Ajker Patrika

‘হাতের অপারেশন করতে পেট কাটল কেন’ প্রশ্ন মৃত শিশুটির বাবা–মায়ের

আরিফুল ইসলাম রিগান, কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি
‘হাতের অপারেশন করতে পেট কাটল কেন’ প্রশ্ন মৃত শিশুটির বাবা–মায়ের

৯ মাস বয়সে ডান হাতের পাঁচটি আঙুল চুলার আগুনে পুরে যায় শিশু মাইশার (৫)। সে সময় চিকিৎসা করে ক্ষত ভালো হয়ে গেলেও তিনটি আঙুল কুঁকড়ে ছিল। আঙুলগুলো ঠিক হয়ে যাবে আশা করে, সম্প্রতি ঢাকার এক চিকিৎসকের পরামর্শে আঙুলে অস্ত্রোপচার করানো হয় শিশুটির। আর সেই অস্ত্রোপচার করতে গিয়েই মৃত্যু হয় মাইশার। কিন্তু মাইশার বাবার প্রশ্ন—মেয়ের আঙুল অপারেশন করার জন্য পেট কাটতে হলো কেন? 

শিশুটির পুরো নাম মারুফা জাহান মাইশা। কুড়িগ্রাম পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ভেলাকোপা ব্যাপারী পাড়ার মোজাফফর আলী ও বেলি আক্তার দম্পতির মেয়ে ছিল সে। মাইশার নানা ওসমান গণি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। 

আজ শুক্রবার সকালে মাইশার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে মাতম চলছে। মেয়ের এমন ‘অস্বাভাবিক’ মৃত্যু কোনোভাবেই মানতে পারছেন না তার বাবা-মা, স্বজন ও প্রতিবেশীরা। তারা মাইশার মৃত্যুর সঠিক কারণ তদন্ত করার দাবি জানান। 

শিশু মাইশার পরিবার বলছে, সম্প্রতি রাজধানীর মিরপুরে ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালের চিকিৎসক মো. আহসান হাবীব শরণাপন্ন হন মাইশার বাবা মোজাফফর। শিশু মাইশার হাত দেখে চিকিৎসক তাদের জানান, অপারেশন করলে মাইশার হাত স্বাভাবিক হয়ে যাবে। সেই অনুযায়ী গত বুধবার সকালে ঢাকায় মিরপুর রূপনগরে আলম মেমোরিয়াল হাসপাতালে হাতের অপারেশন হয় মাইশার। কিন্তু ঘণ্টা দেড়েক পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায় শিশুটির অবস্থা খারাপ, তাকে আইসিইউ সাপোর্ট দেওয়ার জন্য গ্লোবাল স্পেশালাইজড হাসপাতালে নিতে হবে। হতবিহ্বল বাবা-মা মেয়েকে নিয়ে ছোটেন মিরপুর ১ এর মাজার রোডের ওই হাসপাতালে। সেখানে নেওয়ার পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায় শিশুটি মারা গেছে, তাকে নিয়ে বাড়ি ফিরে যেতে। 

মাইশার বাবা মোজাফফর জানায়, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অপারেশনের খরচ বাবদ নেওয়া টাকা তাঁদের ফিরিয়ে দেয়। মরদেহ বাড়িতে ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য অ্যাম্বুলেন্সও ঠিক করে দেয়। বাড়ি ফিরে মাইশাকে দাফনের জন্য গোসল করাতে গিয়ে নারীরা দেখতে পান, শিশু মাইশার নাভির নিচে পুরো পেট জুড়ে কেটে সেলাই করা। পরে তারা পুলিশে খবর দেন। কিন্তু ঢাকায় অপারেশন হওয়ায় সংশ্লিষ্ট থানায় মামলার পরামর্শ দিয়ে পুলিশ চলে যায়। পরে নিরুপায় হয়ে মাইশাকে দাফন করা হয় বাড়ির আঙিনায়।

অস্ত্রোপচারের আগে শিশু মাইশার হাতের আঙুল। ছবি: সংগৃহীত মোজাফফর আলী বলেন, ‘মেয়ের হাতের আঙুল ঠিক করার জন্য ঢাকার মিরপুরে ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালের ডা. আহসান হাবীবের কাছে যাই। তিনি সবকিছু দেখে বলেন বুধবার সকালে অপারেশন করার কথা বলেন। রূপনগরে আলম মেমোরিয়াল মেডিকেলে তাঁর শেয়ার আছে জানিয়ে ডাক্তার বলেন, সেখানে অপারেশন করালে খরচ কম লাগবে। বুধবার সেখানে হাতের অপারেশন করার সময় মেয়ে মারা যায়। পরে তারা আমাদের টাকা ফেরত দেয় এবং ধমক দিয়ে আমাদের বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়। বাড়ি এসে মেয়েকে গোসল করার সময় স্থানীয় মহিলারা দেখেন, মেয়ের তলপেটের পুরো অংশ কেটে সেলাই করা।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা এটা দেখে নিরুপায় হয়ে পড়ি। আমরা গরিব মানুষ। কিছু বুঝি নাই। হাত অপারেশন করতে গিয়ে তারা কেন আমার মেয়ের পেট কাটল তা জানি না। আমাদেরকে কোনো কাগজপত্রও দেওয়া হয় নাই।’ 

শিশু মাইশার মরদেহ গোসল করানোর সঙ্গে ছিলেন স্থানীয় নারী মফিজা খাতুন। তাঁর সঙ্গে কথা হলে তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘মেয়ের হাতের আঙুল কাটা ছিল। পরে গোসলের সময় দেখি ওর তলপেটের পুরো অংশ কেটে সেলাই করা। পরে সকলকে জানাই।’ 

মেয়ে হারানোর শোকে কাতর মাইশার মা বেলী বলেন, ‘আমি কী ভুল করলাম! কেন মেয়েকে নিয়ে গেলাম। ওরা ডাক্তার না, কসাই। আমার মেয়ের পেট কাটল কেন? ওরা আমার মেয়েকে মেরে ফেলছে। আমি এর বিচার চাই। আমি মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে এর বিচার চাই।’ 

ভুক্তভোগীর পরিবার তাদের পরামর্শক ওই চিকিৎসকের ভিজিটিং কার্ড দিলে সেই মোবাইল নম্বরে কথা বলেন আজকের পত্রিকার এ প্রতিনিধি। মোবাইলের অপর প্রান্তের ব্যক্তি নিজেকে ডা. আহসান হাবিব বলে দাবি করেন। 

শিশু মাইশার অপারেশন ও মৃত্যুর বিষয়ে তার কাছে জানতে চাইলে ওই বলেন, ‘আমি অপারেশন করিনি। আমার শেয়ার থাকা আলম মেমোরিয়াল হাসপাতালে অপারেশন অ্যারেঞ্জ করে দেই। সেখানে ঢাকা মেডিকেলের প্লাস্টিক সার্জারির চিকিৎসক (সহকারী অধ্যাপক) ডা. শরিফুল ইসলাম অপারেশন করেন। কিন্তু দুর্ঘটনাবশত শিশুটি মারা যায়। আমি নিজেও এ ঘটনায় শক্ড।’ 

হাতের আঙুল অপারেশন করার সময় পেট কাটার বিষয়ে জানতে চাইলে ‘আহসান হাবীব’ এ প্রতিনিধিকে বলেন, ‘এটা শিশুটির পরিবারকে জানিয়ে করা হয়েছে। হাতের আঙুল অপারেশন করে ওই স্থানে স্কিন সংযুক্ত করার জন্য পেট থেকে স্কিন নেওয়া হয়েছিল। পরিণত বয়সের মানুষের ক্ষেত্রে পায়ের থাই থেকে চামড়া নেওয়া হয়। কিন্তু শিশুটির থাই সরু থাকায় তার পেট থেকে চামড়া নিয়ে সেলাই করে দেওয়া হয়েছিল।’ 

তাহলে হাতের অপারেশন করতে গিয়ে মাইশার মৃত্যুর কারণ কী, এমন প্রশ্নে ওই ‘চিকিৎসক’ বলেন, ‘আমি নিজেও অপারেশন থিয়েটারে প্রায় আধ ঘণ্টা ছিলাম। সবকিছুই স্বাভাবিক ছিল। পরে আমি আমার বাসায় চলে যাই। পরে শিশুটির মৃত্যুর কারণ জানতে ওই সার্জনের সাথে যোগাযোগ করি। তিনি তখন জানান, সম্ভবত অ্যানেসথেসিয়ার কারণে শিশুটির মৃত্যু হয়ে থাকতে পারে। এখানে অন্য আর কোনো কারণ নেই। তবে পুরো ঘটনায় আমি নিজেও মর্মাহত।’ 

সন্তানের শোকে এখনো বিলাপ করছেন শিশু মাইশার মা। ছবি: আজকের পত্রিকা নিজেকে কুড়িগ্রামের সন্তান দাবি করে ‘ডা. আহসান হাবীব বলেন’, ‘রোগীটা আমার এলাকার। কুড়িগ্রামের যেকোনো লোক আসলে আমি হেল্প করি। আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি। এটা আসলে অ্যাকসিডেন্ট। তারপরও এটা মেনে নেওয়া কঠিন। আমি নিজেও সেদিন স্তব্ধ হয়ে গেছি।’ 

নিজের পরিচয় সম্পর্কে মো. আহসান হাবীব জানান, তিনি বিসিএস ২৫ ব্যাচের চিকিৎসক। বর্তমানে তিনি মহাখালীতে জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে সহকারী অধ্যাপক (সার্জারি) হিসেবে কর্মরত। ইসলামী ব্যাংক হাসপাতাল, মিরপুরে তাঁর চেম্বার। 

আজকের পত্রিকার প্রতিনিধির অনুসন্ধানে জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের ওয়েবসাইটে, তাঁর দেওয়া তথ্যমতে ডা. মো. আহসান হাবীব নামে অনকোলোজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ওই হাসপাতালে কর্মরত রয়েছেন। তবে ওয়েবসাইটে তাঁর কোনো ছবি পাওয়া যায়নি। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

‎ওসমান হাদিকে হত্যার প্রতিবাদে টঙ্গীতে মহাসড়ক অবরোধ, যান চলাচল বন্ধ

 টঙ্গী (গাজীপুর) প্রতিনিধি
শরিফ ওসমান বিন হাদি হত্যার প্রতিবাদে আজ শুক্রবার দুপুরে গাজীপুরের টঙ্গীতে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করা হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা
শরিফ ওসমান বিন হাদি হত্যার প্রতিবাদে আজ শুক্রবার দুপুরে গাজীপুরের টঙ্গীতে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করা হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান বিন হাদিকে হত্যার প্রতিবাদে গাজীপুরের টঙ্গীতে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতা-কর্মী ও ছাত্র­-জনতা। ‎

আজ ‎শুক্রবার বেলা আড়াইটার দিকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের টঙ্গী কলেজগেট এলাকায় এই অবরোধ করা হয়। প্রায় দেড় ঘণ্টাব্যাপী এ বিক্ষোভ কর্মসূচিতে মহাসড়কের উভয় পাশে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে ভোগান্তিতে পড়েন মহাসড়কের যানবাহনের যাত্রীরা। ‎

‎বিক্ষোভ কর্মসূচিতে বক্তব্য দেন এনসিপির কেন্দ্রীয় মুখ্য সংগঠক মহসিন উদ্দিন, জাতীয় যুবশক্তির গাজীপুর মহানগর শাখার সদস্যসচিব তানজিল মাহমুদ, মুখ্য সংগঠক আকাশ ঘোষ, যুগ্ম সদস্যসচিব সাইফুল ইসলাম আকাশ, টঙ্গী পশ্চিম থানা যুবশক্তির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক মো. ইসহাক, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা শাওন, মোজাম্মেলসহ ছাত্র-জনতা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

‎হাদি হত্যার বিচার দাবিতে জবি শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ মিছিল

জবি প্রতিনিধি 
ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ‎হাদি হত্যার বিচার দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন জবি শিক্ষার্থীরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ‎হাদি হত্যার বিচার দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন জবি শিক্ষার্থীরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

‎ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদিকে গুলি করে হত্যার প্রতিবাদ এবং হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থীরা। আজ শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) জুমার নামাজ শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়। মিছিলটি বিশ্বজিৎ চত্বর হয়ে লক্ষ্মীবাজার মোড় ঘুরে আবার প্রধান ফটকের সামনে এসে শেষ হয়। ‎

‎এ সময় শিক্ষার্থীরা ‘আমি কে তুমি কে, হাদি হাদি’, ‘আমার সোনার বাংলায় খুনি লীগের ঠাঁই নাই’, ‘ফ্যাসিবাদের ঠিকানা এই বাংলায় হবে না’, হাদি ভাইয়ের রক্ত, বৃথা যেতে দিব না’সহ নানা স্লোগান দেয়। ‎

জুলাই অভ্যুত্থান ও আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের আন্দোলনের মধ্য দিয়ে পরিচিতি পাওয়া হাদি ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-৮ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন। রাজধানীর পুরানা পল্টন এলাকায় গত শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) চলন্ত মোটরসাইকেল থেকে দুর্বৃত্তরা রিকশায় থাকা হাদিকে গুলি করে। গুলিটি হাদির মাথায় লাগে।

গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে অস্ত্রোপচার শেষে রাতেই তাঁকে ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য গত সোমবার দুপুরে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে তাঁকে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

হাদি হত্যা: ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ ছাত্র-জনতার

গাজীপুর ও শ্রীপুর প্রতিনিধি 
মাওনা চৌরাস্তা এলাকায় মহাসড়ক অবরোধ। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাওনা চৌরাস্তা এলাকায় মহাসড়ক অবরোধ। ছবি: আজকের পত্রিকা

ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান বিন হাদির খুনিদের বিচার দাবিতে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ছাত্র-জনতা। এতে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। আজ শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) বেলা আড়াইটা থেকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের মাওনা চৌরাস্তা এলাকার পল্লী বিদ্যুৎ মোড়ে অবরোধ কর্মসূচি শুরু হয়।

জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) শ্রীপুর শাখার সমন্বয়ক আবু রায়হান মিসবাহ্ বলেন, ‘ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ওসমান হাদির খুনিদের বিচার দাবিতে আমরা সড়ক অবরোধ করছি। আমরা চাই, দ্রুত সময়ের মধ্যে যেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী খুনিদের আইনের আওতায় আনে।’

বৈষম্যবিরোধী ছাত্রনেতা কাইফাত মোড়ল বলেন, ‘একজন জুলাই যোদ্ধাকে যেভাবে গুলি করে খুন করল, এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত খুনিদের আজও গ্রেপ্তার করতে পারল না আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। যারা খুনিদের পালিয়ে যেতে সহযোগিতা করল, তাদেরও বিচার দাবি করছি।’

শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ নাছির আহমদ বলেন, মহাসড়ক অবরোধের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে।

গাজীপুরজুড়ে বিক্ষোভ

গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাদির মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার পর রাতেই গাজীপুরে বিক্ষোভ শুরু হয়। রাতে মহানগরীর শিববাড়ী, টঙ্গীসহ বিভিন্ন এলাকায় মহাসড়ক অবরোধ করেন আন্দোলনকারীরা। গভীর রাত পর্যন্ত তাঁরা আগুন জ্বালিয়ে প্রতিবাদ জানান। বিক্ষোভকারীরা হত্যার ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও দায়ীদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানান।

এসব আন্দোলনে অংশ নেয় জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কেন্দ্রীয় সংগঠক আবদুল্লাহ আল মুহিম, গাজীপুর মহানগর জাতীয় যুবশক্তির সদস্যসচিব মো. ওমর ফারুক, গাজীপুর মহানগর এনসিপির সংগঠক নাবিল ইউসুফ, জাতীয় যুবশক্তির কেন্দ্রীয় সংগঠক মো. মোহসিন, সোহানুর রহমান শুভসহ এনসিপি, যুবশক্তি ও সাধারণ ছাত্র-জনতা।

পরে আজ সকাল ১০টার দিকে আবারও মহানগরীর চান্দনা চৌরাস্তায় বিক্ষোভ শুরু করেন এনসিপির নেতা-কর্মীরা। স্লোগানে ও প্রতিবাদে মুখর হয় পুরো এলাকা। এ সময় আন্দোলনকারীরা বলেন, শহীদ শরিফ ওসমান হাদির মৃত্যু কোনোভাবেই স্বাভাবিক নয়, এটি একটি পরিকল্পিত ও নৃশংস হত্যাকাণ্ড। তাঁরা হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার করা না হলে আরও কঠোর কর্মসূচির ঘোষণা দেন।

ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (ডুয়েট) এলাকায়ও ইনকিলাব মঞ্চসহ বিভিন্ন সংগঠনের উদ্যোগে শত শত শিক্ষার্থী ক্যাম্পাস থেকে বিক্ষোভ-মিছিল বের করে শিববাড়ী মোড় গিয়ে সড়ক অবরোধ করে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন।

একই দাবিতে টঙ্গীর কলেজগেট এলাকায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ বিক্ষোভ করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

হাদি হত্যা: ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ

ফেনী প্রতিনিধি
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ বিক্ষোভকারীদের। ছবি: আজকের পত্রিকা
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ বিক্ষোভকারীদের। ছবি: আজকের পত্রিকা

ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান বিন হাদি হত্যার বিচারের দাবিতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন সাধারণ ছাত্র-জনতা। আজ শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) দুপুরে মহাসড়কের ফেনী মহিপাল ফ্লাইওভারের দক্ষিণ দিকের অংশে অবস্থান নেন বিক্ষোভকারীরা। প্রায় আধা ঘণ্টা চলা অবরোধে ঢাকা-চট্টগ্রামমুখী উভয় লেনে যানজটের সৃষ্টি হয়।

সরেজমিন দেখা যায়, আন্দোলনকারীরা জুমার নামাজের পর শহরের জহিরিয়া মসজিদ থেকে একটি মিছিল নিয়ে শহীদ শহীদুল্লা সড়ক প্রদক্ষিণ করে মহাসড়কে এসে বিক্ষোভ শুরু করেন। এই সময় হাদি হত্যার বিচারের দাবিতে স্লোগান দেন তাঁরা।

রাশেদুল ইসলাম নামে এক আন্দোলনকারী বলেন, ‘জুলাইয়ের সম্মুখসারির এক যোদ্ধাকে গুলির ঘটনার এক সপ্তাহ পার হতে চললেও প্রশাসন দৃশ্যমান কোনো ভূমিকা নিতে পারেনি। এ সরকার আমাদের ভাইদের রক্তের ওপর দিয়ে চেয়ারে বসেও তাঁদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছেন। এ ছাড়া মানুষকে কষ্ট দেওয়া আমাদের উদ্দেশ্য নয়। এ হত্যার বিচারের দাবিতে বাধ্য হয়ে আমরা প্রায় আধা ঘণ্টা সময়ের জন্য মহাসড়ক অবরোধ করেছি। শিগগিরই জড়িতদের আইনের আওতায় না আনলে আরও কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।’

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সাবেক জেলা সমন্বয়ক আবদুল আজিজ বলেন, ‘ভারতীয় আধিপত্যবাদবিরোধী আন্দোলনে হাদি আমাদের যে পথ দেখিয়েছেন, সেই পথে হাঁটতে আমরা লাখো হাদি প্রস্তুত। যত দিন এ দেশে ভারতীয় আধিপত্যবাদ থাকবে, তত দিন রাজপথে আমাদের লড়াই চলবে। হাদির খুনিরা যেখানেই থাকুক, অবিলম্বে তাদের গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনতে হবে।’

ফেনী মডেল থানা-পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) সজল কান্তি দাশ বলেন, ‘অবরোধের খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে যাই। এখন আন্দোলনকারীরা মহাসড়ক থেকে সরে দাঁড়িয়েছে। সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত