নাজমুল হাসান সাগর, সুনামগঞ্জ থেকে

বন্যার পানি নামলেও ঘরের মেঝে থেকে কাদামাটি এখনো শুকায়নি। পোকামাকড়ের যন্ত্রণায় জয়নাল আবেদিন তাই নিজের ঘরে থাকতে পারছেন না। ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে অচলপ্রায় জয়নালের থাকার ব্যবস্থা হয়েছে প্রতিবেশীর বাড়ির একটি ঘরে।
গতকাল দুপুরে সেই ঘরের ভেতর উঁকি দিয়ে দেখা গেল, বিছানায় শুয়ে আছেন জয়নাল। পায়ের পাশে বসে আছেন তাঁর স্ত্রী। এই প্রতিবেদককে ত্রাণসহায়তাকারী ভেবে জয়নালের স্ত্রী ভণিতা ছাড়াই বলতে থাকেন, ‘এই লোকটার (জয়নালের) চিকিৎসা করাতে গিয়ে আমরা শ্যাষ। হাতে টাকাপয়সা নাই। ঘরে অসুস্থ রোগী, বাইরে বন্যার পানি আর মাথার ওপর ঋণের বোঝা। সপ্তাহ পার হলেই কিস্তির জন্য আসবে সাহেবরা। ঘরে খাবার নাই। কিস্তি দিব কীভাবে? আমাদের কিছু সাহায্য করেন স্যার।’
বিছানায় শোয়া জয়নাল তখনো ভাবলেশহীন। জানা গেল, গলার ক্যানসারের কারণে দীর্ঘদিন ধরে স্বাভাবিকভাবে খেতে পারেন না তিনি। নানা কায়দা করে তাঁকে যা কিছু খাওয়ানো হয়, বন্যার কারণে তা-ও পাচ্ছেন না। হাত-পা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে জয়নালের। চামড়ার ওপর দিয়েই গোনা যাচ্ছে বুকের পাঁজরের হাড়।
জয়নালের স্ত্রী আরও জানান, তাঁদের দুই ছেলে। ছোট ছেলে আল আমিন সুনামগঞ্জ শহরে নৈশপ্রহরীর কাজের পাশাপাশি টুকটাক কৃষিকাজ করেন। তাঁর রোজগারেই সংসার চলে। স্থানীয় মহাজনের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে আবাদ করেছিলেন। বন্যায় ফসল ও বাড়ির সর্বনাশ হয়ে গেছে। বাবার চিকিৎসা এবং ছোট ছোট ধারদেনা শোধ করতে এনজিও থেকে ২০ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছিলেন আল আমিন। পাঁচ দিন পর সেই ঋণের কিস্তি দিতে হবে। কোথায় পাবেন টাকা, এই চিন্তায় দিশেহারা জয়নালের পরিবারের সদস্যরা।
সুনামগঞ্জ পৌর শহরের ৩ নম্বর পাঠানবাড়ি এলাকা, পাশেই পৌরসভার অদূরে বাহার গ্রাম। সেখানে গিয়ে জয়নালের পরিবারের মতো আরও অনেক পরিবারের সন্ধান পাওয়া গেল। বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পরও দুশ্চিন্তা কমছে না তাদের।
দারিদ্র্যপীড়িত এই এলাকার মানুষ কৃষিকাজ, মাছ ধরা এবং দিনমজুরি করে দিনাতিপাত করেন। এবার আগাম বন্যার অকূলপাথারে পড়েছেন তাঁরা সবাই। বন্যার পানিতে ফসল ডুবেছে, ঘরবাড়ির ক্ষতি হয়েছে। খোরাকির জন্য জমানো ধান এবং গৃহপালিত পশুপাখিও ভেসে গেছে অনেকের। বন্যার ক্ষতি পুষিয়ে ওঠার কোনো অবলম্বন অবশিষ্ট নেই কারও। কিন্তু এসবের চেয়ে বড় চিন্তা হয়ে সবার মাথায় চেপে বসেছে এনজিও এবং স্থানীয় মহাজনের কাছ থেকে নেওয়া ঋণের বোঝা।
বাহার গ্রামের ফজর বানু বললেন, ‘দুবেলা ভাত জোগানের চিন্তায় যখন দিন পার হয়ে যায়, তখন এসব ঋণের কথা মনে হলে চারদিক অন্ধকার হয়ে আসে।’
স্থানীয় কৃষক ও মৎস্যজীবীদের অধিকার নিয়ে কাজ করেন সুনামগঞ্জের হাওর আন্দোলনের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু সুফিয়ান। তিনি জানান, শুধু বাহার গ্রামের বাসিন্দারা নয়, ঋণের ফাঁদে পড়ে বেকায়দায় আছে সুনামগঞ্জের আরও অনেক এলাকার মানুষ। বন্যা এসে তাদের বিপদ আরও বাড়িয়েছে। নিম্ন আয়ের এসব মানুষ কৃষিকাজ ও মাছ চাষের জন্য প্রতিবছর স্থানীয় মহজনদের কাছ থেকে ঋণ নেন।
বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে সেই ঋণ শোধ করতে না পেরে নতুন করে ঋণ নেন এনজিও থেকে। এরপর আবার বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে অন্য মহাজন বা এনজিও থেকে চড়া সুদে ঋণ নেন। এভাবে প্রতিবছর ঋণের ফাঁদে ঘুরপাক খেতে খেতে তাঁদের অর্থনৈতিক স্থিতি থাকে শূন্যের কোঠায়।
আবু সুফিয়ান তাঁর কাজের অভিজ্ঞতা থেকে বলেন, হাওরের কৃষকদের নিয়ে সরকার বিশেষ পরিকল্পনা না নিলে এই সমস্যার সমাধান হবে না। বন্যা না থাকলেও মৌসুমের পুরো ধান ঘরে তুললেও ঋণের এই ফাঁদ থেকে কৃষকদের মুক্তি নেই। মধ্যস্বত্বভোগী মিলারদের কারণে কষ্টার্জিত ফসলের পুরো দামও পান না তাঁরা। এই অবস্থা মৎস্যচাষিদের ক্ষেত্রেও। সরকারি ব্যাংক মৎসচাষিদের সরাসরি ঋণ দিলে এবং চাষির সঙ্গে সরাসরি মুনাফা ভাগ করে নিলে এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ হতে পারে বলেই মনে করেন সুফিয়ান।
ঋণের ফাঁদে পড়া কৃষকদের ব্যাপারে কী ভাবছে সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তর, জানতে চাইলে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বিমল চন্দ্র সোম বলেন, যেসব কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তাঁদের প্রণোদনার ব্যবস্থা করা হবে। যাঁরা ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে চান, তাঁদেরও সহযোগিতা করা হবে।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক জাহাঙ্গীর হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত নিম্ন আয়ের সব মানুষকে পুনর্বাসনের আওতায় আনা হবে।

বন্যার পানি নামলেও ঘরের মেঝে থেকে কাদামাটি এখনো শুকায়নি। পোকামাকড়ের যন্ত্রণায় জয়নাল আবেদিন তাই নিজের ঘরে থাকতে পারছেন না। ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে অচলপ্রায় জয়নালের থাকার ব্যবস্থা হয়েছে প্রতিবেশীর বাড়ির একটি ঘরে।
গতকাল দুপুরে সেই ঘরের ভেতর উঁকি দিয়ে দেখা গেল, বিছানায় শুয়ে আছেন জয়নাল। পায়ের পাশে বসে আছেন তাঁর স্ত্রী। এই প্রতিবেদককে ত্রাণসহায়তাকারী ভেবে জয়নালের স্ত্রী ভণিতা ছাড়াই বলতে থাকেন, ‘এই লোকটার (জয়নালের) চিকিৎসা করাতে গিয়ে আমরা শ্যাষ। হাতে টাকাপয়সা নাই। ঘরে অসুস্থ রোগী, বাইরে বন্যার পানি আর মাথার ওপর ঋণের বোঝা। সপ্তাহ পার হলেই কিস্তির জন্য আসবে সাহেবরা। ঘরে খাবার নাই। কিস্তি দিব কীভাবে? আমাদের কিছু সাহায্য করেন স্যার।’
বিছানায় শোয়া জয়নাল তখনো ভাবলেশহীন। জানা গেল, গলার ক্যানসারের কারণে দীর্ঘদিন ধরে স্বাভাবিকভাবে খেতে পারেন না তিনি। নানা কায়দা করে তাঁকে যা কিছু খাওয়ানো হয়, বন্যার কারণে তা-ও পাচ্ছেন না। হাত-পা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে জয়নালের। চামড়ার ওপর দিয়েই গোনা যাচ্ছে বুকের পাঁজরের হাড়।
জয়নালের স্ত্রী আরও জানান, তাঁদের দুই ছেলে। ছোট ছেলে আল আমিন সুনামগঞ্জ শহরে নৈশপ্রহরীর কাজের পাশাপাশি টুকটাক কৃষিকাজ করেন। তাঁর রোজগারেই সংসার চলে। স্থানীয় মহাজনের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে আবাদ করেছিলেন। বন্যায় ফসল ও বাড়ির সর্বনাশ হয়ে গেছে। বাবার চিকিৎসা এবং ছোট ছোট ধারদেনা শোধ করতে এনজিও থেকে ২০ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছিলেন আল আমিন। পাঁচ দিন পর সেই ঋণের কিস্তি দিতে হবে। কোথায় পাবেন টাকা, এই চিন্তায় দিশেহারা জয়নালের পরিবারের সদস্যরা।
সুনামগঞ্জ পৌর শহরের ৩ নম্বর পাঠানবাড়ি এলাকা, পাশেই পৌরসভার অদূরে বাহার গ্রাম। সেখানে গিয়ে জয়নালের পরিবারের মতো আরও অনেক পরিবারের সন্ধান পাওয়া গেল। বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পরও দুশ্চিন্তা কমছে না তাদের।
দারিদ্র্যপীড়িত এই এলাকার মানুষ কৃষিকাজ, মাছ ধরা এবং দিনমজুরি করে দিনাতিপাত করেন। এবার আগাম বন্যার অকূলপাথারে পড়েছেন তাঁরা সবাই। বন্যার পানিতে ফসল ডুবেছে, ঘরবাড়ির ক্ষতি হয়েছে। খোরাকির জন্য জমানো ধান এবং গৃহপালিত পশুপাখিও ভেসে গেছে অনেকের। বন্যার ক্ষতি পুষিয়ে ওঠার কোনো অবলম্বন অবশিষ্ট নেই কারও। কিন্তু এসবের চেয়ে বড় চিন্তা হয়ে সবার মাথায় চেপে বসেছে এনজিও এবং স্থানীয় মহাজনের কাছ থেকে নেওয়া ঋণের বোঝা।
বাহার গ্রামের ফজর বানু বললেন, ‘দুবেলা ভাত জোগানের চিন্তায় যখন দিন পার হয়ে যায়, তখন এসব ঋণের কথা মনে হলে চারদিক অন্ধকার হয়ে আসে।’
স্থানীয় কৃষক ও মৎস্যজীবীদের অধিকার নিয়ে কাজ করেন সুনামগঞ্জের হাওর আন্দোলনের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু সুফিয়ান। তিনি জানান, শুধু বাহার গ্রামের বাসিন্দারা নয়, ঋণের ফাঁদে পড়ে বেকায়দায় আছে সুনামগঞ্জের আরও অনেক এলাকার মানুষ। বন্যা এসে তাদের বিপদ আরও বাড়িয়েছে। নিম্ন আয়ের এসব মানুষ কৃষিকাজ ও মাছ চাষের জন্য প্রতিবছর স্থানীয় মহজনদের কাছ থেকে ঋণ নেন।
বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে সেই ঋণ শোধ করতে না পেরে নতুন করে ঋণ নেন এনজিও থেকে। এরপর আবার বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে অন্য মহাজন বা এনজিও থেকে চড়া সুদে ঋণ নেন। এভাবে প্রতিবছর ঋণের ফাঁদে ঘুরপাক খেতে খেতে তাঁদের অর্থনৈতিক স্থিতি থাকে শূন্যের কোঠায়।
আবু সুফিয়ান তাঁর কাজের অভিজ্ঞতা থেকে বলেন, হাওরের কৃষকদের নিয়ে সরকার বিশেষ পরিকল্পনা না নিলে এই সমস্যার সমাধান হবে না। বন্যা না থাকলেও মৌসুমের পুরো ধান ঘরে তুললেও ঋণের এই ফাঁদ থেকে কৃষকদের মুক্তি নেই। মধ্যস্বত্বভোগী মিলারদের কারণে কষ্টার্জিত ফসলের পুরো দামও পান না তাঁরা। এই অবস্থা মৎস্যচাষিদের ক্ষেত্রেও। সরকারি ব্যাংক মৎসচাষিদের সরাসরি ঋণ দিলে এবং চাষির সঙ্গে সরাসরি মুনাফা ভাগ করে নিলে এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ হতে পারে বলেই মনে করেন সুফিয়ান।
ঋণের ফাঁদে পড়া কৃষকদের ব্যাপারে কী ভাবছে সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তর, জানতে চাইলে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বিমল চন্দ্র সোম বলেন, যেসব কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তাঁদের প্রণোদনার ব্যবস্থা করা হবে। যাঁরা ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে চান, তাঁদেরও সহযোগিতা করা হবে।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক জাহাঙ্গীর হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত নিম্ন আয়ের সব মানুষকে পুনর্বাসনের আওতায় আনা হবে।

রাষ্ট্রীয় শোক এবং পুলিশের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে রাজধানীতে আতশবাজি ফোটানো ও ফানুস উড়িয়ে খ্রিষ্টীয় নববর্ষ উদ্যাপন করেছে নগরবাসী। খ্রিষ্টীয় নববর্ষ ২০২৬-এর প্রথম প্রহরে নগরজুড়ে বাসাবাড়ির ছাদে ছাদে আতশবাজি ফোটানো ও ফানুস ওড়ানোর দৃশ্য দেখা যায়। এ সময় চারপাশে বিকট শব্দ শোনা যায়।
১০ মিনিট আগে
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া হলফনামা অনুযায়ী গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি ও ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুরের মোট সম্পদের পরিমাণ ৮৯ লাখ ৮২ হাজার ৮৪১ টাকা। তাঁর স্ত্রী মারিয়া আক্তারের সম্পদের পরিমাণ ২ লাখ ৬৬ হাজার ৮১৮ টাকা। তাঁদের কোনো স্বর্ণালংকার নেই।
১ ঘণ্টা আগে
সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জানাজায় অংশ নিতে এসে মারা যাওয়া মো. নিরব হোসেন (৫৬) দৈনিক জনকণ্ঠের সাবেক প্রশাসনিক কর্মকর্তা। তাঁর বাড়ি পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়নের বড় ডালিমা গ্রামে। রাজধানীর বড় মগবাজারে তিনি পরিবারসহ বসবাস করতেন।
২ ঘণ্টা আগে
ভিডিওতে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তির (ঠিকাদার প্রতিনিধি) সঙ্গে কথা বলার আগে কাজের বিলের ফাইল স্বাক্ষর করার সময় ৪৫ হাজার টাকা নেওয়ার বিষয়টিও উঠে আসে। এ ছাড়া নতুন করে আরও পাঁচ হাজার টাকা না দেওয়ায় গড়িমসি করতে থাকেন ওই প্রকৌশলী। একপর্যায়ে তাঁকে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তির কাছ থেকে টাকা নিয়ে পকেটে রাখতে দেখা যায়।
৩ ঘণ্টা আগে