আজকের পত্রিকা ডেস্ক

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সংঘাতের ইতিহাস অনেক দীর্ঘ। এর মূলে রয়েছে কাশ্মীর ভূখণ্ড নিয়ে আঞ্চলিক বিরোধ, ধর্ম ও আদর্শিক পার্থক্য এবং ১৯৪৭ সালে ভারত ভাগের পরবর্তী ঐতিহাসিক ঘটনাবলী। আঞ্চলিক বিরোধ একাধিকবার সশস্ত্র যুদ্ধে গড়িয়েছে। আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপে সাময়িক সময়ের জন্য অস্ত্রবিরতি হলেও দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতা আসেনি। সীমান্তে অস্ত্র সংবরনের চুক্তি হলেও তা বারবার লঙ্ঘিত হয়েছে, ফলস্বরূপ অচলাবস্থা দীর্ঘায়িত হয়েছে। এখানে সংক্ষেপে ভারত–পাকিস্তান সংঘাতের চিত্র তুলে ধরা হলো:
প্রথম ভারত–পাকিস্তান যুদ্ধ (১৯৪৭–৪৮)
কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিরোধ থেকে এই সংঘাতের সূত্রপাত। তৎকালীন মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ কাশ্মীরের মহারাজা ছিলেন হিন্দু। পাকিস্তান সে সময় কাশ্মীরকে নিজেদের ভূখণ্ডের অংশ করতে স্থানীয় মিলিশিয়াদের সমর্থন দেয়। অন্যদিকে মহারাজা ভারতের সঙ্গে যোগ দেওয়ার পক্ষে অবস্থান নেন, ফলে ভারত সরসারি কাশ্মীরে হস্তক্ষেপ করে।
এর জেরে ভারতীয় বাহিনী এবং পাকিস্তান-সমর্থিত মিলিশিয়াদের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয়। পরে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীও যোগ দেয়।
জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় ১৯৪৯ সালের ১ জানুয়ারি যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়। সমঝোতার ভিত্তিতে কাশ্মীরকে বিভক্ত করে নিয়ন্ত্রণ রেখা (এলওসি) টানা হয়। ভারতের নিয়ন্ত্রণে থাকে জম্মু ও কাশ্মীরের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ, বাকি অংশ (আজাদ কাশ্মীর ও গিলগিট-বালটিস্তান) পাকিস্তানের নিয়ন্ত্রণে থাকে। কাশ্মীরের ভবিষ্যৎ নির্ধারণে জাতিসংঘ গণভোটের আহ্বান জানায়। কিন্তু ভারতের আপত্তিতে তা আর কখনো হয়নি।
ফলাফল দাঁড়ায়—অচলাবস্থা। সেই থেকে কাশ্মীর একটি সংঘাতপূর্ণ এলাকা। ভারত ও পাকিস্তানের বিরোধের প্রধান উপাদান হয়ে রয়েছে এই ভূখণ্ড।
দ্বিতীয় ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ (১৯৬৫)
পাকিস্তান ‘অপারেশন জিব্রাল্টার’ শুরু করে। ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু ও কাশ্মীরে অনুপ্রবেশ করে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সদস্যরা স্থানীয়দের ছদ্মবেশে সেখানে বিদ্রোহ উসকে দেওয়ার চেষ্টা করে। ১৯৬২ সালে চীনের সঙ্গে যুদ্ধে হারের পর ভারত দুর্বল হয়ে পড়েছে—এই বিশ্বাস থেকে পাকিস্তান কাশ্মীরের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার আশা দেখতে পায়।
দ্রুতই সংঘাত পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধে রূপ নেয়। কাশ্মীর ও পাঞ্জাবে যুদ্ধ শুরু হয়। ভারত পাল্টা আক্রমণ চালায় এবং লাহোর ও সিয়ালকোটের দিকে অগ্রসর হয়।
এবারও জাতিসংঘের হস্তক্ষেপে ১৯৬৫ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর যুদ্ধবিরতি হয়। তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যস্থতায় তাসখন্দ চুক্তি (১৯৬৬) স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তির আওতায় সামান্য সমন্বয়ের মাধ্যমে যুদ্ধ-পূর্ববর্তী সীমানা (নিয়ন্ত্রণ রেখা) পুনরুদ্ধার করা হয়। ফের অচলাবস্থা শুরু হয়। কিন্তু তাতে আঞ্চলিক পরিস্থিতির কোনো উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হয়নি। উভয় পক্ষই নিজেদের বিজয়ী দাবি করে।
তৃতীয় ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ (১৯৭১)
তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে (বর্তমান বাংলাদেশ) পাকিস্তানের সেনাবাহিনী বেসামরিক জনগণের ওপর নৃশংস আক্রমণ করে। ভয়াবহ সামরিক দমনপীড়নে লাখ লাখ মানুষ সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে আশ্রয় নেয়। সেখানে রীতিমতো শরণার্থী সংকট তৈরি হয়। ভারত মুক্তি বাহিনীকে সমর্থন দেয়। আশ্রয়, অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ দিয়ে সহায়তা করে। একপর্যায়ে পাকিস্তান ভারতীয় বিমান ঘাঁটিতে আকস্মিক হামলা চালায়।
এরপর ভারত পূর্ব পাকিস্তানে সর্বাত্মক আক্রমণ শুরু করে, পাশাপাশি পশ্চিম সীমান্তেও যুদ্ধ হয়। অবশ্য যুদ্ধ মাত্র ১৩ দিন স্থায়ী হয়েছিল।
১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পূর্ব পাকিস্তানে ভারতীয় সেনাবাহিনীর কাছে পাকিস্তান বাহিনী আত্মসমর্পণ করে। এর ফলে সার্বভৌম বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্ম হয়। এরপর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সিমলা চুক্তি (১৯৭২) স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তির আওতায় যুদ্ধবিরতি রেখাকে নিয়ন্ত্রণ রেখা হিসেবে পুনরায় সংজ্ঞায়িত করা হয়। দ্বিপক্ষীয় আলোচনার মাধ্যমে বিরোধ মীমাংসার ওপর জোর দেওয়া হয়।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানের পরাজয় এবং সিমলা চুক্তির মধ্য দিয়ে বড় ধরনের ভূ-রাজনৈতিক পরিবর্তন আসে। পাকিস্তান পূর্ব পাকিস্তানকে হারায় এবং বাংলাদেশ একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।
কার্গিল যুদ্ধ (১৯৯৯)
পাকিস্তানি সেনা ও বিদ্রোহীরা ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু ও কাশ্মীরের কার্গিল সেক্টরে অনুপ্রবেশ করে। তারা ভারতীয় সেনাবাহিনীর রসদ সরবরাহ লাইন ব্যাহত করতে কৌশলগত এলাকার নিয়ন্ত্রণ নেয়। ভারত অনুপ্রবেশকারীদের হঠাতে ‘অপারেশন বিজয়’ শুরু করে। তীব্র লড়াই হয়। কয়েক সপ্তাহ পর ভারত নিয়ন্ত্রণ পুনরুদ্ধার করে।
ভারত ১৯৯৯ সালের জুলাই মাসের মধ্যে হারানো বেশিরভাগ এলাকা পুনরুদ্ধার করে। যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক চাপের মুখে পাকিস্তান পিছু হটতে বাধ্য হয়। তবে এবার কোনো আনুষ্ঠানিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়নি।
এই যুদ্ধে ভারতের কৌশলগত বিজয় হয় এবং এই অঞ্চলে স্থিতাবস্থা পুনরুদ্ধার করে। নিয়ন্ত্রণ রেখা লঙ্ঘনের জন্য পাকিস্তান আন্তর্জাতিক সমালোচনার মুখে পড়ে।
অন্যান্য উল্লেখযোগ্য সংঘাত ও উত্তেজনা
সিয়াচেন সংঘাত (১৯৮৪–বর্তমান)
ভারত ১৯৮৪ সালে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার পর থেকে সিয়াচেন হিমবাহে (এটি বিশ্বের উচ্চতম যুদ্ধক্ষেত্র) দুই দেশই সামরিক উপস্থিতি বজায় রেখেছে। এখনো বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ ঘটে, তবে কোনো বড় যুদ্ধ হয়নি। হিমবাহের বেশিরভাগ অংশ ভারতের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
সীমান্ত পেরিয়ে সংঘর্ষ
নিয়ন্ত্রণ রেখায় ঘন ঘন যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন, বিশেষ করে ২০০০ এবং ২০১০–এর দশকে আর্টিলারি (ভারী গোলা) ও হালকা অস্ত্রের গোলাগুলি হয়। উত্তেজনার উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধির মধ্যে রয়েছে ২০১৬ সালের উরি হামলা এবং ২০১৯ সালের বালাকোট বিমান হামলা।
২০০১–০২ সালের অচলাবস্থা: ২০০১ সালে ভারতের জাতীয় সংসদে সন্ত্রাসী হামলা হয়। এই হামলার জন্য পাকিস্তান ভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তৈয়বা ও জয়শ-ই-মহাম্মদকে দায়ী করে ভারত। এই হামলায় এক জন সাধারণ নাগরিকসহ বারো জনের মৃত্যু হয়।
এই ঘটনার পর উভয় দেশ সীমান্তে সৈন্য সমাবেশ করে। কূটনৈতিক চাপে ১০ মাসের অচলাবস্থার অবসান ঘটে এবং যুদ্ধ এড়ানো যায়।
২০১৯ সালের পুলওয়ামা-বালাকোট সংকট: কাশ্মীরের পুলওয়ামায় আত্মঘাতী বোমা হামলায় ৪০ জন ভারতীয় সেনা নিহত হয়। এরপর ভারত পাকিস্তানের বালাকোটে কথিত সন্ত্রাসী ঘাঁটিতে বিমান হামলা চালিয়ে প্রতিশোধ নেয়। পাকিস্তানের বিমান বাহিনী পাল্টা জবাব দেয়, ফলে একটি সংক্ষিপ্ত বিমান যুদ্ধ হয়। কিন্তু পাকিস্তানের আকাশসীমায় প্রবেশ করতে গিয়ে একজন ভারতীয় পাইলট আটক হন। পরে অবশ্য তাঁকে মুক্তি দেওয়া হয়। ফলে উত্তেজনা প্রশমিত হয়।
এই ঘটনার প্রভাব সেভাবে আঞ্চলিক পরিস্থিতির কোনো পরিবর্তন ঘটায়নি। উভয় পক্ষই বিজয় দাবি করে।
পেহেলগাম হামলা (২০২৫)
গত ২২ এপ্রিল জম্মু–কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন নিহত হয়। তারা সবাই বেসামরিক নাগরিক এবং পর্যটক। এই হামলার জন্য পাকিস্তান ভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন লস্কর–ই–তৈয়বার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একটি সংগঠনকে দায়ী করছে ভারত। সেই সঙ্গে এতে পাকিস্তান রাষ্ট্রেরও হাত আছে বলে অভিযোগ করা হচ্ছে।
এই হামলার জেরে ভারত ও পাকিস্তান পাল্টাপাল্টি কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে। ভারত সিন্ধু পানি বণ্টন চুক্তি, বাণিজ্য, ভিসা ও আকাশসীমা ব্যবহারের অনুমতি স্থগিত করেছে। পাল্টা পাকিস্তানও সিমলা চুক্তি, বাণিজ্য, ভিসা ও আকাশসীমা ব্যবহারের অনুমতি স্থগিত করেছে। সীমান্তে নিয়ন্ত্রণ রেখায় যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে টানা আট দিন রাতের বেলা গোলাগুলি হয়েছে। তবে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। দুইপক্ষে টানটান উত্তেজনা বিরাজ করছে।
মোট কথা, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে বিরোধের মূলে কাশ্মীর। ধর্মীয় ও জাতীয়তাবাদী ভাবাবেগের মিশেলে এটি ক্রমেই অত্যন্ত জটিল আকার ধারণ করেছে। পাকিস্তান কাশ্মীরিদের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারের ওপর জোর দেয়। কিন্তু ভারত কাশ্মীরকে তার অবিচ্ছেদ্য অংশ দাবি করে।
এ নিয়ে উত্তেজনার মধ্যে ১৯৯৮ সালে উভয় দেশ পারমাণবিক শক্তিধর রাষ্ট্রে পরিণত হয়। এতে সংঘাতের ঝুঁকি আরও বেড়ে যায়। উভয়ই পারমাণবিক অস্ত্রধারী হওয়ায় পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধের সম্ভাবনা কমে এলেও ছায়াযুদ্ধ ও সন্ত্রাসবাদ দিন দিন বাড়ছে।
এই বিরোধ ও সংঘাত নিরসনে একাধিকবার চেষ্টা হয়েছে। জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক শক্তিগুলো মধ্যস্থতার চেষ্টা করেছে। এর মধ্যে লাহোর ঘোষণা (১৯৯৯) এবং আগ্রা শীর্ষ সম্মেলনের (২০০১) মতো শান্তি উদ্যোগগুলো অন্যতম। তবে পারস্পরিক অবিশ্বাস এবং বারবার সন্ত্রাসী হামলার মতো ঘটনার কারণে সব উদ্যোগ বারবার ভেস্তে গেছে।
সর্বশেষ চলতি বছর মাঝে মধ্যেই যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের কারণে নিয়ন্ত্রণ রেখা অস্থির হয়ে উঠেছে। ২০১৯ সালের সংকটের পর থেকে কোনো উল্লেখযোগ্য দ্বিপক্ষীয় আলোচনা না হওয়ায় কূটনৈতিক সম্পর্কও এখন বেশ দুর্বল। ২০১৯ সালে ভারত জম্মু ও কাশ্মীরের স্বায়ত্তশাসন বাতিল করে, এতে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে ওঠে। পাকিস্তানও ভারতের সঙ্গে দূরত্ব বাড়াতে থাকে। স্বায়ত্তশাসন বাতিলের পর ব্যাপক অভিযান ও তল্লাশি চালায় ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনী। ব্যাপক নিপীড়ন, উচ্ছেদ ও গ্রেপ্তার চলে। এরপর ভারত সরকার কাশ্মীর পরিস্থিতি নজিরবিহীনভাবে স্থিতিশীল হওয়ার দাবি করে আসছিল। কিন্তু ২২ এপ্রিলের ঘটনার পর সরকারি বয়ান সমালোচনার মুখে পড়েছে।
আরও খবর পড়ুন:

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সংঘাতের ইতিহাস অনেক দীর্ঘ। এর মূলে রয়েছে কাশ্মীর ভূখণ্ড নিয়ে আঞ্চলিক বিরোধ, ধর্ম ও আদর্শিক পার্থক্য এবং ১৯৪৭ সালে ভারত ভাগের পরবর্তী ঐতিহাসিক ঘটনাবলী। আঞ্চলিক বিরোধ একাধিকবার সশস্ত্র যুদ্ধে গড়িয়েছে। আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপে সাময়িক সময়ের জন্য অস্ত্রবিরতি হলেও দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতা আসেনি। সীমান্তে অস্ত্র সংবরনের চুক্তি হলেও তা বারবার লঙ্ঘিত হয়েছে, ফলস্বরূপ অচলাবস্থা দীর্ঘায়িত হয়েছে। এখানে সংক্ষেপে ভারত–পাকিস্তান সংঘাতের চিত্র তুলে ধরা হলো:
প্রথম ভারত–পাকিস্তান যুদ্ধ (১৯৪৭–৪৮)
কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিরোধ থেকে এই সংঘাতের সূত্রপাত। তৎকালীন মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ কাশ্মীরের মহারাজা ছিলেন হিন্দু। পাকিস্তান সে সময় কাশ্মীরকে নিজেদের ভূখণ্ডের অংশ করতে স্থানীয় মিলিশিয়াদের সমর্থন দেয়। অন্যদিকে মহারাজা ভারতের সঙ্গে যোগ দেওয়ার পক্ষে অবস্থান নেন, ফলে ভারত সরসারি কাশ্মীরে হস্তক্ষেপ করে।
এর জেরে ভারতীয় বাহিনী এবং পাকিস্তান-সমর্থিত মিলিশিয়াদের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয়। পরে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীও যোগ দেয়।
জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় ১৯৪৯ সালের ১ জানুয়ারি যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়। সমঝোতার ভিত্তিতে কাশ্মীরকে বিভক্ত করে নিয়ন্ত্রণ রেখা (এলওসি) টানা হয়। ভারতের নিয়ন্ত্রণে থাকে জম্মু ও কাশ্মীরের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ, বাকি অংশ (আজাদ কাশ্মীর ও গিলগিট-বালটিস্তান) পাকিস্তানের নিয়ন্ত্রণে থাকে। কাশ্মীরের ভবিষ্যৎ নির্ধারণে জাতিসংঘ গণভোটের আহ্বান জানায়। কিন্তু ভারতের আপত্তিতে তা আর কখনো হয়নি।
ফলাফল দাঁড়ায়—অচলাবস্থা। সেই থেকে কাশ্মীর একটি সংঘাতপূর্ণ এলাকা। ভারত ও পাকিস্তানের বিরোধের প্রধান উপাদান হয়ে রয়েছে এই ভূখণ্ড।
দ্বিতীয় ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ (১৯৬৫)
পাকিস্তান ‘অপারেশন জিব্রাল্টার’ শুরু করে। ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু ও কাশ্মীরে অনুপ্রবেশ করে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সদস্যরা স্থানীয়দের ছদ্মবেশে সেখানে বিদ্রোহ উসকে দেওয়ার চেষ্টা করে। ১৯৬২ সালে চীনের সঙ্গে যুদ্ধে হারের পর ভারত দুর্বল হয়ে পড়েছে—এই বিশ্বাস থেকে পাকিস্তান কাশ্মীরের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার আশা দেখতে পায়।
দ্রুতই সংঘাত পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধে রূপ নেয়। কাশ্মীর ও পাঞ্জাবে যুদ্ধ শুরু হয়। ভারত পাল্টা আক্রমণ চালায় এবং লাহোর ও সিয়ালকোটের দিকে অগ্রসর হয়।
এবারও জাতিসংঘের হস্তক্ষেপে ১৯৬৫ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর যুদ্ধবিরতি হয়। তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যস্থতায় তাসখন্দ চুক্তি (১৯৬৬) স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তির আওতায় সামান্য সমন্বয়ের মাধ্যমে যুদ্ধ-পূর্ববর্তী সীমানা (নিয়ন্ত্রণ রেখা) পুনরুদ্ধার করা হয়। ফের অচলাবস্থা শুরু হয়। কিন্তু তাতে আঞ্চলিক পরিস্থিতির কোনো উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হয়নি। উভয় পক্ষই নিজেদের বিজয়ী দাবি করে।
তৃতীয় ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ (১৯৭১)
তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে (বর্তমান বাংলাদেশ) পাকিস্তানের সেনাবাহিনী বেসামরিক জনগণের ওপর নৃশংস আক্রমণ করে। ভয়াবহ সামরিক দমনপীড়নে লাখ লাখ মানুষ সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে আশ্রয় নেয়। সেখানে রীতিমতো শরণার্থী সংকট তৈরি হয়। ভারত মুক্তি বাহিনীকে সমর্থন দেয়। আশ্রয়, অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ দিয়ে সহায়তা করে। একপর্যায়ে পাকিস্তান ভারতীয় বিমান ঘাঁটিতে আকস্মিক হামলা চালায়।
এরপর ভারত পূর্ব পাকিস্তানে সর্বাত্মক আক্রমণ শুরু করে, পাশাপাশি পশ্চিম সীমান্তেও যুদ্ধ হয়। অবশ্য যুদ্ধ মাত্র ১৩ দিন স্থায়ী হয়েছিল।
১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পূর্ব পাকিস্তানে ভারতীয় সেনাবাহিনীর কাছে পাকিস্তান বাহিনী আত্মসমর্পণ করে। এর ফলে সার্বভৌম বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্ম হয়। এরপর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সিমলা চুক্তি (১৯৭২) স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তির আওতায় যুদ্ধবিরতি রেখাকে নিয়ন্ত্রণ রেখা হিসেবে পুনরায় সংজ্ঞায়িত করা হয়। দ্বিপক্ষীয় আলোচনার মাধ্যমে বিরোধ মীমাংসার ওপর জোর দেওয়া হয়।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানের পরাজয় এবং সিমলা চুক্তির মধ্য দিয়ে বড় ধরনের ভূ-রাজনৈতিক পরিবর্তন আসে। পাকিস্তান পূর্ব পাকিস্তানকে হারায় এবং বাংলাদেশ একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।
কার্গিল যুদ্ধ (১৯৯৯)
পাকিস্তানি সেনা ও বিদ্রোহীরা ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু ও কাশ্মীরের কার্গিল সেক্টরে অনুপ্রবেশ করে। তারা ভারতীয় সেনাবাহিনীর রসদ সরবরাহ লাইন ব্যাহত করতে কৌশলগত এলাকার নিয়ন্ত্রণ নেয়। ভারত অনুপ্রবেশকারীদের হঠাতে ‘অপারেশন বিজয়’ শুরু করে। তীব্র লড়াই হয়। কয়েক সপ্তাহ পর ভারত নিয়ন্ত্রণ পুনরুদ্ধার করে।
ভারত ১৯৯৯ সালের জুলাই মাসের মধ্যে হারানো বেশিরভাগ এলাকা পুনরুদ্ধার করে। যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক চাপের মুখে পাকিস্তান পিছু হটতে বাধ্য হয়। তবে এবার কোনো আনুষ্ঠানিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়নি।
এই যুদ্ধে ভারতের কৌশলগত বিজয় হয় এবং এই অঞ্চলে স্থিতাবস্থা পুনরুদ্ধার করে। নিয়ন্ত্রণ রেখা লঙ্ঘনের জন্য পাকিস্তান আন্তর্জাতিক সমালোচনার মুখে পড়ে।
অন্যান্য উল্লেখযোগ্য সংঘাত ও উত্তেজনা
সিয়াচেন সংঘাত (১৯৮৪–বর্তমান)
ভারত ১৯৮৪ সালে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার পর থেকে সিয়াচেন হিমবাহে (এটি বিশ্বের উচ্চতম যুদ্ধক্ষেত্র) দুই দেশই সামরিক উপস্থিতি বজায় রেখেছে। এখনো বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ ঘটে, তবে কোনো বড় যুদ্ধ হয়নি। হিমবাহের বেশিরভাগ অংশ ভারতের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
সীমান্ত পেরিয়ে সংঘর্ষ
নিয়ন্ত্রণ রেখায় ঘন ঘন যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন, বিশেষ করে ২০০০ এবং ২০১০–এর দশকে আর্টিলারি (ভারী গোলা) ও হালকা অস্ত্রের গোলাগুলি হয়। উত্তেজনার উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধির মধ্যে রয়েছে ২০১৬ সালের উরি হামলা এবং ২০১৯ সালের বালাকোট বিমান হামলা।
২০০১–০২ সালের অচলাবস্থা: ২০০১ সালে ভারতের জাতীয় সংসদে সন্ত্রাসী হামলা হয়। এই হামলার জন্য পাকিস্তান ভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তৈয়বা ও জয়শ-ই-মহাম্মদকে দায়ী করে ভারত। এই হামলায় এক জন সাধারণ নাগরিকসহ বারো জনের মৃত্যু হয়।
এই ঘটনার পর উভয় দেশ সীমান্তে সৈন্য সমাবেশ করে। কূটনৈতিক চাপে ১০ মাসের অচলাবস্থার অবসান ঘটে এবং যুদ্ধ এড়ানো যায়।
২০১৯ সালের পুলওয়ামা-বালাকোট সংকট: কাশ্মীরের পুলওয়ামায় আত্মঘাতী বোমা হামলায় ৪০ জন ভারতীয় সেনা নিহত হয়। এরপর ভারত পাকিস্তানের বালাকোটে কথিত সন্ত্রাসী ঘাঁটিতে বিমান হামলা চালিয়ে প্রতিশোধ নেয়। পাকিস্তানের বিমান বাহিনী পাল্টা জবাব দেয়, ফলে একটি সংক্ষিপ্ত বিমান যুদ্ধ হয়। কিন্তু পাকিস্তানের আকাশসীমায় প্রবেশ করতে গিয়ে একজন ভারতীয় পাইলট আটক হন। পরে অবশ্য তাঁকে মুক্তি দেওয়া হয়। ফলে উত্তেজনা প্রশমিত হয়।
এই ঘটনার প্রভাব সেভাবে আঞ্চলিক পরিস্থিতির কোনো পরিবর্তন ঘটায়নি। উভয় পক্ষই বিজয় দাবি করে।
পেহেলগাম হামলা (২০২৫)
গত ২২ এপ্রিল জম্মু–কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন নিহত হয়। তারা সবাই বেসামরিক নাগরিক এবং পর্যটক। এই হামলার জন্য পাকিস্তান ভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন লস্কর–ই–তৈয়বার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একটি সংগঠনকে দায়ী করছে ভারত। সেই সঙ্গে এতে পাকিস্তান রাষ্ট্রেরও হাত আছে বলে অভিযোগ করা হচ্ছে।
এই হামলার জেরে ভারত ও পাকিস্তান পাল্টাপাল্টি কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে। ভারত সিন্ধু পানি বণ্টন চুক্তি, বাণিজ্য, ভিসা ও আকাশসীমা ব্যবহারের অনুমতি স্থগিত করেছে। পাল্টা পাকিস্তানও সিমলা চুক্তি, বাণিজ্য, ভিসা ও আকাশসীমা ব্যবহারের অনুমতি স্থগিত করেছে। সীমান্তে নিয়ন্ত্রণ রেখায় যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে টানা আট দিন রাতের বেলা গোলাগুলি হয়েছে। তবে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। দুইপক্ষে টানটান উত্তেজনা বিরাজ করছে।
মোট কথা, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে বিরোধের মূলে কাশ্মীর। ধর্মীয় ও জাতীয়তাবাদী ভাবাবেগের মিশেলে এটি ক্রমেই অত্যন্ত জটিল আকার ধারণ করেছে। পাকিস্তান কাশ্মীরিদের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারের ওপর জোর দেয়। কিন্তু ভারত কাশ্মীরকে তার অবিচ্ছেদ্য অংশ দাবি করে।
এ নিয়ে উত্তেজনার মধ্যে ১৯৯৮ সালে উভয় দেশ পারমাণবিক শক্তিধর রাষ্ট্রে পরিণত হয়। এতে সংঘাতের ঝুঁকি আরও বেড়ে যায়। উভয়ই পারমাণবিক অস্ত্রধারী হওয়ায় পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধের সম্ভাবনা কমে এলেও ছায়াযুদ্ধ ও সন্ত্রাসবাদ দিন দিন বাড়ছে।
এই বিরোধ ও সংঘাত নিরসনে একাধিকবার চেষ্টা হয়েছে। জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক শক্তিগুলো মধ্যস্থতার চেষ্টা করেছে। এর মধ্যে লাহোর ঘোষণা (১৯৯৯) এবং আগ্রা শীর্ষ সম্মেলনের (২০০১) মতো শান্তি উদ্যোগগুলো অন্যতম। তবে পারস্পরিক অবিশ্বাস এবং বারবার সন্ত্রাসী হামলার মতো ঘটনার কারণে সব উদ্যোগ বারবার ভেস্তে গেছে।
সর্বশেষ চলতি বছর মাঝে মধ্যেই যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের কারণে নিয়ন্ত্রণ রেখা অস্থির হয়ে উঠেছে। ২০১৯ সালের সংকটের পর থেকে কোনো উল্লেখযোগ্য দ্বিপক্ষীয় আলোচনা না হওয়ায় কূটনৈতিক সম্পর্কও এখন বেশ দুর্বল। ২০১৯ সালে ভারত জম্মু ও কাশ্মীরের স্বায়ত্তশাসন বাতিল করে, এতে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে ওঠে। পাকিস্তানও ভারতের সঙ্গে দূরত্ব বাড়াতে থাকে। স্বায়ত্তশাসন বাতিলের পর ব্যাপক অভিযান ও তল্লাশি চালায় ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনী। ব্যাপক নিপীড়ন, উচ্ছেদ ও গ্রেপ্তার চলে। এরপর ভারত সরকার কাশ্মীর পরিস্থিতি নজিরবিহীনভাবে স্থিতিশীল হওয়ার দাবি করে আসছিল। কিন্তু ২২ এপ্রিলের ঘটনার পর সরকারি বয়ান সমালোচনার মুখে পড়েছে।
আরও খবর পড়ুন:
আজকের পত্রিকা ডেস্ক

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সংঘাতের ইতিহাস অনেক দীর্ঘ। এর মূলে রয়েছে কাশ্মীর ভূখণ্ড নিয়ে আঞ্চলিক বিরোধ, ধর্ম ও আদর্শিক পার্থক্য এবং ১৯৪৭ সালে ভারত ভাগের পরবর্তী ঐতিহাসিক ঘটনাবলী। আঞ্চলিক বিরোধ একাধিকবার সশস্ত্র যুদ্ধে গড়িয়েছে। আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপে সাময়িক সময়ের জন্য অস্ত্রবিরতি হলেও দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতা আসেনি। সীমান্তে অস্ত্র সংবরনের চুক্তি হলেও তা বারবার লঙ্ঘিত হয়েছে, ফলস্বরূপ অচলাবস্থা দীর্ঘায়িত হয়েছে। এখানে সংক্ষেপে ভারত–পাকিস্তান সংঘাতের চিত্র তুলে ধরা হলো:
প্রথম ভারত–পাকিস্তান যুদ্ধ (১৯৪৭–৪৮)
কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিরোধ থেকে এই সংঘাতের সূত্রপাত। তৎকালীন মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ কাশ্মীরের মহারাজা ছিলেন হিন্দু। পাকিস্তান সে সময় কাশ্মীরকে নিজেদের ভূখণ্ডের অংশ করতে স্থানীয় মিলিশিয়াদের সমর্থন দেয়। অন্যদিকে মহারাজা ভারতের সঙ্গে যোগ দেওয়ার পক্ষে অবস্থান নেন, ফলে ভারত সরসারি কাশ্মীরে হস্তক্ষেপ করে।
এর জেরে ভারতীয় বাহিনী এবং পাকিস্তান-সমর্থিত মিলিশিয়াদের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয়। পরে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীও যোগ দেয়।
জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় ১৯৪৯ সালের ১ জানুয়ারি যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়। সমঝোতার ভিত্তিতে কাশ্মীরকে বিভক্ত করে নিয়ন্ত্রণ রেখা (এলওসি) টানা হয়। ভারতের নিয়ন্ত্রণে থাকে জম্মু ও কাশ্মীরের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ, বাকি অংশ (আজাদ কাশ্মীর ও গিলগিট-বালটিস্তান) পাকিস্তানের নিয়ন্ত্রণে থাকে। কাশ্মীরের ভবিষ্যৎ নির্ধারণে জাতিসংঘ গণভোটের আহ্বান জানায়। কিন্তু ভারতের আপত্তিতে তা আর কখনো হয়নি।
ফলাফল দাঁড়ায়—অচলাবস্থা। সেই থেকে কাশ্মীর একটি সংঘাতপূর্ণ এলাকা। ভারত ও পাকিস্তানের বিরোধের প্রধান উপাদান হয়ে রয়েছে এই ভূখণ্ড।
দ্বিতীয় ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ (১৯৬৫)
পাকিস্তান ‘অপারেশন জিব্রাল্টার’ শুরু করে। ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু ও কাশ্মীরে অনুপ্রবেশ করে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সদস্যরা স্থানীয়দের ছদ্মবেশে সেখানে বিদ্রোহ উসকে দেওয়ার চেষ্টা করে। ১৯৬২ সালে চীনের সঙ্গে যুদ্ধে হারের পর ভারত দুর্বল হয়ে পড়েছে—এই বিশ্বাস থেকে পাকিস্তান কাশ্মীরের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার আশা দেখতে পায়।
দ্রুতই সংঘাত পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধে রূপ নেয়। কাশ্মীর ও পাঞ্জাবে যুদ্ধ শুরু হয়। ভারত পাল্টা আক্রমণ চালায় এবং লাহোর ও সিয়ালকোটের দিকে অগ্রসর হয়।
এবারও জাতিসংঘের হস্তক্ষেপে ১৯৬৫ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর যুদ্ধবিরতি হয়। তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যস্থতায় তাসখন্দ চুক্তি (১৯৬৬) স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তির আওতায় সামান্য সমন্বয়ের মাধ্যমে যুদ্ধ-পূর্ববর্তী সীমানা (নিয়ন্ত্রণ রেখা) পুনরুদ্ধার করা হয়। ফের অচলাবস্থা শুরু হয়। কিন্তু তাতে আঞ্চলিক পরিস্থিতির কোনো উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হয়নি। উভয় পক্ষই নিজেদের বিজয়ী দাবি করে।
তৃতীয় ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ (১৯৭১)
তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে (বর্তমান বাংলাদেশ) পাকিস্তানের সেনাবাহিনী বেসামরিক জনগণের ওপর নৃশংস আক্রমণ করে। ভয়াবহ সামরিক দমনপীড়নে লাখ লাখ মানুষ সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে আশ্রয় নেয়। সেখানে রীতিমতো শরণার্থী সংকট তৈরি হয়। ভারত মুক্তি বাহিনীকে সমর্থন দেয়। আশ্রয়, অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ দিয়ে সহায়তা করে। একপর্যায়ে পাকিস্তান ভারতীয় বিমান ঘাঁটিতে আকস্মিক হামলা চালায়।
এরপর ভারত পূর্ব পাকিস্তানে সর্বাত্মক আক্রমণ শুরু করে, পাশাপাশি পশ্চিম সীমান্তেও যুদ্ধ হয়। অবশ্য যুদ্ধ মাত্র ১৩ দিন স্থায়ী হয়েছিল।
১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পূর্ব পাকিস্তানে ভারতীয় সেনাবাহিনীর কাছে পাকিস্তান বাহিনী আত্মসমর্পণ করে। এর ফলে সার্বভৌম বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্ম হয়। এরপর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সিমলা চুক্তি (১৯৭২) স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তির আওতায় যুদ্ধবিরতি রেখাকে নিয়ন্ত্রণ রেখা হিসেবে পুনরায় সংজ্ঞায়িত করা হয়। দ্বিপক্ষীয় আলোচনার মাধ্যমে বিরোধ মীমাংসার ওপর জোর দেওয়া হয়।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানের পরাজয় এবং সিমলা চুক্তির মধ্য দিয়ে বড় ধরনের ভূ-রাজনৈতিক পরিবর্তন আসে। পাকিস্তান পূর্ব পাকিস্তানকে হারায় এবং বাংলাদেশ একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।
কার্গিল যুদ্ধ (১৯৯৯)
পাকিস্তানি সেনা ও বিদ্রোহীরা ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু ও কাশ্মীরের কার্গিল সেক্টরে অনুপ্রবেশ করে। তারা ভারতীয় সেনাবাহিনীর রসদ সরবরাহ লাইন ব্যাহত করতে কৌশলগত এলাকার নিয়ন্ত্রণ নেয়। ভারত অনুপ্রবেশকারীদের হঠাতে ‘অপারেশন বিজয়’ শুরু করে। তীব্র লড়াই হয়। কয়েক সপ্তাহ পর ভারত নিয়ন্ত্রণ পুনরুদ্ধার করে।
ভারত ১৯৯৯ সালের জুলাই মাসের মধ্যে হারানো বেশিরভাগ এলাকা পুনরুদ্ধার করে। যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক চাপের মুখে পাকিস্তান পিছু হটতে বাধ্য হয়। তবে এবার কোনো আনুষ্ঠানিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়নি।
এই যুদ্ধে ভারতের কৌশলগত বিজয় হয় এবং এই অঞ্চলে স্থিতাবস্থা পুনরুদ্ধার করে। নিয়ন্ত্রণ রেখা লঙ্ঘনের জন্য পাকিস্তান আন্তর্জাতিক সমালোচনার মুখে পড়ে।
অন্যান্য উল্লেখযোগ্য সংঘাত ও উত্তেজনা
সিয়াচেন সংঘাত (১৯৮৪–বর্তমান)
ভারত ১৯৮৪ সালে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার পর থেকে সিয়াচেন হিমবাহে (এটি বিশ্বের উচ্চতম যুদ্ধক্ষেত্র) দুই দেশই সামরিক উপস্থিতি বজায় রেখেছে। এখনো বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ ঘটে, তবে কোনো বড় যুদ্ধ হয়নি। হিমবাহের বেশিরভাগ অংশ ভারতের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
সীমান্ত পেরিয়ে সংঘর্ষ
নিয়ন্ত্রণ রেখায় ঘন ঘন যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন, বিশেষ করে ২০০০ এবং ২০১০–এর দশকে আর্টিলারি (ভারী গোলা) ও হালকা অস্ত্রের গোলাগুলি হয়। উত্তেজনার উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধির মধ্যে রয়েছে ২০১৬ সালের উরি হামলা এবং ২০১৯ সালের বালাকোট বিমান হামলা।
২০০১–০২ সালের অচলাবস্থা: ২০০১ সালে ভারতের জাতীয় সংসদে সন্ত্রাসী হামলা হয়। এই হামলার জন্য পাকিস্তান ভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তৈয়বা ও জয়শ-ই-মহাম্মদকে দায়ী করে ভারত। এই হামলায় এক জন সাধারণ নাগরিকসহ বারো জনের মৃত্যু হয়।
এই ঘটনার পর উভয় দেশ সীমান্তে সৈন্য সমাবেশ করে। কূটনৈতিক চাপে ১০ মাসের অচলাবস্থার অবসান ঘটে এবং যুদ্ধ এড়ানো যায়।
২০১৯ সালের পুলওয়ামা-বালাকোট সংকট: কাশ্মীরের পুলওয়ামায় আত্মঘাতী বোমা হামলায় ৪০ জন ভারতীয় সেনা নিহত হয়। এরপর ভারত পাকিস্তানের বালাকোটে কথিত সন্ত্রাসী ঘাঁটিতে বিমান হামলা চালিয়ে প্রতিশোধ নেয়। পাকিস্তানের বিমান বাহিনী পাল্টা জবাব দেয়, ফলে একটি সংক্ষিপ্ত বিমান যুদ্ধ হয়। কিন্তু পাকিস্তানের আকাশসীমায় প্রবেশ করতে গিয়ে একজন ভারতীয় পাইলট আটক হন। পরে অবশ্য তাঁকে মুক্তি দেওয়া হয়। ফলে উত্তেজনা প্রশমিত হয়।
এই ঘটনার প্রভাব সেভাবে আঞ্চলিক পরিস্থিতির কোনো পরিবর্তন ঘটায়নি। উভয় পক্ষই বিজয় দাবি করে।
পেহেলগাম হামলা (২০২৫)
গত ২২ এপ্রিল জম্মু–কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন নিহত হয়। তারা সবাই বেসামরিক নাগরিক এবং পর্যটক। এই হামলার জন্য পাকিস্তান ভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন লস্কর–ই–তৈয়বার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একটি সংগঠনকে দায়ী করছে ভারত। সেই সঙ্গে এতে পাকিস্তান রাষ্ট্রেরও হাত আছে বলে অভিযোগ করা হচ্ছে।
এই হামলার জেরে ভারত ও পাকিস্তান পাল্টাপাল্টি কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে। ভারত সিন্ধু পানি বণ্টন চুক্তি, বাণিজ্য, ভিসা ও আকাশসীমা ব্যবহারের অনুমতি স্থগিত করেছে। পাল্টা পাকিস্তানও সিমলা চুক্তি, বাণিজ্য, ভিসা ও আকাশসীমা ব্যবহারের অনুমতি স্থগিত করেছে। সীমান্তে নিয়ন্ত্রণ রেখায় যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে টানা আট দিন রাতের বেলা গোলাগুলি হয়েছে। তবে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। দুইপক্ষে টানটান উত্তেজনা বিরাজ করছে।
মোট কথা, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে বিরোধের মূলে কাশ্মীর। ধর্মীয় ও জাতীয়তাবাদী ভাবাবেগের মিশেলে এটি ক্রমেই অত্যন্ত জটিল আকার ধারণ করেছে। পাকিস্তান কাশ্মীরিদের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারের ওপর জোর দেয়। কিন্তু ভারত কাশ্মীরকে তার অবিচ্ছেদ্য অংশ দাবি করে।
এ নিয়ে উত্তেজনার মধ্যে ১৯৯৮ সালে উভয় দেশ পারমাণবিক শক্তিধর রাষ্ট্রে পরিণত হয়। এতে সংঘাতের ঝুঁকি আরও বেড়ে যায়। উভয়ই পারমাণবিক অস্ত্রধারী হওয়ায় পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধের সম্ভাবনা কমে এলেও ছায়াযুদ্ধ ও সন্ত্রাসবাদ দিন দিন বাড়ছে।
এই বিরোধ ও সংঘাত নিরসনে একাধিকবার চেষ্টা হয়েছে। জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক শক্তিগুলো মধ্যস্থতার চেষ্টা করেছে। এর মধ্যে লাহোর ঘোষণা (১৯৯৯) এবং আগ্রা শীর্ষ সম্মেলনের (২০০১) মতো শান্তি উদ্যোগগুলো অন্যতম। তবে পারস্পরিক অবিশ্বাস এবং বারবার সন্ত্রাসী হামলার মতো ঘটনার কারণে সব উদ্যোগ বারবার ভেস্তে গেছে।
সর্বশেষ চলতি বছর মাঝে মধ্যেই যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের কারণে নিয়ন্ত্রণ রেখা অস্থির হয়ে উঠেছে। ২০১৯ সালের সংকটের পর থেকে কোনো উল্লেখযোগ্য দ্বিপক্ষীয় আলোচনা না হওয়ায় কূটনৈতিক সম্পর্কও এখন বেশ দুর্বল। ২০১৯ সালে ভারত জম্মু ও কাশ্মীরের স্বায়ত্তশাসন বাতিল করে, এতে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে ওঠে। পাকিস্তানও ভারতের সঙ্গে দূরত্ব বাড়াতে থাকে। স্বায়ত্তশাসন বাতিলের পর ব্যাপক অভিযান ও তল্লাশি চালায় ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনী। ব্যাপক নিপীড়ন, উচ্ছেদ ও গ্রেপ্তার চলে। এরপর ভারত সরকার কাশ্মীর পরিস্থিতি নজিরবিহীনভাবে স্থিতিশীল হওয়ার দাবি করে আসছিল। কিন্তু ২২ এপ্রিলের ঘটনার পর সরকারি বয়ান সমালোচনার মুখে পড়েছে।
আরও খবর পড়ুন:

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সংঘাতের ইতিহাস অনেক দীর্ঘ। এর মূলে রয়েছে কাশ্মীর ভূখণ্ড নিয়ে আঞ্চলিক বিরোধ, ধর্ম ও আদর্শিক পার্থক্য এবং ১৯৪৭ সালে ভারত ভাগের পরবর্তী ঐতিহাসিক ঘটনাবলী। আঞ্চলিক বিরোধ একাধিকবার সশস্ত্র যুদ্ধে গড়িয়েছে। আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপে সাময়িক সময়ের জন্য অস্ত্রবিরতি হলেও দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতা আসেনি। সীমান্তে অস্ত্র সংবরনের চুক্তি হলেও তা বারবার লঙ্ঘিত হয়েছে, ফলস্বরূপ অচলাবস্থা দীর্ঘায়িত হয়েছে। এখানে সংক্ষেপে ভারত–পাকিস্তান সংঘাতের চিত্র তুলে ধরা হলো:
প্রথম ভারত–পাকিস্তান যুদ্ধ (১৯৪৭–৪৮)
কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিরোধ থেকে এই সংঘাতের সূত্রপাত। তৎকালীন মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ কাশ্মীরের মহারাজা ছিলেন হিন্দু। পাকিস্তান সে সময় কাশ্মীরকে নিজেদের ভূখণ্ডের অংশ করতে স্থানীয় মিলিশিয়াদের সমর্থন দেয়। অন্যদিকে মহারাজা ভারতের সঙ্গে যোগ দেওয়ার পক্ষে অবস্থান নেন, ফলে ভারত সরসারি কাশ্মীরে হস্তক্ষেপ করে।
এর জেরে ভারতীয় বাহিনী এবং পাকিস্তান-সমর্থিত মিলিশিয়াদের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয়। পরে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীও যোগ দেয়।
জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় ১৯৪৯ সালের ১ জানুয়ারি যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়। সমঝোতার ভিত্তিতে কাশ্মীরকে বিভক্ত করে নিয়ন্ত্রণ রেখা (এলওসি) টানা হয়। ভারতের নিয়ন্ত্রণে থাকে জম্মু ও কাশ্মীরের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ, বাকি অংশ (আজাদ কাশ্মীর ও গিলগিট-বালটিস্তান) পাকিস্তানের নিয়ন্ত্রণে থাকে। কাশ্মীরের ভবিষ্যৎ নির্ধারণে জাতিসংঘ গণভোটের আহ্বান জানায়। কিন্তু ভারতের আপত্তিতে তা আর কখনো হয়নি।
ফলাফল দাঁড়ায়—অচলাবস্থা। সেই থেকে কাশ্মীর একটি সংঘাতপূর্ণ এলাকা। ভারত ও পাকিস্তানের বিরোধের প্রধান উপাদান হয়ে রয়েছে এই ভূখণ্ড।
দ্বিতীয় ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ (১৯৬৫)
পাকিস্তান ‘অপারেশন জিব্রাল্টার’ শুরু করে। ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু ও কাশ্মীরে অনুপ্রবেশ করে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সদস্যরা স্থানীয়দের ছদ্মবেশে সেখানে বিদ্রোহ উসকে দেওয়ার চেষ্টা করে। ১৯৬২ সালে চীনের সঙ্গে যুদ্ধে হারের পর ভারত দুর্বল হয়ে পড়েছে—এই বিশ্বাস থেকে পাকিস্তান কাশ্মীরের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার আশা দেখতে পায়।
দ্রুতই সংঘাত পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধে রূপ নেয়। কাশ্মীর ও পাঞ্জাবে যুদ্ধ শুরু হয়। ভারত পাল্টা আক্রমণ চালায় এবং লাহোর ও সিয়ালকোটের দিকে অগ্রসর হয়।
এবারও জাতিসংঘের হস্তক্ষেপে ১৯৬৫ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর যুদ্ধবিরতি হয়। তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যস্থতায় তাসখন্দ চুক্তি (১৯৬৬) স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তির আওতায় সামান্য সমন্বয়ের মাধ্যমে যুদ্ধ-পূর্ববর্তী সীমানা (নিয়ন্ত্রণ রেখা) পুনরুদ্ধার করা হয়। ফের অচলাবস্থা শুরু হয়। কিন্তু তাতে আঞ্চলিক পরিস্থিতির কোনো উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হয়নি। উভয় পক্ষই নিজেদের বিজয়ী দাবি করে।
তৃতীয় ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ (১৯৭১)
তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে (বর্তমান বাংলাদেশ) পাকিস্তানের সেনাবাহিনী বেসামরিক জনগণের ওপর নৃশংস আক্রমণ করে। ভয়াবহ সামরিক দমনপীড়নে লাখ লাখ মানুষ সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে আশ্রয় নেয়। সেখানে রীতিমতো শরণার্থী সংকট তৈরি হয়। ভারত মুক্তি বাহিনীকে সমর্থন দেয়। আশ্রয়, অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ দিয়ে সহায়তা করে। একপর্যায়ে পাকিস্তান ভারতীয় বিমান ঘাঁটিতে আকস্মিক হামলা চালায়।
এরপর ভারত পূর্ব পাকিস্তানে সর্বাত্মক আক্রমণ শুরু করে, পাশাপাশি পশ্চিম সীমান্তেও যুদ্ধ হয়। অবশ্য যুদ্ধ মাত্র ১৩ দিন স্থায়ী হয়েছিল।
১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পূর্ব পাকিস্তানে ভারতীয় সেনাবাহিনীর কাছে পাকিস্তান বাহিনী আত্মসমর্পণ করে। এর ফলে সার্বভৌম বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্ম হয়। এরপর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সিমলা চুক্তি (১৯৭২) স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তির আওতায় যুদ্ধবিরতি রেখাকে নিয়ন্ত্রণ রেখা হিসেবে পুনরায় সংজ্ঞায়িত করা হয়। দ্বিপক্ষীয় আলোচনার মাধ্যমে বিরোধ মীমাংসার ওপর জোর দেওয়া হয়।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানের পরাজয় এবং সিমলা চুক্তির মধ্য দিয়ে বড় ধরনের ভূ-রাজনৈতিক পরিবর্তন আসে। পাকিস্তান পূর্ব পাকিস্তানকে হারায় এবং বাংলাদেশ একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।
কার্গিল যুদ্ধ (১৯৯৯)
পাকিস্তানি সেনা ও বিদ্রোহীরা ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু ও কাশ্মীরের কার্গিল সেক্টরে অনুপ্রবেশ করে। তারা ভারতীয় সেনাবাহিনীর রসদ সরবরাহ লাইন ব্যাহত করতে কৌশলগত এলাকার নিয়ন্ত্রণ নেয়। ভারত অনুপ্রবেশকারীদের হঠাতে ‘অপারেশন বিজয়’ শুরু করে। তীব্র লড়াই হয়। কয়েক সপ্তাহ পর ভারত নিয়ন্ত্রণ পুনরুদ্ধার করে।
ভারত ১৯৯৯ সালের জুলাই মাসের মধ্যে হারানো বেশিরভাগ এলাকা পুনরুদ্ধার করে। যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক চাপের মুখে পাকিস্তান পিছু হটতে বাধ্য হয়। তবে এবার কোনো আনুষ্ঠানিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়নি।
এই যুদ্ধে ভারতের কৌশলগত বিজয় হয় এবং এই অঞ্চলে স্থিতাবস্থা পুনরুদ্ধার করে। নিয়ন্ত্রণ রেখা লঙ্ঘনের জন্য পাকিস্তান আন্তর্জাতিক সমালোচনার মুখে পড়ে।
অন্যান্য উল্লেখযোগ্য সংঘাত ও উত্তেজনা
সিয়াচেন সংঘাত (১৯৮৪–বর্তমান)
ভারত ১৯৮৪ সালে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার পর থেকে সিয়াচেন হিমবাহে (এটি বিশ্বের উচ্চতম যুদ্ধক্ষেত্র) দুই দেশই সামরিক উপস্থিতি বজায় রেখেছে। এখনো বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ ঘটে, তবে কোনো বড় যুদ্ধ হয়নি। হিমবাহের বেশিরভাগ অংশ ভারতের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
সীমান্ত পেরিয়ে সংঘর্ষ
নিয়ন্ত্রণ রেখায় ঘন ঘন যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন, বিশেষ করে ২০০০ এবং ২০১০–এর দশকে আর্টিলারি (ভারী গোলা) ও হালকা অস্ত্রের গোলাগুলি হয়। উত্তেজনার উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধির মধ্যে রয়েছে ২০১৬ সালের উরি হামলা এবং ২০১৯ সালের বালাকোট বিমান হামলা।
২০০১–০২ সালের অচলাবস্থা: ২০০১ সালে ভারতের জাতীয় সংসদে সন্ত্রাসী হামলা হয়। এই হামলার জন্য পাকিস্তান ভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তৈয়বা ও জয়শ-ই-মহাম্মদকে দায়ী করে ভারত। এই হামলায় এক জন সাধারণ নাগরিকসহ বারো জনের মৃত্যু হয়।
এই ঘটনার পর উভয় দেশ সীমান্তে সৈন্য সমাবেশ করে। কূটনৈতিক চাপে ১০ মাসের অচলাবস্থার অবসান ঘটে এবং যুদ্ধ এড়ানো যায়।
২০১৯ সালের পুলওয়ামা-বালাকোট সংকট: কাশ্মীরের পুলওয়ামায় আত্মঘাতী বোমা হামলায় ৪০ জন ভারতীয় সেনা নিহত হয়। এরপর ভারত পাকিস্তানের বালাকোটে কথিত সন্ত্রাসী ঘাঁটিতে বিমান হামলা চালিয়ে প্রতিশোধ নেয়। পাকিস্তানের বিমান বাহিনী পাল্টা জবাব দেয়, ফলে একটি সংক্ষিপ্ত বিমান যুদ্ধ হয়। কিন্তু পাকিস্তানের আকাশসীমায় প্রবেশ করতে গিয়ে একজন ভারতীয় পাইলট আটক হন। পরে অবশ্য তাঁকে মুক্তি দেওয়া হয়। ফলে উত্তেজনা প্রশমিত হয়।
এই ঘটনার প্রভাব সেভাবে আঞ্চলিক পরিস্থিতির কোনো পরিবর্তন ঘটায়নি। উভয় পক্ষই বিজয় দাবি করে।
পেহেলগাম হামলা (২০২৫)
গত ২২ এপ্রিল জম্মু–কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন নিহত হয়। তারা সবাই বেসামরিক নাগরিক এবং পর্যটক। এই হামলার জন্য পাকিস্তান ভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন লস্কর–ই–তৈয়বার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একটি সংগঠনকে দায়ী করছে ভারত। সেই সঙ্গে এতে পাকিস্তান রাষ্ট্রেরও হাত আছে বলে অভিযোগ করা হচ্ছে।
এই হামলার জেরে ভারত ও পাকিস্তান পাল্টাপাল্টি কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে। ভারত সিন্ধু পানি বণ্টন চুক্তি, বাণিজ্য, ভিসা ও আকাশসীমা ব্যবহারের অনুমতি স্থগিত করেছে। পাল্টা পাকিস্তানও সিমলা চুক্তি, বাণিজ্য, ভিসা ও আকাশসীমা ব্যবহারের অনুমতি স্থগিত করেছে। সীমান্তে নিয়ন্ত্রণ রেখায় যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে টানা আট দিন রাতের বেলা গোলাগুলি হয়েছে। তবে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। দুইপক্ষে টানটান উত্তেজনা বিরাজ করছে।
মোট কথা, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে বিরোধের মূলে কাশ্মীর। ধর্মীয় ও জাতীয়তাবাদী ভাবাবেগের মিশেলে এটি ক্রমেই অত্যন্ত জটিল আকার ধারণ করেছে। পাকিস্তান কাশ্মীরিদের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারের ওপর জোর দেয়। কিন্তু ভারত কাশ্মীরকে তার অবিচ্ছেদ্য অংশ দাবি করে।
এ নিয়ে উত্তেজনার মধ্যে ১৯৯৮ সালে উভয় দেশ পারমাণবিক শক্তিধর রাষ্ট্রে পরিণত হয়। এতে সংঘাতের ঝুঁকি আরও বেড়ে যায়। উভয়ই পারমাণবিক অস্ত্রধারী হওয়ায় পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধের সম্ভাবনা কমে এলেও ছায়াযুদ্ধ ও সন্ত্রাসবাদ দিন দিন বাড়ছে।
এই বিরোধ ও সংঘাত নিরসনে একাধিকবার চেষ্টা হয়েছে। জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক শক্তিগুলো মধ্যস্থতার চেষ্টা করেছে। এর মধ্যে লাহোর ঘোষণা (১৯৯৯) এবং আগ্রা শীর্ষ সম্মেলনের (২০০১) মতো শান্তি উদ্যোগগুলো অন্যতম। তবে পারস্পরিক অবিশ্বাস এবং বারবার সন্ত্রাসী হামলার মতো ঘটনার কারণে সব উদ্যোগ বারবার ভেস্তে গেছে।
সর্বশেষ চলতি বছর মাঝে মধ্যেই যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের কারণে নিয়ন্ত্রণ রেখা অস্থির হয়ে উঠেছে। ২০১৯ সালের সংকটের পর থেকে কোনো উল্লেখযোগ্য দ্বিপক্ষীয় আলোচনা না হওয়ায় কূটনৈতিক সম্পর্কও এখন বেশ দুর্বল। ২০১৯ সালে ভারত জম্মু ও কাশ্মীরের স্বায়ত্তশাসন বাতিল করে, এতে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে ওঠে। পাকিস্তানও ভারতের সঙ্গে দূরত্ব বাড়াতে থাকে। স্বায়ত্তশাসন বাতিলের পর ব্যাপক অভিযান ও তল্লাশি চালায় ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনী। ব্যাপক নিপীড়ন, উচ্ছেদ ও গ্রেপ্তার চলে। এরপর ভারত সরকার কাশ্মীর পরিস্থিতি নজিরবিহীনভাবে স্থিতিশীল হওয়ার দাবি করে আসছিল। কিন্তু ২২ এপ্রিলের ঘটনার পর সরকারি বয়ান সমালোচনার মুখে পড়েছে।
আরও খবর পড়ুন:

মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।
৫ ঘণ্টা আগে
নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এর পেছন
১০ ঘণ্টা আগে
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
৫ দিন আগে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
৮ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

বড়দিনের রাতে নাইজেরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় সোকোটো রাজ্যে মার্কিন বাহিনীর বিমান হামলা বিশ্বজুড়ে নতুন করে আলোচনায় নিয়ে এসেছে জঙ্গিগোষ্ঠী ‘ইসলামিক স্টেট’ বা আইএসকে। মধ্যপ্রাচ্যে পরাজয়ের পর গোষ্ঠীটি এখন আফ্রিকায় তাদের জাল বিস্তার করছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছেন, নাইজেরিয়ায় খ্রিষ্টানদের লক্ষ্য করে নৃশংস হত্যাযজ্ঞ চালানোর কারণে তিনি এ হামলার নির্দেশ দিয়েছেন।
ইসলামিক স্টেট কী
ইসলামিক স্টেট (যাকে আইএসআইএস বা দায়েশ নামেও ডাকা হয়) একটি সুন্নি চরমপন্থী গোষ্ঠী। ইরাক ও সিরিয়ায় উত্থান ঘটিয়ে তারা একসময় ‘খিলাফত’ ঘোষণা করেছিল। এরপর ২০১৪ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে ইরাক ও সিরিয়ার বিশাল অংশ তাদের দখলে ছিল। তখন তারা কঠোর শরিয়াহ আইন জারি করে এবং প্রকাশ্যে শিরশ্ছেদ ও নির্যাতনের মতো নৃশংসতা চালিয়ে বিশ্বকে স্তব্ধ করে দেয়।
পরে যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন বহুজাতিক বাহিনীর ক্রমাগত অভিযানের মুখে ইরাকের মসুল ও সিরিয়ার রাক্কায় তাদের পতন ঘটে। তবে সংগঠনটি পুরোপুরি নির্মূল না হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে।
বর্তমানে তারা কোথায় সক্রিয়
মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।
এশিয়া মহাদেশের মধ্যে আফগানিস্তান ও পাকিস্তানে ‘আইএস-খোরাসান’ নামে তারা সক্রিয়। এ ছাড়া ফিলিপাইনের মিন্দানাও অঞ্চলেও তাদের অনুসারী রয়েছে। জাতিসংঘ মনে করে, বর্তমানে তাদের অন্তত ১০ হাজার সক্রিয় সদস্য রয়েছে।
লক্ষ্য ও বর্তমান কৌশল
আইএসের মূল লক্ষ্য তাদের চরমপন্থী মতাদর্শ বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে দেওয়া। তবে সরাসরি যুদ্ধের বদলে তারা এখন কিছু নতুন কৌশল নিয়েছে। যেমন, অ্যাফিলিয়েট নেটওয়ার্ক—নিজেরা সরাসরি যুক্ত না হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানীয় জঙ্গিগোষ্ঠীকে নিজেদের ‘শাখা’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে প্রভাব বিস্তার করা। লোন উলফ অ্যাটাক—সংঘবদ্ধ হামলার পরিবর্তে একজন বা দুই ব্যক্তির সমন্বয়ে বড় ধরনের হামলা। সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই বিচে ইহুদিদের এক অনুষ্ঠানে বন্দুক হামলার পেছনে আইএসের এই কৌশল ছিল বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। অনলাইন প্রচারণা—টেলিগ্রামের মতো প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে আতঙ্ক ছড়ানো এবং নতুন সদস্য সংগ্রহ করা।
মার্কিন সামরিক বাহিনীর মতে, আইএসের বর্তমান বিশ্ব নেতা হলেন আবদুলকাদির মুমিন। তিনি বর্তমানে আইএসের সোমালিয়া শাখার প্রধান।
আইএসের সাম্প্রতিক কিছু বড় হামলা
কঙ্গোতে চলতি বছরের গত অক্টোবরে একটি গির্জায় নৈশকালীন প্রার্থনার সময় হামলায় ৪৩ জন নিহত হয়, যার দায় স্বীকার করে আইএস। গত ফেব্রুয়ারিতে সোমালিয়ায় একাধিক সামরিক ঘাঁটিতে আত্মঘাতী গাড়িবোমা হামলা চালায় আইএস। চলতি মাসে সিরিয়ায় দুই মার্কিন সেনা ও একজন দোভাষী নিহত হন, যার নেপথ্যে আইএসের হাত রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ ঘটনার পর চলতি সপ্তাহে সিরিয়ায় আইএসের ঘাঁটি লক্ষ্য করে ব্যাপক হামলা চালিয়েছে মার্কিন সামরিক বাহিনী।
নাইজেরিয়ায় মার্কিন হামলা এটাই প্রমাণ করে যে, আইএস এখন আর কেবল মধ্যপ্রাচ্যের সমস্যা নয়। বিশেষ করে, সাহেল ও পশ্চিম আফ্রিকায় তাদের ক্রমবর্ধমান শক্তি বিশ্ব নিরাপত্তার জন্য নতুন এক চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রয়টার্স থেকে সংক্ষেপে অনূদিত

বড়দিনের রাতে নাইজেরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় সোকোটো রাজ্যে মার্কিন বাহিনীর বিমান হামলা বিশ্বজুড়ে নতুন করে আলোচনায় নিয়ে এসেছে জঙ্গিগোষ্ঠী ‘ইসলামিক স্টেট’ বা আইএসকে। মধ্যপ্রাচ্যে পরাজয়ের পর গোষ্ঠীটি এখন আফ্রিকায় তাদের জাল বিস্তার করছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছেন, নাইজেরিয়ায় খ্রিষ্টানদের লক্ষ্য করে নৃশংস হত্যাযজ্ঞ চালানোর কারণে তিনি এ হামলার নির্দেশ দিয়েছেন।
ইসলামিক স্টেট কী
ইসলামিক স্টেট (যাকে আইএসআইএস বা দায়েশ নামেও ডাকা হয়) একটি সুন্নি চরমপন্থী গোষ্ঠী। ইরাক ও সিরিয়ায় উত্থান ঘটিয়ে তারা একসময় ‘খিলাফত’ ঘোষণা করেছিল। এরপর ২০১৪ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে ইরাক ও সিরিয়ার বিশাল অংশ তাদের দখলে ছিল। তখন তারা কঠোর শরিয়াহ আইন জারি করে এবং প্রকাশ্যে শিরশ্ছেদ ও নির্যাতনের মতো নৃশংসতা চালিয়ে বিশ্বকে স্তব্ধ করে দেয়।
পরে যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন বহুজাতিক বাহিনীর ক্রমাগত অভিযানের মুখে ইরাকের মসুল ও সিরিয়ার রাক্কায় তাদের পতন ঘটে। তবে সংগঠনটি পুরোপুরি নির্মূল না হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে।
বর্তমানে তারা কোথায় সক্রিয়
মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।
এশিয়া মহাদেশের মধ্যে আফগানিস্তান ও পাকিস্তানে ‘আইএস-খোরাসান’ নামে তারা সক্রিয়। এ ছাড়া ফিলিপাইনের মিন্দানাও অঞ্চলেও তাদের অনুসারী রয়েছে। জাতিসংঘ মনে করে, বর্তমানে তাদের অন্তত ১০ হাজার সক্রিয় সদস্য রয়েছে।
লক্ষ্য ও বর্তমান কৌশল
আইএসের মূল লক্ষ্য তাদের চরমপন্থী মতাদর্শ বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে দেওয়া। তবে সরাসরি যুদ্ধের বদলে তারা এখন কিছু নতুন কৌশল নিয়েছে। যেমন, অ্যাফিলিয়েট নেটওয়ার্ক—নিজেরা সরাসরি যুক্ত না হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানীয় জঙ্গিগোষ্ঠীকে নিজেদের ‘শাখা’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে প্রভাব বিস্তার করা। লোন উলফ অ্যাটাক—সংঘবদ্ধ হামলার পরিবর্তে একজন বা দুই ব্যক্তির সমন্বয়ে বড় ধরনের হামলা। সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই বিচে ইহুদিদের এক অনুষ্ঠানে বন্দুক হামলার পেছনে আইএসের এই কৌশল ছিল বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। অনলাইন প্রচারণা—টেলিগ্রামের মতো প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে আতঙ্ক ছড়ানো এবং নতুন সদস্য সংগ্রহ করা।
মার্কিন সামরিক বাহিনীর মতে, আইএসের বর্তমান বিশ্ব নেতা হলেন আবদুলকাদির মুমিন। তিনি বর্তমানে আইএসের সোমালিয়া শাখার প্রধান।
আইএসের সাম্প্রতিক কিছু বড় হামলা
কঙ্গোতে চলতি বছরের গত অক্টোবরে একটি গির্জায় নৈশকালীন প্রার্থনার সময় হামলায় ৪৩ জন নিহত হয়, যার দায় স্বীকার করে আইএস। গত ফেব্রুয়ারিতে সোমালিয়ায় একাধিক সামরিক ঘাঁটিতে আত্মঘাতী গাড়িবোমা হামলা চালায় আইএস। চলতি মাসে সিরিয়ায় দুই মার্কিন সেনা ও একজন দোভাষী নিহত হন, যার নেপথ্যে আইএসের হাত রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ ঘটনার পর চলতি সপ্তাহে সিরিয়ায় আইএসের ঘাঁটি লক্ষ্য করে ব্যাপক হামলা চালিয়েছে মার্কিন সামরিক বাহিনী।
নাইজেরিয়ায় মার্কিন হামলা এটাই প্রমাণ করে যে, আইএস এখন আর কেবল মধ্যপ্রাচ্যের সমস্যা নয়। বিশেষ করে, সাহেল ও পশ্চিম আফ্রিকায় তাদের ক্রমবর্ধমান শক্তি বিশ্ব নিরাপত্তার জন্য নতুন এক চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রয়টার্স থেকে সংক্ষেপে অনূদিত

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সংঘাতের ইতিহাস অনেক দীর্ঘ। এর মূলে রয়েছে কাশ্মীর ভূখণ্ড নিয়ে আঞ্চলিক বিরোধ, ধর্ম ও আদর্শিক পার্থক্য এবং ১৯৪৭ সালে ভারত ভাগের পরবর্তী ঐতিহাসিক ঘটনাবলী। আঞ্চলিক বিরোধ একাধিকবার সশস্ত্র যুদ্ধে গড়িয়েছে। আন্তর্জতিক হস্তক্ষেপে সাময়িক সময়ের জন্য অস্ত্রবিরতি হলেও দীর্ঘমেয়াদি
০৩ মে ২০২৫
নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এর পেছন
১০ ঘণ্টা আগে
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
৫ দিন আগে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
৮ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

নাইজেরিয়ার সরকার খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়ন ঠেকাতে ব্যর্থ—এমন অভিযোগে কয়েক সপ্তাহ ধরে সমালোচনার পর অবশেষে বড়দিনের রাতে (২৫ ডিসেম্বর) পশ্চিম আফ্রিকার দেশটিতে বিমান হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। সরাসরি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে নাইজেরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় সোকোটো রাজ্যে এ হামলা চালানো হয়।
ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ান বলছে, ট্রাম্প প্রশাসন আইএস জঙ্গিদের একাধিক আস্তানা লক্ষ্য করে এসব হামলা চালায়। হামলায় মার্কিন নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ থেকে টমাহক মিসাইল নিক্ষেপ করা হয়েছিল। এসব হামলায় একাধিক আইএস জঙ্গি নিহত ও তাঁদের আস্তানা ধ্বংস হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে, তবে সঠিক সংখ্যা এখনো জানানো হয়নি।
ট্রাম্প প্রশাসনের সাম্প্রতিক বিদেশি সামরিক হস্তক্ষেপগুলোর সর্বশেষ উদাহরণ নাইজেরিয়ায় হামলা। অথচ ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনী প্রচারণায় তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে ‘অন্তহীন যুদ্ধ’ থেকে বের করে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দাবি করেছেন, এই হামলার মূল উদ্দেশ্য ছিল নাইজেরিয়ায় বসবাসরত খ্রিষ্টানদের ওপর চলমান হত্যাযজ্ঞ বন্ধ করা। তাঁর মতে, আইএস জঙ্গিরা পরিকল্পিতভাবে খ্রিষ্টানদের লক্ষ্যবস্তু বানাচ্ছে। হামলার ঘোষণা দিয়ে ট্রাম্প তাঁর ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে লিখেছিলেন, ‘আমি আগেই এই সন্ত্রাসীদের সতর্ক করেছিলাম, তারা যদি খ্রিষ্টানদের হত্যা বন্ধ না করে, তবে তাদের চড়ম মূল্য দিতে হবে। আজ রাতে (বড়দিন) ঠিক তা-ই ঘটেছে।’
গত অক্টোবর ও নভেম্বর মাসেও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নাইজেরিয়ার নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে ‘খ্রিষ্টান গণহত্যার’ শামিল বলে অভিহিত করেছিলেন।
মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তরের এক কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা এপিকে জানান, নাইজেরিয়া সরকারের অনুমোদন নিয়ে দেশটির সঙ্গে সমন্বয় করেই এসব হামলা চালানো হয়েছে। নাইজেরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, এই সহযোগিতার মধ্যে গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদান ও কৌশলগত সমন্বয় ছিল।
কেন নাইজেরিয়ায় হামলা চালাল ট্রাম্প প্রশাসন
অনেক আগে থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের ডানপন্থী রাজনীতিক গোষ্ঠীগুলো নাইজেরিয়ায় খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়নের অভিযোগ তুলছে। গত সেপ্টেম্বরে রিপাবলিকান সিনেটর টেড ক্রুজ কিছু নাইজেরীয় কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞার আহ্বান জানান। তিনি দাবি করেন, যারা ‘ইসলামপন্থী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর মাধ্যমে খ্রিষ্টান ও অন্য ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সহিংসতা সহজতর করছে’, তাদের নিষিদ্ধ করা উচিত।
তবে বর্তমানে বিষয়টি মার্কিন ডানপন্থী ও ইভানজেলিক্যাল খ্রিষ্টান মহলে বড় ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। আবার এই ডানপন্থী ও ইভানজেলিক্যাল খ্রিষ্টানরাই ট্রাম্পের বড় সমর্থক। বিশ্লেষকদের মতে, নিজের সমর্থকদের তুষ্ট করতে এবং বিশ্বজুড়ে ‘খ্রিষ্টানদের রক্ষাকর্তা’ হিসেবে নিজেকে জাহির করতেই ট্রাম্প এই ত্বরিত সামরিক পদক্ষেপ নিয়েছেন।
এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা আইনের আওতায় নাইজেরিয়াকে ‘বিশেষ উদ্বেগের দেশ’ হিসেবে চিহ্নিত করেন ট্রাম্প। বেশ কিছু মার্কিন আইনপ্রণেতা ও রক্ষণশীল খ্রিষ্টান গোষ্ঠীর লাগাতার লবিংয়ের পর এই সিদ্ধান্ত আসে। এর কিছুদিন পরই তিনি নাইজেরিয়ায় সম্ভাব্য সামরিক অভিযানের পরিকল্পনা করতে পেন্টাগনকে নির্দেশ দেন। সে সময় ট্রাম্প বলেন, নাইজেরিয়া সরকার যদি খ্রিষ্টান হত্যাকাণ্ড বন্ধ না করে, তবে তিনি ‘গানস-এ-ব্লেজিং’ অর্থাৎ পূর্ণ শক্তি নিয়ে হস্তক্ষেপ করতে পারেন।
নাইজেরিয়ায় কি আসলেই খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়ন চলছে
নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; এর পেছনে নানা কারণ রয়েছে।
উদাহরণ হিসেবে, যাযাবর মুসলিম পশুপালক ও খ্রিষ্টান কৃষক সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রাণঘাতী সংঘর্ষ মূলত চারণভূমি ও পানির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে। তবে ধর্মীয় ও জাতিগত বিভাজন এটিকে আরও জটিল করে তুলেছে। আবার অনেক বিশ্লেষকের মতে, যাজকদের অপহরণের ঘটনা ধর্মীয় বিদ্বেষের চেয়ে অর্থনৈতিক লাভের উদ্দেশ্যেই বেশি ঘটে, কারণ, তাঁরা প্রভাবশালী ব্যক্তি এবং তাঁদের অনুসারী বা প্রতিষ্ঠান দ্রুত মুক্তিপণের টাকা জোগাড় করতে পারে।
নাইজেরিয়া সরকারের অবস্থান
ট্রাম্প প্রশাসনের হামলার পর নাইজেরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইএস-নিধনে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতার প্রশংসা করেছে। কিন্তু খ্রিষ্টান নিপীড়নের বিষয়টির সঙ্গে মার্কিন অভিযানের কোনো সম্পর্ক আছে কি না, এ বিষয়ে কিছু বলেনি।
এক বিবৃতিতে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, খ্রিষ্টান, মুসলমান কিংবা অন্য কোনো সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে পরিচালিত সব ধরনের সহিংসতাই নাইজেরিয়ার মূল্যবোধ এবং আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার প্রতি অবমাননা।
নাইজেরিয়ার বাস্তবতাও আসলে এমন। দীর্ঘদিন ধরে দেশটি নিরাপত্তা পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে। গত কয়েক বছরে দেশটিতে হাজারো মানুষ নিহত এবং শত শত মানুষ অপহৃত হয়েছে।
উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ২০০৯ সাল থেকে বোকো হারাম ও ইসলামিক স্টেট ওয়েস্ট আফ্রিকা প্রভিন্স (আইএসডব্লিউএপি) বিদ্রোহ চালিয়ে যাচ্ছে। এতে কয়েক দশক ধরে কয়েক হাজার মানুষ নিহত এবং লাখো মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে সশস্ত্র অপরাধী চক্র, যাদের সাধারণত ‘ডাকাত’ বলা হয়, তারাও গণ-অপহরণ ও হামলা চালাচ্ছে। এমন পরিস্থিতি মুসলমান ও খ্রিষ্টান উভয় সম্প্রদায়কেই প্রভাবিত করছে।
এর আগে ট্রাম্পের অভিযোগের জবাবে নাইজেরিয়ার সরকার বিষয়টি স্বীকার করে বলেছিল, দেশটিতে কেবল খ্রিষ্টান নয়—বিভিন্ন ধর্মের মানুষই চরমপন্থী গোষ্ঠীগুলোর হাতে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে।
গত মাসে নাইজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট বোলা আহমেদ তিনুবু বলেন, নাইজেরিয়াকে ধর্মীয়ভাবে অসহিষ্ণু দেশ হিসেবে চিত্রিত করা বাস্তবতার প্রতিফলন নয়। তিনি বলেন, ‘ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সহনশীলতা আমাদের সম্মিলিত পরিচয়ের একটি মূল ভিত্তি এবং এটি সব সময়ই থাকবে। নাইজেরিয়া এমন একটি দেশ, যেখানে সংবিধান সব ধর্মের নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করে।’
এদিকে, ‘অন্তহীন যুদ্ধ’ বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এলেও নাইজেরিয়ায় ট্রাম্পের নতুন সামরিক হস্তক্ষেপ আফ্রিকার ভূরাজনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। অনেকে বলছেন, ‘খ্রিষ্টান নিপীড়ন’ আসলে ট্রাম্পের অজুহাত; তাঁর লক্ষ্য নাইজেরিয়ার তেলের খনি।
দ্য গার্ডিয়ান থেকে অনুবাদ করেছেন জগতপতি বর্মা

নাইজেরিয়ার সরকার খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়ন ঠেকাতে ব্যর্থ—এমন অভিযোগে কয়েক সপ্তাহ ধরে সমালোচনার পর অবশেষে বড়দিনের রাতে (২৫ ডিসেম্বর) পশ্চিম আফ্রিকার দেশটিতে বিমান হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। সরাসরি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে নাইজেরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় সোকোটো রাজ্যে এ হামলা চালানো হয়।
ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ান বলছে, ট্রাম্প প্রশাসন আইএস জঙ্গিদের একাধিক আস্তানা লক্ষ্য করে এসব হামলা চালায়। হামলায় মার্কিন নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ থেকে টমাহক মিসাইল নিক্ষেপ করা হয়েছিল। এসব হামলায় একাধিক আইএস জঙ্গি নিহত ও তাঁদের আস্তানা ধ্বংস হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে, তবে সঠিক সংখ্যা এখনো জানানো হয়নি।
ট্রাম্প প্রশাসনের সাম্প্রতিক বিদেশি সামরিক হস্তক্ষেপগুলোর সর্বশেষ উদাহরণ নাইজেরিয়ায় হামলা। অথচ ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনী প্রচারণায় তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে ‘অন্তহীন যুদ্ধ’ থেকে বের করে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দাবি করেছেন, এই হামলার মূল উদ্দেশ্য ছিল নাইজেরিয়ায় বসবাসরত খ্রিষ্টানদের ওপর চলমান হত্যাযজ্ঞ বন্ধ করা। তাঁর মতে, আইএস জঙ্গিরা পরিকল্পিতভাবে খ্রিষ্টানদের লক্ষ্যবস্তু বানাচ্ছে। হামলার ঘোষণা দিয়ে ট্রাম্প তাঁর ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে লিখেছিলেন, ‘আমি আগেই এই সন্ত্রাসীদের সতর্ক করেছিলাম, তারা যদি খ্রিষ্টানদের হত্যা বন্ধ না করে, তবে তাদের চড়ম মূল্য দিতে হবে। আজ রাতে (বড়দিন) ঠিক তা-ই ঘটেছে।’
গত অক্টোবর ও নভেম্বর মাসেও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নাইজেরিয়ার নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে ‘খ্রিষ্টান গণহত্যার’ শামিল বলে অভিহিত করেছিলেন।
মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তরের এক কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা এপিকে জানান, নাইজেরিয়া সরকারের অনুমোদন নিয়ে দেশটির সঙ্গে সমন্বয় করেই এসব হামলা চালানো হয়েছে। নাইজেরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, এই সহযোগিতার মধ্যে গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদান ও কৌশলগত সমন্বয় ছিল।
কেন নাইজেরিয়ায় হামলা চালাল ট্রাম্প প্রশাসন
অনেক আগে থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের ডানপন্থী রাজনীতিক গোষ্ঠীগুলো নাইজেরিয়ায় খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়নের অভিযোগ তুলছে। গত সেপ্টেম্বরে রিপাবলিকান সিনেটর টেড ক্রুজ কিছু নাইজেরীয় কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞার আহ্বান জানান। তিনি দাবি করেন, যারা ‘ইসলামপন্থী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর মাধ্যমে খ্রিষ্টান ও অন্য ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সহিংসতা সহজতর করছে’, তাদের নিষিদ্ধ করা উচিত।
তবে বর্তমানে বিষয়টি মার্কিন ডানপন্থী ও ইভানজেলিক্যাল খ্রিষ্টান মহলে বড় ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। আবার এই ডানপন্থী ও ইভানজেলিক্যাল খ্রিষ্টানরাই ট্রাম্পের বড় সমর্থক। বিশ্লেষকদের মতে, নিজের সমর্থকদের তুষ্ট করতে এবং বিশ্বজুড়ে ‘খ্রিষ্টানদের রক্ষাকর্তা’ হিসেবে নিজেকে জাহির করতেই ট্রাম্প এই ত্বরিত সামরিক পদক্ষেপ নিয়েছেন।
এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা আইনের আওতায় নাইজেরিয়াকে ‘বিশেষ উদ্বেগের দেশ’ হিসেবে চিহ্নিত করেন ট্রাম্প। বেশ কিছু মার্কিন আইনপ্রণেতা ও রক্ষণশীল খ্রিষ্টান গোষ্ঠীর লাগাতার লবিংয়ের পর এই সিদ্ধান্ত আসে। এর কিছুদিন পরই তিনি নাইজেরিয়ায় সম্ভাব্য সামরিক অভিযানের পরিকল্পনা করতে পেন্টাগনকে নির্দেশ দেন। সে সময় ট্রাম্প বলেন, নাইজেরিয়া সরকার যদি খ্রিষ্টান হত্যাকাণ্ড বন্ধ না করে, তবে তিনি ‘গানস-এ-ব্লেজিং’ অর্থাৎ পূর্ণ শক্তি নিয়ে হস্তক্ষেপ করতে পারেন।
নাইজেরিয়ায় কি আসলেই খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়ন চলছে
নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; এর পেছনে নানা কারণ রয়েছে।
উদাহরণ হিসেবে, যাযাবর মুসলিম পশুপালক ও খ্রিষ্টান কৃষক সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রাণঘাতী সংঘর্ষ মূলত চারণভূমি ও পানির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে। তবে ধর্মীয় ও জাতিগত বিভাজন এটিকে আরও জটিল করে তুলেছে। আবার অনেক বিশ্লেষকের মতে, যাজকদের অপহরণের ঘটনা ধর্মীয় বিদ্বেষের চেয়ে অর্থনৈতিক লাভের উদ্দেশ্যেই বেশি ঘটে, কারণ, তাঁরা প্রভাবশালী ব্যক্তি এবং তাঁদের অনুসারী বা প্রতিষ্ঠান দ্রুত মুক্তিপণের টাকা জোগাড় করতে পারে।
নাইজেরিয়া সরকারের অবস্থান
ট্রাম্প প্রশাসনের হামলার পর নাইজেরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইএস-নিধনে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতার প্রশংসা করেছে। কিন্তু খ্রিষ্টান নিপীড়নের বিষয়টির সঙ্গে মার্কিন অভিযানের কোনো সম্পর্ক আছে কি না, এ বিষয়ে কিছু বলেনি।
এক বিবৃতিতে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, খ্রিষ্টান, মুসলমান কিংবা অন্য কোনো সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে পরিচালিত সব ধরনের সহিংসতাই নাইজেরিয়ার মূল্যবোধ এবং আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার প্রতি অবমাননা।
নাইজেরিয়ার বাস্তবতাও আসলে এমন। দীর্ঘদিন ধরে দেশটি নিরাপত্তা পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে। গত কয়েক বছরে দেশটিতে হাজারো মানুষ নিহত এবং শত শত মানুষ অপহৃত হয়েছে।
উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ২০০৯ সাল থেকে বোকো হারাম ও ইসলামিক স্টেট ওয়েস্ট আফ্রিকা প্রভিন্স (আইএসডব্লিউএপি) বিদ্রোহ চালিয়ে যাচ্ছে। এতে কয়েক দশক ধরে কয়েক হাজার মানুষ নিহত এবং লাখো মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে সশস্ত্র অপরাধী চক্র, যাদের সাধারণত ‘ডাকাত’ বলা হয়, তারাও গণ-অপহরণ ও হামলা চালাচ্ছে। এমন পরিস্থিতি মুসলমান ও খ্রিষ্টান উভয় সম্প্রদায়কেই প্রভাবিত করছে।
এর আগে ট্রাম্পের অভিযোগের জবাবে নাইজেরিয়ার সরকার বিষয়টি স্বীকার করে বলেছিল, দেশটিতে কেবল খ্রিষ্টান নয়—বিভিন্ন ধর্মের মানুষই চরমপন্থী গোষ্ঠীগুলোর হাতে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে।
গত মাসে নাইজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট বোলা আহমেদ তিনুবু বলেন, নাইজেরিয়াকে ধর্মীয়ভাবে অসহিষ্ণু দেশ হিসেবে চিত্রিত করা বাস্তবতার প্রতিফলন নয়। তিনি বলেন, ‘ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সহনশীলতা আমাদের সম্মিলিত পরিচয়ের একটি মূল ভিত্তি এবং এটি সব সময়ই থাকবে। নাইজেরিয়া এমন একটি দেশ, যেখানে সংবিধান সব ধর্মের নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করে।’
এদিকে, ‘অন্তহীন যুদ্ধ’ বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এলেও নাইজেরিয়ায় ট্রাম্পের নতুন সামরিক হস্তক্ষেপ আফ্রিকার ভূরাজনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। অনেকে বলছেন, ‘খ্রিষ্টান নিপীড়ন’ আসলে ট্রাম্পের অজুহাত; তাঁর লক্ষ্য নাইজেরিয়ার তেলের খনি।
দ্য গার্ডিয়ান থেকে অনুবাদ করেছেন জগতপতি বর্মা

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সংঘাতের ইতিহাস অনেক দীর্ঘ। এর মূলে রয়েছে কাশ্মীর ভূখণ্ড নিয়ে আঞ্চলিক বিরোধ, ধর্ম ও আদর্শিক পার্থক্য এবং ১৯৪৭ সালে ভারত ভাগের পরবর্তী ঐতিহাসিক ঘটনাবলী। আঞ্চলিক বিরোধ একাধিকবার সশস্ত্র যুদ্ধে গড়িয়েছে। আন্তর্জতিক হস্তক্ষেপে সাময়িক সময়ের জন্য অস্ত্রবিরতি হলেও দীর্ঘমেয়াদি
০৩ মে ২০২৫
মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।
৫ ঘণ্টা আগে
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
৫ দিন আগে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
৮ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে। এই প্রেক্ষাপটে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিয়ো লুলা দা সিলভা ভেনেজুয়েলায় মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপ মানবিক বিপর্যয় ডেকে আনবে বলে সতর্ক করেছেন। তাঁর মতে, এই সতর্কতা শুধু ভেনেজুয়েলাকে ঘিরে নয়—পুরো দক্ষিণ আমেরিকার ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার প্রশ্নও তুলে ধরছে।
ভেনেজুয়েলার সংকটের মূল কারণ দেশটির দীর্ঘস্থায়ী রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিতর্কিত নির্বাচন, অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা এবং মানবাধিকার পরিস্থিতি। প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর সরকারকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের একটি অংশ কর্তৃত্ববাদী ও অগণতান্ত্রিক বলে মনে করে। এর জবাবে ওয়াশিংটন একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এসব নিষেধাজ্ঞার মূল লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি, যা দেশটির আয়ের প্রধান উৎস।
ভেনেজুয়েলা বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ তেল মজুতের অধিকারী। ফলে তাদের তেল শুধু অর্থনীতি নয়, কূটনীতিরও কেন্দ্রে অবস্থান করছে। যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, ভেনেজুয়েলার তেল বিক্রির পথ বন্ধ করতে পারলে মাদুরো সরকার দুর্বল হবে। এই লক্ষ্যেই সাম্প্রতিক সময়ে দেশটির নিষেধাজ্ঞাভুক্ত তেল ট্যাংকারগুলোকে অবরোধের মতো কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে মার্কিন বাহিনী। তবে এই পদক্ষেপকে সরাসরি যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেওয়ার ঝুঁকি হিসেবে দেখছেন দক্ষিণ আমেরিকার অনেক নেতা।
ব্রাজিল ও মেক্সিকোর মতো লাতিন শক্তিগুলো এই কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হস্তক্ষেপের সম্ভাবনার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, দক্ষিণ আমেরিকার ইতিহাস বহিঃশক্তির সামরিক হস্তক্ষেপের তিক্ত অভিজ্ঞতায় ভরা। ফকল্যান্ড যুদ্ধের চার দশক পর আবারও কোনো অন্য মহাদেশীয় শক্তির সামরিক উপস্থিতি এই মহাদেশকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে—এমন আশঙ্কাই তিনি প্রকাশ করেছেন।
এদিকে রাশিয়া ও চীন ভেনেজুয়েলার সরকারের প্রতি সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। রাশিয়ার ক্ষেত্রে এটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব মোকাবিলার কৌশল, আর চীনের জন্য এটি তেল ও ঋণনির্ভর অর্থনৈতিক স্বার্থের প্রশ্ন। ফলে ভেনেজুয়েলা ক্রমেই যুক্তরাষ্ট্র বনাম রাশিয়া–চীন প্রভাব বিস্তারের আরেকটি ময়দানে পরিণত হচ্ছে।
‘মার্কোসুর’ সম্মেলনে লাতিন আমেরিকার দেশগুলো যে যৌথ অবস্থান নিয়েছে, তা এই বাস্তবতাকেই প্রতিফলিত করে। তারা ভেনেজুয়েলায় গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষার কথা বলেছে, তবে স্পষ্টভাবে সামরিক পথ প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের মতে, সংকটের সমাধান হতে পারে কেবল সংলাপ ও শান্তিপূর্ণ কূটনীতির মাধ্যমে।
সব মিলিয়ে ভেনেজুয়েলার সংকট এখন আর একটি দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যা নয়। তেল, আদর্শিক দ্বন্দ্ব, আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও বৈশ্বিক ক্ষমতার লড়াই—সবকিছু মিলিয়ে এটি আন্তর্জাতিক রাজনীতির এক স্পর্শকাতর সংঘাতক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।

ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে। এই প্রেক্ষাপটে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিয়ো লুলা দা সিলভা ভেনেজুয়েলায় মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপ মানবিক বিপর্যয় ডেকে আনবে বলে সতর্ক করেছেন। তাঁর মতে, এই সতর্কতা শুধু ভেনেজুয়েলাকে ঘিরে নয়—পুরো দক্ষিণ আমেরিকার ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার প্রশ্নও তুলে ধরছে।
ভেনেজুয়েলার সংকটের মূল কারণ দেশটির দীর্ঘস্থায়ী রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিতর্কিত নির্বাচন, অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা এবং মানবাধিকার পরিস্থিতি। প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর সরকারকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের একটি অংশ কর্তৃত্ববাদী ও অগণতান্ত্রিক বলে মনে করে। এর জবাবে ওয়াশিংটন একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এসব নিষেধাজ্ঞার মূল লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি, যা দেশটির আয়ের প্রধান উৎস।
ভেনেজুয়েলা বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ তেল মজুতের অধিকারী। ফলে তাদের তেল শুধু অর্থনীতি নয়, কূটনীতিরও কেন্দ্রে অবস্থান করছে। যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, ভেনেজুয়েলার তেল বিক্রির পথ বন্ধ করতে পারলে মাদুরো সরকার দুর্বল হবে। এই লক্ষ্যেই সাম্প্রতিক সময়ে দেশটির নিষেধাজ্ঞাভুক্ত তেল ট্যাংকারগুলোকে অবরোধের মতো কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে মার্কিন বাহিনী। তবে এই পদক্ষেপকে সরাসরি যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেওয়ার ঝুঁকি হিসেবে দেখছেন দক্ষিণ আমেরিকার অনেক নেতা।
ব্রাজিল ও মেক্সিকোর মতো লাতিন শক্তিগুলো এই কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হস্তক্ষেপের সম্ভাবনার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, দক্ষিণ আমেরিকার ইতিহাস বহিঃশক্তির সামরিক হস্তক্ষেপের তিক্ত অভিজ্ঞতায় ভরা। ফকল্যান্ড যুদ্ধের চার দশক পর আবারও কোনো অন্য মহাদেশীয় শক্তির সামরিক উপস্থিতি এই মহাদেশকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে—এমন আশঙ্কাই তিনি প্রকাশ করেছেন।
এদিকে রাশিয়া ও চীন ভেনেজুয়েলার সরকারের প্রতি সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। রাশিয়ার ক্ষেত্রে এটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব মোকাবিলার কৌশল, আর চীনের জন্য এটি তেল ও ঋণনির্ভর অর্থনৈতিক স্বার্থের প্রশ্ন। ফলে ভেনেজুয়েলা ক্রমেই যুক্তরাষ্ট্র বনাম রাশিয়া–চীন প্রভাব বিস্তারের আরেকটি ময়দানে পরিণত হচ্ছে।
‘মার্কোসুর’ সম্মেলনে লাতিন আমেরিকার দেশগুলো যে যৌথ অবস্থান নিয়েছে, তা এই বাস্তবতাকেই প্রতিফলিত করে। তারা ভেনেজুয়েলায় গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষার কথা বলেছে, তবে স্পষ্টভাবে সামরিক পথ প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের মতে, সংকটের সমাধান হতে পারে কেবল সংলাপ ও শান্তিপূর্ণ কূটনীতির মাধ্যমে।
সব মিলিয়ে ভেনেজুয়েলার সংকট এখন আর একটি দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যা নয়। তেল, আদর্শিক দ্বন্দ্ব, আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও বৈশ্বিক ক্ষমতার লড়াই—সবকিছু মিলিয়ে এটি আন্তর্জাতিক রাজনীতির এক স্পর্শকাতর সংঘাতক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সংঘাতের ইতিহাস অনেক দীর্ঘ। এর মূলে রয়েছে কাশ্মীর ভূখণ্ড নিয়ে আঞ্চলিক বিরোধ, ধর্ম ও আদর্শিক পার্থক্য এবং ১৯৪৭ সালে ভারত ভাগের পরবর্তী ঐতিহাসিক ঘটনাবলী। আঞ্চলিক বিরোধ একাধিকবার সশস্ত্র যুদ্ধে গড়িয়েছে। আন্তর্জতিক হস্তক্ষেপে সাময়িক সময়ের জন্য অস্ত্রবিরতি হলেও দীর্ঘমেয়াদি
০৩ মে ২০২৫
মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।
৫ ঘণ্টা আগে
নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এর পেছন
১০ ঘণ্টা আগে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
৮ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ভেনেজুয়েলার তেল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ—এমন মন্তব্য করে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাডভাইজার ও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহযোগী স্টিফেন মিলার।
গতকাল বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে মিলার বলেন, ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প গড়ে উঠেছে ‘আমেরিকার শ্রম, উদ্ভাবন ও ঘামের’ ওপর আর সেটা রাষ্ট্রায়ত্ত করে নেওয়াকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদের সবচেয়ে বড় ‘চুরি’ বলে অভিহিত করেন। মিলারের এই মন্তব্যের ঠিক এক দিন আগে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ঘোষণা দেন—ভেনেজুয়েলায় প্রবেশ ও সেখান থেকে বের হওয়া সব তেলবাহী জাহাজের ওপর ‘সম্পূর্ণ ও সর্বাত্মক অবরোধ’ আরোপ করা হচ্ছে।
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার উপকূলের কাছাকাছি কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় সামরিক উপস্থিতি গড়ে তুলেছে যুক্তরাষ্ট্র। গত সেপ্টেম্বর থেকে মাদক পাচারের অভিযোগে বেশ কয়েকটি নৌযানে হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। এতে এখন পর্যন্ত অন্তত ৯০ জন নিহত হয়েছেন। ট্রাম্প প্রশাসন দাবি করছে, এসব নৌকা যুক্তরাষ্ট্রে বিপুল পরিমাণ মাদক পাচার করছিল এবং তা মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি। তবে এই অভিযোগের পক্ষে কোনো প্রমাণ তারা দেয়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোকেনসহ মাদক যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছানোর প্রধান উৎস ভেনেজুয়েলা নয়। ফলে অনেকের মতে, এর পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রকৃত লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল নিয়ন্ত্রণ এবং নিকোলাস মাদুরোকে ক্ষমতা থেকে সরানো।
মিলার কী বলেছেন
গতকাল বুধবার এক্সে দেওয়া পোস্টে স্টিফেন মিলার লেখেন, ‘আমেরিকার শ্রম, মেধা ও পরিশ্রমই ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প সৃষ্টি করেছে। এই শিল্প জোরপূর্বক রাষ্ট্রায়ত্ত করা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ ও সম্পত্তির ইতিহাসের সবচেয়ে বড় চুরি। আর সেই লুণ্ঠিত সম্পদ সন্ত্রাসবাদে অর্থ জোগাতে এবং আমাদের দেশের রাস্তায় খুনি, ভাড়াটে যোদ্ধা ও মাদক ছড়িয়ে দিতে ব্যবহৃত হয়েছে।’
মিলার তাঁর পোস্টে ট্রাম্পের আগের একটি বক্তব্যও যুক্ত করেন, যেখানে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের তেল, ভূমি ও অন্যান্য সম্পদ ‘চুরি’ করার অভিযোগ তোলেন। ওই পোস্টে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার সরকারকে ‘বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন’ ঘোষণা করেন এবং দেশটির তেল ট্যাংকারগুলোর ওপর সম্পূর্ণ অবরোধের নির্দেশ দেন।
মিলার আরও বলেন, ভেনেজুয়েলা থেকে আসা অভিবাসীদের দ্রুত যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠানো হবে এবং সব ‘চুরি হওয়া সম্পদ’ অবিলম্বে যুক্তরাষ্ট্রকে ফিরিয়ে দিতে হবে।
ভেনেজুয়েলায় কী পরিমাণ তেল রয়েছে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলেই বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
২০২৩ সালের হিসাবে ভেনেজুয়েলার তেল মজুতের পরিমাণ প্রায় ৩০৩ বিলিয়ন ব্যারেল—যা বিশ্বে সর্বাধিক। তবে উৎপাদন ও রপ্তানি কমে যাওয়ায় দেশটি এখন তেল থেকে আগের মতো আয় করতে পারছে না।
অবজারভেটরি অব ইকোনমিক কমপ্লেক্সের (ওইসি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ভেনেজুয়েলার অপরিশোধিত তেল রপ্তানির মূল্য ছিল মাত্র ৪ দশমিক শূন্য ৫ বিলিয়ন ডলার। একই সময়ে সৌদি আরব রপ্তানি করেছে ১৮১ বিলিয়ন ডলার, যুক্তরাষ্ট্র ১২৫ বিলিয়ন ডলার ও রাশিয়া ১২২ বিলিয়ন ডলার।
যুক্তরাষ্ট্র কেন ভেনেজুয়েলার তেলের ওপর দাবি করছে
২০ শতকের শুরুর দিকে ভেনেজুয়েলায় তেল অনুসন্ধান শুরু করে মার্কিন কোম্পানিগুলো। ১৯২২ সালে ভেনেজুয়েলার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের মারাকাইবো হ্রদ এলাকায় প্রথম বড় তেলক্ষেত্র আবিষ্কার করে রয়্যাল ডাচ শেল।
এরপর যুক্তরাষ্ট্র ভেনেজুয়েলার তেল উত্তোলন ও উন্নয়নে বড় ধরনের বিনিয়োগ শুরু করে। স্ট্যান্ডার্ড অয়েলের মতো কোম্পানিগুলো চুক্তিভিত্তিকভাবে কাজ করে ভেনেজুয়েলাকে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ তেল সরবরাহকারীতে পরিণত করে।
১৯৬০ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর ওপেক গঠনের সময় ভেনেজুয়েলা ছিল এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। তবে ১৯৭৬ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট কার্লোস আন্দ্রেস পেরেজ তেলশিল্প রাষ্ট্রায়ত্ত করেন এবং পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলা (পিডিভিএসএ) প্রতিষ্ঠা করেন।
পরে হুগো শাভেজ ক্ষমতায় এসে সব বিদেশি তেলসম্পদ জাতীয়করণ করেন। কিন্তু রাজনৈতিক লক্ষ্যকে অগ্রাধিকার দেওয়া, অব্যবস্থাপনা ও বিনিয়োগের অভাবে তেল উৎপাদন ক্রমেই কমতে থাকে।
কবে থেকে নিষেধাজ্ঞা
২০০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র প্রথম ভেনেজুয়েলার তেলশিল্পের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। পরে নিকোলাস মাদুরোর শাসনামলে ২০১৭ ও ২০১৯ সালে নিষেধাজ্ঞা আরও কঠোর করা হয়। এই নিষেধাজ্ঞার ফলে ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি প্রায় বন্ধ হয়ে যায় এবং দেশটি চীন, ভারত ও কিউবার দিকে ঝুঁকে পড়ে।
ভেনেজুয়েলার তেল আমাদের সম্পদ—যুক্তরাষ্ট্রের এমন দাবির কি কোনো আইনি ভিত্তি আছে
না, নেই। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র তার ভূখণ্ডের প্রাকৃতিক সম্পদের মালিক। এই নীতির নাম ‘স্থায়ী প্রাকৃতিক সম্পদে সার্বভৌম অধিকার’ (Permanent Sovereignty over Natural Resources)।
১৯৬২ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের একটি প্রস্তাবে এই নীতি স্বীকৃতি পায়। সে অনুযায়ী, ভেনেজুয়েলার তেল সম্পূর্ণভাবে ভেনেজুয়েলারই। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে এ তেলের ওপর দাবি জানানো আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী।
তাহলে শেভরন কেন কাজ করছে
যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও হিউস্টনভিত্তিক তেল কোম্পানি শেভরন ভেনেজুয়েলায় কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। সাধারণত বিদেশি কোম্পানিগুলো ভেনেজুয়েলায় সরাসরি তেলক্ষেত্রের মালিক হতে পারে না। যুক্তরাষ্ট্রের শেভরন পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলার (পিডিভিএসএ) সঙ্গে যৌথভাবে তেল উৎপাদন করে এবং উৎপাদিত তেলের একটি অংশ পায়।
২০২২ সালে জো বাইডেন প্রশাসন শেভরনকে বিশেষ লাইসেন্স দেয়, যাতে তারা নিষেধাজ্ঞার বাইরে থেকে কাজ করতে পারে। চলতি বছর ট্রাম্প প্রশাসন সেই নিষেধাজ্ঞা ছাড় নবায়ন করেছে।
শেভরন দীর্ঘদিন ধরে ভেনেজুয়েলায় কার্যক্রম চালাচ্ছে এবং সেখানে তাদের বিপুল সম্পদ রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি সরে গেলে সেই সম্পদ রাষ্ট্রের হাতে চলে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে—যা অতীতে এক্সন, কারগিল ও হিলটনের মতো কোম্পানির ক্ষেত্রে ঘটেছে।
ট্রাম্প প্রশাসন মূলত ঐতিহাসিকভাবে মার্কিন কোম্পানিগুলোর করা বিনিয়োগ ও পরে তা বাজেয়াপ্ত হওয়াকে কেন্দ্র করে এই ‘মালিকানা’ দাবি করছে। তবে বর্তমান বিশ্বব্যবস্থায় ও আন্তর্জাতিক আইনে কোনো দেশের সম্পদ অন্য দেশের মালিকানাধীন হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এটি মূলত ভেনেজুয়েলায় শাসনব্যবস্থা পরিবর্তন ও তেলের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার একটি ভূরাজনৈতিক কৌশল।
আল-জাজিরা থেকে অনুবাদ করেছেন জগৎপতি বর্মা

ভেনেজুয়েলার তেল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ—এমন মন্তব্য করে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাডভাইজার ও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহযোগী স্টিফেন মিলার।
গতকাল বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে মিলার বলেন, ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প গড়ে উঠেছে ‘আমেরিকার শ্রম, উদ্ভাবন ও ঘামের’ ওপর আর সেটা রাষ্ট্রায়ত্ত করে নেওয়াকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদের সবচেয়ে বড় ‘চুরি’ বলে অভিহিত করেন। মিলারের এই মন্তব্যের ঠিক এক দিন আগে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ঘোষণা দেন—ভেনেজুয়েলায় প্রবেশ ও সেখান থেকে বের হওয়া সব তেলবাহী জাহাজের ওপর ‘সম্পূর্ণ ও সর্বাত্মক অবরোধ’ আরোপ করা হচ্ছে।
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার উপকূলের কাছাকাছি কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় সামরিক উপস্থিতি গড়ে তুলেছে যুক্তরাষ্ট্র। গত সেপ্টেম্বর থেকে মাদক পাচারের অভিযোগে বেশ কয়েকটি নৌযানে হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। এতে এখন পর্যন্ত অন্তত ৯০ জন নিহত হয়েছেন। ট্রাম্প প্রশাসন দাবি করছে, এসব নৌকা যুক্তরাষ্ট্রে বিপুল পরিমাণ মাদক পাচার করছিল এবং তা মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি। তবে এই অভিযোগের পক্ষে কোনো প্রমাণ তারা দেয়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোকেনসহ মাদক যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছানোর প্রধান উৎস ভেনেজুয়েলা নয়। ফলে অনেকের মতে, এর পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রকৃত লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল নিয়ন্ত্রণ এবং নিকোলাস মাদুরোকে ক্ষমতা থেকে সরানো।
মিলার কী বলেছেন
গতকাল বুধবার এক্সে দেওয়া পোস্টে স্টিফেন মিলার লেখেন, ‘আমেরিকার শ্রম, মেধা ও পরিশ্রমই ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প সৃষ্টি করেছে। এই শিল্প জোরপূর্বক রাষ্ট্রায়ত্ত করা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ ও সম্পত্তির ইতিহাসের সবচেয়ে বড় চুরি। আর সেই লুণ্ঠিত সম্পদ সন্ত্রাসবাদে অর্থ জোগাতে এবং আমাদের দেশের রাস্তায় খুনি, ভাড়াটে যোদ্ধা ও মাদক ছড়িয়ে দিতে ব্যবহৃত হয়েছে।’
মিলার তাঁর পোস্টে ট্রাম্পের আগের একটি বক্তব্যও যুক্ত করেন, যেখানে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের তেল, ভূমি ও অন্যান্য সম্পদ ‘চুরি’ করার অভিযোগ তোলেন। ওই পোস্টে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার সরকারকে ‘বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন’ ঘোষণা করেন এবং দেশটির তেল ট্যাংকারগুলোর ওপর সম্পূর্ণ অবরোধের নির্দেশ দেন।
মিলার আরও বলেন, ভেনেজুয়েলা থেকে আসা অভিবাসীদের দ্রুত যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠানো হবে এবং সব ‘চুরি হওয়া সম্পদ’ অবিলম্বে যুক্তরাষ্ট্রকে ফিরিয়ে দিতে হবে।
ভেনেজুয়েলায় কী পরিমাণ তেল রয়েছে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলেই বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
২০২৩ সালের হিসাবে ভেনেজুয়েলার তেল মজুতের পরিমাণ প্রায় ৩০৩ বিলিয়ন ব্যারেল—যা বিশ্বে সর্বাধিক। তবে উৎপাদন ও রপ্তানি কমে যাওয়ায় দেশটি এখন তেল থেকে আগের মতো আয় করতে পারছে না।
অবজারভেটরি অব ইকোনমিক কমপ্লেক্সের (ওইসি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ভেনেজুয়েলার অপরিশোধিত তেল রপ্তানির মূল্য ছিল মাত্র ৪ দশমিক শূন্য ৫ বিলিয়ন ডলার। একই সময়ে সৌদি আরব রপ্তানি করেছে ১৮১ বিলিয়ন ডলার, যুক্তরাষ্ট্র ১২৫ বিলিয়ন ডলার ও রাশিয়া ১২২ বিলিয়ন ডলার।
যুক্তরাষ্ট্র কেন ভেনেজুয়েলার তেলের ওপর দাবি করছে
২০ শতকের শুরুর দিকে ভেনেজুয়েলায় তেল অনুসন্ধান শুরু করে মার্কিন কোম্পানিগুলো। ১৯২২ সালে ভেনেজুয়েলার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের মারাকাইবো হ্রদ এলাকায় প্রথম বড় তেলক্ষেত্র আবিষ্কার করে রয়্যাল ডাচ শেল।
এরপর যুক্তরাষ্ট্র ভেনেজুয়েলার তেল উত্তোলন ও উন্নয়নে বড় ধরনের বিনিয়োগ শুরু করে। স্ট্যান্ডার্ড অয়েলের মতো কোম্পানিগুলো চুক্তিভিত্তিকভাবে কাজ করে ভেনেজুয়েলাকে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ তেল সরবরাহকারীতে পরিণত করে।
১৯৬০ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর ওপেক গঠনের সময় ভেনেজুয়েলা ছিল এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। তবে ১৯৭৬ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট কার্লোস আন্দ্রেস পেরেজ তেলশিল্প রাষ্ট্রায়ত্ত করেন এবং পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলা (পিডিভিএসএ) প্রতিষ্ঠা করেন।
পরে হুগো শাভেজ ক্ষমতায় এসে সব বিদেশি তেলসম্পদ জাতীয়করণ করেন। কিন্তু রাজনৈতিক লক্ষ্যকে অগ্রাধিকার দেওয়া, অব্যবস্থাপনা ও বিনিয়োগের অভাবে তেল উৎপাদন ক্রমেই কমতে থাকে।
কবে থেকে নিষেধাজ্ঞা
২০০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র প্রথম ভেনেজুয়েলার তেলশিল্পের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। পরে নিকোলাস মাদুরোর শাসনামলে ২০১৭ ও ২০১৯ সালে নিষেধাজ্ঞা আরও কঠোর করা হয়। এই নিষেধাজ্ঞার ফলে ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি প্রায় বন্ধ হয়ে যায় এবং দেশটি চীন, ভারত ও কিউবার দিকে ঝুঁকে পড়ে।
ভেনেজুয়েলার তেল আমাদের সম্পদ—যুক্তরাষ্ট্রের এমন দাবির কি কোনো আইনি ভিত্তি আছে
না, নেই। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র তার ভূখণ্ডের প্রাকৃতিক সম্পদের মালিক। এই নীতির নাম ‘স্থায়ী প্রাকৃতিক সম্পদে সার্বভৌম অধিকার’ (Permanent Sovereignty over Natural Resources)।
১৯৬২ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের একটি প্রস্তাবে এই নীতি স্বীকৃতি পায়। সে অনুযায়ী, ভেনেজুয়েলার তেল সম্পূর্ণভাবে ভেনেজুয়েলারই। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে এ তেলের ওপর দাবি জানানো আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী।
তাহলে শেভরন কেন কাজ করছে
যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও হিউস্টনভিত্তিক তেল কোম্পানি শেভরন ভেনেজুয়েলায় কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। সাধারণত বিদেশি কোম্পানিগুলো ভেনেজুয়েলায় সরাসরি তেলক্ষেত্রের মালিক হতে পারে না। যুক্তরাষ্ট্রের শেভরন পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলার (পিডিভিএসএ) সঙ্গে যৌথভাবে তেল উৎপাদন করে এবং উৎপাদিত তেলের একটি অংশ পায়।
২০২২ সালে জো বাইডেন প্রশাসন শেভরনকে বিশেষ লাইসেন্স দেয়, যাতে তারা নিষেধাজ্ঞার বাইরে থেকে কাজ করতে পারে। চলতি বছর ট্রাম্প প্রশাসন সেই নিষেধাজ্ঞা ছাড় নবায়ন করেছে।
শেভরন দীর্ঘদিন ধরে ভেনেজুয়েলায় কার্যক্রম চালাচ্ছে এবং সেখানে তাদের বিপুল সম্পদ রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি সরে গেলে সেই সম্পদ রাষ্ট্রের হাতে চলে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে—যা অতীতে এক্সন, কারগিল ও হিলটনের মতো কোম্পানির ক্ষেত্রে ঘটেছে।
ট্রাম্প প্রশাসন মূলত ঐতিহাসিকভাবে মার্কিন কোম্পানিগুলোর করা বিনিয়োগ ও পরে তা বাজেয়াপ্ত হওয়াকে কেন্দ্র করে এই ‘মালিকানা’ দাবি করছে। তবে বর্তমান বিশ্বব্যবস্থায় ও আন্তর্জাতিক আইনে কোনো দেশের সম্পদ অন্য দেশের মালিকানাধীন হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এটি মূলত ভেনেজুয়েলায় শাসনব্যবস্থা পরিবর্তন ও তেলের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার একটি ভূরাজনৈতিক কৌশল।
আল-জাজিরা থেকে অনুবাদ করেছেন জগৎপতি বর্মা

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সংঘাতের ইতিহাস অনেক দীর্ঘ। এর মূলে রয়েছে কাশ্মীর ভূখণ্ড নিয়ে আঞ্চলিক বিরোধ, ধর্ম ও আদর্শিক পার্থক্য এবং ১৯৪৭ সালে ভারত ভাগের পরবর্তী ঐতিহাসিক ঘটনাবলী। আঞ্চলিক বিরোধ একাধিকবার সশস্ত্র যুদ্ধে গড়িয়েছে। আন্তর্জতিক হস্তক্ষেপে সাময়িক সময়ের জন্য অস্ত্রবিরতি হলেও দীর্ঘমেয়াদি
০৩ মে ২০২৫
মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।
৫ ঘণ্টা আগে
নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এর পেছন
১০ ঘণ্টা আগে
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
৫ দিন আগে