আজকের পত্রিকা ডেস্ক

শ্রীলঙ্কার রাজধানী কলম্বোর বন্দরের পাইলট’স টাওয়ার থেকে দক্ষিণ এশিয়ায় চীন-ভারতের লড়াইয়ের স্পষ্ট চিত্র ধরা পড়ে। বন্দরের পূর্ব দিকের জেটিতে প্রায়ই ভারতীয় ও চীনা যুদ্ধজাহাজ নোঙর করে। দক্ষিণে চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড পরিকল্পনার প্রাথমিক প্রকল্পগুলোর একটি হলো কনটেইনার টার্মিনাল। এর পাশেই পশ্চিম দিকে ভারতীয় শিল্পগোষ্ঠী আদানি একটি নতুন টার্মিনাল নির্মাণের চুক্তি করেছে।
যখন আদানির টার্মিনাল নির্মাণ চুক্তির ঘোষণা দেওয়া হয়, তখন এটি সহযোগিতার এক অনন্য উদাহরণ হিসেবে প্রশংসিত হয়েছিল, যেটির উদ্দেশ্য ছিল এই অঞ্চলে চীনের প্রভাব মোকাবিলা করা। বাণিজ্য, অস্ত্র বিক্রি ও অবকাঠামো প্রকল্পের মাধ্যমে চীন ওই এলাকায় প্রভাব বিস্তারে তৎপর। পাল্টা জবাব দিচ্ছিল ভারতও। প্রতিবেশী দেশগুলোকে কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে সহায়তা দেওয়া এবং চীনা ঋণের কারণে সৃষ্ট দেনার বোঝা থেকে কিছুটা মুক্তি দেওয়ার মাধ্যমে। এমন পরিস্থিতিতে ২০২৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণাপ্রতিষ্ঠান র্যান্ড করপোরেশন লিখেছিল, ‘ভারত আর পিছিয়ে নেই, বরং বলা যেতে পারে, কৌশলগত প্রতিযোগিতায় চীনের বিরুদ্ধে জয়ের পথেই আছে।’
কিন্তু গত ১৮ মাসে মালদ্বীপ, নেপাল, বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কায় ভারতপন্থী নেতারা ক্ষমতা হারিয়েছেন। বিশেষ করে বাংলাদেশ ক্রমশ চীনের দিকে ঝুঁকছে। গত ফেব্রুয়ারিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ওয়াশিংটন সফরের অভিজ্ঞতাও ভালো নয়। সব মিলিয়ে ট্রাম্পকে দেখানোর মতো আঞ্চলিক সাফল্যের কোনো কিছু তাঁর ঝুলিতে ছিল না।
এদিকে এসব রাজনৈতিক পরিবর্তন এবং আদানি গ্রুপের চেয়ারম্যান গৌতম আদানির বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের ঘুষ কেলেঙ্কারির অভিযোগ (যা তিনি অস্বীকার করেছেন) ঘিরে কয়েকটি আঞ্চলিক আদানি প্রকল্প বিতর্কের মধ্যে পড়েছে। গত ১১ ডিসেম্বর প্রতিষ্ঠানটি জানায়, তারা কলম্বো বন্দরে প্রকল্পে আর মার্কিন ঋণ ব্যবহার করবে না।
এই দোদুল্যমানতার পেছনে আংশিক কারণ হলো, আঞ্চলিক নেতারাই এশিয়ার দুই পরাশক্তিকে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে নিজেদের সুবিধা হাসিল করতে চেয়েছেন। তবে এর জন্য ভারতের কূটনৈতিক দুর্বলতাও অনেকখানি দায়ী।
এসব দেশের সঙ্গে ভৌগোলিক ও সাংস্কৃতিক নৈকট্য থাকার পরও ভারত কেন পারছে না, তা এখন মিলিয়ন ডলার প্রশ্ন। তার ওপর, মোদি ২০১৪ সালে ‘সবার আগে প্রতিবেশী’ নীতি গ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু এর সুফল তো দৃশ্যমান নয়। ভারতের নিরাপত্তা ও কূটনৈতিক মহলে অনেকে আশঙ্কা করছেন, সুনির্দিষ্ট দৃষ্টিভঙ্গির অভাব ও সমন্বয়ের ঘাটতির কারণে চীনের আপাত-দুর্বলতার এই সময়েও সুযোগ হাতছাড়া করছে ভারত।
ভারতের এই দুর্বলতা আমেরিকা এবং অন্য অনেক দেশের জন্য উদ্বেগের বিষয়। কারণ, এই দেশগুলো চীনকে মোকাবিলায় ভারতের ওপর ভরসা করছে। বহু পশ্চিমা কর্মকর্তার আশঙ্কা, ভারতের আঞ্চলিক কূটনীতি অনেক সময় ‘বুমেরাং’ হয়ে যায় বা উল্টো তাদের স্বার্থের সঙ্গেই সংঘাত তৈরি করে। কেউ কেউ বলেন, ভারত চীনের পথেই হাঁটছে—স্বৈরশাসকদের সমর্থন দিচ্ছে, দ্ব্যর্থবোধক ব্যবসায়িক চুক্তি করছে এবং নিজ দেশে উগ্র জাতীয়তাবাদ উসকে দিচ্ছে। ডোনাল্ড ট্রাম্পের হোয়াইট হাউসে ফিরে আসাও ভারতের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে।
উদাহরণ হিসেবে দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় ‘সুইং স্টেট’ বাংলাদেশের কথাই ধরা যাক। (কারণ, পাকিস্তান বহু আগেই চীন শিবিরে ঢুকে পড়েছে।) ২০০৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ভারত বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একনিষ্ঠ সমর্থক ছিল এবং হাসিনার ক্রমবর্ধমান একনায়ক হয়ে ওঠার প্রবণতা দেখেও না দেখার ভান করেছে। এমনকি, বাংলাদেশে গণতন্ত্রের অবনতির বিষয়ে আমেরিকার সমালোচনা যেন নরম হয়, সে জন্য ভারতীয় কর্মকর্তারা তদবিরও করেছেন। তাঁদের যুক্তি ছিল, শেখ হাসিনা না থাকলে বাংলাদেশ কট্টর ইসলামপন্থীদের দখলে চলে যেতে পারে।
ক্ষণিকের জন্য ভারতের এই কৌশল কাজও করেছিল। বাণিজ্য, অবকাঠামো এবং নিরাপত্তাসংক্রান্ত ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের উন্নতি হয়েছিল। বাংলাদেশ চীনের সঙ্গে সম্পর্ক বাড়ালেও নিরাপত্তার বিষয়ে ভারতকে অগ্রাধিকার দিয়েছিল। এরপর ২০২৪ সালের আগস্টে ভারতের কৌশল ব্যর্থ হয়। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হয়ে ভারতে আশ্রয় নেন। এখন বাংলাদেশে ভারতবিরোধী মনোভাব তুঙ্গে; ভারতেও অনেকে বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর নির্যাতনের খবরে ক্ষুব্ধ।
অপরদিকে, বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের আওতায় চীন অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগ কিছুটা কমালেও, যেকোনো কৌশলগত সুযোগের সদ্ব্যবহার করছে এবং গত অক্টোবরে ভারতের সঙ্গে চার বছরের সীমান্ত উত্তেজনা সমাধান করেছে। চীন এরই মধ্যে বাংলাদেশকে ২ বিলিয়ন ডলার আর্থিক সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে এবং আরও ৫ বিলিয়ন ডলার সহায়তার আলোচনা চলছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন।
গত জানুয়ারিতে বেইজিং সফরকালে তৌহিদ হোসেন চীনের কাছে আরও সহায়তা চেয়েছেন। পাশাপাশি চীন বাংলাদেশকে শেখ হাসিনার আমলে দেওয়া কিছু ঋণের মেয়াদ বাড়িয়েছে। দুই পক্ষই অবকাঠামো প্রকল্পে প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছে এবং চীনের প্রস্তাবিত মোংলা বন্দর উন্নয়নের বিষয়ে আলোচনা করেছে।
এদিকে ড. ইউনূস চার দিনের চীন সফরে প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংসহ উচ্চপর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তা এবং বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। সেখান থেকে ঋণ, অনুদান ও বিনিয়োগের বিপরীতে ২ দশমিক ১ বিনিয়োগ ডলারের প্রতিশ্রুতি পেয়েছে বাংলাদেশ। পুরোনো ঋণগুলোর সুদ কমানোর ব্যাপারেও সম্মত হয়েছে চীন। মোংলা বন্দর উন্নয়নের বিষয়েও চূড়ান্ত আলোচনা হয়েছে।
ভারতের পক্ষ থেকেও শেখ হাসিনার অধীনে মোংলা বন্দরের জন্য দরপত্র দেওয়া হয়েছিল। এই উদ্যোগকে চীনের নিয়ন্ত্রণাধীন ভারত মহাসাগরের বন্দরগুলোর নেটওয়ার্কের (স্ট্রিং অব পার্ল) সঙ্গে সমন্বয় সাধনের প্রচেষ্টা হিসেবে দেখা হয়েছিল।
বাংলাদেশে হাসিনা সরকারের পতন কেবল ভারতীয় গোয়েন্দা-ব্যর্থতাই ছিল না, এটি অঞ্চলটির প্রতি ভারতের দৃষ্টিভঙ্গির ত্রুটিও প্রকাশ করে। যারা ভারতের নিরাপত্তা স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিয়েছে, কয়েক দশক ধরে দিল্লি শুধু তাদেরই সমর্থন করে গেছে। প্রধানমন্ত্রী মোদি এই নীতি আরও এগিয়ে নিয়ে গেছেন। তবে তিনি বেশি নির্ভর করেছেন অর্থনৈতিক শক্তির ওপর। উদার সহায়তার (যেমন, ২০২২ সালে দেউলিয়া হওয়ার পর শ্রীলঙ্কাকে ৪ বিলিয়ন ডলার সাহায্য) পাশাপাশি কঠোর শাস্তিও—যেমন ২০১৫ সালে নেপালের বিরুদ্ধে অনানুষ্ঠানিক অবরোধ—আরোপ করেছেন।
ভারতীয় কর্মকর্তারা বলছেন, তাঁদের পদক্ষেপ কাজে দিচ্ছে। তাঁরা শ্রীলঙ্কার নতুন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে যোগাযোগের নমুনা তুলে ধরছেন। যাঁর প্রথম বিদেশ সফর ছিল ভারতে, যদিও তাঁর বামপন্থী দলের চীনের সঙ্গে ঐতিহাসিক সম্পর্ক রয়েছে। তাঁরা মালদ্বীপের নতুন নেতাকে ‘ভারতবিরোধী’ অবস্থান থেকে পিছু হটাতে সফল হয়েছেন। যেখানে ভারত বিরোধিতাই ছিল নির্বাচনী প্রচারের প্রধান অংশ। কিন্তু বাংলাদেশ সম্পর্কে তাঁরা ভারতীয় গণমাধ্যমের ভিত্তিহীন খবর থামানোর চেষ্টা কমই করছেন, যেখানে কোনো তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই বলা হচ্ছে— আমেরিকা হাসিনার পতন ঘটিয়েছে।
সম্প্রতি, ভারতের শীর্ষস্থানীয় কূটনীতিক ও নিরাপত্তা কর্মকর্তারা কৌশল পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছেন। তাঁরা বলছেন, ভারত অত্যধিক কঠোরহস্ত হয়ে উঠেছে, চীন যেভাবে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে বিরোধী দল ও নাগরিক সমাজের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলতে ব্যর্থ হয়েছে বা সাধারণ মূল্যবোধ ও পরিচয়ের অনুভূতি প্রচারে সফল হয়নি, ভারতের অবস্থানও তেমন। কিছু লোক এসবের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী মোদির রাজনৈতিক বিরোধীদের এবং অরাষ্ট্রীয় সংগঠনের প্রতি শত্রুতাকে যুক্ত করেন। কারণ, তাঁর হিন্দু জাতীয়তাবাদ প্রায়ই বিপদ ডেকে আনে (বিশেষত মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংলাদেশে)।
ভারতের সাবেক পররাষ্ট্রসচিব শিবশঙ্কর মেনন বলেন, ‘বিশ্ব খুব দ্রুত বদলে গেছে। কিন্তু আমরা এখনো সেই একই পদ্ধতিতেই কাজ করছি, যা আগে সফল ছিল এবং একই ফলাফলের প্রত্যাশা করছি।’ তাঁর মতে, ভারতকে অর্থনৈতিক সহযোগিতার ওপর বেশি গুরুত্ব দেওয়া উচিত এবং দুর্বল প্রতিবেশী দেশগুলোর কাছ থেকে পারস্পরিক সুবিধা চাওয়ার কথা ভাবা বন্ধ করা উচিত। অন্যরা চান, এই অঞ্চলের তরুণ সম্প্রদায়ের ওপর বেশি মনোযোগ দেওয়া হোক, যাতে তারা বেশি সংখ্যায় ভারতে পড়তে যান। আরেক সাবেক পররাষ্ট্রসচিব শ্যাম শরণ বলেন, ভারতকে অঞ্চলটির সঙ্গে সম্পর্কিত আরও দক্ষ কূটনীতিক প্রয়োজন এবং সীমান্তবর্তী অঞ্চলের স্থানীয় সরকারের আরও বেশি সম্পৃক্ততা জরুরি।
ভারতীয় কূটনীতিকেরা শ্রীলঙ্কার ক্ষেত্রে অনেক দ্রুতগতিতে কাজ করছেন। তবে শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট অনুরা কুমারা দিসানায়েকে এখনো কিছুটা দ্বিধাগ্রস্ত। জানুয়ারিতে চীন সফরের সময় তিনি ৩ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলারের একটি তেল শোধনাগার প্রকল্প দ্রুত এগিয়ে নেওয়ার বিষয়ে সম্মতি জানিয়েছেন। এই প্রকল্প দক্ষিণ শ্রীলঙ্কায় চীনা মালিকানাধীন একটি বন্দর প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত। ভারত এটিকে সম্ভাব্য সামরিক হুমকি বলে মনে করে। দিসানায়েকে বিদেশি গবেষণা জাহাজের ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছেন। চীনা জাহাজ গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করছে—ভারত এই অভিযোগ তোলার পর শ্রীলঙ্কা সরকার কয়েক বছর আগে এই নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল।
কেবল তা-ই নয়, দিসানায়েকে তাঁর বক্তব্যে চীনের পছন্দনীয় শব্দচয়ন করছেন। তিনি তিব্বতের পরিবর্তে অঞ্চলটির মান্দারিন নাম ‘শিজাং’ বলছেন এবং তাইওয়ানের সঙ্গে একীকরণে চীনের ‘সব’ প্রচেষ্টার প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন। নেপালের প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলি গত ডিসেম্বর চীন সফরে গিয়ে একই ধরনের শব্দ ব্যবহার করেন এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও গভীর করার বিষয়ে সম্মত হন। নেপালে ভারতের সাবেক রাষ্ট্রদূত রঞ্জিত রায় ভারতের সমালোচনা করে বলেন, দিল্লি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলছে না, গত জুলাইয়ে নিয়োগ পাওয়ার পর ওলিকে সফরের জন্য আমন্ত্রণও জানায়নি তারা।
ভারতের আরেকটি উদ্বেগের বিষয় হলো, অবকাঠামোগত প্রকল্প প্রতিযোগিতায় কেবলই আদানির ওপর নির্ভরতা। আদানির চেয়ারম্যানের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আছে। ২০১৭ সালে আদানি বাংলাদেশের সঙ্গে ২৫ বছরের জন্য বিদ্যুৎ সরবরাহের চুক্তি করে। শ্রীলঙ্কায় সংস্থাটি প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীনভাবে কলম্বো বন্দরের চুক্তি ও একটি বায়ুবিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ পেয়ে যায়। যদিও নতুন সরকার সেসব চুক্তি পর্যালোচনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। নেপালে আদানি একটি বিমানবন্দর নির্মাণ ও তিনটি বিমানবন্দর পরিচালনার জন্য তদবির করছে।
এদিকে বাংলাদেশ আদানির সঙ্গে বিদ্যুৎ চুক্তিটি পর্যালোচনার আলোচনা এখনো টেবিল থেকে সরায়নি। অভিযোগ রয়েছে, আদানি বাজারের তুলনায় দাম বেশি রাখছে। আদানি অবশ্য বলছে, চুক্তির শর্ত মেনেই কাজ করছে। শ্রীলঙ্কাও একই অভিযোগে বায়ুবিদ্যুৎ প্রকল্পের বিষয়টি পর্যালোচনা করছে।
এসব সমস্যার পেছনে আরও গভীর একটি কারণ রয়েছে—নরেন্দ্র মোদি ভারতকে এক উদীয়মান বিশ্বশক্তি ও গ্লোবাল সাউথের নেতা হিসেবে উপস্থাপন করতে চান। অথচ আঞ্চলিক কর্মকর্তারা বলছেন, নিজ অঞ্চলেই ভারতের অবস্থান স্পষ্ট নয়। এটি সুনির্দিষ্ট না করা পর্যন্ত দ্বিধাগ্রস্ত ও সংশয়গ্রস্ত প্রতিবেশীরা বিকল্প খুঁজতে থাকবে, আর সেই সুযোগ নেবে চীন।
অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান

শ্রীলঙ্কার রাজধানী কলম্বোর বন্দরের পাইলট’স টাওয়ার থেকে দক্ষিণ এশিয়ায় চীন-ভারতের লড়াইয়ের স্পষ্ট চিত্র ধরা পড়ে। বন্দরের পূর্ব দিকের জেটিতে প্রায়ই ভারতীয় ও চীনা যুদ্ধজাহাজ নোঙর করে। দক্ষিণে চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড পরিকল্পনার প্রাথমিক প্রকল্পগুলোর একটি হলো কনটেইনার টার্মিনাল। এর পাশেই পশ্চিম দিকে ভারতীয় শিল্পগোষ্ঠী আদানি একটি নতুন টার্মিনাল নির্মাণের চুক্তি করেছে।
যখন আদানির টার্মিনাল নির্মাণ চুক্তির ঘোষণা দেওয়া হয়, তখন এটি সহযোগিতার এক অনন্য উদাহরণ হিসেবে প্রশংসিত হয়েছিল, যেটির উদ্দেশ্য ছিল এই অঞ্চলে চীনের প্রভাব মোকাবিলা করা। বাণিজ্য, অস্ত্র বিক্রি ও অবকাঠামো প্রকল্পের মাধ্যমে চীন ওই এলাকায় প্রভাব বিস্তারে তৎপর। পাল্টা জবাব দিচ্ছিল ভারতও। প্রতিবেশী দেশগুলোকে কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে সহায়তা দেওয়া এবং চীনা ঋণের কারণে সৃষ্ট দেনার বোঝা থেকে কিছুটা মুক্তি দেওয়ার মাধ্যমে। এমন পরিস্থিতিতে ২০২৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণাপ্রতিষ্ঠান র্যান্ড করপোরেশন লিখেছিল, ‘ভারত আর পিছিয়ে নেই, বরং বলা যেতে পারে, কৌশলগত প্রতিযোগিতায় চীনের বিরুদ্ধে জয়ের পথেই আছে।’
কিন্তু গত ১৮ মাসে মালদ্বীপ, নেপাল, বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কায় ভারতপন্থী নেতারা ক্ষমতা হারিয়েছেন। বিশেষ করে বাংলাদেশ ক্রমশ চীনের দিকে ঝুঁকছে। গত ফেব্রুয়ারিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ওয়াশিংটন সফরের অভিজ্ঞতাও ভালো নয়। সব মিলিয়ে ট্রাম্পকে দেখানোর মতো আঞ্চলিক সাফল্যের কোনো কিছু তাঁর ঝুলিতে ছিল না।
এদিকে এসব রাজনৈতিক পরিবর্তন এবং আদানি গ্রুপের চেয়ারম্যান গৌতম আদানির বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের ঘুষ কেলেঙ্কারির অভিযোগ (যা তিনি অস্বীকার করেছেন) ঘিরে কয়েকটি আঞ্চলিক আদানি প্রকল্প বিতর্কের মধ্যে পড়েছে। গত ১১ ডিসেম্বর প্রতিষ্ঠানটি জানায়, তারা কলম্বো বন্দরে প্রকল্পে আর মার্কিন ঋণ ব্যবহার করবে না।
এই দোদুল্যমানতার পেছনে আংশিক কারণ হলো, আঞ্চলিক নেতারাই এশিয়ার দুই পরাশক্তিকে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে নিজেদের সুবিধা হাসিল করতে চেয়েছেন। তবে এর জন্য ভারতের কূটনৈতিক দুর্বলতাও অনেকখানি দায়ী।
এসব দেশের সঙ্গে ভৌগোলিক ও সাংস্কৃতিক নৈকট্য থাকার পরও ভারত কেন পারছে না, তা এখন মিলিয়ন ডলার প্রশ্ন। তার ওপর, মোদি ২০১৪ সালে ‘সবার আগে প্রতিবেশী’ নীতি গ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু এর সুফল তো দৃশ্যমান নয়। ভারতের নিরাপত্তা ও কূটনৈতিক মহলে অনেকে আশঙ্কা করছেন, সুনির্দিষ্ট দৃষ্টিভঙ্গির অভাব ও সমন্বয়ের ঘাটতির কারণে চীনের আপাত-দুর্বলতার এই সময়েও সুযোগ হাতছাড়া করছে ভারত।
ভারতের এই দুর্বলতা আমেরিকা এবং অন্য অনেক দেশের জন্য উদ্বেগের বিষয়। কারণ, এই দেশগুলো চীনকে মোকাবিলায় ভারতের ওপর ভরসা করছে। বহু পশ্চিমা কর্মকর্তার আশঙ্কা, ভারতের আঞ্চলিক কূটনীতি অনেক সময় ‘বুমেরাং’ হয়ে যায় বা উল্টো তাদের স্বার্থের সঙ্গেই সংঘাত তৈরি করে। কেউ কেউ বলেন, ভারত চীনের পথেই হাঁটছে—স্বৈরশাসকদের সমর্থন দিচ্ছে, দ্ব্যর্থবোধক ব্যবসায়িক চুক্তি করছে এবং নিজ দেশে উগ্র জাতীয়তাবাদ উসকে দিচ্ছে। ডোনাল্ড ট্রাম্পের হোয়াইট হাউসে ফিরে আসাও ভারতের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে।
উদাহরণ হিসেবে দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় ‘সুইং স্টেট’ বাংলাদেশের কথাই ধরা যাক। (কারণ, পাকিস্তান বহু আগেই চীন শিবিরে ঢুকে পড়েছে।) ২০০৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ভারত বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একনিষ্ঠ সমর্থক ছিল এবং হাসিনার ক্রমবর্ধমান একনায়ক হয়ে ওঠার প্রবণতা দেখেও না দেখার ভান করেছে। এমনকি, বাংলাদেশে গণতন্ত্রের অবনতির বিষয়ে আমেরিকার সমালোচনা যেন নরম হয়, সে জন্য ভারতীয় কর্মকর্তারা তদবিরও করেছেন। তাঁদের যুক্তি ছিল, শেখ হাসিনা না থাকলে বাংলাদেশ কট্টর ইসলামপন্থীদের দখলে চলে যেতে পারে।
ক্ষণিকের জন্য ভারতের এই কৌশল কাজও করেছিল। বাণিজ্য, অবকাঠামো এবং নিরাপত্তাসংক্রান্ত ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের উন্নতি হয়েছিল। বাংলাদেশ চীনের সঙ্গে সম্পর্ক বাড়ালেও নিরাপত্তার বিষয়ে ভারতকে অগ্রাধিকার দিয়েছিল। এরপর ২০২৪ সালের আগস্টে ভারতের কৌশল ব্যর্থ হয়। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হয়ে ভারতে আশ্রয় নেন। এখন বাংলাদেশে ভারতবিরোধী মনোভাব তুঙ্গে; ভারতেও অনেকে বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর নির্যাতনের খবরে ক্ষুব্ধ।
অপরদিকে, বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের আওতায় চীন অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগ কিছুটা কমালেও, যেকোনো কৌশলগত সুযোগের সদ্ব্যবহার করছে এবং গত অক্টোবরে ভারতের সঙ্গে চার বছরের সীমান্ত উত্তেজনা সমাধান করেছে। চীন এরই মধ্যে বাংলাদেশকে ২ বিলিয়ন ডলার আর্থিক সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে এবং আরও ৫ বিলিয়ন ডলার সহায়তার আলোচনা চলছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন।
গত জানুয়ারিতে বেইজিং সফরকালে তৌহিদ হোসেন চীনের কাছে আরও সহায়তা চেয়েছেন। পাশাপাশি চীন বাংলাদেশকে শেখ হাসিনার আমলে দেওয়া কিছু ঋণের মেয়াদ বাড়িয়েছে। দুই পক্ষই অবকাঠামো প্রকল্পে প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছে এবং চীনের প্রস্তাবিত মোংলা বন্দর উন্নয়নের বিষয়ে আলোচনা করেছে।
এদিকে ড. ইউনূস চার দিনের চীন সফরে প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংসহ উচ্চপর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তা এবং বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। সেখান থেকে ঋণ, অনুদান ও বিনিয়োগের বিপরীতে ২ দশমিক ১ বিনিয়োগ ডলারের প্রতিশ্রুতি পেয়েছে বাংলাদেশ। পুরোনো ঋণগুলোর সুদ কমানোর ব্যাপারেও সম্মত হয়েছে চীন। মোংলা বন্দর উন্নয়নের বিষয়েও চূড়ান্ত আলোচনা হয়েছে।
ভারতের পক্ষ থেকেও শেখ হাসিনার অধীনে মোংলা বন্দরের জন্য দরপত্র দেওয়া হয়েছিল। এই উদ্যোগকে চীনের নিয়ন্ত্রণাধীন ভারত মহাসাগরের বন্দরগুলোর নেটওয়ার্কের (স্ট্রিং অব পার্ল) সঙ্গে সমন্বয় সাধনের প্রচেষ্টা হিসেবে দেখা হয়েছিল।
বাংলাদেশে হাসিনা সরকারের পতন কেবল ভারতীয় গোয়েন্দা-ব্যর্থতাই ছিল না, এটি অঞ্চলটির প্রতি ভারতের দৃষ্টিভঙ্গির ত্রুটিও প্রকাশ করে। যারা ভারতের নিরাপত্তা স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিয়েছে, কয়েক দশক ধরে দিল্লি শুধু তাদেরই সমর্থন করে গেছে। প্রধানমন্ত্রী মোদি এই নীতি আরও এগিয়ে নিয়ে গেছেন। তবে তিনি বেশি নির্ভর করেছেন অর্থনৈতিক শক্তির ওপর। উদার সহায়তার (যেমন, ২০২২ সালে দেউলিয়া হওয়ার পর শ্রীলঙ্কাকে ৪ বিলিয়ন ডলার সাহায্য) পাশাপাশি কঠোর শাস্তিও—যেমন ২০১৫ সালে নেপালের বিরুদ্ধে অনানুষ্ঠানিক অবরোধ—আরোপ করেছেন।
ভারতীয় কর্মকর্তারা বলছেন, তাঁদের পদক্ষেপ কাজে দিচ্ছে। তাঁরা শ্রীলঙ্কার নতুন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে যোগাযোগের নমুনা তুলে ধরছেন। যাঁর প্রথম বিদেশ সফর ছিল ভারতে, যদিও তাঁর বামপন্থী দলের চীনের সঙ্গে ঐতিহাসিক সম্পর্ক রয়েছে। তাঁরা মালদ্বীপের নতুন নেতাকে ‘ভারতবিরোধী’ অবস্থান থেকে পিছু হটাতে সফল হয়েছেন। যেখানে ভারত বিরোধিতাই ছিল নির্বাচনী প্রচারের প্রধান অংশ। কিন্তু বাংলাদেশ সম্পর্কে তাঁরা ভারতীয় গণমাধ্যমের ভিত্তিহীন খবর থামানোর চেষ্টা কমই করছেন, যেখানে কোনো তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই বলা হচ্ছে— আমেরিকা হাসিনার পতন ঘটিয়েছে।
সম্প্রতি, ভারতের শীর্ষস্থানীয় কূটনীতিক ও নিরাপত্তা কর্মকর্তারা কৌশল পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছেন। তাঁরা বলছেন, ভারত অত্যধিক কঠোরহস্ত হয়ে উঠেছে, চীন যেভাবে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে বিরোধী দল ও নাগরিক সমাজের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলতে ব্যর্থ হয়েছে বা সাধারণ মূল্যবোধ ও পরিচয়ের অনুভূতি প্রচারে সফল হয়নি, ভারতের অবস্থানও তেমন। কিছু লোক এসবের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী মোদির রাজনৈতিক বিরোধীদের এবং অরাষ্ট্রীয় সংগঠনের প্রতি শত্রুতাকে যুক্ত করেন। কারণ, তাঁর হিন্দু জাতীয়তাবাদ প্রায়ই বিপদ ডেকে আনে (বিশেষত মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংলাদেশে)।
ভারতের সাবেক পররাষ্ট্রসচিব শিবশঙ্কর মেনন বলেন, ‘বিশ্ব খুব দ্রুত বদলে গেছে। কিন্তু আমরা এখনো সেই একই পদ্ধতিতেই কাজ করছি, যা আগে সফল ছিল এবং একই ফলাফলের প্রত্যাশা করছি।’ তাঁর মতে, ভারতকে অর্থনৈতিক সহযোগিতার ওপর বেশি গুরুত্ব দেওয়া উচিত এবং দুর্বল প্রতিবেশী দেশগুলোর কাছ থেকে পারস্পরিক সুবিধা চাওয়ার কথা ভাবা বন্ধ করা উচিত। অন্যরা চান, এই অঞ্চলের তরুণ সম্প্রদায়ের ওপর বেশি মনোযোগ দেওয়া হোক, যাতে তারা বেশি সংখ্যায় ভারতে পড়তে যান। আরেক সাবেক পররাষ্ট্রসচিব শ্যাম শরণ বলেন, ভারতকে অঞ্চলটির সঙ্গে সম্পর্কিত আরও দক্ষ কূটনীতিক প্রয়োজন এবং সীমান্তবর্তী অঞ্চলের স্থানীয় সরকারের আরও বেশি সম্পৃক্ততা জরুরি।
ভারতীয় কূটনীতিকেরা শ্রীলঙ্কার ক্ষেত্রে অনেক দ্রুতগতিতে কাজ করছেন। তবে শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট অনুরা কুমারা দিসানায়েকে এখনো কিছুটা দ্বিধাগ্রস্ত। জানুয়ারিতে চীন সফরের সময় তিনি ৩ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলারের একটি তেল শোধনাগার প্রকল্প দ্রুত এগিয়ে নেওয়ার বিষয়ে সম্মতি জানিয়েছেন। এই প্রকল্প দক্ষিণ শ্রীলঙ্কায় চীনা মালিকানাধীন একটি বন্দর প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত। ভারত এটিকে সম্ভাব্য সামরিক হুমকি বলে মনে করে। দিসানায়েকে বিদেশি গবেষণা জাহাজের ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছেন। চীনা জাহাজ গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করছে—ভারত এই অভিযোগ তোলার পর শ্রীলঙ্কা সরকার কয়েক বছর আগে এই নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল।
কেবল তা-ই নয়, দিসানায়েকে তাঁর বক্তব্যে চীনের পছন্দনীয় শব্দচয়ন করছেন। তিনি তিব্বতের পরিবর্তে অঞ্চলটির মান্দারিন নাম ‘শিজাং’ বলছেন এবং তাইওয়ানের সঙ্গে একীকরণে চীনের ‘সব’ প্রচেষ্টার প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন। নেপালের প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলি গত ডিসেম্বর চীন সফরে গিয়ে একই ধরনের শব্দ ব্যবহার করেন এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও গভীর করার বিষয়ে সম্মত হন। নেপালে ভারতের সাবেক রাষ্ট্রদূত রঞ্জিত রায় ভারতের সমালোচনা করে বলেন, দিল্লি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলছে না, গত জুলাইয়ে নিয়োগ পাওয়ার পর ওলিকে সফরের জন্য আমন্ত্রণও জানায়নি তারা।
ভারতের আরেকটি উদ্বেগের বিষয় হলো, অবকাঠামোগত প্রকল্প প্রতিযোগিতায় কেবলই আদানির ওপর নির্ভরতা। আদানির চেয়ারম্যানের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আছে। ২০১৭ সালে আদানি বাংলাদেশের সঙ্গে ২৫ বছরের জন্য বিদ্যুৎ সরবরাহের চুক্তি করে। শ্রীলঙ্কায় সংস্থাটি প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীনভাবে কলম্বো বন্দরের চুক্তি ও একটি বায়ুবিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ পেয়ে যায়। যদিও নতুন সরকার সেসব চুক্তি পর্যালোচনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। নেপালে আদানি একটি বিমানবন্দর নির্মাণ ও তিনটি বিমানবন্দর পরিচালনার জন্য তদবির করছে।
এদিকে বাংলাদেশ আদানির সঙ্গে বিদ্যুৎ চুক্তিটি পর্যালোচনার আলোচনা এখনো টেবিল থেকে সরায়নি। অভিযোগ রয়েছে, আদানি বাজারের তুলনায় দাম বেশি রাখছে। আদানি অবশ্য বলছে, চুক্তির শর্ত মেনেই কাজ করছে। শ্রীলঙ্কাও একই অভিযোগে বায়ুবিদ্যুৎ প্রকল্পের বিষয়টি পর্যালোচনা করছে।
এসব সমস্যার পেছনে আরও গভীর একটি কারণ রয়েছে—নরেন্দ্র মোদি ভারতকে এক উদীয়মান বিশ্বশক্তি ও গ্লোবাল সাউথের নেতা হিসেবে উপস্থাপন করতে চান। অথচ আঞ্চলিক কর্মকর্তারা বলছেন, নিজ অঞ্চলেই ভারতের অবস্থান স্পষ্ট নয়। এটি সুনির্দিষ্ট না করা পর্যন্ত দ্বিধাগ্রস্ত ও সংশয়গ্রস্ত প্রতিবেশীরা বিকল্প খুঁজতে থাকবে, আর সেই সুযোগ নেবে চীন।
অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান
আজকের পত্রিকা ডেস্ক

শ্রীলঙ্কার রাজধানী কলম্বোর বন্দরের পাইলট’স টাওয়ার থেকে দক্ষিণ এশিয়ায় চীন-ভারতের লড়াইয়ের স্পষ্ট চিত্র ধরা পড়ে। বন্দরের পূর্ব দিকের জেটিতে প্রায়ই ভারতীয় ও চীনা যুদ্ধজাহাজ নোঙর করে। দক্ষিণে চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড পরিকল্পনার প্রাথমিক প্রকল্পগুলোর একটি হলো কনটেইনার টার্মিনাল। এর পাশেই পশ্চিম দিকে ভারতীয় শিল্পগোষ্ঠী আদানি একটি নতুন টার্মিনাল নির্মাণের চুক্তি করেছে।
যখন আদানির টার্মিনাল নির্মাণ চুক্তির ঘোষণা দেওয়া হয়, তখন এটি সহযোগিতার এক অনন্য উদাহরণ হিসেবে প্রশংসিত হয়েছিল, যেটির উদ্দেশ্য ছিল এই অঞ্চলে চীনের প্রভাব মোকাবিলা করা। বাণিজ্য, অস্ত্র বিক্রি ও অবকাঠামো প্রকল্পের মাধ্যমে চীন ওই এলাকায় প্রভাব বিস্তারে তৎপর। পাল্টা জবাব দিচ্ছিল ভারতও। প্রতিবেশী দেশগুলোকে কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে সহায়তা দেওয়া এবং চীনা ঋণের কারণে সৃষ্ট দেনার বোঝা থেকে কিছুটা মুক্তি দেওয়ার মাধ্যমে। এমন পরিস্থিতিতে ২০২৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণাপ্রতিষ্ঠান র্যান্ড করপোরেশন লিখেছিল, ‘ভারত আর পিছিয়ে নেই, বরং বলা যেতে পারে, কৌশলগত প্রতিযোগিতায় চীনের বিরুদ্ধে জয়ের পথেই আছে।’
কিন্তু গত ১৮ মাসে মালদ্বীপ, নেপাল, বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কায় ভারতপন্থী নেতারা ক্ষমতা হারিয়েছেন। বিশেষ করে বাংলাদেশ ক্রমশ চীনের দিকে ঝুঁকছে। গত ফেব্রুয়ারিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ওয়াশিংটন সফরের অভিজ্ঞতাও ভালো নয়। সব মিলিয়ে ট্রাম্পকে দেখানোর মতো আঞ্চলিক সাফল্যের কোনো কিছু তাঁর ঝুলিতে ছিল না।
এদিকে এসব রাজনৈতিক পরিবর্তন এবং আদানি গ্রুপের চেয়ারম্যান গৌতম আদানির বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের ঘুষ কেলেঙ্কারির অভিযোগ (যা তিনি অস্বীকার করেছেন) ঘিরে কয়েকটি আঞ্চলিক আদানি প্রকল্প বিতর্কের মধ্যে পড়েছে। গত ১১ ডিসেম্বর প্রতিষ্ঠানটি জানায়, তারা কলম্বো বন্দরে প্রকল্পে আর মার্কিন ঋণ ব্যবহার করবে না।
এই দোদুল্যমানতার পেছনে আংশিক কারণ হলো, আঞ্চলিক নেতারাই এশিয়ার দুই পরাশক্তিকে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে নিজেদের সুবিধা হাসিল করতে চেয়েছেন। তবে এর জন্য ভারতের কূটনৈতিক দুর্বলতাও অনেকখানি দায়ী।
এসব দেশের সঙ্গে ভৌগোলিক ও সাংস্কৃতিক নৈকট্য থাকার পরও ভারত কেন পারছে না, তা এখন মিলিয়ন ডলার প্রশ্ন। তার ওপর, মোদি ২০১৪ সালে ‘সবার আগে প্রতিবেশী’ নীতি গ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু এর সুফল তো দৃশ্যমান নয়। ভারতের নিরাপত্তা ও কূটনৈতিক মহলে অনেকে আশঙ্কা করছেন, সুনির্দিষ্ট দৃষ্টিভঙ্গির অভাব ও সমন্বয়ের ঘাটতির কারণে চীনের আপাত-দুর্বলতার এই সময়েও সুযোগ হাতছাড়া করছে ভারত।
ভারতের এই দুর্বলতা আমেরিকা এবং অন্য অনেক দেশের জন্য উদ্বেগের বিষয়। কারণ, এই দেশগুলো চীনকে মোকাবিলায় ভারতের ওপর ভরসা করছে। বহু পশ্চিমা কর্মকর্তার আশঙ্কা, ভারতের আঞ্চলিক কূটনীতি অনেক সময় ‘বুমেরাং’ হয়ে যায় বা উল্টো তাদের স্বার্থের সঙ্গেই সংঘাত তৈরি করে। কেউ কেউ বলেন, ভারত চীনের পথেই হাঁটছে—স্বৈরশাসকদের সমর্থন দিচ্ছে, দ্ব্যর্থবোধক ব্যবসায়িক চুক্তি করছে এবং নিজ দেশে উগ্র জাতীয়তাবাদ উসকে দিচ্ছে। ডোনাল্ড ট্রাম্পের হোয়াইট হাউসে ফিরে আসাও ভারতের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে।
উদাহরণ হিসেবে দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় ‘সুইং স্টেট’ বাংলাদেশের কথাই ধরা যাক। (কারণ, পাকিস্তান বহু আগেই চীন শিবিরে ঢুকে পড়েছে।) ২০০৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ভারত বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একনিষ্ঠ সমর্থক ছিল এবং হাসিনার ক্রমবর্ধমান একনায়ক হয়ে ওঠার প্রবণতা দেখেও না দেখার ভান করেছে। এমনকি, বাংলাদেশে গণতন্ত্রের অবনতির বিষয়ে আমেরিকার সমালোচনা যেন নরম হয়, সে জন্য ভারতীয় কর্মকর্তারা তদবিরও করেছেন। তাঁদের যুক্তি ছিল, শেখ হাসিনা না থাকলে বাংলাদেশ কট্টর ইসলামপন্থীদের দখলে চলে যেতে পারে।
ক্ষণিকের জন্য ভারতের এই কৌশল কাজও করেছিল। বাণিজ্য, অবকাঠামো এবং নিরাপত্তাসংক্রান্ত ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের উন্নতি হয়েছিল। বাংলাদেশ চীনের সঙ্গে সম্পর্ক বাড়ালেও নিরাপত্তার বিষয়ে ভারতকে অগ্রাধিকার দিয়েছিল। এরপর ২০২৪ সালের আগস্টে ভারতের কৌশল ব্যর্থ হয়। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হয়ে ভারতে আশ্রয় নেন। এখন বাংলাদেশে ভারতবিরোধী মনোভাব তুঙ্গে; ভারতেও অনেকে বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর নির্যাতনের খবরে ক্ষুব্ধ।
অপরদিকে, বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের আওতায় চীন অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগ কিছুটা কমালেও, যেকোনো কৌশলগত সুযোগের সদ্ব্যবহার করছে এবং গত অক্টোবরে ভারতের সঙ্গে চার বছরের সীমান্ত উত্তেজনা সমাধান করেছে। চীন এরই মধ্যে বাংলাদেশকে ২ বিলিয়ন ডলার আর্থিক সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে এবং আরও ৫ বিলিয়ন ডলার সহায়তার আলোচনা চলছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন।
গত জানুয়ারিতে বেইজিং সফরকালে তৌহিদ হোসেন চীনের কাছে আরও সহায়তা চেয়েছেন। পাশাপাশি চীন বাংলাদেশকে শেখ হাসিনার আমলে দেওয়া কিছু ঋণের মেয়াদ বাড়িয়েছে। দুই পক্ষই অবকাঠামো প্রকল্পে প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছে এবং চীনের প্রস্তাবিত মোংলা বন্দর উন্নয়নের বিষয়ে আলোচনা করেছে।
এদিকে ড. ইউনূস চার দিনের চীন সফরে প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংসহ উচ্চপর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তা এবং বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। সেখান থেকে ঋণ, অনুদান ও বিনিয়োগের বিপরীতে ২ দশমিক ১ বিনিয়োগ ডলারের প্রতিশ্রুতি পেয়েছে বাংলাদেশ। পুরোনো ঋণগুলোর সুদ কমানোর ব্যাপারেও সম্মত হয়েছে চীন। মোংলা বন্দর উন্নয়নের বিষয়েও চূড়ান্ত আলোচনা হয়েছে।
ভারতের পক্ষ থেকেও শেখ হাসিনার অধীনে মোংলা বন্দরের জন্য দরপত্র দেওয়া হয়েছিল। এই উদ্যোগকে চীনের নিয়ন্ত্রণাধীন ভারত মহাসাগরের বন্দরগুলোর নেটওয়ার্কের (স্ট্রিং অব পার্ল) সঙ্গে সমন্বয় সাধনের প্রচেষ্টা হিসেবে দেখা হয়েছিল।
বাংলাদেশে হাসিনা সরকারের পতন কেবল ভারতীয় গোয়েন্দা-ব্যর্থতাই ছিল না, এটি অঞ্চলটির প্রতি ভারতের দৃষ্টিভঙ্গির ত্রুটিও প্রকাশ করে। যারা ভারতের নিরাপত্তা স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিয়েছে, কয়েক দশক ধরে দিল্লি শুধু তাদেরই সমর্থন করে গেছে। প্রধানমন্ত্রী মোদি এই নীতি আরও এগিয়ে নিয়ে গেছেন। তবে তিনি বেশি নির্ভর করেছেন অর্থনৈতিক শক্তির ওপর। উদার সহায়তার (যেমন, ২০২২ সালে দেউলিয়া হওয়ার পর শ্রীলঙ্কাকে ৪ বিলিয়ন ডলার সাহায্য) পাশাপাশি কঠোর শাস্তিও—যেমন ২০১৫ সালে নেপালের বিরুদ্ধে অনানুষ্ঠানিক অবরোধ—আরোপ করেছেন।
ভারতীয় কর্মকর্তারা বলছেন, তাঁদের পদক্ষেপ কাজে দিচ্ছে। তাঁরা শ্রীলঙ্কার নতুন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে যোগাযোগের নমুনা তুলে ধরছেন। যাঁর প্রথম বিদেশ সফর ছিল ভারতে, যদিও তাঁর বামপন্থী দলের চীনের সঙ্গে ঐতিহাসিক সম্পর্ক রয়েছে। তাঁরা মালদ্বীপের নতুন নেতাকে ‘ভারতবিরোধী’ অবস্থান থেকে পিছু হটাতে সফল হয়েছেন। যেখানে ভারত বিরোধিতাই ছিল নির্বাচনী প্রচারের প্রধান অংশ। কিন্তু বাংলাদেশ সম্পর্কে তাঁরা ভারতীয় গণমাধ্যমের ভিত্তিহীন খবর থামানোর চেষ্টা কমই করছেন, যেখানে কোনো তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই বলা হচ্ছে— আমেরিকা হাসিনার পতন ঘটিয়েছে।
সম্প্রতি, ভারতের শীর্ষস্থানীয় কূটনীতিক ও নিরাপত্তা কর্মকর্তারা কৌশল পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছেন। তাঁরা বলছেন, ভারত অত্যধিক কঠোরহস্ত হয়ে উঠেছে, চীন যেভাবে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে বিরোধী দল ও নাগরিক সমাজের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলতে ব্যর্থ হয়েছে বা সাধারণ মূল্যবোধ ও পরিচয়ের অনুভূতি প্রচারে সফল হয়নি, ভারতের অবস্থানও তেমন। কিছু লোক এসবের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী মোদির রাজনৈতিক বিরোধীদের এবং অরাষ্ট্রীয় সংগঠনের প্রতি শত্রুতাকে যুক্ত করেন। কারণ, তাঁর হিন্দু জাতীয়তাবাদ প্রায়ই বিপদ ডেকে আনে (বিশেষত মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংলাদেশে)।
ভারতের সাবেক পররাষ্ট্রসচিব শিবশঙ্কর মেনন বলেন, ‘বিশ্ব খুব দ্রুত বদলে গেছে। কিন্তু আমরা এখনো সেই একই পদ্ধতিতেই কাজ করছি, যা আগে সফল ছিল এবং একই ফলাফলের প্রত্যাশা করছি।’ তাঁর মতে, ভারতকে অর্থনৈতিক সহযোগিতার ওপর বেশি গুরুত্ব দেওয়া উচিত এবং দুর্বল প্রতিবেশী দেশগুলোর কাছ থেকে পারস্পরিক সুবিধা চাওয়ার কথা ভাবা বন্ধ করা উচিত। অন্যরা চান, এই অঞ্চলের তরুণ সম্প্রদায়ের ওপর বেশি মনোযোগ দেওয়া হোক, যাতে তারা বেশি সংখ্যায় ভারতে পড়তে যান। আরেক সাবেক পররাষ্ট্রসচিব শ্যাম শরণ বলেন, ভারতকে অঞ্চলটির সঙ্গে সম্পর্কিত আরও দক্ষ কূটনীতিক প্রয়োজন এবং সীমান্তবর্তী অঞ্চলের স্থানীয় সরকারের আরও বেশি সম্পৃক্ততা জরুরি।
ভারতীয় কূটনীতিকেরা শ্রীলঙ্কার ক্ষেত্রে অনেক দ্রুতগতিতে কাজ করছেন। তবে শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট অনুরা কুমারা দিসানায়েকে এখনো কিছুটা দ্বিধাগ্রস্ত। জানুয়ারিতে চীন সফরের সময় তিনি ৩ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলারের একটি তেল শোধনাগার প্রকল্প দ্রুত এগিয়ে নেওয়ার বিষয়ে সম্মতি জানিয়েছেন। এই প্রকল্প দক্ষিণ শ্রীলঙ্কায় চীনা মালিকানাধীন একটি বন্দর প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত। ভারত এটিকে সম্ভাব্য সামরিক হুমকি বলে মনে করে। দিসানায়েকে বিদেশি গবেষণা জাহাজের ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছেন। চীনা জাহাজ গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করছে—ভারত এই অভিযোগ তোলার পর শ্রীলঙ্কা সরকার কয়েক বছর আগে এই নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল।
কেবল তা-ই নয়, দিসানায়েকে তাঁর বক্তব্যে চীনের পছন্দনীয় শব্দচয়ন করছেন। তিনি তিব্বতের পরিবর্তে অঞ্চলটির মান্দারিন নাম ‘শিজাং’ বলছেন এবং তাইওয়ানের সঙ্গে একীকরণে চীনের ‘সব’ প্রচেষ্টার প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন। নেপালের প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলি গত ডিসেম্বর চীন সফরে গিয়ে একই ধরনের শব্দ ব্যবহার করেন এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও গভীর করার বিষয়ে সম্মত হন। নেপালে ভারতের সাবেক রাষ্ট্রদূত রঞ্জিত রায় ভারতের সমালোচনা করে বলেন, দিল্লি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলছে না, গত জুলাইয়ে নিয়োগ পাওয়ার পর ওলিকে সফরের জন্য আমন্ত্রণও জানায়নি তারা।
ভারতের আরেকটি উদ্বেগের বিষয় হলো, অবকাঠামোগত প্রকল্প প্রতিযোগিতায় কেবলই আদানির ওপর নির্ভরতা। আদানির চেয়ারম্যানের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আছে। ২০১৭ সালে আদানি বাংলাদেশের সঙ্গে ২৫ বছরের জন্য বিদ্যুৎ সরবরাহের চুক্তি করে। শ্রীলঙ্কায় সংস্থাটি প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীনভাবে কলম্বো বন্দরের চুক্তি ও একটি বায়ুবিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ পেয়ে যায়। যদিও নতুন সরকার সেসব চুক্তি পর্যালোচনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। নেপালে আদানি একটি বিমানবন্দর নির্মাণ ও তিনটি বিমানবন্দর পরিচালনার জন্য তদবির করছে।
এদিকে বাংলাদেশ আদানির সঙ্গে বিদ্যুৎ চুক্তিটি পর্যালোচনার আলোচনা এখনো টেবিল থেকে সরায়নি। অভিযোগ রয়েছে, আদানি বাজারের তুলনায় দাম বেশি রাখছে। আদানি অবশ্য বলছে, চুক্তির শর্ত মেনেই কাজ করছে। শ্রীলঙ্কাও একই অভিযোগে বায়ুবিদ্যুৎ প্রকল্পের বিষয়টি পর্যালোচনা করছে।
এসব সমস্যার পেছনে আরও গভীর একটি কারণ রয়েছে—নরেন্দ্র মোদি ভারতকে এক উদীয়মান বিশ্বশক্তি ও গ্লোবাল সাউথের নেতা হিসেবে উপস্থাপন করতে চান। অথচ আঞ্চলিক কর্মকর্তারা বলছেন, নিজ অঞ্চলেই ভারতের অবস্থান স্পষ্ট নয়। এটি সুনির্দিষ্ট না করা পর্যন্ত দ্বিধাগ্রস্ত ও সংশয়গ্রস্ত প্রতিবেশীরা বিকল্প খুঁজতে থাকবে, আর সেই সুযোগ নেবে চীন।
অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান

শ্রীলঙ্কার রাজধানী কলম্বোর বন্দরের পাইলট’স টাওয়ার থেকে দক্ষিণ এশিয়ায় চীন-ভারতের লড়াইয়ের স্পষ্ট চিত্র ধরা পড়ে। বন্দরের পূর্ব দিকের জেটিতে প্রায়ই ভারতীয় ও চীনা যুদ্ধজাহাজ নোঙর করে। দক্ষিণে চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড পরিকল্পনার প্রাথমিক প্রকল্পগুলোর একটি হলো কনটেইনার টার্মিনাল। এর পাশেই পশ্চিম দিকে ভারতীয় শিল্পগোষ্ঠী আদানি একটি নতুন টার্মিনাল নির্মাণের চুক্তি করেছে।
যখন আদানির টার্মিনাল নির্মাণ চুক্তির ঘোষণা দেওয়া হয়, তখন এটি সহযোগিতার এক অনন্য উদাহরণ হিসেবে প্রশংসিত হয়েছিল, যেটির উদ্দেশ্য ছিল এই অঞ্চলে চীনের প্রভাব মোকাবিলা করা। বাণিজ্য, অস্ত্র বিক্রি ও অবকাঠামো প্রকল্পের মাধ্যমে চীন ওই এলাকায় প্রভাব বিস্তারে তৎপর। পাল্টা জবাব দিচ্ছিল ভারতও। প্রতিবেশী দেশগুলোকে কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে সহায়তা দেওয়া এবং চীনা ঋণের কারণে সৃষ্ট দেনার বোঝা থেকে কিছুটা মুক্তি দেওয়ার মাধ্যমে। এমন পরিস্থিতিতে ২০২৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণাপ্রতিষ্ঠান র্যান্ড করপোরেশন লিখেছিল, ‘ভারত আর পিছিয়ে নেই, বরং বলা যেতে পারে, কৌশলগত প্রতিযোগিতায় চীনের বিরুদ্ধে জয়ের পথেই আছে।’
কিন্তু গত ১৮ মাসে মালদ্বীপ, নেপাল, বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কায় ভারতপন্থী নেতারা ক্ষমতা হারিয়েছেন। বিশেষ করে বাংলাদেশ ক্রমশ চীনের দিকে ঝুঁকছে। গত ফেব্রুয়ারিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ওয়াশিংটন সফরের অভিজ্ঞতাও ভালো নয়। সব মিলিয়ে ট্রাম্পকে দেখানোর মতো আঞ্চলিক সাফল্যের কোনো কিছু তাঁর ঝুলিতে ছিল না।
এদিকে এসব রাজনৈতিক পরিবর্তন এবং আদানি গ্রুপের চেয়ারম্যান গৌতম আদানির বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের ঘুষ কেলেঙ্কারির অভিযোগ (যা তিনি অস্বীকার করেছেন) ঘিরে কয়েকটি আঞ্চলিক আদানি প্রকল্প বিতর্কের মধ্যে পড়েছে। গত ১১ ডিসেম্বর প্রতিষ্ঠানটি জানায়, তারা কলম্বো বন্দরে প্রকল্পে আর মার্কিন ঋণ ব্যবহার করবে না।
এই দোদুল্যমানতার পেছনে আংশিক কারণ হলো, আঞ্চলিক নেতারাই এশিয়ার দুই পরাশক্তিকে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে নিজেদের সুবিধা হাসিল করতে চেয়েছেন। তবে এর জন্য ভারতের কূটনৈতিক দুর্বলতাও অনেকখানি দায়ী।
এসব দেশের সঙ্গে ভৌগোলিক ও সাংস্কৃতিক নৈকট্য থাকার পরও ভারত কেন পারছে না, তা এখন মিলিয়ন ডলার প্রশ্ন। তার ওপর, মোদি ২০১৪ সালে ‘সবার আগে প্রতিবেশী’ নীতি গ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু এর সুফল তো দৃশ্যমান নয়। ভারতের নিরাপত্তা ও কূটনৈতিক মহলে অনেকে আশঙ্কা করছেন, সুনির্দিষ্ট দৃষ্টিভঙ্গির অভাব ও সমন্বয়ের ঘাটতির কারণে চীনের আপাত-দুর্বলতার এই সময়েও সুযোগ হাতছাড়া করছে ভারত।
ভারতের এই দুর্বলতা আমেরিকা এবং অন্য অনেক দেশের জন্য উদ্বেগের বিষয়। কারণ, এই দেশগুলো চীনকে মোকাবিলায় ভারতের ওপর ভরসা করছে। বহু পশ্চিমা কর্মকর্তার আশঙ্কা, ভারতের আঞ্চলিক কূটনীতি অনেক সময় ‘বুমেরাং’ হয়ে যায় বা উল্টো তাদের স্বার্থের সঙ্গেই সংঘাত তৈরি করে। কেউ কেউ বলেন, ভারত চীনের পথেই হাঁটছে—স্বৈরশাসকদের সমর্থন দিচ্ছে, দ্ব্যর্থবোধক ব্যবসায়িক চুক্তি করছে এবং নিজ দেশে উগ্র জাতীয়তাবাদ উসকে দিচ্ছে। ডোনাল্ড ট্রাম্পের হোয়াইট হাউসে ফিরে আসাও ভারতের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে।
উদাহরণ হিসেবে দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় ‘সুইং স্টেট’ বাংলাদেশের কথাই ধরা যাক। (কারণ, পাকিস্তান বহু আগেই চীন শিবিরে ঢুকে পড়েছে।) ২০০৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ভারত বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একনিষ্ঠ সমর্থক ছিল এবং হাসিনার ক্রমবর্ধমান একনায়ক হয়ে ওঠার প্রবণতা দেখেও না দেখার ভান করেছে। এমনকি, বাংলাদেশে গণতন্ত্রের অবনতির বিষয়ে আমেরিকার সমালোচনা যেন নরম হয়, সে জন্য ভারতীয় কর্মকর্তারা তদবিরও করেছেন। তাঁদের যুক্তি ছিল, শেখ হাসিনা না থাকলে বাংলাদেশ কট্টর ইসলামপন্থীদের দখলে চলে যেতে পারে।
ক্ষণিকের জন্য ভারতের এই কৌশল কাজও করেছিল। বাণিজ্য, অবকাঠামো এবং নিরাপত্তাসংক্রান্ত ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের উন্নতি হয়েছিল। বাংলাদেশ চীনের সঙ্গে সম্পর্ক বাড়ালেও নিরাপত্তার বিষয়ে ভারতকে অগ্রাধিকার দিয়েছিল। এরপর ২০২৪ সালের আগস্টে ভারতের কৌশল ব্যর্থ হয়। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হয়ে ভারতে আশ্রয় নেন। এখন বাংলাদেশে ভারতবিরোধী মনোভাব তুঙ্গে; ভারতেও অনেকে বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর নির্যাতনের খবরে ক্ষুব্ধ।
অপরদিকে, বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের আওতায় চীন অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগ কিছুটা কমালেও, যেকোনো কৌশলগত সুযোগের সদ্ব্যবহার করছে এবং গত অক্টোবরে ভারতের সঙ্গে চার বছরের সীমান্ত উত্তেজনা সমাধান করেছে। চীন এরই মধ্যে বাংলাদেশকে ২ বিলিয়ন ডলার আর্থিক সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে এবং আরও ৫ বিলিয়ন ডলার সহায়তার আলোচনা চলছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন।
গত জানুয়ারিতে বেইজিং সফরকালে তৌহিদ হোসেন চীনের কাছে আরও সহায়তা চেয়েছেন। পাশাপাশি চীন বাংলাদেশকে শেখ হাসিনার আমলে দেওয়া কিছু ঋণের মেয়াদ বাড়িয়েছে। দুই পক্ষই অবকাঠামো প্রকল্পে প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছে এবং চীনের প্রস্তাবিত মোংলা বন্দর উন্নয়নের বিষয়ে আলোচনা করেছে।
এদিকে ড. ইউনূস চার দিনের চীন সফরে প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংসহ উচ্চপর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তা এবং বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। সেখান থেকে ঋণ, অনুদান ও বিনিয়োগের বিপরীতে ২ দশমিক ১ বিনিয়োগ ডলারের প্রতিশ্রুতি পেয়েছে বাংলাদেশ। পুরোনো ঋণগুলোর সুদ কমানোর ব্যাপারেও সম্মত হয়েছে চীন। মোংলা বন্দর উন্নয়নের বিষয়েও চূড়ান্ত আলোচনা হয়েছে।
ভারতের পক্ষ থেকেও শেখ হাসিনার অধীনে মোংলা বন্দরের জন্য দরপত্র দেওয়া হয়েছিল। এই উদ্যোগকে চীনের নিয়ন্ত্রণাধীন ভারত মহাসাগরের বন্দরগুলোর নেটওয়ার্কের (স্ট্রিং অব পার্ল) সঙ্গে সমন্বয় সাধনের প্রচেষ্টা হিসেবে দেখা হয়েছিল।
বাংলাদেশে হাসিনা সরকারের পতন কেবল ভারতীয় গোয়েন্দা-ব্যর্থতাই ছিল না, এটি অঞ্চলটির প্রতি ভারতের দৃষ্টিভঙ্গির ত্রুটিও প্রকাশ করে। যারা ভারতের নিরাপত্তা স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিয়েছে, কয়েক দশক ধরে দিল্লি শুধু তাদেরই সমর্থন করে গেছে। প্রধানমন্ত্রী মোদি এই নীতি আরও এগিয়ে নিয়ে গেছেন। তবে তিনি বেশি নির্ভর করেছেন অর্থনৈতিক শক্তির ওপর। উদার সহায়তার (যেমন, ২০২২ সালে দেউলিয়া হওয়ার পর শ্রীলঙ্কাকে ৪ বিলিয়ন ডলার সাহায্য) পাশাপাশি কঠোর শাস্তিও—যেমন ২০১৫ সালে নেপালের বিরুদ্ধে অনানুষ্ঠানিক অবরোধ—আরোপ করেছেন।
ভারতীয় কর্মকর্তারা বলছেন, তাঁদের পদক্ষেপ কাজে দিচ্ছে। তাঁরা শ্রীলঙ্কার নতুন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে যোগাযোগের নমুনা তুলে ধরছেন। যাঁর প্রথম বিদেশ সফর ছিল ভারতে, যদিও তাঁর বামপন্থী দলের চীনের সঙ্গে ঐতিহাসিক সম্পর্ক রয়েছে। তাঁরা মালদ্বীপের নতুন নেতাকে ‘ভারতবিরোধী’ অবস্থান থেকে পিছু হটাতে সফল হয়েছেন। যেখানে ভারত বিরোধিতাই ছিল নির্বাচনী প্রচারের প্রধান অংশ। কিন্তু বাংলাদেশ সম্পর্কে তাঁরা ভারতীয় গণমাধ্যমের ভিত্তিহীন খবর থামানোর চেষ্টা কমই করছেন, যেখানে কোনো তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই বলা হচ্ছে— আমেরিকা হাসিনার পতন ঘটিয়েছে।
সম্প্রতি, ভারতের শীর্ষস্থানীয় কূটনীতিক ও নিরাপত্তা কর্মকর্তারা কৌশল পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছেন। তাঁরা বলছেন, ভারত অত্যধিক কঠোরহস্ত হয়ে উঠেছে, চীন যেভাবে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে বিরোধী দল ও নাগরিক সমাজের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলতে ব্যর্থ হয়েছে বা সাধারণ মূল্যবোধ ও পরিচয়ের অনুভূতি প্রচারে সফল হয়নি, ভারতের অবস্থানও তেমন। কিছু লোক এসবের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী মোদির রাজনৈতিক বিরোধীদের এবং অরাষ্ট্রীয় সংগঠনের প্রতি শত্রুতাকে যুক্ত করেন। কারণ, তাঁর হিন্দু জাতীয়তাবাদ প্রায়ই বিপদ ডেকে আনে (বিশেষত মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংলাদেশে)।
ভারতের সাবেক পররাষ্ট্রসচিব শিবশঙ্কর মেনন বলেন, ‘বিশ্ব খুব দ্রুত বদলে গেছে। কিন্তু আমরা এখনো সেই একই পদ্ধতিতেই কাজ করছি, যা আগে সফল ছিল এবং একই ফলাফলের প্রত্যাশা করছি।’ তাঁর মতে, ভারতকে অর্থনৈতিক সহযোগিতার ওপর বেশি গুরুত্ব দেওয়া উচিত এবং দুর্বল প্রতিবেশী দেশগুলোর কাছ থেকে পারস্পরিক সুবিধা চাওয়ার কথা ভাবা বন্ধ করা উচিত। অন্যরা চান, এই অঞ্চলের তরুণ সম্প্রদায়ের ওপর বেশি মনোযোগ দেওয়া হোক, যাতে তারা বেশি সংখ্যায় ভারতে পড়তে যান। আরেক সাবেক পররাষ্ট্রসচিব শ্যাম শরণ বলেন, ভারতকে অঞ্চলটির সঙ্গে সম্পর্কিত আরও দক্ষ কূটনীতিক প্রয়োজন এবং সীমান্তবর্তী অঞ্চলের স্থানীয় সরকারের আরও বেশি সম্পৃক্ততা জরুরি।
ভারতীয় কূটনীতিকেরা শ্রীলঙ্কার ক্ষেত্রে অনেক দ্রুতগতিতে কাজ করছেন। তবে শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট অনুরা কুমারা দিসানায়েকে এখনো কিছুটা দ্বিধাগ্রস্ত। জানুয়ারিতে চীন সফরের সময় তিনি ৩ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলারের একটি তেল শোধনাগার প্রকল্প দ্রুত এগিয়ে নেওয়ার বিষয়ে সম্মতি জানিয়েছেন। এই প্রকল্প দক্ষিণ শ্রীলঙ্কায় চীনা মালিকানাধীন একটি বন্দর প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত। ভারত এটিকে সম্ভাব্য সামরিক হুমকি বলে মনে করে। দিসানায়েকে বিদেশি গবেষণা জাহাজের ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছেন। চীনা জাহাজ গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করছে—ভারত এই অভিযোগ তোলার পর শ্রীলঙ্কা সরকার কয়েক বছর আগে এই নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল।
কেবল তা-ই নয়, দিসানায়েকে তাঁর বক্তব্যে চীনের পছন্দনীয় শব্দচয়ন করছেন। তিনি তিব্বতের পরিবর্তে অঞ্চলটির মান্দারিন নাম ‘শিজাং’ বলছেন এবং তাইওয়ানের সঙ্গে একীকরণে চীনের ‘সব’ প্রচেষ্টার প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন। নেপালের প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলি গত ডিসেম্বর চীন সফরে গিয়ে একই ধরনের শব্দ ব্যবহার করেন এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও গভীর করার বিষয়ে সম্মত হন। নেপালে ভারতের সাবেক রাষ্ট্রদূত রঞ্জিত রায় ভারতের সমালোচনা করে বলেন, দিল্লি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলছে না, গত জুলাইয়ে নিয়োগ পাওয়ার পর ওলিকে সফরের জন্য আমন্ত্রণও জানায়নি তারা।
ভারতের আরেকটি উদ্বেগের বিষয় হলো, অবকাঠামোগত প্রকল্প প্রতিযোগিতায় কেবলই আদানির ওপর নির্ভরতা। আদানির চেয়ারম্যানের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আছে। ২০১৭ সালে আদানি বাংলাদেশের সঙ্গে ২৫ বছরের জন্য বিদ্যুৎ সরবরাহের চুক্তি করে। শ্রীলঙ্কায় সংস্থাটি প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীনভাবে কলম্বো বন্দরের চুক্তি ও একটি বায়ুবিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ পেয়ে যায়। যদিও নতুন সরকার সেসব চুক্তি পর্যালোচনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। নেপালে আদানি একটি বিমানবন্দর নির্মাণ ও তিনটি বিমানবন্দর পরিচালনার জন্য তদবির করছে।
এদিকে বাংলাদেশ আদানির সঙ্গে বিদ্যুৎ চুক্তিটি পর্যালোচনার আলোচনা এখনো টেবিল থেকে সরায়নি। অভিযোগ রয়েছে, আদানি বাজারের তুলনায় দাম বেশি রাখছে। আদানি অবশ্য বলছে, চুক্তির শর্ত মেনেই কাজ করছে। শ্রীলঙ্কাও একই অভিযোগে বায়ুবিদ্যুৎ প্রকল্পের বিষয়টি পর্যালোচনা করছে।
এসব সমস্যার পেছনে আরও গভীর একটি কারণ রয়েছে—নরেন্দ্র মোদি ভারতকে এক উদীয়মান বিশ্বশক্তি ও গ্লোবাল সাউথের নেতা হিসেবে উপস্থাপন করতে চান। অথচ আঞ্চলিক কর্মকর্তারা বলছেন, নিজ অঞ্চলেই ভারতের অবস্থান স্পষ্ট নয়। এটি সুনির্দিষ্ট না করা পর্যন্ত দ্বিধাগ্রস্ত ও সংশয়গ্রস্ত প্রতিবেশীরা বিকল্প খুঁজতে থাকবে, আর সেই সুযোগ নেবে চীন।
অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতদের মধ্যে ইউক্রেন শান্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনা হলেও প্রকাশ্যে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইউরি উশাকভ, এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন যে অমীমাংসিত ‘আঞ্চলিক সমস্যাই’ মূল বাধা। আর এই অঞ্চল আর কোনোটিই নয়, দোনেৎস্ক।
২০ ঘণ্টা আগে
বিশ্বজুড়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন উঠে আসছে—‘যদি বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ সীমিত করা হয়, অথবা এই শ্রেণিটিকেই সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়, তবে কী ঘটবে?’ পশ্চিমা দেশগুলোতে চরম ধনী বা বিলিয়নিয়ারদের সংখ্যা ও প্রভাব বাড়তে থাকায় এখন এই প্রশ্ন আরও জোরালো হয়েছে।
১ দিন আগে
জাপানের ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর গত অক্টোবরে দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন সানায়ে তাকাইচি। এরপরই তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত হন জাপানের নতুন ‘আয়রন লেডি’ বা লৌহমানবী’ হিসেবে।
২ দিন আগে
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠককে ঘিরে দিল্লিতে শুরু হয়েছে কূটনৈতিক প্রস্তুতি। চলমান ইউক্রেন যুদ্ধ, যুক্তরাষ্ট্রের চাপ এবং জ্বালানির বাজারে অস্থিরতার মধ্যেই এই শীর্ষ সম্মেলন হতে যাচ্ছে। অর্থনীতি, প্রতিরক্ষা এবং জ্বালানি—এই তিনটি খাত আলোচনার...
২ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতদের মধ্যে ইউক্রেন শান্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনা হলেও প্রকাশ্যে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইউরি উশাকভ, এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন যে অমীমাংসিত ‘আঞ্চলিক সমস্যাই’ মূল বাধা। আর এই অঞ্চল আর কোনোটিই নয়, দোনেৎস্ক।
উশাকভ মূলত ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় দোনেৎস্কের সম্পূর্ণ এলাকার ওপর রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণ দাবির কথাই বলেছিলেন। পুতিন ইউক্রেনে হাজার হাজার সৈন্য পাঠানোর প্রায় ৪ বছর পরও এবং দোনেৎস্কে রাশিয়া সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদী বিদ্রোহের এক দশকেরও বেশি সময় পর অঞ্চলটির কিছু অংশ এখনো ইউক্রেনের হাতে আছে।
প্রায় সব দেশই দোনেৎস্ককে ইউক্রেনের অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। কিন্তু এটি ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের চারটি অঞ্চলের মধ্যে একটি, যা মস্কো ২০২২ সালে একটি গণভোটের পর সংযুক্ত করার কথা ঘোষণা করে। কিয়েভ ও পশ্চিমা দেশগুলো সেই গণভোটকে ‘প্রহসন’ বলে বাতিল করে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ফক্স নিউজকে বলেছিলেন, যুদ্ধটি এখন দোনেৎস্কের সেই ২০ শতাংশ বা ৫ হাজার বর্গকিলোমিটারের এলাকা নিয়ে, যা রাশিয়া নিয়ন্ত্রণ করে না কিন্তু চায়।
পুতিন ২০২২ সালে ইউক্রেনে সৈন্য পাঠানোর সময় বলেছিলেন, তাঁর লক্ষ্য হলো ‘গত আট বছর ধরে যারা ভয়ভীতি ও গণহত্যার শিকার হয়েছেন...সেই মানুষগুলোকে রক্ষা করা।’ ইউক্রেন এবং তার মিত্ররা বলেছিল, পুতিনের এই দাবি ঔপনিবেশিক ধাঁচের এবং এলাকা দখলের জন্য একটি মিথ্যা অজুহাত মাত্র।
পুতিনের এই দাবি মূলত দোনেৎস্ক এবং লুহানস্ক অঞ্চলে রাশিয়া সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিরুদ্ধে ইউক্রেনের লড়াইয়ের দিকে ইঙ্গিত করে, যারা ২০১৪ সালে ইউক্রেনীয় সরকারি নিয়ন্ত্রণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে কিছু এলাকা দখল করেছিল। পূর্ব ইউক্রেনে এর পরের সংঘর্ষে উভয় পক্ষই শহর ও বেসামরিক নাগরিকদের ওপর গোলাবর্ষণের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করেছিল। মস্কো এই অঞ্চলের বিশাল রুশভাষী জনসংখ্যাকে উদ্ধৃত করে বলেছিল যে,২০২২ সালে হস্তক্ষেপ করা তাদের নৈতিক কর্তব্য।
কিয়েভ বলেছিল, ২০১৪ সালে ইউক্রেনের আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষায় শক্তি দিয়ে জবাব দেওয়া ছাড়া তাদের আর কোনো উপায় ছিল না এবং তারাও বিচ্ছিন্নতাবাদী বাহিনীর বিরুদ্ধে শহর ও বেসামরিক নাগরিকদের ওপর গোলাবর্ষণের অভিযোগ এনেছিল। জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৪ সাল থেকে ২০২২ সালের শুরু পর্যন্ত ইউক্রেনীয় সরকারি বাহিনী এবং বিচ্ছিন্নতাবাদীদের মধ্যে সংঘাতে উভয় পক্ষে ৩ হাজার ১০৬ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত এবং ৯ হাজার বেসামরিক নাগরিক আহত হয়েছিলেন।
দোনেৎস্কের বাকি যে অংশটি রাশিয়া চায়, তার মধ্যে রয়েছে স্লোভিয়ানস্ক এবং ক্রামাতোরস্ক—দুটি ‘দুর্গনগরী’ যা ২০১৪ সাল থেকে ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করে আসছে। এই শহরগুলো ইউক্রেনের বাকি অঞ্চল রক্ষার জন্য কিয়েভের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ দোনেৎস্কের পশ্চিমের ভূমি অনেকটাই সমতল এবং বিশাল খোলা মাঠ; যা রাশিয়াকে দোনেৎস্কের বাইরে অগ্রসর হতে এবং দিনিপ্রো নদীর পূর্ব তীর পর্যন্ত এলাকা দখল করার পথ সহজ করে দেবে।
শহরগুলো পরিখা, ট্যাংক-বিধ্বংসী বাধা, বাংকার এবং মাইনক্ষেত্রসহ অত্যন্ত সুরক্ষিত প্রতিরক্ষা লাইনের অংশ। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, গণভোট ছাড়া দোনেৎস্কের বাকি অংশ রাশিয়ার হাতে তুলে দেওয়া অবৈধ হবে এবং তা ভবিষ্যতে ইউক্রেনের গভীরে আক্রমণের জন্য রাশিয়াকে একটি পথ খুলে দেবে।
কিয়েভের আশঙ্কা, যদি তারা দোনেৎস্কের বাকি অংশ ছেড়ে দেয়, তবে রাশিয়া আবার অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হবে এবং একসময় দোনেৎস্ক ব্যবহার করে পশ্চিম দিকে আক্রমণ চালাবে।
উভয় পক্ষই দোনেৎস্ককে কেন্দ্র করে যুদ্ধে ভয়াবহ ক্ষয়ক্ষতির মুখোমুখি হয়েছে এবং প্রচুর অর্থ ও সরঞ্জাম ব্যয় করেছে। এর মধ্যে বাখমুত শহরের লড়াইও রয়েছে। যেখানে রাশিয়া হাজার হাজার দণ্ডিত অপরাধীকে ভাড়াটে সৈন্যে পরিণত করে রণক্ষেত্রে নামিয়েছিল। এ কারণে, দোনেৎস্ক উভয় দেশের জনমানসে আরও বেশি গুরুত্ব পেয়েছে। ফলে কারও পক্ষে তাদের অবস্থান পরিবর্তন করা কঠিন।
ইউক্রেন চায় না যে, রাশিয়া যুদ্ধক্ষেত্রে জয় করতে ব্যর্থ হওয়া ভূখণ্ডকে উপহার হিসেবে পাক এবং জেলেনস্কি বলেছেন, যে যুদ্ধ রাশিয়া শুরু করেছে, তার জন্য তাদের পুরস্কৃত করা উচিত নয়। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ইনস্টিটিউট ফর দ্য স্টাডি অব ওয়ার অক্টোবর মাসে বলেছিল, রাশিয়ার অগ্রগতির হার দেখে মনে হয় না যে তারা খুব শিগগিরই দোনেৎস্কের বাকি অংশ দখল করতে চলেছে। তবে ‘রাশিয়ার অগ্রগতির একটি অপরিবর্তনীয় হার ধরে নিলে’ তারা ২০২৭ সালের আগস্টের মধ্যে তা নিতে পারে।
রাশিয়ার কমান্ডাররা অবশ্য আরও বেশি আশাবাদী। জেনারেল স্টাফের প্রধান ভ্যালেরি গেরাসিমভ রোববার পুতিনকে বলেছেন, মস্কোর বাহিনী পুরো ফ্রন্ট লাইন বরাবর অগ্রসর হচ্ছে এবং দনবাসের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার জন্য কাজ করছে।
দোনেৎস্ক বন্দর, রেলপথ এবং অন্যান্য ভারী শিল্পের কেন্দ্র। এটি একসময় ইউক্রেনের কয়লা, পরিশোধিত ইস্পাত, কোক, ঢালাই লোহা এবং ইস্পাত উৎপাদনের অর্ধেকেরও বেশি সরবরাহ করত, তবে যুদ্ধের কারণে অনেক খনি ও কারখানা ধ্বংস হয়ে গেছে। এ ছাড়া, দোনেৎস্কে বিরল মৃত্তিকা, টাইটানিয়াম এবং জিরকোনিয়াম রয়েছে—যা এটিকে নিয়ন্ত্রণকারী পক্ষের জন্য আয়ের উৎস।
দোনেৎস্কের ভাগ্য পুতিন এবং জেলেনস্কি উভয়ের ঐতিহাসিক উত্তরাধিকারকে প্রভাবিত করতে পারে। পুতিন নিজেকে জাতিগত রুশদের রক্ষক হিসেবে তুলে ধরেছেন, তারা যেখানেই থাকুক না কেন। পুরো দোনেৎস্ককে সুরক্ষিত করা এই বক্তব্যের মূল কেন্দ্রবিন্দু। জেলেনস্কি ২০১৯ সালে পূর্ব ইউক্রেনের যুদ্ধ অবসান ঘটানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন। ২০২২ সাল থেকে তিনি অনেক বড়, বৈরী প্রতিবেশীর মুখে অস্ত্র এবং সংখ্যায় কম ইউক্রেনের এক দৃঢ় রক্ষক হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছেন।
লড়াই না করে দোনেৎস্ক ছেড়ে দেওয়া—যেখানে অন্তত আড়াই লাখ ইউক্রেনীয় বাস করে—ইউক্রেনীয়দের কাছে বিশ্বাসঘাতকতা হিসেবে দেখা হতে পারে, যাদের অনেকেই যুদ্ধক্ষেত্রে স্বজন হারিয়েছেন। কিয়েভ ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব সোসিওলজির সাম্প্রতিক এক জরিপ অনুসারে, ইউক্রেনীয়দের একটি সংকীর্ণ সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ এখনো আঞ্চলিক ছাড়ের বিরোধিতা করে।
জেলেনস্কিসহ ইউক্রেনের কর্মকর্তারা যেকোনো শান্তি চুক্তির অধীনে কিয়েভের নিয়ন্ত্রণে থাকা ভূমি ছাড়ার সম্ভাবনা প্রত্যাখ্যান করেছেন। জেলেনস্কি বলেন, তাঁর ভূখণ্ড ছেড়ে দেওয়ার কোনো ম্যান্ডেট নেই এবং রাষ্ট্রের ভূমি ব্যক্তিগত সম্পত্তির মতো কেনা-বেচা করা যায় না। ইউক্রেনের সংবিধান অনুসারে, আঞ্চলিক পরিবর্তন অবশ্যই একটি গণভোটের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করতে হবে, যা ইউক্রেনের অন্তত দুই-তৃতীয়াংশ অর্থাৎ, অন্তত ৩০ লাখ ইউক্রেনীয় ভোটারের স্বাক্ষর থাকলে আয়োজন করা যেতে পারে।
তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই গণভোটের বিষয়টির সমালোচনা করেছেন এবং তিনি বলেছিলেন, ‘কিছু ভূমি অদল-বদল হবে।’ এখন ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের আলোচনা মূলত এই দোনেৎস্কের নিয়ন্ত্রণ কার হাতে যাবে সেটাই নিয়েই থমকে আছে।
রয়টার্স থেকে পরিমার্জিত

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতদের মধ্যে ইউক্রেন শান্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনা হলেও প্রকাশ্যে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইউরি উশাকভ, এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন যে অমীমাংসিত ‘আঞ্চলিক সমস্যাই’ মূল বাধা। আর এই অঞ্চল আর কোনোটিই নয়, দোনেৎস্ক।
উশাকভ মূলত ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় দোনেৎস্কের সম্পূর্ণ এলাকার ওপর রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণ দাবির কথাই বলেছিলেন। পুতিন ইউক্রেনে হাজার হাজার সৈন্য পাঠানোর প্রায় ৪ বছর পরও এবং দোনেৎস্কে রাশিয়া সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদী বিদ্রোহের এক দশকেরও বেশি সময় পর অঞ্চলটির কিছু অংশ এখনো ইউক্রেনের হাতে আছে।
প্রায় সব দেশই দোনেৎস্ককে ইউক্রেনের অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। কিন্তু এটি ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের চারটি অঞ্চলের মধ্যে একটি, যা মস্কো ২০২২ সালে একটি গণভোটের পর সংযুক্ত করার কথা ঘোষণা করে। কিয়েভ ও পশ্চিমা দেশগুলো সেই গণভোটকে ‘প্রহসন’ বলে বাতিল করে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ফক্স নিউজকে বলেছিলেন, যুদ্ধটি এখন দোনেৎস্কের সেই ২০ শতাংশ বা ৫ হাজার বর্গকিলোমিটারের এলাকা নিয়ে, যা রাশিয়া নিয়ন্ত্রণ করে না কিন্তু চায়।
পুতিন ২০২২ সালে ইউক্রেনে সৈন্য পাঠানোর সময় বলেছিলেন, তাঁর লক্ষ্য হলো ‘গত আট বছর ধরে যারা ভয়ভীতি ও গণহত্যার শিকার হয়েছেন...সেই মানুষগুলোকে রক্ষা করা।’ ইউক্রেন এবং তার মিত্ররা বলেছিল, পুতিনের এই দাবি ঔপনিবেশিক ধাঁচের এবং এলাকা দখলের জন্য একটি মিথ্যা অজুহাত মাত্র।
পুতিনের এই দাবি মূলত দোনেৎস্ক এবং লুহানস্ক অঞ্চলে রাশিয়া সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিরুদ্ধে ইউক্রেনের লড়াইয়ের দিকে ইঙ্গিত করে, যারা ২০১৪ সালে ইউক্রেনীয় সরকারি নিয়ন্ত্রণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে কিছু এলাকা দখল করেছিল। পূর্ব ইউক্রেনে এর পরের সংঘর্ষে উভয় পক্ষই শহর ও বেসামরিক নাগরিকদের ওপর গোলাবর্ষণের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করেছিল। মস্কো এই অঞ্চলের বিশাল রুশভাষী জনসংখ্যাকে উদ্ধৃত করে বলেছিল যে,২০২২ সালে হস্তক্ষেপ করা তাদের নৈতিক কর্তব্য।
কিয়েভ বলেছিল, ২০১৪ সালে ইউক্রেনের আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষায় শক্তি দিয়ে জবাব দেওয়া ছাড়া তাদের আর কোনো উপায় ছিল না এবং তারাও বিচ্ছিন্নতাবাদী বাহিনীর বিরুদ্ধে শহর ও বেসামরিক নাগরিকদের ওপর গোলাবর্ষণের অভিযোগ এনেছিল। জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৪ সাল থেকে ২০২২ সালের শুরু পর্যন্ত ইউক্রেনীয় সরকারি বাহিনী এবং বিচ্ছিন্নতাবাদীদের মধ্যে সংঘাতে উভয় পক্ষে ৩ হাজার ১০৬ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত এবং ৯ হাজার বেসামরিক নাগরিক আহত হয়েছিলেন।
দোনেৎস্কের বাকি যে অংশটি রাশিয়া চায়, তার মধ্যে রয়েছে স্লোভিয়ানস্ক এবং ক্রামাতোরস্ক—দুটি ‘দুর্গনগরী’ যা ২০১৪ সাল থেকে ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করে আসছে। এই শহরগুলো ইউক্রেনের বাকি অঞ্চল রক্ষার জন্য কিয়েভের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ দোনেৎস্কের পশ্চিমের ভূমি অনেকটাই সমতল এবং বিশাল খোলা মাঠ; যা রাশিয়াকে দোনেৎস্কের বাইরে অগ্রসর হতে এবং দিনিপ্রো নদীর পূর্ব তীর পর্যন্ত এলাকা দখল করার পথ সহজ করে দেবে।
শহরগুলো পরিখা, ট্যাংক-বিধ্বংসী বাধা, বাংকার এবং মাইনক্ষেত্রসহ অত্যন্ত সুরক্ষিত প্রতিরক্ষা লাইনের অংশ। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, গণভোট ছাড়া দোনেৎস্কের বাকি অংশ রাশিয়ার হাতে তুলে দেওয়া অবৈধ হবে এবং তা ভবিষ্যতে ইউক্রেনের গভীরে আক্রমণের জন্য রাশিয়াকে একটি পথ খুলে দেবে।
কিয়েভের আশঙ্কা, যদি তারা দোনেৎস্কের বাকি অংশ ছেড়ে দেয়, তবে রাশিয়া আবার অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হবে এবং একসময় দোনেৎস্ক ব্যবহার করে পশ্চিম দিকে আক্রমণ চালাবে।
উভয় পক্ষই দোনেৎস্ককে কেন্দ্র করে যুদ্ধে ভয়াবহ ক্ষয়ক্ষতির মুখোমুখি হয়েছে এবং প্রচুর অর্থ ও সরঞ্জাম ব্যয় করেছে। এর মধ্যে বাখমুত শহরের লড়াইও রয়েছে। যেখানে রাশিয়া হাজার হাজার দণ্ডিত অপরাধীকে ভাড়াটে সৈন্যে পরিণত করে রণক্ষেত্রে নামিয়েছিল। এ কারণে, দোনেৎস্ক উভয় দেশের জনমানসে আরও বেশি গুরুত্ব পেয়েছে। ফলে কারও পক্ষে তাদের অবস্থান পরিবর্তন করা কঠিন।
ইউক্রেন চায় না যে, রাশিয়া যুদ্ধক্ষেত্রে জয় করতে ব্যর্থ হওয়া ভূখণ্ডকে উপহার হিসেবে পাক এবং জেলেনস্কি বলেছেন, যে যুদ্ধ রাশিয়া শুরু করেছে, তার জন্য তাদের পুরস্কৃত করা উচিত নয়। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ইনস্টিটিউট ফর দ্য স্টাডি অব ওয়ার অক্টোবর মাসে বলেছিল, রাশিয়ার অগ্রগতির হার দেখে মনে হয় না যে তারা খুব শিগগিরই দোনেৎস্কের বাকি অংশ দখল করতে চলেছে। তবে ‘রাশিয়ার অগ্রগতির একটি অপরিবর্তনীয় হার ধরে নিলে’ তারা ২০২৭ সালের আগস্টের মধ্যে তা নিতে পারে।
রাশিয়ার কমান্ডাররা অবশ্য আরও বেশি আশাবাদী। জেনারেল স্টাফের প্রধান ভ্যালেরি গেরাসিমভ রোববার পুতিনকে বলেছেন, মস্কোর বাহিনী পুরো ফ্রন্ট লাইন বরাবর অগ্রসর হচ্ছে এবং দনবাসের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার জন্য কাজ করছে।
দোনেৎস্ক বন্দর, রেলপথ এবং অন্যান্য ভারী শিল্পের কেন্দ্র। এটি একসময় ইউক্রেনের কয়লা, পরিশোধিত ইস্পাত, কোক, ঢালাই লোহা এবং ইস্পাত উৎপাদনের অর্ধেকেরও বেশি সরবরাহ করত, তবে যুদ্ধের কারণে অনেক খনি ও কারখানা ধ্বংস হয়ে গেছে। এ ছাড়া, দোনেৎস্কে বিরল মৃত্তিকা, টাইটানিয়াম এবং জিরকোনিয়াম রয়েছে—যা এটিকে নিয়ন্ত্রণকারী পক্ষের জন্য আয়ের উৎস।
দোনেৎস্কের ভাগ্য পুতিন এবং জেলেনস্কি উভয়ের ঐতিহাসিক উত্তরাধিকারকে প্রভাবিত করতে পারে। পুতিন নিজেকে জাতিগত রুশদের রক্ষক হিসেবে তুলে ধরেছেন, তারা যেখানেই থাকুক না কেন। পুরো দোনেৎস্ককে সুরক্ষিত করা এই বক্তব্যের মূল কেন্দ্রবিন্দু। জেলেনস্কি ২০১৯ সালে পূর্ব ইউক্রেনের যুদ্ধ অবসান ঘটানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন। ২০২২ সাল থেকে তিনি অনেক বড়, বৈরী প্রতিবেশীর মুখে অস্ত্র এবং সংখ্যায় কম ইউক্রেনের এক দৃঢ় রক্ষক হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছেন।
লড়াই না করে দোনেৎস্ক ছেড়ে দেওয়া—যেখানে অন্তত আড়াই লাখ ইউক্রেনীয় বাস করে—ইউক্রেনীয়দের কাছে বিশ্বাসঘাতকতা হিসেবে দেখা হতে পারে, যাদের অনেকেই যুদ্ধক্ষেত্রে স্বজন হারিয়েছেন। কিয়েভ ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব সোসিওলজির সাম্প্রতিক এক জরিপ অনুসারে, ইউক্রেনীয়দের একটি সংকীর্ণ সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ এখনো আঞ্চলিক ছাড়ের বিরোধিতা করে।
জেলেনস্কিসহ ইউক্রেনের কর্মকর্তারা যেকোনো শান্তি চুক্তির অধীনে কিয়েভের নিয়ন্ত্রণে থাকা ভূমি ছাড়ার সম্ভাবনা প্রত্যাখ্যান করেছেন। জেলেনস্কি বলেন, তাঁর ভূখণ্ড ছেড়ে দেওয়ার কোনো ম্যান্ডেট নেই এবং রাষ্ট্রের ভূমি ব্যক্তিগত সম্পত্তির মতো কেনা-বেচা করা যায় না। ইউক্রেনের সংবিধান অনুসারে, আঞ্চলিক পরিবর্তন অবশ্যই একটি গণভোটের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করতে হবে, যা ইউক্রেনের অন্তত দুই-তৃতীয়াংশ অর্থাৎ, অন্তত ৩০ লাখ ইউক্রেনীয় ভোটারের স্বাক্ষর থাকলে আয়োজন করা যেতে পারে।
তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই গণভোটের বিষয়টির সমালোচনা করেছেন এবং তিনি বলেছিলেন, ‘কিছু ভূমি অদল-বদল হবে।’ এখন ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের আলোচনা মূলত এই দোনেৎস্কের নিয়ন্ত্রণ কার হাতে যাবে সেটাই নিয়েই থমকে আছে।
রয়টার্স থেকে পরিমার্জিত

ভারতের শীর্ষস্থানীয় কূটনীতিক ও নিরাপত্তা কর্মকর্তারা কৌশল পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছেন। তাঁরা বলছেন, ভারত অত্যধিক কঠোরহস্ত হয়ে উঠেছে, চীন যেভাবে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে বিরোধী দল ও নাগরিক সমাজের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলতে ব্যর্থ হয়েছে বা সাধারণ মূল্যবোধ ও পরিচয়ের অনুভূতি প্রচারে সফল হয়নি, ভারতের
২৯ মার্চ ২০২৫
বিশ্বজুড়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন উঠে আসছে—‘যদি বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ সীমিত করা হয়, অথবা এই শ্রেণিটিকেই সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়, তবে কী ঘটবে?’ পশ্চিমা দেশগুলোতে চরম ধনী বা বিলিয়নিয়ারদের সংখ্যা ও প্রভাব বাড়তে থাকায় এখন এই প্রশ্ন আরও জোরালো হয়েছে।
১ দিন আগে
জাপানের ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর গত অক্টোবরে দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন সানায়ে তাকাইচি। এরপরই তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত হন জাপানের নতুন ‘আয়রন লেডি’ বা লৌহমানবী’ হিসেবে।
২ দিন আগে
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠককে ঘিরে দিল্লিতে শুরু হয়েছে কূটনৈতিক প্রস্তুতি। চলমান ইউক্রেন যুদ্ধ, যুক্তরাষ্ট্রের চাপ এবং জ্বালানির বাজারে অস্থিরতার মধ্যেই এই শীর্ষ সম্মেলন হতে যাচ্ছে। অর্থনীতি, প্রতিরক্ষা এবং জ্বালানি—এই তিনটি খাত আলোচনার...
২ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

বিশ্বজুড়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন উঠে আসছে—‘যদি বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ সীমিত করা হয়, অথবা এই শ্রেণিটিকেই সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়, তবে কী ঘটবে?’ পশ্চিমা দেশগুলোতে চরম ধনী বা বিলিয়নিয়ারদের সংখ্যা ও প্রভাব বাড়তে থাকায় এখন এই প্রশ্ন আরও জোরালো হয়েছে।
সম্প্রতি টেসলার মালিক ইলন মাস্ক গত নভেম্বরে এমন এক পে-অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন, যা তাঁকে একজন ট্রিলিয়ন ডলারের মালিকে পরিণত করতে পারে। তিনি ইতিমধ্যেই বিশ্বের শীর্ষ ধনী। যদি তিনি প্রস্তাবিত পূর্ণ প্যাকেজটি পান, তাহলে তিনি বিশ্বের ইতিহাসে সর্বকালের সেরা ধনী ব্যক্তিতে পরিণত হবেন। ফোর্বসের হিসেবে বর্তমানে বিশ্বের ৩ হাজার ২৮ জন বিলিয়নিয়ার আছেন। তাঁদের মোট সম্পদ প্রায় ১৬.১ ট্রিলিয়ন ডলার। অন্যদিকে পৃথিবীতে এখনো প্রায় ৮৩ কোটি ১০ লাখ মানুষ দৈনিক তিন ডলারের নিচে আয় করে চরম দারিদ্র্যে দিন কাটান।
বিশ্লেষকদের মতে, বিশ্বের এই বিপুল সম্পদ বৈষম্য শুধু অর্থনীতিকে নয়, রাজনীতি, মিডিয়া ও চিন্তাকেও প্রভাবিত করে। অনেকেই মনে করেন, বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ ও ক্ষমতা বিশ্বব্যবস্থাকে ‘অতি ধনীদের স্বার্থে’ পুনর্গঠন করছে। আবার অন্য একটি মত বলছে, বিলিয়নিয়ারেরা না থাকলে উদ্ভাবন, প্রযুক্তি ও অগ্রগতি থমকে যাবে। কারণ বৃহৎ বিনিয়োগই গড়ে তোলে নতুন সমাধান।
উদ্ভাবন কি থেমে যাবে
অ্যাডাম স্মিথ ইনস্টিটিউটের ম্যাক্সওয়েল মার্লোর মতে, বিলিয়নিয়ারদের বিলোপ করা হলে পশ্চিমা অর্থনীতি বিপর্যস্ত হবে। তাঁর দাবি, অধিকাংশ বিলিয়নিয়ার তাঁদের সম্পদের মালিক হয়েছেন সমাজের চাহিদামতো পণ্য ও প্রযুক্তি তৈরি করে। তাঁদের সম্পদ মূলত কোম্পানির শেয়ার, মেধাস্বত্ব অথবা সম্পত্তি—যা দিনে দিনে ওঠানামা করে। তাঁর মতে, এই ধনী ব্যক্তিদের প্রণোদনাই উদ্ভাবনে গতি আনে; তা না থাকলে উন্নয়ন থেমে যাবে।
যদি ন্যায্যভাবে সম্পদ বণ্টিত হতো
গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ট্যাক্স জাস্টিসের ডেরেজে আলেমায়েহুর মতে, শুধু বিলিয়নিয়ার কর আরোপ নয়—প্রশ্ন হচ্ছে, সেই কর কোথায় যাবে। দক্ষিণ বিশ্বের শ্রম ও সম্পদ থেকেই যে বিপুল সম্পদ তৈরি হয়, তাই তার ন্যায্য অংশ দক্ষিণেই ফিরে আসা উচিত। তিনি বলেন, বৈষম্য কমাতে শুধু অর্থ হস্তান্তর নয়, বৈশ্বিক আর্থিক কাঠামো পুনর্গঠন জরুরি; নইলে বৈষম্য আরও গভীর হবে।
বিধিনিষেধ কি বদলাতে হবে
ডেনিসন ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ফাদেল কাবুব বলেন, বিলিয়নিয়ারেরা আসলে ব্যর্থ নীতির ফল। সিস্টেম যেভাবে সাজানো, তাতে সম্পদ একদিকে কেন্দ্রীভূত হওয়াই স্বাভাবিক। তাঁর মতে, বিলিয়নিয়ার শ্রেণিকে বিলোপ করতে হলে আধুনিক অ্যান্টি ট্রাস্ট ও কঠোর বাজার নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন।
মিডিয়ার ওপর প্রভাব কমবে
গোল্ডস্মিথস বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডেস ফ্রিডম্যান মনে করেন, বিলিয়নিয়ারেরা পুরো মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম কিনে ফেলতে সক্ষম হওয়ায় তথ্যপ্রবাহ তাঁদের স্বার্থেই নিয়ন্ত্রিত হয়। যেমন—বেজোস বা ইলন মাস্কের গণমাধ্যম মালিকানা এই অঙ্গনের স্বাধীনতাকে দীর্ঘমেয়াদে প্রশ্নবিদ্ধ করে। তাই বিলিয়নিয়ার প্রভাব সীমিত হলে তথ্যের উৎসও আরও স্বাধীন হতে পারে।
চরম সম্পদ কি সত্যিই বিলোপ করা সম্ভব
বিশ্ব ইনইক্যুয়ালিটি ল্যাবের লুকাস শ্যানসেলের মতে, ইতিহাসে এর নজির আছে। উদাহরণস্বরূপ—রকেফেলারের একচেটিয়া সাম্রাজ্য ভেঙে দেওয়া, কিংবা রুজভেল্টের সময় সর্বোচ্চ করহার ৯৪ শতাংশে উন্নীত করা। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পানামা পেপারসের মতো ফাঁস যেমন দুর্দান্ত স্বচ্ছতা তৈরি করেছে, তেমনি তা পরিবর্তনের সুযোগও তৈরি করছে। তিনি মনে করেন, ধনীদের ওপর কর আরোপের মতো ধারণা এখন আর ‘যদি’ নয়, বরং ‘কখন’ করা হবে—এ প্রশ্নে এসে দাঁড়িয়েছে।
আল-জাজিরা অবলম্বনে

বিশ্বজুড়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন উঠে আসছে—‘যদি বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ সীমিত করা হয়, অথবা এই শ্রেণিটিকেই সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়, তবে কী ঘটবে?’ পশ্চিমা দেশগুলোতে চরম ধনী বা বিলিয়নিয়ারদের সংখ্যা ও প্রভাব বাড়তে থাকায় এখন এই প্রশ্ন আরও জোরালো হয়েছে।
সম্প্রতি টেসলার মালিক ইলন মাস্ক গত নভেম্বরে এমন এক পে-অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন, যা তাঁকে একজন ট্রিলিয়ন ডলারের মালিকে পরিণত করতে পারে। তিনি ইতিমধ্যেই বিশ্বের শীর্ষ ধনী। যদি তিনি প্রস্তাবিত পূর্ণ প্যাকেজটি পান, তাহলে তিনি বিশ্বের ইতিহাসে সর্বকালের সেরা ধনী ব্যক্তিতে পরিণত হবেন। ফোর্বসের হিসেবে বর্তমানে বিশ্বের ৩ হাজার ২৮ জন বিলিয়নিয়ার আছেন। তাঁদের মোট সম্পদ প্রায় ১৬.১ ট্রিলিয়ন ডলার। অন্যদিকে পৃথিবীতে এখনো প্রায় ৮৩ কোটি ১০ লাখ মানুষ দৈনিক তিন ডলারের নিচে আয় করে চরম দারিদ্র্যে দিন কাটান।
বিশ্লেষকদের মতে, বিশ্বের এই বিপুল সম্পদ বৈষম্য শুধু অর্থনীতিকে নয়, রাজনীতি, মিডিয়া ও চিন্তাকেও প্রভাবিত করে। অনেকেই মনে করেন, বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ ও ক্ষমতা বিশ্বব্যবস্থাকে ‘অতি ধনীদের স্বার্থে’ পুনর্গঠন করছে। আবার অন্য একটি মত বলছে, বিলিয়নিয়ারেরা না থাকলে উদ্ভাবন, প্রযুক্তি ও অগ্রগতি থমকে যাবে। কারণ বৃহৎ বিনিয়োগই গড়ে তোলে নতুন সমাধান।
উদ্ভাবন কি থেমে যাবে
অ্যাডাম স্মিথ ইনস্টিটিউটের ম্যাক্সওয়েল মার্লোর মতে, বিলিয়নিয়ারদের বিলোপ করা হলে পশ্চিমা অর্থনীতি বিপর্যস্ত হবে। তাঁর দাবি, অধিকাংশ বিলিয়নিয়ার তাঁদের সম্পদের মালিক হয়েছেন সমাজের চাহিদামতো পণ্য ও প্রযুক্তি তৈরি করে। তাঁদের সম্পদ মূলত কোম্পানির শেয়ার, মেধাস্বত্ব অথবা সম্পত্তি—যা দিনে দিনে ওঠানামা করে। তাঁর মতে, এই ধনী ব্যক্তিদের প্রণোদনাই উদ্ভাবনে গতি আনে; তা না থাকলে উন্নয়ন থেমে যাবে।
যদি ন্যায্যভাবে সম্পদ বণ্টিত হতো
গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ট্যাক্স জাস্টিসের ডেরেজে আলেমায়েহুর মতে, শুধু বিলিয়নিয়ার কর আরোপ নয়—প্রশ্ন হচ্ছে, সেই কর কোথায় যাবে। দক্ষিণ বিশ্বের শ্রম ও সম্পদ থেকেই যে বিপুল সম্পদ তৈরি হয়, তাই তার ন্যায্য অংশ দক্ষিণেই ফিরে আসা উচিত। তিনি বলেন, বৈষম্য কমাতে শুধু অর্থ হস্তান্তর নয়, বৈশ্বিক আর্থিক কাঠামো পুনর্গঠন জরুরি; নইলে বৈষম্য আরও গভীর হবে।
বিধিনিষেধ কি বদলাতে হবে
ডেনিসন ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ফাদেল কাবুব বলেন, বিলিয়নিয়ারেরা আসলে ব্যর্থ নীতির ফল। সিস্টেম যেভাবে সাজানো, তাতে সম্পদ একদিকে কেন্দ্রীভূত হওয়াই স্বাভাবিক। তাঁর মতে, বিলিয়নিয়ার শ্রেণিকে বিলোপ করতে হলে আধুনিক অ্যান্টি ট্রাস্ট ও কঠোর বাজার নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন।
মিডিয়ার ওপর প্রভাব কমবে
গোল্ডস্মিথস বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডেস ফ্রিডম্যান মনে করেন, বিলিয়নিয়ারেরা পুরো মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম কিনে ফেলতে সক্ষম হওয়ায় তথ্যপ্রবাহ তাঁদের স্বার্থেই নিয়ন্ত্রিত হয়। যেমন—বেজোস বা ইলন মাস্কের গণমাধ্যম মালিকানা এই অঙ্গনের স্বাধীনতাকে দীর্ঘমেয়াদে প্রশ্নবিদ্ধ করে। তাই বিলিয়নিয়ার প্রভাব সীমিত হলে তথ্যের উৎসও আরও স্বাধীন হতে পারে।
চরম সম্পদ কি সত্যিই বিলোপ করা সম্ভব
বিশ্ব ইনইক্যুয়ালিটি ল্যাবের লুকাস শ্যানসেলের মতে, ইতিহাসে এর নজির আছে। উদাহরণস্বরূপ—রকেফেলারের একচেটিয়া সাম্রাজ্য ভেঙে দেওয়া, কিংবা রুজভেল্টের সময় সর্বোচ্চ করহার ৯৪ শতাংশে উন্নীত করা। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পানামা পেপারসের মতো ফাঁস যেমন দুর্দান্ত স্বচ্ছতা তৈরি করেছে, তেমনি তা পরিবর্তনের সুযোগও তৈরি করছে। তিনি মনে করেন, ধনীদের ওপর কর আরোপের মতো ধারণা এখন আর ‘যদি’ নয়, বরং ‘কখন’ করা হবে—এ প্রশ্নে এসে দাঁড়িয়েছে।
আল-জাজিরা অবলম্বনে

ভারতের শীর্ষস্থানীয় কূটনীতিক ও নিরাপত্তা কর্মকর্তারা কৌশল পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছেন। তাঁরা বলছেন, ভারত অত্যধিক কঠোরহস্ত হয়ে উঠেছে, চীন যেভাবে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে বিরোধী দল ও নাগরিক সমাজের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলতে ব্যর্থ হয়েছে বা সাধারণ মূল্যবোধ ও পরিচয়ের অনুভূতি প্রচারে সফল হয়নি, ভারতের
২৯ মার্চ ২০২৫
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতদের মধ্যে ইউক্রেন শান্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনা হলেও প্রকাশ্যে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইউরি উশাকভ, এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন যে অমীমাংসিত ‘আঞ্চলিক সমস্যাই’ মূল বাধা। আর এই অঞ্চল আর কোনোটিই নয়, দোনেৎস্ক।
২০ ঘণ্টা আগে
জাপানের ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর গত অক্টোবরে দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন সানায়ে তাকাইচি। এরপরই তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত হন জাপানের নতুন ‘আয়রন লেডি’ বা লৌহমানবী’ হিসেবে।
২ দিন আগে
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠককে ঘিরে দিল্লিতে শুরু হয়েছে কূটনৈতিক প্রস্তুতি। চলমান ইউক্রেন যুদ্ধ, যুক্তরাষ্ট্রের চাপ এবং জ্বালানির বাজারে অস্থিরতার মধ্যেই এই শীর্ষ সম্মেলন হতে যাচ্ছে। অর্থনীতি, প্রতিরক্ষা এবং জ্বালানি—এই তিনটি খাত আলোচনার...
২ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

জাপানের ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর গত অক্টোবরে দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন সানায়ে তাকাইচি। এরপরই তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত হন জাপানের নতুন ‘আয়রন লেডি’ বা লৌহমানবী’ হিসেবে। এই পরিচয়টিকে তাকাইচি নিজেও গর্বের সঙ্গে গ্রহণ করেন। মার্গারেট থ্যাচারের অনুরাগী এই রক্ষণশীল নেতা ঘরোয়া অর্থনীতি থেকে শুরু করে পররাষ্ট্র ও নিরাপত্তা—সব ক্ষেত্রেই শক্ত অবস্থানের বার্তা দিয়েছেন।
তাকাইচির রাজনৈতিক পরিচয়ের মূল কেন্দ্রে রয়েছে ‘নিপ্পন কেইগি’ নামে জাপানের সবচেয়ে প্রভাবশালী জাতীয়তাবাদী গোষ্ঠী। এই সংগঠন জাপানের সংবিধানের যুদ্ধবিরোধী ৯ নম্বর অনুচ্ছেদ বাতিল, শক্তিশালী সামরিক বাহিনী গঠন এবং ঐতিহ্যবাদী মূল্যবোধে প্রত্যাবর্তনের পক্ষে। পূর্বসুরী শিনজো আবের মতো তাই তাকাইচিও জাপানকে স্বাভাবিক রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চান, যেখানে গোয়েন্দা সংস্থা, আধুনিক সেনাবাহিনী এবং কঠোর নিরাপত্তা আইন থাকবে।
অর্থনীতির ক্ষেত্রে তিনি জাতীয় শিল্পকে শক্তিশালী করা, প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বাড়ানো এবং রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ বৃদ্ধির পক্ষে। একই সঙ্গে কঠোর অভিবাসন নীতি ও রক্ষণশীল মূল্যবোধের প্রচারও তাঁকে ডানপন্থীদের মধ্যে জনপ্রিয় করেছে। তবে এই অভ্যন্তরীণ রাজনীতি এখন আন্তর্জাতিক উত্তেজনার সঙ্গে গেঁথে গেছে—বিশেষ করে, তাইওয়ান ইস্যুতে তাঁর অবস্থানের কারণে।
তাকাইচি ক্ষমতায় আসার পর থেকেই চীনের প্রতি কঠোর মনোভাব দেখাচ্ছেন। বেইজিংকে তিনি কৌশলগত হুমকি হিসেবে দেখেন এবং প্রতিরোধমূলক সামরিক ও কূটনৈতিক পদক্ষেপের পক্ষে জোর দিচ্ছেন। এরই অংশ হিসেবে অক্টোবরের শেষ দিকে তাঁর ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাক্ষাৎ দুই দেশের সম্পর্ককে নতুন সোনালি যুগে প্রবেশ করানোর আভাস দেয়। জাপান প্রতিরক্ষা ব্যয় জিডিপির কমপক্ষে ২ শতাংশে উন্নীত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, আর যুক্তরাষ্ট্র বিরল ধাতুর সরবরাহ নিশ্চিতকরণসহ অর্থনৈতিক সহায়তার ঘোষণা দেয়।
তবে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হলো তাইওয়ানের সঙ্গে তাকাইচির ঘনিষ্ঠতা। তিনি তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট লাই চিং-তের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন, যা চীনের কাছে স্পষ্ট উত্তেজনাকর পদক্ষেপ হিসেবে ধরা পড়েছে। আরও বিতর্ক সৃষ্টি হয় যখন তাকাইচি প্রকাশ্যে বলেন, তাইওয়ানের নিরাপত্তা জাপানের নিরাপত্তার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত। এমনকি তাইওয়ানে চীনা হামলার ক্ষেত্রে জাপানের আত্মরক্ষা বাহিনী হস্তক্ষেপ করতে পারে বলেও ইঙ্গিত দেন তিনি।
এ ক্ষেত্রে চীনের প্রতিক্রিয়াও ছিল কঠোর ও দ্রুত। তারা তাকাইচির বিরুদ্ধে ‘পুরোনো সামরিকতাবাদকে পুনরুজ্জীবিত করার’ অভিযোগ তোলে, রাষ্ট্রদূতকে তলব করে এবং জাতিসংঘে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ পাঠায়। পাশাপাশি সামুদ্রিক এলাকায় কোস্টগার্ডের টহল বাড়ায় চীন, জাপানি সামুদ্রিক পণ্যে সীমাবদ্ধতা আরোপের হুমকি দেয় এবং উত্তেজনাপূর্ণ নানা বিবৃতি দেয়।
এদিকে জাপানও পশ্চিম সীমান্তের ইয়োনাগুনি দ্বীপে বিমান প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনের ঘোষণা দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রও একই দ্বীপে সামরিক অবকাঠামো শক্তিশালী করছে। ফলে পরিস্থিতি আরও জটিল আকার ধারণ করছে।
তবে ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি তাকাইচিকে উত্তেজনা না বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন। কারণ আগামী এপ্রিলে তিনি বেইজিং সফর করতে চান।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তাকাইচির নেতৃত্বে জাপান নতুন ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতায় প্রবেশ করেছে। তাঁর দৃঢ় অবস্থান দেশকে হয় পুনরুত্থানের পথে নেবে—নয়তো চীন–তাইওয়ান উত্তেজনার কেন্দ্রে ঠেলে দেবে। ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে তিনি কোন পথে হাঁটবেন তার ওপর।

জাপানের ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর গত অক্টোবরে দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন সানায়ে তাকাইচি। এরপরই তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত হন জাপানের নতুন ‘আয়রন লেডি’ বা লৌহমানবী’ হিসেবে। এই পরিচয়টিকে তাকাইচি নিজেও গর্বের সঙ্গে গ্রহণ করেন। মার্গারেট থ্যাচারের অনুরাগী এই রক্ষণশীল নেতা ঘরোয়া অর্থনীতি থেকে শুরু করে পররাষ্ট্র ও নিরাপত্তা—সব ক্ষেত্রেই শক্ত অবস্থানের বার্তা দিয়েছেন।
তাকাইচির রাজনৈতিক পরিচয়ের মূল কেন্দ্রে রয়েছে ‘নিপ্পন কেইগি’ নামে জাপানের সবচেয়ে প্রভাবশালী জাতীয়তাবাদী গোষ্ঠী। এই সংগঠন জাপানের সংবিধানের যুদ্ধবিরোধী ৯ নম্বর অনুচ্ছেদ বাতিল, শক্তিশালী সামরিক বাহিনী গঠন এবং ঐতিহ্যবাদী মূল্যবোধে প্রত্যাবর্তনের পক্ষে। পূর্বসুরী শিনজো আবের মতো তাই তাকাইচিও জাপানকে স্বাভাবিক রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চান, যেখানে গোয়েন্দা সংস্থা, আধুনিক সেনাবাহিনী এবং কঠোর নিরাপত্তা আইন থাকবে।
অর্থনীতির ক্ষেত্রে তিনি জাতীয় শিল্পকে শক্তিশালী করা, প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বাড়ানো এবং রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ বৃদ্ধির পক্ষে। একই সঙ্গে কঠোর অভিবাসন নীতি ও রক্ষণশীল মূল্যবোধের প্রচারও তাঁকে ডানপন্থীদের মধ্যে জনপ্রিয় করেছে। তবে এই অভ্যন্তরীণ রাজনীতি এখন আন্তর্জাতিক উত্তেজনার সঙ্গে গেঁথে গেছে—বিশেষ করে, তাইওয়ান ইস্যুতে তাঁর অবস্থানের কারণে।
তাকাইচি ক্ষমতায় আসার পর থেকেই চীনের প্রতি কঠোর মনোভাব দেখাচ্ছেন। বেইজিংকে তিনি কৌশলগত হুমকি হিসেবে দেখেন এবং প্রতিরোধমূলক সামরিক ও কূটনৈতিক পদক্ষেপের পক্ষে জোর দিচ্ছেন। এরই অংশ হিসেবে অক্টোবরের শেষ দিকে তাঁর ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাক্ষাৎ দুই দেশের সম্পর্ককে নতুন সোনালি যুগে প্রবেশ করানোর আভাস দেয়। জাপান প্রতিরক্ষা ব্যয় জিডিপির কমপক্ষে ২ শতাংশে উন্নীত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, আর যুক্তরাষ্ট্র বিরল ধাতুর সরবরাহ নিশ্চিতকরণসহ অর্থনৈতিক সহায়তার ঘোষণা দেয়।
তবে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হলো তাইওয়ানের সঙ্গে তাকাইচির ঘনিষ্ঠতা। তিনি তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট লাই চিং-তের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন, যা চীনের কাছে স্পষ্ট উত্তেজনাকর পদক্ষেপ হিসেবে ধরা পড়েছে। আরও বিতর্ক সৃষ্টি হয় যখন তাকাইচি প্রকাশ্যে বলেন, তাইওয়ানের নিরাপত্তা জাপানের নিরাপত্তার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত। এমনকি তাইওয়ানে চীনা হামলার ক্ষেত্রে জাপানের আত্মরক্ষা বাহিনী হস্তক্ষেপ করতে পারে বলেও ইঙ্গিত দেন তিনি।
এ ক্ষেত্রে চীনের প্রতিক্রিয়াও ছিল কঠোর ও দ্রুত। তারা তাকাইচির বিরুদ্ধে ‘পুরোনো সামরিকতাবাদকে পুনরুজ্জীবিত করার’ অভিযোগ তোলে, রাষ্ট্রদূতকে তলব করে এবং জাতিসংঘে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ পাঠায়। পাশাপাশি সামুদ্রিক এলাকায় কোস্টগার্ডের টহল বাড়ায় চীন, জাপানি সামুদ্রিক পণ্যে সীমাবদ্ধতা আরোপের হুমকি দেয় এবং উত্তেজনাপূর্ণ নানা বিবৃতি দেয়।
এদিকে জাপানও পশ্চিম সীমান্তের ইয়োনাগুনি দ্বীপে বিমান প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনের ঘোষণা দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রও একই দ্বীপে সামরিক অবকাঠামো শক্তিশালী করছে। ফলে পরিস্থিতি আরও জটিল আকার ধারণ করছে।
তবে ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি তাকাইচিকে উত্তেজনা না বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন। কারণ আগামী এপ্রিলে তিনি বেইজিং সফর করতে চান।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তাকাইচির নেতৃত্বে জাপান নতুন ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতায় প্রবেশ করেছে। তাঁর দৃঢ় অবস্থান দেশকে হয় পুনরুত্থানের পথে নেবে—নয়তো চীন–তাইওয়ান উত্তেজনার কেন্দ্রে ঠেলে দেবে। ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে তিনি কোন পথে হাঁটবেন তার ওপর।

ভারতের শীর্ষস্থানীয় কূটনীতিক ও নিরাপত্তা কর্মকর্তারা কৌশল পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছেন। তাঁরা বলছেন, ভারত অত্যধিক কঠোরহস্ত হয়ে উঠেছে, চীন যেভাবে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে বিরোধী দল ও নাগরিক সমাজের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলতে ব্যর্থ হয়েছে বা সাধারণ মূল্যবোধ ও পরিচয়ের অনুভূতি প্রচারে সফল হয়নি, ভারতের
২৯ মার্চ ২০২৫
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতদের মধ্যে ইউক্রেন শান্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনা হলেও প্রকাশ্যে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইউরি উশাকভ, এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন যে অমীমাংসিত ‘আঞ্চলিক সমস্যাই’ মূল বাধা। আর এই অঞ্চল আর কোনোটিই নয়, দোনেৎস্ক।
২০ ঘণ্টা আগে
বিশ্বজুড়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন উঠে আসছে—‘যদি বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ সীমিত করা হয়, অথবা এই শ্রেণিটিকেই সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়, তবে কী ঘটবে?’ পশ্চিমা দেশগুলোতে চরম ধনী বা বিলিয়নিয়ারদের সংখ্যা ও প্রভাব বাড়তে থাকায় এখন এই প্রশ্ন আরও জোরালো হয়েছে।
১ দিন আগে
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠককে ঘিরে দিল্লিতে শুরু হয়েছে কূটনৈতিক প্রস্তুতি। চলমান ইউক্রেন যুদ্ধ, যুক্তরাষ্ট্রের চাপ এবং জ্বালানির বাজারে অস্থিরতার মধ্যেই এই শীর্ষ সম্মেলন হতে যাচ্ছে। অর্থনীতি, প্রতিরক্ষা এবং জ্বালানি—এই তিনটি খাত আলোচনার...
২ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠককে ঘিরে দিল্লিতে শুরু হয়েছে কূটনৈতিক প্রস্তুতি। চলমান ইউক্রেন যুদ্ধ, যুক্তরাষ্ট্রের চাপ এবং জ্বালানির বাজারে অস্থিরতার মধ্যেই এই শীর্ষ সম্মেলন হতে যাচ্ছে। অর্থনীতি, প্রতিরক্ষা এবং জ্বালানি—এই তিনটি খাত আলোচনার কেন্দ্রে থাকবে বলে দুই দেশই নিশ্চিত করেছে।
রাষ্ট্রীয় সফরে বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) ভারতে পৌঁছে পরদিন শুক্রবার মোদির সঙ্গে বৈঠকে বসবেন পুতিন। এই বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের অগ্রগতি পর্যালোচনা ছাড়াও নতুন কয়েকটি আন্তদপ্তর ও বাণিজ্যিক চুক্তি স্বাক্ষরের সম্ভাবনা রয়েছে। রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখা এবং একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কৌশলগত অংশীদারত্ব ধরে রাখতে ভারতের নীতির জন্য এই বৈঠক একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রাশিয়া থেকে ডিসকাউন্টে ভারতের তেল কেনা দীর্ঘদিন ধরেই ওয়াশিংটনকে অসন্তুষ্ট করে আসছে। এই অসন্তুষ্টি থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি ভারতীয় পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন, যা মোট শুল্ককে ৫০ শতাংশে উন্নীত করেছে। তবে ভারত বলছে, তারা আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার বিরোধী নয়, কিন্তু ১৪০ কোটি মানুষের জ্বালানি চাহিদা মেটাতেই বাধ্য হয়ে রাশিয়া থেকে তেল আমদানি করা হচ্ছে। নতুন মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে ‘রসনেফত’ ও ‘লুকওইল’ এর মতো রাশিয়ার কিছু কোম্পানি থেকে ভারত তেল কিনবে না বলে জানিয়েছে। তবে নিষেধাজ্ঞামুক্ত রুশ সরবরাহকারীদের সঙ্গে বাণিজ্য চালু থাকবে।
পুতিনের এই সফরে দুই দেশের অর্থনৈতিক সহযোগিতার ওপর জোর দেওয়া হবে। ভারত রাশিয়ায় ওষুধ, কৃষিপণ্য ও টেক্সটাইল রপ্তানি বাড়াতে চায় এবং পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে শুল্কমুক্ত সুবিধা প্রদানের অনুরোধ জানাবে। এ ছাড়া সার সরবরাহের দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি এবং রাশিয়ায় ভারতীয় দক্ষ জনশক্তির নিরাপদ ও নিয়মিত অভিবাসন নিয়ে আলোচনা এগোতে পারে। দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য, সমুদ্র পরিবহন, স্বাস্থ্যসেবা ও গণমাধ্যম সহযোগিতা বিষয়ক নথিপত্র চূড়ান্তের কাজও চলছে।
বুধবার এই বিষয়ে যুক্তরাজ্যভিত্তিক ইনডিপেনডেন্টের এক নিবন্ধে দাবি করা হয়েছে, জ্বালানি সহযোগিতাই পুতিন-মোদি আলোচনার বড় অংশ দখল করবে। ভারতের ফার ইস্টে বিনিয়োগ, রাশিয়ার সঙ্গে বেসামরিক পারমাণবিক প্রকল্প এবং কুদানকুলাম প্রকল্পের সম্প্রসারণ নিয়ে অগ্রগতি পর্যালোচনা হবে। স্থানীয়ভাবে যন্ত্রাংশ উৎপাদন এবং তৃতীয় দেশে যৌথ পারমাণবিক প্রকল্প বাস্তবায়নের সম্ভাবনাও খতিয়ে দেখা হবে।
প্রতিরক্ষা সহযোগিতা এই সফরের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। ২০১৮ সালের ৫.৪ বিলিয়ন ডলারের চুক্তির আওতায় ভারতের হাতে ইতিমধ্যে রাশিয়ার তিনটি এস-৪০০ স্কোয়াড্রন এসেছে। যুদ্ধজনিত কারণে বাকিগুলোর সরবরাহে যুদ্ধজনিত বিলম্ব হচ্ছে। ভারত এই সরবরাহ দ্রুত নিশ্চিত করতে চাপ দেবে। পাশাপাশি আরও এস-৪০০ কেনার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া হয়নি, যদিও বৈঠক থেকে কোনো ঘোষণা হওয়ার সম্ভাবনা কম। রুশ নির্মিত এসইউ-৩০ এমকেআই যুদ্ধবিমান আপগ্রেড, অস্ত্র সরবরাহ দ্রুততর করা এবং যৌথ সামরিক মহড়ায় সমন্বয় জোরদার করার বিষয়েও আলোচনা হবে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভারত বহুজাতিক অস্ত্র সরবরাহকারীদের দিকে নজর বাড়ালেও রাশিয়া এখনো তাদের সবচেয়ে বড় প্রতিরক্ষা অংশীদার। পুতিনের সফরকে সেই সম্পর্কটি আরও দৃঢ় করার বড় সুযোগ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠককে ঘিরে দিল্লিতে শুরু হয়েছে কূটনৈতিক প্রস্তুতি। চলমান ইউক্রেন যুদ্ধ, যুক্তরাষ্ট্রের চাপ এবং জ্বালানির বাজারে অস্থিরতার মধ্যেই এই শীর্ষ সম্মেলন হতে যাচ্ছে। অর্থনীতি, প্রতিরক্ষা এবং জ্বালানি—এই তিনটি খাত আলোচনার কেন্দ্রে থাকবে বলে দুই দেশই নিশ্চিত করেছে।
রাষ্ট্রীয় সফরে বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) ভারতে পৌঁছে পরদিন শুক্রবার মোদির সঙ্গে বৈঠকে বসবেন পুতিন। এই বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের অগ্রগতি পর্যালোচনা ছাড়াও নতুন কয়েকটি আন্তদপ্তর ও বাণিজ্যিক চুক্তি স্বাক্ষরের সম্ভাবনা রয়েছে। রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখা এবং একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কৌশলগত অংশীদারত্ব ধরে রাখতে ভারতের নীতির জন্য এই বৈঠক একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রাশিয়া থেকে ডিসকাউন্টে ভারতের তেল কেনা দীর্ঘদিন ধরেই ওয়াশিংটনকে অসন্তুষ্ট করে আসছে। এই অসন্তুষ্টি থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি ভারতীয় পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন, যা মোট শুল্ককে ৫০ শতাংশে উন্নীত করেছে। তবে ভারত বলছে, তারা আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার বিরোধী নয়, কিন্তু ১৪০ কোটি মানুষের জ্বালানি চাহিদা মেটাতেই বাধ্য হয়ে রাশিয়া থেকে তেল আমদানি করা হচ্ছে। নতুন মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে ‘রসনেফত’ ও ‘লুকওইল’ এর মতো রাশিয়ার কিছু কোম্পানি থেকে ভারত তেল কিনবে না বলে জানিয়েছে। তবে নিষেধাজ্ঞামুক্ত রুশ সরবরাহকারীদের সঙ্গে বাণিজ্য চালু থাকবে।
পুতিনের এই সফরে দুই দেশের অর্থনৈতিক সহযোগিতার ওপর জোর দেওয়া হবে। ভারত রাশিয়ায় ওষুধ, কৃষিপণ্য ও টেক্সটাইল রপ্তানি বাড়াতে চায় এবং পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে শুল্কমুক্ত সুবিধা প্রদানের অনুরোধ জানাবে। এ ছাড়া সার সরবরাহের দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি এবং রাশিয়ায় ভারতীয় দক্ষ জনশক্তির নিরাপদ ও নিয়মিত অভিবাসন নিয়ে আলোচনা এগোতে পারে। দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য, সমুদ্র পরিবহন, স্বাস্থ্যসেবা ও গণমাধ্যম সহযোগিতা বিষয়ক নথিপত্র চূড়ান্তের কাজও চলছে।
বুধবার এই বিষয়ে যুক্তরাজ্যভিত্তিক ইনডিপেনডেন্টের এক নিবন্ধে দাবি করা হয়েছে, জ্বালানি সহযোগিতাই পুতিন-মোদি আলোচনার বড় অংশ দখল করবে। ভারতের ফার ইস্টে বিনিয়োগ, রাশিয়ার সঙ্গে বেসামরিক পারমাণবিক প্রকল্প এবং কুদানকুলাম প্রকল্পের সম্প্রসারণ নিয়ে অগ্রগতি পর্যালোচনা হবে। স্থানীয়ভাবে যন্ত্রাংশ উৎপাদন এবং তৃতীয় দেশে যৌথ পারমাণবিক প্রকল্প বাস্তবায়নের সম্ভাবনাও খতিয়ে দেখা হবে।
প্রতিরক্ষা সহযোগিতা এই সফরের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। ২০১৮ সালের ৫.৪ বিলিয়ন ডলারের চুক্তির আওতায় ভারতের হাতে ইতিমধ্যে রাশিয়ার তিনটি এস-৪০০ স্কোয়াড্রন এসেছে। যুদ্ধজনিত কারণে বাকিগুলোর সরবরাহে যুদ্ধজনিত বিলম্ব হচ্ছে। ভারত এই সরবরাহ দ্রুত নিশ্চিত করতে চাপ দেবে। পাশাপাশি আরও এস-৪০০ কেনার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া হয়নি, যদিও বৈঠক থেকে কোনো ঘোষণা হওয়ার সম্ভাবনা কম। রুশ নির্মিত এসইউ-৩০ এমকেআই যুদ্ধবিমান আপগ্রেড, অস্ত্র সরবরাহ দ্রুততর করা এবং যৌথ সামরিক মহড়ায় সমন্বয় জোরদার করার বিষয়েও আলোচনা হবে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভারত বহুজাতিক অস্ত্র সরবরাহকারীদের দিকে নজর বাড়ালেও রাশিয়া এখনো তাদের সবচেয়ে বড় প্রতিরক্ষা অংশীদার। পুতিনের সফরকে সেই সম্পর্কটি আরও দৃঢ় করার বড় সুযোগ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

ভারতের শীর্ষস্থানীয় কূটনীতিক ও নিরাপত্তা কর্মকর্তারা কৌশল পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছেন। তাঁরা বলছেন, ভারত অত্যধিক কঠোরহস্ত হয়ে উঠেছে, চীন যেভাবে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে বিরোধী দল ও নাগরিক সমাজের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলতে ব্যর্থ হয়েছে বা সাধারণ মূল্যবোধ ও পরিচয়ের অনুভূতি প্রচারে সফল হয়নি, ভারতের
২৯ মার্চ ২০২৫
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতদের মধ্যে ইউক্রেন শান্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনা হলেও প্রকাশ্যে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইউরি উশাকভ, এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন যে অমীমাংসিত ‘আঞ্চলিক সমস্যাই’ মূল বাধা। আর এই অঞ্চল আর কোনোটিই নয়, দোনেৎস্ক।
২০ ঘণ্টা আগে
বিশ্বজুড়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন উঠে আসছে—‘যদি বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ সীমিত করা হয়, অথবা এই শ্রেণিটিকেই সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়, তবে কী ঘটবে?’ পশ্চিমা দেশগুলোতে চরম ধনী বা বিলিয়নিয়ারদের সংখ্যা ও প্রভাব বাড়তে থাকায় এখন এই প্রশ্ন আরও জোরালো হয়েছে।
১ দিন আগে
জাপানের ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর গত অক্টোবরে দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন সানায়ে তাকাইচি। এরপরই তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত হন জাপানের নতুন ‘আয়রন লেডি’ বা লৌহমানবী’ হিসেবে।
২ দিন আগে