
রাশিয়ার ঢোল পেটানো আর কতিপয় ইউরোপীয়র হতাশা দেখে মনে হতে পারে, ভ্লাদিমির পুতিন কখনোই ইউক্রেন যুদ্ধ জয়ের এত কাছে ছিলেন না! কিন্তু আক্রমণের তিন বছর পরেও, ‘জয়’ বলতে তিনি আসলে কী বোঝাতে চান, তা স্পষ্ট নয়। তাঁর লক্ষ্যগুলোও অস্পষ্ট।
ইউক্রেনে পুতিনের ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ পরিকল্পনা করা হয়েছিল গোপনে। রুশ জনগণ তো বটেই, এমনকি সরকারের লোকেরাও অন্ধকারে ছিল! পুতিন রুশ সার্বভৌমত্ব রক্ষার কথা বলেছেন সে সময়। কিন্তু পরবর্তী পরিস্থিতি এমন কিছু বিষয়ের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে, যা তাঁর নিয়ন্ত্রণের বাইরে। যদিও গত ১৮ ফেব্রুয়ারি সৌদি আরবে ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে পুতিন প্রশাসনের আনুষ্ঠানিকভাবে আলোচনা শুরু হয়েছে। কিন্তু এরপরও ইউক্রেনের রাজনৈতিক বাস্তবতা, ইউরোপের পুনঃসশস্ত্রীকরণ প্রচেষ্টা এবং সর্বোপরি ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর পরিকল্পনায় জল ঢেলে দিতে পারে।
ইউক্রেনে যুদ্ধ বন্ধে ট্রাম্পের কোনো সুস্পষ্ট পরিকল্পনা নেই, অন্তত এখন পর্যন্ত তেমন কিছু প্রকাশ পায়নি। তবে তাঁর হাতে ইউক্রেন ইস্যুতে গ্রহণ করার মতো যথেষ্ট বিকল্প আছে। তিনি চাইলেই ইউক্রেনের জন্য সহায়তা সম্পূর্ণ বন্ধ করে দিতে পারেন, সেই সঙ্গে রাশিয়ার ওপরও নিষেধাজ্ঞা বাড়াতে পারেন। কিন্তু সম্ভবত সেসব কিছুই ঘটবে না। কারণ, আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ও পুতিনের মধ্যকার কূটনৈতিক কৌশলের নতুন পর্বের মহরত হলো রিয়াদে। রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ করার তিন বছর পর এই প্রথম আমেরিকা ও রাশিয়ার কর্মকর্তাদের মুখোমুখি বৈঠক হলো। তাঁরা ইউক্রেন এবং ‘পারস্পরিক ভূরাজনৈতিক স্বার্থ’ নিয়ে ধারাবাহিক আলোচনা শুরু করতে রাজি হয়েছেন। তবে আসলে কী আলোচিত হবে তা অস্পষ্ট। এ ছাড়া, ট্রাম্প–পুতিন বৈঠক আয়োজনের প্রস্তুতিও শুরু হবে শিগগির, যদিও এখনো কোনো তারিখ নির্ধারণ করা হয়নি।
এক মার্কিন কর্মকর্তা বলেছেন, এ ধরনের উন্মুক্ত ও অস্পষ্ট আলোচনা পুতিনের জন্য বেশ সুবিধাজনক। ট্রাম্প যেখানে এই আলোচনাকে দেখেন ‘অযৌক্তিক’ যুদ্ধের ইতি টানার উপায় হিসেবে, সেখানে পুতিন এগুলোকে সম্ভাব্য বৃহত্তর সংঘাতের একটি পর্যায় হিসেবে দেখছেন। রুশ নেতা হিসাব কষে দেখছেন, ইউক্রেন বা ন্যাটো জোটের চেয়ে তাঁর ধৈর্য ও সক্ষমতা বেশি। পোকার খেলোয়াড়ের মতো, পুতিন প্রয়োজনের সময় আত্মবিশ্বাস ও শক্তিমত্তার সঙ্গে কাজ করতে দক্ষ। কিন্তু বাস্তবে, তাঁর হাতে থাকা তাস ঠিক ততটা শক্তিশালী নয়, যতটা তিনি প্রতিপক্ষকে বিশ্বাস করাতে চান। অন্যদিকে, যুদ্ধের অবসান তাঁর জন্য নিজ দেশে নতুন জটিলতা তৈরি করতে পারে।
রাশিয়ার আলোচনার অবস্থান মূল্যায়নের যেকোনো প্রচেষ্টা অবশ্যই সামরিক পরিস্থিতি থেকে শুরু করা উচিত। দেশটির সেনাবাহিনী ইউক্রেনে খুব একটা ভালো দক্ষতা দেখাতে পারছে না। তাদের অগ্রগতি অত্যন্ত ধীর। গত বছরের জুলাই থেকে তারা পোকরোভস্ক শহর দখল করতে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু দখল করতে পারেনি। তাদের ক্ষয়ক্ষতিও হয়েছে ব্যাপক। রাশিয়ার বেশির ভাগ সামরিক অগ্রগতি যুদ্ধের প্রথম কয়েক সপ্তাহেই ঘটেছে। ২০২২ সালের এপ্রিলে ইউক্রেনের উত্তর থেকে রাশিয়ার পশ্চাদপসরণের পর, তারা ইউক্রেনের ১৯ দশমিক ৬ শতাংশ ভূখণ্ড নিয়ন্ত্রণ করছিল। সে সময় তাদের হতাহতের সংখ্যা ছিল আনুমানিক ২০ হাজার। বর্তমানে রাশিয়া ইউক্রেনের ১৯ দশমিক ২ শতাংশ এলাকা নিয়ন্ত্রণে রেখেছে এবং ব্রিটিশ গোয়েন্দা মূল্যায়ন অনুসারে, তাদের মোট হতাহতের সংখ্যা ৮ লাখে পৌঁছেছে। এক পশ্চিমা কর্মকর্তা বলেন, ‘দুই দেশের সেনাবাহিনী একে অপরের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে কারণ তারা থামতে পারছে না, কোনো পক্ষই আসলে চূড়ান্ত পরিণতি নির্ধারক জয় অর্জনের আশা করছে না।’
কেবল সেনা হতাহতের ঘটনাই নয়, রাশিয়ার সামরিক সরঞ্জামের ক্ষয়ক্ষতিও অবিশ্বাস্য মাত্রায় পৌঁছেছে। কয়েক দশক ধরে গড়ে তোলা সোভিয়েত আমলের সাঁজোয়া বহরের অবস্থাই তার প্রমাণ। মজুত থাকা ৭ হাজার ৩০০ ট্যাংকের অর্ধেকের বেশি ধ্বংস হয়ে গেছে। অবশিষ্ট যেগুলো আছে, তার মধ্যে মাত্র ৫০০টি দ্রুত সংস্কারের উপযোগী। এপ্রিলের মধ্যেই রাশিয়ার টি–৮০ ট্যাংকের মজুত শেষ হয়ে যেতে পারে। গত বছর রাশিয়া যতগুলো আর্টিলারি বা গোলন্দাজ ইউনিট হারিয়েছে, তার পরিমাণ আগের দুই বছরের সম্মিলিত ক্ষতির দ্বিগুণ। পেশাদার চুক্তিভিত্তিক সেনা নিয়োগের খরচ বাড়ছে, আর সাধারণ জনগণের ব্যাপক মোবিলাইজেশন (যুদ্ধের ময়দানে নামানো) রাজনৈতিকভাবে ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। জনমত জরিপ স্পষ্ট দেখাচ্ছে, রাশিয়ার জনগণ যুদ্ধের অবসান চায়।
রাশিয়ার অর্থনীতি নিষেধাজ্ঞার ধকল সামলে নিতে পেরেছে মূলত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দক্ষতা, উচ্চ পণ্যমূল্য এবং রাজস্ব প্রণোদনার কারণে। তবে উৎপাদনশীল খাত থেকে সামরিক খাতে সম্পদ স্থানান্তরের ফলে মূল্যস্ফীতি দুই অঙ্কের ঘরে পৌঁছে গেছে। সুদহার বর্তমানে ২১ শতাংশ, যা দুই দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ। শ্রমবাজারে দীর্ঘস্থায়ী ঘাটতি রয়ে গেছে। অর্থনৈতিক পরিসংখ্যানের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে, কারণ দেশটির পরিসংখ্যান কর্তৃপক্ষ নিয়মিত প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস সংশোধন করে থাকে।
তবে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের ফাঁস করা রাশিয়ার সেন্ট্রাল ব্যাংক ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের একটি প্রতিবেদনে সতর্ক করে বলা হয়েছে যে, মূল্যস্ফীতি কমার আগেই রাশিয়া মন্দার মুখে পড়তে পারে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক উপপ্রধান ওলেগ ভিউগিন বলেছেন, সরকারকে খুব দ্রুত সামরিক ব্যয় হ্রাস করা অথবা লাগামহীন মূল্যস্ফীতির মধ্যে যেকোনো একটি বেছে নিতে হবে।
সার্বভৌম সম্পদ তহবিল ক্রমাগত ফুরিয়ে যাচ্ছে। সাবেক অর্থমন্ত্রী মিখাইল জাদোরনভের মতে, এই তহবিলের তারল্য মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৭ দশমিক ৪ শতাংশ থেকে কমে ২ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে। গত বছর রাশিয়ার রপ্তানি আয় ছিল ৪১৭ বিলিয়ন ডলার। কিন্তু নিষেধাজ্ঞা এবং বিশ্ব বাজারে নিম্নমুখী পণ্যমূল্যের চাপের কারণে বেশ চাপে আছে। ডিসেম্বরে এটি বছরওয়ারি হিসাবে আগের বছরের তুলনায় ২০ শতাংশ কমেছে। রুশ থিংক ট্যাংক ‘রে–রাশিয়া’—এর গবেষক কিরিল রোগভ যুক্তি দিয়েছেন, নিষেধাজ্ঞার কারণে রাশিয়ার বড় রপ্তানি খাত ইস্পাত ও কৃষিপণ্যের ধীর গতিতে দরপতন রাশিয়ার আগ্রাসনের সক্ষমতাকে সীমিত করবে।
রাশিয়ার এ ধরনের দুর্বলতা থাকার বিষয়টি পশ্চিমাদের মধ্যে অনেককে বিশ্বাস করাচ্ছে যে, আমেরিকা ক্রেমলিনকে যুদ্ধ বন্ধে যে ছাড় দিতে যাচ্ছে বা চাচ্ছে তা আসলে খুব একটা ভালো নয়। যদিও পশ্চিমারা ইউক্রেনকে নিশ্চিত নিরাপত্তার গ্যারান্টি দিতে সক্ষম নাও হতে পারে, তবে তারা রাশিয়াকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে নিষেধাজ্ঞা বহাল রাখতে পারে বলে যুক্তি দিচ্ছেন রোগভ।
তবে ট্রাম্পের লক্ষ্য দীর্ঘ সময় ধরে রাশিয়াকে দমিয়ে রাখা বা প্রতিহত করা নয়, বরং তিনি দ্রুত যুদ্ধের সমাপ্তির প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে মনোযোগী। এক মার্কিন কর্মকর্তা বলেন, ‘শেষ পর্যন্ত আমরা পুতিনকে সেই অবস্থানে নিয়ে এসেছি, যেখানে তাঁকে দেখতে চেয়েছিলাম গত তিন বছর ধরে। এখন যদি আমরা তাঁকে পরাজয়ের মুখ থেকে জয়ের সুযোগ করে দিই, তাহলে সেটা ভয়াবহ লজ্জার বিষয় হবে।’
পুতিন বিশ্বাস করেন, ট্রাম্প কেবল অস্থির প্রকৃতিরই নন, তাঁকে সহজে প্রভাবিতও করা যায়। প্রশংসা ও তাৎক্ষণিক সুবিধা দিয়ে তিনি আমেরিকার প্রেসিডেন্টকে আকৃষ্ট করেছেন। গত ১১ ফেব্রুয়ারি পুতিন ২০২১ সাল থেকে রাশিয়ায় বন্দী থাকা মার্কিন নাগরিক মার্ক ফোগেলকে মুক্তি দেন। তবে পুতিনের মৌলিক দাবি অপরিবর্তিত। তাঁর এসব দাবির মধ্যে—একটি নিরপেক্ষ ইউক্রেন, যার সামরিক বাহিনী আকার ও সরঞ্জামের দিক থেকে সীমিত থাকবে এবং যেখানে পশ্চিমা সেনাদের উপস্থিতি থাকবে না। তিনি চান, ক্রিমিয়া ও অন্য চারটি অধিকৃত ইউক্রেনীয় প্রদেশকে রাশিয়ার অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হোক।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, পুতিন ২০২৪ সালের জুনে ইউক্রেন সংকট নিরসনে যে দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেন তার মূল কথা হলো—তিনি এমন কোনো সাময়িক যুদ্ধবিরতি বা অস্ত্রবিরতি চান না, যা কার্যত রাশিয়ার ওপর পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞাগুলো বহাল রাখবে এবং ইউক্রেনকে পুনরায় অস্ত্রসজ্জিত হওয়ার সুযোগ দেবে। বরং, পুতিন একটি ‘চূড়ান্ত সমাধান’ চান, যার মাধ্যমে রাশিয়ার ওপর আরোপিত পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হবে এবং মস্কো সামরিক শক্তি পুনর্গঠনের সুযোগ পাবে।
তবে বাস্তবতা হলো, রণক্ষেত্রের যুদ্ধ বন্ধ হলেও, পুতিন ইউরোপকে দুর্বল করার এবং রাশিয়ার প্রভাব বলয় পুনর্গঠনের চেষ্টা চালিয়ে যাবেন। ন্যাটোর ইউরোপ চ্যাপ্টারে সুপ্রিম অ্যালাইড কমান্ডারের উপদেষ্টা স্টিভ কোভিংটনের মতে, পুতিনের লক্ষ্য হলো ইউক্রেনকে গুঁড়িয়ে দেওয়া এবং ১৯৪৫—পরবর্তী মার্কিন–নেতৃত্বাধীন বিশ্বব্যবস্থাকে ধ্বংস করা।
গত বছর নিজ দেশের কূটনীতিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় পুতিন বলেছিলেন, ‘সমগ্র ইউরো–আটলান্টিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা আমাদের চোখের সামনে ভেঙে পড়ছে। ইউরোপ বৈশ্বিক অর্থনৈতিক বিকাশে একঘরে হয়ে পড়ছে, বিশৃঙ্খলার মধ্যে ডুবে যাচ্ছে...এবং আন্তর্জাতিক সক্ষমতা ও সাংস্কৃতিক পরিচয় হারাচ্ছে।’
পুতিন নিশ্চিতভাবেই খুশি হয়েছেন, যখন গত ১৫ ফেব্রুয়ারি মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনে আমেরিকার ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি. ভ্যান্স একই মন্তব্যের প্রতিধ্বনি করেছেন। ২০০৭ সালে এই একই সম্মেলনে পুতিন প্রথমবারের মতো ঘোষণা করেছিলেন, তিনি পশ্চিমাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অবতীর্ণ হবেন। ক্রেমলিন অবশ্যই আশা করছে যে, রাশিয়া ঘেঁষা ডানপন্থী রাজনৈতিক দলগুলো—যাদের প্রতি ভ্যান্সেরও সমর্থন আছে—ইউরোপের নির্বাচনে শক্তিশালী অবস্থান গড়ে তুলবে।
ক্রেমলিনের সামনে গ্রেমলিন
পশ্চিমা দুনিয়ায় ‘গ্রেমলিন’ মূলত লোককথায় প্রচলিত একটি দুষ্টু ও রহস্যময় প্রাণী। আধুনিক সংস্কৃতিতে, বিশেষ করে সিনেমা ও সাহিত্যে গ্রেমলিনকে ব্যাপকভাবে তুলে ধরা হয়েছে। সহজ ভাষায় বলতে গেলে, গ্রেমলিন হলো একপ্রকার কাল্পনিক, ছোটখাটো, দুষ্টু প্রকৃতির প্রাণী, যাদের কাজ হলো যন্ত্রপাতির ক্ষতি করা বা গোলমাল তৈরি করা। বিশ শতকের দিকে মূলত উড়োজাহাজ শিল্পকে কেন্দ্র করে এই কল্পকথা তৈরি হয়।
পুতিনের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার হলো ক্ষমতায় টিকে থাকা। যুদ্ধ থেকে বের হয়ে আসার নিজস্ব ঝুঁকি আছে। বিশেষ করে যুদ্ধ শেষ হয়ে যাওয়ার পর লাখ লাখ সেনা ঘরে ফিরবে, তাঁদের ভরণ-পোষণ এবং বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে ক্ষমতার লড়াই তাঁকে বিচলিত করতে পারে।
ট্রাম্পের কূটনীতি নীরবে যুদ্ধের বিরোধিতা করা মধ্যপন্থীদের নতুন আশার সঞ্চার করেছে। তাঁদের রাজনৈতিক ক্ষমতা নেই, তবে এই ‘শান্তির সুবিধাভোগীরা’, যারা মূলত বেসরকারি ব্যবসায়ী, অর্থনীতিবিদ এবং প্রযুক্তিবিদ—আশা করছেন যে, ট্রাম্প ও তাঁর দল রাশিয়ার ভবিষ্যৎ পথ পরিবর্তন করতে পারবেন। পুতিনের মুখোমুখি হতে অক্ষম এই গোষ্ঠী ট্রাম্পকে বোঝাতে চায় যে, পশ্চিমাদের সঙ্গে রাশিয়ার সংঘাত প্রশমিত করা তাঁর নিরাপত্তার জন্য ক্ষতিকর হবে না; বরং তা আরও সুসংহত করবে।
অন্যদিকে আছে ‘যুদ্ধের সুবিধাভোগী গোষ্ঠী’। যদি সংঘাত পুতিন শাসনের ভিত্তি হয়, তবে সহিংসতা ও দুর্নীতি এর টিকে থাকার অন্যান্য উপাদান। অলিগার্কদের বিভিন্ন গোষ্ঠী নিষেধাজ্ঞার ফলে সৃষ্ট গ্রে মার্কেট বা পর্দার অন্তরালের বাজারে জ্বালানি তেল ও অন্যান্য পণ্য রপ্তানির কোটা থেকে লাভবান হয়। এক ধনকুবের রাশিয়ার এই বর্তমান অবস্থাকে ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর (আইআরজিসি) চোরাচালান প্রকল্পগুলোর সঙ্গে তুলনা করেছেন। রুশ অলিগার্করা তাদের লাভজনক ব্যবসা এত সহজে ছাড়বে না। নিরাপত্তা সংস্থাগুলো একদিকে এমন ‘ফিফথ কলাম’ বা ‘পঞ্চম স্তম্ভের’ সন্ধান করবে যারা শান্তির পক্ষে, আবার অন্যদিকে চরমপন্থী জাতীয়তাবাদীদেরও খুঁজবে, যারা যেকোনো সমঝোতাকে বিশ্বাসঘাতকতা হিসেবে দেখবে।
ট্রাম্প ‘হত্যাযজ্ঞ বন্ধ’ করতে চান এবং এ বিষয়ে তিনি সঠিক অবস্থানেই আছেন। যদি যুদ্ধবিরতি ইউক্রেন পুনর্গঠনের সুযোগ দেয়, ইউরোপের প্রতিরক্ষা ব্যয় বাড়ায় এবং রাশিয়ার দুর্বল অর্থনীতির ওপর পশ্চিমা কিছু নিষেধাজ্ঞা বজায় থাকে, তবে তা পুতিনের উচ্চাকাঙ্ক্ষাকে ব্যর্থ করলেও করতেও পারে। তবে পুতিন ‘বাজি ধরছেন’ যে, তিনি ইউক্রেনের চেয়ে দীর্ঘ সময় লড়াই চালিয়ে যেতে পারবেন, অথবা তিনি এমন একটি সমঝোতা ট্রাম্পের মাধ্যমে আদায় করতে পারবেন, যা রাশিয়াকে বিশ্ব অর্থনীতিতে পুনরায় যুক্ত হওয়ার সুযোগ দেবে, ইউক্রেনকে বিভক্ত ও আধা–ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করবে এবং ইউরোপকে এতটাই হতবাক করে দেবে যে, তারা নিজেদের রক্ষা করার সক্ষমতা হারাবে!
অনুবাদ করেছেন আব্দুর রহমান

রাশিয়ার ঢোল পেটানো আর কতিপয় ইউরোপীয়র হতাশা দেখে মনে হতে পারে, ভ্লাদিমির পুতিন কখনোই ইউক্রেন যুদ্ধ জয়ের এত কাছে ছিলেন না! কিন্তু আক্রমণের তিন বছর পরেও, ‘জয়’ বলতে তিনি আসলে কী বোঝাতে চান, তা স্পষ্ট নয়। তাঁর লক্ষ্যগুলোও অস্পষ্ট।
ইউক্রেনে পুতিনের ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ পরিকল্পনা করা হয়েছিল গোপনে। রুশ জনগণ তো বটেই, এমনকি সরকারের লোকেরাও অন্ধকারে ছিল! পুতিন রুশ সার্বভৌমত্ব রক্ষার কথা বলেছেন সে সময়। কিন্তু পরবর্তী পরিস্থিতি এমন কিছু বিষয়ের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে, যা তাঁর নিয়ন্ত্রণের বাইরে। যদিও গত ১৮ ফেব্রুয়ারি সৌদি আরবে ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে পুতিন প্রশাসনের আনুষ্ঠানিকভাবে আলোচনা শুরু হয়েছে। কিন্তু এরপরও ইউক্রেনের রাজনৈতিক বাস্তবতা, ইউরোপের পুনঃসশস্ত্রীকরণ প্রচেষ্টা এবং সর্বোপরি ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর পরিকল্পনায় জল ঢেলে দিতে পারে।
ইউক্রেনে যুদ্ধ বন্ধে ট্রাম্পের কোনো সুস্পষ্ট পরিকল্পনা নেই, অন্তত এখন পর্যন্ত তেমন কিছু প্রকাশ পায়নি। তবে তাঁর হাতে ইউক্রেন ইস্যুতে গ্রহণ করার মতো যথেষ্ট বিকল্প আছে। তিনি চাইলেই ইউক্রেনের জন্য সহায়তা সম্পূর্ণ বন্ধ করে দিতে পারেন, সেই সঙ্গে রাশিয়ার ওপরও নিষেধাজ্ঞা বাড়াতে পারেন। কিন্তু সম্ভবত সেসব কিছুই ঘটবে না। কারণ, আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ও পুতিনের মধ্যকার কূটনৈতিক কৌশলের নতুন পর্বের মহরত হলো রিয়াদে। রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ করার তিন বছর পর এই প্রথম আমেরিকা ও রাশিয়ার কর্মকর্তাদের মুখোমুখি বৈঠক হলো। তাঁরা ইউক্রেন এবং ‘পারস্পরিক ভূরাজনৈতিক স্বার্থ’ নিয়ে ধারাবাহিক আলোচনা শুরু করতে রাজি হয়েছেন। তবে আসলে কী আলোচিত হবে তা অস্পষ্ট। এ ছাড়া, ট্রাম্প–পুতিন বৈঠক আয়োজনের প্রস্তুতিও শুরু হবে শিগগির, যদিও এখনো কোনো তারিখ নির্ধারণ করা হয়নি।
এক মার্কিন কর্মকর্তা বলেছেন, এ ধরনের উন্মুক্ত ও অস্পষ্ট আলোচনা পুতিনের জন্য বেশ সুবিধাজনক। ট্রাম্প যেখানে এই আলোচনাকে দেখেন ‘অযৌক্তিক’ যুদ্ধের ইতি টানার উপায় হিসেবে, সেখানে পুতিন এগুলোকে সম্ভাব্য বৃহত্তর সংঘাতের একটি পর্যায় হিসেবে দেখছেন। রুশ নেতা হিসাব কষে দেখছেন, ইউক্রেন বা ন্যাটো জোটের চেয়ে তাঁর ধৈর্য ও সক্ষমতা বেশি। পোকার খেলোয়াড়ের মতো, পুতিন প্রয়োজনের সময় আত্মবিশ্বাস ও শক্তিমত্তার সঙ্গে কাজ করতে দক্ষ। কিন্তু বাস্তবে, তাঁর হাতে থাকা তাস ঠিক ততটা শক্তিশালী নয়, যতটা তিনি প্রতিপক্ষকে বিশ্বাস করাতে চান। অন্যদিকে, যুদ্ধের অবসান তাঁর জন্য নিজ দেশে নতুন জটিলতা তৈরি করতে পারে।
রাশিয়ার আলোচনার অবস্থান মূল্যায়নের যেকোনো প্রচেষ্টা অবশ্যই সামরিক পরিস্থিতি থেকে শুরু করা উচিত। দেশটির সেনাবাহিনী ইউক্রেনে খুব একটা ভালো দক্ষতা দেখাতে পারছে না। তাদের অগ্রগতি অত্যন্ত ধীর। গত বছরের জুলাই থেকে তারা পোকরোভস্ক শহর দখল করতে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু দখল করতে পারেনি। তাদের ক্ষয়ক্ষতিও হয়েছে ব্যাপক। রাশিয়ার বেশির ভাগ সামরিক অগ্রগতি যুদ্ধের প্রথম কয়েক সপ্তাহেই ঘটেছে। ২০২২ সালের এপ্রিলে ইউক্রেনের উত্তর থেকে রাশিয়ার পশ্চাদপসরণের পর, তারা ইউক্রেনের ১৯ দশমিক ৬ শতাংশ ভূখণ্ড নিয়ন্ত্রণ করছিল। সে সময় তাদের হতাহতের সংখ্যা ছিল আনুমানিক ২০ হাজার। বর্তমানে রাশিয়া ইউক্রেনের ১৯ দশমিক ২ শতাংশ এলাকা নিয়ন্ত্রণে রেখেছে এবং ব্রিটিশ গোয়েন্দা মূল্যায়ন অনুসারে, তাদের মোট হতাহতের সংখ্যা ৮ লাখে পৌঁছেছে। এক পশ্চিমা কর্মকর্তা বলেন, ‘দুই দেশের সেনাবাহিনী একে অপরের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে কারণ তারা থামতে পারছে না, কোনো পক্ষই আসলে চূড়ান্ত পরিণতি নির্ধারক জয় অর্জনের আশা করছে না।’
কেবল সেনা হতাহতের ঘটনাই নয়, রাশিয়ার সামরিক সরঞ্জামের ক্ষয়ক্ষতিও অবিশ্বাস্য মাত্রায় পৌঁছেছে। কয়েক দশক ধরে গড়ে তোলা সোভিয়েত আমলের সাঁজোয়া বহরের অবস্থাই তার প্রমাণ। মজুত থাকা ৭ হাজার ৩০০ ট্যাংকের অর্ধেকের বেশি ধ্বংস হয়ে গেছে। অবশিষ্ট যেগুলো আছে, তার মধ্যে মাত্র ৫০০টি দ্রুত সংস্কারের উপযোগী। এপ্রিলের মধ্যেই রাশিয়ার টি–৮০ ট্যাংকের মজুত শেষ হয়ে যেতে পারে। গত বছর রাশিয়া যতগুলো আর্টিলারি বা গোলন্দাজ ইউনিট হারিয়েছে, তার পরিমাণ আগের দুই বছরের সম্মিলিত ক্ষতির দ্বিগুণ। পেশাদার চুক্তিভিত্তিক সেনা নিয়োগের খরচ বাড়ছে, আর সাধারণ জনগণের ব্যাপক মোবিলাইজেশন (যুদ্ধের ময়দানে নামানো) রাজনৈতিকভাবে ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। জনমত জরিপ স্পষ্ট দেখাচ্ছে, রাশিয়ার জনগণ যুদ্ধের অবসান চায়।
রাশিয়ার অর্থনীতি নিষেধাজ্ঞার ধকল সামলে নিতে পেরেছে মূলত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দক্ষতা, উচ্চ পণ্যমূল্য এবং রাজস্ব প্রণোদনার কারণে। তবে উৎপাদনশীল খাত থেকে সামরিক খাতে সম্পদ স্থানান্তরের ফলে মূল্যস্ফীতি দুই অঙ্কের ঘরে পৌঁছে গেছে। সুদহার বর্তমানে ২১ শতাংশ, যা দুই দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ। শ্রমবাজারে দীর্ঘস্থায়ী ঘাটতি রয়ে গেছে। অর্থনৈতিক পরিসংখ্যানের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে, কারণ দেশটির পরিসংখ্যান কর্তৃপক্ষ নিয়মিত প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস সংশোধন করে থাকে।
তবে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের ফাঁস করা রাশিয়ার সেন্ট্রাল ব্যাংক ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের একটি প্রতিবেদনে সতর্ক করে বলা হয়েছে যে, মূল্যস্ফীতি কমার আগেই রাশিয়া মন্দার মুখে পড়তে পারে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক উপপ্রধান ওলেগ ভিউগিন বলেছেন, সরকারকে খুব দ্রুত সামরিক ব্যয় হ্রাস করা অথবা লাগামহীন মূল্যস্ফীতির মধ্যে যেকোনো একটি বেছে নিতে হবে।
সার্বভৌম সম্পদ তহবিল ক্রমাগত ফুরিয়ে যাচ্ছে। সাবেক অর্থমন্ত্রী মিখাইল জাদোরনভের মতে, এই তহবিলের তারল্য মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৭ দশমিক ৪ শতাংশ থেকে কমে ২ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে। গত বছর রাশিয়ার রপ্তানি আয় ছিল ৪১৭ বিলিয়ন ডলার। কিন্তু নিষেধাজ্ঞা এবং বিশ্ব বাজারে নিম্নমুখী পণ্যমূল্যের চাপের কারণে বেশ চাপে আছে। ডিসেম্বরে এটি বছরওয়ারি হিসাবে আগের বছরের তুলনায় ২০ শতাংশ কমেছে। রুশ থিংক ট্যাংক ‘রে–রাশিয়া’—এর গবেষক কিরিল রোগভ যুক্তি দিয়েছেন, নিষেধাজ্ঞার কারণে রাশিয়ার বড় রপ্তানি খাত ইস্পাত ও কৃষিপণ্যের ধীর গতিতে দরপতন রাশিয়ার আগ্রাসনের সক্ষমতাকে সীমিত করবে।
রাশিয়ার এ ধরনের দুর্বলতা থাকার বিষয়টি পশ্চিমাদের মধ্যে অনেককে বিশ্বাস করাচ্ছে যে, আমেরিকা ক্রেমলিনকে যুদ্ধ বন্ধে যে ছাড় দিতে যাচ্ছে বা চাচ্ছে তা আসলে খুব একটা ভালো নয়। যদিও পশ্চিমারা ইউক্রেনকে নিশ্চিত নিরাপত্তার গ্যারান্টি দিতে সক্ষম নাও হতে পারে, তবে তারা রাশিয়াকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে নিষেধাজ্ঞা বহাল রাখতে পারে বলে যুক্তি দিচ্ছেন রোগভ।
তবে ট্রাম্পের লক্ষ্য দীর্ঘ সময় ধরে রাশিয়াকে দমিয়ে রাখা বা প্রতিহত করা নয়, বরং তিনি দ্রুত যুদ্ধের সমাপ্তির প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে মনোযোগী। এক মার্কিন কর্মকর্তা বলেন, ‘শেষ পর্যন্ত আমরা পুতিনকে সেই অবস্থানে নিয়ে এসেছি, যেখানে তাঁকে দেখতে চেয়েছিলাম গত তিন বছর ধরে। এখন যদি আমরা তাঁকে পরাজয়ের মুখ থেকে জয়ের সুযোগ করে দিই, তাহলে সেটা ভয়াবহ লজ্জার বিষয় হবে।’
পুতিন বিশ্বাস করেন, ট্রাম্প কেবল অস্থির প্রকৃতিরই নন, তাঁকে সহজে প্রভাবিতও করা যায়। প্রশংসা ও তাৎক্ষণিক সুবিধা দিয়ে তিনি আমেরিকার প্রেসিডেন্টকে আকৃষ্ট করেছেন। গত ১১ ফেব্রুয়ারি পুতিন ২০২১ সাল থেকে রাশিয়ায় বন্দী থাকা মার্কিন নাগরিক মার্ক ফোগেলকে মুক্তি দেন। তবে পুতিনের মৌলিক দাবি অপরিবর্তিত। তাঁর এসব দাবির মধ্যে—একটি নিরপেক্ষ ইউক্রেন, যার সামরিক বাহিনী আকার ও সরঞ্জামের দিক থেকে সীমিত থাকবে এবং যেখানে পশ্চিমা সেনাদের উপস্থিতি থাকবে না। তিনি চান, ক্রিমিয়া ও অন্য চারটি অধিকৃত ইউক্রেনীয় প্রদেশকে রাশিয়ার অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হোক।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, পুতিন ২০২৪ সালের জুনে ইউক্রেন সংকট নিরসনে যে দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেন তার মূল কথা হলো—তিনি এমন কোনো সাময়িক যুদ্ধবিরতি বা অস্ত্রবিরতি চান না, যা কার্যত রাশিয়ার ওপর পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞাগুলো বহাল রাখবে এবং ইউক্রেনকে পুনরায় অস্ত্রসজ্জিত হওয়ার সুযোগ দেবে। বরং, পুতিন একটি ‘চূড়ান্ত সমাধান’ চান, যার মাধ্যমে রাশিয়ার ওপর আরোপিত পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হবে এবং মস্কো সামরিক শক্তি পুনর্গঠনের সুযোগ পাবে।
তবে বাস্তবতা হলো, রণক্ষেত্রের যুদ্ধ বন্ধ হলেও, পুতিন ইউরোপকে দুর্বল করার এবং রাশিয়ার প্রভাব বলয় পুনর্গঠনের চেষ্টা চালিয়ে যাবেন। ন্যাটোর ইউরোপ চ্যাপ্টারে সুপ্রিম অ্যালাইড কমান্ডারের উপদেষ্টা স্টিভ কোভিংটনের মতে, পুতিনের লক্ষ্য হলো ইউক্রেনকে গুঁড়িয়ে দেওয়া এবং ১৯৪৫—পরবর্তী মার্কিন–নেতৃত্বাধীন বিশ্বব্যবস্থাকে ধ্বংস করা।
গত বছর নিজ দেশের কূটনীতিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় পুতিন বলেছিলেন, ‘সমগ্র ইউরো–আটলান্টিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা আমাদের চোখের সামনে ভেঙে পড়ছে। ইউরোপ বৈশ্বিক অর্থনৈতিক বিকাশে একঘরে হয়ে পড়ছে, বিশৃঙ্খলার মধ্যে ডুবে যাচ্ছে...এবং আন্তর্জাতিক সক্ষমতা ও সাংস্কৃতিক পরিচয় হারাচ্ছে।’
পুতিন নিশ্চিতভাবেই খুশি হয়েছেন, যখন গত ১৫ ফেব্রুয়ারি মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনে আমেরিকার ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি. ভ্যান্স একই মন্তব্যের প্রতিধ্বনি করেছেন। ২০০৭ সালে এই একই সম্মেলনে পুতিন প্রথমবারের মতো ঘোষণা করেছিলেন, তিনি পশ্চিমাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অবতীর্ণ হবেন। ক্রেমলিন অবশ্যই আশা করছে যে, রাশিয়া ঘেঁষা ডানপন্থী রাজনৈতিক দলগুলো—যাদের প্রতি ভ্যান্সেরও সমর্থন আছে—ইউরোপের নির্বাচনে শক্তিশালী অবস্থান গড়ে তুলবে।
ক্রেমলিনের সামনে গ্রেমলিন
পশ্চিমা দুনিয়ায় ‘গ্রেমলিন’ মূলত লোককথায় প্রচলিত একটি দুষ্টু ও রহস্যময় প্রাণী। আধুনিক সংস্কৃতিতে, বিশেষ করে সিনেমা ও সাহিত্যে গ্রেমলিনকে ব্যাপকভাবে তুলে ধরা হয়েছে। সহজ ভাষায় বলতে গেলে, গ্রেমলিন হলো একপ্রকার কাল্পনিক, ছোটখাটো, দুষ্টু প্রকৃতির প্রাণী, যাদের কাজ হলো যন্ত্রপাতির ক্ষতি করা বা গোলমাল তৈরি করা। বিশ শতকের দিকে মূলত উড়োজাহাজ শিল্পকে কেন্দ্র করে এই কল্পকথা তৈরি হয়।
পুতিনের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার হলো ক্ষমতায় টিকে থাকা। যুদ্ধ থেকে বের হয়ে আসার নিজস্ব ঝুঁকি আছে। বিশেষ করে যুদ্ধ শেষ হয়ে যাওয়ার পর লাখ লাখ সেনা ঘরে ফিরবে, তাঁদের ভরণ-পোষণ এবং বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে ক্ষমতার লড়াই তাঁকে বিচলিত করতে পারে।
ট্রাম্পের কূটনীতি নীরবে যুদ্ধের বিরোধিতা করা মধ্যপন্থীদের নতুন আশার সঞ্চার করেছে। তাঁদের রাজনৈতিক ক্ষমতা নেই, তবে এই ‘শান্তির সুবিধাভোগীরা’, যারা মূলত বেসরকারি ব্যবসায়ী, অর্থনীতিবিদ এবং প্রযুক্তিবিদ—আশা করছেন যে, ট্রাম্প ও তাঁর দল রাশিয়ার ভবিষ্যৎ পথ পরিবর্তন করতে পারবেন। পুতিনের মুখোমুখি হতে অক্ষম এই গোষ্ঠী ট্রাম্পকে বোঝাতে চায় যে, পশ্চিমাদের সঙ্গে রাশিয়ার সংঘাত প্রশমিত করা তাঁর নিরাপত্তার জন্য ক্ষতিকর হবে না; বরং তা আরও সুসংহত করবে।
অন্যদিকে আছে ‘যুদ্ধের সুবিধাভোগী গোষ্ঠী’। যদি সংঘাত পুতিন শাসনের ভিত্তি হয়, তবে সহিংসতা ও দুর্নীতি এর টিকে থাকার অন্যান্য উপাদান। অলিগার্কদের বিভিন্ন গোষ্ঠী নিষেধাজ্ঞার ফলে সৃষ্ট গ্রে মার্কেট বা পর্দার অন্তরালের বাজারে জ্বালানি তেল ও অন্যান্য পণ্য রপ্তানির কোটা থেকে লাভবান হয়। এক ধনকুবের রাশিয়ার এই বর্তমান অবস্থাকে ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর (আইআরজিসি) চোরাচালান প্রকল্পগুলোর সঙ্গে তুলনা করেছেন। রুশ অলিগার্করা তাদের লাভজনক ব্যবসা এত সহজে ছাড়বে না। নিরাপত্তা সংস্থাগুলো একদিকে এমন ‘ফিফথ কলাম’ বা ‘পঞ্চম স্তম্ভের’ সন্ধান করবে যারা শান্তির পক্ষে, আবার অন্যদিকে চরমপন্থী জাতীয়তাবাদীদেরও খুঁজবে, যারা যেকোনো সমঝোতাকে বিশ্বাসঘাতকতা হিসেবে দেখবে।
ট্রাম্প ‘হত্যাযজ্ঞ বন্ধ’ করতে চান এবং এ বিষয়ে তিনি সঠিক অবস্থানেই আছেন। যদি যুদ্ধবিরতি ইউক্রেন পুনর্গঠনের সুযোগ দেয়, ইউরোপের প্রতিরক্ষা ব্যয় বাড়ায় এবং রাশিয়ার দুর্বল অর্থনীতির ওপর পশ্চিমা কিছু নিষেধাজ্ঞা বজায় থাকে, তবে তা পুতিনের উচ্চাকাঙ্ক্ষাকে ব্যর্থ করলেও করতেও পারে। তবে পুতিন ‘বাজি ধরছেন’ যে, তিনি ইউক্রেনের চেয়ে দীর্ঘ সময় লড়াই চালিয়ে যেতে পারবেন, অথবা তিনি এমন একটি সমঝোতা ট্রাম্পের মাধ্যমে আদায় করতে পারবেন, যা রাশিয়াকে বিশ্ব অর্থনীতিতে পুনরায় যুক্ত হওয়ার সুযোগ দেবে, ইউক্রেনকে বিভক্ত ও আধা–ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করবে এবং ইউরোপকে এতটাই হতবাক করে দেবে যে, তারা নিজেদের রক্ষা করার সক্ষমতা হারাবে!
অনুবাদ করেছেন আব্দুর রহমান

বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
২০ ঘণ্টা আগে
নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে।
১ দিন আগে
ইমরান খানকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে।
৫ দিন আগে
ইরানের সঙ্গে নতুন করে বড় ধরনের সামরিক সংঘাতের আশঙ্কা ঘনীভূত হচ্ছে—এমন ইঙ্গিতই দিচ্ছে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক তৎপরতা। দেশটির পার্লামেন্টের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা কমিটির এক গোপন বৈঠকে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা ইরানের সঙ্গে সম্ভাব্য নতুন যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে বিস্তারিত...
৫ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ভেনেজুয়েলার তেল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ—এমন মন্তব্য করে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাডভাইজার ও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহযোগী স্টিফেন মিলার।
গতকাল বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে মিলার বলেন, ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প গড়ে উঠেছে ‘আমেরিকার শ্রম, উদ্ভাবন ও ঘামের’ ওপর আর সেটা রাষ্ট্রায়ত্ত করে নেওয়াকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদের সবচেয়ে বড় ‘চুরি’ বলে অভিহিত করেন। মিলারের এই মন্তব্যের ঠিক এক দিন আগে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ঘোষণা দেন—ভেনেজুয়েলায় প্রবেশ ও সেখান থেকে বের হওয়া সব তেলবাহী জাহাজের ওপর ‘সম্পূর্ণ ও সর্বাত্মক অবরোধ’ আরোপ করা হচ্ছে।
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার উপকূলের কাছাকাছি কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় সামরিক উপস্থিতি গড়ে তুলেছে যুক্তরাষ্ট্র। গত সেপ্টেম্বর থেকে মাদক পাচারের অভিযোগে বেশ কয়েকটি নৌযানে হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। এতে এখন পর্যন্ত অন্তত ৯০ জন নিহত হয়েছেন। ট্রাম্প প্রশাসন দাবি করছে, এসব নৌকা যুক্তরাষ্ট্রে বিপুল পরিমাণ মাদক পাচার করছিল এবং তা মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি। তবে এই অভিযোগের পক্ষে কোনো প্রমাণ তারা দেয়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোকেনসহ মাদক যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছানোর প্রধান উৎস ভেনেজুয়েলা নয়। ফলে অনেকের মতে, এর পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রকৃত লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল নিয়ন্ত্রণ এবং নিকোলাস মাদুরোকে ক্ষমতা থেকে সরানো।
মিলার কী বলেছেন
গতকাল বুধবার এক্সে দেওয়া পোস্টে স্টিফেন মিলার লেখেন, ‘আমেরিকার শ্রম, মেধা ও পরিশ্রমই ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প সৃষ্টি করেছে। এই শিল্প জোরপূর্বক রাষ্ট্রায়ত্ত করা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ ও সম্পত্তির ইতিহাসের সবচেয়ে বড় চুরি। আর সেই লুণ্ঠিত সম্পদ সন্ত্রাসবাদে অর্থ জোগাতে এবং আমাদের দেশের রাস্তায় খুনি, ভাড়াটে যোদ্ধা ও মাদক ছড়িয়ে দিতে ব্যবহৃত হয়েছে।’
মিলার তাঁর পোস্টে ট্রাম্পের আগের একটি বক্তব্যও যুক্ত করেন, যেখানে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের তেল, ভূমি ও অন্যান্য সম্পদ ‘চুরি’ করার অভিযোগ তোলেন। ওই পোস্টে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার সরকারকে ‘বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন’ ঘোষণা করেন এবং দেশটির তেল ট্যাংকারগুলোর ওপর সম্পূর্ণ অবরোধের নির্দেশ দেন।
মিলার আরও বলেন, ভেনেজুয়েলা থেকে আসা অভিবাসীদের দ্রুত যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠানো হবে এবং সব ‘চুরি হওয়া সম্পদ’ অবিলম্বে যুক্তরাষ্ট্রকে ফিরিয়ে দিতে হবে।
ভেনেজুয়েলায় কী পরিমাণ তেল রয়েছে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলেই বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
২০২৩ সালের হিসাবে ভেনেজুয়েলার তেল মজুতের পরিমাণ প্রায় ৩০৩ বিলিয়ন ব্যারেল—যা বিশ্বে সর্বাধিক। তবে উৎপাদন ও রপ্তানি কমে যাওয়ায় দেশটি এখন তেল থেকে আগের মতো আয় করতে পারছে না।
অবজারভেটরি অব ইকোনমিক কমপ্লেক্সের (ওইসি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ভেনেজুয়েলার অপরিশোধিত তেল রপ্তানির মূল্য ছিল মাত্র ৪ দশমিক শূন্য ৫ বিলিয়ন ডলার। একই সময়ে সৌদি আরব রপ্তানি করেছে ১৮১ বিলিয়ন ডলার, যুক্তরাষ্ট্র ১২৫ বিলিয়ন ডলার ও রাশিয়া ১২২ বিলিয়ন ডলার।
যুক্তরাষ্ট্র কেন ভেনেজুয়েলার তেলের ওপর দাবি করছে
২০ শতকের শুরুর দিকে ভেনেজুয়েলায় তেল অনুসন্ধান শুরু করে মার্কিন কোম্পানিগুলো। ১৯২২ সালে ভেনেজুয়েলার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের মারাকাইবো হ্রদ এলাকায় প্রথম বড় তেলক্ষেত্র আবিষ্কার করে রয়্যাল ডাচ শেল।
এরপর যুক্তরাষ্ট্র ভেনেজুয়েলার তেল উত্তোলন ও উন্নয়নে বড় ধরনের বিনিয়োগ শুরু করে। স্ট্যান্ডার্ড অয়েলের মতো কোম্পানিগুলো চুক্তিভিত্তিকভাবে কাজ করে ভেনেজুয়েলাকে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ তেল সরবরাহকারীতে পরিণত করে।
১৯৬০ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর ওপেক গঠনের সময় ভেনেজুয়েলা ছিল এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। তবে ১৯৭৬ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট কার্লোস আন্দ্রেস পেরেজ তেলশিল্প রাষ্ট্রায়ত্ত করেন এবং পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলা (পিডিভিএসএ) প্রতিষ্ঠা করেন।
পরে হুগো শাভেজ ক্ষমতায় এসে সব বিদেশি তেলসম্পদ জাতীয়করণ করেন। কিন্তু রাজনৈতিক লক্ষ্যকে অগ্রাধিকার দেওয়া, অব্যবস্থাপনা ও বিনিয়োগের অভাবে তেল উৎপাদন ক্রমেই কমতে থাকে।
কবে থেকে নিষেধাজ্ঞা
২০০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র প্রথম ভেনেজুয়েলার তেলশিল্পের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। পরে নিকোলাস মাদুরোর শাসনামলে ২০১৭ ও ২০১৯ সালে নিষেধাজ্ঞা আরও কঠোর করা হয়। এই নিষেধাজ্ঞার ফলে ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি প্রায় বন্ধ হয়ে যায় এবং দেশটি চীন, ভারত ও কিউবার দিকে ঝুঁকে পড়ে।
ভেনেজুয়েলার তেল আমাদের সম্পদ—যুক্তরাষ্ট্রের এমন দাবির কি কোনো আইনি ভিত্তি আছে
না, নেই। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র তার ভূখণ্ডের প্রাকৃতিক সম্পদের মালিক। এই নীতির নাম ‘স্থায়ী প্রাকৃতিক সম্পদে সার্বভৌম অধিকার’ (Permanent Sovereignty over Natural Resources)।
১৯৬২ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের একটি প্রস্তাবে এই নীতি স্বীকৃতি পায়। সে অনুযায়ী, ভেনেজুয়েলার তেল সম্পূর্ণভাবে ভেনেজুয়েলারই। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে এ তেলের ওপর দাবি জানানো আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী।
তাহলে শেভরন কেন কাজ করছে
যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও হিউস্টনভিত্তিক তেল কোম্পানি শেভরন ভেনেজুয়েলায় কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। সাধারণত বিদেশি কোম্পানিগুলো ভেনেজুয়েলায় সরাসরি তেলক্ষেত্রের মালিক হতে পারে না। যুক্তরাষ্ট্রের শেভরন পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলার (পিডিভিএসএ) সঙ্গে যৌথভাবে তেল উৎপাদন করে এবং উৎপাদিত তেলের একটি অংশ পায়।
২০২২ সালে জো বাইডেন প্রশাসন শেভরনকে বিশেষ লাইসেন্স দেয়, যাতে তারা নিষেধাজ্ঞার বাইরে থেকে কাজ করতে পারে। চলতি বছর ট্রাম্প প্রশাসন সেই নিষেধাজ্ঞা ছাড় নবায়ন করেছে।
শেভরন দীর্ঘদিন ধরে ভেনেজুয়েলায় কার্যক্রম চালাচ্ছে এবং সেখানে তাদের বিপুল সম্পদ রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি সরে গেলে সেই সম্পদ রাষ্ট্রের হাতে চলে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে—যা অতীতে এক্সন, কারগিল ও হিলটনের মতো কোম্পানির ক্ষেত্রে ঘটেছে।
ট্রাম্প প্রশাসন মূলত ঐতিহাসিকভাবে মার্কিন কোম্পানিগুলোর করা বিনিয়োগ ও পরে তা বাজেয়াপ্ত হওয়াকে কেন্দ্র করে এই ‘মালিকানা’ দাবি করছে। তবে বর্তমান বিশ্বব্যবস্থায় ও আন্তর্জাতিক আইনে কোনো দেশের সম্পদ অন্য দেশের মালিকানাধীন হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এটি মূলত ভেনেজুয়েলায় শাসনব্যবস্থা পরিবর্তন ও তেলের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার একটি ভূরাজনৈতিক কৌশল।
আল-জাজিরা থেকে অনুবাদ করেছেন জগৎপতি বর্মা

ভেনেজুয়েলার তেল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ—এমন মন্তব্য করে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাডভাইজার ও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহযোগী স্টিফেন মিলার।
গতকাল বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে মিলার বলেন, ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প গড়ে উঠেছে ‘আমেরিকার শ্রম, উদ্ভাবন ও ঘামের’ ওপর আর সেটা রাষ্ট্রায়ত্ত করে নেওয়াকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদের সবচেয়ে বড় ‘চুরি’ বলে অভিহিত করেন। মিলারের এই মন্তব্যের ঠিক এক দিন আগে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ঘোষণা দেন—ভেনেজুয়েলায় প্রবেশ ও সেখান থেকে বের হওয়া সব তেলবাহী জাহাজের ওপর ‘সম্পূর্ণ ও সর্বাত্মক অবরোধ’ আরোপ করা হচ্ছে।
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার উপকূলের কাছাকাছি কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় সামরিক উপস্থিতি গড়ে তুলেছে যুক্তরাষ্ট্র। গত সেপ্টেম্বর থেকে মাদক পাচারের অভিযোগে বেশ কয়েকটি নৌযানে হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। এতে এখন পর্যন্ত অন্তত ৯০ জন নিহত হয়েছেন। ট্রাম্প প্রশাসন দাবি করছে, এসব নৌকা যুক্তরাষ্ট্রে বিপুল পরিমাণ মাদক পাচার করছিল এবং তা মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি। তবে এই অভিযোগের পক্ষে কোনো প্রমাণ তারা দেয়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোকেনসহ মাদক যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছানোর প্রধান উৎস ভেনেজুয়েলা নয়। ফলে অনেকের মতে, এর পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রকৃত লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল নিয়ন্ত্রণ এবং নিকোলাস মাদুরোকে ক্ষমতা থেকে সরানো।
মিলার কী বলেছেন
গতকাল বুধবার এক্সে দেওয়া পোস্টে স্টিফেন মিলার লেখেন, ‘আমেরিকার শ্রম, মেধা ও পরিশ্রমই ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প সৃষ্টি করেছে। এই শিল্প জোরপূর্বক রাষ্ট্রায়ত্ত করা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ ও সম্পত্তির ইতিহাসের সবচেয়ে বড় চুরি। আর সেই লুণ্ঠিত সম্পদ সন্ত্রাসবাদে অর্থ জোগাতে এবং আমাদের দেশের রাস্তায় খুনি, ভাড়াটে যোদ্ধা ও মাদক ছড়িয়ে দিতে ব্যবহৃত হয়েছে।’
মিলার তাঁর পোস্টে ট্রাম্পের আগের একটি বক্তব্যও যুক্ত করেন, যেখানে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের তেল, ভূমি ও অন্যান্য সম্পদ ‘চুরি’ করার অভিযোগ তোলেন। ওই পোস্টে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার সরকারকে ‘বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন’ ঘোষণা করেন এবং দেশটির তেল ট্যাংকারগুলোর ওপর সম্পূর্ণ অবরোধের নির্দেশ দেন।
মিলার আরও বলেন, ভেনেজুয়েলা থেকে আসা অভিবাসীদের দ্রুত যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠানো হবে এবং সব ‘চুরি হওয়া সম্পদ’ অবিলম্বে যুক্তরাষ্ট্রকে ফিরিয়ে দিতে হবে।
ভেনেজুয়েলায় কী পরিমাণ তেল রয়েছে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলেই বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
২০২৩ সালের হিসাবে ভেনেজুয়েলার তেল মজুতের পরিমাণ প্রায় ৩০৩ বিলিয়ন ব্যারেল—যা বিশ্বে সর্বাধিক। তবে উৎপাদন ও রপ্তানি কমে যাওয়ায় দেশটি এখন তেল থেকে আগের মতো আয় করতে পারছে না।
অবজারভেটরি অব ইকোনমিক কমপ্লেক্সের (ওইসি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ভেনেজুয়েলার অপরিশোধিত তেল রপ্তানির মূল্য ছিল মাত্র ৪ দশমিক শূন্য ৫ বিলিয়ন ডলার। একই সময়ে সৌদি আরব রপ্তানি করেছে ১৮১ বিলিয়ন ডলার, যুক্তরাষ্ট্র ১২৫ বিলিয়ন ডলার ও রাশিয়া ১২২ বিলিয়ন ডলার।
যুক্তরাষ্ট্র কেন ভেনেজুয়েলার তেলের ওপর দাবি করছে
২০ শতকের শুরুর দিকে ভেনেজুয়েলায় তেল অনুসন্ধান শুরু করে মার্কিন কোম্পানিগুলো। ১৯২২ সালে ভেনেজুয়েলার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের মারাকাইবো হ্রদ এলাকায় প্রথম বড় তেলক্ষেত্র আবিষ্কার করে রয়্যাল ডাচ শেল।
এরপর যুক্তরাষ্ট্র ভেনেজুয়েলার তেল উত্তোলন ও উন্নয়নে বড় ধরনের বিনিয়োগ শুরু করে। স্ট্যান্ডার্ড অয়েলের মতো কোম্পানিগুলো চুক্তিভিত্তিকভাবে কাজ করে ভেনেজুয়েলাকে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ তেল সরবরাহকারীতে পরিণত করে।
১৯৬০ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর ওপেক গঠনের সময় ভেনেজুয়েলা ছিল এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। তবে ১৯৭৬ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট কার্লোস আন্দ্রেস পেরেজ তেলশিল্প রাষ্ট্রায়ত্ত করেন এবং পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলা (পিডিভিএসএ) প্রতিষ্ঠা করেন।
পরে হুগো শাভেজ ক্ষমতায় এসে সব বিদেশি তেলসম্পদ জাতীয়করণ করেন। কিন্তু রাজনৈতিক লক্ষ্যকে অগ্রাধিকার দেওয়া, অব্যবস্থাপনা ও বিনিয়োগের অভাবে তেল উৎপাদন ক্রমেই কমতে থাকে।
কবে থেকে নিষেধাজ্ঞা
২০০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র প্রথম ভেনেজুয়েলার তেলশিল্পের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। পরে নিকোলাস মাদুরোর শাসনামলে ২০১৭ ও ২০১৯ সালে নিষেধাজ্ঞা আরও কঠোর করা হয়। এই নিষেধাজ্ঞার ফলে ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি প্রায় বন্ধ হয়ে যায় এবং দেশটি চীন, ভারত ও কিউবার দিকে ঝুঁকে পড়ে।
ভেনেজুয়েলার তেল আমাদের সম্পদ—যুক্তরাষ্ট্রের এমন দাবির কি কোনো আইনি ভিত্তি আছে
না, নেই। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র তার ভূখণ্ডের প্রাকৃতিক সম্পদের মালিক। এই নীতির নাম ‘স্থায়ী প্রাকৃতিক সম্পদে সার্বভৌম অধিকার’ (Permanent Sovereignty over Natural Resources)।
১৯৬২ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের একটি প্রস্তাবে এই নীতি স্বীকৃতি পায়। সে অনুযায়ী, ভেনেজুয়েলার তেল সম্পূর্ণভাবে ভেনেজুয়েলারই। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে এ তেলের ওপর দাবি জানানো আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী।
তাহলে শেভরন কেন কাজ করছে
যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও হিউস্টনভিত্তিক তেল কোম্পানি শেভরন ভেনেজুয়েলায় কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। সাধারণত বিদেশি কোম্পানিগুলো ভেনেজুয়েলায় সরাসরি তেলক্ষেত্রের মালিক হতে পারে না। যুক্তরাষ্ট্রের শেভরন পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলার (পিডিভিএসএ) সঙ্গে যৌথভাবে তেল উৎপাদন করে এবং উৎপাদিত তেলের একটি অংশ পায়।
২০২২ সালে জো বাইডেন প্রশাসন শেভরনকে বিশেষ লাইসেন্স দেয়, যাতে তারা নিষেধাজ্ঞার বাইরে থেকে কাজ করতে পারে। চলতি বছর ট্রাম্প প্রশাসন সেই নিষেধাজ্ঞা ছাড় নবায়ন করেছে।
শেভরন দীর্ঘদিন ধরে ভেনেজুয়েলায় কার্যক্রম চালাচ্ছে এবং সেখানে তাদের বিপুল সম্পদ রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি সরে গেলে সেই সম্পদ রাষ্ট্রের হাতে চলে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে—যা অতীতে এক্সন, কারগিল ও হিলটনের মতো কোম্পানির ক্ষেত্রে ঘটেছে।
ট্রাম্প প্রশাসন মূলত ঐতিহাসিকভাবে মার্কিন কোম্পানিগুলোর করা বিনিয়োগ ও পরে তা বাজেয়াপ্ত হওয়াকে কেন্দ্র করে এই ‘মালিকানা’ দাবি করছে। তবে বর্তমান বিশ্বব্যবস্থায় ও আন্তর্জাতিক আইনে কোনো দেশের সম্পদ অন্য দেশের মালিকানাধীন হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এটি মূলত ভেনেজুয়েলায় শাসনব্যবস্থা পরিবর্তন ও তেলের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার একটি ভূরাজনৈতিক কৌশল।
আল-জাজিরা থেকে অনুবাদ করেছেন জগৎপতি বর্মা

পুতিন ‘বাজি ধরছেন’ যে, তিনি ইউক্রেনের চেয়ে দীর্ঘ সময় লড়াই চালিয়ে যেতে পারবেন, অথবা তিনি এমন একটি সমঝোতা ট্রাম্পের মাধ্যমে আদায় করতে পারবেন, যা রাশিয়াকে বিশ্ব অর্থনীতিতে পুনরায় যুক্ত হওয়ার সুযোগ দেবে, ইউক্রেনকে বিভক্ত ও আধা–ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করবে এবং ইউরোপকে এতটাই হতবাক করে দেবে যে...
১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে।
১ দিন আগে
ইমরান খানকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে।
৫ দিন আগে
ইরানের সঙ্গে নতুন করে বড় ধরনের সামরিক সংঘাতের আশঙ্কা ঘনীভূত হচ্ছে—এমন ইঙ্গিতই দিচ্ছে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক তৎপরতা। দেশটির পার্লামেন্টের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা কমিটির এক গোপন বৈঠকে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা ইরানের সঙ্গে সম্ভাব্য নতুন যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে বিস্তারিত...
৫ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে। সোভিয়েত আমলের পরিত্যক্ত সমরাস্ত্রের ভান্ডার থেকে শুরু করে আজকের আধুনিক ড্রোনের যুদ্ধক্ষেত্র—এই তিন দশকে ইউক্রেন ও চীনের সম্পর্ক এক অদ্ভুত ও জটিল আবর্তে ঘুরপাক খেয়েছে।
ইউক্রেনের সমরাস্ত্র ইতিহাসের এক অনন্য অধ্যায় হলো ১৯৯৮ সালে চীনের কাছে সোভিয়েত আমলের ‘ভারিয়াগ’ রণতরি বিক্রি। ইউক্রেনের মাইকোলাইভ বন্দরে পড়ে থাকা এই বিশাল জাহাজটি বেইজিং কিনেছিল মাত্র ২০ মিলিয়ন ডলারে। অবশ্য আজকের একটি আধুনিক যুদ্ধজাহাজের মূল্যের তুলনায় এটি অতি নগণ্য। বেইজিং তখন দাবি করেছিল, জাহাজটি একটি ভাসমান ক্যাসিনো ও পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হবে। কিন্তু কয়েক বছর পরই বিশ্ববাসী অবাক হয়ে দেখল, সেই পরিত্যক্ত ভারিয়াগই রূপান্তরিত হয়েছে চীনের প্রথম শক্তিশালী বিমানবাহী রণতরিতে, নাম তার ‘লিয়াওনিং’।
শুধু রণতরিই নয়, চীনের আধুনিক প্রতিরক্ষা শিল্পকে গড়ে তুলতে কিয়েভের কারিগরি সহায়তা ছিল অভাবনীয়। ইউক্রেন থেকে চীনে পাড়ি জমিয়েছে আরও অনেক প্রযুক্তি। এর মধ্যে রয়েছে: হেলিকপ্টার এবং শক্তিশালী ট্যাংক ইঞ্জিনের নকশা ও উৎপাদন প্রযুক্তি; চীনের নৌবাহিনীর গ্যাস টারবাইন এবং বিমানবিধ্বংসী রাডার ব্যবস্থার মূল কারিগরি জ্ঞান।
ইউক্রেন স্বীকার করেছে যে তারা একসময় অবৈধভাবে পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম ছয়টি ‘কেএইচ-৫৫’ ক্রুজ মিসাইল বেইজিংয়ে পাঠিয়েছিল। এটি চীনের দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতাকে কয়েক দশক এগিয়ে দেয়।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের বর্তমান প্রেক্ষাপটে সম্পর্কের এই গতিপ্রকৃতি ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে গেছে। আজ ইউক্রেনীয় ড্রোন বিশেষজ্ঞরা সরাসরি স্বীকার করছেন, যুদ্ধের ভাগ্য এখন বেইজিংয়ের হাতে। কিয়েভের ড্রোন যুদ্ধের অগ্রপথিক আন্দ্রেই প্রোনিন আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘চীন চাইলে মাত্র এক দিনে এই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ বন্ধ করতে পারে। তারা শুধু আমাদের অথবা রুশদের কাছে ড্রোন যন্ত্রাংশ রপ্তানি বন্ধ করে দিলেই হলো।’
ইউক্রেনের আকাশে আজ যে লাখ লাখ ড্রোন উড়ছে, তার প্রতিটি উপাদানে চীনের ছাপ রয়েছে। ড্রোনের ফ্রেম, মোটর, ফ্লাইট কন্ট্রোলার, লিথিয়াম ব্যাটারি এবং নেভিগেশন মডিউল—সবই মূলত চীনা কারখানায় তৈরি।
‘স্নেক আইল্যান্ড’ নামক একটি সামরিক গবেষণা সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইউক্রেনীয় ড্রোন শিল্প এখন পুরোপুরি চীনা আমদানির ওপর নির্ভরশীল। বিশেষ করে নিওডিয়ামিয়াম ম্যাগনেট এবং থার্মাল সেন্সরের মতো জটিল কাঁচামালের ক্ষেত্রে চীনের একচেটিয়া প্রভাব কিয়েভকে এক কঠিন রাজনৈতিক চাপে রেখেছে।
ইউক্রেনীয় নীতিনির্ধারকেরা মনে করেন, যুদ্ধের পর ধ্বংসস্তূপ থেকে দেশ পুনর্গঠনে চীনই হতে পারে সবচেয়ে বড় কৌশলগত অংশীদার। ২০১১ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ভিক্তর ইয়ানুকোভিচের আমলে চীনের সঙ্গে যে ‘কৌশলগত অংশীদারি’ শুরু হয়েছিল, কিয়েভ এখন তার আধুনিক সংস্করণ চাচ্ছে।
এ ছাড়া চীনের উচ্চাভিলাষী বেল্ট অ্যান্ড রোড (বিআরআই) প্রকল্পের জন্য ইউক্রেনের ভৌগোলিক অবস্থান অত্যন্ত আকর্ষণীয়। ইউক্রেনকে উত্তর-পূর্ব চীন থেকে কাজাখস্তান ও ককেশাস হয়ে ইউরোপে পৌঁছানোর প্রধান লজিস্টিক হাব বা ‘সেতুবন্ধনকারী দেশ’ হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে বেইজিংয়ের।
তবে বিশ্লেষক ইগার তিশকেভিচের মতে, চীনকে ইউরোপীয় বাজারে উন্নততর প্রবেশের সুযোগ দিতে ইউক্রেনকে তার সোভিয়েত আমলের চওড়া রেললাইন বদলে পশ্চিমা মানদণ্ডের ন্যারো গেজ ট্র্যাকে রূপান্তর করতে হবে।
যুদ্ধের মধ্যেও চীন এখনো ইউক্রেনীয় ইস্পাত, ভোজ্যতেল এবং সয়াবিনের প্রধান ক্রেতা। এই বাণিজ্যই বর্তমানে ইউক্রেনের যুদ্ধবিধ্বস্ত অর্থনীতিকে কোনোমতে সচল রেখেছে।
বিশ্লেষক অ্যালেক্সি কুশের মতে, চীনের সঙ্গে সম্পর্ক পুনরুদ্ধার করতে ব্যর্থ হওয়া ইউক্রেনের জন্য একটি ঐতিহাসিক ভুল হতে পারে। তিনি মনে করেন, ইউক্রেনের কূটনীতি কেবল পশ্চিমমুখী হলে চলবে না, বরং চীনসহ পুরো ‘গ্লোবাল সাউথ’-এর সঙ্গে সম্পর্কের ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। সমরাস্ত্রের গোপন অতীত এবং ড্রোনের অনিশ্চিত বর্তমানকে পেছনে ফেলে, কিয়েভ এখন এমন এক ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখছে, যেখানে ইউক্রেন হবে পূর্ব ও পশ্চিমের বাণিজ্যিক মিলনস্থল—যেখানে সীমান্ত দিয়ে বিদেশি সৈন্য নয়, বরং পণ্যবাহী জাহাজ ও ট্রেন চলাচল করবে।

নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে। সোভিয়েত আমলের পরিত্যক্ত সমরাস্ত্রের ভান্ডার থেকে শুরু করে আজকের আধুনিক ড্রোনের যুদ্ধক্ষেত্র—এই তিন দশকে ইউক্রেন ও চীনের সম্পর্ক এক অদ্ভুত ও জটিল আবর্তে ঘুরপাক খেয়েছে।
ইউক্রেনের সমরাস্ত্র ইতিহাসের এক অনন্য অধ্যায় হলো ১৯৯৮ সালে চীনের কাছে সোভিয়েত আমলের ‘ভারিয়াগ’ রণতরি বিক্রি। ইউক্রেনের মাইকোলাইভ বন্দরে পড়ে থাকা এই বিশাল জাহাজটি বেইজিং কিনেছিল মাত্র ২০ মিলিয়ন ডলারে। অবশ্য আজকের একটি আধুনিক যুদ্ধজাহাজের মূল্যের তুলনায় এটি অতি নগণ্য। বেইজিং তখন দাবি করেছিল, জাহাজটি একটি ভাসমান ক্যাসিনো ও পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হবে। কিন্তু কয়েক বছর পরই বিশ্ববাসী অবাক হয়ে দেখল, সেই পরিত্যক্ত ভারিয়াগই রূপান্তরিত হয়েছে চীনের প্রথম শক্তিশালী বিমানবাহী রণতরিতে, নাম তার ‘লিয়াওনিং’।
শুধু রণতরিই নয়, চীনের আধুনিক প্রতিরক্ষা শিল্পকে গড়ে তুলতে কিয়েভের কারিগরি সহায়তা ছিল অভাবনীয়। ইউক্রেন থেকে চীনে পাড়ি জমিয়েছে আরও অনেক প্রযুক্তি। এর মধ্যে রয়েছে: হেলিকপ্টার এবং শক্তিশালী ট্যাংক ইঞ্জিনের নকশা ও উৎপাদন প্রযুক্তি; চীনের নৌবাহিনীর গ্যাস টারবাইন এবং বিমানবিধ্বংসী রাডার ব্যবস্থার মূল কারিগরি জ্ঞান।
ইউক্রেন স্বীকার করেছে যে তারা একসময় অবৈধভাবে পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম ছয়টি ‘কেএইচ-৫৫’ ক্রুজ মিসাইল বেইজিংয়ে পাঠিয়েছিল। এটি চীনের দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতাকে কয়েক দশক এগিয়ে দেয়।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের বর্তমান প্রেক্ষাপটে সম্পর্কের এই গতিপ্রকৃতি ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে গেছে। আজ ইউক্রেনীয় ড্রোন বিশেষজ্ঞরা সরাসরি স্বীকার করছেন, যুদ্ধের ভাগ্য এখন বেইজিংয়ের হাতে। কিয়েভের ড্রোন যুদ্ধের অগ্রপথিক আন্দ্রেই প্রোনিন আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘চীন চাইলে মাত্র এক দিনে এই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ বন্ধ করতে পারে। তারা শুধু আমাদের অথবা রুশদের কাছে ড্রোন যন্ত্রাংশ রপ্তানি বন্ধ করে দিলেই হলো।’
ইউক্রেনের আকাশে আজ যে লাখ লাখ ড্রোন উড়ছে, তার প্রতিটি উপাদানে চীনের ছাপ রয়েছে। ড্রোনের ফ্রেম, মোটর, ফ্লাইট কন্ট্রোলার, লিথিয়াম ব্যাটারি এবং নেভিগেশন মডিউল—সবই মূলত চীনা কারখানায় তৈরি।
‘স্নেক আইল্যান্ড’ নামক একটি সামরিক গবেষণা সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইউক্রেনীয় ড্রোন শিল্প এখন পুরোপুরি চীনা আমদানির ওপর নির্ভরশীল। বিশেষ করে নিওডিয়ামিয়াম ম্যাগনেট এবং থার্মাল সেন্সরের মতো জটিল কাঁচামালের ক্ষেত্রে চীনের একচেটিয়া প্রভাব কিয়েভকে এক কঠিন রাজনৈতিক চাপে রেখেছে।
ইউক্রেনীয় নীতিনির্ধারকেরা মনে করেন, যুদ্ধের পর ধ্বংসস্তূপ থেকে দেশ পুনর্গঠনে চীনই হতে পারে সবচেয়ে বড় কৌশলগত অংশীদার। ২০১১ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ভিক্তর ইয়ানুকোভিচের আমলে চীনের সঙ্গে যে ‘কৌশলগত অংশীদারি’ শুরু হয়েছিল, কিয়েভ এখন তার আধুনিক সংস্করণ চাচ্ছে।
এ ছাড়া চীনের উচ্চাভিলাষী বেল্ট অ্যান্ড রোড (বিআরআই) প্রকল্পের জন্য ইউক্রেনের ভৌগোলিক অবস্থান অত্যন্ত আকর্ষণীয়। ইউক্রেনকে উত্তর-পূর্ব চীন থেকে কাজাখস্তান ও ককেশাস হয়ে ইউরোপে পৌঁছানোর প্রধান লজিস্টিক হাব বা ‘সেতুবন্ধনকারী দেশ’ হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে বেইজিংয়ের।
তবে বিশ্লেষক ইগার তিশকেভিচের মতে, চীনকে ইউরোপীয় বাজারে উন্নততর প্রবেশের সুযোগ দিতে ইউক্রেনকে তার সোভিয়েত আমলের চওড়া রেললাইন বদলে পশ্চিমা মানদণ্ডের ন্যারো গেজ ট্র্যাকে রূপান্তর করতে হবে।
যুদ্ধের মধ্যেও চীন এখনো ইউক্রেনীয় ইস্পাত, ভোজ্যতেল এবং সয়াবিনের প্রধান ক্রেতা। এই বাণিজ্যই বর্তমানে ইউক্রেনের যুদ্ধবিধ্বস্ত অর্থনীতিকে কোনোমতে সচল রেখেছে।
বিশ্লেষক অ্যালেক্সি কুশের মতে, চীনের সঙ্গে সম্পর্ক পুনরুদ্ধার করতে ব্যর্থ হওয়া ইউক্রেনের জন্য একটি ঐতিহাসিক ভুল হতে পারে। তিনি মনে করেন, ইউক্রেনের কূটনীতি কেবল পশ্চিমমুখী হলে চলবে না, বরং চীনসহ পুরো ‘গ্লোবাল সাউথ’-এর সঙ্গে সম্পর্কের ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। সমরাস্ত্রের গোপন অতীত এবং ড্রোনের অনিশ্চিত বর্তমানকে পেছনে ফেলে, কিয়েভ এখন এমন এক ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখছে, যেখানে ইউক্রেন হবে পূর্ব ও পশ্চিমের বাণিজ্যিক মিলনস্থল—যেখানে সীমান্ত দিয়ে বিদেশি সৈন্য নয়, বরং পণ্যবাহী জাহাজ ও ট্রেন চলাচল করবে।

পুতিন ‘বাজি ধরছেন’ যে, তিনি ইউক্রেনের চেয়ে দীর্ঘ সময় লড়াই চালিয়ে যেতে পারবেন, অথবা তিনি এমন একটি সমঝোতা ট্রাম্পের মাধ্যমে আদায় করতে পারবেন, যা রাশিয়াকে বিশ্ব অর্থনীতিতে পুনরায় যুক্ত হওয়ার সুযোগ দেবে, ইউক্রেনকে বিভক্ত ও আধা–ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করবে এবং ইউরোপকে এতটাই হতবাক করে দেবে যে...
১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
২০ ঘণ্টা আগে
ইমরান খানকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে।
৫ দিন আগে
ইরানের সঙ্গে নতুন করে বড় ধরনের সামরিক সংঘাতের আশঙ্কা ঘনীভূত হচ্ছে—এমন ইঙ্গিতই দিচ্ছে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক তৎপরতা। দেশটির পার্লামেন্টের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা কমিটির এক গোপন বৈঠকে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা ইরানের সঙ্গে সম্ভাব্য নতুন যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে বিস্তারিত...
৫ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

চার বছর আগে যিনি ছিলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী, সেই ইমরান খান আজ নিজ দেশেই ধুঁকে ধুঁকে মরছেন। ৭৩ বছর বয়সী এই ক্রিকেট কিংবদন্তি বর্তমানে রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা কারাগারে বন্দী। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, তাঁকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে। ইমরান খানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘এটা মানসিক নির্যাতন। তাঁকে মানসিকভাবে দুর্বল করতেই এসব করা হচ্ছে। কিন্তু আমার বাবা শক্ত মানুষ।’
ইমরান খানের প্রথম স্ত্রী জেমিমা গোল্ডস্মিথের দুই ছেলে কাসিম ও সুলাইমান। গত আড়াই বছর ধরে তাঁরা এক দুঃস্বপ্নের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। চলতি সপ্তাহে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার নেয়। সেনাপ্রধান আসিম মুনিরকে নিয়ে ইমরান খানের নির্দেশনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি পোস্ট দেওয়া হয়েছিল। এরপরই সরকার কারাগারে থাকা ইমরান খানের সব সুযোগ-সুবিধা বন্ধ করে দেয়। দুর্নীতির মামলায় দেওয়া ১৪ বছরের সাজার সঙ্গে যুক্ত হতে থাকে একের পর এক নতুন মামলা। ইমরানের পরিবারের আশঙ্কা—এই সংকট সমাধানের কোনো সহজ পথ নেই।
কাসিম বলেন, ‘বাবার বিরুদ্ধে ২০০টির বেশি মামলা আছে। একটি মামলা বাতিল হলে সঙ্গে সঙ্গে দু-তিনটি নতুন মামলা দেওয়া হয়। এটা শুধু সময়ক্ষেপণের কৌশল।’
কারাগারের পরিস্থিতিও ভয়াবহ। সুলাইমান বলেন, ‘বাবাকে যে ছোট কক্ষে রাখা হয়েছে, সেটিকে “ডেথ সেল” বলা হয়। এখানে সাধারণত মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের রাখা হয়। ওই বেশির ভাগ সময়ই বিদ্যুৎ থাকে না। দেওয়া হয় না বই বা পড়ার কোনো উপকরণ।’
কাসিমের ভাষায়, ‘যে পানিতে তিনি গোসল করেন, সেটি খুবই নোংরা। ওই কারাগারে অন্তত এক ডজন বন্দী হেপাটাইটিসে মারা গেছে, আর তাঁরা সবাই ছিলেন পিটিআইয়ের সমর্থক।’
তবে কারা কর্তৃপক্ষ বলছে, সংক্রামক রোগে আক্রান্ত বন্দীদের আলাদা রাখা হয়।
জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিবেদক অ্যালিস জিল এডওয়ার্ডসের এক প্রতিবেদনে ইমরান খানের সেলের চিত্র আরও ভয়াবহভাবে উঠে এসেছে। সেখানে বলা হয়েছে, কক্ষটি ছোট, বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা নেই বললেই চলে, প্রাকৃতিক আলোর অভাব রয়েছে এবং চরম তাপমাত্রা ও পোকামাকড়ের উপদ্রবজনিত কারণে তিনি বমি বমি ভাব এবং ওজন হ্রাসের শিকার হচ্ছেন।

কিন্তু ইমরানের খানের মতো একজন মানুষের জীবনে এই পরিস্থিতি কীভাবে তৈরি হলো
পাকিস্তানের ইতিহাসে ইমরান খান শুধু একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীই নন, তিনি ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার। ১৯৯২ সালে তাঁর নেতৃত্বেই পাকিস্তান একমাত্র ওয়ানডে বিশ্বকাপ জেতে। সেই আসরে খেলোয়াড়দের তিনি বলেছিলেন, ‘কোণঠাসা বাঘের মতো লড়ো।’ প্রতীক হিসেবে বাঘ আঁকা টি-শার্টও পরেছিলেন তিনি।
মাঠের বাইরে ইমরান খানের জীবনও ছিল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। নব্বইয়ের দশকে লন্ডনের ট্রাম্পস নাইটক্লাব থেকে শুরু করে গসিপ কলাম—সবখানেই ছিল তাঁর উপস্থিতি। মডেল মারি হেলভিন একবার বলেছিলেন, ‘ইমরানের মতো বিধ্বংসী পুরুষ আর কেউ ছিলেন না।’

১৯৯৫ সালে ২১ বছর বয়সী জেমিমা গোল্ডস্মিথকে বিয়ে করেন ইমরান খান। বয়স ও সংস্কৃতিগত পার্থক্য নিয়ে সমালোচনা থাকলেও জেমিমা তখন বলেছিলেন, ‘আমার জন্য ইমরান পাশ্চাত্যের রাতজাগা ও মদের জীবন ছেড়ে দিতে প্রস্তুত।’
এরপর ২০০৪ সালে তাঁদের বিচ্ছেদ হয়। তবে বিচ্ছেদ হলেও, বন্দী ইমরান খানের জন্য জেমিমার উদ্বেগ আজও রয়ে গেছে। সম্প্রতি তিনি ইলন মাস্ককে চিঠি দিয়ে অভিযোগ করেছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স ইমরান খান-সংক্রান্ত পোস্ট গোপনে সীমিত করছে।
ইমরানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে আমরা বাবার সংস্পর্শে বড় হয়েছি। এখন বাবা নেই, এটা আমাদের জন্য খুব কষ্টের। আমাদের মায়ের জন্যও এটা কষ্টের।’

দুই ভাই আশা করছেন, এ বিষয়গুলো সামনে আনলে আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যাবে। কিন্তু আসলেই কি ইমরান খানের বিষয়টি আন্তর্জাতিক মহলের নজরে আসবে? এমন প্রশ্ন অবান্তর নয়। কারণ, প্রায় আড়াই বছর থেকে কারাগারে থাকলেও কেউ ইমরান খানের খোঁজ নেয়নি।
অ্যাশেজের মতো বড় আয়োজন চললেও, ক্রিকেট বিশ্ব থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ নেই। আইসিসি হল অব ফেমে জায়গা পেয়েছেন ইমরান খান, কিন্তু সেখানেও নীরবতা। তবে অনেকেই মনে করেন, কথা বললে সরকার আরও কঠোর হতে পারে। ইমরানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘প্রতিবার আমরা কিছু বললে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়।’
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, গত ৫০ বছরে পাকিস্তানের প্রতিটি প্রধানমন্ত্রীকেই কারাবরণ করতে হয়েছে। চ্যাথাম হাউসের গবেষক ফারজানা শেখ মনে করেন, ইমরান খানের সামনে বর্তমানে দুটি পথ—হয় লন্ডনে নির্বাসন অথবা পাকিস্তানে গৃহবন্দিত্ব।
কিন্তু তাঁর ছেলেরা বলছেন, দুটোই অগ্রহণযোগ্য। কাসিমের মতে, ‘লন্ডনে গেলে বাবা মানসিকভাবে ভেঙে পড়বেন।’ আর সুলাইমান বলেন, ‘গৃহবন্দিত্ব মানে রাজনীতি থেকে নির্বাসন—বাবা সেটা মানবেন না।’
ওয়াশিংটনে গিয়ে মার্কিন কংগ্রেস সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেও তেমন অগ্রগতি হয়নি। সুলাইমান বলেন, ‘সেনাপ্রধান ও ট্রাম্পের সম্পর্ক এখন ভালো। ফলে আমাদের আশার জায়গা কম।’
শেষ বিকল্প হিসেবে পাকিস্তানে যাওয়ার কথাও ভাবছেন তাঁরা। কিন্তু সেটিও ঝুঁকিপূর্ণ। কাসিম বলেন, ‘পাকিস্তানে যাওয়ার পর আমাদের গ্রেপ্তার করা হলে হয়তো সেটাই বাবাকে কোনো সমঝোতায় যেতে বাধ্য করবে। কিন্তু আমরা এ রকম কিছু করতে চাই না। সবচেয়ে ভয়াবহ আশঙ্কা—তিনি ৭৩ বছরের একজন মানুষ। আমরা কি আর কখনো তাঁকে দেখতে পাব?’
ব্রিটিশ দৈনিক দ্য টেলিগ্রাফ থেকে অনূদিত

চার বছর আগে যিনি ছিলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী, সেই ইমরান খান আজ নিজ দেশেই ধুঁকে ধুঁকে মরছেন। ৭৩ বছর বয়সী এই ক্রিকেট কিংবদন্তি বর্তমানে রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা কারাগারে বন্দী। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, তাঁকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে। ইমরান খানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘এটা মানসিক নির্যাতন। তাঁকে মানসিকভাবে দুর্বল করতেই এসব করা হচ্ছে। কিন্তু আমার বাবা শক্ত মানুষ।’
ইমরান খানের প্রথম স্ত্রী জেমিমা গোল্ডস্মিথের দুই ছেলে কাসিম ও সুলাইমান। গত আড়াই বছর ধরে তাঁরা এক দুঃস্বপ্নের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। চলতি সপ্তাহে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার নেয়। সেনাপ্রধান আসিম মুনিরকে নিয়ে ইমরান খানের নির্দেশনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি পোস্ট দেওয়া হয়েছিল। এরপরই সরকার কারাগারে থাকা ইমরান খানের সব সুযোগ-সুবিধা বন্ধ করে দেয়। দুর্নীতির মামলায় দেওয়া ১৪ বছরের সাজার সঙ্গে যুক্ত হতে থাকে একের পর এক নতুন মামলা। ইমরানের পরিবারের আশঙ্কা—এই সংকট সমাধানের কোনো সহজ পথ নেই।
কাসিম বলেন, ‘বাবার বিরুদ্ধে ২০০টির বেশি মামলা আছে। একটি মামলা বাতিল হলে সঙ্গে সঙ্গে দু-তিনটি নতুন মামলা দেওয়া হয়। এটা শুধু সময়ক্ষেপণের কৌশল।’
কারাগারের পরিস্থিতিও ভয়াবহ। সুলাইমান বলেন, ‘বাবাকে যে ছোট কক্ষে রাখা হয়েছে, সেটিকে “ডেথ সেল” বলা হয়। এখানে সাধারণত মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের রাখা হয়। ওই বেশির ভাগ সময়ই বিদ্যুৎ থাকে না। দেওয়া হয় না বই বা পড়ার কোনো উপকরণ।’
কাসিমের ভাষায়, ‘যে পানিতে তিনি গোসল করেন, সেটি খুবই নোংরা। ওই কারাগারে অন্তত এক ডজন বন্দী হেপাটাইটিসে মারা গেছে, আর তাঁরা সবাই ছিলেন পিটিআইয়ের সমর্থক।’
তবে কারা কর্তৃপক্ষ বলছে, সংক্রামক রোগে আক্রান্ত বন্দীদের আলাদা রাখা হয়।
জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিবেদক অ্যালিস জিল এডওয়ার্ডসের এক প্রতিবেদনে ইমরান খানের সেলের চিত্র আরও ভয়াবহভাবে উঠে এসেছে। সেখানে বলা হয়েছে, কক্ষটি ছোট, বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা নেই বললেই চলে, প্রাকৃতিক আলোর অভাব রয়েছে এবং চরম তাপমাত্রা ও পোকামাকড়ের উপদ্রবজনিত কারণে তিনি বমি বমি ভাব এবং ওজন হ্রাসের শিকার হচ্ছেন।

কিন্তু ইমরানের খানের মতো একজন মানুষের জীবনে এই পরিস্থিতি কীভাবে তৈরি হলো
পাকিস্তানের ইতিহাসে ইমরান খান শুধু একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীই নন, তিনি ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার। ১৯৯২ সালে তাঁর নেতৃত্বেই পাকিস্তান একমাত্র ওয়ানডে বিশ্বকাপ জেতে। সেই আসরে খেলোয়াড়দের তিনি বলেছিলেন, ‘কোণঠাসা বাঘের মতো লড়ো।’ প্রতীক হিসেবে বাঘ আঁকা টি-শার্টও পরেছিলেন তিনি।
মাঠের বাইরে ইমরান খানের জীবনও ছিল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। নব্বইয়ের দশকে লন্ডনের ট্রাম্পস নাইটক্লাব থেকে শুরু করে গসিপ কলাম—সবখানেই ছিল তাঁর উপস্থিতি। মডেল মারি হেলভিন একবার বলেছিলেন, ‘ইমরানের মতো বিধ্বংসী পুরুষ আর কেউ ছিলেন না।’

১৯৯৫ সালে ২১ বছর বয়সী জেমিমা গোল্ডস্মিথকে বিয়ে করেন ইমরান খান। বয়স ও সংস্কৃতিগত পার্থক্য নিয়ে সমালোচনা থাকলেও জেমিমা তখন বলেছিলেন, ‘আমার জন্য ইমরান পাশ্চাত্যের রাতজাগা ও মদের জীবন ছেড়ে দিতে প্রস্তুত।’
এরপর ২০০৪ সালে তাঁদের বিচ্ছেদ হয়। তবে বিচ্ছেদ হলেও, বন্দী ইমরান খানের জন্য জেমিমার উদ্বেগ আজও রয়ে গেছে। সম্প্রতি তিনি ইলন মাস্ককে চিঠি দিয়ে অভিযোগ করেছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স ইমরান খান-সংক্রান্ত পোস্ট গোপনে সীমিত করছে।
ইমরানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে আমরা বাবার সংস্পর্শে বড় হয়েছি। এখন বাবা নেই, এটা আমাদের জন্য খুব কষ্টের। আমাদের মায়ের জন্যও এটা কষ্টের।’

দুই ভাই আশা করছেন, এ বিষয়গুলো সামনে আনলে আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যাবে। কিন্তু আসলেই কি ইমরান খানের বিষয়টি আন্তর্জাতিক মহলের নজরে আসবে? এমন প্রশ্ন অবান্তর নয়। কারণ, প্রায় আড়াই বছর থেকে কারাগারে থাকলেও কেউ ইমরান খানের খোঁজ নেয়নি।
অ্যাশেজের মতো বড় আয়োজন চললেও, ক্রিকেট বিশ্ব থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ নেই। আইসিসি হল অব ফেমে জায়গা পেয়েছেন ইমরান খান, কিন্তু সেখানেও নীরবতা। তবে অনেকেই মনে করেন, কথা বললে সরকার আরও কঠোর হতে পারে। ইমরানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘প্রতিবার আমরা কিছু বললে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়।’
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, গত ৫০ বছরে পাকিস্তানের প্রতিটি প্রধানমন্ত্রীকেই কারাবরণ করতে হয়েছে। চ্যাথাম হাউসের গবেষক ফারজানা শেখ মনে করেন, ইমরান খানের সামনে বর্তমানে দুটি পথ—হয় লন্ডনে নির্বাসন অথবা পাকিস্তানে গৃহবন্দিত্ব।
কিন্তু তাঁর ছেলেরা বলছেন, দুটোই অগ্রহণযোগ্য। কাসিমের মতে, ‘লন্ডনে গেলে বাবা মানসিকভাবে ভেঙে পড়বেন।’ আর সুলাইমান বলেন, ‘গৃহবন্দিত্ব মানে রাজনীতি থেকে নির্বাসন—বাবা সেটা মানবেন না।’
ওয়াশিংটনে গিয়ে মার্কিন কংগ্রেস সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেও তেমন অগ্রগতি হয়নি। সুলাইমান বলেন, ‘সেনাপ্রধান ও ট্রাম্পের সম্পর্ক এখন ভালো। ফলে আমাদের আশার জায়গা কম।’
শেষ বিকল্প হিসেবে পাকিস্তানে যাওয়ার কথাও ভাবছেন তাঁরা। কিন্তু সেটিও ঝুঁকিপূর্ণ। কাসিম বলেন, ‘পাকিস্তানে যাওয়ার পর আমাদের গ্রেপ্তার করা হলে হয়তো সেটাই বাবাকে কোনো সমঝোতায় যেতে বাধ্য করবে। কিন্তু আমরা এ রকম কিছু করতে চাই না। সবচেয়ে ভয়াবহ আশঙ্কা—তিনি ৭৩ বছরের একজন মানুষ। আমরা কি আর কখনো তাঁকে দেখতে পাব?’
ব্রিটিশ দৈনিক দ্য টেলিগ্রাফ থেকে অনূদিত

পুতিন ‘বাজি ধরছেন’ যে, তিনি ইউক্রেনের চেয়ে দীর্ঘ সময় লড়াই চালিয়ে যেতে পারবেন, অথবা তিনি এমন একটি সমঝোতা ট্রাম্পের মাধ্যমে আদায় করতে পারবেন, যা রাশিয়াকে বিশ্ব অর্থনীতিতে পুনরায় যুক্ত হওয়ার সুযোগ দেবে, ইউক্রেনকে বিভক্ত ও আধা–ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করবে এবং ইউরোপকে এতটাই হতবাক করে দেবে যে...
১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
২০ ঘণ্টা আগে
নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে।
১ দিন আগে
ইরানের সঙ্গে নতুন করে বড় ধরনের সামরিক সংঘাতের আশঙ্কা ঘনীভূত হচ্ছে—এমন ইঙ্গিতই দিচ্ছে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক তৎপরতা। দেশটির পার্লামেন্টের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা কমিটির এক গোপন বৈঠকে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা ইরানের সঙ্গে সম্ভাব্য নতুন যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে বিস্তারিত...
৫ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ইরানের সঙ্গে নতুন করে বড় ধরনের সামরিক সংঘাতের আশঙ্কা ঘনীভূত হচ্ছে—এমন ইঙ্গিতই দিচ্ছে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক তৎপরতা। দেশটির পার্লামেন্টের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা কমিটির এক গোপন বৈঠকে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা ইরানের সঙ্গে সম্ভাব্য নতুন যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে বিস্তারিত ব্রিফ করেছেন।
হিব্রু ভাষার ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম মারিভের খবরে বলা হয়েছে, ওই বৈঠকে এক সামরিক প্রতিনিধি সংসদ সদস্যদের জানান, তেহরান ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদন বাড়িয়েছে এবং হামলার সক্ষমতা পুরোপুরি পুনর্গঠন ও সম্প্রসারণের চেষ্টা করছে। আইডিএফের আশঙ্কা, আগের মতোই ইরান একযোগে শত শত ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে ইসরায়েলের ভূখণ্ডে বড় ধরনের আঘাত হানতে পারে।
গত এক মাসে পশ্চিমা মূলধারার গণমাধ্যমগুলোতেও ইসরায়েল-ইরান উত্তেজনা নিয়ে সতর্কবার্তা জোরালো হয়েছে। দ্য নিউইয়র্ক টাইমস যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের ও কিছু বিশ্লেষকদের উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছে, দুই দেশের মধ্যে সরাসরি সামরিক সংঘর্ষ এড়ানো দিন দিন কঠিন হয়ে পড়ছে। নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, উভয় পক্ষ দ্রুত সামরিক সক্ষমতা বাড়াচ্ছে, পরোক্ষ বা প্রক্সি ফ্রন্ট বিস্তৃত করছে এবং কূটনৈতিক পথ থেকে আরও দূরে সরে যাচ্ছে। সব মিলিয়ে যুদ্ধের ঝুঁকি প্রতি সপ্তাহেই বাড়ছে।
নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বর্তমান উত্তেজনার একটি বড় কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে ২০১৫ সালের পারমাণবিক চুক্তির (জেসিপিওএ) মেয়াদ শেষ হওয়া। চলতি বছরের অক্টোবরে চুক্তিটি বাতিল হয়ে যাওয়ার পর ইরানের ওপর নতুন করে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ হয়। ফলে পারমাণবিক চুক্তি নিয়ে আলোচনার পথ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়।
নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, তেহরানের দাবি অনুযায়ী তারা উচ্চমাত্রার সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের সব মজুত ধ্বংস করেছে। কিন্তু ইসরায়েলি কর্মকর্তারা মনে করেন, এর একটি অংশ গোপনে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। উপসাগরীয় দেশগুলোর মধ্যেও উদ্বেগ বাড়ছে—তাদের মতে, ইরানে ইসরায়েলের আরেকটি হামলা ‘হবে কি না’ এটা প্রশ্ন নয়, হামলা ‘কবে হবে’—সেটাই বড় প্রশ্ন। ইসরায়েলের দৃষ্টিতে, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি তাদের অস্তিত্বের জন্য হুমকি। তেল আবিবের এই মনোভাব সামরিক হামলার সম্ভাবনাকে প্রায় অনিবার্য করে তুলছে।
এদিকে, আন্তর্জাতিক সংকট বিষয়ক গবেষণা সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের ইরান প্রকল্পের পরিচালক আলি ভায়েজ জানান, তাঁর ইরানি সূত্র অনুযায়ী দেশটির ক্ষেপণাস্ত্র কারখানাগুলো দিনে ২৪ ঘণ্টাই চালু আছে। তাঁর ভাষায়, নতুন কোনো সংঘাত হলে ইরান আগের মতো ১২ দিনে ৫০০টি নয়, বরং একযোগে ২ হাজার ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেঙে দিতে চায়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইরান-ইসরায়েল দ্বন্দ্বের মূল কারণগুলো এখনো অমীমাংসিত থাকায় সংঘাতের একটি চক্রাকার ধারা তৈরি হয়েছে, যেখানে উত্তেজনা প্রায় কাঠামোগতভাবেই অনিবার্য। ইরানের দীর্ঘদিন ধরে গড়ে তোলা তথাকথিত ‘প্রতিরোধের অক্ষ’ (যার মধ্যে বিভিন্ন আঞ্চলিক মিত্র ও গোষ্ঠী রয়েছে) গত জুনে ১২ দিনের যুদ্ধে এবং বিশেষ করে গত বছর সিরিয়ায় সরকার পরিবর্তনের পর বড় ধাক্কা খেয়েছে। তবু ইরানের হাতে এখনো গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক রসদ রয়েছে। যেমন—ইয়েমেনের আনসারুল্লাহ (হুতি), লেবাননের হিজবুল্লাহ এবং ইরাকের বিভিন্ন শিয়া মিলিশিয়া। এসব শক্তির মাধ্যমে তেহরান এখনো এক ধরনের অপ্রতিসম প্রতিরোধ সক্ষমতা ধরে রেখেছে।
ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম কার্সরইনফোর বরাতে জানা যায়, দেশটির নিরাপত্তা সংস্থার এক শীর্ষ সূত্রের দাবি—ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই, অর্থাৎ ২০২৯ সালের জানুয়ারির আগে ইরানে শাসক পরিবর্তনের সম্ভাবনা বিবেচনায় রেখেছে ইসরায়েল। সূত্রটি জানায়, ইরান একদিকে যেমন ক্ষেপণাস্ত্র ভান্ডার বাড়াচ্ছে, অন্যদিকে ইসরায়েল ইরানের পারমাণবিক ও প্রতিরক্ষা স্থাপনাগুলো নিরবচ্ছিন্নভাবে নজরদারিতে রেখেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, আরেকটি সামরিক সংঘাত এখন কেবল সময়ের ব্যাপার।
নিউইয়র্ক টাইমস বলছে, ইরান নাতানজের দক্ষিণে ‘পিকঅ্যাক্স মাউন্টেন’ নামে একটি নতুন ভূগর্ভস্থ স্থাপনায় পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির মূল উপাদান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার কাজ করছে। সেখানে এখনো আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) পরিদর্শকদের প্রবেশাধিকার দেওয়া হয়নি।
এই প্রেক্ষাপটে ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান বলেছেন, তেহরান শান্তি ও সংলাপ চায়, তবে চাপের কাছে মাথা নত করবে না, পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচিও পরিত্যাগ করবে না। তাঁর মতে, এসব কর্মসূচি জাতীয় সার্বভৌমত্বের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। তিনি বহুপক্ষীয় আলোচনায় ফেরার আগ্রহ দেখালেও শর্ত দিয়েছেন—‘ইরানের বৈজ্ঞানিক, প্রযুক্তিগত ও প্রতিরক্ষা সক্ষমতা অক্ষুণ্ন রাখতে হবে’।
এখন প্রশ্ন উঠেছে, ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ বাধলে যুক্তরাষ্ট্র কি আবারও তাতে জড়াবে?
গেল নভেম্বরের শুরুতে ডোনাল্ড ট্রাম্প স্বীকার করেন, জুনে ইরানে ইসরায়েলি হামলায় যুক্তরাষ্ট্র সম্পৃক্ত ছিল। বিষয়টি এত দিন হোয়াইট হাউস অস্বীকার করে আসছিল। ওই সময় ট্রাম্প আরও বলেন, ওয়াশিংটন চাইলে তেহরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা শিথিল করতেও প্রস্তুত।
ট্রাম্পের এমন বক্তব্যের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ওয়াশিংটনে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে তাঁর বৈঠক হয়। সেখানে ট্রাম্প আবার বলেন, ইরান যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তি চায় এবং ওয়াশিংটন আলোচনায় প্রস্তুত। একই দিনে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির উপদেষ্টা কামাল খারাজি জানান, পারস্পরিক সম্মান ও সমতার ভিত্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় বসতে প্রস্তুত ইরান, তবে প্রথম পদক্ষেপ ওয়াশিংটনকেই নিতে হবে। তিনি স্পষ্ট করে বলেন, ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি আলোচনার বাইরে, কারণ এটি জাতীয় প্রতিরোধের মূল স্তম্ভ। কেবল পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়েই সীমিত আলোচনার সুযোগ রয়েছে, তাও সার্বভৌমত্ব ক্ষুণ্ন না হলে।
বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রকে সরাসরি ইরানের সঙ্গে যুদ্ধে জড়াতে চান না। অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অর্থনৈতিক চাপে আরেকটি যুদ্ধ যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ব্যয়বহুল হবে। কিন্তু ইসরায়েল এই পরিস্থিতিকে একটি ঐতিহাসিক সুযোগ হিসেবে দেখছে। ইসরায়েল চাচ্ছে, তারা এই সুযোগে ইরানের পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতা স্থায়ীভাবে ধ্বংস করে দেবে।
সব মিলিয়ে, তেহরান আশাবাদী কথাবার্তায় ভরসা করছে না। ইরানি কূটনীতিকদের ধারণা, ইসরায়েল আঞ্চলিক প্রতিক্রিয়া বা যুক্তরাষ্ট্রের আপত্তি উপেক্ষা করেই সামরিক পরিকল্পনা এগিয়ে নিচ্ছে। তাদের মতে, ইসরায়েল হামলা চালালে যুক্তরাষ্ট্রকে যেকোনোভাবে সংঘাতে টেনে আনার চেষ্টা করবে—যদিও ট্রাম্প নতুন যুদ্ধ এড়াতে চান।
যুক্তরাষ্ট্র চাক বা না চাক, পরিস্থিতির চাপে তাকে শেষ পর্যন্ত সংঘাতে জড়িয়ে পড়তে হতে পারে। আর যদি ইরান ইসরায়েলি হামলার জবাবে আরও কঠোর প্রতিক্রিয়া দেখায়, তাহলে ওয়াশিংটনের সামনে কঠিন সিদ্ধান্ত এসে দাঁড়াবে—হস্তক্ষেপ করবে, নাকি নিয়ন্ত্রণ হারাবে। ইরান অবশ্য স্পষ্ট বার্তা দিচ্ছে—তারা ধ্বংসের ভয় পায় না এবং সর্বাত্মক যুদ্ধে নামলে ‘ইসরায়েলকেও সঙ্গে নিয়ে ডুববে’।
আরটি থেকে অনুবাদ করেছেন জগৎপতি বর্মা

ইরানের সঙ্গে নতুন করে বড় ধরনের সামরিক সংঘাতের আশঙ্কা ঘনীভূত হচ্ছে—এমন ইঙ্গিতই দিচ্ছে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক তৎপরতা। দেশটির পার্লামেন্টের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা কমিটির এক গোপন বৈঠকে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা ইরানের সঙ্গে সম্ভাব্য নতুন যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে বিস্তারিত ব্রিফ করেছেন।
হিব্রু ভাষার ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম মারিভের খবরে বলা হয়েছে, ওই বৈঠকে এক সামরিক প্রতিনিধি সংসদ সদস্যদের জানান, তেহরান ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদন বাড়িয়েছে এবং হামলার সক্ষমতা পুরোপুরি পুনর্গঠন ও সম্প্রসারণের চেষ্টা করছে। আইডিএফের আশঙ্কা, আগের মতোই ইরান একযোগে শত শত ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে ইসরায়েলের ভূখণ্ডে বড় ধরনের আঘাত হানতে পারে।
গত এক মাসে পশ্চিমা মূলধারার গণমাধ্যমগুলোতেও ইসরায়েল-ইরান উত্তেজনা নিয়ে সতর্কবার্তা জোরালো হয়েছে। দ্য নিউইয়র্ক টাইমস যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের ও কিছু বিশ্লেষকদের উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছে, দুই দেশের মধ্যে সরাসরি সামরিক সংঘর্ষ এড়ানো দিন দিন কঠিন হয়ে পড়ছে। নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, উভয় পক্ষ দ্রুত সামরিক সক্ষমতা বাড়াচ্ছে, পরোক্ষ বা প্রক্সি ফ্রন্ট বিস্তৃত করছে এবং কূটনৈতিক পথ থেকে আরও দূরে সরে যাচ্ছে। সব মিলিয়ে যুদ্ধের ঝুঁকি প্রতি সপ্তাহেই বাড়ছে।
নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বর্তমান উত্তেজনার একটি বড় কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে ২০১৫ সালের পারমাণবিক চুক্তির (জেসিপিওএ) মেয়াদ শেষ হওয়া। চলতি বছরের অক্টোবরে চুক্তিটি বাতিল হয়ে যাওয়ার পর ইরানের ওপর নতুন করে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ হয়। ফলে পারমাণবিক চুক্তি নিয়ে আলোচনার পথ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়।
নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, তেহরানের দাবি অনুযায়ী তারা উচ্চমাত্রার সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের সব মজুত ধ্বংস করেছে। কিন্তু ইসরায়েলি কর্মকর্তারা মনে করেন, এর একটি অংশ গোপনে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। উপসাগরীয় দেশগুলোর মধ্যেও উদ্বেগ বাড়ছে—তাদের মতে, ইরানে ইসরায়েলের আরেকটি হামলা ‘হবে কি না’ এটা প্রশ্ন নয়, হামলা ‘কবে হবে’—সেটাই বড় প্রশ্ন। ইসরায়েলের দৃষ্টিতে, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি তাদের অস্তিত্বের জন্য হুমকি। তেল আবিবের এই মনোভাব সামরিক হামলার সম্ভাবনাকে প্রায় অনিবার্য করে তুলছে।
এদিকে, আন্তর্জাতিক সংকট বিষয়ক গবেষণা সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের ইরান প্রকল্পের পরিচালক আলি ভায়েজ জানান, তাঁর ইরানি সূত্র অনুযায়ী দেশটির ক্ষেপণাস্ত্র কারখানাগুলো দিনে ২৪ ঘণ্টাই চালু আছে। তাঁর ভাষায়, নতুন কোনো সংঘাত হলে ইরান আগের মতো ১২ দিনে ৫০০টি নয়, বরং একযোগে ২ হাজার ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেঙে দিতে চায়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইরান-ইসরায়েল দ্বন্দ্বের মূল কারণগুলো এখনো অমীমাংসিত থাকায় সংঘাতের একটি চক্রাকার ধারা তৈরি হয়েছে, যেখানে উত্তেজনা প্রায় কাঠামোগতভাবেই অনিবার্য। ইরানের দীর্ঘদিন ধরে গড়ে তোলা তথাকথিত ‘প্রতিরোধের অক্ষ’ (যার মধ্যে বিভিন্ন আঞ্চলিক মিত্র ও গোষ্ঠী রয়েছে) গত জুনে ১২ দিনের যুদ্ধে এবং বিশেষ করে গত বছর সিরিয়ায় সরকার পরিবর্তনের পর বড় ধাক্কা খেয়েছে। তবু ইরানের হাতে এখনো গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক রসদ রয়েছে। যেমন—ইয়েমেনের আনসারুল্লাহ (হুতি), লেবাননের হিজবুল্লাহ এবং ইরাকের বিভিন্ন শিয়া মিলিশিয়া। এসব শক্তির মাধ্যমে তেহরান এখনো এক ধরনের অপ্রতিসম প্রতিরোধ সক্ষমতা ধরে রেখেছে।
ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম কার্সরইনফোর বরাতে জানা যায়, দেশটির নিরাপত্তা সংস্থার এক শীর্ষ সূত্রের দাবি—ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই, অর্থাৎ ২০২৯ সালের জানুয়ারির আগে ইরানে শাসক পরিবর্তনের সম্ভাবনা বিবেচনায় রেখেছে ইসরায়েল। সূত্রটি জানায়, ইরান একদিকে যেমন ক্ষেপণাস্ত্র ভান্ডার বাড়াচ্ছে, অন্যদিকে ইসরায়েল ইরানের পারমাণবিক ও প্রতিরক্ষা স্থাপনাগুলো নিরবচ্ছিন্নভাবে নজরদারিতে রেখেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, আরেকটি সামরিক সংঘাত এখন কেবল সময়ের ব্যাপার।
নিউইয়র্ক টাইমস বলছে, ইরান নাতানজের দক্ষিণে ‘পিকঅ্যাক্স মাউন্টেন’ নামে একটি নতুন ভূগর্ভস্থ স্থাপনায় পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির মূল উপাদান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার কাজ করছে। সেখানে এখনো আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) পরিদর্শকদের প্রবেশাধিকার দেওয়া হয়নি।
এই প্রেক্ষাপটে ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান বলেছেন, তেহরান শান্তি ও সংলাপ চায়, তবে চাপের কাছে মাথা নত করবে না, পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচিও পরিত্যাগ করবে না। তাঁর মতে, এসব কর্মসূচি জাতীয় সার্বভৌমত্বের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। তিনি বহুপক্ষীয় আলোচনায় ফেরার আগ্রহ দেখালেও শর্ত দিয়েছেন—‘ইরানের বৈজ্ঞানিক, প্রযুক্তিগত ও প্রতিরক্ষা সক্ষমতা অক্ষুণ্ন রাখতে হবে’।
এখন প্রশ্ন উঠেছে, ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ বাধলে যুক্তরাষ্ট্র কি আবারও তাতে জড়াবে?
গেল নভেম্বরের শুরুতে ডোনাল্ড ট্রাম্প স্বীকার করেন, জুনে ইরানে ইসরায়েলি হামলায় যুক্তরাষ্ট্র সম্পৃক্ত ছিল। বিষয়টি এত দিন হোয়াইট হাউস অস্বীকার করে আসছিল। ওই সময় ট্রাম্প আরও বলেন, ওয়াশিংটন চাইলে তেহরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা শিথিল করতেও প্রস্তুত।
ট্রাম্পের এমন বক্তব্যের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ওয়াশিংটনে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে তাঁর বৈঠক হয়। সেখানে ট্রাম্প আবার বলেন, ইরান যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তি চায় এবং ওয়াশিংটন আলোচনায় প্রস্তুত। একই দিনে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির উপদেষ্টা কামাল খারাজি জানান, পারস্পরিক সম্মান ও সমতার ভিত্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় বসতে প্রস্তুত ইরান, তবে প্রথম পদক্ষেপ ওয়াশিংটনকেই নিতে হবে। তিনি স্পষ্ট করে বলেন, ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি আলোচনার বাইরে, কারণ এটি জাতীয় প্রতিরোধের মূল স্তম্ভ। কেবল পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়েই সীমিত আলোচনার সুযোগ রয়েছে, তাও সার্বভৌমত্ব ক্ষুণ্ন না হলে।
বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রকে সরাসরি ইরানের সঙ্গে যুদ্ধে জড়াতে চান না। অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অর্থনৈতিক চাপে আরেকটি যুদ্ধ যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ব্যয়বহুল হবে। কিন্তু ইসরায়েল এই পরিস্থিতিকে একটি ঐতিহাসিক সুযোগ হিসেবে দেখছে। ইসরায়েল চাচ্ছে, তারা এই সুযোগে ইরানের পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতা স্থায়ীভাবে ধ্বংস করে দেবে।
সব মিলিয়ে, তেহরান আশাবাদী কথাবার্তায় ভরসা করছে না। ইরানি কূটনীতিকদের ধারণা, ইসরায়েল আঞ্চলিক প্রতিক্রিয়া বা যুক্তরাষ্ট্রের আপত্তি উপেক্ষা করেই সামরিক পরিকল্পনা এগিয়ে নিচ্ছে। তাদের মতে, ইসরায়েল হামলা চালালে যুক্তরাষ্ট্রকে যেকোনোভাবে সংঘাতে টেনে আনার চেষ্টা করবে—যদিও ট্রাম্প নতুন যুদ্ধ এড়াতে চান।
যুক্তরাষ্ট্র চাক বা না চাক, পরিস্থিতির চাপে তাকে শেষ পর্যন্ত সংঘাতে জড়িয়ে পড়তে হতে পারে। আর যদি ইরান ইসরায়েলি হামলার জবাবে আরও কঠোর প্রতিক্রিয়া দেখায়, তাহলে ওয়াশিংটনের সামনে কঠিন সিদ্ধান্ত এসে দাঁড়াবে—হস্তক্ষেপ করবে, নাকি নিয়ন্ত্রণ হারাবে। ইরান অবশ্য স্পষ্ট বার্তা দিচ্ছে—তারা ধ্বংসের ভয় পায় না এবং সর্বাত্মক যুদ্ধে নামলে ‘ইসরায়েলকেও সঙ্গে নিয়ে ডুববে’।
আরটি থেকে অনুবাদ করেছেন জগৎপতি বর্মা

পুতিন ‘বাজি ধরছেন’ যে, তিনি ইউক্রেনের চেয়ে দীর্ঘ সময় লড়াই চালিয়ে যেতে পারবেন, অথবা তিনি এমন একটি সমঝোতা ট্রাম্পের মাধ্যমে আদায় করতে পারবেন, যা রাশিয়াকে বিশ্ব অর্থনীতিতে পুনরায় যুক্ত হওয়ার সুযোগ দেবে, ইউক্রেনকে বিভক্ত ও আধা–ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করবে এবং ইউরোপকে এতটাই হতবাক করে দেবে যে...
১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
২০ ঘণ্টা আগে
নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে।
১ দিন আগে
ইমরান খানকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে।
৫ দিন আগে