Ajker Patrika

সাগরের ওপর দিয়ে ১১৩ মাইলের মহাসড়ক

আপডেট : ৩০ মে ২০২৩, ১৫: ৫৩
সাগরের ওপর দিয়ে ১১৩ মাইলের মহাসড়ক

আটলান্টিক মহাসাগর ও গালফ অব মেক্সিকোর মাঝখানের কোনো জায়গা। চিকচিক করা জলের ওপর গাঙচিলের ঝাঁক চেঁচামেচি জুড়েছে। আকাশের সমস্ত রং যেন গলে পড়েছে সাগরে, প্রবাল ও চুনাপাথরের দ্বীপের মাঝখানে প্রণালিতে পরিণত হয়ে যে ধারণ করেছে সবুজাভ–নীল রং। তবে এর বাইরে সাগরের যতদূর চোখ যাচ্ছে নীলের অবাধ বিস্তার। 

চোখের রোদচশমাটা একটু ঠিকঠাক করতেই পাশে সাগরের জলে কিছু একটির আভাস। একটা বটলনোজ ডলফিন। আপনার আশপাশে অলস সময় কাটাচ্ছে জেলেদের নৌকাগুলো। আর আপনি বসে আছেন একটি গাড়ির ভেতরে, যেটি ৫০ মাইল বেগে ছুটে চলেছে মহাসাগরের ওপর দিয়ে যাওয়া ১১৩ মাইল লম্বা আশ্চর্য এক সড়ক দিয়ে।

অদ্ভুত সুন্দর এ পথের দেখা পেতে হলে আপনাকে যেতে হবে মার্কিন মুল্লুকের ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যে। মহাসাগরের বুক চিরে যাওয়া মহাসড়কটি যুক্ত করেছে মূলভূমির সঙ্গে দুর্গম ফ্লোরিডা কিকে। বলা চলে এটাই বদলে দিয়েছে রাজ্যটিকে।

১২৫ মাইল দীর্ঘ অনেকগুলো দ্বীপের এক শিকলের মতো এই ফ্লোরিডা কি। আর এর প্রধান শহর বলতে পারেন কি ওয়েস্টকে।

বিখ্যাত সেভেন মাইল ব্রিজ রানে প্রতিযোগীরা। ছবি: ফেসবুকতবে ফ্লোরিডার মিয়ামি থেকে কি ওয়েস্ট পর্যন্ত যাওয়া এখনকার মতো সহজ ছিল না আগে। বিশ শতকের গোড়ার দিকে গোটা দিন লেগে যেত নৌকা বা জাহাজে সেখানে পৌঁছাতে। তারপরও গোটা বিষয়টি নির্ভর করত আবহাওয়া ও জোয়ার-ভাটার ওপর। এখনকার এই আয়েশি যাত্রার জন্য ধন্যবাদ পেতে পারে ১১৩ মাইল দীর্ঘ রাস্তা, যেটি মূলভূমির দক্ষিণ অংশ থেকে ছড়িয়েছে। এই পথে সে ৪৪টি দ্বীপের সঙ্গে সংযোগ তৈরি করেছে ৪২টি সেতুর মাধ্যমে। যাত্রাপথেই আশ্চর্য সুন্দর এক টুকরা ম্যানগ্রোভ অরণ্যের দেখা পেয়ে যাবেন, যেখানে উত্তর আমেরিকা ও ক্যারিবিয়ান অঞ্চল এক হয়েছে।

মহাসড়কটির শুরু আসলে সাগরের ওপরের এক রেলপথের মাধ্যমে। আর এর মূল কৃতিত্ব আধুনিক ফ্লোরিডার জনক হিসেবে পরিচিত হেনরি মরগান ফ্ল্যাগারের। ফ্লোরিডা ভ্রমণে গিয়ে সেখানকার পর্যটনের অপার সম্ভাবনা দেখে ফ্ল্যাগার তাঁর সম্পদের বিশাল একটি অংশ ঢাললেন জায়গাটির উন্নয়নে।  

পথের দু–পাশের সাগরের দৃশ্য মুগ্ধ করে পর্যটকদের। ছবি: ফেসবুকএর অংশ হিসেবে ১৮৮৫ সালে আটলান্টিক উপকূলের ফ্লোরিডার উত্তরের সীমার জ্যাকসনভিলের সঙ্গে দক্ষিণের মিয়ামির কিছু বিচ্ছিন্ন রেলপথকে যুক্ত করলেন। এই রেলপথের শেষ হওয়ার কথা মিয়ামিতেই। তবে ১৯০৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র যখন পানামা খাল তৈরির কাজ শুরু করল, কি ওয়েস্টের জন্য বড় সম্ভাবনা দেখলেন ফ্ল্যাগার। ১৯০০ সাল পর্যন্ত কি ওয়েস্টই ছিল ফ্লোরিডার সবচেয়ে বড় শহর, তবে দ্বীপটির দুর্গম অবস্থানের কারণে উত্তরে বিভিন্ন মালামাল সরবরাহ ছিল ব্যয়বহুল ও ঝক্কির কাজ।

কাজেই ফ্ল্যাগার সিদ্ধান্ত নিলেন রেলপথটিকে ১৫৬ মাইল দক্ষিণে কি ওয়েস্ট পর্যন্ত বিস্তৃত করার, যার বেশির ভাগটাই যাবে খোলা সাগরের ওপর দিয়ে। ১৯০৫ থেকে ১৯১২ সালের মধ্যে নির্মাণ এলাকার ওপর আঘাত হানে তিনটি প্রচণ্ড হারিকেন। এতে প্রাণ যায় এক শর বেশি শ্রমিকের। তবে ফ্ল্যাগার লক্ষ্যে ছিলেন অবিচল। কাজটি সম্পন্ন করতে সময় লাগে সাত বছর। খরচ হয় ৫ কোটি ডলার (এখনকার হিসাবে ১৫৬ কোটি ডলার)। রেলপথ তৈরি হয় ৪ হাজার আফ্রো–আমেরিকান, বাহামিয়ান ও ইউরোপীয় শ্রমিকের শ্রমে।

রাস্তাটি সাধারণের জন্য উন্মুক্ত হয় ১৯৩৮ সালে। ছবি: উইকিপিডিয়া১৯১২ সালে রেলপথ তৈরির কাজ যখন শেষ হলো, তখন একে বলা হতো পৃথিবীর অষ্টম বিস্ময়। ১৯৩৫ সাল পর্যন্ত চালু ছিল রেলপথটি। তারপরই শতাব্দীর অন্যতম ভয়াবহ হারিকেনে কয়েক মাইল রেলট্র্যাক পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়। তবে এটাকে সংস্কার করার বদলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সরকার পানির ওপরের দীর্ঘতম সড়কগুলোর একটি তৈরি শুরু করল। আর এর বড় ভিত ছিল ফ্ল্যাগারের প্রায় ‘ধ্বংস করা অসম্ভব সেতু’গুলো। ২০০ মাইল গতির বাতাসের সামনেও যেগুলো দাঁড়িয়ে থাকতে পারে।

ওই সময় ফ্লোরিডা ইস্ট কোস্ট রেলওয়ের থেকে রাস্তার বেড ও রেলসেতুগুলো ফ্লোরিডা রাজ্যের পক্ষ থেকে কিনে নেওয়া হয় ৬ লাখ ৪০ হাজার ডলারে। অবশ্য গোটা সড়কপথটি নতুনভাবে তৈরি করতে হয়েছে তা নয়। এর কিছু কিছু অংশ রেলপথ চালু থাকার সময়ও ছিল। বলা চলে অনেক অংশেই সেতুগুলোর মাধ্যমে ওগুলোকে সংযুক্ত করা হয়। নতুন এই পথ উন্মুক্ত করে দেওয়া হয় ১৯৩৮ সালে।

পথে পড়বে দৃষ্টিনন্দন সব দ্বীপ। ছবি: ফেসবুকরেলপথ তৈরির পর এক শ বছরের বেশি পেরিয়ে গেলেও মূল সেতুগুলোর ২০টি আজও মায়ামি থেকে কি ওয়েস্টের দিকে যাওয়া সড়কপথের যাত্রীদের সেবা দিয়ে যাচ্ছে। এমনিতে গোটা পথটি চার ঘণ্টার মধ্যে পাড়ি দিয়ে দিতে পারবেন। তবে পথে আপনাকে থামতেই হবে সাগরের অসাধারণ দৃশ্য দেখতে।

মিয়ামির ৬৯ মাইল দক্ষিণে পড়বে কিই লারগো। সেখানকার সাগরের জীববৈচিত্র্য দেখতে ভিড় জমান সাঁতারু ও ডুবুরিরা। শরীরটা শুকিয়ে আবার গাড়িতে চেপে পৌঁছে যাবেন আইলামোরাডায়। একটা সময় এখানে ছিল সাগরের ওপরের এক রেলস্টেশন। ৩৫ মিনিটের তথ্যচিত্রে আপনার সামনে নিয়ে আসা হবে রেলপথ তৈরির ইতিহাস ও নানা প্রতিবন্ধকতা।

মিয়ামি এবং কি ওয়েস্টের পর্যটনকেন্দ্রগুলোর সেতুবন্ধ হিসেবে এখন দারুণ জনপ্রিয় মহাসড়কটি।এখান থেকে ৩৫ মাইল দক্ষিণে অবস্থান পিজিয়ন কি নামের ছোট্ট এক প্রবাল দ্বীপের।  সাগরের ওপরের রেলপথের সবচেয়ে জটিল ‘সেভেন মাইল ব্রিজ’ তৈরির জন্য ১৯০৮ থেকে ১৯১২ সাল পর্যন্ত ৪০০ শ্রমিকের আস্তানা ছিল জায়গাটি। এখন কেবল চারজন স্থায়ী বাসিন্দার আবাসস্থল দ্বীপটি। পাঁচ একরের দ্বীপটিকে জাতীয় ঐতিহাসিক এলাকা ঘোষণা করা হয়েছে। এখানে চমৎকার একটি জাদুঘরও পাবেন।

অসাধারণ সাগরের দৃশ্য এবং মিয়ামি ও কি ওয়েস্টের পর্যটনকেন্দ্রগুলোর সেতুবন্ধ হিসেবে এখন দারুণ জনপ্রিয় মহাসড়কটি। তা ছাড়া সড়কপথে কি ওয়েস্টে পৌঁছার একমাত্র রাস্তা এটি। এ ছাড়া যেতে পারবেন উড়োজাহাজ কিংবা উচ্চগতির ফেরিতে চেপে। তবে সড়কপথে চলতে চলতে সাগরের আশ্চর্য দৃশ্য দেখার সুযোগ মেলে কেবল এ রাস্তাটি ধরে গেলেই।

সূত্র: বিবিসি, ফ্লোরিডা গাইড বুক

বিচিত্র সম্পর্কিত আরও পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বাগ্দত্তা ‘বেশি খায়’, বিয়ে ভেঙে দিয়ে ক্ষতিপূরণ চাইলেন প্রেমিক

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
প্রতীকী ছবি। ছবি: ফ্রিপিক
প্রতীকী ছবি। ছবি: ফ্রিপিক

এক চীনা ব্যক্তি তাঁর প্রাক্তন বাগ্দত্তার বিরুদ্ধে মামলা করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছেন। ওই ব্যক্তির দাবি, তাঁর বাগ্‌দত্তা ‘খুব বেশি খাবার খেতেন।’ তাই সম্পর্কের পেছনে ব্যয় করা সমস্ত টাকা তাঁকে ফেরত দিতে হবে।

স্থানীয় সংবাদমাধ্যম জংলান নিউজের বরাত দিয়ে হংকং থেকে প্রকাশিত ইংরেজি দৈনিক সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট গত ৯ ডিসেম্বর এই যুগলকে নিয়ে আদালতের একটি শুনানি সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়। হে পদবির ওই ব্যক্তি তাঁর বান্ধবী ওয়াংয়ের বিরুদ্ধে মামলাটি করেন। মামলায় হে দাবি করেন, তাঁর পরিবার কনেপক্ষকে অগ্রিম যৌতুক (ব্রাইড প্রাইস) হিসেবে যে ২০ হাজার ইউয়ান বা ২ হাজার ৮০০ মার্কিন ডলার দিয়েছিল, তা তিনি ফেরত পেতে চান।

শুধু তাই নয়, সম্পর্কের সময় ওয়াংয়ের পেছনে খরচ হওয়া আরও ৩০ হাজার ইউয়ানও (৪ হাজার ২০০ মার্কিন ডলার) দাবি করেন হে। এই খরচের তালিকায় এমনকি তাঁর কেনা কালো টাইটস এবং অন্তর্বাসও অন্তর্ভুক্ত ছিল।

উত্তর-পূর্ব চীনের হেইলংজিয়াং প্রদেশের একই গ্রামের বাসিন্দা হে এবং ওয়াং। এক ঘটকের মাধ্যমে তাদের পরিচয় এবং পরে বাগদান সম্পন্ন হয়। বাগদানের পর তাঁরা উত্তর চীনের হেবেই প্রদেশে হে-র পরিবারের মালিকানাধীন একটি রেস্তোরাঁ চালাতে যান।

উল্লেখ্য, মালাতাং চীনের একটি জনপ্রিয় স্ট্রিট ফুড, যা মাংস, সবজি ও নুডলসের ঝাল ঝোলে তৈরি করা হয়। ওয়াং সেখানে ৬ মাস কাজ করেন। তবে হে-র অভিযোগ, ওয়াং কেবল ‘সহজ কাজগুলো’ করতেন। হেইলংজিয়াং টিভিকে হে বলেন, ‘সে প্রতিদিন আমাদের মালাতাং খেত। আমাদের বিক্রির জন্য যা থাকত, তাও তাঁর খাওয়ার জন্য যথেষ্ট ছিল না।’ তিনি আরও যোগ করেন, তাঁর পরিবারও ওয়াংয়ের ওপর অসন্তুষ্ট ছিল কারণ তাদের মনে হয়েছে মেয়েটি বদলে গেছে।

আদালতে হে সেই সব জিনিসের তালিকা পেশ করেন যা তিনি ওয়াংয়ের জন্য কিনেছিলেন। জবাবে ওয়াং বলেন, ‘ও বড্ড বেশি হিসেবি। আমি তো ওর বান্ধবী ছিলাম।’ আদালতে তিনি হে-কে প্রশ্ন করেন, ‘তুমি আমাকে যে টাইটস আর অন্তর্বাস কিনে দিয়েছিলে, সেগুলো কি তুমি নিজেও উপভোগ করোনি?’

আদালত ৩০ হাজার ইউয়ান ফেরত দেওয়ার দাবিটি খারিজ করে দেয়। বিচারক জানান, এগুলো ব্যক্তিগত জিনিস যা উভয় পক্ষকেই আবেগীয় তৃপ্তি দিয়েছে। তবে অগ্রিম দেওয়া ২০ হাজার ইউয়ান যৌতুকের অর্ধেক টাকা ওয়াংকে ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। আদালতের এই রায়ে উভয় পক্ষই সন্তোষ প্রকাশ করেছে।

চীনে যৌতুক বা ‘ব্রাইড প্রাইস’ একটি প্রাচীন প্রথা। বিয়ের সময় বরের পরিবার কনের পরিবারকে উপহার হিসেবে এই টাকা দেয়, যা মূলত মেয়েটিকে পরিবারে স্বাগত জানানোর একটি আন্তরিক প্রথা। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এই প্রথা নিয়ে নানা বিতর্ক তৈরি হয়েছে। কেউ কেউ একে সেকেলে এবং নারীকে পণ্য হিসেবে বিবেচনা করার নামান্তর মনে করেন। আবার অনেকে একে বিয়ের পর নারীর ত্যাগের ক্ষতিপূরণ হিসেবে দেখেন।

২০২১ সালে কার্যকর হওয়া চীনের সিভিল কোড অনুযায়ী, যদি বিয়ে সম্পন্ন না হয় কিংবা বিয়ের পর স্বামী-স্ত্রী একত্রে বসবাস না করেন, তবে যৌতুকের টাকা ফেরত দেওয়ার দাবি আদালত সমর্থন করতে পারে।

ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর ইন্টারনেটে সমালোচনার ঝড় বয়ে গেছে। একজন মন্তব্য করেছেন, ‘ও যদি এতই হিসেবি হয়, তবে কেন মেয়েটিকে বেতন দিল না?’ অন্য একজন লিখেছেন, ‘ওর বউ নয়, একজন আয়া দরকার ছিল।’ তৃতীয় আরেকজন লিখেছেন, ‘মেয়েটিকে অভিনন্দন যে সে এমন এক সংকীর্ণমনা মানুষের হাত থেকে মুক্তি পেয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

মদের দোকানে তাণ্ডব, বাথরুমে পাওয়া গেল মাতাল র‍্যাকুন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১: ১৯
মদ খেয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়ে ছিল একটি র‍্যাকুন। ছবি: সংগৃহীত
মদ খেয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়ে ছিল একটি র‍্যাকুন। ছবি: সংগৃহীত

সকালে দোকানের শাটার খুলতেই চক্ষু চড়কগাছ যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়ার অ্যাশল্যান্ডের একটি সরকারি মদের দোকানের কর্মীদের। দোকানের মেঝেতে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে শত শত ভাঙা কাচের টুকরা। মেঝে ভেসে গেছে দামি বিলেতি মদে! প্রাথমিকভাবে সবাই বড় কোনো চুরির আশঙ্কা করলেও কোনো দামি জিনিস খোয়া যায়নি; বরং দোকানের বাথরুমের কমোড আর ডাস্টবিনের চিপায় উদ্ধার হলো আসল ‘অপরাধী’। সেখানে অঘোরে নাক ডেকে ঘুমাচ্ছিল এক বুনো র‍্যাকুন!

ঘটনার সূত্রপাত হয় থ্যাংকসগিভিংয়ের ছুটিতে। দোকান বন্ধ থাকার সুযোগে এই ‘মুখোশধারী ডাকাত’ সিলিংয়ের টাইলস ভেঙে দোকানের ভেতরে প্রবেশ করে। পশুপালন দপ্তরের কর্মকর্তা সামান্থা মার্টিন গণমাধ্যমকে জানান, ভেতরে ঢুকেই র‍্যাকুনটি পুরোদস্তুর তাণ্ডব শুরু করে। তবে তার প্রধান আকর্ষণ ছিল নিচের দিকের তাকগুলোতে সাজিয়ে রাখা স্কচ হুইস্কির বোতলগুলো। বেশ কয়েকটি বোতল ভেঙে, প্রচুর পরিমাণে স্কচ সাবাড় করে র‍্যাকুনটি মাতাল হয়ে পড়ে। একপর্যায়ে নেশার ঘোরে সে বাথরুমে আশ্রয় নেয় এবং সেখানেই জ্ঞান হারায়।

খবর পেয়ে সামান্থা মার্টিন ঘটনাস্থলে পৌঁছে র‍্যাকুনটিকে উদ্ধার করেন। তিনি কৌতুক করে বলেন, ‘পশু সুরক্ষা ও নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তার জীবনে এটা আর দশটা দিনের মতোই একটি সাধারণ দিন!’

পুরো মদের দোকান তছনছ করেছিল বুনো র‍্যাকুন। ছবি: সংগৃহীত
পুরো মদের দোকান তছনছ করেছিল বুনো র‍্যাকুন। ছবি: সংগৃহীত

র‍্যাকুনটি এতটাই নেশাগ্রস্ত ছিল যে সেটিকে ‘প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য’ হ্যানোভার কাউন্টি অ্যানিমেল প্রটেকশন শেল্টারে নিয়ে যাওয়া হয়। তবে পুলিশি কাস্টডিতে নয়, বরং তার নেশা কাটানোর জন্যই এই ব্যবস্থা।

বেশ কয়েক ঘণ্টা একটানা ঘুমের পর যখন র‍্যাকুনটি হ্যাংওভার কাটে। শারীরিক কোনো চোট পাওয়া যায়নি। এটি নিশ্চিত হয়েই তাকে সসম্মানে জঙ্গলে ছেড়ে দেওয়া হয়।

দোকানের সিসিটিভি ফুটেজে এক রহস্যময় ছায়ামূর্তির তাণ্ডব দেখা গেলেও র‍্যাকুনটি ঠিক কতটা স্কচ হজম করেছিল, তা অজানাই রয়ে গেছে। দোকানের পক্ষ থেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি মজার পোস্ট দিয়ে জানানো হয়, র‍্যাকুনটিকে নিরাপদে ‘সোবার রাইড’, অর্থাৎ নেশামুক্ত অবস্থায় বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার জন্য তারা প্রশাসনের কাছে কৃতজ্ঞ!

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভারতে প্রায় কোটি টাকার এক হিরা খুঁজে পেলেন ‘শৈশবের দুই বন্ধু’

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
সতীশ ও সাজিদের পাওয়া এই হিরাটি ১৫.৩৪ ক্যারেটের। ছবি: বিবিসি
সতীশ ও সাজিদের পাওয়া এই হিরাটি ১৫.৩৪ ক্যারেটের। ছবি: বিবিসি

ভারতের মধ্যাঞ্চলের একটি প্রত্যন্ত এলাকায় হঠাৎ পাওয়া একটি হিরার খোঁজ দুই বন্ধুর জীবনে আশার আলো জ্বালিয়েছে। মধ্যপ্রদেশের পান্না জেলায় সম্প্রতি এক শীতের সকালে শৈশবের বন্ধু সতীশ খাটিক ও সাজিদ মোহাম্মদের হাতে ধরা পড়েছে ১৫.৩৪ ক্যারেটের মূল্যবান ওই হিরাটি। এটির বাজারমূল্য বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় পৌনে এক কোটি টাকা।

বুধবার (১৭ ডিসেম্বর) বিবিসি জানিয়েছে, পান্না জেলা ভারতের অন্যতম হিরা উত্তোলন অঞ্চল। সেখানেই কয়েক সপ্তাহ আগে লিজ নেওয়া একটি জমিতে কাজ করতে গিয়ে চকচকে পাথরটির সন্ধান পান সতীশ ও সাজিদ। পরে সেটি শহরের সরকারি হিরা মূল্যায়ন কর্মকর্তার কাছে নিয়ে গেলে নিশ্চিত হওয়া যায়—এটি উৎকৃষ্ট মানের প্রাকৃতিক হিরা।

সতীশের হাতে খুঁজে পাওয়া হিরাটি, পাশে সাজিদ। ছবি: বিবিসি
সতীশের হাতে খুঁজে পাওয়া হিরাটি, পাশে সাজিদ। ছবি: বিবিসি

মূল্যায়ন কর্মকর্তা অনুপম সিং জানান, হিরাটির সম্ভাব্য দাম ৭০ থেকে ৮০ লাখ টাকা। শিগগিরই এটিকে সরকারি নিলামে তোলা হবে। এই নিলামে দেশ-বিদেশের ক্রেতারা অংশ নেবেন। তিনি আরও জানান, হিরার দাম নির্ভর করে ডলারের বিনিময় হার ও আন্তর্জাতিক রাপাপোর্ট রিপোর্টের মানদণ্ডের ওপর।

২৪ বছর বয়সী সতীশ খাটিক একটি মাংসের দোকান চালান, আর ২৩ বছরের সাজিদ মোহাম্মদ ফল বিক্রি করেন। দুজনই দরিদ্র পরিবারের সন্তান এবং পরিবারের কনিষ্ঠ সদস্য। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে তাঁদের পরিবার পান্নায় হিরা খোঁজার চেষ্টা করেছে। কিন্তু এত দিন কোনো বড় সাফল্য আসেনি।

উন্নয়ন সূচকে পান্না জেলা পিছিয়ে থাকা একটি এলাকা। এখানে দারিদ্র্য, পানির সংকট ও বেকারত্ব নিত্যদিনের বাস্তবতা। তবে এই জেলাতেই ভারতের অধিকাংশ হিরা মজুত রয়েছে, যা স্থানীয়দের ভাগ্য বদলের স্বপ্ন দেখায়।

সাজিদের বাবা নাফিস জানান, বছরের পর বছর খোঁড়াখুঁড়ি করেও তাঁরা পেয়েছেন শুধু ধুলো আর কাঁচের টুকরো। তিনি বলেন, ‘ঈশ্বর অবশেষে আমাদের ধৈর্য আর পরিশ্রমের ফল দিয়েছেন।’ সংসারের ক্রমবর্ধমান খরচ ও বিয়ের ব্যয় মেটাতে না পেরে হতাশা থেকেই জমিটি লিজ নিয়েছিলেন সাজিদ।

হিরা খোঁজার কাজ সহজ নয়। দিনের কাজ শেষে সন্ধ্যায় কিংবা ছুটির সময় মাটি খুঁড়ে, পাথর ধুয়ে, চালুনিতে ছেঁকে হাজারো কণার ভিড় থেকে সম্ভাব্য হিরা আলাদা করতেন সতীশ ও সাজিদ। পান্নার জেলা খনি কর্মকর্তা রবি প্যাটেল বলেন, ‘গত ১৯ নভেম্বর তারা জমিটি লিজ নেয়। কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই এমন মানের হিরা পাওয়া সৌভাগ্যের ব্যাপার।’

এখনো নিলামের টাকা হাতে না পেলেও দুই বন্ধু আশাবাদী। বড় শহরে চলে যাওয়া বা ব্যবসা বাড়ানোর চিন্তা আপাতত তাঁরা বাদ দিয়েছেন। তাঁদের একটাই লক্ষ্য—এই অর্থ দিয়ে নিজেদের বোনদের বিয়ে দেওয়া।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

লিংকডইনে গার্লফ্রেন্ড চেয়ে বিজ্ঞাপন দেওয়ার পর যা ঘটল

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১: ১২
‘গার্লফ্রেন্ড’ বা নারীবন্ধুর খোঁজে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছেন ভারতের এক ব্যক্তি। ছবি: লিংকডইন থেকে নেওয়া।
‘গার্লফ্রেন্ড’ বা নারীবন্ধুর খোঁজে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছেন ভারতের এক ব্যক্তি। ছবি: লিংকডইন থেকে নেওয়া।

চাকরি খোঁজার জনপ্রিয় প্ল্যাটফর্ম লিংকডইন। সেখানে কর্মীরা চাকরি খোঁজেন এবং অনেক প্রতিষ্ঠান সেখান থেকে কর্মীদের বাছাই করে থাকে। এই প্ল্যাটফর্মে এবার ‘গার্লফ্রেন্ড’ বা নারীবন্ধুর খোঁজে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছেন ভারতের এক ব্যক্তি। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে হাসি-ঠাট্টা ও বিদ্রুপ।

ভারতের হরিয়ানার গুরুগ্রামের দীনেশ বৈরাগী। ‘পূর্ণকালীন’ চাকরির অফার দিয়ে নারীবন্ধু খুঁজেছেন লিংকডইনে। ওই বিজ্ঞাপনের বিবরণে সম্ভাব্য ‘গার্লফ্রেন্ড’-এর জন্য প্রয়োজনীয় নানা গুণাবলির কথাও উল্লেখ করেছেন দীনেশ।

টেক মাহিন্দ্রার সাবেক সিনিয়র অ্যাসোসিয়েট দীনেশ চাকরির বিজ্ঞাপনে লিখেছেন, ‘গুরগাঁওয়ে পূর্ণকালীন গার্লফ্রেন্ডের পদ খালি আছে। সরাসরি দেখা করা এবং দূর থেকে দায়িত্ব পালন দুটোই করতে হবে।’

প্রযুক্তিখাতে অভিজ্ঞ এই যুবক চাকরির বিজ্ঞাপনে আরও লিখেছেন, ‘এই ভূমিকায় শক্তিশালী আবেগগত সম্পর্ক গড়ে তোলা ও তা বজায় রাখা, অর্থবহ কথোপকথনে অংশ নেওয়া, সঙ্গ দেওয়া, পারস্পরিক সমর্থন এবং সঙ্গীর সঙ্গে বিভিন্ন কার্যক্রম বা শখে যুক্ত থাকার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত থাকবে।’

তিনি আরও লেখেন, ‘সক্রিয় যোগাযোগ, পারস্পরিক সম্মান ও বোঝাপড়া এই ভূমিকাটির ভিত্তি হবে। পাশাপাশি যৌথ সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং ইতিবাচক ও সহায়ক সম্পর্কের পরিবেশ গড়ে তোলাও এর অন্তর্ভুক্ত।’

দীনেশ চাকরিপ্রার্থীর যোগ্যতার ক্ষেত্রে উচ্চমাত্রার আবেগগত বুদ্ধিমত্তা, শোনার সক্ষমতা, সহমর্মিতা ও আন্তঃব্যক্তিক দক্ষতার কথা উল্লেখ করেছেন। এ ছাড়া তিনি জানান, এমন একজনকে তিনি খুঁজছেন, যাঁর মধ্যে রসবোধ, দয়া এবং ইতিবাচক মানসিকতা থাকবে।

তিনি আরও যোগ করেন, ‘সম্পর্কের ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত ও যৌথ লক্ষ্যগুলোর মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করার সক্ষমতা থাকতে হবে। শখ, কার্যক্রমে আগ্রহ বা একসঙ্গে নতুন অভিজ্ঞতা গড়ে তোলার মানসিকতারও প্রয়োজন রয়েছে। পাশাপাশি সম্পর্কের ভেতরে পারস্পরিক সমর্থন ও বিকাশে আগ্রহী হতে হবে।’

লিংকডইনে দেওয়া এই চাকরি খোঁজার মতো করে গার্লফ্রেন্ড খোঁজার পোস্টটি দ্রুতই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এটি নিয়ে রসিকতার বন্যা বইয়ে দেন নেটিজেনরা। অনেকেই এই অদ্ভুত চাকরির বিজ্ঞাপন নিয়ে ঠাট্টা–মশকরা করেন, আবার কেউ কেউ সরাসরি পারিশ্রমিক বা বেতন প্যাকেজ সম্পর্কে জানতে চান।

একজন ব্যবহারকারী লিখেছেন, ‘ওহ, এখন সব পরিষ্কার! তাহলে আমার প্রাক্তন আমার সঙ্গে ছয় মাস গার্লফ্রেন্ড হিসেবে ইন্টার্নশিপ করেছিল, এরপর অন্য কোথাও ফুলটাইম গার্লফ্রেন্ডের চাকরি পেয়ে চলে গেছে।’

আরেকজন মন্তব্য করেন, ‘আপনি যদি আসলেই ভারতীয় হন, তাহলে যেকোনো অ্যাপই ডেটিং অ্যাপ বানিয়ে ফেলবেন।’

তৃতীয় একজন লিখেছেন, ‘পদের বিবরণ দেখে বেশ চমকপ্রদই লাগছে, কিন্তু স্যালারি কত?’

একজন ব্যবহারকারী প্রশ্ন করেন, ‘তিনি কি লিংকডইনের পোস্টের মাধ্যমে কোনো পরীক্ষা চালাচ্ছেন?’ উত্তরে দীনেশ বলেন, ‘একেবারেই না। এটি একটি প্রকৃত শূন্যপদ। প্রোফাইলটি ভালোভাবে বোঝার জন্য আমি চাকরির বিবরণ দেখার পরামর্শ দিচ্ছি। এছাড়া কেউ যদি আগ্রহী ও যোগ্য হন, তাদেরও নির্দেশনা দেওয়া যেতে পারে।’

শেষ আপডেট অনুযায়ী দীনেশ জানিয়েছেন, এই ‘চাকরির’ জন্য এরইমধ্যে ২৬ জন আবেদন করেছেন। এখন নতুন কোনো আবেদন গ্রহণ করা হচ্ছে না বলেও জানান তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত