Ajker Patrika

রিকশাচালককে জুতাপেটা করে বরখাস্ত সেই সমাজসেবা কর্মকর্তাকে ক্ষমা

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
আপডেট : ৩০ জুলাই ২০২৫, ১৯: ২৫
জাহিদ হাসান রাসেল। ছবি: সংগৃহীত
জাহিদ হাসান রাসেল। ছবি: সংগৃহীত

ভাড়া কম দেওয়া নিয়ে রিকশাচালককে জুতাপেটা করে আলোচিত (বরখাস্ত) সমাজসেবা কর্মকর্তা জাহিদ হাসান রাসেল নিজেকে শুধরে নিয়েছেন। এ জন্য সমাজসেবা অধিদপ্তর তাঁকে ক্ষমা করে দিয়েছে। প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে সাময়িক বরখাস্তের আদেশ। শুধু তাই-ই নয়, বরখাস্ত থাকার সময়টি কর্মকাল হিসেবে গণ্য করে তাঁকে বগুড়ার দুপচাঁচিয়া উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা হিসেবে পদায়ন করা হয়েছে।

গত রোববার (২৭ জুলাই) সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপসচিব মোহাম্মদ আবদুল হামিদ মিয়া স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয় এবং আজ বুধবার সেখানে যোগ দিতে বলা হয়।

এর আগে তিনি রাজশাহীর পবা উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত ছিলেন। গত ২ ফেব্রুয়ারি তিনি এক রিকশাচালককে নির্দয়ভাবে পেটান। মুহূর্তে এ ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।

জাহিদ হাসানের স্ত্রী একজন বিচারক। ঘটনাটি ঘটেছিল রাজশাহীর জাজেস কোয়ার্টারের সামনেই। ভাড়া ঠিক না করে উঠে কম টাকা দেওয়ায় রিকশাচালক তাঁকে ‘লাট সাহেব’ বলেছিলেন। এতেই মেজাজ হারিয়ে ওই রিকশাচালককে জুতাপেটা করেন তিনি। এতেও তাঁর ক্ষোভ মেটেনি। গাড়ির ব্যাক ডালা থেকে লাঠি বের করে তিনি রিকশাচালককে পেটান।

গত ২৮ ফেব্রুয়ারি ‘লাট সাহেব বলায় রিকশাচালককে জুতাপেটা করলেন সমাজসেবা কর্মকর্তা’ শিরোনামে আজকের পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়। পরে ৩ ফেব্রুয়ারি সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রশাসন-৫ (প্রশাসন ও শৃঙ্খলা) শাখার প্রজ্ঞাপনে তাঁকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। ঘটনা তদন্তে সমাজসেবা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক (প্রতিষ্ঠান) শহীদুল ইসলামকে তদন্তকারী কর্মকর্তাও নিযুক্ত করা হয়।

তদন্ত শেষে শহীদুল ইসলাম সমাজসেবা অধিদপ্তরে প্রতিবেদন দাখিল করেন। এর ভিত্তিতে ২২ জুলাই সাময়িক বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহার করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।

সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মো. মহিউদ্দিনের স্বাক্ষর করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, জাহিদ হাসান তাঁর অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জন্য অনুতপ্ত ও ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন। ভবিষ্যতে এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা তাঁর দ্বারা আর হবে না মর্মে লিখিত অঙ্গীকারনামাও দিয়েছেন। রিকশাচালকের সঙ্গে ‘ভুল-বোঝাবুঝি সৃষ্টির কারণে’ তিনি ক্ষমাও প্রার্থনা করেন।

জাহিদ হাসান তাঁর লিখিত বক্তব্যে বলেছেন, ঘটনাটি তাঁর জীবনকে বদলে দিয়েছে। ওই ঘটনার পর থেকে তিনি নিজেকে শুধরে নিয়েছেন। এ শোধরানোর মধ্য দিয়ে তিনি বাকি জীবন অতিবাহিত করতে পারবেন।

তাই তাঁর সাময়িক বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহার করা সমীচীন মর্মে মন্ত্রণালয়ের কাছে প্রতীয়মান হয়েছে। এ জন্য সাময়িক বরখাস্তের আগের আদেশ প্রত্যাহার করা হলো এবং তাঁর সাময়িক বরখাস্তকাল কর্মকাল হিসেবে গণ্য করা হলো।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জাহিদ হাসান পবায় থাকাকালে নানা বিতর্কিত ঘটনা ঘটিয়েছিলেন। তাঁর দুর্ব্যবহারে অতিষ্ঠ হয়ে ওঠেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। গত বছরের ৩১ মার্চ উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা শিমুল বিল্লাহ সুলতানা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে জাহিদের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দেন।

শিমুল সুলতানা জানান, জাহিদ প্রায়ই অশোভন আচরণ করেন। উপজেলা পরিষদ চত্বরে তিনি সবার সামনে অকথ্য ও অশ্রাব্য ভাষায় অশালীন আচরণ করেন।

এর আগে দুর্ব্যবহারে অতিষ্ঠ হয়ে ২০২৩ সালের ১৬ মে পবা উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের সহকারী সমাজসেবা কর্মকর্তা শারমিন আফরোজ রাজশাহী জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের তৎকালীন উপপরিচালক হাসিনা মমতাজের কাছে জাহিদ হাসানের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দেন। কিন্তু তাঁর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। অভিযোগের তদন্তও হয়নি।

জাহিদের গ্রামের বাড়ি টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার শরীফবাড়ী গ্রামে। সেখানে তিনি ফাতেমা ফাউন্ডেশন নামের একটি সংগঠন করেছেন। এই সংগঠনের জন্য তিনি নিয়ম ভেঙে পবা উপজেলার নওহাটা পৌরসভা থেকে সরকারি ডাস্টবিন নিয়ে যান।

পৌরসভার ডাস্টবিন বিতরণ-সংক্রান্ত কমিটির সভাপতি ছিলেন জাহিদ হাসান। তিনি অফিসে ‘বিচারক’ লেখা প্রাইভেট কারে চড়ে যাওয়া-আসা করেন। অফিস সহকারী সোহাগ আলীকে দিয়ে গাড়ি পাহারা দেওয়াতেন তিনি।

এসব নিয়ে ৬ মার্চ আজকের পত্রিকায় ‘সমাজসেবার বদলে নিজের সেবা’ শিরোনামে একটি সংবাদ ছাপা হয়। তবে এসব নিয়ে কোনো তদন্ত হয়নি। রিকশাচালককে পিটিয়েও পার পেয়ে গেলেন এই কর্মকর্তা।

জাহিদ হাসান বগুড়ার দুপচাঁচিয়া উপজেলায় যোগ দিয়েছেন কি না, তা জানতে তাঁর মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। সাংবাদিক পরিচয় দিলে তিনি ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।

এ বিষয়ে রাজশাহী বিভাগীয় সমাজসেবা অধিদপ্তরের পরিচালক সৈয়দ মোস্তাক হাসান আজকের পত্রিকাকে জানান, জাহিদ হাসানের বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহারের বিষয়টি তিনি জানেন। তবে তিনি দুপচাঁচিয়ায় যোগ দিয়েছেন কি না, তা জানেন না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

মাঠে পড়ে ছিল মাছ ব্যবসায়ীর রক্তাক্ত লাশ

ফরিদপুর প্রতিনিধি
ঘটনাস্থলে স্থানীয় বাসিন্দারা জড়ো হন। ছবি: আজকের পত্রিকা
ঘটনাস্থলে স্থানীয় বাসিন্দারা জড়ো হন। ছবি: আজকের পত্রিকা

ফরিদপুরের সালথায় উৎপল সরকার (৩৫) নামের এক মাছ ব্যবসায়ীর রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। আজ শুক্রবার সকালে উপজেলার আটঘর ইউনিয়নের গৌরদিয়া এলাকার কালীতলা ব্রিজ-সংলগ্ন মাঠ থেকে লাশটি উদ্ধার করে পুলিশ। এই ঘটনায় মাঠ-সংলগ্ন সেতু থেকে চোখ বাঁধা অবস্থায় থাকা ফিরোজ মোল্যা নামের এক ভ্যানচালককে জীবিত উদ্ধার করে স্থানীয় লোকজন।

নিহত উৎপল ফরিদপুর জেলা সদরের কানাইপুর ইউনিয়নের রনকাইল গ্রামের অজয় সরকারের ছেলে। তাঁর স্ত্রী ও আড়াই বছর বয়সী এক শিশুসন্তান রয়েছে।

থানা-পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আজ ভোরে সড়কের পাশে ফাঁকা মাঠে রক্তাক্ত অবস্থায় একটি লাশ দেখতে পায় স্থানীয় লোকজন। পাশেই একটি সেতুর সঙ্গে একই গ্রামের ভ্যানচালক ফিরোজ মোল্যাকে চোখ বাঁধা অবস্থায় বেঁধে রাখা হয়েছিল। পরে স্থানীয় বাসিন্দাদের হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি খুলে বলেন তিনি।

ভ্যানচালকের বরাত দিয়ে রনকাইল গ্রামের বাসিন্দা ও প্রতিবেশী কাজী শাহীন বলেন, উৎপল সরকার ব্যাটারিচালিত ভ্যানে করে গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরে মাছ কিনতে যাচ্ছিলেন। পথে অজ্ঞাতপরিচয় তিন-চার ব্যক্তি দেশীয় অস্ত্রের মুখে ভ্যানচালক ফিরোজ মোল্যাকে গামছা দিয়ে চোখ বেঁধে ব্রিজের রেলিংয়ে বেঁধে ফেলে। তারা উৎপলের সঙ্গে থাকা টাকাপয়সা লুট করে তাঁকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হত্যা করে পালিয়ে যায়।

বিষয়টি নিশ্চিত করে সালথা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) কে এম মারুফ হাসান রাসেল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘দুই থেকে তিনজন দুর্বৃত্ত ঘটনাটি ঘটিয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। তবে এটাকে ডাকাতি বলা যায় না। ঘটনাটি নিয়ে তদন্ত চলমান। তদন্ত শেষে মূল কারণ বলা যাবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বাসার দরজা ভেঙে চবি শিক্ষার্থীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার

চবি প্রতিনিধি 
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ওমর ফারুক সুমন নামের এক শিক্ষার্থীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) রাতে চট্টগ্রাম নগরীর খুলশী এলাকার একটি বাসা থেকে লাশটি উদ্ধার করে পুলিশ।

ওমর ফারুক বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন।

স্থানীয় ও পরিবারের সদস্যরা জানান, সুমন খুলশীতে তাঁর মামার বাসায় থাকতেন। তাঁর বড় ভাইও সেখানে থাকেন। দুই দিন আগে সুমনের মামা পুরো পরিবার নিয়ে তুরস্কে বেড়াতে যান। বাসায় সুমন ও তাঁর বড় ভাই ছিলেন। গতকাল বিকেল ৪টার দিকে ভাইয়ের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন সুমন। ফোনে তাঁর বড় ভাই কখন বাসায় ফিরবেন জানতে চান সুমন। বড় ভাই জানান যে তাঁর আসতে একটু দেরি হবে। এর কিছুক্ষণ পর বড় ভাই সুমনকে ফোন করলে তিনি আর ফোন রিসিভ করেননি। পরে বাড়ি থেকে সুমনের মা ফোন দিয়ে যোগাযোগ করতে না পেরে বিষয়টি বড় ভাইকে জানান। এতে উদ্বেগ দেখা দিলে বড় ভাই বিল্ডিংয়ের দারোয়ানকে দিয়ে বাসা চেক করান।

দারোয়ান কলিংবেল বাজিয়েও কোনো সাড়া না পেয়ে বড় ভাইকে জানালে তিনি দ্রুত বাসায় এসে সুমনকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পান। খবর পেয়ে পুলিশ এসে লাশ উদ্ধার করে। ঘটনাস্থলে চিরকুট মিলেছে। এতে লেখা রয়েছে, ‘আমি সুমন, ওমর ফারুক সুমন। আমার কোনো আশা-আকাঙ্ক্ষা নেই। আর আমার কারও প্রতি কোনো অভিযোগ নেই। সবাই ভালো থাকবেন।’ এর আগে ১ ডিসেম্বর লেখা আরেকটি চিরকুট পাওয়া যায়। সেখানে লেখা ছিল—‘আশাই জীবন, আশাই মরণ, ব্যর্থতা হতাশা-অন্ধকারে নিয়ে যায়।’

খুলশী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহীনুর জামান বলেন, ‘সুমন ও তাঁর বড় ভাই একসঙ্গে মামার বাসায় থাকতেন। মামা ও মামি বর্তমানে বিদেশে আছেন। বড় ভাই সন্ধ্যায় বাইরে যান। সে সময় সুমন বাসায় একা ছিলেন। বড় ভাই বাসায় ফিরে এসে বারবার ডাকলেও ফ্ল্যাটের ভেতর থেকে কোনো সাড়া পাননি। পরে দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকলে সুমনের মরদেহ ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। প্রাথমিক তদন্তে এটি আত্মহত্যা মনে হলেও আমরা সব সম্ভাব্য কারণ খতিয়ে দেখছি। ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহটি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বদলি নিয়ে ফেসবুকে ক্ষোভ প্রকাশ শিক্ষক নেতার

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি
প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বায়ক আবুল কাশেম। ছবি: সংগৃহীত ক্যাটা: সারা দেশ, ময়মনসিংহ
প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বায়ক আবুল কাশেম। ছবি: সংগৃহীত ক্যাটা: সারা দেশ, ময়মনসিংহ

সহকর্মী এবং নিজের বদলি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক লাইভে এসে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বায়ক আবুল কাশেম। তিনি বলেন, ‘আমাকে সাড়ে ৪০০ মাইল দূরে বদলি করা হয়েছে। এতে আমি বিচলিত নই।’

আজ শুক্রবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে ফেসবুক লাইভে এসে আবুল কাশেম বলেন, ‘আমার মতো সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের তিন দফা দাবি আদায়ের নেতৃত্ব দেওয়া শতাধিক শিক্ষককে বদলি করা হয়েছে পার্শ্ববর্তী জেলা এবং বিভাগে। আরও অনেককে বদলি করা হতে পারে। এ নিয়ে কেউ বিচলিত হবেন না। প্রয়োজনে আইনি লড়াইয়ে যাব। তবে আন্দোলন থেকে সরে আসব না। আপনাদের পাশে রয়েছি। অবিলম্বে আরও কঠোর কর্মসূচির ঘোষণা আসবে। সে জন্য যদি জেলেও যেতে হয়, প্রস্তুত রয়েছি।’

এ বিষয়ে প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বায়ক আবুল কাশেমের সঙ্গে একাধিকবার মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও কোনো সাড়া মেলেনি।

৪ ডিসেম্বর প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (পলিসি ও অপারেশন) মাহফুজা খাতুন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলার চানপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবুল কাশেমকে বরিশাল সদরের চরবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

আমনের বাম্পার ফলনেও মুখে হাসি নেই কৃষকের, বাজারে ধানের দাম কমায় হতাশা

মাহিদুল ইসলাম, মৌলভীবাজার
জমির ধান কাটছেন কৃষকেরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
জমির ধান কাটছেন কৃষকেরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

মৌলভীবাজারের চলতি মৌসুমে আমন ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। ফসল ঘরে তুলতে দিনরাত ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন কৃষকেরা। তবে বাজারে ধানের দাম কম হওয়ায় হতাশা ব্যক্ত করেছেন তাঁরা। কৃষকদের অভিযোগ, বাজারে ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে ধানের দাম কমিয়ে দিয়েছেন। তাই ফলন ভালো হওয়ার পরও বাজারে ধানের যথার্থ মূল্য না পাওয়ায় লোকসানে পড়ছেন তাঁরা।

কৃষকেরা জানান, চলতি আমন মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ধানের ফলন অনেক ভালো হয়েছে। তবে অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার ধানের দাম অনেক কম। গত বছর বাজারে যেখানে ১ হাজার ১০০ থেকে ১ হাজার ৩০০ টাকায় প্রতি মণ ধান বিক্রি হয়েছে, এই বছর মাঝারি শুকনা ধান ৯০০ ও শুকনা ধান ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বীজতলা থেকে শুরু করে ফসল ঘরে তোলার আগপর্যন্ত অনেক শ্রম ও টাকা খরচ করতে হয়েছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে ৯৮ হাজার ২০ হেক্টর জমিতে আমন আবাদ করা হয়েছে। এর থেকে ৪ লাখ ৪১ হাজার ৯০ টন ধান উৎপাদন হবে। আর এই ধান থেকে ২ লাখ ৯৫ হাজার ৫৩০ মেট্রিক টন চাল পাওয়া যাবে। ইতিমধ্যে ৬৫ শতাংশ ধান কাটা হয়েছে। আমন ধানের শতভাগ লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়েছে। এক সপ্তাহের মধ্যে শতভাগ ধান ঘরে তুলতে পারবেন কৃষকেরা।

বাজারে আমন ধানের দাম কম হলেও সরকারিভাবে ভালো দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক অফিস সূত্রে জানা গেছে, সরকারিভাবে প্রতি কেজি আমন ধান ৩৪ টাকা মূল্যে ৭৯০ টন, সেদ্ধ চাল ৫০ টাকা কেজি মূল্যে ২ হাজার ৬৭৭ টন ও আতপ চাল ৪৯ টাকা কেজি মূল্যে ৫ হাজার ৬৪৬ টন চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।

জেলার কমলগঞ্জ, রাজনগর, কুলাউড়া ও সদর উপজেলার আমনখেত ঘুরে দেখা যায়, কৃষকেরা পাকা আমন ধান ঘরে তুলতে ব্যস্ত। অনেক এলাকায় দ্রুত সময়ে কম্বাইন হারভেস্টারের মাধ্যমে ধান কাটা ও মাড়াইয়ের কাজ একসঙ্গে সেরে নিচ্ছেন কৃষকেরা। এতে সময়, খরচ ও কষ্ট কম করতে হচ্ছে। আবার কেউ কাজের লোক এনে ধান কেটে ফসলের মাঠেই মাড়াই করে সেদ্ধ দিচ্ছেন। অনেক কৃষক মাঠের মধ্যে রাত জেগে ধান সেদ্ধ করছেন। তবে সবকিছু ঠিক থাকলেও ধানের দাম কম থাকায় হতাশা ব্যক্ত করেছেন কৃষকেরা।

কমলগঞ্জ উপজেলার পতনঊষার ইউনিয়ন কৃষক আনোয়ার খান বলেন, ‘গত বছর আমাদের ধান একেবারেই হয়নি। এ বছর অনেক ভালো ধান হয়েছে। প্রত্যাশার চেয়ে বেশি ফলন হয়েছে। তবে বাজারে ধানের দাম অনেক কম। প্রতি মণ ধান মাত্র ৯০০ থেকে ১ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কৃষিতে আগের চেয়ে অনেক বেশি খরচ বেড়েছে। সে তুলনায় ধানের দাম বাড়েনি।’

জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক (ভারপ্রাপ্ত) মিলন কান্তি চাকমা বলেন, ‘আমাদের ধান-চাল সংগ্রহের কার্যক্রম ২০ নভেম্বর শুরু হয়েছে; চলবে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। সরকারিভাবে ধানের দাম গত বছরের তুলনায় কেজিপ্রতি ১ টাকা বৃদ্ধি করা হয়েছে। একটা সময় আমরা ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারতাম না; তবে এখন ধান-চালের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়। আশা করি, চলতি মৌসুমে আমাদের লক্ষ্য পূরণ হবে।’

মৌলভীবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. জালাল উদ্দীন বলেন, ‘জেলায় এ বছর খুব ভালো আমন ধান হয়েছে। কৃষকেরা অত্যন্ত উৎসাহ নিয়ে ধান ঘরে তুলছেন। আশা করি, আগামী সপ্তাহের মধ্যে শতভাগ ধান কাটা হয়ে যাবে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ও দিনের বেলা কুয়াশা না থাকায় সহজে কৃষকেরা ধান কাটা, মাড়াই ও সেদ্ধ করতে পারছেন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত