Ajker Patrika

আল-জাজিরার বিশ্লেষণ /যুক্তরাষ্ট্রের ‘যুদ্ধ ক্ষমতা আইন’ কি ট্রাম্পকে আটকাতে পারবে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২০ জুন ২০২৫, ১৭: ৫৭
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: সিএএনএন
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: সিএএনএন

যুক্তরাষ্ট্র ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধে অংশ নেবে কি না, তা নিয়ে গত সপ্তাহ থেকে চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা। গত বুধবার হোয়াইট হাউসে মার্কিন প্রেসিডেন্টকে সাংবাদিকেরা এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি স্বভাবসুলভ জবাব দেন, ‘আমরা যুদ্ধে যোগ দিতেও পারি, না-ও পারি’।

ট্রাম্প প্রশাসনের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা এবং ট্রাম্পের মিত্ররা কয়েক দিন ধরে বেশ জোর দিয়ে বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র এই যুদ্ধে অংশ নেবে কি না, সেই সিদ্ধান্ত ট্রাম্পের এবং ট্রাম্পের দূরদর্শিতার ওপর তাঁদের ভরসা রয়েছে। এর আগে, গত মঙ্গলবার সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস বলেন, ‘এখন থেকে কী হবে, সে বিষয়ে ট্রাম্পই এককভাবে দিকনির্দেশনা দেবেন।’

তবে যুদ্ধবিরোধী সমর্থকেরা যুক্তি দিচ্ছেন, যুদ্ধে জড়ানোর বিষয়টি ট্রাম্পের একক সিদ্ধান্ত হতে পারে না। সংবিধান অনুযায়ী যুদ্ধ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার কেবল কংগ্রেসের। ট্রাম্প ক্রমেই যুদ্ধে জড়িত হওয়ার ইঙ্গিত দিচ্ছেন দেখে কিছু আইনপ্রণেতা এখন যুদ্ধ ক্ষমতা আইন (ওয়ার পাওয়ার অ্যাক্ট) অনুযায়ী কংগ্রেসের সেই ক্ষমতা পুনঃপ্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিচ্ছেন।

এমন পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠছে, আইন অনুযায়ী যুদ্ধ ঘোষণার জন্য কী নিয়ম মানতে হবে প্রশাসনকে? কংগ্রেসের সম্মতি ছাড়াই ট্রাম্প কি যুক্তরাষ্ট্রকে এই যুদ্ধে জড়াতে পারেন?

মার্কিন সংবিধান কী বলে

মার্কিন সংবিধানের প্রথম অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, যুদ্ধ ঘোষণা করার ক্ষমতা কংগ্রেসের। অনেক আইনজীবী এটিকে এভাবে ব্যাখ্যা করেন, দেশের সামরিক হস্তক্ষেপের সিদ্ধান্ত নেওয়ার চূড়ান্ত অধিকার কংগ্রেসের, প্রেসিডেন্টের নয়। অর্থাৎ, যুদ্ধের ব্যাপারে প্রধান নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান হচ্ছে আইন প্রণয়নকারী শাখা এবং চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন আইনপ্রণেতারা।

যুক্তরাষ্ট্র সর্বশেষ কবে আনুষ্ঠানিকভাবে যুদ্ধ ঘোষণা করেছিল

১৯৪২ সালে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে সবশেষ যুদ্ধ ঘোষণা করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। এরপর থেকে আর আনুষ্ঠানিকভাবে যুদ্ধ ঘোষণা করেনি দেশটি। ঘোষণা না করেই কোরিয়া, ভিয়েতনাম, আফগানিস্তান ও ইরাক যুদ্ধে জড়িয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ ছাড়া বহু দেশে সামরিক হামলা ও হস্তক্ষেপ চালিয়েছে দেশটি। উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে সার্বিয়া, লিবিয়া, সোমালিয়া ও ইয়েমেনের নাম।

যুদ্ধ বিষয়ে প্রেসিডেন্টের কী ক্ষমতা আছে

মার্কিন সংবিধানের দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, প্রেসিডেন্ট হলেন সশস্ত্র বাহিনীর ‘সর্বাধিনায়ক’ (কমান্ডার চিফ)। এর ফলে প্রেসিডেন্ট হামলা বা আসন্ন হুমকির জবাবে সামরিক বাহিনীকে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিতে পারেন। তবে এর বাইরের যুদ্ধসংক্রান্ত ক্ষমতা কংগ্রেস দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। সংবিধানের দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ প্রেসিডেন্টকে কেবল তখনই সামরিক অভিযান পরিচালনার ক্ষমতা দেয়, যখন কংগ্রেস আনুষ্ঠানিকভাবে যুদ্ধ অনুমোদন করে। আইনপ্রণেতাদের নির্ধারিত নীতিমালার অধীনে প্রেসিডেন্টকে সেনাবাহিনী ব্যবস্থাপনা করতে হয়। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে একের পর এক মার্কিন প্রেসিডেন্ট এই ‘জরুরি ভিত্তিতে সামরিক বাহিনী পরিচালনার ক্ষমতা’র একপ্রকার অপব্যবহার করেই অন্য দেশে হামলা চালিয়েছেন। এসব হামলাকে তাঁরা আত্মরক্ষামূলক বা হুমকির জবাব হিসেবে উপস্থাপন করেছেন।

যুক্তরাষ্ট্র আনুষ্ঠানিক যুদ্ধ ঘোষণা না করেও কীভাবে ইরাকসহ বিভিন্ন দেশে সেনা পাঠিয়েছে

২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার পর, কংগ্রেস দ্রুত একটি আইন পাস করে, যা ‘অথরাইজেশন ফর ইউজ অব মিলিটারি ফোর্স’ (এইউএমএফ) নামে পরিচিত। এর মাধ্যমে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশকে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধে ব্যাপক সামরিক পদক্ষেপ নেওয়ার অধিকার দেওয়া হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ২০০২ সালে আরেকটি এইউএমএফ পাস হয়, যা যুক্তরাষ্ট্রকে ইরাকের সাদ্দাম হোসেন সরকারের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান চালানোর অনুমতি দেয়। এই অনুমোদনকে ভিত্তি করে ২০০৩ সালে যুক্তরাষ্ট্র ইরাকে সামরিক অভিযান চালায়।

এই দুটি অনুমোদন এখনো বলবৎ আছে এবং পরবর্তী প্রেসিডেন্টরাও কংগ্রেসের অনুমোদন ছাড়াই বিভিন্ন সামরিক হস্তক্ষেপে তা ব্যবহার করে চলেছেন। উদাহরণস্বরূপ, ২০২০ সালে ইরাকের বাগদাদে ইরানের শীর্ষ জেনারেল কাসেম সোলেইমানিকে হত্যার নির্দেশ দেন তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প—এবং এই অভিযান পরিচালিত হয় ২০০২ সালের ইরাক এইউএমএফের অধীনে। ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদকালে আশঙ্কা দেখা দেয়, তিনি ২০০১ সালের এইউএমএফ আইনের অপব্যাখ্যা করে ইরানে আক্রমণের সিদ্ধান্ত নিতে পারেন এই দাবি করে যে তেহরান আল-কায়েদার সহযোগী। যদিও এর পক্ষে কোনো শক্তিশালী প্রমাণ ছিল না।

যুদ্ধ ঘোষণার ক্ষমতা আইন (ওয়ার পাওয়ার অ্যাক্ট) কখন পাস হয়

যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানে যুদ্ধসংক্রান্ত ক্ষমতার বিষয়টি নির্ধারণ করে দেওয়া থাকলেও সময়ের সঙ্গে প্রেসিডেন্টরা নানা উপায়ে কংগ্রেসকে পাশ কাটিয়ে সামরিক অভিযান চালিয়ে আসছেন। এই প্রেক্ষাপটে, ১৯৭৩ সালে—ভিয়েতনাম যুদ্ধ ও এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে দীর্ঘকালীন মার্কিন হস্তক্ষেপের পর—যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস ‘ওয়ার পাওয়ার্স রেজ্যুলেশন’ নামের একটি আইন পাস করে। এর লক্ষ্য ছিল প্রেসিডেন্টের যুদ্ধ-সম্পর্কিত ক্ষমতা সীমিত করা এবং কংগ্রেসের কর্তৃত্ব পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা। এই আইন পাস করা হয় প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সনের গোপনে কম্বোডিয়ায় বোমা বর্ষণের পর, যা হাজার হাজার বেসামরিক মানুষের প্রাণহানির কারণ হয়েছিল এবং যুক্তরাষ্ট্রে ব্যাপক বিক্ষোভের জন্ম দেয়। আইনটির উদ্দেশ্য ছিল—এ ধরনের গোপন ও একতরফা সামরিক অভিযানে প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণে আনা।

ওয়ার পাওয়ার্স অ্যাক্টের প্রধান বিধান

১৯৭৩ সালে যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেস প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সনের ভেটো অগ্রাহ্য করে পাস করে ওয়ার পাওয়ার্স অ্যাক্ট বা ওয়ার পাওয়ার্স রেজ্যুলেশন। এই আইনের মূল লক্ষ্য ছিল যুদ্ধসংক্রান্ত বিষয়ে প্রেসিডেন্টের একতরফা সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা সীমিত করা এবং কংগ্রেসের ভূমিকা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা।

আইন অনুযায়ী, যদি কংগ্রেস আনুষ্ঠানিকভাবে যুদ্ধ ঘোষণা না করে, তাহলে প্রেসিডেন্ট সেনা মোতায়েনের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে কংগ্রেসকে তা অবহিত করতে বাধ্য। সেনা মোতায়েনের এই অনুমোদন সর্বোচ্চ ৬০ দিন পর্যন্ত কার্যকর থাকে, এবং বিশেষ প্রয়োজন হলে আরও ৩০ দিন সময় বাড়ানো যেতে পারে। তবে এই সময়সীমার পর কংগ্রেসের অনুমতি ছাড়া ওই সামরিক উপস্থিতি অব্যাহত রাখা যাবে না। আইনটিতে আরও বলা হয়েছে, বিদেশে মার্কিন সেনা মোতায়েনের আগে প্রেসিডেন্টকে কংগ্রেসের সঙ্গে সর্বোচ্চ মাত্রায় যোগাযোগ করতে হবে এবং কংগ্রেসের পরামর্শ নিতে হবে।

এসব বিধানের মাধ্যমে ওয়ার পাওয়ার্স অ্যাক্ট কংগ্রেসের সাংবিধানিক কর্তৃত্বকে সুরক্ষিত করতে চায় এবং যুদ্ধসংক্রান্ত সিদ্ধান্তের ওপর প্রেসিডেন্টের একচেটিয়া প্রভাব রোধ করে।

ওয়ার পাওয়ার্স অ্যাক্ট কেন আবার আলোচনায়

ইরানে মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপের সম্ভাবনা ক্রমশ বাড়তে থাকায় নতুন করে আলোচনায় ওয়ার পাওয়ার্স অ্যাক্ট। গত সোমবার ডেমোক্র্যাট সিনেটর টিম কেইন একটি প্রস্তাব উত্থাপন করেছেন—প্রস্তাবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে ইরানের বিরুদ্ধে সামরিক হামলা চালাতে হলে কংগ্রেসের পূর্বানুমতি নিতে বাধ্য করার কথা বলা হয়। পরদিন, প্রতিনিধি পরিষদেও এমন একটি বিল উত্থাপন করেন রিপাবলিকান থমাস ম্যাসি এবং ডেমোক্র্যাট রো খন্না। এদিকে আরও একটি বিল উত্থাপন করেন বার্নি স্যান্ডার্স। ‘নো ওয়ার অ্যাগেইনস্ট ইরান অ্যাক্ট’ নামে তোলা ওই প্রস্তাবে তিনি দাবি করেন, ইরানের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপ হিসেবে কোনো ধরনের অর্থ ব্যয় করতে পারবে না যুক্তরাষ্ট্র। তবে এসব প্রচেষ্টা সত্ত্বেও যেহেতু কংগ্রেস বর্তমানে রিপাবলিকানদের নিয়ন্ত্রণে, তাই এসব বিল পাস হওয়ার সম্ভাবনা অত্যন্ত কম।

সংবিধানেই তো স্পষ্টভাবে বলা আছে, তবু নতুন আইন কেন দরকার?

যদিও মার্কিন সংবিধানের প্রথম অনুচ্ছেদে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, যুদ্ধ ঘোষণার অধিকার কেবল কংগ্রেসেরই আছে, বাস্তবে প্রেসিডেন্ট ও কংগ্রেসের মধ্যে এই ক্ষমতা নিয়ে বারবার দ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছে।

সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য উদাহরণটি ১৮৬১ সালের গৃহযুদ্ধের শুরুতে দেখা যায়। কংগ্রেস তখনো দক্ষিণের বিদ্রোহী রাজ্যগুলোর বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিকভাবে যুদ্ধ ঘোষণা করেনি, কিন্তু প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকন দ্রুত পদক্ষেপ হিসেবে দক্ষিণাঞ্চলের বন্দরগুলো অবরোধ করে দেন। পরে সুপ্রিম কোর্ট সিদ্ধান্ত দেন, প্রেসিডেন্ট হঠাৎ কোনো আক্রমণ হলে তা প্রতিহত করার জন্য এমন পদক্ষেপ নিতে পারেন—অর্থাৎ, তা ছিল সংবিধানসম্মত।

ইতিহাসে ১১ বার কংগ্রেস আনুষ্ঠানিকভাবে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। বাকি সময়ে তারা সাধারণত ‘রেজ্যুলেশন’ বা ‘AUMF’-এর মতো আইন পাস করে প্রেসিডেন্টকে সামরিক পদক্ষেপের অনুমোদন দিয়েছে। ফলে প্রেসিডেন্ট কংগ্রেসকে পাশ কাটিয়ে নয়, বরং কংগ্রেসের বিস্তৃত অনুমোদনের ভিত্তিতে যুদ্ধ পরিচালনা করে থাকেন। তাই নতুন একটি আইন জরুরি হয়ে পড়েছে।

ওয়ার পাওয়ার্স অ্যাক্ট কার্যকর কতটা

১৯৭৩ সালে আইনটি পাস হওয়ার পর থেকে সমালোচকেরা বলে আসছেন, এটি কার্যত অচল! এটি অনেকটা কংগ্রেসের অসন্তোষ জানানোর রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হয়, কিন্তু প্রেসিডেন্টকে আটকানোর মতো যথেষ্ট শক্তিশালী নয়।

আশির দশকে, সিনেটর জো বাইডেন নেতৃত্বাধীন একটি উপকমিটি এই আইনকে উদ্দেশ্য পূরণে ব্যর্থ বলে মন্তব্য করেছিলেন। কংগ্রেসের অনুমোদন ছাড়া পরিচালিত যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রকে টেনে আনার চেষ্টা বন্ধে যেকোনো রেভল্যুশনে প্রেসিডেন্ট ভেটো দিতে পারেন—আর তা ঠেকাতে হাউস ও সিনেটে দুই-তৃতীয়াংশ ভোট দরকার হয়, যা সচরাচর পাওয়া যায় না।

তবে অনেক বিশ্লেষক মনে করেন, এই আইন কংগ্রেসের অধিকার রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে এবং প্রেসিডেন্টকে সেনা মোতায়েনের পর দ্রুত রিপোর্ট দেওয়ার একটি কাঠামো বজায় রেখেছে। ১৯৭৩ সালের পর থেকে এখন পর্যন্ত প্রেসিডেন্টরা কংগ্রেসে ১০০-র বেশি রিপোর্ট জমা দিয়েছেন, যা স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির কিছুটা ধারণা দেয়।

প্রেসিডেন্টদের দৃষ্টিভঙ্গি

ওয়ার পাওয়ার্স অ্যাক্টের সবচেয়ে জোরালো বিরোধিতা করেছিলেন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন। কিন্তু তিনি একমাত্র নন। আধুনিক আমেরিকান প্রেসিডেন্টরাও প্রায়শই এই আইনের আওতায় বাধ্যবাধকতাগুলো এড়িয়ে যান এবং আইনকে অতিক্রম করার জন্য বিভিন্ন সৃজনশীল আইনি যুক্তি ব্যবহার করেন। বিশেষ করে ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরের সন্ত্রাসী হামলার পর থেকে নির্বাহী শাখা তাঁর সামরিক ক্ষমতা ব্যাপকভাবে সম্প্রসারিত করেছে। ২০০১ সালের (এইউএমএফ) এবং ২০০২ সালের ইরাক যুদ্ধের অনুমোদন আইনটি ব্যবহার করে কমপক্ষে ১৯টি দেশে বিভিন্ন ‘সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর’ বিরুদ্ধে হামলা চালানো হয়েছে।

ফ্রেন্ডস কমিটি অন ন্যাশনাল লেজিসলেশনের বৈদেশিক নীতিবিষয়ক আইন পরিচালক হিদার ব্র্যান্ডন-স্মিথ জানান, এই অনুমোদন এমন গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হয়েছে, যাদের ৯/১১ হামলার সঙ্গে কোনো সম্পর্কই ছিল না, যেমন আইএসআইএস। আন্তর্জাতিক থিংকট্যাংক ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপ এই আইন পর্যালোচনা বা বাতিলের আহ্বান করলেও বিভিন্ন প্রশাসন এ ব্যাপারে তেমন আগ্রহ দেখায়নি।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কংগ্রেস কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে, যেমন ২০২৩ সালে সিনেট ‘২০০১ সালের এইউএমএফ’ বাতিলের পক্ষে ভোট দিয়েছে, কিন্তু সেটি মূলত প্রতীকী হিসেবে দেখা হয়। ২০২১ সালে হাউস ‘২০০২ সালের এইউএমএফ’ বাতিলের পক্ষে ভোট দিয়েও উভয় আইন এখনো কার্যকর অবস্থায় রয়েছে।

বিদ্যমান আইন ট্রাম্পকে ইরানের যুদ্ধে জড়াতে বাধা দিতে পারবে কি

এটি সময়ের ব্যাপার, তবে বর্তমানে তা খুব সম্ভব বলে মনে করছেন না অনেকে। ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে কংগ্রেস প্রথমবারের মতো প্রেসিডেন্টের যুদ্ধ ক্ষমতা সীমাবদ্ধ করার চেষ্টা করেছিল। ২০১৯ সালে কংগ্রেস সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের ইয়েমেন যুদ্ধের প্রতি আমেরিকার সমর্থন বন্ধের বিল পাস করেছিল, কিন্তু তাতে ভেটো দেন ট্রাম্প।

এক বছর পর, ২০২০ সালে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যখন ড্রোন হামলায় ইরানের শীর্ষ জেনারেল কাসেম সোলেইমানিকে হত্যা করেন, তখন কংগ্রেসের দুই কক্ষই একটি আইন পাস করে—যার উদ্দেশ্য ছিল ইরানের বিরুদ্ধে যেকোনো সামরিক পদক্ষেপের আগে প্রেসিডেন্টকে কংগ্রেসের অনুমতি নিতে বাধ্য করা। কিন্তু ট্রাম্প সেই আইনে ভেটো দেন। আর কংগ্রেসে রিপাবলিকানদের সমর্থন এত কম ছিল যে সেই ভেটো ঠেকানো যায়নি।

এখন ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে কংগ্রেসের দুই কক্ষই রিপাবলিকানদের নিয়ন্ত্রণে। ফলে প্রেসিডেন্টের যুদ্ধ ক্ষমতা সীমিত করার নতুন কোনো আইন পাস করাটা আরও কঠিন হয়ে পড়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

দোনেৎস্ক: শান্তি-আলোচনার টেবিলে পুতিন-জেলেনস্কির অন্তিম বাধা, এর গুরুত্ব কতটা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে এখন মূল আলোচনার ইস্যু হয়ে আছে দোনেৎস্ক অঞ্চলের ২০ শতাংশ ভূমি ছাড়ের বিষয়টি। ছবি: সংগৃহীত
ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে এখন মূল আলোচনার ইস্যু হয়ে আছে দোনেৎস্ক অঞ্চলের ২০ শতাংশ ভূমি ছাড়ের বিষয়টি। ছবি: সংগৃহীত

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতদের মধ্যে ইউক্রেন শান্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনা হলেও প্রকাশ্যে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইউরি উশাকভ, এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন যে অমীমাংসিত ‘আঞ্চলিক সমস্যাই’ মূল বাধা। আর এই অঞ্চল আর কোনোটিই নয়, দোনেৎস্ক।

উশাকভ মূলত ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় দোনেৎস্কের সম্পূর্ণ এলাকার ওপর রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণ দাবির কথাই বলেছিলেন। পুতিন ইউক্রেনে হাজার হাজার সৈন্য পাঠানোর প্রায় ৪ বছর পরও এবং দোনেৎস্কে রাশিয়া সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদী বিদ্রোহের এক দশকেরও বেশি সময় পর অঞ্চলটির কিছু অংশ এখনো ইউক্রেনের হাতে আছে।

প্রায় সব দেশই দোনেৎস্ককে ইউক্রেনের অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। কিন্তু এটি ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের চারটি অঞ্চলের মধ্যে একটি, যা মস্কো ২০২২ সালে একটি গণভোটের পর সংযুক্ত করার কথা ঘোষণা করে। কিয়েভ ও পশ্চিমা দেশগুলো সেই গণভোটকে ‘প্রহসন’ বলে বাতিল করে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ফক্স নিউজকে বলেছিলেন, যুদ্ধটি এখন দোনেৎস্কের সেই ২০ শতাংশ বা ৫ হাজার বর্গকিলোমিটারের এলাকা নিয়ে, যা রাশিয়া নিয়ন্ত্রণ করে না কিন্তু চায়।

পুতিন ২০২২ সালে ইউক্রেনে সৈন্য পাঠানোর সময় বলেছিলেন, তাঁর লক্ষ্য হলো ‘গত আট বছর ধরে যারা ভয়ভীতি ও গণহত্যার শিকার হয়েছেন...সেই মানুষগুলোকে রক্ষা করা।’ ইউক্রেন এবং তার মিত্ররা বলেছিল, পুতিনের এই দাবি ঔপনিবেশিক ধাঁচের এবং এলাকা দখলের জন্য একটি মিথ্যা অজুহাত মাত্র।

পুতিনের এই দাবি মূলত দোনেৎস্ক এবং লুহানস্ক অঞ্চলে রাশিয়া সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিরুদ্ধে ইউক্রেনের লড়াইয়ের দিকে ইঙ্গিত করে, যারা ২০১৪ সালে ইউক্রেনীয় সরকারি নিয়ন্ত্রণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে কিছু এলাকা দখল করেছিল। পূর্ব ইউক্রেনে এর পরের সংঘর্ষে উভয় পক্ষই শহর ও বেসামরিক নাগরিকদের ওপর গোলাবর্ষণের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করেছিল। মস্কো এই অঞ্চলের বিশাল রুশভাষী জনসংখ্যাকে উদ্ধৃত করে বলেছিল যে,২০২২ সালে হস্তক্ষেপ করা তাদের নৈতিক কর্তব্য।

কিয়েভ বলেছিল, ২০১৪ সালে ইউক্রেনের আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষায় শক্তি দিয়ে জবাব দেওয়া ছাড়া তাদের আর কোনো উপায় ছিল না এবং তারাও বিচ্ছিন্নতাবাদী বাহিনীর বিরুদ্ধে শহর ও বেসামরিক নাগরিকদের ওপর গোলাবর্ষণের অভিযোগ এনেছিল। জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৪ সাল থেকে ২০২২ সালের শুরু পর্যন্ত ইউক্রেনীয় সরকারি বাহিনী এবং বিচ্ছিন্নতাবাদীদের মধ্যে সংঘাতে উভয় পক্ষে ৩ হাজার ১০৬ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত এবং ৯ হাজার বেসামরিক নাগরিক আহত হয়েছিলেন।

দোনেৎস্কের বাকি যে অংশটি রাশিয়া চায়, তার মধ্যে রয়েছে স্লোভিয়ানস্ক এবং ক্রামাতোরস্ক—দুটি ‘দুর্গনগরী’ যা ২০১৪ সাল থেকে ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করে আসছে। এই শহরগুলো ইউক্রেনের বাকি অঞ্চল রক্ষার জন্য কিয়েভের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ দোনেৎস্কের পশ্চিমের ভূমি অনেকটাই সমতল এবং বিশাল খোলা মাঠ; যা রাশিয়াকে দোনেৎস্কের বাইরে অগ্রসর হতে এবং দিনিপ্রো নদীর পূর্ব তীর পর্যন্ত এলাকা দখল করার পথ সহজ করে দেবে।

শহরগুলো পরিখা, ট্যাংক-বিধ্বংসী বাধা, বাংকার এবং মাইনক্ষেত্রসহ অত্যন্ত সুরক্ষিত প্রতিরক্ষা লাইনের অংশ। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, গণভোট ছাড়া দোনেৎস্কের বাকি অংশ রাশিয়ার হাতে তুলে দেওয়া অবৈধ হবে এবং তা ভবিষ্যতে ইউক্রেনের গভীরে আক্রমণের জন্য রাশিয়াকে একটি পথ খুলে দেবে।

কিয়েভের আশঙ্কা, যদি তারা দোনেৎস্কের বাকি অংশ ছেড়ে দেয়, তবে রাশিয়া আবার অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হবে এবং একসময় দোনেৎস্ক ব্যবহার করে পশ্চিম দিকে আক্রমণ চালাবে।

উভয় পক্ষই দোনেৎস্ককে কেন্দ্র করে যুদ্ধে ভয়াবহ ক্ষয়ক্ষতির মুখোমুখি হয়েছে এবং প্রচুর অর্থ ও সরঞ্জাম ব্যয় করেছে। এর মধ্যে বাখমুত শহরের লড়াইও রয়েছে। যেখানে রাশিয়া হাজার হাজার দণ্ডিত অপরাধীকে ভাড়াটে সৈন্যে পরিণত করে রণক্ষেত্রে নামিয়েছিল। এ কারণে, দোনেৎস্ক উভয় দেশের জনমানসে আরও বেশি গুরুত্ব পেয়েছে। ফলে কারও পক্ষে তাদের অবস্থান পরিবর্তন করা কঠিন।

ইউক্রেন চায় না যে, রাশিয়া যুদ্ধক্ষেত্রে জয় করতে ব্যর্থ হওয়া ভূখণ্ডকে উপহার হিসেবে পাক এবং জেলেনস্কি বলেছেন, যে যুদ্ধ রাশিয়া শুরু করেছে, তার জন্য তাদের পুরস্কৃত করা উচিত নয়। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ইনস্টিটিউট ফর দ্য স্টাডি অব ওয়ার অক্টোবর মাসে বলেছিল, রাশিয়ার অগ্রগতির হার দেখে মনে হয় না যে তারা খুব শিগগিরই দোনেৎস্কের বাকি অংশ দখল করতে চলেছে। তবে ‘রাশিয়ার অগ্রগতির একটি অপরিবর্তনীয় হার ধরে নিলে’ তারা ২০২৭ সালের আগস্টের মধ্যে তা নিতে পারে।

রাশিয়ার কমান্ডাররা অবশ্য আরও বেশি আশাবাদী। জেনারেল স্টাফের প্রধান ভ্যালেরি গেরাসিমভ রোববার পুতিনকে বলেছেন, মস্কোর বাহিনী পুরো ফ্রন্ট লাইন বরাবর অগ্রসর হচ্ছে এবং দনবাসের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার জন্য কাজ করছে।

দোনেৎস্ক বন্দর, রেলপথ এবং অন্যান্য ভারী শিল্পের কেন্দ্র। এটি একসময় ইউক্রেনের কয়লা, পরিশোধিত ইস্পাত, কোক, ঢালাই লোহা এবং ইস্পাত উৎপাদনের অর্ধেকেরও বেশি সরবরাহ করত, তবে যুদ্ধের কারণে অনেক খনি ও কারখানা ধ্বংস হয়ে গেছে। এ ছাড়া, দোনেৎস্কে বিরল মৃত্তিকা, টাইটানিয়াম এবং জিরকোনিয়াম রয়েছে—যা এটিকে নিয়ন্ত্রণকারী পক্ষের জন্য আয়ের উৎস।

দোনেৎস্কের ভাগ্য পুতিন এবং জেলেনস্কি উভয়ের ঐতিহাসিক উত্তরাধিকারকে প্রভাবিত করতে পারে। পুতিন নিজেকে জাতিগত রুশদের রক্ষক হিসেবে তুলে ধরেছেন, তারা যেখানেই থাকুক না কেন। পুরো দোনেৎস্ককে সুরক্ষিত করা এই বক্তব্যের মূল কেন্দ্রবিন্দু। জেলেনস্কি ২০১৯ সালে পূর্ব ইউক্রেনের যুদ্ধ অবসান ঘটানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন। ২০২২ সাল থেকে তিনি অনেক বড়, বৈরী প্রতিবেশীর মুখে অস্ত্র এবং সংখ্যায় কম ইউক্রেনের এক দৃঢ় রক্ষক হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছেন।

লড়াই না করে দোনেৎস্ক ছেড়ে দেওয়া—যেখানে অন্তত আড়াই লাখ ইউক্রেনীয় বাস করে—ইউক্রেনীয়দের কাছে বিশ্বাসঘাতকতা হিসেবে দেখা হতে পারে, যাদের অনেকেই যুদ্ধক্ষেত্রে স্বজন হারিয়েছেন। কিয়েভ ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব সোসিওলজির সাম্প্রতিক এক জরিপ অনুসারে, ইউক্রেনীয়দের একটি সংকীর্ণ সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ এখনো আঞ্চলিক ছাড়ের বিরোধিতা করে।

জেলেনস্কিসহ ইউক্রেনের কর্মকর্তারা যেকোনো শান্তি চুক্তির অধীনে কিয়েভের নিয়ন্ত্রণে থাকা ভূমি ছাড়ার সম্ভাবনা প্রত্যাখ্যান করেছেন। জেলেনস্কি বলেন, তাঁর ভূখণ্ড ছেড়ে দেওয়ার কোনো ম্যান্ডেট নেই এবং রাষ্ট্রের ভূমি ব্যক্তিগত সম্পত্তির মতো কেনা-বেচা করা যায় না। ইউক্রেনের সংবিধান অনুসারে, আঞ্চলিক পরিবর্তন অবশ্যই একটি গণভোটের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করতে হবে, যা ইউক্রেনের অন্তত দুই-তৃতীয়াংশ অর্থাৎ, অন্তত ৩০ লাখ ইউক্রেনীয় ভোটারের স্বাক্ষর থাকলে আয়োজন করা যেতে পারে।

তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই গণভোটের বিষয়টির সমালোচনা করেছেন এবং তিনি বলেছিলেন, ‘কিছু ভূমি অদল-বদল হবে।’ এখন ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের আলোচনা মূলত এই দোনেৎস্কের নিয়ন্ত্রণ কার হাতে যাবে সেটাই নিয়েই থমকে আছে।

রয়টার্স থেকে পরিমার্জিত

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

কী হবে, যদি বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ কেড়ে নেওয়া হয়

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
মার্ক জাকারবার্গ, জেফ বেজোস ও ইলন মাস্ক সহ বিশ্বের শীর্ষ ধনীদের কয়েকজন। ছবি: এএফপি
মার্ক জাকারবার্গ, জেফ বেজোস ও ইলন মাস্ক সহ বিশ্বের শীর্ষ ধনীদের কয়েকজন। ছবি: এএফপি

বিশ্বজুড়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন উঠে আসছে—‘যদি বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ সীমিত করা হয়, অথবা এই শ্রেণিটিকেই সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়, তবে কী ঘটবে?’ পশ্চিমা দেশগুলোতে চরম ধনী বা বিলিয়নিয়ারদের সংখ্যা ও প্রভাব বাড়তে থাকায় এখন এই প্রশ্ন আরও জোরালো হয়েছে।

সম্প্রতি টেসলার মালিক ইলন মাস্ক গত নভেম্বরে এমন এক পে-অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন, যা তাঁকে একজন ট্রিলিয়ন ডলারের মালিকে পরিণত করতে পারে। তিনি ইতিমধ্যেই বিশ্বের শীর্ষ ধনী। যদি তিনি প্রস্তাবিত পূর্ণ প্যাকেজটি পান, তাহলে তিনি বিশ্বের ইতিহাসে সর্বকালের সেরা ধনী ব্যক্তিতে পরিণত হবেন। ফোর্বসের হিসেবে বর্তমানে বিশ্বের ৩ হাজার ২৮ জন বিলিয়নিয়ার আছেন। তাঁদের মোট সম্পদ প্রায় ১৬.১ ট্রিলিয়ন ডলার। অন্যদিকে পৃথিবীতে এখনো প্রায় ৮৩ কোটি ১০ লাখ মানুষ দৈনিক তিন ডলারের নিচে আয় করে চরম দারিদ্র্যে দিন কাটান।

বিশ্লেষকদের মতে, বিশ্বের এই বিপুল সম্পদ বৈষম্য শুধু অর্থনীতিকে নয়, রাজনীতি, মিডিয়া ও চিন্তাকেও প্রভাবিত করে। অনেকেই মনে করেন, বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ ও ক্ষমতা বিশ্বব্যবস্থাকে ‘অতি ধনীদের স্বার্থে’ পুনর্গঠন করছে। আবার অন্য একটি মত বলছে, বিলিয়নিয়ারেরা না থাকলে উদ্ভাবন, প্রযুক্তি ও অগ্রগতি থমকে যাবে। কারণ বৃহৎ বিনিয়োগই গড়ে তোলে নতুন সমাধান।

উদ্ভাবন কি থেমে যাবে

অ্যাডাম স্মিথ ইনস্টিটিউটের ম্যাক্সওয়েল মার্লোর মতে, বিলিয়নিয়ারদের বিলোপ করা হলে পশ্চিমা অর্থনীতি বিপর্যস্ত হবে। তাঁর দাবি, অধিকাংশ বিলিয়নিয়ার তাঁদের সম্পদের মালিক হয়েছেন সমাজের চাহিদামতো পণ্য ও প্রযুক্তি তৈরি করে। তাঁদের সম্পদ মূলত কোম্পানির শেয়ার, মেধাস্বত্ব অথবা সম্পত্তি—যা দিনে দিনে ওঠানামা করে। তাঁর মতে, এই ধনী ব্যক্তিদের প্রণোদনাই উদ্ভাবনে গতি আনে; তা না থাকলে উন্নয়ন থেমে যাবে।

যদি ন্যায্যভাবে সম্পদ বণ্টিত হতো

গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ট্যাক্স জাস্টিসের ডেরেজে আলেমায়েহুর মতে, শুধু বিলিয়নিয়ার কর আরোপ নয়—প্রশ্ন হচ্ছে, সেই কর কোথায় যাবে। দক্ষিণ বিশ্বের শ্রম ও সম্পদ থেকেই যে বিপুল সম্পদ তৈরি হয়, তাই তার ন্যায্য অংশ দক্ষিণেই ফিরে আসা উচিত। তিনি বলেন, বৈষম্য কমাতে শুধু অর্থ হস্তান্তর নয়, বৈশ্বিক আর্থিক কাঠামো পুনর্গঠন জরুরি; নইলে বৈষম্য আরও গভীর হবে।

বিধিনিষেধ কি বদলাতে হবে

ডেনিসন ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ফাদেল কাবুব বলেন, বিলিয়নিয়ারেরা আসলে ব্যর্থ নীতির ফল। সিস্টেম যেভাবে সাজানো, তাতে সম্পদ একদিকে কেন্দ্রীভূত হওয়াই স্বাভাবিক। তাঁর মতে, বিলিয়নিয়ার শ্রেণিকে বিলোপ করতে হলে আধুনিক অ্যান্টি ট্রাস্ট ও কঠোর বাজার নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন।

মিডিয়ার ওপর প্রভাব কমবে

গোল্ডস্মিথস বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডেস ফ্রিডম্যান মনে করেন, বিলিয়নিয়ারেরা পুরো মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম কিনে ফেলতে সক্ষম হওয়ায় তথ্যপ্রবাহ তাঁদের স্বার্থেই নিয়ন্ত্রিত হয়। যেমন—বেজোস বা ইলন মাস্কের গণমাধ্যম মালিকানা এই অঙ্গনের স্বাধীনতাকে দীর্ঘমেয়াদে প্রশ্নবিদ্ধ করে। তাই বিলিয়নিয়ার প্রভাব সীমিত হলে তথ্যের উৎসও আরও স্বাধীন হতে পারে।

চরম সম্পদ কি সত্যিই বিলোপ করা সম্ভব

বিশ্ব ইনইক্যুয়ালিটি ল্যাবের লুকাস শ্যানসেলের মতে, ইতিহাসে এর নজির আছে। উদাহরণস্বরূপ—রকেফেলারের একচেটিয়া সাম্রাজ্য ভেঙে দেওয়া, কিংবা রুজভেল্টের সময় সর্বোচ্চ করহার ৯৪ শতাংশে উন্নীত করা। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পানামা পেপারসের মতো ফাঁস যেমন দুর্দান্ত স্বচ্ছতা তৈরি করেছে, তেমনি তা পরিবর্তনের সুযোগও তৈরি করছে। তিনি মনে করেন, ধনীদের ওপর কর আরোপের মতো ধারণা এখন আর ‘যদি’ নয়, বরং ‘কখন’ করা হবে—এ প্রশ্নে এসে দাঁড়িয়েছে।

আল-জাজিরা অবলম্বনে

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

জাপানের ‘লৌহমানবী’ কি দেশকে চীনের সঙ্গে যুদ্ধের মুখে ঠেলে দিচ্ছেন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১: ২০
চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিনপিং ও জাপানের প্রধানমন্ত্রী সানায়ে তাকাইচি। ছবি: সংগৃহীত
চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিনপিং ও জাপানের প্রধানমন্ত্রী সানায়ে তাকাইচি। ছবি: সংগৃহীত

জাপানের ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর গত অক্টোবরে দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন সানায়ে তাকাইচি। এরপরই তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত হন জাপানের নতুন ‘আয়রন লেডি’ বা লৌহমানবী’ হিসেবে। এই পরিচয়টিকে তাকাইচি নিজেও গর্বের সঙ্গে গ্রহণ করেন। মার্গারেট থ্যাচারের অনুরাগী এই রক্ষণশীল নেতা ঘরোয়া অর্থনীতি থেকে শুরু করে পররাষ্ট্র ও নিরাপত্তা—সব ক্ষেত্রেই শক্ত অবস্থানের বার্তা দিয়েছেন।

তাকাইচির রাজনৈতিক পরিচয়ের মূল কেন্দ্রে রয়েছে ‘নিপ্পন কেইগি’ নামে জাপানের সবচেয়ে প্রভাবশালী জাতীয়তাবাদী গোষ্ঠী। এই সংগঠন জাপানের সংবিধানের যুদ্ধবিরোধী ৯ নম্বর অনুচ্ছেদ বাতিল, শক্তিশালী সামরিক বাহিনী গঠন এবং ঐতিহ্যবাদী মূল্যবোধে প্রত্যাবর্তনের পক্ষে। পূর্বসুরী শিনজো আবের মতো তাই তাকাইচিও জাপানকে স্বাভাবিক রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চান, যেখানে গোয়েন্দা সংস্থা, আধুনিক সেনাবাহিনী এবং কঠোর নিরাপত্তা আইন থাকবে।

অর্থনীতির ক্ষেত্রে তিনি জাতীয় শিল্পকে শক্তিশালী করা, প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বাড়ানো এবং রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ বৃদ্ধির পক্ষে। একই সঙ্গে কঠোর অভিবাসন নীতি ও রক্ষণশীল মূল্যবোধের প্রচারও তাঁকে ডানপন্থীদের মধ্যে জনপ্রিয় করেছে। তবে এই অভ্যন্তরীণ রাজনীতি এখন আন্তর্জাতিক উত্তেজনার সঙ্গে গেঁথে গেছে—বিশেষ করে, তাইওয়ান ইস্যুতে তাঁর অবস্থানের কারণে।

তাকাইচি ক্ষমতায় আসার পর থেকেই চীনের প্রতি কঠোর মনোভাব দেখাচ্ছেন। বেইজিংকে তিনি কৌশলগত হুমকি হিসেবে দেখেন এবং প্রতিরোধমূলক সামরিক ও কূটনৈতিক পদক্ষেপের পক্ষে জোর দিচ্ছেন। এরই অংশ হিসেবে অক্টোবরের শেষ দিকে তাঁর ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাক্ষাৎ দুই দেশের সম্পর্ককে নতুন সোনালি যুগে প্রবেশ করানোর আভাস দেয়। জাপান প্রতিরক্ষা ব্যয় জিডিপির কমপক্ষে ২ শতাংশে উন্নীত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, আর যুক্তরাষ্ট্র বিরল ধাতুর সরবরাহ নিশ্চিতকরণসহ অর্থনৈতিক সহায়তার ঘোষণা দেয়।

তবে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হলো তাইওয়ানের সঙ্গে তাকাইচির ঘনিষ্ঠতা। তিনি তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট লাই চিং-তের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন, যা চীনের কাছে স্পষ্ট উত্তেজনাকর পদক্ষেপ হিসেবে ধরা পড়েছে। আরও বিতর্ক সৃষ্টি হয় যখন তাকাইচি প্রকাশ্যে বলেন, তাইওয়ানের নিরাপত্তা জাপানের নিরাপত্তার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত। এমনকি তাইওয়ানে চীনা হামলার ক্ষেত্রে জাপানের আত্মরক্ষা বাহিনী হস্তক্ষেপ করতে পারে বলেও ইঙ্গিত দেন তিনি।

এ ক্ষেত্রে চীনের প্রতিক্রিয়াও ছিল কঠোর ও দ্রুত। তারা তাকাইচির বিরুদ্ধে ‘পুরোনো সামরিকতাবাদকে পুনরুজ্জীবিত করার’ অভিযোগ তোলে, রাষ্ট্রদূতকে তলব করে এবং জাতিসংঘে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ পাঠায়। পাশাপাশি সামুদ্রিক এলাকায় কোস্টগার্ডের টহল বাড়ায় চীন, জাপানি সামুদ্রিক পণ্যে সীমাবদ্ধতা আরোপের হুমকি দেয় এবং উত্তেজনাপূর্ণ নানা বিবৃতি দেয়।

এদিকে জাপানও পশ্চিম সীমান্তের ইয়োনাগুনি দ্বীপে বিমান প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনের ঘোষণা দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রও একই দ্বীপে সামরিক অবকাঠামো শক্তিশালী করছে। ফলে পরিস্থিতি আরও জটিল আকার ধারণ করছে।

তবে ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি তাকাইচিকে উত্তেজনা না বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন। কারণ আগামী এপ্রিলে তিনি বেইজিং সফর করতে চান।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তাকাইচির নেতৃত্বে জাপান নতুন ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতায় প্রবেশ করেছে। তাঁর দৃঢ় অবস্থান দেশকে হয় পুনরুত্থানের পথে নেবে—নয়তো চীন–তাইওয়ান উত্তেজনার কেন্দ্রে ঠেলে দেবে। ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে তিনি কোন পথে হাঁটবেন তার ওপর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

পুতিন-মোদির আসন্ন বৈঠকের মূলে কী আছে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৯: ৪৫
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ফাইল ছবি
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ফাইল ছবি

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠককে ঘিরে দিল্লিতে শুরু হয়েছে কূটনৈতিক প্রস্তুতি। চলমান ইউক্রেন যুদ্ধ, যুক্তরাষ্ট্রের চাপ এবং জ্বালানির বাজারে অস্থিরতার মধ্যেই এই শীর্ষ সম্মেলন হতে যাচ্ছে। অর্থনীতি, প্রতিরক্ষা এবং জ্বালানি—এই তিনটি খাত আলোচনার কেন্দ্রে থাকবে বলে দুই দেশই নিশ্চিত করেছে।

রাষ্ট্রীয় সফরে বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) ভারতে পৌঁছে পরদিন শুক্রবার মোদির সঙ্গে বৈঠকে বসবেন পুতিন। এই বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের অগ্রগতি পর্যালোচনা ছাড়াও নতুন কয়েকটি আন্তদপ্তর ও বাণিজ্যিক চুক্তি স্বাক্ষরের সম্ভাবনা রয়েছে। রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখা এবং একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কৌশলগত অংশীদারত্ব ধরে রাখতে ভারতের নীতির জন্য এই বৈঠক একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত হয়ে দাঁড়িয়েছে।

রাশিয়া থেকে ডিসকাউন্টে ভারতের তেল কেনা দীর্ঘদিন ধরেই ওয়াশিংটনকে অসন্তুষ্ট করে আসছে। এই অসন্তুষ্টি থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি ভারতীয় পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন, যা মোট শুল্ককে ৫০ শতাংশে উন্নীত করেছে। তবে ভারত বলছে, তারা আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার বিরোধী নয়, কিন্তু ১৪০ কোটি মানুষের জ্বালানি চাহিদা মেটাতেই বাধ্য হয়ে রাশিয়া থেকে তেল আমদানি করা হচ্ছে। নতুন মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে ‘রসনেফত’ ও ‘লুকওইল’ এর মতো রাশিয়ার কিছু কোম্পানি থেকে ভারত তেল কিনবে না বলে জানিয়েছে। তবে নিষেধাজ্ঞামুক্ত রুশ সরবরাহকারীদের সঙ্গে বাণিজ্য চালু থাকবে।

পুতিনের এই সফরে দুই দেশের অর্থনৈতিক সহযোগিতার ওপর জোর দেওয়া হবে। ভারত রাশিয়ায় ওষুধ, কৃষিপণ্য ও টেক্সটাইল রপ্তানি বাড়াতে চায় এবং পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে শুল্কমুক্ত সুবিধা প্রদানের অনুরোধ জানাবে। এ ছাড়া সার সরবরাহের দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি এবং রাশিয়ায় ভারতীয় দক্ষ জনশক্তির নিরাপদ ও নিয়মিত অভিবাসন নিয়ে আলোচনা এগোতে পারে। দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য, সমুদ্র পরিবহন, স্বাস্থ্যসেবা ও গণমাধ্যম সহযোগিতা বিষয়ক নথিপত্র চূড়ান্তের কাজও চলছে।

বুধবার এই বিষয়ে যুক্তরাজ্যভিত্তিক ইনডিপেনডেন্টের এক নিবন্ধে দাবি করা হয়েছে, জ্বালানি সহযোগিতাই পুতিন-মোদি আলোচনার বড় অংশ দখল করবে। ভারতের ফার ইস্টে বিনিয়োগ, রাশিয়ার সঙ্গে বেসামরিক পারমাণবিক প্রকল্প এবং কুদানকুলাম প্রকল্পের সম্প্রসারণ নিয়ে অগ্রগতি পর্যালোচনা হবে। স্থানীয়ভাবে যন্ত্রাংশ উৎপাদন এবং তৃতীয় দেশে যৌথ পারমাণবিক প্রকল্প বাস্তবায়নের সম্ভাবনাও খতিয়ে দেখা হবে।

প্রতিরক্ষা সহযোগিতা এই সফরের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। ২০১৮ সালের ৫.৪ বিলিয়ন ডলারের চুক্তির আওতায় ভারতের হাতে ইতিমধ্যে রাশিয়ার তিনটি এস-৪০০ স্কোয়াড্রন এসেছে। যুদ্ধজনিত কারণে বাকিগুলোর সরবরাহে যুদ্ধজনিত বিলম্ব হচ্ছে। ভারত এই সরবরাহ দ্রুত নিশ্চিত করতে চাপ দেবে। পাশাপাশি আরও এস-৪০০ কেনার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া হয়নি, যদিও বৈঠক থেকে কোনো ঘোষণা হওয়ার সম্ভাবনা কম। রুশ নির্মিত এসইউ-৩০ এমকেআই যুদ্ধবিমান আপগ্রেড, অস্ত্র সরবরাহ দ্রুততর করা এবং যৌথ সামরিক মহড়ায় সমন্বয় জোরদার করার বিষয়েও আলোচনা হবে।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভারত বহুজাতিক অস্ত্র সরবরাহকারীদের দিকে নজর বাড়ালেও রাশিয়া এখনো তাদের সবচেয়ে বড় প্রতিরক্ষা অংশীদার। পুতিনের সফরকে সেই সম্পর্কটি আরও দৃঢ় করার বড় সুযোগ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত