আব্দুর রহমান

কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো এক সপ্তাহেরও বেশি আগে অভিযোগ করেছিলেন যে, কানাডার মাটিতে খালিস্তান আন্দোলনের নেতা হরদীপ সিং নিজ্জার হত্যাকাণ্ডে ভারত সরকার জড়িত। এ বিষয়ে তাঁর কাছে ‘বিশ্বাসযোগ্য’ তথ্য আছে। এরপর থেকে ক্রমেই কানাডার সঙ্গে ভারতের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক খারাপ হচ্ছে।
এই বিরোধের দৃশ্যপটে এরই মধ্যে হাজির হয়েছে দুই দেশেরই পুরোনো মিত্র যুক্তরাষ্ট্র। এর মধ্যে ভারত আবার দক্ষিণ এশিয়ায় ওয়াশিংটনের সবচেয়ে বড় মিত্র। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য বিষয়টি বিড়ম্বনাকর হওয়ার কথা। যদিও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিক্রিয়ায় তেমনটা মনে হচ্ছে না। তবে বাস্তবের চিত্র ভিন্নও হতে পারে। এমন অবস্থায় সবচেয়ে বড় যে প্রশ্ন উঠেছে, তা হলো, হরদীপ হত্যার ইস্যুতে ভারত-যুক্তরাষ্ট্র কে কার পরীক্ষা নিচ্ছে।
ব্রিটিশ সাময়িকী দ্য ইকোনমিস্টের এক নিবন্ধে বলা হয়েছে, অনেক ভারতীয়ই মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্র হরদীপ ইস্যুতে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোকে সাহায্য করার বদলে অনেকটা এড়িয়ে চলছে। যুক্তরাষ্ট্র যেহেতু এখনো এ ঘটনায় কানাডার পাশে থাকার বিষয়ে দৃঢ় অঙ্গীকার না করে, ভারতকে কোনো কড়া কথা না শুনিয়ে সহযোগিতা করার ‘নমনীয় আহ্বান জানিয়েছে, তাই এমনটা মনে করছেন তারা।
ইকোনমিস্টের ভাষ্য, যুক্তরাষ্ট্রের এই অবস্থান সম্ভবত নরেন্দ্র মোদির সরকারে জন্য বিষয়টিকে দৃঢ়ভাবে উড়িয়ে দেওয়ার অবস্থান তৈরি করে দিয়েছে। উল্টো ভারত সরকার শুরু থেকেই কানাডার অভিযোগ ক্ষোভের সঙ্গে প্রত্যাখ্যান করেছে। অনেক ভারতীয় তাদের সরকারের এই অবস্থানকে স্বাগত জানিয়েছে। কারণ তাদের মতে, হরদীপ সিং নিজ্জার একজন ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী’ ও সন্ত্রাসবাদী আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত। ভারতীয়রা পশ্চিমা বিশ্বকে স্মরণ করিয়ে দিতে চায় যে, এই খালিস্তানকে কেন্দ্র করে ১৯৭০-এর দশক থেকে ১৯৯০-এর দশকের শুরু পর্যন্ত যে পরিমাণ রক্তাক্ত ঘটনা ঘটেছে, তা পশ্চিমারা জানে না। শিখ দেহরক্ষীর হাতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর নিহত হওয়ার ঘটনাও তারা পশ্চিমা বিশ্বকে স্মরণ করিয়ে দিতে চায়।
কিন্তু ভারত যতই দাবি উড়িয়ে দিক বা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করুক না কেন, তাতে আসলে কানাডা একা হয়ে যাচ্ছে না। কারণ হরদীপ সিং নিজ্জার হত্যাকাণ্ডের তদন্তে কানাডার কর্মকর্তারা সম্পৃক্ত যেসব ‘মানবীয় ও সাংকেতিক’ গোয়েন্দা যোগাযোগের আলামত সংগ্রহ করেছে, সেগুলো সরবরাহ করেছে অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, নিউজিল্যান্ড, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দাদের নিয়ে গঠিত জোট ‘ফাইভ আই’স ইন্টেলিজেন্স। এমনকি বিষয়টি নিয়ে ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে আলোচনাও করেছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। বিষয়টি নিয়ে বাইডেন ছাড়াও অন্যান্য পশ্চিমা দেশের নেতারাও মোদির সঙ্গে কথা বলেছেন। এ থেকে একটি বিষয় স্পষ্ট যে, জাস্টিন ট্রুডো কোনোভাবেই একা নয়। তবে এর ফলে যুক্তরাষ্ট্র ভারতের সঙ্গে যে উষ্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলতে চেয়েছিল, তাতে খানিকটা শীতল জল ঢালা হয়েছে।
এখানেই শেষ নয়, যুক্তরাষ্ট্র স্পষ্টভাবে কানাডার পক্ষে কথা না বললেও দেশটি ভারতের পক্ষও নেয়নি। বরং আকারে ইঙ্গিতে কানাডার প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভান বলেন, কানাডায় ভারতের পাঞ্জাব রাজ্যের খালিস্তান আন্দোলনের নেতা হরদীপ সিং নিজ্জার হত্যাকাণ্ডের ইস্যুতে দুই দেশের মধ্যে সৃষ্ট দ্বন্দ্ব নিরসনে উভয় পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে এ বিষয়ে ভারতকে বিশেষ কোনো ছাড় যুক্তরাষ্ট্র দেবে না।
এই ইস্যুতে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেনের বক্তব্যও উল্লেখযোগ্য। তিনি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র এই ইস্যুকে কেন্দ্র করে ভারত ও কানাডা উভয় দেশের সঙ্গেই যোগাযোগ রাখছে। তিনি বলেছেন, ‘আমরা জবাবদিহি দেখতে চাই এবং তদন্তকে সঠিকভাবে এগিয়ে নিতে এবং একটি ফলাফলে পৌঁছানোর জন্য এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’ ভারত কানাডাকে তদন্তে সহযোগিতা করবে আশাবাদ ব্যক্ত করে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা আশা করি, আমাদের ভারতীয় বন্ধুরা এ ঘটনার তদন্তে সার্বিকভাবে সহযোগিতা করবে।’ এ সময় তিনি ভারতের ওপর আনা কানাডার অভিযোগের সারবত্তার দিকে ইঙ্গিত না করে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র বিষয়টি খুবই গুরুত্ব দিয়ে দেখছে।
ভারত সম্ভবত এখনো পশ্চিমা বিশ্বের ঐক্যের শক্তি উপলব্ধি করতে পারেনি। ভারত কানাডাকে একটি দ্বিতীয় সারির ক্ষমতাধর দেশ হিসেবে বিবেচনা করেছিল। তারা ভেবেছিল, অভিযোগগুলো যদি সত্য হয় তবে দেশটি হয়তো খুব কড়াভাবে প্রতিক্রিয়া জানাবে এবং মিথ্যা হলে বিষয়টি হয়তো এড়িয়ে যাবে। কিন্তু ঘটনা সত্য হোক বা মিথ্যা, কানাডা বিষয়টি থেকে পিছু হটেনি। ট্রুডো বারবার দৃঢ়ভাবে বলেছেন, তাদের কাছে উল্লেখযোগ্য প্রমাণ রয়েছে এবং যথাসময় তা প্রকাশও করা হবে।
এ বিষয়ে ওয়াশিংটনভিত্তিক থিংক ট্যাংক ব্রুকিংস ইনস্টিটিউটের ফেলো তানভি মদন বলেন, ‘ভারত যেভাবে বিষয়টিকে দেখছে, তা মূলত কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার বন্ধনকে অস্বীকার করা। দুই দেশের মধ্যে নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা সংশ্লিষ্ট বিষয়ে নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এ ছাড়া এ ঘটনা আমেরিকার নিরাপত্তার জন্য একটি হুমকি। তারা (যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা) কোনোভাবেই চাইবে না উত্তর আমেরিকার মাটিতে কোনো বিদেশি হিটম্যান কাজ করুক। মূলত এ কারণেই আমেরিকায় শিখ সম্প্রদায়ের উপস্থিতি।’
তানভির বক্তব্যের সঙ্গে আমরা মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিংকেনের বক্তব্য মিলিয়ে পাঠ করতে পারি। ব্লিংকেন বলেছেন, ‘আমি মনে করি, এটি (হরদীপ হত্যাকাণ্ডের তদন্তে কানাডাকে ভারতকে সহযোগিতা করা) আন্তর্জাতিক ব্যবস্থার জন্য আরও ব্যাপকভাবে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এ ঘটনা একটি উদাহরণ হয়ে থাকবে যে কোনো দেশ এ ধরনের কাজে জড়িত থাকার ক্ষেত্রে আমলে নিয়ে ভবিষ্যতে সাবধান হয়ে যাবে।’ ব্লিংকেনের বক্তব্য থেকে এটি স্পষ্ট যে, ব্লিংকেন তথা যুক্তরাষ্ট্র স্পষ্টভাবে চায় ভারত এ ঘটনার তদন্তে দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করে কানাডাকে সহায়তা করুক। কারণ, এটি যুক্তরাষ্ট্রসহ উত্তর আমেরিকার নিরাপত্তার প্রশ্ন।
তবে এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ভারত যে একাই দোষী তা বোধ হয় না। ভারতের অভিযোগ, কানাডা দীর্ঘদিন ধরে শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদীদের তাদের ভূখণ্ড ব্যবহার করে সন্ত্রাসবাদী আন্দোলন পরিচালনা করার সুযোগ দিচ্ছে। নয়া দিল্লির দাবি, ভারতে বর্তমানে খুব বেশি শিখ ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী’ নেই। বরং পশ্চিমা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তারা আশ্রয় নিয়ে তা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু পশ্চিমা বিশ্ব এর ফলে যে, সহিংসতার পুনরুদ্ভব হতে পারে সে বিষয়টিকে খুব বেশি আমলে নিচ্ছে না। এমনকি ১৯৮৫ সালে কানাডার মন্ট্রিল থেকে লন্ডনগামী এয়ার ইন্ডিয়ার একটি ফ্লাইট বোমা মেরে উড়িয়ে দেওয়ার পরও পশ্চিমা বিশ্ব বিষয়টি নিয়ে খুব বেশি মাথা ঘামায়নি। তবে এসব ঘটনা বা বিষয়ের আলোকে যদি ভারত মনে করে থাকে যে, এসব ঘটনা কানাডার মাটিতে গুপ্তহত্যা ঘটানোকে বৈধতা দেবে তবে তা হবে খুবই শিশুসুলভ ভাবনা।
ভারতের অবস্থান দেখে মনে হচ্ছে, তারা নিজ্জারের হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি বেমালুম অস্বীকার করবে, এমনকি পর্যাপ্ত প্রমাণাদি যদি জনসমক্ষে আনা হয় তারপরও। ভারত যদি এমনটা করে তাহলে যে ভারতের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র তার কৌশলগত সম্পর্ক ছিন্ন করবে এমনটাও মনে হচ্ছে না এবং সম্ভবত এই অবস্থান যৌক্তিকও বটে। সে ক্ষেত্রে এই ঘটনা ভারতের প্রতিরক্ষা খাতের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে যে দ্বিপক্ষীয় অংশীদারত্ব, দুই দেশের সাধারণ গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ—তার ওপর কোনো প্রভাব ফেলবে না। কারণ, ভারত এবং যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক মূলত চীনকে কেন্দ্র করে উভয় দেশের সাধারণ স্বার্থকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে। এবং ঠিক এ কারণেই হয়তো মোদি এবং তাঁর দল বিজেপি ভারতের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ক্ষতের সৃষ্টি করলেও বাইডেন প্রশাসন তা নিয়ে খুব বেশি সমালোচনা কখনোই করেনি।
তবে নিজ্জার হত্যাকাণ্ড ভারত-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক কতটা ‘অস্বস্তিকর’ সে বিষয়টি সামনে এনেছে। ভারত একই সময়ে পশ্চিমাপন্থী আবার তাদের প্রতি বিরক্তও। তারা ওয়াশিংটনের সঙ্গে গভীর নিরাপত্তা সম্পর্ক চায় আবার বিশ্বের কোনো শক্তির কাছে নিজের নিরাপত্তার দিকটি ছেড়ে দিতেও অনিচ্ছুক। ফলে এই অবস্থায় ভারত যদি আপত্তিকর উপায়ে বহির্বিশ্বে নিজের ক্ষমতার প্রদর্শন করতে শুরু করে তবে চীন ইস্যুতে ওয়াশিংটনের পক্ষ থেকে যে সুবিধা বা সমর্থন তারা পাচ্ছে তা হারাতে পারে।
সব মিলিয়ে নিজ্জার হত্যাকাণ্ড যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ভারতের নিজের অবস্থান পরিষ্কার করা একটি কারণ হিসেবে হাজির হতে পারে। তাই নানা দিক মিলিয়ে ভারত যদি তার অবস্থান ধরে রাখতে চায় বিশেষ করে এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ভারত জড়িত বলে প্রমাণিত হয়—যেমনটা কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বাস করে—তবে মোদির উচিত হবে নমনীয়তার পথ অবলম্বন করা।
তথ্যসূত্র: দ্য ইকোনমিস্ট, রয়টার্স, এএফপি ও আল-জাজিরা

কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো এক সপ্তাহেরও বেশি আগে অভিযোগ করেছিলেন যে, কানাডার মাটিতে খালিস্তান আন্দোলনের নেতা হরদীপ সিং নিজ্জার হত্যাকাণ্ডে ভারত সরকার জড়িত। এ বিষয়ে তাঁর কাছে ‘বিশ্বাসযোগ্য’ তথ্য আছে। এরপর থেকে ক্রমেই কানাডার সঙ্গে ভারতের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক খারাপ হচ্ছে।
এই বিরোধের দৃশ্যপটে এরই মধ্যে হাজির হয়েছে দুই দেশেরই পুরোনো মিত্র যুক্তরাষ্ট্র। এর মধ্যে ভারত আবার দক্ষিণ এশিয়ায় ওয়াশিংটনের সবচেয়ে বড় মিত্র। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য বিষয়টি বিড়ম্বনাকর হওয়ার কথা। যদিও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিক্রিয়ায় তেমনটা মনে হচ্ছে না। তবে বাস্তবের চিত্র ভিন্নও হতে পারে। এমন অবস্থায় সবচেয়ে বড় যে প্রশ্ন উঠেছে, তা হলো, হরদীপ হত্যার ইস্যুতে ভারত-যুক্তরাষ্ট্র কে কার পরীক্ষা নিচ্ছে।
ব্রিটিশ সাময়িকী দ্য ইকোনমিস্টের এক নিবন্ধে বলা হয়েছে, অনেক ভারতীয়ই মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্র হরদীপ ইস্যুতে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোকে সাহায্য করার বদলে অনেকটা এড়িয়ে চলছে। যুক্তরাষ্ট্র যেহেতু এখনো এ ঘটনায় কানাডার পাশে থাকার বিষয়ে দৃঢ় অঙ্গীকার না করে, ভারতকে কোনো কড়া কথা না শুনিয়ে সহযোগিতা করার ‘নমনীয় আহ্বান জানিয়েছে, তাই এমনটা মনে করছেন তারা।
ইকোনমিস্টের ভাষ্য, যুক্তরাষ্ট্রের এই অবস্থান সম্ভবত নরেন্দ্র মোদির সরকারে জন্য বিষয়টিকে দৃঢ়ভাবে উড়িয়ে দেওয়ার অবস্থান তৈরি করে দিয়েছে। উল্টো ভারত সরকার শুরু থেকেই কানাডার অভিযোগ ক্ষোভের সঙ্গে প্রত্যাখ্যান করেছে। অনেক ভারতীয় তাদের সরকারের এই অবস্থানকে স্বাগত জানিয়েছে। কারণ তাদের মতে, হরদীপ সিং নিজ্জার একজন ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী’ ও সন্ত্রাসবাদী আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত। ভারতীয়রা পশ্চিমা বিশ্বকে স্মরণ করিয়ে দিতে চায় যে, এই খালিস্তানকে কেন্দ্র করে ১৯৭০-এর দশক থেকে ১৯৯০-এর দশকের শুরু পর্যন্ত যে পরিমাণ রক্তাক্ত ঘটনা ঘটেছে, তা পশ্চিমারা জানে না। শিখ দেহরক্ষীর হাতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর নিহত হওয়ার ঘটনাও তারা পশ্চিমা বিশ্বকে স্মরণ করিয়ে দিতে চায়।
কিন্তু ভারত যতই দাবি উড়িয়ে দিক বা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করুক না কেন, তাতে আসলে কানাডা একা হয়ে যাচ্ছে না। কারণ হরদীপ সিং নিজ্জার হত্যাকাণ্ডের তদন্তে কানাডার কর্মকর্তারা সম্পৃক্ত যেসব ‘মানবীয় ও সাংকেতিক’ গোয়েন্দা যোগাযোগের আলামত সংগ্রহ করেছে, সেগুলো সরবরাহ করেছে অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, নিউজিল্যান্ড, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দাদের নিয়ে গঠিত জোট ‘ফাইভ আই’স ইন্টেলিজেন্স। এমনকি বিষয়টি নিয়ে ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে আলোচনাও করেছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। বিষয়টি নিয়ে বাইডেন ছাড়াও অন্যান্য পশ্চিমা দেশের নেতারাও মোদির সঙ্গে কথা বলেছেন। এ থেকে একটি বিষয় স্পষ্ট যে, জাস্টিন ট্রুডো কোনোভাবেই একা নয়। তবে এর ফলে যুক্তরাষ্ট্র ভারতের সঙ্গে যে উষ্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলতে চেয়েছিল, তাতে খানিকটা শীতল জল ঢালা হয়েছে।
এখানেই শেষ নয়, যুক্তরাষ্ট্র স্পষ্টভাবে কানাডার পক্ষে কথা না বললেও দেশটি ভারতের পক্ষও নেয়নি। বরং আকারে ইঙ্গিতে কানাডার প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভান বলেন, কানাডায় ভারতের পাঞ্জাব রাজ্যের খালিস্তান আন্দোলনের নেতা হরদীপ সিং নিজ্জার হত্যাকাণ্ডের ইস্যুতে দুই দেশের মধ্যে সৃষ্ট দ্বন্দ্ব নিরসনে উভয় পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে এ বিষয়ে ভারতকে বিশেষ কোনো ছাড় যুক্তরাষ্ট্র দেবে না।
এই ইস্যুতে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেনের বক্তব্যও উল্লেখযোগ্য। তিনি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র এই ইস্যুকে কেন্দ্র করে ভারত ও কানাডা উভয় দেশের সঙ্গেই যোগাযোগ রাখছে। তিনি বলেছেন, ‘আমরা জবাবদিহি দেখতে চাই এবং তদন্তকে সঠিকভাবে এগিয়ে নিতে এবং একটি ফলাফলে পৌঁছানোর জন্য এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’ ভারত কানাডাকে তদন্তে সহযোগিতা করবে আশাবাদ ব্যক্ত করে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা আশা করি, আমাদের ভারতীয় বন্ধুরা এ ঘটনার তদন্তে সার্বিকভাবে সহযোগিতা করবে।’ এ সময় তিনি ভারতের ওপর আনা কানাডার অভিযোগের সারবত্তার দিকে ইঙ্গিত না করে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র বিষয়টি খুবই গুরুত্ব দিয়ে দেখছে।
ভারত সম্ভবত এখনো পশ্চিমা বিশ্বের ঐক্যের শক্তি উপলব্ধি করতে পারেনি। ভারত কানাডাকে একটি দ্বিতীয় সারির ক্ষমতাধর দেশ হিসেবে বিবেচনা করেছিল। তারা ভেবেছিল, অভিযোগগুলো যদি সত্য হয় তবে দেশটি হয়তো খুব কড়াভাবে প্রতিক্রিয়া জানাবে এবং মিথ্যা হলে বিষয়টি হয়তো এড়িয়ে যাবে। কিন্তু ঘটনা সত্য হোক বা মিথ্যা, কানাডা বিষয়টি থেকে পিছু হটেনি। ট্রুডো বারবার দৃঢ়ভাবে বলেছেন, তাদের কাছে উল্লেখযোগ্য প্রমাণ রয়েছে এবং যথাসময় তা প্রকাশও করা হবে।
এ বিষয়ে ওয়াশিংটনভিত্তিক থিংক ট্যাংক ব্রুকিংস ইনস্টিটিউটের ফেলো তানভি মদন বলেন, ‘ভারত যেভাবে বিষয়টিকে দেখছে, তা মূলত কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার বন্ধনকে অস্বীকার করা। দুই দেশের মধ্যে নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা সংশ্লিষ্ট বিষয়ে নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এ ছাড়া এ ঘটনা আমেরিকার নিরাপত্তার জন্য একটি হুমকি। তারা (যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা) কোনোভাবেই চাইবে না উত্তর আমেরিকার মাটিতে কোনো বিদেশি হিটম্যান কাজ করুক। মূলত এ কারণেই আমেরিকায় শিখ সম্প্রদায়ের উপস্থিতি।’
তানভির বক্তব্যের সঙ্গে আমরা মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিংকেনের বক্তব্য মিলিয়ে পাঠ করতে পারি। ব্লিংকেন বলেছেন, ‘আমি মনে করি, এটি (হরদীপ হত্যাকাণ্ডের তদন্তে কানাডাকে ভারতকে সহযোগিতা করা) আন্তর্জাতিক ব্যবস্থার জন্য আরও ব্যাপকভাবে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এ ঘটনা একটি উদাহরণ হয়ে থাকবে যে কোনো দেশ এ ধরনের কাজে জড়িত থাকার ক্ষেত্রে আমলে নিয়ে ভবিষ্যতে সাবধান হয়ে যাবে।’ ব্লিংকেনের বক্তব্য থেকে এটি স্পষ্ট যে, ব্লিংকেন তথা যুক্তরাষ্ট্র স্পষ্টভাবে চায় ভারত এ ঘটনার তদন্তে দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করে কানাডাকে সহায়তা করুক। কারণ, এটি যুক্তরাষ্ট্রসহ উত্তর আমেরিকার নিরাপত্তার প্রশ্ন।
তবে এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ভারত যে একাই দোষী তা বোধ হয় না। ভারতের অভিযোগ, কানাডা দীর্ঘদিন ধরে শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদীদের তাদের ভূখণ্ড ব্যবহার করে সন্ত্রাসবাদী আন্দোলন পরিচালনা করার সুযোগ দিচ্ছে। নয়া দিল্লির দাবি, ভারতে বর্তমানে খুব বেশি শিখ ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী’ নেই। বরং পশ্চিমা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তারা আশ্রয় নিয়ে তা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু পশ্চিমা বিশ্ব এর ফলে যে, সহিংসতার পুনরুদ্ভব হতে পারে সে বিষয়টিকে খুব বেশি আমলে নিচ্ছে না। এমনকি ১৯৮৫ সালে কানাডার মন্ট্রিল থেকে লন্ডনগামী এয়ার ইন্ডিয়ার একটি ফ্লাইট বোমা মেরে উড়িয়ে দেওয়ার পরও পশ্চিমা বিশ্ব বিষয়টি নিয়ে খুব বেশি মাথা ঘামায়নি। তবে এসব ঘটনা বা বিষয়ের আলোকে যদি ভারত মনে করে থাকে যে, এসব ঘটনা কানাডার মাটিতে গুপ্তহত্যা ঘটানোকে বৈধতা দেবে তবে তা হবে খুবই শিশুসুলভ ভাবনা।
ভারতের অবস্থান দেখে মনে হচ্ছে, তারা নিজ্জারের হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি বেমালুম অস্বীকার করবে, এমনকি পর্যাপ্ত প্রমাণাদি যদি জনসমক্ষে আনা হয় তারপরও। ভারত যদি এমনটা করে তাহলে যে ভারতের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র তার কৌশলগত সম্পর্ক ছিন্ন করবে এমনটাও মনে হচ্ছে না এবং সম্ভবত এই অবস্থান যৌক্তিকও বটে। সে ক্ষেত্রে এই ঘটনা ভারতের প্রতিরক্ষা খাতের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে যে দ্বিপক্ষীয় অংশীদারত্ব, দুই দেশের সাধারণ গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ—তার ওপর কোনো প্রভাব ফেলবে না। কারণ, ভারত এবং যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক মূলত চীনকে কেন্দ্র করে উভয় দেশের সাধারণ স্বার্থকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে। এবং ঠিক এ কারণেই হয়তো মোদি এবং তাঁর দল বিজেপি ভারতের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ক্ষতের সৃষ্টি করলেও বাইডেন প্রশাসন তা নিয়ে খুব বেশি সমালোচনা কখনোই করেনি।
তবে নিজ্জার হত্যাকাণ্ড ভারত-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক কতটা ‘অস্বস্তিকর’ সে বিষয়টি সামনে এনেছে। ভারত একই সময়ে পশ্চিমাপন্থী আবার তাদের প্রতি বিরক্তও। তারা ওয়াশিংটনের সঙ্গে গভীর নিরাপত্তা সম্পর্ক চায় আবার বিশ্বের কোনো শক্তির কাছে নিজের নিরাপত্তার দিকটি ছেড়ে দিতেও অনিচ্ছুক। ফলে এই অবস্থায় ভারত যদি আপত্তিকর উপায়ে বহির্বিশ্বে নিজের ক্ষমতার প্রদর্শন করতে শুরু করে তবে চীন ইস্যুতে ওয়াশিংটনের পক্ষ থেকে যে সুবিধা বা সমর্থন তারা পাচ্ছে তা হারাতে পারে।
সব মিলিয়ে নিজ্জার হত্যাকাণ্ড যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ভারতের নিজের অবস্থান পরিষ্কার করা একটি কারণ হিসেবে হাজির হতে পারে। তাই নানা দিক মিলিয়ে ভারত যদি তার অবস্থান ধরে রাখতে চায় বিশেষ করে এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ভারত জড়িত বলে প্রমাণিত হয়—যেমনটা কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বাস করে—তবে মোদির উচিত হবে নমনীয়তার পথ অবলম্বন করা।
তথ্যসূত্র: দ্য ইকোনমিস্ট, রয়টার্স, এএফপি ও আল-জাজিরা
আব্দুর রহমান

কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো এক সপ্তাহেরও বেশি আগে অভিযোগ করেছিলেন যে, কানাডার মাটিতে খালিস্তান আন্দোলনের নেতা হরদীপ সিং নিজ্জার হত্যাকাণ্ডে ভারত সরকার জড়িত। এ বিষয়ে তাঁর কাছে ‘বিশ্বাসযোগ্য’ তথ্য আছে। এরপর থেকে ক্রমেই কানাডার সঙ্গে ভারতের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক খারাপ হচ্ছে।
এই বিরোধের দৃশ্যপটে এরই মধ্যে হাজির হয়েছে দুই দেশেরই পুরোনো মিত্র যুক্তরাষ্ট্র। এর মধ্যে ভারত আবার দক্ষিণ এশিয়ায় ওয়াশিংটনের সবচেয়ে বড় মিত্র। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য বিষয়টি বিড়ম্বনাকর হওয়ার কথা। যদিও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিক্রিয়ায় তেমনটা মনে হচ্ছে না। তবে বাস্তবের চিত্র ভিন্নও হতে পারে। এমন অবস্থায় সবচেয়ে বড় যে প্রশ্ন উঠেছে, তা হলো, হরদীপ হত্যার ইস্যুতে ভারত-যুক্তরাষ্ট্র কে কার পরীক্ষা নিচ্ছে।
ব্রিটিশ সাময়িকী দ্য ইকোনমিস্টের এক নিবন্ধে বলা হয়েছে, অনেক ভারতীয়ই মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্র হরদীপ ইস্যুতে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোকে সাহায্য করার বদলে অনেকটা এড়িয়ে চলছে। যুক্তরাষ্ট্র যেহেতু এখনো এ ঘটনায় কানাডার পাশে থাকার বিষয়ে দৃঢ় অঙ্গীকার না করে, ভারতকে কোনো কড়া কথা না শুনিয়ে সহযোগিতা করার ‘নমনীয় আহ্বান জানিয়েছে, তাই এমনটা মনে করছেন তারা।
ইকোনমিস্টের ভাষ্য, যুক্তরাষ্ট্রের এই অবস্থান সম্ভবত নরেন্দ্র মোদির সরকারে জন্য বিষয়টিকে দৃঢ়ভাবে উড়িয়ে দেওয়ার অবস্থান তৈরি করে দিয়েছে। উল্টো ভারত সরকার শুরু থেকেই কানাডার অভিযোগ ক্ষোভের সঙ্গে প্রত্যাখ্যান করেছে। অনেক ভারতীয় তাদের সরকারের এই অবস্থানকে স্বাগত জানিয়েছে। কারণ তাদের মতে, হরদীপ সিং নিজ্জার একজন ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী’ ও সন্ত্রাসবাদী আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত। ভারতীয়রা পশ্চিমা বিশ্বকে স্মরণ করিয়ে দিতে চায় যে, এই খালিস্তানকে কেন্দ্র করে ১৯৭০-এর দশক থেকে ১৯৯০-এর দশকের শুরু পর্যন্ত যে পরিমাণ রক্তাক্ত ঘটনা ঘটেছে, তা পশ্চিমারা জানে না। শিখ দেহরক্ষীর হাতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর নিহত হওয়ার ঘটনাও তারা পশ্চিমা বিশ্বকে স্মরণ করিয়ে দিতে চায়।
কিন্তু ভারত যতই দাবি উড়িয়ে দিক বা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করুক না কেন, তাতে আসলে কানাডা একা হয়ে যাচ্ছে না। কারণ হরদীপ সিং নিজ্জার হত্যাকাণ্ডের তদন্তে কানাডার কর্মকর্তারা সম্পৃক্ত যেসব ‘মানবীয় ও সাংকেতিক’ গোয়েন্দা যোগাযোগের আলামত সংগ্রহ করেছে, সেগুলো সরবরাহ করেছে অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, নিউজিল্যান্ড, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দাদের নিয়ে গঠিত জোট ‘ফাইভ আই’স ইন্টেলিজেন্স। এমনকি বিষয়টি নিয়ে ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে আলোচনাও করেছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। বিষয়টি নিয়ে বাইডেন ছাড়াও অন্যান্য পশ্চিমা দেশের নেতারাও মোদির সঙ্গে কথা বলেছেন। এ থেকে একটি বিষয় স্পষ্ট যে, জাস্টিন ট্রুডো কোনোভাবেই একা নয়। তবে এর ফলে যুক্তরাষ্ট্র ভারতের সঙ্গে যে উষ্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলতে চেয়েছিল, তাতে খানিকটা শীতল জল ঢালা হয়েছে।
এখানেই শেষ নয়, যুক্তরাষ্ট্র স্পষ্টভাবে কানাডার পক্ষে কথা না বললেও দেশটি ভারতের পক্ষও নেয়নি। বরং আকারে ইঙ্গিতে কানাডার প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভান বলেন, কানাডায় ভারতের পাঞ্জাব রাজ্যের খালিস্তান আন্দোলনের নেতা হরদীপ সিং নিজ্জার হত্যাকাণ্ডের ইস্যুতে দুই দেশের মধ্যে সৃষ্ট দ্বন্দ্ব নিরসনে উভয় পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে এ বিষয়ে ভারতকে বিশেষ কোনো ছাড় যুক্তরাষ্ট্র দেবে না।
এই ইস্যুতে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেনের বক্তব্যও উল্লেখযোগ্য। তিনি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র এই ইস্যুকে কেন্দ্র করে ভারত ও কানাডা উভয় দেশের সঙ্গেই যোগাযোগ রাখছে। তিনি বলেছেন, ‘আমরা জবাবদিহি দেখতে চাই এবং তদন্তকে সঠিকভাবে এগিয়ে নিতে এবং একটি ফলাফলে পৌঁছানোর জন্য এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’ ভারত কানাডাকে তদন্তে সহযোগিতা করবে আশাবাদ ব্যক্ত করে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা আশা করি, আমাদের ভারতীয় বন্ধুরা এ ঘটনার তদন্তে সার্বিকভাবে সহযোগিতা করবে।’ এ সময় তিনি ভারতের ওপর আনা কানাডার অভিযোগের সারবত্তার দিকে ইঙ্গিত না করে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র বিষয়টি খুবই গুরুত্ব দিয়ে দেখছে।
ভারত সম্ভবত এখনো পশ্চিমা বিশ্বের ঐক্যের শক্তি উপলব্ধি করতে পারেনি। ভারত কানাডাকে একটি দ্বিতীয় সারির ক্ষমতাধর দেশ হিসেবে বিবেচনা করেছিল। তারা ভেবেছিল, অভিযোগগুলো যদি সত্য হয় তবে দেশটি হয়তো খুব কড়াভাবে প্রতিক্রিয়া জানাবে এবং মিথ্যা হলে বিষয়টি হয়তো এড়িয়ে যাবে। কিন্তু ঘটনা সত্য হোক বা মিথ্যা, কানাডা বিষয়টি থেকে পিছু হটেনি। ট্রুডো বারবার দৃঢ়ভাবে বলেছেন, তাদের কাছে উল্লেখযোগ্য প্রমাণ রয়েছে এবং যথাসময় তা প্রকাশও করা হবে।
এ বিষয়ে ওয়াশিংটনভিত্তিক থিংক ট্যাংক ব্রুকিংস ইনস্টিটিউটের ফেলো তানভি মদন বলেন, ‘ভারত যেভাবে বিষয়টিকে দেখছে, তা মূলত কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার বন্ধনকে অস্বীকার করা। দুই দেশের মধ্যে নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা সংশ্লিষ্ট বিষয়ে নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এ ছাড়া এ ঘটনা আমেরিকার নিরাপত্তার জন্য একটি হুমকি। তারা (যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা) কোনোভাবেই চাইবে না উত্তর আমেরিকার মাটিতে কোনো বিদেশি হিটম্যান কাজ করুক। মূলত এ কারণেই আমেরিকায় শিখ সম্প্রদায়ের উপস্থিতি।’
তানভির বক্তব্যের সঙ্গে আমরা মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিংকেনের বক্তব্য মিলিয়ে পাঠ করতে পারি। ব্লিংকেন বলেছেন, ‘আমি মনে করি, এটি (হরদীপ হত্যাকাণ্ডের তদন্তে কানাডাকে ভারতকে সহযোগিতা করা) আন্তর্জাতিক ব্যবস্থার জন্য আরও ব্যাপকভাবে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এ ঘটনা একটি উদাহরণ হয়ে থাকবে যে কোনো দেশ এ ধরনের কাজে জড়িত থাকার ক্ষেত্রে আমলে নিয়ে ভবিষ্যতে সাবধান হয়ে যাবে।’ ব্লিংকেনের বক্তব্য থেকে এটি স্পষ্ট যে, ব্লিংকেন তথা যুক্তরাষ্ট্র স্পষ্টভাবে চায় ভারত এ ঘটনার তদন্তে দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করে কানাডাকে সহায়তা করুক। কারণ, এটি যুক্তরাষ্ট্রসহ উত্তর আমেরিকার নিরাপত্তার প্রশ্ন।
তবে এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ভারত যে একাই দোষী তা বোধ হয় না। ভারতের অভিযোগ, কানাডা দীর্ঘদিন ধরে শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদীদের তাদের ভূখণ্ড ব্যবহার করে সন্ত্রাসবাদী আন্দোলন পরিচালনা করার সুযোগ দিচ্ছে। নয়া দিল্লির দাবি, ভারতে বর্তমানে খুব বেশি শিখ ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী’ নেই। বরং পশ্চিমা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তারা আশ্রয় নিয়ে তা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু পশ্চিমা বিশ্ব এর ফলে যে, সহিংসতার পুনরুদ্ভব হতে পারে সে বিষয়টিকে খুব বেশি আমলে নিচ্ছে না। এমনকি ১৯৮৫ সালে কানাডার মন্ট্রিল থেকে লন্ডনগামী এয়ার ইন্ডিয়ার একটি ফ্লাইট বোমা মেরে উড়িয়ে দেওয়ার পরও পশ্চিমা বিশ্ব বিষয়টি নিয়ে খুব বেশি মাথা ঘামায়নি। তবে এসব ঘটনা বা বিষয়ের আলোকে যদি ভারত মনে করে থাকে যে, এসব ঘটনা কানাডার মাটিতে গুপ্তহত্যা ঘটানোকে বৈধতা দেবে তবে তা হবে খুবই শিশুসুলভ ভাবনা।
ভারতের অবস্থান দেখে মনে হচ্ছে, তারা নিজ্জারের হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি বেমালুম অস্বীকার করবে, এমনকি পর্যাপ্ত প্রমাণাদি যদি জনসমক্ষে আনা হয় তারপরও। ভারত যদি এমনটা করে তাহলে যে ভারতের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র তার কৌশলগত সম্পর্ক ছিন্ন করবে এমনটাও মনে হচ্ছে না এবং সম্ভবত এই অবস্থান যৌক্তিকও বটে। সে ক্ষেত্রে এই ঘটনা ভারতের প্রতিরক্ষা খাতের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে যে দ্বিপক্ষীয় অংশীদারত্ব, দুই দেশের সাধারণ গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ—তার ওপর কোনো প্রভাব ফেলবে না। কারণ, ভারত এবং যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক মূলত চীনকে কেন্দ্র করে উভয় দেশের সাধারণ স্বার্থকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে। এবং ঠিক এ কারণেই হয়তো মোদি এবং তাঁর দল বিজেপি ভারতের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ক্ষতের সৃষ্টি করলেও বাইডেন প্রশাসন তা নিয়ে খুব বেশি সমালোচনা কখনোই করেনি।
তবে নিজ্জার হত্যাকাণ্ড ভারত-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক কতটা ‘অস্বস্তিকর’ সে বিষয়টি সামনে এনেছে। ভারত একই সময়ে পশ্চিমাপন্থী আবার তাদের প্রতি বিরক্তও। তারা ওয়াশিংটনের সঙ্গে গভীর নিরাপত্তা সম্পর্ক চায় আবার বিশ্বের কোনো শক্তির কাছে নিজের নিরাপত্তার দিকটি ছেড়ে দিতেও অনিচ্ছুক। ফলে এই অবস্থায় ভারত যদি আপত্তিকর উপায়ে বহির্বিশ্বে নিজের ক্ষমতার প্রদর্শন করতে শুরু করে তবে চীন ইস্যুতে ওয়াশিংটনের পক্ষ থেকে যে সুবিধা বা সমর্থন তারা পাচ্ছে তা হারাতে পারে।
সব মিলিয়ে নিজ্জার হত্যাকাণ্ড যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ভারতের নিজের অবস্থান পরিষ্কার করা একটি কারণ হিসেবে হাজির হতে পারে। তাই নানা দিক মিলিয়ে ভারত যদি তার অবস্থান ধরে রাখতে চায় বিশেষ করে এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ভারত জড়িত বলে প্রমাণিত হয়—যেমনটা কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বাস করে—তবে মোদির উচিত হবে নমনীয়তার পথ অবলম্বন করা।
তথ্যসূত্র: দ্য ইকোনমিস্ট, রয়টার্স, এএফপি ও আল-জাজিরা

কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো এক সপ্তাহেরও বেশি আগে অভিযোগ করেছিলেন যে, কানাডার মাটিতে খালিস্তান আন্দোলনের নেতা হরদীপ সিং নিজ্জার হত্যাকাণ্ডে ভারত সরকার জড়িত। এ বিষয়ে তাঁর কাছে ‘বিশ্বাসযোগ্য’ তথ্য আছে। এরপর থেকে ক্রমেই কানাডার সঙ্গে ভারতের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক খারাপ হচ্ছে।
এই বিরোধের দৃশ্যপটে এরই মধ্যে হাজির হয়েছে দুই দেশেরই পুরোনো মিত্র যুক্তরাষ্ট্র। এর মধ্যে ভারত আবার দক্ষিণ এশিয়ায় ওয়াশিংটনের সবচেয়ে বড় মিত্র। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য বিষয়টি বিড়ম্বনাকর হওয়ার কথা। যদিও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিক্রিয়ায় তেমনটা মনে হচ্ছে না। তবে বাস্তবের চিত্র ভিন্নও হতে পারে। এমন অবস্থায় সবচেয়ে বড় যে প্রশ্ন উঠেছে, তা হলো, হরদীপ হত্যার ইস্যুতে ভারত-যুক্তরাষ্ট্র কে কার পরীক্ষা নিচ্ছে।
ব্রিটিশ সাময়িকী দ্য ইকোনমিস্টের এক নিবন্ধে বলা হয়েছে, অনেক ভারতীয়ই মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্র হরদীপ ইস্যুতে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোকে সাহায্য করার বদলে অনেকটা এড়িয়ে চলছে। যুক্তরাষ্ট্র যেহেতু এখনো এ ঘটনায় কানাডার পাশে থাকার বিষয়ে দৃঢ় অঙ্গীকার না করে, ভারতকে কোনো কড়া কথা না শুনিয়ে সহযোগিতা করার ‘নমনীয় আহ্বান জানিয়েছে, তাই এমনটা মনে করছেন তারা।
ইকোনমিস্টের ভাষ্য, যুক্তরাষ্ট্রের এই অবস্থান সম্ভবত নরেন্দ্র মোদির সরকারে জন্য বিষয়টিকে দৃঢ়ভাবে উড়িয়ে দেওয়ার অবস্থান তৈরি করে দিয়েছে। উল্টো ভারত সরকার শুরু থেকেই কানাডার অভিযোগ ক্ষোভের সঙ্গে প্রত্যাখ্যান করেছে। অনেক ভারতীয় তাদের সরকারের এই অবস্থানকে স্বাগত জানিয়েছে। কারণ তাদের মতে, হরদীপ সিং নিজ্জার একজন ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী’ ও সন্ত্রাসবাদী আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত। ভারতীয়রা পশ্চিমা বিশ্বকে স্মরণ করিয়ে দিতে চায় যে, এই খালিস্তানকে কেন্দ্র করে ১৯৭০-এর দশক থেকে ১৯৯০-এর দশকের শুরু পর্যন্ত যে পরিমাণ রক্তাক্ত ঘটনা ঘটেছে, তা পশ্চিমারা জানে না। শিখ দেহরক্ষীর হাতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর নিহত হওয়ার ঘটনাও তারা পশ্চিমা বিশ্বকে স্মরণ করিয়ে দিতে চায়।
কিন্তু ভারত যতই দাবি উড়িয়ে দিক বা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করুক না কেন, তাতে আসলে কানাডা একা হয়ে যাচ্ছে না। কারণ হরদীপ সিং নিজ্জার হত্যাকাণ্ডের তদন্তে কানাডার কর্মকর্তারা সম্পৃক্ত যেসব ‘মানবীয় ও সাংকেতিক’ গোয়েন্দা যোগাযোগের আলামত সংগ্রহ করেছে, সেগুলো সরবরাহ করেছে অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, নিউজিল্যান্ড, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দাদের নিয়ে গঠিত জোট ‘ফাইভ আই’স ইন্টেলিজেন্স। এমনকি বিষয়টি নিয়ে ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে আলোচনাও করেছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। বিষয়টি নিয়ে বাইডেন ছাড়াও অন্যান্য পশ্চিমা দেশের নেতারাও মোদির সঙ্গে কথা বলেছেন। এ থেকে একটি বিষয় স্পষ্ট যে, জাস্টিন ট্রুডো কোনোভাবেই একা নয়। তবে এর ফলে যুক্তরাষ্ট্র ভারতের সঙ্গে যে উষ্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলতে চেয়েছিল, তাতে খানিকটা শীতল জল ঢালা হয়েছে।
এখানেই শেষ নয়, যুক্তরাষ্ট্র স্পষ্টভাবে কানাডার পক্ষে কথা না বললেও দেশটি ভারতের পক্ষও নেয়নি। বরং আকারে ইঙ্গিতে কানাডার প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভান বলেন, কানাডায় ভারতের পাঞ্জাব রাজ্যের খালিস্তান আন্দোলনের নেতা হরদীপ সিং নিজ্জার হত্যাকাণ্ডের ইস্যুতে দুই দেশের মধ্যে সৃষ্ট দ্বন্দ্ব নিরসনে উভয় পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে এ বিষয়ে ভারতকে বিশেষ কোনো ছাড় যুক্তরাষ্ট্র দেবে না।
এই ইস্যুতে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেনের বক্তব্যও উল্লেখযোগ্য। তিনি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র এই ইস্যুকে কেন্দ্র করে ভারত ও কানাডা উভয় দেশের সঙ্গেই যোগাযোগ রাখছে। তিনি বলেছেন, ‘আমরা জবাবদিহি দেখতে চাই এবং তদন্তকে সঠিকভাবে এগিয়ে নিতে এবং একটি ফলাফলে পৌঁছানোর জন্য এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’ ভারত কানাডাকে তদন্তে সহযোগিতা করবে আশাবাদ ব্যক্ত করে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা আশা করি, আমাদের ভারতীয় বন্ধুরা এ ঘটনার তদন্তে সার্বিকভাবে সহযোগিতা করবে।’ এ সময় তিনি ভারতের ওপর আনা কানাডার অভিযোগের সারবত্তার দিকে ইঙ্গিত না করে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র বিষয়টি খুবই গুরুত্ব দিয়ে দেখছে।
ভারত সম্ভবত এখনো পশ্চিমা বিশ্বের ঐক্যের শক্তি উপলব্ধি করতে পারেনি। ভারত কানাডাকে একটি দ্বিতীয় সারির ক্ষমতাধর দেশ হিসেবে বিবেচনা করেছিল। তারা ভেবেছিল, অভিযোগগুলো যদি সত্য হয় তবে দেশটি হয়তো খুব কড়াভাবে প্রতিক্রিয়া জানাবে এবং মিথ্যা হলে বিষয়টি হয়তো এড়িয়ে যাবে। কিন্তু ঘটনা সত্য হোক বা মিথ্যা, কানাডা বিষয়টি থেকে পিছু হটেনি। ট্রুডো বারবার দৃঢ়ভাবে বলেছেন, তাদের কাছে উল্লেখযোগ্য প্রমাণ রয়েছে এবং যথাসময় তা প্রকাশও করা হবে।
এ বিষয়ে ওয়াশিংটনভিত্তিক থিংক ট্যাংক ব্রুকিংস ইনস্টিটিউটের ফেলো তানভি মদন বলেন, ‘ভারত যেভাবে বিষয়টিকে দেখছে, তা মূলত কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার বন্ধনকে অস্বীকার করা। দুই দেশের মধ্যে নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা সংশ্লিষ্ট বিষয়ে নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এ ছাড়া এ ঘটনা আমেরিকার নিরাপত্তার জন্য একটি হুমকি। তারা (যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা) কোনোভাবেই চাইবে না উত্তর আমেরিকার মাটিতে কোনো বিদেশি হিটম্যান কাজ করুক। মূলত এ কারণেই আমেরিকায় শিখ সম্প্রদায়ের উপস্থিতি।’
তানভির বক্তব্যের সঙ্গে আমরা মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিংকেনের বক্তব্য মিলিয়ে পাঠ করতে পারি। ব্লিংকেন বলেছেন, ‘আমি মনে করি, এটি (হরদীপ হত্যাকাণ্ডের তদন্তে কানাডাকে ভারতকে সহযোগিতা করা) আন্তর্জাতিক ব্যবস্থার জন্য আরও ব্যাপকভাবে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এ ঘটনা একটি উদাহরণ হয়ে থাকবে যে কোনো দেশ এ ধরনের কাজে জড়িত থাকার ক্ষেত্রে আমলে নিয়ে ভবিষ্যতে সাবধান হয়ে যাবে।’ ব্লিংকেনের বক্তব্য থেকে এটি স্পষ্ট যে, ব্লিংকেন তথা যুক্তরাষ্ট্র স্পষ্টভাবে চায় ভারত এ ঘটনার তদন্তে দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করে কানাডাকে সহায়তা করুক। কারণ, এটি যুক্তরাষ্ট্রসহ উত্তর আমেরিকার নিরাপত্তার প্রশ্ন।
তবে এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ভারত যে একাই দোষী তা বোধ হয় না। ভারতের অভিযোগ, কানাডা দীর্ঘদিন ধরে শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদীদের তাদের ভূখণ্ড ব্যবহার করে সন্ত্রাসবাদী আন্দোলন পরিচালনা করার সুযোগ দিচ্ছে। নয়া দিল্লির দাবি, ভারতে বর্তমানে খুব বেশি শিখ ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী’ নেই। বরং পশ্চিমা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তারা আশ্রয় নিয়ে তা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু পশ্চিমা বিশ্ব এর ফলে যে, সহিংসতার পুনরুদ্ভব হতে পারে সে বিষয়টিকে খুব বেশি আমলে নিচ্ছে না। এমনকি ১৯৮৫ সালে কানাডার মন্ট্রিল থেকে লন্ডনগামী এয়ার ইন্ডিয়ার একটি ফ্লাইট বোমা মেরে উড়িয়ে দেওয়ার পরও পশ্চিমা বিশ্ব বিষয়টি নিয়ে খুব বেশি মাথা ঘামায়নি। তবে এসব ঘটনা বা বিষয়ের আলোকে যদি ভারত মনে করে থাকে যে, এসব ঘটনা কানাডার মাটিতে গুপ্তহত্যা ঘটানোকে বৈধতা দেবে তবে তা হবে খুবই শিশুসুলভ ভাবনা।
ভারতের অবস্থান দেখে মনে হচ্ছে, তারা নিজ্জারের হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি বেমালুম অস্বীকার করবে, এমনকি পর্যাপ্ত প্রমাণাদি যদি জনসমক্ষে আনা হয় তারপরও। ভারত যদি এমনটা করে তাহলে যে ভারতের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র তার কৌশলগত সম্পর্ক ছিন্ন করবে এমনটাও মনে হচ্ছে না এবং সম্ভবত এই অবস্থান যৌক্তিকও বটে। সে ক্ষেত্রে এই ঘটনা ভারতের প্রতিরক্ষা খাতের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে যে দ্বিপক্ষীয় অংশীদারত্ব, দুই দেশের সাধারণ গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ—তার ওপর কোনো প্রভাব ফেলবে না। কারণ, ভারত এবং যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক মূলত চীনকে কেন্দ্র করে উভয় দেশের সাধারণ স্বার্থকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে। এবং ঠিক এ কারণেই হয়তো মোদি এবং তাঁর দল বিজেপি ভারতের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ক্ষতের সৃষ্টি করলেও বাইডেন প্রশাসন তা নিয়ে খুব বেশি সমালোচনা কখনোই করেনি।
তবে নিজ্জার হত্যাকাণ্ড ভারত-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক কতটা ‘অস্বস্তিকর’ সে বিষয়টি সামনে এনেছে। ভারত একই সময়ে পশ্চিমাপন্থী আবার তাদের প্রতি বিরক্তও। তারা ওয়াশিংটনের সঙ্গে গভীর নিরাপত্তা সম্পর্ক চায় আবার বিশ্বের কোনো শক্তির কাছে নিজের নিরাপত্তার দিকটি ছেড়ে দিতেও অনিচ্ছুক। ফলে এই অবস্থায় ভারত যদি আপত্তিকর উপায়ে বহির্বিশ্বে নিজের ক্ষমতার প্রদর্শন করতে শুরু করে তবে চীন ইস্যুতে ওয়াশিংটনের পক্ষ থেকে যে সুবিধা বা সমর্থন তারা পাচ্ছে তা হারাতে পারে।
সব মিলিয়ে নিজ্জার হত্যাকাণ্ড যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ভারতের নিজের অবস্থান পরিষ্কার করা একটি কারণ হিসেবে হাজির হতে পারে। তাই নানা দিক মিলিয়ে ভারত যদি তার অবস্থান ধরে রাখতে চায় বিশেষ করে এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ভারত জড়িত বলে প্রমাণিত হয়—যেমনটা কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বাস করে—তবে মোদির উচিত হবে নমনীয়তার পথ অবলম্বন করা।
তথ্যসূত্র: দ্য ইকোনমিস্ট, রয়টার্স, এএফপি ও আল-জাজিরা

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতদের মধ্যে ইউক্রেন শান্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনা হলেও প্রকাশ্যে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইউরি উশাকভ, এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন যে অমীমাংসিত ‘আঞ্চলিক সমস্যাই’ মূল বাধা। আর এই অঞ্চল আর কোনোটিই নয়, দোনেৎস্ক।
১ দিন আগে
বিশ্বজুড়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন উঠে আসছে—‘যদি বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ সীমিত করা হয়, অথবা এই শ্রেণিটিকেই সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়, তবে কী ঘটবে?’ পশ্চিমা দেশগুলোতে চরম ধনী বা বিলিয়নিয়ারদের সংখ্যা ও প্রভাব বাড়তে থাকায় এখন এই প্রশ্ন আরও জোরালো হয়েছে।
২ দিন আগে
জাপানের ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর গত অক্টোবরে দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন সানায়ে তাকাইচি। এরপরই তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত হন জাপানের নতুন ‘আয়রন লেডি’ বা লৌহমানবী’ হিসেবে।
২ দিন আগে
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠককে ঘিরে দিল্লিতে শুরু হয়েছে কূটনৈতিক প্রস্তুতি। চলমান ইউক্রেন যুদ্ধ, যুক্তরাষ্ট্রের চাপ এবং জ্বালানির বাজারে অস্থিরতার মধ্যেই এই শীর্ষ সম্মেলন হতে যাচ্ছে। অর্থনীতি, প্রতিরক্ষা এবং জ্বালানি—এই তিনটি খাত আলোচনার...
২ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতদের মধ্যে ইউক্রেন শান্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনা হলেও প্রকাশ্যে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইউরি উশাকভ, এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন যে অমীমাংসিত ‘আঞ্চলিক সমস্যাই’ মূল বাধা। আর এই অঞ্চল আর কোনোটিই নয়, দোনেৎস্ক।
উশাকভ মূলত ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় দোনেৎস্কের সম্পূর্ণ এলাকার ওপর রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণ দাবির কথাই বলেছিলেন। পুতিন ইউক্রেনে হাজার হাজার সৈন্য পাঠানোর প্রায় ৪ বছর পরও এবং দোনেৎস্কে রাশিয়া সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদী বিদ্রোহের এক দশকেরও বেশি সময় পর অঞ্চলটির কিছু অংশ এখনো ইউক্রেনের হাতে আছে।
প্রায় সব দেশই দোনেৎস্ককে ইউক্রেনের অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। কিন্তু এটি ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের চারটি অঞ্চলের মধ্যে একটি, যা মস্কো ২০২২ সালে একটি গণভোটের পর সংযুক্ত করার কথা ঘোষণা করে। কিয়েভ ও পশ্চিমা দেশগুলো সেই গণভোটকে ‘প্রহসন’ বলে বাতিল করে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ফক্স নিউজকে বলেছিলেন, যুদ্ধটি এখন দোনেৎস্কের সেই ২০ শতাংশ বা ৫ হাজার বর্গকিলোমিটারের এলাকা নিয়ে, যা রাশিয়া নিয়ন্ত্রণ করে না কিন্তু চায়।
পুতিন ২০২২ সালে ইউক্রেনে সৈন্য পাঠানোর সময় বলেছিলেন, তাঁর লক্ষ্য হলো ‘গত আট বছর ধরে যারা ভয়ভীতি ও গণহত্যার শিকার হয়েছেন...সেই মানুষগুলোকে রক্ষা করা।’ ইউক্রেন এবং তার মিত্ররা বলেছিল, পুতিনের এই দাবি ঔপনিবেশিক ধাঁচের এবং এলাকা দখলের জন্য একটি মিথ্যা অজুহাত মাত্র।
পুতিনের এই দাবি মূলত দোনেৎস্ক এবং লুহানস্ক অঞ্চলে রাশিয়া সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিরুদ্ধে ইউক্রেনের লড়াইয়ের দিকে ইঙ্গিত করে, যারা ২০১৪ সালে ইউক্রেনীয় সরকারি নিয়ন্ত্রণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে কিছু এলাকা দখল করেছিল। পূর্ব ইউক্রেনে এর পরের সংঘর্ষে উভয় পক্ষই শহর ও বেসামরিক নাগরিকদের ওপর গোলাবর্ষণের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করেছিল। মস্কো এই অঞ্চলের বিশাল রুশভাষী জনসংখ্যাকে উদ্ধৃত করে বলেছিল যে,২০২২ সালে হস্তক্ষেপ করা তাদের নৈতিক কর্তব্য।
কিয়েভ বলেছিল, ২০১৪ সালে ইউক্রেনের আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষায় শক্তি দিয়ে জবাব দেওয়া ছাড়া তাদের আর কোনো উপায় ছিল না এবং তারাও বিচ্ছিন্নতাবাদী বাহিনীর বিরুদ্ধে শহর ও বেসামরিক নাগরিকদের ওপর গোলাবর্ষণের অভিযোগ এনেছিল। জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৪ সাল থেকে ২০২২ সালের শুরু পর্যন্ত ইউক্রেনীয় সরকারি বাহিনী এবং বিচ্ছিন্নতাবাদীদের মধ্যে সংঘাতে উভয় পক্ষে ৩ হাজার ১০৬ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত এবং ৯ হাজার বেসামরিক নাগরিক আহত হয়েছিলেন।
দোনেৎস্কের বাকি যে অংশটি রাশিয়া চায়, তার মধ্যে রয়েছে স্লোভিয়ানস্ক এবং ক্রামাতোরস্ক—দুটি ‘দুর্গনগরী’ যা ২০১৪ সাল থেকে ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করে আসছে। এই শহরগুলো ইউক্রেনের বাকি অঞ্চল রক্ষার জন্য কিয়েভের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ দোনেৎস্কের পশ্চিমের ভূমি অনেকটাই সমতল এবং বিশাল খোলা মাঠ; যা রাশিয়াকে দোনেৎস্কের বাইরে অগ্রসর হতে এবং দিনিপ্রো নদীর পূর্ব তীর পর্যন্ত এলাকা দখল করার পথ সহজ করে দেবে।
শহরগুলো পরিখা, ট্যাংক-বিধ্বংসী বাধা, বাংকার এবং মাইনক্ষেত্রসহ অত্যন্ত সুরক্ষিত প্রতিরক্ষা লাইনের অংশ। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, গণভোট ছাড়া দোনেৎস্কের বাকি অংশ রাশিয়ার হাতে তুলে দেওয়া অবৈধ হবে এবং তা ভবিষ্যতে ইউক্রেনের গভীরে আক্রমণের জন্য রাশিয়াকে একটি পথ খুলে দেবে।
কিয়েভের আশঙ্কা, যদি তারা দোনেৎস্কের বাকি অংশ ছেড়ে দেয়, তবে রাশিয়া আবার অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হবে এবং একসময় দোনেৎস্ক ব্যবহার করে পশ্চিম দিকে আক্রমণ চালাবে।
উভয় পক্ষই দোনেৎস্ককে কেন্দ্র করে যুদ্ধে ভয়াবহ ক্ষয়ক্ষতির মুখোমুখি হয়েছে এবং প্রচুর অর্থ ও সরঞ্জাম ব্যয় করেছে। এর মধ্যে বাখমুত শহরের লড়াইও রয়েছে। যেখানে রাশিয়া হাজার হাজার দণ্ডিত অপরাধীকে ভাড়াটে সৈন্যে পরিণত করে রণক্ষেত্রে নামিয়েছিল। এ কারণে, দোনেৎস্ক উভয় দেশের জনমানসে আরও বেশি গুরুত্ব পেয়েছে। ফলে কারও পক্ষে তাদের অবস্থান পরিবর্তন করা কঠিন।
ইউক্রেন চায় না যে, রাশিয়া যুদ্ধক্ষেত্রে জয় করতে ব্যর্থ হওয়া ভূখণ্ডকে উপহার হিসেবে পাক এবং জেলেনস্কি বলেছেন, যে যুদ্ধ রাশিয়া শুরু করেছে, তার জন্য তাদের পুরস্কৃত করা উচিত নয়। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ইনস্টিটিউট ফর দ্য স্টাডি অব ওয়ার অক্টোবর মাসে বলেছিল, রাশিয়ার অগ্রগতির হার দেখে মনে হয় না যে তারা খুব শিগগিরই দোনেৎস্কের বাকি অংশ দখল করতে চলেছে। তবে ‘রাশিয়ার অগ্রগতির একটি অপরিবর্তনীয় হার ধরে নিলে’ তারা ২০২৭ সালের আগস্টের মধ্যে তা নিতে পারে।
রাশিয়ার কমান্ডাররা অবশ্য আরও বেশি আশাবাদী। জেনারেল স্টাফের প্রধান ভ্যালেরি গেরাসিমভ রোববার পুতিনকে বলেছেন, মস্কোর বাহিনী পুরো ফ্রন্ট লাইন বরাবর অগ্রসর হচ্ছে এবং দনবাসের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার জন্য কাজ করছে।
দোনেৎস্ক বন্দর, রেলপথ এবং অন্যান্য ভারী শিল্পের কেন্দ্র। এটি একসময় ইউক্রেনের কয়লা, পরিশোধিত ইস্পাত, কোক, ঢালাই লোহা এবং ইস্পাত উৎপাদনের অর্ধেকেরও বেশি সরবরাহ করত, তবে যুদ্ধের কারণে অনেক খনি ও কারখানা ধ্বংস হয়ে গেছে। এ ছাড়া, দোনেৎস্কে বিরল মৃত্তিকা, টাইটানিয়াম এবং জিরকোনিয়াম রয়েছে—যা এটিকে নিয়ন্ত্রণকারী পক্ষের জন্য আয়ের উৎস।
দোনেৎস্কের ভাগ্য পুতিন এবং জেলেনস্কি উভয়ের ঐতিহাসিক উত্তরাধিকারকে প্রভাবিত করতে পারে। পুতিন নিজেকে জাতিগত রুশদের রক্ষক হিসেবে তুলে ধরেছেন, তারা যেখানেই থাকুক না কেন। পুরো দোনেৎস্ককে সুরক্ষিত করা এই বক্তব্যের মূল কেন্দ্রবিন্দু। জেলেনস্কি ২০১৯ সালে পূর্ব ইউক্রেনের যুদ্ধ অবসান ঘটানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন। ২০২২ সাল থেকে তিনি অনেক বড়, বৈরী প্রতিবেশীর মুখে অস্ত্র এবং সংখ্যায় কম ইউক্রেনের এক দৃঢ় রক্ষক হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছেন।
লড়াই না করে দোনেৎস্ক ছেড়ে দেওয়া—যেখানে অন্তত আড়াই লাখ ইউক্রেনীয় বাস করে—ইউক্রেনীয়দের কাছে বিশ্বাসঘাতকতা হিসেবে দেখা হতে পারে, যাদের অনেকেই যুদ্ধক্ষেত্রে স্বজন হারিয়েছেন। কিয়েভ ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব সোসিওলজির সাম্প্রতিক এক জরিপ অনুসারে, ইউক্রেনীয়দের একটি সংকীর্ণ সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ এখনো আঞ্চলিক ছাড়ের বিরোধিতা করে।
জেলেনস্কিসহ ইউক্রেনের কর্মকর্তারা যেকোনো শান্তি চুক্তির অধীনে কিয়েভের নিয়ন্ত্রণে থাকা ভূমি ছাড়ার সম্ভাবনা প্রত্যাখ্যান করেছেন। জেলেনস্কি বলেন, তাঁর ভূখণ্ড ছেড়ে দেওয়ার কোনো ম্যান্ডেট নেই এবং রাষ্ট্রের ভূমি ব্যক্তিগত সম্পত্তির মতো কেনা-বেচা করা যায় না। ইউক্রেনের সংবিধান অনুসারে, আঞ্চলিক পরিবর্তন অবশ্যই একটি গণভোটের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করতে হবে, যা ইউক্রেনের অন্তত দুই-তৃতীয়াংশ অর্থাৎ, অন্তত ৩০ লাখ ইউক্রেনীয় ভোটারের স্বাক্ষর থাকলে আয়োজন করা যেতে পারে।
তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই গণভোটের বিষয়টির সমালোচনা করেছেন এবং তিনি বলেছিলেন, ‘কিছু ভূমি অদল-বদল হবে।’ এখন ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের আলোচনা মূলত এই দোনেৎস্কের নিয়ন্ত্রণ কার হাতে যাবে সেটাই নিয়েই থমকে আছে।
রয়টার্স থেকে পরিমার্জিত

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতদের মধ্যে ইউক্রেন শান্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনা হলেও প্রকাশ্যে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইউরি উশাকভ, এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন যে অমীমাংসিত ‘আঞ্চলিক সমস্যাই’ মূল বাধা। আর এই অঞ্চল আর কোনোটিই নয়, দোনেৎস্ক।
উশাকভ মূলত ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় দোনেৎস্কের সম্পূর্ণ এলাকার ওপর রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণ দাবির কথাই বলেছিলেন। পুতিন ইউক্রেনে হাজার হাজার সৈন্য পাঠানোর প্রায় ৪ বছর পরও এবং দোনেৎস্কে রাশিয়া সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদী বিদ্রোহের এক দশকেরও বেশি সময় পর অঞ্চলটির কিছু অংশ এখনো ইউক্রেনের হাতে আছে।
প্রায় সব দেশই দোনেৎস্ককে ইউক্রেনের অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। কিন্তু এটি ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের চারটি অঞ্চলের মধ্যে একটি, যা মস্কো ২০২২ সালে একটি গণভোটের পর সংযুক্ত করার কথা ঘোষণা করে। কিয়েভ ও পশ্চিমা দেশগুলো সেই গণভোটকে ‘প্রহসন’ বলে বাতিল করে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ফক্স নিউজকে বলেছিলেন, যুদ্ধটি এখন দোনেৎস্কের সেই ২০ শতাংশ বা ৫ হাজার বর্গকিলোমিটারের এলাকা নিয়ে, যা রাশিয়া নিয়ন্ত্রণ করে না কিন্তু চায়।
পুতিন ২০২২ সালে ইউক্রেনে সৈন্য পাঠানোর সময় বলেছিলেন, তাঁর লক্ষ্য হলো ‘গত আট বছর ধরে যারা ভয়ভীতি ও গণহত্যার শিকার হয়েছেন...সেই মানুষগুলোকে রক্ষা করা।’ ইউক্রেন এবং তার মিত্ররা বলেছিল, পুতিনের এই দাবি ঔপনিবেশিক ধাঁচের এবং এলাকা দখলের জন্য একটি মিথ্যা অজুহাত মাত্র।
পুতিনের এই দাবি মূলত দোনেৎস্ক এবং লুহানস্ক অঞ্চলে রাশিয়া সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিরুদ্ধে ইউক্রেনের লড়াইয়ের দিকে ইঙ্গিত করে, যারা ২০১৪ সালে ইউক্রেনীয় সরকারি নিয়ন্ত্রণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে কিছু এলাকা দখল করেছিল। পূর্ব ইউক্রেনে এর পরের সংঘর্ষে উভয় পক্ষই শহর ও বেসামরিক নাগরিকদের ওপর গোলাবর্ষণের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করেছিল। মস্কো এই অঞ্চলের বিশাল রুশভাষী জনসংখ্যাকে উদ্ধৃত করে বলেছিল যে,২০২২ সালে হস্তক্ষেপ করা তাদের নৈতিক কর্তব্য।
কিয়েভ বলেছিল, ২০১৪ সালে ইউক্রেনের আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষায় শক্তি দিয়ে জবাব দেওয়া ছাড়া তাদের আর কোনো উপায় ছিল না এবং তারাও বিচ্ছিন্নতাবাদী বাহিনীর বিরুদ্ধে শহর ও বেসামরিক নাগরিকদের ওপর গোলাবর্ষণের অভিযোগ এনেছিল। জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৪ সাল থেকে ২০২২ সালের শুরু পর্যন্ত ইউক্রেনীয় সরকারি বাহিনী এবং বিচ্ছিন্নতাবাদীদের মধ্যে সংঘাতে উভয় পক্ষে ৩ হাজার ১০৬ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত এবং ৯ হাজার বেসামরিক নাগরিক আহত হয়েছিলেন।
দোনেৎস্কের বাকি যে অংশটি রাশিয়া চায়, তার মধ্যে রয়েছে স্লোভিয়ানস্ক এবং ক্রামাতোরস্ক—দুটি ‘দুর্গনগরী’ যা ২০১৪ সাল থেকে ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করে আসছে। এই শহরগুলো ইউক্রেনের বাকি অঞ্চল রক্ষার জন্য কিয়েভের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ দোনেৎস্কের পশ্চিমের ভূমি অনেকটাই সমতল এবং বিশাল খোলা মাঠ; যা রাশিয়াকে দোনেৎস্কের বাইরে অগ্রসর হতে এবং দিনিপ্রো নদীর পূর্ব তীর পর্যন্ত এলাকা দখল করার পথ সহজ করে দেবে।
শহরগুলো পরিখা, ট্যাংক-বিধ্বংসী বাধা, বাংকার এবং মাইনক্ষেত্রসহ অত্যন্ত সুরক্ষিত প্রতিরক্ষা লাইনের অংশ। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, গণভোট ছাড়া দোনেৎস্কের বাকি অংশ রাশিয়ার হাতে তুলে দেওয়া অবৈধ হবে এবং তা ভবিষ্যতে ইউক্রেনের গভীরে আক্রমণের জন্য রাশিয়াকে একটি পথ খুলে দেবে।
কিয়েভের আশঙ্কা, যদি তারা দোনেৎস্কের বাকি অংশ ছেড়ে দেয়, তবে রাশিয়া আবার অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হবে এবং একসময় দোনেৎস্ক ব্যবহার করে পশ্চিম দিকে আক্রমণ চালাবে।
উভয় পক্ষই দোনেৎস্ককে কেন্দ্র করে যুদ্ধে ভয়াবহ ক্ষয়ক্ষতির মুখোমুখি হয়েছে এবং প্রচুর অর্থ ও সরঞ্জাম ব্যয় করেছে। এর মধ্যে বাখমুত শহরের লড়াইও রয়েছে। যেখানে রাশিয়া হাজার হাজার দণ্ডিত অপরাধীকে ভাড়াটে সৈন্যে পরিণত করে রণক্ষেত্রে নামিয়েছিল। এ কারণে, দোনেৎস্ক উভয় দেশের জনমানসে আরও বেশি গুরুত্ব পেয়েছে। ফলে কারও পক্ষে তাদের অবস্থান পরিবর্তন করা কঠিন।
ইউক্রেন চায় না যে, রাশিয়া যুদ্ধক্ষেত্রে জয় করতে ব্যর্থ হওয়া ভূখণ্ডকে উপহার হিসেবে পাক এবং জেলেনস্কি বলেছেন, যে যুদ্ধ রাশিয়া শুরু করেছে, তার জন্য তাদের পুরস্কৃত করা উচিত নয়। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ইনস্টিটিউট ফর দ্য স্টাডি অব ওয়ার অক্টোবর মাসে বলেছিল, রাশিয়ার অগ্রগতির হার দেখে মনে হয় না যে তারা খুব শিগগিরই দোনেৎস্কের বাকি অংশ দখল করতে চলেছে। তবে ‘রাশিয়ার অগ্রগতির একটি অপরিবর্তনীয় হার ধরে নিলে’ তারা ২০২৭ সালের আগস্টের মধ্যে তা নিতে পারে।
রাশিয়ার কমান্ডাররা অবশ্য আরও বেশি আশাবাদী। জেনারেল স্টাফের প্রধান ভ্যালেরি গেরাসিমভ রোববার পুতিনকে বলেছেন, মস্কোর বাহিনী পুরো ফ্রন্ট লাইন বরাবর অগ্রসর হচ্ছে এবং দনবাসের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার জন্য কাজ করছে।
দোনেৎস্ক বন্দর, রেলপথ এবং অন্যান্য ভারী শিল্পের কেন্দ্র। এটি একসময় ইউক্রেনের কয়লা, পরিশোধিত ইস্পাত, কোক, ঢালাই লোহা এবং ইস্পাত উৎপাদনের অর্ধেকেরও বেশি সরবরাহ করত, তবে যুদ্ধের কারণে অনেক খনি ও কারখানা ধ্বংস হয়ে গেছে। এ ছাড়া, দোনেৎস্কে বিরল মৃত্তিকা, টাইটানিয়াম এবং জিরকোনিয়াম রয়েছে—যা এটিকে নিয়ন্ত্রণকারী পক্ষের জন্য আয়ের উৎস।
দোনেৎস্কের ভাগ্য পুতিন এবং জেলেনস্কি উভয়ের ঐতিহাসিক উত্তরাধিকারকে প্রভাবিত করতে পারে। পুতিন নিজেকে জাতিগত রুশদের রক্ষক হিসেবে তুলে ধরেছেন, তারা যেখানেই থাকুক না কেন। পুরো দোনেৎস্ককে সুরক্ষিত করা এই বক্তব্যের মূল কেন্দ্রবিন্দু। জেলেনস্কি ২০১৯ সালে পূর্ব ইউক্রেনের যুদ্ধ অবসান ঘটানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন। ২০২২ সাল থেকে তিনি অনেক বড়, বৈরী প্রতিবেশীর মুখে অস্ত্র এবং সংখ্যায় কম ইউক্রেনের এক দৃঢ় রক্ষক হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছেন।
লড়াই না করে দোনেৎস্ক ছেড়ে দেওয়া—যেখানে অন্তত আড়াই লাখ ইউক্রেনীয় বাস করে—ইউক্রেনীয়দের কাছে বিশ্বাসঘাতকতা হিসেবে দেখা হতে পারে, যাদের অনেকেই যুদ্ধক্ষেত্রে স্বজন হারিয়েছেন। কিয়েভ ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব সোসিওলজির সাম্প্রতিক এক জরিপ অনুসারে, ইউক্রেনীয়দের একটি সংকীর্ণ সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ এখনো আঞ্চলিক ছাড়ের বিরোধিতা করে।
জেলেনস্কিসহ ইউক্রেনের কর্মকর্তারা যেকোনো শান্তি চুক্তির অধীনে কিয়েভের নিয়ন্ত্রণে থাকা ভূমি ছাড়ার সম্ভাবনা প্রত্যাখ্যান করেছেন। জেলেনস্কি বলেন, তাঁর ভূখণ্ড ছেড়ে দেওয়ার কোনো ম্যান্ডেট নেই এবং রাষ্ট্রের ভূমি ব্যক্তিগত সম্পত্তির মতো কেনা-বেচা করা যায় না। ইউক্রেনের সংবিধান অনুসারে, আঞ্চলিক পরিবর্তন অবশ্যই একটি গণভোটের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করতে হবে, যা ইউক্রেনের অন্তত দুই-তৃতীয়াংশ অর্থাৎ, অন্তত ৩০ লাখ ইউক্রেনীয় ভোটারের স্বাক্ষর থাকলে আয়োজন করা যেতে পারে।
তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই গণভোটের বিষয়টির সমালোচনা করেছেন এবং তিনি বলেছিলেন, ‘কিছু ভূমি অদল-বদল হবে।’ এখন ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের আলোচনা মূলত এই দোনেৎস্কের নিয়ন্ত্রণ কার হাতে যাবে সেটাই নিয়েই থমকে আছে।
রয়টার্স থেকে পরিমার্জিত

অনেক ভারতীয়ই মনে করেন— হরদীপ ইস্যুতে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোকে সাহায্য করার বদলে অনেকটা এড়িয়ে চলছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে এর তদন্তে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দারাও কানাডাকে সাহায্য করেছে। এবং নমনীয় হলে ভারতকে সহযোগিতা করার আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। আর তাই প্রশ্ন উঠেছে, আসলে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্
২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩
বিশ্বজুড়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন উঠে আসছে—‘যদি বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ সীমিত করা হয়, অথবা এই শ্রেণিটিকেই সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়, তবে কী ঘটবে?’ পশ্চিমা দেশগুলোতে চরম ধনী বা বিলিয়নিয়ারদের সংখ্যা ও প্রভাব বাড়তে থাকায় এখন এই প্রশ্ন আরও জোরালো হয়েছে।
২ দিন আগে
জাপানের ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর গত অক্টোবরে দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন সানায়ে তাকাইচি। এরপরই তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত হন জাপানের নতুন ‘আয়রন লেডি’ বা লৌহমানবী’ হিসেবে।
২ দিন আগে
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠককে ঘিরে দিল্লিতে শুরু হয়েছে কূটনৈতিক প্রস্তুতি। চলমান ইউক্রেন যুদ্ধ, যুক্তরাষ্ট্রের চাপ এবং জ্বালানির বাজারে অস্থিরতার মধ্যেই এই শীর্ষ সম্মেলন হতে যাচ্ছে। অর্থনীতি, প্রতিরক্ষা এবং জ্বালানি—এই তিনটি খাত আলোচনার...
২ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

বিশ্বজুড়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন উঠে আসছে—‘যদি বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ সীমিত করা হয়, অথবা এই শ্রেণিটিকেই সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়, তবে কী ঘটবে?’ পশ্চিমা দেশগুলোতে চরম ধনী বা বিলিয়নিয়ারদের সংখ্যা ও প্রভাব বাড়তে থাকায় এখন এই প্রশ্ন আরও জোরালো হয়েছে।
সম্প্রতি টেসলার মালিক ইলন মাস্ক গত নভেম্বরে এমন এক পে-অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন, যা তাঁকে একজন ট্রিলিয়ন ডলারের মালিকে পরিণত করতে পারে। তিনি ইতিমধ্যেই বিশ্বের শীর্ষ ধনী। যদি তিনি প্রস্তাবিত পূর্ণ প্যাকেজটি পান, তাহলে তিনি বিশ্বের ইতিহাসে সর্বকালের সেরা ধনী ব্যক্তিতে পরিণত হবেন। ফোর্বসের হিসেবে বর্তমানে বিশ্বের ৩ হাজার ২৮ জন বিলিয়নিয়ার আছেন। তাঁদের মোট সম্পদ প্রায় ১৬.১ ট্রিলিয়ন ডলার। অন্যদিকে পৃথিবীতে এখনো প্রায় ৮৩ কোটি ১০ লাখ মানুষ দৈনিক তিন ডলারের নিচে আয় করে চরম দারিদ্র্যে দিন কাটান।
বিশ্লেষকদের মতে, বিশ্বের এই বিপুল সম্পদ বৈষম্য শুধু অর্থনীতিকে নয়, রাজনীতি, মিডিয়া ও চিন্তাকেও প্রভাবিত করে। অনেকেই মনে করেন, বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ ও ক্ষমতা বিশ্বব্যবস্থাকে ‘অতি ধনীদের স্বার্থে’ পুনর্গঠন করছে। আবার অন্য একটি মত বলছে, বিলিয়নিয়ারেরা না থাকলে উদ্ভাবন, প্রযুক্তি ও অগ্রগতি থমকে যাবে। কারণ বৃহৎ বিনিয়োগই গড়ে তোলে নতুন সমাধান।
উদ্ভাবন কি থেমে যাবে
অ্যাডাম স্মিথ ইনস্টিটিউটের ম্যাক্সওয়েল মার্লোর মতে, বিলিয়নিয়ারদের বিলোপ করা হলে পশ্চিমা অর্থনীতি বিপর্যস্ত হবে। তাঁর দাবি, অধিকাংশ বিলিয়নিয়ার তাঁদের সম্পদের মালিক হয়েছেন সমাজের চাহিদামতো পণ্য ও প্রযুক্তি তৈরি করে। তাঁদের সম্পদ মূলত কোম্পানির শেয়ার, মেধাস্বত্ব অথবা সম্পত্তি—যা দিনে দিনে ওঠানামা করে। তাঁর মতে, এই ধনী ব্যক্তিদের প্রণোদনাই উদ্ভাবনে গতি আনে; তা না থাকলে উন্নয়ন থেমে যাবে।
যদি ন্যায্যভাবে সম্পদ বণ্টিত হতো
গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ট্যাক্স জাস্টিসের ডেরেজে আলেমায়েহুর মতে, শুধু বিলিয়নিয়ার কর আরোপ নয়—প্রশ্ন হচ্ছে, সেই কর কোথায় যাবে। দক্ষিণ বিশ্বের শ্রম ও সম্পদ থেকেই যে বিপুল সম্পদ তৈরি হয়, তাই তার ন্যায্য অংশ দক্ষিণেই ফিরে আসা উচিত। তিনি বলেন, বৈষম্য কমাতে শুধু অর্থ হস্তান্তর নয়, বৈশ্বিক আর্থিক কাঠামো পুনর্গঠন জরুরি; নইলে বৈষম্য আরও গভীর হবে।
বিধিনিষেধ কি বদলাতে হবে
ডেনিসন ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ফাদেল কাবুব বলেন, বিলিয়নিয়ারেরা আসলে ব্যর্থ নীতির ফল। সিস্টেম যেভাবে সাজানো, তাতে সম্পদ একদিকে কেন্দ্রীভূত হওয়াই স্বাভাবিক। তাঁর মতে, বিলিয়নিয়ার শ্রেণিকে বিলোপ করতে হলে আধুনিক অ্যান্টি ট্রাস্ট ও কঠোর বাজার নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন।
মিডিয়ার ওপর প্রভাব কমবে
গোল্ডস্মিথস বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডেস ফ্রিডম্যান মনে করেন, বিলিয়নিয়ারেরা পুরো মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম কিনে ফেলতে সক্ষম হওয়ায় তথ্যপ্রবাহ তাঁদের স্বার্থেই নিয়ন্ত্রিত হয়। যেমন—বেজোস বা ইলন মাস্কের গণমাধ্যম মালিকানা এই অঙ্গনের স্বাধীনতাকে দীর্ঘমেয়াদে প্রশ্নবিদ্ধ করে। তাই বিলিয়নিয়ার প্রভাব সীমিত হলে তথ্যের উৎসও আরও স্বাধীন হতে পারে।
চরম সম্পদ কি সত্যিই বিলোপ করা সম্ভব
বিশ্ব ইনইক্যুয়ালিটি ল্যাবের লুকাস শ্যানসেলের মতে, ইতিহাসে এর নজির আছে। উদাহরণস্বরূপ—রকেফেলারের একচেটিয়া সাম্রাজ্য ভেঙে দেওয়া, কিংবা রুজভেল্টের সময় সর্বোচ্চ করহার ৯৪ শতাংশে উন্নীত করা। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পানামা পেপারসের মতো ফাঁস যেমন দুর্দান্ত স্বচ্ছতা তৈরি করেছে, তেমনি তা পরিবর্তনের সুযোগও তৈরি করছে। তিনি মনে করেন, ধনীদের ওপর কর আরোপের মতো ধারণা এখন আর ‘যদি’ নয়, বরং ‘কখন’ করা হবে—এ প্রশ্নে এসে দাঁড়িয়েছে।
আল-জাজিরা অবলম্বনে

বিশ্বজুড়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন উঠে আসছে—‘যদি বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ সীমিত করা হয়, অথবা এই শ্রেণিটিকেই সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়, তবে কী ঘটবে?’ পশ্চিমা দেশগুলোতে চরম ধনী বা বিলিয়নিয়ারদের সংখ্যা ও প্রভাব বাড়তে থাকায় এখন এই প্রশ্ন আরও জোরালো হয়েছে।
সম্প্রতি টেসলার মালিক ইলন মাস্ক গত নভেম্বরে এমন এক পে-অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন, যা তাঁকে একজন ট্রিলিয়ন ডলারের মালিকে পরিণত করতে পারে। তিনি ইতিমধ্যেই বিশ্বের শীর্ষ ধনী। যদি তিনি প্রস্তাবিত পূর্ণ প্যাকেজটি পান, তাহলে তিনি বিশ্বের ইতিহাসে সর্বকালের সেরা ধনী ব্যক্তিতে পরিণত হবেন। ফোর্বসের হিসেবে বর্তমানে বিশ্বের ৩ হাজার ২৮ জন বিলিয়নিয়ার আছেন। তাঁদের মোট সম্পদ প্রায় ১৬.১ ট্রিলিয়ন ডলার। অন্যদিকে পৃথিবীতে এখনো প্রায় ৮৩ কোটি ১০ লাখ মানুষ দৈনিক তিন ডলারের নিচে আয় করে চরম দারিদ্র্যে দিন কাটান।
বিশ্লেষকদের মতে, বিশ্বের এই বিপুল সম্পদ বৈষম্য শুধু অর্থনীতিকে নয়, রাজনীতি, মিডিয়া ও চিন্তাকেও প্রভাবিত করে। অনেকেই মনে করেন, বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ ও ক্ষমতা বিশ্বব্যবস্থাকে ‘অতি ধনীদের স্বার্থে’ পুনর্গঠন করছে। আবার অন্য একটি মত বলছে, বিলিয়নিয়ারেরা না থাকলে উদ্ভাবন, প্রযুক্তি ও অগ্রগতি থমকে যাবে। কারণ বৃহৎ বিনিয়োগই গড়ে তোলে নতুন সমাধান।
উদ্ভাবন কি থেমে যাবে
অ্যাডাম স্মিথ ইনস্টিটিউটের ম্যাক্সওয়েল মার্লোর মতে, বিলিয়নিয়ারদের বিলোপ করা হলে পশ্চিমা অর্থনীতি বিপর্যস্ত হবে। তাঁর দাবি, অধিকাংশ বিলিয়নিয়ার তাঁদের সম্পদের মালিক হয়েছেন সমাজের চাহিদামতো পণ্য ও প্রযুক্তি তৈরি করে। তাঁদের সম্পদ মূলত কোম্পানির শেয়ার, মেধাস্বত্ব অথবা সম্পত্তি—যা দিনে দিনে ওঠানামা করে। তাঁর মতে, এই ধনী ব্যক্তিদের প্রণোদনাই উদ্ভাবনে গতি আনে; তা না থাকলে উন্নয়ন থেমে যাবে।
যদি ন্যায্যভাবে সম্পদ বণ্টিত হতো
গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ট্যাক্স জাস্টিসের ডেরেজে আলেমায়েহুর মতে, শুধু বিলিয়নিয়ার কর আরোপ নয়—প্রশ্ন হচ্ছে, সেই কর কোথায় যাবে। দক্ষিণ বিশ্বের শ্রম ও সম্পদ থেকেই যে বিপুল সম্পদ তৈরি হয়, তাই তার ন্যায্য অংশ দক্ষিণেই ফিরে আসা উচিত। তিনি বলেন, বৈষম্য কমাতে শুধু অর্থ হস্তান্তর নয়, বৈশ্বিক আর্থিক কাঠামো পুনর্গঠন জরুরি; নইলে বৈষম্য আরও গভীর হবে।
বিধিনিষেধ কি বদলাতে হবে
ডেনিসন ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ফাদেল কাবুব বলেন, বিলিয়নিয়ারেরা আসলে ব্যর্থ নীতির ফল। সিস্টেম যেভাবে সাজানো, তাতে সম্পদ একদিকে কেন্দ্রীভূত হওয়াই স্বাভাবিক। তাঁর মতে, বিলিয়নিয়ার শ্রেণিকে বিলোপ করতে হলে আধুনিক অ্যান্টি ট্রাস্ট ও কঠোর বাজার নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন।
মিডিয়ার ওপর প্রভাব কমবে
গোল্ডস্মিথস বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডেস ফ্রিডম্যান মনে করেন, বিলিয়নিয়ারেরা পুরো মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম কিনে ফেলতে সক্ষম হওয়ায় তথ্যপ্রবাহ তাঁদের স্বার্থেই নিয়ন্ত্রিত হয়। যেমন—বেজোস বা ইলন মাস্কের গণমাধ্যম মালিকানা এই অঙ্গনের স্বাধীনতাকে দীর্ঘমেয়াদে প্রশ্নবিদ্ধ করে। তাই বিলিয়নিয়ার প্রভাব সীমিত হলে তথ্যের উৎসও আরও স্বাধীন হতে পারে।
চরম সম্পদ কি সত্যিই বিলোপ করা সম্ভব
বিশ্ব ইনইক্যুয়ালিটি ল্যাবের লুকাস শ্যানসেলের মতে, ইতিহাসে এর নজির আছে। উদাহরণস্বরূপ—রকেফেলারের একচেটিয়া সাম্রাজ্য ভেঙে দেওয়া, কিংবা রুজভেল্টের সময় সর্বোচ্চ করহার ৯৪ শতাংশে উন্নীত করা। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পানামা পেপারসের মতো ফাঁস যেমন দুর্দান্ত স্বচ্ছতা তৈরি করেছে, তেমনি তা পরিবর্তনের সুযোগও তৈরি করছে। তিনি মনে করেন, ধনীদের ওপর কর আরোপের মতো ধারণা এখন আর ‘যদি’ নয়, বরং ‘কখন’ করা হবে—এ প্রশ্নে এসে দাঁড়িয়েছে।
আল-জাজিরা অবলম্বনে

অনেক ভারতীয়ই মনে করেন— হরদীপ ইস্যুতে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোকে সাহায্য করার বদলে অনেকটা এড়িয়ে চলছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে এর তদন্তে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দারাও কানাডাকে সাহায্য করেছে। এবং নমনীয় হলে ভারতকে সহযোগিতা করার আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। আর তাই প্রশ্ন উঠেছে, আসলে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্
২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতদের মধ্যে ইউক্রেন শান্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনা হলেও প্রকাশ্যে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইউরি উশাকভ, এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন যে অমীমাংসিত ‘আঞ্চলিক সমস্যাই’ মূল বাধা। আর এই অঞ্চল আর কোনোটিই নয়, দোনেৎস্ক।
১ দিন আগে
জাপানের ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর গত অক্টোবরে দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন সানায়ে তাকাইচি। এরপরই তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত হন জাপানের নতুন ‘আয়রন লেডি’ বা লৌহমানবী’ হিসেবে।
২ দিন আগে
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠককে ঘিরে দিল্লিতে শুরু হয়েছে কূটনৈতিক প্রস্তুতি। চলমান ইউক্রেন যুদ্ধ, যুক্তরাষ্ট্রের চাপ এবং জ্বালানির বাজারে অস্থিরতার মধ্যেই এই শীর্ষ সম্মেলন হতে যাচ্ছে। অর্থনীতি, প্রতিরক্ষা এবং জ্বালানি—এই তিনটি খাত আলোচনার...
২ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

জাপানের ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর গত অক্টোবরে দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন সানায়ে তাকাইচি। এরপরই তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত হন জাপানের নতুন ‘আয়রন লেডি’ বা লৌহমানবী’ হিসেবে। এই পরিচয়টিকে তাকাইচি নিজেও গর্বের সঙ্গে গ্রহণ করেন। মার্গারেট থ্যাচারের অনুরাগী এই রক্ষণশীল নেতা ঘরোয়া অর্থনীতি থেকে শুরু করে পররাষ্ট্র ও নিরাপত্তা—সব ক্ষেত্রেই শক্ত অবস্থানের বার্তা দিয়েছেন।
তাকাইচির রাজনৈতিক পরিচয়ের মূল কেন্দ্রে রয়েছে ‘নিপ্পন কেইগি’ নামে জাপানের সবচেয়ে প্রভাবশালী জাতীয়তাবাদী গোষ্ঠী। এই সংগঠন জাপানের সংবিধানের যুদ্ধবিরোধী ৯ নম্বর অনুচ্ছেদ বাতিল, শক্তিশালী সামরিক বাহিনী গঠন এবং ঐতিহ্যবাদী মূল্যবোধে প্রত্যাবর্তনের পক্ষে। পূর্বসুরী শিনজো আবের মতো তাই তাকাইচিও জাপানকে স্বাভাবিক রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চান, যেখানে গোয়েন্দা সংস্থা, আধুনিক সেনাবাহিনী এবং কঠোর নিরাপত্তা আইন থাকবে।
অর্থনীতির ক্ষেত্রে তিনি জাতীয় শিল্পকে শক্তিশালী করা, প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বাড়ানো এবং রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ বৃদ্ধির পক্ষে। একই সঙ্গে কঠোর অভিবাসন নীতি ও রক্ষণশীল মূল্যবোধের প্রচারও তাঁকে ডানপন্থীদের মধ্যে জনপ্রিয় করেছে। তবে এই অভ্যন্তরীণ রাজনীতি এখন আন্তর্জাতিক উত্তেজনার সঙ্গে গেঁথে গেছে—বিশেষ করে, তাইওয়ান ইস্যুতে তাঁর অবস্থানের কারণে।
তাকাইচি ক্ষমতায় আসার পর থেকেই চীনের প্রতি কঠোর মনোভাব দেখাচ্ছেন। বেইজিংকে তিনি কৌশলগত হুমকি হিসেবে দেখেন এবং প্রতিরোধমূলক সামরিক ও কূটনৈতিক পদক্ষেপের পক্ষে জোর দিচ্ছেন। এরই অংশ হিসেবে অক্টোবরের শেষ দিকে তাঁর ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাক্ষাৎ দুই দেশের সম্পর্ককে নতুন সোনালি যুগে প্রবেশ করানোর আভাস দেয়। জাপান প্রতিরক্ষা ব্যয় জিডিপির কমপক্ষে ২ শতাংশে উন্নীত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, আর যুক্তরাষ্ট্র বিরল ধাতুর সরবরাহ নিশ্চিতকরণসহ অর্থনৈতিক সহায়তার ঘোষণা দেয়।
তবে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হলো তাইওয়ানের সঙ্গে তাকাইচির ঘনিষ্ঠতা। তিনি তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট লাই চিং-তের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন, যা চীনের কাছে স্পষ্ট উত্তেজনাকর পদক্ষেপ হিসেবে ধরা পড়েছে। আরও বিতর্ক সৃষ্টি হয় যখন তাকাইচি প্রকাশ্যে বলেন, তাইওয়ানের নিরাপত্তা জাপানের নিরাপত্তার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত। এমনকি তাইওয়ানে চীনা হামলার ক্ষেত্রে জাপানের আত্মরক্ষা বাহিনী হস্তক্ষেপ করতে পারে বলেও ইঙ্গিত দেন তিনি।
এ ক্ষেত্রে চীনের প্রতিক্রিয়াও ছিল কঠোর ও দ্রুত। তারা তাকাইচির বিরুদ্ধে ‘পুরোনো সামরিকতাবাদকে পুনরুজ্জীবিত করার’ অভিযোগ তোলে, রাষ্ট্রদূতকে তলব করে এবং জাতিসংঘে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ পাঠায়। পাশাপাশি সামুদ্রিক এলাকায় কোস্টগার্ডের টহল বাড়ায় চীন, জাপানি সামুদ্রিক পণ্যে সীমাবদ্ধতা আরোপের হুমকি দেয় এবং উত্তেজনাপূর্ণ নানা বিবৃতি দেয়।
এদিকে জাপানও পশ্চিম সীমান্তের ইয়োনাগুনি দ্বীপে বিমান প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনের ঘোষণা দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রও একই দ্বীপে সামরিক অবকাঠামো শক্তিশালী করছে। ফলে পরিস্থিতি আরও জটিল আকার ধারণ করছে।
তবে ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি তাকাইচিকে উত্তেজনা না বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন। কারণ আগামী এপ্রিলে তিনি বেইজিং সফর করতে চান।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তাকাইচির নেতৃত্বে জাপান নতুন ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতায় প্রবেশ করেছে। তাঁর দৃঢ় অবস্থান দেশকে হয় পুনরুত্থানের পথে নেবে—নয়তো চীন–তাইওয়ান উত্তেজনার কেন্দ্রে ঠেলে দেবে। ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে তিনি কোন পথে হাঁটবেন তার ওপর।

জাপানের ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর গত অক্টোবরে দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন সানায়ে তাকাইচি। এরপরই তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত হন জাপানের নতুন ‘আয়রন লেডি’ বা লৌহমানবী’ হিসেবে। এই পরিচয়টিকে তাকাইচি নিজেও গর্বের সঙ্গে গ্রহণ করেন। মার্গারেট থ্যাচারের অনুরাগী এই রক্ষণশীল নেতা ঘরোয়া অর্থনীতি থেকে শুরু করে পররাষ্ট্র ও নিরাপত্তা—সব ক্ষেত্রেই শক্ত অবস্থানের বার্তা দিয়েছেন।
তাকাইচির রাজনৈতিক পরিচয়ের মূল কেন্দ্রে রয়েছে ‘নিপ্পন কেইগি’ নামে জাপানের সবচেয়ে প্রভাবশালী জাতীয়তাবাদী গোষ্ঠী। এই সংগঠন জাপানের সংবিধানের যুদ্ধবিরোধী ৯ নম্বর অনুচ্ছেদ বাতিল, শক্তিশালী সামরিক বাহিনী গঠন এবং ঐতিহ্যবাদী মূল্যবোধে প্রত্যাবর্তনের পক্ষে। পূর্বসুরী শিনজো আবের মতো তাই তাকাইচিও জাপানকে স্বাভাবিক রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চান, যেখানে গোয়েন্দা সংস্থা, আধুনিক সেনাবাহিনী এবং কঠোর নিরাপত্তা আইন থাকবে।
অর্থনীতির ক্ষেত্রে তিনি জাতীয় শিল্পকে শক্তিশালী করা, প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বাড়ানো এবং রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ বৃদ্ধির পক্ষে। একই সঙ্গে কঠোর অভিবাসন নীতি ও রক্ষণশীল মূল্যবোধের প্রচারও তাঁকে ডানপন্থীদের মধ্যে জনপ্রিয় করেছে। তবে এই অভ্যন্তরীণ রাজনীতি এখন আন্তর্জাতিক উত্তেজনার সঙ্গে গেঁথে গেছে—বিশেষ করে, তাইওয়ান ইস্যুতে তাঁর অবস্থানের কারণে।
তাকাইচি ক্ষমতায় আসার পর থেকেই চীনের প্রতি কঠোর মনোভাব দেখাচ্ছেন। বেইজিংকে তিনি কৌশলগত হুমকি হিসেবে দেখেন এবং প্রতিরোধমূলক সামরিক ও কূটনৈতিক পদক্ষেপের পক্ষে জোর দিচ্ছেন। এরই অংশ হিসেবে অক্টোবরের শেষ দিকে তাঁর ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাক্ষাৎ দুই দেশের সম্পর্ককে নতুন সোনালি যুগে প্রবেশ করানোর আভাস দেয়। জাপান প্রতিরক্ষা ব্যয় জিডিপির কমপক্ষে ২ শতাংশে উন্নীত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, আর যুক্তরাষ্ট্র বিরল ধাতুর সরবরাহ নিশ্চিতকরণসহ অর্থনৈতিক সহায়তার ঘোষণা দেয়।
তবে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হলো তাইওয়ানের সঙ্গে তাকাইচির ঘনিষ্ঠতা। তিনি তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট লাই চিং-তের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন, যা চীনের কাছে স্পষ্ট উত্তেজনাকর পদক্ষেপ হিসেবে ধরা পড়েছে। আরও বিতর্ক সৃষ্টি হয় যখন তাকাইচি প্রকাশ্যে বলেন, তাইওয়ানের নিরাপত্তা জাপানের নিরাপত্তার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত। এমনকি তাইওয়ানে চীনা হামলার ক্ষেত্রে জাপানের আত্মরক্ষা বাহিনী হস্তক্ষেপ করতে পারে বলেও ইঙ্গিত দেন তিনি।
এ ক্ষেত্রে চীনের প্রতিক্রিয়াও ছিল কঠোর ও দ্রুত। তারা তাকাইচির বিরুদ্ধে ‘পুরোনো সামরিকতাবাদকে পুনরুজ্জীবিত করার’ অভিযোগ তোলে, রাষ্ট্রদূতকে তলব করে এবং জাতিসংঘে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ পাঠায়। পাশাপাশি সামুদ্রিক এলাকায় কোস্টগার্ডের টহল বাড়ায় চীন, জাপানি সামুদ্রিক পণ্যে সীমাবদ্ধতা আরোপের হুমকি দেয় এবং উত্তেজনাপূর্ণ নানা বিবৃতি দেয়।
এদিকে জাপানও পশ্চিম সীমান্তের ইয়োনাগুনি দ্বীপে বিমান প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনের ঘোষণা দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রও একই দ্বীপে সামরিক অবকাঠামো শক্তিশালী করছে। ফলে পরিস্থিতি আরও জটিল আকার ধারণ করছে।
তবে ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি তাকাইচিকে উত্তেজনা না বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন। কারণ আগামী এপ্রিলে তিনি বেইজিং সফর করতে চান।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তাকাইচির নেতৃত্বে জাপান নতুন ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতায় প্রবেশ করেছে। তাঁর দৃঢ় অবস্থান দেশকে হয় পুনরুত্থানের পথে নেবে—নয়তো চীন–তাইওয়ান উত্তেজনার কেন্দ্রে ঠেলে দেবে। ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে তিনি কোন পথে হাঁটবেন তার ওপর।

অনেক ভারতীয়ই মনে করেন— হরদীপ ইস্যুতে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোকে সাহায্য করার বদলে অনেকটা এড়িয়ে চলছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে এর তদন্তে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দারাও কানাডাকে সাহায্য করেছে। এবং নমনীয় হলে ভারতকে সহযোগিতা করার আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। আর তাই প্রশ্ন উঠেছে, আসলে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্
২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতদের মধ্যে ইউক্রেন শান্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনা হলেও প্রকাশ্যে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইউরি উশাকভ, এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন যে অমীমাংসিত ‘আঞ্চলিক সমস্যাই’ মূল বাধা। আর এই অঞ্চল আর কোনোটিই নয়, দোনেৎস্ক।
১ দিন আগে
বিশ্বজুড়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন উঠে আসছে—‘যদি বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ সীমিত করা হয়, অথবা এই শ্রেণিটিকেই সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়, তবে কী ঘটবে?’ পশ্চিমা দেশগুলোতে চরম ধনী বা বিলিয়নিয়ারদের সংখ্যা ও প্রভাব বাড়তে থাকায় এখন এই প্রশ্ন আরও জোরালো হয়েছে।
২ দিন আগে
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠককে ঘিরে দিল্লিতে শুরু হয়েছে কূটনৈতিক প্রস্তুতি। চলমান ইউক্রেন যুদ্ধ, যুক্তরাষ্ট্রের চাপ এবং জ্বালানির বাজারে অস্থিরতার মধ্যেই এই শীর্ষ সম্মেলন হতে যাচ্ছে। অর্থনীতি, প্রতিরক্ষা এবং জ্বালানি—এই তিনটি খাত আলোচনার...
২ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠককে ঘিরে দিল্লিতে শুরু হয়েছে কূটনৈতিক প্রস্তুতি। চলমান ইউক্রেন যুদ্ধ, যুক্তরাষ্ট্রের চাপ এবং জ্বালানির বাজারে অস্থিরতার মধ্যেই এই শীর্ষ সম্মেলন হতে যাচ্ছে। অর্থনীতি, প্রতিরক্ষা এবং জ্বালানি—এই তিনটি খাত আলোচনার কেন্দ্রে থাকবে বলে দুই দেশই নিশ্চিত করেছে।
রাষ্ট্রীয় সফরে বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) ভারতে পৌঁছে পরদিন শুক্রবার মোদির সঙ্গে বৈঠকে বসবেন পুতিন। এই বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের অগ্রগতি পর্যালোচনা ছাড়াও নতুন কয়েকটি আন্তদপ্তর ও বাণিজ্যিক চুক্তি স্বাক্ষরের সম্ভাবনা রয়েছে। রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখা এবং একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কৌশলগত অংশীদারত্ব ধরে রাখতে ভারতের নীতির জন্য এই বৈঠক একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রাশিয়া থেকে ডিসকাউন্টে ভারতের তেল কেনা দীর্ঘদিন ধরেই ওয়াশিংটনকে অসন্তুষ্ট করে আসছে। এই অসন্তুষ্টি থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি ভারতীয় পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন, যা মোট শুল্ককে ৫০ শতাংশে উন্নীত করেছে। তবে ভারত বলছে, তারা আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার বিরোধী নয়, কিন্তু ১৪০ কোটি মানুষের জ্বালানি চাহিদা মেটাতেই বাধ্য হয়ে রাশিয়া থেকে তেল আমদানি করা হচ্ছে। নতুন মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে ‘রসনেফত’ ও ‘লুকওইল’ এর মতো রাশিয়ার কিছু কোম্পানি থেকে ভারত তেল কিনবে না বলে জানিয়েছে। তবে নিষেধাজ্ঞামুক্ত রুশ সরবরাহকারীদের সঙ্গে বাণিজ্য চালু থাকবে।
পুতিনের এই সফরে দুই দেশের অর্থনৈতিক সহযোগিতার ওপর জোর দেওয়া হবে। ভারত রাশিয়ায় ওষুধ, কৃষিপণ্য ও টেক্সটাইল রপ্তানি বাড়াতে চায় এবং পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে শুল্কমুক্ত সুবিধা প্রদানের অনুরোধ জানাবে। এ ছাড়া সার সরবরাহের দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি এবং রাশিয়ায় ভারতীয় দক্ষ জনশক্তির নিরাপদ ও নিয়মিত অভিবাসন নিয়ে আলোচনা এগোতে পারে। দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য, সমুদ্র পরিবহন, স্বাস্থ্যসেবা ও গণমাধ্যম সহযোগিতা বিষয়ক নথিপত্র চূড়ান্তের কাজও চলছে।
বুধবার এই বিষয়ে যুক্তরাজ্যভিত্তিক ইনডিপেনডেন্টের এক নিবন্ধে দাবি করা হয়েছে, জ্বালানি সহযোগিতাই পুতিন-মোদি আলোচনার বড় অংশ দখল করবে। ভারতের ফার ইস্টে বিনিয়োগ, রাশিয়ার সঙ্গে বেসামরিক পারমাণবিক প্রকল্প এবং কুদানকুলাম প্রকল্পের সম্প্রসারণ নিয়ে অগ্রগতি পর্যালোচনা হবে। স্থানীয়ভাবে যন্ত্রাংশ উৎপাদন এবং তৃতীয় দেশে যৌথ পারমাণবিক প্রকল্প বাস্তবায়নের সম্ভাবনাও খতিয়ে দেখা হবে।
প্রতিরক্ষা সহযোগিতা এই সফরের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। ২০১৮ সালের ৫.৪ বিলিয়ন ডলারের চুক্তির আওতায় ভারতের হাতে ইতিমধ্যে রাশিয়ার তিনটি এস-৪০০ স্কোয়াড্রন এসেছে। যুদ্ধজনিত কারণে বাকিগুলোর সরবরাহে যুদ্ধজনিত বিলম্ব হচ্ছে। ভারত এই সরবরাহ দ্রুত নিশ্চিত করতে চাপ দেবে। পাশাপাশি আরও এস-৪০০ কেনার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া হয়নি, যদিও বৈঠক থেকে কোনো ঘোষণা হওয়ার সম্ভাবনা কম। রুশ নির্মিত এসইউ-৩০ এমকেআই যুদ্ধবিমান আপগ্রেড, অস্ত্র সরবরাহ দ্রুততর করা এবং যৌথ সামরিক মহড়ায় সমন্বয় জোরদার করার বিষয়েও আলোচনা হবে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভারত বহুজাতিক অস্ত্র সরবরাহকারীদের দিকে নজর বাড়ালেও রাশিয়া এখনো তাদের সবচেয়ে বড় প্রতিরক্ষা অংশীদার। পুতিনের সফরকে সেই সম্পর্কটি আরও দৃঢ় করার বড় সুযোগ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠককে ঘিরে দিল্লিতে শুরু হয়েছে কূটনৈতিক প্রস্তুতি। চলমান ইউক্রেন যুদ্ধ, যুক্তরাষ্ট্রের চাপ এবং জ্বালানির বাজারে অস্থিরতার মধ্যেই এই শীর্ষ সম্মেলন হতে যাচ্ছে। অর্থনীতি, প্রতিরক্ষা এবং জ্বালানি—এই তিনটি খাত আলোচনার কেন্দ্রে থাকবে বলে দুই দেশই নিশ্চিত করেছে।
রাষ্ট্রীয় সফরে বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) ভারতে পৌঁছে পরদিন শুক্রবার মোদির সঙ্গে বৈঠকে বসবেন পুতিন। এই বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের অগ্রগতি পর্যালোচনা ছাড়াও নতুন কয়েকটি আন্তদপ্তর ও বাণিজ্যিক চুক্তি স্বাক্ষরের সম্ভাবনা রয়েছে। রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখা এবং একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কৌশলগত অংশীদারত্ব ধরে রাখতে ভারতের নীতির জন্য এই বৈঠক একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রাশিয়া থেকে ডিসকাউন্টে ভারতের তেল কেনা দীর্ঘদিন ধরেই ওয়াশিংটনকে অসন্তুষ্ট করে আসছে। এই অসন্তুষ্টি থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি ভারতীয় পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন, যা মোট শুল্ককে ৫০ শতাংশে উন্নীত করেছে। তবে ভারত বলছে, তারা আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার বিরোধী নয়, কিন্তু ১৪০ কোটি মানুষের জ্বালানি চাহিদা মেটাতেই বাধ্য হয়ে রাশিয়া থেকে তেল আমদানি করা হচ্ছে। নতুন মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে ‘রসনেফত’ ও ‘লুকওইল’ এর মতো রাশিয়ার কিছু কোম্পানি থেকে ভারত তেল কিনবে না বলে জানিয়েছে। তবে নিষেধাজ্ঞামুক্ত রুশ সরবরাহকারীদের সঙ্গে বাণিজ্য চালু থাকবে।
পুতিনের এই সফরে দুই দেশের অর্থনৈতিক সহযোগিতার ওপর জোর দেওয়া হবে। ভারত রাশিয়ায় ওষুধ, কৃষিপণ্য ও টেক্সটাইল রপ্তানি বাড়াতে চায় এবং পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে শুল্কমুক্ত সুবিধা প্রদানের অনুরোধ জানাবে। এ ছাড়া সার সরবরাহের দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি এবং রাশিয়ায় ভারতীয় দক্ষ জনশক্তির নিরাপদ ও নিয়মিত অভিবাসন নিয়ে আলোচনা এগোতে পারে। দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য, সমুদ্র পরিবহন, স্বাস্থ্যসেবা ও গণমাধ্যম সহযোগিতা বিষয়ক নথিপত্র চূড়ান্তের কাজও চলছে।
বুধবার এই বিষয়ে যুক্তরাজ্যভিত্তিক ইনডিপেনডেন্টের এক নিবন্ধে দাবি করা হয়েছে, জ্বালানি সহযোগিতাই পুতিন-মোদি আলোচনার বড় অংশ দখল করবে। ভারতের ফার ইস্টে বিনিয়োগ, রাশিয়ার সঙ্গে বেসামরিক পারমাণবিক প্রকল্প এবং কুদানকুলাম প্রকল্পের সম্প্রসারণ নিয়ে অগ্রগতি পর্যালোচনা হবে। স্থানীয়ভাবে যন্ত্রাংশ উৎপাদন এবং তৃতীয় দেশে যৌথ পারমাণবিক প্রকল্প বাস্তবায়নের সম্ভাবনাও খতিয়ে দেখা হবে।
প্রতিরক্ষা সহযোগিতা এই সফরের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। ২০১৮ সালের ৫.৪ বিলিয়ন ডলারের চুক্তির আওতায় ভারতের হাতে ইতিমধ্যে রাশিয়ার তিনটি এস-৪০০ স্কোয়াড্রন এসেছে। যুদ্ধজনিত কারণে বাকিগুলোর সরবরাহে যুদ্ধজনিত বিলম্ব হচ্ছে। ভারত এই সরবরাহ দ্রুত নিশ্চিত করতে চাপ দেবে। পাশাপাশি আরও এস-৪০০ কেনার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া হয়নি, যদিও বৈঠক থেকে কোনো ঘোষণা হওয়ার সম্ভাবনা কম। রুশ নির্মিত এসইউ-৩০ এমকেআই যুদ্ধবিমান আপগ্রেড, অস্ত্র সরবরাহ দ্রুততর করা এবং যৌথ সামরিক মহড়ায় সমন্বয় জোরদার করার বিষয়েও আলোচনা হবে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভারত বহুজাতিক অস্ত্র সরবরাহকারীদের দিকে নজর বাড়ালেও রাশিয়া এখনো তাদের সবচেয়ে বড় প্রতিরক্ষা অংশীদার। পুতিনের সফরকে সেই সম্পর্কটি আরও দৃঢ় করার বড় সুযোগ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

অনেক ভারতীয়ই মনে করেন— হরদীপ ইস্যুতে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোকে সাহায্য করার বদলে অনেকটা এড়িয়ে চলছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে এর তদন্তে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দারাও কানাডাকে সাহায্য করেছে। এবং নমনীয় হলে ভারতকে সহযোগিতা করার আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। আর তাই প্রশ্ন উঠেছে, আসলে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্
২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতদের মধ্যে ইউক্রেন শান্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনা হলেও প্রকাশ্যে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইউরি উশাকভ, এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন যে অমীমাংসিত ‘আঞ্চলিক সমস্যাই’ মূল বাধা। আর এই অঞ্চল আর কোনোটিই নয়, দোনেৎস্ক।
১ দিন আগে
বিশ্বজুড়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন উঠে আসছে—‘যদি বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ সীমিত করা হয়, অথবা এই শ্রেণিটিকেই সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়, তবে কী ঘটবে?’ পশ্চিমা দেশগুলোতে চরম ধনী বা বিলিয়নিয়ারদের সংখ্যা ও প্রভাব বাড়তে থাকায় এখন এই প্রশ্ন আরও জোরালো হয়েছে।
২ দিন আগে
জাপানের ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর গত অক্টোবরে দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন সানায়ে তাকাইচি। এরপরই তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত হন জাপানের নতুন ‘আয়রন লেডি’ বা লৌহমানবী’ হিসেবে।
২ দিন আগে