Ajker Patrika

মানুষ কখন ও কেন আত্মহত্যা করে

জাহাঙ্গীর আলম
আপডেট : ০৮ নভেম্বর ২০২১, ১৭: ০২
মানুষ কখন ও কেন আত্মহত্যা করে

‘নারীর হৃদয়-প্রেম-শিশু-গৃহ-নয় সবখানি;/ অর্থ নয়, কীর্তি নয়, স্বচ্ছলতা নয়-/ আরও এক বিপন্ন বিস্ময়/ আমাদের অন্তর্গত রক্তের ভিতরে/ খেলা করে;/ আমাদের ক্লান্ত করে;/ ক্লান্ত-ক্লান্ত করে:’

কখন যে কোথা থেকে মানুষের মনে ভর করে আকাশ সমান ক্লান্তি, বিষণ্নতার কালো মেঘ আচ্ছন্ন করে ফেলে তাকে। জীবন হয়ে ওঠে এক অসহ্য যন্ত্রণার নাম। রাজ্যের নৈরাশ্য গ্রাস করে, ঘুম কেড়ে নেয় তার। কোনো এক ‘ফাল্গুনের রাতের আঁধারে, যখন ডুবে যায় পঞ্চমীর চাঁদ, মরণের সাধ জাগে দুর্নিবার।’ প্রেম, স্নেহ-পৃথিবীর তাবৎ সৌন্দর্য, ঘৃণা, পিছুটান তুচ্ছ মনে হয়। অর্থশূন্য মানবজীবনের অবসানই একমাত্র কাঙ্ক্ষিত হয়ে ওঠে তখন।

আত্মহত্যার মনো-সামাজিক উদ্দীপক এমনই এক রহস্য। জীবনানন্দের মৃত্যুও বুঝি সে কারণেই রহস্যই থেকে গেল!

কী আশ্চর্য! ফাল্গুনের রাতই কেন বেছে নিলেন তিনি? বাংলাদেশে আত্মহত্যায় মৌসুমি প্রভাব আছে কি-না, সে ব্যাপারে কোনো গবেষণা না হলেও তথ্য-উপাত্ত বলছে, নির্দিষ্ট মাসে আত্মহত্যার হার বেশি থাকে। অন্তত পাঁচ বছরে আত্মহত্যার পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে এমন চিত্রই পাওয়া গেছে।

দেখা গেছে, মার্চ ও আগস্টে আত্মহত্যার হার বেশি। তবে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঋতুর বৈশিষ্ট্য পরিবর্তনের কারণে আত্মহত্যার প্রাপ্ত মাসভিত্তিক তথ্যের ভিত্তিতে বলা যায়, বসন্ত ও বর্ষায় বাংলাদেশে আত্মহত্যার হার বেশি থাকে। অন্যভাবে বললে, বসন্তের শেষ ও গ্রীষ্মের শুরুর দিকে আত্মহত্যার পরিমাণ বেশি। অবশ্য বিশ্বের অন্যান্য দেশেও প্রায় একই প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়।

দেশের আত্মহত্যাপ্রবণ অন্যতম দুটি জেলা ঝিনাইদহ ও ঠাকুরগাঁওয়ে পুলিশের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, আত্মহত্যার মাসভিত্তিক প্রবণতায় খুব কমই হেরফের হয়। এর মধ্যে ঝিনাইদহ জেলায় আত্মহত্যার হার সবচেয়ে বেশি।

স্বাধীন গবেষক এস এম ইয়াসির আরাফাত দীর্ঘদিন ধরে আত্মহত্যা নিয়ে গবেষণা করছেন। আত্মহত্যার সিজনাল প্যাটার্ন বা ঋতুভিত্তিক প্রবণতা বুঝতে তিনি নমুনা হিসেবে ঠাকুরগাঁও জেলাকে বেছে নেন। ওই জেলার ২০১৪ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত পুলিশ ডেটা বিশ্লেষণ করে দেখেছেন, এ জেলায় মার্চ ও আগস্টে আত্মহত্যার সংখ্যা সবচেয়ে বেশি থাকে। ২০১৯ সালের আগস্ট পর্যন্ত উপাত্ত বিশ্লেষণ করে এ গবেষণার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে। ঝিনাইদহ জেলার ২০১৮ সাল ও ২০১৯ সালের আগস্ট পর্যন্ত প্রাপ্ত পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে মার্চ-এপ্রিল-মে এবং জুন-জুলাই-আগস্ট এই সময়কালে মোট আত্মহত্যার সংখ্যা সবচেয়ে বেশি—এ পর্যবেক্ষণের পক্ষে সমর্থন পাওয়া গেছে।

এ ব্যাপারে এস এম ইয়াসির আরাফাত তাঁর পর্যবেক্ষণে বলেন, বিশ্বের অধিকাংশ দেশের মতো বাংলাদেশেও বসন্ত ও বর্ষায় (স্প্রিং ও ফল) আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি। ঋতুভিত্তিক এ প্যাটার্ন বুঝতে আমাদের অধিকতর ও বড় পরিসরে গবেষণার প্রয়োজন আছে। আর আত্মহত্যার প্রতিরোধ করতে কৌশল নির্ধারণে এটি বোঝা জরুরি।

২০১৯ সালের ১০ সেপ্টেম্বর বিশ্ব আত্মহত্যা প্রতিরোধ দিবসের প্রতিবেদনে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) বলেছে, ২০১৭ সালে প্রতি ৪০ সেকেন্ডে একজন করে মানুষ আত্মহত্যা করেছে। এক বছরে অন্তত ৩৮টি দেশ আত্মহত্যা প্রতিরোধে বেশ অগ্রগতি করলেও ২০১৮ সালেও প্রতি ৪০ সেকেন্ডে একজন করে মানুষ আত্মহত্যা করেছে। ফলে এ ব্যাপারে অগ্রগতি খুব কম। এ কারণে ওই বছরের ১০ অক্টোবর বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবসের প্রতিপাদ্যও ছিল আত্মহত্যা প্রতিরোধ।

গত বছর প্রতি লাখে আত্মহত্যার হার ছিল ১০ দশমিক ৫। তবে এ হার দেশভেদে ৫ থেকে ৩০ পর্যন্ত। আত্মহত্যায় মোট মৃত্যুর হিসাবে ৭৯ শতাংশ ঘটেছে নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশে। উচ্চ আয়ের দেশে আত্মহত্যা হার বরাবরের মতো সবচেয়ে বেশি; দেখা গেছে, লাখে ১১ দশমিক ৫। উচ্চ আয়ের দেশে পুরুষদের মধ্যে আত্মহত্যার হার নারীর প্রায় তিনগুণ। তবে নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশে দুই লিঙ্গের মধ্যে পার্থক্য খুব কম দেখা গেছে। এমনকি বাংলাদেশসহ কয়েকটি দেশে নারীদের আত্মহত্যার হার পুরুষের চেয়ে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেশি লক্ষ্য করা গেছে।

২০১৬ সালের তথ্যের ভিত্তিতে ডব্লিউএইচওর প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশে আত্মহত্যার হার প্রতি লাখে ৫ দশমিক ৯। এ সময় সারা দেশে সাড়ে ৯ হাজারেরও বেশি মানুষ আত্মহত্যা করেছে।

কিশোর ও তরুণদের মধ্যেই আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি। ১৫-২৯ বছর বয়সীদের মৃত্যুর দ্বিতীয় প্রধান কারণ আত্মহত্যা। প্রথমেই রয়েছে সড়ক দুর্ঘটনা। নারীদের ক্ষেত্রে মাতৃমৃত্যুর পরে মৃত্যুর প্রধান কারণ আত্মহত্যা। আর ছেলেদের অপমৃত্যুর প্রথম কারণ সড়ক দুর্ঘটনা, দ্বিতীয় সহিংসতা এবং তৃতীয় আত্মহত্যা।

আত্মহত্যার প্রধান কৌশল গলায় ফাঁস দেওয়া, এর পর রয়েছে কীটনাশক পান ও আগ্নেয়াস্ত্র। বাংলাদেশের সাম্প্রতিক তথ্য-উপাত্ত বলছে, আত্মহত্যার কৌশলে তেমন কোনো পরিবর্তন হয়নি। যদিও কৃষিপ্রধান দেশগুলোতে বা গ্রামীণ এলাকায় কীটনাশক পানে আত্মহত্যার ঘটনা বেশি।

উইন্টার ব্লু সিনড্রোম
শীত ও বর্ষাকালে মানুষের মধ্যে বিষণ্নতার প্রবণতা বাড়ে। একে বলে সিজনাল অ্যাফেক্ট ডিসঅর্ডার (এসএডি—স্যাড)। তবে মানুষের মধ্যে সাধারণ ধারণা উইন্টার ব্লু সিনড্রোমের প্রকোপের কারণে শীতকালেই বেশি আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে। কিন্তু পরিসংখ্যান বলছে, সারা বিশ্বেই বেশি আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে বসন্ত ও গ্রীষ্মকালে।

২০১৪ সালে আমেরিকান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন সোসাইটির সাইকিয়াট্রি সাময়িকীতে প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখানো হয়, রৌদ্রোজ্জ্বল আবহাওয়ার সঙ্গে আত্মহত্যার প্রবণতার সম্পর্ক রয়েছে। সেখানে গবেষকেরা দাবি করেন, ঋতু কোনো বিষয় নয়; বরং রৌদ্রোজ্জ্বল দিনের সঙ্গে আত্মহননের সম্পর্ক রয়েছে। বিশেষ করে যারা আত্মহত্যার কথা ভাবছেন, তাঁদের জন্য উজ্জ্বল দিন আরও উদ্দীপকের কাজ করে। দেখা গেছে, বেশির ভাগ আত্মহত্যার আগে টানা দুই সপ্তাহ রৌদ্রোজ্জ্বল দিন ছিল। তা ছাড়া টানা ১৫ দিন বা মাসব্যাপী রৌদ্রোজ্জ্বল দিনের চেয়ে কয়েক দিন রোদ ছিল—এ রকম আবহাওয়াতে আত্মহত্যার ঘটনা বেশি দেখা গেছে। অর্থাৎ, যারা আত্মহত্যার কথা ভাবছেন, তাঁদের জন্য উজ্জ্বল দিন আরও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে।

মনোবিজ্ঞানীরা এ বিষয়টির ব্যাখ্যা দিতে না পারলেও স্নায়ুবিজ্ঞানে একটি ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। রৌদ্রোজ্জ্বল দিনে মানুষের শরীরে সেরোটনিন হরমোনের পরিমাণ বেড়ে যায়। স্নায়ু সংকেত পরিবাহক এ উপাদান মানুষের মস্তিষ্কে আনন্দ এবং পাশাপাশি লাগামহীন আবেগ উৎপাদনে ভূমিকা রাখে। সুতরাং যারা আত্মহত্যার কথা ভাবছেন, তাঁদের হঠাৎ করে সেরোটনিন মাত্রা বেড়ে গেলে বেশি আবেগপ্রবণ হয়ে পড়তে পারেন এবং দ্রুত আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত কার্যকর করে ফেলতে পারেন। এ ক্ষেত্রে ‘অগ্নিতে ঘৃতাহুতি’ দিতে পারে একটি রৌদ্রোজ্জ্বল দিন।

বিপরীত পক্ষে, টানা রোদ হলে বা উজ্জ্বল দিন থাকলে একটি স্থিতিশীল মানসিক ভাব তৈরি হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। ফলে এ রকম আবহাওয়ায় আত্মহত্যার ঘটনা কম ঘটতে পারে। যদিও এটি নিয়ে এখনো ব্যাপকভিত্তিক কোনো গবেষণা হয়নি। উপরিউক্ত গবেষণাকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লেখ করেছেন ‘উইন্টার ব্লু’ বইয়ের লেখক ও মনোবিদ ড. নরমান রসেনথাল।

তবে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঋতুর বৈশিষ্ট্যে ব্যাপক পরিবর্তন ঘটছে। এ কারণে নির্দিষ্ট মাসে নিয়মিত উজ্জ্বল দিনের পরিমাণ নির্ধারণ করা কঠিন হয়ে গেছে। বাংলাদেশেও শীত ও বর্ষা ইদানীং অনেক দেরিতে আসছে এবং ঋতুগুলো আজ থেকে ৫০ বছর আগের মতো আচরণ করছে না।

এদিকে শীত ও বর্ষাকালে সিজনাল অ্যাফেক্ট ডিজঅর্ডারের (স্যাড) কারণে মানুষের মধ্যে বিষণ্নতার প্রবণতা বেশি দেখা গেলেও আত্মহত্যার প্রবণতা কম। অপরদিকে গ্রীষ্ম ও বসন্তে আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি থাকার একটি ব্যাখ্যা দিয়েছেন মনোবিদেরা। তাঁরা বলছেন, শীত ও বর্ষায় মানুষের কর্মতৎপরতা অনেক কমে যায়। পারস্পরিক যোগাযোগও বেশ হ্রাস পায়। কিন্তু গ্রীষ্ম ও বসন্তে পূর্ণোদ্যমে তৎপরতা শুরু হয়, মানুষে মানুষে যোগাযোগ ও লেনদেন বাড়ে। ফলে নানা বিষয় তখন মানুষের মানসিক চাপ সৃষ্টি করে। ভারতের কর্নাটক রাজ্যের এক গবেষণায় দেখা গেছে, ফেব্রুয়ারি-মে সময়ে ৪০ শতাংশ আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে। সবচেয়ে বেশি আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে জুন-জানুয়ারি (১০ শতাংশ)। ফলে সময় ভেদে আত্মহত্যা প্রবণতার এই হ্রাস-বৃদ্ধি ও সম্ভাব্য কারণের এ চিহ্নায়নকে একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। যদিও এটি এখনো অনুমান মাত্র।

আরেকটি গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব অঞ্চলের মানুষ বেশি বেশি সামুদ্রিক মাছ খায়, সেসব এলাকায় স্যাডের প্রভাব কম। এ কারণে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় নর্ডিক ও জাপানের তুলনায় স্যাডের প্রভাব বেশি। ২০০৭ সালে পরিচালিত এ গবেষণায় দেখা গেছে, নর্ডিক ও জাপানের মানুষ বছরে মাথাপিছু যথাক্রমে ৯০ কেজি ও ৬০ কেজি মাছ খায়। সেখানে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় মাত্র ২৪ কেজি। ফলে এ ক্ষেত্রে ভিটামিন ডি একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে বলে মনে করা হয়।

আত্মহত্যায় ঋতুভিত্তিক প্রবণতার সঙ্গে শারীর-রাসায়নিক-জৈব ফ্যাক্টর যেমন: দিনের দৈর্ঘ্য, তাপমাত্রা, আর্দ্রতা, দূষণ, জীবাণু অথবা ফুলের রেণুঘটিত বা অন্য কারণে সৃষ্ট অ্যালার্জিজনিত প্রদাহ ইত্যাদি বিষয় জড়িত আছে। উত্তর গোলার্ধে অবস্থিত (ইউরোপ ও এশিয়ার বিস্তীর্ণ অংশ, বাংলাদেশ ও ভারত, চীনসহ) দেশগুলোতে বসন্তকালে আত্মহত্যার হার সবচেয়ে বেশি। ১৯৭৯-২০১১ সালের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে এমন একটি পর্যবেক্ষণ সম্বলিত গবেষণা প্রতিবেদন ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব এনভায়রনমেন্টাল রিসার্চ অ্যান্ড পাবলিক হেলথ-এ প্রকাশিত হয়েছে। অঞ্চলভেদে বসন্তের শেষ নাগাদ থেকে গ্রীষ্মের শুরুতে এবং বর্ষাকালে আত্মহত্যার হার বেশি লক্ষ্য করা গেছে। জার্নাল অব অ্যাফেকটিভ ডিজঅর্ডারে প্রকাশিত আরেকটি গবেষণা প্রতিবেদনেও বসন্তে আত্মহত্যা প্রবণতা বেশি থাকার তথ্য দেওয়া হয়েছে। সেখানে ২০১৬ সালে প্রকাশিত ১৬টি দেশের ২৯টি গবেষণা প্রবন্ধের রেফারেন্স দিয়ে বলা হয়েছে, বসন্ত ও গ্রীষ্মে আত্মহত্যার হার সবচেয়ে বেশি থাকে।

তবে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ঋতুর চরিত্র বদলে যাওয়ার কারণে ঋতুভিত্তিক এ প্রবণতায় ব্যত্যয় ঘটছে। গত এক দশক ধরেই এ ব্যত্যয় লক্ষ্য করছেন গবেষকেরা।

আত্মহত্যা বেশি করে পুরুষেরা, ব্যতিক্রম বাংলাদেশ 
বিশ্বের অধিকাংশ দেশেই পুরুষের আত্মহত্যার হার নারীদের চেয়ে বেশি। তবে বাংলাদেশে এ চিত্র সম্পূর্ণ উল্টো। এ দেশে নারীদের আত্মহত্যার হার পুরুষের প্রায় দ্বিগুণ (৭ ও ৪.৭)। অবশ্য এ তালিকায় বাংলাদেশের পাশে আরও কয়েকটি দেশ রয়েছে: লেসোথো, পাকিস্তান, চীন, মিয়ানমার, মরক্কো, গ্রেনাডা ও অ্যান্টিগুয়া অ্যান্ড বারবুডা। পার্শ্ববর্তী ভারতেও নারীদের চেয়ে পুরুষের আত্মহত্যার হার উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেশি। বাংলাদেশে নারীর আত্মহত্যার হার বেশি হওয়ার প্রধান কারণগুলোর মধ্যে যৌতুক, ধর্ষণ, নারীর প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি ইত্যাদি বিষয়কে উল্লেখ করা হয়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আত্মহত্যাকে অপরাধ হিসেবে বিবেচনা না করে সামাজিক ও মানসিক সংকট হিসেবে চিহ্নিত করতে হবে। এ অনুযায়ী সরকার ও সচেতন নাগরিকদের নানা পদক্ষেপ নিতে হবে। তাহলেই আত্মহত্যা প্রবণতা কমানো সম্ভব। ভারতেও যেখানে আত্মহত্যাকে আর ফৌজদারি অপরাধ গণ্য করাহয় না, সেখানে বাংলাদেশে এমন আইন এখনো রয়ে গেছে। কিন্তু বিপরীতে মানসিক সংকট নিয়ে মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোর কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।

আত্মহত্যার খবর প্রকাশের ক্ষেত্রে গণমাধ্যমের দায়িত্বশীল ভূমিকা, তরুণদের জীবনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার সক্ষমতা তৈরির প্রশিক্ষণ এবং আত্মহত্যার উপকরণ প্রাপ্তি কঠিন করে তুলতে সরকারি পদক্ষেপ আত্মহত্যা কমানোতে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। বিশেষ করে কীটনাশকের বিপণন ও ব্যবহারবিষয়ক আইন কঠোর করে শ্রীলঙ্কা ও দক্ষিণ কোরিয়া দারুণ সফলতা পেয়েছে। ১৯৯৫ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে শ্রীলঙ্কা আত্মহত্যা ৭০ শতাংশ কমিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে।

সর্বোপরি আত্মহত্যাকে একটি মানসিক বিকার হিসেবেই চিহ্নিত করেন মনোবিদেরা। গবেষণায় দেখা গেছে, আত্মহত্যাকারীদের ৯০ শতাংশেরও বেশি মনোবিকারে ভুগছিলেন। এর মধ্যে রয়েছে, মোড ডিজঅর্ডার, মাদকাসক্তি ও সিজোফ্রেনিয়া সম্পর্কিত ডিজঅর্ডার অন্যতম। তবে এসব বিকার সৃষ্টি ও এর প্রাবল্য বৃদ্ধিতে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন, বিষণ্নতা, হতাশা, ক্ষুধা, অনিশ্চয়তা ইত্যাদি বিষয় ‘রিস্ক ফ্যাক্টর’ হিসেবে কাজ করে।

আত্মহত্যার বিষয়টিকে ভারত কিন্তু গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে। আত্মহত্যাকে অপরাধ হিসেবে গণ্য না করতে ২০১৭ সালে আইন সংশোধন করেছে দেশটি। বাংলাদেশে আত্মহত্যায় সহায়তা বা প্ররোচনাদানকারীকে দণ্ডবিধির ৩০৬ ধারা অনুযায়ী ১০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়ার বিধান রয়েছে। এ ছাড়া আত্মহত্যার চেষ্টাকারীর শাস্তি দণ্ডবিধির ৩০৯ ধারায় এক বছর কারাদণ্ডের বিধান আছে। যদিও এমন আইন আত্মহত্যা প্রতিরোধে সহায়ক হয়—এমন কোনো প্রমাণ নেই।

আরও পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

কোন স্বার্থে মুসলিমপ্রধান সোমালিল্যান্ডকে সবার আগে স্বীকৃতি দিল ইসরায়েল

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৫: ৩০
হর্ন অব আফ্রিকার মানচিত্র এবং ভূ-রাজনীতি চিরতরে বদলে যেতে পারে। ছবি: সংগৃহীত
হর্ন অব আফ্রিকার মানচিত্র এবং ভূ-রাজনীতি চিরতরে বদলে যেতে পারে। ছবি: সংগৃহীত

২৬ ডিসেম্বর বিশ্বের প্রথম জাতিসংঘ সদস্যদেশ হিসেবে সোমালিল্যান্ডকে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়েছে ইসরায়েল। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই সিদ্ধান্তকে ‘আব্রাহাম অ্যাকর্ডস’-এর একটি সাহসী সম্প্রসারণ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। হর্ন অব আফ্রিকার এই স্বঘোষিত স্বাধীন মুসলিমপ্রধান ভূখণ্ডটির প্রতি ইসরায়েলের এই গভীর আগ্রহ নিছক কোনো কূটনৈতিক সৌজন্য নয়; বরং এর পেছনে রয়েছে কয়েক দশকের সুদূরপ্রসারী কৌশলগত পরিকল্পনা, নিরাপত্তাঝুঁকি ব্যবস্থাপনা এবং বিশাল অর্থনৈতিক সম্ভাবনা।

সোমালিল্যান্ডের অবস্থান এডেন উপসাগরের তীরে, যা সরাসরি ইয়েমেনের উল্টো দিকে এবং বাব আল-মানদেব প্রণালির ঠিক পাশেই অবস্থিত। বিশ্বের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ জলপথের বাণিজ্য এই পথেই পরিচালিত হয়।

২০২৩ সাল থেকে ইরান-সমর্থিত হুতি বিদ্রোহীরা লোহিত সাগরে ইসরায়েলি সংশ্লিষ্ট জাহাজগুলোতে নিয়মিত হামলা চালিয়ে আসছে। সোমালিল্যান্ডের উপকূলরেখা থেকে হুতিদের মূল ঘাঁটি হোদেইদাহর দূরত্ব ৩০০ থেকে ৫০০ কিলোমিটার। ইসরায়েলের জন্য সোমালিল্যান্ড একটি ‘ফরোয়ার্ড ডিফেন্স’ বা সম্মুখ প্রতিরক্ষা ঘাঁটি হিসেবে কাজ করবে।

ইসরায়েলি থিংকট্যাংক (আইএনএসএস)-এর মতে, সোমালিল্যান্ডে গোয়েন্দা ঘাঁটি স্থাপনের মাধ্যমে ইরান থেকে ইয়েমেনে আসা অস্ত্র চোরাচালান এবং হুতিদের গতিবিধির ওপর সার্বক্ষণিক নজর রাখা সম্ভব হবে। এমনকি সংযুক্ত আরব আমিরাতের অর্থায়নে নির্মিত বারবেরা বন্দর ইসরায়েলি নৌ টহল বা ড্রোন অপারেশনের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠতে পারে।

হর্ন অব আফ্রিকায় ইসরায়েলের এই প্রবেশ মূলত তার আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের আধিপত্য কমানোর একটি পাল্টা কৌশল। তুরস্ক ইতিমধ্যে সোমালিয়ার মোগাদিশুতে বিশাল সামরিক ঘাঁটি এবং বন্দরগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। ইসরায়েল মনে করে, সোমালিল্যান্ডের সঙ্গে জোরালো মৈত্রী এই অঞ্চলে তুরস্কের একক আধিপত্যে ভারসাম্য বজায় রাখবে।

এ ছাড়া ইসরায়েল সব সময় নিজের সীমানার বাইরে মিত্র দেশগুলোতে নিজের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে চায়। সোমালিল্যান্ডের মতো একটি স্থিতিশীল এবং পশ্চিমাপন্থী প্রশাসনের সঙ্গে বন্ধুত্ব ইসরায়েলকে লোহিত সাগরের নিরাপত্তা বলয়ে একক কর্তৃত্ব দেবে।

অর্থনৈতিক সম্ভাবনা ও প্রাকৃতিক সম্পদের ভান্ডারও আগ্রহের মূলে রয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, সোমালিল্যান্ড কেবল একটি কৌশলগত বন্দর নয়, বরং এটি সম্পদের একটি অব্যবহৃত খনি।

সোমালিল্যান্ডে বিপুল পরিমাণ অপরিশোধিত তেল, গ্যাস এবং বিরল মৃত্তিকা খনিজ মজুত থাকার জোরালো সম্ভাবনা রয়েছে। ইসরায়েলের উচ্চ প্রযুক্তি এবং অস্ত্র তৈরির কারখানায় এই কাঁচামালগুলো অত্যন্ত জরুরি।

ইসরায়েল ইতিমধ্যে কৃষি ক্ষেত্রে লবণাক্ত পানি পরিশোধন, উন্নত সেচব্যবস্থা এবং সাইবার নিরাপত্তা খাতে বড় বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। সোমালিল্যান্ডের জন্য এই অংশীদারত্ব হবে অর্থনৈতিক স্বাধীনতার চাবিকাঠি।

তবে এতে কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জও রয়েছে। ইসরায়েলের এই স্বীকৃতি যেমন সোমালিল্যান্ডের জন্য বৈধতার দ্বার উন্মোচন করেছে, তেমনি এটি আঞ্চলিক উত্তেজনারও জন্ম দিয়েছে।

সোমালিয়া এই পদক্ষেপকে তাদের অখণ্ডতার ওপর ‘সরাসরি আক্রমণ’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। আফ্রিকান ইউনিয়ন (এইউ) এবং আরব লিগ এই স্বীকৃতির তীব্র নিন্দা জানিয়েছে এবং সতর্ক করেছে যে এটি আফ্রিকা মহাদেশে নতুন করে অস্থিতিশীলতা তৈরি করতে পারে।

পশ্চিমা বিশ্বও ইসরায়েলের এই পদক্ষেপে দ্বিধাগ্রস্ত। মার্কিন সিনেটর টেড ক্রুজ সোমালিল্যান্ডকে একটি নির্ভরযোগ্য অংশীদার হিসেবে সমর্থন করলেও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র এখনই এই পথে হাঁটবে না, বরং পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবে।

সর্বোপরি ইসরায়েলের জন্য সোমালিল্যান্ড একটি স্থিতিশীল এবং দীর্ঘমেয়াদি মিত্র, যারা সন্ত্রাসবাদ দমনে ইসরায়েলের সমমনা বলেই মনে করা হয়। এই স্বীকৃতির মাধ্যমে ইসরায়েল লোহিত সাগরে নিজের নৌ-শক্তির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চায়। তবে এই পদক্ষেপ যদি ইথিওপিয়া বা সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো দেশগুলোকে সোমালিল্যান্ডকে স্বীকৃতি দিতে উৎসাহিত করবে। তবে এর ফলে হর্ন অব আফ্রিকার মানচিত্র এবং ভূরাজনীতি চিরতরে বদলে যেতে পারে। এটি যেমন একটি নতুন সামরিক ও অর্থনৈতিক অক্ষের সম্ভাবনা তৈরি করেছে, তেমনি আঞ্চলিক সংঘাতের ঝুঁকিও বাড়িয়ে দিয়েছে।

তথ্যসূত্র: সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট, রয়টার্স, আল জাজিরা এবং আটলান্টিক কাউন্সিল।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নাইজেরিয়ায় কোন আইএসকে আঘাত করল মার্কিন বাহিনী

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
নাইজেরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় সোকোটো রাজ্যে আইএস আস্তানা লক্ষ্য করে মার্কিন নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ থেকে টমাহক মিসাইল নিক্ষেপ করা হয়। ছবি: সংগৃহীত
নাইজেরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় সোকোটো রাজ্যে আইএস আস্তানা লক্ষ্য করে মার্কিন নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ থেকে টমাহক মিসাইল নিক্ষেপ করা হয়। ছবি: সংগৃহীত

বড়দিনের রাতে নাইজেরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় সোকোটো রাজ্যে মার্কিন বাহিনীর বিমান হামলা বিশ্বজুড়ে নতুন করে আলোচনায় নিয়ে এসেছে জঙ্গিগোষ্ঠী ‘ইসলামিক স্টেট’ বা আইএসকে। মধ্যপ্রাচ্যে পরাজয়ের পর গোষ্ঠীটি এখন আফ্রিকায় তাদের জাল বিস্তার করছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছেন, নাইজেরিয়ায় খ্রিষ্টানদের লক্ষ্য করে নৃশংস হত্যাযজ্ঞ চালানোর কারণে তিনি এ হামলার নির্দেশ দিয়েছেন।

ইসলামিক স্টেট কী

ইসলামিক স্টেট (যাকে আইএসআইএস বা দায়েশ নামেও ডাকা হয়) একটি সুন্নি চরমপন্থী গোষ্ঠী। ইরাক ও সিরিয়ায় উত্থান ঘটিয়ে তারা একসময় ‘খিলাফত’ ঘোষণা করেছিল। এরপর ২০১৪ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে ইরাক ও সিরিয়ার বিশাল অংশ তাদের দখলে ছিল। তখন তারা কঠোর শরিয়াহ আইন জারি করে এবং প্রকাশ্যে শিরশ্ছেদ ও নির্যাতনের মতো নৃশংসতা চালিয়ে বিশ্বকে স্তব্ধ করে দেয়।

পরে যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন বহুজাতিক বাহিনীর ক্রমাগত অভিযানের মুখে ইরাকের মসুল ও সিরিয়ার রাক্কায় তাদের পতন ঘটে। তবে সংগঠনটি পুরোপুরি নির্মূল না হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে।

বর্তমানে তারা কোথায় সক্রিয়

মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।

এশিয়া মহাদেশের মধ্যে আফগানিস্তান ও পাকিস্তানে ‘আইএস-খোরাসান’ নামে তারা সক্রিয়। এ ছাড়া ফিলিপাইনের মিন্দানাও অঞ্চলেও তাদের অনুসারী রয়েছে। জাতিসংঘ মনে করে, বর্তমানে তাদের অন্তত ১০ হাজার সক্রিয় সদস্য রয়েছে।

লক্ষ্য ও বর্তমান কৌশল

আইএসের মূল লক্ষ্য তাদের চরমপন্থী মতাদর্শ বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে দেওয়া। তবে সরাসরি যুদ্ধের বদলে তারা এখন কিছু নতুন কৌশল নিয়েছে। যেমন, অ্যাফিলিয়েট নেটওয়ার্ক—নিজেরা সরাসরি যুক্ত না হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানীয় জঙ্গিগোষ্ঠীকে নিজেদের ‘শাখা’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে প্রভাব বিস্তার করা। লোন উলফ অ্যাটাক—সংঘবদ্ধ হামলার পরিবর্তে একজন বা দুই ব্যক্তির সমন্বয়ে বড় ধরনের হামলা। সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই বিচে ইহুদিদের এক অনুষ্ঠানে বন্দুক হামলার পেছনে আইএসের এই কৌশল ছিল বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। অনলাইন প্রচারণা—টেলিগ্রামের মতো প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে আতঙ্ক ছড়ানো এবং নতুন সদস্য সংগ্রহ করা।

মার্কিন সামরিক বাহিনীর মতে, আইএসের বর্তমান বিশ্ব নেতা হলেন আবদুলকাদির মুমিন। তিনি বর্তমানে আইএসের সোমালিয়া শাখার প্রধান।

আইএসের সাম্প্রতিক কিছু বড় হামলা

কঙ্গোতে চলতি বছরের গত অক্টোবরে একটি গির্জায় নৈশকালীন প্রার্থনার সময় হামলায় ৪৩ জন নিহত হয়, যার দায় স্বীকার করে আইএস। গত ফেব্রুয়ারিতে সোমালিয়ায় একাধিক সামরিক ঘাঁটিতে আত্মঘাতী গাড়িবোমা হামলা চালায় আইএস। চলতি মাসে সিরিয়ায় দুই মার্কিন সেনা ও একজন দোভাষী নিহত হন, যার নেপথ্যে আইএসের হাত রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ ঘটনার পর চলতি সপ্তাহে সিরিয়ায় আইএসের ঘাঁটি লক্ষ্য করে ব্যাপক হামলা চালিয়েছে মার্কিন সামরিক বাহিনী।

নাইজেরিয়ায় মার্কিন হামলা এটাই প্রমাণ করে যে, আইএস এখন আর কেবল মধ্যপ্রাচ্যের সমস্যা নয়। বিশেষ করে, সাহেল ও পশ্চিম আফ্রিকায় তাদের ক্রমবর্ধমান শক্তি বিশ্ব নিরাপত্তার জন্য নতুন এক চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

রয়টার্স থেকে সংক্ষেপে অনূদিত

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নাইজেরিয়ায় কেন হামলা চালাল মার্কিন বাহিনী, খ্রিষ্টান নিপীড়নের সঙ্গে এর সম্পর্ক কী

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: এএফপি
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: এএফপি

নাইজেরিয়ার সরকার খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়ন ঠেকাতে ব্যর্থ—এমন অভিযোগে কয়েক সপ্তাহ ধরে সমালোচনার পর অবশেষে বড়দিনের রাতে (২৫ ডিসেম্বর) পশ্চিম আফ্রিকার দেশটিতে বিমান হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। সরাসরি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে নাইজেরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় সোকোটো রাজ্যে এ হামলা চালানো হয়।

ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ান বলছে, ট্রাম্প প্রশাসন আইএস জঙ্গিদের একাধিক আস্তানা লক্ষ্য করে এসব হামলা চালায়। হামলায় মার্কিন নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ থেকে টমাহক মিসাইল নিক্ষেপ করা হয়েছিল। এসব হামলায় একাধিক আইএস জঙ্গি নিহত ও তাঁদের আস্তানা ধ্বংস হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে, তবে সঠিক সংখ্যা এখনো জানানো হয়নি।

ট্রাম্প প্রশাসনের সাম্প্রতিক বিদেশি সামরিক হস্তক্ষেপগুলোর সর্বশেষ উদাহরণ নাইজেরিয়ায় হামলা। অথচ ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনী প্রচারণায় তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে ‘অন্তহীন যুদ্ধ’ থেকে বের করে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দাবি করেছেন, এই হামলার মূল উদ্দেশ্য ছিল নাইজেরিয়ায় বসবাসরত খ্রিষ্টানদের ওপর চলমান হত্যাযজ্ঞ বন্ধ করা। তাঁর মতে, আইএস জঙ্গিরা পরিকল্পিতভাবে খ্রিষ্টানদের লক্ষ্যবস্তু বানাচ্ছে। হামলার ঘোষণা দিয়ে ট্রাম্প তাঁর ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে লিখেছিলেন, ‘আমি আগেই এই সন্ত্রাসীদের সতর্ক করেছিলাম, তারা যদি খ্রিষ্টানদের হত্যা বন্ধ না করে, তবে তাদের চড়ম মূল্য দিতে হবে। আজ রাতে (বড়দিন) ঠিক তা-ই ঘটেছে।’

গত অক্টোবর ও নভেম্বর মাসেও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নাইজেরিয়ার নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে ‘খ্রিষ্টান গণহত্যার’ শামিল বলে অভিহিত করেছিলেন।

মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তরের এক কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা এপিকে জানান, নাইজেরিয়া সরকারের অনুমোদন নিয়ে দেশটির সঙ্গে সমন্বয় করেই এসব হামলা চালানো হয়েছে। নাইজেরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, এই সহযোগিতার মধ্যে গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদান ও কৌশলগত সমন্বয় ছিল।

কেন নাইজেরিয়ায় হামলা চালাল ট্রাম্প প্রশাসন

অনেক আগে থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের ডানপন্থী রাজনীতিক গোষ্ঠীগুলো নাইজেরিয়ায় খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়নের অভিযোগ তুলছে। গত সেপ্টেম্বরে রিপাবলিকান সিনেটর টেড ক্রুজ কিছু নাইজেরীয় কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞার আহ্বান জানান। তিনি দাবি করেন, যারা ‘ইসলামপন্থী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর মাধ্যমে খ্রিষ্টান ও অন্য ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সহিংসতা সহজতর করছে’, তাদের নিষিদ্ধ করা উচিত।

তবে বর্তমানে বিষয়টি মার্কিন ডানপন্থী ও ইভানজেলিক্যাল খ্রিষ্টান মহলে বড় ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। আবার এই ডানপন্থী ও ইভানজেলিক্যাল খ্রিষ্টানরাই ট্রাম্পের বড় সমর্থক। বিশ্লেষকদের মতে, নিজের সমর্থকদের তুষ্ট করতে এবং বিশ্বজুড়ে ‘খ্রিষ্টানদের রক্ষাকর্তা’ হিসেবে নিজেকে জাহির করতেই ট্রাম্প এই ত্বরিত সামরিক পদক্ষেপ নিয়েছেন।

এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা আইনের আওতায় নাইজেরিয়াকে ‘বিশেষ উদ্বেগের দেশ’ হিসেবে চিহ্নিত করেন ট্রাম্প। বেশ কিছু মার্কিন আইনপ্রণেতা ও রক্ষণশীল খ্রিষ্টান গোষ্ঠীর লাগাতার লবিংয়ের পর এই সিদ্ধান্ত আসে। এর কিছুদিন পরই তিনি নাইজেরিয়ায় সম্ভাব্য সামরিক অভিযানের পরিকল্পনা করতে পেন্টাগনকে নির্দেশ দেন। সে সময় ট্রাম্প বলেন, নাইজেরিয়া সরকার যদি খ্রিষ্টান হত্যাকাণ্ড বন্ধ না করে, তবে তিনি ‘গানস-এ-ব্লেজিং’ অর্থাৎ পূর্ণ শক্তি নিয়ে হস্তক্ষেপ করতে পারেন।

নাইজেরিয়ায় কি আসলেই খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়ন চলছে

নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; এর পেছনে নানা কারণ রয়েছে।

উদাহরণ হিসেবে, যাযাবর মুসলিম পশুপালক ও খ্রিষ্টান কৃষক সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রাণঘাতী সংঘর্ষ মূলত চারণভূমি ও পানির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে। তবে ধর্মীয় ও জাতিগত বিভাজন এটিকে আরও জটিল করে তুলেছে। আবার অনেক বিশ্লেষকের মতে, যাজকদের অপহরণের ঘটনা ধর্মীয় বিদ্বেষের চেয়ে অর্থনৈতিক লাভের উদ্দেশ্যেই বেশি ঘটে, কারণ, তাঁরা প্রভাবশালী ব্যক্তি এবং তাঁদের অনুসারী বা প্রতিষ্ঠান দ্রুত মুক্তিপণের টাকা জোগাড় করতে পারে।

নাইজেরিয়া সরকারের অবস্থান

ট্রাম্প প্রশাসনের হামলার পর নাইজেরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইএস-নিধনে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতার প্রশংসা করেছে। কিন্তু খ্রিষ্টান নিপীড়নের বিষয়টির সঙ্গে মার্কিন অভিযানের কোনো সম্পর্ক আছে কি না, এ বিষয়ে কিছু বলেনি।

এক বিবৃতিতে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, খ্রিষ্টান, মুসলমান কিংবা অন্য কোনো সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে পরিচালিত সব ধরনের সহিংসতাই নাইজেরিয়ার মূল্যবোধ এবং আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার প্রতি অবমাননা।

নাইজেরিয়ার বাস্তবতাও আসলে এমন। দীর্ঘদিন ধরে দেশটি নিরাপত্তা পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে। গত কয়েক বছরে দেশটিতে হাজারো মানুষ নিহত এবং শত শত মানুষ অপহৃত হয়েছে।

উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ২০০৯ সাল থেকে বোকো হারাম ও ইসলামিক স্টেট ওয়েস্ট আফ্রিকা প্রভিন্স (আইএসডব্লিউএপি) বিদ্রোহ চালিয়ে যাচ্ছে। এতে কয়েক দশক ধরে কয়েক হাজার মানুষ নিহত এবং লাখো মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে সশস্ত্র অপরাধী চক্র, যাদের সাধারণত ‘ডাকাত’ বলা হয়, তারাও গণ-অপহরণ ও হামলা চালাচ্ছে। এমন পরিস্থিতি মুসলমান ও খ্রিষ্টান উভয় সম্প্রদায়কেই প্রভাবিত করছে।

এর আগে ট্রাম্পের অভিযোগের জবাবে নাইজেরিয়ার সরকার বিষয়টি স্বীকার করে বলেছিল, দেশটিতে কেবল খ্রিষ্টান নয়—বিভিন্ন ধর্মের মানুষই চরমপন্থী গোষ্ঠীগুলোর হাতে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে।

গত মাসে নাইজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট বোলা আহমেদ তিনুবু বলেন, নাইজেরিয়াকে ধর্মীয়ভাবে অসহিষ্ণু দেশ হিসেবে চিত্রিত করা বাস্তবতার প্রতিফলন নয়। তিনি বলেন, ‘ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সহনশীলতা আমাদের সম্মিলিত পরিচয়ের একটি মূল ভিত্তি এবং এটি সব সময়ই থাকবে। নাইজেরিয়া এমন একটি দেশ, যেখানে সংবিধান সব ধর্মের নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করে।’

এদিকে, ‘অন্তহীন যুদ্ধ’ বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এলেও নাইজেরিয়ায় ট্রাম্পের নতুন সামরিক হস্তক্ষেপ আফ্রিকার ভূরাজনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। অনেকে বলছেন, ‘খ্রিষ্টান নিপীড়ন’ আসলে ট্রাম্পের অজুহাত; তাঁর লক্ষ্য নাইজেরিয়ার তেলের খনি।

দ্য গার্ডিয়ান থেকে অনুবাদ করেছেন জগতপতি বর্মা

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

‘ভেনেজুয়েলা সংকট’ কীভাবে আন্তর্জাতিক সংঘাতের রূপ নিচ্ছে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে। এই প্রেক্ষাপটে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিয়ো লুলা দা সিলভা ভেনেজুয়েলায় মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপ মানবিক বিপর্যয় ডেকে আনবে বলে সতর্ক করেছেন। তাঁর মতে, এই সতর্কতা শুধু ভেনেজুয়েলাকে ঘিরে নয়—পুরো দক্ষিণ আমেরিকার ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার প্রশ্নও তুলে ধরছে।

ভেনেজুয়েলার সংকটের মূল কারণ দেশটির দীর্ঘস্থায়ী রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিতর্কিত নির্বাচন, অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা এবং মানবাধিকার পরিস্থিতি। প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর সরকারকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের একটি অংশ কর্তৃত্ববাদী ও অগণতান্ত্রিক বলে মনে করে। এর জবাবে ওয়াশিংটন একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এসব নিষেধাজ্ঞার মূল লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি, যা দেশটির আয়ের প্রধান উৎস।

ভেনেজুয়েলা বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ তেল মজুতের অধিকারী। ফলে তাদের তেল শুধু অর্থনীতি নয়, কূটনীতিরও কেন্দ্রে অবস্থান করছে। যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, ভেনেজুয়েলার তেল বিক্রির পথ বন্ধ করতে পারলে মাদুরো সরকার দুর্বল হবে। এই লক্ষ্যেই সাম্প্রতিক সময়ে দেশটির নিষেধাজ্ঞাভুক্ত তেল ট্যাংকারগুলোকে অবরোধের মতো কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে মার্কিন বাহিনী। তবে এই পদক্ষেপকে সরাসরি যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেওয়ার ঝুঁকি হিসেবে দেখছেন দক্ষিণ আমেরিকার অনেক নেতা।

ব্রাজিল ও মেক্সিকোর মতো লাতিন শক্তিগুলো এই কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হস্তক্ষেপের সম্ভাবনার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, দক্ষিণ আমেরিকার ইতিহাস বহিঃশক্তির সামরিক হস্তক্ষেপের তিক্ত অভিজ্ঞতায় ভরা। ফকল্যান্ড যুদ্ধের চার দশক পর আবারও কোনো অন্য মহাদেশীয় শক্তির সামরিক উপস্থিতি এই মহাদেশকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে—এমন আশঙ্কাই তিনি প্রকাশ করেছেন।

এদিকে রাশিয়া ও চীন ভেনেজুয়েলার সরকারের প্রতি সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। রাশিয়ার ক্ষেত্রে এটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব মোকাবিলার কৌশল, আর চীনের জন্য এটি তেল ও ঋণনির্ভর অর্থনৈতিক স্বার্থের প্রশ্ন। ফলে ভেনেজুয়েলা ক্রমেই যুক্তরাষ্ট্র বনাম রাশিয়া–চীন প্রভাব বিস্তারের আরেকটি ময়দানে পরিণত হচ্ছে।

‘মার্কোসুর’ সম্মেলনে লাতিন আমেরিকার দেশগুলো যে যৌথ অবস্থান নিয়েছে, তা এই বাস্তবতাকেই প্রতিফলিত করে। তারা ভেনেজুয়েলায় গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষার কথা বলেছে, তবে স্পষ্টভাবে সামরিক পথ প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের মতে, সংকটের সমাধান হতে পারে কেবল সংলাপ ও শান্তিপূর্ণ কূটনীতির মাধ্যমে।

সব মিলিয়ে ভেনেজুয়েলার সংকট এখন আর একটি দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যা নয়। তেল, আদর্শিক দ্বন্দ্ব, আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও বৈশ্বিক ক্ষমতার লড়াই—সবকিছু মিলিয়ে এটি আন্তর্জাতিক রাজনীতির এক স্পর্শকাতর সংঘাতক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত