ড. মঞ্জুরে খোদা
অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস নতুন দল গঠন প্রসঙ্গে বলেন, ‘তরুণেরা সত্যিই প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তাদের খারাপ কোনো কিছুর সঙ্গে সংস্পর্শ নেই বা নিজেদের রাজনৈতিক আখের গোছানোর ব্যক্তিগত আকাঙ্ক্ষা নেই। তারা এই পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক দল গঠন করছে বা রাজনীতিতে যুক্ত হচ্ছে। এটা দরকার। কারণ, রক্ত দিয়ে তারা যেগুলো অর্জন করেছে, সেগুলো তাদের রক্ষা করতে হবে। অন্যথায় সেগুলো সেই সব ব্যক্তি নিয়ে যাবে, যারা বিগত প্রশাসন ও অন্যান্যের মতো সবকিছুর পুনরাবৃত্তির সুযোগ খুঁজছে। এটাই বাংলাদেশে আমাদের রাজনৈতিক পরিবেশ। সুতরাং তারা এটা রক্ষা করার চেষ্টা করছে। তাই আমি বলব, ছাত্রদের স্বচ্ছ অভিপ্রায় থাকবে।’
‘... যারা বিগত প্রশাসন ও অন্যান্যের মতো সবকিছুর পুনরাবৃত্তির সুযোগ খুঁজছে।’ ড. ইউনূসের বক্তব্যটি গভীর তাৎপর্য ও ইঙ্গিতপূর্ণ। এ কথার ব্যাখ্যা করলে দাঁড়ায়, বিগত দিনের শাসক যাঁরা ছিলেন...প্রধানত আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকেই ইঙ্গিত করছেন। তাঁর এ কথার সঙ্গে আমি খুব দ্বিমত পোষণ করি না। কেননা, বিগত দিনে ক্ষমতা দখল করে রাজনীতিকেরা যা করেছেন, তার পুনরাবৃত্তি হোক, সেটা এ দেশের জনগণ চায় না। কিন্তু তা না হওয়ার পথপ্রক্রিয়া কী? কথিত ছাত্ররা দল গঠনের মাধ্যমে সেই অবস্থা পরিবর্তনের যে কথা বলছে, সেইভাবে কি সেটা হবে? সম্ভব? যে প্রেক্ষাপট ও প্রক্রিয়ায় কাজটি করার কথা বলা হচ্ছে, মনে করি সেটা ভালোর চেয়ে আরও ক্ষতি ও জটিলতার কারণ হবে।
কেন বলছি সে কথা? ছাত্ররা কোনো একক শক্তি নয়। তারা বিভক্ত ছিল, আছে অনেক আগে থেকেই। জাতীয় পর্যায়ে স্বীকৃত সংগঠন যেমন ছাত্রদল, নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগ, ছাত্রশিবির, ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্রফ্রন্টসহ অন্যান্য সংগঠনের মধ্যে আদর্শগত বিরোধ বিদ্যমান। ছাত্ররাজনীতির প্রয়োজন, আবেদন ও গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে যখন প্রশ্ন উঠছিল। তেমন একটি সময়ে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ দেশের সব ছাত্রসংগঠন ও ছাত্রদের একটি নতুন প্ল্যাটফর্ম হয়ে উঠেছিল, যার মাধ্যমে গত বছর এক অভাবনীয় অভ্যুত্থান সংগঠিত হয়েছে। এটা তাদের একটি বিশাল অর্জন। কিন্তু এই সংগঠন যখন রাজনৈতিক দল গঠন ও ক্ষমতা দখলের বাসনা পোষণ শুরু করল, তখন থেকেই সেই অবস্থার পরিবর্তন হতে থাকল। কেননা, সেই আন্দোলনে তাদের সঙ্গে থাকা অন্যান্য সংগঠন ও সাধারণ ছাত্ররা তাদের পাশ থেকে সরে পড়ল।
শুধু তা-ই নয়, সম্প্রতি বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের ‘অন্তর্বর্তী সরকারের ভবিষ্যৎ নিরপেক্ষতার’ বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামের আরেকটি ১/১১-র প্রেক্ষাপটের সম্ভাবনা তৈরির মন্তব্যে এই বৈরিতা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। রাজনৈতিক দল গঠন করা যে কারও গণতান্ত্রিক অধিকার। তাতে খারাপ কিছু নেই। কিন্তু কারা, কোন সময়ে ও প্রেক্ষাপটে, কোন লক্ষ্য-উদ্দেশ্যে সেই কাজ করছে, সেটা গুরুত্বপূর্ণ। ইউনূস সরকারের অধীনে যাঁরা এ কাজ করছেন, তাঁদের এই তৎপরতাকে অন্যান্য রাজনৈতিক দল স্বাভাবিকভাবে নিচ্ছে না। কারণ, দল গঠন শুধু নিছক কোনো দল নয়, তারা ক্ষমতার প্রধান দাবিদার বিএনপির জন্য চ্যালেঞ্জ তৈরি করবে। তার চেয়েও বড় প্রশ্ন, তারা ইউনূস সরকারকে ব্যবহার করবে এবং তাদের প্রতি তিনি তাঁর শুভেচ্ছার কথা খোলামেলাভাবেই বলছেন।
রাজনীতি একটি মহান আদর্শ ও পেশা। এর মাধ্যমে দেশ-জাতির প্রভূত উন্নতি ও সমৃদ্ধি সম্ভব, কিন্তু তার জন্য প্রয়োজন উপযুক্ত নেতৃত্ব। নেতৃত্বের সঠিক নির্দেশনায় দেশ-জাতির অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক উন্নয়ন ঘটে; যার মধ্য দিয়ে সভ্যতা, মানবতা সামনের দিকে অগ্রসর হয়। কিন্তু তা কথায়, ভাবনায় ও তত্ত্বে যতটা সুন্দর-সাবলীল, বাস্তবে ততটাই রূঢ় ও কঠিন। ম্যাকিয়াভেলির মতে, ‘শাসনক্ষমতার বৈধতা কোনো নৈতিকতার মাপকাঠিতে আবদ্ধ নয়; কর্তৃত্ব আর ক্ষমতাই এখানে মূল বিষয়। যার ক্ষমতা আছে, সে-ই শাসন করবে, নৈতিকতা কাউকে ক্ষমতায় বসায় না। ক্ষমতা অর্জন আর ক্ষমতা রক্ষা করাই রাজনীতির মূলনীতি। ক্ষমতার উপযুক্ত ব্যবহার দিয়েই জনগণের আনুগত্য অর্জন করতে হয়। রাজনীতি মানেই হলো ক্ষমতা “গ্রহণ আর প্রয়োগের” নীতি।’ কথাগুলো শুনতে অনেক কঠিন ও রূঢ় মনে হলেও উপমহাদেশের রাজনীতির নিয়তি এই সত্যেরই প্রতিধ্বনি।
নতুন রাজনৈতিক দল গঠন, ভবিষ্যতে নির্বাচন ও ক্ষমতাকেন্দ্রিক সমীকরণটা কেমন হবে? আমার পর্যবেক্ষণ, নির্বাচনী দৌড়ে বিএনপি সুবিধাজনক স্থানে আছে, তারপর ভোটের হিসাবে থাকবে আওয়ামী লীগ (?), জামায়াতে ইসলামীসহ ইসলামপন্থী দল ও বৈবিছাআ’র নবগঠিত দল শক্ত অবস্থানে থাকবে এবং বামসহ অন্যরাও। সে ক্ষেত্রে নির্বাচনী জোট-ঐক্যের সমীকরণ হতে পারে (১) বিএনপি ও তাদের সঙ্গে থাকা দলসমূহ, (২) জামায়াত ও ইসলামপন্থীরা এবং বৈবিছাআ’র নতুন দল, (৩) আওয়ামী লীগ (?) ও তার মিত্ররা যদি থাকে, (৪) বামফ্রন্ট ও মধ্যপন্থীদের ছোট ছোট দল।
এ ক্ষেত্রে হয়তো নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবি ও ক্ষমতার প্রশ্নে বিএনপি, জামায়াতসহ যেকোনো পক্ষই পতিত আওয়ামী লীগের সঙ্গে গোপন বোঝাপড়ায় আসতে পারে। চাণক্যের সেই বিখ্যাত উক্তি ‘শত্রুর শত্রু আমার মিত্র’ বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন চর্চা নয়। তাহলে কাদের ভুল নীতি, ছক ও স্বার্থের কারণে সেই নোংরা খেলার পথ তৈরি হতে চলেছে? কে নেবে এত রক্ত ও আত্মদানের দায়? গণতন্ত্র হত্যাকারী ক্ষমতাচ্যুত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগই হবে গণতন্ত্র উদ্ধারের মিত্র শক্তি! এ তো গেল অভ্যন্তরীণ বিষয়...দেশের ভেতরে থাকা ক্ষমতাকেন্দ্রিক শক্তিগুলোর বিরোধের সুযোগ নেবে বাইরের শক্তিও। তারা সে জন্য মুখিয়ে আছে, শুধু অপেক্ষা সময়ের। সেটা হলে সংস্কার, গণতন্ত্র, নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত, অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজের বিষয়টি হবে কথার কথা, কল্পনার—বাস্তবের নয়।
আমরা ঐক্যের কথা শুনছি, কিন্তু এই রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে কি তা আছে বা থাকবে? কীভাবে? যখন নির্বাচন ও ক্ষমতার প্রশ্ন আসবে, তখনই বিভক্তি, বৈরিতা-শত্রুতা, আঘাত, পাল্টা আঘাত ও প্রতিপক্ষকে পরাজিত করার কূটকৌশল ব্যবহৃত হবে। পুরোনো শত্রু-মিত্রের অবস্থান পরিবর্তিত হবে। তারা ক্ষমতার স্বার্থে-সমীকরণে নীতি-আদর্শ-অঙ্গীকারের কথা ভুলে যাবে। জাতীয় পার্টি, জামায়াত ও ধর্মান্ধ শক্তি ক্ষমতার সেই সমীকরণেই সরকারের অংশীদার হয়েছে। তখন তাদের মাথায় মুক্তিযুদ্ধ ও নব্বইয়ের চেতনা ছিল না।
ড. ইউনূসের উৎসাহেই ছাত্ররা দল গঠন করছেন।
কিন্তু তাঁরা সন্দিহান যে নির্বাচন করলে সংসদে তাদের একটিও আসন থাকবে কি না। কারণ, কেউ তাঁদের চেনে না। এ প্রসঙ্গে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘আমি তাদের বললাম, পুরো জাতি তাদের চেনে। তারা যা করতে চায়, সে বিষয়ে তাদের একটা সুযোগ দিই। সুতরাং, তারা এটা করবে।’
তিনি যদি নিছক উৎসাহের জায়গায় থাকেন, সেটাও তেমন দোষের কিছু নয়, কিন্তু এই শুভেচ্ছা দিতে গিয়ে কি তিনি নিরপেক্ষ ও অন্যান্য দলের কাছে গ্রহণযোগ্য থাকতে পারবেন? যদি সেটা না হয়, সে ক্ষেত্রে একটি নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের দাবি আসতে পারে বৈকি।
চব্বিশের জুলাই অভ্যুত্থানের মাধ্যমে এ দেশে আবারও একটি জাতীয় ঐক্যের বিশাল সুযোগ তৈরি হয়েছিল। বিশ্ববরেণ্য ব্যক্তিত্ব ড. ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি পুরো জাতির ছিল বিপুল সমর্থন। কিন্তু সেই সুযোগ তিনি ব্যবহার করতে পারলেন না। দেশের জন্য প্রয়োজন ছিল একজন দক্ষ ব্যবস্থাপক। মনে করেছিলাম তিনিই হবেন তার উপযুক্ত ব্যক্তি। কিন্তু এতটা হতাশ হতে হবে ভাবিনি।
অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস নতুন দল গঠন প্রসঙ্গে বলেন, ‘তরুণেরা সত্যিই প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তাদের খারাপ কোনো কিছুর সঙ্গে সংস্পর্শ নেই বা নিজেদের রাজনৈতিক আখের গোছানোর ব্যক্তিগত আকাঙ্ক্ষা নেই। তারা এই পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক দল গঠন করছে বা রাজনীতিতে যুক্ত হচ্ছে। এটা দরকার। কারণ, রক্ত দিয়ে তারা যেগুলো অর্জন করেছে, সেগুলো তাদের রক্ষা করতে হবে। অন্যথায় সেগুলো সেই সব ব্যক্তি নিয়ে যাবে, যারা বিগত প্রশাসন ও অন্যান্যের মতো সবকিছুর পুনরাবৃত্তির সুযোগ খুঁজছে। এটাই বাংলাদেশে আমাদের রাজনৈতিক পরিবেশ। সুতরাং তারা এটা রক্ষা করার চেষ্টা করছে। তাই আমি বলব, ছাত্রদের স্বচ্ছ অভিপ্রায় থাকবে।’
‘... যারা বিগত প্রশাসন ও অন্যান্যের মতো সবকিছুর পুনরাবৃত্তির সুযোগ খুঁজছে।’ ড. ইউনূসের বক্তব্যটি গভীর তাৎপর্য ও ইঙ্গিতপূর্ণ। এ কথার ব্যাখ্যা করলে দাঁড়ায়, বিগত দিনের শাসক যাঁরা ছিলেন...প্রধানত আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকেই ইঙ্গিত করছেন। তাঁর এ কথার সঙ্গে আমি খুব দ্বিমত পোষণ করি না। কেননা, বিগত দিনে ক্ষমতা দখল করে রাজনীতিকেরা যা করেছেন, তার পুনরাবৃত্তি হোক, সেটা এ দেশের জনগণ চায় না। কিন্তু তা না হওয়ার পথপ্রক্রিয়া কী? কথিত ছাত্ররা দল গঠনের মাধ্যমে সেই অবস্থা পরিবর্তনের যে কথা বলছে, সেইভাবে কি সেটা হবে? সম্ভব? যে প্রেক্ষাপট ও প্রক্রিয়ায় কাজটি করার কথা বলা হচ্ছে, মনে করি সেটা ভালোর চেয়ে আরও ক্ষতি ও জটিলতার কারণ হবে।
কেন বলছি সে কথা? ছাত্ররা কোনো একক শক্তি নয়। তারা বিভক্ত ছিল, আছে অনেক আগে থেকেই। জাতীয় পর্যায়ে স্বীকৃত সংগঠন যেমন ছাত্রদল, নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগ, ছাত্রশিবির, ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্রফ্রন্টসহ অন্যান্য সংগঠনের মধ্যে আদর্শগত বিরোধ বিদ্যমান। ছাত্ররাজনীতির প্রয়োজন, আবেদন ও গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে যখন প্রশ্ন উঠছিল। তেমন একটি সময়ে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ দেশের সব ছাত্রসংগঠন ও ছাত্রদের একটি নতুন প্ল্যাটফর্ম হয়ে উঠেছিল, যার মাধ্যমে গত বছর এক অভাবনীয় অভ্যুত্থান সংগঠিত হয়েছে। এটা তাদের একটি বিশাল অর্জন। কিন্তু এই সংগঠন যখন রাজনৈতিক দল গঠন ও ক্ষমতা দখলের বাসনা পোষণ শুরু করল, তখন থেকেই সেই অবস্থার পরিবর্তন হতে থাকল। কেননা, সেই আন্দোলনে তাদের সঙ্গে থাকা অন্যান্য সংগঠন ও সাধারণ ছাত্ররা তাদের পাশ থেকে সরে পড়ল।
শুধু তা-ই নয়, সম্প্রতি বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের ‘অন্তর্বর্তী সরকারের ভবিষ্যৎ নিরপেক্ষতার’ বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামের আরেকটি ১/১১-র প্রেক্ষাপটের সম্ভাবনা তৈরির মন্তব্যে এই বৈরিতা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। রাজনৈতিক দল গঠন করা যে কারও গণতান্ত্রিক অধিকার। তাতে খারাপ কিছু নেই। কিন্তু কারা, কোন সময়ে ও প্রেক্ষাপটে, কোন লক্ষ্য-উদ্দেশ্যে সেই কাজ করছে, সেটা গুরুত্বপূর্ণ। ইউনূস সরকারের অধীনে যাঁরা এ কাজ করছেন, তাঁদের এই তৎপরতাকে অন্যান্য রাজনৈতিক দল স্বাভাবিকভাবে নিচ্ছে না। কারণ, দল গঠন শুধু নিছক কোনো দল নয়, তারা ক্ষমতার প্রধান দাবিদার বিএনপির জন্য চ্যালেঞ্জ তৈরি করবে। তার চেয়েও বড় প্রশ্ন, তারা ইউনূস সরকারকে ব্যবহার করবে এবং তাদের প্রতি তিনি তাঁর শুভেচ্ছার কথা খোলামেলাভাবেই বলছেন।
রাজনীতি একটি মহান আদর্শ ও পেশা। এর মাধ্যমে দেশ-জাতির প্রভূত উন্নতি ও সমৃদ্ধি সম্ভব, কিন্তু তার জন্য প্রয়োজন উপযুক্ত নেতৃত্ব। নেতৃত্বের সঠিক নির্দেশনায় দেশ-জাতির অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক উন্নয়ন ঘটে; যার মধ্য দিয়ে সভ্যতা, মানবতা সামনের দিকে অগ্রসর হয়। কিন্তু তা কথায়, ভাবনায় ও তত্ত্বে যতটা সুন্দর-সাবলীল, বাস্তবে ততটাই রূঢ় ও কঠিন। ম্যাকিয়াভেলির মতে, ‘শাসনক্ষমতার বৈধতা কোনো নৈতিকতার মাপকাঠিতে আবদ্ধ নয়; কর্তৃত্ব আর ক্ষমতাই এখানে মূল বিষয়। যার ক্ষমতা আছে, সে-ই শাসন করবে, নৈতিকতা কাউকে ক্ষমতায় বসায় না। ক্ষমতা অর্জন আর ক্ষমতা রক্ষা করাই রাজনীতির মূলনীতি। ক্ষমতার উপযুক্ত ব্যবহার দিয়েই জনগণের আনুগত্য অর্জন করতে হয়। রাজনীতি মানেই হলো ক্ষমতা “গ্রহণ আর প্রয়োগের” নীতি।’ কথাগুলো শুনতে অনেক কঠিন ও রূঢ় মনে হলেও উপমহাদেশের রাজনীতির নিয়তি এই সত্যেরই প্রতিধ্বনি।
নতুন রাজনৈতিক দল গঠন, ভবিষ্যতে নির্বাচন ও ক্ষমতাকেন্দ্রিক সমীকরণটা কেমন হবে? আমার পর্যবেক্ষণ, নির্বাচনী দৌড়ে বিএনপি সুবিধাজনক স্থানে আছে, তারপর ভোটের হিসাবে থাকবে আওয়ামী লীগ (?), জামায়াতে ইসলামীসহ ইসলামপন্থী দল ও বৈবিছাআ’র নবগঠিত দল শক্ত অবস্থানে থাকবে এবং বামসহ অন্যরাও। সে ক্ষেত্রে নির্বাচনী জোট-ঐক্যের সমীকরণ হতে পারে (১) বিএনপি ও তাদের সঙ্গে থাকা দলসমূহ, (২) জামায়াত ও ইসলামপন্থীরা এবং বৈবিছাআ’র নতুন দল, (৩) আওয়ামী লীগ (?) ও তার মিত্ররা যদি থাকে, (৪) বামফ্রন্ট ও মধ্যপন্থীদের ছোট ছোট দল।
এ ক্ষেত্রে হয়তো নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবি ও ক্ষমতার প্রশ্নে বিএনপি, জামায়াতসহ যেকোনো পক্ষই পতিত আওয়ামী লীগের সঙ্গে গোপন বোঝাপড়ায় আসতে পারে। চাণক্যের সেই বিখ্যাত উক্তি ‘শত্রুর শত্রু আমার মিত্র’ বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন চর্চা নয়। তাহলে কাদের ভুল নীতি, ছক ও স্বার্থের কারণে সেই নোংরা খেলার পথ তৈরি হতে চলেছে? কে নেবে এত রক্ত ও আত্মদানের দায়? গণতন্ত্র হত্যাকারী ক্ষমতাচ্যুত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগই হবে গণতন্ত্র উদ্ধারের মিত্র শক্তি! এ তো গেল অভ্যন্তরীণ বিষয়...দেশের ভেতরে থাকা ক্ষমতাকেন্দ্রিক শক্তিগুলোর বিরোধের সুযোগ নেবে বাইরের শক্তিও। তারা সে জন্য মুখিয়ে আছে, শুধু অপেক্ষা সময়ের। সেটা হলে সংস্কার, গণতন্ত্র, নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত, অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজের বিষয়টি হবে কথার কথা, কল্পনার—বাস্তবের নয়।
আমরা ঐক্যের কথা শুনছি, কিন্তু এই রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে কি তা আছে বা থাকবে? কীভাবে? যখন নির্বাচন ও ক্ষমতার প্রশ্ন আসবে, তখনই বিভক্তি, বৈরিতা-শত্রুতা, আঘাত, পাল্টা আঘাত ও প্রতিপক্ষকে পরাজিত করার কূটকৌশল ব্যবহৃত হবে। পুরোনো শত্রু-মিত্রের অবস্থান পরিবর্তিত হবে। তারা ক্ষমতার স্বার্থে-সমীকরণে নীতি-আদর্শ-অঙ্গীকারের কথা ভুলে যাবে। জাতীয় পার্টি, জামায়াত ও ধর্মান্ধ শক্তি ক্ষমতার সেই সমীকরণেই সরকারের অংশীদার হয়েছে। তখন তাদের মাথায় মুক্তিযুদ্ধ ও নব্বইয়ের চেতনা ছিল না।
ড. ইউনূসের উৎসাহেই ছাত্ররা দল গঠন করছেন।
কিন্তু তাঁরা সন্দিহান যে নির্বাচন করলে সংসদে তাদের একটিও আসন থাকবে কি না। কারণ, কেউ তাঁদের চেনে না। এ প্রসঙ্গে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘আমি তাদের বললাম, পুরো জাতি তাদের চেনে। তারা যা করতে চায়, সে বিষয়ে তাদের একটা সুযোগ দিই। সুতরাং, তারা এটা করবে।’
তিনি যদি নিছক উৎসাহের জায়গায় থাকেন, সেটাও তেমন দোষের কিছু নয়, কিন্তু এই শুভেচ্ছা দিতে গিয়ে কি তিনি নিরপেক্ষ ও অন্যান্য দলের কাছে গ্রহণযোগ্য থাকতে পারবেন? যদি সেটা না হয়, সে ক্ষেত্রে একটি নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের দাবি আসতে পারে বৈকি।
চব্বিশের জুলাই অভ্যুত্থানের মাধ্যমে এ দেশে আবারও একটি জাতীয় ঐক্যের বিশাল সুযোগ তৈরি হয়েছিল। বিশ্ববরেণ্য ব্যক্তিত্ব ড. ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি পুরো জাতির ছিল বিপুল সমর্থন। কিন্তু সেই সুযোগ তিনি ব্যবহার করতে পারলেন না। দেশের জন্য প্রয়োজন ছিল একজন দক্ষ ব্যবস্থাপক। মনে করেছিলাম তিনিই হবেন তার উপযুক্ত ব্যক্তি। কিন্তু এতটা হতাশ হতে হবে ভাবিনি।
মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ১৯৪৭ সালের ১১ আগস্ট পাকিস্তানের গণপরিষদের প্রথম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছিলেন। সেখানে তিনি যে অভিভাষণ দিয়েছিলেন, সেটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠালগ্নে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর এটাই ছিল নীতিনির্দেশক বিবৃতি। কী বলেছিলেন তিনি এই অভিভাষণে?
৫ ঘণ্টা আগেছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতে আশ্রয়ে থেকে গত ছয় মাসে বেশ কয়েকবার বক্তব্য-বিবৃতি দিয়েছেন নানা মাধ্যমে। এসব বক্তব্যে তাঁর অতীত কর্মকাণ্ডের জন্য বিন্দুমাত্র অনুতাপ-অনুশোচনা প্রকাশ পায়নি বরং নিজের সব কর্মকাণ্ডের পক্ষে সাফাই গাওয়ার পাশাপাশি প্রতিপক্ষের ওপর দায়...
৫ ঘণ্টা আগেআমাদের ছোটবেলায় বর্ষাকালে গাজীর গানের দল আসত। কেউ একজন ‘গাজীর গান আইছে’ খবরটা দিলেই সেই গান শোনার জন্য আমরা পড়িমরি করে ছুটতাম। গাজীর গানের দলের মূল গায়ক পটচিত্র বের করে সুরে সুরে চিত্রের গল্প বর্ণনা করতেন। তার সঙ্গে দোহার দিতেন আরও এক-দুজন।
৫ ঘণ্টা আগে৭ ফেব্রুয়ারি আজকের পত্রিকায় ‘যুদ্ধ করতে রাশিয়ায় পাচার চক্রের নারী সদস্য গ্রেপ্তার’ শিরোনামে প্রকাশিত খবর থেকে পর্যটন ব্যবসার আড়ালে মানব পাচারের মতো গুরুতর অপরাধ সংঘটনের নতুন তথ্য সামনে আসছে।
৬ ঘণ্টা আগে