আব্দুর রহমান

যুক্তরাষ্ট্রের অন্দরমহল তো বটেই, বিশ্বজুড়েই এক উত্তপ্ত বিতর্ক চলছে। অনেকের মতে, যুক্তরাষ্ট্রকেন্দ্রিক তথাকথিত এক মেরু আধিপত্যের যুগ শেষ হয়ে আসছে এবং বিশ্ব বহু মেরু ব্যবস্থার দিকে এগোচ্ছে। আবার, অনেকে মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্র এখনো বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর দেশ। তবে চলতি বছরের মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্ব এক মেরু ব্যবস্থা থেকে বহু মেরু ব্যবস্থার দিকে অগ্রসর হচ্ছে এবং একই সঙ্গে উত্তেজনা ও অনিশ্চয়তার এক নতুন যুগেও প্রবেশ করছে।
যুক্তরাষ্ট্রের বৈশ্বিক প্রভাব কমে আসছে বলে দেশটিতে উদ্বেগের সূত্রপাত হয় বারাক ওবামা প্রশাসনের শুরুর দিকে। কিছু ক্ষেত্রে রাজনৈতিক পক্ষপাতের কারণে এবং কিছু ক্ষেত্রে পরিবর্তিত বিশ্বব্যবস্থার বাস্তব পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে, এই উদ্বেগ ওবামার পরে ট্রাম্প প্রশাসন থেকে শুরু করে সর্বশেষ বাইডেন প্রশাসন পর্যন্ত বহাল ছিল। রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর এই উদ্বেগ আরও তীব্র হয়েছে। ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসার পর, যুক্তরাষ্ট্রকে ‘আবারও মহান করে’ তুলতে চাওয়ার আকাঙ্ক্ষা প্রকাশের মাধ্যমে এই উদ্বেগ আরও তীব্র হয়েছে।
২০২৫ সালের মিউনিখ নিরাপত্তা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র–চীনের প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিশ্ব একটি বিস্তৃত বহু মেরু ব্যবস্থার দিকে এগিয়ে যাবে কি না—তা এখনো স্পষ্ট নয়। তবে ‘বহু মেরুকরণ’ প্রক্রিয়া ক্রমশ গতি পাচ্ছে। এতে বলা হয়েছে, ‘আজকের বিশ্ব ব্যবস্থায় এক মেরুকরণ, দ্বিমেরুকরণ, বহু মেরুকরণ এবং এমনকি অ-মেরুকরণেরও উপাদান রয়েছে।’
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তবে আরও বেশিসংখ্যক রাষ্ট্রের মধ্যে প্রভাব বিস্তারের প্রতিযোগিতা একটি স্পষ্ট পরিবর্তনের ইঙ্গিত।’ এতে আরও বলা হয়, ‘স্নায়ুযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে এক মেরু বিশ্ব গঠনে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখা রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক উদারনীতিবাদ এখন আর একমাত্র প্রভাবশালী শক্তি নয়। এটি অভ্যন্তরীণভাবে ক্রমবর্ধমান চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। অনেক উদার গণতন্ত্রে জাতীয়তাবাদী জনতুষ্টির রাজনীতির উত্থান ঘটেছে। এ ছাড়া, এটি বাহ্যিকভাবেও চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ডোনাল্ড ট্রাম্পের হোয়াইট হাউসে প্রত্যাবর্তন এই পরিবর্তনকে ত্বরান্বিত করতে পারে এবং এই বিষয়টি ‘প্যাক্স আমেরিকানা’ তথা জলে–স্থলে–অন্তরিক্ষে আমেরিকার একক প্রভাবের সমাপ্তির ইঙ্গিত দেয়। এতে উল্লেখ করা হয়েছে, ট্রাম্প বর্তমান বিশ্ব ব্যবস্থাকে অনুকূল বলে মনে করেন না এবং তিনি যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ ও চীনকে নিয়ন্ত্রণে রাখাকে অগ্রাধিকার দিতে পারেন। এই বিষয়টি মিত্রদের সঙ্গে সম্পর্কের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে এক মেরুকরণ থেকে বহু মেরুকরণের দিকে বিশ্বের এই পরিবর্তন নিয়ে পশ্চিমা শিল্পোন্নত দেশগুলোর নাগরিক এবং গ্লোবাল সাউথের (তৃতীয় বিশ্ব) উদীয়মান শক্তিগুলোর নাগরিকদের মধ্যে ধারণা ব্যাপকভাবে আলাদা। মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনের এক জরিপে দেখা গেছে, শিল্পোন্নত দেশগুলোর জোট জি-৭–এর বেশির ভাগ মানুষ এই পরিবর্তনকে উদ্বেগের সঙ্গে দেখছেন। তাঁদের আশঙ্কা, এই পরিবর্তন বিশৃঙ্খলা ও সংঘাত বাড়িয়ে তুলতে পারে এবং বৈশ্বিক চুক্তি সম্পাদনকে আরও কঠিন করে তুলতে পারে। জরিপ অনুসারে, এসব দেশের বেশির ভাগ মানুষ মনে করেন, বহু মেরু ব্যবস্থা বিশ্বে শান্তি আনবে না।
অন্যদিকে, ব্রিকস (পশ্চিমের বাইরে বিকল্প অর্থনৈতিক জোট) দেশগুলোর বেশির ভাগ অংশীজন বহু মেরুকরণকে একটি ন্যায্য, সুবিচার ও শান্তিপূর্ণ বিশ্বের পথ হিসেবে দেখেন। জরিপে দেখা গেছে, চীন, ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকা ও ব্রাজিলের বেশির ভাগ উত্তরদাতা বিশ্বাস করেন, বহু মেরু বিশ্ব ব্যবস্থা উন্নয়নশীল দেশগুলোর উদ্বেগগুলোকে আরও ভালোভাবে আমলে নেবে এবং সমাধানের পথ বের করবে।
ব্রুকিংস ইনস্টিটিউশনের সিনিয়র ফেলো ফিয়োনা হিলের বিশ্লেষণ অনুযায়ী, পশ্চিমা বিশ্বে রাজনৈতিক অস্থিরতা নিয়ে যে ধারণা প্রবল হচ্ছে, তা বৈশ্বিক পর্যায়ে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে এক ধরনের বিদ্রোহের জন্ম দিচ্ছে। তাঁর মতে, ইউক্রেন ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের সংহতির আহ্বানের প্রতি যে প্রতিরোধ তা মূলত ‘বৈশ্বিক বয়ান তৈরিতে সম্মিলিত পশ্চিমা কর্তৃত্ব এবং তাদের নিজেদের সমস্যা অন্য সবার ঘাড়ে চাপানোর প্রবণতার বিরুদ্ধে’ এটি বিদ্রোহের ইঙ্গিত।
কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের বেনেট পাবলিক পলিসি ইনস্টিটিউটের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পুরো ইউরেশিয়া থেকে শুরু করে আফ্রিকার উত্তর ও পশ্চিম অংশজুড়ে বিস্তৃত দেশগুলো ক্রমশ চীন–রাশিয়ার দিকে ঝুঁকছে এবং যুক্তরাষ্ট্র থেকে দূরে সরে যাচ্ছে।
এই নতুন ভূরাজনৈতিক বাস্তবতায়, বহুপক্ষীয় সহযোগিতা ও আলোচনার প্রচলিত কাঠামো ভেঙে পড়ছে। পশ্চিমা আধিপত্যের যুগ পেরিয়ে, যুক্তরাষ্ট্রের কর্তৃত্বের সূর্য অস্ত যাচ্ছে, সেই সঙ্গে বিশ্ব একটি বিভাজিত বাস্তবতায় প্রবেশ করছে। হিলের ভাষ্য অনুযায়ীও, রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণ ‘প্যাক্স আমেরিকানার’ সমাপ্তি এবং এক নতুন বৈশ্বিক বিশৃঙ্খলার যুগের সূচনার ইঙ্গিত বহন করছে।
ইউরোপীয় কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশনস পরিচালিত এক সাম্প্রতিক জরিপ অনুযায়ী, পশ্চিমা বিশ্ব ও অন্যান্য অঞ্চলের বেশির ভাগ মানুষ এখন মনে করছেন, যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন উদারনৈতিক বিশ্বব্যবস্থার অবসান ঘটছে। ইউক্রেন যুদ্ধ যদিও গ্লোবাল নর্থ বা বৈশ্বিক উত্তরের (উন্নত দেশ) দেশগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বের প্রতি সমর্থন সংহত করেছে, তবে বৈশ্বিক দক্ষিণে (গ্লোবাল সাউথ) এটি মার্কিন নেতৃত্বাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি আস্থার আরও অবক্ষয় ঘটিয়েছে। এই পরিবর্তনের কেন্দ্রবিন্দুতে আছে চীন।
কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, বিশ্বের ১২০ কোটি মানুষের বসবাস উদারনৈতিক গণতন্ত্রের দেশে। এসব দেশের ৭৫ শতাংশ মানুষ চীনের প্রতি নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করে এবং ৮৭ শতাংশ রাশিয়ার প্রতি নেতিবাচক মনোভাব রাখে। কিন্তু বিশ্বের বাকি ৬৩০ কোটি মানুষের মধ্যে চিত্রটি সম্পূর্ণ উল্টো।
গ্লোবাল সাউথে ৭০ শতাংশ মানুষ চীনকে এবং ৬৬ শতাংশ মানুষ রাশিয়াকে ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখে। একই সঙ্গে, ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন ও দক্ষিণ আফ্রিকা নিয়ে গঠিত ব্রিকস জোটের ক্রমবর্ধমান প্রভাব এই উত্তর–দক্ষিণ বিভাজনকে আরও স্পষ্ট করছে এবং বহু মেরু বিশ্বব্যবস্থার পথ প্রশস্ত করছে।
চীন ইতিমধ্যে প্রায় প্রতিটি গ্লোবাল সাউথ দেশের শীর্ষ বাণিজ্যিক অংশীদার, যা তাদের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক দাবি প্রত্যাখ্যান করার আত্মবিশ্বাস দিচ্ছে। কারণ, এসব দেশের নেতারা বিশ্বাস করেন, তাঁরা যুক্তরাষ্ট্রের যে কোনো নিষেধাজ্ঞা মোকাবিলা করার সামর্থ্য রাখেন। আবার চীনকে ছাড়াই ভারত একা মার্কিন চাপ প্রতিহত করার নজির দেখিয়েছে। ইউক্রেন ইস্যুতে পশ্চিমা চাপ উপেক্ষা করে রাশিয়া ও চীন উভয়ের সঙ্গেই সম্পর্ক এগিয়ে নিয়েছে ভারত।
চীন নিজের অর্থনৈতিক শক্তিকে ভূরাজনৈতিক প্রভাবের কেন্দ্রে পরিণত করেছে এবং ব্রিকস জোটের প্রধান স্তম্ভ হয়ে উঠেছে। তবে চীন এককভাবে এই পরিবর্তনের নেতৃত্ব দিচ্ছে না। বিশ্বের ৪১ শতাংশ জনসংখ্যা এবং বৈশ্বিক জিডিপির প্রায় এক-চতুর্থাংশের প্রতিনিধিত্বকারী ব্রিকস এখনো প্রসারিত হচ্ছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উন্নয়নশীল দেশগুলোকে ‘শোষণের’ রেকর্ড আছে, যার মধ্যে রয়েছে—তথ্য যুদ্ধ, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ এবং শর্তযুক্ত ঋণ। এসব দেশের অধিকাংশই যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি গভীর ক্ষোভ পোষণ করে। তারা দেখেছে, কীভাবে যুক্তরাষ্ট্র তাদের প্রিয় মাতৃভূমির সঙ্গে ভয়ানক আচরণ করেছে। ইউক্রেন যুদ্ধ, ইসরায়েলের গাজায় আগ্রাসন, গাজা নিয়ে ট্রাম্পের উদ্ধত পরিকল্পনা—এসবই মূলত যুক্তরাষ্ট্রের সেই অতীত রেকর্ডেরই ধারাবাহিকতা।
ইউক্রেন যুদ্ধ যে বিশ্ব ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ মোড়, সে ব্যাপারে সন্দেহের অবকাশ নেই। তবে বৈশ্বিক দক্ষিণের দৃষ্টিকোণ থেকে যুদ্ধটি প্রধানত যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্যের আলোকে দেখা হয়। হিলের মতে, ‘যুক্তরাষ্ট্রের অহংকার ও ভণ্ডামির কথা বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর যুক্তরাষ্ট্র যে আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা তৈরি করেছিল এবং এত দিন ধরে পরিচালনা করেছে, তার প্রতি আস্থা অনেক আগেই হারিয়ে গেছে।’ মধ্যপ্রাচ্যে দুই দশকের রক্তক্ষয়ী সামরিক হস্তক্ষেপের পর, যুক্তরাষ্ট্র তার নৈতিক অবস্থান অনেকটাই দুর্বল করে ফেলেছে। এর সর্বশেষ উদাহরণ, গাজায় যুক্তরাষ্ট্রের নগ্ন সমর্থনে ইসরায়েলি হত্যাকাণ্ড ও ধ্বংসযজ্ঞ।
এই পরিবর্তনশীল ভূরাজনৈতিক বাস্তবতার সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং দিক হলো, বৈশ্বিক গণমাধ্যমে পশ্চিমা বিশ্ব আর একচেটিয়া আধিপত্য বজায় রাখতে পারছে না। যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইউক্রেন যুদ্ধকে ‘গণতন্ত্র বনাম স্বৈরতন্ত্রের’ লড়াই হিসেবে উপস্থাপন করলেও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও ইন্টারনেট পশ্চিমা সংবাদমাধ্যমের বিশ্বাসযোগ্যতা গ্লোবাল সাউথে ব্যাপকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। চীন, ভারত, তুরস্ক ও রাশিয়ায় অধিকাংশ মানুষ এখন মনে করে—পশ্চিমা বিশ্ব কেবল আরেকটি ভূরাজনৈতিক মেরুরূপে আবির্ভূত হয়েছে।
এর পাশাপাশি, সম্প্রতি চীনের মধ্যস্থতায় ইরান ও সৌদি আরবের পুনর্মিলন একটি ক্রমেই আকার পেতে থাকা এশীয় ব্যবস্থার অংশ হিসেবে দেখা হচ্ছে। ভূরাজনৈতিক বিশ্লেষক পরাগ খান্নার মতে, এশিয়া নিজেকে পুনরায় ঐক্যবদ্ধ করছে এবং সেই বাণিজ্যিক ও সাংস্কৃতিক বিনিময় পুনরুদ্ধার করছে, যা ইউরোপীয় ঔপনিবেশিকতা ও আমেরিকান আধিপত্যের আগে প্রচলিত ছিল।
মস্কোভিত্তিক আমেরিকান রাজনীতি বিশ্লেষক অ্যান্ড্রু করিবকো বলেন, ‘গত কয়েক দশক ধরে বিশ্ব অর্থনীতির কেন্দ্র আটলান্টিক থেকে এশিয়া-প্যাসিফিকের দিকে সরে যাচ্ছে। এটি সরাসরি দুই জায়ান্টের (চীন ও ভারত) উত্থানের কারণে, বিশেষ করে চীনের। দেশটির বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই) বিনিয়োগ গ্লোবাল সাউথের বাকি অংশকেও উত্থানে সাহায্য করেছে। অর্থনৈতিক শক্তির সঙ্গে রাজনৈতিক প্রভাব হাত ধরাধরি করে চলে এবং ব্রিকস দেশগুলো বিশ্ব ব্যবস্থার সংস্কার চায়।’
যুক্তরাষ্ট্রে সাধারণভাবে প্রচলিত দৃষ্টিভঙ্গির বিপরীতে, বৈশ্বিক দক্ষিণের বেশির ভাগ দেশ চীনকে সরাসরি সামরিক বা নিরাপত্তাগত হুমকি হিসেবে দেখে না। বরং চীন এখন তাদের জন্য অন্যতম প্রধান প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগকারী ও বাণিজ্যিক অংশীদার।
গ্লোবাল সাউথের দেশগুলো মনে করে, মার্কিন নেতৃত্বাধীন এক মেরু ব্যবস্থা কেবল ‘পরাক্রমশালী’ দেশটিরই স্বার্থ উদ্ধার করে। এই ধরনের ব্যবস্থা স্বৈরাচারী। কারণ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আক্রমণাত্মকভাবে তার তথাকথিত ‘নিয়ম’ অন্য সবার ওপর চাপিয়ে দেয়। করিবকো বলেন, ‘এটি অসম। কারণ, পশ্চিমের অর্থনৈতিক উত্থান সম্পূর্ণরূপে গ্লোবাল সাউথের শোষণের ওপর দাঁড়িয়ে। এটি অন্যায্য। কারণ, আন্তর্জাতিক আইন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নির্বিচারে লঙ্ঘন করে। সে অনুযায়ী, ব্রিকস দেশগুলো তাদের অর্থনৈতিক শক্তি কাজে লাগিয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ককে আরও গণতান্ত্রিক, ন্যায্য, ভারসাম্যপূর্ণ এবং ন্যায়সংগত করার লক্ষ্যে সংস্কার ত্বরান্বিত করছে।’
এটি স্পষ্ট যে, বৈশ্বিক রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামরিক ব্যবস্থার কাঠামো আর এককভাবে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন থাকবে না। দ্য ন্যাশনাল ইন্টারেস্টের এক সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পশ্চিমা নেতৃত্ব ছাড়াই একটি বহু মেরু বিশ্ব ব্যবস্থা বাস্তবায়িত হতে চলেছে।
গ্লোবাল নর্থ তথা বৈশ্বিক উত্তরের দেশগুলো রাশিয়া থেকে নিজেদের বিচ্ছিন্ন করেছে এবং চীনের সঙ্গে সম্পর্ক কমিয়ে আনার চেষ্টা করছে। অথচ গ্লোবাল সাউথ ক্রমশ ব্রিকস কেন্দ্রিক বাণিজ্য ব্যবস্থার সম্ভাবনার দিকে ঝুঁকছে। পুরোনো ও নতুন বৈশ্বিক ব্যবস্থার মধ্যকার এই সংস্থানিক ব্যবধান পূরণ করা বিশ্বব্যাপী সংকট এড়ানোর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে।
ব্রিকসের এই লক্ষ্য সফল হলে গ্লোবাল সাউথের দেশগুলো উপকৃত হবে। তবে প্রত্যাশা সংযত করা উচিত। কারণ, তারা যে পরিবর্তন কল্পনা করছে, তার প্রাতিষ্ঠানিক রূপদানের বিষয়টি অনেক জটিল ও সময়সাপেক্ষ।
তথ্যসূত্র: গ্লোবাল টাইমস, টিআরটি ওয়ার্ল্ড ও সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল গভর্ন্যান্স ইনোভেশন

যুক্তরাষ্ট্রের অন্দরমহল তো বটেই, বিশ্বজুড়েই এক উত্তপ্ত বিতর্ক চলছে। অনেকের মতে, যুক্তরাষ্ট্রকেন্দ্রিক তথাকথিত এক মেরু আধিপত্যের যুগ শেষ হয়ে আসছে এবং বিশ্ব বহু মেরু ব্যবস্থার দিকে এগোচ্ছে। আবার, অনেকে মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্র এখনো বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর দেশ। তবে চলতি বছরের মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্ব এক মেরু ব্যবস্থা থেকে বহু মেরু ব্যবস্থার দিকে অগ্রসর হচ্ছে এবং একই সঙ্গে উত্তেজনা ও অনিশ্চয়তার এক নতুন যুগেও প্রবেশ করছে।
যুক্তরাষ্ট্রের বৈশ্বিক প্রভাব কমে আসছে বলে দেশটিতে উদ্বেগের সূত্রপাত হয় বারাক ওবামা প্রশাসনের শুরুর দিকে। কিছু ক্ষেত্রে রাজনৈতিক পক্ষপাতের কারণে এবং কিছু ক্ষেত্রে পরিবর্তিত বিশ্বব্যবস্থার বাস্তব পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে, এই উদ্বেগ ওবামার পরে ট্রাম্প প্রশাসন থেকে শুরু করে সর্বশেষ বাইডেন প্রশাসন পর্যন্ত বহাল ছিল। রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর এই উদ্বেগ আরও তীব্র হয়েছে। ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসার পর, যুক্তরাষ্ট্রকে ‘আবারও মহান করে’ তুলতে চাওয়ার আকাঙ্ক্ষা প্রকাশের মাধ্যমে এই উদ্বেগ আরও তীব্র হয়েছে।
২০২৫ সালের মিউনিখ নিরাপত্তা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র–চীনের প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিশ্ব একটি বিস্তৃত বহু মেরু ব্যবস্থার দিকে এগিয়ে যাবে কি না—তা এখনো স্পষ্ট নয়। তবে ‘বহু মেরুকরণ’ প্রক্রিয়া ক্রমশ গতি পাচ্ছে। এতে বলা হয়েছে, ‘আজকের বিশ্ব ব্যবস্থায় এক মেরুকরণ, দ্বিমেরুকরণ, বহু মেরুকরণ এবং এমনকি অ-মেরুকরণেরও উপাদান রয়েছে।’
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তবে আরও বেশিসংখ্যক রাষ্ট্রের মধ্যে প্রভাব বিস্তারের প্রতিযোগিতা একটি স্পষ্ট পরিবর্তনের ইঙ্গিত।’ এতে আরও বলা হয়, ‘স্নায়ুযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে এক মেরু বিশ্ব গঠনে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখা রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক উদারনীতিবাদ এখন আর একমাত্র প্রভাবশালী শক্তি নয়। এটি অভ্যন্তরীণভাবে ক্রমবর্ধমান চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। অনেক উদার গণতন্ত্রে জাতীয়তাবাদী জনতুষ্টির রাজনীতির উত্থান ঘটেছে। এ ছাড়া, এটি বাহ্যিকভাবেও চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ডোনাল্ড ট্রাম্পের হোয়াইট হাউসে প্রত্যাবর্তন এই পরিবর্তনকে ত্বরান্বিত করতে পারে এবং এই বিষয়টি ‘প্যাক্স আমেরিকানা’ তথা জলে–স্থলে–অন্তরিক্ষে আমেরিকার একক প্রভাবের সমাপ্তির ইঙ্গিত দেয়। এতে উল্লেখ করা হয়েছে, ট্রাম্প বর্তমান বিশ্ব ব্যবস্থাকে অনুকূল বলে মনে করেন না এবং তিনি যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ ও চীনকে নিয়ন্ত্রণে রাখাকে অগ্রাধিকার দিতে পারেন। এই বিষয়টি মিত্রদের সঙ্গে সম্পর্কের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে এক মেরুকরণ থেকে বহু মেরুকরণের দিকে বিশ্বের এই পরিবর্তন নিয়ে পশ্চিমা শিল্পোন্নত দেশগুলোর নাগরিক এবং গ্লোবাল সাউথের (তৃতীয় বিশ্ব) উদীয়মান শক্তিগুলোর নাগরিকদের মধ্যে ধারণা ব্যাপকভাবে আলাদা। মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনের এক জরিপে দেখা গেছে, শিল্পোন্নত দেশগুলোর জোট জি-৭–এর বেশির ভাগ মানুষ এই পরিবর্তনকে উদ্বেগের সঙ্গে দেখছেন। তাঁদের আশঙ্কা, এই পরিবর্তন বিশৃঙ্খলা ও সংঘাত বাড়িয়ে তুলতে পারে এবং বৈশ্বিক চুক্তি সম্পাদনকে আরও কঠিন করে তুলতে পারে। জরিপ অনুসারে, এসব দেশের বেশির ভাগ মানুষ মনে করেন, বহু মেরু ব্যবস্থা বিশ্বে শান্তি আনবে না।
অন্যদিকে, ব্রিকস (পশ্চিমের বাইরে বিকল্প অর্থনৈতিক জোট) দেশগুলোর বেশির ভাগ অংশীজন বহু মেরুকরণকে একটি ন্যায্য, সুবিচার ও শান্তিপূর্ণ বিশ্বের পথ হিসেবে দেখেন। জরিপে দেখা গেছে, চীন, ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকা ও ব্রাজিলের বেশির ভাগ উত্তরদাতা বিশ্বাস করেন, বহু মেরু বিশ্ব ব্যবস্থা উন্নয়নশীল দেশগুলোর উদ্বেগগুলোকে আরও ভালোভাবে আমলে নেবে এবং সমাধানের পথ বের করবে।
ব্রুকিংস ইনস্টিটিউশনের সিনিয়র ফেলো ফিয়োনা হিলের বিশ্লেষণ অনুযায়ী, পশ্চিমা বিশ্বে রাজনৈতিক অস্থিরতা নিয়ে যে ধারণা প্রবল হচ্ছে, তা বৈশ্বিক পর্যায়ে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে এক ধরনের বিদ্রোহের জন্ম দিচ্ছে। তাঁর মতে, ইউক্রেন ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের সংহতির আহ্বানের প্রতি যে প্রতিরোধ তা মূলত ‘বৈশ্বিক বয়ান তৈরিতে সম্মিলিত পশ্চিমা কর্তৃত্ব এবং তাদের নিজেদের সমস্যা অন্য সবার ঘাড়ে চাপানোর প্রবণতার বিরুদ্ধে’ এটি বিদ্রোহের ইঙ্গিত।
কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের বেনেট পাবলিক পলিসি ইনস্টিটিউটের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পুরো ইউরেশিয়া থেকে শুরু করে আফ্রিকার উত্তর ও পশ্চিম অংশজুড়ে বিস্তৃত দেশগুলো ক্রমশ চীন–রাশিয়ার দিকে ঝুঁকছে এবং যুক্তরাষ্ট্র থেকে দূরে সরে যাচ্ছে।
এই নতুন ভূরাজনৈতিক বাস্তবতায়, বহুপক্ষীয় সহযোগিতা ও আলোচনার প্রচলিত কাঠামো ভেঙে পড়ছে। পশ্চিমা আধিপত্যের যুগ পেরিয়ে, যুক্তরাষ্ট্রের কর্তৃত্বের সূর্য অস্ত যাচ্ছে, সেই সঙ্গে বিশ্ব একটি বিভাজিত বাস্তবতায় প্রবেশ করছে। হিলের ভাষ্য অনুযায়ীও, রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণ ‘প্যাক্স আমেরিকানার’ সমাপ্তি এবং এক নতুন বৈশ্বিক বিশৃঙ্খলার যুগের সূচনার ইঙ্গিত বহন করছে।
ইউরোপীয় কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশনস পরিচালিত এক সাম্প্রতিক জরিপ অনুযায়ী, পশ্চিমা বিশ্ব ও অন্যান্য অঞ্চলের বেশির ভাগ মানুষ এখন মনে করছেন, যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন উদারনৈতিক বিশ্বব্যবস্থার অবসান ঘটছে। ইউক্রেন যুদ্ধ যদিও গ্লোবাল নর্থ বা বৈশ্বিক উত্তরের (উন্নত দেশ) দেশগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বের প্রতি সমর্থন সংহত করেছে, তবে বৈশ্বিক দক্ষিণে (গ্লোবাল সাউথ) এটি মার্কিন নেতৃত্বাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি আস্থার আরও অবক্ষয় ঘটিয়েছে। এই পরিবর্তনের কেন্দ্রবিন্দুতে আছে চীন।
কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, বিশ্বের ১২০ কোটি মানুষের বসবাস উদারনৈতিক গণতন্ত্রের দেশে। এসব দেশের ৭৫ শতাংশ মানুষ চীনের প্রতি নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করে এবং ৮৭ শতাংশ রাশিয়ার প্রতি নেতিবাচক মনোভাব রাখে। কিন্তু বিশ্বের বাকি ৬৩০ কোটি মানুষের মধ্যে চিত্রটি সম্পূর্ণ উল্টো।
গ্লোবাল সাউথে ৭০ শতাংশ মানুষ চীনকে এবং ৬৬ শতাংশ মানুষ রাশিয়াকে ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখে। একই সঙ্গে, ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন ও দক্ষিণ আফ্রিকা নিয়ে গঠিত ব্রিকস জোটের ক্রমবর্ধমান প্রভাব এই উত্তর–দক্ষিণ বিভাজনকে আরও স্পষ্ট করছে এবং বহু মেরু বিশ্বব্যবস্থার পথ প্রশস্ত করছে।
চীন ইতিমধ্যে প্রায় প্রতিটি গ্লোবাল সাউথ দেশের শীর্ষ বাণিজ্যিক অংশীদার, যা তাদের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক দাবি প্রত্যাখ্যান করার আত্মবিশ্বাস দিচ্ছে। কারণ, এসব দেশের নেতারা বিশ্বাস করেন, তাঁরা যুক্তরাষ্ট্রের যে কোনো নিষেধাজ্ঞা মোকাবিলা করার সামর্থ্য রাখেন। আবার চীনকে ছাড়াই ভারত একা মার্কিন চাপ প্রতিহত করার নজির দেখিয়েছে। ইউক্রেন ইস্যুতে পশ্চিমা চাপ উপেক্ষা করে রাশিয়া ও চীন উভয়ের সঙ্গেই সম্পর্ক এগিয়ে নিয়েছে ভারত।
চীন নিজের অর্থনৈতিক শক্তিকে ভূরাজনৈতিক প্রভাবের কেন্দ্রে পরিণত করেছে এবং ব্রিকস জোটের প্রধান স্তম্ভ হয়ে উঠেছে। তবে চীন এককভাবে এই পরিবর্তনের নেতৃত্ব দিচ্ছে না। বিশ্বের ৪১ শতাংশ জনসংখ্যা এবং বৈশ্বিক জিডিপির প্রায় এক-চতুর্থাংশের প্রতিনিধিত্বকারী ব্রিকস এখনো প্রসারিত হচ্ছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উন্নয়নশীল দেশগুলোকে ‘শোষণের’ রেকর্ড আছে, যার মধ্যে রয়েছে—তথ্য যুদ্ধ, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ এবং শর্তযুক্ত ঋণ। এসব দেশের অধিকাংশই যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি গভীর ক্ষোভ পোষণ করে। তারা দেখেছে, কীভাবে যুক্তরাষ্ট্র তাদের প্রিয় মাতৃভূমির সঙ্গে ভয়ানক আচরণ করেছে। ইউক্রেন যুদ্ধ, ইসরায়েলের গাজায় আগ্রাসন, গাজা নিয়ে ট্রাম্পের উদ্ধত পরিকল্পনা—এসবই মূলত যুক্তরাষ্ট্রের সেই অতীত রেকর্ডেরই ধারাবাহিকতা।
ইউক্রেন যুদ্ধ যে বিশ্ব ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ মোড়, সে ব্যাপারে সন্দেহের অবকাশ নেই। তবে বৈশ্বিক দক্ষিণের দৃষ্টিকোণ থেকে যুদ্ধটি প্রধানত যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্যের আলোকে দেখা হয়। হিলের মতে, ‘যুক্তরাষ্ট্রের অহংকার ও ভণ্ডামির কথা বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর যুক্তরাষ্ট্র যে আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা তৈরি করেছিল এবং এত দিন ধরে পরিচালনা করেছে, তার প্রতি আস্থা অনেক আগেই হারিয়ে গেছে।’ মধ্যপ্রাচ্যে দুই দশকের রক্তক্ষয়ী সামরিক হস্তক্ষেপের পর, যুক্তরাষ্ট্র তার নৈতিক অবস্থান অনেকটাই দুর্বল করে ফেলেছে। এর সর্বশেষ উদাহরণ, গাজায় যুক্তরাষ্ট্রের নগ্ন সমর্থনে ইসরায়েলি হত্যাকাণ্ড ও ধ্বংসযজ্ঞ।
এই পরিবর্তনশীল ভূরাজনৈতিক বাস্তবতার সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং দিক হলো, বৈশ্বিক গণমাধ্যমে পশ্চিমা বিশ্ব আর একচেটিয়া আধিপত্য বজায় রাখতে পারছে না। যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইউক্রেন যুদ্ধকে ‘গণতন্ত্র বনাম স্বৈরতন্ত্রের’ লড়াই হিসেবে উপস্থাপন করলেও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও ইন্টারনেট পশ্চিমা সংবাদমাধ্যমের বিশ্বাসযোগ্যতা গ্লোবাল সাউথে ব্যাপকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। চীন, ভারত, তুরস্ক ও রাশিয়ায় অধিকাংশ মানুষ এখন মনে করে—পশ্চিমা বিশ্ব কেবল আরেকটি ভূরাজনৈতিক মেরুরূপে আবির্ভূত হয়েছে।
এর পাশাপাশি, সম্প্রতি চীনের মধ্যস্থতায় ইরান ও সৌদি আরবের পুনর্মিলন একটি ক্রমেই আকার পেতে থাকা এশীয় ব্যবস্থার অংশ হিসেবে দেখা হচ্ছে। ভূরাজনৈতিক বিশ্লেষক পরাগ খান্নার মতে, এশিয়া নিজেকে পুনরায় ঐক্যবদ্ধ করছে এবং সেই বাণিজ্যিক ও সাংস্কৃতিক বিনিময় পুনরুদ্ধার করছে, যা ইউরোপীয় ঔপনিবেশিকতা ও আমেরিকান আধিপত্যের আগে প্রচলিত ছিল।
মস্কোভিত্তিক আমেরিকান রাজনীতি বিশ্লেষক অ্যান্ড্রু করিবকো বলেন, ‘গত কয়েক দশক ধরে বিশ্ব অর্থনীতির কেন্দ্র আটলান্টিক থেকে এশিয়া-প্যাসিফিকের দিকে সরে যাচ্ছে। এটি সরাসরি দুই জায়ান্টের (চীন ও ভারত) উত্থানের কারণে, বিশেষ করে চীনের। দেশটির বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই) বিনিয়োগ গ্লোবাল সাউথের বাকি অংশকেও উত্থানে সাহায্য করেছে। অর্থনৈতিক শক্তির সঙ্গে রাজনৈতিক প্রভাব হাত ধরাধরি করে চলে এবং ব্রিকস দেশগুলো বিশ্ব ব্যবস্থার সংস্কার চায়।’
যুক্তরাষ্ট্রে সাধারণভাবে প্রচলিত দৃষ্টিভঙ্গির বিপরীতে, বৈশ্বিক দক্ষিণের বেশির ভাগ দেশ চীনকে সরাসরি সামরিক বা নিরাপত্তাগত হুমকি হিসেবে দেখে না। বরং চীন এখন তাদের জন্য অন্যতম প্রধান প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগকারী ও বাণিজ্যিক অংশীদার।
গ্লোবাল সাউথের দেশগুলো মনে করে, মার্কিন নেতৃত্বাধীন এক মেরু ব্যবস্থা কেবল ‘পরাক্রমশালী’ দেশটিরই স্বার্থ উদ্ধার করে। এই ধরনের ব্যবস্থা স্বৈরাচারী। কারণ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আক্রমণাত্মকভাবে তার তথাকথিত ‘নিয়ম’ অন্য সবার ওপর চাপিয়ে দেয়। করিবকো বলেন, ‘এটি অসম। কারণ, পশ্চিমের অর্থনৈতিক উত্থান সম্পূর্ণরূপে গ্লোবাল সাউথের শোষণের ওপর দাঁড়িয়ে। এটি অন্যায্য। কারণ, আন্তর্জাতিক আইন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নির্বিচারে লঙ্ঘন করে। সে অনুযায়ী, ব্রিকস দেশগুলো তাদের অর্থনৈতিক শক্তি কাজে লাগিয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ককে আরও গণতান্ত্রিক, ন্যায্য, ভারসাম্যপূর্ণ এবং ন্যায়সংগত করার লক্ষ্যে সংস্কার ত্বরান্বিত করছে।’
এটি স্পষ্ট যে, বৈশ্বিক রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামরিক ব্যবস্থার কাঠামো আর এককভাবে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন থাকবে না। দ্য ন্যাশনাল ইন্টারেস্টের এক সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পশ্চিমা নেতৃত্ব ছাড়াই একটি বহু মেরু বিশ্ব ব্যবস্থা বাস্তবায়িত হতে চলেছে।
গ্লোবাল নর্থ তথা বৈশ্বিক উত্তরের দেশগুলো রাশিয়া থেকে নিজেদের বিচ্ছিন্ন করেছে এবং চীনের সঙ্গে সম্পর্ক কমিয়ে আনার চেষ্টা করছে। অথচ গ্লোবাল সাউথ ক্রমশ ব্রিকস কেন্দ্রিক বাণিজ্য ব্যবস্থার সম্ভাবনার দিকে ঝুঁকছে। পুরোনো ও নতুন বৈশ্বিক ব্যবস্থার মধ্যকার এই সংস্থানিক ব্যবধান পূরণ করা বিশ্বব্যাপী সংকট এড়ানোর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে।
ব্রিকসের এই লক্ষ্য সফল হলে গ্লোবাল সাউথের দেশগুলো উপকৃত হবে। তবে প্রত্যাশা সংযত করা উচিত। কারণ, তারা যে পরিবর্তন কল্পনা করছে, তার প্রাতিষ্ঠানিক রূপদানের বিষয়টি অনেক জটিল ও সময়সাপেক্ষ।
তথ্যসূত্র: গ্লোবাল টাইমস, টিআরটি ওয়ার্ল্ড ও সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল গভর্ন্যান্স ইনোভেশন
আব্দুর রহমান

যুক্তরাষ্ট্রের অন্দরমহল তো বটেই, বিশ্বজুড়েই এক উত্তপ্ত বিতর্ক চলছে। অনেকের মতে, যুক্তরাষ্ট্রকেন্দ্রিক তথাকথিত এক মেরু আধিপত্যের যুগ শেষ হয়ে আসছে এবং বিশ্ব বহু মেরু ব্যবস্থার দিকে এগোচ্ছে। আবার, অনেকে মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্র এখনো বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর দেশ। তবে চলতি বছরের মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্ব এক মেরু ব্যবস্থা থেকে বহু মেরু ব্যবস্থার দিকে অগ্রসর হচ্ছে এবং একই সঙ্গে উত্তেজনা ও অনিশ্চয়তার এক নতুন যুগেও প্রবেশ করছে।
যুক্তরাষ্ট্রের বৈশ্বিক প্রভাব কমে আসছে বলে দেশটিতে উদ্বেগের সূত্রপাত হয় বারাক ওবামা প্রশাসনের শুরুর দিকে। কিছু ক্ষেত্রে রাজনৈতিক পক্ষপাতের কারণে এবং কিছু ক্ষেত্রে পরিবর্তিত বিশ্বব্যবস্থার বাস্তব পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে, এই উদ্বেগ ওবামার পরে ট্রাম্প প্রশাসন থেকে শুরু করে সর্বশেষ বাইডেন প্রশাসন পর্যন্ত বহাল ছিল। রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর এই উদ্বেগ আরও তীব্র হয়েছে। ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসার পর, যুক্তরাষ্ট্রকে ‘আবারও মহান করে’ তুলতে চাওয়ার আকাঙ্ক্ষা প্রকাশের মাধ্যমে এই উদ্বেগ আরও তীব্র হয়েছে।
২০২৫ সালের মিউনিখ নিরাপত্তা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র–চীনের প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিশ্ব একটি বিস্তৃত বহু মেরু ব্যবস্থার দিকে এগিয়ে যাবে কি না—তা এখনো স্পষ্ট নয়। তবে ‘বহু মেরুকরণ’ প্রক্রিয়া ক্রমশ গতি পাচ্ছে। এতে বলা হয়েছে, ‘আজকের বিশ্ব ব্যবস্থায় এক মেরুকরণ, দ্বিমেরুকরণ, বহু মেরুকরণ এবং এমনকি অ-মেরুকরণেরও উপাদান রয়েছে।’
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তবে আরও বেশিসংখ্যক রাষ্ট্রের মধ্যে প্রভাব বিস্তারের প্রতিযোগিতা একটি স্পষ্ট পরিবর্তনের ইঙ্গিত।’ এতে আরও বলা হয়, ‘স্নায়ুযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে এক মেরু বিশ্ব গঠনে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখা রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক উদারনীতিবাদ এখন আর একমাত্র প্রভাবশালী শক্তি নয়। এটি অভ্যন্তরীণভাবে ক্রমবর্ধমান চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। অনেক উদার গণতন্ত্রে জাতীয়তাবাদী জনতুষ্টির রাজনীতির উত্থান ঘটেছে। এ ছাড়া, এটি বাহ্যিকভাবেও চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ডোনাল্ড ট্রাম্পের হোয়াইট হাউসে প্রত্যাবর্তন এই পরিবর্তনকে ত্বরান্বিত করতে পারে এবং এই বিষয়টি ‘প্যাক্স আমেরিকানা’ তথা জলে–স্থলে–অন্তরিক্ষে আমেরিকার একক প্রভাবের সমাপ্তির ইঙ্গিত দেয়। এতে উল্লেখ করা হয়েছে, ট্রাম্প বর্তমান বিশ্ব ব্যবস্থাকে অনুকূল বলে মনে করেন না এবং তিনি যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ ও চীনকে নিয়ন্ত্রণে রাখাকে অগ্রাধিকার দিতে পারেন। এই বিষয়টি মিত্রদের সঙ্গে সম্পর্কের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে এক মেরুকরণ থেকে বহু মেরুকরণের দিকে বিশ্বের এই পরিবর্তন নিয়ে পশ্চিমা শিল্পোন্নত দেশগুলোর নাগরিক এবং গ্লোবাল সাউথের (তৃতীয় বিশ্ব) উদীয়মান শক্তিগুলোর নাগরিকদের মধ্যে ধারণা ব্যাপকভাবে আলাদা। মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনের এক জরিপে দেখা গেছে, শিল্পোন্নত দেশগুলোর জোট জি-৭–এর বেশির ভাগ মানুষ এই পরিবর্তনকে উদ্বেগের সঙ্গে দেখছেন। তাঁদের আশঙ্কা, এই পরিবর্তন বিশৃঙ্খলা ও সংঘাত বাড়িয়ে তুলতে পারে এবং বৈশ্বিক চুক্তি সম্পাদনকে আরও কঠিন করে তুলতে পারে। জরিপ অনুসারে, এসব দেশের বেশির ভাগ মানুষ মনে করেন, বহু মেরু ব্যবস্থা বিশ্বে শান্তি আনবে না।
অন্যদিকে, ব্রিকস (পশ্চিমের বাইরে বিকল্প অর্থনৈতিক জোট) দেশগুলোর বেশির ভাগ অংশীজন বহু মেরুকরণকে একটি ন্যায্য, সুবিচার ও শান্তিপূর্ণ বিশ্বের পথ হিসেবে দেখেন। জরিপে দেখা গেছে, চীন, ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকা ও ব্রাজিলের বেশির ভাগ উত্তরদাতা বিশ্বাস করেন, বহু মেরু বিশ্ব ব্যবস্থা উন্নয়নশীল দেশগুলোর উদ্বেগগুলোকে আরও ভালোভাবে আমলে নেবে এবং সমাধানের পথ বের করবে।
ব্রুকিংস ইনস্টিটিউশনের সিনিয়র ফেলো ফিয়োনা হিলের বিশ্লেষণ অনুযায়ী, পশ্চিমা বিশ্বে রাজনৈতিক অস্থিরতা নিয়ে যে ধারণা প্রবল হচ্ছে, তা বৈশ্বিক পর্যায়ে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে এক ধরনের বিদ্রোহের জন্ম দিচ্ছে। তাঁর মতে, ইউক্রেন ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের সংহতির আহ্বানের প্রতি যে প্রতিরোধ তা মূলত ‘বৈশ্বিক বয়ান তৈরিতে সম্মিলিত পশ্চিমা কর্তৃত্ব এবং তাদের নিজেদের সমস্যা অন্য সবার ঘাড়ে চাপানোর প্রবণতার বিরুদ্ধে’ এটি বিদ্রোহের ইঙ্গিত।
কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের বেনেট পাবলিক পলিসি ইনস্টিটিউটের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পুরো ইউরেশিয়া থেকে শুরু করে আফ্রিকার উত্তর ও পশ্চিম অংশজুড়ে বিস্তৃত দেশগুলো ক্রমশ চীন–রাশিয়ার দিকে ঝুঁকছে এবং যুক্তরাষ্ট্র থেকে দূরে সরে যাচ্ছে।
এই নতুন ভূরাজনৈতিক বাস্তবতায়, বহুপক্ষীয় সহযোগিতা ও আলোচনার প্রচলিত কাঠামো ভেঙে পড়ছে। পশ্চিমা আধিপত্যের যুগ পেরিয়ে, যুক্তরাষ্ট্রের কর্তৃত্বের সূর্য অস্ত যাচ্ছে, সেই সঙ্গে বিশ্ব একটি বিভাজিত বাস্তবতায় প্রবেশ করছে। হিলের ভাষ্য অনুযায়ীও, রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণ ‘প্যাক্স আমেরিকানার’ সমাপ্তি এবং এক নতুন বৈশ্বিক বিশৃঙ্খলার যুগের সূচনার ইঙ্গিত বহন করছে।
ইউরোপীয় কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশনস পরিচালিত এক সাম্প্রতিক জরিপ অনুযায়ী, পশ্চিমা বিশ্ব ও অন্যান্য অঞ্চলের বেশির ভাগ মানুষ এখন মনে করছেন, যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন উদারনৈতিক বিশ্বব্যবস্থার অবসান ঘটছে। ইউক্রেন যুদ্ধ যদিও গ্লোবাল নর্থ বা বৈশ্বিক উত্তরের (উন্নত দেশ) দেশগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বের প্রতি সমর্থন সংহত করেছে, তবে বৈশ্বিক দক্ষিণে (গ্লোবাল সাউথ) এটি মার্কিন নেতৃত্বাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি আস্থার আরও অবক্ষয় ঘটিয়েছে। এই পরিবর্তনের কেন্দ্রবিন্দুতে আছে চীন।
কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, বিশ্বের ১২০ কোটি মানুষের বসবাস উদারনৈতিক গণতন্ত্রের দেশে। এসব দেশের ৭৫ শতাংশ মানুষ চীনের প্রতি নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করে এবং ৮৭ শতাংশ রাশিয়ার প্রতি নেতিবাচক মনোভাব রাখে। কিন্তু বিশ্বের বাকি ৬৩০ কোটি মানুষের মধ্যে চিত্রটি সম্পূর্ণ উল্টো।
গ্লোবাল সাউথে ৭০ শতাংশ মানুষ চীনকে এবং ৬৬ শতাংশ মানুষ রাশিয়াকে ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখে। একই সঙ্গে, ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন ও দক্ষিণ আফ্রিকা নিয়ে গঠিত ব্রিকস জোটের ক্রমবর্ধমান প্রভাব এই উত্তর–দক্ষিণ বিভাজনকে আরও স্পষ্ট করছে এবং বহু মেরু বিশ্বব্যবস্থার পথ প্রশস্ত করছে।
চীন ইতিমধ্যে প্রায় প্রতিটি গ্লোবাল সাউথ দেশের শীর্ষ বাণিজ্যিক অংশীদার, যা তাদের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক দাবি প্রত্যাখ্যান করার আত্মবিশ্বাস দিচ্ছে। কারণ, এসব দেশের নেতারা বিশ্বাস করেন, তাঁরা যুক্তরাষ্ট্রের যে কোনো নিষেধাজ্ঞা মোকাবিলা করার সামর্থ্য রাখেন। আবার চীনকে ছাড়াই ভারত একা মার্কিন চাপ প্রতিহত করার নজির দেখিয়েছে। ইউক্রেন ইস্যুতে পশ্চিমা চাপ উপেক্ষা করে রাশিয়া ও চীন উভয়ের সঙ্গেই সম্পর্ক এগিয়ে নিয়েছে ভারত।
চীন নিজের অর্থনৈতিক শক্তিকে ভূরাজনৈতিক প্রভাবের কেন্দ্রে পরিণত করেছে এবং ব্রিকস জোটের প্রধান স্তম্ভ হয়ে উঠেছে। তবে চীন এককভাবে এই পরিবর্তনের নেতৃত্ব দিচ্ছে না। বিশ্বের ৪১ শতাংশ জনসংখ্যা এবং বৈশ্বিক জিডিপির প্রায় এক-চতুর্থাংশের প্রতিনিধিত্বকারী ব্রিকস এখনো প্রসারিত হচ্ছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উন্নয়নশীল দেশগুলোকে ‘শোষণের’ রেকর্ড আছে, যার মধ্যে রয়েছে—তথ্য যুদ্ধ, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ এবং শর্তযুক্ত ঋণ। এসব দেশের অধিকাংশই যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি গভীর ক্ষোভ পোষণ করে। তারা দেখেছে, কীভাবে যুক্তরাষ্ট্র তাদের প্রিয় মাতৃভূমির সঙ্গে ভয়ানক আচরণ করেছে। ইউক্রেন যুদ্ধ, ইসরায়েলের গাজায় আগ্রাসন, গাজা নিয়ে ট্রাম্পের উদ্ধত পরিকল্পনা—এসবই মূলত যুক্তরাষ্ট্রের সেই অতীত রেকর্ডেরই ধারাবাহিকতা।
ইউক্রেন যুদ্ধ যে বিশ্ব ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ মোড়, সে ব্যাপারে সন্দেহের অবকাশ নেই। তবে বৈশ্বিক দক্ষিণের দৃষ্টিকোণ থেকে যুদ্ধটি প্রধানত যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্যের আলোকে দেখা হয়। হিলের মতে, ‘যুক্তরাষ্ট্রের অহংকার ও ভণ্ডামির কথা বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর যুক্তরাষ্ট্র যে আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা তৈরি করেছিল এবং এত দিন ধরে পরিচালনা করেছে, তার প্রতি আস্থা অনেক আগেই হারিয়ে গেছে।’ মধ্যপ্রাচ্যে দুই দশকের রক্তক্ষয়ী সামরিক হস্তক্ষেপের পর, যুক্তরাষ্ট্র তার নৈতিক অবস্থান অনেকটাই দুর্বল করে ফেলেছে। এর সর্বশেষ উদাহরণ, গাজায় যুক্তরাষ্ট্রের নগ্ন সমর্থনে ইসরায়েলি হত্যাকাণ্ড ও ধ্বংসযজ্ঞ।
এই পরিবর্তনশীল ভূরাজনৈতিক বাস্তবতার সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং দিক হলো, বৈশ্বিক গণমাধ্যমে পশ্চিমা বিশ্ব আর একচেটিয়া আধিপত্য বজায় রাখতে পারছে না। যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইউক্রেন যুদ্ধকে ‘গণতন্ত্র বনাম স্বৈরতন্ত্রের’ লড়াই হিসেবে উপস্থাপন করলেও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও ইন্টারনেট পশ্চিমা সংবাদমাধ্যমের বিশ্বাসযোগ্যতা গ্লোবাল সাউথে ব্যাপকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। চীন, ভারত, তুরস্ক ও রাশিয়ায় অধিকাংশ মানুষ এখন মনে করে—পশ্চিমা বিশ্ব কেবল আরেকটি ভূরাজনৈতিক মেরুরূপে আবির্ভূত হয়েছে।
এর পাশাপাশি, সম্প্রতি চীনের মধ্যস্থতায় ইরান ও সৌদি আরবের পুনর্মিলন একটি ক্রমেই আকার পেতে থাকা এশীয় ব্যবস্থার অংশ হিসেবে দেখা হচ্ছে। ভূরাজনৈতিক বিশ্লেষক পরাগ খান্নার মতে, এশিয়া নিজেকে পুনরায় ঐক্যবদ্ধ করছে এবং সেই বাণিজ্যিক ও সাংস্কৃতিক বিনিময় পুনরুদ্ধার করছে, যা ইউরোপীয় ঔপনিবেশিকতা ও আমেরিকান আধিপত্যের আগে প্রচলিত ছিল।
মস্কোভিত্তিক আমেরিকান রাজনীতি বিশ্লেষক অ্যান্ড্রু করিবকো বলেন, ‘গত কয়েক দশক ধরে বিশ্ব অর্থনীতির কেন্দ্র আটলান্টিক থেকে এশিয়া-প্যাসিফিকের দিকে সরে যাচ্ছে। এটি সরাসরি দুই জায়ান্টের (চীন ও ভারত) উত্থানের কারণে, বিশেষ করে চীনের। দেশটির বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই) বিনিয়োগ গ্লোবাল সাউথের বাকি অংশকেও উত্থানে সাহায্য করেছে। অর্থনৈতিক শক্তির সঙ্গে রাজনৈতিক প্রভাব হাত ধরাধরি করে চলে এবং ব্রিকস দেশগুলো বিশ্ব ব্যবস্থার সংস্কার চায়।’
যুক্তরাষ্ট্রে সাধারণভাবে প্রচলিত দৃষ্টিভঙ্গির বিপরীতে, বৈশ্বিক দক্ষিণের বেশির ভাগ দেশ চীনকে সরাসরি সামরিক বা নিরাপত্তাগত হুমকি হিসেবে দেখে না। বরং চীন এখন তাদের জন্য অন্যতম প্রধান প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগকারী ও বাণিজ্যিক অংশীদার।
গ্লোবাল সাউথের দেশগুলো মনে করে, মার্কিন নেতৃত্বাধীন এক মেরু ব্যবস্থা কেবল ‘পরাক্রমশালী’ দেশটিরই স্বার্থ উদ্ধার করে। এই ধরনের ব্যবস্থা স্বৈরাচারী। কারণ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আক্রমণাত্মকভাবে তার তথাকথিত ‘নিয়ম’ অন্য সবার ওপর চাপিয়ে দেয়। করিবকো বলেন, ‘এটি অসম। কারণ, পশ্চিমের অর্থনৈতিক উত্থান সম্পূর্ণরূপে গ্লোবাল সাউথের শোষণের ওপর দাঁড়িয়ে। এটি অন্যায্য। কারণ, আন্তর্জাতিক আইন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নির্বিচারে লঙ্ঘন করে। সে অনুযায়ী, ব্রিকস দেশগুলো তাদের অর্থনৈতিক শক্তি কাজে লাগিয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ককে আরও গণতান্ত্রিক, ন্যায্য, ভারসাম্যপূর্ণ এবং ন্যায়সংগত করার লক্ষ্যে সংস্কার ত্বরান্বিত করছে।’
এটি স্পষ্ট যে, বৈশ্বিক রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামরিক ব্যবস্থার কাঠামো আর এককভাবে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন থাকবে না। দ্য ন্যাশনাল ইন্টারেস্টের এক সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পশ্চিমা নেতৃত্ব ছাড়াই একটি বহু মেরু বিশ্ব ব্যবস্থা বাস্তবায়িত হতে চলেছে।
গ্লোবাল নর্থ তথা বৈশ্বিক উত্তরের দেশগুলো রাশিয়া থেকে নিজেদের বিচ্ছিন্ন করেছে এবং চীনের সঙ্গে সম্পর্ক কমিয়ে আনার চেষ্টা করছে। অথচ গ্লোবাল সাউথ ক্রমশ ব্রিকস কেন্দ্রিক বাণিজ্য ব্যবস্থার সম্ভাবনার দিকে ঝুঁকছে। পুরোনো ও নতুন বৈশ্বিক ব্যবস্থার মধ্যকার এই সংস্থানিক ব্যবধান পূরণ করা বিশ্বব্যাপী সংকট এড়ানোর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে।
ব্রিকসের এই লক্ষ্য সফল হলে গ্লোবাল সাউথের দেশগুলো উপকৃত হবে। তবে প্রত্যাশা সংযত করা উচিত। কারণ, তারা যে পরিবর্তন কল্পনা করছে, তার প্রাতিষ্ঠানিক রূপদানের বিষয়টি অনেক জটিল ও সময়সাপেক্ষ।
তথ্যসূত্র: গ্লোবাল টাইমস, টিআরটি ওয়ার্ল্ড ও সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল গভর্ন্যান্স ইনোভেশন

যুক্তরাষ্ট্রের অন্দরমহল তো বটেই, বিশ্বজুড়েই এক উত্তপ্ত বিতর্ক চলছে। অনেকের মতে, যুক্তরাষ্ট্রকেন্দ্রিক তথাকথিত এক মেরু আধিপত্যের যুগ শেষ হয়ে আসছে এবং বিশ্ব বহু মেরু ব্যবস্থার দিকে এগোচ্ছে। আবার, অনেকে মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্র এখনো বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর দেশ। তবে চলতি বছরের মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্ব এক মেরু ব্যবস্থা থেকে বহু মেরু ব্যবস্থার দিকে অগ্রসর হচ্ছে এবং একই সঙ্গে উত্তেজনা ও অনিশ্চয়তার এক নতুন যুগেও প্রবেশ করছে।
যুক্তরাষ্ট্রের বৈশ্বিক প্রভাব কমে আসছে বলে দেশটিতে উদ্বেগের সূত্রপাত হয় বারাক ওবামা প্রশাসনের শুরুর দিকে। কিছু ক্ষেত্রে রাজনৈতিক পক্ষপাতের কারণে এবং কিছু ক্ষেত্রে পরিবর্তিত বিশ্বব্যবস্থার বাস্তব পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে, এই উদ্বেগ ওবামার পরে ট্রাম্প প্রশাসন থেকে শুরু করে সর্বশেষ বাইডেন প্রশাসন পর্যন্ত বহাল ছিল। রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর এই উদ্বেগ আরও তীব্র হয়েছে। ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসার পর, যুক্তরাষ্ট্রকে ‘আবারও মহান করে’ তুলতে চাওয়ার আকাঙ্ক্ষা প্রকাশের মাধ্যমে এই উদ্বেগ আরও তীব্র হয়েছে।
২০২৫ সালের মিউনিখ নিরাপত্তা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র–চীনের প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিশ্ব একটি বিস্তৃত বহু মেরু ব্যবস্থার দিকে এগিয়ে যাবে কি না—তা এখনো স্পষ্ট নয়। তবে ‘বহু মেরুকরণ’ প্রক্রিয়া ক্রমশ গতি পাচ্ছে। এতে বলা হয়েছে, ‘আজকের বিশ্ব ব্যবস্থায় এক মেরুকরণ, দ্বিমেরুকরণ, বহু মেরুকরণ এবং এমনকি অ-মেরুকরণেরও উপাদান রয়েছে।’
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তবে আরও বেশিসংখ্যক রাষ্ট্রের মধ্যে প্রভাব বিস্তারের প্রতিযোগিতা একটি স্পষ্ট পরিবর্তনের ইঙ্গিত।’ এতে আরও বলা হয়, ‘স্নায়ুযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে এক মেরু বিশ্ব গঠনে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখা রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক উদারনীতিবাদ এখন আর একমাত্র প্রভাবশালী শক্তি নয়। এটি অভ্যন্তরীণভাবে ক্রমবর্ধমান চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। অনেক উদার গণতন্ত্রে জাতীয়তাবাদী জনতুষ্টির রাজনীতির উত্থান ঘটেছে। এ ছাড়া, এটি বাহ্যিকভাবেও চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ডোনাল্ড ট্রাম্পের হোয়াইট হাউসে প্রত্যাবর্তন এই পরিবর্তনকে ত্বরান্বিত করতে পারে এবং এই বিষয়টি ‘প্যাক্স আমেরিকানা’ তথা জলে–স্থলে–অন্তরিক্ষে আমেরিকার একক প্রভাবের সমাপ্তির ইঙ্গিত দেয়। এতে উল্লেখ করা হয়েছে, ট্রাম্প বর্তমান বিশ্ব ব্যবস্থাকে অনুকূল বলে মনে করেন না এবং তিনি যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ ও চীনকে নিয়ন্ত্রণে রাখাকে অগ্রাধিকার দিতে পারেন। এই বিষয়টি মিত্রদের সঙ্গে সম্পর্কের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে এক মেরুকরণ থেকে বহু মেরুকরণের দিকে বিশ্বের এই পরিবর্তন নিয়ে পশ্চিমা শিল্পোন্নত দেশগুলোর নাগরিক এবং গ্লোবাল সাউথের (তৃতীয় বিশ্ব) উদীয়মান শক্তিগুলোর নাগরিকদের মধ্যে ধারণা ব্যাপকভাবে আলাদা। মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনের এক জরিপে দেখা গেছে, শিল্পোন্নত দেশগুলোর জোট জি-৭–এর বেশির ভাগ মানুষ এই পরিবর্তনকে উদ্বেগের সঙ্গে দেখছেন। তাঁদের আশঙ্কা, এই পরিবর্তন বিশৃঙ্খলা ও সংঘাত বাড়িয়ে তুলতে পারে এবং বৈশ্বিক চুক্তি সম্পাদনকে আরও কঠিন করে তুলতে পারে। জরিপ অনুসারে, এসব দেশের বেশির ভাগ মানুষ মনে করেন, বহু মেরু ব্যবস্থা বিশ্বে শান্তি আনবে না।
অন্যদিকে, ব্রিকস (পশ্চিমের বাইরে বিকল্প অর্থনৈতিক জোট) দেশগুলোর বেশির ভাগ অংশীজন বহু মেরুকরণকে একটি ন্যায্য, সুবিচার ও শান্তিপূর্ণ বিশ্বের পথ হিসেবে দেখেন। জরিপে দেখা গেছে, চীন, ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকা ও ব্রাজিলের বেশির ভাগ উত্তরদাতা বিশ্বাস করেন, বহু মেরু বিশ্ব ব্যবস্থা উন্নয়নশীল দেশগুলোর উদ্বেগগুলোকে আরও ভালোভাবে আমলে নেবে এবং সমাধানের পথ বের করবে।
ব্রুকিংস ইনস্টিটিউশনের সিনিয়র ফেলো ফিয়োনা হিলের বিশ্লেষণ অনুযায়ী, পশ্চিমা বিশ্বে রাজনৈতিক অস্থিরতা নিয়ে যে ধারণা প্রবল হচ্ছে, তা বৈশ্বিক পর্যায়ে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে এক ধরনের বিদ্রোহের জন্ম দিচ্ছে। তাঁর মতে, ইউক্রেন ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের সংহতির আহ্বানের প্রতি যে প্রতিরোধ তা মূলত ‘বৈশ্বিক বয়ান তৈরিতে সম্মিলিত পশ্চিমা কর্তৃত্ব এবং তাদের নিজেদের সমস্যা অন্য সবার ঘাড়ে চাপানোর প্রবণতার বিরুদ্ধে’ এটি বিদ্রোহের ইঙ্গিত।
কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের বেনেট পাবলিক পলিসি ইনস্টিটিউটের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পুরো ইউরেশিয়া থেকে শুরু করে আফ্রিকার উত্তর ও পশ্চিম অংশজুড়ে বিস্তৃত দেশগুলো ক্রমশ চীন–রাশিয়ার দিকে ঝুঁকছে এবং যুক্তরাষ্ট্র থেকে দূরে সরে যাচ্ছে।
এই নতুন ভূরাজনৈতিক বাস্তবতায়, বহুপক্ষীয় সহযোগিতা ও আলোচনার প্রচলিত কাঠামো ভেঙে পড়ছে। পশ্চিমা আধিপত্যের যুগ পেরিয়ে, যুক্তরাষ্ট্রের কর্তৃত্বের সূর্য অস্ত যাচ্ছে, সেই সঙ্গে বিশ্ব একটি বিভাজিত বাস্তবতায় প্রবেশ করছে। হিলের ভাষ্য অনুযায়ীও, রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণ ‘প্যাক্স আমেরিকানার’ সমাপ্তি এবং এক নতুন বৈশ্বিক বিশৃঙ্খলার যুগের সূচনার ইঙ্গিত বহন করছে।
ইউরোপীয় কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশনস পরিচালিত এক সাম্প্রতিক জরিপ অনুযায়ী, পশ্চিমা বিশ্ব ও অন্যান্য অঞ্চলের বেশির ভাগ মানুষ এখন মনে করছেন, যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন উদারনৈতিক বিশ্বব্যবস্থার অবসান ঘটছে। ইউক্রেন যুদ্ধ যদিও গ্লোবাল নর্থ বা বৈশ্বিক উত্তরের (উন্নত দেশ) দেশগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বের প্রতি সমর্থন সংহত করেছে, তবে বৈশ্বিক দক্ষিণে (গ্লোবাল সাউথ) এটি মার্কিন নেতৃত্বাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি আস্থার আরও অবক্ষয় ঘটিয়েছে। এই পরিবর্তনের কেন্দ্রবিন্দুতে আছে চীন।
কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, বিশ্বের ১২০ কোটি মানুষের বসবাস উদারনৈতিক গণতন্ত্রের দেশে। এসব দেশের ৭৫ শতাংশ মানুষ চীনের প্রতি নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করে এবং ৮৭ শতাংশ রাশিয়ার প্রতি নেতিবাচক মনোভাব রাখে। কিন্তু বিশ্বের বাকি ৬৩০ কোটি মানুষের মধ্যে চিত্রটি সম্পূর্ণ উল্টো।
গ্লোবাল সাউথে ৭০ শতাংশ মানুষ চীনকে এবং ৬৬ শতাংশ মানুষ রাশিয়াকে ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখে। একই সঙ্গে, ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন ও দক্ষিণ আফ্রিকা নিয়ে গঠিত ব্রিকস জোটের ক্রমবর্ধমান প্রভাব এই উত্তর–দক্ষিণ বিভাজনকে আরও স্পষ্ট করছে এবং বহু মেরু বিশ্বব্যবস্থার পথ প্রশস্ত করছে।
চীন ইতিমধ্যে প্রায় প্রতিটি গ্লোবাল সাউথ দেশের শীর্ষ বাণিজ্যিক অংশীদার, যা তাদের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক দাবি প্রত্যাখ্যান করার আত্মবিশ্বাস দিচ্ছে। কারণ, এসব দেশের নেতারা বিশ্বাস করেন, তাঁরা যুক্তরাষ্ট্রের যে কোনো নিষেধাজ্ঞা মোকাবিলা করার সামর্থ্য রাখেন। আবার চীনকে ছাড়াই ভারত একা মার্কিন চাপ প্রতিহত করার নজির দেখিয়েছে। ইউক্রেন ইস্যুতে পশ্চিমা চাপ উপেক্ষা করে রাশিয়া ও চীন উভয়ের সঙ্গেই সম্পর্ক এগিয়ে নিয়েছে ভারত।
চীন নিজের অর্থনৈতিক শক্তিকে ভূরাজনৈতিক প্রভাবের কেন্দ্রে পরিণত করেছে এবং ব্রিকস জোটের প্রধান স্তম্ভ হয়ে উঠেছে। তবে চীন এককভাবে এই পরিবর্তনের নেতৃত্ব দিচ্ছে না। বিশ্বের ৪১ শতাংশ জনসংখ্যা এবং বৈশ্বিক জিডিপির প্রায় এক-চতুর্থাংশের প্রতিনিধিত্বকারী ব্রিকস এখনো প্রসারিত হচ্ছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উন্নয়নশীল দেশগুলোকে ‘শোষণের’ রেকর্ড আছে, যার মধ্যে রয়েছে—তথ্য যুদ্ধ, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ এবং শর্তযুক্ত ঋণ। এসব দেশের অধিকাংশই যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি গভীর ক্ষোভ পোষণ করে। তারা দেখেছে, কীভাবে যুক্তরাষ্ট্র তাদের প্রিয় মাতৃভূমির সঙ্গে ভয়ানক আচরণ করেছে। ইউক্রেন যুদ্ধ, ইসরায়েলের গাজায় আগ্রাসন, গাজা নিয়ে ট্রাম্পের উদ্ধত পরিকল্পনা—এসবই মূলত যুক্তরাষ্ট্রের সেই অতীত রেকর্ডেরই ধারাবাহিকতা।
ইউক্রেন যুদ্ধ যে বিশ্ব ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ মোড়, সে ব্যাপারে সন্দেহের অবকাশ নেই। তবে বৈশ্বিক দক্ষিণের দৃষ্টিকোণ থেকে যুদ্ধটি প্রধানত যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্যের আলোকে দেখা হয়। হিলের মতে, ‘যুক্তরাষ্ট্রের অহংকার ও ভণ্ডামির কথা বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর যুক্তরাষ্ট্র যে আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা তৈরি করেছিল এবং এত দিন ধরে পরিচালনা করেছে, তার প্রতি আস্থা অনেক আগেই হারিয়ে গেছে।’ মধ্যপ্রাচ্যে দুই দশকের রক্তক্ষয়ী সামরিক হস্তক্ষেপের পর, যুক্তরাষ্ট্র তার নৈতিক অবস্থান অনেকটাই দুর্বল করে ফেলেছে। এর সর্বশেষ উদাহরণ, গাজায় যুক্তরাষ্ট্রের নগ্ন সমর্থনে ইসরায়েলি হত্যাকাণ্ড ও ধ্বংসযজ্ঞ।
এই পরিবর্তনশীল ভূরাজনৈতিক বাস্তবতার সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং দিক হলো, বৈশ্বিক গণমাধ্যমে পশ্চিমা বিশ্ব আর একচেটিয়া আধিপত্য বজায় রাখতে পারছে না। যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইউক্রেন যুদ্ধকে ‘গণতন্ত্র বনাম স্বৈরতন্ত্রের’ লড়াই হিসেবে উপস্থাপন করলেও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও ইন্টারনেট পশ্চিমা সংবাদমাধ্যমের বিশ্বাসযোগ্যতা গ্লোবাল সাউথে ব্যাপকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। চীন, ভারত, তুরস্ক ও রাশিয়ায় অধিকাংশ মানুষ এখন মনে করে—পশ্চিমা বিশ্ব কেবল আরেকটি ভূরাজনৈতিক মেরুরূপে আবির্ভূত হয়েছে।
এর পাশাপাশি, সম্প্রতি চীনের মধ্যস্থতায় ইরান ও সৌদি আরবের পুনর্মিলন একটি ক্রমেই আকার পেতে থাকা এশীয় ব্যবস্থার অংশ হিসেবে দেখা হচ্ছে। ভূরাজনৈতিক বিশ্লেষক পরাগ খান্নার মতে, এশিয়া নিজেকে পুনরায় ঐক্যবদ্ধ করছে এবং সেই বাণিজ্যিক ও সাংস্কৃতিক বিনিময় পুনরুদ্ধার করছে, যা ইউরোপীয় ঔপনিবেশিকতা ও আমেরিকান আধিপত্যের আগে প্রচলিত ছিল।
মস্কোভিত্তিক আমেরিকান রাজনীতি বিশ্লেষক অ্যান্ড্রু করিবকো বলেন, ‘গত কয়েক দশক ধরে বিশ্ব অর্থনীতির কেন্দ্র আটলান্টিক থেকে এশিয়া-প্যাসিফিকের দিকে সরে যাচ্ছে। এটি সরাসরি দুই জায়ান্টের (চীন ও ভারত) উত্থানের কারণে, বিশেষ করে চীনের। দেশটির বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই) বিনিয়োগ গ্লোবাল সাউথের বাকি অংশকেও উত্থানে সাহায্য করেছে। অর্থনৈতিক শক্তির সঙ্গে রাজনৈতিক প্রভাব হাত ধরাধরি করে চলে এবং ব্রিকস দেশগুলো বিশ্ব ব্যবস্থার সংস্কার চায়।’
যুক্তরাষ্ট্রে সাধারণভাবে প্রচলিত দৃষ্টিভঙ্গির বিপরীতে, বৈশ্বিক দক্ষিণের বেশির ভাগ দেশ চীনকে সরাসরি সামরিক বা নিরাপত্তাগত হুমকি হিসেবে দেখে না। বরং চীন এখন তাদের জন্য অন্যতম প্রধান প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগকারী ও বাণিজ্যিক অংশীদার।
গ্লোবাল সাউথের দেশগুলো মনে করে, মার্কিন নেতৃত্বাধীন এক মেরু ব্যবস্থা কেবল ‘পরাক্রমশালী’ দেশটিরই স্বার্থ উদ্ধার করে। এই ধরনের ব্যবস্থা স্বৈরাচারী। কারণ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আক্রমণাত্মকভাবে তার তথাকথিত ‘নিয়ম’ অন্য সবার ওপর চাপিয়ে দেয়। করিবকো বলেন, ‘এটি অসম। কারণ, পশ্চিমের অর্থনৈতিক উত্থান সম্পূর্ণরূপে গ্লোবাল সাউথের শোষণের ওপর দাঁড়িয়ে। এটি অন্যায্য। কারণ, আন্তর্জাতিক আইন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নির্বিচারে লঙ্ঘন করে। সে অনুযায়ী, ব্রিকস দেশগুলো তাদের অর্থনৈতিক শক্তি কাজে লাগিয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ককে আরও গণতান্ত্রিক, ন্যায্য, ভারসাম্যপূর্ণ এবং ন্যায়সংগত করার লক্ষ্যে সংস্কার ত্বরান্বিত করছে।’
এটি স্পষ্ট যে, বৈশ্বিক রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামরিক ব্যবস্থার কাঠামো আর এককভাবে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন থাকবে না। দ্য ন্যাশনাল ইন্টারেস্টের এক সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পশ্চিমা নেতৃত্ব ছাড়াই একটি বহু মেরু বিশ্ব ব্যবস্থা বাস্তবায়িত হতে চলেছে।
গ্লোবাল নর্থ তথা বৈশ্বিক উত্তরের দেশগুলো রাশিয়া থেকে নিজেদের বিচ্ছিন্ন করেছে এবং চীনের সঙ্গে সম্পর্ক কমিয়ে আনার চেষ্টা করছে। অথচ গ্লোবাল সাউথ ক্রমশ ব্রিকস কেন্দ্রিক বাণিজ্য ব্যবস্থার সম্ভাবনার দিকে ঝুঁকছে। পুরোনো ও নতুন বৈশ্বিক ব্যবস্থার মধ্যকার এই সংস্থানিক ব্যবধান পূরণ করা বিশ্বব্যাপী সংকট এড়ানোর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে।
ব্রিকসের এই লক্ষ্য সফল হলে গ্লোবাল সাউথের দেশগুলো উপকৃত হবে। তবে প্রত্যাশা সংযত করা উচিত। কারণ, তারা যে পরিবর্তন কল্পনা করছে, তার প্রাতিষ্ঠানিক রূপদানের বিষয়টি অনেক জটিল ও সময়সাপেক্ষ।
তথ্যসূত্র: গ্লোবাল টাইমস, টিআরটি ওয়ার্ল্ড ও সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল গভর্ন্যান্স ইনোভেশন

মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।
৬ ঘণ্টা আগে
নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এর পেছন
১০ ঘণ্টা আগে
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
৫ দিন আগে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
৮ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

বড়দিনের রাতে নাইজেরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় সোকোটো রাজ্যে মার্কিন বাহিনীর বিমান হামলা বিশ্বজুড়ে নতুন করে আলোচনায় নিয়ে এসেছে জঙ্গিগোষ্ঠী ‘ইসলামিক স্টেট’ বা আইএসকে। মধ্যপ্রাচ্যে পরাজয়ের পর গোষ্ঠীটি এখন আফ্রিকায় তাদের জাল বিস্তার করছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছেন, নাইজেরিয়ায় খ্রিষ্টানদের লক্ষ্য করে নৃশংস হত্যাযজ্ঞ চালানোর কারণে তিনি এ হামলার নির্দেশ দিয়েছেন।
ইসলামিক স্টেট কী
ইসলামিক স্টেট (যাকে আইএসআইএস বা দায়েশ নামেও ডাকা হয়) একটি সুন্নি চরমপন্থী গোষ্ঠী। ইরাক ও সিরিয়ায় উত্থান ঘটিয়ে তারা একসময় ‘খিলাফত’ ঘোষণা করেছিল। এরপর ২০১৪ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে ইরাক ও সিরিয়ার বিশাল অংশ তাদের দখলে ছিল। তখন তারা কঠোর শরিয়াহ আইন জারি করে এবং প্রকাশ্যে শিরশ্ছেদ ও নির্যাতনের মতো নৃশংসতা চালিয়ে বিশ্বকে স্তব্ধ করে দেয়।
পরে যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন বহুজাতিক বাহিনীর ক্রমাগত অভিযানের মুখে ইরাকের মসুল ও সিরিয়ার রাক্কায় তাদের পতন ঘটে। তবে সংগঠনটি পুরোপুরি নির্মূল না হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে।
বর্তমানে তারা কোথায় সক্রিয়
মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।
এশিয়া মহাদেশের মধ্যে আফগানিস্তান ও পাকিস্তানে ‘আইএস-খোরাসান’ নামে তারা সক্রিয়। এ ছাড়া ফিলিপাইনের মিন্দানাও অঞ্চলেও তাদের অনুসারী রয়েছে। জাতিসংঘ মনে করে, বর্তমানে তাদের অন্তত ১০ হাজার সক্রিয় সদস্য রয়েছে।
লক্ষ্য ও বর্তমান কৌশল
আইএসের মূল লক্ষ্য তাদের চরমপন্থী মতাদর্শ বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে দেওয়া। তবে সরাসরি যুদ্ধের বদলে তারা এখন কিছু নতুন কৌশল নিয়েছে। যেমন, অ্যাফিলিয়েট নেটওয়ার্ক—নিজেরা সরাসরি যুক্ত না হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানীয় জঙ্গিগোষ্ঠীকে নিজেদের ‘শাখা’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে প্রভাব বিস্তার করা। লোন উলফ অ্যাটাক—সংঘবদ্ধ হামলার পরিবর্তে একজন বা দুই ব্যক্তির সমন্বয়ে বড় ধরনের হামলা। সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই বিচে ইহুদিদের এক অনুষ্ঠানে বন্দুক হামলার পেছনে আইএসের এই কৌশল ছিল বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। অনলাইন প্রচারণা—টেলিগ্রামের মতো প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে আতঙ্ক ছড়ানো এবং নতুন সদস্য সংগ্রহ করা।
মার্কিন সামরিক বাহিনীর মতে, আইএসের বর্তমান বিশ্ব নেতা হলেন আবদুলকাদির মুমিন। তিনি বর্তমানে আইএসের সোমালিয়া শাখার প্রধান।
আইএসের সাম্প্রতিক কিছু বড় হামলা
কঙ্গোতে চলতি বছরের গত অক্টোবরে একটি গির্জায় নৈশকালীন প্রার্থনার সময় হামলায় ৪৩ জন নিহত হয়, যার দায় স্বীকার করে আইএস। গত ফেব্রুয়ারিতে সোমালিয়ায় একাধিক সামরিক ঘাঁটিতে আত্মঘাতী গাড়িবোমা হামলা চালায় আইএস। চলতি মাসে সিরিয়ায় দুই মার্কিন সেনা ও একজন দোভাষী নিহত হন, যার নেপথ্যে আইএসের হাত রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ ঘটনার পর চলতি সপ্তাহে সিরিয়ায় আইএসের ঘাঁটি লক্ষ্য করে ব্যাপক হামলা চালিয়েছে মার্কিন সামরিক বাহিনী।
নাইজেরিয়ায় মার্কিন হামলা এটাই প্রমাণ করে যে, আইএস এখন আর কেবল মধ্যপ্রাচ্যের সমস্যা নয়। বিশেষ করে, সাহেল ও পশ্চিম আফ্রিকায় তাদের ক্রমবর্ধমান শক্তি বিশ্ব নিরাপত্তার জন্য নতুন এক চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রয়টার্স থেকে সংক্ষেপে অনূদিত

বড়দিনের রাতে নাইজেরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় সোকোটো রাজ্যে মার্কিন বাহিনীর বিমান হামলা বিশ্বজুড়ে নতুন করে আলোচনায় নিয়ে এসেছে জঙ্গিগোষ্ঠী ‘ইসলামিক স্টেট’ বা আইএসকে। মধ্যপ্রাচ্যে পরাজয়ের পর গোষ্ঠীটি এখন আফ্রিকায় তাদের জাল বিস্তার করছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছেন, নাইজেরিয়ায় খ্রিষ্টানদের লক্ষ্য করে নৃশংস হত্যাযজ্ঞ চালানোর কারণে তিনি এ হামলার নির্দেশ দিয়েছেন।
ইসলামিক স্টেট কী
ইসলামিক স্টেট (যাকে আইএসআইএস বা দায়েশ নামেও ডাকা হয়) একটি সুন্নি চরমপন্থী গোষ্ঠী। ইরাক ও সিরিয়ায় উত্থান ঘটিয়ে তারা একসময় ‘খিলাফত’ ঘোষণা করেছিল। এরপর ২০১৪ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে ইরাক ও সিরিয়ার বিশাল অংশ তাদের দখলে ছিল। তখন তারা কঠোর শরিয়াহ আইন জারি করে এবং প্রকাশ্যে শিরশ্ছেদ ও নির্যাতনের মতো নৃশংসতা চালিয়ে বিশ্বকে স্তব্ধ করে দেয়।
পরে যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন বহুজাতিক বাহিনীর ক্রমাগত অভিযানের মুখে ইরাকের মসুল ও সিরিয়ার রাক্কায় তাদের পতন ঘটে। তবে সংগঠনটি পুরোপুরি নির্মূল না হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে।
বর্তমানে তারা কোথায় সক্রিয়
মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।
এশিয়া মহাদেশের মধ্যে আফগানিস্তান ও পাকিস্তানে ‘আইএস-খোরাসান’ নামে তারা সক্রিয়। এ ছাড়া ফিলিপাইনের মিন্দানাও অঞ্চলেও তাদের অনুসারী রয়েছে। জাতিসংঘ মনে করে, বর্তমানে তাদের অন্তত ১০ হাজার সক্রিয় সদস্য রয়েছে।
লক্ষ্য ও বর্তমান কৌশল
আইএসের মূল লক্ষ্য তাদের চরমপন্থী মতাদর্শ বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে দেওয়া। তবে সরাসরি যুদ্ধের বদলে তারা এখন কিছু নতুন কৌশল নিয়েছে। যেমন, অ্যাফিলিয়েট নেটওয়ার্ক—নিজেরা সরাসরি যুক্ত না হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানীয় জঙ্গিগোষ্ঠীকে নিজেদের ‘শাখা’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে প্রভাব বিস্তার করা। লোন উলফ অ্যাটাক—সংঘবদ্ধ হামলার পরিবর্তে একজন বা দুই ব্যক্তির সমন্বয়ে বড় ধরনের হামলা। সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই বিচে ইহুদিদের এক অনুষ্ঠানে বন্দুক হামলার পেছনে আইএসের এই কৌশল ছিল বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। অনলাইন প্রচারণা—টেলিগ্রামের মতো প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে আতঙ্ক ছড়ানো এবং নতুন সদস্য সংগ্রহ করা।
মার্কিন সামরিক বাহিনীর মতে, আইএসের বর্তমান বিশ্ব নেতা হলেন আবদুলকাদির মুমিন। তিনি বর্তমানে আইএসের সোমালিয়া শাখার প্রধান।
আইএসের সাম্প্রতিক কিছু বড় হামলা
কঙ্গোতে চলতি বছরের গত অক্টোবরে একটি গির্জায় নৈশকালীন প্রার্থনার সময় হামলায় ৪৩ জন নিহত হয়, যার দায় স্বীকার করে আইএস। গত ফেব্রুয়ারিতে সোমালিয়ায় একাধিক সামরিক ঘাঁটিতে আত্মঘাতী গাড়িবোমা হামলা চালায় আইএস। চলতি মাসে সিরিয়ায় দুই মার্কিন সেনা ও একজন দোভাষী নিহত হন, যার নেপথ্যে আইএসের হাত রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ ঘটনার পর চলতি সপ্তাহে সিরিয়ায় আইএসের ঘাঁটি লক্ষ্য করে ব্যাপক হামলা চালিয়েছে মার্কিন সামরিক বাহিনী।
নাইজেরিয়ায় মার্কিন হামলা এটাই প্রমাণ করে যে, আইএস এখন আর কেবল মধ্যপ্রাচ্যের সমস্যা নয়। বিশেষ করে, সাহেল ও পশ্চিম আফ্রিকায় তাদের ক্রমবর্ধমান শক্তি বিশ্ব নিরাপত্তার জন্য নতুন এক চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রয়টার্স থেকে সংক্ষেপে অনূদিত

ডোনাল্ড ট্রাম্পের হোয়াইট হাউসে প্রত্যাবর্তন এই পরিবর্তনকে ত্বরান্বিত করতে পারে এবং এই বিষয়টি ‘প্যাক্স আমেরিকানা’ তথা জলে–স্থলে–অন্তরিক্ষে আমেরিকার একক প্রভাবের সমাপ্তির ইঙ্গিত দেয়।
০৮ মার্চ ২০২৫
নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এর পেছন
১০ ঘণ্টা আগে
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
৫ দিন আগে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
৮ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

নাইজেরিয়ার সরকার খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়ন ঠেকাতে ব্যর্থ—এমন অভিযোগে কয়েক সপ্তাহ ধরে সমালোচনার পর অবশেষে বড়দিনের রাতে (২৫ ডিসেম্বর) পশ্চিম আফ্রিকার দেশটিতে বিমান হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। সরাসরি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে নাইজেরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় সোকোটো রাজ্যে এ হামলা চালানো হয়।
ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ান বলছে, ট্রাম্প প্রশাসন আইএস জঙ্গিদের একাধিক আস্তানা লক্ষ্য করে এসব হামলা চালায়। হামলায় মার্কিন নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ থেকে টমাহক মিসাইল নিক্ষেপ করা হয়েছিল। এসব হামলায় একাধিক আইএস জঙ্গি নিহত ও তাঁদের আস্তানা ধ্বংস হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে, তবে সঠিক সংখ্যা এখনো জানানো হয়নি।
ট্রাম্প প্রশাসনের সাম্প্রতিক বিদেশি সামরিক হস্তক্ষেপগুলোর সর্বশেষ উদাহরণ নাইজেরিয়ায় হামলা। অথচ ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনী প্রচারণায় তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে ‘অন্তহীন যুদ্ধ’ থেকে বের করে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দাবি করেছেন, এই হামলার মূল উদ্দেশ্য ছিল নাইজেরিয়ায় বসবাসরত খ্রিষ্টানদের ওপর চলমান হত্যাযজ্ঞ বন্ধ করা। তাঁর মতে, আইএস জঙ্গিরা পরিকল্পিতভাবে খ্রিষ্টানদের লক্ষ্যবস্তু বানাচ্ছে। হামলার ঘোষণা দিয়ে ট্রাম্প তাঁর ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে লিখেছিলেন, ‘আমি আগেই এই সন্ত্রাসীদের সতর্ক করেছিলাম, তারা যদি খ্রিষ্টানদের হত্যা বন্ধ না করে, তবে তাদের চড়ম মূল্য দিতে হবে। আজ রাতে (বড়দিন) ঠিক তা-ই ঘটেছে।’
গত অক্টোবর ও নভেম্বর মাসেও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নাইজেরিয়ার নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে ‘খ্রিষ্টান গণহত্যার’ শামিল বলে অভিহিত করেছিলেন।
মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তরের এক কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা এপিকে জানান, নাইজেরিয়া সরকারের অনুমোদন নিয়ে দেশটির সঙ্গে সমন্বয় করেই এসব হামলা চালানো হয়েছে। নাইজেরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, এই সহযোগিতার মধ্যে গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদান ও কৌশলগত সমন্বয় ছিল।
কেন নাইজেরিয়ায় হামলা চালাল ট্রাম্প প্রশাসন
অনেক আগে থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের ডানপন্থী রাজনীতিক গোষ্ঠীগুলো নাইজেরিয়ায় খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়নের অভিযোগ তুলছে। গত সেপ্টেম্বরে রিপাবলিকান সিনেটর টেড ক্রুজ কিছু নাইজেরীয় কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞার আহ্বান জানান। তিনি দাবি করেন, যারা ‘ইসলামপন্থী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর মাধ্যমে খ্রিষ্টান ও অন্য ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সহিংসতা সহজতর করছে’, তাদের নিষিদ্ধ করা উচিত।
তবে বর্তমানে বিষয়টি মার্কিন ডানপন্থী ও ইভানজেলিক্যাল খ্রিষ্টান মহলে বড় ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। আবার এই ডানপন্থী ও ইভানজেলিক্যাল খ্রিষ্টানরাই ট্রাম্পের বড় সমর্থক। বিশ্লেষকদের মতে, নিজের সমর্থকদের তুষ্ট করতে এবং বিশ্বজুড়ে ‘খ্রিষ্টানদের রক্ষাকর্তা’ হিসেবে নিজেকে জাহির করতেই ট্রাম্প এই ত্বরিত সামরিক পদক্ষেপ নিয়েছেন।
এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা আইনের আওতায় নাইজেরিয়াকে ‘বিশেষ উদ্বেগের দেশ’ হিসেবে চিহ্নিত করেন ট্রাম্প। বেশ কিছু মার্কিন আইনপ্রণেতা ও রক্ষণশীল খ্রিষ্টান গোষ্ঠীর লাগাতার লবিংয়ের পর এই সিদ্ধান্ত আসে। এর কিছুদিন পরই তিনি নাইজেরিয়ায় সম্ভাব্য সামরিক অভিযানের পরিকল্পনা করতে পেন্টাগনকে নির্দেশ দেন। সে সময় ট্রাম্প বলেন, নাইজেরিয়া সরকার যদি খ্রিষ্টান হত্যাকাণ্ড বন্ধ না করে, তবে তিনি ‘গানস-এ-ব্লেজিং’ অর্থাৎ পূর্ণ শক্তি নিয়ে হস্তক্ষেপ করতে পারেন।
নাইজেরিয়ায় কি আসলেই খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়ন চলছে
নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; এর পেছনে নানা কারণ রয়েছে।
উদাহরণ হিসেবে, যাযাবর মুসলিম পশুপালক ও খ্রিষ্টান কৃষক সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রাণঘাতী সংঘর্ষ মূলত চারণভূমি ও পানির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে। তবে ধর্মীয় ও জাতিগত বিভাজন এটিকে আরও জটিল করে তুলেছে। আবার অনেক বিশ্লেষকের মতে, যাজকদের অপহরণের ঘটনা ধর্মীয় বিদ্বেষের চেয়ে অর্থনৈতিক লাভের উদ্দেশ্যেই বেশি ঘটে, কারণ, তাঁরা প্রভাবশালী ব্যক্তি এবং তাঁদের অনুসারী বা প্রতিষ্ঠান দ্রুত মুক্তিপণের টাকা জোগাড় করতে পারে।
নাইজেরিয়া সরকারের অবস্থান
ট্রাম্প প্রশাসনের হামলার পর নাইজেরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইএস-নিধনে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতার প্রশংসা করেছে। কিন্তু খ্রিষ্টান নিপীড়নের বিষয়টির সঙ্গে মার্কিন অভিযানের কোনো সম্পর্ক আছে কি না, এ বিষয়ে কিছু বলেনি।
এক বিবৃতিতে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, খ্রিষ্টান, মুসলমান কিংবা অন্য কোনো সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে পরিচালিত সব ধরনের সহিংসতাই নাইজেরিয়ার মূল্যবোধ এবং আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার প্রতি অবমাননা।
নাইজেরিয়ার বাস্তবতাও আসলে এমন। দীর্ঘদিন ধরে দেশটি নিরাপত্তা পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে। গত কয়েক বছরে দেশটিতে হাজারো মানুষ নিহত এবং শত শত মানুষ অপহৃত হয়েছে।
উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ২০০৯ সাল থেকে বোকো হারাম ও ইসলামিক স্টেট ওয়েস্ট আফ্রিকা প্রভিন্স (আইএসডব্লিউএপি) বিদ্রোহ চালিয়ে যাচ্ছে। এতে কয়েক দশক ধরে কয়েক হাজার মানুষ নিহত এবং লাখো মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে সশস্ত্র অপরাধী চক্র, যাদের সাধারণত ‘ডাকাত’ বলা হয়, তারাও গণ-অপহরণ ও হামলা চালাচ্ছে। এমন পরিস্থিতি মুসলমান ও খ্রিষ্টান উভয় সম্প্রদায়কেই প্রভাবিত করছে।
এর আগে ট্রাম্পের অভিযোগের জবাবে নাইজেরিয়ার সরকার বিষয়টি স্বীকার করে বলেছিল, দেশটিতে কেবল খ্রিষ্টান নয়—বিভিন্ন ধর্মের মানুষই চরমপন্থী গোষ্ঠীগুলোর হাতে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে।
গত মাসে নাইজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট বোলা আহমেদ তিনুবু বলেন, নাইজেরিয়াকে ধর্মীয়ভাবে অসহিষ্ণু দেশ হিসেবে চিত্রিত করা বাস্তবতার প্রতিফলন নয়। তিনি বলেন, ‘ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সহনশীলতা আমাদের সম্মিলিত পরিচয়ের একটি মূল ভিত্তি এবং এটি সব সময়ই থাকবে। নাইজেরিয়া এমন একটি দেশ, যেখানে সংবিধান সব ধর্মের নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করে।’
এদিকে, ‘অন্তহীন যুদ্ধ’ বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এলেও নাইজেরিয়ায় ট্রাম্পের নতুন সামরিক হস্তক্ষেপ আফ্রিকার ভূরাজনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। অনেকে বলছেন, ‘খ্রিষ্টান নিপীড়ন’ আসলে ট্রাম্পের অজুহাত; তাঁর লক্ষ্য নাইজেরিয়ার তেলের খনি।
দ্য গার্ডিয়ান থেকে অনুবাদ করেছেন জগতপতি বর্মা

নাইজেরিয়ার সরকার খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়ন ঠেকাতে ব্যর্থ—এমন অভিযোগে কয়েক সপ্তাহ ধরে সমালোচনার পর অবশেষে বড়দিনের রাতে (২৫ ডিসেম্বর) পশ্চিম আফ্রিকার দেশটিতে বিমান হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। সরাসরি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে নাইজেরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় সোকোটো রাজ্যে এ হামলা চালানো হয়।
ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ান বলছে, ট্রাম্প প্রশাসন আইএস জঙ্গিদের একাধিক আস্তানা লক্ষ্য করে এসব হামলা চালায়। হামলায় মার্কিন নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ থেকে টমাহক মিসাইল নিক্ষেপ করা হয়েছিল। এসব হামলায় একাধিক আইএস জঙ্গি নিহত ও তাঁদের আস্তানা ধ্বংস হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে, তবে সঠিক সংখ্যা এখনো জানানো হয়নি।
ট্রাম্প প্রশাসনের সাম্প্রতিক বিদেশি সামরিক হস্তক্ষেপগুলোর সর্বশেষ উদাহরণ নাইজেরিয়ায় হামলা। অথচ ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনী প্রচারণায় তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে ‘অন্তহীন যুদ্ধ’ থেকে বের করে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দাবি করেছেন, এই হামলার মূল উদ্দেশ্য ছিল নাইজেরিয়ায় বসবাসরত খ্রিষ্টানদের ওপর চলমান হত্যাযজ্ঞ বন্ধ করা। তাঁর মতে, আইএস জঙ্গিরা পরিকল্পিতভাবে খ্রিষ্টানদের লক্ষ্যবস্তু বানাচ্ছে। হামলার ঘোষণা দিয়ে ট্রাম্প তাঁর ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে লিখেছিলেন, ‘আমি আগেই এই সন্ত্রাসীদের সতর্ক করেছিলাম, তারা যদি খ্রিষ্টানদের হত্যা বন্ধ না করে, তবে তাদের চড়ম মূল্য দিতে হবে। আজ রাতে (বড়দিন) ঠিক তা-ই ঘটেছে।’
গত অক্টোবর ও নভেম্বর মাসেও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নাইজেরিয়ার নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে ‘খ্রিষ্টান গণহত্যার’ শামিল বলে অভিহিত করেছিলেন।
মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তরের এক কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা এপিকে জানান, নাইজেরিয়া সরকারের অনুমোদন নিয়ে দেশটির সঙ্গে সমন্বয় করেই এসব হামলা চালানো হয়েছে। নাইজেরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, এই সহযোগিতার মধ্যে গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদান ও কৌশলগত সমন্বয় ছিল।
কেন নাইজেরিয়ায় হামলা চালাল ট্রাম্প প্রশাসন
অনেক আগে থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের ডানপন্থী রাজনীতিক গোষ্ঠীগুলো নাইজেরিয়ায় খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়নের অভিযোগ তুলছে। গত সেপ্টেম্বরে রিপাবলিকান সিনেটর টেড ক্রুজ কিছু নাইজেরীয় কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞার আহ্বান জানান। তিনি দাবি করেন, যারা ‘ইসলামপন্থী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর মাধ্যমে খ্রিষ্টান ও অন্য ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সহিংসতা সহজতর করছে’, তাদের নিষিদ্ধ করা উচিত।
তবে বর্তমানে বিষয়টি মার্কিন ডানপন্থী ও ইভানজেলিক্যাল খ্রিষ্টান মহলে বড় ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। আবার এই ডানপন্থী ও ইভানজেলিক্যাল খ্রিষ্টানরাই ট্রাম্পের বড় সমর্থক। বিশ্লেষকদের মতে, নিজের সমর্থকদের তুষ্ট করতে এবং বিশ্বজুড়ে ‘খ্রিষ্টানদের রক্ষাকর্তা’ হিসেবে নিজেকে জাহির করতেই ট্রাম্প এই ত্বরিত সামরিক পদক্ষেপ নিয়েছেন।
এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা আইনের আওতায় নাইজেরিয়াকে ‘বিশেষ উদ্বেগের দেশ’ হিসেবে চিহ্নিত করেন ট্রাম্প। বেশ কিছু মার্কিন আইনপ্রণেতা ও রক্ষণশীল খ্রিষ্টান গোষ্ঠীর লাগাতার লবিংয়ের পর এই সিদ্ধান্ত আসে। এর কিছুদিন পরই তিনি নাইজেরিয়ায় সম্ভাব্য সামরিক অভিযানের পরিকল্পনা করতে পেন্টাগনকে নির্দেশ দেন। সে সময় ট্রাম্প বলেন, নাইজেরিয়া সরকার যদি খ্রিষ্টান হত্যাকাণ্ড বন্ধ না করে, তবে তিনি ‘গানস-এ-ব্লেজিং’ অর্থাৎ পূর্ণ শক্তি নিয়ে হস্তক্ষেপ করতে পারেন।
নাইজেরিয়ায় কি আসলেই খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়ন চলছে
নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; এর পেছনে নানা কারণ রয়েছে।
উদাহরণ হিসেবে, যাযাবর মুসলিম পশুপালক ও খ্রিষ্টান কৃষক সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রাণঘাতী সংঘর্ষ মূলত চারণভূমি ও পানির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে। তবে ধর্মীয় ও জাতিগত বিভাজন এটিকে আরও জটিল করে তুলেছে। আবার অনেক বিশ্লেষকের মতে, যাজকদের অপহরণের ঘটনা ধর্মীয় বিদ্বেষের চেয়ে অর্থনৈতিক লাভের উদ্দেশ্যেই বেশি ঘটে, কারণ, তাঁরা প্রভাবশালী ব্যক্তি এবং তাঁদের অনুসারী বা প্রতিষ্ঠান দ্রুত মুক্তিপণের টাকা জোগাড় করতে পারে।
নাইজেরিয়া সরকারের অবস্থান
ট্রাম্প প্রশাসনের হামলার পর নাইজেরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইএস-নিধনে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতার প্রশংসা করেছে। কিন্তু খ্রিষ্টান নিপীড়নের বিষয়টির সঙ্গে মার্কিন অভিযানের কোনো সম্পর্ক আছে কি না, এ বিষয়ে কিছু বলেনি।
এক বিবৃতিতে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, খ্রিষ্টান, মুসলমান কিংবা অন্য কোনো সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে পরিচালিত সব ধরনের সহিংসতাই নাইজেরিয়ার মূল্যবোধ এবং আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার প্রতি অবমাননা।
নাইজেরিয়ার বাস্তবতাও আসলে এমন। দীর্ঘদিন ধরে দেশটি নিরাপত্তা পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে। গত কয়েক বছরে দেশটিতে হাজারো মানুষ নিহত এবং শত শত মানুষ অপহৃত হয়েছে।
উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ২০০৯ সাল থেকে বোকো হারাম ও ইসলামিক স্টেট ওয়েস্ট আফ্রিকা প্রভিন্স (আইএসডব্লিউএপি) বিদ্রোহ চালিয়ে যাচ্ছে। এতে কয়েক দশক ধরে কয়েক হাজার মানুষ নিহত এবং লাখো মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে সশস্ত্র অপরাধী চক্র, যাদের সাধারণত ‘ডাকাত’ বলা হয়, তারাও গণ-অপহরণ ও হামলা চালাচ্ছে। এমন পরিস্থিতি মুসলমান ও খ্রিষ্টান উভয় সম্প্রদায়কেই প্রভাবিত করছে।
এর আগে ট্রাম্পের অভিযোগের জবাবে নাইজেরিয়ার সরকার বিষয়টি স্বীকার করে বলেছিল, দেশটিতে কেবল খ্রিষ্টান নয়—বিভিন্ন ধর্মের মানুষই চরমপন্থী গোষ্ঠীগুলোর হাতে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে।
গত মাসে নাইজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট বোলা আহমেদ তিনুবু বলেন, নাইজেরিয়াকে ধর্মীয়ভাবে অসহিষ্ণু দেশ হিসেবে চিত্রিত করা বাস্তবতার প্রতিফলন নয়। তিনি বলেন, ‘ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সহনশীলতা আমাদের সম্মিলিত পরিচয়ের একটি মূল ভিত্তি এবং এটি সব সময়ই থাকবে। নাইজেরিয়া এমন একটি দেশ, যেখানে সংবিধান সব ধর্মের নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করে।’
এদিকে, ‘অন্তহীন যুদ্ধ’ বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এলেও নাইজেরিয়ায় ট্রাম্পের নতুন সামরিক হস্তক্ষেপ আফ্রিকার ভূরাজনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। অনেকে বলছেন, ‘খ্রিষ্টান নিপীড়ন’ আসলে ট্রাম্পের অজুহাত; তাঁর লক্ষ্য নাইজেরিয়ার তেলের খনি।
দ্য গার্ডিয়ান থেকে অনুবাদ করেছেন জগতপতি বর্মা

ডোনাল্ড ট্রাম্পের হোয়াইট হাউসে প্রত্যাবর্তন এই পরিবর্তনকে ত্বরান্বিত করতে পারে এবং এই বিষয়টি ‘প্যাক্স আমেরিকানা’ তথা জলে–স্থলে–অন্তরিক্ষে আমেরিকার একক প্রভাবের সমাপ্তির ইঙ্গিত দেয়।
০৮ মার্চ ২০২৫
মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।
৬ ঘণ্টা আগে
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
৫ দিন আগে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
৮ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে। এই প্রেক্ষাপটে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিয়ো লুলা দা সিলভা ভেনেজুয়েলায় মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপ মানবিক বিপর্যয় ডেকে আনবে বলে সতর্ক করেছেন। তাঁর মতে, এই সতর্কতা শুধু ভেনেজুয়েলাকে ঘিরে নয়—পুরো দক্ষিণ আমেরিকার ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার প্রশ্নও তুলে ধরছে।
ভেনেজুয়েলার সংকটের মূল কারণ দেশটির দীর্ঘস্থায়ী রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিতর্কিত নির্বাচন, অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা এবং মানবাধিকার পরিস্থিতি। প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর সরকারকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের একটি অংশ কর্তৃত্ববাদী ও অগণতান্ত্রিক বলে মনে করে। এর জবাবে ওয়াশিংটন একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এসব নিষেধাজ্ঞার মূল লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি, যা দেশটির আয়ের প্রধান উৎস।
ভেনেজুয়েলা বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ তেল মজুতের অধিকারী। ফলে তাদের তেল শুধু অর্থনীতি নয়, কূটনীতিরও কেন্দ্রে অবস্থান করছে। যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, ভেনেজুয়েলার তেল বিক্রির পথ বন্ধ করতে পারলে মাদুরো সরকার দুর্বল হবে। এই লক্ষ্যেই সাম্প্রতিক সময়ে দেশটির নিষেধাজ্ঞাভুক্ত তেল ট্যাংকারগুলোকে অবরোধের মতো কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে মার্কিন বাহিনী। তবে এই পদক্ষেপকে সরাসরি যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেওয়ার ঝুঁকি হিসেবে দেখছেন দক্ষিণ আমেরিকার অনেক নেতা।
ব্রাজিল ও মেক্সিকোর মতো লাতিন শক্তিগুলো এই কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হস্তক্ষেপের সম্ভাবনার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, দক্ষিণ আমেরিকার ইতিহাস বহিঃশক্তির সামরিক হস্তক্ষেপের তিক্ত অভিজ্ঞতায় ভরা। ফকল্যান্ড যুদ্ধের চার দশক পর আবারও কোনো অন্য মহাদেশীয় শক্তির সামরিক উপস্থিতি এই মহাদেশকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে—এমন আশঙ্কাই তিনি প্রকাশ করেছেন।
এদিকে রাশিয়া ও চীন ভেনেজুয়েলার সরকারের প্রতি সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। রাশিয়ার ক্ষেত্রে এটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব মোকাবিলার কৌশল, আর চীনের জন্য এটি তেল ও ঋণনির্ভর অর্থনৈতিক স্বার্থের প্রশ্ন। ফলে ভেনেজুয়েলা ক্রমেই যুক্তরাষ্ট্র বনাম রাশিয়া–চীন প্রভাব বিস্তারের আরেকটি ময়দানে পরিণত হচ্ছে।
‘মার্কোসুর’ সম্মেলনে লাতিন আমেরিকার দেশগুলো যে যৌথ অবস্থান নিয়েছে, তা এই বাস্তবতাকেই প্রতিফলিত করে। তারা ভেনেজুয়েলায় গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষার কথা বলেছে, তবে স্পষ্টভাবে সামরিক পথ প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের মতে, সংকটের সমাধান হতে পারে কেবল সংলাপ ও শান্তিপূর্ণ কূটনীতির মাধ্যমে।
সব মিলিয়ে ভেনেজুয়েলার সংকট এখন আর একটি দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যা নয়। তেল, আদর্শিক দ্বন্দ্ব, আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও বৈশ্বিক ক্ষমতার লড়াই—সবকিছু মিলিয়ে এটি আন্তর্জাতিক রাজনীতির এক স্পর্শকাতর সংঘাতক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।

ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে। এই প্রেক্ষাপটে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিয়ো লুলা দা সিলভা ভেনেজুয়েলায় মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপ মানবিক বিপর্যয় ডেকে আনবে বলে সতর্ক করেছেন। তাঁর মতে, এই সতর্কতা শুধু ভেনেজুয়েলাকে ঘিরে নয়—পুরো দক্ষিণ আমেরিকার ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার প্রশ্নও তুলে ধরছে।
ভেনেজুয়েলার সংকটের মূল কারণ দেশটির দীর্ঘস্থায়ী রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিতর্কিত নির্বাচন, অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা এবং মানবাধিকার পরিস্থিতি। প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর সরকারকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের একটি অংশ কর্তৃত্ববাদী ও অগণতান্ত্রিক বলে মনে করে। এর জবাবে ওয়াশিংটন একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এসব নিষেধাজ্ঞার মূল লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি, যা দেশটির আয়ের প্রধান উৎস।
ভেনেজুয়েলা বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ তেল মজুতের অধিকারী। ফলে তাদের তেল শুধু অর্থনীতি নয়, কূটনীতিরও কেন্দ্রে অবস্থান করছে। যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, ভেনেজুয়েলার তেল বিক্রির পথ বন্ধ করতে পারলে মাদুরো সরকার দুর্বল হবে। এই লক্ষ্যেই সাম্প্রতিক সময়ে দেশটির নিষেধাজ্ঞাভুক্ত তেল ট্যাংকারগুলোকে অবরোধের মতো কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে মার্কিন বাহিনী। তবে এই পদক্ষেপকে সরাসরি যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেওয়ার ঝুঁকি হিসেবে দেখছেন দক্ষিণ আমেরিকার অনেক নেতা।
ব্রাজিল ও মেক্সিকোর মতো লাতিন শক্তিগুলো এই কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হস্তক্ষেপের সম্ভাবনার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, দক্ষিণ আমেরিকার ইতিহাস বহিঃশক্তির সামরিক হস্তক্ষেপের তিক্ত অভিজ্ঞতায় ভরা। ফকল্যান্ড যুদ্ধের চার দশক পর আবারও কোনো অন্য মহাদেশীয় শক্তির সামরিক উপস্থিতি এই মহাদেশকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে—এমন আশঙ্কাই তিনি প্রকাশ করেছেন।
এদিকে রাশিয়া ও চীন ভেনেজুয়েলার সরকারের প্রতি সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। রাশিয়ার ক্ষেত্রে এটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব মোকাবিলার কৌশল, আর চীনের জন্য এটি তেল ও ঋণনির্ভর অর্থনৈতিক স্বার্থের প্রশ্ন। ফলে ভেনেজুয়েলা ক্রমেই যুক্তরাষ্ট্র বনাম রাশিয়া–চীন প্রভাব বিস্তারের আরেকটি ময়দানে পরিণত হচ্ছে।
‘মার্কোসুর’ সম্মেলনে লাতিন আমেরিকার দেশগুলো যে যৌথ অবস্থান নিয়েছে, তা এই বাস্তবতাকেই প্রতিফলিত করে। তারা ভেনেজুয়েলায় গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষার কথা বলেছে, তবে স্পষ্টভাবে সামরিক পথ প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের মতে, সংকটের সমাধান হতে পারে কেবল সংলাপ ও শান্তিপূর্ণ কূটনীতির মাধ্যমে।
সব মিলিয়ে ভেনেজুয়েলার সংকট এখন আর একটি দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যা নয়। তেল, আদর্শিক দ্বন্দ্ব, আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও বৈশ্বিক ক্ষমতার লড়াই—সবকিছু মিলিয়ে এটি আন্তর্জাতিক রাজনীতির এক স্পর্শকাতর সংঘাতক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।

ডোনাল্ড ট্রাম্পের হোয়াইট হাউসে প্রত্যাবর্তন এই পরিবর্তনকে ত্বরান্বিত করতে পারে এবং এই বিষয়টি ‘প্যাক্স আমেরিকানা’ তথা জলে–স্থলে–অন্তরিক্ষে আমেরিকার একক প্রভাবের সমাপ্তির ইঙ্গিত দেয়।
০৮ মার্চ ২০২৫
মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।
৬ ঘণ্টা আগে
নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এর পেছন
১০ ঘণ্টা আগে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
৮ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ভেনেজুয়েলার তেল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ—এমন মন্তব্য করে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাডভাইজার ও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহযোগী স্টিফেন মিলার।
গতকাল বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে মিলার বলেন, ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প গড়ে উঠেছে ‘আমেরিকার শ্রম, উদ্ভাবন ও ঘামের’ ওপর আর সেটা রাষ্ট্রায়ত্ত করে নেওয়াকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদের সবচেয়ে বড় ‘চুরি’ বলে অভিহিত করেন। মিলারের এই মন্তব্যের ঠিক এক দিন আগে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ঘোষণা দেন—ভেনেজুয়েলায় প্রবেশ ও সেখান থেকে বের হওয়া সব তেলবাহী জাহাজের ওপর ‘সম্পূর্ণ ও সর্বাত্মক অবরোধ’ আরোপ করা হচ্ছে।
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার উপকূলের কাছাকাছি কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় সামরিক উপস্থিতি গড়ে তুলেছে যুক্তরাষ্ট্র। গত সেপ্টেম্বর থেকে মাদক পাচারের অভিযোগে বেশ কয়েকটি নৌযানে হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। এতে এখন পর্যন্ত অন্তত ৯০ জন নিহত হয়েছেন। ট্রাম্প প্রশাসন দাবি করছে, এসব নৌকা যুক্তরাষ্ট্রে বিপুল পরিমাণ মাদক পাচার করছিল এবং তা মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি। তবে এই অভিযোগের পক্ষে কোনো প্রমাণ তারা দেয়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোকেনসহ মাদক যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছানোর প্রধান উৎস ভেনেজুয়েলা নয়। ফলে অনেকের মতে, এর পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রকৃত লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল নিয়ন্ত্রণ এবং নিকোলাস মাদুরোকে ক্ষমতা থেকে সরানো।
মিলার কী বলেছেন
গতকাল বুধবার এক্সে দেওয়া পোস্টে স্টিফেন মিলার লেখেন, ‘আমেরিকার শ্রম, মেধা ও পরিশ্রমই ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প সৃষ্টি করেছে। এই শিল্প জোরপূর্বক রাষ্ট্রায়ত্ত করা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ ও সম্পত্তির ইতিহাসের সবচেয়ে বড় চুরি। আর সেই লুণ্ঠিত সম্পদ সন্ত্রাসবাদে অর্থ জোগাতে এবং আমাদের দেশের রাস্তায় খুনি, ভাড়াটে যোদ্ধা ও মাদক ছড়িয়ে দিতে ব্যবহৃত হয়েছে।’
মিলার তাঁর পোস্টে ট্রাম্পের আগের একটি বক্তব্যও যুক্ত করেন, যেখানে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের তেল, ভূমি ও অন্যান্য সম্পদ ‘চুরি’ করার অভিযোগ তোলেন। ওই পোস্টে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার সরকারকে ‘বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন’ ঘোষণা করেন এবং দেশটির তেল ট্যাংকারগুলোর ওপর সম্পূর্ণ অবরোধের নির্দেশ দেন।
মিলার আরও বলেন, ভেনেজুয়েলা থেকে আসা অভিবাসীদের দ্রুত যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠানো হবে এবং সব ‘চুরি হওয়া সম্পদ’ অবিলম্বে যুক্তরাষ্ট্রকে ফিরিয়ে দিতে হবে।
ভেনেজুয়েলায় কী পরিমাণ তেল রয়েছে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলেই বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
২০২৩ সালের হিসাবে ভেনেজুয়েলার তেল মজুতের পরিমাণ প্রায় ৩০৩ বিলিয়ন ব্যারেল—যা বিশ্বে সর্বাধিক। তবে উৎপাদন ও রপ্তানি কমে যাওয়ায় দেশটি এখন তেল থেকে আগের মতো আয় করতে পারছে না।
অবজারভেটরি অব ইকোনমিক কমপ্লেক্সের (ওইসি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ভেনেজুয়েলার অপরিশোধিত তেল রপ্তানির মূল্য ছিল মাত্র ৪ দশমিক শূন্য ৫ বিলিয়ন ডলার। একই সময়ে সৌদি আরব রপ্তানি করেছে ১৮১ বিলিয়ন ডলার, যুক্তরাষ্ট্র ১২৫ বিলিয়ন ডলার ও রাশিয়া ১২২ বিলিয়ন ডলার।
যুক্তরাষ্ট্র কেন ভেনেজুয়েলার তেলের ওপর দাবি করছে
২০ শতকের শুরুর দিকে ভেনেজুয়েলায় তেল অনুসন্ধান শুরু করে মার্কিন কোম্পানিগুলো। ১৯২২ সালে ভেনেজুয়েলার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের মারাকাইবো হ্রদ এলাকায় প্রথম বড় তেলক্ষেত্র আবিষ্কার করে রয়্যাল ডাচ শেল।
এরপর যুক্তরাষ্ট্র ভেনেজুয়েলার তেল উত্তোলন ও উন্নয়নে বড় ধরনের বিনিয়োগ শুরু করে। স্ট্যান্ডার্ড অয়েলের মতো কোম্পানিগুলো চুক্তিভিত্তিকভাবে কাজ করে ভেনেজুয়েলাকে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ তেল সরবরাহকারীতে পরিণত করে।
১৯৬০ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর ওপেক গঠনের সময় ভেনেজুয়েলা ছিল এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। তবে ১৯৭৬ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট কার্লোস আন্দ্রেস পেরেজ তেলশিল্প রাষ্ট্রায়ত্ত করেন এবং পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলা (পিডিভিএসএ) প্রতিষ্ঠা করেন।
পরে হুগো শাভেজ ক্ষমতায় এসে সব বিদেশি তেলসম্পদ জাতীয়করণ করেন। কিন্তু রাজনৈতিক লক্ষ্যকে অগ্রাধিকার দেওয়া, অব্যবস্থাপনা ও বিনিয়োগের অভাবে তেল উৎপাদন ক্রমেই কমতে থাকে।
কবে থেকে নিষেধাজ্ঞা
২০০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র প্রথম ভেনেজুয়েলার তেলশিল্পের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। পরে নিকোলাস মাদুরোর শাসনামলে ২০১৭ ও ২০১৯ সালে নিষেধাজ্ঞা আরও কঠোর করা হয়। এই নিষেধাজ্ঞার ফলে ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি প্রায় বন্ধ হয়ে যায় এবং দেশটি চীন, ভারত ও কিউবার দিকে ঝুঁকে পড়ে।
ভেনেজুয়েলার তেল আমাদের সম্পদ—যুক্তরাষ্ট্রের এমন দাবির কি কোনো আইনি ভিত্তি আছে
না, নেই। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র তার ভূখণ্ডের প্রাকৃতিক সম্পদের মালিক। এই নীতির নাম ‘স্থায়ী প্রাকৃতিক সম্পদে সার্বভৌম অধিকার’ (Permanent Sovereignty over Natural Resources)।
১৯৬২ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের একটি প্রস্তাবে এই নীতি স্বীকৃতি পায়। সে অনুযায়ী, ভেনেজুয়েলার তেল সম্পূর্ণভাবে ভেনেজুয়েলারই। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে এ তেলের ওপর দাবি জানানো আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী।
তাহলে শেভরন কেন কাজ করছে
যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও হিউস্টনভিত্তিক তেল কোম্পানি শেভরন ভেনেজুয়েলায় কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। সাধারণত বিদেশি কোম্পানিগুলো ভেনেজুয়েলায় সরাসরি তেলক্ষেত্রের মালিক হতে পারে না। যুক্তরাষ্ট্রের শেভরন পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলার (পিডিভিএসএ) সঙ্গে যৌথভাবে তেল উৎপাদন করে এবং উৎপাদিত তেলের একটি অংশ পায়।
২০২২ সালে জো বাইডেন প্রশাসন শেভরনকে বিশেষ লাইসেন্স দেয়, যাতে তারা নিষেধাজ্ঞার বাইরে থেকে কাজ করতে পারে। চলতি বছর ট্রাম্প প্রশাসন সেই নিষেধাজ্ঞা ছাড় নবায়ন করেছে।
শেভরন দীর্ঘদিন ধরে ভেনেজুয়েলায় কার্যক্রম চালাচ্ছে এবং সেখানে তাদের বিপুল সম্পদ রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি সরে গেলে সেই সম্পদ রাষ্ট্রের হাতে চলে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে—যা অতীতে এক্সন, কারগিল ও হিলটনের মতো কোম্পানির ক্ষেত্রে ঘটেছে।
ট্রাম্প প্রশাসন মূলত ঐতিহাসিকভাবে মার্কিন কোম্পানিগুলোর করা বিনিয়োগ ও পরে তা বাজেয়াপ্ত হওয়াকে কেন্দ্র করে এই ‘মালিকানা’ দাবি করছে। তবে বর্তমান বিশ্বব্যবস্থায় ও আন্তর্জাতিক আইনে কোনো দেশের সম্পদ অন্য দেশের মালিকানাধীন হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এটি মূলত ভেনেজুয়েলায় শাসনব্যবস্থা পরিবর্তন ও তেলের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার একটি ভূরাজনৈতিক কৌশল।
আল-জাজিরা থেকে অনুবাদ করেছেন জগৎপতি বর্মা

ভেনেজুয়েলার তেল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ—এমন মন্তব্য করে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাডভাইজার ও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহযোগী স্টিফেন মিলার।
গতকাল বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে মিলার বলেন, ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প গড়ে উঠেছে ‘আমেরিকার শ্রম, উদ্ভাবন ও ঘামের’ ওপর আর সেটা রাষ্ট্রায়ত্ত করে নেওয়াকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদের সবচেয়ে বড় ‘চুরি’ বলে অভিহিত করেন। মিলারের এই মন্তব্যের ঠিক এক দিন আগে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ঘোষণা দেন—ভেনেজুয়েলায় প্রবেশ ও সেখান থেকে বের হওয়া সব তেলবাহী জাহাজের ওপর ‘সম্পূর্ণ ও সর্বাত্মক অবরোধ’ আরোপ করা হচ্ছে।
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার উপকূলের কাছাকাছি কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় সামরিক উপস্থিতি গড়ে তুলেছে যুক্তরাষ্ট্র। গত সেপ্টেম্বর থেকে মাদক পাচারের অভিযোগে বেশ কয়েকটি নৌযানে হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। এতে এখন পর্যন্ত অন্তত ৯০ জন নিহত হয়েছেন। ট্রাম্প প্রশাসন দাবি করছে, এসব নৌকা যুক্তরাষ্ট্রে বিপুল পরিমাণ মাদক পাচার করছিল এবং তা মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি। তবে এই অভিযোগের পক্ষে কোনো প্রমাণ তারা দেয়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোকেনসহ মাদক যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছানোর প্রধান উৎস ভেনেজুয়েলা নয়। ফলে অনেকের মতে, এর পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রকৃত লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল নিয়ন্ত্রণ এবং নিকোলাস মাদুরোকে ক্ষমতা থেকে সরানো।
মিলার কী বলেছেন
গতকাল বুধবার এক্সে দেওয়া পোস্টে স্টিফেন মিলার লেখেন, ‘আমেরিকার শ্রম, মেধা ও পরিশ্রমই ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প সৃষ্টি করেছে। এই শিল্প জোরপূর্বক রাষ্ট্রায়ত্ত করা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ ও সম্পত্তির ইতিহাসের সবচেয়ে বড় চুরি। আর সেই লুণ্ঠিত সম্পদ সন্ত্রাসবাদে অর্থ জোগাতে এবং আমাদের দেশের রাস্তায় খুনি, ভাড়াটে যোদ্ধা ও মাদক ছড়িয়ে দিতে ব্যবহৃত হয়েছে।’
মিলার তাঁর পোস্টে ট্রাম্পের আগের একটি বক্তব্যও যুক্ত করেন, যেখানে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের তেল, ভূমি ও অন্যান্য সম্পদ ‘চুরি’ করার অভিযোগ তোলেন। ওই পোস্টে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার সরকারকে ‘বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন’ ঘোষণা করেন এবং দেশটির তেল ট্যাংকারগুলোর ওপর সম্পূর্ণ অবরোধের নির্দেশ দেন।
মিলার আরও বলেন, ভেনেজুয়েলা থেকে আসা অভিবাসীদের দ্রুত যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠানো হবে এবং সব ‘চুরি হওয়া সম্পদ’ অবিলম্বে যুক্তরাষ্ট্রকে ফিরিয়ে দিতে হবে।
ভেনেজুয়েলায় কী পরিমাণ তেল রয়েছে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলেই বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
২০২৩ সালের হিসাবে ভেনেজুয়েলার তেল মজুতের পরিমাণ প্রায় ৩০৩ বিলিয়ন ব্যারেল—যা বিশ্বে সর্বাধিক। তবে উৎপাদন ও রপ্তানি কমে যাওয়ায় দেশটি এখন তেল থেকে আগের মতো আয় করতে পারছে না।
অবজারভেটরি অব ইকোনমিক কমপ্লেক্সের (ওইসি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ভেনেজুয়েলার অপরিশোধিত তেল রপ্তানির মূল্য ছিল মাত্র ৪ দশমিক শূন্য ৫ বিলিয়ন ডলার। একই সময়ে সৌদি আরব রপ্তানি করেছে ১৮১ বিলিয়ন ডলার, যুক্তরাষ্ট্র ১২৫ বিলিয়ন ডলার ও রাশিয়া ১২২ বিলিয়ন ডলার।
যুক্তরাষ্ট্র কেন ভেনেজুয়েলার তেলের ওপর দাবি করছে
২০ শতকের শুরুর দিকে ভেনেজুয়েলায় তেল অনুসন্ধান শুরু করে মার্কিন কোম্পানিগুলো। ১৯২২ সালে ভেনেজুয়েলার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের মারাকাইবো হ্রদ এলাকায় প্রথম বড় তেলক্ষেত্র আবিষ্কার করে রয়্যাল ডাচ শেল।
এরপর যুক্তরাষ্ট্র ভেনেজুয়েলার তেল উত্তোলন ও উন্নয়নে বড় ধরনের বিনিয়োগ শুরু করে। স্ট্যান্ডার্ড অয়েলের মতো কোম্পানিগুলো চুক্তিভিত্তিকভাবে কাজ করে ভেনেজুয়েলাকে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ তেল সরবরাহকারীতে পরিণত করে।
১৯৬০ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর ওপেক গঠনের সময় ভেনেজুয়েলা ছিল এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। তবে ১৯৭৬ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট কার্লোস আন্দ্রেস পেরেজ তেলশিল্প রাষ্ট্রায়ত্ত করেন এবং পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলা (পিডিভিএসএ) প্রতিষ্ঠা করেন।
পরে হুগো শাভেজ ক্ষমতায় এসে সব বিদেশি তেলসম্পদ জাতীয়করণ করেন। কিন্তু রাজনৈতিক লক্ষ্যকে অগ্রাধিকার দেওয়া, অব্যবস্থাপনা ও বিনিয়োগের অভাবে তেল উৎপাদন ক্রমেই কমতে থাকে।
কবে থেকে নিষেধাজ্ঞা
২০০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র প্রথম ভেনেজুয়েলার তেলশিল্পের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। পরে নিকোলাস মাদুরোর শাসনামলে ২০১৭ ও ২০১৯ সালে নিষেধাজ্ঞা আরও কঠোর করা হয়। এই নিষেধাজ্ঞার ফলে ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি প্রায় বন্ধ হয়ে যায় এবং দেশটি চীন, ভারত ও কিউবার দিকে ঝুঁকে পড়ে।
ভেনেজুয়েলার তেল আমাদের সম্পদ—যুক্তরাষ্ট্রের এমন দাবির কি কোনো আইনি ভিত্তি আছে
না, নেই। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র তার ভূখণ্ডের প্রাকৃতিক সম্পদের মালিক। এই নীতির নাম ‘স্থায়ী প্রাকৃতিক সম্পদে সার্বভৌম অধিকার’ (Permanent Sovereignty over Natural Resources)।
১৯৬২ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের একটি প্রস্তাবে এই নীতি স্বীকৃতি পায়। সে অনুযায়ী, ভেনেজুয়েলার তেল সম্পূর্ণভাবে ভেনেজুয়েলারই। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে এ তেলের ওপর দাবি জানানো আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী।
তাহলে শেভরন কেন কাজ করছে
যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও হিউস্টনভিত্তিক তেল কোম্পানি শেভরন ভেনেজুয়েলায় কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। সাধারণত বিদেশি কোম্পানিগুলো ভেনেজুয়েলায় সরাসরি তেলক্ষেত্রের মালিক হতে পারে না। যুক্তরাষ্ট্রের শেভরন পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলার (পিডিভিএসএ) সঙ্গে যৌথভাবে তেল উৎপাদন করে এবং উৎপাদিত তেলের একটি অংশ পায়।
২০২২ সালে জো বাইডেন প্রশাসন শেভরনকে বিশেষ লাইসেন্স দেয়, যাতে তারা নিষেধাজ্ঞার বাইরে থেকে কাজ করতে পারে। চলতি বছর ট্রাম্প প্রশাসন সেই নিষেধাজ্ঞা ছাড় নবায়ন করেছে।
শেভরন দীর্ঘদিন ধরে ভেনেজুয়েলায় কার্যক্রম চালাচ্ছে এবং সেখানে তাদের বিপুল সম্পদ রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি সরে গেলে সেই সম্পদ রাষ্ট্রের হাতে চলে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে—যা অতীতে এক্সন, কারগিল ও হিলটনের মতো কোম্পানির ক্ষেত্রে ঘটেছে।
ট্রাম্প প্রশাসন মূলত ঐতিহাসিকভাবে মার্কিন কোম্পানিগুলোর করা বিনিয়োগ ও পরে তা বাজেয়াপ্ত হওয়াকে কেন্দ্র করে এই ‘মালিকানা’ দাবি করছে। তবে বর্তমান বিশ্বব্যবস্থায় ও আন্তর্জাতিক আইনে কোনো দেশের সম্পদ অন্য দেশের মালিকানাধীন হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এটি মূলত ভেনেজুয়েলায় শাসনব্যবস্থা পরিবর্তন ও তেলের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার একটি ভূরাজনৈতিক কৌশল।
আল-জাজিরা থেকে অনুবাদ করেছেন জগৎপতি বর্মা

ডোনাল্ড ট্রাম্পের হোয়াইট হাউসে প্রত্যাবর্তন এই পরিবর্তনকে ত্বরান্বিত করতে পারে এবং এই বিষয়টি ‘প্যাক্স আমেরিকানা’ তথা জলে–স্থলে–অন্তরিক্ষে আমেরিকার একক প্রভাবের সমাপ্তির ইঙ্গিত দেয়।
০৮ মার্চ ২০২৫
মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।
৬ ঘণ্টা আগে
নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এর পেছন
১০ ঘণ্টা আগে
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
৫ দিন আগে