আজকের পত্রিকা ডেস্ক

শ্রীলঙ্কার রাজধানী কলম্বোর বন্দরের পাইলট’স টাওয়ার থেকে দক্ষিণ এশিয়ায় চীন-ভারতের লড়াইয়ের স্পষ্ট চিত্র ধরা পড়ে। বন্দরের পূর্ব দিকের জেটিতে প্রায়ই ভারতীয় ও চীনা যুদ্ধজাহাজ নোঙর করে। দক্ষিণে চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড পরিকল্পনার প্রাথমিক প্রকল্পগুলোর একটি হলো কনটেইনার টার্মিনাল। এর পাশেই পশ্চিম দিকে ভারতীয় শিল্পগোষ্ঠী আদানি একটি নতুন টার্মিনাল নির্মাণের চুক্তি করেছে।
যখন আদানির টার্মিনাল নির্মাণ চুক্তির ঘোষণা দেওয়া হয়, তখন এটি সহযোগিতার এক অনন্য উদাহরণ হিসেবে প্রশংসিত হয়েছিল, যেটির উদ্দেশ্য ছিল এই অঞ্চলে চীনের প্রভাব মোকাবিলা করা। বাণিজ্য, অস্ত্র বিক্রি ও অবকাঠামো প্রকল্পের মাধ্যমে চীন ওই এলাকায় প্রভাব বিস্তারে তৎপর। পাল্টা জবাব দিচ্ছিল ভারতও। প্রতিবেশী দেশগুলোকে কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে সহায়তা দেওয়া এবং চীনা ঋণের কারণে সৃষ্ট দেনার বোঝা থেকে কিছুটা মুক্তি দেওয়ার মাধ্যমে। এমন পরিস্থিতিতে ২০২৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণাপ্রতিষ্ঠান র্যান্ড করপোরেশন লিখেছিল, ‘ভারত আর পিছিয়ে নেই, বরং বলা যেতে পারে, কৌশলগত প্রতিযোগিতায় চীনের বিরুদ্ধে জয়ের পথেই আছে।’
কিন্তু গত ১৮ মাসে মালদ্বীপ, নেপাল, বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কায় ভারতপন্থী নেতারা ক্ষমতা হারিয়েছেন। বিশেষ করে বাংলাদেশ ক্রমশ চীনের দিকে ঝুঁকছে। গত ফেব্রুয়ারিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ওয়াশিংটন সফরের অভিজ্ঞতাও ভালো নয়। সব মিলিয়ে ট্রাম্পকে দেখানোর মতো আঞ্চলিক সাফল্যের কোনো কিছু তাঁর ঝুলিতে ছিল না।
এদিকে এসব রাজনৈতিক পরিবর্তন এবং আদানি গ্রুপের চেয়ারম্যান গৌতম আদানির বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের ঘুষ কেলেঙ্কারির অভিযোগ (যা তিনি অস্বীকার করেছেন) ঘিরে কয়েকটি আঞ্চলিক আদানি প্রকল্প বিতর্কের মধ্যে পড়েছে। গত ১১ ডিসেম্বর প্রতিষ্ঠানটি জানায়, তারা কলম্বো বন্দরে প্রকল্পে আর মার্কিন ঋণ ব্যবহার করবে না।
এই দোদুল্যমানতার পেছনে আংশিক কারণ হলো, আঞ্চলিক নেতারাই এশিয়ার দুই পরাশক্তিকে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে নিজেদের সুবিধা হাসিল করতে চেয়েছেন। তবে এর জন্য ভারতের কূটনৈতিক দুর্বলতাও অনেকখানি দায়ী।
এসব দেশের সঙ্গে ভৌগোলিক ও সাংস্কৃতিক নৈকট্য থাকার পরও ভারত কেন পারছে না, তা এখন মিলিয়ন ডলার প্রশ্ন। তার ওপর, মোদি ২০১৪ সালে ‘সবার আগে প্রতিবেশী’ নীতি গ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু এর সুফল তো দৃশ্যমান নয়। ভারতের নিরাপত্তা ও কূটনৈতিক মহলে অনেকে আশঙ্কা করছেন, সুনির্দিষ্ট দৃষ্টিভঙ্গির অভাব ও সমন্বয়ের ঘাটতির কারণে চীনের আপাত-দুর্বলতার এই সময়েও সুযোগ হাতছাড়া করছে ভারত।
ভারতের এই দুর্বলতা আমেরিকা এবং অন্য অনেক দেশের জন্য উদ্বেগের বিষয়। কারণ, এই দেশগুলো চীনকে মোকাবিলায় ভারতের ওপর ভরসা করছে। বহু পশ্চিমা কর্মকর্তার আশঙ্কা, ভারতের আঞ্চলিক কূটনীতি অনেক সময় ‘বুমেরাং’ হয়ে যায় বা উল্টো তাদের স্বার্থের সঙ্গেই সংঘাত তৈরি করে। কেউ কেউ বলেন, ভারত চীনের পথেই হাঁটছে—স্বৈরশাসকদের সমর্থন দিচ্ছে, দ্ব্যর্থবোধক ব্যবসায়িক চুক্তি করছে এবং নিজ দেশে উগ্র জাতীয়তাবাদ উসকে দিচ্ছে। ডোনাল্ড ট্রাম্পের হোয়াইট হাউসে ফিরে আসাও ভারতের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে।
উদাহরণ হিসেবে দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় ‘সুইং স্টেট’ বাংলাদেশের কথাই ধরা যাক। (কারণ, পাকিস্তান বহু আগেই চীন শিবিরে ঢুকে পড়েছে।) ২০০৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ভারত বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একনিষ্ঠ সমর্থক ছিল এবং হাসিনার ক্রমবর্ধমান একনায়ক হয়ে ওঠার প্রবণতা দেখেও না দেখার ভান করেছে। এমনকি, বাংলাদেশে গণতন্ত্রের অবনতির বিষয়ে আমেরিকার সমালোচনা যেন নরম হয়, সে জন্য ভারতীয় কর্মকর্তারা তদবিরও করেছেন। তাঁদের যুক্তি ছিল, শেখ হাসিনা না থাকলে বাংলাদেশ কট্টর ইসলামপন্থীদের দখলে চলে যেতে পারে।
ক্ষণিকের জন্য ভারতের এই কৌশল কাজও করেছিল। বাণিজ্য, অবকাঠামো এবং নিরাপত্তাসংক্রান্ত ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের উন্নতি হয়েছিল। বাংলাদেশ চীনের সঙ্গে সম্পর্ক বাড়ালেও নিরাপত্তার বিষয়ে ভারতকে অগ্রাধিকার দিয়েছিল। এরপর ২০২৪ সালের আগস্টে ভারতের কৌশল ব্যর্থ হয়। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হয়ে ভারতে আশ্রয় নেন। এখন বাংলাদেশে ভারতবিরোধী মনোভাব তুঙ্গে; ভারতেও অনেকে বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর নির্যাতনের খবরে ক্ষুব্ধ।
অপরদিকে, বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের আওতায় চীন অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগ কিছুটা কমালেও, যেকোনো কৌশলগত সুযোগের সদ্ব্যবহার করছে এবং গত অক্টোবরে ভারতের সঙ্গে চার বছরের সীমান্ত উত্তেজনা সমাধান করেছে। চীন এরই মধ্যে বাংলাদেশকে ২ বিলিয়ন ডলার আর্থিক সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে এবং আরও ৫ বিলিয়ন ডলার সহায়তার আলোচনা চলছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন।
গত জানুয়ারিতে বেইজিং সফরকালে তৌহিদ হোসেন চীনের কাছে আরও সহায়তা চেয়েছেন। পাশাপাশি চীন বাংলাদেশকে শেখ হাসিনার আমলে দেওয়া কিছু ঋণের মেয়াদ বাড়িয়েছে। দুই পক্ষই অবকাঠামো প্রকল্পে প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছে এবং চীনের প্রস্তাবিত মোংলা বন্দর উন্নয়নের বিষয়ে আলোচনা করেছে।
এদিকে ড. ইউনূস চার দিনের চীন সফরে প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংসহ উচ্চপর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তা এবং বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। সেখান থেকে ঋণ, অনুদান ও বিনিয়োগের বিপরীতে ২ দশমিক ১ বিনিয়োগ ডলারের প্রতিশ্রুতি পেয়েছে বাংলাদেশ। পুরোনো ঋণগুলোর সুদ কমানোর ব্যাপারেও সম্মত হয়েছে চীন। মোংলা বন্দর উন্নয়নের বিষয়েও চূড়ান্ত আলোচনা হয়েছে।
ভারতের পক্ষ থেকেও শেখ হাসিনার অধীনে মোংলা বন্দরের জন্য দরপত্র দেওয়া হয়েছিল। এই উদ্যোগকে চীনের নিয়ন্ত্রণাধীন ভারত মহাসাগরের বন্দরগুলোর নেটওয়ার্কের (স্ট্রিং অব পার্ল) সঙ্গে সমন্বয় সাধনের প্রচেষ্টা হিসেবে দেখা হয়েছিল।
বাংলাদেশে হাসিনা সরকারের পতন কেবল ভারতীয় গোয়েন্দা-ব্যর্থতাই ছিল না, এটি অঞ্চলটির প্রতি ভারতের দৃষ্টিভঙ্গির ত্রুটিও প্রকাশ করে। যারা ভারতের নিরাপত্তা স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিয়েছে, কয়েক দশক ধরে দিল্লি শুধু তাদেরই সমর্থন করে গেছে। প্রধানমন্ত্রী মোদি এই নীতি আরও এগিয়ে নিয়ে গেছেন। তবে তিনি বেশি নির্ভর করেছেন অর্থনৈতিক শক্তির ওপর। উদার সহায়তার (যেমন, ২০২২ সালে দেউলিয়া হওয়ার পর শ্রীলঙ্কাকে ৪ বিলিয়ন ডলার সাহায্য) পাশাপাশি কঠোর শাস্তিও—যেমন ২০১৫ সালে নেপালের বিরুদ্ধে অনানুষ্ঠানিক অবরোধ—আরোপ করেছেন।
ভারতীয় কর্মকর্তারা বলছেন, তাঁদের পদক্ষেপ কাজে দিচ্ছে। তাঁরা শ্রীলঙ্কার নতুন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে যোগাযোগের নমুনা তুলে ধরছেন। যাঁর প্রথম বিদেশ সফর ছিল ভারতে, যদিও তাঁর বামপন্থী দলের চীনের সঙ্গে ঐতিহাসিক সম্পর্ক রয়েছে। তাঁরা মালদ্বীপের নতুন নেতাকে ‘ভারতবিরোধী’ অবস্থান থেকে পিছু হটাতে সফল হয়েছেন। যেখানে ভারত বিরোধিতাই ছিল নির্বাচনী প্রচারের প্রধান অংশ। কিন্তু বাংলাদেশ সম্পর্কে তাঁরা ভারতীয় গণমাধ্যমের ভিত্তিহীন খবর থামানোর চেষ্টা কমই করছেন, যেখানে কোনো তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই বলা হচ্ছে— আমেরিকা হাসিনার পতন ঘটিয়েছে।
সম্প্রতি, ভারতের শীর্ষস্থানীয় কূটনীতিক ও নিরাপত্তা কর্মকর্তারা কৌশল পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছেন। তাঁরা বলছেন, ভারত অত্যধিক কঠোরহস্ত হয়ে উঠেছে, চীন যেভাবে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে বিরোধী দল ও নাগরিক সমাজের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলতে ব্যর্থ হয়েছে বা সাধারণ মূল্যবোধ ও পরিচয়ের অনুভূতি প্রচারে সফল হয়নি, ভারতের অবস্থানও তেমন। কিছু লোক এসবের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী মোদির রাজনৈতিক বিরোধীদের এবং অরাষ্ট্রীয় সংগঠনের প্রতি শত্রুতাকে যুক্ত করেন। কারণ, তাঁর হিন্দু জাতীয়তাবাদ প্রায়ই বিপদ ডেকে আনে (বিশেষত মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংলাদেশে)।
ভারতের সাবেক পররাষ্ট্রসচিব শিবশঙ্কর মেনন বলেন, ‘বিশ্ব খুব দ্রুত বদলে গেছে। কিন্তু আমরা এখনো সেই একই পদ্ধতিতেই কাজ করছি, যা আগে সফল ছিল এবং একই ফলাফলের প্রত্যাশা করছি।’ তাঁর মতে, ভারতকে অর্থনৈতিক সহযোগিতার ওপর বেশি গুরুত্ব দেওয়া উচিত এবং দুর্বল প্রতিবেশী দেশগুলোর কাছ থেকে পারস্পরিক সুবিধা চাওয়ার কথা ভাবা বন্ধ করা উচিত। অন্যরা চান, এই অঞ্চলের তরুণ সম্প্রদায়ের ওপর বেশি মনোযোগ দেওয়া হোক, যাতে তারা বেশি সংখ্যায় ভারতে পড়তে যান। আরেক সাবেক পররাষ্ট্রসচিব শ্যাম শরণ বলেন, ভারতকে অঞ্চলটির সঙ্গে সম্পর্কিত আরও দক্ষ কূটনীতিক প্রয়োজন এবং সীমান্তবর্তী অঞ্চলের স্থানীয় সরকারের আরও বেশি সম্পৃক্ততা জরুরি।
ভারতীয় কূটনীতিকেরা শ্রীলঙ্কার ক্ষেত্রে অনেক দ্রুতগতিতে কাজ করছেন। তবে শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট অনুরা কুমারা দিসানায়েকে এখনো কিছুটা দ্বিধাগ্রস্ত। জানুয়ারিতে চীন সফরের সময় তিনি ৩ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলারের একটি তেল শোধনাগার প্রকল্প দ্রুত এগিয়ে নেওয়ার বিষয়ে সম্মতি জানিয়েছেন। এই প্রকল্প দক্ষিণ শ্রীলঙ্কায় চীনা মালিকানাধীন একটি বন্দর প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত। ভারত এটিকে সম্ভাব্য সামরিক হুমকি বলে মনে করে। দিসানায়েকে বিদেশি গবেষণা জাহাজের ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছেন। চীনা জাহাজ গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করছে—ভারত এই অভিযোগ তোলার পর শ্রীলঙ্কা সরকার কয়েক বছর আগে এই নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল।
কেবল তা-ই নয়, দিসানায়েকে তাঁর বক্তব্যে চীনের পছন্দনীয় শব্দচয়ন করছেন। তিনি তিব্বতের পরিবর্তে অঞ্চলটির মান্দারিন নাম ‘শিজাং’ বলছেন এবং তাইওয়ানের সঙ্গে একীকরণে চীনের ‘সব’ প্রচেষ্টার প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন। নেপালের প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলি গত ডিসেম্বর চীন সফরে গিয়ে একই ধরনের শব্দ ব্যবহার করেন এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও গভীর করার বিষয়ে সম্মত হন। নেপালে ভারতের সাবেক রাষ্ট্রদূত রঞ্জিত রায় ভারতের সমালোচনা করে বলেন, দিল্লি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলছে না, গত জুলাইয়ে নিয়োগ পাওয়ার পর ওলিকে সফরের জন্য আমন্ত্রণও জানায়নি তারা।
ভারতের আরেকটি উদ্বেগের বিষয় হলো, অবকাঠামোগত প্রকল্প প্রতিযোগিতায় কেবলই আদানির ওপর নির্ভরতা। আদানির চেয়ারম্যানের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আছে। ২০১৭ সালে আদানি বাংলাদেশের সঙ্গে ২৫ বছরের জন্য বিদ্যুৎ সরবরাহের চুক্তি করে। শ্রীলঙ্কায় সংস্থাটি প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীনভাবে কলম্বো বন্দরের চুক্তি ও একটি বায়ুবিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ পেয়ে যায়। যদিও নতুন সরকার সেসব চুক্তি পর্যালোচনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। নেপালে আদানি একটি বিমানবন্দর নির্মাণ ও তিনটি বিমানবন্দর পরিচালনার জন্য তদবির করছে।
এদিকে বাংলাদেশ আদানির সঙ্গে বিদ্যুৎ চুক্তিটি পর্যালোচনার আলোচনা এখনো টেবিল থেকে সরায়নি। অভিযোগ রয়েছে, আদানি বাজারের তুলনায় দাম বেশি রাখছে। আদানি অবশ্য বলছে, চুক্তির শর্ত মেনেই কাজ করছে। শ্রীলঙ্কাও একই অভিযোগে বায়ুবিদ্যুৎ প্রকল্পের বিষয়টি পর্যালোচনা করছে।
এসব সমস্যার পেছনে আরও গভীর একটি কারণ রয়েছে—নরেন্দ্র মোদি ভারতকে এক উদীয়মান বিশ্বশক্তি ও গ্লোবাল সাউথের নেতা হিসেবে উপস্থাপন করতে চান। অথচ আঞ্চলিক কর্মকর্তারা বলছেন, নিজ অঞ্চলেই ভারতের অবস্থান স্পষ্ট নয়। এটি সুনির্দিষ্ট না করা পর্যন্ত দ্বিধাগ্রস্ত ও সংশয়গ্রস্ত প্রতিবেশীরা বিকল্প খুঁজতে থাকবে, আর সেই সুযোগ নেবে চীন।
অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান

শ্রীলঙ্কার রাজধানী কলম্বোর বন্দরের পাইলট’স টাওয়ার থেকে দক্ষিণ এশিয়ায় চীন-ভারতের লড়াইয়ের স্পষ্ট চিত্র ধরা পড়ে। বন্দরের পূর্ব দিকের জেটিতে প্রায়ই ভারতীয় ও চীনা যুদ্ধজাহাজ নোঙর করে। দক্ষিণে চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড পরিকল্পনার প্রাথমিক প্রকল্পগুলোর একটি হলো কনটেইনার টার্মিনাল। এর পাশেই পশ্চিম দিকে ভারতীয় শিল্পগোষ্ঠী আদানি একটি নতুন টার্মিনাল নির্মাণের চুক্তি করেছে।
যখন আদানির টার্মিনাল নির্মাণ চুক্তির ঘোষণা দেওয়া হয়, তখন এটি সহযোগিতার এক অনন্য উদাহরণ হিসেবে প্রশংসিত হয়েছিল, যেটির উদ্দেশ্য ছিল এই অঞ্চলে চীনের প্রভাব মোকাবিলা করা। বাণিজ্য, অস্ত্র বিক্রি ও অবকাঠামো প্রকল্পের মাধ্যমে চীন ওই এলাকায় প্রভাব বিস্তারে তৎপর। পাল্টা জবাব দিচ্ছিল ভারতও। প্রতিবেশী দেশগুলোকে কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে সহায়তা দেওয়া এবং চীনা ঋণের কারণে সৃষ্ট দেনার বোঝা থেকে কিছুটা মুক্তি দেওয়ার মাধ্যমে। এমন পরিস্থিতিতে ২০২৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণাপ্রতিষ্ঠান র্যান্ড করপোরেশন লিখেছিল, ‘ভারত আর পিছিয়ে নেই, বরং বলা যেতে পারে, কৌশলগত প্রতিযোগিতায় চীনের বিরুদ্ধে জয়ের পথেই আছে।’
কিন্তু গত ১৮ মাসে মালদ্বীপ, নেপাল, বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কায় ভারতপন্থী নেতারা ক্ষমতা হারিয়েছেন। বিশেষ করে বাংলাদেশ ক্রমশ চীনের দিকে ঝুঁকছে। গত ফেব্রুয়ারিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ওয়াশিংটন সফরের অভিজ্ঞতাও ভালো নয়। সব মিলিয়ে ট্রাম্পকে দেখানোর মতো আঞ্চলিক সাফল্যের কোনো কিছু তাঁর ঝুলিতে ছিল না।
এদিকে এসব রাজনৈতিক পরিবর্তন এবং আদানি গ্রুপের চেয়ারম্যান গৌতম আদানির বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের ঘুষ কেলেঙ্কারির অভিযোগ (যা তিনি অস্বীকার করেছেন) ঘিরে কয়েকটি আঞ্চলিক আদানি প্রকল্প বিতর্কের মধ্যে পড়েছে। গত ১১ ডিসেম্বর প্রতিষ্ঠানটি জানায়, তারা কলম্বো বন্দরে প্রকল্পে আর মার্কিন ঋণ ব্যবহার করবে না।
এই দোদুল্যমানতার পেছনে আংশিক কারণ হলো, আঞ্চলিক নেতারাই এশিয়ার দুই পরাশক্তিকে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে নিজেদের সুবিধা হাসিল করতে চেয়েছেন। তবে এর জন্য ভারতের কূটনৈতিক দুর্বলতাও অনেকখানি দায়ী।
এসব দেশের সঙ্গে ভৌগোলিক ও সাংস্কৃতিক নৈকট্য থাকার পরও ভারত কেন পারছে না, তা এখন মিলিয়ন ডলার প্রশ্ন। তার ওপর, মোদি ২০১৪ সালে ‘সবার আগে প্রতিবেশী’ নীতি গ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু এর সুফল তো দৃশ্যমান নয়। ভারতের নিরাপত্তা ও কূটনৈতিক মহলে অনেকে আশঙ্কা করছেন, সুনির্দিষ্ট দৃষ্টিভঙ্গির অভাব ও সমন্বয়ের ঘাটতির কারণে চীনের আপাত-দুর্বলতার এই সময়েও সুযোগ হাতছাড়া করছে ভারত।
ভারতের এই দুর্বলতা আমেরিকা এবং অন্য অনেক দেশের জন্য উদ্বেগের বিষয়। কারণ, এই দেশগুলো চীনকে মোকাবিলায় ভারতের ওপর ভরসা করছে। বহু পশ্চিমা কর্মকর্তার আশঙ্কা, ভারতের আঞ্চলিক কূটনীতি অনেক সময় ‘বুমেরাং’ হয়ে যায় বা উল্টো তাদের স্বার্থের সঙ্গেই সংঘাত তৈরি করে। কেউ কেউ বলেন, ভারত চীনের পথেই হাঁটছে—স্বৈরশাসকদের সমর্থন দিচ্ছে, দ্ব্যর্থবোধক ব্যবসায়িক চুক্তি করছে এবং নিজ দেশে উগ্র জাতীয়তাবাদ উসকে দিচ্ছে। ডোনাল্ড ট্রাম্পের হোয়াইট হাউসে ফিরে আসাও ভারতের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে।
উদাহরণ হিসেবে দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় ‘সুইং স্টেট’ বাংলাদেশের কথাই ধরা যাক। (কারণ, পাকিস্তান বহু আগেই চীন শিবিরে ঢুকে পড়েছে।) ২০০৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ভারত বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একনিষ্ঠ সমর্থক ছিল এবং হাসিনার ক্রমবর্ধমান একনায়ক হয়ে ওঠার প্রবণতা দেখেও না দেখার ভান করেছে। এমনকি, বাংলাদেশে গণতন্ত্রের অবনতির বিষয়ে আমেরিকার সমালোচনা যেন নরম হয়, সে জন্য ভারতীয় কর্মকর্তারা তদবিরও করেছেন। তাঁদের যুক্তি ছিল, শেখ হাসিনা না থাকলে বাংলাদেশ কট্টর ইসলামপন্থীদের দখলে চলে যেতে পারে।
ক্ষণিকের জন্য ভারতের এই কৌশল কাজও করেছিল। বাণিজ্য, অবকাঠামো এবং নিরাপত্তাসংক্রান্ত ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের উন্নতি হয়েছিল। বাংলাদেশ চীনের সঙ্গে সম্পর্ক বাড়ালেও নিরাপত্তার বিষয়ে ভারতকে অগ্রাধিকার দিয়েছিল। এরপর ২০২৪ সালের আগস্টে ভারতের কৌশল ব্যর্থ হয়। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হয়ে ভারতে আশ্রয় নেন। এখন বাংলাদেশে ভারতবিরোধী মনোভাব তুঙ্গে; ভারতেও অনেকে বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর নির্যাতনের খবরে ক্ষুব্ধ।
অপরদিকে, বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের আওতায় চীন অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগ কিছুটা কমালেও, যেকোনো কৌশলগত সুযোগের সদ্ব্যবহার করছে এবং গত অক্টোবরে ভারতের সঙ্গে চার বছরের সীমান্ত উত্তেজনা সমাধান করেছে। চীন এরই মধ্যে বাংলাদেশকে ২ বিলিয়ন ডলার আর্থিক সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে এবং আরও ৫ বিলিয়ন ডলার সহায়তার আলোচনা চলছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন।
গত জানুয়ারিতে বেইজিং সফরকালে তৌহিদ হোসেন চীনের কাছে আরও সহায়তা চেয়েছেন। পাশাপাশি চীন বাংলাদেশকে শেখ হাসিনার আমলে দেওয়া কিছু ঋণের মেয়াদ বাড়িয়েছে। দুই পক্ষই অবকাঠামো প্রকল্পে প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছে এবং চীনের প্রস্তাবিত মোংলা বন্দর উন্নয়নের বিষয়ে আলোচনা করেছে।
এদিকে ড. ইউনূস চার দিনের চীন সফরে প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংসহ উচ্চপর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তা এবং বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। সেখান থেকে ঋণ, অনুদান ও বিনিয়োগের বিপরীতে ২ দশমিক ১ বিনিয়োগ ডলারের প্রতিশ্রুতি পেয়েছে বাংলাদেশ। পুরোনো ঋণগুলোর সুদ কমানোর ব্যাপারেও সম্মত হয়েছে চীন। মোংলা বন্দর উন্নয়নের বিষয়েও চূড়ান্ত আলোচনা হয়েছে।
ভারতের পক্ষ থেকেও শেখ হাসিনার অধীনে মোংলা বন্দরের জন্য দরপত্র দেওয়া হয়েছিল। এই উদ্যোগকে চীনের নিয়ন্ত্রণাধীন ভারত মহাসাগরের বন্দরগুলোর নেটওয়ার্কের (স্ট্রিং অব পার্ল) সঙ্গে সমন্বয় সাধনের প্রচেষ্টা হিসেবে দেখা হয়েছিল।
বাংলাদেশে হাসিনা সরকারের পতন কেবল ভারতীয় গোয়েন্দা-ব্যর্থতাই ছিল না, এটি অঞ্চলটির প্রতি ভারতের দৃষ্টিভঙ্গির ত্রুটিও প্রকাশ করে। যারা ভারতের নিরাপত্তা স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিয়েছে, কয়েক দশক ধরে দিল্লি শুধু তাদেরই সমর্থন করে গেছে। প্রধানমন্ত্রী মোদি এই নীতি আরও এগিয়ে নিয়ে গেছেন। তবে তিনি বেশি নির্ভর করেছেন অর্থনৈতিক শক্তির ওপর। উদার সহায়তার (যেমন, ২০২২ সালে দেউলিয়া হওয়ার পর শ্রীলঙ্কাকে ৪ বিলিয়ন ডলার সাহায্য) পাশাপাশি কঠোর শাস্তিও—যেমন ২০১৫ সালে নেপালের বিরুদ্ধে অনানুষ্ঠানিক অবরোধ—আরোপ করেছেন।
ভারতীয় কর্মকর্তারা বলছেন, তাঁদের পদক্ষেপ কাজে দিচ্ছে। তাঁরা শ্রীলঙ্কার নতুন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে যোগাযোগের নমুনা তুলে ধরছেন। যাঁর প্রথম বিদেশ সফর ছিল ভারতে, যদিও তাঁর বামপন্থী দলের চীনের সঙ্গে ঐতিহাসিক সম্পর্ক রয়েছে। তাঁরা মালদ্বীপের নতুন নেতাকে ‘ভারতবিরোধী’ অবস্থান থেকে পিছু হটাতে সফল হয়েছেন। যেখানে ভারত বিরোধিতাই ছিল নির্বাচনী প্রচারের প্রধান অংশ। কিন্তু বাংলাদেশ সম্পর্কে তাঁরা ভারতীয় গণমাধ্যমের ভিত্তিহীন খবর থামানোর চেষ্টা কমই করছেন, যেখানে কোনো তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই বলা হচ্ছে— আমেরিকা হাসিনার পতন ঘটিয়েছে।
সম্প্রতি, ভারতের শীর্ষস্থানীয় কূটনীতিক ও নিরাপত্তা কর্মকর্তারা কৌশল পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছেন। তাঁরা বলছেন, ভারত অত্যধিক কঠোরহস্ত হয়ে উঠেছে, চীন যেভাবে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে বিরোধী দল ও নাগরিক সমাজের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলতে ব্যর্থ হয়েছে বা সাধারণ মূল্যবোধ ও পরিচয়ের অনুভূতি প্রচারে সফল হয়নি, ভারতের অবস্থানও তেমন। কিছু লোক এসবের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী মোদির রাজনৈতিক বিরোধীদের এবং অরাষ্ট্রীয় সংগঠনের প্রতি শত্রুতাকে যুক্ত করেন। কারণ, তাঁর হিন্দু জাতীয়তাবাদ প্রায়ই বিপদ ডেকে আনে (বিশেষত মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংলাদেশে)।
ভারতের সাবেক পররাষ্ট্রসচিব শিবশঙ্কর মেনন বলেন, ‘বিশ্ব খুব দ্রুত বদলে গেছে। কিন্তু আমরা এখনো সেই একই পদ্ধতিতেই কাজ করছি, যা আগে সফল ছিল এবং একই ফলাফলের প্রত্যাশা করছি।’ তাঁর মতে, ভারতকে অর্থনৈতিক সহযোগিতার ওপর বেশি গুরুত্ব দেওয়া উচিত এবং দুর্বল প্রতিবেশী দেশগুলোর কাছ থেকে পারস্পরিক সুবিধা চাওয়ার কথা ভাবা বন্ধ করা উচিত। অন্যরা চান, এই অঞ্চলের তরুণ সম্প্রদায়ের ওপর বেশি মনোযোগ দেওয়া হোক, যাতে তারা বেশি সংখ্যায় ভারতে পড়তে যান। আরেক সাবেক পররাষ্ট্রসচিব শ্যাম শরণ বলেন, ভারতকে অঞ্চলটির সঙ্গে সম্পর্কিত আরও দক্ষ কূটনীতিক প্রয়োজন এবং সীমান্তবর্তী অঞ্চলের স্থানীয় সরকারের আরও বেশি সম্পৃক্ততা জরুরি।
ভারতীয় কূটনীতিকেরা শ্রীলঙ্কার ক্ষেত্রে অনেক দ্রুতগতিতে কাজ করছেন। তবে শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট অনুরা কুমারা দিসানায়েকে এখনো কিছুটা দ্বিধাগ্রস্ত। জানুয়ারিতে চীন সফরের সময় তিনি ৩ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলারের একটি তেল শোধনাগার প্রকল্প দ্রুত এগিয়ে নেওয়ার বিষয়ে সম্মতি জানিয়েছেন। এই প্রকল্প দক্ষিণ শ্রীলঙ্কায় চীনা মালিকানাধীন একটি বন্দর প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত। ভারত এটিকে সম্ভাব্য সামরিক হুমকি বলে মনে করে। দিসানায়েকে বিদেশি গবেষণা জাহাজের ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছেন। চীনা জাহাজ গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করছে—ভারত এই অভিযোগ তোলার পর শ্রীলঙ্কা সরকার কয়েক বছর আগে এই নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল।
কেবল তা-ই নয়, দিসানায়েকে তাঁর বক্তব্যে চীনের পছন্দনীয় শব্দচয়ন করছেন। তিনি তিব্বতের পরিবর্তে অঞ্চলটির মান্দারিন নাম ‘শিজাং’ বলছেন এবং তাইওয়ানের সঙ্গে একীকরণে চীনের ‘সব’ প্রচেষ্টার প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন। নেপালের প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলি গত ডিসেম্বর চীন সফরে গিয়ে একই ধরনের শব্দ ব্যবহার করেন এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও গভীর করার বিষয়ে সম্মত হন। নেপালে ভারতের সাবেক রাষ্ট্রদূত রঞ্জিত রায় ভারতের সমালোচনা করে বলেন, দিল্লি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলছে না, গত জুলাইয়ে নিয়োগ পাওয়ার পর ওলিকে সফরের জন্য আমন্ত্রণও জানায়নি তারা।
ভারতের আরেকটি উদ্বেগের বিষয় হলো, অবকাঠামোগত প্রকল্প প্রতিযোগিতায় কেবলই আদানির ওপর নির্ভরতা। আদানির চেয়ারম্যানের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আছে। ২০১৭ সালে আদানি বাংলাদেশের সঙ্গে ২৫ বছরের জন্য বিদ্যুৎ সরবরাহের চুক্তি করে। শ্রীলঙ্কায় সংস্থাটি প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীনভাবে কলম্বো বন্দরের চুক্তি ও একটি বায়ুবিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ পেয়ে যায়। যদিও নতুন সরকার সেসব চুক্তি পর্যালোচনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। নেপালে আদানি একটি বিমানবন্দর নির্মাণ ও তিনটি বিমানবন্দর পরিচালনার জন্য তদবির করছে।
এদিকে বাংলাদেশ আদানির সঙ্গে বিদ্যুৎ চুক্তিটি পর্যালোচনার আলোচনা এখনো টেবিল থেকে সরায়নি। অভিযোগ রয়েছে, আদানি বাজারের তুলনায় দাম বেশি রাখছে। আদানি অবশ্য বলছে, চুক্তির শর্ত মেনেই কাজ করছে। শ্রীলঙ্কাও একই অভিযোগে বায়ুবিদ্যুৎ প্রকল্পের বিষয়টি পর্যালোচনা করছে।
এসব সমস্যার পেছনে আরও গভীর একটি কারণ রয়েছে—নরেন্দ্র মোদি ভারতকে এক উদীয়মান বিশ্বশক্তি ও গ্লোবাল সাউথের নেতা হিসেবে উপস্থাপন করতে চান। অথচ আঞ্চলিক কর্মকর্তারা বলছেন, নিজ অঞ্চলেই ভারতের অবস্থান স্পষ্ট নয়। এটি সুনির্দিষ্ট না করা পর্যন্ত দ্বিধাগ্রস্ত ও সংশয়গ্রস্ত প্রতিবেশীরা বিকল্প খুঁজতে থাকবে, আর সেই সুযোগ নেবে চীন।
অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান

ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
৩ দিন আগে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
৬ দিন আগে
নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে।
৬ দিন আগে
ইমরান খানকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে।
১০ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে। এই প্রেক্ষাপটে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিয়ো লুলা দা সিলভা ভেনেজুয়েলায় মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপ মানবিক বিপর্যয় ডেকে আনবে বলে সতর্ক করেছেন। তাঁর মতে, এই সতর্কতা শুধু ভেনেজুয়েলাকে ঘিরে নয়—পুরো দক্ষিণ আমেরিকার ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার প্রশ্নও তুলে ধরছে।
ভেনেজুয়েলার সংকটের মূল কারণ দেশটির দীর্ঘস্থায়ী রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিতর্কিত নির্বাচন, অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা এবং মানবাধিকার পরিস্থিতি। প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর সরকারকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের একটি অংশ কর্তৃত্ববাদী ও অগণতান্ত্রিক বলে মনে করে। এর জবাবে ওয়াশিংটন একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এসব নিষেধাজ্ঞার মূল লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি, যা দেশটির আয়ের প্রধান উৎস।
ভেনেজুয়েলা বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ তেল মজুতের অধিকারী। ফলে তাদের তেল শুধু অর্থনীতি নয়, কূটনীতিরও কেন্দ্রে অবস্থান করছে। যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, ভেনেজুয়েলার তেল বিক্রির পথ বন্ধ করতে পারলে মাদুরো সরকার দুর্বল হবে। এই লক্ষ্যেই সাম্প্রতিক সময়ে দেশটির নিষেধাজ্ঞাভুক্ত তেল ট্যাংকারগুলোকে অবরোধের মতো কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে মার্কিন বাহিনী। তবে এই পদক্ষেপকে সরাসরি যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেওয়ার ঝুঁকি হিসেবে দেখছেন দক্ষিণ আমেরিকার অনেক নেতা।
ব্রাজিল ও মেক্সিকোর মতো লাতিন শক্তিগুলো এই কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হস্তক্ষেপের সম্ভাবনার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, দক্ষিণ আমেরিকার ইতিহাস বহিঃশক্তির সামরিক হস্তক্ষেপের তিক্ত অভিজ্ঞতায় ভরা। ফকল্যান্ড যুদ্ধের চার দশক পর আবারও কোনো অন্য মহাদেশীয় শক্তির সামরিক উপস্থিতি এই মহাদেশকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে—এমন আশঙ্কাই তিনি প্রকাশ করেছেন।
এদিকে রাশিয়া ও চীন ভেনেজুয়েলার সরকারের প্রতি সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। রাশিয়ার ক্ষেত্রে এটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব মোকাবিলার কৌশল, আর চীনের জন্য এটি তেল ও ঋণনির্ভর অর্থনৈতিক স্বার্থের প্রশ্ন। ফলে ভেনেজুয়েলা ক্রমেই যুক্তরাষ্ট্র বনাম রাশিয়া–চীন প্রভাব বিস্তারের আরেকটি ময়দানে পরিণত হচ্ছে।
‘মার্কোসুর’ সম্মেলনে লাতিন আমেরিকার দেশগুলো যে যৌথ অবস্থান নিয়েছে, তা এই বাস্তবতাকেই প্রতিফলিত করে। তারা ভেনেজুয়েলায় গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষার কথা বলেছে, তবে স্পষ্টভাবে সামরিক পথ প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের মতে, সংকটের সমাধান হতে পারে কেবল সংলাপ ও শান্তিপূর্ণ কূটনীতির মাধ্যমে।
সব মিলিয়ে ভেনেজুয়েলার সংকট এখন আর একটি দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যা নয়। তেল, আদর্শিক দ্বন্দ্ব, আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও বৈশ্বিক ক্ষমতার লড়াই—সবকিছু মিলিয়ে এটি আন্তর্জাতিক রাজনীতির এক স্পর্শকাতর সংঘাতক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।

ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে। এই প্রেক্ষাপটে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিয়ো লুলা দা সিলভা ভেনেজুয়েলায় মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপ মানবিক বিপর্যয় ডেকে আনবে বলে সতর্ক করেছেন। তাঁর মতে, এই সতর্কতা শুধু ভেনেজুয়েলাকে ঘিরে নয়—পুরো দক্ষিণ আমেরিকার ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার প্রশ্নও তুলে ধরছে।
ভেনেজুয়েলার সংকটের মূল কারণ দেশটির দীর্ঘস্থায়ী রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিতর্কিত নির্বাচন, অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা এবং মানবাধিকার পরিস্থিতি। প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর সরকারকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের একটি অংশ কর্তৃত্ববাদী ও অগণতান্ত্রিক বলে মনে করে। এর জবাবে ওয়াশিংটন একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এসব নিষেধাজ্ঞার মূল লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি, যা দেশটির আয়ের প্রধান উৎস।
ভেনেজুয়েলা বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ তেল মজুতের অধিকারী। ফলে তাদের তেল শুধু অর্থনীতি নয়, কূটনীতিরও কেন্দ্রে অবস্থান করছে। যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, ভেনেজুয়েলার তেল বিক্রির পথ বন্ধ করতে পারলে মাদুরো সরকার দুর্বল হবে। এই লক্ষ্যেই সাম্প্রতিক সময়ে দেশটির নিষেধাজ্ঞাভুক্ত তেল ট্যাংকারগুলোকে অবরোধের মতো কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে মার্কিন বাহিনী। তবে এই পদক্ষেপকে সরাসরি যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেওয়ার ঝুঁকি হিসেবে দেখছেন দক্ষিণ আমেরিকার অনেক নেতা।
ব্রাজিল ও মেক্সিকোর মতো লাতিন শক্তিগুলো এই কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হস্তক্ষেপের সম্ভাবনার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, দক্ষিণ আমেরিকার ইতিহাস বহিঃশক্তির সামরিক হস্তক্ষেপের তিক্ত অভিজ্ঞতায় ভরা। ফকল্যান্ড যুদ্ধের চার দশক পর আবারও কোনো অন্য মহাদেশীয় শক্তির সামরিক উপস্থিতি এই মহাদেশকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে—এমন আশঙ্কাই তিনি প্রকাশ করেছেন।
এদিকে রাশিয়া ও চীন ভেনেজুয়েলার সরকারের প্রতি সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। রাশিয়ার ক্ষেত্রে এটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব মোকাবিলার কৌশল, আর চীনের জন্য এটি তেল ও ঋণনির্ভর অর্থনৈতিক স্বার্থের প্রশ্ন। ফলে ভেনেজুয়েলা ক্রমেই যুক্তরাষ্ট্র বনাম রাশিয়া–চীন প্রভাব বিস্তারের আরেকটি ময়দানে পরিণত হচ্ছে।
‘মার্কোসুর’ সম্মেলনে লাতিন আমেরিকার দেশগুলো যে যৌথ অবস্থান নিয়েছে, তা এই বাস্তবতাকেই প্রতিফলিত করে। তারা ভেনেজুয়েলায় গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষার কথা বলেছে, তবে স্পষ্টভাবে সামরিক পথ প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের মতে, সংকটের সমাধান হতে পারে কেবল সংলাপ ও শান্তিপূর্ণ কূটনীতির মাধ্যমে।
সব মিলিয়ে ভেনেজুয়েলার সংকট এখন আর একটি দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যা নয়। তেল, আদর্শিক দ্বন্দ্ব, আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও বৈশ্বিক ক্ষমতার লড়াই—সবকিছু মিলিয়ে এটি আন্তর্জাতিক রাজনীতির এক স্পর্শকাতর সংঘাতক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।

ভারতের শীর্ষস্থানীয় কূটনীতিক ও নিরাপত্তা কর্মকর্তারা কৌশল পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছেন। তাঁরা বলছেন, ভারত অত্যধিক কঠোরহস্ত হয়ে উঠেছে, চীন যেভাবে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে বিরোধী দল ও নাগরিক সমাজের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলতে ব্যর্থ হয়েছে বা সাধারণ মূল্যবোধ ও পরিচয়ের অনুভূতি প্রচারে সফল হয়নি, ভারতের
২৯ মার্চ ২০২৫
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
৬ দিন আগে
নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে।
৬ দিন আগে
ইমরান খানকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে।
১০ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ভেনেজুয়েলার তেল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ—এমন মন্তব্য করে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাডভাইজার ও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহযোগী স্টিফেন মিলার।
গতকাল বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে মিলার বলেন, ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প গড়ে উঠেছে ‘আমেরিকার শ্রম, উদ্ভাবন ও ঘামের’ ওপর আর সেটা রাষ্ট্রায়ত্ত করে নেওয়াকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদের সবচেয়ে বড় ‘চুরি’ বলে অভিহিত করেন। মিলারের এই মন্তব্যের ঠিক এক দিন আগে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ঘোষণা দেন—ভেনেজুয়েলায় প্রবেশ ও সেখান থেকে বের হওয়া সব তেলবাহী জাহাজের ওপর ‘সম্পূর্ণ ও সর্বাত্মক অবরোধ’ আরোপ করা হচ্ছে।
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার উপকূলের কাছাকাছি কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় সামরিক উপস্থিতি গড়ে তুলেছে যুক্তরাষ্ট্র। গত সেপ্টেম্বর থেকে মাদক পাচারের অভিযোগে বেশ কয়েকটি নৌযানে হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। এতে এখন পর্যন্ত অন্তত ৯০ জন নিহত হয়েছেন। ট্রাম্প প্রশাসন দাবি করছে, এসব নৌকা যুক্তরাষ্ট্রে বিপুল পরিমাণ মাদক পাচার করছিল এবং তা মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি। তবে এই অভিযোগের পক্ষে কোনো প্রমাণ তারা দেয়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোকেনসহ মাদক যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছানোর প্রধান উৎস ভেনেজুয়েলা নয়। ফলে অনেকের মতে, এর পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রকৃত লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল নিয়ন্ত্রণ এবং নিকোলাস মাদুরোকে ক্ষমতা থেকে সরানো।
মিলার কী বলেছেন
গতকাল বুধবার এক্সে দেওয়া পোস্টে স্টিফেন মিলার লেখেন, ‘আমেরিকার শ্রম, মেধা ও পরিশ্রমই ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প সৃষ্টি করেছে। এই শিল্প জোরপূর্বক রাষ্ট্রায়ত্ত করা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ ও সম্পত্তির ইতিহাসের সবচেয়ে বড় চুরি। আর সেই লুণ্ঠিত সম্পদ সন্ত্রাসবাদে অর্থ জোগাতে এবং আমাদের দেশের রাস্তায় খুনি, ভাড়াটে যোদ্ধা ও মাদক ছড়িয়ে দিতে ব্যবহৃত হয়েছে।’
মিলার তাঁর পোস্টে ট্রাম্পের আগের একটি বক্তব্যও যুক্ত করেন, যেখানে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের তেল, ভূমি ও অন্যান্য সম্পদ ‘চুরি’ করার অভিযোগ তোলেন। ওই পোস্টে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার সরকারকে ‘বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন’ ঘোষণা করেন এবং দেশটির তেল ট্যাংকারগুলোর ওপর সম্পূর্ণ অবরোধের নির্দেশ দেন।
মিলার আরও বলেন, ভেনেজুয়েলা থেকে আসা অভিবাসীদের দ্রুত যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠানো হবে এবং সব ‘চুরি হওয়া সম্পদ’ অবিলম্বে যুক্তরাষ্ট্রকে ফিরিয়ে দিতে হবে।
ভেনেজুয়েলায় কী পরিমাণ তেল রয়েছে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলেই বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
২০২৩ সালের হিসাবে ভেনেজুয়েলার তেল মজুতের পরিমাণ প্রায় ৩০৩ বিলিয়ন ব্যারেল—যা বিশ্বে সর্বাধিক। তবে উৎপাদন ও রপ্তানি কমে যাওয়ায় দেশটি এখন তেল থেকে আগের মতো আয় করতে পারছে না।
অবজারভেটরি অব ইকোনমিক কমপ্লেক্সের (ওইসি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ভেনেজুয়েলার অপরিশোধিত তেল রপ্তানির মূল্য ছিল মাত্র ৪ দশমিক শূন্য ৫ বিলিয়ন ডলার। একই সময়ে সৌদি আরব রপ্তানি করেছে ১৮১ বিলিয়ন ডলার, যুক্তরাষ্ট্র ১২৫ বিলিয়ন ডলার ও রাশিয়া ১২২ বিলিয়ন ডলার।
যুক্তরাষ্ট্র কেন ভেনেজুয়েলার তেলের ওপর দাবি করছে
২০ শতকের শুরুর দিকে ভেনেজুয়েলায় তেল অনুসন্ধান শুরু করে মার্কিন কোম্পানিগুলো। ১৯২২ সালে ভেনেজুয়েলার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের মারাকাইবো হ্রদ এলাকায় প্রথম বড় তেলক্ষেত্র আবিষ্কার করে রয়্যাল ডাচ শেল।
এরপর যুক্তরাষ্ট্র ভেনেজুয়েলার তেল উত্তোলন ও উন্নয়নে বড় ধরনের বিনিয়োগ শুরু করে। স্ট্যান্ডার্ড অয়েলের মতো কোম্পানিগুলো চুক্তিভিত্তিকভাবে কাজ করে ভেনেজুয়েলাকে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ তেল সরবরাহকারীতে পরিণত করে।
১৯৬০ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর ওপেক গঠনের সময় ভেনেজুয়েলা ছিল এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। তবে ১৯৭৬ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট কার্লোস আন্দ্রেস পেরেজ তেলশিল্প রাষ্ট্রায়ত্ত করেন এবং পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলা (পিডিভিএসএ) প্রতিষ্ঠা করেন।
পরে হুগো শাভেজ ক্ষমতায় এসে সব বিদেশি তেলসম্পদ জাতীয়করণ করেন। কিন্তু রাজনৈতিক লক্ষ্যকে অগ্রাধিকার দেওয়া, অব্যবস্থাপনা ও বিনিয়োগের অভাবে তেল উৎপাদন ক্রমেই কমতে থাকে।
কবে থেকে নিষেধাজ্ঞা
২০০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র প্রথম ভেনেজুয়েলার তেলশিল্পের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। পরে নিকোলাস মাদুরোর শাসনামলে ২০১৭ ও ২০১৯ সালে নিষেধাজ্ঞা আরও কঠোর করা হয়। এই নিষেধাজ্ঞার ফলে ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি প্রায় বন্ধ হয়ে যায় এবং দেশটি চীন, ভারত ও কিউবার দিকে ঝুঁকে পড়ে।
ভেনেজুয়েলার তেল আমাদের সম্পদ—যুক্তরাষ্ট্রের এমন দাবির কি কোনো আইনি ভিত্তি আছে
না, নেই। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র তার ভূখণ্ডের প্রাকৃতিক সম্পদের মালিক। এই নীতির নাম ‘স্থায়ী প্রাকৃতিক সম্পদে সার্বভৌম অধিকার’ (Permanent Sovereignty over Natural Resources)।
১৯৬২ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের একটি প্রস্তাবে এই নীতি স্বীকৃতি পায়। সে অনুযায়ী, ভেনেজুয়েলার তেল সম্পূর্ণভাবে ভেনেজুয়েলারই। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে এ তেলের ওপর দাবি জানানো আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী।
তাহলে শেভরন কেন কাজ করছে
যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও হিউস্টনভিত্তিক তেল কোম্পানি শেভরন ভেনেজুয়েলায় কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। সাধারণত বিদেশি কোম্পানিগুলো ভেনেজুয়েলায় সরাসরি তেলক্ষেত্রের মালিক হতে পারে না। যুক্তরাষ্ট্রের শেভরন পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলার (পিডিভিএসএ) সঙ্গে যৌথভাবে তেল উৎপাদন করে এবং উৎপাদিত তেলের একটি অংশ পায়।
২০২২ সালে জো বাইডেন প্রশাসন শেভরনকে বিশেষ লাইসেন্স দেয়, যাতে তারা নিষেধাজ্ঞার বাইরে থেকে কাজ করতে পারে। চলতি বছর ট্রাম্প প্রশাসন সেই নিষেধাজ্ঞা ছাড় নবায়ন করেছে।
শেভরন দীর্ঘদিন ধরে ভেনেজুয়েলায় কার্যক্রম চালাচ্ছে এবং সেখানে তাদের বিপুল সম্পদ রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি সরে গেলে সেই সম্পদ রাষ্ট্রের হাতে চলে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে—যা অতীতে এক্সন, কারগিল ও হিলটনের মতো কোম্পানির ক্ষেত্রে ঘটেছে।
ট্রাম্প প্রশাসন মূলত ঐতিহাসিকভাবে মার্কিন কোম্পানিগুলোর করা বিনিয়োগ ও পরে তা বাজেয়াপ্ত হওয়াকে কেন্দ্র করে এই ‘মালিকানা’ দাবি করছে। তবে বর্তমান বিশ্বব্যবস্থায় ও আন্তর্জাতিক আইনে কোনো দেশের সম্পদ অন্য দেশের মালিকানাধীন হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এটি মূলত ভেনেজুয়েলায় শাসনব্যবস্থা পরিবর্তন ও তেলের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার একটি ভূরাজনৈতিক কৌশল।
আল-জাজিরা থেকে অনুবাদ করেছেন জগৎপতি বর্মা

ভেনেজুয়েলার তেল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ—এমন মন্তব্য করে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাডভাইজার ও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহযোগী স্টিফেন মিলার।
গতকাল বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে মিলার বলেন, ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প গড়ে উঠেছে ‘আমেরিকার শ্রম, উদ্ভাবন ও ঘামের’ ওপর আর সেটা রাষ্ট্রায়ত্ত করে নেওয়াকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদের সবচেয়ে বড় ‘চুরি’ বলে অভিহিত করেন। মিলারের এই মন্তব্যের ঠিক এক দিন আগে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ঘোষণা দেন—ভেনেজুয়েলায় প্রবেশ ও সেখান থেকে বের হওয়া সব তেলবাহী জাহাজের ওপর ‘সম্পূর্ণ ও সর্বাত্মক অবরোধ’ আরোপ করা হচ্ছে।
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার উপকূলের কাছাকাছি কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় সামরিক উপস্থিতি গড়ে তুলেছে যুক্তরাষ্ট্র। গত সেপ্টেম্বর থেকে মাদক পাচারের অভিযোগে বেশ কয়েকটি নৌযানে হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। এতে এখন পর্যন্ত অন্তত ৯০ জন নিহত হয়েছেন। ট্রাম্প প্রশাসন দাবি করছে, এসব নৌকা যুক্তরাষ্ট্রে বিপুল পরিমাণ মাদক পাচার করছিল এবং তা মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি। তবে এই অভিযোগের পক্ষে কোনো প্রমাণ তারা দেয়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোকেনসহ মাদক যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছানোর প্রধান উৎস ভেনেজুয়েলা নয়। ফলে অনেকের মতে, এর পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রকৃত লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল নিয়ন্ত্রণ এবং নিকোলাস মাদুরোকে ক্ষমতা থেকে সরানো।
মিলার কী বলেছেন
গতকাল বুধবার এক্সে দেওয়া পোস্টে স্টিফেন মিলার লেখেন, ‘আমেরিকার শ্রম, মেধা ও পরিশ্রমই ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প সৃষ্টি করেছে। এই শিল্প জোরপূর্বক রাষ্ট্রায়ত্ত করা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ ও সম্পত্তির ইতিহাসের সবচেয়ে বড় চুরি। আর সেই লুণ্ঠিত সম্পদ সন্ত্রাসবাদে অর্থ জোগাতে এবং আমাদের দেশের রাস্তায় খুনি, ভাড়াটে যোদ্ধা ও মাদক ছড়িয়ে দিতে ব্যবহৃত হয়েছে।’
মিলার তাঁর পোস্টে ট্রাম্পের আগের একটি বক্তব্যও যুক্ত করেন, যেখানে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের তেল, ভূমি ও অন্যান্য সম্পদ ‘চুরি’ করার অভিযোগ তোলেন। ওই পোস্টে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার সরকারকে ‘বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন’ ঘোষণা করেন এবং দেশটির তেল ট্যাংকারগুলোর ওপর সম্পূর্ণ অবরোধের নির্দেশ দেন।
মিলার আরও বলেন, ভেনেজুয়েলা থেকে আসা অভিবাসীদের দ্রুত যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠানো হবে এবং সব ‘চুরি হওয়া সম্পদ’ অবিলম্বে যুক্তরাষ্ট্রকে ফিরিয়ে দিতে হবে।
ভেনেজুয়েলায় কী পরিমাণ তেল রয়েছে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলেই বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
২০২৩ সালের হিসাবে ভেনেজুয়েলার তেল মজুতের পরিমাণ প্রায় ৩০৩ বিলিয়ন ব্যারেল—যা বিশ্বে সর্বাধিক। তবে উৎপাদন ও রপ্তানি কমে যাওয়ায় দেশটি এখন তেল থেকে আগের মতো আয় করতে পারছে না।
অবজারভেটরি অব ইকোনমিক কমপ্লেক্সের (ওইসি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ভেনেজুয়েলার অপরিশোধিত তেল রপ্তানির মূল্য ছিল মাত্র ৪ দশমিক শূন্য ৫ বিলিয়ন ডলার। একই সময়ে সৌদি আরব রপ্তানি করেছে ১৮১ বিলিয়ন ডলার, যুক্তরাষ্ট্র ১২৫ বিলিয়ন ডলার ও রাশিয়া ১২২ বিলিয়ন ডলার।
যুক্তরাষ্ট্র কেন ভেনেজুয়েলার তেলের ওপর দাবি করছে
২০ শতকের শুরুর দিকে ভেনেজুয়েলায় তেল অনুসন্ধান শুরু করে মার্কিন কোম্পানিগুলো। ১৯২২ সালে ভেনেজুয়েলার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের মারাকাইবো হ্রদ এলাকায় প্রথম বড় তেলক্ষেত্র আবিষ্কার করে রয়্যাল ডাচ শেল।
এরপর যুক্তরাষ্ট্র ভেনেজুয়েলার তেল উত্তোলন ও উন্নয়নে বড় ধরনের বিনিয়োগ শুরু করে। স্ট্যান্ডার্ড অয়েলের মতো কোম্পানিগুলো চুক্তিভিত্তিকভাবে কাজ করে ভেনেজুয়েলাকে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ তেল সরবরাহকারীতে পরিণত করে।
১৯৬০ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর ওপেক গঠনের সময় ভেনেজুয়েলা ছিল এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। তবে ১৯৭৬ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট কার্লোস আন্দ্রেস পেরেজ তেলশিল্প রাষ্ট্রায়ত্ত করেন এবং পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলা (পিডিভিএসএ) প্রতিষ্ঠা করেন।
পরে হুগো শাভেজ ক্ষমতায় এসে সব বিদেশি তেলসম্পদ জাতীয়করণ করেন। কিন্তু রাজনৈতিক লক্ষ্যকে অগ্রাধিকার দেওয়া, অব্যবস্থাপনা ও বিনিয়োগের অভাবে তেল উৎপাদন ক্রমেই কমতে থাকে।
কবে থেকে নিষেধাজ্ঞা
২০০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র প্রথম ভেনেজুয়েলার তেলশিল্পের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। পরে নিকোলাস মাদুরোর শাসনামলে ২০১৭ ও ২০১৯ সালে নিষেধাজ্ঞা আরও কঠোর করা হয়। এই নিষেধাজ্ঞার ফলে ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি প্রায় বন্ধ হয়ে যায় এবং দেশটি চীন, ভারত ও কিউবার দিকে ঝুঁকে পড়ে।
ভেনেজুয়েলার তেল আমাদের সম্পদ—যুক্তরাষ্ট্রের এমন দাবির কি কোনো আইনি ভিত্তি আছে
না, নেই। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র তার ভূখণ্ডের প্রাকৃতিক সম্পদের মালিক। এই নীতির নাম ‘স্থায়ী প্রাকৃতিক সম্পদে সার্বভৌম অধিকার’ (Permanent Sovereignty over Natural Resources)।
১৯৬২ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের একটি প্রস্তাবে এই নীতি স্বীকৃতি পায়। সে অনুযায়ী, ভেনেজুয়েলার তেল সম্পূর্ণভাবে ভেনেজুয়েলারই। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে এ তেলের ওপর দাবি জানানো আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী।
তাহলে শেভরন কেন কাজ করছে
যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও হিউস্টনভিত্তিক তেল কোম্পানি শেভরন ভেনেজুয়েলায় কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। সাধারণত বিদেশি কোম্পানিগুলো ভেনেজুয়েলায় সরাসরি তেলক্ষেত্রের মালিক হতে পারে না। যুক্তরাষ্ট্রের শেভরন পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলার (পিডিভিএসএ) সঙ্গে যৌথভাবে তেল উৎপাদন করে এবং উৎপাদিত তেলের একটি অংশ পায়।
২০২২ সালে জো বাইডেন প্রশাসন শেভরনকে বিশেষ লাইসেন্স দেয়, যাতে তারা নিষেধাজ্ঞার বাইরে থেকে কাজ করতে পারে। চলতি বছর ট্রাম্প প্রশাসন সেই নিষেধাজ্ঞা ছাড় নবায়ন করেছে।
শেভরন দীর্ঘদিন ধরে ভেনেজুয়েলায় কার্যক্রম চালাচ্ছে এবং সেখানে তাদের বিপুল সম্পদ রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি সরে গেলে সেই সম্পদ রাষ্ট্রের হাতে চলে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে—যা অতীতে এক্সন, কারগিল ও হিলটনের মতো কোম্পানির ক্ষেত্রে ঘটেছে।
ট্রাম্প প্রশাসন মূলত ঐতিহাসিকভাবে মার্কিন কোম্পানিগুলোর করা বিনিয়োগ ও পরে তা বাজেয়াপ্ত হওয়াকে কেন্দ্র করে এই ‘মালিকানা’ দাবি করছে। তবে বর্তমান বিশ্বব্যবস্থায় ও আন্তর্জাতিক আইনে কোনো দেশের সম্পদ অন্য দেশের মালিকানাধীন হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এটি মূলত ভেনেজুয়েলায় শাসনব্যবস্থা পরিবর্তন ও তেলের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার একটি ভূরাজনৈতিক কৌশল।
আল-জাজিরা থেকে অনুবাদ করেছেন জগৎপতি বর্মা

ভারতের শীর্ষস্থানীয় কূটনীতিক ও নিরাপত্তা কর্মকর্তারা কৌশল পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছেন। তাঁরা বলছেন, ভারত অত্যধিক কঠোরহস্ত হয়ে উঠেছে, চীন যেভাবে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে বিরোধী দল ও নাগরিক সমাজের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলতে ব্যর্থ হয়েছে বা সাধারণ মূল্যবোধ ও পরিচয়ের অনুভূতি প্রচারে সফল হয়নি, ভারতের
২৯ মার্চ ২০২৫
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
৩ দিন আগে
নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে।
৬ দিন আগে
ইমরান খানকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে।
১০ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে। সোভিয়েত আমলের পরিত্যক্ত সমরাস্ত্রের ভান্ডার থেকে শুরু করে আজকের আধুনিক ড্রোনের যুদ্ধক্ষেত্র—এই তিন দশকে ইউক্রেন ও চীনের সম্পর্ক এক অদ্ভুত ও জটিল আবর্তে ঘুরপাক খেয়েছে।
ইউক্রেনের সমরাস্ত্র ইতিহাসের এক অনন্য অধ্যায় হলো ১৯৯৮ সালে চীনের কাছে সোভিয়েত আমলের ‘ভারিয়াগ’ রণতরি বিক্রি। ইউক্রেনের মাইকোলাইভ বন্দরে পড়ে থাকা এই বিশাল জাহাজটি বেইজিং কিনেছিল মাত্র ২০ মিলিয়ন ডলারে। অবশ্য আজকের একটি আধুনিক যুদ্ধজাহাজের মূল্যের তুলনায় এটি অতি নগণ্য। বেইজিং তখন দাবি করেছিল, জাহাজটি একটি ভাসমান ক্যাসিনো ও পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হবে। কিন্তু কয়েক বছর পরই বিশ্ববাসী অবাক হয়ে দেখল, সেই পরিত্যক্ত ভারিয়াগই রূপান্তরিত হয়েছে চীনের প্রথম শক্তিশালী বিমানবাহী রণতরিতে, নাম তার ‘লিয়াওনিং’।
শুধু রণতরিই নয়, চীনের আধুনিক প্রতিরক্ষা শিল্পকে গড়ে তুলতে কিয়েভের কারিগরি সহায়তা ছিল অভাবনীয়। ইউক্রেন থেকে চীনে পাড়ি জমিয়েছে আরও অনেক প্রযুক্তি। এর মধ্যে রয়েছে: হেলিকপ্টার এবং শক্তিশালী ট্যাংক ইঞ্জিনের নকশা ও উৎপাদন প্রযুক্তি; চীনের নৌবাহিনীর গ্যাস টারবাইন এবং বিমানবিধ্বংসী রাডার ব্যবস্থার মূল কারিগরি জ্ঞান।
ইউক্রেন স্বীকার করেছে যে তারা একসময় অবৈধভাবে পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম ছয়টি ‘কেএইচ-৫৫’ ক্রুজ মিসাইল বেইজিংয়ে পাঠিয়েছিল। এটি চীনের দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতাকে কয়েক দশক এগিয়ে দেয়।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের বর্তমান প্রেক্ষাপটে সম্পর্কের এই গতিপ্রকৃতি ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে গেছে। আজ ইউক্রেনীয় ড্রোন বিশেষজ্ঞরা সরাসরি স্বীকার করছেন, যুদ্ধের ভাগ্য এখন বেইজিংয়ের হাতে। কিয়েভের ড্রোন যুদ্ধের অগ্রপথিক আন্দ্রেই প্রোনিন আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘চীন চাইলে মাত্র এক দিনে এই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ বন্ধ করতে পারে। তারা শুধু আমাদের অথবা রুশদের কাছে ড্রোন যন্ত্রাংশ রপ্তানি বন্ধ করে দিলেই হলো।’
ইউক্রেনের আকাশে আজ যে লাখ লাখ ড্রোন উড়ছে, তার প্রতিটি উপাদানে চীনের ছাপ রয়েছে। ড্রোনের ফ্রেম, মোটর, ফ্লাইট কন্ট্রোলার, লিথিয়াম ব্যাটারি এবং নেভিগেশন মডিউল—সবই মূলত চীনা কারখানায় তৈরি।
‘স্নেক আইল্যান্ড’ নামক একটি সামরিক গবেষণা সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইউক্রেনীয় ড্রোন শিল্প এখন পুরোপুরি চীনা আমদানির ওপর নির্ভরশীল। বিশেষ করে নিওডিয়ামিয়াম ম্যাগনেট এবং থার্মাল সেন্সরের মতো জটিল কাঁচামালের ক্ষেত্রে চীনের একচেটিয়া প্রভাব কিয়েভকে এক কঠিন রাজনৈতিক চাপে রেখেছে।
ইউক্রেনীয় নীতিনির্ধারকেরা মনে করেন, যুদ্ধের পর ধ্বংসস্তূপ থেকে দেশ পুনর্গঠনে চীনই হতে পারে সবচেয়ে বড় কৌশলগত অংশীদার। ২০১১ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ভিক্তর ইয়ানুকোভিচের আমলে চীনের সঙ্গে যে ‘কৌশলগত অংশীদারি’ শুরু হয়েছিল, কিয়েভ এখন তার আধুনিক সংস্করণ চাচ্ছে।
এ ছাড়া চীনের উচ্চাভিলাষী বেল্ট অ্যান্ড রোড (বিআরআই) প্রকল্পের জন্য ইউক্রেনের ভৌগোলিক অবস্থান অত্যন্ত আকর্ষণীয়। ইউক্রেনকে উত্তর-পূর্ব চীন থেকে কাজাখস্তান ও ককেশাস হয়ে ইউরোপে পৌঁছানোর প্রধান লজিস্টিক হাব বা ‘সেতুবন্ধনকারী দেশ’ হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে বেইজিংয়ের।
তবে বিশ্লেষক ইগার তিশকেভিচের মতে, চীনকে ইউরোপীয় বাজারে উন্নততর প্রবেশের সুযোগ দিতে ইউক্রেনকে তার সোভিয়েত আমলের চওড়া রেললাইন বদলে পশ্চিমা মানদণ্ডের ন্যারো গেজ ট্র্যাকে রূপান্তর করতে হবে।
যুদ্ধের মধ্যেও চীন এখনো ইউক্রেনীয় ইস্পাত, ভোজ্যতেল এবং সয়াবিনের প্রধান ক্রেতা। এই বাণিজ্যই বর্তমানে ইউক্রেনের যুদ্ধবিধ্বস্ত অর্থনীতিকে কোনোমতে সচল রেখেছে।
বিশ্লেষক অ্যালেক্সি কুশের মতে, চীনের সঙ্গে সম্পর্ক পুনরুদ্ধার করতে ব্যর্থ হওয়া ইউক্রেনের জন্য একটি ঐতিহাসিক ভুল হতে পারে। তিনি মনে করেন, ইউক্রেনের কূটনীতি কেবল পশ্চিমমুখী হলে চলবে না, বরং চীনসহ পুরো ‘গ্লোবাল সাউথ’-এর সঙ্গে সম্পর্কের ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। সমরাস্ত্রের গোপন অতীত এবং ড্রোনের অনিশ্চিত বর্তমানকে পেছনে ফেলে, কিয়েভ এখন এমন এক ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখছে, যেখানে ইউক্রেন হবে পূর্ব ও পশ্চিমের বাণিজ্যিক মিলনস্থল—যেখানে সীমান্ত দিয়ে বিদেশি সৈন্য নয়, বরং পণ্যবাহী জাহাজ ও ট্রেন চলাচল করবে।

নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে। সোভিয়েত আমলের পরিত্যক্ত সমরাস্ত্রের ভান্ডার থেকে শুরু করে আজকের আধুনিক ড্রোনের যুদ্ধক্ষেত্র—এই তিন দশকে ইউক্রেন ও চীনের সম্পর্ক এক অদ্ভুত ও জটিল আবর্তে ঘুরপাক খেয়েছে।
ইউক্রেনের সমরাস্ত্র ইতিহাসের এক অনন্য অধ্যায় হলো ১৯৯৮ সালে চীনের কাছে সোভিয়েত আমলের ‘ভারিয়াগ’ রণতরি বিক্রি। ইউক্রেনের মাইকোলাইভ বন্দরে পড়ে থাকা এই বিশাল জাহাজটি বেইজিং কিনেছিল মাত্র ২০ মিলিয়ন ডলারে। অবশ্য আজকের একটি আধুনিক যুদ্ধজাহাজের মূল্যের তুলনায় এটি অতি নগণ্য। বেইজিং তখন দাবি করেছিল, জাহাজটি একটি ভাসমান ক্যাসিনো ও পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হবে। কিন্তু কয়েক বছর পরই বিশ্ববাসী অবাক হয়ে দেখল, সেই পরিত্যক্ত ভারিয়াগই রূপান্তরিত হয়েছে চীনের প্রথম শক্তিশালী বিমানবাহী রণতরিতে, নাম তার ‘লিয়াওনিং’।
শুধু রণতরিই নয়, চীনের আধুনিক প্রতিরক্ষা শিল্পকে গড়ে তুলতে কিয়েভের কারিগরি সহায়তা ছিল অভাবনীয়। ইউক্রেন থেকে চীনে পাড়ি জমিয়েছে আরও অনেক প্রযুক্তি। এর মধ্যে রয়েছে: হেলিকপ্টার এবং শক্তিশালী ট্যাংক ইঞ্জিনের নকশা ও উৎপাদন প্রযুক্তি; চীনের নৌবাহিনীর গ্যাস টারবাইন এবং বিমানবিধ্বংসী রাডার ব্যবস্থার মূল কারিগরি জ্ঞান।
ইউক্রেন স্বীকার করেছে যে তারা একসময় অবৈধভাবে পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম ছয়টি ‘কেএইচ-৫৫’ ক্রুজ মিসাইল বেইজিংয়ে পাঠিয়েছিল। এটি চীনের দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতাকে কয়েক দশক এগিয়ে দেয়।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের বর্তমান প্রেক্ষাপটে সম্পর্কের এই গতিপ্রকৃতি ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে গেছে। আজ ইউক্রেনীয় ড্রোন বিশেষজ্ঞরা সরাসরি স্বীকার করছেন, যুদ্ধের ভাগ্য এখন বেইজিংয়ের হাতে। কিয়েভের ড্রোন যুদ্ধের অগ্রপথিক আন্দ্রেই প্রোনিন আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘চীন চাইলে মাত্র এক দিনে এই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ বন্ধ করতে পারে। তারা শুধু আমাদের অথবা রুশদের কাছে ড্রোন যন্ত্রাংশ রপ্তানি বন্ধ করে দিলেই হলো।’
ইউক্রেনের আকাশে আজ যে লাখ লাখ ড্রোন উড়ছে, তার প্রতিটি উপাদানে চীনের ছাপ রয়েছে। ড্রোনের ফ্রেম, মোটর, ফ্লাইট কন্ট্রোলার, লিথিয়াম ব্যাটারি এবং নেভিগেশন মডিউল—সবই মূলত চীনা কারখানায় তৈরি।
‘স্নেক আইল্যান্ড’ নামক একটি সামরিক গবেষণা সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইউক্রেনীয় ড্রোন শিল্প এখন পুরোপুরি চীনা আমদানির ওপর নির্ভরশীল। বিশেষ করে নিওডিয়ামিয়াম ম্যাগনেট এবং থার্মাল সেন্সরের মতো জটিল কাঁচামালের ক্ষেত্রে চীনের একচেটিয়া প্রভাব কিয়েভকে এক কঠিন রাজনৈতিক চাপে রেখেছে।
ইউক্রেনীয় নীতিনির্ধারকেরা মনে করেন, যুদ্ধের পর ধ্বংসস্তূপ থেকে দেশ পুনর্গঠনে চীনই হতে পারে সবচেয়ে বড় কৌশলগত অংশীদার। ২০১১ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ভিক্তর ইয়ানুকোভিচের আমলে চীনের সঙ্গে যে ‘কৌশলগত অংশীদারি’ শুরু হয়েছিল, কিয়েভ এখন তার আধুনিক সংস্করণ চাচ্ছে।
এ ছাড়া চীনের উচ্চাভিলাষী বেল্ট অ্যান্ড রোড (বিআরআই) প্রকল্পের জন্য ইউক্রেনের ভৌগোলিক অবস্থান অত্যন্ত আকর্ষণীয়। ইউক্রেনকে উত্তর-পূর্ব চীন থেকে কাজাখস্তান ও ককেশাস হয়ে ইউরোপে পৌঁছানোর প্রধান লজিস্টিক হাব বা ‘সেতুবন্ধনকারী দেশ’ হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে বেইজিংয়ের।
তবে বিশ্লেষক ইগার তিশকেভিচের মতে, চীনকে ইউরোপীয় বাজারে উন্নততর প্রবেশের সুযোগ দিতে ইউক্রেনকে তার সোভিয়েত আমলের চওড়া রেললাইন বদলে পশ্চিমা মানদণ্ডের ন্যারো গেজ ট্র্যাকে রূপান্তর করতে হবে।
যুদ্ধের মধ্যেও চীন এখনো ইউক্রেনীয় ইস্পাত, ভোজ্যতেল এবং সয়াবিনের প্রধান ক্রেতা। এই বাণিজ্যই বর্তমানে ইউক্রেনের যুদ্ধবিধ্বস্ত অর্থনীতিকে কোনোমতে সচল রেখেছে।
বিশ্লেষক অ্যালেক্সি কুশের মতে, চীনের সঙ্গে সম্পর্ক পুনরুদ্ধার করতে ব্যর্থ হওয়া ইউক্রেনের জন্য একটি ঐতিহাসিক ভুল হতে পারে। তিনি মনে করেন, ইউক্রেনের কূটনীতি কেবল পশ্চিমমুখী হলে চলবে না, বরং চীনসহ পুরো ‘গ্লোবাল সাউথ’-এর সঙ্গে সম্পর্কের ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। সমরাস্ত্রের গোপন অতীত এবং ড্রোনের অনিশ্চিত বর্তমানকে পেছনে ফেলে, কিয়েভ এখন এমন এক ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখছে, যেখানে ইউক্রেন হবে পূর্ব ও পশ্চিমের বাণিজ্যিক মিলনস্থল—যেখানে সীমান্ত দিয়ে বিদেশি সৈন্য নয়, বরং পণ্যবাহী জাহাজ ও ট্রেন চলাচল করবে।

ভারতের শীর্ষস্থানীয় কূটনীতিক ও নিরাপত্তা কর্মকর্তারা কৌশল পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছেন। তাঁরা বলছেন, ভারত অত্যধিক কঠোরহস্ত হয়ে উঠেছে, চীন যেভাবে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে বিরোধী দল ও নাগরিক সমাজের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলতে ব্যর্থ হয়েছে বা সাধারণ মূল্যবোধ ও পরিচয়ের অনুভূতি প্রচারে সফল হয়নি, ভারতের
২৯ মার্চ ২০২৫
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
৩ দিন আগে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
৬ দিন আগে
ইমরান খানকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে।
১০ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

চার বছর আগে যিনি ছিলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী, সেই ইমরান খান আজ নিজ দেশেই ধুঁকে ধুঁকে মরছেন। ৭৩ বছর বয়সী এই ক্রিকেট কিংবদন্তি বর্তমানে রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা কারাগারে বন্দী। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, তাঁকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে। ইমরান খানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘এটা মানসিক নির্যাতন। তাঁকে মানসিকভাবে দুর্বল করতেই এসব করা হচ্ছে। কিন্তু আমার বাবা শক্ত মানুষ।’
ইমরান খানের প্রথম স্ত্রী জেমিমা গোল্ডস্মিথের দুই ছেলে কাসিম ও সুলাইমান। গত আড়াই বছর ধরে তাঁরা এক দুঃস্বপ্নের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। চলতি সপ্তাহে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার নেয়। সেনাপ্রধান আসিম মুনিরকে নিয়ে ইমরান খানের নির্দেশনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি পোস্ট দেওয়া হয়েছিল। এরপরই সরকার কারাগারে থাকা ইমরান খানের সব সুযোগ-সুবিধা বন্ধ করে দেয়। দুর্নীতির মামলায় দেওয়া ১৪ বছরের সাজার সঙ্গে যুক্ত হতে থাকে একের পর এক নতুন মামলা। ইমরানের পরিবারের আশঙ্কা—এই সংকট সমাধানের কোনো সহজ পথ নেই।
কাসিম বলেন, ‘বাবার বিরুদ্ধে ২০০টির বেশি মামলা আছে। একটি মামলা বাতিল হলে সঙ্গে সঙ্গে দু-তিনটি নতুন মামলা দেওয়া হয়। এটা শুধু সময়ক্ষেপণের কৌশল।’
কারাগারের পরিস্থিতিও ভয়াবহ। সুলাইমান বলেন, ‘বাবাকে যে ছোট কক্ষে রাখা হয়েছে, সেটিকে “ডেথ সেল” বলা হয়। এখানে সাধারণত মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের রাখা হয়। ওই বেশির ভাগ সময়ই বিদ্যুৎ থাকে না। দেওয়া হয় না বই বা পড়ার কোনো উপকরণ।’
কাসিমের ভাষায়, ‘যে পানিতে তিনি গোসল করেন, সেটি খুবই নোংরা। ওই কারাগারে অন্তত এক ডজন বন্দী হেপাটাইটিসে মারা গেছে, আর তাঁরা সবাই ছিলেন পিটিআইয়ের সমর্থক।’
তবে কারা কর্তৃপক্ষ বলছে, সংক্রামক রোগে আক্রান্ত বন্দীদের আলাদা রাখা হয়।
জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিবেদক অ্যালিস জিল এডওয়ার্ডসের এক প্রতিবেদনে ইমরান খানের সেলের চিত্র আরও ভয়াবহভাবে উঠে এসেছে। সেখানে বলা হয়েছে, কক্ষটি ছোট, বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা নেই বললেই চলে, প্রাকৃতিক আলোর অভাব রয়েছে এবং চরম তাপমাত্রা ও পোকামাকড়ের উপদ্রবজনিত কারণে তিনি বমি বমি ভাব এবং ওজন হ্রাসের শিকার হচ্ছেন।

কিন্তু ইমরানের খানের মতো একজন মানুষের জীবনে এই পরিস্থিতি কীভাবে তৈরি হলো
পাকিস্তানের ইতিহাসে ইমরান খান শুধু একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীই নন, তিনি ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার। ১৯৯২ সালে তাঁর নেতৃত্বেই পাকিস্তান একমাত্র ওয়ানডে বিশ্বকাপ জেতে। সেই আসরে খেলোয়াড়দের তিনি বলেছিলেন, ‘কোণঠাসা বাঘের মতো লড়ো।’ প্রতীক হিসেবে বাঘ আঁকা টি-শার্টও পরেছিলেন তিনি।
মাঠের বাইরে ইমরান খানের জীবনও ছিল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। নব্বইয়ের দশকে লন্ডনের ট্রাম্পস নাইটক্লাব থেকে শুরু করে গসিপ কলাম—সবখানেই ছিল তাঁর উপস্থিতি। মডেল মারি হেলভিন একবার বলেছিলেন, ‘ইমরানের মতো বিধ্বংসী পুরুষ আর কেউ ছিলেন না।’

১৯৯৫ সালে ২১ বছর বয়সী জেমিমা গোল্ডস্মিথকে বিয়ে করেন ইমরান খান। বয়স ও সংস্কৃতিগত পার্থক্য নিয়ে সমালোচনা থাকলেও জেমিমা তখন বলেছিলেন, ‘আমার জন্য ইমরান পাশ্চাত্যের রাতজাগা ও মদের জীবন ছেড়ে দিতে প্রস্তুত।’
এরপর ২০০৪ সালে তাঁদের বিচ্ছেদ হয়। তবে বিচ্ছেদ হলেও, বন্দী ইমরান খানের জন্য জেমিমার উদ্বেগ আজও রয়ে গেছে। সম্প্রতি তিনি ইলন মাস্ককে চিঠি দিয়ে অভিযোগ করেছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স ইমরান খান-সংক্রান্ত পোস্ট গোপনে সীমিত করছে।
ইমরানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে আমরা বাবার সংস্পর্শে বড় হয়েছি। এখন বাবা নেই, এটা আমাদের জন্য খুব কষ্টের। আমাদের মায়ের জন্যও এটা কষ্টের।’

দুই ভাই আশা করছেন, এ বিষয়গুলো সামনে আনলে আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যাবে। কিন্তু আসলেই কি ইমরান খানের বিষয়টি আন্তর্জাতিক মহলের নজরে আসবে? এমন প্রশ্ন অবান্তর নয়। কারণ, প্রায় আড়াই বছর থেকে কারাগারে থাকলেও কেউ ইমরান খানের খোঁজ নেয়নি।
অ্যাশেজের মতো বড় আয়োজন চললেও, ক্রিকেট বিশ্ব থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ নেই। আইসিসি হল অব ফেমে জায়গা পেয়েছেন ইমরান খান, কিন্তু সেখানেও নীরবতা। তবে অনেকেই মনে করেন, কথা বললে সরকার আরও কঠোর হতে পারে। ইমরানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘প্রতিবার আমরা কিছু বললে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়।’
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, গত ৫০ বছরে পাকিস্তানের প্রতিটি প্রধানমন্ত্রীকেই কারাবরণ করতে হয়েছে। চ্যাথাম হাউসের গবেষক ফারজানা শেখ মনে করেন, ইমরান খানের সামনে বর্তমানে দুটি পথ—হয় লন্ডনে নির্বাসন অথবা পাকিস্তানে গৃহবন্দিত্ব।
কিন্তু তাঁর ছেলেরা বলছেন, দুটোই অগ্রহণযোগ্য। কাসিমের মতে, ‘লন্ডনে গেলে বাবা মানসিকভাবে ভেঙে পড়বেন।’ আর সুলাইমান বলেন, ‘গৃহবন্দিত্ব মানে রাজনীতি থেকে নির্বাসন—বাবা সেটা মানবেন না।’
ওয়াশিংটনে গিয়ে মার্কিন কংগ্রেস সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেও তেমন অগ্রগতি হয়নি। সুলাইমান বলেন, ‘সেনাপ্রধান ও ট্রাম্পের সম্পর্ক এখন ভালো। ফলে আমাদের আশার জায়গা কম।’
শেষ বিকল্প হিসেবে পাকিস্তানে যাওয়ার কথাও ভাবছেন তাঁরা। কিন্তু সেটিও ঝুঁকিপূর্ণ। কাসিম বলেন, ‘পাকিস্তানে যাওয়ার পর আমাদের গ্রেপ্তার করা হলে হয়তো সেটাই বাবাকে কোনো সমঝোতায় যেতে বাধ্য করবে। কিন্তু আমরা এ রকম কিছু করতে চাই না। সবচেয়ে ভয়াবহ আশঙ্কা—তিনি ৭৩ বছরের একজন মানুষ। আমরা কি আর কখনো তাঁকে দেখতে পাব?’
ব্রিটিশ দৈনিক দ্য টেলিগ্রাফ থেকে অনূদিত

চার বছর আগে যিনি ছিলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী, সেই ইমরান খান আজ নিজ দেশেই ধুঁকে ধুঁকে মরছেন। ৭৩ বছর বয়সী এই ক্রিকেট কিংবদন্তি বর্তমানে রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা কারাগারে বন্দী। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, তাঁকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে। ইমরান খানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘এটা মানসিক নির্যাতন। তাঁকে মানসিকভাবে দুর্বল করতেই এসব করা হচ্ছে। কিন্তু আমার বাবা শক্ত মানুষ।’
ইমরান খানের প্রথম স্ত্রী জেমিমা গোল্ডস্মিথের দুই ছেলে কাসিম ও সুলাইমান। গত আড়াই বছর ধরে তাঁরা এক দুঃস্বপ্নের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। চলতি সপ্তাহে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার নেয়। সেনাপ্রধান আসিম মুনিরকে নিয়ে ইমরান খানের নির্দেশনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি পোস্ট দেওয়া হয়েছিল। এরপরই সরকার কারাগারে থাকা ইমরান খানের সব সুযোগ-সুবিধা বন্ধ করে দেয়। দুর্নীতির মামলায় দেওয়া ১৪ বছরের সাজার সঙ্গে যুক্ত হতে থাকে একের পর এক নতুন মামলা। ইমরানের পরিবারের আশঙ্কা—এই সংকট সমাধানের কোনো সহজ পথ নেই।
কাসিম বলেন, ‘বাবার বিরুদ্ধে ২০০টির বেশি মামলা আছে। একটি মামলা বাতিল হলে সঙ্গে সঙ্গে দু-তিনটি নতুন মামলা দেওয়া হয়। এটা শুধু সময়ক্ষেপণের কৌশল।’
কারাগারের পরিস্থিতিও ভয়াবহ। সুলাইমান বলেন, ‘বাবাকে যে ছোট কক্ষে রাখা হয়েছে, সেটিকে “ডেথ সেল” বলা হয়। এখানে সাধারণত মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের রাখা হয়। ওই বেশির ভাগ সময়ই বিদ্যুৎ থাকে না। দেওয়া হয় না বই বা পড়ার কোনো উপকরণ।’
কাসিমের ভাষায়, ‘যে পানিতে তিনি গোসল করেন, সেটি খুবই নোংরা। ওই কারাগারে অন্তত এক ডজন বন্দী হেপাটাইটিসে মারা গেছে, আর তাঁরা সবাই ছিলেন পিটিআইয়ের সমর্থক।’
তবে কারা কর্তৃপক্ষ বলছে, সংক্রামক রোগে আক্রান্ত বন্দীদের আলাদা রাখা হয়।
জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিবেদক অ্যালিস জিল এডওয়ার্ডসের এক প্রতিবেদনে ইমরান খানের সেলের চিত্র আরও ভয়াবহভাবে উঠে এসেছে। সেখানে বলা হয়েছে, কক্ষটি ছোট, বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা নেই বললেই চলে, প্রাকৃতিক আলোর অভাব রয়েছে এবং চরম তাপমাত্রা ও পোকামাকড়ের উপদ্রবজনিত কারণে তিনি বমি বমি ভাব এবং ওজন হ্রাসের শিকার হচ্ছেন।

কিন্তু ইমরানের খানের মতো একজন মানুষের জীবনে এই পরিস্থিতি কীভাবে তৈরি হলো
পাকিস্তানের ইতিহাসে ইমরান খান শুধু একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীই নন, তিনি ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার। ১৯৯২ সালে তাঁর নেতৃত্বেই পাকিস্তান একমাত্র ওয়ানডে বিশ্বকাপ জেতে। সেই আসরে খেলোয়াড়দের তিনি বলেছিলেন, ‘কোণঠাসা বাঘের মতো লড়ো।’ প্রতীক হিসেবে বাঘ আঁকা টি-শার্টও পরেছিলেন তিনি।
মাঠের বাইরে ইমরান খানের জীবনও ছিল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। নব্বইয়ের দশকে লন্ডনের ট্রাম্পস নাইটক্লাব থেকে শুরু করে গসিপ কলাম—সবখানেই ছিল তাঁর উপস্থিতি। মডেল মারি হেলভিন একবার বলেছিলেন, ‘ইমরানের মতো বিধ্বংসী পুরুষ আর কেউ ছিলেন না।’

১৯৯৫ সালে ২১ বছর বয়সী জেমিমা গোল্ডস্মিথকে বিয়ে করেন ইমরান খান। বয়স ও সংস্কৃতিগত পার্থক্য নিয়ে সমালোচনা থাকলেও জেমিমা তখন বলেছিলেন, ‘আমার জন্য ইমরান পাশ্চাত্যের রাতজাগা ও মদের জীবন ছেড়ে দিতে প্রস্তুত।’
এরপর ২০০৪ সালে তাঁদের বিচ্ছেদ হয়। তবে বিচ্ছেদ হলেও, বন্দী ইমরান খানের জন্য জেমিমার উদ্বেগ আজও রয়ে গেছে। সম্প্রতি তিনি ইলন মাস্ককে চিঠি দিয়ে অভিযোগ করেছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স ইমরান খান-সংক্রান্ত পোস্ট গোপনে সীমিত করছে।
ইমরানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে আমরা বাবার সংস্পর্শে বড় হয়েছি। এখন বাবা নেই, এটা আমাদের জন্য খুব কষ্টের। আমাদের মায়ের জন্যও এটা কষ্টের।’

দুই ভাই আশা করছেন, এ বিষয়গুলো সামনে আনলে আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যাবে। কিন্তু আসলেই কি ইমরান খানের বিষয়টি আন্তর্জাতিক মহলের নজরে আসবে? এমন প্রশ্ন অবান্তর নয়। কারণ, প্রায় আড়াই বছর থেকে কারাগারে থাকলেও কেউ ইমরান খানের খোঁজ নেয়নি।
অ্যাশেজের মতো বড় আয়োজন চললেও, ক্রিকেট বিশ্ব থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ নেই। আইসিসি হল অব ফেমে জায়গা পেয়েছেন ইমরান খান, কিন্তু সেখানেও নীরবতা। তবে অনেকেই মনে করেন, কথা বললে সরকার আরও কঠোর হতে পারে। ইমরানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘প্রতিবার আমরা কিছু বললে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়।’
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, গত ৫০ বছরে পাকিস্তানের প্রতিটি প্রধানমন্ত্রীকেই কারাবরণ করতে হয়েছে। চ্যাথাম হাউসের গবেষক ফারজানা শেখ মনে করেন, ইমরান খানের সামনে বর্তমানে দুটি পথ—হয় লন্ডনে নির্বাসন অথবা পাকিস্তানে গৃহবন্দিত্ব।
কিন্তু তাঁর ছেলেরা বলছেন, দুটোই অগ্রহণযোগ্য। কাসিমের মতে, ‘লন্ডনে গেলে বাবা মানসিকভাবে ভেঙে পড়বেন।’ আর সুলাইমান বলেন, ‘গৃহবন্দিত্ব মানে রাজনীতি থেকে নির্বাসন—বাবা সেটা মানবেন না।’
ওয়াশিংটনে গিয়ে মার্কিন কংগ্রেস সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেও তেমন অগ্রগতি হয়নি। সুলাইমান বলেন, ‘সেনাপ্রধান ও ট্রাম্পের সম্পর্ক এখন ভালো। ফলে আমাদের আশার জায়গা কম।’
শেষ বিকল্প হিসেবে পাকিস্তানে যাওয়ার কথাও ভাবছেন তাঁরা। কিন্তু সেটিও ঝুঁকিপূর্ণ। কাসিম বলেন, ‘পাকিস্তানে যাওয়ার পর আমাদের গ্রেপ্তার করা হলে হয়তো সেটাই বাবাকে কোনো সমঝোতায় যেতে বাধ্য করবে। কিন্তু আমরা এ রকম কিছু করতে চাই না। সবচেয়ে ভয়াবহ আশঙ্কা—তিনি ৭৩ বছরের একজন মানুষ। আমরা কি আর কখনো তাঁকে দেখতে পাব?’
ব্রিটিশ দৈনিক দ্য টেলিগ্রাফ থেকে অনূদিত

ভারতের শীর্ষস্থানীয় কূটনীতিক ও নিরাপত্তা কর্মকর্তারা কৌশল পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছেন। তাঁরা বলছেন, ভারত অত্যধিক কঠোরহস্ত হয়ে উঠেছে, চীন যেভাবে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে বিরোধী দল ও নাগরিক সমাজের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলতে ব্যর্থ হয়েছে বা সাধারণ মূল্যবোধ ও পরিচয়ের অনুভূতি প্রচারে সফল হয়নি, ভারতের
২৯ মার্চ ২০২৫
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
৩ দিন আগে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
৬ দিন আগে
নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে।
৬ দিন আগে