Ajker Patrika

কাপ্তাইয়ের পানি সরবরাহ প্রকল্প: কার্যাদেশ না মেনে নিম্নমানের কাজ

  • এডিবির অর্থায়নে ৩৩৪ কোটি টাকার প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর।
  • পৌর শহরে পাঁচটি ওভারহেড ট্যাংক নির্মাণকাজে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ।
  • কার্যাদেশে পাইলিংয়ের আগে লোড টেস্ট করার কথা থাকলেও তা করা হচ্ছে না।
হিমেল চাকমা রাঙামাটি
আপডেট : ১৮ আগস্ট ২০২৫, ০৮: ৩৩
রাঙামাটি শহরের মাতৃমঙ্গল এলাকায় চলছে ওভারহেড পানির ট্যাংক স্থাপনে পাইলিংয়ের কাজ। ছবিটি সম্প্রতি তোলা। আজকের পত্রিকা
রাঙামাটি শহরের মাতৃমঙ্গল এলাকায় চলছে ওভারহেড পানির ট্যাংক স্থাপনে পাইলিংয়ের কাজ। ছবিটি সম্প্রতি তোলা। আজকের পত্রিকা

এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) পরামর্শকদের পরামর্শ উপেক্ষা করে রাঙামাটি শহরে কাপ্তাই হ্রদের পানি সরবরাহ প্রকল্পে নিম্নমানের কাজ চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এডিবির অর্থায়নে ৩৩৪ কোটি টাকার এ প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়ন করছে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর।

পাঁচটি প্যাকেজের আওতায় প্রকল্পের কাজ চলছে। এর মধ্যে একটি হলো পৌর শহরের পাঁচ এলাকায় পাঁচটি ওভারহেড ট্যাংক নির্মাণ। যেগুলোর একেকটির উচ্চতা ১১০ ফুট, যা হবে ১০ তলা ভবনের সমান। এর ওপর বসবে পানির ট্যাংক। ট্যাংকের ব্যাসার্ধ হচ্ছে ৪২ ফুট এবং উচ্চতা ২২ ফুট। যে ট্যাংকের প্রতিটিতে পানি থাকবে ৬ লাখ ৮০ হাজার লিটার। পানিসহ প্রতিটি ট্যাংকের ওজন হবে প্রায় ১০ হাজার টন।

জানা গেছে, রাঙামাটি পৌর শহরে পুরোনো বাসস্টেশন এলাকা, এডিসি হিল, জিমনেসিয়াম, ভেদভেদি সড়ক ও জনপথ বিভাগের কারখানাসংলগ্ন বিটিসিএল এলাকা, পৌরসভা কার্যালয়সংলগ্ন এলাকায় পাঁচটি ট্যাংক বসানো হবে।

এ ছাড়া বাকি চারটি প্যাকেজ হবে পুরো রাঙামাটি শহরে মাটির নিচের পাইপলাইন স্থাপন। এগুলোর মধ্যে একটি ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট থেকে ওভারহেড ট্যাংক পর্যন্ত পাইপলাইন স্থাপন। বাকি তিনটি প্যাকেজে পৌর শহরে বিভিন্ন এলাকায় পানি সরবরাহ লাইন স্থাপন।

রাঙামাটি জনস্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, চলমান এ প্রকল্পের কার্যাদেশ দেওয়া হয় ২০২৪ সালে ১৮ আগস্ট। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারির প্রথম দিকে কাজ শুরু করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জেডটি অ্যান্ড এসআর এন্টারপ্রাইজ।

জানা গেছে, গুণগত মান নিশ্চিত করা ও কাজের তদারকি করতে এডিবি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগ দেয়, যার অধীনে দুজন প্রকৌশলী কাজ করছেন।

তাঁদের একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘আমাদের কোনো পরামর্শ না নিয়ে নিম্নমানের মালপত্র ব্যবহার, পরীক্ষার রিপোর্ট পাওয়ার আগে কাজ শুরু করা এবং একক সিদ্ধান্তে কাজ চালিয়ে নিতে ঠিকাদারকে অনুমতি দিচ্ছেন রাঙামাটি জনস্বাস্থ্যের নির্বাহী প্রকৌশলী। আমাদের কোনো পরামর্শ তিনি গ্রহণ করছেন না। বিষয়টি আমরা ইতিমধ্যে এডিবিসংশ্লিষ্ট বিভাগকে জানিয়েছি।’

এ বিষয়ে এডিবির টিম লিডার নাজিরুজ্জামান শ্যামল বলেন, ‘কাজ যথাযথভাবে হচ্ছে না। বিষয়টি ফিল্ড থেকে আমাদের জানানো হয়েছে। কাজ যথাভাবে করতে রাঙামাটিতে নিয়োজিত পরামর্শকেরা বিষয়টি স্থানীয় ম্যানেজার জনস্বাস্থ্যর নির্বাহী প্রকৌশলীকে অবহিত করেছেন। কিন্তু তিনি না করলে আমাদের কিছুই করার থাকে না। কাজটি রাঙামাটিবাসীর। এটা তাঁদেরও দেখা দরকার।’

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, পানির ট্যাংক স্থাপনের সার্ভিস পাইলিংয়ের আগে পরীক্ষামূলক লোড টেস্ট পাইল করার কথা প্রকল্পের শিডিউলে উল্লেখ থাকলেও সেটা করা হয়নি মাতৃমঙ্গল এলাকায়। ইতিমধ্যে সার্ভিস পাইলিংয়ের কাজ হয়ে গেছে।

সম্প্রতি সরেজমিনে ঘুরে এবং সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পাইলিংয়ে সিমেন্ট সিইএম-১ ব্যবহার করার কথা থাকলেও সব ক্ষেত্রে সিইএম-২ সিমেন্ট ব্যবহার করা হচ্ছে।

৯ আগস্ট বিকেল ৪টার দিকে পুরোনো মাতৃমঙ্গলঘেঁষা ওভারহেড ট্যাংকের পাইলিংয়ের কাছে গিয়ে দেখা যায়, একটি মিনি ট্রাক থেকে সিমেন্ট নামানো হচ্ছে। প্রতিটি সিমেন্টের বস্তায় লেখা রয়েছে সিইএম-২। এ সময় রাজমিস্ত্রি এমদাদুল ইসলাম বলেন, ‘৪২টি পাইলিংয়ের কাজ চলছে। প্রতিটি পাইলের গভীরতা ৪০ ফুট। এ পাইলিং কাজে সিইএম-২ সিমেন্ট ব্যবহার করা হচ্ছে। ঠিকাদার যে সিমেন্ট দিচ্ছেন, তা-ই ব্যবহার করা হচ্ছে।’

নকশায় সার্ভিস পাইলের আগে লোড টেস্ট (ভার বহনের সক্ষমতা পরীক্ষা) পাইল করার কথা উল্লেখ থাকলেও লোড টেস্ট পাইলের কাজ না করে সরাসরি সার্ভিস পাইলের কাজ করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

এ বিষয়ে জেডটি অ্যান্ড এসআর এন্টারপ্রাইজের বিপ্লব বলেন, ‘সিইএম-২ ব্যবহার করা হচ্ছে, এটা ঠিক। সিইএম-১ ব্যবহার করলে কংক্রিট দ্রুত শক্ত হয়। প্রকল্পের সব কাজ আমরা জনস্বাস্থ্যের নির্বাহী প্রকৌশলীর অনুমতি নিয়ে করছি।’

স্থানীয়রা বলছেন, নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার ও নকশা না মেনে ত্রুটিপূর্ণ নির্মাণকাজের কারণে বেশি লোড সম্পন্ন ওভারহেড ট্যাংক এলাকার উপকারের পরিবর্তে ধসে পড়ে বড় ক্ষতি হতে পারে। এ ছাড়া বিভিন্ন সরু এলাকায় মাটি কেটে পাইপ স্থাপন ও মাটির নিচে মেশিন দিয়ে পাইপ স্থাপনে সড়কের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে।

রাঙামাটি সচেতন নাগরিক কমিটির সভাপতি অধ্যাপক বাঞ্চিতা চাকমা বলেন, ‘এত বড় একটি স্থাপনা তৈরি হচ্ছে, নির্মাণ ত্রুটির কারণে দুর্ঘটনা ঘটলে এর দায় কে নেবে? বাস্তবায়নকারী কর্তৃপক্ষ যদি এডিবির পরামর্শ গ্রহণ না করে তাহলে এডিবির ভূমিকা কী হতে পারে, তা জানা দরকার।’

গণপূর্ত বিভাগে নির্বাহী প্রকৌশলীতে কর্মরত শর্মি চাকমা বলেন, ‘ইঞ্জিনিয়ারিং লোড টেস্ট হলো কোনো কাঠামো লোড বহন করার কর্মক্ষমতা পরীক্ষা করার প্রক্রিয়া। এটি সাধারণত একটি কাঠামোর নকশা সঠিক কি না এবং এটি নিরাপদে লোড নিতে পারবে কি না, তা যাচাই করার জন্য করা হয়। নকশায় লোড টেস্ট উল্লেখ থাকলে সেটা অবশ্যই করতে হবে। যদি করা না হয় তাহলে নির্মাণে ত্রুটি থেকে যাবে।’

রাঙামাটি জনস্বাস্থ্য নির্বাহী প্রকৌশলী পরাগ বড়ুয়া আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সিইএম-২ সিমেন্ট ব্যবহার করা হচ্ছে, তা ঠিক। পাহাড়ের বাস্তবতা আর সময়মতো সিইএম-১ সিমেন্ট না পাওয়ার কারণে এটি দেওয়া হচ্ছে। এতে কোনো সমস্যা হবে না। এ ছাড়া লোড টেস্ট করা হয়নি, তা ঠিক নয়। সার্ভিস পাইল হচ্ছে। ঠিকাদারকে বলে দিয়েছি, এখান থেকে যেকোনো একটি পাইল লোড টেস্ট করা হবে। এটি বলায় ঠিকাদার প্রতিটি পাইল যত্নসহকারে করছেন।’

রাঙামাটির সিভিল সার্জন নুয়েন খীসা বলেন, ‘কাপ্তাই হ্রদের পানি যে পরিমাণ দূষিত, তা সহজে অনুমেয়। একদিকে এ পানি বদ্ধ অবস্থায় থাকে, অন্যদিকে এখানে রাঙামাটি শহরের সব ধরনের ময়লা ফেলা হচ্ছে। ফলে এ পানির মান খুব খারাপ পর্যায়ে। বর্তমান সময়ে এসেও আমরা দেখি, বছরের নতুন বৃষ্টি হলে হ্রদের পানি যখন ঘোলা হয়। সেই ঘোলা পানি আমাদের বাসাবাড়িতে সরবরাহ করা হয়। এ যুগে এ পানি সহজে পরিষ্কার করা যায়; কিন্তু আমরা তা দেখি না।’

নুয়েন খীসা আরও বলেন, ‘আমরা সহজে বলতে পারি, এই পানি পান করা দূরের কথা, ব্যবহারের ক্ষেত্রেও ঝুঁকি। ভবিষ্যতে নতুন প্রকল্প নিয়ে এই পানি সরবরাহ করতে গেলে আধুনিক প্রযুক্তি দিয়ে বিশুদ্ধ করতে হবে। না হলে এই পানি জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়াবে। পানির এই ত্রুটিযুক্ত বিশুদ্ধকরণ নিয়ে কোনো আপস করা ঠিক হবে না।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বাসার দরজা ভেঙে চবি শিক্ষার্থীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার

চবি প্রতিনিধি 
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ওমর ফারুক সুমন নামের এক শিক্ষার্থীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) রাতে চট্টগ্রাম নগরীর খুলশী এলাকার একটি বাসা থেকে লাশটি উদ্ধার করে পুলিশ।

ওমর ফারুক বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন।

স্থানীয় ও পরিবারের সদস্যরা জানান, সুমন খুলশীতে তাঁর মামার বাসায় থাকতেন। তাঁর বড় ভাইও সেখানে থাকেন। দুই দিন আগে সুমনের মামা পুরো পরিবার নিয়ে তুরস্কে বেড়াতে যান। বাসায় সুমন ও তাঁর বড় ভাই ছিলেন। গতকাল বিকেল ৪টার দিকে ভাইয়ের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন সুমন। ফোনে তাঁর বড় ভাই কখন বাসায় ফিরবেন জানতে চান সুমন। বড় ভাই জানান যে তাঁর আসতে একটু দেরি হবে। এর কিছুক্ষণ পর বড় ভাই সুমনকে ফোন করলে তিনি আর ফোন রিসিভ করেননি। পরে বাড়ি থেকে সুমনের মা ফোন দিয়ে যোগাযোগ করতে না পেরে বিষয়টি বড় ভাইকে জানান। এতে উদ্বেগ দেখা দিলে বড় ভাই বিল্ডিংয়ের দারোয়ানকে দিয়ে বাসা চেক করান।

দারোয়ান কলিংবেল বাজিয়েও কোনো সাড়া না পেয়ে বড় ভাইকে জানালে তিনি দ্রুত বাসায় এসে সুমনকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পান। খবর পেয়ে পুলিশ এসে লাশ উদ্ধার করে। ঘটনাস্থলে চিরকুট মিলেছে। এতে লেখা রয়েছে, ‘আমি সুমন, ওমর ফারুক সুমন। আমার কোনো আশা-আকাঙ্ক্ষা নেই। আর আমার কারও প্রতি কোনো অভিযোগ নেই। সবাই ভালো থাকবেন।’ এর আগে ১ ডিসেম্বর লেখা আরেকটি চিরকুট পাওয়া যায়। সেখানে লেখা ছিল—‘আশাই জীবন, আশাই মরণ, ব্যর্থতা হতাশা-অন্ধকারে নিয়ে যায়।’

খুলশী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহীনুর জামান বলেন, ‘সুমন ও তাঁর বড় ভাই একসঙ্গে মামার বাসায় থাকতেন। মামা ও মামি বর্তমানে বিদেশে আছেন। বড় ভাই সন্ধ্যায় বাইরে যান। সে সময় সুমন বাসায় একা ছিলেন। বড় ভাই বাসায় ফিরে এসে বারবার ডাকলেও ফ্ল্যাটের ভেতর থেকে কোনো সাড়া পাননি। পরে দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকলে সুমনের মরদেহ ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। প্রাথমিক তদন্তে এটি আত্মহত্যা মনে হলেও আমরা সব সম্ভাব্য কারণ খতিয়ে দেখছি। ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহটি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বদলি নিয়ে ফেসবুকে ক্ষোভ প্রকাশ শিক্ষক নেতার

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি
প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বায়ক আবুল কাশেম। ছবি: সংগৃহীত ক্যাটা: সারা দেশ, ময়মনসিংহ
প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বায়ক আবুল কাশেম। ছবি: সংগৃহীত ক্যাটা: সারা দেশ, ময়মনসিংহ

সহকর্মী এবং নিজের বদলি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক লাইভে এসে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বায়ক আবুল কাশেম। তিনি বলেন, ‘আমাকে সাড়ে ৪০০ মাইল দূরে বদলি করা হয়েছে। এতে আমি বিচলিত নই।’

আজ শুক্রবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে ফেসবুক লাইভে এসে আবুল কাশেম বলেন, ‘আমার মতো সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের তিন দফা দাবি আদায়ের নেতৃত্ব দেওয়া শতাধিক শিক্ষককে বদলি করা হয়েছে পার্শ্ববর্তী জেলা এবং বিভাগে। আরও অনেককে বদলি করা হতে পারে। এ নিয়ে কেউ বিচলিত হবেন না। প্রয়োজনে আইনি লড়াইয়ে যাব। তবে আন্দোলন থেকে সরে আসব না। আপনাদের পাশে রয়েছি। অবিলম্বে আরও কঠোর কর্মসূচির ঘোষণা আসবে। সে জন্য যদি জেলেও যেতে হয়, প্রস্তুত রয়েছি।’

এ বিষয়ে প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বায়ক আবুল কাশেমের সঙ্গে একাধিকবার মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও কোনো সাড়া মেলেনি।

৪ ডিসেম্বর প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (পলিসি ও অপারেশন) মাহফুজা খাতুন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলার চানপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবুল কাশেমকে বরিশাল সদরের চরবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

আমনের বাম্পার ফলনেও মুখে হাসি নেই কৃষকের, বাজারে ধানের দাম কমায় হতাশা

মাহিদুল ইসলাম, মৌলভীবাজার
জমির ধান কাটছেন কৃষকেরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
জমির ধান কাটছেন কৃষকেরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

মৌলভীবাজারের চলতি মৌসুমে আমন ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। ফসল ঘরে তুলতে দিনরাত ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন কৃষকেরা। তবে বাজারে ধানের দাম কম হওয়ায় হতাশা ব্যক্ত করেছেন তাঁরা। কৃষকদের অভিযোগ, বাজারে ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে ধানের দাম কমিয়ে দিয়েছেন। তাই ফলন ভালো হওয়ার পরও বাজারে ধানের যথার্থ মূল্য না পাওয়ায় লোকসানে পড়ছেন তাঁরা।

কৃষকেরা জানান, চলতি আমন মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ধানের ফলন অনেক ভালো হয়েছে। তবে অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার ধানের দাম অনেক কম। গত বছর বাজারে যেখানে ১ হাজার ১০০ থেকে ১ হাজার ৩০০ টাকায় প্রতি মণ ধান বিক্রি হয়েছে, এই বছর মাঝারি শুকনা ধান ৯০০ ও শুকনা ধান ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বীজতলা থেকে শুরু করে ফসল ঘরে তোলার আগপর্যন্ত অনেক শ্রম ও টাকা খরচ করতে হয়েছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে ৯৮ হাজার ২০ হেক্টর জমিতে আমন আবাদ করা হয়েছে। এর থেকে ৪ লাখ ৪১ হাজার ৯০ টন ধান উৎপাদন হবে। আর এই ধান থেকে ২ লাখ ৯৫ হাজার ৫৩০ মেট্রিক টন চাল পাওয়া যাবে। ইতিমধ্যে ৬৫ শতাংশ ধান কাটা হয়েছে। আমন ধানের শতভাগ লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়েছে। এক সপ্তাহের মধ্যে শতভাগ ধান ঘরে তুলতে পারবেন কৃষকেরা।

বাজারে আমন ধানের দাম কম হলেও সরকারিভাবে ভালো দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক অফিস সূত্রে জানা গেছে, সরকারিভাবে প্রতি কেজি আমন ধান ৩৪ টাকা মূল্যে ৭৯০ টন, সেদ্ধ চাল ৫০ টাকা কেজি মূল্যে ২ হাজার ৬৭৭ টন ও আতপ চাল ৪৯ টাকা কেজি মূল্যে ৫ হাজার ৬৪৬ টন চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।

জেলার কমলগঞ্জ, রাজনগর, কুলাউড়া ও সদর উপজেলার আমনখেত ঘুরে দেখা যায়, কৃষকেরা পাকা আমন ধান ঘরে তুলতে ব্যস্ত। অনেক এলাকায় দ্রুত সময়ে কম্বাইন হারভেস্টারের মাধ্যমে ধান কাটা ও মাড়াইয়ের কাজ একসঙ্গে সেরে নিচ্ছেন কৃষকেরা। এতে সময়, খরচ ও কষ্ট কম করতে হচ্ছে। আবার কেউ কাজের লোক এনে ধান কেটে ফসলের মাঠেই মাড়াই করে সেদ্ধ দিচ্ছেন। অনেক কৃষক মাঠের মধ্যে রাত জেগে ধান সেদ্ধ করছেন। তবে সবকিছু ঠিক থাকলেও ধানের দাম কম থাকায় হতাশা ব্যক্ত করেছেন কৃষকেরা।

কমলগঞ্জ উপজেলার পতনঊষার ইউনিয়ন কৃষক আনোয়ার খান বলেন, ‘গত বছর আমাদের ধান একেবারেই হয়নি। এ বছর অনেক ভালো ধান হয়েছে। প্রত্যাশার চেয়ে বেশি ফলন হয়েছে। তবে বাজারে ধানের দাম অনেক কম। প্রতি মণ ধান মাত্র ৯০০ থেকে ১ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কৃষিতে আগের চেয়ে অনেক বেশি খরচ বেড়েছে। সে তুলনায় ধানের দাম বাড়েনি।’

জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক (ভারপ্রাপ্ত) মিলন কান্তি চাকমা বলেন, ‘আমাদের ধান-চাল সংগ্রহের কার্যক্রম ২০ নভেম্বর শুরু হয়েছে; চলবে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। সরকারিভাবে ধানের দাম গত বছরের তুলনায় কেজিপ্রতি ১ টাকা বৃদ্ধি করা হয়েছে। একটা সময় আমরা ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারতাম না; তবে এখন ধান-চালের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়। আশা করি, চলতি মৌসুমে আমাদের লক্ষ্য পূরণ হবে।’

মৌলভীবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. জালাল উদ্দীন বলেন, ‘জেলায় এ বছর খুব ভালো আমন ধান হয়েছে। কৃষকেরা অত্যন্ত উৎসাহ নিয়ে ধান ঘরে তুলছেন। আশা করি, আগামী সপ্তাহের মধ্যে শতভাগ ধান কাটা হয়ে যাবে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ও দিনের বেলা কুয়াশা না থাকায় সহজে কৃষকেরা ধান কাটা, মাড়াই ও সেদ্ধ করতে পারছেন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

পঞ্চগড়ে তাপমাত্রা ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস

পঞ্চগড় প্রতিনিধি
হালকা কুয়াশায় ঢাকা চারদিক। ছবি: আজকের পত্রিকা
হালকা কুয়াশায় ঢাকা চারদিক। ছবি: আজকের পত্রিকা

উত্তরের সীমান্তবর্তী জেলা পঞ্চগড়ে ধীরে ধীরে নামতে শুরু করেছে তাপমাত্রার পারদ। আজ শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) সকাল ৯টায় তেঁতুলিয়ায় ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে। এ সময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৯২ শতাংশ।

গত কয়েক দিন পঞ্চগড়ে তাপমাত্রা ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ১৩ ডিগ্রির ঘরে থাকছে। ফলে বাড়ছে শীতের প্রকোপ। আজ শুক্রবার সকালে পঞ্চগড় সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, হালকা কুয়াশায় ঢাকা চারদিক। সুনসান নীরবতায় গরম কাপড় পরে প্রয়োজনীয় কাজে বের হয়েছে লোকজন। কেউ কেউ মাঠে করছেন হালচাষ। এরই মধ্যে পূর্ব আকাশে সূর্য দেখা দিলেও নেই প্রখর রোদ।

পঞ্চগড় সদর উপজেলার তালমা এলাকার গৃহবধূ নাজমা বেগম বলেন, ‘সকাল-বিকেল খুব ঠান্ডা পড়ে। ঘর থেকে বের হলেই যেন বাতাসে শরীর কেঁপে ওঠে। বাচ্চাদের নিয়ে সবচেয়ে দুশ্চিন্তায় আছি। ঠান্ডা লাগলে হাসপাতালে যেতে হয় বারবার।’

একই এলাকার দিনমজুর মিজানুর রহমান বলেন, ‘শীতে কাজ পাওয়া কষ্ট হয়ে গেছে। সকালে কুয়াশায় কিছু দেখা যায় না, হাত-পা জমে থাকে। ঠান্ডায় শরীর ঠিকমতো সাড়া না দেওয়ায় কাজের গতি কমে গেছে।’

স্কুলছাত্রী তানজিলা আক্তার বলে, ‘সকালে কলেজ ও প্রাইভেটে যেতে খুব সমস্যা হয়। ঠান্ডা এমন যে হাতে গ্লাভস ছাড়া সাইকেল চালানো যায় না। শীত যেমন বাড়ছে, তেমনি অসুস্থ হওয়ার ভয়ও বাড়ছে।’

জেলার আশপাশ এলাকায় বাড়ছে ঠান্ডাজনিত রোগী। এতে শিশু ও বৃদ্ধরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। সর্দি-কাশি, জ্বর, নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট ও হঠাৎ তাপমাত্রা পরিবর্তনজনিত অ্যালার্জিতে রোগীর সংখ্যা বাড়ছে।

চিকিৎসকেরা বলছেন, দিন-রাতের তাপমাত্রার এই বড় পার্থক্য শরীরের ওপর চাপ ফেলে। বিশেষ করে শিশু, বয়স্ক ও দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন মানুষ বেশি ঝুঁকিতে থাকে। তাই সবাইকে সতর্ক থাকার পরামর্শ চিকিৎসকের।

তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জিতেন্দ্রনাথ রায় জানান, শীত ধীরে ধীরে নামছে। আজ ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড হয়েছে। সামনে শীত আরও তীব্র হতে পারে। শৈত্যপ্রবাহের আশঙ্কা রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত