Ajker Patrika

১৯৬৭ বনাম ২০২৫: যে যুক্তিতে পরমাণু বোমা বানিয়েছিল ইসরায়েল, একই পরিস্থিতিতে ইরানকেও ঠেলে দিচ্ছে তারা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ৩০ জুন ২০২৫, ১২: ৩৫
ইরানের একটি পরমাণু কেন্দ্র। বিপরীতে ইসরায়েলের ডিমোনো পরমাণু কেন্দ্র। ছবি: সংগৃহীত
ইরানের একটি পরমাণু কেন্দ্র। বিপরীতে ইসরায়েলের ডিমোনো পরমাণু কেন্দ্র। ছবি: সংগৃহীত

মাটির অনেক গভীরে চলছিল গোপন পরমাণু কর্মসূচি। আমেরিকার নজর এড়িয়ে, ধীরে ধীরে উন্মোচিত হচ্ছিল পরমাণুর রহস্য। তৈরি হচ্ছিল পারমাণবিক বোমার জন্য প্রয়োজনীয় জ্বালানি। শত্রুরা এগিয়ে আসছিল, যুদ্ধের পদধ্বনি ক্রমেই জোরালো হচ্ছিল। এরপর, যুদ্ধের ঠিক প্রাক্কালে, তাড়াহুড়ো করে অন্তত একটি সাধারণ পারমাণবিক বোমা তৈরি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো। যদি জাতি সম্পূর্ণভাবে ধ্বংসের মুখে পড়ে, তাহলে হয়তো একটি পারমাণবিক বিস্ফোরণ হয়তো দেশকে বাঁচাতে পারবে।

এটাই ছিল ১৯৬৭ সালে ইসরায়েলের অবস্থা। ইতিহাসবিদেরা এখন মনে করেন, ওই বছরই ইহুদি রাষ্ট্রটি প্রথমবারের মতো পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির একেবারে দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যায়। কিন্তু তারা শেষ মুহূর্তে সেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে। কারণ, ছয় দিনের যুদ্ধে অপ্রত্যাশিত বিজয় তাদের সেই ‘প্রদর্শনীমূলক বিস্ফোরণ’ বা পরীক্ষামূলক বোমার প্রয়োজনীয়তাকে অকার্যকর করে দেয়।

বর্তমান ইরানের গল্পটা খুব একটা আলাদা নয়। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরান-ইসরায়েল সংঘাতকে ‘১২ দিনের যুদ্ধ’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। ১২ দিনের যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগে ইসরায়েল একে একে ইরানের মিত্রদের দুর্বল করে দিয়েছে। এই মিত্রদের মধ্যে আছে লেবাননের হিজবুল্লাহ থেকে শুরু করে, সিরিয়ার সামরিক বাহিনী (আসাদ সরকারের পতনের পর এই বাহিনী এখন আর ইসরায়েলের জন্য কোনো হুমকি নয়) ও হামাস।

এখন ইরান যদি ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ ক্ষমতা পুনর্গঠনের চেষ্টা করে এবং ইসরায়েল যদি আরও সহিংসতার হুমকি দেয়, তাহলে তেহরানও সেই একই প্রশ্নের মুখোমুখি হবে, যে প্রশ্নের মুখোমুখি ১৯৬৭ সালে ইসরায়েলকে হতে হয়েছিল। দেশকে বাঁচানোর জন্য কি পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির পথে ছুটতে হবে, নাকি শেষ মুহূর্তে নিজেকে সামলে রাখতে হবে?

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের সাবেক জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা এবং ‘ইরানস গ্র্যান্ড স্ট্র্যাটেজি’ বইয়ের লেখক ভালি নাসর বলেন, ‘ইরান এখন দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকা এক গভীর অভ্যন্তরীণ বিতর্কের মধ্যে রয়েছে। এটা এখন বাঁচা-মরার মুহূর্ত এবং এটা সত্যিই অবাক করার মতো যে, ইসরায়েলই এখন ইরানকে সেই একই সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করছে, যেটা তারা একসময় নিয়েছিল।’

১৯৬৭ সালের ছয় দিনের যুদ্ধ মধ্যপ্রাচ্যের ভাগ্য বদলে দিয়েছিল। ইসরায়েল, তার চেয়ে আকারে বড় প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর ওপর বিজয় অর্জন করে এবং পশ্চিম তীর ও গাজা দখল করে। এটি ইসরায়েলের চরিত্রকেও বদলে দেয়। সেই সঙ্গে ইসরায়েলের সঙ্গে পারমাণবিক অস্ত্রের সম্পর্ক এক অদ্ভুত, অস্পষ্ট রূপ নেয়। দেশটি পরমাণু শক্তিধর রাষ্ট্রে পরিণত হলেও তারা কখনো তা ঘোষণা করেনি, আবার কখনো অস্বীকারও করেনি।

পশ্চিমাদের তরফ থেকে ইসরায়েলের এই গোপন অস্ত্রভান্ডার মেনে নেওয়াকে মধ্যপ্রাচ্যে দ্বিচারিতা হিসেবে দেখা হয়। পশ্চিমারা তাদের মিত্র ইসরায়েলকে পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ চুক্তি লঙ্ঘনের অনুমতি দিয়েছে, অথচ ইরানকে বিভিন্ন শাস্তির আওতায় রেখেছে—যদিও ইরান অনেক ক্ষেত্রেই তাদের চুক্তির দায়িত্ব পালন করেছে।

কিন্তু ইসরায়েলের এই বিশেষ মর্যাদা শুধু যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত মিত্র হওয়ার কারণে নয়। এটি ছিল একটি ভিন্ন সময়ের ফসল, যখন ইসরায়েল ছিল তরুণ, দুর্বল; শত্রুরা ছিল অনেক বেশি শক্তিশালী, যারা দেশটিকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দিতে চেয়েছিল। ১৯৬৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে করা গোপন চুক্তি—যার ফলে ইসরায়েল তাদের পারমাণবিক অস্ত্র অঘোষিত রাখতে পেরেছিল—ছিল ইসরায়েলি নেতৃত্বের দূরদর্শিতার ফসল। তারা তখন তাদের দেশের দুর্বল অবস্থানকে এবং হলোকাস্টের তাজা স্মৃতিকে কাজে লাগিয়ে এমন এক ব্যতিক্রম সুবিধা আদায় করে নিয়েছিল, যা আর কোনো দেশ পায়নি।

কিন্তু যদি এখন ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির পথে এগিয়ে যায়, তাহলে বিশ্বের সামনে এক অসম্ভব সমীকরণ হাজির হবে—নতুন আরেকটি উচ্চাকাঙ্ক্ষী দেশ পরমাণু ক্লাবে প্রবেশ করবে, যা অন্যদেরও একই পথে ঠেলে দিতে পারে, কিংবা তাদের উত্তর কোরিয়ার মতো শাস্তির মুখে পড়তে হবে।

তৃতীয় বিকল্প হলো, ইরান চাইলে পরমাণু অস্ত্রের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়েই রাজনৈতিক সুবিধা নিতে পারে, ঠিক যেমনটা ইসরায়েল একসময় নিয়েছিল। ইসরায়েলের পারমাণবিক ইতিহাসের অন্যতম শীর্ষ গবেষক আভনার কোহেন বলেন, ইরান আসলে বহু বছর ধরে ইসরায়েলের পথ অনুসরণ করার চেষ্টা করছে। তারা এমন একটি পারমাণবিক কর্মসূচি চালিয়েছে, যা আংশিক প্রকাশ্য, আংশিক গোপন। তারা ধীরে ধীরে ‘বোমার আরও কাছাকাছি’ চলে যাচ্ছে, কিন্তু চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে বিলম্ব করছে, যতক্ষণ পর্যন্ত তা একান্ত জরুরি না হয়।

ক্যালিফোর্নিয়ার মিডলবেরি ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের অধ্যাপক কোহেন বলেন, ‘ইরান খুবই আগ্রহী ছিল আরেক ইসরায়েল হতে, ইসরায়েলের পথ অনুসরণ করতে।’ তিনি বলেন, কোনো সংকটকালে যেন পরমাণু অস্ত্র তৈরি করা যায়, ইসরায়েল সে লক্ষ্যে নিজেদের ব্যাপক দক্ষতা গড়ে তুলেছিল। কিন্তু কখনো প্রকাশ্যে সেই পথে হাঁটেনি। আর এটাই অনুকরণ করার চেষ্টা করেছিল ইরান।

তিনি বলেন, ‘ইরান চেয়েছিল এবং অনেক ক্ষেত্রেই তারা ইসরায়েলের অস্পষ্ট কৌশল অনুকরণ করছিল, কিন্তু তাদের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ছিল অনেক বেশি শত্রুতাপূর্ণ।’ তিনি ১৯৬৯ সালে যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েলের গোপন চুক্তির প্রসঙ্গ টেনে বলেন, ‘শেষ পর্যন্ত, বিশ্ব ইসরায়েলের প্রতি অনেক বেশি সহানুভূতিশীল থেকেছে, আর ইরানের ক্ষেত্রে বরাবরই কঠোর।’

ইসরায়েল-ইরানের আঞ্চলিক দ্বন্দ্বকে সরাসরি সংঘাতে পরিণত হতে সময় লেগেছে প্রায় সাড়ে চার দশক। এই সময়ে ইরানের নেতৃত্ব ‘জায়নবাদী রাষ্ট্র’ ধ্বংস করার শপথকে তাদের জাতীয় রাজনৈতিক বক্তব্যের কেন্দ্রবিন্দুতে স্থাপন করেছে। ইসরায়েলের কাছে, ২১ শতকের শুরু থেকে ইরানের সামরিক শক্তি বৃদ্ধি, পারমাণবিক কর্মসূচি এবং সশস্ত্র মিত্রগোষ্ঠী ক্রমেই দেশটির জন্য অস্তিত্বের হুমকি হয়ে উঠেছে।

অন্যদিকে, ইরানের দৃষ্টিতে ইসরায়েলও দ্রুত অস্তিত্বের হুমকিতে পরিণত হয়েছে। ইসরায়েলি নেতারা প্রকাশ্যে তেহরানের শাসনব্যবস্থা বদলে দেওয়ার কথা বলেছেন এবং ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী ইতিমধ্যে ইরানের ভেতরে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালানোর সক্ষমতা দেখিয়েছে।

ইসরায়েল তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি এমনভাবে গোপন রাখতে সক্ষম হয়েছিল, যা ঘনিষ্ঠ মিত্রদের কাছ থেকেও আড়াল ছিল। অন্যদিকে, ইরান ধীরে ধীরে পারমাণবিক বোমার কারিগরি সক্ষমতার কাছাকাছি পৌঁছে গেছে, যদিও তারা পরমাণু অস্ত্র তৈরি না করার শপথ নিয়েছে। সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি ২০০০—এর দশকের শুরুর দিকে পারমাণবিক অস্ত্রকে ‘হারাম’ বলে ফতোয়া (ধর্মীয় নির্দেশ) দিয়েছিলেন।

ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে হামলা চালানোর সময়ও পশ্চিমা গোয়েন্দা সংস্থা এবং জাতিসংঘ একমত ছিল যে, ইরান এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির সিদ্ধান্ত নেয়নি।

১৯৬৭ সালে আসন্ন সংঘাত ইসরায়েলের সব সন্দেহ দূর করে দেয়। ঐতিহাসিক দলিলপত্রে দেখা যায়, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী লেভি ইশকোল তাঁর মন্ত্রিসভার সদস্যদের সঙ্গে ‘একটি নির্দিষ্ট অস্ত্র’ নিয়ে আলোচনা করেছিলেন। তৎকালীন সেনাপ্রধান (পরে প্রধানমন্ত্রী) আইজ্যাক রবিন ইসরায়েলের একমাত্র পারমাণবিক চুল্লি ডিমোনায় সম্ভাব্য শত্রু হামলা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন। তিনি বলেন, ‘এর কোনো আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি বা বৈধতা নেই।’

ইরানের ক্ষেত্রেও, গত বছর যখন ইসরায়েলের সঙ্গে সংঘাতের আশঙ্কা বাড়ছিল, তেহরানের নীতিনির্ধারকেরা অস্পষ্ট ভাষায় সতর্ক করতে শুরু করেন যে, তারা তাদের পারমাণবিক নীতি পরিবর্তনের কথা ভাবতে পারে। ২০২৪ সালের এপ্রিল মাসে ইসরায়েল ও ইরানের প্রথম পাল্টাপাল্টি হামলার কয়েক মাস পর, আয়াতুল্লাহ খামেনির পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা কামাল খাররাজি ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসকে বলেন, ‘আমরা পরমাণু অস্ত্র তৈরির পক্ষপাতী নই, তবে যদি ইরান অস্তিত্বের হুমকির মুখে পড়ে, তাহলে আমাদের অবশ্যই আমাদের নীতি পরিবর্তন করতে হবে।’

এর আগে, ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে, ইরানের পারমাণবিক শক্তি সংস্থার সাবেক প্রধান আলী আকবর সালেহি বলেন, ইরানের বিস্তৃত পারমাণবিক গবেষণা কর্মসূচি তাদের বিপুল কারিগরি দক্ষতা দিয়েছে। তিনি বলেন, ‘একটি গাড়ির জন্য যা যা লাগে—চ্যাসিস, ইঞ্জিন, স্টিয়ারিং, গিয়ারবক্স—আমরা সবকিছুই তৈরি করেছি। আপনি জিজ্ঞাসা করছেন, আমরা গিয়ারবক্স বানিয়েছি কিনা, আমি বলছি হ্যাঁ। ইঞ্জিন বানিয়েছি? হ্যাঁ। তবে প্রত্যেকটি নিজ নিজ কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে।’

ইসরায়েলের ক্ষেত্রেও, ১৯৬৭ সালের যুদ্ধের ঠিক আগে, সরকার ও সামরিক বাহিনীর বিভিন্ন গবেষণা তাদের প্রাথমিক পারমাণবিক বিস্ফোরকের জন্য প্রয়োজনীয় জ্ঞান এবং জ্বালানি দিয়ে ফেলেছিল। কিন্তু তখনো পর্যন্ত সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে অস্ত্র তৈরির নির্দেশ দেয়নি।

ইরানের ক্ষেত্রেও, সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ইসরায়েলের সঙ্গে সংঘাতের সম্ভাবনা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তাদের মধ্যে একটি বড় পরিবর্তন দেখা যায়—তারা ৬০ শতাংশ মাত্রায় সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের মজুত দ্বিগুণ করেছে, যা এখন প্রায় ৪০০ কেজি। এই ইউরেনিয়াম সহজেই অস্ত্র তৈরি মানে নিয়ে যাওয়া সম্ভব। তবে ইরান তা দিয়ে কোনো উন্নত পারমাণবিক বোমা তৈরি করতে পারবে না; বরং তা হবে খুবই সাধারণ, তবুও কার্যকর, প্রোটোটাইপ অস্ত্র—যেমনটি ইসরায়েল ১৯৬৭ সালে তড়িঘড়ি তৈরি করেছিল। সেটিকেই ‘স্যামসন অপশন’ বলা হয়।

ইসরায়েলের পরমাণু কর্মসূচির পেছনে ছিল গবেষণা ও চতুরতা, যার মূল কেন্দ্র ছিল নেগেভ পারমাণবিক গবেষণা কেন্দ্র ডিমোনায়। সেখানে ১৯৫০-এর দশকের শেষদিকে ইসরায়েল গোপনে প্লুটোনিয়াম প্রক্রিয়াকরণের একটি ভূগর্ভস্থ স্থাপনা তৈরি করেছিল। সে সময় ইসরায়েলের নিরাপত্তা উদ্বেগে ইরান ছিল না। ইরানের তৎকালীন শাহ যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্র ছিলেন। ১৯৬৭ সালে যুক্তরাষ্ট্র ইরানকে ‘অ্যাটমস ফর পিস’ কর্মসূচির অধীনে একটি পারমাণবিক চুল্লি উপহার দিয়েছিল। এক বছর পর ইরান এনপিটি স্বাক্ষর করে।

এরপর, ১৯৭৯ সালের ইসলামি বিপ্লবের পর, শাহ ক্ষমতাচ্যুত হলে ইরানের পারমাণবিক গবেষণা প্রাথমিক পর্যায়ে থেমে যায়। তখন বেশির ভাগ পারমাণবিক বিজ্ঞানী দেশ ছেড়ে চলে যান। একই সময়ে, ১৯৭৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞানীরা পুরোনো এক স্যাটেলাইটের মাধ্যমে দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে সাগরে দুটি আলোর ঝলকানি শনাক্ত করেন। কয়েক মাস পর, প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার তাঁর ডায়েরিতে লেখেন, ‘আমাদের বিজ্ঞানীদের মধ্যে বিশ্বাস বাড়ছে যে, ইসরায়েল দক্ষিণ আফ্রিকার কাছাকাছি সাগরে পারমাণবিক পরীক্ষা চালিয়েছে।’

প্রায় ওই সময়েই, ইসরায়েল একটি নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়, যা আজও অপরিবর্তিত আছে বলে জানান ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সাবেক গবেষণা পরিচালক উজি আরাদ। সেটা হলো—‘বেগিন নীতিমালা।’ এই নীতিমালার মূল কথা হলো—কোনো শত্রু দেশের পারমাণবিক কর্মসূচি যদি ইসরায়েলের জন্য হুমকি হয়ে ওঠে, তাহলে সব রকম পথ বেছে দেখার পর পর, সেগুলোতে বিমান হামলা চালানো হবে।

এই নীতির বাস্তবায়ন শুরু হয় ১৯৮১ সালে। সে বছরই ইসরায়েল ইরাকের পারমাণবিক চুল্লিতে হামলা চালায়। ২০০৭ সালে সিরিয়ায় গোপনে নির্মাণাধীন উত্তর কোরিয়া সরবরাহকৃত পারমাণবিক চুল্লিতে হামলা করে ইসরায়েল। আর এখন, ২০২৫ সালে ইসরায়েলের যুদ্ধবিমান ইরানের নাতানজ, ফোরদো এবং ইস্পাহানে বোমা ফেলেছে।

এই পরিস্থিতি ইরানের নিজস্ব পারমাণবিক অবস্থানও গড়ে তুলেছে, যা আন্তর্জাতিক রাজনীতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে ওঠানামা করেছে। আশির দশকে ইরাকের সঙ্গে যুদ্ধের পর, ইরান পারমাণবিক কর্মসূচি শুরু করেছিল, যাতে ভবিষ্যতে আরেকটি যুদ্ধ এড়ানো যায়। কিন্তু প্রথম উপসাগরীয় যুদ্ধের পর সেই হুমকি কমে যায়।

পাকিস্তানের পারমাণবিক বিজ্ঞানী আব্দুল কাদির খান ২০০৪ সালে স্বীকার করেন, তিনি ১৯৯০-এর দশকে ইরানকে পুরোনো মডেলের সেন্ট্রিফিউজ প্রযুক্তি বিক্রি করেছিলেন। এটাকেই অনেকে ইরানের সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচির সূচনা মনে করেন। ২০০৩ সালে, যুক্তরাষ্ট্র ইরাকে গণবিধ্বংসী অস্ত্র খুঁজে পেতে আক্রমণ চালানোর পর, ইরান তাদের ‘আমাদ’ নামের গোপন কর্মসূচি ঘোষণা করে এবং তা বন্ধ করে দেয়। জাতিসংঘ তখন জানায়, ওই কর্মসূচিতে তারা গবেষণা করলেও প্রকৃত অস্ত্র তৈরি করেনি।

ইরান ভালোভাবেই বুঝতে পেরেছিল, এই কর্মসূচিই যুক্তরাষ্ট্রকে আলোচনার টেবিলে আনতে পারে এবং নিষেধাজ্ঞা তোলার পথ তৈরি করতে পারে। ইরানের দাবি ছিল, তারা এনপিটি স্বাক্ষরকারী দেশ হিসেবে শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক শক্তির বৈধ অধিকার ভোগ করছে। তারা আন্তর্জাতিক পরিদর্শকদের অনুমতি দিয়েছে, এমনকি আকস্মিক পরিদর্শনেরও সুযোগ দিয়েছে।

কিন্তু তারা নাতানজ ও ফোরদোর মতো সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্রও তৈরি করেছে, যা পশ্চিমা গোয়েন্দারা ফাঁস করেছে। এসব স্থাপনাও সম্প্রতি ইসরায়েলি হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। একই সঙ্গে, ইরানের প্রচলিত সামরিক প্রতিরোধ শক্তিও ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। চারপাশের ‘আগুনের বৃত্ত’ বলে পরিচিত ইরানের সশস্ত্র মিত্র বাহিনীগুলোও দুর্বল হয়ে পড়েছে। অনেক ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ কেন্দ্র এবং আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস হয়েছে।

এ অবস্থায়, ইরান এখন একেবারে পরমাণু শক্তিধর রাষ্ট্রে পরিণত হওয়ার কিনারায় দাঁড়িয়ে। ভালি নাসর বলেন, ‘ইরান এখনো লাভ-ক্ষতির হিসাব করছে। আর এখন হয়তো সেই অভ্যন্তরীণ বিতর্ক অনেকটাই সেদিকেই এগিয়েছে, যারা বলছে, বোমা বানানোর সময় হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘তবে দরজা পুরোপুরি বন্ধ হয়নি। এখনো এমন একটি কূটনৈতিক সমঝোতার সুযোগ আছে, যা যথেষ্ট আকর্ষণীয় এবং শক্তিশালী হলে ইরানের এই পথে এগিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত বদলাতে পারে।’

ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস থেকে অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান

আরও খবর পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

দোনেৎস্ক: শান্তি-আলোচনার টেবিলে পুতিন-জেলেনস্কির অন্তিম বাধা, এর গুরুত্ব কতটা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে এখন মূল আলোচনার ইস্যু হয়ে আছে দোনেৎস্ক অঞ্চলের ২০ শতাংশ ভূমি ছাড়ের বিষয়টি। ছবি: সংগৃহীত
ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে এখন মূল আলোচনার ইস্যু হয়ে আছে দোনেৎস্ক অঞ্চলের ২০ শতাংশ ভূমি ছাড়ের বিষয়টি। ছবি: সংগৃহীত

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতদের মধ্যে ইউক্রেন শান্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনা হলেও প্রকাশ্যে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইউরি উশাকভ, এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন যে অমীমাংসিত ‘আঞ্চলিক সমস্যাই’ মূল বাধা। আর এই অঞ্চল আর কোনোটিই নয়, দোনেৎস্ক।

উশাকভ মূলত ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় দোনেৎস্কের সম্পূর্ণ এলাকার ওপর রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণ দাবির কথাই বলেছিলেন। পুতিন ইউক্রেনে হাজার হাজার সৈন্য পাঠানোর প্রায় ৪ বছর পরও এবং দোনেৎস্কে রাশিয়া সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদী বিদ্রোহের এক দশকেরও বেশি সময় পর অঞ্চলটির কিছু অংশ এখনো ইউক্রেনের হাতে আছে।

প্রায় সব দেশই দোনেৎস্ককে ইউক্রেনের অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। কিন্তু এটি ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের চারটি অঞ্চলের মধ্যে একটি, যা মস্কো ২০২২ সালে একটি গণভোটের পর সংযুক্ত করার কথা ঘোষণা করে। কিয়েভ ও পশ্চিমা দেশগুলো সেই গণভোটকে ‘প্রহসন’ বলে বাতিল করে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ফক্স নিউজকে বলেছিলেন, যুদ্ধটি এখন দোনেৎস্কের সেই ২০ শতাংশ বা ৫ হাজার বর্গকিলোমিটারের এলাকা নিয়ে, যা রাশিয়া নিয়ন্ত্রণ করে না কিন্তু চায়।

পুতিন ২০২২ সালে ইউক্রেনে সৈন্য পাঠানোর সময় বলেছিলেন, তাঁর লক্ষ্য হলো ‘গত আট বছর ধরে যারা ভয়ভীতি ও গণহত্যার শিকার হয়েছেন...সেই মানুষগুলোকে রক্ষা করা।’ ইউক্রেন এবং তার মিত্ররা বলেছিল, পুতিনের এই দাবি ঔপনিবেশিক ধাঁচের এবং এলাকা দখলের জন্য একটি মিথ্যা অজুহাত মাত্র।

পুতিনের এই দাবি মূলত দোনেৎস্ক এবং লুহানস্ক অঞ্চলে রাশিয়া সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিরুদ্ধে ইউক্রেনের লড়াইয়ের দিকে ইঙ্গিত করে, যারা ২০১৪ সালে ইউক্রেনীয় সরকারি নিয়ন্ত্রণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে কিছু এলাকা দখল করেছিল। পূর্ব ইউক্রেনে এর পরের সংঘর্ষে উভয় পক্ষই শহর ও বেসামরিক নাগরিকদের ওপর গোলাবর্ষণের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করেছিল। মস্কো এই অঞ্চলের বিশাল রুশভাষী জনসংখ্যাকে উদ্ধৃত করে বলেছিল যে,২০২২ সালে হস্তক্ষেপ করা তাদের নৈতিক কর্তব্য।

কিয়েভ বলেছিল, ২০১৪ সালে ইউক্রেনের আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষায় শক্তি দিয়ে জবাব দেওয়া ছাড়া তাদের আর কোনো উপায় ছিল না এবং তারাও বিচ্ছিন্নতাবাদী বাহিনীর বিরুদ্ধে শহর ও বেসামরিক নাগরিকদের ওপর গোলাবর্ষণের অভিযোগ এনেছিল। জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৪ সাল থেকে ২০২২ সালের শুরু পর্যন্ত ইউক্রেনীয় সরকারি বাহিনী এবং বিচ্ছিন্নতাবাদীদের মধ্যে সংঘাতে উভয় পক্ষে ৩ হাজার ১০৬ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত এবং ৯ হাজার বেসামরিক নাগরিক আহত হয়েছিলেন।

দোনেৎস্কের বাকি যে অংশটি রাশিয়া চায়, তার মধ্যে রয়েছে স্লোভিয়ানস্ক এবং ক্রামাতোরস্ক—দুটি ‘দুর্গনগরী’ যা ২০১৪ সাল থেকে ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করে আসছে। এই শহরগুলো ইউক্রেনের বাকি অঞ্চল রক্ষার জন্য কিয়েভের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ দোনেৎস্কের পশ্চিমের ভূমি অনেকটাই সমতল এবং বিশাল খোলা মাঠ; যা রাশিয়াকে দোনেৎস্কের বাইরে অগ্রসর হতে এবং দিনিপ্রো নদীর পূর্ব তীর পর্যন্ত এলাকা দখল করার পথ সহজ করে দেবে।

শহরগুলো পরিখা, ট্যাংক-বিধ্বংসী বাধা, বাংকার এবং মাইনক্ষেত্রসহ অত্যন্ত সুরক্ষিত প্রতিরক্ষা লাইনের অংশ। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, গণভোট ছাড়া দোনেৎস্কের বাকি অংশ রাশিয়ার হাতে তুলে দেওয়া অবৈধ হবে এবং তা ভবিষ্যতে ইউক্রেনের গভীরে আক্রমণের জন্য রাশিয়াকে একটি পথ খুলে দেবে।

কিয়েভের আশঙ্কা, যদি তারা দোনেৎস্কের বাকি অংশ ছেড়ে দেয়, তবে রাশিয়া আবার অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হবে এবং একসময় দোনেৎস্ক ব্যবহার করে পশ্চিম দিকে আক্রমণ চালাবে।

উভয় পক্ষই দোনেৎস্ককে কেন্দ্র করে যুদ্ধে ভয়াবহ ক্ষয়ক্ষতির মুখোমুখি হয়েছে এবং প্রচুর অর্থ ও সরঞ্জাম ব্যয় করেছে। এর মধ্যে বাখমুত শহরের লড়াইও রয়েছে। যেখানে রাশিয়া হাজার হাজার দণ্ডিত অপরাধীকে ভাড়াটে সৈন্যে পরিণত করে রণক্ষেত্রে নামিয়েছিল। এ কারণে, দোনেৎস্ক উভয় দেশের জনমানসে আরও বেশি গুরুত্ব পেয়েছে। ফলে কারও পক্ষে তাদের অবস্থান পরিবর্তন করা কঠিন।

ইউক্রেন চায় না যে, রাশিয়া যুদ্ধক্ষেত্রে জয় করতে ব্যর্থ হওয়া ভূখণ্ডকে উপহার হিসেবে পাক এবং জেলেনস্কি বলেছেন, যে যুদ্ধ রাশিয়া শুরু করেছে, তার জন্য তাদের পুরস্কৃত করা উচিত নয়। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ইনস্টিটিউট ফর দ্য স্টাডি অব ওয়ার অক্টোবর মাসে বলেছিল, রাশিয়ার অগ্রগতির হার দেখে মনে হয় না যে তারা খুব শিগগিরই দোনেৎস্কের বাকি অংশ দখল করতে চলেছে। তবে ‘রাশিয়ার অগ্রগতির একটি অপরিবর্তনীয় হার ধরে নিলে’ তারা ২০২৭ সালের আগস্টের মধ্যে তা নিতে পারে।

রাশিয়ার কমান্ডাররা অবশ্য আরও বেশি আশাবাদী। জেনারেল স্টাফের প্রধান ভ্যালেরি গেরাসিমভ রোববার পুতিনকে বলেছেন, মস্কোর বাহিনী পুরো ফ্রন্ট লাইন বরাবর অগ্রসর হচ্ছে এবং দনবাসের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার জন্য কাজ করছে।

দোনেৎস্ক বন্দর, রেলপথ এবং অন্যান্য ভারী শিল্পের কেন্দ্র। এটি একসময় ইউক্রেনের কয়লা, পরিশোধিত ইস্পাত, কোক, ঢালাই লোহা এবং ইস্পাত উৎপাদনের অর্ধেকেরও বেশি সরবরাহ করত, তবে যুদ্ধের কারণে অনেক খনি ও কারখানা ধ্বংস হয়ে গেছে। এ ছাড়া, দোনেৎস্কে বিরল মৃত্তিকা, টাইটানিয়াম এবং জিরকোনিয়াম রয়েছে—যা এটিকে নিয়ন্ত্রণকারী পক্ষের জন্য আয়ের উৎস।

দোনেৎস্কের ভাগ্য পুতিন এবং জেলেনস্কি উভয়ের ঐতিহাসিক উত্তরাধিকারকে প্রভাবিত করতে পারে। পুতিন নিজেকে জাতিগত রুশদের রক্ষক হিসেবে তুলে ধরেছেন, তারা যেখানেই থাকুক না কেন। পুরো দোনেৎস্ককে সুরক্ষিত করা এই বক্তব্যের মূল কেন্দ্রবিন্দু। জেলেনস্কি ২০১৯ সালে পূর্ব ইউক্রেনের যুদ্ধ অবসান ঘটানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন। ২০২২ সাল থেকে তিনি অনেক বড়, বৈরী প্রতিবেশীর মুখে অস্ত্র এবং সংখ্যায় কম ইউক্রেনের এক দৃঢ় রক্ষক হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছেন।

লড়াই না করে দোনেৎস্ক ছেড়ে দেওয়া—যেখানে অন্তত আড়াই লাখ ইউক্রেনীয় বাস করে—ইউক্রেনীয়দের কাছে বিশ্বাসঘাতকতা হিসেবে দেখা হতে পারে, যাদের অনেকেই যুদ্ধক্ষেত্রে স্বজন হারিয়েছেন। কিয়েভ ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব সোসিওলজির সাম্প্রতিক এক জরিপ অনুসারে, ইউক্রেনীয়দের একটি সংকীর্ণ সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ এখনো আঞ্চলিক ছাড়ের বিরোধিতা করে।

জেলেনস্কিসহ ইউক্রেনের কর্মকর্তারা যেকোনো শান্তি চুক্তির অধীনে কিয়েভের নিয়ন্ত্রণে থাকা ভূমি ছাড়ার সম্ভাবনা প্রত্যাখ্যান করেছেন। জেলেনস্কি বলেন, তাঁর ভূখণ্ড ছেড়ে দেওয়ার কোনো ম্যান্ডেট নেই এবং রাষ্ট্রের ভূমি ব্যক্তিগত সম্পত্তির মতো কেনা-বেচা করা যায় না। ইউক্রেনের সংবিধান অনুসারে, আঞ্চলিক পরিবর্তন অবশ্যই একটি গণভোটের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করতে হবে, যা ইউক্রেনের অন্তত দুই-তৃতীয়াংশ অর্থাৎ, অন্তত ৩০ লাখ ইউক্রেনীয় ভোটারের স্বাক্ষর থাকলে আয়োজন করা যেতে পারে।

তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই গণভোটের বিষয়টির সমালোচনা করেছেন এবং তিনি বলেছিলেন, ‘কিছু ভূমি অদল-বদল হবে।’ এখন ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের আলোচনা মূলত এই দোনেৎস্কের নিয়ন্ত্রণ কার হাতে যাবে সেটাই নিয়েই থমকে আছে।

রয়টার্স থেকে পরিমার্জিত

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

কী হবে, যদি বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ কেড়ে নেওয়া হয়

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
মার্ক জাকারবার্গ, জেফ বেজোস ও ইলন মাস্ক সহ বিশ্বের শীর্ষ ধনীদের কয়েকজন। ছবি: এএফপি
মার্ক জাকারবার্গ, জেফ বেজোস ও ইলন মাস্ক সহ বিশ্বের শীর্ষ ধনীদের কয়েকজন। ছবি: এএফপি

বিশ্বজুড়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন উঠে আসছে—‘যদি বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ সীমিত করা হয়, অথবা এই শ্রেণিটিকেই সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়, তবে কী ঘটবে?’ পশ্চিমা দেশগুলোতে চরম ধনী বা বিলিয়নিয়ারদের সংখ্যা ও প্রভাব বাড়তে থাকায় এখন এই প্রশ্ন আরও জোরালো হয়েছে।

সম্প্রতি টেসলার মালিক ইলন মাস্ক গত নভেম্বরে এমন এক পে-অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন, যা তাঁকে একজন ট্রিলিয়ন ডলারের মালিকে পরিণত করতে পারে। তিনি ইতিমধ্যেই বিশ্বের শীর্ষ ধনী। যদি তিনি প্রস্তাবিত পূর্ণ প্যাকেজটি পান, তাহলে তিনি বিশ্বের ইতিহাসে সর্বকালের সেরা ধনী ব্যক্তিতে পরিণত হবেন। ফোর্বসের হিসেবে বর্তমানে বিশ্বের ৩ হাজার ২৮ জন বিলিয়নিয়ার আছেন। তাঁদের মোট সম্পদ প্রায় ১৬.১ ট্রিলিয়ন ডলার। অন্যদিকে পৃথিবীতে এখনো প্রায় ৮৩ কোটি ১০ লাখ মানুষ দৈনিক তিন ডলারের নিচে আয় করে চরম দারিদ্র্যে দিন কাটান।

বিশ্লেষকদের মতে, বিশ্বের এই বিপুল সম্পদ বৈষম্য শুধু অর্থনীতিকে নয়, রাজনীতি, মিডিয়া ও চিন্তাকেও প্রভাবিত করে। অনেকেই মনে করেন, বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ ও ক্ষমতা বিশ্বব্যবস্থাকে ‘অতি ধনীদের স্বার্থে’ পুনর্গঠন করছে। আবার অন্য একটি মত বলছে, বিলিয়নিয়ারেরা না থাকলে উদ্ভাবন, প্রযুক্তি ও অগ্রগতি থমকে যাবে। কারণ বৃহৎ বিনিয়োগই গড়ে তোলে নতুন সমাধান।

উদ্ভাবন কি থেমে যাবে

অ্যাডাম স্মিথ ইনস্টিটিউটের ম্যাক্সওয়েল মার্লোর মতে, বিলিয়নিয়ারদের বিলোপ করা হলে পশ্চিমা অর্থনীতি বিপর্যস্ত হবে। তাঁর দাবি, অধিকাংশ বিলিয়নিয়ার তাঁদের সম্পদের মালিক হয়েছেন সমাজের চাহিদামতো পণ্য ও প্রযুক্তি তৈরি করে। তাঁদের সম্পদ মূলত কোম্পানির শেয়ার, মেধাস্বত্ব অথবা সম্পত্তি—যা দিনে দিনে ওঠানামা করে। তাঁর মতে, এই ধনী ব্যক্তিদের প্রণোদনাই উদ্ভাবনে গতি আনে; তা না থাকলে উন্নয়ন থেমে যাবে।

যদি ন্যায্যভাবে সম্পদ বণ্টিত হতো

গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ট্যাক্স জাস্টিসের ডেরেজে আলেমায়েহুর মতে, শুধু বিলিয়নিয়ার কর আরোপ নয়—প্রশ্ন হচ্ছে, সেই কর কোথায় যাবে। দক্ষিণ বিশ্বের শ্রম ও সম্পদ থেকেই যে বিপুল সম্পদ তৈরি হয়, তাই তার ন্যায্য অংশ দক্ষিণেই ফিরে আসা উচিত। তিনি বলেন, বৈষম্য কমাতে শুধু অর্থ হস্তান্তর নয়, বৈশ্বিক আর্থিক কাঠামো পুনর্গঠন জরুরি; নইলে বৈষম্য আরও গভীর হবে।

বিধিনিষেধ কি বদলাতে হবে

ডেনিসন ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ফাদেল কাবুব বলেন, বিলিয়নিয়ারেরা আসলে ব্যর্থ নীতির ফল। সিস্টেম যেভাবে সাজানো, তাতে সম্পদ একদিকে কেন্দ্রীভূত হওয়াই স্বাভাবিক। তাঁর মতে, বিলিয়নিয়ার শ্রেণিকে বিলোপ করতে হলে আধুনিক অ্যান্টি ট্রাস্ট ও কঠোর বাজার নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন।

মিডিয়ার ওপর প্রভাব কমবে

গোল্ডস্মিথস বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডেস ফ্রিডম্যান মনে করেন, বিলিয়নিয়ারেরা পুরো মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম কিনে ফেলতে সক্ষম হওয়ায় তথ্যপ্রবাহ তাঁদের স্বার্থেই নিয়ন্ত্রিত হয়। যেমন—বেজোস বা ইলন মাস্কের গণমাধ্যম মালিকানা এই অঙ্গনের স্বাধীনতাকে দীর্ঘমেয়াদে প্রশ্নবিদ্ধ করে। তাই বিলিয়নিয়ার প্রভাব সীমিত হলে তথ্যের উৎসও আরও স্বাধীন হতে পারে।

চরম সম্পদ কি সত্যিই বিলোপ করা সম্ভব

বিশ্ব ইনইক্যুয়ালিটি ল্যাবের লুকাস শ্যানসেলের মতে, ইতিহাসে এর নজির আছে। উদাহরণস্বরূপ—রকেফেলারের একচেটিয়া সাম্রাজ্য ভেঙে দেওয়া, কিংবা রুজভেল্টের সময় সর্বোচ্চ করহার ৯৪ শতাংশে উন্নীত করা। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পানামা পেপারসের মতো ফাঁস যেমন দুর্দান্ত স্বচ্ছতা তৈরি করেছে, তেমনি তা পরিবর্তনের সুযোগও তৈরি করছে। তিনি মনে করেন, ধনীদের ওপর কর আরোপের মতো ধারণা এখন আর ‘যদি’ নয়, বরং ‘কখন’ করা হবে—এ প্রশ্নে এসে দাঁড়িয়েছে।

আল-জাজিরা অবলম্বনে

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

জাপানের ‘লৌহমানবী’ কি দেশকে চীনের সঙ্গে যুদ্ধের মুখে ঠেলে দিচ্ছেন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১: ২০
চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিনপিং ও জাপানের প্রধানমন্ত্রী সানায়ে তাকাইচি। ছবি: সংগৃহীত
চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিনপিং ও জাপানের প্রধানমন্ত্রী সানায়ে তাকাইচি। ছবি: সংগৃহীত

জাপানের ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর গত অক্টোবরে দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন সানায়ে তাকাইচি। এরপরই তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত হন জাপানের নতুন ‘আয়রন লেডি’ বা লৌহমানবী’ হিসেবে। এই পরিচয়টিকে তাকাইচি নিজেও গর্বের সঙ্গে গ্রহণ করেন। মার্গারেট থ্যাচারের অনুরাগী এই রক্ষণশীল নেতা ঘরোয়া অর্থনীতি থেকে শুরু করে পররাষ্ট্র ও নিরাপত্তা—সব ক্ষেত্রেই শক্ত অবস্থানের বার্তা দিয়েছেন।

তাকাইচির রাজনৈতিক পরিচয়ের মূল কেন্দ্রে রয়েছে ‘নিপ্পন কেইগি’ নামে জাপানের সবচেয়ে প্রভাবশালী জাতীয়তাবাদী গোষ্ঠী। এই সংগঠন জাপানের সংবিধানের যুদ্ধবিরোধী ৯ নম্বর অনুচ্ছেদ বাতিল, শক্তিশালী সামরিক বাহিনী গঠন এবং ঐতিহ্যবাদী মূল্যবোধে প্রত্যাবর্তনের পক্ষে। পূর্বসুরী শিনজো আবের মতো তাই তাকাইচিও জাপানকে স্বাভাবিক রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চান, যেখানে গোয়েন্দা সংস্থা, আধুনিক সেনাবাহিনী এবং কঠোর নিরাপত্তা আইন থাকবে।

অর্থনীতির ক্ষেত্রে তিনি জাতীয় শিল্পকে শক্তিশালী করা, প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বাড়ানো এবং রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ বৃদ্ধির পক্ষে। একই সঙ্গে কঠোর অভিবাসন নীতি ও রক্ষণশীল মূল্যবোধের প্রচারও তাঁকে ডানপন্থীদের মধ্যে জনপ্রিয় করেছে। তবে এই অভ্যন্তরীণ রাজনীতি এখন আন্তর্জাতিক উত্তেজনার সঙ্গে গেঁথে গেছে—বিশেষ করে, তাইওয়ান ইস্যুতে তাঁর অবস্থানের কারণে।

তাকাইচি ক্ষমতায় আসার পর থেকেই চীনের প্রতি কঠোর মনোভাব দেখাচ্ছেন। বেইজিংকে তিনি কৌশলগত হুমকি হিসেবে দেখেন এবং প্রতিরোধমূলক সামরিক ও কূটনৈতিক পদক্ষেপের পক্ষে জোর দিচ্ছেন। এরই অংশ হিসেবে অক্টোবরের শেষ দিকে তাঁর ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাক্ষাৎ দুই দেশের সম্পর্ককে নতুন সোনালি যুগে প্রবেশ করানোর আভাস দেয়। জাপান প্রতিরক্ষা ব্যয় জিডিপির কমপক্ষে ২ শতাংশে উন্নীত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, আর যুক্তরাষ্ট্র বিরল ধাতুর সরবরাহ নিশ্চিতকরণসহ অর্থনৈতিক সহায়তার ঘোষণা দেয়।

তবে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হলো তাইওয়ানের সঙ্গে তাকাইচির ঘনিষ্ঠতা। তিনি তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট লাই চিং-তের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন, যা চীনের কাছে স্পষ্ট উত্তেজনাকর পদক্ষেপ হিসেবে ধরা পড়েছে। আরও বিতর্ক সৃষ্টি হয় যখন তাকাইচি প্রকাশ্যে বলেন, তাইওয়ানের নিরাপত্তা জাপানের নিরাপত্তার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত। এমনকি তাইওয়ানে চীনা হামলার ক্ষেত্রে জাপানের আত্মরক্ষা বাহিনী হস্তক্ষেপ করতে পারে বলেও ইঙ্গিত দেন তিনি।

এ ক্ষেত্রে চীনের প্রতিক্রিয়াও ছিল কঠোর ও দ্রুত। তারা তাকাইচির বিরুদ্ধে ‘পুরোনো সামরিকতাবাদকে পুনরুজ্জীবিত করার’ অভিযোগ তোলে, রাষ্ট্রদূতকে তলব করে এবং জাতিসংঘে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ পাঠায়। পাশাপাশি সামুদ্রিক এলাকায় কোস্টগার্ডের টহল বাড়ায় চীন, জাপানি সামুদ্রিক পণ্যে সীমাবদ্ধতা আরোপের হুমকি দেয় এবং উত্তেজনাপূর্ণ নানা বিবৃতি দেয়।

এদিকে জাপানও পশ্চিম সীমান্তের ইয়োনাগুনি দ্বীপে বিমান প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনের ঘোষণা দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রও একই দ্বীপে সামরিক অবকাঠামো শক্তিশালী করছে। ফলে পরিস্থিতি আরও জটিল আকার ধারণ করছে।

তবে ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি তাকাইচিকে উত্তেজনা না বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন। কারণ আগামী এপ্রিলে তিনি বেইজিং সফর করতে চান।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তাকাইচির নেতৃত্বে জাপান নতুন ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতায় প্রবেশ করেছে। তাঁর দৃঢ় অবস্থান দেশকে হয় পুনরুত্থানের পথে নেবে—নয়তো চীন–তাইওয়ান উত্তেজনার কেন্দ্রে ঠেলে দেবে। ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে তিনি কোন পথে হাঁটবেন তার ওপর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

পুতিন-মোদির আসন্ন বৈঠকের মূলে কী আছে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৯: ৪৫
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ফাইল ছবি
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ফাইল ছবি

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠককে ঘিরে দিল্লিতে শুরু হয়েছে কূটনৈতিক প্রস্তুতি। চলমান ইউক্রেন যুদ্ধ, যুক্তরাষ্ট্রের চাপ এবং জ্বালানির বাজারে অস্থিরতার মধ্যেই এই শীর্ষ সম্মেলন হতে যাচ্ছে। অর্থনীতি, প্রতিরক্ষা এবং জ্বালানি—এই তিনটি খাত আলোচনার কেন্দ্রে থাকবে বলে দুই দেশই নিশ্চিত করেছে।

রাষ্ট্রীয় সফরে বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) ভারতে পৌঁছে পরদিন শুক্রবার মোদির সঙ্গে বৈঠকে বসবেন পুতিন। এই বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের অগ্রগতি পর্যালোচনা ছাড়াও নতুন কয়েকটি আন্তদপ্তর ও বাণিজ্যিক চুক্তি স্বাক্ষরের সম্ভাবনা রয়েছে। রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখা এবং একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কৌশলগত অংশীদারত্ব ধরে রাখতে ভারতের নীতির জন্য এই বৈঠক একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত হয়ে দাঁড়িয়েছে।

রাশিয়া থেকে ডিসকাউন্টে ভারতের তেল কেনা দীর্ঘদিন ধরেই ওয়াশিংটনকে অসন্তুষ্ট করে আসছে। এই অসন্তুষ্টি থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি ভারতীয় পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন, যা মোট শুল্ককে ৫০ শতাংশে উন্নীত করেছে। তবে ভারত বলছে, তারা আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার বিরোধী নয়, কিন্তু ১৪০ কোটি মানুষের জ্বালানি চাহিদা মেটাতেই বাধ্য হয়ে রাশিয়া থেকে তেল আমদানি করা হচ্ছে। নতুন মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে ‘রসনেফত’ ও ‘লুকওইল’ এর মতো রাশিয়ার কিছু কোম্পানি থেকে ভারত তেল কিনবে না বলে জানিয়েছে। তবে নিষেধাজ্ঞামুক্ত রুশ সরবরাহকারীদের সঙ্গে বাণিজ্য চালু থাকবে।

পুতিনের এই সফরে দুই দেশের অর্থনৈতিক সহযোগিতার ওপর জোর দেওয়া হবে। ভারত রাশিয়ায় ওষুধ, কৃষিপণ্য ও টেক্সটাইল রপ্তানি বাড়াতে চায় এবং পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে শুল্কমুক্ত সুবিধা প্রদানের অনুরোধ জানাবে। এ ছাড়া সার সরবরাহের দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি এবং রাশিয়ায় ভারতীয় দক্ষ জনশক্তির নিরাপদ ও নিয়মিত অভিবাসন নিয়ে আলোচনা এগোতে পারে। দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য, সমুদ্র পরিবহন, স্বাস্থ্যসেবা ও গণমাধ্যম সহযোগিতা বিষয়ক নথিপত্র চূড়ান্তের কাজও চলছে।

বুধবার এই বিষয়ে যুক্তরাজ্যভিত্তিক ইনডিপেনডেন্টের এক নিবন্ধে দাবি করা হয়েছে, জ্বালানি সহযোগিতাই পুতিন-মোদি আলোচনার বড় অংশ দখল করবে। ভারতের ফার ইস্টে বিনিয়োগ, রাশিয়ার সঙ্গে বেসামরিক পারমাণবিক প্রকল্প এবং কুদানকুলাম প্রকল্পের সম্প্রসারণ নিয়ে অগ্রগতি পর্যালোচনা হবে। স্থানীয়ভাবে যন্ত্রাংশ উৎপাদন এবং তৃতীয় দেশে যৌথ পারমাণবিক প্রকল্প বাস্তবায়নের সম্ভাবনাও খতিয়ে দেখা হবে।

প্রতিরক্ষা সহযোগিতা এই সফরের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। ২০১৮ সালের ৫.৪ বিলিয়ন ডলারের চুক্তির আওতায় ভারতের হাতে ইতিমধ্যে রাশিয়ার তিনটি এস-৪০০ স্কোয়াড্রন এসেছে। যুদ্ধজনিত কারণে বাকিগুলোর সরবরাহে যুদ্ধজনিত বিলম্ব হচ্ছে। ভারত এই সরবরাহ দ্রুত নিশ্চিত করতে চাপ দেবে। পাশাপাশি আরও এস-৪০০ কেনার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া হয়নি, যদিও বৈঠক থেকে কোনো ঘোষণা হওয়ার সম্ভাবনা কম। রুশ নির্মিত এসইউ-৩০ এমকেআই যুদ্ধবিমান আপগ্রেড, অস্ত্র সরবরাহ দ্রুততর করা এবং যৌথ সামরিক মহড়ায় সমন্বয় জোরদার করার বিষয়েও আলোচনা হবে।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভারত বহুজাতিক অস্ত্র সরবরাহকারীদের দিকে নজর বাড়ালেও রাশিয়া এখনো তাদের সবচেয়ে বড় প্রতিরক্ষা অংশীদার। পুতিনের সফরকে সেই সম্পর্কটি আরও দৃঢ় করার বড় সুযোগ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত