Ajker Patrika

কিশোর গ্যাং: এক উপদ্রব!

সম্পাদকীয়
আপডেট : ২৫ মে ২০২২, ০৮: ৩৫
কিশোর গ্যাং: এক উপদ্রব!

কেউ কি লক্ষ করেছেন, ‘কিশোর গ্যাং’ শব্দ দুটো এখন বারোয়ারি হয়ে গেছে? এরা যে দেশের বিভিন্ন জায়গায় মহা উৎসাহে তাদের পেশিশক্তির প্রকাশ ঘটিয়ে চলেছে, সে ব্যাপারে কি কারও দ্বিমত আছে? এরা যেসব উপদ্রব ঘটিয়ে চলেছে তা যে ক্ষমতার নৈকট্য ছাড়া ঘটানো যায় না, সেটা কি আমরা বুঝতে পারছি? সেই ক্ষমতা রাজনৈতিক হতে পারে, গোষ্ঠীগত হতে পারে, এমনকি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের উদাসীনতার কারণেও ঘটতে পারে।

কথাগুলো উঠল নারায়ণগঞ্জে কিশোর গ্যাংয়ের মাস্তানির খবরের কারণে। আজকের পত্রিকায় যে খবরটি বেরিয়েছে, তাতে কিশোর গ্যাংয়ের দাপটটা প্রকটভাবে চোখে পড়ছে। এ ছাড়া খুলনায় সাজাপ্রাপ্ত কিশোর গ্যাংয়ের মাস্তানির খবরও তো জানা গেল। খুলনা পাবলিক স্কুলের ক্লাস সেভেনের ছাত্র ফাহমিদ তানভীর রাজিনকে হত্যার দায়ে আদালত দুটি কিশোর গ্যাংয়ের ১৭ জন সদস্যকে সাত বছর করে কারাদণ্ড দিয়েছেন।

এ ধরনের গ্যাং সৃষ্টিতে গরিব-বড়লোক সব ধরনের কিশোরকেই দেখা যায়। মাস্তানি করার ক্ষেত্রে তথাকথিত শ্রেণিবৈষম্য অগ্রাহ্য করা গেছে। সমাজের বিভিন্ন অংশে শ্রেণিবিলোপ ঘটলে স্বয়ং মার্ক্স খুশি হতেন। কিন্তু সদ্য শৈশব পেরোনো কিশোরদের এই গ্যাংগুলো কার্ল মার্ক্সের জন্য কোনো সুসংবাদ বয়ে আনেনি। মার্ক্স নিশ্চয়ই পেটোয়া বাহিনীর সাম্য চাননি।

এই কিশোরেরা শুধু নিজেদের বলে বলীয়ান হয়ে কুকর্মগুলো সংঘটিত করছে না। কারও না কারও বৃক্ষ ছায়ায় এদের বসবাস, নইলে হঠাৎ করে কোনো মানুষের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে কেটে পড়ার সুযোগ পায় কী করে? বেশির ভাগ ঘটনায় এরা ধরাও পড়ে না। কেন ধরা পড়ে না?

সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পর ‘মিনিয়া যাভুত আর্লিকিনো’ (আমার নাম আর্লিকিনো) নামে একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করা হয়েছিল, যা ব্যাপকভাবে আলোড়ন তুলেছিল রুশ সমাজে। আর্লিকিনো নামের কিশোরটিও গড়ে তুলেছিল এক কিশোর গ্যাং, তারই রূপায়ণ ছিল ছবিটি। সমাজের নষ্টামীর কারণে বিভ্রান্ত কিশোর মনস্তত্ত্বের অপূর্ব বিশ্লেষণ ছিল সে সিনেমায়। সত্যজিৎ রায়ের ‘অপুর সংসার’ সিনেমায় কাজলের পাখি মারার দৃশ্য নিয়ে অনেক সমালোচকই আপত্তি তুলেছিলেন। সত্যজিৎ রায় সমালোচনার জবাবে শিশু মনস্তত্ত্বের বিশ্লেষণ করে দেখিয়ে দিয়েছিলেন যে এটা শিশুদের স্বভাবজাত।

হিংসা কিংবা নৃশংসতার পথ খুলে গেলে শিশু-কিশোরেরা সেই পথেই হাঁটবে। সেই ভ্রষ্ট পথটি বন্ধ করতে হলে প্রয়োজন শিশু-কিশোরদের নিয়ে সামগ্রিক পরিকল্পনা করা। সেটা সরকারিভাবে যেমন, সামাজিকভাবেও তেমনি। ব্যক্তিগত বা পারিবারিক পর্যায়েও তার প্রভাব থাকতে হবে। নইলে শিশু-কিশোরেরা জীবনে দেখবে এক আর নীতিকথায় দেখবে আরেক বাংলাদেশ। তাতে বিভ্রান্ত হয়ে শিশু-কিশোর মন বিদ্রোহী হয়ে উঠবেই। সে সংকটটাই তো কাটাতে হবে সবার আগে। নইলে আরও বহুদিন কিশোর গ্যাংগুলোর তাণ্ডব দেখে যেতে হবে।

ভেবে দেখুন, এমন সময়ও আসতে পারে, যখন ভাইয়ের সামনে বোনকে, বোনের সামনে ভাইকে, বাবার সামনে মাকে, মায়ের সামনে বাবাকে অসম্মান করে যাচ্ছে একদল কিশোর। সেটা কি খুব ভালো লাগবে? সাবধান হওয়ার সময় পেরিয়ে যাচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...