পিত্তথলি, কিডনি ও অগ্ন্যাশয়ে পাথর হতে পারে। এর মধ্যে কিডনিতে পাথর আমাদের দেশে প্রায় সময় দেখা যায়। বর্তমানে দেশে এ রোগের সংখ্যা বেড়েছে।
পাথর হওয়ার কারণ
বিভিন্ন কারণে কিডনিতে পাথর হতে পারে। ক্যালসিয়াম বা ইউরিক অ্যাসিডের ঘনত্ব বা পরিমাণ বেড়ে গেলে পাথর হতে পারে। আবার এই উপাদানগুলোর স্ফটিকায়ন বা ক্ষুদ্র কণায় পরিণত হওয়ার প্রক্রিয়াকে বাধা দেওয়া পদার্থ, যেমন সাইট্রেট, ম্যাগনেশিয়াম, জিংক ইত্যাদির পরিমাণ কমে গেলেও পাথর হতে পারে।
পাথর হওয়ার বড় কারণ শরীরে পানিস্বল্পতা। যাঁরা গরম আবহাওয়ায় কাজ করেন এবং পর্যাপ্ত পানি পান করেন না, তাঁদের শরীরে পানির পরিমাণ কমে কিডনিতে পাথর হওয়ার আশঙ্কা বেশি। তাই মরুভূমি বা মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে কিডনিতে পাথর হওয়া রোগীর সংখ্যা বেশি।
প্রস্রাবে বারবার সংক্রমণ পাথর হওয়ার আরেকটি কারণ। মূত্রপ্রবাহে বাধা, গরু বা খাসির মাংস অতিরিক্ত খাওয়াও পাথর হওয়ার কারণ।কিছু মেটাবলিক রোগ, যেমন হাইপার প্যারাথাইরয়েড রেনাল টিউবুলার অ্যাসিডোসিস, নেফ্রোক্যালসিনোসিস এবং কিছু জন্মগত
ত্রুটির কারণে কিডনিতে পাথর হয়। এ ছাড়া অপ্রয়োজনে ভিটামিন সি এবং ডি-সহ অন্যান্য ভিটামিন-জাতীয় ওষুধ বেশি খাওয়াও পাথর
হওয়ার কারণ। এসব ভিটামিন অক্সালেট ও ক্যালসিয়ামের ঘনত্ব বাড়ায়।
প্রায় ৯০ শতাংশ পাথর সাধারণ এক্স-রেতে দেখা যায় আর বাকি ১০ শতাংশ পাথর এক্স-রেতে দেখা যায় না।
কিডনিতে পাথর হওয়ার লক্ষণ
- কিডনির পাথরের জন্য ব্যথা হলে পেটের ওপরের দিকে অথবা পিঠের নিচে ডানে বা বাঁয়ে মৃদু ব্যথা হতে পারে।
- লাল প্রস্রাব, প্রস্রাবের সময় ব্যথা ও জ্বালাপোড়া থাকতে পারে।
- ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া বা অল্প প্রস্রাব হয়ে আর না হওয়া।
- মাঝেমধ্যে প্রস্রাবের সঙ্গে ছোট ছোট পাথর যেতে পারে।
- কখনো কখনো কাঁপুনি দিয়ে জ্বর হতে পারে।
- ব্যথার সঙ্গে বমি ভাব বা বমি হতে পারে।
- পাথর যদি কিডনির নালিতে নেমে আসে, তাহলে ওপরের পেট বা পিঠের পাশ থেকে কুঁচকির দিকে বা পেটের নিচের দিকের দুই পাশে বা কোমরে তীব্র ব্যথা হয় এবং সঙ্গে বমি ভাব থাকে।
- » পাথর মূত্রনালি বা কিডনির নালিতে আটকে গেলে তীব্র ব্যথার সঙ্গে কাঁপুনি দিয়ে জ্বর হতে পারে।
পরীক্ষা-নিরীক্ষা
প্রস্রাব পরীক্ষা, আলট্রাসনোগ্রাম, এক্স-রের সাধারণ পরীক্ষা। এরপর পাথরের জন্য সঠিক চিকিৎসাপদ্ধতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে আইভিইউ অথবা সিটি স্ক্যান করতে হয়।
চিকিৎসা
পাথর কিডনির ভেতরে থাকলে কিডনির ক্ষতি হয়। সে জন্য যথাসময়ে পাথর অপসারণ করে পুনরায় যেন না হতে পারে, সে ব্যবস্থা নিতে হবে। পাথর ১ সেন্টিমিটারের ছোট হলে সেগুলো অপারেশন ছাড়া ওষুধের মাধ্যমে বেরিয়ে যায়। পাথর আকারে বড় হলে অপারেশন করাতে হবে। এখন আর পেট কেটে অপারেশন করাতে হয় না। এর নতুন চিকিৎসাপদ্ধতি আছে। যেমন:
- শকওয়েভ দিয়ে গুঁড়া করে পাথর বের করা বা ইএসডব্লিউএল
- পিঠে ছোট ছিদ্র করে পাথর অপসারণ বা পিসিএনএল
- শকওয়েভ বা ছিদ্র ছাড়াও প্রস্রাবের রাস্তা দিয়ে আরআইআরএস লেজার, ইউআরএস-আইসিপিএল ইত্যাদি পদ্ধতিতে কিডনি, মূত্রনালি ও মূত্রথলির পাথর বের করা যায়।
প্রতিকার
অপারেশন বা চিকিৎসার পাঁচ বছরের মধ্যে ৫০ শতাংশ কিডনি রোগীর আবার পাথর হতে পারে। অপারেশন করে অপসারিত পাথরের রাসায়নিক বিশ্লেষণ করে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিলে পুনরায় পাথর হবে না।
প্রতিরোধ
খাদ্যাভ্যাসের কিছু পরিবর্তন এবং পর্যাপ্ত পানি পান করা কিডনির পাথর প্রতিরোধের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
- পানি বা তরল খাবার দিনে ২.৫ থেকে ৩ লিটার।
- শাক ও সবজি খাওয়ার অভ্যাস করা।
- ক্যালসিয়ামসমৃদ্ধ খাবার কম খাওয়া।
- পালংশাক, স্ট্রবেরি, মাখন, চকলেট, দুধ দিয়ে তৈরি খাবারসহ যেসব খাদ্যে অক্সালেটের পরিমাণ বেশি থাকে, সেগুলো কম খেতে হবে।
- পরিমিত লবণ খেতে হবে।
- প্রয়োজন ছাড়া ভিটামিন সাপ্লিমেন্ট না খাওয়া।
- স্থূলতা থাকলে ওজন নিয়ন্ত্রণ করা।
- হজমে সমস্যা বা জন্মগত ত্রুটির চিকিৎসা করতে হবে।
- নিয়মিত ব্যায়াম বা কায়িক শ্রমের মাধ্যমে শরীর সচল রাখা।
- উপযুক্ত খাদ্যাভ্যাস ও সচল জীবন মেনে চললে কিডনির পাথর প্রতিরোধ করা যায়। কিডনির পাথর অপসারণের আধুনিক চিকিৎসা দেশেই সম্ভব।
পরামর্শ দিয়েছেন: ডা. কাজী জিকরুর রাজ্জাক, সহযোগী অধ্যাপক, ইউরোলজি বিভাগ আলোক হেলথকেয়ার লি.
মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে