
কেনিয়াতে যিশুর সাক্ষাৎ পেতে দীর্ঘ উপবাসে মারা যাওয়া প্রায় অর্ধশত মানুষের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। একই স্থানে লাশগুলো পাওয়া গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, আরও অনেক লাশ পাওয়া যাবে। কারণ, যেই ধর্মপ্রচারকের নির্দেশে এই উপবাস শুরু হয়েছিল, কমপক্ষে তিনটি গ্রামের মানুষ তাঁর অনুসারী। এটিকে একটি গণ-আত্মহত্যা বলেই মনে করছে প্রশাসন।
এ ধরনের জনগোষ্ঠীকে বলে ‘কাল্ট’। এরা প্রচলিত ধর্মীয় আচারের বাইরে গিয়ে কঠোর বা সহিংস পন্থা বেছে নেয়। সৃষ্টিকর্তার নৈকট্য লাভের আশায় অথবা অসীমে মিশে যেতে স্বেচ্ছায় প্রাণ বিসর্জন দেয়, কখনো কখনো বলি দেওয়ার ঘটনাও ঘটে।
আজ থেকে ১৬ বছর আগে ঠিক এ ধরনেই একটি ঘটনা ঘটেছিল ময়মনসিংহ জেলায়। এক পরিবারের নয়জন সদস্য ট্রেনের নিচে আত্মাহুতি দিয়েছিলেন। তাঁদের মধ্যে শিশুও ছিল।
ঘটনাকাল ২০০৭ সালের ১১ জুলাই, বেলা ৩টা ১০ মিনিট। জামালপুরের জগন্নাথগঞ্জ স্টেশন থেকে ছেড়ে আসা জিএম এক্সপ্রেস ২৫৪ লোকাল ট্রেনটি ময়মনসিংহ পৌরসভার কাশর এলাকার ইটখোলায় পৌঁছালে হঠাৎ চালকের নজরে পড়ে রেলপথের বাঁ পাশ থেকে বেশ কয়েকজন নারী-পুরুষ একে অন্যকে ধরাধরি করে রেললাইনের দিকে আসছে। এরপর তাঁরা রেললাইন ধরে চুপচাপ বসে পড়েন। প্রথমে চালক ব্যাপারটা বুঝে উঠতে পারেননি। ভেবেছিলেন তাঁরা হয়তো রেললাইন পার হচ্ছেন। কিন্তু যখন বুঝতে পেরেছেন ততক্ষণে কিছুই করার ছিল না। নয়জনকে ছিন্নভিন্ন করে দিয়ে যায় রেলগাড়ির চাকা।
এরপর চালক ট্রেনটি থামিয়ে দেন। মুহূর্তে শত শত মানুষ জড়ো হয়। খবর পেয়ে দ্রুত ছুটে আসে পুলিশ। স্থানীয়রা জানান তাঁদের পরিচয়। নিহতদের মধ্যে ছিলেন মা,দুই ছেলে, চার মেয়ে এবং দুই নাতি-নাতনি। তাঁরা হলেন- মা হেনা আনোয়ার (৬০), ছেলে আরিফ আনোয়ার (৩০) ও রাহাত আনোয়ার (২২), মেয়ে আক্তারী আনোয়ার (৩৫), মুর্শেদা আনোয়ার (২৭), মুন আনোয়ার ওরফে মবি (৩০) ও শবনম আনোয়ার (১৮), নাতি মৌলা আনোয়ার (৮) এবং নাতনি মৌ আনোয়ার (১০)। রেললাইনের পাশেই তাদের বাড়ি।
এ নিয়ে পরের দিন দেশে সব জাতীয় দৈনিকে শিরোনাম হয়। সারা দেশে তোলপাড় শুরু হয়। সাংবাদিকদের ভিড় লেগে যায় ওই এলাকায়। তাৎক্ষণিকভাবে তাঁদের বাড়ি গিয়ে সাংবাদিকেরা দেখতে পান সুনসান নীরবতা। একটি পাকা বাড়ির পাঁচ-ছয়টি কক্ষ। উঠানে কবরের মতো গর্ত। বারান্দায় লাশ নেওয়ার খাটিয়া। রান্নাঘরে পড়ে আছে কাটা মাছ ও তরিতরকারি।
বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে পুলিশ বেশ কিছু ডায়েরি ও হাতে লেখা কাগজপত্র উদ্ধার করে। কিছু বাংলায়, কিছু ইংরেজিতে লেখা। ইংরেজিতে একটি ডায়েরিতে লেখা ছিল, ‘আমরা পৃথিবীর একমাত্র পরিবার যারা স্বাধীন ও আত্মনির্ভরশীল। মোহাম্মদের আইনের বাইরে এবং সব ধর্মের সব কার্যকলাপের বাইরে। তাহলে আমরা কে? আমরা হলাম আদম। সবার উপরে আদম সত্য, জুলুমের বিচারের ব্যবস্থা করিব।’—এ ধরনের কথাবার্তা ছিল সেখানে।
পরে পুলিশের বক্তব্য এবং পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত বিভিন্ন প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, এই পরিবারের সঙ্গে প্রতিবেশী বা এলাকার লোকজনের কোনো সম্পর্ক ছিল না। আনোয়ার দরবেশ নামে এক লোক ‘আদম ধর্ম’-এর প্রতিষ্ঠাতা দাবি করতেন। নিজেকে আনোয়ার আদম বলে পরিচয় দিতেন। তিনিই তৈরি করেছিলেন এই কাল্ট। তাঁর ছোট ভাই আব্দুল হান্নান সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, তাঁর ভাই (আনোয়ার দরবেশ) হার্ট অ্যাটাকে মারা যাওয়ার পর তাঁর পরিবারের সবাই খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করে। এরপর থেকেই তাঁদের আত্মীয়তা নষ্ট হয়ে গেছে।
অবশ্য আনোয়ার দরবেশের বাড়িতে খ্রিষ্টধর্মের সঙ্গে সম্পর্কিত কোনো নথিপত্র বা বইপুস্তক পাওয়া যায়নি। স্থানীয় গির্জাতেও তাঁরা কখনো যাননি।
এই আনোয়ার দরবেশের কার্যক্রম সম্পর্কে ওই সময় পত্রপত্রিকায় যেসব তথ্য বেরোয় সেগুলো হলো—সেনাবাহিনী থেকে অবসর নেওয়ার পরে তিনি ধর্মে মন দেন। এলাকার মানুষ দরবেশ, ফকির ও পীর বলে ডাকতে শুরু করেন। তবে ধীরে ধীরে চিন্তায় পরিবর্তন আসে। প্রচলিত ইসলাম ধর্মের বাইরে নানা কথা বলতে শুরু করেন তিনি। এ নিয়ে এলাকায় অনেকের সঙ্গে তর্কও হতো প্রায়ই। এ কারণে একবার লোকজন তাঁকে মারধরও করে। বলতে গেলে এরপরই আনোয়ার একঘরে হয়ে পড়েন। নিভৃতে থাকতে শুরু করেন। স্থানীয়দের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেন। পরিবারের লোকজন ধীরে ধীরে তাঁর মুরিদ হতে শুরু করে। পরিবারের বাইরেও কয়েকজন মুরিদ ছিলেন বলে জানা যায়।
২০০০ সালের ১১ জুলাই ঢাকার একটি হাসপাতালে মারা যান আনোয়ার। মৃত্যু পরবর্তী কার্যক্রম সম্পর্কে তিনি আগেই লিখে গিয়েছিলেন। তিনি লিখেছিলেন, ‘মৃত্যুর পরে আমার কোনো জানাজা দিবা না, গোসল করাবা না, কাফনের কাপড় পরাবা না। যে কাপড় পরে মারা যাব, সেই কাপড়ে সেই অবস্থাতেই আমাকে কবর দিবা। কোনো কবরখানায় আমাকে নিবে না, বাড়ির ভিতরে গর্ত খুঁড়ে আমাকে কবর দিবে। আমার মাথা থাকবে পূর্বে, পা থাকবে পশ্চিমে আর মুখ দক্ষিণ দিকে ঘুরানো থাকবে। যদি অন্য রকমভাবে কবর দাও, তাহলে আমি কঠিন প্রতিশোধ নিব।’
পরিবারের লোকজন সেই নির্দেশনা অনুযায়ীই কবর দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু স্থানীয়দের বাধায় প্রশাসনের উপস্থিতিতে গোসল, কাফন পরানো এবং জানাজা নামাজের পর তাঁকে ইসলামি রীতিতে কবর দেওয়া হয়।
আনোয়ার আদমের জানাজা এবং দাফন নিয়ে জটিলতায় আদম পরিবারটি ক্রমেই আরও জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। পরিবারটির ওপর নির্যাতন অব্যাহত থাকে। আদম পরিবারের গৃহকর্মী রিনার ভাষ্যমতে, ‘নানা ভাবে তারা ফার্নিচার, টিউবওয়েল চুরি করে নিয়ে গেছে। টয়লেটের দরজা ভেঙে ফেলেছে। বাথরুমের পাইপ নিয়ে গেছে। ওরা বাড়ির ভেতর ঢুকে গাছ কাটার চেষ্টা করেছে।’
এ ঘটনার পর পুরো পরিবার ঢাকায় চলে যায়। বড় ছেলে আরিফ পরিবারের খরচ চালাতেন। কিন্তু তিনি কী করতেন তা স্পষ্ট নয়। অবশ্য ছোট ছেলের ডায়েরিতে খুনের ইঙ্গিত আছে। তিনি লিখেছেন, ‘So who we are? I have already given my and our identity as ‘‘ADAMS’’...We have come to establish the truth and reallity in to the world but our bodies were killed again and again by mohamod’s rules, law and relisions. ’
আনোয়ার আদম মারা যাওয়ার পর বড় ছেলে আরিফ বাবার আধ্যাত্মিক উত্তরাধিকারী হিসেবে ‘আদম ধর্ম’-এর নেতার ভূমিকা পালন করেন। আরিফ সম্বন্ধে তাঁর পরিবারের অত্যন্ত উঁচু ধারণা ছিল। এ প্রসঙ্গে তাঁর ছোট বোন শারমিন ডায়েরিতে লিখেছিলেন—‘My brother worked as dean in many 52 international university in Dhaka and in outside. He is extraordinary smart, intelligent and individual and intellectual man I ever met. There is no doubt. He is different. I am very proud to be his sister...My brother left by muhamad’s attacked.’
২০০৫ সালে ঢাকায় আরিফ মারা যান নাকি খুন হন, সেটিও রহস্য। এরপর পরিবারটি গ্রামে ফিরে যায়। তখন পরিবারের একমাত্র পুরুষ সদস্য রাহাত। সেখানে পরিবারটি কীভাবে জীবিকা নির্বাহ করত সেটি জানা যায় না। রাহাতের ডায়েরিতে ইংরেজিতে লেখা ছিল, ‘We are the only family in the world that is independent and selfdepanded. We are the only one family in the world that is totally independed and selfdepended and out of mohamod’s rules. , law and relisious activities and relisions. ’
বড় বোন আক্তারী আনোয়ার বাবার প্রতিষ্ঠিত আদম ধর্মের পুরোহিত হয়ে বসেন। মৃত বাবা ও ভাইয়ের আত্মার সঙ্গে কথা বলতে পুরো পরিবার নিয়মিত ধ্যান করত। আক্তারী বেগমের ওপরই বাবার আত্মা ভর করত। তাঁর মুখ দিয়েই আসত বিভিন্ন আদেশ-নিষেধ।
ডায়েরি এবং হাতে লেখা কাগজপত্র অনুযায়ী, তাঁদের বিশ্বাস ছিল—আদম হচ্ছেন বিশ্বের প্রথম মানুষ। তিনিই সবকিছু সৃষ্টি করেছেন। অন্য সব মানুষ আদমেরই অংশ (বনি আদম)। আদম বিভিন্ন সময়ে মারা যান, আবার পরবর্তী সময়ে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে জন্ম গ্রহণ করেন। বিংশ শতাব্দীতে বাংলাদেশে আদম হিসেবে জন্ম গ্রহণ করেছিলেন আনোয়ার আদম। নবী মোহাম্মদের (সা.) অনুসারীদের (শরিয়তপন্থী) তাঁরা ঘৃণা করতেন।
প্রত্যেক সদস্যই মৃত্যুর আগে ডায়েরিতে কিছু না কিছু লিখে গেছেন। অধিকাংশ লেখাই ইংরেজিতে। তবে মায়ের হয়ে তাঁর কথাগুলো লিখে দিয়েছেন মেয়ে। এমনকি দুটি শিশুর কথাও ডায়েরিতে রয়েছে। অবশ্য তাদেরটি কেউ লিখে দিয়ে থাকতে পারে।
মূলত বাবা-ভাইয়ের মৃত্যুর কিছুদিন পর তাঁরা আত্মহত্যারই পরিকল্পনা করছিলেন। বাবা ও বড় ভাইয়ের সঙ্গে মিলিত হওয়ার আকাঙ্ক্ষা থেকেই তাঁরা এমন ভেবেছিলেন। ডায়েরির লেখাজোখা থেকে তেমনটিই জানা যায়। ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দেওয়ার আগে তাঁরা গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যারও আয়োজন করেছিলেন।
এ ঘটনা নিয়ে একটি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছিল Mental Health, Religion & Culture সাময়িকীতে, ২০১০ সালের এপ্রিল মাসে। ডা. নাসিমা সেলিমের সেই গবেষণাপত্রের শিরোনাম ‘An extraordinary truth? The Adam ‘‘suicide’’ notes from Bangladesh’।
সেখানে ডা. নাসিমা সেলিম লিখেছেন: আনোয়ার আদমের চিন্তাধারায় প্রোথিত হয়ে গিয়েছিল শরিয়তবিরোধী ধ্যানধারণা। ১৯৯৫ সালে আনোয়ার আদমের চেতনায় যে পরিবর্তন তৈরি হয়েছিল, মনোবিজ্ঞানের ভাষায় একে বলে বিভ্রান্তি (Delusion)। পরিবারের প্রত্যেকেই সেই বিভ্রান্তির শিকার হয়েছিলেন, এটিকে বলে Shared Delusion বা যৌথ বিভ্রান্তি।
এ বিষয়ে ডা. নাসিমা সেলিম লিখেছেন: Shared Psychotic Disorder (SPD), referring to a condition where all members of a family share the delusions This is an extremely rare condition, but one that has been found in many different cultures.
এ ছাড়া নাসিমা সেলিম এই রোগকে সম্ভাব্য `Folie a famille' বলে চিহ্নিত করেছেন। ‘ফলি অ্যা ফ্যামিলি’ রোগে সাধারণত পরিবারের সদস্যরা অদ্ভুত আচরণ শুরু করে। বিশেষত একজন সদস্যের কোনো অস্বাভাবিক প্রবণতা অন্যদের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়ে।
এ রকম একটি ঘটনা ঘটেছিল ২০০৮ সালে সুইডেনে। উরুসুলা এরিকসন নামে এক নারী রাস্তায় ট্রাকের নিচে চাপা পড়ার চেষ্টা করেন। ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান। একটু পরেই তাঁর যমজ বোন সাবিনা এরিকসনও একইভাবে হাইওয়েতে বের হয়ে গাড়ির সঙ্গে ধাক্কা খাওয়ার চেষ্টা করেন। ভাগ্যক্রমে তিনিও বেঁচে যান। মনোবিদেরা বলেন, তাঁরা ‘ফলি অ্যা ফ্যামিলি’ রোগের শিকার।
এ ছাড়া ২০১৬ সালে অস্ট্রেলিয়ায় পাঁচ সদস্যের একটি পরিবার বাড়ি থেকে বের হয়ে ১ হাজার ৬০০ কিলোমিটার দূরে চলে যান। কিন্তু তাদের কোনো উদ্দেশ্য বা পরিকল্পনা ছিল না। স্রেফ একজন ভেবেছেন বাড়ি থেকে দূরে গেলেই ভালো! বাকিরাও তাঁকে অনুসরণ করেছেন!

কেনিয়াতে যিশুর সাক্ষাৎ পেতে দীর্ঘ উপবাসে মারা যাওয়া প্রায় অর্ধশত মানুষের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। একই স্থানে লাশগুলো পাওয়া গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, আরও অনেক লাশ পাওয়া যাবে। কারণ, যেই ধর্মপ্রচারকের নির্দেশে এই উপবাস শুরু হয়েছিল, কমপক্ষে তিনটি গ্রামের মানুষ তাঁর অনুসারী। এটিকে একটি গণ-আত্মহত্যা বলেই মনে করছে প্রশাসন।
এ ধরনের জনগোষ্ঠীকে বলে ‘কাল্ট’। এরা প্রচলিত ধর্মীয় আচারের বাইরে গিয়ে কঠোর বা সহিংস পন্থা বেছে নেয়। সৃষ্টিকর্তার নৈকট্য লাভের আশায় অথবা অসীমে মিশে যেতে স্বেচ্ছায় প্রাণ বিসর্জন দেয়, কখনো কখনো বলি দেওয়ার ঘটনাও ঘটে।
আজ থেকে ১৬ বছর আগে ঠিক এ ধরনেই একটি ঘটনা ঘটেছিল ময়মনসিংহ জেলায়। এক পরিবারের নয়জন সদস্য ট্রেনের নিচে আত্মাহুতি দিয়েছিলেন। তাঁদের মধ্যে শিশুও ছিল।
ঘটনাকাল ২০০৭ সালের ১১ জুলাই, বেলা ৩টা ১০ মিনিট। জামালপুরের জগন্নাথগঞ্জ স্টেশন থেকে ছেড়ে আসা জিএম এক্সপ্রেস ২৫৪ লোকাল ট্রেনটি ময়মনসিংহ পৌরসভার কাশর এলাকার ইটখোলায় পৌঁছালে হঠাৎ চালকের নজরে পড়ে রেলপথের বাঁ পাশ থেকে বেশ কয়েকজন নারী-পুরুষ একে অন্যকে ধরাধরি করে রেললাইনের দিকে আসছে। এরপর তাঁরা রেললাইন ধরে চুপচাপ বসে পড়েন। প্রথমে চালক ব্যাপারটা বুঝে উঠতে পারেননি। ভেবেছিলেন তাঁরা হয়তো রেললাইন পার হচ্ছেন। কিন্তু যখন বুঝতে পেরেছেন ততক্ষণে কিছুই করার ছিল না। নয়জনকে ছিন্নভিন্ন করে দিয়ে যায় রেলগাড়ির চাকা।
এরপর চালক ট্রেনটি থামিয়ে দেন। মুহূর্তে শত শত মানুষ জড়ো হয়। খবর পেয়ে দ্রুত ছুটে আসে পুলিশ। স্থানীয়রা জানান তাঁদের পরিচয়। নিহতদের মধ্যে ছিলেন মা,দুই ছেলে, চার মেয়ে এবং দুই নাতি-নাতনি। তাঁরা হলেন- মা হেনা আনোয়ার (৬০), ছেলে আরিফ আনোয়ার (৩০) ও রাহাত আনোয়ার (২২), মেয়ে আক্তারী আনোয়ার (৩৫), মুর্শেদা আনোয়ার (২৭), মুন আনোয়ার ওরফে মবি (৩০) ও শবনম আনোয়ার (১৮), নাতি মৌলা আনোয়ার (৮) এবং নাতনি মৌ আনোয়ার (১০)। রেললাইনের পাশেই তাদের বাড়ি।
এ নিয়ে পরের দিন দেশে সব জাতীয় দৈনিকে শিরোনাম হয়। সারা দেশে তোলপাড় শুরু হয়। সাংবাদিকদের ভিড় লেগে যায় ওই এলাকায়। তাৎক্ষণিকভাবে তাঁদের বাড়ি গিয়ে সাংবাদিকেরা দেখতে পান সুনসান নীরবতা। একটি পাকা বাড়ির পাঁচ-ছয়টি কক্ষ। উঠানে কবরের মতো গর্ত। বারান্দায় লাশ নেওয়ার খাটিয়া। রান্নাঘরে পড়ে আছে কাটা মাছ ও তরিতরকারি।
বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে পুলিশ বেশ কিছু ডায়েরি ও হাতে লেখা কাগজপত্র উদ্ধার করে। কিছু বাংলায়, কিছু ইংরেজিতে লেখা। ইংরেজিতে একটি ডায়েরিতে লেখা ছিল, ‘আমরা পৃথিবীর একমাত্র পরিবার যারা স্বাধীন ও আত্মনির্ভরশীল। মোহাম্মদের আইনের বাইরে এবং সব ধর্মের সব কার্যকলাপের বাইরে। তাহলে আমরা কে? আমরা হলাম আদম। সবার উপরে আদম সত্য, জুলুমের বিচারের ব্যবস্থা করিব।’—এ ধরনের কথাবার্তা ছিল সেখানে।
পরে পুলিশের বক্তব্য এবং পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত বিভিন্ন প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, এই পরিবারের সঙ্গে প্রতিবেশী বা এলাকার লোকজনের কোনো সম্পর্ক ছিল না। আনোয়ার দরবেশ নামে এক লোক ‘আদম ধর্ম’-এর প্রতিষ্ঠাতা দাবি করতেন। নিজেকে আনোয়ার আদম বলে পরিচয় দিতেন। তিনিই তৈরি করেছিলেন এই কাল্ট। তাঁর ছোট ভাই আব্দুল হান্নান সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, তাঁর ভাই (আনোয়ার দরবেশ) হার্ট অ্যাটাকে মারা যাওয়ার পর তাঁর পরিবারের সবাই খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করে। এরপর থেকেই তাঁদের আত্মীয়তা নষ্ট হয়ে গেছে।
অবশ্য আনোয়ার দরবেশের বাড়িতে খ্রিষ্টধর্মের সঙ্গে সম্পর্কিত কোনো নথিপত্র বা বইপুস্তক পাওয়া যায়নি। স্থানীয় গির্জাতেও তাঁরা কখনো যাননি।
এই আনোয়ার দরবেশের কার্যক্রম সম্পর্কে ওই সময় পত্রপত্রিকায় যেসব তথ্য বেরোয় সেগুলো হলো—সেনাবাহিনী থেকে অবসর নেওয়ার পরে তিনি ধর্মে মন দেন। এলাকার মানুষ দরবেশ, ফকির ও পীর বলে ডাকতে শুরু করেন। তবে ধীরে ধীরে চিন্তায় পরিবর্তন আসে। প্রচলিত ইসলাম ধর্মের বাইরে নানা কথা বলতে শুরু করেন তিনি। এ নিয়ে এলাকায় অনেকের সঙ্গে তর্কও হতো প্রায়ই। এ কারণে একবার লোকজন তাঁকে মারধরও করে। বলতে গেলে এরপরই আনোয়ার একঘরে হয়ে পড়েন। নিভৃতে থাকতে শুরু করেন। স্থানীয়দের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেন। পরিবারের লোকজন ধীরে ধীরে তাঁর মুরিদ হতে শুরু করে। পরিবারের বাইরেও কয়েকজন মুরিদ ছিলেন বলে জানা যায়।
২০০০ সালের ১১ জুলাই ঢাকার একটি হাসপাতালে মারা যান আনোয়ার। মৃত্যু পরবর্তী কার্যক্রম সম্পর্কে তিনি আগেই লিখে গিয়েছিলেন। তিনি লিখেছিলেন, ‘মৃত্যুর পরে আমার কোনো জানাজা দিবা না, গোসল করাবা না, কাফনের কাপড় পরাবা না। যে কাপড় পরে মারা যাব, সেই কাপড়ে সেই অবস্থাতেই আমাকে কবর দিবা। কোনো কবরখানায় আমাকে নিবে না, বাড়ির ভিতরে গর্ত খুঁড়ে আমাকে কবর দিবে। আমার মাথা থাকবে পূর্বে, পা থাকবে পশ্চিমে আর মুখ দক্ষিণ দিকে ঘুরানো থাকবে। যদি অন্য রকমভাবে কবর দাও, তাহলে আমি কঠিন প্রতিশোধ নিব।’
পরিবারের লোকজন সেই নির্দেশনা অনুযায়ীই কবর দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু স্থানীয়দের বাধায় প্রশাসনের উপস্থিতিতে গোসল, কাফন পরানো এবং জানাজা নামাজের পর তাঁকে ইসলামি রীতিতে কবর দেওয়া হয়।
আনোয়ার আদমের জানাজা এবং দাফন নিয়ে জটিলতায় আদম পরিবারটি ক্রমেই আরও জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। পরিবারটির ওপর নির্যাতন অব্যাহত থাকে। আদম পরিবারের গৃহকর্মী রিনার ভাষ্যমতে, ‘নানা ভাবে তারা ফার্নিচার, টিউবওয়েল চুরি করে নিয়ে গেছে। টয়লেটের দরজা ভেঙে ফেলেছে। বাথরুমের পাইপ নিয়ে গেছে। ওরা বাড়ির ভেতর ঢুকে গাছ কাটার চেষ্টা করেছে।’
এ ঘটনার পর পুরো পরিবার ঢাকায় চলে যায়। বড় ছেলে আরিফ পরিবারের খরচ চালাতেন। কিন্তু তিনি কী করতেন তা স্পষ্ট নয়। অবশ্য ছোট ছেলের ডায়েরিতে খুনের ইঙ্গিত আছে। তিনি লিখেছেন, ‘So who we are? I have already given my and our identity as ‘‘ADAMS’’...We have come to establish the truth and reallity in to the world but our bodies were killed again and again by mohamod’s rules, law and relisions. ’
আনোয়ার আদম মারা যাওয়ার পর বড় ছেলে আরিফ বাবার আধ্যাত্মিক উত্তরাধিকারী হিসেবে ‘আদম ধর্ম’-এর নেতার ভূমিকা পালন করেন। আরিফ সম্বন্ধে তাঁর পরিবারের অত্যন্ত উঁচু ধারণা ছিল। এ প্রসঙ্গে তাঁর ছোট বোন শারমিন ডায়েরিতে লিখেছিলেন—‘My brother worked as dean in many 52 international university in Dhaka and in outside. He is extraordinary smart, intelligent and individual and intellectual man I ever met. There is no doubt. He is different. I am very proud to be his sister...My brother left by muhamad’s attacked.’
২০০৫ সালে ঢাকায় আরিফ মারা যান নাকি খুন হন, সেটিও রহস্য। এরপর পরিবারটি গ্রামে ফিরে যায়। তখন পরিবারের একমাত্র পুরুষ সদস্য রাহাত। সেখানে পরিবারটি কীভাবে জীবিকা নির্বাহ করত সেটি জানা যায় না। রাহাতের ডায়েরিতে ইংরেজিতে লেখা ছিল, ‘We are the only family in the world that is independent and selfdepanded. We are the only one family in the world that is totally independed and selfdepended and out of mohamod’s rules. , law and relisious activities and relisions. ’
বড় বোন আক্তারী আনোয়ার বাবার প্রতিষ্ঠিত আদম ধর্মের পুরোহিত হয়ে বসেন। মৃত বাবা ও ভাইয়ের আত্মার সঙ্গে কথা বলতে পুরো পরিবার নিয়মিত ধ্যান করত। আক্তারী বেগমের ওপরই বাবার আত্মা ভর করত। তাঁর মুখ দিয়েই আসত বিভিন্ন আদেশ-নিষেধ।
ডায়েরি এবং হাতে লেখা কাগজপত্র অনুযায়ী, তাঁদের বিশ্বাস ছিল—আদম হচ্ছেন বিশ্বের প্রথম মানুষ। তিনিই সবকিছু সৃষ্টি করেছেন। অন্য সব মানুষ আদমেরই অংশ (বনি আদম)। আদম বিভিন্ন সময়ে মারা যান, আবার পরবর্তী সময়ে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে জন্ম গ্রহণ করেন। বিংশ শতাব্দীতে বাংলাদেশে আদম হিসেবে জন্ম গ্রহণ করেছিলেন আনোয়ার আদম। নবী মোহাম্মদের (সা.) অনুসারীদের (শরিয়তপন্থী) তাঁরা ঘৃণা করতেন।
প্রত্যেক সদস্যই মৃত্যুর আগে ডায়েরিতে কিছু না কিছু লিখে গেছেন। অধিকাংশ লেখাই ইংরেজিতে। তবে মায়ের হয়ে তাঁর কথাগুলো লিখে দিয়েছেন মেয়ে। এমনকি দুটি শিশুর কথাও ডায়েরিতে রয়েছে। অবশ্য তাদেরটি কেউ লিখে দিয়ে থাকতে পারে।
মূলত বাবা-ভাইয়ের মৃত্যুর কিছুদিন পর তাঁরা আত্মহত্যারই পরিকল্পনা করছিলেন। বাবা ও বড় ভাইয়ের সঙ্গে মিলিত হওয়ার আকাঙ্ক্ষা থেকেই তাঁরা এমন ভেবেছিলেন। ডায়েরির লেখাজোখা থেকে তেমনটিই জানা যায়। ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দেওয়ার আগে তাঁরা গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যারও আয়োজন করেছিলেন।
এ ঘটনা নিয়ে একটি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছিল Mental Health, Religion & Culture সাময়িকীতে, ২০১০ সালের এপ্রিল মাসে। ডা. নাসিমা সেলিমের সেই গবেষণাপত্রের শিরোনাম ‘An extraordinary truth? The Adam ‘‘suicide’’ notes from Bangladesh’।
সেখানে ডা. নাসিমা সেলিম লিখেছেন: আনোয়ার আদমের চিন্তাধারায় প্রোথিত হয়ে গিয়েছিল শরিয়তবিরোধী ধ্যানধারণা। ১৯৯৫ সালে আনোয়ার আদমের চেতনায় যে পরিবর্তন তৈরি হয়েছিল, মনোবিজ্ঞানের ভাষায় একে বলে বিভ্রান্তি (Delusion)। পরিবারের প্রত্যেকেই সেই বিভ্রান্তির শিকার হয়েছিলেন, এটিকে বলে Shared Delusion বা যৌথ বিভ্রান্তি।
এ বিষয়ে ডা. নাসিমা সেলিম লিখেছেন: Shared Psychotic Disorder (SPD), referring to a condition where all members of a family share the delusions This is an extremely rare condition, but one that has been found in many different cultures.
এ ছাড়া নাসিমা সেলিম এই রোগকে সম্ভাব্য `Folie a famille' বলে চিহ্নিত করেছেন। ‘ফলি অ্যা ফ্যামিলি’ রোগে সাধারণত পরিবারের সদস্যরা অদ্ভুত আচরণ শুরু করে। বিশেষত একজন সদস্যের কোনো অস্বাভাবিক প্রবণতা অন্যদের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়ে।
এ রকম একটি ঘটনা ঘটেছিল ২০০৮ সালে সুইডেনে। উরুসুলা এরিকসন নামে এক নারী রাস্তায় ট্রাকের নিচে চাপা পড়ার চেষ্টা করেন। ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান। একটু পরেই তাঁর যমজ বোন সাবিনা এরিকসনও একইভাবে হাইওয়েতে বের হয়ে গাড়ির সঙ্গে ধাক্কা খাওয়ার চেষ্টা করেন। ভাগ্যক্রমে তিনিও বেঁচে যান। মনোবিদেরা বলেন, তাঁরা ‘ফলি অ্যা ফ্যামিলি’ রোগের শিকার।
এ ছাড়া ২০১৬ সালে অস্ট্রেলিয়ায় পাঁচ সদস্যের একটি পরিবার বাড়ি থেকে বের হয়ে ১ হাজার ৬০০ কিলোমিটার দূরে চলে যান। কিন্তু তাদের কোনো উদ্দেশ্য বা পরিকল্পনা ছিল না। স্রেফ একজন ভেবেছেন বাড়ি থেকে দূরে গেলেই ভালো! বাকিরাও তাঁকে অনুসরণ করেছেন!

কেনিয়াতে যিশুর সাক্ষাৎ পেতে দীর্ঘ উপবাসে মারা যাওয়া প্রায় অর্ধশত মানুষের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। একই স্থানে লাশগুলো পাওয়া গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, আরও অনেক লাশ পাওয়া যাবে। কারণ, যেই ধর্মপ্রচারকের নির্দেশে এই উপবাস শুরু হয়েছিল, কমপক্ষে তিনটি গ্রামের মানুষ তাঁর অনুসারী। এটিকে একটি গণ-আত্মহত্যা বলেই মনে করছে প্রশাসন।
এ ধরনের জনগোষ্ঠীকে বলে ‘কাল্ট’। এরা প্রচলিত ধর্মীয় আচারের বাইরে গিয়ে কঠোর বা সহিংস পন্থা বেছে নেয়। সৃষ্টিকর্তার নৈকট্য লাভের আশায় অথবা অসীমে মিশে যেতে স্বেচ্ছায় প্রাণ বিসর্জন দেয়, কখনো কখনো বলি দেওয়ার ঘটনাও ঘটে।
আজ থেকে ১৬ বছর আগে ঠিক এ ধরনেই একটি ঘটনা ঘটেছিল ময়মনসিংহ জেলায়। এক পরিবারের নয়জন সদস্য ট্রেনের নিচে আত্মাহুতি দিয়েছিলেন। তাঁদের মধ্যে শিশুও ছিল।
ঘটনাকাল ২০০৭ সালের ১১ জুলাই, বেলা ৩টা ১০ মিনিট। জামালপুরের জগন্নাথগঞ্জ স্টেশন থেকে ছেড়ে আসা জিএম এক্সপ্রেস ২৫৪ লোকাল ট্রেনটি ময়মনসিংহ পৌরসভার কাশর এলাকার ইটখোলায় পৌঁছালে হঠাৎ চালকের নজরে পড়ে রেলপথের বাঁ পাশ থেকে বেশ কয়েকজন নারী-পুরুষ একে অন্যকে ধরাধরি করে রেললাইনের দিকে আসছে। এরপর তাঁরা রেললাইন ধরে চুপচাপ বসে পড়েন। প্রথমে চালক ব্যাপারটা বুঝে উঠতে পারেননি। ভেবেছিলেন তাঁরা হয়তো রেললাইন পার হচ্ছেন। কিন্তু যখন বুঝতে পেরেছেন ততক্ষণে কিছুই করার ছিল না। নয়জনকে ছিন্নভিন্ন করে দিয়ে যায় রেলগাড়ির চাকা।
এরপর চালক ট্রেনটি থামিয়ে দেন। মুহূর্তে শত শত মানুষ জড়ো হয়। খবর পেয়ে দ্রুত ছুটে আসে পুলিশ। স্থানীয়রা জানান তাঁদের পরিচয়। নিহতদের মধ্যে ছিলেন মা,দুই ছেলে, চার মেয়ে এবং দুই নাতি-নাতনি। তাঁরা হলেন- মা হেনা আনোয়ার (৬০), ছেলে আরিফ আনোয়ার (৩০) ও রাহাত আনোয়ার (২২), মেয়ে আক্তারী আনোয়ার (৩৫), মুর্শেদা আনোয়ার (২৭), মুন আনোয়ার ওরফে মবি (৩০) ও শবনম আনোয়ার (১৮), নাতি মৌলা আনোয়ার (৮) এবং নাতনি মৌ আনোয়ার (১০)। রেললাইনের পাশেই তাদের বাড়ি।
এ নিয়ে পরের দিন দেশে সব জাতীয় দৈনিকে শিরোনাম হয়। সারা দেশে তোলপাড় শুরু হয়। সাংবাদিকদের ভিড় লেগে যায় ওই এলাকায়। তাৎক্ষণিকভাবে তাঁদের বাড়ি গিয়ে সাংবাদিকেরা দেখতে পান সুনসান নীরবতা। একটি পাকা বাড়ির পাঁচ-ছয়টি কক্ষ। উঠানে কবরের মতো গর্ত। বারান্দায় লাশ নেওয়ার খাটিয়া। রান্নাঘরে পড়ে আছে কাটা মাছ ও তরিতরকারি।
বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে পুলিশ বেশ কিছু ডায়েরি ও হাতে লেখা কাগজপত্র উদ্ধার করে। কিছু বাংলায়, কিছু ইংরেজিতে লেখা। ইংরেজিতে একটি ডায়েরিতে লেখা ছিল, ‘আমরা পৃথিবীর একমাত্র পরিবার যারা স্বাধীন ও আত্মনির্ভরশীল। মোহাম্মদের আইনের বাইরে এবং সব ধর্মের সব কার্যকলাপের বাইরে। তাহলে আমরা কে? আমরা হলাম আদম। সবার উপরে আদম সত্য, জুলুমের বিচারের ব্যবস্থা করিব।’—এ ধরনের কথাবার্তা ছিল সেখানে।
পরে পুলিশের বক্তব্য এবং পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত বিভিন্ন প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, এই পরিবারের সঙ্গে প্রতিবেশী বা এলাকার লোকজনের কোনো সম্পর্ক ছিল না। আনোয়ার দরবেশ নামে এক লোক ‘আদম ধর্ম’-এর প্রতিষ্ঠাতা দাবি করতেন। নিজেকে আনোয়ার আদম বলে পরিচয় দিতেন। তিনিই তৈরি করেছিলেন এই কাল্ট। তাঁর ছোট ভাই আব্দুল হান্নান সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, তাঁর ভাই (আনোয়ার দরবেশ) হার্ট অ্যাটাকে মারা যাওয়ার পর তাঁর পরিবারের সবাই খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করে। এরপর থেকেই তাঁদের আত্মীয়তা নষ্ট হয়ে গেছে।
অবশ্য আনোয়ার দরবেশের বাড়িতে খ্রিষ্টধর্মের সঙ্গে সম্পর্কিত কোনো নথিপত্র বা বইপুস্তক পাওয়া যায়নি। স্থানীয় গির্জাতেও তাঁরা কখনো যাননি।
এই আনোয়ার দরবেশের কার্যক্রম সম্পর্কে ওই সময় পত্রপত্রিকায় যেসব তথ্য বেরোয় সেগুলো হলো—সেনাবাহিনী থেকে অবসর নেওয়ার পরে তিনি ধর্মে মন দেন। এলাকার মানুষ দরবেশ, ফকির ও পীর বলে ডাকতে শুরু করেন। তবে ধীরে ধীরে চিন্তায় পরিবর্তন আসে। প্রচলিত ইসলাম ধর্মের বাইরে নানা কথা বলতে শুরু করেন তিনি। এ নিয়ে এলাকায় অনেকের সঙ্গে তর্কও হতো প্রায়ই। এ কারণে একবার লোকজন তাঁকে মারধরও করে। বলতে গেলে এরপরই আনোয়ার একঘরে হয়ে পড়েন। নিভৃতে থাকতে শুরু করেন। স্থানীয়দের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেন। পরিবারের লোকজন ধীরে ধীরে তাঁর মুরিদ হতে শুরু করে। পরিবারের বাইরেও কয়েকজন মুরিদ ছিলেন বলে জানা যায়।
২০০০ সালের ১১ জুলাই ঢাকার একটি হাসপাতালে মারা যান আনোয়ার। মৃত্যু পরবর্তী কার্যক্রম সম্পর্কে তিনি আগেই লিখে গিয়েছিলেন। তিনি লিখেছিলেন, ‘মৃত্যুর পরে আমার কোনো জানাজা দিবা না, গোসল করাবা না, কাফনের কাপড় পরাবা না। যে কাপড় পরে মারা যাব, সেই কাপড়ে সেই অবস্থাতেই আমাকে কবর দিবা। কোনো কবরখানায় আমাকে নিবে না, বাড়ির ভিতরে গর্ত খুঁড়ে আমাকে কবর দিবে। আমার মাথা থাকবে পূর্বে, পা থাকবে পশ্চিমে আর মুখ দক্ষিণ দিকে ঘুরানো থাকবে। যদি অন্য রকমভাবে কবর দাও, তাহলে আমি কঠিন প্রতিশোধ নিব।’
পরিবারের লোকজন সেই নির্দেশনা অনুযায়ীই কবর দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু স্থানীয়দের বাধায় প্রশাসনের উপস্থিতিতে গোসল, কাফন পরানো এবং জানাজা নামাজের পর তাঁকে ইসলামি রীতিতে কবর দেওয়া হয়।
আনোয়ার আদমের জানাজা এবং দাফন নিয়ে জটিলতায় আদম পরিবারটি ক্রমেই আরও জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। পরিবারটির ওপর নির্যাতন অব্যাহত থাকে। আদম পরিবারের গৃহকর্মী রিনার ভাষ্যমতে, ‘নানা ভাবে তারা ফার্নিচার, টিউবওয়েল চুরি করে নিয়ে গেছে। টয়লেটের দরজা ভেঙে ফেলেছে। বাথরুমের পাইপ নিয়ে গেছে। ওরা বাড়ির ভেতর ঢুকে গাছ কাটার চেষ্টা করেছে।’
এ ঘটনার পর পুরো পরিবার ঢাকায় চলে যায়। বড় ছেলে আরিফ পরিবারের খরচ চালাতেন। কিন্তু তিনি কী করতেন তা স্পষ্ট নয়। অবশ্য ছোট ছেলের ডায়েরিতে খুনের ইঙ্গিত আছে। তিনি লিখেছেন, ‘So who we are? I have already given my and our identity as ‘‘ADAMS’’...We have come to establish the truth and reallity in to the world but our bodies were killed again and again by mohamod’s rules, law and relisions. ’
আনোয়ার আদম মারা যাওয়ার পর বড় ছেলে আরিফ বাবার আধ্যাত্মিক উত্তরাধিকারী হিসেবে ‘আদম ধর্ম’-এর নেতার ভূমিকা পালন করেন। আরিফ সম্বন্ধে তাঁর পরিবারের অত্যন্ত উঁচু ধারণা ছিল। এ প্রসঙ্গে তাঁর ছোট বোন শারমিন ডায়েরিতে লিখেছিলেন—‘My brother worked as dean in many 52 international university in Dhaka and in outside. He is extraordinary smart, intelligent and individual and intellectual man I ever met. There is no doubt. He is different. I am very proud to be his sister...My brother left by muhamad’s attacked.’
২০০৫ সালে ঢাকায় আরিফ মারা যান নাকি খুন হন, সেটিও রহস্য। এরপর পরিবারটি গ্রামে ফিরে যায়। তখন পরিবারের একমাত্র পুরুষ সদস্য রাহাত। সেখানে পরিবারটি কীভাবে জীবিকা নির্বাহ করত সেটি জানা যায় না। রাহাতের ডায়েরিতে ইংরেজিতে লেখা ছিল, ‘We are the only family in the world that is independent and selfdepanded. We are the only one family in the world that is totally independed and selfdepended and out of mohamod’s rules. , law and relisious activities and relisions. ’
বড় বোন আক্তারী আনোয়ার বাবার প্রতিষ্ঠিত আদম ধর্মের পুরোহিত হয়ে বসেন। মৃত বাবা ও ভাইয়ের আত্মার সঙ্গে কথা বলতে পুরো পরিবার নিয়মিত ধ্যান করত। আক্তারী বেগমের ওপরই বাবার আত্মা ভর করত। তাঁর মুখ দিয়েই আসত বিভিন্ন আদেশ-নিষেধ।
ডায়েরি এবং হাতে লেখা কাগজপত্র অনুযায়ী, তাঁদের বিশ্বাস ছিল—আদম হচ্ছেন বিশ্বের প্রথম মানুষ। তিনিই সবকিছু সৃষ্টি করেছেন। অন্য সব মানুষ আদমেরই অংশ (বনি আদম)। আদম বিভিন্ন সময়ে মারা যান, আবার পরবর্তী সময়ে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে জন্ম গ্রহণ করেন। বিংশ শতাব্দীতে বাংলাদেশে আদম হিসেবে জন্ম গ্রহণ করেছিলেন আনোয়ার আদম। নবী মোহাম্মদের (সা.) অনুসারীদের (শরিয়তপন্থী) তাঁরা ঘৃণা করতেন।
প্রত্যেক সদস্যই মৃত্যুর আগে ডায়েরিতে কিছু না কিছু লিখে গেছেন। অধিকাংশ লেখাই ইংরেজিতে। তবে মায়ের হয়ে তাঁর কথাগুলো লিখে দিয়েছেন মেয়ে। এমনকি দুটি শিশুর কথাও ডায়েরিতে রয়েছে। অবশ্য তাদেরটি কেউ লিখে দিয়ে থাকতে পারে।
মূলত বাবা-ভাইয়ের মৃত্যুর কিছুদিন পর তাঁরা আত্মহত্যারই পরিকল্পনা করছিলেন। বাবা ও বড় ভাইয়ের সঙ্গে মিলিত হওয়ার আকাঙ্ক্ষা থেকেই তাঁরা এমন ভেবেছিলেন। ডায়েরির লেখাজোখা থেকে তেমনটিই জানা যায়। ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দেওয়ার আগে তাঁরা গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যারও আয়োজন করেছিলেন।
এ ঘটনা নিয়ে একটি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছিল Mental Health, Religion & Culture সাময়িকীতে, ২০১০ সালের এপ্রিল মাসে। ডা. নাসিমা সেলিমের সেই গবেষণাপত্রের শিরোনাম ‘An extraordinary truth? The Adam ‘‘suicide’’ notes from Bangladesh’।
সেখানে ডা. নাসিমা সেলিম লিখেছেন: আনোয়ার আদমের চিন্তাধারায় প্রোথিত হয়ে গিয়েছিল শরিয়তবিরোধী ধ্যানধারণা। ১৯৯৫ সালে আনোয়ার আদমের চেতনায় যে পরিবর্তন তৈরি হয়েছিল, মনোবিজ্ঞানের ভাষায় একে বলে বিভ্রান্তি (Delusion)। পরিবারের প্রত্যেকেই সেই বিভ্রান্তির শিকার হয়েছিলেন, এটিকে বলে Shared Delusion বা যৌথ বিভ্রান্তি।
এ বিষয়ে ডা. নাসিমা সেলিম লিখেছেন: Shared Psychotic Disorder (SPD), referring to a condition where all members of a family share the delusions This is an extremely rare condition, but one that has been found in many different cultures.
এ ছাড়া নাসিমা সেলিম এই রোগকে সম্ভাব্য `Folie a famille' বলে চিহ্নিত করেছেন। ‘ফলি অ্যা ফ্যামিলি’ রোগে সাধারণত পরিবারের সদস্যরা অদ্ভুত আচরণ শুরু করে। বিশেষত একজন সদস্যের কোনো অস্বাভাবিক প্রবণতা অন্যদের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়ে।
এ রকম একটি ঘটনা ঘটেছিল ২০০৮ সালে সুইডেনে। উরুসুলা এরিকসন নামে এক নারী রাস্তায় ট্রাকের নিচে চাপা পড়ার চেষ্টা করেন। ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান। একটু পরেই তাঁর যমজ বোন সাবিনা এরিকসনও একইভাবে হাইওয়েতে বের হয়ে গাড়ির সঙ্গে ধাক্কা খাওয়ার চেষ্টা করেন। ভাগ্যক্রমে তিনিও বেঁচে যান। মনোবিদেরা বলেন, তাঁরা ‘ফলি অ্যা ফ্যামিলি’ রোগের শিকার।
এ ছাড়া ২০১৬ সালে অস্ট্রেলিয়ায় পাঁচ সদস্যের একটি পরিবার বাড়ি থেকে বের হয়ে ১ হাজার ৬০০ কিলোমিটার দূরে চলে যান। কিন্তু তাদের কোনো উদ্দেশ্য বা পরিকল্পনা ছিল না। স্রেফ একজন ভেবেছেন বাড়ি থেকে দূরে গেলেই ভালো! বাকিরাও তাঁকে অনুসরণ করেছেন!

কেনিয়াতে যিশুর সাক্ষাৎ পেতে দীর্ঘ উপবাসে মারা যাওয়া প্রায় অর্ধশত মানুষের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। একই স্থানে লাশগুলো পাওয়া গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, আরও অনেক লাশ পাওয়া যাবে। কারণ, যেই ধর্মপ্রচারকের নির্দেশে এই উপবাস শুরু হয়েছিল, কমপক্ষে তিনটি গ্রামের মানুষ তাঁর অনুসারী। এটিকে একটি গণ-আত্মহত্যা বলেই মনে করছে প্রশাসন।
এ ধরনের জনগোষ্ঠীকে বলে ‘কাল্ট’। এরা প্রচলিত ধর্মীয় আচারের বাইরে গিয়ে কঠোর বা সহিংস পন্থা বেছে নেয়। সৃষ্টিকর্তার নৈকট্য লাভের আশায় অথবা অসীমে মিশে যেতে স্বেচ্ছায় প্রাণ বিসর্জন দেয়, কখনো কখনো বলি দেওয়ার ঘটনাও ঘটে।
আজ থেকে ১৬ বছর আগে ঠিক এ ধরনেই একটি ঘটনা ঘটেছিল ময়মনসিংহ জেলায়। এক পরিবারের নয়জন সদস্য ট্রেনের নিচে আত্মাহুতি দিয়েছিলেন। তাঁদের মধ্যে শিশুও ছিল।
ঘটনাকাল ২০০৭ সালের ১১ জুলাই, বেলা ৩টা ১০ মিনিট। জামালপুরের জগন্নাথগঞ্জ স্টেশন থেকে ছেড়ে আসা জিএম এক্সপ্রেস ২৫৪ লোকাল ট্রেনটি ময়মনসিংহ পৌরসভার কাশর এলাকার ইটখোলায় পৌঁছালে হঠাৎ চালকের নজরে পড়ে রেলপথের বাঁ পাশ থেকে বেশ কয়েকজন নারী-পুরুষ একে অন্যকে ধরাধরি করে রেললাইনের দিকে আসছে। এরপর তাঁরা রেললাইন ধরে চুপচাপ বসে পড়েন। প্রথমে চালক ব্যাপারটা বুঝে উঠতে পারেননি। ভেবেছিলেন তাঁরা হয়তো রেললাইন পার হচ্ছেন। কিন্তু যখন বুঝতে পেরেছেন ততক্ষণে কিছুই করার ছিল না। নয়জনকে ছিন্নভিন্ন করে দিয়ে যায় রেলগাড়ির চাকা।
এরপর চালক ট্রেনটি থামিয়ে দেন। মুহূর্তে শত শত মানুষ জড়ো হয়। খবর পেয়ে দ্রুত ছুটে আসে পুলিশ। স্থানীয়রা জানান তাঁদের পরিচয়। নিহতদের মধ্যে ছিলেন মা,দুই ছেলে, চার মেয়ে এবং দুই নাতি-নাতনি। তাঁরা হলেন- মা হেনা আনোয়ার (৬০), ছেলে আরিফ আনোয়ার (৩০) ও রাহাত আনোয়ার (২২), মেয়ে আক্তারী আনোয়ার (৩৫), মুর্শেদা আনোয়ার (২৭), মুন আনোয়ার ওরফে মবি (৩০) ও শবনম আনোয়ার (১৮), নাতি মৌলা আনোয়ার (৮) এবং নাতনি মৌ আনোয়ার (১০)। রেললাইনের পাশেই তাদের বাড়ি।
এ নিয়ে পরের দিন দেশে সব জাতীয় দৈনিকে শিরোনাম হয়। সারা দেশে তোলপাড় শুরু হয়। সাংবাদিকদের ভিড় লেগে যায় ওই এলাকায়। তাৎক্ষণিকভাবে তাঁদের বাড়ি গিয়ে সাংবাদিকেরা দেখতে পান সুনসান নীরবতা। একটি পাকা বাড়ির পাঁচ-ছয়টি কক্ষ। উঠানে কবরের মতো গর্ত। বারান্দায় লাশ নেওয়ার খাটিয়া। রান্নাঘরে পড়ে আছে কাটা মাছ ও তরিতরকারি।
বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে পুলিশ বেশ কিছু ডায়েরি ও হাতে লেখা কাগজপত্র উদ্ধার করে। কিছু বাংলায়, কিছু ইংরেজিতে লেখা। ইংরেজিতে একটি ডায়েরিতে লেখা ছিল, ‘আমরা পৃথিবীর একমাত্র পরিবার যারা স্বাধীন ও আত্মনির্ভরশীল। মোহাম্মদের আইনের বাইরে এবং সব ধর্মের সব কার্যকলাপের বাইরে। তাহলে আমরা কে? আমরা হলাম আদম। সবার উপরে আদম সত্য, জুলুমের বিচারের ব্যবস্থা করিব।’—এ ধরনের কথাবার্তা ছিল সেখানে।
পরে পুলিশের বক্তব্য এবং পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত বিভিন্ন প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, এই পরিবারের সঙ্গে প্রতিবেশী বা এলাকার লোকজনের কোনো সম্পর্ক ছিল না। আনোয়ার দরবেশ নামে এক লোক ‘আদম ধর্ম’-এর প্রতিষ্ঠাতা দাবি করতেন। নিজেকে আনোয়ার আদম বলে পরিচয় দিতেন। তিনিই তৈরি করেছিলেন এই কাল্ট। তাঁর ছোট ভাই আব্দুল হান্নান সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, তাঁর ভাই (আনোয়ার দরবেশ) হার্ট অ্যাটাকে মারা যাওয়ার পর তাঁর পরিবারের সবাই খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করে। এরপর থেকেই তাঁদের আত্মীয়তা নষ্ট হয়ে গেছে।
অবশ্য আনোয়ার দরবেশের বাড়িতে খ্রিষ্টধর্মের সঙ্গে সম্পর্কিত কোনো নথিপত্র বা বইপুস্তক পাওয়া যায়নি। স্থানীয় গির্জাতেও তাঁরা কখনো যাননি।
এই আনোয়ার দরবেশের কার্যক্রম সম্পর্কে ওই সময় পত্রপত্রিকায় যেসব তথ্য বেরোয় সেগুলো হলো—সেনাবাহিনী থেকে অবসর নেওয়ার পরে তিনি ধর্মে মন দেন। এলাকার মানুষ দরবেশ, ফকির ও পীর বলে ডাকতে শুরু করেন। তবে ধীরে ধীরে চিন্তায় পরিবর্তন আসে। প্রচলিত ইসলাম ধর্মের বাইরে নানা কথা বলতে শুরু করেন তিনি। এ নিয়ে এলাকায় অনেকের সঙ্গে তর্কও হতো প্রায়ই। এ কারণে একবার লোকজন তাঁকে মারধরও করে। বলতে গেলে এরপরই আনোয়ার একঘরে হয়ে পড়েন। নিভৃতে থাকতে শুরু করেন। স্থানীয়দের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেন। পরিবারের লোকজন ধীরে ধীরে তাঁর মুরিদ হতে শুরু করে। পরিবারের বাইরেও কয়েকজন মুরিদ ছিলেন বলে জানা যায়।
২০০০ সালের ১১ জুলাই ঢাকার একটি হাসপাতালে মারা যান আনোয়ার। মৃত্যু পরবর্তী কার্যক্রম সম্পর্কে তিনি আগেই লিখে গিয়েছিলেন। তিনি লিখেছিলেন, ‘মৃত্যুর পরে আমার কোনো জানাজা দিবা না, গোসল করাবা না, কাফনের কাপড় পরাবা না। যে কাপড় পরে মারা যাব, সেই কাপড়ে সেই অবস্থাতেই আমাকে কবর দিবা। কোনো কবরখানায় আমাকে নিবে না, বাড়ির ভিতরে গর্ত খুঁড়ে আমাকে কবর দিবে। আমার মাথা থাকবে পূর্বে, পা থাকবে পশ্চিমে আর মুখ দক্ষিণ দিকে ঘুরানো থাকবে। যদি অন্য রকমভাবে কবর দাও, তাহলে আমি কঠিন প্রতিশোধ নিব।’
পরিবারের লোকজন সেই নির্দেশনা অনুযায়ীই কবর দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু স্থানীয়দের বাধায় প্রশাসনের উপস্থিতিতে গোসল, কাফন পরানো এবং জানাজা নামাজের পর তাঁকে ইসলামি রীতিতে কবর দেওয়া হয়।
আনোয়ার আদমের জানাজা এবং দাফন নিয়ে জটিলতায় আদম পরিবারটি ক্রমেই আরও জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। পরিবারটির ওপর নির্যাতন অব্যাহত থাকে। আদম পরিবারের গৃহকর্মী রিনার ভাষ্যমতে, ‘নানা ভাবে তারা ফার্নিচার, টিউবওয়েল চুরি করে নিয়ে গেছে। টয়লেটের দরজা ভেঙে ফেলেছে। বাথরুমের পাইপ নিয়ে গেছে। ওরা বাড়ির ভেতর ঢুকে গাছ কাটার চেষ্টা করেছে।’
এ ঘটনার পর পুরো পরিবার ঢাকায় চলে যায়। বড় ছেলে আরিফ পরিবারের খরচ চালাতেন। কিন্তু তিনি কী করতেন তা স্পষ্ট নয়। অবশ্য ছোট ছেলের ডায়েরিতে খুনের ইঙ্গিত আছে। তিনি লিখেছেন, ‘So who we are? I have already given my and our identity as ‘‘ADAMS’’...We have come to establish the truth and reallity in to the world but our bodies were killed again and again by mohamod’s rules, law and relisions. ’
আনোয়ার আদম মারা যাওয়ার পর বড় ছেলে আরিফ বাবার আধ্যাত্মিক উত্তরাধিকারী হিসেবে ‘আদম ধর্ম’-এর নেতার ভূমিকা পালন করেন। আরিফ সম্বন্ধে তাঁর পরিবারের অত্যন্ত উঁচু ধারণা ছিল। এ প্রসঙ্গে তাঁর ছোট বোন শারমিন ডায়েরিতে লিখেছিলেন—‘My brother worked as dean in many 52 international university in Dhaka and in outside. He is extraordinary smart, intelligent and individual and intellectual man I ever met. There is no doubt. He is different. I am very proud to be his sister...My brother left by muhamad’s attacked.’
২০০৫ সালে ঢাকায় আরিফ মারা যান নাকি খুন হন, সেটিও রহস্য। এরপর পরিবারটি গ্রামে ফিরে যায়। তখন পরিবারের একমাত্র পুরুষ সদস্য রাহাত। সেখানে পরিবারটি কীভাবে জীবিকা নির্বাহ করত সেটি জানা যায় না। রাহাতের ডায়েরিতে ইংরেজিতে লেখা ছিল, ‘We are the only family in the world that is independent and selfdepanded. We are the only one family in the world that is totally independed and selfdepended and out of mohamod’s rules. , law and relisious activities and relisions. ’
বড় বোন আক্তারী আনোয়ার বাবার প্রতিষ্ঠিত আদম ধর্মের পুরোহিত হয়ে বসেন। মৃত বাবা ও ভাইয়ের আত্মার সঙ্গে কথা বলতে পুরো পরিবার নিয়মিত ধ্যান করত। আক্তারী বেগমের ওপরই বাবার আত্মা ভর করত। তাঁর মুখ দিয়েই আসত বিভিন্ন আদেশ-নিষেধ।
ডায়েরি এবং হাতে লেখা কাগজপত্র অনুযায়ী, তাঁদের বিশ্বাস ছিল—আদম হচ্ছেন বিশ্বের প্রথম মানুষ। তিনিই সবকিছু সৃষ্টি করেছেন। অন্য সব মানুষ আদমেরই অংশ (বনি আদম)। আদম বিভিন্ন সময়ে মারা যান, আবার পরবর্তী সময়ে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে জন্ম গ্রহণ করেন। বিংশ শতাব্দীতে বাংলাদেশে আদম হিসেবে জন্ম গ্রহণ করেছিলেন আনোয়ার আদম। নবী মোহাম্মদের (সা.) অনুসারীদের (শরিয়তপন্থী) তাঁরা ঘৃণা করতেন।
প্রত্যেক সদস্যই মৃত্যুর আগে ডায়েরিতে কিছু না কিছু লিখে গেছেন। অধিকাংশ লেখাই ইংরেজিতে। তবে মায়ের হয়ে তাঁর কথাগুলো লিখে দিয়েছেন মেয়ে। এমনকি দুটি শিশুর কথাও ডায়েরিতে রয়েছে। অবশ্য তাদেরটি কেউ লিখে দিয়ে থাকতে পারে।
মূলত বাবা-ভাইয়ের মৃত্যুর কিছুদিন পর তাঁরা আত্মহত্যারই পরিকল্পনা করছিলেন। বাবা ও বড় ভাইয়ের সঙ্গে মিলিত হওয়ার আকাঙ্ক্ষা থেকেই তাঁরা এমন ভেবেছিলেন। ডায়েরির লেখাজোখা থেকে তেমনটিই জানা যায়। ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দেওয়ার আগে তাঁরা গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যারও আয়োজন করেছিলেন।
এ ঘটনা নিয়ে একটি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছিল Mental Health, Religion & Culture সাময়িকীতে, ২০১০ সালের এপ্রিল মাসে। ডা. নাসিমা সেলিমের সেই গবেষণাপত্রের শিরোনাম ‘An extraordinary truth? The Adam ‘‘suicide’’ notes from Bangladesh’।
সেখানে ডা. নাসিমা সেলিম লিখেছেন: আনোয়ার আদমের চিন্তাধারায় প্রোথিত হয়ে গিয়েছিল শরিয়তবিরোধী ধ্যানধারণা। ১৯৯৫ সালে আনোয়ার আদমের চেতনায় যে পরিবর্তন তৈরি হয়েছিল, মনোবিজ্ঞানের ভাষায় একে বলে বিভ্রান্তি (Delusion)। পরিবারের প্রত্যেকেই সেই বিভ্রান্তির শিকার হয়েছিলেন, এটিকে বলে Shared Delusion বা যৌথ বিভ্রান্তি।
এ বিষয়ে ডা. নাসিমা সেলিম লিখেছেন: Shared Psychotic Disorder (SPD), referring to a condition where all members of a family share the delusions This is an extremely rare condition, but one that has been found in many different cultures.
এ ছাড়া নাসিমা সেলিম এই রোগকে সম্ভাব্য `Folie a famille' বলে চিহ্নিত করেছেন। ‘ফলি অ্যা ফ্যামিলি’ রোগে সাধারণত পরিবারের সদস্যরা অদ্ভুত আচরণ শুরু করে। বিশেষত একজন সদস্যের কোনো অস্বাভাবিক প্রবণতা অন্যদের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়ে।
এ রকম একটি ঘটনা ঘটেছিল ২০০৮ সালে সুইডেনে। উরুসুলা এরিকসন নামে এক নারী রাস্তায় ট্রাকের নিচে চাপা পড়ার চেষ্টা করেন। ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান। একটু পরেই তাঁর যমজ বোন সাবিনা এরিকসনও একইভাবে হাইওয়েতে বের হয়ে গাড়ির সঙ্গে ধাক্কা খাওয়ার চেষ্টা করেন। ভাগ্যক্রমে তিনিও বেঁচে যান। মনোবিদেরা বলেন, তাঁরা ‘ফলি অ্যা ফ্যামিলি’ রোগের শিকার।
এ ছাড়া ২০১৬ সালে অস্ট্রেলিয়ায় পাঁচ সদস্যের একটি পরিবার বাড়ি থেকে বের হয়ে ১ হাজার ৬০০ কিলোমিটার দূরে চলে যান। কিন্তু তাদের কোনো উদ্দেশ্য বা পরিকল্পনা ছিল না। স্রেফ একজন ভেবেছেন বাড়ি থেকে দূরে গেলেই ভালো! বাকিরাও তাঁকে অনুসরণ করেছেন!

একদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখলেন, একটা ই-মেইল এসেছে যার ‘সাবজেক্ট’ অপশনে লেখা ‘টার্মিনেশন লেটার’। ঘুম ঘুম চোখে এই ই-মেইল দেখলে স্বাভাবিকভাবেই ঘুম তো থাক, অন্য সব ভাবনাও হারাম হয়ে যাওয়ার কথা! তখন ভাবনায় আসবে ঠিক কি কারণে চাকরি থেকে ছাঁটাই হতে হলো!
১ দিন আগে
বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক থেকে শুরু করে স্বামী-স্ত্রীর ব্যক্তিগত ঝগড়া—সবকিছুতেই এখন থেকে গুনতে হবে মোটা অঙ্কের জরিমানা। চীনের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় ইউনান প্রদেশের লিংক্যাং গ্রামের কমিটি এমন নিয়ম জারি করেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ‘গ্রামের নিয়মাবলি: সবাই সমান’ শিরোনামের একটি নোটিশ ভাইরাল হওয়ার...
৩ দিন আগে
ইতালির আব্রুজ্জো অঞ্চলের মাউন্ট জিরিফালকোর পাদদেশে অবস্থিত এক প্রাচীন গ্রাম পালিয়ারা দে মার্সি। জনশূন্য এই গ্রামে মানুষের চেয়ে বিড়ালের সংখ্যাই বেশি। গত কয়েক দশক ধরে গ্রামটি নিস্তব্ধতায় ডুবে ছিল, কিন্তু গত মার্চ মাস থেকে সেখানে বইছে খুশির জোয়ার। কারণ, দীর্ঘ ৩০ বছর পর এই গ্রামে প্রথম কোনো শিশুর জন্ম
৩ দিন আগে
ক্যালিফোর্নিয়ার সুজ লোপেজ যখন তাঁর ছোট ছেলে রিউকে কোলে নিয়ে বসেন, তখন এক অলৌকিক বিস্ময়ে স্তব্ধ হয়ে যান। কারণ, ছোট্ট রিউ তাঁর মায়ের জরায়ুর ভেতরে নয়, বেড়ে উঠেছিল পেটের ভেতরে একটি বিশাল আকৃতির ওভারিয়ান সিস্টের আড়ালে। চিকিৎসাবিজ্ঞানে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ এবং বিরল এই ঘটনাকে ‘মিরাকল’ বা অলৌকিক বলছেন চিকিৎ
৫ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

একদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখলেন, একটা ই-মেইল এসেছে যার ‘সাবজেক্ট’ অপশনে লেখা ‘টার্মিনেশন লেটার’। ঘুম ঘুম চোখে এই ই-মেইল দেখলে স্বাভাবিকভাবেই ঘুম তো থাক, অন্য সব ভাবনাও হারাম হয়ে যাওয়ার কথা! তখন ভাবনায় আসবে ঠিক কি কারণে চাকরি থেকে ছাঁটাই হতে হলো! ভাবতে ভাবতে মাথা খারাপ হওয়ার জোগাড় এ সময় চোখে পড়ল, যে কোম্পানি থেকে এই ই-মেইল এসেছে, সেখানে আপনি চাকরিই করেন না, কখনো করেনওনি! ভাবুন তো কেমন লাগার কথা।
এমনই ঘটনা ঘটেছে এক নারীর সঙ্গে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্স-এ সাইমন ইনগারি নামের একজন ক্যারিয়ার কাউন্সিলর তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে ঘটে যাওয়া এই ঘটনা শেয়ার করেছেন।
সাইমন ইনগারি তাঁর টুইটে জানান, তাঁর স্ত্রী এমন একটি কোম্পানি থেকে ছাঁটাইয়ের ই-মেইল পেয়েছেন, যেখানে তিনি কখনো কাজই করেননি। ইমেইল পাওয়ার পর তিনি এতটাই আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলেন যে তিনি পুরো স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলেন।
ইনগারি বলেন, ‘আমার স্ত্রী ভাবতে শুরু করেছিল, সে কি কোনো ডেডলাইন মিস করেছিল, নাকি তাঁর বড় কোনো ভুল হয়েছিল। পরে চেক করে দেখে ই-মেইল প্রেরক কোম্পানিটি তাঁর কর্মস্থলই নয়।’
ইনগারি তাঁর পোস্টে লেখেন, ‘আমার স্ত্রী একটি টার্মিনেশন ইমেইল পেয়েছে। ইমেইলটি দেখেই তাঁর বুক ধক করে ওঠে। এক সেকেন্ডের জন্য সে থমকে যায়। কোনো ডেডলাইন মিস করেছে? কিছু ভুল বলেছে? শেষে জানা গেল, যে কোম্পানিতে সে কখনো চাকরিই করেনি, সেখান থেকেই তাঁকে “বরখাস্ত” করা হয়েছে।’
এই ঘটনার মাধ্যমে ওই কোম্পানির এইচআর বিভাগের অসতর্কতার বিষয়টি তুলে ধরে ইনগারি অনুরোধ জানান, ভবিষ্যতে ইমেইল পাঠানোর সময় যেন প্রাপকের আইডি আরও ভালোভাবে যাচাই করা হয়। তিনি লেখেন, ‘প্রিয় এইচআর, দয়া করে পরেরবার ইমেইল আইডিটা একটু ভালো করে দেখবেন। এমন ভুলে তো কারও সত্যিই হার্ট অ্যাটাক হয়ে যেতে পারে।’
এই পোস্ট নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে। অনেক ব্যবহারকারী এমন ভুলের সম্ভাব্য গুরুতর পরিণতির কথা তুলে ধরেন। কেউ কেউ ঘটনাটিকে হাস্যরসের চোখে দেখলেও, অন্যরা এটিকে আধুনিক করপোরেট দুনিয়ায় বাড়তে থাকা অসতর্কতা ও চাকরির অনিশ্চয়তার প্রতিফলন বলে মন্তব্য করেন।
একজন ব্যবহারকারী লিখেছেন, ‘তাঁর উচিত একটি অপ্রত্যাশিত এবং কঠোর জবাব দেওয়া। এতে করে অন্তত তাঁরা বুঝতে পারার আগেই যে ভুল ঠিকানায় ইমেইল পাঠানো হয়েছে, তিনি নিজের ক্ষোভ উগরে দেওয়ার সুযোগ পাবেন।’
আরেকজন মন্তব্য করেন, ‘এটা কোনো ছোটখাটো ভুল নয়। একটি ভুল ইমেইল কারও পুরো দিন, সপ্তাহ—এমনকি মানসিক স্বাস্থ্যের ওপরও প্রভাব ফেলতে পারে। এইচআর সারাদিন সহমর্মিতার কথা বলে, অথচ স্প্যামের মতো করে বরখাস্তের ইমেইল পাঠায়।’
আরেকজন বলেন, ‘মানবিক কোনো মান যাচাই ছাড়াই যখন কোম্পানিগুলো সব অটোমেশন বা স্বয়ংক্রিয় করে ফেলে, তখনই এমনটা ঘটে। এটি অত্যন্ত নিম্নমানের পরিচালনা এবং ব্র্যান্ডের জন্য ক্ষতিকর। ভাগ্য ভালো যে এটি কেবল একটি ভুল সতর্কবার্তা ছিল।’

একদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখলেন, একটা ই-মেইল এসেছে যার ‘সাবজেক্ট’ অপশনে লেখা ‘টার্মিনেশন লেটার’। ঘুম ঘুম চোখে এই ই-মেইল দেখলে স্বাভাবিকভাবেই ঘুম তো থাক, অন্য সব ভাবনাও হারাম হয়ে যাওয়ার কথা! তখন ভাবনায় আসবে ঠিক কি কারণে চাকরি থেকে ছাঁটাই হতে হলো! ভাবতে ভাবতে মাথা খারাপ হওয়ার জোগাড় এ সময় চোখে পড়ল, যে কোম্পানি থেকে এই ই-মেইল এসেছে, সেখানে আপনি চাকরিই করেন না, কখনো করেনওনি! ভাবুন তো কেমন লাগার কথা।
এমনই ঘটনা ঘটেছে এক নারীর সঙ্গে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্স-এ সাইমন ইনগারি নামের একজন ক্যারিয়ার কাউন্সিলর তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে ঘটে যাওয়া এই ঘটনা শেয়ার করেছেন।
সাইমন ইনগারি তাঁর টুইটে জানান, তাঁর স্ত্রী এমন একটি কোম্পানি থেকে ছাঁটাইয়ের ই-মেইল পেয়েছেন, যেখানে তিনি কখনো কাজই করেননি। ইমেইল পাওয়ার পর তিনি এতটাই আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলেন যে তিনি পুরো স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলেন।
ইনগারি বলেন, ‘আমার স্ত্রী ভাবতে শুরু করেছিল, সে কি কোনো ডেডলাইন মিস করেছিল, নাকি তাঁর বড় কোনো ভুল হয়েছিল। পরে চেক করে দেখে ই-মেইল প্রেরক কোম্পানিটি তাঁর কর্মস্থলই নয়।’
ইনগারি তাঁর পোস্টে লেখেন, ‘আমার স্ত্রী একটি টার্মিনেশন ইমেইল পেয়েছে। ইমেইলটি দেখেই তাঁর বুক ধক করে ওঠে। এক সেকেন্ডের জন্য সে থমকে যায়। কোনো ডেডলাইন মিস করেছে? কিছু ভুল বলেছে? শেষে জানা গেল, যে কোম্পানিতে সে কখনো চাকরিই করেনি, সেখান থেকেই তাঁকে “বরখাস্ত” করা হয়েছে।’
এই ঘটনার মাধ্যমে ওই কোম্পানির এইচআর বিভাগের অসতর্কতার বিষয়টি তুলে ধরে ইনগারি অনুরোধ জানান, ভবিষ্যতে ইমেইল পাঠানোর সময় যেন প্রাপকের আইডি আরও ভালোভাবে যাচাই করা হয়। তিনি লেখেন, ‘প্রিয় এইচআর, দয়া করে পরেরবার ইমেইল আইডিটা একটু ভালো করে দেখবেন। এমন ভুলে তো কারও সত্যিই হার্ট অ্যাটাক হয়ে যেতে পারে।’
এই পোস্ট নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে। অনেক ব্যবহারকারী এমন ভুলের সম্ভাব্য গুরুতর পরিণতির কথা তুলে ধরেন। কেউ কেউ ঘটনাটিকে হাস্যরসের চোখে দেখলেও, অন্যরা এটিকে আধুনিক করপোরেট দুনিয়ায় বাড়তে থাকা অসতর্কতা ও চাকরির অনিশ্চয়তার প্রতিফলন বলে মন্তব্য করেন।
একজন ব্যবহারকারী লিখেছেন, ‘তাঁর উচিত একটি অপ্রত্যাশিত এবং কঠোর জবাব দেওয়া। এতে করে অন্তত তাঁরা বুঝতে পারার আগেই যে ভুল ঠিকানায় ইমেইল পাঠানো হয়েছে, তিনি নিজের ক্ষোভ উগরে দেওয়ার সুযোগ পাবেন।’
আরেকজন মন্তব্য করেন, ‘এটা কোনো ছোটখাটো ভুল নয়। একটি ভুল ইমেইল কারও পুরো দিন, সপ্তাহ—এমনকি মানসিক স্বাস্থ্যের ওপরও প্রভাব ফেলতে পারে। এইচআর সারাদিন সহমর্মিতার কথা বলে, অথচ স্প্যামের মতো করে বরখাস্তের ইমেইল পাঠায়।’
আরেকজন বলেন, ‘মানবিক কোনো মান যাচাই ছাড়াই যখন কোম্পানিগুলো সব অটোমেশন বা স্বয়ংক্রিয় করে ফেলে, তখনই এমনটা ঘটে। এটি অত্যন্ত নিম্নমানের পরিচালনা এবং ব্র্যান্ডের জন্য ক্ষতিকর। ভাগ্য ভালো যে এটি কেবল একটি ভুল সতর্কবার্তা ছিল।’

কেনিয়াতে যিশুর সাক্ষাৎ পেতে দীর্ঘ উপবাসে মারা যাওয়া প্রায় অর্ধশত মানুষের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। একই স্থানে লাশগুলো পাওয়া গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, আরও অনেক লাশ পাওয়া যাবে। কারণ, যেই ধর্মপ্রচারকের নির্দেশে এই উপবাস শুরু হয়েছিল, কমপক্ষে তিনটি গ্রামের মানুষ তাঁর অনুসারী। এটিকে একটি গণ-আত্মহত্যা বলেই মনে
২৪ এপ্রিল ২০২৩
বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক থেকে শুরু করে স্বামী-স্ত্রীর ব্যক্তিগত ঝগড়া—সবকিছুতেই এখন থেকে গুনতে হবে মোটা অঙ্কের জরিমানা। চীনের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় ইউনান প্রদেশের লিংক্যাং গ্রামের কমিটি এমন নিয়ম জারি করেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ‘গ্রামের নিয়মাবলি: সবাই সমান’ শিরোনামের একটি নোটিশ ভাইরাল হওয়ার...
৩ দিন আগে
ইতালির আব্রুজ্জো অঞ্চলের মাউন্ট জিরিফালকোর পাদদেশে অবস্থিত এক প্রাচীন গ্রাম পালিয়ারা দে মার্সি। জনশূন্য এই গ্রামে মানুষের চেয়ে বিড়ালের সংখ্যাই বেশি। গত কয়েক দশক ধরে গ্রামটি নিস্তব্ধতায় ডুবে ছিল, কিন্তু গত মার্চ মাস থেকে সেখানে বইছে খুশির জোয়ার। কারণ, দীর্ঘ ৩০ বছর পর এই গ্রামে প্রথম কোনো শিশুর জন্ম
৩ দিন আগে
ক্যালিফোর্নিয়ার সুজ লোপেজ যখন তাঁর ছোট ছেলে রিউকে কোলে নিয়ে বসেন, তখন এক অলৌকিক বিস্ময়ে স্তব্ধ হয়ে যান। কারণ, ছোট্ট রিউ তাঁর মায়ের জরায়ুর ভেতরে নয়, বেড়ে উঠেছিল পেটের ভেতরে একটি বিশাল আকৃতির ওভারিয়ান সিস্টের আড়ালে। চিকিৎসাবিজ্ঞানে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ এবং বিরল এই ঘটনাকে ‘মিরাকল’ বা অলৌকিক বলছেন চিকিৎ
৫ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক থেকে শুরু করে স্বামী-স্ত্রীর ব্যক্তিগত ঝগড়া—সবকিছুতেই এখন থেকে গুনতে হবে মোটা অঙ্কের জরিমানা। চীনের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় ইউনান প্রদেশের লিংক্যাং গ্রামের কমিটি এমন নিয়ম জারি করেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ‘গ্রামের নিয়মাবলি: সবাই সমান’ শিরোনামের একটি নোটিশ ভাইরাল হওয়ার পর শুরু হয়েছে তীব্র সমালোচনা ও বিতর্ক।
সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গ্রামের শৃঙ্খলা বজায় রাখার নামে ব্যক্তিগত স্বাধীনতার ওপর একাধিক বিধিনিষেধ আরোপ করেছে স্থানীয় গ্রাম কমিটি। ভাইরাল হওয়া ছবির ভিত্তিতে জরিমানার তালিকাটি নিচে দেওয়া হলো:
প্রাদেশিক বৈষম্য: ইউনান প্রদেশের বাইরের কাউকে বিয়ে করলে দম্পতিকে ১ হাজার ৫০০ ইউয়ান (প্রায় ২৩,০০০ টাকা) জরিমানা দিতে হবে।
বিয়ের আগে গর্ভধারণ: কোনো নারী বিয়ের আগে গর্ভবতী হলে তাঁকে ৩ হাজার ইউয়ান জরিমানার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
লিভ ইন রিলেশন: বিয়ে ছাড়াই কোনো যুগল একত্রে বসবাস করলে প্রতিবছর ৫০০ ইউয়ান জরিমানা দিতে হবে।
সন্তান জন্মের সময়: বিয়ের মাত্র ১০ মাসের মধ্যে কোনো দম্পতি সন্তান জন্ম দিলে তাঁকে ‘অকাল গর্ভধারণ’ হিসেবে গণ্য করে ৩ হাজার ইউয়ান জরিমানা করা হবে।
পারিবারিক কলহ: স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া হলে এবং তা মেটাতে গ্রাম কর্তাদের ডাকলে উভয় পক্ষকে ৫০০ ইউয়ান করে জরিমানা দিতে হবে।
সামাজিক আচরণ: মদ্যপ অবস্থায় বিশৃঙ্খলা করলে ৩ হাজার থেকে ৫ হাজার ইউয়ান এবং গুজব ছড়ালে ১ হাজার ইউয়ান পর্যন্ত জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে।
চীনের জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘উইবো’-তে এই নোটিশ শেয়ার হওয়ার পর নেটিজেনরা ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন। অনেক ব্যবহারকারী মন্তব্য করেছেন, ‘গ্রাম কমিটি কি এখন মানুষের শোবার ঘরের পাহারাদার হতে চায়?’ কেউ কেউ এটিকে মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন বলে অভিহিত করেছেন। সমালোচকদের মতে, আধুনিক চীনের আইনি কাঠামোয় এ ধরনের নিয়মাবলি সম্পূর্ণ অবৈধ এবং মধ্যযুগীয় বর্বরতার শামিল।
বিতর্ক তুঙ্গে উঠলে স্থানীয় মেংডিং টাউন সরকার দ্রুত পদক্ষেপ নেয়। ১৬ ডিসেম্বর রেড স্টার নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে প্রশাসনের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা জানান, নোটিশটি গ্রাম কমিটির নিজস্ব উদ্যোগে টাঙানো হয়েছিল। তিনি বলেন, ‘এই নিয়মগুলো অত্যন্ত অস্বাভাবিক এবং ইউনিয়ন বা টাউন সরকারের কাছ থেকে কোনো প্রকার পূর্বানুমতি নেওয়া হয়নি। আমরা ইতিমধ্যেই নোটিশটি সরিয়ে ফেলার নির্দেশ দিয়েছি এবং এটি এখন কার্যকর নেই।’
লিংক্যাং গ্রামটির জনসংখ্যা বা বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থা সম্পর্কে সঠিক তথ্য পাওয়া না গেলেও বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, চীনের অনেক প্রত্যন্ত অঞ্চলে গ্রাম কমিটিগুলো নিজেদের ছোটখাটো ‘রাজা’ মনে করে এ ধরনের অবৈধ নিয়ম জারি করে থাকে। এই ঘটনাটি চীনের গ্রামীণ স্বায়ত্তশাসনের সীমাবদ্ধতা এবং সাধারণ মানুষের আইনি অধিকার রক্ষার প্রয়োজনীয়তাকে আবারও সামনে নিয়ে এসেছে।

বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক থেকে শুরু করে স্বামী-স্ত্রীর ব্যক্তিগত ঝগড়া—সবকিছুতেই এখন থেকে গুনতে হবে মোটা অঙ্কের জরিমানা। চীনের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় ইউনান প্রদেশের লিংক্যাং গ্রামের কমিটি এমন নিয়ম জারি করেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ‘গ্রামের নিয়মাবলি: সবাই সমান’ শিরোনামের একটি নোটিশ ভাইরাল হওয়ার পর শুরু হয়েছে তীব্র সমালোচনা ও বিতর্ক।
সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গ্রামের শৃঙ্খলা বজায় রাখার নামে ব্যক্তিগত স্বাধীনতার ওপর একাধিক বিধিনিষেধ আরোপ করেছে স্থানীয় গ্রাম কমিটি। ভাইরাল হওয়া ছবির ভিত্তিতে জরিমানার তালিকাটি নিচে দেওয়া হলো:
প্রাদেশিক বৈষম্য: ইউনান প্রদেশের বাইরের কাউকে বিয়ে করলে দম্পতিকে ১ হাজার ৫০০ ইউয়ান (প্রায় ২৩,০০০ টাকা) জরিমানা দিতে হবে।
বিয়ের আগে গর্ভধারণ: কোনো নারী বিয়ের আগে গর্ভবতী হলে তাঁকে ৩ হাজার ইউয়ান জরিমানার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
লিভ ইন রিলেশন: বিয়ে ছাড়াই কোনো যুগল একত্রে বসবাস করলে প্রতিবছর ৫০০ ইউয়ান জরিমানা দিতে হবে।
সন্তান জন্মের সময়: বিয়ের মাত্র ১০ মাসের মধ্যে কোনো দম্পতি সন্তান জন্ম দিলে তাঁকে ‘অকাল গর্ভধারণ’ হিসেবে গণ্য করে ৩ হাজার ইউয়ান জরিমানা করা হবে।
পারিবারিক কলহ: স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া হলে এবং তা মেটাতে গ্রাম কর্তাদের ডাকলে উভয় পক্ষকে ৫০০ ইউয়ান করে জরিমানা দিতে হবে।
সামাজিক আচরণ: মদ্যপ অবস্থায় বিশৃঙ্খলা করলে ৩ হাজার থেকে ৫ হাজার ইউয়ান এবং গুজব ছড়ালে ১ হাজার ইউয়ান পর্যন্ত জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে।
চীনের জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘উইবো’-তে এই নোটিশ শেয়ার হওয়ার পর নেটিজেনরা ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন। অনেক ব্যবহারকারী মন্তব্য করেছেন, ‘গ্রাম কমিটি কি এখন মানুষের শোবার ঘরের পাহারাদার হতে চায়?’ কেউ কেউ এটিকে মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন বলে অভিহিত করেছেন। সমালোচকদের মতে, আধুনিক চীনের আইনি কাঠামোয় এ ধরনের নিয়মাবলি সম্পূর্ণ অবৈধ এবং মধ্যযুগীয় বর্বরতার শামিল।
বিতর্ক তুঙ্গে উঠলে স্থানীয় মেংডিং টাউন সরকার দ্রুত পদক্ষেপ নেয়। ১৬ ডিসেম্বর রেড স্টার নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে প্রশাসনের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা জানান, নোটিশটি গ্রাম কমিটির নিজস্ব উদ্যোগে টাঙানো হয়েছিল। তিনি বলেন, ‘এই নিয়মগুলো অত্যন্ত অস্বাভাবিক এবং ইউনিয়ন বা টাউন সরকারের কাছ থেকে কোনো প্রকার পূর্বানুমতি নেওয়া হয়নি। আমরা ইতিমধ্যেই নোটিশটি সরিয়ে ফেলার নির্দেশ দিয়েছি এবং এটি এখন কার্যকর নেই।’
লিংক্যাং গ্রামটির জনসংখ্যা বা বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থা সম্পর্কে সঠিক তথ্য পাওয়া না গেলেও বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, চীনের অনেক প্রত্যন্ত অঞ্চলে গ্রাম কমিটিগুলো নিজেদের ছোটখাটো ‘রাজা’ মনে করে এ ধরনের অবৈধ নিয়ম জারি করে থাকে। এই ঘটনাটি চীনের গ্রামীণ স্বায়ত্তশাসনের সীমাবদ্ধতা এবং সাধারণ মানুষের আইনি অধিকার রক্ষার প্রয়োজনীয়তাকে আবারও সামনে নিয়ে এসেছে।

কেনিয়াতে যিশুর সাক্ষাৎ পেতে দীর্ঘ উপবাসে মারা যাওয়া প্রায় অর্ধশত মানুষের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। একই স্থানে লাশগুলো পাওয়া গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, আরও অনেক লাশ পাওয়া যাবে। কারণ, যেই ধর্মপ্রচারকের নির্দেশে এই উপবাস শুরু হয়েছিল, কমপক্ষে তিনটি গ্রামের মানুষ তাঁর অনুসারী। এটিকে একটি গণ-আত্মহত্যা বলেই মনে
২৪ এপ্রিল ২০২৩
একদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখলেন, একটা ই-মেইল এসেছে যার ‘সাবজেক্ট’ অপশনে লেখা ‘টার্মিনেশন লেটার’। ঘুম ঘুম চোখে এই ই-মেইল দেখলে স্বাভাবিকভাবেই ঘুম তো থাক, অন্য সব ভাবনাও হারাম হয়ে যাওয়ার কথা! তখন ভাবনায় আসবে ঠিক কি কারণে চাকরি থেকে ছাঁটাই হতে হলো!
১ দিন আগে
ইতালির আব্রুজ্জো অঞ্চলের মাউন্ট জিরিফালকোর পাদদেশে অবস্থিত এক প্রাচীন গ্রাম পালিয়ারা দে মার্সি। জনশূন্য এই গ্রামে মানুষের চেয়ে বিড়ালের সংখ্যাই বেশি। গত কয়েক দশক ধরে গ্রামটি নিস্তব্ধতায় ডুবে ছিল, কিন্তু গত মার্চ মাস থেকে সেখানে বইছে খুশির জোয়ার। কারণ, দীর্ঘ ৩০ বছর পর এই গ্রামে প্রথম কোনো শিশুর জন্ম
৩ দিন আগে
ক্যালিফোর্নিয়ার সুজ লোপেজ যখন তাঁর ছোট ছেলে রিউকে কোলে নিয়ে বসেন, তখন এক অলৌকিক বিস্ময়ে স্তব্ধ হয়ে যান। কারণ, ছোট্ট রিউ তাঁর মায়ের জরায়ুর ভেতরে নয়, বেড়ে উঠেছিল পেটের ভেতরে একটি বিশাল আকৃতির ওভারিয়ান সিস্টের আড়ালে। চিকিৎসাবিজ্ঞানে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ এবং বিরল এই ঘটনাকে ‘মিরাকল’ বা অলৌকিক বলছেন চিকিৎ
৫ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ইতালির আব্রুজ্জো অঞ্চলের মাউন্ট জিরিফালকোর পাদদেশে অবস্থিত এক প্রাচীন গ্রাম পালিয়ারা দে মার্সি। জনশূন্য এই গ্রামে মানুষের চেয়ে বিড়ালের সংখ্যাই বেশি। গত কয়েক দশক ধরে গ্রামটি নিস্তব্ধতায় ডুবে ছিল, কিন্তু গত মার্চ মাস থেকে সেখানে বইছে খুশির জোয়ার। কারণ, দীর্ঘ ৩০ বছর পর এই গ্রামে প্রথম কোনো শিশুর জন্ম হয়েছে।
লারা বুসি ত্রাবুক্কো নামের এই শিশুটির আগমনে গ্রামের জনসংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২০ জনে। তার খ্রিষ্টধর্মে দীক্ষাদান অনুষ্ঠানে পুরো গ্রাম ভেঙে পড়েছিল। এমনকি ৯ মাস বয়সী লারা এখন ওই অঞ্চলের প্রধান পর্যটন আকর্ষণে পরিণত হয়েছে। লারার মা সিনজিয়া ত্রাবুক্কো বলেন, ‘যারা আগে এই গ্রামের নামও জানত না, তারাও এখন লারাকে দেখতে আসছে।’
লারার জন্ম এক দিকে যেমন আশার প্রতীক, অন্য দিকে এটি ইতালির ভয়াবহ জনসংখ্যা হ্রাসের চিত্রকেও ফুটিয়ে তুলেছে।
ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালে ইতালিতে জন্মহার সর্বকালের সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছেছে (৩,৬৯,৯৪৪ জন)। প্রজনন হার প্রতি নারী পিছু মাত্র ১.১৮, যা ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে অন্যতম সর্বনিম্ন।
২০২৫ সালের প্রথম সাত মাসের উপাত্ত অনুযায়ী, আব্রুজ্জো অঞ্চলে জন্মহার গত বছরের তুলনায় আরও ১০.২ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে।
বিশেষজ্ঞ ও স্থানীয় বাসিন্দারা এই পরিস্থিতির জন্য একাধিক কারণকে দায়ী করেছেন। এরমধ্যে রয়েছে—তরুণ প্রজন্মের মধ্যে কর্মসংস্থানের অভাব ও দেশত্যাগের প্রবণতা। কর্মজীবী মায়েদের জন্য ডে-কেয়ার বা নার্সারির অভাব। অনেক নারী মা হওয়ার পর আর কর্মক্ষেত্রে ফিরতে পারেন না। পুরুষদের মধ্যে ক্রমবর্ধমান বন্ধ্যাত্ব এবং অনেকের সন্তান না নেওয়ার ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। ট্যাক্স বেশি হলেও সেই অনুযায়ী সামাজিক সেবা বা উন্নত জীবনযাত্রার অভাব।
জর্জিয়া মেলোনির সরকার এই পরিস্থিতিকে ‘জনসংখ্যার শীতকাল’ (Demographic Winter) হিসেবে অভিহিত করেছে। সংকট মোকাবিলায় ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে প্রতিটি শিশুর জন্মের পর এককালীন ১ হাজার ইউরো ‘বেবি বোনাস’ এবং প্রতি মাসে প্রায় ৩৭০ ইউরো শিশু ভাতা দেওয়ার নিয়ম চালু করা হয়েছে। তবে লারার মায়ের মতে, শুধু অর্থ দিয়ে এই সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়; পুরো ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন প্রয়োজন।
এদিকে, জনসংখ্যা কমে যাওয়ায় অনেক শহরে প্রসূতি বিভাগ (Maternity Unit) বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। পালিয়ারা দে মার্সি থেকে এক ঘণ্টার দূরত্বে অবস্থিত সুলমোনা শহরের হাসপাতালটি এখন বন্ধের ঝুঁকিতে। নিয়ম অনুযায়ী বছরে অন্তত ৫০০ শিশুর জন্ম না হলে সেই ইউনিট চালু রাখা কঠিন। ২০২৪ সালে সেখানে মাত্র ১২০টি শিশুর জন্ম হয়েছে। এটি বন্ধ হয়ে গেলে গর্ভবতী নারীদের দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে অন্য শহরে যেতে হবে, যা জরুরি অবস্থায় অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।
গ্রামের মেয়র জিউসেপিনা পেরোজি আশা প্রকাশ করেন, লারার জন্ম অন্যদেরও পরিবার গঠনে অনুপ্রাণিত করবে। কিন্তু লারার ভবিষ্যৎ শিক্ষা নিয়ে দুশ্চিন্তা রয়েই গেছে। গ্রামটিতে কয়েক দশক ধরে কোনো শিক্ষক নেই, এবং পার্শ্ববর্তী গ্রামের স্কুলগুলোও শিক্ষার্থীর অভাবে বন্ধ হওয়ার পথে।

ইতালির আব্রুজ্জো অঞ্চলের মাউন্ট জিরিফালকোর পাদদেশে অবস্থিত এক প্রাচীন গ্রাম পালিয়ারা দে মার্সি। জনশূন্য এই গ্রামে মানুষের চেয়ে বিড়ালের সংখ্যাই বেশি। গত কয়েক দশক ধরে গ্রামটি নিস্তব্ধতায় ডুবে ছিল, কিন্তু গত মার্চ মাস থেকে সেখানে বইছে খুশির জোয়ার। কারণ, দীর্ঘ ৩০ বছর পর এই গ্রামে প্রথম কোনো শিশুর জন্ম হয়েছে।
লারা বুসি ত্রাবুক্কো নামের এই শিশুটির আগমনে গ্রামের জনসংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২০ জনে। তার খ্রিষ্টধর্মে দীক্ষাদান অনুষ্ঠানে পুরো গ্রাম ভেঙে পড়েছিল। এমনকি ৯ মাস বয়সী লারা এখন ওই অঞ্চলের প্রধান পর্যটন আকর্ষণে পরিণত হয়েছে। লারার মা সিনজিয়া ত্রাবুক্কো বলেন, ‘যারা আগে এই গ্রামের নামও জানত না, তারাও এখন লারাকে দেখতে আসছে।’
লারার জন্ম এক দিকে যেমন আশার প্রতীক, অন্য দিকে এটি ইতালির ভয়াবহ জনসংখ্যা হ্রাসের চিত্রকেও ফুটিয়ে তুলেছে।
ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালে ইতালিতে জন্মহার সর্বকালের সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছেছে (৩,৬৯,৯৪৪ জন)। প্রজনন হার প্রতি নারী পিছু মাত্র ১.১৮, যা ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে অন্যতম সর্বনিম্ন।
২০২৫ সালের প্রথম সাত মাসের উপাত্ত অনুযায়ী, আব্রুজ্জো অঞ্চলে জন্মহার গত বছরের তুলনায় আরও ১০.২ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে।
বিশেষজ্ঞ ও স্থানীয় বাসিন্দারা এই পরিস্থিতির জন্য একাধিক কারণকে দায়ী করেছেন। এরমধ্যে রয়েছে—তরুণ প্রজন্মের মধ্যে কর্মসংস্থানের অভাব ও দেশত্যাগের প্রবণতা। কর্মজীবী মায়েদের জন্য ডে-কেয়ার বা নার্সারির অভাব। অনেক নারী মা হওয়ার পর আর কর্মক্ষেত্রে ফিরতে পারেন না। পুরুষদের মধ্যে ক্রমবর্ধমান বন্ধ্যাত্ব এবং অনেকের সন্তান না নেওয়ার ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। ট্যাক্স বেশি হলেও সেই অনুযায়ী সামাজিক সেবা বা উন্নত জীবনযাত্রার অভাব।
জর্জিয়া মেলোনির সরকার এই পরিস্থিতিকে ‘জনসংখ্যার শীতকাল’ (Demographic Winter) হিসেবে অভিহিত করেছে। সংকট মোকাবিলায় ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে প্রতিটি শিশুর জন্মের পর এককালীন ১ হাজার ইউরো ‘বেবি বোনাস’ এবং প্রতি মাসে প্রায় ৩৭০ ইউরো শিশু ভাতা দেওয়ার নিয়ম চালু করা হয়েছে। তবে লারার মায়ের মতে, শুধু অর্থ দিয়ে এই সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়; পুরো ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন প্রয়োজন।
এদিকে, জনসংখ্যা কমে যাওয়ায় অনেক শহরে প্রসূতি বিভাগ (Maternity Unit) বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। পালিয়ারা দে মার্সি থেকে এক ঘণ্টার দূরত্বে অবস্থিত সুলমোনা শহরের হাসপাতালটি এখন বন্ধের ঝুঁকিতে। নিয়ম অনুযায়ী বছরে অন্তত ৫০০ শিশুর জন্ম না হলে সেই ইউনিট চালু রাখা কঠিন। ২০২৪ সালে সেখানে মাত্র ১২০টি শিশুর জন্ম হয়েছে। এটি বন্ধ হয়ে গেলে গর্ভবতী নারীদের দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে অন্য শহরে যেতে হবে, যা জরুরি অবস্থায় অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।
গ্রামের মেয়র জিউসেপিনা পেরোজি আশা প্রকাশ করেন, লারার জন্ম অন্যদেরও পরিবার গঠনে অনুপ্রাণিত করবে। কিন্তু লারার ভবিষ্যৎ শিক্ষা নিয়ে দুশ্চিন্তা রয়েই গেছে। গ্রামটিতে কয়েক দশক ধরে কোনো শিক্ষক নেই, এবং পার্শ্ববর্তী গ্রামের স্কুলগুলোও শিক্ষার্থীর অভাবে বন্ধ হওয়ার পথে।

কেনিয়াতে যিশুর সাক্ষাৎ পেতে দীর্ঘ উপবাসে মারা যাওয়া প্রায় অর্ধশত মানুষের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। একই স্থানে লাশগুলো পাওয়া গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, আরও অনেক লাশ পাওয়া যাবে। কারণ, যেই ধর্মপ্রচারকের নির্দেশে এই উপবাস শুরু হয়েছিল, কমপক্ষে তিনটি গ্রামের মানুষ তাঁর অনুসারী। এটিকে একটি গণ-আত্মহত্যা বলেই মনে
২৪ এপ্রিল ২০২৩
একদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখলেন, একটা ই-মেইল এসেছে যার ‘সাবজেক্ট’ অপশনে লেখা ‘টার্মিনেশন লেটার’। ঘুম ঘুম চোখে এই ই-মেইল দেখলে স্বাভাবিকভাবেই ঘুম তো থাক, অন্য সব ভাবনাও হারাম হয়ে যাওয়ার কথা! তখন ভাবনায় আসবে ঠিক কি কারণে চাকরি থেকে ছাঁটাই হতে হলো!
১ দিন আগে
বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক থেকে শুরু করে স্বামী-স্ত্রীর ব্যক্তিগত ঝগড়া—সবকিছুতেই এখন থেকে গুনতে হবে মোটা অঙ্কের জরিমানা। চীনের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় ইউনান প্রদেশের লিংক্যাং গ্রামের কমিটি এমন নিয়ম জারি করেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ‘গ্রামের নিয়মাবলি: সবাই সমান’ শিরোনামের একটি নোটিশ ভাইরাল হওয়ার...
৩ দিন আগে
ক্যালিফোর্নিয়ার সুজ লোপেজ যখন তাঁর ছোট ছেলে রিউকে কোলে নিয়ে বসেন, তখন এক অলৌকিক বিস্ময়ে স্তব্ধ হয়ে যান। কারণ, ছোট্ট রিউ তাঁর মায়ের জরায়ুর ভেতরে নয়, বেড়ে উঠেছিল পেটের ভেতরে একটি বিশাল আকৃতির ওভারিয়ান সিস্টের আড়ালে। চিকিৎসাবিজ্ঞানে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ এবং বিরল এই ঘটনাকে ‘মিরাকল’ বা অলৌকিক বলছেন চিকিৎ
৫ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ক্যালিফোর্নিয়ার সুজ লোপেজ যখন তাঁর ছোট ছেলে রিউকে কোলে নিয়ে বসেন, তখন এক অলৌকিক বিস্ময়ে স্তব্ধ হয়ে যান। কারণ, ছোট্ট রিউ তাঁর মায়ের জরায়ুর ভেতরে নয়, বেড়ে উঠেছিল পেটের ভেতরে একটি বিশাল আকৃতির ওভারিয়ান সিস্টের আড়ালে। চিকিৎসাবিজ্ঞানে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ এবং বিরল এই ঘটনাকে ‘মিরাকল’ বা অলৌকিক বলছেন চিকিৎসকেরা।
লস অ্যাঞ্জেলেসের সিডারস-সিনাই মেডিকেল সেন্টারের প্রসূতি ও প্রসব বিভাগের মেডিকেল ডিরেক্টর ড. জন ওজিমেক এপিকে বলেন, ‘প্রতি ৩০ হাজার গর্ভাবস্থার মধ্যে মাত্র একটি জরায়ুর বাইরে পেটের ভেতরে (Abdominal Pregnancy) ঘটে। আর পূর্ণ মেয়াদে সুস্থ শিশু জন্ম দেওয়ার ঘটনা ১ কোটিতে একজনের ক্ষেত্রেও দেখা যায় না। এটি সত্যিই অবিশ্বাস্য।’
৪১ বছর বয়সী সুজ লোপেজ পেশায় একজন নার্স। আশ্চর্যের বিষয় হলো, সন্তান জন্ম দেওয়ার মাত্র কয়েক দিন আগ পর্যন্ত তিনি জানতেনই না যে তিনি অন্তঃসত্ত্বা।
সুজ দীর্ঘদিন ধরে ওভারিয়ান সিস্টের সমস্যায় ভুগছিলেন। যখন তাঁর পেট বড় হতে শুরু করে, তিনি ভেবেছিলেন, এটি ২১ পাউন্ড ওজনের সেই সিস্টেরই বৃদ্ধি।
সাধারণ গর্ভাবস্থার কোনো লক্ষণ; যেমন সকালবেলায় অসুস্থতা বোধ করা (Morning Sickness) বা শিশুর নড়াচড়া—কিছুই তিনি অনুভব করেননি। অনিয়মিত পিরিয়ডের কারণে ঋতুস্রাব বন্ধ হওয়াকেও তিনি স্বাভাবিক ধরে নিয়েছিলেন।
অবশেষে পেটে অসহ্য ব্যথা শুরু হলে তিনি সিস্ট অপসারণের জন্য চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন। সেখানে সিটি স্ক্যান করার আগে বাধ্যতামূলক গর্ভাবস্থা পরীক্ষায় ফল ‘পজিটিভ’ আসে।
হাসপাতালে আলট্রাসাউন্ড এবং এমআরআই স্ক্যানে দেখা যায়, সুজের জরায়ু সম্পূর্ণ খালি। অথচ একটি পূর্ণাঙ্গ ভ্রূণ তাঁর লিভারের কাছে পেটের এক কোণে অ্যামনিওটিক থ্যাকের ভেতরে বেড়ে উঠছে। ড. ওজিমেক জানান, ভ্রূণটি লিভারের মতো গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গকে সরাসরি আক্রান্ত করেনি, বরং পেলভিসের পাশের দেয়ালে গেঁথে ছিল। এটি অত্যন্ত বিপজ্জনক হলেও লিভারের তুলনায় কিছুটা নিয়ন্ত্রণযোগ্য ছিল।
গত ১৮ আগস্ট এক জটিল অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে ৮ পাউন্ড (৩.৬ কেজি) ওজনের রিউকে পৃথিবীতে আনা হয়। অস্ত্রোপচারের সময় সুজের সেই বিশাল সিস্টটিও অপসারণ করা হয়। অত্যধিক রক্তক্ষরণ হলেও চিকিৎসকদের দক্ষতায় সুজ এবং তাঁর সন্তান দুজনেই সুস্থভাবে ফিরে আসেন।
সুজের স্বামী অ্যান্ড্রু লোপেজ বলেন, ‘বাইরে শান্ত থাকলেও আমি ভেতরে-ভেতরে প্রার্থনা করছিলাম। যেকোনো মুহূর্তে স্ত্রী বা সন্তানকে হারানোর ভয় আমাকে তাড়া করছিল।’
বর্তমানে রিউ সম্পূর্ণ সুস্থ এবং প্রাণচঞ্চল। নিজের ১৮ বছর বয়সী বড় বোন কাইলার সঙ্গে তার খুনসুটি লেগেই থাকে। সামনেই রিউয়ের প্রথম বড়দিন। সুজ লোপেজ আবেগাপ্লুত হয়ে বলেন, ‘আমি এখন অলৌকিক ঘটনায় বিশ্বাস করি। ঈশ্বর আমাদের জীবনের সেরা উপহারটি দিয়েছেন।’
চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, এই কেস এতই বিরল যে তাঁরা এটি একটি মেডিকেল জার্নালে প্রকাশের পরিকল্পনা করছেন।

ক্যালিফোর্নিয়ার সুজ লোপেজ যখন তাঁর ছোট ছেলে রিউকে কোলে নিয়ে বসেন, তখন এক অলৌকিক বিস্ময়ে স্তব্ধ হয়ে যান। কারণ, ছোট্ট রিউ তাঁর মায়ের জরায়ুর ভেতরে নয়, বেড়ে উঠেছিল পেটের ভেতরে একটি বিশাল আকৃতির ওভারিয়ান সিস্টের আড়ালে। চিকিৎসাবিজ্ঞানে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ এবং বিরল এই ঘটনাকে ‘মিরাকল’ বা অলৌকিক বলছেন চিকিৎসকেরা।
লস অ্যাঞ্জেলেসের সিডারস-সিনাই মেডিকেল সেন্টারের প্রসূতি ও প্রসব বিভাগের মেডিকেল ডিরেক্টর ড. জন ওজিমেক এপিকে বলেন, ‘প্রতি ৩০ হাজার গর্ভাবস্থার মধ্যে মাত্র একটি জরায়ুর বাইরে পেটের ভেতরে (Abdominal Pregnancy) ঘটে। আর পূর্ণ মেয়াদে সুস্থ শিশু জন্ম দেওয়ার ঘটনা ১ কোটিতে একজনের ক্ষেত্রেও দেখা যায় না। এটি সত্যিই অবিশ্বাস্য।’
৪১ বছর বয়সী সুজ লোপেজ পেশায় একজন নার্স। আশ্চর্যের বিষয় হলো, সন্তান জন্ম দেওয়ার মাত্র কয়েক দিন আগ পর্যন্ত তিনি জানতেনই না যে তিনি অন্তঃসত্ত্বা।
সুজ দীর্ঘদিন ধরে ওভারিয়ান সিস্টের সমস্যায় ভুগছিলেন। যখন তাঁর পেট বড় হতে শুরু করে, তিনি ভেবেছিলেন, এটি ২১ পাউন্ড ওজনের সেই সিস্টেরই বৃদ্ধি।
সাধারণ গর্ভাবস্থার কোনো লক্ষণ; যেমন সকালবেলায় অসুস্থতা বোধ করা (Morning Sickness) বা শিশুর নড়াচড়া—কিছুই তিনি অনুভব করেননি। অনিয়মিত পিরিয়ডের কারণে ঋতুস্রাব বন্ধ হওয়াকেও তিনি স্বাভাবিক ধরে নিয়েছিলেন।
অবশেষে পেটে অসহ্য ব্যথা শুরু হলে তিনি সিস্ট অপসারণের জন্য চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন। সেখানে সিটি স্ক্যান করার আগে বাধ্যতামূলক গর্ভাবস্থা পরীক্ষায় ফল ‘পজিটিভ’ আসে।
হাসপাতালে আলট্রাসাউন্ড এবং এমআরআই স্ক্যানে দেখা যায়, সুজের জরায়ু সম্পূর্ণ খালি। অথচ একটি পূর্ণাঙ্গ ভ্রূণ তাঁর লিভারের কাছে পেটের এক কোণে অ্যামনিওটিক থ্যাকের ভেতরে বেড়ে উঠছে। ড. ওজিমেক জানান, ভ্রূণটি লিভারের মতো গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গকে সরাসরি আক্রান্ত করেনি, বরং পেলভিসের পাশের দেয়ালে গেঁথে ছিল। এটি অত্যন্ত বিপজ্জনক হলেও লিভারের তুলনায় কিছুটা নিয়ন্ত্রণযোগ্য ছিল।
গত ১৮ আগস্ট এক জটিল অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে ৮ পাউন্ড (৩.৬ কেজি) ওজনের রিউকে পৃথিবীতে আনা হয়। অস্ত্রোপচারের সময় সুজের সেই বিশাল সিস্টটিও অপসারণ করা হয়। অত্যধিক রক্তক্ষরণ হলেও চিকিৎসকদের দক্ষতায় সুজ এবং তাঁর সন্তান দুজনেই সুস্থভাবে ফিরে আসেন।
সুজের স্বামী অ্যান্ড্রু লোপেজ বলেন, ‘বাইরে শান্ত থাকলেও আমি ভেতরে-ভেতরে প্রার্থনা করছিলাম। যেকোনো মুহূর্তে স্ত্রী বা সন্তানকে হারানোর ভয় আমাকে তাড়া করছিল।’
বর্তমানে রিউ সম্পূর্ণ সুস্থ এবং প্রাণচঞ্চল। নিজের ১৮ বছর বয়সী বড় বোন কাইলার সঙ্গে তার খুনসুটি লেগেই থাকে। সামনেই রিউয়ের প্রথম বড়দিন। সুজ লোপেজ আবেগাপ্লুত হয়ে বলেন, ‘আমি এখন অলৌকিক ঘটনায় বিশ্বাস করি। ঈশ্বর আমাদের জীবনের সেরা উপহারটি দিয়েছেন।’
চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, এই কেস এতই বিরল যে তাঁরা এটি একটি মেডিকেল জার্নালে প্রকাশের পরিকল্পনা করছেন।

কেনিয়াতে যিশুর সাক্ষাৎ পেতে দীর্ঘ উপবাসে মারা যাওয়া প্রায় অর্ধশত মানুষের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। একই স্থানে লাশগুলো পাওয়া গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, আরও অনেক লাশ পাওয়া যাবে। কারণ, যেই ধর্মপ্রচারকের নির্দেশে এই উপবাস শুরু হয়েছিল, কমপক্ষে তিনটি গ্রামের মানুষ তাঁর অনুসারী। এটিকে একটি গণ-আত্মহত্যা বলেই মনে
২৪ এপ্রিল ২০২৩
একদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখলেন, একটা ই-মেইল এসেছে যার ‘সাবজেক্ট’ অপশনে লেখা ‘টার্মিনেশন লেটার’। ঘুম ঘুম চোখে এই ই-মেইল দেখলে স্বাভাবিকভাবেই ঘুম তো থাক, অন্য সব ভাবনাও হারাম হয়ে যাওয়ার কথা! তখন ভাবনায় আসবে ঠিক কি কারণে চাকরি থেকে ছাঁটাই হতে হলো!
১ দিন আগে
বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক থেকে শুরু করে স্বামী-স্ত্রীর ব্যক্তিগত ঝগড়া—সবকিছুতেই এখন থেকে গুনতে হবে মোটা অঙ্কের জরিমানা। চীনের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় ইউনান প্রদেশের লিংক্যাং গ্রামের কমিটি এমন নিয়ম জারি করেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ‘গ্রামের নিয়মাবলি: সবাই সমান’ শিরোনামের একটি নোটিশ ভাইরাল হওয়ার...
৩ দিন আগে
ইতালির আব্রুজ্জো অঞ্চলের মাউন্ট জিরিফালকোর পাদদেশে অবস্থিত এক প্রাচীন গ্রাম পালিয়ারা দে মার্সি। জনশূন্য এই গ্রামে মানুষের চেয়ে বিড়ালের সংখ্যাই বেশি। গত কয়েক দশক ধরে গ্রামটি নিস্তব্ধতায় ডুবে ছিল, কিন্তু গত মার্চ মাস থেকে সেখানে বইছে খুশির জোয়ার। কারণ, দীর্ঘ ৩০ বছর পর এই গ্রামে প্রথম কোনো শিশুর জন্ম
৩ দিন আগে