
রাশিয়ার ঢোল পেটানো আর কতিপয় ইউরোপীয়র হতাশা দেখে মনে হতে পারে, ভ্লাদিমির পুতিন কখনোই ইউক্রেন যুদ্ধ জয়ের এত কাছে ছিলেন না! কিন্তু আক্রমণের তিন বছর পরেও, ‘জয়’ বলতে তিনি আসলে কী বোঝাতে চান, তা স্পষ্ট নয়। তাঁর লক্ষ্যগুলোও অস্পষ্ট।
ইউক্রেনে পুতিনের ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ পরিকল্পনা করা হয়েছিল গোপনে। রুশ জনগণ তো বটেই, এমনকি সরকারের লোকেরাও অন্ধকারে ছিল! পুতিন রুশ সার্বভৌমত্ব রক্ষার কথা বলেছেন সে সময়। কিন্তু পরবর্তী পরিস্থিতি এমন কিছু বিষয়ের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে, যা তাঁর নিয়ন্ত্রণের বাইরে। যদিও গত ১৮ ফেব্রুয়ারি সৌদি আরবে ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে পুতিন প্রশাসনের আনুষ্ঠানিকভাবে আলোচনা শুরু হয়েছে। কিন্তু এরপরও ইউক্রেনের রাজনৈতিক বাস্তবতা, ইউরোপের পুনঃসশস্ত্রীকরণ প্রচেষ্টা এবং সর্বোপরি ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর পরিকল্পনায় জল ঢেলে দিতে পারে।
ইউক্রেনে যুদ্ধ বন্ধে ট্রাম্পের কোনো সুস্পষ্ট পরিকল্পনা নেই, অন্তত এখন পর্যন্ত তেমন কিছু প্রকাশ পায়নি। তবে তাঁর হাতে ইউক্রেন ইস্যুতে গ্রহণ করার মতো যথেষ্ট বিকল্প আছে। তিনি চাইলেই ইউক্রেনের জন্য সহায়তা সম্পূর্ণ বন্ধ করে দিতে পারেন, সেই সঙ্গে রাশিয়ার ওপরও নিষেধাজ্ঞা বাড়াতে পারেন। কিন্তু সম্ভবত সেসব কিছুই ঘটবে না। কারণ, আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ও পুতিনের মধ্যকার কূটনৈতিক কৌশলের নতুন পর্বের মহরত হলো রিয়াদে। রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ করার তিন বছর পর এই প্রথম আমেরিকা ও রাশিয়ার কর্মকর্তাদের মুখোমুখি বৈঠক হলো। তাঁরা ইউক্রেন এবং ‘পারস্পরিক ভূরাজনৈতিক স্বার্থ’ নিয়ে ধারাবাহিক আলোচনা শুরু করতে রাজি হয়েছেন। তবে আসলে কী আলোচিত হবে তা অস্পষ্ট। এ ছাড়া, ট্রাম্প–পুতিন বৈঠক আয়োজনের প্রস্তুতিও শুরু হবে শিগগির, যদিও এখনো কোনো তারিখ নির্ধারণ করা হয়নি।
এক মার্কিন কর্মকর্তা বলেছেন, এ ধরনের উন্মুক্ত ও অস্পষ্ট আলোচনা পুতিনের জন্য বেশ সুবিধাজনক। ট্রাম্প যেখানে এই আলোচনাকে দেখেন ‘অযৌক্তিক’ যুদ্ধের ইতি টানার উপায় হিসেবে, সেখানে পুতিন এগুলোকে সম্ভাব্য বৃহত্তর সংঘাতের একটি পর্যায় হিসেবে দেখছেন। রুশ নেতা হিসাব কষে দেখছেন, ইউক্রেন বা ন্যাটো জোটের চেয়ে তাঁর ধৈর্য ও সক্ষমতা বেশি। পোকার খেলোয়াড়ের মতো, পুতিন প্রয়োজনের সময় আত্মবিশ্বাস ও শক্তিমত্তার সঙ্গে কাজ করতে দক্ষ। কিন্তু বাস্তবে, তাঁর হাতে থাকা তাস ঠিক ততটা শক্তিশালী নয়, যতটা তিনি প্রতিপক্ষকে বিশ্বাস করাতে চান। অন্যদিকে, যুদ্ধের অবসান তাঁর জন্য নিজ দেশে নতুন জটিলতা তৈরি করতে পারে।
রাশিয়ার আলোচনার অবস্থান মূল্যায়নের যেকোনো প্রচেষ্টা অবশ্যই সামরিক পরিস্থিতি থেকে শুরু করা উচিত। দেশটির সেনাবাহিনী ইউক্রেনে খুব একটা ভালো দক্ষতা দেখাতে পারছে না। তাদের অগ্রগতি অত্যন্ত ধীর। গত বছরের জুলাই থেকে তারা পোকরোভস্ক শহর দখল করতে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু দখল করতে পারেনি। তাদের ক্ষয়ক্ষতিও হয়েছে ব্যাপক। রাশিয়ার বেশির ভাগ সামরিক অগ্রগতি যুদ্ধের প্রথম কয়েক সপ্তাহেই ঘটেছে। ২০২২ সালের এপ্রিলে ইউক্রেনের উত্তর থেকে রাশিয়ার পশ্চাদপসরণের পর, তারা ইউক্রেনের ১৯ দশমিক ৬ শতাংশ ভূখণ্ড নিয়ন্ত্রণ করছিল। সে সময় তাদের হতাহতের সংখ্যা ছিল আনুমানিক ২০ হাজার। বর্তমানে রাশিয়া ইউক্রেনের ১৯ দশমিক ২ শতাংশ এলাকা নিয়ন্ত্রণে রেখেছে এবং ব্রিটিশ গোয়েন্দা মূল্যায়ন অনুসারে, তাদের মোট হতাহতের সংখ্যা ৮ লাখে পৌঁছেছে। এক পশ্চিমা কর্মকর্তা বলেন, ‘দুই দেশের সেনাবাহিনী একে অপরের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে কারণ তারা থামতে পারছে না, কোনো পক্ষই আসলে চূড়ান্ত পরিণতি নির্ধারক জয় অর্জনের আশা করছে না।’
কেবল সেনা হতাহতের ঘটনাই নয়, রাশিয়ার সামরিক সরঞ্জামের ক্ষয়ক্ষতিও অবিশ্বাস্য মাত্রায় পৌঁছেছে। কয়েক দশক ধরে গড়ে তোলা সোভিয়েত আমলের সাঁজোয়া বহরের অবস্থাই তার প্রমাণ। মজুত থাকা ৭ হাজার ৩০০ ট্যাংকের অর্ধেকের বেশি ধ্বংস হয়ে গেছে। অবশিষ্ট যেগুলো আছে, তার মধ্যে মাত্র ৫০০টি দ্রুত সংস্কারের উপযোগী। এপ্রিলের মধ্যেই রাশিয়ার টি–৮০ ট্যাংকের মজুত শেষ হয়ে যেতে পারে। গত বছর রাশিয়া যতগুলো আর্টিলারি বা গোলন্দাজ ইউনিট হারিয়েছে, তার পরিমাণ আগের দুই বছরের সম্মিলিত ক্ষতির দ্বিগুণ। পেশাদার চুক্তিভিত্তিক সেনা নিয়োগের খরচ বাড়ছে, আর সাধারণ জনগণের ব্যাপক মোবিলাইজেশন (যুদ্ধের ময়দানে নামানো) রাজনৈতিকভাবে ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। জনমত জরিপ স্পষ্ট দেখাচ্ছে, রাশিয়ার জনগণ যুদ্ধের অবসান চায়।
রাশিয়ার অর্থনীতি নিষেধাজ্ঞার ধকল সামলে নিতে পেরেছে মূলত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দক্ষতা, উচ্চ পণ্যমূল্য এবং রাজস্ব প্রণোদনার কারণে। তবে উৎপাদনশীল খাত থেকে সামরিক খাতে সম্পদ স্থানান্তরের ফলে মূল্যস্ফীতি দুই অঙ্কের ঘরে পৌঁছে গেছে। সুদহার বর্তমানে ২১ শতাংশ, যা দুই দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ। শ্রমবাজারে দীর্ঘস্থায়ী ঘাটতি রয়ে গেছে। অর্থনৈতিক পরিসংখ্যানের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে, কারণ দেশটির পরিসংখ্যান কর্তৃপক্ষ নিয়মিত প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস সংশোধন করে থাকে।
তবে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের ফাঁস করা রাশিয়ার সেন্ট্রাল ব্যাংক ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের একটি প্রতিবেদনে সতর্ক করে বলা হয়েছে যে, মূল্যস্ফীতি কমার আগেই রাশিয়া মন্দার মুখে পড়তে পারে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক উপপ্রধান ওলেগ ভিউগিন বলেছেন, সরকারকে খুব দ্রুত সামরিক ব্যয় হ্রাস করা অথবা লাগামহীন মূল্যস্ফীতির মধ্যে যেকোনো একটি বেছে নিতে হবে।
সার্বভৌম সম্পদ তহবিল ক্রমাগত ফুরিয়ে যাচ্ছে। সাবেক অর্থমন্ত্রী মিখাইল জাদোরনভের মতে, এই তহবিলের তারল্য মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৭ দশমিক ৪ শতাংশ থেকে কমে ২ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে। গত বছর রাশিয়ার রপ্তানি আয় ছিল ৪১৭ বিলিয়ন ডলার। কিন্তু নিষেধাজ্ঞা এবং বিশ্ব বাজারে নিম্নমুখী পণ্যমূল্যের চাপের কারণে বেশ চাপে আছে। ডিসেম্বরে এটি বছরওয়ারি হিসাবে আগের বছরের তুলনায় ২০ শতাংশ কমেছে। রুশ থিংক ট্যাংক ‘রে–রাশিয়া’—এর গবেষক কিরিল রোগভ যুক্তি দিয়েছেন, নিষেধাজ্ঞার কারণে রাশিয়ার বড় রপ্তানি খাত ইস্পাত ও কৃষিপণ্যের ধীর গতিতে দরপতন রাশিয়ার আগ্রাসনের সক্ষমতাকে সীমিত করবে।
রাশিয়ার এ ধরনের দুর্বলতা থাকার বিষয়টি পশ্চিমাদের মধ্যে অনেককে বিশ্বাস করাচ্ছে যে, আমেরিকা ক্রেমলিনকে যুদ্ধ বন্ধে যে ছাড় দিতে যাচ্ছে বা চাচ্ছে তা আসলে খুব একটা ভালো নয়। যদিও পশ্চিমারা ইউক্রেনকে নিশ্চিত নিরাপত্তার গ্যারান্টি দিতে সক্ষম নাও হতে পারে, তবে তারা রাশিয়াকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে নিষেধাজ্ঞা বহাল রাখতে পারে বলে যুক্তি দিচ্ছেন রোগভ।
তবে ট্রাম্পের লক্ষ্য দীর্ঘ সময় ধরে রাশিয়াকে দমিয়ে রাখা বা প্রতিহত করা নয়, বরং তিনি দ্রুত যুদ্ধের সমাপ্তির প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে মনোযোগী। এক মার্কিন কর্মকর্তা বলেন, ‘শেষ পর্যন্ত আমরা পুতিনকে সেই অবস্থানে নিয়ে এসেছি, যেখানে তাঁকে দেখতে চেয়েছিলাম গত তিন বছর ধরে। এখন যদি আমরা তাঁকে পরাজয়ের মুখ থেকে জয়ের সুযোগ করে দিই, তাহলে সেটা ভয়াবহ লজ্জার বিষয় হবে।’
পুতিন বিশ্বাস করেন, ট্রাম্প কেবল অস্থির প্রকৃতিরই নন, তাঁকে সহজে প্রভাবিতও করা যায়। প্রশংসা ও তাৎক্ষণিক সুবিধা দিয়ে তিনি আমেরিকার প্রেসিডেন্টকে আকৃষ্ট করেছেন। গত ১১ ফেব্রুয়ারি পুতিন ২০২১ সাল থেকে রাশিয়ায় বন্দী থাকা মার্কিন নাগরিক মার্ক ফোগেলকে মুক্তি দেন। তবে পুতিনের মৌলিক দাবি অপরিবর্তিত। তাঁর এসব দাবির মধ্যে—একটি নিরপেক্ষ ইউক্রেন, যার সামরিক বাহিনী আকার ও সরঞ্জামের দিক থেকে সীমিত থাকবে এবং যেখানে পশ্চিমা সেনাদের উপস্থিতি থাকবে না। তিনি চান, ক্রিমিয়া ও অন্য চারটি অধিকৃত ইউক্রেনীয় প্রদেশকে রাশিয়ার অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হোক।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, পুতিন ২০২৪ সালের জুনে ইউক্রেন সংকট নিরসনে যে দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেন তার মূল কথা হলো—তিনি এমন কোনো সাময়িক যুদ্ধবিরতি বা অস্ত্রবিরতি চান না, যা কার্যত রাশিয়ার ওপর পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞাগুলো বহাল রাখবে এবং ইউক্রেনকে পুনরায় অস্ত্রসজ্জিত হওয়ার সুযোগ দেবে। বরং, পুতিন একটি ‘চূড়ান্ত সমাধান’ চান, যার মাধ্যমে রাশিয়ার ওপর আরোপিত পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হবে এবং মস্কো সামরিক শক্তি পুনর্গঠনের সুযোগ পাবে।
তবে বাস্তবতা হলো, রণক্ষেত্রের যুদ্ধ বন্ধ হলেও, পুতিন ইউরোপকে দুর্বল করার এবং রাশিয়ার প্রভাব বলয় পুনর্গঠনের চেষ্টা চালিয়ে যাবেন। ন্যাটোর ইউরোপ চ্যাপ্টারে সুপ্রিম অ্যালাইড কমান্ডারের উপদেষ্টা স্টিভ কোভিংটনের মতে, পুতিনের লক্ষ্য হলো ইউক্রেনকে গুঁড়িয়ে দেওয়া এবং ১৯৪৫—পরবর্তী মার্কিন–নেতৃত্বাধীন বিশ্বব্যবস্থাকে ধ্বংস করা।
গত বছর নিজ দেশের কূটনীতিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় পুতিন বলেছিলেন, ‘সমগ্র ইউরো–আটলান্টিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা আমাদের চোখের সামনে ভেঙে পড়ছে। ইউরোপ বৈশ্বিক অর্থনৈতিক বিকাশে একঘরে হয়ে পড়ছে, বিশৃঙ্খলার মধ্যে ডুবে যাচ্ছে...এবং আন্তর্জাতিক সক্ষমতা ও সাংস্কৃতিক পরিচয় হারাচ্ছে।’
পুতিন নিশ্চিতভাবেই খুশি হয়েছেন, যখন গত ১৫ ফেব্রুয়ারি মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনে আমেরিকার ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি. ভ্যান্স একই মন্তব্যের প্রতিধ্বনি করেছেন। ২০০৭ সালে এই একই সম্মেলনে পুতিন প্রথমবারের মতো ঘোষণা করেছিলেন, তিনি পশ্চিমাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অবতীর্ণ হবেন। ক্রেমলিন অবশ্যই আশা করছে যে, রাশিয়া ঘেঁষা ডানপন্থী রাজনৈতিক দলগুলো—যাদের প্রতি ভ্যান্সেরও সমর্থন আছে—ইউরোপের নির্বাচনে শক্তিশালী অবস্থান গড়ে তুলবে।
ক্রেমলিনের সামনে গ্রেমলিন
পশ্চিমা দুনিয়ায় ‘গ্রেমলিন’ মূলত লোককথায় প্রচলিত একটি দুষ্টু ও রহস্যময় প্রাণী। আধুনিক সংস্কৃতিতে, বিশেষ করে সিনেমা ও সাহিত্যে গ্রেমলিনকে ব্যাপকভাবে তুলে ধরা হয়েছে। সহজ ভাষায় বলতে গেলে, গ্রেমলিন হলো একপ্রকার কাল্পনিক, ছোটখাটো, দুষ্টু প্রকৃতির প্রাণী, যাদের কাজ হলো যন্ত্রপাতির ক্ষতি করা বা গোলমাল তৈরি করা। বিশ শতকের দিকে মূলত উড়োজাহাজ শিল্পকে কেন্দ্র করে এই কল্পকথা তৈরি হয়।
পুতিনের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার হলো ক্ষমতায় টিকে থাকা। যুদ্ধ থেকে বের হয়ে আসার নিজস্ব ঝুঁকি আছে। বিশেষ করে যুদ্ধ শেষ হয়ে যাওয়ার পর লাখ লাখ সেনা ঘরে ফিরবে, তাঁদের ভরণ-পোষণ এবং বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে ক্ষমতার লড়াই তাঁকে বিচলিত করতে পারে।
ট্রাম্পের কূটনীতি নীরবে যুদ্ধের বিরোধিতা করা মধ্যপন্থীদের নতুন আশার সঞ্চার করেছে। তাঁদের রাজনৈতিক ক্ষমতা নেই, তবে এই ‘শান্তির সুবিধাভোগীরা’, যারা মূলত বেসরকারি ব্যবসায়ী, অর্থনীতিবিদ এবং প্রযুক্তিবিদ—আশা করছেন যে, ট্রাম্প ও তাঁর দল রাশিয়ার ভবিষ্যৎ পথ পরিবর্তন করতে পারবেন। পুতিনের মুখোমুখি হতে অক্ষম এই গোষ্ঠী ট্রাম্পকে বোঝাতে চায় যে, পশ্চিমাদের সঙ্গে রাশিয়ার সংঘাত প্রশমিত করা তাঁর নিরাপত্তার জন্য ক্ষতিকর হবে না; বরং তা আরও সুসংহত করবে।
অন্যদিকে আছে ‘যুদ্ধের সুবিধাভোগী গোষ্ঠী’। যদি সংঘাত পুতিন শাসনের ভিত্তি হয়, তবে সহিংসতা ও দুর্নীতি এর টিকে থাকার অন্যান্য উপাদান। অলিগার্কদের বিভিন্ন গোষ্ঠী নিষেধাজ্ঞার ফলে সৃষ্ট গ্রে মার্কেট বা পর্দার অন্তরালের বাজারে জ্বালানি তেল ও অন্যান্য পণ্য রপ্তানির কোটা থেকে লাভবান হয়। এক ধনকুবের রাশিয়ার এই বর্তমান অবস্থাকে ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর (আইআরজিসি) চোরাচালান প্রকল্পগুলোর সঙ্গে তুলনা করেছেন। রুশ অলিগার্করা তাদের লাভজনক ব্যবসা এত সহজে ছাড়বে না। নিরাপত্তা সংস্থাগুলো একদিকে এমন ‘ফিফথ কলাম’ বা ‘পঞ্চম স্তম্ভের’ সন্ধান করবে যারা শান্তির পক্ষে, আবার অন্যদিকে চরমপন্থী জাতীয়তাবাদীদেরও খুঁজবে, যারা যেকোনো সমঝোতাকে বিশ্বাসঘাতকতা হিসেবে দেখবে।
ট্রাম্প ‘হত্যাযজ্ঞ বন্ধ’ করতে চান এবং এ বিষয়ে তিনি সঠিক অবস্থানেই আছেন। যদি যুদ্ধবিরতি ইউক্রেন পুনর্গঠনের সুযোগ দেয়, ইউরোপের প্রতিরক্ষা ব্যয় বাড়ায় এবং রাশিয়ার দুর্বল অর্থনীতির ওপর পশ্চিমা কিছু নিষেধাজ্ঞা বজায় থাকে, তবে তা পুতিনের উচ্চাকাঙ্ক্ষাকে ব্যর্থ করলেও করতেও পারে। তবে পুতিন ‘বাজি ধরছেন’ যে, তিনি ইউক্রেনের চেয়ে দীর্ঘ সময় লড়াই চালিয়ে যেতে পারবেন, অথবা তিনি এমন একটি সমঝোতা ট্রাম্পের মাধ্যমে আদায় করতে পারবেন, যা রাশিয়াকে বিশ্ব অর্থনীতিতে পুনরায় যুক্ত হওয়ার সুযোগ দেবে, ইউক্রেনকে বিভক্ত ও আধা–ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করবে এবং ইউরোপকে এতটাই হতবাক করে দেবে যে, তারা নিজেদের রক্ষা করার সক্ষমতা হারাবে!
অনুবাদ করেছেন আব্দুর রহমান

রাশিয়ার ঢোল পেটানো আর কতিপয় ইউরোপীয়র হতাশা দেখে মনে হতে পারে, ভ্লাদিমির পুতিন কখনোই ইউক্রেন যুদ্ধ জয়ের এত কাছে ছিলেন না! কিন্তু আক্রমণের তিন বছর পরেও, ‘জয়’ বলতে তিনি আসলে কী বোঝাতে চান, তা স্পষ্ট নয়। তাঁর লক্ষ্যগুলোও অস্পষ্ট।
ইউক্রেনে পুতিনের ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ পরিকল্পনা করা হয়েছিল গোপনে। রুশ জনগণ তো বটেই, এমনকি সরকারের লোকেরাও অন্ধকারে ছিল! পুতিন রুশ সার্বভৌমত্ব রক্ষার কথা বলেছেন সে সময়। কিন্তু পরবর্তী পরিস্থিতি এমন কিছু বিষয়ের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে, যা তাঁর নিয়ন্ত্রণের বাইরে। যদিও গত ১৮ ফেব্রুয়ারি সৌদি আরবে ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে পুতিন প্রশাসনের আনুষ্ঠানিকভাবে আলোচনা শুরু হয়েছে। কিন্তু এরপরও ইউক্রেনের রাজনৈতিক বাস্তবতা, ইউরোপের পুনঃসশস্ত্রীকরণ প্রচেষ্টা এবং সর্বোপরি ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর পরিকল্পনায় জল ঢেলে দিতে পারে।
ইউক্রেনে যুদ্ধ বন্ধে ট্রাম্পের কোনো সুস্পষ্ট পরিকল্পনা নেই, অন্তত এখন পর্যন্ত তেমন কিছু প্রকাশ পায়নি। তবে তাঁর হাতে ইউক্রেন ইস্যুতে গ্রহণ করার মতো যথেষ্ট বিকল্প আছে। তিনি চাইলেই ইউক্রেনের জন্য সহায়তা সম্পূর্ণ বন্ধ করে দিতে পারেন, সেই সঙ্গে রাশিয়ার ওপরও নিষেধাজ্ঞা বাড়াতে পারেন। কিন্তু সম্ভবত সেসব কিছুই ঘটবে না। কারণ, আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ও পুতিনের মধ্যকার কূটনৈতিক কৌশলের নতুন পর্বের মহরত হলো রিয়াদে। রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ করার তিন বছর পর এই প্রথম আমেরিকা ও রাশিয়ার কর্মকর্তাদের মুখোমুখি বৈঠক হলো। তাঁরা ইউক্রেন এবং ‘পারস্পরিক ভূরাজনৈতিক স্বার্থ’ নিয়ে ধারাবাহিক আলোচনা শুরু করতে রাজি হয়েছেন। তবে আসলে কী আলোচিত হবে তা অস্পষ্ট। এ ছাড়া, ট্রাম্প–পুতিন বৈঠক আয়োজনের প্রস্তুতিও শুরু হবে শিগগির, যদিও এখনো কোনো তারিখ নির্ধারণ করা হয়নি।
এক মার্কিন কর্মকর্তা বলেছেন, এ ধরনের উন্মুক্ত ও অস্পষ্ট আলোচনা পুতিনের জন্য বেশ সুবিধাজনক। ট্রাম্প যেখানে এই আলোচনাকে দেখেন ‘অযৌক্তিক’ যুদ্ধের ইতি টানার উপায় হিসেবে, সেখানে পুতিন এগুলোকে সম্ভাব্য বৃহত্তর সংঘাতের একটি পর্যায় হিসেবে দেখছেন। রুশ নেতা হিসাব কষে দেখছেন, ইউক্রেন বা ন্যাটো জোটের চেয়ে তাঁর ধৈর্য ও সক্ষমতা বেশি। পোকার খেলোয়াড়ের মতো, পুতিন প্রয়োজনের সময় আত্মবিশ্বাস ও শক্তিমত্তার সঙ্গে কাজ করতে দক্ষ। কিন্তু বাস্তবে, তাঁর হাতে থাকা তাস ঠিক ততটা শক্তিশালী নয়, যতটা তিনি প্রতিপক্ষকে বিশ্বাস করাতে চান। অন্যদিকে, যুদ্ধের অবসান তাঁর জন্য নিজ দেশে নতুন জটিলতা তৈরি করতে পারে।
রাশিয়ার আলোচনার অবস্থান মূল্যায়নের যেকোনো প্রচেষ্টা অবশ্যই সামরিক পরিস্থিতি থেকে শুরু করা উচিত। দেশটির সেনাবাহিনী ইউক্রেনে খুব একটা ভালো দক্ষতা দেখাতে পারছে না। তাদের অগ্রগতি অত্যন্ত ধীর। গত বছরের জুলাই থেকে তারা পোকরোভস্ক শহর দখল করতে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু দখল করতে পারেনি। তাদের ক্ষয়ক্ষতিও হয়েছে ব্যাপক। রাশিয়ার বেশির ভাগ সামরিক অগ্রগতি যুদ্ধের প্রথম কয়েক সপ্তাহেই ঘটেছে। ২০২২ সালের এপ্রিলে ইউক্রেনের উত্তর থেকে রাশিয়ার পশ্চাদপসরণের পর, তারা ইউক্রেনের ১৯ দশমিক ৬ শতাংশ ভূখণ্ড নিয়ন্ত্রণ করছিল। সে সময় তাদের হতাহতের সংখ্যা ছিল আনুমানিক ২০ হাজার। বর্তমানে রাশিয়া ইউক্রেনের ১৯ দশমিক ২ শতাংশ এলাকা নিয়ন্ত্রণে রেখেছে এবং ব্রিটিশ গোয়েন্দা মূল্যায়ন অনুসারে, তাদের মোট হতাহতের সংখ্যা ৮ লাখে পৌঁছেছে। এক পশ্চিমা কর্মকর্তা বলেন, ‘দুই দেশের সেনাবাহিনী একে অপরের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে কারণ তারা থামতে পারছে না, কোনো পক্ষই আসলে চূড়ান্ত পরিণতি নির্ধারক জয় অর্জনের আশা করছে না।’
কেবল সেনা হতাহতের ঘটনাই নয়, রাশিয়ার সামরিক সরঞ্জামের ক্ষয়ক্ষতিও অবিশ্বাস্য মাত্রায় পৌঁছেছে। কয়েক দশক ধরে গড়ে তোলা সোভিয়েত আমলের সাঁজোয়া বহরের অবস্থাই তার প্রমাণ। মজুত থাকা ৭ হাজার ৩০০ ট্যাংকের অর্ধেকের বেশি ধ্বংস হয়ে গেছে। অবশিষ্ট যেগুলো আছে, তার মধ্যে মাত্র ৫০০টি দ্রুত সংস্কারের উপযোগী। এপ্রিলের মধ্যেই রাশিয়ার টি–৮০ ট্যাংকের মজুত শেষ হয়ে যেতে পারে। গত বছর রাশিয়া যতগুলো আর্টিলারি বা গোলন্দাজ ইউনিট হারিয়েছে, তার পরিমাণ আগের দুই বছরের সম্মিলিত ক্ষতির দ্বিগুণ। পেশাদার চুক্তিভিত্তিক সেনা নিয়োগের খরচ বাড়ছে, আর সাধারণ জনগণের ব্যাপক মোবিলাইজেশন (যুদ্ধের ময়দানে নামানো) রাজনৈতিকভাবে ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। জনমত জরিপ স্পষ্ট দেখাচ্ছে, রাশিয়ার জনগণ যুদ্ধের অবসান চায়।
রাশিয়ার অর্থনীতি নিষেধাজ্ঞার ধকল সামলে নিতে পেরেছে মূলত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দক্ষতা, উচ্চ পণ্যমূল্য এবং রাজস্ব প্রণোদনার কারণে। তবে উৎপাদনশীল খাত থেকে সামরিক খাতে সম্পদ স্থানান্তরের ফলে মূল্যস্ফীতি দুই অঙ্কের ঘরে পৌঁছে গেছে। সুদহার বর্তমানে ২১ শতাংশ, যা দুই দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ। শ্রমবাজারে দীর্ঘস্থায়ী ঘাটতি রয়ে গেছে। অর্থনৈতিক পরিসংখ্যানের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে, কারণ দেশটির পরিসংখ্যান কর্তৃপক্ষ নিয়মিত প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস সংশোধন করে থাকে।
তবে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের ফাঁস করা রাশিয়ার সেন্ট্রাল ব্যাংক ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের একটি প্রতিবেদনে সতর্ক করে বলা হয়েছে যে, মূল্যস্ফীতি কমার আগেই রাশিয়া মন্দার মুখে পড়তে পারে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক উপপ্রধান ওলেগ ভিউগিন বলেছেন, সরকারকে খুব দ্রুত সামরিক ব্যয় হ্রাস করা অথবা লাগামহীন মূল্যস্ফীতির মধ্যে যেকোনো একটি বেছে নিতে হবে।
সার্বভৌম সম্পদ তহবিল ক্রমাগত ফুরিয়ে যাচ্ছে। সাবেক অর্থমন্ত্রী মিখাইল জাদোরনভের মতে, এই তহবিলের তারল্য মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৭ দশমিক ৪ শতাংশ থেকে কমে ২ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে। গত বছর রাশিয়ার রপ্তানি আয় ছিল ৪১৭ বিলিয়ন ডলার। কিন্তু নিষেধাজ্ঞা এবং বিশ্ব বাজারে নিম্নমুখী পণ্যমূল্যের চাপের কারণে বেশ চাপে আছে। ডিসেম্বরে এটি বছরওয়ারি হিসাবে আগের বছরের তুলনায় ২০ শতাংশ কমেছে। রুশ থিংক ট্যাংক ‘রে–রাশিয়া’—এর গবেষক কিরিল রোগভ যুক্তি দিয়েছেন, নিষেধাজ্ঞার কারণে রাশিয়ার বড় রপ্তানি খাত ইস্পাত ও কৃষিপণ্যের ধীর গতিতে দরপতন রাশিয়ার আগ্রাসনের সক্ষমতাকে সীমিত করবে।
রাশিয়ার এ ধরনের দুর্বলতা থাকার বিষয়টি পশ্চিমাদের মধ্যে অনেককে বিশ্বাস করাচ্ছে যে, আমেরিকা ক্রেমলিনকে যুদ্ধ বন্ধে যে ছাড় দিতে যাচ্ছে বা চাচ্ছে তা আসলে খুব একটা ভালো নয়। যদিও পশ্চিমারা ইউক্রেনকে নিশ্চিত নিরাপত্তার গ্যারান্টি দিতে সক্ষম নাও হতে পারে, তবে তারা রাশিয়াকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে নিষেধাজ্ঞা বহাল রাখতে পারে বলে যুক্তি দিচ্ছেন রোগভ।
তবে ট্রাম্পের লক্ষ্য দীর্ঘ সময় ধরে রাশিয়াকে দমিয়ে রাখা বা প্রতিহত করা নয়, বরং তিনি দ্রুত যুদ্ধের সমাপ্তির প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে মনোযোগী। এক মার্কিন কর্মকর্তা বলেন, ‘শেষ পর্যন্ত আমরা পুতিনকে সেই অবস্থানে নিয়ে এসেছি, যেখানে তাঁকে দেখতে চেয়েছিলাম গত তিন বছর ধরে। এখন যদি আমরা তাঁকে পরাজয়ের মুখ থেকে জয়ের সুযোগ করে দিই, তাহলে সেটা ভয়াবহ লজ্জার বিষয় হবে।’
পুতিন বিশ্বাস করেন, ট্রাম্প কেবল অস্থির প্রকৃতিরই নন, তাঁকে সহজে প্রভাবিতও করা যায়। প্রশংসা ও তাৎক্ষণিক সুবিধা দিয়ে তিনি আমেরিকার প্রেসিডেন্টকে আকৃষ্ট করেছেন। গত ১১ ফেব্রুয়ারি পুতিন ২০২১ সাল থেকে রাশিয়ায় বন্দী থাকা মার্কিন নাগরিক মার্ক ফোগেলকে মুক্তি দেন। তবে পুতিনের মৌলিক দাবি অপরিবর্তিত। তাঁর এসব দাবির মধ্যে—একটি নিরপেক্ষ ইউক্রেন, যার সামরিক বাহিনী আকার ও সরঞ্জামের দিক থেকে সীমিত থাকবে এবং যেখানে পশ্চিমা সেনাদের উপস্থিতি থাকবে না। তিনি চান, ক্রিমিয়া ও অন্য চারটি অধিকৃত ইউক্রেনীয় প্রদেশকে রাশিয়ার অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হোক।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, পুতিন ২০২৪ সালের জুনে ইউক্রেন সংকট নিরসনে যে দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেন তার মূল কথা হলো—তিনি এমন কোনো সাময়িক যুদ্ধবিরতি বা অস্ত্রবিরতি চান না, যা কার্যত রাশিয়ার ওপর পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞাগুলো বহাল রাখবে এবং ইউক্রেনকে পুনরায় অস্ত্রসজ্জিত হওয়ার সুযোগ দেবে। বরং, পুতিন একটি ‘চূড়ান্ত সমাধান’ চান, যার মাধ্যমে রাশিয়ার ওপর আরোপিত পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হবে এবং মস্কো সামরিক শক্তি পুনর্গঠনের সুযোগ পাবে।
তবে বাস্তবতা হলো, রণক্ষেত্রের যুদ্ধ বন্ধ হলেও, পুতিন ইউরোপকে দুর্বল করার এবং রাশিয়ার প্রভাব বলয় পুনর্গঠনের চেষ্টা চালিয়ে যাবেন। ন্যাটোর ইউরোপ চ্যাপ্টারে সুপ্রিম অ্যালাইড কমান্ডারের উপদেষ্টা স্টিভ কোভিংটনের মতে, পুতিনের লক্ষ্য হলো ইউক্রেনকে গুঁড়িয়ে দেওয়া এবং ১৯৪৫—পরবর্তী মার্কিন–নেতৃত্বাধীন বিশ্বব্যবস্থাকে ধ্বংস করা।
গত বছর নিজ দেশের কূটনীতিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় পুতিন বলেছিলেন, ‘সমগ্র ইউরো–আটলান্টিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা আমাদের চোখের সামনে ভেঙে পড়ছে। ইউরোপ বৈশ্বিক অর্থনৈতিক বিকাশে একঘরে হয়ে পড়ছে, বিশৃঙ্খলার মধ্যে ডুবে যাচ্ছে...এবং আন্তর্জাতিক সক্ষমতা ও সাংস্কৃতিক পরিচয় হারাচ্ছে।’
পুতিন নিশ্চিতভাবেই খুশি হয়েছেন, যখন গত ১৫ ফেব্রুয়ারি মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনে আমেরিকার ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি. ভ্যান্স একই মন্তব্যের প্রতিধ্বনি করেছেন। ২০০৭ সালে এই একই সম্মেলনে পুতিন প্রথমবারের মতো ঘোষণা করেছিলেন, তিনি পশ্চিমাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অবতীর্ণ হবেন। ক্রেমলিন অবশ্যই আশা করছে যে, রাশিয়া ঘেঁষা ডানপন্থী রাজনৈতিক দলগুলো—যাদের প্রতি ভ্যান্সেরও সমর্থন আছে—ইউরোপের নির্বাচনে শক্তিশালী অবস্থান গড়ে তুলবে।
ক্রেমলিনের সামনে গ্রেমলিন
পশ্চিমা দুনিয়ায় ‘গ্রেমলিন’ মূলত লোককথায় প্রচলিত একটি দুষ্টু ও রহস্যময় প্রাণী। আধুনিক সংস্কৃতিতে, বিশেষ করে সিনেমা ও সাহিত্যে গ্রেমলিনকে ব্যাপকভাবে তুলে ধরা হয়েছে। সহজ ভাষায় বলতে গেলে, গ্রেমলিন হলো একপ্রকার কাল্পনিক, ছোটখাটো, দুষ্টু প্রকৃতির প্রাণী, যাদের কাজ হলো যন্ত্রপাতির ক্ষতি করা বা গোলমাল তৈরি করা। বিশ শতকের দিকে মূলত উড়োজাহাজ শিল্পকে কেন্দ্র করে এই কল্পকথা তৈরি হয়।
পুতিনের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার হলো ক্ষমতায় টিকে থাকা। যুদ্ধ থেকে বের হয়ে আসার নিজস্ব ঝুঁকি আছে। বিশেষ করে যুদ্ধ শেষ হয়ে যাওয়ার পর লাখ লাখ সেনা ঘরে ফিরবে, তাঁদের ভরণ-পোষণ এবং বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে ক্ষমতার লড়াই তাঁকে বিচলিত করতে পারে।
ট্রাম্পের কূটনীতি নীরবে যুদ্ধের বিরোধিতা করা মধ্যপন্থীদের নতুন আশার সঞ্চার করেছে। তাঁদের রাজনৈতিক ক্ষমতা নেই, তবে এই ‘শান্তির সুবিধাভোগীরা’, যারা মূলত বেসরকারি ব্যবসায়ী, অর্থনীতিবিদ এবং প্রযুক্তিবিদ—আশা করছেন যে, ট্রাম্প ও তাঁর দল রাশিয়ার ভবিষ্যৎ পথ পরিবর্তন করতে পারবেন। পুতিনের মুখোমুখি হতে অক্ষম এই গোষ্ঠী ট্রাম্পকে বোঝাতে চায় যে, পশ্চিমাদের সঙ্গে রাশিয়ার সংঘাত প্রশমিত করা তাঁর নিরাপত্তার জন্য ক্ষতিকর হবে না; বরং তা আরও সুসংহত করবে।
অন্যদিকে আছে ‘যুদ্ধের সুবিধাভোগী গোষ্ঠী’। যদি সংঘাত পুতিন শাসনের ভিত্তি হয়, তবে সহিংসতা ও দুর্নীতি এর টিকে থাকার অন্যান্য উপাদান। অলিগার্কদের বিভিন্ন গোষ্ঠী নিষেধাজ্ঞার ফলে সৃষ্ট গ্রে মার্কেট বা পর্দার অন্তরালের বাজারে জ্বালানি তেল ও অন্যান্য পণ্য রপ্তানির কোটা থেকে লাভবান হয়। এক ধনকুবের রাশিয়ার এই বর্তমান অবস্থাকে ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর (আইআরজিসি) চোরাচালান প্রকল্পগুলোর সঙ্গে তুলনা করেছেন। রুশ অলিগার্করা তাদের লাভজনক ব্যবসা এত সহজে ছাড়বে না। নিরাপত্তা সংস্থাগুলো একদিকে এমন ‘ফিফথ কলাম’ বা ‘পঞ্চম স্তম্ভের’ সন্ধান করবে যারা শান্তির পক্ষে, আবার অন্যদিকে চরমপন্থী জাতীয়তাবাদীদেরও খুঁজবে, যারা যেকোনো সমঝোতাকে বিশ্বাসঘাতকতা হিসেবে দেখবে।
ট্রাম্প ‘হত্যাযজ্ঞ বন্ধ’ করতে চান এবং এ বিষয়ে তিনি সঠিক অবস্থানেই আছেন। যদি যুদ্ধবিরতি ইউক্রেন পুনর্গঠনের সুযোগ দেয়, ইউরোপের প্রতিরক্ষা ব্যয় বাড়ায় এবং রাশিয়ার দুর্বল অর্থনীতির ওপর পশ্চিমা কিছু নিষেধাজ্ঞা বজায় থাকে, তবে তা পুতিনের উচ্চাকাঙ্ক্ষাকে ব্যর্থ করলেও করতেও পারে। তবে পুতিন ‘বাজি ধরছেন’ যে, তিনি ইউক্রেনের চেয়ে দীর্ঘ সময় লড়াই চালিয়ে যেতে পারবেন, অথবা তিনি এমন একটি সমঝোতা ট্রাম্পের মাধ্যমে আদায় করতে পারবেন, যা রাশিয়াকে বিশ্ব অর্থনীতিতে পুনরায় যুক্ত হওয়ার সুযোগ দেবে, ইউক্রেনকে বিভক্ত ও আধা–ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করবে এবং ইউরোপকে এতটাই হতবাক করে দেবে যে, তারা নিজেদের রক্ষা করার সক্ষমতা হারাবে!
অনুবাদ করেছেন আব্দুর রহমান

রাশিয়ার ঢোল পেটানো আর কতিপয় ইউরোপীয়র হতাশা দেখে মনে হতে পারে, ভ্লাদিমির পুতিন কখনোই ইউক্রেন যুদ্ধ জয়ের এত কাছে ছিলেন না! কিন্তু আক্রমণের তিন বছর পরেও, ‘জয়’ বলতে তিনি আসলে কী বোঝাতে চান, তা স্পষ্ট নয়। তাঁর লক্ষ্যগুলোও অস্পষ্ট।
ইউক্রেনে পুতিনের ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ পরিকল্পনা করা হয়েছিল গোপনে। রুশ জনগণ তো বটেই, এমনকি সরকারের লোকেরাও অন্ধকারে ছিল! পুতিন রুশ সার্বভৌমত্ব রক্ষার কথা বলেছেন সে সময়। কিন্তু পরবর্তী পরিস্থিতি এমন কিছু বিষয়ের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে, যা তাঁর নিয়ন্ত্রণের বাইরে। যদিও গত ১৮ ফেব্রুয়ারি সৌদি আরবে ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে পুতিন প্রশাসনের আনুষ্ঠানিকভাবে আলোচনা শুরু হয়েছে। কিন্তু এরপরও ইউক্রেনের রাজনৈতিক বাস্তবতা, ইউরোপের পুনঃসশস্ত্রীকরণ প্রচেষ্টা এবং সর্বোপরি ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর পরিকল্পনায় জল ঢেলে দিতে পারে।
ইউক্রেনে যুদ্ধ বন্ধে ট্রাম্পের কোনো সুস্পষ্ট পরিকল্পনা নেই, অন্তত এখন পর্যন্ত তেমন কিছু প্রকাশ পায়নি। তবে তাঁর হাতে ইউক্রেন ইস্যুতে গ্রহণ করার মতো যথেষ্ট বিকল্প আছে। তিনি চাইলেই ইউক্রেনের জন্য সহায়তা সম্পূর্ণ বন্ধ করে দিতে পারেন, সেই সঙ্গে রাশিয়ার ওপরও নিষেধাজ্ঞা বাড়াতে পারেন। কিন্তু সম্ভবত সেসব কিছুই ঘটবে না। কারণ, আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ও পুতিনের মধ্যকার কূটনৈতিক কৌশলের নতুন পর্বের মহরত হলো রিয়াদে। রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ করার তিন বছর পর এই প্রথম আমেরিকা ও রাশিয়ার কর্মকর্তাদের মুখোমুখি বৈঠক হলো। তাঁরা ইউক্রেন এবং ‘পারস্পরিক ভূরাজনৈতিক স্বার্থ’ নিয়ে ধারাবাহিক আলোচনা শুরু করতে রাজি হয়েছেন। তবে আসলে কী আলোচিত হবে তা অস্পষ্ট। এ ছাড়া, ট্রাম্প–পুতিন বৈঠক আয়োজনের প্রস্তুতিও শুরু হবে শিগগির, যদিও এখনো কোনো তারিখ নির্ধারণ করা হয়নি।
এক মার্কিন কর্মকর্তা বলেছেন, এ ধরনের উন্মুক্ত ও অস্পষ্ট আলোচনা পুতিনের জন্য বেশ সুবিধাজনক। ট্রাম্প যেখানে এই আলোচনাকে দেখেন ‘অযৌক্তিক’ যুদ্ধের ইতি টানার উপায় হিসেবে, সেখানে পুতিন এগুলোকে সম্ভাব্য বৃহত্তর সংঘাতের একটি পর্যায় হিসেবে দেখছেন। রুশ নেতা হিসাব কষে দেখছেন, ইউক্রেন বা ন্যাটো জোটের চেয়ে তাঁর ধৈর্য ও সক্ষমতা বেশি। পোকার খেলোয়াড়ের মতো, পুতিন প্রয়োজনের সময় আত্মবিশ্বাস ও শক্তিমত্তার সঙ্গে কাজ করতে দক্ষ। কিন্তু বাস্তবে, তাঁর হাতে থাকা তাস ঠিক ততটা শক্তিশালী নয়, যতটা তিনি প্রতিপক্ষকে বিশ্বাস করাতে চান। অন্যদিকে, যুদ্ধের অবসান তাঁর জন্য নিজ দেশে নতুন জটিলতা তৈরি করতে পারে।
রাশিয়ার আলোচনার অবস্থান মূল্যায়নের যেকোনো প্রচেষ্টা অবশ্যই সামরিক পরিস্থিতি থেকে শুরু করা উচিত। দেশটির সেনাবাহিনী ইউক্রেনে খুব একটা ভালো দক্ষতা দেখাতে পারছে না। তাদের অগ্রগতি অত্যন্ত ধীর। গত বছরের জুলাই থেকে তারা পোকরোভস্ক শহর দখল করতে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু দখল করতে পারেনি। তাদের ক্ষয়ক্ষতিও হয়েছে ব্যাপক। রাশিয়ার বেশির ভাগ সামরিক অগ্রগতি যুদ্ধের প্রথম কয়েক সপ্তাহেই ঘটেছে। ২০২২ সালের এপ্রিলে ইউক্রেনের উত্তর থেকে রাশিয়ার পশ্চাদপসরণের পর, তারা ইউক্রেনের ১৯ দশমিক ৬ শতাংশ ভূখণ্ড নিয়ন্ত্রণ করছিল। সে সময় তাদের হতাহতের সংখ্যা ছিল আনুমানিক ২০ হাজার। বর্তমানে রাশিয়া ইউক্রেনের ১৯ দশমিক ২ শতাংশ এলাকা নিয়ন্ত্রণে রেখেছে এবং ব্রিটিশ গোয়েন্দা মূল্যায়ন অনুসারে, তাদের মোট হতাহতের সংখ্যা ৮ লাখে পৌঁছেছে। এক পশ্চিমা কর্মকর্তা বলেন, ‘দুই দেশের সেনাবাহিনী একে অপরের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে কারণ তারা থামতে পারছে না, কোনো পক্ষই আসলে চূড়ান্ত পরিণতি নির্ধারক জয় অর্জনের আশা করছে না।’
কেবল সেনা হতাহতের ঘটনাই নয়, রাশিয়ার সামরিক সরঞ্জামের ক্ষয়ক্ষতিও অবিশ্বাস্য মাত্রায় পৌঁছেছে। কয়েক দশক ধরে গড়ে তোলা সোভিয়েত আমলের সাঁজোয়া বহরের অবস্থাই তার প্রমাণ। মজুত থাকা ৭ হাজার ৩০০ ট্যাংকের অর্ধেকের বেশি ধ্বংস হয়ে গেছে। অবশিষ্ট যেগুলো আছে, তার মধ্যে মাত্র ৫০০টি দ্রুত সংস্কারের উপযোগী। এপ্রিলের মধ্যেই রাশিয়ার টি–৮০ ট্যাংকের মজুত শেষ হয়ে যেতে পারে। গত বছর রাশিয়া যতগুলো আর্টিলারি বা গোলন্দাজ ইউনিট হারিয়েছে, তার পরিমাণ আগের দুই বছরের সম্মিলিত ক্ষতির দ্বিগুণ। পেশাদার চুক্তিভিত্তিক সেনা নিয়োগের খরচ বাড়ছে, আর সাধারণ জনগণের ব্যাপক মোবিলাইজেশন (যুদ্ধের ময়দানে নামানো) রাজনৈতিকভাবে ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। জনমত জরিপ স্পষ্ট দেখাচ্ছে, রাশিয়ার জনগণ যুদ্ধের অবসান চায়।
রাশিয়ার অর্থনীতি নিষেধাজ্ঞার ধকল সামলে নিতে পেরেছে মূলত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দক্ষতা, উচ্চ পণ্যমূল্য এবং রাজস্ব প্রণোদনার কারণে। তবে উৎপাদনশীল খাত থেকে সামরিক খাতে সম্পদ স্থানান্তরের ফলে মূল্যস্ফীতি দুই অঙ্কের ঘরে পৌঁছে গেছে। সুদহার বর্তমানে ২১ শতাংশ, যা দুই দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ। শ্রমবাজারে দীর্ঘস্থায়ী ঘাটতি রয়ে গেছে। অর্থনৈতিক পরিসংখ্যানের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে, কারণ দেশটির পরিসংখ্যান কর্তৃপক্ষ নিয়মিত প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস সংশোধন করে থাকে।
তবে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের ফাঁস করা রাশিয়ার সেন্ট্রাল ব্যাংক ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের একটি প্রতিবেদনে সতর্ক করে বলা হয়েছে যে, মূল্যস্ফীতি কমার আগেই রাশিয়া মন্দার মুখে পড়তে পারে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক উপপ্রধান ওলেগ ভিউগিন বলেছেন, সরকারকে খুব দ্রুত সামরিক ব্যয় হ্রাস করা অথবা লাগামহীন মূল্যস্ফীতির মধ্যে যেকোনো একটি বেছে নিতে হবে।
সার্বভৌম সম্পদ তহবিল ক্রমাগত ফুরিয়ে যাচ্ছে। সাবেক অর্থমন্ত্রী মিখাইল জাদোরনভের মতে, এই তহবিলের তারল্য মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৭ দশমিক ৪ শতাংশ থেকে কমে ২ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে। গত বছর রাশিয়ার রপ্তানি আয় ছিল ৪১৭ বিলিয়ন ডলার। কিন্তু নিষেধাজ্ঞা এবং বিশ্ব বাজারে নিম্নমুখী পণ্যমূল্যের চাপের কারণে বেশ চাপে আছে। ডিসেম্বরে এটি বছরওয়ারি হিসাবে আগের বছরের তুলনায় ২০ শতাংশ কমেছে। রুশ থিংক ট্যাংক ‘রে–রাশিয়া’—এর গবেষক কিরিল রোগভ যুক্তি দিয়েছেন, নিষেধাজ্ঞার কারণে রাশিয়ার বড় রপ্তানি খাত ইস্পাত ও কৃষিপণ্যের ধীর গতিতে দরপতন রাশিয়ার আগ্রাসনের সক্ষমতাকে সীমিত করবে।
রাশিয়ার এ ধরনের দুর্বলতা থাকার বিষয়টি পশ্চিমাদের মধ্যে অনেককে বিশ্বাস করাচ্ছে যে, আমেরিকা ক্রেমলিনকে যুদ্ধ বন্ধে যে ছাড় দিতে যাচ্ছে বা চাচ্ছে তা আসলে খুব একটা ভালো নয়। যদিও পশ্চিমারা ইউক্রেনকে নিশ্চিত নিরাপত্তার গ্যারান্টি দিতে সক্ষম নাও হতে পারে, তবে তারা রাশিয়াকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে নিষেধাজ্ঞা বহাল রাখতে পারে বলে যুক্তি দিচ্ছেন রোগভ।
তবে ট্রাম্পের লক্ষ্য দীর্ঘ সময় ধরে রাশিয়াকে দমিয়ে রাখা বা প্রতিহত করা নয়, বরং তিনি দ্রুত যুদ্ধের সমাপ্তির প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে মনোযোগী। এক মার্কিন কর্মকর্তা বলেন, ‘শেষ পর্যন্ত আমরা পুতিনকে সেই অবস্থানে নিয়ে এসেছি, যেখানে তাঁকে দেখতে চেয়েছিলাম গত তিন বছর ধরে। এখন যদি আমরা তাঁকে পরাজয়ের মুখ থেকে জয়ের সুযোগ করে দিই, তাহলে সেটা ভয়াবহ লজ্জার বিষয় হবে।’
পুতিন বিশ্বাস করেন, ট্রাম্প কেবল অস্থির প্রকৃতিরই নন, তাঁকে সহজে প্রভাবিতও করা যায়। প্রশংসা ও তাৎক্ষণিক সুবিধা দিয়ে তিনি আমেরিকার প্রেসিডেন্টকে আকৃষ্ট করেছেন। গত ১১ ফেব্রুয়ারি পুতিন ২০২১ সাল থেকে রাশিয়ায় বন্দী থাকা মার্কিন নাগরিক মার্ক ফোগেলকে মুক্তি দেন। তবে পুতিনের মৌলিক দাবি অপরিবর্তিত। তাঁর এসব দাবির মধ্যে—একটি নিরপেক্ষ ইউক্রেন, যার সামরিক বাহিনী আকার ও সরঞ্জামের দিক থেকে সীমিত থাকবে এবং যেখানে পশ্চিমা সেনাদের উপস্থিতি থাকবে না। তিনি চান, ক্রিমিয়া ও অন্য চারটি অধিকৃত ইউক্রেনীয় প্রদেশকে রাশিয়ার অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হোক।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, পুতিন ২০২৪ সালের জুনে ইউক্রেন সংকট নিরসনে যে দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেন তার মূল কথা হলো—তিনি এমন কোনো সাময়িক যুদ্ধবিরতি বা অস্ত্রবিরতি চান না, যা কার্যত রাশিয়ার ওপর পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞাগুলো বহাল রাখবে এবং ইউক্রেনকে পুনরায় অস্ত্রসজ্জিত হওয়ার সুযোগ দেবে। বরং, পুতিন একটি ‘চূড়ান্ত সমাধান’ চান, যার মাধ্যমে রাশিয়ার ওপর আরোপিত পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হবে এবং মস্কো সামরিক শক্তি পুনর্গঠনের সুযোগ পাবে।
তবে বাস্তবতা হলো, রণক্ষেত্রের যুদ্ধ বন্ধ হলেও, পুতিন ইউরোপকে দুর্বল করার এবং রাশিয়ার প্রভাব বলয় পুনর্গঠনের চেষ্টা চালিয়ে যাবেন। ন্যাটোর ইউরোপ চ্যাপ্টারে সুপ্রিম অ্যালাইড কমান্ডারের উপদেষ্টা স্টিভ কোভিংটনের মতে, পুতিনের লক্ষ্য হলো ইউক্রেনকে গুঁড়িয়ে দেওয়া এবং ১৯৪৫—পরবর্তী মার্কিন–নেতৃত্বাধীন বিশ্বব্যবস্থাকে ধ্বংস করা।
গত বছর নিজ দেশের কূটনীতিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় পুতিন বলেছিলেন, ‘সমগ্র ইউরো–আটলান্টিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা আমাদের চোখের সামনে ভেঙে পড়ছে। ইউরোপ বৈশ্বিক অর্থনৈতিক বিকাশে একঘরে হয়ে পড়ছে, বিশৃঙ্খলার মধ্যে ডুবে যাচ্ছে...এবং আন্তর্জাতিক সক্ষমতা ও সাংস্কৃতিক পরিচয় হারাচ্ছে।’
পুতিন নিশ্চিতভাবেই খুশি হয়েছেন, যখন গত ১৫ ফেব্রুয়ারি মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনে আমেরিকার ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি. ভ্যান্স একই মন্তব্যের প্রতিধ্বনি করেছেন। ২০০৭ সালে এই একই সম্মেলনে পুতিন প্রথমবারের মতো ঘোষণা করেছিলেন, তিনি পশ্চিমাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অবতীর্ণ হবেন। ক্রেমলিন অবশ্যই আশা করছে যে, রাশিয়া ঘেঁষা ডানপন্থী রাজনৈতিক দলগুলো—যাদের প্রতি ভ্যান্সেরও সমর্থন আছে—ইউরোপের নির্বাচনে শক্তিশালী অবস্থান গড়ে তুলবে।
ক্রেমলিনের সামনে গ্রেমলিন
পশ্চিমা দুনিয়ায় ‘গ্রেমলিন’ মূলত লোককথায় প্রচলিত একটি দুষ্টু ও রহস্যময় প্রাণী। আধুনিক সংস্কৃতিতে, বিশেষ করে সিনেমা ও সাহিত্যে গ্রেমলিনকে ব্যাপকভাবে তুলে ধরা হয়েছে। সহজ ভাষায় বলতে গেলে, গ্রেমলিন হলো একপ্রকার কাল্পনিক, ছোটখাটো, দুষ্টু প্রকৃতির প্রাণী, যাদের কাজ হলো যন্ত্রপাতির ক্ষতি করা বা গোলমাল তৈরি করা। বিশ শতকের দিকে মূলত উড়োজাহাজ শিল্পকে কেন্দ্র করে এই কল্পকথা তৈরি হয়।
পুতিনের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার হলো ক্ষমতায় টিকে থাকা। যুদ্ধ থেকে বের হয়ে আসার নিজস্ব ঝুঁকি আছে। বিশেষ করে যুদ্ধ শেষ হয়ে যাওয়ার পর লাখ লাখ সেনা ঘরে ফিরবে, তাঁদের ভরণ-পোষণ এবং বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে ক্ষমতার লড়াই তাঁকে বিচলিত করতে পারে।
ট্রাম্পের কূটনীতি নীরবে যুদ্ধের বিরোধিতা করা মধ্যপন্থীদের নতুন আশার সঞ্চার করেছে। তাঁদের রাজনৈতিক ক্ষমতা নেই, তবে এই ‘শান্তির সুবিধাভোগীরা’, যারা মূলত বেসরকারি ব্যবসায়ী, অর্থনীতিবিদ এবং প্রযুক্তিবিদ—আশা করছেন যে, ট্রাম্প ও তাঁর দল রাশিয়ার ভবিষ্যৎ পথ পরিবর্তন করতে পারবেন। পুতিনের মুখোমুখি হতে অক্ষম এই গোষ্ঠী ট্রাম্পকে বোঝাতে চায় যে, পশ্চিমাদের সঙ্গে রাশিয়ার সংঘাত প্রশমিত করা তাঁর নিরাপত্তার জন্য ক্ষতিকর হবে না; বরং তা আরও সুসংহত করবে।
অন্যদিকে আছে ‘যুদ্ধের সুবিধাভোগী গোষ্ঠী’। যদি সংঘাত পুতিন শাসনের ভিত্তি হয়, তবে সহিংসতা ও দুর্নীতি এর টিকে থাকার অন্যান্য উপাদান। অলিগার্কদের বিভিন্ন গোষ্ঠী নিষেধাজ্ঞার ফলে সৃষ্ট গ্রে মার্কেট বা পর্দার অন্তরালের বাজারে জ্বালানি তেল ও অন্যান্য পণ্য রপ্তানির কোটা থেকে লাভবান হয়। এক ধনকুবের রাশিয়ার এই বর্তমান অবস্থাকে ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর (আইআরজিসি) চোরাচালান প্রকল্পগুলোর সঙ্গে তুলনা করেছেন। রুশ অলিগার্করা তাদের লাভজনক ব্যবসা এত সহজে ছাড়বে না। নিরাপত্তা সংস্থাগুলো একদিকে এমন ‘ফিফথ কলাম’ বা ‘পঞ্চম স্তম্ভের’ সন্ধান করবে যারা শান্তির পক্ষে, আবার অন্যদিকে চরমপন্থী জাতীয়তাবাদীদেরও খুঁজবে, যারা যেকোনো সমঝোতাকে বিশ্বাসঘাতকতা হিসেবে দেখবে।
ট্রাম্প ‘হত্যাযজ্ঞ বন্ধ’ করতে চান এবং এ বিষয়ে তিনি সঠিক অবস্থানেই আছেন। যদি যুদ্ধবিরতি ইউক্রেন পুনর্গঠনের সুযোগ দেয়, ইউরোপের প্রতিরক্ষা ব্যয় বাড়ায় এবং রাশিয়ার দুর্বল অর্থনীতির ওপর পশ্চিমা কিছু নিষেধাজ্ঞা বজায় থাকে, তবে তা পুতিনের উচ্চাকাঙ্ক্ষাকে ব্যর্থ করলেও করতেও পারে। তবে পুতিন ‘বাজি ধরছেন’ যে, তিনি ইউক্রেনের চেয়ে দীর্ঘ সময় লড়াই চালিয়ে যেতে পারবেন, অথবা তিনি এমন একটি সমঝোতা ট্রাম্পের মাধ্যমে আদায় করতে পারবেন, যা রাশিয়াকে বিশ্ব অর্থনীতিতে পুনরায় যুক্ত হওয়ার সুযোগ দেবে, ইউক্রেনকে বিভক্ত ও আধা–ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করবে এবং ইউরোপকে এতটাই হতবাক করে দেবে যে, তারা নিজেদের রক্ষা করার সক্ষমতা হারাবে!
অনুবাদ করেছেন আব্দুর রহমান

রাশিয়ার ঢোল পেটানো আর কতিপয় ইউরোপীয়র হতাশা দেখে মনে হতে পারে, ভ্লাদিমির পুতিন কখনোই ইউক্রেন যুদ্ধ জয়ের এত কাছে ছিলেন না! কিন্তু আক্রমণের তিন বছর পরেও, ‘জয়’ বলতে তিনি আসলে কী বোঝাতে চান, তা স্পষ্ট নয়। তাঁর লক্ষ্যগুলোও অস্পষ্ট।
ইউক্রেনে পুতিনের ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ পরিকল্পনা করা হয়েছিল গোপনে। রুশ জনগণ তো বটেই, এমনকি সরকারের লোকেরাও অন্ধকারে ছিল! পুতিন রুশ সার্বভৌমত্ব রক্ষার কথা বলেছেন সে সময়। কিন্তু পরবর্তী পরিস্থিতি এমন কিছু বিষয়ের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে, যা তাঁর নিয়ন্ত্রণের বাইরে। যদিও গত ১৮ ফেব্রুয়ারি সৌদি আরবে ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে পুতিন প্রশাসনের আনুষ্ঠানিকভাবে আলোচনা শুরু হয়েছে। কিন্তু এরপরও ইউক্রেনের রাজনৈতিক বাস্তবতা, ইউরোপের পুনঃসশস্ত্রীকরণ প্রচেষ্টা এবং সর্বোপরি ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর পরিকল্পনায় জল ঢেলে দিতে পারে।
ইউক্রেনে যুদ্ধ বন্ধে ট্রাম্পের কোনো সুস্পষ্ট পরিকল্পনা নেই, অন্তত এখন পর্যন্ত তেমন কিছু প্রকাশ পায়নি। তবে তাঁর হাতে ইউক্রেন ইস্যুতে গ্রহণ করার মতো যথেষ্ট বিকল্প আছে। তিনি চাইলেই ইউক্রেনের জন্য সহায়তা সম্পূর্ণ বন্ধ করে দিতে পারেন, সেই সঙ্গে রাশিয়ার ওপরও নিষেধাজ্ঞা বাড়াতে পারেন। কিন্তু সম্ভবত সেসব কিছুই ঘটবে না। কারণ, আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ও পুতিনের মধ্যকার কূটনৈতিক কৌশলের নতুন পর্বের মহরত হলো রিয়াদে। রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ করার তিন বছর পর এই প্রথম আমেরিকা ও রাশিয়ার কর্মকর্তাদের মুখোমুখি বৈঠক হলো। তাঁরা ইউক্রেন এবং ‘পারস্পরিক ভূরাজনৈতিক স্বার্থ’ নিয়ে ধারাবাহিক আলোচনা শুরু করতে রাজি হয়েছেন। তবে আসলে কী আলোচিত হবে তা অস্পষ্ট। এ ছাড়া, ট্রাম্প–পুতিন বৈঠক আয়োজনের প্রস্তুতিও শুরু হবে শিগগির, যদিও এখনো কোনো তারিখ নির্ধারণ করা হয়নি।
এক মার্কিন কর্মকর্তা বলেছেন, এ ধরনের উন্মুক্ত ও অস্পষ্ট আলোচনা পুতিনের জন্য বেশ সুবিধাজনক। ট্রাম্প যেখানে এই আলোচনাকে দেখেন ‘অযৌক্তিক’ যুদ্ধের ইতি টানার উপায় হিসেবে, সেখানে পুতিন এগুলোকে সম্ভাব্য বৃহত্তর সংঘাতের একটি পর্যায় হিসেবে দেখছেন। রুশ নেতা হিসাব কষে দেখছেন, ইউক্রেন বা ন্যাটো জোটের চেয়ে তাঁর ধৈর্য ও সক্ষমতা বেশি। পোকার খেলোয়াড়ের মতো, পুতিন প্রয়োজনের সময় আত্মবিশ্বাস ও শক্তিমত্তার সঙ্গে কাজ করতে দক্ষ। কিন্তু বাস্তবে, তাঁর হাতে থাকা তাস ঠিক ততটা শক্তিশালী নয়, যতটা তিনি প্রতিপক্ষকে বিশ্বাস করাতে চান। অন্যদিকে, যুদ্ধের অবসান তাঁর জন্য নিজ দেশে নতুন জটিলতা তৈরি করতে পারে।
রাশিয়ার আলোচনার অবস্থান মূল্যায়নের যেকোনো প্রচেষ্টা অবশ্যই সামরিক পরিস্থিতি থেকে শুরু করা উচিত। দেশটির সেনাবাহিনী ইউক্রেনে খুব একটা ভালো দক্ষতা দেখাতে পারছে না। তাদের অগ্রগতি অত্যন্ত ধীর। গত বছরের জুলাই থেকে তারা পোকরোভস্ক শহর দখল করতে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু দখল করতে পারেনি। তাদের ক্ষয়ক্ষতিও হয়েছে ব্যাপক। রাশিয়ার বেশির ভাগ সামরিক অগ্রগতি যুদ্ধের প্রথম কয়েক সপ্তাহেই ঘটেছে। ২০২২ সালের এপ্রিলে ইউক্রেনের উত্তর থেকে রাশিয়ার পশ্চাদপসরণের পর, তারা ইউক্রেনের ১৯ দশমিক ৬ শতাংশ ভূখণ্ড নিয়ন্ত্রণ করছিল। সে সময় তাদের হতাহতের সংখ্যা ছিল আনুমানিক ২০ হাজার। বর্তমানে রাশিয়া ইউক্রেনের ১৯ দশমিক ২ শতাংশ এলাকা নিয়ন্ত্রণে রেখেছে এবং ব্রিটিশ গোয়েন্দা মূল্যায়ন অনুসারে, তাদের মোট হতাহতের সংখ্যা ৮ লাখে পৌঁছেছে। এক পশ্চিমা কর্মকর্তা বলেন, ‘দুই দেশের সেনাবাহিনী একে অপরের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে কারণ তারা থামতে পারছে না, কোনো পক্ষই আসলে চূড়ান্ত পরিণতি নির্ধারক জয় অর্জনের আশা করছে না।’
কেবল সেনা হতাহতের ঘটনাই নয়, রাশিয়ার সামরিক সরঞ্জামের ক্ষয়ক্ষতিও অবিশ্বাস্য মাত্রায় পৌঁছেছে। কয়েক দশক ধরে গড়ে তোলা সোভিয়েত আমলের সাঁজোয়া বহরের অবস্থাই তার প্রমাণ। মজুত থাকা ৭ হাজার ৩০০ ট্যাংকের অর্ধেকের বেশি ধ্বংস হয়ে গেছে। অবশিষ্ট যেগুলো আছে, তার মধ্যে মাত্র ৫০০টি দ্রুত সংস্কারের উপযোগী। এপ্রিলের মধ্যেই রাশিয়ার টি–৮০ ট্যাংকের মজুত শেষ হয়ে যেতে পারে। গত বছর রাশিয়া যতগুলো আর্টিলারি বা গোলন্দাজ ইউনিট হারিয়েছে, তার পরিমাণ আগের দুই বছরের সম্মিলিত ক্ষতির দ্বিগুণ। পেশাদার চুক্তিভিত্তিক সেনা নিয়োগের খরচ বাড়ছে, আর সাধারণ জনগণের ব্যাপক মোবিলাইজেশন (যুদ্ধের ময়দানে নামানো) রাজনৈতিকভাবে ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। জনমত জরিপ স্পষ্ট দেখাচ্ছে, রাশিয়ার জনগণ যুদ্ধের অবসান চায়।
রাশিয়ার অর্থনীতি নিষেধাজ্ঞার ধকল সামলে নিতে পেরেছে মূলত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দক্ষতা, উচ্চ পণ্যমূল্য এবং রাজস্ব প্রণোদনার কারণে। তবে উৎপাদনশীল খাত থেকে সামরিক খাতে সম্পদ স্থানান্তরের ফলে মূল্যস্ফীতি দুই অঙ্কের ঘরে পৌঁছে গেছে। সুদহার বর্তমানে ২১ শতাংশ, যা দুই দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ। শ্রমবাজারে দীর্ঘস্থায়ী ঘাটতি রয়ে গেছে। অর্থনৈতিক পরিসংখ্যানের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে, কারণ দেশটির পরিসংখ্যান কর্তৃপক্ষ নিয়মিত প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস সংশোধন করে থাকে।
তবে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের ফাঁস করা রাশিয়ার সেন্ট্রাল ব্যাংক ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের একটি প্রতিবেদনে সতর্ক করে বলা হয়েছে যে, মূল্যস্ফীতি কমার আগেই রাশিয়া মন্দার মুখে পড়তে পারে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক উপপ্রধান ওলেগ ভিউগিন বলেছেন, সরকারকে খুব দ্রুত সামরিক ব্যয় হ্রাস করা অথবা লাগামহীন মূল্যস্ফীতির মধ্যে যেকোনো একটি বেছে নিতে হবে।
সার্বভৌম সম্পদ তহবিল ক্রমাগত ফুরিয়ে যাচ্ছে। সাবেক অর্থমন্ত্রী মিখাইল জাদোরনভের মতে, এই তহবিলের তারল্য মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৭ দশমিক ৪ শতাংশ থেকে কমে ২ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে। গত বছর রাশিয়ার রপ্তানি আয় ছিল ৪১৭ বিলিয়ন ডলার। কিন্তু নিষেধাজ্ঞা এবং বিশ্ব বাজারে নিম্নমুখী পণ্যমূল্যের চাপের কারণে বেশ চাপে আছে। ডিসেম্বরে এটি বছরওয়ারি হিসাবে আগের বছরের তুলনায় ২০ শতাংশ কমেছে। রুশ থিংক ট্যাংক ‘রে–রাশিয়া’—এর গবেষক কিরিল রোগভ যুক্তি দিয়েছেন, নিষেধাজ্ঞার কারণে রাশিয়ার বড় রপ্তানি খাত ইস্পাত ও কৃষিপণ্যের ধীর গতিতে দরপতন রাশিয়ার আগ্রাসনের সক্ষমতাকে সীমিত করবে।
রাশিয়ার এ ধরনের দুর্বলতা থাকার বিষয়টি পশ্চিমাদের মধ্যে অনেককে বিশ্বাস করাচ্ছে যে, আমেরিকা ক্রেমলিনকে যুদ্ধ বন্ধে যে ছাড় দিতে যাচ্ছে বা চাচ্ছে তা আসলে খুব একটা ভালো নয়। যদিও পশ্চিমারা ইউক্রেনকে নিশ্চিত নিরাপত্তার গ্যারান্টি দিতে সক্ষম নাও হতে পারে, তবে তারা রাশিয়াকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে নিষেধাজ্ঞা বহাল রাখতে পারে বলে যুক্তি দিচ্ছেন রোগভ।
তবে ট্রাম্পের লক্ষ্য দীর্ঘ সময় ধরে রাশিয়াকে দমিয়ে রাখা বা প্রতিহত করা নয়, বরং তিনি দ্রুত যুদ্ধের সমাপ্তির প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে মনোযোগী। এক মার্কিন কর্মকর্তা বলেন, ‘শেষ পর্যন্ত আমরা পুতিনকে সেই অবস্থানে নিয়ে এসেছি, যেখানে তাঁকে দেখতে চেয়েছিলাম গত তিন বছর ধরে। এখন যদি আমরা তাঁকে পরাজয়ের মুখ থেকে জয়ের সুযোগ করে দিই, তাহলে সেটা ভয়াবহ লজ্জার বিষয় হবে।’
পুতিন বিশ্বাস করেন, ট্রাম্প কেবল অস্থির প্রকৃতিরই নন, তাঁকে সহজে প্রভাবিতও করা যায়। প্রশংসা ও তাৎক্ষণিক সুবিধা দিয়ে তিনি আমেরিকার প্রেসিডেন্টকে আকৃষ্ট করেছেন। গত ১১ ফেব্রুয়ারি পুতিন ২০২১ সাল থেকে রাশিয়ায় বন্দী থাকা মার্কিন নাগরিক মার্ক ফোগেলকে মুক্তি দেন। তবে পুতিনের মৌলিক দাবি অপরিবর্তিত। তাঁর এসব দাবির মধ্যে—একটি নিরপেক্ষ ইউক্রেন, যার সামরিক বাহিনী আকার ও সরঞ্জামের দিক থেকে সীমিত থাকবে এবং যেখানে পশ্চিমা সেনাদের উপস্থিতি থাকবে না। তিনি চান, ক্রিমিয়া ও অন্য চারটি অধিকৃত ইউক্রেনীয় প্রদেশকে রাশিয়ার অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হোক।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, পুতিন ২০২৪ সালের জুনে ইউক্রেন সংকট নিরসনে যে দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেন তার মূল কথা হলো—তিনি এমন কোনো সাময়িক যুদ্ধবিরতি বা অস্ত্রবিরতি চান না, যা কার্যত রাশিয়ার ওপর পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞাগুলো বহাল রাখবে এবং ইউক্রেনকে পুনরায় অস্ত্রসজ্জিত হওয়ার সুযোগ দেবে। বরং, পুতিন একটি ‘চূড়ান্ত সমাধান’ চান, যার মাধ্যমে রাশিয়ার ওপর আরোপিত পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হবে এবং মস্কো সামরিক শক্তি পুনর্গঠনের সুযোগ পাবে।
তবে বাস্তবতা হলো, রণক্ষেত্রের যুদ্ধ বন্ধ হলেও, পুতিন ইউরোপকে দুর্বল করার এবং রাশিয়ার প্রভাব বলয় পুনর্গঠনের চেষ্টা চালিয়ে যাবেন। ন্যাটোর ইউরোপ চ্যাপ্টারে সুপ্রিম অ্যালাইড কমান্ডারের উপদেষ্টা স্টিভ কোভিংটনের মতে, পুতিনের লক্ষ্য হলো ইউক্রেনকে গুঁড়িয়ে দেওয়া এবং ১৯৪৫—পরবর্তী মার্কিন–নেতৃত্বাধীন বিশ্বব্যবস্থাকে ধ্বংস করা।
গত বছর নিজ দেশের কূটনীতিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় পুতিন বলেছিলেন, ‘সমগ্র ইউরো–আটলান্টিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা আমাদের চোখের সামনে ভেঙে পড়ছে। ইউরোপ বৈশ্বিক অর্থনৈতিক বিকাশে একঘরে হয়ে পড়ছে, বিশৃঙ্খলার মধ্যে ডুবে যাচ্ছে...এবং আন্তর্জাতিক সক্ষমতা ও সাংস্কৃতিক পরিচয় হারাচ্ছে।’
পুতিন নিশ্চিতভাবেই খুশি হয়েছেন, যখন গত ১৫ ফেব্রুয়ারি মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনে আমেরিকার ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি. ভ্যান্স একই মন্তব্যের প্রতিধ্বনি করেছেন। ২০০৭ সালে এই একই সম্মেলনে পুতিন প্রথমবারের মতো ঘোষণা করেছিলেন, তিনি পশ্চিমাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অবতীর্ণ হবেন। ক্রেমলিন অবশ্যই আশা করছে যে, রাশিয়া ঘেঁষা ডানপন্থী রাজনৈতিক দলগুলো—যাদের প্রতি ভ্যান্সেরও সমর্থন আছে—ইউরোপের নির্বাচনে শক্তিশালী অবস্থান গড়ে তুলবে।
ক্রেমলিনের সামনে গ্রেমলিন
পশ্চিমা দুনিয়ায় ‘গ্রেমলিন’ মূলত লোককথায় প্রচলিত একটি দুষ্টু ও রহস্যময় প্রাণী। আধুনিক সংস্কৃতিতে, বিশেষ করে সিনেমা ও সাহিত্যে গ্রেমলিনকে ব্যাপকভাবে তুলে ধরা হয়েছে। সহজ ভাষায় বলতে গেলে, গ্রেমলিন হলো একপ্রকার কাল্পনিক, ছোটখাটো, দুষ্টু প্রকৃতির প্রাণী, যাদের কাজ হলো যন্ত্রপাতির ক্ষতি করা বা গোলমাল তৈরি করা। বিশ শতকের দিকে মূলত উড়োজাহাজ শিল্পকে কেন্দ্র করে এই কল্পকথা তৈরি হয়।
পুতিনের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার হলো ক্ষমতায় টিকে থাকা। যুদ্ধ থেকে বের হয়ে আসার নিজস্ব ঝুঁকি আছে। বিশেষ করে যুদ্ধ শেষ হয়ে যাওয়ার পর লাখ লাখ সেনা ঘরে ফিরবে, তাঁদের ভরণ-পোষণ এবং বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে ক্ষমতার লড়াই তাঁকে বিচলিত করতে পারে।
ট্রাম্পের কূটনীতি নীরবে যুদ্ধের বিরোধিতা করা মধ্যপন্থীদের নতুন আশার সঞ্চার করেছে। তাঁদের রাজনৈতিক ক্ষমতা নেই, তবে এই ‘শান্তির সুবিধাভোগীরা’, যারা মূলত বেসরকারি ব্যবসায়ী, অর্থনীতিবিদ এবং প্রযুক্তিবিদ—আশা করছেন যে, ট্রাম্প ও তাঁর দল রাশিয়ার ভবিষ্যৎ পথ পরিবর্তন করতে পারবেন। পুতিনের মুখোমুখি হতে অক্ষম এই গোষ্ঠী ট্রাম্পকে বোঝাতে চায় যে, পশ্চিমাদের সঙ্গে রাশিয়ার সংঘাত প্রশমিত করা তাঁর নিরাপত্তার জন্য ক্ষতিকর হবে না; বরং তা আরও সুসংহত করবে।
অন্যদিকে আছে ‘যুদ্ধের সুবিধাভোগী গোষ্ঠী’। যদি সংঘাত পুতিন শাসনের ভিত্তি হয়, তবে সহিংসতা ও দুর্নীতি এর টিকে থাকার অন্যান্য উপাদান। অলিগার্কদের বিভিন্ন গোষ্ঠী নিষেধাজ্ঞার ফলে সৃষ্ট গ্রে মার্কেট বা পর্দার অন্তরালের বাজারে জ্বালানি তেল ও অন্যান্য পণ্য রপ্তানির কোটা থেকে লাভবান হয়। এক ধনকুবের রাশিয়ার এই বর্তমান অবস্থাকে ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর (আইআরজিসি) চোরাচালান প্রকল্পগুলোর সঙ্গে তুলনা করেছেন। রুশ অলিগার্করা তাদের লাভজনক ব্যবসা এত সহজে ছাড়বে না। নিরাপত্তা সংস্থাগুলো একদিকে এমন ‘ফিফথ কলাম’ বা ‘পঞ্চম স্তম্ভের’ সন্ধান করবে যারা শান্তির পক্ষে, আবার অন্যদিকে চরমপন্থী জাতীয়তাবাদীদেরও খুঁজবে, যারা যেকোনো সমঝোতাকে বিশ্বাসঘাতকতা হিসেবে দেখবে।
ট্রাম্প ‘হত্যাযজ্ঞ বন্ধ’ করতে চান এবং এ বিষয়ে তিনি সঠিক অবস্থানেই আছেন। যদি যুদ্ধবিরতি ইউক্রেন পুনর্গঠনের সুযোগ দেয়, ইউরোপের প্রতিরক্ষা ব্যয় বাড়ায় এবং রাশিয়ার দুর্বল অর্থনীতির ওপর পশ্চিমা কিছু নিষেধাজ্ঞা বজায় থাকে, তবে তা পুতিনের উচ্চাকাঙ্ক্ষাকে ব্যর্থ করলেও করতেও পারে। তবে পুতিন ‘বাজি ধরছেন’ যে, তিনি ইউক্রেনের চেয়ে দীর্ঘ সময় লড়াই চালিয়ে যেতে পারবেন, অথবা তিনি এমন একটি সমঝোতা ট্রাম্পের মাধ্যমে আদায় করতে পারবেন, যা রাশিয়াকে বিশ্ব অর্থনীতিতে পুনরায় যুক্ত হওয়ার সুযোগ দেবে, ইউক্রেনকে বিভক্ত ও আধা–ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করবে এবং ইউরোপকে এতটাই হতবাক করে দেবে যে, তারা নিজেদের রক্ষা করার সক্ষমতা হারাবে!
অনুবাদ করেছেন আব্দুর রহমান

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতদের মধ্যে ইউক্রেন শান্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনা হলেও প্রকাশ্যে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইউরি উশাকভ, এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন যে অমীমাংসিত ‘আঞ্চলিক সমস্যাই’ মূল বাধা। আর এই অঞ্চল আর কোনোটিই নয়, দোনেৎস্ক।
২১ ঘণ্টা আগে
বিশ্বজুড়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন উঠে আসছে—‘যদি বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ সীমিত করা হয়, অথবা এই শ্রেণিটিকেই সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়, তবে কী ঘটবে?’ পশ্চিমা দেশগুলোতে চরম ধনী বা বিলিয়নিয়ারদের সংখ্যা ও প্রভাব বাড়তে থাকায় এখন এই প্রশ্ন আরও জোরালো হয়েছে।
১ দিন আগে
জাপানের ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর গত অক্টোবরে দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন সানায়ে তাকাইচি। এরপরই তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত হন জাপানের নতুন ‘আয়রন লেডি’ বা লৌহমানবী’ হিসেবে।
২ দিন আগে
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠককে ঘিরে দিল্লিতে শুরু হয়েছে কূটনৈতিক প্রস্তুতি। চলমান ইউক্রেন যুদ্ধ, যুক্তরাষ্ট্রের চাপ এবং জ্বালানির বাজারে অস্থিরতার মধ্যেই এই শীর্ষ সম্মেলন হতে যাচ্ছে। অর্থনীতি, প্রতিরক্ষা এবং জ্বালানি—এই তিনটি খাত আলোচনার...
২ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতদের মধ্যে ইউক্রেন শান্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনা হলেও প্রকাশ্যে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইউরি উশাকভ, এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন যে অমীমাংসিত ‘আঞ্চলিক সমস্যাই’ মূল বাধা। আর এই অঞ্চল আর কোনোটিই নয়, দোনেৎস্ক।
উশাকভ মূলত ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় দোনেৎস্কের সম্পূর্ণ এলাকার ওপর রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণ দাবির কথাই বলেছিলেন। পুতিন ইউক্রেনে হাজার হাজার সৈন্য পাঠানোর প্রায় ৪ বছর পরও এবং দোনেৎস্কে রাশিয়া সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদী বিদ্রোহের এক দশকেরও বেশি সময় পর অঞ্চলটির কিছু অংশ এখনো ইউক্রেনের হাতে আছে।
প্রায় সব দেশই দোনেৎস্ককে ইউক্রেনের অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। কিন্তু এটি ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের চারটি অঞ্চলের মধ্যে একটি, যা মস্কো ২০২২ সালে একটি গণভোটের পর সংযুক্ত করার কথা ঘোষণা করে। কিয়েভ ও পশ্চিমা দেশগুলো সেই গণভোটকে ‘প্রহসন’ বলে বাতিল করে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ফক্স নিউজকে বলেছিলেন, যুদ্ধটি এখন দোনেৎস্কের সেই ২০ শতাংশ বা ৫ হাজার বর্গকিলোমিটারের এলাকা নিয়ে, যা রাশিয়া নিয়ন্ত্রণ করে না কিন্তু চায়।
পুতিন ২০২২ সালে ইউক্রেনে সৈন্য পাঠানোর সময় বলেছিলেন, তাঁর লক্ষ্য হলো ‘গত আট বছর ধরে যারা ভয়ভীতি ও গণহত্যার শিকার হয়েছেন...সেই মানুষগুলোকে রক্ষা করা।’ ইউক্রেন এবং তার মিত্ররা বলেছিল, পুতিনের এই দাবি ঔপনিবেশিক ধাঁচের এবং এলাকা দখলের জন্য একটি মিথ্যা অজুহাত মাত্র।
পুতিনের এই দাবি মূলত দোনেৎস্ক এবং লুহানস্ক অঞ্চলে রাশিয়া সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিরুদ্ধে ইউক্রেনের লড়াইয়ের দিকে ইঙ্গিত করে, যারা ২০১৪ সালে ইউক্রেনীয় সরকারি নিয়ন্ত্রণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে কিছু এলাকা দখল করেছিল। পূর্ব ইউক্রেনে এর পরের সংঘর্ষে উভয় পক্ষই শহর ও বেসামরিক নাগরিকদের ওপর গোলাবর্ষণের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করেছিল। মস্কো এই অঞ্চলের বিশাল রুশভাষী জনসংখ্যাকে উদ্ধৃত করে বলেছিল যে,২০২২ সালে হস্তক্ষেপ করা তাদের নৈতিক কর্তব্য।
কিয়েভ বলেছিল, ২০১৪ সালে ইউক্রেনের আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষায় শক্তি দিয়ে জবাব দেওয়া ছাড়া তাদের আর কোনো উপায় ছিল না এবং তারাও বিচ্ছিন্নতাবাদী বাহিনীর বিরুদ্ধে শহর ও বেসামরিক নাগরিকদের ওপর গোলাবর্ষণের অভিযোগ এনেছিল। জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৪ সাল থেকে ২০২২ সালের শুরু পর্যন্ত ইউক্রেনীয় সরকারি বাহিনী এবং বিচ্ছিন্নতাবাদীদের মধ্যে সংঘাতে উভয় পক্ষে ৩ হাজার ১০৬ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত এবং ৯ হাজার বেসামরিক নাগরিক আহত হয়েছিলেন।
দোনেৎস্কের বাকি যে অংশটি রাশিয়া চায়, তার মধ্যে রয়েছে স্লোভিয়ানস্ক এবং ক্রামাতোরস্ক—দুটি ‘দুর্গনগরী’ যা ২০১৪ সাল থেকে ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করে আসছে। এই শহরগুলো ইউক্রেনের বাকি অঞ্চল রক্ষার জন্য কিয়েভের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ দোনেৎস্কের পশ্চিমের ভূমি অনেকটাই সমতল এবং বিশাল খোলা মাঠ; যা রাশিয়াকে দোনেৎস্কের বাইরে অগ্রসর হতে এবং দিনিপ্রো নদীর পূর্ব তীর পর্যন্ত এলাকা দখল করার পথ সহজ করে দেবে।
শহরগুলো পরিখা, ট্যাংক-বিধ্বংসী বাধা, বাংকার এবং মাইনক্ষেত্রসহ অত্যন্ত সুরক্ষিত প্রতিরক্ষা লাইনের অংশ। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, গণভোট ছাড়া দোনেৎস্কের বাকি অংশ রাশিয়ার হাতে তুলে দেওয়া অবৈধ হবে এবং তা ভবিষ্যতে ইউক্রেনের গভীরে আক্রমণের জন্য রাশিয়াকে একটি পথ খুলে দেবে।
কিয়েভের আশঙ্কা, যদি তারা দোনেৎস্কের বাকি অংশ ছেড়ে দেয়, তবে রাশিয়া আবার অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হবে এবং একসময় দোনেৎস্ক ব্যবহার করে পশ্চিম দিকে আক্রমণ চালাবে।
উভয় পক্ষই দোনেৎস্ককে কেন্দ্র করে যুদ্ধে ভয়াবহ ক্ষয়ক্ষতির মুখোমুখি হয়েছে এবং প্রচুর অর্থ ও সরঞ্জাম ব্যয় করেছে। এর মধ্যে বাখমুত শহরের লড়াইও রয়েছে। যেখানে রাশিয়া হাজার হাজার দণ্ডিত অপরাধীকে ভাড়াটে সৈন্যে পরিণত করে রণক্ষেত্রে নামিয়েছিল। এ কারণে, দোনেৎস্ক উভয় দেশের জনমানসে আরও বেশি গুরুত্ব পেয়েছে। ফলে কারও পক্ষে তাদের অবস্থান পরিবর্তন করা কঠিন।
ইউক্রেন চায় না যে, রাশিয়া যুদ্ধক্ষেত্রে জয় করতে ব্যর্থ হওয়া ভূখণ্ডকে উপহার হিসেবে পাক এবং জেলেনস্কি বলেছেন, যে যুদ্ধ রাশিয়া শুরু করেছে, তার জন্য তাদের পুরস্কৃত করা উচিত নয়। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ইনস্টিটিউট ফর দ্য স্টাডি অব ওয়ার অক্টোবর মাসে বলেছিল, রাশিয়ার অগ্রগতির হার দেখে মনে হয় না যে তারা খুব শিগগিরই দোনেৎস্কের বাকি অংশ দখল করতে চলেছে। তবে ‘রাশিয়ার অগ্রগতির একটি অপরিবর্তনীয় হার ধরে নিলে’ তারা ২০২৭ সালের আগস্টের মধ্যে তা নিতে পারে।
রাশিয়ার কমান্ডাররা অবশ্য আরও বেশি আশাবাদী। জেনারেল স্টাফের প্রধান ভ্যালেরি গেরাসিমভ রোববার পুতিনকে বলেছেন, মস্কোর বাহিনী পুরো ফ্রন্ট লাইন বরাবর অগ্রসর হচ্ছে এবং দনবাসের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার জন্য কাজ করছে।
দোনেৎস্ক বন্দর, রেলপথ এবং অন্যান্য ভারী শিল্পের কেন্দ্র। এটি একসময় ইউক্রেনের কয়লা, পরিশোধিত ইস্পাত, কোক, ঢালাই লোহা এবং ইস্পাত উৎপাদনের অর্ধেকেরও বেশি সরবরাহ করত, তবে যুদ্ধের কারণে অনেক খনি ও কারখানা ধ্বংস হয়ে গেছে। এ ছাড়া, দোনেৎস্কে বিরল মৃত্তিকা, টাইটানিয়াম এবং জিরকোনিয়াম রয়েছে—যা এটিকে নিয়ন্ত্রণকারী পক্ষের জন্য আয়ের উৎস।
দোনেৎস্কের ভাগ্য পুতিন এবং জেলেনস্কি উভয়ের ঐতিহাসিক উত্তরাধিকারকে প্রভাবিত করতে পারে। পুতিন নিজেকে জাতিগত রুশদের রক্ষক হিসেবে তুলে ধরেছেন, তারা যেখানেই থাকুক না কেন। পুরো দোনেৎস্ককে সুরক্ষিত করা এই বক্তব্যের মূল কেন্দ্রবিন্দু। জেলেনস্কি ২০১৯ সালে পূর্ব ইউক্রেনের যুদ্ধ অবসান ঘটানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন। ২০২২ সাল থেকে তিনি অনেক বড়, বৈরী প্রতিবেশীর মুখে অস্ত্র এবং সংখ্যায় কম ইউক্রেনের এক দৃঢ় রক্ষক হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছেন।
লড়াই না করে দোনেৎস্ক ছেড়ে দেওয়া—যেখানে অন্তত আড়াই লাখ ইউক্রেনীয় বাস করে—ইউক্রেনীয়দের কাছে বিশ্বাসঘাতকতা হিসেবে দেখা হতে পারে, যাদের অনেকেই যুদ্ধক্ষেত্রে স্বজন হারিয়েছেন। কিয়েভ ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব সোসিওলজির সাম্প্রতিক এক জরিপ অনুসারে, ইউক্রেনীয়দের একটি সংকীর্ণ সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ এখনো আঞ্চলিক ছাড়ের বিরোধিতা করে।
জেলেনস্কিসহ ইউক্রেনের কর্মকর্তারা যেকোনো শান্তি চুক্তির অধীনে কিয়েভের নিয়ন্ত্রণে থাকা ভূমি ছাড়ার সম্ভাবনা প্রত্যাখ্যান করেছেন। জেলেনস্কি বলেন, তাঁর ভূখণ্ড ছেড়ে দেওয়ার কোনো ম্যান্ডেট নেই এবং রাষ্ট্রের ভূমি ব্যক্তিগত সম্পত্তির মতো কেনা-বেচা করা যায় না। ইউক্রেনের সংবিধান অনুসারে, আঞ্চলিক পরিবর্তন অবশ্যই একটি গণভোটের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করতে হবে, যা ইউক্রেনের অন্তত দুই-তৃতীয়াংশ অর্থাৎ, অন্তত ৩০ লাখ ইউক্রেনীয় ভোটারের স্বাক্ষর থাকলে আয়োজন করা যেতে পারে।
তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই গণভোটের বিষয়টির সমালোচনা করেছেন এবং তিনি বলেছিলেন, ‘কিছু ভূমি অদল-বদল হবে।’ এখন ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের আলোচনা মূলত এই দোনেৎস্কের নিয়ন্ত্রণ কার হাতে যাবে সেটাই নিয়েই থমকে আছে।
রয়টার্স থেকে পরিমার্জিত

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতদের মধ্যে ইউক্রেন শান্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনা হলেও প্রকাশ্যে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইউরি উশাকভ, এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন যে অমীমাংসিত ‘আঞ্চলিক সমস্যাই’ মূল বাধা। আর এই অঞ্চল আর কোনোটিই নয়, দোনেৎস্ক।
উশাকভ মূলত ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় দোনেৎস্কের সম্পূর্ণ এলাকার ওপর রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণ দাবির কথাই বলেছিলেন। পুতিন ইউক্রেনে হাজার হাজার সৈন্য পাঠানোর প্রায় ৪ বছর পরও এবং দোনেৎস্কে রাশিয়া সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদী বিদ্রোহের এক দশকেরও বেশি সময় পর অঞ্চলটির কিছু অংশ এখনো ইউক্রেনের হাতে আছে।
প্রায় সব দেশই দোনেৎস্ককে ইউক্রেনের অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। কিন্তু এটি ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের চারটি অঞ্চলের মধ্যে একটি, যা মস্কো ২০২২ সালে একটি গণভোটের পর সংযুক্ত করার কথা ঘোষণা করে। কিয়েভ ও পশ্চিমা দেশগুলো সেই গণভোটকে ‘প্রহসন’ বলে বাতিল করে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ফক্স নিউজকে বলেছিলেন, যুদ্ধটি এখন দোনেৎস্কের সেই ২০ শতাংশ বা ৫ হাজার বর্গকিলোমিটারের এলাকা নিয়ে, যা রাশিয়া নিয়ন্ত্রণ করে না কিন্তু চায়।
পুতিন ২০২২ সালে ইউক্রেনে সৈন্য পাঠানোর সময় বলেছিলেন, তাঁর লক্ষ্য হলো ‘গত আট বছর ধরে যারা ভয়ভীতি ও গণহত্যার শিকার হয়েছেন...সেই মানুষগুলোকে রক্ষা করা।’ ইউক্রেন এবং তার মিত্ররা বলেছিল, পুতিনের এই দাবি ঔপনিবেশিক ধাঁচের এবং এলাকা দখলের জন্য একটি মিথ্যা অজুহাত মাত্র।
পুতিনের এই দাবি মূলত দোনেৎস্ক এবং লুহানস্ক অঞ্চলে রাশিয়া সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিরুদ্ধে ইউক্রেনের লড়াইয়ের দিকে ইঙ্গিত করে, যারা ২০১৪ সালে ইউক্রেনীয় সরকারি নিয়ন্ত্রণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে কিছু এলাকা দখল করেছিল। পূর্ব ইউক্রেনে এর পরের সংঘর্ষে উভয় পক্ষই শহর ও বেসামরিক নাগরিকদের ওপর গোলাবর্ষণের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করেছিল। মস্কো এই অঞ্চলের বিশাল রুশভাষী জনসংখ্যাকে উদ্ধৃত করে বলেছিল যে,২০২২ সালে হস্তক্ষেপ করা তাদের নৈতিক কর্তব্য।
কিয়েভ বলেছিল, ২০১৪ সালে ইউক্রেনের আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষায় শক্তি দিয়ে জবাব দেওয়া ছাড়া তাদের আর কোনো উপায় ছিল না এবং তারাও বিচ্ছিন্নতাবাদী বাহিনীর বিরুদ্ধে শহর ও বেসামরিক নাগরিকদের ওপর গোলাবর্ষণের অভিযোগ এনেছিল। জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৪ সাল থেকে ২০২২ সালের শুরু পর্যন্ত ইউক্রেনীয় সরকারি বাহিনী এবং বিচ্ছিন্নতাবাদীদের মধ্যে সংঘাতে উভয় পক্ষে ৩ হাজার ১০৬ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত এবং ৯ হাজার বেসামরিক নাগরিক আহত হয়েছিলেন।
দোনেৎস্কের বাকি যে অংশটি রাশিয়া চায়, তার মধ্যে রয়েছে স্লোভিয়ানস্ক এবং ক্রামাতোরস্ক—দুটি ‘দুর্গনগরী’ যা ২০১৪ সাল থেকে ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করে আসছে। এই শহরগুলো ইউক্রেনের বাকি অঞ্চল রক্ষার জন্য কিয়েভের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ দোনেৎস্কের পশ্চিমের ভূমি অনেকটাই সমতল এবং বিশাল খোলা মাঠ; যা রাশিয়াকে দোনেৎস্কের বাইরে অগ্রসর হতে এবং দিনিপ্রো নদীর পূর্ব তীর পর্যন্ত এলাকা দখল করার পথ সহজ করে দেবে।
শহরগুলো পরিখা, ট্যাংক-বিধ্বংসী বাধা, বাংকার এবং মাইনক্ষেত্রসহ অত্যন্ত সুরক্ষিত প্রতিরক্ষা লাইনের অংশ। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, গণভোট ছাড়া দোনেৎস্কের বাকি অংশ রাশিয়ার হাতে তুলে দেওয়া অবৈধ হবে এবং তা ভবিষ্যতে ইউক্রেনের গভীরে আক্রমণের জন্য রাশিয়াকে একটি পথ খুলে দেবে।
কিয়েভের আশঙ্কা, যদি তারা দোনেৎস্কের বাকি অংশ ছেড়ে দেয়, তবে রাশিয়া আবার অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হবে এবং একসময় দোনেৎস্ক ব্যবহার করে পশ্চিম দিকে আক্রমণ চালাবে।
উভয় পক্ষই দোনেৎস্ককে কেন্দ্র করে যুদ্ধে ভয়াবহ ক্ষয়ক্ষতির মুখোমুখি হয়েছে এবং প্রচুর অর্থ ও সরঞ্জাম ব্যয় করেছে। এর মধ্যে বাখমুত শহরের লড়াইও রয়েছে। যেখানে রাশিয়া হাজার হাজার দণ্ডিত অপরাধীকে ভাড়াটে সৈন্যে পরিণত করে রণক্ষেত্রে নামিয়েছিল। এ কারণে, দোনেৎস্ক উভয় দেশের জনমানসে আরও বেশি গুরুত্ব পেয়েছে। ফলে কারও পক্ষে তাদের অবস্থান পরিবর্তন করা কঠিন।
ইউক্রেন চায় না যে, রাশিয়া যুদ্ধক্ষেত্রে জয় করতে ব্যর্থ হওয়া ভূখণ্ডকে উপহার হিসেবে পাক এবং জেলেনস্কি বলেছেন, যে যুদ্ধ রাশিয়া শুরু করেছে, তার জন্য তাদের পুরস্কৃত করা উচিত নয়। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ইনস্টিটিউট ফর দ্য স্টাডি অব ওয়ার অক্টোবর মাসে বলেছিল, রাশিয়ার অগ্রগতির হার দেখে মনে হয় না যে তারা খুব শিগগিরই দোনেৎস্কের বাকি অংশ দখল করতে চলেছে। তবে ‘রাশিয়ার অগ্রগতির একটি অপরিবর্তনীয় হার ধরে নিলে’ তারা ২০২৭ সালের আগস্টের মধ্যে তা নিতে পারে।
রাশিয়ার কমান্ডাররা অবশ্য আরও বেশি আশাবাদী। জেনারেল স্টাফের প্রধান ভ্যালেরি গেরাসিমভ রোববার পুতিনকে বলেছেন, মস্কোর বাহিনী পুরো ফ্রন্ট লাইন বরাবর অগ্রসর হচ্ছে এবং দনবাসের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার জন্য কাজ করছে।
দোনেৎস্ক বন্দর, রেলপথ এবং অন্যান্য ভারী শিল্পের কেন্দ্র। এটি একসময় ইউক্রেনের কয়লা, পরিশোধিত ইস্পাত, কোক, ঢালাই লোহা এবং ইস্পাত উৎপাদনের অর্ধেকেরও বেশি সরবরাহ করত, তবে যুদ্ধের কারণে অনেক খনি ও কারখানা ধ্বংস হয়ে গেছে। এ ছাড়া, দোনেৎস্কে বিরল মৃত্তিকা, টাইটানিয়াম এবং জিরকোনিয়াম রয়েছে—যা এটিকে নিয়ন্ত্রণকারী পক্ষের জন্য আয়ের উৎস।
দোনেৎস্কের ভাগ্য পুতিন এবং জেলেনস্কি উভয়ের ঐতিহাসিক উত্তরাধিকারকে প্রভাবিত করতে পারে। পুতিন নিজেকে জাতিগত রুশদের রক্ষক হিসেবে তুলে ধরেছেন, তারা যেখানেই থাকুক না কেন। পুরো দোনেৎস্ককে সুরক্ষিত করা এই বক্তব্যের মূল কেন্দ্রবিন্দু। জেলেনস্কি ২০১৯ সালে পূর্ব ইউক্রেনের যুদ্ধ অবসান ঘটানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন। ২০২২ সাল থেকে তিনি অনেক বড়, বৈরী প্রতিবেশীর মুখে অস্ত্র এবং সংখ্যায় কম ইউক্রেনের এক দৃঢ় রক্ষক হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছেন।
লড়াই না করে দোনেৎস্ক ছেড়ে দেওয়া—যেখানে অন্তত আড়াই লাখ ইউক্রেনীয় বাস করে—ইউক্রেনীয়দের কাছে বিশ্বাসঘাতকতা হিসেবে দেখা হতে পারে, যাদের অনেকেই যুদ্ধক্ষেত্রে স্বজন হারিয়েছেন। কিয়েভ ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব সোসিওলজির সাম্প্রতিক এক জরিপ অনুসারে, ইউক্রেনীয়দের একটি সংকীর্ণ সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ এখনো আঞ্চলিক ছাড়ের বিরোধিতা করে।
জেলেনস্কিসহ ইউক্রেনের কর্মকর্তারা যেকোনো শান্তি চুক্তির অধীনে কিয়েভের নিয়ন্ত্রণে থাকা ভূমি ছাড়ার সম্ভাবনা প্রত্যাখ্যান করেছেন। জেলেনস্কি বলেন, তাঁর ভূখণ্ড ছেড়ে দেওয়ার কোনো ম্যান্ডেট নেই এবং রাষ্ট্রের ভূমি ব্যক্তিগত সম্পত্তির মতো কেনা-বেচা করা যায় না। ইউক্রেনের সংবিধান অনুসারে, আঞ্চলিক পরিবর্তন অবশ্যই একটি গণভোটের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করতে হবে, যা ইউক্রেনের অন্তত দুই-তৃতীয়াংশ অর্থাৎ, অন্তত ৩০ লাখ ইউক্রেনীয় ভোটারের স্বাক্ষর থাকলে আয়োজন করা যেতে পারে।
তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই গণভোটের বিষয়টির সমালোচনা করেছেন এবং তিনি বলেছিলেন, ‘কিছু ভূমি অদল-বদল হবে।’ এখন ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের আলোচনা মূলত এই দোনেৎস্কের নিয়ন্ত্রণ কার হাতে যাবে সেটাই নিয়েই থমকে আছে।
রয়টার্স থেকে পরিমার্জিত

পুতিন ‘বাজি ধরছেন’ যে, তিনি ইউক্রেনের চেয়ে দীর্ঘ সময় লড়াই চালিয়ে যেতে পারবেন, অথবা তিনি এমন একটি সমঝোতা ট্রাম্পের মাধ্যমে আদায় করতে পারবেন, যা রাশিয়াকে বিশ্ব অর্থনীতিতে পুনরায় যুক্ত হওয়ার সুযোগ দেবে, ইউক্রেনকে বিভক্ত ও আধা–ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করবে এবং ইউরোপকে এতটাই হতবাক করে দেবে যে...
১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
বিশ্বজুড়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন উঠে আসছে—‘যদি বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ সীমিত করা হয়, অথবা এই শ্রেণিটিকেই সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়, তবে কী ঘটবে?’ পশ্চিমা দেশগুলোতে চরম ধনী বা বিলিয়নিয়ারদের সংখ্যা ও প্রভাব বাড়তে থাকায় এখন এই প্রশ্ন আরও জোরালো হয়েছে।
১ দিন আগে
জাপানের ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর গত অক্টোবরে দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন সানায়ে তাকাইচি। এরপরই তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত হন জাপানের নতুন ‘আয়রন লেডি’ বা লৌহমানবী’ হিসেবে।
২ দিন আগে
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠককে ঘিরে দিল্লিতে শুরু হয়েছে কূটনৈতিক প্রস্তুতি। চলমান ইউক্রেন যুদ্ধ, যুক্তরাষ্ট্রের চাপ এবং জ্বালানির বাজারে অস্থিরতার মধ্যেই এই শীর্ষ সম্মেলন হতে যাচ্ছে। অর্থনীতি, প্রতিরক্ষা এবং জ্বালানি—এই তিনটি খাত আলোচনার...
২ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

বিশ্বজুড়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন উঠে আসছে—‘যদি বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ সীমিত করা হয়, অথবা এই শ্রেণিটিকেই সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়, তবে কী ঘটবে?’ পশ্চিমা দেশগুলোতে চরম ধনী বা বিলিয়নিয়ারদের সংখ্যা ও প্রভাব বাড়তে থাকায় এখন এই প্রশ্ন আরও জোরালো হয়েছে।
সম্প্রতি টেসলার মালিক ইলন মাস্ক গত নভেম্বরে এমন এক পে-অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন, যা তাঁকে একজন ট্রিলিয়ন ডলারের মালিকে পরিণত করতে পারে। তিনি ইতিমধ্যেই বিশ্বের শীর্ষ ধনী। যদি তিনি প্রস্তাবিত পূর্ণ প্যাকেজটি পান, তাহলে তিনি বিশ্বের ইতিহাসে সর্বকালের সেরা ধনী ব্যক্তিতে পরিণত হবেন। ফোর্বসের হিসেবে বর্তমানে বিশ্বের ৩ হাজার ২৮ জন বিলিয়নিয়ার আছেন। তাঁদের মোট সম্পদ প্রায় ১৬.১ ট্রিলিয়ন ডলার। অন্যদিকে পৃথিবীতে এখনো প্রায় ৮৩ কোটি ১০ লাখ মানুষ দৈনিক তিন ডলারের নিচে আয় করে চরম দারিদ্র্যে দিন কাটান।
বিশ্লেষকদের মতে, বিশ্বের এই বিপুল সম্পদ বৈষম্য শুধু অর্থনীতিকে নয়, রাজনীতি, মিডিয়া ও চিন্তাকেও প্রভাবিত করে। অনেকেই মনে করেন, বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ ও ক্ষমতা বিশ্বব্যবস্থাকে ‘অতি ধনীদের স্বার্থে’ পুনর্গঠন করছে। আবার অন্য একটি মত বলছে, বিলিয়নিয়ারেরা না থাকলে উদ্ভাবন, প্রযুক্তি ও অগ্রগতি থমকে যাবে। কারণ বৃহৎ বিনিয়োগই গড়ে তোলে নতুন সমাধান।
উদ্ভাবন কি থেমে যাবে
অ্যাডাম স্মিথ ইনস্টিটিউটের ম্যাক্সওয়েল মার্লোর মতে, বিলিয়নিয়ারদের বিলোপ করা হলে পশ্চিমা অর্থনীতি বিপর্যস্ত হবে। তাঁর দাবি, অধিকাংশ বিলিয়নিয়ার তাঁদের সম্পদের মালিক হয়েছেন সমাজের চাহিদামতো পণ্য ও প্রযুক্তি তৈরি করে। তাঁদের সম্পদ মূলত কোম্পানির শেয়ার, মেধাস্বত্ব অথবা সম্পত্তি—যা দিনে দিনে ওঠানামা করে। তাঁর মতে, এই ধনী ব্যক্তিদের প্রণোদনাই উদ্ভাবনে গতি আনে; তা না থাকলে উন্নয়ন থেমে যাবে।
যদি ন্যায্যভাবে সম্পদ বণ্টিত হতো
গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ট্যাক্স জাস্টিসের ডেরেজে আলেমায়েহুর মতে, শুধু বিলিয়নিয়ার কর আরোপ নয়—প্রশ্ন হচ্ছে, সেই কর কোথায় যাবে। দক্ষিণ বিশ্বের শ্রম ও সম্পদ থেকেই যে বিপুল সম্পদ তৈরি হয়, তাই তার ন্যায্য অংশ দক্ষিণেই ফিরে আসা উচিত। তিনি বলেন, বৈষম্য কমাতে শুধু অর্থ হস্তান্তর নয়, বৈশ্বিক আর্থিক কাঠামো পুনর্গঠন জরুরি; নইলে বৈষম্য আরও গভীর হবে।
বিধিনিষেধ কি বদলাতে হবে
ডেনিসন ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ফাদেল কাবুব বলেন, বিলিয়নিয়ারেরা আসলে ব্যর্থ নীতির ফল। সিস্টেম যেভাবে সাজানো, তাতে সম্পদ একদিকে কেন্দ্রীভূত হওয়াই স্বাভাবিক। তাঁর মতে, বিলিয়নিয়ার শ্রেণিকে বিলোপ করতে হলে আধুনিক অ্যান্টি ট্রাস্ট ও কঠোর বাজার নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন।
মিডিয়ার ওপর প্রভাব কমবে
গোল্ডস্মিথস বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডেস ফ্রিডম্যান মনে করেন, বিলিয়নিয়ারেরা পুরো মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম কিনে ফেলতে সক্ষম হওয়ায় তথ্যপ্রবাহ তাঁদের স্বার্থেই নিয়ন্ত্রিত হয়। যেমন—বেজোস বা ইলন মাস্কের গণমাধ্যম মালিকানা এই অঙ্গনের স্বাধীনতাকে দীর্ঘমেয়াদে প্রশ্নবিদ্ধ করে। তাই বিলিয়নিয়ার প্রভাব সীমিত হলে তথ্যের উৎসও আরও স্বাধীন হতে পারে।
চরম সম্পদ কি সত্যিই বিলোপ করা সম্ভব
বিশ্ব ইনইক্যুয়ালিটি ল্যাবের লুকাস শ্যানসেলের মতে, ইতিহাসে এর নজির আছে। উদাহরণস্বরূপ—রকেফেলারের একচেটিয়া সাম্রাজ্য ভেঙে দেওয়া, কিংবা রুজভেল্টের সময় সর্বোচ্চ করহার ৯৪ শতাংশে উন্নীত করা। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পানামা পেপারসের মতো ফাঁস যেমন দুর্দান্ত স্বচ্ছতা তৈরি করেছে, তেমনি তা পরিবর্তনের সুযোগও তৈরি করছে। তিনি মনে করেন, ধনীদের ওপর কর আরোপের মতো ধারণা এখন আর ‘যদি’ নয়, বরং ‘কখন’ করা হবে—এ প্রশ্নে এসে দাঁড়িয়েছে।
আল-জাজিরা অবলম্বনে

বিশ্বজুড়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন উঠে আসছে—‘যদি বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ সীমিত করা হয়, অথবা এই শ্রেণিটিকেই সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়, তবে কী ঘটবে?’ পশ্চিমা দেশগুলোতে চরম ধনী বা বিলিয়নিয়ারদের সংখ্যা ও প্রভাব বাড়তে থাকায় এখন এই প্রশ্ন আরও জোরালো হয়েছে।
সম্প্রতি টেসলার মালিক ইলন মাস্ক গত নভেম্বরে এমন এক পে-অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন, যা তাঁকে একজন ট্রিলিয়ন ডলারের মালিকে পরিণত করতে পারে। তিনি ইতিমধ্যেই বিশ্বের শীর্ষ ধনী। যদি তিনি প্রস্তাবিত পূর্ণ প্যাকেজটি পান, তাহলে তিনি বিশ্বের ইতিহাসে সর্বকালের সেরা ধনী ব্যক্তিতে পরিণত হবেন। ফোর্বসের হিসেবে বর্তমানে বিশ্বের ৩ হাজার ২৮ জন বিলিয়নিয়ার আছেন। তাঁদের মোট সম্পদ প্রায় ১৬.১ ট্রিলিয়ন ডলার। অন্যদিকে পৃথিবীতে এখনো প্রায় ৮৩ কোটি ১০ লাখ মানুষ দৈনিক তিন ডলারের নিচে আয় করে চরম দারিদ্র্যে দিন কাটান।
বিশ্লেষকদের মতে, বিশ্বের এই বিপুল সম্পদ বৈষম্য শুধু অর্থনীতিকে নয়, রাজনীতি, মিডিয়া ও চিন্তাকেও প্রভাবিত করে। অনেকেই মনে করেন, বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ ও ক্ষমতা বিশ্বব্যবস্থাকে ‘অতি ধনীদের স্বার্থে’ পুনর্গঠন করছে। আবার অন্য একটি মত বলছে, বিলিয়নিয়ারেরা না থাকলে উদ্ভাবন, প্রযুক্তি ও অগ্রগতি থমকে যাবে। কারণ বৃহৎ বিনিয়োগই গড়ে তোলে নতুন সমাধান।
উদ্ভাবন কি থেমে যাবে
অ্যাডাম স্মিথ ইনস্টিটিউটের ম্যাক্সওয়েল মার্লোর মতে, বিলিয়নিয়ারদের বিলোপ করা হলে পশ্চিমা অর্থনীতি বিপর্যস্ত হবে। তাঁর দাবি, অধিকাংশ বিলিয়নিয়ার তাঁদের সম্পদের মালিক হয়েছেন সমাজের চাহিদামতো পণ্য ও প্রযুক্তি তৈরি করে। তাঁদের সম্পদ মূলত কোম্পানির শেয়ার, মেধাস্বত্ব অথবা সম্পত্তি—যা দিনে দিনে ওঠানামা করে। তাঁর মতে, এই ধনী ব্যক্তিদের প্রণোদনাই উদ্ভাবনে গতি আনে; তা না থাকলে উন্নয়ন থেমে যাবে।
যদি ন্যায্যভাবে সম্পদ বণ্টিত হতো
গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ট্যাক্স জাস্টিসের ডেরেজে আলেমায়েহুর মতে, শুধু বিলিয়নিয়ার কর আরোপ নয়—প্রশ্ন হচ্ছে, সেই কর কোথায় যাবে। দক্ষিণ বিশ্বের শ্রম ও সম্পদ থেকেই যে বিপুল সম্পদ তৈরি হয়, তাই তার ন্যায্য অংশ দক্ষিণেই ফিরে আসা উচিত। তিনি বলেন, বৈষম্য কমাতে শুধু অর্থ হস্তান্তর নয়, বৈশ্বিক আর্থিক কাঠামো পুনর্গঠন জরুরি; নইলে বৈষম্য আরও গভীর হবে।
বিধিনিষেধ কি বদলাতে হবে
ডেনিসন ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ফাদেল কাবুব বলেন, বিলিয়নিয়ারেরা আসলে ব্যর্থ নীতির ফল। সিস্টেম যেভাবে সাজানো, তাতে সম্পদ একদিকে কেন্দ্রীভূত হওয়াই স্বাভাবিক। তাঁর মতে, বিলিয়নিয়ার শ্রেণিকে বিলোপ করতে হলে আধুনিক অ্যান্টি ট্রাস্ট ও কঠোর বাজার নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন।
মিডিয়ার ওপর প্রভাব কমবে
গোল্ডস্মিথস বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডেস ফ্রিডম্যান মনে করেন, বিলিয়নিয়ারেরা পুরো মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম কিনে ফেলতে সক্ষম হওয়ায় তথ্যপ্রবাহ তাঁদের স্বার্থেই নিয়ন্ত্রিত হয়। যেমন—বেজোস বা ইলন মাস্কের গণমাধ্যম মালিকানা এই অঙ্গনের স্বাধীনতাকে দীর্ঘমেয়াদে প্রশ্নবিদ্ধ করে। তাই বিলিয়নিয়ার প্রভাব সীমিত হলে তথ্যের উৎসও আরও স্বাধীন হতে পারে।
চরম সম্পদ কি সত্যিই বিলোপ করা সম্ভব
বিশ্ব ইনইক্যুয়ালিটি ল্যাবের লুকাস শ্যানসেলের মতে, ইতিহাসে এর নজির আছে। উদাহরণস্বরূপ—রকেফেলারের একচেটিয়া সাম্রাজ্য ভেঙে দেওয়া, কিংবা রুজভেল্টের সময় সর্বোচ্চ করহার ৯৪ শতাংশে উন্নীত করা। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পানামা পেপারসের মতো ফাঁস যেমন দুর্দান্ত স্বচ্ছতা তৈরি করেছে, তেমনি তা পরিবর্তনের সুযোগও তৈরি করছে। তিনি মনে করেন, ধনীদের ওপর কর আরোপের মতো ধারণা এখন আর ‘যদি’ নয়, বরং ‘কখন’ করা হবে—এ প্রশ্নে এসে দাঁড়িয়েছে।
আল-জাজিরা অবলম্বনে

পুতিন ‘বাজি ধরছেন’ যে, তিনি ইউক্রেনের চেয়ে দীর্ঘ সময় লড়াই চালিয়ে যেতে পারবেন, অথবা তিনি এমন একটি সমঝোতা ট্রাম্পের মাধ্যমে আদায় করতে পারবেন, যা রাশিয়াকে বিশ্ব অর্থনীতিতে পুনরায় যুক্ত হওয়ার সুযোগ দেবে, ইউক্রেনকে বিভক্ত ও আধা–ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করবে এবং ইউরোপকে এতটাই হতবাক করে দেবে যে...
১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতদের মধ্যে ইউক্রেন শান্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনা হলেও প্রকাশ্যে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইউরি উশাকভ, এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন যে অমীমাংসিত ‘আঞ্চলিক সমস্যাই’ মূল বাধা। আর এই অঞ্চল আর কোনোটিই নয়, দোনেৎস্ক।
২১ ঘণ্টা আগে
জাপানের ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর গত অক্টোবরে দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন সানায়ে তাকাইচি। এরপরই তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত হন জাপানের নতুন ‘আয়রন লেডি’ বা লৌহমানবী’ হিসেবে।
২ দিন আগে
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠককে ঘিরে দিল্লিতে শুরু হয়েছে কূটনৈতিক প্রস্তুতি। চলমান ইউক্রেন যুদ্ধ, যুক্তরাষ্ট্রের চাপ এবং জ্বালানির বাজারে অস্থিরতার মধ্যেই এই শীর্ষ সম্মেলন হতে যাচ্ছে। অর্থনীতি, প্রতিরক্ষা এবং জ্বালানি—এই তিনটি খাত আলোচনার...
২ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

জাপানের ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর গত অক্টোবরে দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন সানায়ে তাকাইচি। এরপরই তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত হন জাপানের নতুন ‘আয়রন লেডি’ বা লৌহমানবী’ হিসেবে। এই পরিচয়টিকে তাকাইচি নিজেও গর্বের সঙ্গে গ্রহণ করেন। মার্গারেট থ্যাচারের অনুরাগী এই রক্ষণশীল নেতা ঘরোয়া অর্থনীতি থেকে শুরু করে পররাষ্ট্র ও নিরাপত্তা—সব ক্ষেত্রেই শক্ত অবস্থানের বার্তা দিয়েছেন।
তাকাইচির রাজনৈতিক পরিচয়ের মূল কেন্দ্রে রয়েছে ‘নিপ্পন কেইগি’ নামে জাপানের সবচেয়ে প্রভাবশালী জাতীয়তাবাদী গোষ্ঠী। এই সংগঠন জাপানের সংবিধানের যুদ্ধবিরোধী ৯ নম্বর অনুচ্ছেদ বাতিল, শক্তিশালী সামরিক বাহিনী গঠন এবং ঐতিহ্যবাদী মূল্যবোধে প্রত্যাবর্তনের পক্ষে। পূর্বসুরী শিনজো আবের মতো তাই তাকাইচিও জাপানকে স্বাভাবিক রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চান, যেখানে গোয়েন্দা সংস্থা, আধুনিক সেনাবাহিনী এবং কঠোর নিরাপত্তা আইন থাকবে।
অর্থনীতির ক্ষেত্রে তিনি জাতীয় শিল্পকে শক্তিশালী করা, প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বাড়ানো এবং রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ বৃদ্ধির পক্ষে। একই সঙ্গে কঠোর অভিবাসন নীতি ও রক্ষণশীল মূল্যবোধের প্রচারও তাঁকে ডানপন্থীদের মধ্যে জনপ্রিয় করেছে। তবে এই অভ্যন্তরীণ রাজনীতি এখন আন্তর্জাতিক উত্তেজনার সঙ্গে গেঁথে গেছে—বিশেষ করে, তাইওয়ান ইস্যুতে তাঁর অবস্থানের কারণে।
তাকাইচি ক্ষমতায় আসার পর থেকেই চীনের প্রতি কঠোর মনোভাব দেখাচ্ছেন। বেইজিংকে তিনি কৌশলগত হুমকি হিসেবে দেখেন এবং প্রতিরোধমূলক সামরিক ও কূটনৈতিক পদক্ষেপের পক্ষে জোর দিচ্ছেন। এরই অংশ হিসেবে অক্টোবরের শেষ দিকে তাঁর ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাক্ষাৎ দুই দেশের সম্পর্ককে নতুন সোনালি যুগে প্রবেশ করানোর আভাস দেয়। জাপান প্রতিরক্ষা ব্যয় জিডিপির কমপক্ষে ২ শতাংশে উন্নীত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, আর যুক্তরাষ্ট্র বিরল ধাতুর সরবরাহ নিশ্চিতকরণসহ অর্থনৈতিক সহায়তার ঘোষণা দেয়।
তবে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হলো তাইওয়ানের সঙ্গে তাকাইচির ঘনিষ্ঠতা। তিনি তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট লাই চিং-তের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন, যা চীনের কাছে স্পষ্ট উত্তেজনাকর পদক্ষেপ হিসেবে ধরা পড়েছে। আরও বিতর্ক সৃষ্টি হয় যখন তাকাইচি প্রকাশ্যে বলেন, তাইওয়ানের নিরাপত্তা জাপানের নিরাপত্তার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত। এমনকি তাইওয়ানে চীনা হামলার ক্ষেত্রে জাপানের আত্মরক্ষা বাহিনী হস্তক্ষেপ করতে পারে বলেও ইঙ্গিত দেন তিনি।
এ ক্ষেত্রে চীনের প্রতিক্রিয়াও ছিল কঠোর ও দ্রুত। তারা তাকাইচির বিরুদ্ধে ‘পুরোনো সামরিকতাবাদকে পুনরুজ্জীবিত করার’ অভিযোগ তোলে, রাষ্ট্রদূতকে তলব করে এবং জাতিসংঘে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ পাঠায়। পাশাপাশি সামুদ্রিক এলাকায় কোস্টগার্ডের টহল বাড়ায় চীন, জাপানি সামুদ্রিক পণ্যে সীমাবদ্ধতা আরোপের হুমকি দেয় এবং উত্তেজনাপূর্ণ নানা বিবৃতি দেয়।
এদিকে জাপানও পশ্চিম সীমান্তের ইয়োনাগুনি দ্বীপে বিমান প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনের ঘোষণা দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রও একই দ্বীপে সামরিক অবকাঠামো শক্তিশালী করছে। ফলে পরিস্থিতি আরও জটিল আকার ধারণ করছে।
তবে ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি তাকাইচিকে উত্তেজনা না বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন। কারণ আগামী এপ্রিলে তিনি বেইজিং সফর করতে চান।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তাকাইচির নেতৃত্বে জাপান নতুন ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতায় প্রবেশ করেছে। তাঁর দৃঢ় অবস্থান দেশকে হয় পুনরুত্থানের পথে নেবে—নয়তো চীন–তাইওয়ান উত্তেজনার কেন্দ্রে ঠেলে দেবে। ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে তিনি কোন পথে হাঁটবেন তার ওপর।

জাপানের ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর গত অক্টোবরে দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন সানায়ে তাকাইচি। এরপরই তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত হন জাপানের নতুন ‘আয়রন লেডি’ বা লৌহমানবী’ হিসেবে। এই পরিচয়টিকে তাকাইচি নিজেও গর্বের সঙ্গে গ্রহণ করেন। মার্গারেট থ্যাচারের অনুরাগী এই রক্ষণশীল নেতা ঘরোয়া অর্থনীতি থেকে শুরু করে পররাষ্ট্র ও নিরাপত্তা—সব ক্ষেত্রেই শক্ত অবস্থানের বার্তা দিয়েছেন।
তাকাইচির রাজনৈতিক পরিচয়ের মূল কেন্দ্রে রয়েছে ‘নিপ্পন কেইগি’ নামে জাপানের সবচেয়ে প্রভাবশালী জাতীয়তাবাদী গোষ্ঠী। এই সংগঠন জাপানের সংবিধানের যুদ্ধবিরোধী ৯ নম্বর অনুচ্ছেদ বাতিল, শক্তিশালী সামরিক বাহিনী গঠন এবং ঐতিহ্যবাদী মূল্যবোধে প্রত্যাবর্তনের পক্ষে। পূর্বসুরী শিনজো আবের মতো তাই তাকাইচিও জাপানকে স্বাভাবিক রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চান, যেখানে গোয়েন্দা সংস্থা, আধুনিক সেনাবাহিনী এবং কঠোর নিরাপত্তা আইন থাকবে।
অর্থনীতির ক্ষেত্রে তিনি জাতীয় শিল্পকে শক্তিশালী করা, প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বাড়ানো এবং রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ বৃদ্ধির পক্ষে। একই সঙ্গে কঠোর অভিবাসন নীতি ও রক্ষণশীল মূল্যবোধের প্রচারও তাঁকে ডানপন্থীদের মধ্যে জনপ্রিয় করেছে। তবে এই অভ্যন্তরীণ রাজনীতি এখন আন্তর্জাতিক উত্তেজনার সঙ্গে গেঁথে গেছে—বিশেষ করে, তাইওয়ান ইস্যুতে তাঁর অবস্থানের কারণে।
তাকাইচি ক্ষমতায় আসার পর থেকেই চীনের প্রতি কঠোর মনোভাব দেখাচ্ছেন। বেইজিংকে তিনি কৌশলগত হুমকি হিসেবে দেখেন এবং প্রতিরোধমূলক সামরিক ও কূটনৈতিক পদক্ষেপের পক্ষে জোর দিচ্ছেন। এরই অংশ হিসেবে অক্টোবরের শেষ দিকে তাঁর ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাক্ষাৎ দুই দেশের সম্পর্ককে নতুন সোনালি যুগে প্রবেশ করানোর আভাস দেয়। জাপান প্রতিরক্ষা ব্যয় জিডিপির কমপক্ষে ২ শতাংশে উন্নীত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, আর যুক্তরাষ্ট্র বিরল ধাতুর সরবরাহ নিশ্চিতকরণসহ অর্থনৈতিক সহায়তার ঘোষণা দেয়।
তবে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হলো তাইওয়ানের সঙ্গে তাকাইচির ঘনিষ্ঠতা। তিনি তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট লাই চিং-তের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন, যা চীনের কাছে স্পষ্ট উত্তেজনাকর পদক্ষেপ হিসেবে ধরা পড়েছে। আরও বিতর্ক সৃষ্টি হয় যখন তাকাইচি প্রকাশ্যে বলেন, তাইওয়ানের নিরাপত্তা জাপানের নিরাপত্তার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত। এমনকি তাইওয়ানে চীনা হামলার ক্ষেত্রে জাপানের আত্মরক্ষা বাহিনী হস্তক্ষেপ করতে পারে বলেও ইঙ্গিত দেন তিনি।
এ ক্ষেত্রে চীনের প্রতিক্রিয়াও ছিল কঠোর ও দ্রুত। তারা তাকাইচির বিরুদ্ধে ‘পুরোনো সামরিকতাবাদকে পুনরুজ্জীবিত করার’ অভিযোগ তোলে, রাষ্ট্রদূতকে তলব করে এবং জাতিসংঘে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ পাঠায়। পাশাপাশি সামুদ্রিক এলাকায় কোস্টগার্ডের টহল বাড়ায় চীন, জাপানি সামুদ্রিক পণ্যে সীমাবদ্ধতা আরোপের হুমকি দেয় এবং উত্তেজনাপূর্ণ নানা বিবৃতি দেয়।
এদিকে জাপানও পশ্চিম সীমান্তের ইয়োনাগুনি দ্বীপে বিমান প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনের ঘোষণা দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রও একই দ্বীপে সামরিক অবকাঠামো শক্তিশালী করছে। ফলে পরিস্থিতি আরও জটিল আকার ধারণ করছে।
তবে ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি তাকাইচিকে উত্তেজনা না বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন। কারণ আগামী এপ্রিলে তিনি বেইজিং সফর করতে চান।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তাকাইচির নেতৃত্বে জাপান নতুন ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতায় প্রবেশ করেছে। তাঁর দৃঢ় অবস্থান দেশকে হয় পুনরুত্থানের পথে নেবে—নয়তো চীন–তাইওয়ান উত্তেজনার কেন্দ্রে ঠেলে দেবে। ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে তিনি কোন পথে হাঁটবেন তার ওপর।

পুতিন ‘বাজি ধরছেন’ যে, তিনি ইউক্রেনের চেয়ে দীর্ঘ সময় লড়াই চালিয়ে যেতে পারবেন, অথবা তিনি এমন একটি সমঝোতা ট্রাম্পের মাধ্যমে আদায় করতে পারবেন, যা রাশিয়াকে বিশ্ব অর্থনীতিতে পুনরায় যুক্ত হওয়ার সুযোগ দেবে, ইউক্রেনকে বিভক্ত ও আধা–ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করবে এবং ইউরোপকে এতটাই হতবাক করে দেবে যে...
১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতদের মধ্যে ইউক্রেন শান্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনা হলেও প্রকাশ্যে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইউরি উশাকভ, এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন যে অমীমাংসিত ‘আঞ্চলিক সমস্যাই’ মূল বাধা। আর এই অঞ্চল আর কোনোটিই নয়, দোনেৎস্ক।
২১ ঘণ্টা আগে
বিশ্বজুড়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন উঠে আসছে—‘যদি বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ সীমিত করা হয়, অথবা এই শ্রেণিটিকেই সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়, তবে কী ঘটবে?’ পশ্চিমা দেশগুলোতে চরম ধনী বা বিলিয়নিয়ারদের সংখ্যা ও প্রভাব বাড়তে থাকায় এখন এই প্রশ্ন আরও জোরালো হয়েছে।
১ দিন আগে
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠককে ঘিরে দিল্লিতে শুরু হয়েছে কূটনৈতিক প্রস্তুতি। চলমান ইউক্রেন যুদ্ধ, যুক্তরাষ্ট্রের চাপ এবং জ্বালানির বাজারে অস্থিরতার মধ্যেই এই শীর্ষ সম্মেলন হতে যাচ্ছে। অর্থনীতি, প্রতিরক্ষা এবং জ্বালানি—এই তিনটি খাত আলোচনার...
২ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠককে ঘিরে দিল্লিতে শুরু হয়েছে কূটনৈতিক প্রস্তুতি। চলমান ইউক্রেন যুদ্ধ, যুক্তরাষ্ট্রের চাপ এবং জ্বালানির বাজারে অস্থিরতার মধ্যেই এই শীর্ষ সম্মেলন হতে যাচ্ছে। অর্থনীতি, প্রতিরক্ষা এবং জ্বালানি—এই তিনটি খাত আলোচনার কেন্দ্রে থাকবে বলে দুই দেশই নিশ্চিত করেছে।
রাষ্ট্রীয় সফরে বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) ভারতে পৌঁছে পরদিন শুক্রবার মোদির সঙ্গে বৈঠকে বসবেন পুতিন। এই বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের অগ্রগতি পর্যালোচনা ছাড়াও নতুন কয়েকটি আন্তদপ্তর ও বাণিজ্যিক চুক্তি স্বাক্ষরের সম্ভাবনা রয়েছে। রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখা এবং একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কৌশলগত অংশীদারত্ব ধরে রাখতে ভারতের নীতির জন্য এই বৈঠক একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রাশিয়া থেকে ডিসকাউন্টে ভারতের তেল কেনা দীর্ঘদিন ধরেই ওয়াশিংটনকে অসন্তুষ্ট করে আসছে। এই অসন্তুষ্টি থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি ভারতীয় পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন, যা মোট শুল্ককে ৫০ শতাংশে উন্নীত করেছে। তবে ভারত বলছে, তারা আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার বিরোধী নয়, কিন্তু ১৪০ কোটি মানুষের জ্বালানি চাহিদা মেটাতেই বাধ্য হয়ে রাশিয়া থেকে তেল আমদানি করা হচ্ছে। নতুন মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে ‘রসনেফত’ ও ‘লুকওইল’ এর মতো রাশিয়ার কিছু কোম্পানি থেকে ভারত তেল কিনবে না বলে জানিয়েছে। তবে নিষেধাজ্ঞামুক্ত রুশ সরবরাহকারীদের সঙ্গে বাণিজ্য চালু থাকবে।
পুতিনের এই সফরে দুই দেশের অর্থনৈতিক সহযোগিতার ওপর জোর দেওয়া হবে। ভারত রাশিয়ায় ওষুধ, কৃষিপণ্য ও টেক্সটাইল রপ্তানি বাড়াতে চায় এবং পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে শুল্কমুক্ত সুবিধা প্রদানের অনুরোধ জানাবে। এ ছাড়া সার সরবরাহের দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি এবং রাশিয়ায় ভারতীয় দক্ষ জনশক্তির নিরাপদ ও নিয়মিত অভিবাসন নিয়ে আলোচনা এগোতে পারে। দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য, সমুদ্র পরিবহন, স্বাস্থ্যসেবা ও গণমাধ্যম সহযোগিতা বিষয়ক নথিপত্র চূড়ান্তের কাজও চলছে।
বুধবার এই বিষয়ে যুক্তরাজ্যভিত্তিক ইনডিপেনডেন্টের এক নিবন্ধে দাবি করা হয়েছে, জ্বালানি সহযোগিতাই পুতিন-মোদি আলোচনার বড় অংশ দখল করবে। ভারতের ফার ইস্টে বিনিয়োগ, রাশিয়ার সঙ্গে বেসামরিক পারমাণবিক প্রকল্প এবং কুদানকুলাম প্রকল্পের সম্প্রসারণ নিয়ে অগ্রগতি পর্যালোচনা হবে। স্থানীয়ভাবে যন্ত্রাংশ উৎপাদন এবং তৃতীয় দেশে যৌথ পারমাণবিক প্রকল্প বাস্তবায়নের সম্ভাবনাও খতিয়ে দেখা হবে।
প্রতিরক্ষা সহযোগিতা এই সফরের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। ২০১৮ সালের ৫.৪ বিলিয়ন ডলারের চুক্তির আওতায় ভারতের হাতে ইতিমধ্যে রাশিয়ার তিনটি এস-৪০০ স্কোয়াড্রন এসেছে। যুদ্ধজনিত কারণে বাকিগুলোর সরবরাহে যুদ্ধজনিত বিলম্ব হচ্ছে। ভারত এই সরবরাহ দ্রুত নিশ্চিত করতে চাপ দেবে। পাশাপাশি আরও এস-৪০০ কেনার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া হয়নি, যদিও বৈঠক থেকে কোনো ঘোষণা হওয়ার সম্ভাবনা কম। রুশ নির্মিত এসইউ-৩০ এমকেআই যুদ্ধবিমান আপগ্রেড, অস্ত্র সরবরাহ দ্রুততর করা এবং যৌথ সামরিক মহড়ায় সমন্বয় জোরদার করার বিষয়েও আলোচনা হবে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভারত বহুজাতিক অস্ত্র সরবরাহকারীদের দিকে নজর বাড়ালেও রাশিয়া এখনো তাদের সবচেয়ে বড় প্রতিরক্ষা অংশীদার। পুতিনের সফরকে সেই সম্পর্কটি আরও দৃঢ় করার বড় সুযোগ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠককে ঘিরে দিল্লিতে শুরু হয়েছে কূটনৈতিক প্রস্তুতি। চলমান ইউক্রেন যুদ্ধ, যুক্তরাষ্ট্রের চাপ এবং জ্বালানির বাজারে অস্থিরতার মধ্যেই এই শীর্ষ সম্মেলন হতে যাচ্ছে। অর্থনীতি, প্রতিরক্ষা এবং জ্বালানি—এই তিনটি খাত আলোচনার কেন্দ্রে থাকবে বলে দুই দেশই নিশ্চিত করেছে।
রাষ্ট্রীয় সফরে বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) ভারতে পৌঁছে পরদিন শুক্রবার মোদির সঙ্গে বৈঠকে বসবেন পুতিন। এই বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের অগ্রগতি পর্যালোচনা ছাড়াও নতুন কয়েকটি আন্তদপ্তর ও বাণিজ্যিক চুক্তি স্বাক্ষরের সম্ভাবনা রয়েছে। রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখা এবং একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কৌশলগত অংশীদারত্ব ধরে রাখতে ভারতের নীতির জন্য এই বৈঠক একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রাশিয়া থেকে ডিসকাউন্টে ভারতের তেল কেনা দীর্ঘদিন ধরেই ওয়াশিংটনকে অসন্তুষ্ট করে আসছে। এই অসন্তুষ্টি থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি ভারতীয় পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন, যা মোট শুল্ককে ৫০ শতাংশে উন্নীত করেছে। তবে ভারত বলছে, তারা আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার বিরোধী নয়, কিন্তু ১৪০ কোটি মানুষের জ্বালানি চাহিদা মেটাতেই বাধ্য হয়ে রাশিয়া থেকে তেল আমদানি করা হচ্ছে। নতুন মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে ‘রসনেফত’ ও ‘লুকওইল’ এর মতো রাশিয়ার কিছু কোম্পানি থেকে ভারত তেল কিনবে না বলে জানিয়েছে। তবে নিষেধাজ্ঞামুক্ত রুশ সরবরাহকারীদের সঙ্গে বাণিজ্য চালু থাকবে।
পুতিনের এই সফরে দুই দেশের অর্থনৈতিক সহযোগিতার ওপর জোর দেওয়া হবে। ভারত রাশিয়ায় ওষুধ, কৃষিপণ্য ও টেক্সটাইল রপ্তানি বাড়াতে চায় এবং পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে শুল্কমুক্ত সুবিধা প্রদানের অনুরোধ জানাবে। এ ছাড়া সার সরবরাহের দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি এবং রাশিয়ায় ভারতীয় দক্ষ জনশক্তির নিরাপদ ও নিয়মিত অভিবাসন নিয়ে আলোচনা এগোতে পারে। দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য, সমুদ্র পরিবহন, স্বাস্থ্যসেবা ও গণমাধ্যম সহযোগিতা বিষয়ক নথিপত্র চূড়ান্তের কাজও চলছে।
বুধবার এই বিষয়ে যুক্তরাজ্যভিত্তিক ইনডিপেনডেন্টের এক নিবন্ধে দাবি করা হয়েছে, জ্বালানি সহযোগিতাই পুতিন-মোদি আলোচনার বড় অংশ দখল করবে। ভারতের ফার ইস্টে বিনিয়োগ, রাশিয়ার সঙ্গে বেসামরিক পারমাণবিক প্রকল্প এবং কুদানকুলাম প্রকল্পের সম্প্রসারণ নিয়ে অগ্রগতি পর্যালোচনা হবে। স্থানীয়ভাবে যন্ত্রাংশ উৎপাদন এবং তৃতীয় দেশে যৌথ পারমাণবিক প্রকল্প বাস্তবায়নের সম্ভাবনাও খতিয়ে দেখা হবে।
প্রতিরক্ষা সহযোগিতা এই সফরের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। ২০১৮ সালের ৫.৪ বিলিয়ন ডলারের চুক্তির আওতায় ভারতের হাতে ইতিমধ্যে রাশিয়ার তিনটি এস-৪০০ স্কোয়াড্রন এসেছে। যুদ্ধজনিত কারণে বাকিগুলোর সরবরাহে যুদ্ধজনিত বিলম্ব হচ্ছে। ভারত এই সরবরাহ দ্রুত নিশ্চিত করতে চাপ দেবে। পাশাপাশি আরও এস-৪০০ কেনার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া হয়নি, যদিও বৈঠক থেকে কোনো ঘোষণা হওয়ার সম্ভাবনা কম। রুশ নির্মিত এসইউ-৩০ এমকেআই যুদ্ধবিমান আপগ্রেড, অস্ত্র সরবরাহ দ্রুততর করা এবং যৌথ সামরিক মহড়ায় সমন্বয় জোরদার করার বিষয়েও আলোচনা হবে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভারত বহুজাতিক অস্ত্র সরবরাহকারীদের দিকে নজর বাড়ালেও রাশিয়া এখনো তাদের সবচেয়ে বড় প্রতিরক্ষা অংশীদার। পুতিনের সফরকে সেই সম্পর্কটি আরও দৃঢ় করার বড় সুযোগ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

পুতিন ‘বাজি ধরছেন’ যে, তিনি ইউক্রেনের চেয়ে দীর্ঘ সময় লড়াই চালিয়ে যেতে পারবেন, অথবা তিনি এমন একটি সমঝোতা ট্রাম্পের মাধ্যমে আদায় করতে পারবেন, যা রাশিয়াকে বিশ্ব অর্থনীতিতে পুনরায় যুক্ত হওয়ার সুযোগ দেবে, ইউক্রেনকে বিভক্ত ও আধা–ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করবে এবং ইউরোপকে এতটাই হতবাক করে দেবে যে...
১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতদের মধ্যে ইউক্রেন শান্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনা হলেও প্রকাশ্যে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইউরি উশাকভ, এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন যে অমীমাংসিত ‘আঞ্চলিক সমস্যাই’ মূল বাধা। আর এই অঞ্চল আর কোনোটিই নয়, দোনেৎস্ক।
২১ ঘণ্টা আগে
বিশ্বজুড়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন উঠে আসছে—‘যদি বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ সীমিত করা হয়, অথবা এই শ্রেণিটিকেই সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়, তবে কী ঘটবে?’ পশ্চিমা দেশগুলোতে চরম ধনী বা বিলিয়নিয়ারদের সংখ্যা ও প্রভাব বাড়তে থাকায় এখন এই প্রশ্ন আরও জোরালো হয়েছে।
১ দিন আগে
জাপানের ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর গত অক্টোবরে দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন সানায়ে তাকাইচি। এরপরই তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত হন জাপানের নতুন ‘আয়রন লেডি’ বা লৌহমানবী’ হিসেবে।
২ দিন আগে