Ajker Patrika

রাউজান এলাকা

হালদার ‘বিষফোড়া’ ইটভাটা

  • সাতটি ভেঙে দেওয়ার পরও আরও তিনটিতে ইট পোড়ানোর প্রস্তুতি।
  • ‘এ আলী’ চিমনি ভেঙে দেওয়া হয়েছিল। আবারও চালু হয়েছে ভাটা।
  • শান্তি ব্রিকসকে করা হয়েছিল জরিমানা। উৎপাদনে যেতে প্রস্তুত তারা।
মো. আরফাত হোসাইন, রাউজান (চট্টগ্রাম)
ইটভাটায় সরবরাহের জন্য হালদাপাড়ে খননযন্ত্র বসিয়ে কাটা হচ্ছে মাটি। ছবিটি গতকাল দুপুরে চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার নোয়াপাড়া ইউনিয়নের মোকামীপাড়া এলাকা থেকে তোলা। আজকের পত্রিকা
ইটভাটায় সরবরাহের জন্য হালদাপাড়ে খননযন্ত্র বসিয়ে কাটা হচ্ছে মাটি। ছবিটি গতকাল দুপুরে চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার নোয়াপাড়া ইউনিয়নের মোকামীপাড়া এলাকা থেকে তোলা। আজকের পত্রিকা

দেশের একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদীর পারে গড়ে উঠেছে একাধিক ইটভাটা। রাউজান অংশে ইটভাটার মাটির জোগান দিতে কাটা হচ্ছে নদীর পাড়। বিভিন্ন স্থান থেকে মাটি আনতে নদীতে ব্যবহার করা হচ্ছে যান্ত্রিক নৌকা। ভাটাগুলোর শ্রমিকেরা হালদায় মাছ শিকার করছেন—এসব কারণে হুমকির মুখে পড়েছে নদীর জীববৈচিত্র্য।

এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রশাসন মাঝেমধ্যে ভাটায় অভিযান চালায়, ভাটার চিমনি গুঁড়িয়ে দেয়, জরিমানা করে। তবে কিছুদিন পর আবারও চালু হয় ইটভাটা। ফলে পরিবেশ ও নদীদূষণ—কোনোটাই থেমে নেই।

কয়েক বছর আগেও হালদা নদীর তীরে রাউজান অংশে কোতোয়ালি ঘোনার পাশে, পশ্চিম বিনাজুরী, পশ্চিম গুজরার কাশেম নগর, উরকিরচরের পশ্চিম আবুরখীল, সার্কদা, নোয়াপাড়ার মোকামীপাড়া ও কচুখাইন এবং হাটহাজারী অংশের মেখল এলাকা—সব মিলিয়ে ১০টি ইটভাটার অস্তিত্ব ছিল। নদী বিশেষজ্ঞদের মতামতের ভিত্তিতে ৭টি ইটভাটা সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। কয়েক বছর আগে নোয়াপাড়া ইউনিয়নের মোকামীপাড়া গ্রামে ‘এ আলী’ নামের একটি ইটভাটার চিমনি গুঁড়িয়ে দিয়েছিল পরিবেশ অধিদপ্তর। তবে সেই ভাটায় আবারও ইট তৈরি শুরু হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পরিবেশ অধিদপ্তরের (সদর) নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট (সিনিয়র সহকারী সচিব) ফয়জুন্নেছা আকতার মোবাইলে বলেন, ‘সারা দেশে অবৈধ ইটভাটা বন্ধে অভিযান চলছে। অবৈধ বা ক্ষতিকর সব ইটভাটায় অভিযান চালানো হবে। সম্প্রতি রাউজানে অভিযান পরিচালনা করে চারটি ইটভাটা গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে।’

তবে ইটভাটায় গিয়ে ভিন্ন চিত্র দেখা যায়। ‘এ আলী’ ইটভাটার পাশে নদীর পাড় ঘেঁষে এক্সকাভেটর দিয়ে বিশাল গর্ত করে মাটি খনন করা হচ্ছে। তার ৫০ ফুট দূরত্বে এসব মাটি মজুত করে কাঁচা ইট তৈরির কাজ চলছে। একইভাবে নদীর পাড়ে ইটভাটা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে উরকিরচরের সার্কদা এলাকায় ‘মেসার্স আজমীর অটো ব্রিকস’ এবং একই ইউনিয়নের পশ্চিম আবুরখীল এলাকায় ‘শান্তি ব্রিকস’।

শান্তি ব্রিকস নামের এই ইটভাটায় গিয়ে দেখা যায়, নদীর চরাঞ্চল থেকে মাটি কেটে যান্ত্রিক নৌযানে এনে মজুত করা হচ্ছে। ইটভাটা-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা ইটভাটা পরিষ্কার করছেন। তবে এখনো ইট তৈরির কাজ পুরোপুরি শুরু হয়নি। এ আলী, আজমীর অটো ও শান্তি ব্রিকসে এমন কর্মতৎপরতা চললেও নীরব ভূমিকায় উপজেলা প্রশাসন বা পরিবেশ অধিদপ্তর।

এ আলী ব্রিকস পরিদর্শনকালে ইটভাটায় নিয়োজিত শ্রমিকের মোবাইলে কথা হয় ভাটামালিক রাশেদের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘হালদা নদীর পাড় হলেও এসব আমাদের জায়গা। আমরা নদীর পাড়ে যে মাটি খনন করছি, তা পুনরায় ভরাট করে দেওয়া হবে।’ পরিবেশদূষণের বিষয়ে জানতে চাইলে কোনো মন্তব্য করেননি তিনি।

এদিকে শান্তি ব্রিকসের অংশীজন প্রিয়তোষ বড়ুয়া বলেন, ‘আমি আপনাদের সঙ্গে বসতে চাই, আপনাদের সঙ্গে দেখা করব।’

কিছুক্ষণ পর ইটভাটায় এসে প্রতিবেদন না করতে ‘ম্যানেজ’ করার চেষ্টা চালান প্রিয়তোষ বড়ুয়া। ইটভাটার কারণে নদীর মা মাছ তথা জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন তিনি।

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক কলেজের জীববিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান হালদা গবেষক ড. মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ২০১০ ও ইটভাটা নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১৩ অনুযায়ী বসতি এলাকা, পাহাড়, বন ও জলাভূমির এক কিলোমিটারের মধ্যে কোনো ইটভাটা নির্মাণ করা যাবে না; এমনকি কৃষিজমিতেও ইটভাটা নির্মাণ অবৈধ।’ তিনি বলেন, ইটভাটার সৃষ্ট তাপের ফলে আশপাশের অঞ্চলে ফসল উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। উৎপাদিত ছাই পাশের জলাশয়ের পানির সঙ্গে মিশে বিষাক্ত উপাদান সৃষ্টি করে, যা জলাশয়ের বাস্তুতন্ত্র ও জলজ প্রাণীর জন্য মারাত্মক হুমকি। ফলে পরিবেশ, জীববৈচিত্র্য ধ্বংস, কৃষিজমির উর্বরতা নষ্ট, বায়ু ও পানিদূষণ ঘটছে। এ ছাড়া ইটভাটার কারণে মানুষের স্বাস্থ্যগত জটিলতার বিষয়টিও ভয়ংকর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

নরসিংদীতে তিন চোখ ও দুই মুখের বাছুরের জন্ম, এলাকায় চাঞ্চল্য

নরসিংদী প্রতিনিধি
পুবেরগাঁও গ্রামের একটি খামারে বাছুরটির জন্ম। ছবি: আজকের পত্রিকা
পুবেরগাঁও গ্রামের একটি খামারে বাছুরটির জন্ম। ছবি: আজকের পত্রিকা

নরসিংদীতে অদ্ভুত আকৃতির বাছুরের জন্ম হয়েছে। বাছুরটির রয়েছে দুটি মুখ, দুটি জিহ্বা, দুটি কান ও তিনটি চোখ। এর মধ্যে একটি চোখ বাছুরের কপালের মাঝখানে। এ ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।

২৩ ডিসেম্বর রাতে শিবপুর উপজেলার চক্রধা ইউনিয়নের পুবেরগাঁও গ্রামে স্থানীয় ইউপি সদস্য কাশেম খানের খামারে বাছুরটির জন্ম।

খামারমালিক কাশেম খান বলেন, বাছুরটি জন্মের পর থেকেই অসুস্থ। স্বাভাবিকভাবে দুধ পান করতে না পারায় ফিডারের মাধ্যমে দুধ খাওয়াতে হচ্ছে।

তিনি জানান, তাঁর খামারের একটি গাভি বাছুরটির জন্ম দিয়েছে। তিনি বলেন, এর আগেও গাভিটির বাছুর হয়েছে। কিন্তু এবারের মতো এমন অদ্ভুদ বাছুর আগে কখনো হয়নি।

ঘটনাটি জানাজানির পর থেকেই বাছুরটিকে একনজর দেখতে আশপাশের কৌতূহলী মানুষ খামারে আসছেন।

স্থানীয় বাসিন্দা আবদুল জলিল বলেন, ‘আমরা ছোটবেলা থেকে গরু-ছাগল দেখছি। কিন্তু তিন চোখ আর দুই মুখের বাছুর এই প্রথম দেখলাম। খবর পেয়ে দূর থেকে এসেছি।’

আরেক স্থানীয় নারী জরিনা বেগম বলেন, ‘বাছুরটা দেখতে অদ্ভুত লাগলেও মায়া হচ্ছে। বাছুরটির স্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা। অনেকেই দ্রুত প্রাণিসম্পদ বিভাগের চিকিৎসকের পরামর্শ ও চিকিৎসা নিশ্চিত করার পরামর্শ দিচ্ছেন।’

এর আগে এ ধরনের বাছুর জন্মের বিষয়ে প্রাণী বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, সাধারণত জেনেটিকস ডিফেক্টের কারণে গাভির এমন ত্রুটিপূর্ণ বাচ্চার জন্ম হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

গাজীপুরে ট্রেনে কাটা পড়ে নানি-নাতনিসহ নিহত ৩

গাজীপুর প্রতিনিধি
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

গাজীপুরের কালীগঞ্জে রেললাইন দিয়ে হাঁটার সময় ট্রেনে কাটা পড়ে নানি-নাতনিসহ তিন নারী নিহত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) বিকেলে টঙ্গী-ভৈরব রেলপথের আড়িখোলা রেলস্টেশনসংলগ্ন টেকপাড়া এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।

নিহত নারীরা হলেন কালীগঞ্জ পৌরসভার দেওয়ালেরটেক গ্রামের মোবারক হোসেনের স্ত্রী সাদিয়া বেগম (২৪), একই এলাকার বাবু মিয়ার মেয়ে অনাদি আক্তার (১৩) এবং নরসিংদীর শিবপুর উপজেলার মরজাল এলাকার বাসিন্দা কমলা বেগম (৫৫)। নিহত কমলা বেগম ও অনাদি আক্তার সম্পর্কে নানি-নাতনি এবং সাদিয়া বেগম তাঁদের প্রতিবেশী ছিলেন।

স্থানীয়রা ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে আড়িখোলা রেলব্রিজ এলাকায় রেললাইনের ওপর দিয়ে তিনজন হেঁটে যাচ্ছিলেন। এ সময় ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা নোয়াখালীগামী ‘উপকূল এক্সপ্রেস’ ট্রেনটি চলে আসে। এ সময় তাঁরা রেলব্রিজের ওপর থাকায় সেখান থেকে দ্রুত সরে যাওয়ার সুযোগ পাননি। পরে ট্রেনটি তাঁদের ওপর দিয়ে চলে যায়। এতে ট্রেনে কাটা পড়ে ঘটনাস্থলেই কমলা বেগম ও সাদিয়া বেগমের মৃত্যু হয়। গুরুতর আহত অবস্থায় অনাদি আক্তারকে উদ্ধার করে কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক জিয়াউর রহমান জানান, অনাদি আক্তারকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়েছিল।

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে কালীগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) ওবায়দুল হক জানান, এটি রেলওয়ের আওতাধীন দুর্ঘটনা হওয়ায় রেলওয়ে পুলিশের সঙ্গে সমন্বয় করে লাশগুলো উদ্ধার করা হয়েছে।

রেলওয়ে নরসিংদী পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক (এসআই) দিলীপ চন্দ্র সরকার বলেন, ‘খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশের সুরতহাল সম্পন্ন করেছি। নিহত নারীদের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে। পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এবং ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে বিনা ময়নাতদন্তে লাশগুলো স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

আরাকান আর্মিদের জন্য নেওয়া হচ্ছিল ১৫০০ মশারি, আটক ৫

থানচি (বান্দরবান) প্রতিনিধি  
মশারিসহ জব্দ করা মালপত্র। ছবি: আজকের পত্রিকা
মশারিসহ জব্দ করা মালপত্র। ছবি: আজকের পত্রিকা

বান্দরবানের থানচি উপজেলায় দুটি ইঞ্জিনচালিত নৌকা তল্লাশি করে ১ হাজার ৫০০টি মশারি, ১২০টি নৌকার ইঞ্জিনের পাখা উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) বিকেলে তিন্দুমুখ বিজিবি চেকপোস্ট পার হওয়ার সময় নৌকাগুলো তল্লাশি করে এসব জিনিস জব্দ করে বিজিবি। এসব মশারি ও ইঞ্জিনের পাখা বান্দরবানের থানচির বড় মদক সীমান্ত দিয়ে মিয়ানমারে সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মির জন্য নেওয়া হচ্ছিল বলে জানিয়েছে বিজিবি। এ ঘটনায় নৌকা দুটি থেকে পাঁচজনকে আটক করা হয়। আজ বৃহস্পতিবার তাঁদের থানচি থানায় সোপর্দ করা হয়েছে।

এ ঘটনায় আটক ব্যক্তিরা হলেন থোয়াই হ্লা চিং মারমা, উমং সাইং মারমা, হ্লাচিংথোয়াই মারমা, উক্যছাইন মারমা ও মো. ইউনুস।

এসব তথ্য নিশ্চিত করে বিজিবি বলিপাড়া ৩৮ ব্যাটালিয়ানের সহকারী পরিচালক মো. জাকির হোসেনের জানান, নিজস্ব গোয়েন্দা সূত্রে তাঁরা জেনেছেন, দীর্ঘদিন থেকে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ওষুধ, কাপড়, জুতা, মোজা, মশারি, নৌকা ইঞ্জিনের পাখা ও বিভিন্ন যন্ত্রাংশ মিয়ানমারের আরাকান আর্মির কাছে সরবরাহ করছে একটি সিন্ডিকেট চক্র। পাচারকারীদের ধরতে সীমান্তের বিজিবি চৌকিগুলোতে বিজিবি সদস্যরা সতর্ক রয়েছেন।

জাকির হোসেন বলেন, গতকাল বুধবার তিন্দুমুখ বিজিবি চেকপোস্ট অতিক্রম করার সময় মালবাহী তিনটি ইঞ্জিন নৌকা দেখে বিজিবির সদস্যদের সন্দেহ হয়। এ সময় নৌকা থামাতে বললে একটি নৌকা দ্রুত চলে যায়। বাকি দুটি নৌকা তল্লাশি করে ১ হাজার ৫০০টি মশারি, ১২০টি ইঞ্জিন বোটসহ অন্যান্য পণ্য পাওয়া যায়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

নলছিটি লঞ্চঘাট ওসমান হাদির নামে নামকরণ

ঝালকাঠি প্রতিনিধি  
নলছিটি লঞ্চঘাট ।  ছবি: আজকের পত্রিকা
নলছিটি লঞ্চঘাট । ছবি: আজকের পত্রিকা

নলছিটি উপজেলার লঞ্চঘাট এখন থেকে শহীদ শরিফ ওসমান হাদির নামে পরিচিত হবে। জন্মস্থান ও শৈশবের স্মৃতিতে গাথা এই লঞ্চঘাট তাঁর নামের সঙ্গে চিরস্থায়ীভাবে যুক্ত হলো।

বরিশাল বিআইডব্লিউটিএর নির্বাহী প্রকৌশলী আমজাদ হোসেন বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় (২৫ ডিসেম্বর) জানান, শহীদ ওসমান হাদির জন্মস্থান নলছিটি। শৈশব, বেড়ে ওঠা এবং জীবনসংগ্রামের সঙ্গে লঞ্চঘাট এলাকার নিবিড় সম্পর্ক থাকার কারণে এটি তাঁর নামে নামকরণ করা হয়েছে। বর্তমানে টার্মিনালের সংস্কার ও রঙের কাজ চলমান রয়েছে।

আগামী শনিবার নৌপরিবহন উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন ঘাটটি পরিদর্শন করবেন বলেও জানান তিনি।

নলছিটি লঞ্চঘাট শহীদ ওসমান হাদির জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। ঘাট থেকে মাত্র ৫০০ মিটার দূরে তার পৈতৃক বাড়ি। নদীর ধারে দাঁড়িয়ে মানুষের আসা-যাওয়া দেখা এবং লঞ্চের ভিড়ে সময় কাটানো—এই ঘাট ছিল তার বেড়ে ওঠার নীরব সাক্ষী।

ঘাট এলাকার ব্যবসায়ী রব হাওলাদার বলেন, ‘আমরা চাইছিলাম হাদির স্মরণে এমন কিছু হোক, যা প্রজন্মের পর প্রজন্ম মনে রাখবে। তার শৈশবের স্মৃতিবিজড়িত লঞ্চঘাটের নাম তার নামে হওয়া নিঃসন্দেহে স্মরণীয় সিদ্ধান্ত।’

ব্যবসায়ী শাহাদত আলম ফকির যোগ করেন, ‘এই ঘাটে আমরা হাদিকে ছোটবেলা থেকে দেখেছি। সে এখানকারই ছেলে ছিল। আজ তার নামে ঘাটের নামকরণ হওয়ায় আমরা গর্বিত।’

ওসমান হাদির প্রতিবেশী বেলায়েত হোসেন নান্নু বলেন, ‘হাদি এই এলাকার সন্তান। এই ঘাট, এই নদী, এই মানুষ—সবকিছুতেই তার স্মৃতি ছড়িয়ে আছে। লঞ্চঘাটের নাম তার নামে হওয়া মানে, সে এখানেই চিরদিন বেঁচে থাকবে।’

উল্লেখ্য, ১২ ডিসেম্বর হত্যার উদ্দেশ্যে ওসমান হাদিকে গুলি করা হয়। তাঁকে প্রথমে ঢাকায় ভর্তি করা হয় এবং পরে সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৮ ডিসেম্বর মারা যান ওসমান হাদি। পরবর্তীকালে তাঁর মরদেহ দেশে আনা হয় এবং সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় জানাজা শেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে (জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের কবরের পাশে) সমাহিত করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত