Ajker Patrika

স্বাধীন বিচারকাজে প্রধান বাধা ১১৬ অনুচ্ছেদ

  • বিচারকদের নিয়ন্ত্রণ সুপ্রিম কোর্টের হাতে ন্যস্ত করার সুপারিশ করা হয়েছে।
  • শুধু অপসারণের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের পরামর্শ।
  • সংবিধান বিচারকের স্বাধীনতার কথা বললেও অনেক ক্ষেত্রেই বিঘ্ন সৃষ্টি করা হয়।
এস এম নূর মোহাম্মদ, ঢাকা  
আপডেট : ৩০ জানুয়ারি ২০২৫, ০২: ০০
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

২০২০ সালের ৩ মার্চ; দুপুর নাগাদ এক দুর্নীতির মামলায় পিরোজপুরের সাবেক সংসদ সদস্য জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এ কে এম এ আউয়াল ও তাঁর স্ত্রীর জামিন আবেদন নাকচ করে জেলহাজতে পাঠানোর আদেশ দিলেন জেলা ও দায়রা জজ মো. আবদুল মান্নান। বিকেল না পেরোতেই আইন মন্ত্রণালয় থেকে বদলির নির্দেশ পেলেন ওই বিচারক। সেই বিকেলেই এক যুগ্ম জেলা জজকে ভারপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজের দায়িত্ব দিয়ে আসামিদের জামিনের ব্যবস্থা করা হলো।

সংবিধানে বিচারকদের কাজের স্বাধীনতা থাকার অঙ্গীকার থাকলেও বাস্তবে দেশের বিচার বিভাগকে কমবেশি কী চর্চার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে দশকের পর দশক ধরে, পিরোজপুরের ঘটনা তার একটি উদাহরণমাত্র। এ ধরনের অভিজ্ঞতার আলোকে বিচারকদের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে আইন মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপ বন্ধ করার সুপারিশ করেছে আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মমিনুর রহমানকে প্রধান করে গঠিত বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন। গত ১১ ডিসেম্বর আইন মন্ত্রণালয়ে প্রাথমিক সুপারিশ জমা দিয়েছে কমিশন। কমিশনের মতে, মন্ত্রণালয়ের হাতে ক্ষমতা থাকার অর্থ দ্বৈত নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা বজায় থাকা। কাগজে-কলমে বিচারকদের স্বাধীনতার ঘোষণা থাকলেও এর সুবাদে অনেক ক্ষেত্রেই স্বাধীনভাবে বিচারিক কর্মকাণ্ড পরিচালনায় বিঘ্ন সৃষ্টি করা সম্ভব হয়।

প্রসঙ্গত, কাজের সুবিধার্থে সময়সীমা বাড়ানোর পর কমিশন প্রধান উপদেষ্টার কাছে এর পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন জমা দিতে যাচ্ছে আগামী ৫ ফেব্রুয়ারি।

বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের সদস্য ব্যারিস্টার তানিম হোসেইন শাওন আজকের পত্রিকাকে বলেন, তাঁরা অধস্তন আদালতের বিচারকদের নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি রাষ্ট্রপতির পরিবর্তে সুপ্রিম কোর্টের হাতে ন্যস্ত রাখতে বলেছেন। তবে কাউকে যদি গুরুদণ্ড দিতে বা অপসারণ করতে হয়, সে ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতির অনুমোদন গ্রহণ করার বিধানের জন্য সুপারিশ করা হয়েছে। তানিম হোসেইন শাওন বলেন, ‘পৃথক সচিবালয় ও সুপ্রিম কোর্টের হাতে নিয়ন্ত্রণ থাকলে বিচার বিভাগ স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারবে বলে আমি মনে করি।’

আইন মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া সংস্কার কমিশনের প্রাথমিক সুপারিশে বলা হয়েছে, সংবিধানের ২২ অনুচ্ছেদে বিচার বিভাগকে নির্বাহী বিভাগ থেকে পৃথক করা এবং ১১৬ক অনুচ্ছেদে বিচারকদের স্বাধীনতার ঘোষণা থাকলেও বাস্তবে অনেক ক্ষেত্রেই স্বাধীনভাবে বিচারিক কর্মকাণ্ড পরিচালনায় বিঘ্ন সৃষ্টি করা হয়। এতে বলা হয়েছে, নিম্ন আদালতের বিচারকদের দ্বারা নিরপেক্ষ ও স্বাধীনভাবে বিচারকাজ চালানোর ক্ষেত্রে অন্যতম প্রধান বাধা হচ্ছে সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদে বর্ণিত ‘দ্বৈত প্রশাসনিক ব্যবস্থা’।

সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, বিচার বিভাগের কর্মকর্তাদের বদলি, পদোন্নতি, নিয়ন্ত্রণ ও শৃঙ্খলার বিষয়ে মূল ক্ষমতা রাষ্ট্রপতি তথা নির্বাহী বিভাগের হাতে ন্যস্ত থাকবে। তবে ওই ক্ষমতার প্রয়োগ তিনি করবেন সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে পরামর্শক্রমে।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, ‘সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ বিচার বিভাগের স্বাধীনতার ক্ষেত্রে একধরনের বাধা। এই অনুচ্ছেদ নিয়ে রুল জারি করা হয়েছে। এটি বাতিল হলে বিচার বিভাগের জন্য ভালো হবে।’

আলোচিত মাসদার হোসেন মামলায় সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ১২ দফা নির্দেশনা দিয়েছিলেন। সে রায়ে বলা হয়, বিচার বিভাগে নিযুক্ত কর্মকর্তারা নির্বাহী বিভাগের অংশ নন। তাঁরা একটি সাংবিধানিক সার্ভিসের সদস্য এবং তাঁদের জন্য স্বতন্ত্র চাকরিবিধি প্রণয়ন করতে হবে।

বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের মতে, বিধিমালা প্রণীত হলেও বাস্তব অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, বিচার বিভাগে বদলি, পদোন্নতি ও শৃঙ্খলার ক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্টের মতামত নেওয়ার বিধান নানাভাবে অবহেলিত হয়েছে।

বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার অংশ হিসেবে জেলা পর্যায়ের আদালতের বিচারকদের স্বাধীনতা, নিরপেক্ষতা ও কার্যকর ভূমিকা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সংস্কার কমিশন একগুচ্ছ প্রস্তাব দিয়েছে। প্রস্তাবগুলো হচ্ছে—

(ক) সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদে সুপ্রিম কোর্টের ‘পরামর্শ প্রদানকারী’ যে ভূমিকার উল্লেখ আছে, তা পরিবর্তন করতে হবে। বিচারকদের কর্মস্থল নির্ধারণ, পদোন্নতি, ছুটি মঞ্জুর এবং বেতন-ভাতা ও আর্থিক সুবিধাদি নিয়ন্ত্রণ এবং শৃঙ্খলা বিধান সুপ্রিম কোর্টের হাতেই ন্যস্ত করতে হবে।

(খ) সুপ্রিম কোর্টের নিয়ন্ত্রণসংক্রান্ত মৌলিক বিধানের প্রতিফলন ঘটাতে মাসদার হোসেন মামলায় প্রদত্ত ১২ দফা নির্দেশনার আলোকে প্রণীত চাকরিবিধিতে প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনতে হবে।

(গ) জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনের কার্যপরিধি বিস্তৃত করে অ্যাটর্নি সার্ভিসে প্রবেশ পদে নিয়োগকেও এর অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। এ জন্য কমিশনের নাম পরিবর্তন করে ‘লিগ্যাল অ্যান্ড জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশন’ নির্ধারণ করা প্রয়োজন। এর জন্য সংবিধানে আনুষঙ্গিক বিধান অন্তর্ভুক্ত করতে হবে অথবা বিদ্যমান সংবিধানের ১৩৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়ন করতে হবে।

(ঘ) সুপ্রিম কোর্টের নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতার যথাযথ ও কার্যকর প্রয়োগ নিশ্চিত করা। বিচার বিভাগের প্রশাসনিক, আর্থিক এবং আনুষঙ্গিক ব্যবস্থাকে নির্বাহী বিভাগের নিয়ন্ত্রণমুক্ত রাখার জন্য সুপ্রিম কোর্টের নিজস্ব সচিবালয় প্রতিষ্ঠা অপরিহার্য। এ লক্ষ্যে সংবিধানে সংসদ সচিবালয়বিষয়ক ৭৯ অনুচ্ছেদের অনুরূপ বিধান অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

(ঙ) বিচার বিভাগের জন্য পর্যাপ্ত অবকাঠামো এবং বাজেট নিশ্চিত করতে হবে, যার নিয়ন্ত্রণ থাকবে সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয়ের হাতে।

(চ) সংবিধানের ৮৮ অনুচ্ছেদ সংশোধন করে সংযুক্ত তহবিলের ওপর দায়যুক্ত ব্যয়ের তালিকায় বিচার বিভাগে কর্মরত জনবলকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

ইতিমধ্যে ১১৬ অনুচ্ছেদের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট করেছিলেন কয়েকজন আইনজীবী। সে রিটের প্রাথমিক শুনানির পর গত বছরের ২৭ অক্টোবর রুল জারি করেন হাইকোর্ট। রুলে সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ এবং এ-সংক্রান্ত ২০১৭ সালের জুডিশিয়াল সার্ভিস (শৃঙ্খলা) বিধিমালা কেন সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়। একই সঙ্গে বিচার বিভাগের জন্য পৃথক সচিবালয় কেন প্রতিষ্ঠা করা হবে না, তা-ও জানতে চান হাইকোর্ট। ওই রুলের শুনানি শেষ পর্যায়ে রয়েছে।

রিট আবেদনকারীদের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির বলেন, ১১৬ অনুচ্ছেদের কারণে বিচার বিভাগের পূর্ণ স্বাধীনতা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। ওই অনুচ্ছেদের বদৌলতে বিচারকদের মন্ত্রণালয় থেকে অদৃশ্যভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। এতে বিচারকেরা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারেন না। তাই এই অবস্থার অবসান হওয়া প্রয়োজন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

তারেক রহমানের জন্য নির্ধারিত ফ্লাইটের দুই কেবিন ক্রুকে প্রত্যাহার

‘আমি তো মামলা করি না, ডাইরেক্ট ওয়ারেন্ট করাই’

ভালুকায় কারখানার শ্রমিকদের মহাসড়ক অবরোধ

কুকুর লেলিয়ে পুরুষ ফিলিস্তিনিকে ধর্ষণ—বিবিসির প্রতিবেদনে ইসরায়েলি কারাগারে নির্যাতনের চিত্র

আজকের রাশিফল: ফুচকায় ঝাল কম দিতে বলুন, বড় অঙ্কের টাকা হাতে আসার সম্ভাবনা

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারে হামলাকারীরা শনাক্ত, জানালেন ধর্ম উপদেষ্টা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ধর্মবিষয়ক উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন। ছবি: সংগৃহীত
ধর্মবিষয়ক উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন। ছবি: সংগৃহীত

রাজধানীর কারওয়ান বাজার ও কাজী নজরুল ইসলাম অ্যাভিনিউতে অবস্থিত দেশের শীর্ষস্থানীয় দুই সংবাদমাধ্যম ‘প্রথম আলো’ ও ‘দ্য ডেইলি স্টার’ কার্যালয়ে হামলা, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনায় জড়িত কয়েকজনকে শনাক্ত করা হয়েছে। তাঁদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ধর্ম বিষয়ক উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন।

আজ রোববার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এক প্রশ্নের জবাবে ধর্ম উপদেষ্টা এ তথ্য জানান।

ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, ‘প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারে যারা আগুন দিয়েছে, আমি গোয়েন্দা রিপোর্ট থেকে জানতে পেরেছি যে তাঁদের কিছু ছবি এবং পরিচয় আমরা ইতিমধ্যে শনাক্ত করতে পেরেছি। তাঁদের গ্রেপ্তার করে দ্রুততম সময়ে আইনের আওতায় আনার জন্য আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছি।’

তিনি আরও উল্লেখ করেন, ‘কোনো প্রতিষ্ঠান জ্বালিয়ে দেওয়া বা মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করা কখনোই কাম্য নয়। সরকার এই ধরনের অন্যায় ও গর্হিত কাজ বন্ধ করতে এবং অপরাধীদের শাস্তি দিতে বদ্ধপরিকর।’

গত বৃহস্পতিবার রাতে প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারের কার্যালয়ে এক দল দুর্বৃত্ত হামলা করে। হামলাকারীরা কারওয়ান বাজারে প্রথম আলো কার্যালয় এবং ডেইলি স্টার কার্যালয়ে ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটপাট চালায়। পরবর্তীতে কার্যালয় দুটি আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়।

এই ভয়াবহ হামলার ঘটনাকে ‘গণমাধ্যমের জন্য কালো দিন’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন সাংবাদিক নেতা ও বিশিষ্ট নাগরিকেরা। তাঁরা বলছেন, এই হামলা স্বাধীন গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধ করার একটি জঘন্য প্রচেষ্টা।

ছায়ানট ভবনে হামলার বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, ‘কোনো প্রতিষ্ঠান কেউ আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেবে, এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। আমরা এটাকে অন্যায় ও গর্হিত কাজ বলে বিবেচনা করি।’

এ ছাড়া ময়মনসিংহের ভালুকায় পোশাককর্মী দিপু চন্দ্র দাসকে পিটিয়ে হত্যার পর মরদেহ গাছে ঝুলিয়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার ঘটনাকে ‘অত্যন্ত নিন্দনীয়’ বলে অভিহিত করেন ধর্ম উপদেষ্টা। উপদেষ্টা বলেন, ‘সরকার কোনোভাবেই কাউকে আইন নিজের হাতে তুলে নিতে দেবে না। প্রতিটি ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার নিশ্চিত করা হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

তারেক রহমানের জন্য নির্ধারিত ফ্লাইটের দুই কেবিন ক্রুকে প্রত্যাহার

‘আমি তো মামলা করি না, ডাইরেক্ট ওয়ারেন্ট করাই’

ভালুকায় কারখানার শ্রমিকদের মহাসড়ক অবরোধ

কুকুর লেলিয়ে পুরুষ ফিলিস্তিনিকে ধর্ষণ—বিবিসির প্রতিবেদনে ইসরায়েলি কারাগারে নির্যাতনের চিত্র

আজকের রাশিফল: ফুচকায় ঝাল কম দিতে বলুন, বড় অঙ্কের টাকা হাতে আসার সম্ভাবনা

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

শেখ হাসিনা, সাবেক মন্ত্রী-সচিবসহ ১৭ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা ও সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। ফাইল ছবি
আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা ও সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। ফাইল ছবি

ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরসহ মোট ১৭ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। আজ রোববার (২১ ডিসেম্বর) ঢাকার মহানগর দায়রা জজ ও সিনিয়র বিশেষ জজ আদালতের অবকাশকালীন বিচারক মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুন মেঘনা-গোমতী সেতুতে টোল আদায়ে দুর্নীতির অভিযোগে দায়ের করা মামলায় এই নির্দেশ দেন।

অন্য যাঁদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে তাঁরা হলেন— সাবেক মন্ত্রী আমির হোসেন আমু, আনিসুল হক, তোফায়েল আহমেদ, খন্দকার মোশাররফ হোসেন, সাবেক প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান, সাবেক সচিব এম এ এন ছিদ্দিক, সাবেক অতিরিক্ত সচিব মো. ফারুক জলিল, সাবেক উপ-সচিব মোহাম্মদ শফিকুল করিম, প্রকৌশলী মো. ফিরোজ ইকবাল, ইবনে আলম হাসান, মো. আফতাব হোসেন খান, মো. আব্দুস সালাম এবং সিএনএস লিমিটেড-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুনীর উজ জামান চৌধুরী, পরিচালক সেলিনা চৌধুরী ও ইকরাম ইকবাল।

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালত এ আদেশ দেন বলে জানান দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা আকতারুল ইসলাম।

দুদকের সহকারী পরিচালক তানজিল হাসান ১৭ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা আছে আবেদন করেন।

আবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ঢাকা-চট্টগ্রাম রোডে মেঘনা-গোমতী সেতুতে ২০১৬ সালে নীতিমালা উপেক্ষা করে ‘কম্পিউটার নেটওয়ার্ক সিস্টেম লিমিটেড’কে (সিএনএস) উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে কার্যাদেশ দেওয়া হয়। টাকার অঙ্কে কাজের মূল্য নির্ধারণ না করে বরং মোট আদায়কৃত টোলের ১৭ দশমিক ৭৫ শতাংশ হারে সার্ভিস চার্জ নির্ধারণ করা হয়। এর মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি মোট ৪৮৯ কোটি ৪৩ লাখ ৭৩ হাজার টাকা বিল তুলেছে। দুদক বলছে, এ প্রক্রিয়ায় সরকারের প্রায় ৩০৯ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।

এ ঘটনায় দুদক ১২ অক্টোবর শেখ হাসিনাসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা করে। মামলাটি তদন্তাধীন। তদন্তকালে দুদক জানতে পেরেছে, এ মামলার আসামিরা যেকোনো সময় দেশত্যাগ করতে পারেন। তাঁরা দেশত্যাগ করলে তদন্তে ব্যাঘাত ঘটবে বিধায় তাঁদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করা প্রয়োজন।

উল্লেখ্য, গত বছর ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা দেশত্যাগ থেকে ভারতে চলে যান। এরপর বিভিন্ন মামলায় তাঁর দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

তারেক রহমানের জন্য নির্ধারিত ফ্লাইটের দুই কেবিন ক্রুকে প্রত্যাহার

‘আমি তো মামলা করি না, ডাইরেক্ট ওয়ারেন্ট করাই’

ভালুকায় কারখানার শ্রমিকদের মহাসড়ক অবরোধ

কুকুর লেলিয়ে পুরুষ ফিলিস্তিনিকে ধর্ষণ—বিবিসির প্রতিবেদনে ইসরায়েলি কারাগারে নির্যাতনের চিত্র

আজকের রাশিফল: ফুচকায় ঝাল কম দিতে বলুন, বড় অঙ্কের টাকা হাতে আসার সম্ভাবনা

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

দেশি নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের জন্য আবেদনের সময় বাড়ল

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট পর্যবেক্ষণের জন্য দেশি পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলোর পর্যবেক্ষক মোতায়েনের আবেদনের সময়সীমা বৃদ্ধি করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আগ্রহী সংস্থাগুলো আগামী ২৯ ডিসেম্বর (সোমবার) অফিস চলাকালীন সময় পর্যন্ত আবেদন করতে পারবে।

আজ রোববার নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের জনসংযোগ শাখা থেকে প্রকাশিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচন পর্যবেক্ষণ নীতিমালা ২০২৫ অনুযায়ী, তফসিল ঘোষণার ১০ দিনের মধ্যে অর্থাৎ ২১ ডিসেম্বরের মধ্যে পর্যবেক্ষক মোতায়েনের আবেদন করার কথা ছিল। তবে বিভিন্ন পর্যবেক্ষক সংস্থার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে কমিশন এই সময়সীমা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

নির্বাচন কমিশন থেকে অনুমতি পাওয়ার পর কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষকদের পরিচয়পত্র ও গাড়ির স্টিকার নির্বাচন কমিশন সচিবালয় থেকে সরবরাহ করা হবে। অন্যদিকে, স্থানীয় পর্যবেক্ষকদের জন্য এই পরিচয়পত্র ও স্টিকার সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং বা সহকারী রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয় থেকে দেওয়া হবে।

পরিচয়পত্র সংগ্রহের সময় অনুমোদিত পর্যবেক্ষকের এইচএসসি বা সমমানের সার্টিফিকেটের সত্যায়িত ফটোকপি, জাতীয় পরিচয়পত্রের সত্যায়িত ফটোকপি এবং নির্ধারিত ফরম (EO-2 ও EO-3) পূরণ করে জমা দিতে হবে।

পর্যবেক্ষক নীতিমালা ২০২৫ এবং প্রয়োজনীয় অঙ্গীকারনামা ও অন্যান্য ফরম নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে (www.ecs.gov.bd) পাওয়া যাবে। বর্তমানে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত মোট ৮১টি পর্যবেক্ষক সংস্থা রয়েছে, যারা এই প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করতে পারবে।

নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সহকারী পরিচালক (জনসংযোগ) মো. আশাদুল হক স্বাক্ষরিত এই বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, স্বচ্ছ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতেই পর্যবেক্ষকদের এই সুযোগ দেওয়া হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

তারেক রহমানের জন্য নির্ধারিত ফ্লাইটের দুই কেবিন ক্রুকে প্রত্যাহার

‘আমি তো মামলা করি না, ডাইরেক্ট ওয়ারেন্ট করাই’

ভালুকায় কারখানার শ্রমিকদের মহাসড়ক অবরোধ

কুকুর লেলিয়ে পুরুষ ফিলিস্তিনিকে ধর্ষণ—বিবিসির প্রতিবেদনে ইসরায়েলি কারাগারে নির্যাতনের চিত্র

আজকের রাশিফল: ফুচকায় ঝাল কম দিতে বলুন, বড় অঙ্কের টাকা হাতে আসার সম্ভাবনা

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

টিএফআই সেলে গুম: হাসিনাসহ সেনা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের আদেশ পেছাল

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ২১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৬: ০৩
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

আওয়ামী লীগের শাসনামলে টিএফআই সেলে গুম করে নির্যাতনের ঘটনায় দায়ের করা মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেখ হাসিনা ও সেনা কর্মকর্তাসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের বিষয়ে আদেশ ২৩ ডিসেম্বর। আজ রোববার (২১ ডিসেম্বর) উভয় পক্ষের শুনানি শেষে বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ আদেশের জন্য এই দিন ধার্য করেন।

ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত তিন আসামির পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী হামিদুল মিসবাহ ও সাতজনের পক্ষে ছিলেন তাবারক হোসেন। পলাতক আসামি শেখ হাসিনার পক্ষে ছিলেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ তিনজনের পক্ষে শুনানি করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী এম হাসান ইমাম ও পলাতক তিন সেনা কর্মকর্তার পক্ষে ছিলেন আইনজীবী সুজাদ মিয়া।

এর আগে এই মামলায় অভিযোগ গঠনের জন্য আজকের দিন ধার্য করা হয়েছিল। তবে আজ সিনিয়র আইনজীবী হিসেবে মনসুরুল হক চৌধুরী এই মামলায় শুনানি করতে সময় আবেদন করেন। পরে ট্রাইব্যুনাল তাঁকে শুনানি করতে আগামীকাল এবং আদেশের জন্য ২৩ ডিসেম্বর দিন ঠিক করে দেন।

এই মামলায় ১৭ আসামির মধ্যে রোববার শুনানির সময় ১০ সেনা কর্মকর্তা ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা হলেন র‍্যাবের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক কর্নেল আনোয়ার লতিফ খান, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জাহাঙ্গীর আলম, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তোফায়েল মোস্তফা সারোয়ার, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক কর্নেল কে এম আজাদ, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল কামরুল হাসান, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাহবুব আলম, সাবেক পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল সারোয়ার বিন কাশেম, সাবেক পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) খায়রুল ইসলাম, সাবেক পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মশিউর রহমান জুয়েল এবং সাবেক পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল সাইফুল ইসলাম সুমন।

এই মামলায় পলাতক রয়েছেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, শেখ হাসিনার সাবেক প্রতিরক্ষাবিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ, র‍্যাবের সাবেক মহাপরিচালক এম খুরশিদ হোসেন, র‍্যাবের সাবেক মহাপরিচালক ব্যারিস্টার হারুন অর রশিদ এবং সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক কর্নেল আবদুল্লাহ আল মোমেন।

এর আগে র‍্যাবের টাস্কফোর্স ইন্টারোগেশনের (টিএফআই) মাধ্যমে গুম-নির্যাতনের ঘটনায় দায়ের করা মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গত ৮ অক্টোবর আসামিদের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ জমা দেয় প্রসিকিউশন। পরে ওই দিনই তাঁদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়। এই মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে ১৪ জনকে গুম করে নির্যাতনের ঘটনায় চারটি অভিযোগ আনা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

তারেক রহমানের জন্য নির্ধারিত ফ্লাইটের দুই কেবিন ক্রুকে প্রত্যাহার

‘আমি তো মামলা করি না, ডাইরেক্ট ওয়ারেন্ট করাই’

ভালুকায় কারখানার শ্রমিকদের মহাসড়ক অবরোধ

কুকুর লেলিয়ে পুরুষ ফিলিস্তিনিকে ধর্ষণ—বিবিসির প্রতিবেদনে ইসরায়েলি কারাগারে নির্যাতনের চিত্র

আজকের রাশিফল: ফুচকায় ঝাল কম দিতে বলুন, বড় অঙ্কের টাকা হাতে আসার সম্ভাবনা

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত