Ajker Patrika

পঞ্চগড়ে সংঘর্ষ: আতঙ্কে এলাকায় ফিরছেন না ক্ষতিগ্রস্তরা

শিপুল ইসলাম, পঞ্চগড় থেকে 
পঞ্চগড়ে সংঘর্ষ: আতঙ্কে এলাকায় ফিরছেন না ক্ষতিগ্রস্তরা

পোড়া গন্ধ বাতাসে উড়ছে। পড়ে আছে ছাই আর কাঠ-কয়লা। কোলাহল, পদচারণা নেই সাধারণ মানুষের। যে দিকে চোখ যায় শুধু পুলিশ, বিজিবি আর র‍্যাব সদস্যরা। পঞ্চগড়ের আহমদিয়া জামায়াতের ‘সালানা জলসা’কে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ, নিহত, অগ্নিসংযোগ, লুটপাটের ঘটনার চার দিন পরও এমন অবস্থা দেখা গেছে গ্রামগুলো ঘুরে। তবে রোববার থেকে শহরের সবকিছু স্বাভাবিক রয়েছে। খুলেছে দোকানপাট। এ ঘটনায় বিরোধী দলগুলো প্রশাসনের দুর্বলতার কথা বলছে। আর ক্ষমতাসীন দলের নেতারা দুষছেন বিএনপি-জামাতকে।

পঞ্চগড় সদর উপজেলার ধাক্কামারা ইউনিয়ন ও বোদা উপজেলার বিংহারী ইউনিয়নের করতোয়া নদীর দক্ষিণ ধারে ৫ কিলোমিটার জুড়ে আহমদনগর, ফুলতলা, সালসিড়ি, গোয়ালপাড়া, সোনাতলা গ্রামের তিন হাজার আহমদিয়া সম্প্রদায়ের পরিবারের বসবাস। গত শুক্রবার ‘সালানা জলসা’ বন্ধের ঘটনাকে কেন্দ্র করে গ্রামগুলোর ১৭৯টি পরিবারে অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর, লুটপাট করেন দুর্বৃত্তরা। এরপর শনিবার ফের গুজব রটিয়ে হামলা চালায়, গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে। এ ঘটনার পর গ্রাম ছেড়েছেন আহমদিয়ারা। ফের হামলার আতঙ্কে গ্রামে ফিরছেন না কেউ। 

ঘটনার চার দিনেও সরকারি কোনো সহায়তা দেওয়া হয়নি। তবে আজ সোমবার সকালে হামলার শিকার এলাকা পরিদর্শনে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের ঘর বাড়ি সংস্কারের আশ্বাস দেন রেলপথমন্ত্রী ও পঞ্চগড় জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাড নুরুল ইসলাম সুজন। এ সময় তিনি আহমদিয়া নেতাদের হাতে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ব্যক্তিগত উদ্যোগে এক লাখ টাকা, শাড়ি ও কম্বল দেন। 

এ সময় রংপুরের বিভাগীয় কমিশনার সাবিরুল ইসলাম, রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি আবদুল আলিম মাহমুদ, পঞ্চগড়ের জেলা প্রশাসক জহুরুল ইসলাম, পুলিশ সুপার এমএম সিরাজুল হুদা, আহমদিয়া মুসলিম জামাতের বহিঃসম্পর্ক, গণসংযোগ ও প্রেস বিভাগের প্রধান আহমদ তবশির চৌধুরী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাসহ আহমদিয়া জামায়াতের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। 

এ সময় মন্ত্রী বলেন, একটি গোষ্ঠী সব সময় ধর্মকে ব্যবহার করে আসছে। তারা ধর্মের দোহাই দিয়ে নানা ফৌজদারি অপরাধ ঘটাচ্ছে। পঞ্চগড়ে তৌহিদী জনতার ব্যানারে বিএনপি-জামাত যে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে তা একাত্তরের নৃশংসতাকেও হার মানায়। বিএনপি-জামাত নামে-বেনামে গুপ্ত হামলা করে মানুষের মনে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে। 

গত শুক্রবারের হামলার জন্য বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতারা প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে দায়ী করেছে। পঞ্চগড় জেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক আবু সালেক জানান, প্রতি বছরই আহমদিয়া সম্প্রদায় তাদের ধর্মীয় কর্মকাণ্ডের অংশ হিসেবে জলসা করে আসছে। কিন্তু স্থানীয় মুসল্লিরা তা মেনে নিতে চায় না। প্রশাসনের দুর্বলতা রয়েছে, আগে থেকে ব্যবস্থা নিলে জানমালের ক্ষতি হতো না। তবে প্রকৃত দোষীদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে হবে। 

জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার সাদাত সম্রাট বলেন, বিএনপি জামায়াতের লোকজনই এই তাণ্ডব চালিয়েছে। অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টিসহ লুটপাটের উদ্দেশ্যেই তাঁরা এ ঘটনা ঘটায়।

আজ সোমবার সকালে হামলার শিকার এলাকা পরিদর্শনে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের ঘর বাড়ি সংস্কারের আশ্বাস দেন রেলপথমন্ত্রী ও পঞ্চগড় জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাড নুরুল ইসলাম সুজনসাবেক সাংসদ ও কেন্দ্রীয় জাসদের সেক্রেটারি নাজমুল হক প্রধান বলেন, ২০১৮ সালের নির্বাচনের পর সেখানে এমন ঘটনা ঘটেছিল। প্রশাসন নীরব দর্শক ছিল মাত্র। এবারেও একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটেছে।

পঞ্চগড়-১ আসনের এমপি ও জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি মজাহারুল হক প্রধান বলেন, বিষয়টি দুঃখজনক। হামলাকারীদের হাতে অস্ত্র ও মুখে গামছা প্যাঁচানো ছিল। বহিরাগতরা পরিকল্পিতভাবে এই হামলা চালিয়েছে। তবে প্রশাসন চেষ্টা করলে বিষয়টি এত দূর গড়াতো না।

এদিকে কথা হলে সম্মিলিত খতমে নবুয়ত সংরক্ষণ পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আবদুল্লাহ বলেন, আহমদিয়াদের জলসা বন্ধ নিয়ে যে হামলা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। এমন পরিস্থিতি আমরা চাইনি। জলসা বন্ধসহ তাদের অমুসলিম ঘোষণার দাবিতে বিক্ষোভ করেছি মাত্র। 

ইমান-আকিদা রক্ষা কমিটির সভাপতি ড. আবদুর রহমান বলেন, তৃতীয় কোনো শক্তি সুযোগকে কাজে লাগিয়ে হামলা ও লুটপাটের ঘটনা ঘটিয়েছে। আমরা শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করে ফিরে এসেছি। এরপর কি ঘটেছে, কারা ঘটিয়েছে তা আমরা জানি না।

ইমাম-মুয়াজ্জিন কল্যাণ সমিতির সভাপতি হাফেজ মোহাম্মদ সাইফুর রহমান বলেন, হামলার উদ্দেশ্যে আমরা বিক্ষোভ করিনি। আমরা শুধু জলসা বন্ধ করতে চেয়েছি। তবে প্রশাসন বৃহস্পতিবারের আবেদনের প্রেক্ষিতে যদি পদক্ষেপ নিয়ে জলসা বন্ধ করত তাহলে তৃতীয় শক্তি এই হামলার সুযোগ পেত না।
    
আজ সোমবার বিকেল পর্যন্ত সরেজমিনে দেখা গেছে, পুড়ে যাওয়া ও হামলার শিকার ঘরবাড়িগুলোর ধ্বংসস্তূপ পড়ে আছে। যে বাড়িগুলোতে হামলা চালানো হয়নি তাঁরা বাড়িতে থাকলেও তেমন বাইরে বের হচ্ছে না। বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। গ্রাম পুলিশেরা এলাকাগুলো ঘুরে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করছেন।
    
ফুলতলা গ্রামের স্বামীহারা গৃহবধূ তহুরা বেগম বলেন, ‘স্বামী ছাইড়া গেছে চাইর বছর। দুই ছাওয়াল নিয়া বাবার একটা ভাঙা ঘরে সেলাই করি পেট চালাইতাম। ওরা আগুন দিয়া সব পুড়াই দিছে। চার দিন থাকি একবেলা খিচড়ি খায়া আছি। সরকারি কোনো লোক আইসে নাই। সহযোগিতা করে নাই। আমার বাঁচার সম্বল হারাই গেছে।’

তহুরার বাবা-ভাইসহ পরিবারের ৫টি ঘরের সব পুড়ে গেছে। কিন্তু দুই হাত গাঁ ঘেঁষা রমিছা বেগমের বাড়িতে কোনো আঘাতের চিহ্ন নেই। কথা হলে রমিছা বেগম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘চোখের সামনে দাউ দাউ করি সব পুড়ছে। কিছুই কইরার পাই নাই। মুখে-চোখে কাপড় বান্ধি ডিজেল-পেট্রল, মবিল ছিটিয়া আগুন ধরা দিছে।’

তহুরার পাশেই রওশন আরার বাড়ি। আহমদিয়া সম্প্রদায়ে নয় তাই তাঁর বাড়িও বেঁচে গেছে। প্রত্যক্ষদর্শী এই নারী বলেন, ‘হু হু করে ১৮-৪৫ বছর বয়সী লোকজন গ্রামে ঢুকে পড়ে। আহমদিয়ারা তখন জলসায়। এমন অবস্থা যে, তাঁদের ঘরে কেউ থাকলে তাঁরাসহ পুড়ে যেত। জুস, আরসির বোতলে পেট্রল ছিটিয়ে আগুন লাগায় তাঁরা। ঘরহারা মানুষগুলো এখন গ্রাম ছেড়ে রংপুর, ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে চলে গেছে। কারেন্ট নাই, অন্ধকারে ফাঁকা গ্রামে রাতের বেলায় খুব ভয় হয়। কেউ যদি ক্ষতি করে।’ 
    
ওই গ্রামের সুজন আলী এনজিও থেকে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে ইজিবাইক কিনেছিলেন। আগুনে তাঁর বাড়িঘরসহ ইজিবাইকটি পুড়ে গেছে। এখন পড়নে শার্ট-লুঙ্গি ছাড়া কিছুই নেই। সুজন আলী জানান, সপ্তাহে ৪ হাজার ৬০০ টাকা কিস্তি। আইজ (সোমবার) সকালে ফিল্ডম্যান আসছিল, ঘুরে গেছে। এই ঋণ এখন কীভাবে শোধ করব ভেবে পাচ্ছি না। সরকারের সহযোগিতা দরকার। 
    
ঘটনার চার দিনেও সরকারি কোনো সহযোগিতা ক্ষতিগ্রস্তরা না পেলেও বিকেল ৩টার দিকে ফুলতলা বাজার এলাকা বিংহারী ইউনিয়নের এক গ্রামপুলিশকে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করতে দেখা যায়। এ সময় গ্রাম পুলিশ আজগার আলী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ইউএনওর নির্দেশে চেয়ারম্যান আমাদের ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করতে পাঠিয়েছে। আমরা গ্রাম ঘুরে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করছি। তবে অধিকাংশ বাড়িতে লোকজন না থাকায় তালিকা করতে সময় লাগছে।’ 
    
আহমদিয়া মুসলিম জামাতের সালানা জলসার আহ্বায়ক আহমদ তবশির চৌধুরী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘থাকার জায়গা ও নিরাপত্তা নেই। তাই লোকজন বাড়ি ফিরছেন না। ১৭৯টি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাঁরা নিরাপদ স্থানে চলে গেছেন। যে দুই চারজন মসজিদে আছেন তাদের আমরা খিচুড়ি রান্না করে খাওয়াচ্ছি। পুনর্বাসন না হওয়া পর্যন্ত কেউ ঘরে ফিরতে চাচ্ছেন না। একটি হত্যা মামলা থানায় নথিভুক্ত হয়েছে। অন্যান্য মামলাগুলো দায়ের প্রক্রিয়া চলছে।’
    
পুলিশ বলছে, ‘সালানা জলসা’ বন্ধকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ, হত্যা, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, সরকারি কাজে বাঁধা ও গুজব রটানোসহ পৃথক ৬টি মামলায় নাম ও অজ্ঞাত ৮ হাজার ২০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৮১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ৬টি মামলার মধ্যে পুলিশের পক্ষ থেকে ৪টি, একটি র‍্যাব-১৩ ও আহমদিয়া সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে ১টি মামলা দায়ের করা হয়। এর মধ্যে শনিবার ৩টি ও রোববার ৩টি মামলা করা হয়।

পঞ্চগড়ের পুলিশ সুপার এস এম সিরাজুল হুদা বলেন, ৬টি মামলায় ৮১ জন এ পর্যন্ত গ্রেপ্তার হয়েছে। নিরপরাধ সাধারণ মানুষ যাতে হয়রানির শিকার না হয় সে জন্য ভিডিও ফুটেজ দেখে, সুনির্দিষ্ট গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে এবং যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে আসামিদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। বর্তমানে পুলিশি নিয়ন্ত্রণে জেলার পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।

উল্লেখ্য, ‘সালানা জলসা’ বন্ধের দাবিতে গত বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে শহরের চৌরঙ্গী মোড়ে ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশের পঞ্চগড় শাখা, সম্মিলিত খতমে নবুয়ত সংরক্ষণ পরিষদ, ইমান-আকিদা রক্ষা কমিটি, ইমাম-মুয়াজ্জিন কল্যাণ সমিতি, পঞ্চগড় কওমি ওলামা পরিষদ ও জাতীয় ওলামা-মাশায়েখ আইম্মা পরিষদের নেতা-কর্মীরা জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি দেয়।

এরপর শুক্রবার বিক্ষোভ মিছিল করেন ইসলামি আন্দোলনসহ ধর্মভিত্তিক কয়েকটি সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। এ সময় মিছিলে বাধা দেওয়ায় বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে দুজন নিহত হয়েছেন। এরপর শনিবার রাতে ফের গুজব রটিয়ে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার পর পুরো এলাকায় ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়। গতকাল রোববার ৩৬ ঘণ্টা পর ইন্টারনেট সেবা সচল করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

চট্টগ্রাম-১৫ আসন

বিএনপির প্রার্থীকে জামায়াত মনোনীত উল্লেখ নির্বাচন কর্মকর্তার ছকে

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
বিএনপির প্রার্থীকে জামায়াত মনোনীত উল্লেখ নির্বাচন কর্মকর্তার ছকে

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া) আসন থেকে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী নাজমুল মোস্তাফা আমীনকে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী হিসেবে উল্লেখ করেছে জেলা রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়। এ ঘটনায় বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে।

বুধবার লোহাগাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয় থেকে নাজমুল মোস্তাফা আমীন মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন। তিনি বিএনপির প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করলেও পরে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো তথ্যে তাঁকে জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী হিসেবে উল্লেখ করা হয়।

জেলা রিটার্নিং অফিসারের তথ্যমতে, বুধবার চট্টগ্রামের ১৬টি সংসদীয় আসন থেকে মোট ১২ জন প্রার্থী মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। তাঁদের মধ্যে বিএনপির ৭ জন, জামায়াতে ইসলামীর ১ জন, এলডিপির ১ জন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের ১ জন এবং স্বতন্ত্র ২ জন রয়েছেন।

বুধবার সন্ধ্যা ৬টা ১৫ মিনিটে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয় থেকে পাঠানো তথ্যে উল্লেখ করা হয়, চট্টগ্রাম-১৫ আসন থেকে দুজন প্রার্থী মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। তাঁদের মধ্যে মুজিবুর রহমানকে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের এবং নাজমুল মোস্তাফা আমীনকে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী হিসেবে দেখানো হয়।

তবে চট্টগ্রাম-১৫ আসনে বিএনপির পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে নাজমুল মোস্তাফা আমীনকে।

এ বিষয়ে লোহাগাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং অফিসার মো. সাইফুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, উপজেলা থেকে নাজমুল মোস্তাফা আমীনকে বিএনপি প্রার্থী হিসেবে উল্লেখ করেই রিটার্নিং অফিসারের কাছে তথ্য পাঠানো হয়েছে।

এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং অফিসার মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞার সঙ্গে একাধিকবার মোবাইল ফোন ও হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।

বিএনপি মনোনীত প্রার্থী নাজমুল মোস্তাফা আমীন বলেন, যথাযথভাবে মনোনয়ন ফরম পূরণ ও জমা দেওয়ার পরও তাঁকে অন্য দলের প্রার্থী হিসেবে উল্লেখ করা দুঃখজনক ও মানহানিকর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

জনগণ নির্বাচনমুখী হলে কেউ বাধা দিতে পারবে না: জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী

মুন্সিগঞ্জ প্রতিনিধি
সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন স্বরাষ্ট্র ও কৃষি উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। ছবি: আজকের পত্রিকা
সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন স্বরাষ্ট্র ও কৃষি উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। ছবি: আজকের পত্রিকা

স্বরাষ্ট্র ও কৃষি উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, জনগণ যখন নির্বাচনমুখী হবে, সে সময় তাদের কেউ বাধা দিয়ে রাখতে পারবে না। নির্বাচন ভালোভাবে হয়ে যাবে। তিনি বলেন, ‘এখন দলগুলো যদি একজন আরেকজনের সঙ্গে প্রতিযোগিতা না করে সহাবস্থানে থাকে, তাহলে আমাদের জন্য ভালো।’

আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলার রাজদিয়া আব্দুল জব্বার পাইলট বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে চারতলা ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা শেষে সাংবাদিকদের জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী এসব কথা বলেন।

উপদেষ্টা বলেন, ‘নির্বাচনকে ঘিরে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন সাংবাদিকেরা। আপনারা যদি বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রকাশ করেন এবং জনগণকে সঠিক তথ্য দিয়ে উদ্বুদ্ধ করেন, তাহলে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি আপনাদের মাধ্যমে দেশবাসীর কাছে অনুরোধ জানাতে চাই, ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদির সুস্থতার জন্য সবাই দোয়া করবেন, যেন তিনি দ্রুত সুস্থ হয়ে আমাদের মাঝে ফিরে আসতে পারেন।’

কৃষি প্রসঙ্গে জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ‘এবার আলুচাষিরা লোকসানের মাথায়, আমরা একটা প্রণোদনা দেওয়ার চিন্তাভাবনা করছি। এবার আলুচাষিরা শুধু মুন্সিগঞ্জে না, সব জায়গায় লোকসানের সম্মুখীন। কোল্ড স্টোরেজগুলো বন্ধ করার কথা ছিল নভেম্বরে, আমরা বলছি যে ডিসেম্বর পর্যন্ত খোলা রাখতে হবে।’ আলুতে লোকসান হলেও এ বছর ধান উৎপাদনে ভালো ফলন হয়েছে বলে জানান তিনি।

এর আগে স্বরাষ্ট্র ও কৃষি উপদেষ্টা সিরাজদিখান উপজেলার কুসুমপুর উচ্চবিদ্যালয় ও কুসুমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ইছাপুরা সরকারি মডেল উচ্চবিদ্যালয়, বিক্রমপুর কুঞ্জবিহারী সরকারি কলেজের ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি রেজাউল করিম মল্লিক, জেলা প্রশাসক সৈয়দা নুরমহল আশরাফী, মুন্সিগঞ্জ জেলার পুলিশ সুপার মেনহাজুল আলম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম) ফিরোজ কবির, সিরাজদিখান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুম্পা ঘোষ, সহকারী কমিশনার (ভূমি) তৌহিদুল ইসলাম বারী, সিরাজদিখান সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার আনোয়ার পারভেজ ও থানার ওসি আব্দুল হান্নান, বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল কুদ্দুস ধীরেনসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। উল্লেখ্য, উপজেলার পাঁচটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ৬ কোটি ৭৪ লাখ টাকার উন্নয়নকাজ হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নিরাপত্তার ঘেরাটোপে সর্বসাধারণের চলাচল যেন ব্যাহত না হয়: ডিএমপি কমিশনার

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ডিএমপি সদর দপ্তরে আজ বৃহস্পতিবার আয়োজিত সভায় কথা বলেন ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী। ছবি: আজকের পত্রিকা
ডিএমপি সদর দপ্তরে আজ বৃহস্পতিবার আয়োজিত সভায় কথা বলেন ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী। ছবি: আজকের পত্রিকা

ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী বলেছেন, স্বাভাবিক পরিস্থিতি বজায় রেখে জননিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। নিরাপত্তার ঘেরাটোপে যেন সর্বসাধারণের স্বাভাবিক চলাচল ব্যাহত না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। পবিত্র বড়দিন যেন ভাবগাম্ভীর্য ও উৎসবমুখর পরিবেশে পালিত হয়, সে লক্ষ্যে পর্যাপ্ত নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

২৫ ডিসেম্বর খ্রিষ্ট ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় উৎসব বড়দিন এবং ইংরেজি বর্ষবিদায় ও নববর্ষ উপলক্ষে ডিএমপি সদর দপ্তরে আজ আয়োজিত সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

ডিএমপি কমিশনার বলেন, ঢাকা মহানগরীতে ৭৩টি গির্জায় বড়দিন উপলক্ষে ধর্মীয় অনুষ্ঠান হবে। এ জন্য যেকোনো গুজব বা অপপ্রচার রোধে সাইবার প্যাট্রলিং জোরদার করা হয়েছে এবং গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।

সাজ্জাত আলী বলেন, আগামী দিনে রাজধানীতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ইভেন্ট রয়েছে। থার্টি ফার্স্ট নাইট উপলক্ষে যেন কোনো রকম অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে, সে জন্য সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে। এ ছাড়া মোটরকার রেসিং থেকে বিরত থাকার জন্য নগরবাসীকে অনুরোধ জানান তিনি। থার্টি ফার্স্ট নাইটে কেউ মোটর রেসিং করলে তাঁর গাড়ি জব্দ করা হবে বলেও জানান তিনি।

সভায় অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (প্রশাসন) মো. সরওয়ার বলেন, থার্টি ফার্স্ট নাইট উপলক্ষে যেকোনো অনুষ্ঠানের জন্য আগে থেকে অনুমতি নিতে হবে।

অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) এস এন মো. নজরুল ইসলাম বলেন, নিরাপত্তার বিষয়ে কোনো শৈথিল্য প্রদর্শন করা যাবে না। পটকা ও বিস্ফোরক দ্রব্য কেনাবেচা বন্ধ রাখতে হবে।

সভায় খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের নেতারা ছাড়াও অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম) মো. মাসুদ করিম, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) মো. আনিছুর রহমান এবং ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার, উপপুলিশ কমিশনার ও সংশ্লিষ্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

সিলেটে দুই মোটরসাইকেলের সংঘর্ষে নিহত তিন

সিলেট প্রতিনিধি
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

সিলেটের গোলাপগঞ্জে দুই মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে তিনজন নিহত হয়েছেন। গতকাল বুধবার দিবাগত রাতে উপজেলার গোলাপগঞ্জ সদর ইউনিয়নের উত্তর গোয়াসপুর এলাকার সিলেট-জকিগঞ্জ সড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে। এতে আরও একজন আহত হয়েছেন।

নিহতরা হলেন গোলাপগঞ্জ সদর ইউনিয়নের গোয়াসপুর গ্রামের আব্দুল আহাদ (৪২), উপজেলার রানাপিং ছত্রিশ গ্রামের সাব্বির আহমদ (২১) এবং সদর ইউনিয়নের ফাজিলপুর গ্রামের আরিফুল হক জয় (৩৫)। দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন মৌলভীবাজারের জুড়ি উপজেলার বাছিরপুর গ্রামের বাছিরপুর গ্রামের জাকির আহমদ (২০)।

পুলিশ জানায়, গতকাল রাত ১২টার দিকে উত্তর গোয়াসপুর এলাকায় সিলেট থেকে গোলাপগঞ্জগামী মোটরসাইকেলের সঙ্গে বিপরীত দিক থেকে আসা আরেকটি মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে দুই মোটরসাইকেলের চার আরোহী গুরুতর আহত হন। পরে তাঁদের উদ্ধার করে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান স্থানীয়রা। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আবদুল আহাদ ও সাব্বির আহমদের মৃত্যু হয়। পরে ওই রাতেই আরিফুল হক জয়ের মৃত্যু হয়।

এ তথ্য নিশ্চিত করে গোলাপগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আরিফুল ইসলাম জানান, এ ঘটনায় আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন। আহত ব্যক্তির অবস্থাও গুরুতর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত