Ajker Patrika

যে ‘সাগরে’ ডোবার ভয় নেই

ইশতিয়াক হাসান
আপডেট : ১৬ মার্চ ২০২৩, ১৫: ২৫
যে ‘সাগরে’ ডোবার ভয় নেই

বিশাল কোনো সাগর বা লেকে আপনাকে নামিয়ে দেওয়া হলো। এদিকে সাঁতারও জানেন না, সঙ্গে দেওয়া হয়নি লাইফ জ্যাকেটও। ভাবছেন নিশ্চয়, এমন পরিস্থিতে বাঁচার আশা ছেড়ে দেওয়া ছাড়া উপায় থাকবে না। তবে জায়গাটি যদি হয় ডেড সি বা মৃত সাগর, তাহলে অবশ্য আপনার দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই। কারণ সাঁতার না জানাতে সেখানে কিছুই আসে যায় না। যে কেউ ভেসে থাকতে পারবেন সেখানে। কেন? সেই প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার আগে বরং ডেড সি সম্পর্কে আরও কিছু মজার বিষয় জেনে নেওয়া যাক।

জর্ডান আর ইসরায়েলের সীমানায় অবস্থান মৃত সাগরের। এটি পৃথিবীর সবচেয়ে নিচু জায়গা বা লোয়েস্ট পয়েন্ট। সাগর সমতল থেকে প্রায় ১ হাজার ৩০০ ফুট নিচে এর অবস্থান। এখন নিশ্চয় আপনার মনে প্রশ্ন জাগছে, একটি সাগর কীভাবে সাগর সমতল থেকে নিচে অবস্থিত হতে পারে! আসলে নামে ডেড সি হলেও এটি মোটেই সাগর নয়, বরং এটি একটি হ্রদ। এর সঙ্গে যদি তুলনা করেন উত্তর আমেরিকার সবচেয়ে নিচু জায়গা ডেথ ভ্যালি সাগর সমতল থেকে কেবল ২৮২ ফুট নিচে অবস্থিত।

পৃথিবীর সবচেয়ে নিচু রাস্তা ইসরায়েলের হাইওয়ে ৯০ চলে গেছে ডেড সির পশ্চিম তীর ঘেঁষে। সাগর সমতল থেকে রাস্তাটি ১ হাজার ২৮৯ ফুট নিচে অবস্থিত। 

মৃত সাগরের কালিয়া সৈকতডেড সির আয়তন ৬০৫ বর্গকিলোমিটার। এটি কিন্তু বেশ গভীরও। সর্বোচ্চ গভীরতা কত শুনলে চমকে উঠবেন, ১ হাজার ৩০০ ফুটের কাছাকাছি। 

পৃথিবীর সবচেয়ে লবণাক্ত জায়গাগুলোর একটি ডেড সি। সাধারণ সাগরের পানি থেকে দশ গুণ বেশি লবণ আছে এখানে। এখানকার প্রচণ্ড গরম ও শুকনো আবহাওয়ার কারণে প্রচুর পানি বাষ্প হয়ে উড়ে যায়। এ কারণে লবণসহ অন্য খনিজ আরও বেশি ঘনীভূত হওয়ার সুযোগ পায়। অনুমান করা হয়, গোটা মৃত সাগরে ৩ হাজার ৭০০ কোটি টন লবণ আছে। 

পৃথিবীর নিম্নতম জায়গাএবার তাহলে শুরুর ওই প্রসঙ্গে আসা যাক, মানে সাঁতার না জানলেও ডেড সিতে নামলে আপনাকে কেন দুশ্চিন্তায় ভুগতে হবে না, সে বিষয় আরকি! এখানকার উচ্চমাত্রার লবণের কারণে পানির ঘনত্ব অনেক বেশি। এতে প্রাকৃতিকভাবেই প্লবতা বেড়ে যাওয়ায় সহজেই ভেসে থাকবে আপনার শরীরটা। 

তবে এখানে সহজে ভেসে থাকা গেলেও সাঁতার কাটা কিন্তু মোটেই সহজ নয়। বিষয়টি অনেকটা এ রকম, আপনি ভেসে থাকতে পারছেন কিন্তু শরীরের ওজন আবার অনুভব করছেন। সবকিছু মিলিয়ে তখন আপনার জন্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলো নাড়াচাড়া করা কঠিন হবে। তাহলে পানিতে আরাম করে শুয়ে শুয়ে পত্রিকা পড়ার যে ছবিগুলো আমরা দেখি সেগুলোর কী হলো। এগুলো অবশ্যই বাস্তব। তবে শুরুতে এভাবে অবস্থান নিতে একজন মানুষকে কেমন বেগ পোহাতে হয় তা অবশ্য ছবি দেখে বোঝা যায় না। 

জর্ডানের তীরে পানি নিচে নামায় সাদা লবণের উপস্থিতি পাহাড়ের গায়ে।মৃত সাগরে লবণ ও খনিজের পরিমাণ অনেক বেশি থাকার মানে এখানকার পানির রোগ নিরাময়ের ভালো ক্ষমতা আছে। ত্বকের নানা ধরনের সমস্যা দূর করতে মানুষ এই জলে নামে। এক হিসাবে নিখরচায় স্পার জন্য স্থানীয় বাসিন্দা ও পর্যটকদের কাছে খুব জনপ্রিয় এটি। তেমনি এর তীরে গড়ে উঠেছে অনেক স্পা সেন্টার। অবশ্য এখানকার জলের এই বিশেষ ক্ষমতার কথা মানুষের জানা ছিল বহু আগ থেকে। বলা হয়, খ্রিষ্টপূর্ব ৪ থেকে ৩৭ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত রাজত্ব করা সম্রাট হরোড দ্য গ্রেট পৃথিবীর প্রথম হেলথ স্পাগুলোর একটি গড়ে তোলেন এর তীরে। কিংবদন্তি অনুসারে ক্লিওপেট্রার ভারি প্রিয় জায়গা ছিল মৃত সাগর, নিজের রূপচর্চায় এখানকার বিভিন্ন উপাদান ব্যবহার করতেন। 

মৃত সাগরে ভেসে আছেন এক দম্পতিতবে শরীরে কোনো ক্ষত নিয়ে মৃত সাগরে না নামাই ভালো। কেন? লবণের কারণে তখন ক্ষতস্থান জ্বলবে আপনার। তার মানে, ডেড সিতে নামার আগে শেভ বা দাড়ি-গোঁফ না কাটাই উত্তম। 

ডেড সিতে এক দেশে থেকে আপনি আরেক দেশ দেখতে পারবেন। অর্থাৎ মৃত সাগরের জর্ডানের অংশের তীরে দাঁড়িয়ে আপনি ইসরায়েলের পশ্চিম তীর দেখতে পারবেন। আবার ইসরায়েলের সীমানায় দাঁড়িয়ে দূরে দেখতে পারবেন জর্ডানের ভূভাগ। 

ডেড সির তীরে নুড়ি পাথরউচ্চমাত্রার লবণের উপস্থিতির কারণে এখানে কোনো প্রাণী বা উদ্ভিদের বেঁচে থাকা মুশকিল। ব্যাকটেরিয়াসহ আণুবীক্ষনিক কিছু জীবাণু আর জলজ দু-চারটি উদ্ভিদ ছাড়া এখানে আর কোনো উদ্ভিদ বা প্রাণের উপস্থিতি পাবেন না। 

ডেড সিতে সূর্যস্নানে অন্য জায়গার তুলনায় সানবার্ন বা ত্বক সূর্যতাপে পোড়ার আশঙ্কা কম। এর কারণ, ডেড সির অবস্থান সাগর সমতল থেকে বেশ নিচে হওয়ায় প্রাকৃতিক তিনটি স্তরের ছাঁকনি পেরিয়ে তবেই আসতে হয় ক্ষতিকর অতিবেগুনি রশ্মিকে। 

মহানন্দে আছেন দুই পর্যটকআধুনিক প্রত্নতত্ত্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কারগুলোর একটির জায়গা এটি। ১৯৪৭ সালে এর উত্তর-পশ্চিম তীরে গুহার মধ্যে পাওয়া যায় বিখ্যাত ডেড সি স্ক্রল। প্রাচীন ওই পান্ডুলিপি খ্রিষ্টপূর্ব ২৫০ সাল থেকে ৬৮ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যকার কোনো এক সময়ের। 

ডেড সির আরেকটি আশ্চর্যজনক বিষয় হলো, ছোট ছোট নুড়ি আর অ্যাসফাল্ট এর গভীর থেকে সমতলে উঠে আসে কোনো প্রক্রিয়ায়। প্রাচীন মিসরীয়রা এগুলো আমদানি করতেন মমি তৈরির কাজে ব্যবহারের জন্য। 

ডেড সিতে ভেসে বই পড়ছেন এক নারীপর্যটকদের খুব প্রিয় এক গন্তব্য ডেড সি। তবে প্রতিবছর এক মিটারের বেশি কমছে এর গভীরতা, আর ১০০ বছর আগে আয়তন যা ছিল, এখন নেমে এসেছে এর অর্ধেকে। তবে এমন দুই-একটা শঙ্কা বাদ দিলে ভ্রমণের জন্য মৃত সাগরের মতো আশ্চর্য জায়গা পাবেন কমই! 

সূত্র: অন দ্য গো ট্যুরস, ইনসাইড দ্য ট্র্যাভেল লেব

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

২৩ লাখ টাকার ‘ডিম’ গিলে ফেললেন যুবক, এক সপ্তাহ পর যেভাবে উদ্ধার করল পুলিশ

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
হীরকখচিত মহামূল্যবান ডিম গিলে ফেলেছিলেন এক যুবক। ছবি: নিউজিল্যান্ড পুলিশ
হীরকখচিত মহামূল্যবান ডিম গিলে ফেলেছিলেন এক যুবক। ছবি: নিউজিল্যান্ড পুলিশ

এক চুরির ঘটনায় রীতিমতো হইচই পড়ে গেল নিউজিল্যান্ডে। এক ব্যক্তি একটি বহুমূল্য হীরকখচিত লকেট চুরি করতে গিয়ে তা গিলে ফেলেন। তবে অবশেষে সেই লকেটটি ‘স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায়’ উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

পুলিশের পক্ষ থেকে বিবিসিকে জানানো হয়েছে, লকেটটি উদ্ধার করতে ‘মেডিকেল হস্তক্ষেপের প্রয়োজন হয়নি’।

৩২ বছর বয়সী ওই ব্যক্তিকে অকল্যান্ডের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত প্যারট্রিজ জুয়েলার্সের দোকান থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। অভিযোগ, লকেটটি গিলে ফেলার কয়েক মিনিটের মধ্যেই তাঁকে ধরা হয়। চুরির প্রায় এক সপ্তাহ পরে এই মূল্যবান জিনিসটি উদ্ধার করা সম্ভব হলো।

ফেবার্গে এগ-এর আদলে তৈরি এই লকেটটির মূল্য ৩৩ হাজার ৫৮৫ নিউজিল্যান্ড ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় যা প্রায় ২৩ লাখ টাকার বেশি)। জুয়েলারের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, গিলে ফেলা এই লকেটটিতে ৬০টি সাদা হিরা এবং ১৫টি নীলকান্তমণি বসানো রয়েছে। লকেটটি খুললে এর ভেতরে ১৮ ক্যারেট সোনার তৈরি একটি ছোট অক্টোপাস দেখা যায়। এই কারণে লকেটটির নাম দেওয়া হয়েছিল ‘অক্টোপাস ডিম’। ১৯৮৩ সালের জেমস বন্ড ছবি ‘অক্টোপাসি’ থেকে অনুপ্রাণিত।

চুরি করার পর থেকেই পুলিশ ওই ব্যক্তিকে নিজেদের হেফাজতে রেখে লাগাতার নজরদারি চালাচ্ছিল। নিউজিল্যান্ড পুলিশ এর আগে জানিয়েছিল, যেহেতু এই ব্যক্তি পুলিশি হেফাজতে রয়েছেন, তাই যা ঘটেছে তার পরিপ্রেক্ষিতে তাকে পর্যবেক্ষণ করা আমাদের কর্তব্য।

ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে চুরির অভিযোগ আনা হয়েছে এবং আগামী ৮ ডিসেম্বর তাঁকে ফের আদালতে হাজির হওয়ার কথা রয়েছে। বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুধু এই লকেট চুরিই নয়, ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে আরও বেশ কিছু অভিযোগ রয়েছে। ১২ নভেম্বর একই জুয়েলারি দোকান থেকে একটি আইপ্যাড চুরি করেছিলেন তিনি। এর একদিন পরে একটি ব্যক্তিগত ঠিকানা থেকে ১০০ নিউজিল্যান্ড ডলার মূল্যের বিড়ালের লিটার এবং ফ্লি কন্ট্রোল (মাছি নিয়ন্ত্রণ) পণ্য চুরি করেন।

প্যারট্রিজ জুয়েলার্স জানিয়েছে, উদ্ধার হওয়া এই বিরল ফেবার্গে লকেটটি নির্মাতাদের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

১৯ হাজার ডলারের ‘ডিম’ গিলে যুবক কারাগারে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৫: ২৪
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

নিউজিল্যান্ডে এক ব্যক্তি হীরাখচিত লকেট চুরি করেছেন এমন এক উপায়ে, যা শুনলে সিনেমার দৃশ্যই মনে হয়। দোকানদারেরা টের পাওয়ার আগেই তিনি লকেটটি গিলে ফেলেন। পরে পুলিশ এসে তাঁকে হাতেনাতে ধরে ফেলে।

স্থানীয় সংবাদমাধ্যমকে পুলিশ জানিয়েছে, গিলে ফেলা ফ্যাবারজে এগ লকেট, যার মূল্য ৩৩ হাজার ৫৮৫ নিউজিল্যান্ড ডলার (১৯ হাজার ৩০০ মার্কিন ডলার) এখনো উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।

এক প্রতিবেদনে বিবিসি জানিয়েছে, গত শুক্রবার বিকেলে অকল্যান্ডের কেন্দ্রস্থলে পারট্রিজ জুয়েলার্সে পুলিশ ডাকা হলে ৩২ বছর বয়সী ওই ব্যক্তিকে দোকান থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়েছে।

জুয়েলারির ওয়েবসাইট অনুযায়ী, যে ফ্যাবারজে এগ চুরি করা হয়েছে, তাতে রয়েছে ৬০টি সাদা হীরা এবং ১৫টি নীল নীলা। ডিমটি খুললে দেখা যায়, ভেতরে ১৮ ক্যারেট সোনার একটি ছোট্ট অক্টোপাস।

ডিমটির নাম দেওয়া হয়েছে ‘অক্টোপাসি এগ’, যা ১৯৮৩ সালের একই নামের জেমস বন্ড চলচ্চিত্র থেকে অনুপ্রাণিত; যার কাহিনির কেন্দ্রে রয়েছে এক জটিল ফ্যাবারজে এগ চুরির ঘটনা।

ফ্যাবারজে দুই শতাব্দীর বেশি আগে রাশিয়ায় প্রতিষ্ঠিত এক বিশ্বখ্যাত জুয়েলারি ব্র্যান্ড, যা রত্ন ও মূল্যবান ধাতু দিয়ে তৈরি ডিম-আকৃতির শিল্পকর্মের জন্য পরিচিত।

বিবিসি জানিয়েছে, ৮ ডিসেম্বর আদালতে হাজির হওয়ার কথা রয়েছে অভিযুক্ত ব্যক্তির। তিনি গত ১২ নভেম্বর একই জুয়েলারি দোকান থেকে একটি আইপ্যাড চুরির অভিযোগেও অভিযুক্ত। পরদিন ১০০ নিউজিল্যান্ড ডলার মূল্যের বিড়ালের বর্জ্য পরিষ্কারের সামগ্রী ও পিঁপড়া নিয়ন্ত্রণের পণ্য চুরির অভিযোগও রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জরায়ুহীন হয়ে জন্মেছিলেন, তাঁর হয়ে সন্তান জন্ম দিলেন প্রিয় বন্ধু

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৫: ১৪
গত অক্টোবরে জর্জিয়া ব্যারিংটনের সন্তান ওটিলির জন্ম দেন ডেইজি হোপ (ডানে)। ছবি: বিবিসি
গত অক্টোবরে জর্জিয়া ব্যারিংটনের সন্তান ওটিলির জন্ম দেন ডেইজি হোপ (ডানে)। ছবি: বিবিসি

সদ্য মা হয়েছেন জর্জিয়া ব্যারিংটন। কিন্তু মেয়ে ওটিলিকে তিনি জন্ম দেননি। জন্ম দিয়েছেন তাঁর প্রিয় বন্ধু ডেইজি হোপ; যিনি কিশোর বয়সে দেওয়া প্রতিশ্রুতি রাখতে জর্জিয়ার হয়ে সন্তানের জন্ম দেন।

দুই বন্ধু ছোটবেলা থেকেই অবিচ্ছেদ্য। তাঁরা নিজেদের ‘সোল সিস্টার্স’ বলে ডাকেন। একসঙ্গে বড় হয়েছেন। তাঁদের বাবারাও ঘনিষ্ঠ বন্ধু।

শৈশবের সেই বন্ধনই একদিন হয়ে ওঠে জীবন বদলে দেওয়া উদারতার ভিত্তি।

১৫ বছর বয়সে জর্জিয়া এমন কিছু জানতে পারেন, যা কোনো অল্প বয়সী মেয়ে আশা করে না। তিনি জরায়ু ছাড়াই জন্মগ্রহণ করেছেন এবং কোনো দিন সন্তান ধারণ করতে পারবেন না।

মেয়ার-রোকিটানস্কি-কুস্টার-হাউসার সিনড্রোম বিরল এক জন্মগত রোগ, যা প্রতি ৫ হাজার নারীর মধ্যে একজনের ক্ষেত্রে দেখা যায়। জর্জিয়ার মনে হয়েছিল, একমুহূর্তে তাঁর ভবিষ্যৎটা যেন বদলে গেল।

১৫ বছর বয়সকালের সেই ঘটনা মনে করে জর্জিয়া বলেন, ‘আমার গোটা পৃথিবীই ভেঙে পড়েছিল। আমি সব সময় ভেবে বড় হয়েছি, আমি একজন মা হব আর সেটা আমার কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়া হলো। আমি যা কিছু স্বপ্ন দেখেছিলাম, সবই শেষ হয়ে গেল।’

সে সময় ডেইজি খুব মাতৃত্বপ্রবণ ছিলেন না। কিন্তু তিনি বন্ধুর রোগ নির্ণয়ের কথা এখনো স্পষ্ট মনে করতে পারেন। তাঁর কাছে ‘অন্যায়’ মনে হয়েছিল—যে বন্ধু মাতৃত্বের স্বপ্ন দেখতেন, তিনি কিনা মা হতে পারবেন না!

এমা বার্নেটের সঙ্গে ‘রেডি টু টক’ অনুষ্ঠানে ডেইজি বলেন, ‘আমি তাঁকে ভরসা দিতে চেয়েছিলাম, বোঝাতে চেয়েছিলাম—পৃথিবী শেষ হয়ে যায়নি। তাই বলেছিলাম, একদিন আমি তাঁর হয়ে সন্তান ধারণ করব। তখন হয়তো বুঝিনি কথাটার গভীরতা কতটা। কিন্তু ভেতরে ভেতরে জানতাম, জর্জিয়ার জন্য আমি এটা করবই।’

১০ বছরের বেশি সময় পরে ডেইজি সেই প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেন। ২০২৩ সালে দুই বন্ধু মিলে আইভিএফ প্রক্রিয়া শুরু করেন।

জর্জিয়া একজন ধাত্রী হিসেবে প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন। নিজেকে এমন এক জগতে নিমজ্জিত করেছিলেন, যে জগতে তিনি হয়তো কোনো দিন অংশ নিতে পারবেন না বলে ভয় পেয়েছিলেন।

জর্জিয়া বলেন, ‘একবার আমাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, এটা কি আমার জন্য সঠিক পেশা? কিন্তু আসলে এটা আমাকে সেরে উঠতে সাহায্য করেছে। আর অন্তর থেকে জানতাম—কোনো না কোনোভাবে আমি মা হবই।’

কয়েক বছর পরে ডেইজি তাঁর প্রথম সন্তানের জন্ম দেন। আর সেই প্রসবে ধাত্রী ছিলেন জর্জিয়াই।

ডেইজি বলেন, ‘আমার সন্তানের প্রতি যে ভালোবাসা অনুভব করেছি, তা ছিল অসাধারণ। তখন মনে হয়েছিল, প্রত্যেকেরই তো এই অনুভূতি পাওয়ার অধিকার আছে।’

তথ্যসূত্র: বিবিসি

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বিড়ালের বিরুদ্ধে ‘যুদ্ধ ঘোষণা’ করল নিউজিল্যান্ড সরকার

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
রাকিউরা স্টুয়ার্ট দ্বীপে এই বিড়াল পুকুনুই বা সাউদার্ন ডটারেল প্রজাতি নামে এক ধরনের পাখিকে প্রায় বিলুপ্তির মুখে ঠেলে দিয়েছে। ছবি: ১২৩আরএফের সৌজন্যে
রাকিউরা স্টুয়ার্ট দ্বীপে এই বিড়াল পুকুনুই বা সাউদার্ন ডটারেল প্রজাতি নামে এক ধরনের পাখিকে প্রায় বিলুপ্তির মুখে ঠেলে দিয়েছে। ছবি: ১২৩আরএফের সৌজন্যে

জীববৈচিত্র্য রক্ষায় ২০৫০ সালের মধ্যে বন্য বিড়াল বা মালিকহীন বিড়াল নির্মূলের ঘোষণা দিয়েছে নিউজিল্যান্ড। দেশটির সংরক্ষণমন্ত্রী তামা পোতাকা গত শুক্রবার এই ঘোষণা দেন।

মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এবার বন্য বিড়ালকে নিউজিল্যান্ডের বিশ্বস্বীকৃত ‘প্রিডেটর-ফ্রি ২০৫০’ তালিকায় যুক্ত করা হয়েছে। এই তালিকায় কিছু শিকারি প্রাণীকে যুক্ত করা হয়েছে, যেগুলো জীববৈচিত্র্যের জন্য হুমকিস্বরূপ। ২০১৬ সালে এই উদ্যোগ চালু হওয়ার পর প্রথমবার কোনো নতুন শিকারিকে এ তালিকায় যুক্ত করা হলো।

দীর্ঘদিন ধরেই নিউজিল্যান্ডের বিভিন্ন এলাকায় বন্য বিড়াল ধরা ও মেরে ফেলা হচ্ছিল। তবে তালিকায় যুক্ত হওয়ায় এবার তাদের বিরুদ্ধে সমন্বিত জাতীয় পর্যায়ের অভিযানে নামবে সরকার—যার মধ্যে থাকবে বৃহৎ আকারের নির্মূল কর্মসূচি ও বিশেষ গবেষণা। এ বিষয়ে বিস্তারিত পরিকল্পনা প্রকাশ করা হবে ২০২৬ সালের মার্চ মাসে।

নিউজিল্যান্ডের বনভূমি ও উপকূলীয় দ্বীপগুলোতে বর্তমানে ২৫ লাখেরও বেশি বন্য বিড়াল ও মালিকহীন বিড়ালের বিচরণ। লেজসহ এসব বিড়ালের দৈর্ঘ্য এক মিটার এবং ওজন প্রায় সাত কেজি পর্যন্ত হতে পারে। এসব বন্য বিড়াল দেশটির দুর্লভ প্রাণিজগৎ ধ্বংসের মূল কারণগুলোর একটি হয়ে উঠেছে।

রাকিউরা স্টুয়ার্ট দ্বীপে এই বিড়াল পুকুনুই বা সাউদার্ন ডটারেল প্রজাতি নামে একধরনের পাখিকে প্রায় বিলুপ্তির মুখে ঠেলে দিয়েছে। মাউন্ট রুয়াপেহু এলাকায় তারা প্রতি সপ্তাহে প্রায় ১০০ বাদুড় শিকার করায় সে প্রজাতিও হুমকিতে।

রেডিও নিউজিল্যান্ডকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সংরক্ষণমন্ত্রী পোতাকা বন্য বিড়ালকে আখ্যা দেন ‘স্টোন-কোল্ড কিলার’ বা নির্দয় শিকারি হিসেবে। তিনি বলেন, ‘জীববৈচিত্র্য রক্ষা, বনভূমির সৌন্দর্য বজায় রাখা এবং আমাদের কাঙ্ক্ষিত পরিবেশ নিশ্চিত করতে হলে এসব হত্যাকারীকে সরিয়ে ফেলতেই হবে।’

বন্য বিড়ালকে তালিকায় যুক্ত করা নিয়ে বহু বছর ধরে প্রচারণা চললেও অতীতে বিষয়টি নিয়ে প্রবল জনমত-বিরোধিতা দেখা গেছে। পরিবেশবিদ গ্যারেথ মরগান ২০১৩ সালে ‘ক্যাটস টু গো’ প্রচারণা শুরু করলে দেশজুড়ে ব্যাপক সমালোচনা হয়। তবে এবার সংরক্ষণ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, খসড়া কৌশল নিয়ে জনমতের ৯০ শতাংশই বন্য বিড়াল নির্মূল করার পক্ষে মত দিয়েছে।

এদিকে, গৃহপালিত বিড়াল এ তালিকায় না থাকলেও সেগুলোও দেশটির জীববৈচিত্র্যের জন্য হুমকি বলে মনে করা হচ্ছে। প্রসঙ্গত, গৃহপালিত প্রাণী হিসেবে বিড়াল পালনের দিক থেকে নিউজিল্যান্ড বিশ্বের শীর্ষ দেশগুলোর একটি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত