Ajker Patrika

ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে বাড়ছে ধাতুর দাম, শঙ্কায় গাড়ি উৎপাদন

ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে বাড়ছে ধাতুর দাম, শঙ্কায় গাড়ি উৎপাদন

ইউক্রেনে রাশিয়ার অভিযানের প্রভাব পড়েছে ধাতুর বাজারেও। গাড়ি তৈরিতে ব্যবহৃত হয়, এমন ধাতুর দাম ক্রমাগত বাড়ছে। এ অবস্থায় গাড়ি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো পড়েছে শঙ্কায়। এর প্রভাব এমনকি গাড়িভাড়া থেকে শুরু করে সব স্তরে পড়তে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। 

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ইউক্রেন যুদ্ধের জেরে গাড়ি তৈরিতে ব্যবহৃত হয় এমন প্রায় সব ধাতুর দাম বাড়ছে। গাড়ির বাইরের আদল তৈরিতে ব্যবহৃত অ্যালুমিনিয়াম থেকে শুরু করে ক্যাটালাইটিক কনভার্টারে ব্যবহৃত প্যালাডিয়াম, বৈদ্যুতিক গাড়ির ব্যাটারিতে ব্যবহৃত নিকেল—সবকিছুর দাম বাড়তি। ফলে বাড়ছে গাড়ির উৎপাদন ব্যয়, যার দায় শেষ পর্যন্ত এসে পড়বে সাধারণ মানুষের ওপর। 

ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর রাশিয়ার ওপর যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্ব একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। তবে ধাতু এখনো এই তালিকার বাইরে। কিন্তু কিছু সরবরাহকারী এরই মধ্যে রুশ পণ্য সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে। এতে গাড়ি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো বিপাকে পড়েছে, যারা এরই মধ্যে জ্বালানি তেলের উচ্চ মূল্য ও চিপ স্বল্পতায় সংকটের মধ্যে ছিল। 

বিশ্বের চতুর্থ সর্বোচ্চ গাড়ি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান স্টেলান্টিসের প্রধান নির্বাহী কার্লোস তাভারেজ রয়টার্সের সঙ্গে আলাপকালে শঙ্কা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘এই পরিস্থিতি থেকে আর কী হতে পারে? প্রথমেই যা ঘটবে তা হলো, গাড়ি তৈরির কাঁচামাল ও জ্বালানির দাম বৃদ্ধির কারণে আমাদের ব্যবসায়িক মডেলের ওপর ব্যাপক চাপ সৃষ্টি হবে।’ 

রয়টার্স জানায়, গতকাল সোমবার অ্যালুমিনিয়াম ও প্যালাডিয়াম—উভয় ধাতু বিক্রি হয়েছে রেকর্ড দামে। আর মঙ্গলবার নিকেলের দাম প্রথমবারের মতো টনপ্রতি ১ লাখ মার্কিন ডলার ছাড়িয়েছে। 

নিকেল কিন্তু শুধু বৈদ্যুতিক গাড়ির ব্যাটারিতেই ব্যবহৃত হয় না। এর একটা বড় অংশ যায় স্টেইনলেস স্টিল উৎপাদনে। ফলে এই দরবৃদ্ধির অনেক বড় প্রভাব পড়বে বাজারে। ধাতুর দর বৃদ্ধির বড় প্রভাব পড়বে সার্বিক শিল্প উৎপাদনে। 

কতটা প্রভাব পড়ছে? সেটা জানা যাবে গাড়ি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের জন্য অ্যালুমিনিয়াম ও ম্যাগনেশিয়ামের ডাই-কাস্ট তৈরি ও সরবরাহ করা প্রতিষ্ঠান অ্যালুডাইনের প্রধান নির্বাহীর আন্দ্রেস ওয়েলারের বক্তব্য থেকে। তিনি জানান, শুধু জ্বালানি ও অ্যালুমিনিয়ামের দাম বাড়ার কারণে গত চার মাসে তাঁদের উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে ৬০ শতাংশ। তিনি জানান, প্রতিষ্ঠানটি বছরে ১২০ কোটি ডলারের পণ্য বিক্রি করে। গত চার মাসে তাদের উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে কয়েক শ মিলিয়ন ডলার। এ অবস্থায় চুক্তি মূল্যের চেয়ে বেশি দামে যেন পণ্য কেনা হয়, সে জন্য তাদের এমনকি কিছু ক্রেতাকে অনুরোধ করতে হয়েছে। 

ওয়েলার বলেন, ‘আমাদের পক্ষে তাঁদের অনুরোধ করা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। কিন্তু সব ক্রেতা তো এক নয়। কেউ কেউ বিষয়গুলো বোঝেন এবং সহযোগিতা করেন।’ 

জ্বালানি তেল ও ধাতুর দাম বৃদ্ধিতে গাড়ি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর বড় চাপ সৃষ্টি হয়েছেএই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের পথ কী তবে? এ বিষয়ে স্টেলানটিসের প্রধান নির্বাহী রয়টার্সকে বলেন, ‘চিপ স্বল্পতা কমলে একটা পথ হয়তো বের হবে। সে ক্ষেত্রে গাড়ি উৎপাদকেরা জ্বালানি তেল ও ধাতুর উচ্চমূল্য কিছুটা সামাল দিতে পারবে। কিন্তু চিপ স্বল্পতা এ বছরে কাটবে বলে মনে হচ্ছে না।’ 

ক্রেতারা আগে থেকেই বিপদে আছেন। এমনকি ধাতুর দাম চড়ার আগে থেকেই চিপ স্বল্পতার জেরে গাড়ি উৎপাদন কমে গিয়েছিল। এর সরাসরি প্রভাব পড়েছিল বাজারে। ক্রেতাদের গাড়ি কিনতে উচ্চ মূল্য পরিশোধ করতে হচ্ছে। 

মার্কিন পরামর্শক প্রতিষ্ঠান এলএমসি অ্যান্ড জেডি পাওয়ারের তথ্যমতে, গত ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রে নতুন একটি গাড়ির গড় দাম ছিল ৪৪ হাজার ৪৬০ ডলার, যা ২০২১ সালের একই মাসের তুলনায় ১৮ দশমিক ৫ শতাংশ বেশি। 

জার্মান গাড়ি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ফক্সওয়াগন ও বিএমডব্লিউর ওপর এরই মধ্যে ইউক্রেন যুদ্ধের বড় প্রভাব পড়েছে। যুদ্ধের জেরে দেশটির পশ্চিমাঞ্চলে ওয়্যার হারনেস উৎপাদনকারী কারখানাগুলোকে উৎপাদন বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। গাড়ি উৎপাদনের ক্ষেত্রে এ ওয়্যার হারনেস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একটি গাড়ি তৈরিতে গড়ে প্রায় ৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের তার লাগে। আর এর বড় সরবরাহকারী দেশ ইউক্রেন। আর ধাতুর ক্ষেত্রে জার্মান গাড়ি উৎপাদকেরা রুশ সরবরাহের ওপর নির্ভরশীল। ২০২০ সালে তারা জার্মানির মোট নিকেল আমদানির ৪৪ শতাংশ, টাইটেনিয়ামের ৪১ ও প্যালাডিয়ামের ১৮ শতাংশই এসেছিল রাশিয়া থেকে। 

লোহার আকরিক উৎপাদনে রাশিয়া বিশ্বে পঞ্চম। গত বছর দেশটি ১০ কোটি ৮০ লাখ টন লোহার আকরিক উৎপাদন করে। এর বড় অংশই যায় ইউরোপের দেশগুলোতে। এ অবস্থায় দেশগুলো এখন বিশেষত ধাতুর ভিন্ন উৎস খুঁজছে। ধাতু সরবরাহে রাশিয়ার ওপর কোনো নিষেধাজ্ঞা না থাকলেও কার্যত নিষেধাজ্ঞার মতোই অবস্থা বিরাজ করছে। 

ধাতুর উচ্চমূল্য সত্ত্বেও রাশিয়া থেকে কেন পণ্য কিনছে না জার্মানি—এমন প্রশ্নের উত্তরে জার্মান ধাতু সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ভস স্টেইনলেসের প্রধান নির্বাহী থর্সটেন স্টুডেমুন্ড রয়টার্সকে বলেন, ‘অ্যালুমিনিয়াম বা অন্য কোনো ধাতু নিষেধাজ্ঞার আওতায় না থাকলেও আমরা রাশিয়া থেকে এগুলো কেনা বন্ধ রেখেছি। কারণ, রাশিয়া এ খাত থেকে পাওয়া অর্থও যুদ্ধের পেছনে ব্যয় করবে।’ 

সব মিলিয়ে ধাতুর বাজারে যে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে, তা সামনের দিনে আরও বাড়ার আশঙ্কা করছেন বাজার বিশ্লেষকেরা। তাঁরা বলছেন, এর প্রভাব বহুমুখী। গাড়ি উৎপাদনে এর সরাসরি প্রভাব পড়বে, যা যাতায়াত খরচ থেকে শুরু করে জীবনের নানা ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলবে। এ ছাড়া ধাতু থেকে তৈরি অন্য পণ্যের দামও বাড়বে এর প্রভাবে। নতুন শিল্প স্থাপন কঠিন হয়ে পড়বে। প্রভাব পড়বে অবকাঠামো খাতেও। আর এটি শুধু ইউরোপে নয়, গোটা বিশ্বে। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

স্টারলিংকসহ দেশি-বিদেশি বিনিয়োগে প্রাণচাঞ্চল্য

 রিমন রহমান, রাজশাহী
রাজশাহী হাইটেক পার্ক
রাজশাহী হাইটেক পার্ক

দীর্ঘ স্থবিরতার পর আবারও প্রাণ ফিরে পাচ্ছে রাজশাহী হাইটেক পার্ক। নতুন করে দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগ শুরু হওয়ায় পার্ককেন্দ্রিক অর্থনীতিতে এসেছে দৃশ্যমান গতি। এতে প্রযুক্তিনির্ভর কর্মসংস্থান ও আঞ্চলিক উন্নয়নের সম্ভাবনাও জোরদার হয়েছে।

পার্কসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন খালি পড়ে থাকা আটটি বাণিজ্যিক প্লটই এখন লিজ নিয়েছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। সবচেয়ে আলোচিত বিনিয়োগটি এসেছে মার্কিন প্রতিষ্ঠান স্টারলিংক থেকে। তারা ৪০ বছরের জন্য এক একর জায়গা লিজ নিয়ে স্থাপন করেছে অত্যাধুনিক গ্রাউন্ড স্টেশন। একই সময়ে দেশীয় অগ্নিসিস্টেম নতুন প্লট বরাদ্দ পেয়েছে এবং ব্র্যাক-আইটি দুই একর জায়গায় কার্যক্রম শুরুর প্রস্তুতি নিচ্ছে। এ ছাড়া ১২ তলা সিলিকন টাওয়ারে প্রাণ-আরএফএলসহ একাধিক কোম্পানি মোট ২ হাজার ৪০০ বর্গফুট স্পেস ভাড়া নিয়েছে।

ভর্তুকিনির্ভর পার্কে উন্নতির আশা

বর্তমানে হাইটেক পার্কে ভাড়া ও সার্ভিস চার্জ বাবদ মাসিক আয় মাত্র ২ লাখ টাকা, যেখানে ব্যয় ৮ লাখ টাকার বেশি। ফলে প্রতি মাসেই প্রায় ৬ লাখ টাকা ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। তবে নতুন বছরের শুরু থেকে প্রতিষ্ঠানগুলোর পূর্ণাঙ্গ কার্যক্রম চালু হলে ঘাটতি উল্লেখযোগ্যভাবে কমে আসবে বলে আশা করছে কর্তৃপক্ষ।

পার্কের উপপরিচালক ইঞ্জিনিয়ার গোলাম কিবরিয়া বলেন, ‘আগে ৮টি প্লটের সবই খালি পড়ে ছিল। এখন সাত প্রতিষ্ঠান তাদের নিয়মিত কার্যক্রম চালাচ্ছে। ১২ তলা সিলিকন টাওয়ারেও ১৯টি কোম্পানিকে স্পেস বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান কাজ শুরু করেছে, অনেকে অফিস সাজাচ্ছে।’

অবকাঠামো-নিরাপত্তা ঘাটতি নিয়ে উদ্বেগ

অবকাঠামো ও নিরাপত্তাসংক্রান্ত কিছু সমস্যার কথা জানিয়ে উদ্যোক্তারা বলছেন, ২০২৪ সালের ৫ আগস্টে যে ক্ষতি হয়েছিল, তা পুষিয়ে নিতে দ্রুত অবকাঠামো সংস্কার ও নিরাপত্তা জোরদার না করলে বড় বিনিয়োগ ঝুঁকিতে পড়তে পারে। বিনিয়োগ বাড়তে থাকলেও নিরাপত্তা, পরিবেশ ও ব্র্যান্ডিংয়ে এখনো পিছিয়ে কর্তৃপক্ষ।

হাইটেক পার্কের রাজ আইটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ এস এম আক্তারুজ্জামান মাসুদ বলেন, ‘এখানে এখনো সিকিউরিটি ক্যামেরা নেই, বিদ্যুৎ ব্যাকআপও দুর্বল। মাঝে মাঝে বিদ্যুৎ চলে যায়। হাইটেক পার্কে এমন হতে পারে না। কারণ, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ ও কর্মীবান্ধব পরিবেশ ছাড়া কোনো হাইটেক পার্ক টেকসই হতে পারে না। এ বিষয়গুলো দ্রুত সমাধান করতে হবে।’

সম্ভাবনার কেন্দ্র হতে পারে রাজশাহী

শিক্ষানগরী রাজশাহীতে প্রতিবছর প্রায় ১ লাখ শিক্ষার্থী কর্মসংস্থানের সুযোগ খোঁজেন। এমন প্রেক্ষাপটে হাইটেক পার্কে কমপক্ষে ১৪ হাজার কর্মসংস্থান তৈরি করা সম্ভব বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সিএসই বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক রোকনুজ্জামান বলেন, ‘হাইটেক পার্ক ও বিশ্ববিদ্যালয় একসঙ্গে কাজ করলে একটি শক্তিশালী মানবসম্পদ ভান্ডার তৈরি হতে পারে। আমাদের শিক্ষার্থীরা প্রতিনিয়ত চাকরি খুঁজছে। পার্কের প্রতিষ্ঠানগুলো যদি আমাদের আমন্ত্রণ জানায়, আমরা তাদের সঙ্গে দক্ষ জনবল তৈরিতে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

আইডিআরএর প্রতিবেদন

নিয়ম ভেঙে বাকিতে ব্যবসা কন্টিনেন্টাল ইনস্যুরেন্সের

  • মোট পলিসি ইস্যু ৩৪ হাজার ৩টি।
  • বাকিতে পলিসি বিক্রি ১২ হাজার ৪৭৬টি।
  • প্রিমিয়াম জমা হয়নি নির্দিষ্ট সময়ে।
  • ব্যাংক গ্যারান্টি অনুপস্থিত অনেক পলিসির।
  • কঠোর ব্যবস্থা নিতে পারে আইডিআরএ।
মাজফুজুল ইসলাম, ঢাকা
প্রতীকী
প্রতীকী

বিমা খাতের নিয়মকানুন উপেক্ষা করে কন্টিনেন্টাল ইনস্যুরেন্স পিএলসি দীর্ঘদিন ধরে ‘বাকিতে’ বিমা ব্যবসা করছে। অর্থাৎ প্রিমিয়াম হাতে পাওয়ার আগেই পলিসি ইস্যু করেছে। বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) সর্বশেষ পরিদর্শন প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে। প্রিমিয়াম হাতে পাওয়ার আগেই পলিসি ইস্যু করাকে বিমা আইন সরাসরি নিষিদ্ধ। কারণ, এতে কোম্পানির আর্থিক ঝুঁকি বাড়ে এবং বাজারে অনৈতিক প্রতিযোগিতা তৈরি হয়।

আইডিআরএর সহকারী পরিচালক আব্দুর রহিমের ২১ সেপ্টেম্বরের প্রতিবেদনে দেখা যায়, কন্টিনেন্টাল ইনস্যুরেন্স ২০২৪ সালে মোট ৩৪ হাজার ৩টি পলিসি ইস্যু করেছে। এর মধ্যে ১২ হাজার ৪৭৬টি পলিসি ‘বাকিতে’ ইস্যু করা হয়েছে। এই ব্যবসার প্রিমিয়ামের পরিমাণ ২৬ কোটি ৪ লাখ ৭২ হাজার ৮১৩ টাকা। এর মধ্যে বিলম্বে জমা পড়া প্রিমিয়াম ২৫ কোটি ৫৬ লাখ ৮৯ হাজার ৪০০ টাকা।

পরিদর্শকেরা ১০০ দিনের বেশি দেরিতে জমা হওয়া কয়েকটি কাভার নোট ও পলিসির নথি পরীক্ষা করে দেখেছেন, ১৫টির মধ্যে ১২টির কোনো ব্যাংক গ্যারান্টি ছিল না। ফলে এগুলো সরাসরি ‘বাকিতে ব্যবসা’ বলে প্রমাণিত। এ ছাড়া ২০২৪ সালে ইস্যু করা কিছু পলিসির বিপরীতে ২০২৫ সালের ৩১ আগস্ট পর্যন্ত ৪৭ লাখ ৮৩ হাজার টাকার কোনো প্রিমিয়াম জমা হয়নি।

প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, হেলথকেয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের একটি ব্যাংক গ্যারান্টি থাকলেও তার পরিমাণ মাত্র ৩ লাখ টাকা, অথচ কোম্পানিটি ২০২৪ সালে তাদের সঙ্গে ১ কোটি ৭৯ লাখ ১৭ হাজার টাকার বাকিতে ব্যবসা করেছে। শুধু মে মাসেই ২১ লাখ টাকার বেশি বাকিতে পলিসি করা হয়েছে। এ ছাড়া লীরা গ্রুপ ও সম্রাট গ্রুপের কিছু ব্যাংক গ্যারান্টির মেয়াদ ২০২২ সালে শেষ হলেও ২০২৪ সালে কোম্পানিটি তাদের পলিসি বাকিতে ইস্যু করেছে।

আইডিআরএ জানিয়েছে, ২১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ব্যাংক গ্যারান্টির নথি চাওয়া হলেও কোম্পানিটি তা জমা দিতে পারেনি।

বিমা খাতের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রিমিয়াম হাতে পাওয়ার আগেই পলিসি ইস্যু করলে কোম্পানির আর্থিক ঝুঁকি বৃদ্ধি পায় এবং খাতটিতে অনৈতিক প্রতিযোগিতা তৈরি হয়। তাঁদের মতে, ‘বাকিতে বিমা বিক্রি’ বন্ধে আইডিআরএর কঠোর ভূমিকা জরুরি। কারণ, এতে কোম্পানির আর্থিক হিসাব বিকৃত হয়, ক্ষতির ঝুঁকি বাড়ে এবং ন্যায্য প্রতিযোগিতা নষ্ট হয়। তাঁরা মনে করেন, আইডিআরএ চাইলে এর বিরুদ্ধে আর্থিক জরিমানা থেকে শুরু করে লাইসেন্স-সংক্রান্ত কঠোর ব্যবস্থা নিতে পারে।

কন্টিনেন্টাল ইনস্যুরেন্সের সিইও মোশাররফ হোসেন এ বিষয়ে আজকের পত্রিকাকে বলেন, রিপোর্টে দেখানো চিত্র সম্পূর্ণ সঠিক নয়। তথ্য সংশোধনের জন্য আইডিআরএর সঙ্গে আলোচনা চলছে। তিনি আরও বলেন, বাকিতে বিমা ব্যবসা শুধু তাদের কোম্পানিতেই নয়, খাতের সব কোম্পানি কমবেশি করছে। জানুয়ারির প্রথম দিন থেকে চেষ্টা করবেন, যাতে এ ধরনের ব্যবসা বন্ধ করা যায়।

আইন অনুযায়ী, ২০১১ সালের আইডিআরএ সার্কুলার অনুযায়ী ৫ হাজার টাকার বেশি প্রিমিয়াম ডিমান্ড ড্রাফট, পে-অর্ডার, ইএফটি বা চেক আগে জমা না হলে কোনো পলিসি বা কাভার নোট ইস্যু করা যাবে না। চেক এনক্যাশ হওয়ার আগেও নথি ইস্যু করা নিষিদ্ধ। কিন্তু কন্টিনেন্টাল ইনস্যুরেন্স এই নির্দেশনা মানেনি। আইডিআরএ জানিয়েছে, প্রতিষ্ঠানটি বিমা আইন, ২০১০-এর ধারা ১৮(২) এবং সার্কুলার নং ২৯/২০১১ সরাসরি লঙ্ঘন করেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

এএমএল আবারও স্পটলাইটে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: বিজ্ঞপ্তি
ছবি: বিজ্ঞপ্তি

ক্যাম্পেইন এজেন্সি অব দ্য ইয়ার অ্যাওয়ার্ডস ২০২৫-এ দুটি অ্যাওয়ার্ড অর্জন করে এএমএল আবারও দক্ষিণ এশিয়ার বিজ্ঞাপনী বাজারে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করেছে। এ বছর এএমএল ‘রেস্ট অব সাউথ এশিয়া ডিজিটাল ইনোভেশন এজেন্সি অব দ্য ইয়ার’ ক্যাটাগরিতে এবং ‘রেস্ট অব সাউথ এশিয়া মিডিয়া এজেন্সি অব দ্য ইয়ার’ ক্যাটাগরিতে দুটি ব্রোঞ্জ অর্জন করেছে।

নব্বই দশকের গোড়া থেকে ক্যাম্পেইন এজেন্সি অব দ্য ইয়ার অ্যাওয়ার্ডস এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের অ্যাডভার্টাইজিং, কমিউনিকেশন, মিডিয়া ও ডিজিটাল ইনোভেশনের সেরা সাফল্যগুলোকে স্বীকৃতি দিয়ে আসছে। শুধু সৃজনশীল কাজই নয়, দূরদর্শী নেতৃত্ব, অপারেশনাল দক্ষতা এবং শক্তিশালী ব্যবসায়িক পারফরম্যান্সও এই পুরস্কারের বিবেচনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

এই বছরের স্বীকৃতিগুলো এএমএলের ডিজিটাল ট্রান্সফর্মেশন এবং মিডিয়া এফেক্টিভনেস—উভয় ক্ষেত্রেই ধারাবাহিক অগ্রযাত্রার প্রমাণ। ডেটাভিত্তিক স্ট্র্যাটেজি, ভবিষ্যৎ উপযোগী সমাধান এবং ক্রমবর্ধমান ভোক্তা আচরণের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এএমএল তাদের ক্লায়েন্টদের জন্য বাস্তবধর্মী সাফল্য নিশ্চিত করে আসছে।

বিগত বছরগুলোর পারফরম্যান্সের ভিত্তিতে এএমএল তাদের সাবমিশন প্রস্তুত করে—যেখানে এজেন্সির ভিশন, ইন্ডাস্ট্রিতে অবদান, সাসটেইনেবল বিজনেস ডেভেলপমেন্ট এবং ক্লায়েন্টদের জন্য অর্জিত সাফল্যগুলোকে বিশেষভাবে তুলে ধরা হয়। বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক অর্থনীতির পরিবর্তিত বাস্তবতায় ব্র্যান্ডগুলোর দ্রুত ট্রান্সফরমেশন সহজ করতে এএমএলের স্ট্র্যাটেজিক দৃষ্টিভঙ্গি ও সহযোগিতামূলক কাজ বিশেষ ভূমিকা রেখেছে।

যদিও এটা এএমএলের প্রথম আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি নয়, তবু প্রতিটি অর্জনই পুরো দলের জন্য বিশেষ গর্বের। এই পুরস্কারগুলো প্রতিষ্ঠানটির সব সদস্যের নিষ্ঠা ও পরিশ্রমের প্রতিফলন, পাশাপাশি অংশীদার ও ক্লায়েন্টদের অবিচল আস্থার ফল।

এএমএল তাদের সব ক্লায়েন্ট, সহযোগী ও অংশীদারদের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছে, যাদের বিশ্বাস ও সমর্থনই প্রতিষ্ঠানটিকে প্রতিবছর নতুন উচ্চতায় পৌঁছাতে অনুপ্রেরণা জোগায়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

নিষিদ্ধ ঘনচিনির আরও ৪২০০ কেজি চালান জব্দ

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
এ নিয়ে তিন মাসের ব্যবধানে ঘনচিনির তিনটি চালান জব্দ করা হয়েছে। সব মিলিয়ে তিনটি চালানে ১০৪ টন ঘনচিনি রয়েছে। ছবি: চট্টগ্রাম কাস্টমস
এ নিয়ে তিন মাসের ব্যবধানে ঘনচিনির তিনটি চালান জব্দ করা হয়েছে। সব মিলিয়ে তিনটি চালানে ১০৪ টন ঘনচিনি রয়েছে। ছবি: চট্টগ্রাম কাস্টমস

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সেলের (সিআইসি) সহযোগিতায় চট্টগ্রাম বন্দরে আমদানি নিষিদ্ধ সোডিয়াম সাইক্লামেট বা ঘনচিনির আরও একটি চালান জব্দ করেছেন চট্টগ্রাম কাস্টমসের গোয়েন্দা কর্মকর্তারা। চালানটিতে ৪ হাজার ২০০ কেজি ঘনচিনি রয়েছে।

ল্যাবে রাসায়নিক পরীক্ষায় নিশ্চিত হওয়ার পর আজ বুধবার এক বিজ্ঞপ্তিতে চালান জব্দের কথা জানায় এনবিআর। এ নিয়ে তিন মাসের ব্যবধানে ঘনচিনির তিনটি চালান জব্দ করা হয়েছে। সব মিলিয়ে তিনটি চালানে ১০৪ টন ঘনচিনি রয়েছে।

এনবিআরের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ঢাকার কেরানীগঞ্জের এজাজ ট্রেডিং চীন থেকে ‘পলি অ্যালুমিনিয়াম ক্লোরাইড’ ঘোষণায় এক কনটেইনার পণ্য আমদানি করে। এই পণ্য বর্জ্যপানি পরিশোধনে ব্যবহৃত হয়। গত ২১ অক্টোবর চালানটি চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজ থেকে নামানো হয়। তবে চালানটি নিয়ে সন্দেহজনক তথ্য পাওয়ায় সেটির খালাস স্থগিত করে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ৬ নভেম্বর কনটেইনার খুলে দুই ধরনের পণ্য পাওয়া যায়, যার নমুনা চট্টগ্রাম কাস্টমসের ল্যাবে রাসায়নিক পরীক্ষা করা হয়।

পরীক্ষার প্রতিবেদন অনুযায়ী, চালানটিতে ১৭ হাজার ৮০০ কেজি ‘পলি অ্যালুমিনিয়াম ক্লোরাইড’ পাওয়া গেলেও বাকি ৪ হাজার ২০০ কেজি ঘনচিনি হিসেবে শনাক্ত করা হয়েছে।

এনবিআর জানিয়েছে, ঘনচিনি একটি কৃত্রিম মিষ্টিকারক, যা সাধারণ চিনির চেয়ে ৩০ থেকে ৫০ গুণ বেশি মিষ্টি। বিভিন্ন ধরনের মিষ্টান্ন, বেকারি আইটেম, আইসক্রিম, বেভারেজ, জুস, চকলেট, কনডেন্সড মিল্ক ও শিশুখাদ্য তৈরিতে সাধারণ চিনির পরিবর্তে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী এই ক্ষতিকারক কৃত্রিম উপাদান ব্যবহার করে থাকেন। ঘনচিনি দিয়ে তৈরি খাদ্য জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। ঘনচিনির দ্বারা প্রস্তুত খাদ্য ক্যানসারসহ কিডনি ও লিভারের জটিল রোগের কারণ হতে পারে।

নিষিদ্ধ ঘনচিনি আমদানি করায় কাস্টমস আইন অনুসারে পণ্যের চালানটি আটক করা হয়েছে এবং আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানায় এনবিআর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত