Ajker Patrika

পঞ্চগড়ে সংঘর্ষ: আতঙ্কে এলাকায় ফিরছেন না ক্ষতিগ্রস্তরা

শিপুল ইসলাম, পঞ্চগড় থেকে 
পঞ্চগড়ে সংঘর্ষ: আতঙ্কে এলাকায় ফিরছেন না ক্ষতিগ্রস্তরা

পোড়া গন্ধ বাতাসে উড়ছে। পড়ে আছে ছাই আর কাঠ-কয়লা। কোলাহল, পদচারণা নেই সাধারণ মানুষের। যে দিকে চোখ যায় শুধু পুলিশ, বিজিবি আর র‍্যাব সদস্যরা। পঞ্চগড়ের আহমদিয়া জামায়াতের ‘সালানা জলসা’কে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ, নিহত, অগ্নিসংযোগ, লুটপাটের ঘটনার চার দিন পরও এমন অবস্থা দেখা গেছে গ্রামগুলো ঘুরে। তবে রোববার থেকে শহরের সবকিছু স্বাভাবিক রয়েছে। খুলেছে দোকানপাট। এ ঘটনায় বিরোধী দলগুলো প্রশাসনের দুর্বলতার কথা বলছে। আর ক্ষমতাসীন দলের নেতারা দুষছেন বিএনপি-জামাতকে।

পঞ্চগড় সদর উপজেলার ধাক্কামারা ইউনিয়ন ও বোদা উপজেলার বিংহারী ইউনিয়নের করতোয়া নদীর দক্ষিণ ধারে ৫ কিলোমিটার জুড়ে আহমদনগর, ফুলতলা, সালসিড়ি, গোয়ালপাড়া, সোনাতলা গ্রামের তিন হাজার আহমদিয়া সম্প্রদায়ের পরিবারের বসবাস। গত শুক্রবার ‘সালানা জলসা’ বন্ধের ঘটনাকে কেন্দ্র করে গ্রামগুলোর ১৭৯টি পরিবারে অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর, লুটপাট করেন দুর্বৃত্তরা। এরপর শনিবার ফের গুজব রটিয়ে হামলা চালায়, গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে। এ ঘটনার পর গ্রাম ছেড়েছেন আহমদিয়ারা। ফের হামলার আতঙ্কে গ্রামে ফিরছেন না কেউ। 

ঘটনার চার দিনেও সরকারি কোনো সহায়তা দেওয়া হয়নি। তবে আজ সোমবার সকালে হামলার শিকার এলাকা পরিদর্শনে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের ঘর বাড়ি সংস্কারের আশ্বাস দেন রেলপথমন্ত্রী ও পঞ্চগড় জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাড নুরুল ইসলাম সুজন। এ সময় তিনি আহমদিয়া নেতাদের হাতে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ব্যক্তিগত উদ্যোগে এক লাখ টাকা, শাড়ি ও কম্বল দেন। 

এ সময় রংপুরের বিভাগীয় কমিশনার সাবিরুল ইসলাম, রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি আবদুল আলিম মাহমুদ, পঞ্চগড়ের জেলা প্রশাসক জহুরুল ইসলাম, পুলিশ সুপার এমএম সিরাজুল হুদা, আহমদিয়া মুসলিম জামাতের বহিঃসম্পর্ক, গণসংযোগ ও প্রেস বিভাগের প্রধান আহমদ তবশির চৌধুরী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাসহ আহমদিয়া জামায়াতের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। 

এ সময় মন্ত্রী বলেন, একটি গোষ্ঠী সব সময় ধর্মকে ব্যবহার করে আসছে। তারা ধর্মের দোহাই দিয়ে নানা ফৌজদারি অপরাধ ঘটাচ্ছে। পঞ্চগড়ে তৌহিদী জনতার ব্যানারে বিএনপি-জামাত যে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে তা একাত্তরের নৃশংসতাকেও হার মানায়। বিএনপি-জামাত নামে-বেনামে গুপ্ত হামলা করে মানুষের মনে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে। 

গত শুক্রবারের হামলার জন্য বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতারা প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে দায়ী করেছে। পঞ্চগড় জেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক আবু সালেক জানান, প্রতি বছরই আহমদিয়া সম্প্রদায় তাদের ধর্মীয় কর্মকাণ্ডের অংশ হিসেবে জলসা করে আসছে। কিন্তু স্থানীয় মুসল্লিরা তা মেনে নিতে চায় না। প্রশাসনের দুর্বলতা রয়েছে, আগে থেকে ব্যবস্থা নিলে জানমালের ক্ষতি হতো না। তবে প্রকৃত দোষীদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে হবে। 

জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার সাদাত সম্রাট বলেন, বিএনপি জামায়াতের লোকজনই এই তাণ্ডব চালিয়েছে। অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টিসহ লুটপাটের উদ্দেশ্যেই তাঁরা এ ঘটনা ঘটায়।

আজ সোমবার সকালে হামলার শিকার এলাকা পরিদর্শনে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের ঘর বাড়ি সংস্কারের আশ্বাস দেন রেলপথমন্ত্রী ও পঞ্চগড় জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাড নুরুল ইসলাম সুজনসাবেক সাংসদ ও কেন্দ্রীয় জাসদের সেক্রেটারি নাজমুল হক প্রধান বলেন, ২০১৮ সালের নির্বাচনের পর সেখানে এমন ঘটনা ঘটেছিল। প্রশাসন নীরব দর্শক ছিল মাত্র। এবারেও একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটেছে।

পঞ্চগড়-১ আসনের এমপি ও জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি মজাহারুল হক প্রধান বলেন, বিষয়টি দুঃখজনক। হামলাকারীদের হাতে অস্ত্র ও মুখে গামছা প্যাঁচানো ছিল। বহিরাগতরা পরিকল্পিতভাবে এই হামলা চালিয়েছে। তবে প্রশাসন চেষ্টা করলে বিষয়টি এত দূর গড়াতো না।

এদিকে কথা হলে সম্মিলিত খতমে নবুয়ত সংরক্ষণ পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আবদুল্লাহ বলেন, আহমদিয়াদের জলসা বন্ধ নিয়ে যে হামলা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। এমন পরিস্থিতি আমরা চাইনি। জলসা বন্ধসহ তাদের অমুসলিম ঘোষণার দাবিতে বিক্ষোভ করেছি মাত্র। 

ইমান-আকিদা রক্ষা কমিটির সভাপতি ড. আবদুর রহমান বলেন, তৃতীয় কোনো শক্তি সুযোগকে কাজে লাগিয়ে হামলা ও লুটপাটের ঘটনা ঘটিয়েছে। আমরা শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করে ফিরে এসেছি। এরপর কি ঘটেছে, কারা ঘটিয়েছে তা আমরা জানি না।

ইমাম-মুয়াজ্জিন কল্যাণ সমিতির সভাপতি হাফেজ মোহাম্মদ সাইফুর রহমান বলেন, হামলার উদ্দেশ্যে আমরা বিক্ষোভ করিনি। আমরা শুধু জলসা বন্ধ করতে চেয়েছি। তবে প্রশাসন বৃহস্পতিবারের আবেদনের প্রেক্ষিতে যদি পদক্ষেপ নিয়ে জলসা বন্ধ করত তাহলে তৃতীয় শক্তি এই হামলার সুযোগ পেত না।
    
আজ সোমবার বিকেল পর্যন্ত সরেজমিনে দেখা গেছে, পুড়ে যাওয়া ও হামলার শিকার ঘরবাড়িগুলোর ধ্বংসস্তূপ পড়ে আছে। যে বাড়িগুলোতে হামলা চালানো হয়নি তাঁরা বাড়িতে থাকলেও তেমন বাইরে বের হচ্ছে না। বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। গ্রাম পুলিশেরা এলাকাগুলো ঘুরে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করছেন।
    
ফুলতলা গ্রামের স্বামীহারা গৃহবধূ তহুরা বেগম বলেন, ‘স্বামী ছাইড়া গেছে চাইর বছর। দুই ছাওয়াল নিয়া বাবার একটা ভাঙা ঘরে সেলাই করি পেট চালাইতাম। ওরা আগুন দিয়া সব পুড়াই দিছে। চার দিন থাকি একবেলা খিচড়ি খায়া আছি। সরকারি কোনো লোক আইসে নাই। সহযোগিতা করে নাই। আমার বাঁচার সম্বল হারাই গেছে।’

তহুরার বাবা-ভাইসহ পরিবারের ৫টি ঘরের সব পুড়ে গেছে। কিন্তু দুই হাত গাঁ ঘেঁষা রমিছা বেগমের বাড়িতে কোনো আঘাতের চিহ্ন নেই। কথা হলে রমিছা বেগম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘চোখের সামনে দাউ দাউ করি সব পুড়ছে। কিছুই কইরার পাই নাই। মুখে-চোখে কাপড় বান্ধি ডিজেল-পেট্রল, মবিল ছিটিয়া আগুন ধরা দিছে।’

তহুরার পাশেই রওশন আরার বাড়ি। আহমদিয়া সম্প্রদায়ে নয় তাই তাঁর বাড়িও বেঁচে গেছে। প্রত্যক্ষদর্শী এই নারী বলেন, ‘হু হু করে ১৮-৪৫ বছর বয়সী লোকজন গ্রামে ঢুকে পড়ে। আহমদিয়ারা তখন জলসায়। এমন অবস্থা যে, তাঁদের ঘরে কেউ থাকলে তাঁরাসহ পুড়ে যেত। জুস, আরসির বোতলে পেট্রল ছিটিয়ে আগুন লাগায় তাঁরা। ঘরহারা মানুষগুলো এখন গ্রাম ছেড়ে রংপুর, ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে চলে গেছে। কারেন্ট নাই, অন্ধকারে ফাঁকা গ্রামে রাতের বেলায় খুব ভয় হয়। কেউ যদি ক্ষতি করে।’ 
    
ওই গ্রামের সুজন আলী এনজিও থেকে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে ইজিবাইক কিনেছিলেন। আগুনে তাঁর বাড়িঘরসহ ইজিবাইকটি পুড়ে গেছে। এখন পড়নে শার্ট-লুঙ্গি ছাড়া কিছুই নেই। সুজন আলী জানান, সপ্তাহে ৪ হাজার ৬০০ টাকা কিস্তি। আইজ (সোমবার) সকালে ফিল্ডম্যান আসছিল, ঘুরে গেছে। এই ঋণ এখন কীভাবে শোধ করব ভেবে পাচ্ছি না। সরকারের সহযোগিতা দরকার। 
    
ঘটনার চার দিনেও সরকারি কোনো সহযোগিতা ক্ষতিগ্রস্তরা না পেলেও বিকেল ৩টার দিকে ফুলতলা বাজার এলাকা বিংহারী ইউনিয়নের এক গ্রামপুলিশকে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করতে দেখা যায়। এ সময় গ্রাম পুলিশ আজগার আলী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ইউএনওর নির্দেশে চেয়ারম্যান আমাদের ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করতে পাঠিয়েছে। আমরা গ্রাম ঘুরে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করছি। তবে অধিকাংশ বাড়িতে লোকজন না থাকায় তালিকা করতে সময় লাগছে।’ 
    
আহমদিয়া মুসলিম জামাতের সালানা জলসার আহ্বায়ক আহমদ তবশির চৌধুরী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘থাকার জায়গা ও নিরাপত্তা নেই। তাই লোকজন বাড়ি ফিরছেন না। ১৭৯টি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাঁরা নিরাপদ স্থানে চলে গেছেন। যে দুই চারজন মসজিদে আছেন তাদের আমরা খিচুড়ি রান্না করে খাওয়াচ্ছি। পুনর্বাসন না হওয়া পর্যন্ত কেউ ঘরে ফিরতে চাচ্ছেন না। একটি হত্যা মামলা থানায় নথিভুক্ত হয়েছে। অন্যান্য মামলাগুলো দায়ের প্রক্রিয়া চলছে।’
    
পুলিশ বলছে, ‘সালানা জলসা’ বন্ধকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ, হত্যা, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, সরকারি কাজে বাঁধা ও গুজব রটানোসহ পৃথক ৬টি মামলায় নাম ও অজ্ঞাত ৮ হাজার ২০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৮১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ৬টি মামলার মধ্যে পুলিশের পক্ষ থেকে ৪টি, একটি র‍্যাব-১৩ ও আহমদিয়া সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে ১টি মামলা দায়ের করা হয়। এর মধ্যে শনিবার ৩টি ও রোববার ৩টি মামলা করা হয়।

পঞ্চগড়ের পুলিশ সুপার এস এম সিরাজুল হুদা বলেন, ৬টি মামলায় ৮১ জন এ পর্যন্ত গ্রেপ্তার হয়েছে। নিরপরাধ সাধারণ মানুষ যাতে হয়রানির শিকার না হয় সে জন্য ভিডিও ফুটেজ দেখে, সুনির্দিষ্ট গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে এবং যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে আসামিদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। বর্তমানে পুলিশি নিয়ন্ত্রণে জেলার পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।

উল্লেখ্য, ‘সালানা জলসা’ বন্ধের দাবিতে গত বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে শহরের চৌরঙ্গী মোড়ে ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশের পঞ্চগড় শাখা, সম্মিলিত খতমে নবুয়ত সংরক্ষণ পরিষদ, ইমান-আকিদা রক্ষা কমিটি, ইমাম-মুয়াজ্জিন কল্যাণ সমিতি, পঞ্চগড় কওমি ওলামা পরিষদ ও জাতীয় ওলামা-মাশায়েখ আইম্মা পরিষদের নেতা-কর্মীরা জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি দেয়।

এরপর শুক্রবার বিক্ষোভ মিছিল করেন ইসলামি আন্দোলনসহ ধর্মভিত্তিক কয়েকটি সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। এ সময় মিছিলে বাধা দেওয়ায় বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে দুজন নিহত হয়েছেন। এরপর শনিবার রাতে ফের গুজব রটিয়ে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার পর পুরো এলাকায় ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়। গতকাল রোববার ৩৬ ঘণ্টা পর ইন্টারনেট সেবা সচল করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

খুলনায় এনসিপি নেতা গুলিবিদ্ধের ঘটনায় তরুণী আটক

খুলনা প্রতিনিধি
তনিমা তন্বী। ছবি: আজকের পত্রিকা
তনিমা তন্বী। ছবি: আজকের পত্রিকা

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) শ্রমিক সংগঠনের খুলনা বিভাগীয় আহ্বায়ক মোতালেব শিকদার গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনায় আলোচিত তনিমা তন্বীকে আটক করেছে মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)।

সোমবার (২২ ডিসেম্বর) রাতে মহানগরীর টুটপাড়া থেকে তন্বীকে আটক করা হয়। খুলনা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) ওসি তৈমুর ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

এর আগে সোমবার বেলা ১১টা ৪৫ মিনিটের দিকে মহানগরীর সোনাডাঙ্গার আল আকসা মসজিদ রোডে অবস্থিত ১০৯ মুক্তা হাউসের নিচতলার তন্বীর বাসায় মোতালেব গুলিবিদ্ধ হন। ঘটনার পর স্থানীয়রা তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান। ঘটনার পর থেকেই বিষয়টি খুলনাসহ দেশজুড়ে আলোচনার ঝড় তোলে।

এ ঘটনায় পুলিশ ওই কক্ষ থেকে মাদক সেবনের বিভিন্ন সরঞ্জাম উদ্ধার করেছে।

এর আগে মুক্তা হাউসের মালিকের স্ত্রী আশরাফুন্নাহার জানিয়েছিলেন, স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে তন্বী গত ১ ডিসেম্বর নিচতলাটি ভাড়া নিয়েছিলেন। তিনি নিজেকে এনজিও কর্মী হিসেবে দাবি করে প্রায় সময় বাড়ির বাইরে থাকতেন। তাঁর কক্ষে একাধিক পুরুষের আসা-যাওয়া ছিল। পরে অন্যদের মাধ্যমে তাঁর অসামাজিক কার্যকলাপের বিষয়টি জানতে পেরে চলতি মাসেই বাড়ি ছাড়ার নোটিশ দেওয়া হয়। তবে বাড়ির ছাড়ার আগেই গুলিবিদ্ধের ঘটনাটি ঘটেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ডেইলি স্টারে লুটপাট-অগ্নিসংযোগের ঘটনায় ৩৫০-৪০০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে মামলা

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

রাজধানীর তেজগাঁওয়ে দ্য ডেইলি স্টার পত্রিকার কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় অজ্ঞাতনামা ৩৫০-৪০০ জনকে আসামি করে মামলা করা হয়েছে। আজ সোমবার (২২ ডিসেম্বর) তেজগাঁও থানায় মামলাটি করা হয়। দ্য ডেইলি স্টারের হেড অব অপারেশনস মিজানুর রহমান বাদী হয়ে মামলাটি করেন।

১৮৬০ সালের দণ্ডবিধি, ২০০৯ সালের সন্ত্রাসবিরোধী আইন, ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইন ও ২০২৫ সালের সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশের অধীনে এ মামলা দাখিল করা হয়েছে।

মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, ১৯ ডিসেম্বর দিবাগত রাত আনুমানিক ১২টা ২৫ মিনিট থেকে ভোর সাড়ে ৪টা পর্যন্ত দ্য ডেইলি স্টার ভবনের সামনে বিপুলসংখ্যক লোক দেশীয় অস্ত্র, লাঠিসোঁটা ও দাহ্য পদার্থ নিয়ে সমবেত হয়। তারা পত্রিকাটির বিরুদ্ধে উত্তেজনা সৃষ্টিকারী স্লোগান দিতে থাকে এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে উসকানিমূলক পোস্টের মাধ্যমে হামলার আহ্বান জানায়।

রাত আনুমানিক ১২টা ৩৫ মিনিটে হামলাকারীরা সাংবাদিক ও কর্মচারীদের মারধর ও হত্যাচেষ্টার উদ্দেশ্যে ভবনের মূল গেট ও কাচের দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকে ব্যাপক ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট চালায়। ভবনের বিভিন্ন তলা পুড়িয়ে দেওয়া হয় এবং বহু আসবাব নিচে ফেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।

এজাহারে বলা হয়, হামলায় ভবনের ভেতরে থাকা দুই শতাধিক কম্পিউটার, ল্যাপটপ, ক্যামেরা, সার্ভার, প্রিন্টার, স্টুডিও সরঞ্জামসহ বিপুল পরিমাণ ইলেকট্রনিক ডিভাইস নষ্ট হয়, যার আনুমানিক মূল্য পাঁচ কোটি টাকা। পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানের লকারে থাকা প্রায় ৩৫ লাখ টাকা লুট করা হয়। ভবনের অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা, লিফট, সেন্ট্রাল এয়ার কন্ডিশনিং সিস্টেম ও বৈদ্যুতিক সাবস্টেশনেও ক্ষতি করা হয়।

আসামিদের ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ফলে ‘দ্য ডেইলি স্টার ভবনে’ সর্বমোট ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণের আনুমানিক মূল্য ৪০,০০,০০,০০০ (চল্লিশ কোটি টাকা)। যাচাই-বাছাই শেষে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণের হিসাব আরও বৃদ্ধি পেতে পারে।

সন্ত্রাসীদের হামলা ও অগ্নিসংযোগে দ্য ডেইলি স্টারের তৃতীয় তলায় স্টোরে সংরক্ষিত হিসাব বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ নথি, জাতীয় রাজস্ব বিভাগের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কর-সম্পর্কিত যাবতীয় নথি এবং নিউজ পেপার আর্কাইভস পুড়িয়ে ভস্মীভূত করা হয় বলেও এজহারে উল্লেখ করা হয়েছে।

হামলার সময় প্রমাণ নষ্টের উদ্দেশ্যে সিসিটিভি ক্যামেরা ভাঙচুর করা হয় এবং ফায়ার সার্ভিস ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাজে বাধা দেওয়া হয় বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে। পরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও ফায়ার সার্ভিসের যৌথ অভিযানে ভবনের ভেতর থেকে অন্তত ৩০ জন কর্মীকে উদ্ধার করা হয়।

সন্ত্রাসীদের হামলার কারণে দ্য ডেইলি স্টার পত্রিকার প্রকাশনা বন্ধ হয়ে যায় এবং ১৯ ডিসেম্বর পত্রিকা প্রকাশিত হয়নি। অনলাইন কার্যক্রম ১৭ ঘণ্টা বন্ধ ছিল।

মামলার এজাহারে ডেইলি স্টার জানিয়েছে, এই হামলার সিসিটিভি ফুটেজ এবং বিভিন্ন মিডিয়ার ভিডিও ফুটেজ রয়েছে।

তেজগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ক্যশৈনু মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

হেডফোন কানে রেললাইনে যুবক, ট্রেনে কাটা পড়ে নিহত

ফেনী প্রতিনিধি
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

ফেনীতে ট্রেনে কাটা পড়ে আবদুল্লাহ আল নাহিদ (২২) নামের এক যুবক মারা গেছেন। আজ সোমবার (২২ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের সদর উপজেলার উত্তর শিবপুর এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।

নিহত নাহিদ সদর উপজেলার শর্শদি ইউনিয়নের দেওয়ানগঞ্জ এলাকার দেবীপুর গ্রামের আবু তাহেরের ছেলে।  

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রামগামী সাগরিকা ট্রেনটি উত্তর শিবপুর এলাকা অতিক্রম করার সময় এ দুর্ঘটনা ঘটে। পরে খবর পেয়ে রেলওয়ে স্টেশন পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে মরদেহটি উদ্ধার করে।

এ ব্যাপারে ফেনী রেলওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ দীপক দেওয়ান বলেন, নিহত যুবক হেডফোন কানে রেললাইনে হাঁটছিলেন। পরে চট্টগ্রামগামী ট্রেনটি তাঁকে পেছন থেকে ধাক্কা দিলে রেললাইনের এক পাশে ছিটকে পড়েন তিনি। স্থানীয় বাসিন্দাদের মাধ্যমে খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ময়নাতদন্ত ছাড়াই মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

গণঅধিকার পরিষদ সদস্যের মরদেহ উদ্ধার

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি  
হাফিজুল ইসলাম হাফিজ। ছবি: সংগৃহীত
হাফিজুল ইসলাম হাফিজ। ছবি: সংগৃহীত

সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলায় যমুনা নদীর পাড়ে একটি ড্রেজার থেকে হাফিজুল ইসলাম হাফিজ (৩০) নামের গণঅধিকার পরিষদের এক সদস্যের মরদেহ উদ্ধার করেছে নৌ পুলিশ। সোমবার (২২ ডিসেম্বর) বেলা ৩টার দিকে উপজেলার জালালপুর ইউনিয়নের পাড়ামোহনপুর এলাকা থেকে মরদেহটি উদ্ধার করা হয়। পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো অভিযোগ না থাকায় বিনা ময়নাতদন্তে মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে।

নিহত হাফিজুল ইসলাম ওই উপজেলার জালালপুর ইউনিয়নের বাঐখোলা গ্রামের মৃত কমল মুন্সীর ছেলে। তিনি গণঅধিকার পরিষদের একজন সদস্য ছিলেন বলে জানান স্থানীয়রা।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, যমুনা নদীর আড়কান্দি ও পাড়ামোহনপুরসহ আশপাশের এলাকায় নদীতীর সংরক্ষণ বাঁধের পাশে বালুর ব্যবসা চলছিল। হাফিজুল ইসলামও ওই কাজে যুক্ত ছিলেন। রোববার রাতে একটি ড্রেজারের বাল্কহেডের ইঞ্জিন অংশে চার সহযোগীর সঙ্গে ঘুমিয়ে পড়েন তিনি। সোমবার দুপুর ১২টার দিকে তাঁর মৃত্যুর বিষয়টি জানাজানি হলে এনায়েতপুর থানা-পুলিশ ও চৌহালী নৌ পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে মরদেহ উদ্ধার করে।

স্থানীয় বাসিন্দা জামাল প্রামাণিক জানান, নদীভাঙনে বসতভিটা হারানোর পর হাফিজুল ইসলাম ঢাকায় চাকরি করতেন। কয়েক মাস আগে এলাকায় ফিরে এসে তিনি বালুর ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত হন। তিনি নিজেকে গণঅধিকার পরিষদের একজন সদস্য হিসেবে পরিচয় দিতেন।

এ বিষয়ে চৌহালী নৌ পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ ফিরোজ উদ্দিন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘নিহতের শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। পরিবারের পক্ষ থেকেও কোনো অভিযোগ না থাকায় আইনগত প্রক্রিয়া শেষে মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত