জাহিদ হাসান, যশোর

যশোর শহরের কাজিপাড়ার কাঁঠালতলা মোড়। এখানে দাঁড়িয়ে উত্তর দিকে তাকালেই দেখা যাবে ভাঙা আর আগুনে পোড়া তিনতলা বাড়ি। তালাবদ্ধ এ বাড়িটির মালিক যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য শাহীন চাকলাদার। বাড়ির গা ঘেঁষেই সাদা রঙের একতলা ভবন। ভেতরে ভাঙচুর ও আগুনের ক্ষতচিহ্ন। এ ভবনটির মালিকও শাহীন। এটি তিনি ব্যক্তিগত, দলীয়, রাজনৈতিক ও ব্যবসায়িক কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার করতেন।
গত বুধবার বিকেলে ষাটোর্ধ্ব এক ব্যক্তি ভাঙা ও পোড়া বাড়িটি দেখছিলেন। তাঁর কাছে যেতেই বলে উঠলেন, ‘কয়েক দিন আগেও এখানে কত ক্ষমতা, ঠিকাদারি নিয়ন্ত্রণ, ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ হতো। চাকলাদারের কথায় কতজনের মায়ের কোল খালি হয়েছে! আর এখন বাড়িতে কেউ নেই। হাহাকার করছে। সবই সৃষ্টিকর্তার খেল!’
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত ৫ আগস্ট শাহীনের ওই বাড়ি ও পাশের অফিসে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট করে দুর্বৃত্তরা। পরিস্থিতি আঁচ করতে পেরে আগেই তিনি পরিবার নিয়ে সটকে পড়েন। সরকার পতনের পর থেকে তাঁকে আর যশোরে দেখা যায়নি। শাহীন চাকলাদার গা ঢাকা দিলেও যশোরবাসীর কাছে তিনি আতঙ্কের নাম। তাঁর অপকর্মের বিষয়ে এখনো কেউ মুখ খুলতে সাহস পান না।
দুর্নীতি দমন কমিশন তাঁর সম্পদের অনুসন্ধান শুরু করেছে। ইতিমধ্যে শাহীন চাকলাদার এবং তাঁর স্ত্রী ও সন্তানের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
আওয়ামী লীগে হঠাৎ আগন্তুক শাহীন
দলীয় নেতা-কর্মী সূত্রে জানা যায়, নব্বইয়ের দশকের শেষের দিকেও শাহীন চাকলাদার নিয়মিত পারিবারিক ওষুধের দোকানে বসতেন। হঠাৎ ২০০১ সালে যশোর জেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য হন তিনি। ২০০৪ সালে যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হন শাহীন চাকলাদার। এর পাঁচ বছরের মাথায় তিনি আওয়ামী লীগ থেকে যশোর সদর উপজেলা চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করে জয়ী হন। দ্বিতীয় মেয়াদে নির্বাচিত হন ২০১৪ সালে। এরপর ২০২০ সালে চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করে যশোর-৬ (কেশবপুর) আসনে উপনির্বাচনে তিনি এমপি নির্বাচিত হন।
সর্বশেষ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পেয়েও পরাজিত হন স্বতন্ত্র প্রার্থীর কাছে। কেশবপুরে দলীয় নেতা-কর্মীদের অবমূল্যায়ন, নিয়োগ-বাণিজ্যের কারণে তিনি হারেন বলে মন্তব্য করেন নেতারা।
এই পরাজয়ের আগে যশোরের সবকিছুতে একক নিয়ন্ত্রক ছিলেন শাহীন। জেলায় ২০০৯ থেকেই শুরু শাহীন চাকলাদারের একক আধিপত্য বিস্তারের রাজনীতি। তাঁর এই পথে যাঁরা বাধা হয়েছিলেন তাঁদের সরাতে বিশাল সন্ত্রাসী বাহিনী গড়ে তোলেন তিনি। একপর্যায়ে শাহীন চাকলাদার নিজেই সন্ত্রাসীদের গডফাদারে পরিণত হন। তিনি নিজেও সব সময় সন্ত্রাসী-আতঙ্কে থাকতেন। তাঁর বাড়ি ও অফিসে বসানো সিসি ক্যামেরা এবং চলাফেরার ধরন দেখেই এ সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা পাওয়া যায়। নিরাপত্তার জন্য সরকার অনুমোদিত গানম্যান ছিল তাঁর। এর বাইরেও তিনি যখন চলাফেরা করতেন, তাঁর আগে-পিছে গোটাদশেক মোটরসাইকেলের বহর দেখা যেত।
‘অবৈধ’ সম্পদের পাহাড়
২০০৯ থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালে শাহীন চাকলাদার অবৈধভাবে অঢেল বিত্তবৈভবের মালিক হন। সংসদ নির্বাচনে দাখিল করা হলফনামার তথ্য অনুযায়ী, শাহীন শহরের কাজিপাড়ায় পৈতৃক বাড়ির বাইরেও বহু স্থানে বানিয়েছেন বাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। এসবের মধ্যে উল্লেখযোগ্য শহরের চিত্রা মোড়ে ১৭ তলাবিশিষ্ট পাঁচতারকা হোটেল, কাঁঠালতলায় অত্যাধুনিক তিনতলা বাড়ি ও বড় বাজারে দোতলা বাড়ি। কিনেছেন যশোরের ঐতিহ্যবাহী পারভীনা হোটেল। আরবপুর মোড়ে রয়েছে পাঁচতলা বাড়ি, বিমান অফিসের পাশে রয়েছে বাড়িসহ জমি, মাইকপট্টিতে তাঁরই সহযোগী সাবেক কাউন্সিলর আলমগীর কবির সুমন ওরফে হাজী সুমনের সঙ্গে যৌথ নামে জমি, পেট্রলপাম্প, ধর্মতলায় জমি, ঢাকার কলাবাগান ও মহাখালীর ডিওএইচএসে ফ্ল্যাট।
দলীয় নেতা-কর্মীদের সূত্রে জানা যায়, আত্মীয়স্বজনের নামেও দেশে-বিদেশে বিপুল সম্পদ গড়েছেন শাহীন। সম্পত্তি গড়া ও আধিপত্য বিস্তারে অন্যকে দমন করে রাজনীতিসহ সব ক্ষেত্রে একক আধিপত্য বিস্তারে তিনি সন্ত্রাসীদের ব্যবহার করতেন। জেলার রাজনীতি, টেন্ডার ব্যবসা, চাঁদাবাজি, চোরাচালান, দখলবাজিসহ সব ক্ষেত্রে একক আধিপত্য প্রতিষ্ঠায় চিহ্নিত অপরাধীদের নিয়ে তিনি গড়েন পৃথক বাহিনী। সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আরবপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান শাহারুল ইসলাম, শাহীন চাকলাদারের চাচাতো ভাই সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান তৌহিদ চাকলাদার ফন্টু ওরফে ফন্টু চাকলাদার, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি রওশন ইকবাল শাহী, সাবেক সাধারণ সম্পাদক সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন বিপুল এসব বাহিনীর নেতৃত্বে ছিলেন। গত ৫ আগস্টের পর থেকে তাঁরা সবাই গা ঢাকা দেন।
অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে, আনোয়ারা বেগম নামের এক স্কুলশিক্ষিকা শহরের চিত্রা মোড়ে তাঁর জমি দখলদারদের হাত থেকে মুক্ত করতে সহযোগিতার জন্য গিয়েছিলেন শাহীন চাকলাদারের কাছে। একপর্যায়ে কোটি টাকা মূল্যের ওই জমি থেকে আগের দখলদারের পাশাপাশি ওই শিক্ষিকাকেও উচ্ছেদ করে নিজেই দখল করে নেন শাহীন চাকলাদার। সেই জমিতে তিনি গড়ে তোলেন ১৭ তলাবিশিষ্ট ফাইভ স্টার হোটেল ‘জাবির ইন্টারন্যাশনাল’; যা জুয়া ও বড় বড় অনৈতিক কাজের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়। ৫ আগস্ট ওই হোটেলে আগুন ধরিয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। এতে এক বিদেশিসহ ২৪ ব্যক্তির মৃত্যু হয়। অভিযোগ রয়েছে, হোটেলের পাশে গাজী ইলেকট্রিকের দোতলা মার্কেটের একটি বড় অংশও তিনি দখল করে নেন।
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে ২০০ বিঘার এড়োলের বিল, মাহিদিয়ায় ১০০ বিঘার বিলের জমি, জগহাটির একটি বিল, শহরের মাইকপট্টির সেলিম নামের এক ব্যক্তির মার্কেটের একাংশ, কাঁঠালতলা এলাকার ঈদগাহের একটি অংশ, শহরের ঘোষপাড়া এলাকার সাধন নামের এক ব্যক্তির ১৫ বিঘা জমি, বকচরে সরকারি জায়গা দখল করে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান নির্মাণ, যশোর-নড়াইল রোডের বীজ গোডাউনের সামনে সড়ক ও জনপথ বিভাগের জায়গা দখল করে মার্কেট নির্মাণের অভিযোগ রয়েছে শাহীন চাকলাদার ও তাঁর লোকজনের বিরুদ্ধে।
এ ছাড়া সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের নিলামে চাকলাদারের লোকজন ছাড়া কাউকে ভিড়তে দেওয়া হতো না। যশোরের ভূমি অফিস, রেজিস্ট্রি অফিস, পাসপোর্ট অফিস, বিআরটিএ অফিস, সেটেলমেন্ট অফিস, বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিক মালিকেরা শাহীনের লোকজনকে নিয়মিত চাঁদা দিতে বাধ্য হতেন। এমনকি কোচিং সেন্টারও তাঁদের চাঁদাবাজির বাইরে ছিল না। শহরের বিভিন্ন প্রবেশমুখ মুড়লি, চাঁচড়া চেকপোস্ট, পালবাড়ী, খাজুরা বাসস্ট্যান্ড ও মণিহারসহ মূল শহরের মোড়ে মোড়ে বিভিন্ন যানবাহন থেকে নিয়মিত চাঁদা তুলতেন চাকলাদারের ক্যাডাররা। এমনকি ইজিবাইক, রিকশা ও ভ্যানচালকেরাও চাঁদা দিতে বাধ্য হতেন।
যশোরের সব সরকারি দপ্তরের টেন্ডার নিয়ন্ত্রিত হতো শাহীন চাকলাদারের বাড়ি কাঁঠালতলা থেকে। চাকলাদারের প্রভাব খাটিয়ে তাঁর ভাই সাবেক পৌর মেয়র জহিরুল ইসলাম চাকলাদার রেন্টু, কাউন্সিলর হাজী সুমন, মোস্তফা, সন্তোষ দত্ত, জাহিদ হোসেন মিলন ওরফে টাক মিলন, চূড়ামনকাটি ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান মুন্না, মশিয়ার রহমান সাগর, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহারুল ইসলাম ও বিহারি ক্যাম্প এলাকার রবি নিরীহ মানুষের সম্পত্তি দখল করতেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
চাকলাদারের পৃষ্ঠপোষকতায় তাঁর বাহিনী খুনোখুনিতেও ছিল বেপরোয়া। তাঁদের বিরুদ্ধে বহু হত্যাকাণ্ডে সম্পৃক্ততার অভিযোগ রয়েছে।তাঁর বাহিনীর অনেকেই হত্যা মামলার চার্জশিটের (অভিযোগপত্র) আসামি। শাহীন চাকলাদার ক্ষমতায় থাকাকালে বিভিন্ন সমাবেশে বিরোধী রাজনৈতিক মত-পথের লোকজনকে প্রকাশ্যে দেখে নেওয়ার হুমকি দিতেন। আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতাৎ-কর্মীরা বরাবরই তাঁর কাছে ছিলেন উপেক্ষিত।
যশোর সরকারি এমএম কলেজের দুটি ছাত্রাবাস ছিল শাহীন চাকলাদারের ক্যাডার বাহিনীর দখলে। এখান থেকে শহরের সব মেস নিয়ন্ত্রণ করা হতো। শিক্ষার্থীদের শাহীন চাকলাদারের মিছিলে যেতে বাধ্য করা হতো। ছাত্রলীগের নামধারীরা নিয়ন্ত্রণ করত সব ক্যাম্পাস।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রশাসনও চলতে বাধ্য হতো তাঁদের ইশারায়। কলেজের ৪টি পুকুর চাকলাদারের অনুসারী জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি রওশন ইকবাল শাহী ও সাবেক সাধারণ আনোয়ার হোসেন বিপুল দখল করে বিনা ইজারায় মাছ চাষের ব্যবসা করেছেন।
কেশবপুরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়োগ-বাণিজ্য
যশোর-৩ (সদর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদের সঙ্গে শাহীন চাকলাদারের ছিল দা-কুমড়া সম্পর্ক। সদরে দলীয় মনোনয়ন নিয়েই মূলত দুজনের মধ্যে বিরোধ তুঙ্গে ছিল। যশোর-৬ আসনের (কেশবপুর) সাবেক এমপি ইসমাত আরা সাদেকের মৃত্যুর পর সেখানে উপনির্বাচনে দলীয় হাইকমান্ড শাহীন চাকলাদারকে প্রার্থী করে। ২০২০ সালের উপনির্বাচনে তিনি এমপি নির্বাচিত হন।
অভিযোগ রয়েছে, তিন বছরের মেয়াদে কেশবপুরের তিন শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়োগ-বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করেছেন তিনি। উপজেলার হিজলডাঙ্গা গ্রামে শহীদ ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মাসুদ মেমোরিয়াল কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মশিয়ুর রহমান ১৯ জনের নিয়োগ দেওয়ার জন্য ৬৪ লাখ টাকা দিতে অঙ্গীকারনামা দেন।
সেই অঙ্গীকারনামায় তিনি লিখেছেন, ‘কলেজের ল্যাব অ্যাসিস্ট্যান্ট পদে চাকরিতে নজরুল ইসলামকে এমপিওভুক্ত করাতে ১ লাখ ৯৫ হাজার টাকা নিয়ে সাবেক সংসদ সদস্য শাহীনের ব্যক্তিগত সহকারী আলমগীর সিদ্দিকীর কাছে দিয়েছেন তিনি।’ এটি গত তিন বছরের নিয়োগ-বাণিজ্যের একটি প্রমাণ। এ ব্যাপারে শাহীন চাকলাদারের ব্যক্তিগত সহকারী আলমগীর সিদ্দিকী বলেন, তিনি কোনো টাকা মশিয়ুর রহমানের কাছ থেকে নেননি। মশিয়ুর রহমান সরাসরি শাহীন চাকলাদারের কাছে টাকা দিয়েছেন।
শাহীন কেশবপুরে আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে কখনো বসেননি। তিনি পৌরসভার মেয়রের কক্ষে বসতেন। এ বিষয়ে তখন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা ক্ষুব্ধ ছিলেন। কেশবপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গাজী গোলাম মোস্তফা বলেন, শেষ তিন বছরে দলের সঙ্গে শাহীন চাকলাদারের সম্পর্ক ছিল অনেকটা প্রভু-ভৃত্যের মতো। তাঁর কথাই ছিল শেষকথা।
এ ছাড়া সরকারি কাবিখা, কাবিটাসহ সব প্রকল্প সম্পন্ন করতেন মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে। ক্ষমতার দাপটে তিনি একের পর এক দখল করতে থাকেন সেখানকার সব মাছের ঘের। তাঁর অপকর্মে স্থানীয় রাজনীতিবিদসহ সব শ্রেণি-পেশার মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে ওঠেন। তাঁরই ফলে ২০২৪ সালের নির্বাচনে দলীয় নৌকা প্রতীকের প্রার্থী হয়েও একই দলের স্বতন্ত্র প্রার্থী বয়সে তরুণ আজিজুল ইসলাম ওরফে খন্দকার আজিজের কাছে শোচনীয়ভাবে পরাজিত হন শাহীন।
শাহীন চাকলাদার দেশে না বিদেশে, এ নিয়ে দুই ধরনের তথ্য মিলছে। কেউ বলছেন, তাঁর ফাইভ স্টার হোটেলের ম্যানেজার কলকাতার বাসিন্দা হওয়ায় তাঁর মাধ্যমে তিনি পুটখালী সীমান্ত হয়ে ভারতে পাড়ি জমিয়েছেন। কেউবা বলছেন, জনগণ ও প্রশাসনের দৃষ্টি ভিন্ন খাতে নিতে ভারতে যাওয়ার কথা প্রচার করে যশোরেই আত্মগোপনে আছেন তিনি। এ শহরে বসেই এখনো সব কার্যক্রম পরিচালনা করছেন শাহীন।
এসব অভিযোগের ব্যাপারে কথা বলার জন্য বহুবার চেষ্টা করেও শাহীন চাকলাদারের মোবাইল ফোন নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়। হোয়াটস অ্যাপেও তাঁর সংযোগ পাওয়া যায়নি।
যশোর জেলা বিএনপির সদস্যসচিব সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু আজকের পত্রিকাকে বলেন, শাহীন দানবীয় রাজনীতি করেছেন, যশোরবাসীর আতঙ্কের নাম ছিল শাহীন চাকলাদার। যশোর সন্ত্রাসীর জনপদে রূপ নেয় তাঁর হাত ধরে। তাঁর বলপ্রয়োগের রাজনীতিতে ২০-৩০ জন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী খুন হয়েছেন। শহরের দখলবাজি, চাঁদাবাজি ও ঠিকাদারি নিয়ন্ত্রণ হয়েছে তাঁর হাত ধরে। দল ক্ষমতায় থাকাকালে তিনি হয়েছেন শত শত কোটি টাকার মালিক। তাঁর এই সম্পত্তি স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় হয়নি। তিনি এখন এ শহরে না থাকায় মানুষ স্বস্তিতে রয়েছেন।
যশোরের পুলিশ সুপার জিয়াউদ্দিন আহমেদ বলেন, যশোরের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আগের চেয়ে অনেক ভালো। বিগত সময়ে নির্যাতিনের শিকার হওয়া ব্যক্তিরা অভিযোগ দিলে পুলিশ তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবে।

যশোর শহরের কাজিপাড়ার কাঁঠালতলা মোড়। এখানে দাঁড়িয়ে উত্তর দিকে তাকালেই দেখা যাবে ভাঙা আর আগুনে পোড়া তিনতলা বাড়ি। তালাবদ্ধ এ বাড়িটির মালিক যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য শাহীন চাকলাদার। বাড়ির গা ঘেঁষেই সাদা রঙের একতলা ভবন। ভেতরে ভাঙচুর ও আগুনের ক্ষতচিহ্ন। এ ভবনটির মালিকও শাহীন। এটি তিনি ব্যক্তিগত, দলীয়, রাজনৈতিক ও ব্যবসায়িক কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার করতেন।
গত বুধবার বিকেলে ষাটোর্ধ্ব এক ব্যক্তি ভাঙা ও পোড়া বাড়িটি দেখছিলেন। তাঁর কাছে যেতেই বলে উঠলেন, ‘কয়েক দিন আগেও এখানে কত ক্ষমতা, ঠিকাদারি নিয়ন্ত্রণ, ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ হতো। চাকলাদারের কথায় কতজনের মায়ের কোল খালি হয়েছে! আর এখন বাড়িতে কেউ নেই। হাহাকার করছে। সবই সৃষ্টিকর্তার খেল!’
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত ৫ আগস্ট শাহীনের ওই বাড়ি ও পাশের অফিসে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট করে দুর্বৃত্তরা। পরিস্থিতি আঁচ করতে পেরে আগেই তিনি পরিবার নিয়ে সটকে পড়েন। সরকার পতনের পর থেকে তাঁকে আর যশোরে দেখা যায়নি। শাহীন চাকলাদার গা ঢাকা দিলেও যশোরবাসীর কাছে তিনি আতঙ্কের নাম। তাঁর অপকর্মের বিষয়ে এখনো কেউ মুখ খুলতে সাহস পান না।
দুর্নীতি দমন কমিশন তাঁর সম্পদের অনুসন্ধান শুরু করেছে। ইতিমধ্যে শাহীন চাকলাদার এবং তাঁর স্ত্রী ও সন্তানের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
আওয়ামী লীগে হঠাৎ আগন্তুক শাহীন
দলীয় নেতা-কর্মী সূত্রে জানা যায়, নব্বইয়ের দশকের শেষের দিকেও শাহীন চাকলাদার নিয়মিত পারিবারিক ওষুধের দোকানে বসতেন। হঠাৎ ২০০১ সালে যশোর জেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য হন তিনি। ২০০৪ সালে যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হন শাহীন চাকলাদার। এর পাঁচ বছরের মাথায় তিনি আওয়ামী লীগ থেকে যশোর সদর উপজেলা চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করে জয়ী হন। দ্বিতীয় মেয়াদে নির্বাচিত হন ২০১৪ সালে। এরপর ২০২০ সালে চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করে যশোর-৬ (কেশবপুর) আসনে উপনির্বাচনে তিনি এমপি নির্বাচিত হন।
সর্বশেষ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পেয়েও পরাজিত হন স্বতন্ত্র প্রার্থীর কাছে। কেশবপুরে দলীয় নেতা-কর্মীদের অবমূল্যায়ন, নিয়োগ-বাণিজ্যের কারণে তিনি হারেন বলে মন্তব্য করেন নেতারা।
এই পরাজয়ের আগে যশোরের সবকিছুতে একক নিয়ন্ত্রক ছিলেন শাহীন। জেলায় ২০০৯ থেকেই শুরু শাহীন চাকলাদারের একক আধিপত্য বিস্তারের রাজনীতি। তাঁর এই পথে যাঁরা বাধা হয়েছিলেন তাঁদের সরাতে বিশাল সন্ত্রাসী বাহিনী গড়ে তোলেন তিনি। একপর্যায়ে শাহীন চাকলাদার নিজেই সন্ত্রাসীদের গডফাদারে পরিণত হন। তিনি নিজেও সব সময় সন্ত্রাসী-আতঙ্কে থাকতেন। তাঁর বাড়ি ও অফিসে বসানো সিসি ক্যামেরা এবং চলাফেরার ধরন দেখেই এ সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা পাওয়া যায়। নিরাপত্তার জন্য সরকার অনুমোদিত গানম্যান ছিল তাঁর। এর বাইরেও তিনি যখন চলাফেরা করতেন, তাঁর আগে-পিছে গোটাদশেক মোটরসাইকেলের বহর দেখা যেত।
‘অবৈধ’ সম্পদের পাহাড়
২০০৯ থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালে শাহীন চাকলাদার অবৈধভাবে অঢেল বিত্তবৈভবের মালিক হন। সংসদ নির্বাচনে দাখিল করা হলফনামার তথ্য অনুযায়ী, শাহীন শহরের কাজিপাড়ায় পৈতৃক বাড়ির বাইরেও বহু স্থানে বানিয়েছেন বাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। এসবের মধ্যে উল্লেখযোগ্য শহরের চিত্রা মোড়ে ১৭ তলাবিশিষ্ট পাঁচতারকা হোটেল, কাঁঠালতলায় অত্যাধুনিক তিনতলা বাড়ি ও বড় বাজারে দোতলা বাড়ি। কিনেছেন যশোরের ঐতিহ্যবাহী পারভীনা হোটেল। আরবপুর মোড়ে রয়েছে পাঁচতলা বাড়ি, বিমান অফিসের পাশে রয়েছে বাড়িসহ জমি, মাইকপট্টিতে তাঁরই সহযোগী সাবেক কাউন্সিলর আলমগীর কবির সুমন ওরফে হাজী সুমনের সঙ্গে যৌথ নামে জমি, পেট্রলপাম্প, ধর্মতলায় জমি, ঢাকার কলাবাগান ও মহাখালীর ডিওএইচএসে ফ্ল্যাট।
দলীয় নেতা-কর্মীদের সূত্রে জানা যায়, আত্মীয়স্বজনের নামেও দেশে-বিদেশে বিপুল সম্পদ গড়েছেন শাহীন। সম্পত্তি গড়া ও আধিপত্য বিস্তারে অন্যকে দমন করে রাজনীতিসহ সব ক্ষেত্রে একক আধিপত্য বিস্তারে তিনি সন্ত্রাসীদের ব্যবহার করতেন। জেলার রাজনীতি, টেন্ডার ব্যবসা, চাঁদাবাজি, চোরাচালান, দখলবাজিসহ সব ক্ষেত্রে একক আধিপত্য প্রতিষ্ঠায় চিহ্নিত অপরাধীদের নিয়ে তিনি গড়েন পৃথক বাহিনী। সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আরবপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান শাহারুল ইসলাম, শাহীন চাকলাদারের চাচাতো ভাই সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান তৌহিদ চাকলাদার ফন্টু ওরফে ফন্টু চাকলাদার, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি রওশন ইকবাল শাহী, সাবেক সাধারণ সম্পাদক সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন বিপুল এসব বাহিনীর নেতৃত্বে ছিলেন। গত ৫ আগস্টের পর থেকে তাঁরা সবাই গা ঢাকা দেন।
অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে, আনোয়ারা বেগম নামের এক স্কুলশিক্ষিকা শহরের চিত্রা মোড়ে তাঁর জমি দখলদারদের হাত থেকে মুক্ত করতে সহযোগিতার জন্য গিয়েছিলেন শাহীন চাকলাদারের কাছে। একপর্যায়ে কোটি টাকা মূল্যের ওই জমি থেকে আগের দখলদারের পাশাপাশি ওই শিক্ষিকাকেও উচ্ছেদ করে নিজেই দখল করে নেন শাহীন চাকলাদার। সেই জমিতে তিনি গড়ে তোলেন ১৭ তলাবিশিষ্ট ফাইভ স্টার হোটেল ‘জাবির ইন্টারন্যাশনাল’; যা জুয়া ও বড় বড় অনৈতিক কাজের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়। ৫ আগস্ট ওই হোটেলে আগুন ধরিয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। এতে এক বিদেশিসহ ২৪ ব্যক্তির মৃত্যু হয়। অভিযোগ রয়েছে, হোটেলের পাশে গাজী ইলেকট্রিকের দোতলা মার্কেটের একটি বড় অংশও তিনি দখল করে নেন।
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে ২০০ বিঘার এড়োলের বিল, মাহিদিয়ায় ১০০ বিঘার বিলের জমি, জগহাটির একটি বিল, শহরের মাইকপট্টির সেলিম নামের এক ব্যক্তির মার্কেটের একাংশ, কাঁঠালতলা এলাকার ঈদগাহের একটি অংশ, শহরের ঘোষপাড়া এলাকার সাধন নামের এক ব্যক্তির ১৫ বিঘা জমি, বকচরে সরকারি জায়গা দখল করে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান নির্মাণ, যশোর-নড়াইল রোডের বীজ গোডাউনের সামনে সড়ক ও জনপথ বিভাগের জায়গা দখল করে মার্কেট নির্মাণের অভিযোগ রয়েছে শাহীন চাকলাদার ও তাঁর লোকজনের বিরুদ্ধে।
এ ছাড়া সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের নিলামে চাকলাদারের লোকজন ছাড়া কাউকে ভিড়তে দেওয়া হতো না। যশোরের ভূমি অফিস, রেজিস্ট্রি অফিস, পাসপোর্ট অফিস, বিআরটিএ অফিস, সেটেলমেন্ট অফিস, বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিক মালিকেরা শাহীনের লোকজনকে নিয়মিত চাঁদা দিতে বাধ্য হতেন। এমনকি কোচিং সেন্টারও তাঁদের চাঁদাবাজির বাইরে ছিল না। শহরের বিভিন্ন প্রবেশমুখ মুড়লি, চাঁচড়া চেকপোস্ট, পালবাড়ী, খাজুরা বাসস্ট্যান্ড ও মণিহারসহ মূল শহরের মোড়ে মোড়ে বিভিন্ন যানবাহন থেকে নিয়মিত চাঁদা তুলতেন চাকলাদারের ক্যাডাররা। এমনকি ইজিবাইক, রিকশা ও ভ্যানচালকেরাও চাঁদা দিতে বাধ্য হতেন।
যশোরের সব সরকারি দপ্তরের টেন্ডার নিয়ন্ত্রিত হতো শাহীন চাকলাদারের বাড়ি কাঁঠালতলা থেকে। চাকলাদারের প্রভাব খাটিয়ে তাঁর ভাই সাবেক পৌর মেয়র জহিরুল ইসলাম চাকলাদার রেন্টু, কাউন্সিলর হাজী সুমন, মোস্তফা, সন্তোষ দত্ত, জাহিদ হোসেন মিলন ওরফে টাক মিলন, চূড়ামনকাটি ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান মুন্না, মশিয়ার রহমান সাগর, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহারুল ইসলাম ও বিহারি ক্যাম্প এলাকার রবি নিরীহ মানুষের সম্পত্তি দখল করতেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
চাকলাদারের পৃষ্ঠপোষকতায় তাঁর বাহিনী খুনোখুনিতেও ছিল বেপরোয়া। তাঁদের বিরুদ্ধে বহু হত্যাকাণ্ডে সম্পৃক্ততার অভিযোগ রয়েছে।তাঁর বাহিনীর অনেকেই হত্যা মামলার চার্জশিটের (অভিযোগপত্র) আসামি। শাহীন চাকলাদার ক্ষমতায় থাকাকালে বিভিন্ন সমাবেশে বিরোধী রাজনৈতিক মত-পথের লোকজনকে প্রকাশ্যে দেখে নেওয়ার হুমকি দিতেন। আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতাৎ-কর্মীরা বরাবরই তাঁর কাছে ছিলেন উপেক্ষিত।
যশোর সরকারি এমএম কলেজের দুটি ছাত্রাবাস ছিল শাহীন চাকলাদারের ক্যাডার বাহিনীর দখলে। এখান থেকে শহরের সব মেস নিয়ন্ত্রণ করা হতো। শিক্ষার্থীদের শাহীন চাকলাদারের মিছিলে যেতে বাধ্য করা হতো। ছাত্রলীগের নামধারীরা নিয়ন্ত্রণ করত সব ক্যাম্পাস।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রশাসনও চলতে বাধ্য হতো তাঁদের ইশারায়। কলেজের ৪টি পুকুর চাকলাদারের অনুসারী জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি রওশন ইকবাল শাহী ও সাবেক সাধারণ আনোয়ার হোসেন বিপুল দখল করে বিনা ইজারায় মাছ চাষের ব্যবসা করেছেন।
কেশবপুরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়োগ-বাণিজ্য
যশোর-৩ (সদর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদের সঙ্গে শাহীন চাকলাদারের ছিল দা-কুমড়া সম্পর্ক। সদরে দলীয় মনোনয়ন নিয়েই মূলত দুজনের মধ্যে বিরোধ তুঙ্গে ছিল। যশোর-৬ আসনের (কেশবপুর) সাবেক এমপি ইসমাত আরা সাদেকের মৃত্যুর পর সেখানে উপনির্বাচনে দলীয় হাইকমান্ড শাহীন চাকলাদারকে প্রার্থী করে। ২০২০ সালের উপনির্বাচনে তিনি এমপি নির্বাচিত হন।
অভিযোগ রয়েছে, তিন বছরের মেয়াদে কেশবপুরের তিন শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়োগ-বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করেছেন তিনি। উপজেলার হিজলডাঙ্গা গ্রামে শহীদ ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মাসুদ মেমোরিয়াল কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মশিয়ুর রহমান ১৯ জনের নিয়োগ দেওয়ার জন্য ৬৪ লাখ টাকা দিতে অঙ্গীকারনামা দেন।
সেই অঙ্গীকারনামায় তিনি লিখেছেন, ‘কলেজের ল্যাব অ্যাসিস্ট্যান্ট পদে চাকরিতে নজরুল ইসলামকে এমপিওভুক্ত করাতে ১ লাখ ৯৫ হাজার টাকা নিয়ে সাবেক সংসদ সদস্য শাহীনের ব্যক্তিগত সহকারী আলমগীর সিদ্দিকীর কাছে দিয়েছেন তিনি।’ এটি গত তিন বছরের নিয়োগ-বাণিজ্যের একটি প্রমাণ। এ ব্যাপারে শাহীন চাকলাদারের ব্যক্তিগত সহকারী আলমগীর সিদ্দিকী বলেন, তিনি কোনো টাকা মশিয়ুর রহমানের কাছ থেকে নেননি। মশিয়ুর রহমান সরাসরি শাহীন চাকলাদারের কাছে টাকা দিয়েছেন।
শাহীন কেশবপুরে আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে কখনো বসেননি। তিনি পৌরসভার মেয়রের কক্ষে বসতেন। এ বিষয়ে তখন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা ক্ষুব্ধ ছিলেন। কেশবপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গাজী গোলাম মোস্তফা বলেন, শেষ তিন বছরে দলের সঙ্গে শাহীন চাকলাদারের সম্পর্ক ছিল অনেকটা প্রভু-ভৃত্যের মতো। তাঁর কথাই ছিল শেষকথা।
এ ছাড়া সরকারি কাবিখা, কাবিটাসহ সব প্রকল্প সম্পন্ন করতেন মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে। ক্ষমতার দাপটে তিনি একের পর এক দখল করতে থাকেন সেখানকার সব মাছের ঘের। তাঁর অপকর্মে স্থানীয় রাজনীতিবিদসহ সব শ্রেণি-পেশার মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে ওঠেন। তাঁরই ফলে ২০২৪ সালের নির্বাচনে দলীয় নৌকা প্রতীকের প্রার্থী হয়েও একই দলের স্বতন্ত্র প্রার্থী বয়সে তরুণ আজিজুল ইসলাম ওরফে খন্দকার আজিজের কাছে শোচনীয়ভাবে পরাজিত হন শাহীন।
শাহীন চাকলাদার দেশে না বিদেশে, এ নিয়ে দুই ধরনের তথ্য মিলছে। কেউ বলছেন, তাঁর ফাইভ স্টার হোটেলের ম্যানেজার কলকাতার বাসিন্দা হওয়ায় তাঁর মাধ্যমে তিনি পুটখালী সীমান্ত হয়ে ভারতে পাড়ি জমিয়েছেন। কেউবা বলছেন, জনগণ ও প্রশাসনের দৃষ্টি ভিন্ন খাতে নিতে ভারতে যাওয়ার কথা প্রচার করে যশোরেই আত্মগোপনে আছেন তিনি। এ শহরে বসেই এখনো সব কার্যক্রম পরিচালনা করছেন শাহীন।
এসব অভিযোগের ব্যাপারে কথা বলার জন্য বহুবার চেষ্টা করেও শাহীন চাকলাদারের মোবাইল ফোন নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়। হোয়াটস অ্যাপেও তাঁর সংযোগ পাওয়া যায়নি।
যশোর জেলা বিএনপির সদস্যসচিব সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু আজকের পত্রিকাকে বলেন, শাহীন দানবীয় রাজনীতি করেছেন, যশোরবাসীর আতঙ্কের নাম ছিল শাহীন চাকলাদার। যশোর সন্ত্রাসীর জনপদে রূপ নেয় তাঁর হাত ধরে। তাঁর বলপ্রয়োগের রাজনীতিতে ২০-৩০ জন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী খুন হয়েছেন। শহরের দখলবাজি, চাঁদাবাজি ও ঠিকাদারি নিয়ন্ত্রণ হয়েছে তাঁর হাত ধরে। দল ক্ষমতায় থাকাকালে তিনি হয়েছেন শত শত কোটি টাকার মালিক। তাঁর এই সম্পত্তি স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় হয়নি। তিনি এখন এ শহরে না থাকায় মানুষ স্বস্তিতে রয়েছেন।
যশোরের পুলিশ সুপার জিয়াউদ্দিন আহমেদ বলেন, যশোরের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আগের চেয়ে অনেক ভালো। বিগত সময়ে নির্যাতিনের শিকার হওয়া ব্যক্তিরা অভিযোগ দিলে পুলিশ তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবে।
জাহিদ হাসান, যশোর

যশোর শহরের কাজিপাড়ার কাঁঠালতলা মোড়। এখানে দাঁড়িয়ে উত্তর দিকে তাকালেই দেখা যাবে ভাঙা আর আগুনে পোড়া তিনতলা বাড়ি। তালাবদ্ধ এ বাড়িটির মালিক যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য শাহীন চাকলাদার। বাড়ির গা ঘেঁষেই সাদা রঙের একতলা ভবন। ভেতরে ভাঙচুর ও আগুনের ক্ষতচিহ্ন। এ ভবনটির মালিকও শাহীন। এটি তিনি ব্যক্তিগত, দলীয়, রাজনৈতিক ও ব্যবসায়িক কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার করতেন।
গত বুধবার বিকেলে ষাটোর্ধ্ব এক ব্যক্তি ভাঙা ও পোড়া বাড়িটি দেখছিলেন। তাঁর কাছে যেতেই বলে উঠলেন, ‘কয়েক দিন আগেও এখানে কত ক্ষমতা, ঠিকাদারি নিয়ন্ত্রণ, ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ হতো। চাকলাদারের কথায় কতজনের মায়ের কোল খালি হয়েছে! আর এখন বাড়িতে কেউ নেই। হাহাকার করছে। সবই সৃষ্টিকর্তার খেল!’
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত ৫ আগস্ট শাহীনের ওই বাড়ি ও পাশের অফিসে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট করে দুর্বৃত্তরা। পরিস্থিতি আঁচ করতে পেরে আগেই তিনি পরিবার নিয়ে সটকে পড়েন। সরকার পতনের পর থেকে তাঁকে আর যশোরে দেখা যায়নি। শাহীন চাকলাদার গা ঢাকা দিলেও যশোরবাসীর কাছে তিনি আতঙ্কের নাম। তাঁর অপকর্মের বিষয়ে এখনো কেউ মুখ খুলতে সাহস পান না।
দুর্নীতি দমন কমিশন তাঁর সম্পদের অনুসন্ধান শুরু করেছে। ইতিমধ্যে শাহীন চাকলাদার এবং তাঁর স্ত্রী ও সন্তানের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
আওয়ামী লীগে হঠাৎ আগন্তুক শাহীন
দলীয় নেতা-কর্মী সূত্রে জানা যায়, নব্বইয়ের দশকের শেষের দিকেও শাহীন চাকলাদার নিয়মিত পারিবারিক ওষুধের দোকানে বসতেন। হঠাৎ ২০০১ সালে যশোর জেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য হন তিনি। ২০০৪ সালে যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হন শাহীন চাকলাদার। এর পাঁচ বছরের মাথায় তিনি আওয়ামী লীগ থেকে যশোর সদর উপজেলা চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করে জয়ী হন। দ্বিতীয় মেয়াদে নির্বাচিত হন ২০১৪ সালে। এরপর ২০২০ সালে চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করে যশোর-৬ (কেশবপুর) আসনে উপনির্বাচনে তিনি এমপি নির্বাচিত হন।
সর্বশেষ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পেয়েও পরাজিত হন স্বতন্ত্র প্রার্থীর কাছে। কেশবপুরে দলীয় নেতা-কর্মীদের অবমূল্যায়ন, নিয়োগ-বাণিজ্যের কারণে তিনি হারেন বলে মন্তব্য করেন নেতারা।
এই পরাজয়ের আগে যশোরের সবকিছুতে একক নিয়ন্ত্রক ছিলেন শাহীন। জেলায় ২০০৯ থেকেই শুরু শাহীন চাকলাদারের একক আধিপত্য বিস্তারের রাজনীতি। তাঁর এই পথে যাঁরা বাধা হয়েছিলেন তাঁদের সরাতে বিশাল সন্ত্রাসী বাহিনী গড়ে তোলেন তিনি। একপর্যায়ে শাহীন চাকলাদার নিজেই সন্ত্রাসীদের গডফাদারে পরিণত হন। তিনি নিজেও সব সময় সন্ত্রাসী-আতঙ্কে থাকতেন। তাঁর বাড়ি ও অফিসে বসানো সিসি ক্যামেরা এবং চলাফেরার ধরন দেখেই এ সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা পাওয়া যায়। নিরাপত্তার জন্য সরকার অনুমোদিত গানম্যান ছিল তাঁর। এর বাইরেও তিনি যখন চলাফেরা করতেন, তাঁর আগে-পিছে গোটাদশেক মোটরসাইকেলের বহর দেখা যেত।
‘অবৈধ’ সম্পদের পাহাড়
২০০৯ থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালে শাহীন চাকলাদার অবৈধভাবে অঢেল বিত্তবৈভবের মালিক হন। সংসদ নির্বাচনে দাখিল করা হলফনামার তথ্য অনুযায়ী, শাহীন শহরের কাজিপাড়ায় পৈতৃক বাড়ির বাইরেও বহু স্থানে বানিয়েছেন বাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। এসবের মধ্যে উল্লেখযোগ্য শহরের চিত্রা মোড়ে ১৭ তলাবিশিষ্ট পাঁচতারকা হোটেল, কাঁঠালতলায় অত্যাধুনিক তিনতলা বাড়ি ও বড় বাজারে দোতলা বাড়ি। কিনেছেন যশোরের ঐতিহ্যবাহী পারভীনা হোটেল। আরবপুর মোড়ে রয়েছে পাঁচতলা বাড়ি, বিমান অফিসের পাশে রয়েছে বাড়িসহ জমি, মাইকপট্টিতে তাঁরই সহযোগী সাবেক কাউন্সিলর আলমগীর কবির সুমন ওরফে হাজী সুমনের সঙ্গে যৌথ নামে জমি, পেট্রলপাম্প, ধর্মতলায় জমি, ঢাকার কলাবাগান ও মহাখালীর ডিওএইচএসে ফ্ল্যাট।
দলীয় নেতা-কর্মীদের সূত্রে জানা যায়, আত্মীয়স্বজনের নামেও দেশে-বিদেশে বিপুল সম্পদ গড়েছেন শাহীন। সম্পত্তি গড়া ও আধিপত্য বিস্তারে অন্যকে দমন করে রাজনীতিসহ সব ক্ষেত্রে একক আধিপত্য বিস্তারে তিনি সন্ত্রাসীদের ব্যবহার করতেন। জেলার রাজনীতি, টেন্ডার ব্যবসা, চাঁদাবাজি, চোরাচালান, দখলবাজিসহ সব ক্ষেত্রে একক আধিপত্য প্রতিষ্ঠায় চিহ্নিত অপরাধীদের নিয়ে তিনি গড়েন পৃথক বাহিনী। সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আরবপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান শাহারুল ইসলাম, শাহীন চাকলাদারের চাচাতো ভাই সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান তৌহিদ চাকলাদার ফন্টু ওরফে ফন্টু চাকলাদার, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি রওশন ইকবাল শাহী, সাবেক সাধারণ সম্পাদক সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন বিপুল এসব বাহিনীর নেতৃত্বে ছিলেন। গত ৫ আগস্টের পর থেকে তাঁরা সবাই গা ঢাকা দেন।
অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে, আনোয়ারা বেগম নামের এক স্কুলশিক্ষিকা শহরের চিত্রা মোড়ে তাঁর জমি দখলদারদের হাত থেকে মুক্ত করতে সহযোগিতার জন্য গিয়েছিলেন শাহীন চাকলাদারের কাছে। একপর্যায়ে কোটি টাকা মূল্যের ওই জমি থেকে আগের দখলদারের পাশাপাশি ওই শিক্ষিকাকেও উচ্ছেদ করে নিজেই দখল করে নেন শাহীন চাকলাদার। সেই জমিতে তিনি গড়ে তোলেন ১৭ তলাবিশিষ্ট ফাইভ স্টার হোটেল ‘জাবির ইন্টারন্যাশনাল’; যা জুয়া ও বড় বড় অনৈতিক কাজের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়। ৫ আগস্ট ওই হোটেলে আগুন ধরিয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। এতে এক বিদেশিসহ ২৪ ব্যক্তির মৃত্যু হয়। অভিযোগ রয়েছে, হোটেলের পাশে গাজী ইলেকট্রিকের দোতলা মার্কেটের একটি বড় অংশও তিনি দখল করে নেন।
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে ২০০ বিঘার এড়োলের বিল, মাহিদিয়ায় ১০০ বিঘার বিলের জমি, জগহাটির একটি বিল, শহরের মাইকপট্টির সেলিম নামের এক ব্যক্তির মার্কেটের একাংশ, কাঁঠালতলা এলাকার ঈদগাহের একটি অংশ, শহরের ঘোষপাড়া এলাকার সাধন নামের এক ব্যক্তির ১৫ বিঘা জমি, বকচরে সরকারি জায়গা দখল করে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান নির্মাণ, যশোর-নড়াইল রোডের বীজ গোডাউনের সামনে সড়ক ও জনপথ বিভাগের জায়গা দখল করে মার্কেট নির্মাণের অভিযোগ রয়েছে শাহীন চাকলাদার ও তাঁর লোকজনের বিরুদ্ধে।
এ ছাড়া সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের নিলামে চাকলাদারের লোকজন ছাড়া কাউকে ভিড়তে দেওয়া হতো না। যশোরের ভূমি অফিস, রেজিস্ট্রি অফিস, পাসপোর্ট অফিস, বিআরটিএ অফিস, সেটেলমেন্ট অফিস, বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিক মালিকেরা শাহীনের লোকজনকে নিয়মিত চাঁদা দিতে বাধ্য হতেন। এমনকি কোচিং সেন্টারও তাঁদের চাঁদাবাজির বাইরে ছিল না। শহরের বিভিন্ন প্রবেশমুখ মুড়লি, চাঁচড়া চেকপোস্ট, পালবাড়ী, খাজুরা বাসস্ট্যান্ড ও মণিহারসহ মূল শহরের মোড়ে মোড়ে বিভিন্ন যানবাহন থেকে নিয়মিত চাঁদা তুলতেন চাকলাদারের ক্যাডাররা। এমনকি ইজিবাইক, রিকশা ও ভ্যানচালকেরাও চাঁদা দিতে বাধ্য হতেন।
যশোরের সব সরকারি দপ্তরের টেন্ডার নিয়ন্ত্রিত হতো শাহীন চাকলাদারের বাড়ি কাঁঠালতলা থেকে। চাকলাদারের প্রভাব খাটিয়ে তাঁর ভাই সাবেক পৌর মেয়র জহিরুল ইসলাম চাকলাদার রেন্টু, কাউন্সিলর হাজী সুমন, মোস্তফা, সন্তোষ দত্ত, জাহিদ হোসেন মিলন ওরফে টাক মিলন, চূড়ামনকাটি ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান মুন্না, মশিয়ার রহমান সাগর, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহারুল ইসলাম ও বিহারি ক্যাম্প এলাকার রবি নিরীহ মানুষের সম্পত্তি দখল করতেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
চাকলাদারের পৃষ্ঠপোষকতায় তাঁর বাহিনী খুনোখুনিতেও ছিল বেপরোয়া। তাঁদের বিরুদ্ধে বহু হত্যাকাণ্ডে সম্পৃক্ততার অভিযোগ রয়েছে।তাঁর বাহিনীর অনেকেই হত্যা মামলার চার্জশিটের (অভিযোগপত্র) আসামি। শাহীন চাকলাদার ক্ষমতায় থাকাকালে বিভিন্ন সমাবেশে বিরোধী রাজনৈতিক মত-পথের লোকজনকে প্রকাশ্যে দেখে নেওয়ার হুমকি দিতেন। আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতাৎ-কর্মীরা বরাবরই তাঁর কাছে ছিলেন উপেক্ষিত।
যশোর সরকারি এমএম কলেজের দুটি ছাত্রাবাস ছিল শাহীন চাকলাদারের ক্যাডার বাহিনীর দখলে। এখান থেকে শহরের সব মেস নিয়ন্ত্রণ করা হতো। শিক্ষার্থীদের শাহীন চাকলাদারের মিছিলে যেতে বাধ্য করা হতো। ছাত্রলীগের নামধারীরা নিয়ন্ত্রণ করত সব ক্যাম্পাস।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রশাসনও চলতে বাধ্য হতো তাঁদের ইশারায়। কলেজের ৪টি পুকুর চাকলাদারের অনুসারী জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি রওশন ইকবাল শাহী ও সাবেক সাধারণ আনোয়ার হোসেন বিপুল দখল করে বিনা ইজারায় মাছ চাষের ব্যবসা করেছেন।
কেশবপুরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়োগ-বাণিজ্য
যশোর-৩ (সদর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদের সঙ্গে শাহীন চাকলাদারের ছিল দা-কুমড়া সম্পর্ক। সদরে দলীয় মনোনয়ন নিয়েই মূলত দুজনের মধ্যে বিরোধ তুঙ্গে ছিল। যশোর-৬ আসনের (কেশবপুর) সাবেক এমপি ইসমাত আরা সাদেকের মৃত্যুর পর সেখানে উপনির্বাচনে দলীয় হাইকমান্ড শাহীন চাকলাদারকে প্রার্থী করে। ২০২০ সালের উপনির্বাচনে তিনি এমপি নির্বাচিত হন।
অভিযোগ রয়েছে, তিন বছরের মেয়াদে কেশবপুরের তিন শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়োগ-বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করেছেন তিনি। উপজেলার হিজলডাঙ্গা গ্রামে শহীদ ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মাসুদ মেমোরিয়াল কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মশিয়ুর রহমান ১৯ জনের নিয়োগ দেওয়ার জন্য ৬৪ লাখ টাকা দিতে অঙ্গীকারনামা দেন।
সেই অঙ্গীকারনামায় তিনি লিখেছেন, ‘কলেজের ল্যাব অ্যাসিস্ট্যান্ট পদে চাকরিতে নজরুল ইসলামকে এমপিওভুক্ত করাতে ১ লাখ ৯৫ হাজার টাকা নিয়ে সাবেক সংসদ সদস্য শাহীনের ব্যক্তিগত সহকারী আলমগীর সিদ্দিকীর কাছে দিয়েছেন তিনি।’ এটি গত তিন বছরের নিয়োগ-বাণিজ্যের একটি প্রমাণ। এ ব্যাপারে শাহীন চাকলাদারের ব্যক্তিগত সহকারী আলমগীর সিদ্দিকী বলেন, তিনি কোনো টাকা মশিয়ুর রহমানের কাছ থেকে নেননি। মশিয়ুর রহমান সরাসরি শাহীন চাকলাদারের কাছে টাকা দিয়েছেন।
শাহীন কেশবপুরে আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে কখনো বসেননি। তিনি পৌরসভার মেয়রের কক্ষে বসতেন। এ বিষয়ে তখন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা ক্ষুব্ধ ছিলেন। কেশবপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গাজী গোলাম মোস্তফা বলেন, শেষ তিন বছরে দলের সঙ্গে শাহীন চাকলাদারের সম্পর্ক ছিল অনেকটা প্রভু-ভৃত্যের মতো। তাঁর কথাই ছিল শেষকথা।
এ ছাড়া সরকারি কাবিখা, কাবিটাসহ সব প্রকল্প সম্পন্ন করতেন মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে। ক্ষমতার দাপটে তিনি একের পর এক দখল করতে থাকেন সেখানকার সব মাছের ঘের। তাঁর অপকর্মে স্থানীয় রাজনীতিবিদসহ সব শ্রেণি-পেশার মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে ওঠেন। তাঁরই ফলে ২০২৪ সালের নির্বাচনে দলীয় নৌকা প্রতীকের প্রার্থী হয়েও একই দলের স্বতন্ত্র প্রার্থী বয়সে তরুণ আজিজুল ইসলাম ওরফে খন্দকার আজিজের কাছে শোচনীয়ভাবে পরাজিত হন শাহীন।
শাহীন চাকলাদার দেশে না বিদেশে, এ নিয়ে দুই ধরনের তথ্য মিলছে। কেউ বলছেন, তাঁর ফাইভ স্টার হোটেলের ম্যানেজার কলকাতার বাসিন্দা হওয়ায় তাঁর মাধ্যমে তিনি পুটখালী সীমান্ত হয়ে ভারতে পাড়ি জমিয়েছেন। কেউবা বলছেন, জনগণ ও প্রশাসনের দৃষ্টি ভিন্ন খাতে নিতে ভারতে যাওয়ার কথা প্রচার করে যশোরেই আত্মগোপনে আছেন তিনি। এ শহরে বসেই এখনো সব কার্যক্রম পরিচালনা করছেন শাহীন।
এসব অভিযোগের ব্যাপারে কথা বলার জন্য বহুবার চেষ্টা করেও শাহীন চাকলাদারের মোবাইল ফোন নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়। হোয়াটস অ্যাপেও তাঁর সংযোগ পাওয়া যায়নি।
যশোর জেলা বিএনপির সদস্যসচিব সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু আজকের পত্রিকাকে বলেন, শাহীন দানবীয় রাজনীতি করেছেন, যশোরবাসীর আতঙ্কের নাম ছিল শাহীন চাকলাদার। যশোর সন্ত্রাসীর জনপদে রূপ নেয় তাঁর হাত ধরে। তাঁর বলপ্রয়োগের রাজনীতিতে ২০-৩০ জন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী খুন হয়েছেন। শহরের দখলবাজি, চাঁদাবাজি ও ঠিকাদারি নিয়ন্ত্রণ হয়েছে তাঁর হাত ধরে। দল ক্ষমতায় থাকাকালে তিনি হয়েছেন শত শত কোটি টাকার মালিক। তাঁর এই সম্পত্তি স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় হয়নি। তিনি এখন এ শহরে না থাকায় মানুষ স্বস্তিতে রয়েছেন।
যশোরের পুলিশ সুপার জিয়াউদ্দিন আহমেদ বলেন, যশোরের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আগের চেয়ে অনেক ভালো। বিগত সময়ে নির্যাতিনের শিকার হওয়া ব্যক্তিরা অভিযোগ দিলে পুলিশ তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবে।

যশোর শহরের কাজিপাড়ার কাঁঠালতলা মোড়। এখানে দাঁড়িয়ে উত্তর দিকে তাকালেই দেখা যাবে ভাঙা আর আগুনে পোড়া তিনতলা বাড়ি। তালাবদ্ধ এ বাড়িটির মালিক যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য শাহীন চাকলাদার। বাড়ির গা ঘেঁষেই সাদা রঙের একতলা ভবন। ভেতরে ভাঙচুর ও আগুনের ক্ষতচিহ্ন। এ ভবনটির মালিকও শাহীন। এটি তিনি ব্যক্তিগত, দলীয়, রাজনৈতিক ও ব্যবসায়িক কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার করতেন।
গত বুধবার বিকেলে ষাটোর্ধ্ব এক ব্যক্তি ভাঙা ও পোড়া বাড়িটি দেখছিলেন। তাঁর কাছে যেতেই বলে উঠলেন, ‘কয়েক দিন আগেও এখানে কত ক্ষমতা, ঠিকাদারি নিয়ন্ত্রণ, ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ হতো। চাকলাদারের কথায় কতজনের মায়ের কোল খালি হয়েছে! আর এখন বাড়িতে কেউ নেই। হাহাকার করছে। সবই সৃষ্টিকর্তার খেল!’
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত ৫ আগস্ট শাহীনের ওই বাড়ি ও পাশের অফিসে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট করে দুর্বৃত্তরা। পরিস্থিতি আঁচ করতে পেরে আগেই তিনি পরিবার নিয়ে সটকে পড়েন। সরকার পতনের পর থেকে তাঁকে আর যশোরে দেখা যায়নি। শাহীন চাকলাদার গা ঢাকা দিলেও যশোরবাসীর কাছে তিনি আতঙ্কের নাম। তাঁর অপকর্মের বিষয়ে এখনো কেউ মুখ খুলতে সাহস পান না।
দুর্নীতি দমন কমিশন তাঁর সম্পদের অনুসন্ধান শুরু করেছে। ইতিমধ্যে শাহীন চাকলাদার এবং তাঁর স্ত্রী ও সন্তানের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
আওয়ামী লীগে হঠাৎ আগন্তুক শাহীন
দলীয় নেতা-কর্মী সূত্রে জানা যায়, নব্বইয়ের দশকের শেষের দিকেও শাহীন চাকলাদার নিয়মিত পারিবারিক ওষুধের দোকানে বসতেন। হঠাৎ ২০০১ সালে যশোর জেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য হন তিনি। ২০০৪ সালে যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হন শাহীন চাকলাদার। এর পাঁচ বছরের মাথায় তিনি আওয়ামী লীগ থেকে যশোর সদর উপজেলা চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করে জয়ী হন। দ্বিতীয় মেয়াদে নির্বাচিত হন ২০১৪ সালে। এরপর ২০২০ সালে চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করে যশোর-৬ (কেশবপুর) আসনে উপনির্বাচনে তিনি এমপি নির্বাচিত হন।
সর্বশেষ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পেয়েও পরাজিত হন স্বতন্ত্র প্রার্থীর কাছে। কেশবপুরে দলীয় নেতা-কর্মীদের অবমূল্যায়ন, নিয়োগ-বাণিজ্যের কারণে তিনি হারেন বলে মন্তব্য করেন নেতারা।
এই পরাজয়ের আগে যশোরের সবকিছুতে একক নিয়ন্ত্রক ছিলেন শাহীন। জেলায় ২০০৯ থেকেই শুরু শাহীন চাকলাদারের একক আধিপত্য বিস্তারের রাজনীতি। তাঁর এই পথে যাঁরা বাধা হয়েছিলেন তাঁদের সরাতে বিশাল সন্ত্রাসী বাহিনী গড়ে তোলেন তিনি। একপর্যায়ে শাহীন চাকলাদার নিজেই সন্ত্রাসীদের গডফাদারে পরিণত হন। তিনি নিজেও সব সময় সন্ত্রাসী-আতঙ্কে থাকতেন। তাঁর বাড়ি ও অফিসে বসানো সিসি ক্যামেরা এবং চলাফেরার ধরন দেখেই এ সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা পাওয়া যায়। নিরাপত্তার জন্য সরকার অনুমোদিত গানম্যান ছিল তাঁর। এর বাইরেও তিনি যখন চলাফেরা করতেন, তাঁর আগে-পিছে গোটাদশেক মোটরসাইকেলের বহর দেখা যেত।
‘অবৈধ’ সম্পদের পাহাড়
২০০৯ থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালে শাহীন চাকলাদার অবৈধভাবে অঢেল বিত্তবৈভবের মালিক হন। সংসদ নির্বাচনে দাখিল করা হলফনামার তথ্য অনুযায়ী, শাহীন শহরের কাজিপাড়ায় পৈতৃক বাড়ির বাইরেও বহু স্থানে বানিয়েছেন বাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। এসবের মধ্যে উল্লেখযোগ্য শহরের চিত্রা মোড়ে ১৭ তলাবিশিষ্ট পাঁচতারকা হোটেল, কাঁঠালতলায় অত্যাধুনিক তিনতলা বাড়ি ও বড় বাজারে দোতলা বাড়ি। কিনেছেন যশোরের ঐতিহ্যবাহী পারভীনা হোটেল। আরবপুর মোড়ে রয়েছে পাঁচতলা বাড়ি, বিমান অফিসের পাশে রয়েছে বাড়িসহ জমি, মাইকপট্টিতে তাঁরই সহযোগী সাবেক কাউন্সিলর আলমগীর কবির সুমন ওরফে হাজী সুমনের সঙ্গে যৌথ নামে জমি, পেট্রলপাম্প, ধর্মতলায় জমি, ঢাকার কলাবাগান ও মহাখালীর ডিওএইচএসে ফ্ল্যাট।
দলীয় নেতা-কর্মীদের সূত্রে জানা যায়, আত্মীয়স্বজনের নামেও দেশে-বিদেশে বিপুল সম্পদ গড়েছেন শাহীন। সম্পত্তি গড়া ও আধিপত্য বিস্তারে অন্যকে দমন করে রাজনীতিসহ সব ক্ষেত্রে একক আধিপত্য বিস্তারে তিনি সন্ত্রাসীদের ব্যবহার করতেন। জেলার রাজনীতি, টেন্ডার ব্যবসা, চাঁদাবাজি, চোরাচালান, দখলবাজিসহ সব ক্ষেত্রে একক আধিপত্য প্রতিষ্ঠায় চিহ্নিত অপরাধীদের নিয়ে তিনি গড়েন পৃথক বাহিনী। সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আরবপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান শাহারুল ইসলাম, শাহীন চাকলাদারের চাচাতো ভাই সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান তৌহিদ চাকলাদার ফন্টু ওরফে ফন্টু চাকলাদার, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি রওশন ইকবাল শাহী, সাবেক সাধারণ সম্পাদক সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন বিপুল এসব বাহিনীর নেতৃত্বে ছিলেন। গত ৫ আগস্টের পর থেকে তাঁরা সবাই গা ঢাকা দেন।
অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে, আনোয়ারা বেগম নামের এক স্কুলশিক্ষিকা শহরের চিত্রা মোড়ে তাঁর জমি দখলদারদের হাত থেকে মুক্ত করতে সহযোগিতার জন্য গিয়েছিলেন শাহীন চাকলাদারের কাছে। একপর্যায়ে কোটি টাকা মূল্যের ওই জমি থেকে আগের দখলদারের পাশাপাশি ওই শিক্ষিকাকেও উচ্ছেদ করে নিজেই দখল করে নেন শাহীন চাকলাদার। সেই জমিতে তিনি গড়ে তোলেন ১৭ তলাবিশিষ্ট ফাইভ স্টার হোটেল ‘জাবির ইন্টারন্যাশনাল’; যা জুয়া ও বড় বড় অনৈতিক কাজের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়। ৫ আগস্ট ওই হোটেলে আগুন ধরিয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। এতে এক বিদেশিসহ ২৪ ব্যক্তির মৃত্যু হয়। অভিযোগ রয়েছে, হোটেলের পাশে গাজী ইলেকট্রিকের দোতলা মার্কেটের একটি বড় অংশও তিনি দখল করে নেন।
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে ২০০ বিঘার এড়োলের বিল, মাহিদিয়ায় ১০০ বিঘার বিলের জমি, জগহাটির একটি বিল, শহরের মাইকপট্টির সেলিম নামের এক ব্যক্তির মার্কেটের একাংশ, কাঁঠালতলা এলাকার ঈদগাহের একটি অংশ, শহরের ঘোষপাড়া এলাকার সাধন নামের এক ব্যক্তির ১৫ বিঘা জমি, বকচরে সরকারি জায়গা দখল করে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান নির্মাণ, যশোর-নড়াইল রোডের বীজ গোডাউনের সামনে সড়ক ও জনপথ বিভাগের জায়গা দখল করে মার্কেট নির্মাণের অভিযোগ রয়েছে শাহীন চাকলাদার ও তাঁর লোকজনের বিরুদ্ধে।
এ ছাড়া সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের নিলামে চাকলাদারের লোকজন ছাড়া কাউকে ভিড়তে দেওয়া হতো না। যশোরের ভূমি অফিস, রেজিস্ট্রি অফিস, পাসপোর্ট অফিস, বিআরটিএ অফিস, সেটেলমেন্ট অফিস, বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিক মালিকেরা শাহীনের লোকজনকে নিয়মিত চাঁদা দিতে বাধ্য হতেন। এমনকি কোচিং সেন্টারও তাঁদের চাঁদাবাজির বাইরে ছিল না। শহরের বিভিন্ন প্রবেশমুখ মুড়লি, চাঁচড়া চেকপোস্ট, পালবাড়ী, খাজুরা বাসস্ট্যান্ড ও মণিহারসহ মূল শহরের মোড়ে মোড়ে বিভিন্ন যানবাহন থেকে নিয়মিত চাঁদা তুলতেন চাকলাদারের ক্যাডাররা। এমনকি ইজিবাইক, রিকশা ও ভ্যানচালকেরাও চাঁদা দিতে বাধ্য হতেন।
যশোরের সব সরকারি দপ্তরের টেন্ডার নিয়ন্ত্রিত হতো শাহীন চাকলাদারের বাড়ি কাঁঠালতলা থেকে। চাকলাদারের প্রভাব খাটিয়ে তাঁর ভাই সাবেক পৌর মেয়র জহিরুল ইসলাম চাকলাদার রেন্টু, কাউন্সিলর হাজী সুমন, মোস্তফা, সন্তোষ দত্ত, জাহিদ হোসেন মিলন ওরফে টাক মিলন, চূড়ামনকাটি ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান মুন্না, মশিয়ার রহমান সাগর, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহারুল ইসলাম ও বিহারি ক্যাম্প এলাকার রবি নিরীহ মানুষের সম্পত্তি দখল করতেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
চাকলাদারের পৃষ্ঠপোষকতায় তাঁর বাহিনী খুনোখুনিতেও ছিল বেপরোয়া। তাঁদের বিরুদ্ধে বহু হত্যাকাণ্ডে সম্পৃক্ততার অভিযোগ রয়েছে।তাঁর বাহিনীর অনেকেই হত্যা মামলার চার্জশিটের (অভিযোগপত্র) আসামি। শাহীন চাকলাদার ক্ষমতায় থাকাকালে বিভিন্ন সমাবেশে বিরোধী রাজনৈতিক মত-পথের লোকজনকে প্রকাশ্যে দেখে নেওয়ার হুমকি দিতেন। আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতাৎ-কর্মীরা বরাবরই তাঁর কাছে ছিলেন উপেক্ষিত।
যশোর সরকারি এমএম কলেজের দুটি ছাত্রাবাস ছিল শাহীন চাকলাদারের ক্যাডার বাহিনীর দখলে। এখান থেকে শহরের সব মেস নিয়ন্ত্রণ করা হতো। শিক্ষার্থীদের শাহীন চাকলাদারের মিছিলে যেতে বাধ্য করা হতো। ছাত্রলীগের নামধারীরা নিয়ন্ত্রণ করত সব ক্যাম্পাস।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রশাসনও চলতে বাধ্য হতো তাঁদের ইশারায়। কলেজের ৪টি পুকুর চাকলাদারের অনুসারী জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি রওশন ইকবাল শাহী ও সাবেক সাধারণ আনোয়ার হোসেন বিপুল দখল করে বিনা ইজারায় মাছ চাষের ব্যবসা করেছেন।
কেশবপুরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়োগ-বাণিজ্য
যশোর-৩ (সদর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদের সঙ্গে শাহীন চাকলাদারের ছিল দা-কুমড়া সম্পর্ক। সদরে দলীয় মনোনয়ন নিয়েই মূলত দুজনের মধ্যে বিরোধ তুঙ্গে ছিল। যশোর-৬ আসনের (কেশবপুর) সাবেক এমপি ইসমাত আরা সাদেকের মৃত্যুর পর সেখানে উপনির্বাচনে দলীয় হাইকমান্ড শাহীন চাকলাদারকে প্রার্থী করে। ২০২০ সালের উপনির্বাচনে তিনি এমপি নির্বাচিত হন।
অভিযোগ রয়েছে, তিন বছরের মেয়াদে কেশবপুরের তিন শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়োগ-বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করেছেন তিনি। উপজেলার হিজলডাঙ্গা গ্রামে শহীদ ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মাসুদ মেমোরিয়াল কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মশিয়ুর রহমান ১৯ জনের নিয়োগ দেওয়ার জন্য ৬৪ লাখ টাকা দিতে অঙ্গীকারনামা দেন।
সেই অঙ্গীকারনামায় তিনি লিখেছেন, ‘কলেজের ল্যাব অ্যাসিস্ট্যান্ট পদে চাকরিতে নজরুল ইসলামকে এমপিওভুক্ত করাতে ১ লাখ ৯৫ হাজার টাকা নিয়ে সাবেক সংসদ সদস্য শাহীনের ব্যক্তিগত সহকারী আলমগীর সিদ্দিকীর কাছে দিয়েছেন তিনি।’ এটি গত তিন বছরের নিয়োগ-বাণিজ্যের একটি প্রমাণ। এ ব্যাপারে শাহীন চাকলাদারের ব্যক্তিগত সহকারী আলমগীর সিদ্দিকী বলেন, তিনি কোনো টাকা মশিয়ুর রহমানের কাছ থেকে নেননি। মশিয়ুর রহমান সরাসরি শাহীন চাকলাদারের কাছে টাকা দিয়েছেন।
শাহীন কেশবপুরে আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে কখনো বসেননি। তিনি পৌরসভার মেয়রের কক্ষে বসতেন। এ বিষয়ে তখন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা ক্ষুব্ধ ছিলেন। কেশবপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গাজী গোলাম মোস্তফা বলেন, শেষ তিন বছরে দলের সঙ্গে শাহীন চাকলাদারের সম্পর্ক ছিল অনেকটা প্রভু-ভৃত্যের মতো। তাঁর কথাই ছিল শেষকথা।
এ ছাড়া সরকারি কাবিখা, কাবিটাসহ সব প্রকল্প সম্পন্ন করতেন মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে। ক্ষমতার দাপটে তিনি একের পর এক দখল করতে থাকেন সেখানকার সব মাছের ঘের। তাঁর অপকর্মে স্থানীয় রাজনীতিবিদসহ সব শ্রেণি-পেশার মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে ওঠেন। তাঁরই ফলে ২০২৪ সালের নির্বাচনে দলীয় নৌকা প্রতীকের প্রার্থী হয়েও একই দলের স্বতন্ত্র প্রার্থী বয়সে তরুণ আজিজুল ইসলাম ওরফে খন্দকার আজিজের কাছে শোচনীয়ভাবে পরাজিত হন শাহীন।
শাহীন চাকলাদার দেশে না বিদেশে, এ নিয়ে দুই ধরনের তথ্য মিলছে। কেউ বলছেন, তাঁর ফাইভ স্টার হোটেলের ম্যানেজার কলকাতার বাসিন্দা হওয়ায় তাঁর মাধ্যমে তিনি পুটখালী সীমান্ত হয়ে ভারতে পাড়ি জমিয়েছেন। কেউবা বলছেন, জনগণ ও প্রশাসনের দৃষ্টি ভিন্ন খাতে নিতে ভারতে যাওয়ার কথা প্রচার করে যশোরেই আত্মগোপনে আছেন তিনি। এ শহরে বসেই এখনো সব কার্যক্রম পরিচালনা করছেন শাহীন।
এসব অভিযোগের ব্যাপারে কথা বলার জন্য বহুবার চেষ্টা করেও শাহীন চাকলাদারের মোবাইল ফোন নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়। হোয়াটস অ্যাপেও তাঁর সংযোগ পাওয়া যায়নি।
যশোর জেলা বিএনপির সদস্যসচিব সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু আজকের পত্রিকাকে বলেন, শাহীন দানবীয় রাজনীতি করেছেন, যশোরবাসীর আতঙ্কের নাম ছিল শাহীন চাকলাদার। যশোর সন্ত্রাসীর জনপদে রূপ নেয় তাঁর হাত ধরে। তাঁর বলপ্রয়োগের রাজনীতিতে ২০-৩০ জন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী খুন হয়েছেন। শহরের দখলবাজি, চাঁদাবাজি ও ঠিকাদারি নিয়ন্ত্রণ হয়েছে তাঁর হাত ধরে। দল ক্ষমতায় থাকাকালে তিনি হয়েছেন শত শত কোটি টাকার মালিক। তাঁর এই সম্পত্তি স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় হয়নি। তিনি এখন এ শহরে না থাকায় মানুষ স্বস্তিতে রয়েছেন।
যশোরের পুলিশ সুপার জিয়াউদ্দিন আহমেদ বলেন, যশোরের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আগের চেয়ে অনেক ভালো। বিগত সময়ে নির্যাতিনের শিকার হওয়া ব্যক্তিরা অভিযোগ দিলে পুলিশ তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবে।

মেঘনা নদী থেকে জেগে ওঠা নতুন চর নোয়াখালীর সুবর্ণচরের আয়তন বাড়ালেও একই সঙ্গে ভয়াবহ ভাঙনে বিলীন হচ্ছে জনপদ। শুধু সুবর্ণচর নয়, উপকূলীয় জেলা নোয়াখালীর সর্বত্রই চলছে নদীর এই ভাঙা-গড়ার খেলা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শেষ পর্যন্ত টিকে থাকা ভূমির পরিমাণ ভাঙনের চেয়ে বেশি হলেও নতুন জেগে ওঠা চরগুলো এখনো বসতিস্থাপনের
৪ ঘণ্টা আগে
ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ও ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী শরিফ ওসমান বিন হাদির ওপর হামলার নেপথ্যের ব্যক্তিদের এবং উপকরণ সরবরাহকারীদের বিষয়ে এখনো কিছু জানতে পারেনি পুলিশ। হামলাকারী দুজন ঘটনার আগে-পরে যাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন, তাঁদের কয়েকজনকে আটকের পর জিজ্ঞাসাবাদে বেশ কিছু তথ্য পেয়েছে ডিবি ও র্যাব
৪ ঘণ্টা আগে
চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলায় পরিবেশ ধ্বংসের হিড়িক পড়েছে। চক্রের থাবা থেকে রেহাই পাচ্ছে না বনাঞ্চলের পাহাড়-টিলা, এমনকি কৃষিজমির উর্বর মাটিও। স্থানীয় প্রশাসনের অভিযান এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের মামলার পরও কোনো কিছুতেই থামানো যাচ্ছে না মাটিখেকোদের দৌরাত্ম্য।
৪ ঘণ্টা আগে
কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত শরীয়তপুরে এবার বদলে গেছে নির্বাচনী সমীকরণ। জুলাই অভ্যুত্থানের পর বিদ্যমান বাস্তবতায় জেলার তিনটি আসনই নিশ্চিত করতে চায় বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী। শরীয়তপুর-১ আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী সাঈদ আহমেদ আসলামের মনোনয়ন বাতিলের দাবিতে দফায় দফায় সড়ক অবরোধ কর
৪ ঘণ্টা আগেমুজাহিদুল ইসলাম সোহেল, সুবর্ণচর (নোয়াখালী)

মেঘনা নদী থেকে জেগে ওঠা নতুন চর নোয়াখালীর সুবর্ণচরের আয়তন বাড়ালেও একই সঙ্গে ভয়াবহ ভাঙনে বিলীন হচ্ছে জনপদ। শুধু সুবর্ণচর নয়, উপকূলীয় জেলা নোয়াখালীর সর্বত্রই চলছে নদীর এই ভাঙা-গড়ার খেলা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শেষ পর্যন্ত টিকে থাকা ভূমির পরিমাণ ভাঙনের চেয়ে বেশি হলেও নতুন জেগে ওঠা চরগুলো এখনো বসতিস্থাপনের উপযোগী হয়ে ওঠেনি।
বাংলাদেশ সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড জিওগ্রাফিক্যাল ইনফরমেশন সার্ভিসেস (সিইজিআইএস)-এর হিসাবে, গত ৭০ বছরে নোয়াখালীতে প্রায় ২০০ বর্গকিলোমিটার ভূমি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। একই সময়ে নতুন করে যুক্ত হয়েছে প্রায় এক হাজার বর্গকিলোমিটার ভূমি। তবে এই ভাঙা-গড়ার প্রক্রিয়ায় যারা সব হারায়, তাদের জন্য থাকে কেবল হাহাকার।
তবে স্থানীয়দের অভিযোগ, নদীভাঙনে নিঃস্ব মানুষের জন্য সরকারিভাবে কোনো আলাদা সুযোগ-সুবিধা নেই। নেই পুনর্বাসনের কার্যকর উদ্যোগ। এমনকি কত মানুষ ভিটেমাটি হারিয়েছে, তারও কোনো নির্ভরযোগ্য তালিকা তৈরি করা হয়নি।
জানা গেছে, মেঘনা নদীর তীব্র ভাঙনে সুবর্ণচর উপজেলার মোহাম্মদপুর ও চরক্লার্ক ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকা বিলীন হয়ে যাচ্ছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত দুই বছরে এই দুই ইউনিয়নে অন্তত তিন হাজার পরিবার গৃহহীন হয়েছে। ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা আরও বিস্তৃত হওয়ায় মোট ভিটেমাটি হারানো পরিবারের সংখ্যা প্রায় চার হাজার।
স্থানীয়দের ভাষ্য অনুযায়ী, চরক্লার্ক ও মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ হেমায়েতপুরের একটি অংশ, চর বায়েজিদ মৌজা, চর খন্দকার, আলেমপুর, সৈয়দপুর, চর নোমান সমাজ ও চর মোজাম্মেল মৌজাসহ অন্তত ১০টি এলাকা ইতিমধ্যে নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। ভাঙনের সঙ্গে সঙ্গে হারিয়ে গেছে কয়েক হাজার একর ফসলি জমি, চর উন্নয়ন ও বসতি স্থাপন প্রকল্পের (সিডিএসপি) ৭/৮ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ এবং বন বিভাগের রোপণ করা নানা প্রজাতির গাছ।
এক বছর আগে চরক্লার্ক ইউনিয়নের চর খন্দকার এলাকায় সাবেক ২ নম্বর কাটাখালী স্লুইসগেট নদীতে বিলীন হয়ে যায়। এতে জোয়ারের সময় পানি দ্রুত উত্তর দিকে প্রবাহিত হচ্ছে। এর ফলে সোলেমান বাজারসহ আশপাশের এলাকাও নতুন করে ভাঙনের ঝুঁকিতে পড়েছে। আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে হাজারো পরিবার।
জানতে চাইলে চরক্লার্ক ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবুল বাশার জানান, ভাঙনের বিষয়টি উপজেলা ও জেলা প্রশাসনকে অবহিত করা হয়েছে। উপদেষ্টা পর্যায়েও বিষয়টি জানানো হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন।
সুবর্ণচরের সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)-এর সাধারণ সম্পাদক আবদুল বারী বাবলু বলেন, ভাঙা-গড়া প্রকৃতির নিয়ম হলেও নদীভাঙনে ক্ষতিগ্রস্তরা জেগে ওঠা চরে তাঁদের পুরোনো অবস্থান বা জীবন ফিরে পান না। নদীশাসন এবং জেগে ওঠা চরে বসতি স্থাপন নিয়ে রাষ্ট্রীয় নীতিমালা জরুরি। নদী ভাঙলে শুধু মানুষের ঘরবাড়ি নয়, জনপদের চিহ্নও মুছে যায়।
এ বিষয়ে সুবর্ণচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আকিব ওসমান বলেন, মোহাম্মদপুর ও চরক্লার্ক ইউনিয়নের ভাঙনের বিষয়টি প্রশাসনের জানা আছে। তবে এখনো পর্যন্ত কত পরিবার গৃহহীন হয়েছে, তার কোনো তালিকা প্রস্তুত করা হয়নি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে ভাঙন রোধ ও ক্ষতিগ্রস্তদের বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

মেঘনা নদী থেকে জেগে ওঠা নতুন চর নোয়াখালীর সুবর্ণচরের আয়তন বাড়ালেও একই সঙ্গে ভয়াবহ ভাঙনে বিলীন হচ্ছে জনপদ। শুধু সুবর্ণচর নয়, উপকূলীয় জেলা নোয়াখালীর সর্বত্রই চলছে নদীর এই ভাঙা-গড়ার খেলা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শেষ পর্যন্ত টিকে থাকা ভূমির পরিমাণ ভাঙনের চেয়ে বেশি হলেও নতুন জেগে ওঠা চরগুলো এখনো বসতিস্থাপনের উপযোগী হয়ে ওঠেনি।
বাংলাদেশ সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড জিওগ্রাফিক্যাল ইনফরমেশন সার্ভিসেস (সিইজিআইএস)-এর হিসাবে, গত ৭০ বছরে নোয়াখালীতে প্রায় ২০০ বর্গকিলোমিটার ভূমি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। একই সময়ে নতুন করে যুক্ত হয়েছে প্রায় এক হাজার বর্গকিলোমিটার ভূমি। তবে এই ভাঙা-গড়ার প্রক্রিয়ায় যারা সব হারায়, তাদের জন্য থাকে কেবল হাহাকার।
তবে স্থানীয়দের অভিযোগ, নদীভাঙনে নিঃস্ব মানুষের জন্য সরকারিভাবে কোনো আলাদা সুযোগ-সুবিধা নেই। নেই পুনর্বাসনের কার্যকর উদ্যোগ। এমনকি কত মানুষ ভিটেমাটি হারিয়েছে, তারও কোনো নির্ভরযোগ্য তালিকা তৈরি করা হয়নি।
জানা গেছে, মেঘনা নদীর তীব্র ভাঙনে সুবর্ণচর উপজেলার মোহাম্মদপুর ও চরক্লার্ক ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকা বিলীন হয়ে যাচ্ছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত দুই বছরে এই দুই ইউনিয়নে অন্তত তিন হাজার পরিবার গৃহহীন হয়েছে। ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা আরও বিস্তৃত হওয়ায় মোট ভিটেমাটি হারানো পরিবারের সংখ্যা প্রায় চার হাজার।
স্থানীয়দের ভাষ্য অনুযায়ী, চরক্লার্ক ও মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ হেমায়েতপুরের একটি অংশ, চর বায়েজিদ মৌজা, চর খন্দকার, আলেমপুর, সৈয়দপুর, চর নোমান সমাজ ও চর মোজাম্মেল মৌজাসহ অন্তত ১০টি এলাকা ইতিমধ্যে নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। ভাঙনের সঙ্গে সঙ্গে হারিয়ে গেছে কয়েক হাজার একর ফসলি জমি, চর উন্নয়ন ও বসতি স্থাপন প্রকল্পের (সিডিএসপি) ৭/৮ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ এবং বন বিভাগের রোপণ করা নানা প্রজাতির গাছ।
এক বছর আগে চরক্লার্ক ইউনিয়নের চর খন্দকার এলাকায় সাবেক ২ নম্বর কাটাখালী স্লুইসগেট নদীতে বিলীন হয়ে যায়। এতে জোয়ারের সময় পানি দ্রুত উত্তর দিকে প্রবাহিত হচ্ছে। এর ফলে সোলেমান বাজারসহ আশপাশের এলাকাও নতুন করে ভাঙনের ঝুঁকিতে পড়েছে। আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে হাজারো পরিবার।
জানতে চাইলে চরক্লার্ক ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবুল বাশার জানান, ভাঙনের বিষয়টি উপজেলা ও জেলা প্রশাসনকে অবহিত করা হয়েছে। উপদেষ্টা পর্যায়েও বিষয়টি জানানো হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন।
সুবর্ণচরের সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)-এর সাধারণ সম্পাদক আবদুল বারী বাবলু বলেন, ভাঙা-গড়া প্রকৃতির নিয়ম হলেও নদীভাঙনে ক্ষতিগ্রস্তরা জেগে ওঠা চরে তাঁদের পুরোনো অবস্থান বা জীবন ফিরে পান না। নদীশাসন এবং জেগে ওঠা চরে বসতি স্থাপন নিয়ে রাষ্ট্রীয় নীতিমালা জরুরি। নদী ভাঙলে শুধু মানুষের ঘরবাড়ি নয়, জনপদের চিহ্নও মুছে যায়।
এ বিষয়ে সুবর্ণচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আকিব ওসমান বলেন, মোহাম্মদপুর ও চরক্লার্ক ইউনিয়নের ভাঙনের বিষয়টি প্রশাসনের জানা আছে। তবে এখনো পর্যন্ত কত পরিবার গৃহহীন হয়েছে, তার কোনো তালিকা প্রস্তুত করা হয়নি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে ভাঙন রোধ ও ক্ষতিগ্রস্তদের বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

যশোর শহরের কাজিপাড়ার কাঁঠালতলা মোড়। এখানে দাঁড়িয়ে উত্তর দিকে তাকালেই দেখা যাবে ভাঙা আর আগুনে পোড়া তিনতলা বাড়ি। তালাবদ্ধ এ বাড়িটির মালিক যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য শাহীন চাকলাদার।
২১ অক্টোবর ২০২৪
ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ও ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী শরিফ ওসমান বিন হাদির ওপর হামলার নেপথ্যের ব্যক্তিদের এবং উপকরণ সরবরাহকারীদের বিষয়ে এখনো কিছু জানতে পারেনি পুলিশ। হামলাকারী দুজন ঘটনার আগে-পরে যাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন, তাঁদের কয়েকজনকে আটকের পর জিজ্ঞাসাবাদে বেশ কিছু তথ্য পেয়েছে ডিবি ও র্যাব
৪ ঘণ্টা আগে
চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলায় পরিবেশ ধ্বংসের হিড়িক পড়েছে। চক্রের থাবা থেকে রেহাই পাচ্ছে না বনাঞ্চলের পাহাড়-টিলা, এমনকি কৃষিজমির উর্বর মাটিও। স্থানীয় প্রশাসনের অভিযান এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের মামলার পরও কোনো কিছুতেই থামানো যাচ্ছে না মাটিখেকোদের দৌরাত্ম্য।
৪ ঘণ্টা আগে
কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত শরীয়তপুরে এবার বদলে গেছে নির্বাচনী সমীকরণ। জুলাই অভ্যুত্থানের পর বিদ্যমান বাস্তবতায় জেলার তিনটি আসনই নিশ্চিত করতে চায় বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী। শরীয়তপুর-১ আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী সাঈদ আহমেদ আসলামের মনোনয়ন বাতিলের দাবিতে দফায় দফায় সড়ক অবরোধ কর
৪ ঘণ্টা আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ও ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী শরিফ ওসমান বিন হাদির ওপর হামলার নেপথ্যের ব্যক্তিদের এবং উপকরণ সরবরাহকারীদের বিষয়ে এখনো কিছু জানতে পারেনি পুলিশ। হামলাকারী দুজন ঘটনার আগে-পরে যাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন, তাঁদের কয়েকজনকে আটকের পর জিজ্ঞাসাবাদে বেশ কিছু তথ্য পেয়েছে ডিবি ও র্যাব। তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
ওসমান হাদিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য গতকাল সোমবার এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হয়েছে। এই হত্যাচেষ্টা মামলার প্রধান আসামি ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে রাহুল ওরফে দাউদের (৩৭) স্ত্রীসহ তিনজনকে গতকাল ৫ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।
১২ ডিসেম্বর বেলা আড়াইটার দিকে পুরানা পল্টনের বক্স কালভার্ট রোডে ব্যাটারিচালিত রিকশায় থাকা ওসমান হাদিকে গুলি করেন মোটরসাইকেল আরোহী দুর্বৃত্তরা। প্রথমে তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়; পরে সেখান থেকে এভারকেয়ার হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। গতকাল নেওয়া হয় সিঙ্গাপুরে। এই ঘটনায় ১৪ ডিসেম্বর রাতে পল্টন থানায় করা মামলার তদন্ত করছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ডিবির মতিঝিল বিভাগ।
ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মো. শফিকুল ইসলাম গতকাল বলেন, এখন পর্যন্ত এই মামলায় চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর সঙ্গে যারাই জড়িত থাকুক, তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।
ওসমান হাদিকে বহনকারী এয়ার অ্যাম্বুলেন্স বেলা ১টা ৫৫ মিনিটে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়ন করে। বাংলাদেশ সময় বিকেল ৫টা ৫০ মিনিটে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটি সিঙ্গাপুরে পৌঁছায়। মাথায় গুলিবিদ্ধ হাদির শরীরের অন্য অঙ্গগুলো এখনো ‘নিয়ন্ত্রণযোগ্য’ বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়) অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান।
তদন্তসংশ্লিষ্টরা হামলায় অংশ নেওয়া দুজনের পরিচয় শনাক্ত করেছেন। তাঁরা হলেন–ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে রাহুল ওরফে দাউদ ও আলমগীর হোসেন। তবে মামলার এজাহারে আলমগীরের নাম নেই। তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, এই দুজনের এবং তাঁদের বহনকারী গাড়ির চালকদের তথ্য পেলেও হামলার নেপথ্যের ব্যক্তিদের সম্পর্কে এখনো জানা যায়নি। ফয়সাল ও আলমগীর ইতিমধ্যে সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে চলে গেছেন বলেও ডিবি নিশ্চিত হয়েছে।
হামলার আগের রাতে সাভারের একটি রিসোর্টে ছিলেন দুজন। তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, হামলার আগের দিন, অর্থাৎ ১১ ডিসেম্বর রাতে সাভারের গ্রিন জোন রিসোর্টের পৃথক কক্ষে ছিলেন ফয়সাল ও আলমগীর। রাত ২টার দিকে সেখানে ফয়সালের বান্ধবী ছোট বোনকে নিয়ে গিয়েছিলেন। সকালে হাদির কিছু ভিডিও দেখার পর ঢাকায় আসেন তাঁরা। ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে ফয়সালের বান্ধবী জানান, হাদির ভিডিও দেখার সময় গালিগালাজ করেন ফয়সাল। হাদিকে কিছু একটা করবেন, তা তিনি বুঝতে পেরেছিলেন।
দুবার মোটরসাইকেলের নম্বরপ্লেট পরিবর্তন: ১২ ডিসেম্বর সকালে সাভার থেকে ঢাকায় এসে ফয়সাল ও আলমগীর আগারগাঁওয়ে ফয়সালের বোনের বাসায় যান। সেখানে ফয়সালের বাবা-মাও থাকেন। ওই বাসার গ্যারেজের সিসি ক্যামেরার ফুটেজের সূত্র ধরে ডিবি বলছে, বাসা থেকে বের হওয়ার আগে ফয়সালের বাবা একটি নম্বরপ্লেট নিয়ে গ্যারেজে এলে তাঁরা নম্বরপ্লেট পরিবর্তন করে বের হন। গুলি করার পর পল্টনের বক্স কালভার্ট রোড থেকে মোটরসাইকেলে করে তাঁরা আবার আগারগাঁওয়ে ফয়সালের বোনের বাসায় যান। আবার মোটরসাইকেলের নম্বরপ্লেট পরিবর্তন করেন। একটি নম্বরপ্লেট তাঁরা ম্যানহোলে ফেলে দেন। বাসায় কিছুক্ষণ থেকে ফয়সাল ও আলমগীর দুটি কালো ব্যাগ নিয়ে বের হয়ে বাসার নিরাপত্তাকর্মীর ঠিক করা সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে আমিন বাজারের ঢালে নামেন। ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে ওই অটোরিকশাচালক জানান, আমিনবাজারে ওই দুজন এক তরুণীর সঙ্গে কথা বলেন। তিনি গাড়ি নিয়ে আগে থেকে সেখানে অপেক্ষা করছিলেন বলে ডিবি নিশ্চিত হয়েছে। সেখানে তাঁরা মোবাইল ও সিম ফেলে দেন। এরপর কালামপুর, টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা হয়ে ময়মনসিংহ যান। ময়মনসিংহের সেতুর পাড়ে গাড়ি বদলে আরেকটি প্রাইভেট কারে উঠে হালুয়াঘাটের ধারাবাজারের একটি পেট্রলপাম্পে গিয়ে থামেন। সেখানে তিন যুবক ওই দুজনকে মোটরসাইকেলে উঠিয়ে হালুয়াঘাটের ভুটিয়াপাড়ায় নিয়ে যান। রাত আড়াইটার দিকে ভুটিয়াপাড়া সীমান্ত পাড়ি দিয়ে দুজনে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের তুরায় যান। হামলা ও ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পুরো বিষয়টি ছিল নিখুঁত পরিকল্পনার অংশ। ময়মনসিংহে নেওয়া গাড়িটি ছিল ভাড়া করা।
৪ ডিসেম্বর থেকে হামলাকারী ফয়সাল, আলমগীর ও জাকির প্রার্থী ওসমান হাদির গণসংযোগে নিয়মিত অংশ নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন ইনকিলাব মঞ্চের নেতা-কর্মী ও পুলিশ। এর দেড় মাস আগে তাঁরা জুলাই যোদ্ধা পরিচয়ে হাদির দলে ভিড়েছিলেন।
ফয়সালের স্ত্রীসহ তিনজন রিমান্ডে: প্রধান আসামি ফয়সালের স্ত্রী সাহেদা পারভীন সামিয়া, শ্যালক ও ফয়সালের এক বান্ধবীকে গতকাল আদালতে হাজির করে তদন্ত কর্মকর্তা প্রত্যেকের সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন জানান। শুনানি শেষে ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জশিতা ইসলাম তাঁদের পাঁচ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
হাদির মোবাইলের হদিস নেই: হামলার পর ওসমান হাদির ব্যবহৃত মোবাইল ফোনের হদিস পাওয়া যাচ্ছে না। ডিবি বলেছে, তাঁর মোবাইলে যেহেতু বারবার হত্যার হুমকি আসছিল, তাই মোবাইলটি গুরুত্বপূর্ণ ছিল। তবে ঘটনার পর মোবাইলটি পাওয়া যায়নি। ওই মোবাইল নম্বরটি নিয়ে কাজ করছে পুলিশ।
সীমান্ত পারাপারে জড়িত আরও দুজন আটক: হাদির ওপর হামলাকারীদের সীমান্ত পার করানোর ঘটনায় শেরপুরের নালিতাবাড়ী সীমান্ত এলাকা থেকে আরও দুজনকে আটক করেছে বিজিবি। ময়মনসিংহের ৩৯ বিজিবির সেক্টর সদর দপ্তরে সংবাদ সম্মেলনে সেক্টর কমান্ডার কর্নেল সরকার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান বিষয়টি জানান। আটক দুজন হলেন, শেরপুরের নালিতাবাড়ী সীমান্ত থেকে অবৈধভাবে মানুষ পারাপারে সহায়তাকারী ফিলিপের মামাশ্বশুর বেঞ্জামিন চিড়ান এবং ফিলিপের ঘনিষ্ঠ বন্ধু সীশল। এর আগে রোববার ডিবি পুলিশ ওই এলাকা থেকে দুজনকে গ্রেপ্তার করে। সিবিয়ন দিও ও সঞ্চয় চিসিম নামের ওই দুজন পুলিশের হেফাজতে রয়েছেন।

ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ও ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী শরিফ ওসমান বিন হাদির ওপর হামলার নেপথ্যের ব্যক্তিদের এবং উপকরণ সরবরাহকারীদের বিষয়ে এখনো কিছু জানতে পারেনি পুলিশ। হামলাকারী দুজন ঘটনার আগে-পরে যাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন, তাঁদের কয়েকজনকে আটকের পর জিজ্ঞাসাবাদে বেশ কিছু তথ্য পেয়েছে ডিবি ও র্যাব। তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
ওসমান হাদিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য গতকাল সোমবার এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হয়েছে। এই হত্যাচেষ্টা মামলার প্রধান আসামি ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে রাহুল ওরফে দাউদের (৩৭) স্ত্রীসহ তিনজনকে গতকাল ৫ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।
১২ ডিসেম্বর বেলা আড়াইটার দিকে পুরানা পল্টনের বক্স কালভার্ট রোডে ব্যাটারিচালিত রিকশায় থাকা ওসমান হাদিকে গুলি করেন মোটরসাইকেল আরোহী দুর্বৃত্তরা। প্রথমে তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়; পরে সেখান থেকে এভারকেয়ার হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। গতকাল নেওয়া হয় সিঙ্গাপুরে। এই ঘটনায় ১৪ ডিসেম্বর রাতে পল্টন থানায় করা মামলার তদন্ত করছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ডিবির মতিঝিল বিভাগ।
ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মো. শফিকুল ইসলাম গতকাল বলেন, এখন পর্যন্ত এই মামলায় চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর সঙ্গে যারাই জড়িত থাকুক, তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।
ওসমান হাদিকে বহনকারী এয়ার অ্যাম্বুলেন্স বেলা ১টা ৫৫ মিনিটে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়ন করে। বাংলাদেশ সময় বিকেল ৫টা ৫০ মিনিটে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটি সিঙ্গাপুরে পৌঁছায়। মাথায় গুলিবিদ্ধ হাদির শরীরের অন্য অঙ্গগুলো এখনো ‘নিয়ন্ত্রণযোগ্য’ বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়) অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান।
তদন্তসংশ্লিষ্টরা হামলায় অংশ নেওয়া দুজনের পরিচয় শনাক্ত করেছেন। তাঁরা হলেন–ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে রাহুল ওরফে দাউদ ও আলমগীর হোসেন। তবে মামলার এজাহারে আলমগীরের নাম নেই। তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, এই দুজনের এবং তাঁদের বহনকারী গাড়ির চালকদের তথ্য পেলেও হামলার নেপথ্যের ব্যক্তিদের সম্পর্কে এখনো জানা যায়নি। ফয়সাল ও আলমগীর ইতিমধ্যে সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে চলে গেছেন বলেও ডিবি নিশ্চিত হয়েছে।
হামলার আগের রাতে সাভারের একটি রিসোর্টে ছিলেন দুজন। তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, হামলার আগের দিন, অর্থাৎ ১১ ডিসেম্বর রাতে সাভারের গ্রিন জোন রিসোর্টের পৃথক কক্ষে ছিলেন ফয়সাল ও আলমগীর। রাত ২টার দিকে সেখানে ফয়সালের বান্ধবী ছোট বোনকে নিয়ে গিয়েছিলেন। সকালে হাদির কিছু ভিডিও দেখার পর ঢাকায় আসেন তাঁরা। ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে ফয়সালের বান্ধবী জানান, হাদির ভিডিও দেখার সময় গালিগালাজ করেন ফয়সাল। হাদিকে কিছু একটা করবেন, তা তিনি বুঝতে পেরেছিলেন।
দুবার মোটরসাইকেলের নম্বরপ্লেট পরিবর্তন: ১২ ডিসেম্বর সকালে সাভার থেকে ঢাকায় এসে ফয়সাল ও আলমগীর আগারগাঁওয়ে ফয়সালের বোনের বাসায় যান। সেখানে ফয়সালের বাবা-মাও থাকেন। ওই বাসার গ্যারেজের সিসি ক্যামেরার ফুটেজের সূত্র ধরে ডিবি বলছে, বাসা থেকে বের হওয়ার আগে ফয়সালের বাবা একটি নম্বরপ্লেট নিয়ে গ্যারেজে এলে তাঁরা নম্বরপ্লেট পরিবর্তন করে বের হন। গুলি করার পর পল্টনের বক্স কালভার্ট রোড থেকে মোটরসাইকেলে করে তাঁরা আবার আগারগাঁওয়ে ফয়সালের বোনের বাসায় যান। আবার মোটরসাইকেলের নম্বরপ্লেট পরিবর্তন করেন। একটি নম্বরপ্লেট তাঁরা ম্যানহোলে ফেলে দেন। বাসায় কিছুক্ষণ থেকে ফয়সাল ও আলমগীর দুটি কালো ব্যাগ নিয়ে বের হয়ে বাসার নিরাপত্তাকর্মীর ঠিক করা সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে আমিন বাজারের ঢালে নামেন। ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে ওই অটোরিকশাচালক জানান, আমিনবাজারে ওই দুজন এক তরুণীর সঙ্গে কথা বলেন। তিনি গাড়ি নিয়ে আগে থেকে সেখানে অপেক্ষা করছিলেন বলে ডিবি নিশ্চিত হয়েছে। সেখানে তাঁরা মোবাইল ও সিম ফেলে দেন। এরপর কালামপুর, টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা হয়ে ময়মনসিংহ যান। ময়মনসিংহের সেতুর পাড়ে গাড়ি বদলে আরেকটি প্রাইভেট কারে উঠে হালুয়াঘাটের ধারাবাজারের একটি পেট্রলপাম্পে গিয়ে থামেন। সেখানে তিন যুবক ওই দুজনকে মোটরসাইকেলে উঠিয়ে হালুয়াঘাটের ভুটিয়াপাড়ায় নিয়ে যান। রাত আড়াইটার দিকে ভুটিয়াপাড়া সীমান্ত পাড়ি দিয়ে দুজনে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের তুরায় যান। হামলা ও ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পুরো বিষয়টি ছিল নিখুঁত পরিকল্পনার অংশ। ময়মনসিংহে নেওয়া গাড়িটি ছিল ভাড়া করা।
৪ ডিসেম্বর থেকে হামলাকারী ফয়সাল, আলমগীর ও জাকির প্রার্থী ওসমান হাদির গণসংযোগে নিয়মিত অংশ নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন ইনকিলাব মঞ্চের নেতা-কর্মী ও পুলিশ। এর দেড় মাস আগে তাঁরা জুলাই যোদ্ধা পরিচয়ে হাদির দলে ভিড়েছিলেন।
ফয়সালের স্ত্রীসহ তিনজন রিমান্ডে: প্রধান আসামি ফয়সালের স্ত্রী সাহেদা পারভীন সামিয়া, শ্যালক ও ফয়সালের এক বান্ধবীকে গতকাল আদালতে হাজির করে তদন্ত কর্মকর্তা প্রত্যেকের সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন জানান। শুনানি শেষে ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জশিতা ইসলাম তাঁদের পাঁচ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
হাদির মোবাইলের হদিস নেই: হামলার পর ওসমান হাদির ব্যবহৃত মোবাইল ফোনের হদিস পাওয়া যাচ্ছে না। ডিবি বলেছে, তাঁর মোবাইলে যেহেতু বারবার হত্যার হুমকি আসছিল, তাই মোবাইলটি গুরুত্বপূর্ণ ছিল। তবে ঘটনার পর মোবাইলটি পাওয়া যায়নি। ওই মোবাইল নম্বরটি নিয়ে কাজ করছে পুলিশ।
সীমান্ত পারাপারে জড়িত আরও দুজন আটক: হাদির ওপর হামলাকারীদের সীমান্ত পার করানোর ঘটনায় শেরপুরের নালিতাবাড়ী সীমান্ত এলাকা থেকে আরও দুজনকে আটক করেছে বিজিবি। ময়মনসিংহের ৩৯ বিজিবির সেক্টর সদর দপ্তরে সংবাদ সম্মেলনে সেক্টর কমান্ডার কর্নেল সরকার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান বিষয়টি জানান। আটক দুজন হলেন, শেরপুরের নালিতাবাড়ী সীমান্ত থেকে অবৈধভাবে মানুষ পারাপারে সহায়তাকারী ফিলিপের মামাশ্বশুর বেঞ্জামিন চিড়ান এবং ফিলিপের ঘনিষ্ঠ বন্ধু সীশল। এর আগে রোববার ডিবি পুলিশ ওই এলাকা থেকে দুজনকে গ্রেপ্তার করে। সিবিয়ন দিও ও সঞ্চয় চিসিম নামের ওই দুজন পুলিশের হেফাজতে রয়েছেন।

যশোর শহরের কাজিপাড়ার কাঁঠালতলা মোড়। এখানে দাঁড়িয়ে উত্তর দিকে তাকালেই দেখা যাবে ভাঙা আর আগুনে পোড়া তিনতলা বাড়ি। তালাবদ্ধ এ বাড়িটির মালিক যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য শাহীন চাকলাদার।
২১ অক্টোবর ২০২৪
মেঘনা নদী থেকে জেগে ওঠা নতুন চর নোয়াখালীর সুবর্ণচরের আয়তন বাড়ালেও একই সঙ্গে ভয়াবহ ভাঙনে বিলীন হচ্ছে জনপদ। শুধু সুবর্ণচর নয়, উপকূলীয় জেলা নোয়াখালীর সর্বত্রই চলছে নদীর এই ভাঙা-গড়ার খেলা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শেষ পর্যন্ত টিকে থাকা ভূমির পরিমাণ ভাঙনের চেয়ে বেশি হলেও নতুন জেগে ওঠা চরগুলো এখনো বসতিস্থাপনের
৪ ঘণ্টা আগে
চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলায় পরিবেশ ধ্বংসের হিড়িক পড়েছে। চক্রের থাবা থেকে রেহাই পাচ্ছে না বনাঞ্চলের পাহাড়-টিলা, এমনকি কৃষিজমির উর্বর মাটিও। স্থানীয় প্রশাসনের অভিযান এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের মামলার পরও কোনো কিছুতেই থামানো যাচ্ছে না মাটিখেকোদের দৌরাত্ম্য।
৪ ঘণ্টা আগে
কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত শরীয়তপুরে এবার বদলে গেছে নির্বাচনী সমীকরণ। জুলাই অভ্যুত্থানের পর বিদ্যমান বাস্তবতায় জেলার তিনটি আসনই নিশ্চিত করতে চায় বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী। শরীয়তপুর-১ আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী সাঈদ আহমেদ আসলামের মনোনয়ন বাতিলের দাবিতে দফায় দফায় সড়ক অবরোধ কর
৪ ঘণ্টা আগেফটিকছড়ি সংবাদদাতা

চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলায় পরিবেশ ধ্বংসের হিড়িক পড়েছে। চক্রের থাবা থেকে রেহাই পাচ্ছে না বনাঞ্চলের পাহাড়-টিলা, এমনকি কৃষিজমির উর্বর মাটিও। স্থানীয় প্রশাসনের অভিযান এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের মামলার পরও কোনো কিছুতেই থামানো যাচ্ছে না মাটিখেকোদের দৌরাত্ম্য।
জানা গেছে, উপজেলার পাইন্দং, ভূজপুর, নারায়ণহাট, দাঁতমারা, বাগানবাজার, সুয়াবিল, হারুয়ালছড়ি ও কাঞ্চননগর ইউনিয়নসহ বিভিন্ন এলাকায় এসব মাটি কাটার ঘটনা ঘটছে। স্থানীয় প্রভাবশালীদের নেতৃত্বে চলছে এই কর্মকাণ্ড।
স্থানীয়রা বলেন, কৃষিজমি থেকে মাটি কাটা রোধে অভিযান চালাচ্ছে প্রশাসন। তবে কৌশল বদলে দিনের বেলার পরিবর্তে রাতে কাটা হচ্ছে মাটি। সন্ধ্যা থেকে ভোর পর্যন্ত চলে মাটি কাটা।
জানা গেছে, প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে উপজেলার ফসলি জমি ও টিলা থেকে মাটি কাটছে অর্ধশতাধিক চক্র। এক্সকাভেটর দিয়ে ফসলি জমির টপসয়েল কেটে ডাম্পট্রাক ও পিকআপ ভ্যানে করে ইটভাটা, পুকুর, ডোবা ও নতুন বাড়ির জায়গায় মাটি ভরাট করছে তাঁরা।
সরেজমিনে গত শনি ও রোববার দুই দিন উপজেলার পাইন্দং, ভূজপুর, বাগানবাজার ইউনিয়নের একাধিক এলাকা ঘুরে দেখা মেলে পরিবেশ ধ্বংসের এমন ভয়াবহতার চিত্র।
অনুসন্ধানে জানা যায়, পাইন্দংয়ের ফকিরাচাঁন আমতল এলাকায় রাতের আঁধারে কয়েকটি এক্সকাভেটর দিয়ে কাটা হচ্ছে কৃষিজমির মাটি। ভূজপুর ইউনিয়নের আন্ধারমানিক গলাচিপা এলাকায় স্থানীয় মো. রাশেদের নেতৃত্বে চার-পাঁচজনের একটি চক্র রাতের আঁধারে কেটে নিয়েছে বিশালাকার টিলার মাটি। এসব মাটি ডাম্পট্রাকে করে যাচ্ছে কাজীরহাট বাজারের একাধিক কৃষিজমি ভরাট কাজে। একই কায়দায় হারুয়ালছড়ি ইউনিয়নের আপন ব্রিকস ফিল্ডসংলগ্ন বাংলাবাজার সরকার বাড়ি এলাকায় কাটা হয়েছে টিলা। ভূজপুর ইউনিয়নের আছিয়া চা-বাগানসংলগ্ন মা আমেনা লেয়ার ফার্মের পাশে মো. আরিফ নামে এক ব্যক্তির মুরগির ফার্ম তৈরির জন্য কাটা হয়েছে বিশালাকার টিলা। একই দৃশ্য বাগানবাজার ইউনিয়নের লালমাই এলাকায়। যেখানে ভবন নির্মাণের জন্য দিনদুপুরে কাটা হচ্ছে উঁচু পাহাড়-টিলা। লালমাই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে স্থানীয় মনির ও মফিজের নেতৃত্বে পেলোডার দিয়ে কেটে সাবাড় করা হয়েছে ব্যবসায়ী মো. হাসেমের টিলা।
মাটি কাটার বিষয়টি স্বীকার করেন হাসেমের ছেলে মাহবুব। তিনি বলেন, ‘আমরা যাদের দিয়ে মাটি কাটিয়েছি তারা প্রশাসনের কাছ থেকে অনুমতি নিয়েছে বলে আমাদের জানিয়েছে।’ তবে কাদের দিয়ে মাটি কাটিয়েছেন তাদের নাম বলেননি মাহবুব। একই ইউনিয়নের বাগমারা এলাকায় মাহবুবুল হকের বসত টিলা, গার্ডের দোকানে নবী মাস্টারের টিলা, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান একরামুল হক বাবুলের ভাই লায়েসের নেতৃত্বে কাটা হচ্ছে কৃষিজমি। তবে মাটি কাটার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন মো. লায়েস।
লালমাই এলাকার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, ‘যখন যে দল ক্ষমতায় আসে, সে দলের লোকেরাই পাহাড়-টিলা কর্তন করে। প্রভাবশালী হওয়ার ভয়ে কেউ তাদের বিরুদ্ধে কথা বলে না, প্রতিবাদ করে না।’
চট্টগ্রাম জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের রিসার্স অফিসার মো. আশরাফ উদ্দিন বলেন, কর্তনকৃত এসব স্থান পরিদর্শন করে শিগগিরই জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম বলেন, ‘মাটি কাটার সংবাদ পেলে যত রাতই হোক অভিযান পরিচালনা করছি।’ তিনি বলেন, টিলা-পাহাড় ও কৃষিজমির টপসয়েল কাটা আমলযোগ্য অপরাধ। পুলিশ প্রশাসন চাইলে স্বপ্রণোদিত হয়ে ব্যবস্থা নিতে পারে।

চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলায় পরিবেশ ধ্বংসের হিড়িক পড়েছে। চক্রের থাবা থেকে রেহাই পাচ্ছে না বনাঞ্চলের পাহাড়-টিলা, এমনকি কৃষিজমির উর্বর মাটিও। স্থানীয় প্রশাসনের অভিযান এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের মামলার পরও কোনো কিছুতেই থামানো যাচ্ছে না মাটিখেকোদের দৌরাত্ম্য।
জানা গেছে, উপজেলার পাইন্দং, ভূজপুর, নারায়ণহাট, দাঁতমারা, বাগানবাজার, সুয়াবিল, হারুয়ালছড়ি ও কাঞ্চননগর ইউনিয়নসহ বিভিন্ন এলাকায় এসব মাটি কাটার ঘটনা ঘটছে। স্থানীয় প্রভাবশালীদের নেতৃত্বে চলছে এই কর্মকাণ্ড।
স্থানীয়রা বলেন, কৃষিজমি থেকে মাটি কাটা রোধে অভিযান চালাচ্ছে প্রশাসন। তবে কৌশল বদলে দিনের বেলার পরিবর্তে রাতে কাটা হচ্ছে মাটি। সন্ধ্যা থেকে ভোর পর্যন্ত চলে মাটি কাটা।
জানা গেছে, প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে উপজেলার ফসলি জমি ও টিলা থেকে মাটি কাটছে অর্ধশতাধিক চক্র। এক্সকাভেটর দিয়ে ফসলি জমির টপসয়েল কেটে ডাম্পট্রাক ও পিকআপ ভ্যানে করে ইটভাটা, পুকুর, ডোবা ও নতুন বাড়ির জায়গায় মাটি ভরাট করছে তাঁরা।
সরেজমিনে গত শনি ও রোববার দুই দিন উপজেলার পাইন্দং, ভূজপুর, বাগানবাজার ইউনিয়নের একাধিক এলাকা ঘুরে দেখা মেলে পরিবেশ ধ্বংসের এমন ভয়াবহতার চিত্র।
অনুসন্ধানে জানা যায়, পাইন্দংয়ের ফকিরাচাঁন আমতল এলাকায় রাতের আঁধারে কয়েকটি এক্সকাভেটর দিয়ে কাটা হচ্ছে কৃষিজমির মাটি। ভূজপুর ইউনিয়নের আন্ধারমানিক গলাচিপা এলাকায় স্থানীয় মো. রাশেদের নেতৃত্বে চার-পাঁচজনের একটি চক্র রাতের আঁধারে কেটে নিয়েছে বিশালাকার টিলার মাটি। এসব মাটি ডাম্পট্রাকে করে যাচ্ছে কাজীরহাট বাজারের একাধিক কৃষিজমি ভরাট কাজে। একই কায়দায় হারুয়ালছড়ি ইউনিয়নের আপন ব্রিকস ফিল্ডসংলগ্ন বাংলাবাজার সরকার বাড়ি এলাকায় কাটা হয়েছে টিলা। ভূজপুর ইউনিয়নের আছিয়া চা-বাগানসংলগ্ন মা আমেনা লেয়ার ফার্মের পাশে মো. আরিফ নামে এক ব্যক্তির মুরগির ফার্ম তৈরির জন্য কাটা হয়েছে বিশালাকার টিলা। একই দৃশ্য বাগানবাজার ইউনিয়নের লালমাই এলাকায়। যেখানে ভবন নির্মাণের জন্য দিনদুপুরে কাটা হচ্ছে উঁচু পাহাড়-টিলা। লালমাই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে স্থানীয় মনির ও মফিজের নেতৃত্বে পেলোডার দিয়ে কেটে সাবাড় করা হয়েছে ব্যবসায়ী মো. হাসেমের টিলা।
মাটি কাটার বিষয়টি স্বীকার করেন হাসেমের ছেলে মাহবুব। তিনি বলেন, ‘আমরা যাদের দিয়ে মাটি কাটিয়েছি তারা প্রশাসনের কাছ থেকে অনুমতি নিয়েছে বলে আমাদের জানিয়েছে।’ তবে কাদের দিয়ে মাটি কাটিয়েছেন তাদের নাম বলেননি মাহবুব। একই ইউনিয়নের বাগমারা এলাকায় মাহবুবুল হকের বসত টিলা, গার্ডের দোকানে নবী মাস্টারের টিলা, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান একরামুল হক বাবুলের ভাই লায়েসের নেতৃত্বে কাটা হচ্ছে কৃষিজমি। তবে মাটি কাটার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন মো. লায়েস।
লালমাই এলাকার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, ‘যখন যে দল ক্ষমতায় আসে, সে দলের লোকেরাই পাহাড়-টিলা কর্তন করে। প্রভাবশালী হওয়ার ভয়ে কেউ তাদের বিরুদ্ধে কথা বলে না, প্রতিবাদ করে না।’
চট্টগ্রাম জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের রিসার্স অফিসার মো. আশরাফ উদ্দিন বলেন, কর্তনকৃত এসব স্থান পরিদর্শন করে শিগগিরই জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম বলেন, ‘মাটি কাটার সংবাদ পেলে যত রাতই হোক অভিযান পরিচালনা করছি।’ তিনি বলেন, টিলা-পাহাড় ও কৃষিজমির টপসয়েল কাটা আমলযোগ্য অপরাধ। পুলিশ প্রশাসন চাইলে স্বপ্রণোদিত হয়ে ব্যবস্থা নিতে পারে।

যশোর শহরের কাজিপাড়ার কাঁঠালতলা মোড়। এখানে দাঁড়িয়ে উত্তর দিকে তাকালেই দেখা যাবে ভাঙা আর আগুনে পোড়া তিনতলা বাড়ি। তালাবদ্ধ এ বাড়িটির মালিক যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য শাহীন চাকলাদার।
২১ অক্টোবর ২০২৪
মেঘনা নদী থেকে জেগে ওঠা নতুন চর নোয়াখালীর সুবর্ণচরের আয়তন বাড়ালেও একই সঙ্গে ভয়াবহ ভাঙনে বিলীন হচ্ছে জনপদ। শুধু সুবর্ণচর নয়, উপকূলীয় জেলা নোয়াখালীর সর্বত্রই চলছে নদীর এই ভাঙা-গড়ার খেলা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শেষ পর্যন্ত টিকে থাকা ভূমির পরিমাণ ভাঙনের চেয়ে বেশি হলেও নতুন জেগে ওঠা চরগুলো এখনো বসতিস্থাপনের
৪ ঘণ্টা আগে
ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ও ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী শরিফ ওসমান বিন হাদির ওপর হামলার নেপথ্যের ব্যক্তিদের এবং উপকরণ সরবরাহকারীদের বিষয়ে এখনো কিছু জানতে পারেনি পুলিশ। হামলাকারী দুজন ঘটনার আগে-পরে যাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন, তাঁদের কয়েকজনকে আটকের পর জিজ্ঞাসাবাদে বেশ কিছু তথ্য পেয়েছে ডিবি ও র্যাব
৪ ঘণ্টা আগে
কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত শরীয়তপুরে এবার বদলে গেছে নির্বাচনী সমীকরণ। জুলাই অভ্যুত্থানের পর বিদ্যমান বাস্তবতায় জেলার তিনটি আসনই নিশ্চিত করতে চায় বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী। শরীয়তপুর-১ আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী সাঈদ আহমেদ আসলামের মনোনয়ন বাতিলের দাবিতে দফায় দফায় সড়ক অবরোধ কর
৪ ঘণ্টা আগেশরীয়তপুর প্রতিনিধি

কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত শরীয়তপুরে এবার বদলে গেছে নির্বাচনী সমীকরণ। জুলাই অভ্যুত্থানের পর বিদ্যমান বাস্তবতায় জেলার তিনটি আসনই নিশ্চিত করতে চায় বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী। শরীয়তপুর-১ আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী সাঈদ আহমেদ আসলামের মনোনয়ন বাতিলের দাবিতে দফায় দফায় সড়ক অবরোধ করেছে দলের অপর অংশ। তবে অন্য দুই আসনে এমন বিরোধ নেই। সবকটি আসনেই নেতা-কর্মীদের নিয়ে এলাকা চষে বেড়াচ্ছেন বিএনপি ও জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থীরা।
শরীয়তপুর-১: স্বাধীনতার পর একবারই এখানে জয় পায় বিএনপি। সেটি ছিল ১৯৭৯ সালে। এর বাইরে বিভিন্ন সময়ে আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর দখলে ছিল এটি। শরীয়তপুর সদর ও জাজিরা নিয়ে গঠিত আসনটিতে এবার বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী সাঈদ আহমেদ আসলাম। তিনি জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক এবং শরীয়তপুর-৩ আসনের বাসিন্দা। তবে তাঁর প্রাথমিক মনোনয়ন মেনে নিতে নারাজ আরেক মনোনয়নপ্রত্যাশী জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক এমপি সরদার এ কে এম নাসির উদ্দীন কালুর অনুসারীরা। সাঈদ আহমেদ আসলামের মনোনয়ন বাতিলের দাবিতে দফায় দফায় সড়ক অবরোধ করেছেন তাঁরা। দলীয়ভাবে মীমাংসা না হলে শেষ পর্যন্ত নাসির উদ্দীন কালু স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে পারেন।
জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থী শিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক সভাপতি ড. মোশারফ হোসেন মাসুদ। সাঈদ আহমেদ আসলাম ও মোশারফ হোসেন মাসুদ দুজনই নেতা-কর্মীদের নিয়ে ব্যাপক প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস থেকে জালালুদ্দীন আহমদ, এনসিপি থেকে মো. আব্দুর রহমান, ইসলামী আন্দোলন থেকে মুফতি তোফায়েল আহমেদ কাসেমী, গণঅধিকার পরিষদ থেকে অ্যাডভোকেট খবির উদ্দিন মনোনয়ন পেতে পারেন।
শরীয়তপুর-২: নড়িয়া ও সখিপুর থানা নিয়ে গঠিত আসনটি বরাবরই আওয়ামী লীগের দখলে ছিল। শুধু ১৯৮৬ ও ১৯৮৮ সালে দুবার বিজয়ী হন জাতীয় পার্টির প্রার্থী। এবার এখানে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী দলের জেলা সভাপতি ও সাবেক এমপি শফিকুর রহমান কিরণ। জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থী ন্যাশনাল ডক্টরস ফোরামের (এনডিএফ) সেক্রেটারি ডা. মাহমুদ হোসেন বকাউল। দুজনই এলাকায় গণসংযোগ ও পথসভাসহ নানাভাবে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস থেকে মো. দবির হোসেন শেখ, ইসলামী আন্দোলন থেকে মুফতি মো. ইমরান হোসাইন এবং গণঅধিকার পরিষদ থেকে আক্তারুজ্জামান সম্রাট মাঝি মনোনয়ন পেতে পারেন।
শরীয়তপুর-৩: স্বাধীনতার পর বেশির ভাগ সময়েই এখানে জয় পেয়েছে আওয়ামী লীগ। শুধু ১৯৭৯ সালে একবার মুসলিম লীগ, ১৯৮৬ সালে একবার জাতীয় পার্টির প্রার্থী বিজয়ী হন। গোসাইরহাট, ডামুড্যা ও ভেদরগঞ্জ উপজেলার একাংশ নিয়ে গঠিত আসনটিতে এবার বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী তারেক রহমানের সাবেক একান্ত সচিব মিয়া নুরুদ্দিন আহাম্মেদ অপু। জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থী শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের কোষাধ্যক্ষ মোহাম্মদ আজহারুল ইসলাম। দুজনই নেতা-কর্মীদের নিয়ে ব্যাপক প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। খেলাফত মজলিস থেকে মুফতি খবির উদ্দিন এবং ইসলামী আন্দোলন থেকে অ্যাডভোকেট মো. হানিফ মিয়া মনোনয়ন পেতে পারেন।

কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত শরীয়তপুরে এবার বদলে গেছে নির্বাচনী সমীকরণ। জুলাই অভ্যুত্থানের পর বিদ্যমান বাস্তবতায় জেলার তিনটি আসনই নিশ্চিত করতে চায় বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী। শরীয়তপুর-১ আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী সাঈদ আহমেদ আসলামের মনোনয়ন বাতিলের দাবিতে দফায় দফায় সড়ক অবরোধ করেছে দলের অপর অংশ। তবে অন্য দুই আসনে এমন বিরোধ নেই। সবকটি আসনেই নেতা-কর্মীদের নিয়ে এলাকা চষে বেড়াচ্ছেন বিএনপি ও জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থীরা।
শরীয়তপুর-১: স্বাধীনতার পর একবারই এখানে জয় পায় বিএনপি। সেটি ছিল ১৯৭৯ সালে। এর বাইরে বিভিন্ন সময়ে আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর দখলে ছিল এটি। শরীয়তপুর সদর ও জাজিরা নিয়ে গঠিত আসনটিতে এবার বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী সাঈদ আহমেদ আসলাম। তিনি জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক এবং শরীয়তপুর-৩ আসনের বাসিন্দা। তবে তাঁর প্রাথমিক মনোনয়ন মেনে নিতে নারাজ আরেক মনোনয়নপ্রত্যাশী জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক এমপি সরদার এ কে এম নাসির উদ্দীন কালুর অনুসারীরা। সাঈদ আহমেদ আসলামের মনোনয়ন বাতিলের দাবিতে দফায় দফায় সড়ক অবরোধ করেছেন তাঁরা। দলীয়ভাবে মীমাংসা না হলে শেষ পর্যন্ত নাসির উদ্দীন কালু স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে পারেন।
জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থী শিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক সভাপতি ড. মোশারফ হোসেন মাসুদ। সাঈদ আহমেদ আসলাম ও মোশারফ হোসেন মাসুদ দুজনই নেতা-কর্মীদের নিয়ে ব্যাপক প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস থেকে জালালুদ্দীন আহমদ, এনসিপি থেকে মো. আব্দুর রহমান, ইসলামী আন্দোলন থেকে মুফতি তোফায়েল আহমেদ কাসেমী, গণঅধিকার পরিষদ থেকে অ্যাডভোকেট খবির উদ্দিন মনোনয়ন পেতে পারেন।
শরীয়তপুর-২: নড়িয়া ও সখিপুর থানা নিয়ে গঠিত আসনটি বরাবরই আওয়ামী লীগের দখলে ছিল। শুধু ১৯৮৬ ও ১৯৮৮ সালে দুবার বিজয়ী হন জাতীয় পার্টির প্রার্থী। এবার এখানে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী দলের জেলা সভাপতি ও সাবেক এমপি শফিকুর রহমান কিরণ। জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থী ন্যাশনাল ডক্টরস ফোরামের (এনডিএফ) সেক্রেটারি ডা. মাহমুদ হোসেন বকাউল। দুজনই এলাকায় গণসংযোগ ও পথসভাসহ নানাভাবে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস থেকে মো. দবির হোসেন শেখ, ইসলামী আন্দোলন থেকে মুফতি মো. ইমরান হোসাইন এবং গণঅধিকার পরিষদ থেকে আক্তারুজ্জামান সম্রাট মাঝি মনোনয়ন পেতে পারেন।
শরীয়তপুর-৩: স্বাধীনতার পর বেশির ভাগ সময়েই এখানে জয় পেয়েছে আওয়ামী লীগ। শুধু ১৯৭৯ সালে একবার মুসলিম লীগ, ১৯৮৬ সালে একবার জাতীয় পার্টির প্রার্থী বিজয়ী হন। গোসাইরহাট, ডামুড্যা ও ভেদরগঞ্জ উপজেলার একাংশ নিয়ে গঠিত আসনটিতে এবার বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী তারেক রহমানের সাবেক একান্ত সচিব মিয়া নুরুদ্দিন আহাম্মেদ অপু। জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থী শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের কোষাধ্যক্ষ মোহাম্মদ আজহারুল ইসলাম। দুজনই নেতা-কর্মীদের নিয়ে ব্যাপক প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। খেলাফত মজলিস থেকে মুফতি খবির উদ্দিন এবং ইসলামী আন্দোলন থেকে অ্যাডভোকেট মো. হানিফ মিয়া মনোনয়ন পেতে পারেন।

যশোর শহরের কাজিপাড়ার কাঁঠালতলা মোড়। এখানে দাঁড়িয়ে উত্তর দিকে তাকালেই দেখা যাবে ভাঙা আর আগুনে পোড়া তিনতলা বাড়ি। তালাবদ্ধ এ বাড়িটির মালিক যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য শাহীন চাকলাদার।
২১ অক্টোবর ২০২৪
মেঘনা নদী থেকে জেগে ওঠা নতুন চর নোয়াখালীর সুবর্ণচরের আয়তন বাড়ালেও একই সঙ্গে ভয়াবহ ভাঙনে বিলীন হচ্ছে জনপদ। শুধু সুবর্ণচর নয়, উপকূলীয় জেলা নোয়াখালীর সর্বত্রই চলছে নদীর এই ভাঙা-গড়ার খেলা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শেষ পর্যন্ত টিকে থাকা ভূমির পরিমাণ ভাঙনের চেয়ে বেশি হলেও নতুন জেগে ওঠা চরগুলো এখনো বসতিস্থাপনের
৪ ঘণ্টা আগে
ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ও ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী শরিফ ওসমান বিন হাদির ওপর হামলার নেপথ্যের ব্যক্তিদের এবং উপকরণ সরবরাহকারীদের বিষয়ে এখনো কিছু জানতে পারেনি পুলিশ। হামলাকারী দুজন ঘটনার আগে-পরে যাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন, তাঁদের কয়েকজনকে আটকের পর জিজ্ঞাসাবাদে বেশ কিছু তথ্য পেয়েছে ডিবি ও র্যাব
৪ ঘণ্টা আগে
চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলায় পরিবেশ ধ্বংসের হিড়িক পড়েছে। চক্রের থাবা থেকে রেহাই পাচ্ছে না বনাঞ্চলের পাহাড়-টিলা, এমনকি কৃষিজমির উর্বর মাটিও। স্থানীয় প্রশাসনের অভিযান এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের মামলার পরও কোনো কিছুতেই থামানো যাচ্ছে না মাটিখেকোদের দৌরাত্ম্য।
৪ ঘণ্টা আগে