Ajker Patrika

ইউএনও দপ্তরের নাজিরকে মারপিট, থানা যুবদলের আহ্বায়ক বহিষ্কার

যশোর ও মনিরামপুর প্রতিনিধি 
আপডেট : ০৭ মার্চ ২০২৫, ২৩: ০৯
মনিরামপুর থানা যুবদলের আহ্বায়ক মোতাহারুল ইসলাম রিয়াদ। ছবি: সংগৃহীত
মনিরামপুর থানা যুবদলের আহ্বায়ক মোতাহারুল ইসলাম রিয়াদ। ছবি: সংগৃহীত

যশোরের মনিরামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) দপ্তরের নাজির শাহিন আলমকে মোবাইলে হুমকির পর মারপিটের ঘটনায় মনিরামপুর থানা যুবদলের আহ্বায়ক মোতাহারুল ইসলাম রিয়াদকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। আজ শুক্রবার যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সহদপ্তর সম্পাদক মিনহাজুল ইসলাম ভূঁইয়া স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

এর আগে গত বুধবার বিকেলে নিজ কার্যালয়ের সামনে থানা যুবদলের আহ্বায়ক রিয়াদের নেতৃত্বে নাজির শাহিন আলমকে মারধর করা হয়। পরদিন গতকাল বৃহস্পতিবার ঘটনার প্রতিবাদে মানববন্ধন করেন মনিরামপুর উপজেলা পরিষদের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তাতে অংশ নেন ইউএনও নিশাত তামান্না ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) নিয়াজ মাখদুম।

শাহীন আলমকে মারপিটের একটি ভিডিও আজকের পত্রিকার হাতে এসেছে। তাতে দেখা যায়, কানে মোবাইল ফোন ধরে সাদা পাঞ্জাবি-পাজামা পরিহিত যুবদলের আহ্বায়ক রিয়াদ দলবল নিয়ে উপজেলা পরিষদ চত্বরে ঢুকে শহীদ মিনারের পূর্ব পাশে দাঁড়িয়ে থাকা শাহীন আলমের কাছে যান। সেখানে রিয়াদ আঙুল উঁচিয়ে শাহীনকে বকাঝকা করছেন। একপর্যায়ে দলের মধ্য থেকে একজন শাহীনের মাথায় চড় মেরেছেন। সঙ্গের কয়েকজন শাহীনকে হাত ধরে টানাটানি করছেন।

মারপিটের শিকার নাজির শাহীন বলেন, ‘বুধবার বিকেলে অফিসের সামনের শহীদ মিনারের পাশে দাঁড়িয়ে সহকর্মী সাইফুল ইসলামের সঙ্গে গল্প করছিলাম। এ সময় শাহীনের ফোনে কল করে কথা বলছিলেন রিয়াদ। একপর্যায়ে সাইফুল বলে ওঠেন, শাহীন আমার সামনে আছে। তখন রিয়াদ আমার সঙ্গে কথা বলতে চাইলে সাইফুল আমাকে ফোন ধরিয়ে দেন।’

নাজির শাহীন আরও বলেন, ‘আমি ফোন ধরতেই রিয়াদ আমাকে গালমন্দ করতে থাকে। আমি প্রতিবাদ করলে নানা হুমকি দিয়ে সে আমার অবস্থান জানতে চায়। আমি অফিসের সামনে থাকার কথা বললে ফোন কেটে দিয়ে কিছুক্ষণের মধ্যে ২০-২৫ জনকে নিয়ে রিয়াদ আমাদের কাছে আসে। এরপর রিয়াদের উপস্থিতিতে আমাকে মারপিট ও ধাক্কাধাক্কি করা হয়।’

দলীয় সূত্রে জানা যায়, মনিরামপুর বিএনপির রাজনীতিতে দুটি মেরুকরণ রয়েছে। এক গ্রুপের নেতৃত্বে রয়েছেন মনিরামপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি শহীদ মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন। অন্য গ্রুপের নেতৃত্বে আছেন উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ মুছা ও বর্তমান সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান মিন্টু। মোতাহারুল ইসলাম রিয়াদ মোহাম্মদ মুছা ও আসাদুজ্জামান মিন্টুর অনুসারী।

মনিরামপুর থানা যুবদলের আহ্বায়ক মোতাহারুল ইসলাম রিয়াদ। ছবি: সংগৃহীত
মনিরামপুর থানা যুবদলের আহ্বায়ক মোতাহারুল ইসলাম রিয়াদ। ছবি: সংগৃহীত

শাহীন বলেন, ‘আমি ঘটনাটি সঙ্গে সঙ্গে বিএনপির থানা কমিটির সেক্রেটারি আসাদুজ্জামান মিন্টুকে মোবাইল ফোনে জানাই। এরপর ওরা চলে যায়। তাৎক্ষণিক আমি বিষয়টি ইউএনও স্যারকেও বলেছি। স্যার জেলা প্রশাসক স্যারকে জানিয়েছেন।’

এক প্রশ্নের জবাবে শাহীন বলেন, ‘আমাকে মোবাইলে রিয়াদ বলছিল, অফিসে বসে দালালি করিস। তোর হাত-পা ভেঙে দেব। কেন সে এসব কথা বলেছে, তা বুঝে উঠতে পারছি না।’

শাহীন আরও বলেন, ‘এ ঘটনা জানাজানি হলে রাতে থানা বিএনপির সেক্রেটারি আসাদুজ্জামান ইউএনও স্যারের বাসায় গিয়ে দেখা করেন। এরপর থানা বিএনপির সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ মুছা, আসাদুজ্জামান মিন্টু ও রিয়াদ আমার কাছে এসে ভুল স্বীকার করেছেন। আমি তাঁদের বলেছি, বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জেনেছেন। এই বিষয়ে তাঁরা সিদ্ধান্ত নেবেন।’

এ বিষয়ে জানতে মনিরামপুর থানা যুবদলের আহ্বায়ক মোতাহারুল ইসলাম রিয়াদকে ফোন করা হলে তিনি সংযোগ কেটে দেন। তবে তিনি স্থানীয় সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, শাহিন আলমের সঙ্গে ওই ধরনের কোনো ঘটনা ঘটেনি। তাঁর সঙ্গে মোবাইলে কোনো কথাই হয়নি। অভিযোগটি তাঁর মনগড়া হতে পারে।

রিয়াদকে দল থেকে বহিষ্কারের বিজ্ঞপ্তি। ছবি: সংগৃহীত
রিয়াদকে দল থেকে বহিষ্কারের বিজ্ঞপ্তি। ছবি: সংগৃহীত

মনিরামপুর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান মিন্টু ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। বিষয়টি বড় কিছু নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, রিয়াদের সঙ্গে ইউএনও দপ্তরের শাহীনের কথা-কাটাকাটি হয়েছে। একপর্যায়ে অন্য একজন শাহীনকে একটা চড় মেরেছে।

আসাদুজ্জামান মিন্টু বলেন, ‘এই বিষয়ে ইউএনওর সঙ্গে আমার দুই দফা কথা হয়েছে। একবার সরাসরি। অন্যবার মোবাইল ফোনে। আমি রিয়াদ ও শাহীনের মধ্যে মিলমিশ করে দিয়েছি।’

মনিরামপুর উপজেলার ইউএনও নিশাত তামান্না আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বিএনপির কয়েকজন আমার কাছে এসেছিল। বিষয়টি মিলমিশের কিছু নয়। শাহীনকে ফিজিক্যালি অ্যাসাল্ট করা হয়েছে। আমি বিষয়টি ডিসি স্যারকে জানিয়েছে। তিনি এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দেবেন।’

নিশাত তামান্না আরও বলেন, ‘শাহীনকে মারপিটের ঘটনায় আমরা উপজেলা পরিষদে কর্মরত সবাই একত্র হয়ে প্রতিবাদ সভা করেছি। আমরা হয়রানিমুক্ত সুষ্ঠু কর্ম পরিবেশ চাই।’

ইউএনও বলেন, ‘আমরা এখনো মামলায় যাইনি। ডিসি স্যারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছি। আশা করছি একটা সিদ্ধান্ত আসবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা র-এর ওপর নিষেধাজ্ঞার সুপারিশ মার্কিন ফেডারেল সংস্থার

ভারত নিয়ে পশ্চিমবঙ্গে রিকশাচালকের সঙ্গে তর্ক, বাংলাদেশিকে ফেরত

আকরামদের প্রথম খবর দেওয়া হয়েছিল, তামিম আর নেই

‘মদের বোতল’ হাতে বৈষম্যবিরোধী নেতা-নেত্রীর ভিডিও, সদস্যপদ স্থগিত

চীনের আগে ভারত সফরে যেতে চেয়েছিলেন ড. ইউনূস: দ্য হিন্দুকে প্রেস সচিব

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত