Ajker Patrika

লিবিয়ায় বন্দী শিবচরের তিন যুবক

৪০ লাখের পর নির্যাতনের ভিডিও পাঠিয়ে আরও ২০ লাখ দাবি

শিবচর (মাদারীপুর) প্রতিনিধি 
আপডেট : ২৮ নভেম্বর ২০২৫, ১৯: ৩০
আলমাস খান, সজীব ফরাজী, শিবচর সবুজ তপাদার। ছবি: সংগৃহীত
আলমাস খান, সজীব ফরাজী, শিবচর সবুজ তপাদার। ছবি: সংগৃহীত

ইতালিযাত্রার স্বপ্ন নিয়ে বাড়ি ছাড়েন মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার বাঁশকান্দি এলাকার তিন যুবক। ইতালি পৌঁছে উপার্জন করে সচ্ছলতা আনবেন দেশে থাকা পরিবারে—এমনটাই আশা ছিল তাঁদের। তবে প্রায় ১৪ মাস আগে ইতালিযাত্রার পথে লিবিয়ায় গিয়ে আটকা পড়েন তাঁরা।

এদিকে ওই তিন যুবকের পরিবারের কাছ থেকে প্রায় ৪০ লাখ করে টাকা নিয়েছে মানব পাচার চক্র। তাতেও ছাড়া পাননি তাঁরা। বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে মাফিয়াদের কাছে। সম্প্রতি ওই তিন যুবককে বেঁধে নির্যাতনের একটি ভিডিও পরিবারের কাছে পাঠিয়ে চাওয়া হয় আরও ২০ লাখ করে টাকা।

নির্যাতনের ভিডিও দেখার পর দিশেহারা পরিবারগুলো। ইতিমধ্যে ৪০ লাখ টাকা দিয়ে অনেকটা সর্বস্বান্ত, এখন আবার কোথায় পাবে ২০ লাখ। অন্যদিকে নির্যাতনের ভিডিও পরিবারের কাছে আসার খবরে গা ঢাকা দিয়েছেন স্থানীয় দুই দালাল।

ভুক্তভোগীদের পরিবারসূত্রে জানা গেছে, শিবচর উপজেলার বাঁশকান্দি ইউনিয়নের শেখপুর গ্রামের ছয় যুবক স্থানীয় দালালের মাধ্যমে প্রায় ১৪ মাস আগে ইতালির পথে লিবিয়া যান। তাঁদের মধ্যে তিনজন কয়েক মাস আগে ইতালি পৌঁছেছেন। তবে ফাঁদে পড়ে যান আলাউদ্দিন খানের ছেলে আলমাস খান (২৫), চুন্নু তপাদারের ছেলে সবুজ তপাদার (২৫) এবং নূর ইসলাম ফরাজীর ছেলে সজীব ফরাজী (৩৩)।

নির্যাতনের খবরে ওই তিন যুবকের বাড়িতে গেলে তাঁদের পরিবারের সদস্যরা জানান, একই এলাকার নূর আলম ও সেলিম নামের দুই দালালের মাধ্যমে সমস্ত টাকা লেনদেন হয়। লিবিয়ায় তিন যুবক আটকে থাকলেও মাঝেমধ্যে তাঁদের সঙ্গে পরিবারের সদস্যদের কথা হতো। কিন্তু মাসখানেক ধরে তাঁদের সঙ্গে আর যোগাযোগ করতে পারছেন না। এর মধ্যে পরিবারের ফোনে নির্যাতনের ভিডিও পাঠানো হলে তাঁরা চরম উৎকণ্ঠায় রয়েছেন।

নির্যাতনের ভিডিও পাওয়ার পর লিবিয়ায় বন্দী সজীব ফরাজীর মা শেফালী বেগম থানায় দুই দালালসহ বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। মামলার পর দালাল নূর আলম ও সেলিমের তথ্য পেতে পুলিশ তাঁদের স্ত্রীদের গ্রেপ্তার করেছে।

লিবিয়ায় বন্দী আলমাস খানের বাবা আলাউদ্দিন খান বলেন, ‘মোট ১৭ লাখ টাকার চুক্তি হয় দালাল নূর আলমের সঙ্গে। ১০ লাখ টাকা লিবিয়া পৌঁছানোর পর এবং ৭ লাখ টাকা ইতালি পৌঁছানোর পর দেওয়ার কথা ছিল। গত বছর আমার ছেলেসহ ছয়জন লিবিয়া যায়। ধারদেনা কইরা টাকা জোগাড় করে দালালকে দেই। লিবিয়া নেওয়ার পর গেমের কথা বইলা দফায় দফায় টাকা নেয়। ৪০ লাখ টাকা গেছে। জমি বিক্রি কইরা টাকা দিছি। এখন শুনি আমার ছেলেরে মাফিয়ার কাছে বিক্রি কইরা দিছে। গত সপ্তাহে মারধর করার ভিডিও পাঠাইছে।’

আলমাসের মা চায়না বেগম বলেন, ‘আমার পোলাডারে মারতে মারতে শ্যাষ কইরা ফালাইতেছে। আরও ২০ লাখ টাকা চায়। আমার তো সব শ্যাষ হইয়া গেছে।’

আরও এক বন্দী সবুজ তপাদারের মা পারুল বেগম বলেন, ‘আমার ছেলেসহ তিনজনরে মারধর করে ভিডিও পাঠাইছে। মুক্তিপণের জন্য ২০ লাখ টাকা চায়। ৪০ লাখ তো দিছি আগে। আমার বড় একটা গরুর খামার ছিল। সব গরু বিক্রি কইরা দিছি। সব শ্যাষ আমার। না জানি পোলাডা কেমন আছে এখন।’

বন্দী সজীব ফরাজীর মা শেফালী বেগম বলেন, ‘১৪ মাস আগে লিবিয়া নিছে। মাফিয়াদের কাছে বিক্রি কইরা দিছে। এখন আরও ২০ লাখ টাকা চায়। নির্যাতনের ভিডিও পাঠানোর পর দালাল নূর আলম আর সেলিম পালাইছে। গ্রামের লোকজন পুলিশকে জানাইছিল। আমি মামলাও করেছি। এরপর লোক দিয়া হুমকি দেয় ওরা। আমরা আমাগো ছেলেদের ফেরত চাই। সর্বস্বান্ত হইয়া গেছি। এখন ছেলেরা সুস্থভাবে বাড়ি ফিরলেই আমাগো শান্তি।’

জানতে চাইলে শিবচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রকিবুল ইসলাম জানান, এ ঘটনায় মামলা হয়েছে। দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্যদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বিএনপির আপত্তি তোলা দুই অধ্যাদেশে উপদেষ্টা পরিষদের অনুমোদন

ভারতে পা রাখলেন পুতিন, নিয়ম ভেঙে ‘কোলাকুলি’ করলেন মোদি

মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা—জনসংখ্যার তীব্র সংকটে ইউক্রেন

বাংলাদেশি ও পাকিস্তানি শিক্ষার্থী ভর্তি স্থগিত করেছে যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়

গোপালগঞ্জে শিক্ষকের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ, ছাত্রীর আত্মহত্যা

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ