Ajker Patrika

সীমান্তে গরু-মাদক পাচার

পাচারের রুট গর্জনিয়া হাট

  • সীমান্ত পেরিয়ে আসা সিংহভাগ গরু বিক্রি হয় এই হাটে, ছড়িয়ে যায় সারা দেশে
  • প্রাথমিক ইজারা ছিল আড়াই কোটি, চোরাই গরুর কারণে ডাক উঠেছে ২৫ কোটি টাকা
  • সীমান্ত দিয়ে গরুর সঙ্গে আসছে মাদক, যাচ্ছে নিত্যপণ্য ও জ্বালানি তেল
মাইনউদ্দিন শাহেদ, কক্সবাজার
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

মিয়ানমার সীমান্তবর্তী দুই ইউনিয়ন কক্সবাজারের রামু উপজেলার গর্জনিয়া ও কচ্ছপিয়া। এই দুই ইউনিয়নের প্রধান বাজার গর্জনিয়া। সপ্তাহে দুই দিন সেখানে বসে হাট। আর এই হাট ঘিরে বেড়েছে সীমান্তে চোরাচালান। আসছে গরু, মাদক। আর সীমান্ত পেরিয়ে যাচ্ছে নিত্যপণ্য এবং জ্বালানি তেল। হাটকে ঘিরে গরু চোলাচালানের কথা স্বীকারও করেছে নিরাপত্তা বাহিনী। তবে অপরাধীরা থেকে যাচ্ছে অধরা।

চোরাচালান রোধে ২০০৫ সালে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ জেটিঘাট দিয়ে মিয়ানমারের গবাদিপশুর করিডর চালু করা হয়েছিল। রাজস্ব দিয়ে এই করিডরের মাধ্যমে ব্যবসায়ীরা গরু-মহিষ আনতেন। তবে ২০২২ সালে দেশীয় খামারিদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সরকার করিডর বন্ধ করে দেয়। এরপর থেকে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি, আলীকদম ও কক্সবাজারের উখিয়ার সীমান্ত দিয়ে গরু চোরাচালান শুরু হয়। চোরাই পথে আসা গরুর বৈধতা দিতে ব্যবহৃত হচ্ছে গর্জনিয়া বাজার। রামু উপজেলা সদর থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সদর পার হয়ে এই বাজারে যেতে হয়। সম্প্রতি এ বাজারে গিয়ে দেখা যায়, শতাধিক ছোট-বড় ট্রাকে গরু বোঝাই করা হচ্ছে।

চট্টগ্রাম থেকে আসা গরু ব্যবসায়ী আবদুল হাকিম বলেন, হাজার দশেক টাকা কমে বার্মিজ গরু কেনা যায়। এ জন্য এক ট্রাক (১২-১৪টি) গরু নিতে পারলে লাখখানেক টাকা লাভ হয়। তবে পথে অনেক ঝুঁকিও আছে। অনেক সময় গরু লুটের ঘটনা ঘটে।

পুলিশ, স্থানীয় লোকজন ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মিয়ানমার সীমান্ত দিয়ে প্রতিদিন হাজারো গরু ঢুকছে। বেশির ভাগ গরু গর্জনিয়া বাজারে তোলা হয়। তবে কিছু গরু পাহাড়ি পথ বেয়ে অন্যান্য বাজারেও নেওয়া হয়। চোরাই পথে আসা এসব গরু স্থানীয় হিসেবে চালাতে চোরাকারবারিরা ইউনিয়ন পরিষদের কাগজপত্রও ব্যবহার করছে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ২০২৪ সালে ৩ লাখের বেশি গরু মিয়ানমার সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে ঢুকেছে। এসব গরু গর্জনিয়া বাজার ঘুরে কক্সবাজার, ঈদগাঁও, চকরিয়া হয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সরবরাহ করা হচ্ছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে গরু পাচার ও ব্যবসায় জড়িত একাধিক ব্যক্তি জানান, সীমান্ত পাড়ি দেওয়া প্রতি গরু ঈদগাঁও বাজার পর্যন্ত পৌঁছাতে ১৯ হাজার টাকা চাঁদা দিতে হয়। এ ছাড়া চোরাকারবারিরা সশস্ত্র পাহারায় গরুর সঙ্গে ইয়াবা ও আইসের (ক্রিস্টাল মেথ) বড় চালানও নিয়ে আসছে। মিয়ানমারের সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো কম দামে গরুর সঙ্গে ইয়াবা ও আইসের চালান পাঠায়। বিনিময়ে বাংলাদেশ থেকে খাদ্যসামগ্রী, জ্বালানি ও ভোজ্যতেল নিয়ে যায়। এর আগে জান্তা বাহিনীর সদস্যরাও একইভাবে চোরাচালানে সহযোগিতা দিয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

চোরাই গরুতে হাট চড়া

গর্জনিয়া বাজারের প্রাথমিক ইজারা ধরা হয়েছিল আড়াই কোটি টাকা, তবে নিলামে ডাক উঠেছে প্রায় ২৫ কোটি টাকা। স্থানীয়রা বলছেন, এর কারণ, কম টাকার মিয়ানমারের চোরাই গরু বেশি দামে বিক্রি হয় এই হাটে।

রামু উপজেলা প্রাণিসম্পদ

কার্যালয় সূত্র জানিয়েছে, গর্জনিয়া ইউনিয়নে ২৬টি খামারে ৪ হাজার ৩৮৮টি এবং কচ্ছপিয়া ইউনিয়নে ৩১টি খামারে ৫ হাজার ৭৬২টি গরু পালন করা হচ্ছে।

এই সব গরু এই হাটে বিক্রি করলেও ইজারার টাকা তোলা সম্ভব নয় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

তবে বড় অঙ্কের টাকায় বাজার ইজারা নিয়ে আলোচনায় এসেছেন তৌহিদুল ইসলাম। দরপত্র অনুযায়ী প্রতি মাসে এই বাজার থেকে ২ কোটি টাকার ওপরে আদায় করতে হবে। মিয়ানমার থেকে গরু না এলে এত টাকা উশুল করা সম্ভব কি না—জানতে চাইলে তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ‘কেউ মিয়ানমারের গরু বাজারে এনে বেচলে আমাদের কিছু করার নেই। আমরা তো চোরাই গরুর ব্যবসায় জড়িত নই।’

গ্রামীণ একটি বাজারের ইজারামূল্য এত বেশি ওঠা নিয়ে রামু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রাশেদুল ইসলাম বলেন, সম্ভবত সারা দেশের মধ্যে গর্জনিয়া বাজার সর্বোচ্চ দামের ইজারা। নিলামগ্রহীতাদের মধ্যে সমঝোতা না হওয়ায় সর্বোচ্চ মূল্যে বাজার ইজারা হয়েছে বলে মনে করেন তিনি। মিয়ানমারের চোরাই গরু ছাড়া এই ইজারামূল্য তোলা সম্ভব কি না— জানতে চাইলে ইউএনও মো. রাশেদুল ইসলাম কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

চোরাচালানকে কেন্দ্র করে খুনখারাবি

গরু ও ইয়াবা পাচারকে কেন্দ্র করে রামু উপজেলার গর্জনিয়া, কচ্ছপিয়া ও কাউয়ারখোপ এলাকায় শাহীন ডাকাত ও আবছার বাহিনীসহ ততোধিক সন্ত্রাসী গ্রুপ গড়ে উঠেছে। এসব গ্রুপের মধ্যে প্রায় সময় সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। সর্বশেষ ঈদের দিন সন্ধ্যায় রামু উপজেলার কাউয়ারখোপ ইউনিয়নের চৌধুরী খামারপাড়ায় মিয়ানমার থেকে অবৈধ পথে আনা শতাধিক গরু পাচারকে কেন্দ্র করে দুই বাহিনীর মধ্যে ব্যাপক গোলাগুলি হয়েছে। এতে এক বাহিনীর প্রধান মোহাম্মদ নবী (৪২) নিহত হয়েছেন।

গরু চোরাচালানকে কেন্দ্র করে অপরাধ বাড়ার সত্যতা স্বীকার করেন রামু থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইমন কান্তি চৌধুরী। আজকের পত্রিকাকে তিনি বলেন, ‘কোনটি মিয়ানমারের আর কোনটি দেশি গরু, তা পরখ করা কঠিন। পাচারকারীদের হাতে গরু বেচাকেনার কাগজপত্র থাকে। তারপরও চোরাচালান হওয়া পণ্য বা গরু ধরতে তাঁদের নজরদারি অব্যাহত রয়েছে।’

এ প্রসঙ্গে নাইক্ষ্যংছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাসরুরুল হক বলেন, চোরাকারবারিরা গরুগুলো ছাড়িয়ে নিতে নানা অপকর্মের আশ্রয় নেয়।

বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) এক কর্মকর্তা জানান, ‘সীমান্তের এপার-ওপারের চোরাকারবারিরা সুযোগ বুঝে গরু নিয়ে আসছে। লোকালয়ে ঢুকে পড়লে স্থানীয়রা চোরাই গরু নিজেদের দাবি করে অনেক সময় বিজিবির সঙ্গেও চ্যালেঞ্জ করে। এতে কিছু করার থাকে না।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নেত্রকোনায় অটোস্ট্যান্ডে যাত্রী ওঠানামা নিয়ে সংঘর্ষে যুবক নিহত

নেত্রকোনা প্রতিনিধি
জিহাদুল ইসলাম । ছবি: আজকের পত্রিকা
জিহাদুল ইসলাম । ছবি: আজকের পত্রিকা

নেত্রকোনার পূর্বধলায় অটোস্ট্যান্ডে যাত্রী ওঠানামাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে জিহাদুল ইসলাম (৩২) নামের এক যুবক নিহত হয়েছেন।

আজ সোমবার (২২ ডিসেম্বর) বেলা ৩টার দিকে পূর্বধলা উপজেলায় চৌরাস্তা মোড়ে ইলাসপুর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সজল কুমার সরকার এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

নিহত জিহাদুল ইসলাম পূর্বধলার সদর ইউনিয়নের ইলাসপুর গ্রামের আব্দুল হাইয়ের ছেলে। তিনি পেশায় ট্রাকচালক। তাঁর দুটি সন্তান রয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার চৌরাস্তা অটোস্ট্যান্ডে যাত্রী ওঠানামা নিয়ে দুই অটোচালকের মধ্যে বাগ্‌বিতণ্ডা হয়। জিহাদুল বিষয়টি সমাধান করতে গেলে অটোচালক নিজাম উদ্দিনের সঙ্গে তাঁর ঝগড়া ও হাতাহাতি হয়। স্থানীয় লোকজন বিবাদ থামিয়ে উভয় পক্ষকে বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়।

কিছুক্ষণ পর অটোচালক নিজাম উদ্দিন দেশীয় অস্ত্রসহ তাঁর লোকজন নিয়ে এসে জিহাদুলের ওপর হামলা করেন। এ সময় জিহাদুলের পক্ষের লোকজনও তাঁদের প্রতিহত করেন। সংঘর্ষের একপর্যায়ে নিজাম উদ্দিন শাবল দিয়ে জিহাদুলকে আঘাত করে গুরুতর জখম করেন।

গুরুতর আহত অবস্থায় স্থানীয়রা জিহাদুলকে উদ্ধার করে পূর্বধলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্তব্যরত চিকিৎসক সোহেল রানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে জিহাদুলকে মৃত ঘোষণা করেন।

খবর পেয়ে নেত্রকোনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সজল কুমার সরকার ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান। তিনি বলেন, অটোরিকশায় যাত্রী ওঠানামা ও ভাড়াকে কেন্দ্র করে অটোচালক নিজাম উদ্দিন ও জিহাদুলের মধ্যে বাগ্‌বিতণ্ডার জেরে এ সংঘর্ষ হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে তাঁদের মধ্যে আগে থেকেই জমি-সংক্রান্ত ঝামেলা রয়েছে। জিহাদুলের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য জেলা সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হচ্ছে। এ বিষয়ে তদন্ত করে দায়ীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

পূর্বধলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. দিদারুল ইসলাম বলেন, ঘটনাস্থল পরিদর্শনের পাশাপাশি সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্তের চেষ্টা চলছে। নিহত ব্যক্তির সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য নেত্রকোনা সদর হাসপাতালে পাঠানো হবে। এ ঘটনায় পরবর্তী আইনি প্রক্রিয়া চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

প্যারোলে মুক্তি পেয়ে বাবার শেষকৃত্যে অংশ নিলেন আওয়ামী লীগ নেতা প্রদ্যুৎ কুমার

দুর্গাপুর (রাজশাহী) প্রতিনিধি  
প্যারোলে মুক্তি পেয়ে বাবার শেষকৃত্যে অংশ নেন আওয়ামী লীগ নেতা প্রদ্যুৎ কুমার সরকার। ছবি: আজকের পত্রিকা
প্যারোলে মুক্তি পেয়ে বাবার শেষকৃত্যে অংশ নেন আওয়ামী লীগ নেতা প্রদ্যুৎ কুমার সরকার। ছবি: আজকের পত্রিকা

রাজশাহীর দুর্গাপুরে প্যারোলে মুক্তি পেয়ে বাবার শেষকৃত্যে অংশ নিয়েছেন প্রদ্যুৎ কুমার সরকার নামের কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের এক নেতা। আজ সোমবার দুপুরে কারাগার থেকে প্যারোলে মুক্তি পেয়ে তিনি উপজেলার বেলঘরিয়া গ্রামে বাবার শেষকৃত্যে অংশ নেন।

প্রদ্যুৎ কুমার সরকার রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক। তাঁর বাড়ি রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার বেলঘরিয়া গ্রামে।

গতকাল রোববার রাতে বার্ধক্যজনিত কারণে প্রদ্যুৎ কুমারের বাবা পল্লিচিকিৎসক গোপাল চন্দ্র সরকার মারা যান। বাবার মৃত্যুর খবর পেয়ে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে আজ প্যারোলে মুক্তি পান প্রদ্যুৎ কুমার। বেলা প্রায় ২টা ৩০ মিনিটে কারাগার থেকে মুক্তি নিয়ে বেলা ৩টার দিকে তিনি নিজ গ্রামে আসেন। পরে পুলিশি প্রহরায় বাড়ির পাশে বাবার দাহকর্মে অংশ নেন তিনি।

প্রদ্যুৎ কুমারের ছোট ভাই সুকেশ কুমার জানান, বাবার মৃত্যুর পর প্যারোলে মুক্তির জন্য অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বরাবর লিখিত আবেদন করলে বেলা

১টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত তিন ঘণ্টা প্যারোলে মুক্তি পান তাঁর ভাই।

জানা গেছে, এ বছরের ২ সেপ্টেম্বর নগরীর ভাড়া বাসা থেকে প্রদ্যুৎ কুমারকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁর বিরুদ্ধে রাজশাহী নগরীর শাহমখদুম থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা করা হয়। বর্তমানে তিনি রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দী রয়েছেন।

দুর্গাপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) হাবিবুর রহমান বলেন, ‘আমরা থানা থেকে অংশ নিয়েছিলাম। বিস্তারিত তথ্য জেলা পুলিশের হাতে ছিল। তারাই সব বলতে পারবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

স্বামীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করায় স্ত্রীর কারাদণ্ড

মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি
আপডেট : ২২ ডিসেম্বর ২০২৫, ২২: ৪৩
মানিকগঞ্জের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত। ছবি: সংগৃহীত
মানিকগঞ্জের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত। ছবি: সংগৃহীত

স্বামীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলার অভিযোগে বাদীকে এক দিনের কারাদণ্ড দিয়েছেন মানিকগঞ্জের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত। গতকাল রোববার দুপুরে আদালতের বিচারক মামুন হাসান খান এই রায় ঘোষণা করেন।

দণ্ডপ্রাপ্ত নারী হলেন শারমিন আক্তার। বাবার বাড়ি সাটুরিয়া উপজেলার তেবাড়িয়া গ্রামে। পার্শ্ববর্তী জেলা টাঙ্গাইলের নাগরপুর উপজেলার মানরা গ্রামের শহীদ হোসেনের সাবেক স্ত্রী।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, গত ১৭ নভেম্বর শারমিন আক্তার ও শহীদ হোসেনের তালাক সম্পন্ন হয়। কাবিনের অর্থ ও এক সন্তানের ভরণপোষণ বাবদ শারমিনকে ১৪ লাখ টাকা দেন শহীদ হোসেন। এর দুই দিন পর (১৯ নভেম্বর) তালাকের বিষয়টি গোপন করে সাবেক স্বামীর বিরুদ্ধে যৌতুক দাবির অভিযোগে মামলা করেন শারমিন। এর পরিপ্রেক্ষিতে আদালত আসামি শহীদের বিরুদ্ধে সমন জারি করেন।

গতকাল রোববার দুপুরে আসামি শহীদ ও বাদী শারমিন আদালতে হাজির হন। এ সময় দুই পক্ষের আইনজীবীদের শুনানি শেষে মামলাটি মিথ্যা হিসেবে প্রমাণিত হয়। এরপর মামলা থেকে আসামিকে অব্যাহতি দেন। পাশাপাশি মিথ্যা মামলা করার দায়ে শারমিনকে এক দিনের কারাদণ্ড দেন বিচারক মামুন হাসান খান।

খালাসপ্রাপ্ত শহীদ হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, দাম্পত্যকলহের কারণে সংসার করা সম্ভব হয়নি। পরে স্ত্রীর সম্মতিতে তাঁদের মধ্যে তালাক হয়ে যায় এবং আর্থিক দেনা-পাওনা পরিশোধ করা হয়। এরপরও তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করা হয়।

আদালতে দেওয়া বক্তব্যে বাদী শারমিন আক্তার দাবি করেন, তিনি কাবিনের টাকা পেয়েছেন। তবে আগে চাকরি বাবদ শহীদ তাঁর কাছ থেকে ১২ লাখ টাকা নিয়েছিলেন। এ কারণে তিনি মামলা করেছেন।

আসামিপক্ষের আইনজীবী আজিজুল হক সাংবাদিকদের বলেন, সাবেক স্বামীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করায় আদালতের বিচারক ওই নারীকে এক দিনের কারাদণ্ড দিয়েছেন। আদালতের নির্দেশে আসামি শারমিনকে কারাগারে পাঠানো হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বড়দিন উপলক্ষ ২১টি গির্জায় আর্থিক প্রণোদনা দিল ডিএনসিসি

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

আসন্ন বড়দিন উপলক্ষে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজের ঐচ্ছিক তহবিল থেকে রাজধানীর ২১টি গির্জায় প্রায় ২০ লাখ টাকা আর্থিক প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। আজ সোমবার (২২ ডিসেম্বর) ডিএনসিসির জনসংযোগ বিভাগ এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানায়।

ডিএনসিসি জানিয়েছে, বড়দিনকে কেন্দ্র করে গির্জাগুলোর ধর্মীয় আয়োজন, সামাজিক কল্যাণমূলক কার্যক্রম এবং সার্বিক প্রস্তুতি গ্রহণে এই আর্থিক সহায়তা সহায়ক ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে।

বড়দিন উপলক্ষে শুভেচ্ছা জানিয়ে ডিএনসিসি প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ বলেন, শহরের সব ধর্মের মানুষ যেন নিরাপদ, আনন্দঘন ও উৎসবমুখর পরিবেশে নিজ নিজ ধর্মীয় উৎসব পালন করতে পারেন, সে লক্ষ্যে সিটি করপোরেশন কাজ করছে। তিনি বলেন, ‘আমরা ঢাকাকে একটি বহু সংস্কৃতির মানবিক নগরীতে পরিণত করতে চাই, যেখানে সব ধর্ম ও সংস্কৃতির মানুষ নির্ভয়ে ও নিশ্চিন্তে বসবাস করতে পারবেন।’

ডিএনসিসি প্রশাসক আরও বলেন, নাগরিক সম্প্রীতি, সহনশীলতা ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধকে ডিএনসিসি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়। এরই ধারাবাহিকতায় বড়দিনসহ বিভিন্ন ধর্মীয় উৎসবে বাস্তবসম্মত সহায়তা অব্যাহত থাকবে।

ডিএনসিসি জানায়, এর আগে ঈদ ও দুর্গাপূজা উপলক্ষে মসজিদ, মন্দির ও ঈদগাহে আর্থিক প্রণোদনা দেওয়া হয়েছিল।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত