বিজন সাহা

অনেক দিন আগে বন্ধু পেনকভ বলেছিল, যদি আমেরিকান, ভারতীয়, বাংলাদেশি—এসব ‘তুমি কে’ সেই প্রশ্নের উত্তর হয়, তাহলে রুস্কি—এটা শুধু ‘কে’ নয়, ‘কেমন’ সেই প্রশ্নেরও উত্তর। মানে রুস্কি শুধু জাতি, দেশ—এসবের সাথেই সম্পর্কিত নয়। এটা মানুষের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য। রুস্কি চেলাভেক—রুশ মানুষ; এটা এক ধরনের বিশেষ মনোভাবের মানুষ। এ জন্যই হয়তো বলে রাশিয়াকে বুদ্ধি দিয়ে বোঝা যায় না।
আজ দু মাসের বেশি যুদ্ধ চলছে। কিন্তু লোকজনের মধ্যে তেমন উত্তেজনা নেই। সবাই কাজকর্ম করছে। অফিসে এ নিয়ে তেমন কথা হয় না। সাঁতার কাটতে গিয়ে সুইমিং পুলে, সাওনায় অনেকের সঙ্গে দেখা হয়, কথা হয়। তবে যুদ্ধ নিয়ে তেমন কোনো কথা হয় না। রাস্তাঘাট, দোকানপাট—সব একই রকম। তবে হাজার হাজার শরণার্থী আসছে। সবাই যে যেভাবে পারছে সাহায্য করছে। আমি কয়েক ব্যাগ ভর্তি জামাকাপড়, জুতা, জ্যাকেট—এসব দিয়ে এসেছি। মানে মানুষের অংশগ্রহণ যে নেই, তা নয়। আসলে এ দেশের মানুষ এমনই। সাধারণত কারও ব্যাপারে নাক গলায় না, কাউকে পছন্দ না হলে সেটা বুঝতে দেয়। আমাদের মতো ‘মুখে হাসি মনে বিষ’—এমন নয়। সরকারকে নিয়েও এদের তেমন মাথা ব্যথা নেই। জানে নিজেরটা নিজেরই করে খেতে হবে।
তবে ইতিহাস ঘাঁটলে দেখব, এরা শক্ত হাত পছন্দ করে। আগেই লিখেছি এরা নিজে থেকেই নভগোরাদের স্ক্যান্ডিনেভিয়ান রাজা রিউরিককে ডেকে এনে নিজেদের নেতা করে। পরবর্তীতে এই বংশের পতন ঘটলে নিজেরা পঝারস্কি ও কুজমা মিনিনের নেতৃত্বে যুদ্ধের মধ্য দিয়ে পোল্যান্ডের হাত থেকে দেশ মুক্ত করে রোমানভ বংশের পত্তন ঘটায়। গণতান্ত্রিক না হলেও কী রিউরিক, কী মিখাইল রোমানভ—জনগণ দ্বারাই নির্বাচিত। আগেই বলেছি, যখনই এ দেশে শক্তিশালী নেতার আবির্ভাব ঘটেছে—এ দেশ উন্নতির শিখরে পৌঁছেছে। এরা শক্ত হাতে ক্ষমতার ভার দিয়ে নিজেদের কাজে নেমে পড়ে। সোভিয়েত আমলেও ভিন্ন কিছু ছিল না। তবে একটা ব্যাপারে এরা এক–দেশ যখন বিদেশি শত্রু দ্বারা আক্রান্ত হয়, এরা সবাই ঝাঁপিয়ে পড়ে।
সোভিয়েত আমলে চার্চের ওপর শত অত্যাচারের পরও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় চার্চ যুদ্ধে নামে। এরা এসব যুদ্ধকে বলে মহান পিতৃভূমির যুদ্ধ। এরা নেতাদের সব দোষ ক্ষমা করতে পারে; কিন্তু পরাজয় ক্ষমা করতে পারে না। এই দেশের ওপর, এ দেশের নেতৃত্বের ওপর যত বেশি বাইরের চাপ আসে, তত বেশি এরা নেতার পেছনে এককাট্টা হয়ে দাঁড়ায়। সেটা দেখেছি স্তালিনের সময়; ক্যারিবিয়ান সংকটে। আবার কোনো নেতার প্রতি বাইরের দেশ খুব বেশি সদয় হলে এরা তাদের সন্দেহ করে। নিকট অতীতে এমনটা ঘটেছে গর্বাচভের সঙ্গে, ইয়েলৎসিনের সঙ্গে। কিন্তু যখনই প্রিমাকভ আটলান্টিকের মাঝপথ থেকে বিমান ঘুরিয়েছেন বা রুশ সেনারা ন্যাটোর আগে প্রিস্টিনা বিমানবন্দর দখল করেছে; দেশের মানুষ সেটাকে সমর্থন করেছে। রুশদের সাইকোলজি বুঝতে পশ্চিমের ব্যর্থতাই বারবার তাদের নিষেধাজ্ঞাসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ ব্যর্থ করে দিচ্ছে। আসলে আমাদের দেশে যদি পাপ-পুণ্য, পশ্চিমা বিশ্বে আইনসংগত-বেআইনি—এসব ধারণা জনগণের চিন্তায় প্রথম সারিতে থাকে। এদের ক্ষেত্রে সেটা ন্যায়-অন্যায়। আর এ কারণেই হয়তো পশ্চিমা বিশ্বের মানবতার মুখোশ এরা বারবার খুলে দিচ্ছে, আর সেখান থেকে বারবার বেরিয়ে আসছে মধ্যযুগীয় জানোয়ার।
যুদ্ধ শুরুর পর শিল্পী, অভিনেতাসহ অনেক জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব রাশিয়া ত্যাগ করেছে। এ নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে বিভিন্ন মত আছে। তবে তাদের নাগরিকত্ব বাতিলের ডাক ক্রেমলিন খারিজ করে দিয়েছে। আসলে এই যুদ্ধের পর সমাজে মেরুকরণ ঘটেছে, সবার মুখোশ খুলে গেছে। এখানে আমার চিন্তা-ভাবনা এমন। আমি নিজে দেশের বাইরে ১৯৮৩ থেকে। এ রকম অনেক লোককে জানি, যারা দেশের বাইরে থাকেন। কিন্তু এরা সত্যিকার অর্থেই হৃদয়ে বাংলাদেশ ধারণ করেন। তারা দেশের ভালো-মন্দ নিয়ে ভাবেন, এর সুখে সুখী, দুঃখে দুঃখী হন। এদের অনেকেই দেশে রেমিট্যান্স পাঠিয়ে দেশের উন্নয়নে অবদান রাখেন। আবার অনেকেই আছে, যারা দেশে বাস করেন, উপার্জন করেন, আর অর্থ পাচার করেন উন্নত বিশ্বে। এরা আর যাই হোক দেশ নিয়ে ভাবে না, দেশ তাদের জন্য উপার্জনের জায়গা। একইভাবে আজ যারা রাশিয়া থেকে চলে যাচ্ছেন, তাঁদের অনেকেই এই দেশে উপার্জন করতেন, আর শপিং করতেন মিলান, প্যারিস, লন্ডন ও নিউইয়র্কে। এদের অনেকেই এ দেশের মানুষের সঙ্গে একাত্মতা বোধ করতেন না। অনেকেই সরকারি অনুদান পেতেন। তাই এদের অনুপস্থিতি রাশিয়া খুব একটা অনুভব করবে বলে মনে হয় না। কিন্তু এরা কি পারবে নিজেদের সেখানে মানিয়ে নিতে? তাদের পণ্যের মূল ক্রেতা ছিল রুশ জনগণ। এসব শিল্পী, সাহিত্যিক, অভিনেতারা ওখানে কী করবেন? বর্তমানে যুদ্ধের কারণে হয়তো সেসব দেশে ফ্লোর পাবেন, কিন্তু যুদ্ধ শেষে তাদের প্রয়োজন ফুরিয়ে যাবে। তখন? তা ছাড়া এখন যেভাবে রুশোফোবিয়া পশ্চিমা বিশ্বে শেকড় গেড়েছে, তাতে সাধারণ মানুষ সেখানে তাদের কতটা গ্রহণ করবে সেটাও ভাবার বিষয়।
বর্তমানে যে অবস্থা দাঁড়িয়েছে, পশ্চিমা বিশ্বের অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা যত কম কার্যকর হচ্ছে, ন্যাটো ততই আগ্রাসী হচ্ছে। নতুন নতুন নিষেধাজ্ঞা দিচ্ছে, নতুন নতুন অস্ত্র পাঠাচ্ছে। তাদের উদ্দেশ্য যুদ্ধ যত দূর সম্ভব দীর্ঘায়িত করা। তবে এতে যে শুধু রাশিয়াই ক্ষতিগ্রস্ত হবে, তা নয়। ইউরোপ-আমেরিকাসহ সারা বিশ্বের অর্থনীতিতে এর প্রভাব পড়বে। তখন দেখা যাবে, কার সহ্যশক্তি কত বেশি। আর তার ওপরই নির্ভর করবে যুদ্ধ শেষ পর্যন্ত কোথায় গিয়ে দাঁড়ায়। এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র রাখঢাক না করেই স্বীকার করছে, তারা বিগত বছরগুলোতে ইউক্রেনের সৈন্যদের প্রশিক্ষণ দিয়েছে।
এখানে একটা বিষয় উল্লেখ করা দরকার। আজোভ ব্যাটালিয়নের যারা ধরা পড়ছে, নাম শুনে মনে হয় তাদের অধিকাংশই জাতিগতভাবে রুশ। তবে যুদ্ধ না করে যারা আত্মসমর্পণ করছে, তাদের বেশির ভাগই পশ্চিম ইউক্রেনের। কেন? আসলে পশ্চিম ইউক্রেনের লোকেরা কখনোই তেমন একটা যুদ্ধ করেনি। তারা সব সময়ই যখন যে রাজা এসেছে, তাদের আনুগত্য স্বীকার করেছে। ফলে তারা পালিয়ে আশ্রয় নিচ্ছে ইউরোপে।
এমনও শুনেছি পূর্ব ইউক্রেন থেকে যারা পালিয়ে পশ্চিম দিকে যাচ্ছে, পশ্চিম ইউক্রেনের লোকেরা তাদের কাছে বাসা ভাড়া দিয়ে নিজেরা ইউরোপের দিকে যাচ্ছে। আর এদের অনেকেই, বিশেষ করে এলিটদের অনেকেই পালিয়ে যাচ্ছে বিশাল অঙ্কের অর্থ আত্মসাৎ করে। এমন অনেকে ধরা পড়েছে হাঙ্গেরি, রোমানিয়ার সীমান্তে। পালিয়ে বাঁচাদের তালিকায় রয়েছে সেসব লোকজন, যাদের কথা ছিল দেশের হয়ে যুদ্ধ করার। এ নিয়ে ইউরোপে বিরূপ প্রতিক্রিয়া হচ্ছে। শুধু তাই নয়, তারা ইউরোপে গিয়ে বিভিন্ন অসামাজিক কাজে লিপ্ত হয়েছে। অল্পবয়সী ছেলেমেয়েরা যৌনকর্মীর খাতার নাম লেখাতে বাধ্য হচ্ছে। এ নিয়ে ব্যবসা হচ্ছে। এ ছাড়া ইউক্রেনের অনেকেই বিভিন্ন দেশে রুশদের ওপর হামলা করছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে আত্মদানকারী সোভিয়েত সেনাদের মনুমেন্ট ভাঙচুর করছে। তাই যুদ্ধ হচ্ছে মূলত রুশদের সঙ্গে রুশদের। এভাবেই পশ্চিমা বিশ্ব এদের মধ্যে ভ্রাতৃঘাতী যুদ্ধ লাগিয়ে নিজেদের মানবিক ও গণতান্ত্রিক দায়িত্ব পালন করছে। আত্মসমর্পণ করা ইউক্রেন সেনারা বলছে, আত্মসমর্পণ করলে ওদের মেরে ফেলা হবে বলে ভয় দেখানো হয়েছিল। এখন তারা বুঝতে পারছে, এটাই জীবন বাঁচানোর একমাত্র পথ। তা ছাড়া মানুষের মৃত্যু দেখতে দেখতে ক্লান্ত হয়ে গেছে বলেও অনেকে জানিয়েছে।
পশ্চিমা বয়ানই কি শেষ কথা
আমরা কথায় কথায় স্বাধীনতার কথা বলি, মুক্ত চিন্তার কথা বলি। আচ্ছা আজ কতটি দেশ স্বাধীন? সত্যের কোনো একক রূপ নেই। একজনের দৃষ্টিতে যা সত্য, অন্যের দৃষ্টিতে তা মিথ্যা হতে পারে। তা ছাড়া পশ্চিমা বয়ানই যে শেষ কথা, তার তো কোনো মানে নেই। এখন এই যুদ্ধ নিয়ে রাশিয়ার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ আনা হচ্ছে পশ্চিমা বিশ্বের পক্ষ থেকে। আমি জানি গতকাল কেউ কোনো ঘটনার প্রতিবাদ না করলেও আজ সে অনুরূপ ঘটনার বিরুদ্ধে বলতে পারে। তবে সে ক্ষেত্রে তার দায়িত্ব হয়ে দাঁড়ায়, এর পর থেকে এ ধরনের যেকোনো ঘটনার প্রতিবাদ করা। সবাই জানে আফগানিস্তান, ইরাক, লিবিয়া, সিরিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকার কথা। যে বাইডেন পুতিনকে খুনি বলছেন, তিনিই ১৯৯২ সালে বেলগ্রাদ আক্রমণের পক্ষে ওকালতি করেন। ইরাক ও লিবিয়ার যুদ্ধেও তাঁর সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল। জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ এর প্রতিবাদ করে আজ জেলের ভাত খাচ্ছেন। আজ যে কারণে রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হচ্ছে, তার শতগুণ অপরাধে অপরাধী যুক্তরাষ্ট্র কিন্তু সব সময়ই বেকসুর খালাস পেয়ে গেছে। এটা আমাদের দেশে কিছু কিছু বিশেষ আসামির মতো। ইউরোপ-আমেরিকায় বসবাসকারী অনেক বাংলাদেশিকে দেখি দেশে এমন কিছু ঘটলে বিষ উগরে দেন, অথচ যুক্তরাষ্ট্রের অন্যায় হজম করে যান, দরকারে হজমি খেয়ে সেটা করেন। এদের দেখে আমি বুঝি, কেন বাংলাদেশের অনেক লোক ভারতে কোনো মুসলমানের ওপর অত্যাচার হলে প্রতিবাদে সোচ্চার হন, অথচ তারাই বাংলাদেশের হিন্দুদের ওপর অত্যাচার দেখেও মুখ খোলে না। ঠিক এর উল্টোটা ঘটে ভারতে; যারা পাকিস্তান বা বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর অত্যাচারের প্রতিবাদ করে, তারা ভারতে মুসলমানদের ওপর অত্যাচারের ব্যাপারে নিশ্চুপ থাকে। আসলে এটা এক ধরনের মানসিক রোগ, যখন আগে থেকেই ঠিক করা হয় কাদের প্রতি আমরা সহানুভূতিশীল হব, আর কাদের প্রতি নিস্পৃহ।
আচ্ছা কেউ কি মনে করেন, ব্রিটিশেরা ভারতীয়দের পছন্দ করত? আমার তো মনে হয়, তারা হিন্দু, মুসলমান নির্বিশেষ সমস্ত ভারতীয়দের একই রকম অবজ্ঞার চোখে দেখত। কিন্তু কখনো হিন্দুদের, কখনো মুসলমানদের মাথায় হাত বুলিয়ে তাদের মধ্যে ভেদ সৃষ্টি করত। ফলাফল—দেশভাগ। তবে তার চেয়েও ভয়ংকর হচ্ছে লাখ লাখ মানুষের মৃত্যু। আজ পশ্চিমা বিশ্ব ইউক্রেনের পাশে দাঁড়িয়েছে তাদের ভালোবেসে নয়, তাদের হাত দিয়ে যত বেশি সম্ভব রুশ হত্যার জন্য। তারা ভালোভাবেই জানে রুশ, বেলারুশ ও ইউক্রেনীয়—এরা প্রায় একই জাতি। এখন তারা মিষ্টি কথায় ভুলিয়ে এদের বিভক্ত করছে। ডিভাইড অ্যান্ড রুল—এটা তাদের অমূল্য আবিষ্কার।
অনেককেই দেখি, শুধু পুতিন বিরোধিতা থেকে পশ্চিমের সবকিছু জায়েজ করে দেয়। পুতিনের প্রতি বিভিন্ন মনোভাব থাকতেই পারে। থাকাটাই স্বাভাবিক। কিন্তু সেটা যদি অন্ধ ঘৃণা হয়, তাহলে বিপদ। আমি ব্যক্তিগতভাবে তাঁর অনেক কিছুই অপছন্দ করি। সত্যি বলতে কি আমি কারওই সবকিছু পছন্দ করি না। কারও মধ্যে পছন্দ করার মতো কিছু থাকলে পছন্দ করি, ঘৃণা করার মতো কিছু থাকলে, সেটা করতেও পিছ-পা হই না। আমার কাছে কোনো কিছুর ভালোমন্দ কে করল তার ওপর নির্ভর করে না, কী করল সেটাই বড় কথা।
পুতিনের সবচেয়ে বড় অবদানগুলোর একটি হচ্ছে রাশিয়াকে অনিবার্য ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করা ও যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধেও যে দাঁড়ানো যায়, সেটা দেখানো। ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের একচ্ছত্র অধিকারী হয়ে ওঠে। কেউই তখন তার প্রতিবাদ করতে পারত না। যুক্তরাষ্ট্রের কথাই ছিল আইন। তাই বেলগ্রাদ আক্রমণ থেকে শুরু করে সবাই হজম করতে হয়। করবেই-বা না কেন? যদি ইউরোপের প্রায় প্রতিটি দেশে অসংখ্য মার্কিন ঘাঁটি থাকে, তবে তার কথা না মেনে উপায় আছে? ঠিক এ রকম এক সময়ে ২০০৭ সালে পুতিন মিউনিখে দাঁড়িয়ে এর প্রতিবাদ করেন। সবাই হেসেছিল। কারণ, রাশিয়া তখন তাদের চোখে ছিল পেট্রল পাম্প। পুতিন সবাইকে দেখিয়ে দেন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একমত না হয়েও বেঁচে থাকা যায়।
এর অনেক পরে ২০১৫ সালে তৎকালীন ভাইস প্রেসিডেন্ট বাইডেনের কথায় ইউক্রেন সে দেশের প্রসিকিউটর জেনারেলকে পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়। তাই শুধু সুযোগ থাকলেই হবে না, সেটা ব্যবহারের মনোবল থাকতে হবে। মতিলাল নেহরু বলেছিলেন, ‘গান্ধীর সঙ্গে দ্বিমত করার ব্যাপারে আমরা একমত হয়েছি–উই এগ্রিড টু ডিস্যাগ্রি’। আসলে গণতন্ত্রের মূল মন্ত্র হলো দ্বিমত প্রকাশের অধিকার। কিন্তু এখন আমরা কী দেখি? যেসব দেশ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একযোগে রাশিয়ার নিন্দা করতে অস্বীকার করছে, তাদের ওপর নেমে আসছে প্রচণ্ড চাপ। এবার সে যে দেশই হোক—চীন, ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তান বা যে-ই হোক। এই বিশ্বে কি আমরা বাস করতে চাই? আমার বিশ্বাস যদি এই যুদ্ধে রাশিয়া হারে, তবে যুক্তরাষ্ট্র হবে সেই দানব, যার দুপুরের খাবারের জন্য প্রতিদিন একটা করে দেশ পাঠাতে হবে। তাই এই যুদ্ধ শুধু রাশিয়ার অস্তিত্বের যুদ্ধ নয়, এটা বিশ্বের প্রতিটি দেশের স্বাধীনভাবে বেঁচে থাকার অধিকারের যুদ্ধ। তাই এই যুদ্ধে বিজয়ের কোনোই বিকল্প নেই বলে মনে করছে মস্কো।
নিষেধাজ্ঞায় পশ্চিমও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে
যুদ্ধ শুরুর অনেক আগে থেকেই পশ্চিমা বিশ্ব বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞা আরোপের অনবরত হুমকি দিয়ে আসছিল। তাদের ধারণা ছিল, কয়েকটি নিষেধাজ্ঞা দিয়েই রাশিয়ার অর্থনীতিতে ধস নামানো যাবে। যুদ্ধ শুরুর মুহূর্তে এক ধরনের প্যানিক যে সৃষ্টি হয়নি, তা নয়। সেই এক দিনে মানুষ এক ট্রিলিয়ন রুবল ব্যাংক থেকে নামিয়ে নেয়। তবে এ নিয়ে কোনো সমস্যা হয়নি। সবাই সেটা করতে পেরেছে, কোথাও কোথাও লম্বা লাইনে দাঁড়াতে হয়েছে। একের পর এক বিভিন্ন বিদেশি কোম্পানি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কিছু কিছু জিনিস কেনার হিড়িক লাগে। মনে আছে, ওই সময় মেয়ে বলল ও স্যানিটারি প্যাড খুঁজে পাচ্ছে না (একেবারে নেই তা নয়, ও যে কোম্পানির প্যাড ব্যবহার করে সেটা নেই)। আমি দোকানে গিয়ে কিছু কিনে আনলাম, ওয়াইল্ড বেরিতে কিছু অর্ডার দিলাম। মাঝে চিনির অভাব ছিল।
পরে ব্যবসায়ী বন্ধুদের কাছে শুনলাম, যেহেতু প্রথম দিকে ডলারের দাম প্রতিদিন বাড়ছিল, তাই অনেক কোম্পানি ইচ্ছা করে বিভিন্ন জিনিসপত্র বিক্রি করেনি। পরে অবশ্য অ্যান্টিমনোপলি সংস্থা এসব ধরে প্রচুর জরিমানা করে। এরই মধ্যে ডলারের দাম কম-বেশি স্ট্যাবল হওয়ায় জিনিসপত্র দোকানে ফিরে এসেছে। তবে এটা ঠিক হাইটেকের অনেক জিনিসপত্রের অভাব দেখা দেওয়ার আশঙ্কা আছে, কিছুদিন পর যখন স্টক শেষ হয়ে যাবে। মনে আছে, সোভিয়েত আমলে এ দেশে কম্পিউটার আমদানির ওপর বিদেশি নিষেধাজ্ঞা ছিল। তবে বিদেশি শিক্ষার্থীরা তখন সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া—এসব দেশ থেকে কম্পিউটার কিনে সোভিয়েত ইউনিয়নে বিক্রি করত। তাই আমার ধারণা চীন বাদেও অন্য অনেক দেশের মাধ্যমে সেই সমস্যা অনেকটাই সমাধান হবে। মনে রাখতে হবে, পুঁজিবাদ লাভ খোঁজে। তাই নিষেধাজ্ঞার ফাঁদে পড়ে সরাসরি এ দেশে বিভিন্ন জিনিস রপ্তানি বন্ধ করলেও তারা অলিগলি খুঁজবে। এখনই ইরানের তেলের সাথে রাশিয়ার তেল মিশিয়ে নাকি বিক্রি হচ্ছে!
রাশিয়া এক বিশাল মার্কেট। যেসব কোম্পানি চলে যাচ্ছে, সেসব জায়গা ফাঁকা থাকবে না। ইতিমধ্যে রাশিয়া থেকে চলে যাওয়া প্রায় হাজারখানেক কোম্পানির স্থান দখলের প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। অনেক দেশি কোম্পানি এত দিন বিদেশি কোম্পানির সাথে পাল্লা দিয়ে হেরে যাচ্ছিল, হেরে যাচ্ছিল চীনের বিভিন্ন কোম্পানি। এখন এরা সেই জায়গা দখল করবে। তবে রুশ ক্রেতা এখন যেহেতু ভালো জিনিসের কদর বোঝে, তাই এসব কোম্পানিকে বাধ্য হয়েই নিজেদের প্রোডাক্টের মান উন্নত করতে হবে।
নিষেধাজ্ঞার ফলে দেশে যাতে কোনো পণ্যের অভাব না হয়, সে জন্যে সরকার বিভিন্ন ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছে। এটাকে এরা বলে আমদানি বিকল্প। আশির দশকের পেরেস্ত্রোইকা ও গ্লাসনস্তের মতোই এই ইম্পরতোজামেশেনিয়ে বা আমদানি বিকল্প বর্তমান রাশিয়ায় প্রচণ্ড জনপ্রিয়। উল্লেখ করা যেতে পারে যে, ২০১৪ সাল থেকেই যখন পশ্চিমা বিশ্ব রাশিয়ার ওপর বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞা আরোপের হুমকি দিচ্ছিল, তখন থেকেই এখানে শুরু হয় স্বনির্ভর হওয়ার প্রক্রিয়া। ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর সমস্ত কলকারখানা যখন রাষ্ট্রীয় মালিকানা থেকে ব্যক্তি মালিকানায় দিয়ে দেওয়া হয়, তখন সেই বেসরকারিকরণের মূল লক্ষ্য ছিল এ দেশের শিল্প চিরতরে ধ্বংস করা। সেই প্রক্রিয়ার পরিচালক আনাতলি চুবাইস, যিনি কিছুদিন আগ পর্যন্তও বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় উচ্চপদে নিযুক্ত ছিলেন, আর যুদ্ধ শুরুর পরপর দেশ ছেড়ে চলে যান; বলেছিলেন, ‘আমাদের একটাই উদ্দেশ্য ছিল, সোভিয়েত সমাজ, তার শিল্প—সবকিছু ধ্বংস করা, যাতে সোভিয়েত ইউনিয়ন আর কোনো দিন পুনর্জন্ম নিতে না পারে।’
এর ফল হিসেবে আমরা দেখেছি, প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই এরা বিদেশি পণ্যের ওপর নির্ভরশীল ছিল রাশিয়া। কিন্তু ২০১৪ সালের পর থেকে এখানে শুরু হয় নতুন করে সবকিছু ভেবে দেখা। আর এর সূত্র ধরে কয়েক বছর আগ পর্যন্ত শস্যের জন্য বিদেশের ওপর নির্ভরশীল রাশিয়া আজ অন্যতম প্রধান শস্য রপ্তানিকারক দেশ। সোভিয়েত আমলের শক্তিশালী বিভিন্ন জীবাণু ও ভাইরাস রিসার্চ সেন্টার নতুন উদ্যোগে কাজ শুরু করে। প্রায় ধ্বংসপ্রাপ্ত এসব প্রতিষ্ঠান থেকে পৃথিবী পায় করোনার প্রথম ভ্যাকসিন। উড়োজাহাজ তৈরিতে সোভিয়েত ইউনিয়নের স্থান ছিল যুক্তরাষ্ট্রের পর। কিন্তু নতুন রাশিয়ায় সেটা ধ্বংস হয়ে যায়। ২০১৪ সালের পর থেকে শুরু হয় নতুন করে উড়োজাহাজ উৎপাদন। বর্তমানে রাশিয়ার সিভিল এয়ার পার্কের প্রায় অর্ধেক বোয়িং ও এয়ারবাসের দখলে। কিন্তু যুদ্ধ শুরুর পর তারা এসব উড়োজাহাজের লিজিং স্থগিত রাখে। ফলে প্রায় এক হাজার উড়োজাহাজ এখন মাটিতে বেকার পড়ে আছে। কিন্তু নিষেধাজ্ঞার ফলে এদের নিজ নিজ দেশে নিয়ে যেতে পারছে না। ফলে পশ্চিমা অনেক লিজিং কোম্পানি বন্ধ হওয়ার পথে।
এদিকে এই সমস্যা সমাধানে রাশিয়া নিজেই উড়োজাহাজ তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এতে সময় লাগবে। তবে সেটা ভবিষ্যতে যেকোনো নিষেধাজ্ঞায় দেশটিকে বাঁচাবে। বাড়তি পাওয়া হিসেবে এর ফলে তৈরি হবে নতুন কর্মস্থান, উড়োজাহাজ নির্মাণের মতো বিষয়গুলো আবার ফিরে আসবে এদের শিক্ষা ব্যবস্থায়। তবে এসব যে খুব সহজে হবে, তা কিন্তু নয়।
সোভিয়েত আমলে রাশিয়ায় প্রায় সব ধরনের ফসলের সিলেকশন হতো। দীর্ঘ সময় ধরে বিদেশ থেকে কম পয়সায় আমদানির কারণে এখানে সমস্যা দেখা দিয়েছে। যদিও এখন পর্যন্ত আগামী মৌসুমের জন্য বীজ সংরক্ষিত আছে। দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে বছর দু-এক পর সমস্যায় পড়তে হতে পারে। চীন, ভারত সহায়তা করতে পারে। তবে তবে এরা এখন থেকেই চাইছে জিন পুলের ক্ষেত্রে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে। এককথায় যুদ্ধের পাশাপাশি রাশিয়া তার রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক—সব ব্যবস্থাকেই ঢেলে সাজাচ্ছে। রুশরা বলে, ‘শান্তি ছিল না, অশান্তি সাহায্য করল’। অনেক দিন ধরে ব্যবসা, বিশেষ করে মধ্যমানের পুঁজির জন্য বেশ কিছু জরুরি আইন এদের সংসদ বা দুমায় পড়ে ছিল, এখন সেগুলো পাস হয়ে গেছে।
লেখক: শিক্ষক, রাশিয়ান পিপলস ফ্রেন্ডশিপ ইউনিভার্সিটি, মস্কো

অনেক দিন আগে বন্ধু পেনকভ বলেছিল, যদি আমেরিকান, ভারতীয়, বাংলাদেশি—এসব ‘তুমি কে’ সেই প্রশ্নের উত্তর হয়, তাহলে রুস্কি—এটা শুধু ‘কে’ নয়, ‘কেমন’ সেই প্রশ্নেরও উত্তর। মানে রুস্কি শুধু জাতি, দেশ—এসবের সাথেই সম্পর্কিত নয়। এটা মানুষের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য। রুস্কি চেলাভেক—রুশ মানুষ; এটা এক ধরনের বিশেষ মনোভাবের মানুষ। এ জন্যই হয়তো বলে রাশিয়াকে বুদ্ধি দিয়ে বোঝা যায় না।
আজ দু মাসের বেশি যুদ্ধ চলছে। কিন্তু লোকজনের মধ্যে তেমন উত্তেজনা নেই। সবাই কাজকর্ম করছে। অফিসে এ নিয়ে তেমন কথা হয় না। সাঁতার কাটতে গিয়ে সুইমিং পুলে, সাওনায় অনেকের সঙ্গে দেখা হয়, কথা হয়। তবে যুদ্ধ নিয়ে তেমন কোনো কথা হয় না। রাস্তাঘাট, দোকানপাট—সব একই রকম। তবে হাজার হাজার শরণার্থী আসছে। সবাই যে যেভাবে পারছে সাহায্য করছে। আমি কয়েক ব্যাগ ভর্তি জামাকাপড়, জুতা, জ্যাকেট—এসব দিয়ে এসেছি। মানে মানুষের অংশগ্রহণ যে নেই, তা নয়। আসলে এ দেশের মানুষ এমনই। সাধারণত কারও ব্যাপারে নাক গলায় না, কাউকে পছন্দ না হলে সেটা বুঝতে দেয়। আমাদের মতো ‘মুখে হাসি মনে বিষ’—এমন নয়। সরকারকে নিয়েও এদের তেমন মাথা ব্যথা নেই। জানে নিজেরটা নিজেরই করে খেতে হবে।
তবে ইতিহাস ঘাঁটলে দেখব, এরা শক্ত হাত পছন্দ করে। আগেই লিখেছি এরা নিজে থেকেই নভগোরাদের স্ক্যান্ডিনেভিয়ান রাজা রিউরিককে ডেকে এনে নিজেদের নেতা করে। পরবর্তীতে এই বংশের পতন ঘটলে নিজেরা পঝারস্কি ও কুজমা মিনিনের নেতৃত্বে যুদ্ধের মধ্য দিয়ে পোল্যান্ডের হাত থেকে দেশ মুক্ত করে রোমানভ বংশের পত্তন ঘটায়। গণতান্ত্রিক না হলেও কী রিউরিক, কী মিখাইল রোমানভ—জনগণ দ্বারাই নির্বাচিত। আগেই বলেছি, যখনই এ দেশে শক্তিশালী নেতার আবির্ভাব ঘটেছে—এ দেশ উন্নতির শিখরে পৌঁছেছে। এরা শক্ত হাতে ক্ষমতার ভার দিয়ে নিজেদের কাজে নেমে পড়ে। সোভিয়েত আমলেও ভিন্ন কিছু ছিল না। তবে একটা ব্যাপারে এরা এক–দেশ যখন বিদেশি শত্রু দ্বারা আক্রান্ত হয়, এরা সবাই ঝাঁপিয়ে পড়ে।
সোভিয়েত আমলে চার্চের ওপর শত অত্যাচারের পরও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় চার্চ যুদ্ধে নামে। এরা এসব যুদ্ধকে বলে মহান পিতৃভূমির যুদ্ধ। এরা নেতাদের সব দোষ ক্ষমা করতে পারে; কিন্তু পরাজয় ক্ষমা করতে পারে না। এই দেশের ওপর, এ দেশের নেতৃত্বের ওপর যত বেশি বাইরের চাপ আসে, তত বেশি এরা নেতার পেছনে এককাট্টা হয়ে দাঁড়ায়। সেটা দেখেছি স্তালিনের সময়; ক্যারিবিয়ান সংকটে। আবার কোনো নেতার প্রতি বাইরের দেশ খুব বেশি সদয় হলে এরা তাদের সন্দেহ করে। নিকট অতীতে এমনটা ঘটেছে গর্বাচভের সঙ্গে, ইয়েলৎসিনের সঙ্গে। কিন্তু যখনই প্রিমাকভ আটলান্টিকের মাঝপথ থেকে বিমান ঘুরিয়েছেন বা রুশ সেনারা ন্যাটোর আগে প্রিস্টিনা বিমানবন্দর দখল করেছে; দেশের মানুষ সেটাকে সমর্থন করেছে। রুশদের সাইকোলজি বুঝতে পশ্চিমের ব্যর্থতাই বারবার তাদের নিষেধাজ্ঞাসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ ব্যর্থ করে দিচ্ছে। আসলে আমাদের দেশে যদি পাপ-পুণ্য, পশ্চিমা বিশ্বে আইনসংগত-বেআইনি—এসব ধারণা জনগণের চিন্তায় প্রথম সারিতে থাকে। এদের ক্ষেত্রে সেটা ন্যায়-অন্যায়। আর এ কারণেই হয়তো পশ্চিমা বিশ্বের মানবতার মুখোশ এরা বারবার খুলে দিচ্ছে, আর সেখান থেকে বারবার বেরিয়ে আসছে মধ্যযুগীয় জানোয়ার।
যুদ্ধ শুরুর পর শিল্পী, অভিনেতাসহ অনেক জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব রাশিয়া ত্যাগ করেছে। এ নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে বিভিন্ন মত আছে। তবে তাদের নাগরিকত্ব বাতিলের ডাক ক্রেমলিন খারিজ করে দিয়েছে। আসলে এই যুদ্ধের পর সমাজে মেরুকরণ ঘটেছে, সবার মুখোশ খুলে গেছে। এখানে আমার চিন্তা-ভাবনা এমন। আমি নিজে দেশের বাইরে ১৯৮৩ থেকে। এ রকম অনেক লোককে জানি, যারা দেশের বাইরে থাকেন। কিন্তু এরা সত্যিকার অর্থেই হৃদয়ে বাংলাদেশ ধারণ করেন। তারা দেশের ভালো-মন্দ নিয়ে ভাবেন, এর সুখে সুখী, দুঃখে দুঃখী হন। এদের অনেকেই দেশে রেমিট্যান্স পাঠিয়ে দেশের উন্নয়নে অবদান রাখেন। আবার অনেকেই আছে, যারা দেশে বাস করেন, উপার্জন করেন, আর অর্থ পাচার করেন উন্নত বিশ্বে। এরা আর যাই হোক দেশ নিয়ে ভাবে না, দেশ তাদের জন্য উপার্জনের জায়গা। একইভাবে আজ যারা রাশিয়া থেকে চলে যাচ্ছেন, তাঁদের অনেকেই এই দেশে উপার্জন করতেন, আর শপিং করতেন মিলান, প্যারিস, লন্ডন ও নিউইয়র্কে। এদের অনেকেই এ দেশের মানুষের সঙ্গে একাত্মতা বোধ করতেন না। অনেকেই সরকারি অনুদান পেতেন। তাই এদের অনুপস্থিতি রাশিয়া খুব একটা অনুভব করবে বলে মনে হয় না। কিন্তু এরা কি পারবে নিজেদের সেখানে মানিয়ে নিতে? তাদের পণ্যের মূল ক্রেতা ছিল রুশ জনগণ। এসব শিল্পী, সাহিত্যিক, অভিনেতারা ওখানে কী করবেন? বর্তমানে যুদ্ধের কারণে হয়তো সেসব দেশে ফ্লোর পাবেন, কিন্তু যুদ্ধ শেষে তাদের প্রয়োজন ফুরিয়ে যাবে। তখন? তা ছাড়া এখন যেভাবে রুশোফোবিয়া পশ্চিমা বিশ্বে শেকড় গেড়েছে, তাতে সাধারণ মানুষ সেখানে তাদের কতটা গ্রহণ করবে সেটাও ভাবার বিষয়।
বর্তমানে যে অবস্থা দাঁড়িয়েছে, পশ্চিমা বিশ্বের অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা যত কম কার্যকর হচ্ছে, ন্যাটো ততই আগ্রাসী হচ্ছে। নতুন নতুন নিষেধাজ্ঞা দিচ্ছে, নতুন নতুন অস্ত্র পাঠাচ্ছে। তাদের উদ্দেশ্য যুদ্ধ যত দূর সম্ভব দীর্ঘায়িত করা। তবে এতে যে শুধু রাশিয়াই ক্ষতিগ্রস্ত হবে, তা নয়। ইউরোপ-আমেরিকাসহ সারা বিশ্বের অর্থনীতিতে এর প্রভাব পড়বে। তখন দেখা যাবে, কার সহ্যশক্তি কত বেশি। আর তার ওপরই নির্ভর করবে যুদ্ধ শেষ পর্যন্ত কোথায় গিয়ে দাঁড়ায়। এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র রাখঢাক না করেই স্বীকার করছে, তারা বিগত বছরগুলোতে ইউক্রেনের সৈন্যদের প্রশিক্ষণ দিয়েছে।
এখানে একটা বিষয় উল্লেখ করা দরকার। আজোভ ব্যাটালিয়নের যারা ধরা পড়ছে, নাম শুনে মনে হয় তাদের অধিকাংশই জাতিগতভাবে রুশ। তবে যুদ্ধ না করে যারা আত্মসমর্পণ করছে, তাদের বেশির ভাগই পশ্চিম ইউক্রেনের। কেন? আসলে পশ্চিম ইউক্রেনের লোকেরা কখনোই তেমন একটা যুদ্ধ করেনি। তারা সব সময়ই যখন যে রাজা এসেছে, তাদের আনুগত্য স্বীকার করেছে। ফলে তারা পালিয়ে আশ্রয় নিচ্ছে ইউরোপে।
এমনও শুনেছি পূর্ব ইউক্রেন থেকে যারা পালিয়ে পশ্চিম দিকে যাচ্ছে, পশ্চিম ইউক্রেনের লোকেরা তাদের কাছে বাসা ভাড়া দিয়ে নিজেরা ইউরোপের দিকে যাচ্ছে। আর এদের অনেকেই, বিশেষ করে এলিটদের অনেকেই পালিয়ে যাচ্ছে বিশাল অঙ্কের অর্থ আত্মসাৎ করে। এমন অনেকে ধরা পড়েছে হাঙ্গেরি, রোমানিয়ার সীমান্তে। পালিয়ে বাঁচাদের তালিকায় রয়েছে সেসব লোকজন, যাদের কথা ছিল দেশের হয়ে যুদ্ধ করার। এ নিয়ে ইউরোপে বিরূপ প্রতিক্রিয়া হচ্ছে। শুধু তাই নয়, তারা ইউরোপে গিয়ে বিভিন্ন অসামাজিক কাজে লিপ্ত হয়েছে। অল্পবয়সী ছেলেমেয়েরা যৌনকর্মীর খাতার নাম লেখাতে বাধ্য হচ্ছে। এ নিয়ে ব্যবসা হচ্ছে। এ ছাড়া ইউক্রেনের অনেকেই বিভিন্ন দেশে রুশদের ওপর হামলা করছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে আত্মদানকারী সোভিয়েত সেনাদের মনুমেন্ট ভাঙচুর করছে। তাই যুদ্ধ হচ্ছে মূলত রুশদের সঙ্গে রুশদের। এভাবেই পশ্চিমা বিশ্ব এদের মধ্যে ভ্রাতৃঘাতী যুদ্ধ লাগিয়ে নিজেদের মানবিক ও গণতান্ত্রিক দায়িত্ব পালন করছে। আত্মসমর্পণ করা ইউক্রেন সেনারা বলছে, আত্মসমর্পণ করলে ওদের মেরে ফেলা হবে বলে ভয় দেখানো হয়েছিল। এখন তারা বুঝতে পারছে, এটাই জীবন বাঁচানোর একমাত্র পথ। তা ছাড়া মানুষের মৃত্যু দেখতে দেখতে ক্লান্ত হয়ে গেছে বলেও অনেকে জানিয়েছে।
পশ্চিমা বয়ানই কি শেষ কথা
আমরা কথায় কথায় স্বাধীনতার কথা বলি, মুক্ত চিন্তার কথা বলি। আচ্ছা আজ কতটি দেশ স্বাধীন? সত্যের কোনো একক রূপ নেই। একজনের দৃষ্টিতে যা সত্য, অন্যের দৃষ্টিতে তা মিথ্যা হতে পারে। তা ছাড়া পশ্চিমা বয়ানই যে শেষ কথা, তার তো কোনো মানে নেই। এখন এই যুদ্ধ নিয়ে রাশিয়ার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ আনা হচ্ছে পশ্চিমা বিশ্বের পক্ষ থেকে। আমি জানি গতকাল কেউ কোনো ঘটনার প্রতিবাদ না করলেও আজ সে অনুরূপ ঘটনার বিরুদ্ধে বলতে পারে। তবে সে ক্ষেত্রে তার দায়িত্ব হয়ে দাঁড়ায়, এর পর থেকে এ ধরনের যেকোনো ঘটনার প্রতিবাদ করা। সবাই জানে আফগানিস্তান, ইরাক, লিবিয়া, সিরিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকার কথা। যে বাইডেন পুতিনকে খুনি বলছেন, তিনিই ১৯৯২ সালে বেলগ্রাদ আক্রমণের পক্ষে ওকালতি করেন। ইরাক ও লিবিয়ার যুদ্ধেও তাঁর সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল। জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ এর প্রতিবাদ করে আজ জেলের ভাত খাচ্ছেন। আজ যে কারণে রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হচ্ছে, তার শতগুণ অপরাধে অপরাধী যুক্তরাষ্ট্র কিন্তু সব সময়ই বেকসুর খালাস পেয়ে গেছে। এটা আমাদের দেশে কিছু কিছু বিশেষ আসামির মতো। ইউরোপ-আমেরিকায় বসবাসকারী অনেক বাংলাদেশিকে দেখি দেশে এমন কিছু ঘটলে বিষ উগরে দেন, অথচ যুক্তরাষ্ট্রের অন্যায় হজম করে যান, দরকারে হজমি খেয়ে সেটা করেন। এদের দেখে আমি বুঝি, কেন বাংলাদেশের অনেক লোক ভারতে কোনো মুসলমানের ওপর অত্যাচার হলে প্রতিবাদে সোচ্চার হন, অথচ তারাই বাংলাদেশের হিন্দুদের ওপর অত্যাচার দেখেও মুখ খোলে না। ঠিক এর উল্টোটা ঘটে ভারতে; যারা পাকিস্তান বা বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর অত্যাচারের প্রতিবাদ করে, তারা ভারতে মুসলমানদের ওপর অত্যাচারের ব্যাপারে নিশ্চুপ থাকে। আসলে এটা এক ধরনের মানসিক রোগ, যখন আগে থেকেই ঠিক করা হয় কাদের প্রতি আমরা সহানুভূতিশীল হব, আর কাদের প্রতি নিস্পৃহ।
আচ্ছা কেউ কি মনে করেন, ব্রিটিশেরা ভারতীয়দের পছন্দ করত? আমার তো মনে হয়, তারা হিন্দু, মুসলমান নির্বিশেষ সমস্ত ভারতীয়দের একই রকম অবজ্ঞার চোখে দেখত। কিন্তু কখনো হিন্দুদের, কখনো মুসলমানদের মাথায় হাত বুলিয়ে তাদের মধ্যে ভেদ সৃষ্টি করত। ফলাফল—দেশভাগ। তবে তার চেয়েও ভয়ংকর হচ্ছে লাখ লাখ মানুষের মৃত্যু। আজ পশ্চিমা বিশ্ব ইউক্রেনের পাশে দাঁড়িয়েছে তাদের ভালোবেসে নয়, তাদের হাত দিয়ে যত বেশি সম্ভব রুশ হত্যার জন্য। তারা ভালোভাবেই জানে রুশ, বেলারুশ ও ইউক্রেনীয়—এরা প্রায় একই জাতি। এখন তারা মিষ্টি কথায় ভুলিয়ে এদের বিভক্ত করছে। ডিভাইড অ্যান্ড রুল—এটা তাদের অমূল্য আবিষ্কার।
অনেককেই দেখি, শুধু পুতিন বিরোধিতা থেকে পশ্চিমের সবকিছু জায়েজ করে দেয়। পুতিনের প্রতি বিভিন্ন মনোভাব থাকতেই পারে। থাকাটাই স্বাভাবিক। কিন্তু সেটা যদি অন্ধ ঘৃণা হয়, তাহলে বিপদ। আমি ব্যক্তিগতভাবে তাঁর অনেক কিছুই অপছন্দ করি। সত্যি বলতে কি আমি কারওই সবকিছু পছন্দ করি না। কারও মধ্যে পছন্দ করার মতো কিছু থাকলে পছন্দ করি, ঘৃণা করার মতো কিছু থাকলে, সেটা করতেও পিছ-পা হই না। আমার কাছে কোনো কিছুর ভালোমন্দ কে করল তার ওপর নির্ভর করে না, কী করল সেটাই বড় কথা।
পুতিনের সবচেয়ে বড় অবদানগুলোর একটি হচ্ছে রাশিয়াকে অনিবার্য ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করা ও যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধেও যে দাঁড়ানো যায়, সেটা দেখানো। ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের একচ্ছত্র অধিকারী হয়ে ওঠে। কেউই তখন তার প্রতিবাদ করতে পারত না। যুক্তরাষ্ট্রের কথাই ছিল আইন। তাই বেলগ্রাদ আক্রমণ থেকে শুরু করে সবাই হজম করতে হয়। করবেই-বা না কেন? যদি ইউরোপের প্রায় প্রতিটি দেশে অসংখ্য মার্কিন ঘাঁটি থাকে, তবে তার কথা না মেনে উপায় আছে? ঠিক এ রকম এক সময়ে ২০০৭ সালে পুতিন মিউনিখে দাঁড়িয়ে এর প্রতিবাদ করেন। সবাই হেসেছিল। কারণ, রাশিয়া তখন তাদের চোখে ছিল পেট্রল পাম্প। পুতিন সবাইকে দেখিয়ে দেন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একমত না হয়েও বেঁচে থাকা যায়।
এর অনেক পরে ২০১৫ সালে তৎকালীন ভাইস প্রেসিডেন্ট বাইডেনের কথায় ইউক্রেন সে দেশের প্রসিকিউটর জেনারেলকে পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়। তাই শুধু সুযোগ থাকলেই হবে না, সেটা ব্যবহারের মনোবল থাকতে হবে। মতিলাল নেহরু বলেছিলেন, ‘গান্ধীর সঙ্গে দ্বিমত করার ব্যাপারে আমরা একমত হয়েছি–উই এগ্রিড টু ডিস্যাগ্রি’। আসলে গণতন্ত্রের মূল মন্ত্র হলো দ্বিমত প্রকাশের অধিকার। কিন্তু এখন আমরা কী দেখি? যেসব দেশ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একযোগে রাশিয়ার নিন্দা করতে অস্বীকার করছে, তাদের ওপর নেমে আসছে প্রচণ্ড চাপ। এবার সে যে দেশই হোক—চীন, ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তান বা যে-ই হোক। এই বিশ্বে কি আমরা বাস করতে চাই? আমার বিশ্বাস যদি এই যুদ্ধে রাশিয়া হারে, তবে যুক্তরাষ্ট্র হবে সেই দানব, যার দুপুরের খাবারের জন্য প্রতিদিন একটা করে দেশ পাঠাতে হবে। তাই এই যুদ্ধ শুধু রাশিয়ার অস্তিত্বের যুদ্ধ নয়, এটা বিশ্বের প্রতিটি দেশের স্বাধীনভাবে বেঁচে থাকার অধিকারের যুদ্ধ। তাই এই যুদ্ধে বিজয়ের কোনোই বিকল্প নেই বলে মনে করছে মস্কো।
নিষেধাজ্ঞায় পশ্চিমও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে
যুদ্ধ শুরুর অনেক আগে থেকেই পশ্চিমা বিশ্ব বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞা আরোপের অনবরত হুমকি দিয়ে আসছিল। তাদের ধারণা ছিল, কয়েকটি নিষেধাজ্ঞা দিয়েই রাশিয়ার অর্থনীতিতে ধস নামানো যাবে। যুদ্ধ শুরুর মুহূর্তে এক ধরনের প্যানিক যে সৃষ্টি হয়নি, তা নয়। সেই এক দিনে মানুষ এক ট্রিলিয়ন রুবল ব্যাংক থেকে নামিয়ে নেয়। তবে এ নিয়ে কোনো সমস্যা হয়নি। সবাই সেটা করতে পেরেছে, কোথাও কোথাও লম্বা লাইনে দাঁড়াতে হয়েছে। একের পর এক বিভিন্ন বিদেশি কোম্পানি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কিছু কিছু জিনিস কেনার হিড়িক লাগে। মনে আছে, ওই সময় মেয়ে বলল ও স্যানিটারি প্যাড খুঁজে পাচ্ছে না (একেবারে নেই তা নয়, ও যে কোম্পানির প্যাড ব্যবহার করে সেটা নেই)। আমি দোকানে গিয়ে কিছু কিনে আনলাম, ওয়াইল্ড বেরিতে কিছু অর্ডার দিলাম। মাঝে চিনির অভাব ছিল।
পরে ব্যবসায়ী বন্ধুদের কাছে শুনলাম, যেহেতু প্রথম দিকে ডলারের দাম প্রতিদিন বাড়ছিল, তাই অনেক কোম্পানি ইচ্ছা করে বিভিন্ন জিনিসপত্র বিক্রি করেনি। পরে অবশ্য অ্যান্টিমনোপলি সংস্থা এসব ধরে প্রচুর জরিমানা করে। এরই মধ্যে ডলারের দাম কম-বেশি স্ট্যাবল হওয়ায় জিনিসপত্র দোকানে ফিরে এসেছে। তবে এটা ঠিক হাইটেকের অনেক জিনিসপত্রের অভাব দেখা দেওয়ার আশঙ্কা আছে, কিছুদিন পর যখন স্টক শেষ হয়ে যাবে। মনে আছে, সোভিয়েত আমলে এ দেশে কম্পিউটার আমদানির ওপর বিদেশি নিষেধাজ্ঞা ছিল। তবে বিদেশি শিক্ষার্থীরা তখন সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া—এসব দেশ থেকে কম্পিউটার কিনে সোভিয়েত ইউনিয়নে বিক্রি করত। তাই আমার ধারণা চীন বাদেও অন্য অনেক দেশের মাধ্যমে সেই সমস্যা অনেকটাই সমাধান হবে। মনে রাখতে হবে, পুঁজিবাদ লাভ খোঁজে। তাই নিষেধাজ্ঞার ফাঁদে পড়ে সরাসরি এ দেশে বিভিন্ন জিনিস রপ্তানি বন্ধ করলেও তারা অলিগলি খুঁজবে। এখনই ইরানের তেলের সাথে রাশিয়ার তেল মিশিয়ে নাকি বিক্রি হচ্ছে!
রাশিয়া এক বিশাল মার্কেট। যেসব কোম্পানি চলে যাচ্ছে, সেসব জায়গা ফাঁকা থাকবে না। ইতিমধ্যে রাশিয়া থেকে চলে যাওয়া প্রায় হাজারখানেক কোম্পানির স্থান দখলের প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। অনেক দেশি কোম্পানি এত দিন বিদেশি কোম্পানির সাথে পাল্লা দিয়ে হেরে যাচ্ছিল, হেরে যাচ্ছিল চীনের বিভিন্ন কোম্পানি। এখন এরা সেই জায়গা দখল করবে। তবে রুশ ক্রেতা এখন যেহেতু ভালো জিনিসের কদর বোঝে, তাই এসব কোম্পানিকে বাধ্য হয়েই নিজেদের প্রোডাক্টের মান উন্নত করতে হবে।
নিষেধাজ্ঞার ফলে দেশে যাতে কোনো পণ্যের অভাব না হয়, সে জন্যে সরকার বিভিন্ন ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছে। এটাকে এরা বলে আমদানি বিকল্প। আশির দশকের পেরেস্ত্রোইকা ও গ্লাসনস্তের মতোই এই ইম্পরতোজামেশেনিয়ে বা আমদানি বিকল্প বর্তমান রাশিয়ায় প্রচণ্ড জনপ্রিয়। উল্লেখ করা যেতে পারে যে, ২০১৪ সাল থেকেই যখন পশ্চিমা বিশ্ব রাশিয়ার ওপর বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞা আরোপের হুমকি দিচ্ছিল, তখন থেকেই এখানে শুরু হয় স্বনির্ভর হওয়ার প্রক্রিয়া। ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর সমস্ত কলকারখানা যখন রাষ্ট্রীয় মালিকানা থেকে ব্যক্তি মালিকানায় দিয়ে দেওয়া হয়, তখন সেই বেসরকারিকরণের মূল লক্ষ্য ছিল এ দেশের শিল্প চিরতরে ধ্বংস করা। সেই প্রক্রিয়ার পরিচালক আনাতলি চুবাইস, যিনি কিছুদিন আগ পর্যন্তও বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় উচ্চপদে নিযুক্ত ছিলেন, আর যুদ্ধ শুরুর পরপর দেশ ছেড়ে চলে যান; বলেছিলেন, ‘আমাদের একটাই উদ্দেশ্য ছিল, সোভিয়েত সমাজ, তার শিল্প—সবকিছু ধ্বংস করা, যাতে সোভিয়েত ইউনিয়ন আর কোনো দিন পুনর্জন্ম নিতে না পারে।’
এর ফল হিসেবে আমরা দেখেছি, প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই এরা বিদেশি পণ্যের ওপর নির্ভরশীল ছিল রাশিয়া। কিন্তু ২০১৪ সালের পর থেকে এখানে শুরু হয় নতুন করে সবকিছু ভেবে দেখা। আর এর সূত্র ধরে কয়েক বছর আগ পর্যন্ত শস্যের জন্য বিদেশের ওপর নির্ভরশীল রাশিয়া আজ অন্যতম প্রধান শস্য রপ্তানিকারক দেশ। সোভিয়েত আমলের শক্তিশালী বিভিন্ন জীবাণু ও ভাইরাস রিসার্চ সেন্টার নতুন উদ্যোগে কাজ শুরু করে। প্রায় ধ্বংসপ্রাপ্ত এসব প্রতিষ্ঠান থেকে পৃথিবী পায় করোনার প্রথম ভ্যাকসিন। উড়োজাহাজ তৈরিতে সোভিয়েত ইউনিয়নের স্থান ছিল যুক্তরাষ্ট্রের পর। কিন্তু নতুন রাশিয়ায় সেটা ধ্বংস হয়ে যায়। ২০১৪ সালের পর থেকে শুরু হয় নতুন করে উড়োজাহাজ উৎপাদন। বর্তমানে রাশিয়ার সিভিল এয়ার পার্কের প্রায় অর্ধেক বোয়িং ও এয়ারবাসের দখলে। কিন্তু যুদ্ধ শুরুর পর তারা এসব উড়োজাহাজের লিজিং স্থগিত রাখে। ফলে প্রায় এক হাজার উড়োজাহাজ এখন মাটিতে বেকার পড়ে আছে। কিন্তু নিষেধাজ্ঞার ফলে এদের নিজ নিজ দেশে নিয়ে যেতে পারছে না। ফলে পশ্চিমা অনেক লিজিং কোম্পানি বন্ধ হওয়ার পথে।
এদিকে এই সমস্যা সমাধানে রাশিয়া নিজেই উড়োজাহাজ তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এতে সময় লাগবে। তবে সেটা ভবিষ্যতে যেকোনো নিষেধাজ্ঞায় দেশটিকে বাঁচাবে। বাড়তি পাওয়া হিসেবে এর ফলে তৈরি হবে নতুন কর্মস্থান, উড়োজাহাজ নির্মাণের মতো বিষয়গুলো আবার ফিরে আসবে এদের শিক্ষা ব্যবস্থায়। তবে এসব যে খুব সহজে হবে, তা কিন্তু নয়।
সোভিয়েত আমলে রাশিয়ায় প্রায় সব ধরনের ফসলের সিলেকশন হতো। দীর্ঘ সময় ধরে বিদেশ থেকে কম পয়সায় আমদানির কারণে এখানে সমস্যা দেখা দিয়েছে। যদিও এখন পর্যন্ত আগামী মৌসুমের জন্য বীজ সংরক্ষিত আছে। দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে বছর দু-এক পর সমস্যায় পড়তে হতে পারে। চীন, ভারত সহায়তা করতে পারে। তবে তবে এরা এখন থেকেই চাইছে জিন পুলের ক্ষেত্রে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে। এককথায় যুদ্ধের পাশাপাশি রাশিয়া তার রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক—সব ব্যবস্থাকেই ঢেলে সাজাচ্ছে। রুশরা বলে, ‘শান্তি ছিল না, অশান্তি সাহায্য করল’। অনেক দিন ধরে ব্যবসা, বিশেষ করে মধ্যমানের পুঁজির জন্য বেশ কিছু জরুরি আইন এদের সংসদ বা দুমায় পড়ে ছিল, এখন সেগুলো পাস হয়ে গেছে।
লেখক: শিক্ষক, রাশিয়ান পিপলস ফ্রেন্ডশিপ ইউনিভার্সিটি, মস্কো

পাকিস্তানের বিচারপতি কায়ানির নামে একটা রসিকতা চালু আছে। তিনি নাকি বলেছিলেন, সব দেশের একটি সেনাবাহিনী আছে, আর পাকিস্তান সেনাবাহিনীর রয়েছে একটি দেশ। পাকিস্তানের ইতিহাসের দিকে নজর রাখলেই একের পর এক জেনারেল বেরিয়ে আসবে। গণতন্ত্র সেখানে সোনার হরিণ হিসেবেই রয়ে গেছে, বাস্তবজীবনে তার দেখা মেলা ভার।
৭ ঘণ্টা আগে
‘ক্রেইনস আর ফ্লাইং’, ‘ব্যালাড অব এ সোলজার’, ‘গানস অব নাভারন’, ‘সোফিস চয়েজ’-এর মতো চলচ্চিত্র হয়তো আমাদের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে তৈরি হয়নি, কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকেই। শুরুর দিকের সিনেমাগুলোয় স্থূলতার সঙ্গে সঙ্গে বাণিজ্যিক উপাদান যুক্ত হয়েছে খুব দ্রুত।
৭ ঘণ্টা আগে
কুকুর ও বিড়াল মানুষের সংস্পর্শ ছাড়া থাকতে পারে না। বনজঙ্গলে রেখে এলেও তারা লোকালয়ে চলে আসে। কুকুর ও বিড়ালের লোকালয়ে চলে আসার কারণ হিসেবে বলা হয় যে তারা মানুষের খাবার খেয়ে, ভালোবাসায় বেঁচে থাকে। ফলে মানুষের থেকে দূরে থাকতে তারা পারে না।
৭ ঘণ্টা আগে
ঠিক কোথা থেকে শুরু করব বুঝে উঠতে পারছি না। ভেতরের তোলপাড়ের কারণেই লিখি লিখি করে লেখা হয়ে উঠছিল না লেখাটা। গত মাসের কথা, মানে নভেম্বর; ফেসবুকের নিউজফিডে একটি খবর ভেসে আসে। রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার খোড়াগাছ ইউনিয়নের জারুল্লাপুর গ্রামের ধানখেত থেকে একটি নবজাত শিশুকে উদ্ধার করা হয়।
৭ ঘণ্টা আগেসম্পাদকীয়

পাকিস্তানের বিচারপতি কায়ানির নামে একটা রসিকতা চালু আছে। তিনি নাকি বলেছিলেন, সব দেশের একটি সেনাবাহিনী আছে, আর পাকিস্তান সেনাবাহিনীর রয়েছে একটি দেশ। পাকিস্তানের ইতিহাসের দিকে নজর রাখলেই একের পর এক জেনারেল বেরিয়ে আসবে। গণতন্ত্র সেখানে সোনার হরিণ হিসেবেই রয়ে গেছে, বাস্তবজীবনে তার দেখা মেলা ভার।
সম্প্রতি পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান জেলে বন্দী অবস্থায় মারা গেছেন বলে গুজব ছড়িয়ে পড়েছিল। সেই ২০২৩ সাল থেকে পাকিস্তান ক্রিকেটের কিংবদন্তি এবং রাজনীতিবিদ ইমরান খান কারাবন্দী রয়েছেন। দীর্ঘদিন রাজনীতির মাঠে সক্রিয় থেকে একসময় তাঁর দল নির্বাচনে জয়ী হয়েছিল, সরকার গঠন করেছিল। এরপর কীভাবে ইমরান খানকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়েছিল, তা নতুন করে বলার দরকার পড়ে না। কারাগারে তিনি সুস্থ আছেন, এই সংবাদ প্রকাশিত হলে ইমরান খানকে নিয়ে সংশয় কেটে যায়।
পাকিস্তানের ইতিহাস ঘাঁটলে নির্বাচিত সরকারের পরিবর্তন কীভাবে হয়, তা যে কেউ জেনে নিতে পারবে। নির্বাচিত সরকারপ্রধানকে সরিয়ে হয় একটা পুতুল সরকার বসানো হয় অথবা সরাসরি ক্ষমতার মঞ্চে আবির্ভূত হন কোনো জেনারেল। ইস্কান্দার মির্জা, আইয়ুব খান হয়ে আসিম মুনিরে এসে ঠেকেছে পাকিস্তানের বিধিলিপি। ফলে পাকিস্তানকে জেনারেলদের দুনিয়া বলা হলেও সত্যের অপলাপ হবে না। সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণহীন হতে চাইলেই সে সরকারের ওপর নেমে আসে বিভীষিকা। অরাজকতা যেন সেখানকার ঐতিহ্য হয়ে উঠেছে।
ইমরান খান জনপ্রিয় নেতা। বিগত নির্বাচনে পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ দলকে নির্বাচনে অংশ নিতে দেওয়া হয়নি। কিন্তু দলটির স্বতন্ত্র সদস্যরা জিতে নেন অনেকগুলো আসন। পাকিস্তানি রাজনীতিতে দলটির একটি গ্রহণযোগ্য অবস্থান রয়েছে। জেলখানায় বন্দী ইমরান খান পাকিস্তানে এখনো খুবই জনপ্রিয়। ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় তিনি জেনারেলদের বিরোধের মধ্যে পড়ে নিজের প্রধানমন্ত্রিত্বকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দেন। এ ছাড়াও দেশ পরিচালনার ক্ষেত্রে কিছু দুর্বলতা দেখা দেওয়ায় তিনি বিরোধী দলগুলোর রোষানলে পড়েন। যার ফলে তিনি ক্ষমতা ত্যাগ করতে বাধ্য হন।
বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কের ব্যাপারে ইমরান খানের একটি বক্তব্য স্মর্তব্য। তিনি তাঁর দলের সঙ্গে জুলুম হচ্ছে জানিয়ে বলেছিলেন, ‘পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে কী হয়েছিল? সবচেয়ে বড় যে রাজনৈতিক দল নির্বাচনে জিতেছিল, তাদের ওপর দমনপীড়ন চালিয়েছিল সামরিক বাহিনী। তাদের যে অধিকার ছিল, তা দেওয়া হয়নি।’ ইমরান আরও বলেছিলেন, ‘আমার জানা ছিল না, সেখানকার মানুষের ভেতরে কী পরিমাণ ঘৃণা জমেছিল। কেন ঘৃণা জমেছিল? তারা নির্বাচনে জিতেছিল আর আমরা তাদের সেই অধিকার দিচ্ছিলাম না। প্রধানমন্ত্রী তাদের হওয়ার কথা। কিন্তু আমরা এখানে (পশ্চিম পাকিস্তানে) বসে সিদ্ধান্ত নিলাম, আমরা তাদের প্রধানমন্ত্রী হতে দেব না।’
পাকিস্তানের রাজনীতিতে গণতন্ত্র আসবে কি না, সেটা নির্ভর করবে দেশটি আইনের শাসনের প্রতি কতটা অনুগত, তার ওপর। আপাতত সেই পরিবেশের উন্নতি হওয়ার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। আর সেই অন্ধকারই নিয়ন্ত্রণ করছে ইমরান খানের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ।

পাকিস্তানের বিচারপতি কায়ানির নামে একটা রসিকতা চালু আছে। তিনি নাকি বলেছিলেন, সব দেশের একটি সেনাবাহিনী আছে, আর পাকিস্তান সেনাবাহিনীর রয়েছে একটি দেশ। পাকিস্তানের ইতিহাসের দিকে নজর রাখলেই একের পর এক জেনারেল বেরিয়ে আসবে। গণতন্ত্র সেখানে সোনার হরিণ হিসেবেই রয়ে গেছে, বাস্তবজীবনে তার দেখা মেলা ভার।
সম্প্রতি পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান জেলে বন্দী অবস্থায় মারা গেছেন বলে গুজব ছড়িয়ে পড়েছিল। সেই ২০২৩ সাল থেকে পাকিস্তান ক্রিকেটের কিংবদন্তি এবং রাজনীতিবিদ ইমরান খান কারাবন্দী রয়েছেন। দীর্ঘদিন রাজনীতির মাঠে সক্রিয় থেকে একসময় তাঁর দল নির্বাচনে জয়ী হয়েছিল, সরকার গঠন করেছিল। এরপর কীভাবে ইমরান খানকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়েছিল, তা নতুন করে বলার দরকার পড়ে না। কারাগারে তিনি সুস্থ আছেন, এই সংবাদ প্রকাশিত হলে ইমরান খানকে নিয়ে সংশয় কেটে যায়।
পাকিস্তানের ইতিহাস ঘাঁটলে নির্বাচিত সরকারের পরিবর্তন কীভাবে হয়, তা যে কেউ জেনে নিতে পারবে। নির্বাচিত সরকারপ্রধানকে সরিয়ে হয় একটা পুতুল সরকার বসানো হয় অথবা সরাসরি ক্ষমতার মঞ্চে আবির্ভূত হন কোনো জেনারেল। ইস্কান্দার মির্জা, আইয়ুব খান হয়ে আসিম মুনিরে এসে ঠেকেছে পাকিস্তানের বিধিলিপি। ফলে পাকিস্তানকে জেনারেলদের দুনিয়া বলা হলেও সত্যের অপলাপ হবে না। সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণহীন হতে চাইলেই সে সরকারের ওপর নেমে আসে বিভীষিকা। অরাজকতা যেন সেখানকার ঐতিহ্য হয়ে উঠেছে।
ইমরান খান জনপ্রিয় নেতা। বিগত নির্বাচনে পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ দলকে নির্বাচনে অংশ নিতে দেওয়া হয়নি। কিন্তু দলটির স্বতন্ত্র সদস্যরা জিতে নেন অনেকগুলো আসন। পাকিস্তানি রাজনীতিতে দলটির একটি গ্রহণযোগ্য অবস্থান রয়েছে। জেলখানায় বন্দী ইমরান খান পাকিস্তানে এখনো খুবই জনপ্রিয়। ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় তিনি জেনারেলদের বিরোধের মধ্যে পড়ে নিজের প্রধানমন্ত্রিত্বকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দেন। এ ছাড়াও দেশ পরিচালনার ক্ষেত্রে কিছু দুর্বলতা দেখা দেওয়ায় তিনি বিরোধী দলগুলোর রোষানলে পড়েন। যার ফলে তিনি ক্ষমতা ত্যাগ করতে বাধ্য হন।
বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কের ব্যাপারে ইমরান খানের একটি বক্তব্য স্মর্তব্য। তিনি তাঁর দলের সঙ্গে জুলুম হচ্ছে জানিয়ে বলেছিলেন, ‘পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে কী হয়েছিল? সবচেয়ে বড় যে রাজনৈতিক দল নির্বাচনে জিতেছিল, তাদের ওপর দমনপীড়ন চালিয়েছিল সামরিক বাহিনী। তাদের যে অধিকার ছিল, তা দেওয়া হয়নি।’ ইমরান আরও বলেছিলেন, ‘আমার জানা ছিল না, সেখানকার মানুষের ভেতরে কী পরিমাণ ঘৃণা জমেছিল। কেন ঘৃণা জমেছিল? তারা নির্বাচনে জিতেছিল আর আমরা তাদের সেই অধিকার দিচ্ছিলাম না। প্রধানমন্ত্রী তাদের হওয়ার কথা। কিন্তু আমরা এখানে (পশ্চিম পাকিস্তানে) বসে সিদ্ধান্ত নিলাম, আমরা তাদের প্রধানমন্ত্রী হতে দেব না।’
পাকিস্তানের রাজনীতিতে গণতন্ত্র আসবে কি না, সেটা নির্ভর করবে দেশটি আইনের শাসনের প্রতি কতটা অনুগত, তার ওপর। আপাতত সেই পরিবেশের উন্নতি হওয়ার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। আর সেই অন্ধকারই নিয়ন্ত্রণ করছে ইমরান খানের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ।

অনেক দিন আগে বন্ধু পেনকভ বলেছিল, যদি আমেরিকান, ভারতীয়, বাংলাদেশি—এসব ‘তুমি কে’ সেই প্রশ্নের উত্তর হয়, তাহলে রুস্কি—এটা শুধু ‘কে’ নয়, ‘কেমন’ সেই প্রশ্নেরও উত্তর। মানে রুস্কি শুধু জাতি, দেশ—এসবের সাথেই সম্পর্কিত নয়। এটা মানুষের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য। রুস্কি চেলাভেক—রুশ মানুষ; এটা এক ধরনের বিশেষ মনোভাবের
২৯ এপ্রিল ২০২২
‘ক্রেইনস আর ফ্লাইং’, ‘ব্যালাড অব এ সোলজার’, ‘গানস অব নাভারন’, ‘সোফিস চয়েজ’-এর মতো চলচ্চিত্র হয়তো আমাদের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে তৈরি হয়নি, কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকেই। শুরুর দিকের সিনেমাগুলোয় স্থূলতার সঙ্গে সঙ্গে বাণিজ্যিক উপাদান যুক্ত হয়েছে খুব দ্রুত।
৭ ঘণ্টা আগে
কুকুর ও বিড়াল মানুষের সংস্পর্শ ছাড়া থাকতে পারে না। বনজঙ্গলে রেখে এলেও তারা লোকালয়ে চলে আসে। কুকুর ও বিড়ালের লোকালয়ে চলে আসার কারণ হিসেবে বলা হয় যে তারা মানুষের খাবার খেয়ে, ভালোবাসায় বেঁচে থাকে। ফলে মানুষের থেকে দূরে থাকতে তারা পারে না।
৭ ঘণ্টা আগে
ঠিক কোথা থেকে শুরু করব বুঝে উঠতে পারছি না। ভেতরের তোলপাড়ের কারণেই লিখি লিখি করে লেখা হয়ে উঠছিল না লেখাটা। গত মাসের কথা, মানে নভেম্বর; ফেসবুকের নিউজফিডে একটি খবর ভেসে আসে। রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার খোড়াগাছ ইউনিয়নের জারুল্লাপুর গ্রামের ধানখেত থেকে একটি নবজাত শিশুকে উদ্ধার করা হয়।
৭ ঘণ্টা আগেজাহীদ রেজা নূর

‘ক্রেইনস আর ফ্লাইং’, ‘ব্যালাড অব এ সোলজার’, ‘গানস অব নাভারন’, ‘সোফিস চয়েজ’-এর মতো চলচ্চিত্র হয়তো আমাদের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে তৈরি হয়নি, কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকেই। শুরুর দিকের সিনেমাগুলোয় স্থূলতার সঙ্গে সঙ্গে বাণিজ্যিক উপাদান যুক্ত হয়েছে খুব দ্রুত। নারীকে সেখানে লালসার শিকার হিসেবে তুলে ধরে বাণিজ্যিক লাভালাভের খোঁজ করেছেন পরিচালকেরা। এরপর ১৯৭৫ সালের মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ডের পর মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র নির্মাণের কাজটাই তো থমকে দাঁড়াল। এমনভাবে সাংস্কৃতিক জগৎটা নির্মাণ করা হলো, যেন মুক্তিযুদ্ধ বলে কিছুই ঘটেনি এ দেশে। এই মতলবি রাজনীতি চলেছিল অনেক দিন ধরেই। বাংলাদেশ বেতারকে রেডিও বাংলাদেশে পরিণত করেছিল যারা, তাদের খায়েশ ছিল পাকিস্তানের সঙ্গে আবার আঁতাত করার। যে রক্ত ঝরেছিল একাত্তরে, তাকে অগ্রাহ্য করা হয়েছিল দম্ভ ভরে। কিন্তু সে সময় তাদের সে খায়েশ পূরণ হয়নি। একের পর এক সামরিক শাসক দেশের শাসনভার হাতে নিয়ে সবচেয়ে যে বিষয়টিকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে, তা হলো দেশের সাংস্কৃতিক পরিচয়।
কিছুটা সামাল দিয়ে আশির দশকে আবার শুরু হয়েছিল মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণ। কিন্তু মূলধারার চলচ্চিত্রে উল্লেখ করার মতো চলচ্চিত্র হয়নি বললে খুব একটা ভুল বলা হবে না। কোনো কোনো চলচ্চিত্রে মানবিক আবেদন আছে বটে, কিন্তু তা শিল্পের দাবির সঙ্গে একীভূত হতে পারেনি।
২. আজ আমরা এমন কয়েকটি চলচ্চিত্র নিয়ে কথা বলব, যেগুলো নির্মিত হয়েছে স্বাধীনতার পরে। এই চলচ্চিত্রগুলো পূর্ণদৈর্ঘ্য বাংলা ছায়াছবি নয়, স্বল্পদৈর্ঘ্য বাংলা ছায়াছবিও নয়। এগুলো তথ্যচিত্র।
ছবিগুলোর মধ্যে সরাসরি মুক্তিযুদ্ধ নেই। কিন্তু এর মধ্যে কয়েকটি প্রামাণ্যচিত্র যুদ্ধ ও যুদ্ধ-পরবর্তী বাস্তবতাকে তুলে ধরে। ভাবায়।
অনেকেরই মনে পড়ে যাবে, নব্বইয়ের দশকে যখন ‘মুক্তির গান’ নিয়ে এলেন তারেক মাসুদ ও ক্যাথরিন মাসুদ, তখন কীভাবে আলোড়িত হয়েছিল দেশের তরুণ সমাজ। মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে সরাসরি এই সংযোগ একটা জাগরণী মন্ত্রের মতো কাজ করেছিল। মার্কিন চলচ্চিত্রকার লিয়ার লেভিন যে ফুটেজগুলো ধারণ করেছিলেন একাত্তরে এবং যেগুলো অলসভাবে পড়ে ছিল তাঁর বেজমেন্টে, সেগুলো উদ্ধার করে এনে তারেক-ক্যাথরিন জুটি যা করলেন, তা আমাদের সত্যিকারের ইতিহাসের অংশ হয়ে রইল।
হ্যাঁ, সে ছবিতে মুক্তিযোদ্ধাদেরও দেখা গেছে। কিন্তু সবচেয়ে বড় হয়ে যা উঠে এসেছে, তা হলো স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা নিয়ে কীভাবে যুক্ত হওয়া যায় এই যুদ্ধে। বাংলাদেশ থেকে উদ্বাস্তু হয়ে ভারতে যাওয়া শিল্পীরাই সংগঠিত হয়ে তৈরি করেছিলেন গানের দলটি। উদ্বাস্তু শিবিরে, মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্পে তাঁরা শুনিয়েছেন জাগরণী গান। ব্যক্তিগতভাবে এই শিল্পীদের কারও কারও সঙ্গে কথা বলার সৌভাগ্য হয়েছে আমার। তাঁদের কাছ থেকেই জেনেছি, খেয়ে-না খেয়ে কীভাবে তাঁরা কাজ করেছেন। আবার উদ্বাস্তুদের কেউ কেউ গানের শেষে জোর করে তাঁদের আপ্যায়ন করেছেন। খুবই সাধারণ খাবার, কিন্তু আন্তরিকতা? যুদ্ধে এই আন্তরিকতার প্রকাশ খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যুদ্ধ তো মনস্তাত্ত্বিক খেলা। প্রচারণার খেলা। সেই খেলায় জয়ী হয় তারাই, যাদের পেছনে দেশের মানুষের সমর্থন থাকে। ১৯৭১ সালে এই দেশের মানুষ কীভাবে যোদ্ধাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে, সে ইতিহাস তুলে ধরার জন্য মাটির গান ছবিটি গুরুত্বপূর্ণ। আরও অনেক কারণেই তা গুরুত্বপূর্ণ। একটি কারণের কথা তো উল্লেখ করতেই হবে—যারা একাত্তর নিয়ে এখন নতুন মিথ তৈরি করার মতো চালাকি করছে, তারা যেসব কারণে হালে পানি পাবে না, তার একটি হচ্ছে তথ্যভিত্তিক ইতিহাস। এই ইতিহাসকে অগ্রাহ্য করে নতুন বয়ান তৈরি করার চেষ্টা একসময় হাসির খোরাকে পরিণত হবে।
৩. ইদানীং দেখা যায়, অনেকেই একাত্তরে ধর্ষিতা নারীদের নিয়ে কটাক্ষ করেন। অনেকে তো বলেই থাকেন, এই নারীরা নিজের স্বাধীন ইচ্ছায় পাকিস্তানি হানাদারদের বাহুলগ্না হয়েছেন। এই অরুচিকর মন্তব্য কারা করতে পারেন, সে বিষয়ে নিশ্চয়ই সচেতন, সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষের ধারণা আছে। মুশকিল হলো, তরুণ প্রজন্ম ইতিহাসের কোন শিক্ষাটি নেবে? মুক্তিযুদ্ধের কথা বলে অনেকেই অনেক রকম ফায়দা তুলে নিয়েছেন। ফলে, যারা মুক্তিযুদ্ধ দেখেনি কিংবা যাদের পরিবারে কোনো মুক্তিযোদ্ধা নেই, অথবা যাদের পক্ষে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস শোনার সৌভাগ্য হয়নি, তারা তো মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে অপপ্রচারে বিভ্রান্ত হতেই পারে। তাদের সামনে প্রামাণ্য উদাহরণ থাকলে তারা মাথা খাটিয়ে নিজেই কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারবে। তরুণদের দোষারোপ করার কোনো কারণ নেই। তাদের কাছে সত্য ইতিহাস তুলে ধরতে না পারলে তারা অজায়গা-কুজায়গা থেকে তথ্য সংগ্রহ করতে পারে। সেখানেই বিপদ। তাই মুক্তিযুদ্ধের প্রামাণ্য ইতিহাস খুঁজে নিতে হবে। তেমনই একটি তথ্যভান্ডার হতে পারে ইয়াসমিন কবিরের ‘এ সার্টেইন লিবারেশন।’
‘স্বাধীনতা’ বা ‘এ সার্টেইন লিবারেশন’ ছবিটি দেখতে বসলে প্রথমে বোঝাই যাবে না, এ ছবির প্রাণ কতটা গভীরে। গুরুদাসী মণ্ডলকে উন্মাদ মনে হতে পারে। খুলনার কপিলমুনির রাস্তাঘাটে যে পাগলিকে দেখা যায়, তার জীবনে একটা কাহিনি আছে। কাউকে তোয়াক্কা না করে ঘুরে বেড়াচ্ছে যে নারী, তাকে স্বাধীন বলা হবে নাকি পরাধীন—এই প্রশ্ন তো স্বভাবতই জেগে উঠতে পারে মনে। কাহিনি যত এগিয়ে যেতে থাকে, ততই মানুষ একটু একটু করে অনুভব করতে পারে আপাত এই স্বাধীনতা মোটেই মুক্তি নয়। বেঁচে থাকার অমোঘ নিয়মেই গুরুদাসীর এই পাগল বেশ।
এই ছবিতে অসাধারণ কিছু সংলাপ আছে। তার একটি এখানে বলা যেতে পারে। এক মুসলিম পরিবারের ঘরেই খাওয়াদাওয়া করে গুরুদাসী। এ কারণেই সেই পরিবারে গরুর মাংস রান্না হয় না। এই বাড়ির গৃহকর্ত্রী যখন ধর্মের বিষয়ে তার সরল স্বীকারোক্তি করে, বলে, সবার রক্তই লাল। তখন বড় বড় দার্শনিকের নানা আবিষ্কারও সেই সংলাপের কাছে ম্লান হয়ে যায়। এই নারী কথাগুলো শিখেছে জীবনে চলতে গিয়ে। তাই তা প্রগাঢ় সত্য হিসেবেই প্রতিভাত হয়।
একটা সময় গুরুদাসীকে নিয়ে দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ পড়ে শোনানো হয়। তার স্বামী এবং সন্তানদের কীভাবে তার সামনে হত্যা করা হয়েছে এবং কীভাবে তাকে দিনের পর দিন ধর্ষণ করা হয়েছে, সে বিষয়টিও মূর্ত হয়ে ওঠে ছবিতে।
একজন বীরাঙ্গনার জীবনকাহিনি ছবির ভাষায় বর্ণনা করে ইতিহাসের একটি অধ্যায়কে যেভাবে এনেছেন ইয়াসমিন কবীর, তাতে তাঁকে সাধুবাদ দিতে হয়।
৪. একেবারে অন্য ধরনের একটি ছবি ‘নট এ পেনি, নট এ গান’। মকবুল চৌধুরী নির্মাণ করেছেন ছবিটি। নিজের বাবাকে নিয়ে তৈরি এ ছবিটি। যে বিষয় নিয়ে ছবিটি তৈরি হয়েছে, সেদিকে সাধারণভাবে চোখ যায় না।
মকবুল চৌধুরীর বাবা মোহাম্মদ আজিজুল হক ভুইয়া ছিলেন স্টিয়ারিং কমিটি অব দ্য অ্যাকশন কমিটি ফর দ্য পিপলস রিপাবলিক অব বাংলাদেশ ইউকের কনভেনর বা আহ্বায়ক। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি ব্রিটেনের বার্মিংহামে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। ১৯৭২ সালের জানুয়ারিতেই তিনি ফিরে আসেন ঢাকায়। আর কখনো ব্রিটেনে ফিরে যাননি। ২০০৬ সালের জানুয়ারি মাসে যখন তিনি মারা যান, তখন তাঁর পরিবার আশা করেছিল, মুক্তিযুদ্ধে তাঁর অবদানের জন্য রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তাঁকে সমাধিস্থ করা হবে। কিন্তু সে রকম কিছু ঘটেনি।
এরপর মকবুল চৌধুরী বার্মিংহামে যান। সেখানে গিয়ে জানতে পারেন, মুক্তিযুদ্ধের ব্যাপারে বার্মিংহামের বাঙালিদের সংগ্রাম এবং তাঁর নিজের বাবা মোহাম্মদ আজিজুল হক ভুঁইয়ার অবদানের কথা। সেই সংগ্রামে অংশগ্রহণ করেছিলেন যাঁরা, তাঁরা এখন বয়সের ভারে ন্যুব্জ, কিন্তু তাঁরা তাঁদের সেই স্মৃতিকে আঁকড়ে ধরে রেখেছেন। রেখে দিয়েছেন সেই সংগ্রাম নিয়ে প্রকাশিত পত্র-পত্রিকার কাটিং।
সেই ছবিতে পরিষ্কার হয়ে যায়, বার্মিংহাম তথা ব্রিটেনে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত গঠনের জন্য কত আত্মত্যাগ করেছেন কত মানুষ!
শুধু অস্ত্র হাতেই যুদ্ধ হয়নি, যুদ্ধ হয়েছে কতভাবে, সেটা জানা দরকার।
৫. আরও অনেক তথ্যচিত্রের কথা আলোচনায় আনতে হবে। নির্মোহ দৃষ্টিতে দেখতে হবে মুক্তিযুদ্ধের ঘটনাগুলোকে। এবং সে সঙ্গে এ কথাও মনে রাখতে হবে, এই জনযুদ্ধের একজন জননায়ক ছিলেন। এই জনযুদ্ধ একটি রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বে হয়েছে। সেটা মেনে নিয়েই মুক্তিযুদ্ধের নানা দিক তুলে ধরা আজ আরও বেশি প্রয়োজন। যে তিনটি ছবির কথা উল্লেখ করা হলো, সেখানেও নির্মোহভাবে এই বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধকে হৃদয়ে ধারণ করেই নতুন পরিবর্তনগুলো আসবে। অন্যভাবে নয়।

‘ক্রেইনস আর ফ্লাইং’, ‘ব্যালাড অব এ সোলজার’, ‘গানস অব নাভারন’, ‘সোফিস চয়েজ’-এর মতো চলচ্চিত্র হয়তো আমাদের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে তৈরি হয়নি, কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকেই। শুরুর দিকের সিনেমাগুলোয় স্থূলতার সঙ্গে সঙ্গে বাণিজ্যিক উপাদান যুক্ত হয়েছে খুব দ্রুত। নারীকে সেখানে লালসার শিকার হিসেবে তুলে ধরে বাণিজ্যিক লাভালাভের খোঁজ করেছেন পরিচালকেরা। এরপর ১৯৭৫ সালের মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ডের পর মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র নির্মাণের কাজটাই তো থমকে দাঁড়াল। এমনভাবে সাংস্কৃতিক জগৎটা নির্মাণ করা হলো, যেন মুক্তিযুদ্ধ বলে কিছুই ঘটেনি এ দেশে। এই মতলবি রাজনীতি চলেছিল অনেক দিন ধরেই। বাংলাদেশ বেতারকে রেডিও বাংলাদেশে পরিণত করেছিল যারা, তাদের খায়েশ ছিল পাকিস্তানের সঙ্গে আবার আঁতাত করার। যে রক্ত ঝরেছিল একাত্তরে, তাকে অগ্রাহ্য করা হয়েছিল দম্ভ ভরে। কিন্তু সে সময় তাদের সে খায়েশ পূরণ হয়নি। একের পর এক সামরিক শাসক দেশের শাসনভার হাতে নিয়ে সবচেয়ে যে বিষয়টিকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে, তা হলো দেশের সাংস্কৃতিক পরিচয়।
কিছুটা সামাল দিয়ে আশির দশকে আবার শুরু হয়েছিল মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণ। কিন্তু মূলধারার চলচ্চিত্রে উল্লেখ করার মতো চলচ্চিত্র হয়নি বললে খুব একটা ভুল বলা হবে না। কোনো কোনো চলচ্চিত্রে মানবিক আবেদন আছে বটে, কিন্তু তা শিল্পের দাবির সঙ্গে একীভূত হতে পারেনি।
২. আজ আমরা এমন কয়েকটি চলচ্চিত্র নিয়ে কথা বলব, যেগুলো নির্মিত হয়েছে স্বাধীনতার পরে। এই চলচ্চিত্রগুলো পূর্ণদৈর্ঘ্য বাংলা ছায়াছবি নয়, স্বল্পদৈর্ঘ্য বাংলা ছায়াছবিও নয়। এগুলো তথ্যচিত্র।
ছবিগুলোর মধ্যে সরাসরি মুক্তিযুদ্ধ নেই। কিন্তু এর মধ্যে কয়েকটি প্রামাণ্যচিত্র যুদ্ধ ও যুদ্ধ-পরবর্তী বাস্তবতাকে তুলে ধরে। ভাবায়।
অনেকেরই মনে পড়ে যাবে, নব্বইয়ের দশকে যখন ‘মুক্তির গান’ নিয়ে এলেন তারেক মাসুদ ও ক্যাথরিন মাসুদ, তখন কীভাবে আলোড়িত হয়েছিল দেশের তরুণ সমাজ। মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে সরাসরি এই সংযোগ একটা জাগরণী মন্ত্রের মতো কাজ করেছিল। মার্কিন চলচ্চিত্রকার লিয়ার লেভিন যে ফুটেজগুলো ধারণ করেছিলেন একাত্তরে এবং যেগুলো অলসভাবে পড়ে ছিল তাঁর বেজমেন্টে, সেগুলো উদ্ধার করে এনে তারেক-ক্যাথরিন জুটি যা করলেন, তা আমাদের সত্যিকারের ইতিহাসের অংশ হয়ে রইল।
হ্যাঁ, সে ছবিতে মুক্তিযোদ্ধাদেরও দেখা গেছে। কিন্তু সবচেয়ে বড় হয়ে যা উঠে এসেছে, তা হলো স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা নিয়ে কীভাবে যুক্ত হওয়া যায় এই যুদ্ধে। বাংলাদেশ থেকে উদ্বাস্তু হয়ে ভারতে যাওয়া শিল্পীরাই সংগঠিত হয়ে তৈরি করেছিলেন গানের দলটি। উদ্বাস্তু শিবিরে, মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্পে তাঁরা শুনিয়েছেন জাগরণী গান। ব্যক্তিগতভাবে এই শিল্পীদের কারও কারও সঙ্গে কথা বলার সৌভাগ্য হয়েছে আমার। তাঁদের কাছ থেকেই জেনেছি, খেয়ে-না খেয়ে কীভাবে তাঁরা কাজ করেছেন। আবার উদ্বাস্তুদের কেউ কেউ গানের শেষে জোর করে তাঁদের আপ্যায়ন করেছেন। খুবই সাধারণ খাবার, কিন্তু আন্তরিকতা? যুদ্ধে এই আন্তরিকতার প্রকাশ খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যুদ্ধ তো মনস্তাত্ত্বিক খেলা। প্রচারণার খেলা। সেই খেলায় জয়ী হয় তারাই, যাদের পেছনে দেশের মানুষের সমর্থন থাকে। ১৯৭১ সালে এই দেশের মানুষ কীভাবে যোদ্ধাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে, সে ইতিহাস তুলে ধরার জন্য মাটির গান ছবিটি গুরুত্বপূর্ণ। আরও অনেক কারণেই তা গুরুত্বপূর্ণ। একটি কারণের কথা তো উল্লেখ করতেই হবে—যারা একাত্তর নিয়ে এখন নতুন মিথ তৈরি করার মতো চালাকি করছে, তারা যেসব কারণে হালে পানি পাবে না, তার একটি হচ্ছে তথ্যভিত্তিক ইতিহাস। এই ইতিহাসকে অগ্রাহ্য করে নতুন বয়ান তৈরি করার চেষ্টা একসময় হাসির খোরাকে পরিণত হবে।
৩. ইদানীং দেখা যায়, অনেকেই একাত্তরে ধর্ষিতা নারীদের নিয়ে কটাক্ষ করেন। অনেকে তো বলেই থাকেন, এই নারীরা নিজের স্বাধীন ইচ্ছায় পাকিস্তানি হানাদারদের বাহুলগ্না হয়েছেন। এই অরুচিকর মন্তব্য কারা করতে পারেন, সে বিষয়ে নিশ্চয়ই সচেতন, সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষের ধারণা আছে। মুশকিল হলো, তরুণ প্রজন্ম ইতিহাসের কোন শিক্ষাটি নেবে? মুক্তিযুদ্ধের কথা বলে অনেকেই অনেক রকম ফায়দা তুলে নিয়েছেন। ফলে, যারা মুক্তিযুদ্ধ দেখেনি কিংবা যাদের পরিবারে কোনো মুক্তিযোদ্ধা নেই, অথবা যাদের পক্ষে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস শোনার সৌভাগ্য হয়নি, তারা তো মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে অপপ্রচারে বিভ্রান্ত হতেই পারে। তাদের সামনে প্রামাণ্য উদাহরণ থাকলে তারা মাথা খাটিয়ে নিজেই কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারবে। তরুণদের দোষারোপ করার কোনো কারণ নেই। তাদের কাছে সত্য ইতিহাস তুলে ধরতে না পারলে তারা অজায়গা-কুজায়গা থেকে তথ্য সংগ্রহ করতে পারে। সেখানেই বিপদ। তাই মুক্তিযুদ্ধের প্রামাণ্য ইতিহাস খুঁজে নিতে হবে। তেমনই একটি তথ্যভান্ডার হতে পারে ইয়াসমিন কবিরের ‘এ সার্টেইন লিবারেশন।’
‘স্বাধীনতা’ বা ‘এ সার্টেইন লিবারেশন’ ছবিটি দেখতে বসলে প্রথমে বোঝাই যাবে না, এ ছবির প্রাণ কতটা গভীরে। গুরুদাসী মণ্ডলকে উন্মাদ মনে হতে পারে। খুলনার কপিলমুনির রাস্তাঘাটে যে পাগলিকে দেখা যায়, তার জীবনে একটা কাহিনি আছে। কাউকে তোয়াক্কা না করে ঘুরে বেড়াচ্ছে যে নারী, তাকে স্বাধীন বলা হবে নাকি পরাধীন—এই প্রশ্ন তো স্বভাবতই জেগে উঠতে পারে মনে। কাহিনি যত এগিয়ে যেতে থাকে, ততই মানুষ একটু একটু করে অনুভব করতে পারে আপাত এই স্বাধীনতা মোটেই মুক্তি নয়। বেঁচে থাকার অমোঘ নিয়মেই গুরুদাসীর এই পাগল বেশ।
এই ছবিতে অসাধারণ কিছু সংলাপ আছে। তার একটি এখানে বলা যেতে পারে। এক মুসলিম পরিবারের ঘরেই খাওয়াদাওয়া করে গুরুদাসী। এ কারণেই সেই পরিবারে গরুর মাংস রান্না হয় না। এই বাড়ির গৃহকর্ত্রী যখন ধর্মের বিষয়ে তার সরল স্বীকারোক্তি করে, বলে, সবার রক্তই লাল। তখন বড় বড় দার্শনিকের নানা আবিষ্কারও সেই সংলাপের কাছে ম্লান হয়ে যায়। এই নারী কথাগুলো শিখেছে জীবনে চলতে গিয়ে। তাই তা প্রগাঢ় সত্য হিসেবেই প্রতিভাত হয়।
একটা সময় গুরুদাসীকে নিয়ে দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ পড়ে শোনানো হয়। তার স্বামী এবং সন্তানদের কীভাবে তার সামনে হত্যা করা হয়েছে এবং কীভাবে তাকে দিনের পর দিন ধর্ষণ করা হয়েছে, সে বিষয়টিও মূর্ত হয়ে ওঠে ছবিতে।
একজন বীরাঙ্গনার জীবনকাহিনি ছবির ভাষায় বর্ণনা করে ইতিহাসের একটি অধ্যায়কে যেভাবে এনেছেন ইয়াসমিন কবীর, তাতে তাঁকে সাধুবাদ দিতে হয়।
৪. একেবারে অন্য ধরনের একটি ছবি ‘নট এ পেনি, নট এ গান’। মকবুল চৌধুরী নির্মাণ করেছেন ছবিটি। নিজের বাবাকে নিয়ে তৈরি এ ছবিটি। যে বিষয় নিয়ে ছবিটি তৈরি হয়েছে, সেদিকে সাধারণভাবে চোখ যায় না।
মকবুল চৌধুরীর বাবা মোহাম্মদ আজিজুল হক ভুইয়া ছিলেন স্টিয়ারিং কমিটি অব দ্য অ্যাকশন কমিটি ফর দ্য পিপলস রিপাবলিক অব বাংলাদেশ ইউকের কনভেনর বা আহ্বায়ক। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি ব্রিটেনের বার্মিংহামে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। ১৯৭২ সালের জানুয়ারিতেই তিনি ফিরে আসেন ঢাকায়। আর কখনো ব্রিটেনে ফিরে যাননি। ২০০৬ সালের জানুয়ারি মাসে যখন তিনি মারা যান, তখন তাঁর পরিবার আশা করেছিল, মুক্তিযুদ্ধে তাঁর অবদানের জন্য রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তাঁকে সমাধিস্থ করা হবে। কিন্তু সে রকম কিছু ঘটেনি।
এরপর মকবুল চৌধুরী বার্মিংহামে যান। সেখানে গিয়ে জানতে পারেন, মুক্তিযুদ্ধের ব্যাপারে বার্মিংহামের বাঙালিদের সংগ্রাম এবং তাঁর নিজের বাবা মোহাম্মদ আজিজুল হক ভুঁইয়ার অবদানের কথা। সেই সংগ্রামে অংশগ্রহণ করেছিলেন যাঁরা, তাঁরা এখন বয়সের ভারে ন্যুব্জ, কিন্তু তাঁরা তাঁদের সেই স্মৃতিকে আঁকড়ে ধরে রেখেছেন। রেখে দিয়েছেন সেই সংগ্রাম নিয়ে প্রকাশিত পত্র-পত্রিকার কাটিং।
সেই ছবিতে পরিষ্কার হয়ে যায়, বার্মিংহাম তথা ব্রিটেনে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত গঠনের জন্য কত আত্মত্যাগ করেছেন কত মানুষ!
শুধু অস্ত্র হাতেই যুদ্ধ হয়নি, যুদ্ধ হয়েছে কতভাবে, সেটা জানা দরকার।
৫. আরও অনেক তথ্যচিত্রের কথা আলোচনায় আনতে হবে। নির্মোহ দৃষ্টিতে দেখতে হবে মুক্তিযুদ্ধের ঘটনাগুলোকে। এবং সে সঙ্গে এ কথাও মনে রাখতে হবে, এই জনযুদ্ধের একজন জননায়ক ছিলেন। এই জনযুদ্ধ একটি রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বে হয়েছে। সেটা মেনে নিয়েই মুক্তিযুদ্ধের নানা দিক তুলে ধরা আজ আরও বেশি প্রয়োজন। যে তিনটি ছবির কথা উল্লেখ করা হলো, সেখানেও নির্মোহভাবে এই বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধকে হৃদয়ে ধারণ করেই নতুন পরিবর্তনগুলো আসবে। অন্যভাবে নয়।

অনেক দিন আগে বন্ধু পেনকভ বলেছিল, যদি আমেরিকান, ভারতীয়, বাংলাদেশি—এসব ‘তুমি কে’ সেই প্রশ্নের উত্তর হয়, তাহলে রুস্কি—এটা শুধু ‘কে’ নয়, ‘কেমন’ সেই প্রশ্নেরও উত্তর। মানে রুস্কি শুধু জাতি, দেশ—এসবের সাথেই সম্পর্কিত নয়। এটা মানুষের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য। রুস্কি চেলাভেক—রুশ মানুষ; এটা এক ধরনের বিশেষ মনোভাবের
২৯ এপ্রিল ২০২২
পাকিস্তানের বিচারপতি কায়ানির নামে একটা রসিকতা চালু আছে। তিনি নাকি বলেছিলেন, সব দেশের একটি সেনাবাহিনী আছে, আর পাকিস্তান সেনাবাহিনীর রয়েছে একটি দেশ। পাকিস্তানের ইতিহাসের দিকে নজর রাখলেই একের পর এক জেনারেল বেরিয়ে আসবে। গণতন্ত্র সেখানে সোনার হরিণ হিসেবেই রয়ে গেছে, বাস্তবজীবনে তার দেখা মেলা ভার।
৭ ঘণ্টা আগে
কুকুর ও বিড়াল মানুষের সংস্পর্শ ছাড়া থাকতে পারে না। বনজঙ্গলে রেখে এলেও তারা লোকালয়ে চলে আসে। কুকুর ও বিড়ালের লোকালয়ে চলে আসার কারণ হিসেবে বলা হয় যে তারা মানুষের খাবার খেয়ে, ভালোবাসায় বেঁচে থাকে। ফলে মানুষের থেকে দূরে থাকতে তারা পারে না।
৭ ঘণ্টা আগে
ঠিক কোথা থেকে শুরু করব বুঝে উঠতে পারছি না। ভেতরের তোলপাড়ের কারণেই লিখি লিখি করে লেখা হয়ে উঠছিল না লেখাটা। গত মাসের কথা, মানে নভেম্বর; ফেসবুকের নিউজফিডে একটি খবর ভেসে আসে। রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার খোড়াগাছ ইউনিয়নের জারুল্লাপুর গ্রামের ধানখেত থেকে একটি নবজাত শিশুকে উদ্ধার করা হয়।
৭ ঘণ্টা আগেস্বপ্না রেজা

কুকুর ও বিড়াল মানুষের সংস্পর্শ ছাড়া থাকতে পারে না। বনজঙ্গলে রেখে এলেও তারা লোকালয়ে চলে আসে। কুকুর ও বিড়ালের লোকালয়ে চলে আসার কারণ হিসেবে বলা হয় যে তারা মানুষের খাবার খেয়ে, ভালোবাসায় বেঁচে থাকে। ফলে মানুষের থেকে দূরে থাকতে তারা পারে না। প্রকৃতির বিধানে মানবজাতির সঙ্গে কুকুর ও বিড়ালের এক অভূতপূর্ব সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। বিশ্বস্ততা ও আস্থার প্রতীক হিসেবে এই দুটি প্রাণীর অবস্থান মানবজাতির সঙ্গে। এটাও যেন সৃষ্টিকর্তার বিধিভুক্ত। কুকুর, বিড়ালের মানুষের সঙ্গে অবস্থানের রহস্য সহনশীলতা, পছন্দ-অপছন্দ, ভালোবাসা—সবকিছুর পেছনে কারণ নিশ্চয়ই আছে, যা দৃশ্যমান হয় না। যেটুকু বুঝতে পারা যায় তা হলো, কুকুর-বিড়াল ভালোবেসে কেউ কেউ ঘরে পোষা প্রাণী হিসেবে রাখে, যত্ন করে। এদের সংখ্যা খুব বেশি নয় সমাজে।
সম্প্রতি বাংলাদেশে একটা দুঃখজনক ঘটনা ঘটে গেছে। বিশেষ করে যাদের কুকুর-বিড়ালের মতো প্রাণীর প্রতি ভালোবাসা কাজ করে এবং সর্বোপরি যারা প্রকৃতার্থে মানবিক, তারা এমন মর্মান্তিক ঘটনায় দুঃখ পেয়েছে। মূলধারার মিডিয়া, সোশ্যাল মিডিয়ায় বিষয়টি ব্যাপকভাবে প্রকাশ পেয়েছে। শুধু তাই নয়, স্থানীয় অন্য প্রাণীপ্রিয় মানুষকে ভীষণভাবে ব্যথিত করেছে। ঘটনাটি হলো পাবনার ঈশ্বরদী এলাকায় একজন নারী আটটি কুকুরের ছানাকে বস্তাবন্দি করে মেরে ফেলেছেন। কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, কুকুরের ডাকে তিনি অতিষ্ঠ হয়ে এমন নির্মম কাজ করেছেন। তাঁর শিশুপুত্র বলেছে, তার মা বস্তায় ভরে কুকুরের ছানাগুলোকে পানিতে ফেলে দিয়েছে। মা কুকুর তার ছানাদের না পেয়ে পুরো এলাকায় কান্না করে বেড়িয়েছে, অসহায় হয়ে ঘুরে ফিরেছে। তার স্তনে ছিল সন্তানদের জন্য সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত আহার। সন্তানদের এই দুগ্ধপান করাতে না পারায় অসহনীয় যন্ত্রণা নিয়ে মা কুকুর তার ছানাদের খুঁজে ফিরেছে। তার কণ্ঠে তার মতোই ভাষা ছিল। চোখে ছিল অশ্রু। শরীরের ভেতর নিদারুণ অসহায়ত্ব। একজন মা মানুষের মতোই তার আর্তনাদ ছিল। যিনি হত্যা করেছেন তিনি মা হয়েও বোঝেননি সন্তান হারানোর যন্ত্রণা। স্থানীয় বাসিন্দাদের চোখে বিষয়টি পড়েছে। তাঁরা মর্মাহত হয়েছেন, প্রতিবাদ করেছেন। স্থানীয় প্রশাসন নড়েচড়ে বসেছে চারপাশের প্রতিবাদে। জানা গেছে, যিনি হত্যা করেছেন তিনি একজন সরকারি কর্মকর্তার স্ত্রী এবং ফলাও করে সেটা প্রচার করা হচ্ছে। কিন্তু এটা তাঁর বড় পরিচয় নয়। বড় পরিচয় হচ্ছে, তিনি একজন মা মানুষ হয়ে একজন মা কুকুরকে নিঃসন্তান করেছেন, আটটি সন্তানকে নির্মমভাবে হত্যা করেছেন।
যে মা কুকুর তার আটটি সন্তান হারিয়েছে তাকে স্থানীয় লোকজন ভালোবেসে নাম দিয়েছিলেন টমি। তাঁদের ভালোবাসায় সিক্ত টমি তার সন্তানদের আশ্রয় হিসেবে জায়গাটিকে সুরক্ষিত মনে করেছিল। কিন্তু সবকিছুকে অর্থহীন করে দিল একজন নিশি খাতুন, যিনি মা আর সন্তানের মধ্যকার গভীর টান, অনিবার্য সান্নিধ্যটুকু বুঝতে পারেন না। কিংবা স্বার্থপরের মতো কেবল নিজেরটা বুঝতে শিখেছেন। সমাজে একটা বোধ বেশ প্রচলন আছে, সেটা হলো, শিশু ও ফুলকে যে ভালোবাসে না সে আদতে ভালো মানুষ নয়। মানুষসহ সব জীবের কথাই এখানে প্রযোজ্য। আমাদের সমাজে প্রায়ই একজন আরেকজনকে নির্মমভাবে হত্যা করে, নিঃস্ব করে, ধ্বংস করে এবং এর পেছনে থাকে রাজনৈতিক ও অরাজনৈতিক প্রতিশোধ, প্রতিহিংসা, লোভ-লালসা ইত্যাদির স্পৃহা। অনেক ক্ষেত্রেই এসব বিচারহীনতার বেষ্টনীতে থেকে যায়, থেকে যাচ্ছে। যার পেছনেও থাকে হীন উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য। অপরাধ করে মুক্ত জীবনে বসবাস—এই এক ধরনের সংস্কৃতির প্রচলন ঘটেছে আমাদের সমাজে। এই সংস্কৃতির চর্চা সর্বত্র এবং ব্যক্তি-গোষ্ঠীকে সুবিধাবাদী করতে যথেষ্ট সহায়ক। আমাদের সমাজে শিশুদের যেভাবে হত্যা করা হয়, যেভাবে ধর্ষণ করা হয়, তার পাশে আটটি কুকুরছানাকে বস্তায় ভরে হত্যার ঘটনাটি কিন্তু বেমানান নয়, বরং বেশ মিলে যায়। কিছুদিন আগেও দেখা গেছে যে কুকুর প্রাণীদের ধরে ধরে হত্যা করা হয়েছে। একজন প্রবীণ ব্যক্তি বলছিলেন, এই সমাজে কোনো প্রাণীই আর নিরাপদ নয়। হত্যার বিষয়টি প্রত্যেকের নাগালের মধ্যে পৌঁছে গেছে। যেভাবে মানুষ হত্যা হচ্ছে, সেভাবে অন্য জীব হত্যা হচ্ছে। হত্যা করাই যেন সহজতর কাজ। এতে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে বিচারহীনতার সংস্কৃতি। সরকারি ও বেসরকারি প্রভাবশালী ব্যক্তিদের হরিণ মেরে খাওয়ার প্রবণতা ও স্পর্ধার তো অপ্রচলন ঘটেনি কখনো, বরং তা রয়েই গেছে।
পত্রিকান্তরে জানা গেছে, কুকুরছানা হত্যাকারী নিশি রহমান ধরা পড়েছেন। যদিও তিনি দাবি করেছেন, তিনি বস্তায় ভরে রেখে এসেছেন কিন্তু পানিতে চুবিয়ে হত্যা করেননি। কিন্তু নিশি রহমানের শিশুপুত্র বলেছে, কুকুরছানাদের বস্তায় ভরে পানিতে ফেলেছে। সব শিশুর ভেতরেই শিশুসুলভ সরলতা কাজ করে যা সত্য বলতে সহায়ক হয়। নিশি তাঁর অপরাধকে লুকাতে পারেননি নিজের শিশুপুত্রের সরলতার কারণেই। প্রকৃতির হিসাব কখনো ভুল হয়নি, ভুল হয় না। মিডিয়ায় দেখা গেল, মা কুকুরকে স্বস্তি ও শান্তি দেওয়ার জন্য দুটি কুকুরছানা এনে তার দুগ্ধপান করানো হচ্ছে। কাজটি করছেন স্থানীয় তরুণরা এবং বিষয়টি অবলোকন করছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। মা কুকুরের সঙ্গে কুকুরছানা দুটিকে অভ্যস্ত করা হচ্ছে, টিভির পর্দায় দেখা গেল। মা কুকুর তার দুগ্ধপানে বেশ সহায়তা করছে ছানা দুটিকে। মুহূর্তের মধ্যে মনে হলো, এই হিংস্র, হিংসাবিদ্বেষের জগতে ভিন্নতর ও সবচেয়ে মধুর ও অকৃত্রিম সৌন্দর্য উপভোগ করছি যেন। ভীষণ ভালো লাগল। সেই সঙ্গে প্রত্যাশা জাগল, জগতের সব প্রাণীর স্বস্তি ও শান্তি নিশ্চিত করার চেতনা জাগ্রত হোক সর্বত্র।
একজন বলছিলেন, নিশি রহমানকে গ্রেপ্তার করা ঠিক হয়েছে। প্রাণিসম্পদ রক্ষার আইনে তাঁর বিচার হলে মানুষের ভেতর সচেতনতা বাড়বে। এ ধরনের অপরাধ আর কেউ করবে না। ঠিক কথা। কিন্তু শেষ অবধি কী হয় বা হবে ? যেমন আমরা দেখি, মানবসন্তানকে হত্যা করেও অনেক অপরাধী বিচারবহির্ভূত জীবনযাপন করছে, আবার যেকোনো প্রতিশোধ ও প্রতিহিংসায় শিশুরাই কেবল বলি হয় বা হচ্ছে, সেখানে কঠিন বিচারহীনতার সংস্কৃতি কাজ করে এবং অপরাধীরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যায়, যাচ্ছে।
যেকোনো অপরাধ আইনের আওতায় আনা জরুরি এবং স্বচ্ছতার সঙ্গে বিচার করতে হবে। গোটা প্রক্রিয়া হতে হবে সংবিধান অনুসারে এবং দলীয় রাজনীতিমুক্ত। মিডিয়ায় প্রচারনির্ভর কর্মকাণ্ড নয়, বরং লক্ষ্য হতে হবে প্রতিটি প্রাণীর নিরাপত্তা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করা। তাতেই সচেতনতা বাড়বে, মায়েদের শান্তি ফিরবে। দেশ হবে সবার বসবাসের উপযোগী।

কুকুর ও বিড়াল মানুষের সংস্পর্শ ছাড়া থাকতে পারে না। বনজঙ্গলে রেখে এলেও তারা লোকালয়ে চলে আসে। কুকুর ও বিড়ালের লোকালয়ে চলে আসার কারণ হিসেবে বলা হয় যে তারা মানুষের খাবার খেয়ে, ভালোবাসায় বেঁচে থাকে। ফলে মানুষের থেকে দূরে থাকতে তারা পারে না। প্রকৃতির বিধানে মানবজাতির সঙ্গে কুকুর ও বিড়ালের এক অভূতপূর্ব সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। বিশ্বস্ততা ও আস্থার প্রতীক হিসেবে এই দুটি প্রাণীর অবস্থান মানবজাতির সঙ্গে। এটাও যেন সৃষ্টিকর্তার বিধিভুক্ত। কুকুর, বিড়ালের মানুষের সঙ্গে অবস্থানের রহস্য সহনশীলতা, পছন্দ-অপছন্দ, ভালোবাসা—সবকিছুর পেছনে কারণ নিশ্চয়ই আছে, যা দৃশ্যমান হয় না। যেটুকু বুঝতে পারা যায় তা হলো, কুকুর-বিড়াল ভালোবেসে কেউ কেউ ঘরে পোষা প্রাণী হিসেবে রাখে, যত্ন করে। এদের সংখ্যা খুব বেশি নয় সমাজে।
সম্প্রতি বাংলাদেশে একটা দুঃখজনক ঘটনা ঘটে গেছে। বিশেষ করে যাদের কুকুর-বিড়ালের মতো প্রাণীর প্রতি ভালোবাসা কাজ করে এবং সর্বোপরি যারা প্রকৃতার্থে মানবিক, তারা এমন মর্মান্তিক ঘটনায় দুঃখ পেয়েছে। মূলধারার মিডিয়া, সোশ্যাল মিডিয়ায় বিষয়টি ব্যাপকভাবে প্রকাশ পেয়েছে। শুধু তাই নয়, স্থানীয় অন্য প্রাণীপ্রিয় মানুষকে ভীষণভাবে ব্যথিত করেছে। ঘটনাটি হলো পাবনার ঈশ্বরদী এলাকায় একজন নারী আটটি কুকুরের ছানাকে বস্তাবন্দি করে মেরে ফেলেছেন। কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, কুকুরের ডাকে তিনি অতিষ্ঠ হয়ে এমন নির্মম কাজ করেছেন। তাঁর শিশুপুত্র বলেছে, তার মা বস্তায় ভরে কুকুরের ছানাগুলোকে পানিতে ফেলে দিয়েছে। মা কুকুর তার ছানাদের না পেয়ে পুরো এলাকায় কান্না করে বেড়িয়েছে, অসহায় হয়ে ঘুরে ফিরেছে। তার স্তনে ছিল সন্তানদের জন্য সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত আহার। সন্তানদের এই দুগ্ধপান করাতে না পারায় অসহনীয় যন্ত্রণা নিয়ে মা কুকুর তার ছানাদের খুঁজে ফিরেছে। তার কণ্ঠে তার মতোই ভাষা ছিল। চোখে ছিল অশ্রু। শরীরের ভেতর নিদারুণ অসহায়ত্ব। একজন মা মানুষের মতোই তার আর্তনাদ ছিল। যিনি হত্যা করেছেন তিনি মা হয়েও বোঝেননি সন্তান হারানোর যন্ত্রণা। স্থানীয় বাসিন্দাদের চোখে বিষয়টি পড়েছে। তাঁরা মর্মাহত হয়েছেন, প্রতিবাদ করেছেন। স্থানীয় প্রশাসন নড়েচড়ে বসেছে চারপাশের প্রতিবাদে। জানা গেছে, যিনি হত্যা করেছেন তিনি একজন সরকারি কর্মকর্তার স্ত্রী এবং ফলাও করে সেটা প্রচার করা হচ্ছে। কিন্তু এটা তাঁর বড় পরিচয় নয়। বড় পরিচয় হচ্ছে, তিনি একজন মা মানুষ হয়ে একজন মা কুকুরকে নিঃসন্তান করেছেন, আটটি সন্তানকে নির্মমভাবে হত্যা করেছেন।
যে মা কুকুর তার আটটি সন্তান হারিয়েছে তাকে স্থানীয় লোকজন ভালোবেসে নাম দিয়েছিলেন টমি। তাঁদের ভালোবাসায় সিক্ত টমি তার সন্তানদের আশ্রয় হিসেবে জায়গাটিকে সুরক্ষিত মনে করেছিল। কিন্তু সবকিছুকে অর্থহীন করে দিল একজন নিশি খাতুন, যিনি মা আর সন্তানের মধ্যকার গভীর টান, অনিবার্য সান্নিধ্যটুকু বুঝতে পারেন না। কিংবা স্বার্থপরের মতো কেবল নিজেরটা বুঝতে শিখেছেন। সমাজে একটা বোধ বেশ প্রচলন আছে, সেটা হলো, শিশু ও ফুলকে যে ভালোবাসে না সে আদতে ভালো মানুষ নয়। মানুষসহ সব জীবের কথাই এখানে প্রযোজ্য। আমাদের সমাজে প্রায়ই একজন আরেকজনকে নির্মমভাবে হত্যা করে, নিঃস্ব করে, ধ্বংস করে এবং এর পেছনে থাকে রাজনৈতিক ও অরাজনৈতিক প্রতিশোধ, প্রতিহিংসা, লোভ-লালসা ইত্যাদির স্পৃহা। অনেক ক্ষেত্রেই এসব বিচারহীনতার বেষ্টনীতে থেকে যায়, থেকে যাচ্ছে। যার পেছনেও থাকে হীন উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য। অপরাধ করে মুক্ত জীবনে বসবাস—এই এক ধরনের সংস্কৃতির প্রচলন ঘটেছে আমাদের সমাজে। এই সংস্কৃতির চর্চা সর্বত্র এবং ব্যক্তি-গোষ্ঠীকে সুবিধাবাদী করতে যথেষ্ট সহায়ক। আমাদের সমাজে শিশুদের যেভাবে হত্যা করা হয়, যেভাবে ধর্ষণ করা হয়, তার পাশে আটটি কুকুরছানাকে বস্তায় ভরে হত্যার ঘটনাটি কিন্তু বেমানান নয়, বরং বেশ মিলে যায়। কিছুদিন আগেও দেখা গেছে যে কুকুর প্রাণীদের ধরে ধরে হত্যা করা হয়েছে। একজন প্রবীণ ব্যক্তি বলছিলেন, এই সমাজে কোনো প্রাণীই আর নিরাপদ নয়। হত্যার বিষয়টি প্রত্যেকের নাগালের মধ্যে পৌঁছে গেছে। যেভাবে মানুষ হত্যা হচ্ছে, সেভাবে অন্য জীব হত্যা হচ্ছে। হত্যা করাই যেন সহজতর কাজ। এতে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে বিচারহীনতার সংস্কৃতি। সরকারি ও বেসরকারি প্রভাবশালী ব্যক্তিদের হরিণ মেরে খাওয়ার প্রবণতা ও স্পর্ধার তো অপ্রচলন ঘটেনি কখনো, বরং তা রয়েই গেছে।
পত্রিকান্তরে জানা গেছে, কুকুরছানা হত্যাকারী নিশি রহমান ধরা পড়েছেন। যদিও তিনি দাবি করেছেন, তিনি বস্তায় ভরে রেখে এসেছেন কিন্তু পানিতে চুবিয়ে হত্যা করেননি। কিন্তু নিশি রহমানের শিশুপুত্র বলেছে, কুকুরছানাদের বস্তায় ভরে পানিতে ফেলেছে। সব শিশুর ভেতরেই শিশুসুলভ সরলতা কাজ করে যা সত্য বলতে সহায়ক হয়। নিশি তাঁর অপরাধকে লুকাতে পারেননি নিজের শিশুপুত্রের সরলতার কারণেই। প্রকৃতির হিসাব কখনো ভুল হয়নি, ভুল হয় না। মিডিয়ায় দেখা গেল, মা কুকুরকে স্বস্তি ও শান্তি দেওয়ার জন্য দুটি কুকুরছানা এনে তার দুগ্ধপান করানো হচ্ছে। কাজটি করছেন স্থানীয় তরুণরা এবং বিষয়টি অবলোকন করছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। মা কুকুরের সঙ্গে কুকুরছানা দুটিকে অভ্যস্ত করা হচ্ছে, টিভির পর্দায় দেখা গেল। মা কুকুর তার দুগ্ধপানে বেশ সহায়তা করছে ছানা দুটিকে। মুহূর্তের মধ্যে মনে হলো, এই হিংস্র, হিংসাবিদ্বেষের জগতে ভিন্নতর ও সবচেয়ে মধুর ও অকৃত্রিম সৌন্দর্য উপভোগ করছি যেন। ভীষণ ভালো লাগল। সেই সঙ্গে প্রত্যাশা জাগল, জগতের সব প্রাণীর স্বস্তি ও শান্তি নিশ্চিত করার চেতনা জাগ্রত হোক সর্বত্র।
একজন বলছিলেন, নিশি রহমানকে গ্রেপ্তার করা ঠিক হয়েছে। প্রাণিসম্পদ রক্ষার আইনে তাঁর বিচার হলে মানুষের ভেতর সচেতনতা বাড়বে। এ ধরনের অপরাধ আর কেউ করবে না। ঠিক কথা। কিন্তু শেষ অবধি কী হয় বা হবে ? যেমন আমরা দেখি, মানবসন্তানকে হত্যা করেও অনেক অপরাধী বিচারবহির্ভূত জীবনযাপন করছে, আবার যেকোনো প্রতিশোধ ও প্রতিহিংসায় শিশুরাই কেবল বলি হয় বা হচ্ছে, সেখানে কঠিন বিচারহীনতার সংস্কৃতি কাজ করে এবং অপরাধীরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যায়, যাচ্ছে।
যেকোনো অপরাধ আইনের আওতায় আনা জরুরি এবং স্বচ্ছতার সঙ্গে বিচার করতে হবে। গোটা প্রক্রিয়া হতে হবে সংবিধান অনুসারে এবং দলীয় রাজনীতিমুক্ত। মিডিয়ায় প্রচারনির্ভর কর্মকাণ্ড নয়, বরং লক্ষ্য হতে হবে প্রতিটি প্রাণীর নিরাপত্তা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করা। তাতেই সচেতনতা বাড়বে, মায়েদের শান্তি ফিরবে। দেশ হবে সবার বসবাসের উপযোগী।

অনেক দিন আগে বন্ধু পেনকভ বলেছিল, যদি আমেরিকান, ভারতীয়, বাংলাদেশি—এসব ‘তুমি কে’ সেই প্রশ্নের উত্তর হয়, তাহলে রুস্কি—এটা শুধু ‘কে’ নয়, ‘কেমন’ সেই প্রশ্নেরও উত্তর। মানে রুস্কি শুধু জাতি, দেশ—এসবের সাথেই সম্পর্কিত নয়। এটা মানুষের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য। রুস্কি চেলাভেক—রুশ মানুষ; এটা এক ধরনের বিশেষ মনোভাবের
২৯ এপ্রিল ২০২২
পাকিস্তানের বিচারপতি কায়ানির নামে একটা রসিকতা চালু আছে। তিনি নাকি বলেছিলেন, সব দেশের একটি সেনাবাহিনী আছে, আর পাকিস্তান সেনাবাহিনীর রয়েছে একটি দেশ। পাকিস্তানের ইতিহাসের দিকে নজর রাখলেই একের পর এক জেনারেল বেরিয়ে আসবে। গণতন্ত্র সেখানে সোনার হরিণ হিসেবেই রয়ে গেছে, বাস্তবজীবনে তার দেখা মেলা ভার।
৭ ঘণ্টা আগে
‘ক্রেইনস আর ফ্লাইং’, ‘ব্যালাড অব এ সোলজার’, ‘গানস অব নাভারন’, ‘সোফিস চয়েজ’-এর মতো চলচ্চিত্র হয়তো আমাদের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে তৈরি হয়নি, কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকেই। শুরুর দিকের সিনেমাগুলোয় স্থূলতার সঙ্গে সঙ্গে বাণিজ্যিক উপাদান যুক্ত হয়েছে খুব দ্রুত।
৭ ঘণ্টা আগে
ঠিক কোথা থেকে শুরু করব বুঝে উঠতে পারছি না। ভেতরের তোলপাড়ের কারণেই লিখি লিখি করে লেখা হয়ে উঠছিল না লেখাটা। গত মাসের কথা, মানে নভেম্বর; ফেসবুকের নিউজফিডে একটি খবর ভেসে আসে। রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার খোড়াগাছ ইউনিয়নের জারুল্লাপুর গ্রামের ধানখেত থেকে একটি নবজাত শিশুকে উদ্ধার করা হয়।
৭ ঘণ্টা আগেসানজিদা সামরিন

ঠিক কোথা থেকে শুরু করব বুঝে উঠতে পারছি না। ভেতরের তোলপাড়ের কারণেই লিখি লিখি করে লেখা হয়ে উঠছিল না লেখাটা। গত মাসের কথা, মানে নভেম্বর; ফেসবুকের নিউজফিডে একটি খবর ভেসে আসে। রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার খোড়াগাছ ইউনিয়নের জারুল্লাপুর গ্রামের ধানখেত থেকে একটি নবজাত শিশুকে উদ্ধার করা হয়। শিশুটির কান্না শুনে একজন কৃষক তাকে উদ্ধার করেন। পরে এলাকাবাসীর সহায়তা নিয়ে দ্রুত শিশুটিকে প্রাথমিক সেবা দিয়ে প্রয়োজনীয় চিকিৎসার জন্য রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। শিশুটির পরিচয় জানা যায়নি।
গত এক মাসের কথাই যদি ধরি, এ রকম আরও কতগুলো খবর পড়তে হয়েছে তার হিসাব নেই। সদ্য ভূমিষ্ঠ সন্তানকে পলিব্যাগে ভরে ডাস্টবিনে ফেলে দেওয়া হয়েছে। হাসপাতালে সন্তানের জন্মের পর মা নিজেই পালিয়ে গেছেন। একজন ডাক্তার ফেসবুক পোস্টের মাধ্য়মে জানিয়েছেন, এক নবজাতকের জন্মের পর একটি কঠিন অসুখ দেখা দেয়। বাবা-মা চিকিৎসা করাতে চাননি। সন্তানটিকে হাসপাতালে ফেলে বাড়ি চলে যান। হাসপাতাল নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় চেষ্টা করেছে শিশুটিকে বাঁচাতে, কিন্তু সম্ভব হয়নি। সে মৃত্য়ুর কোলে ঢলে পড়ে। নবজাতকের মৃতদেহ নেওয়ার জন্য তার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও তাঁরা কেউ আসতে রাজি হননি। কী বীভৎস তাই না? ভাবতেই গায়ে শীতকাঁটা দিচ্ছে আমার, হয়তো আপনাদেরও। আবার এমন জানা যায়, হাসপাতালের টয়লেটের ওয়াটার ট্যাংকে নবজাতককে ডুবিয়ে রেখে পালিয়ে গেছেন তারই নিজের মা।
ওপরের প্রতিটি ঘটনা বা খবরই চিরাচরিত সেই কথাটিকে মিথ্য়ে করে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট, ‘মা’র মতো আপন আর কেউ হয় না।’ যদি তাই হয়, তাহলে যে শিশুটি আজ বা গতকাল পৃথিবীর আলো দেখল, তার স্থান ধানখেতে কেন। কেন সেখানে শিয়াল, কুকুর এসে আঁচড় কাটছে তার ফুলের মতো শরীরে? ময়লার স্তূপে পড়ে কাঁদছে কেন সে? কেন মা নিজেই চান তাঁর সন্তানটি মরে যাক!
অনেকেই হয়তো এর উত্তরে বলবেন, ‘উপায় ছিল না, তাই হয়তো’, অথবা ‘সেই নারী পরিস্থিতির শিকার’। যদি আমি আমার সাধারণ জ্ঞানবুদ্ধি নিয়ে উল্টোপথে হাঁটি, যদি বলি, এই শিশুগুলোর জীবন কোনো পরিস্থিতি নয়, বরং কারও ইচ্ছের ফল। সোজাসাপ্টাভাবে বললে, কোনো নারী, তিনি বিবাহিত হোন বা অবিবাহিত; স্বেচ্ছায় শারীরিক সম্পর্কে জড়ান বা ধর্ষণের শিকার হন; ঘটনা যাই হোক, তিনি যদি গর্ভকাল এড়াতে চান তাহলে আগে থেকেই তো ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব ছিল। ২০২৫-এ এসে কোনো শিশু জন্মের পরে গিয়ে পরিত্যক্ত হবে, এ ঘটনা মেনে নেওয়া কঠিন। বাজারে বিভিন্ন রকমের জন্মনিরোধক পাওয়া যায়, অপরিকল্পিত গর্ভধারণের পর নির্দিষ্ট সময়ের মধ্য়ে অ্যাবরশনও কিন্তু করা যায়। ফলে যে নারী বা যে দম্পতি সন্তান চাইবেন না, তিনি কেন এসব উপায় বেছে নেন না? আর যদি সেই গর্ভস্থ সন্তান অনাকাঙ্ক্ষিতই হয়, সমাজের ভয়েই যদি জন্মের পর সন্তানকে ডাস্টবিনে, ওয়াটার ট্যাংকে ফেলে দিতে হয়, তাহলে ৯ মাস ১০ দিন ধরে তাকে গর্ভে রেখেছেনই কীভাবে, এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাই না। যে নারী সবার চোখের সামনে নিজের গর্ভকাল পার করে ফেলতে পারেন, তিনি কিনা সমাজের দোহাই দিয়ে সদ্য় জন্মানো সন্তানকে ছুড়ে ফেলে দিচ্ছেন? কথা এখানেই শেষ নয়, আরও আছে।
নিজের সন্তানকে হত্য়া করার আরও একটি কারণ পাওয়া যায়। হয়তো সেই নারী নতুন আরেকটি সম্পর্কে জড়িয়েছেন। আর সেই সম্পর্ক সফল করতে হলে সন্তান নামের বাহুল্য না থাকাই হয়তো শ্রেয় বলে ভাবেন তিনি। আমার মতে, সেখানেও তো উপায় রয়েছে। এমন অনেক নিঃসন্তান মা রয়েছেন যাঁরা দিনের পর দিন মা ডাকটি শুনতে চান। এমন নিরাপদ কোনো পরিবার খুঁজে সন্তানকে দত্তক দিয়ে দিলেই তো হয়। হত্য়ার দায় না নিয়ে জীবনসঙ্গীকে ডিভোর্স ও সন্তানকে দত্তক দিলে নিজের জীবনটাও নির্বিঘ্নে কাটানো যায়। ওই জীবনগুলোও বেঁচে থাকার নতুন কারণ খুঁজে পায়।
একজন মা নিজের সন্তানের জীবননাশকারী আরও একটি কারণে হয়ে ওঠেন। এই কারণটি ২০২৫ সালে এসেও অনেকের কাছে হাস্য়রসের বিষয়। তা হলো–পোস্টপার্টাম ডিপ্রেশন। চিকিৎসকদের মতে, বিশ্বজুড়ে সন্তান প্রসবের পর প্রতি ১০০ জনে ৮৫ জন এই জটিলতায় ভোগেন। আবার সময়ের সঙ্গে সঙ্গে স্বাভাবিক হয়ে যান অনেকে। কিন্তু যাঁরা স্বাভাবিক হতে পারেন না, তাঁদের ক্ষেত্রেই ঘটে অঘটন। বেবি ব্লু থেকে সৃষ্টি হয় তীব্র হতাশার, তারপর তা রূপ নেয় পোস্টপার্টাম সাইকোসিসে। এসব ক্ষেত্রে মা নিজের সন্তানকে হত্য়া পর্যন্ত করতে পারেন। এমনিতেও খেয়াল করলে দেখবেন, একজন মা তাঁর সন্তানের সঙ্গে যত ধরনের বিরূপ আচরণ করেন, তার অন্যতম মূল কারণ পারিবারিক অসহযোগিতা। আমাদের দেশে এই সংকট আরও প্রবল। বেশির ভাগ পরিবারেই দেখা যায়, বাড়ির সব কাজ ও সন্তান লালন-পালনের প্রতিটি বিষয় মায়ের কাঁধে চেপে বসে আছে। ফলে দিন শেষে, তিনিও ভারসাম্য় হারাচ্ছেন। চোটপাট করছেন অবুঝ শিশুটির ওপর।
তবে যে কথা দিয়ে এই লেখার শুরু, তাতে একটা কথাই বলতে ইচ্ছা হচ্ছে; নিজেদের কাছে একটা আশা রাখতে ইচ্ছা হচ্ছে, তা হলো–যদি কেউ সন্তান না চান, তাকে সুন্দর একটা জীবন দেওয়ার ইচ্ছা না থাকে বা বুঝে থাকেন পৃথিবীতে এলে তাকে অবহেলাই পেতে হবে; তাহলে তাকে পৃথিবীতে আসার পথ না দেখানোই ভালো। যে শিশু নিজের ইচ্ছায় পৃথিবীতে আসে না, তাকে আপনি তো আপনার ইচ্ছাতে হত্য়া করতে পারেন না। হাওয়ায় ভেসে আসা নবজাতকের কান্না, শিয়ালের আঁচড়ে কেঁপে ওঠা তার শরীর, জলের বুদ্বুদে মিশে যাওয়া তার বুকের মৃদু ধুকপুক শব্দ প্রকৃতিতে যে অভিশাপ ঢেলে দেয়। প্রকৃতি সব মনে রাখে। সেও তো সব কড়ায়-গন্ডায় ফিরিয়ে দেয়। কী, দেয় না?

ঠিক কোথা থেকে শুরু করব বুঝে উঠতে পারছি না। ভেতরের তোলপাড়ের কারণেই লিখি লিখি করে লেখা হয়ে উঠছিল না লেখাটা। গত মাসের কথা, মানে নভেম্বর; ফেসবুকের নিউজফিডে একটি খবর ভেসে আসে। রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার খোড়াগাছ ইউনিয়নের জারুল্লাপুর গ্রামের ধানখেত থেকে একটি নবজাত শিশুকে উদ্ধার করা হয়। শিশুটির কান্না শুনে একজন কৃষক তাকে উদ্ধার করেন। পরে এলাকাবাসীর সহায়তা নিয়ে দ্রুত শিশুটিকে প্রাথমিক সেবা দিয়ে প্রয়োজনীয় চিকিৎসার জন্য রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। শিশুটির পরিচয় জানা যায়নি।
গত এক মাসের কথাই যদি ধরি, এ রকম আরও কতগুলো খবর পড়তে হয়েছে তার হিসাব নেই। সদ্য ভূমিষ্ঠ সন্তানকে পলিব্যাগে ভরে ডাস্টবিনে ফেলে দেওয়া হয়েছে। হাসপাতালে সন্তানের জন্মের পর মা নিজেই পালিয়ে গেছেন। একজন ডাক্তার ফেসবুক পোস্টের মাধ্য়মে জানিয়েছেন, এক নবজাতকের জন্মের পর একটি কঠিন অসুখ দেখা দেয়। বাবা-মা চিকিৎসা করাতে চাননি। সন্তানটিকে হাসপাতালে ফেলে বাড়ি চলে যান। হাসপাতাল নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় চেষ্টা করেছে শিশুটিকে বাঁচাতে, কিন্তু সম্ভব হয়নি। সে মৃত্য়ুর কোলে ঢলে পড়ে। নবজাতকের মৃতদেহ নেওয়ার জন্য তার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও তাঁরা কেউ আসতে রাজি হননি। কী বীভৎস তাই না? ভাবতেই গায়ে শীতকাঁটা দিচ্ছে আমার, হয়তো আপনাদেরও। আবার এমন জানা যায়, হাসপাতালের টয়লেটের ওয়াটার ট্যাংকে নবজাতককে ডুবিয়ে রেখে পালিয়ে গেছেন তারই নিজের মা।
ওপরের প্রতিটি ঘটনা বা খবরই চিরাচরিত সেই কথাটিকে মিথ্য়ে করে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট, ‘মা’র মতো আপন আর কেউ হয় না।’ যদি তাই হয়, তাহলে যে শিশুটি আজ বা গতকাল পৃথিবীর আলো দেখল, তার স্থান ধানখেতে কেন। কেন সেখানে শিয়াল, কুকুর এসে আঁচড় কাটছে তার ফুলের মতো শরীরে? ময়লার স্তূপে পড়ে কাঁদছে কেন সে? কেন মা নিজেই চান তাঁর সন্তানটি মরে যাক!
অনেকেই হয়তো এর উত্তরে বলবেন, ‘উপায় ছিল না, তাই হয়তো’, অথবা ‘সেই নারী পরিস্থিতির শিকার’। যদি আমি আমার সাধারণ জ্ঞানবুদ্ধি নিয়ে উল্টোপথে হাঁটি, যদি বলি, এই শিশুগুলোর জীবন কোনো পরিস্থিতি নয়, বরং কারও ইচ্ছের ফল। সোজাসাপ্টাভাবে বললে, কোনো নারী, তিনি বিবাহিত হোন বা অবিবাহিত; স্বেচ্ছায় শারীরিক সম্পর্কে জড়ান বা ধর্ষণের শিকার হন; ঘটনা যাই হোক, তিনি যদি গর্ভকাল এড়াতে চান তাহলে আগে থেকেই তো ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব ছিল। ২০২৫-এ এসে কোনো শিশু জন্মের পরে গিয়ে পরিত্যক্ত হবে, এ ঘটনা মেনে নেওয়া কঠিন। বাজারে বিভিন্ন রকমের জন্মনিরোধক পাওয়া যায়, অপরিকল্পিত গর্ভধারণের পর নির্দিষ্ট সময়ের মধ্য়ে অ্যাবরশনও কিন্তু করা যায়। ফলে যে নারী বা যে দম্পতি সন্তান চাইবেন না, তিনি কেন এসব উপায় বেছে নেন না? আর যদি সেই গর্ভস্থ সন্তান অনাকাঙ্ক্ষিতই হয়, সমাজের ভয়েই যদি জন্মের পর সন্তানকে ডাস্টবিনে, ওয়াটার ট্যাংকে ফেলে দিতে হয়, তাহলে ৯ মাস ১০ দিন ধরে তাকে গর্ভে রেখেছেনই কীভাবে, এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাই না। যে নারী সবার চোখের সামনে নিজের গর্ভকাল পার করে ফেলতে পারেন, তিনি কিনা সমাজের দোহাই দিয়ে সদ্য় জন্মানো সন্তানকে ছুড়ে ফেলে দিচ্ছেন? কথা এখানেই শেষ নয়, আরও আছে।
নিজের সন্তানকে হত্য়া করার আরও একটি কারণ পাওয়া যায়। হয়তো সেই নারী নতুন আরেকটি সম্পর্কে জড়িয়েছেন। আর সেই সম্পর্ক সফল করতে হলে সন্তান নামের বাহুল্য না থাকাই হয়তো শ্রেয় বলে ভাবেন তিনি। আমার মতে, সেখানেও তো উপায় রয়েছে। এমন অনেক নিঃসন্তান মা রয়েছেন যাঁরা দিনের পর দিন মা ডাকটি শুনতে চান। এমন নিরাপদ কোনো পরিবার খুঁজে সন্তানকে দত্তক দিয়ে দিলেই তো হয়। হত্য়ার দায় না নিয়ে জীবনসঙ্গীকে ডিভোর্স ও সন্তানকে দত্তক দিলে নিজের জীবনটাও নির্বিঘ্নে কাটানো যায়। ওই জীবনগুলোও বেঁচে থাকার নতুন কারণ খুঁজে পায়।
একজন মা নিজের সন্তানের জীবননাশকারী আরও একটি কারণে হয়ে ওঠেন। এই কারণটি ২০২৫ সালে এসেও অনেকের কাছে হাস্য়রসের বিষয়। তা হলো–পোস্টপার্টাম ডিপ্রেশন। চিকিৎসকদের মতে, বিশ্বজুড়ে সন্তান প্রসবের পর প্রতি ১০০ জনে ৮৫ জন এই জটিলতায় ভোগেন। আবার সময়ের সঙ্গে সঙ্গে স্বাভাবিক হয়ে যান অনেকে। কিন্তু যাঁরা স্বাভাবিক হতে পারেন না, তাঁদের ক্ষেত্রেই ঘটে অঘটন। বেবি ব্লু থেকে সৃষ্টি হয় তীব্র হতাশার, তারপর তা রূপ নেয় পোস্টপার্টাম সাইকোসিসে। এসব ক্ষেত্রে মা নিজের সন্তানকে হত্য়া পর্যন্ত করতে পারেন। এমনিতেও খেয়াল করলে দেখবেন, একজন মা তাঁর সন্তানের সঙ্গে যত ধরনের বিরূপ আচরণ করেন, তার অন্যতম মূল কারণ পারিবারিক অসহযোগিতা। আমাদের দেশে এই সংকট আরও প্রবল। বেশির ভাগ পরিবারেই দেখা যায়, বাড়ির সব কাজ ও সন্তান লালন-পালনের প্রতিটি বিষয় মায়ের কাঁধে চেপে বসে আছে। ফলে দিন শেষে, তিনিও ভারসাম্য় হারাচ্ছেন। চোটপাট করছেন অবুঝ শিশুটির ওপর।
তবে যে কথা দিয়ে এই লেখার শুরু, তাতে একটা কথাই বলতে ইচ্ছা হচ্ছে; নিজেদের কাছে একটা আশা রাখতে ইচ্ছা হচ্ছে, তা হলো–যদি কেউ সন্তান না চান, তাকে সুন্দর একটা জীবন দেওয়ার ইচ্ছা না থাকে বা বুঝে থাকেন পৃথিবীতে এলে তাকে অবহেলাই পেতে হবে; তাহলে তাকে পৃথিবীতে আসার পথ না দেখানোই ভালো। যে শিশু নিজের ইচ্ছায় পৃথিবীতে আসে না, তাকে আপনি তো আপনার ইচ্ছাতে হত্য়া করতে পারেন না। হাওয়ায় ভেসে আসা নবজাতকের কান্না, শিয়ালের আঁচড়ে কেঁপে ওঠা তার শরীর, জলের বুদ্বুদে মিশে যাওয়া তার বুকের মৃদু ধুকপুক শব্দ প্রকৃতিতে যে অভিশাপ ঢেলে দেয়। প্রকৃতি সব মনে রাখে। সেও তো সব কড়ায়-গন্ডায় ফিরিয়ে দেয়। কী, দেয় না?

অনেক দিন আগে বন্ধু পেনকভ বলেছিল, যদি আমেরিকান, ভারতীয়, বাংলাদেশি—এসব ‘তুমি কে’ সেই প্রশ্নের উত্তর হয়, তাহলে রুস্কি—এটা শুধু ‘কে’ নয়, ‘কেমন’ সেই প্রশ্নেরও উত্তর। মানে রুস্কি শুধু জাতি, দেশ—এসবের সাথেই সম্পর্কিত নয়। এটা মানুষের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য। রুস্কি চেলাভেক—রুশ মানুষ; এটা এক ধরনের বিশেষ মনোভাবের
২৯ এপ্রিল ২০২২
পাকিস্তানের বিচারপতি কায়ানির নামে একটা রসিকতা চালু আছে। তিনি নাকি বলেছিলেন, সব দেশের একটি সেনাবাহিনী আছে, আর পাকিস্তান সেনাবাহিনীর রয়েছে একটি দেশ। পাকিস্তানের ইতিহাসের দিকে নজর রাখলেই একের পর এক জেনারেল বেরিয়ে আসবে। গণতন্ত্র সেখানে সোনার হরিণ হিসেবেই রয়ে গেছে, বাস্তবজীবনে তার দেখা মেলা ভার।
৭ ঘণ্টা আগে
‘ক্রেইনস আর ফ্লাইং’, ‘ব্যালাড অব এ সোলজার’, ‘গানস অব নাভারন’, ‘সোফিস চয়েজ’-এর মতো চলচ্চিত্র হয়তো আমাদের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে তৈরি হয়নি, কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকেই। শুরুর দিকের সিনেমাগুলোয় স্থূলতার সঙ্গে সঙ্গে বাণিজ্যিক উপাদান যুক্ত হয়েছে খুব দ্রুত।
৭ ঘণ্টা আগে
কুকুর ও বিড়াল মানুষের সংস্পর্শ ছাড়া থাকতে পারে না। বনজঙ্গলে রেখে এলেও তারা লোকালয়ে চলে আসে। কুকুর ও বিড়ালের লোকালয়ে চলে আসার কারণ হিসেবে বলা হয় যে তারা মানুষের খাবার খেয়ে, ভালোবাসায় বেঁচে থাকে। ফলে মানুষের থেকে দূরে থাকতে তারা পারে না।
৭ ঘণ্টা আগে