Ajker Patrika

চট্টগ্রাম-১৫ আসন: ইমেজ সংকটে বেকায়দায় আওয়ামী লীগ প্রার্থী নদভী

জমির উদ্দিন, চট্টগ্রাম
আপডেট : ১৭ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৯: ৪৭
চট্টগ্রাম-১৫ আসন: ইমেজ সংকটে বেকায়দায় আওয়ামী লীগ প্রার্থী নদভী

চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া) আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আবু রেজা মোহাম্মদ নিজামুদ্দিন নদভী বেশ বেকায়দায় পড়েছেন। নির্বাচন সামনে রেখে একদিকে তিনি আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে কেলেঙ্কারি ও নির্বাচন অনুসন্ধান কমিটির শাস্তিমূলক ব্যবস্থার সুপারিশে ইমেজ সংকটে পড়েছেন। তার ওপর আওয়ামী লীগের প্রায় সর্বস্তরের নেতা-কর্মীরা তাঁর বিরুদ্ধে একাট্টা হওয়ায় স্থানীয়ভাবে তিনি কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন।

আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রামে (আইআইইউসি) ওঠা নানা অভিযোগ নদভীকে বেশ কিছু দিন ধরেই ব্যস্ত রেখেছে। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) মিলে নদভীকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছে। দুদকের দেওয়া চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে ইউজিসির একাধিক ব্যাখ্যা তলবের চিঠি ঝুলছে তাঁর সামনে।

আইন লঙ্ঘন করে কোটি কোটি টাকার সম্মানী-ভাতা গ্রহণের অভিযোগের ব্যাখ্যা দিতে হচ্ছে তাঁকে নির্বাচনী ডামাডোলের মধ্যেই। আবার নিজের পাকিস্তানি বন্ধুকে অবৈধভাবে আইআইইউসিতে চাকরির সুযোগ দিয়েও ইউজিসির তোপের মুখে নদভী। অন্যদিকে সাতকানিয়া ও লোহাগাড়া আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও তৃণমূলের বেশির ভাগ নেতা-কর্মীই পাশে নেই তাঁর। প্রকাশ্যে তাঁরা অবস্থান নিয়ে ভোটের মাঠে তৈরি করেছেন নদভীবিরোধী অবস্থান।

সম্প্রতি আবু রেজা নদভীর বিরুদ্ধে আইআইইউসি কেলেঙ্কারির সূত্রপাত ঘটে তাঁর পাকিস্তানি বন্ধু আমিন নদভীকে লাখ টাকা বেতনের চাকরি দেওয়াকে কেন্দ্র করে। পাকিস্তানি নাগরিক হয়ে বাংলাদেশে ভিসা নিয়ে অনুমতি ছাড়াই দীর্ঘদিন ধরে আইআইইউসিতে চাকরি করছিলেন আমিন নদভী। এই অভিযোগ পেয়ে ইউজিসি গত ২২ নভেম্বর ব্যাখ্যা চেয়ে চিঠি দেয়। তিন দিনের মধ্যে এ ব্যাখ্যা দিতে বলা হয় আইআইইউসি রেজিস্ট্রারকে। এর পরপরই আইআইইউসি থেকে মাসে ১ কোটি ৩৭ লাখ ৬১ হাজার ৪৪২ টাকার সম্মানী নেওয়ার খবর জানাজানি হয় নির্বাচনী ডামাডোলের ভেতর।

হলফনামায় এই তথ্য চাউর হওয়ার পর দেশজুড়ে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন আবু রেজা নদভী। কারণ, দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ও ট্রাস্ট আইন অনুযায়ী কোনো ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য কিংবা চেয়ারম্যান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কোনো মাসিক কোনো ভাতা বা সম্মানী গ্রহণ করতে পারেন না। তোলপাড় হওয়া এ ঘটনায় ইউজিসি তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করে।

৮ ডিসেম্বর পাঁচ দিনের মধ্যে এ-সংক্রান্ত অভিযোগের ব্যাখ্যা দিতে আইআইইউসির রেজিস্ট্রারকে চিঠি দেয় ইউজিসি। এসব বিষয়ে ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ চন্দ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আইআইইউসি থেকে অবৈধভাবে ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান ও সদস্য টাকা নেওয়ার বিষয়ে দুদক অনুসন্ধান করতে একটি চিঠি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে দেয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয় সেটি আমাদের কাছে পাঠায়। তারপর আমরা এ বিষয়ে আইআইইউসির কাছে ব্যাখ্যা চাই। এ ছাড়া পাকিস্তানি নাগরিককে কীভাবে চাকরি দেওয়া হয়েছে, সে বিষয়েও ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে।’

স্থানীয় আওয়ামী লীগে নড়বড়ে অবস্থান হওয়ায় দলের কেন্দ্রীয় ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমীনের ‘কাঁধে ভর করে’ এবারের ভোটের বৈতরণি পার হতে চাইছিলেন নদভী। কিন্তু নদভীর পক্ষে অবস্থান নিয়ে নিজেই বেকায়দায় পড়েছেন আমিনুল ইসলাম আমীন। সাতকানিয়া-লোহাগাড়ায় নিজের অনুসারীরাই তাঁকে নদভীর পক্ষ থেকে সরে আসার আহ্বান জানিয়েছেন।

এ বিষয়ে আমিনুল ইসলামের অনুসারী হিসেবে পরিচিত লোহাগাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি খুরশিদুল আলম বলেন, ‘গত ১০ বছরে এই আসনে নদভীর কাজগুলো আমাদের পছন্দ হয়নি। তিনি আমাদের (আওয়ামী লীগের) প্রতি আন্তরিক নন। এখানে অনেক জুলুম হয়েছে, অন্যায় হয়েছে। আমি এতে সায় দিইনি। মোতালেব অত্যন্ত ভালো মানুষ। তাঁর সঙ্গে দলের সম্পর্ক রয়েছে। তাই ওনার সঙ্গে কাজ করছি।’

অন্যদিকে নদভীর বিরুদ্ধে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের প্রমাণ পেয়েছে নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটি। অনুসন্ধান কমিটির চেয়ারম্যান (সিনিয়র সহকারী জজ) শাহনেওয়াজ মনিরের তদন্তে উঠে এসেছে, নদভীর সমর্থকেরা স্বতন্ত্র প্রার্থীর লোকজনকে মারধর, হামলাসহ নানাভাবে পেশিশক্তির ব্যবহার করছেন। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্বাচন কমিশন সচিব বরাবর সুপারিশ পাঠানো হয়েছে। এসব বিষয়ে শাস্তির মুখোমুখিও হতে পারেন নদভী।

এ ছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুল মোতালেবকে সমর্থনকারী ১ শতাংশ ভোটারের নিরাপত্তা দিতে জেলা পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দিয়েছেন সংসদীয় আসন ২৯২-এর নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটির চেয়ারম্যান।

এদিকে দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের নির্বাহী সদস্য ও চিকিৎসক নেতা আ ম ম মিনহাজুর রহমানও মোতালেবের পক্ষে কাজ করছেন। ওই আসনে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে দাঁড়িয়েছিলেন। মোতালেবের প্রার্থিতা ফিরে পাওয়ায় অনেকটা তাঁকে সমর্থন দিয়ে নিজের প্রার্থিতা ফিরে পেতে নির্বাচন কমিশনে আবেদন করেননি।

ডা. মিনহাজ বলেন, ‘আমরা সাতকানিয়া ও লোহাগাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সব পর্যায়ের নেতা-কর্মী আওয়ামী লীগ দলীয় স্বতন্ত্র প্রার্থী জননেতা এম এ মোতালেবের পক্ষে ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে নেমেছি। ৭ জানুয়ারির নির্বাচন সুষ্ঠু, অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক হবে এবং জনগণ এ নির্বাচনকে উৎসবে পরিণত করে নিজেদের পছন্দের প্রার্থী বেছে নেবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

শেখ হাসিনাকে ফেরত পাঠানোর ব্যাপারে এখনো ইতিবাচক সাড়া দেয়নি ভারত: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

রংপুর প্রতিনিধি
রংপুরে সার্কিট হাউসে সাংবাদিকের সঙ্গে কথা বলেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। ছবি: আজকের পত্রিকা
রংপুরে সার্কিট হাউসে সাংবাদিকের সঙ্গে কথা বলেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। ছবি: আজকের পত্রিকা

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেছেন, শেখ হাসিনাকে দেশে ফেরত দেয়ার ব্যাপারে ভারত এখনও ইতিবাচক সাড়া দেয়নি। ট্রাইব্যুনালের রায় নিয়ে তারা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছে, আমরাও তাদের প্রতিক্রিয়ার অপেক্ষায় আছি। আজ শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) সকালে রংপুর সার্কিট হাউসে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন তিনি। রংপুর অঞ্চলে চার দিনের সফরে এসেছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা।

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা তো চেয়েছি যে তাকে (শেখ হাসিনাকে) ফেরত পাঠানো হোক। যেহেতু উনি একজন কনভিক্টেড, যেহেতু সর্বোচ্চ বিচারিক সংস্থা তাকে একটি শাস্তি দিয়েছে। কিন্তু আমরা ইতিবাচক কোনো সাড়া এখন পর্যন্ত পাইনি। এটা নিয়ে আমার মনে হয় স্পেকুলেট না করাই ভালো। দেখা যাক কী হয়। আমরা তো চেয়েছি খুব, এ ধরনের ঘটনায় তো ঝট করে একদিনে সাত দিনে কোনো পরিবর্তন ঘটে না। আমরা অপেক্ষা করব, দেখি, ভারতের পক্ষ থেকে কি আসছে রিঅ্যাকশন।’

তৌহিদ হোসেন বলেন, একটা রিঅ্যাকশন আমরা দেখেছি যেটা, সেটা হলো তারা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখছে, এরকম একটা কথা আসছে আমাদের। দেখুক তারা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে।

বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে ফেরার বিষয়ে পররাষ্ট্র দপ্তরে কোনো তথ্য নেই বলে উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, "তারেক সাহেব কখন আসবেন এই সম্বন্ধে আমার কাছে কোনো তথ্য নেই। উনার স্ত্রী সম্ভবত আসছেন বা পৌঁছে গেছেন হয়তো ইতিমধ্যে। আজকে সকালে পৌঁছার কথা ছিল। বেগম জিয়াকে আজকে নেওয়া হচ্ছে না, আমি ঢাকা থেকে আজকে সকালে জানলাম যে, আজকে নেওয়া হচ্ছে না। একটু টেকনিক্যাল প্রবলেম দেখা দিয়েছে ওই এয়ারক্রাফট নিয়ে। সেক্ষেত্রে হয়তো এক-আধ দিন দেরি হতে পারে। "

আরাকান আর্মি বাংলাদেশিদের ধরে নিয়ে যাওয়া প্রসঙ্গে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, "আরাকান আর্মির সাথে আমাদের দ্বিপাক্ষিক আলোচনা সম্ভব নয়। তারা একটা নন-স্টেট অ্যাক্টর। আমরা স্টেট হিসেবে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা যেমন মিয়ানমারের কর্তৃপক্ষ, থাইল্যান্ড বা ভারতের সাথে করতে পারি সেটা তাদের সাথে করতে পারি না। তবে আমাদের স্বার্থ যেহেতু আছে, আমাদের দেখতে হবে। এই ঘটনা যাতে কমে বা আদৌ না ঘটে, এটার জন্য পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। "

এছাড়াও নীলফামারীতে প্রস্তাবিত চীনা হাসপাতালের কার্যক্রম অন্তর্বর্তী সরকার দ্রুত শুরু করে যেতে চায় বলেও জানান পররাষ্ট্র উপদেষ্টা। একই সঙ্গে নির্বাচিত সরকার এলে এই কাজ সমাপ্ত করবে বলেও আশা তার। এ সময় পিছিয়ে পড়া রংপুরের প্রত্নতাত্ত্বিকসহ সবক্ষেত্রে নেয়ার ব্যাপারে ইতিবাচক সরকারের সদিচ্ছার কথা জানান তৌহিদ হোসেন।

এরপর পররাষ্ট্র উপদেষ্টা সপরিবারে রংপুর জমিদার বাড়ি তাজহাটে পরিদর্শনে যান। এছাড়াও বিকেলে রংপুর সার্কিট হাউসে চা-চক্রের কথা রয়েছে তৌহিদ হোসেনের। আগামীকাল রংপুরের প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় এবং রংপুরের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জিলা স্কুল পরিদর্শন করার কথাও রয়েছে তার।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

হাতিয়ায় ৫৬০০ কেজি জাটকা ইলিশ জব্দ, এতিমখানায় বিতরণ

­হাতিয়া (নোয়াখালী) প্রতিনিধি
কোস্ট গার্ডের অভিযানে জব্দ জাটকা ইলিশ। ছবি: আজকের পত্রিকা
কোস্ট গার্ডের অভিযানে জব্দ জাটকা ইলিশ। ছবি: আজকের পত্রিকা

নোয়াখালীর হাতিয়ার জাগলার চর এলাকার মেঘনা নদীতে অভিযান চালিয়েছে কোস্ট গার্ড। এ সময় একটি নৌকা থেকে ৫ হাজার ৬০০ কেজি জাটকা ইলিশ জব্দ করা হয়। এই ঘটনায় আটক কয়েকজন মাঝিমাল্লার কাছ থেকে মুচলেকা নিয়ে তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়।

গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে কোস্ট গার্ড হাতিয়ার একটি দল এই অভিযান চালায়। জব্দ করা জাটকাগুলোর মূল্য প্রায় ২৮ লাখ টাকা।

কোস্ট গার্ড মিডিয়া কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট মো. আবুল কাশেম জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে মেঘনা নদীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে কোস্ট গার্ড। অভিযানে মেঘনা নদীর জাগলার চর এলাকায় একটি কাঠের নৌকায় তল্লাশি করা হয়। ওই নৌকা থেকে ৫ হাজার ৬০০ কেজি জাটকা জব্দ করা হয়। এ সময় মাঝিদের মুচলেকা নিয়ে নৌকা ছেড়ে দেওয়া হয়। জব্দ মাছগুলো মৎস্য কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে এতিমখানা ও দুস্থ ব্যক্তিদের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে। মৎস্য সম্পদ রক্ষায় কোস্ট গার্ডের এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে জানান এই কর্মকর্তা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

মাঠে পড়ে ছিল মাছ ব্যবসায়ীর রক্তাক্ত লাশ

ফরিদপুর প্রতিনিধি
ঘটনাস্থলে স্থানীয় বাসিন্দারা জড়ো হন। ছবি: আজকের পত্রিকা
ঘটনাস্থলে স্থানীয় বাসিন্দারা জড়ো হন। ছবি: আজকের পত্রিকা

ফরিদপুরের সালথায় উৎপল সরকার (৩৫) নামের এক মাছ ব্যবসায়ীর রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। আজ শুক্রবার সকালে উপজেলার আটঘর ইউনিয়নের গৌরদিয়া এলাকার কালীতলা ব্রিজ-সংলগ্ন মাঠ থেকে লাশটি উদ্ধার করে পুলিশ। এই ঘটনায় মাঠ-সংলগ্ন সেতু থেকে চোখ বাঁধা অবস্থায় থাকা ফিরোজ মোল্যা নামের এক ভ্যানচালককে জীবিত উদ্ধার করে স্থানীয় লোকজন।

নিহত উৎপল ফরিদপুর জেলা সদরের কানাইপুর ইউনিয়নের রনকাইল গ্রামের অজয় সরকারের ছেলে। তাঁর স্ত্রী ও আড়াই বছর বয়সী এক শিশুসন্তান রয়েছে।

থানা-পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আজ ভোরে সড়কের পাশে ফাঁকা মাঠে রক্তাক্ত অবস্থায় একটি লাশ দেখতে পায় স্থানীয় লোকজন। পাশেই একটি সেতুর সঙ্গে একই গ্রামের ভ্যানচালক ফিরোজ মোল্যাকে চোখ বাঁধা অবস্থায় বেঁধে রাখা হয়েছিল। পরে স্থানীয় বাসিন্দাদের হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি খুলে বলেন তিনি।

ভ্যানচালকের বরাত দিয়ে রনকাইল গ্রামের বাসিন্দা ও প্রতিবেশী কাজী শাহীন বলেন, উৎপল সরকার ব্যাটারিচালিত ভ্যানে করে গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরে মাছ কিনতে যাচ্ছিলেন। পথে অজ্ঞাতপরিচয় তিন-চার ব্যক্তি দেশীয় অস্ত্রের মুখে ভ্যানচালক ফিরোজ মোল্যাকে গামছা দিয়ে চোখ বেঁধে ব্রিজের রেলিংয়ে বেঁধে ফেলে। তারা উৎপলের সঙ্গে থাকা টাকাপয়সা লুট করে তাঁকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হত্যা করে পালিয়ে যায়।

বিষয়টি নিশ্চিত করে সালথা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) কে এম মারুফ হাসান রাসেল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘দুই থেকে তিনজন দুর্বৃত্ত ঘটনাটি ঘটিয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। তবে এটাকে ডাকাতি বলা যায় না। ঘটনাটি নিয়ে তদন্ত চলমান। তদন্ত শেষে মূল কারণ বলা যাবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বাসার দরজা ভেঙে চবি শিক্ষার্থীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার

চবি প্রতিনিধি 
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ওমর ফারুক সুমন নামের এক শিক্ষার্থীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) রাতে চট্টগ্রাম নগরীর খুলশী এলাকার একটি বাসা থেকে লাশটি উদ্ধার করে পুলিশ।

ওমর ফারুক বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন।

স্থানীয় ও পরিবারের সদস্যরা জানান, সুমন খুলশীতে তাঁর মামার বাসায় থাকতেন। তাঁর বড় ভাইও সেখানে থাকেন। দুই দিন আগে সুমনের মামা পুরো পরিবার নিয়ে তুরস্কে বেড়াতে যান। বাসায় সুমন ও তাঁর বড় ভাই ছিলেন। গতকাল বিকেল ৪টার দিকে ভাইয়ের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন সুমন। ফোনে তাঁর বড় ভাই কখন বাসায় ফিরবেন জানতে চান সুমন। বড় ভাই জানান যে তাঁর আসতে একটু দেরি হবে। এর কিছুক্ষণ পর বড় ভাই সুমনকে ফোন করলে তিনি আর ফোন রিসিভ করেননি। পরে বাড়ি থেকে সুমনের মা ফোন দিয়ে যোগাযোগ করতে না পেরে বিষয়টি বড় ভাইকে জানান। এতে উদ্বেগ দেখা দিলে বড় ভাই বিল্ডিংয়ের দারোয়ানকে দিয়ে বাসা চেক করান।

দারোয়ান কলিংবেল বাজিয়েও কোনো সাড়া না পেয়ে বড় ভাইকে জানালে তিনি দ্রুত বাসায় এসে সুমনকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পান। খবর পেয়ে পুলিশ এসে লাশ উদ্ধার করে। ঘটনাস্থলে চিরকুট মিলেছে। এতে লেখা রয়েছে, ‘আমি সুমন, ওমর ফারুক সুমন। আমার কোনো আশা-আকাঙ্ক্ষা নেই। আর আমার কারও প্রতি কোনো অভিযোগ নেই। সবাই ভালো থাকবেন।’ এর আগে ১ ডিসেম্বর লেখা আরেকটি চিরকুট পাওয়া যায়। সেখানে লেখা ছিল—‘আশাই জীবন, আশাই মরণ, ব্যর্থতা হতাশা-অন্ধকারে নিয়ে যায়।’

খুলশী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহীনুর জামান বলেন, ‘সুমন ও তাঁর বড় ভাই একসঙ্গে মামার বাসায় থাকতেন। মামা ও মামি বর্তমানে বিদেশে আছেন। বড় ভাই সন্ধ্যায় বাইরে যান। সে সময় সুমন বাসায় একা ছিলেন। বড় ভাই বাসায় ফিরে এসে বারবার ডাকলেও ফ্ল্যাটের ভেতর থেকে কোনো সাড়া পাননি। পরে দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকলে সুমনের মরদেহ ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। প্রাথমিক তদন্তে এটি আত্মহত্যা মনে হলেও আমরা সব সম্ভাব্য কারণ খতিয়ে দেখছি। ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহটি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত