আজকের পত্রিকা ডেস্ক

ভারতে কয়েক দশকের ‘জঙ্গল বিদ্রোহ’ কি অবশেষে সমাপ্তির দিকে এগোচ্ছে? গত সপ্তাহে দেশটির সবচেয়ে বেশি দিন ধরে মোস্ট ওয়ান্টেড তালিকায় থাকা মাওবাদী নেতা নাম্বালা কেশবরাও ছত্রিশগড় রাজ্যে এক অভিযানে ২৬ জনসহ নিহত হয়েছেন। তিনি বাসবরাজু নামেও পরিচিত। ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এই অভিযানকে তিন দশকের মধ্যে বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে ‘সবচেয়ে কঠোর নিষ্পত্তিমূলক আঘাত’ বলে অভিহিত করেছেন। এই অভিযানে এক পুলিশ কর্মকর্তাও প্রাণ হারিয়েছেন।
বাসবরাজুর মৃত্যু কেবল ভারত সরকারের কৌশলগত বিজয়ই নয়, মাওবাদীদের বস্তারে অবস্থিত শেষ প্রতিরক্ষা রেখাতেও ভাঙনের নির্দেশ করে। এই এলাকায় দলটি ১৯৮০-এর দশক থেকে সবচেয়ে শক্তিশালী দুর্গ তৈরি করেছিল।
১৯৬৭ সালে পশ্চিমবঙ্গের নকশালবাড়ি গ্রাম থেকে মাওবাদীদের বিদ্রোহ শুরু হয়। এ কারণে পরে তারা ‘নকশাল’ নামে পরিচিত হয়। কয়েক দশক ধরে পুনর্গঠিত হয়ে মধ্য ও পূর্ব ভারতজুড়ে এক ‘রেড করিডর’ তৈরি করে এই সশস্ত্র দল। এই করিডর পূর্বে ঝাড়খণ্ড থেকে পশ্চিমে মহারাষ্ট্র পর্যন্ত বিস্তৃত এবং দেশের এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি জেলাজুড়ে এর অবস্থান। সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং এই বিদ্রোহকে ভারতের ‘সবচেয়ে বড় অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা হুমকি’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছিলেন।
সাউথ এশিয়ান টেররিজম পোর্টালের তথ্য অনুযায়ী, কমিউনিস্ট শাসনের দাবিতে শুরু হওয়া এই সশস্ত্র সংগ্রাম ২০০০ সাল থেকে প্রায় ১২ হাজার মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে। বিদ্রোহীরা বলে, তারা আদিবাসী, উপজাতি এবং গ্রামীণ দরিদ্রদের অধিকারের জন্য লড়ছে। তাদের অভিযোগ, রাষ্ট্র দশকের পর দশক ধরে এই জনগোষ্ঠীগুলোকে অবহেলা করেছে এবং ভূমি দখল করে নিয়েছে।
মাওবাদী আন্দোলন আনুষ্ঠানিকভাবে বাম-উগ্রবাদ বলে বিবেচিত। ২০০৪ সালে প্রধান মার্কসবাদী-লেনিনবাদী গোষ্ঠীগুলো সিপিআই (মাওবাদী)-এর সঙ্গে একীভূত হওয়ার মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক রূপ নেয়। এই দলটির আদর্শিক শিকড় ১৯৪৬ সালের তেলেঙ্গানা রাজ্যের কৃষক বিদ্রোহে। এই সময়ে এসে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সরকার ২০২৬ সালের মার্চের মধ্যে মাওবাদ নির্মূল করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো—সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে থাকা রণক্লান্ত বিদ্রোহ কি সত্যিই শেষ—নাকি এর দীর্ঘ, রক্তাক্ত পরিসরে কেবলই আরেকটি বিরতি?
সাংবাদিক, সমাজবিজ্ঞানী ও মাওবাদী আন্দোলনের দীর্ঘদিনের পর্যবেক্ষক এন ভেনুগোপাল বলেন, ‘এটি সাময়িক বিরতি। তবে মার্কসবাদী-লেনিনবাদী আন্দোলনগুলো এখন এমন চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করছে, যা তারা মোকাবিলা করেছিল ৭০-এর দশকে নকশালদের শীর্ষ নেতৃত্ব নিহত হওয়ার সময়।’

তবে মাওবাদী বিরোধী অভিযান তদারক করা ভারত সরকারের শীর্ষ কর্মকর্তা এমএ গণপতি ভিন্ন মত পোষণ করেন। তিনি বলেন, ‘মূলত, মাওবাদী আন্দোলন ছিল একটি আদর্শিক সংগ্রাম, কিন্তু সেই আদর্শ আকর্ষণ হারিয়েছে, বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে। শিক্ষিত যুবকেরা আর আগ্রহী নয়।’ তিনি বলেন, ‘বাসবরাজু নিহত হওয়ায়, তাদের মনোবল কমে গেছে। তারা তাদের শেষ পর্যায়ে চলে এসেছে।’
ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, মাওবাদী সংশ্লিষ্ট সহিংস ঘটনা ২০১৩ সালের ১ হাজার ১৩৬টি থেকে ২০২৩ সালে ৫৯৪ টিতে নেমে এসেছে, অর্থাৎ ৪৪ শতাংশ কমেছে। এই সময়ে এসব ঘটনা সম্পর্কিত প্রাণহানি ৩৯৭ থেকে কমে ১৩৮ জন হয়েছে বা ৬৫ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। তবে, ২০২৩ সালে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য হতাহতের সংখ্যা ২০২২ সালের তুলনায় সামান্য বেড়েছে। এর কারণ হিসেবে মাওবাদী অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে অভিযান তীব্র হওয়াকেই উল্লেখ করা হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালে ছত্তিশগড় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত রাজ্য ছিল। মাওবাদী সংশ্লিষ্ট ঘটনার মোট ৬৩ শতাংশ এবং মোট প্রাণহানির ৬৬ শতাংশ ঘটেছে এই রাজ্যে। এ ছাড়া, মোট সহিংসতার ২৭ শতাংশ হয়েছে ঝাড়খণ্ডে এবং প্রাণহানির ২৩ শতাংশ হয়েছে এই রাজ্যে। বাকি ঘটনাগুলো মহারাষ্ট্র, ওডিশা, মধ্যপ্রদেশ ও বিহারে ঘটেছে।
এই পরিসংখ্যানের দিকে ইঙ্গিত করে এমএ গণপতি বলেন, ছত্তিশগড়ে মাওবাদীদের পতন এই আন্দোলনের ব্যাপকভাবে হীনবল হওয়ার ইঙ্গিত দেয়। এক দশক আগে রাজ্যের পুলিশকে দুর্বল মনে করা হতো। কিন্তু এখন সেটা আর প্রতীয়মান হচ্ছে না। তিনি আরও বলেন, ‘আজ কেন্দ্রীয় আধা-সামরিক বাহিনীর সাহায্যে সুনির্দিষ্ট অভিযান পরিস্থিতি পাল্টে দিয়েছে। আধা-সামরিক বাহিনী যেখানে অবস্থান ধরে রেখেছে, সেখানে রাজ্যের বাহিনী গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করে লক্ষ্যবস্তুতে অভিযান চালিয়েছে।’
গণপতি আরও বলেন, মোবাইল ফোন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, রাস্তা এবং উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে মানুষ এখন অনেক বেশি সচেতন। এর ফলে তারা সশস্ত্র গোপন আন্দোলনকে সমর্থন করতে কম আগ্রহী। তিনি বলেন, ‘মানুষ উচ্চাকাঙ্ক্ষী হয়ে উঠেছে, মোবাইল ফোন ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে এবং মানুষ বাইরের বিশ্বের সংস্পর্শে আসছে। মাওবাদীরাও নতুন সামাজিক বাস্তবতার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে না পেরে আর কত দিন দুর্গম জঙ্গলে লুকিয়ে থাকবে! জনসমর্থন ছাড়া কোনো বিদ্রোহ টিকতে পারে না।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সাবেক মাওবাদী নেতা আন্দোলনের পতনের পেছনে গভীর এক ত্রুটির কথা উল্লেখ করেছেন। সেটি হলো—রাজনৈতিক বিচ্ছিন্নতা। তিনি বলেন, ‘তারা সত্যিকারের পরিবর্তন এনেছিল তেলেঙ্গানায়। সেখানে তারা সামাজিক ন্যায়বিচার, ছত্তিশগড়ে উপজাতিদের একত্র করার মতো কাজ তারা করেছিল। কিন্তু এটিকে সুসংহত রাজনৈতিক শক্তিতে পরিণত করতে পারেনি।’
এই ব্যর্থতার মূলে এক পুরোনো বিপ্লবী ধারণা—রাষ্ট্রের নাগালের বাইরে বিচ্ছিন্ন ‘মুক্তাঞ্চল’ তৈরি করা এবং ‘দীর্ঘস্থায়ী গণযুদ্ধের মাধ্যমে রাষ্ট্রকে আঘাত করার তত্ত্ব’। ওই সাবেক মাওবাদী বলেন, ‘এই পকেটগুলো ততক্ষণ কাজ করে, যতক্ষণ না রাষ্ট্র পাল্টা আঘাত করে। এরপর অঞ্চলগুলো ভেঙে পড়ে এবং হাজার হাজার মানুষ মারা যায়। প্রশ্ন করার সময় এসেছে যে, আজকের ভারতে কি সত্যিই বিচ্ছিন্ন বনাঞ্চল থেকে একটি বিপ্লব পরিচালনা করা সম্ভব?’
ওই নেতা আরও বলেন, সিপিআই-এর (মাওবাদী) ২০০৭ সালের রাজনৈতিক দলিলে মাও-যুগের কৌশল আঁকড়ে ধরা হয়েছে। তাদের নীতি হলো, ‘একটি মুক্তাঞ্চল তৈরি করা এবং গ্রামাঞ্চল থেকে শহর ঘেরাও করা।’ কিন্তু এটা আর কাজ করে না এখন। দলটি এখনো কিছু বিচ্ছিন্ন পকেটে জনসমর্থন ধরে রেখেছে। মূলত পূর্ব মহারাষ্ট্র, দক্ষিণ ছত্তিশগড় এবং ওডিশা ও ঝাড়খণ্ডের কিছু উপজাতীয় অঞ্চলে তাদের সমর্থন রয়েছে। তবে তাদের কোনো শক্তিশালী সামরিক ভিত্তি নেই।
সরকারি বাহিনীর ব্যাপক অভিযান দক্ষিণ ছত্তিশগড়ের ঘাঁটিগুলোতে মাওবাদীদের সামরিক অবকাঠামোকে উল্লেখযোগ্যভাবে দুর্বল করেছে। তাদের ক্যাডার ও নেতাদের এখন নিয়মিতভাবে হত্যা করা হচ্ছে। এটি বিদ্রোহীদের নিজেদের রক্ষা করার ক্রমবর্ধমান অক্ষমতাকেই প্রতিফলিত করে। এমএ গণপতি বিশ্বাস করেন, ভারত সরকার এই ‘কৌশলটি পুরোপুরি পরিত্যাগ না করে, পুনর্বিবেচনা করতে পারে’ এবং এটাই ‘দরকার’। তিনি বলেন, আমাদের সমাজে আন্ডারগ্রাউন্ড সংগ্রামের একটি জায়গা আছে। তবে ‘আসল চ্যালেঞ্জ হলো এটিকে নির্বাচনী রাজনীতির সঙ্গে মেশানো।’
ভেনুগোপালও অদূর ভবিষ্যতে মাওবাদীদের ‘অর্থপূর্ণ পাল্টা লড়াই’ করার সম্ভাবনা কম দেখেন। তিনি যুক্তি দেন, এখন ভিন্ন একটি পদ্ধতির সময় এসেছে, সেটি হলো আলোচনা। তিনি বলেন, ‘তাদের এখন আলোচনায় বসা বুদ্ধিমানের কাজ হবে, হয়তো শর্তহীনভাবে বা শর্তগুলো জানিয়ে সরকারকে সেগুলো বিবেচনা করতে বলা উচিত। অকারণে নিজেদের ক্যাডারদের উদ্দেশ্যহীনভাবে বলি না দিয়ে সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করার এটাই সময়।’
তেলেঙ্গানা ও অন্ধ্র প্রদেশে মূলধারার রাজনৈতিক দলগুলোর সমর্থন পায় মাওবাদীরা। তেলেঙ্গানায় ক্ষমতাসীন কংগ্রেস ও প্রধান বিরোধী দল ভারত রাষ্ট্র সমিতি (বিআরএস) যুদ্ধবিরতির আহ্বানকে সমর্থন করেছে। ১০টি ছোট বামপন্থী দলও একই প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। এটি মাওবাদী নেতা ও ক্যাডারদের রক্ষা করার একটি প্রচেষ্টা বলে মনে করা হচ্ছে।
বর্ণবৈষম্যের বিরুদ্ধে অতীতের সংগ্রামের কারণে মাওবাদী আন্দোলন এখনো এই রাজ্যগুলোর কিছু অংশে সামাজিক বৈধতার দাবি রাখে। নাগরিক সমাজের কর্মীরাও যুদ্ধবিরতির পক্ষে। কলকাতার অ্যাসোসিয়েশন ফর প্রোটেকশন অব ডেমোক্রেটিক রাইটসে সাধারণ সম্পাদক রঞ্জিত সুর বলেন, ‘আমরা অন্যান্য নাগরিক অধিকার গোষ্ঠীর সঙ্গে দুই ধাপের প্রক্রিয়ার দাবি জানিয়েছি—প্রথমে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি এবং এরপর শান্তি আলোচনা।’
মাওবাদী প্রভাবিত রাজ্যগুলো খনিজ সম্পদে সমৃদ্ধ। এ কারণেই এগুলো সম্পত্তি নিয়ে যুদ্ধের কেন্দ্রবিন্দু। ভেনুগোপাল মনে করেন, এটি সিপিআই (মাওবাদী)-এর টিকে থাকার মূল কারণ। উদাহরণস্বরূপ, ছত্তিশগড় ভারতের একমাত্র টিন ও বালির উৎপাদক। রাজ্যটি কয়লা, ডোলোমাইট, বক্সাইট ও উচ্চমানের লোহা আকরিকেরও প্রধান উৎস। খনিজ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এই রাজ্যে দেশের ৩৬ শতাংশ টিন, ২০ শতাংশ লোহার আকরিক, ১৮ শতাংশ কয়লা, ১১ শতাংশ ডোলোমাইট ও ৪ শতাংশ হিরা ও মার্বেল মজুত আছে। কিন্তু সংঘাতের কারণে আগ্রহ থাকা সত্ত্বেও দেশি-বিদেশি খনি কোম্পানিগুলো দীর্ঘদিন ধরে এই সম্পদগুলো আহরণে সমস্যায় পড়েছে।
ভেনুগোপাল বলেন, ‘বহুজাতিক কোম্পানিগুলো প্রবেশ করতে পারেনি। কারণ “পানি, জঙ্গল, জমি” স্লোগানের ওপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠা মাওবাদী আন্দোলন দাবি করে যে, বনভূমি আদিবাসীদের, করপোরেশনের নয়। কিন্তু মাওবাদীরা এখন দুর্বল হওয়ায় ছত্তিশগড়ের অন্তত চারটি খনি ‘পছন্দের দরদাতাদের’ হাতে যাবে বলে সরকারি এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
ভেনুগোপাল মনে করেন, মাওবাদী নেতাদের মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গেই প্রতিরোধ শেষ হবে না। নেতারা হয়তো মারা যাবেন, কিন্তু ক্ষোভ থাকবেই। যেখানেই অবিচার থাকবে, সেখানেই আন্দোলন হবে। আমরা হয়তো সেগুলোকে আর মাওবাদ বলব না। তবে সেগুলো থাকবে।
অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকা সহসম্পাদক আব্দুর রহমান

ভারতে কয়েক দশকের ‘জঙ্গল বিদ্রোহ’ কি অবশেষে সমাপ্তির দিকে এগোচ্ছে? গত সপ্তাহে দেশটির সবচেয়ে বেশি দিন ধরে মোস্ট ওয়ান্টেড তালিকায় থাকা মাওবাদী নেতা নাম্বালা কেশবরাও ছত্রিশগড় রাজ্যে এক অভিযানে ২৬ জনসহ নিহত হয়েছেন। তিনি বাসবরাজু নামেও পরিচিত। ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এই অভিযানকে তিন দশকের মধ্যে বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে ‘সবচেয়ে কঠোর নিষ্পত্তিমূলক আঘাত’ বলে অভিহিত করেছেন। এই অভিযানে এক পুলিশ কর্মকর্তাও প্রাণ হারিয়েছেন।
বাসবরাজুর মৃত্যু কেবল ভারত সরকারের কৌশলগত বিজয়ই নয়, মাওবাদীদের বস্তারে অবস্থিত শেষ প্রতিরক্ষা রেখাতেও ভাঙনের নির্দেশ করে। এই এলাকায় দলটি ১৯৮০-এর দশক থেকে সবচেয়ে শক্তিশালী দুর্গ তৈরি করেছিল।
১৯৬৭ সালে পশ্চিমবঙ্গের নকশালবাড়ি গ্রাম থেকে মাওবাদীদের বিদ্রোহ শুরু হয়। এ কারণে পরে তারা ‘নকশাল’ নামে পরিচিত হয়। কয়েক দশক ধরে পুনর্গঠিত হয়ে মধ্য ও পূর্ব ভারতজুড়ে এক ‘রেড করিডর’ তৈরি করে এই সশস্ত্র দল। এই করিডর পূর্বে ঝাড়খণ্ড থেকে পশ্চিমে মহারাষ্ট্র পর্যন্ত বিস্তৃত এবং দেশের এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি জেলাজুড়ে এর অবস্থান। সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং এই বিদ্রোহকে ভারতের ‘সবচেয়ে বড় অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা হুমকি’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছিলেন।
সাউথ এশিয়ান টেররিজম পোর্টালের তথ্য অনুযায়ী, কমিউনিস্ট শাসনের দাবিতে শুরু হওয়া এই সশস্ত্র সংগ্রাম ২০০০ সাল থেকে প্রায় ১২ হাজার মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে। বিদ্রোহীরা বলে, তারা আদিবাসী, উপজাতি এবং গ্রামীণ দরিদ্রদের অধিকারের জন্য লড়ছে। তাদের অভিযোগ, রাষ্ট্র দশকের পর দশক ধরে এই জনগোষ্ঠীগুলোকে অবহেলা করেছে এবং ভূমি দখল করে নিয়েছে।
মাওবাদী আন্দোলন আনুষ্ঠানিকভাবে বাম-উগ্রবাদ বলে বিবেচিত। ২০০৪ সালে প্রধান মার্কসবাদী-লেনিনবাদী গোষ্ঠীগুলো সিপিআই (মাওবাদী)-এর সঙ্গে একীভূত হওয়ার মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক রূপ নেয়। এই দলটির আদর্শিক শিকড় ১৯৪৬ সালের তেলেঙ্গানা রাজ্যের কৃষক বিদ্রোহে। এই সময়ে এসে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সরকার ২০২৬ সালের মার্চের মধ্যে মাওবাদ নির্মূল করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো—সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে থাকা রণক্লান্ত বিদ্রোহ কি সত্যিই শেষ—নাকি এর দীর্ঘ, রক্তাক্ত পরিসরে কেবলই আরেকটি বিরতি?
সাংবাদিক, সমাজবিজ্ঞানী ও মাওবাদী আন্দোলনের দীর্ঘদিনের পর্যবেক্ষক এন ভেনুগোপাল বলেন, ‘এটি সাময়িক বিরতি। তবে মার্কসবাদী-লেনিনবাদী আন্দোলনগুলো এখন এমন চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করছে, যা তারা মোকাবিলা করেছিল ৭০-এর দশকে নকশালদের শীর্ষ নেতৃত্ব নিহত হওয়ার সময়।’

তবে মাওবাদী বিরোধী অভিযান তদারক করা ভারত সরকারের শীর্ষ কর্মকর্তা এমএ গণপতি ভিন্ন মত পোষণ করেন। তিনি বলেন, ‘মূলত, মাওবাদী আন্দোলন ছিল একটি আদর্শিক সংগ্রাম, কিন্তু সেই আদর্শ আকর্ষণ হারিয়েছে, বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে। শিক্ষিত যুবকেরা আর আগ্রহী নয়।’ তিনি বলেন, ‘বাসবরাজু নিহত হওয়ায়, তাদের মনোবল কমে গেছে। তারা তাদের শেষ পর্যায়ে চলে এসেছে।’
ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, মাওবাদী সংশ্লিষ্ট সহিংস ঘটনা ২০১৩ সালের ১ হাজার ১৩৬টি থেকে ২০২৩ সালে ৫৯৪ টিতে নেমে এসেছে, অর্থাৎ ৪৪ শতাংশ কমেছে। এই সময়ে এসব ঘটনা সম্পর্কিত প্রাণহানি ৩৯৭ থেকে কমে ১৩৮ জন হয়েছে বা ৬৫ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। তবে, ২০২৩ সালে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য হতাহতের সংখ্যা ২০২২ সালের তুলনায় সামান্য বেড়েছে। এর কারণ হিসেবে মাওবাদী অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে অভিযান তীব্র হওয়াকেই উল্লেখ করা হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালে ছত্তিশগড় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত রাজ্য ছিল। মাওবাদী সংশ্লিষ্ট ঘটনার মোট ৬৩ শতাংশ এবং মোট প্রাণহানির ৬৬ শতাংশ ঘটেছে এই রাজ্যে। এ ছাড়া, মোট সহিংসতার ২৭ শতাংশ হয়েছে ঝাড়খণ্ডে এবং প্রাণহানির ২৩ শতাংশ হয়েছে এই রাজ্যে। বাকি ঘটনাগুলো মহারাষ্ট্র, ওডিশা, মধ্যপ্রদেশ ও বিহারে ঘটেছে।
এই পরিসংখ্যানের দিকে ইঙ্গিত করে এমএ গণপতি বলেন, ছত্তিশগড়ে মাওবাদীদের পতন এই আন্দোলনের ব্যাপকভাবে হীনবল হওয়ার ইঙ্গিত দেয়। এক দশক আগে রাজ্যের পুলিশকে দুর্বল মনে করা হতো। কিন্তু এখন সেটা আর প্রতীয়মান হচ্ছে না। তিনি আরও বলেন, ‘আজ কেন্দ্রীয় আধা-সামরিক বাহিনীর সাহায্যে সুনির্দিষ্ট অভিযান পরিস্থিতি পাল্টে দিয়েছে। আধা-সামরিক বাহিনী যেখানে অবস্থান ধরে রেখেছে, সেখানে রাজ্যের বাহিনী গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করে লক্ষ্যবস্তুতে অভিযান চালিয়েছে।’
গণপতি আরও বলেন, মোবাইল ফোন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, রাস্তা এবং উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে মানুষ এখন অনেক বেশি সচেতন। এর ফলে তারা সশস্ত্র গোপন আন্দোলনকে সমর্থন করতে কম আগ্রহী। তিনি বলেন, ‘মানুষ উচ্চাকাঙ্ক্ষী হয়ে উঠেছে, মোবাইল ফোন ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে এবং মানুষ বাইরের বিশ্বের সংস্পর্শে আসছে। মাওবাদীরাও নতুন সামাজিক বাস্তবতার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে না পেরে আর কত দিন দুর্গম জঙ্গলে লুকিয়ে থাকবে! জনসমর্থন ছাড়া কোনো বিদ্রোহ টিকতে পারে না।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সাবেক মাওবাদী নেতা আন্দোলনের পতনের পেছনে গভীর এক ত্রুটির কথা উল্লেখ করেছেন। সেটি হলো—রাজনৈতিক বিচ্ছিন্নতা। তিনি বলেন, ‘তারা সত্যিকারের পরিবর্তন এনেছিল তেলেঙ্গানায়। সেখানে তারা সামাজিক ন্যায়বিচার, ছত্তিশগড়ে উপজাতিদের একত্র করার মতো কাজ তারা করেছিল। কিন্তু এটিকে সুসংহত রাজনৈতিক শক্তিতে পরিণত করতে পারেনি।’
এই ব্যর্থতার মূলে এক পুরোনো বিপ্লবী ধারণা—রাষ্ট্রের নাগালের বাইরে বিচ্ছিন্ন ‘মুক্তাঞ্চল’ তৈরি করা এবং ‘দীর্ঘস্থায়ী গণযুদ্ধের মাধ্যমে রাষ্ট্রকে আঘাত করার তত্ত্ব’। ওই সাবেক মাওবাদী বলেন, ‘এই পকেটগুলো ততক্ষণ কাজ করে, যতক্ষণ না রাষ্ট্র পাল্টা আঘাত করে। এরপর অঞ্চলগুলো ভেঙে পড়ে এবং হাজার হাজার মানুষ মারা যায়। প্রশ্ন করার সময় এসেছে যে, আজকের ভারতে কি সত্যিই বিচ্ছিন্ন বনাঞ্চল থেকে একটি বিপ্লব পরিচালনা করা সম্ভব?’
ওই নেতা আরও বলেন, সিপিআই-এর (মাওবাদী) ২০০৭ সালের রাজনৈতিক দলিলে মাও-যুগের কৌশল আঁকড়ে ধরা হয়েছে। তাদের নীতি হলো, ‘একটি মুক্তাঞ্চল তৈরি করা এবং গ্রামাঞ্চল থেকে শহর ঘেরাও করা।’ কিন্তু এটা আর কাজ করে না এখন। দলটি এখনো কিছু বিচ্ছিন্ন পকেটে জনসমর্থন ধরে রেখেছে। মূলত পূর্ব মহারাষ্ট্র, দক্ষিণ ছত্তিশগড় এবং ওডিশা ও ঝাড়খণ্ডের কিছু উপজাতীয় অঞ্চলে তাদের সমর্থন রয়েছে। তবে তাদের কোনো শক্তিশালী সামরিক ভিত্তি নেই।
সরকারি বাহিনীর ব্যাপক অভিযান দক্ষিণ ছত্তিশগড়ের ঘাঁটিগুলোতে মাওবাদীদের সামরিক অবকাঠামোকে উল্লেখযোগ্যভাবে দুর্বল করেছে। তাদের ক্যাডার ও নেতাদের এখন নিয়মিতভাবে হত্যা করা হচ্ছে। এটি বিদ্রোহীদের নিজেদের রক্ষা করার ক্রমবর্ধমান অক্ষমতাকেই প্রতিফলিত করে। এমএ গণপতি বিশ্বাস করেন, ভারত সরকার এই ‘কৌশলটি পুরোপুরি পরিত্যাগ না করে, পুনর্বিবেচনা করতে পারে’ এবং এটাই ‘দরকার’। তিনি বলেন, আমাদের সমাজে আন্ডারগ্রাউন্ড সংগ্রামের একটি জায়গা আছে। তবে ‘আসল চ্যালেঞ্জ হলো এটিকে নির্বাচনী রাজনীতির সঙ্গে মেশানো।’
ভেনুগোপালও অদূর ভবিষ্যতে মাওবাদীদের ‘অর্থপূর্ণ পাল্টা লড়াই’ করার সম্ভাবনা কম দেখেন। তিনি যুক্তি দেন, এখন ভিন্ন একটি পদ্ধতির সময় এসেছে, সেটি হলো আলোচনা। তিনি বলেন, ‘তাদের এখন আলোচনায় বসা বুদ্ধিমানের কাজ হবে, হয়তো শর্তহীনভাবে বা শর্তগুলো জানিয়ে সরকারকে সেগুলো বিবেচনা করতে বলা উচিত। অকারণে নিজেদের ক্যাডারদের উদ্দেশ্যহীনভাবে বলি না দিয়ে সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করার এটাই সময়।’
তেলেঙ্গানা ও অন্ধ্র প্রদেশে মূলধারার রাজনৈতিক দলগুলোর সমর্থন পায় মাওবাদীরা। তেলেঙ্গানায় ক্ষমতাসীন কংগ্রেস ও প্রধান বিরোধী দল ভারত রাষ্ট্র সমিতি (বিআরএস) যুদ্ধবিরতির আহ্বানকে সমর্থন করেছে। ১০টি ছোট বামপন্থী দলও একই প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। এটি মাওবাদী নেতা ও ক্যাডারদের রক্ষা করার একটি প্রচেষ্টা বলে মনে করা হচ্ছে।
বর্ণবৈষম্যের বিরুদ্ধে অতীতের সংগ্রামের কারণে মাওবাদী আন্দোলন এখনো এই রাজ্যগুলোর কিছু অংশে সামাজিক বৈধতার দাবি রাখে। নাগরিক সমাজের কর্মীরাও যুদ্ধবিরতির পক্ষে। কলকাতার অ্যাসোসিয়েশন ফর প্রোটেকশন অব ডেমোক্রেটিক রাইটসে সাধারণ সম্পাদক রঞ্জিত সুর বলেন, ‘আমরা অন্যান্য নাগরিক অধিকার গোষ্ঠীর সঙ্গে দুই ধাপের প্রক্রিয়ার দাবি জানিয়েছি—প্রথমে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি এবং এরপর শান্তি আলোচনা।’
মাওবাদী প্রভাবিত রাজ্যগুলো খনিজ সম্পদে সমৃদ্ধ। এ কারণেই এগুলো সম্পত্তি নিয়ে যুদ্ধের কেন্দ্রবিন্দু। ভেনুগোপাল মনে করেন, এটি সিপিআই (মাওবাদী)-এর টিকে থাকার মূল কারণ। উদাহরণস্বরূপ, ছত্তিশগড় ভারতের একমাত্র টিন ও বালির উৎপাদক। রাজ্যটি কয়লা, ডোলোমাইট, বক্সাইট ও উচ্চমানের লোহা আকরিকেরও প্রধান উৎস। খনিজ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এই রাজ্যে দেশের ৩৬ শতাংশ টিন, ২০ শতাংশ লোহার আকরিক, ১৮ শতাংশ কয়লা, ১১ শতাংশ ডোলোমাইট ও ৪ শতাংশ হিরা ও মার্বেল মজুত আছে। কিন্তু সংঘাতের কারণে আগ্রহ থাকা সত্ত্বেও দেশি-বিদেশি খনি কোম্পানিগুলো দীর্ঘদিন ধরে এই সম্পদগুলো আহরণে সমস্যায় পড়েছে।
ভেনুগোপাল বলেন, ‘বহুজাতিক কোম্পানিগুলো প্রবেশ করতে পারেনি। কারণ “পানি, জঙ্গল, জমি” স্লোগানের ওপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠা মাওবাদী আন্দোলন দাবি করে যে, বনভূমি আদিবাসীদের, করপোরেশনের নয়। কিন্তু মাওবাদীরা এখন দুর্বল হওয়ায় ছত্তিশগড়ের অন্তত চারটি খনি ‘পছন্দের দরদাতাদের’ হাতে যাবে বলে সরকারি এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
ভেনুগোপাল মনে করেন, মাওবাদী নেতাদের মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গেই প্রতিরোধ শেষ হবে না। নেতারা হয়তো মারা যাবেন, কিন্তু ক্ষোভ থাকবেই। যেখানেই অবিচার থাকবে, সেখানেই আন্দোলন হবে। আমরা হয়তো সেগুলোকে আর মাওবাদ বলব না। তবে সেগুলো থাকবে।
অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকা সহসম্পাদক আব্দুর রহমান
আজকের পত্রিকা ডেস্ক

ভারতে কয়েক দশকের ‘জঙ্গল বিদ্রোহ’ কি অবশেষে সমাপ্তির দিকে এগোচ্ছে? গত সপ্তাহে দেশটির সবচেয়ে বেশি দিন ধরে মোস্ট ওয়ান্টেড তালিকায় থাকা মাওবাদী নেতা নাম্বালা কেশবরাও ছত্রিশগড় রাজ্যে এক অভিযানে ২৬ জনসহ নিহত হয়েছেন। তিনি বাসবরাজু নামেও পরিচিত। ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এই অভিযানকে তিন দশকের মধ্যে বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে ‘সবচেয়ে কঠোর নিষ্পত্তিমূলক আঘাত’ বলে অভিহিত করেছেন। এই অভিযানে এক পুলিশ কর্মকর্তাও প্রাণ হারিয়েছেন।
বাসবরাজুর মৃত্যু কেবল ভারত সরকারের কৌশলগত বিজয়ই নয়, মাওবাদীদের বস্তারে অবস্থিত শেষ প্রতিরক্ষা রেখাতেও ভাঙনের নির্দেশ করে। এই এলাকায় দলটি ১৯৮০-এর দশক থেকে সবচেয়ে শক্তিশালী দুর্গ তৈরি করেছিল।
১৯৬৭ সালে পশ্চিমবঙ্গের নকশালবাড়ি গ্রাম থেকে মাওবাদীদের বিদ্রোহ শুরু হয়। এ কারণে পরে তারা ‘নকশাল’ নামে পরিচিত হয়। কয়েক দশক ধরে পুনর্গঠিত হয়ে মধ্য ও পূর্ব ভারতজুড়ে এক ‘রেড করিডর’ তৈরি করে এই সশস্ত্র দল। এই করিডর পূর্বে ঝাড়খণ্ড থেকে পশ্চিমে মহারাষ্ট্র পর্যন্ত বিস্তৃত এবং দেশের এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি জেলাজুড়ে এর অবস্থান। সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং এই বিদ্রোহকে ভারতের ‘সবচেয়ে বড় অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা হুমকি’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছিলেন।
সাউথ এশিয়ান টেররিজম পোর্টালের তথ্য অনুযায়ী, কমিউনিস্ট শাসনের দাবিতে শুরু হওয়া এই সশস্ত্র সংগ্রাম ২০০০ সাল থেকে প্রায় ১২ হাজার মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে। বিদ্রোহীরা বলে, তারা আদিবাসী, উপজাতি এবং গ্রামীণ দরিদ্রদের অধিকারের জন্য লড়ছে। তাদের অভিযোগ, রাষ্ট্র দশকের পর দশক ধরে এই জনগোষ্ঠীগুলোকে অবহেলা করেছে এবং ভূমি দখল করে নিয়েছে।
মাওবাদী আন্দোলন আনুষ্ঠানিকভাবে বাম-উগ্রবাদ বলে বিবেচিত। ২০০৪ সালে প্রধান মার্কসবাদী-লেনিনবাদী গোষ্ঠীগুলো সিপিআই (মাওবাদী)-এর সঙ্গে একীভূত হওয়ার মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক রূপ নেয়। এই দলটির আদর্শিক শিকড় ১৯৪৬ সালের তেলেঙ্গানা রাজ্যের কৃষক বিদ্রোহে। এই সময়ে এসে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সরকার ২০২৬ সালের মার্চের মধ্যে মাওবাদ নির্মূল করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো—সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে থাকা রণক্লান্ত বিদ্রোহ কি সত্যিই শেষ—নাকি এর দীর্ঘ, রক্তাক্ত পরিসরে কেবলই আরেকটি বিরতি?
সাংবাদিক, সমাজবিজ্ঞানী ও মাওবাদী আন্দোলনের দীর্ঘদিনের পর্যবেক্ষক এন ভেনুগোপাল বলেন, ‘এটি সাময়িক বিরতি। তবে মার্কসবাদী-লেনিনবাদী আন্দোলনগুলো এখন এমন চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করছে, যা তারা মোকাবিলা করেছিল ৭০-এর দশকে নকশালদের শীর্ষ নেতৃত্ব নিহত হওয়ার সময়।’

তবে মাওবাদী বিরোধী অভিযান তদারক করা ভারত সরকারের শীর্ষ কর্মকর্তা এমএ গণপতি ভিন্ন মত পোষণ করেন। তিনি বলেন, ‘মূলত, মাওবাদী আন্দোলন ছিল একটি আদর্শিক সংগ্রাম, কিন্তু সেই আদর্শ আকর্ষণ হারিয়েছে, বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে। শিক্ষিত যুবকেরা আর আগ্রহী নয়।’ তিনি বলেন, ‘বাসবরাজু নিহত হওয়ায়, তাদের মনোবল কমে গেছে। তারা তাদের শেষ পর্যায়ে চলে এসেছে।’
ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, মাওবাদী সংশ্লিষ্ট সহিংস ঘটনা ২০১৩ সালের ১ হাজার ১৩৬টি থেকে ২০২৩ সালে ৫৯৪ টিতে নেমে এসেছে, অর্থাৎ ৪৪ শতাংশ কমেছে। এই সময়ে এসব ঘটনা সম্পর্কিত প্রাণহানি ৩৯৭ থেকে কমে ১৩৮ জন হয়েছে বা ৬৫ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। তবে, ২০২৩ সালে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য হতাহতের সংখ্যা ২০২২ সালের তুলনায় সামান্য বেড়েছে। এর কারণ হিসেবে মাওবাদী অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে অভিযান তীব্র হওয়াকেই উল্লেখ করা হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালে ছত্তিশগড় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত রাজ্য ছিল। মাওবাদী সংশ্লিষ্ট ঘটনার মোট ৬৩ শতাংশ এবং মোট প্রাণহানির ৬৬ শতাংশ ঘটেছে এই রাজ্যে। এ ছাড়া, মোট সহিংসতার ২৭ শতাংশ হয়েছে ঝাড়খণ্ডে এবং প্রাণহানির ২৩ শতাংশ হয়েছে এই রাজ্যে। বাকি ঘটনাগুলো মহারাষ্ট্র, ওডিশা, মধ্যপ্রদেশ ও বিহারে ঘটেছে।
এই পরিসংখ্যানের দিকে ইঙ্গিত করে এমএ গণপতি বলেন, ছত্তিশগড়ে মাওবাদীদের পতন এই আন্দোলনের ব্যাপকভাবে হীনবল হওয়ার ইঙ্গিত দেয়। এক দশক আগে রাজ্যের পুলিশকে দুর্বল মনে করা হতো। কিন্তু এখন সেটা আর প্রতীয়মান হচ্ছে না। তিনি আরও বলেন, ‘আজ কেন্দ্রীয় আধা-সামরিক বাহিনীর সাহায্যে সুনির্দিষ্ট অভিযান পরিস্থিতি পাল্টে দিয়েছে। আধা-সামরিক বাহিনী যেখানে অবস্থান ধরে রেখেছে, সেখানে রাজ্যের বাহিনী গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করে লক্ষ্যবস্তুতে অভিযান চালিয়েছে।’
গণপতি আরও বলেন, মোবাইল ফোন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, রাস্তা এবং উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে মানুষ এখন অনেক বেশি সচেতন। এর ফলে তারা সশস্ত্র গোপন আন্দোলনকে সমর্থন করতে কম আগ্রহী। তিনি বলেন, ‘মানুষ উচ্চাকাঙ্ক্ষী হয়ে উঠেছে, মোবাইল ফোন ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে এবং মানুষ বাইরের বিশ্বের সংস্পর্শে আসছে। মাওবাদীরাও নতুন সামাজিক বাস্তবতার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে না পেরে আর কত দিন দুর্গম জঙ্গলে লুকিয়ে থাকবে! জনসমর্থন ছাড়া কোনো বিদ্রোহ টিকতে পারে না।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সাবেক মাওবাদী নেতা আন্দোলনের পতনের পেছনে গভীর এক ত্রুটির কথা উল্লেখ করেছেন। সেটি হলো—রাজনৈতিক বিচ্ছিন্নতা। তিনি বলেন, ‘তারা সত্যিকারের পরিবর্তন এনেছিল তেলেঙ্গানায়। সেখানে তারা সামাজিক ন্যায়বিচার, ছত্তিশগড়ে উপজাতিদের একত্র করার মতো কাজ তারা করেছিল। কিন্তু এটিকে সুসংহত রাজনৈতিক শক্তিতে পরিণত করতে পারেনি।’
এই ব্যর্থতার মূলে এক পুরোনো বিপ্লবী ধারণা—রাষ্ট্রের নাগালের বাইরে বিচ্ছিন্ন ‘মুক্তাঞ্চল’ তৈরি করা এবং ‘দীর্ঘস্থায়ী গণযুদ্ধের মাধ্যমে রাষ্ট্রকে আঘাত করার তত্ত্ব’। ওই সাবেক মাওবাদী বলেন, ‘এই পকেটগুলো ততক্ষণ কাজ করে, যতক্ষণ না রাষ্ট্র পাল্টা আঘাত করে। এরপর অঞ্চলগুলো ভেঙে পড়ে এবং হাজার হাজার মানুষ মারা যায়। প্রশ্ন করার সময় এসেছে যে, আজকের ভারতে কি সত্যিই বিচ্ছিন্ন বনাঞ্চল থেকে একটি বিপ্লব পরিচালনা করা সম্ভব?’
ওই নেতা আরও বলেন, সিপিআই-এর (মাওবাদী) ২০০৭ সালের রাজনৈতিক দলিলে মাও-যুগের কৌশল আঁকড়ে ধরা হয়েছে। তাদের নীতি হলো, ‘একটি মুক্তাঞ্চল তৈরি করা এবং গ্রামাঞ্চল থেকে শহর ঘেরাও করা।’ কিন্তু এটা আর কাজ করে না এখন। দলটি এখনো কিছু বিচ্ছিন্ন পকেটে জনসমর্থন ধরে রেখেছে। মূলত পূর্ব মহারাষ্ট্র, দক্ষিণ ছত্তিশগড় এবং ওডিশা ও ঝাড়খণ্ডের কিছু উপজাতীয় অঞ্চলে তাদের সমর্থন রয়েছে। তবে তাদের কোনো শক্তিশালী সামরিক ভিত্তি নেই।
সরকারি বাহিনীর ব্যাপক অভিযান দক্ষিণ ছত্তিশগড়ের ঘাঁটিগুলোতে মাওবাদীদের সামরিক অবকাঠামোকে উল্লেখযোগ্যভাবে দুর্বল করেছে। তাদের ক্যাডার ও নেতাদের এখন নিয়মিতভাবে হত্যা করা হচ্ছে। এটি বিদ্রোহীদের নিজেদের রক্ষা করার ক্রমবর্ধমান অক্ষমতাকেই প্রতিফলিত করে। এমএ গণপতি বিশ্বাস করেন, ভারত সরকার এই ‘কৌশলটি পুরোপুরি পরিত্যাগ না করে, পুনর্বিবেচনা করতে পারে’ এবং এটাই ‘দরকার’। তিনি বলেন, আমাদের সমাজে আন্ডারগ্রাউন্ড সংগ্রামের একটি জায়গা আছে। তবে ‘আসল চ্যালেঞ্জ হলো এটিকে নির্বাচনী রাজনীতির সঙ্গে মেশানো।’
ভেনুগোপালও অদূর ভবিষ্যতে মাওবাদীদের ‘অর্থপূর্ণ পাল্টা লড়াই’ করার সম্ভাবনা কম দেখেন। তিনি যুক্তি দেন, এখন ভিন্ন একটি পদ্ধতির সময় এসেছে, সেটি হলো আলোচনা। তিনি বলেন, ‘তাদের এখন আলোচনায় বসা বুদ্ধিমানের কাজ হবে, হয়তো শর্তহীনভাবে বা শর্তগুলো জানিয়ে সরকারকে সেগুলো বিবেচনা করতে বলা উচিত। অকারণে নিজেদের ক্যাডারদের উদ্দেশ্যহীনভাবে বলি না দিয়ে সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করার এটাই সময়।’
তেলেঙ্গানা ও অন্ধ্র প্রদেশে মূলধারার রাজনৈতিক দলগুলোর সমর্থন পায় মাওবাদীরা। তেলেঙ্গানায় ক্ষমতাসীন কংগ্রেস ও প্রধান বিরোধী দল ভারত রাষ্ট্র সমিতি (বিআরএস) যুদ্ধবিরতির আহ্বানকে সমর্থন করেছে। ১০টি ছোট বামপন্থী দলও একই প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। এটি মাওবাদী নেতা ও ক্যাডারদের রক্ষা করার একটি প্রচেষ্টা বলে মনে করা হচ্ছে।
বর্ণবৈষম্যের বিরুদ্ধে অতীতের সংগ্রামের কারণে মাওবাদী আন্দোলন এখনো এই রাজ্যগুলোর কিছু অংশে সামাজিক বৈধতার দাবি রাখে। নাগরিক সমাজের কর্মীরাও যুদ্ধবিরতির পক্ষে। কলকাতার অ্যাসোসিয়েশন ফর প্রোটেকশন অব ডেমোক্রেটিক রাইটসে সাধারণ সম্পাদক রঞ্জিত সুর বলেন, ‘আমরা অন্যান্য নাগরিক অধিকার গোষ্ঠীর সঙ্গে দুই ধাপের প্রক্রিয়ার দাবি জানিয়েছি—প্রথমে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি এবং এরপর শান্তি আলোচনা।’
মাওবাদী প্রভাবিত রাজ্যগুলো খনিজ সম্পদে সমৃদ্ধ। এ কারণেই এগুলো সম্পত্তি নিয়ে যুদ্ধের কেন্দ্রবিন্দু। ভেনুগোপাল মনে করেন, এটি সিপিআই (মাওবাদী)-এর টিকে থাকার মূল কারণ। উদাহরণস্বরূপ, ছত্তিশগড় ভারতের একমাত্র টিন ও বালির উৎপাদক। রাজ্যটি কয়লা, ডোলোমাইট, বক্সাইট ও উচ্চমানের লোহা আকরিকেরও প্রধান উৎস। খনিজ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এই রাজ্যে দেশের ৩৬ শতাংশ টিন, ২০ শতাংশ লোহার আকরিক, ১৮ শতাংশ কয়লা, ১১ শতাংশ ডোলোমাইট ও ৪ শতাংশ হিরা ও মার্বেল মজুত আছে। কিন্তু সংঘাতের কারণে আগ্রহ থাকা সত্ত্বেও দেশি-বিদেশি খনি কোম্পানিগুলো দীর্ঘদিন ধরে এই সম্পদগুলো আহরণে সমস্যায় পড়েছে।
ভেনুগোপাল বলেন, ‘বহুজাতিক কোম্পানিগুলো প্রবেশ করতে পারেনি। কারণ “পানি, জঙ্গল, জমি” স্লোগানের ওপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠা মাওবাদী আন্দোলন দাবি করে যে, বনভূমি আদিবাসীদের, করপোরেশনের নয়। কিন্তু মাওবাদীরা এখন দুর্বল হওয়ায় ছত্তিশগড়ের অন্তত চারটি খনি ‘পছন্দের দরদাতাদের’ হাতে যাবে বলে সরকারি এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
ভেনুগোপাল মনে করেন, মাওবাদী নেতাদের মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গেই প্রতিরোধ শেষ হবে না। নেতারা হয়তো মারা যাবেন, কিন্তু ক্ষোভ থাকবেই। যেখানেই অবিচার থাকবে, সেখানেই আন্দোলন হবে। আমরা হয়তো সেগুলোকে আর মাওবাদ বলব না। তবে সেগুলো থাকবে।
অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকা সহসম্পাদক আব্দুর রহমান

ভারতে কয়েক দশকের ‘জঙ্গল বিদ্রোহ’ কি অবশেষে সমাপ্তির দিকে এগোচ্ছে? গত সপ্তাহে দেশটির সবচেয়ে বেশি দিন ধরে মোস্ট ওয়ান্টেড তালিকায় থাকা মাওবাদী নেতা নাম্বালা কেশবরাও ছত্রিশগড় রাজ্যে এক অভিযানে ২৬ জনসহ নিহত হয়েছেন। তিনি বাসবরাজু নামেও পরিচিত। ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এই অভিযানকে তিন দশকের মধ্যে বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে ‘সবচেয়ে কঠোর নিষ্পত্তিমূলক আঘাত’ বলে অভিহিত করেছেন। এই অভিযানে এক পুলিশ কর্মকর্তাও প্রাণ হারিয়েছেন।
বাসবরাজুর মৃত্যু কেবল ভারত সরকারের কৌশলগত বিজয়ই নয়, মাওবাদীদের বস্তারে অবস্থিত শেষ প্রতিরক্ষা রেখাতেও ভাঙনের নির্দেশ করে। এই এলাকায় দলটি ১৯৮০-এর দশক থেকে সবচেয়ে শক্তিশালী দুর্গ তৈরি করেছিল।
১৯৬৭ সালে পশ্চিমবঙ্গের নকশালবাড়ি গ্রাম থেকে মাওবাদীদের বিদ্রোহ শুরু হয়। এ কারণে পরে তারা ‘নকশাল’ নামে পরিচিত হয়। কয়েক দশক ধরে পুনর্গঠিত হয়ে মধ্য ও পূর্ব ভারতজুড়ে এক ‘রেড করিডর’ তৈরি করে এই সশস্ত্র দল। এই করিডর পূর্বে ঝাড়খণ্ড থেকে পশ্চিমে মহারাষ্ট্র পর্যন্ত বিস্তৃত এবং দেশের এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি জেলাজুড়ে এর অবস্থান। সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং এই বিদ্রোহকে ভারতের ‘সবচেয়ে বড় অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা হুমকি’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছিলেন।
সাউথ এশিয়ান টেররিজম পোর্টালের তথ্য অনুযায়ী, কমিউনিস্ট শাসনের দাবিতে শুরু হওয়া এই সশস্ত্র সংগ্রাম ২০০০ সাল থেকে প্রায় ১২ হাজার মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে। বিদ্রোহীরা বলে, তারা আদিবাসী, উপজাতি এবং গ্রামীণ দরিদ্রদের অধিকারের জন্য লড়ছে। তাদের অভিযোগ, রাষ্ট্র দশকের পর দশক ধরে এই জনগোষ্ঠীগুলোকে অবহেলা করেছে এবং ভূমি দখল করে নিয়েছে।
মাওবাদী আন্দোলন আনুষ্ঠানিকভাবে বাম-উগ্রবাদ বলে বিবেচিত। ২০০৪ সালে প্রধান মার্কসবাদী-লেনিনবাদী গোষ্ঠীগুলো সিপিআই (মাওবাদী)-এর সঙ্গে একীভূত হওয়ার মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক রূপ নেয়। এই দলটির আদর্শিক শিকড় ১৯৪৬ সালের তেলেঙ্গানা রাজ্যের কৃষক বিদ্রোহে। এই সময়ে এসে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সরকার ২০২৬ সালের মার্চের মধ্যে মাওবাদ নির্মূল করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো—সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে থাকা রণক্লান্ত বিদ্রোহ কি সত্যিই শেষ—নাকি এর দীর্ঘ, রক্তাক্ত পরিসরে কেবলই আরেকটি বিরতি?
সাংবাদিক, সমাজবিজ্ঞানী ও মাওবাদী আন্দোলনের দীর্ঘদিনের পর্যবেক্ষক এন ভেনুগোপাল বলেন, ‘এটি সাময়িক বিরতি। তবে মার্কসবাদী-লেনিনবাদী আন্দোলনগুলো এখন এমন চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করছে, যা তারা মোকাবিলা করেছিল ৭০-এর দশকে নকশালদের শীর্ষ নেতৃত্ব নিহত হওয়ার সময়।’

তবে মাওবাদী বিরোধী অভিযান তদারক করা ভারত সরকারের শীর্ষ কর্মকর্তা এমএ গণপতি ভিন্ন মত পোষণ করেন। তিনি বলেন, ‘মূলত, মাওবাদী আন্দোলন ছিল একটি আদর্শিক সংগ্রাম, কিন্তু সেই আদর্শ আকর্ষণ হারিয়েছে, বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে। শিক্ষিত যুবকেরা আর আগ্রহী নয়।’ তিনি বলেন, ‘বাসবরাজু নিহত হওয়ায়, তাদের মনোবল কমে গেছে। তারা তাদের শেষ পর্যায়ে চলে এসেছে।’
ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, মাওবাদী সংশ্লিষ্ট সহিংস ঘটনা ২০১৩ সালের ১ হাজার ১৩৬টি থেকে ২০২৩ সালে ৫৯৪ টিতে নেমে এসেছে, অর্থাৎ ৪৪ শতাংশ কমেছে। এই সময়ে এসব ঘটনা সম্পর্কিত প্রাণহানি ৩৯৭ থেকে কমে ১৩৮ জন হয়েছে বা ৬৫ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। তবে, ২০২৩ সালে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য হতাহতের সংখ্যা ২০২২ সালের তুলনায় সামান্য বেড়েছে। এর কারণ হিসেবে মাওবাদী অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে অভিযান তীব্র হওয়াকেই উল্লেখ করা হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালে ছত্তিশগড় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত রাজ্য ছিল। মাওবাদী সংশ্লিষ্ট ঘটনার মোট ৬৩ শতাংশ এবং মোট প্রাণহানির ৬৬ শতাংশ ঘটেছে এই রাজ্যে। এ ছাড়া, মোট সহিংসতার ২৭ শতাংশ হয়েছে ঝাড়খণ্ডে এবং প্রাণহানির ২৩ শতাংশ হয়েছে এই রাজ্যে। বাকি ঘটনাগুলো মহারাষ্ট্র, ওডিশা, মধ্যপ্রদেশ ও বিহারে ঘটেছে।
এই পরিসংখ্যানের দিকে ইঙ্গিত করে এমএ গণপতি বলেন, ছত্তিশগড়ে মাওবাদীদের পতন এই আন্দোলনের ব্যাপকভাবে হীনবল হওয়ার ইঙ্গিত দেয়। এক দশক আগে রাজ্যের পুলিশকে দুর্বল মনে করা হতো। কিন্তু এখন সেটা আর প্রতীয়মান হচ্ছে না। তিনি আরও বলেন, ‘আজ কেন্দ্রীয় আধা-সামরিক বাহিনীর সাহায্যে সুনির্দিষ্ট অভিযান পরিস্থিতি পাল্টে দিয়েছে। আধা-সামরিক বাহিনী যেখানে অবস্থান ধরে রেখেছে, সেখানে রাজ্যের বাহিনী গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করে লক্ষ্যবস্তুতে অভিযান চালিয়েছে।’
গণপতি আরও বলেন, মোবাইল ফোন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, রাস্তা এবং উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে মানুষ এখন অনেক বেশি সচেতন। এর ফলে তারা সশস্ত্র গোপন আন্দোলনকে সমর্থন করতে কম আগ্রহী। তিনি বলেন, ‘মানুষ উচ্চাকাঙ্ক্ষী হয়ে উঠেছে, মোবাইল ফোন ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে এবং মানুষ বাইরের বিশ্বের সংস্পর্শে আসছে। মাওবাদীরাও নতুন সামাজিক বাস্তবতার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে না পেরে আর কত দিন দুর্গম জঙ্গলে লুকিয়ে থাকবে! জনসমর্থন ছাড়া কোনো বিদ্রোহ টিকতে পারে না।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সাবেক মাওবাদী নেতা আন্দোলনের পতনের পেছনে গভীর এক ত্রুটির কথা উল্লেখ করেছেন। সেটি হলো—রাজনৈতিক বিচ্ছিন্নতা। তিনি বলেন, ‘তারা সত্যিকারের পরিবর্তন এনেছিল তেলেঙ্গানায়। সেখানে তারা সামাজিক ন্যায়বিচার, ছত্তিশগড়ে উপজাতিদের একত্র করার মতো কাজ তারা করেছিল। কিন্তু এটিকে সুসংহত রাজনৈতিক শক্তিতে পরিণত করতে পারেনি।’
এই ব্যর্থতার মূলে এক পুরোনো বিপ্লবী ধারণা—রাষ্ট্রের নাগালের বাইরে বিচ্ছিন্ন ‘মুক্তাঞ্চল’ তৈরি করা এবং ‘দীর্ঘস্থায়ী গণযুদ্ধের মাধ্যমে রাষ্ট্রকে আঘাত করার তত্ত্ব’। ওই সাবেক মাওবাদী বলেন, ‘এই পকেটগুলো ততক্ষণ কাজ করে, যতক্ষণ না রাষ্ট্র পাল্টা আঘাত করে। এরপর অঞ্চলগুলো ভেঙে পড়ে এবং হাজার হাজার মানুষ মারা যায়। প্রশ্ন করার সময় এসেছে যে, আজকের ভারতে কি সত্যিই বিচ্ছিন্ন বনাঞ্চল থেকে একটি বিপ্লব পরিচালনা করা সম্ভব?’
ওই নেতা আরও বলেন, সিপিআই-এর (মাওবাদী) ২০০৭ সালের রাজনৈতিক দলিলে মাও-যুগের কৌশল আঁকড়ে ধরা হয়েছে। তাদের নীতি হলো, ‘একটি মুক্তাঞ্চল তৈরি করা এবং গ্রামাঞ্চল থেকে শহর ঘেরাও করা।’ কিন্তু এটা আর কাজ করে না এখন। দলটি এখনো কিছু বিচ্ছিন্ন পকেটে জনসমর্থন ধরে রেখেছে। মূলত পূর্ব মহারাষ্ট্র, দক্ষিণ ছত্তিশগড় এবং ওডিশা ও ঝাড়খণ্ডের কিছু উপজাতীয় অঞ্চলে তাদের সমর্থন রয়েছে। তবে তাদের কোনো শক্তিশালী সামরিক ভিত্তি নেই।
সরকারি বাহিনীর ব্যাপক অভিযান দক্ষিণ ছত্তিশগড়ের ঘাঁটিগুলোতে মাওবাদীদের সামরিক অবকাঠামোকে উল্লেখযোগ্যভাবে দুর্বল করেছে। তাদের ক্যাডার ও নেতাদের এখন নিয়মিতভাবে হত্যা করা হচ্ছে। এটি বিদ্রোহীদের নিজেদের রক্ষা করার ক্রমবর্ধমান অক্ষমতাকেই প্রতিফলিত করে। এমএ গণপতি বিশ্বাস করেন, ভারত সরকার এই ‘কৌশলটি পুরোপুরি পরিত্যাগ না করে, পুনর্বিবেচনা করতে পারে’ এবং এটাই ‘দরকার’। তিনি বলেন, আমাদের সমাজে আন্ডারগ্রাউন্ড সংগ্রামের একটি জায়গা আছে। তবে ‘আসল চ্যালেঞ্জ হলো এটিকে নির্বাচনী রাজনীতির সঙ্গে মেশানো।’
ভেনুগোপালও অদূর ভবিষ্যতে মাওবাদীদের ‘অর্থপূর্ণ পাল্টা লড়াই’ করার সম্ভাবনা কম দেখেন। তিনি যুক্তি দেন, এখন ভিন্ন একটি পদ্ধতির সময় এসেছে, সেটি হলো আলোচনা। তিনি বলেন, ‘তাদের এখন আলোচনায় বসা বুদ্ধিমানের কাজ হবে, হয়তো শর্তহীনভাবে বা শর্তগুলো জানিয়ে সরকারকে সেগুলো বিবেচনা করতে বলা উচিত। অকারণে নিজেদের ক্যাডারদের উদ্দেশ্যহীনভাবে বলি না দিয়ে সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করার এটাই সময়।’
তেলেঙ্গানা ও অন্ধ্র প্রদেশে মূলধারার রাজনৈতিক দলগুলোর সমর্থন পায় মাওবাদীরা। তেলেঙ্গানায় ক্ষমতাসীন কংগ্রেস ও প্রধান বিরোধী দল ভারত রাষ্ট্র সমিতি (বিআরএস) যুদ্ধবিরতির আহ্বানকে সমর্থন করেছে। ১০টি ছোট বামপন্থী দলও একই প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। এটি মাওবাদী নেতা ও ক্যাডারদের রক্ষা করার একটি প্রচেষ্টা বলে মনে করা হচ্ছে।
বর্ণবৈষম্যের বিরুদ্ধে অতীতের সংগ্রামের কারণে মাওবাদী আন্দোলন এখনো এই রাজ্যগুলোর কিছু অংশে সামাজিক বৈধতার দাবি রাখে। নাগরিক সমাজের কর্মীরাও যুদ্ধবিরতির পক্ষে। কলকাতার অ্যাসোসিয়েশন ফর প্রোটেকশন অব ডেমোক্রেটিক রাইটসে সাধারণ সম্পাদক রঞ্জিত সুর বলেন, ‘আমরা অন্যান্য নাগরিক অধিকার গোষ্ঠীর সঙ্গে দুই ধাপের প্রক্রিয়ার দাবি জানিয়েছি—প্রথমে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি এবং এরপর শান্তি আলোচনা।’
মাওবাদী প্রভাবিত রাজ্যগুলো খনিজ সম্পদে সমৃদ্ধ। এ কারণেই এগুলো সম্পত্তি নিয়ে যুদ্ধের কেন্দ্রবিন্দু। ভেনুগোপাল মনে করেন, এটি সিপিআই (মাওবাদী)-এর টিকে থাকার মূল কারণ। উদাহরণস্বরূপ, ছত্তিশগড় ভারতের একমাত্র টিন ও বালির উৎপাদক। রাজ্যটি কয়লা, ডোলোমাইট, বক্সাইট ও উচ্চমানের লোহা আকরিকেরও প্রধান উৎস। খনিজ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এই রাজ্যে দেশের ৩৬ শতাংশ টিন, ২০ শতাংশ লোহার আকরিক, ১৮ শতাংশ কয়লা, ১১ শতাংশ ডোলোমাইট ও ৪ শতাংশ হিরা ও মার্বেল মজুত আছে। কিন্তু সংঘাতের কারণে আগ্রহ থাকা সত্ত্বেও দেশি-বিদেশি খনি কোম্পানিগুলো দীর্ঘদিন ধরে এই সম্পদগুলো আহরণে সমস্যায় পড়েছে।
ভেনুগোপাল বলেন, ‘বহুজাতিক কোম্পানিগুলো প্রবেশ করতে পারেনি। কারণ “পানি, জঙ্গল, জমি” স্লোগানের ওপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠা মাওবাদী আন্দোলন দাবি করে যে, বনভূমি আদিবাসীদের, করপোরেশনের নয়। কিন্তু মাওবাদীরা এখন দুর্বল হওয়ায় ছত্তিশগড়ের অন্তত চারটি খনি ‘পছন্দের দরদাতাদের’ হাতে যাবে বলে সরকারি এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
ভেনুগোপাল মনে করেন, মাওবাদী নেতাদের মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গেই প্রতিরোধ শেষ হবে না। নেতারা হয়তো মারা যাবেন, কিন্তু ক্ষোভ থাকবেই। যেখানেই অবিচার থাকবে, সেখানেই আন্দোলন হবে। আমরা হয়তো সেগুলোকে আর মাওবাদ বলব না। তবে সেগুলো থাকবে।
অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকা সহসম্পাদক আব্দুর রহমান

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতদের মধ্যে ইউক্রেন শান্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনা হলেও প্রকাশ্যে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইউরি উশাকভ, এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন যে অমীমাংসিত ‘আঞ্চলিক সমস্যাই’ মূল বাধা। আর এই অঞ্চল আর কোনোটিই নয়, দোনেৎস্ক।
১৯ ঘণ্টা আগে
বিশ্বজুড়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন উঠে আসছে—‘যদি বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ সীমিত করা হয়, অথবা এই শ্রেণিটিকেই সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়, তবে কী ঘটবে?’ পশ্চিমা দেশগুলোতে চরম ধনী বা বিলিয়নিয়ারদের সংখ্যা ও প্রভাব বাড়তে থাকায় এখন এই প্রশ্ন আরও জোরালো হয়েছে।
১ দিন আগে
জাপানের ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর গত অক্টোবরে দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন সানায়ে তাকাইচি। এরপরই তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত হন জাপানের নতুন ‘আয়রন লেডি’ বা লৌহমানবী’ হিসেবে।
১ দিন আগে
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠককে ঘিরে দিল্লিতে শুরু হয়েছে কূটনৈতিক প্রস্তুতি। চলমান ইউক্রেন যুদ্ধ, যুক্তরাষ্ট্রের চাপ এবং জ্বালানির বাজারে অস্থিরতার মধ্যেই এই শীর্ষ সম্মেলন হতে যাচ্ছে। অর্থনীতি, প্রতিরক্ষা এবং জ্বালানি—এই তিনটি খাত আলোচনার...
২ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতদের মধ্যে ইউক্রেন শান্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনা হলেও প্রকাশ্যে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইউরি উশাকভ, এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন যে অমীমাংসিত ‘আঞ্চলিক সমস্যাই’ মূল বাধা। আর এই অঞ্চল আর কোনোটিই নয়, দোনেৎস্ক।
উশাকভ মূলত ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় দোনেৎস্কের সম্পূর্ণ এলাকার ওপর রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণ দাবির কথাই বলেছিলেন। পুতিন ইউক্রেনে হাজার হাজার সৈন্য পাঠানোর প্রায় ৪ বছর পরও এবং দোনেৎস্কে রাশিয়া সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদী বিদ্রোহের এক দশকেরও বেশি সময় পর অঞ্চলটির কিছু অংশ এখনো ইউক্রেনের হাতে আছে।
প্রায় সব দেশই দোনেৎস্ককে ইউক্রেনের অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। কিন্তু এটি ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের চারটি অঞ্চলের মধ্যে একটি, যা মস্কো ২০২২ সালে একটি গণভোটের পর সংযুক্ত করার কথা ঘোষণা করে। কিয়েভ ও পশ্চিমা দেশগুলো সেই গণভোটকে ‘প্রহসন’ বলে বাতিল করে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ফক্স নিউজকে বলেছিলেন, যুদ্ধটি এখন দোনেৎস্কের সেই ২০ শতাংশ বা ৫ হাজার বর্গকিলোমিটারের এলাকা নিয়ে, যা রাশিয়া নিয়ন্ত্রণ করে না কিন্তু চায়।
পুতিন ২০২২ সালে ইউক্রেনে সৈন্য পাঠানোর সময় বলেছিলেন, তাঁর লক্ষ্য হলো ‘গত আট বছর ধরে যারা ভয়ভীতি ও গণহত্যার শিকার হয়েছেন...সেই মানুষগুলোকে রক্ষা করা।’ ইউক্রেন এবং তার মিত্ররা বলেছিল, পুতিনের এই দাবি ঔপনিবেশিক ধাঁচের এবং এলাকা দখলের জন্য একটি মিথ্যা অজুহাত মাত্র।
পুতিনের এই দাবি মূলত দোনেৎস্ক এবং লুহানস্ক অঞ্চলে রাশিয়া সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিরুদ্ধে ইউক্রেনের লড়াইয়ের দিকে ইঙ্গিত করে, যারা ২০১৪ সালে ইউক্রেনীয় সরকারি নিয়ন্ত্রণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে কিছু এলাকা দখল করেছিল। পূর্ব ইউক্রেনে এর পরের সংঘর্ষে উভয় পক্ষই শহর ও বেসামরিক নাগরিকদের ওপর গোলাবর্ষণের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করেছিল। মস্কো এই অঞ্চলের বিশাল রুশভাষী জনসংখ্যাকে উদ্ধৃত করে বলেছিল যে,২০২২ সালে হস্তক্ষেপ করা তাদের নৈতিক কর্তব্য।
কিয়েভ বলেছিল, ২০১৪ সালে ইউক্রেনের আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষায় শক্তি দিয়ে জবাব দেওয়া ছাড়া তাদের আর কোনো উপায় ছিল না এবং তারাও বিচ্ছিন্নতাবাদী বাহিনীর বিরুদ্ধে শহর ও বেসামরিক নাগরিকদের ওপর গোলাবর্ষণের অভিযোগ এনেছিল। জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৪ সাল থেকে ২০২২ সালের শুরু পর্যন্ত ইউক্রেনীয় সরকারি বাহিনী এবং বিচ্ছিন্নতাবাদীদের মধ্যে সংঘাতে উভয় পক্ষে ৩ হাজার ১০৬ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত এবং ৯ হাজার বেসামরিক নাগরিক আহত হয়েছিলেন।
দোনেৎস্কের বাকি যে অংশটি রাশিয়া চায়, তার মধ্যে রয়েছে স্লোভিয়ানস্ক এবং ক্রামাতোরস্ক—দুটি ‘দুর্গনগরী’ যা ২০১৪ সাল থেকে ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করে আসছে। এই শহরগুলো ইউক্রেনের বাকি অঞ্চল রক্ষার জন্য কিয়েভের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ দোনেৎস্কের পশ্চিমের ভূমি অনেকটাই সমতল এবং বিশাল খোলা মাঠ; যা রাশিয়াকে দোনেৎস্কের বাইরে অগ্রসর হতে এবং দিনিপ্রো নদীর পূর্ব তীর পর্যন্ত এলাকা দখল করার পথ সহজ করে দেবে।
শহরগুলো পরিখা, ট্যাংক-বিধ্বংসী বাধা, বাংকার এবং মাইনক্ষেত্রসহ অত্যন্ত সুরক্ষিত প্রতিরক্ষা লাইনের অংশ। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, গণভোট ছাড়া দোনেৎস্কের বাকি অংশ রাশিয়ার হাতে তুলে দেওয়া অবৈধ হবে এবং তা ভবিষ্যতে ইউক্রেনের গভীরে আক্রমণের জন্য রাশিয়াকে একটি পথ খুলে দেবে।
কিয়েভের আশঙ্কা, যদি তারা দোনেৎস্কের বাকি অংশ ছেড়ে দেয়, তবে রাশিয়া আবার অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হবে এবং একসময় দোনেৎস্ক ব্যবহার করে পশ্চিম দিকে আক্রমণ চালাবে।
উভয় পক্ষই দোনেৎস্ককে কেন্দ্র করে যুদ্ধে ভয়াবহ ক্ষয়ক্ষতির মুখোমুখি হয়েছে এবং প্রচুর অর্থ ও সরঞ্জাম ব্যয় করেছে। এর মধ্যে বাখমুত শহরের লড়াইও রয়েছে। যেখানে রাশিয়া হাজার হাজার দণ্ডিত অপরাধীকে ভাড়াটে সৈন্যে পরিণত করে রণক্ষেত্রে নামিয়েছিল। এ কারণে, দোনেৎস্ক উভয় দেশের জনমানসে আরও বেশি গুরুত্ব পেয়েছে। ফলে কারও পক্ষে তাদের অবস্থান পরিবর্তন করা কঠিন।
ইউক্রেন চায় না যে, রাশিয়া যুদ্ধক্ষেত্রে জয় করতে ব্যর্থ হওয়া ভূখণ্ডকে উপহার হিসেবে পাক এবং জেলেনস্কি বলেছেন, যে যুদ্ধ রাশিয়া শুরু করেছে, তার জন্য তাদের পুরস্কৃত করা উচিত নয়। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ইনস্টিটিউট ফর দ্য স্টাডি অব ওয়ার অক্টোবর মাসে বলেছিল, রাশিয়ার অগ্রগতির হার দেখে মনে হয় না যে তারা খুব শিগগিরই দোনেৎস্কের বাকি অংশ দখল করতে চলেছে। তবে ‘রাশিয়ার অগ্রগতির একটি অপরিবর্তনীয় হার ধরে নিলে’ তারা ২০২৭ সালের আগস্টের মধ্যে তা নিতে পারে।
রাশিয়ার কমান্ডাররা অবশ্য আরও বেশি আশাবাদী। জেনারেল স্টাফের প্রধান ভ্যালেরি গেরাসিমভ রোববার পুতিনকে বলেছেন, মস্কোর বাহিনী পুরো ফ্রন্ট লাইন বরাবর অগ্রসর হচ্ছে এবং দনবাসের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার জন্য কাজ করছে।
দোনেৎস্ক বন্দর, রেলপথ এবং অন্যান্য ভারী শিল্পের কেন্দ্র। এটি একসময় ইউক্রেনের কয়লা, পরিশোধিত ইস্পাত, কোক, ঢালাই লোহা এবং ইস্পাত উৎপাদনের অর্ধেকেরও বেশি সরবরাহ করত, তবে যুদ্ধের কারণে অনেক খনি ও কারখানা ধ্বংস হয়ে গেছে। এ ছাড়া, দোনেৎস্কে বিরল মৃত্তিকা, টাইটানিয়াম এবং জিরকোনিয়াম রয়েছে—যা এটিকে নিয়ন্ত্রণকারী পক্ষের জন্য আয়ের উৎস।
দোনেৎস্কের ভাগ্য পুতিন এবং জেলেনস্কি উভয়ের ঐতিহাসিক উত্তরাধিকারকে প্রভাবিত করতে পারে। পুতিন নিজেকে জাতিগত রুশদের রক্ষক হিসেবে তুলে ধরেছেন, তারা যেখানেই থাকুক না কেন। পুরো দোনেৎস্ককে সুরক্ষিত করা এই বক্তব্যের মূল কেন্দ্রবিন্দু। জেলেনস্কি ২০১৯ সালে পূর্ব ইউক্রেনের যুদ্ধ অবসান ঘটানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন। ২০২২ সাল থেকে তিনি অনেক বড়, বৈরী প্রতিবেশীর মুখে অস্ত্র এবং সংখ্যায় কম ইউক্রেনের এক দৃঢ় রক্ষক হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছেন।
লড়াই না করে দোনেৎস্ক ছেড়ে দেওয়া—যেখানে অন্তত আড়াই লাখ ইউক্রেনীয় বাস করে—ইউক্রেনীয়দের কাছে বিশ্বাসঘাতকতা হিসেবে দেখা হতে পারে, যাদের অনেকেই যুদ্ধক্ষেত্রে স্বজন হারিয়েছেন। কিয়েভ ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব সোসিওলজির সাম্প্রতিক এক জরিপ অনুসারে, ইউক্রেনীয়দের একটি সংকীর্ণ সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ এখনো আঞ্চলিক ছাড়ের বিরোধিতা করে।
জেলেনস্কিসহ ইউক্রেনের কর্মকর্তারা যেকোনো শান্তি চুক্তির অধীনে কিয়েভের নিয়ন্ত্রণে থাকা ভূমি ছাড়ার সম্ভাবনা প্রত্যাখ্যান করেছেন। জেলেনস্কি বলেন, তাঁর ভূখণ্ড ছেড়ে দেওয়ার কোনো ম্যান্ডেট নেই এবং রাষ্ট্রের ভূমি ব্যক্তিগত সম্পত্তির মতো কেনা-বেচা করা যায় না। ইউক্রেনের সংবিধান অনুসারে, আঞ্চলিক পরিবর্তন অবশ্যই একটি গণভোটের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করতে হবে, যা ইউক্রেনের অন্তত দুই-তৃতীয়াংশ অর্থাৎ, অন্তত ৩০ লাখ ইউক্রেনীয় ভোটারের স্বাক্ষর থাকলে আয়োজন করা যেতে পারে।
তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই গণভোটের বিষয়টির সমালোচনা করেছেন এবং তিনি বলেছিলেন, ‘কিছু ভূমি অদল-বদল হবে।’ এখন ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের আলোচনা মূলত এই দোনেৎস্কের নিয়ন্ত্রণ কার হাতে যাবে সেটাই নিয়েই থমকে আছে।
রয়টার্স থেকে পরিমার্জিত

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতদের মধ্যে ইউক্রেন শান্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনা হলেও প্রকাশ্যে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইউরি উশাকভ, এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন যে অমীমাংসিত ‘আঞ্চলিক সমস্যাই’ মূল বাধা। আর এই অঞ্চল আর কোনোটিই নয়, দোনেৎস্ক।
উশাকভ মূলত ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় দোনেৎস্কের সম্পূর্ণ এলাকার ওপর রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণ দাবির কথাই বলেছিলেন। পুতিন ইউক্রেনে হাজার হাজার সৈন্য পাঠানোর প্রায় ৪ বছর পরও এবং দোনেৎস্কে রাশিয়া সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদী বিদ্রোহের এক দশকেরও বেশি সময় পর অঞ্চলটির কিছু অংশ এখনো ইউক্রেনের হাতে আছে।
প্রায় সব দেশই দোনেৎস্ককে ইউক্রেনের অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। কিন্তু এটি ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের চারটি অঞ্চলের মধ্যে একটি, যা মস্কো ২০২২ সালে একটি গণভোটের পর সংযুক্ত করার কথা ঘোষণা করে। কিয়েভ ও পশ্চিমা দেশগুলো সেই গণভোটকে ‘প্রহসন’ বলে বাতিল করে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ফক্স নিউজকে বলেছিলেন, যুদ্ধটি এখন দোনেৎস্কের সেই ২০ শতাংশ বা ৫ হাজার বর্গকিলোমিটারের এলাকা নিয়ে, যা রাশিয়া নিয়ন্ত্রণ করে না কিন্তু চায়।
পুতিন ২০২২ সালে ইউক্রেনে সৈন্য পাঠানোর সময় বলেছিলেন, তাঁর লক্ষ্য হলো ‘গত আট বছর ধরে যারা ভয়ভীতি ও গণহত্যার শিকার হয়েছেন...সেই মানুষগুলোকে রক্ষা করা।’ ইউক্রেন এবং তার মিত্ররা বলেছিল, পুতিনের এই দাবি ঔপনিবেশিক ধাঁচের এবং এলাকা দখলের জন্য একটি মিথ্যা অজুহাত মাত্র।
পুতিনের এই দাবি মূলত দোনেৎস্ক এবং লুহানস্ক অঞ্চলে রাশিয়া সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিরুদ্ধে ইউক্রেনের লড়াইয়ের দিকে ইঙ্গিত করে, যারা ২০১৪ সালে ইউক্রেনীয় সরকারি নিয়ন্ত্রণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে কিছু এলাকা দখল করেছিল। পূর্ব ইউক্রেনে এর পরের সংঘর্ষে উভয় পক্ষই শহর ও বেসামরিক নাগরিকদের ওপর গোলাবর্ষণের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করেছিল। মস্কো এই অঞ্চলের বিশাল রুশভাষী জনসংখ্যাকে উদ্ধৃত করে বলেছিল যে,২০২২ সালে হস্তক্ষেপ করা তাদের নৈতিক কর্তব্য।
কিয়েভ বলেছিল, ২০১৪ সালে ইউক্রেনের আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষায় শক্তি দিয়ে জবাব দেওয়া ছাড়া তাদের আর কোনো উপায় ছিল না এবং তারাও বিচ্ছিন্নতাবাদী বাহিনীর বিরুদ্ধে শহর ও বেসামরিক নাগরিকদের ওপর গোলাবর্ষণের অভিযোগ এনেছিল। জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৪ সাল থেকে ২০২২ সালের শুরু পর্যন্ত ইউক্রেনীয় সরকারি বাহিনী এবং বিচ্ছিন্নতাবাদীদের মধ্যে সংঘাতে উভয় পক্ষে ৩ হাজার ১০৬ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত এবং ৯ হাজার বেসামরিক নাগরিক আহত হয়েছিলেন।
দোনেৎস্কের বাকি যে অংশটি রাশিয়া চায়, তার মধ্যে রয়েছে স্লোভিয়ানস্ক এবং ক্রামাতোরস্ক—দুটি ‘দুর্গনগরী’ যা ২০১৪ সাল থেকে ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করে আসছে। এই শহরগুলো ইউক্রেনের বাকি অঞ্চল রক্ষার জন্য কিয়েভের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ দোনেৎস্কের পশ্চিমের ভূমি অনেকটাই সমতল এবং বিশাল খোলা মাঠ; যা রাশিয়াকে দোনেৎস্কের বাইরে অগ্রসর হতে এবং দিনিপ্রো নদীর পূর্ব তীর পর্যন্ত এলাকা দখল করার পথ সহজ করে দেবে।
শহরগুলো পরিখা, ট্যাংক-বিধ্বংসী বাধা, বাংকার এবং মাইনক্ষেত্রসহ অত্যন্ত সুরক্ষিত প্রতিরক্ষা লাইনের অংশ। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, গণভোট ছাড়া দোনেৎস্কের বাকি অংশ রাশিয়ার হাতে তুলে দেওয়া অবৈধ হবে এবং তা ভবিষ্যতে ইউক্রেনের গভীরে আক্রমণের জন্য রাশিয়াকে একটি পথ খুলে দেবে।
কিয়েভের আশঙ্কা, যদি তারা দোনেৎস্কের বাকি অংশ ছেড়ে দেয়, তবে রাশিয়া আবার অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হবে এবং একসময় দোনেৎস্ক ব্যবহার করে পশ্চিম দিকে আক্রমণ চালাবে।
উভয় পক্ষই দোনেৎস্ককে কেন্দ্র করে যুদ্ধে ভয়াবহ ক্ষয়ক্ষতির মুখোমুখি হয়েছে এবং প্রচুর অর্থ ও সরঞ্জাম ব্যয় করেছে। এর মধ্যে বাখমুত শহরের লড়াইও রয়েছে। যেখানে রাশিয়া হাজার হাজার দণ্ডিত অপরাধীকে ভাড়াটে সৈন্যে পরিণত করে রণক্ষেত্রে নামিয়েছিল। এ কারণে, দোনেৎস্ক উভয় দেশের জনমানসে আরও বেশি গুরুত্ব পেয়েছে। ফলে কারও পক্ষে তাদের অবস্থান পরিবর্তন করা কঠিন।
ইউক্রেন চায় না যে, রাশিয়া যুদ্ধক্ষেত্রে জয় করতে ব্যর্থ হওয়া ভূখণ্ডকে উপহার হিসেবে পাক এবং জেলেনস্কি বলেছেন, যে যুদ্ধ রাশিয়া শুরু করেছে, তার জন্য তাদের পুরস্কৃত করা উচিত নয়। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ইনস্টিটিউট ফর দ্য স্টাডি অব ওয়ার অক্টোবর মাসে বলেছিল, রাশিয়ার অগ্রগতির হার দেখে মনে হয় না যে তারা খুব শিগগিরই দোনেৎস্কের বাকি অংশ দখল করতে চলেছে। তবে ‘রাশিয়ার অগ্রগতির একটি অপরিবর্তনীয় হার ধরে নিলে’ তারা ২০২৭ সালের আগস্টের মধ্যে তা নিতে পারে।
রাশিয়ার কমান্ডাররা অবশ্য আরও বেশি আশাবাদী। জেনারেল স্টাফের প্রধান ভ্যালেরি গেরাসিমভ রোববার পুতিনকে বলেছেন, মস্কোর বাহিনী পুরো ফ্রন্ট লাইন বরাবর অগ্রসর হচ্ছে এবং দনবাসের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার জন্য কাজ করছে।
দোনেৎস্ক বন্দর, রেলপথ এবং অন্যান্য ভারী শিল্পের কেন্দ্র। এটি একসময় ইউক্রেনের কয়লা, পরিশোধিত ইস্পাত, কোক, ঢালাই লোহা এবং ইস্পাত উৎপাদনের অর্ধেকেরও বেশি সরবরাহ করত, তবে যুদ্ধের কারণে অনেক খনি ও কারখানা ধ্বংস হয়ে গেছে। এ ছাড়া, দোনেৎস্কে বিরল মৃত্তিকা, টাইটানিয়াম এবং জিরকোনিয়াম রয়েছে—যা এটিকে নিয়ন্ত্রণকারী পক্ষের জন্য আয়ের উৎস।
দোনেৎস্কের ভাগ্য পুতিন এবং জেলেনস্কি উভয়ের ঐতিহাসিক উত্তরাধিকারকে প্রভাবিত করতে পারে। পুতিন নিজেকে জাতিগত রুশদের রক্ষক হিসেবে তুলে ধরেছেন, তারা যেখানেই থাকুক না কেন। পুরো দোনেৎস্ককে সুরক্ষিত করা এই বক্তব্যের মূল কেন্দ্রবিন্দু। জেলেনস্কি ২০১৯ সালে পূর্ব ইউক্রেনের যুদ্ধ অবসান ঘটানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন। ২০২২ সাল থেকে তিনি অনেক বড়, বৈরী প্রতিবেশীর মুখে অস্ত্র এবং সংখ্যায় কম ইউক্রেনের এক দৃঢ় রক্ষক হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছেন।
লড়াই না করে দোনেৎস্ক ছেড়ে দেওয়া—যেখানে অন্তত আড়াই লাখ ইউক্রেনীয় বাস করে—ইউক্রেনীয়দের কাছে বিশ্বাসঘাতকতা হিসেবে দেখা হতে পারে, যাদের অনেকেই যুদ্ধক্ষেত্রে স্বজন হারিয়েছেন। কিয়েভ ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব সোসিওলজির সাম্প্রতিক এক জরিপ অনুসারে, ইউক্রেনীয়দের একটি সংকীর্ণ সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ এখনো আঞ্চলিক ছাড়ের বিরোধিতা করে।
জেলেনস্কিসহ ইউক্রেনের কর্মকর্তারা যেকোনো শান্তি চুক্তির অধীনে কিয়েভের নিয়ন্ত্রণে থাকা ভূমি ছাড়ার সম্ভাবনা প্রত্যাখ্যান করেছেন। জেলেনস্কি বলেন, তাঁর ভূখণ্ড ছেড়ে দেওয়ার কোনো ম্যান্ডেট নেই এবং রাষ্ট্রের ভূমি ব্যক্তিগত সম্পত্তির মতো কেনা-বেচা করা যায় না। ইউক্রেনের সংবিধান অনুসারে, আঞ্চলিক পরিবর্তন অবশ্যই একটি গণভোটের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করতে হবে, যা ইউক্রেনের অন্তত দুই-তৃতীয়াংশ অর্থাৎ, অন্তত ৩০ লাখ ইউক্রেনীয় ভোটারের স্বাক্ষর থাকলে আয়োজন করা যেতে পারে।
তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই গণভোটের বিষয়টির সমালোচনা করেছেন এবং তিনি বলেছিলেন, ‘কিছু ভূমি অদল-বদল হবে।’ এখন ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের আলোচনা মূলত এই দোনেৎস্কের নিয়ন্ত্রণ কার হাতে যাবে সেটাই নিয়েই থমকে আছে।
রয়টার্স থেকে পরিমার্জিত

বাসবরাজুর মৃত্যু কেবল ভারত সরকারের কৌশলগত বিজয়ই নয়, মাওবাদীদের বস্তারে অবস্থিত শেষ প্রতিরক্ষা রেখাতেও ভাঙনের নির্দেশ করে। এই এলাকায় দলটি ১৯৮০-এর দশক থেকে সবচেয়ে শক্তিশালী দুর্গ তৈরি করেছিল।
২৮ মে ২০২৫
বিশ্বজুড়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন উঠে আসছে—‘যদি বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ সীমিত করা হয়, অথবা এই শ্রেণিটিকেই সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়, তবে কী ঘটবে?’ পশ্চিমা দেশগুলোতে চরম ধনী বা বিলিয়নিয়ারদের সংখ্যা ও প্রভাব বাড়তে থাকায় এখন এই প্রশ্ন আরও জোরালো হয়েছে।
১ দিন আগে
জাপানের ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর গত অক্টোবরে দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন সানায়ে তাকাইচি। এরপরই তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত হন জাপানের নতুন ‘আয়রন লেডি’ বা লৌহমানবী’ হিসেবে।
১ দিন আগে
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠককে ঘিরে দিল্লিতে শুরু হয়েছে কূটনৈতিক প্রস্তুতি। চলমান ইউক্রেন যুদ্ধ, যুক্তরাষ্ট্রের চাপ এবং জ্বালানির বাজারে অস্থিরতার মধ্যেই এই শীর্ষ সম্মেলন হতে যাচ্ছে। অর্থনীতি, প্রতিরক্ষা এবং জ্বালানি—এই তিনটি খাত আলোচনার...
২ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

বিশ্বজুড়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন উঠে আসছে—‘যদি বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ সীমিত করা হয়, অথবা এই শ্রেণিটিকেই সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়, তবে কী ঘটবে?’ পশ্চিমা দেশগুলোতে চরম ধনী বা বিলিয়নিয়ারদের সংখ্যা ও প্রভাব বাড়তে থাকায় এখন এই প্রশ্ন আরও জোরালো হয়েছে।
সম্প্রতি টেসলার মালিক ইলন মাস্ক গত নভেম্বরে এমন এক পে-অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন, যা তাঁকে একজন ট্রিলিয়ন ডলারের মালিকে পরিণত করতে পারে। তিনি ইতিমধ্যেই বিশ্বের শীর্ষ ধনী। যদি তিনি প্রস্তাবিত পূর্ণ প্যাকেজটি পান, তাহলে তিনি বিশ্বের ইতিহাসে সর্বকালের সেরা ধনী ব্যক্তিতে পরিণত হবেন। ফোর্বসের হিসেবে বর্তমানে বিশ্বের ৩ হাজার ২৮ জন বিলিয়নিয়ার আছেন। তাঁদের মোট সম্পদ প্রায় ১৬.১ ট্রিলিয়ন ডলার। অন্যদিকে পৃথিবীতে এখনো প্রায় ৮৩ কোটি ১০ লাখ মানুষ দৈনিক তিন ডলারের নিচে আয় করে চরম দারিদ্র্যে দিন কাটান।
বিশ্লেষকদের মতে, বিশ্বের এই বিপুল সম্পদ বৈষম্য শুধু অর্থনীতিকে নয়, রাজনীতি, মিডিয়া ও চিন্তাকেও প্রভাবিত করে। অনেকেই মনে করেন, বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ ও ক্ষমতা বিশ্বব্যবস্থাকে ‘অতি ধনীদের স্বার্থে’ পুনর্গঠন করছে। আবার অন্য একটি মত বলছে, বিলিয়নিয়ারেরা না থাকলে উদ্ভাবন, প্রযুক্তি ও অগ্রগতি থমকে যাবে। কারণ বৃহৎ বিনিয়োগই গড়ে তোলে নতুন সমাধান।
উদ্ভাবন কি থেমে যাবে
অ্যাডাম স্মিথ ইনস্টিটিউটের ম্যাক্সওয়েল মার্লোর মতে, বিলিয়নিয়ারদের বিলোপ করা হলে পশ্চিমা অর্থনীতি বিপর্যস্ত হবে। তাঁর দাবি, অধিকাংশ বিলিয়নিয়ার তাঁদের সম্পদের মালিক হয়েছেন সমাজের চাহিদামতো পণ্য ও প্রযুক্তি তৈরি করে। তাঁদের সম্পদ মূলত কোম্পানির শেয়ার, মেধাস্বত্ব অথবা সম্পত্তি—যা দিনে দিনে ওঠানামা করে। তাঁর মতে, এই ধনী ব্যক্তিদের প্রণোদনাই উদ্ভাবনে গতি আনে; তা না থাকলে উন্নয়ন থেমে যাবে।
যদি ন্যায্যভাবে সম্পদ বণ্টিত হতো
গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ট্যাক্স জাস্টিসের ডেরেজে আলেমায়েহুর মতে, শুধু বিলিয়নিয়ার কর আরোপ নয়—প্রশ্ন হচ্ছে, সেই কর কোথায় যাবে। দক্ষিণ বিশ্বের শ্রম ও সম্পদ থেকেই যে বিপুল সম্পদ তৈরি হয়, তাই তার ন্যায্য অংশ দক্ষিণেই ফিরে আসা উচিত। তিনি বলেন, বৈষম্য কমাতে শুধু অর্থ হস্তান্তর নয়, বৈশ্বিক আর্থিক কাঠামো পুনর্গঠন জরুরি; নইলে বৈষম্য আরও গভীর হবে।
বিধিনিষেধ কি বদলাতে হবে
ডেনিসন ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ফাদেল কাবুব বলেন, বিলিয়নিয়ারেরা আসলে ব্যর্থ নীতির ফল। সিস্টেম যেভাবে সাজানো, তাতে সম্পদ একদিকে কেন্দ্রীভূত হওয়াই স্বাভাবিক। তাঁর মতে, বিলিয়নিয়ার শ্রেণিকে বিলোপ করতে হলে আধুনিক অ্যান্টি ট্রাস্ট ও কঠোর বাজার নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন।
মিডিয়ার ওপর প্রভাব কমবে
গোল্ডস্মিথস বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডেস ফ্রিডম্যান মনে করেন, বিলিয়নিয়ারেরা পুরো মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম কিনে ফেলতে সক্ষম হওয়ায় তথ্যপ্রবাহ তাঁদের স্বার্থেই নিয়ন্ত্রিত হয়। যেমন—বেজোস বা ইলন মাস্কের গণমাধ্যম মালিকানা এই অঙ্গনের স্বাধীনতাকে দীর্ঘমেয়াদে প্রশ্নবিদ্ধ করে। তাই বিলিয়নিয়ার প্রভাব সীমিত হলে তথ্যের উৎসও আরও স্বাধীন হতে পারে।
চরম সম্পদ কি সত্যিই বিলোপ করা সম্ভব
বিশ্ব ইনইক্যুয়ালিটি ল্যাবের লুকাস শ্যানসেলের মতে, ইতিহাসে এর নজির আছে। উদাহরণস্বরূপ—রকেফেলারের একচেটিয়া সাম্রাজ্য ভেঙে দেওয়া, কিংবা রুজভেল্টের সময় সর্বোচ্চ করহার ৯৪ শতাংশে উন্নীত করা। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পানামা পেপারসের মতো ফাঁস যেমন দুর্দান্ত স্বচ্ছতা তৈরি করেছে, তেমনি তা পরিবর্তনের সুযোগও তৈরি করছে। তিনি মনে করেন, ধনীদের ওপর কর আরোপের মতো ধারণা এখন আর ‘যদি’ নয়, বরং ‘কখন’ করা হবে—এ প্রশ্নে এসে দাঁড়িয়েছে।
আল-জাজিরা অবলম্বনে

বিশ্বজুড়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন উঠে আসছে—‘যদি বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ সীমিত করা হয়, অথবা এই শ্রেণিটিকেই সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়, তবে কী ঘটবে?’ পশ্চিমা দেশগুলোতে চরম ধনী বা বিলিয়নিয়ারদের সংখ্যা ও প্রভাব বাড়তে থাকায় এখন এই প্রশ্ন আরও জোরালো হয়েছে।
সম্প্রতি টেসলার মালিক ইলন মাস্ক গত নভেম্বরে এমন এক পে-অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন, যা তাঁকে একজন ট্রিলিয়ন ডলারের মালিকে পরিণত করতে পারে। তিনি ইতিমধ্যেই বিশ্বের শীর্ষ ধনী। যদি তিনি প্রস্তাবিত পূর্ণ প্যাকেজটি পান, তাহলে তিনি বিশ্বের ইতিহাসে সর্বকালের সেরা ধনী ব্যক্তিতে পরিণত হবেন। ফোর্বসের হিসেবে বর্তমানে বিশ্বের ৩ হাজার ২৮ জন বিলিয়নিয়ার আছেন। তাঁদের মোট সম্পদ প্রায় ১৬.১ ট্রিলিয়ন ডলার। অন্যদিকে পৃথিবীতে এখনো প্রায় ৮৩ কোটি ১০ লাখ মানুষ দৈনিক তিন ডলারের নিচে আয় করে চরম দারিদ্র্যে দিন কাটান।
বিশ্লেষকদের মতে, বিশ্বের এই বিপুল সম্পদ বৈষম্য শুধু অর্থনীতিকে নয়, রাজনীতি, মিডিয়া ও চিন্তাকেও প্রভাবিত করে। অনেকেই মনে করেন, বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ ও ক্ষমতা বিশ্বব্যবস্থাকে ‘অতি ধনীদের স্বার্থে’ পুনর্গঠন করছে। আবার অন্য একটি মত বলছে, বিলিয়নিয়ারেরা না থাকলে উদ্ভাবন, প্রযুক্তি ও অগ্রগতি থমকে যাবে। কারণ বৃহৎ বিনিয়োগই গড়ে তোলে নতুন সমাধান।
উদ্ভাবন কি থেমে যাবে
অ্যাডাম স্মিথ ইনস্টিটিউটের ম্যাক্সওয়েল মার্লোর মতে, বিলিয়নিয়ারদের বিলোপ করা হলে পশ্চিমা অর্থনীতি বিপর্যস্ত হবে। তাঁর দাবি, অধিকাংশ বিলিয়নিয়ার তাঁদের সম্পদের মালিক হয়েছেন সমাজের চাহিদামতো পণ্য ও প্রযুক্তি তৈরি করে। তাঁদের সম্পদ মূলত কোম্পানির শেয়ার, মেধাস্বত্ব অথবা সম্পত্তি—যা দিনে দিনে ওঠানামা করে। তাঁর মতে, এই ধনী ব্যক্তিদের প্রণোদনাই উদ্ভাবনে গতি আনে; তা না থাকলে উন্নয়ন থেমে যাবে।
যদি ন্যায্যভাবে সম্পদ বণ্টিত হতো
গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ট্যাক্স জাস্টিসের ডেরেজে আলেমায়েহুর মতে, শুধু বিলিয়নিয়ার কর আরোপ নয়—প্রশ্ন হচ্ছে, সেই কর কোথায় যাবে। দক্ষিণ বিশ্বের শ্রম ও সম্পদ থেকেই যে বিপুল সম্পদ তৈরি হয়, তাই তার ন্যায্য অংশ দক্ষিণেই ফিরে আসা উচিত। তিনি বলেন, বৈষম্য কমাতে শুধু অর্থ হস্তান্তর নয়, বৈশ্বিক আর্থিক কাঠামো পুনর্গঠন জরুরি; নইলে বৈষম্য আরও গভীর হবে।
বিধিনিষেধ কি বদলাতে হবে
ডেনিসন ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ফাদেল কাবুব বলেন, বিলিয়নিয়ারেরা আসলে ব্যর্থ নীতির ফল। সিস্টেম যেভাবে সাজানো, তাতে সম্পদ একদিকে কেন্দ্রীভূত হওয়াই স্বাভাবিক। তাঁর মতে, বিলিয়নিয়ার শ্রেণিকে বিলোপ করতে হলে আধুনিক অ্যান্টি ট্রাস্ট ও কঠোর বাজার নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন।
মিডিয়ার ওপর প্রভাব কমবে
গোল্ডস্মিথস বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডেস ফ্রিডম্যান মনে করেন, বিলিয়নিয়ারেরা পুরো মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম কিনে ফেলতে সক্ষম হওয়ায় তথ্যপ্রবাহ তাঁদের স্বার্থেই নিয়ন্ত্রিত হয়। যেমন—বেজোস বা ইলন মাস্কের গণমাধ্যম মালিকানা এই অঙ্গনের স্বাধীনতাকে দীর্ঘমেয়াদে প্রশ্নবিদ্ধ করে। তাই বিলিয়নিয়ার প্রভাব সীমিত হলে তথ্যের উৎসও আরও স্বাধীন হতে পারে।
চরম সম্পদ কি সত্যিই বিলোপ করা সম্ভব
বিশ্ব ইনইক্যুয়ালিটি ল্যাবের লুকাস শ্যানসেলের মতে, ইতিহাসে এর নজির আছে। উদাহরণস্বরূপ—রকেফেলারের একচেটিয়া সাম্রাজ্য ভেঙে দেওয়া, কিংবা রুজভেল্টের সময় সর্বোচ্চ করহার ৯৪ শতাংশে উন্নীত করা। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পানামা পেপারসের মতো ফাঁস যেমন দুর্দান্ত স্বচ্ছতা তৈরি করেছে, তেমনি তা পরিবর্তনের সুযোগও তৈরি করছে। তিনি মনে করেন, ধনীদের ওপর কর আরোপের মতো ধারণা এখন আর ‘যদি’ নয়, বরং ‘কখন’ করা হবে—এ প্রশ্নে এসে দাঁড়িয়েছে।
আল-জাজিরা অবলম্বনে

বাসবরাজুর মৃত্যু কেবল ভারত সরকারের কৌশলগত বিজয়ই নয়, মাওবাদীদের বস্তারে অবস্থিত শেষ প্রতিরক্ষা রেখাতেও ভাঙনের নির্দেশ করে। এই এলাকায় দলটি ১৯৮০-এর দশক থেকে সবচেয়ে শক্তিশালী দুর্গ তৈরি করেছিল।
২৮ মে ২০২৫
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতদের মধ্যে ইউক্রেন শান্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনা হলেও প্রকাশ্যে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইউরি উশাকভ, এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন যে অমীমাংসিত ‘আঞ্চলিক সমস্যাই’ মূল বাধা। আর এই অঞ্চল আর কোনোটিই নয়, দোনেৎস্ক।
১৯ ঘণ্টা আগে
জাপানের ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর গত অক্টোবরে দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন সানায়ে তাকাইচি। এরপরই তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত হন জাপানের নতুন ‘আয়রন লেডি’ বা লৌহমানবী’ হিসেবে।
১ দিন আগে
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠককে ঘিরে দিল্লিতে শুরু হয়েছে কূটনৈতিক প্রস্তুতি। চলমান ইউক্রেন যুদ্ধ, যুক্তরাষ্ট্রের চাপ এবং জ্বালানির বাজারে অস্থিরতার মধ্যেই এই শীর্ষ সম্মেলন হতে যাচ্ছে। অর্থনীতি, প্রতিরক্ষা এবং জ্বালানি—এই তিনটি খাত আলোচনার...
২ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

জাপানের ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর গত অক্টোবরে দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন সানায়ে তাকাইচি। এরপরই তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত হন জাপানের নতুন ‘আয়রন লেডি’ বা লৌহমানবী’ হিসেবে। এই পরিচয়টিকে তাকাইচি নিজেও গর্বের সঙ্গে গ্রহণ করেন। মার্গারেট থ্যাচারের অনুরাগী এই রক্ষণশীল নেতা ঘরোয়া অর্থনীতি থেকে শুরু করে পররাষ্ট্র ও নিরাপত্তা—সব ক্ষেত্রেই শক্ত অবস্থানের বার্তা দিয়েছেন।
তাকাইচির রাজনৈতিক পরিচয়ের মূল কেন্দ্রে রয়েছে ‘নিপ্পন কেইগি’ নামে জাপানের সবচেয়ে প্রভাবশালী জাতীয়তাবাদী গোষ্ঠী। এই সংগঠন জাপানের সংবিধানের যুদ্ধবিরোধী ৯ নম্বর অনুচ্ছেদ বাতিল, শক্তিশালী সামরিক বাহিনী গঠন এবং ঐতিহ্যবাদী মূল্যবোধে প্রত্যাবর্তনের পক্ষে। পূর্বসুরী শিনজো আবের মতো তাই তাকাইচিও জাপানকে স্বাভাবিক রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চান, যেখানে গোয়েন্দা সংস্থা, আধুনিক সেনাবাহিনী এবং কঠোর নিরাপত্তা আইন থাকবে।
অর্থনীতির ক্ষেত্রে তিনি জাতীয় শিল্পকে শক্তিশালী করা, প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বাড়ানো এবং রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ বৃদ্ধির পক্ষে। একই সঙ্গে কঠোর অভিবাসন নীতি ও রক্ষণশীল মূল্যবোধের প্রচারও তাঁকে ডানপন্থীদের মধ্যে জনপ্রিয় করেছে। তবে এই অভ্যন্তরীণ রাজনীতি এখন আন্তর্জাতিক উত্তেজনার সঙ্গে গেঁথে গেছে—বিশেষ করে, তাইওয়ান ইস্যুতে তাঁর অবস্থানের কারণে।
তাকাইচি ক্ষমতায় আসার পর থেকেই চীনের প্রতি কঠোর মনোভাব দেখাচ্ছেন। বেইজিংকে তিনি কৌশলগত হুমকি হিসেবে দেখেন এবং প্রতিরোধমূলক সামরিক ও কূটনৈতিক পদক্ষেপের পক্ষে জোর দিচ্ছেন। এরই অংশ হিসেবে অক্টোবরের শেষ দিকে তাঁর ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাক্ষাৎ দুই দেশের সম্পর্ককে নতুন সোনালি যুগে প্রবেশ করানোর আভাস দেয়। জাপান প্রতিরক্ষা ব্যয় জিডিপির কমপক্ষে ২ শতাংশে উন্নীত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, আর যুক্তরাষ্ট্র বিরল ধাতুর সরবরাহ নিশ্চিতকরণসহ অর্থনৈতিক সহায়তার ঘোষণা দেয়।
তবে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হলো তাইওয়ানের সঙ্গে তাকাইচির ঘনিষ্ঠতা। তিনি তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট লাই চিং-তের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন, যা চীনের কাছে স্পষ্ট উত্তেজনাকর পদক্ষেপ হিসেবে ধরা পড়েছে। আরও বিতর্ক সৃষ্টি হয় যখন তাকাইচি প্রকাশ্যে বলেন, তাইওয়ানের নিরাপত্তা জাপানের নিরাপত্তার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত। এমনকি তাইওয়ানে চীনা হামলার ক্ষেত্রে জাপানের আত্মরক্ষা বাহিনী হস্তক্ষেপ করতে পারে বলেও ইঙ্গিত দেন তিনি।
এ ক্ষেত্রে চীনের প্রতিক্রিয়াও ছিল কঠোর ও দ্রুত। তারা তাকাইচির বিরুদ্ধে ‘পুরোনো সামরিকতাবাদকে পুনরুজ্জীবিত করার’ অভিযোগ তোলে, রাষ্ট্রদূতকে তলব করে এবং জাতিসংঘে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ পাঠায়। পাশাপাশি সামুদ্রিক এলাকায় কোস্টগার্ডের টহল বাড়ায় চীন, জাপানি সামুদ্রিক পণ্যে সীমাবদ্ধতা আরোপের হুমকি দেয় এবং উত্তেজনাপূর্ণ নানা বিবৃতি দেয়।
এদিকে জাপানও পশ্চিম সীমান্তের ইয়োনাগুনি দ্বীপে বিমান প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনের ঘোষণা দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রও একই দ্বীপে সামরিক অবকাঠামো শক্তিশালী করছে। ফলে পরিস্থিতি আরও জটিল আকার ধারণ করছে।
তবে ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি তাকাইচিকে উত্তেজনা না বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন। কারণ আগামী এপ্রিলে তিনি বেইজিং সফর করতে চান।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তাকাইচির নেতৃত্বে জাপান নতুন ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতায় প্রবেশ করেছে। তাঁর দৃঢ় অবস্থান দেশকে হয় পুনরুত্থানের পথে নেবে—নয়তো চীন–তাইওয়ান উত্তেজনার কেন্দ্রে ঠেলে দেবে। ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে তিনি কোন পথে হাঁটবেন তার ওপর।

জাপানের ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর গত অক্টোবরে দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন সানায়ে তাকাইচি। এরপরই তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত হন জাপানের নতুন ‘আয়রন লেডি’ বা লৌহমানবী’ হিসেবে। এই পরিচয়টিকে তাকাইচি নিজেও গর্বের সঙ্গে গ্রহণ করেন। মার্গারেট থ্যাচারের অনুরাগী এই রক্ষণশীল নেতা ঘরোয়া অর্থনীতি থেকে শুরু করে পররাষ্ট্র ও নিরাপত্তা—সব ক্ষেত্রেই শক্ত অবস্থানের বার্তা দিয়েছেন।
তাকাইচির রাজনৈতিক পরিচয়ের মূল কেন্দ্রে রয়েছে ‘নিপ্পন কেইগি’ নামে জাপানের সবচেয়ে প্রভাবশালী জাতীয়তাবাদী গোষ্ঠী। এই সংগঠন জাপানের সংবিধানের যুদ্ধবিরোধী ৯ নম্বর অনুচ্ছেদ বাতিল, শক্তিশালী সামরিক বাহিনী গঠন এবং ঐতিহ্যবাদী মূল্যবোধে প্রত্যাবর্তনের পক্ষে। পূর্বসুরী শিনজো আবের মতো তাই তাকাইচিও জাপানকে স্বাভাবিক রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চান, যেখানে গোয়েন্দা সংস্থা, আধুনিক সেনাবাহিনী এবং কঠোর নিরাপত্তা আইন থাকবে।
অর্থনীতির ক্ষেত্রে তিনি জাতীয় শিল্পকে শক্তিশালী করা, প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বাড়ানো এবং রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ বৃদ্ধির পক্ষে। একই সঙ্গে কঠোর অভিবাসন নীতি ও রক্ষণশীল মূল্যবোধের প্রচারও তাঁকে ডানপন্থীদের মধ্যে জনপ্রিয় করেছে। তবে এই অভ্যন্তরীণ রাজনীতি এখন আন্তর্জাতিক উত্তেজনার সঙ্গে গেঁথে গেছে—বিশেষ করে, তাইওয়ান ইস্যুতে তাঁর অবস্থানের কারণে।
তাকাইচি ক্ষমতায় আসার পর থেকেই চীনের প্রতি কঠোর মনোভাব দেখাচ্ছেন। বেইজিংকে তিনি কৌশলগত হুমকি হিসেবে দেখেন এবং প্রতিরোধমূলক সামরিক ও কূটনৈতিক পদক্ষেপের পক্ষে জোর দিচ্ছেন। এরই অংশ হিসেবে অক্টোবরের শেষ দিকে তাঁর ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাক্ষাৎ দুই দেশের সম্পর্ককে নতুন সোনালি যুগে প্রবেশ করানোর আভাস দেয়। জাপান প্রতিরক্ষা ব্যয় জিডিপির কমপক্ষে ২ শতাংশে উন্নীত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, আর যুক্তরাষ্ট্র বিরল ধাতুর সরবরাহ নিশ্চিতকরণসহ অর্থনৈতিক সহায়তার ঘোষণা দেয়।
তবে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হলো তাইওয়ানের সঙ্গে তাকাইচির ঘনিষ্ঠতা। তিনি তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট লাই চিং-তের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন, যা চীনের কাছে স্পষ্ট উত্তেজনাকর পদক্ষেপ হিসেবে ধরা পড়েছে। আরও বিতর্ক সৃষ্টি হয় যখন তাকাইচি প্রকাশ্যে বলেন, তাইওয়ানের নিরাপত্তা জাপানের নিরাপত্তার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত। এমনকি তাইওয়ানে চীনা হামলার ক্ষেত্রে জাপানের আত্মরক্ষা বাহিনী হস্তক্ষেপ করতে পারে বলেও ইঙ্গিত দেন তিনি।
এ ক্ষেত্রে চীনের প্রতিক্রিয়াও ছিল কঠোর ও দ্রুত। তারা তাকাইচির বিরুদ্ধে ‘পুরোনো সামরিকতাবাদকে পুনরুজ্জীবিত করার’ অভিযোগ তোলে, রাষ্ট্রদূতকে তলব করে এবং জাতিসংঘে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ পাঠায়। পাশাপাশি সামুদ্রিক এলাকায় কোস্টগার্ডের টহল বাড়ায় চীন, জাপানি সামুদ্রিক পণ্যে সীমাবদ্ধতা আরোপের হুমকি দেয় এবং উত্তেজনাপূর্ণ নানা বিবৃতি দেয়।
এদিকে জাপানও পশ্চিম সীমান্তের ইয়োনাগুনি দ্বীপে বিমান প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনের ঘোষণা দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রও একই দ্বীপে সামরিক অবকাঠামো শক্তিশালী করছে। ফলে পরিস্থিতি আরও জটিল আকার ধারণ করছে।
তবে ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি তাকাইচিকে উত্তেজনা না বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন। কারণ আগামী এপ্রিলে তিনি বেইজিং সফর করতে চান।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তাকাইচির নেতৃত্বে জাপান নতুন ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতায় প্রবেশ করেছে। তাঁর দৃঢ় অবস্থান দেশকে হয় পুনরুত্থানের পথে নেবে—নয়তো চীন–তাইওয়ান উত্তেজনার কেন্দ্রে ঠেলে দেবে। ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে তিনি কোন পথে হাঁটবেন তার ওপর।

বাসবরাজুর মৃত্যু কেবল ভারত সরকারের কৌশলগত বিজয়ই নয়, মাওবাদীদের বস্তারে অবস্থিত শেষ প্রতিরক্ষা রেখাতেও ভাঙনের নির্দেশ করে। এই এলাকায় দলটি ১৯৮০-এর দশক থেকে সবচেয়ে শক্তিশালী দুর্গ তৈরি করেছিল।
২৮ মে ২০২৫
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতদের মধ্যে ইউক্রেন শান্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনা হলেও প্রকাশ্যে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইউরি উশাকভ, এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন যে অমীমাংসিত ‘আঞ্চলিক সমস্যাই’ মূল বাধা। আর এই অঞ্চল আর কোনোটিই নয়, দোনেৎস্ক।
১৯ ঘণ্টা আগে
বিশ্বজুড়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন উঠে আসছে—‘যদি বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ সীমিত করা হয়, অথবা এই শ্রেণিটিকেই সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়, তবে কী ঘটবে?’ পশ্চিমা দেশগুলোতে চরম ধনী বা বিলিয়নিয়ারদের সংখ্যা ও প্রভাব বাড়তে থাকায় এখন এই প্রশ্ন আরও জোরালো হয়েছে।
১ দিন আগে
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠককে ঘিরে দিল্লিতে শুরু হয়েছে কূটনৈতিক প্রস্তুতি। চলমান ইউক্রেন যুদ্ধ, যুক্তরাষ্ট্রের চাপ এবং জ্বালানির বাজারে অস্থিরতার মধ্যেই এই শীর্ষ সম্মেলন হতে যাচ্ছে। অর্থনীতি, প্রতিরক্ষা এবং জ্বালানি—এই তিনটি খাত আলোচনার...
২ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠককে ঘিরে দিল্লিতে শুরু হয়েছে কূটনৈতিক প্রস্তুতি। চলমান ইউক্রেন যুদ্ধ, যুক্তরাষ্ট্রের চাপ এবং জ্বালানির বাজারে অস্থিরতার মধ্যেই এই শীর্ষ সম্মেলন হতে যাচ্ছে। অর্থনীতি, প্রতিরক্ষা এবং জ্বালানি—এই তিনটি খাত আলোচনার কেন্দ্রে থাকবে বলে দুই দেশই নিশ্চিত করেছে।
রাষ্ট্রীয় সফরে বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) ভারতে পৌঁছে পরদিন শুক্রবার মোদির সঙ্গে বৈঠকে বসবেন পুতিন। এই বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের অগ্রগতি পর্যালোচনা ছাড়াও নতুন কয়েকটি আন্তদপ্তর ও বাণিজ্যিক চুক্তি স্বাক্ষরের সম্ভাবনা রয়েছে। রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখা এবং একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কৌশলগত অংশীদারত্ব ধরে রাখতে ভারতের নীতির জন্য এই বৈঠক একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রাশিয়া থেকে ডিসকাউন্টে ভারতের তেল কেনা দীর্ঘদিন ধরেই ওয়াশিংটনকে অসন্তুষ্ট করে আসছে। এই অসন্তুষ্টি থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি ভারতীয় পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন, যা মোট শুল্ককে ৫০ শতাংশে উন্নীত করেছে। তবে ভারত বলছে, তারা আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার বিরোধী নয়, কিন্তু ১৪০ কোটি মানুষের জ্বালানি চাহিদা মেটাতেই বাধ্য হয়ে রাশিয়া থেকে তেল আমদানি করা হচ্ছে। নতুন মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে ‘রসনেফত’ ও ‘লুকওইল’ এর মতো রাশিয়ার কিছু কোম্পানি থেকে ভারত তেল কিনবে না বলে জানিয়েছে। তবে নিষেধাজ্ঞামুক্ত রুশ সরবরাহকারীদের সঙ্গে বাণিজ্য চালু থাকবে।
পুতিনের এই সফরে দুই দেশের অর্থনৈতিক সহযোগিতার ওপর জোর দেওয়া হবে। ভারত রাশিয়ায় ওষুধ, কৃষিপণ্য ও টেক্সটাইল রপ্তানি বাড়াতে চায় এবং পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে শুল্কমুক্ত সুবিধা প্রদানের অনুরোধ জানাবে। এ ছাড়া সার সরবরাহের দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি এবং রাশিয়ায় ভারতীয় দক্ষ জনশক্তির নিরাপদ ও নিয়মিত অভিবাসন নিয়ে আলোচনা এগোতে পারে। দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য, সমুদ্র পরিবহন, স্বাস্থ্যসেবা ও গণমাধ্যম সহযোগিতা বিষয়ক নথিপত্র চূড়ান্তের কাজও চলছে।
বুধবার এই বিষয়ে যুক্তরাজ্যভিত্তিক ইনডিপেনডেন্টের এক নিবন্ধে দাবি করা হয়েছে, জ্বালানি সহযোগিতাই পুতিন-মোদি আলোচনার বড় অংশ দখল করবে। ভারতের ফার ইস্টে বিনিয়োগ, রাশিয়ার সঙ্গে বেসামরিক পারমাণবিক প্রকল্প এবং কুদানকুলাম প্রকল্পের সম্প্রসারণ নিয়ে অগ্রগতি পর্যালোচনা হবে। স্থানীয়ভাবে যন্ত্রাংশ উৎপাদন এবং তৃতীয় দেশে যৌথ পারমাণবিক প্রকল্প বাস্তবায়নের সম্ভাবনাও খতিয়ে দেখা হবে।
প্রতিরক্ষা সহযোগিতা এই সফরের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। ২০১৮ সালের ৫.৪ বিলিয়ন ডলারের চুক্তির আওতায় ভারতের হাতে ইতিমধ্যে রাশিয়ার তিনটি এস-৪০০ স্কোয়াড্রন এসেছে। যুদ্ধজনিত কারণে বাকিগুলোর সরবরাহে যুদ্ধজনিত বিলম্ব হচ্ছে। ভারত এই সরবরাহ দ্রুত নিশ্চিত করতে চাপ দেবে। পাশাপাশি আরও এস-৪০০ কেনার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া হয়নি, যদিও বৈঠক থেকে কোনো ঘোষণা হওয়ার সম্ভাবনা কম। রুশ নির্মিত এসইউ-৩০ এমকেআই যুদ্ধবিমান আপগ্রেড, অস্ত্র সরবরাহ দ্রুততর করা এবং যৌথ সামরিক মহড়ায় সমন্বয় জোরদার করার বিষয়েও আলোচনা হবে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভারত বহুজাতিক অস্ত্র সরবরাহকারীদের দিকে নজর বাড়ালেও রাশিয়া এখনো তাদের সবচেয়ে বড় প্রতিরক্ষা অংশীদার। পুতিনের সফরকে সেই সম্পর্কটি আরও দৃঢ় করার বড় সুযোগ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠককে ঘিরে দিল্লিতে শুরু হয়েছে কূটনৈতিক প্রস্তুতি। চলমান ইউক্রেন যুদ্ধ, যুক্তরাষ্ট্রের চাপ এবং জ্বালানির বাজারে অস্থিরতার মধ্যেই এই শীর্ষ সম্মেলন হতে যাচ্ছে। অর্থনীতি, প্রতিরক্ষা এবং জ্বালানি—এই তিনটি খাত আলোচনার কেন্দ্রে থাকবে বলে দুই দেশই নিশ্চিত করেছে।
রাষ্ট্রীয় সফরে বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) ভারতে পৌঁছে পরদিন শুক্রবার মোদির সঙ্গে বৈঠকে বসবেন পুতিন। এই বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের অগ্রগতি পর্যালোচনা ছাড়াও নতুন কয়েকটি আন্তদপ্তর ও বাণিজ্যিক চুক্তি স্বাক্ষরের সম্ভাবনা রয়েছে। রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখা এবং একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কৌশলগত অংশীদারত্ব ধরে রাখতে ভারতের নীতির জন্য এই বৈঠক একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রাশিয়া থেকে ডিসকাউন্টে ভারতের তেল কেনা দীর্ঘদিন ধরেই ওয়াশিংটনকে অসন্তুষ্ট করে আসছে। এই অসন্তুষ্টি থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি ভারতীয় পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন, যা মোট শুল্ককে ৫০ শতাংশে উন্নীত করেছে। তবে ভারত বলছে, তারা আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার বিরোধী নয়, কিন্তু ১৪০ কোটি মানুষের জ্বালানি চাহিদা মেটাতেই বাধ্য হয়ে রাশিয়া থেকে তেল আমদানি করা হচ্ছে। নতুন মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে ‘রসনেফত’ ও ‘লুকওইল’ এর মতো রাশিয়ার কিছু কোম্পানি থেকে ভারত তেল কিনবে না বলে জানিয়েছে। তবে নিষেধাজ্ঞামুক্ত রুশ সরবরাহকারীদের সঙ্গে বাণিজ্য চালু থাকবে।
পুতিনের এই সফরে দুই দেশের অর্থনৈতিক সহযোগিতার ওপর জোর দেওয়া হবে। ভারত রাশিয়ায় ওষুধ, কৃষিপণ্য ও টেক্সটাইল রপ্তানি বাড়াতে চায় এবং পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে শুল্কমুক্ত সুবিধা প্রদানের অনুরোধ জানাবে। এ ছাড়া সার সরবরাহের দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি এবং রাশিয়ায় ভারতীয় দক্ষ জনশক্তির নিরাপদ ও নিয়মিত অভিবাসন নিয়ে আলোচনা এগোতে পারে। দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য, সমুদ্র পরিবহন, স্বাস্থ্যসেবা ও গণমাধ্যম সহযোগিতা বিষয়ক নথিপত্র চূড়ান্তের কাজও চলছে।
বুধবার এই বিষয়ে যুক্তরাজ্যভিত্তিক ইনডিপেনডেন্টের এক নিবন্ধে দাবি করা হয়েছে, জ্বালানি সহযোগিতাই পুতিন-মোদি আলোচনার বড় অংশ দখল করবে। ভারতের ফার ইস্টে বিনিয়োগ, রাশিয়ার সঙ্গে বেসামরিক পারমাণবিক প্রকল্প এবং কুদানকুলাম প্রকল্পের সম্প্রসারণ নিয়ে অগ্রগতি পর্যালোচনা হবে। স্থানীয়ভাবে যন্ত্রাংশ উৎপাদন এবং তৃতীয় দেশে যৌথ পারমাণবিক প্রকল্প বাস্তবায়নের সম্ভাবনাও খতিয়ে দেখা হবে।
প্রতিরক্ষা সহযোগিতা এই সফরের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। ২০১৮ সালের ৫.৪ বিলিয়ন ডলারের চুক্তির আওতায় ভারতের হাতে ইতিমধ্যে রাশিয়ার তিনটি এস-৪০০ স্কোয়াড্রন এসেছে। যুদ্ধজনিত কারণে বাকিগুলোর সরবরাহে যুদ্ধজনিত বিলম্ব হচ্ছে। ভারত এই সরবরাহ দ্রুত নিশ্চিত করতে চাপ দেবে। পাশাপাশি আরও এস-৪০০ কেনার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া হয়নি, যদিও বৈঠক থেকে কোনো ঘোষণা হওয়ার সম্ভাবনা কম। রুশ নির্মিত এসইউ-৩০ এমকেআই যুদ্ধবিমান আপগ্রেড, অস্ত্র সরবরাহ দ্রুততর করা এবং যৌথ সামরিক মহড়ায় সমন্বয় জোরদার করার বিষয়েও আলোচনা হবে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভারত বহুজাতিক অস্ত্র সরবরাহকারীদের দিকে নজর বাড়ালেও রাশিয়া এখনো তাদের সবচেয়ে বড় প্রতিরক্ষা অংশীদার। পুতিনের সফরকে সেই সম্পর্কটি আরও দৃঢ় করার বড় সুযোগ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

বাসবরাজুর মৃত্যু কেবল ভারত সরকারের কৌশলগত বিজয়ই নয়, মাওবাদীদের বস্তারে অবস্থিত শেষ প্রতিরক্ষা রেখাতেও ভাঙনের নির্দেশ করে। এই এলাকায় দলটি ১৯৮০-এর দশক থেকে সবচেয়ে শক্তিশালী দুর্গ তৈরি করেছিল।
২৮ মে ২০২৫
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতদের মধ্যে ইউক্রেন শান্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনা হলেও প্রকাশ্যে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইউরি উশাকভ, এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন যে অমীমাংসিত ‘আঞ্চলিক সমস্যাই’ মূল বাধা। আর এই অঞ্চল আর কোনোটিই নয়, দোনেৎস্ক।
১৯ ঘণ্টা আগে
বিশ্বজুড়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন উঠে আসছে—‘যদি বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ সীমিত করা হয়, অথবা এই শ্রেণিটিকেই সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়, তবে কী ঘটবে?’ পশ্চিমা দেশগুলোতে চরম ধনী বা বিলিয়নিয়ারদের সংখ্যা ও প্রভাব বাড়তে থাকায় এখন এই প্রশ্ন আরও জোরালো হয়েছে।
১ দিন আগে
জাপানের ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর গত অক্টোবরে দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন সানায়ে তাকাইচি। এরপরই তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত হন জাপানের নতুন ‘আয়রন লেডি’ বা লৌহমানবী’ হিসেবে।
১ দিন আগে