Ajker Patrika

বিদ্যুতে গ্যাস দিলে শিল্পে টান

  • দেশে গ্যাসের দৈনিক চাহিদা ৩৮০ কোটি ঘনফুট।
  • সরবরাহ করা হচ্ছে কমবেশি ২৭০ কোটি ঘনফুট।
  • বিদ্যুৎকেন্দ্রে দেওয়া হয় প্রায় ১১০ কোটি ঘনফুট।
  • গ্যাস পাচ্ছে না শিল্পকারখানা, বাসাবাড়ি ও সিএনজি স্টেশন।
আরিফুজ্জামান তুহিন, ঢাকা
আপডেট : ০৩ মে ২০২৫, ০৮: ৫৯
বিদ্যুতে গ্যাস দিলে শিল্পে টান

দেশের শিল্পকারখানায় চরম গ্যাস-সংকট দেখা দিয়েছে। গ্যাস না থাকায় অনেক স্থানে উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। আবার কোথাও কোথাও উৎপাদন নেমে এসেছে তিন ভাগের এক ভাগে। শুধু শিল্প নয়, বাসাবাড়ি ও সিএনজি স্টেশনেও চলছে গ্যাসের জন্য হাহাকার। গ্রীষ্মে লোডশেডিং কমাতে বিদ্যুৎ উৎপাদনে গ্যাস সরবরাহ বাড়ানোয় এই সংকট তৈরি হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। দেশীয় গ্যাসের উত্তোলন কমতে থাকায় সামনের দিনে সংকট আরও তীব্র হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তাঁরা।

পেট্রোবাংলার কর্মকর্তারা বলছেন, দেশে দৈনিক ৩৮০ কোটি ঘনফুট গ্যাসের চাহিদা রয়েছে। ৩০০ থেকে ৩২০ কোটি ঘনফুট গ্যাস পাওয়া গেলেও পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যায়। কিন্তু এই চাহিদার বিপরীতে ২৮ এপ্রিল গ্যাস সরবরাহ করা হয় ২৭০ কোটি ঘনফুট। সেখান থেকে বিদ্যুৎকেন্দ্রে দেওয়া হয় প্রায় ১১০ কোটি ঘনফুট। বাকি ১৬০ কোটি ঘনফুট গ্যাস দিয়ে শিল্পকারখানা, বাসাবাড়ি ও সিএনজি স্টেশনের চাহিদা মেটানো সম্ভব হচ্ছে না। এই পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বেশি ভুগতে হচ্ছে শিল্প-কারখানাগুলোকে।

ঢাকার সাভার, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ ও নরসংদীর শিল্পকারখানায় গ্যাস-সংকট চরমে উঠেছে। এতে অর্ডার ধরে রাখা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন সেখানকার রপ্তানিমুখী গার্মেন্টস কারখানার মালিকেরা। গার্মেন্টস কারখানা ছাড়াও সিরামিক, ইস্পাত, রি-রোলিং মিল ও টেক্সটাইল খাতের উৎপাদন অর্ধেকে নেমে এসেছে।

দেশের বৃহত্তম গ্যাস বিতরণ সংস্থা তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন। ঢাকা, গাজীপুর, ময়মনসিংহ ও নারায়ণগঞ্জ এলাকায় গ্যাস সরবরাহ করে সংস্থাটি। তিতাস গ্যাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহনেওয়াজ পারভেজ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের চাহিদা রয়েছে ১৯০ কোটি ঘনফুট, আমরা পাচ্ছি ১৫০ কোটি ঘনফুট। যা পাচ্ছি তা থেকে একটি বড় অংশ বিদ্যুৎকেন্দ্রে সরবরাহ করা হচ্ছে। সে কারণে চাহিদা অনুযায়ী কলকারখানায় গ্যাস সরবরাহ দেওয়া যাচ্ছে না।’

বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) বিদেশ থেকে আমদানি করে এই সংকট সমাধান করা যাবে না। সংকট সমাধানে দেশীয় গ্যাস উত্তোলনে জোর দেওয়া দরকার।

কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক এম শামসুল আলম আজকের পত্রিকাকে বলেন, আগে দেশীয় গ্যাস উত্তোলনে যথেষ্ট চেষ্টা করা হয়নি, এখনো হচ্ছে না। জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে না পারলে দেশের অর্থনীতি বড় বিপদে পড়বে।

লোডশেডিং থেকে মুক্তি নেই

শিল্পকারখানায় গ্যাস সরবরাহ কমিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনে অগ্রাধিকার দেওয়া হলেও পুরোপুরি লোডশেডিং মুক্ত করা সম্ভব হচ্ছে না। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) প্রকৌশলীরা বলছেন, গত মাসের (এপ্রিল) শেষ সময়ে এসে দেশে বিদ্যুতের গড় চাহিদা দাঁড়ায় ১৪ হাজার মেগাওয়াট থেকে ১৪ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট। এর বিপরীতে যে বিদ্যুৎ উৎপাদন হয় , তাতে প্রতিদিন প্রায় ১ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট ঘাটতি ছিল। ফলে রাজধানীকে লোডশেডিং মুক্ত রাখা গেলেও সারা দেশের গ্রাম পর্যায়ে লোডশেডিং ভোগান্তি ঠিকই রয়ে গেছে। পরিস্থিতির আরও অবনতি যেন না হয়, সেজন্য দৈনিক ১১০ কোটি ঘনফুট গ্যাস বিদ্যুৎকেন্দ্রে সরবরাহ করা হচ্ছে। বিদ্যুৎকেন্দ্রে সরবরাহ করা গ্যাসের পরিমাণ এর নিচে নেমে গেলে রাজধানীতেও তীব্র লোডশেডিং দেখা দেবে। আবার বিদ্যুৎকেন্দ্রে গ্যাস সরবরাহ একই হারে রাখলে কলকারখানা অচল হয়ে পড়বে।

এলএনজি নির্ভরতার শুরু যেভাবে

২০০৯ সালের জানুয়ারিতে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার সময় দেশীয় গ্যাসের উৎপাদন ছিল দৈনিক ১৭৪ কোটি ঘনফুট। এরপর দেশীয় গ্যাস উৎপাদনের জন্য নতুন কূপ খনন ও বিদ্যমান কূপের সংস্কার কাজ হাতে নেওয়া হয়। এতে দেশীয় গ্যাসের উৎপাদন বেড়ে দৈনিক ২৭০ কোটি ঘনফুটে পৌঁছায়। স্থলভাগে বড় ধরনের গ্যাসের মজুত পাওয়া যাবে না, এমন বিবেচনায় সরকার সাগরে ভাসমান দুটি এলএনজি স্থাপন করে এর একটি দেওয়া হয় যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানি এক্সিলারেট এনার্জিকে, অপরটি দেশীয় প্রতিষ্ঠান সামিটকে। দুটো টার্মিনাল দেওয়া হয় বিশেষ আইনে বিনা দরপত্রে। ২০১৮ সালের আগস্ট মাসে দৈনিক ৫০ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহের ক্ষমতা নিয়ে এক্সিলারেট এনার্জির এলএনজি টার্মিনাল থেকে গ্যাস সরবরাহ শুরু হয় আর সামিটের এলএনজি টার্মিনাল উৎপাদনে আসে ২০১৯ সালের এপ্রিলে।

পেট্রোবাংলার সূত্রে জানা গেছে, ২০২৪ সালের এপ্রিল জুড়ে গড়ে দৈনিক ৩১০ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হয়। এর মধ্যে বিদেশ থেকে আমদানি করা এলএনজি ছিল ১০০ কোটি ঘনফুট, বাকি ২১০ কোটি ঘনফুট ছিল দেশীয় গ্যাস। ২৮ এপ্রিল গ্যাস সরবরাহ করা হয় ২৭০ কোটি ঘনফুট, যা আগের বছরের তুলনায় ৪০ লাখ ঘনফুট কম; যার সবটুকুই দেশীয় গ্যাস, যার এখন দৈনিক উৎপাদন এসে দাঁড়িয়েছে ১৭০ কোটি ঘনফুটে।

সামনে অন্ধকার

দেশের দুটি এলএনজি টার্মিনাল দিয়ে সর্বোচ্চ দৈনিক ১০০ কোটি ঘনফুট সরবরাহ হচ্ছে। বিগত আওয়ামী লীগ সরকার আরও দুটি এলএনজি টার্মিনালের অনুমতি দিয়েছিল, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার সে দুটি এলএনজি টার্মিনাল বাতিল করেছে। বিপরীতে সরকার একটি স্থলভিত্তিক এলএনজি টার্মিনাল স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। তবে বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, দরপত্র আহ্বান করে নতুন টার্মিনাল স্থাপনে বেশ কয়েক বছর লেগে যাবে। ফলে সহজেই যাচ্ছে না গ্যাস-সংকট।

পেট্রোবাংলার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দেশের স্থলভাগে বড় ধরনের গ্যাসের মজুত মিলবে না, কমে যাবে বিদ্যমান কূপের উৎপাদন। বিশেষ করে মৌলভীবাজারের বিবিয়ানা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া তিতাস গ্যাসক্ষেত্রের গ্যাসের সরবরাহ কমে যাওয়ার আশঙ্কা আছে। এমন পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে পটুয়াখালীর পায়রায় একটি ভাসমান টার্মিনাল নির্মাণে মার্কিন কোম্পানি এক্সিলারেটের সঙ্গে চুক্তি সই করে পেট্রোবাংলা। আর ২০২৪ সালের মার্চে কক্সবাজারের মহেশখালীতে সামিটের সঙ্গে ভাসমান আরেকটি এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণে চুক্তি সই করা হয়। এ দুটি টার্মিনালের মাধ্যমে দৈনিক ১০০ কোটি ঘনফুট গ্যাস আমদানি করা যেত। এই দুটি চুক্তিই গত বছরে অক্টোবরে বাতিল করে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকার। সেই সঙ্গে ডিপ ড্রিলিং থেকেও সরে আসে পেট্রোবাংলা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

তেল-পেঁয়াজে দাম বাড়তি, সবজিতে ফিরছে স্বস্তি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯: ৪০
টাটকা সবজি কিনছেন একজন। গতকাল রাজধানীর হাতিরপুল কাঁচাবাজারে।
টাটকা সবজি কিনছেন একজন। গতকাল রাজধানীর হাতিরপুল কাঁচাবাজারে।

বাজারে একলাফে লিটারে ৯ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে সয়াবিন তেলের দাম। আর দেশি পুরোনো পেঁয়াজের দাম বেড়েছে প্রতি কেজিতে ১০ টাকা। তবে এসব পণ্যের সরবরাহে তেমন কোনো সমস্যা নেই বাজারে। পুরোনো পেঁয়াজের সঙ্গে নতুন পেঁয়াজও পাওয়া যাচ্ছে।

ভোজ্যতেল ও পেঁয়াজ ছাড়া বাজারে সবজি, ডিম, মুরগি, আটা, চিনিসহ প্রায় অধিকাংশ পণ্যের দাম কমেছে। বিশেষ করে সবজির বাজারে গত সপ্তাহের তুলনায় অনেকটাই স্বস্তি ফিরেছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর শান্তিনগর, মালিবাগ, রামপুরাসহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১২০-১৪০ টাকা, এক সপ্তাহ আগে মানভেদে দাম ছিল ১১০-১২০ টাকা কেজি। নতুন পেঁয়াজের দাম অবশ্য তুলনামূলক কম। খুচরায় পাতাসহ নতুন পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৭০-৮০ টাকা কেজি।

জানতে চাইলে রামপুরা বাজারের সবজি বিক্রেতা শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এবার পেঁয়াজ আমদানি না করেই বাজারের চাহিদা মিটে গেছে। এখন আগের মৌসুমের পেঁয়াজের মজুত একেবারেই শেষের দিকে। এই সময় পুরোনো পেঁয়াজের দাম কিছুটা বেশিই থাকে। তবে এটা বেশি দিন থাকবে না। বাজারে পেঁয়াজের ঘাটতি নেই। চাহিদা অনুসার পেঁয়াজ রয়েছে।’

বেড়েছে ভোজ্যতেলের দামও। প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৯৮ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ১৮৯ টাকা। খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৭৫-১৭৯ টাকা লিটার, যা গত সপ্তাহে ছিল ১৭১-১৭৪ টাকা লিটার।

বিক্রেতারা বলছেন, কোম্পানিগুলো গত এক সপ্তাহে ধীরে ধীরে বাজারে বাড়তি দামে তেল সরবরাহ করেছে। এখনো অনেক দোকানে আগের দামের তেল পাওয়া যায়। তবে বাজারের অধিকাংশ দোকানেই বাড়তি দামের তেল রয়েছে।

গত সপ্তাহ পর্যন্ত খুচরায় কাঁচা মরিচ বিক্রি হতো ১২০-১৫০ টাকা কেজি, তবে চলতি সপ্তাহে দাম কমে ৭০-১০০ টাকা কেজিতে নেমেছে। এ ছাড়া শীতের সবজি হলেও শিমের দাম হঠাৎ বেড়ে ১৫০ টাকার ওপরে উঠেছিল।

সেই শিম এখন বিক্রি হচ্ছে ৬০-৮০ টাকা কেজি। ফুলকপি, বাঁধাকপির দাম কমেছে প্রতিটিতে ১০ টাকা। দুই ধরনের কপিই পাওয়া যাচ্ছে ৩০ টাকায়। তবে ভালো মানের ফুলকপি ৫০ টাকা। গত সপ্তাহে একটি কপি কিনতে ৪০-৬০ টাকা লেগেছিল।

দাম কমেছে টমেটোরও। মান ও বাজারভেদে প্রতি কেজি টমেটো বিক্রি হচ্ছে ৮০-১০০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ১২০-১৪০ টাকা।

দেশি গাজরের সরবরাহ ব্যাপক বেড়েছে বাজারে, এতে দামও কমেছে। প্রতি কেজি গাজর বিক্রি হচ্ছে ৬০-৮০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ৮০-১০০ টাকা। তবে আমদানির গাজর আগের মতোই ১২০-১৩০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। গত সপ্তাহে বেগুন বিক্রি হয়েছিল ৮০-১০০ টাকা কেজি, যা চলতি সপ্তাহে কমে ৭০-৮০ টাকায় নেমেছে। বাজারে আলুর দাম আগের মতোই প্রতি কেজি ২৫ টাকা রয়েছে।

আমিষের সবচেয়ে বড় উৎস ডিমের দাম আরও কমেছে। ফার্মের মুরগির সাদা ও বাদামি ডিমের দাম কমে ১১০ থেকে ১২৫ টাকা ডজনে নেমেছে। গত সপ্তাহে ছিল ১২০-১৩০ টাকা।

ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) তথ্য বলছে, গত বছর এই সময় ফার্মের মুরগির ডিম বিক্রি হয়েছিল ১৪০-১৫০ টাকা ডজন। টিসিবি বলছে, গত বছরের তুলনায় ডিমের দাম ৩৫ শতাংশ কমেছে।

ডিমের সঙ্গে কমেছে ফার্মের মুরগির দামও। প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগির দাম কমে ১৫০-১৭০ টাকা কেজি, যা গত সপ্তাহে ছিল ১৬০-১৮০ টাকা কেজি।

সেগুনবাগিচা বাজারের ডিম বিক্রেতা নূর ই আলম বলেন, ‘ডিম ও মুরগির বাজার স্বাভাবিক আচরণ করছে না। হঠাৎ দামের এত পতন হচ্ছে কেন, তা বোঝা যাচ্ছে না। বর্তমানে ডিমের যে দাম, তা গত কয়েক বছরের তুলনায় সবচেয়ে কম।’

ডিম-মুরগির সঙ্গে কিছুটা কমেছে রুই-কাতলা মাছের দামও। বাজারে চাষের এই মাছগুলো বিক্রি হচ্ছে ৩০০-৪০০ টাকা কেজি, যা গত সপ্তাহে ছিল ৩২০-৪৫০ টাকা কেজি।

মুদিপণ্যের মধ্যে চিনির দাম আগে থেকেই কমেছে। খোলা চিনি বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৯০-১০০ টাকা কেজি। চলতি সপ্তাহে নতুন করে কমেছে আটা, মসুর ডাল, ছোলার দাম। খোলা আটার দাম ২-৩ টাকা কমে ৪৫-৪৮ টাকা বিক্রি হচ্ছে, যা আগে ছিল ৪৮-৫০ টাকা কেজি। কেজিপ্রতি বড় দানার মসুর ডাল বিক্রি হচ্ছে ৯০-১০০ টাকা কেজি, যা গত সপ্তাহে ছিল ৯৫-১০৫ টাকা। ছোলার দামও কেজিপ্রতি ৫ টাকা কমে ৯৫-১১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

সেগুনবাগিচা কাঁচাবাজারের মামা-ভাগনে মুদিদোকানের বিক্রেতা হারুনুর রশিদ বলেন, রমজান উপলক্ষে পণ্যের আমদানি ব্যাপক বেড়েছে। তাই প্রায় সব ধরনের পণ্যের দাম কমছে। তবে ভোজ্যতেল ও পেঁয়াজের বিষয়টি কিছুটা ভিন্ন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

উত্তরা ব্যাংকের ২৫০তম শাখার উদ্বোধন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

উত্তরা ব্যাংক পিএলসির একটি নতুন শাখার উদ্বোধন করা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার কুমিল্লা জেলার লাকসাম থানার ব্যাংক রোড, দৌলতগঞ্জ বাজারে ব্যাংকের ২৫০তম লাকসাম শাখার উদ্বোধন করেন ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী মো. আবুল হাশেম।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ব্যাংকের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাকসুদুল হাসান।

এ ছাড়া অনুষ্ঠানে মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) মো. রবিউল হাসান এবং উপমহাব্যবস্থাপক ও আঞ্চলিক প্রধান (কুমিল্লা অঞ্চল) মো. জাহাঙ্গীর আলমসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

টানা চার মাস কমল রপ্তানি আয়

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

রেমিট্যান্সে প্রবাহ বাড়লেও পণ্য রপ্তানিতে ধাক্কার ধারা থামছে না। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সর্বশেষ প্রতিবেদনে দেখা গেছে, চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের নভেম্বরে দেশের রপ্তানি আয় হয়েছে ৩৮৯ কোটি ১৫ লাখ ডলার। গত বছরের একই মাসে এই আয় ছিল ৪১১ কোটি ৯৬ লাখ ডলার। অর্থাৎ মাসওয়ারি হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে রপ্তানি আয় কমেছে ৫ দশমিক ৫৪ শতাংশ, টাকার অঙ্কে এই হ্রাসকৃত রপ্তানির পরিমাণ দাঁড়ায় ২২ কোটি ৮১ লাখ ডলার।

এবারই প্রথম নয়, আগস্ট থেকে শুরু হওয়া নিম্নমুখী ধারা নভেম্বরে এসে চতুর্থ মাসে পা দিল। জুলাইয়ের শক্তিশালী সূচনার পর রপ্তানি খাত যে ধারাবাহিক গতি অর্জন করেছিল, সেই গতি আগস্টেই থমকে যায়। ওই মাসে আগের বছরের তুলনায় প্রবৃদ্ধি কমে ২ দশমিক ৯৩ শতাংশে নেমে আসে। সেপ্টেম্বরেও পতন গভীর হয়—৪ দশমিক ৬১ শতাংশ। অক্টোবরে সেই হার আরও বেড়ে দাঁড়ায় ৭ দশমিক ৪৩ শতাংশে।

জুলাইয়ের ব্যতিক্রমী সাফল্যের পর পরবর্তী চার মাস যেন একটানা ঢালু পথ। সেই জুলাইয়ে রপ্তানি আয় ছিল ৪৭৭ কোটি ৫ লাখ ডলার, প্রবৃদ্ধি প্রায় ২৪ দশমিক ৯০ শতাংশ। কিন্তু এরপর প্রতি মাসেই কমতে কমতে নভেম্বরে এসে রপ্তানি আয়ের ব্যবধান স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।

সার্বিক চিত্রটি বলছে, অর্থবছরের শুরুতে পাওয়া জোয়ারটি এখন চার মাসের টানা ভাটার মুখে দাঁড়িয়ে।

আজ বৃহস্পতিবার প্রকাশিত ইপিবির তথ্য পর্যালোচনায় আরও দেখা গেছে, চলতি অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বর মিলিয়ে পাঁচ মাসে মোট রপ্তানি আয় দাঁড়িয়েছে ২০০২ কোটি ৮৫ লাখ ডলার; যা আগের ২০২৪-২৫ অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় প্রবৃদ্ধি ঘটেছে মাত্র দশমিক ৬২ শতাংশ। অর্থাৎ পাঁচ মাসের সার্বিক রপ্তানি আয়ের চিত্রও নামমাত্র।

নভেম্বরের সবচেয়ে বড় আঘাত লেগেছে পোশাক খাতে, যেটি দেশের রপ্তানির প্রধান ভরসা। ওই মাসে পোশাক রপ্তানি থেকে এসেছে ৩১৪ কোটি ৯ লাখ ডলার, যা গত বছরের তুলনায় ৫ শতাংশ কম। এ সময় নিটওয়্যার খাতে আয় নেমেছে ১৬১ কোটি ৮৪ লাখ ডলারে, আর ওভেনে এসেছে ১৫২ কোটি ২৪ লাখ ডলার। গত বছরের একই সময়ে নিটওয়্যার আয় ছিল ১৭৩ কোটি ৮২ লাখ ডলার এবং ওভেন ১৫৬ কোটি ৯২ লাখ ডলার।

পোশাকের বাইরে কৃষিপণ্যে রপ্তানি কমেছে ২৪ দশমিক ৬৮ শতাংশ, প্লাস্টিক পণ্যে কমেছে ১৫ দশমিক ৪৯ শতাংশ। এ ছাড়া রপ্তানি পতনের তালিকায় রয়েছে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, পাট ও পাটজাত সামগ্রী, হোম টেক্সটাইলস, ফার্মাসিউটিক্যালস, জাহাজ, চিংড়ি ও লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং। এর মানে হচ্ছে, প্রচলিত এসব খাতেও মন্থরতা স্পষ্ট।

তবে সব বাজারে একই চিত্র নয়। কিছু গন্তব্যে বিপরীত প্রবণতা দেখা গেছে, যা সামগ্রিক মন্দার মধ্যেও আশার সঞ্চার করেছে। যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি বেড়েছে ৪ দশমিক ২০ শতাংশ, যুক্তরাজ্যে ৩ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ। উদীয়মান বাজারগুলোর মধ্যেও ইতিবাচক প্রবণতা স্পষ্ট—চীনে রপ্তানি বেড়েছে ২৩ দশমিক ৮৩ শতাংশ, পোল্যান্ডে ১১ দশমিক ৫৭ শতাংশ, সৌদি আরবে ১১ দশমিক ৩৪ শতাংশ এবং স্পেনে ১০ দশমিক ৪৬ শতাংশ। এ প্রবণতা সাম্প্রতিক বছরগুলোয় যেন অনেকটাই ব্যতিক্রমী সাফল্য।

সব মিলিয়ে চিত্রটি দ্বিমুখী। একদিকে ঐতিহ্যগত প্রধান খাতগুলোতে পতন; অন্যদিকে কিছু নতুন বাজারে ইতিবাচক ইঙ্গিত। তবে বড় প্রশ্ন রয়ে যায়, এই বাজার বৃদ্ধি কি পোশাকসহ প্রধান খাতের ধারাবাহিক মন্দাকে সামাল দিতে পারবে?

বর্তমান বাস্তবতা বলছে, বৈচিত্র্য বাড়ানোর পথে অনেক দূর যেতে হবে। উৎপাদন প্রতিযোগিতা, মূল্যের চাপ, বৈদেশিক অর্ডার সংকোচন এবং বিশ্ববাজারের অনিশ্চয়তা, সব মিলিয়ে রপ্তানি খাতে সামনের পথ সহজ নয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

৯ কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি দিল সিগারেট কোম্পানি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ০৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১: ৪৮
৯ কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি দিল  সিগারেট কোম্পানি

পাবনার ইশ্বরদীভিত্তিক সিগারেট কোম্পানি ইউনাইটেড টোব্যাকো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের প্রায় ৯ কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি উদঘাটন করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। ভ্যাট গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা অভিযানে গিয়ে এই ফাঁকি ধরেছেন বলে আজ বৃহস্পতিবার এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে এনবিআর।

এনবিআর জানায়, তামাক ও তামাকজাত পণ্যের অবৈধ উৎপাদন, বাজারজাতকরণ এবং রাজস্ব ফাঁকি প্রতিরোধে সম্প্রতি কার্যক্রম আরও জোরদার করেছে এনবিআর। এরই ধারাবাহিকতায় গোপন সূত্রের ভিত্তিতে এনবিআরের ভ্যাট গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের একটি দল ঈশ্বরদীতে অবস্থিত ইউনাইটেড টোব্যাকো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের কারখানায় বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে।

গোয়েন্দা দলের পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানটি ভ্যাট নিবন্ধন গ্রহণ করলেও দীর্ঘদিন ধরে আনুষ্ঠানিক উৎপাদন কার্যক্রম প্রদর্শন না করে গোপনে সিগারেট উৎপাদন ও বাজারজাতকরণের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে আসছে। অভিযানে ৬ লাখ ৩৪ হাজার ৫৯০ শলাকা জাল ব্যান্ডরোলযুক্ত সিগারেট জব্দ করা হয়, যার বাজারমূল্য ৩৮ লাখ টাকারও বেশি। এসব সিগারেটের বিপরীতে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ২৯ লাখ টাকা রাজস্ব ফাঁকি দেওয়ার সুনির্দিষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়।

এ ছাড়া ১০ লাখ ২৯ হাজারটি অব্যবহৃত জাল ব্যান্ডরোল বা স্ট্যাম্প উদ্ধার করা হয়, যা ব্যবহার করা হলে অতিরিক্ত ৮ কোটি ৫০ লাখ টাকারও বেশি রাজস্ব ফাঁকি দেওয়া সম্ভব ছিল। প্রতিষ্ঠানটি ৩ লাখ ২২ হাজার ৫০০টি বৈধ ব্যান্ডরোল সংগ্রহ করলেও তা ব্যবহার না করে জাল ব্যান্ডরোল ব্যবহার করে সিগারেট উৎপাদন ও বিক্রি করছিল।

এনবিআর জানিয়েছে, সব সিগারেট ও উপকরণ আইনানুগভাবে জব্দ করা হয়েছে এবং প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনিপ্রক্রিয়া ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে। অভিযানে উদ্ধার করা দলিলাদির ভিত্তিতে শিগগিরই পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দাখিল করা হবে। পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট ভ্যাট কমিশনারেটকে প্রতিষ্ঠানটির উৎপাদন ও বিক্রি কার্যক্রমের ওপর কঠোর নজরদারির জন্য নির্দেশনা প্রদান করা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত