Ajker Patrika

আমরা কি ‘ফাঁপা’ অর্থনীতিতেই আস্থা রাখছি?

তাপস বড়ুয়া
আপডেট : ০৯ জুন ২০২২, ১৫: ৩৮
আমরা কি ‘ফাঁপা’ অর্থনীতিতেই আস্থা রাখছি?

তেলের দাম বাড়তি, চালের দাম বাড়তি, বিদ্যুতের দাম বাড়তি, গ্যাসের দাম বাড়তি, রিকশা ও বাসভাড়া বাড়তি, বাড়িভাড়া বাড়তি, ডাক্তারের ফি বাড়তি ইত্যাদি ইত্যাদি। জীবনের সব ক্ষেত্রে খরচ বাড়ছে। ওদিকে আয় কমছে। করোনার ধাক্কায় চাকরি হারিয়েছেন অনেকে। যাঁরা চাকরি হারিয়েছেন, তাঁদের জন্য চাকরি পাওয়া যারপরনাই কঠিন হয়ে পড়েছে। 

সাময়িক বেকার যেসব মানুষ নতুন করে চাকরি পাচ্ছেন, তার একটা বড় অংশই যোগ্যতা অনুযায়ী প্রাপ্যের চেয়ে কম বেতনে কাজ করতে বাধ্য হচ্ছেন। কারণ চাকরির বাজারে যোগ্য, কিন্তু চাকরিহীন মানুষের জোগান এখন বেশি। সব মিলিয়ে নাকাল মানুষের জীবন। ঘরে ঘরে নিত্যদিন হাঁসফাঁস অবস্থা। 

এর মধ্যে এল বাজেট নামের ঘটনাটি। প্রতিবছরের বাজেটের পর জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়া একটা রেওয়াজে পরিণত হয়েছে। এবার বাজেটের আকার ৬ লাখ কোটি টাকার বেশি। বড় বাজেট বড় মূল্যস্ফীতি নিয়ে আসবে—এমন ভয় অমূলক নয়। বাজেটে ঘাটতি থাকবে প্রায় আড়াই লাখ কোটি টাকার। এই অর্থ সরকার ঋণ করবে। 

ঋণের একটা বড় খাত সরকারি বন্ড বা সঞ্চয়পত্র বিক্রি। ব্যাংকে রাখা যেকোনো ধরনের আমানতের সুদ গেছে কমে। ফলে মানুষ তার সঞ্চয় সরকারকে ঋণ দিয়ে সঞ্চয়পত্র কিনতে উৎসাহিত হবে। সরকার দিয়েছে সঞ্চয়পত্রের সুদ কমিয়ে। মূল্যস্ফীতিকে হিসাবে ধরলে সঞ্চয়পত্র থেকে আসা লাভ আসলে পিঁপড়েয় খেয়ে যাওয়ার মতো। 

ঘাটতি বাজেট প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বলেছেন, ঋণ করে হলেও সরকারকে খরচ করতে হবে। তাহলে বাজারে টাকার লেনদেন হবে। অর্থনীতির গতি সচল থাকবে। এই যে অর্থনীতির গতি সচল থাকা, সেটা কি মূল্যস্ফীতির দামে? এটা কতকটা শ্রমিকের ঘামে মালিকের লাভ বাড়ার মতো। কারণ মূল্যস্ফীতির ঝড়টা যাবে সাধারণ মানুষের ওপর দিয়ে। লাভ করবে ধনিক শ্রেণি। বাজারের বর্তমান অবস্থায় এটা বুঝে নিতে অর্থনীতির জটিল তত্ত্ব বোঝার দরকার হয় না। 

ব্যাংকিং খাত থেকেও সরকারের বড় অঙ্কের ঋণ নেওয়ার পরিকল্পনা বাজেট আলোচনায় এসেছে। ঋণ করে ঘি খাওয়া আখেরে কতটা ভালো হবে, সেটা একটা প্রশ্ন। কারণ, আমরা এ বছরই ঋণ শোধ বাবদ খরচ করব একটা বিশাল অঙ্ক (সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকা)। 

হাতে পয়সা নেই, তবু খরচ করতে হচ্ছে। এই শহরে যারা একবার এসে পড়েছেন, দায়ে পড়ে অথবা স্বপ্নের মোহে তাঁদের মান্না দের গানের মতো ‘পিছনের পথে উঠেছে ধূলির ঝড়, সমুখে অন্ধকার’। শোনা যায়, করোনার পরে পোশাক কারখানায় নাকি এখন প্রচুর অর্ডার। কিন্তু মালিকেরা নতুন শ্রমিক নিয়োগ দিচ্ছেন না। অজুহাত, আবার যদি অর্ডার কমে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়, তখন কী হবে? অথচ এই পোশাকশিল্প করোনার মধ্যে সরকারি প্রণোদনা পেয়েছে জনগণের টাকায়। 

দেড় শ বছর আগে কার্ল মার্ক্স এক অদ্ভুত সমীকরণের কথা বলেছিলেন। যদিও অর্থনৈতিক-সামাজিক সম্পর্কসমূহ আজ আরও বেশি জটিল, সরাসরি দাগ টেনে শ্রমিকে আর মালিকে, বুর্জোয়া আর প্রলেতারিয়েতে ভাগ করা যায় না সমাজকে, তবু মার্কসের সমীকরণটি এই অবস্থায় মনে করে নেওয়াটা কাজের হবে। 

মার্কস বলেছিলেন, পুঁজিবাদী ব্যবস্থার মূলে আছে লাভ। মালিক লাভ করতে চায়। সম্ভাব্য সর্বোচ্চ লাভ যে মালিক তুলে নিতে পারবে না, সে প্রতিযোগিতায় হেরে যাবে। তাকে বাজার থেকে সরে যেতে হবে। সে যদি লাভ বেশি করে, তাহলেই সে শ্রমিককে বেশি বেতন দিতে পারবে। আবার শ্রমিককে বেশি বেতন দিলে সেই অঙ্কটা তার লাভ থেকে কমবে। শ্রমিকের সংখ্যা বা জোগান কম থাকলে শ্রমিকের চাহিদা বাড়বে, মালিকেরা বেশি পারিশ্রমিক দিয়ে শ্রমিক নিয়োগ করতে বাধ্য হবে। ফলে তার লাভ কম হবে। অর্থনীতিজুড়ে এই অবস্থা চলতে থাকলে মালিকেরা অনেকে ব্যবসায় ক্ষতির সম্মুখীন হবে এবং প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে ব্যবসা বন্ধ করে দেবে। ফলে শ্রমিকের চাহিদা কমবে। তখন যেসব মালিক ব্যবসায় টিকে থাকবে, তারা কম বেতনে শ্রমিক নিয়োগের সুযোগ পাবে। বিষয়টি যখন খুব খারাপ অবস্থায় গিয়ে দাঁড়াবে, বেকারত্ব যখন খুব বেড়ে যাবে, তখন কম দামে শ্রমিক নিয়োগের সুবিধা নিয়ে মালিকেরা আবার ব্যবসায় ফিরবে। কিন্তু শ্রমিকের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেলে সে বিপ্লবে শামিল হবে। কম বেতন পাওয়া শ্রমিকের হাতে খরচ করার মতো যথেষ্ট টাকা থাকবে না। যথেষ্ট টাকা খরচ না করলে অর্থনীতি নিম্নমুখী টার্ন নেবে। ফলে মালিকের লাভ কমতে শুরু করবে। আবার তার পণ্যের বাজার সৃষ্টির জন্য দরকার হবে বেশি বেতন দেওয়া। এভাবে একসময় পুঁজিবাদ ভেঙে পড়বে। কারণ, শ্রমিকেরা এই শোষণের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করবে। 

কিন্তু পুঁজিবাদ অত সহজে দমবার পাত্র নয়। সে বের করেছে এক বিকল্প, যাতে কম আয় করেও মানুষ বেশি খরচ করা চালিয়ে যেতে পারে। সেই পথটি হচ্ছে ক্রেডিট, যার একটা বড় বাহক হচ্ছে ক্রেডিট কার্ড। এতে সমস্যার আপাতত সমাধান হয়। পুঁজিবাদী ব্যবস্থার মোক্ষ যে লাভ, সেটা হতে থাকে। কিন্তু এই সমাধান একেবারেই আপাতত। 

সত্তরের দশকে পাশ্চাত্যে শক্তিশালী ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলনের জন্য বেতন কমানো কঠিন ছিল। আশির দশকে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগ্যান আর ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী মার্গারেট থ্যাচার মালিকের পক্ষে শক্ত করে নেমে গেলেন। এবং মালিকের পক্ষ নিয়ে শ্রমিক শোষণের ব্যবস্থা করে দিলেন। ফল হয়েছে, সমাজের উঁচুতলার কয়েকজনের আয় ও সম্পদ আকাশ ছুঁয়েছে। বেশির ভাগের আয় সমানুপাতিক বাড়েনি, খরচ বেড়েছে। ফলত তারা নেট হিসেবে গরিব হয়েছে। মুদ্রাস্ফীতি বাদ দিলে সাধারণ মানুষের আয় গত কুড়ি বছরে বাড়েনি। বরং ক্রয়ক্ষমতার নিরিখে কমেছে। কিন্তু বড়লোকদের সম্পদ বেড়েছে মুদ্রাস্ফীতির চেয়ে বহুগুণ। রিগ্যান, থ্যাচারের প্রভাব সারা বিশ্বের অর্থনীতিতে, বিশেষত বাংলাদেশের মতো দেশে প্রকট। 

পুঁজি ও লাভ আর শ্রম একদিকে হাত ধরাধরি করে চলে। অন্যদিকে আবার পরস্পর মুখোমুখি অবস্থানে দাঁড়িয়ে যায়। এই যুগপৎ দ্বৈরথকে সহনীয় পর্যায়ে রাখতে রাষ্ট্রীয় নীতির ব্যাপক ভূমিকা রয়েছে। 

এদিকে বড়লোকদের পুঁজির জোগান দিয়েছে রাষ্ট্র। মানে জনগণের টাকায়। ব্যবসায় লাভ হলে তারা নিয়েছে। ব্যবসায় ক্ষতি হলে সেই দায় ঋণখেলাপি হয়ে আবার রাষ্ট্রের তথা জনগণের ঘাড়ে এসে চেপেছে। তার মানে, গরিবের টাকা নিয়েই বড়লোকের সম্পদ বাড়ছে। 

কম মূল্যে শ্রমিক পাওয়ার দিকে ঝুঁকেছে বিশ্ব। বিশ্বায়নের ফলে আমেরিকায় বিক্রির পণ্য বাংলাদেশ বা ইথিওপিয়ায় তৈরি হচ্ছে। ফলে লাভ বাড়ছে শ্রমিক তথা কর্মীদের কম টাকা দেওয়ার ফলাফল হিসেবে। প্রযুক্তি আরও সুযোগ করে দিয়েছে ১০ জনের কাজ এক মেশিনে করে। ব্যবসাকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার কথা অনুযায়ী দক্ষ করে তুলছে প্রযুক্তি। কিন্তু এটিই মানুষের চাকরির সুযোগ কমিয়েছে। ফলে প্রযুক্তি গ্রহণের সঙ্গে সঙ্গে চাকরির সুবিধা কমবে। মানুষের হাতে টাকা কমবে। এই সংকট মিটছে না। মানুষের হাতে অর্থ না থাকলেও তাকে খরচ বাড়াতে হবে। তা না হলে পণ্য বিক্রি হবে না। মালিকের লাভ হবে না। 

ক্রেডিটের অর্থনীতি চলতে থাকে। কিন্তু কতক্ষণ? কয়েক বছর আগের বিশ্বমন্দা পাশ্চাত্যের হাউজিং সেক্টরে মর্টগেজ ঋণের প্রত্যক্ষ অবদান। ক্রেডিটের মাধ্যমে বাজারে অর্থ সরবরাহ বাড়িয়ে দাম বাড়াকে সহনীয় করা হচ্ছে। মানুষ খরচ করা চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু একটা সময় এই ফাঁপা অর্থনীতি পড়ে যেতে বাধ্য। অতিরিক্ত ঋণ দেওয়া চলিয়ে গেলে ব্যাংকও একসময় ধসে যেতে বাধ্য। আমরা কি সেদিকে যাচ্ছি? কারণ আমরা প্রবৃদ্ধি চাই। প্রবৃদ্ধির গল্প করা সম্মানের, কৃতিত্বের! 

Tapos-Boruaদাস ক্যাপিটালে কার্ল মার্ক্স পুঁজি ও শ্রমের মধ্যে দ্বন্দ্বের বিষয়টি উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেছেন, লাভের এবং উৎপাদনশীলতার দৌড় স্বাভাবিকভাবেই কম শ্রমিক নিয়োগ করে বেশি কাজ তুলে নেওয়ার চেষ্টা করবে, যাতে করে দরিদ্র ও বেকার কর্মীর সংখ্যা বাড়বে। মার্কস যাদের বলেছেন ‘ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিজার্ভ আর্মি’। সুতরাং এক মেরুতে সম্পদের সঞ্চয়ন হওয়াটা আসলে একই সঙ্গে অন্য জায়গায় দুর্দশার সঞ্চয়নও। 

তাই জনগণের কাজের সুযোগ সৃষ্টির জন্য ব্যবসায় প্রণোদনা দেওয়ার সুযোগ রাখতে হবে বাজেটে। কিন্তু ব্যবসায় প্রণোদনা যেন জনগণের কাজের সুযোগ সৃষ্টি করে, লাভের গুড় যেন ব্যবসায়ীরা এককভাবে খেয়ে না ফেলে, সে বিষয়টি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে নিশ্চিত করতে হবে। ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টির কোনো বিকল্প নেই। কিন্তু সেটা একই সঙ্গে কর্মীবান্ধব বা বৃহত্তর অর্থে জনবান্ধবও হতে হবে। রাষ্ট্রীয় কোষাগারের অর্থের যেকোনো ব্যবহার বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর উন্নয়ন নিশ্চিতেই শুধু খরচ করার ব্যবস্থা বাজেটের মধ্যে রাখতে হবে। তা না হলে প্রণোদনাগুলো, ব্যবসাবান্ধব পরিবেশের জন্য বিনিয়োগগুলো রাষ্ট্র থেকে বা জনগণ থেকে গুটি কয়েক মানুষের পকেটে যাবে, যা কখনোই কাম্য নয়। 

কাজের বিনিময়ে খাদ্যের মতো প্রকল্পগুলোসহ বড় প্রকল্পগুলোর খরচে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে। কাজের বিনিময়ে খাদ্যের মতো গতানুগতিক প্রকল্পগুলো আশু সমাধান দেয়। বড় প্রকল্পগুলো সরাসরি এবং ব্যাকওয়ার্ড ও ফরোয়ার্ড লিঙ্কেজ ব্যবসা ও শিল্পগুলোর মাধ্যমে বড় আকারে কর্মসংস্থান সৃষ্টির সুযোগ থাকে। বড় প্রকল্প হাতে নিয়ে বাজারে অর্থের সরবরাহ বাড়ানোর পরামর্শ ব্রিটিশ অর্থনীতিবিদ ফ্রেডরিখ হায়েক আমেরিকার মন্দার সময় দিয়েছিলেন। তার একটা উদাহরণ আমেরিকার বিখ্যাত হুভার ড্যাম। ত্রাণমুখী সমাধান, খোলাবাজারে নিত্যপণ্য বিক্রির মতো কার্যক্রম চালু রাখতে হবে। পাশাপাশি, বেশি গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে বাজারে ন্যায্যমূল্যে নিত্যপণ্যের সরবরাহও নিশ্চিত করা। 

জর্জ ম্যাগনাস তাঁর ‘গিভ কার্ল মার্ক্স আ চান্স টু সেভ দি ওয়ার্ল্ড ইকোনমি’ নিবন্ধে (২৯ আগস্ট ২০১১; ব্লুমবার্গ) বলেছেন, ‘গতানুগতিক চর্চার বাইরে গিয়ে কাজের সুযোগ সৃষ্টিকে নীতিনির্ধারকদের অ্যাজেন্ডার শীর্ষে রাখতে হবে।’ এই সমস্যা সাময়িক না এবং গতানুগতিক সমাধান এতে কাজে আসবে না। 

জর্জ ম্যাগনাস বলেছেন, চাহিদা ও আয়ের বৃদ্ধি ধরে রাখতে হবে। তা না হলে ঋণের ফাঁদে পড়ে সমাজ গুরুতর পরিণতির দিকে এগিয়ে যাবে। কর্মসংস্থান সৃষ্টিকে পলিসির জন্য লিটমাস টেস্ট হিসেবে নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন তিনি। 

পিপিআরসি-বিআইজিডির গবেষণায় দেখা গেছে, করোনার এক বছরে দেশে নতুন করে দরিদ্র হয়েছে আড়াই কোটি মানুষ। গবেষণা বাদ দিয়েও পরিচিত ৫০ বা ১০০ জনের দিকে তাকিয়ে দেখলে আমরা ঠিকই দেখতে পাই বেকারত্ব ও প্রচ্ছন্ন দারিদ্র্য এখন কতটা প্রকট। 

ম্যাগনাস এমনকি চাকরিদাতাদের পে-রোল ট্যাক্স কমিয়ে এবং অর্থনৈতিক প্রণোদনা দিয়ে হলেও বিনিয়োগ ও কর্মী নিয়োগকে উৎসাহিত করার কথা বলেছিলেন আমেরিকা, ব্রিটেন, জার্মানির মতো দেশগুলোকে। 

বলা বাহুল্য, মানুষের আয় কমলে সরকারের রাজস্বও কমবে। ট্যাক্স-ভ্যাটে ভাটা পড়বে। সেটা রাষ্ট্রীয় কোষাগারের জন্য কোনো ভালো খবর হবে না। বাজেটে এসবকে ব্যালেন্স করার কী কী পদক্ষেপ প্রস্তাব করা হয়, কর্মসংস্থান সৃষ্টির কী কী পদক্ষেপ প্রস্তাব করা হয়, সেদিকেই নজর জনগণের। 

পত্রিকান্তরে সাক্ষাৎকারে অর্থমন্ত্রী বলেছেন, এবারের বাজেটের মূল নজর কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে। মানুষ এই কথার প্রতিফলন দেখতে চায় বাজেট বক্তৃতায় এবং বাজেট বাস্তবায়নের পুরো সময়জুড়ে। 

লেখক: বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থায় কর্মরত ও কলাম লেখক

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ময়মনসিংহে পিটিয়ে হত্যা: র‍্যাবের অভিযানে আটক ৭

বিএনপি নেতার ঘরে তালা মেরে অগ্নিসংযোগের অভিযোগ, ঘুমন্ত শিশুর মৃত্যু, দগ্ধ ৩

ওসমান হাদির জানাজা: ১০০০ বডি ওর্ন ক্যামেরা পরবেন পুলিশ সদস্যরা

বাম, শাহবাগী, ছায়ানট, উদীচীকে তছনছ করে দিতে হবে: জাবি ছাত্রশিবির সেক্রেটারি

ময়মনসিংহের নান্দাইল: নদীর জায়গা দখল করে আ.লীগ নেতার মার্কেট

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শান্ত হোন

সম্পাদকীয়
শান্ত হোন

দেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিঃসন্দেহে অত্যন্ত উদ্বেগজনক। সহিংসতা, আতঙ্ক, গুজব ও অনিশ্চয়তা জনজীবনে গভীর অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে। এই সংকটময় সময়ে রাষ্ট্র ও সমাজ—উভয়ের জন্যই সবচেয়ে জরুরি বিষয় হলো শান্ত থাকা, সংযম বজায় রাখা এবং দায়িত্বশীল আচরণ করা। ইতিহাস বলে, উত্তেজনার মুহূর্তে ভুল সিদ্ধান্তই সবচেয়ে বড় ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান বিন হাদির নির্মম হত্যাকাণ্ড আমাদের গভীরভাবে ক্ষুব্ধ ও ব্যথিত করেছে। এ ধরনের নৃশংস ঘটনা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। একজন নাগরিকের প্রাণহানি মানেই রাষ্ট্রের নিরাপত্তা ও ন্যায়বিচার ব্যবস্থার ওপর সরাসরি আঘাত। এই হত্যাকাণ্ডের দ্রুত, নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ তদন্ত এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের অবশ্যকর্তব্য।

তবে এই হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিবাদের পাশাপাশি যে সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে, তা কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়। ইতিমধ্যে দুটি গণমাধ্যম ও একটি সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানে হামলা-ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। মতবিরোধ, ক্ষোভ কিংবা রাজনৈতিক অবস্থান—যা-ই থাকুক না কেন, গণমাধ্যম ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানে হামলা মানে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, গণতন্ত্র এবং সমাজের শিল্প-সংস্কৃতিচর্চার পরিসরকে আঘাত করা। এসব কর্মকাণ্ড কোনো যুক্তিতেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না এবং অবিলম্বে তা বন্ধ করতে হবে। নিউ এজ সম্পাদক নূরুল কবীর আওয়ামী লীগ শাসনামলে অপশাসনের বিরুদ্ধে ছিলেন সোচ্চার। কেন তাঁকে ‘আওয়ামী দোসর’ আখ্যা দিয়ে নাজেহাল করা হলো, তা বোধগম্য নয়।

এই পরিস্থিতিতে গুজব ও উসকানিমূলক বক্তব্য পরিস্থিতিকে আরও ভয়াবহ করে তুলছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যাচাই ছাড়া তথ্য ছড়িয়ে পড়ছে, যা জনমনে বিভ্রান্তি ও ক্ষোভ বাড়াচ্ছে। এই সময়ে দায়িত্বশীল নাগরিকের পরিচয় হলো—সংযত ভাষা ব্যবহার করা, তথ্য যাচাই করা এবং উসকানিমূলক পোস্ট বা মন্তব্য থেকে বিরত থাকা।

রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর ভূমিকা এখানে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় কঠোরতা যেমন প্রয়োজন, তেমনি জনগণের আস্থা অর্জন করাও জরুরি। স্বচ্ছতা, নিয়মিত তথ্য প্রদান এবং ন্যায়সংগত পদক্ষেপই পারে পরিস্থিতি শান্ত করতে। একই সঙ্গে রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠন ও প্রভাবশালী নাগরিকদেরও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে—উসকানি নয়, সংলাপ ও সহনশীলতার পথ বেছে নিতে হবে।

দেশ নির্বাচনের দ্বারপ্রান্তে। এ সময় প্রতিটি দলকেই ধৈর্য ধরতে হবে। শান্ত থাকতে হবে। শান্ত রাখতে হবে দলের কর্মীদের। নেতারা যদি এ সময় দায়িত্বশীল আচরণ না করেন, তাহলে দেশের পরিস্থিতি অবনতির দিকে যাবে। এমনকি বহু কাঙ্ক্ষিত নির্বাচনও অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে যাবে। জাতির এই ক্রান্তিলগ্নে প্রতিটি রাজনৈতিক দল যদি ঐক্যবদ্ধ হয়ে অরাজকতার মোকাবিলা করতে পারে, তাহলেই কেবল সামনে আশার আলো দেখা যাবে। বিশেষ করে তরুণসমাজকে মনে রাখতে হবে—দেশের ভবিষ্যৎ তাদের হাতেই। ধ্বংস নয়, গঠন; ঘৃণা নয়, যুক্তি—এই পথেই দেশকে অস্থিরতা থেকে রক্ষা করা সম্ভব। শান্ত থাকা কোনো দুর্বলতা নয়। বরং সংকটের মুহূর্তে শান্ত থাকতে পারাই সবচেয়ে বড় শক্তি। আজ সেই শক্তিরই সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ময়মনসিংহে পিটিয়ে হত্যা: র‍্যাবের অভিযানে আটক ৭

বিএনপি নেতার ঘরে তালা মেরে অগ্নিসংযোগের অভিযোগ, ঘুমন্ত শিশুর মৃত্যু, দগ্ধ ৩

ওসমান হাদির জানাজা: ১০০০ বডি ওর্ন ক্যামেরা পরবেন পুলিশ সদস্যরা

বাম, শাহবাগী, ছায়ানট, উদীচীকে তছনছ করে দিতে হবে: জাবি ছাত্রশিবির সেক্রেটারি

ময়মনসিংহের নান্দাইল: নদীর জায়গা দখল করে আ.লীগ নেতার মার্কেট

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শঙ্কা যেন পিছু ছাড়তে চাইছে না

অরুণ কর্মকার
শঙ্কা যেন পিছু ছাড়তে চাইছে না

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং রাষ্ট্র সংস্কারের প্রশ্নে গণভোটের দিনক্ষণ যত এগিয়ে আসছে, দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতি ততই যেন জটিলতর হয়ে উঠছে। সন্ত্রাস, সহিংসতা, হত্যাকাণ্ড চলেছে অব্যাহতভাবে। ফলে জনমনে প্রতিদিনই নতুন নতুন শঙ্কা, সংশয় দানা বাঁধছে। এই শঙ্কা ও সংশয় শুধু শহর-নগরবাসী মানুষের মধ্যে নয়, গ্রামাঞ্চলের মানুষের মধ্যেও সমানভাবে বিরাজ করছে। গত সপ্তাহে পাঁচ দিন ব্যক্তিগত প্রয়োজনে কয়েকটি জেলা-উপজেলা শহর ও বেশ কিছু গ্রামাঞ্চলে গিয়েছি। পরিচিত-অপরিচিত অনেক মানুষের সঙ্গে কথা হয়েছে। তাতে এটা স্পষ্ট হয়েছে যে কোনো মানুষ স্বস্তিতে নেই।

মফস্বল শহর এবং গ্রামগঞ্জের মানুষের এই অস্বস্তি যে কেবল রাজনৈতিক অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কারণে, তা নয়। আয়-উপার্জনে গভীর মন্দা থেকে ব্যক্তিগত ও পারিবারিক নিরাপত্তার বিষয়ও এই অস্বস্তির কারণ। শত্রুতা করে মামলায় ফাঁসানো, ব্যক্তিগত শত্রুতাকে রাজনৈতিক রং দিয়ে পুলিশে ধরিয়ে দেওয়া—এগুলো বন্ধ হয়নি। আর্থিক টানাপোড়েনের মধ্যে আছে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ। তার মধ্যে আছে নির্বাচন ঘিরে সম্ভাব্য সহিংস পরিস্থিতি সৃষ্টির আশঙ্কা, যা আমাদের দেশের যেকোনো নির্বাচনকালীন বৈশিষ্ট্যের মধ্যে পড়ে। এবারও পরিস্থিতি অন্য রকম হওয়ার কোনো লক্ষণ সাধারণ মানুষ দেখছে না। বরং কোনো কোনো ক্ষেত্রে তা অতীতকে ছাড়িয়ে যেতে পারে বলেও তাদের আশঙ্কা। যদিও অন্তর্বর্তী সরকার মানুষকে অব্যাহতভাবে আশ্বস্ত করে যাচ্ছে।

ঢাকাসহ দেশের প্রধান প্রধান নগরকেন্দ্রিক এবং রাজনৈতিক দল ও নেতৃত্বকেন্দ্রিক পরিস্থিতির দিকে তাকালেও ভিন্ন কোনো চিত্র দেখা যায় না। সম্প্রতি জাতীয় পার্টি আশঙ্কা প্রকাশ করেছে যে আগামী নির্বাচনটি একটি ‘পাতানো’ নির্বাচন হতে পারে। দলটির মহাসচিব শামীম হায়দার পাটোয়ারি অনেক রকম আশঙ্কার কথা বলেছেন। যেমন ‘ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং হতে পারে। ভোটের নির্ধারিত সময়ের পরে ভোট হতে পারে। মিডিয়া ভোট হতে পারে। কোনো আশঙ্কাই উড়িয়ে দেওয়া যায় না।’ যদিও তাঁরা ৩০০ আসনেই প্রার্থী দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তবে সরকার এবং নির্বাচন কমিশন দলের নেতা-কর্মীদের নিরাপত্তা দিতে না পারলে তাঁরা নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করবেন বলেও বলে রেখেছেন। এর চেয়েও ভয়ানক এবং স্পর্শকাতর যে বিষয়টি ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারি তাঁর বক্তব্যে উল্লেখ করেছেন তা হলো, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন যদি সুষ্ঠু না হয়, গ্রহণযোগ্য না হয়, ক্রেডিবল না হয়, রিফ্লেকটিভ না হয় তাহলে ভবিষ্যতে দেশে গৃহযুদ্ধ হতে পারে।

জুলাই অভ্যুত্থান-পরবর্তী পরিস্থিতিতে জাতীয় পার্টির এসব বক্তব্য হয়তো রাজনৈতিক বিবেচনায় বিবেচিত হবে। কারণ, তাদের ওপর স্বৈরাচারের দোসর ট্যাগ লাগানো রয়েছে। কিন্তু জুলাই অভ্যুত্থানের একেবারে কেন্দ্রীয় শক্তি হিসেবে যাদের অবস্থান, তারাও তো স্বস্তিতে নেই! তাদের মধ্যেও তো কেউ কেউ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। যেমন আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির সাধারণ সম্পাদক ও বরিশাল-৩ (বাবুগঞ্জ-মুলাদী) আসনে দলের প্রার্থী ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ গত বুধবার নির্বাচন কমিশনে উপস্থিত হয়ে নিরাপত্তাহীনতার অভিযোগ করে বলেছেন, পুলিশ তাঁকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করছে না।

আরেকজন, কিশোরগঞ্জ-৪ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী কাজী রেহা কবির সিগমাও নির্বাচন কমিশনের দ্বারস্থ হয়েছেন ওই বুধবারই। তিনি নির্বাচন কমিশনকে দেওয়া লিখিত অভিযোগে বলেছেন, ‘আসন্ন ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন পক্ষপাতমুক্ত, সুষ্ঠু ও সবার জন্য নির্বিঘ্ন করা অন্তর্বর্তী সরকার, নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসনের অঙ্গীকার ও প্রত্যয়। কিন্তু এসব প্রশ্নবিদ্ধ ও বাধাগ্রস্ত করার প্রক্রিয়া ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। বিষয়টি গুরুত্বসহকারে তদন্ত করে অবিলম্বে জড়িত ও দায়ীদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করার আবেদন করছি।’ পরে সাংবাদিকদের রেহা কবির বলেন, ‘পুলিশ ভীতি সৃষ্টি করছে। আমার কর্মী ও আমি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। তাই ইসি ও প্রশাসনের কাছে সার্বিক সহযোগিতা চেয়েছি।’

দেশের বিভিন্ন স্থানে নির্বাচন কার্যালয়ে আগুন দেওয়ার ঘটনা শুরু হয়েছে। রাজনৈতিক কর্মীদের ওপর হামলা, হত্যাকাণ্ড চলছে। নির্বাচনের আগে আগে এসব ঘটনা জনমনে উদ্বেগ বাড়াচ্ছে। সরকার অবশ্য এসব ঘটনার জন্য কার্যক্রম নিষিদ্ধঘোষিত আওয়ামী লীগকেই দায়ী করছে। কিন্তু তাদের এসব কর্মকাণ্ড প্রতিহত করার কার্যকর কোনো উপায় খুঁজে পাচ্ছে বলে মনে হয় না। যদি তা-ই হয় এবং আওয়ামী লীগ এ রকম কর্মকাণ্ড চালাতেই থাকে, যা বর্তমান পরিস্থিতিতে তাদের পক্ষে হয়তো স্বাভাবিক—সে ক্ষেত্রে সরকার নির্বাচনটা কীভাবে শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে পারবে, সেই প্রশ্ন মানুষের মনে ঘুরপাক খাচ্ছে।

আরেকটি বিষয় বোধ হয় সরকারের ভেবে দেখা দরকার। তা হলো কোনো কায়েমি স্বার্থবাদী গোষ্ঠী পর্দার অন্তরালে থেকে সরকারের নাকের ডগায় বসে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির কোনো অপচেষ্টা চালাচ্ছে কি না। ইনকিলাব মঞ্চের শরিফ ওসমান বিন হাদির ওপর প্রাণঘাতী হামলার পর এই প্রশ্নটি আরও গভীরভাবে সামনে এসেছে। কোনো পেশাদার শুটার কাউকে হত্যা করার অ্যাসাইনমেন্ট নিয়ে দিনের পর দিন প্রকাশ্যে সেই ব্যক্তির আশপাশে থেকে নিজের চেহারা দেখাবে কি না, প্রশ্ন সেটি। অনেক নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ মনে করেন, এমনটা সাধারণত হয় না। কারণ সে ক্ষেত্রে শুটার নিজেই নিজেকে চিহ্নিত করার কাজটি সহজ করে দেয়। কিন্তু ওসমান হাদির ক্ষেত্রে সেই ঘটনাটাই ঘটেছে।

তা ছাড়া, ওসমান হাদির ওপর প্রাণঘাতী হামলার পর (অবশ্য তার আগেও বেশ কয়েকবার) দেশের কোনো কোনো রাজনৈতিক মহলের বক্তব্য ভারতের জন্য স্পর্শকাতরতা সৃষ্টি করেছে। ফলে দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে সৃষ্ট তীব্র টানাপোড়েন আমরা কয়েক দিন ধরে দেখেছি। নির্বাচনপূর্ব সময়ে দুই দেশের মধ্যে আন্তসীমান্ত উত্তেজনা বৃদ্ধি পেলে, কূটনৈতিক টানাপোড়েন বৃদ্ধি পেলে, তা সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে জনমনের অস্বস্তি বাড়াবে কি না, সেটাও বিবেচনার বিষয়। কেননা, আমাদের এখন প্রধান লক্ষ্য সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে একটি নির্বাচন অনুষ্ঠান।

অবশ্য যেকোনো অজুহাতে নির্বাচন বিঘ্নিত করার কোনো প্রয়াস যে নেই, তা-ও মানুষ বিশ্বাস করে না। কারণ, মানুষ অন্তর্বর্তী সরকারকে অস্থিতিশীল করার মতো নানা কর্মকাণ্ডও দেখতে পাচ্ছে। তবে সবার জানা এবং বোঝা দরকার যে আগামী নির্বাচন বিঘ্নিত হলে দেশ অনেক বড় ধরনের অস্থিতিশীলতার মুখোমুখি হতে পারে। তাই সংশ্লিষ্ট সব পক্ষেরই সংযত আচরণ করা প্রয়োজন। অন্যথায় আমাদের বড় কোনো বিপর্যয়ের সম্মুখীন হওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। সেই পরিস্থিতি বোধ হয় আমাদের কারও জন্যই সুফল বয়ে আনবে না। দেশের জন্য তো নয়ই।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ময়মনসিংহে পিটিয়ে হত্যা: র‍্যাবের অভিযানে আটক ৭

বিএনপি নেতার ঘরে তালা মেরে অগ্নিসংযোগের অভিযোগ, ঘুমন্ত শিশুর মৃত্যু, দগ্ধ ৩

ওসমান হাদির জানাজা: ১০০০ বডি ওর্ন ক্যামেরা পরবেন পুলিশ সদস্যরা

বাম, শাহবাগী, ছায়ানট, উদীচীকে তছনছ করে দিতে হবে: জাবি ছাত্রশিবির সেক্রেটারি

ময়মনসিংহের নান্দাইল: নদীর জায়গা দখল করে আ.লীগ নেতার মার্কেট

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

হাদি হত্যা এবং আগামী নির্বাচন

এম গোলাম মোস্তফা ভুইয়া
আপডেট : ২০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০: ৫১
ওসমান হাদি। ছবি: সংগৃহীত
ওসমান হাদি। ছবি: সংগৃহীত

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরদিন রাজধানীতে প্রকাশ্য দিবালোকে গুলি করা হয়েছে ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান বিন হাদিকে। বিভিন্ন সময়ে দেশ-বিদেশের নানা প্রান্ত থেকেই তাঁকে হত্যার হুমকি দেওয়া হলেও তিনি তাতে ভীত হননি। তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভিডিও বার্তায় নিজের অবস্থান পরিষ্কার করে বলেছেন, ‘ভয় পেয়ে ৫০ বছর বেঁচে থেকে লাভ নেই, যদি এই বেঁচে থাকা সমাজে কোনো ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে না পারে।’

অবশেষে ওসমান হাদি সাত দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে মারা গেছেন। হাদিকে এভাবে হত্যা করে নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র দেশের সব রাজনৈতিক দলের জন্য একটি রেড অ্যালার্ট। তবে রাষ্ট্র ও সরকার জুলাই যোদ্ধা ও অকুতোভয় কণ্ঠস্বরগুলোকে রক্ষা করতে ব্যর্থ হলে দেশটা গভীর সংকটে নিপতিত হতে বাধ্য।

বহু জল্পনা-কল্পনা-আলোচনার পর দেশ যখন নির্বাচনমুখী ট্রেনে, ঠিক তখন নির্বাচনে সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থীকে আততায়ীরা নিশানা করল কেন? যার ফলে উত্তপ্ত পুরো দেশ। প্রশ্নের মুখে পড়েছে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি। সন্দেহ নেই, উদ্ভূত পরিস্থিতি সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ সম্ভব না হলে এটি আসন্ন নির্বাচনের জন্য অশনিসংকেত হয়ে উঠতে পারে। নির্বাচন ইস্যুতে বিভিন্ন দলের মধ্যে বিভক্তি দেখা দিয়েছে। এর মধ্যে এই হত্যাকাণ্ড পরিস্থিতি জটিল করার ইঙ্গিত দিচ্ছে। তবে হাদির ওপর হামলাকে কেন্দ্র করে উদ্ভূত পরিস্থিতির জন্য আরও শক্তিশালীরূপে ফিরে এসেছে জুলাই আন্দোলনের পর লুণ্ঠিত অস্ত্রের বিষয়টি। সে সময়ে এই অস্ত্রগুলো উদ্ধার করা গেলে এখনকার উদ্ভূত পরিস্থিতি সৃষ্টি নাও হতে পারত বলে অনেকের ধারণা।

এখন এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর অনেকের মনে প্রশ্ন তুলেছে, নির্বাচন কি আদৌ হবে? নাকি নির্বাচন বানচালের অপতৎপরতা আরও জোরালো হয়ে উঠেছে?

এ ঘটনা নিঃসন্দেহে প্রার্থীদের আতঙ্কিত করে তুলছে। এই আতঙ্কের কারণেই বিজয় দিবসের দিন নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের বিএনপির ঘোষিত প্রার্থী নিজেকে নির্বাচন থেকে প্রত্যাহার করে নিয়েছেন সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে। ভয়ের ছায়া তাঁদের গ্রাস করছে। এরই মধ্যে হাদির ওপর আততায়ীর হামলার ঘটনা জনপ্রতিনিধি তো বটেই; জনমনেও একধরনের শঙ্কা তৈরি করেছে, যা ভালো নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য অন্তরায়। ফলে জনমনে স্বস্তি ফেরাতে এ পরিস্থিতির উন্নতি একমাত্র পথ।

শুধুই কি নির্বাচন বানচাল করা, নাকি এর পেছনে আরও বড় কোনো রহস্য লুকিয়ে আছে? নির্বাচন বানচাল হলে কার লাভ আর কার ক্ষতি? নির্বাচন বানচাল হলে বা দীর্ঘ সময়ের জন্য ঝুলে গেলে যাদের লাভ, হাদির ওপর হামলায় তাদের কোনো ইন্ধন রয়েছে কি না বা রাজনৈতিক বিভক্তির সুযোগ নিয়ে তৃতীয় কোনো পক্ষ এই ঘটনা ঘটিয়ে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে চাইছে কি না? বা দেশি-বিদেশি কোনো শক্তি চরম অস্থিরতা তৈরি করে তাদের স্বার্থ সিদ্ধি করতে চায়?

জাতীয় নির্বাচন ঘিরে দেশজুড়ে সহিংসতা বিরাজ করছে, তার সমাধান কী? কোনো কোনো মহল ভাবছে নির্বাচন ঘিরে দেশে সহিংসতা আরও বৃদ্ধি পেতে পারে। জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে চোরাগোপ্তা হামলা, অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার ও নাশকতার আশঙ্কাও আছে। তবে সরকার আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট সামনে রেখে পুলিশের পক্ষ থেকে সব রাজনৈতিক দলের জন্য নিরাপত্তা প্রটোকল দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।

চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসে রাজধানীতে ৩৫২টি খুনের ঘটনা ঘটেছে। শুধু রাজধানীতেই নয়, ঢাকা বিভাগেও গড় হিসাব করলে গত বছরের তুলনায় এ বছর বেশি খুন হয়েছে। এই খুনের হার বৃদ্ধির কারণ হিসেবে দেখা যাচ্ছে, দেশে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার যথাযথ কার্যকর পদক্ষেপের অভাব।

সবাইকে মনে রাখতে হবে, এই নির্বাচনটি বানচাল হয়ে গেলে বা দীর্ঘ সময়ের জন্য ঝুলে গেলে দেশ এখন যে সংকটে আছে, তার চেয়ে অনেক বেশি সংকট ঘনীভূত হবে। সুতরাং রাজনৈতিক আদর্শ, দর্শন ও কর্মসূচি ভিন্ন হলেও এই মুহূর্তে ক্রিয়াশীল সব রাজনৈতিক দলের মধ্যে ঐক্য জরুরি। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই বারবার জাতীয় ঐক্যের কথা বলা হচ্ছে, সেই ঐক্যে যে বড় ধরনের ফাটল ধরেছে, তা নানা ঘটনায় স্পষ্ট। কিন্তু এখন অন্তত হাদির এই ঘটনার পরে সেই ফাটল দূর করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের প্রত্যাশা, যথাযথ পদক্ষেপের মধ্য দিয়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অচিরেই উন্নতি ঘটবে। দূর হবে আস্থার সংকট। দেশ এগিয়ে যাবে একটি সুষ্ঠু ও উৎসবমুখর নির্বাচনের দিকে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ময়মনসিংহে পিটিয়ে হত্যা: র‍্যাবের অভিযানে আটক ৭

বিএনপি নেতার ঘরে তালা মেরে অগ্নিসংযোগের অভিযোগ, ঘুমন্ত শিশুর মৃত্যু, দগ্ধ ৩

ওসমান হাদির জানাজা: ১০০০ বডি ওর্ন ক্যামেরা পরবেন পুলিশ সদস্যরা

বাম, শাহবাগী, ছায়ানট, উদীচীকে তছনছ করে দিতে হবে: জাবি ছাত্রশিবির সেক্রেটারি

ময়মনসিংহের নান্দাইল: নদীর জায়গা দখল করে আ.লীগ নেতার মার্কেট

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

দেশের অর্থনীতির দ্বৈত বাস্তবতা

ড. মো. শফিকুল ইসলাম
দেশের অর্থনীতির দ্বৈত বাস্তবতা

বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন এমন এক বাস্তবতার মুখোমুখি, যেখানে সংখ্যার ভাষা আর মানুষের অভিজ্ঞতা এক বিন্দুতে মিলছে না। সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, অর্থনীতি ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। কিন্তু সাধারণ মানুষের জীবনে সেই ঘুরে দাঁড়ানোর প্রতিফলন এখনো স্পষ্ট নয়। উচ্চ সুদের চাপ, বিনিয়োগের স্থবিরতা এবং কর্মসংস্থানের সংকট—এই তিনটি বিষয় একসঙ্গে অর্থনীতির ওপর এমন বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে, যা ভবিষ্যৎ নিয়ে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করছে। বাংলাদেশের অর্থনীতি বর্তমানে এমন এক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে, যেখানে পরিসংখ্যান আর বাস্তবজীবনের অভিজ্ঞতার মধ্যে ব্যবধান ক্রমেই স্পষ্ট হয়ে উঠছে। একদিকে কিছু সামষ্টিক সূচকে ঘুরে দাঁড়ানোর আভাস, অন্যদিকে সাধারণ মানুষের জীবনে বাড়তে থাকা অনিশ্চয়তা—এই দ্বৈত বাস্তবতা আজকের অর্থনীতির সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য।

পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সাম্প্রতিক প্রকাশনা ‘বাংলাদেশ স্টেট অব দ্য ইকোনমি ২০২৫’ এই বাস্তবতাকে পরিসংখ্যানের আয়নায় তুলে ধরেছে। প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫-২৬ অর্থবছরের শুরুতে অর্থনীতিতে যে শ্লথগতি দেখা গিয়েছিল, তার প্রভাব এখনো পুরোপুরি কাটেনি। যদিও কিছু সূচকে পুনরুদ্ধারের ইঙ্গিত রয়েছে, তবু সেই পুনরুদ্ধার কতটা টেকসই, সেটিই এখন বড় প্রশ্ন।

২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি নেমে আসে মাত্র ২ শতাংশে। রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও বাজারে আস্থার সংকট শিল্প ও সেবা খাতে সরাসরি নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। কৃষি খাতেও প্রবৃদ্ধি ছিল অত্যন্ত সীমিত। দ্বিতীয় ও তৃতীয় প্রান্তিকে শিল্প খাত কিছুটা ঘুরে দাঁড়ালেও অর্থনীতিবিদদের মতে, এই প্রবৃদ্ধির পেছনে শক্ত ভিত নেই। কারণ, টেকসই প্রবৃদ্ধির মূল চালিকাশক্তি বিনিয়োগ, যা এখনো দুর্বল। এখানে নতুন নির্বাচিত সরকার এলে, এই ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। তবে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের অনেক দায়িত্ব রয়েছে অর্থনীতিকে সচল রাখার বিষয়ে। নির্বাচিত সরকার এলে বিদেশি বিনিয়োগের ওপর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে এবং অবস্থার পরিবর্তনও হবে।

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক নীতি সুদহার ১০ শতাংশে স্থির রেখেছে। এই সিদ্ধান্ত স্বল্প মেয়াদে মূল্যস্ফীতির চাপ কিছুটা কমাতে সহায়ক হলেও এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া পড়ছে বিনিয়োগে। উচ্চ সুদের কারণে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ কমে এসেছে উল্লেখযোগ্যভাবে। জুন ২০২৫ নাগাদ বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি ছিল মাত্র ৭ শতাংশের কিছু বেশি, যা একটি উন্নয়নশীল অর্থনীতির জন্য উদ্বেগজনকভাবে কম। তাই অর্থ উপদেষ্টাকে এখানে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

একই সময়ে সরকারি ঋণ গ্রহণ বেড়ে যাওয়ায় বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর অর্থপ্রবাহ আরও সংকুচিত হয়েছে। ফলে বেসরকারি উদ্যোক্তারা প্রয়োজনীয় অর্থায়ন থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। নতুন শিল্প স্থাপন, বিদ্যমান শিল্প সম্প্রসারণ কিংবা উদ্ভাবনী উদ্যোগ—সবকিছুই উচ্চ সুদের চাপে থমকে যাচ্ছে। বিনিয়োগ না হলে উৎপাদন বাড়ে না, আর উৎপাদন না বাড়লে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয় না—এই সরল অর্থনৈতিক সত্যটি আবারও সামনে এসে দাঁড়িয়েছে।

শিল্প উৎপাদনের চিত্রও সেই বাস্তবতাকেই প্রতিফলিত করছে। যদিও কিছু মাসে শিল্প উৎপাদনে প্রবৃদ্ধি দেখা গেছে, তবু সামগ্রিকভাবে এই গতি স্থায়ী নয়। উৎপাদনের ধারাবাহিকতা না থাকায় নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে সীমিত পরিসরে। এর সরাসরি প্রভাব পড়ছে শ্রমবাজারে।

এই মুহূর্তে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর শ্রমশক্তি জরিপ অনুযায়ী বাংলাদেশে বেকারের সংখ্যা আনুমানিক ২৬-২৭ লাখের মধ্যে (২.৬১-২.৭৪ মিলিয়ন)। গত বছরের একই সময়ে তা ছিল ২৪ লাখ। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে দেশে বেকার বেড়েছে প্রায় ৩ লাখের বেশি। বাস্তবে বেকারত্বের হার আরও অনেক বেশি বলে কেউ কেউ মনে করছেন। দেশের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে বেকারত্বের হার ইতিহাসের সর্বোচ্চ পর্যায়ে ঠেকেছে। চলতি অর্থবছরের অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিকে দেশের বেকারত্বের হার বেড়ে ৪.৬৩ শতাংশে পৌঁছেছে। শ্রমশক্তি জরিপের তথ্য অনুযায়ী, দেশে সামগ্রিক বেকারত্বের হার বেড়েছে। সবচেয়ে উদ্বেগজনক হলো যুব বেকারত্ব। শিক্ষিত তরুণদের একটি বড় অংশ কাজ, শিক্ষা বা প্রশিক্ষণের বাইরে রয়ে যাচ্ছে। এই পরিস্থিতি কেবল অর্থনৈতিক নয়, সামাজিক স্থিতিশীলতার জন্যও বড় চ্যালেঞ্জ। তরুণ জনগোষ্ঠী যদি উৎপাদনপ্রক্রিয়ার বাইরে থাকে, তবে জনসংখ্যাগত লভ্যাংশ জনসংখ্যাগত বোঝায় পরিণত হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়।

মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমে এলেও সাধারণ মানুষের জীবনে স্বস্তি এখনো সীমিত। খাদ্য মূল্যস্ফীতি এক অঙ্কে নামলেও চালের দাম সাধারণ মানুষের জন্য বড় উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। উৎপাদন বাড়লেও বাজারে তার সুফল না পৌঁছানো বাজার ব্যবস্থাপনার দুর্বলতাকেই স্পষ্ট করে। খাদ্যপণ্যের দামে সামান্য অস্থিরতাও নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারের বাজেটে বড় ধাক্কা দেয়। কৃষি খাতেও চ্যালেঞ্জ কম নয়। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব, ঘন ঘন বন্যা এবং অনিশ্চিত আবহাওয়া কৃষি উৎপাদনকে ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলছে। আউশ ও আমন উৎপাদনে ঘাটতির তথ্য ভবিষ্যতের খাদ্যনিরাপত্তা নিয়েও প্রশ্ন তুলছে। কৃষি যদি স্থিতিশীল না থাকে, তবে মূল্যস্ফীতি ও দারিদ্র্য—দুটোই বাড়ার আশঙ্কা থাকে।

দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও টেকসই প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করতে পর্যটন খাতকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া এখন সময়ের দাবি। পর্যটনশিল্প একটি অত্যন্ত সম্ভাবনাময় খাত, যা তুলনামূলকভাবে কম বিনিয়োগে বিপুল কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারে এবং বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের একটি কার্যকর উৎস হিসেবে কাজ করে। দুঃখজনক হলেও সত্য, আমাদের দেশে এখনো এই খাতটি যথাযথ গুরুত্ব ও পরিকল্পনার অভাবে কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন লাভ করতে পারেনি। অন্যদিকে চীন, ভারত, থাইল্যান্ড ও শ্রীলঙ্কার মতো আমাদের দেশের জাতীয় অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে এবং টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে পর্যটন খাতকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গুরুত্ব দেওয়ার বিকল্প নেই।

এই প্রেক্ষাপটে অন্তর্বর্তী সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক কিছু কাঠামোগত সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে। ব্যাংক খাতে শৃঙ্খলা ফেরানো, দুর্বল ব্যাংক একীভূতকরণ এবং বিনিয়োগ আকর্ষণে নানামুখী উদ্যোগ প্রশংসনীয়। তবে এসব উদ্যোগের সুফল পেতে সময় লাগবে, আর সেই সময়টা অর্থনীতি কতটা সহ্য করতে পারবে—সেটিই বড় প্রশ্ন। বাংলাদেশের অর্থনীতি যে ঘুরে দাঁড়ানোর সম্ভাবনা রাখে, তা অস্বীকার করার সুযোগ নেই। কিন্তু উচ্চ সুদের চাপে বিনিয়োগ স্থবির থাকলে এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টি না হলে এই পুনরুদ্ধার টেকসই হবে না। এখন প্রয়োজন সুসমন্বিত নীতি, বাস্তবমুখী সংস্কার এবং এমন সিদ্ধান্ত, যা কেবল পরিসংখ্যানে নয়, মানুষের জীবনে দৃশ্যমান পরিবর্তন আনতে পারে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ময়মনসিংহে পিটিয়ে হত্যা: র‍্যাবের অভিযানে আটক ৭

বিএনপি নেতার ঘরে তালা মেরে অগ্নিসংযোগের অভিযোগ, ঘুমন্ত শিশুর মৃত্যু, দগ্ধ ৩

ওসমান হাদির জানাজা: ১০০০ বডি ওর্ন ক্যামেরা পরবেন পুলিশ সদস্যরা

বাম, শাহবাগী, ছায়ানট, উদীচীকে তছনছ করে দিতে হবে: জাবি ছাত্রশিবির সেক্রেটারি

ময়মনসিংহের নান্দাইল: নদীর জায়গা দখল করে আ.লীগ নেতার মার্কেট

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত