Ajker Patrika

রাষ্ট্রের মদদেই তাঁর উত্থান নিজের দোষে পতন

কামরুল হাসান
আপডেট : ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২০: ০৮
রাষ্ট্রের মদদেই তাঁর উত্থান নিজের দোষে পতন

নিকুঞ্জ-২ আবাসিক এলাকায় তখনো সেভাবে বসবাস শুরু হয়নি। এখন যেখানে ঢাকা রিজেন্সি হোটেল, সেখান থেকে পেছনের দিকে ৮-১০টি সড়কে কেবল বাড়িঘর উঠেছে। নাগরিক টেলিভিশন ভবনের সামনের সড়কটি তখন ছিল বসতির শেষ মাথা। তারপরে খোলা মাঠ, সেখানে দাঁড়ালে দূর থেকে উড়োজাহাজের ওঠানামা দেখা যেত।

এই সড়কগুলোর যেকোনো একটি বাড়ির খোঁজে সকাল থেকে আমরা ২-৩টা করে চক্কর দিয়েছি, কিন্তু খোঁজ মেলেনি। আমরা মানে, আমি আর আমার মোটরবাইকের পেছনে বসা পারভেজ খান, একটি জাতীয় দৈনিকের ক্রাইম রিপোর্টার।

আমাদের কাছে খবর ছিল, নিকুঞ্জ এলাকার কোনো একটি বাড়িতে সে সময়ে ঢাকার নামকরা এক সন্ত্রাসী তাঁর বান্ধবীসহ মারা গেছেন অথবা তাঁকে মেরে ফেলা হয়েছে। বান্ধবীর মৃত্যু ঢাকা মেডিকেলে হওয়ায় আমরা তাঁর নাম জানতে পেরেছি, কিন্তু সেই সন্ত্রাসীর নাম বা তিনি কোথায় মারা গেছেন, তা কেউ বলতে পারছে না। প্রথমে আমাদের ধারণা ছিল, সেই নারীর পরিবারকে ধরে সন্ত্রাসীর নাম-ঠিকানা বের করব। কিন্তু হাসপাতালের কাগজে নাম ছাড়া নারীর কোনো ঠিকানা নেই। মারা যাওয়ার পর কেউ তাঁর লাশও নিতে আসেনি। দুদিন ধরে মৃতদেহ হাসপাতাল মর্গে পড়ে আছে। পারভেজ খানের শক্ত সোর্স, সেই সোর্স বলেছেন, নিকুঞ্জের একটি বাড়িতেই এ ঘটনা ঘটেছে। সেই ভরসায় আমরা গলদঘর্ম হচ্ছি। এটা ১৯৯৯ সালের ১৮ মের ঘটনা।

ঘণ্টা দুয়েক ঘুরে ক্লান্ত হয়ে একটি চায়ের দোকানে বসার পরই মনে হলো, কৌটায় লুকানো ভ্রমরের খোঁজ পেয়ে গেছি। সেই দোকানি একটি বাড়ি দেখিয়ে বললেন, ওই বাড়িতে এ ঘটনা ঘটেছে। কীসের চা খাওয়া—গেলাম সেই বাড়িতে। ৫ নম্বর সড়কের চারতলা বাড়িটির উত্তর দিকে একটি ফ্ল্যাটে সেই ঘটনা। তিনতলায় বাড়িওয়ালা থাকেন, কিন্তু তিনি কিছুই বললেন না। পাশের এক ভাড়াটে বললেন, দুদিন আগে এক তরুণী এবং এক পুরুষ মদ পান করে অসুস্থ হওয়ার পর হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। তিনি তাঁদের নাম জানেন না। কোন হাসপাতালে গেলেন—প্রশ্ন করতেই তিনি বললেন, যাওয়ার সময় তাঁরা বেবিট্যাক্সিচালককে মহাখালীর মেট্রোপলিটান মেডিকেল সেন্টারের নাম বলেছিলেন।

এই তথ্যটুকু আমাদের খুব কাজে দিল। এলাম মহাখালী বাস টার্মিনালের উল্টো দিকে মেট্রোপলিটান মেডিকেল সেন্টারে। ভাড়াটের দেওয়া বিবরণ মিলে গেল। দুদিন আগে নারী-পুরুষ এসেছিলেন। তাঁদের একজনের নাম জেসমিন আক্তার, আরেকজনের ছালাউদ্দিন। হাসপাতালে আসার পর পুরুষটি মারা গেছে, নারীকে তাঁরা ঢাকা মেডিকেলে পাঠান। ঠিকানা বলতে, খাতায় লেখা আছে সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল।

ছালাউদ্দিন নামটি আমাদের পরিচিত নয়। এই নামে কোনো সন্ত্রাসী ঢাকায় আছে, মনে করতে পারছি না। তবু মনে হলো, টানেলে আলোর রেখা দেখা দিয়েছে। আমরা একটু একটু করে তথ্যের মালা গাঁথতে শুরু করেছি।

পারভেজ খান আমাকে বললেন, বন্ধু, এবার চলো সায়েদাবাদে, দেখি কে মারা গেছে। এলাম সায়েদাবাদ টার্মিনালে। এখানে সবকিছুই স্বাভাবিক। কিছু হয়েছে, তা কেউ বলছেন না। এক পরিবহননেতাকে আড়ালে ডেকে পারভেজ খান অনেকক্ষণ কথা বললেন, তিনি টার্মিনালের পাশে একটি বাড়ি দেখিয়ে বললেন, ওই বাড়িতে গেলেই সব জানতে পারবেন। গেলাম ১০/২ নম্বর বাড়িতে। বাড়িটি চারতলা। নিচতলায় এক লোককে পেয়ে জানতে চাইলাম, দোতলায় কে থাকেন। তিনি যাঁর নাম বললেন, তা শুনে আমরা চমকে গেলাম। বললেন, এই বাড়িতে থাকতেন সায়েদাবাদের সে সময়ের ত্রাস নাজিম উদ্দিন নাজিম। দুদিন আগে তিনি হার্ট অ্যাটাকে মারা গেছেন। বাড়িতে তাঁর স্ত্রী-সন্তান আছে। নাজিমের নাম শুনেই বড় খবরের গন্ধ পেয়ে গেলাম। এতক্ষণের পরিশ্রমের মাশুল মিলল।

দোতলার উঠে দেখি বাড়িতে অনেক লোক, বেশির ভাগের চেহারা সন্ত্রাসীর মতো। কিন্তু সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে তাঁরা আমাদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করলেন। বসতে দিলেন। আমরা নাজিমের স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতে চাইলাম। তিনি ভেতরে আছেন, অপেক্ষা করতে বললেন।

এবার নাজিমের কথা বলি। তখন এরশাদ ক্ষমতায়। রোজই হরতাল, অবরোধ হচ্ছে। এরশাদের পক্ষে একশ্রেণির পরিবহননেতা হরতাল উপেক্ষা করে রাস্তায় গাড়ি চালাতে চাইলেন। তাঁরা পরিবহনশ্রমিকদের হাতে অস্ত্র তুলে দিলেন, যাতে কেউ বাধা দিলেই ব্যবস্থা নেওয়া যায়। এরশাদের পক্ষে সন্ত্রাসী দলের নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য দুই যুবককে বাছাই করা হলো। একজনের নাম নাজিম উদ্দিন, আরেকজন মুন্না। এসব করে এরশাদ ক্ষমতায় থাকতে থাকতেই তাঁরা বিপুল অর্থের মালিক হয়ে গেলেন।

এরশাদের পতনের পর সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি তাঁরা পরিবহননেতা বনে গেলেন। বাসের হেলপার থেকে ঢাকা-সিলেট রুটের এনপি পরিবহনের অংশীদার হয়ে গেলেন নাজিম। কিন্তু স্বভাব গেল না। শুরু করলেন চাঁদাবাজি আর সন্ত্রাস। প্রথমে নাজিম আর মুন্না একসঙ্গে, পরে দুজন প্রতিপক্ষ হয়ে গেলেন। তাঁদের পৃষ্ঠপোষকতা দিলেন কয়েকজন পরিবহননেতা। তখন দুই গ্রুপের মধ্যে গোলাগুলি আর বাসে আগুন দেওয়ার ঘটনা ছিল নিত্যদিনের। পুলিশের তালিকায় দুজনই হয়ে গেলেন সন্ত্রাসী।

১৯৯১ সালের পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর মির্জা আব্বাসের লোকজন সায়েদাবাদে ঢোকার চেষ্টা করে ব্যর্থ হলো। প্রথম দফা আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে গ্রেপ্তার হন নাজিম। কিছুদিন জেল খেটে বেরিয়ে এসে সায়েদাবাদের পরিবহন সন্ত্রাসীদের এক জোট করলেন। পুলিশের হাত থেকে বাঁচতে নিকুঞ্জ এলাকায় একটি বাসা ভাড়া নিলেন। আমরা যে বাসার খোঁজ করছিলাম, সেটাই ছিল নাজিমের গোপন আস্তানা।

নাজিমের স্ত্রীর নাম নাসিমা আক্তার পপি। তাঁর এক সন্তান নাঈম। খুবই সাধারণ গৃহবধূ। তিনি কোনো রাখঢাক না করেই সব বলতে শুরু করলেন। ৫-৬ জন তাঁকে ঘিরে আছে।

আমরা যেদিন তাঁর বাড়িতে যাই, সেটা ছিল ১৯৯৯ সালের ১৮ মে, মঙ্গলবার। নাসিমা বললেন, এর দুদিন আগে ১৬ মে দুপুরের দিকে নিজের গাড়িচালক স্বপনকে সঙ্গে নিয়ে বের হন নাজিম। যাওয়ার সময় ম্যানেজার সেলিম, বন্ধু শামীম, কর্মচারী আজিজুল এবং শ্যালক ওমর ফারুক সঙ্গে ছিলেন। তাঁরা নিকুঞ্জে যাচ্ছিলেন। মালিবাগে যাওয়ার পর সেই গাড়িতে ওঠেন জেসমিন নামের এক তরুণী। জেসমিন আগে থেকেই রাস্তায় দাঁড়িয়ে ছিলেন। তাঁদের নিকুঞ্জে নামিয়ে দিয়ে গাড়িটি চলে আসে। নাসিমার কথা বলার সময় শ্যালক ওমর ফারুক পাশে ছিলেন। বাকিটা বললেন তিনি।

ওমর ফারুক বললেন, রাতের বেলা তাঁরা বাসায় মদ পান করছিলেন। এক দফা মদ ফুরিয়ে গেলে গভীর রাতে উত্তরার একটি বাড়িতে গিয়ে আবার মদ নিয়ে আসেন। সেটা খেয়ে নাজিম, জেসমিন ও আজিজুল অসুস্থ হয়ে পড়েন। সকালে তাঁদের মহাখালীর মেট্রোপলিটান মেডিকেল সেন্টারে নেওয়া হয়। সেখানে নাজিমের নাম বলা হয় ছালাউদ্দিন। পরে নাজিম মারা যান। জেসমিন ও আজিজুলকে পাঠানো হয় ঢাকা মেডিকেলে। পরে তাঁরাও মারা যান। এরপর তাঁরা নাজিমের লাশ গোপনে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পুলিশে খবর দেয়। পুলিশ এসে লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠায়। পরে নাজিমের গাড়িচালককে দিয়ে পুলিশ একটি অভিযোগ লিখিয়ে মদপানে মৃত্যুর মামলা করে।

নাসিমার কাছে জানতে চাইলাম, জেসমিনকে চেনেন? তিনি মাথা নাড়লেন, কিছু বললেন না। বোঝা গেল, স্বামীর এ কর্মকাণ্ডে তিনি খুবই বিরক্ত। বললেন, জেসমিনের বাবার নাম আওলাদ হোসেন। সিপাহিবাগে বাসা। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যবস্থাপনা বিষয়ে পড়েছে। তাঁর সঙ্গে নাজিমের বৈবাহিক কোনো সম্পর্ক নেই। কিন্তু দুজন একসঙ্গে থাকেন। এটা নিয়ে কেউ কিছু বলতে পারে না। তিনি খুব বিরক্তি নিয়ে বললেন, ‘লেখাপড়া জানা একটি মেয়ে আমার স্বামীর রক্ষিতা।’ নাসিমার দিকে তাকিয়ে মনে হলো, তিনি গোপন কিছু বলতে চান, কিন্তু পারছেন না। আমি তাঁকে বললাম, আপনি কি আলাদা কিছু বলতে চান? তিনি মাথা নাড়লেন, আমি সবাইকে বের হয়ে যাওয়ার অনুরোধ করতেই তাঁরা সরে গেলেন। নাসিমা এদিক-ওদিক তাকিয়ে বললেন, মদের সঙ্গে বিষ মিশিয়ে তাঁদের মেরে ফেলা হয়েছে। এটুকু বলতেই লোকজন চলে এলেন। তিনি কথা বন্ধ করলেন।  

আমাদের কথা শেষ। পেটে প্রচণ্ড ক্ষুধা। সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালের পূর্ব দিকের এক রেস্তোরাঁয় ডাল, মাংস আর রুটি খেয়ে আমরা যখন বের হলাম, তখন বিকেল হয়ে গেছে। পরের দিন সেই খবর ফলাও করে ছাপা হলো।

আজকের ‘আষাঢ়ে নয়’ লেখার আগে ফোন দিলাম পরিবহননেতা খন্দকার এনায়েত উল্যাহকে। নাজিমের কথা উঠতেই বললেন, নাজিম মারা যাওয়ার কিছুদিন পর মুন্নাও অস্বাভাবিক আচরণ শুরু করে। একপর্যায়ে সেও মারা যায়। দুই সন্ত্রাসীর মৃত্যুর পরই সায়েদাবাদ টার্মিনাল শান্ত হয়। আজকের সায়েদাবাদ টার্মিনাল দেখলে বোঝাই যায় না, একটা সময় এখানে বন্দুকযুদ্ধ ছিল নিত্যদিনের ঘটনা।
মনে পড়ে গেল সেই পুলিশ কর্মকর্তার কথা, আসলেই সন্ত্রাসীদের চুল পাকে না। তার আগেই প্রতিপক্ষের হাতে প্রাণ যায়।

আরও পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘কোম্পানির লোকেরাই আমার ভাইকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে’

আমি লজ্জিত, নিজেকে মাটিতে পুঁতে দিতে ইচ্ছে করছে—ফেসবুকে প্রেস সচিব

তাহলে কি বাংলাদেশ-ভারত ফাইনাল

প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার সম্পাদকের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার ফোনালাপ

গণমাধ্যমে হামলা ও ময়মনসিংহে নৃশংসতায় জড়িতদের ছাড় দেওয়া হবে না, সরকারের বিবৃতি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

হাদিকে গুলির ঘটনায় সন্দেহভাজন ফয়সাল ওরফে দাউদ কে, মাস্ক পরা ব্যক্তিটিই কি তিনি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৩: ০৫
হাদিকে গুলি করা সন্দেহভাজন। ছবি: সংগৃহীত
হাদিকে গুলি করা সন্দেহভাজন। ছবি: সংগৃহীত

জুলাই–আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আলোচিত মুখ ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ওসমান হাদিকে গুলি করার ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগে মাধ্যমে বহুল আলোচিত নাম ফয়সাল করিম মাসুদ কিংবা দাউদ খান। গতকাল শুক্রবার হাদি গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর থেকেই এই দুই নামে এক ব্যক্তির ছবি ফেসবুকে ভেসে বেড়াচ্ছে।

হাদিকে গুলির ঘটনায় মাস্ক পরা দুই তরুণ জড়িত বলে তাঁর সহযোদ্ধাদের সন্দেহ। তাঁদের দাবি, কয়েকদিন ধরে দুই তরুণ মাস্ক পরে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী হাদির সঙ্গে গণসংযোগে অংশ নিচ্ছেন। বার বার তাঁদের মাস্ক খুলতে বলা হলেও তাঁরা রাজি হননি। হাদিঘনিষ্ঠদের সন্দেহ, এই তরুণরা হাদিকে হত্যার উদ্দেশ্যে তাঁর গতিবিধি বোঝার জন্য তাঁর সঙ্গে যুক্ত হন।

দুজনের মধ্যে মাস্ক পরা একজন হাদির পাশে বসে আছে— এমন একটি ছবি ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেকেই তাকে ‘ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খান’ হিসেবে দেখিয়েছেন। তবে মাস্ক করা এই তরুণই যে হাদিকে গুলি করেছেন, কিংবা এই তরুণই যে ফয়সাল, তা নিশ্চিত করে বলছে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) পক্ষ থেকে ‘সন্দেহভাজন’ হিসেবে শনাক্ত একজনের ছবি প্রকাশ করে ধরিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।

ডিএমপির বিবৃতিতে বলা হয়, ‘শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) রাজধানীর বিজয়নগর বক্স কালভার্ট এলাকায় মোটরসাইকেল আরোহী দুর্বৃত্তদের হামলায় ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ওসমান হাদি গুরুতর আহত হন। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ হামলাকারীদের গ্রেফতারে রাজধানীতে জোর অভিযান পরিচালনা করছে। ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে ছবির ব্যক্তিকে প্রাথমিকভাবে সনাক্ত করা গেছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ তাকে হন্য হয়ে খুঁজছে। উক্ত ব্যক্তি সম্পর্কে কোন তথ্য থাকলে বা তার সন্ধান পেলে দ্রুত নিম্নলিখিত মোবাইল নম্বর অথবা ৯৯৯ এর মাধ্যমে পুলিশকে জানানোর জন্য বিনীত অনুরোধ করা হলো।’

পুলিশের বিবৃতিতে এই তরুণের নাম উল্লেখ করা না হলেও ছবি দেখে ‘ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খান’ বলে আন্দাজ করা যায়। এই তরুণকেও আগে হাদীর সঙ্গে দেখা গেছে। তবে গত কয়েকদিন ধরে হাদির সঙ্গে গণসংযোগে থাকা মাস্ক পরা তরুণটিই ‘ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খান’ এমন কোনো তথ্য পুলিশের কাছ থেকে পাওয়া যায়নি।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, গত ৯ ডিসেম্বর বাংলামোটর এলাকায় হাদির ইনকিলাব কালচারাল সেন্টারে গিয়ে হাদির পাশে বসে আলোচনা শুনেছিলেন ফয়সাল করিম। সেই আলোচনার ছবিও ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে।

ফয়সাল করিম নামের তরুণ কার্যক্রমনিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের নিষিদ্ধঘোষিত সহযোগী সংগঠন ছাত্রলীগের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ২০১৯ সালের ১১ মে ঘোষিত কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে তিনি সদস্য হন। তাঁর পুরো নাম ফয়সাল করিম দাউদ খান।

নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরদিন গতকাল শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর পুরানা পল্টনের বক্স কালভার্ট রোডে গুলিবিদ্ধ হন ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ও ঢাকা–৮ সংসদীয় আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী ওসমান হাদি। হাদিকে বহনকারী রিকশাকে অনুসরণ করে পেছন দিকে থেকে মোটরসাইকেলে এসে তাঁকে গুলি করে চলে যায় আততায়ীরা। হাদি রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাঁর অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।

ইনকিলাব কালচারাল সেন্টার নামে ওসমান হাদির প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন জায়গায় তাঁর সঙ্গে ফয়সাল করিমের কিছু ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক ও বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। সেই ছবিগুলোতে থাকা ফয়সাল করিমের সঙ্গে মাস্ক পরা ব্যক্তির চেহারার কিছুটা সাদৃশ্য আছে। সেকারণে গুলি ছোড়ার ঘটনায় তাঁকে সন্দেহ করা হচ্ছে।

এর মধ্যেই দুপুরে ডিএমপি সন্দেহভাজনকে শনাক্তের কথা জানায় এবং ওসমান হাদিকে গুলি করা ব্যক্তিকে ধরিয়ে দিতে পারলে ৫০ লাখ টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।

গত ৯ ডিসেম্বর বাংলামোটর এলাকায় হাদির ইনকিলাব কালচারাল সেন্টারে গিয়ে হাদির পাশে বসে আলোচনা শুনেছিলেন ফয়সাল করিম।
গত ৯ ডিসেম্বর বাংলামোটর এলাকায় হাদির ইনকিলাব কালচারাল সেন্টারে গিয়ে হাদির পাশে বসে আলোচনা শুনেছিলেন ফয়সাল করিম।

আলোচিত ফয়সাল করিম কে?

পেশাদারদের যোগাযোগমাধ্যম লিংকডইনে ফয়সাল করিমের নামে প্রোফাইল আছে। সেখানে তিনি নিজেকে অ্যাপল সফট আইটি, ওয়াইসিইউ টেকনোলজি ও এনলিস্ট ওয়ার্ক নামে তিন প্রতিষ্ঠানের মালিক হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

লিংকডইন প্রোফাইলের তথ্য অনুযায়ী, ফয়সাল করিম ২০১৩ সালে ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটারবিজ্ঞানে স্নাতক সম্পন্ন করেছেন। পরে আরেকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি এমবিএ করেছেন বলে সেখানে উল্লেখ রয়েছে।

২০২৪ সালে জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের সময় আন্দোলনকারীদের দমনে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতা–কর্মীদের সঙ্গে মাঠে ছিলেন বলে ছাত্রলীগের সূত্র জানিয়েছে।

ওসমান হাদিকে গুলির ঘটনায় নাম আসার পর ফয়সাল করিমের সঙ্গে আওয়ামী লীগ আমলে বাংলাদেশের দুইবারের রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের কিছু নেতার ছবি ফেসবুকে প্রকাশিত হয়েছে। এ ছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে হাদির সঙ্গে ঢাকা–৮ আসনে গণসংযোগ এবং বাংলামোটরে হাদির প্রতিষ্ঠিত ইনকিলাব কালচারাল সেন্টারের আড্ডায় ফয়সালের অংশ নেওয়ার ছবিও ভাইরাল হয়েছে। অনেকে ধারণা করছেন, ফয়সাল করিম ওসমান হাদিকে বেশ কিছুদিন ধরে অনুসরণ করছিলেন।

২০১৬ সালে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) সহযোগিতা ও সরকারের তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগের পৃষ্ঠপোষকতায় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে ‘ব্যাটল অব ৭১’ নামে একটি কম্পিউটার গেম তৈরি করেছিল ফয়সাল করিমের মালিকানাধীন ওয়াইসিইউ টেকনোলজি লিমিটেড। সে বছরের নভেম্বরে ওই গেমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বেসিসের তৎকালীন সভাপতি এবং পরে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বারও উপস্থিত ছিলেন।

২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ‘আসনভিত্তিক নির্বাচন পরিচালনা ও সমন্বয়ক কমিটি’ করেছিল কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। ঢাকা–১২ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। এই আসনের সমন্বয়ক কমিটির সদস্য ছিলেন ফয়সাল করিম।

অভ্যুত্থানের অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার ফয়সালের দ্রুত জামিন নিয়ে প্রশ্ন সবার

জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের পর গত বছরের ২৮ অক্টোবর ঢাকার আদাবরের বাইতুল আমান হাউজিং সোসাইটি এলাকায় ব্রিটিশ কলাম্বিয়া স্কুলের চতুর্থ তলায় অফিসে অস্ত্রের মুখে ১৭ লাখ টাকা লুটের ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় আদাবর থানার মামলার প্রধান আসামি ছিলেন ফয়সাল করিম।

মামলা হওয়ার কিছুদিন পর ৭ নভেম্বর আদাবর এলাকা থেকে ফয়সাল করিমকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাব। তাঁর কাছ থেকে দুটি বিদেশি পিস্তল, দুটি ম্যাগাজিন ও পাঁচটি গুলিও উদ্ধার করা হয়। ওই মামলায় গত ১৬ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট থেকে জামিন পান ফয়সাল করিম। জামিনের সময়সীমা বাড়াতে গত ১২ আগস্ট আবারও আবেদন করলে হাইকোর্ট নতুন করে তাঁর এক বছরের জামিন মঞ্জুর করেন।

জামিনে থাকা অবস্থায় এবার তাঁর বিরুদ্ধে ওসমান হাদিকে গুলি করার অভিযোগ এল। এত অল্প সময়ের মধ্যে তিনি কীভাবে জামিন পেলেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। কারণ, কোনো অপরাধমূলক কাজের প্রমাণ না থাকলেও অভ্যুত্থানের পর শুধু মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা নিয়ে আলোচনা সভা করায় গ্রেপ্তার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও সাংবাদিকের জামিন বারবার নাকচ করা হয়েছিল। আর এ রকম লুটের ঘটনায় দুটি অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিকে এতো দ্রুত জামিন দেওয়া হলো কীভাবে, সেই প্রশ্ন নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এখন আলোচনা–সমালোচনায় সরব।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘কোম্পানির লোকেরাই আমার ভাইকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে’

আমি লজ্জিত, নিজেকে মাটিতে পুঁতে দিতে ইচ্ছে করছে—ফেসবুকে প্রেস সচিব

তাহলে কি বাংলাদেশ-ভারত ফাইনাল

প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার সম্পাদকের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার ফোনালাপ

গণমাধ্যমে হামলা ও ময়মনসিংহে নৃশংসতায় জড়িতদের ছাড় দেওয়া হবে না, সরকারের বিবৃতি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

খুনের পর মোবাইল, ল্যাপটপ, স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকা লুট, ‘গৃহকর্মী আয়েশা’র পরিচয় মেলেনি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১০ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯: ৫৭
ছবি: সিসিটিভির ফুটেজ থেকে নেওয়া
ছবি: সিসিটিভির ফুটেজ থেকে নেওয়া

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে মা-মেয়েকে খুন করার পর কথিক গৃহকর্মী আয়েশা ওই বাসা থেকে একটি মোবাইল ফোন, একটি ল্যাপটপ, বেশ কিছু স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকা লুট করেন। এ ঘটনায় গতকাল সোমবার রাতে মোহাম্মদপুর থানায় করা হত্যা মামলার এজাহারে এই দাবি করা হয়েছে। তবে আয়েশা নামে পরিচয় দেওয়া ওই তরুণীর প্রকৃত পরিচয় মেলেনি এখনো।

স্ত্রী লায়লা আফরোজ (৪৮) ও মেয়ে নাফিসা লাওয়াল বিনতে আজিজ (১৫) হত্যার ঘটনায় গতকাল মামলাটি করেন নাটোরের স্থায়ী বাসিন্দা আ জ ম আজিজুল ইসলাম। মামলায় কথিত গৃহকর্মী মোছা. আয়েশাকে (২০) একমাত্র আসামি করা হয়েছে। তবে এজাহারে তাঁর বাবার নাম ও ঠিকানায় ‘অজ্ঞাত’ লেখা হয়েছে।

আজ মঙ্গলবার দুপুরে আজকের পত্রিকাকে মামলার এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন মোহাম্মদপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) রকিবুজ্জামান তালুকদার। গতকাল সকাল ৭টা ৫১ মিনিট থেকে ৯টা ৩৫ মিনিটের মধ্যে যেকোনো সময় এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে।

এজাহারে বাদী আজিজুল লিখেছেন, তিনি পেশায় একজন শিক্ষক। মোহাম্মদপুরে পরিবার নিয়ে থাকেন। চার দিন আগে উল্লিখিত আসামি তাঁর বাসায় খণ্ডকালীন গৃহকর্মী হিসেবে কাজ শুরু করেন। গতকাল সকাল ৭টার দিকে তিনি (আজিজুল) তাঁর কর্মস্থল উত্তরায় চলে যান। কর্মস্থলে থাকাকালে তিনি তাঁর স্ত্রীর মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করে ব্যর্থ হন।

পরে তিনি বেলা ১১টার দিকে বাসায় আসেন। এসে দেখতে পান, তাঁর স্ত্রীর গলাসহ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় কাটা। স্ত্রী রক্তাক্ত জখম হয়ে মৃত অবস্থায় পড়ে আছেন আর মেয়ের গলার নিচে ডান পাশে কাটা। মেয়ে গুরুতর অবস্থায় বাসার প্রধান ফটকে পড়ে আছে। মেয়ের এই অবস্থা দেখে তিনি দ্রুত তাকে উদ্ধার করেন। পরিচ্ছন্নতাকর্মী আশিকের মাধ্যমে মেয়েকে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। হাসপাতালে নেওয়ার পর তাকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।

মামলায় আজিজুল আরও লিখেছেন, তিনি বাসার সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে পর্যালোচনা করেন। এতে তিনি দেখতে পান, আসামি সকাল ৭টা ৫১ মিনিটের সময় কাজ করার জন্য বাসায় আসেন। সকাল ৯টা ৩৫ মিনিটের সময় আসামি তাঁর (বাদী) মেয়ের স্কুলড্রেস পরে বাসা থেকে পালিয়ে যান। যাওয়ার সময় একটি মোবাইল ফোন, একটি ল্যাপটপ, স্বর্ণালংকার, নগদ অর্থসহ অন্যান্য মূলবান সামগ্রী নিয়ে যান আসামি।

মামলায় বাদী লিখেছেন, সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করে তিনি নিশ্চিত হন যে, অজ্ঞাত কারণে আসামি তাঁর (বাদী) স্ত্রী ও মেয়েকে ছুরি বা অন্য কোনো ধারালো অস্ত্র দিয়ে গুরুতর জখম করে হত্যা করেন।

মা-মেয়ে হত্যার আসামিকে শনাক্ত করা যায়নি। মোহাম্মদপুর থানা-পুলিশ জানায়, গৃহকর্মীর পরিচয় এখনো শনাক্ত করা যায়নি। পুলিশ চেষ্টা চালাচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘কোম্পানির লোকেরাই আমার ভাইকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে’

আমি লজ্জিত, নিজেকে মাটিতে পুঁতে দিতে ইচ্ছে করছে—ফেসবুকে প্রেস সচিব

তাহলে কি বাংলাদেশ-ভারত ফাইনাল

প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার সম্পাদকের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার ফোনালাপ

গণমাধ্যমে হামলা ও ময়মনসিংহে নৃশংসতায় জড়িতদের ছাড় দেওয়া হবে না, সরকারের বিবৃতি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সৌদি আরবে অপহরণ, ৫০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি দেশে

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

সৌদি আরবে এক প্রবাসী ব্যবসায়ীকে অপহরণ করে বাংলাদেশে তাঁর পরিবারের কাছ থেকে ৫০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে একটি চক্র। না দিলে হত্যার হুমকিও দেওয়া হয়। পরিবারের সদস্যরা বিভিন্ন ব্যাংক হিসাব ও মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসে (এমএফএস) ধাপে ধাপে মোট ৩৫ লাখ টাকা পাঠালে সৌদি আরবের রিয়াদে অচেতন অবস্থায় তাঁকে ফেলে যায় অপহরণকারীরা।

গত মঙ্গলবার অপহরণকারী এই চক্রের বাংলাদেশি সদস্য মো. জিয়াউর রহমানকে (৪২) মাগুরার শালিখা থানার হরিপুর বাজার এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছে সিআইডি।

গ্রেপ্তারের পর সংস্থার বিশেষ পুলিশ সুপার জসীম উদ্দিন খান জানান, অপহরণকারীদের দেওয়া এমএফএস ও ব্যাংক হিসাব নম্বর বিশ্লেষণ করে জিয়াউর রহমানকে শনাক্ত করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি মুক্তিপণ থেকে ৫ লাখ টাকা কমিশন নেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন।

চলতি বছরের ১২ জানুয়ারি মো. রাসেল নামের ওই প্রবাসীকে অপহরণের পর সে মাসের ২১ তারিখে তাঁর শ্বশুর রাজধানীর খিলগাঁও থানায় মামলা করেন। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। মামলাটি সিআইডির ঢাকা মেট্রো (পূর্ব) ইউনিট তদন্ত করছে।

মামলার এজাহারে বলা হয়, মো. রাসেল ২০ বছর ধরে রিয়াদে ব্যবসা করছেন। ১২ জানুয়ারি অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিরা তাঁকে অপহরণ করে তাঁর বড় ভাই সাইফুল ইসলামের কাছে ইমু ও ভিওআইপিতে ফোন করে মুক্তিপণ দাবি করে। টাকা না দিলে হত্যার হুমকিও দেওয়া হয়। কয়েক ধাপে টাকা পাঠানোর পর তাঁকে রাস্তার পাশে ফেলে রেখে যায় অপহরণকারীরা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘কোম্পানির লোকেরাই আমার ভাইকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে’

আমি লজ্জিত, নিজেকে মাটিতে পুঁতে দিতে ইচ্ছে করছে—ফেসবুকে প্রেস সচিব

তাহলে কি বাংলাদেশ-ভারত ফাইনাল

প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার সম্পাদকের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার ফোনালাপ

গণমাধ্যমে হামলা ও ময়মনসিংহে নৃশংসতায় জড়িতদের ছাড় দেওয়া হবে না, সরকারের বিবৃতি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

পুলিশের সঙ্গে খারাপ আচরণ করা হচ্ছে: ডিএমপি কমিশনার

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ২০ নভেম্বর ২০২৫, ২০: ২৫
ডিবির সাইবার সাপোর্ট সেন্টার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন ডিএমপি কমিশনার শেখ সাজ্জাত আলী। ছবি: আজকের পত্রিকা
ডিবির সাইবার সাপোর্ট সেন্টার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন ডিএমপি কমিশনার শেখ সাজ্জাত আলী। ছবি: আজকের পত্রিকা

অরাজকতা প্রতিহত করতে গেলে পুলিশের সঙ্গে অসদাচরণ করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার শেখ সাজ্জাত আলী। তিনি বলেছেন, পুলিশ যখন অরাজকতা ঠেকানোর চেষ্টা করছে, তখন তাদের সঙ্গে যে আচরণ করা হয়েছে, তা অত্যন্ত দুঃখজনক।

ডিএমপি কমিশনার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, ‘আমার অফিসারদের সঙ্গে এ ধরনের আচরণ করবেন না।’

আজ বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সাইবার সাপোর্ট সেন্টার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

সাম্প্রতিক অরাজকতা প্রতিরোধের সময় পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণের বিষয়ে ডিএমপি কমিশনার আরও বলেন, ‘পুলিশ যখন অরাজকতা প্রতিহত করার চেষ্টা করছিল, তখন আমার অফিসারদের সঙ্গে যে ধরনের ব্যবহার করা হয়েছে, তা অত্যন্ত হতাশাজনক। আমার অফিসারদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করবেন না। আমরা সংঘাতে জড়াতে চাই না; আমরা সেবা দিতে চাই। আপনারা যেটি করতে চাচ্ছিলেন, সেটি করলে সমাজে, ঢাকায় এবং পুরো দেশে অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো।’

কমিশনার জানান, একটি গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তন হয়েছে। এখন যদি একই ধরনের কার্যকলাপ দেখা যায়, তাহলে সমাজে অস্থিরতা বাড়বে। এ জন্যই পুলিশের সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছিলেন। কিন্তু তাঁদের প্রতি এমন আচরণ কোনো শিক্ষিত ও সচেতন মানুষের কাছ থেকে প্রত্যাশিত নয়।

পল্লবী থানার সামনে ককটেল বিস্ফোরণে এক পুলিশ সদস্য আহত হওয়ার ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘আমার নিরপরাধ অফিসারকে যেভাবে ককটেল মেরে আহত করা হয়েছে, তা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। এতে সদস্যদের মনোবল নষ্ট হয় এবং এর ক্ষতি সমাজকেই ভোগ করতে হয়। যদি পুলিশের মনোবল ভেঙে যায়, তবে ৫ আগস্টের পর যেভাবে ৮০ বছরের বৃদ্ধও লাঠি হাতে নিয়ে মহল্লা পাহারা দিয়েছেন, সেই পরিস্থিতি আবার তৈরি হতে পারে।’

যারা ককটেল ছোড়া বা এ ধরনের দুর্বৃত্তায়নের মাধ্যমে পুলিশ সদস্যদের মনোবল ভাঙার চেষ্টা করছে, তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন—‘এই কাজটি করবেন না।’

গুলির নির্দেশনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটি পুলিশ কমিশনারের নির্দেশনা নয়, এটি দেশের আইন। আইন পুলিশ বানায় না, পার্লামেন্ট বানায়। আইন যা বলেছে, আমরা শুধু সেটাই অনুসরণের নির্দেশ দিয়েছি।’

ডিএমপি কমিশনার জানান, দ্রুত পরিবর্তনশীল প্রযুক্তিনির্ভর অপরাধ মোকাবিলায় আধুনিক সক্ষমতা গড়ে তুলতেই ডিবির সাইবার সাপোর্ট সেন্টার উদ্বোধন করা হয়েছে। এখানে থাকবে অত্যাধুনিক প্রযুক্তিযুক্ত ল্যাব, দক্ষ তদন্তকারী দল, ডিজিটাল ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ এবং ২৪ ঘণ্টার রেসপন্স টিম। ফেসবুক পেজ, ই-মেইল এবং ডিবির অনলাইন চ্যানেলের মাধ্যমে নাগরিকেরা সরাসরি অভিযোগ জানাতে পারবেন। প্রযুক্তিনির্ভর, সময়োপযোগী ও প্রমাণভিত্তিক পুলিশ সেবা নিশ্চিত করাই তাদের লক্ষ্য।

ডিএমপি কমিশনার বলেন, বর্তমান সময়ে অনলাইন জালিয়াতি, প্রতারণা, ডিজিটাল হয়রানি, মানহানি, অনলাইন গ্যাম্বলিংসহ নানা অপরাধ মানুষের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা ও আর্থিক সুরক্ষাকে হুমকির মুখে ফেলছে। তাই জনগণের নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে ডিএমপি তার সক্ষমতা বাড়িয়ে চলেছে।

নারী ও কিশোরদের সুরক্ষাকে গুরুত্ব দিয়ে সাইবার সাপোর্ট সেন্টার কাজ করবে উল্লেখ করে ডিএমপি কমিশনার বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নারী ও কিশোরদের ওপর হয়রানির অভিযোগ দ্রুত সমাধানের জন্য বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হবে। হয়রানির শিকার হলে দ্রুত সহায়তা নিশ্চিত করাই তাদের অন্যতম অঙ্গীকার।

সাইবার নিরাপত্তা শুধু পুলিশের দায়িত্ব নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, পরিবার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সমাজের সচেতনতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিরাপদ অনলাইন পরিবেশ গড়ে তুলতে তিনি সম্মিলিত উদ্যোগের ওপর গুরুত্ব দেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘কোম্পানির লোকেরাই আমার ভাইকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে’

আমি লজ্জিত, নিজেকে মাটিতে পুঁতে দিতে ইচ্ছে করছে—ফেসবুকে প্রেস সচিব

তাহলে কি বাংলাদেশ-ভারত ফাইনাল

প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার সম্পাদকের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার ফোনালাপ

গণমাধ্যমে হামলা ও ময়মনসিংহে নৃশংসতায় জড়িতদের ছাড় দেওয়া হবে না, সরকারের বিবৃতি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত