Ajker Patrika

দীপুর সাম্রাজ্যে টিপুই সব

  • ৪৮ একর খাসজমিতে ভাই গড়েছেন ‘টিপু নগর’
  • অবৈধ বালু উত্তোলনকারী সেলিম ছিলেন ‘টাকার মেশিন’
  • বিরাগভাজন হয়ে টিকতে পারেননি জেলা প্রশাসকও
মুহাম্মদ মাসুদ আলম, চাঁদপুর
আপডেট : ০৬ নভেম্বর ২০২৪, ১২: ১৫
দীপু মনি ও জে আর ওয়াদুদ টিপু। ছবি: সংগৃহীত
দীপু মনি ও জে আর ওয়াদুদ টিপু। ছবি: সংগৃহীত

চাঁদপুরে পদ্মা-মেঘনা-বিল ডাকাতিয়ায় গত ১৫ বছরে অনেক পানি গড়ালেও জেলার সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করেছেন একজনই। তিনি ডা. দীপু মনি। টানা চারবারের সংসদ সদস্য, তিন দফায় মন্ত্রিত্ব ও ক্ষমতার শীর্ষ ব্যক্তির সুনজরের সুবাদে চাঁদপুরকে করে নিয়েছিলেন নিজের সাম্রাজ্য। যার দেখভাল করতেন তাঁর বড় ভাই ডা. জে আর ওয়াদুদ টিপু। যিনি নিজেও খাসজমিতে গড়ে তোলেন ‘টিপু নগর’।

চাঁদপুরের রাজনীতি, নিয়োগ-বদলি, দরপত্র, মনোনয়ন-বাণিজ্য, অবৈধভাবে নদীর বালু উত্তোলন, প্রকল্প গ্রহণ, জমি অধিগ্রহণসহ সর্বত্র বিস্তৃত ছিল দীপু মনির নিয়ন্ত্রণ। ডা. টিপুর নেতৃত্বে একটি চক্রের সদস্যরা এই নিয়ন্ত্রণে সহযোগিতা করতেন। এই চক্রের একজন বালুখেকো সেলিম খান গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার পতনের পর গণপিটুনিতে নিহত হয়েছেন।

দীপু-টিপুর সাম্রাজ্যে সরকারি কর্মকর্তা, বিরোধী দল, এমনকি নিজ দল আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরাও ছিলেন অসহায়। তাঁর বিরাগভাজন হয়ে টিকতে পারেননি এক জেলা প্রশাসক। জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যানের পদ হারাতে হয়েছিল ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরীকে।

৫ আগস্টের পর দীপু মনি গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে। শোনা যায়, ডা. টিপু দেশ ছেড়েছেন। বদলে গেছে চাঁদপুরের পরিস্থিতি। তাঁদের বিরুদ্ধে মুখ খুলছেন মানুষ। বাদ নেই আওয়ামী লীগের নেতারাও।

দীপু মনির সাম্রাজ্যে ভিন্নমতের রাজনৈতিক দলকে দমন, নিপীড়ন, হামলা ও মামলা ছিল নিত্যদিনের ঘটনা। সর্বশেষ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময়ও জেলা বিএনপির কার্যালয় এবং সভাপতির বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে।

চাঁদপুর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সেলিম উল্লাহ সেলিম বলেন, বিগত দেড় দশকে দীপু মনি ও তাঁর লোকদের হাতে বিএনপি-জামায়াতে ইসলামীর বহু নেতা-কর্মী গায়েবি মামলার আসামি ও ঘরছাড়া হয়েছেন। তাঁর নিজের দলের (আওয়ামী লীগের) লোকজনও রক্ষা পাননি। জুলুম ও নির্যাতনের শিকার ভুক্তভোগীরা তাঁর এসব কর্মকাণ্ডের জবাব নেওয়ার অপেক্ষায় আছেন। নিরাপত্তাসহ এসব কারণে তাঁকে চাঁদপুরের আদালতে হাজির করা হচ্ছে না।

বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, দীপু মনির পৈতৃক বাড়ি চাঁদপুর সদর উপজেলার রামপুর ইউনিয়নের রাড়িরচর গ্রামের পাটওয়ারী বাড়ি। রাজধানীতে রাজনীতি করা দীপু মনি ২০০৮ সালের আগে চাঁদপুর সদরে এসে চিকিৎসাসেবা দিয়ে সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছার চেষ্টা করেন। ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে চাঁদপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পেয়ে যান পররাষ্ট্রমন্ত্রীর পদ। পরে ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালে অনুষ্ঠিত দশম, একাদশ ও দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনেও বিজয়ী হন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে ঘন ঘন বিদেশ সফরের কারণে সমালোচিত হন। ২০১৪ সালে মন্ত্রিত্ব না পেলেও ছিলেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি। তবে ২০১৮ সালে আবার মন্ত্রিত্ব পান, সেবার পান শিক্ষা মন্ত্রণালয়। সর্বশেষ দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের পর হয়েছিলেন সমাজকল্যাণমন্ত্রী। ফলে ক্ষমতার দাপটে হেরফের হয়নি। তিনি আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।

অভিযোগ রয়েছে, শুরুর দিকে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠায় দীপু মনিকে সহযোগিতা করেন ওসমান গণি পাটওয়ারী। তবে ডা. টিপুর কাছে বেশি দিন টিকতে পারেননি ওসমান। সবকিছুর নিয়ন্ত্রণ নেন ডা. টিপু। তাঁর সঙ্গী হন আওয়ামী লীগের কিছু লোকসহ সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, টেন্ডারবাজ হিসেবে পরিচিত লোকজন। তাঁদের অন্যতম ছিলেন মেঘনা নদী থেকে অবৈধভাবে কয়েক হাজার কোটি টাকার বালু উত্তোলনকারী সেলিম খান। যিনি ইউপি চেয়ারম্যানও ছিলেন। এই চক্রে আরও ছিলেন সাবেক মেয়র জিল্লুর রহমান জুয়েল, জেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মাহফুজুর রহমান টুটুল, সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান আইয়ুব আলী ব্যাপারী, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি জাহিদুল ইসলাম রোমান, পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত সাইদুল ইসলাম বাবু ওরফে বিহারী বাবু। শিক্ষামন্ত্রী থাকাকালে বদলি-বাণিজ্যসহ শিক্ষকদের হয়রানির মূল হোতা ছিলেন পুরান বাজার ডিগ্রি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ রতন কুমার মজুমদার। সেলিম খান পিটুনিতে ছেলেসহ নিহত হয়েছেন। বাকি অনুসারীরা আত্মগোপনে।

স্থানীয়রা বলেছেন, ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে একসময় ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকায় চাঁদপুরের জন্য বড় বড় উন্নয়ন প্রকল্প এনেছেন। মানুষকে স্বপ্ন দেখিয়েছেন। কিন্তু লুটপাট ও ভাগ-বাঁটোয়ারায় সমঝোতা না হওয়ায় কোনো প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়নি। এগুলোর মধ্যে রয়েছে চাঁদপুর শহর রক্ষাসহ মেঘনা নদীর বাঁধ প্রকল্প, চাঁদপুর মেডিকেল কলেজ, চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ইত্যাদি। এসব প্রকল্প বাস্তবায়িত না হওয়ার পেছনে আছে ডা. টিপুর স্বার্থ হাসিল না হওয়া। এ ছাড়া তদবির, বদলি, ঘুষ-বাণিজ্য ও অবৈধ বালু উত্তোলনের টাকার ভাগ নেওয়ার দায়িত্বও ছিল টিপুর।

মেঘনায় অবৈধভাবে বালু উত্তোলন: স্থানীয়রা বলেছেন, সাবেক মন্ত্রী দীপু মনির ‘টাকার মেশিন’ ছিলেন লক্ষ্মীপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান নিহত সেলিম খান। পররাষ্ট্রমন্ত্রী থাকাকালে তাঁর হাত ধরেই উত্থান হয় সেলিম খানের। তিনি মেঘনা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করতেন। তাঁকে বারবার ডিও লেটার দিয়ে নির্বিচার পদ্মা-মেঘনা থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের সুযোগ করে দেন দীপু মনি।

অভিযোগ রয়েছে, সেলিম খানের বালুমহাল থেকে কয়েক শ কোটি টাকা ভাগ পেয়েছেন দীপু মনি ও তাঁর ভাই টিপু। অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করায় ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর সেলিম খানকে ২৬৭ কোটি ৩৩ লাখ টাকা কোষাগারে জমা দিতে চিঠি দিয়েছিলেন তৎকালীন জেলা প্রশাসক। তবে তাঁকে বদলি হতে হয়েছে। দীপু মনির নাম উল্লেখ না করে অবৈধ বালু উত্তোলনের সঙ্গে একজন নারী মন্ত্রীর পৃষ্ঠপোষকতা থাকার সমালোচনা করে একই মাসে বক্তব্য দিয়েছিলেন জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের তৎকালীন চেয়ারম্যান ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরী। তিনিও পদচ্যুত হন।

এ প্রসঙ্গে ড. মনজুর আহমেদ পরে চাঁদপুরে এসে বলেছিলেন, ‘মেঘনায় অবৈধভাবে যারা বালু তুলছে, তাদের সঙ্গে একজন নারী মন্ত্রীর সম্পর্ক আছে বলে আমি মন্তব্য করেছিলাম। ওই ঘটনার পর আমি আমার পদ হারাই।’

চাঁদপুর মেডিকেল কলেজ: চাঁদপুর সরকারি মেডিকেল কলেজ অনুমোদন পাওয়ার পর থেকে এর কার্যক্রম চলছে সরকারি জেনারেল হাসপাতালের একটি ভবনে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে একাধিকবার শহরতলির ইসলামপুর গাছতলা এলাকায় জমি পরিদর্শন করা হলেও জমি অধিগ্রহণ নিয়ে জটিলতার কারণে প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়নি। অভিযোগ রয়েছে, এই জমি অধিগ্রহণের অর্থ দীপু মনির লোকজনের লোপাটের নীলনকশা প্রকাশ পাওয়ার আশঙ্কায় প্রকল্পই মুখ থুবড়ে পড়েছে।

নিজগাছতলা গ্রামের বাসিন্দা আবুল কালাম পাঠান বলেন, নির্বাচনের আগে দীপু মনি বিভিন্ন ওয়াদা করতেন; কিন্তু সেগুলো রাখেননি। মেডিকেল কলেজ হয়নি। সরকার অধিগ্রহণ করবে এটা ভেবে ৩০ একর জমির মালিক কয়েক বছর জমিগুলোতে আবাদ করেননি। দীপু মনির লোকজন লুটপাট ও লাভের আশায় উন্নয়নকাজও বাধাগ্রস্ত করেছে।

চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়: চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রকল্প অনুমোদনের পরও বাস্তবায়িত হয়নি। তবে জমি অধিগ্রহণকে কেন্দ্র করে দীপু মনির ঘনিষ্ঠদের অধিগ্রহণের অর্থ নিজেদের পকেটে ঢোকানোর নীলনকশার অভিযোগ ওঠে। অভিযোগ ওঠে, ডা. টিপু, সেলিম খানসহ দীপু মনির ঘনিষ্ঠরা প্রস্তাবিত জমির দাম কয়েক গুণ বেশি দেখিয়ে ৩৫৯ কোটি টাকা বাড়তি পকেটে ভরতে কারসাজি করেছেন। তৎকালীন জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশের মন্ত্রণালয়ে পাঠানো একটি চিঠির সূত্র ধরে এ নিয়ে গণমাধ্যমে খবরও প্রকাশিত হয়; যা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হয়। অবশ্য দীপু মনি এই অভিযোগ অস্বীকার করেন। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম শহরের খলিশাডুলির একটি ভাড়া বাড়িতে অস্থায়ীভাবে চলছে।

জানা গেছে, ওই কারণে শহর রক্ষায় সাড়ে ছয় হাজার কোটি টাকার স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ প্রকল্পও ভেস্তে যায়।

লক্ষ্মীপুর মডেল ইউনিয়নের মেঘনা নদী উপকূলে বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য প্রস্তাবিত এলাকার কালু খাঁন, মো. কাজল গাজী ও হাবিবুর রহমান বলেন, সেলিম চেয়ারম্যান বিশ্ববিদ্যালয় হবে বলে তাঁদের বসতভিটা থেকে উচ্ছেদ করেন। তাঁরা এখনো সম্পত্তি বুঝে পাননি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ও হয়নি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা একাধিকবার সংবাদ সম্মেলন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাসসহ তাঁদের সমস্যাগুলো সমাধানে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

দীপু মনির ভাইয়ের টিপু নগর: অভিযোগ রয়েছে, দীপু মনির ক্ষমতার দাপটে তাঁর ভাই ডা. টিপু হাইমচর উপজেলার নীলকমল ইউনিয়নের বাহেরচরে ৪৮ একর খাসজমি দখল করে গড়ে তুলেছেন ‘টিপু নগর’। সেখানে আছে মাছের ঘের, গবাদিপশুর খামার ও সবজিবাগান। বিষয়টি জানতে পেরে তৎকালীন জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ সরকারি জমি উদ্ধারে উদ্যোগ নিয়েছিলেন। তাতে ক্ষিপ্ত হয়ে দীপু মনি ওই জেলা প্রশাসককে নেত্রকোনায় বদলি করান।

আরও যত অভিযোগ: দীপু মনির বিরুদ্ধে সবচেয়ে বেশি অভিযোগ ২০১৯ সালে তিনি শিক্ষামন্ত্রী হওয়ার পর। অভিযোগ রয়েছে, তদবির-বাণিজ্যের জন্য ২০২১ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মশিউর রহমানকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগ দেন। এই তদবির-বাণিজ্যে সহযোগিতা করতেন পুরান বাজার ডিগ্রি কলেজের সদ্য সাবেক অধ্যক্ষ রতন কুমার মজুমদার। কেন্দ্রে থাকতেন ডা. টিপু। তিনি মাধ্যমিক স্কুলের শিক্ষক থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পর্যন্ত শিক্ষা প্রশাসনের বিভিন্ন পদায়ন, পদোন্নতি ও বদলি-বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করতেন।

একাধিক শিক্ষকের অভিযোগ, টিপুর নেতৃত্বে গড়ে ওঠা সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করত সারা দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও শিক্ষকদের এমপিওভুক্তি। চাঁদপুর শহরের মাতৃপীঠ সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক মো. মাসুদুর রহমান বলেন, টিপু ও রতন মজুমদারের মনমতো না হলেই ওই শিক্ষক হয়ে যেতেন বিএনপি-জামায়াতের। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিকুলামবিরোধী বক্তব্য দেওয়ায় তাঁকে খাগড়াছড়ি বদলি করা হয়েছিল।

অভিযোগ রয়েছে, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরেরও নিয়ন্ত্রণে ছিলেন টিপু।

আওয়ামী লীগে বিভক্তিতে দীপু মনি: চাঁদপুরের একাধিক আওয়ামী লীগ নেতা অভিযোগ করেন, নিজের স্বার্থে দীপু মনি জেলা আওয়ামী লীগকে কয়েক ভাগে বিভক্ত করেছেন। এ ছাড়া ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের একাংশকে নিয়ে একক রাজত্ব কায়েম করেন। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ প্রথম সারির প্রায় সব নেতাই ছিলেন তাঁর চক্ষুশূল।

জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জহিরুল ইসলাম বলেন, এর আগে একজনের কারণে জেলা নেতাদের মধ্যে অনৈক্য ছিল। এটা সংগঠনের বৃহত্তর স্বার্থে তিনি অতীতেও চাননি, এখনো চান না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

শেখ হাসিনাকে ফেরত পাঠানোর ব্যাপারে এখনো ইতিবাচক সাড়া দেয়নি ভারত: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

রংপুর প্রতিনিধি
রংপুরে সার্কিট হাউসে সাংবাদিকের সঙ্গে কথা বলেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। ছবি: আজকের পত্রিকা
রংপুরে সার্কিট হাউসে সাংবাদিকের সঙ্গে কথা বলেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। ছবি: আজকের পত্রিকা

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেছেন, শেখ হাসিনাকে দেশে ফেরত দেয়ার ব্যাপারে ভারত এখনও ইতিবাচক সাড়া দেয়নি। ট্রাইব্যুনালের রায় নিয়ে তারা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছে, আমরাও তাদের প্রতিক্রিয়ার অপেক্ষায় আছি। আজ শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) সকালে রংপুর সার্কিট হাউসে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন তিনি। রংপুর অঞ্চলে চার দিনের সফরে এসেছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা।

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা তো চেয়েছি যে তাকে (শেখ হাসিনাকে) ফেরত পাঠানো হোক। যেহেতু উনি একজন কনভিক্টেড, যেহেতু সর্বোচ্চ বিচারিক সংস্থা তাকে একটি শাস্তি দিয়েছে। কিন্তু আমরা ইতিবাচক কোনো সাড়া এখন পর্যন্ত পাইনি। এটা নিয়ে আমার মনে হয় স্পেকুলেট না করাই ভালো। দেখা যাক কী হয়। আমরা তো চেয়েছি খুব, এ ধরনের ঘটনায় তো ঝট করে একদিনে সাত দিনে কোনো পরিবর্তন ঘটে না। আমরা অপেক্ষা করব, দেখি, ভারতের পক্ষ থেকে কি আসছে রিঅ্যাকশন।’

তৌহিদ হোসেন বলেন, একটা রিঅ্যাকশন আমরা দেখেছি যেটা, সেটা হলো তারা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখছে, এরকম একটা কথা আসছে আমাদের। দেখুক তারা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে।

বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে ফেরার বিষয়ে পররাষ্ট্র দপ্তরে কোনো তথ্য নেই বলে উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, "তারেক সাহেব কখন আসবেন এই সম্বন্ধে আমার কাছে কোনো তথ্য নেই। উনার স্ত্রী সম্ভবত আসছেন বা পৌঁছে গেছেন হয়তো ইতিমধ্যে। আজকে সকালে পৌঁছার কথা ছিল। বেগম জিয়াকে আজকে নেওয়া হচ্ছে না, আমি ঢাকা থেকে আজকে সকালে জানলাম যে, আজকে নেওয়া হচ্ছে না। একটু টেকনিক্যাল প্রবলেম দেখা দিয়েছে ওই এয়ারক্রাফট নিয়ে। সেক্ষেত্রে হয়তো এক-আধ দিন দেরি হতে পারে। "

আরাকান আর্মি বাংলাদেশিদের ধরে নিয়ে যাওয়া প্রসঙ্গে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, "আরাকান আর্মির সাথে আমাদের দ্বিপাক্ষিক আলোচনা সম্ভব নয়। তারা একটা নন-স্টেট অ্যাক্টর। আমরা স্টেট হিসেবে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা যেমন মিয়ানমারের কর্তৃপক্ষ, থাইল্যান্ড বা ভারতের সাথে করতে পারি সেটা তাদের সাথে করতে পারি না। তবে আমাদের স্বার্থ যেহেতু আছে, আমাদের দেখতে হবে। এই ঘটনা যাতে কমে বা আদৌ না ঘটে, এটার জন্য পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। "

এছাড়াও নীলফামারীতে প্রস্তাবিত চীনা হাসপাতালের কার্যক্রম অন্তর্বর্তী সরকার দ্রুত শুরু করে যেতে চায় বলেও জানান পররাষ্ট্র উপদেষ্টা। একই সঙ্গে নির্বাচিত সরকার এলে এই কাজ সমাপ্ত করবে বলেও আশা তার। এ সময় পিছিয়ে পড়া রংপুরের প্রত্নতাত্ত্বিকসহ সবক্ষেত্রে নেয়ার ব্যাপারে ইতিবাচক সরকারের সদিচ্ছার কথা জানান তৌহিদ হোসেন।

এরপর পররাষ্ট্র উপদেষ্টা সপরিবারে রংপুর জমিদার বাড়ি তাজহাটে পরিদর্শনে যান। এছাড়াও বিকেলে রংপুর সার্কিট হাউসে চা-চক্রের কথা রয়েছে তৌহিদ হোসেনের। আগামীকাল রংপুরের প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় এবং রংপুরের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জিলা স্কুল পরিদর্শন করার কথাও রয়েছে তার।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

হাতিয়ায় ৫৬০০ কেজি জাটকা ইলিশ জব্দ, এতিমখানায় বিতরণ

­হাতিয়া (নোয়াখালী) প্রতিনিধি
কোস্ট গার্ডের অভিযানে জব্দ জাটকা ইলিশ। ছবি: আজকের পত্রিকা
কোস্ট গার্ডের অভিযানে জব্দ জাটকা ইলিশ। ছবি: আজকের পত্রিকা

নোয়াখালীর হাতিয়ার জাগলার চর এলাকার মেঘনা নদীতে অভিযান চালিয়েছে কোস্ট গার্ড। এ সময় একটি নৌকা থেকে ৫ হাজার ৬০০ কেজি জাটকা ইলিশ জব্দ করা হয়। এই ঘটনায় আটক কয়েকজন মাঝিমাল্লার কাছ থেকে মুচলেকা নিয়ে তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়।

গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে কোস্ট গার্ড হাতিয়ার একটি দল এই অভিযান চালায়। জব্দ করা জাটকাগুলোর মূল্য প্রায় ২৮ লাখ টাকা।

কোস্ট গার্ড মিডিয়া কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট মো. আবুল কাশেম জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে মেঘনা নদীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে কোস্ট গার্ড। অভিযানে মেঘনা নদীর জাগলার চর এলাকায় একটি কাঠের নৌকায় তল্লাশি করা হয়। ওই নৌকা থেকে ৫ হাজার ৬০০ কেজি জাটকা জব্দ করা হয়। এ সময় মাঝিদের মুচলেকা নিয়ে নৌকা ছেড়ে দেওয়া হয়। জব্দ মাছগুলো মৎস্য কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে এতিমখানা ও দুস্থ ব্যক্তিদের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে। মৎস্য সম্পদ রক্ষায় কোস্ট গার্ডের এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে জানান এই কর্মকর্তা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

মাঠে পড়ে ছিল মাছ ব্যবসায়ীর রক্তাক্ত লাশ

ফরিদপুর প্রতিনিধি
ঘটনাস্থলে স্থানীয় বাসিন্দারা জড়ো হন। ছবি: আজকের পত্রিকা
ঘটনাস্থলে স্থানীয় বাসিন্দারা জড়ো হন। ছবি: আজকের পত্রিকা

ফরিদপুরের সালথায় উৎপল সরকার (৩৫) নামের এক মাছ ব্যবসায়ীর রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। আজ শুক্রবার সকালে উপজেলার আটঘর ইউনিয়নের গৌরদিয়া এলাকার কালীতলা ব্রিজ-সংলগ্ন মাঠ থেকে লাশটি উদ্ধার করে পুলিশ। এই ঘটনায় মাঠ-সংলগ্ন সেতু থেকে চোখ বাঁধা অবস্থায় থাকা ফিরোজ মোল্যা নামের এক ভ্যানচালককে জীবিত উদ্ধার করে স্থানীয় লোকজন।

নিহত উৎপল ফরিদপুর জেলা সদরের কানাইপুর ইউনিয়নের রনকাইল গ্রামের অজয় সরকারের ছেলে। তাঁর স্ত্রী ও আড়াই বছর বয়সী এক শিশুসন্তান রয়েছে।

থানা-পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আজ ভোরে সড়কের পাশে ফাঁকা মাঠে রক্তাক্ত অবস্থায় একটি লাশ দেখতে পায় স্থানীয় লোকজন। পাশেই একটি সেতুর সঙ্গে একই গ্রামের ভ্যানচালক ফিরোজ মোল্যাকে চোখ বাঁধা অবস্থায় বেঁধে রাখা হয়েছিল। পরে স্থানীয় বাসিন্দাদের হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি খুলে বলেন তিনি।

ভ্যানচালকের বরাত দিয়ে রনকাইল গ্রামের বাসিন্দা ও প্রতিবেশী কাজী শাহীন বলেন, উৎপল সরকার ব্যাটারিচালিত ভ্যানে করে গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরে মাছ কিনতে যাচ্ছিলেন। পথে অজ্ঞাতপরিচয় তিন-চার ব্যক্তি দেশীয় অস্ত্রের মুখে ভ্যানচালক ফিরোজ মোল্যাকে গামছা দিয়ে চোখ বেঁধে ব্রিজের রেলিংয়ে বেঁধে ফেলে। তারা উৎপলের সঙ্গে থাকা টাকাপয়সা লুট করে তাঁকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হত্যা করে পালিয়ে যায়।

বিষয়টি নিশ্চিত করে সালথা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) কে এম মারুফ হাসান রাসেল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘দুই থেকে তিনজন দুর্বৃত্ত ঘটনাটি ঘটিয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। তবে এটাকে ডাকাতি বলা যায় না। ঘটনাটি নিয়ে তদন্ত চলমান। তদন্ত শেষে মূল কারণ বলা যাবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বাসার দরজা ভেঙে চবি শিক্ষার্থীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার

চবি প্রতিনিধি 
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ওমর ফারুক সুমন নামের এক শিক্ষার্থীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) রাতে চট্টগ্রাম নগরীর খুলশী এলাকার একটি বাসা থেকে লাশটি উদ্ধার করে পুলিশ।

ওমর ফারুক বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন।

স্থানীয় ও পরিবারের সদস্যরা জানান, সুমন খুলশীতে তাঁর মামার বাসায় থাকতেন। তাঁর বড় ভাইও সেখানে থাকেন। দুই দিন আগে সুমনের মামা পুরো পরিবার নিয়ে তুরস্কে বেড়াতে যান। বাসায় সুমন ও তাঁর বড় ভাই ছিলেন। গতকাল বিকেল ৪টার দিকে ভাইয়ের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন সুমন। ফোনে তাঁর বড় ভাই কখন বাসায় ফিরবেন জানতে চান সুমন। বড় ভাই জানান যে তাঁর আসতে একটু দেরি হবে। এর কিছুক্ষণ পর বড় ভাই সুমনকে ফোন করলে তিনি আর ফোন রিসিভ করেননি। পরে বাড়ি থেকে সুমনের মা ফোন দিয়ে যোগাযোগ করতে না পেরে বিষয়টি বড় ভাইকে জানান। এতে উদ্বেগ দেখা দিলে বড় ভাই বিল্ডিংয়ের দারোয়ানকে দিয়ে বাসা চেক করান।

দারোয়ান কলিংবেল বাজিয়েও কোনো সাড়া না পেয়ে বড় ভাইকে জানালে তিনি দ্রুত বাসায় এসে সুমনকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পান। খবর পেয়ে পুলিশ এসে লাশ উদ্ধার করে। ঘটনাস্থলে চিরকুট মিলেছে। এতে লেখা রয়েছে, ‘আমি সুমন, ওমর ফারুক সুমন। আমার কোনো আশা-আকাঙ্ক্ষা নেই। আর আমার কারও প্রতি কোনো অভিযোগ নেই। সবাই ভালো থাকবেন।’ এর আগে ১ ডিসেম্বর লেখা আরেকটি চিরকুট পাওয়া যায়। সেখানে লেখা ছিল—‘আশাই জীবন, আশাই মরণ, ব্যর্থতা হতাশা-অন্ধকারে নিয়ে যায়।’

খুলশী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহীনুর জামান বলেন, ‘সুমন ও তাঁর বড় ভাই একসঙ্গে মামার বাসায় থাকতেন। মামা ও মামি বর্তমানে বিদেশে আছেন। বড় ভাই সন্ধ্যায় বাইরে যান। সে সময় সুমন বাসায় একা ছিলেন। বড় ভাই বাসায় ফিরে এসে বারবার ডাকলেও ফ্ল্যাটের ভেতর থেকে কোনো সাড়া পাননি। পরে দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকলে সুমনের মরদেহ ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। প্রাথমিক তদন্তে এটি আত্মহত্যা মনে হলেও আমরা সব সম্ভাব্য কারণ খতিয়ে দেখছি। ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহটি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত