আজকের পত্রিকা ডেস্ক

পাকিস্তান গতকাল বুধবার বলেছে, তাদের কাছে ‘বিশ্বাসযোগ্য গোয়েন্দা তথ্য’ রয়েছে যে, ভারত ২৪-৩৬ ঘণ্টার মধ্যে তাদের ওপর সামরিক হামলা চালাতে পারে। এটি মূলত গত ২২ এপ্রিল ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে দুই দেশের মধ্যে চলমান উত্তেজনার ফল।
পেহেলগামে হামলার পর থেকে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা বেড়েছে। হামলার পর ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি মঙ্গল ও বুধবার নিরাপত্তাবিষয়ক একাধিক বৈঠক করেছেন। এসব বৈঠক ভারতের পক্ষ থেকে পাকিস্তানের আসন্ন সামরিক অভিযানের জল্পনা বাড়িয়েছে।
পেহেলগামে হামলার পর পারমাণবিক শক্তিধর দক্ষিণ এশিয়ার এ দুই প্রতিবেশীর মধ্যে আগে থেকেই প্রায় না-থাকা সম্পর্ক আরও খারাপ হয়েছে। দুই দেশ কূটনৈতিক যোগাযোগ কমিয়ে দিয়েছে, দ্বিপক্ষীয় চুক্তিগুলো স্থগিত করেছে এবং একে অপরের নাগরিকদের বহিষ্কার করেছে।
উপমহাদেশ এখন চরম উত্তেজনায়। কিন্তু পেহেলগাম হত্যাকাণ্ডের পর ভারতের সামরিক পদক্ষেপ কতটা আসন্ন? আর সেই পদক্ষেপ ঠিক কেমন হতে পারে? ইতিহাস এ বিষয়ে কী ইঙ্গিত দেয়?
পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী আতাউল্লাহ তারার গতকাল বুধবার এক টিভি বিবৃতিতে চাঞ্চল্যকর দাবি করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, তাঁদের কাছে ‘বিশ্বাসযোগ্য গোয়েন্দা তথ্য’ রয়েছে। আগামী ২৪-৩৬ ঘণ্টার মধ্যে ভারত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপ নিতে পারে। তারার বলেন, পেহেলগাম ঘটনায় পাকিস্তানের জড়িত থাকার ‘ভিত্তিহীন ও বানোয়াট অভিযোগ’ তুলে ভারত এই হামলা চালাতে পারে। ভারত যদিও পেহেলগাম হামলায় পাকিস্তানের দিকে অভিযোগের আঙুল তুলেছে, ইসলামাবাদ তা কঠোরভাবে অস্বীকার করেছে।
ভারত ও পাকিস্তান দুই দেশই কাশ্মীরের অংশবিশেষ নিয়ন্ত্রণ করে। তবে পুরো ভূখণ্ডের ওপরই উভয়ের দাবি রয়েছে। তারারের বিবৃতির ঠিক আগের দিন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দেশের নিরাপত্তাপ্রধানদের সঙ্গে এক রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন। একাধিক সংবাদ সংস্থা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উচ্চপদস্থ সরকারি সূত্রকে উদ্ধৃত করে জানিয়েছে, সেই বৈঠকে মোদি পেহেলগাম হামলার জবাব দিতে ভারতীয় সামরিক বাহিনীকে ‘সম্পূর্ণ আভিযানিক স্বাধীনতা’ দিয়েছেন।
গতকাল বুধবার পেহেলগামে হামলার পর দ্বিতীয়বার প্রধানমন্ত্রী মোদি নিরাপত্তাবিষয়ক মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন। এ কথা জানিয়েছে রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন দূরদর্শন। এদিকে, ভারত-পাকিস্তানের নিয়ন্ত্রণরেখা (এলওসি) বরাবর উভয় পক্ষের মধ্যে গুলিবিনিময় অব্যাহত রয়েছে। এর মধ্যেই উত্তেজনা কমাতে অন্য বিশ্বনেতারা সক্রিয় হয়েছেন।
মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের এক মুখপাত্র সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা উভয় পক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করছি এবং তাদের পরিস্থিতি উসকানো থেকে বিরত থাকতে বলছি।’ এর পরপরই মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ভারত ও পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে কথা বলেন। একই দিনে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের মুখপাত্র জানান, তিনি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ ও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুব্রহ্মণ্যম জয়শঙ্করের সঙ্গে কথা বলেছেন। তিনি পরিস্থিতি শান্ত করার জন্য সহায়তার প্রস্তাব দিয়েছেন।
ভারত কী পদক্ষেপ নিতে পারে, তা স্পষ্ট নয়। তবে অতীতে দেশটি বিভিন্ন সামরিক কৌশল ব্যবহার করেছে। তার কয়েকটি নিচে দেওয়া হলো:
সামরিক গোপন অভিযান
পরিকল্পনা অনুযায়ী এগুলোর ঘোষণা দেওয়া হয় না এবং নিশ্চিতও করা হয় না। তবে বিগত দশকগুলোতে ভারত-পাকিস্তান একে অপরের নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলে একাধিক গোপন অভিযান চালিয়েছে। এসব অভিযানে সামরিক চৌকিগুলো লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়েছে, সেনা হত্যা করা হয়েছে এবং মাঝে মাঝে শত্রুপক্ষের সেনাদের শিরশ্ছেদও করা হয়েছে।
এ ধরনের হামলা প্রায়শই প্রতিশোধ হিসেবে চালানো হয়। যখন কোনো সামরিক ইউনিট আক্রান্ত হয়, তখন সেখানকার কর্মীরা পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে এমন অভিযান চালান। তবে এ ধরনের অভিযান কখনোই নিশ্চিত করা হয় না। এর উদ্দেশ্য হলো অন্য দেশকে একটি বার্তা দেওয়া, কিন্তু এমন পরিস্থিতি তৈরি না করা, যাতে তারা পাল্টা জবাব দিতে বাধ্য হয়। এর ফলে সংঘাত বৃদ্ধির ঝুঁকি কমানো যায়। জনসমক্ষে ঘোষণা দিলে সরকারের ওপর পাল্টা আঘাত হানার জন্য অভ্যন্তরীণ চাপ সৃষ্টি হয়।
প্রচারিত ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’
মাঝে মাঝে অবশ্য উদ্দেশ্য থাকে সূক্ষ্ম বার্তা দেওয়া নয়, বরং অন্য দেশকে বিব্রত করা। হামলা জনসমক্ষে প্রকাশ করে এটি করা হয়। রাজনৈতিকভাবেও এটি লাভজনক হয়। ভারত অতীতে নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর নির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে তথাকথিত সার্জিক্যাল স্ট্রাইক চালিয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে সাম্প্রতিক ছিল ২০১৬ সালের হামলা।
তখন উরিতে এক হামলায় ১৭ জন ভারতীয় সেনা নিহত হওয়ার পর ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে ভারতীয় সেনাবাহিনীর বিশেষ বাহিনী সীমান্ত পেরিয়ে হামলা চালায়। নয়াদিল্লি অভিযোগ করেছিল, যেখানে হামলা চালানো হয়েছে, সেগুলো ছিল ‘লঞ্চ প্যাড।’ সেখান থেকে ‘সন্ত্রাসীরা’ ভারতে আবার হামলা চালানোর পরিকল্পনা করছিল।
ভারতীয় সেনাবাহিনীর তৎকালীন ডিরেক্টর জেনারেল অব মিলিটারি অপারেশনস লেফটেন্যান্ট জেনারেল রণবীর সিং এক বিবৃতিতে এই অভিযানের কথা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘এসব অভিযানের মূল লক্ষ্য ছিল নিশ্চিত করা যে, এই সন্ত্রাসীরা অনুপ্রবেশ এবং ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে আমাদের দেশের নাগরিকদের জীবন বিপন্ন করার তাদের পরিকল্পনায় সফল না হয়।’ ভারত দাবি করেছিল যে, এই সার্জিক্যাল স্ট্রাইকে কয়েক ডজন যোদ্ধা নিহত হয়েছেন। যদিও স্বাধীন বিশ্লেষকদের মতে নিহতের সংখ্যা সম্ভবত এর চেয়ে অনেক কম ছিল।
আকাশপথে হামলা
২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে কাশ্মীরের পুলওয়ামায় এক আত্মঘাতী হামলায় ৪০ ভারতীয় আধাসামরিক সেনা নিহত হন। ভারতের জাতীয় নির্বাচনের কয়েক সপ্তাহ আগে এই ঘটনা ঘটে। পাকিস্তানভিত্তিক সশস্ত্র গোষ্ঠী জইশ-ই-মুহাম্মদ এই হামলার দায় স্বীকার করে।
এতে ভারতে ব্যাপক ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। এর প্রতিক্রিয়ায় ভারতীয় বিমানবাহিনী পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে বিমান হামলা চালায়। ভারত দাবি করে, তারা সেখানে ‘সন্ত্রাসীদের’ আস্তানা লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে এবং কয়েক ডজন জঙ্গিকে হত্যা করেছে।
তবে পাকিস্তান জোর দিয়েছিল যে, ভারতীয় বিমান শুধু একটি বনাঞ্চলে আঘাত হেনেছে এবং কোনো জঙ্গিকে হত্যা করেনি। ইসলামাবাদ পাল্টা দাবি করে, তাদের যুদ্ধবিমান ভারতীয় বিমানগুলোকে তাড়িয়ে নিয়ন্ত্রণরেখার ওপারে ফেরত পাঠিয়েছে।
কিন্তু এর এক দিন পরেই ভারত ও পাকিস্তানের যুদ্ধবিমানগুলো আবারও আকাশযুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। এবার পাকিস্তান তাদের নিয়ন্ত্রণে থাকা এলাকায় একটি ভারতীয় বিমান ভূপাতিত করে। ভারতীয় বিমানবাহিনীর এক পাইলটকে আটক করে পাকিস্তান এবং কয়েক দিন পর তাঁকে ফেরত পাঠানো হয়।
পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত ভূমি দখলের চেষ্টা
গত কয়েক বছর ধরে ভারতের পক্ষ থেকে পাকিস্তাননিয়ন্ত্রিত কাশ্মীর ফিরিয়ে নেওয়ার দাবি জোরালো হচ্ছে। সম্প্রতি পেহেলগাম হামলার পর এই দাবি আরও তীব্র হয়েছে। এমনকি বিরোধী দল কংগ্রেসের নেতারাও মোদি সরকারকে ওই ভূখণ্ড পুনরুদ্ধারে চাপ দিচ্ছেন।
পাকিস্তাননিয়ন্ত্রিত কাশ্মীর পুনরুদ্ধার করা ভারতের প্রতিটি সরকারের নীতিগত লক্ষ্য। তবে দুই দেশের প্রায় সমশক্তির সামরিক সক্ষমতার কারণে এমন প্রচেষ্টা সফল হওয়া কঠিন। তবে পাকিস্তানের কাছ থেকে বিতর্কিত অঞ্চল দখলের ক্ষেত্রে ভারতের সাফল্য রয়েছে।
১৯৮৪ সালে ভারতীয় সেনাবাহিনী এবং ভারতীয় বিমানবাহিনী ‘অপারেশন মেঘদূত’ শুরু করে। এর মাধ্যমে তারা দ্রুত হিমালয়ের সিয়াচেন হিমবাহ দখল করে নেয়। এটি পাকিস্তান সেনাবাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ গিরিপথগুলোতে প্রবেশ বন্ধ করে দেয়। বিশ্বের বৃহত্তম অমেরু হিমবাহগুলোর মধ্যে অন্যতম এই সিয়াচেন। তখন থেকে এটি পৃথিবীর উচ্চতম যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। এখানে ভারত ও পাকিস্তানের সামরিক ঘাঁটিগুলো একে অপরের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে।
নৌপথে হামলা
পেহেলগামে হামলার পর ভারতীয় নৌবাহিনী ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার কথা ঘোষণা করে। গত ২৭ এপ্রিল নৌবাহিনী এক বিবৃতিতে জানায়, ‘ভারতীয় নৌবাহিনীর জাহাজগুলো সফলভাবে একাধিক জাহাজ-বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে। এর মাধ্যমে দূরপাল্লার নিখুঁত আক্রমণাত্মক সক্ষমতা এবং প্ল্যাটফর্ম, সিস্টেম ও ক্রুদের প্রস্তুতি পুনরায় যাচাই ও প্রদর্শন করা হয়েছে।’ বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘ভারতীয় নৌবাহিনী যেকোনো সময়, যেকোনো স্থানে, যেকোনো পরিস্থিতিতে জাতির সামুদ্রিক স্বার্থ রক্ষায় যুদ্ধে প্রস্তুত, বিশ্বাসযোগ্য এবং ভবিষ্যৎমুখী অবস্থানে রয়েছে।’
অনেক বিশ্লেষক মনে করছেন, এই পরীক্ষাগুলো শক্তি প্রদর্শনের একটি অংশ। তারা উল্লেখ করেছেন, নির্দেশ পেলে ভারতীয় নৌবাহিনীর পাকিস্তানের ভূখণ্ডে আঘাত হানার সক্ষমতা রয়েছে।
পূর্ণাঙ্গ সামরিক সংঘাত
ভারত ও পাকিস্তান তাদের স্বাধীনতার ৭৮ বছরে চারবার যুদ্ধে জড়িয়েছে। এর মধ্যে তিনটি যুদ্ধই হয়েছে কাশ্মীরকে কেন্দ্র করে। ১৯৪৭ সালের আগস্টে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক সরকার ভারতীয় উপমহাদেশকে ভাগ করে ভারত ও পাকিস্তান সৃষ্টি করে চলে যাওয়ার দুই মাস পর দুই প্রতিবেশী কাশ্মীর নিয়ে প্রথম যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। তখন কাশ্মীর একজন রাজার শাসনাধীন ছিল।
পাকিস্তানি মিলিশিয়ারা কাশ্মীর দখল করার চেষ্টা করে আক্রমণ চালায়। রাজা হরি সিং ভারতের কাছে সাহায্যের আবেদন জানান। দিল্লি সাহায্যের জন্য রাজি হয়, কিন্তু একটি শর্তে। শর্তটি ছিল যে, সিংকে একটি ‘অ্যাকসেশন চুক্তিতে’ স্বাক্ষর করতে হবে, যার মাধ্যমে কাশ্মীর ভারতের সঙ্গে যুক্ত হবে। রাজা এতে সম্মত হন। এরপর, ১৯৪৯ সালের ১ জানুয়ারি যুদ্ধ শেষ হয় যুদ্ধবিরতি চুক্তির মাধ্যমে। সেই থেকে ভারত ও পাকিস্তান কাশ্মীরের অংশবিশেষ নিজেদের দখলে রেখেছে।
এরপর, ১৯৬৫ সালে দুই দেশের সীমান্তরক্ষীদের মধ্যে সংঘর্ষ পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধে রূপ নেয়। পাকিস্তানি বাহিনী যুদ্ধবিরতি রেখা অতিক্রম করে ভারত-শাসিত কাশ্মীরে প্রবেশ করে। অন্যদিকে, ভারতীয় বাহিনী আন্তর্জাতিক সীমান্ত অতিক্রম করে পাকিস্তানের লাহোরে প্রবেশ করে এবং হামলা চালায়। উভয় পক্ষে হাজার হাজার হতাহতের পর জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের একটি প্রস্তাবের মাধ্যমে যুদ্ধ শেষ হয়।
এরপর তৃতীয় দফায় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে কেন্দ্র করে ১৯৭১ সালে পাকিস্তান ও ভারত সশস্ত্র সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে। ভারতীয় বাহিনী বাংলাদেশের স্বাধীনতায় সহায়তা করে। ১৯৭২ সালে দুই দেশ সিমলা চুক্তি স্বাক্ষর করে, যা নিয়ন্ত্রণরেখা বা এলওসি নির্ধারণ করে।
সর্বশেষ, ১৯৯৯ সালে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী নিয়ন্ত্রণরেখা অতিক্রম করে কারগিল যুদ্ধের সূচনা করে। লাদাখ অঞ্চলের বরফ ঢাকা উচ্চভূমিতে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর ভারতীয় সেনারা পাকিস্তানি সৈন্যদের পিছু হটতে বাধ্য করে।
অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান

পাকিস্তান গতকাল বুধবার বলেছে, তাদের কাছে ‘বিশ্বাসযোগ্য গোয়েন্দা তথ্য’ রয়েছে যে, ভারত ২৪-৩৬ ঘণ্টার মধ্যে তাদের ওপর সামরিক হামলা চালাতে পারে। এটি মূলত গত ২২ এপ্রিল ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে দুই দেশের মধ্যে চলমান উত্তেজনার ফল।
পেহেলগামে হামলার পর থেকে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা বেড়েছে। হামলার পর ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি মঙ্গল ও বুধবার নিরাপত্তাবিষয়ক একাধিক বৈঠক করেছেন। এসব বৈঠক ভারতের পক্ষ থেকে পাকিস্তানের আসন্ন সামরিক অভিযানের জল্পনা বাড়িয়েছে।
পেহেলগামে হামলার পর পারমাণবিক শক্তিধর দক্ষিণ এশিয়ার এ দুই প্রতিবেশীর মধ্যে আগে থেকেই প্রায় না-থাকা সম্পর্ক আরও খারাপ হয়েছে। দুই দেশ কূটনৈতিক যোগাযোগ কমিয়ে দিয়েছে, দ্বিপক্ষীয় চুক্তিগুলো স্থগিত করেছে এবং একে অপরের নাগরিকদের বহিষ্কার করেছে।
উপমহাদেশ এখন চরম উত্তেজনায়। কিন্তু পেহেলগাম হত্যাকাণ্ডের পর ভারতের সামরিক পদক্ষেপ কতটা আসন্ন? আর সেই পদক্ষেপ ঠিক কেমন হতে পারে? ইতিহাস এ বিষয়ে কী ইঙ্গিত দেয়?
পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী আতাউল্লাহ তারার গতকাল বুধবার এক টিভি বিবৃতিতে চাঞ্চল্যকর দাবি করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, তাঁদের কাছে ‘বিশ্বাসযোগ্য গোয়েন্দা তথ্য’ রয়েছে। আগামী ২৪-৩৬ ঘণ্টার মধ্যে ভারত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপ নিতে পারে। তারার বলেন, পেহেলগাম ঘটনায় পাকিস্তানের জড়িত থাকার ‘ভিত্তিহীন ও বানোয়াট অভিযোগ’ তুলে ভারত এই হামলা চালাতে পারে। ভারত যদিও পেহেলগাম হামলায় পাকিস্তানের দিকে অভিযোগের আঙুল তুলেছে, ইসলামাবাদ তা কঠোরভাবে অস্বীকার করেছে।
ভারত ও পাকিস্তান দুই দেশই কাশ্মীরের অংশবিশেষ নিয়ন্ত্রণ করে। তবে পুরো ভূখণ্ডের ওপরই উভয়ের দাবি রয়েছে। তারারের বিবৃতির ঠিক আগের দিন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দেশের নিরাপত্তাপ্রধানদের সঙ্গে এক রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন। একাধিক সংবাদ সংস্থা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উচ্চপদস্থ সরকারি সূত্রকে উদ্ধৃত করে জানিয়েছে, সেই বৈঠকে মোদি পেহেলগাম হামলার জবাব দিতে ভারতীয় সামরিক বাহিনীকে ‘সম্পূর্ণ আভিযানিক স্বাধীনতা’ দিয়েছেন।
গতকাল বুধবার পেহেলগামে হামলার পর দ্বিতীয়বার প্রধানমন্ত্রী মোদি নিরাপত্তাবিষয়ক মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন। এ কথা জানিয়েছে রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন দূরদর্শন। এদিকে, ভারত-পাকিস্তানের নিয়ন্ত্রণরেখা (এলওসি) বরাবর উভয় পক্ষের মধ্যে গুলিবিনিময় অব্যাহত রয়েছে। এর মধ্যেই উত্তেজনা কমাতে অন্য বিশ্বনেতারা সক্রিয় হয়েছেন।
মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের এক মুখপাত্র সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা উভয় পক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করছি এবং তাদের পরিস্থিতি উসকানো থেকে বিরত থাকতে বলছি।’ এর পরপরই মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ভারত ও পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে কথা বলেন। একই দিনে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের মুখপাত্র জানান, তিনি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ ও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুব্রহ্মণ্যম জয়শঙ্করের সঙ্গে কথা বলেছেন। তিনি পরিস্থিতি শান্ত করার জন্য সহায়তার প্রস্তাব দিয়েছেন।
ভারত কী পদক্ষেপ নিতে পারে, তা স্পষ্ট নয়। তবে অতীতে দেশটি বিভিন্ন সামরিক কৌশল ব্যবহার করেছে। তার কয়েকটি নিচে দেওয়া হলো:
সামরিক গোপন অভিযান
পরিকল্পনা অনুযায়ী এগুলোর ঘোষণা দেওয়া হয় না এবং নিশ্চিতও করা হয় না। তবে বিগত দশকগুলোতে ভারত-পাকিস্তান একে অপরের নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলে একাধিক গোপন অভিযান চালিয়েছে। এসব অভিযানে সামরিক চৌকিগুলো লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়েছে, সেনা হত্যা করা হয়েছে এবং মাঝে মাঝে শত্রুপক্ষের সেনাদের শিরশ্ছেদও করা হয়েছে।
এ ধরনের হামলা প্রায়শই প্রতিশোধ হিসেবে চালানো হয়। যখন কোনো সামরিক ইউনিট আক্রান্ত হয়, তখন সেখানকার কর্মীরা পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে এমন অভিযান চালান। তবে এ ধরনের অভিযান কখনোই নিশ্চিত করা হয় না। এর উদ্দেশ্য হলো অন্য দেশকে একটি বার্তা দেওয়া, কিন্তু এমন পরিস্থিতি তৈরি না করা, যাতে তারা পাল্টা জবাব দিতে বাধ্য হয়। এর ফলে সংঘাত বৃদ্ধির ঝুঁকি কমানো যায়। জনসমক্ষে ঘোষণা দিলে সরকারের ওপর পাল্টা আঘাত হানার জন্য অভ্যন্তরীণ চাপ সৃষ্টি হয়।
প্রচারিত ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’
মাঝে মাঝে অবশ্য উদ্দেশ্য থাকে সূক্ষ্ম বার্তা দেওয়া নয়, বরং অন্য দেশকে বিব্রত করা। হামলা জনসমক্ষে প্রকাশ করে এটি করা হয়। রাজনৈতিকভাবেও এটি লাভজনক হয়। ভারত অতীতে নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর নির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে তথাকথিত সার্জিক্যাল স্ট্রাইক চালিয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে সাম্প্রতিক ছিল ২০১৬ সালের হামলা।
তখন উরিতে এক হামলায় ১৭ জন ভারতীয় সেনা নিহত হওয়ার পর ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে ভারতীয় সেনাবাহিনীর বিশেষ বাহিনী সীমান্ত পেরিয়ে হামলা চালায়। নয়াদিল্লি অভিযোগ করেছিল, যেখানে হামলা চালানো হয়েছে, সেগুলো ছিল ‘লঞ্চ প্যাড।’ সেখান থেকে ‘সন্ত্রাসীরা’ ভারতে আবার হামলা চালানোর পরিকল্পনা করছিল।
ভারতীয় সেনাবাহিনীর তৎকালীন ডিরেক্টর জেনারেল অব মিলিটারি অপারেশনস লেফটেন্যান্ট জেনারেল রণবীর সিং এক বিবৃতিতে এই অভিযানের কথা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘এসব অভিযানের মূল লক্ষ্য ছিল নিশ্চিত করা যে, এই সন্ত্রাসীরা অনুপ্রবেশ এবং ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে আমাদের দেশের নাগরিকদের জীবন বিপন্ন করার তাদের পরিকল্পনায় সফল না হয়।’ ভারত দাবি করেছিল যে, এই সার্জিক্যাল স্ট্রাইকে কয়েক ডজন যোদ্ধা নিহত হয়েছেন। যদিও স্বাধীন বিশ্লেষকদের মতে নিহতের সংখ্যা সম্ভবত এর চেয়ে অনেক কম ছিল।
আকাশপথে হামলা
২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে কাশ্মীরের পুলওয়ামায় এক আত্মঘাতী হামলায় ৪০ ভারতীয় আধাসামরিক সেনা নিহত হন। ভারতের জাতীয় নির্বাচনের কয়েক সপ্তাহ আগে এই ঘটনা ঘটে। পাকিস্তানভিত্তিক সশস্ত্র গোষ্ঠী জইশ-ই-মুহাম্মদ এই হামলার দায় স্বীকার করে।
এতে ভারতে ব্যাপক ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। এর প্রতিক্রিয়ায় ভারতীয় বিমানবাহিনী পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে বিমান হামলা চালায়। ভারত দাবি করে, তারা সেখানে ‘সন্ত্রাসীদের’ আস্তানা লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে এবং কয়েক ডজন জঙ্গিকে হত্যা করেছে।
তবে পাকিস্তান জোর দিয়েছিল যে, ভারতীয় বিমান শুধু একটি বনাঞ্চলে আঘাত হেনেছে এবং কোনো জঙ্গিকে হত্যা করেনি। ইসলামাবাদ পাল্টা দাবি করে, তাদের যুদ্ধবিমান ভারতীয় বিমানগুলোকে তাড়িয়ে নিয়ন্ত্রণরেখার ওপারে ফেরত পাঠিয়েছে।
কিন্তু এর এক দিন পরেই ভারত ও পাকিস্তানের যুদ্ধবিমানগুলো আবারও আকাশযুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। এবার পাকিস্তান তাদের নিয়ন্ত্রণে থাকা এলাকায় একটি ভারতীয় বিমান ভূপাতিত করে। ভারতীয় বিমানবাহিনীর এক পাইলটকে আটক করে পাকিস্তান এবং কয়েক দিন পর তাঁকে ফেরত পাঠানো হয়।
পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত ভূমি দখলের চেষ্টা
গত কয়েক বছর ধরে ভারতের পক্ষ থেকে পাকিস্তাননিয়ন্ত্রিত কাশ্মীর ফিরিয়ে নেওয়ার দাবি জোরালো হচ্ছে। সম্প্রতি পেহেলগাম হামলার পর এই দাবি আরও তীব্র হয়েছে। এমনকি বিরোধী দল কংগ্রেসের নেতারাও মোদি সরকারকে ওই ভূখণ্ড পুনরুদ্ধারে চাপ দিচ্ছেন।
পাকিস্তাননিয়ন্ত্রিত কাশ্মীর পুনরুদ্ধার করা ভারতের প্রতিটি সরকারের নীতিগত লক্ষ্য। তবে দুই দেশের প্রায় সমশক্তির সামরিক সক্ষমতার কারণে এমন প্রচেষ্টা সফল হওয়া কঠিন। তবে পাকিস্তানের কাছ থেকে বিতর্কিত অঞ্চল দখলের ক্ষেত্রে ভারতের সাফল্য রয়েছে।
১৯৮৪ সালে ভারতীয় সেনাবাহিনী এবং ভারতীয় বিমানবাহিনী ‘অপারেশন মেঘদূত’ শুরু করে। এর মাধ্যমে তারা দ্রুত হিমালয়ের সিয়াচেন হিমবাহ দখল করে নেয়। এটি পাকিস্তান সেনাবাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ গিরিপথগুলোতে প্রবেশ বন্ধ করে দেয়। বিশ্বের বৃহত্তম অমেরু হিমবাহগুলোর মধ্যে অন্যতম এই সিয়াচেন। তখন থেকে এটি পৃথিবীর উচ্চতম যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। এখানে ভারত ও পাকিস্তানের সামরিক ঘাঁটিগুলো একে অপরের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে।
নৌপথে হামলা
পেহেলগামে হামলার পর ভারতীয় নৌবাহিনী ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার কথা ঘোষণা করে। গত ২৭ এপ্রিল নৌবাহিনী এক বিবৃতিতে জানায়, ‘ভারতীয় নৌবাহিনীর জাহাজগুলো সফলভাবে একাধিক জাহাজ-বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে। এর মাধ্যমে দূরপাল্লার নিখুঁত আক্রমণাত্মক সক্ষমতা এবং প্ল্যাটফর্ম, সিস্টেম ও ক্রুদের প্রস্তুতি পুনরায় যাচাই ও প্রদর্শন করা হয়েছে।’ বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘ভারতীয় নৌবাহিনী যেকোনো সময়, যেকোনো স্থানে, যেকোনো পরিস্থিতিতে জাতির সামুদ্রিক স্বার্থ রক্ষায় যুদ্ধে প্রস্তুত, বিশ্বাসযোগ্য এবং ভবিষ্যৎমুখী অবস্থানে রয়েছে।’
অনেক বিশ্লেষক মনে করছেন, এই পরীক্ষাগুলো শক্তি প্রদর্শনের একটি অংশ। তারা উল্লেখ করেছেন, নির্দেশ পেলে ভারতীয় নৌবাহিনীর পাকিস্তানের ভূখণ্ডে আঘাত হানার সক্ষমতা রয়েছে।
পূর্ণাঙ্গ সামরিক সংঘাত
ভারত ও পাকিস্তান তাদের স্বাধীনতার ৭৮ বছরে চারবার যুদ্ধে জড়িয়েছে। এর মধ্যে তিনটি যুদ্ধই হয়েছে কাশ্মীরকে কেন্দ্র করে। ১৯৪৭ সালের আগস্টে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক সরকার ভারতীয় উপমহাদেশকে ভাগ করে ভারত ও পাকিস্তান সৃষ্টি করে চলে যাওয়ার দুই মাস পর দুই প্রতিবেশী কাশ্মীর নিয়ে প্রথম যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। তখন কাশ্মীর একজন রাজার শাসনাধীন ছিল।
পাকিস্তানি মিলিশিয়ারা কাশ্মীর দখল করার চেষ্টা করে আক্রমণ চালায়। রাজা হরি সিং ভারতের কাছে সাহায্যের আবেদন জানান। দিল্লি সাহায্যের জন্য রাজি হয়, কিন্তু একটি শর্তে। শর্তটি ছিল যে, সিংকে একটি ‘অ্যাকসেশন চুক্তিতে’ স্বাক্ষর করতে হবে, যার মাধ্যমে কাশ্মীর ভারতের সঙ্গে যুক্ত হবে। রাজা এতে সম্মত হন। এরপর, ১৯৪৯ সালের ১ জানুয়ারি যুদ্ধ শেষ হয় যুদ্ধবিরতি চুক্তির মাধ্যমে। সেই থেকে ভারত ও পাকিস্তান কাশ্মীরের অংশবিশেষ নিজেদের দখলে রেখেছে।
এরপর, ১৯৬৫ সালে দুই দেশের সীমান্তরক্ষীদের মধ্যে সংঘর্ষ পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধে রূপ নেয়। পাকিস্তানি বাহিনী যুদ্ধবিরতি রেখা অতিক্রম করে ভারত-শাসিত কাশ্মীরে প্রবেশ করে। অন্যদিকে, ভারতীয় বাহিনী আন্তর্জাতিক সীমান্ত অতিক্রম করে পাকিস্তানের লাহোরে প্রবেশ করে এবং হামলা চালায়। উভয় পক্ষে হাজার হাজার হতাহতের পর জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের একটি প্রস্তাবের মাধ্যমে যুদ্ধ শেষ হয়।
এরপর তৃতীয় দফায় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে কেন্দ্র করে ১৯৭১ সালে পাকিস্তান ও ভারত সশস্ত্র সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে। ভারতীয় বাহিনী বাংলাদেশের স্বাধীনতায় সহায়তা করে। ১৯৭২ সালে দুই দেশ সিমলা চুক্তি স্বাক্ষর করে, যা নিয়ন্ত্রণরেখা বা এলওসি নির্ধারণ করে।
সর্বশেষ, ১৯৯৯ সালে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী নিয়ন্ত্রণরেখা অতিক্রম করে কারগিল যুদ্ধের সূচনা করে। লাদাখ অঞ্চলের বরফ ঢাকা উচ্চভূমিতে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর ভারতীয় সেনারা পাকিস্তানি সৈন্যদের পিছু হটতে বাধ্য করে।
অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান
আজকের পত্রিকা ডেস্ক

পাকিস্তান গতকাল বুধবার বলেছে, তাদের কাছে ‘বিশ্বাসযোগ্য গোয়েন্দা তথ্য’ রয়েছে যে, ভারত ২৪-৩৬ ঘণ্টার মধ্যে তাদের ওপর সামরিক হামলা চালাতে পারে। এটি মূলত গত ২২ এপ্রিল ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে দুই দেশের মধ্যে চলমান উত্তেজনার ফল।
পেহেলগামে হামলার পর থেকে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা বেড়েছে। হামলার পর ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি মঙ্গল ও বুধবার নিরাপত্তাবিষয়ক একাধিক বৈঠক করেছেন। এসব বৈঠক ভারতের পক্ষ থেকে পাকিস্তানের আসন্ন সামরিক অভিযানের জল্পনা বাড়িয়েছে।
পেহেলগামে হামলার পর পারমাণবিক শক্তিধর দক্ষিণ এশিয়ার এ দুই প্রতিবেশীর মধ্যে আগে থেকেই প্রায় না-থাকা সম্পর্ক আরও খারাপ হয়েছে। দুই দেশ কূটনৈতিক যোগাযোগ কমিয়ে দিয়েছে, দ্বিপক্ষীয় চুক্তিগুলো স্থগিত করেছে এবং একে অপরের নাগরিকদের বহিষ্কার করেছে।
উপমহাদেশ এখন চরম উত্তেজনায়। কিন্তু পেহেলগাম হত্যাকাণ্ডের পর ভারতের সামরিক পদক্ষেপ কতটা আসন্ন? আর সেই পদক্ষেপ ঠিক কেমন হতে পারে? ইতিহাস এ বিষয়ে কী ইঙ্গিত দেয়?
পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী আতাউল্লাহ তারার গতকাল বুধবার এক টিভি বিবৃতিতে চাঞ্চল্যকর দাবি করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, তাঁদের কাছে ‘বিশ্বাসযোগ্য গোয়েন্দা তথ্য’ রয়েছে। আগামী ২৪-৩৬ ঘণ্টার মধ্যে ভারত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপ নিতে পারে। তারার বলেন, পেহেলগাম ঘটনায় পাকিস্তানের জড়িত থাকার ‘ভিত্তিহীন ও বানোয়াট অভিযোগ’ তুলে ভারত এই হামলা চালাতে পারে। ভারত যদিও পেহেলগাম হামলায় পাকিস্তানের দিকে অভিযোগের আঙুল তুলেছে, ইসলামাবাদ তা কঠোরভাবে অস্বীকার করেছে।
ভারত ও পাকিস্তান দুই দেশই কাশ্মীরের অংশবিশেষ নিয়ন্ত্রণ করে। তবে পুরো ভূখণ্ডের ওপরই উভয়ের দাবি রয়েছে। তারারের বিবৃতির ঠিক আগের দিন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দেশের নিরাপত্তাপ্রধানদের সঙ্গে এক রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন। একাধিক সংবাদ সংস্থা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উচ্চপদস্থ সরকারি সূত্রকে উদ্ধৃত করে জানিয়েছে, সেই বৈঠকে মোদি পেহেলগাম হামলার জবাব দিতে ভারতীয় সামরিক বাহিনীকে ‘সম্পূর্ণ আভিযানিক স্বাধীনতা’ দিয়েছেন।
গতকাল বুধবার পেহেলগামে হামলার পর দ্বিতীয়বার প্রধানমন্ত্রী মোদি নিরাপত্তাবিষয়ক মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন। এ কথা জানিয়েছে রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন দূরদর্শন। এদিকে, ভারত-পাকিস্তানের নিয়ন্ত্রণরেখা (এলওসি) বরাবর উভয় পক্ষের মধ্যে গুলিবিনিময় অব্যাহত রয়েছে। এর মধ্যেই উত্তেজনা কমাতে অন্য বিশ্বনেতারা সক্রিয় হয়েছেন।
মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের এক মুখপাত্র সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা উভয় পক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করছি এবং তাদের পরিস্থিতি উসকানো থেকে বিরত থাকতে বলছি।’ এর পরপরই মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ভারত ও পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে কথা বলেন। একই দিনে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের মুখপাত্র জানান, তিনি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ ও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুব্রহ্মণ্যম জয়শঙ্করের সঙ্গে কথা বলেছেন। তিনি পরিস্থিতি শান্ত করার জন্য সহায়তার প্রস্তাব দিয়েছেন।
ভারত কী পদক্ষেপ নিতে পারে, তা স্পষ্ট নয়। তবে অতীতে দেশটি বিভিন্ন সামরিক কৌশল ব্যবহার করেছে। তার কয়েকটি নিচে দেওয়া হলো:
সামরিক গোপন অভিযান
পরিকল্পনা অনুযায়ী এগুলোর ঘোষণা দেওয়া হয় না এবং নিশ্চিতও করা হয় না। তবে বিগত দশকগুলোতে ভারত-পাকিস্তান একে অপরের নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলে একাধিক গোপন অভিযান চালিয়েছে। এসব অভিযানে সামরিক চৌকিগুলো লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়েছে, সেনা হত্যা করা হয়েছে এবং মাঝে মাঝে শত্রুপক্ষের সেনাদের শিরশ্ছেদও করা হয়েছে।
এ ধরনের হামলা প্রায়শই প্রতিশোধ হিসেবে চালানো হয়। যখন কোনো সামরিক ইউনিট আক্রান্ত হয়, তখন সেখানকার কর্মীরা পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে এমন অভিযান চালান। তবে এ ধরনের অভিযান কখনোই নিশ্চিত করা হয় না। এর উদ্দেশ্য হলো অন্য দেশকে একটি বার্তা দেওয়া, কিন্তু এমন পরিস্থিতি তৈরি না করা, যাতে তারা পাল্টা জবাব দিতে বাধ্য হয়। এর ফলে সংঘাত বৃদ্ধির ঝুঁকি কমানো যায়। জনসমক্ষে ঘোষণা দিলে সরকারের ওপর পাল্টা আঘাত হানার জন্য অভ্যন্তরীণ চাপ সৃষ্টি হয়।
প্রচারিত ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’
মাঝে মাঝে অবশ্য উদ্দেশ্য থাকে সূক্ষ্ম বার্তা দেওয়া নয়, বরং অন্য দেশকে বিব্রত করা। হামলা জনসমক্ষে প্রকাশ করে এটি করা হয়। রাজনৈতিকভাবেও এটি লাভজনক হয়। ভারত অতীতে নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর নির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে তথাকথিত সার্জিক্যাল স্ট্রাইক চালিয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে সাম্প্রতিক ছিল ২০১৬ সালের হামলা।
তখন উরিতে এক হামলায় ১৭ জন ভারতীয় সেনা নিহত হওয়ার পর ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে ভারতীয় সেনাবাহিনীর বিশেষ বাহিনী সীমান্ত পেরিয়ে হামলা চালায়। নয়াদিল্লি অভিযোগ করেছিল, যেখানে হামলা চালানো হয়েছে, সেগুলো ছিল ‘লঞ্চ প্যাড।’ সেখান থেকে ‘সন্ত্রাসীরা’ ভারতে আবার হামলা চালানোর পরিকল্পনা করছিল।
ভারতীয় সেনাবাহিনীর তৎকালীন ডিরেক্টর জেনারেল অব মিলিটারি অপারেশনস লেফটেন্যান্ট জেনারেল রণবীর সিং এক বিবৃতিতে এই অভিযানের কথা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘এসব অভিযানের মূল লক্ষ্য ছিল নিশ্চিত করা যে, এই সন্ত্রাসীরা অনুপ্রবেশ এবং ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে আমাদের দেশের নাগরিকদের জীবন বিপন্ন করার তাদের পরিকল্পনায় সফল না হয়।’ ভারত দাবি করেছিল যে, এই সার্জিক্যাল স্ট্রাইকে কয়েক ডজন যোদ্ধা নিহত হয়েছেন। যদিও স্বাধীন বিশ্লেষকদের মতে নিহতের সংখ্যা সম্ভবত এর চেয়ে অনেক কম ছিল।
আকাশপথে হামলা
২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে কাশ্মীরের পুলওয়ামায় এক আত্মঘাতী হামলায় ৪০ ভারতীয় আধাসামরিক সেনা নিহত হন। ভারতের জাতীয় নির্বাচনের কয়েক সপ্তাহ আগে এই ঘটনা ঘটে। পাকিস্তানভিত্তিক সশস্ত্র গোষ্ঠী জইশ-ই-মুহাম্মদ এই হামলার দায় স্বীকার করে।
এতে ভারতে ব্যাপক ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। এর প্রতিক্রিয়ায় ভারতীয় বিমানবাহিনী পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে বিমান হামলা চালায়। ভারত দাবি করে, তারা সেখানে ‘সন্ত্রাসীদের’ আস্তানা লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে এবং কয়েক ডজন জঙ্গিকে হত্যা করেছে।
তবে পাকিস্তান জোর দিয়েছিল যে, ভারতীয় বিমান শুধু একটি বনাঞ্চলে আঘাত হেনেছে এবং কোনো জঙ্গিকে হত্যা করেনি। ইসলামাবাদ পাল্টা দাবি করে, তাদের যুদ্ধবিমান ভারতীয় বিমানগুলোকে তাড়িয়ে নিয়ন্ত্রণরেখার ওপারে ফেরত পাঠিয়েছে।
কিন্তু এর এক দিন পরেই ভারত ও পাকিস্তানের যুদ্ধবিমানগুলো আবারও আকাশযুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। এবার পাকিস্তান তাদের নিয়ন্ত্রণে থাকা এলাকায় একটি ভারতীয় বিমান ভূপাতিত করে। ভারতীয় বিমানবাহিনীর এক পাইলটকে আটক করে পাকিস্তান এবং কয়েক দিন পর তাঁকে ফেরত পাঠানো হয়।
পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত ভূমি দখলের চেষ্টা
গত কয়েক বছর ধরে ভারতের পক্ষ থেকে পাকিস্তাননিয়ন্ত্রিত কাশ্মীর ফিরিয়ে নেওয়ার দাবি জোরালো হচ্ছে। সম্প্রতি পেহেলগাম হামলার পর এই দাবি আরও তীব্র হয়েছে। এমনকি বিরোধী দল কংগ্রেসের নেতারাও মোদি সরকারকে ওই ভূখণ্ড পুনরুদ্ধারে চাপ দিচ্ছেন।
পাকিস্তাননিয়ন্ত্রিত কাশ্মীর পুনরুদ্ধার করা ভারতের প্রতিটি সরকারের নীতিগত লক্ষ্য। তবে দুই দেশের প্রায় সমশক্তির সামরিক সক্ষমতার কারণে এমন প্রচেষ্টা সফল হওয়া কঠিন। তবে পাকিস্তানের কাছ থেকে বিতর্কিত অঞ্চল দখলের ক্ষেত্রে ভারতের সাফল্য রয়েছে।
১৯৮৪ সালে ভারতীয় সেনাবাহিনী এবং ভারতীয় বিমানবাহিনী ‘অপারেশন মেঘদূত’ শুরু করে। এর মাধ্যমে তারা দ্রুত হিমালয়ের সিয়াচেন হিমবাহ দখল করে নেয়। এটি পাকিস্তান সেনাবাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ গিরিপথগুলোতে প্রবেশ বন্ধ করে দেয়। বিশ্বের বৃহত্তম অমেরু হিমবাহগুলোর মধ্যে অন্যতম এই সিয়াচেন। তখন থেকে এটি পৃথিবীর উচ্চতম যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। এখানে ভারত ও পাকিস্তানের সামরিক ঘাঁটিগুলো একে অপরের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে।
নৌপথে হামলা
পেহেলগামে হামলার পর ভারতীয় নৌবাহিনী ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার কথা ঘোষণা করে। গত ২৭ এপ্রিল নৌবাহিনী এক বিবৃতিতে জানায়, ‘ভারতীয় নৌবাহিনীর জাহাজগুলো সফলভাবে একাধিক জাহাজ-বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে। এর মাধ্যমে দূরপাল্লার নিখুঁত আক্রমণাত্মক সক্ষমতা এবং প্ল্যাটফর্ম, সিস্টেম ও ক্রুদের প্রস্তুতি পুনরায় যাচাই ও প্রদর্শন করা হয়েছে।’ বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘ভারতীয় নৌবাহিনী যেকোনো সময়, যেকোনো স্থানে, যেকোনো পরিস্থিতিতে জাতির সামুদ্রিক স্বার্থ রক্ষায় যুদ্ধে প্রস্তুত, বিশ্বাসযোগ্য এবং ভবিষ্যৎমুখী অবস্থানে রয়েছে।’
অনেক বিশ্লেষক মনে করছেন, এই পরীক্ষাগুলো শক্তি প্রদর্শনের একটি অংশ। তারা উল্লেখ করেছেন, নির্দেশ পেলে ভারতীয় নৌবাহিনীর পাকিস্তানের ভূখণ্ডে আঘাত হানার সক্ষমতা রয়েছে।
পূর্ণাঙ্গ সামরিক সংঘাত
ভারত ও পাকিস্তান তাদের স্বাধীনতার ৭৮ বছরে চারবার যুদ্ধে জড়িয়েছে। এর মধ্যে তিনটি যুদ্ধই হয়েছে কাশ্মীরকে কেন্দ্র করে। ১৯৪৭ সালের আগস্টে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক সরকার ভারতীয় উপমহাদেশকে ভাগ করে ভারত ও পাকিস্তান সৃষ্টি করে চলে যাওয়ার দুই মাস পর দুই প্রতিবেশী কাশ্মীর নিয়ে প্রথম যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। তখন কাশ্মীর একজন রাজার শাসনাধীন ছিল।
পাকিস্তানি মিলিশিয়ারা কাশ্মীর দখল করার চেষ্টা করে আক্রমণ চালায়। রাজা হরি সিং ভারতের কাছে সাহায্যের আবেদন জানান। দিল্লি সাহায্যের জন্য রাজি হয়, কিন্তু একটি শর্তে। শর্তটি ছিল যে, সিংকে একটি ‘অ্যাকসেশন চুক্তিতে’ স্বাক্ষর করতে হবে, যার মাধ্যমে কাশ্মীর ভারতের সঙ্গে যুক্ত হবে। রাজা এতে সম্মত হন। এরপর, ১৯৪৯ সালের ১ জানুয়ারি যুদ্ধ শেষ হয় যুদ্ধবিরতি চুক্তির মাধ্যমে। সেই থেকে ভারত ও পাকিস্তান কাশ্মীরের অংশবিশেষ নিজেদের দখলে রেখেছে।
এরপর, ১৯৬৫ সালে দুই দেশের সীমান্তরক্ষীদের মধ্যে সংঘর্ষ পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধে রূপ নেয়। পাকিস্তানি বাহিনী যুদ্ধবিরতি রেখা অতিক্রম করে ভারত-শাসিত কাশ্মীরে প্রবেশ করে। অন্যদিকে, ভারতীয় বাহিনী আন্তর্জাতিক সীমান্ত অতিক্রম করে পাকিস্তানের লাহোরে প্রবেশ করে এবং হামলা চালায়। উভয় পক্ষে হাজার হাজার হতাহতের পর জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের একটি প্রস্তাবের মাধ্যমে যুদ্ধ শেষ হয়।
এরপর তৃতীয় দফায় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে কেন্দ্র করে ১৯৭১ সালে পাকিস্তান ও ভারত সশস্ত্র সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে। ভারতীয় বাহিনী বাংলাদেশের স্বাধীনতায় সহায়তা করে। ১৯৭২ সালে দুই দেশ সিমলা চুক্তি স্বাক্ষর করে, যা নিয়ন্ত্রণরেখা বা এলওসি নির্ধারণ করে।
সর্বশেষ, ১৯৯৯ সালে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী নিয়ন্ত্রণরেখা অতিক্রম করে কারগিল যুদ্ধের সূচনা করে। লাদাখ অঞ্চলের বরফ ঢাকা উচ্চভূমিতে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর ভারতীয় সেনারা পাকিস্তানি সৈন্যদের পিছু হটতে বাধ্য করে।
অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান

পাকিস্তান গতকাল বুধবার বলেছে, তাদের কাছে ‘বিশ্বাসযোগ্য গোয়েন্দা তথ্য’ রয়েছে যে, ভারত ২৪-৩৬ ঘণ্টার মধ্যে তাদের ওপর সামরিক হামলা চালাতে পারে। এটি মূলত গত ২২ এপ্রিল ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে দুই দেশের মধ্যে চলমান উত্তেজনার ফল।
পেহেলগামে হামলার পর থেকে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা বেড়েছে। হামলার পর ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি মঙ্গল ও বুধবার নিরাপত্তাবিষয়ক একাধিক বৈঠক করেছেন। এসব বৈঠক ভারতের পক্ষ থেকে পাকিস্তানের আসন্ন সামরিক অভিযানের জল্পনা বাড়িয়েছে।
পেহেলগামে হামলার পর পারমাণবিক শক্তিধর দক্ষিণ এশিয়ার এ দুই প্রতিবেশীর মধ্যে আগে থেকেই প্রায় না-থাকা সম্পর্ক আরও খারাপ হয়েছে। দুই দেশ কূটনৈতিক যোগাযোগ কমিয়ে দিয়েছে, দ্বিপক্ষীয় চুক্তিগুলো স্থগিত করেছে এবং একে অপরের নাগরিকদের বহিষ্কার করেছে।
উপমহাদেশ এখন চরম উত্তেজনায়। কিন্তু পেহেলগাম হত্যাকাণ্ডের পর ভারতের সামরিক পদক্ষেপ কতটা আসন্ন? আর সেই পদক্ষেপ ঠিক কেমন হতে পারে? ইতিহাস এ বিষয়ে কী ইঙ্গিত দেয়?
পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী আতাউল্লাহ তারার গতকাল বুধবার এক টিভি বিবৃতিতে চাঞ্চল্যকর দাবি করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, তাঁদের কাছে ‘বিশ্বাসযোগ্য গোয়েন্দা তথ্য’ রয়েছে। আগামী ২৪-৩৬ ঘণ্টার মধ্যে ভারত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপ নিতে পারে। তারার বলেন, পেহেলগাম ঘটনায় পাকিস্তানের জড়িত থাকার ‘ভিত্তিহীন ও বানোয়াট অভিযোগ’ তুলে ভারত এই হামলা চালাতে পারে। ভারত যদিও পেহেলগাম হামলায় পাকিস্তানের দিকে অভিযোগের আঙুল তুলেছে, ইসলামাবাদ তা কঠোরভাবে অস্বীকার করেছে।
ভারত ও পাকিস্তান দুই দেশই কাশ্মীরের অংশবিশেষ নিয়ন্ত্রণ করে। তবে পুরো ভূখণ্ডের ওপরই উভয়ের দাবি রয়েছে। তারারের বিবৃতির ঠিক আগের দিন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দেশের নিরাপত্তাপ্রধানদের সঙ্গে এক রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন। একাধিক সংবাদ সংস্থা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উচ্চপদস্থ সরকারি সূত্রকে উদ্ধৃত করে জানিয়েছে, সেই বৈঠকে মোদি পেহেলগাম হামলার জবাব দিতে ভারতীয় সামরিক বাহিনীকে ‘সম্পূর্ণ আভিযানিক স্বাধীনতা’ দিয়েছেন।
গতকাল বুধবার পেহেলগামে হামলার পর দ্বিতীয়বার প্রধানমন্ত্রী মোদি নিরাপত্তাবিষয়ক মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন। এ কথা জানিয়েছে রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন দূরদর্শন। এদিকে, ভারত-পাকিস্তানের নিয়ন্ত্রণরেখা (এলওসি) বরাবর উভয় পক্ষের মধ্যে গুলিবিনিময় অব্যাহত রয়েছে। এর মধ্যেই উত্তেজনা কমাতে অন্য বিশ্বনেতারা সক্রিয় হয়েছেন।
মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের এক মুখপাত্র সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা উভয় পক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করছি এবং তাদের পরিস্থিতি উসকানো থেকে বিরত থাকতে বলছি।’ এর পরপরই মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ভারত ও পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে কথা বলেন। একই দিনে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের মুখপাত্র জানান, তিনি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ ও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুব্রহ্মণ্যম জয়শঙ্করের সঙ্গে কথা বলেছেন। তিনি পরিস্থিতি শান্ত করার জন্য সহায়তার প্রস্তাব দিয়েছেন।
ভারত কী পদক্ষেপ নিতে পারে, তা স্পষ্ট নয়। তবে অতীতে দেশটি বিভিন্ন সামরিক কৌশল ব্যবহার করেছে। তার কয়েকটি নিচে দেওয়া হলো:
সামরিক গোপন অভিযান
পরিকল্পনা অনুযায়ী এগুলোর ঘোষণা দেওয়া হয় না এবং নিশ্চিতও করা হয় না। তবে বিগত দশকগুলোতে ভারত-পাকিস্তান একে অপরের নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলে একাধিক গোপন অভিযান চালিয়েছে। এসব অভিযানে সামরিক চৌকিগুলো লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়েছে, সেনা হত্যা করা হয়েছে এবং মাঝে মাঝে শত্রুপক্ষের সেনাদের শিরশ্ছেদও করা হয়েছে।
এ ধরনের হামলা প্রায়শই প্রতিশোধ হিসেবে চালানো হয়। যখন কোনো সামরিক ইউনিট আক্রান্ত হয়, তখন সেখানকার কর্মীরা পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে এমন অভিযান চালান। তবে এ ধরনের অভিযান কখনোই নিশ্চিত করা হয় না। এর উদ্দেশ্য হলো অন্য দেশকে একটি বার্তা দেওয়া, কিন্তু এমন পরিস্থিতি তৈরি না করা, যাতে তারা পাল্টা জবাব দিতে বাধ্য হয়। এর ফলে সংঘাত বৃদ্ধির ঝুঁকি কমানো যায়। জনসমক্ষে ঘোষণা দিলে সরকারের ওপর পাল্টা আঘাত হানার জন্য অভ্যন্তরীণ চাপ সৃষ্টি হয়।
প্রচারিত ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’
মাঝে মাঝে অবশ্য উদ্দেশ্য থাকে সূক্ষ্ম বার্তা দেওয়া নয়, বরং অন্য দেশকে বিব্রত করা। হামলা জনসমক্ষে প্রকাশ করে এটি করা হয়। রাজনৈতিকভাবেও এটি লাভজনক হয়। ভারত অতীতে নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর নির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে তথাকথিত সার্জিক্যাল স্ট্রাইক চালিয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে সাম্প্রতিক ছিল ২০১৬ সালের হামলা।
তখন উরিতে এক হামলায় ১৭ জন ভারতীয় সেনা নিহত হওয়ার পর ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে ভারতীয় সেনাবাহিনীর বিশেষ বাহিনী সীমান্ত পেরিয়ে হামলা চালায়। নয়াদিল্লি অভিযোগ করেছিল, যেখানে হামলা চালানো হয়েছে, সেগুলো ছিল ‘লঞ্চ প্যাড।’ সেখান থেকে ‘সন্ত্রাসীরা’ ভারতে আবার হামলা চালানোর পরিকল্পনা করছিল।
ভারতীয় সেনাবাহিনীর তৎকালীন ডিরেক্টর জেনারেল অব মিলিটারি অপারেশনস লেফটেন্যান্ট জেনারেল রণবীর সিং এক বিবৃতিতে এই অভিযানের কথা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘এসব অভিযানের মূল লক্ষ্য ছিল নিশ্চিত করা যে, এই সন্ত্রাসীরা অনুপ্রবেশ এবং ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে আমাদের দেশের নাগরিকদের জীবন বিপন্ন করার তাদের পরিকল্পনায় সফল না হয়।’ ভারত দাবি করেছিল যে, এই সার্জিক্যাল স্ট্রাইকে কয়েক ডজন যোদ্ধা নিহত হয়েছেন। যদিও স্বাধীন বিশ্লেষকদের মতে নিহতের সংখ্যা সম্ভবত এর চেয়ে অনেক কম ছিল।
আকাশপথে হামলা
২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে কাশ্মীরের পুলওয়ামায় এক আত্মঘাতী হামলায় ৪০ ভারতীয় আধাসামরিক সেনা নিহত হন। ভারতের জাতীয় নির্বাচনের কয়েক সপ্তাহ আগে এই ঘটনা ঘটে। পাকিস্তানভিত্তিক সশস্ত্র গোষ্ঠী জইশ-ই-মুহাম্মদ এই হামলার দায় স্বীকার করে।
এতে ভারতে ব্যাপক ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। এর প্রতিক্রিয়ায় ভারতীয় বিমানবাহিনী পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে বিমান হামলা চালায়। ভারত দাবি করে, তারা সেখানে ‘সন্ত্রাসীদের’ আস্তানা লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে এবং কয়েক ডজন জঙ্গিকে হত্যা করেছে।
তবে পাকিস্তান জোর দিয়েছিল যে, ভারতীয় বিমান শুধু একটি বনাঞ্চলে আঘাত হেনেছে এবং কোনো জঙ্গিকে হত্যা করেনি। ইসলামাবাদ পাল্টা দাবি করে, তাদের যুদ্ধবিমান ভারতীয় বিমানগুলোকে তাড়িয়ে নিয়ন্ত্রণরেখার ওপারে ফেরত পাঠিয়েছে।
কিন্তু এর এক দিন পরেই ভারত ও পাকিস্তানের যুদ্ধবিমানগুলো আবারও আকাশযুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। এবার পাকিস্তান তাদের নিয়ন্ত্রণে থাকা এলাকায় একটি ভারতীয় বিমান ভূপাতিত করে। ভারতীয় বিমানবাহিনীর এক পাইলটকে আটক করে পাকিস্তান এবং কয়েক দিন পর তাঁকে ফেরত পাঠানো হয়।
পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত ভূমি দখলের চেষ্টা
গত কয়েক বছর ধরে ভারতের পক্ষ থেকে পাকিস্তাননিয়ন্ত্রিত কাশ্মীর ফিরিয়ে নেওয়ার দাবি জোরালো হচ্ছে। সম্প্রতি পেহেলগাম হামলার পর এই দাবি আরও তীব্র হয়েছে। এমনকি বিরোধী দল কংগ্রেসের নেতারাও মোদি সরকারকে ওই ভূখণ্ড পুনরুদ্ধারে চাপ দিচ্ছেন।
পাকিস্তাননিয়ন্ত্রিত কাশ্মীর পুনরুদ্ধার করা ভারতের প্রতিটি সরকারের নীতিগত লক্ষ্য। তবে দুই দেশের প্রায় সমশক্তির সামরিক সক্ষমতার কারণে এমন প্রচেষ্টা সফল হওয়া কঠিন। তবে পাকিস্তানের কাছ থেকে বিতর্কিত অঞ্চল দখলের ক্ষেত্রে ভারতের সাফল্য রয়েছে।
১৯৮৪ সালে ভারতীয় সেনাবাহিনী এবং ভারতীয় বিমানবাহিনী ‘অপারেশন মেঘদূত’ শুরু করে। এর মাধ্যমে তারা দ্রুত হিমালয়ের সিয়াচেন হিমবাহ দখল করে নেয়। এটি পাকিস্তান সেনাবাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ গিরিপথগুলোতে প্রবেশ বন্ধ করে দেয়। বিশ্বের বৃহত্তম অমেরু হিমবাহগুলোর মধ্যে অন্যতম এই সিয়াচেন। তখন থেকে এটি পৃথিবীর উচ্চতম যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। এখানে ভারত ও পাকিস্তানের সামরিক ঘাঁটিগুলো একে অপরের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে।
নৌপথে হামলা
পেহেলগামে হামলার পর ভারতীয় নৌবাহিনী ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার কথা ঘোষণা করে। গত ২৭ এপ্রিল নৌবাহিনী এক বিবৃতিতে জানায়, ‘ভারতীয় নৌবাহিনীর জাহাজগুলো সফলভাবে একাধিক জাহাজ-বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে। এর মাধ্যমে দূরপাল্লার নিখুঁত আক্রমণাত্মক সক্ষমতা এবং প্ল্যাটফর্ম, সিস্টেম ও ক্রুদের প্রস্তুতি পুনরায় যাচাই ও প্রদর্শন করা হয়েছে।’ বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘ভারতীয় নৌবাহিনী যেকোনো সময়, যেকোনো স্থানে, যেকোনো পরিস্থিতিতে জাতির সামুদ্রিক স্বার্থ রক্ষায় যুদ্ধে প্রস্তুত, বিশ্বাসযোগ্য এবং ভবিষ্যৎমুখী অবস্থানে রয়েছে।’
অনেক বিশ্লেষক মনে করছেন, এই পরীক্ষাগুলো শক্তি প্রদর্শনের একটি অংশ। তারা উল্লেখ করেছেন, নির্দেশ পেলে ভারতীয় নৌবাহিনীর পাকিস্তানের ভূখণ্ডে আঘাত হানার সক্ষমতা রয়েছে।
পূর্ণাঙ্গ সামরিক সংঘাত
ভারত ও পাকিস্তান তাদের স্বাধীনতার ৭৮ বছরে চারবার যুদ্ধে জড়িয়েছে। এর মধ্যে তিনটি যুদ্ধই হয়েছে কাশ্মীরকে কেন্দ্র করে। ১৯৪৭ সালের আগস্টে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক সরকার ভারতীয় উপমহাদেশকে ভাগ করে ভারত ও পাকিস্তান সৃষ্টি করে চলে যাওয়ার দুই মাস পর দুই প্রতিবেশী কাশ্মীর নিয়ে প্রথম যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। তখন কাশ্মীর একজন রাজার শাসনাধীন ছিল।
পাকিস্তানি মিলিশিয়ারা কাশ্মীর দখল করার চেষ্টা করে আক্রমণ চালায়। রাজা হরি সিং ভারতের কাছে সাহায্যের আবেদন জানান। দিল্লি সাহায্যের জন্য রাজি হয়, কিন্তু একটি শর্তে। শর্তটি ছিল যে, সিংকে একটি ‘অ্যাকসেশন চুক্তিতে’ স্বাক্ষর করতে হবে, যার মাধ্যমে কাশ্মীর ভারতের সঙ্গে যুক্ত হবে। রাজা এতে সম্মত হন। এরপর, ১৯৪৯ সালের ১ জানুয়ারি যুদ্ধ শেষ হয় যুদ্ধবিরতি চুক্তির মাধ্যমে। সেই থেকে ভারত ও পাকিস্তান কাশ্মীরের অংশবিশেষ নিজেদের দখলে রেখেছে।
এরপর, ১৯৬৫ সালে দুই দেশের সীমান্তরক্ষীদের মধ্যে সংঘর্ষ পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধে রূপ নেয়। পাকিস্তানি বাহিনী যুদ্ধবিরতি রেখা অতিক্রম করে ভারত-শাসিত কাশ্মীরে প্রবেশ করে। অন্যদিকে, ভারতীয় বাহিনী আন্তর্জাতিক সীমান্ত অতিক্রম করে পাকিস্তানের লাহোরে প্রবেশ করে এবং হামলা চালায়। উভয় পক্ষে হাজার হাজার হতাহতের পর জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের একটি প্রস্তাবের মাধ্যমে যুদ্ধ শেষ হয়।
এরপর তৃতীয় দফায় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে কেন্দ্র করে ১৯৭১ সালে পাকিস্তান ও ভারত সশস্ত্র সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে। ভারতীয় বাহিনী বাংলাদেশের স্বাধীনতায় সহায়তা করে। ১৯৭২ সালে দুই দেশ সিমলা চুক্তি স্বাক্ষর করে, যা নিয়ন্ত্রণরেখা বা এলওসি নির্ধারণ করে।
সর্বশেষ, ১৯৯৯ সালে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী নিয়ন্ত্রণরেখা অতিক্রম করে কারগিল যুদ্ধের সূচনা করে। লাদাখ অঞ্চলের বরফ ঢাকা উচ্চভূমিতে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর ভারতীয় সেনারা পাকিস্তানি সৈন্যদের পিছু হটতে বাধ্য করে।
অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতদের মধ্যে ইউক্রেন শান্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনা হলেও প্রকাশ্যে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইউরি উশাকভ, এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন যে অমীমাংসিত ‘আঞ্চলিক সমস্যাই’ মূল বাধা। আর এই অঞ্চল আর কোনোটিই নয়, দোনেৎস্ক।
২০ ঘণ্টা আগে
বিশ্বজুড়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন উঠে আসছে—‘যদি বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ সীমিত করা হয়, অথবা এই শ্রেণিটিকেই সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়, তবে কী ঘটবে?’ পশ্চিমা দেশগুলোতে চরম ধনী বা বিলিয়নিয়ারদের সংখ্যা ও প্রভাব বাড়তে থাকায় এখন এই প্রশ্ন আরও জোরালো হয়েছে।
১ দিন আগে
জাপানের ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর গত অক্টোবরে দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন সানায়ে তাকাইচি। এরপরই তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত হন জাপানের নতুন ‘আয়রন লেডি’ বা লৌহমানবী’ হিসেবে।
১ দিন আগে
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠককে ঘিরে দিল্লিতে শুরু হয়েছে কূটনৈতিক প্রস্তুতি। চলমান ইউক্রেন যুদ্ধ, যুক্তরাষ্ট্রের চাপ এবং জ্বালানির বাজারে অস্থিরতার মধ্যেই এই শীর্ষ সম্মেলন হতে যাচ্ছে। অর্থনীতি, প্রতিরক্ষা এবং জ্বালানি—এই তিনটি খাত আলোচনার...
২ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতদের মধ্যে ইউক্রেন শান্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনা হলেও প্রকাশ্যে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইউরি উশাকভ, এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন যে অমীমাংসিত ‘আঞ্চলিক সমস্যাই’ মূল বাধা। আর এই অঞ্চল আর কোনোটিই নয়, দোনেৎস্ক।
উশাকভ মূলত ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় দোনেৎস্কের সম্পূর্ণ এলাকার ওপর রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণ দাবির কথাই বলেছিলেন। পুতিন ইউক্রেনে হাজার হাজার সৈন্য পাঠানোর প্রায় ৪ বছর পরও এবং দোনেৎস্কে রাশিয়া সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদী বিদ্রোহের এক দশকেরও বেশি সময় পর অঞ্চলটির কিছু অংশ এখনো ইউক্রেনের হাতে আছে।
প্রায় সব দেশই দোনেৎস্ককে ইউক্রেনের অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। কিন্তু এটি ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের চারটি অঞ্চলের মধ্যে একটি, যা মস্কো ২০২২ সালে একটি গণভোটের পর সংযুক্ত করার কথা ঘোষণা করে। কিয়েভ ও পশ্চিমা দেশগুলো সেই গণভোটকে ‘প্রহসন’ বলে বাতিল করে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ফক্স নিউজকে বলেছিলেন, যুদ্ধটি এখন দোনেৎস্কের সেই ২০ শতাংশ বা ৫ হাজার বর্গকিলোমিটারের এলাকা নিয়ে, যা রাশিয়া নিয়ন্ত্রণ করে না কিন্তু চায়।
পুতিন ২০২২ সালে ইউক্রেনে সৈন্য পাঠানোর সময় বলেছিলেন, তাঁর লক্ষ্য হলো ‘গত আট বছর ধরে যারা ভয়ভীতি ও গণহত্যার শিকার হয়েছেন...সেই মানুষগুলোকে রক্ষা করা।’ ইউক্রেন এবং তার মিত্ররা বলেছিল, পুতিনের এই দাবি ঔপনিবেশিক ধাঁচের এবং এলাকা দখলের জন্য একটি মিথ্যা অজুহাত মাত্র।
পুতিনের এই দাবি মূলত দোনেৎস্ক এবং লুহানস্ক অঞ্চলে রাশিয়া সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিরুদ্ধে ইউক্রেনের লড়াইয়ের দিকে ইঙ্গিত করে, যারা ২০১৪ সালে ইউক্রেনীয় সরকারি নিয়ন্ত্রণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে কিছু এলাকা দখল করেছিল। পূর্ব ইউক্রেনে এর পরের সংঘর্ষে উভয় পক্ষই শহর ও বেসামরিক নাগরিকদের ওপর গোলাবর্ষণের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করেছিল। মস্কো এই অঞ্চলের বিশাল রুশভাষী জনসংখ্যাকে উদ্ধৃত করে বলেছিল যে,২০২২ সালে হস্তক্ষেপ করা তাদের নৈতিক কর্তব্য।
কিয়েভ বলেছিল, ২০১৪ সালে ইউক্রেনের আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষায় শক্তি দিয়ে জবাব দেওয়া ছাড়া তাদের আর কোনো উপায় ছিল না এবং তারাও বিচ্ছিন্নতাবাদী বাহিনীর বিরুদ্ধে শহর ও বেসামরিক নাগরিকদের ওপর গোলাবর্ষণের অভিযোগ এনেছিল। জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৪ সাল থেকে ২০২২ সালের শুরু পর্যন্ত ইউক্রেনীয় সরকারি বাহিনী এবং বিচ্ছিন্নতাবাদীদের মধ্যে সংঘাতে উভয় পক্ষে ৩ হাজার ১০৬ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত এবং ৯ হাজার বেসামরিক নাগরিক আহত হয়েছিলেন।
দোনেৎস্কের বাকি যে অংশটি রাশিয়া চায়, তার মধ্যে রয়েছে স্লোভিয়ানস্ক এবং ক্রামাতোরস্ক—দুটি ‘দুর্গনগরী’ যা ২০১৪ সাল থেকে ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করে আসছে। এই শহরগুলো ইউক্রেনের বাকি অঞ্চল রক্ষার জন্য কিয়েভের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ দোনেৎস্কের পশ্চিমের ভূমি অনেকটাই সমতল এবং বিশাল খোলা মাঠ; যা রাশিয়াকে দোনেৎস্কের বাইরে অগ্রসর হতে এবং দিনিপ্রো নদীর পূর্ব তীর পর্যন্ত এলাকা দখল করার পথ সহজ করে দেবে।
শহরগুলো পরিখা, ট্যাংক-বিধ্বংসী বাধা, বাংকার এবং মাইনক্ষেত্রসহ অত্যন্ত সুরক্ষিত প্রতিরক্ষা লাইনের অংশ। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, গণভোট ছাড়া দোনেৎস্কের বাকি অংশ রাশিয়ার হাতে তুলে দেওয়া অবৈধ হবে এবং তা ভবিষ্যতে ইউক্রেনের গভীরে আক্রমণের জন্য রাশিয়াকে একটি পথ খুলে দেবে।
কিয়েভের আশঙ্কা, যদি তারা দোনেৎস্কের বাকি অংশ ছেড়ে দেয়, তবে রাশিয়া আবার অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হবে এবং একসময় দোনেৎস্ক ব্যবহার করে পশ্চিম দিকে আক্রমণ চালাবে।
উভয় পক্ষই দোনেৎস্ককে কেন্দ্র করে যুদ্ধে ভয়াবহ ক্ষয়ক্ষতির মুখোমুখি হয়েছে এবং প্রচুর অর্থ ও সরঞ্জাম ব্যয় করেছে। এর মধ্যে বাখমুত শহরের লড়াইও রয়েছে। যেখানে রাশিয়া হাজার হাজার দণ্ডিত অপরাধীকে ভাড়াটে সৈন্যে পরিণত করে রণক্ষেত্রে নামিয়েছিল। এ কারণে, দোনেৎস্ক উভয় দেশের জনমানসে আরও বেশি গুরুত্ব পেয়েছে। ফলে কারও পক্ষে তাদের অবস্থান পরিবর্তন করা কঠিন।
ইউক্রেন চায় না যে, রাশিয়া যুদ্ধক্ষেত্রে জয় করতে ব্যর্থ হওয়া ভূখণ্ডকে উপহার হিসেবে পাক এবং জেলেনস্কি বলেছেন, যে যুদ্ধ রাশিয়া শুরু করেছে, তার জন্য তাদের পুরস্কৃত করা উচিত নয়। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ইনস্টিটিউট ফর দ্য স্টাডি অব ওয়ার অক্টোবর মাসে বলেছিল, রাশিয়ার অগ্রগতির হার দেখে মনে হয় না যে তারা খুব শিগগিরই দোনেৎস্কের বাকি অংশ দখল করতে চলেছে। তবে ‘রাশিয়ার অগ্রগতির একটি অপরিবর্তনীয় হার ধরে নিলে’ তারা ২০২৭ সালের আগস্টের মধ্যে তা নিতে পারে।
রাশিয়ার কমান্ডাররা অবশ্য আরও বেশি আশাবাদী। জেনারেল স্টাফের প্রধান ভ্যালেরি গেরাসিমভ রোববার পুতিনকে বলেছেন, মস্কোর বাহিনী পুরো ফ্রন্ট লাইন বরাবর অগ্রসর হচ্ছে এবং দনবাসের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার জন্য কাজ করছে।
দোনেৎস্ক বন্দর, রেলপথ এবং অন্যান্য ভারী শিল্পের কেন্দ্র। এটি একসময় ইউক্রেনের কয়লা, পরিশোধিত ইস্পাত, কোক, ঢালাই লোহা এবং ইস্পাত উৎপাদনের অর্ধেকেরও বেশি সরবরাহ করত, তবে যুদ্ধের কারণে অনেক খনি ও কারখানা ধ্বংস হয়ে গেছে। এ ছাড়া, দোনেৎস্কে বিরল মৃত্তিকা, টাইটানিয়াম এবং জিরকোনিয়াম রয়েছে—যা এটিকে নিয়ন্ত্রণকারী পক্ষের জন্য আয়ের উৎস।
দোনেৎস্কের ভাগ্য পুতিন এবং জেলেনস্কি উভয়ের ঐতিহাসিক উত্তরাধিকারকে প্রভাবিত করতে পারে। পুতিন নিজেকে জাতিগত রুশদের রক্ষক হিসেবে তুলে ধরেছেন, তারা যেখানেই থাকুক না কেন। পুরো দোনেৎস্ককে সুরক্ষিত করা এই বক্তব্যের মূল কেন্দ্রবিন্দু। জেলেনস্কি ২০১৯ সালে পূর্ব ইউক্রেনের যুদ্ধ অবসান ঘটানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন। ২০২২ সাল থেকে তিনি অনেক বড়, বৈরী প্রতিবেশীর মুখে অস্ত্র এবং সংখ্যায় কম ইউক্রেনের এক দৃঢ় রক্ষক হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছেন।
লড়াই না করে দোনেৎস্ক ছেড়ে দেওয়া—যেখানে অন্তত আড়াই লাখ ইউক্রেনীয় বাস করে—ইউক্রেনীয়দের কাছে বিশ্বাসঘাতকতা হিসেবে দেখা হতে পারে, যাদের অনেকেই যুদ্ধক্ষেত্রে স্বজন হারিয়েছেন। কিয়েভ ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব সোসিওলজির সাম্প্রতিক এক জরিপ অনুসারে, ইউক্রেনীয়দের একটি সংকীর্ণ সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ এখনো আঞ্চলিক ছাড়ের বিরোধিতা করে।
জেলেনস্কিসহ ইউক্রেনের কর্মকর্তারা যেকোনো শান্তি চুক্তির অধীনে কিয়েভের নিয়ন্ত্রণে থাকা ভূমি ছাড়ার সম্ভাবনা প্রত্যাখ্যান করেছেন। জেলেনস্কি বলেন, তাঁর ভূখণ্ড ছেড়ে দেওয়ার কোনো ম্যান্ডেট নেই এবং রাষ্ট্রের ভূমি ব্যক্তিগত সম্পত্তির মতো কেনা-বেচা করা যায় না। ইউক্রেনের সংবিধান অনুসারে, আঞ্চলিক পরিবর্তন অবশ্যই একটি গণভোটের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করতে হবে, যা ইউক্রেনের অন্তত দুই-তৃতীয়াংশ অর্থাৎ, অন্তত ৩০ লাখ ইউক্রেনীয় ভোটারের স্বাক্ষর থাকলে আয়োজন করা যেতে পারে।
তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই গণভোটের বিষয়টির সমালোচনা করেছেন এবং তিনি বলেছিলেন, ‘কিছু ভূমি অদল-বদল হবে।’ এখন ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের আলোচনা মূলত এই দোনেৎস্কের নিয়ন্ত্রণ কার হাতে যাবে সেটাই নিয়েই থমকে আছে।
রয়টার্স থেকে পরিমার্জিত

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতদের মধ্যে ইউক্রেন শান্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনা হলেও প্রকাশ্যে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইউরি উশাকভ, এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন যে অমীমাংসিত ‘আঞ্চলিক সমস্যাই’ মূল বাধা। আর এই অঞ্চল আর কোনোটিই নয়, দোনেৎস্ক।
উশাকভ মূলত ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় দোনেৎস্কের সম্পূর্ণ এলাকার ওপর রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণ দাবির কথাই বলেছিলেন। পুতিন ইউক্রেনে হাজার হাজার সৈন্য পাঠানোর প্রায় ৪ বছর পরও এবং দোনেৎস্কে রাশিয়া সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদী বিদ্রোহের এক দশকেরও বেশি সময় পর অঞ্চলটির কিছু অংশ এখনো ইউক্রেনের হাতে আছে।
প্রায় সব দেশই দোনেৎস্ককে ইউক্রেনের অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। কিন্তু এটি ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের চারটি অঞ্চলের মধ্যে একটি, যা মস্কো ২০২২ সালে একটি গণভোটের পর সংযুক্ত করার কথা ঘোষণা করে। কিয়েভ ও পশ্চিমা দেশগুলো সেই গণভোটকে ‘প্রহসন’ বলে বাতিল করে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ফক্স নিউজকে বলেছিলেন, যুদ্ধটি এখন দোনেৎস্কের সেই ২০ শতাংশ বা ৫ হাজার বর্গকিলোমিটারের এলাকা নিয়ে, যা রাশিয়া নিয়ন্ত্রণ করে না কিন্তু চায়।
পুতিন ২০২২ সালে ইউক্রেনে সৈন্য পাঠানোর সময় বলেছিলেন, তাঁর লক্ষ্য হলো ‘গত আট বছর ধরে যারা ভয়ভীতি ও গণহত্যার শিকার হয়েছেন...সেই মানুষগুলোকে রক্ষা করা।’ ইউক্রেন এবং তার মিত্ররা বলেছিল, পুতিনের এই দাবি ঔপনিবেশিক ধাঁচের এবং এলাকা দখলের জন্য একটি মিথ্যা অজুহাত মাত্র।
পুতিনের এই দাবি মূলত দোনেৎস্ক এবং লুহানস্ক অঞ্চলে রাশিয়া সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিরুদ্ধে ইউক্রেনের লড়াইয়ের দিকে ইঙ্গিত করে, যারা ২০১৪ সালে ইউক্রেনীয় সরকারি নিয়ন্ত্রণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে কিছু এলাকা দখল করেছিল। পূর্ব ইউক্রেনে এর পরের সংঘর্ষে উভয় পক্ষই শহর ও বেসামরিক নাগরিকদের ওপর গোলাবর্ষণের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করেছিল। মস্কো এই অঞ্চলের বিশাল রুশভাষী জনসংখ্যাকে উদ্ধৃত করে বলেছিল যে,২০২২ সালে হস্তক্ষেপ করা তাদের নৈতিক কর্তব্য।
কিয়েভ বলেছিল, ২০১৪ সালে ইউক্রেনের আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষায় শক্তি দিয়ে জবাব দেওয়া ছাড়া তাদের আর কোনো উপায় ছিল না এবং তারাও বিচ্ছিন্নতাবাদী বাহিনীর বিরুদ্ধে শহর ও বেসামরিক নাগরিকদের ওপর গোলাবর্ষণের অভিযোগ এনেছিল। জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৪ সাল থেকে ২০২২ সালের শুরু পর্যন্ত ইউক্রেনীয় সরকারি বাহিনী এবং বিচ্ছিন্নতাবাদীদের মধ্যে সংঘাতে উভয় পক্ষে ৩ হাজার ১০৬ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত এবং ৯ হাজার বেসামরিক নাগরিক আহত হয়েছিলেন।
দোনেৎস্কের বাকি যে অংশটি রাশিয়া চায়, তার মধ্যে রয়েছে স্লোভিয়ানস্ক এবং ক্রামাতোরস্ক—দুটি ‘দুর্গনগরী’ যা ২০১৪ সাল থেকে ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করে আসছে। এই শহরগুলো ইউক্রেনের বাকি অঞ্চল রক্ষার জন্য কিয়েভের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ দোনেৎস্কের পশ্চিমের ভূমি অনেকটাই সমতল এবং বিশাল খোলা মাঠ; যা রাশিয়াকে দোনেৎস্কের বাইরে অগ্রসর হতে এবং দিনিপ্রো নদীর পূর্ব তীর পর্যন্ত এলাকা দখল করার পথ সহজ করে দেবে।
শহরগুলো পরিখা, ট্যাংক-বিধ্বংসী বাধা, বাংকার এবং মাইনক্ষেত্রসহ অত্যন্ত সুরক্ষিত প্রতিরক্ষা লাইনের অংশ। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, গণভোট ছাড়া দোনেৎস্কের বাকি অংশ রাশিয়ার হাতে তুলে দেওয়া অবৈধ হবে এবং তা ভবিষ্যতে ইউক্রেনের গভীরে আক্রমণের জন্য রাশিয়াকে একটি পথ খুলে দেবে।
কিয়েভের আশঙ্কা, যদি তারা দোনেৎস্কের বাকি অংশ ছেড়ে দেয়, তবে রাশিয়া আবার অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হবে এবং একসময় দোনেৎস্ক ব্যবহার করে পশ্চিম দিকে আক্রমণ চালাবে।
উভয় পক্ষই দোনেৎস্ককে কেন্দ্র করে যুদ্ধে ভয়াবহ ক্ষয়ক্ষতির মুখোমুখি হয়েছে এবং প্রচুর অর্থ ও সরঞ্জাম ব্যয় করেছে। এর মধ্যে বাখমুত শহরের লড়াইও রয়েছে। যেখানে রাশিয়া হাজার হাজার দণ্ডিত অপরাধীকে ভাড়াটে সৈন্যে পরিণত করে রণক্ষেত্রে নামিয়েছিল। এ কারণে, দোনেৎস্ক উভয় দেশের জনমানসে আরও বেশি গুরুত্ব পেয়েছে। ফলে কারও পক্ষে তাদের অবস্থান পরিবর্তন করা কঠিন।
ইউক্রেন চায় না যে, রাশিয়া যুদ্ধক্ষেত্রে জয় করতে ব্যর্থ হওয়া ভূখণ্ডকে উপহার হিসেবে পাক এবং জেলেনস্কি বলেছেন, যে যুদ্ধ রাশিয়া শুরু করেছে, তার জন্য তাদের পুরস্কৃত করা উচিত নয়। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ইনস্টিটিউট ফর দ্য স্টাডি অব ওয়ার অক্টোবর মাসে বলেছিল, রাশিয়ার অগ্রগতির হার দেখে মনে হয় না যে তারা খুব শিগগিরই দোনেৎস্কের বাকি অংশ দখল করতে চলেছে। তবে ‘রাশিয়ার অগ্রগতির একটি অপরিবর্তনীয় হার ধরে নিলে’ তারা ২০২৭ সালের আগস্টের মধ্যে তা নিতে পারে।
রাশিয়ার কমান্ডাররা অবশ্য আরও বেশি আশাবাদী। জেনারেল স্টাফের প্রধান ভ্যালেরি গেরাসিমভ রোববার পুতিনকে বলেছেন, মস্কোর বাহিনী পুরো ফ্রন্ট লাইন বরাবর অগ্রসর হচ্ছে এবং দনবাসের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার জন্য কাজ করছে।
দোনেৎস্ক বন্দর, রেলপথ এবং অন্যান্য ভারী শিল্পের কেন্দ্র। এটি একসময় ইউক্রেনের কয়লা, পরিশোধিত ইস্পাত, কোক, ঢালাই লোহা এবং ইস্পাত উৎপাদনের অর্ধেকেরও বেশি সরবরাহ করত, তবে যুদ্ধের কারণে অনেক খনি ও কারখানা ধ্বংস হয়ে গেছে। এ ছাড়া, দোনেৎস্কে বিরল মৃত্তিকা, টাইটানিয়াম এবং জিরকোনিয়াম রয়েছে—যা এটিকে নিয়ন্ত্রণকারী পক্ষের জন্য আয়ের উৎস।
দোনেৎস্কের ভাগ্য পুতিন এবং জেলেনস্কি উভয়ের ঐতিহাসিক উত্তরাধিকারকে প্রভাবিত করতে পারে। পুতিন নিজেকে জাতিগত রুশদের রক্ষক হিসেবে তুলে ধরেছেন, তারা যেখানেই থাকুক না কেন। পুরো দোনেৎস্ককে সুরক্ষিত করা এই বক্তব্যের মূল কেন্দ্রবিন্দু। জেলেনস্কি ২০১৯ সালে পূর্ব ইউক্রেনের যুদ্ধ অবসান ঘটানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন। ২০২২ সাল থেকে তিনি অনেক বড়, বৈরী প্রতিবেশীর মুখে অস্ত্র এবং সংখ্যায় কম ইউক্রেনের এক দৃঢ় রক্ষক হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছেন।
লড়াই না করে দোনেৎস্ক ছেড়ে দেওয়া—যেখানে অন্তত আড়াই লাখ ইউক্রেনীয় বাস করে—ইউক্রেনীয়দের কাছে বিশ্বাসঘাতকতা হিসেবে দেখা হতে পারে, যাদের অনেকেই যুদ্ধক্ষেত্রে স্বজন হারিয়েছেন। কিয়েভ ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব সোসিওলজির সাম্প্রতিক এক জরিপ অনুসারে, ইউক্রেনীয়দের একটি সংকীর্ণ সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ এখনো আঞ্চলিক ছাড়ের বিরোধিতা করে।
জেলেনস্কিসহ ইউক্রেনের কর্মকর্তারা যেকোনো শান্তি চুক্তির অধীনে কিয়েভের নিয়ন্ত্রণে থাকা ভূমি ছাড়ার সম্ভাবনা প্রত্যাখ্যান করেছেন। জেলেনস্কি বলেন, তাঁর ভূখণ্ড ছেড়ে দেওয়ার কোনো ম্যান্ডেট নেই এবং রাষ্ট্রের ভূমি ব্যক্তিগত সম্পত্তির মতো কেনা-বেচা করা যায় না। ইউক্রেনের সংবিধান অনুসারে, আঞ্চলিক পরিবর্তন অবশ্যই একটি গণভোটের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করতে হবে, যা ইউক্রেনের অন্তত দুই-তৃতীয়াংশ অর্থাৎ, অন্তত ৩০ লাখ ইউক্রেনীয় ভোটারের স্বাক্ষর থাকলে আয়োজন করা যেতে পারে।
তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই গণভোটের বিষয়টির সমালোচনা করেছেন এবং তিনি বলেছিলেন, ‘কিছু ভূমি অদল-বদল হবে।’ এখন ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের আলোচনা মূলত এই দোনেৎস্কের নিয়ন্ত্রণ কার হাতে যাবে সেটাই নিয়েই থমকে আছে।
রয়টার্স থেকে পরিমার্জিত

এই ধরনের হামলা প্রায়শই প্রতিশোধ হিসেবে চালানো হয়। যখন কোনো সামরিক ইউনিট আক্রান্ত হয়, তখন সেখানকার কর্মীরা পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে এমন অভিযান চালায়। তবে এই ধরনের অভিযান কখনোই নিশ্চিত করা হয় না। এর উদ্দেশ্য হলো অন্য দেশকে একটি বার্তা দেওয়া, কিন্তু এমন পরিস্থিতি তৈরি না করা যাতে তারা পাল্টা জবাব দিতে
০১ মে ২০২৫
বিশ্বজুড়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন উঠে আসছে—‘যদি বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ সীমিত করা হয়, অথবা এই শ্রেণিটিকেই সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়, তবে কী ঘটবে?’ পশ্চিমা দেশগুলোতে চরম ধনী বা বিলিয়নিয়ারদের সংখ্যা ও প্রভাব বাড়তে থাকায় এখন এই প্রশ্ন আরও জোরালো হয়েছে।
১ দিন আগে
জাপানের ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর গত অক্টোবরে দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন সানায়ে তাকাইচি। এরপরই তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত হন জাপানের নতুন ‘আয়রন লেডি’ বা লৌহমানবী’ হিসেবে।
১ দিন আগে
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠককে ঘিরে দিল্লিতে শুরু হয়েছে কূটনৈতিক প্রস্তুতি। চলমান ইউক্রেন যুদ্ধ, যুক্তরাষ্ট্রের চাপ এবং জ্বালানির বাজারে অস্থিরতার মধ্যেই এই শীর্ষ সম্মেলন হতে যাচ্ছে। অর্থনীতি, প্রতিরক্ষা এবং জ্বালানি—এই তিনটি খাত আলোচনার...
২ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

বিশ্বজুড়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন উঠে আসছে—‘যদি বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ সীমিত করা হয়, অথবা এই শ্রেণিটিকেই সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়, তবে কী ঘটবে?’ পশ্চিমা দেশগুলোতে চরম ধনী বা বিলিয়নিয়ারদের সংখ্যা ও প্রভাব বাড়তে থাকায় এখন এই প্রশ্ন আরও জোরালো হয়েছে।
সম্প্রতি টেসলার মালিক ইলন মাস্ক গত নভেম্বরে এমন এক পে-অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন, যা তাঁকে একজন ট্রিলিয়ন ডলারের মালিকে পরিণত করতে পারে। তিনি ইতিমধ্যেই বিশ্বের শীর্ষ ধনী। যদি তিনি প্রস্তাবিত পূর্ণ প্যাকেজটি পান, তাহলে তিনি বিশ্বের ইতিহাসে সর্বকালের সেরা ধনী ব্যক্তিতে পরিণত হবেন। ফোর্বসের হিসেবে বর্তমানে বিশ্বের ৩ হাজার ২৮ জন বিলিয়নিয়ার আছেন। তাঁদের মোট সম্পদ প্রায় ১৬.১ ট্রিলিয়ন ডলার। অন্যদিকে পৃথিবীতে এখনো প্রায় ৮৩ কোটি ১০ লাখ মানুষ দৈনিক তিন ডলারের নিচে আয় করে চরম দারিদ্র্যে দিন কাটান।
বিশ্লেষকদের মতে, বিশ্বের এই বিপুল সম্পদ বৈষম্য শুধু অর্থনীতিকে নয়, রাজনীতি, মিডিয়া ও চিন্তাকেও প্রভাবিত করে। অনেকেই মনে করেন, বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ ও ক্ষমতা বিশ্বব্যবস্থাকে ‘অতি ধনীদের স্বার্থে’ পুনর্গঠন করছে। আবার অন্য একটি মত বলছে, বিলিয়নিয়ারেরা না থাকলে উদ্ভাবন, প্রযুক্তি ও অগ্রগতি থমকে যাবে। কারণ বৃহৎ বিনিয়োগই গড়ে তোলে নতুন সমাধান।
উদ্ভাবন কি থেমে যাবে
অ্যাডাম স্মিথ ইনস্টিটিউটের ম্যাক্সওয়েল মার্লোর মতে, বিলিয়নিয়ারদের বিলোপ করা হলে পশ্চিমা অর্থনীতি বিপর্যস্ত হবে। তাঁর দাবি, অধিকাংশ বিলিয়নিয়ার তাঁদের সম্পদের মালিক হয়েছেন সমাজের চাহিদামতো পণ্য ও প্রযুক্তি তৈরি করে। তাঁদের সম্পদ মূলত কোম্পানির শেয়ার, মেধাস্বত্ব অথবা সম্পত্তি—যা দিনে দিনে ওঠানামা করে। তাঁর মতে, এই ধনী ব্যক্তিদের প্রণোদনাই উদ্ভাবনে গতি আনে; তা না থাকলে উন্নয়ন থেমে যাবে।
যদি ন্যায্যভাবে সম্পদ বণ্টিত হতো
গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ট্যাক্স জাস্টিসের ডেরেজে আলেমায়েহুর মতে, শুধু বিলিয়নিয়ার কর আরোপ নয়—প্রশ্ন হচ্ছে, সেই কর কোথায় যাবে। দক্ষিণ বিশ্বের শ্রম ও সম্পদ থেকেই যে বিপুল সম্পদ তৈরি হয়, তাই তার ন্যায্য অংশ দক্ষিণেই ফিরে আসা উচিত। তিনি বলেন, বৈষম্য কমাতে শুধু অর্থ হস্তান্তর নয়, বৈশ্বিক আর্থিক কাঠামো পুনর্গঠন জরুরি; নইলে বৈষম্য আরও গভীর হবে।
বিধিনিষেধ কি বদলাতে হবে
ডেনিসন ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ফাদেল কাবুব বলেন, বিলিয়নিয়ারেরা আসলে ব্যর্থ নীতির ফল। সিস্টেম যেভাবে সাজানো, তাতে সম্পদ একদিকে কেন্দ্রীভূত হওয়াই স্বাভাবিক। তাঁর মতে, বিলিয়নিয়ার শ্রেণিকে বিলোপ করতে হলে আধুনিক অ্যান্টি ট্রাস্ট ও কঠোর বাজার নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন।
মিডিয়ার ওপর প্রভাব কমবে
গোল্ডস্মিথস বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডেস ফ্রিডম্যান মনে করেন, বিলিয়নিয়ারেরা পুরো মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম কিনে ফেলতে সক্ষম হওয়ায় তথ্যপ্রবাহ তাঁদের স্বার্থেই নিয়ন্ত্রিত হয়। যেমন—বেজোস বা ইলন মাস্কের গণমাধ্যম মালিকানা এই অঙ্গনের স্বাধীনতাকে দীর্ঘমেয়াদে প্রশ্নবিদ্ধ করে। তাই বিলিয়নিয়ার প্রভাব সীমিত হলে তথ্যের উৎসও আরও স্বাধীন হতে পারে।
চরম সম্পদ কি সত্যিই বিলোপ করা সম্ভব
বিশ্ব ইনইক্যুয়ালিটি ল্যাবের লুকাস শ্যানসেলের মতে, ইতিহাসে এর নজির আছে। উদাহরণস্বরূপ—রকেফেলারের একচেটিয়া সাম্রাজ্য ভেঙে দেওয়া, কিংবা রুজভেল্টের সময় সর্বোচ্চ করহার ৯৪ শতাংশে উন্নীত করা। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পানামা পেপারসের মতো ফাঁস যেমন দুর্দান্ত স্বচ্ছতা তৈরি করেছে, তেমনি তা পরিবর্তনের সুযোগও তৈরি করছে। তিনি মনে করেন, ধনীদের ওপর কর আরোপের মতো ধারণা এখন আর ‘যদি’ নয়, বরং ‘কখন’ করা হবে—এ প্রশ্নে এসে দাঁড়িয়েছে।
আল-জাজিরা অবলম্বনে

বিশ্বজুড়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন উঠে আসছে—‘যদি বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ সীমিত করা হয়, অথবা এই শ্রেণিটিকেই সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়, তবে কী ঘটবে?’ পশ্চিমা দেশগুলোতে চরম ধনী বা বিলিয়নিয়ারদের সংখ্যা ও প্রভাব বাড়তে থাকায় এখন এই প্রশ্ন আরও জোরালো হয়েছে।
সম্প্রতি টেসলার মালিক ইলন মাস্ক গত নভেম্বরে এমন এক পে-অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন, যা তাঁকে একজন ট্রিলিয়ন ডলারের মালিকে পরিণত করতে পারে। তিনি ইতিমধ্যেই বিশ্বের শীর্ষ ধনী। যদি তিনি প্রস্তাবিত পূর্ণ প্যাকেজটি পান, তাহলে তিনি বিশ্বের ইতিহাসে সর্বকালের সেরা ধনী ব্যক্তিতে পরিণত হবেন। ফোর্বসের হিসেবে বর্তমানে বিশ্বের ৩ হাজার ২৮ জন বিলিয়নিয়ার আছেন। তাঁদের মোট সম্পদ প্রায় ১৬.১ ট্রিলিয়ন ডলার। অন্যদিকে পৃথিবীতে এখনো প্রায় ৮৩ কোটি ১০ লাখ মানুষ দৈনিক তিন ডলারের নিচে আয় করে চরম দারিদ্র্যে দিন কাটান।
বিশ্লেষকদের মতে, বিশ্বের এই বিপুল সম্পদ বৈষম্য শুধু অর্থনীতিকে নয়, রাজনীতি, মিডিয়া ও চিন্তাকেও প্রভাবিত করে। অনেকেই মনে করেন, বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ ও ক্ষমতা বিশ্বব্যবস্থাকে ‘অতি ধনীদের স্বার্থে’ পুনর্গঠন করছে। আবার অন্য একটি মত বলছে, বিলিয়নিয়ারেরা না থাকলে উদ্ভাবন, প্রযুক্তি ও অগ্রগতি থমকে যাবে। কারণ বৃহৎ বিনিয়োগই গড়ে তোলে নতুন সমাধান।
উদ্ভাবন কি থেমে যাবে
অ্যাডাম স্মিথ ইনস্টিটিউটের ম্যাক্সওয়েল মার্লোর মতে, বিলিয়নিয়ারদের বিলোপ করা হলে পশ্চিমা অর্থনীতি বিপর্যস্ত হবে। তাঁর দাবি, অধিকাংশ বিলিয়নিয়ার তাঁদের সম্পদের মালিক হয়েছেন সমাজের চাহিদামতো পণ্য ও প্রযুক্তি তৈরি করে। তাঁদের সম্পদ মূলত কোম্পানির শেয়ার, মেধাস্বত্ব অথবা সম্পত্তি—যা দিনে দিনে ওঠানামা করে। তাঁর মতে, এই ধনী ব্যক্তিদের প্রণোদনাই উদ্ভাবনে গতি আনে; তা না থাকলে উন্নয়ন থেমে যাবে।
যদি ন্যায্যভাবে সম্পদ বণ্টিত হতো
গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ট্যাক্স জাস্টিসের ডেরেজে আলেমায়েহুর মতে, শুধু বিলিয়নিয়ার কর আরোপ নয়—প্রশ্ন হচ্ছে, সেই কর কোথায় যাবে। দক্ষিণ বিশ্বের শ্রম ও সম্পদ থেকেই যে বিপুল সম্পদ তৈরি হয়, তাই তার ন্যায্য অংশ দক্ষিণেই ফিরে আসা উচিত। তিনি বলেন, বৈষম্য কমাতে শুধু অর্থ হস্তান্তর নয়, বৈশ্বিক আর্থিক কাঠামো পুনর্গঠন জরুরি; নইলে বৈষম্য আরও গভীর হবে।
বিধিনিষেধ কি বদলাতে হবে
ডেনিসন ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ফাদেল কাবুব বলেন, বিলিয়নিয়ারেরা আসলে ব্যর্থ নীতির ফল। সিস্টেম যেভাবে সাজানো, তাতে সম্পদ একদিকে কেন্দ্রীভূত হওয়াই স্বাভাবিক। তাঁর মতে, বিলিয়নিয়ার শ্রেণিকে বিলোপ করতে হলে আধুনিক অ্যান্টি ট্রাস্ট ও কঠোর বাজার নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন।
মিডিয়ার ওপর প্রভাব কমবে
গোল্ডস্মিথস বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডেস ফ্রিডম্যান মনে করেন, বিলিয়নিয়ারেরা পুরো মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম কিনে ফেলতে সক্ষম হওয়ায় তথ্যপ্রবাহ তাঁদের স্বার্থেই নিয়ন্ত্রিত হয়। যেমন—বেজোস বা ইলন মাস্কের গণমাধ্যম মালিকানা এই অঙ্গনের স্বাধীনতাকে দীর্ঘমেয়াদে প্রশ্নবিদ্ধ করে। তাই বিলিয়নিয়ার প্রভাব সীমিত হলে তথ্যের উৎসও আরও স্বাধীন হতে পারে।
চরম সম্পদ কি সত্যিই বিলোপ করা সম্ভব
বিশ্ব ইনইক্যুয়ালিটি ল্যাবের লুকাস শ্যানসেলের মতে, ইতিহাসে এর নজির আছে। উদাহরণস্বরূপ—রকেফেলারের একচেটিয়া সাম্রাজ্য ভেঙে দেওয়া, কিংবা রুজভেল্টের সময় সর্বোচ্চ করহার ৯৪ শতাংশে উন্নীত করা। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পানামা পেপারসের মতো ফাঁস যেমন দুর্দান্ত স্বচ্ছতা তৈরি করেছে, তেমনি তা পরিবর্তনের সুযোগও তৈরি করছে। তিনি মনে করেন, ধনীদের ওপর কর আরোপের মতো ধারণা এখন আর ‘যদি’ নয়, বরং ‘কখন’ করা হবে—এ প্রশ্নে এসে দাঁড়িয়েছে।
আল-জাজিরা অবলম্বনে

এই ধরনের হামলা প্রায়শই প্রতিশোধ হিসেবে চালানো হয়। যখন কোনো সামরিক ইউনিট আক্রান্ত হয়, তখন সেখানকার কর্মীরা পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে এমন অভিযান চালায়। তবে এই ধরনের অভিযান কখনোই নিশ্চিত করা হয় না। এর উদ্দেশ্য হলো অন্য দেশকে একটি বার্তা দেওয়া, কিন্তু এমন পরিস্থিতি তৈরি না করা যাতে তারা পাল্টা জবাব দিতে
০১ মে ২০২৫
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতদের মধ্যে ইউক্রেন শান্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনা হলেও প্রকাশ্যে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইউরি উশাকভ, এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন যে অমীমাংসিত ‘আঞ্চলিক সমস্যাই’ মূল বাধা। আর এই অঞ্চল আর কোনোটিই নয়, দোনেৎস্ক।
২০ ঘণ্টা আগে
জাপানের ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর গত অক্টোবরে দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন সানায়ে তাকাইচি। এরপরই তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত হন জাপানের নতুন ‘আয়রন লেডি’ বা লৌহমানবী’ হিসেবে।
১ দিন আগে
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠককে ঘিরে দিল্লিতে শুরু হয়েছে কূটনৈতিক প্রস্তুতি। চলমান ইউক্রেন যুদ্ধ, যুক্তরাষ্ট্রের চাপ এবং জ্বালানির বাজারে অস্থিরতার মধ্যেই এই শীর্ষ সম্মেলন হতে যাচ্ছে। অর্থনীতি, প্রতিরক্ষা এবং জ্বালানি—এই তিনটি খাত আলোচনার...
২ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

জাপানের ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর গত অক্টোবরে দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন সানায়ে তাকাইচি। এরপরই তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত হন জাপানের নতুন ‘আয়রন লেডি’ বা লৌহমানবী’ হিসেবে। এই পরিচয়টিকে তাকাইচি নিজেও গর্বের সঙ্গে গ্রহণ করেন। মার্গারেট থ্যাচারের অনুরাগী এই রক্ষণশীল নেতা ঘরোয়া অর্থনীতি থেকে শুরু করে পররাষ্ট্র ও নিরাপত্তা—সব ক্ষেত্রেই শক্ত অবস্থানের বার্তা দিয়েছেন।
তাকাইচির রাজনৈতিক পরিচয়ের মূল কেন্দ্রে রয়েছে ‘নিপ্পন কেইগি’ নামে জাপানের সবচেয়ে প্রভাবশালী জাতীয়তাবাদী গোষ্ঠী। এই সংগঠন জাপানের সংবিধানের যুদ্ধবিরোধী ৯ নম্বর অনুচ্ছেদ বাতিল, শক্তিশালী সামরিক বাহিনী গঠন এবং ঐতিহ্যবাদী মূল্যবোধে প্রত্যাবর্তনের পক্ষে। পূর্বসুরী শিনজো আবের মতো তাই তাকাইচিও জাপানকে স্বাভাবিক রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চান, যেখানে গোয়েন্দা সংস্থা, আধুনিক সেনাবাহিনী এবং কঠোর নিরাপত্তা আইন থাকবে।
অর্থনীতির ক্ষেত্রে তিনি জাতীয় শিল্পকে শক্তিশালী করা, প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বাড়ানো এবং রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ বৃদ্ধির পক্ষে। একই সঙ্গে কঠোর অভিবাসন নীতি ও রক্ষণশীল মূল্যবোধের প্রচারও তাঁকে ডানপন্থীদের মধ্যে জনপ্রিয় করেছে। তবে এই অভ্যন্তরীণ রাজনীতি এখন আন্তর্জাতিক উত্তেজনার সঙ্গে গেঁথে গেছে—বিশেষ করে, তাইওয়ান ইস্যুতে তাঁর অবস্থানের কারণে।
তাকাইচি ক্ষমতায় আসার পর থেকেই চীনের প্রতি কঠোর মনোভাব দেখাচ্ছেন। বেইজিংকে তিনি কৌশলগত হুমকি হিসেবে দেখেন এবং প্রতিরোধমূলক সামরিক ও কূটনৈতিক পদক্ষেপের পক্ষে জোর দিচ্ছেন। এরই অংশ হিসেবে অক্টোবরের শেষ দিকে তাঁর ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাক্ষাৎ দুই দেশের সম্পর্ককে নতুন সোনালি যুগে প্রবেশ করানোর আভাস দেয়। জাপান প্রতিরক্ষা ব্যয় জিডিপির কমপক্ষে ২ শতাংশে উন্নীত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, আর যুক্তরাষ্ট্র বিরল ধাতুর সরবরাহ নিশ্চিতকরণসহ অর্থনৈতিক সহায়তার ঘোষণা দেয়।
তবে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হলো তাইওয়ানের সঙ্গে তাকাইচির ঘনিষ্ঠতা। তিনি তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট লাই চিং-তের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন, যা চীনের কাছে স্পষ্ট উত্তেজনাকর পদক্ষেপ হিসেবে ধরা পড়েছে। আরও বিতর্ক সৃষ্টি হয় যখন তাকাইচি প্রকাশ্যে বলেন, তাইওয়ানের নিরাপত্তা জাপানের নিরাপত্তার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত। এমনকি তাইওয়ানে চীনা হামলার ক্ষেত্রে জাপানের আত্মরক্ষা বাহিনী হস্তক্ষেপ করতে পারে বলেও ইঙ্গিত দেন তিনি।
এ ক্ষেত্রে চীনের প্রতিক্রিয়াও ছিল কঠোর ও দ্রুত। তারা তাকাইচির বিরুদ্ধে ‘পুরোনো সামরিকতাবাদকে পুনরুজ্জীবিত করার’ অভিযোগ তোলে, রাষ্ট্রদূতকে তলব করে এবং জাতিসংঘে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ পাঠায়। পাশাপাশি সামুদ্রিক এলাকায় কোস্টগার্ডের টহল বাড়ায় চীন, জাপানি সামুদ্রিক পণ্যে সীমাবদ্ধতা আরোপের হুমকি দেয় এবং উত্তেজনাপূর্ণ নানা বিবৃতি দেয়।
এদিকে জাপানও পশ্চিম সীমান্তের ইয়োনাগুনি দ্বীপে বিমান প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনের ঘোষণা দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রও একই দ্বীপে সামরিক অবকাঠামো শক্তিশালী করছে। ফলে পরিস্থিতি আরও জটিল আকার ধারণ করছে।
তবে ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি তাকাইচিকে উত্তেজনা না বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন। কারণ আগামী এপ্রিলে তিনি বেইজিং সফর করতে চান।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তাকাইচির নেতৃত্বে জাপান নতুন ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতায় প্রবেশ করেছে। তাঁর দৃঢ় অবস্থান দেশকে হয় পুনরুত্থানের পথে নেবে—নয়তো চীন–তাইওয়ান উত্তেজনার কেন্দ্রে ঠেলে দেবে। ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে তিনি কোন পথে হাঁটবেন তার ওপর।

জাপানের ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর গত অক্টোবরে দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন সানায়ে তাকাইচি। এরপরই তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত হন জাপানের নতুন ‘আয়রন লেডি’ বা লৌহমানবী’ হিসেবে। এই পরিচয়টিকে তাকাইচি নিজেও গর্বের সঙ্গে গ্রহণ করেন। মার্গারেট থ্যাচারের অনুরাগী এই রক্ষণশীল নেতা ঘরোয়া অর্থনীতি থেকে শুরু করে পররাষ্ট্র ও নিরাপত্তা—সব ক্ষেত্রেই শক্ত অবস্থানের বার্তা দিয়েছেন।
তাকাইচির রাজনৈতিক পরিচয়ের মূল কেন্দ্রে রয়েছে ‘নিপ্পন কেইগি’ নামে জাপানের সবচেয়ে প্রভাবশালী জাতীয়তাবাদী গোষ্ঠী। এই সংগঠন জাপানের সংবিধানের যুদ্ধবিরোধী ৯ নম্বর অনুচ্ছেদ বাতিল, শক্তিশালী সামরিক বাহিনী গঠন এবং ঐতিহ্যবাদী মূল্যবোধে প্রত্যাবর্তনের পক্ষে। পূর্বসুরী শিনজো আবের মতো তাই তাকাইচিও জাপানকে স্বাভাবিক রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চান, যেখানে গোয়েন্দা সংস্থা, আধুনিক সেনাবাহিনী এবং কঠোর নিরাপত্তা আইন থাকবে।
অর্থনীতির ক্ষেত্রে তিনি জাতীয় শিল্পকে শক্তিশালী করা, প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বাড়ানো এবং রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ বৃদ্ধির পক্ষে। একই সঙ্গে কঠোর অভিবাসন নীতি ও রক্ষণশীল মূল্যবোধের প্রচারও তাঁকে ডানপন্থীদের মধ্যে জনপ্রিয় করেছে। তবে এই অভ্যন্তরীণ রাজনীতি এখন আন্তর্জাতিক উত্তেজনার সঙ্গে গেঁথে গেছে—বিশেষ করে, তাইওয়ান ইস্যুতে তাঁর অবস্থানের কারণে।
তাকাইচি ক্ষমতায় আসার পর থেকেই চীনের প্রতি কঠোর মনোভাব দেখাচ্ছেন। বেইজিংকে তিনি কৌশলগত হুমকি হিসেবে দেখেন এবং প্রতিরোধমূলক সামরিক ও কূটনৈতিক পদক্ষেপের পক্ষে জোর দিচ্ছেন। এরই অংশ হিসেবে অক্টোবরের শেষ দিকে তাঁর ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাক্ষাৎ দুই দেশের সম্পর্ককে নতুন সোনালি যুগে প্রবেশ করানোর আভাস দেয়। জাপান প্রতিরক্ষা ব্যয় জিডিপির কমপক্ষে ২ শতাংশে উন্নীত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, আর যুক্তরাষ্ট্র বিরল ধাতুর সরবরাহ নিশ্চিতকরণসহ অর্থনৈতিক সহায়তার ঘোষণা দেয়।
তবে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হলো তাইওয়ানের সঙ্গে তাকাইচির ঘনিষ্ঠতা। তিনি তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট লাই চিং-তের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন, যা চীনের কাছে স্পষ্ট উত্তেজনাকর পদক্ষেপ হিসেবে ধরা পড়েছে। আরও বিতর্ক সৃষ্টি হয় যখন তাকাইচি প্রকাশ্যে বলেন, তাইওয়ানের নিরাপত্তা জাপানের নিরাপত্তার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত। এমনকি তাইওয়ানে চীনা হামলার ক্ষেত্রে জাপানের আত্মরক্ষা বাহিনী হস্তক্ষেপ করতে পারে বলেও ইঙ্গিত দেন তিনি।
এ ক্ষেত্রে চীনের প্রতিক্রিয়াও ছিল কঠোর ও দ্রুত। তারা তাকাইচির বিরুদ্ধে ‘পুরোনো সামরিকতাবাদকে পুনরুজ্জীবিত করার’ অভিযোগ তোলে, রাষ্ট্রদূতকে তলব করে এবং জাতিসংঘে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ পাঠায়। পাশাপাশি সামুদ্রিক এলাকায় কোস্টগার্ডের টহল বাড়ায় চীন, জাপানি সামুদ্রিক পণ্যে সীমাবদ্ধতা আরোপের হুমকি দেয় এবং উত্তেজনাপূর্ণ নানা বিবৃতি দেয়।
এদিকে জাপানও পশ্চিম সীমান্তের ইয়োনাগুনি দ্বীপে বিমান প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনের ঘোষণা দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রও একই দ্বীপে সামরিক অবকাঠামো শক্তিশালী করছে। ফলে পরিস্থিতি আরও জটিল আকার ধারণ করছে।
তবে ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি তাকাইচিকে উত্তেজনা না বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন। কারণ আগামী এপ্রিলে তিনি বেইজিং সফর করতে চান।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তাকাইচির নেতৃত্বে জাপান নতুন ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতায় প্রবেশ করেছে। তাঁর দৃঢ় অবস্থান দেশকে হয় পুনরুত্থানের পথে নেবে—নয়তো চীন–তাইওয়ান উত্তেজনার কেন্দ্রে ঠেলে দেবে। ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে তিনি কোন পথে হাঁটবেন তার ওপর।

এই ধরনের হামলা প্রায়শই প্রতিশোধ হিসেবে চালানো হয়। যখন কোনো সামরিক ইউনিট আক্রান্ত হয়, তখন সেখানকার কর্মীরা পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে এমন অভিযান চালায়। তবে এই ধরনের অভিযান কখনোই নিশ্চিত করা হয় না। এর উদ্দেশ্য হলো অন্য দেশকে একটি বার্তা দেওয়া, কিন্তু এমন পরিস্থিতি তৈরি না করা যাতে তারা পাল্টা জবাব দিতে
০১ মে ২০২৫
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতদের মধ্যে ইউক্রেন শান্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনা হলেও প্রকাশ্যে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইউরি উশাকভ, এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন যে অমীমাংসিত ‘আঞ্চলিক সমস্যাই’ মূল বাধা। আর এই অঞ্চল আর কোনোটিই নয়, দোনেৎস্ক।
২০ ঘণ্টা আগে
বিশ্বজুড়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন উঠে আসছে—‘যদি বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ সীমিত করা হয়, অথবা এই শ্রেণিটিকেই সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়, তবে কী ঘটবে?’ পশ্চিমা দেশগুলোতে চরম ধনী বা বিলিয়নিয়ারদের সংখ্যা ও প্রভাব বাড়তে থাকায় এখন এই প্রশ্ন আরও জোরালো হয়েছে।
১ দিন আগে
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠককে ঘিরে দিল্লিতে শুরু হয়েছে কূটনৈতিক প্রস্তুতি। চলমান ইউক্রেন যুদ্ধ, যুক্তরাষ্ট্রের চাপ এবং জ্বালানির বাজারে অস্থিরতার মধ্যেই এই শীর্ষ সম্মেলন হতে যাচ্ছে। অর্থনীতি, প্রতিরক্ষা এবং জ্বালানি—এই তিনটি খাত আলোচনার...
২ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠককে ঘিরে দিল্লিতে শুরু হয়েছে কূটনৈতিক প্রস্তুতি। চলমান ইউক্রেন যুদ্ধ, যুক্তরাষ্ট্রের চাপ এবং জ্বালানির বাজারে অস্থিরতার মধ্যেই এই শীর্ষ সম্মেলন হতে যাচ্ছে। অর্থনীতি, প্রতিরক্ষা এবং জ্বালানি—এই তিনটি খাত আলোচনার কেন্দ্রে থাকবে বলে দুই দেশই নিশ্চিত করেছে।
রাষ্ট্রীয় সফরে বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) ভারতে পৌঁছে পরদিন শুক্রবার মোদির সঙ্গে বৈঠকে বসবেন পুতিন। এই বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের অগ্রগতি পর্যালোচনা ছাড়াও নতুন কয়েকটি আন্তদপ্তর ও বাণিজ্যিক চুক্তি স্বাক্ষরের সম্ভাবনা রয়েছে। রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখা এবং একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কৌশলগত অংশীদারত্ব ধরে রাখতে ভারতের নীতির জন্য এই বৈঠক একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রাশিয়া থেকে ডিসকাউন্টে ভারতের তেল কেনা দীর্ঘদিন ধরেই ওয়াশিংটনকে অসন্তুষ্ট করে আসছে। এই অসন্তুষ্টি থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি ভারতীয় পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন, যা মোট শুল্ককে ৫০ শতাংশে উন্নীত করেছে। তবে ভারত বলছে, তারা আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার বিরোধী নয়, কিন্তু ১৪০ কোটি মানুষের জ্বালানি চাহিদা মেটাতেই বাধ্য হয়ে রাশিয়া থেকে তেল আমদানি করা হচ্ছে। নতুন মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে ‘রসনেফত’ ও ‘লুকওইল’ এর মতো রাশিয়ার কিছু কোম্পানি থেকে ভারত তেল কিনবে না বলে জানিয়েছে। তবে নিষেধাজ্ঞামুক্ত রুশ সরবরাহকারীদের সঙ্গে বাণিজ্য চালু থাকবে।
পুতিনের এই সফরে দুই দেশের অর্থনৈতিক সহযোগিতার ওপর জোর দেওয়া হবে। ভারত রাশিয়ায় ওষুধ, কৃষিপণ্য ও টেক্সটাইল রপ্তানি বাড়াতে চায় এবং পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে শুল্কমুক্ত সুবিধা প্রদানের অনুরোধ জানাবে। এ ছাড়া সার সরবরাহের দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি এবং রাশিয়ায় ভারতীয় দক্ষ জনশক্তির নিরাপদ ও নিয়মিত অভিবাসন নিয়ে আলোচনা এগোতে পারে। দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য, সমুদ্র পরিবহন, স্বাস্থ্যসেবা ও গণমাধ্যম সহযোগিতা বিষয়ক নথিপত্র চূড়ান্তের কাজও চলছে।
বুধবার এই বিষয়ে যুক্তরাজ্যভিত্তিক ইনডিপেনডেন্টের এক নিবন্ধে দাবি করা হয়েছে, জ্বালানি সহযোগিতাই পুতিন-মোদি আলোচনার বড় অংশ দখল করবে। ভারতের ফার ইস্টে বিনিয়োগ, রাশিয়ার সঙ্গে বেসামরিক পারমাণবিক প্রকল্প এবং কুদানকুলাম প্রকল্পের সম্প্রসারণ নিয়ে অগ্রগতি পর্যালোচনা হবে। স্থানীয়ভাবে যন্ত্রাংশ উৎপাদন এবং তৃতীয় দেশে যৌথ পারমাণবিক প্রকল্প বাস্তবায়নের সম্ভাবনাও খতিয়ে দেখা হবে।
প্রতিরক্ষা সহযোগিতা এই সফরের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। ২০১৮ সালের ৫.৪ বিলিয়ন ডলারের চুক্তির আওতায় ভারতের হাতে ইতিমধ্যে রাশিয়ার তিনটি এস-৪০০ স্কোয়াড্রন এসেছে। যুদ্ধজনিত কারণে বাকিগুলোর সরবরাহে যুদ্ধজনিত বিলম্ব হচ্ছে। ভারত এই সরবরাহ দ্রুত নিশ্চিত করতে চাপ দেবে। পাশাপাশি আরও এস-৪০০ কেনার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া হয়নি, যদিও বৈঠক থেকে কোনো ঘোষণা হওয়ার সম্ভাবনা কম। রুশ নির্মিত এসইউ-৩০ এমকেআই যুদ্ধবিমান আপগ্রেড, অস্ত্র সরবরাহ দ্রুততর করা এবং যৌথ সামরিক মহড়ায় সমন্বয় জোরদার করার বিষয়েও আলোচনা হবে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভারত বহুজাতিক অস্ত্র সরবরাহকারীদের দিকে নজর বাড়ালেও রাশিয়া এখনো তাদের সবচেয়ে বড় প্রতিরক্ষা অংশীদার। পুতিনের সফরকে সেই সম্পর্কটি আরও দৃঢ় করার বড় সুযোগ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠককে ঘিরে দিল্লিতে শুরু হয়েছে কূটনৈতিক প্রস্তুতি। চলমান ইউক্রেন যুদ্ধ, যুক্তরাষ্ট্রের চাপ এবং জ্বালানির বাজারে অস্থিরতার মধ্যেই এই শীর্ষ সম্মেলন হতে যাচ্ছে। অর্থনীতি, প্রতিরক্ষা এবং জ্বালানি—এই তিনটি খাত আলোচনার কেন্দ্রে থাকবে বলে দুই দেশই নিশ্চিত করেছে।
রাষ্ট্রীয় সফরে বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) ভারতে পৌঁছে পরদিন শুক্রবার মোদির সঙ্গে বৈঠকে বসবেন পুতিন। এই বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের অগ্রগতি পর্যালোচনা ছাড়াও নতুন কয়েকটি আন্তদপ্তর ও বাণিজ্যিক চুক্তি স্বাক্ষরের সম্ভাবনা রয়েছে। রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখা এবং একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কৌশলগত অংশীদারত্ব ধরে রাখতে ভারতের নীতির জন্য এই বৈঠক একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রাশিয়া থেকে ডিসকাউন্টে ভারতের তেল কেনা দীর্ঘদিন ধরেই ওয়াশিংটনকে অসন্তুষ্ট করে আসছে। এই অসন্তুষ্টি থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি ভারতীয় পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন, যা মোট শুল্ককে ৫০ শতাংশে উন্নীত করেছে। তবে ভারত বলছে, তারা আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার বিরোধী নয়, কিন্তু ১৪০ কোটি মানুষের জ্বালানি চাহিদা মেটাতেই বাধ্য হয়ে রাশিয়া থেকে তেল আমদানি করা হচ্ছে। নতুন মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে ‘রসনেফত’ ও ‘লুকওইল’ এর মতো রাশিয়ার কিছু কোম্পানি থেকে ভারত তেল কিনবে না বলে জানিয়েছে। তবে নিষেধাজ্ঞামুক্ত রুশ সরবরাহকারীদের সঙ্গে বাণিজ্য চালু থাকবে।
পুতিনের এই সফরে দুই দেশের অর্থনৈতিক সহযোগিতার ওপর জোর দেওয়া হবে। ভারত রাশিয়ায় ওষুধ, কৃষিপণ্য ও টেক্সটাইল রপ্তানি বাড়াতে চায় এবং পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে শুল্কমুক্ত সুবিধা প্রদানের অনুরোধ জানাবে। এ ছাড়া সার সরবরাহের দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি এবং রাশিয়ায় ভারতীয় দক্ষ জনশক্তির নিরাপদ ও নিয়মিত অভিবাসন নিয়ে আলোচনা এগোতে পারে। দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য, সমুদ্র পরিবহন, স্বাস্থ্যসেবা ও গণমাধ্যম সহযোগিতা বিষয়ক নথিপত্র চূড়ান্তের কাজও চলছে।
বুধবার এই বিষয়ে যুক্তরাজ্যভিত্তিক ইনডিপেনডেন্টের এক নিবন্ধে দাবি করা হয়েছে, জ্বালানি সহযোগিতাই পুতিন-মোদি আলোচনার বড় অংশ দখল করবে। ভারতের ফার ইস্টে বিনিয়োগ, রাশিয়ার সঙ্গে বেসামরিক পারমাণবিক প্রকল্প এবং কুদানকুলাম প্রকল্পের সম্প্রসারণ নিয়ে অগ্রগতি পর্যালোচনা হবে। স্থানীয়ভাবে যন্ত্রাংশ উৎপাদন এবং তৃতীয় দেশে যৌথ পারমাণবিক প্রকল্প বাস্তবায়নের সম্ভাবনাও খতিয়ে দেখা হবে।
প্রতিরক্ষা সহযোগিতা এই সফরের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। ২০১৮ সালের ৫.৪ বিলিয়ন ডলারের চুক্তির আওতায় ভারতের হাতে ইতিমধ্যে রাশিয়ার তিনটি এস-৪০০ স্কোয়াড্রন এসেছে। যুদ্ধজনিত কারণে বাকিগুলোর সরবরাহে যুদ্ধজনিত বিলম্ব হচ্ছে। ভারত এই সরবরাহ দ্রুত নিশ্চিত করতে চাপ দেবে। পাশাপাশি আরও এস-৪০০ কেনার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া হয়নি, যদিও বৈঠক থেকে কোনো ঘোষণা হওয়ার সম্ভাবনা কম। রুশ নির্মিত এসইউ-৩০ এমকেআই যুদ্ধবিমান আপগ্রেড, অস্ত্র সরবরাহ দ্রুততর করা এবং যৌথ সামরিক মহড়ায় সমন্বয় জোরদার করার বিষয়েও আলোচনা হবে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভারত বহুজাতিক অস্ত্র সরবরাহকারীদের দিকে নজর বাড়ালেও রাশিয়া এখনো তাদের সবচেয়ে বড় প্রতিরক্ষা অংশীদার। পুতিনের সফরকে সেই সম্পর্কটি আরও দৃঢ় করার বড় সুযোগ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

এই ধরনের হামলা প্রায়শই প্রতিশোধ হিসেবে চালানো হয়। যখন কোনো সামরিক ইউনিট আক্রান্ত হয়, তখন সেখানকার কর্মীরা পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে এমন অভিযান চালায়। তবে এই ধরনের অভিযান কখনোই নিশ্চিত করা হয় না। এর উদ্দেশ্য হলো অন্য দেশকে একটি বার্তা দেওয়া, কিন্তু এমন পরিস্থিতি তৈরি না করা যাতে তারা পাল্টা জবাব দিতে
০১ মে ২০২৫
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতদের মধ্যে ইউক্রেন শান্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনা হলেও প্রকাশ্যে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইউরি উশাকভ, এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন যে অমীমাংসিত ‘আঞ্চলিক সমস্যাই’ মূল বাধা। আর এই অঞ্চল আর কোনোটিই নয়, দোনেৎস্ক।
২০ ঘণ্টা আগে
বিশ্বজুড়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন উঠে আসছে—‘যদি বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ সীমিত করা হয়, অথবা এই শ্রেণিটিকেই সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়, তবে কী ঘটবে?’ পশ্চিমা দেশগুলোতে চরম ধনী বা বিলিয়নিয়ারদের সংখ্যা ও প্রভাব বাড়তে থাকায় এখন এই প্রশ্ন আরও জোরালো হয়েছে।
১ দিন আগে
জাপানের ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর গত অক্টোবরে দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন সানায়ে তাকাইচি। এরপরই তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত হন জাপানের নতুন ‘আয়রন লেডি’ বা লৌহমানবী’ হিসেবে।
১ দিন আগে