Ajker Patrika

বিএনপির সমাবেশ: রাজশাহীতে নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা, চলছে ধরপাকড়

আপডেট : ৩০ নভেম্বর ২০২২, ২৩: ১৪
বিএনপির সমাবেশ: রাজশাহীতে নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা, চলছে ধরপাকড়

রাজশাহীতে ৮ শর্তে বিভাগীয় গণসমাবেশের অনুমতি পেয়েছে বিএনপি। আগামী ৩ ডিসেম্বর ঐতিহাসিক মাদ্রাসা ময়দানে (হাজী মুহম্মদ মুহসীন উচ্চ বিদ্যালয় মাঠ) হবে গণসমাবেশ। এরই মধ্যে সমাবেশের আগে ১০ দফা দাবিতে বৃহস্পতিবার (১ ডিসেম্বর) থেকে রাজশাহী বিভাগে অনির্দিষ্টকালের জন্য পরিবহন ধর্মঘটের ঘোষণা দিয়েছে পরিবহন মালিক সমিতি।

অন্যদিকে সমাবেশকে ঘিরে বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে শুরু হয়েছে মামলা ও ধরপাকড়। রাজশাহী বিভাগের বিভিন্ন জেলায় গতকাল ও আজ বুধবার মিলিয়ে ৭২ জন নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ ছাড়া প্রায় ৪২৭ জনের নাম উল্লেখ করে এবং হাজার খানেক অজ্ঞাত নেতা-কর্মীকে আসামি করে মামলা করা হয়েছে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ
চাঁপাইনবাবগঞ্জে এক রাতে বিএনপির ৬২ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার (২৯ নভেম্বর) দিবাগত রাতে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদরে ১১, শিবগঞ্জে ১৩, নাচোলে ১৯, গোমস্তাপুরে ১৪ ও ভোলাহাটে ৫ জন বিএনপি নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে স্থানীয় থানা-পুলিশ। পাঁচ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। বিস্ফোরক আইনের মামলায় আজ বুধবার (৩০ নভেম্বর) তাঁদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

বিএনপি এবং এর অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে পুলিশের একের পর এক মামলা করার অভিযোগ করেছে বিএনপি। ১০ দিনে জেলার ৫ থানায় বিস্ফোরক আইনে ৫টি মামলা হয়েছে বলে দাবি বিএনপি নেতাদের। আগামী ৩ ডিসেম্বর রাজশাহীর বিভাগীয় গণসমাবেশ ঠেকাতে নেতা-কর্মীদের নামে পুলিশ এসব ‘গায়েবি মামলা’ করছে বলে অভিযোগ তাদের। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা বিএনপির আহবায়ক গোলাম জাকারিয়া জানান, পুলিশের সাজানো মামলায় প্রায় ৪ শতাধিক কর্মীকে আসামি করা হয়েছে। কাউকে বাড়ি থেকে, কাউকে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বা রাস্তা থেকে পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে বলে জানান তিনি।

রাজশাহী 
নাশকতার মামলায় রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার গনিপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মনিরুজ্জামান রঞ্জুকে (৫৫) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বুধবার (৩০ নভেম্বর) দুপুরে বাগমারার দেউলা চারমাথা এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। মনিরুজ্জামান উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক। বিকেলে তাঁকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে বলে জানান বাগমারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রবিউল ইসলাম।

বাঘা (রাজশাহী)
রাজশাহীর বাঘায় নাশকতার পরিকল্পনার অভিযোগে বিশেষ ক্ষমতা আইনে বিএনপির তিন নেতাকে মামলায় গ্রেপ্তার করে বাঘা থানা-পুলিশ। বুধবার (৩০ নভেম্বর) সকালে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, বাঘা উপজেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য ও উপজেলা যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোখলেচুর রহমান মুকুল, জেলা যুবদলের আহবায়ক কমিটির সদস্য ও উপজেলা যুবদলের আহবায়ক কমিটির সাবেক সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক শফিকুল ইসলাম (শফি), উপজেলার পাকুড়িয়া ইউনিয়ন বিএনপি নেতা ফিরোজ হোসেন।

গত ১৯ নভেম্বর রাতে পাকুড়িয়া ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতিসহ ১৫০ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে নাশকতার পরিকল্পনার অভিযোগে বিশেষ ক্ষমতা আইনে বাঘা থানায় উপপরিদর্শক (এসআই) শাহরিয়ার নাসিম বাদী হয়ে মামলাটি করেন। মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে, পাকুড়িয়া ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি দস্তুল হোসেনকে। এ ছাড়া এজাহারে কয়েকজনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে কয়েকজনকে।

পুঠিয়া (রাজশাহী)
রাজশাহীর পুঠিয়ায় নাশকতা মামলায় উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক অধ্যাপক নাজমুল ইসলাম মুক্তাকে (৫০) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বুধবার (৩০ নভেম্বর) ভোররাতের দিকে পুঠিয়া সদরের কাঠালবাড়িয়া গ্রামের বাসভবন থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।

জানা গেছে, স্থানীয় বিএনপির কর্মী সমাবেশ ঘিরে গত ২১ নভেম্বর রাতে পুঠিয়ার মোল্লাপাড়া বাজারে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় থানা পুলিশ ১৬ জনের নামে ও আরও শতাধিক অজ্ঞাতনামা আসামি করে নাশকতার মামলা দায়ের করে।

এ মামলায় গত ২১ নভেম্বর জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি অধ্যাপক খোরশেদ আলমকে মোল্লাপাড়া থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। থানার ওসি সোহরাওয়ার্দী হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

সিরাজগঞ্জ
সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জে আওয়ামী লীগ দলীয় কার্যালয়ের সামনে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় বিএনপির ২০ নেতা-কর্মীর নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও ১৫০ জনকে আসামি করে মামলা করা হয়েছে। মঙ্গলবার (২৯ নভেম্বর) গভীর রাতে রায়গঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সদস্য মো. জুয়েল আকন্দ বাদী হয়ে রায়গঞ্জ থানায় মামলাটি দায়ের করেন। রায়গঞ্জ থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসিফ মোহাম্মদ সিদ্দিকুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। 

মামলায় রায়গঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আইনুল হক, উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল কুদ্দুস মন্ডল, জেলা বিএনপির সহপ্রচার সম্পাদক রেজাউল করীম খানসহ ২০ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত আরও ১৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে।

তাড়াশ (সিরাজগঞ্জ)
সিরাজগঞ্জের তাড়াশে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনার মামলায় বিএনপির ৫ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন তাড়াশ থানার ভারপ্রাপ্ত  কর্মকর্তান (ওসি) মো. শহিদুল ইসলাম। মঙ্গলবার (২৯ নভেম্বর) রাত সাড়ে ১০টার দিকে উপজেলার তাড়াশ-রানীরহাট আঞ্চলিক সড়কের লাউতা চার মাথা আকবর আলী বাজারে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় তালম ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. মোজ্জামেল হক মজনু বাদী হয়ে অজ্ঞাত ১২০ জনকে আসামি করে মামলা করেন। পরে পুলিশ রাতভর উপজেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে বিএনপির ৫ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করে।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, উপজেলার তালম ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মো. সোহরাব হোসেন (৫৫), ইউনিয়ন যুব দলের আহ্বায়ক মো. দিদার খাঁন (৪২), তাড়াশ উপজেলা যুব দলের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. রাজিব আহম্মেদ মাসুম (৩৮), বারুহাস ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক  মুক্তার হোসেন সরকার (৪৫) ও মাধাইনগর ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক মো. আবুল কালাম আজাদ (৪০)।

বেলকুচি (সিরাজগঞ্জ)
সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর ও বেলকুচিতে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ নেতাদের লক্ষ্য করে ককটেল বিস্ফোরণের অভিযোগ এনে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের ৩৫ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা আরও ২০৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। বুধবার (৩০ নভেম্বর) সকালে খুকনী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ আফাজ উদ্দিন বেপারী বাদী হয়ে এনায়েতপুর থানায় বিস্ফোরক আইনে মামলা দায়ের করেন। এ ছাড়া গত রোববার রাতে বেলকুচি পৌর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সৌরভ আহম্মেদ উৎস বাদী হয়ে বেলকুচি থানায় পৃথক মামলা দায়ের করেন। মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেন এনায়েতপুর থানার ওসি আনিছুর রহমান।

প্রতিবেদন তৈরিতে সহযোগিতা করেছেন- চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী, বাঘা (রাজশাহী), পুঠিয়া (রাজশাহী), সিরাজগঞ্জ, তাড়াশ (সিরাজগঞ্জ), বেলকুচি (সিরাজগঞ্জ) ও সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

সেতুর দাবি: চাষির ফসলের ন্যায্যমূল্য আটকা ইছামতিতে

দিনাজপুর প্রতিনিধি ও চিরিরবন্দর সংবাদদাতা
২৫০ ফুট দীর্ঘ বাঁশের সাঁকোই ভরসা দুই ইউনিয়নবাসীর। সম্প্রতি দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলার সাতনালা ইউনিয়নের তারকশাহার হাট এলাকায়। ছবি: আজকের পত্রিকা
২৫০ ফুট দীর্ঘ বাঁশের সাঁকোই ভরসা দুই ইউনিয়নবাসীর। সম্প্রতি দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলার সাতনালা ইউনিয়নের তারকশাহার হাট এলাকায়। ছবি: আজকের পত্রিকা

দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলার সাতনালা ইউনিয়নের তারকশাহার হাট এলাকায় ইছামতী নদীর ওপর একটি সেতুর অভাব দীর্ঘদিনের। নদী পারাপারে ভরসা ২৫০ ফুট দীর্ঘ একটি বাঁশের সাঁকো। সেতুর অভাবে প্রতিদিনের যাতায়াতের মতো কৃষকের ন্যায্যমূল্যও আটকে আছে ইছামতীর তীরে। অন্যদিকে দীর্ঘ পথ ঘুরতে গিয়ে বেড়ে যাচ্ছে কৃষকের ফসল উৎপাদন খরচ।

জানা গেছে, এই সাঁকো দিয়েই উপজেলার সাতনালা ও আলোকডিহি ইউনিয়নের প্রায় ১০ হাজার মানুষ প্রতিদিন ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে। প্রতিটি নির্বাচনের আগে জনপ্রতিনিধিরা সেতু নির্মাণের আশ্বাস দিলেও বাস্তবে তার কোনো অগ্রগতি হয়নি। তাই তো স্বাধীনতার ৫৫ বছর পেরিয়ে আজও বাঁশের সাঁকোর ভরসায় দুই ইউনিয়নের মানুষ।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এই সাঁকো ব্যবহার করে এলাকার মানুষ বেকিপুল বাজার, কিষ্টহরি বাজার, চাম্পাতলী বাজার, বিন্যাকুড়ির হাট, তারকশাহার হাট, ইছামতী ডিগ্রি কলেজ, ইছামতী ফাজিল মাদ্রাসা, মডেল স্কুল এবং রানীরবন্দর সুইয়ারী বাজারে যাতায়াত করেন। ব্যাংক লেনদেন, শিক্ষা কার্যক্রম, হাটবাজারে যাওয়াসহ প্রায় সব কাজে নদী পার হতে হয় এই সাঁকো দিয়ে।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এই জনপদের অধিকাংশ মানুষ কৃষিকাজের ওপর নির্ভরশীল। অঞ্চলটি সবজি উৎপাদনের জন্য পরিচিত। তবে যোগাযোগব্যবস্থা দুর্বল হওয়ায় উৎপাদিত কৃষিপণ্য বাজারে নিতে গিয়ে বাড়তি খরচ গুনতে হচ্ছে কৃষকদের। সাঁকোর ওপর দিয়ে ভ্যান বা অন্য কোনো যান চলাচল সম্ভব নয়। ফলে কৃষিপণ্য বহনের জন্য অনেককে চার-পাঁচ কিলোমিটার ঘুরে বিকল্প পথ ব্যবহার করতে হচ্ছে। এতে পরিবহন খরচ বেড়ে যাচ্ছে এবং ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন কৃষকেরা।

জোত সাতনালা গ্রামের কৃষক হাসান আলী জানান, নদীর ওপারে তাঁর বেশির ভাগ জমি। ধান কেটে সাঁকোর কারণে ভ্যানে করে বাড়ি আনতে পারছেন না। বাধ্য হয়ে বেশি ভাড়া দিয়ে দূরের পথ ঘুরে ধান পরিবহন করতে হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘প্রতিটি নির্বাচনের আগে প্রার্থীরা এসে বলেন, ভোট দিলে এখানে সেতু হবে। কত নির্বাচন চলে গেল, কিন্তু আজও সেতু হলো না।’

জানতে চাইলে সাতনালা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. এনামুল হক শাহ বলেন, সাঁকোটির দুই পাশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও হাটবাজার থাকায় প্রতিদিন শত শত মানুষ ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করেন। তিনি জানান, ভুক্তভোগীদের দুর্ভোগ লাঘবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে।

এ বিষয়ে চিরিরবন্দর উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের কর্মকর্তা মাসুদার রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ইছামতী নদীর ওপর সেতু নির্মাণের জন্য মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। তবে এখনো এ বিষয়ে কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত পাওয়া যায়নি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নরসুন্দার তীর থেকে ৪ শতাধিক গ্রিল উধাও

সাজন আহম্মেদ পাপন, কিশোরগঞ্জ 
কিশোরগঞ্জের নরসুন্দার সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্পের বাউন্ডারিতে থাকা গ্রিল খুলে নিয়ে গেছে দুর্বৃত্তরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
কিশোরগঞ্জের নরসুন্দার সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্পের বাউন্ডারিতে থাকা গ্রিল খুলে নিয়ে গেছে দুর্বৃত্তরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

কিশোরগঞ্জের নরসুন্দা সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্পের বাউন্ডারিতে থাকা চার শতাধিক রডের গ্রিল উধাও হয়ে গেছে। যার আনুমানিক মূল্য ২০ লক্ষাধিক টাকা। এত গ্রিল উধাও হয়ে যাওয়ার পরও কর্তৃপক্ষকে এ নিয়ে কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি। স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রশাসনের উদাসীনতার কারণেই এমন ঘটনা ঘটেছে।

সরেজমিনে নরসুন্দা সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্পের কাচারিবাজার ব্রিজ থেকে বড়বাজার মাছমহল ব্রিজ পর্যন্ত দেখা যায়, নদের দুই পাশের বাউন্ডারির চার শতাধিক গ্রিল উধাও হয়ে গেছে।

জানা গেছে, ২০১৪ সালে উদ্যোগ নেওয়া নরসুন্দা সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্পের ব্যয় ছিল ১১০ কোটি টাকা। জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ (এলজিইডি) ও কিশোরগঞ্জ পৌরসভা যৌথভাবে কাজটি করে। প্রকল্পের কাজ শেষ হয় ২০১৬ সালে। প্রকল্পের টাকা নিয়েও লুটপাটের অভিযোগ ছিল।

অন্যদিকে নরসুন্দা নদের পাড়ের ওয়াকওয়েতে অধিকাংশ সড়কবাতি না থাকায় সন্ধ্যার পর এখানে দেখা যায় ভুতুড়ে অন্ধকার। আলো না থাকার সুযোগে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে। মাদকের আখড়া হিসেবেও পরিচিতি পেয়েছে স্থানটি। সন্ধ্যার পর লোকজন ভয়ে এ ওয়াকওয়ে দিয়ে যাতায়াত করেন না বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।

পৌরবাসী আজিজুল রিয়াদ ও সাকিবসহ কয়েকজন বলেন, ‘কিশোরগঞ্জ পৌর কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা ও পৌর কর্মচারীদের কর্মক্ষেত্রে অবহেলার কারণে সরকারি সম্পদ উধাও হয়ে গেছে।’ তাঁরা বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজরদারি না থাকায় একটি সিন্ডিকেট নির্ভয়ে এসব চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কিশোরগঞ্জ পৌরসভার একাধিক কর্মকর্তা বলেন, ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর এসব গ্রিল চুরি করে নিয়ে গেছে চোরেরা। পৌর কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কোনো ধরনের পদক্ষেপ নেয়নি। এমনকি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকেও অবগত করেনি।

কিশোরগঞ্জ পৌরসভার সচিব সৈয়দ শফিকুর রহমান বলেন, ‘এ বিষয়ে আমার কাছে কোনো তথ্য নেই। আমি কোনো কিছু জানি না।’

কিশোরগঞ্জ পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘প্রকল্পটি এলজিইডি বাস্তবায়ন করেছে। কিন্তু আমাদের বুঝিয়ে দেয়নি। আমি সরেজমিনে পরিদর্শন করে পৌর প্রশাসকের সঙ্গে কথা বলব।’

কিশোরগঞ্জ এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ এনায়েত কবির বলেন, ‘আমাদের দায়িত্ব ছিল বাস্তবায়ন করে দেওয়ার, আমরা তা করেছি। এই প্রকল্পের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব তাদের।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ধানমন্ডির ছায়ানট ভবনে অগ্নিসংযোগ, নিরাপত্তা জোরদার

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ছায়ানটের ভেতর ভাঙচুর করে বিক্ষুব্ধরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
ছায়ানটের ভেতর ভাঙচুর করে বিক্ষুব্ধরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

রাজধানীর ধানমন্ডিতে ছায়ানট ভবনের ভেতরে আগুন দেওয়া হয়েছে। তবে ঘটনাস্থলে রাত ৩টায় কোনো বিক্ষোভকারীর দেখা মেলেনি।

ভবনের সামনে সেনাবাহিনী, পুলিশ ও র‍্যাবের সদস্যরা নিরাপত্তা অবস্থান নিয়েছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে জানা গেছে।

ধানমন্ডি মডেল থানার ডিউটি অফিসার মিঠুন সিংহ বলেন, ‘বিক্ষুব্ধ জনতা ধানমন্ডিতে অবস্থিত ছায়ানট ভবন ভাংচুর ও আগুন দিয়েছে। আমরা ফায়ার সার্ভিসকে খবর দিয়েছি। পুলিশ ঘটনাস্থলে আছে। আমাদের ঊর্ধ্বতন সেখানে আছেন।’

এদিকে, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার দীর্ঘ সময় পরও ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে পারেনি।

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদি হত্যার বিচারের দাবিতে রাজধানীতে বিক্ষোভ করছেন ইনকিলাব মঞ্চের কর্মী ও সমর্থকেরা। এই বিক্ষোভের অংশ হিসেবে এর আগে রাত থেকেই বিক্ষুব্ধরা শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নিয়ে যান চলাচল বন্ধ করে দেয়। পরে তারা রাজধানীর রামপুরা, মিরপুর ও কারওয়ান বাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় সড়ক অবরোধ করে যান চলাচলে বাধার সৃষ্টি করে।

রাত ১২টার দিকে কারওয়ান বাজারে প্রথম আলো কার্যালয়ে ভাঙচুর ও নথিপত্রে অগ্নিসংযোগও করে তারা। একপর্যায়ে তারা ডেইলি স্টার কার্যালয়ের দিকেও অগ্রসর হয় এবং সেখানেও আগুন ধরিয়ে দেয়। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ডেইলি স্টার কার্যালয়ের আগুন নিয়ন্ত্রণে এনেছে দমকল কর্মীরা। সেখানে দমকল বাহিনীর অন্তত দুটি ইউনিট কাজ করছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

তালগাছ ন্যাড়া করে দেওয়ায় ক্ষুব্ধ নওগাঁবাসী

নওগাঁ সংবাদদাতা
সড়কের দুই পাশে থাকা ৭৫০টি তালগাছের পাতা কেটে ন্যাড়া করে দিয়েছে নেসকো। গতকাল নওগাঁয় বাইপাস সড়কে। ছবি: আজকের পত্রিকা
সড়কের দুই পাশে থাকা ৭৫০টি তালগাছের পাতা কেটে ন্যাড়া করে দিয়েছে নেসকো। গতকাল নওগাঁয় বাইপাস সড়কে। ছবি: আজকের পত্রিকা

নওগাঁয় বাইপাস সড়কের দুই পাশে থাকা ৭৫০টি তালগাছের পাতা কেটে ন্যাড়া করে দেওয়া হয়েছে। এসব গাছের ওপর দিয়ে যাওয়া বিদ্যুতের সরবরাহ লাইনের সুরক্ষা দিতে এই কাজ করেছে নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেড (নেসকো)। পরিবেশকর্মীরা বলছেন, সরকার যখন বজ্রপাত থেকে সুরক্ষায় তালগাছ রোপণের উদ্যোগ নিচ্ছে, সেখানে এভাবে পাতা কেটে গাছগুলো ন্যাড়া করা ঠিক হয়নি। বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করে বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করা সম্ভব ছিল। এতে গাছ বাঁচত, পরিবেশের ভারসাম্যও রক্ষা পেত।

স্থানীয় কয়েকজন ব্যক্তি বিভিন্ন এলাকা থেকে তালের বীজ সংগ্রহ করে সড়কের দুই পাশে রোপণ করেছিলেন। এখন একেকটি গাছের বয়স ২০-৩০ বছর। এগুলোর কারণে সড়কটিও দৃষ্টিনন্দন হয়ে ওঠে। কিন্তু এখন পাতা ছেঁটে ফেলায় কিছু গাছ মারা যেতে পারে। এর আগেও সড়ক সংস্কারের নামে নির্বিচারে গাছ কাটা হয়েছিল।

এ বিষয়ে নেসকোর উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মো. কালাম বলেন, ‘বৈদুতিক লাইনের নিরাপত্তা নিশ্চিতে ঝুঁকিপূর্ণ গাছের ডাল ও মাথা কাটা হয়েছে। এটি নিয়মিত প্রক্রিয়া।’

সরেজমিনে দেখা যায়, সড়কের রামভদ্রপুর থেকে বটতলী বোয়ালিয়া পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকাজুড়ে কয়েক হাজার তালগাছ। এগুলোর উচ্চতা ১০-১২ ফুট। সামান্য দূরত্বে বিদ্যুতের খুঁটি। এর মধ্যে দুই পাশে থাকা প্রায় ৭৫০টি তালগাছ ন্যাড়া অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে।

স্থানীয় বাসিন্দা বেলাল হোসেন বলেন, ‘দিন দিন তালগাছ হারিয়ে যাচ্ছে। এই গাছগুলো এক দিনে বড় হয়নি। বিদ্যুতের লাইন পরিষ্কারের নামে সমানে পাতা কাটা হয়েছে। তালগাছের ওপর দিয়ে যাওয়া বিদ্যুতের খুঁটিগুলো দু-তিন হাত সরিয়ে নেওয়া যেত। কিন্তু তারা সেটি না করে গাছের ক্ষতি করল।’

স্থানীয় পরিবেশকর্মী নাইস পারভীন বলেন, ‘নওগাঁয় প্রতিবছর বজ্রপাতে অনেক মানুষ মারা যায়। বজ্রপাতের ক্ষতি এড়াতে তালগাছ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। সরকার যেখানে গাছ লাগানোর উদ্যোগ নিচ্ছে, সেখানে এগুলো ন্যাড়া করে দেওয়া পরিবেশবিধ্বংসী আচরণ।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত