Ajker Patrika

বার কাউন্সিলের পরীক্ষার ফি কমানোর দাবি রাবি শিক্ষার্থীদের

রাবি প্রতিনিধি  
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) আইন অনুষদের শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন। ছবি: আজকের পত্রিকা
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) আইন অনুষদের শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন। ছবি: আজকের পত্রিকা

বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের এনরোলমেন্ট পরীক্ষার আবেদন ফি কমানোর দাবি জানিয়েছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) আইন অনুষদের শিক্ষার্থীরা। এ দাবিতে কয়েক দিন ধরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে স্ট্যাটাসের মাধ্যমে তাঁরা এ দাবি জানিয়ে আসছেন। এ দাবিতে গত শনিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারিস রোডে একটি মানববন্ধন কর্মসূচিও পালন শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষার্থীরা বলছেন, বার কাউন্সিল পরীক্ষায় ৪ হাজার ২০ টাকা ফি নির্ধারণ অযৌক্তিক ও নজিরবিহীন; যেখানে বাংলাদেশের যেকোনো সরকারি চাকরির পরীক্ষায় আবেদন ফি ২০০ থেকে ৩০০ টাকার মধ্যে। এমনকি বিসিএসের মতো পরীক্ষায় যাতে আঞ্চলিক কেন্দ্র থাকে, সেখানে অনেক বেশি খরচ হওয়ার কথা থাকলেও ২০০ টাকায় আবেদন করা যায়।

অন্যদিকে বার কাউন্সিলের পরীক্ষায় আবেদন ফি বেশি দেওয়ার পরও ঢাকায় গিয়ে পরীক্ষা দিতে হয়। এতে যাতায়াত, থাকা-খাওয়াসহ পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে বিপুল টাকা খরচ হয়। ফলে অনেক শিক্ষার্থী প্রাথমিক অবস্থায় শুধু আবেদনও করতে পারেন না।

এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ বলেন, একজন আইন গ্র্যাজুয়েটকে আইনজীবী হতে হলে প্রথমে ইন্টিমেশন জমা দিতে হয়, এতে ক্ষেত্রবিশেষে কমবেশি দুই হাজার টাকা পরিশোধ করতে হয়। ছয় মাস পরে ফরম ফিলাপের সুযোগ হয়, তখন পরীক্ষার্থীকে ৪০২০ টাকা প্রদান করতে হয়। তখন একজন শিক্ষানবিশ আইনজীবী বার কাউন্সিল এনরোলমেন্ট পরীক্ষায় বসতে পারে; যা কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়।

আবু সাঈদ আরও বলেন, ‘এত কিছুর পর প্রিলি, লিখিত, ভাইভা পরীক্ষার মাধ্যমে কোয়ালিফাই করে একজন শিক্ষানবিশ আইনজীবী হিসেবে যখন বার অ্যাসোসিয়েশনগুলোয় সদস্য হতে যান, তখন তাঁকে আবারও বড় অঙ্কের টাকা গুনতে হয়। কোনো কোনো সময় এটা ৬০-৭০ হাজার টাকা পর্যন্ত হয়। একজন শিক্ষানবিশ আইনজীবীর ওপর এগুলো চরম মাত্রার জুলুম। তাই বার কাউন্সিল ইতিমধ্যে যে ফরম ফিলাপের বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে, সেটা সংশোধন করে ফরম ফিলাপের ফি যুক্তিসংগত মাত্রায় কমিয়ে এনে পুনরায় বিজ্ঞপ্তি প্রদানের দাবি জানাচ্ছি।’

আইন ও ভূমি প্রশাসন বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী শাহরুখ মাহমুদ বলেন, ‘অভ্যুত্থানের পরে বিসিএসের মতো পরীক্ষার ফি কমিয়ে ২০০ টাকাতে আনা হয়েছে। কিন্তু বার কাউন্সিলের পরীক্ষার ফি এখনো কমানো হয়নি। একটা সদ্য পাস করা আইনের ছাত্র যখন পড়াশোনা করে বের হয়, তখন প্রথম পরিচয় খোঁজে একজন আইনজীবী হওয়ার জন্য। এখন একটা পরীক্ষা দেওয়ার জন্য বা পাস করার জন্য যদি এত টাকা ফি দিতে হয়, তাহলে আইনের ছাত্রদের জন্য এটা লজ্জা ও অপমানজনক।’

বার কাউন্সিল পরীক্ষার বর্তমান ফি অযৌক্তিক ও নজিরবিহীন হিসেবে মনে করছেন আইন ও ভূমি প্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী এবং এই আন্দোলনের আহ্বায়ক কামরুল হাসান সজীব। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, বার কাউন্সিল পরীক্ষায় ৪ হাজার ২০ টাকা ফি নির্ধারণ অযৌক্তিক ও নজিরবিহীন। এমনকি বিসিএসের মতো পরীক্ষায় যাতে আঞ্চলিক কেন্দ্র থাকে, সেখানে অনেক বেশি খরচ হওয়ার কথা থাকলেও ২০০ টাকায় আবেদন করা যায়। অন্যদিকে বার কাউন্সিলের পরীক্ষায় আবেদন ফি বেশি ফি দেওয়ার পরও ঢাকায় গিয়ে পরীক্ষা দিতে হয়। এতে যাতায়াত, থাকা-খাওয়াসহ পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে বিপুল টাকা খরচ হয়। ফলে অনেক শিক্ষার্থী প্রাথমিক অবস্থায় শুধু আবেদনও করতে পারেন না।

কামরুল হাসান সজীব আরও বলেন, ‘অনার্স-মাস্টার্স শেষে আমাদের যে শুধু একটা পরীক্ষায় বসতে হয়, এমন না। প্রতি মাসে আমাদের কয়েকটি পরীক্ষার জন্য ঢাকা যেতে হয়। সুতরাং, এত টাকা খরচ করে একটি পরীক্ষায় বসা আমাদের জন্য খুবই কষ্টসাধ্য হয়ে দাঁড়ায়। তাই আমরা বার কাউন্সিল পরীক্ষার আবেদন ফি কমিয়ে ৩০০ টাকা করার দাবি জানাচ্ছি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

গণভোটে ‘হ্যাঁ’ ভোট চাইলেন প্রধান উপদেষ্টা

ফ্ল্যাটের ভেতর অন্তঃকোন্দলে এনসিপির মোতালেবকে গুলি, মাদক ও গুলির খোসা উদ্ধার: পুলিশ

দল বিলুপ্ত করে বিএনপিতে যোগ দিলেন এহসানুল হুদা

বেনজীরের ফ্ল্যাট থেকে জব্দ ২৪৬ ধরনের মালামাল প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ তহবিলে

খুলনায় এনসিপি নেতা গুলিবিদ্ধের ঘটনায় তরুণী আটক

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ফকিরহাটে ভৈরব নদ: খননেও মেলেনি সুফল বাধা ওয়াসার পাইপ

  • ২০২০ সালে নদের সাড়ে ১৭ কিমি পুনঃখনন করে পাউবো।
  • পাঁচ বছরের মধ্যে নদটির বিভিন্ন অংশে পলি জমে ভরাট হয়ে গেছে।
ফকিরহাট (বাগেরহাট) প্রতিনিধি 
বাগেরহাটের ফকিরহাটে ভৈরব নদের মাঝামাঝি স্থানে ওয়াসার পাইপলাইন। ছবি: আজকের পত্রিকা
বাগেরহাটের ফকিরহাটে ভৈরব নদের মাঝামাঝি স্থানে ওয়াসার পাইপলাইন। ছবি: আজকের পত্রিকা

বাগেরহাটের ফকিরহাট উপজেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত ভৈরব নদ খননের পরও সুফল পাচ্ছে না এলাকাবাসী। উপজেলার ফকিরহাট বাজারসংলগ্ন এলাকা দিয়ে নেওয়া খুলনা ওয়াসার পাইপলাইনের কারণে নদীটিতে নৌচলাচল বাধাগ্রস্ত হয়েছে। দেখা দিয়েছে মারাত্মক নাব্যতাসংকট।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ফকিরহাট বাজারের পাশ দিয়ে যাওয়া ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের একটি সেতুর নিচে ভৈরব নদের মাঝ বরাবর বড় পানির পাইপ রয়েছে। পাইপটি রক্ষায় নদীর ভেতর আড়াআড়িভাবে লোহার খাম্বা বসিয়ে বেড়া দেওয়ায় নদীটিতে বাঁধ তৈরি হয়েছে। ফলে জোয়ার-ভাটার স্বাভাবিক গতি ব্যাহত হয়ে নদীগর্ভে দ্রুত পলি জমছে। বাধাগ্রস্ত হচ্ছে নৌচলাচল।

স্থানীয়রা বলেন, ফকিরহাট, মোল্লাহাট এবং আশপাশের বিস্তীর্ণ এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসনসহ নৌপথ সচল রাখতে ২০২০ সালে ভৈরব নদের সাড়ে ১৭ কিমি পুনঃখনন করে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। তবে খননের সুফল কাজে আসেনি। মোল্লাহাটের মধুমতী নদী থেকে খুলনা শহরে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের জন্য স্থাপন করা ওয়াসার পাইপলাইনের কারণে নদীটিতে এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। গত বর্ষা মৌসুমে নদী দিয়ে পানি নিষ্কাশন ব্যাহত হওয়ায় ফকিরহাট এবং আশপাশের এলাকায় ব্যাপক জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এতে বিস্তীর্ণ এলাকার ফসলি জমি ও মাছের ঘের পানিতে ডুবে নষ্ট হয়ে যায়।

ফকিরহাট বাজারের ব্যবসায়ী মুকুন্দ পাল বলেন, নৌচলাচল বন্ধ থাকায় ব্যবসায় মারাত্মক প্রভাব পড়েছে। নৌপথ চালু থাকলে খুলনা, মোংলা বন্দর, বাগেরহাট ও বরিশালের সঙ্গে স্বল্প খরচে পণ্য পরিবহন সম্ভব হতো।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুমনা আইরিন বলেন, ওয়াসার পাইপটি ফকিরহাটসহ পার্শ্ববর্তী এলাকার একটি বৃহৎ জনগোষ্ঠীর জন্য দীর্ঘদিনের ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিষয়টি দ্রুত সমাধানে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।

খুলনা ওয়াসার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরমান সিদ্দিক বলেন, ওই স্থানে পাইপলাইনের মেরামতের জন্য প্রয়োজনীয় উন্নত প্রযুক্তির যন্ত্রপাতি চীন থেকে আনার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। যন্ত্রপাতি এলে পাইপলাইনটি নৌযান চলাচলের উপযোগী করা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

গণভোটে ‘হ্যাঁ’ ভোট চাইলেন প্রধান উপদেষ্টা

ফ্ল্যাটের ভেতর অন্তঃকোন্দলে এনসিপির মোতালেবকে গুলি, মাদক ও গুলির খোসা উদ্ধার: পুলিশ

দল বিলুপ্ত করে বিএনপিতে যোগ দিলেন এহসানুল হুদা

বেনজীরের ফ্ল্যাট থেকে জব্দ ২৪৬ ধরনের মালামাল প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ তহবিলে

খুলনায় এনসিপি নেতা গুলিবিদ্ধের ঘটনায় তরুণী আটক

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বিচার পেতে জীবনের ঝুঁকি

মো. হোসাইন আলী কাজী
বিএডিসির জরাজীর্ণ ভবন। ছবি: আজকের পত্রিকা
বিএডিসির জরাজীর্ণ ভবন। ছবি: আজকের পত্রিকা

আইনের আশ্রয় নিতে এসে ভয় নিয়ে ঢুকতে হচ্ছে আদালতে। অর্ধশত বছরের পুরোনো দুটি পরিত্যক্ত ভবনের মাঝ দিয়েই বরগুনার আমতলী উপজেলা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের মূল প্রবেশপথ। জরাজীর্ণ ভবন দুটি যেকোনো সময় ধসে পড়ার শঙ্কা রয়েছে। তাই প্রতিদিন জীবনের ঝুঁকি নিয়েই বিচারপ্রার্থী, আইনজীবী ও আদালতের কর্মচারীরা ওই পথ ব্যবহার করছেন। বড় ধরনের দুর্ঘটনা এড়াতে ভবন দুটি দ্রুত অপসারণের দাবি জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

জানা গেছে, ১৯৭৫ সালে বিএডিসি কর্তৃপক্ষ আমতলী উপজেলা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের সামনে মেশিনারিজ যন্ত্রাংশ ও কৃষি উপকরণ সংরক্ষণের জন্য দুটি দ্বিতল পাকা ভবন নির্মাণ করে। প্রায় ১৫ বছর আগে উপজেলা প্রশাসন ভবন দুটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করে। তবে দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও সেগুলো অপসারণে কোনো কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।

পরিত্যক্ত ওই ভবন দুটির মাঝখান দিয়েই আদালতের প্রধান প্রবেশদ্বার নির্মিত। প্রতিদিন বিচারকাজে অংশ নিতে হাজারো মানুষ ওই ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের নিচ দিয়ে আদালতে যাতায়াত করেন। স্থানীয়দের দাবি, ভবন দুটি এতটাই জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে যে, যেকোনো সময় ধসে পড়তে পারে। এতে প্রাণহানির শঙ্কা রয়েছে।

গত রোববার বিকেলে সরেজমিনে দেখা গেছে, ভবন দুটির বিভিন্ন অংশ থেকে ইট, পাথর ও বিম খসে পড়ছে। দেয়ালজুড়ে জন্মেছে পরগাছা। ভেতরের অবস্থা এমন যে দিনের বেলায়ও সেখানে ঢুকতে ভয় পান মানুষ। ভবন দুটি ভুতুড়ে অবস্থায় পরিণত হওয়ায় আদালত প্রাঙ্গণের পরিবেশও নষ্ট হচ্ছে।

বিচারপ্রার্থী আব্দুল মাজেদ বলেন, ‘আদালতের সামনে এভাবে দুটি পরিত্যক্ত ভবন থাকা যেমন দৃষ্টিকটু, তেমনি তা আমাদের জীবনের জন্য মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ। দ্রুত ভবন দুটি অপসারণ করা প্রয়োজন।’

আমতলী সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের পেশকার মো. আবুবকর বলেন, আদালতের প্রবেশপথের দুই পাশে পরিত্যক্ত দুটি ভবন পড়ে আছে। ভবন ধসে পড়লে বড় ধরনের প্রাণহানি ঘটতে পারে।

জেলা বার সদস্য ও অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর মো. জসিম উদ্দিন বলেন, পরিত্যক্ত ভবন দুটি অপসারণের জন্য উপজেলা প্রশাসনকে একাধিকবার অবহিত করা হয়েছে। বিচারপ্রার্থী ও আইনজীবীদের নিরাপত্তার স্বার্থে দ্রুত ভবন দুটি অপসারণ করা জরুরি।

জানতে চাইলে আমতলী উপজেলা বিএডিসির উপসহকারী প্রকৌশলী সৈয়দ মোহাইমিনুল ইসলাম বলেন, ‘ভবন দুটি বহু আগেই পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। কেন এখনো সেগুলো অপসারণ করা হয়নি, তা আমারও বোধগম্য নয়।’

এ বিষয়ে উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী মো. ইদ্রিস আলী বলেন, বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ইউএনও মুহাম্মদ জাফর আরিফ চৌধুরী বলেন, পরিত্যক্ত ভবন দুটি যথাযথ প্রক্রিয়ায় দ্রুত সময়ের মধ্যেই অপসারণ করা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

গণভোটে ‘হ্যাঁ’ ভোট চাইলেন প্রধান উপদেষ্টা

ফ্ল্যাটের ভেতর অন্তঃকোন্দলে এনসিপির মোতালেবকে গুলি, মাদক ও গুলির খোসা উদ্ধার: পুলিশ

দল বিলুপ্ত করে বিএনপিতে যোগ দিলেন এহসানুল হুদা

বেনজীরের ফ্ল্যাট থেকে জব্দ ২৪৬ ধরনের মালামাল প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ তহবিলে

খুলনায় এনসিপি নেতা গুলিবিদ্ধের ঘটনায় তরুণী আটক

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

চোর সন্দেহে নির্যাতন: মবের ভুক্তভোগীকে জেল, হাসপাতালে মৃত্যু

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
ওমর ফারুক
ওমর ফারুক

দুই ঘণ্টা ধরে নির্যাতন চলে ভ্যানচালক ওমর ফারুকের (৩৮) ওপর। পেরেক ঢোকানো হয় হাত-পায়ে। পানি চাইলে শীতের রাতে নগ্ন করে চুবানো হয় নদীতে। তারপর দফায় দফায় নির্যাতন। পায়ুপথে ঢোকানো হয় মরিচের গুঁড়া। এতে মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়েন ফারুক। ওই অবস্থায় তাঁকে ভ্রাম্যমাণ আদালতে সাত দিনের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। পরে কারাগার থেকে হাসপাতালে পাঠানো হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়।

নিহত ফারুকের বাড়ি রাজশাহীর বাগমারা উপজেলা সদরের চাঁনপাড়া মহল্লায়। বাবার নাম মসলেম সরদার। গত বুধবার সন্ধ্যায় উপজেলা সদরের সিএনজি সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে সমিতির সদস্যরা তাঁকে নির্মম নির্যাতন করেন। স্থানীয়রা জানান, চুরির অভিযোগে নির্যাতন করা হলেও পরে মাদক উদ্ধারের নাটক সাজানো হয়। এক পুরিয়া গাঁজার জন্য ফারুককে সাত দিনের কারাদণ্ড এবং ১০০ টাকা জরিমানা করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সাইফুল ইসলাম ভুঞা। পরে ওই রাতেই তাঁকে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে রেখে যায় বাগমারা থানা-পুলিশ। শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় পরদিন সকালে তাঁকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত শনিবার ভোরে তাঁর মৃত্যু হয়।

গত বুধবার উপজেলা সদরে গেলে ব্যাটারি চুরির অপবাদ দিয়ে ওমর ফারুককে আটকে রাখেন সিএনজি সমিতির সদস্যরা। সমিতির সভাপতি রেজাউল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মতিনের নেতৃত্বে সমিতির ২০-২৫ জন সদস্য মব সৃষ্টি করে তাঁকে নির্মম নির্যাতন করেন। চুরির কথা স্বীকার করাতে চার হাত-পায়ে পেরেক ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। নগ্ন করে ফেলে রাখা হয় রাস্তায়। পানি খেতে চাইলে পাশের নদীতে চুবানো হয়। পায়ুপথে ঢুকিয়ে দেওয়া হয় মরিচের গুঁড়া। একপর্যায়ে অবস্থা আশঙ্কাজনক দেখে এক পুরিয়া গাঁজা এনে পুলিশে খবর দেওয়া হয়। শারীরিক অবস্থা দেখে পুলিশ সদস্যরা আর তাঁকে নিয়ে যেতে চাননি। পরে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে হাজির হন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সাইফুল ইসলাম ভুঞা। তিনি নির্যাতনকারীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে মুমূর্ষু ভ্যানচালক ফারুককে সাত দিন কারাদণ্ড ও ১০০ টাকা অর্থদণ্ড দেন।

রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার শাহ আলম খান জানান, ওই রাতেই পুলিশ ওমর ফারুককে আহত অবস্থায় কারাগারে দিয়ে যায়। তাঁর অবস্থা খারাপ দেখে পরদিন সকালে রামেক হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার ফারুক মারা যান। এরপর ময়নাতদন্ত শেষে লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

ফারুকের বাবা মসলেম সরদারও ভ্যানচালক। তিনি বলেন, মিথ্যা অভিযোগে ছেলেকে নির্যাতন করা হয়েছে। চুরি না করলেও স্বীকার করাতে এভাবে নির্যাতন করা হয়েছে।

ফারুকের মা পারুল বেগম বলেন, ‘গরিব বলে আমার ছেলেকে এভাবে নির্যাতন করা হয়েছে। মুমূর্ষু অবস্থায় চিকিৎসা না করিয়ে প্রশাসন তাকে কারাগারে পাঠায়। সিএনজির লোকজন দেখায়, তার কাছে গাঁজা পাওয়া গেছে। কিন্তু সে মাদক সেবন করত না। প্রশাসন নির্যাতনকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে আমার মৃতপ্রায় ছেলেকে জেলে দিয়ে খুব খারাপ কাজ করেছে। তখনো সঠিক চিকিৎসা হলে বেঁচে যেত। আমি এই ঘটনার সাথে জড়িত সবার বিচার চাই।’

এ বিষয়ে কথা বলতে ভবানীগঞ্জ সিএনজি মালিক সমিতির সভাপতি রেজাউল করিমের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করা হয়। সামনাসামনি না গেলে তিনি এ ব্যাপারে কথা বলবেন না বলে জানান।

মুমূর্ষু ব্যক্তিকে কারাগারে নেওয়ার বিষয়ে বাগমারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা তো ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করি না। আদেশ হলে আমাদের কাজ কারাগারে পৌঁছে দেওয়া। সেটাই করেছি।’ নির্যাতনকারীদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘পরিবার চাইলে মামলা করতে পারে। তারপর তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

মুমূর্ষু ব্যক্তির চিকিৎসা না করিয়ে কারাদণ্ড দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সাইফুল ইসলাম ভুঞা বলেন, তিনি একটি সভায় ব্যস্ত আছেন। সভা শেষে ফোন করবেন। পরে আর ফোন করেননি। আবার ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি।

বিভাগীয় কমিশনার ড. আ ন ম বজলুর রশীদ বলেন, এ বিষয়ে তাঁর কিছু জানা নেই। খোঁজ নিয়ে দেখবেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

গণভোটে ‘হ্যাঁ’ ভোট চাইলেন প্রধান উপদেষ্টা

ফ্ল্যাটের ভেতর অন্তঃকোন্দলে এনসিপির মোতালেবকে গুলি, মাদক ও গুলির খোসা উদ্ধার: পুলিশ

দল বিলুপ্ত করে বিএনপিতে যোগ দিলেন এহসানুল হুদা

বেনজীরের ফ্ল্যাট থেকে জব্দ ২৪৬ ধরনের মালামাল প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ তহবিলে

খুলনায় এনসিপি নেতা গুলিবিদ্ধের ঘটনায় তরুণী আটক

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

খুলনায় এনসিপি নেতা গুলিবিদ্ধের ঘটনায় তরুণী আটক

খুলনা প্রতিনিধি
তনিমা তন্বী। ছবি: আজকের পত্রিকা
তনিমা তন্বী। ছবি: আজকের পত্রিকা

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) শ্রমিক সংগঠনের খুলনা বিভাগীয় আহ্বায়ক মোতালেব শিকদার গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনায় আলোচিত তনিমা তন্বীকে আটক করেছে মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)।

সোমবার (২২ ডিসেম্বর) রাতে মহানগরীর টুটপাড়া থেকে তন্বীকে আটক করা হয়। খুলনা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) ওসি তৈমুর ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

এর আগে সোমবার বেলা ১১টা ৪৫ মিনিটের দিকে মহানগরীর সোনাডাঙ্গার আল আকসা মসজিদ রোডে অবস্থিত ১০৯ মুক্তা হাউসের নিচতলার তন্বীর বাসায় মোতালেব গুলিবিদ্ধ হন। ঘটনার পর স্থানীয়রা তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান। ঘটনার পর থেকেই বিষয়টি খুলনাসহ দেশজুড়ে আলোচনার ঝড় তোলে।

এ ঘটনায় পুলিশ ওই কক্ষ থেকে মাদক সেবনের বিভিন্ন সরঞ্জাম উদ্ধার করেছে।

এর আগে মুক্তা হাউসের মালিকের স্ত্রী আশরাফুন্নাহার জানিয়েছিলেন, স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে তন্বী গত ১ ডিসেম্বর নিচতলাটি ভাড়া নিয়েছিলেন। তিনি নিজেকে এনজিও কর্মী হিসেবে দাবি করে প্রায় সময় বাড়ির বাইরে থাকতেন। তাঁর কক্ষে একাধিক পুরুষের আসা-যাওয়া ছিল। পরে অন্যদের মাধ্যমে তাঁর অসামাজিক কার্যকলাপের বিষয়টি জানতে পেরে চলতি মাসেই বাড়ি ছাড়ার নোটিশ দেওয়া হয়। তবে বাড়ির ছাড়ার আগেই গুলিবিদ্ধের ঘটনাটি ঘটেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

গণভোটে ‘হ্যাঁ’ ভোট চাইলেন প্রধান উপদেষ্টা

ফ্ল্যাটের ভেতর অন্তঃকোন্দলে এনসিপির মোতালেবকে গুলি, মাদক ও গুলির খোসা উদ্ধার: পুলিশ

দল বিলুপ্ত করে বিএনপিতে যোগ দিলেন এহসানুল হুদা

বেনজীরের ফ্ল্যাট থেকে জব্দ ২৪৬ ধরনের মালামাল প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ তহবিলে

খুলনায় এনসিপি নেতা গুলিবিদ্ধের ঘটনায় তরুণী আটক

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত