সাজ্জাদ বকুল

বাংলা কথাসাহিত্যের জগতে শক্তিশালী লেখক হিসেবে সুবিদিত হাসান আজিজুল হক করতেন শিক্ষকতা—প্রথমে বিভিন্ন কলেজে, পরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে, দর্শন বিভাগে। শিক্ষকতার পেশায় থেকে অনেকেই লেখালেখি করে থাকেন। তবে হাসান আজিজুল হকের লেখালেখি যে নিতান্ত শখের বশে নয়, তা যাঁরা তাঁর লেখা পাঠ করেছেন বা তাঁকে কাছ থেকে দেখেছেন, তাঁরা নিশ্চয়ই উপলব্ধি করেছেন। প্রায় এক যুগ তাঁকে খুব কাছ থেকে দেখে, ঘনিষ্ঠভাবে মিশে আমারও তা কিছুটা হৃদয়ঙ্গম হয়েছে।
হাসান আজিজুল হক একজন সমাজ-সচেতন লেখক, বিবেকবান, প্রতিবাদী মানুষ। মানুষের দুঃখ, বেদনা, সংগ্রাম, বঞ্চনা, বৈষম্য, রাষ্ট্রের মালিক জনগণের ওপর শাসকদের শোষণ-পীড়ন তাঁকে ক্ষুব্ধ করেছে। এসবের শৈল্পিক প্রতিবাদ করতেই তিনি কলম হাতে তুলে নিয়েছেন। তাঁর এমন ক্ষোভের আগুন থেকেই জন্ম নিয়েছে ‘শকুন’-এর মতো বাংলা ছোটগল্প-জগতের বাঁক বদলকারী গল্পের। পাকিস্তান আমলে স্বৈরশাসক আইয়ুব খানের সামরিক অপশাসনের প্রতিবাদ হিসেবে তিনি এই গল্প রচনা করেন।
দেশভাগের মতো রাজনীতিবিদদের স্বার্থতাড়িত অপরিণামদর্শী সিদ্ধান্তপ্রসূত ঘটনার বিয়োগান্ত পরিণতিতে ক্ষুব্ধ হাসান আজিজুল হক লেখক-জীবনের প্রায় শুরুতে লিখেছেন ‘আত্মজা ও একটি করবী গাছ’-এর মতো কালজয়ী গল্প, শেষ দিকে এসে লিখেছেন ‘আগুনপাখি’র মতো মহাকাব্যিক উপন্যাস।
হাসান আজিজুল হককে পাঠ করলে আমরা এই সিদ্ধান্তে আসতে পারি, তাঁর লেখালেখি আসলে বিবেকের দায় থেকে। সেই দায় বিপন্ন, দুস্থ মানুষের দুর্দশার কথা সকলের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়ার দায়। সেই দায় তিনি শুধু তাঁর লেখালেখি দিয়ে মেটাতে চেষ্টা করেননি। একই সঙ্গে তিনি সক্রিয় থেকেছেন মাঠে।
যখনই মানুষ আক্রান্ত হয়েছে, সমাজ কলুষিত হয়েছে, হাসান আজিজুল হক মাঠে নেমেছেন—সাহিত্যের মাঠে যেমন, তেমনি আন্দোলন-সংগ্রামের মাঠেও। নানা সংগঠন, সভা-সমাবেশে নেতৃত্ব দিয়েছেন, অন্যদের ডাকে সাড়া দিয়ে যেমন, তেমন নিজে থেকেও এসবের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন, মানুষকে সংগঠিত করেছেন। তিনি এমন একজন লেখক, যিনি একদিকে বিবেকের দায়বোধ থেকে সাহিত্য রচনা করেছেন, অন্যদিকে সামাজিক-সাংস্কৃতিক নানা কর্মকাণ্ডে সক্রিয় থেকে তাঁর বক্তব্য আপামর জনতার কাছে পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন, অনেকের কাছে হয়তো তাঁর লেখাসেভাবে পৌঁছায়নি।
অবিভক্ত ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার যবগ্রামে জন্ম নেওয়া এই মানুষটা দেশভাগের নির্মম বাস্তবতার শিকার হয়ে পাকিস্তানে তথা বাংলাদেশে চলে আসতে বাধ্য হন। এরপর কিছুকাল খুলনায় কাটিয়ে চলে আসেন উত্তরের জেলা রাজশাহীতে। জীবনের প্রায় ছয় দশকেরও বেশি সময় তিনি কাটিয়েছেন রাজশাহীতে। ১৯৭৩ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে যোগদানের পর থেকে ২০২১ সালের ১৫ নভেম্বর প্রয়াত হওয়ার সময় পর্যন্ত তিনি বাস করেছেন শিক্ষানগরীখ্যাত এই জেলা শহরে।
হাসান আজিজুল হক এই দীর্ঘ সময়ে রাজশাহীর নানা সামাজিক-সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয় থেকেছেন। কখনো সংগীত, কখনো আবৃত্তি, কখনো চলচ্চিত্র, কখনো নাটক। শিল্প-সংস্কৃতির নানা মাধ্যমে সাংগঠনিক তৎপরতায় নিজেকে সম্পৃক্ত করেছেন। এখানে তিনি শুধুই অংশগ্রহণকারী থাকেননি বা নিছক মনের ক্ষুধা নিবৃত্ত করতে এসব করেননি। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে হয়েছেন সংগঠক। এখানেই অন্য অনেক লেখকের চেয়ে তিনি আলাদা।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর দীর্ঘদিনের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডের সহযোদ্ধা অনেকের সঙ্গে কথা বলে এ বিষয়ে নানা তথ্য পাওয়া যায়। এমন কয়েকজন হলেন হাসান আজিজুল হকের প্রায় সমবয়সী রাবির অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক, একুশে পদকপ্রাপ্ত বিশিষ্ট লেখক-চিন্তক সনৎ কুমার সাহা, বাংলা বিভাগের সাবেক অধ্যাপক কবি চৌধুরী জুলফিকার মতিন, বিভাগে হাসান আজিজুল হকের শিক্ষার্থী ও পরে সহকর্মী অধ্যাপক এস এম আবু বকর, ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক বাংলা একাডেমি পুরস্কারপ্রাপ্ত নাট্যব্যক্তিত্ব মলয় ভৌমিক প্রমুখ।
তাঁদের কাছ থেকে জানা যায়, হাসান আজিজুল হক স্বাধীনতা-উত্তরকালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আরও কয়েকজন গুণী শিক্ষক, যেমন আলী আনোয়ার, বজলুল মোবিন চৌধুরী, শহীদুর রহমান, গুণী কর্মকর্তা নাজিম মাহমুদ প্রমুখের সঙ্গে মিলে ক্যাম্পাসে নাট্যচর্চার ক্ষেত্র প্রস্তুত করেন। সে সময় থিয়েটার ওয়ার্কশপ আয়োজন, নাট্য রচনা, বিদেশি নাটকের অনুবাদ ও সেসবের মঞ্চায়নসহ নাটক নিয়ে নানা কর্মকাণ্ডের ফলে রাবিতে নাটক বিষয়ে অনেক সংগঠন আত্মপ্রকাশ করে, যার মধ্যে অনুশীলনসহ কয়েকটি এখনো সক্রিয়।
নাজিম মাহমুদ প্রমুখের প্রতিষ্ঠিত আবৃত্তি সংগঠন ‘স্বনন’-এর সঙ্গে তিনি ঘনিষ্ঠভাবে সম্পৃক্ত ছিলেন, বলা যায় তিনিই ছিলেন এর প্রধান পৃষ্ঠপোষক। ‘স্বনন’ নামটিও তাঁর দেওয়া। ক্যাম্পাসে সংগীতবিষয়ক নানা কর্মকাণ্ডেও হাসান আজিজুল হকের অনুপ্রেরণা, অংশগ্রহণ ছিল। জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত সম্মিলন পরিষদের কেন্দ্রীয় ও রাজশাহী শাখার উপদেষ্টা ছিলেন তিনি। এই সংগঠনের রাজশাহী শাখার সাবেক সভাপতি তাপস মজুমদারের তথ্যমতে, রাজশাহীতে তাঁরা ‘রবীন্দ্রমেলা’সহ নানা আয়োজন করলে হাসান আজিজুল হক নানাভাবে যুক্ত থাকতেন, অনুষ্ঠানের খরচের জন্য বিজ্ঞাপন জোগাড়ে তিনিই ছিলেন মূল ভরসা।
রাজশাহী শহরে কবিকুঞ্জ বলে কবিদের একটা সংগঠন প্রতিষ্ঠিত হয় ২০১২ সালে। তিনি এই সংগঠনের উপদেষ্টা ছিলেন বলে জানান এর সাধারণ সম্পাদক আরিফুল হক কুমার। প্রতিবছর তাঁরা ‘জীবনানন্দ কবিতামেলা’ বলে যে আন্তর্জাতিক কবিতা-উৎসবের আয়োজন করে আসছেন, তাতে আমৃত্যু যুক্ত থেকেছেন হাসান আজিজুল হক, একাধিক মেলা উদ্বোধন করেছেন। এ ছাড়া
রাজশাহী শহরে ‘ইলা মিত্র শিল্পী সংঘ’, ‘খেলাঘর আসর’সহ নানা সংগঠনে তিনি নানাভাবে সক্রিয় সহযোগিতা করেছেন।
২০০১ সালের পরে বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর অনুপ্রেরণায় ‘বাংলাদেশ চর্চা পাঠচক্র’ নামে একটি বুদ্ধিবৃত্তিক সংগঠন জন্ম নেয়, মৃত্যুর আগপর্যন্ত যার প্রতিটি আসরে সভাপতিত্ব করেছেন হাসান আজিজুল হক। ২০১০-১১ সাল থেকে সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আমি দায়িত্ব পালন করছি। মাঝেমধ্যে কার্যক্রম ঝিমিয়ে পড়লে আমাকে তাড়া দিয়েছেন এটিকে আবার বাঁচিয়ে তোলার জন্য।
আমি ২০১১ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় চলচ্চিত্র সংসদ’ প্রতিষ্ঠা করি, আমৃত্যু যার উপদেষ্টা ছিলেন হাসান আজিজুল হক। আমাদের চলচ্চিত্রবিষয়ক সব বড় অনুষ্ঠানে তাঁকে পেয়েছি। রাজশাহী শহরে ‘ঋত্বিক ঘটক চলচ্চিত্র সংসদ’, ‘রাজশাহী ফিল্ম সোসাইটি’সহ অন্য চলচ্চিত্র সংসদগুলোর কর্মকাণ্ডে হাসান স্যারই ছিলেন প্রধান আকর্ষণ।
রাজশাহীতে ২০১৮ সালে ‘উপহার’ সিনেমা হল বন্ধ করে দেওয়ার সময় এটি চালু রাখার দাবিতে আমরা যে আন্দোলন গড়ে তুলেছিলাম, তাতে হলের সামনে আমাদের অবস্থান কর্মসূচিতে উপস্থিত থেকে উৎসাহ দিয়েছেন। মিঞাপাড়ায় আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন চলচ্চিত্রকার ঋত্বিক ঘটকের পারিবারিক যে ভিটেটি হোমিওপ্যাথিক কলেজের আড়ালে দখল করা হয়েছে, সেটি উদ্ধারের আন্দোলনেও হাসান স্যার আমাদের উৎসাহ দিয়েছেন। হোমিওপ্যাথিক কলেজে ঋত্বিক ঘটকের নামে করা মিলনায়তনের উদ্বোধকও হাসান আজিজুল হক।
১৯৯২ সালে রাজশাহীতে ‘একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি’র যে আহ্বায়ক কমিটি গঠিত হয় তাতে আহ্বায়ক হিসেবে নেতৃত্বে থেকে অন্যদের সাহস জুগিয়েছেন হাসান আজিজুল হক। এই
কমিটির সদস্যসচিব অধ্যাপক এস এম আবু বকর এই সংগঠনের মাধ্যমে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে হাসান আজিজুল হকের সাহসী পদক্ষেপের যে বিবরণ আমাকে সম্প্রতি শোনালেন, তা ছোটগল্পের রাজপুত্র হিসেবে পরিচিত এই কথাশিল্পীর সমাজের প্রতি, মানুষের প্রতি দায়বোধের আরেকটি দিক উন্মোচিত করে।
এভাবে কত সংগঠনের সঙ্গে যে তাঁর নানারকম যোগ ছিল তা খতিয়ে দেখতে গেলে রীতিমতো বিস্মিত হতে হয়। এই স্বল্প পরিসরের লেখায় সব তুলে আনা গেল না। সবশেষে বলা যায়, হাসান আজিজুল হক কিংবদন্তি কথাশিল্পীর পরিচয়ের পাশাপাশি সামাজিক-সাংস্কৃতিক আন্দোলনের একজন পুরোধা ব্যক্তিত্ব হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।

বাংলা কথাসাহিত্যের জগতে শক্তিশালী লেখক হিসেবে সুবিদিত হাসান আজিজুল হক করতেন শিক্ষকতা—প্রথমে বিভিন্ন কলেজে, পরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে, দর্শন বিভাগে। শিক্ষকতার পেশায় থেকে অনেকেই লেখালেখি করে থাকেন। তবে হাসান আজিজুল হকের লেখালেখি যে নিতান্ত শখের বশে নয়, তা যাঁরা তাঁর লেখা পাঠ করেছেন বা তাঁকে কাছ থেকে দেখেছেন, তাঁরা নিশ্চয়ই উপলব্ধি করেছেন। প্রায় এক যুগ তাঁকে খুব কাছ থেকে দেখে, ঘনিষ্ঠভাবে মিশে আমারও তা কিছুটা হৃদয়ঙ্গম হয়েছে।
হাসান আজিজুল হক একজন সমাজ-সচেতন লেখক, বিবেকবান, প্রতিবাদী মানুষ। মানুষের দুঃখ, বেদনা, সংগ্রাম, বঞ্চনা, বৈষম্য, রাষ্ট্রের মালিক জনগণের ওপর শাসকদের শোষণ-পীড়ন তাঁকে ক্ষুব্ধ করেছে। এসবের শৈল্পিক প্রতিবাদ করতেই তিনি কলম হাতে তুলে নিয়েছেন। তাঁর এমন ক্ষোভের আগুন থেকেই জন্ম নিয়েছে ‘শকুন’-এর মতো বাংলা ছোটগল্প-জগতের বাঁক বদলকারী গল্পের। পাকিস্তান আমলে স্বৈরশাসক আইয়ুব খানের সামরিক অপশাসনের প্রতিবাদ হিসেবে তিনি এই গল্প রচনা করেন।
দেশভাগের মতো রাজনীতিবিদদের স্বার্থতাড়িত অপরিণামদর্শী সিদ্ধান্তপ্রসূত ঘটনার বিয়োগান্ত পরিণতিতে ক্ষুব্ধ হাসান আজিজুল হক লেখক-জীবনের প্রায় শুরুতে লিখেছেন ‘আত্মজা ও একটি করবী গাছ’-এর মতো কালজয়ী গল্প, শেষ দিকে এসে লিখেছেন ‘আগুনপাখি’র মতো মহাকাব্যিক উপন্যাস।
হাসান আজিজুল হককে পাঠ করলে আমরা এই সিদ্ধান্তে আসতে পারি, তাঁর লেখালেখি আসলে বিবেকের দায় থেকে। সেই দায় বিপন্ন, দুস্থ মানুষের দুর্দশার কথা সকলের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়ার দায়। সেই দায় তিনি শুধু তাঁর লেখালেখি দিয়ে মেটাতে চেষ্টা করেননি। একই সঙ্গে তিনি সক্রিয় থেকেছেন মাঠে।
যখনই মানুষ আক্রান্ত হয়েছে, সমাজ কলুষিত হয়েছে, হাসান আজিজুল হক মাঠে নেমেছেন—সাহিত্যের মাঠে যেমন, তেমনি আন্দোলন-সংগ্রামের মাঠেও। নানা সংগঠন, সভা-সমাবেশে নেতৃত্ব দিয়েছেন, অন্যদের ডাকে সাড়া দিয়ে যেমন, তেমন নিজে থেকেও এসবের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন, মানুষকে সংগঠিত করেছেন। তিনি এমন একজন লেখক, যিনি একদিকে বিবেকের দায়বোধ থেকে সাহিত্য রচনা করেছেন, অন্যদিকে সামাজিক-সাংস্কৃতিক নানা কর্মকাণ্ডে সক্রিয় থেকে তাঁর বক্তব্য আপামর জনতার কাছে পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন, অনেকের কাছে হয়তো তাঁর লেখাসেভাবে পৌঁছায়নি।
অবিভক্ত ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার যবগ্রামে জন্ম নেওয়া এই মানুষটা দেশভাগের নির্মম বাস্তবতার শিকার হয়ে পাকিস্তানে তথা বাংলাদেশে চলে আসতে বাধ্য হন। এরপর কিছুকাল খুলনায় কাটিয়ে চলে আসেন উত্তরের জেলা রাজশাহীতে। জীবনের প্রায় ছয় দশকেরও বেশি সময় তিনি কাটিয়েছেন রাজশাহীতে। ১৯৭৩ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে যোগদানের পর থেকে ২০২১ সালের ১৫ নভেম্বর প্রয়াত হওয়ার সময় পর্যন্ত তিনি বাস করেছেন শিক্ষানগরীখ্যাত এই জেলা শহরে।
হাসান আজিজুল হক এই দীর্ঘ সময়ে রাজশাহীর নানা সামাজিক-সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয় থেকেছেন। কখনো সংগীত, কখনো আবৃত্তি, কখনো চলচ্চিত্র, কখনো নাটক। শিল্প-সংস্কৃতির নানা মাধ্যমে সাংগঠনিক তৎপরতায় নিজেকে সম্পৃক্ত করেছেন। এখানে তিনি শুধুই অংশগ্রহণকারী থাকেননি বা নিছক মনের ক্ষুধা নিবৃত্ত করতে এসব করেননি। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে হয়েছেন সংগঠক। এখানেই অন্য অনেক লেখকের চেয়ে তিনি আলাদা।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর দীর্ঘদিনের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডের সহযোদ্ধা অনেকের সঙ্গে কথা বলে এ বিষয়ে নানা তথ্য পাওয়া যায়। এমন কয়েকজন হলেন হাসান আজিজুল হকের প্রায় সমবয়সী রাবির অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক, একুশে পদকপ্রাপ্ত বিশিষ্ট লেখক-চিন্তক সনৎ কুমার সাহা, বাংলা বিভাগের সাবেক অধ্যাপক কবি চৌধুরী জুলফিকার মতিন, বিভাগে হাসান আজিজুল হকের শিক্ষার্থী ও পরে সহকর্মী অধ্যাপক এস এম আবু বকর, ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক বাংলা একাডেমি পুরস্কারপ্রাপ্ত নাট্যব্যক্তিত্ব মলয় ভৌমিক প্রমুখ।
তাঁদের কাছ থেকে জানা যায়, হাসান আজিজুল হক স্বাধীনতা-উত্তরকালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আরও কয়েকজন গুণী শিক্ষক, যেমন আলী আনোয়ার, বজলুল মোবিন চৌধুরী, শহীদুর রহমান, গুণী কর্মকর্তা নাজিম মাহমুদ প্রমুখের সঙ্গে মিলে ক্যাম্পাসে নাট্যচর্চার ক্ষেত্র প্রস্তুত করেন। সে সময় থিয়েটার ওয়ার্কশপ আয়োজন, নাট্য রচনা, বিদেশি নাটকের অনুবাদ ও সেসবের মঞ্চায়নসহ নাটক নিয়ে নানা কর্মকাণ্ডের ফলে রাবিতে নাটক বিষয়ে অনেক সংগঠন আত্মপ্রকাশ করে, যার মধ্যে অনুশীলনসহ কয়েকটি এখনো সক্রিয়।
নাজিম মাহমুদ প্রমুখের প্রতিষ্ঠিত আবৃত্তি সংগঠন ‘স্বনন’-এর সঙ্গে তিনি ঘনিষ্ঠভাবে সম্পৃক্ত ছিলেন, বলা যায় তিনিই ছিলেন এর প্রধান পৃষ্ঠপোষক। ‘স্বনন’ নামটিও তাঁর দেওয়া। ক্যাম্পাসে সংগীতবিষয়ক নানা কর্মকাণ্ডেও হাসান আজিজুল হকের অনুপ্রেরণা, অংশগ্রহণ ছিল। জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত সম্মিলন পরিষদের কেন্দ্রীয় ও রাজশাহী শাখার উপদেষ্টা ছিলেন তিনি। এই সংগঠনের রাজশাহী শাখার সাবেক সভাপতি তাপস মজুমদারের তথ্যমতে, রাজশাহীতে তাঁরা ‘রবীন্দ্রমেলা’সহ নানা আয়োজন করলে হাসান আজিজুল হক নানাভাবে যুক্ত থাকতেন, অনুষ্ঠানের খরচের জন্য বিজ্ঞাপন জোগাড়ে তিনিই ছিলেন মূল ভরসা।
রাজশাহী শহরে কবিকুঞ্জ বলে কবিদের একটা সংগঠন প্রতিষ্ঠিত হয় ২০১২ সালে। তিনি এই সংগঠনের উপদেষ্টা ছিলেন বলে জানান এর সাধারণ সম্পাদক আরিফুল হক কুমার। প্রতিবছর তাঁরা ‘জীবনানন্দ কবিতামেলা’ বলে যে আন্তর্জাতিক কবিতা-উৎসবের আয়োজন করে আসছেন, তাতে আমৃত্যু যুক্ত থেকেছেন হাসান আজিজুল হক, একাধিক মেলা উদ্বোধন করেছেন। এ ছাড়া
রাজশাহী শহরে ‘ইলা মিত্র শিল্পী সংঘ’, ‘খেলাঘর আসর’সহ নানা সংগঠনে তিনি নানাভাবে সক্রিয় সহযোগিতা করেছেন।
২০০১ সালের পরে বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর অনুপ্রেরণায় ‘বাংলাদেশ চর্চা পাঠচক্র’ নামে একটি বুদ্ধিবৃত্তিক সংগঠন জন্ম নেয়, মৃত্যুর আগপর্যন্ত যার প্রতিটি আসরে সভাপতিত্ব করেছেন হাসান আজিজুল হক। ২০১০-১১ সাল থেকে সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আমি দায়িত্ব পালন করছি। মাঝেমধ্যে কার্যক্রম ঝিমিয়ে পড়লে আমাকে তাড়া দিয়েছেন এটিকে আবার বাঁচিয়ে তোলার জন্য।
আমি ২০১১ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় চলচ্চিত্র সংসদ’ প্রতিষ্ঠা করি, আমৃত্যু যার উপদেষ্টা ছিলেন হাসান আজিজুল হক। আমাদের চলচ্চিত্রবিষয়ক সব বড় অনুষ্ঠানে তাঁকে পেয়েছি। রাজশাহী শহরে ‘ঋত্বিক ঘটক চলচ্চিত্র সংসদ’, ‘রাজশাহী ফিল্ম সোসাইটি’সহ অন্য চলচ্চিত্র সংসদগুলোর কর্মকাণ্ডে হাসান স্যারই ছিলেন প্রধান আকর্ষণ।
রাজশাহীতে ২০১৮ সালে ‘উপহার’ সিনেমা হল বন্ধ করে দেওয়ার সময় এটি চালু রাখার দাবিতে আমরা যে আন্দোলন গড়ে তুলেছিলাম, তাতে হলের সামনে আমাদের অবস্থান কর্মসূচিতে উপস্থিত থেকে উৎসাহ দিয়েছেন। মিঞাপাড়ায় আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন চলচ্চিত্রকার ঋত্বিক ঘটকের পারিবারিক যে ভিটেটি হোমিওপ্যাথিক কলেজের আড়ালে দখল করা হয়েছে, সেটি উদ্ধারের আন্দোলনেও হাসান স্যার আমাদের উৎসাহ দিয়েছেন। হোমিওপ্যাথিক কলেজে ঋত্বিক ঘটকের নামে করা মিলনায়তনের উদ্বোধকও হাসান আজিজুল হক।
১৯৯২ সালে রাজশাহীতে ‘একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি’র যে আহ্বায়ক কমিটি গঠিত হয় তাতে আহ্বায়ক হিসেবে নেতৃত্বে থেকে অন্যদের সাহস জুগিয়েছেন হাসান আজিজুল হক। এই
কমিটির সদস্যসচিব অধ্যাপক এস এম আবু বকর এই সংগঠনের মাধ্যমে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে হাসান আজিজুল হকের সাহসী পদক্ষেপের যে বিবরণ আমাকে সম্প্রতি শোনালেন, তা ছোটগল্পের রাজপুত্র হিসেবে পরিচিত এই কথাশিল্পীর সমাজের প্রতি, মানুষের প্রতি দায়বোধের আরেকটি দিক উন্মোচিত করে।
এভাবে কত সংগঠনের সঙ্গে যে তাঁর নানারকম যোগ ছিল তা খতিয়ে দেখতে গেলে রীতিমতো বিস্মিত হতে হয়। এই স্বল্প পরিসরের লেখায় সব তুলে আনা গেল না। সবশেষে বলা যায়, হাসান আজিজুল হক কিংবদন্তি কথাশিল্পীর পরিচয়ের পাশাপাশি সামাজিক-সাংস্কৃতিক আন্দোলনের একজন পুরোধা ব্যক্তিত্ব হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।
সাজ্জাদ বকুল

বাংলা কথাসাহিত্যের জগতে শক্তিশালী লেখক হিসেবে সুবিদিত হাসান আজিজুল হক করতেন শিক্ষকতা—প্রথমে বিভিন্ন কলেজে, পরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে, দর্শন বিভাগে। শিক্ষকতার পেশায় থেকে অনেকেই লেখালেখি করে থাকেন। তবে হাসান আজিজুল হকের লেখালেখি যে নিতান্ত শখের বশে নয়, তা যাঁরা তাঁর লেখা পাঠ করেছেন বা তাঁকে কাছ থেকে দেখেছেন, তাঁরা নিশ্চয়ই উপলব্ধি করেছেন। প্রায় এক যুগ তাঁকে খুব কাছ থেকে দেখে, ঘনিষ্ঠভাবে মিশে আমারও তা কিছুটা হৃদয়ঙ্গম হয়েছে।
হাসান আজিজুল হক একজন সমাজ-সচেতন লেখক, বিবেকবান, প্রতিবাদী মানুষ। মানুষের দুঃখ, বেদনা, সংগ্রাম, বঞ্চনা, বৈষম্য, রাষ্ট্রের মালিক জনগণের ওপর শাসকদের শোষণ-পীড়ন তাঁকে ক্ষুব্ধ করেছে। এসবের শৈল্পিক প্রতিবাদ করতেই তিনি কলম হাতে তুলে নিয়েছেন। তাঁর এমন ক্ষোভের আগুন থেকেই জন্ম নিয়েছে ‘শকুন’-এর মতো বাংলা ছোটগল্প-জগতের বাঁক বদলকারী গল্পের। পাকিস্তান আমলে স্বৈরশাসক আইয়ুব খানের সামরিক অপশাসনের প্রতিবাদ হিসেবে তিনি এই গল্প রচনা করেন।
দেশভাগের মতো রাজনীতিবিদদের স্বার্থতাড়িত অপরিণামদর্শী সিদ্ধান্তপ্রসূত ঘটনার বিয়োগান্ত পরিণতিতে ক্ষুব্ধ হাসান আজিজুল হক লেখক-জীবনের প্রায় শুরুতে লিখেছেন ‘আত্মজা ও একটি করবী গাছ’-এর মতো কালজয়ী গল্প, শেষ দিকে এসে লিখেছেন ‘আগুনপাখি’র মতো মহাকাব্যিক উপন্যাস।
হাসান আজিজুল হককে পাঠ করলে আমরা এই সিদ্ধান্তে আসতে পারি, তাঁর লেখালেখি আসলে বিবেকের দায় থেকে। সেই দায় বিপন্ন, দুস্থ মানুষের দুর্দশার কথা সকলের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়ার দায়। সেই দায় তিনি শুধু তাঁর লেখালেখি দিয়ে মেটাতে চেষ্টা করেননি। একই সঙ্গে তিনি সক্রিয় থেকেছেন মাঠে।
যখনই মানুষ আক্রান্ত হয়েছে, সমাজ কলুষিত হয়েছে, হাসান আজিজুল হক মাঠে নেমেছেন—সাহিত্যের মাঠে যেমন, তেমনি আন্দোলন-সংগ্রামের মাঠেও। নানা সংগঠন, সভা-সমাবেশে নেতৃত্ব দিয়েছেন, অন্যদের ডাকে সাড়া দিয়ে যেমন, তেমন নিজে থেকেও এসবের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন, মানুষকে সংগঠিত করেছেন। তিনি এমন একজন লেখক, যিনি একদিকে বিবেকের দায়বোধ থেকে সাহিত্য রচনা করেছেন, অন্যদিকে সামাজিক-সাংস্কৃতিক নানা কর্মকাণ্ডে সক্রিয় থেকে তাঁর বক্তব্য আপামর জনতার কাছে পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন, অনেকের কাছে হয়তো তাঁর লেখাসেভাবে পৌঁছায়নি।
অবিভক্ত ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার যবগ্রামে জন্ম নেওয়া এই মানুষটা দেশভাগের নির্মম বাস্তবতার শিকার হয়ে পাকিস্তানে তথা বাংলাদেশে চলে আসতে বাধ্য হন। এরপর কিছুকাল খুলনায় কাটিয়ে চলে আসেন উত্তরের জেলা রাজশাহীতে। জীবনের প্রায় ছয় দশকেরও বেশি সময় তিনি কাটিয়েছেন রাজশাহীতে। ১৯৭৩ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে যোগদানের পর থেকে ২০২১ সালের ১৫ নভেম্বর প্রয়াত হওয়ার সময় পর্যন্ত তিনি বাস করেছেন শিক্ষানগরীখ্যাত এই জেলা শহরে।
হাসান আজিজুল হক এই দীর্ঘ সময়ে রাজশাহীর নানা সামাজিক-সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয় থেকেছেন। কখনো সংগীত, কখনো আবৃত্তি, কখনো চলচ্চিত্র, কখনো নাটক। শিল্প-সংস্কৃতির নানা মাধ্যমে সাংগঠনিক তৎপরতায় নিজেকে সম্পৃক্ত করেছেন। এখানে তিনি শুধুই অংশগ্রহণকারী থাকেননি বা নিছক মনের ক্ষুধা নিবৃত্ত করতে এসব করেননি। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে হয়েছেন সংগঠক। এখানেই অন্য অনেক লেখকের চেয়ে তিনি আলাদা।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর দীর্ঘদিনের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডের সহযোদ্ধা অনেকের সঙ্গে কথা বলে এ বিষয়ে নানা তথ্য পাওয়া যায়। এমন কয়েকজন হলেন হাসান আজিজুল হকের প্রায় সমবয়সী রাবির অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক, একুশে পদকপ্রাপ্ত বিশিষ্ট লেখক-চিন্তক সনৎ কুমার সাহা, বাংলা বিভাগের সাবেক অধ্যাপক কবি চৌধুরী জুলফিকার মতিন, বিভাগে হাসান আজিজুল হকের শিক্ষার্থী ও পরে সহকর্মী অধ্যাপক এস এম আবু বকর, ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক বাংলা একাডেমি পুরস্কারপ্রাপ্ত নাট্যব্যক্তিত্ব মলয় ভৌমিক প্রমুখ।
তাঁদের কাছ থেকে জানা যায়, হাসান আজিজুল হক স্বাধীনতা-উত্তরকালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আরও কয়েকজন গুণী শিক্ষক, যেমন আলী আনোয়ার, বজলুল মোবিন চৌধুরী, শহীদুর রহমান, গুণী কর্মকর্তা নাজিম মাহমুদ প্রমুখের সঙ্গে মিলে ক্যাম্পাসে নাট্যচর্চার ক্ষেত্র প্রস্তুত করেন। সে সময় থিয়েটার ওয়ার্কশপ আয়োজন, নাট্য রচনা, বিদেশি নাটকের অনুবাদ ও সেসবের মঞ্চায়নসহ নাটক নিয়ে নানা কর্মকাণ্ডের ফলে রাবিতে নাটক বিষয়ে অনেক সংগঠন আত্মপ্রকাশ করে, যার মধ্যে অনুশীলনসহ কয়েকটি এখনো সক্রিয়।
নাজিম মাহমুদ প্রমুখের প্রতিষ্ঠিত আবৃত্তি সংগঠন ‘স্বনন’-এর সঙ্গে তিনি ঘনিষ্ঠভাবে সম্পৃক্ত ছিলেন, বলা যায় তিনিই ছিলেন এর প্রধান পৃষ্ঠপোষক। ‘স্বনন’ নামটিও তাঁর দেওয়া। ক্যাম্পাসে সংগীতবিষয়ক নানা কর্মকাণ্ডেও হাসান আজিজুল হকের অনুপ্রেরণা, অংশগ্রহণ ছিল। জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত সম্মিলন পরিষদের কেন্দ্রীয় ও রাজশাহী শাখার উপদেষ্টা ছিলেন তিনি। এই সংগঠনের রাজশাহী শাখার সাবেক সভাপতি তাপস মজুমদারের তথ্যমতে, রাজশাহীতে তাঁরা ‘রবীন্দ্রমেলা’সহ নানা আয়োজন করলে হাসান আজিজুল হক নানাভাবে যুক্ত থাকতেন, অনুষ্ঠানের খরচের জন্য বিজ্ঞাপন জোগাড়ে তিনিই ছিলেন মূল ভরসা।
রাজশাহী শহরে কবিকুঞ্জ বলে কবিদের একটা সংগঠন প্রতিষ্ঠিত হয় ২০১২ সালে। তিনি এই সংগঠনের উপদেষ্টা ছিলেন বলে জানান এর সাধারণ সম্পাদক আরিফুল হক কুমার। প্রতিবছর তাঁরা ‘জীবনানন্দ কবিতামেলা’ বলে যে আন্তর্জাতিক কবিতা-উৎসবের আয়োজন করে আসছেন, তাতে আমৃত্যু যুক্ত থেকেছেন হাসান আজিজুল হক, একাধিক মেলা উদ্বোধন করেছেন। এ ছাড়া
রাজশাহী শহরে ‘ইলা মিত্র শিল্পী সংঘ’, ‘খেলাঘর আসর’সহ নানা সংগঠনে তিনি নানাভাবে সক্রিয় সহযোগিতা করেছেন।
২০০১ সালের পরে বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর অনুপ্রেরণায় ‘বাংলাদেশ চর্চা পাঠচক্র’ নামে একটি বুদ্ধিবৃত্তিক সংগঠন জন্ম নেয়, মৃত্যুর আগপর্যন্ত যার প্রতিটি আসরে সভাপতিত্ব করেছেন হাসান আজিজুল হক। ২০১০-১১ সাল থেকে সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আমি দায়িত্ব পালন করছি। মাঝেমধ্যে কার্যক্রম ঝিমিয়ে পড়লে আমাকে তাড়া দিয়েছেন এটিকে আবার বাঁচিয়ে তোলার জন্য।
আমি ২০১১ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় চলচ্চিত্র সংসদ’ প্রতিষ্ঠা করি, আমৃত্যু যার উপদেষ্টা ছিলেন হাসান আজিজুল হক। আমাদের চলচ্চিত্রবিষয়ক সব বড় অনুষ্ঠানে তাঁকে পেয়েছি। রাজশাহী শহরে ‘ঋত্বিক ঘটক চলচ্চিত্র সংসদ’, ‘রাজশাহী ফিল্ম সোসাইটি’সহ অন্য চলচ্চিত্র সংসদগুলোর কর্মকাণ্ডে হাসান স্যারই ছিলেন প্রধান আকর্ষণ।
রাজশাহীতে ২০১৮ সালে ‘উপহার’ সিনেমা হল বন্ধ করে দেওয়ার সময় এটি চালু রাখার দাবিতে আমরা যে আন্দোলন গড়ে তুলেছিলাম, তাতে হলের সামনে আমাদের অবস্থান কর্মসূচিতে উপস্থিত থেকে উৎসাহ দিয়েছেন। মিঞাপাড়ায় আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন চলচ্চিত্রকার ঋত্বিক ঘটকের পারিবারিক যে ভিটেটি হোমিওপ্যাথিক কলেজের আড়ালে দখল করা হয়েছে, সেটি উদ্ধারের আন্দোলনেও হাসান স্যার আমাদের উৎসাহ দিয়েছেন। হোমিওপ্যাথিক কলেজে ঋত্বিক ঘটকের নামে করা মিলনায়তনের উদ্বোধকও হাসান আজিজুল হক।
১৯৯২ সালে রাজশাহীতে ‘একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি’র যে আহ্বায়ক কমিটি গঠিত হয় তাতে আহ্বায়ক হিসেবে নেতৃত্বে থেকে অন্যদের সাহস জুগিয়েছেন হাসান আজিজুল হক। এই
কমিটির সদস্যসচিব অধ্যাপক এস এম আবু বকর এই সংগঠনের মাধ্যমে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে হাসান আজিজুল হকের সাহসী পদক্ষেপের যে বিবরণ আমাকে সম্প্রতি শোনালেন, তা ছোটগল্পের রাজপুত্র হিসেবে পরিচিত এই কথাশিল্পীর সমাজের প্রতি, মানুষের প্রতি দায়বোধের আরেকটি দিক উন্মোচিত করে।
এভাবে কত সংগঠনের সঙ্গে যে তাঁর নানারকম যোগ ছিল তা খতিয়ে দেখতে গেলে রীতিমতো বিস্মিত হতে হয়। এই স্বল্প পরিসরের লেখায় সব তুলে আনা গেল না। সবশেষে বলা যায়, হাসান আজিজুল হক কিংবদন্তি কথাশিল্পীর পরিচয়ের পাশাপাশি সামাজিক-সাংস্কৃতিক আন্দোলনের একজন পুরোধা ব্যক্তিত্ব হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।

বাংলা কথাসাহিত্যের জগতে শক্তিশালী লেখক হিসেবে সুবিদিত হাসান আজিজুল হক করতেন শিক্ষকতা—প্রথমে বিভিন্ন কলেজে, পরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে, দর্শন বিভাগে। শিক্ষকতার পেশায় থেকে অনেকেই লেখালেখি করে থাকেন। তবে হাসান আজিজুল হকের লেখালেখি যে নিতান্ত শখের বশে নয়, তা যাঁরা তাঁর লেখা পাঠ করেছেন বা তাঁকে কাছ থেকে দেখেছেন, তাঁরা নিশ্চয়ই উপলব্ধি করেছেন। প্রায় এক যুগ তাঁকে খুব কাছ থেকে দেখে, ঘনিষ্ঠভাবে মিশে আমারও তা কিছুটা হৃদয়ঙ্গম হয়েছে।
হাসান আজিজুল হক একজন সমাজ-সচেতন লেখক, বিবেকবান, প্রতিবাদী মানুষ। মানুষের দুঃখ, বেদনা, সংগ্রাম, বঞ্চনা, বৈষম্য, রাষ্ট্রের মালিক জনগণের ওপর শাসকদের শোষণ-পীড়ন তাঁকে ক্ষুব্ধ করেছে। এসবের শৈল্পিক প্রতিবাদ করতেই তিনি কলম হাতে তুলে নিয়েছেন। তাঁর এমন ক্ষোভের আগুন থেকেই জন্ম নিয়েছে ‘শকুন’-এর মতো বাংলা ছোটগল্প-জগতের বাঁক বদলকারী গল্পের। পাকিস্তান আমলে স্বৈরশাসক আইয়ুব খানের সামরিক অপশাসনের প্রতিবাদ হিসেবে তিনি এই গল্প রচনা করেন।
দেশভাগের মতো রাজনীতিবিদদের স্বার্থতাড়িত অপরিণামদর্শী সিদ্ধান্তপ্রসূত ঘটনার বিয়োগান্ত পরিণতিতে ক্ষুব্ধ হাসান আজিজুল হক লেখক-জীবনের প্রায় শুরুতে লিখেছেন ‘আত্মজা ও একটি করবী গাছ’-এর মতো কালজয়ী গল্প, শেষ দিকে এসে লিখেছেন ‘আগুনপাখি’র মতো মহাকাব্যিক উপন্যাস।
হাসান আজিজুল হককে পাঠ করলে আমরা এই সিদ্ধান্তে আসতে পারি, তাঁর লেখালেখি আসলে বিবেকের দায় থেকে। সেই দায় বিপন্ন, দুস্থ মানুষের দুর্দশার কথা সকলের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়ার দায়। সেই দায় তিনি শুধু তাঁর লেখালেখি দিয়ে মেটাতে চেষ্টা করেননি। একই সঙ্গে তিনি সক্রিয় থেকেছেন মাঠে।
যখনই মানুষ আক্রান্ত হয়েছে, সমাজ কলুষিত হয়েছে, হাসান আজিজুল হক মাঠে নেমেছেন—সাহিত্যের মাঠে যেমন, তেমনি আন্দোলন-সংগ্রামের মাঠেও। নানা সংগঠন, সভা-সমাবেশে নেতৃত্ব দিয়েছেন, অন্যদের ডাকে সাড়া দিয়ে যেমন, তেমন নিজে থেকেও এসবের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন, মানুষকে সংগঠিত করেছেন। তিনি এমন একজন লেখক, যিনি একদিকে বিবেকের দায়বোধ থেকে সাহিত্য রচনা করেছেন, অন্যদিকে সামাজিক-সাংস্কৃতিক নানা কর্মকাণ্ডে সক্রিয় থেকে তাঁর বক্তব্য আপামর জনতার কাছে পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন, অনেকের কাছে হয়তো তাঁর লেখাসেভাবে পৌঁছায়নি।
অবিভক্ত ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার যবগ্রামে জন্ম নেওয়া এই মানুষটা দেশভাগের নির্মম বাস্তবতার শিকার হয়ে পাকিস্তানে তথা বাংলাদেশে চলে আসতে বাধ্য হন। এরপর কিছুকাল খুলনায় কাটিয়ে চলে আসেন উত্তরের জেলা রাজশাহীতে। জীবনের প্রায় ছয় দশকেরও বেশি সময় তিনি কাটিয়েছেন রাজশাহীতে। ১৯৭৩ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে যোগদানের পর থেকে ২০২১ সালের ১৫ নভেম্বর প্রয়াত হওয়ার সময় পর্যন্ত তিনি বাস করেছেন শিক্ষানগরীখ্যাত এই জেলা শহরে।
হাসান আজিজুল হক এই দীর্ঘ সময়ে রাজশাহীর নানা সামাজিক-সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয় থেকেছেন। কখনো সংগীত, কখনো আবৃত্তি, কখনো চলচ্চিত্র, কখনো নাটক। শিল্প-সংস্কৃতির নানা মাধ্যমে সাংগঠনিক তৎপরতায় নিজেকে সম্পৃক্ত করেছেন। এখানে তিনি শুধুই অংশগ্রহণকারী থাকেননি বা নিছক মনের ক্ষুধা নিবৃত্ত করতে এসব করেননি। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে হয়েছেন সংগঠক। এখানেই অন্য অনেক লেখকের চেয়ে তিনি আলাদা।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর দীর্ঘদিনের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডের সহযোদ্ধা অনেকের সঙ্গে কথা বলে এ বিষয়ে নানা তথ্য পাওয়া যায়। এমন কয়েকজন হলেন হাসান আজিজুল হকের প্রায় সমবয়সী রাবির অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক, একুশে পদকপ্রাপ্ত বিশিষ্ট লেখক-চিন্তক সনৎ কুমার সাহা, বাংলা বিভাগের সাবেক অধ্যাপক কবি চৌধুরী জুলফিকার মতিন, বিভাগে হাসান আজিজুল হকের শিক্ষার্থী ও পরে সহকর্মী অধ্যাপক এস এম আবু বকর, ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক বাংলা একাডেমি পুরস্কারপ্রাপ্ত নাট্যব্যক্তিত্ব মলয় ভৌমিক প্রমুখ।
তাঁদের কাছ থেকে জানা যায়, হাসান আজিজুল হক স্বাধীনতা-উত্তরকালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আরও কয়েকজন গুণী শিক্ষক, যেমন আলী আনোয়ার, বজলুল মোবিন চৌধুরী, শহীদুর রহমান, গুণী কর্মকর্তা নাজিম মাহমুদ প্রমুখের সঙ্গে মিলে ক্যাম্পাসে নাট্যচর্চার ক্ষেত্র প্রস্তুত করেন। সে সময় থিয়েটার ওয়ার্কশপ আয়োজন, নাট্য রচনা, বিদেশি নাটকের অনুবাদ ও সেসবের মঞ্চায়নসহ নাটক নিয়ে নানা কর্মকাণ্ডের ফলে রাবিতে নাটক বিষয়ে অনেক সংগঠন আত্মপ্রকাশ করে, যার মধ্যে অনুশীলনসহ কয়েকটি এখনো সক্রিয়।
নাজিম মাহমুদ প্রমুখের প্রতিষ্ঠিত আবৃত্তি সংগঠন ‘স্বনন’-এর সঙ্গে তিনি ঘনিষ্ঠভাবে সম্পৃক্ত ছিলেন, বলা যায় তিনিই ছিলেন এর প্রধান পৃষ্ঠপোষক। ‘স্বনন’ নামটিও তাঁর দেওয়া। ক্যাম্পাসে সংগীতবিষয়ক নানা কর্মকাণ্ডেও হাসান আজিজুল হকের অনুপ্রেরণা, অংশগ্রহণ ছিল। জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত সম্মিলন পরিষদের কেন্দ্রীয় ও রাজশাহী শাখার উপদেষ্টা ছিলেন তিনি। এই সংগঠনের রাজশাহী শাখার সাবেক সভাপতি তাপস মজুমদারের তথ্যমতে, রাজশাহীতে তাঁরা ‘রবীন্দ্রমেলা’সহ নানা আয়োজন করলে হাসান আজিজুল হক নানাভাবে যুক্ত থাকতেন, অনুষ্ঠানের খরচের জন্য বিজ্ঞাপন জোগাড়ে তিনিই ছিলেন মূল ভরসা।
রাজশাহী শহরে কবিকুঞ্জ বলে কবিদের একটা সংগঠন প্রতিষ্ঠিত হয় ২০১২ সালে। তিনি এই সংগঠনের উপদেষ্টা ছিলেন বলে জানান এর সাধারণ সম্পাদক আরিফুল হক কুমার। প্রতিবছর তাঁরা ‘জীবনানন্দ কবিতামেলা’ বলে যে আন্তর্জাতিক কবিতা-উৎসবের আয়োজন করে আসছেন, তাতে আমৃত্যু যুক্ত থেকেছেন হাসান আজিজুল হক, একাধিক মেলা উদ্বোধন করেছেন। এ ছাড়া
রাজশাহী শহরে ‘ইলা মিত্র শিল্পী সংঘ’, ‘খেলাঘর আসর’সহ নানা সংগঠনে তিনি নানাভাবে সক্রিয় সহযোগিতা করেছেন।
২০০১ সালের পরে বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর অনুপ্রেরণায় ‘বাংলাদেশ চর্চা পাঠচক্র’ নামে একটি বুদ্ধিবৃত্তিক সংগঠন জন্ম নেয়, মৃত্যুর আগপর্যন্ত যার প্রতিটি আসরে সভাপতিত্ব করেছেন হাসান আজিজুল হক। ২০১০-১১ সাল থেকে সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আমি দায়িত্ব পালন করছি। মাঝেমধ্যে কার্যক্রম ঝিমিয়ে পড়লে আমাকে তাড়া দিয়েছেন এটিকে আবার বাঁচিয়ে তোলার জন্য।
আমি ২০১১ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় চলচ্চিত্র সংসদ’ প্রতিষ্ঠা করি, আমৃত্যু যার উপদেষ্টা ছিলেন হাসান আজিজুল হক। আমাদের চলচ্চিত্রবিষয়ক সব বড় অনুষ্ঠানে তাঁকে পেয়েছি। রাজশাহী শহরে ‘ঋত্বিক ঘটক চলচ্চিত্র সংসদ’, ‘রাজশাহী ফিল্ম সোসাইটি’সহ অন্য চলচ্চিত্র সংসদগুলোর কর্মকাণ্ডে হাসান স্যারই ছিলেন প্রধান আকর্ষণ।
রাজশাহীতে ২০১৮ সালে ‘উপহার’ সিনেমা হল বন্ধ করে দেওয়ার সময় এটি চালু রাখার দাবিতে আমরা যে আন্দোলন গড়ে তুলেছিলাম, তাতে হলের সামনে আমাদের অবস্থান কর্মসূচিতে উপস্থিত থেকে উৎসাহ দিয়েছেন। মিঞাপাড়ায় আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন চলচ্চিত্রকার ঋত্বিক ঘটকের পারিবারিক যে ভিটেটি হোমিওপ্যাথিক কলেজের আড়ালে দখল করা হয়েছে, সেটি উদ্ধারের আন্দোলনেও হাসান স্যার আমাদের উৎসাহ দিয়েছেন। হোমিওপ্যাথিক কলেজে ঋত্বিক ঘটকের নামে করা মিলনায়তনের উদ্বোধকও হাসান আজিজুল হক।
১৯৯২ সালে রাজশাহীতে ‘একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি’র যে আহ্বায়ক কমিটি গঠিত হয় তাতে আহ্বায়ক হিসেবে নেতৃত্বে থেকে অন্যদের সাহস জুগিয়েছেন হাসান আজিজুল হক। এই
কমিটির সদস্যসচিব অধ্যাপক এস এম আবু বকর এই সংগঠনের মাধ্যমে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে হাসান আজিজুল হকের সাহসী পদক্ষেপের যে বিবরণ আমাকে সম্প্রতি শোনালেন, তা ছোটগল্পের রাজপুত্র হিসেবে পরিচিত এই কথাশিল্পীর সমাজের প্রতি, মানুষের প্রতি দায়বোধের আরেকটি দিক উন্মোচিত করে।
এভাবে কত সংগঠনের সঙ্গে যে তাঁর নানারকম যোগ ছিল তা খতিয়ে দেখতে গেলে রীতিমতো বিস্মিত হতে হয়। এই স্বল্প পরিসরের লেখায় সব তুলে আনা গেল না। সবশেষে বলা যায়, হাসান আজিজুল হক কিংবদন্তি কথাশিল্পীর পরিচয়ের পাশাপাশি সামাজিক-সাংস্কৃতিক আন্দোলনের একজন পুরোধা ব্যক্তিত্ব হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।

আলসেমি শরীরে এদিক-ওদিক চেয়ে আটকে গেল চোখ পশ্চিমান্তে। রক্তিম সূর্যের বিদায় ধীর গতিতে। খুব লাল হয়েছে, সারা দিনের জ্বলন্ত প্রহরে পেয়েছে এক অপূর্ব রূপ।
১৩ দিন আগে
হুমায়ূন আহমেদ তখন ক্যানসার আক্রান্ত। যুক্তরাষ্ট্রে কেমোথেরাপি নিচ্ছেন। হঠাৎ চিকিৎসকের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে চলে এলেন নুহাশপল্লীতে। নাটক বানাবেন। অভিনেতা ফারুক আহমেদকে ডাকলেন। নুহাশপল্লীতে নাটকের শুটিংয়ের ফাঁকে গল্প করছিলেন হুমায়ূন ও ফারুক। হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘কী আশ্চর্য, তাই না ফারুক!’
২৩ দিন আগে
প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করেছে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবার স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার নাটক, সংগীত ও নৃত্যকলা ক্লাবের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী বার্ষিক নাট্যানুষ্ঠানে এটি মঞ্চস্থ করা হয়।
০৮ নভেম্বর ২০২৫
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
২০ অক্টোবর ২০২৫তৌহিদুল হক

রক্ত লাল
আলসেমি শরীরে এদিক-ওদিক চেয়ে আটকে
গেল চোখ পশ্চিমান্তে। রক্তিম সূর্যের বিদায়
ধীর গতিতে। খুব লাল হয়েছে, সারা দিনের
জ্বলন্ত প্রহরে পেয়েছে এক অপূর্ব রূপ।
যা স্বভাববিদ্ধ, তবে কতটা উপকারী বা বাঁচিয়ে
রাখার নিরলস অভিপ্রায়। মানুষের তরে
প্রাণীর অফুরন্ত প্রাচুর্য বিস্তৃতকরণে, কিংবা
উদ্ভিদের অন্তিম প্রেমে বসন্তের অভিষেকে।
কতটা জ্বলতে হয় পরের জন্য, কতটা ফুটন্ত
শরীর নিয়ে চালিয়ে যায় সেবার পরিধি।
এক চিরন্তন শিক্ষা, আবার উদিত হয়
দিনের শুরুতে, বিদায় প্রান্তিক অপূর্ব
মায়ায়-দিনের শেষ প্রান্তে।
এতটুকু কার্পণ্য রেখে যায়নি, হয়তো মুখ
ফিরিয়ে নিবে না কোনো দিন। তবে ভাবনার
অন্তিমে শেষ দৃশ্যের সংলাপে ভেসে
ওঠে জনদরদি রাজার মুখ। যেখানে রক্ত ঝরে
বন্যার বেগে সেখানেও প্রতিদিন ফুল ফোটে ফুল হয়ে।
যত দেখি
যত দেখি তৃপ্ত হই, শীতল হয়ে
জড়িয়ে পড়ি তোমার সমস্ত শরীরে। এক অজানা
শিহরণ ছুঁয়ে যায় হৃদয়ের সমস্ত পৃষ্ঠা জুড়ে।
যেন দীর্ঘদিনের শুষ্কতা ধীরে ধীরে সরে যাচ্ছে দূরে।
হারিয়ে যাওয়া রস ফিরছে মূলে, নিয়ে যাচ্ছে আদিপর্বে।
যেমন নেয় নদীর কূল, জোয়ারের ফেনা।
ভাবনার অতলে অদ্ভুত মায়া, দীর্ঘক্ষণ মোহগ্রস্ত
করে রাখে চোখের পলক, তাকিয়ে থাকি মায়ার মায়ায়। কী অপরূপ মায়া!
সেখানেও দেখি তৃষ্ণার ব্যাকুলতা নিয়ে অপেক্ষারত কান্না।
জীবনের তল্লাটে হারিয়ে খুঁজি আজ
আমারও জীবন ছিল। মায়ায় ভরা নির্বিঘ্ন আয়োজন, কলমিলতার মতো নিষ্পাপ।
তৃপ্ত হই ঘাসে, বাতাসের বেহায়া আঘাতে
অভিমানের মোড়ক ছুড়ে ফেলে হাতে তুলে নেই
কচু পাতায় টলোমলো জলের লজ্জা। এ জীবনের চাহিদা তোমায় দেখার
প্রয়োজনে তপ্ত, হয় উত্তপ্ত অথবা সহ্যের অতীত শীতল।
এ যেন কেমন
গহিন অরণ্যে সবুজ পাতার মতো, মগজে
চিন্তার রাজ্যে ভাবের উদয়, আকুল বিন্যাসে
একটু একটু করে এগিয়ে নেয়, আবার ভরা কলসির
মতো বসিয়ে রাখে-ভবের রাজ্যে। একদিন সমস্ত ভাবনা থেকে মুক্ত হয়ে
এদিক-ওদিক চলন, জীবন্ত মরণ! মানুষ
কেন বাঁচে, কীভাবে বাঁচে-প্রশ্নের সমাধা
আজ তর্কপ্রিয় সন্ধানে, মূর্ত প্রার্থনা।
সকল প্রিয়জন পরিত্যাগে, নিগূঢ় যত্নে হৃদয়ে প্রবেশ করে
নিজের অপরিচিত চেহারা, সব জিজ্ঞাসার
অন্ত-ক্রিয়ার এক উচ্চতম বিলাস।
জীবনের মানে অর্থশুন্য ভবিতব্য! এ কী হয়?
চোখের পলকে নিষ্পাপ দৃশ্যলোক-পেছন ডাকে বারবার
যেখানে থাকে আবার দেখার ইচ্ছা, নামে যে মুক্তকরণ। মিলনকান্তির আবাস।
চতুর্মুখ সমীকরণে খেলে যায় সময়ের ঝাঁজালো সিদ্ধান্ত। কেউ কী অপ্রিয় হয় কারও?
যেখানে ভেসে ওঠে নীলপদ্ম, অতীতের নিটোল কিতাব। সে-তো মানুষের ছবি!
চলে আসুন সবজি বাজারে
মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে দেখেছি অনেক কিছু
যা মানুষের নয়। অ-মানুষের জন্ম-উত্তর বাঁচার
উপায় হতে পারে। পোশাকে সজ্জিত দেহ কতভাবে
হিংস্র হয়, গোপনে, অন্ধের গহনে।
প্রবেশের আগেই পেয়েছি সংকেত। কত নোংরা, পচা, আবর্জনায় ভরা একটি থালার মতো
পড়ে আছে সম্মুখে। কেউ কি দেখেছে?
হয়তো মেনে নিয়েছে সবাই, সবার আগে সে
যে ভেবেছে, কী বা আছে উপায়!
চারপাশে কত কিছুর ঘ্রাণ, চোখ যা বলে তা কি মেনে নেয় স্বাস্থ্যবার্তা
ফুটে আছে ফুলের মতো দোকানের পসরা। খেতে বা কেনায় বারণ বালাই নেই।
যা পাচ্ছে নিচ্ছে, অনেকে। কেউ গায়ে কেউ পেটে।
আহা! দেখার কেউ নেই!
এক অন্ধকারে হাঁটছে আমাদের পা।
কেউ কি আছে কোথাও, আলো নিয়ে হাতে? ভেবেছে কি কেউ
কেন আমাদের আয়োজনে সবাই নেই?
কেউ এসে শুধু একবার বলুক, এই নিন-আপনাদের জীবন টিকিট যা উত্তরণ।
চলে আসুন সবজির বাজারে, সবুজের খোঁজে।
ইতিহাস
আজ স্পষ্ট ঘোষণা, আমার চোখের সামনে কেউ নেই
নেই কেউ ভাবের অন্তিম ঘরে। এক অস্পৃশ্য অনুভব
ছুঁয়ে চলে, ভাসিয়ে দেয় অগণিত স্রোতের তুমুল আলিঙ্গনে।
আজ কিছু ভেবে বলছি না, সরাসরি জবাব---
আমি নই কারও!
সব বাতাসের সাথে মিশে থাকা চোখের প্রেম
ভাবনার বিলাসে জড়িয়ে পড়ার বাসনা----সকলের অগোচরে
অথবা সকলের মাঝে। জীবনের অর্থে হৃদয়ের গুড়গুড় আলাপ
ঘুটঘুটে অন্ধকারে হৃদয়ে খোলা আকাশ, শুধু
এক মুখচ্ছবি।
আজ কোনো ক্ষমা নেই---নিজের প্রতি! নিজের পাপে
হাঁটি আমি, সবার মাঝে একলা হয়ে। বেদনার
কালো রং নিয়ে। শুধু দেখে যাই, শুধু দেখতে যাই।
কত রং বিরাজ করে ভাবনার গরমিলে, স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রই।
দাঁড়িয়ে থেকেও হেঁটে যাই!
আজকের না বলা কথা, কোনো দিন বলা হবে না
হবে না দাঁড়িয়ে আবার ভাবা আর একটু বসলে
ভালো হতো। যে বসিয়ে রাখে যে আশায় বসে থাকে
সবকিছুর-ই সময় থাকে---
এরপর---ইতিহাস!

রক্ত লাল
আলসেমি শরীরে এদিক-ওদিক চেয়ে আটকে
গেল চোখ পশ্চিমান্তে। রক্তিম সূর্যের বিদায়
ধীর গতিতে। খুব লাল হয়েছে, সারা দিনের
জ্বলন্ত প্রহরে পেয়েছে এক অপূর্ব রূপ।
যা স্বভাববিদ্ধ, তবে কতটা উপকারী বা বাঁচিয়ে
রাখার নিরলস অভিপ্রায়। মানুষের তরে
প্রাণীর অফুরন্ত প্রাচুর্য বিস্তৃতকরণে, কিংবা
উদ্ভিদের অন্তিম প্রেমে বসন্তের অভিষেকে।
কতটা জ্বলতে হয় পরের জন্য, কতটা ফুটন্ত
শরীর নিয়ে চালিয়ে যায় সেবার পরিধি।
এক চিরন্তন শিক্ষা, আবার উদিত হয়
দিনের শুরুতে, বিদায় প্রান্তিক অপূর্ব
মায়ায়-দিনের শেষ প্রান্তে।
এতটুকু কার্পণ্য রেখে যায়নি, হয়তো মুখ
ফিরিয়ে নিবে না কোনো দিন। তবে ভাবনার
অন্তিমে শেষ দৃশ্যের সংলাপে ভেসে
ওঠে জনদরদি রাজার মুখ। যেখানে রক্ত ঝরে
বন্যার বেগে সেখানেও প্রতিদিন ফুল ফোটে ফুল হয়ে।
যত দেখি
যত দেখি তৃপ্ত হই, শীতল হয়ে
জড়িয়ে পড়ি তোমার সমস্ত শরীরে। এক অজানা
শিহরণ ছুঁয়ে যায় হৃদয়ের সমস্ত পৃষ্ঠা জুড়ে।
যেন দীর্ঘদিনের শুষ্কতা ধীরে ধীরে সরে যাচ্ছে দূরে।
হারিয়ে যাওয়া রস ফিরছে মূলে, নিয়ে যাচ্ছে আদিপর্বে।
যেমন নেয় নদীর কূল, জোয়ারের ফেনা।
ভাবনার অতলে অদ্ভুত মায়া, দীর্ঘক্ষণ মোহগ্রস্ত
করে রাখে চোখের পলক, তাকিয়ে থাকি মায়ার মায়ায়। কী অপরূপ মায়া!
সেখানেও দেখি তৃষ্ণার ব্যাকুলতা নিয়ে অপেক্ষারত কান্না।
জীবনের তল্লাটে হারিয়ে খুঁজি আজ
আমারও জীবন ছিল। মায়ায় ভরা নির্বিঘ্ন আয়োজন, কলমিলতার মতো নিষ্পাপ।
তৃপ্ত হই ঘাসে, বাতাসের বেহায়া আঘাতে
অভিমানের মোড়ক ছুড়ে ফেলে হাতে তুলে নেই
কচু পাতায় টলোমলো জলের লজ্জা। এ জীবনের চাহিদা তোমায় দেখার
প্রয়োজনে তপ্ত, হয় উত্তপ্ত অথবা সহ্যের অতীত শীতল।
এ যেন কেমন
গহিন অরণ্যে সবুজ পাতার মতো, মগজে
চিন্তার রাজ্যে ভাবের উদয়, আকুল বিন্যাসে
একটু একটু করে এগিয়ে নেয়, আবার ভরা কলসির
মতো বসিয়ে রাখে-ভবের রাজ্যে। একদিন সমস্ত ভাবনা থেকে মুক্ত হয়ে
এদিক-ওদিক চলন, জীবন্ত মরণ! মানুষ
কেন বাঁচে, কীভাবে বাঁচে-প্রশ্নের সমাধা
আজ তর্কপ্রিয় সন্ধানে, মূর্ত প্রার্থনা।
সকল প্রিয়জন পরিত্যাগে, নিগূঢ় যত্নে হৃদয়ে প্রবেশ করে
নিজের অপরিচিত চেহারা, সব জিজ্ঞাসার
অন্ত-ক্রিয়ার এক উচ্চতম বিলাস।
জীবনের মানে অর্থশুন্য ভবিতব্য! এ কী হয়?
চোখের পলকে নিষ্পাপ দৃশ্যলোক-পেছন ডাকে বারবার
যেখানে থাকে আবার দেখার ইচ্ছা, নামে যে মুক্তকরণ। মিলনকান্তির আবাস।
চতুর্মুখ সমীকরণে খেলে যায় সময়ের ঝাঁজালো সিদ্ধান্ত। কেউ কী অপ্রিয় হয় কারও?
যেখানে ভেসে ওঠে নীলপদ্ম, অতীতের নিটোল কিতাব। সে-তো মানুষের ছবি!
চলে আসুন সবজি বাজারে
মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে দেখেছি অনেক কিছু
যা মানুষের নয়। অ-মানুষের জন্ম-উত্তর বাঁচার
উপায় হতে পারে। পোশাকে সজ্জিত দেহ কতভাবে
হিংস্র হয়, গোপনে, অন্ধের গহনে।
প্রবেশের আগেই পেয়েছি সংকেত। কত নোংরা, পচা, আবর্জনায় ভরা একটি থালার মতো
পড়ে আছে সম্মুখে। কেউ কি দেখেছে?
হয়তো মেনে নিয়েছে সবাই, সবার আগে সে
যে ভেবেছে, কী বা আছে উপায়!
চারপাশে কত কিছুর ঘ্রাণ, চোখ যা বলে তা কি মেনে নেয় স্বাস্থ্যবার্তা
ফুটে আছে ফুলের মতো দোকানের পসরা। খেতে বা কেনায় বারণ বালাই নেই।
যা পাচ্ছে নিচ্ছে, অনেকে। কেউ গায়ে কেউ পেটে।
আহা! দেখার কেউ নেই!
এক অন্ধকারে হাঁটছে আমাদের পা।
কেউ কি আছে কোথাও, আলো নিয়ে হাতে? ভেবেছে কি কেউ
কেন আমাদের আয়োজনে সবাই নেই?
কেউ এসে শুধু একবার বলুক, এই নিন-আপনাদের জীবন টিকিট যা উত্তরণ।
চলে আসুন সবজির বাজারে, সবুজের খোঁজে।
ইতিহাস
আজ স্পষ্ট ঘোষণা, আমার চোখের সামনে কেউ নেই
নেই কেউ ভাবের অন্তিম ঘরে। এক অস্পৃশ্য অনুভব
ছুঁয়ে চলে, ভাসিয়ে দেয় অগণিত স্রোতের তুমুল আলিঙ্গনে।
আজ কিছু ভেবে বলছি না, সরাসরি জবাব---
আমি নই কারও!
সব বাতাসের সাথে মিশে থাকা চোখের প্রেম
ভাবনার বিলাসে জড়িয়ে পড়ার বাসনা----সকলের অগোচরে
অথবা সকলের মাঝে। জীবনের অর্থে হৃদয়ের গুড়গুড় আলাপ
ঘুটঘুটে অন্ধকারে হৃদয়ে খোলা আকাশ, শুধু
এক মুখচ্ছবি।
আজ কোনো ক্ষমা নেই---নিজের প্রতি! নিজের পাপে
হাঁটি আমি, সবার মাঝে একলা হয়ে। বেদনার
কালো রং নিয়ে। শুধু দেখে যাই, শুধু দেখতে যাই।
কত রং বিরাজ করে ভাবনার গরমিলে, স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রই।
দাঁড়িয়ে থেকেও হেঁটে যাই!
আজকের না বলা কথা, কোনো দিন বলা হবে না
হবে না দাঁড়িয়ে আবার ভাবা আর একটু বসলে
ভালো হতো। যে বসিয়ে রাখে যে আশায় বসে থাকে
সবকিছুর-ই সময় থাকে---
এরপর---ইতিহাস!

বাংলা কথাসাহিত্যের জগতে শক্তিশালী লেখক হিসেবে সুবিদিত হাসান আজিজুল হক করতেন শিক্ষকতা—প্রথমে বিভিন্ন কলেজে, পরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে, দর্শন বিভাগে। শিক্ষকতার পেশায় থেকে অনেকেই লেখালেখি করে থাকেন। তবে হাসান আজিজুল হকের লেখালেখি যে নিতান্ত শখের বশে নয়, তা যাঁরা তাঁর লেখা পাঠ করেছেন বা তাঁকে কাছ থেকে
১৯ নভেম্বর ২০২২
হুমায়ূন আহমেদ তখন ক্যানসার আক্রান্ত। যুক্তরাষ্ট্রে কেমোথেরাপি নিচ্ছেন। হঠাৎ চিকিৎসকের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে চলে এলেন নুহাশপল্লীতে। নাটক বানাবেন। অভিনেতা ফারুক আহমেদকে ডাকলেন। নুহাশপল্লীতে নাটকের শুটিংয়ের ফাঁকে গল্প করছিলেন হুমায়ূন ও ফারুক। হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘কী আশ্চর্য, তাই না ফারুক!’
২৩ দিন আগে
প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করেছে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবার স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার নাটক, সংগীত ও নৃত্যকলা ক্লাবের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী বার্ষিক নাট্যানুষ্ঠানে এটি মঞ্চস্থ করা হয়।
০৮ নভেম্বর ২০২৫
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
২০ অক্টোবর ২০২৫জন্মদিনের শ্রদ্ধাঞ্জলি
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

হুমায়ূন আহমেদ তখন ক্যানসার আক্রান্ত। যুক্তরাষ্ট্রে কেমোথেরাপি নিচ্ছেন। হঠাৎ চিকিৎসকের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে চলে এলেন নুহাশপল্লীতে। নাটক বানাবেন। অভিনেতা ফারুক আহমেদকে ডাকলেন। নুহাশপল্লীতে নাটকের শুটিংয়ের ফাঁকে গল্প করছিলেন হুমায়ূন ও ফারুক। হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘কী আশ্চর্য, তাই না ফারুক!’ জবাবে ফারুক বললেন, ‘কী আশ্চর্য ভাই?’ হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘এই যে প্রকৃতি, জোছনা, বৃষ্টি, নদী— কী সুন্দর! একদিন হয়তো আমি এসব আর দেখতে পারব না। একুশের বইমেলা হবে। লোকেদের ভিড়, আড্ডা; আমি সেখানে থাকব না। এটা কি মেনে নেওয়া যায়! হায় রে জীবন!’
‘আমার না বলা কথা’ বইয়ে ফারুক আহমেদ এই স্মৃতিচারণ করেছেন। লিখেছেন, ‘আমি কিছু না বলে মূর্তির মতো বসে রইলাম। একসময় তাকিয়ে দেখলাম, হুমায়ূন ভাইয়ের দুচোখের কোনায় পানি।’
হুমায়ূন আহমেদ নেই। তবে তিনি রয়েছেন দেশের তরুণদের মনে। যে বইমেলায় তিনি থাকবেন না বলে আক্ষেপ, সেই বইমেলায় তাঁর বইয়ের স্টলে তরুণদের ঢলের মধ্যে আছেন।
নেত্রকোনার মোহনগঞ্জে হুমায়ূন আহমেদের জন্ম এই দিনে (১৩ নভেম্বর); ভারত ভাগের এক বছর পরে ১৯৪৮ সালে। ছোট সময়ে তাঁর নাম ছিল শামসুর রহমান। তাঁর বাবা ছেলেমেয়েদের নাম পাল্টে ফেলতেন। তাঁর নাম পাল্টে রাখেন হুমায়ূন আহমেদ। হিমু, মিসির আলি, শুভ্রর মতো চরিত্রের স্রষ্টা তিনি। শুধু কথাসাহিত্যেই নয়; ‘বহুব্রীহি’, ‘অয়োময়’, ‘কোথাও কেউ নেই’,
‘আজ রবিবার’-এর মতো নাটক বানিয়েছেন, তৈরি করেছেন ‘আগুনের পরশমণি’, ‘শ্যামল ছায়া’র মতো চলচ্চিত্র।
হুমায়ূন আহমেদ বৃষ্টি, জোছনা ভালোবাসতেন। তাঁর লেখায় সেসব উঠে এসেছে বারবার। ২০১২ সালের জুলাইয়ে বর্ষাতেই তিনি পাড়ি জমিয়েছিলেন ওপারে।
তিনি নেই। কিন্তু তাঁর লেখায় উঠে আসা চান্নিপসর, বৃষ্টি বিলাস আজও আছে তরুণদের মনে। ফারুক আহমেদ তাঁর ওই বইয়ে হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে আরেকটি স্মৃতিচারণ করেছিলেন এভাবে—‘এক বিকেলে শুটিং শেষে তাঁর প্রিয় লিচুগাছের দিকে তাকিয়ে আছেন হুমায়ূন। সেখানে ঝুলছে পাকা লিচু। তিনি তাঁর কেয়ারটেকার মুশাররফকে ডেকে গ্রামের ছোট ছেলেমেয়েদের ডেকে নিয়ে এলেন। তাদের বললেন, গাছে উঠে যে যত পারে লিচু খেতে। বাচ্চারা কেউ গাছে উঠে লিচু খাচ্ছে, হইচই করছে। কেউ পকেটে ভরছে। হুমায়ূন আহমেদ অবাক হয়ে সেই লিচু খাওয়া দেখতে লাগলেন।’
ফারুক আহমেদ লিখেছেন, ‘হুমায়ূন ভাই একসময় আমাকে বললেন, এমন সুন্দর দৃশ্য তুমি কখনো দেখেছো? এমন ভালো লাগার অনুভূতি কি অন্য কোনোভাবে পাওয়া যায়? আমি কী বলব বুঝতে পারছিলাম না। হঠাৎ বললাম, না ভাই এমন ভালো লাগার অনুভূতি কোনোভাবেই পাওয়া যায় না।’
হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন ঘিরে রাজধানীসহ জন্মস্থান নেত্রকোনাতে রয়েছে নানা আয়োজন। নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার রোয়াইলবাড়ি ইউনিয়নের কুতুবপুরে হুমায়ূন আহমেদ প্রতিষ্ঠিত শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠ এবং এলাকাবাসীর উদ্যোগে এসব কর্মসূচি পালন করা হবে। সকালে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কোরআন খতম করবেন। এরপর শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠ প্রাঙ্গণ থেকে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, এলাকাবাসী এবং হুমায়ূনভক্তদের আনন্দ শোভাযাত্রা বের হবে। পরে লেখকের প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ, জন্মদিনের কেক কাটা, বৃক্ষরোপণ, কুইজ, হুমায়ূন আহমেদের রচিত নাটক ও সিনেমার অংশবিশেষ নিয়ে অভিনয়, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, পুরস্কার বিতরণ এবং আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। এ ছাড়া রাজধানীতে হুমায়ূন আহমেদের চলচ্চিত্র নিয়ে চলচ্চিত্র সপ্তাহ, হুমায়ূন প্রতিযোগিতা, হুমায়ূন জন্মোৎসব, টেলিভিশন চ্যানেলে নাটক ও অনুষ্ঠান প্রচারসহ নানা আয়োজনে মুখর থাকছে দিনটি।

হুমায়ূন আহমেদ তখন ক্যানসার আক্রান্ত। যুক্তরাষ্ট্রে কেমোথেরাপি নিচ্ছেন। হঠাৎ চিকিৎসকের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে চলে এলেন নুহাশপল্লীতে। নাটক বানাবেন। অভিনেতা ফারুক আহমেদকে ডাকলেন। নুহাশপল্লীতে নাটকের শুটিংয়ের ফাঁকে গল্প করছিলেন হুমায়ূন ও ফারুক। হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘কী আশ্চর্য, তাই না ফারুক!’ জবাবে ফারুক বললেন, ‘কী আশ্চর্য ভাই?’ হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘এই যে প্রকৃতি, জোছনা, বৃষ্টি, নদী— কী সুন্দর! একদিন হয়তো আমি এসব আর দেখতে পারব না। একুশের বইমেলা হবে। লোকেদের ভিড়, আড্ডা; আমি সেখানে থাকব না। এটা কি মেনে নেওয়া যায়! হায় রে জীবন!’
‘আমার না বলা কথা’ বইয়ে ফারুক আহমেদ এই স্মৃতিচারণ করেছেন। লিখেছেন, ‘আমি কিছু না বলে মূর্তির মতো বসে রইলাম। একসময় তাকিয়ে দেখলাম, হুমায়ূন ভাইয়ের দুচোখের কোনায় পানি।’
হুমায়ূন আহমেদ নেই। তবে তিনি রয়েছেন দেশের তরুণদের মনে। যে বইমেলায় তিনি থাকবেন না বলে আক্ষেপ, সেই বইমেলায় তাঁর বইয়ের স্টলে তরুণদের ঢলের মধ্যে আছেন।
নেত্রকোনার মোহনগঞ্জে হুমায়ূন আহমেদের জন্ম এই দিনে (১৩ নভেম্বর); ভারত ভাগের এক বছর পরে ১৯৪৮ সালে। ছোট সময়ে তাঁর নাম ছিল শামসুর রহমান। তাঁর বাবা ছেলেমেয়েদের নাম পাল্টে ফেলতেন। তাঁর নাম পাল্টে রাখেন হুমায়ূন আহমেদ। হিমু, মিসির আলি, শুভ্রর মতো চরিত্রের স্রষ্টা তিনি। শুধু কথাসাহিত্যেই নয়; ‘বহুব্রীহি’, ‘অয়োময়’, ‘কোথাও কেউ নেই’,
‘আজ রবিবার’-এর মতো নাটক বানিয়েছেন, তৈরি করেছেন ‘আগুনের পরশমণি’, ‘শ্যামল ছায়া’র মতো চলচ্চিত্র।
হুমায়ূন আহমেদ বৃষ্টি, জোছনা ভালোবাসতেন। তাঁর লেখায় সেসব উঠে এসেছে বারবার। ২০১২ সালের জুলাইয়ে বর্ষাতেই তিনি পাড়ি জমিয়েছিলেন ওপারে।
তিনি নেই। কিন্তু তাঁর লেখায় উঠে আসা চান্নিপসর, বৃষ্টি বিলাস আজও আছে তরুণদের মনে। ফারুক আহমেদ তাঁর ওই বইয়ে হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে আরেকটি স্মৃতিচারণ করেছিলেন এভাবে—‘এক বিকেলে শুটিং শেষে তাঁর প্রিয় লিচুগাছের দিকে তাকিয়ে আছেন হুমায়ূন। সেখানে ঝুলছে পাকা লিচু। তিনি তাঁর কেয়ারটেকার মুশাররফকে ডেকে গ্রামের ছোট ছেলেমেয়েদের ডেকে নিয়ে এলেন। তাদের বললেন, গাছে উঠে যে যত পারে লিচু খেতে। বাচ্চারা কেউ গাছে উঠে লিচু খাচ্ছে, হইচই করছে। কেউ পকেটে ভরছে। হুমায়ূন আহমেদ অবাক হয়ে সেই লিচু খাওয়া দেখতে লাগলেন।’
ফারুক আহমেদ লিখেছেন, ‘হুমায়ূন ভাই একসময় আমাকে বললেন, এমন সুন্দর দৃশ্য তুমি কখনো দেখেছো? এমন ভালো লাগার অনুভূতি কি অন্য কোনোভাবে পাওয়া যায়? আমি কী বলব বুঝতে পারছিলাম না। হঠাৎ বললাম, না ভাই এমন ভালো লাগার অনুভূতি কোনোভাবেই পাওয়া যায় না।’
হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন ঘিরে রাজধানীসহ জন্মস্থান নেত্রকোনাতে রয়েছে নানা আয়োজন। নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার রোয়াইলবাড়ি ইউনিয়নের কুতুবপুরে হুমায়ূন আহমেদ প্রতিষ্ঠিত শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠ এবং এলাকাবাসীর উদ্যোগে এসব কর্মসূচি পালন করা হবে। সকালে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কোরআন খতম করবেন। এরপর শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠ প্রাঙ্গণ থেকে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, এলাকাবাসী এবং হুমায়ূনভক্তদের আনন্দ শোভাযাত্রা বের হবে। পরে লেখকের প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ, জন্মদিনের কেক কাটা, বৃক্ষরোপণ, কুইজ, হুমায়ূন আহমেদের রচিত নাটক ও সিনেমার অংশবিশেষ নিয়ে অভিনয়, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, পুরস্কার বিতরণ এবং আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। এ ছাড়া রাজধানীতে হুমায়ূন আহমেদের চলচ্চিত্র নিয়ে চলচ্চিত্র সপ্তাহ, হুমায়ূন প্রতিযোগিতা, হুমায়ূন জন্মোৎসব, টেলিভিশন চ্যানেলে নাটক ও অনুষ্ঠান প্রচারসহ নানা আয়োজনে মুখর থাকছে দিনটি।

বাংলা কথাসাহিত্যের জগতে শক্তিশালী লেখক হিসেবে সুবিদিত হাসান আজিজুল হক করতেন শিক্ষকতা—প্রথমে বিভিন্ন কলেজে, পরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে, দর্শন বিভাগে। শিক্ষকতার পেশায় থেকে অনেকেই লেখালেখি করে থাকেন। তবে হাসান আজিজুল হকের লেখালেখি যে নিতান্ত শখের বশে নয়, তা যাঁরা তাঁর লেখা পাঠ করেছেন বা তাঁকে কাছ থেকে
১৯ নভেম্বর ২০২২
আলসেমি শরীরে এদিক-ওদিক চেয়ে আটকে গেল চোখ পশ্চিমান্তে। রক্তিম সূর্যের বিদায় ধীর গতিতে। খুব লাল হয়েছে, সারা দিনের জ্বলন্ত প্রহরে পেয়েছে এক অপূর্ব রূপ।
১৩ দিন আগে
প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করেছে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবার স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার নাটক, সংগীত ও নৃত্যকলা ক্লাবের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী বার্ষিক নাট্যানুষ্ঠানে এটি মঞ্চস্থ করা হয়।
০৮ নভেম্বর ২০২৫
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
২০ অক্টোবর ২০২৫নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করেছে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবার স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার নাটক, সংগীত ও নৃত্যকলা ক্লাবের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী বার্ষিক নাট্যানুষ্ঠানে এটি মঞ্চস্থ করা হয়।
মঞ্চনাট্যটি স্কলাস্টিকার প্রতিষ্ঠাতা ইয়াসমিন মুরশেদকে উৎসর্গ করা হয়।

স্কুলের এসটিএম মিলনায়তন প্রতিষ্ঠার রজতজয়ন্তী উদ্যাপনকে সামনে রেখে আয়োজিত এ নাট্যানুষ্ঠানের সমাপনী দিনে বিশেষ অতিথি ছিলেন নাট্যব্যক্তিত্ব আবুল হায়াত, দিলারা জামান ও আফজাল হোসেন। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার অধ্যক্ষ ফারাহ্ সোফিয়া আহমেদ।
হীরক রাজার দেশে নাটকটির নির্দেশনায় ছিলেন কাজী তৌফিকুল ইসলাম ইমন। প্রোডাকশন ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করেন শৈলী পারমিতা নীলপদ্ম। সংগীত পরিচালনা করেন গাজী মুন্নোফ, ইলিয়াস খান ও পলাশ নাথ লোচন। নৃত্য পরিচালনায় ছিলেন শাম্মী ইয়াসমিন ঝিনুক ও ফরহাদ আহমেদ শামিম।
নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেন নাজিফা ওয়াযিহা আহমেদ, আরিয়াদ রহমান, আজিয়াদ রহমান, বাজনীন রহমান, মোহম্মদ সফির চৌধুরী, ফাহিম আহম্মেদ, সৈয়দ কাফশাত তাইয়ুশ হামদ ও তাজরীবা নওফাত প্রমুখ।
শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকেরা অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের পরিবেশিত অভিনয়, গান ও নাচ উপভোগ করেন।

প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করেছে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবার স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার নাটক, সংগীত ও নৃত্যকলা ক্লাবের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী বার্ষিক নাট্যানুষ্ঠানে এটি মঞ্চস্থ করা হয়।
মঞ্চনাট্যটি স্কলাস্টিকার প্রতিষ্ঠাতা ইয়াসমিন মুরশেদকে উৎসর্গ করা হয়।

স্কুলের এসটিএম মিলনায়তন প্রতিষ্ঠার রজতজয়ন্তী উদ্যাপনকে সামনে রেখে আয়োজিত এ নাট্যানুষ্ঠানের সমাপনী দিনে বিশেষ অতিথি ছিলেন নাট্যব্যক্তিত্ব আবুল হায়াত, দিলারা জামান ও আফজাল হোসেন। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার অধ্যক্ষ ফারাহ্ সোফিয়া আহমেদ।
হীরক রাজার দেশে নাটকটির নির্দেশনায় ছিলেন কাজী তৌফিকুল ইসলাম ইমন। প্রোডাকশন ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করেন শৈলী পারমিতা নীলপদ্ম। সংগীত পরিচালনা করেন গাজী মুন্নোফ, ইলিয়াস খান ও পলাশ নাথ লোচন। নৃত্য পরিচালনায় ছিলেন শাম্মী ইয়াসমিন ঝিনুক ও ফরহাদ আহমেদ শামিম।
নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেন নাজিফা ওয়াযিহা আহমেদ, আরিয়াদ রহমান, আজিয়াদ রহমান, বাজনীন রহমান, মোহম্মদ সফির চৌধুরী, ফাহিম আহম্মেদ, সৈয়দ কাফশাত তাইয়ুশ হামদ ও তাজরীবা নওফাত প্রমুখ।
শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকেরা অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের পরিবেশিত অভিনয়, গান ও নাচ উপভোগ করেন।

বাংলা কথাসাহিত্যের জগতে শক্তিশালী লেখক হিসেবে সুবিদিত হাসান আজিজুল হক করতেন শিক্ষকতা—প্রথমে বিভিন্ন কলেজে, পরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে, দর্শন বিভাগে। শিক্ষকতার পেশায় থেকে অনেকেই লেখালেখি করে থাকেন। তবে হাসান আজিজুল হকের লেখালেখি যে নিতান্ত শখের বশে নয়, তা যাঁরা তাঁর লেখা পাঠ করেছেন বা তাঁকে কাছ থেকে
১৯ নভেম্বর ২০২২
আলসেমি শরীরে এদিক-ওদিক চেয়ে আটকে গেল চোখ পশ্চিমান্তে। রক্তিম সূর্যের বিদায় ধীর গতিতে। খুব লাল হয়েছে, সারা দিনের জ্বলন্ত প্রহরে পেয়েছে এক অপূর্ব রূপ।
১৩ দিন আগে
হুমায়ূন আহমেদ তখন ক্যানসার আক্রান্ত। যুক্তরাষ্ট্রে কেমোথেরাপি নিচ্ছেন। হঠাৎ চিকিৎসকের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে চলে এলেন নুহাশপল্লীতে। নাটক বানাবেন। অভিনেতা ফারুক আহমেদকে ডাকলেন। নুহাশপল্লীতে নাটকের শুটিংয়ের ফাঁকে গল্প করছিলেন হুমায়ূন ও ফারুক। হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘কী আশ্চর্য, তাই না ফারুক!’
২৩ দিন আগে
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
২০ অক্টোবর ২০২৫আজকের পত্রিকা ডেস্ক

জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল। কিন্তু ভাষাবিদ ও সাহিত্য ইতিহাসবিদদের মতে, এই ধারণা আসলে পশ্চিমা দৃষ্টিকোণ থেকে তৈরি এক ‘ঔপনিবেশিক কল্পনা’ মাত্র। বাস্তবে আরবি সাহিত্য কখনোই থেমে যায়নি।
প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, অষ্টম শতাব্দীতে আব্বাসীয় খলিফাদের অধীনে বিজ্ঞান, দর্শন ও কবিতার কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল বাগদাদ। আবু নুয়াস, আল-মুতানাব্বি, আল-ফারাবি ও ইবনে সিনার মতো কবি ও দার্শনিকদের হাত ধরে শুরু হয়েছিল এক স্বর্ণযুগ। ঊনবিংশ শতাব্দীর ইউরোপীয় গবেষকেরা—যেমন ফরাসি চিন্তাবিদ আর্নেস্ট রেনাঁ ও ডাচ ইতিহাসবিদ রেইনহার্ট দোজি সেই আমলটিকেই আরবি বুদ্ধিবৃত্তিক জীবনের শিখর বলে স্বীকার করেছিলেন এবং দাবি করেছিলেন, একাদশ শতাব্দীর পর এই ধারাবাহিকতার পতন ঘটে। তাঁদের মতে, এরপর প্রায় ৮০০ বছর আরবে আর কোনো গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যিক বা দার্শনিক কাজ হয়নি—যতক্ষণ না ইউরোপে রেনেসাঁ শুরু হয়।
কিন্তু আধুনিক গবেষকেরা বলছেন, এই ধারণা সরলীকৃত ও পক্ষপাতদুষ্ট। ফ্রাঙ্কফুর্ট আন্তর্জাতিক বইমেলায় শেখ জায়েদ বুক অ্যাওয়ার্ডের আয়োজিত এক আলোচনায় ভাষাবিদেরা দাবি করেছেন, আরবি রচনা শৈলী কখনো বিলুপ্ত হয়নি; বরং তা ধারাবাহিকভাবে কপি, অনুবাদ ও পাঠের মাধ্যমে বেঁচে ছিল।
জার্মান গবেষক বেয়াট্রিস গ্রুন্ডলার তাঁর ‘দ্য রাইজ অব দ্য অ্যারাবিক বুক’ গ্রন্থে দাবি করেছেন, আরবি সাহিত্যে ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে যে ধারণাটি প্রচলিত আছে তা আসলে গাল-গল্প। এই বইটি এবারের শেখ জায়েদ পুরস্কারের শর্টলিস্টে রয়েছে। গ্রুন্ডলার এতে দেখিয়েছেন, নবম শতাব্দীর বাগদাদে বইয়ের ব্যবসা, কপিকারদের প্রতিযোগিতা, জনসম্মুখে পাঠ ও লেখার প্রচলন—সবই ছিল আধুনিক প্রকাশনা সংস্কৃতির পূর্বসূরি। তিনি মত দিয়েছেন, ‘বাগদাদের রাস্তায় হাঁটলে আপনি দেখতেন লোকেরা হস্তলিপি বিক্রি করছে, বিরামচিহ্ন নিয়ে তর্ক করছে—এ যেন এক জীবন্ত প্রকাশনা বাজার।’
গবেষণা বলছে, আরবি সাহিত্য আসলে কখনো এক জায়গায় স্থির থাকেনি। এর কেন্দ্র এক সময় বাগদাদ থেকে কায়রো, দামেস্ক ও আন্দালুসিয়ায় স্থানান্তরিত হয়। কিন্তু ধারাটি অব্যাহতই থাকে। নতুন ঘরানা তৈরি হয়, পুরোনো ঘরানা রূপান্তরিত হয়।
ফরাসি অধ্যাপক হাকান ওজকান তাঁর গবেষণায় দেখিয়েছেন, ‘জাজাল’ নামের কথ্য ছন্দভিত্তিক কবিতার ধারা আব্বাসীয় যুগের পরও বিকশিত হতে থাকে। তাঁর মতে, ‘এই কবিরা নিয়ম ভেঙে নতুন রূপ দিয়েছে—তাঁদের ছন্দ ও ব্যঙ্গ আধুনিক র্যাপের মতো প্রাণবন্ত।’

এদিকে এই বিষয়ে এক প্রতিবেদনে সোমবার (২০ অক্টোবর) আমিরাতভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ন্যাশনাল জানিয়েছে, আবুধাবির নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির ‘আরবি সাহিত্য লাইব্রেরি’ প্রকল্প ইতিমধ্যেই ‘হারানো শতাব্দী’ বলে বিবেচিত সময়ের ৬০ টিরও বেশি আরবি সাহিত্যকর্ম পুনরুদ্ধার করেছে। প্রকল্পটির সম্পাদক অধ্যাপক মরিস পোমেরান্টজ বলেছেন, ‘এই বইগুলো সম্পাদনা করা মানে এক চলমান সংলাপে অংশ নেওয়া—যেখানে প্রজন্মের পর প্রজন্ম লেখক, অনুবাদক ও সমালোচকেরা একে অপরকে উত্তর দিয়ে গেছেন।’
মরিস মনে করেন, আরবি সাহিত্য স্থবির হয়ে যাওয়ার ধারণাটি মূলত অনুবাদের অভাব থেকেই জন্ম নিয়েছে। তিনি বলেন, ‘যখন কোনো লেখা অনুবাদ করা হয় না, তখন সেটি বৈশ্বিক অস্তিত্ব হারায়।’
মরিসের মতে, এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো এই সাহিত্যকে আবার জনসাধারণের কল্পনায় ফিরিয়ে আনা—স্কুলে পড়ানো, মঞ্চে উপস্থাপন করা, অনুবাদের মাধ্যমে বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়া। তা না হলে আরবি সাহিত্যের ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে চিহ্নিত সময়টি অধরাই থেকে যাবে।

জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল। কিন্তু ভাষাবিদ ও সাহিত্য ইতিহাসবিদদের মতে, এই ধারণা আসলে পশ্চিমা দৃষ্টিকোণ থেকে তৈরি এক ‘ঔপনিবেশিক কল্পনা’ মাত্র। বাস্তবে আরবি সাহিত্য কখনোই থেমে যায়নি।
প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, অষ্টম শতাব্দীতে আব্বাসীয় খলিফাদের অধীনে বিজ্ঞান, দর্শন ও কবিতার কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল বাগদাদ। আবু নুয়াস, আল-মুতানাব্বি, আল-ফারাবি ও ইবনে সিনার মতো কবি ও দার্শনিকদের হাত ধরে শুরু হয়েছিল এক স্বর্ণযুগ। ঊনবিংশ শতাব্দীর ইউরোপীয় গবেষকেরা—যেমন ফরাসি চিন্তাবিদ আর্নেস্ট রেনাঁ ও ডাচ ইতিহাসবিদ রেইনহার্ট দোজি সেই আমলটিকেই আরবি বুদ্ধিবৃত্তিক জীবনের শিখর বলে স্বীকার করেছিলেন এবং দাবি করেছিলেন, একাদশ শতাব্দীর পর এই ধারাবাহিকতার পতন ঘটে। তাঁদের মতে, এরপর প্রায় ৮০০ বছর আরবে আর কোনো গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যিক বা দার্শনিক কাজ হয়নি—যতক্ষণ না ইউরোপে রেনেসাঁ শুরু হয়।
কিন্তু আধুনিক গবেষকেরা বলছেন, এই ধারণা সরলীকৃত ও পক্ষপাতদুষ্ট। ফ্রাঙ্কফুর্ট আন্তর্জাতিক বইমেলায় শেখ জায়েদ বুক অ্যাওয়ার্ডের আয়োজিত এক আলোচনায় ভাষাবিদেরা দাবি করেছেন, আরবি রচনা শৈলী কখনো বিলুপ্ত হয়নি; বরং তা ধারাবাহিকভাবে কপি, অনুবাদ ও পাঠের মাধ্যমে বেঁচে ছিল।
জার্মান গবেষক বেয়াট্রিস গ্রুন্ডলার তাঁর ‘দ্য রাইজ অব দ্য অ্যারাবিক বুক’ গ্রন্থে দাবি করেছেন, আরবি সাহিত্যে ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে যে ধারণাটি প্রচলিত আছে তা আসলে গাল-গল্প। এই বইটি এবারের শেখ জায়েদ পুরস্কারের শর্টলিস্টে রয়েছে। গ্রুন্ডলার এতে দেখিয়েছেন, নবম শতাব্দীর বাগদাদে বইয়ের ব্যবসা, কপিকারদের প্রতিযোগিতা, জনসম্মুখে পাঠ ও লেখার প্রচলন—সবই ছিল আধুনিক প্রকাশনা সংস্কৃতির পূর্বসূরি। তিনি মত দিয়েছেন, ‘বাগদাদের রাস্তায় হাঁটলে আপনি দেখতেন লোকেরা হস্তলিপি বিক্রি করছে, বিরামচিহ্ন নিয়ে তর্ক করছে—এ যেন এক জীবন্ত প্রকাশনা বাজার।’
গবেষণা বলছে, আরবি সাহিত্য আসলে কখনো এক জায়গায় স্থির থাকেনি। এর কেন্দ্র এক সময় বাগদাদ থেকে কায়রো, দামেস্ক ও আন্দালুসিয়ায় স্থানান্তরিত হয়। কিন্তু ধারাটি অব্যাহতই থাকে। নতুন ঘরানা তৈরি হয়, পুরোনো ঘরানা রূপান্তরিত হয়।
ফরাসি অধ্যাপক হাকান ওজকান তাঁর গবেষণায় দেখিয়েছেন, ‘জাজাল’ নামের কথ্য ছন্দভিত্তিক কবিতার ধারা আব্বাসীয় যুগের পরও বিকশিত হতে থাকে। তাঁর মতে, ‘এই কবিরা নিয়ম ভেঙে নতুন রূপ দিয়েছে—তাঁদের ছন্দ ও ব্যঙ্গ আধুনিক র্যাপের মতো প্রাণবন্ত।’

এদিকে এই বিষয়ে এক প্রতিবেদনে সোমবার (২০ অক্টোবর) আমিরাতভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ন্যাশনাল জানিয়েছে, আবুধাবির নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির ‘আরবি সাহিত্য লাইব্রেরি’ প্রকল্প ইতিমধ্যেই ‘হারানো শতাব্দী’ বলে বিবেচিত সময়ের ৬০ টিরও বেশি আরবি সাহিত্যকর্ম পুনরুদ্ধার করেছে। প্রকল্পটির সম্পাদক অধ্যাপক মরিস পোমেরান্টজ বলেছেন, ‘এই বইগুলো সম্পাদনা করা মানে এক চলমান সংলাপে অংশ নেওয়া—যেখানে প্রজন্মের পর প্রজন্ম লেখক, অনুবাদক ও সমালোচকেরা একে অপরকে উত্তর দিয়ে গেছেন।’
মরিস মনে করেন, আরবি সাহিত্য স্থবির হয়ে যাওয়ার ধারণাটি মূলত অনুবাদের অভাব থেকেই জন্ম নিয়েছে। তিনি বলেন, ‘যখন কোনো লেখা অনুবাদ করা হয় না, তখন সেটি বৈশ্বিক অস্তিত্ব হারায়।’
মরিসের মতে, এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো এই সাহিত্যকে আবার জনসাধারণের কল্পনায় ফিরিয়ে আনা—স্কুলে পড়ানো, মঞ্চে উপস্থাপন করা, অনুবাদের মাধ্যমে বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়া। তা না হলে আরবি সাহিত্যের ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে চিহ্নিত সময়টি অধরাই থেকে যাবে।

বাংলা কথাসাহিত্যের জগতে শক্তিশালী লেখক হিসেবে সুবিদিত হাসান আজিজুল হক করতেন শিক্ষকতা—প্রথমে বিভিন্ন কলেজে, পরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে, দর্শন বিভাগে। শিক্ষকতার পেশায় থেকে অনেকেই লেখালেখি করে থাকেন। তবে হাসান আজিজুল হকের লেখালেখি যে নিতান্ত শখের বশে নয়, তা যাঁরা তাঁর লেখা পাঠ করেছেন বা তাঁকে কাছ থেকে
১৯ নভেম্বর ২০২২
আলসেমি শরীরে এদিক-ওদিক চেয়ে আটকে গেল চোখ পশ্চিমান্তে। রক্তিম সূর্যের বিদায় ধীর গতিতে। খুব লাল হয়েছে, সারা দিনের জ্বলন্ত প্রহরে পেয়েছে এক অপূর্ব রূপ।
১৩ দিন আগে
হুমায়ূন আহমেদ তখন ক্যানসার আক্রান্ত। যুক্তরাষ্ট্রে কেমোথেরাপি নিচ্ছেন। হঠাৎ চিকিৎসকের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে চলে এলেন নুহাশপল্লীতে। নাটক বানাবেন। অভিনেতা ফারুক আহমেদকে ডাকলেন। নুহাশপল্লীতে নাটকের শুটিংয়ের ফাঁকে গল্প করছিলেন হুমায়ূন ও ফারুক। হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘কী আশ্চর্য, তাই না ফারুক!’
২৩ দিন আগে
প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করেছে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবার স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার নাটক, সংগীত ও নৃত্যকলা ক্লাবের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী বার্ষিক নাট্যানুষ্ঠানে এটি মঞ্চস্থ করা হয়।
০৮ নভেম্বর ২০২৫