
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগে পড়াশোনা করা মোজাম্মেল হোসেন, ঘনিষ্ঠ মহলে যিনি মঞ্জু নামেই বেশি পরিচিত, ছাত্রাবস্থায় ১৯৬৯ সালে সাপ্তাহিক ‘যুগবাণী’ ও ১৯৭০ সালে সাপ্তাহিক ‘একতা’য় প্রতিবেদক হিসেবে পেশাজীবন শুরু করেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় ‘মুক্তিযুদ্ধ’ পত্রিকার সহকারী সম্পাদক ছিলেন। দৈনিক ‘ভোরের কাগজ’ ও ‘প্রথম আলো’র বার্তা বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেন। দৈনিক ‘সমকাল’সহ একাধিক পত্রিকায় সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করেছেন। সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক মোজাম্মেল হোসেনের সঙ্গে সমসাময়িক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার বিভুরঞ্জন সরকার।
বিভুরঞ্জন সরকার

আপনি দীর্ঘকাল ধরে দেশের রাজনীতি পর্যবেক্ষণ করছেন। আজকের অবস্থানে দাঁড়িয়ে আপনি দেশের রাজনীতিকে কীভাবে ব্যাখ্যা করবেন?
রাজনৈতিকভাবে দেশ একটি ঘোরতর জটিল পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। সাংবিধানিক ও নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতি দেশে থাকলেও, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ভালো হলেও নিয়মনীতি অগ্রাহ্য করে, নির্বাচনে নগ্ন কারচুপি করে আওয়ামী লীগ দীর্ঘ সময় একচ্ছত্রভাবে ক্ষমতায় থাকার চেষ্টা করে অনেক সংকট তৈরি করেছিল। প্রাতিষ্ঠানিক ভাঙন, রাষ্ট্রযন্ত্র দলীয়করণ, খোলাখুলি ব্যাপক দুর্নীতি, রাজনৈতিক দলের দুর্বৃত্তায়ন, সমান সুযোগের অভাবে নাগরিকদের মধ্যে বঞ্চনাবোধ—এগুলোই হচ্ছে সংকটের রূপ। ছাত্র-তরুণেরা ভীষণ বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে এবং গত বছর জুলাই-আগস্টে ত্বরিত ফুঁসে ওঠা রাজপথের রক্তাক্ত আন্দোলনে সরকারের পতন ঘটে যায়। কিন্তু এর পরই জনগণের আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী নিয়মশৃঙ্খলা এনে একটি ভালো নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক শাসনের পথে যাত্রা সম্পর্কে শঙ্কা তৈরি হতে থাকে, কেননা ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের ভাবাদর্শের বিরুদ্ধের শক্তিগুলো, বিশেষত ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলোর প্রাধান্য প্রকাশ পায় এবং মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস-ঐতিহ্য, স্মারক আক্রান্ত হতে থাকে। গণতন্ত্রকে সফল করার জন্য, সাম্প্রতিক সময়ের মতো কোনো স্বৈরতান্ত্রিক শাসন যাতে আর না ফিরে আসে, সে জন্য অভিজ্ঞতা থেকে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতাকাঠামোয় কিছু সংস্কার দরকার, তা সবাই মানে। কিন্তু সে অছিলায় সংবিধানের মূলনীতি পরিবর্তনসহ রাষ্ট্রের চরিত্র বদলে ফেলার একটি লক্ষণীয় চেষ্টা একধরনের নতুন দ্বন্দ্বের সৃষ্টি করছে। এটা জটিলতা। এই পটভূমিতে দেশে অসহিষ্ণুতা, হিংস্রতা, প্রতিহিংসাপরায়ণতা যা দেখা যাচ্ছে, তা উদ্বেগের কারণ। এসবের নিরসন ঘটিয়ে সমাজে শান্তি আনা, জাতীয় ঐক্য-সংহতি দৃঢ় করা বড় চ্যালেঞ্জ।
আওয়ামী লীগ তো এখন কার্যত দৃশ্যপট থেকে অপসারিত। বিএনপি কি শূন্যস্থান পূরণ করতে বা বিকল্প শক্তি হয়ে উঠতে পারবে? জাতীয় পার্টি?
এই প্রশ্নে আমি কিছুটা কঠোর হব। বিএনপি ও জাতীয় পার্টি জনগণের প্রয়োজনে জনগণের মধ্য থেকে উঠে আসা দল নয়। সামরিক শাসকদের সৃষ্ট দল, যা তাঁরা ক্ষমতায় বসে বানিয়েছেন এবং পরিকৌশলী নিয়ন্ত্রিত নির্বাচনের মাধ্যমে জিতিয়ে এনেছেন। তবে সময়ের সঙ্গে রাজনীতি করে বিএনপি পোড় খেয়েছে, জনগণের কাতারে এসেছে। একাধিকবার দেশ পরিচালনা করেছে। প্রতিষ্ঠাতা সামরিক নেতা জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পরে ভোটে জিতেই ক্ষমতায় এসেছে। ২০০৬ সাল থেকে ১৯ বছর ক্ষমতার বাইরে থেকেও দলটি বড় আকারেই রয়েছে। কখনো কখনো ভুল সিদ্ধান্ত ও ভুল কৌশল এবং সাংগঠনিক দুর্বলতার জন্য আশানুরূপ ফল পায়নি। ২০১৪ থেকে আমি একাধিকবার বলেছি, বিএনপির উচিত ছিল আওয়ামী লীগ সৃষ্ট প্রতিকূলতার মধ্যেও সরকারের পতন ঘটাতে না চেয়ে, বয়কট না করে নির্বাচনে অংশ নিয়ে ভোট শুদ্ধ করার জন্য লড়াই করা। তাতে সার্বিকভাবেও দেশের রাজনীতির উপকার হতো। ছাত্রদের আন্দোলনসহ আরও নানা কারণে হাসিনা সরকারের পতন ঘটায় এখন রাজনীতির মাঠ বিএনপির জন্যই অনুকূলে। তবে নিকট অতীতে রাজনীতির দুর্বৃত্তায়নের অংশীদার বিএনপিও। এখনো চাঁদাবাজি, অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব প্রভৃতি পরিহারসহ দলের পরিশীলন ছাড়া বিএনপি জনগণের স্বার্থে ভূমিকা পালন করতে পারবে না। দলে তুলনামূলকভাবে চিন্তাশীল নেতৃত্বের দরকার ও তুলনামূলক বিশুদ্ধ রাজনীতির পথে হাঁটতে হবে দলটিকে।
জাতীয় পার্টি, এর প্রতিষ্ঠাতা সামরিক নেতা এরশাদের সময়ই কেবল ক্ষমতায় ছিল। পরে মূলত একটি ‘প্রক্সি পার্টি’তে রূপান্তরিত হয়। ক্ষমতার রাজনীতিতে এরা কখনো সরাসরি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেয় না। বরং একটি ‘বিকল্প নয়, বিকল্পের অংশীদার’ হিসেবেই তারা বেশি কাজ করে। বর্তমান রাজনীতিতে জাতীয় পার্টির ভূমিকা সীমিতই থাকবে।
সব সময়ই তো বলা হয় তরুণেরাই পরিবর্তন আনে। তরুণেরাই ভরসা। জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানের পরে রাজনীতিতে তরুণদের ভূমিকা কেমন দেখছেন?
নবগঠিত জাতীয় নাগরিক পার্টি বা এনসিপি তো তরুণদের দল। এনসিপি জন্ম নেওয়ার আগেই জুলাই আবহে ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে আমি বলেছিলাম, তরুণদের একটি রাজনৈতিক দলকে আমরা স্বাগত জানাতে পারি। এঁরা বয়সে তরুণ ও মানসিকতায় আধুনিক হবেন। নীতি, কর্মসূচি, জ্ঞান ও ব্যবস্থাপনাকে গুরুত্ব দেবেন; স্লোগান, বুলি কপচানো ও নেতা বন্দনায় নয়। যুক্তি দিয়ে কথা বলবেন সাধারণ স্বরগ্রামে, অহেতুক গলার রগ ফুলিয়ে বক্তৃতা করবেন না। গণতন্ত্রের রীতিনীতি মেনে চলবেন এবং পার্লামেন্টে বিরোধী দলের আসনে বসে রাজনীতি করাকে মর্যাদাপূর্ণ ভাববেন।
এমন তরুণদের দল আমরা পাচ্ছি কি না বা এনসিপি তেমন দল হচ্ছে কি না, তা পাঠকেরা প্রতিদিনই তাদের দেখে যাচাই করতে পারেন। গলা ফুলিয়ে, হিংসা ছড়িয়ে বক্তৃতা করা, অজ্ঞাত উৎসের হিসাববহির্ভূত অর্থ ব্যয়, চাঁদাবাজির অভিযোগ ওঠা, গাড়ির বহর নিয়ে শক্তির মহড়া ইত্যাদি না হলে বুঝব রাজনীতিতে পরিবর্তন আসছে।
আমাদের তরুণেরা রাজনীতি থেকে দূরে সরে যাচ্ছিল। ‘আই হেইট পলিটিকস’ শোনা যেত। কারণ, বছরের পর বছর তারা আদর্শহীন, সুবিধাবাদী, সংঘাতপূর্ণ, দুর্বৃত্তায়িত রাজনীতি দেখেছে। অন্যদিকে সামাজিক মাধ্যমে তারা দুনিয়া দেখে, সেখানে তাদের রাজনৈতিক উপস্থিতি পাওয়া যায়, তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে, প্রশ্ন তোলে। তরুণেরা এখন ‘নিউ পলিটিকস’ চায়, যেখানে নেতৃত্ব হবে বিশ্বাসযোগ্য, চিন্তাশীল এবং বাস্তবমুখী। কিন্তু আমি বিস্মিত যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কেরা, জাতীয় নাগরিক পার্টিতে সমবেত তরুণেরা শিক্ষিত, প্রতিভাবান, স্মার্ট কিন্তু কেউ কেউ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের প্রতি শ্রদ্ধাশীল নয়, এমনকি ধর্মভিত্তিক রাজনীতি দ্বারা প্রভাবিত ও জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে তাদের নৈকট্য দেখা যায়। তখন ভাবি, তরুণ মানেই তো ভালো, অগ্রসর চিন্তার মানুষ, প্রগতিশীল ও ন্যায়যোদ্ধা নয়। এগুলো হচ্ছে তারুণ্যের ধর্ম। কিন্তু সব তরুণের মধ্যে তারুণ্য নেই। চোর-গুন্ডা-বদমাশ ও সন্ত্রাসীরা কি বয়সে তরুণ নয়? নজরুল যাদের আহ্বান করেন ‘চল চল চল...অরুণপ্রাতের তরুণদল’ বলে এবং রবীন্দ্রনাথ যাদের বলেন ‘ওরে আমার সবুজ, ওরে আমার কাঁচা, আধমরাদের ঘা মেরে তুই বাঁচা’। তারা শুধু বয়সে তরুণ নয়, ধর্মে-মর্মে তরুণ। তাই তরুণ ও তারুণ্যে পার্থক্য আছে। তারুণ্যের ধর্মচ্যুত তরুণ আমাদের কাম্য নয়। তাই আমাদের দেশ ও সমাজের ব্যাপক সাধারণ তরুণদের মধ্যে এনসিপির আবেদন কতটুকু হবে, তা ওই দলের ভূমিকা ও কাজের ওপর নির্ভর করবে।
আপনি কি মনে করেন বাংলাদেশে আশু গণতান্ত্রিক উত্তরণ সম্ভব?
নিশ্চয়ই সম্ভব, কারণ জনগণ দৃঢ়ভাবে এটা চায়। তবে কয়েকটি কঠিন চ্যালেঞ্জও আছে। মিয়ানমারের আরাকান অঞ্চলকে ঘিরে আমেরিকার মতো পরাশক্তির কোনো একটি ভূ-রাজনৈতিক পরিকল্পনা আছে বলে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে জল্পনা আছে, যদিও সংগত কারণে এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায় না। এখানে কোনো অস্থিতিশীলতা ঘটলে আমাদের নির্বাচন ব্যাহত হতে পারে। আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধের মধ্যে আমাদের নির্বাচন হওয়ার কথা। তবে এখনো এটা নিশ্চিত নয়।
মনে রাখতে হবে, গণতন্ত্র একটি সংস্কৃতি, শুধু নিয়ম নয়। আমাদের রাজনৈতিক সংস্কারের একটি ব্যাপক পরিকল্পনা প্রয়োজন, যে বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্য লাগবে। প্রথম ধাপেই আমাদের নির্বাচনকে সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক হতে হবে। বিগত সরকারের বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজের বিচার অবশ্যই হতে হবে। তবে সরকার ও প্রশাসনের দায়ী ব্যক্তিবর্গ ছাড়া বর্তমানে সরকারের আদেশে কার্যক্রম নিষিদ্ধ রাখা আওয়ামী লীগের বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মী-সমর্থককে সংগঠিত হওয়ার ও মতপ্রকাশের সাংবিধানিক অধিকার দিয়ে গণতন্ত্রের যাত্রাকে অংশগ্রহণমূলক করা ভালো। জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনও এই অধিকারগুলোর কথা আমাদের স্মরণ করিয়ে দিয়েছে।
এবার দু-একটি আন্তর্জাতিক বিষয়। চলমান বিশ্ব পরিস্থিতি, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা জোটের ভূমিকাকে আপনি কীভাবে দেখছেন?
পশ্চিমা জোট বলতে যদি আমরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন বা স্পষ্টত ন্যাটোভুক্ত দেশগুলোকে বোঝাই, তাহলে এই দেশগুলো হচ্ছে সাম্রাজ্যবাদী দেশ। সারা দুনিয়ায় আধিপত্য তাদের কাম্য। আমরা তাত্ত্বিকভাবে বলি যে সাম্রাজ্যবাদের খাদ্য হচ্ছে যুদ্ধ। যুদ্ধ ছাড়া তারা বাঁচতে পারে না। প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরেও সারাক্ষণ কোথাও না কোথাও যুদ্ধ লেগেই আছে। চার বছর ধরে রাশিয়া ও ইউক্রেনের যুদ্ধ চলার মধ্যেই এই মাসে ইরানে ইসরায়েল ও আমেরিকা আক্রমণ চালিয়ে একটি আঞ্চলিক যুদ্ধ ঘটাল। ইসরায়েল প্রায় দুই বছর ধরে ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় অকল্পনীয় নিষ্ঠুরতায় অব্যাহত গণহত্যা চালাচ্ছে। প্রায় ৬০ হাজার মানুষকে হত্যা করার পর এখন তাদের দুর্ভিক্ষে মৃত্যুমুখে ঠেলে দিচ্ছে। এইসব ঘটনায় এখন জাতিসংঘ কার্যত নিষ্ক্রিয় বা সভায় বসলেও কোনো পদক্ষেপ নিতে পারে না। ফিলিস্তিন ও ইরানে যা দেখা গেল, আমেরিকা ও ইসরায়েল আন্তর্জাতিক আইন ভঙ্গ করে চলেছে। সর্বশেষ এই সপ্তাহে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের চাপে প্রতিটি ন্যাটো দেশ অস্ত্র খাতে ব্যয় ৫ শতাংশ বাড়াতে সম্মত হয়েছে। এককথায় বৃহৎ শক্তিগুলোর স্বার্থে বিশ্বকে যুদ্ধে তাতিয়ে রাখাই হচ্ছে বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতি। বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধ পুরোটাই স্নায়ুযুদ্ধের কাল হলেও সমাজতান্ত্রিক সোভিয়েত ব্লক ও পশ্চিমা ব্লকের শক্তির ভারসাম্য ছোট দেশগুলোকে একটা ভরসায় রেখেছিল। সে সময় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে জেতার পেছনে সোভিয়েতের ভূমিকা একটি বড় উপাদান ছিল। সোভিয়েতের আহ্বানে তখন বিশ্বে পূর্ণাঙ্গ পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণের আলোচনা হয়েছিল। এখন বড় শক্তিগুলো নিরস্ত্রীকরণ নয়, পারমাণবিক অস্ত্রের একচেটিয়া অধিকার হাতে রাখতে চায়।
পরাশক্তিব্যবস্থা ভেঙে পড়ার পরে আমেরিকা ভেবেছিল বিশ্ব এককেন্দ্রিক হবে। কিন্তু তা হলো না। বরং আমেরিকা একটু দুর্বল হওয়ার পাশাপাশি চীন, রাশিয়া, ভারত, ইরান প্রভৃতি শক্তিধর রাষ্ট্র আছে। দুই মহাশক্তির পরিবর্তে পৃথিবী শক্তিকেন্দ্রিক। এ রকম
অবস্থায় বাংলাদেশের মতো ছোট দেশের জন্য সুযোগ এবং চ্যালেঞ্জ দুটোই আছে। সুযোগ এই কারণে যে, একপেশে অবস্থানের পরিবর্তে কৌশলী পররাষ্ট্রনীতি গ্রহণ করে আমরা স্বার্থসংশ্লিষ্ট সুবিধা আদায় করতে পারি। চ্যালেঞ্জ এই কারণে যে, বড়দের দ্বন্দ্বে আমরা পড়ে যেতে পারি একপেশে সিদ্ধান্তে। ভারসাম্য রক্ষা করে চলাই আমাদের স্বার্থানুকূল।
আপনার দৃষ্টিতে ইরান-ইসরায়েলের যুদ্ধের মূলে কী? এটি ধর্মীয়, রাজনৈতিক, না কৌশলগত সংঘাত? আমেরিকা কেন জড়াল?
খুব ভালো প্রশ্ন। কিন্তু উত্তরটা এককথায় দেওয়া যায় না। এই সংঘাত ধর্মীয়ও বটে, কৌশলগতও বটে এবং আঞ্চলিক আধিপত্য বিস্তার নিয়েও বটে।
দুটি রাষ্ট্রই ধর্মভিত্তিক। ইহুদি রাষ্ট্রটির শাসকদের মধ্যে জায়নবাদীরা আছে। জায়নবাদ হচ্ছে ইহুদি-শ্রেষ্ঠত্বের দাবিতে ফ্যাসিবাদী ভাবধারা। তবে সব ইহুদি জায়নবাদী নয়। তাদের মধ্যে উদার আধুনিক মানুষ অনেক আছে। প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু যুদ্ধে ধর্মীয় উন্মাদনা সৃষ্টি করতে সব সময় ধর্মগ্রন্থ ‘তোরাহ’ ব্যবহার করেন। যেমন ১২ জুন ইরান আক্রমণের নাম ‘জাগ্রত সিংহ অপারেশন’ ওল্ড টেস্টামেন্টভিত্তিক কাহিনি থেকে। তিনি আক্রমণের আগে জেরুজালেমে ওয়েস্ট ওয়ালে গিয়ে প্রার্থনা করেন। ওদিকে জাব্বাজোব্বা পরা আয়াতুল্লাহ শাসকেরা ইরানকে মধ্যপ্রাচ্যে শিয়াপন্থী অভিভাবক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চায়। এরা এমন ধর্মান্ধ যে ২০২২ সালে মাহশা আমিনি নামে এক তরুণীর হিজাব সরে গিয়ে চুল বেরিয়ে পড়ায় নীতি-পুলিশ তাঁর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। বন্দী অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হলে প্রতিবাদকারী শতাধিক কিশোরী-তরুণীকে মিছিলে গুলি করে মারা হয়। যুদ্ধে ধর্মীয় উপাদান ব্যবহার করা হলেও এটি মূলত ক্ষমতা ও আঞ্চলিক আধিপত্যের লড়াই। ইসরায়েল হচ্ছে একটি আঞ্চলিক পরাশক্তি, যাকে পশ্চিমা বিশ্ব, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র নিরঙ্কুশ সমর্থন দিয়ে থাকে। ইরান বড় আকারে পারমাণবিক গবেষণা করে, কিন্তু পারমাণবিক বোমা বানাতে চায়, তা স্বীকার না করে শান্তিপূর্ণ উন্নয়নের কাজে ব্যবহারের কথা বলে। আন্তর্জাতিক পরমাণু সংস্থাকে পরিদর্শনের অনুমতি দেয়। আলোচনায়ও বসেছে। এর আগের মেয়াদে ক্ষমতায় থাকতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প একতরফা আলোচনা ভেঙে দিয়েছিলেন। ইসরায়েল এবার ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় বোমা ফেলে, কয়েকজন সেনাপতি ও পরমাণুবিজ্ঞানীকে গুপ্তহত্যা করে। ইরান কার্যকরভাবে ইসরায়েলে পাল্টা ক্ষেপণাস্ত্র হামলা করতে পারলে ইসরায়েলের ইজ্জত বাঁচাতে যুক্তরাষ্ট্র শঠতাপূর্ণভাবে বি-টু যুদ্ধবিমান দিয়ে ইরানে বড় হামলা করে। তার পরই ট্রাম্প যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করেন। তিন রাষ্ট্রের দুই পক্ষের ১২ দিনের যুদ্ধ। সন্দেহ করা হয় যে ২০০৩ সালে জনবিধ্বংসী অস্ত্র আছে বলে মিথ্যা অজুহাতে ইরাক আক্রমণ করে সাদ্দাম হোসেনকে উৎখাত ও ফাঁসি দেওয়ার মতো ঘটনা ইরানে ঘটানোর জন্য যুক্তরাষ্ট্র ফন্দি আঁটতে পারে।
এবার কে জিতল?
(হেসে) তিন পক্ষই। যুদ্ধ শেষ হওয়ার দিন ২৪ জুনেই আন্তর্জাতিক মিডিয়া জানায়, যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, তারা ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র বানানো অনেক পিছিয়ে দিতে পেরেছে। ইসরায়েল বলেছে, তারা ইরানকে দুর্বল করে দিয়েছে। অবশ্য ইসরায়েলের আরেকটি লক্ষ্য খামেনি সরকারের পতন ঘটেনি—সে সম্পর্কে নীরব। আর ইরান বলেছে, তারা উপযুক্ত জবাব দিয়েছে। সর্বশেষ ২৬ জুন টিভিতে সম্প্রচারিত ভিডিও বার্তায় আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি কাতারে মার্কিন ঘাঁটিতে ইরানি ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতকে ‘সজোরে চপেটাঘাত’ উল্লেখ করে বলেন, ‘ইসরায়েল ধসে পড়েছে।’
বলাই যায়, ইসরায়েলি ‘সিংহ’ গর্জন মোতাবেক শিকার ধরতে পারেনি। ইউরোপে কিছুটা কূটনৈতিক বিচ্ছিন্নতায় পড়েছে। তবে নেতানিয়াহুর ক্ষমতার আয়ু কিছু বাড়তে পারে। ইরান ধারণার চেয়ে বেশি সক্ষমতা দেখিয়েছে এবং খামেনির সরকার পড়ে যাওয়ার বিপরীতে জনমতের দিক থেকে কিছুটা সংহত হয়েছে। বিশ্বের মুসলমানদের সমর্থন পেয়েছে। তারা বাংলাদেশকে ধন্যবাদও জানিয়েছে। আর আমেরিকা কিছুটা দুর্বল ইরানকে আলোচনার টেবিলে বসাবে। তিন পক্ষই বড় যুদ্ধ চায়নি, সেখানেও জিতেছে।
এই ১২ দিনের উপসংহারহীন অসমাপ্ত যুদ্ধের আরেকটি দিক হলো চীন ও রাশিয়ার কৌশলগত উত্থান। চীন চায় মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন আধিপত্যে ফাটল ধরুক। তারা ইরানকে কিছুটা উসকানি বা কৌশলগত সহায়তা দিয়েছে বলে ধারণা। রাশিয়াও মধ্যপ্রাচ্যে বন্ধুত্ব বাড়াতে সক্রিয়।
ইরানে বড় আক্রমণ দেখে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরুর আশঙ্কার কথা বলা হচ্ছিল।
তেমন আশঙ্কা দূরবর্তী বলেই মনে হয়। তবে স্থানিক যুদ্ধের পুনরাবৃত্তি হতে পারে বা বলতে পারেন ‘প্রক্সিতে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ’ সম্ভব। দুটি বৈশ্বিক মেরু তৈরি হয়েছে: একদিকে যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েল-ন্যাটো ব্লক, অন্যদিকে চীন-রাশিয়া-ইরান-হিজবুল্লাহ-হামাস।
এই দুই মেরুর মধ্যে সরাসরি সংঘর্ষ না হলেও তারা পরোক্ষে যুদ্ধ করছে ইউক্রেন, সিরিয়া, ইয়েমেন, গাজা প্রভৃতি যুদ্ধক্ষেত্রে। এখন তো যুদ্ধ শুধু অস্ত্রের না, তথ্যেরও। মিডিয়া, সামাজিক মাধ্যম, কূটনৈতিক মঞ্চ—সবই যুদ্ধে জড়িয়ে। থেমে নেই।
বাংলাদেশের অবস্থান কী হওয়া উচিত? আমাদের কি নিরপেক্ষ থাকা উচিত, নাকি অবস্থান নিতে হবে?
দৃঢ় অবস্থান, আমরা যুদ্ধ চাই না। সাংবিধানিকভাবে আমাদের পররাষ্ট্রনীতি সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে শত্রুতা নয়। তবে অবশ্যই ন্যায়-অন্যায় ও মানবাধিকারের প্রশ্নে গাজা যুদ্ধে ও ইরান আক্রমণে ইসরায়েলের তীব্র নিন্দা করেছি আমরা। ইসরায়েলকে আমরা রাষ্ট্র হিসেবে এখনো স্বীকৃতি দিইনি। আমাদের জনগণের একটি মুসলিম ভ্রাতৃত্ববোধ আছে।
তবে রাষ্ট্র হিসেবে আমাদের কৌশলগত ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। ইরানের সঙ্গে আমাদের বাণিজ্য ও জ্বালানি সহযোগিতা আছে। আমরা আন্তর্জাতিক শান্তির পক্ষে এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে অবশ্যই আপসহীন।
আপনি দীর্ঘকাল ধরে দেশের রাজনীতি পর্যবেক্ষণ করছেন। আজকের অবস্থানে দাঁড়িয়ে আপনি দেশের রাজনীতিকে কীভাবে ব্যাখ্যা করবেন?
রাজনৈতিকভাবে দেশ একটি ঘোরতর জটিল পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। সাংবিধানিক ও নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতি দেশে থাকলেও, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ভালো হলেও নিয়মনীতি অগ্রাহ্য করে, নির্বাচনে নগ্ন কারচুপি করে আওয়ামী লীগ দীর্ঘ সময় একচ্ছত্রভাবে ক্ষমতায় থাকার চেষ্টা করে অনেক সংকট তৈরি করেছিল। প্রাতিষ্ঠানিক ভাঙন, রাষ্ট্রযন্ত্র দলীয়করণ, খোলাখুলি ব্যাপক দুর্নীতি, রাজনৈতিক দলের দুর্বৃত্তায়ন, সমান সুযোগের অভাবে নাগরিকদের মধ্যে বঞ্চনাবোধ—এগুলোই হচ্ছে সংকটের রূপ। ছাত্র-তরুণেরা ভীষণ বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে এবং গত বছর জুলাই-আগস্টে ত্বরিত ফুঁসে ওঠা রাজপথের রক্তাক্ত আন্দোলনে সরকারের পতন ঘটে যায়। কিন্তু এর পরই জনগণের আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী নিয়মশৃঙ্খলা এনে একটি ভালো নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক শাসনের পথে যাত্রা সম্পর্কে শঙ্কা তৈরি হতে থাকে, কেননা ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের ভাবাদর্শের বিরুদ্ধের শক্তিগুলো, বিশেষত ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলোর প্রাধান্য প্রকাশ পায় এবং মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস-ঐতিহ্য, স্মারক আক্রান্ত হতে থাকে। গণতন্ত্রকে সফল করার জন্য, সাম্প্রতিক সময়ের মতো কোনো স্বৈরতান্ত্রিক শাসন যাতে আর না ফিরে আসে, সে জন্য অভিজ্ঞতা থেকে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতাকাঠামোয় কিছু সংস্কার দরকার, তা সবাই মানে। কিন্তু সে অছিলায় সংবিধানের মূলনীতি পরিবর্তনসহ রাষ্ট্রের চরিত্র বদলে ফেলার একটি লক্ষণীয় চেষ্টা একধরনের নতুন দ্বন্দ্বের সৃষ্টি করছে। এটা জটিলতা। এই পটভূমিতে দেশে অসহিষ্ণুতা, হিংস্রতা, প্রতিহিংসাপরায়ণতা যা দেখা যাচ্ছে, তা উদ্বেগের কারণ। এসবের নিরসন ঘটিয়ে সমাজে শান্তি আনা, জাতীয় ঐক্য-সংহতি দৃঢ় করা বড় চ্যালেঞ্জ।
আওয়ামী লীগ তো এখন কার্যত দৃশ্যপট থেকে অপসারিত। বিএনপি কি শূন্যস্থান পূরণ করতে বা বিকল্প শক্তি হয়ে উঠতে পারবে? জাতীয় পার্টি?
এই প্রশ্নে আমি কিছুটা কঠোর হব। বিএনপি ও জাতীয় পার্টি জনগণের প্রয়োজনে জনগণের মধ্য থেকে উঠে আসা দল নয়। সামরিক শাসকদের সৃষ্ট দল, যা তাঁরা ক্ষমতায় বসে বানিয়েছেন এবং পরিকৌশলী নিয়ন্ত্রিত নির্বাচনের মাধ্যমে জিতিয়ে এনেছেন। তবে সময়ের সঙ্গে রাজনীতি করে বিএনপি পোড় খেয়েছে, জনগণের কাতারে এসেছে। একাধিকবার দেশ পরিচালনা করেছে। প্রতিষ্ঠাতা সামরিক নেতা জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পরে ভোটে জিতেই ক্ষমতায় এসেছে। ২০০৬ সাল থেকে ১৯ বছর ক্ষমতার বাইরে থেকেও দলটি বড় আকারেই রয়েছে। কখনো কখনো ভুল সিদ্ধান্ত ও ভুল কৌশল এবং সাংগঠনিক দুর্বলতার জন্য আশানুরূপ ফল পায়নি। ২০১৪ থেকে আমি একাধিকবার বলেছি, বিএনপির উচিত ছিল আওয়ামী লীগ সৃষ্ট প্রতিকূলতার মধ্যেও সরকারের পতন ঘটাতে না চেয়ে, বয়কট না করে নির্বাচনে অংশ নিয়ে ভোট শুদ্ধ করার জন্য লড়াই করা। তাতে সার্বিকভাবেও দেশের রাজনীতির উপকার হতো। ছাত্রদের আন্দোলনসহ আরও নানা কারণে হাসিনা সরকারের পতন ঘটায় এখন রাজনীতির মাঠ বিএনপির জন্যই অনুকূলে। তবে নিকট অতীতে রাজনীতির দুর্বৃত্তায়নের অংশীদার বিএনপিও। এখনো চাঁদাবাজি, অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব প্রভৃতি পরিহারসহ দলের পরিশীলন ছাড়া বিএনপি জনগণের স্বার্থে ভূমিকা পালন করতে পারবে না। দলে তুলনামূলকভাবে চিন্তাশীল নেতৃত্বের দরকার ও তুলনামূলক বিশুদ্ধ রাজনীতির পথে হাঁটতে হবে দলটিকে।
জাতীয় পার্টি, এর প্রতিষ্ঠাতা সামরিক নেতা এরশাদের সময়ই কেবল ক্ষমতায় ছিল। পরে মূলত একটি ‘প্রক্সি পার্টি’তে রূপান্তরিত হয়। ক্ষমতার রাজনীতিতে এরা কখনো সরাসরি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেয় না। বরং একটি ‘বিকল্প নয়, বিকল্পের অংশীদার’ হিসেবেই তারা বেশি কাজ করে। বর্তমান রাজনীতিতে জাতীয় পার্টির ভূমিকা সীমিতই থাকবে।
সব সময়ই তো বলা হয় তরুণেরাই পরিবর্তন আনে। তরুণেরাই ভরসা। জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানের পরে রাজনীতিতে তরুণদের ভূমিকা কেমন দেখছেন?
নবগঠিত জাতীয় নাগরিক পার্টি বা এনসিপি তো তরুণদের দল। এনসিপি জন্ম নেওয়ার আগেই জুলাই আবহে ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে আমি বলেছিলাম, তরুণদের একটি রাজনৈতিক দলকে আমরা স্বাগত জানাতে পারি। এঁরা বয়সে তরুণ ও মানসিকতায় আধুনিক হবেন। নীতি, কর্মসূচি, জ্ঞান ও ব্যবস্থাপনাকে গুরুত্ব দেবেন; স্লোগান, বুলি কপচানো ও নেতা বন্দনায় নয়। যুক্তি দিয়ে কথা বলবেন সাধারণ স্বরগ্রামে, অহেতুক গলার রগ ফুলিয়ে বক্তৃতা করবেন না। গণতন্ত্রের রীতিনীতি মেনে চলবেন এবং পার্লামেন্টে বিরোধী দলের আসনে বসে রাজনীতি করাকে মর্যাদাপূর্ণ ভাববেন।
এমন তরুণদের দল আমরা পাচ্ছি কি না বা এনসিপি তেমন দল হচ্ছে কি না, তা পাঠকেরা প্রতিদিনই তাদের দেখে যাচাই করতে পারেন। গলা ফুলিয়ে, হিংসা ছড়িয়ে বক্তৃতা করা, অজ্ঞাত উৎসের হিসাববহির্ভূত অর্থ ব্যয়, চাঁদাবাজির অভিযোগ ওঠা, গাড়ির বহর নিয়ে শক্তির মহড়া ইত্যাদি না হলে বুঝব রাজনীতিতে পরিবর্তন আসছে।
আমাদের তরুণেরা রাজনীতি থেকে দূরে সরে যাচ্ছিল। ‘আই হেইট পলিটিকস’ শোনা যেত। কারণ, বছরের পর বছর তারা আদর্শহীন, সুবিধাবাদী, সংঘাতপূর্ণ, দুর্বৃত্তায়িত রাজনীতি দেখেছে। অন্যদিকে সামাজিক মাধ্যমে তারা দুনিয়া দেখে, সেখানে তাদের রাজনৈতিক উপস্থিতি পাওয়া যায়, তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে, প্রশ্ন তোলে। তরুণেরা এখন ‘নিউ পলিটিকস’ চায়, যেখানে নেতৃত্ব হবে বিশ্বাসযোগ্য, চিন্তাশীল এবং বাস্তবমুখী। কিন্তু আমি বিস্মিত যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কেরা, জাতীয় নাগরিক পার্টিতে সমবেত তরুণেরা শিক্ষিত, প্রতিভাবান, স্মার্ট কিন্তু কেউ কেউ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের প্রতি শ্রদ্ধাশীল নয়, এমনকি ধর্মভিত্তিক রাজনীতি দ্বারা প্রভাবিত ও জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে তাদের নৈকট্য দেখা যায়। তখন ভাবি, তরুণ মানেই তো ভালো, অগ্রসর চিন্তার মানুষ, প্রগতিশীল ও ন্যায়যোদ্ধা নয়। এগুলো হচ্ছে তারুণ্যের ধর্ম। কিন্তু সব তরুণের মধ্যে তারুণ্য নেই। চোর-গুন্ডা-বদমাশ ও সন্ত্রাসীরা কি বয়সে তরুণ নয়? নজরুল যাদের আহ্বান করেন ‘চল চল চল...অরুণপ্রাতের তরুণদল’ বলে এবং রবীন্দ্রনাথ যাদের বলেন ‘ওরে আমার সবুজ, ওরে আমার কাঁচা, আধমরাদের ঘা মেরে তুই বাঁচা’। তারা শুধু বয়সে তরুণ নয়, ধর্মে-মর্মে তরুণ। তাই তরুণ ও তারুণ্যে পার্থক্য আছে। তারুণ্যের ধর্মচ্যুত তরুণ আমাদের কাম্য নয়। তাই আমাদের দেশ ও সমাজের ব্যাপক সাধারণ তরুণদের মধ্যে এনসিপির আবেদন কতটুকু হবে, তা ওই দলের ভূমিকা ও কাজের ওপর নির্ভর করবে।
আপনি কি মনে করেন বাংলাদেশে আশু গণতান্ত্রিক উত্তরণ সম্ভব?
নিশ্চয়ই সম্ভব, কারণ জনগণ দৃঢ়ভাবে এটা চায়। তবে কয়েকটি কঠিন চ্যালেঞ্জও আছে। মিয়ানমারের আরাকান অঞ্চলকে ঘিরে আমেরিকার মতো পরাশক্তির কোনো একটি ভূ-রাজনৈতিক পরিকল্পনা আছে বলে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে জল্পনা আছে, যদিও সংগত কারণে এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায় না। এখানে কোনো অস্থিতিশীলতা ঘটলে আমাদের নির্বাচন ব্যাহত হতে পারে। আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধের মধ্যে আমাদের নির্বাচন হওয়ার কথা। তবে এখনো এটা নিশ্চিত নয়।
মনে রাখতে হবে, গণতন্ত্র একটি সংস্কৃতি, শুধু নিয়ম নয়। আমাদের রাজনৈতিক সংস্কারের একটি ব্যাপক পরিকল্পনা প্রয়োজন, যে বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্য লাগবে। প্রথম ধাপেই আমাদের নির্বাচনকে সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক হতে হবে। বিগত সরকারের বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজের বিচার অবশ্যই হতে হবে। তবে সরকার ও প্রশাসনের দায়ী ব্যক্তিবর্গ ছাড়া বর্তমানে সরকারের আদেশে কার্যক্রম নিষিদ্ধ রাখা আওয়ামী লীগের বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মী-সমর্থককে সংগঠিত হওয়ার ও মতপ্রকাশের সাংবিধানিক অধিকার দিয়ে গণতন্ত্রের যাত্রাকে অংশগ্রহণমূলক করা ভালো। জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনও এই অধিকারগুলোর কথা আমাদের স্মরণ করিয়ে দিয়েছে।
এবার দু-একটি আন্তর্জাতিক বিষয়। চলমান বিশ্ব পরিস্থিতি, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা জোটের ভূমিকাকে আপনি কীভাবে দেখছেন?
পশ্চিমা জোট বলতে যদি আমরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন বা স্পষ্টত ন্যাটোভুক্ত দেশগুলোকে বোঝাই, তাহলে এই দেশগুলো হচ্ছে সাম্রাজ্যবাদী দেশ। সারা দুনিয়ায় আধিপত্য তাদের কাম্য। আমরা তাত্ত্বিকভাবে বলি যে সাম্রাজ্যবাদের খাদ্য হচ্ছে যুদ্ধ। যুদ্ধ ছাড়া তারা বাঁচতে পারে না। প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরেও সারাক্ষণ কোথাও না কোথাও যুদ্ধ লেগেই আছে। চার বছর ধরে রাশিয়া ও ইউক্রেনের যুদ্ধ চলার মধ্যেই এই মাসে ইরানে ইসরায়েল ও আমেরিকা আক্রমণ চালিয়ে একটি আঞ্চলিক যুদ্ধ ঘটাল। ইসরায়েল প্রায় দুই বছর ধরে ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় অকল্পনীয় নিষ্ঠুরতায় অব্যাহত গণহত্যা চালাচ্ছে। প্রায় ৬০ হাজার মানুষকে হত্যা করার পর এখন তাদের দুর্ভিক্ষে মৃত্যুমুখে ঠেলে দিচ্ছে। এইসব ঘটনায় এখন জাতিসংঘ কার্যত নিষ্ক্রিয় বা সভায় বসলেও কোনো পদক্ষেপ নিতে পারে না। ফিলিস্তিন ও ইরানে যা দেখা গেল, আমেরিকা ও ইসরায়েল আন্তর্জাতিক আইন ভঙ্গ করে চলেছে। সর্বশেষ এই সপ্তাহে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের চাপে প্রতিটি ন্যাটো দেশ অস্ত্র খাতে ব্যয় ৫ শতাংশ বাড়াতে সম্মত হয়েছে। এককথায় বৃহৎ শক্তিগুলোর স্বার্থে বিশ্বকে যুদ্ধে তাতিয়ে রাখাই হচ্ছে বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতি। বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধ পুরোটাই স্নায়ুযুদ্ধের কাল হলেও সমাজতান্ত্রিক সোভিয়েত ব্লক ও পশ্চিমা ব্লকের শক্তির ভারসাম্য ছোট দেশগুলোকে একটা ভরসায় রেখেছিল। সে সময় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে জেতার পেছনে সোভিয়েতের ভূমিকা একটি বড় উপাদান ছিল। সোভিয়েতের আহ্বানে তখন বিশ্বে পূর্ণাঙ্গ পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণের আলোচনা হয়েছিল। এখন বড় শক্তিগুলো নিরস্ত্রীকরণ নয়, পারমাণবিক অস্ত্রের একচেটিয়া অধিকার হাতে রাখতে চায়।
পরাশক্তিব্যবস্থা ভেঙে পড়ার পরে আমেরিকা ভেবেছিল বিশ্ব এককেন্দ্রিক হবে। কিন্তু তা হলো না। বরং আমেরিকা একটু দুর্বল হওয়ার পাশাপাশি চীন, রাশিয়া, ভারত, ইরান প্রভৃতি শক্তিধর রাষ্ট্র আছে। দুই মহাশক্তির পরিবর্তে পৃথিবী শক্তিকেন্দ্রিক। এ রকম
অবস্থায় বাংলাদেশের মতো ছোট দেশের জন্য সুযোগ এবং চ্যালেঞ্জ দুটোই আছে। সুযোগ এই কারণে যে, একপেশে অবস্থানের পরিবর্তে কৌশলী পররাষ্ট্রনীতি গ্রহণ করে আমরা স্বার্থসংশ্লিষ্ট সুবিধা আদায় করতে পারি। চ্যালেঞ্জ এই কারণে যে, বড়দের দ্বন্দ্বে আমরা পড়ে যেতে পারি একপেশে সিদ্ধান্তে। ভারসাম্য রক্ষা করে চলাই আমাদের স্বার্থানুকূল।
আপনার দৃষ্টিতে ইরান-ইসরায়েলের যুদ্ধের মূলে কী? এটি ধর্মীয়, রাজনৈতিক, না কৌশলগত সংঘাত? আমেরিকা কেন জড়াল?
খুব ভালো প্রশ্ন। কিন্তু উত্তরটা এককথায় দেওয়া যায় না। এই সংঘাত ধর্মীয়ও বটে, কৌশলগতও বটে এবং আঞ্চলিক আধিপত্য বিস্তার নিয়েও বটে।
দুটি রাষ্ট্রই ধর্মভিত্তিক। ইহুদি রাষ্ট্রটির শাসকদের মধ্যে জায়নবাদীরা আছে। জায়নবাদ হচ্ছে ইহুদি-শ্রেষ্ঠত্বের দাবিতে ফ্যাসিবাদী ভাবধারা। তবে সব ইহুদি জায়নবাদী নয়। তাদের মধ্যে উদার আধুনিক মানুষ অনেক আছে। প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু যুদ্ধে ধর্মীয় উন্মাদনা সৃষ্টি করতে সব সময় ধর্মগ্রন্থ ‘তোরাহ’ ব্যবহার করেন। যেমন ১২ জুন ইরান আক্রমণের নাম ‘জাগ্রত সিংহ অপারেশন’ ওল্ড টেস্টামেন্টভিত্তিক কাহিনি থেকে। তিনি আক্রমণের আগে জেরুজালেমে ওয়েস্ট ওয়ালে গিয়ে প্রার্থনা করেন। ওদিকে জাব্বাজোব্বা পরা আয়াতুল্লাহ শাসকেরা ইরানকে মধ্যপ্রাচ্যে শিয়াপন্থী অভিভাবক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চায়। এরা এমন ধর্মান্ধ যে ২০২২ সালে মাহশা আমিনি নামে এক তরুণীর হিজাব সরে গিয়ে চুল বেরিয়ে পড়ায় নীতি-পুলিশ তাঁর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। বন্দী অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হলে প্রতিবাদকারী শতাধিক কিশোরী-তরুণীকে মিছিলে গুলি করে মারা হয়। যুদ্ধে ধর্মীয় উপাদান ব্যবহার করা হলেও এটি মূলত ক্ষমতা ও আঞ্চলিক আধিপত্যের লড়াই। ইসরায়েল হচ্ছে একটি আঞ্চলিক পরাশক্তি, যাকে পশ্চিমা বিশ্ব, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র নিরঙ্কুশ সমর্থন দিয়ে থাকে। ইরান বড় আকারে পারমাণবিক গবেষণা করে, কিন্তু পারমাণবিক বোমা বানাতে চায়, তা স্বীকার না করে শান্তিপূর্ণ উন্নয়নের কাজে ব্যবহারের কথা বলে। আন্তর্জাতিক পরমাণু সংস্থাকে পরিদর্শনের অনুমতি দেয়। আলোচনায়ও বসেছে। এর আগের মেয়াদে ক্ষমতায় থাকতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প একতরফা আলোচনা ভেঙে দিয়েছিলেন। ইসরায়েল এবার ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় বোমা ফেলে, কয়েকজন সেনাপতি ও পরমাণুবিজ্ঞানীকে গুপ্তহত্যা করে। ইরান কার্যকরভাবে ইসরায়েলে পাল্টা ক্ষেপণাস্ত্র হামলা করতে পারলে ইসরায়েলের ইজ্জত বাঁচাতে যুক্তরাষ্ট্র শঠতাপূর্ণভাবে বি-টু যুদ্ধবিমান দিয়ে ইরানে বড় হামলা করে। তার পরই ট্রাম্প যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করেন। তিন রাষ্ট্রের দুই পক্ষের ১২ দিনের যুদ্ধ। সন্দেহ করা হয় যে ২০০৩ সালে জনবিধ্বংসী অস্ত্র আছে বলে মিথ্যা অজুহাতে ইরাক আক্রমণ করে সাদ্দাম হোসেনকে উৎখাত ও ফাঁসি দেওয়ার মতো ঘটনা ইরানে ঘটানোর জন্য যুক্তরাষ্ট্র ফন্দি আঁটতে পারে।
এবার কে জিতল?
(হেসে) তিন পক্ষই। যুদ্ধ শেষ হওয়ার দিন ২৪ জুনেই আন্তর্জাতিক মিডিয়া জানায়, যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, তারা ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র বানানো অনেক পিছিয়ে দিতে পেরেছে। ইসরায়েল বলেছে, তারা ইরানকে দুর্বল করে দিয়েছে। অবশ্য ইসরায়েলের আরেকটি লক্ষ্য খামেনি সরকারের পতন ঘটেনি—সে সম্পর্কে নীরব। আর ইরান বলেছে, তারা উপযুক্ত জবাব দিয়েছে। সর্বশেষ ২৬ জুন টিভিতে সম্প্রচারিত ভিডিও বার্তায় আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি কাতারে মার্কিন ঘাঁটিতে ইরানি ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতকে ‘সজোরে চপেটাঘাত’ উল্লেখ করে বলেন, ‘ইসরায়েল ধসে পড়েছে।’
বলাই যায়, ইসরায়েলি ‘সিংহ’ গর্জন মোতাবেক শিকার ধরতে পারেনি। ইউরোপে কিছুটা কূটনৈতিক বিচ্ছিন্নতায় পড়েছে। তবে নেতানিয়াহুর ক্ষমতার আয়ু কিছু বাড়তে পারে। ইরান ধারণার চেয়ে বেশি সক্ষমতা দেখিয়েছে এবং খামেনির সরকার পড়ে যাওয়ার বিপরীতে জনমতের দিক থেকে কিছুটা সংহত হয়েছে। বিশ্বের মুসলমানদের সমর্থন পেয়েছে। তারা বাংলাদেশকে ধন্যবাদও জানিয়েছে। আর আমেরিকা কিছুটা দুর্বল ইরানকে আলোচনার টেবিলে বসাবে। তিন পক্ষই বড় যুদ্ধ চায়নি, সেখানেও জিতেছে।
এই ১২ দিনের উপসংহারহীন অসমাপ্ত যুদ্ধের আরেকটি দিক হলো চীন ও রাশিয়ার কৌশলগত উত্থান। চীন চায় মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন আধিপত্যে ফাটল ধরুক। তারা ইরানকে কিছুটা উসকানি বা কৌশলগত সহায়তা দিয়েছে বলে ধারণা। রাশিয়াও মধ্যপ্রাচ্যে বন্ধুত্ব বাড়াতে সক্রিয়।
ইরানে বড় আক্রমণ দেখে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরুর আশঙ্কার কথা বলা হচ্ছিল।
তেমন আশঙ্কা দূরবর্তী বলেই মনে হয়। তবে স্থানিক যুদ্ধের পুনরাবৃত্তি হতে পারে বা বলতে পারেন ‘প্রক্সিতে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ’ সম্ভব। দুটি বৈশ্বিক মেরু তৈরি হয়েছে: একদিকে যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েল-ন্যাটো ব্লক, অন্যদিকে চীন-রাশিয়া-ইরান-হিজবুল্লাহ-হামাস।
এই দুই মেরুর মধ্যে সরাসরি সংঘর্ষ না হলেও তারা পরোক্ষে যুদ্ধ করছে ইউক্রেন, সিরিয়া, ইয়েমেন, গাজা প্রভৃতি যুদ্ধক্ষেত্রে। এখন তো যুদ্ধ শুধু অস্ত্রের না, তথ্যেরও। মিডিয়া, সামাজিক মাধ্যম, কূটনৈতিক মঞ্চ—সবই যুদ্ধে জড়িয়ে। থেমে নেই।
বাংলাদেশের অবস্থান কী হওয়া উচিত? আমাদের কি নিরপেক্ষ থাকা উচিত, নাকি অবস্থান নিতে হবে?
দৃঢ় অবস্থান, আমরা যুদ্ধ চাই না। সাংবিধানিকভাবে আমাদের পররাষ্ট্রনীতি সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে শত্রুতা নয়। তবে অবশ্যই ন্যায়-অন্যায় ও মানবাধিকারের প্রশ্নে গাজা যুদ্ধে ও ইরান আক্রমণে ইসরায়েলের তীব্র নিন্দা করেছি আমরা। ইসরায়েলকে আমরা রাষ্ট্র হিসেবে এখনো স্বীকৃতি দিইনি। আমাদের জনগণের একটি মুসলিম ভ্রাতৃত্ববোধ আছে।
তবে রাষ্ট্র হিসেবে আমাদের কৌশলগত ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। ইরানের সঙ্গে আমাদের বাণিজ্য ও জ্বালানি সহযোগিতা আছে। আমরা আন্তর্জাতিক শান্তির পক্ষে এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে অবশ্যই আপসহীন।

সংযোগ সড়ক না থাকলে সেতু নির্মাণ করলে তা এলাকার জনগণের কোনো কাজে আসে না। এ রকম একটা অপ্রয়োজনীয় সেতু নির্মাণ করা হয়েছে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলায় সেরার খালের ওপর। কোটি টাকার বেশি বরাদ্দে সেতুটি নির্মাণ করা হয় বছরখানেক আগে। কিন্তু সংযোগ সড়ক নির্মাণ না করায় ঝুঁকি নিয়ে মই বেয়ে সেতু পারাপার...
১৬ ঘণ্টা আগে
নির্বাচনের প্রসঙ্গ এলেই প্রথমে আমার মনে পড়ে যায় সোভিয়েত ইউনিয়নে প্রচলিত কৌতুকগুলোর কথা। ছিল লৌহশাসন, অথচ সেই শাসনের ফাঁকফোকর দিয়ে বেরিয়ে আসত দমফাটানো কৌতুক। সে সময়ের কৌতুকের একটাই বলি এখানে। একজন ভোটারকে টেলিভিশনের এক কর্মী প্রশ্ন করায় তিনি উত্তর দিলেন, ‘হ্যাঁ, আমি ভোট দিয়েছি।
১৬ ঘণ্টা আগে
২০২৫ সালে বাজারে ঢুকলেই যে চাপ লাগে, তা শুধু দামের নয়, মানুষের দৈনন্দিন লড়াইয়ের অনুভূতিও। আন্তর্জাতিক বাজারে চাল, গম, সয়াবিন তেল, ডাল, চিনিসহ প্রধান খাদ্যপণ্যের দাম ২০২৩ সালের তুলনায় ১২ থেকে ১৮ শতাংশ কমেছে। এফএওর খাদ্যমূল্য সূচক ২০২৪ সালে টানা ১২ মাস কমেছে এবং ২০২৫ সালেও সেই ধারা চলছে।
১৬ ঘণ্টা আগে
বিজয় দিবস পার হলো। আরও একটি বিজয়ের আনন্দ যুক্ত হলো স্বাধীন বাংলাদেশের মানুষের মনে। যদিও এই বছরে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধপক্ষের নানা প্রচারণার দেখা পাওয়া গেছে, কিন্তু দেশের মানুষ তাতে খুব বেশি বিভ্রান্ত হয়েছে, এমনটা বলা যাবে না।
২ দিন আগেসম্পাদকীয়

সংযোগ সড়ক না থাকলে সেতু নির্মাণ করলে তা এলাকার জনগণের কোনো কাজে আসে না। এ রকম একটা অপ্রয়োজনীয় সেতু নির্মাণ করা হয়েছে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলায় সেরার খালের ওপর। কোটি টাকার বেশি বরাদ্দে সেতুটি নির্মাণ করা হয় বছরখানেক আগে। কিন্তু সংযোগ সড়ক নির্মাণ না করায় ঝুঁকি নিয়ে মই বেয়ে সেতু পারাপার করতে হচ্ছে স্থানীয় বাসিন্দাদের। এতে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনার ঝুঁকিতে পড়েছেন বৃদ্ধ, নারী ও স্কুলগামী শিশুরা। সংযোগ সড়ক না থাকায় স্থানীয় বাসিন্দারা টাকা তুলে মইয়ের ব্যবস্থা করেছেন। আবার মই বেয়ে উঠতে গিয়ে কয়েকজন গুরুতর দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন। এ নিয়ে ১৭ ডিসেম্বর আজকের পত্রিকায় একটি সংবাদ ছাপা হয়েছে।
সংবাদ সূত্রে জানা যায়, প্রকল্পটির জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয় ১ কোটি ৭ লাখ টাকা। ৪০ ফুট দৈর্ঘ্য এবং ১৪ ফুট প্রস্থের সেতুটি নির্মাণের কার্যাদেশ পায় মিথুন এন্টারপ্রাইজ। প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্বে রয়েছে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বক্তব্যটি আরও কৌতূহল উদ্দীপক। প্রকল্পের ঠিকাদারের দাবি, মাটি না পাওয়ায় তাঁরা সংযোগ সড়ক নির্মাণ করতে পারেননি।
অতীতেও আমাদের দেশে এ রকম অসংখ্য সেতুর হদিস পাওয়া গেছে। যেখানে কোনো জনবসতি বা রাস্তা নেই, সেখানে সেতু তৈরি করার অনেক নজির রয়েছে। যাঁরা এসব সেতু নির্মাণের দায়িত্ব পাচ্ছেন তাঁরা জনগণের কথা যে ভাবেন না, সেটা স্পষ্ট। সেতুর নামে যেখানে খুশি সেখানে একটি কাঠামো দাঁড় করিয়ে জনগণের করের টাকা কীভাবে নিজেদের পকেটে ঢোকানো যায়, তাঁরা সেই চিন্তায় নিমগ্ন থাকেন। অথচ দেশের অনেক জায়গায় সেতুর প্রয়োজন হলেও সেসব জায়গায় সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে না। এতে বছরের পর বছর চলে গেলেও কারও কোনো দুশ্চিন্তা হয় না। ফলে বাধ্য হয়েই ওই সব এলাকার জনগণকে বাঁশের সাঁকো, কাঠের সেতু কিংবা নৌকায় করে ঝুঁকি নিয়ে নদী পার হতে দেখা যায়। আবার সংস্কারের অভাবে অনেক সেতু জরাজীর্ণ ও ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ে আছে। প্রায়ই এ ধরনের ঘটনা ঘটছে।
দেশের মানুষের যোগাযোগের কথা চিন্তা করে সরকারি উদ্যোগে অনেক সেতুই নির্মাণ করা হচ্ছে। কিন্তু এসব সেতু আদৌ জনগণের কল্যাণে আসছে কি না, তা নিয়ে কর্তৃপক্ষের যেন কোনো ভাবনা নেই। তবে সেতু নির্মাণের সঙ্গে জড়িত স্বার্থান্বেষী একটি গোষ্ঠী যে নিজেদের লাভের জন্য এ ধরনের অপকর্ম করছে, তা ব্যাখ্যা না করলেও চলে।
সেতু নির্মাণের নামে জনগণের অর্থের অপচয় বন্ধ করতে হবে। সেতু নির্মাণ করতে হবে প্রকৃত অর্থেই জনগণের কথা মাথায় রেখে। আর যে সেতু নির্মাণ করে এলাকাবাসীর কোনো কাজে আসে না, উল্টো দুর্ভোগ সৃষ্টি করে, তা নির্মাণের কোনো প্রয়োজন নেই। এখন সংযোগ সড়ক নির্মাণের জন্য ঠিকাদারকে বাধ্য করতে হবে। এ ক্ষেত্রে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অবহেলার দায় এড়ানোর সুযোগ নেই।

সংযোগ সড়ক না থাকলে সেতু নির্মাণ করলে তা এলাকার জনগণের কোনো কাজে আসে না। এ রকম একটা অপ্রয়োজনীয় সেতু নির্মাণ করা হয়েছে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলায় সেরার খালের ওপর। কোটি টাকার বেশি বরাদ্দে সেতুটি নির্মাণ করা হয় বছরখানেক আগে। কিন্তু সংযোগ সড়ক নির্মাণ না করায় ঝুঁকি নিয়ে মই বেয়ে সেতু পারাপার করতে হচ্ছে স্থানীয় বাসিন্দাদের। এতে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনার ঝুঁকিতে পড়েছেন বৃদ্ধ, নারী ও স্কুলগামী শিশুরা। সংযোগ সড়ক না থাকায় স্থানীয় বাসিন্দারা টাকা তুলে মইয়ের ব্যবস্থা করেছেন। আবার মই বেয়ে উঠতে গিয়ে কয়েকজন গুরুতর দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন। এ নিয়ে ১৭ ডিসেম্বর আজকের পত্রিকায় একটি সংবাদ ছাপা হয়েছে।
সংবাদ সূত্রে জানা যায়, প্রকল্পটির জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয় ১ কোটি ৭ লাখ টাকা। ৪০ ফুট দৈর্ঘ্য এবং ১৪ ফুট প্রস্থের সেতুটি নির্মাণের কার্যাদেশ পায় মিথুন এন্টারপ্রাইজ। প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্বে রয়েছে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বক্তব্যটি আরও কৌতূহল উদ্দীপক। প্রকল্পের ঠিকাদারের দাবি, মাটি না পাওয়ায় তাঁরা সংযোগ সড়ক নির্মাণ করতে পারেননি।
অতীতেও আমাদের দেশে এ রকম অসংখ্য সেতুর হদিস পাওয়া গেছে। যেখানে কোনো জনবসতি বা রাস্তা নেই, সেখানে সেতু তৈরি করার অনেক নজির রয়েছে। যাঁরা এসব সেতু নির্মাণের দায়িত্ব পাচ্ছেন তাঁরা জনগণের কথা যে ভাবেন না, সেটা স্পষ্ট। সেতুর নামে যেখানে খুশি সেখানে একটি কাঠামো দাঁড় করিয়ে জনগণের করের টাকা কীভাবে নিজেদের পকেটে ঢোকানো যায়, তাঁরা সেই চিন্তায় নিমগ্ন থাকেন। অথচ দেশের অনেক জায়গায় সেতুর প্রয়োজন হলেও সেসব জায়গায় সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে না। এতে বছরের পর বছর চলে গেলেও কারও কোনো দুশ্চিন্তা হয় না। ফলে বাধ্য হয়েই ওই সব এলাকার জনগণকে বাঁশের সাঁকো, কাঠের সেতু কিংবা নৌকায় করে ঝুঁকি নিয়ে নদী পার হতে দেখা যায়। আবার সংস্কারের অভাবে অনেক সেতু জরাজীর্ণ ও ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ে আছে। প্রায়ই এ ধরনের ঘটনা ঘটছে।
দেশের মানুষের যোগাযোগের কথা চিন্তা করে সরকারি উদ্যোগে অনেক সেতুই নির্মাণ করা হচ্ছে। কিন্তু এসব সেতু আদৌ জনগণের কল্যাণে আসছে কি না, তা নিয়ে কর্তৃপক্ষের যেন কোনো ভাবনা নেই। তবে সেতু নির্মাণের সঙ্গে জড়িত স্বার্থান্বেষী একটি গোষ্ঠী যে নিজেদের লাভের জন্য এ ধরনের অপকর্ম করছে, তা ব্যাখ্যা না করলেও চলে।
সেতু নির্মাণের নামে জনগণের অর্থের অপচয় বন্ধ করতে হবে। সেতু নির্মাণ করতে হবে প্রকৃত অর্থেই জনগণের কথা মাথায় রেখে। আর যে সেতু নির্মাণ করে এলাকাবাসীর কোনো কাজে আসে না, উল্টো দুর্ভোগ সৃষ্টি করে, তা নির্মাণের কোনো প্রয়োজন নেই। এখন সংযোগ সড়ক নির্মাণের জন্য ঠিকাদারকে বাধ্য করতে হবে। এ ক্ষেত্রে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অবহেলার দায় এড়ানোর সুযোগ নেই।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগে পড়াশোনা করা মোজাম্মেল হোসেন, ঘনিষ্ঠ মহলে যিনি মঞ্জু নামেই বেশি পরিচিত, ছাত্রাবস্থায় ১৯৬৯ সালে সাপ্তাহিক ‘যুগবাণী’ ও ১৯৭০ সালে সাপ্তাহিক ‘একতা’য় প্রতিবেদক হিসেবে পেশাজীবন শুরু করেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় ‘মুক্তিযুদ্ধ’ পত্রিকার সহকারী সম্পাদক ছিলেন।
২৯ জুন ২০২৫
নির্বাচনের প্রসঙ্গ এলেই প্রথমে আমার মনে পড়ে যায় সোভিয়েত ইউনিয়নে প্রচলিত কৌতুকগুলোর কথা। ছিল লৌহশাসন, অথচ সেই শাসনের ফাঁকফোকর দিয়ে বেরিয়ে আসত দমফাটানো কৌতুক। সে সময়ের কৌতুকের একটাই বলি এখানে। একজন ভোটারকে টেলিভিশনের এক কর্মী প্রশ্ন করায় তিনি উত্তর দিলেন, ‘হ্যাঁ, আমি ভোট দিয়েছি।
১৬ ঘণ্টা আগে
২০২৫ সালে বাজারে ঢুকলেই যে চাপ লাগে, তা শুধু দামের নয়, মানুষের দৈনন্দিন লড়াইয়ের অনুভূতিও। আন্তর্জাতিক বাজারে চাল, গম, সয়াবিন তেল, ডাল, চিনিসহ প্রধান খাদ্যপণ্যের দাম ২০২৩ সালের তুলনায় ১২ থেকে ১৮ শতাংশ কমেছে। এফএওর খাদ্যমূল্য সূচক ২০২৪ সালে টানা ১২ মাস কমেছে এবং ২০২৫ সালেও সেই ধারা চলছে।
১৬ ঘণ্টা আগে
বিজয় দিবস পার হলো। আরও একটি বিজয়ের আনন্দ যুক্ত হলো স্বাধীন বাংলাদেশের মানুষের মনে। যদিও এই বছরে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধপক্ষের নানা প্রচারণার দেখা পাওয়া গেছে, কিন্তু দেশের মানুষ তাতে খুব বেশি বিভ্রান্ত হয়েছে, এমনটা বলা যাবে না।
২ দিন আগেজাহীদ রেজা নূর

নির্বাচনের প্রসঙ্গ এলেই প্রথমে আমার মনে পড়ে যায় সোভিয়েত ইউনিয়নে প্রচলিত কৌতুকগুলোর কথা। ছিল লৌহশাসন, অথচ সেই শাসনের ফাঁকফোকর দিয়ে বেরিয়ে আসত দমফাটানো কৌতুক। সে সময়ের কৌতুকের একটাই বলি এখানে। একজন ভোটারকে টেলিভিশনের এক কর্মী প্রশ্ন করায় তিনি উত্তর দিলেন, ‘হ্যাঁ, আমি ভোট দিয়েছি। একজন প্রার্থী ছিলেন, তাঁকেই উৎসবমুখর পরিবেশে আমরা বেছে নিয়েছি!’
ভোটারের ভোটের স্বাধীনতা বলতে এ রকম একটি আবহই বিরাজ করত সেখানে। আমাদের দেশে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে হচ্ছে নির্বাচন। নানা রাজনৈতিক মতাবলম্বী দল অংশ নেবে নির্বাচনে। ফলে, আমাদের নির্বাচন সোভিয়েত ইউনিয়নের মতো একপেশে হবে না। তাই তা নিয়ে কৌতুক করার সুযোগই থাকবে না নিশ্চয়ই।
রাশিয়ায় নির্বাচন নিয়ে ইদানীং নতুন নতুন কৌতুকের জন্ম হচ্ছে। একটু হালকা চালে সে কৌতুকগুলো বলে আমাদের দেশের নির্বাচনের ব্যাপারে কিছু কথা বলব। সেগুলো অবশ্য কৌতুককর হবে না।
রাশিয়ার মানুষ নিজেদেরই প্রশ্ন করে, ‘আমাদের দেশে নির্বাচন আর লটারির মধ্যে পার্থক্য কী?’ নিজেকে এই প্রশ্ন করে কিছুক্ষণ ভেবে নিজেই উত্তর দেয়, ‘লটারিতে অন্তত ভিন্ন ফল হওয়ার একটা সুযোগ থাকে।’
আরেকটি প্রশ্ন-উত্তর:
— রাশিয়ায় নির্বাচন সব সময় ‘সৎ’ভাবে হয় কেন?
— কারণ ভোট শুরু হওয়ার আগেই সবাই জানে ফল কী হবে।
পরের কৌতুকটা রাজনীতির একটা মোক্ষম জায়গায় হাত দিয়েছে। কোন দেশের জন্য তা কার্যকর, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলার অবকাশ নেই। কিন্তু প্রশ্ন যেমন, উত্তরও তেমন:
— নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি আর রূপকথার মধ্যে পার্থক্য কী?
— রূপকথায় শেষ পর্যন্ত ভালোই জেতে।
স্বৈরাচারী নির্বাচনে কীভাবে প্রার্থীকে নির্বাচিত করা হয়, তা নিয়ে কৌতুকে বলা হচ্ছে:
নির্বাচনে একজনই প্রার্থী ছিল। তবু
ব্যালট পেপারে দুইটা অপশন ছিল: ‘পক্ষে’ আর ‘খুবই পক্ষে’।
রাশিয়াকে সরিয়ে রাখা যাক। জর্জ অরওয়েলের নামে একটা উদ্ধৃতি ঘুরে বেড়ায় অন্তর্জালে। তিনি বলেছেন, ‘যারা ব্যর্থ লোক, চোর, বিশ্বাসঘাতক ও প্রতারকদের পক্ষে ভোট দেয়, তারা তাদের শিকার নয়—তারা তাদের সহযোগী।’
কিন্তু জর্জ অরওয়েল এ রকম কথা কোথাও বলেছেন, এমন প্রমাণ পাওয়া যায় না। কেউ না কেউ এ রকম কিছু বলে তা অরওয়েলের ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়েছেন। অরওয়েল বলে থাকুন আর না-ই থাকুন, কথাটা কিন্তু মিথ্যে নয়। খুঁজতে গিয়ে দেখা গেল কাছাকাছি এ ধরনের কথা অনেকেই বলেছেন। যেমন মার্কিন উদ্ভাবক, ভিডিও গেম ডিজাইনার, প্রকৌশলী রালফ বেয়ার বলেছিলেন, ‘শৈশবের প্রধান সুবিধা হলো অজ্ঞানতা। তুমি এখনো জানো না যে পৃথিবীটি চালায় প্রতারক, চোর, মিথ্যাবাদী, বিশ্বাসঘাতক, খুনি এবং দুষ্টজনেরা।’
একটু ভিন্নভাবে মেক্সিকোর বিপ্লবের নেতা এমিলিয়ানো সাপাতা বলেছিলেন, ‘আমি চোর এবং খুনিকে ক্ষমা করতে পারি, কিন্তু বিশ্বাসঘাতককে কখনো না।’
এ রকম অনেক কথাই আছে যেগুলো শুনতে ভালো লাগে। বিশ্বাসও হয়। কিন্তু সৎ মানুষের খোঁজ করতে গেলে তাকে খুঁজে পাওয়া দিন দিন কঠিন হয়ে পড়ছে।
এই জায়গায় এসেই আমাদের একটু সতর্ক হতে হয়। কৌতুক থেকে বেরিয়ে আসার পথ খুঁজতে হয়। আমাদের দেশে ভালো নির্বাচন একেবারে হয়নি, তা নয়। কিন্তু রাজনীতির মাঠে দিনের পর দিন সংসদে যাওয়ার জন্য যে মানুষগুলো প্রস্তুত হয়েছেন এবং নির্বাচিত হয়েছেন, তাঁদের মধ্যে এমন অনেকেই আছেন, যাঁরা কালোটাকার মালিক। এভাবে কথাটা বললে অবশ্য সেটাও হয়ে ওঠে কৌতুক। বরং বলা যায়, কালোটাকা ছাড়া নির্বাচন করা খুবই কঠিন, আর তাতে জেতা প্রায় অসম্ভব।
কালোটাকার মালিকদের কথা বললে আবার আমাকে নস্টালজিয়া পেয়ে বসে। নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত আমি রাশিয়ায় ছিলাম। দশকের শুরুতেই ধরাশায়ী হয়েছিল কমিউনিস্ট শাসন। সারা বিশ্বের সমাজতান্ত্রিক দেশগুলোয় তখন চলছিল ভাঙন। পশ্চিমা বিশ্বের মদদ ছিল তাতে, কিন্তু সমাজতান্ত্রিক বিশ্বের স্থবিরতা এবং স্বৈরাচারও সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলোর পতনের জন্য অনেকাংশে দায়ী—এ কথা না বললে সত্যের অপলাপ হবে।
সোভিয়েত ইউনিয়ন ভাঙনের পর একটা সময় এসেছিল, যখন হঠাৎ করেই আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়েছিল নব্য রুশরা। এই নব্য রুশদের কেউ বেরিয়ে এসেছিল কমিউনিস্ট পার্টি থেকে, কেউ তাদের ছাত্রসংগঠন কমসোমল থেকে, কেউ পার্টি না করলেও কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা জমিয়ে পুঁজির পাহাড়ে উঠে বসে পড়েছিল। এই নব্য রুশরা ‘জাতে’ উঠতে চাইত। তারা সে সময়ের বিলাসবহুল ‘মার্সিডিস ৬০০’ গাড়ি কিনত, সেটাই চালাত। এ রকম গাড়ি দেখলেই বোঝা যেত, এই লোক নির্ঘাত নব্য রুশ। তারা গলায় পরত মোটা সোনার চেইন। আর শরীরে জড়াত গাঢ় গোলাপি জ্যাকেট। এক পুরুষে অভিজাত হওয়ার খায়েশ মেটাতে
চাইত তারা। তাদের নিয়ে একটা কৌতুক বলে নেওয়া যাক।
দুই নব্য রুশের দেখা হয়েছে মস্কোতে। প্রথমজনের নিখুঁত স্যুটের সঙ্গে একটি মানানসই টাই দেখে দ্বিতীয় নব্য রুশ প্রশ্ন করছে, ‘এই টাই তুমি কোথায় কিনেছ? কত দিয়ে কিনেছ?’
প্রথম নব্য রুশ বলল, ‘টাইটা আমি কিনেছি প্যারিস থেকে, ১০০০ ডলার পড়েছে দাম।’
চুক চুক করে দ্বিতীয়জন বলল, ‘আরে! কী বোকা তুমি! লন্ডনে কিনলে এই একই টাই তুমি ২০০০ ডলারে কিনতে পারতে!’
মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন। নতুন গোঁফ উঠলে যেমন বারবার আয়নার সামনে দাঁড়ায় সদ্য তরুণ, তেমনি নব্য ক্ষমতার স্বাদ পেলে নব্য রাজনীতিবিদেরাও এমন সব কাণ্ড করতে থাকেন, যা অনেক কৌতুকের জন্ম দেয়।
বলে রাখা ভালো, সেই নব্য রুশরা এখন ইতিহাস। তারা বর্তমানে অচল। তাই তাদের নিয়ে নতুন কোনো কৌতুক তৈরি হয় না।
২. নির্বাচন নিয়ে কথা বলার আগে একটু হালকা আলাপ করে নিলাম। রাজনৈতিকভাবে জটিল হয়ে উঠছে পরিস্থিতি, এ অবস্থায় মানসিক চাপ নেওয়া ঠিক হবে না। নির্বাচন পর্যন্ত পৌঁছাতে হবে, নির্বাচিত দল ক্ষমতা হাতে নেবে এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করা, অর্থনীতিতে গতি আনা, জনমনে নিরাপত্তা দেওয়ার কাজগুলো তারা করবে নিশ্চয়ই। এর জন্য সবচেয়ে আগে দরকার নির্বাচনী পরিবেশ সৃষ্টি করা। রাজনৈতিক, সামাজিক ও প্রশাসনিকভাবে দেশ নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে কি না, সেটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার।
ভালো নির্বাচন করতে হলে ভোটারদের আশ্বস্ত করতে হবে যে তাঁরা ভয়ভীতি ছাড়াই ভোটকেন্দ্রে যেতে পারবেন। প্রত্যেকে সমান সুযোগ পাবেন, স্বচ্ছ ও বিশ্বাসযোগ্যভাবে তাঁর ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন। কোনো শক্তি ভোটারকে ভোটকেন্দ্রে যেতে বাধা দিলে তা প্রতিরোধের ব্যবস্থা থাকছে কি না। এগুলো খুবই জরুরি প্রশ্ন। দেশের মানুষকে বিভাজিত হওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হলে দেশের গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ অন্ধকার হয়ে পড়বে।
ভোটকেন্দ্রে ও তার আশপাশের এলাকার পরিবেশও অনেক কথা বলে দেবে। এবারের নির্বাচনের দিকে বিশ্ববাসীর নজর থাকবে। গায়ের জোরে কিংবা কৌশল করে কেউ যদি নির্বাচনী রায় ছিনতাই করতে চায়, তাহলে সেই নির্বাচন একেবারেই গ্রহণযোগ্যতা পাবে না।
নজর রাখতে হবে প্রশাসনের দিকে। প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যদি দলনিরপেক্ষ আচরণ না করে, কিংবা কোনো না কোনো দলের প্রতি দুর্বল হয়ে পড়ে, তাহলে সে নির্বাচন একেবারেই গ্রহণযোগ্য হবে না। সব দলের প্রতি নির্বাচনী বিধির একই রকম প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।
বিরোধী মতের কণ্ঠ রোধ করার কথা আগের জামানায় যেমন শোনা গেছে, এই জামানায়ও শোনা যায়। ফলে সব দলের জন্য সমান প্রচারের সুযোগ, সভা-সমাবেশ, পোস্টার ইত্যাদির ব্যাপারে নির্দেশনা থাকতে হবে, যেন সবাই নির্ভয়ে তার কাজটা করতে পারে।
নির্বাচন কমিশন কতটা স্বাধীন ও কার্যকর থাকবে, সেটাও একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। ভোট গ্রহণ, গণনা ও ফল ঘোষণায় স্বচ্ছতা না থাকলে পরবর্তীকালে নির্বাচন কমিশনের সদস্যদেরই তার জবাবদিহি করতে হবে। নিকট-অতীতে এই অভিজ্ঞতা মোটেই সুখকর নয়। তাই নির্বাচন কমিশনের উচিত হবে, তাদের স্বচ্ছতা বজায় রাখা, কাউকে ছাড় না দেওয়া।
নির্বাচন আসছে। নির্বাচনের মাধ্যমে দেশে স্থিতিশীল সরকার ক্ষমতায় আসুক। শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন হোক, ক্ষমতার রদবদল হোক সাংবিধানিকভাবে। আবার নির্বাচন হোক, সবাই তাতে যুক্ত হোক, উৎসবমুখর পরিবেশে সবাই নির্বাচনী প্রচারণা চালাক, ভোটার নির্ভয়ে তাঁর রায় প্রদান করুন। ফিরে আসুক গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া। এবং সেই সঙ্গে মহান মুক্তিযুদ্ধের অঙ্গীকারগুলো বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিক নির্বাচিত সরকার। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কটাক্ষ করার প্রবণতা বন্ধ হোক।

নির্বাচনের প্রসঙ্গ এলেই প্রথমে আমার মনে পড়ে যায় সোভিয়েত ইউনিয়নে প্রচলিত কৌতুকগুলোর কথা। ছিল লৌহশাসন, অথচ সেই শাসনের ফাঁকফোকর দিয়ে বেরিয়ে আসত দমফাটানো কৌতুক। সে সময়ের কৌতুকের একটাই বলি এখানে। একজন ভোটারকে টেলিভিশনের এক কর্মী প্রশ্ন করায় তিনি উত্তর দিলেন, ‘হ্যাঁ, আমি ভোট দিয়েছি। একজন প্রার্থী ছিলেন, তাঁকেই উৎসবমুখর পরিবেশে আমরা বেছে নিয়েছি!’
ভোটারের ভোটের স্বাধীনতা বলতে এ রকম একটি আবহই বিরাজ করত সেখানে। আমাদের দেশে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে হচ্ছে নির্বাচন। নানা রাজনৈতিক মতাবলম্বী দল অংশ নেবে নির্বাচনে। ফলে, আমাদের নির্বাচন সোভিয়েত ইউনিয়নের মতো একপেশে হবে না। তাই তা নিয়ে কৌতুক করার সুযোগই থাকবে না নিশ্চয়ই।
রাশিয়ায় নির্বাচন নিয়ে ইদানীং নতুন নতুন কৌতুকের জন্ম হচ্ছে। একটু হালকা চালে সে কৌতুকগুলো বলে আমাদের দেশের নির্বাচনের ব্যাপারে কিছু কথা বলব। সেগুলো অবশ্য কৌতুককর হবে না।
রাশিয়ার মানুষ নিজেদেরই প্রশ্ন করে, ‘আমাদের দেশে নির্বাচন আর লটারির মধ্যে পার্থক্য কী?’ নিজেকে এই প্রশ্ন করে কিছুক্ষণ ভেবে নিজেই উত্তর দেয়, ‘লটারিতে অন্তত ভিন্ন ফল হওয়ার একটা সুযোগ থাকে।’
আরেকটি প্রশ্ন-উত্তর:
— রাশিয়ায় নির্বাচন সব সময় ‘সৎ’ভাবে হয় কেন?
— কারণ ভোট শুরু হওয়ার আগেই সবাই জানে ফল কী হবে।
পরের কৌতুকটা রাজনীতির একটা মোক্ষম জায়গায় হাত দিয়েছে। কোন দেশের জন্য তা কার্যকর, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলার অবকাশ নেই। কিন্তু প্রশ্ন যেমন, উত্তরও তেমন:
— নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি আর রূপকথার মধ্যে পার্থক্য কী?
— রূপকথায় শেষ পর্যন্ত ভালোই জেতে।
স্বৈরাচারী নির্বাচনে কীভাবে প্রার্থীকে নির্বাচিত করা হয়, তা নিয়ে কৌতুকে বলা হচ্ছে:
নির্বাচনে একজনই প্রার্থী ছিল। তবু
ব্যালট পেপারে দুইটা অপশন ছিল: ‘পক্ষে’ আর ‘খুবই পক্ষে’।
রাশিয়াকে সরিয়ে রাখা যাক। জর্জ অরওয়েলের নামে একটা উদ্ধৃতি ঘুরে বেড়ায় অন্তর্জালে। তিনি বলেছেন, ‘যারা ব্যর্থ লোক, চোর, বিশ্বাসঘাতক ও প্রতারকদের পক্ষে ভোট দেয়, তারা তাদের শিকার নয়—তারা তাদের সহযোগী।’
কিন্তু জর্জ অরওয়েল এ রকম কথা কোথাও বলেছেন, এমন প্রমাণ পাওয়া যায় না। কেউ না কেউ এ রকম কিছু বলে তা অরওয়েলের ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়েছেন। অরওয়েল বলে থাকুন আর না-ই থাকুন, কথাটা কিন্তু মিথ্যে নয়। খুঁজতে গিয়ে দেখা গেল কাছাকাছি এ ধরনের কথা অনেকেই বলেছেন। যেমন মার্কিন উদ্ভাবক, ভিডিও গেম ডিজাইনার, প্রকৌশলী রালফ বেয়ার বলেছিলেন, ‘শৈশবের প্রধান সুবিধা হলো অজ্ঞানতা। তুমি এখনো জানো না যে পৃথিবীটি চালায় প্রতারক, চোর, মিথ্যাবাদী, বিশ্বাসঘাতক, খুনি এবং দুষ্টজনেরা।’
একটু ভিন্নভাবে মেক্সিকোর বিপ্লবের নেতা এমিলিয়ানো সাপাতা বলেছিলেন, ‘আমি চোর এবং খুনিকে ক্ষমা করতে পারি, কিন্তু বিশ্বাসঘাতককে কখনো না।’
এ রকম অনেক কথাই আছে যেগুলো শুনতে ভালো লাগে। বিশ্বাসও হয়। কিন্তু সৎ মানুষের খোঁজ করতে গেলে তাকে খুঁজে পাওয়া দিন দিন কঠিন হয়ে পড়ছে।
এই জায়গায় এসেই আমাদের একটু সতর্ক হতে হয়। কৌতুক থেকে বেরিয়ে আসার পথ খুঁজতে হয়। আমাদের দেশে ভালো নির্বাচন একেবারে হয়নি, তা নয়। কিন্তু রাজনীতির মাঠে দিনের পর দিন সংসদে যাওয়ার জন্য যে মানুষগুলো প্রস্তুত হয়েছেন এবং নির্বাচিত হয়েছেন, তাঁদের মধ্যে এমন অনেকেই আছেন, যাঁরা কালোটাকার মালিক। এভাবে কথাটা বললে অবশ্য সেটাও হয়ে ওঠে কৌতুক। বরং বলা যায়, কালোটাকা ছাড়া নির্বাচন করা খুবই কঠিন, আর তাতে জেতা প্রায় অসম্ভব।
কালোটাকার মালিকদের কথা বললে আবার আমাকে নস্টালজিয়া পেয়ে বসে। নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত আমি রাশিয়ায় ছিলাম। দশকের শুরুতেই ধরাশায়ী হয়েছিল কমিউনিস্ট শাসন। সারা বিশ্বের সমাজতান্ত্রিক দেশগুলোয় তখন চলছিল ভাঙন। পশ্চিমা বিশ্বের মদদ ছিল তাতে, কিন্তু সমাজতান্ত্রিক বিশ্বের স্থবিরতা এবং স্বৈরাচারও সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলোর পতনের জন্য অনেকাংশে দায়ী—এ কথা না বললে সত্যের অপলাপ হবে।
সোভিয়েত ইউনিয়ন ভাঙনের পর একটা সময় এসেছিল, যখন হঠাৎ করেই আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়েছিল নব্য রুশরা। এই নব্য রুশদের কেউ বেরিয়ে এসেছিল কমিউনিস্ট পার্টি থেকে, কেউ তাদের ছাত্রসংগঠন কমসোমল থেকে, কেউ পার্টি না করলেও কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা জমিয়ে পুঁজির পাহাড়ে উঠে বসে পড়েছিল। এই নব্য রুশরা ‘জাতে’ উঠতে চাইত। তারা সে সময়ের বিলাসবহুল ‘মার্সিডিস ৬০০’ গাড়ি কিনত, সেটাই চালাত। এ রকম গাড়ি দেখলেই বোঝা যেত, এই লোক নির্ঘাত নব্য রুশ। তারা গলায় পরত মোটা সোনার চেইন। আর শরীরে জড়াত গাঢ় গোলাপি জ্যাকেট। এক পুরুষে অভিজাত হওয়ার খায়েশ মেটাতে
চাইত তারা। তাদের নিয়ে একটা কৌতুক বলে নেওয়া যাক।
দুই নব্য রুশের দেখা হয়েছে মস্কোতে। প্রথমজনের নিখুঁত স্যুটের সঙ্গে একটি মানানসই টাই দেখে দ্বিতীয় নব্য রুশ প্রশ্ন করছে, ‘এই টাই তুমি কোথায় কিনেছ? কত দিয়ে কিনেছ?’
প্রথম নব্য রুশ বলল, ‘টাইটা আমি কিনেছি প্যারিস থেকে, ১০০০ ডলার পড়েছে দাম।’
চুক চুক করে দ্বিতীয়জন বলল, ‘আরে! কী বোকা তুমি! লন্ডনে কিনলে এই একই টাই তুমি ২০০০ ডলারে কিনতে পারতে!’
মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন। নতুন গোঁফ উঠলে যেমন বারবার আয়নার সামনে দাঁড়ায় সদ্য তরুণ, তেমনি নব্য ক্ষমতার স্বাদ পেলে নব্য রাজনীতিবিদেরাও এমন সব কাণ্ড করতে থাকেন, যা অনেক কৌতুকের জন্ম দেয়।
বলে রাখা ভালো, সেই নব্য রুশরা এখন ইতিহাস। তারা বর্তমানে অচল। তাই তাদের নিয়ে নতুন কোনো কৌতুক তৈরি হয় না।
২. নির্বাচন নিয়ে কথা বলার আগে একটু হালকা আলাপ করে নিলাম। রাজনৈতিকভাবে জটিল হয়ে উঠছে পরিস্থিতি, এ অবস্থায় মানসিক চাপ নেওয়া ঠিক হবে না। নির্বাচন পর্যন্ত পৌঁছাতে হবে, নির্বাচিত দল ক্ষমতা হাতে নেবে এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করা, অর্থনীতিতে গতি আনা, জনমনে নিরাপত্তা দেওয়ার কাজগুলো তারা করবে নিশ্চয়ই। এর জন্য সবচেয়ে আগে দরকার নির্বাচনী পরিবেশ সৃষ্টি করা। রাজনৈতিক, সামাজিক ও প্রশাসনিকভাবে দেশ নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে কি না, সেটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার।
ভালো নির্বাচন করতে হলে ভোটারদের আশ্বস্ত করতে হবে যে তাঁরা ভয়ভীতি ছাড়াই ভোটকেন্দ্রে যেতে পারবেন। প্রত্যেকে সমান সুযোগ পাবেন, স্বচ্ছ ও বিশ্বাসযোগ্যভাবে তাঁর ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন। কোনো শক্তি ভোটারকে ভোটকেন্দ্রে যেতে বাধা দিলে তা প্রতিরোধের ব্যবস্থা থাকছে কি না। এগুলো খুবই জরুরি প্রশ্ন। দেশের মানুষকে বিভাজিত হওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হলে দেশের গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ অন্ধকার হয়ে পড়বে।
ভোটকেন্দ্রে ও তার আশপাশের এলাকার পরিবেশও অনেক কথা বলে দেবে। এবারের নির্বাচনের দিকে বিশ্ববাসীর নজর থাকবে। গায়ের জোরে কিংবা কৌশল করে কেউ যদি নির্বাচনী রায় ছিনতাই করতে চায়, তাহলে সেই নির্বাচন একেবারেই গ্রহণযোগ্যতা পাবে না।
নজর রাখতে হবে প্রশাসনের দিকে। প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যদি দলনিরপেক্ষ আচরণ না করে, কিংবা কোনো না কোনো দলের প্রতি দুর্বল হয়ে পড়ে, তাহলে সে নির্বাচন একেবারেই গ্রহণযোগ্য হবে না। সব দলের প্রতি নির্বাচনী বিধির একই রকম প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।
বিরোধী মতের কণ্ঠ রোধ করার কথা আগের জামানায় যেমন শোনা গেছে, এই জামানায়ও শোনা যায়। ফলে সব দলের জন্য সমান প্রচারের সুযোগ, সভা-সমাবেশ, পোস্টার ইত্যাদির ব্যাপারে নির্দেশনা থাকতে হবে, যেন সবাই নির্ভয়ে তার কাজটা করতে পারে।
নির্বাচন কমিশন কতটা স্বাধীন ও কার্যকর থাকবে, সেটাও একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। ভোট গ্রহণ, গণনা ও ফল ঘোষণায় স্বচ্ছতা না থাকলে পরবর্তীকালে নির্বাচন কমিশনের সদস্যদেরই তার জবাবদিহি করতে হবে। নিকট-অতীতে এই অভিজ্ঞতা মোটেই সুখকর নয়। তাই নির্বাচন কমিশনের উচিত হবে, তাদের স্বচ্ছতা বজায় রাখা, কাউকে ছাড় না দেওয়া।
নির্বাচন আসছে। নির্বাচনের মাধ্যমে দেশে স্থিতিশীল সরকার ক্ষমতায় আসুক। শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন হোক, ক্ষমতার রদবদল হোক সাংবিধানিকভাবে। আবার নির্বাচন হোক, সবাই তাতে যুক্ত হোক, উৎসবমুখর পরিবেশে সবাই নির্বাচনী প্রচারণা চালাক, ভোটার নির্ভয়ে তাঁর রায় প্রদান করুন। ফিরে আসুক গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া। এবং সেই সঙ্গে মহান মুক্তিযুদ্ধের অঙ্গীকারগুলো বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিক নির্বাচিত সরকার। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কটাক্ষ করার প্রবণতা বন্ধ হোক।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগে পড়াশোনা করা মোজাম্মেল হোসেন, ঘনিষ্ঠ মহলে যিনি মঞ্জু নামেই বেশি পরিচিত, ছাত্রাবস্থায় ১৯৬৯ সালে সাপ্তাহিক ‘যুগবাণী’ ও ১৯৭০ সালে সাপ্তাহিক ‘একতা’য় প্রতিবেদক হিসেবে পেশাজীবন শুরু করেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় ‘মুক্তিযুদ্ধ’ পত্রিকার সহকারী সম্পাদক ছিলেন।
২৯ জুন ২০২৫
সংযোগ সড়ক না থাকলে সেতু নির্মাণ করলে তা এলাকার জনগণের কোনো কাজে আসে না। এ রকম একটা অপ্রয়োজনীয় সেতু নির্মাণ করা হয়েছে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলায় সেরার খালের ওপর। কোটি টাকার বেশি বরাদ্দে সেতুটি নির্মাণ করা হয় বছরখানেক আগে। কিন্তু সংযোগ সড়ক নির্মাণ না করায় ঝুঁকি নিয়ে মই বেয়ে সেতু পারাপার...
১৬ ঘণ্টা আগে
২০২৫ সালে বাজারে ঢুকলেই যে চাপ লাগে, তা শুধু দামের নয়, মানুষের দৈনন্দিন লড়াইয়ের অনুভূতিও। আন্তর্জাতিক বাজারে চাল, গম, সয়াবিন তেল, ডাল, চিনিসহ প্রধান খাদ্যপণ্যের দাম ২০২৩ সালের তুলনায় ১২ থেকে ১৮ শতাংশ কমেছে। এফএওর খাদ্যমূল্য সূচক ২০২৪ সালে টানা ১২ মাস কমেছে এবং ২০২৫ সালেও সেই ধারা চলছে।
১৬ ঘণ্টা আগে
বিজয় দিবস পার হলো। আরও একটি বিজয়ের আনন্দ যুক্ত হলো স্বাধীন বাংলাদেশের মানুষের মনে। যদিও এই বছরে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধপক্ষের নানা প্রচারণার দেখা পাওয়া গেছে, কিন্তু দেশের মানুষ তাতে খুব বেশি বিভ্রান্ত হয়েছে, এমনটা বলা যাবে না।
২ দিন আগেশোয়েব সাম্য সিদ্দিক

২০২৫ সালে বাজারে ঢুকলেই যে চাপ লাগে, তা শুধু দামের নয়, মানুষের দৈনন্দিন লড়াইয়ের অনুভূতিও। আন্তর্জাতিক বাজারে চাল, গম, সয়াবিন তেল, ডাল, চিনিসহ প্রধান খাদ্যপণ্যের দাম ২০২৩ সালের তুলনায় ১২ থেকে ১৮ শতাংশ কমেছে। এফএওর খাদ্যমূল্য সূচক ২০২৪ সালে টানা ১২ মাস কমেছে এবং ২০২৫ সালেও সেই ধারা চলছে। কিন্তু বাংলাদেশে একই সময়ে মৌলিক খাদ্যপণ্যের দাম স্থির হয়নি বরং অনেক ক্ষেত্রেই আরও বেড়েছে। এই অদ্ভুত বৈপরীত্যই আমাদের বাজারব্যবস্থার গভীর সমস্যার দিকগুলো তুলে ধরে।
এই প্রশ্ন আমার কাছে অর্থনীতির শুষ্ক বিশ্লেষণ নয়, এটি মানুষের প্রতিদিনের সংগ্রামের বাস্তব গল্প। বাজারে যাওয়ার আগে মানুষ ভাবে আজ কি একটু স্বস্তি মিলবে? মাছ, চাল, ডাল, তেল—এসবের দাম গত পাঁচ বছরে যে মাত্রায় বেড়েছে, তা কেবল সংখ্যা নয়, তা মানুষের জীবনমানের ক্ষয়, উদ্বেগ এবং অনিশ্চয়তার প্রতিচ্ছবি। বিশ্ববাজারে দাম কমলেও আমাদের দেশে কেন কমছে না—এই সাধারণ প্রশ্নটাই এখন নীতিনির্ধারণের সবচেয়ে জরুরি আলোচ্য হওয়া উচিত।
আমার পর্যবেক্ষণে প্রধান সমস্যা শুরু হয় আমদানি ও সরবরাহব্যবস্থার অদক্ষতা দিয়ে। যেসব দেশে বৈশ্বিক মূল্যহ্রাস দ্রুত বাজারে প্রতিফলিত হয়, সেখানে কাস্টমস ক্লিয়ারেন্স সময় গড়ে দুই থেকে পাঁচ দিন। কিন্তু বিশ্বব্যাংকের ট্রেড ফ্যাসিলিটেশন রিপোর্ট অনুযায়ী বাংলাদেশে একই কাজ সম্পন্ন করতে গড়ে ১০ থেকে ১২ দিন লাগে। বন্দরে অতিরিক্ত অপেক্ষা, ডেমারেজ চার্জ, শিপিং বিলম্ব এবং কাগজপত্রের জটিলতা যোগ হতে হতে আমদানি করা পণ্যের খরচ বাড়তেই থাকে। ফলে বিদেশে দাম কমলেও দেশে খুচরা পর্যায়ে সেই সুবিধা ভোক্তার সামনে পৌঁছায় না।
দ্বিতীয় সমস্যা টাকার অবমূল্যায়ন। বাংলাদেশ ব্যাংকের ২০২৫ সালের প্রথম প্রান্তিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, টাকার মান ২০২৩ সালের তুলনায় প্রায় ১২ শতাংশ কমেছে। আন্তর্জাতিক বাজারে সয়াবিন তেলের দাম ২০২৪ থেকে ২০২৫ সময়ে প্রায় ১৪ শতাংশ কমলেও বাংলাদেশে তেলের দাম কমেনি। কারণ, আমদানি মূল্য ডলারে নির্ধারিত হয়। টাকার অবমূল্যায়ন বৈশ্বিক মূল্যহ্রাসকে দেশের বাজারে প্রায় নিষ্ফল করে দেয়।
তৃতীয় সমস্যা প্রতিযোগিতাহীন বাজার। সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ দেখিয়েছে, ২০১৯ থেকে ২০২৪ সময়ে চাল, তেল, চিনি, ডালসহ প্রধান পণ্যের বাজার কিছুসংখ্যক গোষ্ঠী নিয়ন্ত্রণ করেছে। বাজারে নতুন আমদানিকারক বা পরিবেশকদের প্রবেশ বাধাগ্রস্ত হলে মূল্যহ্রাসের চাপ তৈরি হয় না। প্রতিযোগিতা না থাকলে দাম কমার বদলে একই থাকে। আমার মতে, এই বাজারসংকোচনই মূলধারার ভোক্তামূল্যকে দীর্ঘমেয়াদি অস্থির অবস্থায় আটকে রাখে।
চতুর্থ বড় সমস্যা তদারকি দুর্বলতা। ভোক্তা অধিদপ্তর বা প্রশাসনের হঠাৎ অভিযান বাজারে সাময়িক প্রভাব ফেলে, কিন্তু কয়েক দিনের মধ্যে সব আগের অবস্থায় ফিরে যায়। কারণ, একটি স্থায়ী, তথ্যভিত্তিক, নিয়মচালিত তদারকি ব্যবস্থা নেই। প্রতিটি বাজারে মূল্য পরিবর্তনের তথ্য নিয়মিত বিশ্লেষণ এবং কড়াকড়িভাবে প্রয়োগ করতে না পারলে সিন্ডিকেটের পক্ষে কৃত্রিম মূল্য নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখা সহজ হয়ে পড়ে।
পঞ্চমত, তথ্যের অস্বচ্ছতা। বিবিএস, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং টিসিবির মূল্যতথ্য একই সময়ে এক নয়। কোন জেলায় কত স্টক আছে, আমদানি করা পণ্য বন্দরে কোথায় আছে, কোন ব্যবসায়ী কতটুকু মজুত রেখেছে—এসব তথ্যের কেন্দ্রীয় ড্যাশবোর্ড বাংলাদেশে নেই। ফলে নীতিনির্ধারকেরা অনেক সময় অনুমানভিত্তিক সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হন। তথ্যহীনতা বাজারের স্বচ্ছতাকে দুর্বল করে এবং সিন্ডিকেটকে সুবিধা দেয়।
অনেকে বলবেন, শুধু অভ্যন্তরীণ সমস্যা নয়; রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, সুয়েজ খাল-সংকট, পরিবহন ব্যয় ও বৈশ্বিক অনিশ্চয়তাও প্রভাব ফেলে। সেটি সত্য। তবে ২০২৪ ও ২০২৫ সালে যখন খাদ্যমূল্য বিশ্বব্যাপী টানা নিম্নমুখী, তখন দক্ষিণ এশিয়ার কয়েকটি দেশ এই সুবিধা ভোক্তার কাছে পৌঁছে দিতে সক্ষম হয়েছে। বাংলাদেশ পারেনি, কারণ অভ্যন্তরীণ কাঠামো দুর্বল এবং নীতি সমন্বয় অনুপস্থিত।
২০২৫ সালে বাংলাদেশের ভোক্তারা কিছু মৌলিক পণ্যের জন্য এখনো আন্তর্জাতিক মূল্যের প্রায় দ্বিগুণ মূল্য দিচ্ছেন। সিপিডি জানিয়েছে, ২০২৪ সালে বিশ্ববাজারে চিনির গড় দাম কেজিতে ৫০ থেকে ৬০ টাকা হলেও বাংলাদেশে সেটি ছিল ১৩০ থেকে ১৬০ টাকা। সয়াবিন তেলের দাম বিশ্ববাজারে ১০৫ থেকে ১১৫ টাকা কেজি থাকলেও বাংলাদেশে একই সময়ে ১৫০ থেকে ১৬৫ টাকা। এই অতিরিক্ত ব্যয়ের বোঝা মানুষের জীবনযাত্রাকে চরম অনিরাপদ করে তুলছে। আমার নিজের পর্যবেক্ষণ বলে, মধ্যবিত্তের মাস শেষে ঘাটতি স্থায়ী রূপ নিয়েছে, নিম্নবিত্তের খাদ্য গ্রহণ কমেছে, আর দরিদ্র মানুষের হাতে প্রতিদিনের প্রয়োজনীয় জিনিস কেনার সামর্থ্য কমে গেছে।
আমার মতে সমাধান সুস্পষ্ট, বাস্তবসম্মত এবং তাৎক্ষণিকভাবে বাস্তবায়নযোগ্য। কাস্টমস ও আমদানি প্রক্রিয়ার পূর্ণাঙ্গ ডিজিটালাইজেশন জরুরি, কারণ বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় মূল্যবৃদ্ধির চাপ তৈরি হয় বন্দরের অকার্যকারিতা ও কাগজপত্রের জটিলতা থেকে। কাস্টমস ক্লিয়ারেন্স সময় যদি বর্তমান ১০ থেকে ১২ দিন থেকে কমিয়ে ৪৮ ঘণ্টায় আনা যায়, তবে আমদানি করা পণ্যের মোট ব্যয় উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যাবে। ডিজিটাল ট্র্যাকিং, অটোমেটেড ডকুমেন্ট যাচাই এবং ঝামেলামুক্ত অনলাইন অনুমোদনব্যবস্থা চালু করলে পণ্যের প্রবাহ দ্রুত হবে, মজুত ব্যয় কমবে এবং খুচরা বাজারে দাম স্বাভাবিকভাবে নেমে আসবে। একইভাবে বাজারে নতুন আমদানিকারক ও পরিবেশকের প্রবেশ সহজ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ বর্তমান বাজারকাঠামোতে কিছু গোষ্ঠী দীর্ঘদিন ধরে একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ ধরে রেখেছে এবং নতুন উদ্যোক্তারা আমদানি লাইসেন্স, এলসি বা বিতরণ নেটওয়ার্ক তৈরি করতে গিয়ে নানা বাধার মুখে পড়েন। এই বাধা দূর করতে পারলে প্রতিযোগিতা বাড়বে এবং দাম কমার স্বাভাবিক চাপ তৈরি হবে, যেটি দক্ষিণ এশিয়ার কয়েকটি দেশ ইতিমধ্যে সফলভাবে বাস্তবায়ন করেছে। পাশাপাশি একটি কেন্দ্রীয় মূল্যতথ্য ড্যাশবোর্ড তৈরি করা জরুরি, কারণ কোথায় কত স্টক আছে, কোন পণ্য কখন বন্দরে এসেছে বা ছাড় হয়েছে এবং কোন স্তরে দাম বাড়ছে বা কমছে—এসব তথ্য বর্তমানে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকায় নীতি গ্রহণে বিলম্ব হয়। একক ড্যাশবোর্ডে আমদানি থেকে খুচরা পর্যন্ত প্রতিটি ধাপ রিয়েল-টাইমে দেখা গেলে সিদ্ধান্ত দ্রুত নেওয়া সম্ভব হবে, অযৌক্তিক মূল্যবৃদ্ধি শনাক্ত করা সহজ হবে এবং বাজারে কারসাজির সুযোগ কমে যাবে। পাশাপাশি ভোক্তা অধিদপ্তরকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করে স্থায়ী, পেশাদার ও তথ্যনির্ভর তদারকি ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে, যেখানে নিয়মিত পর্যবেক্ষণ, ডেটা অ্যানালিটিকস ব্যবহার, ক্ষমতায়ন এবং বড় ব্যবসা-গোষ্ঠীর অনিয়ম শনাক্তের পর দ্রুত শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নেওয়ার ব্যবস্থা থাকবে। এমন স্থায়ী নজরদারি নিশ্চিত করা গেলে কোনো সিন্ডিকেট দীর্ঘ সময় বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না এবং দাম স্বাভাবিকভাবেই নেমে আসবে।
সবশেষে বলতে হয়, বাজার কেবল অর্থনীতির হিসাব নয়, এটি মানুষের জীবনের নিরাপত্তা। মধ্যবিত্তের টানাপোড়েন, নিম্নবিত্তের অপূর্ণতা এবং দরিদ্র মানুষের দৈনন্দিন লড়াই, সবকিছু মিলেই বাজারকে মানবিকভাবে বুঝতে হবে। নীতি যদি মানুষের মুখের আহার না বোঝে, তবে সেই নীতি অর্থনীতিকে নিরাপদ রাখতে পারে না। বিশ্ববাজারে দাম কমছে, কিন্তু বাংলাদেশে কমছে না। এটি বাজারের সমস্যা নয়, নীতির সমস্যা। আমরা চাইলে এই অবস্থার পরিবর্তন করতে পারি। সঠিক সিদ্ধান্ত নিলে মানুষের কষ্ট কমবে, বাজার ঠিক হবে এবং অর্থনীতি আরও স্থিতিশীল পথে ফিরবে। এটাই আমার দৃঢ় বিশ্বাস।

২০২৫ সালে বাজারে ঢুকলেই যে চাপ লাগে, তা শুধু দামের নয়, মানুষের দৈনন্দিন লড়াইয়ের অনুভূতিও। আন্তর্জাতিক বাজারে চাল, গম, সয়াবিন তেল, ডাল, চিনিসহ প্রধান খাদ্যপণ্যের দাম ২০২৩ সালের তুলনায় ১২ থেকে ১৮ শতাংশ কমেছে। এফএওর খাদ্যমূল্য সূচক ২০২৪ সালে টানা ১২ মাস কমেছে এবং ২০২৫ সালেও সেই ধারা চলছে। কিন্তু বাংলাদেশে একই সময়ে মৌলিক খাদ্যপণ্যের দাম স্থির হয়নি বরং অনেক ক্ষেত্রেই আরও বেড়েছে। এই অদ্ভুত বৈপরীত্যই আমাদের বাজারব্যবস্থার গভীর সমস্যার দিকগুলো তুলে ধরে।
এই প্রশ্ন আমার কাছে অর্থনীতির শুষ্ক বিশ্লেষণ নয়, এটি মানুষের প্রতিদিনের সংগ্রামের বাস্তব গল্প। বাজারে যাওয়ার আগে মানুষ ভাবে আজ কি একটু স্বস্তি মিলবে? মাছ, চাল, ডাল, তেল—এসবের দাম গত পাঁচ বছরে যে মাত্রায় বেড়েছে, তা কেবল সংখ্যা নয়, তা মানুষের জীবনমানের ক্ষয়, উদ্বেগ এবং অনিশ্চয়তার প্রতিচ্ছবি। বিশ্ববাজারে দাম কমলেও আমাদের দেশে কেন কমছে না—এই সাধারণ প্রশ্নটাই এখন নীতিনির্ধারণের সবচেয়ে জরুরি আলোচ্য হওয়া উচিত।
আমার পর্যবেক্ষণে প্রধান সমস্যা শুরু হয় আমদানি ও সরবরাহব্যবস্থার অদক্ষতা দিয়ে। যেসব দেশে বৈশ্বিক মূল্যহ্রাস দ্রুত বাজারে প্রতিফলিত হয়, সেখানে কাস্টমস ক্লিয়ারেন্স সময় গড়ে দুই থেকে পাঁচ দিন। কিন্তু বিশ্বব্যাংকের ট্রেড ফ্যাসিলিটেশন রিপোর্ট অনুযায়ী বাংলাদেশে একই কাজ সম্পন্ন করতে গড়ে ১০ থেকে ১২ দিন লাগে। বন্দরে অতিরিক্ত অপেক্ষা, ডেমারেজ চার্জ, শিপিং বিলম্ব এবং কাগজপত্রের জটিলতা যোগ হতে হতে আমদানি করা পণ্যের খরচ বাড়তেই থাকে। ফলে বিদেশে দাম কমলেও দেশে খুচরা পর্যায়ে সেই সুবিধা ভোক্তার সামনে পৌঁছায় না।
দ্বিতীয় সমস্যা টাকার অবমূল্যায়ন। বাংলাদেশ ব্যাংকের ২০২৫ সালের প্রথম প্রান্তিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, টাকার মান ২০২৩ সালের তুলনায় প্রায় ১২ শতাংশ কমেছে। আন্তর্জাতিক বাজারে সয়াবিন তেলের দাম ২০২৪ থেকে ২০২৫ সময়ে প্রায় ১৪ শতাংশ কমলেও বাংলাদেশে তেলের দাম কমেনি। কারণ, আমদানি মূল্য ডলারে নির্ধারিত হয়। টাকার অবমূল্যায়ন বৈশ্বিক মূল্যহ্রাসকে দেশের বাজারে প্রায় নিষ্ফল করে দেয়।
তৃতীয় সমস্যা প্রতিযোগিতাহীন বাজার। সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ দেখিয়েছে, ২০১৯ থেকে ২০২৪ সময়ে চাল, তেল, চিনি, ডালসহ প্রধান পণ্যের বাজার কিছুসংখ্যক গোষ্ঠী নিয়ন্ত্রণ করেছে। বাজারে নতুন আমদানিকারক বা পরিবেশকদের প্রবেশ বাধাগ্রস্ত হলে মূল্যহ্রাসের চাপ তৈরি হয় না। প্রতিযোগিতা না থাকলে দাম কমার বদলে একই থাকে। আমার মতে, এই বাজারসংকোচনই মূলধারার ভোক্তামূল্যকে দীর্ঘমেয়াদি অস্থির অবস্থায় আটকে রাখে।
চতুর্থ বড় সমস্যা তদারকি দুর্বলতা। ভোক্তা অধিদপ্তর বা প্রশাসনের হঠাৎ অভিযান বাজারে সাময়িক প্রভাব ফেলে, কিন্তু কয়েক দিনের মধ্যে সব আগের অবস্থায় ফিরে যায়। কারণ, একটি স্থায়ী, তথ্যভিত্তিক, নিয়মচালিত তদারকি ব্যবস্থা নেই। প্রতিটি বাজারে মূল্য পরিবর্তনের তথ্য নিয়মিত বিশ্লেষণ এবং কড়াকড়িভাবে প্রয়োগ করতে না পারলে সিন্ডিকেটের পক্ষে কৃত্রিম মূল্য নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখা সহজ হয়ে পড়ে।
পঞ্চমত, তথ্যের অস্বচ্ছতা। বিবিএস, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং টিসিবির মূল্যতথ্য একই সময়ে এক নয়। কোন জেলায় কত স্টক আছে, আমদানি করা পণ্য বন্দরে কোথায় আছে, কোন ব্যবসায়ী কতটুকু মজুত রেখেছে—এসব তথ্যের কেন্দ্রীয় ড্যাশবোর্ড বাংলাদেশে নেই। ফলে নীতিনির্ধারকেরা অনেক সময় অনুমানভিত্তিক সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হন। তথ্যহীনতা বাজারের স্বচ্ছতাকে দুর্বল করে এবং সিন্ডিকেটকে সুবিধা দেয়।
অনেকে বলবেন, শুধু অভ্যন্তরীণ সমস্যা নয়; রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, সুয়েজ খাল-সংকট, পরিবহন ব্যয় ও বৈশ্বিক অনিশ্চয়তাও প্রভাব ফেলে। সেটি সত্য। তবে ২০২৪ ও ২০২৫ সালে যখন খাদ্যমূল্য বিশ্বব্যাপী টানা নিম্নমুখী, তখন দক্ষিণ এশিয়ার কয়েকটি দেশ এই সুবিধা ভোক্তার কাছে পৌঁছে দিতে সক্ষম হয়েছে। বাংলাদেশ পারেনি, কারণ অভ্যন্তরীণ কাঠামো দুর্বল এবং নীতি সমন্বয় অনুপস্থিত।
২০২৫ সালে বাংলাদেশের ভোক্তারা কিছু মৌলিক পণ্যের জন্য এখনো আন্তর্জাতিক মূল্যের প্রায় দ্বিগুণ মূল্য দিচ্ছেন। সিপিডি জানিয়েছে, ২০২৪ সালে বিশ্ববাজারে চিনির গড় দাম কেজিতে ৫০ থেকে ৬০ টাকা হলেও বাংলাদেশে সেটি ছিল ১৩০ থেকে ১৬০ টাকা। সয়াবিন তেলের দাম বিশ্ববাজারে ১০৫ থেকে ১১৫ টাকা কেজি থাকলেও বাংলাদেশে একই সময়ে ১৫০ থেকে ১৬৫ টাকা। এই অতিরিক্ত ব্যয়ের বোঝা মানুষের জীবনযাত্রাকে চরম অনিরাপদ করে তুলছে। আমার নিজের পর্যবেক্ষণ বলে, মধ্যবিত্তের মাস শেষে ঘাটতি স্থায়ী রূপ নিয়েছে, নিম্নবিত্তের খাদ্য গ্রহণ কমেছে, আর দরিদ্র মানুষের হাতে প্রতিদিনের প্রয়োজনীয় জিনিস কেনার সামর্থ্য কমে গেছে।
আমার মতে সমাধান সুস্পষ্ট, বাস্তবসম্মত এবং তাৎক্ষণিকভাবে বাস্তবায়নযোগ্য। কাস্টমস ও আমদানি প্রক্রিয়ার পূর্ণাঙ্গ ডিজিটালাইজেশন জরুরি, কারণ বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় মূল্যবৃদ্ধির চাপ তৈরি হয় বন্দরের অকার্যকারিতা ও কাগজপত্রের জটিলতা থেকে। কাস্টমস ক্লিয়ারেন্স সময় যদি বর্তমান ১০ থেকে ১২ দিন থেকে কমিয়ে ৪৮ ঘণ্টায় আনা যায়, তবে আমদানি করা পণ্যের মোট ব্যয় উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যাবে। ডিজিটাল ট্র্যাকিং, অটোমেটেড ডকুমেন্ট যাচাই এবং ঝামেলামুক্ত অনলাইন অনুমোদনব্যবস্থা চালু করলে পণ্যের প্রবাহ দ্রুত হবে, মজুত ব্যয় কমবে এবং খুচরা বাজারে দাম স্বাভাবিকভাবে নেমে আসবে। একইভাবে বাজারে নতুন আমদানিকারক ও পরিবেশকের প্রবেশ সহজ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ বর্তমান বাজারকাঠামোতে কিছু গোষ্ঠী দীর্ঘদিন ধরে একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ ধরে রেখেছে এবং নতুন উদ্যোক্তারা আমদানি লাইসেন্স, এলসি বা বিতরণ নেটওয়ার্ক তৈরি করতে গিয়ে নানা বাধার মুখে পড়েন। এই বাধা দূর করতে পারলে প্রতিযোগিতা বাড়বে এবং দাম কমার স্বাভাবিক চাপ তৈরি হবে, যেটি দক্ষিণ এশিয়ার কয়েকটি দেশ ইতিমধ্যে সফলভাবে বাস্তবায়ন করেছে। পাশাপাশি একটি কেন্দ্রীয় মূল্যতথ্য ড্যাশবোর্ড তৈরি করা জরুরি, কারণ কোথায় কত স্টক আছে, কোন পণ্য কখন বন্দরে এসেছে বা ছাড় হয়েছে এবং কোন স্তরে দাম বাড়ছে বা কমছে—এসব তথ্য বর্তমানে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকায় নীতি গ্রহণে বিলম্ব হয়। একক ড্যাশবোর্ডে আমদানি থেকে খুচরা পর্যন্ত প্রতিটি ধাপ রিয়েল-টাইমে দেখা গেলে সিদ্ধান্ত দ্রুত নেওয়া সম্ভব হবে, অযৌক্তিক মূল্যবৃদ্ধি শনাক্ত করা সহজ হবে এবং বাজারে কারসাজির সুযোগ কমে যাবে। পাশাপাশি ভোক্তা অধিদপ্তরকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করে স্থায়ী, পেশাদার ও তথ্যনির্ভর তদারকি ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে, যেখানে নিয়মিত পর্যবেক্ষণ, ডেটা অ্যানালিটিকস ব্যবহার, ক্ষমতায়ন এবং বড় ব্যবসা-গোষ্ঠীর অনিয়ম শনাক্তের পর দ্রুত শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নেওয়ার ব্যবস্থা থাকবে। এমন স্থায়ী নজরদারি নিশ্চিত করা গেলে কোনো সিন্ডিকেট দীর্ঘ সময় বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না এবং দাম স্বাভাবিকভাবেই নেমে আসবে।
সবশেষে বলতে হয়, বাজার কেবল অর্থনীতির হিসাব নয়, এটি মানুষের জীবনের নিরাপত্তা। মধ্যবিত্তের টানাপোড়েন, নিম্নবিত্তের অপূর্ণতা এবং দরিদ্র মানুষের দৈনন্দিন লড়াই, সবকিছু মিলেই বাজারকে মানবিকভাবে বুঝতে হবে। নীতি যদি মানুষের মুখের আহার না বোঝে, তবে সেই নীতি অর্থনীতিকে নিরাপদ রাখতে পারে না। বিশ্ববাজারে দাম কমছে, কিন্তু বাংলাদেশে কমছে না। এটি বাজারের সমস্যা নয়, নীতির সমস্যা। আমরা চাইলে এই অবস্থার পরিবর্তন করতে পারি। সঠিক সিদ্ধান্ত নিলে মানুষের কষ্ট কমবে, বাজার ঠিক হবে এবং অর্থনীতি আরও স্থিতিশীল পথে ফিরবে। এটাই আমার দৃঢ় বিশ্বাস।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগে পড়াশোনা করা মোজাম্মেল হোসেন, ঘনিষ্ঠ মহলে যিনি মঞ্জু নামেই বেশি পরিচিত, ছাত্রাবস্থায় ১৯৬৯ সালে সাপ্তাহিক ‘যুগবাণী’ ও ১৯৭০ সালে সাপ্তাহিক ‘একতা’য় প্রতিবেদক হিসেবে পেশাজীবন শুরু করেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় ‘মুক্তিযুদ্ধ’ পত্রিকার সহকারী সম্পাদক ছিলেন।
২৯ জুন ২০২৫
সংযোগ সড়ক না থাকলে সেতু নির্মাণ করলে তা এলাকার জনগণের কোনো কাজে আসে না। এ রকম একটা অপ্রয়োজনীয় সেতু নির্মাণ করা হয়েছে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলায় সেরার খালের ওপর। কোটি টাকার বেশি বরাদ্দে সেতুটি নির্মাণ করা হয় বছরখানেক আগে। কিন্তু সংযোগ সড়ক নির্মাণ না করায় ঝুঁকি নিয়ে মই বেয়ে সেতু পারাপার...
১৬ ঘণ্টা আগে
নির্বাচনের প্রসঙ্গ এলেই প্রথমে আমার মনে পড়ে যায় সোভিয়েত ইউনিয়নে প্রচলিত কৌতুকগুলোর কথা। ছিল লৌহশাসন, অথচ সেই শাসনের ফাঁকফোকর দিয়ে বেরিয়ে আসত দমফাটানো কৌতুক। সে সময়ের কৌতুকের একটাই বলি এখানে। একজন ভোটারকে টেলিভিশনের এক কর্মী প্রশ্ন করায় তিনি উত্তর দিলেন, ‘হ্যাঁ, আমি ভোট দিয়েছি।
১৬ ঘণ্টা আগে
বিজয় দিবস পার হলো। আরও একটি বিজয়ের আনন্দ যুক্ত হলো স্বাধীন বাংলাদেশের মানুষের মনে। যদিও এই বছরে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধপক্ষের নানা প্রচারণার দেখা পাওয়া গেছে, কিন্তু দেশের মানুষ তাতে খুব বেশি বিভ্রান্ত হয়েছে, এমনটা বলা যাবে না।
২ দিন আগেসম্পাদকীয়

বিজয় দিবস পার হলো। আরও একটি বিজয়ের আনন্দ যুক্ত হলো স্বাধীন বাংলাদেশের মানুষের মনে। যদিও এই বছরে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধপক্ষের নানা প্রচারণার দেখা পাওয়া গেছে, কিন্তু দেশের মানুষ তাতে খুব বেশি বিভ্রান্ত হয়েছে, এমনটা বলা যাবে না। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস এখন পর্যন্ত এতটাই সজীব যে, ইচ্ছে করলেই এই ইতিহাসকে কৃত্রিমভাবে তৈরি করা যাবে না।
আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে যারা প্রশ্ন তোলে, তাদের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। অতি সুকৌশলে এমন সব প্রশ্নের জন্ম দেওয়া হয়, যার উত্তর তারা নিজেরা জানলেও সে উত্তরকে আড়ালে রেখে নতুন বয়ান তৈরির ধূর্ততাও পরিলক্ষিত হয়। সম্প্রতি বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের দায় পাকিস্তানি হানাদার ও আলবদর, আলশামসের কাঁধ থেকে সরিয়ে দেওয়ার প্রবণতাও দেখা গেছে। এই কাজটি মূলত তারাই করতে চাইছে, যারা একাত্তরের পরাজয়ের গ্লানি এখনো হজম করে উঠতে পারেনি। এই প্রশ্নের উত্তর পেতে হলে বাংলাদেশের সূত্রের কাছে না গেলেও চলবে। আত্মসমর্পণের দলিলে স্বাক্ষরকারী পাকিস্তানি জেনারেল নিয়াজি এবং সে সময়ের ভয়ংকর দানব হয়ে ওঠা রাও ফরমান আলী তাদের বইগুলোয় একে অপরকে দোষারোপ করতে গিয়ে নিজেদের ষড়যন্ত্রের গোমর ফাঁস করে দিয়েছেন। নিয়াজির অফিসের সামনে রাও ফরমান আলী দেখেছেন কাদালেপা মাইক্রোবাস, রাও ফরমান আলীর ডায়েরিতে দেখা গেছে বুদ্ধিজীবীদের তালিকা। কেউ কেউ রাও ফরমান আলীকে অনুরোধ করে সেই তালিকা থেকে বুদ্ধিজীবীদের নাম কাটিয়েছেন বলেও প্রমাণ আছে। এই যখন অবস্থা, তখন বাংলাদেশে বসে বাংলাদেশেরই শিক্ষিত কোনো মানুষ একাত্তরে পাকিস্তানি বাহিনী বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড ঘটাতে পারে না বলে মত প্রকাশ করলে তা সত্যের অপলাপই হয়। এ ধরনের বক্তব্য আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের অর্জনকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তোলার ন্যক্কারজনক প্রয়াস হিসেবে বিবেচিত হওয়ার যোগ্য।
বাংলা ও বাঙালির বীরত্বগাথাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তোলার এই প্রবণতার বিরুদ্ধে সতর্ক থাকা জরুরি। দেশের ক্ষমতা যার হাতে থাকে, সে-ই নিজের ইচ্ছেমতো ইতিহাস রচনা করতে চায়। কিন্তু তারা ভুলে যায়, ইতিহাসের সত্যগুলো প্রকাশিত হবেই। স্বাধিকার আন্দোলনের পথ ধরে আসা স্বাধীনতার সময়টিতে কার নেতৃত্বে আন্দোলন পরিচালিত হয়, কার ওপর দেশবাসী রেখেছিল আস্থা, পাকিস্তানিদের চালানো অপারেশন সার্চলাইট, সার্চ অ্যান্ড ডেস্ট্রয় এবং বুদ্ধিজীবী হত্যার বর্ণনা পাওয়া কঠিন কোনো কাজ নয়। বাঙালির এই জনযুদ্ধকে খাটো করে দেখানো কিংবা পাকিস্তানি বাহিনীর মহিমাকীর্তন কোনো ইতিবাচক স্বপ্ন দেখাতে পারবে না। সব পক্ষের উচিত, ইতিহাসের সত্যকে আড়াল না করে নতুন করে জীবন গড়ে তোলার অঙ্গীকার করা।
আমাদের দেশ একটা অস্থির সময় পার করছে। এই সময়টিতে পুরো জাতির ঐক্য প্রয়োজন। কিন্তু গণ-আন্দোলনে বিজয়ী পক্ষ এত বেশি বিভক্ত হয়ে রয়েছে যে তাদের সম্মিলিত উদ্যোগে জাতীয় সব অঙ্গনে স্থিতিশীলতা আসবে—এমন আশা এখন পায়ের নিচে শক্ত মাটি পাচ্ছে না। ন্যূনতম কিছু বিষয়ে একমত হতে হলে জাতিকে সামগ্রিকভাবেই দেখতে হবে। সেদিকেই হতে হবে দেশের যাত্রা।

বিজয় দিবস পার হলো। আরও একটি বিজয়ের আনন্দ যুক্ত হলো স্বাধীন বাংলাদেশের মানুষের মনে। যদিও এই বছরে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধপক্ষের নানা প্রচারণার দেখা পাওয়া গেছে, কিন্তু দেশের মানুষ তাতে খুব বেশি বিভ্রান্ত হয়েছে, এমনটা বলা যাবে না। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস এখন পর্যন্ত এতটাই সজীব যে, ইচ্ছে করলেই এই ইতিহাসকে কৃত্রিমভাবে তৈরি করা যাবে না।
আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে যারা প্রশ্ন তোলে, তাদের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। অতি সুকৌশলে এমন সব প্রশ্নের জন্ম দেওয়া হয়, যার উত্তর তারা নিজেরা জানলেও সে উত্তরকে আড়ালে রেখে নতুন বয়ান তৈরির ধূর্ততাও পরিলক্ষিত হয়। সম্প্রতি বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের দায় পাকিস্তানি হানাদার ও আলবদর, আলশামসের কাঁধ থেকে সরিয়ে দেওয়ার প্রবণতাও দেখা গেছে। এই কাজটি মূলত তারাই করতে চাইছে, যারা একাত্তরের পরাজয়ের গ্লানি এখনো হজম করে উঠতে পারেনি। এই প্রশ্নের উত্তর পেতে হলে বাংলাদেশের সূত্রের কাছে না গেলেও চলবে। আত্মসমর্পণের দলিলে স্বাক্ষরকারী পাকিস্তানি জেনারেল নিয়াজি এবং সে সময়ের ভয়ংকর দানব হয়ে ওঠা রাও ফরমান আলী তাদের বইগুলোয় একে অপরকে দোষারোপ করতে গিয়ে নিজেদের ষড়যন্ত্রের গোমর ফাঁস করে দিয়েছেন। নিয়াজির অফিসের সামনে রাও ফরমান আলী দেখেছেন কাদালেপা মাইক্রোবাস, রাও ফরমান আলীর ডায়েরিতে দেখা গেছে বুদ্ধিজীবীদের তালিকা। কেউ কেউ রাও ফরমান আলীকে অনুরোধ করে সেই তালিকা থেকে বুদ্ধিজীবীদের নাম কাটিয়েছেন বলেও প্রমাণ আছে। এই যখন অবস্থা, তখন বাংলাদেশে বসে বাংলাদেশেরই শিক্ষিত কোনো মানুষ একাত্তরে পাকিস্তানি বাহিনী বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড ঘটাতে পারে না বলে মত প্রকাশ করলে তা সত্যের অপলাপই হয়। এ ধরনের বক্তব্য আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের অর্জনকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তোলার ন্যক্কারজনক প্রয়াস হিসেবে বিবেচিত হওয়ার যোগ্য।
বাংলা ও বাঙালির বীরত্বগাথাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তোলার এই প্রবণতার বিরুদ্ধে সতর্ক থাকা জরুরি। দেশের ক্ষমতা যার হাতে থাকে, সে-ই নিজের ইচ্ছেমতো ইতিহাস রচনা করতে চায়। কিন্তু তারা ভুলে যায়, ইতিহাসের সত্যগুলো প্রকাশিত হবেই। স্বাধিকার আন্দোলনের পথ ধরে আসা স্বাধীনতার সময়টিতে কার নেতৃত্বে আন্দোলন পরিচালিত হয়, কার ওপর দেশবাসী রেখেছিল আস্থা, পাকিস্তানিদের চালানো অপারেশন সার্চলাইট, সার্চ অ্যান্ড ডেস্ট্রয় এবং বুদ্ধিজীবী হত্যার বর্ণনা পাওয়া কঠিন কোনো কাজ নয়। বাঙালির এই জনযুদ্ধকে খাটো করে দেখানো কিংবা পাকিস্তানি বাহিনীর মহিমাকীর্তন কোনো ইতিবাচক স্বপ্ন দেখাতে পারবে না। সব পক্ষের উচিত, ইতিহাসের সত্যকে আড়াল না করে নতুন করে জীবন গড়ে তোলার অঙ্গীকার করা।
আমাদের দেশ একটা অস্থির সময় পার করছে। এই সময়টিতে পুরো জাতির ঐক্য প্রয়োজন। কিন্তু গণ-আন্দোলনে বিজয়ী পক্ষ এত বেশি বিভক্ত হয়ে রয়েছে যে তাদের সম্মিলিত উদ্যোগে জাতীয় সব অঙ্গনে স্থিতিশীলতা আসবে—এমন আশা এখন পায়ের নিচে শক্ত মাটি পাচ্ছে না। ন্যূনতম কিছু বিষয়ে একমত হতে হলে জাতিকে সামগ্রিকভাবেই দেখতে হবে। সেদিকেই হতে হবে দেশের যাত্রা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগে পড়াশোনা করা মোজাম্মেল হোসেন, ঘনিষ্ঠ মহলে যিনি মঞ্জু নামেই বেশি পরিচিত, ছাত্রাবস্থায় ১৯৬৯ সালে সাপ্তাহিক ‘যুগবাণী’ ও ১৯৭০ সালে সাপ্তাহিক ‘একতা’য় প্রতিবেদক হিসেবে পেশাজীবন শুরু করেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় ‘মুক্তিযুদ্ধ’ পত্রিকার সহকারী সম্পাদক ছিলেন।
২৯ জুন ২০২৫
সংযোগ সড়ক না থাকলে সেতু নির্মাণ করলে তা এলাকার জনগণের কোনো কাজে আসে না। এ রকম একটা অপ্রয়োজনীয় সেতু নির্মাণ করা হয়েছে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলায় সেরার খালের ওপর। কোটি টাকার বেশি বরাদ্দে সেতুটি নির্মাণ করা হয় বছরখানেক আগে। কিন্তু সংযোগ সড়ক নির্মাণ না করায় ঝুঁকি নিয়ে মই বেয়ে সেতু পারাপার...
১৬ ঘণ্টা আগে
নির্বাচনের প্রসঙ্গ এলেই প্রথমে আমার মনে পড়ে যায় সোভিয়েত ইউনিয়নে প্রচলিত কৌতুকগুলোর কথা। ছিল লৌহশাসন, অথচ সেই শাসনের ফাঁকফোকর দিয়ে বেরিয়ে আসত দমফাটানো কৌতুক। সে সময়ের কৌতুকের একটাই বলি এখানে। একজন ভোটারকে টেলিভিশনের এক কর্মী প্রশ্ন করায় তিনি উত্তর দিলেন, ‘হ্যাঁ, আমি ভোট দিয়েছি।
১৬ ঘণ্টা আগে
২০২৫ সালে বাজারে ঢুকলেই যে চাপ লাগে, তা শুধু দামের নয়, মানুষের দৈনন্দিন লড়াইয়ের অনুভূতিও। আন্তর্জাতিক বাজারে চাল, গম, সয়াবিন তেল, ডাল, চিনিসহ প্রধান খাদ্যপণ্যের দাম ২০২৩ সালের তুলনায় ১২ থেকে ১৮ শতাংশ কমেছে। এফএওর খাদ্যমূল্য সূচক ২০২৪ সালে টানা ১২ মাস কমেছে এবং ২০২৫ সালেও সেই ধারা চলছে।
১৬ ঘণ্টা আগে