Ajker Patrika

কিশোরগঞ্জে ঈদে মিলাদুন্নবীর র‍্যালিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ, নিহতের ঘটনায় গ্রেপ্তার ৯ 

কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি
কিশোরগঞ্জে ঈদে মিলাদুন্নবীর র‍্যালিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ, নিহতের ঘটনায় গ্রেপ্তার ৯ 

কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচরে ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে আয়োজিত জশনে জুলুসকে কেন্দ্র করে দুপক্ষের সংঘর্ষে মীর মোহাম্মদ মিলন নামের এক ব্যক্তি নিহতের ঘটনায় হত্যা মামলা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার ইমাম উলামা পরিষদের নেতা ও ছয়সূতী জামে মসজিদের খতিব আবু হানিফ বাদী হয়ে এ মামলা করেছে। 

মামলায় নয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মামলায় ৬৮ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। 

এর আগে গতকাল সোমবার দুপুরে কুলিয়ারচর উপজেলার ছয়সূতী ইউনিয়নে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় আহত হন উভয় পক্ষের ১৫ জন।  

নিহত মীর মোহাম্মদ মিলন (৫০) উপজেলার ছয়সূতী ইউনিয়নের পূর্ব ছয়সূতী গ্রামের হাজী জমির উদ্দিনের ছেলে। তিনি ছয়সূতী বাজারের জুতা ব্যবসায়ী এবং স্থানীয় ৩ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি ও উপজেলা বিএনপির সদস্য। ছয়সূতী ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ কমিটির সদস্যও ছিলেন তিনি। 

মামলায় গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন, এজাহারভুক্ত আসামি ছয়সূতী গ্রামের মরহুম সৈয়দ মঞ্জুরুল হামিদের ছেলে সৈয়দ ফয়জুল আল আমিন (৪৮), সৈয়দ ফয়জুল মুরসালিন (৪৪), মো. ছেনু মিয়ার ছেলে মো. রাজু মিয়া (২৪), মো. হানিফ মিয়ার ছেলে মো. শাহিদ মিয়া ওরফে শহিদ (২৩), রঙ্গু ভূইয়ার ছেলে আমির মিয়া (৪০), খুর্শিদ খানের ছেলে চান মিয়া (৪০), ছোট ছয়সূতী গ্রামের শুক্কর আলীর ছেলে শফিকুল মিয়া (৪০), সন্দিগ্ধ ছয়সূতী প্রতাপনাথ বাজারের মো. সিদ্দিক মিয়ার ছেলে মো. তুষার মিয়া (১৮) ও ছোট ছয়সূতী পূর্বপাড়া গ্রামের মো. রিয়াজ উদ্দিনের ছেলে মো. রকি মিয়া (২০)। 

স্থানীয় ও পুলিশ সূত্র জানায়, গতকাল সোমবার ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে ছয়সূতী ইউনিয়নে আহলে সুন্নত ওয়াল জামাতের পক্ষ থেকে জশনে জুলুস ও মাহফিল আয়োজনের কথা ছিল। অপরদিকে ইমাম ওলামা পরিষদের পক্ষ থেকেও একটি মাহফিলের আয়োজনের কথা ছিল। দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করায় উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে গত রোববার দুই পক্ষের অনুষ্ঠানই বন্ধ রাখতে বলা হয়। তবে পরে পৃথক সময়ে দুই পক্ষকেই অনুমতি দেওয়া হয়। 

গতকাল সকালে আহলে সুন্নত ওয়াল জামাতের পক্ষ থেকে জশনে জুলুস বের হয়। তবে উপজেলা প্রশাসন মিছিলটি ছয়সুতি বাজারে প্রবেশ করতে নিষেধ করে। কিন্তু মিছিলটি ছয়সুতি বাজারে এলে ইমাম ওলামা পরিষদের পক্ষ থেকে বাধা দেওয়া হয়। এতে দুই পক্ষের মাঝে সংঘর্ষে বাধে। 

সংঘর্ষের সময় ছয়সুতি ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে এবং মাজার, ঘরবাড়িও ভাঙচুর করা হয়। সংঘর্ষে ১৫ জন আহত হন। আশঙ্কাজনক অবস্থায় বাজিতপুরের জহিরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে মীর মিলন নামে একজনের মৃত্যু হয়। খবর পেয়ে পুলিশ, সেনাবাহিনী ও উপজেলা প্রশাসনের লোকজন ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। 

প্রত্যক্ষদর্শী উলামা পরিষদ নেতা মাওলানা তানভীর আহমেদ বলেন, হামলার সময় মসজিদ সংলগ্ন খাদেমুল ইসলাম হোসাইনিয়া মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষকেরা আতঙ্কিত হয়ে পড়লে মসজিদের মাইকে স্থানীয়দের কাছে সহায়তা চায়। একপর্যায়ে সর্বস্তরের মানুষ এগিয়ে আসলে হামলাকারীরা পিছু হটে। পরে উলামাদের সমর্থকেরা মিছিল নিয়ে ছয়সুতী গাউছিয়া দরবার শরীফ ও বাড়িঘরে হামলা চালায়।  

এদিকে ঘটনার পর বেলা ২টার দিকে ছয়সূতী খাদেমুল ইসলাম হোসাইনিয়া হাফিজিয়া মাদ্রাসা চত্বরে উপজেলা ইমাম উলামা পরিষদের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন করে। 

সংবাদ সম্মেলনে জামিয়া নূরুল উলুম কুলিয়ারচর মাদ্রাসার প্রধান মুফতি নাছির উদ্দিন রহমানিয়া বলেন, ‘প্রশাসনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমরা সিরাতুন্নবী মাহফিল বন্ধ রাখি। বেলা ১১টায় বেদাতিরা পরিকল্পিতভাবে আমাদের মসজিদে হামলা চালায়। এ ঘটনায় বাজারের একজন ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন।’ প্রশাসনের এত নজরধারীর পরও এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি একটি ন্যক্কারজনক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। তিনি এর বিচার দাবি করেন। 

এদিকে আজ মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে ছয়সূতী বাসস্ট্যান্ডে প্রতিবাদ সভা ও বিক্ষোভ মিছিল করার ঘোষণা দিলেও পরে তা করেনি ইমাম উলামা পরিষদ। 

ছয়সূতী গাউছিয়া দরবার শরীফের পীর মরহুম শাহ সুফী সৈয়দ মঞ্জুরুল হামিদের বড় ছেলে সৈয়দ ফয়জুল আল আমিন বলেন, ‘আমাদের এখানে ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে গিয়াস উদ্দিন আত্ব-তাহেরী আসার কথা ছিল। মাহফিল বন্ধ করা হলেও প্রশাসনের রোডম্যাপ অনুযায়ী জশনে জুলুসের মিছিল করার অনুমতি ছিল। কিন্তু আমাদের মিছিলের কিছু লোক রোডম্যাপের বাইরে চলে গিয়েছিল। আমাদের ওপর তারা হামলা চালিয়েছে। মাজার ভাঙচুরসহ আরও ১০টি বাড়িঘর ও দোকানপাট ভাঙচুর করেছে।’ তিনি সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে এর বিচার দাবি করেন। 

নিহতের ভাই আলফাজ ও ছোট বোন আছমা আক্তার বলেন, দুপক্ষের সংঘর্ষ ফেরাতে গেলে মীর মোহাম্মদ মিলন আহলে সুন্নত ওয়াল জামাতের লোকজনের মাধ্যমে হামলার শিকার হয়। তাঁরাই ভাইকে পিটিয়ে মেরেছেন বলে দাবি তাঁদের। 

কুলিয়ারচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাবিহা ফাতেমাতুজ-জোহরা বলেন, সকাল থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে মিছিলের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। অপরদিকে ইমাম ওলামাদের মাহফিলের জন্য অনুমতি দেওয়া হয় বেলা ১টার পর। কিন্তু আহলে সুন্নত ওয়াল জামাতের ২০-২৫ জনের একটা ছোট দল মসজিদের সামনে দিয়ে গেলে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। পরে সংঘর্ষ বাধে। ঘটনাস্থল ও আশপাশে পুলিশ ও সেনাবাহিনী মোতায়েন রয়েছে। 

কুলিয়ারচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সারোয়ার জাহান বলেন, আজ মঙ্গলবার ইমাম উলামা পরিষদের নেতা ও ছয়সূতী জামে মসজিদের খতিব আবু হানিফ বাদী হয়ে ৬৮ জনের নাম উল্লেখ করে হত্যা মামলা করেছেন। মামলায় ২০০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে। মামলা করার সময় নিহতের ছেলে ও শ্যালক উপস্থিত ছিল। নিহতের পরিবারের সম্মতিতেই আবু হানিফ বাদী হয়ে মামলাটি করেছেন বলে জানিয়েছেন ওসি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

মাঠে পড়ে ছিল মাছ ব্যবসায়ীর রক্তাক্ত লাশ

ফরিদপুর প্রতিনিধি
ঘটনাস্থলে স্থানীয় বাসিন্দারা জড়ো হন। ছবি: আজকের পত্রিকা
ঘটনাস্থলে স্থানীয় বাসিন্দারা জড়ো হন। ছবি: আজকের পত্রিকা

ফরিদপুরের সালথায় উৎপল সরকার (৩৫) নামের এক মাছ ব্যবসায়ীর রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। আজ শুক্রবার সকালে উপজেলার আটঘর ইউনিয়নের গৌরদিয়া এলাকার কালীতলা ব্রিজ-সংলগ্ন মাঠ থেকে লাশটি উদ্ধার করে পুলিশ। এই ঘটনায় মাঠ-সংলগ্ন সেতু থেকে চোখ বাঁধা অবস্থায় থাকা ফিরোজ মোল্যা নামের এক ভ্যানচালককে জীবিত উদ্ধার করে স্থানীয় লোকজন।

নিহত উৎপল ফরিদপুর জেলা সদরের কানাইপুর ইউনিয়নের রনকাইল গ্রামের অজয় সরকারের ছেলে। তাঁর স্ত্রী ও আড়াই বছর বয়সী এক শিশুসন্তান রয়েছে।

থানা-পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আজ ভোরে সড়কের পাশে ফাঁকা মাঠে রক্তাক্ত অবস্থায় একটি লাশ দেখতে পায় স্থানীয় লোকজন। পাশেই একটি সেতুর সঙ্গে একই গ্রামের ভ্যানচালক ফিরোজ মোল্যাকে চোখ বাঁধা অবস্থায় বেঁধে রাখা হয়েছিল। পরে স্থানীয় বাসিন্দাদের হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি খুলে বলেন তিনি।

ভ্যানচালকের বরাত দিয়ে রনকাইল গ্রামের বাসিন্দা ও প্রতিবেশী কাজী শাহীন বলেন, উৎপল সরকার ব্যাটারিচালিত ভ্যানে করে গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরে মাছ কিনতে যাচ্ছিলেন। পথে অজ্ঞাতপরিচয় তিন-চার ব্যক্তি দেশীয় অস্ত্রের মুখে ভ্যানচালক ফিরোজ মোল্যাকে গামছা দিয়ে চোখ বেঁধে ব্রিজের রেলিংয়ে বেঁধে ফেলে। তারা উৎপলের সঙ্গে থাকা টাকাপয়সা লুট করে তাঁকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হত্যা করে পালিয়ে যায়।

বিষয়টি নিশ্চিত করে সালথা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) কে এম মারুফ হাসান রাসেল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘দুই থেকে তিনজন দুর্বৃত্ত ঘটনাটি ঘটিয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। তবে এটাকে ডাকাতি বলা যায় না। ঘটনাটি নিয়ে তদন্ত চলমান। তদন্ত শেষে মূল কারণ বলা যাবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বাসার দরজা ভেঙে চবি শিক্ষার্থীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার

চবি প্রতিনিধি 
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ওমর ফারুক সুমন নামের এক শিক্ষার্থীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) রাতে চট্টগ্রাম নগরীর খুলশী এলাকার একটি বাসা থেকে লাশটি উদ্ধার করে পুলিশ।

ওমর ফারুক বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন।

স্থানীয় ও পরিবারের সদস্যরা জানান, সুমন খুলশীতে তাঁর মামার বাসায় থাকতেন। তাঁর বড় ভাইও সেখানে থাকেন। দুই দিন আগে সুমনের মামা পুরো পরিবার নিয়ে তুরস্কে বেড়াতে যান। বাসায় সুমন ও তাঁর বড় ভাই ছিলেন। গতকাল বিকেল ৪টার দিকে ভাইয়ের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন সুমন। ফোনে তাঁর বড় ভাই কখন বাসায় ফিরবেন জানতে চান সুমন। বড় ভাই জানান যে তাঁর আসতে একটু দেরি হবে। এর কিছুক্ষণ পর বড় ভাই সুমনকে ফোন করলে তিনি আর ফোন রিসিভ করেননি। পরে বাড়ি থেকে সুমনের মা ফোন দিয়ে যোগাযোগ করতে না পেরে বিষয়টি বড় ভাইকে জানান। এতে উদ্বেগ দেখা দিলে বড় ভাই বিল্ডিংয়ের দারোয়ানকে দিয়ে বাসা চেক করান।

দারোয়ান কলিংবেল বাজিয়েও কোনো সাড়া না পেয়ে বড় ভাইকে জানালে তিনি দ্রুত বাসায় এসে সুমনকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পান। খবর পেয়ে পুলিশ এসে লাশ উদ্ধার করে। ঘটনাস্থলে চিরকুট মিলেছে। এতে লেখা রয়েছে, ‘আমি সুমন, ওমর ফারুক সুমন। আমার কোনো আশা-আকাঙ্ক্ষা নেই। আর আমার কারও প্রতি কোনো অভিযোগ নেই। সবাই ভালো থাকবেন।’ এর আগে ১ ডিসেম্বর লেখা আরেকটি চিরকুট পাওয়া যায়। সেখানে লেখা ছিল—‘আশাই জীবন, আশাই মরণ, ব্যর্থতা হতাশা-অন্ধকারে নিয়ে যায়।’

খুলশী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহীনুর জামান বলেন, ‘সুমন ও তাঁর বড় ভাই একসঙ্গে মামার বাসায় থাকতেন। মামা ও মামি বর্তমানে বিদেশে আছেন। বড় ভাই সন্ধ্যায় বাইরে যান। সে সময় সুমন বাসায় একা ছিলেন। বড় ভাই বাসায় ফিরে এসে বারবার ডাকলেও ফ্ল্যাটের ভেতর থেকে কোনো সাড়া পাননি। পরে দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকলে সুমনের মরদেহ ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। প্রাথমিক তদন্তে এটি আত্মহত্যা মনে হলেও আমরা সব সম্ভাব্য কারণ খতিয়ে দেখছি। ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহটি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বদলি নিয়ে ফেসবুকে ক্ষোভ প্রকাশ শিক্ষক নেতার

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি
প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বায়ক আবুল কাশেম। ছবি: সংগৃহীত ক্যাটা: সারা দেশ, ময়মনসিংহ
প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বায়ক আবুল কাশেম। ছবি: সংগৃহীত ক্যাটা: সারা দেশ, ময়মনসিংহ

সহকর্মী এবং নিজের বদলি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক লাইভে এসে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বায়ক আবুল কাশেম। তিনি বলেন, ‘আমাকে সাড়ে ৪০০ মাইল দূরে বদলি করা হয়েছে। এতে আমি বিচলিত নই।’

আজ শুক্রবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে ফেসবুক লাইভে এসে আবুল কাশেম বলেন, ‘আমার মতো সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের তিন দফা দাবি আদায়ের নেতৃত্ব দেওয়া শতাধিক শিক্ষককে বদলি করা হয়েছে পার্শ্ববর্তী জেলা এবং বিভাগে। আরও অনেককে বদলি করা হতে পারে। এ নিয়ে কেউ বিচলিত হবেন না। প্রয়োজনে আইনি লড়াইয়ে যাব। তবে আন্দোলন থেকে সরে আসব না। আপনাদের পাশে রয়েছি। অবিলম্বে আরও কঠোর কর্মসূচির ঘোষণা আসবে। সে জন্য যদি জেলেও যেতে হয়, প্রস্তুত রয়েছি।’

এ বিষয়ে প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বায়ক আবুল কাশেমের সঙ্গে একাধিকবার মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও কোনো সাড়া মেলেনি।

৪ ডিসেম্বর প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (পলিসি ও অপারেশন) মাহফুজা খাতুন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলার চানপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবুল কাশেমকে বরিশাল সদরের চরবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

আমনের বাম্পার ফলনেও মুখে হাসি নেই কৃষকের, বাজারে ধানের দাম কমায় হতাশা

মাহিদুল ইসলাম, মৌলভীবাজার
জমির ধান কাটছেন কৃষকেরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
জমির ধান কাটছেন কৃষকেরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

মৌলভীবাজারের চলতি মৌসুমে আমন ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। ফসল ঘরে তুলতে দিনরাত ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন কৃষকেরা। তবে বাজারে ধানের দাম কম হওয়ায় হতাশা ব্যক্ত করেছেন তাঁরা। কৃষকদের অভিযোগ, বাজারে ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে ধানের দাম কমিয়ে দিয়েছেন। তাই ফলন ভালো হওয়ার পরও বাজারে ধানের যথার্থ মূল্য না পাওয়ায় লোকসানে পড়ছেন তাঁরা।

কৃষকেরা জানান, চলতি আমন মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ধানের ফলন অনেক ভালো হয়েছে। তবে অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার ধানের দাম অনেক কম। গত বছর বাজারে যেখানে ১ হাজার ১০০ থেকে ১ হাজার ৩০০ টাকায় প্রতি মণ ধান বিক্রি হয়েছে, এই বছর মাঝারি শুকনা ধান ৯০০ ও শুকনা ধান ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বীজতলা থেকে শুরু করে ফসল ঘরে তোলার আগপর্যন্ত অনেক শ্রম ও টাকা খরচ করতে হয়েছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে ৯৮ হাজার ২০ হেক্টর জমিতে আমন আবাদ করা হয়েছে। এর থেকে ৪ লাখ ৪১ হাজার ৯০ টন ধান উৎপাদন হবে। আর এই ধান থেকে ২ লাখ ৯৫ হাজার ৫৩০ মেট্রিক টন চাল পাওয়া যাবে। ইতিমধ্যে ৬৫ শতাংশ ধান কাটা হয়েছে। আমন ধানের শতভাগ লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়েছে। এক সপ্তাহের মধ্যে শতভাগ ধান ঘরে তুলতে পারবেন কৃষকেরা।

বাজারে আমন ধানের দাম কম হলেও সরকারিভাবে ভালো দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক অফিস সূত্রে জানা গেছে, সরকারিভাবে প্রতি কেজি আমন ধান ৩৪ টাকা মূল্যে ৭৯০ টন, সেদ্ধ চাল ৫০ টাকা কেজি মূল্যে ২ হাজার ৬৭৭ টন ও আতপ চাল ৪৯ টাকা কেজি মূল্যে ৫ হাজার ৬৪৬ টন চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।

জেলার কমলগঞ্জ, রাজনগর, কুলাউড়া ও সদর উপজেলার আমনখেত ঘুরে দেখা যায়, কৃষকেরা পাকা আমন ধান ঘরে তুলতে ব্যস্ত। অনেক এলাকায় দ্রুত সময়ে কম্বাইন হারভেস্টারের মাধ্যমে ধান কাটা ও মাড়াইয়ের কাজ একসঙ্গে সেরে নিচ্ছেন কৃষকেরা। এতে সময়, খরচ ও কষ্ট কম করতে হচ্ছে। আবার কেউ কাজের লোক এনে ধান কেটে ফসলের মাঠেই মাড়াই করে সেদ্ধ দিচ্ছেন। অনেক কৃষক মাঠের মধ্যে রাত জেগে ধান সেদ্ধ করছেন। তবে সবকিছু ঠিক থাকলেও ধানের দাম কম থাকায় হতাশা ব্যক্ত করেছেন কৃষকেরা।

কমলগঞ্জ উপজেলার পতনঊষার ইউনিয়ন কৃষক আনোয়ার খান বলেন, ‘গত বছর আমাদের ধান একেবারেই হয়নি। এ বছর অনেক ভালো ধান হয়েছে। প্রত্যাশার চেয়ে বেশি ফলন হয়েছে। তবে বাজারে ধানের দাম অনেক কম। প্রতি মণ ধান মাত্র ৯০০ থেকে ১ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কৃষিতে আগের চেয়ে অনেক বেশি খরচ বেড়েছে। সে তুলনায় ধানের দাম বাড়েনি।’

জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক (ভারপ্রাপ্ত) মিলন কান্তি চাকমা বলেন, ‘আমাদের ধান-চাল সংগ্রহের কার্যক্রম ২০ নভেম্বর শুরু হয়েছে; চলবে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। সরকারিভাবে ধানের দাম গত বছরের তুলনায় কেজিপ্রতি ১ টাকা বৃদ্ধি করা হয়েছে। একটা সময় আমরা ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারতাম না; তবে এখন ধান-চালের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়। আশা করি, চলতি মৌসুমে আমাদের লক্ষ্য পূরণ হবে।’

মৌলভীবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. জালাল উদ্দীন বলেন, ‘জেলায় এ বছর খুব ভালো আমন ধান হয়েছে। কৃষকেরা অত্যন্ত উৎসাহ নিয়ে ধান ঘরে তুলছেন। আশা করি, আগামী সপ্তাহের মধ্যে শতভাগ ধান কাটা হয়ে যাবে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ও দিনের বেলা কুয়াশা না থাকায় সহজে কৃষকেরা ধান কাটা, মাড়াই ও সেদ্ধ করতে পারছেন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত