আজকের পত্রিকা ডেস্ক

পাঁচ বছর আগে ভারতে অভাবনীয় অভ্যর্থনা পেয়েছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সে সময় চীন কড়া ভাষায় এর সমালোচনা করেছিল। ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ট্রাম্পের সম্মানে ‘নমস্তে ট্রাম্প’ নামে এক জনসভার আয়োজন করেছিলেন আহমেদাবাদে। মোদির নিজ রাজ্য গুজরাটের আহমেদাবাদে আয়োজিত ওই জনসভা ছিল ট্রাম্পের প্রথম ভারত সফর। এই সফর দুই দেশের মধ্যে আরও গভীর সম্পর্কের পথ খুলে দেয়। এটি মোদি ও ট্রাম্পের ব্যক্তিগত সম্পর্কেরও এক নতুন অধ্যায় শুরুর প্রদর্শনী ছিল।
এর কয়েক মাস পর, ২০২০ সালের জুনে ভারত-চীন সম্পর্ক তলানিতে ঠেকে। হিমালয় অঞ্চলের লাদাখের গালওয়ান উপত্যকায় সংঘর্ষে নিহত হয় ভারতের ২০ সেনা। এরপর ভারত টিকটকসহ দুই শতাধিক চীনা অ্যাপ নিষিদ্ধ করে। ভারত ও চীনের সেনারা সীমান্তে মুখোমুখি অবস্থান নেন। এ সময় যুক্তরাষ্ট্র ও কোয়াড জোটের (কোয়াড্রিল্যাটারাল সিকিউরিটি ডায়ালগ)—যেখানে জাপান ও অস্ট্রেলিয়াও রয়েছে—সঙ্গে প্রতিরক্ষা ও কৌশলগত সহযোগিতা জোরদার করে নয়াদিল্লি।
বিগত পাঁচ বছর চীনকে প্রতিপক্ষ হিসেবেই দেখেছে ভারত। এমনকি গত মে মাস পর্যন্ত চীনকে কার্যত প্রধান প্রতিপক্ষ হিসেবে দেখেছে। কারণ, ভারতনিয়ন্ত্রিত জম্মু-কাশ্মীরে সন্ত্রাসী হামলার পর চার দিনের যুদ্ধে পাকিস্তান চীনা প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ব্যবহার করেছিল। কিন্তু ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক যুদ্ধ, বিশেষ করে—ভারতের পণ্যে ৫০ শতাংশ কর আরোপ এবং দ্রুত ভূরাজনৈতিক পরিবর্তনের কারণে নয়াদিল্লি ও বেইজিংয়ের সম্পর্ক কিছুটা উষ্ণ হয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, প্রভাব বিস্তারের লক্ষ্যে কয়েক দশকে ওয়াশিংটনের গড়ে তোলা কূটনৈতিক ও কৌশলগত অর্জনগুলো ভেস্তে দিচ্ছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।
ড্রাগন-হাতির ট্যাঙ্গো
গত সপ্তাহের শুরুতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ইর সঙ্গে বৈঠক করেন। দুই দিনের দিল্লি সফরে ওয়াং ই ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালের সঙ্গেও বৈঠক করেন। হিমালয় সীমান্তে দুই দেশের চলমান বিরোধ নিয়েই মূলত আলোচনা হয়।
চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, একে অপরকে ‘বিশ্বাস ও সহযোগিতা’ করা উচিত। বৈঠকে উভয় পক্ষের মধ্যে আস্থা গড়তে কয়েকটি পদক্ষেপের ঘোষণা দেওয়া হয়—সরাসরি বিমান চলাচল পুনরায় শুরু, ভিসা প্রক্রিয়া সহজীকরণ ও সীমান্ত বাণিজ্যে সুবিধা দেওয়া।
গত জুনে বেইজিং ভারতীয় তীর্থযাত্রীদের তিব্বতের পবিত্র স্থানে যাওয়ার অনুমতি দেয়। পাশাপাশি, দীর্ঘদিনের সীমান্ত বিরোধের কিছু অংশে ‘প্রাথমিক সমাধান’ খুঁজে দেখতেও দুই দেশ সম্মত হয়েছে। ১৯৬২ সালের যুদ্ধে রূপ নেওয়া এই সীমান্ত সংকটই দুই দেশের সম্পর্কের সবচেয়ে বড় ঐতিহাসিক উত্তেজনার কারণ।
চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং মোদিকে সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন (এসসিও) সম্মেলনে যোগ দেওয়ার আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। চীন-রাশিয়ার নেতৃত্বাধীন এই আঞ্চলিক জোটকে অনেক বিশ্লেষক যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব ঠেকানোর উদ্যোগ হিসেবে দেখেন। চলতি মাসের শেষ দিকে চীনের তিয়ানজিনে অনুষ্ঠেয় এ সম্মেলনে যোগ দেবেন মোদি। সাত বছরের বেশি সময় পর এটিই হবে তাঁর প্রথম চীন সফর।
চলতি বছরের শুরুর দিকে প্রেসিডেন্ট সি আহ্বান জানান ভারত-চীন সম্পর্ককে ‘ড্রাগন-হাতির ট্যাঙ্গো নাচের’ রূপ দেওয়ার জন্য। ড্রাগন ও হাতিকে এই দুই এশীয় পরাশক্তির প্রতীক ধরা হয়।
তাইওয়ান-এশিয়া এক্সচেঞ্জ ফাউন্ডেশনের ফেলো সানা হাশমি আল-জাজিরাকে বলেন, ভারত-চীনের বিভেদ দূর করার প্রচেষ্টা বেশ কিছুদিন ধরেই চলছে। গত অক্টোবরেই রাশিয়ার কাজানে মোদি ও সির মধ্যে বরফ গলানো বৈঠক হয়। এর আগে কয়েক বছর ধরে তাঁরা একে অপরকে এড়িয়ে চলছিলেন, এমনকি বহুপক্ষীয় সম্মেলনেও।
হাশমি বলেন, ‘তবে ট্রাম্পের শুল্কনীতি আর পাকিস্তানের প্রতি তাঁর বাড়তি আনুকূল্যের কারণে ভারতের হাতে তেমন বিকল্প ছিল না। তাই তারা প্রতিপক্ষের সংখ্যা কমানোর পথে হাঁটছে, যার মধ্যে চীনও রয়েছে।’
এ বছর ট্রাম্প দুবার পাকিস্তানের সেনাপ্রধান আসিম মুনিরকে ওয়াশিংটনে আতিথ্য দিয়েছেন। এমনকি দীর্ঘদিনের রীতি ভেঙে বিদেশি কোনো সেনাপ্রধানকে তিনি হোয়াইট হাউসে আতিথ্য দেন। ট্রাম্প বারবার দাবি করেছেন, গত মে মাসে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধবিরতি ঘটেছে তাঁর মধ্যস্থতায়। যদিও নয়াদিল্লি বলে আসছে, ওয়াশিংটন কোনো ভূমিকা নেয়নি।
এই প্রেক্ষাপটে ভারত-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের আলোকে দিল্লির ভবিষ্যৎ পদক্ষেপ প্রসঙ্গে হাশমি বলেন, ‘বেইজিংয়ের জন্য এই উদ্যোগটা (ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো করা) কৌশলগত, কিন্তু নয়াদিল্লির জন্য বিষয়টা এসেছে অনিশ্চয়তা আর পরিবর্তনশীল ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপট থেকে।’ হাশমি মনে করেন, হোয়াইট হাউস ‘নিশ্চিতভাবেই ভারতের মতো কৌশলগত অংশীদারকে একঘরে করার চেষ্টা করছে’।
রাশিয়ার তেল আমদানি অব্যাহত রাখায় ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রে ভারতের রপ্তানি পণ্যে ২৫ শতাংশ বাড়তি শুল্ক বসিয়েছেন, যা আগের ২৫ শতাংশ শুল্কের ওপর আরোপ করা হয়েছে। কিন্তু রুশ তেলের সবচেয়ে বড় ক্রেতা চীনের ওপর তিনি এমন শুল্ক দেননি। বাণিজ্য অর্থনীতিবিদ বিশ্বজিৎ ধর বলেন, ট্রাম্পের এই শুল্কনীতি এশিয়ায় নতুন সমীকরণ তৈরি করছে। তিনি বলেন, ‘ভারত-চীন সম্পর্ক উন্নতির গতি গত কয়েক মাসে অনেক বেড়েছে। এবার মনে হচ্ছে সম্পর্কের সত্যিকারের একটা পরিবর্তন ঘটছে, যা স্থায়ী হতে যাচ্ছে।’
নয়া এশীয় বাণিজ্য জোট?
রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারত-চীন সম্পর্কের উন্নতি হলে দুই দেশই যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কের ধাক্কা কিছুটা লাঘব করতে পারবে। চীনা বাজারে প্রবেশাধিকার, সীমান্ত বাণিজ্যে সহজতা এবং যৌথ সরবরাহ চেইন নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা ভারতের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের বাজারের ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে সহায়ক হবে।
২০২৪-২৫ অর্থবছরে চীনের সঙ্গে ভারতের বাণিজ্য ঘাটতি ছিল ৯৯ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার। মূলত ইলেকট্রনিক পণ্যের আমদানি বেড়ে যাওয়া এর জন্য দায়ী। যুক্তরাষ্ট্রের পরই চীন ভারতের সবচেয়ে বড় বাণিজ্য অংশীদার। তবে ভারতের যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যে ঘাটতি, চীনের সঙ্গে তা প্রায় দ্বিগুণ।
এ বিষয়ে সানা হাশমি বলেছেন, চীন ভারতকে আকৃষ্ট করার চেষ্টা করছে এবং ভারতীয় পণ্যের জন্য বাজার আরও খুলে দেওয়ার ইঙ্গিত দিচ্ছে। এতে শুল্কের প্রভাব কিছুটা কমতে পারে। একই সঙ্গে কৌশলগত ও অর্থনৈতিক দুর্বলতাও হ্রাস পাবে। চীনের সঙ্গে বিশাল বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে সহায়তা করবে।
হাশমি আরও বলেন, ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করতে পারা চীনের জন্য কৌশলগত দিক থেকেও বড় সাফল্য হবে। তাঁর মতে, ‘নয়াদিল্লি বরাবরই যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ। ফলে ভারতের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক চীনকে প্রমাণ করতে সাহায্য করবে যে অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তা অংশীদার হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র নয়, বরং তারাই বেশি নির্ভরযোগ্য।’
সিঙ্গাপুরের ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ইনস্টিটিউট অব সাউথ এশিয়ান স্টাডিজের ভিজিটিং রিসার্চ ফেলো ও ভারত-চীন সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ ইভান লিদারেভ বলেন, ভারত ও চীন উভয় দেশেই এখন উপলব্ধি করছে, দ্বিপক্ষীয় টানাপোড়েনের কারণে ভূরাজনীতিতে তারা অনেক কিছু হারিয়েছে।
লিদারেভ বলেন, ‘চীন বুঝতে পেরেছে, তারা ভারতকে যুক্তরাষ্ট্রের দিকে অনেক বেশি ঠেলে দিয়েছে। আর নয়াদিল্লি বুঝতে পারছে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তার জন্য বড় মূল্য চোকানোর বাস্তবতা বয়ে এনেছে।’ লিদারেভের মতে, ‘ভারত-চীন সম্পর্ক উষ্ণ হলে এশিয়াকেন্দ্রিক বাণিজ্য জোট গঠনের সুযোগ আরও বাড়বে, যা ওয়াশিংটন থেকে স্বাধীন থাকবে।’
তবে হাশমি সীমাবদ্ধতাও তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ভারতসহ অনেক দেশ সরবরাহ চেইনে ঝুঁকি কমাতে কোনো একক উৎসের ওপর অতি নির্ভরতা কমানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু চীনের ওপর ক্রমবর্ধমান নির্ভরতার কার্যকর জবাব না দিলে সেই চেষ্টার ফল আসবে না। ভারতের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শুল্কের কারণে এই চ্যালেঞ্জ আরও বেড়েছে।
হাশমি আল-জাজিরাকে বলেন, ‘সম্পর্কে নমনীয়তা এলেও তা আমূল বদলে দেবে না। প্রতিযোগিতা ও সংঘাত থাকবেই। শুল্কের পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন দেশ চীনের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক স্বাভাবিক করার জন্য তাড়াহুড়া করবে। ফলে বিশ্ব বাণিজ্যে চীনের ওপর নির্ভরশীলতাও বহাল থাকবে।’
গুরুত্ব হারাচ্ছে কোয়াড
জর্জ ডব্লিউ বুশের সময় থেকেই ওয়াশিংটনে ভারতকে চীনের গণতান্ত্রিক প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে দেখা হচ্ছিল। বারাক ওবামার ‘এশিয়ামুখী’ বা ‘pivot to Asia’ নীতিতে বেইজিংয়ের উত্থান ঠেকাতে দিল্লিকে কেন্দ্রে রাখা হয়। এরপর সেটি আরও স্পষ্ট হয় কোয়াড গঠনের মাধ্যমে, যেখানে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের সঙ্গে যোগ দেয় জাপান ও অস্ট্রেলিয়া।
ওয়াশিংটনের কাছে কোয়াড ছিল—এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় কৌশলের মূল কেন্দ্র। এর মাধ্যমে ওই অঞ্চলে অবকাঠামো নির্মাণ, সরবরাহ চেইনের স্থিতিশীলতা ও গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তিতে বিলিয়ন ডলার ঢালা হয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, কোয়াড যুক্তরাষ্ট্রকে আনুষ্ঠানিক সামরিক জোটের বাইরে থেকেও প্রভাব বিস্তারের সুযোগ দিয়েছে। একই সঙ্গে ভারতকে নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক সহযোগিতার কাঠামোয় বেঁধে ফেলেছে।
স্নায়ুযুদ্ধের সময় থেকেই ভারতের পররাষ্ট্রনীতি গড়ে উঠেছে ‘কৌশলগত স্বায়ত্তশাসন’ ধারণার ওপর। অর্থাৎ, নির্দিষ্ট ইস্যুতে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সহযোগিতা করবে, কিন্তু কোনো সামরিক জোটে যোগ দেবে না, কিংবা অন্য শক্তির বিরুদ্ধে আদর্শিক শিবিরে দাঁড়াবে না।
তবুও ওয়াশিংটনে ধরে নেওয়া হচ্ছিল যে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ হওয়ার পাশাপাশি দিল্লি ও বেইজিংয়ের পুরোনো অবিশ্বাস ভারতকে চীনের বিরুদ্ধে বড় কৌশলগত স্তম্ভে পরিণত করবে। ভারতকে পাশে রাখতে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্র কখনো দিল্লির মস্কোর প্রতি ঐতিহ্যগত বন্ধুত্ব নিয়ে বেশি চাপ সৃষ্টি করেনি। বিগত অর্ধশত ধরে রাশিয়া ভারতের অন্যতম বড় অস্ত্র সরবরাহকারী। রাশিয়ার ইউক্রেন যুদ্ধের সময়ও যুক্তরাষ্ট্র এই নীতি ধরে রাখে।
কিন্তু এখন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সেই সমীকরণ পাল্টে দিতে চাচ্ছে। তিনি চান ভারত স্পষ্টভাবে একপক্ষ বেছে নিক। হোয়াইট হাউসের বাণিজ্য ও উৎপাদনবিষয়ক কাউন্সেলর পিটার নাভারো ১৮ আগস্ট ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসে লেখেন, ‘বাইডেন প্রশাসন এই কৌশলগত ও ভূরাজনৈতিক অযৌক্তিকতার দিকে মূলত চোখ বন্ধ করে ছিল। ট্রাম্প প্রশাসন সেটির মোকাবিলা করছে...যদি ভারত যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত অংশীদার হিসেবে স্বীকৃতি পেতে চায়, তবে তাকে সেভাবে আচরণ করতে হবে।’
অন্যদিকে ভারতীয় কর্মকর্তারা ইঙ্গিত দিয়েছেন, দিল্লি তার ‘কৌশলগত স্বায়ত্তশাসন’ ছাড়বে না। দিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের (জেএনইউ) চায়না স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক বি আর দীপক বলেন, ভারত-চীন সম্পর্ক উষ্ণ হলে যুক্তরাষ্ট্রের চীনকে বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠানগুলোয় একঘরে করার পরিকল্পনা কঠিন হয়ে যাবে।
তিনি আল-জাজিরাকে বলেন, ‘যদি দিল্লি উন্নয়ন অর্থায়ন, বহুপক্ষীয় সংস্কার, ডি-ডলারাইজেশন বা জলবায়ু পরিবর্তনের মতো বিষয়ে বেইজিংয়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হয়, তবে তা যুক্তরাষ্ট্রের চীনবিরোধী গণতন্ত্র-জোট গড়ার বয়ানকে দুর্বল করবে। এতে চীনের বিকল্প বৈশ্বিক শৃঙ্খলা গঠনের প্রচেষ্টায় বৈধতা যুক্ত হবে।’
দীপক আরও বলেন, বেইজিং ও দিল্লির মধ্যে সুসম্পর্ক তৈরি হলে ভারত কোয়াডে প্রকাশ্যে চীনবিরোধী অবস্থান নেওয়ার ক্ষেত্রে কিছুটা পিছিয়ে যেতে পারে। তখন কোয়াড হয়তো কঠোরভাবে চীনের মোকাবিলা না করে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরে জনকল্যাণমূলক উদ্যোগ নেওয়ার দিকেই বেশি মনোযোগ দেবে।
সিঙ্গাপুরের ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির গবেষক লিদারেভ বলেন, ভারত-চীন পুনর্মিলন কোয়াডের ভেতরে জটিলতা তৈরি করবে। এতে পারস্পরিক আস্থা ও উদ্দেশ্যের স্পষ্টতাও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তবে দীপকের মতে, কোয়াডের ‘কৌশলগত গুরুত্ব’ একেবারেই শেষ হয়ে যাবে না। সরবরাহ চেইনের স্থিতিশীলতা, উদীয়মান প্রযুক্তি, জলবায়ু সহযোগিতা ও সামুদ্রিক নিরাপত্তার মতো যৌথ লক্ষ্যে এর প্রাসঙ্গিকতা টিকে থাকবে।
হাশমি মনে করিয়ে দেন, ট্রাম্প প্রথম দফায় কোয়াড শক্তিশালী করার ওপর জোর দিয়েছিলেন। অথচ এখন তাঁর পদক্ষেপই এর ঐক্যকে দুর্বল করছে। তিনি বলেন, আপাতত প্রেসিডেন্টের কাছে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চল অগ্রাধিকার বলে মনে হচ্ছে না। তবে পরিস্থিতি পাল্টালে যুক্তরাষ্ট্র একেবারে নতুন এক আঞ্চলিক বাস্তবতার মুখোমুখি হবে। তখন ভারতকে কোনো চীনবিরোধী জোটে যুক্ত করা অনেক কঠিন হয়ে উঠবে।
অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান

পাঁচ বছর আগে ভারতে অভাবনীয় অভ্যর্থনা পেয়েছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সে সময় চীন কড়া ভাষায় এর সমালোচনা করেছিল। ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ট্রাম্পের সম্মানে ‘নমস্তে ট্রাম্প’ নামে এক জনসভার আয়োজন করেছিলেন আহমেদাবাদে। মোদির নিজ রাজ্য গুজরাটের আহমেদাবাদে আয়োজিত ওই জনসভা ছিল ট্রাম্পের প্রথম ভারত সফর। এই সফর দুই দেশের মধ্যে আরও গভীর সম্পর্কের পথ খুলে দেয়। এটি মোদি ও ট্রাম্পের ব্যক্তিগত সম্পর্কেরও এক নতুন অধ্যায় শুরুর প্রদর্শনী ছিল।
এর কয়েক মাস পর, ২০২০ সালের জুনে ভারত-চীন সম্পর্ক তলানিতে ঠেকে। হিমালয় অঞ্চলের লাদাখের গালওয়ান উপত্যকায় সংঘর্ষে নিহত হয় ভারতের ২০ সেনা। এরপর ভারত টিকটকসহ দুই শতাধিক চীনা অ্যাপ নিষিদ্ধ করে। ভারত ও চীনের সেনারা সীমান্তে মুখোমুখি অবস্থান নেন। এ সময় যুক্তরাষ্ট্র ও কোয়াড জোটের (কোয়াড্রিল্যাটারাল সিকিউরিটি ডায়ালগ)—যেখানে জাপান ও অস্ট্রেলিয়াও রয়েছে—সঙ্গে প্রতিরক্ষা ও কৌশলগত সহযোগিতা জোরদার করে নয়াদিল্লি।
বিগত পাঁচ বছর চীনকে প্রতিপক্ষ হিসেবেই দেখেছে ভারত। এমনকি গত মে মাস পর্যন্ত চীনকে কার্যত প্রধান প্রতিপক্ষ হিসেবে দেখেছে। কারণ, ভারতনিয়ন্ত্রিত জম্মু-কাশ্মীরে সন্ত্রাসী হামলার পর চার দিনের যুদ্ধে পাকিস্তান চীনা প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ব্যবহার করেছিল। কিন্তু ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক যুদ্ধ, বিশেষ করে—ভারতের পণ্যে ৫০ শতাংশ কর আরোপ এবং দ্রুত ভূরাজনৈতিক পরিবর্তনের কারণে নয়াদিল্লি ও বেইজিংয়ের সম্পর্ক কিছুটা উষ্ণ হয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, প্রভাব বিস্তারের লক্ষ্যে কয়েক দশকে ওয়াশিংটনের গড়ে তোলা কূটনৈতিক ও কৌশলগত অর্জনগুলো ভেস্তে দিচ্ছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।
ড্রাগন-হাতির ট্যাঙ্গো
গত সপ্তাহের শুরুতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ইর সঙ্গে বৈঠক করেন। দুই দিনের দিল্লি সফরে ওয়াং ই ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালের সঙ্গেও বৈঠক করেন। হিমালয় সীমান্তে দুই দেশের চলমান বিরোধ নিয়েই মূলত আলোচনা হয়।
চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, একে অপরকে ‘বিশ্বাস ও সহযোগিতা’ করা উচিত। বৈঠকে উভয় পক্ষের মধ্যে আস্থা গড়তে কয়েকটি পদক্ষেপের ঘোষণা দেওয়া হয়—সরাসরি বিমান চলাচল পুনরায় শুরু, ভিসা প্রক্রিয়া সহজীকরণ ও সীমান্ত বাণিজ্যে সুবিধা দেওয়া।
গত জুনে বেইজিং ভারতীয় তীর্থযাত্রীদের তিব্বতের পবিত্র স্থানে যাওয়ার অনুমতি দেয়। পাশাপাশি, দীর্ঘদিনের সীমান্ত বিরোধের কিছু অংশে ‘প্রাথমিক সমাধান’ খুঁজে দেখতেও দুই দেশ সম্মত হয়েছে। ১৯৬২ সালের যুদ্ধে রূপ নেওয়া এই সীমান্ত সংকটই দুই দেশের সম্পর্কের সবচেয়ে বড় ঐতিহাসিক উত্তেজনার কারণ।
চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং মোদিকে সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন (এসসিও) সম্মেলনে যোগ দেওয়ার আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। চীন-রাশিয়ার নেতৃত্বাধীন এই আঞ্চলিক জোটকে অনেক বিশ্লেষক যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব ঠেকানোর উদ্যোগ হিসেবে দেখেন। চলতি মাসের শেষ দিকে চীনের তিয়ানজিনে অনুষ্ঠেয় এ সম্মেলনে যোগ দেবেন মোদি। সাত বছরের বেশি সময় পর এটিই হবে তাঁর প্রথম চীন সফর।
চলতি বছরের শুরুর দিকে প্রেসিডেন্ট সি আহ্বান জানান ভারত-চীন সম্পর্ককে ‘ড্রাগন-হাতির ট্যাঙ্গো নাচের’ রূপ দেওয়ার জন্য। ড্রাগন ও হাতিকে এই দুই এশীয় পরাশক্তির প্রতীক ধরা হয়।
তাইওয়ান-এশিয়া এক্সচেঞ্জ ফাউন্ডেশনের ফেলো সানা হাশমি আল-জাজিরাকে বলেন, ভারত-চীনের বিভেদ দূর করার প্রচেষ্টা বেশ কিছুদিন ধরেই চলছে। গত অক্টোবরেই রাশিয়ার কাজানে মোদি ও সির মধ্যে বরফ গলানো বৈঠক হয়। এর আগে কয়েক বছর ধরে তাঁরা একে অপরকে এড়িয়ে চলছিলেন, এমনকি বহুপক্ষীয় সম্মেলনেও।
হাশমি বলেন, ‘তবে ট্রাম্পের শুল্কনীতি আর পাকিস্তানের প্রতি তাঁর বাড়তি আনুকূল্যের কারণে ভারতের হাতে তেমন বিকল্প ছিল না। তাই তারা প্রতিপক্ষের সংখ্যা কমানোর পথে হাঁটছে, যার মধ্যে চীনও রয়েছে।’
এ বছর ট্রাম্প দুবার পাকিস্তানের সেনাপ্রধান আসিম মুনিরকে ওয়াশিংটনে আতিথ্য দিয়েছেন। এমনকি দীর্ঘদিনের রীতি ভেঙে বিদেশি কোনো সেনাপ্রধানকে তিনি হোয়াইট হাউসে আতিথ্য দেন। ট্রাম্প বারবার দাবি করেছেন, গত মে মাসে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধবিরতি ঘটেছে তাঁর মধ্যস্থতায়। যদিও নয়াদিল্লি বলে আসছে, ওয়াশিংটন কোনো ভূমিকা নেয়নি।
এই প্রেক্ষাপটে ভারত-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের আলোকে দিল্লির ভবিষ্যৎ পদক্ষেপ প্রসঙ্গে হাশমি বলেন, ‘বেইজিংয়ের জন্য এই উদ্যোগটা (ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো করা) কৌশলগত, কিন্তু নয়াদিল্লির জন্য বিষয়টা এসেছে অনিশ্চয়তা আর পরিবর্তনশীল ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপট থেকে।’ হাশমি মনে করেন, হোয়াইট হাউস ‘নিশ্চিতভাবেই ভারতের মতো কৌশলগত অংশীদারকে একঘরে করার চেষ্টা করছে’।
রাশিয়ার তেল আমদানি অব্যাহত রাখায় ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রে ভারতের রপ্তানি পণ্যে ২৫ শতাংশ বাড়তি শুল্ক বসিয়েছেন, যা আগের ২৫ শতাংশ শুল্কের ওপর আরোপ করা হয়েছে। কিন্তু রুশ তেলের সবচেয়ে বড় ক্রেতা চীনের ওপর তিনি এমন শুল্ক দেননি। বাণিজ্য অর্থনীতিবিদ বিশ্বজিৎ ধর বলেন, ট্রাম্পের এই শুল্কনীতি এশিয়ায় নতুন সমীকরণ তৈরি করছে। তিনি বলেন, ‘ভারত-চীন সম্পর্ক উন্নতির গতি গত কয়েক মাসে অনেক বেড়েছে। এবার মনে হচ্ছে সম্পর্কের সত্যিকারের একটা পরিবর্তন ঘটছে, যা স্থায়ী হতে যাচ্ছে।’
নয়া এশীয় বাণিজ্য জোট?
রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারত-চীন সম্পর্কের উন্নতি হলে দুই দেশই যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কের ধাক্কা কিছুটা লাঘব করতে পারবে। চীনা বাজারে প্রবেশাধিকার, সীমান্ত বাণিজ্যে সহজতা এবং যৌথ সরবরাহ চেইন নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা ভারতের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের বাজারের ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে সহায়ক হবে।
২০২৪-২৫ অর্থবছরে চীনের সঙ্গে ভারতের বাণিজ্য ঘাটতি ছিল ৯৯ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার। মূলত ইলেকট্রনিক পণ্যের আমদানি বেড়ে যাওয়া এর জন্য দায়ী। যুক্তরাষ্ট্রের পরই চীন ভারতের সবচেয়ে বড় বাণিজ্য অংশীদার। তবে ভারতের যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যে ঘাটতি, চীনের সঙ্গে তা প্রায় দ্বিগুণ।
এ বিষয়ে সানা হাশমি বলেছেন, চীন ভারতকে আকৃষ্ট করার চেষ্টা করছে এবং ভারতীয় পণ্যের জন্য বাজার আরও খুলে দেওয়ার ইঙ্গিত দিচ্ছে। এতে শুল্কের প্রভাব কিছুটা কমতে পারে। একই সঙ্গে কৌশলগত ও অর্থনৈতিক দুর্বলতাও হ্রাস পাবে। চীনের সঙ্গে বিশাল বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে সহায়তা করবে।
হাশমি আরও বলেন, ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করতে পারা চীনের জন্য কৌশলগত দিক থেকেও বড় সাফল্য হবে। তাঁর মতে, ‘নয়াদিল্লি বরাবরই যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ। ফলে ভারতের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক চীনকে প্রমাণ করতে সাহায্য করবে যে অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তা অংশীদার হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র নয়, বরং তারাই বেশি নির্ভরযোগ্য।’
সিঙ্গাপুরের ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ইনস্টিটিউট অব সাউথ এশিয়ান স্টাডিজের ভিজিটিং রিসার্চ ফেলো ও ভারত-চীন সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ ইভান লিদারেভ বলেন, ভারত ও চীন উভয় দেশেই এখন উপলব্ধি করছে, দ্বিপক্ষীয় টানাপোড়েনের কারণে ভূরাজনীতিতে তারা অনেক কিছু হারিয়েছে।
লিদারেভ বলেন, ‘চীন বুঝতে পেরেছে, তারা ভারতকে যুক্তরাষ্ট্রের দিকে অনেক বেশি ঠেলে দিয়েছে। আর নয়াদিল্লি বুঝতে পারছে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তার জন্য বড় মূল্য চোকানোর বাস্তবতা বয়ে এনেছে।’ লিদারেভের মতে, ‘ভারত-চীন সম্পর্ক উষ্ণ হলে এশিয়াকেন্দ্রিক বাণিজ্য জোট গঠনের সুযোগ আরও বাড়বে, যা ওয়াশিংটন থেকে স্বাধীন থাকবে।’
তবে হাশমি সীমাবদ্ধতাও তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ভারতসহ অনেক দেশ সরবরাহ চেইনে ঝুঁকি কমাতে কোনো একক উৎসের ওপর অতি নির্ভরতা কমানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু চীনের ওপর ক্রমবর্ধমান নির্ভরতার কার্যকর জবাব না দিলে সেই চেষ্টার ফল আসবে না। ভারতের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শুল্কের কারণে এই চ্যালেঞ্জ আরও বেড়েছে।
হাশমি আল-জাজিরাকে বলেন, ‘সম্পর্কে নমনীয়তা এলেও তা আমূল বদলে দেবে না। প্রতিযোগিতা ও সংঘাত থাকবেই। শুল্কের পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন দেশ চীনের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক স্বাভাবিক করার জন্য তাড়াহুড়া করবে। ফলে বিশ্ব বাণিজ্যে চীনের ওপর নির্ভরশীলতাও বহাল থাকবে।’
গুরুত্ব হারাচ্ছে কোয়াড
জর্জ ডব্লিউ বুশের সময় থেকেই ওয়াশিংটনে ভারতকে চীনের গণতান্ত্রিক প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে দেখা হচ্ছিল। বারাক ওবামার ‘এশিয়ামুখী’ বা ‘pivot to Asia’ নীতিতে বেইজিংয়ের উত্থান ঠেকাতে দিল্লিকে কেন্দ্রে রাখা হয়। এরপর সেটি আরও স্পষ্ট হয় কোয়াড গঠনের মাধ্যমে, যেখানে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের সঙ্গে যোগ দেয় জাপান ও অস্ট্রেলিয়া।
ওয়াশিংটনের কাছে কোয়াড ছিল—এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় কৌশলের মূল কেন্দ্র। এর মাধ্যমে ওই অঞ্চলে অবকাঠামো নির্মাণ, সরবরাহ চেইনের স্থিতিশীলতা ও গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তিতে বিলিয়ন ডলার ঢালা হয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, কোয়াড যুক্তরাষ্ট্রকে আনুষ্ঠানিক সামরিক জোটের বাইরে থেকেও প্রভাব বিস্তারের সুযোগ দিয়েছে। একই সঙ্গে ভারতকে নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক সহযোগিতার কাঠামোয় বেঁধে ফেলেছে।
স্নায়ুযুদ্ধের সময় থেকেই ভারতের পররাষ্ট্রনীতি গড়ে উঠেছে ‘কৌশলগত স্বায়ত্তশাসন’ ধারণার ওপর। অর্থাৎ, নির্দিষ্ট ইস্যুতে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সহযোগিতা করবে, কিন্তু কোনো সামরিক জোটে যোগ দেবে না, কিংবা অন্য শক্তির বিরুদ্ধে আদর্শিক শিবিরে দাঁড়াবে না।
তবুও ওয়াশিংটনে ধরে নেওয়া হচ্ছিল যে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ হওয়ার পাশাপাশি দিল্লি ও বেইজিংয়ের পুরোনো অবিশ্বাস ভারতকে চীনের বিরুদ্ধে বড় কৌশলগত স্তম্ভে পরিণত করবে। ভারতকে পাশে রাখতে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্র কখনো দিল্লির মস্কোর প্রতি ঐতিহ্যগত বন্ধুত্ব নিয়ে বেশি চাপ সৃষ্টি করেনি। বিগত অর্ধশত ধরে রাশিয়া ভারতের অন্যতম বড় অস্ত্র সরবরাহকারী। রাশিয়ার ইউক্রেন যুদ্ধের সময়ও যুক্তরাষ্ট্র এই নীতি ধরে রাখে।
কিন্তু এখন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সেই সমীকরণ পাল্টে দিতে চাচ্ছে। তিনি চান ভারত স্পষ্টভাবে একপক্ষ বেছে নিক। হোয়াইট হাউসের বাণিজ্য ও উৎপাদনবিষয়ক কাউন্সেলর পিটার নাভারো ১৮ আগস্ট ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসে লেখেন, ‘বাইডেন প্রশাসন এই কৌশলগত ও ভূরাজনৈতিক অযৌক্তিকতার দিকে মূলত চোখ বন্ধ করে ছিল। ট্রাম্প প্রশাসন সেটির মোকাবিলা করছে...যদি ভারত যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত অংশীদার হিসেবে স্বীকৃতি পেতে চায়, তবে তাকে সেভাবে আচরণ করতে হবে।’
অন্যদিকে ভারতীয় কর্মকর্তারা ইঙ্গিত দিয়েছেন, দিল্লি তার ‘কৌশলগত স্বায়ত্তশাসন’ ছাড়বে না। দিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের (জেএনইউ) চায়না স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক বি আর দীপক বলেন, ভারত-চীন সম্পর্ক উষ্ণ হলে যুক্তরাষ্ট্রের চীনকে বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠানগুলোয় একঘরে করার পরিকল্পনা কঠিন হয়ে যাবে।
তিনি আল-জাজিরাকে বলেন, ‘যদি দিল্লি উন্নয়ন অর্থায়ন, বহুপক্ষীয় সংস্কার, ডি-ডলারাইজেশন বা জলবায়ু পরিবর্তনের মতো বিষয়ে বেইজিংয়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হয়, তবে তা যুক্তরাষ্ট্রের চীনবিরোধী গণতন্ত্র-জোট গড়ার বয়ানকে দুর্বল করবে। এতে চীনের বিকল্প বৈশ্বিক শৃঙ্খলা গঠনের প্রচেষ্টায় বৈধতা যুক্ত হবে।’
দীপক আরও বলেন, বেইজিং ও দিল্লির মধ্যে সুসম্পর্ক তৈরি হলে ভারত কোয়াডে প্রকাশ্যে চীনবিরোধী অবস্থান নেওয়ার ক্ষেত্রে কিছুটা পিছিয়ে যেতে পারে। তখন কোয়াড হয়তো কঠোরভাবে চীনের মোকাবিলা না করে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরে জনকল্যাণমূলক উদ্যোগ নেওয়ার দিকেই বেশি মনোযোগ দেবে।
সিঙ্গাপুরের ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির গবেষক লিদারেভ বলেন, ভারত-চীন পুনর্মিলন কোয়াডের ভেতরে জটিলতা তৈরি করবে। এতে পারস্পরিক আস্থা ও উদ্দেশ্যের স্পষ্টতাও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তবে দীপকের মতে, কোয়াডের ‘কৌশলগত গুরুত্ব’ একেবারেই শেষ হয়ে যাবে না। সরবরাহ চেইনের স্থিতিশীলতা, উদীয়মান প্রযুক্তি, জলবায়ু সহযোগিতা ও সামুদ্রিক নিরাপত্তার মতো যৌথ লক্ষ্যে এর প্রাসঙ্গিকতা টিকে থাকবে।
হাশমি মনে করিয়ে দেন, ট্রাম্প প্রথম দফায় কোয়াড শক্তিশালী করার ওপর জোর দিয়েছিলেন। অথচ এখন তাঁর পদক্ষেপই এর ঐক্যকে দুর্বল করছে। তিনি বলেন, আপাতত প্রেসিডেন্টের কাছে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চল অগ্রাধিকার বলে মনে হচ্ছে না। তবে পরিস্থিতি পাল্টালে যুক্তরাষ্ট্র একেবারে নতুন এক আঞ্চলিক বাস্তবতার মুখোমুখি হবে। তখন ভারতকে কোনো চীনবিরোধী জোটে যুক্ত করা অনেক কঠিন হয়ে উঠবে।
অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতদের মধ্যে ইউক্রেন শান্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনা হলেও প্রকাশ্যে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইউরি উশাকভ, এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন যে অমীমাংসিত ‘আঞ্চলিক সমস্যাই’ মূল বাধা। আর এই অঞ্চল আর কোনোটিই নয়, দোনেৎস্ক।
১ দিন আগে
বিশ্বজুড়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন উঠে আসছে—‘যদি বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ সীমিত করা হয়, অথবা এই শ্রেণিটিকেই সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়, তবে কী ঘটবে?’ পশ্চিমা দেশগুলোতে চরম ধনী বা বিলিয়নিয়ারদের সংখ্যা ও প্রভাব বাড়তে থাকায় এখন এই প্রশ্ন আরও জোরালো হয়েছে।
১ দিন আগে
জাপানের ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর গত অক্টোবরে দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন সানায়ে তাকাইচি। এরপরই তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত হন জাপানের নতুন ‘আয়রন লেডি’ বা লৌহমানবী’ হিসেবে।
২ দিন আগে
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠককে ঘিরে দিল্লিতে শুরু হয়েছে কূটনৈতিক প্রস্তুতি। চলমান ইউক্রেন যুদ্ধ, যুক্তরাষ্ট্রের চাপ এবং জ্বালানির বাজারে অস্থিরতার মধ্যেই এই শীর্ষ সম্মেলন হতে যাচ্ছে। অর্থনীতি, প্রতিরক্ষা এবং জ্বালানি—এই তিনটি খাত আলোচনার...
২ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতদের মধ্যে ইউক্রেন শান্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনা হলেও প্রকাশ্যে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইউরি উশাকভ, এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন যে অমীমাংসিত ‘আঞ্চলিক সমস্যাই’ মূল বাধা। আর এই অঞ্চল আর কোনোটিই নয়, দোনেৎস্ক।
উশাকভ মূলত ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় দোনেৎস্কের সম্পূর্ণ এলাকার ওপর রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণ দাবির কথাই বলেছিলেন। পুতিন ইউক্রেনে হাজার হাজার সৈন্য পাঠানোর প্রায় ৪ বছর পরও এবং দোনেৎস্কে রাশিয়া সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদী বিদ্রোহের এক দশকেরও বেশি সময় পর অঞ্চলটির কিছু অংশ এখনো ইউক্রেনের হাতে আছে।
প্রায় সব দেশই দোনেৎস্ককে ইউক্রেনের অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। কিন্তু এটি ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের চারটি অঞ্চলের মধ্যে একটি, যা মস্কো ২০২২ সালে একটি গণভোটের পর সংযুক্ত করার কথা ঘোষণা করে। কিয়েভ ও পশ্চিমা দেশগুলো সেই গণভোটকে ‘প্রহসন’ বলে বাতিল করে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ফক্স নিউজকে বলেছিলেন, যুদ্ধটি এখন দোনেৎস্কের সেই ২০ শতাংশ বা ৫ হাজার বর্গকিলোমিটারের এলাকা নিয়ে, যা রাশিয়া নিয়ন্ত্রণ করে না কিন্তু চায়।
পুতিন ২০২২ সালে ইউক্রেনে সৈন্য পাঠানোর সময় বলেছিলেন, তাঁর লক্ষ্য হলো ‘গত আট বছর ধরে যারা ভয়ভীতি ও গণহত্যার শিকার হয়েছেন...সেই মানুষগুলোকে রক্ষা করা।’ ইউক্রেন এবং তার মিত্ররা বলেছিল, পুতিনের এই দাবি ঔপনিবেশিক ধাঁচের এবং এলাকা দখলের জন্য একটি মিথ্যা অজুহাত মাত্র।
পুতিনের এই দাবি মূলত দোনেৎস্ক এবং লুহানস্ক অঞ্চলে রাশিয়া সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিরুদ্ধে ইউক্রেনের লড়াইয়ের দিকে ইঙ্গিত করে, যারা ২০১৪ সালে ইউক্রেনীয় সরকারি নিয়ন্ত্রণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে কিছু এলাকা দখল করেছিল। পূর্ব ইউক্রেনে এর পরের সংঘর্ষে উভয় পক্ষই শহর ও বেসামরিক নাগরিকদের ওপর গোলাবর্ষণের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করেছিল। মস্কো এই অঞ্চলের বিশাল রুশভাষী জনসংখ্যাকে উদ্ধৃত করে বলেছিল যে,২০২২ সালে হস্তক্ষেপ করা তাদের নৈতিক কর্তব্য।
কিয়েভ বলেছিল, ২০১৪ সালে ইউক্রেনের আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষায় শক্তি দিয়ে জবাব দেওয়া ছাড়া তাদের আর কোনো উপায় ছিল না এবং তারাও বিচ্ছিন্নতাবাদী বাহিনীর বিরুদ্ধে শহর ও বেসামরিক নাগরিকদের ওপর গোলাবর্ষণের অভিযোগ এনেছিল। জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৪ সাল থেকে ২০২২ সালের শুরু পর্যন্ত ইউক্রেনীয় সরকারি বাহিনী এবং বিচ্ছিন্নতাবাদীদের মধ্যে সংঘাতে উভয় পক্ষে ৩ হাজার ১০৬ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত এবং ৯ হাজার বেসামরিক নাগরিক আহত হয়েছিলেন।
দোনেৎস্কের বাকি যে অংশটি রাশিয়া চায়, তার মধ্যে রয়েছে স্লোভিয়ানস্ক এবং ক্রামাতোরস্ক—দুটি ‘দুর্গনগরী’ যা ২০১৪ সাল থেকে ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করে আসছে। এই শহরগুলো ইউক্রেনের বাকি অঞ্চল রক্ষার জন্য কিয়েভের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ দোনেৎস্কের পশ্চিমের ভূমি অনেকটাই সমতল এবং বিশাল খোলা মাঠ; যা রাশিয়াকে দোনেৎস্কের বাইরে অগ্রসর হতে এবং দিনিপ্রো নদীর পূর্ব তীর পর্যন্ত এলাকা দখল করার পথ সহজ করে দেবে।
শহরগুলো পরিখা, ট্যাংক-বিধ্বংসী বাধা, বাংকার এবং মাইনক্ষেত্রসহ অত্যন্ত সুরক্ষিত প্রতিরক্ষা লাইনের অংশ। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, গণভোট ছাড়া দোনেৎস্কের বাকি অংশ রাশিয়ার হাতে তুলে দেওয়া অবৈধ হবে এবং তা ভবিষ্যতে ইউক্রেনের গভীরে আক্রমণের জন্য রাশিয়াকে একটি পথ খুলে দেবে।
কিয়েভের আশঙ্কা, যদি তারা দোনেৎস্কের বাকি অংশ ছেড়ে দেয়, তবে রাশিয়া আবার অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হবে এবং একসময় দোনেৎস্ক ব্যবহার করে পশ্চিম দিকে আক্রমণ চালাবে।
উভয় পক্ষই দোনেৎস্ককে কেন্দ্র করে যুদ্ধে ভয়াবহ ক্ষয়ক্ষতির মুখোমুখি হয়েছে এবং প্রচুর অর্থ ও সরঞ্জাম ব্যয় করেছে। এর মধ্যে বাখমুত শহরের লড়াইও রয়েছে। যেখানে রাশিয়া হাজার হাজার দণ্ডিত অপরাধীকে ভাড়াটে সৈন্যে পরিণত করে রণক্ষেত্রে নামিয়েছিল। এ কারণে, দোনেৎস্ক উভয় দেশের জনমানসে আরও বেশি গুরুত্ব পেয়েছে। ফলে কারও পক্ষে তাদের অবস্থান পরিবর্তন করা কঠিন।
ইউক্রেন চায় না যে, রাশিয়া যুদ্ধক্ষেত্রে জয় করতে ব্যর্থ হওয়া ভূখণ্ডকে উপহার হিসেবে পাক এবং জেলেনস্কি বলেছেন, যে যুদ্ধ রাশিয়া শুরু করেছে, তার জন্য তাদের পুরস্কৃত করা উচিত নয়। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ইনস্টিটিউট ফর দ্য স্টাডি অব ওয়ার অক্টোবর মাসে বলেছিল, রাশিয়ার অগ্রগতির হার দেখে মনে হয় না যে তারা খুব শিগগিরই দোনেৎস্কের বাকি অংশ দখল করতে চলেছে। তবে ‘রাশিয়ার অগ্রগতির একটি অপরিবর্তনীয় হার ধরে নিলে’ তারা ২০২৭ সালের আগস্টের মধ্যে তা নিতে পারে।
রাশিয়ার কমান্ডাররা অবশ্য আরও বেশি আশাবাদী। জেনারেল স্টাফের প্রধান ভ্যালেরি গেরাসিমভ রোববার পুতিনকে বলেছেন, মস্কোর বাহিনী পুরো ফ্রন্ট লাইন বরাবর অগ্রসর হচ্ছে এবং দনবাসের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার জন্য কাজ করছে।
দোনেৎস্ক বন্দর, রেলপথ এবং অন্যান্য ভারী শিল্পের কেন্দ্র। এটি একসময় ইউক্রেনের কয়লা, পরিশোধিত ইস্পাত, কোক, ঢালাই লোহা এবং ইস্পাত উৎপাদনের অর্ধেকেরও বেশি সরবরাহ করত, তবে যুদ্ধের কারণে অনেক খনি ও কারখানা ধ্বংস হয়ে গেছে। এ ছাড়া, দোনেৎস্কে বিরল মৃত্তিকা, টাইটানিয়াম এবং জিরকোনিয়াম রয়েছে—যা এটিকে নিয়ন্ত্রণকারী পক্ষের জন্য আয়ের উৎস।
দোনেৎস্কের ভাগ্য পুতিন এবং জেলেনস্কি উভয়ের ঐতিহাসিক উত্তরাধিকারকে প্রভাবিত করতে পারে। পুতিন নিজেকে জাতিগত রুশদের রক্ষক হিসেবে তুলে ধরেছেন, তারা যেখানেই থাকুক না কেন। পুরো দোনেৎস্ককে সুরক্ষিত করা এই বক্তব্যের মূল কেন্দ্রবিন্দু। জেলেনস্কি ২০১৯ সালে পূর্ব ইউক্রেনের যুদ্ধ অবসান ঘটানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন। ২০২২ সাল থেকে তিনি অনেক বড়, বৈরী প্রতিবেশীর মুখে অস্ত্র এবং সংখ্যায় কম ইউক্রেনের এক দৃঢ় রক্ষক হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছেন।
লড়াই না করে দোনেৎস্ক ছেড়ে দেওয়া—যেখানে অন্তত আড়াই লাখ ইউক্রেনীয় বাস করে—ইউক্রেনীয়দের কাছে বিশ্বাসঘাতকতা হিসেবে দেখা হতে পারে, যাদের অনেকেই যুদ্ধক্ষেত্রে স্বজন হারিয়েছেন। কিয়েভ ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব সোসিওলজির সাম্প্রতিক এক জরিপ অনুসারে, ইউক্রেনীয়দের একটি সংকীর্ণ সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ এখনো আঞ্চলিক ছাড়ের বিরোধিতা করে।
জেলেনস্কিসহ ইউক্রেনের কর্মকর্তারা যেকোনো শান্তি চুক্তির অধীনে কিয়েভের নিয়ন্ত্রণে থাকা ভূমি ছাড়ার সম্ভাবনা প্রত্যাখ্যান করেছেন। জেলেনস্কি বলেন, তাঁর ভূখণ্ড ছেড়ে দেওয়ার কোনো ম্যান্ডেট নেই এবং রাষ্ট্রের ভূমি ব্যক্তিগত সম্পত্তির মতো কেনা-বেচা করা যায় না। ইউক্রেনের সংবিধান অনুসারে, আঞ্চলিক পরিবর্তন অবশ্যই একটি গণভোটের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করতে হবে, যা ইউক্রেনের অন্তত দুই-তৃতীয়াংশ অর্থাৎ, অন্তত ৩০ লাখ ইউক্রেনীয় ভোটারের স্বাক্ষর থাকলে আয়োজন করা যেতে পারে।
তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই গণভোটের বিষয়টির সমালোচনা করেছেন এবং তিনি বলেছিলেন, ‘কিছু ভূমি অদল-বদল হবে।’ এখন ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের আলোচনা মূলত এই দোনেৎস্কের নিয়ন্ত্রণ কার হাতে যাবে সেটাই নিয়েই থমকে আছে।
রয়টার্স থেকে পরিমার্জিত

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতদের মধ্যে ইউক্রেন শান্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনা হলেও প্রকাশ্যে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইউরি উশাকভ, এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন যে অমীমাংসিত ‘আঞ্চলিক সমস্যাই’ মূল বাধা। আর এই অঞ্চল আর কোনোটিই নয়, দোনেৎস্ক।
উশাকভ মূলত ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় দোনেৎস্কের সম্পূর্ণ এলাকার ওপর রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণ দাবির কথাই বলেছিলেন। পুতিন ইউক্রেনে হাজার হাজার সৈন্য পাঠানোর প্রায় ৪ বছর পরও এবং দোনেৎস্কে রাশিয়া সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদী বিদ্রোহের এক দশকেরও বেশি সময় পর অঞ্চলটির কিছু অংশ এখনো ইউক্রেনের হাতে আছে।
প্রায় সব দেশই দোনেৎস্ককে ইউক্রেনের অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। কিন্তু এটি ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের চারটি অঞ্চলের মধ্যে একটি, যা মস্কো ২০২২ সালে একটি গণভোটের পর সংযুক্ত করার কথা ঘোষণা করে। কিয়েভ ও পশ্চিমা দেশগুলো সেই গণভোটকে ‘প্রহসন’ বলে বাতিল করে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ফক্স নিউজকে বলেছিলেন, যুদ্ধটি এখন দোনেৎস্কের সেই ২০ শতাংশ বা ৫ হাজার বর্গকিলোমিটারের এলাকা নিয়ে, যা রাশিয়া নিয়ন্ত্রণ করে না কিন্তু চায়।
পুতিন ২০২২ সালে ইউক্রেনে সৈন্য পাঠানোর সময় বলেছিলেন, তাঁর লক্ষ্য হলো ‘গত আট বছর ধরে যারা ভয়ভীতি ও গণহত্যার শিকার হয়েছেন...সেই মানুষগুলোকে রক্ষা করা।’ ইউক্রেন এবং তার মিত্ররা বলেছিল, পুতিনের এই দাবি ঔপনিবেশিক ধাঁচের এবং এলাকা দখলের জন্য একটি মিথ্যা অজুহাত মাত্র।
পুতিনের এই দাবি মূলত দোনেৎস্ক এবং লুহানস্ক অঞ্চলে রাশিয়া সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিরুদ্ধে ইউক্রেনের লড়াইয়ের দিকে ইঙ্গিত করে, যারা ২০১৪ সালে ইউক্রেনীয় সরকারি নিয়ন্ত্রণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে কিছু এলাকা দখল করেছিল। পূর্ব ইউক্রেনে এর পরের সংঘর্ষে উভয় পক্ষই শহর ও বেসামরিক নাগরিকদের ওপর গোলাবর্ষণের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করেছিল। মস্কো এই অঞ্চলের বিশাল রুশভাষী জনসংখ্যাকে উদ্ধৃত করে বলেছিল যে,২০২২ সালে হস্তক্ষেপ করা তাদের নৈতিক কর্তব্য।
কিয়েভ বলেছিল, ২০১৪ সালে ইউক্রেনের আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষায় শক্তি দিয়ে জবাব দেওয়া ছাড়া তাদের আর কোনো উপায় ছিল না এবং তারাও বিচ্ছিন্নতাবাদী বাহিনীর বিরুদ্ধে শহর ও বেসামরিক নাগরিকদের ওপর গোলাবর্ষণের অভিযোগ এনেছিল। জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৪ সাল থেকে ২০২২ সালের শুরু পর্যন্ত ইউক্রেনীয় সরকারি বাহিনী এবং বিচ্ছিন্নতাবাদীদের মধ্যে সংঘাতে উভয় পক্ষে ৩ হাজার ১০৬ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত এবং ৯ হাজার বেসামরিক নাগরিক আহত হয়েছিলেন।
দোনেৎস্কের বাকি যে অংশটি রাশিয়া চায়, তার মধ্যে রয়েছে স্লোভিয়ানস্ক এবং ক্রামাতোরস্ক—দুটি ‘দুর্গনগরী’ যা ২০১৪ সাল থেকে ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করে আসছে। এই শহরগুলো ইউক্রেনের বাকি অঞ্চল রক্ষার জন্য কিয়েভের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ দোনেৎস্কের পশ্চিমের ভূমি অনেকটাই সমতল এবং বিশাল খোলা মাঠ; যা রাশিয়াকে দোনেৎস্কের বাইরে অগ্রসর হতে এবং দিনিপ্রো নদীর পূর্ব তীর পর্যন্ত এলাকা দখল করার পথ সহজ করে দেবে।
শহরগুলো পরিখা, ট্যাংক-বিধ্বংসী বাধা, বাংকার এবং মাইনক্ষেত্রসহ অত্যন্ত সুরক্ষিত প্রতিরক্ষা লাইনের অংশ। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, গণভোট ছাড়া দোনেৎস্কের বাকি অংশ রাশিয়ার হাতে তুলে দেওয়া অবৈধ হবে এবং তা ভবিষ্যতে ইউক্রেনের গভীরে আক্রমণের জন্য রাশিয়াকে একটি পথ খুলে দেবে।
কিয়েভের আশঙ্কা, যদি তারা দোনেৎস্কের বাকি অংশ ছেড়ে দেয়, তবে রাশিয়া আবার অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হবে এবং একসময় দোনেৎস্ক ব্যবহার করে পশ্চিম দিকে আক্রমণ চালাবে।
উভয় পক্ষই দোনেৎস্ককে কেন্দ্র করে যুদ্ধে ভয়াবহ ক্ষয়ক্ষতির মুখোমুখি হয়েছে এবং প্রচুর অর্থ ও সরঞ্জাম ব্যয় করেছে। এর মধ্যে বাখমুত শহরের লড়াইও রয়েছে। যেখানে রাশিয়া হাজার হাজার দণ্ডিত অপরাধীকে ভাড়াটে সৈন্যে পরিণত করে রণক্ষেত্রে নামিয়েছিল। এ কারণে, দোনেৎস্ক উভয় দেশের জনমানসে আরও বেশি গুরুত্ব পেয়েছে। ফলে কারও পক্ষে তাদের অবস্থান পরিবর্তন করা কঠিন।
ইউক্রেন চায় না যে, রাশিয়া যুদ্ধক্ষেত্রে জয় করতে ব্যর্থ হওয়া ভূখণ্ডকে উপহার হিসেবে পাক এবং জেলেনস্কি বলেছেন, যে যুদ্ধ রাশিয়া শুরু করেছে, তার জন্য তাদের পুরস্কৃত করা উচিত নয়। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ইনস্টিটিউট ফর দ্য স্টাডি অব ওয়ার অক্টোবর মাসে বলেছিল, রাশিয়ার অগ্রগতির হার দেখে মনে হয় না যে তারা খুব শিগগিরই দোনেৎস্কের বাকি অংশ দখল করতে চলেছে। তবে ‘রাশিয়ার অগ্রগতির একটি অপরিবর্তনীয় হার ধরে নিলে’ তারা ২০২৭ সালের আগস্টের মধ্যে তা নিতে পারে।
রাশিয়ার কমান্ডাররা অবশ্য আরও বেশি আশাবাদী। জেনারেল স্টাফের প্রধান ভ্যালেরি গেরাসিমভ রোববার পুতিনকে বলেছেন, মস্কোর বাহিনী পুরো ফ্রন্ট লাইন বরাবর অগ্রসর হচ্ছে এবং দনবাসের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার জন্য কাজ করছে।
দোনেৎস্ক বন্দর, রেলপথ এবং অন্যান্য ভারী শিল্পের কেন্দ্র। এটি একসময় ইউক্রেনের কয়লা, পরিশোধিত ইস্পাত, কোক, ঢালাই লোহা এবং ইস্পাত উৎপাদনের অর্ধেকেরও বেশি সরবরাহ করত, তবে যুদ্ধের কারণে অনেক খনি ও কারখানা ধ্বংস হয়ে গেছে। এ ছাড়া, দোনেৎস্কে বিরল মৃত্তিকা, টাইটানিয়াম এবং জিরকোনিয়াম রয়েছে—যা এটিকে নিয়ন্ত্রণকারী পক্ষের জন্য আয়ের উৎস।
দোনেৎস্কের ভাগ্য পুতিন এবং জেলেনস্কি উভয়ের ঐতিহাসিক উত্তরাধিকারকে প্রভাবিত করতে পারে। পুতিন নিজেকে জাতিগত রুশদের রক্ষক হিসেবে তুলে ধরেছেন, তারা যেখানেই থাকুক না কেন। পুরো দোনেৎস্ককে সুরক্ষিত করা এই বক্তব্যের মূল কেন্দ্রবিন্দু। জেলেনস্কি ২০১৯ সালে পূর্ব ইউক্রেনের যুদ্ধ অবসান ঘটানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন। ২০২২ সাল থেকে তিনি অনেক বড়, বৈরী প্রতিবেশীর মুখে অস্ত্র এবং সংখ্যায় কম ইউক্রেনের এক দৃঢ় রক্ষক হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছেন।
লড়াই না করে দোনেৎস্ক ছেড়ে দেওয়া—যেখানে অন্তত আড়াই লাখ ইউক্রেনীয় বাস করে—ইউক্রেনীয়দের কাছে বিশ্বাসঘাতকতা হিসেবে দেখা হতে পারে, যাদের অনেকেই যুদ্ধক্ষেত্রে স্বজন হারিয়েছেন। কিয়েভ ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব সোসিওলজির সাম্প্রতিক এক জরিপ অনুসারে, ইউক্রেনীয়দের একটি সংকীর্ণ সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ এখনো আঞ্চলিক ছাড়ের বিরোধিতা করে।
জেলেনস্কিসহ ইউক্রেনের কর্মকর্তারা যেকোনো শান্তি চুক্তির অধীনে কিয়েভের নিয়ন্ত্রণে থাকা ভূমি ছাড়ার সম্ভাবনা প্রত্যাখ্যান করেছেন। জেলেনস্কি বলেন, তাঁর ভূখণ্ড ছেড়ে দেওয়ার কোনো ম্যান্ডেট নেই এবং রাষ্ট্রের ভূমি ব্যক্তিগত সম্পত্তির মতো কেনা-বেচা করা যায় না। ইউক্রেনের সংবিধান অনুসারে, আঞ্চলিক পরিবর্তন অবশ্যই একটি গণভোটের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করতে হবে, যা ইউক্রেনের অন্তত দুই-তৃতীয়াংশ অর্থাৎ, অন্তত ৩০ লাখ ইউক্রেনীয় ভোটারের স্বাক্ষর থাকলে আয়োজন করা যেতে পারে।
তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই গণভোটের বিষয়টির সমালোচনা করেছেন এবং তিনি বলেছিলেন, ‘কিছু ভূমি অদল-বদল হবে।’ এখন ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের আলোচনা মূলত এই দোনেৎস্কের নিয়ন্ত্রণ কার হাতে যাবে সেটাই নিয়েই থমকে আছে।
রয়টার্স থেকে পরিমার্জিত

বিগত পাঁচ বছর চীনকে প্রতিপক্ষ হিসেবেই দেখেছে ভারত। এমনকি গত মে মাস পর্যন্ত চীনকে কার্যত প্রধান প্রতিপক্ষ হিসেবে দেখেছে। কারণ, ভারতনিয়ন্ত্রিত জম্মু-কাশ্মীরে সন্ত্রাসী হামলার পর চার দিনের যুদ্ধে পাকিস্তান চীনা প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ব্যবহার করেছিল।
২৫ আগস্ট ২০২৫
বিশ্বজুড়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন উঠে আসছে—‘যদি বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ সীমিত করা হয়, অথবা এই শ্রেণিটিকেই সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়, তবে কী ঘটবে?’ পশ্চিমা দেশগুলোতে চরম ধনী বা বিলিয়নিয়ারদের সংখ্যা ও প্রভাব বাড়তে থাকায় এখন এই প্রশ্ন আরও জোরালো হয়েছে।
১ দিন আগে
জাপানের ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর গত অক্টোবরে দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন সানায়ে তাকাইচি। এরপরই তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত হন জাপানের নতুন ‘আয়রন লেডি’ বা লৌহমানবী’ হিসেবে।
২ দিন আগে
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠককে ঘিরে দিল্লিতে শুরু হয়েছে কূটনৈতিক প্রস্তুতি। চলমান ইউক্রেন যুদ্ধ, যুক্তরাষ্ট্রের চাপ এবং জ্বালানির বাজারে অস্থিরতার মধ্যেই এই শীর্ষ সম্মেলন হতে যাচ্ছে। অর্থনীতি, প্রতিরক্ষা এবং জ্বালানি—এই তিনটি খাত আলোচনার...
২ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

বিশ্বজুড়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন উঠে আসছে—‘যদি বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ সীমিত করা হয়, অথবা এই শ্রেণিটিকেই সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়, তবে কী ঘটবে?’ পশ্চিমা দেশগুলোতে চরম ধনী বা বিলিয়নিয়ারদের সংখ্যা ও প্রভাব বাড়তে থাকায় এখন এই প্রশ্ন আরও জোরালো হয়েছে।
সম্প্রতি টেসলার মালিক ইলন মাস্ক গত নভেম্বরে এমন এক পে-অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন, যা তাঁকে একজন ট্রিলিয়ন ডলারের মালিকে পরিণত করতে পারে। তিনি ইতিমধ্যেই বিশ্বের শীর্ষ ধনী। যদি তিনি প্রস্তাবিত পূর্ণ প্যাকেজটি পান, তাহলে তিনি বিশ্বের ইতিহাসে সর্বকালের সেরা ধনী ব্যক্তিতে পরিণত হবেন। ফোর্বসের হিসেবে বর্তমানে বিশ্বের ৩ হাজার ২৮ জন বিলিয়নিয়ার আছেন। তাঁদের মোট সম্পদ প্রায় ১৬.১ ট্রিলিয়ন ডলার। অন্যদিকে পৃথিবীতে এখনো প্রায় ৮৩ কোটি ১০ লাখ মানুষ দৈনিক তিন ডলারের নিচে আয় করে চরম দারিদ্র্যে দিন কাটান।
বিশ্লেষকদের মতে, বিশ্বের এই বিপুল সম্পদ বৈষম্য শুধু অর্থনীতিকে নয়, রাজনীতি, মিডিয়া ও চিন্তাকেও প্রভাবিত করে। অনেকেই মনে করেন, বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ ও ক্ষমতা বিশ্বব্যবস্থাকে ‘অতি ধনীদের স্বার্থে’ পুনর্গঠন করছে। আবার অন্য একটি মত বলছে, বিলিয়নিয়ারেরা না থাকলে উদ্ভাবন, প্রযুক্তি ও অগ্রগতি থমকে যাবে। কারণ বৃহৎ বিনিয়োগই গড়ে তোলে নতুন সমাধান।
উদ্ভাবন কি থেমে যাবে
অ্যাডাম স্মিথ ইনস্টিটিউটের ম্যাক্সওয়েল মার্লোর মতে, বিলিয়নিয়ারদের বিলোপ করা হলে পশ্চিমা অর্থনীতি বিপর্যস্ত হবে। তাঁর দাবি, অধিকাংশ বিলিয়নিয়ার তাঁদের সম্পদের মালিক হয়েছেন সমাজের চাহিদামতো পণ্য ও প্রযুক্তি তৈরি করে। তাঁদের সম্পদ মূলত কোম্পানির শেয়ার, মেধাস্বত্ব অথবা সম্পত্তি—যা দিনে দিনে ওঠানামা করে। তাঁর মতে, এই ধনী ব্যক্তিদের প্রণোদনাই উদ্ভাবনে গতি আনে; তা না থাকলে উন্নয়ন থেমে যাবে।
যদি ন্যায্যভাবে সম্পদ বণ্টিত হতো
গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ট্যাক্স জাস্টিসের ডেরেজে আলেমায়েহুর মতে, শুধু বিলিয়নিয়ার কর আরোপ নয়—প্রশ্ন হচ্ছে, সেই কর কোথায় যাবে। দক্ষিণ বিশ্বের শ্রম ও সম্পদ থেকেই যে বিপুল সম্পদ তৈরি হয়, তাই তার ন্যায্য অংশ দক্ষিণেই ফিরে আসা উচিত। তিনি বলেন, বৈষম্য কমাতে শুধু অর্থ হস্তান্তর নয়, বৈশ্বিক আর্থিক কাঠামো পুনর্গঠন জরুরি; নইলে বৈষম্য আরও গভীর হবে।
বিধিনিষেধ কি বদলাতে হবে
ডেনিসন ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ফাদেল কাবুব বলেন, বিলিয়নিয়ারেরা আসলে ব্যর্থ নীতির ফল। সিস্টেম যেভাবে সাজানো, তাতে সম্পদ একদিকে কেন্দ্রীভূত হওয়াই স্বাভাবিক। তাঁর মতে, বিলিয়নিয়ার শ্রেণিকে বিলোপ করতে হলে আধুনিক অ্যান্টি ট্রাস্ট ও কঠোর বাজার নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন।
মিডিয়ার ওপর প্রভাব কমবে
গোল্ডস্মিথস বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডেস ফ্রিডম্যান মনে করেন, বিলিয়নিয়ারেরা পুরো মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম কিনে ফেলতে সক্ষম হওয়ায় তথ্যপ্রবাহ তাঁদের স্বার্থেই নিয়ন্ত্রিত হয়। যেমন—বেজোস বা ইলন মাস্কের গণমাধ্যম মালিকানা এই অঙ্গনের স্বাধীনতাকে দীর্ঘমেয়াদে প্রশ্নবিদ্ধ করে। তাই বিলিয়নিয়ার প্রভাব সীমিত হলে তথ্যের উৎসও আরও স্বাধীন হতে পারে।
চরম সম্পদ কি সত্যিই বিলোপ করা সম্ভব
বিশ্ব ইনইক্যুয়ালিটি ল্যাবের লুকাস শ্যানসেলের মতে, ইতিহাসে এর নজির আছে। উদাহরণস্বরূপ—রকেফেলারের একচেটিয়া সাম্রাজ্য ভেঙে দেওয়া, কিংবা রুজভেল্টের সময় সর্বোচ্চ করহার ৯৪ শতাংশে উন্নীত করা। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পানামা পেপারসের মতো ফাঁস যেমন দুর্দান্ত স্বচ্ছতা তৈরি করেছে, তেমনি তা পরিবর্তনের সুযোগও তৈরি করছে। তিনি মনে করেন, ধনীদের ওপর কর আরোপের মতো ধারণা এখন আর ‘যদি’ নয়, বরং ‘কখন’ করা হবে—এ প্রশ্নে এসে দাঁড়িয়েছে।
আল-জাজিরা অবলম্বনে

বিশ্বজুড়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন উঠে আসছে—‘যদি বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ সীমিত করা হয়, অথবা এই শ্রেণিটিকেই সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়, তবে কী ঘটবে?’ পশ্চিমা দেশগুলোতে চরম ধনী বা বিলিয়নিয়ারদের সংখ্যা ও প্রভাব বাড়তে থাকায় এখন এই প্রশ্ন আরও জোরালো হয়েছে।
সম্প্রতি টেসলার মালিক ইলন মাস্ক গত নভেম্বরে এমন এক পে-অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন, যা তাঁকে একজন ট্রিলিয়ন ডলারের মালিকে পরিণত করতে পারে। তিনি ইতিমধ্যেই বিশ্বের শীর্ষ ধনী। যদি তিনি প্রস্তাবিত পূর্ণ প্যাকেজটি পান, তাহলে তিনি বিশ্বের ইতিহাসে সর্বকালের সেরা ধনী ব্যক্তিতে পরিণত হবেন। ফোর্বসের হিসেবে বর্তমানে বিশ্বের ৩ হাজার ২৮ জন বিলিয়নিয়ার আছেন। তাঁদের মোট সম্পদ প্রায় ১৬.১ ট্রিলিয়ন ডলার। অন্যদিকে পৃথিবীতে এখনো প্রায় ৮৩ কোটি ১০ লাখ মানুষ দৈনিক তিন ডলারের নিচে আয় করে চরম দারিদ্র্যে দিন কাটান।
বিশ্লেষকদের মতে, বিশ্বের এই বিপুল সম্পদ বৈষম্য শুধু অর্থনীতিকে নয়, রাজনীতি, মিডিয়া ও চিন্তাকেও প্রভাবিত করে। অনেকেই মনে করেন, বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ ও ক্ষমতা বিশ্বব্যবস্থাকে ‘অতি ধনীদের স্বার্থে’ পুনর্গঠন করছে। আবার অন্য একটি মত বলছে, বিলিয়নিয়ারেরা না থাকলে উদ্ভাবন, প্রযুক্তি ও অগ্রগতি থমকে যাবে। কারণ বৃহৎ বিনিয়োগই গড়ে তোলে নতুন সমাধান।
উদ্ভাবন কি থেমে যাবে
অ্যাডাম স্মিথ ইনস্টিটিউটের ম্যাক্সওয়েল মার্লোর মতে, বিলিয়নিয়ারদের বিলোপ করা হলে পশ্চিমা অর্থনীতি বিপর্যস্ত হবে। তাঁর দাবি, অধিকাংশ বিলিয়নিয়ার তাঁদের সম্পদের মালিক হয়েছেন সমাজের চাহিদামতো পণ্য ও প্রযুক্তি তৈরি করে। তাঁদের সম্পদ মূলত কোম্পানির শেয়ার, মেধাস্বত্ব অথবা সম্পত্তি—যা দিনে দিনে ওঠানামা করে। তাঁর মতে, এই ধনী ব্যক্তিদের প্রণোদনাই উদ্ভাবনে গতি আনে; তা না থাকলে উন্নয়ন থেমে যাবে।
যদি ন্যায্যভাবে সম্পদ বণ্টিত হতো
গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ট্যাক্স জাস্টিসের ডেরেজে আলেমায়েহুর মতে, শুধু বিলিয়নিয়ার কর আরোপ নয়—প্রশ্ন হচ্ছে, সেই কর কোথায় যাবে। দক্ষিণ বিশ্বের শ্রম ও সম্পদ থেকেই যে বিপুল সম্পদ তৈরি হয়, তাই তার ন্যায্য অংশ দক্ষিণেই ফিরে আসা উচিত। তিনি বলেন, বৈষম্য কমাতে শুধু অর্থ হস্তান্তর নয়, বৈশ্বিক আর্থিক কাঠামো পুনর্গঠন জরুরি; নইলে বৈষম্য আরও গভীর হবে।
বিধিনিষেধ কি বদলাতে হবে
ডেনিসন ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ফাদেল কাবুব বলেন, বিলিয়নিয়ারেরা আসলে ব্যর্থ নীতির ফল। সিস্টেম যেভাবে সাজানো, তাতে সম্পদ একদিকে কেন্দ্রীভূত হওয়াই স্বাভাবিক। তাঁর মতে, বিলিয়নিয়ার শ্রেণিকে বিলোপ করতে হলে আধুনিক অ্যান্টি ট্রাস্ট ও কঠোর বাজার নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন।
মিডিয়ার ওপর প্রভাব কমবে
গোল্ডস্মিথস বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডেস ফ্রিডম্যান মনে করেন, বিলিয়নিয়ারেরা পুরো মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম কিনে ফেলতে সক্ষম হওয়ায় তথ্যপ্রবাহ তাঁদের স্বার্থেই নিয়ন্ত্রিত হয়। যেমন—বেজোস বা ইলন মাস্কের গণমাধ্যম মালিকানা এই অঙ্গনের স্বাধীনতাকে দীর্ঘমেয়াদে প্রশ্নবিদ্ধ করে। তাই বিলিয়নিয়ার প্রভাব সীমিত হলে তথ্যের উৎসও আরও স্বাধীন হতে পারে।
চরম সম্পদ কি সত্যিই বিলোপ করা সম্ভব
বিশ্ব ইনইক্যুয়ালিটি ল্যাবের লুকাস শ্যানসেলের মতে, ইতিহাসে এর নজির আছে। উদাহরণস্বরূপ—রকেফেলারের একচেটিয়া সাম্রাজ্য ভেঙে দেওয়া, কিংবা রুজভেল্টের সময় সর্বোচ্চ করহার ৯৪ শতাংশে উন্নীত করা। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পানামা পেপারসের মতো ফাঁস যেমন দুর্দান্ত স্বচ্ছতা তৈরি করেছে, তেমনি তা পরিবর্তনের সুযোগও তৈরি করছে। তিনি মনে করেন, ধনীদের ওপর কর আরোপের মতো ধারণা এখন আর ‘যদি’ নয়, বরং ‘কখন’ করা হবে—এ প্রশ্নে এসে দাঁড়িয়েছে।
আল-জাজিরা অবলম্বনে

বিগত পাঁচ বছর চীনকে প্রতিপক্ষ হিসেবেই দেখেছে ভারত। এমনকি গত মে মাস পর্যন্ত চীনকে কার্যত প্রধান প্রতিপক্ষ হিসেবে দেখেছে। কারণ, ভারতনিয়ন্ত্রিত জম্মু-কাশ্মীরে সন্ত্রাসী হামলার পর চার দিনের যুদ্ধে পাকিস্তান চীনা প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ব্যবহার করেছিল।
২৫ আগস্ট ২০২৫
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতদের মধ্যে ইউক্রেন শান্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনা হলেও প্রকাশ্যে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইউরি উশাকভ, এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন যে অমীমাংসিত ‘আঞ্চলিক সমস্যাই’ মূল বাধা। আর এই অঞ্চল আর কোনোটিই নয়, দোনেৎস্ক।
১ দিন আগে
জাপানের ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর গত অক্টোবরে দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন সানায়ে তাকাইচি। এরপরই তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত হন জাপানের নতুন ‘আয়রন লেডি’ বা লৌহমানবী’ হিসেবে।
২ দিন আগে
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠককে ঘিরে দিল্লিতে শুরু হয়েছে কূটনৈতিক প্রস্তুতি। চলমান ইউক্রেন যুদ্ধ, যুক্তরাষ্ট্রের চাপ এবং জ্বালানির বাজারে অস্থিরতার মধ্যেই এই শীর্ষ সম্মেলন হতে যাচ্ছে। অর্থনীতি, প্রতিরক্ষা এবং জ্বালানি—এই তিনটি খাত আলোচনার...
২ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

জাপানের ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর গত অক্টোবরে দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন সানায়ে তাকাইচি। এরপরই তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত হন জাপানের নতুন ‘আয়রন লেডি’ বা লৌহমানবী’ হিসেবে। এই পরিচয়টিকে তাকাইচি নিজেও গর্বের সঙ্গে গ্রহণ করেন। মার্গারেট থ্যাচারের অনুরাগী এই রক্ষণশীল নেতা ঘরোয়া অর্থনীতি থেকে শুরু করে পররাষ্ট্র ও নিরাপত্তা—সব ক্ষেত্রেই শক্ত অবস্থানের বার্তা দিয়েছেন।
তাকাইচির রাজনৈতিক পরিচয়ের মূল কেন্দ্রে রয়েছে ‘নিপ্পন কেইগি’ নামে জাপানের সবচেয়ে প্রভাবশালী জাতীয়তাবাদী গোষ্ঠী। এই সংগঠন জাপানের সংবিধানের যুদ্ধবিরোধী ৯ নম্বর অনুচ্ছেদ বাতিল, শক্তিশালী সামরিক বাহিনী গঠন এবং ঐতিহ্যবাদী মূল্যবোধে প্রত্যাবর্তনের পক্ষে। পূর্বসুরী শিনজো আবের মতো তাই তাকাইচিও জাপানকে স্বাভাবিক রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চান, যেখানে গোয়েন্দা সংস্থা, আধুনিক সেনাবাহিনী এবং কঠোর নিরাপত্তা আইন থাকবে।
অর্থনীতির ক্ষেত্রে তিনি জাতীয় শিল্পকে শক্তিশালী করা, প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বাড়ানো এবং রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ বৃদ্ধির পক্ষে। একই সঙ্গে কঠোর অভিবাসন নীতি ও রক্ষণশীল মূল্যবোধের প্রচারও তাঁকে ডানপন্থীদের মধ্যে জনপ্রিয় করেছে। তবে এই অভ্যন্তরীণ রাজনীতি এখন আন্তর্জাতিক উত্তেজনার সঙ্গে গেঁথে গেছে—বিশেষ করে, তাইওয়ান ইস্যুতে তাঁর অবস্থানের কারণে।
তাকাইচি ক্ষমতায় আসার পর থেকেই চীনের প্রতি কঠোর মনোভাব দেখাচ্ছেন। বেইজিংকে তিনি কৌশলগত হুমকি হিসেবে দেখেন এবং প্রতিরোধমূলক সামরিক ও কূটনৈতিক পদক্ষেপের পক্ষে জোর দিচ্ছেন। এরই অংশ হিসেবে অক্টোবরের শেষ দিকে তাঁর ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাক্ষাৎ দুই দেশের সম্পর্ককে নতুন সোনালি যুগে প্রবেশ করানোর আভাস দেয়। জাপান প্রতিরক্ষা ব্যয় জিডিপির কমপক্ষে ২ শতাংশে উন্নীত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, আর যুক্তরাষ্ট্র বিরল ধাতুর সরবরাহ নিশ্চিতকরণসহ অর্থনৈতিক সহায়তার ঘোষণা দেয়।
তবে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হলো তাইওয়ানের সঙ্গে তাকাইচির ঘনিষ্ঠতা। তিনি তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট লাই চিং-তের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন, যা চীনের কাছে স্পষ্ট উত্তেজনাকর পদক্ষেপ হিসেবে ধরা পড়েছে। আরও বিতর্ক সৃষ্টি হয় যখন তাকাইচি প্রকাশ্যে বলেন, তাইওয়ানের নিরাপত্তা জাপানের নিরাপত্তার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত। এমনকি তাইওয়ানে চীনা হামলার ক্ষেত্রে জাপানের আত্মরক্ষা বাহিনী হস্তক্ষেপ করতে পারে বলেও ইঙ্গিত দেন তিনি।
এ ক্ষেত্রে চীনের প্রতিক্রিয়াও ছিল কঠোর ও দ্রুত। তারা তাকাইচির বিরুদ্ধে ‘পুরোনো সামরিকতাবাদকে পুনরুজ্জীবিত করার’ অভিযোগ তোলে, রাষ্ট্রদূতকে তলব করে এবং জাতিসংঘে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ পাঠায়। পাশাপাশি সামুদ্রিক এলাকায় কোস্টগার্ডের টহল বাড়ায় চীন, জাপানি সামুদ্রিক পণ্যে সীমাবদ্ধতা আরোপের হুমকি দেয় এবং উত্তেজনাপূর্ণ নানা বিবৃতি দেয়।
এদিকে জাপানও পশ্চিম সীমান্তের ইয়োনাগুনি দ্বীপে বিমান প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনের ঘোষণা দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রও একই দ্বীপে সামরিক অবকাঠামো শক্তিশালী করছে। ফলে পরিস্থিতি আরও জটিল আকার ধারণ করছে।
তবে ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি তাকাইচিকে উত্তেজনা না বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন। কারণ আগামী এপ্রিলে তিনি বেইজিং সফর করতে চান।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তাকাইচির নেতৃত্বে জাপান নতুন ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতায় প্রবেশ করেছে। তাঁর দৃঢ় অবস্থান দেশকে হয় পুনরুত্থানের পথে নেবে—নয়তো চীন–তাইওয়ান উত্তেজনার কেন্দ্রে ঠেলে দেবে। ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে তিনি কোন পথে হাঁটবেন তার ওপর।

জাপানের ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর গত অক্টোবরে দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন সানায়ে তাকাইচি। এরপরই তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত হন জাপানের নতুন ‘আয়রন লেডি’ বা লৌহমানবী’ হিসেবে। এই পরিচয়টিকে তাকাইচি নিজেও গর্বের সঙ্গে গ্রহণ করেন। মার্গারেট থ্যাচারের অনুরাগী এই রক্ষণশীল নেতা ঘরোয়া অর্থনীতি থেকে শুরু করে পররাষ্ট্র ও নিরাপত্তা—সব ক্ষেত্রেই শক্ত অবস্থানের বার্তা দিয়েছেন।
তাকাইচির রাজনৈতিক পরিচয়ের মূল কেন্দ্রে রয়েছে ‘নিপ্পন কেইগি’ নামে জাপানের সবচেয়ে প্রভাবশালী জাতীয়তাবাদী গোষ্ঠী। এই সংগঠন জাপানের সংবিধানের যুদ্ধবিরোধী ৯ নম্বর অনুচ্ছেদ বাতিল, শক্তিশালী সামরিক বাহিনী গঠন এবং ঐতিহ্যবাদী মূল্যবোধে প্রত্যাবর্তনের পক্ষে। পূর্বসুরী শিনজো আবের মতো তাই তাকাইচিও জাপানকে স্বাভাবিক রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চান, যেখানে গোয়েন্দা সংস্থা, আধুনিক সেনাবাহিনী এবং কঠোর নিরাপত্তা আইন থাকবে।
অর্থনীতির ক্ষেত্রে তিনি জাতীয় শিল্পকে শক্তিশালী করা, প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বাড়ানো এবং রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ বৃদ্ধির পক্ষে। একই সঙ্গে কঠোর অভিবাসন নীতি ও রক্ষণশীল মূল্যবোধের প্রচারও তাঁকে ডানপন্থীদের মধ্যে জনপ্রিয় করেছে। তবে এই অভ্যন্তরীণ রাজনীতি এখন আন্তর্জাতিক উত্তেজনার সঙ্গে গেঁথে গেছে—বিশেষ করে, তাইওয়ান ইস্যুতে তাঁর অবস্থানের কারণে।
তাকাইচি ক্ষমতায় আসার পর থেকেই চীনের প্রতি কঠোর মনোভাব দেখাচ্ছেন। বেইজিংকে তিনি কৌশলগত হুমকি হিসেবে দেখেন এবং প্রতিরোধমূলক সামরিক ও কূটনৈতিক পদক্ষেপের পক্ষে জোর দিচ্ছেন। এরই অংশ হিসেবে অক্টোবরের শেষ দিকে তাঁর ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাক্ষাৎ দুই দেশের সম্পর্ককে নতুন সোনালি যুগে প্রবেশ করানোর আভাস দেয়। জাপান প্রতিরক্ষা ব্যয় জিডিপির কমপক্ষে ২ শতাংশে উন্নীত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, আর যুক্তরাষ্ট্র বিরল ধাতুর সরবরাহ নিশ্চিতকরণসহ অর্থনৈতিক সহায়তার ঘোষণা দেয়।
তবে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হলো তাইওয়ানের সঙ্গে তাকাইচির ঘনিষ্ঠতা। তিনি তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট লাই চিং-তের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন, যা চীনের কাছে স্পষ্ট উত্তেজনাকর পদক্ষেপ হিসেবে ধরা পড়েছে। আরও বিতর্ক সৃষ্টি হয় যখন তাকাইচি প্রকাশ্যে বলেন, তাইওয়ানের নিরাপত্তা জাপানের নিরাপত্তার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত। এমনকি তাইওয়ানে চীনা হামলার ক্ষেত্রে জাপানের আত্মরক্ষা বাহিনী হস্তক্ষেপ করতে পারে বলেও ইঙ্গিত দেন তিনি।
এ ক্ষেত্রে চীনের প্রতিক্রিয়াও ছিল কঠোর ও দ্রুত। তারা তাকাইচির বিরুদ্ধে ‘পুরোনো সামরিকতাবাদকে পুনরুজ্জীবিত করার’ অভিযোগ তোলে, রাষ্ট্রদূতকে তলব করে এবং জাতিসংঘে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ পাঠায়। পাশাপাশি সামুদ্রিক এলাকায় কোস্টগার্ডের টহল বাড়ায় চীন, জাপানি সামুদ্রিক পণ্যে সীমাবদ্ধতা আরোপের হুমকি দেয় এবং উত্তেজনাপূর্ণ নানা বিবৃতি দেয়।
এদিকে জাপানও পশ্চিম সীমান্তের ইয়োনাগুনি দ্বীপে বিমান প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনের ঘোষণা দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রও একই দ্বীপে সামরিক অবকাঠামো শক্তিশালী করছে। ফলে পরিস্থিতি আরও জটিল আকার ধারণ করছে।
তবে ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি তাকাইচিকে উত্তেজনা না বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন। কারণ আগামী এপ্রিলে তিনি বেইজিং সফর করতে চান।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তাকাইচির নেতৃত্বে জাপান নতুন ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতায় প্রবেশ করেছে। তাঁর দৃঢ় অবস্থান দেশকে হয় পুনরুত্থানের পথে নেবে—নয়তো চীন–তাইওয়ান উত্তেজনার কেন্দ্রে ঠেলে দেবে। ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে তিনি কোন পথে হাঁটবেন তার ওপর।

বিগত পাঁচ বছর চীনকে প্রতিপক্ষ হিসেবেই দেখেছে ভারত। এমনকি গত মে মাস পর্যন্ত চীনকে কার্যত প্রধান প্রতিপক্ষ হিসেবে দেখেছে। কারণ, ভারতনিয়ন্ত্রিত জম্মু-কাশ্মীরে সন্ত্রাসী হামলার পর চার দিনের যুদ্ধে পাকিস্তান চীনা প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ব্যবহার করেছিল।
২৫ আগস্ট ২০২৫
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতদের মধ্যে ইউক্রেন শান্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনা হলেও প্রকাশ্যে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইউরি উশাকভ, এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন যে অমীমাংসিত ‘আঞ্চলিক সমস্যাই’ মূল বাধা। আর এই অঞ্চল আর কোনোটিই নয়, দোনেৎস্ক।
১ দিন আগে
বিশ্বজুড়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন উঠে আসছে—‘যদি বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ সীমিত করা হয়, অথবা এই শ্রেণিটিকেই সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়, তবে কী ঘটবে?’ পশ্চিমা দেশগুলোতে চরম ধনী বা বিলিয়নিয়ারদের সংখ্যা ও প্রভাব বাড়তে থাকায় এখন এই প্রশ্ন আরও জোরালো হয়েছে।
১ দিন আগে
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠককে ঘিরে দিল্লিতে শুরু হয়েছে কূটনৈতিক প্রস্তুতি। চলমান ইউক্রেন যুদ্ধ, যুক্তরাষ্ট্রের চাপ এবং জ্বালানির বাজারে অস্থিরতার মধ্যেই এই শীর্ষ সম্মেলন হতে যাচ্ছে। অর্থনীতি, প্রতিরক্ষা এবং জ্বালানি—এই তিনটি খাত আলোচনার...
২ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠককে ঘিরে দিল্লিতে শুরু হয়েছে কূটনৈতিক প্রস্তুতি। চলমান ইউক্রেন যুদ্ধ, যুক্তরাষ্ট্রের চাপ এবং জ্বালানির বাজারে অস্থিরতার মধ্যেই এই শীর্ষ সম্মেলন হতে যাচ্ছে। অর্থনীতি, প্রতিরক্ষা এবং জ্বালানি—এই তিনটি খাত আলোচনার কেন্দ্রে থাকবে বলে দুই দেশই নিশ্চিত করেছে।
রাষ্ট্রীয় সফরে বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) ভারতে পৌঁছে পরদিন শুক্রবার মোদির সঙ্গে বৈঠকে বসবেন পুতিন। এই বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের অগ্রগতি পর্যালোচনা ছাড়াও নতুন কয়েকটি আন্তদপ্তর ও বাণিজ্যিক চুক্তি স্বাক্ষরের সম্ভাবনা রয়েছে। রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখা এবং একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কৌশলগত অংশীদারত্ব ধরে রাখতে ভারতের নীতির জন্য এই বৈঠক একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রাশিয়া থেকে ডিসকাউন্টে ভারতের তেল কেনা দীর্ঘদিন ধরেই ওয়াশিংটনকে অসন্তুষ্ট করে আসছে। এই অসন্তুষ্টি থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি ভারতীয় পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন, যা মোট শুল্ককে ৫০ শতাংশে উন্নীত করেছে। তবে ভারত বলছে, তারা আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার বিরোধী নয়, কিন্তু ১৪০ কোটি মানুষের জ্বালানি চাহিদা মেটাতেই বাধ্য হয়ে রাশিয়া থেকে তেল আমদানি করা হচ্ছে। নতুন মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে ‘রসনেফত’ ও ‘লুকওইল’ এর মতো রাশিয়ার কিছু কোম্পানি থেকে ভারত তেল কিনবে না বলে জানিয়েছে। তবে নিষেধাজ্ঞামুক্ত রুশ সরবরাহকারীদের সঙ্গে বাণিজ্য চালু থাকবে।
পুতিনের এই সফরে দুই দেশের অর্থনৈতিক সহযোগিতার ওপর জোর দেওয়া হবে। ভারত রাশিয়ায় ওষুধ, কৃষিপণ্য ও টেক্সটাইল রপ্তানি বাড়াতে চায় এবং পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে শুল্কমুক্ত সুবিধা প্রদানের অনুরোধ জানাবে। এ ছাড়া সার সরবরাহের দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি এবং রাশিয়ায় ভারতীয় দক্ষ জনশক্তির নিরাপদ ও নিয়মিত অভিবাসন নিয়ে আলোচনা এগোতে পারে। দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য, সমুদ্র পরিবহন, স্বাস্থ্যসেবা ও গণমাধ্যম সহযোগিতা বিষয়ক নথিপত্র চূড়ান্তের কাজও চলছে।
বুধবার এই বিষয়ে যুক্তরাজ্যভিত্তিক ইনডিপেনডেন্টের এক নিবন্ধে দাবি করা হয়েছে, জ্বালানি সহযোগিতাই পুতিন-মোদি আলোচনার বড় অংশ দখল করবে। ভারতের ফার ইস্টে বিনিয়োগ, রাশিয়ার সঙ্গে বেসামরিক পারমাণবিক প্রকল্প এবং কুদানকুলাম প্রকল্পের সম্প্রসারণ নিয়ে অগ্রগতি পর্যালোচনা হবে। স্থানীয়ভাবে যন্ত্রাংশ উৎপাদন এবং তৃতীয় দেশে যৌথ পারমাণবিক প্রকল্প বাস্তবায়নের সম্ভাবনাও খতিয়ে দেখা হবে।
প্রতিরক্ষা সহযোগিতা এই সফরের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। ২০১৮ সালের ৫.৪ বিলিয়ন ডলারের চুক্তির আওতায় ভারতের হাতে ইতিমধ্যে রাশিয়ার তিনটি এস-৪০০ স্কোয়াড্রন এসেছে। যুদ্ধজনিত কারণে বাকিগুলোর সরবরাহে যুদ্ধজনিত বিলম্ব হচ্ছে। ভারত এই সরবরাহ দ্রুত নিশ্চিত করতে চাপ দেবে। পাশাপাশি আরও এস-৪০০ কেনার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া হয়নি, যদিও বৈঠক থেকে কোনো ঘোষণা হওয়ার সম্ভাবনা কম। রুশ নির্মিত এসইউ-৩০ এমকেআই যুদ্ধবিমান আপগ্রেড, অস্ত্র সরবরাহ দ্রুততর করা এবং যৌথ সামরিক মহড়ায় সমন্বয় জোরদার করার বিষয়েও আলোচনা হবে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভারত বহুজাতিক অস্ত্র সরবরাহকারীদের দিকে নজর বাড়ালেও রাশিয়া এখনো তাদের সবচেয়ে বড় প্রতিরক্ষা অংশীদার। পুতিনের সফরকে সেই সম্পর্কটি আরও দৃঢ় করার বড় সুযোগ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠককে ঘিরে দিল্লিতে শুরু হয়েছে কূটনৈতিক প্রস্তুতি। চলমান ইউক্রেন যুদ্ধ, যুক্তরাষ্ট্রের চাপ এবং জ্বালানির বাজারে অস্থিরতার মধ্যেই এই শীর্ষ সম্মেলন হতে যাচ্ছে। অর্থনীতি, প্রতিরক্ষা এবং জ্বালানি—এই তিনটি খাত আলোচনার কেন্দ্রে থাকবে বলে দুই দেশই নিশ্চিত করেছে।
রাষ্ট্রীয় সফরে বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) ভারতে পৌঁছে পরদিন শুক্রবার মোদির সঙ্গে বৈঠকে বসবেন পুতিন। এই বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের অগ্রগতি পর্যালোচনা ছাড়াও নতুন কয়েকটি আন্তদপ্তর ও বাণিজ্যিক চুক্তি স্বাক্ষরের সম্ভাবনা রয়েছে। রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখা এবং একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কৌশলগত অংশীদারত্ব ধরে রাখতে ভারতের নীতির জন্য এই বৈঠক একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রাশিয়া থেকে ডিসকাউন্টে ভারতের তেল কেনা দীর্ঘদিন ধরেই ওয়াশিংটনকে অসন্তুষ্ট করে আসছে। এই অসন্তুষ্টি থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি ভারতীয় পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন, যা মোট শুল্ককে ৫০ শতাংশে উন্নীত করেছে। তবে ভারত বলছে, তারা আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার বিরোধী নয়, কিন্তু ১৪০ কোটি মানুষের জ্বালানি চাহিদা মেটাতেই বাধ্য হয়ে রাশিয়া থেকে তেল আমদানি করা হচ্ছে। নতুন মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে ‘রসনেফত’ ও ‘লুকওইল’ এর মতো রাশিয়ার কিছু কোম্পানি থেকে ভারত তেল কিনবে না বলে জানিয়েছে। তবে নিষেধাজ্ঞামুক্ত রুশ সরবরাহকারীদের সঙ্গে বাণিজ্য চালু থাকবে।
পুতিনের এই সফরে দুই দেশের অর্থনৈতিক সহযোগিতার ওপর জোর দেওয়া হবে। ভারত রাশিয়ায় ওষুধ, কৃষিপণ্য ও টেক্সটাইল রপ্তানি বাড়াতে চায় এবং পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে শুল্কমুক্ত সুবিধা প্রদানের অনুরোধ জানাবে। এ ছাড়া সার সরবরাহের দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি এবং রাশিয়ায় ভারতীয় দক্ষ জনশক্তির নিরাপদ ও নিয়মিত অভিবাসন নিয়ে আলোচনা এগোতে পারে। দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য, সমুদ্র পরিবহন, স্বাস্থ্যসেবা ও গণমাধ্যম সহযোগিতা বিষয়ক নথিপত্র চূড়ান্তের কাজও চলছে।
বুধবার এই বিষয়ে যুক্তরাজ্যভিত্তিক ইনডিপেনডেন্টের এক নিবন্ধে দাবি করা হয়েছে, জ্বালানি সহযোগিতাই পুতিন-মোদি আলোচনার বড় অংশ দখল করবে। ভারতের ফার ইস্টে বিনিয়োগ, রাশিয়ার সঙ্গে বেসামরিক পারমাণবিক প্রকল্প এবং কুদানকুলাম প্রকল্পের সম্প্রসারণ নিয়ে অগ্রগতি পর্যালোচনা হবে। স্থানীয়ভাবে যন্ত্রাংশ উৎপাদন এবং তৃতীয় দেশে যৌথ পারমাণবিক প্রকল্প বাস্তবায়নের সম্ভাবনাও খতিয়ে দেখা হবে।
প্রতিরক্ষা সহযোগিতা এই সফরের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। ২০১৮ সালের ৫.৪ বিলিয়ন ডলারের চুক্তির আওতায় ভারতের হাতে ইতিমধ্যে রাশিয়ার তিনটি এস-৪০০ স্কোয়াড্রন এসেছে। যুদ্ধজনিত কারণে বাকিগুলোর সরবরাহে যুদ্ধজনিত বিলম্ব হচ্ছে। ভারত এই সরবরাহ দ্রুত নিশ্চিত করতে চাপ দেবে। পাশাপাশি আরও এস-৪০০ কেনার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া হয়নি, যদিও বৈঠক থেকে কোনো ঘোষণা হওয়ার সম্ভাবনা কম। রুশ নির্মিত এসইউ-৩০ এমকেআই যুদ্ধবিমান আপগ্রেড, অস্ত্র সরবরাহ দ্রুততর করা এবং যৌথ সামরিক মহড়ায় সমন্বয় জোরদার করার বিষয়েও আলোচনা হবে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভারত বহুজাতিক অস্ত্র সরবরাহকারীদের দিকে নজর বাড়ালেও রাশিয়া এখনো তাদের সবচেয়ে বড় প্রতিরক্ষা অংশীদার। পুতিনের সফরকে সেই সম্পর্কটি আরও দৃঢ় করার বড় সুযোগ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

বিগত পাঁচ বছর চীনকে প্রতিপক্ষ হিসেবেই দেখেছে ভারত। এমনকি গত মে মাস পর্যন্ত চীনকে কার্যত প্রধান প্রতিপক্ষ হিসেবে দেখেছে। কারণ, ভারতনিয়ন্ত্রিত জম্মু-কাশ্মীরে সন্ত্রাসী হামলার পর চার দিনের যুদ্ধে পাকিস্তান চীনা প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ব্যবহার করেছিল।
২৫ আগস্ট ২০২৫
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতদের মধ্যে ইউক্রেন শান্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনা হলেও প্রকাশ্যে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইউরি উশাকভ, এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন যে অমীমাংসিত ‘আঞ্চলিক সমস্যাই’ মূল বাধা। আর এই অঞ্চল আর কোনোটিই নয়, দোনেৎস্ক।
১ দিন আগে
বিশ্বজুড়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন উঠে আসছে—‘যদি বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ সীমিত করা হয়, অথবা এই শ্রেণিটিকেই সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়, তবে কী ঘটবে?’ পশ্চিমা দেশগুলোতে চরম ধনী বা বিলিয়নিয়ারদের সংখ্যা ও প্রভাব বাড়তে থাকায় এখন এই প্রশ্ন আরও জোরালো হয়েছে।
১ দিন আগে
জাপানের ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর গত অক্টোবরে দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন সানায়ে তাকাইচি। এরপরই তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত হন জাপানের নতুন ‘আয়রন লেডি’ বা লৌহমানবী’ হিসেবে।
২ দিন আগে