Ajker Patrika

চট্টগ্রাম-১৫ আসন: ইমেজ সংকটে বেকায়দায় আওয়ামী লীগ প্রার্থী নদভী

জমির উদ্দিন, চট্টগ্রাম
আপডেট : ১৭ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৯: ৪৭
চট্টগ্রাম-১৫ আসন: ইমেজ সংকটে বেকায়দায় আওয়ামী লীগ প্রার্থী নদভী

চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া) আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আবু রেজা মোহাম্মদ নিজামুদ্দিন নদভী বেশ বেকায়দায় পড়েছেন। নির্বাচন সামনে রেখে একদিকে তিনি আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে কেলেঙ্কারি ও নির্বাচন অনুসন্ধান কমিটির শাস্তিমূলক ব্যবস্থার সুপারিশে ইমেজ সংকটে পড়েছেন। তার ওপর আওয়ামী লীগের প্রায় সর্বস্তরের নেতা-কর্মীরা তাঁর বিরুদ্ধে একাট্টা হওয়ায় স্থানীয়ভাবে তিনি কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন।

আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রামে (আইআইইউসি) ওঠা নানা অভিযোগ নদভীকে বেশ কিছু দিন ধরেই ব্যস্ত রেখেছে। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) মিলে নদভীকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছে। দুদকের দেওয়া চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে ইউজিসির একাধিক ব্যাখ্যা তলবের চিঠি ঝুলছে তাঁর সামনে।

আইন লঙ্ঘন করে কোটি কোটি টাকার সম্মানী-ভাতা গ্রহণের অভিযোগের ব্যাখ্যা দিতে হচ্ছে তাঁকে নির্বাচনী ডামাডোলের মধ্যেই। আবার নিজের পাকিস্তানি বন্ধুকে অবৈধভাবে আইআইইউসিতে চাকরির সুযোগ দিয়েও ইউজিসির তোপের মুখে নদভী। অন্যদিকে সাতকানিয়া ও লোহাগাড়া আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও তৃণমূলের বেশির ভাগ নেতা-কর্মীই পাশে নেই তাঁর। প্রকাশ্যে তাঁরা অবস্থান নিয়ে ভোটের মাঠে তৈরি করেছেন নদভীবিরোধী অবস্থান।

সম্প্রতি আবু রেজা নদভীর বিরুদ্ধে আইআইইউসি কেলেঙ্কারির সূত্রপাত ঘটে তাঁর পাকিস্তানি বন্ধু আমিন নদভীকে লাখ টাকা বেতনের চাকরি দেওয়াকে কেন্দ্র করে। পাকিস্তানি নাগরিক হয়ে বাংলাদেশে ভিসা নিয়ে অনুমতি ছাড়াই দীর্ঘদিন ধরে আইআইইউসিতে চাকরি করছিলেন আমিন নদভী। এই অভিযোগ পেয়ে ইউজিসি গত ২২ নভেম্বর ব্যাখ্যা চেয়ে চিঠি দেয়। তিন দিনের মধ্যে এ ব্যাখ্যা দিতে বলা হয় আইআইইউসি রেজিস্ট্রারকে। এর পরপরই আইআইইউসি থেকে মাসে ১ কোটি ৩৭ লাখ ৬১ হাজার ৪৪২ টাকার সম্মানী নেওয়ার খবর জানাজানি হয় নির্বাচনী ডামাডোলের ভেতর।

হলফনামায় এই তথ্য চাউর হওয়ার পর দেশজুড়ে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন আবু রেজা নদভী। কারণ, দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ও ট্রাস্ট আইন অনুযায়ী কোনো ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য কিংবা চেয়ারম্যান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কোনো মাসিক কোনো ভাতা বা সম্মানী গ্রহণ করতে পারেন না। তোলপাড় হওয়া এ ঘটনায় ইউজিসি তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করে।

৮ ডিসেম্বর পাঁচ দিনের মধ্যে এ-সংক্রান্ত অভিযোগের ব্যাখ্যা দিতে আইআইইউসির রেজিস্ট্রারকে চিঠি দেয় ইউজিসি। এসব বিষয়ে ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ চন্দ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আইআইইউসি থেকে অবৈধভাবে ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান ও সদস্য টাকা নেওয়ার বিষয়ে দুদক অনুসন্ধান করতে একটি চিঠি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে দেয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয় সেটি আমাদের কাছে পাঠায়। তারপর আমরা এ বিষয়ে আইআইইউসির কাছে ব্যাখ্যা চাই। এ ছাড়া পাকিস্তানি নাগরিককে কীভাবে চাকরি দেওয়া হয়েছে, সে বিষয়েও ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে।’

স্থানীয় আওয়ামী লীগে নড়বড়ে অবস্থান হওয়ায় দলের কেন্দ্রীয় ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমীনের ‘কাঁধে ভর করে’ এবারের ভোটের বৈতরণি পার হতে চাইছিলেন নদভী। কিন্তু নদভীর পক্ষে অবস্থান নিয়ে নিজেই বেকায়দায় পড়েছেন আমিনুল ইসলাম আমীন। সাতকানিয়া-লোহাগাড়ায় নিজের অনুসারীরাই তাঁকে নদভীর পক্ষ থেকে সরে আসার আহ্বান জানিয়েছেন।

এ বিষয়ে আমিনুল ইসলামের অনুসারী হিসেবে পরিচিত লোহাগাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি খুরশিদুল আলম বলেন, ‘গত ১০ বছরে এই আসনে নদভীর কাজগুলো আমাদের পছন্দ হয়নি। তিনি আমাদের (আওয়ামী লীগের) প্রতি আন্তরিক নন। এখানে অনেক জুলুম হয়েছে, অন্যায় হয়েছে। আমি এতে সায় দিইনি। মোতালেব অত্যন্ত ভালো মানুষ। তাঁর সঙ্গে দলের সম্পর্ক রয়েছে। তাই ওনার সঙ্গে কাজ করছি।’

অন্যদিকে নদভীর বিরুদ্ধে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের প্রমাণ পেয়েছে নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটি। অনুসন্ধান কমিটির চেয়ারম্যান (সিনিয়র সহকারী জজ) শাহনেওয়াজ মনিরের তদন্তে উঠে এসেছে, নদভীর সমর্থকেরা স্বতন্ত্র প্রার্থীর লোকজনকে মারধর, হামলাসহ নানাভাবে পেশিশক্তির ব্যবহার করছেন। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্বাচন কমিশন সচিব বরাবর সুপারিশ পাঠানো হয়েছে। এসব বিষয়ে শাস্তির মুখোমুখিও হতে পারেন নদভী।

এ ছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুল মোতালেবকে সমর্থনকারী ১ শতাংশ ভোটারের নিরাপত্তা দিতে জেলা পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দিয়েছেন সংসদীয় আসন ২৯২-এর নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটির চেয়ারম্যান।

এদিকে দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের নির্বাহী সদস্য ও চিকিৎসক নেতা আ ম ম মিনহাজুর রহমানও মোতালেবের পক্ষে কাজ করছেন। ওই আসনে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে দাঁড়িয়েছিলেন। মোতালেবের প্রার্থিতা ফিরে পাওয়ায় অনেকটা তাঁকে সমর্থন দিয়ে নিজের প্রার্থিতা ফিরে পেতে নির্বাচন কমিশনে আবেদন করেননি।

ডা. মিনহাজ বলেন, ‘আমরা সাতকানিয়া ও লোহাগাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সব পর্যায়ের নেতা-কর্মী আওয়ামী লীগ দলীয় স্বতন্ত্র প্রার্থী জননেতা এম এ মোতালেবের পক্ষে ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে নেমেছি। ৭ জানুয়ারির নির্বাচন সুষ্ঠু, অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক হবে এবং জনগণ এ নির্বাচনকে উৎসবে পরিণত করে নিজেদের পছন্দের প্রার্থী বেছে নেবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

‎টঙ্গীতে যৌথ বাহিনীর অভিযানে জুলাই যোদ্ধা তাহরিমা গ্রেপ্তার

টঙ্গী (গাজীপুর) প্রতিনিধি
আপডেট : ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০: ৪৬
টঙ্গীর মরকুন পূর্বপাড়া চৌরঙ্গীর পাড় এলাকায় নিজ বাসা থেকে গ্রেপ্তার তাহরিমা জান্নাত সুরভী। ছবি: আজকের পত্রিকা
টঙ্গীর মরকুন পূর্বপাড়া চৌরঙ্গীর পাড় এলাকায় নিজ বাসা থেকে গ্রেপ্তার তাহরিমা জান্নাত সুরভী। ছবি: আজকের পত্রিকা

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সরকার, সরকারের একাধিক উপদেষ্টা ও সেনাবাহিনীর প্রধানকে নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করায় মামলা দায়েরের পর গ্রেপ্তার করা হয়েছে জুলাই যোদ্ধা তাহরিমা জান্নাত সুরভীকে (২৫)। ‎বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) রাত ১টার দিকে টঙ্গীর মরকুন পূর্বপাড়া চৌরঙ্গীর পাড় এলাকায় তাঁর নিজ বাসায় অভিযান চালিয়ে তাঁকে গ্রেপ্তার করে যৌথ বাহিনী। পরে তাঁকে টঙ্গী পূর্ব থানায় হস্তান্তর করা হয়।

‎জানা যায়, গ্রেপ্তার তাহরিমা জান্নাত সুরভী দীর্ঘদিন ধরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বর্তমান সরকার, সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ উপদেষ্টা এবং সেনাবাহিনীর প্রধানকে নিয়ে অশালীন, কুরুচিপূর্ণ ও রাষ্ট্রবিরোধী মন্তব্য করে আসছিলেন। তাঁর এসব বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়লে জনমনে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।

‎আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি সূত্র জানায়, তাহরিমা জান্নাত সুরভীর বিরুদ্ধে আগে থেকেই ওয়ারেন্ট জারি ছিল। একই সঙ্গে তাঁর অনলাইন কর্মকাণ্ড দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও রাষ্ট্রীয় স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি হতে পারে, এমন আশঙ্কায় গোয়েন্দা নজরদারি জোরদার করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার রাতে যৌথ বাহিনী অভিযান চালিয়ে তাঁকে গ্রেপ্তার করে।‎

‎টঙ্গী পূর্ব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মেহেদী হাসান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ‘গ্রেপ্তার তাহরিমা জান্নাত সুরভীর বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ রয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে গাজীপুরের কালিয়াকৈর থানায় একটি চাঁদাবাজির মামলা রয়েছে। ওই মামলায় তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। আজ বৃহস্পতিবার সকালে কালিয়াকৈর থানা-পুলিশের কাছে তাহরিমাকে হস্তান্তর করা হয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

পঞ্চগড়ে চার দিন ধরে ঘন কুয়াশা ও কনকনে শীত

পঞ্চগড় প্রতিনিধি 
ঘন কুয়াশার কারণে ভোরে হেডলাইট জ্বালিয়ে বাস চলছে। পঞ্চগড়ের তেলিপাড়া এলাকা থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
ঘন কুয়াশার কারণে ভোরে হেডলাইট জ্বালিয়ে বাস চলছে। পঞ্চগড়ের তেলিপাড়া এলাকা থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

টানা চার দিন ধরে ঘন কুয়াশা ও কনকনে শীতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে উত্তরের জেলা পঞ্চগড়। ভোর থেকেই জেলার সড়ক ও জনপথ ঘন কুয়াশায় ঢেকে থাকছে। কনকনে ঠান্ডা আর কুয়াশার কারণে ব্যাহত হচ্ছে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। এর প্রভাব পড়েছে কর্মজীবী মানুষ থেকে শুরু করে হাসপাতালগুলোতে।

বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) সকাল ৬টায় তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১০ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ সময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ১০০ শতাংশ। ঘন কুয়াশার কারণে ভোর থেকেই যানবাহনগুলোকে হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করতে দেখা গেছে।

ঘন কুয়াশা ও তীব্র শীতে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েছেন খেটে খাওয়া মানুষেরা। ভোরে অনেকেই কাজে যেতে পারছেন না। শীত নিবারণের জন্য বিভিন্ন এলাকায় মানুষকে খড়কুটো জ্বালিয়ে আগুন পোহাতে দেখা গেছে।

নাইট কোচের চালকেরা জানান, ঘন কুয়াশার কারণে রাস্তায় কিছুই দেখা যায় না। রফিকুল আলী নামের এক চালক বলেন, ‘এত কুয়াশায় সাবধানে গাড়ি চালিয়ে আসতে হয়েছে। শীত এলেই আমাদের এই সমস্যায় পড়তে হয়। কুয়াশায় সামনে কিছুই বোঝা যায় না।’

আরেকজন চালক জানান, কুয়াশার কারণে গতি কমিয়ে গাড়ি চালাতে হয়। একটু অসতর্ক হলেই দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকে।

শীতের প্রভাবে জেলার হাসপাতালগুলোতে বেড়েছে রোগীর ভিড়। সর্দি-কাশি, জ্বর, শ্বাসকষ্ট ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে। সদর হাসপাতালের একজন চিকিৎসক জানান, তাপমাত্রা কমে যাওয়ায় শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তিরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন। তিনি এ সময় গরম কাপড় ব্যবহার, উষ্ণ খাবার গ্রহণ এবং প্রয়োজন ছাড়া বাইরে না যাওয়ার পরামর্শ দেন।

তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জিতেন্দ্রনাথ রায় জানান, ১১ থেকে ১৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত তেঁতুলিয়ায় মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে গেছে। গত শনিবার তাপমাত্রা কিছুটা বাড়লেও পরবর্তী দিনগুলোতে তা আবার কমে গেছে। বৃহস্পতিবার সকাল ৬টায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১০ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে।

জেলা প্রশাসক কাজী সাইমুজ্জামান জানান, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যে প্রায় ১৫ হাজার শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়েছে। আরও শীতবস্ত্রের চাহিদা পাঠানো হয়েছে। প্রাপ্ত শীতবস্ত্রগুলো প্রতিটি উপজেলায় সমানভাবে ভাগ করে শীতার্ত মানুষের মধ্যে বিতরণ করা হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

পিরোজপুর-২ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হচ্ছেন সাবেক ভিপি মাহমুদ হোসেন

নেছারাবাদ (পিরোজপুর) প্রতিনিধি 
মাহমুদ হোসেন। ছবি: সংগৃহীত
মাহমুদ হোসেন। ছবি: সংগৃহীত

পিরোজপুর-২ (কাউখালী, ভান্ডারিয়া ও নেছারাবাদ) আসনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) থেকে দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন সাবেক ভিপি মাহমুদ হোসেন। মোবাইলে আলাপকালে মাহমুদ হোসেন নিজেই বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

মাহমুদ হোসেন ভান্ডারিয়া সরকারি কলেজের সাবেক ভিপি এবং প্রখ্যাত সাংবাদিক তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়ার ভাতিজা। তিনি দীর্ঘদিন ধরে পিরোজপুর-২ আসন থেকে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন। তাঁর নেতৃত্বে এই আসনে বিএনপির একটি শক্তিশালী রাজনৈতিক বলয় গড়ে উঠেছে বলে স্থানীয়ভাবে জানা যায়।

উল্লেখ্য, পিরোজপুর-২ আসনে বিএনপির চূড়ান্ত মনোনয়ন পেয়েছেন আহমদ সোহেল মঞ্জুর সুমন। গত মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) মনোনয়ন চূড়ান্ত হওয়ার পরপরই মাহমুদ হোসেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।

এ বিষয়ে মাহমুদ হোসেন বলেন, ‘আমি ২০২৩ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে বিএনপিতে যোগ দিলেও ছাত্রজীবন থেকেই বিএনপির আদর্শে বিশ্বাসী। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের চেতনাকে ধারণ করে সব সময় দলের তৃণমূল নেতা-কর্মীদের পাশে থাকার চেষ্টা করেছি।’

মাহমুদ হোসেন আরও বলেন, ‘পিরোজপুর-২ আসনের সাধারণ মানুষ আমাকে এই আসনে নেতৃত্বে দেখতে চান। জনগণের সেই প্রত্যাশাকে প্রাধান্য দিয়েই স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। বিএনপি একটি গণমানুষের দল। সেই গণমানুষের চাওয়াকেই গুরুত্ব দিয়ে সামনে এগোতে চাই।’

মাহমুদ হোসেন জানান, শিগগির তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করবেন এবং আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনী কার্যক্রম শুরু করবেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

লাঠিতে ভর দিয়ে করতে হয় যাতায়াত, একই পরিবারে ছয় প্রতিবন্ধীর মানবেতর জীবন

ফরিদগঞ্জ (চাঁদপুর) প্রতিনিধি 
ফরিদগঞ্জ পৌরসভার পশ্চিম বড়ালী গ্রামের প্রয়াত আবু মনুহর ও ফুল বানু দম্পতির ছয় সন্তানই শারীরিক প্রতিবন্ধী। ছবি: আজকের পত্রিকা
ফরিদগঞ্জ পৌরসভার পশ্চিম বড়ালী গ্রামের প্রয়াত আবু মনুহর ও ফুল বানু দম্পতির ছয় সন্তানই শারীরিক প্রতিবন্ধী। ছবি: আজকের পত্রিকা

চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জে চরম মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে একটি পরিবার। পরিবারটির ছয় সদস্যই শারীরিক প্রতিবন্ধী। ফরিদগঞ্জ পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের পশ্চিম বড়ালী গ্রামের আজিম বাড়ির বাসিন্দা প্রয়াত আবু মনুহর ও ফুল বানু দম্পতির সাত সন্তানের মধ্যে শুধু একজন সুস্থ। বাকি ছয় সন্তান শারীরিক প্রতিবন্ধকতায় ভুগছেন।

পরিবারে পাঁচ ছেলে ও দুই মেয়ে। একমাত্র সুস্থ সন্তান মিসু আক্তার প্রিয়া (৩৩) গৃহস্থালির কাজ করেন। অন্য ছয় সন্তানের কেউই শারীরিক প্রতিবন্ধকতার কারণে স্বাভাবিক জীবন কিংবা দাম্পত্য জীবনে পা রাখতে পারেননি। অর্থাভাবে নিয়মিত চিকিৎসাও হচ্ছে না। অর্ধাহারে-অনাহারে দিন কাটছে তাঁদের। ভালো বাসস্থানের ব্যবস্থাও নেই। ফলে পুরো পরিবারের জীবন হয়ে উঠেছে দুর্বিষহ।

শারীরিক প্রতিবন্ধী সন্তানেরা হলেন নুরুল ইসলাম (৪১), তাজুল ইসলাম (৩৯), জাহাঙ্গীর হোসেন (৩৫), বিল্লাল হোসেন (৩৪), মো. আবদুর রব (৩২) ও রেহানা বেগম (২৩)। পরিবার সূত্রে জানা গেছে, সবাই স্বাভাবিকভাবে জন্ম নিলেও ছয় থেকে সাত বছর বয়সে টাইফয়েডে আক্রান্ত হওয়ার পর ধীরে ধীরে শারীরিকভাবে অক্ষম হয়ে পড়েন।

জানা যায়, পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি আবু মনুহর দিনমজুরের কাজ করে সন্তানদের জীবিকা নির্বাহ করতেন। প্রায় দেড় বছর আগে স্ট্রোক করে তাঁর মৃত্যু হয়। এর পর থেকে পরিবারটির দুর্দশা আরও বেড়ে যায়। বর্তমানে তাঁরা নিজের ঘরে শিশুদের খাদ্যদ্রব্য বিক্রি করে কোনোরকমে দিন চালাচ্ছেন।

প্রতিবন্ধী আবদুর রব বলেন, ‘শরীরে শক্তি নেই, হাঁটতেও পারি না। তাই ভিক্ষাও করতে পারি না। ঘরে বসে শিশুখাদ্য বিক্রি করি। দিনে ৭০ থেকে ১০০ টাকা আয় হয়। আটজনের সংসারে অনেক সময় না খেয়েই থাকতে হয়।’

নুরুল ইসলাম ও তাজুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা শুধু প্রতিবন্ধী ভাতা পাই। সরকারি বা বেসরকারি আর কোনো সহযোগিতা পাই না। বেঁচে থাকার জন্য সহযোগিতা চাই।’

প্রতিবন্ধী সন্তানদের মা ফুল বানু বলেন, ‘একটি স্বাভাবিক সন্তান বড় করতেই এখন অনেক কষ্ট। সেখানে পরপর ছয়টি প্রতিবন্ধী সন্তান নিয়ে যে মানসিক ও শারীরিক যন্ত্রণা ভোগ করছি, তা ভাষায় বোঝানো যাবে না। স্বামী মারা যাওয়ার পর থেকে খেয়ে না খেয়ে দিন কাটছে। আমি এখনো বিধবা ভাতার কার্ড পাইনি।’

স্থানীয় বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা আলী আহমদ, বিল্লাল হোসেন মানিক ও রাজনীতিক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, উপার্জনক্ষম কেউ না থাকায় পরিবারটি চরম দুঃখ-কষ্টে দিন কাটাচ্ছে। প্রতিবন্ধী ভাতা ছাড়া আর কোনো সহায়তা তারা পাচ্ছে না। তাঁরা পরিবারটির পাশে দাঁড়াতে বিত্তবানদের প্রতি আহ্বান জানান।

উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসান বলেন, পরিবারের সদস্যরা ইতিমধ্যে প্রতিবন্ধী ভাতার আওতায় এসেছেন। কেউ বাদ পড়লে যাচাই-বাছাই করে সুবিধার আওতায় আনা হবে।

ফরিদগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান জুয়েল বলেন, তাঁরা দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ। হাসপাতালে এলে বিশেষভাবে চিকিৎসা ও প্রয়োজনীয় ওষুধ দেওয়া হয়।

ফরিদগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সেটু কুমার জানান, বিষয়টি দুঃখজনক, খোঁজখবর নিয়ে তাঁদের পাশে থাকার চেষ্টা করব।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত