Ajker Patrika

৬৮ একরের মাছের প্রকল্প বিএনপি নেতার কবজায়

  • বাঁশখালী মৎস্যচাষি সমবায় সমিতির কার্যালয়ে তালা দিয়েছেন বিএনপির নেতা।
  • কার্যালয়ে ঢুকতে পারছেন না সদস্যরা, ৬টি দিঘিতে মাছ চাষ করতে মানা।
 নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
আপডেট : ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৮: ৩৬
৬৮ একরের মাছের প্রকল্প বিএনপি নেতার কবজায়

চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার ওসমানপুর ইউনিয়নের ১০৫ সদস্য মিলে ‘বাঁশখালী মৎস্যচাষি সমবায় সমিতি লিমিটেড’ নামে সরকারি নিবন্ধন নিয়ে ৬৮ একর মৎস্য প্রকল্প গড়ে তোলেন ১২ বছর আগে। জুলাই আন্দোলনের পর পরিস্থিতি বদলে গেলে স্থানীয় বিএনপির নেতা মোশাররফ হোসেন লাভলুসহ তাঁর সহযোগীরা এ প্রকল্পের দখল নেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এ প্রকল্প কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছেন তিনি।

মিরসরাই বাঁশখালী মৎস্যচাষি সমবায় সমিতির একাধিক সদস্যের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সমিতির সদস্যরা বেশির ভাগই প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর। অনেকেই আবার নদীভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত। খামার থেকে প্রতিবছর যা আয় হয়, তা সমভাবে সাধারণ সদস্যদের মধ্যে বিতরণ করা হয়।

গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর দলবল নিয়ে সমবায় সমিতির কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দেন ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক মোশাররফ হোসেন লাভলু। এ সময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন জহুরুল হক, নাসির উদ্দিন, জসিম ভেন্ডারসহ ৮-১০ জন। তাঁরা প্রথমে কার্যালয়ে ঢুকে সমিতির সদস্যদের মারধর ও প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে আসবাবপত্র ভাঙচুর করেন। পরে সমিতির ৬টি দিঘিতে মাছ চাষ বন্ধের হুমকি দেন।

এ নিয়ে গত ১৬ জানুয়ারি মিরসরাই সেনাক্যাম্পে অভিযোগ দিয়ে প্রতিকার চান বাঁশখালী মৎস্যচাষি সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি এ টি এম মোস্তাফিজুর রহমান।

লিখিত অভিযোগে বলা হয়, সমিতির কার্যালয়ে মাসিক বৈঠক চলছিল। এ সময় মোশাররফ হোসেন লাভলু তাঁর দলীয় ক্যাডার বাহিনী নিয়ে সমিতির কার্যালয়ে ঢুকে সদস্যদের মারধর ও প্রাণনাশের হুমকি দেন। এ সময় তিনি আসবাবপত্র ভাঙচুর এবং সমিতির ৬টি দিঘিতে মাছ চাষ করতে নিষেধ করেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মোশাররফ হোসেন লাভলু বলেন, ‘আমি কোনো মৎস্য খামার দখল করতে যাইনি। আমার বিরুদ্ধে করা অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা।’

তবে সমিতির সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বাঁশখালী মৎস্যচাষি সমবায় সমিতি সরকারের নিবন্ধিত সমবায় সমিতি এবং উপজেলা সমবায় অফিস, মিরসরাই, চট্টগ্রাম কর্তৃক প্রতিবছর বার্ষিক বিধিবদ্ধ অডিট হয়ে থাকে। সমিতির অফিস ঘরে তালা, প্রাণনাশের হুমকি, পুকুর ঘরে তালা ও পুকুরের ইজারা দেওয়ার কাজে বাধা ও সদস্যদের ওপর হামলার পর পুঁজি হারানোর আশঙ্কা করছেন সমিতির ১০৫ জন সদস্য। বর্তমানে সদস্যরা যেতে পারছেন না।

এ বিষয়ে মিরসরাই উপজেলার জোরারগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ টি এম শিফাতুল মাজদার বলেন, ‘এ-সংক্রান্ত অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

যা বলছেন সদস্যরা

বাঁশখালী মৎস্যচাষি সমবায় সমিতির সদস্য বিধবা শাহানা বেগম। তিনি বলেন, ‘আমার একমাত্র আয়ের উৎস এ মৎস্য খামার। বছর বছর কিছু লভ্যাংশ পাওয়া যায়। আমাদের এ প্রজেক্ট দখলের চেষ্টা চলছে। আমি অসুস্থ, আমার একমাত্র ছেলের পড়াশোনার খরচ, সংসারের খরচ চলে এই সমিতি থেকে পাওয়া টাকায়। মৎস্য প্রজেক্টের কাছে ইছাখালী গ্রামে এক রুমের ঘরে বসবাস করি। আমাদের মৎস্য খামারে লাল পতাকা টানানো হচ্ছে, হামলা-ভাঙচুর করা হয়েছে। আমাদের উচ্ছেদ করা হলে আমরা বিপদে পড়ে যাব।’

সমিতির আরেক সদস্য মো. আনোয়ার হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের দীর্ঘদিনের সমিতিটা প্রভাবশালী মহল দখলের চেষ্টা করছে। ১০৫ জনের এই সমিতি থেকে উচ্ছেদ করা হলে আমাদের পরিবার চালানো কঠিন হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

গাজীপুরে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ, যান চলাচল বন্ধ

গুলশানে ১০ তলা বিলাসবহুল ভবন ছিল টিউলিপের স্থায়ী ঠিকানা

অবসরে যাওয়া ৭৬৪ কর্মকর্তাকে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি দিয়ে প্রজ্ঞাপন

বগুড়ায় মেলা বসানোকে কেন্দ্র করে বিএনপির ২ পক্ষের সংঘর্ষে আহত ১৩

আ.লীগের নেতা-কর্মীদের নামে মামলা, টাকায় আপস করলেন বিএনপি নেত্রী

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত