Ajker Patrika

মাদক কারবারির সঙ্গে ‘সখ্য’ তিন কর্মকর্তার

চাঁদপুর প্রতিনিধি
আপডেট : ০৩ অক্টোবর ২০২৩, ১১: ১৪
মাদক কারবারির সঙ্গে ‘সখ্য’ তিন কর্মকর্তার

চাঁদপুরে আন্তজেলা যোগাযোগের জন্য সড়ক, রেল ও নৌপথের ব্যবস্থা রয়েছে। সীমান্তবর্তী এলাকার সঙ্গেও জেলাটির যোগাযোগের ব্যবস্থা রয়েছে এই তিন পথে। এ জন্য মাদক কারবারিরা এই জেলার রুটগুলো ব্যবহার করে। অভিযোগ উঠেছে, জেলার মাদক নিয়ন্ত্রণে যাঁরা রক্ষক হিসেবে দায়িত্বে রয়েছেন, তাঁদের মধ্যে অন্তত তিনজন ভক্ষকের ভূমিকা পালন করছেন।

সেই তিনজন হলেন চাঁদপুর জেলার মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) পিয়ার হোসেন, সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) মো. সাইফুল ইসলাম ও পরিদর্শক (ভারপ্রাপ্ত) সেন্টু রঞ্জন নাথ। গত ১৩ সেপ্টেম্বর তাঁদের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ের অতিরিক্ত পরিচালক জাফরুল্লাহ কাজলের কাছে লিখিত অভিযোগ পাঠানো হয়। তবু এখন পর্যন্ত তাঁরা চাঁদপুর জেলা কার্যালয়ে বহাল তবিয়তে আছেন। এ অভিযোগের অনুলিপি মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ঢাকার মহাপরিচালক (ডিজি) ও পরিচালকের (অপারেশন ও গোয়েন্দা) কাছেও পাঠানো হয়েছে।অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, চাঁদপুর শহরের একাধিক মাদক কারবারির সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে এই তিন কর্মকর্তার।

অভিযানের আগে তাঁরা মোবাইল ফোনে কল করে মাদক কারবারিদের জানিয়ে দেন। এর বিনিময়ে আদায় করেন মাসোহারা।
অনুসন্ধান ও খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চাঁদপুরে যোগদান করার পর সেন্টু, পিয়ার ও সাইফুল মাদক কারবারিদের সঙ্গে গোপনে সখ্য গড়ে তোলেন। ফলে মাদকের বড় ধরনের কোনো মামলা উদ্‌ঘাটন করা সম্ভব হয়নি গত পাঁচ বছরে। তাঁরা মাদক কারবারিদের কাছ থেকে মাসোহারা হিসেবে টাকা নেন বলেও কয়েকজন কারবারি অভিযোগ করেছেন। এ ছাড়া সংঘবদ্ধভাবে মাদক বিক্রি করতে কারবারিদের বাধ্য করতেন বলেও অভিযোগ রয়েছে এই তিনজনের বিরুদ্ধে।

আরও জানা গেছে, এই তিন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এক সপ্তাহ আগে শহরের ভুক্তভোগীরা জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

চাঁদপুর শহরের আদালতপাড়া এলাকার শাহাদাত হোসেন বলেন, তিনি একসময় মাদক কারবারের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। কিন্তু সন্তানেরা বড় হওয়ার পর তা ছেড়ে দেন। এর পরও ভালো থাকতে পারেননি। কারণ, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের তিন কর্মকর্তা সাইফুল, পিয়ার ও সেন্টু তাঁকে মাদক কারবারে বাধ্য করেন।

শহরের কয়লাঘাট এলাকার বাসিন্দা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সোর্স রিপন ঢালী বলেন, মাদক কারবারি রানা, রহিমসহ তাঁদের সহযোগীদের টাকা খেয়ে ছেড়ে দেন এই তিন কর্মকর্তা। শহরের জামতলার মাদক কারবারি শাহজাহানের স্ত্রী ইয়াছমিন আক্তার পুতুল বলেন, তাঁর স্বামী এখন মাদক সেবন করেন, কিন্তু বিক্রি করেন না। যখন বিক্রি করতেন, তখন সাইফুল, পিয়ার ও সেন্টু প্রতি মাসে টাকা নিতেন। এখন মাসিক টাকা না দেওয়ায় নানাভাবে হয়রানি করা হচ্ছে। তাঁর স্বামীর বিরুদ্ধে মামলা করার হুমকিও দেওয়া হচ্ছে।

চাঁদপুর জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক এ কে এম দিদারুল আলম বলেন, ‘আমি এ জেলায় আগেও ছিলাম। চলতি বছরের জুন মাসে আবার যোগ দিয়েছি। এখানকার প্রশাসন ও অন্যান্য লোকজন আমার পরিচিত হওয়ায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আমার কাছে নানাভাবে অভিযোগ আসতে থাকে। এগুলো আমার কাছে সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়।’

দিদারুল আলম আরও বলেন, বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হলে তাঁকে লিখিত দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। এরপর গত ১৩ সেপ্টেম্বর মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক জাফরুল্লাহ কাজলের কাছে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়। এখন অধিদপ্তর তাঁদের বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়টি দেখবে। তবে অধিদপ্তরে অভিযোগ দেওয়ার পর থেকে অভিযুক্ত ব্যক্তিরা সংঘবদ্ধ হয়ে অপপ্রচার চালাচ্ছেন।

অভিযুক্ত তিন কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম, পিয়ার হোসেন ও সেন্টু রঞ্জন দেবনাথের বক্তব্য নিতে তাঁদের ব্যক্তিগত মোবাইল ফোনে বেশ কয়েকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তাঁরা কল রিসিভ করেননি। পরে গত রোববার অফিস চলাকালে দপ্তরে গিয়েও পাওয়া যায়নি তাঁদের।

জানতে চাইলে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ের অতিরিক্ত পরিচালক জাফরুল্লাহ কাজল বলেন, এসব অভিযোগের বিষয়ে তাঁদের প্রধান দপ্তর কাজ করছে। এই বিষয়ে তিনি কিছু বলতে পারবেন না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হাদির ইনকিলাব কালচারাল সেন্টার বন্ধ ঘোষণা

হাদির অবস্থা আশঙ্কাজনক, মস্তিষ্ক মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত, ফুসফুসেও আঘাত: মেডিকেল বোর্ড

অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেইজ-২ অবিলম্বে চালু হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

সুদানে সন্ত্রাসী হামলায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৬ শান্তিরক্ষী নিহত, যুদ্ধ চলমান: আইএসপিআর

মেসিকে কলকাতায় আনার মূল উদ্যোক্তা আটক

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ