Ajker Patrika

চবিতে ডাইনিংয়ের খাবারের দাম এক লাফে বাড়ল ১০ টাকা, শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি
আপডেট : ২৪ মার্চ ২০২৩, ১৬: ৩৭
চবিতে ডাইনিংয়ের খাবারের দাম এক লাফে বাড়ল ১০ টাকা, শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) আবাসিক হলের ডাইনিংয়ের খাবারের দাম এক লাফে ১০ টাকা বাড়ানো হয়েছে। তাতে এখন থেকে নিয়মিত খাবার ২৫ টাকার পরিবর্তে ৩৫ টাকা এবং সেহরি ৫০ টাকার পরিবর্তে ৬০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

এদিকে এ নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন আবাসিক হলের শিক্ষার্থীরা। তাঁদের অভিযোগ, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা না করে, কোনো ঘোষণা ছাড়াই কর্তৃপক্ষ এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার রাত থেকে খাবারের এই নতুন দাম কার্যকর করা হয়। এর আগে বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাধ্যক্ষ কমিটির এক সভায় খাবারের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, হলের খাবারের মান সব সময়ই নিম্নমুখী। ভর্তুকি না দিয়ে হঠাৎ দাম বাড়ানোর এই সিদ্ধান্ত শিক্ষার্থীদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে শিক্ষার্থীদের আয় বাড়েনি, উল্টো ব্যয়ের লাগাম টানতে হিমশিম খেতে হয়েছে। এ ছাড়া এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় শিক্ষার্থীদের কোনো প্রতিনিধিও সেখানে উপস্থিত ছিলেন না। ফলে শিক্ষার্থীদের স্বার্থরক্ষা হয়নি।

দাম বাড়ানোর বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পরপর শিক্ষার্থীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখাতে থাকেন। সর্বশেষ দাম কমানোর দাবিতে আজ জুমার নামাজের পর বুদ্ধিজীবী চত্বরে মানববন্ধন করেন বিভিন্ন হলের শিক্ষার্থীরা। এ সময় তাঁরা ‘প্রভোস্ট স্যার, ডাইনিংয়ে আসুন, একসঙ্গে খাই; রমজানে প্রহসন, মানি না, মানব না’ স্লোগান সংবলিত প্লাকার্ড বহন করেন।

মানববন্ধনে অংশ নিয়ে বক্তারা বলেন, ‘আমরা খাবারের দাম কমানো ও মান ঠিক রাখার দাবিতে রোজা রেখে মানববন্ধনে দাঁড়িয়েছি। আমরা যখন ভর্তি হই, তখন ২০ টাকা দিয়ে খেতাম। এরপর হঠাৎ তা ২৫ টাকা করা হলো। এখন এক লাফে তা ৩৫ টাকায় নিয়ে গেল।’

বক্তারা আরও বলেন, ‘পূর্বঘোষণা ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই দাম বাড়ানো অন্যায়। আমরা এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে মাঠে নেমেছি।’

রসায়ন বিভাগের শিক্ষার্থী স্বপন মিয়া ফেসবুকে লেখেন, ‘২০১৯ সালে প্রথম বর্ষে থাকাকালে ২০ টাকার বিনিময়েও দুবেলা খাইতে পারিনি টাকা বাঁচানোর জন্য। এক বেলা খেয়ে দিন পার করে দিয়েছি। তাই খুব ভালো করে জানি, ক্ষুধা কী জিনিস। প্রথম বর্ষে যারা আছে, তাদের জন্য ৩৫ টাকা আত্মহত্যার মতো। অনেকের ২৫ টাকা দিয়ে দুবেলা খাওয়ার সামর্থ্য নেই। সেখানে ৩৫ টাকা অনেক বেশি। মাননীয় প্রভোস্ট, দয়া করে আমাকে ক্ষুধার্ত রাখবেন না। আমার খাবার নিশ্চিত করুন।’

চবি ডাইনিংয়ের খাবারআসাদ নেওয়াজ নামের এক শিক্ষার্থী লেখেন, ‘মাননীয় প্রশাসন, দয়া করে আমাদের একটা জোরে লাথি মেরে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের করে দেন। কারণ এই তল্লাটে থাকার মতো অবস্থা আর রইল না। এবার সত্যই সেই বাপ-দাদাদের বলে যাওয়া কথাটাই সত্যি হচ্ছে। পেটে গামছা বেঁধে পড়ে থাকা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।’

আসাদ নেওয়াজ বলেন, ‘সরকার প্রতি বছর যে কোটি কোটি টাকার বাজেট দিচ্ছে, সেখান থেকে ন্যূনতম একটা অংশ ভর্তুকি হিসেবে দিলেও তো আজ এই দিন দেখতে হতো না। এটা কোনো দিনও একটা স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ হতে পারে না। একটা নোটিশ নেই, কোনো ঘোষণা ছাড়াই এভাবে দাম বাড়ানো হলো। এটা আমরা মেনে নেব না।’

খাবারের দাম বাড়ানোর বিষয়ে জানতে চাইলে এফ রহমান হলের প্রাধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) মোয়াজ্জেম হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে ডাইনিং ম্যানেজাররাও চালাতে পারছিলেন না। তাঁরা ডাইনিং চালানো ছেড়ে চলে যেতে চান। তাই প্রভোস্ট কমিটির সভায় খাবার ও সেহরিতে ১০ টাকা বাড়ানো হয়েছে। খাবারের দামের সঙ্গে মানও বাড়ানো হয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, খাবারের মেন্যুতে পরিবর্তন আসছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. মো. নূরুল আজিম সিকদার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘নিজ নিজ হলের প্রভোস্ট শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে দাম বাড়িয়েছেন। শিক্ষার্থীরাও দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছিল দাম বাড়িয়ে হলেও যেন খাবারের মান বাড়ানো হয়। জিনিসপত্রের দাম অনেক বেড়ে গেছে। অনেক কিছুর দাম দ্বিগুণও বেড়েছে। সবকিছু বিবেচনা করে খাবারের দাম ১০ টাকা করে বাড়ানো হয়েছে। শিক্ষার্থীরা যেহেতু অসন্তোষ দেখাচ্ছে, তাই আমরা রাতে এ নিয়ে বৈঠকে বসব।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনে আগুন, স্ফুলিঙ্গ নিচে পড়ে ট্রাক ও ঝুটগুদাম পুড়ে ছাই

শ্রীপুর (গাজীপুর) প্রতিনিধি  
আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত ট্রাক ও ঝুটগুদাম। ছবি: আজকের পত্রিকা
আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত ট্রাক ও ঝুটগুদাম। ছবি: আজকের পত্রিকা

গাজীপুরের শ্রীপুরে পল্লী বিদ্যুতের সঞ্চালন লাইনের ফিউজে অগ্নিকাণ্ডের পর আগুনের স্ফুলিঙ্গ ছিটকে পড়ে দাঁড়িয়ে থাকা দুটি ট্রাক ও একটি ঝুটগুদাম পুড়ে গেছে। গতকাল বুধবার দিবাগত রাতে উপজেলার গাজীপুর ইউনিয়নের নগরহাওলা গ্রামের জৈনা বাজার এলাকায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের পাশে এই ঘটনা ঘটে।

স্থানীয় বাসিন্দা মাসুদ রানা জানান, গতকাল দিবাগত রাত পৌনে ২টার দিকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের পাশ দিয়ে যাওয়া পল্লী বিদ্যুতের অধিক ক্ষমতাসম্পন্ন লাইনের একটি ফিউজে আগুন জ্বলে ওঠে। সেখান থেকে আগুনের স্ফুলিঙ্গ নিচে দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাকে পড়ে মুহূর্তেই আগুন পাশের ঝুটগুদাম ও অপর একটি ট্রাকে ছড়িয়ে পড়ে। স্থানীয় বাসিন্দারা আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেন। কিন্তু আগুন নেভানো সম্ভব হয়নি। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট এসে আগুন নিয়ন্ত্রণ করে। ততক্ষণে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়ে যায়।

স্থানীয় ব্যবসায়ী ও ক্ষতিগ্রস্ত ট্রাকের মালিকের অভিযোগ, পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ নিয়মিত বিদ্যুৎ লাইনের ত্রুটি তদারকি না করার কারণে এমন সমস্যা হয়েছে।

শ্রীপুর ফায়ার সার্ভিসের ওয়্যারহাউস ইন্সপেক্টর মো. নূরুল করিম জানান, আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে। তাৎক্ষণিকভাবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ণয় করা সম্ভব হয়নি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

রাজধানীতে হোস্টেল থেকে এনসিপি নেত্রীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২: ৩৮
জান্নাতারা রুমি। ছবি: ফেসবুক
জান্নাতারা রুমি। ছবি: ফেসবুক

রাজধানীর জিগাতলার একটি ছাত্রী হোস্টেল থেকে এক তরুণীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। আজ বৃহস্পতিবার সকালের দিকে মরদেহটি উদ্ধার করা হয়।

পুলিশ জানিয়েছে, হাজারীবাগ থানার জিগাতলা এলাকার একটি ছাত্রী হোস্টেল থেকে জান্নাতারা রুমীর (৩০) ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। তিনি জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তবে প্রাথমিকভাবে তিনি কোন পদে ছিলেন, তা জানাতে পারেনি পুলিশ। মরদেহ এখনো ওই হোস্টেলেই রয়েছে।

আজকের পত্রিকাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন হাজারীবাগ থানার এসআই সুব্রত। তিনি বলেন, মরদেহটি ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি চলছে।

ওই তরুণী জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) ধানমন্ডি শাখার যুগ্ম সমন্বয়কারী ছিলেন বলে জানিয়েছেন দলটির যুগ্ম সদস্যসচিব তারেক রেজা।

ফেসবুক পোস্টে তারেক রেজা লেখেন, রুমী এক মাস ধরে আওয়ামী লীগের ক্রমাগত সাইবার বুলিং, হত্যা ও ধর্ষণের হুমকি পেয়ে আসছিলেন।

এনসিপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক খান মুহাম্মদ মুরসালীনও আজকের পত্রিকাকে একই কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘জান্নাতারা রুমী বেশ কিছুদিন ধরে নানাভাবে হুমকি পাচ্ছিলেন। এটা আত্মহত্যা নাকি হত্যা, সে বিষয়ে আমরা এখনো নিশ্চিত নই। তিনি সাইবার বুলিংয়েরও শিকার হচ্ছিলেন।’

হাজারীবাগ থানা-পুলিশ জানিয়েছে, মরদেহের সুরতহাল প্রস্তুত করার পর ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে আত্মহত্যা মনে হলেও এটি আত্মহত্যা নাকি হত্যা, তা নিশ্চিত হওয়া যাবে ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনের পর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ওসমান হাদিকে গুলি মানে জুলাই যোদ্ধাদের ওপর হামলা: আল মামুন

 গঙ্গাচড়া (রংপুর) প্রতিনিধি
গতকাল রাতে ওসমান হাদিকে হত্যাচেষ্টার প্রতিবাদে গঙ্গাচড়া উপজেলা এনসিপির আয়োজনে মশাল মিছিল হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা
গতকাল রাতে ওসমান হাদিকে হত্যাচেষ্টার প্রতিবাদে গঙ্গাচড়া উপজেলা এনসিপির আয়োজনে মশাল মিছিল হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা

জুলাই বিপ্লবের সম্মুখসারির যোদ্ধা ও ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ওসমান হাদিকে গুলি করা মানে বাংলাদেশের সব জুলাই যোদ্ধার ওপর হামলা—এমন মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) রংপুর জেলার আহ্বায়ক আল মামুন। গতকাল বুধবার রাতে ওসমান হাদিকে হত্যাচেষ্টার প্রতিবাদে গঙ্গাচড়া উপজেলা এনসিপির আয়োজনে অনুষ্ঠিত মশাল মিছিল শেষে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে তিনি এই মন্তব্য করেন।

আল মামুন বলেন, দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়েছে। জুলাই যোদ্ধা থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ সবাই আজ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। একের পর এক হত্যাকাণ্ড ও ধর্ষণের ঘটনা ঘটলেও সরকার কার্যকর ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হচ্ছে।

আল মামুন আরও বলেন, ‘আজ ওসমান হাদির ওপর হামলা হয়েছে, আগামীকাল আমার ওপর কিংবা অন্য কোনো সহযোদ্ধার ওপরও হতে পারে। এটি দেশের মানুষের বিরুদ্ধে কোনো পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র কি না, তা সরকারকে স্পষ্ট করতে হবে।’

অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, হয় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির দৃশ্যমান উন্নতি করতে হবে, নয়তো পদত্যাগ করতে হবে। জনগণ নিরাপদ না থাকলে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়।

সমাবেশে রংপুর-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মসিউর রহমান রাঙ্গার নির্বাচনী তৎপরতার সমালোচনা করে আল মামুন বলেন, আবারও ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠার ষড়যন্ত্র হচ্ছে, যা জুলাই যোদ্ধারা প্রতিহত করবে।

মশাল মিছিলটি গঙ্গাচড়া সরকারি কলেজ মোড় থেকে শুরু হয়ে গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে গঙ্গাচড়া বাজার জিরো পয়েন্টে সমাবেশ শেষে পুনরায় কলেজ মোড়ে এসে শেষ হয়। এতে উপজেলার ৯টি ইউনিয়নের এনসিপি নেতা-কর্মীরা অংশ নেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বৃক্ষরোপণে বদলে যাচ্ছে পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

­­শাহীন রহমান, পাবনা
পাবিপ্রবি ক্যাম্পাসকে সবুজে পরিণত করতে রোপণ করা হয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির ১ হাজার ২০০ গাছের চারা। গতকাল সকালে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
পাবিপ্রবি ক্যাম্পাসকে সবুজে পরিণত করতে রোপণ করা হয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির ১ হাজার ২০০ গাছের চারা। গতকাল সকালে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

মাত্র ১৭ বছরের তরুণ একটি বিশ্ববিদ্যালয়। জন্মলগ্নে যার জায়গা ছিল বিস্তীর্ণ জলাভূমি ও খোলা প্রান্তর। সময়ের সঙ্গে সেই ভূমিতে গড়ে উঠেছে আকাশছোঁয়া নান্দনিক ভবন। তবে দীর্ঘদিন ধরে ক্যাম্পাসে ছিল রুক্ষ পরিবেশ—ছিল না পর্যাপ্ত গাছ, ফুল কিংবা ছায়া। সেই ভাবনা থেকেই ক্যাম্পাসকে প্রাণবন্ত করে তুলতে বিশেষ বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি শুরু করেছে পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘প্রাকৃতিক চরিত্র’ ফুটিয়ে তুলতে গত মে মাস থেকে নান্দনিক পরিকল্পনায় ফলদ, বনজ, ঔষধি ও শোভাবর্ধক ২৫০ প্রজাতির প্রায় ১ হাজার ২০০টি গাছের চারা রোপণ করা হয়েছে। পরিবেশগত বিপর্যয় মোকাবিলা, জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ, দুর্লভ প্রজাতির গাছ রক্ষা এবং সৌন্দর্যবর্ধন—এই লক্ষ্যকে সামনে রেখে নেওয়া হয়েছে উদ্যোগটি। এরই মধ্যে ক্যাম্পাসে যুক্ত হয়েছে প্রশান্তির নতুন মাত্রা। আগামী তিন বছরের মধ্যে একটি পূর্ণাঙ্গ ‘গ্রিন ক্যাম্পাস’ গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে।

এই কর্মসূচি বাস্তবায়নে নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগ এবং স্থাপত্য বিভাগের শিক্ষকসহ বিশেষজ্ঞদের নিয়ে ছয় সদস্যের একটি বৃক্ষরোপণ কমিটি গঠন করা হয়েছে। পুরো কার্যক্রম তত্ত্বাবধান করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য ড. মো. নজরুল ইসলাম। তিনি বায়ো-বেজড কম্পোজিটস, কাঠ সংরক্ষণ, বায়ো-আঠা ও উদ্ভিদবিষয়ক গবেষণায় দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন।

বৃক্ষরোপণ কমিটি ৩০ একর ক্যাম্পাসকে ১ হাজার ২০০ জোনে ভাগ করে পরিকল্পিতভাবে চারা রোপণের উদ্যোগ নেয়। প্রতিটি স্থানে ৮ ফুট বালু অপসারণ করে গোবর ও দোআঁশ মাটি দিয়ে এক মাস আগে থেকেই জায়গা প্রস্তুত করা হয়। পর্যাপ্ত প্রস্তুতির পরই চারা রোপণ শুরু হয়, যা এখনো চলমান।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য ড. মো. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘ক্যাম্পাসে বৃক্ষরোপণের প্রধানতম উদ্দেশ্য সবুজায়ন, সৌন্দর্যবর্ধন ও জীববৈচিত্র্য রক্ষা। নাটোরের লালপুরসহ পাবনা উঞ্চ এলাকা হিসেবে ইতিমধ্যে জায়গা করে নিয়েছে। শুষ্ক মৌসুমে প্রচণ্ড গরম পড়ে। পর্যাপ্ত বৃক্ষরোপণ তাপমাত্রা কমাতে পারে। জীববৈচিত্র্য মাথায় রেখেছি। দুর্লভ গাছ সংরক্ষণের বিষয়টি পরিকল্পনায় আছে। যেসব গাছ হারিয়ে যাচ্ছে, সেসব গাছের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের পরিচয় করাতে চাই। ক্যাম্পাসকে সবুজ ও সৌন্দর্যবর্ধন করতে চাই। এখানে পাখি আসবে।’

নজরুল ইসলাম আরও বলেন, কিছুদিনের মধ্যেই ক্যাম্পাসটি জীববৈচিত্র্য, শিক্ষা ও গবেষণার জন্য একটি সমৃদ্ধ লিভিং ল্যাবরেটরিতে পরিণত হবে। গাছপালা বড় হলে জলবায়ু সহনশীলতা বাড়বে, তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ ও বাতাসের মান উন্নত হবে। একই সঙ্গে বিভিন্ন পোকামাকড় ও পাখির আবাসস্থল তৈরি হয়ে জীববৈচিত্র্য সমৃদ্ধ হবে। জীববিজ্ঞান, পরিবেশবিজ্ঞান, কৃষি ও বনবিদ্যার শিক্ষার্থীরা এখানে একটি বাস্তব গবেষণা ক্ষেত্র পাবে।

অবকাঠামো নির্মাণের পর ক্যাম্পাসের যেসব জায়গা ফাঁকা ছিল, মূলত সেসব স্থানে বনজ, ফলদ, ঔষধি ও ছায়াদানকারী গাছের চারা রোপণ করা হয়েছে। অনেক বিলুপ্তপ্রায় ও দুর্লভ প্রজাতির গাছ সংগ্রহ করে লাগানো হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ধুপ, উরি আম, মধুমাধবী, হাপরমালী, কানাইডিঙ্গা, নাগলিঙ্গম, রক্তন, তমাল, পুন্নাগ, কুসুম, কুরচি, মুচকুন্দচাঁপা, করঞ্জ, পরশপিপুল, কৃষ্ণবট, নীল অঞ্জন, রয়না, রিঠা, কুম্ভী, পুত্রঞ্জীবসহ নানা প্রজাতির গাছ।

এই কর্মসূচিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের পাশাপাশি আর্থিক সহায়তা দিয়েছে পূবালী ও জনতা ব্যাংক। বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন চারা রোপণে সহযোগিতা করেছে। ক্যাম্পাস পরিচ্ছন্ন রাখতে নিয়মিত কাজ করছে রোভার স্কাউট গ্রুপ। জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের অংশ হিসেবে ক্যাম্পাসের লেকে মাছ অবমুক্ত করা হয়েছে এবং কচ্ছপ ছাড়ার পরিকল্পনাও রয়েছে।

বাংলা বিভাগের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী হোসাইন আহমেদ বলেন, ‘রোপিত চারাগুলোর সঙ্গে বড় হবে আমাদের স্বপ্ন ও সম্ভাবনা। ছায়াঘেরা পথ, ফুলের বাগান আর প্রাণবন্ত পরিবেশে ক্যাম্পাস হবে শিক্ষার্থীদের জন্য আদর্শ সময় কাটানোর জায়গা। এটি সত্যিকারের একটি লিভিং ল্যাবরেটরি হয়ে উঠবে।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. এস আব্দুল আওয়াল বলেন, ‘দীর্ঘমেয়াদি রক্ষণাবেক্ষণ ও সম্প্রসারণের অংশ হিসেবে বৃক্ষরোপণ করছি। এর মাধ্যমে পরিবেশগত উপকারিতার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের মননশীলতা ও সৃজনশীলতা বাড়বে। জলবায়ু পরিবর্তন ও টেকসই ভবিষ্যতের জন্য আমাদের উদ্যোগ কাজে লাগবে। আমাদের ক্যাম্পাস ছড়িয়ে পড়বে দেশ থেকে দেশান্তরে। এই ক্যাম্পাসের আলোয় আলোকিত হবে পুরো বাংলাদেশ।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত