
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগে পড়াশোনা করা মোজাম্মেল হোসেন, ঘনিষ্ঠ মহলে যিনি মঞ্জু নামেই বেশি পরিচিত, ছাত্রাবস্থায় ১৯৬৯ সালে সাপ্তাহিক ‘যুগবাণী’ ও ১৯৭০ সালে সাপ্তাহিক ‘একতা’য় প্রতিবেদক হিসেবে পেশাজীবন শুরু করেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় ‘মুক্তিযুদ্ধ’ পত্রিকার সহকারী সম্পাদক ছিলেন। দৈনিক ‘ভোরের কাগজ’ ও ‘প্রথম আলো’র বার্তা বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেন। দৈনিক ‘সমকাল’সহ একাধিক পত্রিকায় সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করেছেন। সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক মোজাম্মেল হোসেনের সঙ্গে সমসাময়িক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার বিভুরঞ্জন সরকার।
বিভুরঞ্জন সরকার

আপনি দীর্ঘকাল ধরে দেশের রাজনীতি পর্যবেক্ষণ করছেন। আজকের অবস্থানে দাঁড়িয়ে আপনি দেশের রাজনীতিকে কীভাবে ব্যাখ্যা করবেন?
রাজনৈতিকভাবে দেশ একটি ঘোরতর জটিল পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। সাংবিধানিক ও নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতি দেশে থাকলেও, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ভালো হলেও নিয়মনীতি অগ্রাহ্য করে, নির্বাচনে নগ্ন কারচুপি করে আওয়ামী লীগ দীর্ঘ সময় একচ্ছত্রভাবে ক্ষমতায় থাকার চেষ্টা করে অনেক সংকট তৈরি করেছিল। প্রাতিষ্ঠানিক ভাঙন, রাষ্ট্রযন্ত্র দলীয়করণ, খোলাখুলি ব্যাপক দুর্নীতি, রাজনৈতিক দলের দুর্বৃত্তায়ন, সমান সুযোগের অভাবে নাগরিকদের মধ্যে বঞ্চনাবোধ—এগুলোই হচ্ছে সংকটের রূপ। ছাত্র-তরুণেরা ভীষণ বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে এবং গত বছর জুলাই-আগস্টে ত্বরিত ফুঁসে ওঠা রাজপথের রক্তাক্ত আন্দোলনে সরকারের পতন ঘটে যায়। কিন্তু এর পরই জনগণের আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী নিয়মশৃঙ্খলা এনে একটি ভালো নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক শাসনের পথে যাত্রা সম্পর্কে শঙ্কা তৈরি হতে থাকে, কেননা ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের ভাবাদর্শের বিরুদ্ধের শক্তিগুলো, বিশেষত ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলোর প্রাধান্য প্রকাশ পায় এবং মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস-ঐতিহ্য, স্মারক আক্রান্ত হতে থাকে। গণতন্ত্রকে সফল করার জন্য, সাম্প্রতিক সময়ের মতো কোনো স্বৈরতান্ত্রিক শাসন যাতে আর না ফিরে আসে, সে জন্য অভিজ্ঞতা থেকে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতাকাঠামোয় কিছু সংস্কার দরকার, তা সবাই মানে। কিন্তু সে অছিলায় সংবিধানের মূলনীতি পরিবর্তনসহ রাষ্ট্রের চরিত্র বদলে ফেলার একটি লক্ষণীয় চেষ্টা একধরনের নতুন দ্বন্দ্বের সৃষ্টি করছে। এটা জটিলতা। এই পটভূমিতে দেশে অসহিষ্ণুতা, হিংস্রতা, প্রতিহিংসাপরায়ণতা যা দেখা যাচ্ছে, তা উদ্বেগের কারণ। এসবের নিরসন ঘটিয়ে সমাজে শান্তি আনা, জাতীয় ঐক্য-সংহতি দৃঢ় করা বড় চ্যালেঞ্জ।
আওয়ামী লীগ তো এখন কার্যত দৃশ্যপট থেকে অপসারিত। বিএনপি কি শূন্যস্থান পূরণ করতে বা বিকল্প শক্তি হয়ে উঠতে পারবে? জাতীয় পার্টি?
এই প্রশ্নে আমি কিছুটা কঠোর হব। বিএনপি ও জাতীয় পার্টি জনগণের প্রয়োজনে জনগণের মধ্য থেকে উঠে আসা দল নয়। সামরিক শাসকদের সৃষ্ট দল, যা তাঁরা ক্ষমতায় বসে বানিয়েছেন এবং পরিকৌশলী নিয়ন্ত্রিত নির্বাচনের মাধ্যমে জিতিয়ে এনেছেন। তবে সময়ের সঙ্গে রাজনীতি করে বিএনপি পোড় খেয়েছে, জনগণের কাতারে এসেছে। একাধিকবার দেশ পরিচালনা করেছে। প্রতিষ্ঠাতা সামরিক নেতা জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পরে ভোটে জিতেই ক্ষমতায় এসেছে। ২০০৬ সাল থেকে ১৯ বছর ক্ষমতার বাইরে থেকেও দলটি বড় আকারেই রয়েছে। কখনো কখনো ভুল সিদ্ধান্ত ও ভুল কৌশল এবং সাংগঠনিক দুর্বলতার জন্য আশানুরূপ ফল পায়নি। ২০১৪ থেকে আমি একাধিকবার বলেছি, বিএনপির উচিত ছিল আওয়ামী লীগ সৃষ্ট প্রতিকূলতার মধ্যেও সরকারের পতন ঘটাতে না চেয়ে, বয়কট না করে নির্বাচনে অংশ নিয়ে ভোট শুদ্ধ করার জন্য লড়াই করা। তাতে সার্বিকভাবেও দেশের রাজনীতির উপকার হতো। ছাত্রদের আন্দোলনসহ আরও নানা কারণে হাসিনা সরকারের পতন ঘটায় এখন রাজনীতির মাঠ বিএনপির জন্যই অনুকূলে। তবে নিকট অতীতে রাজনীতির দুর্বৃত্তায়নের অংশীদার বিএনপিও। এখনো চাঁদাবাজি, অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব প্রভৃতি পরিহারসহ দলের পরিশীলন ছাড়া বিএনপি জনগণের স্বার্থে ভূমিকা পালন করতে পারবে না। দলে তুলনামূলকভাবে চিন্তাশীল নেতৃত্বের দরকার ও তুলনামূলক বিশুদ্ধ রাজনীতির পথে হাঁটতে হবে দলটিকে।
জাতীয় পার্টি, এর প্রতিষ্ঠাতা সামরিক নেতা এরশাদের সময়ই কেবল ক্ষমতায় ছিল। পরে মূলত একটি ‘প্রক্সি পার্টি’তে রূপান্তরিত হয়। ক্ষমতার রাজনীতিতে এরা কখনো সরাসরি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেয় না। বরং একটি ‘বিকল্প নয়, বিকল্পের অংশীদার’ হিসেবেই তারা বেশি কাজ করে। বর্তমান রাজনীতিতে জাতীয় পার্টির ভূমিকা সীমিতই থাকবে।
সব সময়ই তো বলা হয় তরুণেরাই পরিবর্তন আনে। তরুণেরাই ভরসা। জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানের পরে রাজনীতিতে তরুণদের ভূমিকা কেমন দেখছেন?
নবগঠিত জাতীয় নাগরিক পার্টি বা এনসিপি তো তরুণদের দল। এনসিপি জন্ম নেওয়ার আগেই জুলাই আবহে ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে আমি বলেছিলাম, তরুণদের একটি রাজনৈতিক দলকে আমরা স্বাগত জানাতে পারি। এঁরা বয়সে তরুণ ও মানসিকতায় আধুনিক হবেন। নীতি, কর্মসূচি, জ্ঞান ও ব্যবস্থাপনাকে গুরুত্ব দেবেন; স্লোগান, বুলি কপচানো ও নেতা বন্দনায় নয়। যুক্তি দিয়ে কথা বলবেন সাধারণ স্বরগ্রামে, অহেতুক গলার রগ ফুলিয়ে বক্তৃতা করবেন না। গণতন্ত্রের রীতিনীতি মেনে চলবেন এবং পার্লামেন্টে বিরোধী দলের আসনে বসে রাজনীতি করাকে মর্যাদাপূর্ণ ভাববেন।
এমন তরুণদের দল আমরা পাচ্ছি কি না বা এনসিপি তেমন দল হচ্ছে কি না, তা পাঠকেরা প্রতিদিনই তাদের দেখে যাচাই করতে পারেন। গলা ফুলিয়ে, হিংসা ছড়িয়ে বক্তৃতা করা, অজ্ঞাত উৎসের হিসাববহির্ভূত অর্থ ব্যয়, চাঁদাবাজির অভিযোগ ওঠা, গাড়ির বহর নিয়ে শক্তির মহড়া ইত্যাদি না হলে বুঝব রাজনীতিতে পরিবর্তন আসছে।
আমাদের তরুণেরা রাজনীতি থেকে দূরে সরে যাচ্ছিল। ‘আই হেইট পলিটিকস’ শোনা যেত। কারণ, বছরের পর বছর তারা আদর্শহীন, সুবিধাবাদী, সংঘাতপূর্ণ, দুর্বৃত্তায়িত রাজনীতি দেখেছে। অন্যদিকে সামাজিক মাধ্যমে তারা দুনিয়া দেখে, সেখানে তাদের রাজনৈতিক উপস্থিতি পাওয়া যায়, তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে, প্রশ্ন তোলে। তরুণেরা এখন ‘নিউ পলিটিকস’ চায়, যেখানে নেতৃত্ব হবে বিশ্বাসযোগ্য, চিন্তাশীল এবং বাস্তবমুখী। কিন্তু আমি বিস্মিত যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কেরা, জাতীয় নাগরিক পার্টিতে সমবেত তরুণেরা শিক্ষিত, প্রতিভাবান, স্মার্ট কিন্তু কেউ কেউ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের প্রতি শ্রদ্ধাশীল নয়, এমনকি ধর্মভিত্তিক রাজনীতি দ্বারা প্রভাবিত ও জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে তাদের নৈকট্য দেখা যায়। তখন ভাবি, তরুণ মানেই তো ভালো, অগ্রসর চিন্তার মানুষ, প্রগতিশীল ও ন্যায়যোদ্ধা নয়। এগুলো হচ্ছে তারুণ্যের ধর্ম। কিন্তু সব তরুণের মধ্যে তারুণ্য নেই। চোর-গুন্ডা-বদমাশ ও সন্ত্রাসীরা কি বয়সে তরুণ নয়? নজরুল যাদের আহ্বান করেন ‘চল চল চল...অরুণপ্রাতের তরুণদল’ বলে এবং রবীন্দ্রনাথ যাদের বলেন ‘ওরে আমার সবুজ, ওরে আমার কাঁচা, আধমরাদের ঘা মেরে তুই বাঁচা’। তারা শুধু বয়সে তরুণ নয়, ধর্মে-মর্মে তরুণ। তাই তরুণ ও তারুণ্যে পার্থক্য আছে। তারুণ্যের ধর্মচ্যুত তরুণ আমাদের কাম্য নয়। তাই আমাদের দেশ ও সমাজের ব্যাপক সাধারণ তরুণদের মধ্যে এনসিপির আবেদন কতটুকু হবে, তা ওই দলের ভূমিকা ও কাজের ওপর নির্ভর করবে।
আপনি কি মনে করেন বাংলাদেশে আশু গণতান্ত্রিক উত্তরণ সম্ভব?
নিশ্চয়ই সম্ভব, কারণ জনগণ দৃঢ়ভাবে এটা চায়। তবে কয়েকটি কঠিন চ্যালেঞ্জও আছে। মিয়ানমারের আরাকান অঞ্চলকে ঘিরে আমেরিকার মতো পরাশক্তির কোনো একটি ভূ-রাজনৈতিক পরিকল্পনা আছে বলে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে জল্পনা আছে, যদিও সংগত কারণে এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায় না। এখানে কোনো অস্থিতিশীলতা ঘটলে আমাদের নির্বাচন ব্যাহত হতে পারে। আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধের মধ্যে আমাদের নির্বাচন হওয়ার কথা। তবে এখনো এটা নিশ্চিত নয়।
মনে রাখতে হবে, গণতন্ত্র একটি সংস্কৃতি, শুধু নিয়ম নয়। আমাদের রাজনৈতিক সংস্কারের একটি ব্যাপক পরিকল্পনা প্রয়োজন, যে বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্য লাগবে। প্রথম ধাপেই আমাদের নির্বাচনকে সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক হতে হবে। বিগত সরকারের বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজের বিচার অবশ্যই হতে হবে। তবে সরকার ও প্রশাসনের দায়ী ব্যক্তিবর্গ ছাড়া বর্তমানে সরকারের আদেশে কার্যক্রম নিষিদ্ধ রাখা আওয়ামী লীগের বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মী-সমর্থককে সংগঠিত হওয়ার ও মতপ্রকাশের সাংবিধানিক অধিকার দিয়ে গণতন্ত্রের যাত্রাকে অংশগ্রহণমূলক করা ভালো। জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনও এই অধিকারগুলোর কথা আমাদের স্মরণ করিয়ে দিয়েছে।
এবার দু-একটি আন্তর্জাতিক বিষয়। চলমান বিশ্ব পরিস্থিতি, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা জোটের ভূমিকাকে আপনি কীভাবে দেখছেন?
পশ্চিমা জোট বলতে যদি আমরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন বা স্পষ্টত ন্যাটোভুক্ত দেশগুলোকে বোঝাই, তাহলে এই দেশগুলো হচ্ছে সাম্রাজ্যবাদী দেশ। সারা দুনিয়ায় আধিপত্য তাদের কাম্য। আমরা তাত্ত্বিকভাবে বলি যে সাম্রাজ্যবাদের খাদ্য হচ্ছে যুদ্ধ। যুদ্ধ ছাড়া তারা বাঁচতে পারে না। প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরেও সারাক্ষণ কোথাও না কোথাও যুদ্ধ লেগেই আছে। চার বছর ধরে রাশিয়া ও ইউক্রেনের যুদ্ধ চলার মধ্যেই এই মাসে ইরানে ইসরায়েল ও আমেরিকা আক্রমণ চালিয়ে একটি আঞ্চলিক যুদ্ধ ঘটাল। ইসরায়েল প্রায় দুই বছর ধরে ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় অকল্পনীয় নিষ্ঠুরতায় অব্যাহত গণহত্যা চালাচ্ছে। প্রায় ৬০ হাজার মানুষকে হত্যা করার পর এখন তাদের দুর্ভিক্ষে মৃত্যুমুখে ঠেলে দিচ্ছে। এইসব ঘটনায় এখন জাতিসংঘ কার্যত নিষ্ক্রিয় বা সভায় বসলেও কোনো পদক্ষেপ নিতে পারে না। ফিলিস্তিন ও ইরানে যা দেখা গেল, আমেরিকা ও ইসরায়েল আন্তর্জাতিক আইন ভঙ্গ করে চলেছে। সর্বশেষ এই সপ্তাহে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের চাপে প্রতিটি ন্যাটো দেশ অস্ত্র খাতে ব্যয় ৫ শতাংশ বাড়াতে সম্মত হয়েছে। এককথায় বৃহৎ শক্তিগুলোর স্বার্থে বিশ্বকে যুদ্ধে তাতিয়ে রাখাই হচ্ছে বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতি। বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধ পুরোটাই স্নায়ুযুদ্ধের কাল হলেও সমাজতান্ত্রিক সোভিয়েত ব্লক ও পশ্চিমা ব্লকের শক্তির ভারসাম্য ছোট দেশগুলোকে একটা ভরসায় রেখেছিল। সে সময় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে জেতার পেছনে সোভিয়েতের ভূমিকা একটি বড় উপাদান ছিল। সোভিয়েতের আহ্বানে তখন বিশ্বে পূর্ণাঙ্গ পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণের আলোচনা হয়েছিল। এখন বড় শক্তিগুলো নিরস্ত্রীকরণ নয়, পারমাণবিক অস্ত্রের একচেটিয়া অধিকার হাতে রাখতে চায়।
পরাশক্তিব্যবস্থা ভেঙে পড়ার পরে আমেরিকা ভেবেছিল বিশ্ব এককেন্দ্রিক হবে। কিন্তু তা হলো না। বরং আমেরিকা একটু দুর্বল হওয়ার পাশাপাশি চীন, রাশিয়া, ভারত, ইরান প্রভৃতি শক্তিধর রাষ্ট্র আছে। দুই মহাশক্তির পরিবর্তে পৃথিবী শক্তিকেন্দ্রিক। এ রকম
অবস্থায় বাংলাদেশের মতো ছোট দেশের জন্য সুযোগ এবং চ্যালেঞ্জ দুটোই আছে। সুযোগ এই কারণে যে, একপেশে অবস্থানের পরিবর্তে কৌশলী পররাষ্ট্রনীতি গ্রহণ করে আমরা স্বার্থসংশ্লিষ্ট সুবিধা আদায় করতে পারি। চ্যালেঞ্জ এই কারণে যে, বড়দের দ্বন্দ্বে আমরা পড়ে যেতে পারি একপেশে সিদ্ধান্তে। ভারসাম্য রক্ষা করে চলাই আমাদের স্বার্থানুকূল।
আপনার দৃষ্টিতে ইরান-ইসরায়েলের যুদ্ধের মূলে কী? এটি ধর্মীয়, রাজনৈতিক, না কৌশলগত সংঘাত? আমেরিকা কেন জড়াল?
খুব ভালো প্রশ্ন। কিন্তু উত্তরটা এককথায় দেওয়া যায় না। এই সংঘাত ধর্মীয়ও বটে, কৌশলগতও বটে এবং আঞ্চলিক আধিপত্য বিস্তার নিয়েও বটে।
দুটি রাষ্ট্রই ধর্মভিত্তিক। ইহুদি রাষ্ট্রটির শাসকদের মধ্যে জায়নবাদীরা আছে। জায়নবাদ হচ্ছে ইহুদি-শ্রেষ্ঠত্বের দাবিতে ফ্যাসিবাদী ভাবধারা। তবে সব ইহুদি জায়নবাদী নয়। তাদের মধ্যে উদার আধুনিক মানুষ অনেক আছে। প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু যুদ্ধে ধর্মীয় উন্মাদনা সৃষ্টি করতে সব সময় ধর্মগ্রন্থ ‘তোরাহ’ ব্যবহার করেন। যেমন ১২ জুন ইরান আক্রমণের নাম ‘জাগ্রত সিংহ অপারেশন’ ওল্ড টেস্টামেন্টভিত্তিক কাহিনি থেকে। তিনি আক্রমণের আগে জেরুজালেমে ওয়েস্ট ওয়ালে গিয়ে প্রার্থনা করেন। ওদিকে জাব্বাজোব্বা পরা আয়াতুল্লাহ শাসকেরা ইরানকে মধ্যপ্রাচ্যে শিয়াপন্থী অভিভাবক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চায়। এরা এমন ধর্মান্ধ যে ২০২২ সালে মাহশা আমিনি নামে এক তরুণীর হিজাব সরে গিয়ে চুল বেরিয়ে পড়ায় নীতি-পুলিশ তাঁর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। বন্দী অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হলে প্রতিবাদকারী শতাধিক কিশোরী-তরুণীকে মিছিলে গুলি করে মারা হয়। যুদ্ধে ধর্মীয় উপাদান ব্যবহার করা হলেও এটি মূলত ক্ষমতা ও আঞ্চলিক আধিপত্যের লড়াই। ইসরায়েল হচ্ছে একটি আঞ্চলিক পরাশক্তি, যাকে পশ্চিমা বিশ্ব, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র নিরঙ্কুশ সমর্থন দিয়ে থাকে। ইরান বড় আকারে পারমাণবিক গবেষণা করে, কিন্তু পারমাণবিক বোমা বানাতে চায়, তা স্বীকার না করে শান্তিপূর্ণ উন্নয়নের কাজে ব্যবহারের কথা বলে। আন্তর্জাতিক পরমাণু সংস্থাকে পরিদর্শনের অনুমতি দেয়। আলোচনায়ও বসেছে। এর আগের মেয়াদে ক্ষমতায় থাকতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প একতরফা আলোচনা ভেঙে দিয়েছিলেন। ইসরায়েল এবার ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় বোমা ফেলে, কয়েকজন সেনাপতি ও পরমাণুবিজ্ঞানীকে গুপ্তহত্যা করে। ইরান কার্যকরভাবে ইসরায়েলে পাল্টা ক্ষেপণাস্ত্র হামলা করতে পারলে ইসরায়েলের ইজ্জত বাঁচাতে যুক্তরাষ্ট্র শঠতাপূর্ণভাবে বি-টু যুদ্ধবিমান দিয়ে ইরানে বড় হামলা করে। তার পরই ট্রাম্প যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করেন। তিন রাষ্ট্রের দুই পক্ষের ১২ দিনের যুদ্ধ। সন্দেহ করা হয় যে ২০০৩ সালে জনবিধ্বংসী অস্ত্র আছে বলে মিথ্যা অজুহাতে ইরাক আক্রমণ করে সাদ্দাম হোসেনকে উৎখাত ও ফাঁসি দেওয়ার মতো ঘটনা ইরানে ঘটানোর জন্য যুক্তরাষ্ট্র ফন্দি আঁটতে পারে।
এবার কে জিতল?
(হেসে) তিন পক্ষই। যুদ্ধ শেষ হওয়ার দিন ২৪ জুনেই আন্তর্জাতিক মিডিয়া জানায়, যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, তারা ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র বানানো অনেক পিছিয়ে দিতে পেরেছে। ইসরায়েল বলেছে, তারা ইরানকে দুর্বল করে দিয়েছে। অবশ্য ইসরায়েলের আরেকটি লক্ষ্য খামেনি সরকারের পতন ঘটেনি—সে সম্পর্কে নীরব। আর ইরান বলেছে, তারা উপযুক্ত জবাব দিয়েছে। সর্বশেষ ২৬ জুন টিভিতে সম্প্রচারিত ভিডিও বার্তায় আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি কাতারে মার্কিন ঘাঁটিতে ইরানি ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতকে ‘সজোরে চপেটাঘাত’ উল্লেখ করে বলেন, ‘ইসরায়েল ধসে পড়েছে।’
বলাই যায়, ইসরায়েলি ‘সিংহ’ গর্জন মোতাবেক শিকার ধরতে পারেনি। ইউরোপে কিছুটা কূটনৈতিক বিচ্ছিন্নতায় পড়েছে। তবে নেতানিয়াহুর ক্ষমতার আয়ু কিছু বাড়তে পারে। ইরান ধারণার চেয়ে বেশি সক্ষমতা দেখিয়েছে এবং খামেনির সরকার পড়ে যাওয়ার বিপরীতে জনমতের দিক থেকে কিছুটা সংহত হয়েছে। বিশ্বের মুসলমানদের সমর্থন পেয়েছে। তারা বাংলাদেশকে ধন্যবাদও জানিয়েছে। আর আমেরিকা কিছুটা দুর্বল ইরানকে আলোচনার টেবিলে বসাবে। তিন পক্ষই বড় যুদ্ধ চায়নি, সেখানেও জিতেছে।
এই ১২ দিনের উপসংহারহীন অসমাপ্ত যুদ্ধের আরেকটি দিক হলো চীন ও রাশিয়ার কৌশলগত উত্থান। চীন চায় মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন আধিপত্যে ফাটল ধরুক। তারা ইরানকে কিছুটা উসকানি বা কৌশলগত সহায়তা দিয়েছে বলে ধারণা। রাশিয়াও মধ্যপ্রাচ্যে বন্ধুত্ব বাড়াতে সক্রিয়।
ইরানে বড় আক্রমণ দেখে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরুর আশঙ্কার কথা বলা হচ্ছিল।
তেমন আশঙ্কা দূরবর্তী বলেই মনে হয়। তবে স্থানিক যুদ্ধের পুনরাবৃত্তি হতে পারে বা বলতে পারেন ‘প্রক্সিতে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ’ সম্ভব। দুটি বৈশ্বিক মেরু তৈরি হয়েছে: একদিকে যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েল-ন্যাটো ব্লক, অন্যদিকে চীন-রাশিয়া-ইরান-হিজবুল্লাহ-হামাস।
এই দুই মেরুর মধ্যে সরাসরি সংঘর্ষ না হলেও তারা পরোক্ষে যুদ্ধ করছে ইউক্রেন, সিরিয়া, ইয়েমেন, গাজা প্রভৃতি যুদ্ধক্ষেত্রে। এখন তো যুদ্ধ শুধু অস্ত্রের না, তথ্যেরও। মিডিয়া, সামাজিক মাধ্যম, কূটনৈতিক মঞ্চ—সবই যুদ্ধে জড়িয়ে। থেমে নেই।
বাংলাদেশের অবস্থান কী হওয়া উচিত? আমাদের কি নিরপেক্ষ থাকা উচিত, নাকি অবস্থান নিতে হবে?
দৃঢ় অবস্থান, আমরা যুদ্ধ চাই না। সাংবিধানিকভাবে আমাদের পররাষ্ট্রনীতি সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে শত্রুতা নয়। তবে অবশ্যই ন্যায়-অন্যায় ও মানবাধিকারের প্রশ্নে গাজা যুদ্ধে ও ইরান আক্রমণে ইসরায়েলের তীব্র নিন্দা করেছি আমরা। ইসরায়েলকে আমরা রাষ্ট্র হিসেবে এখনো স্বীকৃতি দিইনি। আমাদের জনগণের একটি মুসলিম ভ্রাতৃত্ববোধ আছে।
তবে রাষ্ট্র হিসেবে আমাদের কৌশলগত ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। ইরানের সঙ্গে আমাদের বাণিজ্য ও জ্বালানি সহযোগিতা আছে। আমরা আন্তর্জাতিক শান্তির পক্ষে এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে অবশ্যই আপসহীন।
আপনি দীর্ঘকাল ধরে দেশের রাজনীতি পর্যবেক্ষণ করছেন। আজকের অবস্থানে দাঁড়িয়ে আপনি দেশের রাজনীতিকে কীভাবে ব্যাখ্যা করবেন?
রাজনৈতিকভাবে দেশ একটি ঘোরতর জটিল পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। সাংবিধানিক ও নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতি দেশে থাকলেও, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ভালো হলেও নিয়মনীতি অগ্রাহ্য করে, নির্বাচনে নগ্ন কারচুপি করে আওয়ামী লীগ দীর্ঘ সময় একচ্ছত্রভাবে ক্ষমতায় থাকার চেষ্টা করে অনেক সংকট তৈরি করেছিল। প্রাতিষ্ঠানিক ভাঙন, রাষ্ট্রযন্ত্র দলীয়করণ, খোলাখুলি ব্যাপক দুর্নীতি, রাজনৈতিক দলের দুর্বৃত্তায়ন, সমান সুযোগের অভাবে নাগরিকদের মধ্যে বঞ্চনাবোধ—এগুলোই হচ্ছে সংকটের রূপ। ছাত্র-তরুণেরা ভীষণ বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে এবং গত বছর জুলাই-আগস্টে ত্বরিত ফুঁসে ওঠা রাজপথের রক্তাক্ত আন্দোলনে সরকারের পতন ঘটে যায়। কিন্তু এর পরই জনগণের আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী নিয়মশৃঙ্খলা এনে একটি ভালো নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক শাসনের পথে যাত্রা সম্পর্কে শঙ্কা তৈরি হতে থাকে, কেননা ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের ভাবাদর্শের বিরুদ্ধের শক্তিগুলো, বিশেষত ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলোর প্রাধান্য প্রকাশ পায় এবং মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস-ঐতিহ্য, স্মারক আক্রান্ত হতে থাকে। গণতন্ত্রকে সফল করার জন্য, সাম্প্রতিক সময়ের মতো কোনো স্বৈরতান্ত্রিক শাসন যাতে আর না ফিরে আসে, সে জন্য অভিজ্ঞতা থেকে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতাকাঠামোয় কিছু সংস্কার দরকার, তা সবাই মানে। কিন্তু সে অছিলায় সংবিধানের মূলনীতি পরিবর্তনসহ রাষ্ট্রের চরিত্র বদলে ফেলার একটি লক্ষণীয় চেষ্টা একধরনের নতুন দ্বন্দ্বের সৃষ্টি করছে। এটা জটিলতা। এই পটভূমিতে দেশে অসহিষ্ণুতা, হিংস্রতা, প্রতিহিংসাপরায়ণতা যা দেখা যাচ্ছে, তা উদ্বেগের কারণ। এসবের নিরসন ঘটিয়ে সমাজে শান্তি আনা, জাতীয় ঐক্য-সংহতি দৃঢ় করা বড় চ্যালেঞ্জ।
আওয়ামী লীগ তো এখন কার্যত দৃশ্যপট থেকে অপসারিত। বিএনপি কি শূন্যস্থান পূরণ করতে বা বিকল্প শক্তি হয়ে উঠতে পারবে? জাতীয় পার্টি?
এই প্রশ্নে আমি কিছুটা কঠোর হব। বিএনপি ও জাতীয় পার্টি জনগণের প্রয়োজনে জনগণের মধ্য থেকে উঠে আসা দল নয়। সামরিক শাসকদের সৃষ্ট দল, যা তাঁরা ক্ষমতায় বসে বানিয়েছেন এবং পরিকৌশলী নিয়ন্ত্রিত নির্বাচনের মাধ্যমে জিতিয়ে এনেছেন। তবে সময়ের সঙ্গে রাজনীতি করে বিএনপি পোড় খেয়েছে, জনগণের কাতারে এসেছে। একাধিকবার দেশ পরিচালনা করেছে। প্রতিষ্ঠাতা সামরিক নেতা জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পরে ভোটে জিতেই ক্ষমতায় এসেছে। ২০০৬ সাল থেকে ১৯ বছর ক্ষমতার বাইরে থেকেও দলটি বড় আকারেই রয়েছে। কখনো কখনো ভুল সিদ্ধান্ত ও ভুল কৌশল এবং সাংগঠনিক দুর্বলতার জন্য আশানুরূপ ফল পায়নি। ২০১৪ থেকে আমি একাধিকবার বলেছি, বিএনপির উচিত ছিল আওয়ামী লীগ সৃষ্ট প্রতিকূলতার মধ্যেও সরকারের পতন ঘটাতে না চেয়ে, বয়কট না করে নির্বাচনে অংশ নিয়ে ভোট শুদ্ধ করার জন্য লড়াই করা। তাতে সার্বিকভাবেও দেশের রাজনীতির উপকার হতো। ছাত্রদের আন্দোলনসহ আরও নানা কারণে হাসিনা সরকারের পতন ঘটায় এখন রাজনীতির মাঠ বিএনপির জন্যই অনুকূলে। তবে নিকট অতীতে রাজনীতির দুর্বৃত্তায়নের অংশীদার বিএনপিও। এখনো চাঁদাবাজি, অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব প্রভৃতি পরিহারসহ দলের পরিশীলন ছাড়া বিএনপি জনগণের স্বার্থে ভূমিকা পালন করতে পারবে না। দলে তুলনামূলকভাবে চিন্তাশীল নেতৃত্বের দরকার ও তুলনামূলক বিশুদ্ধ রাজনীতির পথে হাঁটতে হবে দলটিকে।
জাতীয় পার্টি, এর প্রতিষ্ঠাতা সামরিক নেতা এরশাদের সময়ই কেবল ক্ষমতায় ছিল। পরে মূলত একটি ‘প্রক্সি পার্টি’তে রূপান্তরিত হয়। ক্ষমতার রাজনীতিতে এরা কখনো সরাসরি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেয় না। বরং একটি ‘বিকল্প নয়, বিকল্পের অংশীদার’ হিসেবেই তারা বেশি কাজ করে। বর্তমান রাজনীতিতে জাতীয় পার্টির ভূমিকা সীমিতই থাকবে।
সব সময়ই তো বলা হয় তরুণেরাই পরিবর্তন আনে। তরুণেরাই ভরসা। জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানের পরে রাজনীতিতে তরুণদের ভূমিকা কেমন দেখছেন?
নবগঠিত জাতীয় নাগরিক পার্টি বা এনসিপি তো তরুণদের দল। এনসিপি জন্ম নেওয়ার আগেই জুলাই আবহে ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে আমি বলেছিলাম, তরুণদের একটি রাজনৈতিক দলকে আমরা স্বাগত জানাতে পারি। এঁরা বয়সে তরুণ ও মানসিকতায় আধুনিক হবেন। নীতি, কর্মসূচি, জ্ঞান ও ব্যবস্থাপনাকে গুরুত্ব দেবেন; স্লোগান, বুলি কপচানো ও নেতা বন্দনায় নয়। যুক্তি দিয়ে কথা বলবেন সাধারণ স্বরগ্রামে, অহেতুক গলার রগ ফুলিয়ে বক্তৃতা করবেন না। গণতন্ত্রের রীতিনীতি মেনে চলবেন এবং পার্লামেন্টে বিরোধী দলের আসনে বসে রাজনীতি করাকে মর্যাদাপূর্ণ ভাববেন।
এমন তরুণদের দল আমরা পাচ্ছি কি না বা এনসিপি তেমন দল হচ্ছে কি না, তা পাঠকেরা প্রতিদিনই তাদের দেখে যাচাই করতে পারেন। গলা ফুলিয়ে, হিংসা ছড়িয়ে বক্তৃতা করা, অজ্ঞাত উৎসের হিসাববহির্ভূত অর্থ ব্যয়, চাঁদাবাজির অভিযোগ ওঠা, গাড়ির বহর নিয়ে শক্তির মহড়া ইত্যাদি না হলে বুঝব রাজনীতিতে পরিবর্তন আসছে।
আমাদের তরুণেরা রাজনীতি থেকে দূরে সরে যাচ্ছিল। ‘আই হেইট পলিটিকস’ শোনা যেত। কারণ, বছরের পর বছর তারা আদর্শহীন, সুবিধাবাদী, সংঘাতপূর্ণ, দুর্বৃত্তায়িত রাজনীতি দেখেছে। অন্যদিকে সামাজিক মাধ্যমে তারা দুনিয়া দেখে, সেখানে তাদের রাজনৈতিক উপস্থিতি পাওয়া যায়, তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে, প্রশ্ন তোলে। তরুণেরা এখন ‘নিউ পলিটিকস’ চায়, যেখানে নেতৃত্ব হবে বিশ্বাসযোগ্য, চিন্তাশীল এবং বাস্তবমুখী। কিন্তু আমি বিস্মিত যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কেরা, জাতীয় নাগরিক পার্টিতে সমবেত তরুণেরা শিক্ষিত, প্রতিভাবান, স্মার্ট কিন্তু কেউ কেউ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের প্রতি শ্রদ্ধাশীল নয়, এমনকি ধর্মভিত্তিক রাজনীতি দ্বারা প্রভাবিত ও জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে তাদের নৈকট্য দেখা যায়। তখন ভাবি, তরুণ মানেই তো ভালো, অগ্রসর চিন্তার মানুষ, প্রগতিশীল ও ন্যায়যোদ্ধা নয়। এগুলো হচ্ছে তারুণ্যের ধর্ম। কিন্তু সব তরুণের মধ্যে তারুণ্য নেই। চোর-গুন্ডা-বদমাশ ও সন্ত্রাসীরা কি বয়সে তরুণ নয়? নজরুল যাদের আহ্বান করেন ‘চল চল চল...অরুণপ্রাতের তরুণদল’ বলে এবং রবীন্দ্রনাথ যাদের বলেন ‘ওরে আমার সবুজ, ওরে আমার কাঁচা, আধমরাদের ঘা মেরে তুই বাঁচা’। তারা শুধু বয়সে তরুণ নয়, ধর্মে-মর্মে তরুণ। তাই তরুণ ও তারুণ্যে পার্থক্য আছে। তারুণ্যের ধর্মচ্যুত তরুণ আমাদের কাম্য নয়। তাই আমাদের দেশ ও সমাজের ব্যাপক সাধারণ তরুণদের মধ্যে এনসিপির আবেদন কতটুকু হবে, তা ওই দলের ভূমিকা ও কাজের ওপর নির্ভর করবে।
আপনি কি মনে করেন বাংলাদেশে আশু গণতান্ত্রিক উত্তরণ সম্ভব?
নিশ্চয়ই সম্ভব, কারণ জনগণ দৃঢ়ভাবে এটা চায়। তবে কয়েকটি কঠিন চ্যালেঞ্জও আছে। মিয়ানমারের আরাকান অঞ্চলকে ঘিরে আমেরিকার মতো পরাশক্তির কোনো একটি ভূ-রাজনৈতিক পরিকল্পনা আছে বলে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে জল্পনা আছে, যদিও সংগত কারণে এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায় না। এখানে কোনো অস্থিতিশীলতা ঘটলে আমাদের নির্বাচন ব্যাহত হতে পারে। আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধের মধ্যে আমাদের নির্বাচন হওয়ার কথা। তবে এখনো এটা নিশ্চিত নয়।
মনে রাখতে হবে, গণতন্ত্র একটি সংস্কৃতি, শুধু নিয়ম নয়। আমাদের রাজনৈতিক সংস্কারের একটি ব্যাপক পরিকল্পনা প্রয়োজন, যে বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্য লাগবে। প্রথম ধাপেই আমাদের নির্বাচনকে সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক হতে হবে। বিগত সরকারের বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজের বিচার অবশ্যই হতে হবে। তবে সরকার ও প্রশাসনের দায়ী ব্যক্তিবর্গ ছাড়া বর্তমানে সরকারের আদেশে কার্যক্রম নিষিদ্ধ রাখা আওয়ামী লীগের বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মী-সমর্থককে সংগঠিত হওয়ার ও মতপ্রকাশের সাংবিধানিক অধিকার দিয়ে গণতন্ত্রের যাত্রাকে অংশগ্রহণমূলক করা ভালো। জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনও এই অধিকারগুলোর কথা আমাদের স্মরণ করিয়ে দিয়েছে।
এবার দু-একটি আন্তর্জাতিক বিষয়। চলমান বিশ্ব পরিস্থিতি, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা জোটের ভূমিকাকে আপনি কীভাবে দেখছেন?
পশ্চিমা জোট বলতে যদি আমরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন বা স্পষ্টত ন্যাটোভুক্ত দেশগুলোকে বোঝাই, তাহলে এই দেশগুলো হচ্ছে সাম্রাজ্যবাদী দেশ। সারা দুনিয়ায় আধিপত্য তাদের কাম্য। আমরা তাত্ত্বিকভাবে বলি যে সাম্রাজ্যবাদের খাদ্য হচ্ছে যুদ্ধ। যুদ্ধ ছাড়া তারা বাঁচতে পারে না। প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরেও সারাক্ষণ কোথাও না কোথাও যুদ্ধ লেগেই আছে। চার বছর ধরে রাশিয়া ও ইউক্রেনের যুদ্ধ চলার মধ্যেই এই মাসে ইরানে ইসরায়েল ও আমেরিকা আক্রমণ চালিয়ে একটি আঞ্চলিক যুদ্ধ ঘটাল। ইসরায়েল প্রায় দুই বছর ধরে ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় অকল্পনীয় নিষ্ঠুরতায় অব্যাহত গণহত্যা চালাচ্ছে। প্রায় ৬০ হাজার মানুষকে হত্যা করার পর এখন তাদের দুর্ভিক্ষে মৃত্যুমুখে ঠেলে দিচ্ছে। এইসব ঘটনায় এখন জাতিসংঘ কার্যত নিষ্ক্রিয় বা সভায় বসলেও কোনো পদক্ষেপ নিতে পারে না। ফিলিস্তিন ও ইরানে যা দেখা গেল, আমেরিকা ও ইসরায়েল আন্তর্জাতিক আইন ভঙ্গ করে চলেছে। সর্বশেষ এই সপ্তাহে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের চাপে প্রতিটি ন্যাটো দেশ অস্ত্র খাতে ব্যয় ৫ শতাংশ বাড়াতে সম্মত হয়েছে। এককথায় বৃহৎ শক্তিগুলোর স্বার্থে বিশ্বকে যুদ্ধে তাতিয়ে রাখাই হচ্ছে বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতি। বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধ পুরোটাই স্নায়ুযুদ্ধের কাল হলেও সমাজতান্ত্রিক সোভিয়েত ব্লক ও পশ্চিমা ব্লকের শক্তির ভারসাম্য ছোট দেশগুলোকে একটা ভরসায় রেখেছিল। সে সময় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে জেতার পেছনে সোভিয়েতের ভূমিকা একটি বড় উপাদান ছিল। সোভিয়েতের আহ্বানে তখন বিশ্বে পূর্ণাঙ্গ পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণের আলোচনা হয়েছিল। এখন বড় শক্তিগুলো নিরস্ত্রীকরণ নয়, পারমাণবিক অস্ত্রের একচেটিয়া অধিকার হাতে রাখতে চায়।
পরাশক্তিব্যবস্থা ভেঙে পড়ার পরে আমেরিকা ভেবেছিল বিশ্ব এককেন্দ্রিক হবে। কিন্তু তা হলো না। বরং আমেরিকা একটু দুর্বল হওয়ার পাশাপাশি চীন, রাশিয়া, ভারত, ইরান প্রভৃতি শক্তিধর রাষ্ট্র আছে। দুই মহাশক্তির পরিবর্তে পৃথিবী শক্তিকেন্দ্রিক। এ রকম
অবস্থায় বাংলাদেশের মতো ছোট দেশের জন্য সুযোগ এবং চ্যালেঞ্জ দুটোই আছে। সুযোগ এই কারণে যে, একপেশে অবস্থানের পরিবর্তে কৌশলী পররাষ্ট্রনীতি গ্রহণ করে আমরা স্বার্থসংশ্লিষ্ট সুবিধা আদায় করতে পারি। চ্যালেঞ্জ এই কারণে যে, বড়দের দ্বন্দ্বে আমরা পড়ে যেতে পারি একপেশে সিদ্ধান্তে। ভারসাম্য রক্ষা করে চলাই আমাদের স্বার্থানুকূল।
আপনার দৃষ্টিতে ইরান-ইসরায়েলের যুদ্ধের মূলে কী? এটি ধর্মীয়, রাজনৈতিক, না কৌশলগত সংঘাত? আমেরিকা কেন জড়াল?
খুব ভালো প্রশ্ন। কিন্তু উত্তরটা এককথায় দেওয়া যায় না। এই সংঘাত ধর্মীয়ও বটে, কৌশলগতও বটে এবং আঞ্চলিক আধিপত্য বিস্তার নিয়েও বটে।
দুটি রাষ্ট্রই ধর্মভিত্তিক। ইহুদি রাষ্ট্রটির শাসকদের মধ্যে জায়নবাদীরা আছে। জায়নবাদ হচ্ছে ইহুদি-শ্রেষ্ঠত্বের দাবিতে ফ্যাসিবাদী ভাবধারা। তবে সব ইহুদি জায়নবাদী নয়। তাদের মধ্যে উদার আধুনিক মানুষ অনেক আছে। প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু যুদ্ধে ধর্মীয় উন্মাদনা সৃষ্টি করতে সব সময় ধর্মগ্রন্থ ‘তোরাহ’ ব্যবহার করেন। যেমন ১২ জুন ইরান আক্রমণের নাম ‘জাগ্রত সিংহ অপারেশন’ ওল্ড টেস্টামেন্টভিত্তিক কাহিনি থেকে। তিনি আক্রমণের আগে জেরুজালেমে ওয়েস্ট ওয়ালে গিয়ে প্রার্থনা করেন। ওদিকে জাব্বাজোব্বা পরা আয়াতুল্লাহ শাসকেরা ইরানকে মধ্যপ্রাচ্যে শিয়াপন্থী অভিভাবক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চায়। এরা এমন ধর্মান্ধ যে ২০২২ সালে মাহশা আমিনি নামে এক তরুণীর হিজাব সরে গিয়ে চুল বেরিয়ে পড়ায় নীতি-পুলিশ তাঁর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। বন্দী অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হলে প্রতিবাদকারী শতাধিক কিশোরী-তরুণীকে মিছিলে গুলি করে মারা হয়। যুদ্ধে ধর্মীয় উপাদান ব্যবহার করা হলেও এটি মূলত ক্ষমতা ও আঞ্চলিক আধিপত্যের লড়াই। ইসরায়েল হচ্ছে একটি আঞ্চলিক পরাশক্তি, যাকে পশ্চিমা বিশ্ব, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র নিরঙ্কুশ সমর্থন দিয়ে থাকে। ইরান বড় আকারে পারমাণবিক গবেষণা করে, কিন্তু পারমাণবিক বোমা বানাতে চায়, তা স্বীকার না করে শান্তিপূর্ণ উন্নয়নের কাজে ব্যবহারের কথা বলে। আন্তর্জাতিক পরমাণু সংস্থাকে পরিদর্শনের অনুমতি দেয়। আলোচনায়ও বসেছে। এর আগের মেয়াদে ক্ষমতায় থাকতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প একতরফা আলোচনা ভেঙে দিয়েছিলেন। ইসরায়েল এবার ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় বোমা ফেলে, কয়েকজন সেনাপতি ও পরমাণুবিজ্ঞানীকে গুপ্তহত্যা করে। ইরান কার্যকরভাবে ইসরায়েলে পাল্টা ক্ষেপণাস্ত্র হামলা করতে পারলে ইসরায়েলের ইজ্জত বাঁচাতে যুক্তরাষ্ট্র শঠতাপূর্ণভাবে বি-টু যুদ্ধবিমান দিয়ে ইরানে বড় হামলা করে। তার পরই ট্রাম্প যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করেন। তিন রাষ্ট্রের দুই পক্ষের ১২ দিনের যুদ্ধ। সন্দেহ করা হয় যে ২০০৩ সালে জনবিধ্বংসী অস্ত্র আছে বলে মিথ্যা অজুহাতে ইরাক আক্রমণ করে সাদ্দাম হোসেনকে উৎখাত ও ফাঁসি দেওয়ার মতো ঘটনা ইরানে ঘটানোর জন্য যুক্তরাষ্ট্র ফন্দি আঁটতে পারে।
এবার কে জিতল?
(হেসে) তিন পক্ষই। যুদ্ধ শেষ হওয়ার দিন ২৪ জুনেই আন্তর্জাতিক মিডিয়া জানায়, যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, তারা ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র বানানো অনেক পিছিয়ে দিতে পেরেছে। ইসরায়েল বলেছে, তারা ইরানকে দুর্বল করে দিয়েছে। অবশ্য ইসরায়েলের আরেকটি লক্ষ্য খামেনি সরকারের পতন ঘটেনি—সে সম্পর্কে নীরব। আর ইরান বলেছে, তারা উপযুক্ত জবাব দিয়েছে। সর্বশেষ ২৬ জুন টিভিতে সম্প্রচারিত ভিডিও বার্তায় আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি কাতারে মার্কিন ঘাঁটিতে ইরানি ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতকে ‘সজোরে চপেটাঘাত’ উল্লেখ করে বলেন, ‘ইসরায়েল ধসে পড়েছে।’
বলাই যায়, ইসরায়েলি ‘সিংহ’ গর্জন মোতাবেক শিকার ধরতে পারেনি। ইউরোপে কিছুটা কূটনৈতিক বিচ্ছিন্নতায় পড়েছে। তবে নেতানিয়াহুর ক্ষমতার আয়ু কিছু বাড়তে পারে। ইরান ধারণার চেয়ে বেশি সক্ষমতা দেখিয়েছে এবং খামেনির সরকার পড়ে যাওয়ার বিপরীতে জনমতের দিক থেকে কিছুটা সংহত হয়েছে। বিশ্বের মুসলমানদের সমর্থন পেয়েছে। তারা বাংলাদেশকে ধন্যবাদও জানিয়েছে। আর আমেরিকা কিছুটা দুর্বল ইরানকে আলোচনার টেবিলে বসাবে। তিন পক্ষই বড় যুদ্ধ চায়নি, সেখানেও জিতেছে।
এই ১২ দিনের উপসংহারহীন অসমাপ্ত যুদ্ধের আরেকটি দিক হলো চীন ও রাশিয়ার কৌশলগত উত্থান। চীন চায় মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন আধিপত্যে ফাটল ধরুক। তারা ইরানকে কিছুটা উসকানি বা কৌশলগত সহায়তা দিয়েছে বলে ধারণা। রাশিয়াও মধ্যপ্রাচ্যে বন্ধুত্ব বাড়াতে সক্রিয়।
ইরানে বড় আক্রমণ দেখে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরুর আশঙ্কার কথা বলা হচ্ছিল।
তেমন আশঙ্কা দূরবর্তী বলেই মনে হয়। তবে স্থানিক যুদ্ধের পুনরাবৃত্তি হতে পারে বা বলতে পারেন ‘প্রক্সিতে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ’ সম্ভব। দুটি বৈশ্বিক মেরু তৈরি হয়েছে: একদিকে যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েল-ন্যাটো ব্লক, অন্যদিকে চীন-রাশিয়া-ইরান-হিজবুল্লাহ-হামাস।
এই দুই মেরুর মধ্যে সরাসরি সংঘর্ষ না হলেও তারা পরোক্ষে যুদ্ধ করছে ইউক্রেন, সিরিয়া, ইয়েমেন, গাজা প্রভৃতি যুদ্ধক্ষেত্রে। এখন তো যুদ্ধ শুধু অস্ত্রের না, তথ্যেরও। মিডিয়া, সামাজিক মাধ্যম, কূটনৈতিক মঞ্চ—সবই যুদ্ধে জড়িয়ে। থেমে নেই।
বাংলাদেশের অবস্থান কী হওয়া উচিত? আমাদের কি নিরপেক্ষ থাকা উচিত, নাকি অবস্থান নিতে হবে?
দৃঢ় অবস্থান, আমরা যুদ্ধ চাই না। সাংবিধানিকভাবে আমাদের পররাষ্ট্রনীতি সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে শত্রুতা নয়। তবে অবশ্যই ন্যায়-অন্যায় ও মানবাধিকারের প্রশ্নে গাজা যুদ্ধে ও ইরান আক্রমণে ইসরায়েলের তীব্র নিন্দা করেছি আমরা। ইসরায়েলকে আমরা রাষ্ট্র হিসেবে এখনো স্বীকৃতি দিইনি। আমাদের জনগণের একটি মুসলিম ভ্রাতৃত্ববোধ আছে।
তবে রাষ্ট্র হিসেবে আমাদের কৌশলগত ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। ইরানের সঙ্গে আমাদের বাণিজ্য ও জ্বালানি সহযোগিতা আছে। আমরা আন্তর্জাতিক শান্তির পক্ষে এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে অবশ্যই আপসহীন।

ড. কামরুল হাসান মামুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের মাধ্যমে জুলাই আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন। তিনি যুক্তরাজ্যের ব্রুনেল ইউনিভার্সিটির পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ থেকে পিএইচডি করেছেন। হামবোল্ট রিসার্চ ফেলো হিসেবে কাজ করেছেন জার্মানির পটসডাম বিশ্ববিদ্যালয়ে।
১২ ঘণ্টা আগে
অন্তর্বর্তী সরকার বাংলাদেশের হাল ধরার পর থেকেই নির্বাচন নিয়ে নানা জল্পনাকল্পনা চলেছে। বাড়ির খাবার টেবিল থেকে শুরু করে চায়ের দোকানে মুরব্বিদের আড্ডায় এ নিয়ে নানা জটিল প্রশ্নের উদ্ভব হয়েছে। প্রায় সব প্রশ্নের উত্তর পাওয়া না গেলেও ২০২৫ সালের শুরু থেকে প্রধান উপদেষ্টা মোটামুটি জোর কণ্ঠেই বলে গেছেন...
১৩ ঘণ্টা আগে
সম্প্রতি রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে সুজন আয়োজিত ‘নির্বাচনী ব্যবস্থার সংস্কার: অগ্রগতি পর্যালোচনা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে বিশিষ্ট নাগরিক ও বিশেষজ্ঞরা যে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, তা আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতি ও বাস্তবতার এক করুণ চিত্র উঠে এসেছে।
১৩ ঘণ্টা আগে
খুলনার ব্যাপারটা বড্ড গোলমেলে। এনসিপির এক শ্রমিকনেতাকে উদ্দেশ্য করে গুলি ছোড়া হয়েছে। গুলিটি তাঁর বাঁ কানের চামড়া ভেদ করে বের হয়ে গেছে। তিনি এখন শঙ্কামুক্ত। গুলি লাগার পরই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই ঘটনা ছড়িয়ে পড়ে। কোনো গুপ্তঘাতক নেতাদের টার্গেট করে হত্যা পরিকল্পনায় নেমেছে কি না, সে রকম...
১ দিন আগে
ড. কামরুল হাসান মামুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের মাধ্যমে জুলাই আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন। তিনি যুক্তরাজ্যের ব্রুনেল ইউনিভার্সিটির পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ থেকে পিএইচডি করেছেন। হামবোল্ট রিসার্চ ফেলো হিসেবে কাজ করেছেন জার্মানির পটসডাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। দেশের শিক্ষাব্যবস্থার অসংগতি, বৈষম্য নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছেন তিনি। শিক্ষা নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের অবস্থান, ছাত্র সংসদ, ছাত্ররাজনীতির গতিধারা এবং শিক্ষাব্যবস্থার নানা বিষয় নিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার মাসুদ রানা
মাসুদ রানা

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম মূল দাবি ছিল ‘বৈষম্যহীন রাষ্ট্র গঠন’। গত দেড় বছরে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা সেই কাঙ্ক্ষিত বৈষম্যহীনতার পথে কতটুকু এগিয়েছে বলে আপনি মনে করেন?
প্রশ্ন হলো, বৈষম্যহীনতা মূল রেখে, ডালপালা ছাঁটলে তো কোনো লাভ হবে না। বৈষম্য তো রয়ে গেছে আমাদের মূলে। একটা দেশে কীভাবে কওমি মাদ্রাসা, আলিয়া মাদ্রাসা, বাংলা মিডিয়াম, বাংলার আবার ইংরেজি ভার্সন, ইংরেজি মাধ্যম থাকতে পারে? আমি আমার শিক্ষকতা জীবনে দেখেছি, এইসব শিক্ষাকাঠামোর কোথাও মিলনস্থান নেই। এভাবে আমরা আমাদের দেশের মানুষকে শিক্ষা, অর্থনীতি ও ধর্ম দিয়ে বিভাজিত করেছি। এ রকম একটা সমাজে বৈষম্যহীন করার জন্য যে ধরনের প্রজ্ঞা, পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি লাগে, তার তো সব অনুপস্থিতি এখনো আছে।
সুতরাং আমি গত দেড় বছরে বাংলাদেশের কোনো পর্যায়েই বৈষম্যহীনতা তো দূরের কথা, বৈষম্য কমানোর চেষ্টা দেখিনি। গরিব মানুষ আরও গরিব হয়েছে, ধনীরা হয়তোবা আরও বেশি ধনী হয়েছে। কিন্তু বৈষম্য কোনো দিক দিয়েই কমেনি।
আগের সরকারের প্রবর্তিত নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে অনেক বিতর্ক ছিল। বর্তমান সরকার যে পরিমার্জন এনেছে, তা শিক্ষাব্যবস্থার কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তনে কোনো ভূমিকা কি রেখেছে?
আগের সরকার যা করেছে এবং বর্তমান সরকার যা করছে, আসলে তা হলো মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। আগের সরকার মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু এবং তাঁর পরিবারের সব সদস্যকে পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করে ব্যবহার করেছে। আর এই সরকার ক্ষমতায় আসতে না আসতেই চব্বিশের আন্দোলনকে পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করেছে। কোনো বিষয় পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য একটা সময় লাগে। ইতিহাসকে আসলে একটা সময় দিতে হয়। এটা সত্যি সত্যি পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার যোগ্য কি না, সেটা সময়ের আলোকে আসলে রেকটিফাই ও টেস্ট করতে হয়। মানে ফিল্টারিং প্রসেসের মধ্য দিয়ে যেতে হয়। এখনই এটা দেওয়ার মানে হলো, আপনারা এটাকে ব্যবহার করতে চান, ঠিক যেভাবে আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধকে ব্যবহার করেছিল। ইতিহাস তো ব্যবহার্য বিষয় না। ইতিহাস তো ধারণ করার বিষয়।
চব্বিশকে পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করা মানেই হলো, আপনাদের কোনো লাভের বিষয় আছে। আপনারা এটাকে ব্যবহার করতে চান টিস্যু পেপারের মতো। শিক্ষার্থীদের গিনিপিগ হিসেবে ব্যবহার করে আপনারা আপনাদের হীন স্বার্থ হাসিলের ব্যবস্থা করবেন, সেটা কখনোই মেনে নেওয়া যায় না। কাকে বাদ দেওয়া হবে? রবীন্দ্রনাথ, কাজী নজরুল, জীবনানন্দকে বাদ দেওয়া যায়? এঁদের কবিতা ও অন্যান্য লেখা দিয়ে ধর্ম ও জাতিভেদের ব্যাপারগুলো টেনে নিয়ে আসা ঠিক না। তাঁরা সময় দ্বারা পরীক্ষিত। ভালো মানের লোক দিয়ে একটা শিক্ষা কমিশন করা দরকার ছিল। কিন্তু এই সরকারের কি ম্যান্ডেট থাকতে পারে আমলাদের দিয়ে পাঠ্যপুস্তকের বিষয় যোগ বা বিয়োগ করার? তাদের এই যোগ ও বাদ দেওয়ার কোনোটাই সমর্থন করতে পারি না।
গত দেড় বছরের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররাজনীতির পটপরিবর্তনকে কীভাবে দেখেন?
২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থানের পর মানুষের মধ্যে একটা আকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়েছিল, শিক্ষার্থীরা তাদের রাজনীতি করবে, লেজুড়বৃত্তি করবে না। কোনো দলের জাতীয় নেতারা অন্যায় করলে সেটার প্রতিবাদ করবে শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের দাবির মধ্যে থাকবে, শিক্ষায় কীভাবে বাজেট বৃদ্ধি করা যায়, গবেষণায় কীভাবে বরাদ্দ বৃদ্ধি করা যায়; শিক্ষার্থীরা সাংস্কৃতিক, বুদ্ধিবৃত্তিক কর্মকাণ্ডে ও এক্সট্রা কারিকুলাম অ্যাক্টিভিটিতে যুক্ত থাকবে এবং সব সময় সজাগ দৃষ্টি রাখবে—দেশ কোন দিকে যাচ্ছে। কিন্তু শিক্ষার্থীরা যখন দলীয় বৃত্তের মধ্যে চলে যায়, তখন একটা দলের মধ্যে আটকে থাকলে তো তারা পুরো আকাশ দেখতে পাবে না। সে কারণে তারা সেই দলের কোনো অন্যায় কর্মকাণ্ডকে মাফ করে দেয়। আর অন্য দলের সামান্য অন্যায়কে বড় করে দেখে থাকে। এটা শিক্ষার্থীদের চরিত্র হওয়া উচিত না। এই আকাঙ্ক্ষাটা জুলাই আন্দোলনের পর তৈরি হয়েছিল। কিন্তু সেটা আবার ফিরে এসেছে। দলান্ধতা আবার বেড়ে
গেছে। কিন্তু সবার না। যেমন উগ্র ডানপন্থীদের কার্যক্রম প্রচণ্ড রকম বেড়ে গেছে। কিন্তু এটাকে প্রতিহত করার জন্য তেমন কাউকে দেখা যাচ্ছে না।
বর্তমানে ডাকসুসহ অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের কার্যক্রমকে কীভাবে দেখেন?
ছাত্র সংসদের কিছু দায়িত্ব আছে। তারা কী করতে পারে এবং কী করা উচিত এবং কী করা উচিত না, সেগুলোর সবকিছু লিখিত না থাকলেও অধিকাংশ জনের কাছে সেগুলোর একটা ধারণা আছে। ছাত্র সংসদের কাজ তো ছিন্নমূল মানুষকে লাঠির বাড়ি দিয়ে উঠিয়ে দেওয়া না। ছাত্র সংসদের কাজ গুন্ডামি করা নয় বা কাউকে পেটানো না। তারা নিজেদের প্রশাসনের অংশ মনে করে। উপাচার্য বলেন, ‘তোমরা আমাদেরই পার্ট।’ তা হতে পারে না।
ছাত্র সংসদের নির্ধারিত কাজ হচ্ছে সাংস্কৃতিক, খেলাধুলার বিষয়গুলো দেখভাল করা, শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা ও গবেষণাকে কীভাবে অগ্রসর করা যায়, কীভাবে লেখাপড়ার মান আরও উন্নত করা যায়—এসব নিয়ে কাজ করা। উন্নত দেশের ছাত্র সংসদের প্রতিনিধিরা নতুন ছাত্র যারা ভর্তি হয়েছে, তাদের প্রয়োজনে বাসস্ট্যান্ড ও বিমানবন্দর থেকে রিসিভ করে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করে থাকে। কারণ, বিভিন্ন দেশ থেকে বা গ্রাম থেকে যখন শিক্ষার্থীরা আসে, নতুন একটা শহর চেনার কথা না। ছাত্র সংসদের প্রতিনিধিদের কাজ আসলে এগুলোই। শিক্ষার্থীরা কীভাবে স্কলারশিপ পাবে, কে আর্থিকভাবে দুর্বল—এদের জন্যই তারা কাজ করবে। কিন্তু আসল কাজ বাদ দিয়ে এরা যা করছে তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। একটা দলকে কীভাবে জাতীয় নির্বাচনে জয়ী করা যায়, সেগুলোতে তাদের মূল আগ্রহ দেখা যাচ্ছে।
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক পদগুলোতে নিয়োগের ক্ষেত্রে কি রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত পরিবেশ ফিরে এসেছে?
এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই সরকার তো নির্দলীয়। এই নির্দলীয় সরকার কি দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সত্যিকারের একাডেমিকভাবে যোগ্য লোকদের নিয়োগ দিয়েছে? সব ক্ষেত্রেই উপাচার্য, উপ-উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষ দলীয়ভাবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এই দলীয় উপাচার্যরা নিয়োগ পাওয়ার পর প্রশাসনিক সব পদে প্রভোস্ট, প্রক্টর ও ডিনদের দলীয়ভাবে নিয়োগ দিয়েছেন। গত সরকার যা করেছে, এর আগে বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালীন যা করেছে, এই অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনেও কোনো পার্থক্য দেখা গেল না।
সামনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর একটি নতুন সরকার ক্ষমতায় আসবে। তারা কি শিক্ষাব্যবস্থার আমূল পরিবর্তনে নতুন আশার আলো দেখাতে পারবে?
এই দেশে সবদিক দিয়ে সবচেয়ে বড় দুটি সমস্যা হলো শিক্ষা ও স্বাস্থ্যব্যবস্থা। যেহেতু দেশের শিক্ষা ও সরকারি হাসপাতালের মান ভালো না, সেহেতু দেশের লক্ষ-কোটি টাকা ডলারে রূপান্তরিত হয়ে বিদেশে চলে যাচ্ছে। প্রতিবছর দেশ থেকে প্রায় ১৫-২০ হাজার শিক্ষার্থী শুধু পড়ালেখার জন্য বিদেশে চলে যাচ্ছেন। দেশের বৈদেশিক মুদ্রার একটা বড় অংশ শুধু শিক্ষা ও চিকিৎসার জন্য বিদেশে চলে যাচ্ছে। শুধু অর্থ বিদেশে চলে যাচ্ছে না, অনেক মেধাবী শিক্ষার্থীও বিদেশে চলে যাচ্ছেন। কোনো সরকার কি পরিসংখ্যান নিয়ে দেখেছে, যাঁরা বিদেশে যাচ্ছেন, তার কত অংশ দেশে ফিরে আসছেন? এ দেশের জনগণের ট্যাক্সের টাকায় পড়াশোনা শেষ করে এই যে মেধাবী শিক্ষার্থীরা বিদেশে চলে যাচ্ছেন, এটাকেই বলা হয় ‘ব্রেন ড্রেন’। আমরা যাঁদের মেধাবী হিসেবে তৈরি করছি, তাঁদের সেবাটা পাচ্ছে না এ দেশ। তার চিত্রটা দেখা পাওয়া যায় রাস্তাঘাটে হাঁটলে। শুধু তা-ই না, এ দেশে আরেকটা সমস্যা তৈরি হয়েছে—গত সাড়ে ১৫ বছরে থিয়েটার, টেলিভিশন, গানের শিল্পীসহ নানা সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব দেশ থেকে চলে গেছেন। সুতরাং শিক্ষক, ছাত্র ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব দেশ থেকে চলে যাওয়ার কারণে দেশে মেধাবীদের একটা শূন্যতা তৈরি হয়েছে।
একটা দেশ উন্নত হওয়ার জন্য প্রয়োজন একটা নির্দিষ্টসংখ্যক উচ্চ মানের মানুষের। এঁদের সংখ্যা কমে যাওয়া মানে শরীরের রক্তশূন্যতার মতো। আমরা এখন সেই রক্তশূন্যতার মধ্যে ভুগছি। প্রতিবাদী মানুষের সংখ্যাও কমে গেছে। সমাজকে সুস্থ রাখার জন্য প্রতিবাদী মানুষের সংখ্যা বেশি হওয়া দরকার।
শিক্ষাব্যবস্থাকে যদি ভালো করা না যায়, তাহলে দেশে বেকার সমস্যার সমাধান হবে না। আমাদের শিক্ষার মান খারাপ হওয়ার কারণে বেকারের সংখ্যা প্রচুর। বেকারত্বের কারণেই দেশে নানা ধরনের অরাজকতা তৈরি হয়েছে।
জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে যে দল ক্ষমতায় আসবে, তাদের কাছে আমার আবেদন বা অনুরোধ থাকবে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া। কারণ, প্রকৃত শিক্ষার মাধ্যমেই মানুষ তৈরি হয়। আগে উন্নত মানুষ তৈরি করতে হবে। কারণ, উন্নত মানুষের মাধ্যমেই কেবল উন্নত দেশ গড়া সম্ভব। দালানকোঠা নির্মাণ করে দেশ উন্নত করা সম্ভব নয়। পৃথিবীর এমন একটা দেশ পাওয়া যাবে না, যে দেশ শিক্ষায় উন্নত না হয়ে অর্থনৈতিকভাবে উন্নত হতে পেরেছে। একটা উদাহরণ দিই। আজ থেকে ৩০ বছর আগেও চীনের কোনো বিশ্ববিদ্যালয় ওয়ার্ল্ড র্যাঙ্কিংয়ে ১০০-এর মধ্যে ছিল না। সেই চীনের বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় ২০-এর মধ্যে অবস্থান করছে। আশা করা যায়, আগামী ১০ বছরের মধ্যে তারা দশের মধ্যে চলে আসবে। এই যে চলে আসা এবং তাদের যে অর্থনৈতিকভাবে উন্নয়ন, দুটিই হাত ধরাধরি করে এগিয়েছে।
সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
আজকের পত্রিকা ও আপনাকেও ধন্যবাদ।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম মূল দাবি ছিল ‘বৈষম্যহীন রাষ্ট্র গঠন’। গত দেড় বছরে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা সেই কাঙ্ক্ষিত বৈষম্যহীনতার পথে কতটুকু এগিয়েছে বলে আপনি মনে করেন?
প্রশ্ন হলো, বৈষম্যহীনতা মূল রেখে, ডালপালা ছাঁটলে তো কোনো লাভ হবে না। বৈষম্য তো রয়ে গেছে আমাদের মূলে। একটা দেশে কীভাবে কওমি মাদ্রাসা, আলিয়া মাদ্রাসা, বাংলা মিডিয়াম, বাংলার আবার ইংরেজি ভার্সন, ইংরেজি মাধ্যম থাকতে পারে? আমি আমার শিক্ষকতা জীবনে দেখেছি, এইসব শিক্ষাকাঠামোর কোথাও মিলনস্থান নেই। এভাবে আমরা আমাদের দেশের মানুষকে শিক্ষা, অর্থনীতি ও ধর্ম দিয়ে বিভাজিত করেছি। এ রকম একটা সমাজে বৈষম্যহীন করার জন্য যে ধরনের প্রজ্ঞা, পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি লাগে, তার তো সব অনুপস্থিতি এখনো আছে।
সুতরাং আমি গত দেড় বছরে বাংলাদেশের কোনো পর্যায়েই বৈষম্যহীনতা তো দূরের কথা, বৈষম্য কমানোর চেষ্টা দেখিনি। গরিব মানুষ আরও গরিব হয়েছে, ধনীরা হয়তোবা আরও বেশি ধনী হয়েছে। কিন্তু বৈষম্য কোনো দিক দিয়েই কমেনি।
আগের সরকারের প্রবর্তিত নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে অনেক বিতর্ক ছিল। বর্তমান সরকার যে পরিমার্জন এনেছে, তা শিক্ষাব্যবস্থার কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তনে কোনো ভূমিকা কি রেখেছে?
আগের সরকার যা করেছে এবং বর্তমান সরকার যা করছে, আসলে তা হলো মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। আগের সরকার মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু এবং তাঁর পরিবারের সব সদস্যকে পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করে ব্যবহার করেছে। আর এই সরকার ক্ষমতায় আসতে না আসতেই চব্বিশের আন্দোলনকে পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করেছে। কোনো বিষয় পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য একটা সময় লাগে। ইতিহাসকে আসলে একটা সময় দিতে হয়। এটা সত্যি সত্যি পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার যোগ্য কি না, সেটা সময়ের আলোকে আসলে রেকটিফাই ও টেস্ট করতে হয়। মানে ফিল্টারিং প্রসেসের মধ্য দিয়ে যেতে হয়। এখনই এটা দেওয়ার মানে হলো, আপনারা এটাকে ব্যবহার করতে চান, ঠিক যেভাবে আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধকে ব্যবহার করেছিল। ইতিহাস তো ব্যবহার্য বিষয় না। ইতিহাস তো ধারণ করার বিষয়।
চব্বিশকে পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করা মানেই হলো, আপনাদের কোনো লাভের বিষয় আছে। আপনারা এটাকে ব্যবহার করতে চান টিস্যু পেপারের মতো। শিক্ষার্থীদের গিনিপিগ হিসেবে ব্যবহার করে আপনারা আপনাদের হীন স্বার্থ হাসিলের ব্যবস্থা করবেন, সেটা কখনোই মেনে নেওয়া যায় না। কাকে বাদ দেওয়া হবে? রবীন্দ্রনাথ, কাজী নজরুল, জীবনানন্দকে বাদ দেওয়া যায়? এঁদের কবিতা ও অন্যান্য লেখা দিয়ে ধর্ম ও জাতিভেদের ব্যাপারগুলো টেনে নিয়ে আসা ঠিক না। তাঁরা সময় দ্বারা পরীক্ষিত। ভালো মানের লোক দিয়ে একটা শিক্ষা কমিশন করা দরকার ছিল। কিন্তু এই সরকারের কি ম্যান্ডেট থাকতে পারে আমলাদের দিয়ে পাঠ্যপুস্তকের বিষয় যোগ বা বিয়োগ করার? তাদের এই যোগ ও বাদ দেওয়ার কোনোটাই সমর্থন করতে পারি না।
গত দেড় বছরের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররাজনীতির পটপরিবর্তনকে কীভাবে দেখেন?
২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থানের পর মানুষের মধ্যে একটা আকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়েছিল, শিক্ষার্থীরা তাদের রাজনীতি করবে, লেজুড়বৃত্তি করবে না। কোনো দলের জাতীয় নেতারা অন্যায় করলে সেটার প্রতিবাদ করবে শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের দাবির মধ্যে থাকবে, শিক্ষায় কীভাবে বাজেট বৃদ্ধি করা যায়, গবেষণায় কীভাবে বরাদ্দ বৃদ্ধি করা যায়; শিক্ষার্থীরা সাংস্কৃতিক, বুদ্ধিবৃত্তিক কর্মকাণ্ডে ও এক্সট্রা কারিকুলাম অ্যাক্টিভিটিতে যুক্ত থাকবে এবং সব সময় সজাগ দৃষ্টি রাখবে—দেশ কোন দিকে যাচ্ছে। কিন্তু শিক্ষার্থীরা যখন দলীয় বৃত্তের মধ্যে চলে যায়, তখন একটা দলের মধ্যে আটকে থাকলে তো তারা পুরো আকাশ দেখতে পাবে না। সে কারণে তারা সেই দলের কোনো অন্যায় কর্মকাণ্ডকে মাফ করে দেয়। আর অন্য দলের সামান্য অন্যায়কে বড় করে দেখে থাকে। এটা শিক্ষার্থীদের চরিত্র হওয়া উচিত না। এই আকাঙ্ক্ষাটা জুলাই আন্দোলনের পর তৈরি হয়েছিল। কিন্তু সেটা আবার ফিরে এসেছে। দলান্ধতা আবার বেড়ে
গেছে। কিন্তু সবার না। যেমন উগ্র ডানপন্থীদের কার্যক্রম প্রচণ্ড রকম বেড়ে গেছে। কিন্তু এটাকে প্রতিহত করার জন্য তেমন কাউকে দেখা যাচ্ছে না।
বর্তমানে ডাকসুসহ অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের কার্যক্রমকে কীভাবে দেখেন?
ছাত্র সংসদের কিছু দায়িত্ব আছে। তারা কী করতে পারে এবং কী করা উচিত এবং কী করা উচিত না, সেগুলোর সবকিছু লিখিত না থাকলেও অধিকাংশ জনের কাছে সেগুলোর একটা ধারণা আছে। ছাত্র সংসদের কাজ তো ছিন্নমূল মানুষকে লাঠির বাড়ি দিয়ে উঠিয়ে দেওয়া না। ছাত্র সংসদের কাজ গুন্ডামি করা নয় বা কাউকে পেটানো না। তারা নিজেদের প্রশাসনের অংশ মনে করে। উপাচার্য বলেন, ‘তোমরা আমাদেরই পার্ট।’ তা হতে পারে না।
ছাত্র সংসদের নির্ধারিত কাজ হচ্ছে সাংস্কৃতিক, খেলাধুলার বিষয়গুলো দেখভাল করা, শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা ও গবেষণাকে কীভাবে অগ্রসর করা যায়, কীভাবে লেখাপড়ার মান আরও উন্নত করা যায়—এসব নিয়ে কাজ করা। উন্নত দেশের ছাত্র সংসদের প্রতিনিধিরা নতুন ছাত্র যারা ভর্তি হয়েছে, তাদের প্রয়োজনে বাসস্ট্যান্ড ও বিমানবন্দর থেকে রিসিভ করে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করে থাকে। কারণ, বিভিন্ন দেশ থেকে বা গ্রাম থেকে যখন শিক্ষার্থীরা আসে, নতুন একটা শহর চেনার কথা না। ছাত্র সংসদের প্রতিনিধিদের কাজ আসলে এগুলোই। শিক্ষার্থীরা কীভাবে স্কলারশিপ পাবে, কে আর্থিকভাবে দুর্বল—এদের জন্যই তারা কাজ করবে। কিন্তু আসল কাজ বাদ দিয়ে এরা যা করছে তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। একটা দলকে কীভাবে জাতীয় নির্বাচনে জয়ী করা যায়, সেগুলোতে তাদের মূল আগ্রহ দেখা যাচ্ছে।
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক পদগুলোতে নিয়োগের ক্ষেত্রে কি রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত পরিবেশ ফিরে এসেছে?
এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই সরকার তো নির্দলীয়। এই নির্দলীয় সরকার কি দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সত্যিকারের একাডেমিকভাবে যোগ্য লোকদের নিয়োগ দিয়েছে? সব ক্ষেত্রেই উপাচার্য, উপ-উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষ দলীয়ভাবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এই দলীয় উপাচার্যরা নিয়োগ পাওয়ার পর প্রশাসনিক সব পদে প্রভোস্ট, প্রক্টর ও ডিনদের দলীয়ভাবে নিয়োগ দিয়েছেন। গত সরকার যা করেছে, এর আগে বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালীন যা করেছে, এই অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনেও কোনো পার্থক্য দেখা গেল না।
সামনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর একটি নতুন সরকার ক্ষমতায় আসবে। তারা কি শিক্ষাব্যবস্থার আমূল পরিবর্তনে নতুন আশার আলো দেখাতে পারবে?
এই দেশে সবদিক দিয়ে সবচেয়ে বড় দুটি সমস্যা হলো শিক্ষা ও স্বাস্থ্যব্যবস্থা। যেহেতু দেশের শিক্ষা ও সরকারি হাসপাতালের মান ভালো না, সেহেতু দেশের লক্ষ-কোটি টাকা ডলারে রূপান্তরিত হয়ে বিদেশে চলে যাচ্ছে। প্রতিবছর দেশ থেকে প্রায় ১৫-২০ হাজার শিক্ষার্থী শুধু পড়ালেখার জন্য বিদেশে চলে যাচ্ছেন। দেশের বৈদেশিক মুদ্রার একটা বড় অংশ শুধু শিক্ষা ও চিকিৎসার জন্য বিদেশে চলে যাচ্ছে। শুধু অর্থ বিদেশে চলে যাচ্ছে না, অনেক মেধাবী শিক্ষার্থীও বিদেশে চলে যাচ্ছেন। কোনো সরকার কি পরিসংখ্যান নিয়ে দেখেছে, যাঁরা বিদেশে যাচ্ছেন, তার কত অংশ দেশে ফিরে আসছেন? এ দেশের জনগণের ট্যাক্সের টাকায় পড়াশোনা শেষ করে এই যে মেধাবী শিক্ষার্থীরা বিদেশে চলে যাচ্ছেন, এটাকেই বলা হয় ‘ব্রেন ড্রেন’। আমরা যাঁদের মেধাবী হিসেবে তৈরি করছি, তাঁদের সেবাটা পাচ্ছে না এ দেশ। তার চিত্রটা দেখা পাওয়া যায় রাস্তাঘাটে হাঁটলে। শুধু তা-ই না, এ দেশে আরেকটা সমস্যা তৈরি হয়েছে—গত সাড়ে ১৫ বছরে থিয়েটার, টেলিভিশন, গানের শিল্পীসহ নানা সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব দেশ থেকে চলে গেছেন। সুতরাং শিক্ষক, ছাত্র ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব দেশ থেকে চলে যাওয়ার কারণে দেশে মেধাবীদের একটা শূন্যতা তৈরি হয়েছে।
একটা দেশ উন্নত হওয়ার জন্য প্রয়োজন একটা নির্দিষ্টসংখ্যক উচ্চ মানের মানুষের। এঁদের সংখ্যা কমে যাওয়া মানে শরীরের রক্তশূন্যতার মতো। আমরা এখন সেই রক্তশূন্যতার মধ্যে ভুগছি। প্রতিবাদী মানুষের সংখ্যাও কমে গেছে। সমাজকে সুস্থ রাখার জন্য প্রতিবাদী মানুষের সংখ্যা বেশি হওয়া দরকার।
শিক্ষাব্যবস্থাকে যদি ভালো করা না যায়, তাহলে দেশে বেকার সমস্যার সমাধান হবে না। আমাদের শিক্ষার মান খারাপ হওয়ার কারণে বেকারের সংখ্যা প্রচুর। বেকারত্বের কারণেই দেশে নানা ধরনের অরাজকতা তৈরি হয়েছে।
জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে যে দল ক্ষমতায় আসবে, তাদের কাছে আমার আবেদন বা অনুরোধ থাকবে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া। কারণ, প্রকৃত শিক্ষার মাধ্যমেই মানুষ তৈরি হয়। আগে উন্নত মানুষ তৈরি করতে হবে। কারণ, উন্নত মানুষের মাধ্যমেই কেবল উন্নত দেশ গড়া সম্ভব। দালানকোঠা নির্মাণ করে দেশ উন্নত করা সম্ভব নয়। পৃথিবীর এমন একটা দেশ পাওয়া যাবে না, যে দেশ শিক্ষায় উন্নত না হয়ে অর্থনৈতিকভাবে উন্নত হতে পেরেছে। একটা উদাহরণ দিই। আজ থেকে ৩০ বছর আগেও চীনের কোনো বিশ্ববিদ্যালয় ওয়ার্ল্ড র্যাঙ্কিংয়ে ১০০-এর মধ্যে ছিল না। সেই চীনের বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় ২০-এর মধ্যে অবস্থান করছে। আশা করা যায়, আগামী ১০ বছরের মধ্যে তারা দশের মধ্যে চলে আসবে। এই যে চলে আসা এবং তাদের যে অর্থনৈতিকভাবে উন্নয়ন, দুটিই হাত ধরাধরি করে এগিয়েছে।
সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
আজকের পত্রিকা ও আপনাকেও ধন্যবাদ।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগে পড়াশোনা করা মোজাম্মেল হোসেন, ঘনিষ্ঠ মহলে যিনি মঞ্জু নামেই বেশি পরিচিত, ছাত্রাবস্থায় ১৯৬৯ সালে সাপ্তাহিক ‘যুগবাণী’ ও ১৯৭০ সালে সাপ্তাহিক ‘একতা’য় প্রতিবেদক হিসেবে পেশাজীবন শুরু করেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় ‘মুক্তিযুদ্ধ’ পত্রিকার সহকারী সম্পাদক ছিলেন।
২৯ জুন ২০২৫
অন্তর্বর্তী সরকার বাংলাদেশের হাল ধরার পর থেকেই নির্বাচন নিয়ে নানা জল্পনাকল্পনা চলেছে। বাড়ির খাবার টেবিল থেকে শুরু করে চায়ের দোকানে মুরব্বিদের আড্ডায় এ নিয়ে নানা জটিল প্রশ্নের উদ্ভব হয়েছে। প্রায় সব প্রশ্নের উত্তর পাওয়া না গেলেও ২০২৫ সালের শুরু থেকে প্রধান উপদেষ্টা মোটামুটি জোর কণ্ঠেই বলে গেছেন...
১৩ ঘণ্টা আগে
সম্প্রতি রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে সুজন আয়োজিত ‘নির্বাচনী ব্যবস্থার সংস্কার: অগ্রগতি পর্যালোচনা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে বিশিষ্ট নাগরিক ও বিশেষজ্ঞরা যে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, তা আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতি ও বাস্তবতার এক করুণ চিত্র উঠে এসেছে।
১৩ ঘণ্টা আগে
খুলনার ব্যাপারটা বড্ড গোলমেলে। এনসিপির এক শ্রমিকনেতাকে উদ্দেশ্য করে গুলি ছোড়া হয়েছে। গুলিটি তাঁর বাঁ কানের চামড়া ভেদ করে বের হয়ে গেছে। তিনি এখন শঙ্কামুক্ত। গুলি লাগার পরই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই ঘটনা ছড়িয়ে পড়ে। কোনো গুপ্তঘাতক নেতাদের টার্গেট করে হত্যা পরিকল্পনায় নেমেছে কি না, সে রকম...
১ দিন আগেসৈয়দা সাদিয়া শাহরীন

অন্তর্বর্তী সরকার বাংলাদেশের হাল ধরার পর থেকেই নির্বাচন নিয়ে নানা জল্পনাকল্পনা চলেছে। বাড়ির খাবার টেবিল থেকে শুরু করে চায়ের দোকানে মুরব্বিদের আড্ডায় এ নিয়ে নানা জটিল প্রশ্নের উদ্ভব হয়েছে। প্রায় সব প্রশ্নের উত্তর পাওয়া না গেলেও ২০২৫ সালের শুরু থেকে প্রধান উপদেষ্টা মোটামুটি জোর কণ্ঠেই বলে গেছেন—নির্বাচন হবে। কবে হবে? সে উত্তরটাও সুনির্ধারিতভাবে পাওয়া গেছে বছরের শেষ দিকে এসে। তফসিল ঘোষণা হয়ে গেছে। আকাঙ্ক্ষিত তফসিল। সারা বছর যাঁরা ‘নির্বাচন কবে হবে’—এই প্রশ্নের উত্তরের অপেক্ষা করেছেন, তাঁরা নির্বাচনের তারিখটা জেনে নিশ্চয়ই স্বস্তি পেয়েছেন। এবার বহুল আকাঙ্ক্ষিত নির্বাচনটা আসছে বছর ১২ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হয়ে গেলেই ব্যাপারটা সোনায় সোহাগা হবে!
ভবিষ্যতের কথা থাক। লেখাটা আসলে এ বছরের আলোচিত ঘটনাগুলো মনে করিয়ে দিতে ছাপা হয়েছে, যেন অতীতের ভুল শুধরে নতুন বছরে আমরা ভালো কিছু করে এর সুফল ভোগ করতে পারি। ২০২৫ সালে এত ঘটনা ঘটে গেছে যে একে ‘ঘটনার ঘনঘটার বছর’ বললে নিশ্চয়ই দণ্ডনীয় কোনো অপরাধ হবে না! দেখুন তো পাঠক, নিচের ঘটনাগুলো আপনার মনে পড়ছে কি না।
২. ২০২৫। সালটা ভীষণ উদ্বেগ নিয়ে কেটেছে অনেকের। শিশু ধর্ষণ থেকে শুরু করে প্রকাশ্যে খুন, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, ডাকাতি—কী হয়নি এ বছর? অপরাধ যে কয়েক গুণ বেড়েছে, এ নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। আমরা মাগুরার আট বছর বয়সী শিশুর ধর্ষণের বিচার চেয়েছিলাম। বছরের শুরুতে সেই শিশুর ওপর নির্মম অত্যাচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছিল পুরো দেশ। তবু ঢাকার কেরানীগঞ্জে দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হন এক অন্তঃসত্ত্বা নারী। রাঙামাটিতে তিন বছরের শিশুকে ধর্ষণ করে ষাট বছরের বৃদ্ধ। ঝিনাইদহে চকলেটের প্রলোভনে ধর্ষণের শিকার হয় চার বছর বয়সী শিশু।
৩. ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে সোহাগ নামের এক ব্যক্তির মাথা থেঁতলে মেরে ফেলা হয় প্রকাশ্য দিবালোকে। এই ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ ছড়িয়ে পড়েছিল নেট দুনিয়ায়। ফুটেজটা কোনো দুঃস্বপ্ন হলেই ভালো হতো। কিন্তু না, বাস্তব ঘটনার সাক্ষী এটি। তবে এই হত্যাকাণ্ডের পর প্রায় একই রকমভাবে একটি ঘটনা ঘটতে যাচ্ছিল পুরান ঢাকার ওয়ারীতে। এলাকাবাসী সেদিন সাহসের পরিচয় দিয়ে রুখে দিয়েছেন হামলাকারীকে। চাঁদাবাজি নিয়ে মিটফোর্ডের হত্যাকাণ্ডটি সংঘটিত হয়েছিল বলে দেশের মানুষ চাঁদাবাজির বিরুদ্ধেও সোচ্চার হয়েছিল তখন।
চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ায় বছরের শুরুর দিকেই এলিফ্যান্ট রোড কম্পিউটার ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সভাপতি ওয়াহেদুল হাসান দীপু এবং ইপিএস কম্পিউটার সিটির (মাল্টিপ্ল্যান) যুগ্ম সদস্যসচিব এহতেশামুল হক হামলার শিকার হন। পরে বেরিয়ে আসে এই হামলার পেছনে হাত রয়েছে চব্বিশের ৫ আগস্ট-পরবর্তী সময়ে জামিনে ছাড়া পাওয়া দুই শীর্ষ সন্ত্রাসীর। কারাগারে থাকতেই যেখানে তাঁরা অপরাধজগৎ নিয়ন্ত্রণ করতেন বলে জানা যায়, সেখানে তাঁদের জামিন দেওয়া কতটা বুদ্ধিমানের কাজ হয়েছে, তা ইতিমধ্যে নিশ্চয়ই জনগণ নির্ধারণ করে ফেলেছে।
৪. সোনার দাম যেভাবে এ বছর বেড়েছে, তা এক ব্যাপার বটে! এর চেয়েও বড় ব্যাপার ঘটে গিয়েছিল যখন এক ব্যবসায়ী নিজের সোনার দোকানে নিজেই ডাকাতি করিয়ে ‘কট’ খেয়ে যান। মানিকগঞ্জ শহরের স্বর্ণকারপট্টি এলাকায় শুভ দাস লোক ভাড়া করে নিজের দোকানে ডাকাতির নাটক সাজিয়ে গ্রাহকদের স্বর্ণালংকার আত্মসাৎ করতে চেয়েছিলেন। পুলিশের চোখ ফাঁকি দিতে পারেনি তাঁর এই চালাকি।
তবে রাজধানীর বনশ্রীর ঘটনাটি দুঃখজনক ছিল। আনোয়ার হোসেন নামে এক সোনার ব্যবসায়ীকে গুলি ও ছুরিকাঘাত করে ১৬০ ভরি সোনা ও এক লাখ টাকা ছিনিয়ে নিয়ে যায় ছয়-সাতজন দুর্বৃত্ত।
৫. আপনারা হয়তো কোনো কমেডি সিনেমায় দেখে থাকবেন, ছিনতাইকারী শুধু টাকাপয়সা বা ফোন ছিনতাই করে না, গায়ের জামা-পায়ের জুতা সবই নিয়ে চলে যায়। রাজধানীর শ্যামলীতে সত্যিই যখন এ রকম একটি ঘটনা ঘটল, তখন এর সিসিটিভি ফুটেজ ছড়িয়ে পড়ল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করার পাশাপাশি জব্দ করা হয় ছিনতাইয়ে ব্যবহৃত মোটরসাইকেল ও চাপাতি। ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটনে মেলে আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য। ছিনতাইকারী চক্রটি চাপাতি ও মোটরসাইকেল ভাড়া দেয় মাঠপর্যায়ে ছিনতাইকারীদের। প্রতিদিন ঢাকার একাধিক এলাকায় চাপাতি আর মোটরসাইকেল ভাড়া নিয়ে ছিনতাই কার্যক্রম চালায় চক্রটি। চাপাতি-মোটরসাইকেলের ভাড়া অগ্রিম পরিশোধ করতে হয় না তাদের, ছিনতাই শেষে মালপত্র বিক্রির পর ভাড়া দিতে হয়। এমনকি ছিনতাইয়ের মালপত্র বিক্রিও করতে হয় ছিনতাইকারী চক্রের মূল হোতাদের কাছে। ছিনতাই করার এক আধুনিক প্যাকেজ বটে!
বছরজুড়ে মোহাম্মদপুর এলাকাটিও কিন্তু ছিনতাইয়ের ঘটনার জন্য এক আতঙ্কের জায়গা হয়ে রয়েছে। যখন-তখন চাপাতি নিয়ে তেড়ে আসা তরুণেরা এলাকাটির ত্রাস। পুলিশ তৎপরতা না বাড়ালে সেখানকার অপরাধ চলতেই থাকবে।
৬. বছরের আলোচিত একটি হত্যাকাণ্ড ছিল প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী পারভেজ হত্যাকাণ্ড। শুধু হাসির ‘অপরাধে’ প্রাণ দিতে হয়েছিল তাঁকে।
বাড্ডায় প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করা হয় বিএনপির নেতা কামরুল আহসান সাধনকে। পুরান ঢাকায় প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করা হয় সন্ত্রাসী তারিক সাইফ মামুনকে। লক্ষ্মীপুরের চন্দ্রগঞ্জের পশ্চিম লতিফপুর এলাকায় ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবুল কালামকে গুলি করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। পল্লবীতে একটি হার্ডওয়্যারের দোকানে প্রবেশ করে মুখোশ ও হেলমেট পরা সন্ত্রাসীরা গুলি করে হত্যা করে পল্লবী থানা যুবদলের সদস্যসচিব গোলাম কিবরিয়াকে। চট্টগ্রামে চলন্ত প্রাইভেট কার থামিয়ে প্রকাশ্যে দিনদুপুরে বিএনপি-সমর্থিত এক ব্যবসায়ীকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এসব হত্যাকাণ্ডের পেছনে রাজনৈতিক কারণ নাকি ব্যবসায়িক বা ব্যক্তিগত শত্রুতা রয়েছে—সবই জটিল রহস্যে মুড়ে আছে।
লক্ষ্মীপুরে বিএনপির নেতা বেলাল হোসেনের বাড়িতে আগুন দেওয়ার ঘটনায় দগ্ধ হয়ে তাঁর দুই সন্তানের মৃত্যু পুরো দেশকেই মর্মাহত করেছে। ময়মনসিংহের ভালুকায় পোশাকশ্রমিক দীপু চন্দ্র দাসকে পিটিয়ে হত্যা করে ও লাশ পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনা বর্বরতার সব মাত্রা যেন ছাড়িয়ে গেছে। কবর থেকে উঠিয়ে নুরাল পাগলার লাশ পুড়িয়ে তথাকথিত মব কী অর্জন করতে পেরেছে, তা এক রহস্য। মবের হাত থেকে রক্ষা পায়নি সংবাদমাধ্যমও। একটুর জন্য রক্ষা পেয়েছে সংবাদকর্মীরা।
নাটকীয় কায়দায় যেভাবে ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও ঢাকা-৮ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী শরিফ ওসমান বিন হাদিকে দিনদুপুরে গুলি করা হলো, তা এই বছরটির জন্য এক কলঙ্কিত অধ্যায় হয়ে থাকবে। চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাদির মৃত্যুর পর সারা দেশ এখনো জনরোষে ফুঁসছে, বিচার চাইছে সবাই। কিন্তু বিচার কার হবে? পলাতক হত্যাকারীকে অবিলম্বে খুঁজে বের করা হোক। তবেই না হবে বিচার।
৭. ২০২৫ সালের সবচেয়ে আকর্ষণীয় ঘটনা কোনটি? এর উত্তরে বলতে হয়—বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন। তিনি নিজেই জানিয়েছেন, ৬ হাজার ৩১৪ দিন পর দেশে ফিরেছেন। ফিরেই মাটির স্পর্শ নিয়েছেন। জানিয়েছেন দেশ নিয়ে তাঁর পরিকল্পনার কথা। তাঁকে সংবর্ধনা দিতে মানুষের যে ঢল নেমেছিল ঢাকার পূর্বাচলের পথে, তা প্রত্যাবর্তনের এক অভূতপূর্ব দৃশ্য বলে মেনে নিতে হয়।
আবার সেই নির্বাচনে ফিরে আসা যাক। তারেক রহমানের আগমনে দেশের রাজনৈতিক পট কতটা আর কীভাবে পরিবর্তন হবে, তা সময় বলে দেবে। নির্বাচনের ওপর কেমন আর কতটা প্রভাব পড়বে, তা-ও সময়ই বলে দেবে। কিন্তু নির্বাচনে যাঁরা জয়ী হবেন, তাঁরা নিশ্চয়ই বলতে পারবেন এ বছর যেসব অনাকাঙ্ক্ষিত ও অপ্রত্যাশিত ঘটনা কিংবা অপরাধ সংঘটিত হয়েছে, তা নতুন বছরে ঠেকানো যাবে কি না। কারণ,
দেশের হাল যাঁরা ধরবেন, দেশ ও জনগণের নিরাপত্তা তো তাঁদেরই হাতে থাকবে। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারলে তাঁরা থাকবেন জনগণের হৃদয়ে। হৃদয়ে জায়গা করে নেওয়া কি খুব কঠিন?
লেখক: সহসম্পাদক, আজকের পত্রিকা

অন্তর্বর্তী সরকার বাংলাদেশের হাল ধরার পর থেকেই নির্বাচন নিয়ে নানা জল্পনাকল্পনা চলেছে। বাড়ির খাবার টেবিল থেকে শুরু করে চায়ের দোকানে মুরব্বিদের আড্ডায় এ নিয়ে নানা জটিল প্রশ্নের উদ্ভব হয়েছে। প্রায় সব প্রশ্নের উত্তর পাওয়া না গেলেও ২০২৫ সালের শুরু থেকে প্রধান উপদেষ্টা মোটামুটি জোর কণ্ঠেই বলে গেছেন—নির্বাচন হবে। কবে হবে? সে উত্তরটাও সুনির্ধারিতভাবে পাওয়া গেছে বছরের শেষ দিকে এসে। তফসিল ঘোষণা হয়ে গেছে। আকাঙ্ক্ষিত তফসিল। সারা বছর যাঁরা ‘নির্বাচন কবে হবে’—এই প্রশ্নের উত্তরের অপেক্ষা করেছেন, তাঁরা নির্বাচনের তারিখটা জেনে নিশ্চয়ই স্বস্তি পেয়েছেন। এবার বহুল আকাঙ্ক্ষিত নির্বাচনটা আসছে বছর ১২ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হয়ে গেলেই ব্যাপারটা সোনায় সোহাগা হবে!
ভবিষ্যতের কথা থাক। লেখাটা আসলে এ বছরের আলোচিত ঘটনাগুলো মনে করিয়ে দিতে ছাপা হয়েছে, যেন অতীতের ভুল শুধরে নতুন বছরে আমরা ভালো কিছু করে এর সুফল ভোগ করতে পারি। ২০২৫ সালে এত ঘটনা ঘটে গেছে যে একে ‘ঘটনার ঘনঘটার বছর’ বললে নিশ্চয়ই দণ্ডনীয় কোনো অপরাধ হবে না! দেখুন তো পাঠক, নিচের ঘটনাগুলো আপনার মনে পড়ছে কি না।
২. ২০২৫। সালটা ভীষণ উদ্বেগ নিয়ে কেটেছে অনেকের। শিশু ধর্ষণ থেকে শুরু করে প্রকাশ্যে খুন, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, ডাকাতি—কী হয়নি এ বছর? অপরাধ যে কয়েক গুণ বেড়েছে, এ নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। আমরা মাগুরার আট বছর বয়সী শিশুর ধর্ষণের বিচার চেয়েছিলাম। বছরের শুরুতে সেই শিশুর ওপর নির্মম অত্যাচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছিল পুরো দেশ। তবু ঢাকার কেরানীগঞ্জে দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হন এক অন্তঃসত্ত্বা নারী। রাঙামাটিতে তিন বছরের শিশুকে ধর্ষণ করে ষাট বছরের বৃদ্ধ। ঝিনাইদহে চকলেটের প্রলোভনে ধর্ষণের শিকার হয় চার বছর বয়সী শিশু।
৩. ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে সোহাগ নামের এক ব্যক্তির মাথা থেঁতলে মেরে ফেলা হয় প্রকাশ্য দিবালোকে। এই ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ ছড়িয়ে পড়েছিল নেট দুনিয়ায়। ফুটেজটা কোনো দুঃস্বপ্ন হলেই ভালো হতো। কিন্তু না, বাস্তব ঘটনার সাক্ষী এটি। তবে এই হত্যাকাণ্ডের পর প্রায় একই রকমভাবে একটি ঘটনা ঘটতে যাচ্ছিল পুরান ঢাকার ওয়ারীতে। এলাকাবাসী সেদিন সাহসের পরিচয় দিয়ে রুখে দিয়েছেন হামলাকারীকে। চাঁদাবাজি নিয়ে মিটফোর্ডের হত্যাকাণ্ডটি সংঘটিত হয়েছিল বলে দেশের মানুষ চাঁদাবাজির বিরুদ্ধেও সোচ্চার হয়েছিল তখন।
চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ায় বছরের শুরুর দিকেই এলিফ্যান্ট রোড কম্পিউটার ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সভাপতি ওয়াহেদুল হাসান দীপু এবং ইপিএস কম্পিউটার সিটির (মাল্টিপ্ল্যান) যুগ্ম সদস্যসচিব এহতেশামুল হক হামলার শিকার হন। পরে বেরিয়ে আসে এই হামলার পেছনে হাত রয়েছে চব্বিশের ৫ আগস্ট-পরবর্তী সময়ে জামিনে ছাড়া পাওয়া দুই শীর্ষ সন্ত্রাসীর। কারাগারে থাকতেই যেখানে তাঁরা অপরাধজগৎ নিয়ন্ত্রণ করতেন বলে জানা যায়, সেখানে তাঁদের জামিন দেওয়া কতটা বুদ্ধিমানের কাজ হয়েছে, তা ইতিমধ্যে নিশ্চয়ই জনগণ নির্ধারণ করে ফেলেছে।
৪. সোনার দাম যেভাবে এ বছর বেড়েছে, তা এক ব্যাপার বটে! এর চেয়েও বড় ব্যাপার ঘটে গিয়েছিল যখন এক ব্যবসায়ী নিজের সোনার দোকানে নিজেই ডাকাতি করিয়ে ‘কট’ খেয়ে যান। মানিকগঞ্জ শহরের স্বর্ণকারপট্টি এলাকায় শুভ দাস লোক ভাড়া করে নিজের দোকানে ডাকাতির নাটক সাজিয়ে গ্রাহকদের স্বর্ণালংকার আত্মসাৎ করতে চেয়েছিলেন। পুলিশের চোখ ফাঁকি দিতে পারেনি তাঁর এই চালাকি।
তবে রাজধানীর বনশ্রীর ঘটনাটি দুঃখজনক ছিল। আনোয়ার হোসেন নামে এক সোনার ব্যবসায়ীকে গুলি ও ছুরিকাঘাত করে ১৬০ ভরি সোনা ও এক লাখ টাকা ছিনিয়ে নিয়ে যায় ছয়-সাতজন দুর্বৃত্ত।
৫. আপনারা হয়তো কোনো কমেডি সিনেমায় দেখে থাকবেন, ছিনতাইকারী শুধু টাকাপয়সা বা ফোন ছিনতাই করে না, গায়ের জামা-পায়ের জুতা সবই নিয়ে চলে যায়। রাজধানীর শ্যামলীতে সত্যিই যখন এ রকম একটি ঘটনা ঘটল, তখন এর সিসিটিভি ফুটেজ ছড়িয়ে পড়ল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করার পাশাপাশি জব্দ করা হয় ছিনতাইয়ে ব্যবহৃত মোটরসাইকেল ও চাপাতি। ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটনে মেলে আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য। ছিনতাইকারী চক্রটি চাপাতি ও মোটরসাইকেল ভাড়া দেয় মাঠপর্যায়ে ছিনতাইকারীদের। প্রতিদিন ঢাকার একাধিক এলাকায় চাপাতি আর মোটরসাইকেল ভাড়া নিয়ে ছিনতাই কার্যক্রম চালায় চক্রটি। চাপাতি-মোটরসাইকেলের ভাড়া অগ্রিম পরিশোধ করতে হয় না তাদের, ছিনতাই শেষে মালপত্র বিক্রির পর ভাড়া দিতে হয়। এমনকি ছিনতাইয়ের মালপত্র বিক্রিও করতে হয় ছিনতাইকারী চক্রের মূল হোতাদের কাছে। ছিনতাই করার এক আধুনিক প্যাকেজ বটে!
বছরজুড়ে মোহাম্মদপুর এলাকাটিও কিন্তু ছিনতাইয়ের ঘটনার জন্য এক আতঙ্কের জায়গা হয়ে রয়েছে। যখন-তখন চাপাতি নিয়ে তেড়ে আসা তরুণেরা এলাকাটির ত্রাস। পুলিশ তৎপরতা না বাড়ালে সেখানকার অপরাধ চলতেই থাকবে।
৬. বছরের আলোচিত একটি হত্যাকাণ্ড ছিল প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী পারভেজ হত্যাকাণ্ড। শুধু হাসির ‘অপরাধে’ প্রাণ দিতে হয়েছিল তাঁকে।
বাড্ডায় প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করা হয় বিএনপির নেতা কামরুল আহসান সাধনকে। পুরান ঢাকায় প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করা হয় সন্ত্রাসী তারিক সাইফ মামুনকে। লক্ষ্মীপুরের চন্দ্রগঞ্জের পশ্চিম লতিফপুর এলাকায় ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবুল কালামকে গুলি করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। পল্লবীতে একটি হার্ডওয়্যারের দোকানে প্রবেশ করে মুখোশ ও হেলমেট পরা সন্ত্রাসীরা গুলি করে হত্যা করে পল্লবী থানা যুবদলের সদস্যসচিব গোলাম কিবরিয়াকে। চট্টগ্রামে চলন্ত প্রাইভেট কার থামিয়ে প্রকাশ্যে দিনদুপুরে বিএনপি-সমর্থিত এক ব্যবসায়ীকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এসব হত্যাকাণ্ডের পেছনে রাজনৈতিক কারণ নাকি ব্যবসায়িক বা ব্যক্তিগত শত্রুতা রয়েছে—সবই জটিল রহস্যে মুড়ে আছে।
লক্ষ্মীপুরে বিএনপির নেতা বেলাল হোসেনের বাড়িতে আগুন দেওয়ার ঘটনায় দগ্ধ হয়ে তাঁর দুই সন্তানের মৃত্যু পুরো দেশকেই মর্মাহত করেছে। ময়মনসিংহের ভালুকায় পোশাকশ্রমিক দীপু চন্দ্র দাসকে পিটিয়ে হত্যা করে ও লাশ পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনা বর্বরতার সব মাত্রা যেন ছাড়িয়ে গেছে। কবর থেকে উঠিয়ে নুরাল পাগলার লাশ পুড়িয়ে তথাকথিত মব কী অর্জন করতে পেরেছে, তা এক রহস্য। মবের হাত থেকে রক্ষা পায়নি সংবাদমাধ্যমও। একটুর জন্য রক্ষা পেয়েছে সংবাদকর্মীরা।
নাটকীয় কায়দায় যেভাবে ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও ঢাকা-৮ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী শরিফ ওসমান বিন হাদিকে দিনদুপুরে গুলি করা হলো, তা এই বছরটির জন্য এক কলঙ্কিত অধ্যায় হয়ে থাকবে। চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাদির মৃত্যুর পর সারা দেশ এখনো জনরোষে ফুঁসছে, বিচার চাইছে সবাই। কিন্তু বিচার কার হবে? পলাতক হত্যাকারীকে অবিলম্বে খুঁজে বের করা হোক। তবেই না হবে বিচার।
৭. ২০২৫ সালের সবচেয়ে আকর্ষণীয় ঘটনা কোনটি? এর উত্তরে বলতে হয়—বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন। তিনি নিজেই জানিয়েছেন, ৬ হাজার ৩১৪ দিন পর দেশে ফিরেছেন। ফিরেই মাটির স্পর্শ নিয়েছেন। জানিয়েছেন দেশ নিয়ে তাঁর পরিকল্পনার কথা। তাঁকে সংবর্ধনা দিতে মানুষের যে ঢল নেমেছিল ঢাকার পূর্বাচলের পথে, তা প্রত্যাবর্তনের এক অভূতপূর্ব দৃশ্য বলে মেনে নিতে হয়।
আবার সেই নির্বাচনে ফিরে আসা যাক। তারেক রহমানের আগমনে দেশের রাজনৈতিক পট কতটা আর কীভাবে পরিবর্তন হবে, তা সময় বলে দেবে। নির্বাচনের ওপর কেমন আর কতটা প্রভাব পড়বে, তা-ও সময়ই বলে দেবে। কিন্তু নির্বাচনে যাঁরা জয়ী হবেন, তাঁরা নিশ্চয়ই বলতে পারবেন এ বছর যেসব অনাকাঙ্ক্ষিত ও অপ্রত্যাশিত ঘটনা কিংবা অপরাধ সংঘটিত হয়েছে, তা নতুন বছরে ঠেকানো যাবে কি না। কারণ,
দেশের হাল যাঁরা ধরবেন, দেশ ও জনগণের নিরাপত্তা তো তাঁদেরই হাতে থাকবে। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারলে তাঁরা থাকবেন জনগণের হৃদয়ে। হৃদয়ে জায়গা করে নেওয়া কি খুব কঠিন?
লেখক: সহসম্পাদক, আজকের পত্রিকা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগে পড়াশোনা করা মোজাম্মেল হোসেন, ঘনিষ্ঠ মহলে যিনি মঞ্জু নামেই বেশি পরিচিত, ছাত্রাবস্থায় ১৯৬৯ সালে সাপ্তাহিক ‘যুগবাণী’ ও ১৯৭০ সালে সাপ্তাহিক ‘একতা’য় প্রতিবেদক হিসেবে পেশাজীবন শুরু করেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় ‘মুক্তিযুদ্ধ’ পত্রিকার সহকারী সম্পাদক ছিলেন।
২৯ জুন ২০২৫
ড. কামরুল হাসান মামুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের মাধ্যমে জুলাই আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন। তিনি যুক্তরাজ্যের ব্রুনেল ইউনিভার্সিটির পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ থেকে পিএইচডি করেছেন। হামবোল্ট রিসার্চ ফেলো হিসেবে কাজ করেছেন জার্মানির পটসডাম বিশ্ববিদ্যালয়ে।
১২ ঘণ্টা আগে
সম্প্রতি রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে সুজন আয়োজিত ‘নির্বাচনী ব্যবস্থার সংস্কার: অগ্রগতি পর্যালোচনা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে বিশিষ্ট নাগরিক ও বিশেষজ্ঞরা যে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, তা আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতি ও বাস্তবতার এক করুণ চিত্র উঠে এসেছে।
১৩ ঘণ্টা আগে
খুলনার ব্যাপারটা বড্ড গোলমেলে। এনসিপির এক শ্রমিকনেতাকে উদ্দেশ্য করে গুলি ছোড়া হয়েছে। গুলিটি তাঁর বাঁ কানের চামড়া ভেদ করে বের হয়ে গেছে। তিনি এখন শঙ্কামুক্ত। গুলি লাগার পরই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই ঘটনা ছড়িয়ে পড়ে। কোনো গুপ্তঘাতক নেতাদের টার্গেট করে হত্যা পরিকল্পনায় নেমেছে কি না, সে রকম...
১ দিন আগেসম্পাদকীয়

সম্প্রতি রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে সুজন আয়োজিত ‘নির্বাচনী ব্যবস্থার সংস্কার: অগ্রগতি পর্যালোচনা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে বিশিষ্ট নাগরিক ও বিশেষজ্ঞরা যে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, তা আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতি ও বাস্তবতার এক করুণ চিত্র উঠে এসেছে। এই চিত্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দৃশ্য হলো নির্বাচনের ব্যয়।
সুস্থ গণতন্ত্রের প্রধান অন্তরায় হলো টাকার রাজনীতি। নির্বাচনী ব্যয় যদি নিয়ন্ত্রণ করা না যায়, তবে নির্বাচন-পরবর্তী দুর্নীতি রোধ করা কোনোভাবেই সম্ভব হবে না। কারণ, নির্বাচনের পেছনে যে বিপুল অর্থ ব্যয় হয়, বিজয়ীরা ক্ষমতায় গিয়ে সুদে-আসলে সেই অর্থ জনগণের পকেট থেকেই আদায় করার চেষ্টা করেন।
নির্বাচনী ব্যবস্থার আমূল সংস্কারের লক্ষ্যে গঠিত কমিশন অনেকগুলো যুগোপযোগী সুপারিশ করেছিল। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় হলো, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে (আরপিও) এই সুপারিশগুলোর একটি বড় অংশই উপেক্ষা করা হয়েছে। বিশেষ করে ব্যয় মনিটরিং কমিটি গঠন করে নিবিড় নজরদারি করার প্রস্তাবটি গৃহীত না হওয়া একটি বড় ক্ষতির জায়গা তৈরি করতে পারে ভবিষ্যতে।
‘মনোনয়ন-বাণিজ্যের’ মাধ্যমে নির্বাচনী ব্যয় বৃদ্ধির সংস্কৃতি আগে থেকেই শিকড় গেড়ে আছে। যখন একজন প্রার্থী কোটি কোটি টাকা খরচ করে মনোনয়ন কেনেন এবং নির্বাচনে লড়েন, তখন জনসেবা নয় বরং ‘বিনিয়োগের মুনাফা’ তোলাই তাঁর প্রধান লক্ষ্য হয়ে দাঁড়ায়। এই সংস্কৃতি রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নের মূল উৎস।
নির্বাচন সংস্কার কমিশনের সুপারিশমালায় কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উপেক্ষিত হয়েছে। এসব বিষয় উপেক্ষার কারণে ভবিষ্যতে একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হওয়া নিয়ে আশঙ্কা থেকেই যায়।
গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য জাতীয় ঐক্যেরও কোনো বিকল্প নেই। নির্বাচন কমিশন এবং সরকারকে বুঝতে হবে যে, লোকদেখানো সংস্কার দিয়ে জনগণের আস্থা অর্জন করা সম্ভব নয়। নির্বাচন সংস্কার কমিশন যে সুপারিশগুলো দিয়েছে, তা কেবল কাগজ-কলমে সীমাবদ্ধ না রেখে দ্রুত বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোর ভেতরে গণতন্ত্রায়ণ এবং আর্থিক স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা না গেলে সৎ ও যোগ্য প্রার্থীদের নির্বাচনে টিকে থাকা অসম্ভব হয়ে পড়বে।
দেশের সচেতন মানুষের প্রত্যাশা ছিল, এবার হয়তো নির্বাচনী ব্যবস্থার একটা আমূল সংস্কার করা সম্ভব হবে। দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন সংস্কার কমিশনের বৈঠকে বিভিন্ন দলের নেতাদের মতামত নেওয়ার জন্য চা-নাশতা বাবদ রাষ্ট্রের টাকা খরচ করা হয়েছে। কিন্তু সেই বৈঠকগুলো থেকে কাঙ্ক্ষিত ফলাফল যে আসেনি, তা পরবর্তী সময়ে কমিশনের রিপোর্ট থেকে স্পষ্ট হওয়া গেছে। জাতীয় নির্বাচনের আগে অমীমাংসিত বিষয়গুলো নিরসন করা সম্ভব না হলে নির্বাচনের পরে সেগুলো নিরসনের উদ্যোগ নেওয়া জরুরি।
নির্বাচনী ব্যবস্থার সংস্কার কোনো বিলাসিতার বিষয় নয়। এটি রাষ্ট্রের ভিত্তি মজবুত করার অপরিহার্য শর্ত। সরকারকে নির্বাচনী ব্যয় নিয়ন্ত্রণে কঠোর হতে হবে এবং সংস্কার কমিশনের বাকি সুপারিশগুলো আমলে নিয়ে একটি প্রকৃত অর্থবহ পরিবর্তনের পথ প্রশস্ত করতে হবে। অন্যথায় ভোটের নামে অর্থের খেলা চলবেই এবং দুর্নীতি নামক দানবটি আমাদের শাসনব্যবস্থাকে কুরে কুরে খেতে থাকবে।

সম্প্রতি রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে সুজন আয়োজিত ‘নির্বাচনী ব্যবস্থার সংস্কার: অগ্রগতি পর্যালোচনা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে বিশিষ্ট নাগরিক ও বিশেষজ্ঞরা যে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, তা আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতি ও বাস্তবতার এক করুণ চিত্র উঠে এসেছে। এই চিত্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দৃশ্য হলো নির্বাচনের ব্যয়।
সুস্থ গণতন্ত্রের প্রধান অন্তরায় হলো টাকার রাজনীতি। নির্বাচনী ব্যয় যদি নিয়ন্ত্রণ করা না যায়, তবে নির্বাচন-পরবর্তী দুর্নীতি রোধ করা কোনোভাবেই সম্ভব হবে না। কারণ, নির্বাচনের পেছনে যে বিপুল অর্থ ব্যয় হয়, বিজয়ীরা ক্ষমতায় গিয়ে সুদে-আসলে সেই অর্থ জনগণের পকেট থেকেই আদায় করার চেষ্টা করেন।
নির্বাচনী ব্যবস্থার আমূল সংস্কারের লক্ষ্যে গঠিত কমিশন অনেকগুলো যুগোপযোগী সুপারিশ করেছিল। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় হলো, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে (আরপিও) এই সুপারিশগুলোর একটি বড় অংশই উপেক্ষা করা হয়েছে। বিশেষ করে ব্যয় মনিটরিং কমিটি গঠন করে নিবিড় নজরদারি করার প্রস্তাবটি গৃহীত না হওয়া একটি বড় ক্ষতির জায়গা তৈরি করতে পারে ভবিষ্যতে।
‘মনোনয়ন-বাণিজ্যের’ মাধ্যমে নির্বাচনী ব্যয় বৃদ্ধির সংস্কৃতি আগে থেকেই শিকড় গেড়ে আছে। যখন একজন প্রার্থী কোটি কোটি টাকা খরচ করে মনোনয়ন কেনেন এবং নির্বাচনে লড়েন, তখন জনসেবা নয় বরং ‘বিনিয়োগের মুনাফা’ তোলাই তাঁর প্রধান লক্ষ্য হয়ে দাঁড়ায়। এই সংস্কৃতি রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নের মূল উৎস।
নির্বাচন সংস্কার কমিশনের সুপারিশমালায় কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উপেক্ষিত হয়েছে। এসব বিষয় উপেক্ষার কারণে ভবিষ্যতে একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হওয়া নিয়ে আশঙ্কা থেকেই যায়।
গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য জাতীয় ঐক্যেরও কোনো বিকল্প নেই। নির্বাচন কমিশন এবং সরকারকে বুঝতে হবে যে, লোকদেখানো সংস্কার দিয়ে জনগণের আস্থা অর্জন করা সম্ভব নয়। নির্বাচন সংস্কার কমিশন যে সুপারিশগুলো দিয়েছে, তা কেবল কাগজ-কলমে সীমাবদ্ধ না রেখে দ্রুত বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোর ভেতরে গণতন্ত্রায়ণ এবং আর্থিক স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা না গেলে সৎ ও যোগ্য প্রার্থীদের নির্বাচনে টিকে থাকা অসম্ভব হয়ে পড়বে।
দেশের সচেতন মানুষের প্রত্যাশা ছিল, এবার হয়তো নির্বাচনী ব্যবস্থার একটা আমূল সংস্কার করা সম্ভব হবে। দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন সংস্কার কমিশনের বৈঠকে বিভিন্ন দলের নেতাদের মতামত নেওয়ার জন্য চা-নাশতা বাবদ রাষ্ট্রের টাকা খরচ করা হয়েছে। কিন্তু সেই বৈঠকগুলো থেকে কাঙ্ক্ষিত ফলাফল যে আসেনি, তা পরবর্তী সময়ে কমিশনের রিপোর্ট থেকে স্পষ্ট হওয়া গেছে। জাতীয় নির্বাচনের আগে অমীমাংসিত বিষয়গুলো নিরসন করা সম্ভব না হলে নির্বাচনের পরে সেগুলো নিরসনের উদ্যোগ নেওয়া জরুরি।
নির্বাচনী ব্যবস্থার সংস্কার কোনো বিলাসিতার বিষয় নয়। এটি রাষ্ট্রের ভিত্তি মজবুত করার অপরিহার্য শর্ত। সরকারকে নির্বাচনী ব্যয় নিয়ন্ত্রণে কঠোর হতে হবে এবং সংস্কার কমিশনের বাকি সুপারিশগুলো আমলে নিয়ে একটি প্রকৃত অর্থবহ পরিবর্তনের পথ প্রশস্ত করতে হবে। অন্যথায় ভোটের নামে অর্থের খেলা চলবেই এবং দুর্নীতি নামক দানবটি আমাদের শাসনব্যবস্থাকে কুরে কুরে খেতে থাকবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগে পড়াশোনা করা মোজাম্মেল হোসেন, ঘনিষ্ঠ মহলে যিনি মঞ্জু নামেই বেশি পরিচিত, ছাত্রাবস্থায় ১৯৬৯ সালে সাপ্তাহিক ‘যুগবাণী’ ও ১৯৭০ সালে সাপ্তাহিক ‘একতা’য় প্রতিবেদক হিসেবে পেশাজীবন শুরু করেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় ‘মুক্তিযুদ্ধ’ পত্রিকার সহকারী সম্পাদক ছিলেন।
২৯ জুন ২০২৫
ড. কামরুল হাসান মামুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের মাধ্যমে জুলাই আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন। তিনি যুক্তরাজ্যের ব্রুনেল ইউনিভার্সিটির পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ থেকে পিএইচডি করেছেন। হামবোল্ট রিসার্চ ফেলো হিসেবে কাজ করেছেন জার্মানির পটসডাম বিশ্ববিদ্যালয়ে।
১২ ঘণ্টা আগে
অন্তর্বর্তী সরকার বাংলাদেশের হাল ধরার পর থেকেই নির্বাচন নিয়ে নানা জল্পনাকল্পনা চলেছে। বাড়ির খাবার টেবিল থেকে শুরু করে চায়ের দোকানে মুরব্বিদের আড্ডায় এ নিয়ে নানা জটিল প্রশ্নের উদ্ভব হয়েছে। প্রায় সব প্রশ্নের উত্তর পাওয়া না গেলেও ২০২৫ সালের শুরু থেকে প্রধান উপদেষ্টা মোটামুটি জোর কণ্ঠেই বলে গেছেন...
১৩ ঘণ্টা আগে
খুলনার ব্যাপারটা বড্ড গোলমেলে। এনসিপির এক শ্রমিকনেতাকে উদ্দেশ্য করে গুলি ছোড়া হয়েছে। গুলিটি তাঁর বাঁ কানের চামড়া ভেদ করে বের হয়ে গেছে। তিনি এখন শঙ্কামুক্ত। গুলি লাগার পরই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই ঘটনা ছড়িয়ে পড়ে। কোনো গুপ্তঘাতক নেতাদের টার্গেট করে হত্যা পরিকল্পনায় নেমেছে কি না, সে রকম...
১ দিন আগেসম্পাদকীয়

খুলনার ব্যাপারটা বড্ড গোলমেলে। এনসিপির এক শ্রমিকনেতাকে উদ্দেশ্য করে গুলি ছোড়া হয়েছে। গুলিটি তাঁর বাঁ কানের চামড়া ভেদ করে বের হয়ে গেছে। তিনি এখন শঙ্কামুক্ত। গুলি লাগার পরই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই ঘটনা ছড়িয়ে পড়ে। কোনো গুপ্তঘাতক নেতাদের টার্গেট করে হত্যা পরিকল্পনায় নেমেছে কি না, সে রকম ভাবনারও জন্ম হয়। অনেকে কানের পাশ দিয়ে গুলি বেরিয়ে যাওয়ার ঘটনাকে সদ্য প্রয়াত ইনকিলাব মঞ্চ নেতা ওসমান হাদিকে করা গুলির সঙ্গে তুলনা করতে শুরু করেন। কিন্তু পুলিশ যখন তাদের তদন্ত শুরু করল, তখন দেখা গেল, এ এক রহস্যজনক ব্যাপার! এই ঘটনার সঙ্গে মদ, নারী, ইয়াবাসহ অনেক কিছুই জড়িত বলে ধারণা পুলিশের।
গোলমেলে বলার একটা কারণ হলো, যেহেতু গুলির আঘাত এসেছে এনসিপি নেতার ওপর, তাই কোনো ধরনের তথ্য-প্রমাণ ছাড়াই রাজনৈতিক নেতারা দোষারোপের রাজনীতি শুরু করে দিয়েছিলেন। এনসিপির খুলনা জেলার প্রধান সমন্বয়কারী এই গুলির ঘটনার জন্য সরাসরি আওয়ামী লীগকে দায়ী করে বসলেন। তিনি বললেন, মোতালেব গাড়ি থেকে নামার পর তাঁকে টেনেহিঁচড়ে একটি চায়ের দোকানে নিয়ে মারধর করার পর গুলি করা হয়। এনসিপির খুলনা মহানগরের সংগঠক বললেন, বিগত দিনে খুলনায় অহরহ গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। আর এ সবই সন্ত্রাসী গ্রুপ আওয়ামী নেতাদের আশীর্বাদপুষ্ট।
বর্তমান বাস্তবতায় যেকোনো ঘটনাতেই ‘কেষ্টা ব্যাটা’কে খোঁজা কতটা যৌক্তিক, সে বিষয়ে কোনো প্রশ্ন কেন কোনো সচেতন রাজনৈতিক কর্মীর মাথায় আসবে না, সেটা বোধগম্য নয়। আওয়ামী লীগ দৃশ্যপটে আছে কি নেই, দলটি খুলনায় কাজির কিতাবের গরু কি না, সে বিষয়ে এনসিপির কারও মনে কোনো সন্দেহ জাগবে না কেন? আওয়ামী লীগ আমলে যেমন সব দোষ বিএনপি এবং জামায়াতকে দিয়ে নিশ্চিন্ত থাকত সরকার, তেমনি এখন যেকোনো অঘটন ঘটলেই বলা নেই কওয়া নেই, আওয়ামী লীগের দিকে ছুটে যায় সন্দেহের তির। মুশকিল হলো, সত্যিকারের ঘটনা উদ্ঘাটিত না হলে সাধারণ মানুষও একসময় দোষারোপের রাজনীতির মর্মকথা বুঝে যায়। তখন তাদের বেকুব ভেবে বিভ্রান্ত করা যায় না।
এই গোলমেলে ব্যাপারে পুলিশ কী বলছে? পুলিশ একটা কাজের কাজ করেছে। রাজনীতিবিদেরা যখন আওয়ামী লীগের ওপর দোষ দিয়ে ঘটনাটিকে একটা চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের দিকে নিয়ে যাচ্ছিল, তখন পুলিশ খোঁজ নিয়েছে সিসিটিভির। আর তাতেই এই গোলমেলে ঘটনার কুয়াশা ধীরে ধীরে কাটতে শুরু করেছে। ফুটেজে দেখা গেল, কোনো চায়ের দোকান থেকে নয়, মোতালেব বের হচ্ছেন একটি বাড়ি থেকে। তাঁর কানে রয়েছে হাত। অর্থাৎ গুলিটি লেগেছে ওই বাড়িতেই। কেএমপির উপপুলিশ কমিশনার ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেছেন, রোববার দিবাগত রাতে মোতালেব শিকদার এখানে এসেছিলেন এবং এখানে অসামাজিক কার্যকলাপে লিপ্ত হন। ঘটনা এখানেই শেষ নয়, এর সঙ্গে আবার এক তরুণীর সংশ্লিষ্টতা আছে। তাঁকেও ধরেছে পুলিশ।
এ ব্যাপারে মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন। অসামাজিক কর্মকাণ্ডকে যেন রাজনৈতিক রং লাগাতে দেওয়া না হয়, সেদিকে নজর রাখা দরকার।

খুলনার ব্যাপারটা বড্ড গোলমেলে। এনসিপির এক শ্রমিকনেতাকে উদ্দেশ্য করে গুলি ছোড়া হয়েছে। গুলিটি তাঁর বাঁ কানের চামড়া ভেদ করে বের হয়ে গেছে। তিনি এখন শঙ্কামুক্ত। গুলি লাগার পরই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই ঘটনা ছড়িয়ে পড়ে। কোনো গুপ্তঘাতক নেতাদের টার্গেট করে হত্যা পরিকল্পনায় নেমেছে কি না, সে রকম ভাবনারও জন্ম হয়। অনেকে কানের পাশ দিয়ে গুলি বেরিয়ে যাওয়ার ঘটনাকে সদ্য প্রয়াত ইনকিলাব মঞ্চ নেতা ওসমান হাদিকে করা গুলির সঙ্গে তুলনা করতে শুরু করেন। কিন্তু পুলিশ যখন তাদের তদন্ত শুরু করল, তখন দেখা গেল, এ এক রহস্যজনক ব্যাপার! এই ঘটনার সঙ্গে মদ, নারী, ইয়াবাসহ অনেক কিছুই জড়িত বলে ধারণা পুলিশের।
গোলমেলে বলার একটা কারণ হলো, যেহেতু গুলির আঘাত এসেছে এনসিপি নেতার ওপর, তাই কোনো ধরনের তথ্য-প্রমাণ ছাড়াই রাজনৈতিক নেতারা দোষারোপের রাজনীতি শুরু করে দিয়েছিলেন। এনসিপির খুলনা জেলার প্রধান সমন্বয়কারী এই গুলির ঘটনার জন্য সরাসরি আওয়ামী লীগকে দায়ী করে বসলেন। তিনি বললেন, মোতালেব গাড়ি থেকে নামার পর তাঁকে টেনেহিঁচড়ে একটি চায়ের দোকানে নিয়ে মারধর করার পর গুলি করা হয়। এনসিপির খুলনা মহানগরের সংগঠক বললেন, বিগত দিনে খুলনায় অহরহ গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। আর এ সবই সন্ত্রাসী গ্রুপ আওয়ামী নেতাদের আশীর্বাদপুষ্ট।
বর্তমান বাস্তবতায় যেকোনো ঘটনাতেই ‘কেষ্টা ব্যাটা’কে খোঁজা কতটা যৌক্তিক, সে বিষয়ে কোনো প্রশ্ন কেন কোনো সচেতন রাজনৈতিক কর্মীর মাথায় আসবে না, সেটা বোধগম্য নয়। আওয়ামী লীগ দৃশ্যপটে আছে কি নেই, দলটি খুলনায় কাজির কিতাবের গরু কি না, সে বিষয়ে এনসিপির কারও মনে কোনো সন্দেহ জাগবে না কেন? আওয়ামী লীগ আমলে যেমন সব দোষ বিএনপি এবং জামায়াতকে দিয়ে নিশ্চিন্ত থাকত সরকার, তেমনি এখন যেকোনো অঘটন ঘটলেই বলা নেই কওয়া নেই, আওয়ামী লীগের দিকে ছুটে যায় সন্দেহের তির। মুশকিল হলো, সত্যিকারের ঘটনা উদ্ঘাটিত না হলে সাধারণ মানুষও একসময় দোষারোপের রাজনীতির মর্মকথা বুঝে যায়। তখন তাদের বেকুব ভেবে বিভ্রান্ত করা যায় না।
এই গোলমেলে ব্যাপারে পুলিশ কী বলছে? পুলিশ একটা কাজের কাজ করেছে। রাজনীতিবিদেরা যখন আওয়ামী লীগের ওপর দোষ দিয়ে ঘটনাটিকে একটা চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের দিকে নিয়ে যাচ্ছিল, তখন পুলিশ খোঁজ নিয়েছে সিসিটিভির। আর তাতেই এই গোলমেলে ঘটনার কুয়াশা ধীরে ধীরে কাটতে শুরু করেছে। ফুটেজে দেখা গেল, কোনো চায়ের দোকান থেকে নয়, মোতালেব বের হচ্ছেন একটি বাড়ি থেকে। তাঁর কানে রয়েছে হাত। অর্থাৎ গুলিটি লেগেছে ওই বাড়িতেই। কেএমপির উপপুলিশ কমিশনার ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেছেন, রোববার দিবাগত রাতে মোতালেব শিকদার এখানে এসেছিলেন এবং এখানে অসামাজিক কার্যকলাপে লিপ্ত হন। ঘটনা এখানেই শেষ নয়, এর সঙ্গে আবার এক তরুণীর সংশ্লিষ্টতা আছে। তাঁকেও ধরেছে পুলিশ।
এ ব্যাপারে মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন। অসামাজিক কর্মকাণ্ডকে যেন রাজনৈতিক রং লাগাতে দেওয়া না হয়, সেদিকে নজর রাখা দরকার।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগে পড়াশোনা করা মোজাম্মেল হোসেন, ঘনিষ্ঠ মহলে যিনি মঞ্জু নামেই বেশি পরিচিত, ছাত্রাবস্থায় ১৯৬৯ সালে সাপ্তাহিক ‘যুগবাণী’ ও ১৯৭০ সালে সাপ্তাহিক ‘একতা’য় প্রতিবেদক হিসেবে পেশাজীবন শুরু করেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় ‘মুক্তিযুদ্ধ’ পত্রিকার সহকারী সম্পাদক ছিলেন।
২৯ জুন ২০২৫
ড. কামরুল হাসান মামুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের মাধ্যমে জুলাই আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন। তিনি যুক্তরাজ্যের ব্রুনেল ইউনিভার্সিটির পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ থেকে পিএইচডি করেছেন। হামবোল্ট রিসার্চ ফেলো হিসেবে কাজ করেছেন জার্মানির পটসডাম বিশ্ববিদ্যালয়ে।
১২ ঘণ্টা আগে
অন্তর্বর্তী সরকার বাংলাদেশের হাল ধরার পর থেকেই নির্বাচন নিয়ে নানা জল্পনাকল্পনা চলেছে। বাড়ির খাবার টেবিল থেকে শুরু করে চায়ের দোকানে মুরব্বিদের আড্ডায় এ নিয়ে নানা জটিল প্রশ্নের উদ্ভব হয়েছে। প্রায় সব প্রশ্নের উত্তর পাওয়া না গেলেও ২০২৫ সালের শুরু থেকে প্রধান উপদেষ্টা মোটামুটি জোর কণ্ঠেই বলে গেছেন...
১৩ ঘণ্টা আগে
সম্প্রতি রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে সুজন আয়োজিত ‘নির্বাচনী ব্যবস্থার সংস্কার: অগ্রগতি পর্যালোচনা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে বিশিষ্ট নাগরিক ও বিশেষজ্ঞরা যে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, তা আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতি ও বাস্তবতার এক করুণ চিত্র উঠে এসেছে।
১৩ ঘণ্টা আগে