Ajker Patrika

এখনো রাশিয়ায় আটকে আছেন ইউক্রেনে ‘যুদ্ধ করা’ ২০ ভারতীয় 

আপডেট : ০১ মার্চ ২০২৪, ১১: ২৯
এখনো রাশিয়ায় আটকে আছেন ইউক্রেনে ‘যুদ্ধ করা’ ২০ ভারতীয় 

রুশ সেনাবাহিনীতে ‘সেনা নিরাপত্তা সহকারী’ হিসেবে কাজ করানোর কথা বলে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে অংশ নিতে বাধ্য করা হয়েছে বেশ কয়েকজন ভারতীয়কে। তাঁদের মধ্যে অন্তত ২০ জন ভারতীয় রাশিয়ায় এখনো আটকা আছেন। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গতকাল বৃহস্পতিবার এ কথা জানিয়েছে। 

ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দাবি, ভারতীয় এজেন্টরাই এই ভারতীয়দের রুশ সেনাবাহিনীতে ‘সেনা নিরাপত্তা সহকারী’ হিসেবে কাজ দেওয়ার কথা বলে প্রতারণা করেছে। তবে সবাইকে ইউক্রেনে যুদ্ধ করতে হয়নি। কিন্তু তাদের মধ্যে কয়েকজন অভিযোগ করেছেন, তাদের নিয়োগের সময় যে পরিমাণ অর্থের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল তা দেওয়া হয়নি। এর ফলে তাঁরা ভারত সরকারের দ্বারস্থ হয়েছেন। 

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টেলিগ্রাফ ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউক্রেনে রাশিয়ার হয়ে যুদ্ধ করতে গিয়ে আটকে পড়াদের সংখ্যা সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয় ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রকের মুখপাত্র রণধীর জ্যাসওয়ালের কাছে। জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা জানতে পেরেছি যে, ২০ জনের আশপাশে কিছুসংখ্যক লোক আটকে আছেন। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি তাদের দ্রুত ছাড়িয়ে আনার জন্য।’ 

এর আগ, তিন ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দুকে জানান, ‘সেনা নিরাপত্তা সহকারীর’ কথা বলে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে  অংশ নিতে বাধ্য করা হয়েছে। তাঁরা জানান, এক এজেন্ট তাঁদের প্রতারিত করে নিয়ে যায়। ২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে প্রায় ১৮ জন ভারতীয়কে রাশিয়া-ইউক্রেন সীমান্তবর্তী মারিওপোল, খারকিভ, দোনেৎস্ক, রোস্তোভ-অন-দনে যুদ্ধ করতে বাধ্য করা হয়েছে। এর মধ্যে যুদ্ধে একজনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানান এক এজেন্ট। ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে এই যুদ্ধ চলছে। 

এক ভুক্তভোগীর পরিবার তেলেঙ্গানা রাজ্যের রাজনৈতিক দল সর্বভারতীয় মজলিশ-ই-ইত্তেহাদুল মুসলেমিনের সংসদ সদস্য আসাদুদ্দিন ওয়েইসির কাছে এ বিষয়ে অভিযোগ করেছেন। তিনি ভারতের হায়দরাবাদের বাসিন্দা। গত ২৫ জানুয়ারি ওয়েইসি ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর ও মস্কোতে ভারতের দূতাবাসে এ বিষয়ে সরকারের হস্তক্ষেপ চেয়ে চিঠি লিখেছেন। 

ভুক্তভোগীরা ভারতের উত্তর প্রদেশ, গুজরাট, পাঞ্জাব ও জম্মু-কাশ্মীরের বাসিন্দা। দ্য হিন্দু ভুক্তভোগীদের নাম গোপন রেখেছে। উত্তর প্রদেশের এক ভুক্তভোগী জানান, তাঁদের তিনজনকে ‘রুশ সেনাবাহিনী’ অস্ত্র ও গোলাবারুদ পরিচালনার প্রাথমিক প্রশিক্ষণ দেয় এবং গত জানুয়ারিতে রাশিয়া-ইউক্রেন সীমান্তে রোস্তভ-অন-দনে নিয়ে যায়। সেখানে তাঁরা লড়াই করতে বাধ্য হন। 

তিনি বলেন, ‘আমরা ২০২৩ সালের নভেম্বরে এখানে পৌঁছাই। এখানে আমাদের চুক্তি সই করানো হয়। চুক্তিতে বলা হয়, আমাদের সেনাবাহিনীর নিরাপত্তা সহকারী হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। আমাদের স্পষ্টভাবে বলা হয় যে, আমাদের যুদ্ধক্ষেত্রে পাঠানো হবে না এবং প্রতি মাসে ১ লাখ ৯৫ হাজার রুপি বেতন ও ৫০ হাজার রুপি অতিরিক্ত বোনাস দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। দুই মাস বোনাসের ৫০ হাজার রুপি ছাড়া আমি আর কোনো বেতন পাইনি।’ 

তিনি আরও জানান, তিনি এক এজেন্টের মাধ্যমে রাশিয়ায় যান। এজেন্ট ফয়সাল খান বাবা ভ্লগ নামে একটি ইউটিউব চ্যানেল চালান। গত ১২ নভেম্বর রাশিয়ায় খানের সহযোগী ভারতীয় দুই এজেন্ট উত্তর প্রদেশের এই বাসিন্দাকে গ্রহণ করেন। 

ওই ভুক্তভোগী আরও বলেন, ‘গত ১৩ নভেম্বর আমাদের একটি ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয় এবং মস্কো থেকে আড়াই ঘণ্টা দূরের এক নির্জন জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়। আমরা ভারতীয় ওই এজেন্টের সঙ্গে যোগাযোগ করি। তারা জানায়, আমাদের নিরাপত্তা সহকারী হিসেবেই নিয়োগ দেওয়া হবে। আমাদের তাঁবুতে থাকতে দেওয়া হয় এবং অস্ত্র চালনা শেখানো হয়। গত ১৪ জানুয়ারি আমাদের যুদ্ধ করার জন্য দোনেৎস্কে পাঠানো হয়।’ 

লড়াই করতে বাধ্য করার কয়েক দিন পরই পালানোর সুযোগ পান তিনি এবং অস্ত্র ফেলে দেন। ভুক্তভোগী বলেন, ‘কিন্তু আমি ধরা পড়ে যাই এবং আমাকে বন্দুকের নলের মুখে হুমকি দেওয়া হয়। তারা আমাকে এক ভবন থেকে অন্য ভবনে পণ্য সরবরাহের কাজ করতে বলে। কমান্ডার আমাদের পাঁচ মিটারের দূরত্ব বজায় রেখে হাঁটতে বলে যেন আমরা সহজ লক্ষ্য না হই। স্বল্প এই দূরত্ব অতিক্রম করতেই আমরা সাত-আট বার বুলেটের মুখে পড়ি। আমার সঙ্গে থাকা এক স্থানীয় এতে নিহত হয়। গত ২২ জানুয়ারি আমি পালাতে সক্ষম হই এবং অত্যন্ত ঠান্ডার কারণে শরীরে ক্ষত নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হই।’ 

তিনি বলেন, অনেক দিন পর্যন্ত তিনি মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে পারেননি। যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পালানোর পরই পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তিনি বলেন, ‘মস্কোর ভারতীয় দূতাবাসের কাছে বারবার অনুরোধ করা হলেও তা উপেক্ষা করা হয়েছে। আমাকে বেশ কয়েকবার ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমার কাছে যথাযথ কাগজপত্র নেই এবং কোনো অর্থ নেই। সরকার আমাদের সাহায্য করছে না।’ 

রাশিয়ায় ভুক্তভোগীদের গ্রহণকারী এক এজেন্ট দ্য হিন্দুকে বলেন, এই ব্যক্তিরা ভারতের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে এসেছেন এবং সরকার ব্যবস্থা না নিলে জীবনের মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়তে পারেন। 

এজেন্ট বলেন, ‘তাঁদের সেনাবাহিনীর সহকারী হিসেবে কাজে নেওয়া হয়েছিল। চুক্তি অনুসারে তাঁদের তিন মাসের প্রাথমিক প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে, এর পরে একটি মনস্তাত্ত্বিক মূল্যায়ন এবং অন্যান্য পরীক্ষা করা হবে। তাঁরা রান্নাঘরের সহকারী বা অন্য কোনো কাজ চালিয়ে যেতে চান কি না, তা নির্ধারণ করা হবে। কিন্তু এক মাস পর তাঁদের পাসপোর্ট কেড়ে নেওয়া হয় এবং তাঁরা রাশিয়ার পক্ষে যুদ্ধ করতে বাধ্য হন। অন্য দেশের নাগরিকেরাও এখানে আটকা পড়ে আছেন।’ 

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় রাশিয়ায় ভারতীয়দের বিষয়টি নিয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। সূত্র অনুসারে, ভারতীয় দূতাবাস তাদের কাছে আসা সমস্ত অভিযোগ খতিয়ে দেখছে। 

তবে সূত্র বলছে, যাঁরা দাবি করেন যে তাঁদের সীমান্তে শ্রম দিতে বাধ্য করা হচ্ছে, তাঁদের অনেকেই দেশ ছাড়তে চান না। তাঁদের মধ্যে অনেকেই বিদেশে কাজের সুযোগ পাওয়ার জন্য নিয়োগকর্তাদের মোটা অঙ্কের অর্থ পরিশোধ করেছেন। ভারতে তাঁদের পরিবারের কাছে ফিরে আসার আগে কিছু অর্থ উপার্জন ছাড়া তাঁরা ফিরে আসতে চান না। তাই কর্মকর্তারা বলছেন, এ ক্ষেত্রে তাঁদের হাত বাঁধা। এর পরও যেকোনো প্রয়োজনে ভারতীয় নাগরিকদের সাহায্য করতে প্রস্তুত।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভেনেজুয়েলার উপকূলে আবার তেলের ট্যাংকার জব্দ করল যুক্তরাষ্ট্র

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
গত সপ্তাহে ভেনেজুয়েলার উপকূলে একটি বিদেশি তেলের ট্যাংকার জব্দ করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। ছবি: সংগৃহীত
গত সপ্তাহে ভেনেজুয়েলার উপকূলে একটি বিদেশি তেলের ট্যাংকার জব্দ করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। ছবি: সংগৃহীত

ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে ঘোষিত ‘সর্বাত্মক অবরোধের’ অংশ হিসেবে আন্তর্জাতিক জলসীমায় আরও একটি তেলের ট্যাংকার জব্দ করেছে মার্কিন কোস্টগার্ড। আজ শনিবার (২০ ডিসেম্বর) নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তিনজন মার্কিন কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

গত মঙ্গলবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ঘোষণা দেন, ভেনেজুয়েলায় প্রবেশ এবং সেখান থেকে বের হওয়া সব তেলবাহী জাহাজের ওপর ‘সম্পূর্ণ ও সর্বাত্মক অবরোধ’ আরোপ করা হচ্ছে। তাঁর এমন ঘোষণার মাত্র কয়েক দিনের মাথায় এই অভিযান চালানো হলো।

এর আগে গত সপ্তাহে একটি বিদেশি তেলের ট্যাংকার জব্দের পর এটি দ্বিতীয় ঘটনা। তবে এই ট্যাংকারের নাম বা নির্দিষ্ট অবস্থান সম্পর্কে পেন্টাগন বা হোয়াইট হাউস এখনো বিস্তারিত প্রকাশ করেনি। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মার্কিন কোস্টগার্ড এই অভিযানে নেতৃত্ব দিচ্ছে।

ভেনেজুয়েলার রাষ্ট্রীয় তেল কোম্পানি পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলা (পিডিভিএসএ) তাৎক্ষণিকভাবে এ নিয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। তবে আগের অভিযানকে ‘আন্তর্জাতিক জলদস্যুতা’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছিল মাদুরো সরকার।

এদিকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের অবরোধ ঘোষণার পর থেকে ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানিতে ধস নেমেছে। আটকের ভয়ে ভেনেজুয়েলার জলসীমার ভেতরে কয়েক মিলিয়ন ব্যারেল তেল নিয়ে বহু ট্যাংকার নোঙর করে আছে।

গত সপ্তাহের অভিযানের পর থেকে দেশটির অপরিশোধিত তেল রপ্তানি আরও কমেছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, এই অবরোধ দীর্ঘস্থায়ী হলে দৈনিক প্রায় ১০ লাখ ব্যারেল অপরিশোধিত তেল সরবরাহ বন্ধ হবে। এর প্রভাবে বিশ্ববাজারে তেলের সরবরাহ ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কায় এশীয় ও ইউরোপীয় বাজারে অপরিশোধিত তেলের দামও কিছুটা বেড়েছে।

গত সেপ্টেম্বর মাস থেকে ভেনেজুয়েলা ও কলম্বিয়া উপকূলে ‘মাদকবিরোধী অভিযানের’ নামে যুক্তরাষ্ট্র অন্তত ২৬টি সামরিক হামলা চালিয়েছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ও গার্ডিয়ানের তথ্যমতে, এসব হামলায় এখন পর্যন্ত অন্তত ১০০ জন নিহত হয়েছে।

প্রেসিডেন্ট নিকোলা মাদুরো অভিযোগ করেছেন, এই অবরোধ ও সামরিক তৎপরতা আসলে তাঁকে ক্ষমতাচ্যুত করে ভেনেজুয়েলার বিশাল তেল সম্পদ দখলে নেওয়ার একটি সুপরিকল্পিত পরিকল্পনা।

ভেনেজুয়েলার তেলের সবচেয়ে বড় ক্রেতা চীন। ডিসেম্বরে দেশটি প্রতিদিন গড়ে ৬ লাখ ব্যারেল তেল আমদানির লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছিল, যা এখন চরম ঝুঁকির মুখে। ট্রাম্পের এই পদক্ষেপকে ডেমোক্র্যাট কিছু কংগ্রেসম্যান ‘যুদ্ধের শামিল’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। অন্যদিকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সতর্ক করেছেন, শিগগির ভেনেজুয়েলার অভ্যন্তরে স্থল হামলাও শুরু হতে পারে।

২০১৯ সালে যুক্তরাষ্ট্র ভেনেজুয়েলার ওপর জ্বালানি নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার পর থেকে দেশটির তেল কিনতে আগ্রহী ব্যবসায়ী ও শোধনাগারগুলো তথাকথিত ‘শ্যাডো ফ্লিট’ ব্যবহার করে আসছে। এসব ট্যাংকার নিজেদের অবস্থান গোপন রাখে এবং অনেক ক্ষেত্রে ইরান বা রাশিয়ার তেল পরিবহনের জন্য নিষেধাজ্ঞাভুক্ত জাহাজ ব্যবহার করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভারতে নিকাব বিতর্ক: কাজে যোগ দেননি সেই নারী চিকিৎসক

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: ভিডিও থেকে নেওয়া
ছবি: ভিডিও থেকে নেওয়া

সরকারি অনুষ্ঠানে সার্টিফিকেট নিতে আসা এক মুসলিম নারীর মুখ দেখতে নিকাব টান দিয়ে সরিয়ে দিয়েছিলেন ভারতের বিহার রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার। ঘটনাটি নিয়ে ইতিমধ্যে বেশ সমালোচনা হচ্ছে। এর মধ্যে আজ আরেকটি বিষয় নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। জানা গেছে, নিকাব বিতর্কের কেন্দ্রে থাকা সেই নারী চিকিৎসক নুসরাত পারভীন নির্ধারিত সময়ে কর্মস্থলে যোগ দেননি।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আজ শনিবার (২০ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত তিনি কাজে যোগদান করেননি। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পাটনার সিভিল সার্জন অবিনাশ কুমার সিং। এমনকি তাঁর বা তাঁর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গেও কোনো যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না বলে জানিয়েছে প্রশাসন।

পাটনার সিভিল সার্জন জানান, নুসরাত পারভীনের কাজে যোগদানের শেষ সময় ২০ ডিসেম্বরের পর আরও বাড়ানো হয়েছে। তবে নতুন সময়সীমা কত দিন, তা স্পষ্ট করেননি তিনি। সিভিল সার্জন বলেন, ‘তিনি সোমবার যোগ দেন কি না, সেটিই এখন দেখার বিষয়।’

নুসরাত পারভীনের পাটনা সদরের সাবলপুর প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যোগ দেওয়ার কথা ছিল। সেখানকার সার্জন বিজয় কুমার জানিয়েছেন, আজ ৫-৬ জন নতুন চিকিৎসক যোগ দিলেও নুসরাতের কোনো খোঁজ নেই। এমনকি সিভিল সার্জন অফিস থেকেও তাঁর নিয়োগপত্র এখনো সেখানে পৌঁছায়নি।

নুসরাত পারভীন পাটনার সরকারি তিব্বি কলেজ ও হাসপাতালের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। কলেজের প্রিন্সিপাল মাহফুজুর রহমান জানিয়েছেন, নুসরাত সর্বশেষ ১৭ বা ১৮ ডিসেম্বর কলেজে এসেছিলেন।

নুসরাতের পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, তাঁরা অতিরিক্ত মিডিয়া কাভারেজ এড়াতে চাইছেন। এই বিতর্কের কারণে নুসরাত আদৌ চাকরিতে যোগ দেবেন কি না, তা নিয়ে নতুন করে ভাবছেন।

এদিকে নুসরাতের পরিবার কলকাতায় চলে গেছে বলে যে গুঞ্জন উঠেছিল, তা নাকচ করে দিয়েছেন তাঁর স্বামী। তিনি জানিয়েছেন, তাঁরা সরকারের ওপর নয়, বরং সংবাদমাধ্যমের সৃষ্টি করা বিতর্কে বিরক্ত।

চলতি সপ্তাহের শুরুতে পাটনায় আয়ুশ চিকিৎসকদের নিয়োগপত্র বিতরণ অনুষ্ঠানে এই অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে। ভিডিওতে দেখা যায়, নুসরাত পারভীন নিয়োগপত্র নিতে মঞ্চে এলে মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার তাঁর মুখের নিকাব নিয়ে প্রশ্ন তোলেন এবং একপর্যায়ে তা টেনে সরিয়ে দেন। এই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে দেশজুড়ে তীব্র সমালোচনা শুরু হয়।

বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলেছেন বিহারের রাজ্যপাল আরিফ মোহাম্মদ খান। তবে তিনি এই ঘটনাকে ‘বিতর্ক’ বলতে নারাজ। সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘বাবা ও মেয়ের মধ্যে কি কোনো বিতর্ক হতে পারে? নীতীশ কুমার নারী শিক্ষার্থীদের নিজের মেয়ের মতো মনে করেন। আপনারা বিষয়টিকে কোথায় নিয়ে গেছেন?’

তবে এর আগেও বিতর্কে জড়িয়েছিলেন নীতীশ কুমার। গত নভেম্বরের বিহার বিধানসভা নির্বাচনের কয়েক সপ্তাহ আগে এক জনসভায় এক নারীকে মালা পরানোর ভিডিও ভাইরাল হলে সমালোচনার মুখে পড়েন তিনি। সে সময় এক জেডিইউ সংসদ সদস্য থামানোর চেষ্টা করলে মুখ্যমন্ত্রী তাঁকে ধমক দেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বন্ধু ট্রাম্পকে খুশি করতে মোদির ‘শান্তি’ বিল পাস, বিরোধীদের সমালোচনা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ভারতের প্রধানমন্ত্রী ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: সংগৃহীত
ভারতের প্রধানমন্ত্রী ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: সংগৃহীত

ভারতের মোদি সরকারের সদ্য পাস হওয়া ‘শান্তি’ বিল নিয়ে বিস্ফোরক অভিযোগ তুলেছে প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস। দলের প্রবীণ নেতা ও রাজ্যসভার সংসদ সদস্য জয়রাম রমেশ অভিযোগ করেছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে সম্পর্ক পুনরুদ্ধার করতে এবং তাদের স্বার্থ রক্ষা করতেই এই বিতর্কিত বিলটি সংসদে জোরপূর্বক পাস করা হয়েছে।

জয়রাম রমেশের দাবি, এই বিলের মাধ্যমে ভারতের পরমাণু খাতে বিদেশি সরবরাহকারীদের দায়বদ্ধতা কমিয়ে দেওয়া হয়েছে, যা দীর্ঘদিনের জাতীয় ঐকমত্যের পরিপন্থী। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে জয়রাম রমেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ‘ন্যাশনাল ডিফেন্স অথরাইজেশন অ্যাক্ট (এনডিএএ) ২০২৬’-এর প্রসঙ্গ টেনে আনেন।

তিনি বলেন, ট্রাম্প স্বাক্ষরিত ৩ হাজার ১০০ পৃষ্ঠার ওই মার্কিন আইনের ১৯১২ নম্বর পৃষ্ঠায় ভারতের ‘পরমাণু দায়বদ্ধতা আইন’ নিয়ে দ্বিপক্ষীয় পর্যালোচনার স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু আমাদের নতুন বিলে সেটা নেই।

জয়রাম রমেশ বলেন, ‘এখন আমরা নিশ্চিত যে প্রধানমন্ত্রী কেন চলতি সপ্তাহেই “শান্তি” বিলটি পাস করার জন্য এত তাড়াহুড়ো করলেন। এটি তাঁর একসময়ের ঘনিষ্ঠ বন্ধুর (ট্রাম্প) সঙ্গে সুসম্পর্ক বা শান্তি ফিরিয়ে আনার একটি প্রচেষ্টা মাত্র।’

কটাক্ষ করে তিনি বলেন, শান্তি বিলটিকে আসলে ‘ট্রাম্প অ্যাক্ট’ বলা উচিত। এর পূর্ণরূপ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন—‘দ্য রিঅ্যাক্টর ইউস অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট প্রমিজ অ্যাক্ট’।

কী আছে এই ‘শান্তি’ বিলে

মোদি সরকারের দাবি, ‘সাস্টেইনেবল হার্নেসিং অ্যান্ড অ্যাডভান্সমেন্ট অব নিউক্লিয়ার এনার্জি ফর ট্রান্সফর্মিং ইন্ডিয়া (শান্তি বা এসএইচএএনটিআই) বিল-২০২৫’ ভারতের পরমাণু খাতে আমূল পরিবর্তনের পথ প্রশস্ত করবে। এই বিলের মাধ্যমে ভারতের পারমাণবিক বিদ্যুৎ খাতে এই প্রথম বেসরকারি কোম্পানিগুলোর প্রবেশের সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে।

গত বুধবার ভারতের পরমাণু শক্তি দপ্তরের প্রতিমন্ত্রী জিতেন্দ্র সিং বিলটি সংসদে উত্থাপন করেন। তাঁর মতে, এই বিলের লক্ষ্য হলো—১৯৬২ সালের পারমাণবিক শক্তি আইনের ভিত্তিতে আধুনিক প্রযুক্তি, অর্থনীতি ও জ্বালানি বাস্তবতার সঙ্গে ভারতের পারমাণবিক কাঠামোকে আধুনিক করা।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এই বিল পাস হওয়াকে একটি ‘রূপান্তরমূলক মুহূর্ত’ বলে উল্লেখ করেন।

বিলটির মূল লক্ষ্য হলো—ভারতের পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদন দ্রুত বাড়ানো। বর্তমানে ভারতের পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদন উৎপাদন সক্ষমতা ৮ দশমিক ২ গিগাওয়াট। মোদি সরকার ২০৪৭ সালের মধ্যে তা ১০০ গিগাওয়াটে নিতে চায়। এ ছাড়া ভারতের ২০৭০ সালের মধ্য নেট জিরো লক্ষ্যমাত্রা অর্জন এবং পাশাপাশি ৫ ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতি গড়ার সঙ্গেও এটি সম্পর্কযুক্ত।

তবে বিরোধীরা বলছেন, নতুন এই বিলের মাধ্যম ১৯৬২ সালের পরমাণু শক্তি আইন ও ২০১০ সালের পরমাণু ক্ষয়ক্ষতি বিষয়ক বেসামরিক দায়বদ্ধতা আইন (সিভিল লাইয়াবিলিটি ফর নিউক্লিয়ার ড্যামেজ আইন) বাতিল হয়ে গেছে।

বিরোধীদের প্রধান অভিযোগ, নতুন আইনে পারমাণবিক দুর্ঘটনায় সরঞ্জাম সরবরাহকারীর দায়বদ্ধতা-সংক্রান্ত কঠোর ধারাগুলো শিথিল করা হয়েছে। এখন কোনো দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে দায় মূলত অপারেটরের ওপরই বর্তাবে।

সংসদে বিলটি পাসের সময় কংগ্রেসসহ অন্য বিরোধী দলগুলো দাবি করেছিল, বিলটি সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হোক। কিন্তু সরকার সেই দাবি প্রত্যাখ্যান করে এবং বিরোধীদের ওয়াকআউটের মধ্যেই বিলটি পাস হয়ে যায়।

বিরোধীদের মতে, ২০১০ সালে যখন ইউপিএ সরকার পরমাণু দায়বদ্ধতা আইন এনেছিল, তখন বিজেপিই সরবরাহকারীর দায়বদ্ধতার দাবিতে অনড় ছিল। এখন সেই বিজেপিই ক্ষমতায় এসে বিদেশি সংস্থাগুলোকে ছাড় দিতে আইন শিথিল করছে, যা জনস্বার্থের পরিপন্থী।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

গ্রিস উপকূলে মাছধরা নৌকা থেকে বাংলাদেশিসহ ৫৪০ অভিবাসী উদ্ধার

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
উদ্ধারকৃতদের মধ্যে বাংলাদেশ, মিশর ও পাকিস্তানের নাগরিক রয়েছেন। ছবি: রয়টার্সের সৌজন্যে
উদ্ধারকৃতদের মধ্যে বাংলাদেশ, মিশর ও পাকিস্তানের নাগরিক রয়েছেন। ছবি: রয়টার্সের সৌজন্যে

গ্রিসের দক্ষিণাঞ্চলীয় দ্বীপ গাভদোসের কাছে একটি মাছধরা নৌকা থেকে বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের প্রায় ৫৪০ জন অভিবাসীকে উদ্ধার করেছে দেশটির কোস্ট গার্ড। গ্রিক কোস্ট গার্ডের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, গতকাল শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) গাভদোস দ্বীপ থেকে প্রায় ১৬ নটিক্যাল মাইল (২৯.৬ কিমি) দূরে লিবীয় সাগরে নৌকাটি শনাক্ত করা হয়।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের সীমান্ত সংস্থা ফ্রন্টেক্সের টহল জাহাজ প্রথমে নৌকাটি দেখতে পায়। এরপর কোস্ট গার্ডের তিনটি জাহাজ, ফ্রন্টেক্সের তিনটি জাহাজ ও তিনটি বাণিজ্যিক জাহাজের সমন্বয়ে উদ্ধার অভিযান পরিচালিত হয়।

জানা গেছে, উদ্ধার হওয়া ৫৪০ জন অভিবাসীর সবাই বর্তমানে সুস্থ আছেন। তাঁদের উদ্ধার করে নিকটবর্তী ক্রিট দ্বীপের আগিয়া গালিনি বন্দরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

গ্রিক কোস্ট গার্ডের একজন মুখপাত্র বার্তা সংস্থা এএফপিকে জানিয়েছেন, উদ্ধারকৃতদের মধ্যে বাংলাদেশ, মিশর ও পাকিস্তানের নাগরিক রয়েছেন। এ ছাড়া ইরিত্রিয়া, সোমালিয়া, সুদান ও ফিলিস্তিনি নাগরিকেরাও এই দলে ছিলেন।

তাঁদের আপাতত ক্রিট দ্বীপের রেথিমনো শহরের একটি অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে রাখা হয়েছে। সেখানে প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা শেষে তাঁদের রাজনৈতিক আশ্রয়ের (Asylum) আবেদন প্রক্রিয়া শুরু করা হবে।

লিবিয়ার পূর্বাঞ্চলীয় শহর তোব্রুক থেকে পরিচালিত পাচারকারী চক্রগুলো এখন ইউরোপে প্রবেশের জন্য গাভদোস রুটটিকে বেশি ব্যবহার করছে। ২০২৫ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসেই ক্রিট ও গাভদোসে ৭ হাজার ৩০০-এর বেশি অভিবাসী পৌঁছেছেন, যা ২০২৪ সালের পুরো বছরের মোট সংখ্যাকেও ছাড়িয়ে গেছে।

গ্রিসের প্রধানমন্ত্রী কিরিয়াকোস মিতসোটাকিস জানিয়েছেন, ২০২৬ সালের মাঝামাঝি থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নতুন অভিবাসন চুক্তি কার্যকর হবে। এর আওতায় যাঁদের আশ্রয়ের আবেদন বাতিল হবে, তাঁদের দ্রুত নিজ দেশে ফেরত পাঠানোকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।

উদ্ধারকৃতদের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ, মিসর ও সুদানের নাগরিকেরা এই মরণযাত্রার জন্য পাচারকারী চক্রকে জনপ্রতি দুই থেকে পাঁচ হাজার ইউরো (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ২.৫ থেকে ৬ লাখ টাকা) পরিশোধ করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত