মহিউদ্দিন খান মোহন

সম্প্রতি ঘটা করে অনুষ্ঠিত হলো বিএনপির বর্ধিত সভা। সভাটির সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হলো, প্রায় সাত বছর পরে দলটির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বক্তব্য রেখেছেন। লন্ডনে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়া প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি সভাটিতে সংযুক্ত হয়ে বক্তব্য রেখেছেন। চিরাচরিত স্বভাব অনুযায়ী কাউকে আক্রমণ না করে অত্যন্ত ভদ্রোচিত ভাষায় কথা বলেছেন তিনি। নেতা-কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বানের পাশাপাশি দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার সংগ্রামে নিজের সম্পৃক্ত থাকার ইচ্ছার কথাও জানিয়েছেন তিনি। লন্ডন থেকে যুক্ত হয়ে সভায় সভাপতিত্ব করেছেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। দীর্ঘদিন পর অনুষ্ঠিত দলটির জাতীয় নির্বাহী কমিটির এই বর্ধিত সভা সংগত কারণেই নেতা-কর্মীদের মধ্যে যেমন উদ্দীপনা সৃষ্টি করেছিল, তেমনি রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহলেও ঔৎসুক্যের অন্ত ছিল না। বিশেষত সভা থেকে নেতা-কর্মীরা কী বার্তা পাবেন, তা নিয়ে সবারই কৌতূহল ছিল। তবে শেষ পর্যন্ত নতুন কোনো বার্তা নেতা-কর্মীরা পাননি। নিজেদের ঐক্যবদ্ধ রাখা এবং আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতি গ্রহণের জন্য ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নির্দেশনা পেয়েছেন নেতা-কর্মীরা; যা এর আগেও প্রায় প্রতিটি সভায় তিনি বলেছেন।
যেভাবে যে পরিসরে বিএনপির এই বর্ধিত সভাটি হয়েছে, তা বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে অভিনবই বলা যায়। জাতীয় কাউন্সিল সম্মেলনের আদলে অনুষ্ঠিত হয়েছে বর্ধিত সভাটি। চার হাজারের অধিক প্রতিনিধির অংশগ্রহণে একটি দলের জাতীয় নির্বাহী কমিটির বর্ধিত সভা নজিরবিহীন ঘটনা। এদিক দিয়ে বিএনপি একটি রেকর্ড করল। এ সভাকে সফল করতে ব্যবস্থাপনা কমিটি, বাস্তবায়ন কমিটি, অভ্যর্থনা উপকমিটি, আপ্যায়ন উপকমিটি, শৃঙ্খলা উপকমিটি ইত্যাদি বিভিন্ন কমিটিও গঠন করা হয়েছিল। যতদূর জানি বিএনপির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী জাতীয় নির্বাহী কমিটির বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা স্থায়ী কমিটির সদস্য, নির্বাহী কমিটির সদস্য, জেলা কমিটির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক এবং অঙ্গসংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকদের নিয়ে। এর বাইরে দলের কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যরাও বিশেষভাবে আমন্ত্রিত হতে পারেন।
কিন্তু গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর ও দলটির নেতা-কর্মীদের বর্ণনা থেকে জানা যায়, চিরাচরিত নিয়মের ব্যত্যয় ঘটেছে এ ক্ষেত্রে। গঠনতান্ত্রিক রীতি উপেক্ষা করে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল উপজেলা বিএনপির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকদেরও। এমনকি কোনো ক্রাইটেরিয়ায়ই পড়েন না, এমন অনেকে আমন্ত্রণ পেয়েছেন। সবচেয়ে অবাক কাণ্ড হলো, বর্ধিত সভায় অংশগ্রহণের সুযোগ দিতে একটি বিশেষ ক্রাইটেরিয়া সৃষ্টি করা হয়েছিল ‘একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রাথমিক মনোনয়নপ্রাপ্ত’ বলে। এই ক্রাইটেরিয়ায় প্রতিটি সংসদীয় আসনে প্রাথমিক মনোনয়নপ্রাপ্ত অন্তত তিনজন করে বর্ধিত সভায় আমন্ত্রণ পেয়েছিলেন। প্রশ্ন হলো, গণতন্ত্রের ইতিহাসে একটি কলঙ্কিত নির্বাচনে ‘প্রাথমিক মনোনয়নপ্রাপ্তদের’ বর্ধিত সভায় যোগ দেওয়ার আমন্ত্রণ জানিয়ে বিএনপি কি ওই নির্বাচনকে প্রকারান্তরে স্বীকৃতি দিল না? অবশ্য মুখে ‘রাতের ভোটের নির্বাচন’, ‘অবৈধ সংসদ’ বললেও তাদের সাতজন এমপি চার বছর পর্যন্ত সংসদ সদস্য হিসেবে বহাল থেকে রাষ্ট্রীয় সব সুযোগ-সুবিধাই ভোগ করেছেন। এমনকি ভাগে পাওয়া একমাত্র নারী সংসদ সদস্য রাজউক থেকে একটি প্লট বরাদ্দ দেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে তৎকালীন স্পিকারের কাছে আবেদনও করেছিলেন। পরে তীব্র সমালোচনার মুখে তিনি সে আবেদন প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন। সে সময় অনেকেই ওই এমপিদের ‘অবৈধ সংসদের বৈধ এমপি’ বলে কটাক্ষ করতেন। বর্ধিত সভায় অঙ্গসংগঠনগুলোর এমন অনেক নেতা-কর্মীকে প্রবেশাধিকার দেওয়া হয়েছিল, দলটির গঠনতন্ত্র অনুসারে যাঁদের ধারেকাছেও ঘেঁষার কথা নয়। অভিযোগ রয়েছে, এদেরকে বিভিন্ন উপকমিটির সদস্য হিসেবে কার্ড বানিয়ে দেওয়া হয়েছিল। আবার এমন অনেক নেতাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি, যাঁদের বর্ধিত সভার আবরণে অনুষ্ঠিত ওই কর্মী সভার আমন্ত্রণ পাওয়া উচিত ছিল। দলটির দুঃসময়ের কান্ডারিখ্যাত প্রয়াত একজন শীর্ষনেতার পুত্র আফসোস করে বললেন, ‘বর্ধিত সভায় আমন্ত্রণ পাব কী? দলেই তো ঠাঁই মিলছে না!’ তিনি জানালেন, দলের যাঁরা নিবেদিতপ্রাণ নেতা-কর্মী তাঁরা এখন বঞ্চিত, অবহেলিত। তাঁদের জেলায় এখন চলছে ‘এক নেত্রীর শাসন’। তাঁর হুকুমেই সব চলে। কারও বলার বা করার কিছু নেই। নেতা-কর্মীরা নাকি আড়ালে-আবডালে ওই নেত্রীকে সে জেলার ‘শেখ হাসিনা’ বলে অভিহিত করে থাকেন।
এদিকে ‘কামাল জামান’ নামে আওয়ামী লীগের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ জনৈক ব্যক্তিকে একটি উপকমিটির সদস্য হিসেবে বর্ধিত সভায় প্রবেশ কার্ড দেওয়ার অভিযোগ করেছেন বিএনপির এক কর্মী। তিনি তাঁর ফেসবুক পেজে কার্ডের ছবি ও আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে ওই ব্যক্তির ছবি পোস্ট করে জানতে চেয়েছেন, এই ব্যক্তি কী করে দলের গুরুত্বপূর্ণ সভায় ঢুকতে পারল? অপরদিকে মো. সারোয়ার হোসেন রুবেল নামে এক ব্যক্তি ‘জিয়া প্রজন্ম দল’ নামে এক ভুয়া সংগঠনের মহাসচিব হিসেবে নিজের নামে ডেলিগেট কার্ড বানিয়ে সভায় যোগ দিয়েছিলেন। পরে এ বিষয়ে বিএনপির সহদপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে ওই ব্যক্তির সঙ্গে মূল দল কিংবা কোনো অঙ্গ বা সহযোগী সংগঠনের সম্পর্ক নেই বলে জানানো হয়েছে। একটি বড় আয়োজনে কিছু ভুলত্রুটি থাকাটা অস্বাভাবিক নয়। তবে দলের সঙ্গে সম্পর্কহীন এবং সাবেক স্বৈরশাসক-দলটির নেতাদের ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি কী করে একটি উপকমিটির সদস্য হলেন—এ প্রশ্ন বিএনপির কর্মীদের। তাঁদের কয়েকজন ক্ষোভের সঙ্গে বললেন, ১৭ বছর আমরা জীবন বাজি রেখে যাঁদের বিরুদ্ধে লড়াই করলাম, এখন তাঁদেরই দোসররা আমাদের পেছনে ফেলে সামনের সারিতে চলে যাচ্ছেন। তাঁরা আমাকে অনুরোধ করলেন এসব তথ্য তুলে ধরতে, যাতে দলের হাইকমান্ড অনুপ্রবেশকারীদের সম্পর্কে সতর্ক হতে পারে। তাঁদের বলেছি, তথ্য হয়তো তুলে ধরতে পারব, তবে তোমাদের হাইকমান্ড তা ধর্তব্য বলে গণ্য করবে কি না, সে গ্যারান্টি দিতে পারব না।
রাজনৈতিক সচেতন মহল বলছে, বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির উল্লিখিত বর্ধিত সভাটি আক্ষরিক অর্থে বর্ধিত সভা ছিল না। কার্যত তা ছিল জাতীয় কাউন্সিল সম্মেলনের মহড়া। যেহেতু আগামী সংসদ নির্বাচনের আগে দলটির কাউন্সিল সম্মেলনের সম্ভাবনা নেই, তাই নেতা-কর্মীদের কেন্দ্রীয়ভাবে একত্র করে পরবর্তী নির্দেশনা দেওয়ার জন্য এই সভাটিকে উপলক্ষ করা হয়েছিল। সে হিসেবে সভাটিকে ‘কেন্দ্রীয় কর্মী সম্মেলন’ হিসেবে অভিহিত করা যেত। এটা স্বীকার্য যে বিএনপি এখন যে সাংগঠনিক অবস্থায় রয়েছে, তাতে জাতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠানের কথা ভাবা প্রায় অসম্ভব। অধিকাংশ জেলায় নির্বাচিত কমিটি নেই। কোথাও আবার পূর্বতন কমিটি ভেঙে দিয়ে গঠন করা হয়েছে আহ্বায়ক কমিটি। জেলার অধীন উপজেলা কমিটিগুলোর অবস্থাও তথৈবচ। দ্বন্দ্ব-কোন্দলের অবসান হয়নি কোথাও। ইতিমধ্যে দু-চারটি জেলায় নির্বাচনের মাধ্যমে ‘সুপার ফাইভ’ বা ‘সুপার সেভেন’ কমিটি গঠিত হয়েছে। তবে তাতে কোন্দলের অবসান হয়নি। পূর্ণাঙ্গ কমিটি কবে হবে, কেউ জানে না। পূর্বতন কমিটি ভেঙে দিয়ে গঠন করা আহ্বায়ক কমিটি নিয়ে নেতা-কর্মীদের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে অসন্তোষ। মুন্সিগঞ্জ জেলা বিএনপির কমিটি ভেঙে দিয়ে আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে সপ্তাহ দুয়েক আগে। আহ্বায়ক করা হয়েছে ২০২০ সালে বিএনপির সব পদ থেকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগী নেতা সাবেক প্রতিমন্ত্রী মিজানুর রহমান সিনহাকে। এ নিয়ে স্থানীয় বিএনপির নেতা-কর্মীর একাংশের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে অসন্তোষ।
বিএনপি এখন ব্যস্ত রয়েছে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছ থেকে দ্রুত নির্বাচন আদায়ের চেষ্টায়। কিন্তু অভ্যন্তরীণ কোন্দল নিরসন করে সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ফিরিয়ে এনে দলকে ঐক্যবদ্ধ না করে নির্বাচনে অবতীর্ণ হওয়া নতুন সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে বলে মনে করছে রাজনীতি-অভিজ্ঞ মহল। এহেন পরিস্থিতিতে অনুষ্ঠিত বর্ধিত সভা বিএনপির সাংগঠনিক শক্তি বর্ধন ও ভেঙে পড়া ঐক্যকে পুনরুদ্ধারে কতটুকু ইতিবাচক ভূমিকা রাখে, সেটাই এখন দেখার বিষয়।

সম্প্রতি ঘটা করে অনুষ্ঠিত হলো বিএনপির বর্ধিত সভা। সভাটির সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হলো, প্রায় সাত বছর পরে দলটির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বক্তব্য রেখেছেন। লন্ডনে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়া প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি সভাটিতে সংযুক্ত হয়ে বক্তব্য রেখেছেন। চিরাচরিত স্বভাব অনুযায়ী কাউকে আক্রমণ না করে অত্যন্ত ভদ্রোচিত ভাষায় কথা বলেছেন তিনি। নেতা-কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বানের পাশাপাশি দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার সংগ্রামে নিজের সম্পৃক্ত থাকার ইচ্ছার কথাও জানিয়েছেন তিনি। লন্ডন থেকে যুক্ত হয়ে সভায় সভাপতিত্ব করেছেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। দীর্ঘদিন পর অনুষ্ঠিত দলটির জাতীয় নির্বাহী কমিটির এই বর্ধিত সভা সংগত কারণেই নেতা-কর্মীদের মধ্যে যেমন উদ্দীপনা সৃষ্টি করেছিল, তেমনি রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহলেও ঔৎসুক্যের অন্ত ছিল না। বিশেষত সভা থেকে নেতা-কর্মীরা কী বার্তা পাবেন, তা নিয়ে সবারই কৌতূহল ছিল। তবে শেষ পর্যন্ত নতুন কোনো বার্তা নেতা-কর্মীরা পাননি। নিজেদের ঐক্যবদ্ধ রাখা এবং আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতি গ্রহণের জন্য ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নির্দেশনা পেয়েছেন নেতা-কর্মীরা; যা এর আগেও প্রায় প্রতিটি সভায় তিনি বলেছেন।
যেভাবে যে পরিসরে বিএনপির এই বর্ধিত সভাটি হয়েছে, তা বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে অভিনবই বলা যায়। জাতীয় কাউন্সিল সম্মেলনের আদলে অনুষ্ঠিত হয়েছে বর্ধিত সভাটি। চার হাজারের অধিক প্রতিনিধির অংশগ্রহণে একটি দলের জাতীয় নির্বাহী কমিটির বর্ধিত সভা নজিরবিহীন ঘটনা। এদিক দিয়ে বিএনপি একটি রেকর্ড করল। এ সভাকে সফল করতে ব্যবস্থাপনা কমিটি, বাস্তবায়ন কমিটি, অভ্যর্থনা উপকমিটি, আপ্যায়ন উপকমিটি, শৃঙ্খলা উপকমিটি ইত্যাদি বিভিন্ন কমিটিও গঠন করা হয়েছিল। যতদূর জানি বিএনপির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী জাতীয় নির্বাহী কমিটির বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা স্থায়ী কমিটির সদস্য, নির্বাহী কমিটির সদস্য, জেলা কমিটির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক এবং অঙ্গসংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকদের নিয়ে। এর বাইরে দলের কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যরাও বিশেষভাবে আমন্ত্রিত হতে পারেন।
কিন্তু গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর ও দলটির নেতা-কর্মীদের বর্ণনা থেকে জানা যায়, চিরাচরিত নিয়মের ব্যত্যয় ঘটেছে এ ক্ষেত্রে। গঠনতান্ত্রিক রীতি উপেক্ষা করে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল উপজেলা বিএনপির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকদেরও। এমনকি কোনো ক্রাইটেরিয়ায়ই পড়েন না, এমন অনেকে আমন্ত্রণ পেয়েছেন। সবচেয়ে অবাক কাণ্ড হলো, বর্ধিত সভায় অংশগ্রহণের সুযোগ দিতে একটি বিশেষ ক্রাইটেরিয়া সৃষ্টি করা হয়েছিল ‘একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রাথমিক মনোনয়নপ্রাপ্ত’ বলে। এই ক্রাইটেরিয়ায় প্রতিটি সংসদীয় আসনে প্রাথমিক মনোনয়নপ্রাপ্ত অন্তত তিনজন করে বর্ধিত সভায় আমন্ত্রণ পেয়েছিলেন। প্রশ্ন হলো, গণতন্ত্রের ইতিহাসে একটি কলঙ্কিত নির্বাচনে ‘প্রাথমিক মনোনয়নপ্রাপ্তদের’ বর্ধিত সভায় যোগ দেওয়ার আমন্ত্রণ জানিয়ে বিএনপি কি ওই নির্বাচনকে প্রকারান্তরে স্বীকৃতি দিল না? অবশ্য মুখে ‘রাতের ভোটের নির্বাচন’, ‘অবৈধ সংসদ’ বললেও তাদের সাতজন এমপি চার বছর পর্যন্ত সংসদ সদস্য হিসেবে বহাল থেকে রাষ্ট্রীয় সব সুযোগ-সুবিধাই ভোগ করেছেন। এমনকি ভাগে পাওয়া একমাত্র নারী সংসদ সদস্য রাজউক থেকে একটি প্লট বরাদ্দ দেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে তৎকালীন স্পিকারের কাছে আবেদনও করেছিলেন। পরে তীব্র সমালোচনার মুখে তিনি সে আবেদন প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন। সে সময় অনেকেই ওই এমপিদের ‘অবৈধ সংসদের বৈধ এমপি’ বলে কটাক্ষ করতেন। বর্ধিত সভায় অঙ্গসংগঠনগুলোর এমন অনেক নেতা-কর্মীকে প্রবেশাধিকার দেওয়া হয়েছিল, দলটির গঠনতন্ত্র অনুসারে যাঁদের ধারেকাছেও ঘেঁষার কথা নয়। অভিযোগ রয়েছে, এদেরকে বিভিন্ন উপকমিটির সদস্য হিসেবে কার্ড বানিয়ে দেওয়া হয়েছিল। আবার এমন অনেক নেতাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি, যাঁদের বর্ধিত সভার আবরণে অনুষ্ঠিত ওই কর্মী সভার আমন্ত্রণ পাওয়া উচিত ছিল। দলটির দুঃসময়ের কান্ডারিখ্যাত প্রয়াত একজন শীর্ষনেতার পুত্র আফসোস করে বললেন, ‘বর্ধিত সভায় আমন্ত্রণ পাব কী? দলেই তো ঠাঁই মিলছে না!’ তিনি জানালেন, দলের যাঁরা নিবেদিতপ্রাণ নেতা-কর্মী তাঁরা এখন বঞ্চিত, অবহেলিত। তাঁদের জেলায় এখন চলছে ‘এক নেত্রীর শাসন’। তাঁর হুকুমেই সব চলে। কারও বলার বা করার কিছু নেই। নেতা-কর্মীরা নাকি আড়ালে-আবডালে ওই নেত্রীকে সে জেলার ‘শেখ হাসিনা’ বলে অভিহিত করে থাকেন।
এদিকে ‘কামাল জামান’ নামে আওয়ামী লীগের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ জনৈক ব্যক্তিকে একটি উপকমিটির সদস্য হিসেবে বর্ধিত সভায় প্রবেশ কার্ড দেওয়ার অভিযোগ করেছেন বিএনপির এক কর্মী। তিনি তাঁর ফেসবুক পেজে কার্ডের ছবি ও আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে ওই ব্যক্তির ছবি পোস্ট করে জানতে চেয়েছেন, এই ব্যক্তি কী করে দলের গুরুত্বপূর্ণ সভায় ঢুকতে পারল? অপরদিকে মো. সারোয়ার হোসেন রুবেল নামে এক ব্যক্তি ‘জিয়া প্রজন্ম দল’ নামে এক ভুয়া সংগঠনের মহাসচিব হিসেবে নিজের নামে ডেলিগেট কার্ড বানিয়ে সভায় যোগ দিয়েছিলেন। পরে এ বিষয়ে বিএনপির সহদপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে ওই ব্যক্তির সঙ্গে মূল দল কিংবা কোনো অঙ্গ বা সহযোগী সংগঠনের সম্পর্ক নেই বলে জানানো হয়েছে। একটি বড় আয়োজনে কিছু ভুলত্রুটি থাকাটা অস্বাভাবিক নয়। তবে দলের সঙ্গে সম্পর্কহীন এবং সাবেক স্বৈরশাসক-দলটির নেতাদের ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি কী করে একটি উপকমিটির সদস্য হলেন—এ প্রশ্ন বিএনপির কর্মীদের। তাঁদের কয়েকজন ক্ষোভের সঙ্গে বললেন, ১৭ বছর আমরা জীবন বাজি রেখে যাঁদের বিরুদ্ধে লড়াই করলাম, এখন তাঁদেরই দোসররা আমাদের পেছনে ফেলে সামনের সারিতে চলে যাচ্ছেন। তাঁরা আমাকে অনুরোধ করলেন এসব তথ্য তুলে ধরতে, যাতে দলের হাইকমান্ড অনুপ্রবেশকারীদের সম্পর্কে সতর্ক হতে পারে। তাঁদের বলেছি, তথ্য হয়তো তুলে ধরতে পারব, তবে তোমাদের হাইকমান্ড তা ধর্তব্য বলে গণ্য করবে কি না, সে গ্যারান্টি দিতে পারব না।
রাজনৈতিক সচেতন মহল বলছে, বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির উল্লিখিত বর্ধিত সভাটি আক্ষরিক অর্থে বর্ধিত সভা ছিল না। কার্যত তা ছিল জাতীয় কাউন্সিল সম্মেলনের মহড়া। যেহেতু আগামী সংসদ নির্বাচনের আগে দলটির কাউন্সিল সম্মেলনের সম্ভাবনা নেই, তাই নেতা-কর্মীদের কেন্দ্রীয়ভাবে একত্র করে পরবর্তী নির্দেশনা দেওয়ার জন্য এই সভাটিকে উপলক্ষ করা হয়েছিল। সে হিসেবে সভাটিকে ‘কেন্দ্রীয় কর্মী সম্মেলন’ হিসেবে অভিহিত করা যেত। এটা স্বীকার্য যে বিএনপি এখন যে সাংগঠনিক অবস্থায় রয়েছে, তাতে জাতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠানের কথা ভাবা প্রায় অসম্ভব। অধিকাংশ জেলায় নির্বাচিত কমিটি নেই। কোথাও আবার পূর্বতন কমিটি ভেঙে দিয়ে গঠন করা হয়েছে আহ্বায়ক কমিটি। জেলার অধীন উপজেলা কমিটিগুলোর অবস্থাও তথৈবচ। দ্বন্দ্ব-কোন্দলের অবসান হয়নি কোথাও। ইতিমধ্যে দু-চারটি জেলায় নির্বাচনের মাধ্যমে ‘সুপার ফাইভ’ বা ‘সুপার সেভেন’ কমিটি গঠিত হয়েছে। তবে তাতে কোন্দলের অবসান হয়নি। পূর্ণাঙ্গ কমিটি কবে হবে, কেউ জানে না। পূর্বতন কমিটি ভেঙে দিয়ে গঠন করা আহ্বায়ক কমিটি নিয়ে নেতা-কর্মীদের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে অসন্তোষ। মুন্সিগঞ্জ জেলা বিএনপির কমিটি ভেঙে দিয়ে আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে সপ্তাহ দুয়েক আগে। আহ্বায়ক করা হয়েছে ২০২০ সালে বিএনপির সব পদ থেকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগী নেতা সাবেক প্রতিমন্ত্রী মিজানুর রহমান সিনহাকে। এ নিয়ে স্থানীয় বিএনপির নেতা-কর্মীর একাংশের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে অসন্তোষ।
বিএনপি এখন ব্যস্ত রয়েছে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছ থেকে দ্রুত নির্বাচন আদায়ের চেষ্টায়। কিন্তু অভ্যন্তরীণ কোন্দল নিরসন করে সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ফিরিয়ে এনে দলকে ঐক্যবদ্ধ না করে নির্বাচনে অবতীর্ণ হওয়া নতুন সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে বলে মনে করছে রাজনীতি-অভিজ্ঞ মহল। এহেন পরিস্থিতিতে অনুষ্ঠিত বর্ধিত সভা বিএনপির সাংগঠনিক শক্তি বর্ধন ও ভেঙে পড়া ঐক্যকে পুনরুদ্ধারে কতটুকু ইতিবাচক ভূমিকা রাখে, সেটাই এখন দেখার বিষয়।

সম্প্রতি রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে সুজন আয়োজিত ‘নির্বাচনী ব্যবস্থার সংস্কার: অগ্রগতি পর্যালোচনা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে বিশিষ্ট নাগরিক ও বিশেষজ্ঞরা যে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, তা আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতি ও বাস্তবতার এক করুণ চিত্র উঠে এসেছে।
১৩ মিনিট আগে
খুলনার ব্যাপারটা বড্ড গোলমেলে। এনসিপির এক শ্রমিকনেতাকে উদ্দেশ্য করে গুলি ছোড়া হয়েছে। গুলিটি তাঁর বাঁ কানের চামড়া ভেদ করে বের হয়ে গেছে। তিনি এখন শঙ্কামুক্ত। গুলি লাগার পরই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই ঘটনা ছড়িয়ে পড়ে। কোনো গুপ্তঘাতক নেতাদের টার্গেট করে হত্যা পরিকল্পনায় নেমেছে কি না, সে রকম...
১ দিন আগে
জাতীয় দৈনিক প্রথম আলো এবং ডেইলি স্টারে সন্ত্রাসীরা যে নজিরবিহীন নৃশংস হামলা করেছে, তার সূত্র ধরেই শুরু করতে হচ্ছে। ঘটনার পূর্বাপর সবাই এখন জানেন। তাই সংক্ষেপে শুধু একটি বিষয় উল্লেখ করব। হামলার আলামত স্পষ্ট হয়ে ওঠার পরই প্রথম আলোর পক্ষ থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সরকারের বিভিন্ন...
১ দিন আগে
মানুষের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সম্পর্কের গুরুত্ব অপরিসীম। তবে প্রবীণ বয়সে সেই গুরুত্ব আরও গভীর ও সূক্ষ্ম হয়ে ওঠে। কর্মজীবন শেষ, সন্তানেরা নিজেদের জীবনে ব্যস্ত, শরীর ক্রমেই দুর্বল—এই বাস্তবতায় প্রবীণের জীবনে যে সম্পর্কটি নিঃশর্তভাবে পাশে থাকে, তা হলো বন্ধুত্ব। পরিবার দায়িত্বে আবদ্ধ, আত্মীয়রা...
১ দিন আগেসম্পাদকীয়

সম্প্রতি রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে সুজন আয়োজিত ‘নির্বাচনী ব্যবস্থার সংস্কার: অগ্রগতি পর্যালোচনা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে বিশিষ্ট নাগরিক ও বিশেষজ্ঞরা যে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, তা আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতি ও বাস্তবতার এক করুণ চিত্র উঠে এসেছে। এই চিত্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দৃশ্য হলো নির্বাচনের ব্যয়।
সুস্থ গণতন্ত্রের প্রধান অন্তরায় হলো টাকার রাজনীতি। নির্বাচনী ব্যয় যদি নিয়ন্ত্রণ করা না যায়, তবে নির্বাচন-পরবর্তী দুর্নীতি রোধ করা কোনোভাবেই সম্ভব হবে না। কারণ, নির্বাচনের পেছনে যে বিপুল অর্থ ব্যয় হয়, বিজয়ীরা ক্ষমতায় গিয়ে সুদে-আসলে সেই অর্থ জনগণের পকেট থেকেই আদায় করার চেষ্টা করেন।
নির্বাচনী ব্যবস্থার আমূল সংস্কারের লক্ষ্যে গঠিত কমিশন অনেকগুলো যুগোপযোগী সুপারিশ করেছিল। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় হলো, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে (আরপিও) এই সুপারিশগুলোর একটি বড় অংশই উপেক্ষা করা হয়েছে। বিশেষ করে ব্যয় মনিটরিং কমিটি গঠন করে নিবিড় নজরদারি করার প্রস্তাবটি গৃহীত না হওয়া একটি বড় ক্ষতির জায়গা তৈরি করতে পারে ভবিষ্যতে।
‘মনোনয়ন-বাণিজ্যের’ মাধ্যমে নির্বাচনী ব্যয় বৃদ্ধির সংস্কৃতি আগে থেকেই শিকড় গেড়ে আছে। যখন একজন প্রার্থী কোটি কোটি টাকা খরচ করে মনোনয়ন কেনেন এবং নির্বাচনে লড়েন, তখন জনসেবা নয় বরং ‘বিনিয়োগের মুনাফা’ তোলাই তাঁর প্রধান লক্ষ্য হয়ে দাঁড়ায়। এই সংস্কৃতি রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নের মূল উৎস।
নির্বাচন সংস্কার কমিশনের সুপারিশমালায় কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উপেক্ষিত হয়েছে। এসব বিষয় উপেক্ষার কারণে ভবিষ্যতে একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হওয়া নিয়ে আশঙ্কা থেকেই যায়।
গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য জাতীয় ঐক্যেরও কোনো বিকল্প নেই। নির্বাচন কমিশন এবং সরকারকে বুঝতে হবে যে, লোকদেখানো সংস্কার দিয়ে জনগণের আস্থা অর্জন করা সম্ভব নয়। নির্বাচন সংস্কার কমিশন যে সুপারিশগুলো দিয়েছে, তা কেবল কাগজ-কলমে সীমাবদ্ধ না রেখে দ্রুত বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোর ভেতরে গণতন্ত্রায়ণ এবং আর্থিক স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা না গেলে সৎ ও যোগ্য প্রার্থীদের নির্বাচনে টিকে থাকা অসম্ভব হয়ে পড়বে।
দেশের সচেতন মানুষের প্রত্যাশা ছিল, এবার হয়তো নির্বাচনী ব্যবস্থার একটা আমূল সংস্কার করা সম্ভব হবে। দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন সংস্কার কমিশনের বৈঠকে বিভিন্ন দলের নেতাদের মতামত নেওয়ার জন্য চা-নাশতা বাবদ রাষ্ট্রের টাকা খরচ করা হয়েছে। কিন্তু সেই বৈঠকগুলো থেকে কাঙ্ক্ষিত ফলাফল যে আসেনি, তা পরবর্তী সময়ে কমিশনের রিপোর্ট থেকে স্পষ্ট হওয়া গেছে। জাতীয় নির্বাচনের আগে অমীমাংসিত বিষয়গুলো নিরসন করা সম্ভব না হলে নির্বাচনের পরে সেগুলো নিরসনের উদ্যোগ নেওয়া জরুরি।
নির্বাচনী ব্যবস্থার সংস্কার কোনো বিলাসিতার বিষয় নয়। এটি রাষ্ট্রের ভিত্তি মজবুত করার অপরিহার্য শর্ত। সরকারকে নির্বাচনী ব্যয় নিয়ন্ত্রণে কঠোর হতে হবে এবং সংস্কার কমিশনের বাকি সুপারিশগুলো আমলে নিয়ে একটি প্রকৃত অর্থবহ পরিবর্তনের পথ প্রশস্ত করতে হবে। অন্যথায় ভোটের নামে অর্থের খেলা চলবেই এবং দুর্নীতি নামক দানবটি আমাদের শাসনব্যবস্থাকে কুরে কুরে খেতে থাকবে।

সম্প্রতি রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে সুজন আয়োজিত ‘নির্বাচনী ব্যবস্থার সংস্কার: অগ্রগতি পর্যালোচনা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে বিশিষ্ট নাগরিক ও বিশেষজ্ঞরা যে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, তা আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতি ও বাস্তবতার এক করুণ চিত্র উঠে এসেছে। এই চিত্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দৃশ্য হলো নির্বাচনের ব্যয়।
সুস্থ গণতন্ত্রের প্রধান অন্তরায় হলো টাকার রাজনীতি। নির্বাচনী ব্যয় যদি নিয়ন্ত্রণ করা না যায়, তবে নির্বাচন-পরবর্তী দুর্নীতি রোধ করা কোনোভাবেই সম্ভব হবে না। কারণ, নির্বাচনের পেছনে যে বিপুল অর্থ ব্যয় হয়, বিজয়ীরা ক্ষমতায় গিয়ে সুদে-আসলে সেই অর্থ জনগণের পকেট থেকেই আদায় করার চেষ্টা করেন।
নির্বাচনী ব্যবস্থার আমূল সংস্কারের লক্ষ্যে গঠিত কমিশন অনেকগুলো যুগোপযোগী সুপারিশ করেছিল। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় হলো, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে (আরপিও) এই সুপারিশগুলোর একটি বড় অংশই উপেক্ষা করা হয়েছে। বিশেষ করে ব্যয় মনিটরিং কমিটি গঠন করে নিবিড় নজরদারি করার প্রস্তাবটি গৃহীত না হওয়া একটি বড় ক্ষতির জায়গা তৈরি করতে পারে ভবিষ্যতে।
‘মনোনয়ন-বাণিজ্যের’ মাধ্যমে নির্বাচনী ব্যয় বৃদ্ধির সংস্কৃতি আগে থেকেই শিকড় গেড়ে আছে। যখন একজন প্রার্থী কোটি কোটি টাকা খরচ করে মনোনয়ন কেনেন এবং নির্বাচনে লড়েন, তখন জনসেবা নয় বরং ‘বিনিয়োগের মুনাফা’ তোলাই তাঁর প্রধান লক্ষ্য হয়ে দাঁড়ায়। এই সংস্কৃতি রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নের মূল উৎস।
নির্বাচন সংস্কার কমিশনের সুপারিশমালায় কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উপেক্ষিত হয়েছে। এসব বিষয় উপেক্ষার কারণে ভবিষ্যতে একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হওয়া নিয়ে আশঙ্কা থেকেই যায়।
গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য জাতীয় ঐক্যেরও কোনো বিকল্প নেই। নির্বাচন কমিশন এবং সরকারকে বুঝতে হবে যে, লোকদেখানো সংস্কার দিয়ে জনগণের আস্থা অর্জন করা সম্ভব নয়। নির্বাচন সংস্কার কমিশন যে সুপারিশগুলো দিয়েছে, তা কেবল কাগজ-কলমে সীমাবদ্ধ না রেখে দ্রুত বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোর ভেতরে গণতন্ত্রায়ণ এবং আর্থিক স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা না গেলে সৎ ও যোগ্য প্রার্থীদের নির্বাচনে টিকে থাকা অসম্ভব হয়ে পড়বে।
দেশের সচেতন মানুষের প্রত্যাশা ছিল, এবার হয়তো নির্বাচনী ব্যবস্থার একটা আমূল সংস্কার করা সম্ভব হবে। দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন সংস্কার কমিশনের বৈঠকে বিভিন্ন দলের নেতাদের মতামত নেওয়ার জন্য চা-নাশতা বাবদ রাষ্ট্রের টাকা খরচ করা হয়েছে। কিন্তু সেই বৈঠকগুলো থেকে কাঙ্ক্ষিত ফলাফল যে আসেনি, তা পরবর্তী সময়ে কমিশনের রিপোর্ট থেকে স্পষ্ট হওয়া গেছে। জাতীয় নির্বাচনের আগে অমীমাংসিত বিষয়গুলো নিরসন করা সম্ভব না হলে নির্বাচনের পরে সেগুলো নিরসনের উদ্যোগ নেওয়া জরুরি।
নির্বাচনী ব্যবস্থার সংস্কার কোনো বিলাসিতার বিষয় নয়। এটি রাষ্ট্রের ভিত্তি মজবুত করার অপরিহার্য শর্ত। সরকারকে নির্বাচনী ব্যয় নিয়ন্ত্রণে কঠোর হতে হবে এবং সংস্কার কমিশনের বাকি সুপারিশগুলো আমলে নিয়ে একটি প্রকৃত অর্থবহ পরিবর্তনের পথ প্রশস্ত করতে হবে। অন্যথায় ভোটের নামে অর্থের খেলা চলবেই এবং দুর্নীতি নামক দানবটি আমাদের শাসনব্যবস্থাকে কুরে কুরে খেতে থাকবে।

সম্প্রতি ঘটা করে অনুষ্ঠিত হলো বিএনপির বর্ধিত সভা। সভাটির সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হলো, প্রায় সাত বছর পরে দলটির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বক্তব্য রেখেছেন। লন্ডনে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়া প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি সভাটিতে সংযুক্ত হয়ে বক্তব্য রেখেছেন। চিরাচরিত স্বভাব অনুযায়ী কাউকে আক্রমণ না করে অত্যন্ত
০৭ মার্চ ২০২৫
খুলনার ব্যাপারটা বড্ড গোলমেলে। এনসিপির এক শ্রমিকনেতাকে উদ্দেশ্য করে গুলি ছোড়া হয়েছে। গুলিটি তাঁর বাঁ কানের চামড়া ভেদ করে বের হয়ে গেছে। তিনি এখন শঙ্কামুক্ত। গুলি লাগার পরই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই ঘটনা ছড়িয়ে পড়ে। কোনো গুপ্তঘাতক নেতাদের টার্গেট করে হত্যা পরিকল্পনায় নেমেছে কি না, সে রকম...
১ দিন আগে
জাতীয় দৈনিক প্রথম আলো এবং ডেইলি স্টারে সন্ত্রাসীরা যে নজিরবিহীন নৃশংস হামলা করেছে, তার সূত্র ধরেই শুরু করতে হচ্ছে। ঘটনার পূর্বাপর সবাই এখন জানেন। তাই সংক্ষেপে শুধু একটি বিষয় উল্লেখ করব। হামলার আলামত স্পষ্ট হয়ে ওঠার পরই প্রথম আলোর পক্ষ থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সরকারের বিভিন্ন...
১ দিন আগে
মানুষের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সম্পর্কের গুরুত্ব অপরিসীম। তবে প্রবীণ বয়সে সেই গুরুত্ব আরও গভীর ও সূক্ষ্ম হয়ে ওঠে। কর্মজীবন শেষ, সন্তানেরা নিজেদের জীবনে ব্যস্ত, শরীর ক্রমেই দুর্বল—এই বাস্তবতায় প্রবীণের জীবনে যে সম্পর্কটি নিঃশর্তভাবে পাশে থাকে, তা হলো বন্ধুত্ব। পরিবার দায়িত্বে আবদ্ধ, আত্মীয়রা...
১ দিন আগেসম্পাদকীয়

খুলনার ব্যাপারটা বড্ড গোলমেলে। এনসিপির এক শ্রমিকনেতাকে উদ্দেশ্য করে গুলি ছোড়া হয়েছে। গুলিটি তাঁর বাঁ কানের চামড়া ভেদ করে বের হয়ে গেছে। তিনি এখন শঙ্কামুক্ত। গুলি লাগার পরই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই ঘটনা ছড়িয়ে পড়ে। কোনো গুপ্তঘাতক নেতাদের টার্গেট করে হত্যা পরিকল্পনায় নেমেছে কি না, সে রকম ভাবনারও জন্ম হয়। অনেকে কানের পাশ দিয়ে গুলি বেরিয়ে যাওয়ার ঘটনাকে সদ্য প্রয়াত ইনকিলাব মঞ্চ নেতা ওসমান হাদিকে করা গুলির সঙ্গে তুলনা করতে শুরু করেন। কিন্তু পুলিশ যখন তাদের তদন্ত শুরু করল, তখন দেখা গেল, এ এক রহস্যজনক ব্যাপার! এই ঘটনার সঙ্গে মদ, নারী, ইয়াবাসহ অনেক কিছুই জড়িত বলে ধারণা পুলিশের।
গোলমেলে বলার একটা কারণ হলো, যেহেতু গুলির আঘাত এসেছে এনসিপি নেতার ওপর, তাই কোনো ধরনের তথ্য-প্রমাণ ছাড়াই রাজনৈতিক নেতারা দোষারোপের রাজনীতি শুরু করে দিয়েছিলেন। এনসিপির খুলনা জেলার প্রধান সমন্বয়কারী এই গুলির ঘটনার জন্য সরাসরি আওয়ামী লীগকে দায়ী করে বসলেন। তিনি বললেন, মোতালেব গাড়ি থেকে নামার পর তাঁকে টেনেহিঁচড়ে একটি চায়ের দোকানে নিয়ে মারধর করার পর গুলি করা হয়। এনসিপির খুলনা মহানগরের সংগঠক বললেন, বিগত দিনে খুলনায় অহরহ গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। আর এ সবই সন্ত্রাসী গ্রুপ আওয়ামী নেতাদের আশীর্বাদপুষ্ট।
বর্তমান বাস্তবতায় যেকোনো ঘটনাতেই ‘কেষ্টা ব্যাটা’কে খোঁজা কতটা যৌক্তিক, সে বিষয়ে কোনো প্রশ্ন কেন কোনো সচেতন রাজনৈতিক কর্মীর মাথায় আসবে না, সেটা বোধগম্য নয়। আওয়ামী লীগ দৃশ্যপটে আছে কি নেই, দলটি খুলনায় কাজির কিতাবের গরু কি না, সে বিষয়ে এনসিপির কারও মনে কোনো সন্দেহ জাগবে না কেন? আওয়ামী লীগ আমলে যেমন সব দোষ বিএনপি এবং জামায়াতকে দিয়ে নিশ্চিন্ত থাকত সরকার, তেমনি এখন যেকোনো অঘটন ঘটলেই বলা নেই কওয়া নেই, আওয়ামী লীগের দিকে ছুটে যায় সন্দেহের তির। মুশকিল হলো, সত্যিকারের ঘটনা উদ্ঘাটিত না হলে সাধারণ মানুষও একসময় দোষারোপের রাজনীতির মর্মকথা বুঝে যায়। তখন তাদের বেকুব ভেবে বিভ্রান্ত করা যায় না।
এই গোলমেলে ব্যাপারে পুলিশ কী বলছে? পুলিশ একটা কাজের কাজ করেছে। রাজনীতিবিদেরা যখন আওয়ামী লীগের ওপর দোষ দিয়ে ঘটনাটিকে একটা চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের দিকে নিয়ে যাচ্ছিল, তখন পুলিশ খোঁজ নিয়েছে সিসিটিভির। আর তাতেই এই গোলমেলে ঘটনার কুয়াশা ধীরে ধীরে কাটতে শুরু করেছে। ফুটেজে দেখা গেল, কোনো চায়ের দোকান থেকে নয়, মোতালেব বের হচ্ছেন একটি বাড়ি থেকে। তাঁর কানে রয়েছে হাত। অর্থাৎ গুলিটি লেগেছে ওই বাড়িতেই। কেএমপির উপপুলিশ কমিশনার ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেছেন, রোববার দিবাগত রাতে মোতালেব শিকদার এখানে এসেছিলেন এবং এখানে অসামাজিক কার্যকলাপে লিপ্ত হন। ঘটনা এখানেই শেষ নয়, এর সঙ্গে আবার এক তরুণীর সংশ্লিষ্টতা আছে। তাঁকেও ধরেছে পুলিশ।
এ ব্যাপারে মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন। অসামাজিক কর্মকাণ্ডকে যেন রাজনৈতিক রং লাগাতে দেওয়া না হয়, সেদিকে নজর রাখা দরকার।

খুলনার ব্যাপারটা বড্ড গোলমেলে। এনসিপির এক শ্রমিকনেতাকে উদ্দেশ্য করে গুলি ছোড়া হয়েছে। গুলিটি তাঁর বাঁ কানের চামড়া ভেদ করে বের হয়ে গেছে। তিনি এখন শঙ্কামুক্ত। গুলি লাগার পরই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই ঘটনা ছড়িয়ে পড়ে। কোনো গুপ্তঘাতক নেতাদের টার্গেট করে হত্যা পরিকল্পনায় নেমেছে কি না, সে রকম ভাবনারও জন্ম হয়। অনেকে কানের পাশ দিয়ে গুলি বেরিয়ে যাওয়ার ঘটনাকে সদ্য প্রয়াত ইনকিলাব মঞ্চ নেতা ওসমান হাদিকে করা গুলির সঙ্গে তুলনা করতে শুরু করেন। কিন্তু পুলিশ যখন তাদের তদন্ত শুরু করল, তখন দেখা গেল, এ এক রহস্যজনক ব্যাপার! এই ঘটনার সঙ্গে মদ, নারী, ইয়াবাসহ অনেক কিছুই জড়িত বলে ধারণা পুলিশের।
গোলমেলে বলার একটা কারণ হলো, যেহেতু গুলির আঘাত এসেছে এনসিপি নেতার ওপর, তাই কোনো ধরনের তথ্য-প্রমাণ ছাড়াই রাজনৈতিক নেতারা দোষারোপের রাজনীতি শুরু করে দিয়েছিলেন। এনসিপির খুলনা জেলার প্রধান সমন্বয়কারী এই গুলির ঘটনার জন্য সরাসরি আওয়ামী লীগকে দায়ী করে বসলেন। তিনি বললেন, মোতালেব গাড়ি থেকে নামার পর তাঁকে টেনেহিঁচড়ে একটি চায়ের দোকানে নিয়ে মারধর করার পর গুলি করা হয়। এনসিপির খুলনা মহানগরের সংগঠক বললেন, বিগত দিনে খুলনায় অহরহ গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। আর এ সবই সন্ত্রাসী গ্রুপ আওয়ামী নেতাদের আশীর্বাদপুষ্ট।
বর্তমান বাস্তবতায় যেকোনো ঘটনাতেই ‘কেষ্টা ব্যাটা’কে খোঁজা কতটা যৌক্তিক, সে বিষয়ে কোনো প্রশ্ন কেন কোনো সচেতন রাজনৈতিক কর্মীর মাথায় আসবে না, সেটা বোধগম্য নয়। আওয়ামী লীগ দৃশ্যপটে আছে কি নেই, দলটি খুলনায় কাজির কিতাবের গরু কি না, সে বিষয়ে এনসিপির কারও মনে কোনো সন্দেহ জাগবে না কেন? আওয়ামী লীগ আমলে যেমন সব দোষ বিএনপি এবং জামায়াতকে দিয়ে নিশ্চিন্ত থাকত সরকার, তেমনি এখন যেকোনো অঘটন ঘটলেই বলা নেই কওয়া নেই, আওয়ামী লীগের দিকে ছুটে যায় সন্দেহের তির। মুশকিল হলো, সত্যিকারের ঘটনা উদ্ঘাটিত না হলে সাধারণ মানুষও একসময় দোষারোপের রাজনীতির মর্মকথা বুঝে যায়। তখন তাদের বেকুব ভেবে বিভ্রান্ত করা যায় না।
এই গোলমেলে ব্যাপারে পুলিশ কী বলছে? পুলিশ একটা কাজের কাজ করেছে। রাজনীতিবিদেরা যখন আওয়ামী লীগের ওপর দোষ দিয়ে ঘটনাটিকে একটা চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের দিকে নিয়ে যাচ্ছিল, তখন পুলিশ খোঁজ নিয়েছে সিসিটিভির। আর তাতেই এই গোলমেলে ঘটনার কুয়াশা ধীরে ধীরে কাটতে শুরু করেছে। ফুটেজে দেখা গেল, কোনো চায়ের দোকান থেকে নয়, মোতালেব বের হচ্ছেন একটি বাড়ি থেকে। তাঁর কানে রয়েছে হাত। অর্থাৎ গুলিটি লেগেছে ওই বাড়িতেই। কেএমপির উপপুলিশ কমিশনার ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেছেন, রোববার দিবাগত রাতে মোতালেব শিকদার এখানে এসেছিলেন এবং এখানে অসামাজিক কার্যকলাপে লিপ্ত হন। ঘটনা এখানেই শেষ নয়, এর সঙ্গে আবার এক তরুণীর সংশ্লিষ্টতা আছে। তাঁকেও ধরেছে পুলিশ।
এ ব্যাপারে মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন। অসামাজিক কর্মকাণ্ডকে যেন রাজনৈতিক রং লাগাতে দেওয়া না হয়, সেদিকে নজর রাখা দরকার।

সম্প্রতি ঘটা করে অনুষ্ঠিত হলো বিএনপির বর্ধিত সভা। সভাটির সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হলো, প্রায় সাত বছর পরে দলটির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বক্তব্য রেখেছেন। লন্ডনে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়া প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি সভাটিতে সংযুক্ত হয়ে বক্তব্য রেখেছেন। চিরাচরিত স্বভাব অনুযায়ী কাউকে আক্রমণ না করে অত্যন্ত
০৭ মার্চ ২০২৫
সম্প্রতি রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে সুজন আয়োজিত ‘নির্বাচনী ব্যবস্থার সংস্কার: অগ্রগতি পর্যালোচনা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে বিশিষ্ট নাগরিক ও বিশেষজ্ঞরা যে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, তা আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতি ও বাস্তবতার এক করুণ চিত্র উঠে এসেছে।
১৩ মিনিট আগে
জাতীয় দৈনিক প্রথম আলো এবং ডেইলি স্টারে সন্ত্রাসীরা যে নজিরবিহীন নৃশংস হামলা করেছে, তার সূত্র ধরেই শুরু করতে হচ্ছে। ঘটনার পূর্বাপর সবাই এখন জানেন। তাই সংক্ষেপে শুধু একটি বিষয় উল্লেখ করব। হামলার আলামত স্পষ্ট হয়ে ওঠার পরই প্রথম আলোর পক্ষ থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সরকারের বিভিন্ন...
১ দিন আগে
মানুষের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সম্পর্কের গুরুত্ব অপরিসীম। তবে প্রবীণ বয়সে সেই গুরুত্ব আরও গভীর ও সূক্ষ্ম হয়ে ওঠে। কর্মজীবন শেষ, সন্তানেরা নিজেদের জীবনে ব্যস্ত, শরীর ক্রমেই দুর্বল—এই বাস্তবতায় প্রবীণের জীবনে যে সম্পর্কটি নিঃশর্তভাবে পাশে থাকে, তা হলো বন্ধুত্ব। পরিবার দায়িত্বে আবদ্ধ, আত্মীয়রা...
১ দিন আগেঅরুণ কর্মকার

জাতীয় দৈনিক প্রথম আলো এবং ডেইলি স্টারে সন্ত্রাসীরা যে নজিরবিহীন নৃশংস হামলা করেছে, তার সূত্র ধরেই শুরু করতে হচ্ছে। ঘটনার পূর্বাপর সবাই এখন জানেন। তাই সংক্ষেপে শুধু একটি বিষয় উল্লেখ করব। হামলার আলামত স্পষ্ট হয়ে ওঠার পরই প্রথম আলোর পক্ষ থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে যোগাযোগ করে সাহায্য চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু পায়নি। বরং প্রথম আলো অফিসের আশপাশে আগে থেকেই রুটিন দায়িত্ব হিসেবে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার যেসব সদস্য অবস্থান করছিলেন, তাঁরাও সরে যান। আর ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহ্ফুজ আনাম তো প্রকাশ্য সভায়ই বলেছেন, প্রথম আলো অফিসে হামলা শুরুর পরই তিনি সরকারের সব সংস্থা ও ব্যক্তির কাছে তাঁর প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তার জন্য সাহায্য চেয়েও পাননি। তিনি আরও বলেছেন, দেশে মতপ্রকাশ তো দূরের কথা, বেঁচে থাকার অধিকারের ব্যাপার এসে গেছে।
অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টামণ্ডলীর অধিকাংশের সঙ্গে প্রথম আলো-ডেইলি স্টারের সম্পর্ক কারও অবিদিত নয়। সরকারের কাজকর্মে পত্রিকা দুটির সমর্থন এবং গঠনমূলক সমালোচনার কথাও সবার জানা। তারপরও তাদেরই যখন এহেন অসহায় অবস্থা, তখন অন্য সবার ক্ষেত্রে পরিস্থিতিটা যে কী, তা বুঝতে কারও অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। সে পরিস্থিতি এককথায় বোঝাতে গেলে বলতে হয়, দেশে জননিরাপত্তা পরিস্থিতি একেবারেই নাজুক। এই পরিস্থিতিতে পিটিয়ে-পুড়িয়ে হত্যা, গলা কেটে-গুলি করে খুন এবং ছায়ানট-উদীচীর মতো প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর, আগুন লাগানোর মতো সহিংস কর্মকাণ্ড আকছার চলতে পারছে। বিশিষ্ট সম্পাদক নূরুল কবীরের মতো জনপ্রিয়, পরিচিত ব্যক্তিরাও হেনস্তার শিকার হচ্ছেন।
এসব ঘটনার পর অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে দুঃখ প্রকাশ করা হয়েছে এবং বলা হয়েছে সরকার প্রথম আলো-ডেইলি স্টারের পাশে আছে। সরকার নিশ্চয়ই দেশের শান্তিপ্রিয় সাধারণ মানুষের পাশেও আছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, সরকার প্রথম আলো-ডেইলি স্টারের পাশে যেমন আছে, তেমনিভাবে জনগণের পাশে থাকলে সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন সম্পন্ন করা সম্ভব হবে কি না। বিষয়টি আরেকটু স্পষ্ট করার জন্য আরও দুজনের দুটি প্রণিধানযোগ্য বক্তব্য উল্লেখ করা প্রয়োজন।
এক. জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম প্রথম আলো-ডেইলি স্টারে হামলা প্রসঙ্গে বলেছেন, এই হামলার সঙ্গে সরকারের একটা অংশের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। নাহিদ ইসলাম শুধু জুলাই অভ্যুত্থানের প্রধান সংগঠকদের অন্যতমই নন, তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাও ছিলেন। এই সরকারের তরিকা এবং এর ভেতর-বাইরে তিনি ভালোই জানেন। কাজেই তাঁর এই কথাটি অন্য পাঁচটা রাজনৈতিক বক্তৃতার মতো নয়। এখন কথা হলো, সরকারের ভেতরেই যখন এমন শক্তি ঘাপটি মেরে আছে, তখন তারা তো ইচ্ছা করলে নির্বাচনেও বিঘ্ন সৃষ্টি করতে পারে। এবং সেটা তারা করবে বলেও বিশ্বাস করার যথেষ্ট কারণ আছে। কেননা, তাদের ভিন্ন অ্যাজেন্ডা রয়েছে।
দুই. ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) এস এন মো. নজরুল ইসলামের একটি বক্তব্য গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। সে অনুযায়ী তিনি প্রথম আলো-ডেইলি স্টারে হামলার প্রসঙ্গে বলেছেন, কারওয়ান বাজারের যে পরিস্থিতি ছিল, সেখানে পুলিশ অ্যাকশনে গেলে গুলি হতো, দুই-চারজন মারা যেতেন। এরপর পুলিশের ওপর পাল্টা আক্রমণ হতো। সে কারণেই তাঁরা সেখানে অ্যাকশনে যেতে পারেননি। এর ফলে কোনো মানুষ হতাহত হয়নি। এই পুলিশ কর্মকর্তার বক্তব্য অত্যন্ত যৌক্তিক। তা ছাড়া এই বক্তব্যের মধ্যে কয়েকটি গূঢ় বার্তা লুকিয়ে আছে।
প্রথমত, পুলিশ এমন কোনো পরিস্থিতিতে অ্যাকশনে যাবে না যেখানে তাদেরকে গুলি করতে হতে পারে। যেখানে তাদের গুলিতে মানুষ মারা যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। এমনকি, সেখানে যদি আক্রমণকারীদের হাতে আক্রান্ত মানুষের মারা যাওয়ার এবং কোনো মানুষের বা প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ ধ্বংস হওয়ার আশঙ্কা থাকে, তবু পুলিশ অ্যাকশনে যাবে না। অন্তর্বর্তী সরকারের পুরো সময়কাল আমরা এই সত্য অনুধাবন করছি। পুলিশ তথা সরকারের এই ভূমিকার কারণ হতে পারে এই যে জুলাই অভ্যুত্থানের পর দেশে এমন একটি বয়ান প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে, মানুষকে গুলি করে কেবল স্বৈরাচার। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার তো স্বৈরাচার হতে পারে না। তারা চুপচাপ সাধারণ মানুষের নিগ্রহ, খুন, লুটপাট এসব দেখতে পারে। কাজেই পুলিশ কীভাবে অ্যাকশনে যাবে! কীভাবে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান হামলার হাত থেকে বাঁচতে সরকারের কাছে সাহায্য চেয়ে পাবেন! এসব ক্ষেত্রে অন্তর্বর্তী সরকারের ভাবখানা বোধ হয় এই যে, আমরা আর কদিন। এই কটা দিন কোনোক্রমে চোখমুখ বন্ধ করে কাটিয়ে যেতে পারলেই হয়। কিন্তু ইতিহাসের দায় শোধের যে বিষয় সবার ক্ষেত্রেই থেকে যায়, সে কথাও কি ভোলা উচিত!
তৃতীয়ত, পুলিশ অ্যাকশনে গেলে পুলিশের ওপরও আক্রমণ হতো। এই আশঙ্কাটাও শতভাগ সত্য। অন্তর্বর্তী সরকারের ভূমিকার ফলে সন্ত্রাসীরা যে পুলিশ-মিলিটারি কিছুই মানে না, সে তো আমরা বারবার দেখছি। তাহলে পুলিশ কেন আক্রান্ত মানুষ কিংবা প্রতিষ্ঠানকে রক্ষা করতে গিয়ে নিজেরা বিপদে পড়বে। আর শেষ পর্যন্ত তো পুলিশের ওপরই দোষ চাপানো হয়। কাজেই এহেন পরিস্থিতিতে গা বাঁচিয়ে চলাই শ্রেয়। কিন্তু কথা হলো, এই পরিস্থিতি চলতে দিয়ে নির্বাচনটা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা যাবে তো? নির্বাচনের সময়ও তো কোনো কোনো সন্ত্রাসী গোষ্ঠী একই কাজ করতে পারে। এমনকি, নির্বাচন বিঘ্নিত করার জন্য নতুন কোনো সন্ত্রাসী গোষ্ঠী সংগঠিতও হতে পারে। তখন গুলি করার নির্দেশ দিলেও তো অন্তর্বর্তী সরকার স্বৈরাচারের কাতারে পড়ে যাবে। আর তখনো যে পুলিশ সরকারের বা নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ মেনে অ্যাকশনে যাবে, তারই-বা নিশ্চয়তা কী?
কোনো নিশ্চয়তা নেই বলেই নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে, ততই নির্বাচনকালীন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। গত মঙ্গলবার নির্বাচন ভবনে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় মিলিত হয়েছিলেন সব রিটার্নিং কর্মকর্তা বা জেলা প্রশাসক (ডিসি) এবং পুলিশ সুপার (এসপি), সব রেঞ্জের ডিআইজি, বিভাগীয় কমিশনার, আঞ্চলিক ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তারা। সেখানে তাঁরা রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে শুরু করে উপজেলা নির্বাচন অফিস, সব নির্বাচন কর্মকর্তা, ভোটকেন্দ্র—সকল পর্যায়ে নিরাপত্তা নিয়ে সবাই দুশ্চিন্তার কথা বলেছেন। রিটার্নিং কর্মকর্তারা তাঁদের ও জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের নিরাপত্তা বাড়ানোর প্রস্তাব করেছেন। সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তাদের নিরাপত্তার বিষয়ও বিবেচনায় নেওয়ার কথা বলেছেন। অনেক জেলা-উপজেলায় নির্বাচন অফিসগুলো সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ বলে উল্লেখ করে নিরাপত্তা জোরদার করার পরামর্শ দেন তাঁরা। কিছু এলাকার ভোটকেন্দ্রে নির্বাচনী সামগ্রী নিয়ে যেতে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশকে (বিজিবি) দায়িত্ব দেওয়ার কথাও বলা হয়েছে।
সাধারণ মানুষের মধ্যে নিরাপত্তাহীনতা তো আছেই। প্রকৃতপক্ষে দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে কোনো মানুষই নিজেকে আর নিরাপদ ভাবতে পারছে না। সবাই নিজের এবং পরিবার-পরিজনের নিরাপত্তার বিষয়ে উদ্বিগ্ন। এই অবস্থায় অন্তর্বর্তী সরকার কীভাবে মানুষের পাশে থাকবে, কীভাবেই-বা শান্তিপূর্ণ পরিবেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন সম্পন্ন করবে, সেটিই বড় প্রশ্ন হয়ে উঠেছে।

জাতীয় দৈনিক প্রথম আলো এবং ডেইলি স্টারে সন্ত্রাসীরা যে নজিরবিহীন নৃশংস হামলা করেছে, তার সূত্র ধরেই শুরু করতে হচ্ছে। ঘটনার পূর্বাপর সবাই এখন জানেন। তাই সংক্ষেপে শুধু একটি বিষয় উল্লেখ করব। হামলার আলামত স্পষ্ট হয়ে ওঠার পরই প্রথম আলোর পক্ষ থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে যোগাযোগ করে সাহায্য চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু পায়নি। বরং প্রথম আলো অফিসের আশপাশে আগে থেকেই রুটিন দায়িত্ব হিসেবে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার যেসব সদস্য অবস্থান করছিলেন, তাঁরাও সরে যান। আর ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহ্ফুজ আনাম তো প্রকাশ্য সভায়ই বলেছেন, প্রথম আলো অফিসে হামলা শুরুর পরই তিনি সরকারের সব সংস্থা ও ব্যক্তির কাছে তাঁর প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তার জন্য সাহায্য চেয়েও পাননি। তিনি আরও বলেছেন, দেশে মতপ্রকাশ তো দূরের কথা, বেঁচে থাকার অধিকারের ব্যাপার এসে গেছে।
অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টামণ্ডলীর অধিকাংশের সঙ্গে প্রথম আলো-ডেইলি স্টারের সম্পর্ক কারও অবিদিত নয়। সরকারের কাজকর্মে পত্রিকা দুটির সমর্থন এবং গঠনমূলক সমালোচনার কথাও সবার জানা। তারপরও তাদেরই যখন এহেন অসহায় অবস্থা, তখন অন্য সবার ক্ষেত্রে পরিস্থিতিটা যে কী, তা বুঝতে কারও অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। সে পরিস্থিতি এককথায় বোঝাতে গেলে বলতে হয়, দেশে জননিরাপত্তা পরিস্থিতি একেবারেই নাজুক। এই পরিস্থিতিতে পিটিয়ে-পুড়িয়ে হত্যা, গলা কেটে-গুলি করে খুন এবং ছায়ানট-উদীচীর মতো প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর, আগুন লাগানোর মতো সহিংস কর্মকাণ্ড আকছার চলতে পারছে। বিশিষ্ট সম্পাদক নূরুল কবীরের মতো জনপ্রিয়, পরিচিত ব্যক্তিরাও হেনস্তার শিকার হচ্ছেন।
এসব ঘটনার পর অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে দুঃখ প্রকাশ করা হয়েছে এবং বলা হয়েছে সরকার প্রথম আলো-ডেইলি স্টারের পাশে আছে। সরকার নিশ্চয়ই দেশের শান্তিপ্রিয় সাধারণ মানুষের পাশেও আছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, সরকার প্রথম আলো-ডেইলি স্টারের পাশে যেমন আছে, তেমনিভাবে জনগণের পাশে থাকলে সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন সম্পন্ন করা সম্ভব হবে কি না। বিষয়টি আরেকটু স্পষ্ট করার জন্য আরও দুজনের দুটি প্রণিধানযোগ্য বক্তব্য উল্লেখ করা প্রয়োজন।
এক. জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম প্রথম আলো-ডেইলি স্টারে হামলা প্রসঙ্গে বলেছেন, এই হামলার সঙ্গে সরকারের একটা অংশের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। নাহিদ ইসলাম শুধু জুলাই অভ্যুত্থানের প্রধান সংগঠকদের অন্যতমই নন, তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাও ছিলেন। এই সরকারের তরিকা এবং এর ভেতর-বাইরে তিনি ভালোই জানেন। কাজেই তাঁর এই কথাটি অন্য পাঁচটা রাজনৈতিক বক্তৃতার মতো নয়। এখন কথা হলো, সরকারের ভেতরেই যখন এমন শক্তি ঘাপটি মেরে আছে, তখন তারা তো ইচ্ছা করলে নির্বাচনেও বিঘ্ন সৃষ্টি করতে পারে। এবং সেটা তারা করবে বলেও বিশ্বাস করার যথেষ্ট কারণ আছে। কেননা, তাদের ভিন্ন অ্যাজেন্ডা রয়েছে।
দুই. ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) এস এন মো. নজরুল ইসলামের একটি বক্তব্য গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। সে অনুযায়ী তিনি প্রথম আলো-ডেইলি স্টারে হামলার প্রসঙ্গে বলেছেন, কারওয়ান বাজারের যে পরিস্থিতি ছিল, সেখানে পুলিশ অ্যাকশনে গেলে গুলি হতো, দুই-চারজন মারা যেতেন। এরপর পুলিশের ওপর পাল্টা আক্রমণ হতো। সে কারণেই তাঁরা সেখানে অ্যাকশনে যেতে পারেননি। এর ফলে কোনো মানুষ হতাহত হয়নি। এই পুলিশ কর্মকর্তার বক্তব্য অত্যন্ত যৌক্তিক। তা ছাড়া এই বক্তব্যের মধ্যে কয়েকটি গূঢ় বার্তা লুকিয়ে আছে।
প্রথমত, পুলিশ এমন কোনো পরিস্থিতিতে অ্যাকশনে যাবে না যেখানে তাদেরকে গুলি করতে হতে পারে। যেখানে তাদের গুলিতে মানুষ মারা যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। এমনকি, সেখানে যদি আক্রমণকারীদের হাতে আক্রান্ত মানুষের মারা যাওয়ার এবং কোনো মানুষের বা প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ ধ্বংস হওয়ার আশঙ্কা থাকে, তবু পুলিশ অ্যাকশনে যাবে না। অন্তর্বর্তী সরকারের পুরো সময়কাল আমরা এই সত্য অনুধাবন করছি। পুলিশ তথা সরকারের এই ভূমিকার কারণ হতে পারে এই যে জুলাই অভ্যুত্থানের পর দেশে এমন একটি বয়ান প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে, মানুষকে গুলি করে কেবল স্বৈরাচার। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার তো স্বৈরাচার হতে পারে না। তারা চুপচাপ সাধারণ মানুষের নিগ্রহ, খুন, লুটপাট এসব দেখতে পারে। কাজেই পুলিশ কীভাবে অ্যাকশনে যাবে! কীভাবে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান হামলার হাত থেকে বাঁচতে সরকারের কাছে সাহায্য চেয়ে পাবেন! এসব ক্ষেত্রে অন্তর্বর্তী সরকারের ভাবখানা বোধ হয় এই যে, আমরা আর কদিন। এই কটা দিন কোনোক্রমে চোখমুখ বন্ধ করে কাটিয়ে যেতে পারলেই হয়। কিন্তু ইতিহাসের দায় শোধের যে বিষয় সবার ক্ষেত্রেই থেকে যায়, সে কথাও কি ভোলা উচিত!
তৃতীয়ত, পুলিশ অ্যাকশনে গেলে পুলিশের ওপরও আক্রমণ হতো। এই আশঙ্কাটাও শতভাগ সত্য। অন্তর্বর্তী সরকারের ভূমিকার ফলে সন্ত্রাসীরা যে পুলিশ-মিলিটারি কিছুই মানে না, সে তো আমরা বারবার দেখছি। তাহলে পুলিশ কেন আক্রান্ত মানুষ কিংবা প্রতিষ্ঠানকে রক্ষা করতে গিয়ে নিজেরা বিপদে পড়বে। আর শেষ পর্যন্ত তো পুলিশের ওপরই দোষ চাপানো হয়। কাজেই এহেন পরিস্থিতিতে গা বাঁচিয়ে চলাই শ্রেয়। কিন্তু কথা হলো, এই পরিস্থিতি চলতে দিয়ে নির্বাচনটা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা যাবে তো? নির্বাচনের সময়ও তো কোনো কোনো সন্ত্রাসী গোষ্ঠী একই কাজ করতে পারে। এমনকি, নির্বাচন বিঘ্নিত করার জন্য নতুন কোনো সন্ত্রাসী গোষ্ঠী সংগঠিতও হতে পারে। তখন গুলি করার নির্দেশ দিলেও তো অন্তর্বর্তী সরকার স্বৈরাচারের কাতারে পড়ে যাবে। আর তখনো যে পুলিশ সরকারের বা নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ মেনে অ্যাকশনে যাবে, তারই-বা নিশ্চয়তা কী?
কোনো নিশ্চয়তা নেই বলেই নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে, ততই নির্বাচনকালীন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। গত মঙ্গলবার নির্বাচন ভবনে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় মিলিত হয়েছিলেন সব রিটার্নিং কর্মকর্তা বা জেলা প্রশাসক (ডিসি) এবং পুলিশ সুপার (এসপি), সব রেঞ্জের ডিআইজি, বিভাগীয় কমিশনার, আঞ্চলিক ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তারা। সেখানে তাঁরা রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে শুরু করে উপজেলা নির্বাচন অফিস, সব নির্বাচন কর্মকর্তা, ভোটকেন্দ্র—সকল পর্যায়ে নিরাপত্তা নিয়ে সবাই দুশ্চিন্তার কথা বলেছেন। রিটার্নিং কর্মকর্তারা তাঁদের ও জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের নিরাপত্তা বাড়ানোর প্রস্তাব করেছেন। সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তাদের নিরাপত্তার বিষয়ও বিবেচনায় নেওয়ার কথা বলেছেন। অনেক জেলা-উপজেলায় নির্বাচন অফিসগুলো সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ বলে উল্লেখ করে নিরাপত্তা জোরদার করার পরামর্শ দেন তাঁরা। কিছু এলাকার ভোটকেন্দ্রে নির্বাচনী সামগ্রী নিয়ে যেতে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশকে (বিজিবি) দায়িত্ব দেওয়ার কথাও বলা হয়েছে।
সাধারণ মানুষের মধ্যে নিরাপত্তাহীনতা তো আছেই। প্রকৃতপক্ষে দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে কোনো মানুষই নিজেকে আর নিরাপদ ভাবতে পারছে না। সবাই নিজের এবং পরিবার-পরিজনের নিরাপত্তার বিষয়ে উদ্বিগ্ন। এই অবস্থায় অন্তর্বর্তী সরকার কীভাবে মানুষের পাশে থাকবে, কীভাবেই-বা শান্তিপূর্ণ পরিবেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন সম্পন্ন করবে, সেটিই বড় প্রশ্ন হয়ে উঠেছে।

সম্প্রতি ঘটা করে অনুষ্ঠিত হলো বিএনপির বর্ধিত সভা। সভাটির সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হলো, প্রায় সাত বছর পরে দলটির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বক্তব্য রেখেছেন। লন্ডনে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়া প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি সভাটিতে সংযুক্ত হয়ে বক্তব্য রেখেছেন। চিরাচরিত স্বভাব অনুযায়ী কাউকে আক্রমণ না করে অত্যন্ত
০৭ মার্চ ২০২৫
সম্প্রতি রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে সুজন আয়োজিত ‘নির্বাচনী ব্যবস্থার সংস্কার: অগ্রগতি পর্যালোচনা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে বিশিষ্ট নাগরিক ও বিশেষজ্ঞরা যে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, তা আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতি ও বাস্তবতার এক করুণ চিত্র উঠে এসেছে।
১৩ মিনিট আগে
খুলনার ব্যাপারটা বড্ড গোলমেলে। এনসিপির এক শ্রমিকনেতাকে উদ্দেশ্য করে গুলি ছোড়া হয়েছে। গুলিটি তাঁর বাঁ কানের চামড়া ভেদ করে বের হয়ে গেছে। তিনি এখন শঙ্কামুক্ত। গুলি লাগার পরই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই ঘটনা ছড়িয়ে পড়ে। কোনো গুপ্তঘাতক নেতাদের টার্গেট করে হত্যা পরিকল্পনায় নেমেছে কি না, সে রকম...
১ দিন আগে
মানুষের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সম্পর্কের গুরুত্ব অপরিসীম। তবে প্রবীণ বয়সে সেই গুরুত্ব আরও গভীর ও সূক্ষ্ম হয়ে ওঠে। কর্মজীবন শেষ, সন্তানেরা নিজেদের জীবনে ব্যস্ত, শরীর ক্রমেই দুর্বল—এই বাস্তবতায় প্রবীণের জীবনে যে সম্পর্কটি নিঃশর্তভাবে পাশে থাকে, তা হলো বন্ধুত্ব। পরিবার দায়িত্বে আবদ্ধ, আত্মীয়রা...
১ দিন আগেহাসান আলী

মানুষের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সম্পর্কের গুরুত্ব অপরিসীম। তবে প্রবীণ বয়সে সেই গুরুত্ব আরও গভীর ও সূক্ষ্ম হয়ে ওঠে। কর্মজীবন শেষ, সন্তানেরা নিজেদের জীবনে ব্যস্ত, শরীর ক্রমেই দুর্বল—এই বাস্তবতায় প্রবীণের জীবনে যে সম্পর্কটি নিঃশর্তভাবে পাশে থাকে, তা হলো বন্ধুত্ব। পরিবার দায়িত্বে আবদ্ধ, আত্মীয়রা দূরত্বে—কিন্তু বন্ধু থাকে অনুভবের কাছাকাছি।
প্রবীণ বয়সে সবচেয়ে বড় শত্রু একাকিত্ব। ঘরের ভেতর থেকেও মানুষ একা হয়ে যেতে পারে। কথা বলার মানুষ থাকে না, দিনের অভিজ্ঞতা ভাগ করার কেউ থাকে না। এই নীরবতার মধ্যে একজন বন্ধুর ফোনকল, বিকেলের আড্ডা বা একসঙ্গে হাঁটতে বের হওয়া—সবই হয়ে ওঠে বেঁচে থাকার অক্সিজেন। বন্ধু মানে কেবল হাসি নয়, বন্ধু মানে নিজের মতো করে কথা বলার স্বাধীনতা।
পরিবারের সঙ্গে সম্পর্ক অনেক সময় দায়িত্ব আর প্রত্যাশায় বাঁধা। সন্তানেরা বাবা-মাকে ভালোবাসে ঠিকই, কিন্তু সব কথা বলা যায় না। নিজের ভয়, হতাশা, মৃত্যুচিন্তা কিংবা ব্যর্থতার অনুভূতি—এই বিষয়গুলো সন্তানদের সামনে প্রকাশ করতে প্রবীণেরা সংকোচ বোধ করেন। কিন্তু একজন বন্ধু সেই জায়গা, যেখানে কোনো বিচার নেই, আছে কেবল শোনা আর বোঝা। বন্ধুর কাছে কান্নাও নিরাপদ।
প্রবীণ জীবনে বন্ধুত্ব মানে স্মৃতির ভাগাভাগি। একই সময়ের মানুষ, একই সমাজ, একই লড়াই—এই মিলগুলো বন্ধুত্বকে গভীর করে তোলে। একসঙ্গে বসে পুরোনো দিনের গল্প করলে কেবল স্মৃতি নয়, নিজেদের অস্তিত্বও নতুন করে আবিষ্কার হয়। ‘আমি ছিলাম, আমি করেছি’—এই অনুভূতি আত্মসম্মান জাগিয়ে তোলে, যা বার্ধক্যে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন।
মনোবিজ্ঞানের মতে, প্রবীণ বয়সে ভালো বন্ধুত্ব ডিমেনশিয়া ও বিষণ্নতার ঝুঁকি কমায়। কারণ, কথা বলা, হাসা, মতবিনিময়—সবই মস্তিষ্ককে সক্রিয় রাখে। একজন প্রবীণ যখন বন্ধুর সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখেন, তখন তাঁর মনও সচল থাকে, জীবনের প্রতি আগ্রহ কমে না। বন্ধুত্ব মানে শুধু সময় কাটানো নয়, মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষা করা।
বন্ধু না থাকলে প্রবীণেরা অনেক সময় নিজেদের বোঝা মনে করেন। মনে হয় তাঁরা শুধু অন্যের ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু বন্ধুর সঙ্গে দেখা হলে সেই ধারণা ভেঙে যায়। তখন তাঁরা আবার একজন মানুষ—যার গল্প আছে, মতামত আছে, রসিকতা আছে। বন্ধুত্ব প্রবীণকে ‘রোগী’ থেকে আবার ‘মানুষ’ বানিয়ে তোলে।
আমাদের সমাজে প্রবীণদের বন্ধুত্বকে অনেক সময় তুচ্ছ করা হয়। বলা হয়, ‘এই বয়সে আবার বন্ধু!’ অথচ এই বয়সেই বন্ধুত্ব সবচেয়ে বেশি দরকার। কারণ, তখন জীবনের অধিকাংশ দরজা বন্ধ হয়ে যায়, বন্ধুত্বই একমাত্র জানালা দিয়ে আলো ঢোকে। প্রবীণদের বন্ধুত্ব মানে জীবনের শেষ অধ্যায়ে মানবিক উষ্ণতা।
বিশেষ করে যাঁরা একা থাকেন, জীবনসঙ্গী হারিয়েছেন, সন্তানেরা দূরে—তাঁদের জন্য বন্ধুই পরিবার। প্রয়োজনে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া, বাজার করা বা শুধু পাশে বসে থাকা—বন্ধু এই কাজগুলো নীরবে করে যায়। কোনো রক্তের সম্পর্ক না হয়েও বন্ধুত্ব হয়ে ওঠে রক্তের চেয়েও ঘনিষ্ঠ।
প্রবীণদের বন্ধুত্ব তরুণদের জন্যও একটি শিক্ষা। এখানে প্রতিযোগিতা নেই, আছে সহমর্মিতা। এখানে লাভ-ক্ষতি নেই, আছে সময় দেওয়া। প্রবীণ বন্ধুরা একে অপরকে ব্যবহার করেন না, তাঁরা একে অপরকে থাকতে দেন। এই থাকার মধ্যেই নিহিত আছে মানবিকতার সৌন্দর্য।
আপনি নিশ্চয়ই দেখেছেন—যাঁদের ভালো বন্ধু আছে, তাঁদের চোখে আলোর ঝিলিক থাকে। শরীর ভাঙলেও মন ভাঙে না। আর যাঁরা একা, তাঁদের চোখে ক্লান্তি। তাই প্রবীণকল্যাণ মানে শুধু ওষুধ বা খাবার নয়—বন্ধুত্বের পরিবেশ তৈরি করাও।
শেষ পর্যন্ত বলা যায়, প্রবীণ জীবনে বন্ধুত্ব হলো জীবনের শেষ প্রদীপ। এই প্রদীপ জ্বলে থাকলে অন্ধকার ভয়ের নয়। বয়স বাড়ে, শরীর ঝরে—কিন্তু বন্ধুত্ব থাকলে মন সব সময় তরুণ থাকে। আর তরুণ মনই তো আসল জীবন।

মানুষের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সম্পর্কের গুরুত্ব অপরিসীম। তবে প্রবীণ বয়সে সেই গুরুত্ব আরও গভীর ও সূক্ষ্ম হয়ে ওঠে। কর্মজীবন শেষ, সন্তানেরা নিজেদের জীবনে ব্যস্ত, শরীর ক্রমেই দুর্বল—এই বাস্তবতায় প্রবীণের জীবনে যে সম্পর্কটি নিঃশর্তভাবে পাশে থাকে, তা হলো বন্ধুত্ব। পরিবার দায়িত্বে আবদ্ধ, আত্মীয়রা দূরত্বে—কিন্তু বন্ধু থাকে অনুভবের কাছাকাছি।
প্রবীণ বয়সে সবচেয়ে বড় শত্রু একাকিত্ব। ঘরের ভেতর থেকেও মানুষ একা হয়ে যেতে পারে। কথা বলার মানুষ থাকে না, দিনের অভিজ্ঞতা ভাগ করার কেউ থাকে না। এই নীরবতার মধ্যে একজন বন্ধুর ফোনকল, বিকেলের আড্ডা বা একসঙ্গে হাঁটতে বের হওয়া—সবই হয়ে ওঠে বেঁচে থাকার অক্সিজেন। বন্ধু মানে কেবল হাসি নয়, বন্ধু মানে নিজের মতো করে কথা বলার স্বাধীনতা।
পরিবারের সঙ্গে সম্পর্ক অনেক সময় দায়িত্ব আর প্রত্যাশায় বাঁধা। সন্তানেরা বাবা-মাকে ভালোবাসে ঠিকই, কিন্তু সব কথা বলা যায় না। নিজের ভয়, হতাশা, মৃত্যুচিন্তা কিংবা ব্যর্থতার অনুভূতি—এই বিষয়গুলো সন্তানদের সামনে প্রকাশ করতে প্রবীণেরা সংকোচ বোধ করেন। কিন্তু একজন বন্ধু সেই জায়গা, যেখানে কোনো বিচার নেই, আছে কেবল শোনা আর বোঝা। বন্ধুর কাছে কান্নাও নিরাপদ।
প্রবীণ জীবনে বন্ধুত্ব মানে স্মৃতির ভাগাভাগি। একই সময়ের মানুষ, একই সমাজ, একই লড়াই—এই মিলগুলো বন্ধুত্বকে গভীর করে তোলে। একসঙ্গে বসে পুরোনো দিনের গল্প করলে কেবল স্মৃতি নয়, নিজেদের অস্তিত্বও নতুন করে আবিষ্কার হয়। ‘আমি ছিলাম, আমি করেছি’—এই অনুভূতি আত্মসম্মান জাগিয়ে তোলে, যা বার্ধক্যে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন।
মনোবিজ্ঞানের মতে, প্রবীণ বয়সে ভালো বন্ধুত্ব ডিমেনশিয়া ও বিষণ্নতার ঝুঁকি কমায়। কারণ, কথা বলা, হাসা, মতবিনিময়—সবই মস্তিষ্ককে সক্রিয় রাখে। একজন প্রবীণ যখন বন্ধুর সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখেন, তখন তাঁর মনও সচল থাকে, জীবনের প্রতি আগ্রহ কমে না। বন্ধুত্ব মানে শুধু সময় কাটানো নয়, মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষা করা।
বন্ধু না থাকলে প্রবীণেরা অনেক সময় নিজেদের বোঝা মনে করেন। মনে হয় তাঁরা শুধু অন্যের ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু বন্ধুর সঙ্গে দেখা হলে সেই ধারণা ভেঙে যায়। তখন তাঁরা আবার একজন মানুষ—যার গল্প আছে, মতামত আছে, রসিকতা আছে। বন্ধুত্ব প্রবীণকে ‘রোগী’ থেকে আবার ‘মানুষ’ বানিয়ে তোলে।
আমাদের সমাজে প্রবীণদের বন্ধুত্বকে অনেক সময় তুচ্ছ করা হয়। বলা হয়, ‘এই বয়সে আবার বন্ধু!’ অথচ এই বয়সেই বন্ধুত্ব সবচেয়ে বেশি দরকার। কারণ, তখন জীবনের অধিকাংশ দরজা বন্ধ হয়ে যায়, বন্ধুত্বই একমাত্র জানালা দিয়ে আলো ঢোকে। প্রবীণদের বন্ধুত্ব মানে জীবনের শেষ অধ্যায়ে মানবিক উষ্ণতা।
বিশেষ করে যাঁরা একা থাকেন, জীবনসঙ্গী হারিয়েছেন, সন্তানেরা দূরে—তাঁদের জন্য বন্ধুই পরিবার। প্রয়োজনে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া, বাজার করা বা শুধু পাশে বসে থাকা—বন্ধু এই কাজগুলো নীরবে করে যায়। কোনো রক্তের সম্পর্ক না হয়েও বন্ধুত্ব হয়ে ওঠে রক্তের চেয়েও ঘনিষ্ঠ।
প্রবীণদের বন্ধুত্ব তরুণদের জন্যও একটি শিক্ষা। এখানে প্রতিযোগিতা নেই, আছে সহমর্মিতা। এখানে লাভ-ক্ষতি নেই, আছে সময় দেওয়া। প্রবীণ বন্ধুরা একে অপরকে ব্যবহার করেন না, তাঁরা একে অপরকে থাকতে দেন। এই থাকার মধ্যেই নিহিত আছে মানবিকতার সৌন্দর্য।
আপনি নিশ্চয়ই দেখেছেন—যাঁদের ভালো বন্ধু আছে, তাঁদের চোখে আলোর ঝিলিক থাকে। শরীর ভাঙলেও মন ভাঙে না। আর যাঁরা একা, তাঁদের চোখে ক্লান্তি। তাই প্রবীণকল্যাণ মানে শুধু ওষুধ বা খাবার নয়—বন্ধুত্বের পরিবেশ তৈরি করাও।
শেষ পর্যন্ত বলা যায়, প্রবীণ জীবনে বন্ধুত্ব হলো জীবনের শেষ প্রদীপ। এই প্রদীপ জ্বলে থাকলে অন্ধকার ভয়ের নয়। বয়স বাড়ে, শরীর ঝরে—কিন্তু বন্ধুত্ব থাকলে মন সব সময় তরুণ থাকে। আর তরুণ মনই তো আসল জীবন।

সম্প্রতি ঘটা করে অনুষ্ঠিত হলো বিএনপির বর্ধিত সভা। সভাটির সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হলো, প্রায় সাত বছর পরে দলটির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বক্তব্য রেখেছেন। লন্ডনে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়া প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি সভাটিতে সংযুক্ত হয়ে বক্তব্য রেখেছেন। চিরাচরিত স্বভাব অনুযায়ী কাউকে আক্রমণ না করে অত্যন্ত
০৭ মার্চ ২০২৫
সম্প্রতি রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে সুজন আয়োজিত ‘নির্বাচনী ব্যবস্থার সংস্কার: অগ্রগতি পর্যালোচনা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে বিশিষ্ট নাগরিক ও বিশেষজ্ঞরা যে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, তা আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতি ও বাস্তবতার এক করুণ চিত্র উঠে এসেছে।
১৩ মিনিট আগে
খুলনার ব্যাপারটা বড্ড গোলমেলে। এনসিপির এক শ্রমিকনেতাকে উদ্দেশ্য করে গুলি ছোড়া হয়েছে। গুলিটি তাঁর বাঁ কানের চামড়া ভেদ করে বের হয়ে গেছে। তিনি এখন শঙ্কামুক্ত। গুলি লাগার পরই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই ঘটনা ছড়িয়ে পড়ে। কোনো গুপ্তঘাতক নেতাদের টার্গেট করে হত্যা পরিকল্পনায় নেমেছে কি না, সে রকম...
১ দিন আগে
জাতীয় দৈনিক প্রথম আলো এবং ডেইলি স্টারে সন্ত্রাসীরা যে নজিরবিহীন নৃশংস হামলা করেছে, তার সূত্র ধরেই শুরু করতে হচ্ছে। ঘটনার পূর্বাপর সবাই এখন জানেন। তাই সংক্ষেপে শুধু একটি বিষয় উল্লেখ করব। হামলার আলামত স্পষ্ট হয়ে ওঠার পরই প্রথম আলোর পক্ষ থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সরকারের বিভিন্ন...
১ দিন আগে