আজকের পত্রিকা ডেস্ক

মাটির অনেক গভীরে চলছিল গোপন পরমাণু কর্মসূচি। আমেরিকার নজর এড়িয়ে, ধীরে ধীরে উন্মোচিত হচ্ছিল পরমাণুর রহস্য। তৈরি হচ্ছিল পারমাণবিক বোমার জন্য প্রয়োজনীয় জ্বালানি। শত্রুরা এগিয়ে আসছিল, যুদ্ধের পদধ্বনি ক্রমেই জোরালো হচ্ছিল। এরপর, যুদ্ধের ঠিক প্রাক্কালে, তাড়াহুড়ো করে অন্তত একটি সাধারণ পারমাণবিক বোমা তৈরি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো। যদি জাতি সম্পূর্ণভাবে ধ্বংসের মুখে পড়ে, তাহলে হয়তো একটি পারমাণবিক বিস্ফোরণ হয়তো দেশকে বাঁচাতে পারবে।
এটাই ছিল ১৯৬৭ সালে ইসরায়েলের অবস্থা। ইতিহাসবিদেরা এখন মনে করেন, ওই বছরই ইহুদি রাষ্ট্রটি প্রথমবারের মতো পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির একেবারে দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যায়। কিন্তু তারা শেষ মুহূর্তে সেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে। কারণ, ছয় দিনের যুদ্ধে অপ্রত্যাশিত বিজয় তাদের সেই ‘প্রদর্শনীমূলক বিস্ফোরণ’ বা পরীক্ষামূলক বোমার প্রয়োজনীয়তাকে অকার্যকর করে দেয়।
বর্তমান ইরানের গল্পটা খুব একটা আলাদা নয়। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরান-ইসরায়েল সংঘাতকে ‘১২ দিনের যুদ্ধ’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। ১২ দিনের যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগে ইসরায়েল একে একে ইরানের মিত্রদের দুর্বল করে দিয়েছে। এই মিত্রদের মধ্যে আছে লেবাননের হিজবুল্লাহ থেকে শুরু করে, সিরিয়ার সামরিক বাহিনী (আসাদ সরকারের পতনের পর এই বাহিনী এখন আর ইসরায়েলের জন্য কোনো হুমকি নয়) ও হামাস।
এখন ইরান যদি ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ ক্ষমতা পুনর্গঠনের চেষ্টা করে এবং ইসরায়েল যদি আরও সহিংসতার হুমকি দেয়, তাহলে তেহরানও সেই একই প্রশ্নের মুখোমুখি হবে, যে প্রশ্নের মুখোমুখি ১৯৬৭ সালে ইসরায়েলকে হতে হয়েছিল। দেশকে বাঁচানোর জন্য কি পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির পথে ছুটতে হবে, নাকি শেষ মুহূর্তে নিজেকে সামলে রাখতে হবে?
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের সাবেক জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা এবং ‘ইরানস গ্র্যান্ড স্ট্র্যাটেজি’ বইয়ের লেখক ভালি নাসর বলেন, ‘ইরান এখন দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকা এক গভীর অভ্যন্তরীণ বিতর্কের মধ্যে রয়েছে। এটা এখন বাঁচা-মরার মুহূর্ত এবং এটা সত্যিই অবাক করার মতো যে, ইসরায়েলই এখন ইরানকে সেই একই সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করছে, যেটা তারা একসময় নিয়েছিল।’
১৯৬৭ সালের ছয় দিনের যুদ্ধ মধ্যপ্রাচ্যের ভাগ্য বদলে দিয়েছিল। ইসরায়েল, তার চেয়ে আকারে বড় প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর ওপর বিজয় অর্জন করে এবং পশ্চিম তীর ও গাজা দখল করে। এটি ইসরায়েলের চরিত্রকেও বদলে দেয়। সেই সঙ্গে ইসরায়েলের সঙ্গে পারমাণবিক অস্ত্রের সম্পর্ক এক অদ্ভুত, অস্পষ্ট রূপ নেয়। দেশটি পরমাণু শক্তিধর রাষ্ট্রে পরিণত হলেও তারা কখনো তা ঘোষণা করেনি, আবার কখনো অস্বীকারও করেনি।
পশ্চিমাদের তরফ থেকে ইসরায়েলের এই গোপন অস্ত্রভান্ডার মেনে নেওয়াকে মধ্যপ্রাচ্যে দ্বিচারিতা হিসেবে দেখা হয়। পশ্চিমারা তাদের মিত্র ইসরায়েলকে পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ চুক্তি লঙ্ঘনের অনুমতি দিয়েছে, অথচ ইরানকে বিভিন্ন শাস্তির আওতায় রেখেছে—যদিও ইরান অনেক ক্ষেত্রেই তাদের চুক্তির দায়িত্ব পালন করেছে।
কিন্তু ইসরায়েলের এই বিশেষ মর্যাদা শুধু যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত মিত্র হওয়ার কারণে নয়। এটি ছিল একটি ভিন্ন সময়ের ফসল, যখন ইসরায়েল ছিল তরুণ, দুর্বল; শত্রুরা ছিল অনেক বেশি শক্তিশালী, যারা দেশটিকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দিতে চেয়েছিল। ১৯৬৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে করা গোপন চুক্তি—যার ফলে ইসরায়েল তাদের পারমাণবিক অস্ত্র অঘোষিত রাখতে পেরেছিল—ছিল ইসরায়েলি নেতৃত্বের দূরদর্শিতার ফসল। তারা তখন তাদের দেশের দুর্বল অবস্থানকে এবং হলোকাস্টের তাজা স্মৃতিকে কাজে লাগিয়ে এমন এক ব্যতিক্রম সুবিধা আদায় করে নিয়েছিল, যা আর কোনো দেশ পায়নি।
কিন্তু যদি এখন ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির পথে এগিয়ে যায়, তাহলে বিশ্বের সামনে এক অসম্ভব সমীকরণ হাজির হবে—নতুন আরেকটি উচ্চাকাঙ্ক্ষী দেশ পরমাণু ক্লাবে প্রবেশ করবে, যা অন্যদেরও একই পথে ঠেলে দিতে পারে, কিংবা তাদের উত্তর কোরিয়ার মতো শাস্তির মুখে পড়তে হবে।
তৃতীয় বিকল্প হলো, ইরান চাইলে পরমাণু অস্ত্রের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়েই রাজনৈতিক সুবিধা নিতে পারে, ঠিক যেমনটা ইসরায়েল একসময় নিয়েছিল। ইসরায়েলের পারমাণবিক ইতিহাসের অন্যতম শীর্ষ গবেষক আভনার কোহেন বলেন, ইরান আসলে বহু বছর ধরে ইসরায়েলের পথ অনুসরণ করার চেষ্টা করছে। তারা এমন একটি পারমাণবিক কর্মসূচি চালিয়েছে, যা আংশিক প্রকাশ্য, আংশিক গোপন। তারা ধীরে ধীরে ‘বোমার আরও কাছাকাছি’ চলে যাচ্ছে, কিন্তু চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে বিলম্ব করছে, যতক্ষণ পর্যন্ত তা একান্ত জরুরি না হয়।
ক্যালিফোর্নিয়ার মিডলবেরি ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের অধ্যাপক কোহেন বলেন, ‘ইরান খুবই আগ্রহী ছিল আরেক ইসরায়েল হতে, ইসরায়েলের পথ অনুসরণ করতে।’ তিনি বলেন, কোনো সংকটকালে যেন পরমাণু অস্ত্র তৈরি করা যায়, ইসরায়েল সে লক্ষ্যে নিজেদের ব্যাপক দক্ষতা গড়ে তুলেছিল। কিন্তু কখনো প্রকাশ্যে সেই পথে হাঁটেনি। আর এটাই অনুকরণ করার চেষ্টা করেছিল ইরান।
তিনি বলেন, ‘ইরান চেয়েছিল এবং অনেক ক্ষেত্রেই তারা ইসরায়েলের অস্পষ্ট কৌশল অনুকরণ করছিল, কিন্তু তাদের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ছিল অনেক বেশি শত্রুতাপূর্ণ।’ তিনি ১৯৬৯ সালে যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েলের গোপন চুক্তির প্রসঙ্গ টেনে বলেন, ‘শেষ পর্যন্ত, বিশ্ব ইসরায়েলের প্রতি অনেক বেশি সহানুভূতিশীল থেকেছে, আর ইরানের ক্ষেত্রে বরাবরই কঠোর।’
ইসরায়েল-ইরানের আঞ্চলিক দ্বন্দ্বকে সরাসরি সংঘাতে পরিণত হতে সময় লেগেছে প্রায় সাড়ে চার দশক। এই সময়ে ইরানের নেতৃত্ব ‘জায়নবাদী রাষ্ট্র’ ধ্বংস করার শপথকে তাদের জাতীয় রাজনৈতিক বক্তব্যের কেন্দ্রবিন্দুতে স্থাপন করেছে। ইসরায়েলের কাছে, ২১ শতকের শুরু থেকে ইরানের সামরিক শক্তি বৃদ্ধি, পারমাণবিক কর্মসূচি এবং সশস্ত্র মিত্রগোষ্ঠী ক্রমেই দেশটির জন্য অস্তিত্বের হুমকি হয়ে উঠেছে।
অন্যদিকে, ইরানের দৃষ্টিতে ইসরায়েলও দ্রুত অস্তিত্বের হুমকিতে পরিণত হয়েছে। ইসরায়েলি নেতারা প্রকাশ্যে তেহরানের শাসনব্যবস্থা বদলে দেওয়ার কথা বলেছেন এবং ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী ইতিমধ্যে ইরানের ভেতরে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালানোর সক্ষমতা দেখিয়েছে।
ইসরায়েল তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি এমনভাবে গোপন রাখতে সক্ষম হয়েছিল, যা ঘনিষ্ঠ মিত্রদের কাছ থেকেও আড়াল ছিল। অন্যদিকে, ইরান ধীরে ধীরে পারমাণবিক বোমার কারিগরি সক্ষমতার কাছাকাছি পৌঁছে গেছে, যদিও তারা পরমাণু অস্ত্র তৈরি না করার শপথ নিয়েছে। সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি ২০০০—এর দশকের শুরুর দিকে পারমাণবিক অস্ত্রকে ‘হারাম’ বলে ফতোয়া (ধর্মীয় নির্দেশ) দিয়েছিলেন।
ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে হামলা চালানোর সময়ও পশ্চিমা গোয়েন্দা সংস্থা এবং জাতিসংঘ একমত ছিল যে, ইরান এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির সিদ্ধান্ত নেয়নি।
১৯৬৭ সালে আসন্ন সংঘাত ইসরায়েলের সব সন্দেহ দূর করে দেয়। ঐতিহাসিক দলিলপত্রে দেখা যায়, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী লেভি ইশকোল তাঁর মন্ত্রিসভার সদস্যদের সঙ্গে ‘একটি নির্দিষ্ট অস্ত্র’ নিয়ে আলোচনা করেছিলেন। তৎকালীন সেনাপ্রধান (পরে প্রধানমন্ত্রী) আইজ্যাক রবিন ইসরায়েলের একমাত্র পারমাণবিক চুল্লি ডিমোনায় সম্ভাব্য শত্রু হামলা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন। তিনি বলেন, ‘এর কোনো আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি বা বৈধতা নেই।’
ইরানের ক্ষেত্রেও, গত বছর যখন ইসরায়েলের সঙ্গে সংঘাতের আশঙ্কা বাড়ছিল, তেহরানের নীতিনির্ধারকেরা অস্পষ্ট ভাষায় সতর্ক করতে শুরু করেন যে, তারা তাদের পারমাণবিক নীতি পরিবর্তনের কথা ভাবতে পারে। ২০২৪ সালের এপ্রিল মাসে ইসরায়েল ও ইরানের প্রথম পাল্টাপাল্টি হামলার কয়েক মাস পর, আয়াতুল্লাহ খামেনির পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা কামাল খাররাজি ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসকে বলেন, ‘আমরা পরমাণু অস্ত্র তৈরির পক্ষপাতী নই, তবে যদি ইরান অস্তিত্বের হুমকির মুখে পড়ে, তাহলে আমাদের অবশ্যই আমাদের নীতি পরিবর্তন করতে হবে।’
এর আগে, ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে, ইরানের পারমাণবিক শক্তি সংস্থার সাবেক প্রধান আলী আকবর সালেহি বলেন, ইরানের বিস্তৃত পারমাণবিক গবেষণা কর্মসূচি তাদের বিপুল কারিগরি দক্ষতা দিয়েছে। তিনি বলেন, ‘একটি গাড়ির জন্য যা যা লাগে—চ্যাসিস, ইঞ্জিন, স্টিয়ারিং, গিয়ারবক্স—আমরা সবকিছুই তৈরি করেছি। আপনি জিজ্ঞাসা করছেন, আমরা গিয়ারবক্স বানিয়েছি কিনা, আমি বলছি হ্যাঁ। ইঞ্জিন বানিয়েছি? হ্যাঁ। তবে প্রত্যেকটি নিজ নিজ কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে।’
ইসরায়েলের ক্ষেত্রেও, ১৯৬৭ সালের যুদ্ধের ঠিক আগে, সরকার ও সামরিক বাহিনীর বিভিন্ন গবেষণা তাদের প্রাথমিক পারমাণবিক বিস্ফোরকের জন্য প্রয়োজনীয় জ্ঞান এবং জ্বালানি দিয়ে ফেলেছিল। কিন্তু তখনো পর্যন্ত সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে অস্ত্র তৈরির নির্দেশ দেয়নি।
ইরানের ক্ষেত্রেও, সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ইসরায়েলের সঙ্গে সংঘাতের সম্ভাবনা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তাদের মধ্যে একটি বড় পরিবর্তন দেখা যায়—তারা ৬০ শতাংশ মাত্রায় সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের মজুত দ্বিগুণ করেছে, যা এখন প্রায় ৪০০ কেজি। এই ইউরেনিয়াম সহজেই অস্ত্র তৈরি মানে নিয়ে যাওয়া সম্ভব। তবে ইরান তা দিয়ে কোনো উন্নত পারমাণবিক বোমা তৈরি করতে পারবে না; বরং তা হবে খুবই সাধারণ, তবুও কার্যকর, প্রোটোটাইপ অস্ত্র—যেমনটি ইসরায়েল ১৯৬৭ সালে তড়িঘড়ি তৈরি করেছিল। সেটিকেই ‘স্যামসন অপশন’ বলা হয়।
ইসরায়েলের পরমাণু কর্মসূচির পেছনে ছিল গবেষণা ও চতুরতা, যার মূল কেন্দ্র ছিল নেগেভ পারমাণবিক গবেষণা কেন্দ্র ডিমোনায়। সেখানে ১৯৫০-এর দশকের শেষদিকে ইসরায়েল গোপনে প্লুটোনিয়াম প্রক্রিয়াকরণের একটি ভূগর্ভস্থ স্থাপনা তৈরি করেছিল। সে সময় ইসরায়েলের নিরাপত্তা উদ্বেগে ইরান ছিল না। ইরানের তৎকালীন শাহ যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্র ছিলেন। ১৯৬৭ সালে যুক্তরাষ্ট্র ইরানকে ‘অ্যাটমস ফর পিস’ কর্মসূচির অধীনে একটি পারমাণবিক চুল্লি উপহার দিয়েছিল। এক বছর পর ইরান এনপিটি স্বাক্ষর করে।
এরপর, ১৯৭৯ সালের ইসলামি বিপ্লবের পর, শাহ ক্ষমতাচ্যুত হলে ইরানের পারমাণবিক গবেষণা প্রাথমিক পর্যায়ে থেমে যায়। তখন বেশির ভাগ পারমাণবিক বিজ্ঞানী দেশ ছেড়ে চলে যান। একই সময়ে, ১৯৭৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞানীরা পুরোনো এক স্যাটেলাইটের মাধ্যমে দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে সাগরে দুটি আলোর ঝলকানি শনাক্ত করেন। কয়েক মাস পর, প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার তাঁর ডায়েরিতে লেখেন, ‘আমাদের বিজ্ঞানীদের মধ্যে বিশ্বাস বাড়ছে যে, ইসরায়েল দক্ষিণ আফ্রিকার কাছাকাছি সাগরে পারমাণবিক পরীক্ষা চালিয়েছে।’
প্রায় ওই সময়েই, ইসরায়েল একটি নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়, যা আজও অপরিবর্তিত আছে বলে জানান ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সাবেক গবেষণা পরিচালক উজি আরাদ। সেটা হলো—‘বেগিন নীতিমালা।’ এই নীতিমালার মূল কথা হলো—কোনো শত্রু দেশের পারমাণবিক কর্মসূচি যদি ইসরায়েলের জন্য হুমকি হয়ে ওঠে, তাহলে সব রকম পথ বেছে দেখার পর পর, সেগুলোতে বিমান হামলা চালানো হবে।
এই নীতির বাস্তবায়ন শুরু হয় ১৯৮১ সালে। সে বছরই ইসরায়েল ইরাকের পারমাণবিক চুল্লিতে হামলা চালায়। ২০০৭ সালে সিরিয়ায় গোপনে নির্মাণাধীন উত্তর কোরিয়া সরবরাহকৃত পারমাণবিক চুল্লিতে হামলা করে ইসরায়েল। আর এখন, ২০২৫ সালে ইসরায়েলের যুদ্ধবিমান ইরানের নাতানজ, ফোরদো এবং ইস্পাহানে বোমা ফেলেছে।
এই পরিস্থিতি ইরানের নিজস্ব পারমাণবিক অবস্থানও গড়ে তুলেছে, যা আন্তর্জাতিক রাজনীতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে ওঠানামা করেছে। আশির দশকে ইরাকের সঙ্গে যুদ্ধের পর, ইরান পারমাণবিক কর্মসূচি শুরু করেছিল, যাতে ভবিষ্যতে আরেকটি যুদ্ধ এড়ানো যায়। কিন্তু প্রথম উপসাগরীয় যুদ্ধের পর সেই হুমকি কমে যায়।
পাকিস্তানের পারমাণবিক বিজ্ঞানী আব্দুল কাদির খান ২০০৪ সালে স্বীকার করেন, তিনি ১৯৯০-এর দশকে ইরানকে পুরোনো মডেলের সেন্ট্রিফিউজ প্রযুক্তি বিক্রি করেছিলেন। এটাকেই অনেকে ইরানের সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচির সূচনা মনে করেন। ২০০৩ সালে, যুক্তরাষ্ট্র ইরাকে গণবিধ্বংসী অস্ত্র খুঁজে পেতে আক্রমণ চালানোর পর, ইরান তাদের ‘আমাদ’ নামের গোপন কর্মসূচি ঘোষণা করে এবং তা বন্ধ করে দেয়। জাতিসংঘ তখন জানায়, ওই কর্মসূচিতে তারা গবেষণা করলেও প্রকৃত অস্ত্র তৈরি করেনি।
ইরান ভালোভাবেই বুঝতে পেরেছিল, এই কর্মসূচিই যুক্তরাষ্ট্রকে আলোচনার টেবিলে আনতে পারে এবং নিষেধাজ্ঞা তোলার পথ তৈরি করতে পারে। ইরানের দাবি ছিল, তারা এনপিটি স্বাক্ষরকারী দেশ হিসেবে শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক শক্তির বৈধ অধিকার ভোগ করছে। তারা আন্তর্জাতিক পরিদর্শকদের অনুমতি দিয়েছে, এমনকি আকস্মিক পরিদর্শনেরও সুযোগ দিয়েছে।
কিন্তু তারা নাতানজ ও ফোরদোর মতো সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্রও তৈরি করেছে, যা পশ্চিমা গোয়েন্দারা ফাঁস করেছে। এসব স্থাপনাও সম্প্রতি ইসরায়েলি হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। একই সঙ্গে, ইরানের প্রচলিত সামরিক প্রতিরোধ শক্তিও ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। চারপাশের ‘আগুনের বৃত্ত’ বলে পরিচিত ইরানের সশস্ত্র মিত্র বাহিনীগুলোও দুর্বল হয়ে পড়েছে। অনেক ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ কেন্দ্র এবং আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস হয়েছে।
এ অবস্থায়, ইরান এখন একেবারে পরমাণু শক্তিধর রাষ্ট্রে পরিণত হওয়ার কিনারায় দাঁড়িয়ে। ভালি নাসর বলেন, ‘ইরান এখনো লাভ-ক্ষতির হিসাব করছে। আর এখন হয়তো সেই অভ্যন্তরীণ বিতর্ক অনেকটাই সেদিকেই এগিয়েছে, যারা বলছে, বোমা বানানোর সময় হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘তবে দরজা পুরোপুরি বন্ধ হয়নি। এখনো এমন একটি কূটনৈতিক সমঝোতার সুযোগ আছে, যা যথেষ্ট আকর্ষণীয় এবং শক্তিশালী হলে ইরানের এই পথে এগিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত বদলাতে পারে।’
ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস থেকে অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান
আরও খবর পড়ুন:

মাটির অনেক গভীরে চলছিল গোপন পরমাণু কর্মসূচি। আমেরিকার নজর এড়িয়ে, ধীরে ধীরে উন্মোচিত হচ্ছিল পরমাণুর রহস্য। তৈরি হচ্ছিল পারমাণবিক বোমার জন্য প্রয়োজনীয় জ্বালানি। শত্রুরা এগিয়ে আসছিল, যুদ্ধের পদধ্বনি ক্রমেই জোরালো হচ্ছিল। এরপর, যুদ্ধের ঠিক প্রাক্কালে, তাড়াহুড়ো করে অন্তত একটি সাধারণ পারমাণবিক বোমা তৈরি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো। যদি জাতি সম্পূর্ণভাবে ধ্বংসের মুখে পড়ে, তাহলে হয়তো একটি পারমাণবিক বিস্ফোরণ হয়তো দেশকে বাঁচাতে পারবে।
এটাই ছিল ১৯৬৭ সালে ইসরায়েলের অবস্থা। ইতিহাসবিদেরা এখন মনে করেন, ওই বছরই ইহুদি রাষ্ট্রটি প্রথমবারের মতো পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির একেবারে দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যায়। কিন্তু তারা শেষ মুহূর্তে সেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে। কারণ, ছয় দিনের যুদ্ধে অপ্রত্যাশিত বিজয় তাদের সেই ‘প্রদর্শনীমূলক বিস্ফোরণ’ বা পরীক্ষামূলক বোমার প্রয়োজনীয়তাকে অকার্যকর করে দেয়।
বর্তমান ইরানের গল্পটা খুব একটা আলাদা নয়। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরান-ইসরায়েল সংঘাতকে ‘১২ দিনের যুদ্ধ’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। ১২ দিনের যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগে ইসরায়েল একে একে ইরানের মিত্রদের দুর্বল করে দিয়েছে। এই মিত্রদের মধ্যে আছে লেবাননের হিজবুল্লাহ থেকে শুরু করে, সিরিয়ার সামরিক বাহিনী (আসাদ সরকারের পতনের পর এই বাহিনী এখন আর ইসরায়েলের জন্য কোনো হুমকি নয়) ও হামাস।
এখন ইরান যদি ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ ক্ষমতা পুনর্গঠনের চেষ্টা করে এবং ইসরায়েল যদি আরও সহিংসতার হুমকি দেয়, তাহলে তেহরানও সেই একই প্রশ্নের মুখোমুখি হবে, যে প্রশ্নের মুখোমুখি ১৯৬৭ সালে ইসরায়েলকে হতে হয়েছিল। দেশকে বাঁচানোর জন্য কি পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির পথে ছুটতে হবে, নাকি শেষ মুহূর্তে নিজেকে সামলে রাখতে হবে?
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের সাবেক জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা এবং ‘ইরানস গ্র্যান্ড স্ট্র্যাটেজি’ বইয়ের লেখক ভালি নাসর বলেন, ‘ইরান এখন দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকা এক গভীর অভ্যন্তরীণ বিতর্কের মধ্যে রয়েছে। এটা এখন বাঁচা-মরার মুহূর্ত এবং এটা সত্যিই অবাক করার মতো যে, ইসরায়েলই এখন ইরানকে সেই একই সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করছে, যেটা তারা একসময় নিয়েছিল।’
১৯৬৭ সালের ছয় দিনের যুদ্ধ মধ্যপ্রাচ্যের ভাগ্য বদলে দিয়েছিল। ইসরায়েল, তার চেয়ে আকারে বড় প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর ওপর বিজয় অর্জন করে এবং পশ্চিম তীর ও গাজা দখল করে। এটি ইসরায়েলের চরিত্রকেও বদলে দেয়। সেই সঙ্গে ইসরায়েলের সঙ্গে পারমাণবিক অস্ত্রের সম্পর্ক এক অদ্ভুত, অস্পষ্ট রূপ নেয়। দেশটি পরমাণু শক্তিধর রাষ্ট্রে পরিণত হলেও তারা কখনো তা ঘোষণা করেনি, আবার কখনো অস্বীকারও করেনি।
পশ্চিমাদের তরফ থেকে ইসরায়েলের এই গোপন অস্ত্রভান্ডার মেনে নেওয়াকে মধ্যপ্রাচ্যে দ্বিচারিতা হিসেবে দেখা হয়। পশ্চিমারা তাদের মিত্র ইসরায়েলকে পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ চুক্তি লঙ্ঘনের অনুমতি দিয়েছে, অথচ ইরানকে বিভিন্ন শাস্তির আওতায় রেখেছে—যদিও ইরান অনেক ক্ষেত্রেই তাদের চুক্তির দায়িত্ব পালন করেছে।
কিন্তু ইসরায়েলের এই বিশেষ মর্যাদা শুধু যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত মিত্র হওয়ার কারণে নয়। এটি ছিল একটি ভিন্ন সময়ের ফসল, যখন ইসরায়েল ছিল তরুণ, দুর্বল; শত্রুরা ছিল অনেক বেশি শক্তিশালী, যারা দেশটিকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দিতে চেয়েছিল। ১৯৬৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে করা গোপন চুক্তি—যার ফলে ইসরায়েল তাদের পারমাণবিক অস্ত্র অঘোষিত রাখতে পেরেছিল—ছিল ইসরায়েলি নেতৃত্বের দূরদর্শিতার ফসল। তারা তখন তাদের দেশের দুর্বল অবস্থানকে এবং হলোকাস্টের তাজা স্মৃতিকে কাজে লাগিয়ে এমন এক ব্যতিক্রম সুবিধা আদায় করে নিয়েছিল, যা আর কোনো দেশ পায়নি।
কিন্তু যদি এখন ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির পথে এগিয়ে যায়, তাহলে বিশ্বের সামনে এক অসম্ভব সমীকরণ হাজির হবে—নতুন আরেকটি উচ্চাকাঙ্ক্ষী দেশ পরমাণু ক্লাবে প্রবেশ করবে, যা অন্যদেরও একই পথে ঠেলে দিতে পারে, কিংবা তাদের উত্তর কোরিয়ার মতো শাস্তির মুখে পড়তে হবে।
তৃতীয় বিকল্প হলো, ইরান চাইলে পরমাণু অস্ত্রের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়েই রাজনৈতিক সুবিধা নিতে পারে, ঠিক যেমনটা ইসরায়েল একসময় নিয়েছিল। ইসরায়েলের পারমাণবিক ইতিহাসের অন্যতম শীর্ষ গবেষক আভনার কোহেন বলেন, ইরান আসলে বহু বছর ধরে ইসরায়েলের পথ অনুসরণ করার চেষ্টা করছে। তারা এমন একটি পারমাণবিক কর্মসূচি চালিয়েছে, যা আংশিক প্রকাশ্য, আংশিক গোপন। তারা ধীরে ধীরে ‘বোমার আরও কাছাকাছি’ চলে যাচ্ছে, কিন্তু চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে বিলম্ব করছে, যতক্ষণ পর্যন্ত তা একান্ত জরুরি না হয়।
ক্যালিফোর্নিয়ার মিডলবেরি ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের অধ্যাপক কোহেন বলেন, ‘ইরান খুবই আগ্রহী ছিল আরেক ইসরায়েল হতে, ইসরায়েলের পথ অনুসরণ করতে।’ তিনি বলেন, কোনো সংকটকালে যেন পরমাণু অস্ত্র তৈরি করা যায়, ইসরায়েল সে লক্ষ্যে নিজেদের ব্যাপক দক্ষতা গড়ে তুলেছিল। কিন্তু কখনো প্রকাশ্যে সেই পথে হাঁটেনি। আর এটাই অনুকরণ করার চেষ্টা করেছিল ইরান।
তিনি বলেন, ‘ইরান চেয়েছিল এবং অনেক ক্ষেত্রেই তারা ইসরায়েলের অস্পষ্ট কৌশল অনুকরণ করছিল, কিন্তু তাদের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ছিল অনেক বেশি শত্রুতাপূর্ণ।’ তিনি ১৯৬৯ সালে যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েলের গোপন চুক্তির প্রসঙ্গ টেনে বলেন, ‘শেষ পর্যন্ত, বিশ্ব ইসরায়েলের প্রতি অনেক বেশি সহানুভূতিশীল থেকেছে, আর ইরানের ক্ষেত্রে বরাবরই কঠোর।’
ইসরায়েল-ইরানের আঞ্চলিক দ্বন্দ্বকে সরাসরি সংঘাতে পরিণত হতে সময় লেগেছে প্রায় সাড়ে চার দশক। এই সময়ে ইরানের নেতৃত্ব ‘জায়নবাদী রাষ্ট্র’ ধ্বংস করার শপথকে তাদের জাতীয় রাজনৈতিক বক্তব্যের কেন্দ্রবিন্দুতে স্থাপন করেছে। ইসরায়েলের কাছে, ২১ শতকের শুরু থেকে ইরানের সামরিক শক্তি বৃদ্ধি, পারমাণবিক কর্মসূচি এবং সশস্ত্র মিত্রগোষ্ঠী ক্রমেই দেশটির জন্য অস্তিত্বের হুমকি হয়ে উঠেছে।
অন্যদিকে, ইরানের দৃষ্টিতে ইসরায়েলও দ্রুত অস্তিত্বের হুমকিতে পরিণত হয়েছে। ইসরায়েলি নেতারা প্রকাশ্যে তেহরানের শাসনব্যবস্থা বদলে দেওয়ার কথা বলেছেন এবং ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী ইতিমধ্যে ইরানের ভেতরে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালানোর সক্ষমতা দেখিয়েছে।
ইসরায়েল তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি এমনভাবে গোপন রাখতে সক্ষম হয়েছিল, যা ঘনিষ্ঠ মিত্রদের কাছ থেকেও আড়াল ছিল। অন্যদিকে, ইরান ধীরে ধীরে পারমাণবিক বোমার কারিগরি সক্ষমতার কাছাকাছি পৌঁছে গেছে, যদিও তারা পরমাণু অস্ত্র তৈরি না করার শপথ নিয়েছে। সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি ২০০০—এর দশকের শুরুর দিকে পারমাণবিক অস্ত্রকে ‘হারাম’ বলে ফতোয়া (ধর্মীয় নির্দেশ) দিয়েছিলেন।
ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে হামলা চালানোর সময়ও পশ্চিমা গোয়েন্দা সংস্থা এবং জাতিসংঘ একমত ছিল যে, ইরান এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির সিদ্ধান্ত নেয়নি।
১৯৬৭ সালে আসন্ন সংঘাত ইসরায়েলের সব সন্দেহ দূর করে দেয়। ঐতিহাসিক দলিলপত্রে দেখা যায়, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী লেভি ইশকোল তাঁর মন্ত্রিসভার সদস্যদের সঙ্গে ‘একটি নির্দিষ্ট অস্ত্র’ নিয়ে আলোচনা করেছিলেন। তৎকালীন সেনাপ্রধান (পরে প্রধানমন্ত্রী) আইজ্যাক রবিন ইসরায়েলের একমাত্র পারমাণবিক চুল্লি ডিমোনায় সম্ভাব্য শত্রু হামলা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন। তিনি বলেন, ‘এর কোনো আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি বা বৈধতা নেই।’
ইরানের ক্ষেত্রেও, গত বছর যখন ইসরায়েলের সঙ্গে সংঘাতের আশঙ্কা বাড়ছিল, তেহরানের নীতিনির্ধারকেরা অস্পষ্ট ভাষায় সতর্ক করতে শুরু করেন যে, তারা তাদের পারমাণবিক নীতি পরিবর্তনের কথা ভাবতে পারে। ২০২৪ সালের এপ্রিল মাসে ইসরায়েল ও ইরানের প্রথম পাল্টাপাল্টি হামলার কয়েক মাস পর, আয়াতুল্লাহ খামেনির পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা কামাল খাররাজি ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসকে বলেন, ‘আমরা পরমাণু অস্ত্র তৈরির পক্ষপাতী নই, তবে যদি ইরান অস্তিত্বের হুমকির মুখে পড়ে, তাহলে আমাদের অবশ্যই আমাদের নীতি পরিবর্তন করতে হবে।’
এর আগে, ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে, ইরানের পারমাণবিক শক্তি সংস্থার সাবেক প্রধান আলী আকবর সালেহি বলেন, ইরানের বিস্তৃত পারমাণবিক গবেষণা কর্মসূচি তাদের বিপুল কারিগরি দক্ষতা দিয়েছে। তিনি বলেন, ‘একটি গাড়ির জন্য যা যা লাগে—চ্যাসিস, ইঞ্জিন, স্টিয়ারিং, গিয়ারবক্স—আমরা সবকিছুই তৈরি করেছি। আপনি জিজ্ঞাসা করছেন, আমরা গিয়ারবক্স বানিয়েছি কিনা, আমি বলছি হ্যাঁ। ইঞ্জিন বানিয়েছি? হ্যাঁ। তবে প্রত্যেকটি নিজ নিজ কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে।’
ইসরায়েলের ক্ষেত্রেও, ১৯৬৭ সালের যুদ্ধের ঠিক আগে, সরকার ও সামরিক বাহিনীর বিভিন্ন গবেষণা তাদের প্রাথমিক পারমাণবিক বিস্ফোরকের জন্য প্রয়োজনীয় জ্ঞান এবং জ্বালানি দিয়ে ফেলেছিল। কিন্তু তখনো পর্যন্ত সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে অস্ত্র তৈরির নির্দেশ দেয়নি।
ইরানের ক্ষেত্রেও, সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ইসরায়েলের সঙ্গে সংঘাতের সম্ভাবনা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তাদের মধ্যে একটি বড় পরিবর্তন দেখা যায়—তারা ৬০ শতাংশ মাত্রায় সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের মজুত দ্বিগুণ করেছে, যা এখন প্রায় ৪০০ কেজি। এই ইউরেনিয়াম সহজেই অস্ত্র তৈরি মানে নিয়ে যাওয়া সম্ভব। তবে ইরান তা দিয়ে কোনো উন্নত পারমাণবিক বোমা তৈরি করতে পারবে না; বরং তা হবে খুবই সাধারণ, তবুও কার্যকর, প্রোটোটাইপ অস্ত্র—যেমনটি ইসরায়েল ১৯৬৭ সালে তড়িঘড়ি তৈরি করেছিল। সেটিকেই ‘স্যামসন অপশন’ বলা হয়।
ইসরায়েলের পরমাণু কর্মসূচির পেছনে ছিল গবেষণা ও চতুরতা, যার মূল কেন্দ্র ছিল নেগেভ পারমাণবিক গবেষণা কেন্দ্র ডিমোনায়। সেখানে ১৯৫০-এর দশকের শেষদিকে ইসরায়েল গোপনে প্লুটোনিয়াম প্রক্রিয়াকরণের একটি ভূগর্ভস্থ স্থাপনা তৈরি করেছিল। সে সময় ইসরায়েলের নিরাপত্তা উদ্বেগে ইরান ছিল না। ইরানের তৎকালীন শাহ যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্র ছিলেন। ১৯৬৭ সালে যুক্তরাষ্ট্র ইরানকে ‘অ্যাটমস ফর পিস’ কর্মসূচির অধীনে একটি পারমাণবিক চুল্লি উপহার দিয়েছিল। এক বছর পর ইরান এনপিটি স্বাক্ষর করে।
এরপর, ১৯৭৯ সালের ইসলামি বিপ্লবের পর, শাহ ক্ষমতাচ্যুত হলে ইরানের পারমাণবিক গবেষণা প্রাথমিক পর্যায়ে থেমে যায়। তখন বেশির ভাগ পারমাণবিক বিজ্ঞানী দেশ ছেড়ে চলে যান। একই সময়ে, ১৯৭৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞানীরা পুরোনো এক স্যাটেলাইটের মাধ্যমে দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে সাগরে দুটি আলোর ঝলকানি শনাক্ত করেন। কয়েক মাস পর, প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার তাঁর ডায়েরিতে লেখেন, ‘আমাদের বিজ্ঞানীদের মধ্যে বিশ্বাস বাড়ছে যে, ইসরায়েল দক্ষিণ আফ্রিকার কাছাকাছি সাগরে পারমাণবিক পরীক্ষা চালিয়েছে।’
প্রায় ওই সময়েই, ইসরায়েল একটি নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়, যা আজও অপরিবর্তিত আছে বলে জানান ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সাবেক গবেষণা পরিচালক উজি আরাদ। সেটা হলো—‘বেগিন নীতিমালা।’ এই নীতিমালার মূল কথা হলো—কোনো শত্রু দেশের পারমাণবিক কর্মসূচি যদি ইসরায়েলের জন্য হুমকি হয়ে ওঠে, তাহলে সব রকম পথ বেছে দেখার পর পর, সেগুলোতে বিমান হামলা চালানো হবে।
এই নীতির বাস্তবায়ন শুরু হয় ১৯৮১ সালে। সে বছরই ইসরায়েল ইরাকের পারমাণবিক চুল্লিতে হামলা চালায়। ২০০৭ সালে সিরিয়ায় গোপনে নির্মাণাধীন উত্তর কোরিয়া সরবরাহকৃত পারমাণবিক চুল্লিতে হামলা করে ইসরায়েল। আর এখন, ২০২৫ সালে ইসরায়েলের যুদ্ধবিমান ইরানের নাতানজ, ফোরদো এবং ইস্পাহানে বোমা ফেলেছে।
এই পরিস্থিতি ইরানের নিজস্ব পারমাণবিক অবস্থানও গড়ে তুলেছে, যা আন্তর্জাতিক রাজনীতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে ওঠানামা করেছে। আশির দশকে ইরাকের সঙ্গে যুদ্ধের পর, ইরান পারমাণবিক কর্মসূচি শুরু করেছিল, যাতে ভবিষ্যতে আরেকটি যুদ্ধ এড়ানো যায়। কিন্তু প্রথম উপসাগরীয় যুদ্ধের পর সেই হুমকি কমে যায়।
পাকিস্তানের পারমাণবিক বিজ্ঞানী আব্দুল কাদির খান ২০০৪ সালে স্বীকার করেন, তিনি ১৯৯০-এর দশকে ইরানকে পুরোনো মডেলের সেন্ট্রিফিউজ প্রযুক্তি বিক্রি করেছিলেন। এটাকেই অনেকে ইরানের সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচির সূচনা মনে করেন। ২০০৩ সালে, যুক্তরাষ্ট্র ইরাকে গণবিধ্বংসী অস্ত্র খুঁজে পেতে আক্রমণ চালানোর পর, ইরান তাদের ‘আমাদ’ নামের গোপন কর্মসূচি ঘোষণা করে এবং তা বন্ধ করে দেয়। জাতিসংঘ তখন জানায়, ওই কর্মসূচিতে তারা গবেষণা করলেও প্রকৃত অস্ত্র তৈরি করেনি।
ইরান ভালোভাবেই বুঝতে পেরেছিল, এই কর্মসূচিই যুক্তরাষ্ট্রকে আলোচনার টেবিলে আনতে পারে এবং নিষেধাজ্ঞা তোলার পথ তৈরি করতে পারে। ইরানের দাবি ছিল, তারা এনপিটি স্বাক্ষরকারী দেশ হিসেবে শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক শক্তির বৈধ অধিকার ভোগ করছে। তারা আন্তর্জাতিক পরিদর্শকদের অনুমতি দিয়েছে, এমনকি আকস্মিক পরিদর্শনেরও সুযোগ দিয়েছে।
কিন্তু তারা নাতানজ ও ফোরদোর মতো সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্রও তৈরি করেছে, যা পশ্চিমা গোয়েন্দারা ফাঁস করেছে। এসব স্থাপনাও সম্প্রতি ইসরায়েলি হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। একই সঙ্গে, ইরানের প্রচলিত সামরিক প্রতিরোধ শক্তিও ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। চারপাশের ‘আগুনের বৃত্ত’ বলে পরিচিত ইরানের সশস্ত্র মিত্র বাহিনীগুলোও দুর্বল হয়ে পড়েছে। অনেক ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ কেন্দ্র এবং আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস হয়েছে।
এ অবস্থায়, ইরান এখন একেবারে পরমাণু শক্তিধর রাষ্ট্রে পরিণত হওয়ার কিনারায় দাঁড়িয়ে। ভালি নাসর বলেন, ‘ইরান এখনো লাভ-ক্ষতির হিসাব করছে। আর এখন হয়তো সেই অভ্যন্তরীণ বিতর্ক অনেকটাই সেদিকেই এগিয়েছে, যারা বলছে, বোমা বানানোর সময় হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘তবে দরজা পুরোপুরি বন্ধ হয়নি। এখনো এমন একটি কূটনৈতিক সমঝোতার সুযোগ আছে, যা যথেষ্ট আকর্ষণীয় এবং শক্তিশালী হলে ইরানের এই পথে এগিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত বদলাতে পারে।’
ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস থেকে অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান
আরও খবর পড়ুন:
আজকের পত্রিকা ডেস্ক

মাটির অনেক গভীরে চলছিল গোপন পরমাণু কর্মসূচি। আমেরিকার নজর এড়িয়ে, ধীরে ধীরে উন্মোচিত হচ্ছিল পরমাণুর রহস্য। তৈরি হচ্ছিল পারমাণবিক বোমার জন্য প্রয়োজনীয় জ্বালানি। শত্রুরা এগিয়ে আসছিল, যুদ্ধের পদধ্বনি ক্রমেই জোরালো হচ্ছিল। এরপর, যুদ্ধের ঠিক প্রাক্কালে, তাড়াহুড়ো করে অন্তত একটি সাধারণ পারমাণবিক বোমা তৈরি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো। যদি জাতি সম্পূর্ণভাবে ধ্বংসের মুখে পড়ে, তাহলে হয়তো একটি পারমাণবিক বিস্ফোরণ হয়তো দেশকে বাঁচাতে পারবে।
এটাই ছিল ১৯৬৭ সালে ইসরায়েলের অবস্থা। ইতিহাসবিদেরা এখন মনে করেন, ওই বছরই ইহুদি রাষ্ট্রটি প্রথমবারের মতো পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির একেবারে দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যায়। কিন্তু তারা শেষ মুহূর্তে সেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে। কারণ, ছয় দিনের যুদ্ধে অপ্রত্যাশিত বিজয় তাদের সেই ‘প্রদর্শনীমূলক বিস্ফোরণ’ বা পরীক্ষামূলক বোমার প্রয়োজনীয়তাকে অকার্যকর করে দেয়।
বর্তমান ইরানের গল্পটা খুব একটা আলাদা নয়। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরান-ইসরায়েল সংঘাতকে ‘১২ দিনের যুদ্ধ’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। ১২ দিনের যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগে ইসরায়েল একে একে ইরানের মিত্রদের দুর্বল করে দিয়েছে। এই মিত্রদের মধ্যে আছে লেবাননের হিজবুল্লাহ থেকে শুরু করে, সিরিয়ার সামরিক বাহিনী (আসাদ সরকারের পতনের পর এই বাহিনী এখন আর ইসরায়েলের জন্য কোনো হুমকি নয়) ও হামাস।
এখন ইরান যদি ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ ক্ষমতা পুনর্গঠনের চেষ্টা করে এবং ইসরায়েল যদি আরও সহিংসতার হুমকি দেয়, তাহলে তেহরানও সেই একই প্রশ্নের মুখোমুখি হবে, যে প্রশ্নের মুখোমুখি ১৯৬৭ সালে ইসরায়েলকে হতে হয়েছিল। দেশকে বাঁচানোর জন্য কি পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির পথে ছুটতে হবে, নাকি শেষ মুহূর্তে নিজেকে সামলে রাখতে হবে?
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের সাবেক জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা এবং ‘ইরানস গ্র্যান্ড স্ট্র্যাটেজি’ বইয়ের লেখক ভালি নাসর বলেন, ‘ইরান এখন দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকা এক গভীর অভ্যন্তরীণ বিতর্কের মধ্যে রয়েছে। এটা এখন বাঁচা-মরার মুহূর্ত এবং এটা সত্যিই অবাক করার মতো যে, ইসরায়েলই এখন ইরানকে সেই একই সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করছে, যেটা তারা একসময় নিয়েছিল।’
১৯৬৭ সালের ছয় দিনের যুদ্ধ মধ্যপ্রাচ্যের ভাগ্য বদলে দিয়েছিল। ইসরায়েল, তার চেয়ে আকারে বড় প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর ওপর বিজয় অর্জন করে এবং পশ্চিম তীর ও গাজা দখল করে। এটি ইসরায়েলের চরিত্রকেও বদলে দেয়। সেই সঙ্গে ইসরায়েলের সঙ্গে পারমাণবিক অস্ত্রের সম্পর্ক এক অদ্ভুত, অস্পষ্ট রূপ নেয়। দেশটি পরমাণু শক্তিধর রাষ্ট্রে পরিণত হলেও তারা কখনো তা ঘোষণা করেনি, আবার কখনো অস্বীকারও করেনি।
পশ্চিমাদের তরফ থেকে ইসরায়েলের এই গোপন অস্ত্রভান্ডার মেনে নেওয়াকে মধ্যপ্রাচ্যে দ্বিচারিতা হিসেবে দেখা হয়। পশ্চিমারা তাদের মিত্র ইসরায়েলকে পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ চুক্তি লঙ্ঘনের অনুমতি দিয়েছে, অথচ ইরানকে বিভিন্ন শাস্তির আওতায় রেখেছে—যদিও ইরান অনেক ক্ষেত্রেই তাদের চুক্তির দায়িত্ব পালন করেছে।
কিন্তু ইসরায়েলের এই বিশেষ মর্যাদা শুধু যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত মিত্র হওয়ার কারণে নয়। এটি ছিল একটি ভিন্ন সময়ের ফসল, যখন ইসরায়েল ছিল তরুণ, দুর্বল; শত্রুরা ছিল অনেক বেশি শক্তিশালী, যারা দেশটিকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দিতে চেয়েছিল। ১৯৬৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে করা গোপন চুক্তি—যার ফলে ইসরায়েল তাদের পারমাণবিক অস্ত্র অঘোষিত রাখতে পেরেছিল—ছিল ইসরায়েলি নেতৃত্বের দূরদর্শিতার ফসল। তারা তখন তাদের দেশের দুর্বল অবস্থানকে এবং হলোকাস্টের তাজা স্মৃতিকে কাজে লাগিয়ে এমন এক ব্যতিক্রম সুবিধা আদায় করে নিয়েছিল, যা আর কোনো দেশ পায়নি।
কিন্তু যদি এখন ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির পথে এগিয়ে যায়, তাহলে বিশ্বের সামনে এক অসম্ভব সমীকরণ হাজির হবে—নতুন আরেকটি উচ্চাকাঙ্ক্ষী দেশ পরমাণু ক্লাবে প্রবেশ করবে, যা অন্যদেরও একই পথে ঠেলে দিতে পারে, কিংবা তাদের উত্তর কোরিয়ার মতো শাস্তির মুখে পড়তে হবে।
তৃতীয় বিকল্প হলো, ইরান চাইলে পরমাণু অস্ত্রের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়েই রাজনৈতিক সুবিধা নিতে পারে, ঠিক যেমনটা ইসরায়েল একসময় নিয়েছিল। ইসরায়েলের পারমাণবিক ইতিহাসের অন্যতম শীর্ষ গবেষক আভনার কোহেন বলেন, ইরান আসলে বহু বছর ধরে ইসরায়েলের পথ অনুসরণ করার চেষ্টা করছে। তারা এমন একটি পারমাণবিক কর্মসূচি চালিয়েছে, যা আংশিক প্রকাশ্য, আংশিক গোপন। তারা ধীরে ধীরে ‘বোমার আরও কাছাকাছি’ চলে যাচ্ছে, কিন্তু চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে বিলম্ব করছে, যতক্ষণ পর্যন্ত তা একান্ত জরুরি না হয়।
ক্যালিফোর্নিয়ার মিডলবেরি ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের অধ্যাপক কোহেন বলেন, ‘ইরান খুবই আগ্রহী ছিল আরেক ইসরায়েল হতে, ইসরায়েলের পথ অনুসরণ করতে।’ তিনি বলেন, কোনো সংকটকালে যেন পরমাণু অস্ত্র তৈরি করা যায়, ইসরায়েল সে লক্ষ্যে নিজেদের ব্যাপক দক্ষতা গড়ে তুলেছিল। কিন্তু কখনো প্রকাশ্যে সেই পথে হাঁটেনি। আর এটাই অনুকরণ করার চেষ্টা করেছিল ইরান।
তিনি বলেন, ‘ইরান চেয়েছিল এবং অনেক ক্ষেত্রেই তারা ইসরায়েলের অস্পষ্ট কৌশল অনুকরণ করছিল, কিন্তু তাদের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ছিল অনেক বেশি শত্রুতাপূর্ণ।’ তিনি ১৯৬৯ সালে যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েলের গোপন চুক্তির প্রসঙ্গ টেনে বলেন, ‘শেষ পর্যন্ত, বিশ্ব ইসরায়েলের প্রতি অনেক বেশি সহানুভূতিশীল থেকেছে, আর ইরানের ক্ষেত্রে বরাবরই কঠোর।’
ইসরায়েল-ইরানের আঞ্চলিক দ্বন্দ্বকে সরাসরি সংঘাতে পরিণত হতে সময় লেগেছে প্রায় সাড়ে চার দশক। এই সময়ে ইরানের নেতৃত্ব ‘জায়নবাদী রাষ্ট্র’ ধ্বংস করার শপথকে তাদের জাতীয় রাজনৈতিক বক্তব্যের কেন্দ্রবিন্দুতে স্থাপন করেছে। ইসরায়েলের কাছে, ২১ শতকের শুরু থেকে ইরানের সামরিক শক্তি বৃদ্ধি, পারমাণবিক কর্মসূচি এবং সশস্ত্র মিত্রগোষ্ঠী ক্রমেই দেশটির জন্য অস্তিত্বের হুমকি হয়ে উঠেছে।
অন্যদিকে, ইরানের দৃষ্টিতে ইসরায়েলও দ্রুত অস্তিত্বের হুমকিতে পরিণত হয়েছে। ইসরায়েলি নেতারা প্রকাশ্যে তেহরানের শাসনব্যবস্থা বদলে দেওয়ার কথা বলেছেন এবং ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী ইতিমধ্যে ইরানের ভেতরে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালানোর সক্ষমতা দেখিয়েছে।
ইসরায়েল তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি এমনভাবে গোপন রাখতে সক্ষম হয়েছিল, যা ঘনিষ্ঠ মিত্রদের কাছ থেকেও আড়াল ছিল। অন্যদিকে, ইরান ধীরে ধীরে পারমাণবিক বোমার কারিগরি সক্ষমতার কাছাকাছি পৌঁছে গেছে, যদিও তারা পরমাণু অস্ত্র তৈরি না করার শপথ নিয়েছে। সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি ২০০০—এর দশকের শুরুর দিকে পারমাণবিক অস্ত্রকে ‘হারাম’ বলে ফতোয়া (ধর্মীয় নির্দেশ) দিয়েছিলেন।
ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে হামলা চালানোর সময়ও পশ্চিমা গোয়েন্দা সংস্থা এবং জাতিসংঘ একমত ছিল যে, ইরান এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির সিদ্ধান্ত নেয়নি।
১৯৬৭ সালে আসন্ন সংঘাত ইসরায়েলের সব সন্দেহ দূর করে দেয়। ঐতিহাসিক দলিলপত্রে দেখা যায়, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী লেভি ইশকোল তাঁর মন্ত্রিসভার সদস্যদের সঙ্গে ‘একটি নির্দিষ্ট অস্ত্র’ নিয়ে আলোচনা করেছিলেন। তৎকালীন সেনাপ্রধান (পরে প্রধানমন্ত্রী) আইজ্যাক রবিন ইসরায়েলের একমাত্র পারমাণবিক চুল্লি ডিমোনায় সম্ভাব্য শত্রু হামলা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন। তিনি বলেন, ‘এর কোনো আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি বা বৈধতা নেই।’
ইরানের ক্ষেত্রেও, গত বছর যখন ইসরায়েলের সঙ্গে সংঘাতের আশঙ্কা বাড়ছিল, তেহরানের নীতিনির্ধারকেরা অস্পষ্ট ভাষায় সতর্ক করতে শুরু করেন যে, তারা তাদের পারমাণবিক নীতি পরিবর্তনের কথা ভাবতে পারে। ২০২৪ সালের এপ্রিল মাসে ইসরায়েল ও ইরানের প্রথম পাল্টাপাল্টি হামলার কয়েক মাস পর, আয়াতুল্লাহ খামেনির পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা কামাল খাররাজি ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসকে বলেন, ‘আমরা পরমাণু অস্ত্র তৈরির পক্ষপাতী নই, তবে যদি ইরান অস্তিত্বের হুমকির মুখে পড়ে, তাহলে আমাদের অবশ্যই আমাদের নীতি পরিবর্তন করতে হবে।’
এর আগে, ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে, ইরানের পারমাণবিক শক্তি সংস্থার সাবেক প্রধান আলী আকবর সালেহি বলেন, ইরানের বিস্তৃত পারমাণবিক গবেষণা কর্মসূচি তাদের বিপুল কারিগরি দক্ষতা দিয়েছে। তিনি বলেন, ‘একটি গাড়ির জন্য যা যা লাগে—চ্যাসিস, ইঞ্জিন, স্টিয়ারিং, গিয়ারবক্স—আমরা সবকিছুই তৈরি করেছি। আপনি জিজ্ঞাসা করছেন, আমরা গিয়ারবক্স বানিয়েছি কিনা, আমি বলছি হ্যাঁ। ইঞ্জিন বানিয়েছি? হ্যাঁ। তবে প্রত্যেকটি নিজ নিজ কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে।’
ইসরায়েলের ক্ষেত্রেও, ১৯৬৭ সালের যুদ্ধের ঠিক আগে, সরকার ও সামরিক বাহিনীর বিভিন্ন গবেষণা তাদের প্রাথমিক পারমাণবিক বিস্ফোরকের জন্য প্রয়োজনীয় জ্ঞান এবং জ্বালানি দিয়ে ফেলেছিল। কিন্তু তখনো পর্যন্ত সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে অস্ত্র তৈরির নির্দেশ দেয়নি।
ইরানের ক্ষেত্রেও, সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ইসরায়েলের সঙ্গে সংঘাতের সম্ভাবনা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তাদের মধ্যে একটি বড় পরিবর্তন দেখা যায়—তারা ৬০ শতাংশ মাত্রায় সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের মজুত দ্বিগুণ করেছে, যা এখন প্রায় ৪০০ কেজি। এই ইউরেনিয়াম সহজেই অস্ত্র তৈরি মানে নিয়ে যাওয়া সম্ভব। তবে ইরান তা দিয়ে কোনো উন্নত পারমাণবিক বোমা তৈরি করতে পারবে না; বরং তা হবে খুবই সাধারণ, তবুও কার্যকর, প্রোটোটাইপ অস্ত্র—যেমনটি ইসরায়েল ১৯৬৭ সালে তড়িঘড়ি তৈরি করেছিল। সেটিকেই ‘স্যামসন অপশন’ বলা হয়।
ইসরায়েলের পরমাণু কর্মসূচির পেছনে ছিল গবেষণা ও চতুরতা, যার মূল কেন্দ্র ছিল নেগেভ পারমাণবিক গবেষণা কেন্দ্র ডিমোনায়। সেখানে ১৯৫০-এর দশকের শেষদিকে ইসরায়েল গোপনে প্লুটোনিয়াম প্রক্রিয়াকরণের একটি ভূগর্ভস্থ স্থাপনা তৈরি করেছিল। সে সময় ইসরায়েলের নিরাপত্তা উদ্বেগে ইরান ছিল না। ইরানের তৎকালীন শাহ যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্র ছিলেন। ১৯৬৭ সালে যুক্তরাষ্ট্র ইরানকে ‘অ্যাটমস ফর পিস’ কর্মসূচির অধীনে একটি পারমাণবিক চুল্লি উপহার দিয়েছিল। এক বছর পর ইরান এনপিটি স্বাক্ষর করে।
এরপর, ১৯৭৯ সালের ইসলামি বিপ্লবের পর, শাহ ক্ষমতাচ্যুত হলে ইরানের পারমাণবিক গবেষণা প্রাথমিক পর্যায়ে থেমে যায়। তখন বেশির ভাগ পারমাণবিক বিজ্ঞানী দেশ ছেড়ে চলে যান। একই সময়ে, ১৯৭৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞানীরা পুরোনো এক স্যাটেলাইটের মাধ্যমে দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে সাগরে দুটি আলোর ঝলকানি শনাক্ত করেন। কয়েক মাস পর, প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার তাঁর ডায়েরিতে লেখেন, ‘আমাদের বিজ্ঞানীদের মধ্যে বিশ্বাস বাড়ছে যে, ইসরায়েল দক্ষিণ আফ্রিকার কাছাকাছি সাগরে পারমাণবিক পরীক্ষা চালিয়েছে।’
প্রায় ওই সময়েই, ইসরায়েল একটি নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়, যা আজও অপরিবর্তিত আছে বলে জানান ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সাবেক গবেষণা পরিচালক উজি আরাদ। সেটা হলো—‘বেগিন নীতিমালা।’ এই নীতিমালার মূল কথা হলো—কোনো শত্রু দেশের পারমাণবিক কর্মসূচি যদি ইসরায়েলের জন্য হুমকি হয়ে ওঠে, তাহলে সব রকম পথ বেছে দেখার পর পর, সেগুলোতে বিমান হামলা চালানো হবে।
এই নীতির বাস্তবায়ন শুরু হয় ১৯৮১ সালে। সে বছরই ইসরায়েল ইরাকের পারমাণবিক চুল্লিতে হামলা চালায়। ২০০৭ সালে সিরিয়ায় গোপনে নির্মাণাধীন উত্তর কোরিয়া সরবরাহকৃত পারমাণবিক চুল্লিতে হামলা করে ইসরায়েল। আর এখন, ২০২৫ সালে ইসরায়েলের যুদ্ধবিমান ইরানের নাতানজ, ফোরদো এবং ইস্পাহানে বোমা ফেলেছে।
এই পরিস্থিতি ইরানের নিজস্ব পারমাণবিক অবস্থানও গড়ে তুলেছে, যা আন্তর্জাতিক রাজনীতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে ওঠানামা করেছে। আশির দশকে ইরাকের সঙ্গে যুদ্ধের পর, ইরান পারমাণবিক কর্মসূচি শুরু করেছিল, যাতে ভবিষ্যতে আরেকটি যুদ্ধ এড়ানো যায়। কিন্তু প্রথম উপসাগরীয় যুদ্ধের পর সেই হুমকি কমে যায়।
পাকিস্তানের পারমাণবিক বিজ্ঞানী আব্দুল কাদির খান ২০০৪ সালে স্বীকার করেন, তিনি ১৯৯০-এর দশকে ইরানকে পুরোনো মডেলের সেন্ট্রিফিউজ প্রযুক্তি বিক্রি করেছিলেন। এটাকেই অনেকে ইরানের সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচির সূচনা মনে করেন। ২০০৩ সালে, যুক্তরাষ্ট্র ইরাকে গণবিধ্বংসী অস্ত্র খুঁজে পেতে আক্রমণ চালানোর পর, ইরান তাদের ‘আমাদ’ নামের গোপন কর্মসূচি ঘোষণা করে এবং তা বন্ধ করে দেয়। জাতিসংঘ তখন জানায়, ওই কর্মসূচিতে তারা গবেষণা করলেও প্রকৃত অস্ত্র তৈরি করেনি।
ইরান ভালোভাবেই বুঝতে পেরেছিল, এই কর্মসূচিই যুক্তরাষ্ট্রকে আলোচনার টেবিলে আনতে পারে এবং নিষেধাজ্ঞা তোলার পথ তৈরি করতে পারে। ইরানের দাবি ছিল, তারা এনপিটি স্বাক্ষরকারী দেশ হিসেবে শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক শক্তির বৈধ অধিকার ভোগ করছে। তারা আন্তর্জাতিক পরিদর্শকদের অনুমতি দিয়েছে, এমনকি আকস্মিক পরিদর্শনেরও সুযোগ দিয়েছে।
কিন্তু তারা নাতানজ ও ফোরদোর মতো সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্রও তৈরি করেছে, যা পশ্চিমা গোয়েন্দারা ফাঁস করেছে। এসব স্থাপনাও সম্প্রতি ইসরায়েলি হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। একই সঙ্গে, ইরানের প্রচলিত সামরিক প্রতিরোধ শক্তিও ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। চারপাশের ‘আগুনের বৃত্ত’ বলে পরিচিত ইরানের সশস্ত্র মিত্র বাহিনীগুলোও দুর্বল হয়ে পড়েছে। অনেক ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ কেন্দ্র এবং আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস হয়েছে।
এ অবস্থায়, ইরান এখন একেবারে পরমাণু শক্তিধর রাষ্ট্রে পরিণত হওয়ার কিনারায় দাঁড়িয়ে। ভালি নাসর বলেন, ‘ইরান এখনো লাভ-ক্ষতির হিসাব করছে। আর এখন হয়তো সেই অভ্যন্তরীণ বিতর্ক অনেকটাই সেদিকেই এগিয়েছে, যারা বলছে, বোমা বানানোর সময় হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘তবে দরজা পুরোপুরি বন্ধ হয়নি। এখনো এমন একটি কূটনৈতিক সমঝোতার সুযোগ আছে, যা যথেষ্ট আকর্ষণীয় এবং শক্তিশালী হলে ইরানের এই পথে এগিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত বদলাতে পারে।’
ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস থেকে অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান
আরও খবর পড়ুন:

মাটির অনেক গভীরে চলছিল গোপন পরমাণু কর্মসূচি। আমেরিকার নজর এড়িয়ে, ধীরে ধীরে উন্মোচিত হচ্ছিল পরমাণুর রহস্য। তৈরি হচ্ছিল পারমাণবিক বোমার জন্য প্রয়োজনীয় জ্বালানি। শত্রুরা এগিয়ে আসছিল, যুদ্ধের পদধ্বনি ক্রমেই জোরালো হচ্ছিল। এরপর, যুদ্ধের ঠিক প্রাক্কালে, তাড়াহুড়ো করে অন্তত একটি সাধারণ পারমাণবিক বোমা তৈরি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো। যদি জাতি সম্পূর্ণভাবে ধ্বংসের মুখে পড়ে, তাহলে হয়তো একটি পারমাণবিক বিস্ফোরণ হয়তো দেশকে বাঁচাতে পারবে।
এটাই ছিল ১৯৬৭ সালে ইসরায়েলের অবস্থা। ইতিহাসবিদেরা এখন মনে করেন, ওই বছরই ইহুদি রাষ্ট্রটি প্রথমবারের মতো পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির একেবারে দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যায়। কিন্তু তারা শেষ মুহূর্তে সেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে। কারণ, ছয় দিনের যুদ্ধে অপ্রত্যাশিত বিজয় তাদের সেই ‘প্রদর্শনীমূলক বিস্ফোরণ’ বা পরীক্ষামূলক বোমার প্রয়োজনীয়তাকে অকার্যকর করে দেয়।
বর্তমান ইরানের গল্পটা খুব একটা আলাদা নয়। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরান-ইসরায়েল সংঘাতকে ‘১২ দিনের যুদ্ধ’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। ১২ দিনের যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগে ইসরায়েল একে একে ইরানের মিত্রদের দুর্বল করে দিয়েছে। এই মিত্রদের মধ্যে আছে লেবাননের হিজবুল্লাহ থেকে শুরু করে, সিরিয়ার সামরিক বাহিনী (আসাদ সরকারের পতনের পর এই বাহিনী এখন আর ইসরায়েলের জন্য কোনো হুমকি নয়) ও হামাস।
এখন ইরান যদি ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ ক্ষমতা পুনর্গঠনের চেষ্টা করে এবং ইসরায়েল যদি আরও সহিংসতার হুমকি দেয়, তাহলে তেহরানও সেই একই প্রশ্নের মুখোমুখি হবে, যে প্রশ্নের মুখোমুখি ১৯৬৭ সালে ইসরায়েলকে হতে হয়েছিল। দেশকে বাঁচানোর জন্য কি পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির পথে ছুটতে হবে, নাকি শেষ মুহূর্তে নিজেকে সামলে রাখতে হবে?
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের সাবেক জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা এবং ‘ইরানস গ্র্যান্ড স্ট্র্যাটেজি’ বইয়ের লেখক ভালি নাসর বলেন, ‘ইরান এখন দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকা এক গভীর অভ্যন্তরীণ বিতর্কের মধ্যে রয়েছে। এটা এখন বাঁচা-মরার মুহূর্ত এবং এটা সত্যিই অবাক করার মতো যে, ইসরায়েলই এখন ইরানকে সেই একই সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করছে, যেটা তারা একসময় নিয়েছিল।’
১৯৬৭ সালের ছয় দিনের যুদ্ধ মধ্যপ্রাচ্যের ভাগ্য বদলে দিয়েছিল। ইসরায়েল, তার চেয়ে আকারে বড় প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর ওপর বিজয় অর্জন করে এবং পশ্চিম তীর ও গাজা দখল করে। এটি ইসরায়েলের চরিত্রকেও বদলে দেয়। সেই সঙ্গে ইসরায়েলের সঙ্গে পারমাণবিক অস্ত্রের সম্পর্ক এক অদ্ভুত, অস্পষ্ট রূপ নেয়। দেশটি পরমাণু শক্তিধর রাষ্ট্রে পরিণত হলেও তারা কখনো তা ঘোষণা করেনি, আবার কখনো অস্বীকারও করেনি।
পশ্চিমাদের তরফ থেকে ইসরায়েলের এই গোপন অস্ত্রভান্ডার মেনে নেওয়াকে মধ্যপ্রাচ্যে দ্বিচারিতা হিসেবে দেখা হয়। পশ্চিমারা তাদের মিত্র ইসরায়েলকে পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ চুক্তি লঙ্ঘনের অনুমতি দিয়েছে, অথচ ইরানকে বিভিন্ন শাস্তির আওতায় রেখেছে—যদিও ইরান অনেক ক্ষেত্রেই তাদের চুক্তির দায়িত্ব পালন করেছে।
কিন্তু ইসরায়েলের এই বিশেষ মর্যাদা শুধু যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত মিত্র হওয়ার কারণে নয়। এটি ছিল একটি ভিন্ন সময়ের ফসল, যখন ইসরায়েল ছিল তরুণ, দুর্বল; শত্রুরা ছিল অনেক বেশি শক্তিশালী, যারা দেশটিকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দিতে চেয়েছিল। ১৯৬৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে করা গোপন চুক্তি—যার ফলে ইসরায়েল তাদের পারমাণবিক অস্ত্র অঘোষিত রাখতে পেরেছিল—ছিল ইসরায়েলি নেতৃত্বের দূরদর্শিতার ফসল। তারা তখন তাদের দেশের দুর্বল অবস্থানকে এবং হলোকাস্টের তাজা স্মৃতিকে কাজে লাগিয়ে এমন এক ব্যতিক্রম সুবিধা আদায় করে নিয়েছিল, যা আর কোনো দেশ পায়নি।
কিন্তু যদি এখন ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির পথে এগিয়ে যায়, তাহলে বিশ্বের সামনে এক অসম্ভব সমীকরণ হাজির হবে—নতুন আরেকটি উচ্চাকাঙ্ক্ষী দেশ পরমাণু ক্লাবে প্রবেশ করবে, যা অন্যদেরও একই পথে ঠেলে দিতে পারে, কিংবা তাদের উত্তর কোরিয়ার মতো শাস্তির মুখে পড়তে হবে।
তৃতীয় বিকল্প হলো, ইরান চাইলে পরমাণু অস্ত্রের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়েই রাজনৈতিক সুবিধা নিতে পারে, ঠিক যেমনটা ইসরায়েল একসময় নিয়েছিল। ইসরায়েলের পারমাণবিক ইতিহাসের অন্যতম শীর্ষ গবেষক আভনার কোহেন বলেন, ইরান আসলে বহু বছর ধরে ইসরায়েলের পথ অনুসরণ করার চেষ্টা করছে। তারা এমন একটি পারমাণবিক কর্মসূচি চালিয়েছে, যা আংশিক প্রকাশ্য, আংশিক গোপন। তারা ধীরে ধীরে ‘বোমার আরও কাছাকাছি’ চলে যাচ্ছে, কিন্তু চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে বিলম্ব করছে, যতক্ষণ পর্যন্ত তা একান্ত জরুরি না হয়।
ক্যালিফোর্নিয়ার মিডলবেরি ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের অধ্যাপক কোহেন বলেন, ‘ইরান খুবই আগ্রহী ছিল আরেক ইসরায়েল হতে, ইসরায়েলের পথ অনুসরণ করতে।’ তিনি বলেন, কোনো সংকটকালে যেন পরমাণু অস্ত্র তৈরি করা যায়, ইসরায়েল সে লক্ষ্যে নিজেদের ব্যাপক দক্ষতা গড়ে তুলেছিল। কিন্তু কখনো প্রকাশ্যে সেই পথে হাঁটেনি। আর এটাই অনুকরণ করার চেষ্টা করেছিল ইরান।
তিনি বলেন, ‘ইরান চেয়েছিল এবং অনেক ক্ষেত্রেই তারা ইসরায়েলের অস্পষ্ট কৌশল অনুকরণ করছিল, কিন্তু তাদের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ছিল অনেক বেশি শত্রুতাপূর্ণ।’ তিনি ১৯৬৯ সালে যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েলের গোপন চুক্তির প্রসঙ্গ টেনে বলেন, ‘শেষ পর্যন্ত, বিশ্ব ইসরায়েলের প্রতি অনেক বেশি সহানুভূতিশীল থেকেছে, আর ইরানের ক্ষেত্রে বরাবরই কঠোর।’
ইসরায়েল-ইরানের আঞ্চলিক দ্বন্দ্বকে সরাসরি সংঘাতে পরিণত হতে সময় লেগেছে প্রায় সাড়ে চার দশক। এই সময়ে ইরানের নেতৃত্ব ‘জায়নবাদী রাষ্ট্র’ ধ্বংস করার শপথকে তাদের জাতীয় রাজনৈতিক বক্তব্যের কেন্দ্রবিন্দুতে স্থাপন করেছে। ইসরায়েলের কাছে, ২১ শতকের শুরু থেকে ইরানের সামরিক শক্তি বৃদ্ধি, পারমাণবিক কর্মসূচি এবং সশস্ত্র মিত্রগোষ্ঠী ক্রমেই দেশটির জন্য অস্তিত্বের হুমকি হয়ে উঠেছে।
অন্যদিকে, ইরানের দৃষ্টিতে ইসরায়েলও দ্রুত অস্তিত্বের হুমকিতে পরিণত হয়েছে। ইসরায়েলি নেতারা প্রকাশ্যে তেহরানের শাসনব্যবস্থা বদলে দেওয়ার কথা বলেছেন এবং ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী ইতিমধ্যে ইরানের ভেতরে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালানোর সক্ষমতা দেখিয়েছে।
ইসরায়েল তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি এমনভাবে গোপন রাখতে সক্ষম হয়েছিল, যা ঘনিষ্ঠ মিত্রদের কাছ থেকেও আড়াল ছিল। অন্যদিকে, ইরান ধীরে ধীরে পারমাণবিক বোমার কারিগরি সক্ষমতার কাছাকাছি পৌঁছে গেছে, যদিও তারা পরমাণু অস্ত্র তৈরি না করার শপথ নিয়েছে। সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি ২০০০—এর দশকের শুরুর দিকে পারমাণবিক অস্ত্রকে ‘হারাম’ বলে ফতোয়া (ধর্মীয় নির্দেশ) দিয়েছিলেন।
ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে হামলা চালানোর সময়ও পশ্চিমা গোয়েন্দা সংস্থা এবং জাতিসংঘ একমত ছিল যে, ইরান এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির সিদ্ধান্ত নেয়নি।
১৯৬৭ সালে আসন্ন সংঘাত ইসরায়েলের সব সন্দেহ দূর করে দেয়। ঐতিহাসিক দলিলপত্রে দেখা যায়, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী লেভি ইশকোল তাঁর মন্ত্রিসভার সদস্যদের সঙ্গে ‘একটি নির্দিষ্ট অস্ত্র’ নিয়ে আলোচনা করেছিলেন। তৎকালীন সেনাপ্রধান (পরে প্রধানমন্ত্রী) আইজ্যাক রবিন ইসরায়েলের একমাত্র পারমাণবিক চুল্লি ডিমোনায় সম্ভাব্য শত্রু হামলা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন। তিনি বলেন, ‘এর কোনো আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি বা বৈধতা নেই।’
ইরানের ক্ষেত্রেও, গত বছর যখন ইসরায়েলের সঙ্গে সংঘাতের আশঙ্কা বাড়ছিল, তেহরানের নীতিনির্ধারকেরা অস্পষ্ট ভাষায় সতর্ক করতে শুরু করেন যে, তারা তাদের পারমাণবিক নীতি পরিবর্তনের কথা ভাবতে পারে। ২০২৪ সালের এপ্রিল মাসে ইসরায়েল ও ইরানের প্রথম পাল্টাপাল্টি হামলার কয়েক মাস পর, আয়াতুল্লাহ খামেনির পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা কামাল খাররাজি ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসকে বলেন, ‘আমরা পরমাণু অস্ত্র তৈরির পক্ষপাতী নই, তবে যদি ইরান অস্তিত্বের হুমকির মুখে পড়ে, তাহলে আমাদের অবশ্যই আমাদের নীতি পরিবর্তন করতে হবে।’
এর আগে, ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে, ইরানের পারমাণবিক শক্তি সংস্থার সাবেক প্রধান আলী আকবর সালেহি বলেন, ইরানের বিস্তৃত পারমাণবিক গবেষণা কর্মসূচি তাদের বিপুল কারিগরি দক্ষতা দিয়েছে। তিনি বলেন, ‘একটি গাড়ির জন্য যা যা লাগে—চ্যাসিস, ইঞ্জিন, স্টিয়ারিং, গিয়ারবক্স—আমরা সবকিছুই তৈরি করেছি। আপনি জিজ্ঞাসা করছেন, আমরা গিয়ারবক্স বানিয়েছি কিনা, আমি বলছি হ্যাঁ। ইঞ্জিন বানিয়েছি? হ্যাঁ। তবে প্রত্যেকটি নিজ নিজ কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে।’
ইসরায়েলের ক্ষেত্রেও, ১৯৬৭ সালের যুদ্ধের ঠিক আগে, সরকার ও সামরিক বাহিনীর বিভিন্ন গবেষণা তাদের প্রাথমিক পারমাণবিক বিস্ফোরকের জন্য প্রয়োজনীয় জ্ঞান এবং জ্বালানি দিয়ে ফেলেছিল। কিন্তু তখনো পর্যন্ত সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে অস্ত্র তৈরির নির্দেশ দেয়নি।
ইরানের ক্ষেত্রেও, সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ইসরায়েলের সঙ্গে সংঘাতের সম্ভাবনা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তাদের মধ্যে একটি বড় পরিবর্তন দেখা যায়—তারা ৬০ শতাংশ মাত্রায় সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের মজুত দ্বিগুণ করেছে, যা এখন প্রায় ৪০০ কেজি। এই ইউরেনিয়াম সহজেই অস্ত্র তৈরি মানে নিয়ে যাওয়া সম্ভব। তবে ইরান তা দিয়ে কোনো উন্নত পারমাণবিক বোমা তৈরি করতে পারবে না; বরং তা হবে খুবই সাধারণ, তবুও কার্যকর, প্রোটোটাইপ অস্ত্র—যেমনটি ইসরায়েল ১৯৬৭ সালে তড়িঘড়ি তৈরি করেছিল। সেটিকেই ‘স্যামসন অপশন’ বলা হয়।
ইসরায়েলের পরমাণু কর্মসূচির পেছনে ছিল গবেষণা ও চতুরতা, যার মূল কেন্দ্র ছিল নেগেভ পারমাণবিক গবেষণা কেন্দ্র ডিমোনায়। সেখানে ১৯৫০-এর দশকের শেষদিকে ইসরায়েল গোপনে প্লুটোনিয়াম প্রক্রিয়াকরণের একটি ভূগর্ভস্থ স্থাপনা তৈরি করেছিল। সে সময় ইসরায়েলের নিরাপত্তা উদ্বেগে ইরান ছিল না। ইরানের তৎকালীন শাহ যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্র ছিলেন। ১৯৬৭ সালে যুক্তরাষ্ট্র ইরানকে ‘অ্যাটমস ফর পিস’ কর্মসূচির অধীনে একটি পারমাণবিক চুল্লি উপহার দিয়েছিল। এক বছর পর ইরান এনপিটি স্বাক্ষর করে।
এরপর, ১৯৭৯ সালের ইসলামি বিপ্লবের পর, শাহ ক্ষমতাচ্যুত হলে ইরানের পারমাণবিক গবেষণা প্রাথমিক পর্যায়ে থেমে যায়। তখন বেশির ভাগ পারমাণবিক বিজ্ঞানী দেশ ছেড়ে চলে যান। একই সময়ে, ১৯৭৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞানীরা পুরোনো এক স্যাটেলাইটের মাধ্যমে দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে সাগরে দুটি আলোর ঝলকানি শনাক্ত করেন। কয়েক মাস পর, প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার তাঁর ডায়েরিতে লেখেন, ‘আমাদের বিজ্ঞানীদের মধ্যে বিশ্বাস বাড়ছে যে, ইসরায়েল দক্ষিণ আফ্রিকার কাছাকাছি সাগরে পারমাণবিক পরীক্ষা চালিয়েছে।’
প্রায় ওই সময়েই, ইসরায়েল একটি নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়, যা আজও অপরিবর্তিত আছে বলে জানান ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সাবেক গবেষণা পরিচালক উজি আরাদ। সেটা হলো—‘বেগিন নীতিমালা।’ এই নীতিমালার মূল কথা হলো—কোনো শত্রু দেশের পারমাণবিক কর্মসূচি যদি ইসরায়েলের জন্য হুমকি হয়ে ওঠে, তাহলে সব রকম পথ বেছে দেখার পর পর, সেগুলোতে বিমান হামলা চালানো হবে।
এই নীতির বাস্তবায়ন শুরু হয় ১৯৮১ সালে। সে বছরই ইসরায়েল ইরাকের পারমাণবিক চুল্লিতে হামলা চালায়। ২০০৭ সালে সিরিয়ায় গোপনে নির্মাণাধীন উত্তর কোরিয়া সরবরাহকৃত পারমাণবিক চুল্লিতে হামলা করে ইসরায়েল। আর এখন, ২০২৫ সালে ইসরায়েলের যুদ্ধবিমান ইরানের নাতানজ, ফোরদো এবং ইস্পাহানে বোমা ফেলেছে।
এই পরিস্থিতি ইরানের নিজস্ব পারমাণবিক অবস্থানও গড়ে তুলেছে, যা আন্তর্জাতিক রাজনীতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে ওঠানামা করেছে। আশির দশকে ইরাকের সঙ্গে যুদ্ধের পর, ইরান পারমাণবিক কর্মসূচি শুরু করেছিল, যাতে ভবিষ্যতে আরেকটি যুদ্ধ এড়ানো যায়। কিন্তু প্রথম উপসাগরীয় যুদ্ধের পর সেই হুমকি কমে যায়।
পাকিস্তানের পারমাণবিক বিজ্ঞানী আব্দুল কাদির খান ২০০৪ সালে স্বীকার করেন, তিনি ১৯৯০-এর দশকে ইরানকে পুরোনো মডেলের সেন্ট্রিফিউজ প্রযুক্তি বিক্রি করেছিলেন। এটাকেই অনেকে ইরানের সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচির সূচনা মনে করেন। ২০০৩ সালে, যুক্তরাষ্ট্র ইরাকে গণবিধ্বংসী অস্ত্র খুঁজে পেতে আক্রমণ চালানোর পর, ইরান তাদের ‘আমাদ’ নামের গোপন কর্মসূচি ঘোষণা করে এবং তা বন্ধ করে দেয়। জাতিসংঘ তখন জানায়, ওই কর্মসূচিতে তারা গবেষণা করলেও প্রকৃত অস্ত্র তৈরি করেনি।
ইরান ভালোভাবেই বুঝতে পেরেছিল, এই কর্মসূচিই যুক্তরাষ্ট্রকে আলোচনার টেবিলে আনতে পারে এবং নিষেধাজ্ঞা তোলার পথ তৈরি করতে পারে। ইরানের দাবি ছিল, তারা এনপিটি স্বাক্ষরকারী দেশ হিসেবে শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক শক্তির বৈধ অধিকার ভোগ করছে। তারা আন্তর্জাতিক পরিদর্শকদের অনুমতি দিয়েছে, এমনকি আকস্মিক পরিদর্শনেরও সুযোগ দিয়েছে।
কিন্তু তারা নাতানজ ও ফোরদোর মতো সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্রও তৈরি করেছে, যা পশ্চিমা গোয়েন্দারা ফাঁস করেছে। এসব স্থাপনাও সম্প্রতি ইসরায়েলি হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। একই সঙ্গে, ইরানের প্রচলিত সামরিক প্রতিরোধ শক্তিও ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। চারপাশের ‘আগুনের বৃত্ত’ বলে পরিচিত ইরানের সশস্ত্র মিত্র বাহিনীগুলোও দুর্বল হয়ে পড়েছে। অনেক ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ কেন্দ্র এবং আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস হয়েছে।
এ অবস্থায়, ইরান এখন একেবারে পরমাণু শক্তিধর রাষ্ট্রে পরিণত হওয়ার কিনারায় দাঁড়িয়ে। ভালি নাসর বলেন, ‘ইরান এখনো লাভ-ক্ষতির হিসাব করছে। আর এখন হয়তো সেই অভ্যন্তরীণ বিতর্ক অনেকটাই সেদিকেই এগিয়েছে, যারা বলছে, বোমা বানানোর সময় হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘তবে দরজা পুরোপুরি বন্ধ হয়নি। এখনো এমন একটি কূটনৈতিক সমঝোতার সুযোগ আছে, যা যথেষ্ট আকর্ষণীয় এবং শক্তিশালী হলে ইরানের এই পথে এগিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত বদলাতে পারে।’
ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস থেকে অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান
আরও খবর পড়ুন:

গত ২৬ ডিসেম্বর বিশ্বের প্রথম জাতিসংঘ সদস্য দেশ হিসেবে সোমালিল্যান্ডকে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়েছে ইসরায়েল। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই সিদ্ধান্তকে ‘আব্রাহাম অ্যাকর্ডস’-এর একটি সাহসী সম্প্রসারণ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
১ দিন আগে
মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।
২ দিন আগে
নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এর পেছন
২ দিন আগে
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
৭ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

২৬ ডিসেম্বর বিশ্বের প্রথম জাতিসংঘ সদস্যদেশ হিসেবে সোমালিল্যান্ডকে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়েছে ইসরায়েল। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই সিদ্ধান্তকে ‘আব্রাহাম অ্যাকর্ডস’-এর একটি সাহসী সম্প্রসারণ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। হর্ন অব আফ্রিকার এই স্বঘোষিত স্বাধীন মুসলিমপ্রধান ভূখণ্ডটির প্রতি ইসরায়েলের এই গভীর আগ্রহ নিছক কোনো কূটনৈতিক সৌজন্য নয়; বরং এর পেছনে রয়েছে কয়েক দশকের সুদূরপ্রসারী কৌশলগত পরিকল্পনা, নিরাপত্তাঝুঁকি ব্যবস্থাপনা এবং বিশাল অর্থনৈতিক সম্ভাবনা।
সোমালিল্যান্ডের অবস্থান এডেন উপসাগরের তীরে, যা সরাসরি ইয়েমেনের উল্টো দিকে এবং বাব আল-মানদেব প্রণালির ঠিক পাশেই অবস্থিত। বিশ্বের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ জলপথের বাণিজ্য এই পথেই পরিচালিত হয়।
২০২৩ সাল থেকে ইরান-সমর্থিত হুতি বিদ্রোহীরা লোহিত সাগরে ইসরায়েলি সংশ্লিষ্ট জাহাজগুলোতে নিয়মিত হামলা চালিয়ে আসছে। সোমালিল্যান্ডের উপকূলরেখা থেকে হুতিদের মূল ঘাঁটি হোদেইদাহর দূরত্ব ৩০০ থেকে ৫০০ কিলোমিটার। ইসরায়েলের জন্য সোমালিল্যান্ড একটি ‘ফরোয়ার্ড ডিফেন্স’ বা সম্মুখ প্রতিরক্ষা ঘাঁটি হিসেবে কাজ করবে।
ইসরায়েলি থিংকট্যাংক (আইএনএসএস)-এর মতে, সোমালিল্যান্ডে গোয়েন্দা ঘাঁটি স্থাপনের মাধ্যমে ইরান থেকে ইয়েমেনে আসা অস্ত্র চোরাচালান এবং হুতিদের গতিবিধির ওপর সার্বক্ষণিক নজর রাখা সম্ভব হবে। এমনকি সংযুক্ত আরব আমিরাতের অর্থায়নে নির্মিত বারবেরা বন্দর ইসরায়েলি নৌ টহল বা ড্রোন অপারেশনের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠতে পারে।
হর্ন অব আফ্রিকায় ইসরায়েলের এই প্রবেশ মূলত তার আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের আধিপত্য কমানোর একটি পাল্টা কৌশল। তুরস্ক ইতিমধ্যে সোমালিয়ার মোগাদিশুতে বিশাল সামরিক ঘাঁটি এবং বন্দরগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। ইসরায়েল মনে করে, সোমালিল্যান্ডের সঙ্গে জোরালো মৈত্রী এই অঞ্চলে তুরস্কের একক আধিপত্যে ভারসাম্য বজায় রাখবে।
এ ছাড়া ইসরায়েল সব সময় নিজের সীমানার বাইরে মিত্র দেশগুলোতে নিজের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে চায়। সোমালিল্যান্ডের মতো একটি স্থিতিশীল এবং পশ্চিমাপন্থী প্রশাসনের সঙ্গে বন্ধুত্ব ইসরায়েলকে লোহিত সাগরের নিরাপত্তা বলয়ে একক কর্তৃত্ব দেবে।
অর্থনৈতিক সম্ভাবনা ও প্রাকৃতিক সম্পদের ভান্ডারও আগ্রহের মূলে রয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, সোমালিল্যান্ড কেবল একটি কৌশলগত বন্দর নয়, বরং এটি সম্পদের একটি অব্যবহৃত খনি।
সোমালিল্যান্ডে বিপুল পরিমাণ অপরিশোধিত তেল, গ্যাস এবং বিরল মৃত্তিকা খনিজ মজুত থাকার জোরালো সম্ভাবনা রয়েছে। ইসরায়েলের উচ্চ প্রযুক্তি এবং অস্ত্র তৈরির কারখানায় এই কাঁচামালগুলো অত্যন্ত জরুরি।
ইসরায়েল ইতিমধ্যে কৃষি ক্ষেত্রে লবণাক্ত পানি পরিশোধন, উন্নত সেচব্যবস্থা এবং সাইবার নিরাপত্তা খাতে বড় বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। সোমালিল্যান্ডের জন্য এই অংশীদারত্ব হবে অর্থনৈতিক স্বাধীনতার চাবিকাঠি।
তবে এতে কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জও রয়েছে। ইসরায়েলের এই স্বীকৃতি যেমন সোমালিল্যান্ডের জন্য বৈধতার দ্বার উন্মোচন করেছে, তেমনি এটি আঞ্চলিক উত্তেজনারও জন্ম দিয়েছে।
সোমালিয়া এই পদক্ষেপকে তাদের অখণ্ডতার ওপর ‘সরাসরি আক্রমণ’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। আফ্রিকান ইউনিয়ন (এইউ) এবং আরব লিগ এই স্বীকৃতির তীব্র নিন্দা জানিয়েছে এবং সতর্ক করেছে যে এটি আফ্রিকা মহাদেশে নতুন করে অস্থিতিশীলতা তৈরি করতে পারে।
পশ্চিমা বিশ্বও ইসরায়েলের এই পদক্ষেপে দ্বিধাগ্রস্ত। মার্কিন সিনেটর টেড ক্রুজ সোমালিল্যান্ডকে একটি নির্ভরযোগ্য অংশীদার হিসেবে সমর্থন করলেও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র এখনই এই পথে হাঁটবে না, বরং পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবে।
সর্বোপরি ইসরায়েলের জন্য সোমালিল্যান্ড একটি স্থিতিশীল এবং দীর্ঘমেয়াদি মিত্র, যারা সন্ত্রাসবাদ দমনে ইসরায়েলের সমমনা বলেই মনে করা হয়। এই স্বীকৃতির মাধ্যমে ইসরায়েল লোহিত সাগরে নিজের নৌ-শক্তির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চায়। তবে এই পদক্ষেপ যদি ইথিওপিয়া বা সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো দেশগুলোকে সোমালিল্যান্ডকে স্বীকৃতি দিতে উৎসাহিত করবে। তবে এর ফলে হর্ন অব আফ্রিকার মানচিত্র এবং ভূরাজনীতি চিরতরে বদলে যেতে পারে। এটি যেমন একটি নতুন সামরিক ও অর্থনৈতিক অক্ষের সম্ভাবনা তৈরি করেছে, তেমনি আঞ্চলিক সংঘাতের ঝুঁকিও বাড়িয়ে দিয়েছে।
তথ্যসূত্র: সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট, রয়টার্স, আল জাজিরা এবং আটলান্টিক কাউন্সিল।

২৬ ডিসেম্বর বিশ্বের প্রথম জাতিসংঘ সদস্যদেশ হিসেবে সোমালিল্যান্ডকে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়েছে ইসরায়েল। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই সিদ্ধান্তকে ‘আব্রাহাম অ্যাকর্ডস’-এর একটি সাহসী সম্প্রসারণ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। হর্ন অব আফ্রিকার এই স্বঘোষিত স্বাধীন মুসলিমপ্রধান ভূখণ্ডটির প্রতি ইসরায়েলের এই গভীর আগ্রহ নিছক কোনো কূটনৈতিক সৌজন্য নয়; বরং এর পেছনে রয়েছে কয়েক দশকের সুদূরপ্রসারী কৌশলগত পরিকল্পনা, নিরাপত্তাঝুঁকি ব্যবস্থাপনা এবং বিশাল অর্থনৈতিক সম্ভাবনা।
সোমালিল্যান্ডের অবস্থান এডেন উপসাগরের তীরে, যা সরাসরি ইয়েমেনের উল্টো দিকে এবং বাব আল-মানদেব প্রণালির ঠিক পাশেই অবস্থিত। বিশ্বের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ জলপথের বাণিজ্য এই পথেই পরিচালিত হয়।
২০২৩ সাল থেকে ইরান-সমর্থিত হুতি বিদ্রোহীরা লোহিত সাগরে ইসরায়েলি সংশ্লিষ্ট জাহাজগুলোতে নিয়মিত হামলা চালিয়ে আসছে। সোমালিল্যান্ডের উপকূলরেখা থেকে হুতিদের মূল ঘাঁটি হোদেইদাহর দূরত্ব ৩০০ থেকে ৫০০ কিলোমিটার। ইসরায়েলের জন্য সোমালিল্যান্ড একটি ‘ফরোয়ার্ড ডিফেন্স’ বা সম্মুখ প্রতিরক্ষা ঘাঁটি হিসেবে কাজ করবে।
ইসরায়েলি থিংকট্যাংক (আইএনএসএস)-এর মতে, সোমালিল্যান্ডে গোয়েন্দা ঘাঁটি স্থাপনের মাধ্যমে ইরান থেকে ইয়েমেনে আসা অস্ত্র চোরাচালান এবং হুতিদের গতিবিধির ওপর সার্বক্ষণিক নজর রাখা সম্ভব হবে। এমনকি সংযুক্ত আরব আমিরাতের অর্থায়নে নির্মিত বারবেরা বন্দর ইসরায়েলি নৌ টহল বা ড্রোন অপারেশনের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠতে পারে।
হর্ন অব আফ্রিকায় ইসরায়েলের এই প্রবেশ মূলত তার আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের আধিপত্য কমানোর একটি পাল্টা কৌশল। তুরস্ক ইতিমধ্যে সোমালিয়ার মোগাদিশুতে বিশাল সামরিক ঘাঁটি এবং বন্দরগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। ইসরায়েল মনে করে, সোমালিল্যান্ডের সঙ্গে জোরালো মৈত্রী এই অঞ্চলে তুরস্কের একক আধিপত্যে ভারসাম্য বজায় রাখবে।
এ ছাড়া ইসরায়েল সব সময় নিজের সীমানার বাইরে মিত্র দেশগুলোতে নিজের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে চায়। সোমালিল্যান্ডের মতো একটি স্থিতিশীল এবং পশ্চিমাপন্থী প্রশাসনের সঙ্গে বন্ধুত্ব ইসরায়েলকে লোহিত সাগরের নিরাপত্তা বলয়ে একক কর্তৃত্ব দেবে।
অর্থনৈতিক সম্ভাবনা ও প্রাকৃতিক সম্পদের ভান্ডারও আগ্রহের মূলে রয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, সোমালিল্যান্ড কেবল একটি কৌশলগত বন্দর নয়, বরং এটি সম্পদের একটি অব্যবহৃত খনি।
সোমালিল্যান্ডে বিপুল পরিমাণ অপরিশোধিত তেল, গ্যাস এবং বিরল মৃত্তিকা খনিজ মজুত থাকার জোরালো সম্ভাবনা রয়েছে। ইসরায়েলের উচ্চ প্রযুক্তি এবং অস্ত্র তৈরির কারখানায় এই কাঁচামালগুলো অত্যন্ত জরুরি।
ইসরায়েল ইতিমধ্যে কৃষি ক্ষেত্রে লবণাক্ত পানি পরিশোধন, উন্নত সেচব্যবস্থা এবং সাইবার নিরাপত্তা খাতে বড় বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। সোমালিল্যান্ডের জন্য এই অংশীদারত্ব হবে অর্থনৈতিক স্বাধীনতার চাবিকাঠি।
তবে এতে কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জও রয়েছে। ইসরায়েলের এই স্বীকৃতি যেমন সোমালিল্যান্ডের জন্য বৈধতার দ্বার উন্মোচন করেছে, তেমনি এটি আঞ্চলিক উত্তেজনারও জন্ম দিয়েছে।
সোমালিয়া এই পদক্ষেপকে তাদের অখণ্ডতার ওপর ‘সরাসরি আক্রমণ’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। আফ্রিকান ইউনিয়ন (এইউ) এবং আরব লিগ এই স্বীকৃতির তীব্র নিন্দা জানিয়েছে এবং সতর্ক করেছে যে এটি আফ্রিকা মহাদেশে নতুন করে অস্থিতিশীলতা তৈরি করতে পারে।
পশ্চিমা বিশ্বও ইসরায়েলের এই পদক্ষেপে দ্বিধাগ্রস্ত। মার্কিন সিনেটর টেড ক্রুজ সোমালিল্যান্ডকে একটি নির্ভরযোগ্য অংশীদার হিসেবে সমর্থন করলেও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র এখনই এই পথে হাঁটবে না, বরং পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবে।
সর্বোপরি ইসরায়েলের জন্য সোমালিল্যান্ড একটি স্থিতিশীল এবং দীর্ঘমেয়াদি মিত্র, যারা সন্ত্রাসবাদ দমনে ইসরায়েলের সমমনা বলেই মনে করা হয়। এই স্বীকৃতির মাধ্যমে ইসরায়েল লোহিত সাগরে নিজের নৌ-শক্তির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চায়। তবে এই পদক্ষেপ যদি ইথিওপিয়া বা সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো দেশগুলোকে সোমালিল্যান্ডকে স্বীকৃতি দিতে উৎসাহিত করবে। তবে এর ফলে হর্ন অব আফ্রিকার মানচিত্র এবং ভূরাজনীতি চিরতরে বদলে যেতে পারে। এটি যেমন একটি নতুন সামরিক ও অর্থনৈতিক অক্ষের সম্ভাবনা তৈরি করেছে, তেমনি আঞ্চলিক সংঘাতের ঝুঁকিও বাড়িয়ে দিয়েছে।
তথ্যসূত্র: সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট, রয়টার্স, আল জাজিরা এবং আটলান্টিক কাউন্সিল।

এখন ইরান যদি ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ ক্ষমতা পুনর্গঠনের চেষ্টা করে এবং ইসরায়েল যদি আরও সহিংসতার হুমকি দেয়, তাহলে তেহরানও সেই একই প্রশ্নের মুখোমুখি হবে, যে প্রশ্নের মুখোমুখি ১৯৬৭ সালে ইসরায়েলকে হতে হয়েছিল। দেশকে বাঁচানোর জন্য কি পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির পথে ছুটতে হবে, নাকি শেষ মুহূর্তে নিজেকে সামলে রাখতে...
৩০ জুন ২০২৫
মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।
২ দিন আগে
নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এর পেছন
২ দিন আগে
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
৭ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

বড়দিনের রাতে নাইজেরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় সোকোটো রাজ্যে মার্কিন বাহিনীর বিমান হামলা বিশ্বজুড়ে নতুন করে আলোচনায় নিয়ে এসেছে জঙ্গিগোষ্ঠী ‘ইসলামিক স্টেট’ বা আইএসকে। মধ্যপ্রাচ্যে পরাজয়ের পর গোষ্ঠীটি এখন আফ্রিকায় তাদের জাল বিস্তার করছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছেন, নাইজেরিয়ায় খ্রিষ্টানদের লক্ষ্য করে নৃশংস হত্যাযজ্ঞ চালানোর কারণে তিনি এ হামলার নির্দেশ দিয়েছেন।
ইসলামিক স্টেট কী
ইসলামিক স্টেট (যাকে আইএসআইএস বা দায়েশ নামেও ডাকা হয়) একটি সুন্নি চরমপন্থী গোষ্ঠী। ইরাক ও সিরিয়ায় উত্থান ঘটিয়ে তারা একসময় ‘খিলাফত’ ঘোষণা করেছিল। এরপর ২০১৪ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে ইরাক ও সিরিয়ার বিশাল অংশ তাদের দখলে ছিল। তখন তারা কঠোর শরিয়াহ আইন জারি করে এবং প্রকাশ্যে শিরশ্ছেদ ও নির্যাতনের মতো নৃশংসতা চালিয়ে বিশ্বকে স্তব্ধ করে দেয়।
পরে যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন বহুজাতিক বাহিনীর ক্রমাগত অভিযানের মুখে ইরাকের মসুল ও সিরিয়ার রাক্কায় তাদের পতন ঘটে। তবে সংগঠনটি পুরোপুরি নির্মূল না হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে।
বর্তমানে তারা কোথায় সক্রিয়
মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।
এশিয়া মহাদেশের মধ্যে আফগানিস্তান ও পাকিস্তানে ‘আইএস-খোরাসান’ নামে তারা সক্রিয়। এ ছাড়া ফিলিপাইনের মিন্দানাও অঞ্চলেও তাদের অনুসারী রয়েছে। জাতিসংঘ মনে করে, বর্তমানে তাদের অন্তত ১০ হাজার সক্রিয় সদস্য রয়েছে।
লক্ষ্য ও বর্তমান কৌশল
আইএসের মূল লক্ষ্য তাদের চরমপন্থী মতাদর্শ বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে দেওয়া। তবে সরাসরি যুদ্ধের বদলে তারা এখন কিছু নতুন কৌশল নিয়েছে। যেমন, অ্যাফিলিয়েট নেটওয়ার্ক—নিজেরা সরাসরি যুক্ত না হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানীয় জঙ্গিগোষ্ঠীকে নিজেদের ‘শাখা’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে প্রভাব বিস্তার করা। লোন উলফ অ্যাটাক—সংঘবদ্ধ হামলার পরিবর্তে একজন বা দুই ব্যক্তির সমন্বয়ে বড় ধরনের হামলা। সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই বিচে ইহুদিদের এক অনুষ্ঠানে বন্দুক হামলার পেছনে আইএসের এই কৌশল ছিল বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। অনলাইন প্রচারণা—টেলিগ্রামের মতো প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে আতঙ্ক ছড়ানো এবং নতুন সদস্য সংগ্রহ করা।
মার্কিন সামরিক বাহিনীর মতে, আইএসের বর্তমান বিশ্ব নেতা হলেন আবদুলকাদির মুমিন। তিনি বর্তমানে আইএসের সোমালিয়া শাখার প্রধান।
আইএসের সাম্প্রতিক কিছু বড় হামলা
কঙ্গোতে চলতি বছরের গত অক্টোবরে একটি গির্জায় নৈশকালীন প্রার্থনার সময় হামলায় ৪৩ জন নিহত হয়, যার দায় স্বীকার করে আইএস। গত ফেব্রুয়ারিতে সোমালিয়ায় একাধিক সামরিক ঘাঁটিতে আত্মঘাতী গাড়িবোমা হামলা চালায় আইএস। চলতি মাসে সিরিয়ায় দুই মার্কিন সেনা ও একজন দোভাষী নিহত হন, যার নেপথ্যে আইএসের হাত রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ ঘটনার পর চলতি সপ্তাহে সিরিয়ায় আইএসের ঘাঁটি লক্ষ্য করে ব্যাপক হামলা চালিয়েছে মার্কিন সামরিক বাহিনী।
নাইজেরিয়ায় মার্কিন হামলা এটাই প্রমাণ করে যে, আইএস এখন আর কেবল মধ্যপ্রাচ্যের সমস্যা নয়। বিশেষ করে, সাহেল ও পশ্চিম আফ্রিকায় তাদের ক্রমবর্ধমান শক্তি বিশ্ব নিরাপত্তার জন্য নতুন এক চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রয়টার্স থেকে সংক্ষেপে অনূদিত

বড়দিনের রাতে নাইজেরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় সোকোটো রাজ্যে মার্কিন বাহিনীর বিমান হামলা বিশ্বজুড়ে নতুন করে আলোচনায় নিয়ে এসেছে জঙ্গিগোষ্ঠী ‘ইসলামিক স্টেট’ বা আইএসকে। মধ্যপ্রাচ্যে পরাজয়ের পর গোষ্ঠীটি এখন আফ্রিকায় তাদের জাল বিস্তার করছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছেন, নাইজেরিয়ায় খ্রিষ্টানদের লক্ষ্য করে নৃশংস হত্যাযজ্ঞ চালানোর কারণে তিনি এ হামলার নির্দেশ দিয়েছেন।
ইসলামিক স্টেট কী
ইসলামিক স্টেট (যাকে আইএসআইএস বা দায়েশ নামেও ডাকা হয়) একটি সুন্নি চরমপন্থী গোষ্ঠী। ইরাক ও সিরিয়ায় উত্থান ঘটিয়ে তারা একসময় ‘খিলাফত’ ঘোষণা করেছিল। এরপর ২০১৪ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে ইরাক ও সিরিয়ার বিশাল অংশ তাদের দখলে ছিল। তখন তারা কঠোর শরিয়াহ আইন জারি করে এবং প্রকাশ্যে শিরশ্ছেদ ও নির্যাতনের মতো নৃশংসতা চালিয়ে বিশ্বকে স্তব্ধ করে দেয়।
পরে যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন বহুজাতিক বাহিনীর ক্রমাগত অভিযানের মুখে ইরাকের মসুল ও সিরিয়ার রাক্কায় তাদের পতন ঘটে। তবে সংগঠনটি পুরোপুরি নির্মূল না হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে।
বর্তমানে তারা কোথায় সক্রিয়
মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।
এশিয়া মহাদেশের মধ্যে আফগানিস্তান ও পাকিস্তানে ‘আইএস-খোরাসান’ নামে তারা সক্রিয়। এ ছাড়া ফিলিপাইনের মিন্দানাও অঞ্চলেও তাদের অনুসারী রয়েছে। জাতিসংঘ মনে করে, বর্তমানে তাদের অন্তত ১০ হাজার সক্রিয় সদস্য রয়েছে।
লক্ষ্য ও বর্তমান কৌশল
আইএসের মূল লক্ষ্য তাদের চরমপন্থী মতাদর্শ বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে দেওয়া। তবে সরাসরি যুদ্ধের বদলে তারা এখন কিছু নতুন কৌশল নিয়েছে। যেমন, অ্যাফিলিয়েট নেটওয়ার্ক—নিজেরা সরাসরি যুক্ত না হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানীয় জঙ্গিগোষ্ঠীকে নিজেদের ‘শাখা’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে প্রভাব বিস্তার করা। লোন উলফ অ্যাটাক—সংঘবদ্ধ হামলার পরিবর্তে একজন বা দুই ব্যক্তির সমন্বয়ে বড় ধরনের হামলা। সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই বিচে ইহুদিদের এক অনুষ্ঠানে বন্দুক হামলার পেছনে আইএসের এই কৌশল ছিল বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। অনলাইন প্রচারণা—টেলিগ্রামের মতো প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে আতঙ্ক ছড়ানো এবং নতুন সদস্য সংগ্রহ করা।
মার্কিন সামরিক বাহিনীর মতে, আইএসের বর্তমান বিশ্ব নেতা হলেন আবদুলকাদির মুমিন। তিনি বর্তমানে আইএসের সোমালিয়া শাখার প্রধান।
আইএসের সাম্প্রতিক কিছু বড় হামলা
কঙ্গোতে চলতি বছরের গত অক্টোবরে একটি গির্জায় নৈশকালীন প্রার্থনার সময় হামলায় ৪৩ জন নিহত হয়, যার দায় স্বীকার করে আইএস। গত ফেব্রুয়ারিতে সোমালিয়ায় একাধিক সামরিক ঘাঁটিতে আত্মঘাতী গাড়িবোমা হামলা চালায় আইএস। চলতি মাসে সিরিয়ায় দুই মার্কিন সেনা ও একজন দোভাষী নিহত হন, যার নেপথ্যে আইএসের হাত রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ ঘটনার পর চলতি সপ্তাহে সিরিয়ায় আইএসের ঘাঁটি লক্ষ্য করে ব্যাপক হামলা চালিয়েছে মার্কিন সামরিক বাহিনী।
নাইজেরিয়ায় মার্কিন হামলা এটাই প্রমাণ করে যে, আইএস এখন আর কেবল মধ্যপ্রাচ্যের সমস্যা নয়। বিশেষ করে, সাহেল ও পশ্চিম আফ্রিকায় তাদের ক্রমবর্ধমান শক্তি বিশ্ব নিরাপত্তার জন্য নতুন এক চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রয়টার্স থেকে সংক্ষেপে অনূদিত

এখন ইরান যদি ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ ক্ষমতা পুনর্গঠনের চেষ্টা করে এবং ইসরায়েল যদি আরও সহিংসতার হুমকি দেয়, তাহলে তেহরানও সেই একই প্রশ্নের মুখোমুখি হবে, যে প্রশ্নের মুখোমুখি ১৯৬৭ সালে ইসরায়েলকে হতে হয়েছিল। দেশকে বাঁচানোর জন্য কি পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির পথে ছুটতে হবে, নাকি শেষ মুহূর্তে নিজেকে সামলে রাখতে...
৩০ জুন ২০২৫
গত ২৬ ডিসেম্বর বিশ্বের প্রথম জাতিসংঘ সদস্য দেশ হিসেবে সোমালিল্যান্ডকে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়েছে ইসরায়েল। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই সিদ্ধান্তকে ‘আব্রাহাম অ্যাকর্ডস’-এর একটি সাহসী সম্প্রসারণ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
১ দিন আগে
নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এর পেছন
২ দিন আগে
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
৭ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

নাইজেরিয়ার সরকার খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়ন ঠেকাতে ব্যর্থ—এমন অভিযোগে কয়েক সপ্তাহ ধরে সমালোচনার পর অবশেষে বড়দিনের রাতে (২৫ ডিসেম্বর) পশ্চিম আফ্রিকার দেশটিতে বিমান হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। সরাসরি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে নাইজেরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় সোকোটো রাজ্যে এ হামলা চালানো হয়।
ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ান বলছে, ট্রাম্প প্রশাসন আইএস জঙ্গিদের একাধিক আস্তানা লক্ষ্য করে এসব হামলা চালায়। হামলায় মার্কিন নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ থেকে টমাহক মিসাইল নিক্ষেপ করা হয়েছিল। এসব হামলায় একাধিক আইএস জঙ্গি নিহত ও তাঁদের আস্তানা ধ্বংস হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে, তবে সঠিক সংখ্যা এখনো জানানো হয়নি।
ট্রাম্প প্রশাসনের সাম্প্রতিক বিদেশি সামরিক হস্তক্ষেপগুলোর সর্বশেষ উদাহরণ নাইজেরিয়ায় হামলা। অথচ ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনী প্রচারণায় তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে ‘অন্তহীন যুদ্ধ’ থেকে বের করে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দাবি করেছেন, এই হামলার মূল উদ্দেশ্য ছিল নাইজেরিয়ায় বসবাসরত খ্রিষ্টানদের ওপর চলমান হত্যাযজ্ঞ বন্ধ করা। তাঁর মতে, আইএস জঙ্গিরা পরিকল্পিতভাবে খ্রিষ্টানদের লক্ষ্যবস্তু বানাচ্ছে। হামলার ঘোষণা দিয়ে ট্রাম্প তাঁর ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে লিখেছিলেন, ‘আমি আগেই এই সন্ত্রাসীদের সতর্ক করেছিলাম, তারা যদি খ্রিষ্টানদের হত্যা বন্ধ না করে, তবে তাদের চড়ম মূল্য দিতে হবে। আজ রাতে (বড়দিন) ঠিক তা-ই ঘটেছে।’
গত অক্টোবর ও নভেম্বর মাসেও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নাইজেরিয়ার নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে ‘খ্রিষ্টান গণহত্যার’ শামিল বলে অভিহিত করেছিলেন।
মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তরের এক কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা এপিকে জানান, নাইজেরিয়া সরকারের অনুমোদন নিয়ে দেশটির সঙ্গে সমন্বয় করেই এসব হামলা চালানো হয়েছে। নাইজেরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, এই সহযোগিতার মধ্যে গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদান ও কৌশলগত সমন্বয় ছিল।
কেন নাইজেরিয়ায় হামলা চালাল ট্রাম্প প্রশাসন
অনেক আগে থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের ডানপন্থী রাজনীতিক গোষ্ঠীগুলো নাইজেরিয়ায় খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়নের অভিযোগ তুলছে। গত সেপ্টেম্বরে রিপাবলিকান সিনেটর টেড ক্রুজ কিছু নাইজেরীয় কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞার আহ্বান জানান। তিনি দাবি করেন, যারা ‘ইসলামপন্থী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর মাধ্যমে খ্রিষ্টান ও অন্য ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সহিংসতা সহজতর করছে’, তাদের নিষিদ্ধ করা উচিত।
তবে বর্তমানে বিষয়টি মার্কিন ডানপন্থী ও ইভানজেলিক্যাল খ্রিষ্টান মহলে বড় ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। আবার এই ডানপন্থী ও ইভানজেলিক্যাল খ্রিষ্টানরাই ট্রাম্পের বড় সমর্থক। বিশ্লেষকদের মতে, নিজের সমর্থকদের তুষ্ট করতে এবং বিশ্বজুড়ে ‘খ্রিষ্টানদের রক্ষাকর্তা’ হিসেবে নিজেকে জাহির করতেই ট্রাম্প এই ত্বরিত সামরিক পদক্ষেপ নিয়েছেন।
এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা আইনের আওতায় নাইজেরিয়াকে ‘বিশেষ উদ্বেগের দেশ’ হিসেবে চিহ্নিত করেন ট্রাম্প। বেশ কিছু মার্কিন আইনপ্রণেতা ও রক্ষণশীল খ্রিষ্টান গোষ্ঠীর লাগাতার লবিংয়ের পর এই সিদ্ধান্ত আসে। এর কিছুদিন পরই তিনি নাইজেরিয়ায় সম্ভাব্য সামরিক অভিযানের পরিকল্পনা করতে পেন্টাগনকে নির্দেশ দেন। সে সময় ট্রাম্প বলেন, নাইজেরিয়া সরকার যদি খ্রিষ্টান হত্যাকাণ্ড বন্ধ না করে, তবে তিনি ‘গানস-এ-ব্লেজিং’ অর্থাৎ পূর্ণ শক্তি নিয়ে হস্তক্ষেপ করতে পারেন।
নাইজেরিয়ায় কি আসলেই খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়ন চলছে
নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; এর পেছনে নানা কারণ রয়েছে।
উদাহরণ হিসেবে, যাযাবর মুসলিম পশুপালক ও খ্রিষ্টান কৃষক সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রাণঘাতী সংঘর্ষ মূলত চারণভূমি ও পানির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে। তবে ধর্মীয় ও জাতিগত বিভাজন এটিকে আরও জটিল করে তুলেছে। আবার অনেক বিশ্লেষকের মতে, যাজকদের অপহরণের ঘটনা ধর্মীয় বিদ্বেষের চেয়ে অর্থনৈতিক লাভের উদ্দেশ্যেই বেশি ঘটে, কারণ, তাঁরা প্রভাবশালী ব্যক্তি এবং তাঁদের অনুসারী বা প্রতিষ্ঠান দ্রুত মুক্তিপণের টাকা জোগাড় করতে পারে।
নাইজেরিয়া সরকারের অবস্থান
ট্রাম্প প্রশাসনের হামলার পর নাইজেরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইএস-নিধনে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতার প্রশংসা করেছে। কিন্তু খ্রিষ্টান নিপীড়নের বিষয়টির সঙ্গে মার্কিন অভিযানের কোনো সম্পর্ক আছে কি না, এ বিষয়ে কিছু বলেনি।
এক বিবৃতিতে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, খ্রিষ্টান, মুসলমান কিংবা অন্য কোনো সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে পরিচালিত সব ধরনের সহিংসতাই নাইজেরিয়ার মূল্যবোধ এবং আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার প্রতি অবমাননা।
নাইজেরিয়ার বাস্তবতাও আসলে এমন। দীর্ঘদিন ধরে দেশটি নিরাপত্তা পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে। গত কয়েক বছরে দেশটিতে হাজারো মানুষ নিহত এবং শত শত মানুষ অপহৃত হয়েছে।
উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ২০০৯ সাল থেকে বোকো হারাম ও ইসলামিক স্টেট ওয়েস্ট আফ্রিকা প্রভিন্স (আইএসডব্লিউএপি) বিদ্রোহ চালিয়ে যাচ্ছে। এতে কয়েক দশক ধরে কয়েক হাজার মানুষ নিহত এবং লাখো মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে সশস্ত্র অপরাধী চক্র, যাদের সাধারণত ‘ডাকাত’ বলা হয়, তারাও গণ-অপহরণ ও হামলা চালাচ্ছে। এমন পরিস্থিতি মুসলমান ও খ্রিষ্টান উভয় সম্প্রদায়কেই প্রভাবিত করছে।
এর আগে ট্রাম্পের অভিযোগের জবাবে নাইজেরিয়ার সরকার বিষয়টি স্বীকার করে বলেছিল, দেশটিতে কেবল খ্রিষ্টান নয়—বিভিন্ন ধর্মের মানুষই চরমপন্থী গোষ্ঠীগুলোর হাতে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে।
গত মাসে নাইজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট বোলা আহমেদ তিনুবু বলেন, নাইজেরিয়াকে ধর্মীয়ভাবে অসহিষ্ণু দেশ হিসেবে চিত্রিত করা বাস্তবতার প্রতিফলন নয়। তিনি বলেন, ‘ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সহনশীলতা আমাদের সম্মিলিত পরিচয়ের একটি মূল ভিত্তি এবং এটি সব সময়ই থাকবে। নাইজেরিয়া এমন একটি দেশ, যেখানে সংবিধান সব ধর্মের নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করে।’
এদিকে, ‘অন্তহীন যুদ্ধ’ বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এলেও নাইজেরিয়ায় ট্রাম্পের নতুন সামরিক হস্তক্ষেপ আফ্রিকার ভূরাজনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। অনেকে বলছেন, ‘খ্রিষ্টান নিপীড়ন’ আসলে ট্রাম্পের অজুহাত; তাঁর লক্ষ্য নাইজেরিয়ার তেলের খনি।
দ্য গার্ডিয়ান থেকে অনুবাদ করেছেন জগতপতি বর্মা

নাইজেরিয়ার সরকার খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়ন ঠেকাতে ব্যর্থ—এমন অভিযোগে কয়েক সপ্তাহ ধরে সমালোচনার পর অবশেষে বড়দিনের রাতে (২৫ ডিসেম্বর) পশ্চিম আফ্রিকার দেশটিতে বিমান হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। সরাসরি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে নাইজেরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় সোকোটো রাজ্যে এ হামলা চালানো হয়।
ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ান বলছে, ট্রাম্প প্রশাসন আইএস জঙ্গিদের একাধিক আস্তানা লক্ষ্য করে এসব হামলা চালায়। হামলায় মার্কিন নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ থেকে টমাহক মিসাইল নিক্ষেপ করা হয়েছিল। এসব হামলায় একাধিক আইএস জঙ্গি নিহত ও তাঁদের আস্তানা ধ্বংস হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে, তবে সঠিক সংখ্যা এখনো জানানো হয়নি।
ট্রাম্প প্রশাসনের সাম্প্রতিক বিদেশি সামরিক হস্তক্ষেপগুলোর সর্বশেষ উদাহরণ নাইজেরিয়ায় হামলা। অথচ ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনী প্রচারণায় তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে ‘অন্তহীন যুদ্ধ’ থেকে বের করে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দাবি করেছেন, এই হামলার মূল উদ্দেশ্য ছিল নাইজেরিয়ায় বসবাসরত খ্রিষ্টানদের ওপর চলমান হত্যাযজ্ঞ বন্ধ করা। তাঁর মতে, আইএস জঙ্গিরা পরিকল্পিতভাবে খ্রিষ্টানদের লক্ষ্যবস্তু বানাচ্ছে। হামলার ঘোষণা দিয়ে ট্রাম্প তাঁর ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে লিখেছিলেন, ‘আমি আগেই এই সন্ত্রাসীদের সতর্ক করেছিলাম, তারা যদি খ্রিষ্টানদের হত্যা বন্ধ না করে, তবে তাদের চড়ম মূল্য দিতে হবে। আজ রাতে (বড়দিন) ঠিক তা-ই ঘটেছে।’
গত অক্টোবর ও নভেম্বর মাসেও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নাইজেরিয়ার নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে ‘খ্রিষ্টান গণহত্যার’ শামিল বলে অভিহিত করেছিলেন।
মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তরের এক কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা এপিকে জানান, নাইজেরিয়া সরকারের অনুমোদন নিয়ে দেশটির সঙ্গে সমন্বয় করেই এসব হামলা চালানো হয়েছে। নাইজেরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, এই সহযোগিতার মধ্যে গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদান ও কৌশলগত সমন্বয় ছিল।
কেন নাইজেরিয়ায় হামলা চালাল ট্রাম্প প্রশাসন
অনেক আগে থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের ডানপন্থী রাজনীতিক গোষ্ঠীগুলো নাইজেরিয়ায় খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়নের অভিযোগ তুলছে। গত সেপ্টেম্বরে রিপাবলিকান সিনেটর টেড ক্রুজ কিছু নাইজেরীয় কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞার আহ্বান জানান। তিনি দাবি করেন, যারা ‘ইসলামপন্থী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর মাধ্যমে খ্রিষ্টান ও অন্য ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সহিংসতা সহজতর করছে’, তাদের নিষিদ্ধ করা উচিত।
তবে বর্তমানে বিষয়টি মার্কিন ডানপন্থী ও ইভানজেলিক্যাল খ্রিষ্টান মহলে বড় ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। আবার এই ডানপন্থী ও ইভানজেলিক্যাল খ্রিষ্টানরাই ট্রাম্পের বড় সমর্থক। বিশ্লেষকদের মতে, নিজের সমর্থকদের তুষ্ট করতে এবং বিশ্বজুড়ে ‘খ্রিষ্টানদের রক্ষাকর্তা’ হিসেবে নিজেকে জাহির করতেই ট্রাম্প এই ত্বরিত সামরিক পদক্ষেপ নিয়েছেন।
এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা আইনের আওতায় নাইজেরিয়াকে ‘বিশেষ উদ্বেগের দেশ’ হিসেবে চিহ্নিত করেন ট্রাম্প। বেশ কিছু মার্কিন আইনপ্রণেতা ও রক্ষণশীল খ্রিষ্টান গোষ্ঠীর লাগাতার লবিংয়ের পর এই সিদ্ধান্ত আসে। এর কিছুদিন পরই তিনি নাইজেরিয়ায় সম্ভাব্য সামরিক অভিযানের পরিকল্পনা করতে পেন্টাগনকে নির্দেশ দেন। সে সময় ট্রাম্প বলেন, নাইজেরিয়া সরকার যদি খ্রিষ্টান হত্যাকাণ্ড বন্ধ না করে, তবে তিনি ‘গানস-এ-ব্লেজিং’ অর্থাৎ পূর্ণ শক্তি নিয়ে হস্তক্ষেপ করতে পারেন।
নাইজেরিয়ায় কি আসলেই খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়ন চলছে
নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; এর পেছনে নানা কারণ রয়েছে।
উদাহরণ হিসেবে, যাযাবর মুসলিম পশুপালক ও খ্রিষ্টান কৃষক সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রাণঘাতী সংঘর্ষ মূলত চারণভূমি ও পানির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে। তবে ধর্মীয় ও জাতিগত বিভাজন এটিকে আরও জটিল করে তুলেছে। আবার অনেক বিশ্লেষকের মতে, যাজকদের অপহরণের ঘটনা ধর্মীয় বিদ্বেষের চেয়ে অর্থনৈতিক লাভের উদ্দেশ্যেই বেশি ঘটে, কারণ, তাঁরা প্রভাবশালী ব্যক্তি এবং তাঁদের অনুসারী বা প্রতিষ্ঠান দ্রুত মুক্তিপণের টাকা জোগাড় করতে পারে।
নাইজেরিয়া সরকারের অবস্থান
ট্রাম্প প্রশাসনের হামলার পর নাইজেরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইএস-নিধনে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতার প্রশংসা করেছে। কিন্তু খ্রিষ্টান নিপীড়নের বিষয়টির সঙ্গে মার্কিন অভিযানের কোনো সম্পর্ক আছে কি না, এ বিষয়ে কিছু বলেনি।
এক বিবৃতিতে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, খ্রিষ্টান, মুসলমান কিংবা অন্য কোনো সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে পরিচালিত সব ধরনের সহিংসতাই নাইজেরিয়ার মূল্যবোধ এবং আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার প্রতি অবমাননা।
নাইজেরিয়ার বাস্তবতাও আসলে এমন। দীর্ঘদিন ধরে দেশটি নিরাপত্তা পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে। গত কয়েক বছরে দেশটিতে হাজারো মানুষ নিহত এবং শত শত মানুষ অপহৃত হয়েছে।
উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ২০০৯ সাল থেকে বোকো হারাম ও ইসলামিক স্টেট ওয়েস্ট আফ্রিকা প্রভিন্স (আইএসডব্লিউএপি) বিদ্রোহ চালিয়ে যাচ্ছে। এতে কয়েক দশক ধরে কয়েক হাজার মানুষ নিহত এবং লাখো মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে সশস্ত্র অপরাধী চক্র, যাদের সাধারণত ‘ডাকাত’ বলা হয়, তারাও গণ-অপহরণ ও হামলা চালাচ্ছে। এমন পরিস্থিতি মুসলমান ও খ্রিষ্টান উভয় সম্প্রদায়কেই প্রভাবিত করছে।
এর আগে ট্রাম্পের অভিযোগের জবাবে নাইজেরিয়ার সরকার বিষয়টি স্বীকার করে বলেছিল, দেশটিতে কেবল খ্রিষ্টান নয়—বিভিন্ন ধর্মের মানুষই চরমপন্থী গোষ্ঠীগুলোর হাতে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে।
গত মাসে নাইজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট বোলা আহমেদ তিনুবু বলেন, নাইজেরিয়াকে ধর্মীয়ভাবে অসহিষ্ণু দেশ হিসেবে চিত্রিত করা বাস্তবতার প্রতিফলন নয়। তিনি বলেন, ‘ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সহনশীলতা আমাদের সম্মিলিত পরিচয়ের একটি মূল ভিত্তি এবং এটি সব সময়ই থাকবে। নাইজেরিয়া এমন একটি দেশ, যেখানে সংবিধান সব ধর্মের নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করে।’
এদিকে, ‘অন্তহীন যুদ্ধ’ বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এলেও নাইজেরিয়ায় ট্রাম্পের নতুন সামরিক হস্তক্ষেপ আফ্রিকার ভূরাজনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। অনেকে বলছেন, ‘খ্রিষ্টান নিপীড়ন’ আসলে ট্রাম্পের অজুহাত; তাঁর লক্ষ্য নাইজেরিয়ার তেলের খনি।
দ্য গার্ডিয়ান থেকে অনুবাদ করেছেন জগতপতি বর্মা

এখন ইরান যদি ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ ক্ষমতা পুনর্গঠনের চেষ্টা করে এবং ইসরায়েল যদি আরও সহিংসতার হুমকি দেয়, তাহলে তেহরানও সেই একই প্রশ্নের মুখোমুখি হবে, যে প্রশ্নের মুখোমুখি ১৯৬৭ সালে ইসরায়েলকে হতে হয়েছিল। দেশকে বাঁচানোর জন্য কি পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির পথে ছুটতে হবে, নাকি শেষ মুহূর্তে নিজেকে সামলে রাখতে...
৩০ জুন ২০২৫
গত ২৬ ডিসেম্বর বিশ্বের প্রথম জাতিসংঘ সদস্য দেশ হিসেবে সোমালিল্যান্ডকে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়েছে ইসরায়েল। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই সিদ্ধান্তকে ‘আব্রাহাম অ্যাকর্ডস’-এর একটি সাহসী সম্প্রসারণ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
১ দিন আগে
মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।
২ দিন আগে
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
৭ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে। এই প্রেক্ষাপটে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিয়ো লুলা দা সিলভা ভেনেজুয়েলায় মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপ মানবিক বিপর্যয় ডেকে আনবে বলে সতর্ক করেছেন। তাঁর মতে, এই সতর্কতা শুধু ভেনেজুয়েলাকে ঘিরে নয়—পুরো দক্ষিণ আমেরিকার ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার প্রশ্নও তুলে ধরছে।
ভেনেজুয়েলার সংকটের মূল কারণ দেশটির দীর্ঘস্থায়ী রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিতর্কিত নির্বাচন, অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা এবং মানবাধিকার পরিস্থিতি। প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর সরকারকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের একটি অংশ কর্তৃত্ববাদী ও অগণতান্ত্রিক বলে মনে করে। এর জবাবে ওয়াশিংটন একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এসব নিষেধাজ্ঞার মূল লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি, যা দেশটির আয়ের প্রধান উৎস।
ভেনেজুয়েলা বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ তেল মজুতের অধিকারী। ফলে তাদের তেল শুধু অর্থনীতি নয়, কূটনীতিরও কেন্দ্রে অবস্থান করছে। যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, ভেনেজুয়েলার তেল বিক্রির পথ বন্ধ করতে পারলে মাদুরো সরকার দুর্বল হবে। এই লক্ষ্যেই সাম্প্রতিক সময়ে দেশটির নিষেধাজ্ঞাভুক্ত তেল ট্যাংকারগুলোকে অবরোধের মতো কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে মার্কিন বাহিনী। তবে এই পদক্ষেপকে সরাসরি যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেওয়ার ঝুঁকি হিসেবে দেখছেন দক্ষিণ আমেরিকার অনেক নেতা।
ব্রাজিল ও মেক্সিকোর মতো লাতিন শক্তিগুলো এই কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হস্তক্ষেপের সম্ভাবনার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, দক্ষিণ আমেরিকার ইতিহাস বহিঃশক্তির সামরিক হস্তক্ষেপের তিক্ত অভিজ্ঞতায় ভরা। ফকল্যান্ড যুদ্ধের চার দশক পর আবারও কোনো অন্য মহাদেশীয় শক্তির সামরিক উপস্থিতি এই মহাদেশকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে—এমন আশঙ্কাই তিনি প্রকাশ করেছেন।
এদিকে রাশিয়া ও চীন ভেনেজুয়েলার সরকারের প্রতি সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। রাশিয়ার ক্ষেত্রে এটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব মোকাবিলার কৌশল, আর চীনের জন্য এটি তেল ও ঋণনির্ভর অর্থনৈতিক স্বার্থের প্রশ্ন। ফলে ভেনেজুয়েলা ক্রমেই যুক্তরাষ্ট্র বনাম রাশিয়া–চীন প্রভাব বিস্তারের আরেকটি ময়দানে পরিণত হচ্ছে।
‘মার্কোসুর’ সম্মেলনে লাতিন আমেরিকার দেশগুলো যে যৌথ অবস্থান নিয়েছে, তা এই বাস্তবতাকেই প্রতিফলিত করে। তারা ভেনেজুয়েলায় গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষার কথা বলেছে, তবে স্পষ্টভাবে সামরিক পথ প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের মতে, সংকটের সমাধান হতে পারে কেবল সংলাপ ও শান্তিপূর্ণ কূটনীতির মাধ্যমে।
সব মিলিয়ে ভেনেজুয়েলার সংকট এখন আর একটি দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যা নয়। তেল, আদর্শিক দ্বন্দ্ব, আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও বৈশ্বিক ক্ষমতার লড়াই—সবকিছু মিলিয়ে এটি আন্তর্জাতিক রাজনীতির এক স্পর্শকাতর সংঘাতক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।

ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে। এই প্রেক্ষাপটে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিয়ো লুলা দা সিলভা ভেনেজুয়েলায় মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপ মানবিক বিপর্যয় ডেকে আনবে বলে সতর্ক করেছেন। তাঁর মতে, এই সতর্কতা শুধু ভেনেজুয়েলাকে ঘিরে নয়—পুরো দক্ষিণ আমেরিকার ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার প্রশ্নও তুলে ধরছে।
ভেনেজুয়েলার সংকটের মূল কারণ দেশটির দীর্ঘস্থায়ী রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিতর্কিত নির্বাচন, অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা এবং মানবাধিকার পরিস্থিতি। প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর সরকারকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের একটি অংশ কর্তৃত্ববাদী ও অগণতান্ত্রিক বলে মনে করে। এর জবাবে ওয়াশিংটন একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এসব নিষেধাজ্ঞার মূল লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি, যা দেশটির আয়ের প্রধান উৎস।
ভেনেজুয়েলা বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ তেল মজুতের অধিকারী। ফলে তাদের তেল শুধু অর্থনীতি নয়, কূটনীতিরও কেন্দ্রে অবস্থান করছে। যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, ভেনেজুয়েলার তেল বিক্রির পথ বন্ধ করতে পারলে মাদুরো সরকার দুর্বল হবে। এই লক্ষ্যেই সাম্প্রতিক সময়ে দেশটির নিষেধাজ্ঞাভুক্ত তেল ট্যাংকারগুলোকে অবরোধের মতো কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে মার্কিন বাহিনী। তবে এই পদক্ষেপকে সরাসরি যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেওয়ার ঝুঁকি হিসেবে দেখছেন দক্ষিণ আমেরিকার অনেক নেতা।
ব্রাজিল ও মেক্সিকোর মতো লাতিন শক্তিগুলো এই কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হস্তক্ষেপের সম্ভাবনার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, দক্ষিণ আমেরিকার ইতিহাস বহিঃশক্তির সামরিক হস্তক্ষেপের তিক্ত অভিজ্ঞতায় ভরা। ফকল্যান্ড যুদ্ধের চার দশক পর আবারও কোনো অন্য মহাদেশীয় শক্তির সামরিক উপস্থিতি এই মহাদেশকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে—এমন আশঙ্কাই তিনি প্রকাশ করেছেন।
এদিকে রাশিয়া ও চীন ভেনেজুয়েলার সরকারের প্রতি সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। রাশিয়ার ক্ষেত্রে এটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব মোকাবিলার কৌশল, আর চীনের জন্য এটি তেল ও ঋণনির্ভর অর্থনৈতিক স্বার্থের প্রশ্ন। ফলে ভেনেজুয়েলা ক্রমেই যুক্তরাষ্ট্র বনাম রাশিয়া–চীন প্রভাব বিস্তারের আরেকটি ময়দানে পরিণত হচ্ছে।
‘মার্কোসুর’ সম্মেলনে লাতিন আমেরিকার দেশগুলো যে যৌথ অবস্থান নিয়েছে, তা এই বাস্তবতাকেই প্রতিফলিত করে। তারা ভেনেজুয়েলায় গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষার কথা বলেছে, তবে স্পষ্টভাবে সামরিক পথ প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের মতে, সংকটের সমাধান হতে পারে কেবল সংলাপ ও শান্তিপূর্ণ কূটনীতির মাধ্যমে।
সব মিলিয়ে ভেনেজুয়েলার সংকট এখন আর একটি দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যা নয়। তেল, আদর্শিক দ্বন্দ্ব, আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও বৈশ্বিক ক্ষমতার লড়াই—সবকিছু মিলিয়ে এটি আন্তর্জাতিক রাজনীতির এক স্পর্শকাতর সংঘাতক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।

এখন ইরান যদি ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ ক্ষমতা পুনর্গঠনের চেষ্টা করে এবং ইসরায়েল যদি আরও সহিংসতার হুমকি দেয়, তাহলে তেহরানও সেই একই প্রশ্নের মুখোমুখি হবে, যে প্রশ্নের মুখোমুখি ১৯৬৭ সালে ইসরায়েলকে হতে হয়েছিল। দেশকে বাঁচানোর জন্য কি পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির পথে ছুটতে হবে, নাকি শেষ মুহূর্তে নিজেকে সামলে রাখতে...
৩০ জুন ২০২৫
গত ২৬ ডিসেম্বর বিশ্বের প্রথম জাতিসংঘ সদস্য দেশ হিসেবে সোমালিল্যান্ডকে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়েছে ইসরায়েল। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই সিদ্ধান্তকে ‘আব্রাহাম অ্যাকর্ডস’-এর একটি সাহসী সম্প্রসারণ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
১ দিন আগে
মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।
২ দিন আগে
নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এর পেছন
২ দিন আগে