Ajker Patrika

আল-জাজিরার বিশ্লেষণ /যুক্তরাষ্ট্রের ‘যুদ্ধ ক্ষমতা আইন’ কি ট্রাম্পকে আটকাতে পারবে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২০ জুন ২০২৫, ১৭: ৫৭
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: সিএএনএন
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: সিএএনএন

যুক্তরাষ্ট্র ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধে অংশ নেবে কি না, তা নিয়ে গত সপ্তাহ থেকে চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা। গত বুধবার হোয়াইট হাউসে মার্কিন প্রেসিডেন্টকে সাংবাদিকেরা এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি স্বভাবসুলভ জবাব দেন, ‘আমরা যুদ্ধে যোগ দিতেও পারি, না-ও পারি’।

ট্রাম্প প্রশাসনের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা এবং ট্রাম্পের মিত্ররা কয়েক দিন ধরে বেশ জোর দিয়ে বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র এই যুদ্ধে অংশ নেবে কি না, সেই সিদ্ধান্ত ট্রাম্পের এবং ট্রাম্পের দূরদর্শিতার ওপর তাঁদের ভরসা রয়েছে। এর আগে, গত মঙ্গলবার সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস বলেন, ‘এখন থেকে কী হবে, সে বিষয়ে ট্রাম্পই এককভাবে দিকনির্দেশনা দেবেন।’

তবে যুদ্ধবিরোধী সমর্থকেরা যুক্তি দিচ্ছেন, যুদ্ধে জড়ানোর বিষয়টি ট্রাম্পের একক সিদ্ধান্ত হতে পারে না। সংবিধান অনুযায়ী যুদ্ধ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার কেবল কংগ্রেসের। ট্রাম্প ক্রমেই যুদ্ধে জড়িত হওয়ার ইঙ্গিত দিচ্ছেন দেখে কিছু আইনপ্রণেতা এখন যুদ্ধ ক্ষমতা আইন (ওয়ার পাওয়ার অ্যাক্ট) অনুযায়ী কংগ্রেসের সেই ক্ষমতা পুনঃপ্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিচ্ছেন।

এমন পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠছে, আইন অনুযায়ী যুদ্ধ ঘোষণার জন্য কী নিয়ম মানতে হবে প্রশাসনকে? কংগ্রেসের সম্মতি ছাড়াই ট্রাম্প কি যুক্তরাষ্ট্রকে এই যুদ্ধে জড়াতে পারেন?

মার্কিন সংবিধান কী বলে

মার্কিন সংবিধানের প্রথম অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, যুদ্ধ ঘোষণা করার ক্ষমতা কংগ্রেসের। অনেক আইনজীবী এটিকে এভাবে ব্যাখ্যা করেন, দেশের সামরিক হস্তক্ষেপের সিদ্ধান্ত নেওয়ার চূড়ান্ত অধিকার কংগ্রেসের, প্রেসিডেন্টের নয়। অর্থাৎ, যুদ্ধের ব্যাপারে প্রধান নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান হচ্ছে আইন প্রণয়নকারী শাখা এবং চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন আইনপ্রণেতারা।

যুক্তরাষ্ট্র সর্বশেষ কবে আনুষ্ঠানিকভাবে যুদ্ধ ঘোষণা করেছিল

১৯৪২ সালে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে সবশেষ যুদ্ধ ঘোষণা করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। এরপর থেকে আর আনুষ্ঠানিকভাবে যুদ্ধ ঘোষণা করেনি দেশটি। ঘোষণা না করেই কোরিয়া, ভিয়েতনাম, আফগানিস্তান ও ইরাক যুদ্ধে জড়িয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ ছাড়া বহু দেশে সামরিক হামলা ও হস্তক্ষেপ চালিয়েছে দেশটি। উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে সার্বিয়া, লিবিয়া, সোমালিয়া ও ইয়েমেনের নাম।

যুদ্ধ বিষয়ে প্রেসিডেন্টের কী ক্ষমতা আছে

মার্কিন সংবিধানের দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, প্রেসিডেন্ট হলেন সশস্ত্র বাহিনীর ‘সর্বাধিনায়ক’ (কমান্ডার চিফ)। এর ফলে প্রেসিডেন্ট হামলা বা আসন্ন হুমকির জবাবে সামরিক বাহিনীকে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিতে পারেন। তবে এর বাইরের যুদ্ধসংক্রান্ত ক্ষমতা কংগ্রেস দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। সংবিধানের দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ প্রেসিডেন্টকে কেবল তখনই সামরিক অভিযান পরিচালনার ক্ষমতা দেয়, যখন কংগ্রেস আনুষ্ঠানিকভাবে যুদ্ধ অনুমোদন করে। আইনপ্রণেতাদের নির্ধারিত নীতিমালার অধীনে প্রেসিডেন্টকে সেনাবাহিনী ব্যবস্থাপনা করতে হয়। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে একের পর এক মার্কিন প্রেসিডেন্ট এই ‘জরুরি ভিত্তিতে সামরিক বাহিনী পরিচালনার ক্ষমতা’র একপ্রকার অপব্যবহার করেই অন্য দেশে হামলা চালিয়েছেন। এসব হামলাকে তাঁরা আত্মরক্ষামূলক বা হুমকির জবাব হিসেবে উপস্থাপন করেছেন।

যুক্তরাষ্ট্র আনুষ্ঠানিক যুদ্ধ ঘোষণা না করেও কীভাবে ইরাকসহ বিভিন্ন দেশে সেনা পাঠিয়েছে

২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার পর, কংগ্রেস দ্রুত একটি আইন পাস করে, যা ‘অথরাইজেশন ফর ইউজ অব মিলিটারি ফোর্স’ (এইউএমএফ) নামে পরিচিত। এর মাধ্যমে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশকে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধে ব্যাপক সামরিক পদক্ষেপ নেওয়ার অধিকার দেওয়া হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ২০০২ সালে আরেকটি এইউএমএফ পাস হয়, যা যুক্তরাষ্ট্রকে ইরাকের সাদ্দাম হোসেন সরকারের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান চালানোর অনুমতি দেয়। এই অনুমোদনকে ভিত্তি করে ২০০৩ সালে যুক্তরাষ্ট্র ইরাকে সামরিক অভিযান চালায়।

এই দুটি অনুমোদন এখনো বলবৎ আছে এবং পরবর্তী প্রেসিডেন্টরাও কংগ্রেসের অনুমোদন ছাড়াই বিভিন্ন সামরিক হস্তক্ষেপে তা ব্যবহার করে চলেছেন। উদাহরণস্বরূপ, ২০২০ সালে ইরাকের বাগদাদে ইরানের শীর্ষ জেনারেল কাসেম সোলেইমানিকে হত্যার নির্দেশ দেন তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প—এবং এই অভিযান পরিচালিত হয় ২০০২ সালের ইরাক এইউএমএফের অধীনে। ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদকালে আশঙ্কা দেখা দেয়, তিনি ২০০১ সালের এইউএমএফ আইনের অপব্যাখ্যা করে ইরানে আক্রমণের সিদ্ধান্ত নিতে পারেন এই দাবি করে যে তেহরান আল-কায়েদার সহযোগী। যদিও এর পক্ষে কোনো শক্তিশালী প্রমাণ ছিল না।

যুদ্ধ ঘোষণার ক্ষমতা আইন (ওয়ার পাওয়ার অ্যাক্ট) কখন পাস হয়

যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানে যুদ্ধসংক্রান্ত ক্ষমতার বিষয়টি নির্ধারণ করে দেওয়া থাকলেও সময়ের সঙ্গে প্রেসিডেন্টরা নানা উপায়ে কংগ্রেসকে পাশ কাটিয়ে সামরিক অভিযান চালিয়ে আসছেন। এই প্রেক্ষাপটে, ১৯৭৩ সালে—ভিয়েতনাম যুদ্ধ ও এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে দীর্ঘকালীন মার্কিন হস্তক্ষেপের পর—যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস ‘ওয়ার পাওয়ার্স রেজ্যুলেশন’ নামের একটি আইন পাস করে। এর লক্ষ্য ছিল প্রেসিডেন্টের যুদ্ধ-সম্পর্কিত ক্ষমতা সীমিত করা এবং কংগ্রেসের কর্তৃত্ব পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা। এই আইন পাস করা হয় প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সনের গোপনে কম্বোডিয়ায় বোমা বর্ষণের পর, যা হাজার হাজার বেসামরিক মানুষের প্রাণহানির কারণ হয়েছিল এবং যুক্তরাষ্ট্রে ব্যাপক বিক্ষোভের জন্ম দেয়। আইনটির উদ্দেশ্য ছিল—এ ধরনের গোপন ও একতরফা সামরিক অভিযানে প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণে আনা।

ওয়ার পাওয়ার্স অ্যাক্টের প্রধান বিধান

১৯৭৩ সালে যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেস প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সনের ভেটো অগ্রাহ্য করে পাস করে ওয়ার পাওয়ার্স অ্যাক্ট বা ওয়ার পাওয়ার্স রেজ্যুলেশন। এই আইনের মূল লক্ষ্য ছিল যুদ্ধসংক্রান্ত বিষয়ে প্রেসিডেন্টের একতরফা সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা সীমিত করা এবং কংগ্রেসের ভূমিকা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা।

আইন অনুযায়ী, যদি কংগ্রেস আনুষ্ঠানিকভাবে যুদ্ধ ঘোষণা না করে, তাহলে প্রেসিডেন্ট সেনা মোতায়েনের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে কংগ্রেসকে তা অবহিত করতে বাধ্য। সেনা মোতায়েনের এই অনুমোদন সর্বোচ্চ ৬০ দিন পর্যন্ত কার্যকর থাকে, এবং বিশেষ প্রয়োজন হলে আরও ৩০ দিন সময় বাড়ানো যেতে পারে। তবে এই সময়সীমার পর কংগ্রেসের অনুমতি ছাড়া ওই সামরিক উপস্থিতি অব্যাহত রাখা যাবে না। আইনটিতে আরও বলা হয়েছে, বিদেশে মার্কিন সেনা মোতায়েনের আগে প্রেসিডেন্টকে কংগ্রেসের সঙ্গে সর্বোচ্চ মাত্রায় যোগাযোগ করতে হবে এবং কংগ্রেসের পরামর্শ নিতে হবে।

এসব বিধানের মাধ্যমে ওয়ার পাওয়ার্স অ্যাক্ট কংগ্রেসের সাংবিধানিক কর্তৃত্বকে সুরক্ষিত করতে চায় এবং যুদ্ধসংক্রান্ত সিদ্ধান্তের ওপর প্রেসিডেন্টের একচেটিয়া প্রভাব রোধ করে।

ওয়ার পাওয়ার্স অ্যাক্ট কেন আবার আলোচনায়

ইরানে মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপের সম্ভাবনা ক্রমশ বাড়তে থাকায় নতুন করে আলোচনায় ওয়ার পাওয়ার্স অ্যাক্ট। গত সোমবার ডেমোক্র্যাট সিনেটর টিম কেইন একটি প্রস্তাব উত্থাপন করেছেন—প্রস্তাবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে ইরানের বিরুদ্ধে সামরিক হামলা চালাতে হলে কংগ্রেসের পূর্বানুমতি নিতে বাধ্য করার কথা বলা হয়। পরদিন, প্রতিনিধি পরিষদেও এমন একটি বিল উত্থাপন করেন রিপাবলিকান থমাস ম্যাসি এবং ডেমোক্র্যাট রো খন্না। এদিকে আরও একটি বিল উত্থাপন করেন বার্নি স্যান্ডার্স। ‘নো ওয়ার অ্যাগেইনস্ট ইরান অ্যাক্ট’ নামে তোলা ওই প্রস্তাবে তিনি দাবি করেন, ইরানের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপ হিসেবে কোনো ধরনের অর্থ ব্যয় করতে পারবে না যুক্তরাষ্ট্র। তবে এসব প্রচেষ্টা সত্ত্বেও যেহেতু কংগ্রেস বর্তমানে রিপাবলিকানদের নিয়ন্ত্রণে, তাই এসব বিল পাস হওয়ার সম্ভাবনা অত্যন্ত কম।

সংবিধানেই তো স্পষ্টভাবে বলা আছে, তবু নতুন আইন কেন দরকার?

যদিও মার্কিন সংবিধানের প্রথম অনুচ্ছেদে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, যুদ্ধ ঘোষণার অধিকার কেবল কংগ্রেসেরই আছে, বাস্তবে প্রেসিডেন্ট ও কংগ্রেসের মধ্যে এই ক্ষমতা নিয়ে বারবার দ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছে।

সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য উদাহরণটি ১৮৬১ সালের গৃহযুদ্ধের শুরুতে দেখা যায়। কংগ্রেস তখনো দক্ষিণের বিদ্রোহী রাজ্যগুলোর বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিকভাবে যুদ্ধ ঘোষণা করেনি, কিন্তু প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকন দ্রুত পদক্ষেপ হিসেবে দক্ষিণাঞ্চলের বন্দরগুলো অবরোধ করে দেন। পরে সুপ্রিম কোর্ট সিদ্ধান্ত দেন, প্রেসিডেন্ট হঠাৎ কোনো আক্রমণ হলে তা প্রতিহত করার জন্য এমন পদক্ষেপ নিতে পারেন—অর্থাৎ, তা ছিল সংবিধানসম্মত।

ইতিহাসে ১১ বার কংগ্রেস আনুষ্ঠানিকভাবে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। বাকি সময়ে তারা সাধারণত ‘রেজ্যুলেশন’ বা ‘AUMF’-এর মতো আইন পাস করে প্রেসিডেন্টকে সামরিক পদক্ষেপের অনুমোদন দিয়েছে। ফলে প্রেসিডেন্ট কংগ্রেসকে পাশ কাটিয়ে নয়, বরং কংগ্রেসের বিস্তৃত অনুমোদনের ভিত্তিতে যুদ্ধ পরিচালনা করে থাকেন। তাই নতুন একটি আইন জরুরি হয়ে পড়েছে।

ওয়ার পাওয়ার্স অ্যাক্ট কার্যকর কতটা

১৯৭৩ সালে আইনটি পাস হওয়ার পর থেকে সমালোচকেরা বলে আসছেন, এটি কার্যত অচল! এটি অনেকটা কংগ্রেসের অসন্তোষ জানানোর রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হয়, কিন্তু প্রেসিডেন্টকে আটকানোর মতো যথেষ্ট শক্তিশালী নয়।

আশির দশকে, সিনেটর জো বাইডেন নেতৃত্বাধীন একটি উপকমিটি এই আইনকে উদ্দেশ্য পূরণে ব্যর্থ বলে মন্তব্য করেছিলেন। কংগ্রেসের অনুমোদন ছাড়া পরিচালিত যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রকে টেনে আনার চেষ্টা বন্ধে যেকোনো রেভল্যুশনে প্রেসিডেন্ট ভেটো দিতে পারেন—আর তা ঠেকাতে হাউস ও সিনেটে দুই-তৃতীয়াংশ ভোট দরকার হয়, যা সচরাচর পাওয়া যায় না।

তবে অনেক বিশ্লেষক মনে করেন, এই আইন কংগ্রেসের অধিকার রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে এবং প্রেসিডেন্টকে সেনা মোতায়েনের পর দ্রুত রিপোর্ট দেওয়ার একটি কাঠামো বজায় রেখেছে। ১৯৭৩ সালের পর থেকে এখন পর্যন্ত প্রেসিডেন্টরা কংগ্রেসে ১০০-র বেশি রিপোর্ট জমা দিয়েছেন, যা স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির কিছুটা ধারণা দেয়।

প্রেসিডেন্টদের দৃষ্টিভঙ্গি

ওয়ার পাওয়ার্স অ্যাক্টের সবচেয়ে জোরালো বিরোধিতা করেছিলেন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন। কিন্তু তিনি একমাত্র নন। আধুনিক আমেরিকান প্রেসিডেন্টরাও প্রায়শই এই আইনের আওতায় বাধ্যবাধকতাগুলো এড়িয়ে যান এবং আইনকে অতিক্রম করার জন্য বিভিন্ন সৃজনশীল আইনি যুক্তি ব্যবহার করেন। বিশেষ করে ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরের সন্ত্রাসী হামলার পর থেকে নির্বাহী শাখা তাঁর সামরিক ক্ষমতা ব্যাপকভাবে সম্প্রসারিত করেছে। ২০০১ সালের (এইউএমএফ) এবং ২০০২ সালের ইরাক যুদ্ধের অনুমোদন আইনটি ব্যবহার করে কমপক্ষে ১৯টি দেশে বিভিন্ন ‘সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর’ বিরুদ্ধে হামলা চালানো হয়েছে।

ফ্রেন্ডস কমিটি অন ন্যাশনাল লেজিসলেশনের বৈদেশিক নীতিবিষয়ক আইন পরিচালক হিদার ব্র্যান্ডন-স্মিথ জানান, এই অনুমোদন এমন গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হয়েছে, যাদের ৯/১১ হামলার সঙ্গে কোনো সম্পর্কই ছিল না, যেমন আইএসআইএস। আন্তর্জাতিক থিংকট্যাংক ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপ এই আইন পর্যালোচনা বা বাতিলের আহ্বান করলেও বিভিন্ন প্রশাসন এ ব্যাপারে তেমন আগ্রহ দেখায়নি।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কংগ্রেস কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে, যেমন ২০২৩ সালে সিনেট ‘২০০১ সালের এইউএমএফ’ বাতিলের পক্ষে ভোট দিয়েছে, কিন্তু সেটি মূলত প্রতীকী হিসেবে দেখা হয়। ২০২১ সালে হাউস ‘২০০২ সালের এইউএমএফ’ বাতিলের পক্ষে ভোট দিয়েও উভয় আইন এখনো কার্যকর অবস্থায় রয়েছে।

বিদ্যমান আইন ট্রাম্পকে ইরানের যুদ্ধে জড়াতে বাধা দিতে পারবে কি

এটি সময়ের ব্যাপার, তবে বর্তমানে তা খুব সম্ভব বলে মনে করছেন না অনেকে। ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে কংগ্রেস প্রথমবারের মতো প্রেসিডেন্টের যুদ্ধ ক্ষমতা সীমাবদ্ধ করার চেষ্টা করেছিল। ২০১৯ সালে কংগ্রেস সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের ইয়েমেন যুদ্ধের প্রতি আমেরিকার সমর্থন বন্ধের বিল পাস করেছিল, কিন্তু তাতে ভেটো দেন ট্রাম্প।

এক বছর পর, ২০২০ সালে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যখন ড্রোন হামলায় ইরানের শীর্ষ জেনারেল কাসেম সোলেইমানিকে হত্যা করেন, তখন কংগ্রেসের দুই কক্ষই একটি আইন পাস করে—যার উদ্দেশ্য ছিল ইরানের বিরুদ্ধে যেকোনো সামরিক পদক্ষেপের আগে প্রেসিডেন্টকে কংগ্রেসের অনুমতি নিতে বাধ্য করা। কিন্তু ট্রাম্প সেই আইনে ভেটো দেন। আর কংগ্রেসে রিপাবলিকানদের সমর্থন এত কম ছিল যে সেই ভেটো ঠেকানো যায়নি।

এখন ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে কংগ্রেসের দুই কক্ষই রিপাবলিকানদের নিয়ন্ত্রণে। ফলে প্রেসিডেন্টের যুদ্ধ ক্ষমতা সীমিত করার নতুন কোনো আইন পাস করাটা আরও কঠিন হয়ে পড়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

নাহিদকে শুভকামনা জানিয়ে সরে গেলেন জামায়াতের আতিক

নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার ঘোষণা এনসিপি নেত্রী মনজিলা ঝুমার

এনসিপির সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদ করলেন মওলানা ভাসানীর নাতি

আজকের রাশিফল: অন্যের নামে সঙ্গীকে ডেকে হুলুস্থুল বাধাবেন, হঠাৎ অর্থপ্রাপ্তির সম্ভাবনা

‘জেবু’কে নিয়ে মানুষের কৌতূহল দেখে অবাক জাইমা, দীর্ঘ পোস্টে লিখলেন অনুভূতি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

কোন স্বার্থে মুসলিমপ্রধান সোমালিল্যান্ডকে সবার আগে স্বীকৃতি দিল ইসরায়েল

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৫: ৩০
হর্ন অব আফ্রিকার মানচিত্র এবং ভূ-রাজনীতি চিরতরে বদলে যেতে পারে। ছবি: সংগৃহীত
হর্ন অব আফ্রিকার মানচিত্র এবং ভূ-রাজনীতি চিরতরে বদলে যেতে পারে। ছবি: সংগৃহীত

২৬ ডিসেম্বর বিশ্বের প্রথম জাতিসংঘ সদস্যদেশ হিসেবে সোমালিল্যান্ডকে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়েছে ইসরায়েল। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই সিদ্ধান্তকে ‘আব্রাহাম অ্যাকর্ডস’-এর একটি সাহসী সম্প্রসারণ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। হর্ন অব আফ্রিকার এই স্বঘোষিত স্বাধীন মুসলিমপ্রধান ভূখণ্ডটির প্রতি ইসরায়েলের এই গভীর আগ্রহ নিছক কোনো কূটনৈতিক সৌজন্য নয়; বরং এর পেছনে রয়েছে কয়েক দশকের সুদূরপ্রসারী কৌশলগত পরিকল্পনা, নিরাপত্তাঝুঁকি ব্যবস্থাপনা এবং বিশাল অর্থনৈতিক সম্ভাবনা।

সোমালিল্যান্ডের অবস্থান এডেন উপসাগরের তীরে, যা সরাসরি ইয়েমেনের উল্টো দিকে এবং বাব আল-মানদেব প্রণালির ঠিক পাশেই অবস্থিত। বিশ্বের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ জলপথের বাণিজ্য এই পথেই পরিচালিত হয়।

২০২৩ সাল থেকে ইরান-সমর্থিত হুতি বিদ্রোহীরা লোহিত সাগরে ইসরায়েলি সংশ্লিষ্ট জাহাজগুলোতে নিয়মিত হামলা চালিয়ে আসছে। সোমালিল্যান্ডের উপকূলরেখা থেকে হুতিদের মূল ঘাঁটি হোদেইদাহর দূরত্ব ৩০০ থেকে ৫০০ কিলোমিটার। ইসরায়েলের জন্য সোমালিল্যান্ড একটি ‘ফরোয়ার্ড ডিফেন্স’ বা সম্মুখ প্রতিরক্ষা ঘাঁটি হিসেবে কাজ করবে।

ইসরায়েলি থিংকট্যাংক (আইএনএসএস)-এর মতে, সোমালিল্যান্ডে গোয়েন্দা ঘাঁটি স্থাপনের মাধ্যমে ইরান থেকে ইয়েমেনে আসা অস্ত্র চোরাচালান এবং হুতিদের গতিবিধির ওপর সার্বক্ষণিক নজর রাখা সম্ভব হবে। এমনকি সংযুক্ত আরব আমিরাতের অর্থায়নে নির্মিত বারবেরা বন্দর ইসরায়েলি নৌ টহল বা ড্রোন অপারেশনের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠতে পারে।

হর্ন অব আফ্রিকায় ইসরায়েলের এই প্রবেশ মূলত তার আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের আধিপত্য কমানোর একটি পাল্টা কৌশল। তুরস্ক ইতিমধ্যে সোমালিয়ার মোগাদিশুতে বিশাল সামরিক ঘাঁটি এবং বন্দরগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। ইসরায়েল মনে করে, সোমালিল্যান্ডের সঙ্গে জোরালো মৈত্রী এই অঞ্চলে তুরস্কের একক আধিপত্যে ভারসাম্য বজায় রাখবে।

এ ছাড়া ইসরায়েল সব সময় নিজের সীমানার বাইরে মিত্র দেশগুলোতে নিজের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে চায়। সোমালিল্যান্ডের মতো একটি স্থিতিশীল এবং পশ্চিমাপন্থী প্রশাসনের সঙ্গে বন্ধুত্ব ইসরায়েলকে লোহিত সাগরের নিরাপত্তা বলয়ে একক কর্তৃত্ব দেবে।

অর্থনৈতিক সম্ভাবনা ও প্রাকৃতিক সম্পদের ভান্ডারও আগ্রহের মূলে রয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, সোমালিল্যান্ড কেবল একটি কৌশলগত বন্দর নয়, বরং এটি সম্পদের একটি অব্যবহৃত খনি।

সোমালিল্যান্ডে বিপুল পরিমাণ অপরিশোধিত তেল, গ্যাস এবং বিরল মৃত্তিকা খনিজ মজুত থাকার জোরালো সম্ভাবনা রয়েছে। ইসরায়েলের উচ্চ প্রযুক্তি এবং অস্ত্র তৈরির কারখানায় এই কাঁচামালগুলো অত্যন্ত জরুরি।

ইসরায়েল ইতিমধ্যে কৃষি ক্ষেত্রে লবণাক্ত পানি পরিশোধন, উন্নত সেচব্যবস্থা এবং সাইবার নিরাপত্তা খাতে বড় বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। সোমালিল্যান্ডের জন্য এই অংশীদারত্ব হবে অর্থনৈতিক স্বাধীনতার চাবিকাঠি।

তবে এতে কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জও রয়েছে। ইসরায়েলের এই স্বীকৃতি যেমন সোমালিল্যান্ডের জন্য বৈধতার দ্বার উন্মোচন করেছে, তেমনি এটি আঞ্চলিক উত্তেজনারও জন্ম দিয়েছে।

সোমালিয়া এই পদক্ষেপকে তাদের অখণ্ডতার ওপর ‘সরাসরি আক্রমণ’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। আফ্রিকান ইউনিয়ন (এইউ) এবং আরব লিগ এই স্বীকৃতির তীব্র নিন্দা জানিয়েছে এবং সতর্ক করেছে যে এটি আফ্রিকা মহাদেশে নতুন করে অস্থিতিশীলতা তৈরি করতে পারে।

পশ্চিমা বিশ্বও ইসরায়েলের এই পদক্ষেপে দ্বিধাগ্রস্ত। মার্কিন সিনেটর টেড ক্রুজ সোমালিল্যান্ডকে একটি নির্ভরযোগ্য অংশীদার হিসেবে সমর্থন করলেও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র এখনই এই পথে হাঁটবে না, বরং পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবে।

সর্বোপরি ইসরায়েলের জন্য সোমালিল্যান্ড একটি স্থিতিশীল এবং দীর্ঘমেয়াদি মিত্র, যারা সন্ত্রাসবাদ দমনে ইসরায়েলের সমমনা বলেই মনে করা হয়। এই স্বীকৃতির মাধ্যমে ইসরায়েল লোহিত সাগরে নিজের নৌ-শক্তির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চায়। তবে এই পদক্ষেপ যদি ইথিওপিয়া বা সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো দেশগুলোকে সোমালিল্যান্ডকে স্বীকৃতি দিতে উৎসাহিত করবে। তবে এর ফলে হর্ন অব আফ্রিকার মানচিত্র এবং ভূরাজনীতি চিরতরে বদলে যেতে পারে। এটি যেমন একটি নতুন সামরিক ও অর্থনৈতিক অক্ষের সম্ভাবনা তৈরি করেছে, তেমনি আঞ্চলিক সংঘাতের ঝুঁকিও বাড়িয়ে দিয়েছে।

তথ্যসূত্র: সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট, রয়টার্স, আল জাজিরা এবং আটলান্টিক কাউন্সিল।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

নাহিদকে শুভকামনা জানিয়ে সরে গেলেন জামায়াতের আতিক

নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার ঘোষণা এনসিপি নেত্রী মনজিলা ঝুমার

এনসিপির সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদ করলেন মওলানা ভাসানীর নাতি

আজকের রাশিফল: অন্যের নামে সঙ্গীকে ডেকে হুলুস্থুল বাধাবেন, হঠাৎ অর্থপ্রাপ্তির সম্ভাবনা

‘জেবু’কে নিয়ে মানুষের কৌতূহল দেখে অবাক জাইমা, দীর্ঘ পোস্টে লিখলেন অনুভূতি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

নাইজেরিয়ায় কোন আইএসকে আঘাত করল মার্কিন বাহিনী

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
নাইজেরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় সোকোটো রাজ্যে আইএস আস্তানা লক্ষ্য করে মার্কিন নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ থেকে টমাহক মিসাইল নিক্ষেপ করা হয়। ছবি: সংগৃহীত
নাইজেরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় সোকোটো রাজ্যে আইএস আস্তানা লক্ষ্য করে মার্কিন নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ থেকে টমাহক মিসাইল নিক্ষেপ করা হয়। ছবি: সংগৃহীত

বড়দিনের রাতে নাইজেরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় সোকোটো রাজ্যে মার্কিন বাহিনীর বিমান হামলা বিশ্বজুড়ে নতুন করে আলোচনায় নিয়ে এসেছে জঙ্গিগোষ্ঠী ‘ইসলামিক স্টেট’ বা আইএসকে। মধ্যপ্রাচ্যে পরাজয়ের পর গোষ্ঠীটি এখন আফ্রিকায় তাদের জাল বিস্তার করছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছেন, নাইজেরিয়ায় খ্রিষ্টানদের লক্ষ্য করে নৃশংস হত্যাযজ্ঞ চালানোর কারণে তিনি এ হামলার নির্দেশ দিয়েছেন।

ইসলামিক স্টেট কী

ইসলামিক স্টেট (যাকে আইএসআইএস বা দায়েশ নামেও ডাকা হয়) একটি সুন্নি চরমপন্থী গোষ্ঠী। ইরাক ও সিরিয়ায় উত্থান ঘটিয়ে তারা একসময় ‘খিলাফত’ ঘোষণা করেছিল। এরপর ২০১৪ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে ইরাক ও সিরিয়ার বিশাল অংশ তাদের দখলে ছিল। তখন তারা কঠোর শরিয়াহ আইন জারি করে এবং প্রকাশ্যে শিরশ্ছেদ ও নির্যাতনের মতো নৃশংসতা চালিয়ে বিশ্বকে স্তব্ধ করে দেয়।

পরে যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন বহুজাতিক বাহিনীর ক্রমাগত অভিযানের মুখে ইরাকের মসুল ও সিরিয়ার রাক্কায় তাদের পতন ঘটে। তবে সংগঠনটি পুরোপুরি নির্মূল না হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে।

বর্তমানে তারা কোথায় সক্রিয়

মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।

এশিয়া মহাদেশের মধ্যে আফগানিস্তান ও পাকিস্তানে ‘আইএস-খোরাসান’ নামে তারা সক্রিয়। এ ছাড়া ফিলিপাইনের মিন্দানাও অঞ্চলেও তাদের অনুসারী রয়েছে। জাতিসংঘ মনে করে, বর্তমানে তাদের অন্তত ১০ হাজার সক্রিয় সদস্য রয়েছে।

লক্ষ্য ও বর্তমান কৌশল

আইএসের মূল লক্ষ্য তাদের চরমপন্থী মতাদর্শ বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে দেওয়া। তবে সরাসরি যুদ্ধের বদলে তারা এখন কিছু নতুন কৌশল নিয়েছে। যেমন, অ্যাফিলিয়েট নেটওয়ার্ক—নিজেরা সরাসরি যুক্ত না হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানীয় জঙ্গিগোষ্ঠীকে নিজেদের ‘শাখা’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে প্রভাব বিস্তার করা। লোন উলফ অ্যাটাক—সংঘবদ্ধ হামলার পরিবর্তে একজন বা দুই ব্যক্তির সমন্বয়ে বড় ধরনের হামলা। সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই বিচে ইহুদিদের এক অনুষ্ঠানে বন্দুক হামলার পেছনে আইএসের এই কৌশল ছিল বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। অনলাইন প্রচারণা—টেলিগ্রামের মতো প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে আতঙ্ক ছড়ানো এবং নতুন সদস্য সংগ্রহ করা।

মার্কিন সামরিক বাহিনীর মতে, আইএসের বর্তমান বিশ্ব নেতা হলেন আবদুলকাদির মুমিন। তিনি বর্তমানে আইএসের সোমালিয়া শাখার প্রধান।

আইএসের সাম্প্রতিক কিছু বড় হামলা

কঙ্গোতে চলতি বছরের গত অক্টোবরে একটি গির্জায় নৈশকালীন প্রার্থনার সময় হামলায় ৪৩ জন নিহত হয়, যার দায় স্বীকার করে আইএস। গত ফেব্রুয়ারিতে সোমালিয়ায় একাধিক সামরিক ঘাঁটিতে আত্মঘাতী গাড়িবোমা হামলা চালায় আইএস। চলতি মাসে সিরিয়ায় দুই মার্কিন সেনা ও একজন দোভাষী নিহত হন, যার নেপথ্যে আইএসের হাত রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ ঘটনার পর চলতি সপ্তাহে সিরিয়ায় আইএসের ঘাঁটি লক্ষ্য করে ব্যাপক হামলা চালিয়েছে মার্কিন সামরিক বাহিনী।

নাইজেরিয়ায় মার্কিন হামলা এটাই প্রমাণ করে যে, আইএস এখন আর কেবল মধ্যপ্রাচ্যের সমস্যা নয়। বিশেষ করে, সাহেল ও পশ্চিম আফ্রিকায় তাদের ক্রমবর্ধমান শক্তি বিশ্ব নিরাপত্তার জন্য নতুন এক চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

রয়টার্স থেকে সংক্ষেপে অনূদিত

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

নাহিদকে শুভকামনা জানিয়ে সরে গেলেন জামায়াতের আতিক

নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার ঘোষণা এনসিপি নেত্রী মনজিলা ঝুমার

এনসিপির সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদ করলেন মওলানা ভাসানীর নাতি

আজকের রাশিফল: অন্যের নামে সঙ্গীকে ডেকে হুলুস্থুল বাধাবেন, হঠাৎ অর্থপ্রাপ্তির সম্ভাবনা

‘জেবু’কে নিয়ে মানুষের কৌতূহল দেখে অবাক জাইমা, দীর্ঘ পোস্টে লিখলেন অনুভূতি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

নাইজেরিয়ায় কেন হামলা চালাল মার্কিন বাহিনী, খ্রিষ্টান নিপীড়নের সঙ্গে এর সম্পর্ক কী

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: এএফপি
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: এএফপি

নাইজেরিয়ার সরকার খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়ন ঠেকাতে ব্যর্থ—এমন অভিযোগে কয়েক সপ্তাহ ধরে সমালোচনার পর অবশেষে বড়দিনের রাতে (২৫ ডিসেম্বর) পশ্চিম আফ্রিকার দেশটিতে বিমান হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। সরাসরি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে নাইজেরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় সোকোটো রাজ্যে এ হামলা চালানো হয়।

ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ান বলছে, ট্রাম্প প্রশাসন আইএস জঙ্গিদের একাধিক আস্তানা লক্ষ্য করে এসব হামলা চালায়। হামলায় মার্কিন নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ থেকে টমাহক মিসাইল নিক্ষেপ করা হয়েছিল। এসব হামলায় একাধিক আইএস জঙ্গি নিহত ও তাঁদের আস্তানা ধ্বংস হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে, তবে সঠিক সংখ্যা এখনো জানানো হয়নি।

ট্রাম্প প্রশাসনের সাম্প্রতিক বিদেশি সামরিক হস্তক্ষেপগুলোর সর্বশেষ উদাহরণ নাইজেরিয়ায় হামলা। অথচ ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনী প্রচারণায় তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে ‘অন্তহীন যুদ্ধ’ থেকে বের করে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দাবি করেছেন, এই হামলার মূল উদ্দেশ্য ছিল নাইজেরিয়ায় বসবাসরত খ্রিষ্টানদের ওপর চলমান হত্যাযজ্ঞ বন্ধ করা। তাঁর মতে, আইএস জঙ্গিরা পরিকল্পিতভাবে খ্রিষ্টানদের লক্ষ্যবস্তু বানাচ্ছে। হামলার ঘোষণা দিয়ে ট্রাম্প তাঁর ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে লিখেছিলেন, ‘আমি আগেই এই সন্ত্রাসীদের সতর্ক করেছিলাম, তারা যদি খ্রিষ্টানদের হত্যা বন্ধ না করে, তবে তাদের চড়ম মূল্য দিতে হবে। আজ রাতে (বড়দিন) ঠিক তা-ই ঘটেছে।’

গত অক্টোবর ও নভেম্বর মাসেও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নাইজেরিয়ার নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে ‘খ্রিষ্টান গণহত্যার’ শামিল বলে অভিহিত করেছিলেন।

মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তরের এক কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা এপিকে জানান, নাইজেরিয়া সরকারের অনুমোদন নিয়ে দেশটির সঙ্গে সমন্বয় করেই এসব হামলা চালানো হয়েছে। নাইজেরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, এই সহযোগিতার মধ্যে গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদান ও কৌশলগত সমন্বয় ছিল।

কেন নাইজেরিয়ায় হামলা চালাল ট্রাম্প প্রশাসন

অনেক আগে থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের ডানপন্থী রাজনীতিক গোষ্ঠীগুলো নাইজেরিয়ায় খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়নের অভিযোগ তুলছে। গত সেপ্টেম্বরে রিপাবলিকান সিনেটর টেড ক্রুজ কিছু নাইজেরীয় কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞার আহ্বান জানান। তিনি দাবি করেন, যারা ‘ইসলামপন্থী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর মাধ্যমে খ্রিষ্টান ও অন্য ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সহিংসতা সহজতর করছে’, তাদের নিষিদ্ধ করা উচিত।

তবে বর্তমানে বিষয়টি মার্কিন ডানপন্থী ও ইভানজেলিক্যাল খ্রিষ্টান মহলে বড় ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। আবার এই ডানপন্থী ও ইভানজেলিক্যাল খ্রিষ্টানরাই ট্রাম্পের বড় সমর্থক। বিশ্লেষকদের মতে, নিজের সমর্থকদের তুষ্ট করতে এবং বিশ্বজুড়ে ‘খ্রিষ্টানদের রক্ষাকর্তা’ হিসেবে নিজেকে জাহির করতেই ট্রাম্প এই ত্বরিত সামরিক পদক্ষেপ নিয়েছেন।

এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা আইনের আওতায় নাইজেরিয়াকে ‘বিশেষ উদ্বেগের দেশ’ হিসেবে চিহ্নিত করেন ট্রাম্প। বেশ কিছু মার্কিন আইনপ্রণেতা ও রক্ষণশীল খ্রিষ্টান গোষ্ঠীর লাগাতার লবিংয়ের পর এই সিদ্ধান্ত আসে। এর কিছুদিন পরই তিনি নাইজেরিয়ায় সম্ভাব্য সামরিক অভিযানের পরিকল্পনা করতে পেন্টাগনকে নির্দেশ দেন। সে সময় ট্রাম্প বলেন, নাইজেরিয়া সরকার যদি খ্রিষ্টান হত্যাকাণ্ড বন্ধ না করে, তবে তিনি ‘গানস-এ-ব্লেজিং’ অর্থাৎ পূর্ণ শক্তি নিয়ে হস্তক্ষেপ করতে পারেন।

নাইজেরিয়ায় কি আসলেই খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়ন চলছে

নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; এর পেছনে নানা কারণ রয়েছে।

উদাহরণ হিসেবে, যাযাবর মুসলিম পশুপালক ও খ্রিষ্টান কৃষক সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রাণঘাতী সংঘর্ষ মূলত চারণভূমি ও পানির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে। তবে ধর্মীয় ও জাতিগত বিভাজন এটিকে আরও জটিল করে তুলেছে। আবার অনেক বিশ্লেষকের মতে, যাজকদের অপহরণের ঘটনা ধর্মীয় বিদ্বেষের চেয়ে অর্থনৈতিক লাভের উদ্দেশ্যেই বেশি ঘটে, কারণ, তাঁরা প্রভাবশালী ব্যক্তি এবং তাঁদের অনুসারী বা প্রতিষ্ঠান দ্রুত মুক্তিপণের টাকা জোগাড় করতে পারে।

নাইজেরিয়া সরকারের অবস্থান

ট্রাম্প প্রশাসনের হামলার পর নাইজেরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইএস-নিধনে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতার প্রশংসা করেছে। কিন্তু খ্রিষ্টান নিপীড়নের বিষয়টির সঙ্গে মার্কিন অভিযানের কোনো সম্পর্ক আছে কি না, এ বিষয়ে কিছু বলেনি।

এক বিবৃতিতে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, খ্রিষ্টান, মুসলমান কিংবা অন্য কোনো সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে পরিচালিত সব ধরনের সহিংসতাই নাইজেরিয়ার মূল্যবোধ এবং আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার প্রতি অবমাননা।

নাইজেরিয়ার বাস্তবতাও আসলে এমন। দীর্ঘদিন ধরে দেশটি নিরাপত্তা পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে। গত কয়েক বছরে দেশটিতে হাজারো মানুষ নিহত এবং শত শত মানুষ অপহৃত হয়েছে।

উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ২০০৯ সাল থেকে বোকো হারাম ও ইসলামিক স্টেট ওয়েস্ট আফ্রিকা প্রভিন্স (আইএসডব্লিউএপি) বিদ্রোহ চালিয়ে যাচ্ছে। এতে কয়েক দশক ধরে কয়েক হাজার মানুষ নিহত এবং লাখো মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে সশস্ত্র অপরাধী চক্র, যাদের সাধারণত ‘ডাকাত’ বলা হয়, তারাও গণ-অপহরণ ও হামলা চালাচ্ছে। এমন পরিস্থিতি মুসলমান ও খ্রিষ্টান উভয় সম্প্রদায়কেই প্রভাবিত করছে।

এর আগে ট্রাম্পের অভিযোগের জবাবে নাইজেরিয়ার সরকার বিষয়টি স্বীকার করে বলেছিল, দেশটিতে কেবল খ্রিষ্টান নয়—বিভিন্ন ধর্মের মানুষই চরমপন্থী গোষ্ঠীগুলোর হাতে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে।

গত মাসে নাইজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট বোলা আহমেদ তিনুবু বলেন, নাইজেরিয়াকে ধর্মীয়ভাবে অসহিষ্ণু দেশ হিসেবে চিত্রিত করা বাস্তবতার প্রতিফলন নয়। তিনি বলেন, ‘ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সহনশীলতা আমাদের সম্মিলিত পরিচয়ের একটি মূল ভিত্তি এবং এটি সব সময়ই থাকবে। নাইজেরিয়া এমন একটি দেশ, যেখানে সংবিধান সব ধর্মের নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করে।’

এদিকে, ‘অন্তহীন যুদ্ধ’ বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এলেও নাইজেরিয়ায় ট্রাম্পের নতুন সামরিক হস্তক্ষেপ আফ্রিকার ভূরাজনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। অনেকে বলছেন, ‘খ্রিষ্টান নিপীড়ন’ আসলে ট্রাম্পের অজুহাত; তাঁর লক্ষ্য নাইজেরিয়ার তেলের খনি।

দ্য গার্ডিয়ান থেকে অনুবাদ করেছেন জগতপতি বর্মা

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

নাহিদকে শুভকামনা জানিয়ে সরে গেলেন জামায়াতের আতিক

নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার ঘোষণা এনসিপি নেত্রী মনজিলা ঝুমার

এনসিপির সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদ করলেন মওলানা ভাসানীর নাতি

আজকের রাশিফল: অন্যের নামে সঙ্গীকে ডেকে হুলুস্থুল বাধাবেন, হঠাৎ অর্থপ্রাপ্তির সম্ভাবনা

‘জেবু’কে নিয়ে মানুষের কৌতূহল দেখে অবাক জাইমা, দীর্ঘ পোস্টে লিখলেন অনুভূতি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

‘ভেনেজুয়েলা সংকট’ কীভাবে আন্তর্জাতিক সংঘাতের রূপ নিচ্ছে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে। এই প্রেক্ষাপটে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিয়ো লুলা দা সিলভা ভেনেজুয়েলায় মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপ মানবিক বিপর্যয় ডেকে আনবে বলে সতর্ক করেছেন। তাঁর মতে, এই সতর্কতা শুধু ভেনেজুয়েলাকে ঘিরে নয়—পুরো দক্ষিণ আমেরিকার ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার প্রশ্নও তুলে ধরছে।

ভেনেজুয়েলার সংকটের মূল কারণ দেশটির দীর্ঘস্থায়ী রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিতর্কিত নির্বাচন, অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা এবং মানবাধিকার পরিস্থিতি। প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর সরকারকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের একটি অংশ কর্তৃত্ববাদী ও অগণতান্ত্রিক বলে মনে করে। এর জবাবে ওয়াশিংটন একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এসব নিষেধাজ্ঞার মূল লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি, যা দেশটির আয়ের প্রধান উৎস।

ভেনেজুয়েলা বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ তেল মজুতের অধিকারী। ফলে তাদের তেল শুধু অর্থনীতি নয়, কূটনীতিরও কেন্দ্রে অবস্থান করছে। যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, ভেনেজুয়েলার তেল বিক্রির পথ বন্ধ করতে পারলে মাদুরো সরকার দুর্বল হবে। এই লক্ষ্যেই সাম্প্রতিক সময়ে দেশটির নিষেধাজ্ঞাভুক্ত তেল ট্যাংকারগুলোকে অবরোধের মতো কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে মার্কিন বাহিনী। তবে এই পদক্ষেপকে সরাসরি যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেওয়ার ঝুঁকি হিসেবে দেখছেন দক্ষিণ আমেরিকার অনেক নেতা।

ব্রাজিল ও মেক্সিকোর মতো লাতিন শক্তিগুলো এই কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হস্তক্ষেপের সম্ভাবনার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, দক্ষিণ আমেরিকার ইতিহাস বহিঃশক্তির সামরিক হস্তক্ষেপের তিক্ত অভিজ্ঞতায় ভরা। ফকল্যান্ড যুদ্ধের চার দশক পর আবারও কোনো অন্য মহাদেশীয় শক্তির সামরিক উপস্থিতি এই মহাদেশকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে—এমন আশঙ্কাই তিনি প্রকাশ করেছেন।

এদিকে রাশিয়া ও চীন ভেনেজুয়েলার সরকারের প্রতি সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। রাশিয়ার ক্ষেত্রে এটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব মোকাবিলার কৌশল, আর চীনের জন্য এটি তেল ও ঋণনির্ভর অর্থনৈতিক স্বার্থের প্রশ্ন। ফলে ভেনেজুয়েলা ক্রমেই যুক্তরাষ্ট্র বনাম রাশিয়া–চীন প্রভাব বিস্তারের আরেকটি ময়দানে পরিণত হচ্ছে।

‘মার্কোসুর’ সম্মেলনে লাতিন আমেরিকার দেশগুলো যে যৌথ অবস্থান নিয়েছে, তা এই বাস্তবতাকেই প্রতিফলিত করে। তারা ভেনেজুয়েলায় গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষার কথা বলেছে, তবে স্পষ্টভাবে সামরিক পথ প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের মতে, সংকটের সমাধান হতে পারে কেবল সংলাপ ও শান্তিপূর্ণ কূটনীতির মাধ্যমে।

সব মিলিয়ে ভেনেজুয়েলার সংকট এখন আর একটি দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যা নয়। তেল, আদর্শিক দ্বন্দ্ব, আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও বৈশ্বিক ক্ষমতার লড়াই—সবকিছু মিলিয়ে এটি আন্তর্জাতিক রাজনীতির এক স্পর্শকাতর সংঘাতক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

নাহিদকে শুভকামনা জানিয়ে সরে গেলেন জামায়াতের আতিক

নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার ঘোষণা এনসিপি নেত্রী মনজিলা ঝুমার

এনসিপির সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদ করলেন মওলানা ভাসানীর নাতি

আজকের রাশিফল: অন্যের নামে সঙ্গীকে ডেকে হুলুস্থুল বাধাবেন, হঠাৎ অর্থপ্রাপ্তির সম্ভাবনা

‘জেবু’কে নিয়ে মানুষের কৌতূহল দেখে অবাক জাইমা, দীর্ঘ পোস্টে লিখলেন অনুভূতি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত