Ajker Patrika

বারান্দা-মেঝেতে রোগী তালাবদ্ধ নতুন ভবন

  • ২০২৩ সালে ঠিকাদার ভবনটি বুঝিয়ে দিলেও তা এখনো চালো হয়নি।
  • ৩২টি চিকিৎসকের পদের মধ্যে বর্তমানে কর্মরত মাত্র পাঁচজন।
যশোর ও চৌগাছা প্রতিনিধি
বারান্দায় শয্যা পেতে চলছে রোগীদের চিকিৎসা। সম্প্রতি যশোরের চৌগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। ছবি: আজকের পত্রিকা
বারান্দায় শয্যা পেতে চলছে রোগীদের চিকিৎসা। সম্প্রতি যশোরের চৌগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। ছবি: আজকের পত্রিকা

যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার গুলবাগপুরের ১৩ মাস বয়সী আব্দুর রহমান ডায়রিয়ায় আক্রান্ত। শিশুটিকে ভর্তি করা হয়েছে পাশের চৌগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। কিন্তু ডায়রিয়া ওয়ার্ডে শয্যা না পাওয়ায় তার জায়গা হয়েছে বারান্দায়। সেখানে কোনোরকমে চিকিৎসা মিললেও মাঘ মাসের শীতল বাতাসে নাজেহাল হতে হচ্ছে শিশুটি ও তার সঙ্গে থাকা স্বজনদের।

আব্দুর রহমানের দাদি শাহিদা বেগম বলেন, ‘তিন দিন ধরে পোতাছেলেডা অসুস্থ। হাসপাতালে নিয়ে এসে বেড পাইনি। বারান্দাতে ডায়রিয়া ওয়ার্ড বানিয়ে ওখানে মেঝেতে চিকিৎসা চলছে। অতিরিক্ত রোগীর চাপে বারান্দার মেঝেতে গাদাগাদি করে থাকতে হচ্ছে। দিনের বেলাতে পাশ দিয়ে মানুষের চলাচলে ধুলা উড়ে আসছে বেডে। অন্যদিকে রাতে শীতের কষ্ট। গরিব মানুষ, উপায় না পেয়ে কষ্ট হলেও থাকতে হচ্ছে এভাবে।’

শুধু আব্দুর রহমান নয়, আরও অনেক রোগীকে এ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসে শয্যার সংকটে চরম বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে। অতিরিক্ত রোগীর চাপে শয্যা না পাওয়ায় কারও স্থান হচ্ছে ওয়ার্ডের মেঝেতে, কারও বারান্দায়। অথচ ২০১৮ সালে ৫০ থেকে ১০০ শয্যায় উন্নীত করা হয় হাসপাতালটি। ২১ কোটি ৫৭ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয় ছয়তলা ভবন। যাবতীয় কাজ শেষ করে ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে ঠিকাদার ভবনটি বুঝিয়ে দিলেও এখনো সেখানে কার্যক্রম শুরু হয়নি।

সরেজমিনে দেখা গেছে, হাসপাতালের বহির্বিভাগে সুদীর্ঘ সারি। গাদাগাদি করে দাঁড়িয়ে রোগীরা চিকিৎসা নিচ্ছে। বিভিন্ন ওয়ার্ড বিশেষ করে মহিলা, গাইনি ও শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি রোগীর চাপ। সেখানে মেঝে ও বারান্দাতে রোগীরা শুয়ে আছেন।

সিংহঝুলি থেকে আসা নাজমা বেগম বলেন, ‘ভেতরে জায়গা পাইনি। নার্সরা বারান্দাতে জায়গা দিয়েছে, সেখানেই চিকিৎসা নিচ্ছি।’ আহাদ আলী নামের এক রোগীর স্বজন বলেন, ‘হাসপাতালে শয্যার সংকট ‍দূরে করতে ১০০ শয্যার নতুন হাসপাতাল নির্মাণ করা হয়েছে। অথচ চালু হয়নি। জনগণের দুর্ভোগ দূর করতেই তো এই হাসপাতাল নির্মাণ; অথচ সেই দুর্ভোগ কাটছে না।’

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, নতুন ভবন নির্মাণ ও যাবতীয় সরঞ্জাম বসানো হলেও তা চালু হচ্ছে না। নিরাপত্তাব্যবস্থা না থাকায় সেখান থেকে সরঞ্জাম চুরি হয়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন তলা থেকে জিনিসপত্র খুলে ও কেটে নিয়ে গেছে চোরেরা। কয়েকজন কর্মচারী জানান, ৫০টির বেশি বেসিন খুলে নিয়ে গেছে। সেই সঙ্গে লাইট, অক্সিজেন প্ল্যান্টের পাইপও খুলে নেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছে।

এদিকে হাসপাতালে ৩২টি চিকিৎসকের পদের মধ্যে শূন্য রয়েছে ১৬টি পদ। বাকিদের মধ্যে তিনজন দীর্ঘদিন ধরে কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়াই অনুপস্থিত। এ ছাড়া পেষণে গেছেন আটজন। ফলে পাঁচজন চিকিৎসক দিয়ে চলছে কার্যক্রম।

সার্বিক বিষয়ে কথা হলে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আহসানুল মিজান রুমি বলেন, ‘তিনটি উপজেলার মধ্যবর্তী স্থানে হওয়ায় এ হাসপাতালে সব সময় রোগীর চাপ থাকে। এ কারণে ৫০ থেকে ১০০ শয্যায় উন্নীত করা হলেও তা চালু হয়নি দেড় বছরেও। ভবনটি চালুর জন্য দুই দফা লিখিত পত্র পাঠিয়েছি; তবে এখনো সাড়া মেলেনি। চিকিৎসক ও শয্যার সংকটে চিকিৎসা দিতে বেগ পেতে হচ্ছে আমাদের।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত