Ajker Patrika

ভোটের তফসিলের আগে ডিসি পদায়ন

  • যুগ্ম সচিব হলেও ২১ ডিসিকে তিন মাসেও প্রত্যাহার করা হয়নি
  • রদবদলে জনপ্রশাসন-বিষয়ক কমিটির দিকে তাকিয়ে মন্ত্রণালয়
  • তফসিলের আগে ডিসি-ইউএনওদের ব্যাপক রদবদলের গুঞ্জন
শহীদুল ইসলাম, ঢাকা
আপডেট : ১৭ জুন ২০২৫, ১৫: ৩৯
ভোটের তফসিলের আগে ডিসি পদায়ন

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে মাঠ প্রশাসন ঠিক করতে পারে অন্তর্বর্তী সরকার। এমনটাই ধারণা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের। তাঁরা বলছেন, এমন ভাবনার কারণেই ২১ জন জেলা প্রশাসক (ডিসি) তিন মাস আগে যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি পেলেও তাঁদের ডিসি পদ থেকে প্রত্যাহার করা হয়নি। মাঠ প্রশাসনে রদবদলের কোনো উদ্যোগও দেখা যাচ্ছে না।

ডিসি পদায়নে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একক কর্তৃত্ব বর্তমানে নেই। অর্থ উপদেষ্টার নেতৃত্বাধীন জনপ্রশাসন-বিষয়ক কমিটির মতামত ছাড়া মন্ত্রণালয় ডিসি পদে রদবদল করতে পারবে না। এই কমিটি পদোন্নতি পাওয়ার পরও ডিসিদের আগের পদে সর্বোচ্চ কত দিন বহাল রাখা হয়েছিল, সেই তথ্যও মন্ত্রণালয় থেকে নিয়েছে। মন্ত্রণালয় ডিসি রদবদলে তাকিয়ে আছে কমিটির সিদ্ধান্তের দিকে।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, মন্ত্রণালয়ের অনেক বিষয় ঝুলে থাকলেও উপদেষ্টাদের ব্যস্ততার কারণে জনপ্রশাসন কমিটির সভা ঠিকমতো হচ্ছে না। শোনা যাচ্ছে, জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার সময়কে আমলে নিয়ে ডিসি-ইউএনও পদে ব্যাপক রদবদল করা হবে। কারণ, তফসিল ঘোষণার পর নির্বাচনসংশ্লিষ্ট মাঠ প্রশাসনের সব পদায়ন-বদলির একক এখতিয়ার থাকবে নির্বাচন কমিশনের (ইসি)।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, লন্ডনে গত শুক্রবার অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠকের পর দেওয়া যৌথ বিবৃতি অনুযায়ী, সবকিছু সম্পন্ন হলে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি জাতীয় নির্বাচন হতে পারে। সে ক্ষেত্রে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হতে পারে আগামী ডিসেম্বরে। সে হিসাবে তফসিলের বাকি আছে ছয় মাস। তাই আরেকটু অপেক্ষা করে ডিসিসহ মাঠ প্রশাসনে রদবদল করতে চায় সরকার।

দৃষ্টি আকর্ষণ করলে জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ ও সাবেক অতিরিক্ত সচিব ফিরোজ মিয়া আজকের পত্রিকা'কে বলেন, তফসিল ঘোষণার আগে আগে মাঠ প্রশাসনে রদবদল নিরপেক্ষ নির্বাচন কতটুকু নিশ্চিত করবে, সেই প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে। অন্তর্বর্তী সরকারের অগ্রাধিকার থাকবে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান করা। তবে কোনো ডিসিকে নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো আপত্তি জানালে নির্বাচন কমিশন ব্যবস্থা নিতে পারবে। সরকার এবং নির্বাচন কমিশন যদি নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় তাহলে নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে, এরা না চাইলে কোনোভাবেই নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে না।

প্রশাসন ক্যাডারের উপসচিব বা সমপর্যায়ের কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে ডিসি নিয়োগ দেওয়া হয়। জাতীয় নির্বাচনে বিভাগীয় শহরে বিভাগীয় কমিশনার এবং জেলায় ডিসিরা রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করেন। সাধারণত কোনো ডিসি যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি পেলে তাঁকে আর ওই দায়িত্বে রাখা হয় না। সর্বশেষ গত ২০ মার্চ যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি দেয় সরকার। ডিসির দায়িত্বে থাকা ২১ কর্মকর্তা যুগ্ম সচিব হয়েছেন। সূত্র জানায়, এই ২১ ডিসি এবং ২৪তম বিসিএস ব্যাচের পাঁচ কর্মকর্তাকে ডিসির পদ থেকে প্রত্যাহার করতে জনপ্রশাসন-বিষয়ক কমিটির কাছে প্রস্তাব পাঠায় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নিয়োগ, পদোন্নতি ও প্রেষণ অনুবিভাগ (এপিডি উইং)। কিন্তু কমিটি এ বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত দেয়নি।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি পাওয়ার পর এর আগে ডিসিদের সর্বোচ্চ কত দিন পর্যন্ত আগের দায়িত্বে রাখা হয়েছিল সেই তথ্য চেয়েছিল জনপ্রশাসন-বিষয়ক কমিটি। মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়, যুগ্ম সচিব হওয়ার পর কয়েকজনের ১০ মাস পর্যন্ত ডিসির দায়িত্বে থাকার নজির আছে। এরপর যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি পাওয়া ডিসিদের প্রত্যাহারের বিষয়টি আর এগোয়নি।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, জাতীয় নির্বাচনের আগে সব সরকারই ডিসি পদে দেখেশুনে পদায়ন করে। অন্তর্বর্তী সরকার দক্ষ ও সৎ কর্মকর্তাদেরই ডিসি পদে পদায়ন করতে চাইবে। তবে এ ক্ষেত্রে কারও ব্যক্তিগত পছন্দকে প্রাধান্য দেওয়া যাবে না। তিনি শুনেছেন ডিসি পদায়ন নিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে ব্যাপক চাপ রয়েছে।

বর্তমানে ২৪তম ব্যাচের ২৬ জন, ২৫তম ব্যাচের ২৫ জন এবং ২৭তম ব্যাচের ১৩ কর্মকর্তা ডিসির দায়িত্বে আছেন। ২৫ ও ২৭তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে ডিসি নিয়োগ দিতে তাঁদের ফিট লিস্টও তৈরি করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। তবে জনপ্রশাসন-বিষয়ক কমিটির সিদ্ধান্ত না পাওয়ায় ডিসি পদে রদবদল করতে পারেনি।

জেলা প্রশাসক, বিভাগীয় কমিশনার, যুগ্ম সচিব ও তার ওপরের পদমর্যাদার কর্মকর্তাদের নিয়োগ, বদলি ও শৃঙ্খলাসংক্রান্ত বিষয়ে পরামর্শ দিতে অর্থ উপদেষ্টাকে প্রধান করে গত ৮ জানুয়ারি জনপ্রশাসন-বিষয়ক কমিটি করে অন্তর্বর্তী সরকার।

ডিসি পদায়নের বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নিয়োগ, পদোন্নতি ও প্রেষণ অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. এরফানুল হক আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছি।’

ডিসি পদে একজন কর্মকর্তাকে কত দিন রাখা যাবে, সে বিষয়ে কোনো নিয়ম নেই। ফলে সরকার চাইলেই যেকোনো সময় যেকোনো ডিসিকে পদ থেকে প্রত্যাহার করতে পারে বা রেখে দিতে পারে। বিগত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ডিসি পদে ব্যাপক রদবদল করেছিল তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার। এতে নিয়োগের এক মাসের মধ্যেও কাউকে কাউকে ডিসির পদ থেকে প্রত্যাহারের ঘটনা ঘটেছিল।

জানতে চাইলে জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ ফিরোজ মিয়া আজকের পত্রিকা'কে বলেন, জনপ্রশাসন-বিষয়ক কমিটি মতামত না দেওয়ায় মন্ত্রণালয় তাৎক্ষণিকভাবে অনেক সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না। তিনি বলেন, যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি পাওয়া ডিসিরা বদলির অপেক্ষায় থাকায় আগের মতো কাজ করতে পারছেন না। গুরুত্বপূর্ণ কাজে হাত দিয়ে শেষ করতে পারবেন না মনে করে সেসবে হাত দিচ্ছেন না। আবার নতুন কোনো কাজে কেউ বিরাগভাজন হলে খারাপ পোস্টিং বা ওএসডি হওয়ার শঙ্কাও তাঁদের মধ্যে রয়েছে।

আরও খবর পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বোরো ধানের মৌসুম: সেচ মৌসুমে জ্বালানিতে টান

  • যেকোনো পরিস্থিতিতে তিন মাসের জ্বালানি মজুত থাকার কথা
  • বিপিসির নথি বলছে, আর ১৩ থেকে ২০ দিনের জ্বালানি আছে
 আবু বকর ছিদ্দিক, চট্টগ্রাম
আপডেট : ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮: ৩১
বোরো ধানের মৌসুম: সেচ মৌসুমে জ্বালানিতে টান

বোরো ধানের মৌসুমে দেশে জ্বালানি মজুতে টান পড়েছে। বর্তমান ডিজেলের মজুত একেবারেই তলানিতে রয়েছে। সরকারি তেল বিপণনকারী তিনটি কোম্পানি পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা অয়েলে মজুত প্রতিবেদনে বিষয়টি উঠে এসেছে। যেকোনো পরিস্থিতিতে তিন মাসের জ্বালানি মজুত থাকার কথা থাকলেও বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) নথি বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, বর্তমানে আর ১৩ থেকে ২০ দিনের জ্বালানি তেলের মজুত রয়েছে। যদিও বিপিসির দাবি, দেশে জ্বালানি-সংকট দেখা দেওয়ার আশঙ্কা নেই।

বিপিসির মজুত প্রতিবেদনে জানা যায়, ২৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশে মোট ডিজেল ৩ লাখ ৩৬ হাজার ৪৯৭ টন মজুত রয়েছে। এর মধ্যে দেশের ২৪টি ডিপোর ট্যাংকে ২ লাখ ৬৮ হাজার ৮২৯ টন মজুত রয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন লাইটার জাহাজসহ ট্রানজিটে রয়েছে ৪৯ হাজার ৬৬৮ টন। ২২ ডিসেম্বর বিপিসির বিক্রয় প্রতিবেদনে দেখা যায়, এদিন ১৬ হাজার ৬০১ টন ডিজেল সারা দেশে বিক্রি করা হয়েছে। সে হিসাবে দেখা যায়, বর্তমানে বিপিসির কাছে ২০ দিনের ডিজেল মজুত রয়েছে। একইভাবে বিপিসি বিভিন্ন ডিপোতে পেট্রল মজুত আছে ২২ হাজার ১১৪ টন। ২২ ডিসেম্বর বিপিসির বিক্রয় প্রতিবেদনে দেখা যায়, এদিন ১ হাজার ৬১৮ টন পেট্রল বিক্রি করা হয়েছে। এই হিসাবে বিপিসির কাছে পেট্রল ১৩ দিনের মজুত আছে।

বিপিসির ২৩ ডিসেম্বরের স্টক প্রতিবেদনে দেখা যায়, সারা দেশে মোট ২৮ হাজার ২৭০ টন অকটেন মজুত রয়েছে। ২২ ডিসেম্বর বিপিসির বিক্রয় প্রতিবেদনে দেখা যায়, এদিন ১ হাজার ৮৮৫ টন অকটেন বিক্রি করা হয়েছে। এই হিসাবে বিপিসির কাছে ১৫ দিনের অকটেন মজুত আছে।

বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে বিপিসির পরিচালক এ কে এম আজাদুর রহমান জানান, সারা দেশে ২৫ দিনের অকটেন ও পেট্রল মজুত রয়েছে। এ ছাড়া ডিজেল ৩৫ দিনের মজুত রয়েছে বলে দাবি করেন তিনি। দেশে ডিজেলের মজুত কম কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখন শুষ্ক মৌসুমে সব জায়গায় বিদ্যুতের ব্যবহার হচ্ছে। তাই ডিজেলের চাহিদা কম।

এদিকে রাষ্ট্রায়ত্ত তেল বিপণনকারী প্রতিষ্ঠান মেঘনা অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের ২৩ ডিসেম্বরের মজুত প্রতিবেদনে দেখা যায়, সারা দেশে ১৭টি ডিপোতে ৫ হাজার ৬৯৫ টন অকটেন মজুত রয়েছে। আর পেট্রল মজুত রয়েছে ৪ হাজার ২৯৫ টন। সারা দেশের ১৭টি ডিপোতে ৯২ হাজার ৮৯৫ টন ডিজেল মজুত রয়েছে। একইভাবে সরকারি তেল বিপণনকারী প্রতিষ্ঠান পদ্মা অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের ২৩ ডিসেম্বরের মজুত প্রতিবেদনে দেখা যায়, সারা দেশে ১৭টি ডিপোতে ৮০ হাজার ২১৩ টন ডিজেল মজুত রয়েছে। এ ছাড়া ২ হাজার ৯১৪ টন পেট্রল এবং ৪ হাজার ১৮৭ টন অকটেন মজুত রয়েছে। পদ্মা অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের ২৩ ডিসেম্বরের মজুত প্রতিবেদনে দেখা যায়, ফতুল্লা, রাজশাহী, হরিয়ান, চিলমারী ডিপোতে কোনো জ্বালানি তেল নাই। পদ্মা অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের নাটোর ডিপোতে ৩০ টন, রংপুর ডিপোতে ৫৭ টন এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ডিপোতে ২ টন ডিজেল রয়েছে।

নাম না প্রকাশে সরকারি তেল বিপণনকারী এক কর্মকর্তা জানান, বিপিসির আমদানি করা জ্বালানি তেলের মজুত আশঙ্কাজনকভাবে কম রয়েছে। ডিজেলের মজুত একবারেই কম। তাঁর মতে ১৩ থেকে ১৫ দিনের জ্বালানি মজুত রয়েছে বর্তমানে।

পদ্মা অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক আসিফ মালিক বলেন, দেশে পর্যাপ্ত জ্বালানি মজুত রয়েছে। সংকটের কোনো আশঙ্কা নেই। নিয়মিতভাবে জ্বালানি তেলের জাহাজ আসা অব্যাহত রয়েছে বলেও জানান।

তবে গাজীপুর ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের জ্যেষ্ঠ বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আবদুল মোমিন বলেন, দেশে ধান উৎপাদনের জন্য সবচেয়ে বড় মৌসুম হচ্ছে বর্তমান বোরো মৌসুম। এ সময় প্রায় ৫২ লাখ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ হয়। এই মৌসুমে জ্বালানি-সংকট হলে সেটা দেশের খাদ্য উৎপাদনে ছেদ পড়বে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

রাজবাড়ীতে গণপিটুনিতে অমৃত মন্ডল নিহতের ঘটনা সাম্প্রদায়িক হামলা নয়: প্রেস উইং

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
রাজবাড়ীতে গণপিটুনিতে অমৃত মন্ডল নিহতের ঘটনা সাম্প্রদায়িক হামলা নয়: প্রেস উইং

রাজবাড়ীর পাংশা থানাধীন এলাকায় গত বুধবার রাতে সংঘটিত একটি দুঃখজনক হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানোর বিষয়টি সরকারের নজরে এসেছে।

পুলিশের তথ্য ও প্রাথমিক তদন্ত থেকে প্রতীয়মান হচ্ছে, ঘটনাটি মোটেই সাম্প্রদায়িক হামলা নয়। এটি চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড থেকে উদ্ভূত সহিংস পরিস্থিতির থেকে সৃষ্ট ঘটনা। নিহত ব্যক্তি শীর্ষ সন্ত্রাসী অমৃত মন্ডল ওরফে সম্রাট চাঁদা দাবির উদ্দেশ্যে এলাকায় উপস্থিত হন এবং বিক্ষুব্ধ স্থানীয় জনতার সঙ্গে সংঘর্ষের একপর্যায়ে প্রাণ হারান। তিনি ইতিপূর্বে ২০২৩ সালে রুজুকৃত হত্যা, চাঁদাবাজির মামলাসহ একাধিক গুরুতর মামলার আসামি ছিলেন। এসব মামলায় তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও রয়েছে।

পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে সম্রাটের সহযোগী সেলিমকে একটি বিদেশি পিস্তল, ১টি পাইপগানসহ আটক করে। এই ঘটনায় ইতিমধ্যে তিনটি মামলা দায়ের হয়েছে।

এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সরকার কঠোর নিন্দা জানায়। সরকার সুস্পষ্টভাবে জানাতে চায়, যেকোনো ধরনের আইনবহির্ভূত কর্মকাণ্ড, গণপিটুনি বা সহিংসতা সরকার কোনোভাবেই সমর্থন করে না। এ ঘটনায় যারা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত, তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তদন্ত কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।

একই সঙ্গে সরকার গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করছে, একটি মহল নিহত ব্যক্তির ধর্মীয় পরিচয়কে সামনে এনে ঘটনাটিকে সাম্প্রদায়িক হামলা হিসেবে উপস্থাপনের অপচেষ্টা চালাচ্ছে, যা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও অসদুদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এ ধরনের অপপ্রচার সামাজিক সম্প্রীতি বিনষ্ট করতে পারে এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাতে পারে।

সরকারসংশ্লিষ্ট সবাইকে দায়িত্বশীল আচরণ করার আহ্বান জানাচ্ছে এবং বিভ্রান্তিকর, উসকানিমূলক ও সাম্প্রদায়িক বক্তব্য প্রচার থেকে বিরত থাকার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছে।

আইনের শাসন ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় সরকার দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। বাংলাদেশ একটি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ, এ দেশের শান্তি ও স্থিতিশীলতা নষ্ট করার যেকোনো অপচেষ্টা সরকার কঠোরহস্তে দমন করবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

তারেক রহমানের আগমনে রাজনৈতিক শূন্যতা পূরণ হবে: প্রেস সচিব

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। ফাইল ছবি
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। ফাইল ছবি

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের আগমনে বাংলাদেশের রাজনৈতিক শূন্যতা পূরণ হবে বলে মনে করছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। আজ বৃহস্পতিবার বড়দিন উপলক্ষে রাজধানীর তেজগাঁওয়ের পবিত্র জপমালা রাণী গির্জায় খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করতে যান শফিকুল আলম। সেখানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন তিনি।

শফিকুল আলম বলেন, ‘আমরা তাঁকে (তারেক রহমান) স্বাগত জানাই। উনি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় দলের নেতা এবং আমি বলব তাঁর বাংলাদেশে আসা খুবই একটা ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। বাংলাদেশে তো সত্যিকার অর্থে কিছু রাজনৈতিক শূন্যতা আছে। উনি আসলে সেটা পূরণ হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের সামনে আমাদের একটা বড় ইলেকশন, আমরা একটা ডেমোক্রেটিক ট্রানজিশনে (গণতান্ত্রিক উত্তরণে) আছি। আমরা আশা করছি, আমাদের এই ট্রানজিশনটা আরও স্মুথ হবে।’

তারেক রহমানের নিরাপত্তা নিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নে জবাবে শফিকুল আলম বলেন, ‘তাঁর নিরাপত্তা তো তাঁর পার্টি দেখছেন, তবে তাঁরা আমাদের কাছে যেই ধরনের সহযোগিতা চাচ্ছেন, আমরা সব সহযোগিতাই করছি।’

দীর্ঘ ১৭ বছরের নির্বাসিত জীবন কাটানোর পর তারেক রহমানকে বহনকারী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ফ্লাইটটি যুক্তরাজ্যের লন্ডন থেকে সকাল ৯টা ৫৬ মিনিটে সিলেটে আসে। সিলেটে যাত্রাবিরতি শেষে ফ্লাইটটি বেলা ১১টা ৩৯ মিনিটে ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। সেখান থেকে তাঁর বাসটি সংবর্ধনাস্থলে আসে। কিছুক্ষণ আগে তিনি মঞ্চে অবস্থান নিয়ে তিনি বক্তব্য শুরু করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বড়দিনে বঙ্গভবনে শুভেচ্ছা বিনিময় করলেন রাষ্ট্রপতি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
বড়দিনের শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। ছবি: আজকের পত্রিকা
বড়দিনের শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। ছবি: আজকের পত্রিকা

খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎস বড়দিনে খ্রিষ্টান ধর্মের বিশিষ্ট ব্যক্তি, বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনার এবং আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন।

আজ বৃহস্পতিবার বঙ্গভবনে তিনি এই শুভেচ্ছা বিনিময় করেন বলে বঙ্গভবনের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।

বড়দিনের শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। ছবি: আজকের পত্রিকা
বড়দিনের শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। ছবি: আজকের পত্রিকা

সেখানে বলা হয়, রাষ্ট্রপতি দেশের খ্রিষ্টান সম্প্রদায়সহ বিশ্ববাসীর প্রতি বড় দিনের আন্তরিক শুভেচ্ছা ও উষ্ণ অভিনন্দন জানান। জাতি, ধর্ম ও বর্ণ নির্বিশেষে এ দেশের মানুষের মধ্যে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি চিরকাল অটুট ও অক্ষুণ্ন রাখার আহ্বান জানান তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত