জাহাঙ্গীর আলম
‘নারীর হৃদয়-প্রেম-শিশু-গৃহ-নয় সবখানি;/ অর্থ নয়, কীর্তি নয়, স্বচ্ছলতা নয়-/ আরও এক বিপন্ন বিস্ময়/ আমাদের অন্তর্গত রক্তের ভিতরে/ খেলা করে;/ আমাদের ক্লান্ত করে;/ ক্লান্ত-ক্লান্ত করে:’
কখন যে কোথা থেকে মানুষের মনে ভর করে আকাশ সমান ক্লান্তি, বিষণ্নতার কালো মেঘ আচ্ছন্ন করে ফেলে তাকে। জীবন হয়ে ওঠে এক অসহ্য যন্ত্রণার নাম। রাজ্যের নৈরাশ্য গ্রাস করে, ঘুম কেড়ে নেয় তার। কোনো এক ‘ফাল্গুনের রাতের আঁধারে, যখন ডুবে যায় পঞ্চমীর চাঁদ, মরণের সাধ জাগে দুর্নিবার।’ প্রেম, স্নেহ-পৃথিবীর তাবৎ সৌন্দর্য, ঘৃণা, পিছুটান তুচ্ছ মনে হয়। অর্থশূন্য মানবজীবনের অবসানই একমাত্র কাঙ্ক্ষিত হয়ে ওঠে তখন।
আত্মহত্যার মনো-সামাজিক উদ্দীপক এমনই এক রহস্য। জীবনানন্দের মৃত্যুও বুঝি সে কারণেই রহস্যই থেকে গেল!
কী আশ্চর্য! ফাল্গুনের রাতই কেন বেছে নিলেন তিনি? বাংলাদেশে আত্মহত্যায় মৌসুমি প্রভাব আছে কি-না, সে ব্যাপারে কোনো গবেষণা না হলেও তথ্য-উপাত্ত বলছে, নির্দিষ্ট মাসে আত্মহত্যার হার বেশি থাকে। অন্তত পাঁচ বছরে আত্মহত্যার পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে এমন চিত্রই পাওয়া গেছে।
দেখা গেছে, মার্চ ও আগস্টে আত্মহত্যার হার বেশি। তবে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঋতুর বৈশিষ্ট্য পরিবর্তনের কারণে আত্মহত্যার প্রাপ্ত মাসভিত্তিক তথ্যের ভিত্তিতে বলা যায়, বসন্ত ও বর্ষায় বাংলাদেশে আত্মহত্যার হার বেশি থাকে। অন্যভাবে বললে, বসন্তের শেষ ও গ্রীষ্মের শুরুর দিকে আত্মহত্যার পরিমাণ বেশি। অবশ্য বিশ্বের অন্যান্য দেশেও প্রায় একই প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়।
দেশের আত্মহত্যাপ্রবণ অন্যতম দুটি জেলা ঝিনাইদহ ও ঠাকুরগাঁওয়ে পুলিশের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, আত্মহত্যার মাসভিত্তিক প্রবণতায় খুব কমই হেরফের হয়। এর মধ্যে ঝিনাইদহ জেলায় আত্মহত্যার হার সবচেয়ে বেশি।
স্বাধীন গবেষক এস এম ইয়াসির আরাফাত দীর্ঘদিন ধরে আত্মহত্যা নিয়ে গবেষণা করছেন। আত্মহত্যার সিজনাল প্যাটার্ন বা ঋতুভিত্তিক প্রবণতা বুঝতে তিনি নমুনা হিসেবে ঠাকুরগাঁও জেলাকে বেছে নেন। ওই জেলার ২০১৪ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত পুলিশ ডেটা বিশ্লেষণ করে দেখেছেন, এ জেলায় মার্চ ও আগস্টে আত্মহত্যার সংখ্যা সবচেয়ে বেশি থাকে। ২০১৯ সালের আগস্ট পর্যন্ত উপাত্ত বিশ্লেষণ করে এ গবেষণার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে। ঝিনাইদহ জেলার ২০১৮ সাল ও ২০১৯ সালের আগস্ট পর্যন্ত প্রাপ্ত পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে মার্চ-এপ্রিল-মে এবং জুন-জুলাই-আগস্ট এই সময়কালে মোট আত্মহত্যার সংখ্যা সবচেয়ে বেশি—এ পর্যবেক্ষণের পক্ষে সমর্থন পাওয়া গেছে।
এ ব্যাপারে এস এম ইয়াসির আরাফাত তাঁর পর্যবেক্ষণে বলেন, বিশ্বের অধিকাংশ দেশের মতো বাংলাদেশেও বসন্ত ও বর্ষায় (স্প্রিং ও ফল) আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি। ঋতুভিত্তিক এ প্যাটার্ন বুঝতে আমাদের অধিকতর ও বড় পরিসরে গবেষণার প্রয়োজন আছে। আর আত্মহত্যার প্রতিরোধ করতে কৌশল নির্ধারণে এটি বোঝা জরুরি।
২০১৯ সালের ১০ সেপ্টেম্বর বিশ্ব আত্মহত্যা প্রতিরোধ দিবসের প্রতিবেদনে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) বলেছে, ২০১৭ সালে প্রতি ৪০ সেকেন্ডে একজন করে মানুষ আত্মহত্যা করেছে। এক বছরে অন্তত ৩৮টি দেশ আত্মহত্যা প্রতিরোধে বেশ অগ্রগতি করলেও ২০১৮ সালেও প্রতি ৪০ সেকেন্ডে একজন করে মানুষ আত্মহত্যা করেছে। ফলে এ ব্যাপারে অগ্রগতি খুব কম। এ কারণে ওই বছরের ১০ অক্টোবর বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবসের প্রতিপাদ্যও ছিল আত্মহত্যা প্রতিরোধ।
গত বছর প্রতি লাখে আত্মহত্যার হার ছিল ১০ দশমিক ৫। তবে এ হার দেশভেদে ৫ থেকে ৩০ পর্যন্ত। আত্মহত্যায় মোট মৃত্যুর হিসাবে ৭৯ শতাংশ ঘটেছে নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশে। উচ্চ আয়ের দেশে আত্মহত্যা হার বরাবরের মতো সবচেয়ে বেশি; দেখা গেছে, লাখে ১১ দশমিক ৫। উচ্চ আয়ের দেশে পুরুষদের মধ্যে আত্মহত্যার হার নারীর প্রায় তিনগুণ। তবে নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশে দুই লিঙ্গের মধ্যে পার্থক্য খুব কম দেখা গেছে। এমনকি বাংলাদেশসহ কয়েকটি দেশে নারীদের আত্মহত্যার হার পুরুষের চেয়ে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেশি লক্ষ্য করা গেছে।
২০১৬ সালের তথ্যের ভিত্তিতে ডব্লিউএইচওর প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশে আত্মহত্যার হার প্রতি লাখে ৫ দশমিক ৯। এ সময় সারা দেশে সাড়ে ৯ হাজারেরও বেশি মানুষ আত্মহত্যা করেছে।
কিশোর ও তরুণদের মধ্যেই আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি। ১৫-২৯ বছর বয়সীদের মৃত্যুর দ্বিতীয় প্রধান কারণ আত্মহত্যা। প্রথমেই রয়েছে সড়ক দুর্ঘটনা। নারীদের ক্ষেত্রে মাতৃমৃত্যুর পরে মৃত্যুর প্রধান কারণ আত্মহত্যা। আর ছেলেদের অপমৃত্যুর প্রথম কারণ সড়ক দুর্ঘটনা, দ্বিতীয় সহিংসতা এবং তৃতীয় আত্মহত্যা।
আত্মহত্যার প্রধান কৌশল গলায় ফাঁস দেওয়া, এর পর রয়েছে কীটনাশক পান ও আগ্নেয়াস্ত্র। বাংলাদেশের সাম্প্রতিক তথ্য-উপাত্ত বলছে, আত্মহত্যার কৌশলে তেমন কোনো পরিবর্তন হয়নি। যদিও কৃষিপ্রধান দেশগুলোতে বা গ্রামীণ এলাকায় কীটনাশক পানে আত্মহত্যার ঘটনা বেশি।
উইন্টার ব্লু সিনড্রোম
শীত ও বর্ষাকালে মানুষের মধ্যে বিষণ্নতার প্রবণতা বাড়ে। একে বলে সিজনাল অ্যাফেক্ট ডিসঅর্ডার (এসএডি—স্যাড)। তবে মানুষের মধ্যে সাধারণ ধারণা উইন্টার ব্লু সিনড্রোমের প্রকোপের কারণে শীতকালেই বেশি আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে। কিন্তু পরিসংখ্যান বলছে, সারা বিশ্বেই বেশি আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে বসন্ত ও গ্রীষ্মকালে।
২০১৪ সালে আমেরিকান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন সোসাইটির সাইকিয়াট্রি সাময়িকীতে প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখানো হয়, রৌদ্রোজ্জ্বল আবহাওয়ার সঙ্গে আত্মহত্যার প্রবণতার সম্পর্ক রয়েছে। সেখানে গবেষকেরা দাবি করেন, ঋতু কোনো বিষয় নয়; বরং রৌদ্রোজ্জ্বল দিনের সঙ্গে আত্মহননের সম্পর্ক রয়েছে। বিশেষ করে যারা আত্মহত্যার কথা ভাবছেন, তাঁদের জন্য উজ্জ্বল দিন আরও উদ্দীপকের কাজ করে। দেখা গেছে, বেশির ভাগ আত্মহত্যার আগে টানা দুই সপ্তাহ রৌদ্রোজ্জ্বল দিন ছিল। তা ছাড়া টানা ১৫ দিন বা মাসব্যাপী রৌদ্রোজ্জ্বল দিনের চেয়ে কয়েক দিন রোদ ছিল—এ রকম আবহাওয়াতে আত্মহত্যার ঘটনা বেশি দেখা গেছে। অর্থাৎ, যারা আত্মহত্যার কথা ভাবছেন, তাঁদের জন্য উজ্জ্বল দিন আরও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে।
মনোবিজ্ঞানীরা এ বিষয়টির ব্যাখ্যা দিতে না পারলেও স্নায়ুবিজ্ঞানে একটি ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। রৌদ্রোজ্জ্বল দিনে মানুষের শরীরে সেরোটনিন হরমোনের পরিমাণ বেড়ে যায়। স্নায়ু সংকেত পরিবাহক এ উপাদান মানুষের মস্তিষ্কে আনন্দ এবং পাশাপাশি লাগামহীন আবেগ উৎপাদনে ভূমিকা রাখে। সুতরাং যারা আত্মহত্যার কথা ভাবছেন, তাঁদের হঠাৎ করে সেরোটনিন মাত্রা বেড়ে গেলে বেশি আবেগপ্রবণ হয়ে পড়তে পারেন এবং দ্রুত আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত কার্যকর করে ফেলতে পারেন। এ ক্ষেত্রে ‘অগ্নিতে ঘৃতাহুতি’ দিতে পারে একটি রৌদ্রোজ্জ্বল দিন।
বিপরীত পক্ষে, টানা রোদ হলে বা উজ্জ্বল দিন থাকলে একটি স্থিতিশীল মানসিক ভাব তৈরি হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। ফলে এ রকম আবহাওয়ায় আত্মহত্যার ঘটনা কম ঘটতে পারে। যদিও এটি নিয়ে এখনো ব্যাপকভিত্তিক কোনো গবেষণা হয়নি। উপরিউক্ত গবেষণাকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লেখ করেছেন ‘উইন্টার ব্লু’ বইয়ের লেখক ও মনোবিদ ড. নরমান রসেনথাল।
তবে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঋতুর বৈশিষ্ট্যে ব্যাপক পরিবর্তন ঘটছে। এ কারণে নির্দিষ্ট মাসে নিয়মিত উজ্জ্বল দিনের পরিমাণ নির্ধারণ করা কঠিন হয়ে গেছে। বাংলাদেশেও শীত ও বর্ষা ইদানীং অনেক দেরিতে আসছে এবং ঋতুগুলো আজ থেকে ৫০ বছর আগের মতো আচরণ করছে না।
এদিকে শীত ও বর্ষাকালে সিজনাল অ্যাফেক্ট ডিজঅর্ডারের (স্যাড) কারণে মানুষের মধ্যে বিষণ্নতার প্রবণতা বেশি দেখা গেলেও আত্মহত্যার প্রবণতা কম। অপরদিকে গ্রীষ্ম ও বসন্তে আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি থাকার একটি ব্যাখ্যা দিয়েছেন মনোবিদেরা। তাঁরা বলছেন, শীত ও বর্ষায় মানুষের কর্মতৎপরতা অনেক কমে যায়। পারস্পরিক যোগাযোগও বেশ হ্রাস পায়। কিন্তু গ্রীষ্ম ও বসন্তে পূর্ণোদ্যমে তৎপরতা শুরু হয়, মানুষে মানুষে যোগাযোগ ও লেনদেন বাড়ে। ফলে নানা বিষয় তখন মানুষের মানসিক চাপ সৃষ্টি করে। ভারতের কর্নাটক রাজ্যের এক গবেষণায় দেখা গেছে, ফেব্রুয়ারি-মে সময়ে ৪০ শতাংশ আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে। সবচেয়ে বেশি আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে জুন-জানুয়ারি (১০ শতাংশ)। ফলে সময় ভেদে আত্মহত্যা প্রবণতার এই হ্রাস-বৃদ্ধি ও সম্ভাব্য কারণের এ চিহ্নায়নকে একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। যদিও এটি এখনো অনুমান মাত্র।
আরেকটি গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব অঞ্চলের মানুষ বেশি বেশি সামুদ্রিক মাছ খায়, সেসব এলাকায় স্যাডের প্রভাব কম। এ কারণে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় নর্ডিক ও জাপানের তুলনায় স্যাডের প্রভাব বেশি। ২০০৭ সালে পরিচালিত এ গবেষণায় দেখা গেছে, নর্ডিক ও জাপানের মানুষ বছরে মাথাপিছু যথাক্রমে ৯০ কেজি ও ৬০ কেজি মাছ খায়। সেখানে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় মাত্র ২৪ কেজি। ফলে এ ক্ষেত্রে ভিটামিন ডি একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে বলে মনে করা হয়।
আত্মহত্যায় ঋতুভিত্তিক প্রবণতার সঙ্গে শারীর-রাসায়নিক-জৈব ফ্যাক্টর যেমন: দিনের দৈর্ঘ্য, তাপমাত্রা, আর্দ্রতা, দূষণ, জীবাণু অথবা ফুলের রেণুঘটিত বা অন্য কারণে সৃষ্ট অ্যালার্জিজনিত প্রদাহ ইত্যাদি বিষয় জড়িত আছে। উত্তর গোলার্ধে অবস্থিত (ইউরোপ ও এশিয়ার বিস্তীর্ণ অংশ, বাংলাদেশ ও ভারত, চীনসহ) দেশগুলোতে বসন্তকালে আত্মহত্যার হার সবচেয়ে বেশি। ১৯৭৯-২০১১ সালের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে এমন একটি পর্যবেক্ষণ সম্বলিত গবেষণা প্রতিবেদন ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব এনভায়রনমেন্টাল রিসার্চ অ্যান্ড পাবলিক হেলথ-এ প্রকাশিত হয়েছে। অঞ্চলভেদে বসন্তের শেষ নাগাদ থেকে গ্রীষ্মের শুরুতে এবং বর্ষাকালে আত্মহত্যার হার বেশি লক্ষ্য করা গেছে। জার্নাল অব অ্যাফেকটিভ ডিজঅর্ডারে প্রকাশিত আরেকটি গবেষণা প্রতিবেদনেও বসন্তে আত্মহত্যা প্রবণতা বেশি থাকার তথ্য দেওয়া হয়েছে। সেখানে ২০১৬ সালে প্রকাশিত ১৬টি দেশের ২৯টি গবেষণা প্রবন্ধের রেফারেন্স দিয়ে বলা হয়েছে, বসন্ত ও গ্রীষ্মে আত্মহত্যার হার সবচেয়ে বেশি থাকে।
তবে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ঋতুর চরিত্র বদলে যাওয়ার কারণে ঋতুভিত্তিক এ প্রবণতায় ব্যত্যয় ঘটছে। গত এক দশক ধরেই এ ব্যত্যয় লক্ষ্য করছেন গবেষকেরা।
আত্মহত্যা বেশি করে পুরুষেরা, ব্যতিক্রম বাংলাদেশ
বিশ্বের অধিকাংশ দেশেই পুরুষের আত্মহত্যার হার নারীদের চেয়ে বেশি। তবে বাংলাদেশে এ চিত্র সম্পূর্ণ উল্টো। এ দেশে নারীদের আত্মহত্যার হার পুরুষের প্রায় দ্বিগুণ (৭ ও ৪.৭)। অবশ্য এ তালিকায় বাংলাদেশের পাশে আরও কয়েকটি দেশ রয়েছে: লেসোথো, পাকিস্তান, চীন, মিয়ানমার, মরক্কো, গ্রেনাডা ও অ্যান্টিগুয়া অ্যান্ড বারবুডা। পার্শ্ববর্তী ভারতেও নারীদের চেয়ে পুরুষের আত্মহত্যার হার উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেশি। বাংলাদেশে নারীর আত্মহত্যার হার বেশি হওয়ার প্রধান কারণগুলোর মধ্যে যৌতুক, ধর্ষণ, নারীর প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি ইত্যাদি বিষয়কে উল্লেখ করা হয়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আত্মহত্যাকে অপরাধ হিসেবে বিবেচনা না করে সামাজিক ও মানসিক সংকট হিসেবে চিহ্নিত করতে হবে। এ অনুযায়ী সরকার ও সচেতন নাগরিকদের নানা পদক্ষেপ নিতে হবে। তাহলেই আত্মহত্যা প্রবণতা কমানো সম্ভব। ভারতেও যেখানে আত্মহত্যাকে আর ফৌজদারি অপরাধ গণ্য করাহয় না, সেখানে বাংলাদেশে এমন আইন এখনো রয়ে গেছে। কিন্তু বিপরীতে মানসিক সংকট নিয়ে মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোর কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
আত্মহত্যার খবর প্রকাশের ক্ষেত্রে গণমাধ্যমের দায়িত্বশীল ভূমিকা, তরুণদের জীবনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার সক্ষমতা তৈরির প্রশিক্ষণ এবং আত্মহত্যার উপকরণ প্রাপ্তি কঠিন করে তুলতে সরকারি পদক্ষেপ আত্মহত্যা কমানোতে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। বিশেষ করে কীটনাশকের বিপণন ও ব্যবহারবিষয়ক আইন কঠোর করে শ্রীলঙ্কা ও দক্ষিণ কোরিয়া দারুণ সফলতা পেয়েছে। ১৯৯৫ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে শ্রীলঙ্কা আত্মহত্যা ৭০ শতাংশ কমিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে।
সর্বোপরি আত্মহত্যাকে একটি মানসিক বিকার হিসেবেই চিহ্নিত করেন মনোবিদেরা। গবেষণায় দেখা গেছে, আত্মহত্যাকারীদের ৯০ শতাংশেরও বেশি মনোবিকারে ভুগছিলেন। এর মধ্যে রয়েছে, মোড ডিজঅর্ডার, মাদকাসক্তি ও সিজোফ্রেনিয়া সম্পর্কিত ডিজঅর্ডার অন্যতম। তবে এসব বিকার সৃষ্টি ও এর প্রাবল্য বৃদ্ধিতে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন, বিষণ্নতা, হতাশা, ক্ষুধা, অনিশ্চয়তা ইত্যাদি বিষয় ‘রিস্ক ফ্যাক্টর’ হিসেবে কাজ করে।
আত্মহত্যার বিষয়টিকে ভারত কিন্তু গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে। আত্মহত্যাকে অপরাধ হিসেবে গণ্য না করতে ২০১৭ সালে আইন সংশোধন করেছে দেশটি। বাংলাদেশে আত্মহত্যায় সহায়তা বা প্ররোচনাদানকারীকে দণ্ডবিধির ৩০৬ ধারা অনুযায়ী ১০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়ার বিধান রয়েছে। এ ছাড়া আত্মহত্যার চেষ্টাকারীর শাস্তি দণ্ডবিধির ৩০৯ ধারায় এক বছর কারাদণ্ডের বিধান আছে। যদিও এমন আইন আত্মহত্যা প্রতিরোধে সহায়ক হয়—এমন কোনো প্রমাণ নেই।
আরও পড়ুন:
‘নারীর হৃদয়-প্রেম-শিশু-গৃহ-নয় সবখানি;/ অর্থ নয়, কীর্তি নয়, স্বচ্ছলতা নয়-/ আরও এক বিপন্ন বিস্ময়/ আমাদের অন্তর্গত রক্তের ভিতরে/ খেলা করে;/ আমাদের ক্লান্ত করে;/ ক্লান্ত-ক্লান্ত করে:’
কখন যে কোথা থেকে মানুষের মনে ভর করে আকাশ সমান ক্লান্তি, বিষণ্নতার কালো মেঘ আচ্ছন্ন করে ফেলে তাকে। জীবন হয়ে ওঠে এক অসহ্য যন্ত্রণার নাম। রাজ্যের নৈরাশ্য গ্রাস করে, ঘুম কেড়ে নেয় তার। কোনো এক ‘ফাল্গুনের রাতের আঁধারে, যখন ডুবে যায় পঞ্চমীর চাঁদ, মরণের সাধ জাগে দুর্নিবার।’ প্রেম, স্নেহ-পৃথিবীর তাবৎ সৌন্দর্য, ঘৃণা, পিছুটান তুচ্ছ মনে হয়। অর্থশূন্য মানবজীবনের অবসানই একমাত্র কাঙ্ক্ষিত হয়ে ওঠে তখন।
আত্মহত্যার মনো-সামাজিক উদ্দীপক এমনই এক রহস্য। জীবনানন্দের মৃত্যুও বুঝি সে কারণেই রহস্যই থেকে গেল!
কী আশ্চর্য! ফাল্গুনের রাতই কেন বেছে নিলেন তিনি? বাংলাদেশে আত্মহত্যায় মৌসুমি প্রভাব আছে কি-না, সে ব্যাপারে কোনো গবেষণা না হলেও তথ্য-উপাত্ত বলছে, নির্দিষ্ট মাসে আত্মহত্যার হার বেশি থাকে। অন্তত পাঁচ বছরে আত্মহত্যার পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে এমন চিত্রই পাওয়া গেছে।
দেখা গেছে, মার্চ ও আগস্টে আত্মহত্যার হার বেশি। তবে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঋতুর বৈশিষ্ট্য পরিবর্তনের কারণে আত্মহত্যার প্রাপ্ত মাসভিত্তিক তথ্যের ভিত্তিতে বলা যায়, বসন্ত ও বর্ষায় বাংলাদেশে আত্মহত্যার হার বেশি থাকে। অন্যভাবে বললে, বসন্তের শেষ ও গ্রীষ্মের শুরুর দিকে আত্মহত্যার পরিমাণ বেশি। অবশ্য বিশ্বের অন্যান্য দেশেও প্রায় একই প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়।
দেশের আত্মহত্যাপ্রবণ অন্যতম দুটি জেলা ঝিনাইদহ ও ঠাকুরগাঁওয়ে পুলিশের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, আত্মহত্যার মাসভিত্তিক প্রবণতায় খুব কমই হেরফের হয়। এর মধ্যে ঝিনাইদহ জেলায় আত্মহত্যার হার সবচেয়ে বেশি।
স্বাধীন গবেষক এস এম ইয়াসির আরাফাত দীর্ঘদিন ধরে আত্মহত্যা নিয়ে গবেষণা করছেন। আত্মহত্যার সিজনাল প্যাটার্ন বা ঋতুভিত্তিক প্রবণতা বুঝতে তিনি নমুনা হিসেবে ঠাকুরগাঁও জেলাকে বেছে নেন। ওই জেলার ২০১৪ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত পুলিশ ডেটা বিশ্লেষণ করে দেখেছেন, এ জেলায় মার্চ ও আগস্টে আত্মহত্যার সংখ্যা সবচেয়ে বেশি থাকে। ২০১৯ সালের আগস্ট পর্যন্ত উপাত্ত বিশ্লেষণ করে এ গবেষণার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে। ঝিনাইদহ জেলার ২০১৮ সাল ও ২০১৯ সালের আগস্ট পর্যন্ত প্রাপ্ত পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে মার্চ-এপ্রিল-মে এবং জুন-জুলাই-আগস্ট এই সময়কালে মোট আত্মহত্যার সংখ্যা সবচেয়ে বেশি—এ পর্যবেক্ষণের পক্ষে সমর্থন পাওয়া গেছে।
এ ব্যাপারে এস এম ইয়াসির আরাফাত তাঁর পর্যবেক্ষণে বলেন, বিশ্বের অধিকাংশ দেশের মতো বাংলাদেশেও বসন্ত ও বর্ষায় (স্প্রিং ও ফল) আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি। ঋতুভিত্তিক এ প্যাটার্ন বুঝতে আমাদের অধিকতর ও বড় পরিসরে গবেষণার প্রয়োজন আছে। আর আত্মহত্যার প্রতিরোধ করতে কৌশল নির্ধারণে এটি বোঝা জরুরি।
২০১৯ সালের ১০ সেপ্টেম্বর বিশ্ব আত্মহত্যা প্রতিরোধ দিবসের প্রতিবেদনে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) বলেছে, ২০১৭ সালে প্রতি ৪০ সেকেন্ডে একজন করে মানুষ আত্মহত্যা করেছে। এক বছরে অন্তত ৩৮টি দেশ আত্মহত্যা প্রতিরোধে বেশ অগ্রগতি করলেও ২০১৮ সালেও প্রতি ৪০ সেকেন্ডে একজন করে মানুষ আত্মহত্যা করেছে। ফলে এ ব্যাপারে অগ্রগতি খুব কম। এ কারণে ওই বছরের ১০ অক্টোবর বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবসের প্রতিপাদ্যও ছিল আত্মহত্যা প্রতিরোধ।
গত বছর প্রতি লাখে আত্মহত্যার হার ছিল ১০ দশমিক ৫। তবে এ হার দেশভেদে ৫ থেকে ৩০ পর্যন্ত। আত্মহত্যায় মোট মৃত্যুর হিসাবে ৭৯ শতাংশ ঘটেছে নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশে। উচ্চ আয়ের দেশে আত্মহত্যা হার বরাবরের মতো সবচেয়ে বেশি; দেখা গেছে, লাখে ১১ দশমিক ৫। উচ্চ আয়ের দেশে পুরুষদের মধ্যে আত্মহত্যার হার নারীর প্রায় তিনগুণ। তবে নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশে দুই লিঙ্গের মধ্যে পার্থক্য খুব কম দেখা গেছে। এমনকি বাংলাদেশসহ কয়েকটি দেশে নারীদের আত্মহত্যার হার পুরুষের চেয়ে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেশি লক্ষ্য করা গেছে।
২০১৬ সালের তথ্যের ভিত্তিতে ডব্লিউএইচওর প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশে আত্মহত্যার হার প্রতি লাখে ৫ দশমিক ৯। এ সময় সারা দেশে সাড়ে ৯ হাজারেরও বেশি মানুষ আত্মহত্যা করেছে।
কিশোর ও তরুণদের মধ্যেই আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি। ১৫-২৯ বছর বয়সীদের মৃত্যুর দ্বিতীয় প্রধান কারণ আত্মহত্যা। প্রথমেই রয়েছে সড়ক দুর্ঘটনা। নারীদের ক্ষেত্রে মাতৃমৃত্যুর পরে মৃত্যুর প্রধান কারণ আত্মহত্যা। আর ছেলেদের অপমৃত্যুর প্রথম কারণ সড়ক দুর্ঘটনা, দ্বিতীয় সহিংসতা এবং তৃতীয় আত্মহত্যা।
আত্মহত্যার প্রধান কৌশল গলায় ফাঁস দেওয়া, এর পর রয়েছে কীটনাশক পান ও আগ্নেয়াস্ত্র। বাংলাদেশের সাম্প্রতিক তথ্য-উপাত্ত বলছে, আত্মহত্যার কৌশলে তেমন কোনো পরিবর্তন হয়নি। যদিও কৃষিপ্রধান দেশগুলোতে বা গ্রামীণ এলাকায় কীটনাশক পানে আত্মহত্যার ঘটনা বেশি।
উইন্টার ব্লু সিনড্রোম
শীত ও বর্ষাকালে মানুষের মধ্যে বিষণ্নতার প্রবণতা বাড়ে। একে বলে সিজনাল অ্যাফেক্ট ডিসঅর্ডার (এসএডি—স্যাড)। তবে মানুষের মধ্যে সাধারণ ধারণা উইন্টার ব্লু সিনড্রোমের প্রকোপের কারণে শীতকালেই বেশি আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে। কিন্তু পরিসংখ্যান বলছে, সারা বিশ্বেই বেশি আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে বসন্ত ও গ্রীষ্মকালে।
২০১৪ সালে আমেরিকান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন সোসাইটির সাইকিয়াট্রি সাময়িকীতে প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখানো হয়, রৌদ্রোজ্জ্বল আবহাওয়ার সঙ্গে আত্মহত্যার প্রবণতার সম্পর্ক রয়েছে। সেখানে গবেষকেরা দাবি করেন, ঋতু কোনো বিষয় নয়; বরং রৌদ্রোজ্জ্বল দিনের সঙ্গে আত্মহননের সম্পর্ক রয়েছে। বিশেষ করে যারা আত্মহত্যার কথা ভাবছেন, তাঁদের জন্য উজ্জ্বল দিন আরও উদ্দীপকের কাজ করে। দেখা গেছে, বেশির ভাগ আত্মহত্যার আগে টানা দুই সপ্তাহ রৌদ্রোজ্জ্বল দিন ছিল। তা ছাড়া টানা ১৫ দিন বা মাসব্যাপী রৌদ্রোজ্জ্বল দিনের চেয়ে কয়েক দিন রোদ ছিল—এ রকম আবহাওয়াতে আত্মহত্যার ঘটনা বেশি দেখা গেছে। অর্থাৎ, যারা আত্মহত্যার কথা ভাবছেন, তাঁদের জন্য উজ্জ্বল দিন আরও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে।
মনোবিজ্ঞানীরা এ বিষয়টির ব্যাখ্যা দিতে না পারলেও স্নায়ুবিজ্ঞানে একটি ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। রৌদ্রোজ্জ্বল দিনে মানুষের শরীরে সেরোটনিন হরমোনের পরিমাণ বেড়ে যায়। স্নায়ু সংকেত পরিবাহক এ উপাদান মানুষের মস্তিষ্কে আনন্দ এবং পাশাপাশি লাগামহীন আবেগ উৎপাদনে ভূমিকা রাখে। সুতরাং যারা আত্মহত্যার কথা ভাবছেন, তাঁদের হঠাৎ করে সেরোটনিন মাত্রা বেড়ে গেলে বেশি আবেগপ্রবণ হয়ে পড়তে পারেন এবং দ্রুত আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত কার্যকর করে ফেলতে পারেন। এ ক্ষেত্রে ‘অগ্নিতে ঘৃতাহুতি’ দিতে পারে একটি রৌদ্রোজ্জ্বল দিন।
বিপরীত পক্ষে, টানা রোদ হলে বা উজ্জ্বল দিন থাকলে একটি স্থিতিশীল মানসিক ভাব তৈরি হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। ফলে এ রকম আবহাওয়ায় আত্মহত্যার ঘটনা কম ঘটতে পারে। যদিও এটি নিয়ে এখনো ব্যাপকভিত্তিক কোনো গবেষণা হয়নি। উপরিউক্ত গবেষণাকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লেখ করেছেন ‘উইন্টার ব্লু’ বইয়ের লেখক ও মনোবিদ ড. নরমান রসেনথাল।
তবে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঋতুর বৈশিষ্ট্যে ব্যাপক পরিবর্তন ঘটছে। এ কারণে নির্দিষ্ট মাসে নিয়মিত উজ্জ্বল দিনের পরিমাণ নির্ধারণ করা কঠিন হয়ে গেছে। বাংলাদেশেও শীত ও বর্ষা ইদানীং অনেক দেরিতে আসছে এবং ঋতুগুলো আজ থেকে ৫০ বছর আগের মতো আচরণ করছে না।
এদিকে শীত ও বর্ষাকালে সিজনাল অ্যাফেক্ট ডিজঅর্ডারের (স্যাড) কারণে মানুষের মধ্যে বিষণ্নতার প্রবণতা বেশি দেখা গেলেও আত্মহত্যার প্রবণতা কম। অপরদিকে গ্রীষ্ম ও বসন্তে আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি থাকার একটি ব্যাখ্যা দিয়েছেন মনোবিদেরা। তাঁরা বলছেন, শীত ও বর্ষায় মানুষের কর্মতৎপরতা অনেক কমে যায়। পারস্পরিক যোগাযোগও বেশ হ্রাস পায়। কিন্তু গ্রীষ্ম ও বসন্তে পূর্ণোদ্যমে তৎপরতা শুরু হয়, মানুষে মানুষে যোগাযোগ ও লেনদেন বাড়ে। ফলে নানা বিষয় তখন মানুষের মানসিক চাপ সৃষ্টি করে। ভারতের কর্নাটক রাজ্যের এক গবেষণায় দেখা গেছে, ফেব্রুয়ারি-মে সময়ে ৪০ শতাংশ আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে। সবচেয়ে বেশি আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে জুন-জানুয়ারি (১০ শতাংশ)। ফলে সময় ভেদে আত্মহত্যা প্রবণতার এই হ্রাস-বৃদ্ধি ও সম্ভাব্য কারণের এ চিহ্নায়নকে একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। যদিও এটি এখনো অনুমান মাত্র।
আরেকটি গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব অঞ্চলের মানুষ বেশি বেশি সামুদ্রিক মাছ খায়, সেসব এলাকায় স্যাডের প্রভাব কম। এ কারণে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় নর্ডিক ও জাপানের তুলনায় স্যাডের প্রভাব বেশি। ২০০৭ সালে পরিচালিত এ গবেষণায় দেখা গেছে, নর্ডিক ও জাপানের মানুষ বছরে মাথাপিছু যথাক্রমে ৯০ কেজি ও ৬০ কেজি মাছ খায়। সেখানে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় মাত্র ২৪ কেজি। ফলে এ ক্ষেত্রে ভিটামিন ডি একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে বলে মনে করা হয়।
আত্মহত্যায় ঋতুভিত্তিক প্রবণতার সঙ্গে শারীর-রাসায়নিক-জৈব ফ্যাক্টর যেমন: দিনের দৈর্ঘ্য, তাপমাত্রা, আর্দ্রতা, দূষণ, জীবাণু অথবা ফুলের রেণুঘটিত বা অন্য কারণে সৃষ্ট অ্যালার্জিজনিত প্রদাহ ইত্যাদি বিষয় জড়িত আছে। উত্তর গোলার্ধে অবস্থিত (ইউরোপ ও এশিয়ার বিস্তীর্ণ অংশ, বাংলাদেশ ও ভারত, চীনসহ) দেশগুলোতে বসন্তকালে আত্মহত্যার হার সবচেয়ে বেশি। ১৯৭৯-২০১১ সালের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে এমন একটি পর্যবেক্ষণ সম্বলিত গবেষণা প্রতিবেদন ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব এনভায়রনমেন্টাল রিসার্চ অ্যান্ড পাবলিক হেলথ-এ প্রকাশিত হয়েছে। অঞ্চলভেদে বসন্তের শেষ নাগাদ থেকে গ্রীষ্মের শুরুতে এবং বর্ষাকালে আত্মহত্যার হার বেশি লক্ষ্য করা গেছে। জার্নাল অব অ্যাফেকটিভ ডিজঅর্ডারে প্রকাশিত আরেকটি গবেষণা প্রতিবেদনেও বসন্তে আত্মহত্যা প্রবণতা বেশি থাকার তথ্য দেওয়া হয়েছে। সেখানে ২০১৬ সালে প্রকাশিত ১৬টি দেশের ২৯টি গবেষণা প্রবন্ধের রেফারেন্স দিয়ে বলা হয়েছে, বসন্ত ও গ্রীষ্মে আত্মহত্যার হার সবচেয়ে বেশি থাকে।
তবে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ঋতুর চরিত্র বদলে যাওয়ার কারণে ঋতুভিত্তিক এ প্রবণতায় ব্যত্যয় ঘটছে। গত এক দশক ধরেই এ ব্যত্যয় লক্ষ্য করছেন গবেষকেরা।
আত্মহত্যা বেশি করে পুরুষেরা, ব্যতিক্রম বাংলাদেশ
বিশ্বের অধিকাংশ দেশেই পুরুষের আত্মহত্যার হার নারীদের চেয়ে বেশি। তবে বাংলাদেশে এ চিত্র সম্পূর্ণ উল্টো। এ দেশে নারীদের আত্মহত্যার হার পুরুষের প্রায় দ্বিগুণ (৭ ও ৪.৭)। অবশ্য এ তালিকায় বাংলাদেশের পাশে আরও কয়েকটি দেশ রয়েছে: লেসোথো, পাকিস্তান, চীন, মিয়ানমার, মরক্কো, গ্রেনাডা ও অ্যান্টিগুয়া অ্যান্ড বারবুডা। পার্শ্ববর্তী ভারতেও নারীদের চেয়ে পুরুষের আত্মহত্যার হার উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেশি। বাংলাদেশে নারীর আত্মহত্যার হার বেশি হওয়ার প্রধান কারণগুলোর মধ্যে যৌতুক, ধর্ষণ, নারীর প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি ইত্যাদি বিষয়কে উল্লেখ করা হয়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আত্মহত্যাকে অপরাধ হিসেবে বিবেচনা না করে সামাজিক ও মানসিক সংকট হিসেবে চিহ্নিত করতে হবে। এ অনুযায়ী সরকার ও সচেতন নাগরিকদের নানা পদক্ষেপ নিতে হবে। তাহলেই আত্মহত্যা প্রবণতা কমানো সম্ভব। ভারতেও যেখানে আত্মহত্যাকে আর ফৌজদারি অপরাধ গণ্য করাহয় না, সেখানে বাংলাদেশে এমন আইন এখনো রয়ে গেছে। কিন্তু বিপরীতে মানসিক সংকট নিয়ে মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোর কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
আত্মহত্যার খবর প্রকাশের ক্ষেত্রে গণমাধ্যমের দায়িত্বশীল ভূমিকা, তরুণদের জীবনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার সক্ষমতা তৈরির প্রশিক্ষণ এবং আত্মহত্যার উপকরণ প্রাপ্তি কঠিন করে তুলতে সরকারি পদক্ষেপ আত্মহত্যা কমানোতে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। বিশেষ করে কীটনাশকের বিপণন ও ব্যবহারবিষয়ক আইন কঠোর করে শ্রীলঙ্কা ও দক্ষিণ কোরিয়া দারুণ সফলতা পেয়েছে। ১৯৯৫ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে শ্রীলঙ্কা আত্মহত্যা ৭০ শতাংশ কমিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে।
সর্বোপরি আত্মহত্যাকে একটি মানসিক বিকার হিসেবেই চিহ্নিত করেন মনোবিদেরা। গবেষণায় দেখা গেছে, আত্মহত্যাকারীদের ৯০ শতাংশেরও বেশি মনোবিকারে ভুগছিলেন। এর মধ্যে রয়েছে, মোড ডিজঅর্ডার, মাদকাসক্তি ও সিজোফ্রেনিয়া সম্পর্কিত ডিজঅর্ডার অন্যতম। তবে এসব বিকার সৃষ্টি ও এর প্রাবল্য বৃদ্ধিতে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন, বিষণ্নতা, হতাশা, ক্ষুধা, অনিশ্চয়তা ইত্যাদি বিষয় ‘রিস্ক ফ্যাক্টর’ হিসেবে কাজ করে।
আত্মহত্যার বিষয়টিকে ভারত কিন্তু গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে। আত্মহত্যাকে অপরাধ হিসেবে গণ্য না করতে ২০১৭ সালে আইন সংশোধন করেছে দেশটি। বাংলাদেশে আত্মহত্যায় সহায়তা বা প্ররোচনাদানকারীকে দণ্ডবিধির ৩০৬ ধারা অনুযায়ী ১০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়ার বিধান রয়েছে। এ ছাড়া আত্মহত্যার চেষ্টাকারীর শাস্তি দণ্ডবিধির ৩০৯ ধারায় এক বছর কারাদণ্ডের বিধান আছে। যদিও এমন আইন আত্মহত্যা প্রতিরোধে সহায়ক হয়—এমন কোনো প্রমাণ নেই।
আরও পড়ুন:
জাহাঙ্গীর আলম
‘নারীর হৃদয়-প্রেম-শিশু-গৃহ-নয় সবখানি;/ অর্থ নয়, কীর্তি নয়, স্বচ্ছলতা নয়-/ আরও এক বিপন্ন বিস্ময়/ আমাদের অন্তর্গত রক্তের ভিতরে/ খেলা করে;/ আমাদের ক্লান্ত করে;/ ক্লান্ত-ক্লান্ত করে:’
কখন যে কোথা থেকে মানুষের মনে ভর করে আকাশ সমান ক্লান্তি, বিষণ্নতার কালো মেঘ আচ্ছন্ন করে ফেলে তাকে। জীবন হয়ে ওঠে এক অসহ্য যন্ত্রণার নাম। রাজ্যের নৈরাশ্য গ্রাস করে, ঘুম কেড়ে নেয় তার। কোনো এক ‘ফাল্গুনের রাতের আঁধারে, যখন ডুবে যায় পঞ্চমীর চাঁদ, মরণের সাধ জাগে দুর্নিবার।’ প্রেম, স্নেহ-পৃথিবীর তাবৎ সৌন্দর্য, ঘৃণা, পিছুটান তুচ্ছ মনে হয়। অর্থশূন্য মানবজীবনের অবসানই একমাত্র কাঙ্ক্ষিত হয়ে ওঠে তখন।
আত্মহত্যার মনো-সামাজিক উদ্দীপক এমনই এক রহস্য। জীবনানন্দের মৃত্যুও বুঝি সে কারণেই রহস্যই থেকে গেল!
কী আশ্চর্য! ফাল্গুনের রাতই কেন বেছে নিলেন তিনি? বাংলাদেশে আত্মহত্যায় মৌসুমি প্রভাব আছে কি-না, সে ব্যাপারে কোনো গবেষণা না হলেও তথ্য-উপাত্ত বলছে, নির্দিষ্ট মাসে আত্মহত্যার হার বেশি থাকে। অন্তত পাঁচ বছরে আত্মহত্যার পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে এমন চিত্রই পাওয়া গেছে।
দেখা গেছে, মার্চ ও আগস্টে আত্মহত্যার হার বেশি। তবে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঋতুর বৈশিষ্ট্য পরিবর্তনের কারণে আত্মহত্যার প্রাপ্ত মাসভিত্তিক তথ্যের ভিত্তিতে বলা যায়, বসন্ত ও বর্ষায় বাংলাদেশে আত্মহত্যার হার বেশি থাকে। অন্যভাবে বললে, বসন্তের শেষ ও গ্রীষ্মের শুরুর দিকে আত্মহত্যার পরিমাণ বেশি। অবশ্য বিশ্বের অন্যান্য দেশেও প্রায় একই প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়।
দেশের আত্মহত্যাপ্রবণ অন্যতম দুটি জেলা ঝিনাইদহ ও ঠাকুরগাঁওয়ে পুলিশের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, আত্মহত্যার মাসভিত্তিক প্রবণতায় খুব কমই হেরফের হয়। এর মধ্যে ঝিনাইদহ জেলায় আত্মহত্যার হার সবচেয়ে বেশি।
স্বাধীন গবেষক এস এম ইয়াসির আরাফাত দীর্ঘদিন ধরে আত্মহত্যা নিয়ে গবেষণা করছেন। আত্মহত্যার সিজনাল প্যাটার্ন বা ঋতুভিত্তিক প্রবণতা বুঝতে তিনি নমুনা হিসেবে ঠাকুরগাঁও জেলাকে বেছে নেন। ওই জেলার ২০১৪ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত পুলিশ ডেটা বিশ্লেষণ করে দেখেছেন, এ জেলায় মার্চ ও আগস্টে আত্মহত্যার সংখ্যা সবচেয়ে বেশি থাকে। ২০১৯ সালের আগস্ট পর্যন্ত উপাত্ত বিশ্লেষণ করে এ গবেষণার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে। ঝিনাইদহ জেলার ২০১৮ সাল ও ২০১৯ সালের আগস্ট পর্যন্ত প্রাপ্ত পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে মার্চ-এপ্রিল-মে এবং জুন-জুলাই-আগস্ট এই সময়কালে মোট আত্মহত্যার সংখ্যা সবচেয়ে বেশি—এ পর্যবেক্ষণের পক্ষে সমর্থন পাওয়া গেছে।
এ ব্যাপারে এস এম ইয়াসির আরাফাত তাঁর পর্যবেক্ষণে বলেন, বিশ্বের অধিকাংশ দেশের মতো বাংলাদেশেও বসন্ত ও বর্ষায় (স্প্রিং ও ফল) আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি। ঋতুভিত্তিক এ প্যাটার্ন বুঝতে আমাদের অধিকতর ও বড় পরিসরে গবেষণার প্রয়োজন আছে। আর আত্মহত্যার প্রতিরোধ করতে কৌশল নির্ধারণে এটি বোঝা জরুরি।
২০১৯ সালের ১০ সেপ্টেম্বর বিশ্ব আত্মহত্যা প্রতিরোধ দিবসের প্রতিবেদনে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) বলেছে, ২০১৭ সালে প্রতি ৪০ সেকেন্ডে একজন করে মানুষ আত্মহত্যা করেছে। এক বছরে অন্তত ৩৮টি দেশ আত্মহত্যা প্রতিরোধে বেশ অগ্রগতি করলেও ২০১৮ সালেও প্রতি ৪০ সেকেন্ডে একজন করে মানুষ আত্মহত্যা করেছে। ফলে এ ব্যাপারে অগ্রগতি খুব কম। এ কারণে ওই বছরের ১০ অক্টোবর বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবসের প্রতিপাদ্যও ছিল আত্মহত্যা প্রতিরোধ।
গত বছর প্রতি লাখে আত্মহত্যার হার ছিল ১০ দশমিক ৫। তবে এ হার দেশভেদে ৫ থেকে ৩০ পর্যন্ত। আত্মহত্যায় মোট মৃত্যুর হিসাবে ৭৯ শতাংশ ঘটেছে নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশে। উচ্চ আয়ের দেশে আত্মহত্যা হার বরাবরের মতো সবচেয়ে বেশি; দেখা গেছে, লাখে ১১ দশমিক ৫। উচ্চ আয়ের দেশে পুরুষদের মধ্যে আত্মহত্যার হার নারীর প্রায় তিনগুণ। তবে নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশে দুই লিঙ্গের মধ্যে পার্থক্য খুব কম দেখা গেছে। এমনকি বাংলাদেশসহ কয়েকটি দেশে নারীদের আত্মহত্যার হার পুরুষের চেয়ে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেশি লক্ষ্য করা গেছে।
২০১৬ সালের তথ্যের ভিত্তিতে ডব্লিউএইচওর প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশে আত্মহত্যার হার প্রতি লাখে ৫ দশমিক ৯। এ সময় সারা দেশে সাড়ে ৯ হাজারেরও বেশি মানুষ আত্মহত্যা করেছে।
কিশোর ও তরুণদের মধ্যেই আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি। ১৫-২৯ বছর বয়সীদের মৃত্যুর দ্বিতীয় প্রধান কারণ আত্মহত্যা। প্রথমেই রয়েছে সড়ক দুর্ঘটনা। নারীদের ক্ষেত্রে মাতৃমৃত্যুর পরে মৃত্যুর প্রধান কারণ আত্মহত্যা। আর ছেলেদের অপমৃত্যুর প্রথম কারণ সড়ক দুর্ঘটনা, দ্বিতীয় সহিংসতা এবং তৃতীয় আত্মহত্যা।
আত্মহত্যার প্রধান কৌশল গলায় ফাঁস দেওয়া, এর পর রয়েছে কীটনাশক পান ও আগ্নেয়াস্ত্র। বাংলাদেশের সাম্প্রতিক তথ্য-উপাত্ত বলছে, আত্মহত্যার কৌশলে তেমন কোনো পরিবর্তন হয়নি। যদিও কৃষিপ্রধান দেশগুলোতে বা গ্রামীণ এলাকায় কীটনাশক পানে আত্মহত্যার ঘটনা বেশি।
উইন্টার ব্লু সিনড্রোম
শীত ও বর্ষাকালে মানুষের মধ্যে বিষণ্নতার প্রবণতা বাড়ে। একে বলে সিজনাল অ্যাফেক্ট ডিসঅর্ডার (এসএডি—স্যাড)। তবে মানুষের মধ্যে সাধারণ ধারণা উইন্টার ব্লু সিনড্রোমের প্রকোপের কারণে শীতকালেই বেশি আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে। কিন্তু পরিসংখ্যান বলছে, সারা বিশ্বেই বেশি আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে বসন্ত ও গ্রীষ্মকালে।
২০১৪ সালে আমেরিকান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন সোসাইটির সাইকিয়াট্রি সাময়িকীতে প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখানো হয়, রৌদ্রোজ্জ্বল আবহাওয়ার সঙ্গে আত্মহত্যার প্রবণতার সম্পর্ক রয়েছে। সেখানে গবেষকেরা দাবি করেন, ঋতু কোনো বিষয় নয়; বরং রৌদ্রোজ্জ্বল দিনের সঙ্গে আত্মহননের সম্পর্ক রয়েছে। বিশেষ করে যারা আত্মহত্যার কথা ভাবছেন, তাঁদের জন্য উজ্জ্বল দিন আরও উদ্দীপকের কাজ করে। দেখা গেছে, বেশির ভাগ আত্মহত্যার আগে টানা দুই সপ্তাহ রৌদ্রোজ্জ্বল দিন ছিল। তা ছাড়া টানা ১৫ দিন বা মাসব্যাপী রৌদ্রোজ্জ্বল দিনের চেয়ে কয়েক দিন রোদ ছিল—এ রকম আবহাওয়াতে আত্মহত্যার ঘটনা বেশি দেখা গেছে। অর্থাৎ, যারা আত্মহত্যার কথা ভাবছেন, তাঁদের জন্য উজ্জ্বল দিন আরও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে।
মনোবিজ্ঞানীরা এ বিষয়টির ব্যাখ্যা দিতে না পারলেও স্নায়ুবিজ্ঞানে একটি ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। রৌদ্রোজ্জ্বল দিনে মানুষের শরীরে সেরোটনিন হরমোনের পরিমাণ বেড়ে যায়। স্নায়ু সংকেত পরিবাহক এ উপাদান মানুষের মস্তিষ্কে আনন্দ এবং পাশাপাশি লাগামহীন আবেগ উৎপাদনে ভূমিকা রাখে। সুতরাং যারা আত্মহত্যার কথা ভাবছেন, তাঁদের হঠাৎ করে সেরোটনিন মাত্রা বেড়ে গেলে বেশি আবেগপ্রবণ হয়ে পড়তে পারেন এবং দ্রুত আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত কার্যকর করে ফেলতে পারেন। এ ক্ষেত্রে ‘অগ্নিতে ঘৃতাহুতি’ দিতে পারে একটি রৌদ্রোজ্জ্বল দিন।
বিপরীত পক্ষে, টানা রোদ হলে বা উজ্জ্বল দিন থাকলে একটি স্থিতিশীল মানসিক ভাব তৈরি হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। ফলে এ রকম আবহাওয়ায় আত্মহত্যার ঘটনা কম ঘটতে পারে। যদিও এটি নিয়ে এখনো ব্যাপকভিত্তিক কোনো গবেষণা হয়নি। উপরিউক্ত গবেষণাকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লেখ করেছেন ‘উইন্টার ব্লু’ বইয়ের লেখক ও মনোবিদ ড. নরমান রসেনথাল।
তবে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঋতুর বৈশিষ্ট্যে ব্যাপক পরিবর্তন ঘটছে। এ কারণে নির্দিষ্ট মাসে নিয়মিত উজ্জ্বল দিনের পরিমাণ নির্ধারণ করা কঠিন হয়ে গেছে। বাংলাদেশেও শীত ও বর্ষা ইদানীং অনেক দেরিতে আসছে এবং ঋতুগুলো আজ থেকে ৫০ বছর আগের মতো আচরণ করছে না।
এদিকে শীত ও বর্ষাকালে সিজনাল অ্যাফেক্ট ডিজঅর্ডারের (স্যাড) কারণে মানুষের মধ্যে বিষণ্নতার প্রবণতা বেশি দেখা গেলেও আত্মহত্যার প্রবণতা কম। অপরদিকে গ্রীষ্ম ও বসন্তে আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি থাকার একটি ব্যাখ্যা দিয়েছেন মনোবিদেরা। তাঁরা বলছেন, শীত ও বর্ষায় মানুষের কর্মতৎপরতা অনেক কমে যায়। পারস্পরিক যোগাযোগও বেশ হ্রাস পায়। কিন্তু গ্রীষ্ম ও বসন্তে পূর্ণোদ্যমে তৎপরতা শুরু হয়, মানুষে মানুষে যোগাযোগ ও লেনদেন বাড়ে। ফলে নানা বিষয় তখন মানুষের মানসিক চাপ সৃষ্টি করে। ভারতের কর্নাটক রাজ্যের এক গবেষণায় দেখা গেছে, ফেব্রুয়ারি-মে সময়ে ৪০ শতাংশ আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে। সবচেয়ে বেশি আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে জুন-জানুয়ারি (১০ শতাংশ)। ফলে সময় ভেদে আত্মহত্যা প্রবণতার এই হ্রাস-বৃদ্ধি ও সম্ভাব্য কারণের এ চিহ্নায়নকে একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। যদিও এটি এখনো অনুমান মাত্র।
আরেকটি গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব অঞ্চলের মানুষ বেশি বেশি সামুদ্রিক মাছ খায়, সেসব এলাকায় স্যাডের প্রভাব কম। এ কারণে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় নর্ডিক ও জাপানের তুলনায় স্যাডের প্রভাব বেশি। ২০০৭ সালে পরিচালিত এ গবেষণায় দেখা গেছে, নর্ডিক ও জাপানের মানুষ বছরে মাথাপিছু যথাক্রমে ৯০ কেজি ও ৬০ কেজি মাছ খায়। সেখানে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় মাত্র ২৪ কেজি। ফলে এ ক্ষেত্রে ভিটামিন ডি একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে বলে মনে করা হয়।
আত্মহত্যায় ঋতুভিত্তিক প্রবণতার সঙ্গে শারীর-রাসায়নিক-জৈব ফ্যাক্টর যেমন: দিনের দৈর্ঘ্য, তাপমাত্রা, আর্দ্রতা, দূষণ, জীবাণু অথবা ফুলের রেণুঘটিত বা অন্য কারণে সৃষ্ট অ্যালার্জিজনিত প্রদাহ ইত্যাদি বিষয় জড়িত আছে। উত্তর গোলার্ধে অবস্থিত (ইউরোপ ও এশিয়ার বিস্তীর্ণ অংশ, বাংলাদেশ ও ভারত, চীনসহ) দেশগুলোতে বসন্তকালে আত্মহত্যার হার সবচেয়ে বেশি। ১৯৭৯-২০১১ সালের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে এমন একটি পর্যবেক্ষণ সম্বলিত গবেষণা প্রতিবেদন ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব এনভায়রনমেন্টাল রিসার্চ অ্যান্ড পাবলিক হেলথ-এ প্রকাশিত হয়েছে। অঞ্চলভেদে বসন্তের শেষ নাগাদ থেকে গ্রীষ্মের শুরুতে এবং বর্ষাকালে আত্মহত্যার হার বেশি লক্ষ্য করা গেছে। জার্নাল অব অ্যাফেকটিভ ডিজঅর্ডারে প্রকাশিত আরেকটি গবেষণা প্রতিবেদনেও বসন্তে আত্মহত্যা প্রবণতা বেশি থাকার তথ্য দেওয়া হয়েছে। সেখানে ২০১৬ সালে প্রকাশিত ১৬টি দেশের ২৯টি গবেষণা প্রবন্ধের রেফারেন্স দিয়ে বলা হয়েছে, বসন্ত ও গ্রীষ্মে আত্মহত্যার হার সবচেয়ে বেশি থাকে।
তবে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ঋতুর চরিত্র বদলে যাওয়ার কারণে ঋতুভিত্তিক এ প্রবণতায় ব্যত্যয় ঘটছে। গত এক দশক ধরেই এ ব্যত্যয় লক্ষ্য করছেন গবেষকেরা।
আত্মহত্যা বেশি করে পুরুষেরা, ব্যতিক্রম বাংলাদেশ
বিশ্বের অধিকাংশ দেশেই পুরুষের আত্মহত্যার হার নারীদের চেয়ে বেশি। তবে বাংলাদেশে এ চিত্র সম্পূর্ণ উল্টো। এ দেশে নারীদের আত্মহত্যার হার পুরুষের প্রায় দ্বিগুণ (৭ ও ৪.৭)। অবশ্য এ তালিকায় বাংলাদেশের পাশে আরও কয়েকটি দেশ রয়েছে: লেসোথো, পাকিস্তান, চীন, মিয়ানমার, মরক্কো, গ্রেনাডা ও অ্যান্টিগুয়া অ্যান্ড বারবুডা। পার্শ্ববর্তী ভারতেও নারীদের চেয়ে পুরুষের আত্মহত্যার হার উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেশি। বাংলাদেশে নারীর আত্মহত্যার হার বেশি হওয়ার প্রধান কারণগুলোর মধ্যে যৌতুক, ধর্ষণ, নারীর প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি ইত্যাদি বিষয়কে উল্লেখ করা হয়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আত্মহত্যাকে অপরাধ হিসেবে বিবেচনা না করে সামাজিক ও মানসিক সংকট হিসেবে চিহ্নিত করতে হবে। এ অনুযায়ী সরকার ও সচেতন নাগরিকদের নানা পদক্ষেপ নিতে হবে। তাহলেই আত্মহত্যা প্রবণতা কমানো সম্ভব। ভারতেও যেখানে আত্মহত্যাকে আর ফৌজদারি অপরাধ গণ্য করাহয় না, সেখানে বাংলাদেশে এমন আইন এখনো রয়ে গেছে। কিন্তু বিপরীতে মানসিক সংকট নিয়ে মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোর কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
আত্মহত্যার খবর প্রকাশের ক্ষেত্রে গণমাধ্যমের দায়িত্বশীল ভূমিকা, তরুণদের জীবনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার সক্ষমতা তৈরির প্রশিক্ষণ এবং আত্মহত্যার উপকরণ প্রাপ্তি কঠিন করে তুলতে সরকারি পদক্ষেপ আত্মহত্যা কমানোতে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। বিশেষ করে কীটনাশকের বিপণন ও ব্যবহারবিষয়ক আইন কঠোর করে শ্রীলঙ্কা ও দক্ষিণ কোরিয়া দারুণ সফলতা পেয়েছে। ১৯৯৫ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে শ্রীলঙ্কা আত্মহত্যা ৭০ শতাংশ কমিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে।
সর্বোপরি আত্মহত্যাকে একটি মানসিক বিকার হিসেবেই চিহ্নিত করেন মনোবিদেরা। গবেষণায় দেখা গেছে, আত্মহত্যাকারীদের ৯০ শতাংশেরও বেশি মনোবিকারে ভুগছিলেন। এর মধ্যে রয়েছে, মোড ডিজঅর্ডার, মাদকাসক্তি ও সিজোফ্রেনিয়া সম্পর্কিত ডিজঅর্ডার অন্যতম। তবে এসব বিকার সৃষ্টি ও এর প্রাবল্য বৃদ্ধিতে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন, বিষণ্নতা, হতাশা, ক্ষুধা, অনিশ্চয়তা ইত্যাদি বিষয় ‘রিস্ক ফ্যাক্টর’ হিসেবে কাজ করে।
আত্মহত্যার বিষয়টিকে ভারত কিন্তু গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে। আত্মহত্যাকে অপরাধ হিসেবে গণ্য না করতে ২০১৭ সালে আইন সংশোধন করেছে দেশটি। বাংলাদেশে আত্মহত্যায় সহায়তা বা প্ররোচনাদানকারীকে দণ্ডবিধির ৩০৬ ধারা অনুযায়ী ১০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়ার বিধান রয়েছে। এ ছাড়া আত্মহত্যার চেষ্টাকারীর শাস্তি দণ্ডবিধির ৩০৯ ধারায় এক বছর কারাদণ্ডের বিধান আছে। যদিও এমন আইন আত্মহত্যা প্রতিরোধে সহায়ক হয়—এমন কোনো প্রমাণ নেই।
আরও পড়ুন:
‘নারীর হৃদয়-প্রেম-শিশু-গৃহ-নয় সবখানি;/ অর্থ নয়, কীর্তি নয়, স্বচ্ছলতা নয়-/ আরও এক বিপন্ন বিস্ময়/ আমাদের অন্তর্গত রক্তের ভিতরে/ খেলা করে;/ আমাদের ক্লান্ত করে;/ ক্লান্ত-ক্লান্ত করে:’
কখন যে কোথা থেকে মানুষের মনে ভর করে আকাশ সমান ক্লান্তি, বিষণ্নতার কালো মেঘ আচ্ছন্ন করে ফেলে তাকে। জীবন হয়ে ওঠে এক অসহ্য যন্ত্রণার নাম। রাজ্যের নৈরাশ্য গ্রাস করে, ঘুম কেড়ে নেয় তার। কোনো এক ‘ফাল্গুনের রাতের আঁধারে, যখন ডুবে যায় পঞ্চমীর চাঁদ, মরণের সাধ জাগে দুর্নিবার।’ প্রেম, স্নেহ-পৃথিবীর তাবৎ সৌন্দর্য, ঘৃণা, পিছুটান তুচ্ছ মনে হয়। অর্থশূন্য মানবজীবনের অবসানই একমাত্র কাঙ্ক্ষিত হয়ে ওঠে তখন।
আত্মহত্যার মনো-সামাজিক উদ্দীপক এমনই এক রহস্য। জীবনানন্দের মৃত্যুও বুঝি সে কারণেই রহস্যই থেকে গেল!
কী আশ্চর্য! ফাল্গুনের রাতই কেন বেছে নিলেন তিনি? বাংলাদেশে আত্মহত্যায় মৌসুমি প্রভাব আছে কি-না, সে ব্যাপারে কোনো গবেষণা না হলেও তথ্য-উপাত্ত বলছে, নির্দিষ্ট মাসে আত্মহত্যার হার বেশি থাকে। অন্তত পাঁচ বছরে আত্মহত্যার পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে এমন চিত্রই পাওয়া গেছে।
দেখা গেছে, মার্চ ও আগস্টে আত্মহত্যার হার বেশি। তবে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঋতুর বৈশিষ্ট্য পরিবর্তনের কারণে আত্মহত্যার প্রাপ্ত মাসভিত্তিক তথ্যের ভিত্তিতে বলা যায়, বসন্ত ও বর্ষায় বাংলাদেশে আত্মহত্যার হার বেশি থাকে। অন্যভাবে বললে, বসন্তের শেষ ও গ্রীষ্মের শুরুর দিকে আত্মহত্যার পরিমাণ বেশি। অবশ্য বিশ্বের অন্যান্য দেশেও প্রায় একই প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়।
দেশের আত্মহত্যাপ্রবণ অন্যতম দুটি জেলা ঝিনাইদহ ও ঠাকুরগাঁওয়ে পুলিশের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, আত্মহত্যার মাসভিত্তিক প্রবণতায় খুব কমই হেরফের হয়। এর মধ্যে ঝিনাইদহ জেলায় আত্মহত্যার হার সবচেয়ে বেশি।
স্বাধীন গবেষক এস এম ইয়াসির আরাফাত দীর্ঘদিন ধরে আত্মহত্যা নিয়ে গবেষণা করছেন। আত্মহত্যার সিজনাল প্যাটার্ন বা ঋতুভিত্তিক প্রবণতা বুঝতে তিনি নমুনা হিসেবে ঠাকুরগাঁও জেলাকে বেছে নেন। ওই জেলার ২০১৪ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত পুলিশ ডেটা বিশ্লেষণ করে দেখেছেন, এ জেলায় মার্চ ও আগস্টে আত্মহত্যার সংখ্যা সবচেয়ে বেশি থাকে। ২০১৯ সালের আগস্ট পর্যন্ত উপাত্ত বিশ্লেষণ করে এ গবেষণার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে। ঝিনাইদহ জেলার ২০১৮ সাল ও ২০১৯ সালের আগস্ট পর্যন্ত প্রাপ্ত পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে মার্চ-এপ্রিল-মে এবং জুন-জুলাই-আগস্ট এই সময়কালে মোট আত্মহত্যার সংখ্যা সবচেয়ে বেশি—এ পর্যবেক্ষণের পক্ষে সমর্থন পাওয়া গেছে।
এ ব্যাপারে এস এম ইয়াসির আরাফাত তাঁর পর্যবেক্ষণে বলেন, বিশ্বের অধিকাংশ দেশের মতো বাংলাদেশেও বসন্ত ও বর্ষায় (স্প্রিং ও ফল) আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি। ঋতুভিত্তিক এ প্যাটার্ন বুঝতে আমাদের অধিকতর ও বড় পরিসরে গবেষণার প্রয়োজন আছে। আর আত্মহত্যার প্রতিরোধ করতে কৌশল নির্ধারণে এটি বোঝা জরুরি।
২০১৯ সালের ১০ সেপ্টেম্বর বিশ্ব আত্মহত্যা প্রতিরোধ দিবসের প্রতিবেদনে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) বলেছে, ২০১৭ সালে প্রতি ৪০ সেকেন্ডে একজন করে মানুষ আত্মহত্যা করেছে। এক বছরে অন্তত ৩৮টি দেশ আত্মহত্যা প্রতিরোধে বেশ অগ্রগতি করলেও ২০১৮ সালেও প্রতি ৪০ সেকেন্ডে একজন করে মানুষ আত্মহত্যা করেছে। ফলে এ ব্যাপারে অগ্রগতি খুব কম। এ কারণে ওই বছরের ১০ অক্টোবর বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবসের প্রতিপাদ্যও ছিল আত্মহত্যা প্রতিরোধ।
গত বছর প্রতি লাখে আত্মহত্যার হার ছিল ১০ দশমিক ৫। তবে এ হার দেশভেদে ৫ থেকে ৩০ পর্যন্ত। আত্মহত্যায় মোট মৃত্যুর হিসাবে ৭৯ শতাংশ ঘটেছে নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশে। উচ্চ আয়ের দেশে আত্মহত্যা হার বরাবরের মতো সবচেয়ে বেশি; দেখা গেছে, লাখে ১১ দশমিক ৫। উচ্চ আয়ের দেশে পুরুষদের মধ্যে আত্মহত্যার হার নারীর প্রায় তিনগুণ। তবে নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশে দুই লিঙ্গের মধ্যে পার্থক্য খুব কম দেখা গেছে। এমনকি বাংলাদেশসহ কয়েকটি দেশে নারীদের আত্মহত্যার হার পুরুষের চেয়ে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেশি লক্ষ্য করা গেছে।
২০১৬ সালের তথ্যের ভিত্তিতে ডব্লিউএইচওর প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশে আত্মহত্যার হার প্রতি লাখে ৫ দশমিক ৯। এ সময় সারা দেশে সাড়ে ৯ হাজারেরও বেশি মানুষ আত্মহত্যা করেছে।
কিশোর ও তরুণদের মধ্যেই আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি। ১৫-২৯ বছর বয়সীদের মৃত্যুর দ্বিতীয় প্রধান কারণ আত্মহত্যা। প্রথমেই রয়েছে সড়ক দুর্ঘটনা। নারীদের ক্ষেত্রে মাতৃমৃত্যুর পরে মৃত্যুর প্রধান কারণ আত্মহত্যা। আর ছেলেদের অপমৃত্যুর প্রথম কারণ সড়ক দুর্ঘটনা, দ্বিতীয় সহিংসতা এবং তৃতীয় আত্মহত্যা।
আত্মহত্যার প্রধান কৌশল গলায় ফাঁস দেওয়া, এর পর রয়েছে কীটনাশক পান ও আগ্নেয়াস্ত্র। বাংলাদেশের সাম্প্রতিক তথ্য-উপাত্ত বলছে, আত্মহত্যার কৌশলে তেমন কোনো পরিবর্তন হয়নি। যদিও কৃষিপ্রধান দেশগুলোতে বা গ্রামীণ এলাকায় কীটনাশক পানে আত্মহত্যার ঘটনা বেশি।
উইন্টার ব্লু সিনড্রোম
শীত ও বর্ষাকালে মানুষের মধ্যে বিষণ্নতার প্রবণতা বাড়ে। একে বলে সিজনাল অ্যাফেক্ট ডিসঅর্ডার (এসএডি—স্যাড)। তবে মানুষের মধ্যে সাধারণ ধারণা উইন্টার ব্লু সিনড্রোমের প্রকোপের কারণে শীতকালেই বেশি আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে। কিন্তু পরিসংখ্যান বলছে, সারা বিশ্বেই বেশি আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে বসন্ত ও গ্রীষ্মকালে।
২০১৪ সালে আমেরিকান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন সোসাইটির সাইকিয়াট্রি সাময়িকীতে প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখানো হয়, রৌদ্রোজ্জ্বল আবহাওয়ার সঙ্গে আত্মহত্যার প্রবণতার সম্পর্ক রয়েছে। সেখানে গবেষকেরা দাবি করেন, ঋতু কোনো বিষয় নয়; বরং রৌদ্রোজ্জ্বল দিনের সঙ্গে আত্মহননের সম্পর্ক রয়েছে। বিশেষ করে যারা আত্মহত্যার কথা ভাবছেন, তাঁদের জন্য উজ্জ্বল দিন আরও উদ্দীপকের কাজ করে। দেখা গেছে, বেশির ভাগ আত্মহত্যার আগে টানা দুই সপ্তাহ রৌদ্রোজ্জ্বল দিন ছিল। তা ছাড়া টানা ১৫ দিন বা মাসব্যাপী রৌদ্রোজ্জ্বল দিনের চেয়ে কয়েক দিন রোদ ছিল—এ রকম আবহাওয়াতে আত্মহত্যার ঘটনা বেশি দেখা গেছে। অর্থাৎ, যারা আত্মহত্যার কথা ভাবছেন, তাঁদের জন্য উজ্জ্বল দিন আরও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে।
মনোবিজ্ঞানীরা এ বিষয়টির ব্যাখ্যা দিতে না পারলেও স্নায়ুবিজ্ঞানে একটি ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। রৌদ্রোজ্জ্বল দিনে মানুষের শরীরে সেরোটনিন হরমোনের পরিমাণ বেড়ে যায়। স্নায়ু সংকেত পরিবাহক এ উপাদান মানুষের মস্তিষ্কে আনন্দ এবং পাশাপাশি লাগামহীন আবেগ উৎপাদনে ভূমিকা রাখে। সুতরাং যারা আত্মহত্যার কথা ভাবছেন, তাঁদের হঠাৎ করে সেরোটনিন মাত্রা বেড়ে গেলে বেশি আবেগপ্রবণ হয়ে পড়তে পারেন এবং দ্রুত আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত কার্যকর করে ফেলতে পারেন। এ ক্ষেত্রে ‘অগ্নিতে ঘৃতাহুতি’ দিতে পারে একটি রৌদ্রোজ্জ্বল দিন।
বিপরীত পক্ষে, টানা রোদ হলে বা উজ্জ্বল দিন থাকলে একটি স্থিতিশীল মানসিক ভাব তৈরি হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। ফলে এ রকম আবহাওয়ায় আত্মহত্যার ঘটনা কম ঘটতে পারে। যদিও এটি নিয়ে এখনো ব্যাপকভিত্তিক কোনো গবেষণা হয়নি। উপরিউক্ত গবেষণাকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লেখ করেছেন ‘উইন্টার ব্লু’ বইয়ের লেখক ও মনোবিদ ড. নরমান রসেনথাল।
তবে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঋতুর বৈশিষ্ট্যে ব্যাপক পরিবর্তন ঘটছে। এ কারণে নির্দিষ্ট মাসে নিয়মিত উজ্জ্বল দিনের পরিমাণ নির্ধারণ করা কঠিন হয়ে গেছে। বাংলাদেশেও শীত ও বর্ষা ইদানীং অনেক দেরিতে আসছে এবং ঋতুগুলো আজ থেকে ৫০ বছর আগের মতো আচরণ করছে না।
এদিকে শীত ও বর্ষাকালে সিজনাল অ্যাফেক্ট ডিজঅর্ডারের (স্যাড) কারণে মানুষের মধ্যে বিষণ্নতার প্রবণতা বেশি দেখা গেলেও আত্মহত্যার প্রবণতা কম। অপরদিকে গ্রীষ্ম ও বসন্তে আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি থাকার একটি ব্যাখ্যা দিয়েছেন মনোবিদেরা। তাঁরা বলছেন, শীত ও বর্ষায় মানুষের কর্মতৎপরতা অনেক কমে যায়। পারস্পরিক যোগাযোগও বেশ হ্রাস পায়। কিন্তু গ্রীষ্ম ও বসন্তে পূর্ণোদ্যমে তৎপরতা শুরু হয়, মানুষে মানুষে যোগাযোগ ও লেনদেন বাড়ে। ফলে নানা বিষয় তখন মানুষের মানসিক চাপ সৃষ্টি করে। ভারতের কর্নাটক রাজ্যের এক গবেষণায় দেখা গেছে, ফেব্রুয়ারি-মে সময়ে ৪০ শতাংশ আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে। সবচেয়ে বেশি আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে জুন-জানুয়ারি (১০ শতাংশ)। ফলে সময় ভেদে আত্মহত্যা প্রবণতার এই হ্রাস-বৃদ্ধি ও সম্ভাব্য কারণের এ চিহ্নায়নকে একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। যদিও এটি এখনো অনুমান মাত্র।
আরেকটি গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব অঞ্চলের মানুষ বেশি বেশি সামুদ্রিক মাছ খায়, সেসব এলাকায় স্যাডের প্রভাব কম। এ কারণে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় নর্ডিক ও জাপানের তুলনায় স্যাডের প্রভাব বেশি। ২০০৭ সালে পরিচালিত এ গবেষণায় দেখা গেছে, নর্ডিক ও জাপানের মানুষ বছরে মাথাপিছু যথাক্রমে ৯০ কেজি ও ৬০ কেজি মাছ খায়। সেখানে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় মাত্র ২৪ কেজি। ফলে এ ক্ষেত্রে ভিটামিন ডি একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে বলে মনে করা হয়।
আত্মহত্যায় ঋতুভিত্তিক প্রবণতার সঙ্গে শারীর-রাসায়নিক-জৈব ফ্যাক্টর যেমন: দিনের দৈর্ঘ্য, তাপমাত্রা, আর্দ্রতা, দূষণ, জীবাণু অথবা ফুলের রেণুঘটিত বা অন্য কারণে সৃষ্ট অ্যালার্জিজনিত প্রদাহ ইত্যাদি বিষয় জড়িত আছে। উত্তর গোলার্ধে অবস্থিত (ইউরোপ ও এশিয়ার বিস্তীর্ণ অংশ, বাংলাদেশ ও ভারত, চীনসহ) দেশগুলোতে বসন্তকালে আত্মহত্যার হার সবচেয়ে বেশি। ১৯৭৯-২০১১ সালের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে এমন একটি পর্যবেক্ষণ সম্বলিত গবেষণা প্রতিবেদন ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব এনভায়রনমেন্টাল রিসার্চ অ্যান্ড পাবলিক হেলথ-এ প্রকাশিত হয়েছে। অঞ্চলভেদে বসন্তের শেষ নাগাদ থেকে গ্রীষ্মের শুরুতে এবং বর্ষাকালে আত্মহত্যার হার বেশি লক্ষ্য করা গেছে। জার্নাল অব অ্যাফেকটিভ ডিজঅর্ডারে প্রকাশিত আরেকটি গবেষণা প্রতিবেদনেও বসন্তে আত্মহত্যা প্রবণতা বেশি থাকার তথ্য দেওয়া হয়েছে। সেখানে ২০১৬ সালে প্রকাশিত ১৬টি দেশের ২৯টি গবেষণা প্রবন্ধের রেফারেন্স দিয়ে বলা হয়েছে, বসন্ত ও গ্রীষ্মে আত্মহত্যার হার সবচেয়ে বেশি থাকে।
তবে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ঋতুর চরিত্র বদলে যাওয়ার কারণে ঋতুভিত্তিক এ প্রবণতায় ব্যত্যয় ঘটছে। গত এক দশক ধরেই এ ব্যত্যয় লক্ষ্য করছেন গবেষকেরা।
আত্মহত্যা বেশি করে পুরুষেরা, ব্যতিক্রম বাংলাদেশ
বিশ্বের অধিকাংশ দেশেই পুরুষের আত্মহত্যার হার নারীদের চেয়ে বেশি। তবে বাংলাদেশে এ চিত্র সম্পূর্ণ উল্টো। এ দেশে নারীদের আত্মহত্যার হার পুরুষের প্রায় দ্বিগুণ (৭ ও ৪.৭)। অবশ্য এ তালিকায় বাংলাদেশের পাশে আরও কয়েকটি দেশ রয়েছে: লেসোথো, পাকিস্তান, চীন, মিয়ানমার, মরক্কো, গ্রেনাডা ও অ্যান্টিগুয়া অ্যান্ড বারবুডা। পার্শ্ববর্তী ভারতেও নারীদের চেয়ে পুরুষের আত্মহত্যার হার উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেশি। বাংলাদেশে নারীর আত্মহত্যার হার বেশি হওয়ার প্রধান কারণগুলোর মধ্যে যৌতুক, ধর্ষণ, নারীর প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি ইত্যাদি বিষয়কে উল্লেখ করা হয়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আত্মহত্যাকে অপরাধ হিসেবে বিবেচনা না করে সামাজিক ও মানসিক সংকট হিসেবে চিহ্নিত করতে হবে। এ অনুযায়ী সরকার ও সচেতন নাগরিকদের নানা পদক্ষেপ নিতে হবে। তাহলেই আত্মহত্যা প্রবণতা কমানো সম্ভব। ভারতেও যেখানে আত্মহত্যাকে আর ফৌজদারি অপরাধ গণ্য করাহয় না, সেখানে বাংলাদেশে এমন আইন এখনো রয়ে গেছে। কিন্তু বিপরীতে মানসিক সংকট নিয়ে মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোর কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
আত্মহত্যার খবর প্রকাশের ক্ষেত্রে গণমাধ্যমের দায়িত্বশীল ভূমিকা, তরুণদের জীবনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার সক্ষমতা তৈরির প্রশিক্ষণ এবং আত্মহত্যার উপকরণ প্রাপ্তি কঠিন করে তুলতে সরকারি পদক্ষেপ আত্মহত্যা কমানোতে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। বিশেষ করে কীটনাশকের বিপণন ও ব্যবহারবিষয়ক আইন কঠোর করে শ্রীলঙ্কা ও দক্ষিণ কোরিয়া দারুণ সফলতা পেয়েছে। ১৯৯৫ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে শ্রীলঙ্কা আত্মহত্যা ৭০ শতাংশ কমিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে।
সর্বোপরি আত্মহত্যাকে একটি মানসিক বিকার হিসেবেই চিহ্নিত করেন মনোবিদেরা। গবেষণায় দেখা গেছে, আত্মহত্যাকারীদের ৯০ শতাংশেরও বেশি মনোবিকারে ভুগছিলেন। এর মধ্যে রয়েছে, মোড ডিজঅর্ডার, মাদকাসক্তি ও সিজোফ্রেনিয়া সম্পর্কিত ডিজঅর্ডার অন্যতম। তবে এসব বিকার সৃষ্টি ও এর প্রাবল্য বৃদ্ধিতে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন, বিষণ্নতা, হতাশা, ক্ষুধা, অনিশ্চয়তা ইত্যাদি বিষয় ‘রিস্ক ফ্যাক্টর’ হিসেবে কাজ করে।
আত্মহত্যার বিষয়টিকে ভারত কিন্তু গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে। আত্মহত্যাকে অপরাধ হিসেবে গণ্য না করতে ২০১৭ সালে আইন সংশোধন করেছে দেশটি। বাংলাদেশে আত্মহত্যায় সহায়তা বা প্ররোচনাদানকারীকে দণ্ডবিধির ৩০৬ ধারা অনুযায়ী ১০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়ার বিধান রয়েছে। এ ছাড়া আত্মহত্যার চেষ্টাকারীর শাস্তি দণ্ডবিধির ৩০৯ ধারায় এক বছর কারাদণ্ডের বিধান আছে। যদিও এমন আইন আত্মহত্যা প্রতিরোধে সহায়ক হয়—এমন কোনো প্রমাণ নেই।
আরও পড়ুন:

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতদের মধ্যে ইউক্রেন শান্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনা হলেও প্রকাশ্যে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইউরি উশাকভ, এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন যে অমীমাংসিত ‘আঞ্চলিক সমস্যাই’ মূল বাধা। আর এই অঞ্চল আর কোনোটিই নয়, দোনেৎস্ক।
২০ ঘণ্টা আগে
বিশ্বজুড়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন উঠে আসছে—‘যদি বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ সীমিত করা হয়, অথবা এই শ্রেণিটিকেই সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়, তবে কী ঘটবে?’ পশ্চিমা দেশগুলোতে চরম ধনী বা বিলিয়নিয়ারদের সংখ্যা ও প্রভাব বাড়তে থাকায় এখন এই প্রশ্ন আরও জোরালো হয়েছে।
১ দিন আগে
জাপানের ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর গত অক্টোবরে দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন সানায়ে তাকাইচি। এরপরই তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত হন জাপানের নতুন ‘আয়রন লেডি’ বা লৌহমানবী’ হিসেবে।
১ দিন আগে
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠককে ঘিরে দিল্লিতে শুরু হয়েছে কূটনৈতিক প্রস্তুতি। চলমান ইউক্রেন যুদ্ধ, যুক্তরাষ্ট্রের চাপ এবং জ্বালানির বাজারে অস্থিরতার মধ্যেই এই শীর্ষ সম্মেলন হতে যাচ্ছে। অর্থনীতি, প্রতিরক্ষা এবং জ্বালানি—এই তিনটি খাত আলোচনার...
২ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতদের মধ্যে ইউক্রেন শান্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনা হলেও প্রকাশ্যে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইউরি উশাকভ, এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন যে অমীমাংসিত ‘আঞ্চলিক সমস্যাই’ মূল বাধা। আর এই অঞ্চল আর কোনোটিই নয়, দোনেৎস্ক।
উশাকভ মূলত ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় দোনেৎস্কের সম্পূর্ণ এলাকার ওপর রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণ দাবির কথাই বলেছিলেন। পুতিন ইউক্রেনে হাজার হাজার সৈন্য পাঠানোর প্রায় ৪ বছর পরও এবং দোনেৎস্কে রাশিয়া সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদী বিদ্রোহের এক দশকেরও বেশি সময় পর অঞ্চলটির কিছু অংশ এখনো ইউক্রেনের হাতে আছে।
প্রায় সব দেশই দোনেৎস্ককে ইউক্রেনের অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। কিন্তু এটি ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের চারটি অঞ্চলের মধ্যে একটি, যা মস্কো ২০২২ সালে একটি গণভোটের পর সংযুক্ত করার কথা ঘোষণা করে। কিয়েভ ও পশ্চিমা দেশগুলো সেই গণভোটকে ‘প্রহসন’ বলে বাতিল করে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ফক্স নিউজকে বলেছিলেন, যুদ্ধটি এখন দোনেৎস্কের সেই ২০ শতাংশ বা ৫ হাজার বর্গকিলোমিটারের এলাকা নিয়ে, যা রাশিয়া নিয়ন্ত্রণ করে না কিন্তু চায়।
পুতিন ২০২২ সালে ইউক্রেনে সৈন্য পাঠানোর সময় বলেছিলেন, তাঁর লক্ষ্য হলো ‘গত আট বছর ধরে যারা ভয়ভীতি ও গণহত্যার শিকার হয়েছেন...সেই মানুষগুলোকে রক্ষা করা।’ ইউক্রেন এবং তার মিত্ররা বলেছিল, পুতিনের এই দাবি ঔপনিবেশিক ধাঁচের এবং এলাকা দখলের জন্য একটি মিথ্যা অজুহাত মাত্র।
পুতিনের এই দাবি মূলত দোনেৎস্ক এবং লুহানস্ক অঞ্চলে রাশিয়া সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিরুদ্ধে ইউক্রেনের লড়াইয়ের দিকে ইঙ্গিত করে, যারা ২০১৪ সালে ইউক্রেনীয় সরকারি নিয়ন্ত্রণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে কিছু এলাকা দখল করেছিল। পূর্ব ইউক্রেনে এর পরের সংঘর্ষে উভয় পক্ষই শহর ও বেসামরিক নাগরিকদের ওপর গোলাবর্ষণের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করেছিল। মস্কো এই অঞ্চলের বিশাল রুশভাষী জনসংখ্যাকে উদ্ধৃত করে বলেছিল যে,২০২২ সালে হস্তক্ষেপ করা তাদের নৈতিক কর্তব্য।
কিয়েভ বলেছিল, ২০১৪ সালে ইউক্রেনের আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষায় শক্তি দিয়ে জবাব দেওয়া ছাড়া তাদের আর কোনো উপায় ছিল না এবং তারাও বিচ্ছিন্নতাবাদী বাহিনীর বিরুদ্ধে শহর ও বেসামরিক নাগরিকদের ওপর গোলাবর্ষণের অভিযোগ এনেছিল। জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৪ সাল থেকে ২০২২ সালের শুরু পর্যন্ত ইউক্রেনীয় সরকারি বাহিনী এবং বিচ্ছিন্নতাবাদীদের মধ্যে সংঘাতে উভয় পক্ষে ৩ হাজার ১০৬ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত এবং ৯ হাজার বেসামরিক নাগরিক আহত হয়েছিলেন।
দোনেৎস্কের বাকি যে অংশটি রাশিয়া চায়, তার মধ্যে রয়েছে স্লোভিয়ানস্ক এবং ক্রামাতোরস্ক—দুটি ‘দুর্গনগরী’ যা ২০১৪ সাল থেকে ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করে আসছে। এই শহরগুলো ইউক্রেনের বাকি অঞ্চল রক্ষার জন্য কিয়েভের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ দোনেৎস্কের পশ্চিমের ভূমি অনেকটাই সমতল এবং বিশাল খোলা মাঠ; যা রাশিয়াকে দোনেৎস্কের বাইরে অগ্রসর হতে এবং দিনিপ্রো নদীর পূর্ব তীর পর্যন্ত এলাকা দখল করার পথ সহজ করে দেবে।
শহরগুলো পরিখা, ট্যাংক-বিধ্বংসী বাধা, বাংকার এবং মাইনক্ষেত্রসহ অত্যন্ত সুরক্ষিত প্রতিরক্ষা লাইনের অংশ। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, গণভোট ছাড়া দোনেৎস্কের বাকি অংশ রাশিয়ার হাতে তুলে দেওয়া অবৈধ হবে এবং তা ভবিষ্যতে ইউক্রেনের গভীরে আক্রমণের জন্য রাশিয়াকে একটি পথ খুলে দেবে।
কিয়েভের আশঙ্কা, যদি তারা দোনেৎস্কের বাকি অংশ ছেড়ে দেয়, তবে রাশিয়া আবার অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হবে এবং একসময় দোনেৎস্ক ব্যবহার করে পশ্চিম দিকে আক্রমণ চালাবে।
উভয় পক্ষই দোনেৎস্ককে কেন্দ্র করে যুদ্ধে ভয়াবহ ক্ষয়ক্ষতির মুখোমুখি হয়েছে এবং প্রচুর অর্থ ও সরঞ্জাম ব্যয় করেছে। এর মধ্যে বাখমুত শহরের লড়াইও রয়েছে। যেখানে রাশিয়া হাজার হাজার দণ্ডিত অপরাধীকে ভাড়াটে সৈন্যে পরিণত করে রণক্ষেত্রে নামিয়েছিল। এ কারণে, দোনেৎস্ক উভয় দেশের জনমানসে আরও বেশি গুরুত্ব পেয়েছে। ফলে কারও পক্ষে তাদের অবস্থান পরিবর্তন করা কঠিন।
ইউক্রেন চায় না যে, রাশিয়া যুদ্ধক্ষেত্রে জয় করতে ব্যর্থ হওয়া ভূখণ্ডকে উপহার হিসেবে পাক এবং জেলেনস্কি বলেছেন, যে যুদ্ধ রাশিয়া শুরু করেছে, তার জন্য তাদের পুরস্কৃত করা উচিত নয়। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ইনস্টিটিউট ফর দ্য স্টাডি অব ওয়ার অক্টোবর মাসে বলেছিল, রাশিয়ার অগ্রগতির হার দেখে মনে হয় না যে তারা খুব শিগগিরই দোনেৎস্কের বাকি অংশ দখল করতে চলেছে। তবে ‘রাশিয়ার অগ্রগতির একটি অপরিবর্তনীয় হার ধরে নিলে’ তারা ২০২৭ সালের আগস্টের মধ্যে তা নিতে পারে।
রাশিয়ার কমান্ডাররা অবশ্য আরও বেশি আশাবাদী। জেনারেল স্টাফের প্রধান ভ্যালেরি গেরাসিমভ রোববার পুতিনকে বলেছেন, মস্কোর বাহিনী পুরো ফ্রন্ট লাইন বরাবর অগ্রসর হচ্ছে এবং দনবাসের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার জন্য কাজ করছে।
দোনেৎস্ক বন্দর, রেলপথ এবং অন্যান্য ভারী শিল্পের কেন্দ্র। এটি একসময় ইউক্রেনের কয়লা, পরিশোধিত ইস্পাত, কোক, ঢালাই লোহা এবং ইস্পাত উৎপাদনের অর্ধেকেরও বেশি সরবরাহ করত, তবে যুদ্ধের কারণে অনেক খনি ও কারখানা ধ্বংস হয়ে গেছে। এ ছাড়া, দোনেৎস্কে বিরল মৃত্তিকা, টাইটানিয়াম এবং জিরকোনিয়াম রয়েছে—যা এটিকে নিয়ন্ত্রণকারী পক্ষের জন্য আয়ের উৎস।
দোনেৎস্কের ভাগ্য পুতিন এবং জেলেনস্কি উভয়ের ঐতিহাসিক উত্তরাধিকারকে প্রভাবিত করতে পারে। পুতিন নিজেকে জাতিগত রুশদের রক্ষক হিসেবে তুলে ধরেছেন, তারা যেখানেই থাকুক না কেন। পুরো দোনেৎস্ককে সুরক্ষিত করা এই বক্তব্যের মূল কেন্দ্রবিন্দু। জেলেনস্কি ২০১৯ সালে পূর্ব ইউক্রেনের যুদ্ধ অবসান ঘটানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন। ২০২২ সাল থেকে তিনি অনেক বড়, বৈরী প্রতিবেশীর মুখে অস্ত্র এবং সংখ্যায় কম ইউক্রেনের এক দৃঢ় রক্ষক হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছেন।
লড়াই না করে দোনেৎস্ক ছেড়ে দেওয়া—যেখানে অন্তত আড়াই লাখ ইউক্রেনীয় বাস করে—ইউক্রেনীয়দের কাছে বিশ্বাসঘাতকতা হিসেবে দেখা হতে পারে, যাদের অনেকেই যুদ্ধক্ষেত্রে স্বজন হারিয়েছেন। কিয়েভ ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব সোসিওলজির সাম্প্রতিক এক জরিপ অনুসারে, ইউক্রেনীয়দের একটি সংকীর্ণ সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ এখনো আঞ্চলিক ছাড়ের বিরোধিতা করে।
জেলেনস্কিসহ ইউক্রেনের কর্মকর্তারা যেকোনো শান্তি চুক্তির অধীনে কিয়েভের নিয়ন্ত্রণে থাকা ভূমি ছাড়ার সম্ভাবনা প্রত্যাখ্যান করেছেন। জেলেনস্কি বলেন, তাঁর ভূখণ্ড ছেড়ে দেওয়ার কোনো ম্যান্ডেট নেই এবং রাষ্ট্রের ভূমি ব্যক্তিগত সম্পত্তির মতো কেনা-বেচা করা যায় না। ইউক্রেনের সংবিধান অনুসারে, আঞ্চলিক পরিবর্তন অবশ্যই একটি গণভোটের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করতে হবে, যা ইউক্রেনের অন্তত দুই-তৃতীয়াংশ অর্থাৎ, অন্তত ৩০ লাখ ইউক্রেনীয় ভোটারের স্বাক্ষর থাকলে আয়োজন করা যেতে পারে।
তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই গণভোটের বিষয়টির সমালোচনা করেছেন এবং তিনি বলেছিলেন, ‘কিছু ভূমি অদল-বদল হবে।’ এখন ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের আলোচনা মূলত এই দোনেৎস্কের নিয়ন্ত্রণ কার হাতে যাবে সেটাই নিয়েই থমকে আছে।
রয়টার্স থেকে পরিমার্জিত

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতদের মধ্যে ইউক্রেন শান্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনা হলেও প্রকাশ্যে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইউরি উশাকভ, এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন যে অমীমাংসিত ‘আঞ্চলিক সমস্যাই’ মূল বাধা। আর এই অঞ্চল আর কোনোটিই নয়, দোনেৎস্ক।
উশাকভ মূলত ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় দোনেৎস্কের সম্পূর্ণ এলাকার ওপর রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণ দাবির কথাই বলেছিলেন। পুতিন ইউক্রেনে হাজার হাজার সৈন্য পাঠানোর প্রায় ৪ বছর পরও এবং দোনেৎস্কে রাশিয়া সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদী বিদ্রোহের এক দশকেরও বেশি সময় পর অঞ্চলটির কিছু অংশ এখনো ইউক্রেনের হাতে আছে।
প্রায় সব দেশই দোনেৎস্ককে ইউক্রেনের অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। কিন্তু এটি ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের চারটি অঞ্চলের মধ্যে একটি, যা মস্কো ২০২২ সালে একটি গণভোটের পর সংযুক্ত করার কথা ঘোষণা করে। কিয়েভ ও পশ্চিমা দেশগুলো সেই গণভোটকে ‘প্রহসন’ বলে বাতিল করে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ফক্স নিউজকে বলেছিলেন, যুদ্ধটি এখন দোনেৎস্কের সেই ২০ শতাংশ বা ৫ হাজার বর্গকিলোমিটারের এলাকা নিয়ে, যা রাশিয়া নিয়ন্ত্রণ করে না কিন্তু চায়।
পুতিন ২০২২ সালে ইউক্রেনে সৈন্য পাঠানোর সময় বলেছিলেন, তাঁর লক্ষ্য হলো ‘গত আট বছর ধরে যারা ভয়ভীতি ও গণহত্যার শিকার হয়েছেন...সেই মানুষগুলোকে রক্ষা করা।’ ইউক্রেন এবং তার মিত্ররা বলেছিল, পুতিনের এই দাবি ঔপনিবেশিক ধাঁচের এবং এলাকা দখলের জন্য একটি মিথ্যা অজুহাত মাত্র।
পুতিনের এই দাবি মূলত দোনেৎস্ক এবং লুহানস্ক অঞ্চলে রাশিয়া সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিরুদ্ধে ইউক্রেনের লড়াইয়ের দিকে ইঙ্গিত করে, যারা ২০১৪ সালে ইউক্রেনীয় সরকারি নিয়ন্ত্রণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে কিছু এলাকা দখল করেছিল। পূর্ব ইউক্রেনে এর পরের সংঘর্ষে উভয় পক্ষই শহর ও বেসামরিক নাগরিকদের ওপর গোলাবর্ষণের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করেছিল। মস্কো এই অঞ্চলের বিশাল রুশভাষী জনসংখ্যাকে উদ্ধৃত করে বলেছিল যে,২০২২ সালে হস্তক্ষেপ করা তাদের নৈতিক কর্তব্য।
কিয়েভ বলেছিল, ২০১৪ সালে ইউক্রেনের আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষায় শক্তি দিয়ে জবাব দেওয়া ছাড়া তাদের আর কোনো উপায় ছিল না এবং তারাও বিচ্ছিন্নতাবাদী বাহিনীর বিরুদ্ধে শহর ও বেসামরিক নাগরিকদের ওপর গোলাবর্ষণের অভিযোগ এনেছিল। জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৪ সাল থেকে ২০২২ সালের শুরু পর্যন্ত ইউক্রেনীয় সরকারি বাহিনী এবং বিচ্ছিন্নতাবাদীদের মধ্যে সংঘাতে উভয় পক্ষে ৩ হাজার ১০৬ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত এবং ৯ হাজার বেসামরিক নাগরিক আহত হয়েছিলেন।
দোনেৎস্কের বাকি যে অংশটি রাশিয়া চায়, তার মধ্যে রয়েছে স্লোভিয়ানস্ক এবং ক্রামাতোরস্ক—দুটি ‘দুর্গনগরী’ যা ২০১৪ সাল থেকে ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করে আসছে। এই শহরগুলো ইউক্রেনের বাকি অঞ্চল রক্ষার জন্য কিয়েভের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ দোনেৎস্কের পশ্চিমের ভূমি অনেকটাই সমতল এবং বিশাল খোলা মাঠ; যা রাশিয়াকে দোনেৎস্কের বাইরে অগ্রসর হতে এবং দিনিপ্রো নদীর পূর্ব তীর পর্যন্ত এলাকা দখল করার পথ সহজ করে দেবে।
শহরগুলো পরিখা, ট্যাংক-বিধ্বংসী বাধা, বাংকার এবং মাইনক্ষেত্রসহ অত্যন্ত সুরক্ষিত প্রতিরক্ষা লাইনের অংশ। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, গণভোট ছাড়া দোনেৎস্কের বাকি অংশ রাশিয়ার হাতে তুলে দেওয়া অবৈধ হবে এবং তা ভবিষ্যতে ইউক্রেনের গভীরে আক্রমণের জন্য রাশিয়াকে একটি পথ খুলে দেবে।
কিয়েভের আশঙ্কা, যদি তারা দোনেৎস্কের বাকি অংশ ছেড়ে দেয়, তবে রাশিয়া আবার অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হবে এবং একসময় দোনেৎস্ক ব্যবহার করে পশ্চিম দিকে আক্রমণ চালাবে।
উভয় পক্ষই দোনেৎস্ককে কেন্দ্র করে যুদ্ধে ভয়াবহ ক্ষয়ক্ষতির মুখোমুখি হয়েছে এবং প্রচুর অর্থ ও সরঞ্জাম ব্যয় করেছে। এর মধ্যে বাখমুত শহরের লড়াইও রয়েছে। যেখানে রাশিয়া হাজার হাজার দণ্ডিত অপরাধীকে ভাড়াটে সৈন্যে পরিণত করে রণক্ষেত্রে নামিয়েছিল। এ কারণে, দোনেৎস্ক উভয় দেশের জনমানসে আরও বেশি গুরুত্ব পেয়েছে। ফলে কারও পক্ষে তাদের অবস্থান পরিবর্তন করা কঠিন।
ইউক্রেন চায় না যে, রাশিয়া যুদ্ধক্ষেত্রে জয় করতে ব্যর্থ হওয়া ভূখণ্ডকে উপহার হিসেবে পাক এবং জেলেনস্কি বলেছেন, যে যুদ্ধ রাশিয়া শুরু করেছে, তার জন্য তাদের পুরস্কৃত করা উচিত নয়। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ইনস্টিটিউট ফর দ্য স্টাডি অব ওয়ার অক্টোবর মাসে বলেছিল, রাশিয়ার অগ্রগতির হার দেখে মনে হয় না যে তারা খুব শিগগিরই দোনেৎস্কের বাকি অংশ দখল করতে চলেছে। তবে ‘রাশিয়ার অগ্রগতির একটি অপরিবর্তনীয় হার ধরে নিলে’ তারা ২০২৭ সালের আগস্টের মধ্যে তা নিতে পারে।
রাশিয়ার কমান্ডাররা অবশ্য আরও বেশি আশাবাদী। জেনারেল স্টাফের প্রধান ভ্যালেরি গেরাসিমভ রোববার পুতিনকে বলেছেন, মস্কোর বাহিনী পুরো ফ্রন্ট লাইন বরাবর অগ্রসর হচ্ছে এবং দনবাসের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার জন্য কাজ করছে।
দোনেৎস্ক বন্দর, রেলপথ এবং অন্যান্য ভারী শিল্পের কেন্দ্র। এটি একসময় ইউক্রেনের কয়লা, পরিশোধিত ইস্পাত, কোক, ঢালাই লোহা এবং ইস্পাত উৎপাদনের অর্ধেকেরও বেশি সরবরাহ করত, তবে যুদ্ধের কারণে অনেক খনি ও কারখানা ধ্বংস হয়ে গেছে। এ ছাড়া, দোনেৎস্কে বিরল মৃত্তিকা, টাইটানিয়াম এবং জিরকোনিয়াম রয়েছে—যা এটিকে নিয়ন্ত্রণকারী পক্ষের জন্য আয়ের উৎস।
দোনেৎস্কের ভাগ্য পুতিন এবং জেলেনস্কি উভয়ের ঐতিহাসিক উত্তরাধিকারকে প্রভাবিত করতে পারে। পুতিন নিজেকে জাতিগত রুশদের রক্ষক হিসেবে তুলে ধরেছেন, তারা যেখানেই থাকুক না কেন। পুরো দোনেৎস্ককে সুরক্ষিত করা এই বক্তব্যের মূল কেন্দ্রবিন্দু। জেলেনস্কি ২০১৯ সালে পূর্ব ইউক্রেনের যুদ্ধ অবসান ঘটানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন। ২০২২ সাল থেকে তিনি অনেক বড়, বৈরী প্রতিবেশীর মুখে অস্ত্র এবং সংখ্যায় কম ইউক্রেনের এক দৃঢ় রক্ষক হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছেন।
লড়াই না করে দোনেৎস্ক ছেড়ে দেওয়া—যেখানে অন্তত আড়াই লাখ ইউক্রেনীয় বাস করে—ইউক্রেনীয়দের কাছে বিশ্বাসঘাতকতা হিসেবে দেখা হতে পারে, যাদের অনেকেই যুদ্ধক্ষেত্রে স্বজন হারিয়েছেন। কিয়েভ ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব সোসিওলজির সাম্প্রতিক এক জরিপ অনুসারে, ইউক্রেনীয়দের একটি সংকীর্ণ সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ এখনো আঞ্চলিক ছাড়ের বিরোধিতা করে।
জেলেনস্কিসহ ইউক্রেনের কর্মকর্তারা যেকোনো শান্তি চুক্তির অধীনে কিয়েভের নিয়ন্ত্রণে থাকা ভূমি ছাড়ার সম্ভাবনা প্রত্যাখ্যান করেছেন। জেলেনস্কি বলেন, তাঁর ভূখণ্ড ছেড়ে দেওয়ার কোনো ম্যান্ডেট নেই এবং রাষ্ট্রের ভূমি ব্যক্তিগত সম্পত্তির মতো কেনা-বেচা করা যায় না। ইউক্রেনের সংবিধান অনুসারে, আঞ্চলিক পরিবর্তন অবশ্যই একটি গণভোটের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করতে হবে, যা ইউক্রেনের অন্তত দুই-তৃতীয়াংশ অর্থাৎ, অন্তত ৩০ লাখ ইউক্রেনীয় ভোটারের স্বাক্ষর থাকলে আয়োজন করা যেতে পারে।
তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই গণভোটের বিষয়টির সমালোচনা করেছেন এবং তিনি বলেছিলেন, ‘কিছু ভূমি অদল-বদল হবে।’ এখন ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের আলোচনা মূলত এই দোনেৎস্কের নিয়ন্ত্রণ কার হাতে যাবে সেটাই নিয়েই থমকে আছে।
রয়টার্স থেকে পরিমার্জিত
আত্মহত্যাকে শুধু ব্যক্তির সংকট হিসেবে দেখার একটা প্রবণতা আছে। কিন্তু আত্মহত্যার প্রবণতায় রয়েছে ঋতুভিত্তিক ভেদ। একেক দেশে আবার একেক রকম। আবার এক দেশের সবখানেও প্রবণতায় হেরফের আছে। যেমন বাংলাদেশের আত্মহত্যাপ্রবণ অন্যতম দুটি জেলা ঝিনাইদহ ও ঠাকুরগাঁও।
১০ সেপ্টেম্বর ২০২১
বিশ্বজুড়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন উঠে আসছে—‘যদি বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ সীমিত করা হয়, অথবা এই শ্রেণিটিকেই সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়, তবে কী ঘটবে?’ পশ্চিমা দেশগুলোতে চরম ধনী বা বিলিয়নিয়ারদের সংখ্যা ও প্রভাব বাড়তে থাকায় এখন এই প্রশ্ন আরও জোরালো হয়েছে।
১ দিন আগে
জাপানের ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর গত অক্টোবরে দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন সানায়ে তাকাইচি। এরপরই তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত হন জাপানের নতুন ‘আয়রন লেডি’ বা লৌহমানবী’ হিসেবে।
১ দিন আগে
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠককে ঘিরে দিল্লিতে শুরু হয়েছে কূটনৈতিক প্রস্তুতি। চলমান ইউক্রেন যুদ্ধ, যুক্তরাষ্ট্রের চাপ এবং জ্বালানির বাজারে অস্থিরতার মধ্যেই এই শীর্ষ সম্মেলন হতে যাচ্ছে। অর্থনীতি, প্রতিরক্ষা এবং জ্বালানি—এই তিনটি খাত আলোচনার...
২ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

বিশ্বজুড়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন উঠে আসছে—‘যদি বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ সীমিত করা হয়, অথবা এই শ্রেণিটিকেই সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়, তবে কী ঘটবে?’ পশ্চিমা দেশগুলোতে চরম ধনী বা বিলিয়নিয়ারদের সংখ্যা ও প্রভাব বাড়তে থাকায় এখন এই প্রশ্ন আরও জোরালো হয়েছে।
সম্প্রতি টেসলার মালিক ইলন মাস্ক গত নভেম্বরে এমন এক পে-অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন, যা তাঁকে একজন ট্রিলিয়ন ডলারের মালিকে পরিণত করতে পারে। তিনি ইতিমধ্যেই বিশ্বের শীর্ষ ধনী। যদি তিনি প্রস্তাবিত পূর্ণ প্যাকেজটি পান, তাহলে তিনি বিশ্বের ইতিহাসে সর্বকালের সেরা ধনী ব্যক্তিতে পরিণত হবেন। ফোর্বসের হিসেবে বর্তমানে বিশ্বের ৩ হাজার ২৮ জন বিলিয়নিয়ার আছেন। তাঁদের মোট সম্পদ প্রায় ১৬.১ ট্রিলিয়ন ডলার। অন্যদিকে পৃথিবীতে এখনো প্রায় ৮৩ কোটি ১০ লাখ মানুষ দৈনিক তিন ডলারের নিচে আয় করে চরম দারিদ্র্যে দিন কাটান।
বিশ্লেষকদের মতে, বিশ্বের এই বিপুল সম্পদ বৈষম্য শুধু অর্থনীতিকে নয়, রাজনীতি, মিডিয়া ও চিন্তাকেও প্রভাবিত করে। অনেকেই মনে করেন, বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ ও ক্ষমতা বিশ্বব্যবস্থাকে ‘অতি ধনীদের স্বার্থে’ পুনর্গঠন করছে। আবার অন্য একটি মত বলছে, বিলিয়নিয়ারেরা না থাকলে উদ্ভাবন, প্রযুক্তি ও অগ্রগতি থমকে যাবে। কারণ বৃহৎ বিনিয়োগই গড়ে তোলে নতুন সমাধান।
উদ্ভাবন কি থেমে যাবে
অ্যাডাম স্মিথ ইনস্টিটিউটের ম্যাক্সওয়েল মার্লোর মতে, বিলিয়নিয়ারদের বিলোপ করা হলে পশ্চিমা অর্থনীতি বিপর্যস্ত হবে। তাঁর দাবি, অধিকাংশ বিলিয়নিয়ার তাঁদের সম্পদের মালিক হয়েছেন সমাজের চাহিদামতো পণ্য ও প্রযুক্তি তৈরি করে। তাঁদের সম্পদ মূলত কোম্পানির শেয়ার, মেধাস্বত্ব অথবা সম্পত্তি—যা দিনে দিনে ওঠানামা করে। তাঁর মতে, এই ধনী ব্যক্তিদের প্রণোদনাই উদ্ভাবনে গতি আনে; তা না থাকলে উন্নয়ন থেমে যাবে।
যদি ন্যায্যভাবে সম্পদ বণ্টিত হতো
গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ট্যাক্স জাস্টিসের ডেরেজে আলেমায়েহুর মতে, শুধু বিলিয়নিয়ার কর আরোপ নয়—প্রশ্ন হচ্ছে, সেই কর কোথায় যাবে। দক্ষিণ বিশ্বের শ্রম ও সম্পদ থেকেই যে বিপুল সম্পদ তৈরি হয়, তাই তার ন্যায্য অংশ দক্ষিণেই ফিরে আসা উচিত। তিনি বলেন, বৈষম্য কমাতে শুধু অর্থ হস্তান্তর নয়, বৈশ্বিক আর্থিক কাঠামো পুনর্গঠন জরুরি; নইলে বৈষম্য আরও গভীর হবে।
বিধিনিষেধ কি বদলাতে হবে
ডেনিসন ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ফাদেল কাবুব বলেন, বিলিয়নিয়ারেরা আসলে ব্যর্থ নীতির ফল। সিস্টেম যেভাবে সাজানো, তাতে সম্পদ একদিকে কেন্দ্রীভূত হওয়াই স্বাভাবিক। তাঁর মতে, বিলিয়নিয়ার শ্রেণিকে বিলোপ করতে হলে আধুনিক অ্যান্টি ট্রাস্ট ও কঠোর বাজার নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন।
মিডিয়ার ওপর প্রভাব কমবে
গোল্ডস্মিথস বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডেস ফ্রিডম্যান মনে করেন, বিলিয়নিয়ারেরা পুরো মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম কিনে ফেলতে সক্ষম হওয়ায় তথ্যপ্রবাহ তাঁদের স্বার্থেই নিয়ন্ত্রিত হয়। যেমন—বেজোস বা ইলন মাস্কের গণমাধ্যম মালিকানা এই অঙ্গনের স্বাধীনতাকে দীর্ঘমেয়াদে প্রশ্নবিদ্ধ করে। তাই বিলিয়নিয়ার প্রভাব সীমিত হলে তথ্যের উৎসও আরও স্বাধীন হতে পারে।
চরম সম্পদ কি সত্যিই বিলোপ করা সম্ভব
বিশ্ব ইনইক্যুয়ালিটি ল্যাবের লুকাস শ্যানসেলের মতে, ইতিহাসে এর নজির আছে। উদাহরণস্বরূপ—রকেফেলারের একচেটিয়া সাম্রাজ্য ভেঙে দেওয়া, কিংবা রুজভেল্টের সময় সর্বোচ্চ করহার ৯৪ শতাংশে উন্নীত করা। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পানামা পেপারসের মতো ফাঁস যেমন দুর্দান্ত স্বচ্ছতা তৈরি করেছে, তেমনি তা পরিবর্তনের সুযোগও তৈরি করছে। তিনি মনে করেন, ধনীদের ওপর কর আরোপের মতো ধারণা এখন আর ‘যদি’ নয়, বরং ‘কখন’ করা হবে—এ প্রশ্নে এসে দাঁড়িয়েছে।
আল-জাজিরা অবলম্বনে

বিশ্বজুড়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন উঠে আসছে—‘যদি বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ সীমিত করা হয়, অথবা এই শ্রেণিটিকেই সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়, তবে কী ঘটবে?’ পশ্চিমা দেশগুলোতে চরম ধনী বা বিলিয়নিয়ারদের সংখ্যা ও প্রভাব বাড়তে থাকায় এখন এই প্রশ্ন আরও জোরালো হয়েছে।
সম্প্রতি টেসলার মালিক ইলন মাস্ক গত নভেম্বরে এমন এক পে-অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন, যা তাঁকে একজন ট্রিলিয়ন ডলারের মালিকে পরিণত করতে পারে। তিনি ইতিমধ্যেই বিশ্বের শীর্ষ ধনী। যদি তিনি প্রস্তাবিত পূর্ণ প্যাকেজটি পান, তাহলে তিনি বিশ্বের ইতিহাসে সর্বকালের সেরা ধনী ব্যক্তিতে পরিণত হবেন। ফোর্বসের হিসেবে বর্তমানে বিশ্বের ৩ হাজার ২৮ জন বিলিয়নিয়ার আছেন। তাঁদের মোট সম্পদ প্রায় ১৬.১ ট্রিলিয়ন ডলার। অন্যদিকে পৃথিবীতে এখনো প্রায় ৮৩ কোটি ১০ লাখ মানুষ দৈনিক তিন ডলারের নিচে আয় করে চরম দারিদ্র্যে দিন কাটান।
বিশ্লেষকদের মতে, বিশ্বের এই বিপুল সম্পদ বৈষম্য শুধু অর্থনীতিকে নয়, রাজনীতি, মিডিয়া ও চিন্তাকেও প্রভাবিত করে। অনেকেই মনে করেন, বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ ও ক্ষমতা বিশ্বব্যবস্থাকে ‘অতি ধনীদের স্বার্থে’ পুনর্গঠন করছে। আবার অন্য একটি মত বলছে, বিলিয়নিয়ারেরা না থাকলে উদ্ভাবন, প্রযুক্তি ও অগ্রগতি থমকে যাবে। কারণ বৃহৎ বিনিয়োগই গড়ে তোলে নতুন সমাধান।
উদ্ভাবন কি থেমে যাবে
অ্যাডাম স্মিথ ইনস্টিটিউটের ম্যাক্সওয়েল মার্লোর মতে, বিলিয়নিয়ারদের বিলোপ করা হলে পশ্চিমা অর্থনীতি বিপর্যস্ত হবে। তাঁর দাবি, অধিকাংশ বিলিয়নিয়ার তাঁদের সম্পদের মালিক হয়েছেন সমাজের চাহিদামতো পণ্য ও প্রযুক্তি তৈরি করে। তাঁদের সম্পদ মূলত কোম্পানির শেয়ার, মেধাস্বত্ব অথবা সম্পত্তি—যা দিনে দিনে ওঠানামা করে। তাঁর মতে, এই ধনী ব্যক্তিদের প্রণোদনাই উদ্ভাবনে গতি আনে; তা না থাকলে উন্নয়ন থেমে যাবে।
যদি ন্যায্যভাবে সম্পদ বণ্টিত হতো
গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ট্যাক্স জাস্টিসের ডেরেজে আলেমায়েহুর মতে, শুধু বিলিয়নিয়ার কর আরোপ নয়—প্রশ্ন হচ্ছে, সেই কর কোথায় যাবে। দক্ষিণ বিশ্বের শ্রম ও সম্পদ থেকেই যে বিপুল সম্পদ তৈরি হয়, তাই তার ন্যায্য অংশ দক্ষিণেই ফিরে আসা উচিত। তিনি বলেন, বৈষম্য কমাতে শুধু অর্থ হস্তান্তর নয়, বৈশ্বিক আর্থিক কাঠামো পুনর্গঠন জরুরি; নইলে বৈষম্য আরও গভীর হবে।
বিধিনিষেধ কি বদলাতে হবে
ডেনিসন ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ফাদেল কাবুব বলেন, বিলিয়নিয়ারেরা আসলে ব্যর্থ নীতির ফল। সিস্টেম যেভাবে সাজানো, তাতে সম্পদ একদিকে কেন্দ্রীভূত হওয়াই স্বাভাবিক। তাঁর মতে, বিলিয়নিয়ার শ্রেণিকে বিলোপ করতে হলে আধুনিক অ্যান্টি ট্রাস্ট ও কঠোর বাজার নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন।
মিডিয়ার ওপর প্রভাব কমবে
গোল্ডস্মিথস বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডেস ফ্রিডম্যান মনে করেন, বিলিয়নিয়ারেরা পুরো মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম কিনে ফেলতে সক্ষম হওয়ায় তথ্যপ্রবাহ তাঁদের স্বার্থেই নিয়ন্ত্রিত হয়। যেমন—বেজোস বা ইলন মাস্কের গণমাধ্যম মালিকানা এই অঙ্গনের স্বাধীনতাকে দীর্ঘমেয়াদে প্রশ্নবিদ্ধ করে। তাই বিলিয়নিয়ার প্রভাব সীমিত হলে তথ্যের উৎসও আরও স্বাধীন হতে পারে।
চরম সম্পদ কি সত্যিই বিলোপ করা সম্ভব
বিশ্ব ইনইক্যুয়ালিটি ল্যাবের লুকাস শ্যানসেলের মতে, ইতিহাসে এর নজির আছে। উদাহরণস্বরূপ—রকেফেলারের একচেটিয়া সাম্রাজ্য ভেঙে দেওয়া, কিংবা রুজভেল্টের সময় সর্বোচ্চ করহার ৯৪ শতাংশে উন্নীত করা। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পানামা পেপারসের মতো ফাঁস যেমন দুর্দান্ত স্বচ্ছতা তৈরি করেছে, তেমনি তা পরিবর্তনের সুযোগও তৈরি করছে। তিনি মনে করেন, ধনীদের ওপর কর আরোপের মতো ধারণা এখন আর ‘যদি’ নয়, বরং ‘কখন’ করা হবে—এ প্রশ্নে এসে দাঁড়িয়েছে।
আল-জাজিরা অবলম্বনে
আত্মহত্যাকে শুধু ব্যক্তির সংকট হিসেবে দেখার একটা প্রবণতা আছে। কিন্তু আত্মহত্যার প্রবণতায় রয়েছে ঋতুভিত্তিক ভেদ। একেক দেশে আবার একেক রকম। আবার এক দেশের সবখানেও প্রবণতায় হেরফের আছে। যেমন বাংলাদেশের আত্মহত্যাপ্রবণ অন্যতম দুটি জেলা ঝিনাইদহ ও ঠাকুরগাঁও।
১০ সেপ্টেম্বর ২০২১
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতদের মধ্যে ইউক্রেন শান্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনা হলেও প্রকাশ্যে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইউরি উশাকভ, এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন যে অমীমাংসিত ‘আঞ্চলিক সমস্যাই’ মূল বাধা। আর এই অঞ্চল আর কোনোটিই নয়, দোনেৎস্ক।
২০ ঘণ্টা আগে
জাপানের ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর গত অক্টোবরে দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন সানায়ে তাকাইচি। এরপরই তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত হন জাপানের নতুন ‘আয়রন লেডি’ বা লৌহমানবী’ হিসেবে।
১ দিন আগে
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠককে ঘিরে দিল্লিতে শুরু হয়েছে কূটনৈতিক প্রস্তুতি। চলমান ইউক্রেন যুদ্ধ, যুক্তরাষ্ট্রের চাপ এবং জ্বালানির বাজারে অস্থিরতার মধ্যেই এই শীর্ষ সম্মেলন হতে যাচ্ছে। অর্থনীতি, প্রতিরক্ষা এবং জ্বালানি—এই তিনটি খাত আলোচনার...
২ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

জাপানের ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর গত অক্টোবরে দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন সানায়ে তাকাইচি। এরপরই তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত হন জাপানের নতুন ‘আয়রন লেডি’ বা লৌহমানবী’ হিসেবে। এই পরিচয়টিকে তাকাইচি নিজেও গর্বের সঙ্গে গ্রহণ করেন। মার্গারেট থ্যাচারের অনুরাগী এই রক্ষণশীল নেতা ঘরোয়া অর্থনীতি থেকে শুরু করে পররাষ্ট্র ও নিরাপত্তা—সব ক্ষেত্রেই শক্ত অবস্থানের বার্তা দিয়েছেন।
তাকাইচির রাজনৈতিক পরিচয়ের মূল কেন্দ্রে রয়েছে ‘নিপ্পন কেইগি’ নামে জাপানের সবচেয়ে প্রভাবশালী জাতীয়তাবাদী গোষ্ঠী। এই সংগঠন জাপানের সংবিধানের যুদ্ধবিরোধী ৯ নম্বর অনুচ্ছেদ বাতিল, শক্তিশালী সামরিক বাহিনী গঠন এবং ঐতিহ্যবাদী মূল্যবোধে প্রত্যাবর্তনের পক্ষে। পূর্বসুরী শিনজো আবের মতো তাই তাকাইচিও জাপানকে স্বাভাবিক রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চান, যেখানে গোয়েন্দা সংস্থা, আধুনিক সেনাবাহিনী এবং কঠোর নিরাপত্তা আইন থাকবে।
অর্থনীতির ক্ষেত্রে তিনি জাতীয় শিল্পকে শক্তিশালী করা, প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বাড়ানো এবং রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ বৃদ্ধির পক্ষে। একই সঙ্গে কঠোর অভিবাসন নীতি ও রক্ষণশীল মূল্যবোধের প্রচারও তাঁকে ডানপন্থীদের মধ্যে জনপ্রিয় করেছে। তবে এই অভ্যন্তরীণ রাজনীতি এখন আন্তর্জাতিক উত্তেজনার সঙ্গে গেঁথে গেছে—বিশেষ করে, তাইওয়ান ইস্যুতে তাঁর অবস্থানের কারণে।
তাকাইচি ক্ষমতায় আসার পর থেকেই চীনের প্রতি কঠোর মনোভাব দেখাচ্ছেন। বেইজিংকে তিনি কৌশলগত হুমকি হিসেবে দেখেন এবং প্রতিরোধমূলক সামরিক ও কূটনৈতিক পদক্ষেপের পক্ষে জোর দিচ্ছেন। এরই অংশ হিসেবে অক্টোবরের শেষ দিকে তাঁর ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাক্ষাৎ দুই দেশের সম্পর্ককে নতুন সোনালি যুগে প্রবেশ করানোর আভাস দেয়। জাপান প্রতিরক্ষা ব্যয় জিডিপির কমপক্ষে ২ শতাংশে উন্নীত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, আর যুক্তরাষ্ট্র বিরল ধাতুর সরবরাহ নিশ্চিতকরণসহ অর্থনৈতিক সহায়তার ঘোষণা দেয়।
তবে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হলো তাইওয়ানের সঙ্গে তাকাইচির ঘনিষ্ঠতা। তিনি তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট লাই চিং-তের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন, যা চীনের কাছে স্পষ্ট উত্তেজনাকর পদক্ষেপ হিসেবে ধরা পড়েছে। আরও বিতর্ক সৃষ্টি হয় যখন তাকাইচি প্রকাশ্যে বলেন, তাইওয়ানের নিরাপত্তা জাপানের নিরাপত্তার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত। এমনকি তাইওয়ানে চীনা হামলার ক্ষেত্রে জাপানের আত্মরক্ষা বাহিনী হস্তক্ষেপ করতে পারে বলেও ইঙ্গিত দেন তিনি।
এ ক্ষেত্রে চীনের প্রতিক্রিয়াও ছিল কঠোর ও দ্রুত। তারা তাকাইচির বিরুদ্ধে ‘পুরোনো সামরিকতাবাদকে পুনরুজ্জীবিত করার’ অভিযোগ তোলে, রাষ্ট্রদূতকে তলব করে এবং জাতিসংঘে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ পাঠায়। পাশাপাশি সামুদ্রিক এলাকায় কোস্টগার্ডের টহল বাড়ায় চীন, জাপানি সামুদ্রিক পণ্যে সীমাবদ্ধতা আরোপের হুমকি দেয় এবং উত্তেজনাপূর্ণ নানা বিবৃতি দেয়।
এদিকে জাপানও পশ্চিম সীমান্তের ইয়োনাগুনি দ্বীপে বিমান প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনের ঘোষণা দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রও একই দ্বীপে সামরিক অবকাঠামো শক্তিশালী করছে। ফলে পরিস্থিতি আরও জটিল আকার ধারণ করছে।
তবে ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি তাকাইচিকে উত্তেজনা না বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন। কারণ আগামী এপ্রিলে তিনি বেইজিং সফর করতে চান।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তাকাইচির নেতৃত্বে জাপান নতুন ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতায় প্রবেশ করেছে। তাঁর দৃঢ় অবস্থান দেশকে হয় পুনরুত্থানের পথে নেবে—নয়তো চীন–তাইওয়ান উত্তেজনার কেন্দ্রে ঠেলে দেবে। ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে তিনি কোন পথে হাঁটবেন তার ওপর।

জাপানের ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর গত অক্টোবরে দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন সানায়ে তাকাইচি। এরপরই তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত হন জাপানের নতুন ‘আয়রন লেডি’ বা লৌহমানবী’ হিসেবে। এই পরিচয়টিকে তাকাইচি নিজেও গর্বের সঙ্গে গ্রহণ করেন। মার্গারেট থ্যাচারের অনুরাগী এই রক্ষণশীল নেতা ঘরোয়া অর্থনীতি থেকে শুরু করে পররাষ্ট্র ও নিরাপত্তা—সব ক্ষেত্রেই শক্ত অবস্থানের বার্তা দিয়েছেন।
তাকাইচির রাজনৈতিক পরিচয়ের মূল কেন্দ্রে রয়েছে ‘নিপ্পন কেইগি’ নামে জাপানের সবচেয়ে প্রভাবশালী জাতীয়তাবাদী গোষ্ঠী। এই সংগঠন জাপানের সংবিধানের যুদ্ধবিরোধী ৯ নম্বর অনুচ্ছেদ বাতিল, শক্তিশালী সামরিক বাহিনী গঠন এবং ঐতিহ্যবাদী মূল্যবোধে প্রত্যাবর্তনের পক্ষে। পূর্বসুরী শিনজো আবের মতো তাই তাকাইচিও জাপানকে স্বাভাবিক রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চান, যেখানে গোয়েন্দা সংস্থা, আধুনিক সেনাবাহিনী এবং কঠোর নিরাপত্তা আইন থাকবে।
অর্থনীতির ক্ষেত্রে তিনি জাতীয় শিল্পকে শক্তিশালী করা, প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বাড়ানো এবং রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ বৃদ্ধির পক্ষে। একই সঙ্গে কঠোর অভিবাসন নীতি ও রক্ষণশীল মূল্যবোধের প্রচারও তাঁকে ডানপন্থীদের মধ্যে জনপ্রিয় করেছে। তবে এই অভ্যন্তরীণ রাজনীতি এখন আন্তর্জাতিক উত্তেজনার সঙ্গে গেঁথে গেছে—বিশেষ করে, তাইওয়ান ইস্যুতে তাঁর অবস্থানের কারণে।
তাকাইচি ক্ষমতায় আসার পর থেকেই চীনের প্রতি কঠোর মনোভাব দেখাচ্ছেন। বেইজিংকে তিনি কৌশলগত হুমকি হিসেবে দেখেন এবং প্রতিরোধমূলক সামরিক ও কূটনৈতিক পদক্ষেপের পক্ষে জোর দিচ্ছেন। এরই অংশ হিসেবে অক্টোবরের শেষ দিকে তাঁর ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাক্ষাৎ দুই দেশের সম্পর্ককে নতুন সোনালি যুগে প্রবেশ করানোর আভাস দেয়। জাপান প্রতিরক্ষা ব্যয় জিডিপির কমপক্ষে ২ শতাংশে উন্নীত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, আর যুক্তরাষ্ট্র বিরল ধাতুর সরবরাহ নিশ্চিতকরণসহ অর্থনৈতিক সহায়তার ঘোষণা দেয়।
তবে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হলো তাইওয়ানের সঙ্গে তাকাইচির ঘনিষ্ঠতা। তিনি তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট লাই চিং-তের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন, যা চীনের কাছে স্পষ্ট উত্তেজনাকর পদক্ষেপ হিসেবে ধরা পড়েছে। আরও বিতর্ক সৃষ্টি হয় যখন তাকাইচি প্রকাশ্যে বলেন, তাইওয়ানের নিরাপত্তা জাপানের নিরাপত্তার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত। এমনকি তাইওয়ানে চীনা হামলার ক্ষেত্রে জাপানের আত্মরক্ষা বাহিনী হস্তক্ষেপ করতে পারে বলেও ইঙ্গিত দেন তিনি।
এ ক্ষেত্রে চীনের প্রতিক্রিয়াও ছিল কঠোর ও দ্রুত। তারা তাকাইচির বিরুদ্ধে ‘পুরোনো সামরিকতাবাদকে পুনরুজ্জীবিত করার’ অভিযোগ তোলে, রাষ্ট্রদূতকে তলব করে এবং জাতিসংঘে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ পাঠায়। পাশাপাশি সামুদ্রিক এলাকায় কোস্টগার্ডের টহল বাড়ায় চীন, জাপানি সামুদ্রিক পণ্যে সীমাবদ্ধতা আরোপের হুমকি দেয় এবং উত্তেজনাপূর্ণ নানা বিবৃতি দেয়।
এদিকে জাপানও পশ্চিম সীমান্তের ইয়োনাগুনি দ্বীপে বিমান প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনের ঘোষণা দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রও একই দ্বীপে সামরিক অবকাঠামো শক্তিশালী করছে। ফলে পরিস্থিতি আরও জটিল আকার ধারণ করছে।
তবে ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি তাকাইচিকে উত্তেজনা না বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন। কারণ আগামী এপ্রিলে তিনি বেইজিং সফর করতে চান।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তাকাইচির নেতৃত্বে জাপান নতুন ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতায় প্রবেশ করেছে। তাঁর দৃঢ় অবস্থান দেশকে হয় পুনরুত্থানের পথে নেবে—নয়তো চীন–তাইওয়ান উত্তেজনার কেন্দ্রে ঠেলে দেবে। ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে তিনি কোন পথে হাঁটবেন তার ওপর।
আত্মহত্যাকে শুধু ব্যক্তির সংকট হিসেবে দেখার একটা প্রবণতা আছে। কিন্তু আত্মহত্যার প্রবণতায় রয়েছে ঋতুভিত্তিক ভেদ। একেক দেশে আবার একেক রকম। আবার এক দেশের সবখানেও প্রবণতায় হেরফের আছে। যেমন বাংলাদেশের আত্মহত্যাপ্রবণ অন্যতম দুটি জেলা ঝিনাইদহ ও ঠাকুরগাঁও।
১০ সেপ্টেম্বর ২০২১
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতদের মধ্যে ইউক্রেন শান্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনা হলেও প্রকাশ্যে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইউরি উশাকভ, এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন যে অমীমাংসিত ‘আঞ্চলিক সমস্যাই’ মূল বাধা। আর এই অঞ্চল আর কোনোটিই নয়, দোনেৎস্ক।
২০ ঘণ্টা আগে
বিশ্বজুড়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন উঠে আসছে—‘যদি বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ সীমিত করা হয়, অথবা এই শ্রেণিটিকেই সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়, তবে কী ঘটবে?’ পশ্চিমা দেশগুলোতে চরম ধনী বা বিলিয়নিয়ারদের সংখ্যা ও প্রভাব বাড়তে থাকায় এখন এই প্রশ্ন আরও জোরালো হয়েছে।
১ দিন আগে
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠককে ঘিরে দিল্লিতে শুরু হয়েছে কূটনৈতিক প্রস্তুতি। চলমান ইউক্রেন যুদ্ধ, যুক্তরাষ্ট্রের চাপ এবং জ্বালানির বাজারে অস্থিরতার মধ্যেই এই শীর্ষ সম্মেলন হতে যাচ্ছে। অর্থনীতি, প্রতিরক্ষা এবং জ্বালানি—এই তিনটি খাত আলোচনার...
২ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠককে ঘিরে দিল্লিতে শুরু হয়েছে কূটনৈতিক প্রস্তুতি। চলমান ইউক্রেন যুদ্ধ, যুক্তরাষ্ট্রের চাপ এবং জ্বালানির বাজারে অস্থিরতার মধ্যেই এই শীর্ষ সম্মেলন হতে যাচ্ছে। অর্থনীতি, প্রতিরক্ষা এবং জ্বালানি—এই তিনটি খাত আলোচনার কেন্দ্রে থাকবে বলে দুই দেশই নিশ্চিত করেছে।
রাষ্ট্রীয় সফরে বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) ভারতে পৌঁছে পরদিন শুক্রবার মোদির সঙ্গে বৈঠকে বসবেন পুতিন। এই বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের অগ্রগতি পর্যালোচনা ছাড়াও নতুন কয়েকটি আন্তদপ্তর ও বাণিজ্যিক চুক্তি স্বাক্ষরের সম্ভাবনা রয়েছে। রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখা এবং একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কৌশলগত অংশীদারত্ব ধরে রাখতে ভারতের নীতির জন্য এই বৈঠক একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রাশিয়া থেকে ডিসকাউন্টে ভারতের তেল কেনা দীর্ঘদিন ধরেই ওয়াশিংটনকে অসন্তুষ্ট করে আসছে। এই অসন্তুষ্টি থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি ভারতীয় পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন, যা মোট শুল্ককে ৫০ শতাংশে উন্নীত করেছে। তবে ভারত বলছে, তারা আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার বিরোধী নয়, কিন্তু ১৪০ কোটি মানুষের জ্বালানি চাহিদা মেটাতেই বাধ্য হয়ে রাশিয়া থেকে তেল আমদানি করা হচ্ছে। নতুন মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে ‘রসনেফত’ ও ‘লুকওইল’ এর মতো রাশিয়ার কিছু কোম্পানি থেকে ভারত তেল কিনবে না বলে জানিয়েছে। তবে নিষেধাজ্ঞামুক্ত রুশ সরবরাহকারীদের সঙ্গে বাণিজ্য চালু থাকবে।
পুতিনের এই সফরে দুই দেশের অর্থনৈতিক সহযোগিতার ওপর জোর দেওয়া হবে। ভারত রাশিয়ায় ওষুধ, কৃষিপণ্য ও টেক্সটাইল রপ্তানি বাড়াতে চায় এবং পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে শুল্কমুক্ত সুবিধা প্রদানের অনুরোধ জানাবে। এ ছাড়া সার সরবরাহের দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি এবং রাশিয়ায় ভারতীয় দক্ষ জনশক্তির নিরাপদ ও নিয়মিত অভিবাসন নিয়ে আলোচনা এগোতে পারে। দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য, সমুদ্র পরিবহন, স্বাস্থ্যসেবা ও গণমাধ্যম সহযোগিতা বিষয়ক নথিপত্র চূড়ান্তের কাজও চলছে।
বুধবার এই বিষয়ে যুক্তরাজ্যভিত্তিক ইনডিপেনডেন্টের এক নিবন্ধে দাবি করা হয়েছে, জ্বালানি সহযোগিতাই পুতিন-মোদি আলোচনার বড় অংশ দখল করবে। ভারতের ফার ইস্টে বিনিয়োগ, রাশিয়ার সঙ্গে বেসামরিক পারমাণবিক প্রকল্প এবং কুদানকুলাম প্রকল্পের সম্প্রসারণ নিয়ে অগ্রগতি পর্যালোচনা হবে। স্থানীয়ভাবে যন্ত্রাংশ উৎপাদন এবং তৃতীয় দেশে যৌথ পারমাণবিক প্রকল্প বাস্তবায়নের সম্ভাবনাও খতিয়ে দেখা হবে।
প্রতিরক্ষা সহযোগিতা এই সফরের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। ২০১৮ সালের ৫.৪ বিলিয়ন ডলারের চুক্তির আওতায় ভারতের হাতে ইতিমধ্যে রাশিয়ার তিনটি এস-৪০০ স্কোয়াড্রন এসেছে। যুদ্ধজনিত কারণে বাকিগুলোর সরবরাহে যুদ্ধজনিত বিলম্ব হচ্ছে। ভারত এই সরবরাহ দ্রুত নিশ্চিত করতে চাপ দেবে। পাশাপাশি আরও এস-৪০০ কেনার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া হয়নি, যদিও বৈঠক থেকে কোনো ঘোষণা হওয়ার সম্ভাবনা কম। রুশ নির্মিত এসইউ-৩০ এমকেআই যুদ্ধবিমান আপগ্রেড, অস্ত্র সরবরাহ দ্রুততর করা এবং যৌথ সামরিক মহড়ায় সমন্বয় জোরদার করার বিষয়েও আলোচনা হবে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভারত বহুজাতিক অস্ত্র সরবরাহকারীদের দিকে নজর বাড়ালেও রাশিয়া এখনো তাদের সবচেয়ে বড় প্রতিরক্ষা অংশীদার। পুতিনের সফরকে সেই সম্পর্কটি আরও দৃঢ় করার বড় সুযোগ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠককে ঘিরে দিল্লিতে শুরু হয়েছে কূটনৈতিক প্রস্তুতি। চলমান ইউক্রেন যুদ্ধ, যুক্তরাষ্ট্রের চাপ এবং জ্বালানির বাজারে অস্থিরতার মধ্যেই এই শীর্ষ সম্মেলন হতে যাচ্ছে। অর্থনীতি, প্রতিরক্ষা এবং জ্বালানি—এই তিনটি খাত আলোচনার কেন্দ্রে থাকবে বলে দুই দেশই নিশ্চিত করেছে।
রাষ্ট্রীয় সফরে বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) ভারতে পৌঁছে পরদিন শুক্রবার মোদির সঙ্গে বৈঠকে বসবেন পুতিন। এই বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের অগ্রগতি পর্যালোচনা ছাড়াও নতুন কয়েকটি আন্তদপ্তর ও বাণিজ্যিক চুক্তি স্বাক্ষরের সম্ভাবনা রয়েছে। রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখা এবং একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কৌশলগত অংশীদারত্ব ধরে রাখতে ভারতের নীতির জন্য এই বৈঠক একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রাশিয়া থেকে ডিসকাউন্টে ভারতের তেল কেনা দীর্ঘদিন ধরেই ওয়াশিংটনকে অসন্তুষ্ট করে আসছে। এই অসন্তুষ্টি থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি ভারতীয় পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন, যা মোট শুল্ককে ৫০ শতাংশে উন্নীত করেছে। তবে ভারত বলছে, তারা আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার বিরোধী নয়, কিন্তু ১৪০ কোটি মানুষের জ্বালানি চাহিদা মেটাতেই বাধ্য হয়ে রাশিয়া থেকে তেল আমদানি করা হচ্ছে। নতুন মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে ‘রসনেফত’ ও ‘লুকওইল’ এর মতো রাশিয়ার কিছু কোম্পানি থেকে ভারত তেল কিনবে না বলে জানিয়েছে। তবে নিষেধাজ্ঞামুক্ত রুশ সরবরাহকারীদের সঙ্গে বাণিজ্য চালু থাকবে।
পুতিনের এই সফরে দুই দেশের অর্থনৈতিক সহযোগিতার ওপর জোর দেওয়া হবে। ভারত রাশিয়ায় ওষুধ, কৃষিপণ্য ও টেক্সটাইল রপ্তানি বাড়াতে চায় এবং পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে শুল্কমুক্ত সুবিধা প্রদানের অনুরোধ জানাবে। এ ছাড়া সার সরবরাহের দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি এবং রাশিয়ায় ভারতীয় দক্ষ জনশক্তির নিরাপদ ও নিয়মিত অভিবাসন নিয়ে আলোচনা এগোতে পারে। দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য, সমুদ্র পরিবহন, স্বাস্থ্যসেবা ও গণমাধ্যম সহযোগিতা বিষয়ক নথিপত্র চূড়ান্তের কাজও চলছে।
বুধবার এই বিষয়ে যুক্তরাজ্যভিত্তিক ইনডিপেনডেন্টের এক নিবন্ধে দাবি করা হয়েছে, জ্বালানি সহযোগিতাই পুতিন-মোদি আলোচনার বড় অংশ দখল করবে। ভারতের ফার ইস্টে বিনিয়োগ, রাশিয়ার সঙ্গে বেসামরিক পারমাণবিক প্রকল্প এবং কুদানকুলাম প্রকল্পের সম্প্রসারণ নিয়ে অগ্রগতি পর্যালোচনা হবে। স্থানীয়ভাবে যন্ত্রাংশ উৎপাদন এবং তৃতীয় দেশে যৌথ পারমাণবিক প্রকল্প বাস্তবায়নের সম্ভাবনাও খতিয়ে দেখা হবে।
প্রতিরক্ষা সহযোগিতা এই সফরের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। ২০১৮ সালের ৫.৪ বিলিয়ন ডলারের চুক্তির আওতায় ভারতের হাতে ইতিমধ্যে রাশিয়ার তিনটি এস-৪০০ স্কোয়াড্রন এসেছে। যুদ্ধজনিত কারণে বাকিগুলোর সরবরাহে যুদ্ধজনিত বিলম্ব হচ্ছে। ভারত এই সরবরাহ দ্রুত নিশ্চিত করতে চাপ দেবে। পাশাপাশি আরও এস-৪০০ কেনার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া হয়নি, যদিও বৈঠক থেকে কোনো ঘোষণা হওয়ার সম্ভাবনা কম। রুশ নির্মিত এসইউ-৩০ এমকেআই যুদ্ধবিমান আপগ্রেড, অস্ত্র সরবরাহ দ্রুততর করা এবং যৌথ সামরিক মহড়ায় সমন্বয় জোরদার করার বিষয়েও আলোচনা হবে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভারত বহুজাতিক অস্ত্র সরবরাহকারীদের দিকে নজর বাড়ালেও রাশিয়া এখনো তাদের সবচেয়ে বড় প্রতিরক্ষা অংশীদার। পুতিনের সফরকে সেই সম্পর্কটি আরও দৃঢ় করার বড় সুযোগ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
আত্মহত্যাকে শুধু ব্যক্তির সংকট হিসেবে দেখার একটা প্রবণতা আছে। কিন্তু আত্মহত্যার প্রবণতায় রয়েছে ঋতুভিত্তিক ভেদ। একেক দেশে আবার একেক রকম। আবার এক দেশের সবখানেও প্রবণতায় হেরফের আছে। যেমন বাংলাদেশের আত্মহত্যাপ্রবণ অন্যতম দুটি জেলা ঝিনাইদহ ও ঠাকুরগাঁও।
১০ সেপ্টেম্বর ২০২১
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতদের মধ্যে ইউক্রেন শান্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনা হলেও প্রকাশ্যে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইউরি উশাকভ, এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন যে অমীমাংসিত ‘আঞ্চলিক সমস্যাই’ মূল বাধা। আর এই অঞ্চল আর কোনোটিই নয়, দোনেৎস্ক।
২০ ঘণ্টা আগে
বিশ্বজুড়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন উঠে আসছে—‘যদি বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ সীমিত করা হয়, অথবা এই শ্রেণিটিকেই সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়, তবে কী ঘটবে?’ পশ্চিমা দেশগুলোতে চরম ধনী বা বিলিয়নিয়ারদের সংখ্যা ও প্রভাব বাড়তে থাকায় এখন এই প্রশ্ন আরও জোরালো হয়েছে।
১ দিন আগে
জাপানের ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর গত অক্টোবরে দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন সানায়ে তাকাইচি। এরপরই তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত হন জাপানের নতুন ‘আয়রন লেডি’ বা লৌহমানবী’ হিসেবে।
১ দিন আগে