
রাশিয়ার ঢোল পেটানো আর কতিপয় ইউরোপীয়র হতাশা দেখে মনে হতে পারে, ভ্লাদিমির পুতিন কখনোই ইউক্রেন যুদ্ধ জয়ের এত কাছে ছিলেন না! কিন্তু আক্রমণের তিন বছর পরেও, ‘জয়’ বলতে তিনি আসলে কী বোঝাতে চান, তা স্পষ্ট নয়। তাঁর লক্ষ্যগুলোও অস্পষ্ট।
ইউক্রেনে পুতিনের ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ পরিকল্পনা করা হয়েছিল গোপনে। রুশ জনগণ তো বটেই, এমনকি সরকারের লোকেরাও অন্ধকারে ছিল! পুতিন রুশ সার্বভৌমত্ব রক্ষার কথা বলেছেন সে সময়। কিন্তু পরবর্তী পরিস্থিতি এমন কিছু বিষয়ের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে, যা তাঁর নিয়ন্ত্রণের বাইরে। যদিও গত ১৮ ফেব্রুয়ারি সৌদি আরবে ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে পুতিন প্রশাসনের আনুষ্ঠানিকভাবে আলোচনা শুরু হয়েছে। কিন্তু এরপরও ইউক্রেনের রাজনৈতিক বাস্তবতা, ইউরোপের পুনঃসশস্ত্রীকরণ প্রচেষ্টা এবং সর্বোপরি ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর পরিকল্পনায় জল ঢেলে দিতে পারে।
ইউক্রেনে যুদ্ধ বন্ধে ট্রাম্পের কোনো সুস্পষ্ট পরিকল্পনা নেই, অন্তত এখন পর্যন্ত তেমন কিছু প্রকাশ পায়নি। তবে তাঁর হাতে ইউক্রেন ইস্যুতে গ্রহণ করার মতো যথেষ্ট বিকল্প আছে। তিনি চাইলেই ইউক্রেনের জন্য সহায়তা সম্পূর্ণ বন্ধ করে দিতে পারেন, সেই সঙ্গে রাশিয়ার ওপরও নিষেধাজ্ঞা বাড়াতে পারেন। কিন্তু সম্ভবত সেসব কিছুই ঘটবে না। কারণ, আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ও পুতিনের মধ্যকার কূটনৈতিক কৌশলের নতুন পর্বের মহরত হলো রিয়াদে। রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ করার তিন বছর পর এই প্রথম আমেরিকা ও রাশিয়ার কর্মকর্তাদের মুখোমুখি বৈঠক হলো। তাঁরা ইউক্রেন এবং ‘পারস্পরিক ভূরাজনৈতিক স্বার্থ’ নিয়ে ধারাবাহিক আলোচনা শুরু করতে রাজি হয়েছেন। তবে আসলে কী আলোচিত হবে তা অস্পষ্ট। এ ছাড়া, ট্রাম্প–পুতিন বৈঠক আয়োজনের প্রস্তুতিও শুরু হবে শিগগির, যদিও এখনো কোনো তারিখ নির্ধারণ করা হয়নি।
এক মার্কিন কর্মকর্তা বলেছেন, এ ধরনের উন্মুক্ত ও অস্পষ্ট আলোচনা পুতিনের জন্য বেশ সুবিধাজনক। ট্রাম্প যেখানে এই আলোচনাকে দেখেন ‘অযৌক্তিক’ যুদ্ধের ইতি টানার উপায় হিসেবে, সেখানে পুতিন এগুলোকে সম্ভাব্য বৃহত্তর সংঘাতের একটি পর্যায় হিসেবে দেখছেন। রুশ নেতা হিসাব কষে দেখছেন, ইউক্রেন বা ন্যাটো জোটের চেয়ে তাঁর ধৈর্য ও সক্ষমতা বেশি। পোকার খেলোয়াড়ের মতো, পুতিন প্রয়োজনের সময় আত্মবিশ্বাস ও শক্তিমত্তার সঙ্গে কাজ করতে দক্ষ। কিন্তু বাস্তবে, তাঁর হাতে থাকা তাস ঠিক ততটা শক্তিশালী নয়, যতটা তিনি প্রতিপক্ষকে বিশ্বাস করাতে চান। অন্যদিকে, যুদ্ধের অবসান তাঁর জন্য নিজ দেশে নতুন জটিলতা তৈরি করতে পারে।
রাশিয়ার আলোচনার অবস্থান মূল্যায়নের যেকোনো প্রচেষ্টা অবশ্যই সামরিক পরিস্থিতি থেকে শুরু করা উচিত। দেশটির সেনাবাহিনী ইউক্রেনে খুব একটা ভালো দক্ষতা দেখাতে পারছে না। তাদের অগ্রগতি অত্যন্ত ধীর। গত বছরের জুলাই থেকে তারা পোকরোভস্ক শহর দখল করতে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু দখল করতে পারেনি। তাদের ক্ষয়ক্ষতিও হয়েছে ব্যাপক। রাশিয়ার বেশির ভাগ সামরিক অগ্রগতি যুদ্ধের প্রথম কয়েক সপ্তাহেই ঘটেছে। ২০২২ সালের এপ্রিলে ইউক্রেনের উত্তর থেকে রাশিয়ার পশ্চাদপসরণের পর, তারা ইউক্রেনের ১৯ দশমিক ৬ শতাংশ ভূখণ্ড নিয়ন্ত্রণ করছিল। সে সময় তাদের হতাহতের সংখ্যা ছিল আনুমানিক ২০ হাজার। বর্তমানে রাশিয়া ইউক্রেনের ১৯ দশমিক ২ শতাংশ এলাকা নিয়ন্ত্রণে রেখেছে এবং ব্রিটিশ গোয়েন্দা মূল্যায়ন অনুসারে, তাদের মোট হতাহতের সংখ্যা ৮ লাখে পৌঁছেছে। এক পশ্চিমা কর্মকর্তা বলেন, ‘দুই দেশের সেনাবাহিনী একে অপরের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে কারণ তারা থামতে পারছে না, কোনো পক্ষই আসলে চূড়ান্ত পরিণতি নির্ধারক জয় অর্জনের আশা করছে না।’
কেবল সেনা হতাহতের ঘটনাই নয়, রাশিয়ার সামরিক সরঞ্জামের ক্ষয়ক্ষতিও অবিশ্বাস্য মাত্রায় পৌঁছেছে। কয়েক দশক ধরে গড়ে তোলা সোভিয়েত আমলের সাঁজোয়া বহরের অবস্থাই তার প্রমাণ। মজুত থাকা ৭ হাজার ৩০০ ট্যাংকের অর্ধেকের বেশি ধ্বংস হয়ে গেছে। অবশিষ্ট যেগুলো আছে, তার মধ্যে মাত্র ৫০০টি দ্রুত সংস্কারের উপযোগী। এপ্রিলের মধ্যেই রাশিয়ার টি–৮০ ট্যাংকের মজুত শেষ হয়ে যেতে পারে। গত বছর রাশিয়া যতগুলো আর্টিলারি বা গোলন্দাজ ইউনিট হারিয়েছে, তার পরিমাণ আগের দুই বছরের সম্মিলিত ক্ষতির দ্বিগুণ। পেশাদার চুক্তিভিত্তিক সেনা নিয়োগের খরচ বাড়ছে, আর সাধারণ জনগণের ব্যাপক মোবিলাইজেশন (যুদ্ধের ময়দানে নামানো) রাজনৈতিকভাবে ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। জনমত জরিপ স্পষ্ট দেখাচ্ছে, রাশিয়ার জনগণ যুদ্ধের অবসান চায়।
রাশিয়ার অর্থনীতি নিষেধাজ্ঞার ধকল সামলে নিতে পেরেছে মূলত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দক্ষতা, উচ্চ পণ্যমূল্য এবং রাজস্ব প্রণোদনার কারণে। তবে উৎপাদনশীল খাত থেকে সামরিক খাতে সম্পদ স্থানান্তরের ফলে মূল্যস্ফীতি দুই অঙ্কের ঘরে পৌঁছে গেছে। সুদহার বর্তমানে ২১ শতাংশ, যা দুই দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ। শ্রমবাজারে দীর্ঘস্থায়ী ঘাটতি রয়ে গেছে। অর্থনৈতিক পরিসংখ্যানের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে, কারণ দেশটির পরিসংখ্যান কর্তৃপক্ষ নিয়মিত প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস সংশোধন করে থাকে।
তবে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের ফাঁস করা রাশিয়ার সেন্ট্রাল ব্যাংক ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের একটি প্রতিবেদনে সতর্ক করে বলা হয়েছে যে, মূল্যস্ফীতি কমার আগেই রাশিয়া মন্দার মুখে পড়তে পারে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক উপপ্রধান ওলেগ ভিউগিন বলেছেন, সরকারকে খুব দ্রুত সামরিক ব্যয় হ্রাস করা অথবা লাগামহীন মূল্যস্ফীতির মধ্যে যেকোনো একটি বেছে নিতে হবে।
সার্বভৌম সম্পদ তহবিল ক্রমাগত ফুরিয়ে যাচ্ছে। সাবেক অর্থমন্ত্রী মিখাইল জাদোরনভের মতে, এই তহবিলের তারল্য মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৭ দশমিক ৪ শতাংশ থেকে কমে ২ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে। গত বছর রাশিয়ার রপ্তানি আয় ছিল ৪১৭ বিলিয়ন ডলার। কিন্তু নিষেধাজ্ঞা এবং বিশ্ব বাজারে নিম্নমুখী পণ্যমূল্যের চাপের কারণে বেশ চাপে আছে। ডিসেম্বরে এটি বছরওয়ারি হিসাবে আগের বছরের তুলনায় ২০ শতাংশ কমেছে। রুশ থিংক ট্যাংক ‘রে–রাশিয়া’—এর গবেষক কিরিল রোগভ যুক্তি দিয়েছেন, নিষেধাজ্ঞার কারণে রাশিয়ার বড় রপ্তানি খাত ইস্পাত ও কৃষিপণ্যের ধীর গতিতে দরপতন রাশিয়ার আগ্রাসনের সক্ষমতাকে সীমিত করবে।
রাশিয়ার এ ধরনের দুর্বলতা থাকার বিষয়টি পশ্চিমাদের মধ্যে অনেককে বিশ্বাস করাচ্ছে যে, আমেরিকা ক্রেমলিনকে যুদ্ধ বন্ধে যে ছাড় দিতে যাচ্ছে বা চাচ্ছে তা আসলে খুব একটা ভালো নয়। যদিও পশ্চিমারা ইউক্রেনকে নিশ্চিত নিরাপত্তার গ্যারান্টি দিতে সক্ষম নাও হতে পারে, তবে তারা রাশিয়াকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে নিষেধাজ্ঞা বহাল রাখতে পারে বলে যুক্তি দিচ্ছেন রোগভ।
তবে ট্রাম্পের লক্ষ্য দীর্ঘ সময় ধরে রাশিয়াকে দমিয়ে রাখা বা প্রতিহত করা নয়, বরং তিনি দ্রুত যুদ্ধের সমাপ্তির প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে মনোযোগী। এক মার্কিন কর্মকর্তা বলেন, ‘শেষ পর্যন্ত আমরা পুতিনকে সেই অবস্থানে নিয়ে এসেছি, যেখানে তাঁকে দেখতে চেয়েছিলাম গত তিন বছর ধরে। এখন যদি আমরা তাঁকে পরাজয়ের মুখ থেকে জয়ের সুযোগ করে দিই, তাহলে সেটা ভয়াবহ লজ্জার বিষয় হবে।’
পুতিন বিশ্বাস করেন, ট্রাম্প কেবল অস্থির প্রকৃতিরই নন, তাঁকে সহজে প্রভাবিতও করা যায়। প্রশংসা ও তাৎক্ষণিক সুবিধা দিয়ে তিনি আমেরিকার প্রেসিডেন্টকে আকৃষ্ট করেছেন। গত ১১ ফেব্রুয়ারি পুতিন ২০২১ সাল থেকে রাশিয়ায় বন্দী থাকা মার্কিন নাগরিক মার্ক ফোগেলকে মুক্তি দেন। তবে পুতিনের মৌলিক দাবি অপরিবর্তিত। তাঁর এসব দাবির মধ্যে—একটি নিরপেক্ষ ইউক্রেন, যার সামরিক বাহিনী আকার ও সরঞ্জামের দিক থেকে সীমিত থাকবে এবং যেখানে পশ্চিমা সেনাদের উপস্থিতি থাকবে না। তিনি চান, ক্রিমিয়া ও অন্য চারটি অধিকৃত ইউক্রেনীয় প্রদেশকে রাশিয়ার অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হোক।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, পুতিন ২০২৪ সালের জুনে ইউক্রেন সংকট নিরসনে যে দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেন তার মূল কথা হলো—তিনি এমন কোনো সাময়িক যুদ্ধবিরতি বা অস্ত্রবিরতি চান না, যা কার্যত রাশিয়ার ওপর পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞাগুলো বহাল রাখবে এবং ইউক্রেনকে পুনরায় অস্ত্রসজ্জিত হওয়ার সুযোগ দেবে। বরং, পুতিন একটি ‘চূড়ান্ত সমাধান’ চান, যার মাধ্যমে রাশিয়ার ওপর আরোপিত পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হবে এবং মস্কো সামরিক শক্তি পুনর্গঠনের সুযোগ পাবে।
তবে বাস্তবতা হলো, রণক্ষেত্রের যুদ্ধ বন্ধ হলেও, পুতিন ইউরোপকে দুর্বল করার এবং রাশিয়ার প্রভাব বলয় পুনর্গঠনের চেষ্টা চালিয়ে যাবেন। ন্যাটোর ইউরোপ চ্যাপ্টারে সুপ্রিম অ্যালাইড কমান্ডারের উপদেষ্টা স্টিভ কোভিংটনের মতে, পুতিনের লক্ষ্য হলো ইউক্রেনকে গুঁড়িয়ে দেওয়া এবং ১৯৪৫—পরবর্তী মার্কিন–নেতৃত্বাধীন বিশ্বব্যবস্থাকে ধ্বংস করা।
গত বছর নিজ দেশের কূটনীতিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় পুতিন বলেছিলেন, ‘সমগ্র ইউরো–আটলান্টিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা আমাদের চোখের সামনে ভেঙে পড়ছে। ইউরোপ বৈশ্বিক অর্থনৈতিক বিকাশে একঘরে হয়ে পড়ছে, বিশৃঙ্খলার মধ্যে ডুবে যাচ্ছে...এবং আন্তর্জাতিক সক্ষমতা ও সাংস্কৃতিক পরিচয় হারাচ্ছে।’
পুতিন নিশ্চিতভাবেই খুশি হয়েছেন, যখন গত ১৫ ফেব্রুয়ারি মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনে আমেরিকার ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি. ভ্যান্স একই মন্তব্যের প্রতিধ্বনি করেছেন। ২০০৭ সালে এই একই সম্মেলনে পুতিন প্রথমবারের মতো ঘোষণা করেছিলেন, তিনি পশ্চিমাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অবতীর্ণ হবেন। ক্রেমলিন অবশ্যই আশা করছে যে, রাশিয়া ঘেঁষা ডানপন্থী রাজনৈতিক দলগুলো—যাদের প্রতি ভ্যান্সেরও সমর্থন আছে—ইউরোপের নির্বাচনে শক্তিশালী অবস্থান গড়ে তুলবে।
ক্রেমলিনের সামনে গ্রেমলিন
পশ্চিমা দুনিয়ায় ‘গ্রেমলিন’ মূলত লোককথায় প্রচলিত একটি দুষ্টু ও রহস্যময় প্রাণী। আধুনিক সংস্কৃতিতে, বিশেষ করে সিনেমা ও সাহিত্যে গ্রেমলিনকে ব্যাপকভাবে তুলে ধরা হয়েছে। সহজ ভাষায় বলতে গেলে, গ্রেমলিন হলো একপ্রকার কাল্পনিক, ছোটখাটো, দুষ্টু প্রকৃতির প্রাণী, যাদের কাজ হলো যন্ত্রপাতির ক্ষতি করা বা গোলমাল তৈরি করা। বিশ শতকের দিকে মূলত উড়োজাহাজ শিল্পকে কেন্দ্র করে এই কল্পকথা তৈরি হয়।
পুতিনের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার হলো ক্ষমতায় টিকে থাকা। যুদ্ধ থেকে বের হয়ে আসার নিজস্ব ঝুঁকি আছে। বিশেষ করে যুদ্ধ শেষ হয়ে যাওয়ার পর লাখ লাখ সেনা ঘরে ফিরবে, তাঁদের ভরণ-পোষণ এবং বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে ক্ষমতার লড়াই তাঁকে বিচলিত করতে পারে।
ট্রাম্পের কূটনীতি নীরবে যুদ্ধের বিরোধিতা করা মধ্যপন্থীদের নতুন আশার সঞ্চার করেছে। তাঁদের রাজনৈতিক ক্ষমতা নেই, তবে এই ‘শান্তির সুবিধাভোগীরা’, যারা মূলত বেসরকারি ব্যবসায়ী, অর্থনীতিবিদ এবং প্রযুক্তিবিদ—আশা করছেন যে, ট্রাম্প ও তাঁর দল রাশিয়ার ভবিষ্যৎ পথ পরিবর্তন করতে পারবেন। পুতিনের মুখোমুখি হতে অক্ষম এই গোষ্ঠী ট্রাম্পকে বোঝাতে চায় যে, পশ্চিমাদের সঙ্গে রাশিয়ার সংঘাত প্রশমিত করা তাঁর নিরাপত্তার জন্য ক্ষতিকর হবে না; বরং তা আরও সুসংহত করবে।
অন্যদিকে আছে ‘যুদ্ধের সুবিধাভোগী গোষ্ঠী’। যদি সংঘাত পুতিন শাসনের ভিত্তি হয়, তবে সহিংসতা ও দুর্নীতি এর টিকে থাকার অন্যান্য উপাদান। অলিগার্কদের বিভিন্ন গোষ্ঠী নিষেধাজ্ঞার ফলে সৃষ্ট গ্রে মার্কেট বা পর্দার অন্তরালের বাজারে জ্বালানি তেল ও অন্যান্য পণ্য রপ্তানির কোটা থেকে লাভবান হয়। এক ধনকুবের রাশিয়ার এই বর্তমান অবস্থাকে ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর (আইআরজিসি) চোরাচালান প্রকল্পগুলোর সঙ্গে তুলনা করেছেন। রুশ অলিগার্করা তাদের লাভজনক ব্যবসা এত সহজে ছাড়বে না। নিরাপত্তা সংস্থাগুলো একদিকে এমন ‘ফিফথ কলাম’ বা ‘পঞ্চম স্তম্ভের’ সন্ধান করবে যারা শান্তির পক্ষে, আবার অন্যদিকে চরমপন্থী জাতীয়তাবাদীদেরও খুঁজবে, যারা যেকোনো সমঝোতাকে বিশ্বাসঘাতকতা হিসেবে দেখবে।
ট্রাম্প ‘হত্যাযজ্ঞ বন্ধ’ করতে চান এবং এ বিষয়ে তিনি সঠিক অবস্থানেই আছেন। যদি যুদ্ধবিরতি ইউক্রেন পুনর্গঠনের সুযোগ দেয়, ইউরোপের প্রতিরক্ষা ব্যয় বাড়ায় এবং রাশিয়ার দুর্বল অর্থনীতির ওপর পশ্চিমা কিছু নিষেধাজ্ঞা বজায় থাকে, তবে তা পুতিনের উচ্চাকাঙ্ক্ষাকে ব্যর্থ করলেও করতেও পারে। তবে পুতিন ‘বাজি ধরছেন’ যে, তিনি ইউক্রেনের চেয়ে দীর্ঘ সময় লড়াই চালিয়ে যেতে পারবেন, অথবা তিনি এমন একটি সমঝোতা ট্রাম্পের মাধ্যমে আদায় করতে পারবেন, যা রাশিয়াকে বিশ্ব অর্থনীতিতে পুনরায় যুক্ত হওয়ার সুযোগ দেবে, ইউক্রেনকে বিভক্ত ও আধা–ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করবে এবং ইউরোপকে এতটাই হতবাক করে দেবে যে, তারা নিজেদের রক্ষা করার সক্ষমতা হারাবে!
অনুবাদ করেছেন আব্দুর রহমান

রাশিয়ার ঢোল পেটানো আর কতিপয় ইউরোপীয়র হতাশা দেখে মনে হতে পারে, ভ্লাদিমির পুতিন কখনোই ইউক্রেন যুদ্ধ জয়ের এত কাছে ছিলেন না! কিন্তু আক্রমণের তিন বছর পরেও, ‘জয়’ বলতে তিনি আসলে কী বোঝাতে চান, তা স্পষ্ট নয়। তাঁর লক্ষ্যগুলোও অস্পষ্ট।
ইউক্রেনে পুতিনের ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ পরিকল্পনা করা হয়েছিল গোপনে। রুশ জনগণ তো বটেই, এমনকি সরকারের লোকেরাও অন্ধকারে ছিল! পুতিন রুশ সার্বভৌমত্ব রক্ষার কথা বলেছেন সে সময়। কিন্তু পরবর্তী পরিস্থিতি এমন কিছু বিষয়ের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে, যা তাঁর নিয়ন্ত্রণের বাইরে। যদিও গত ১৮ ফেব্রুয়ারি সৌদি আরবে ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে পুতিন প্রশাসনের আনুষ্ঠানিকভাবে আলোচনা শুরু হয়েছে। কিন্তু এরপরও ইউক্রেনের রাজনৈতিক বাস্তবতা, ইউরোপের পুনঃসশস্ত্রীকরণ প্রচেষ্টা এবং সর্বোপরি ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর পরিকল্পনায় জল ঢেলে দিতে পারে।
ইউক্রেনে যুদ্ধ বন্ধে ট্রাম্পের কোনো সুস্পষ্ট পরিকল্পনা নেই, অন্তত এখন পর্যন্ত তেমন কিছু প্রকাশ পায়নি। তবে তাঁর হাতে ইউক্রেন ইস্যুতে গ্রহণ করার মতো যথেষ্ট বিকল্প আছে। তিনি চাইলেই ইউক্রেনের জন্য সহায়তা সম্পূর্ণ বন্ধ করে দিতে পারেন, সেই সঙ্গে রাশিয়ার ওপরও নিষেধাজ্ঞা বাড়াতে পারেন। কিন্তু সম্ভবত সেসব কিছুই ঘটবে না। কারণ, আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ও পুতিনের মধ্যকার কূটনৈতিক কৌশলের নতুন পর্বের মহরত হলো রিয়াদে। রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ করার তিন বছর পর এই প্রথম আমেরিকা ও রাশিয়ার কর্মকর্তাদের মুখোমুখি বৈঠক হলো। তাঁরা ইউক্রেন এবং ‘পারস্পরিক ভূরাজনৈতিক স্বার্থ’ নিয়ে ধারাবাহিক আলোচনা শুরু করতে রাজি হয়েছেন। তবে আসলে কী আলোচিত হবে তা অস্পষ্ট। এ ছাড়া, ট্রাম্প–পুতিন বৈঠক আয়োজনের প্রস্তুতিও শুরু হবে শিগগির, যদিও এখনো কোনো তারিখ নির্ধারণ করা হয়নি।
এক মার্কিন কর্মকর্তা বলেছেন, এ ধরনের উন্মুক্ত ও অস্পষ্ট আলোচনা পুতিনের জন্য বেশ সুবিধাজনক। ট্রাম্প যেখানে এই আলোচনাকে দেখেন ‘অযৌক্তিক’ যুদ্ধের ইতি টানার উপায় হিসেবে, সেখানে পুতিন এগুলোকে সম্ভাব্য বৃহত্তর সংঘাতের একটি পর্যায় হিসেবে দেখছেন। রুশ নেতা হিসাব কষে দেখছেন, ইউক্রেন বা ন্যাটো জোটের চেয়ে তাঁর ধৈর্য ও সক্ষমতা বেশি। পোকার খেলোয়াড়ের মতো, পুতিন প্রয়োজনের সময় আত্মবিশ্বাস ও শক্তিমত্তার সঙ্গে কাজ করতে দক্ষ। কিন্তু বাস্তবে, তাঁর হাতে থাকা তাস ঠিক ততটা শক্তিশালী নয়, যতটা তিনি প্রতিপক্ষকে বিশ্বাস করাতে চান। অন্যদিকে, যুদ্ধের অবসান তাঁর জন্য নিজ দেশে নতুন জটিলতা তৈরি করতে পারে।
রাশিয়ার আলোচনার অবস্থান মূল্যায়নের যেকোনো প্রচেষ্টা অবশ্যই সামরিক পরিস্থিতি থেকে শুরু করা উচিত। দেশটির সেনাবাহিনী ইউক্রেনে খুব একটা ভালো দক্ষতা দেখাতে পারছে না। তাদের অগ্রগতি অত্যন্ত ধীর। গত বছরের জুলাই থেকে তারা পোকরোভস্ক শহর দখল করতে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু দখল করতে পারেনি। তাদের ক্ষয়ক্ষতিও হয়েছে ব্যাপক। রাশিয়ার বেশির ভাগ সামরিক অগ্রগতি যুদ্ধের প্রথম কয়েক সপ্তাহেই ঘটেছে। ২০২২ সালের এপ্রিলে ইউক্রেনের উত্তর থেকে রাশিয়ার পশ্চাদপসরণের পর, তারা ইউক্রেনের ১৯ দশমিক ৬ শতাংশ ভূখণ্ড নিয়ন্ত্রণ করছিল। সে সময় তাদের হতাহতের সংখ্যা ছিল আনুমানিক ২০ হাজার। বর্তমানে রাশিয়া ইউক্রেনের ১৯ দশমিক ২ শতাংশ এলাকা নিয়ন্ত্রণে রেখেছে এবং ব্রিটিশ গোয়েন্দা মূল্যায়ন অনুসারে, তাদের মোট হতাহতের সংখ্যা ৮ লাখে পৌঁছেছে। এক পশ্চিমা কর্মকর্তা বলেন, ‘দুই দেশের সেনাবাহিনী একে অপরের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে কারণ তারা থামতে পারছে না, কোনো পক্ষই আসলে চূড়ান্ত পরিণতি নির্ধারক জয় অর্জনের আশা করছে না।’
কেবল সেনা হতাহতের ঘটনাই নয়, রাশিয়ার সামরিক সরঞ্জামের ক্ষয়ক্ষতিও অবিশ্বাস্য মাত্রায় পৌঁছেছে। কয়েক দশক ধরে গড়ে তোলা সোভিয়েত আমলের সাঁজোয়া বহরের অবস্থাই তার প্রমাণ। মজুত থাকা ৭ হাজার ৩০০ ট্যাংকের অর্ধেকের বেশি ধ্বংস হয়ে গেছে। অবশিষ্ট যেগুলো আছে, তার মধ্যে মাত্র ৫০০টি দ্রুত সংস্কারের উপযোগী। এপ্রিলের মধ্যেই রাশিয়ার টি–৮০ ট্যাংকের মজুত শেষ হয়ে যেতে পারে। গত বছর রাশিয়া যতগুলো আর্টিলারি বা গোলন্দাজ ইউনিট হারিয়েছে, তার পরিমাণ আগের দুই বছরের সম্মিলিত ক্ষতির দ্বিগুণ। পেশাদার চুক্তিভিত্তিক সেনা নিয়োগের খরচ বাড়ছে, আর সাধারণ জনগণের ব্যাপক মোবিলাইজেশন (যুদ্ধের ময়দানে নামানো) রাজনৈতিকভাবে ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। জনমত জরিপ স্পষ্ট দেখাচ্ছে, রাশিয়ার জনগণ যুদ্ধের অবসান চায়।
রাশিয়ার অর্থনীতি নিষেধাজ্ঞার ধকল সামলে নিতে পেরেছে মূলত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দক্ষতা, উচ্চ পণ্যমূল্য এবং রাজস্ব প্রণোদনার কারণে। তবে উৎপাদনশীল খাত থেকে সামরিক খাতে সম্পদ স্থানান্তরের ফলে মূল্যস্ফীতি দুই অঙ্কের ঘরে পৌঁছে গেছে। সুদহার বর্তমানে ২১ শতাংশ, যা দুই দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ। শ্রমবাজারে দীর্ঘস্থায়ী ঘাটতি রয়ে গেছে। অর্থনৈতিক পরিসংখ্যানের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে, কারণ দেশটির পরিসংখ্যান কর্তৃপক্ষ নিয়মিত প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস সংশোধন করে থাকে।
তবে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের ফাঁস করা রাশিয়ার সেন্ট্রাল ব্যাংক ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের একটি প্রতিবেদনে সতর্ক করে বলা হয়েছে যে, মূল্যস্ফীতি কমার আগেই রাশিয়া মন্দার মুখে পড়তে পারে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক উপপ্রধান ওলেগ ভিউগিন বলেছেন, সরকারকে খুব দ্রুত সামরিক ব্যয় হ্রাস করা অথবা লাগামহীন মূল্যস্ফীতির মধ্যে যেকোনো একটি বেছে নিতে হবে।
সার্বভৌম সম্পদ তহবিল ক্রমাগত ফুরিয়ে যাচ্ছে। সাবেক অর্থমন্ত্রী মিখাইল জাদোরনভের মতে, এই তহবিলের তারল্য মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৭ দশমিক ৪ শতাংশ থেকে কমে ২ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে। গত বছর রাশিয়ার রপ্তানি আয় ছিল ৪১৭ বিলিয়ন ডলার। কিন্তু নিষেধাজ্ঞা এবং বিশ্ব বাজারে নিম্নমুখী পণ্যমূল্যের চাপের কারণে বেশ চাপে আছে। ডিসেম্বরে এটি বছরওয়ারি হিসাবে আগের বছরের তুলনায় ২০ শতাংশ কমেছে। রুশ থিংক ট্যাংক ‘রে–রাশিয়া’—এর গবেষক কিরিল রোগভ যুক্তি দিয়েছেন, নিষেধাজ্ঞার কারণে রাশিয়ার বড় রপ্তানি খাত ইস্পাত ও কৃষিপণ্যের ধীর গতিতে দরপতন রাশিয়ার আগ্রাসনের সক্ষমতাকে সীমিত করবে।
রাশিয়ার এ ধরনের দুর্বলতা থাকার বিষয়টি পশ্চিমাদের মধ্যে অনেককে বিশ্বাস করাচ্ছে যে, আমেরিকা ক্রেমলিনকে যুদ্ধ বন্ধে যে ছাড় দিতে যাচ্ছে বা চাচ্ছে তা আসলে খুব একটা ভালো নয়। যদিও পশ্চিমারা ইউক্রেনকে নিশ্চিত নিরাপত্তার গ্যারান্টি দিতে সক্ষম নাও হতে পারে, তবে তারা রাশিয়াকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে নিষেধাজ্ঞা বহাল রাখতে পারে বলে যুক্তি দিচ্ছেন রোগভ।
তবে ট্রাম্পের লক্ষ্য দীর্ঘ সময় ধরে রাশিয়াকে দমিয়ে রাখা বা প্রতিহত করা নয়, বরং তিনি দ্রুত যুদ্ধের সমাপ্তির প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে মনোযোগী। এক মার্কিন কর্মকর্তা বলেন, ‘শেষ পর্যন্ত আমরা পুতিনকে সেই অবস্থানে নিয়ে এসেছি, যেখানে তাঁকে দেখতে চেয়েছিলাম গত তিন বছর ধরে। এখন যদি আমরা তাঁকে পরাজয়ের মুখ থেকে জয়ের সুযোগ করে দিই, তাহলে সেটা ভয়াবহ লজ্জার বিষয় হবে।’
পুতিন বিশ্বাস করেন, ট্রাম্প কেবল অস্থির প্রকৃতিরই নন, তাঁকে সহজে প্রভাবিতও করা যায়। প্রশংসা ও তাৎক্ষণিক সুবিধা দিয়ে তিনি আমেরিকার প্রেসিডেন্টকে আকৃষ্ট করেছেন। গত ১১ ফেব্রুয়ারি পুতিন ২০২১ সাল থেকে রাশিয়ায় বন্দী থাকা মার্কিন নাগরিক মার্ক ফোগেলকে মুক্তি দেন। তবে পুতিনের মৌলিক দাবি অপরিবর্তিত। তাঁর এসব দাবির মধ্যে—একটি নিরপেক্ষ ইউক্রেন, যার সামরিক বাহিনী আকার ও সরঞ্জামের দিক থেকে সীমিত থাকবে এবং যেখানে পশ্চিমা সেনাদের উপস্থিতি থাকবে না। তিনি চান, ক্রিমিয়া ও অন্য চারটি অধিকৃত ইউক্রেনীয় প্রদেশকে রাশিয়ার অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হোক।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, পুতিন ২০২৪ সালের জুনে ইউক্রেন সংকট নিরসনে যে দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেন তার মূল কথা হলো—তিনি এমন কোনো সাময়িক যুদ্ধবিরতি বা অস্ত্রবিরতি চান না, যা কার্যত রাশিয়ার ওপর পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞাগুলো বহাল রাখবে এবং ইউক্রেনকে পুনরায় অস্ত্রসজ্জিত হওয়ার সুযোগ দেবে। বরং, পুতিন একটি ‘চূড়ান্ত সমাধান’ চান, যার মাধ্যমে রাশিয়ার ওপর আরোপিত পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হবে এবং মস্কো সামরিক শক্তি পুনর্গঠনের সুযোগ পাবে।
তবে বাস্তবতা হলো, রণক্ষেত্রের যুদ্ধ বন্ধ হলেও, পুতিন ইউরোপকে দুর্বল করার এবং রাশিয়ার প্রভাব বলয় পুনর্গঠনের চেষ্টা চালিয়ে যাবেন। ন্যাটোর ইউরোপ চ্যাপ্টারে সুপ্রিম অ্যালাইড কমান্ডারের উপদেষ্টা স্টিভ কোভিংটনের মতে, পুতিনের লক্ষ্য হলো ইউক্রেনকে গুঁড়িয়ে দেওয়া এবং ১৯৪৫—পরবর্তী মার্কিন–নেতৃত্বাধীন বিশ্বব্যবস্থাকে ধ্বংস করা।
গত বছর নিজ দেশের কূটনীতিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় পুতিন বলেছিলেন, ‘সমগ্র ইউরো–আটলান্টিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা আমাদের চোখের সামনে ভেঙে পড়ছে। ইউরোপ বৈশ্বিক অর্থনৈতিক বিকাশে একঘরে হয়ে পড়ছে, বিশৃঙ্খলার মধ্যে ডুবে যাচ্ছে...এবং আন্তর্জাতিক সক্ষমতা ও সাংস্কৃতিক পরিচয় হারাচ্ছে।’
পুতিন নিশ্চিতভাবেই খুশি হয়েছেন, যখন গত ১৫ ফেব্রুয়ারি মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনে আমেরিকার ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি. ভ্যান্স একই মন্তব্যের প্রতিধ্বনি করেছেন। ২০০৭ সালে এই একই সম্মেলনে পুতিন প্রথমবারের মতো ঘোষণা করেছিলেন, তিনি পশ্চিমাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অবতীর্ণ হবেন। ক্রেমলিন অবশ্যই আশা করছে যে, রাশিয়া ঘেঁষা ডানপন্থী রাজনৈতিক দলগুলো—যাদের প্রতি ভ্যান্সেরও সমর্থন আছে—ইউরোপের নির্বাচনে শক্তিশালী অবস্থান গড়ে তুলবে।
ক্রেমলিনের সামনে গ্রেমলিন
পশ্চিমা দুনিয়ায় ‘গ্রেমলিন’ মূলত লোককথায় প্রচলিত একটি দুষ্টু ও রহস্যময় প্রাণী। আধুনিক সংস্কৃতিতে, বিশেষ করে সিনেমা ও সাহিত্যে গ্রেমলিনকে ব্যাপকভাবে তুলে ধরা হয়েছে। সহজ ভাষায় বলতে গেলে, গ্রেমলিন হলো একপ্রকার কাল্পনিক, ছোটখাটো, দুষ্টু প্রকৃতির প্রাণী, যাদের কাজ হলো যন্ত্রপাতির ক্ষতি করা বা গোলমাল তৈরি করা। বিশ শতকের দিকে মূলত উড়োজাহাজ শিল্পকে কেন্দ্র করে এই কল্পকথা তৈরি হয়।
পুতিনের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার হলো ক্ষমতায় টিকে থাকা। যুদ্ধ থেকে বের হয়ে আসার নিজস্ব ঝুঁকি আছে। বিশেষ করে যুদ্ধ শেষ হয়ে যাওয়ার পর লাখ লাখ সেনা ঘরে ফিরবে, তাঁদের ভরণ-পোষণ এবং বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে ক্ষমতার লড়াই তাঁকে বিচলিত করতে পারে।
ট্রাম্পের কূটনীতি নীরবে যুদ্ধের বিরোধিতা করা মধ্যপন্থীদের নতুন আশার সঞ্চার করেছে। তাঁদের রাজনৈতিক ক্ষমতা নেই, তবে এই ‘শান্তির সুবিধাভোগীরা’, যারা মূলত বেসরকারি ব্যবসায়ী, অর্থনীতিবিদ এবং প্রযুক্তিবিদ—আশা করছেন যে, ট্রাম্প ও তাঁর দল রাশিয়ার ভবিষ্যৎ পথ পরিবর্তন করতে পারবেন। পুতিনের মুখোমুখি হতে অক্ষম এই গোষ্ঠী ট্রাম্পকে বোঝাতে চায় যে, পশ্চিমাদের সঙ্গে রাশিয়ার সংঘাত প্রশমিত করা তাঁর নিরাপত্তার জন্য ক্ষতিকর হবে না; বরং তা আরও সুসংহত করবে।
অন্যদিকে আছে ‘যুদ্ধের সুবিধাভোগী গোষ্ঠী’। যদি সংঘাত পুতিন শাসনের ভিত্তি হয়, তবে সহিংসতা ও দুর্নীতি এর টিকে থাকার অন্যান্য উপাদান। অলিগার্কদের বিভিন্ন গোষ্ঠী নিষেধাজ্ঞার ফলে সৃষ্ট গ্রে মার্কেট বা পর্দার অন্তরালের বাজারে জ্বালানি তেল ও অন্যান্য পণ্য রপ্তানির কোটা থেকে লাভবান হয়। এক ধনকুবের রাশিয়ার এই বর্তমান অবস্থাকে ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর (আইআরজিসি) চোরাচালান প্রকল্পগুলোর সঙ্গে তুলনা করেছেন। রুশ অলিগার্করা তাদের লাভজনক ব্যবসা এত সহজে ছাড়বে না। নিরাপত্তা সংস্থাগুলো একদিকে এমন ‘ফিফথ কলাম’ বা ‘পঞ্চম স্তম্ভের’ সন্ধান করবে যারা শান্তির পক্ষে, আবার অন্যদিকে চরমপন্থী জাতীয়তাবাদীদেরও খুঁজবে, যারা যেকোনো সমঝোতাকে বিশ্বাসঘাতকতা হিসেবে দেখবে।
ট্রাম্প ‘হত্যাযজ্ঞ বন্ধ’ করতে চান এবং এ বিষয়ে তিনি সঠিক অবস্থানেই আছেন। যদি যুদ্ধবিরতি ইউক্রেন পুনর্গঠনের সুযোগ দেয়, ইউরোপের প্রতিরক্ষা ব্যয় বাড়ায় এবং রাশিয়ার দুর্বল অর্থনীতির ওপর পশ্চিমা কিছু নিষেধাজ্ঞা বজায় থাকে, তবে তা পুতিনের উচ্চাকাঙ্ক্ষাকে ব্যর্থ করলেও করতেও পারে। তবে পুতিন ‘বাজি ধরছেন’ যে, তিনি ইউক্রেনের চেয়ে দীর্ঘ সময় লড়াই চালিয়ে যেতে পারবেন, অথবা তিনি এমন একটি সমঝোতা ট্রাম্পের মাধ্যমে আদায় করতে পারবেন, যা রাশিয়াকে বিশ্ব অর্থনীতিতে পুনরায় যুক্ত হওয়ার সুযোগ দেবে, ইউক্রেনকে বিভক্ত ও আধা–ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করবে এবং ইউরোপকে এতটাই হতবাক করে দেবে যে, তারা নিজেদের রক্ষা করার সক্ষমতা হারাবে!
অনুবাদ করেছেন আব্দুর রহমান

মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।
১৩ ঘণ্টা আগে
নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এর পেছন
১৭ ঘণ্টা আগে
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
৬ দিন আগে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
৯ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

বড়দিনের রাতে নাইজেরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় সোকোটো রাজ্যে মার্কিন বাহিনীর বিমান হামলা বিশ্বজুড়ে নতুন করে আলোচনায় নিয়ে এসেছে জঙ্গিগোষ্ঠী ‘ইসলামিক স্টেট’ বা আইএসকে। মধ্যপ্রাচ্যে পরাজয়ের পর গোষ্ঠীটি এখন আফ্রিকায় তাদের জাল বিস্তার করছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছেন, নাইজেরিয়ায় খ্রিষ্টানদের লক্ষ্য করে নৃশংস হত্যাযজ্ঞ চালানোর কারণে তিনি এ হামলার নির্দেশ দিয়েছেন।
ইসলামিক স্টেট কী
ইসলামিক স্টেট (যাকে আইএসআইএস বা দায়েশ নামেও ডাকা হয়) একটি সুন্নি চরমপন্থী গোষ্ঠী। ইরাক ও সিরিয়ায় উত্থান ঘটিয়ে তারা একসময় ‘খিলাফত’ ঘোষণা করেছিল। এরপর ২০১৪ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে ইরাক ও সিরিয়ার বিশাল অংশ তাদের দখলে ছিল। তখন তারা কঠোর শরিয়াহ আইন জারি করে এবং প্রকাশ্যে শিরশ্ছেদ ও নির্যাতনের মতো নৃশংসতা চালিয়ে বিশ্বকে স্তব্ধ করে দেয়।
পরে যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন বহুজাতিক বাহিনীর ক্রমাগত অভিযানের মুখে ইরাকের মসুল ও সিরিয়ার রাক্কায় তাদের পতন ঘটে। তবে সংগঠনটি পুরোপুরি নির্মূল না হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে।
বর্তমানে তারা কোথায় সক্রিয়
মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।
এশিয়া মহাদেশের মধ্যে আফগানিস্তান ও পাকিস্তানে ‘আইএস-খোরাসান’ নামে তারা সক্রিয়। এ ছাড়া ফিলিপাইনের মিন্দানাও অঞ্চলেও তাদের অনুসারী রয়েছে। জাতিসংঘ মনে করে, বর্তমানে তাদের অন্তত ১০ হাজার সক্রিয় সদস্য রয়েছে।
লক্ষ্য ও বর্তমান কৌশল
আইএসের মূল লক্ষ্য তাদের চরমপন্থী মতাদর্শ বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে দেওয়া। তবে সরাসরি যুদ্ধের বদলে তারা এখন কিছু নতুন কৌশল নিয়েছে। যেমন, অ্যাফিলিয়েট নেটওয়ার্ক—নিজেরা সরাসরি যুক্ত না হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানীয় জঙ্গিগোষ্ঠীকে নিজেদের ‘শাখা’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে প্রভাব বিস্তার করা। লোন উলফ অ্যাটাক—সংঘবদ্ধ হামলার পরিবর্তে একজন বা দুই ব্যক্তির সমন্বয়ে বড় ধরনের হামলা। সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই বিচে ইহুদিদের এক অনুষ্ঠানে বন্দুক হামলার পেছনে আইএসের এই কৌশল ছিল বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। অনলাইন প্রচারণা—টেলিগ্রামের মতো প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে আতঙ্ক ছড়ানো এবং নতুন সদস্য সংগ্রহ করা।
মার্কিন সামরিক বাহিনীর মতে, আইএসের বর্তমান বিশ্ব নেতা হলেন আবদুলকাদির মুমিন। তিনি বর্তমানে আইএসের সোমালিয়া শাখার প্রধান।
আইএসের সাম্প্রতিক কিছু বড় হামলা
কঙ্গোতে চলতি বছরের গত অক্টোবরে একটি গির্জায় নৈশকালীন প্রার্থনার সময় হামলায় ৪৩ জন নিহত হয়, যার দায় স্বীকার করে আইএস। গত ফেব্রুয়ারিতে সোমালিয়ায় একাধিক সামরিক ঘাঁটিতে আত্মঘাতী গাড়িবোমা হামলা চালায় আইএস। চলতি মাসে সিরিয়ায় দুই মার্কিন সেনা ও একজন দোভাষী নিহত হন, যার নেপথ্যে আইএসের হাত রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ ঘটনার পর চলতি সপ্তাহে সিরিয়ায় আইএসের ঘাঁটি লক্ষ্য করে ব্যাপক হামলা চালিয়েছে মার্কিন সামরিক বাহিনী।
নাইজেরিয়ায় মার্কিন হামলা এটাই প্রমাণ করে যে, আইএস এখন আর কেবল মধ্যপ্রাচ্যের সমস্যা নয়। বিশেষ করে, সাহেল ও পশ্চিম আফ্রিকায় তাদের ক্রমবর্ধমান শক্তি বিশ্ব নিরাপত্তার জন্য নতুন এক চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রয়টার্স থেকে সংক্ষেপে অনূদিত

বড়দিনের রাতে নাইজেরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় সোকোটো রাজ্যে মার্কিন বাহিনীর বিমান হামলা বিশ্বজুড়ে নতুন করে আলোচনায় নিয়ে এসেছে জঙ্গিগোষ্ঠী ‘ইসলামিক স্টেট’ বা আইএসকে। মধ্যপ্রাচ্যে পরাজয়ের পর গোষ্ঠীটি এখন আফ্রিকায় তাদের জাল বিস্তার করছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছেন, নাইজেরিয়ায় খ্রিষ্টানদের লক্ষ্য করে নৃশংস হত্যাযজ্ঞ চালানোর কারণে তিনি এ হামলার নির্দেশ দিয়েছেন।
ইসলামিক স্টেট কী
ইসলামিক স্টেট (যাকে আইএসআইএস বা দায়েশ নামেও ডাকা হয়) একটি সুন্নি চরমপন্থী গোষ্ঠী। ইরাক ও সিরিয়ায় উত্থান ঘটিয়ে তারা একসময় ‘খিলাফত’ ঘোষণা করেছিল। এরপর ২০১৪ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে ইরাক ও সিরিয়ার বিশাল অংশ তাদের দখলে ছিল। তখন তারা কঠোর শরিয়াহ আইন জারি করে এবং প্রকাশ্যে শিরশ্ছেদ ও নির্যাতনের মতো নৃশংসতা চালিয়ে বিশ্বকে স্তব্ধ করে দেয়।
পরে যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন বহুজাতিক বাহিনীর ক্রমাগত অভিযানের মুখে ইরাকের মসুল ও সিরিয়ার রাক্কায় তাদের পতন ঘটে। তবে সংগঠনটি পুরোপুরি নির্মূল না হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে।
বর্তমানে তারা কোথায় সক্রিয়
মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।
এশিয়া মহাদেশের মধ্যে আফগানিস্তান ও পাকিস্তানে ‘আইএস-খোরাসান’ নামে তারা সক্রিয়। এ ছাড়া ফিলিপাইনের মিন্দানাও অঞ্চলেও তাদের অনুসারী রয়েছে। জাতিসংঘ মনে করে, বর্তমানে তাদের অন্তত ১০ হাজার সক্রিয় সদস্য রয়েছে।
লক্ষ্য ও বর্তমান কৌশল
আইএসের মূল লক্ষ্য তাদের চরমপন্থী মতাদর্শ বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে দেওয়া। তবে সরাসরি যুদ্ধের বদলে তারা এখন কিছু নতুন কৌশল নিয়েছে। যেমন, অ্যাফিলিয়েট নেটওয়ার্ক—নিজেরা সরাসরি যুক্ত না হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানীয় জঙ্গিগোষ্ঠীকে নিজেদের ‘শাখা’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে প্রভাব বিস্তার করা। লোন উলফ অ্যাটাক—সংঘবদ্ধ হামলার পরিবর্তে একজন বা দুই ব্যক্তির সমন্বয়ে বড় ধরনের হামলা। সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই বিচে ইহুদিদের এক অনুষ্ঠানে বন্দুক হামলার পেছনে আইএসের এই কৌশল ছিল বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। অনলাইন প্রচারণা—টেলিগ্রামের মতো প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে আতঙ্ক ছড়ানো এবং নতুন সদস্য সংগ্রহ করা।
মার্কিন সামরিক বাহিনীর মতে, আইএসের বর্তমান বিশ্ব নেতা হলেন আবদুলকাদির মুমিন। তিনি বর্তমানে আইএসের সোমালিয়া শাখার প্রধান।
আইএসের সাম্প্রতিক কিছু বড় হামলা
কঙ্গোতে চলতি বছরের গত অক্টোবরে একটি গির্জায় নৈশকালীন প্রার্থনার সময় হামলায় ৪৩ জন নিহত হয়, যার দায় স্বীকার করে আইএস। গত ফেব্রুয়ারিতে সোমালিয়ায় একাধিক সামরিক ঘাঁটিতে আত্মঘাতী গাড়িবোমা হামলা চালায় আইএস। চলতি মাসে সিরিয়ায় দুই মার্কিন সেনা ও একজন দোভাষী নিহত হন, যার নেপথ্যে আইএসের হাত রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ ঘটনার পর চলতি সপ্তাহে সিরিয়ায় আইএসের ঘাঁটি লক্ষ্য করে ব্যাপক হামলা চালিয়েছে মার্কিন সামরিক বাহিনী।
নাইজেরিয়ায় মার্কিন হামলা এটাই প্রমাণ করে যে, আইএস এখন আর কেবল মধ্যপ্রাচ্যের সমস্যা নয়। বিশেষ করে, সাহেল ও পশ্চিম আফ্রিকায় তাদের ক্রমবর্ধমান শক্তি বিশ্ব নিরাপত্তার জন্য নতুন এক চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রয়টার্স থেকে সংক্ষেপে অনূদিত

পুতিন ‘বাজি ধরছেন’ যে, তিনি ইউক্রেনের চেয়ে দীর্ঘ সময় লড়াই চালিয়ে যেতে পারবেন, অথবা তিনি এমন একটি সমঝোতা ট্রাম্পের মাধ্যমে আদায় করতে পারবেন, যা রাশিয়াকে বিশ্ব অর্থনীতিতে পুনরায় যুক্ত হওয়ার সুযোগ দেবে, ইউক্রেনকে বিভক্ত ও আধা–ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করবে এবং ইউরোপকে এতটাই হতবাক করে দেবে যে...
১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এর পেছন
১৭ ঘণ্টা আগে
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
৬ দিন আগে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
৯ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

নাইজেরিয়ার সরকার খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়ন ঠেকাতে ব্যর্থ—এমন অভিযোগে কয়েক সপ্তাহ ধরে সমালোচনার পর অবশেষে বড়দিনের রাতে (২৫ ডিসেম্বর) পশ্চিম আফ্রিকার দেশটিতে বিমান হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। সরাসরি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে নাইজেরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় সোকোটো রাজ্যে এ হামলা চালানো হয়।
ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ান বলছে, ট্রাম্প প্রশাসন আইএস জঙ্গিদের একাধিক আস্তানা লক্ষ্য করে এসব হামলা চালায়। হামলায় মার্কিন নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ থেকে টমাহক মিসাইল নিক্ষেপ করা হয়েছিল। এসব হামলায় একাধিক আইএস জঙ্গি নিহত ও তাঁদের আস্তানা ধ্বংস হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে, তবে সঠিক সংখ্যা এখনো জানানো হয়নি।
ট্রাম্প প্রশাসনের সাম্প্রতিক বিদেশি সামরিক হস্তক্ষেপগুলোর সর্বশেষ উদাহরণ নাইজেরিয়ায় হামলা। অথচ ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনী প্রচারণায় তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে ‘অন্তহীন যুদ্ধ’ থেকে বের করে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দাবি করেছেন, এই হামলার মূল উদ্দেশ্য ছিল নাইজেরিয়ায় বসবাসরত খ্রিষ্টানদের ওপর চলমান হত্যাযজ্ঞ বন্ধ করা। তাঁর মতে, আইএস জঙ্গিরা পরিকল্পিতভাবে খ্রিষ্টানদের লক্ষ্যবস্তু বানাচ্ছে। হামলার ঘোষণা দিয়ে ট্রাম্প তাঁর ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে লিখেছিলেন, ‘আমি আগেই এই সন্ত্রাসীদের সতর্ক করেছিলাম, তারা যদি খ্রিষ্টানদের হত্যা বন্ধ না করে, তবে তাদের চড়ম মূল্য দিতে হবে। আজ রাতে (বড়দিন) ঠিক তা-ই ঘটেছে।’
গত অক্টোবর ও নভেম্বর মাসেও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নাইজেরিয়ার নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে ‘খ্রিষ্টান গণহত্যার’ শামিল বলে অভিহিত করেছিলেন।
মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তরের এক কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা এপিকে জানান, নাইজেরিয়া সরকারের অনুমোদন নিয়ে দেশটির সঙ্গে সমন্বয় করেই এসব হামলা চালানো হয়েছে। নাইজেরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, এই সহযোগিতার মধ্যে গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদান ও কৌশলগত সমন্বয় ছিল।
কেন নাইজেরিয়ায় হামলা চালাল ট্রাম্প প্রশাসন
অনেক আগে থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের ডানপন্থী রাজনীতিক গোষ্ঠীগুলো নাইজেরিয়ায় খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়নের অভিযোগ তুলছে। গত সেপ্টেম্বরে রিপাবলিকান সিনেটর টেড ক্রুজ কিছু নাইজেরীয় কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞার আহ্বান জানান। তিনি দাবি করেন, যারা ‘ইসলামপন্থী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর মাধ্যমে খ্রিষ্টান ও অন্য ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সহিংসতা সহজতর করছে’, তাদের নিষিদ্ধ করা উচিত।
তবে বর্তমানে বিষয়টি মার্কিন ডানপন্থী ও ইভানজেলিক্যাল খ্রিষ্টান মহলে বড় ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। আবার এই ডানপন্থী ও ইভানজেলিক্যাল খ্রিষ্টানরাই ট্রাম্পের বড় সমর্থক। বিশ্লেষকদের মতে, নিজের সমর্থকদের তুষ্ট করতে এবং বিশ্বজুড়ে ‘খ্রিষ্টানদের রক্ষাকর্তা’ হিসেবে নিজেকে জাহির করতেই ট্রাম্প এই ত্বরিত সামরিক পদক্ষেপ নিয়েছেন।
এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা আইনের আওতায় নাইজেরিয়াকে ‘বিশেষ উদ্বেগের দেশ’ হিসেবে চিহ্নিত করেন ট্রাম্প। বেশ কিছু মার্কিন আইনপ্রণেতা ও রক্ষণশীল খ্রিষ্টান গোষ্ঠীর লাগাতার লবিংয়ের পর এই সিদ্ধান্ত আসে। এর কিছুদিন পরই তিনি নাইজেরিয়ায় সম্ভাব্য সামরিক অভিযানের পরিকল্পনা করতে পেন্টাগনকে নির্দেশ দেন। সে সময় ট্রাম্প বলেন, নাইজেরিয়া সরকার যদি খ্রিষ্টান হত্যাকাণ্ড বন্ধ না করে, তবে তিনি ‘গানস-এ-ব্লেজিং’ অর্থাৎ পূর্ণ শক্তি নিয়ে হস্তক্ষেপ করতে পারেন।
নাইজেরিয়ায় কি আসলেই খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়ন চলছে
নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; এর পেছনে নানা কারণ রয়েছে।
উদাহরণ হিসেবে, যাযাবর মুসলিম পশুপালক ও খ্রিষ্টান কৃষক সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রাণঘাতী সংঘর্ষ মূলত চারণভূমি ও পানির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে। তবে ধর্মীয় ও জাতিগত বিভাজন এটিকে আরও জটিল করে তুলেছে। আবার অনেক বিশ্লেষকের মতে, যাজকদের অপহরণের ঘটনা ধর্মীয় বিদ্বেষের চেয়ে অর্থনৈতিক লাভের উদ্দেশ্যেই বেশি ঘটে, কারণ, তাঁরা প্রভাবশালী ব্যক্তি এবং তাঁদের অনুসারী বা প্রতিষ্ঠান দ্রুত মুক্তিপণের টাকা জোগাড় করতে পারে।
নাইজেরিয়া সরকারের অবস্থান
ট্রাম্প প্রশাসনের হামলার পর নাইজেরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইএস-নিধনে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতার প্রশংসা করেছে। কিন্তু খ্রিষ্টান নিপীড়নের বিষয়টির সঙ্গে মার্কিন অভিযানের কোনো সম্পর্ক আছে কি না, এ বিষয়ে কিছু বলেনি।
এক বিবৃতিতে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, খ্রিষ্টান, মুসলমান কিংবা অন্য কোনো সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে পরিচালিত সব ধরনের সহিংসতাই নাইজেরিয়ার মূল্যবোধ এবং আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার প্রতি অবমাননা।
নাইজেরিয়ার বাস্তবতাও আসলে এমন। দীর্ঘদিন ধরে দেশটি নিরাপত্তা পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে। গত কয়েক বছরে দেশটিতে হাজারো মানুষ নিহত এবং শত শত মানুষ অপহৃত হয়েছে।
উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ২০০৯ সাল থেকে বোকো হারাম ও ইসলামিক স্টেট ওয়েস্ট আফ্রিকা প্রভিন্স (আইএসডব্লিউএপি) বিদ্রোহ চালিয়ে যাচ্ছে। এতে কয়েক দশক ধরে কয়েক হাজার মানুষ নিহত এবং লাখো মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে সশস্ত্র অপরাধী চক্র, যাদের সাধারণত ‘ডাকাত’ বলা হয়, তারাও গণ-অপহরণ ও হামলা চালাচ্ছে। এমন পরিস্থিতি মুসলমান ও খ্রিষ্টান উভয় সম্প্রদায়কেই প্রভাবিত করছে।
এর আগে ট্রাম্পের অভিযোগের জবাবে নাইজেরিয়ার সরকার বিষয়টি স্বীকার করে বলেছিল, দেশটিতে কেবল খ্রিষ্টান নয়—বিভিন্ন ধর্মের মানুষই চরমপন্থী গোষ্ঠীগুলোর হাতে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে।
গত মাসে নাইজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট বোলা আহমেদ তিনুবু বলেন, নাইজেরিয়াকে ধর্মীয়ভাবে অসহিষ্ণু দেশ হিসেবে চিত্রিত করা বাস্তবতার প্রতিফলন নয়। তিনি বলেন, ‘ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সহনশীলতা আমাদের সম্মিলিত পরিচয়ের একটি মূল ভিত্তি এবং এটি সব সময়ই থাকবে। নাইজেরিয়া এমন একটি দেশ, যেখানে সংবিধান সব ধর্মের নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করে।’
এদিকে, ‘অন্তহীন যুদ্ধ’ বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এলেও নাইজেরিয়ায় ট্রাম্পের নতুন সামরিক হস্তক্ষেপ আফ্রিকার ভূরাজনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। অনেকে বলছেন, ‘খ্রিষ্টান নিপীড়ন’ আসলে ট্রাম্পের অজুহাত; তাঁর লক্ষ্য নাইজেরিয়ার তেলের খনি।
দ্য গার্ডিয়ান থেকে অনুবাদ করেছেন জগতপতি বর্মা

নাইজেরিয়ার সরকার খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়ন ঠেকাতে ব্যর্থ—এমন অভিযোগে কয়েক সপ্তাহ ধরে সমালোচনার পর অবশেষে বড়দিনের রাতে (২৫ ডিসেম্বর) পশ্চিম আফ্রিকার দেশটিতে বিমান হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। সরাসরি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে নাইজেরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় সোকোটো রাজ্যে এ হামলা চালানো হয়।
ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ান বলছে, ট্রাম্প প্রশাসন আইএস জঙ্গিদের একাধিক আস্তানা লক্ষ্য করে এসব হামলা চালায়। হামলায় মার্কিন নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ থেকে টমাহক মিসাইল নিক্ষেপ করা হয়েছিল। এসব হামলায় একাধিক আইএস জঙ্গি নিহত ও তাঁদের আস্তানা ধ্বংস হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে, তবে সঠিক সংখ্যা এখনো জানানো হয়নি।
ট্রাম্প প্রশাসনের সাম্প্রতিক বিদেশি সামরিক হস্তক্ষেপগুলোর সর্বশেষ উদাহরণ নাইজেরিয়ায় হামলা। অথচ ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনী প্রচারণায় তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে ‘অন্তহীন যুদ্ধ’ থেকে বের করে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দাবি করেছেন, এই হামলার মূল উদ্দেশ্য ছিল নাইজেরিয়ায় বসবাসরত খ্রিষ্টানদের ওপর চলমান হত্যাযজ্ঞ বন্ধ করা। তাঁর মতে, আইএস জঙ্গিরা পরিকল্পিতভাবে খ্রিষ্টানদের লক্ষ্যবস্তু বানাচ্ছে। হামলার ঘোষণা দিয়ে ট্রাম্প তাঁর ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে লিখেছিলেন, ‘আমি আগেই এই সন্ত্রাসীদের সতর্ক করেছিলাম, তারা যদি খ্রিষ্টানদের হত্যা বন্ধ না করে, তবে তাদের চড়ম মূল্য দিতে হবে। আজ রাতে (বড়দিন) ঠিক তা-ই ঘটেছে।’
গত অক্টোবর ও নভেম্বর মাসেও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নাইজেরিয়ার নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে ‘খ্রিষ্টান গণহত্যার’ শামিল বলে অভিহিত করেছিলেন।
মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তরের এক কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা এপিকে জানান, নাইজেরিয়া সরকারের অনুমোদন নিয়ে দেশটির সঙ্গে সমন্বয় করেই এসব হামলা চালানো হয়েছে। নাইজেরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, এই সহযোগিতার মধ্যে গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদান ও কৌশলগত সমন্বয় ছিল।
কেন নাইজেরিয়ায় হামলা চালাল ট্রাম্প প্রশাসন
অনেক আগে থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের ডানপন্থী রাজনীতিক গোষ্ঠীগুলো নাইজেরিয়ায় খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়নের অভিযোগ তুলছে। গত সেপ্টেম্বরে রিপাবলিকান সিনেটর টেড ক্রুজ কিছু নাইজেরীয় কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞার আহ্বান জানান। তিনি দাবি করেন, যারা ‘ইসলামপন্থী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর মাধ্যমে খ্রিষ্টান ও অন্য ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সহিংসতা সহজতর করছে’, তাদের নিষিদ্ধ করা উচিত।
তবে বর্তমানে বিষয়টি মার্কিন ডানপন্থী ও ইভানজেলিক্যাল খ্রিষ্টান মহলে বড় ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। আবার এই ডানপন্থী ও ইভানজেলিক্যাল খ্রিষ্টানরাই ট্রাম্পের বড় সমর্থক। বিশ্লেষকদের মতে, নিজের সমর্থকদের তুষ্ট করতে এবং বিশ্বজুড়ে ‘খ্রিষ্টানদের রক্ষাকর্তা’ হিসেবে নিজেকে জাহির করতেই ট্রাম্প এই ত্বরিত সামরিক পদক্ষেপ নিয়েছেন।
এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা আইনের আওতায় নাইজেরিয়াকে ‘বিশেষ উদ্বেগের দেশ’ হিসেবে চিহ্নিত করেন ট্রাম্প। বেশ কিছু মার্কিন আইনপ্রণেতা ও রক্ষণশীল খ্রিষ্টান গোষ্ঠীর লাগাতার লবিংয়ের পর এই সিদ্ধান্ত আসে। এর কিছুদিন পরই তিনি নাইজেরিয়ায় সম্ভাব্য সামরিক অভিযানের পরিকল্পনা করতে পেন্টাগনকে নির্দেশ দেন। সে সময় ট্রাম্প বলেন, নাইজেরিয়া সরকার যদি খ্রিষ্টান হত্যাকাণ্ড বন্ধ না করে, তবে তিনি ‘গানস-এ-ব্লেজিং’ অর্থাৎ পূর্ণ শক্তি নিয়ে হস্তক্ষেপ করতে পারেন।
নাইজেরিয়ায় কি আসলেই খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়ন চলছে
নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; এর পেছনে নানা কারণ রয়েছে।
উদাহরণ হিসেবে, যাযাবর মুসলিম পশুপালক ও খ্রিষ্টান কৃষক সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রাণঘাতী সংঘর্ষ মূলত চারণভূমি ও পানির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে। তবে ধর্মীয় ও জাতিগত বিভাজন এটিকে আরও জটিল করে তুলেছে। আবার অনেক বিশ্লেষকের মতে, যাজকদের অপহরণের ঘটনা ধর্মীয় বিদ্বেষের চেয়ে অর্থনৈতিক লাভের উদ্দেশ্যেই বেশি ঘটে, কারণ, তাঁরা প্রভাবশালী ব্যক্তি এবং তাঁদের অনুসারী বা প্রতিষ্ঠান দ্রুত মুক্তিপণের টাকা জোগাড় করতে পারে।
নাইজেরিয়া সরকারের অবস্থান
ট্রাম্প প্রশাসনের হামলার পর নাইজেরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইএস-নিধনে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতার প্রশংসা করেছে। কিন্তু খ্রিষ্টান নিপীড়নের বিষয়টির সঙ্গে মার্কিন অভিযানের কোনো সম্পর্ক আছে কি না, এ বিষয়ে কিছু বলেনি।
এক বিবৃতিতে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, খ্রিষ্টান, মুসলমান কিংবা অন্য কোনো সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে পরিচালিত সব ধরনের সহিংসতাই নাইজেরিয়ার মূল্যবোধ এবং আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার প্রতি অবমাননা।
নাইজেরিয়ার বাস্তবতাও আসলে এমন। দীর্ঘদিন ধরে দেশটি নিরাপত্তা পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে। গত কয়েক বছরে দেশটিতে হাজারো মানুষ নিহত এবং শত শত মানুষ অপহৃত হয়েছে।
উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ২০০৯ সাল থেকে বোকো হারাম ও ইসলামিক স্টেট ওয়েস্ট আফ্রিকা প্রভিন্স (আইএসডব্লিউএপি) বিদ্রোহ চালিয়ে যাচ্ছে। এতে কয়েক দশক ধরে কয়েক হাজার মানুষ নিহত এবং লাখো মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে সশস্ত্র অপরাধী চক্র, যাদের সাধারণত ‘ডাকাত’ বলা হয়, তারাও গণ-অপহরণ ও হামলা চালাচ্ছে। এমন পরিস্থিতি মুসলমান ও খ্রিষ্টান উভয় সম্প্রদায়কেই প্রভাবিত করছে।
এর আগে ট্রাম্পের অভিযোগের জবাবে নাইজেরিয়ার সরকার বিষয়টি স্বীকার করে বলেছিল, দেশটিতে কেবল খ্রিষ্টান নয়—বিভিন্ন ধর্মের মানুষই চরমপন্থী গোষ্ঠীগুলোর হাতে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে।
গত মাসে নাইজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট বোলা আহমেদ তিনুবু বলেন, নাইজেরিয়াকে ধর্মীয়ভাবে অসহিষ্ণু দেশ হিসেবে চিত্রিত করা বাস্তবতার প্রতিফলন নয়। তিনি বলেন, ‘ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সহনশীলতা আমাদের সম্মিলিত পরিচয়ের একটি মূল ভিত্তি এবং এটি সব সময়ই থাকবে। নাইজেরিয়া এমন একটি দেশ, যেখানে সংবিধান সব ধর্মের নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করে।’
এদিকে, ‘অন্তহীন যুদ্ধ’ বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এলেও নাইজেরিয়ায় ট্রাম্পের নতুন সামরিক হস্তক্ষেপ আফ্রিকার ভূরাজনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। অনেকে বলছেন, ‘খ্রিষ্টান নিপীড়ন’ আসলে ট্রাম্পের অজুহাত; তাঁর লক্ষ্য নাইজেরিয়ার তেলের খনি।
দ্য গার্ডিয়ান থেকে অনুবাদ করেছেন জগতপতি বর্মা

পুতিন ‘বাজি ধরছেন’ যে, তিনি ইউক্রেনের চেয়ে দীর্ঘ সময় লড়াই চালিয়ে যেতে পারবেন, অথবা তিনি এমন একটি সমঝোতা ট্রাম্পের মাধ্যমে আদায় করতে পারবেন, যা রাশিয়াকে বিশ্ব অর্থনীতিতে পুনরায় যুক্ত হওয়ার সুযোগ দেবে, ইউক্রেনকে বিভক্ত ও আধা–ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করবে এবং ইউরোপকে এতটাই হতবাক করে দেবে যে...
১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।
১৩ ঘণ্টা আগে
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
৬ দিন আগে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
৯ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে। এই প্রেক্ষাপটে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিয়ো লুলা দা সিলভা ভেনেজুয়েলায় মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপ মানবিক বিপর্যয় ডেকে আনবে বলে সতর্ক করেছেন। তাঁর মতে, এই সতর্কতা শুধু ভেনেজুয়েলাকে ঘিরে নয়—পুরো দক্ষিণ আমেরিকার ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার প্রশ্নও তুলে ধরছে।
ভেনেজুয়েলার সংকটের মূল কারণ দেশটির দীর্ঘস্থায়ী রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিতর্কিত নির্বাচন, অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা এবং মানবাধিকার পরিস্থিতি। প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর সরকারকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের একটি অংশ কর্তৃত্ববাদী ও অগণতান্ত্রিক বলে মনে করে। এর জবাবে ওয়াশিংটন একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এসব নিষেধাজ্ঞার মূল লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি, যা দেশটির আয়ের প্রধান উৎস।
ভেনেজুয়েলা বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ তেল মজুতের অধিকারী। ফলে তাদের তেল শুধু অর্থনীতি নয়, কূটনীতিরও কেন্দ্রে অবস্থান করছে। যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, ভেনেজুয়েলার তেল বিক্রির পথ বন্ধ করতে পারলে মাদুরো সরকার দুর্বল হবে। এই লক্ষ্যেই সাম্প্রতিক সময়ে দেশটির নিষেধাজ্ঞাভুক্ত তেল ট্যাংকারগুলোকে অবরোধের মতো কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে মার্কিন বাহিনী। তবে এই পদক্ষেপকে সরাসরি যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেওয়ার ঝুঁকি হিসেবে দেখছেন দক্ষিণ আমেরিকার অনেক নেতা।
ব্রাজিল ও মেক্সিকোর মতো লাতিন শক্তিগুলো এই কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হস্তক্ষেপের সম্ভাবনার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, দক্ষিণ আমেরিকার ইতিহাস বহিঃশক্তির সামরিক হস্তক্ষেপের তিক্ত অভিজ্ঞতায় ভরা। ফকল্যান্ড যুদ্ধের চার দশক পর আবারও কোনো অন্য মহাদেশীয় শক্তির সামরিক উপস্থিতি এই মহাদেশকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে—এমন আশঙ্কাই তিনি প্রকাশ করেছেন।
এদিকে রাশিয়া ও চীন ভেনেজুয়েলার সরকারের প্রতি সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। রাশিয়ার ক্ষেত্রে এটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব মোকাবিলার কৌশল, আর চীনের জন্য এটি তেল ও ঋণনির্ভর অর্থনৈতিক স্বার্থের প্রশ্ন। ফলে ভেনেজুয়েলা ক্রমেই যুক্তরাষ্ট্র বনাম রাশিয়া–চীন প্রভাব বিস্তারের আরেকটি ময়দানে পরিণত হচ্ছে।
‘মার্কোসুর’ সম্মেলনে লাতিন আমেরিকার দেশগুলো যে যৌথ অবস্থান নিয়েছে, তা এই বাস্তবতাকেই প্রতিফলিত করে। তারা ভেনেজুয়েলায় গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষার কথা বলেছে, তবে স্পষ্টভাবে সামরিক পথ প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের মতে, সংকটের সমাধান হতে পারে কেবল সংলাপ ও শান্তিপূর্ণ কূটনীতির মাধ্যমে।
সব মিলিয়ে ভেনেজুয়েলার সংকট এখন আর একটি দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যা নয়। তেল, আদর্শিক দ্বন্দ্ব, আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও বৈশ্বিক ক্ষমতার লড়াই—সবকিছু মিলিয়ে এটি আন্তর্জাতিক রাজনীতির এক স্পর্শকাতর সংঘাতক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।

ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে। এই প্রেক্ষাপটে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিয়ো লুলা দা সিলভা ভেনেজুয়েলায় মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপ মানবিক বিপর্যয় ডেকে আনবে বলে সতর্ক করেছেন। তাঁর মতে, এই সতর্কতা শুধু ভেনেজুয়েলাকে ঘিরে নয়—পুরো দক্ষিণ আমেরিকার ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার প্রশ্নও তুলে ধরছে।
ভেনেজুয়েলার সংকটের মূল কারণ দেশটির দীর্ঘস্থায়ী রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিতর্কিত নির্বাচন, অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা এবং মানবাধিকার পরিস্থিতি। প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর সরকারকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের একটি অংশ কর্তৃত্ববাদী ও অগণতান্ত্রিক বলে মনে করে। এর জবাবে ওয়াশিংটন একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এসব নিষেধাজ্ঞার মূল লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি, যা দেশটির আয়ের প্রধান উৎস।
ভেনেজুয়েলা বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ তেল মজুতের অধিকারী। ফলে তাদের তেল শুধু অর্থনীতি নয়, কূটনীতিরও কেন্দ্রে অবস্থান করছে। যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, ভেনেজুয়েলার তেল বিক্রির পথ বন্ধ করতে পারলে মাদুরো সরকার দুর্বল হবে। এই লক্ষ্যেই সাম্প্রতিক সময়ে দেশটির নিষেধাজ্ঞাভুক্ত তেল ট্যাংকারগুলোকে অবরোধের মতো কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে মার্কিন বাহিনী। তবে এই পদক্ষেপকে সরাসরি যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেওয়ার ঝুঁকি হিসেবে দেখছেন দক্ষিণ আমেরিকার অনেক নেতা।
ব্রাজিল ও মেক্সিকোর মতো লাতিন শক্তিগুলো এই কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হস্তক্ষেপের সম্ভাবনার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, দক্ষিণ আমেরিকার ইতিহাস বহিঃশক্তির সামরিক হস্তক্ষেপের তিক্ত অভিজ্ঞতায় ভরা। ফকল্যান্ড যুদ্ধের চার দশক পর আবারও কোনো অন্য মহাদেশীয় শক্তির সামরিক উপস্থিতি এই মহাদেশকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে—এমন আশঙ্কাই তিনি প্রকাশ করেছেন।
এদিকে রাশিয়া ও চীন ভেনেজুয়েলার সরকারের প্রতি সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। রাশিয়ার ক্ষেত্রে এটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব মোকাবিলার কৌশল, আর চীনের জন্য এটি তেল ও ঋণনির্ভর অর্থনৈতিক স্বার্থের প্রশ্ন। ফলে ভেনেজুয়েলা ক্রমেই যুক্তরাষ্ট্র বনাম রাশিয়া–চীন প্রভাব বিস্তারের আরেকটি ময়দানে পরিণত হচ্ছে।
‘মার্কোসুর’ সম্মেলনে লাতিন আমেরিকার দেশগুলো যে যৌথ অবস্থান নিয়েছে, তা এই বাস্তবতাকেই প্রতিফলিত করে। তারা ভেনেজুয়েলায় গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষার কথা বলেছে, তবে স্পষ্টভাবে সামরিক পথ প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের মতে, সংকটের সমাধান হতে পারে কেবল সংলাপ ও শান্তিপূর্ণ কূটনীতির মাধ্যমে।
সব মিলিয়ে ভেনেজুয়েলার সংকট এখন আর একটি দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যা নয়। তেল, আদর্শিক দ্বন্দ্ব, আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও বৈশ্বিক ক্ষমতার লড়াই—সবকিছু মিলিয়ে এটি আন্তর্জাতিক রাজনীতির এক স্পর্শকাতর সংঘাতক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।

পুতিন ‘বাজি ধরছেন’ যে, তিনি ইউক্রেনের চেয়ে দীর্ঘ সময় লড়াই চালিয়ে যেতে পারবেন, অথবা তিনি এমন একটি সমঝোতা ট্রাম্পের মাধ্যমে আদায় করতে পারবেন, যা রাশিয়াকে বিশ্ব অর্থনীতিতে পুনরায় যুক্ত হওয়ার সুযোগ দেবে, ইউক্রেনকে বিভক্ত ও আধা–ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করবে এবং ইউরোপকে এতটাই হতবাক করে দেবে যে...
১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।
১৩ ঘণ্টা আগে
নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এর পেছন
১৭ ঘণ্টা আগে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
৯ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ভেনেজুয়েলার তেল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ—এমন মন্তব্য করে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাডভাইজার ও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহযোগী স্টিফেন মিলার।
গতকাল বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে মিলার বলেন, ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প গড়ে উঠেছে ‘আমেরিকার শ্রম, উদ্ভাবন ও ঘামের’ ওপর আর সেটা রাষ্ট্রায়ত্ত করে নেওয়াকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদের সবচেয়ে বড় ‘চুরি’ বলে অভিহিত করেন। মিলারের এই মন্তব্যের ঠিক এক দিন আগে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ঘোষণা দেন—ভেনেজুয়েলায় প্রবেশ ও সেখান থেকে বের হওয়া সব তেলবাহী জাহাজের ওপর ‘সম্পূর্ণ ও সর্বাত্মক অবরোধ’ আরোপ করা হচ্ছে।
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার উপকূলের কাছাকাছি কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় সামরিক উপস্থিতি গড়ে তুলেছে যুক্তরাষ্ট্র। গত সেপ্টেম্বর থেকে মাদক পাচারের অভিযোগে বেশ কয়েকটি নৌযানে হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। এতে এখন পর্যন্ত অন্তত ৯০ জন নিহত হয়েছেন। ট্রাম্প প্রশাসন দাবি করছে, এসব নৌকা যুক্তরাষ্ট্রে বিপুল পরিমাণ মাদক পাচার করছিল এবং তা মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি। তবে এই অভিযোগের পক্ষে কোনো প্রমাণ তারা দেয়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোকেনসহ মাদক যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছানোর প্রধান উৎস ভেনেজুয়েলা নয়। ফলে অনেকের মতে, এর পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রকৃত লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল নিয়ন্ত্রণ এবং নিকোলাস মাদুরোকে ক্ষমতা থেকে সরানো।
মিলার কী বলেছেন
গতকাল বুধবার এক্সে দেওয়া পোস্টে স্টিফেন মিলার লেখেন, ‘আমেরিকার শ্রম, মেধা ও পরিশ্রমই ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প সৃষ্টি করেছে। এই শিল্প জোরপূর্বক রাষ্ট্রায়ত্ত করা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ ও সম্পত্তির ইতিহাসের সবচেয়ে বড় চুরি। আর সেই লুণ্ঠিত সম্পদ সন্ত্রাসবাদে অর্থ জোগাতে এবং আমাদের দেশের রাস্তায় খুনি, ভাড়াটে যোদ্ধা ও মাদক ছড়িয়ে দিতে ব্যবহৃত হয়েছে।’
মিলার তাঁর পোস্টে ট্রাম্পের আগের একটি বক্তব্যও যুক্ত করেন, যেখানে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের তেল, ভূমি ও অন্যান্য সম্পদ ‘চুরি’ করার অভিযোগ তোলেন। ওই পোস্টে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার সরকারকে ‘বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন’ ঘোষণা করেন এবং দেশটির তেল ট্যাংকারগুলোর ওপর সম্পূর্ণ অবরোধের নির্দেশ দেন।
মিলার আরও বলেন, ভেনেজুয়েলা থেকে আসা অভিবাসীদের দ্রুত যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠানো হবে এবং সব ‘চুরি হওয়া সম্পদ’ অবিলম্বে যুক্তরাষ্ট্রকে ফিরিয়ে দিতে হবে।
ভেনেজুয়েলায় কী পরিমাণ তেল রয়েছে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলেই বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
২০২৩ সালের হিসাবে ভেনেজুয়েলার তেল মজুতের পরিমাণ প্রায় ৩০৩ বিলিয়ন ব্যারেল—যা বিশ্বে সর্বাধিক। তবে উৎপাদন ও রপ্তানি কমে যাওয়ায় দেশটি এখন তেল থেকে আগের মতো আয় করতে পারছে না।
অবজারভেটরি অব ইকোনমিক কমপ্লেক্সের (ওইসি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ভেনেজুয়েলার অপরিশোধিত তেল রপ্তানির মূল্য ছিল মাত্র ৪ দশমিক শূন্য ৫ বিলিয়ন ডলার। একই সময়ে সৌদি আরব রপ্তানি করেছে ১৮১ বিলিয়ন ডলার, যুক্তরাষ্ট্র ১২৫ বিলিয়ন ডলার ও রাশিয়া ১২২ বিলিয়ন ডলার।
যুক্তরাষ্ট্র কেন ভেনেজুয়েলার তেলের ওপর দাবি করছে
২০ শতকের শুরুর দিকে ভেনেজুয়েলায় তেল অনুসন্ধান শুরু করে মার্কিন কোম্পানিগুলো। ১৯২২ সালে ভেনেজুয়েলার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের মারাকাইবো হ্রদ এলাকায় প্রথম বড় তেলক্ষেত্র আবিষ্কার করে রয়্যাল ডাচ শেল।
এরপর যুক্তরাষ্ট্র ভেনেজুয়েলার তেল উত্তোলন ও উন্নয়নে বড় ধরনের বিনিয়োগ শুরু করে। স্ট্যান্ডার্ড অয়েলের মতো কোম্পানিগুলো চুক্তিভিত্তিকভাবে কাজ করে ভেনেজুয়েলাকে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ তেল সরবরাহকারীতে পরিণত করে।
১৯৬০ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর ওপেক গঠনের সময় ভেনেজুয়েলা ছিল এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। তবে ১৯৭৬ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট কার্লোস আন্দ্রেস পেরেজ তেলশিল্প রাষ্ট্রায়ত্ত করেন এবং পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলা (পিডিভিএসএ) প্রতিষ্ঠা করেন।
পরে হুগো শাভেজ ক্ষমতায় এসে সব বিদেশি তেলসম্পদ জাতীয়করণ করেন। কিন্তু রাজনৈতিক লক্ষ্যকে অগ্রাধিকার দেওয়া, অব্যবস্থাপনা ও বিনিয়োগের অভাবে তেল উৎপাদন ক্রমেই কমতে থাকে।
কবে থেকে নিষেধাজ্ঞা
২০০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র প্রথম ভেনেজুয়েলার তেলশিল্পের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। পরে নিকোলাস মাদুরোর শাসনামলে ২০১৭ ও ২০১৯ সালে নিষেধাজ্ঞা আরও কঠোর করা হয়। এই নিষেধাজ্ঞার ফলে ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি প্রায় বন্ধ হয়ে যায় এবং দেশটি চীন, ভারত ও কিউবার দিকে ঝুঁকে পড়ে।
ভেনেজুয়েলার তেল আমাদের সম্পদ—যুক্তরাষ্ট্রের এমন দাবির কি কোনো আইনি ভিত্তি আছে
না, নেই। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র তার ভূখণ্ডের প্রাকৃতিক সম্পদের মালিক। এই নীতির নাম ‘স্থায়ী প্রাকৃতিক সম্পদে সার্বভৌম অধিকার’ (Permanent Sovereignty over Natural Resources)।
১৯৬২ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের একটি প্রস্তাবে এই নীতি স্বীকৃতি পায়। সে অনুযায়ী, ভেনেজুয়েলার তেল সম্পূর্ণভাবে ভেনেজুয়েলারই। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে এ তেলের ওপর দাবি জানানো আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী।
তাহলে শেভরন কেন কাজ করছে
যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও হিউস্টনভিত্তিক তেল কোম্পানি শেভরন ভেনেজুয়েলায় কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। সাধারণত বিদেশি কোম্পানিগুলো ভেনেজুয়েলায় সরাসরি তেলক্ষেত্রের মালিক হতে পারে না। যুক্তরাষ্ট্রের শেভরন পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলার (পিডিভিএসএ) সঙ্গে যৌথভাবে তেল উৎপাদন করে এবং উৎপাদিত তেলের একটি অংশ পায়।
২০২২ সালে জো বাইডেন প্রশাসন শেভরনকে বিশেষ লাইসেন্স দেয়, যাতে তারা নিষেধাজ্ঞার বাইরে থেকে কাজ করতে পারে। চলতি বছর ট্রাম্প প্রশাসন সেই নিষেধাজ্ঞা ছাড় নবায়ন করেছে।
শেভরন দীর্ঘদিন ধরে ভেনেজুয়েলায় কার্যক্রম চালাচ্ছে এবং সেখানে তাদের বিপুল সম্পদ রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি সরে গেলে সেই সম্পদ রাষ্ট্রের হাতে চলে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে—যা অতীতে এক্সন, কারগিল ও হিলটনের মতো কোম্পানির ক্ষেত্রে ঘটেছে।
ট্রাম্প প্রশাসন মূলত ঐতিহাসিকভাবে মার্কিন কোম্পানিগুলোর করা বিনিয়োগ ও পরে তা বাজেয়াপ্ত হওয়াকে কেন্দ্র করে এই ‘মালিকানা’ দাবি করছে। তবে বর্তমান বিশ্বব্যবস্থায় ও আন্তর্জাতিক আইনে কোনো দেশের সম্পদ অন্য দেশের মালিকানাধীন হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এটি মূলত ভেনেজুয়েলায় শাসনব্যবস্থা পরিবর্তন ও তেলের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার একটি ভূরাজনৈতিক কৌশল।
আল-জাজিরা থেকে অনুবাদ করেছেন জগৎপতি বর্মা

ভেনেজুয়েলার তেল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ—এমন মন্তব্য করে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাডভাইজার ও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহযোগী স্টিফেন মিলার।
গতকাল বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে মিলার বলেন, ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প গড়ে উঠেছে ‘আমেরিকার শ্রম, উদ্ভাবন ও ঘামের’ ওপর আর সেটা রাষ্ট্রায়ত্ত করে নেওয়াকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদের সবচেয়ে বড় ‘চুরি’ বলে অভিহিত করেন। মিলারের এই মন্তব্যের ঠিক এক দিন আগে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ঘোষণা দেন—ভেনেজুয়েলায় প্রবেশ ও সেখান থেকে বের হওয়া সব তেলবাহী জাহাজের ওপর ‘সম্পূর্ণ ও সর্বাত্মক অবরোধ’ আরোপ করা হচ্ছে।
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার উপকূলের কাছাকাছি কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় সামরিক উপস্থিতি গড়ে তুলেছে যুক্তরাষ্ট্র। গত সেপ্টেম্বর থেকে মাদক পাচারের অভিযোগে বেশ কয়েকটি নৌযানে হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। এতে এখন পর্যন্ত অন্তত ৯০ জন নিহত হয়েছেন। ট্রাম্প প্রশাসন দাবি করছে, এসব নৌকা যুক্তরাষ্ট্রে বিপুল পরিমাণ মাদক পাচার করছিল এবং তা মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি। তবে এই অভিযোগের পক্ষে কোনো প্রমাণ তারা দেয়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোকেনসহ মাদক যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছানোর প্রধান উৎস ভেনেজুয়েলা নয়। ফলে অনেকের মতে, এর পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রকৃত লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল নিয়ন্ত্রণ এবং নিকোলাস মাদুরোকে ক্ষমতা থেকে সরানো।
মিলার কী বলেছেন
গতকাল বুধবার এক্সে দেওয়া পোস্টে স্টিফেন মিলার লেখেন, ‘আমেরিকার শ্রম, মেধা ও পরিশ্রমই ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প সৃষ্টি করেছে। এই শিল্প জোরপূর্বক রাষ্ট্রায়ত্ত করা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ ও সম্পত্তির ইতিহাসের সবচেয়ে বড় চুরি। আর সেই লুণ্ঠিত সম্পদ সন্ত্রাসবাদে অর্থ জোগাতে এবং আমাদের দেশের রাস্তায় খুনি, ভাড়াটে যোদ্ধা ও মাদক ছড়িয়ে দিতে ব্যবহৃত হয়েছে।’
মিলার তাঁর পোস্টে ট্রাম্পের আগের একটি বক্তব্যও যুক্ত করেন, যেখানে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের তেল, ভূমি ও অন্যান্য সম্পদ ‘চুরি’ করার অভিযোগ তোলেন। ওই পোস্টে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার সরকারকে ‘বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন’ ঘোষণা করেন এবং দেশটির তেল ট্যাংকারগুলোর ওপর সম্পূর্ণ অবরোধের নির্দেশ দেন।
মিলার আরও বলেন, ভেনেজুয়েলা থেকে আসা অভিবাসীদের দ্রুত যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠানো হবে এবং সব ‘চুরি হওয়া সম্পদ’ অবিলম্বে যুক্তরাষ্ট্রকে ফিরিয়ে দিতে হবে।
ভেনেজুয়েলায় কী পরিমাণ তেল রয়েছে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলেই বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
২০২৩ সালের হিসাবে ভেনেজুয়েলার তেল মজুতের পরিমাণ প্রায় ৩০৩ বিলিয়ন ব্যারেল—যা বিশ্বে সর্বাধিক। তবে উৎপাদন ও রপ্তানি কমে যাওয়ায় দেশটি এখন তেল থেকে আগের মতো আয় করতে পারছে না।
অবজারভেটরি অব ইকোনমিক কমপ্লেক্সের (ওইসি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ভেনেজুয়েলার অপরিশোধিত তেল রপ্তানির মূল্য ছিল মাত্র ৪ দশমিক শূন্য ৫ বিলিয়ন ডলার। একই সময়ে সৌদি আরব রপ্তানি করেছে ১৮১ বিলিয়ন ডলার, যুক্তরাষ্ট্র ১২৫ বিলিয়ন ডলার ও রাশিয়া ১২২ বিলিয়ন ডলার।
যুক্তরাষ্ট্র কেন ভেনেজুয়েলার তেলের ওপর দাবি করছে
২০ শতকের শুরুর দিকে ভেনেজুয়েলায় তেল অনুসন্ধান শুরু করে মার্কিন কোম্পানিগুলো। ১৯২২ সালে ভেনেজুয়েলার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের মারাকাইবো হ্রদ এলাকায় প্রথম বড় তেলক্ষেত্র আবিষ্কার করে রয়্যাল ডাচ শেল।
এরপর যুক্তরাষ্ট্র ভেনেজুয়েলার তেল উত্তোলন ও উন্নয়নে বড় ধরনের বিনিয়োগ শুরু করে। স্ট্যান্ডার্ড অয়েলের মতো কোম্পানিগুলো চুক্তিভিত্তিকভাবে কাজ করে ভেনেজুয়েলাকে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ তেল সরবরাহকারীতে পরিণত করে।
১৯৬০ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর ওপেক গঠনের সময় ভেনেজুয়েলা ছিল এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। তবে ১৯৭৬ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট কার্লোস আন্দ্রেস পেরেজ তেলশিল্প রাষ্ট্রায়ত্ত করেন এবং পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলা (পিডিভিএসএ) প্রতিষ্ঠা করেন।
পরে হুগো শাভেজ ক্ষমতায় এসে সব বিদেশি তেলসম্পদ জাতীয়করণ করেন। কিন্তু রাজনৈতিক লক্ষ্যকে অগ্রাধিকার দেওয়া, অব্যবস্থাপনা ও বিনিয়োগের অভাবে তেল উৎপাদন ক্রমেই কমতে থাকে।
কবে থেকে নিষেধাজ্ঞা
২০০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র প্রথম ভেনেজুয়েলার তেলশিল্পের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। পরে নিকোলাস মাদুরোর শাসনামলে ২০১৭ ও ২০১৯ সালে নিষেধাজ্ঞা আরও কঠোর করা হয়। এই নিষেধাজ্ঞার ফলে ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি প্রায় বন্ধ হয়ে যায় এবং দেশটি চীন, ভারত ও কিউবার দিকে ঝুঁকে পড়ে।
ভেনেজুয়েলার তেল আমাদের সম্পদ—যুক্তরাষ্ট্রের এমন দাবির কি কোনো আইনি ভিত্তি আছে
না, নেই। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র তার ভূখণ্ডের প্রাকৃতিক সম্পদের মালিক। এই নীতির নাম ‘স্থায়ী প্রাকৃতিক সম্পদে সার্বভৌম অধিকার’ (Permanent Sovereignty over Natural Resources)।
১৯৬২ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের একটি প্রস্তাবে এই নীতি স্বীকৃতি পায়। সে অনুযায়ী, ভেনেজুয়েলার তেল সম্পূর্ণভাবে ভেনেজুয়েলারই। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে এ তেলের ওপর দাবি জানানো আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী।
তাহলে শেভরন কেন কাজ করছে
যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও হিউস্টনভিত্তিক তেল কোম্পানি শেভরন ভেনেজুয়েলায় কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। সাধারণত বিদেশি কোম্পানিগুলো ভেনেজুয়েলায় সরাসরি তেলক্ষেত্রের মালিক হতে পারে না। যুক্তরাষ্ট্রের শেভরন পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলার (পিডিভিএসএ) সঙ্গে যৌথভাবে তেল উৎপাদন করে এবং উৎপাদিত তেলের একটি অংশ পায়।
২০২২ সালে জো বাইডেন প্রশাসন শেভরনকে বিশেষ লাইসেন্স দেয়, যাতে তারা নিষেধাজ্ঞার বাইরে থেকে কাজ করতে পারে। চলতি বছর ট্রাম্প প্রশাসন সেই নিষেধাজ্ঞা ছাড় নবায়ন করেছে।
শেভরন দীর্ঘদিন ধরে ভেনেজুয়েলায় কার্যক্রম চালাচ্ছে এবং সেখানে তাদের বিপুল সম্পদ রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি সরে গেলে সেই সম্পদ রাষ্ট্রের হাতে চলে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে—যা অতীতে এক্সন, কারগিল ও হিলটনের মতো কোম্পানির ক্ষেত্রে ঘটেছে।
ট্রাম্প প্রশাসন মূলত ঐতিহাসিকভাবে মার্কিন কোম্পানিগুলোর করা বিনিয়োগ ও পরে তা বাজেয়াপ্ত হওয়াকে কেন্দ্র করে এই ‘মালিকানা’ দাবি করছে। তবে বর্তমান বিশ্বব্যবস্থায় ও আন্তর্জাতিক আইনে কোনো দেশের সম্পদ অন্য দেশের মালিকানাধীন হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এটি মূলত ভেনেজুয়েলায় শাসনব্যবস্থা পরিবর্তন ও তেলের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার একটি ভূরাজনৈতিক কৌশল।
আল-জাজিরা থেকে অনুবাদ করেছেন জগৎপতি বর্মা

পুতিন ‘বাজি ধরছেন’ যে, তিনি ইউক্রেনের চেয়ে দীর্ঘ সময় লড়াই চালিয়ে যেতে পারবেন, অথবা তিনি এমন একটি সমঝোতা ট্রাম্পের মাধ্যমে আদায় করতে পারবেন, যা রাশিয়াকে বিশ্ব অর্থনীতিতে পুনরায় যুক্ত হওয়ার সুযোগ দেবে, ইউক্রেনকে বিভক্ত ও আধা–ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করবে এবং ইউরোপকে এতটাই হতবাক করে দেবে যে...
১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।
১৩ ঘণ্টা আগে
নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এর পেছন
১৭ ঘণ্টা আগে
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
৬ দিন আগে