Ajker Patrika

আপনি ১০০টা ইলিশ পান, কিন্তু মানুষ মাছের জন্য কাঁদে: এমপিকে সুলতানা কামাল

আপডেট : ১৭ মে ২০২৩, ২০: ৪১
আপনি ১০০টা ইলিশ পান, কিন্তু মানুষ মাছের জন্য কাঁদে: এমপিকে সুলতানা কামাল

‘উপকূলের ইলিশ ও জেলে’বিষয়ক জাতীয় সংলাপে অংশ নিয়ে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অগণিত দুই কেজির ইলিশ ব্যবস্থা করার ঘোষণা দিলেন এক সরকারদলীয় সংসদ সদস্য। তিনি নিজে সাম্প্রতিক সময়ে তিন কেজির ইলিশও খেয়েছেন বলেও জানান। যদিও সংলাপে উপস্থিত জেলেরা জানান, তাঁরা মাছ পাচ্ছেন না। ধারদেনায় জর্জরিত সংসার। সেই এমপিকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট সুলতানা কামালের প্রশ্ন, ‘আপনি বাক্সভরে মানুষকে ইলিশ দিতে পারবেন, আরেকটা মানুষ কেন মাছ-ভাতের জন্য কাঁদবে?’

আজ বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবের তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে এই সংলাপের আয়োজন করে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), সুন্দরবন ও উপকূল সুরক্ষা আন্দোলন এবং ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ।

দেশের বিভিন্ন উপকূলীয় জেলা থেকে সংলাপে অংশ নেন মৎস্যজীবী ও পরিবেশবাদী সংগঠকেরা। মোংলা, পটুয়াখালী, খুলনার বিভিন্ন নদী ও সাগরে ইলিশ আহরণকারী মানুষ জানান তাঁদের অবস্থার কথা। নদীতে ইলিশ না থাকায় জীবিকায় টান পড়েছে তাঁদের বেশির ভাগেরই। পাশাপাশি অবৈধ কারেন্ট জালের ব্যবহার, প্রশাসনের নানা বিষয় তুলে ধরেন জেলেরা। প্রজনন মৌসুমে সরকারের দেওয়া অপ্রতুল সহায়তা এবং তা বণ্টন নিয়ে জনপ্রতিনিধিদের দুর্নীতির বিষয়গুলোও আসে সংগঠক এবং গবেষকদের আলোচনায়।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল সংলাপে বক্তব্য দেনমৎস্য অধিদপ্তরের (ইলিশ ব্যবস্থাপনা) উপপ্রধান মাসুদ আরা মমি বলেন, মৎস্য অধিদপ্তর পদক্ষেপ না নিলে বইপুস্তকে চলে যেত ইলিশ। বিএনপি সরকারের আমলে ইলিশের উৎপাদন একেবারেই শূন্যের কোঠায় নেমে আসে জানিয়ে বর্তমান সরকারের নেওয়া নানা পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন তিনি।

মমি বলেন, ‘ইলিশ নাই কথাটা ঠিক না। এখন উৎপাদন ৫ লাখ ৬৭ হাজার টন। ২০০৯ সালে জাটকা নিধন, জেলেদের বিকল্প কর্মসংস্থান এবং গবেষণা প্রকল্প চালু হয়। ইলিশের যে উন্নয়ন সেটা—এই সরকারের সময়ে হয়েছে। বেসরকারি সংস্থাও গবেষণায় সহায়তা করেছে। ২০১৫ সালে তা শেষ হওয়ার পর মাছ উৎপাদন বেড়েছে, কিন্তু ইলিশের কন্ট্রিবিউশন হয়তো কম। বর্তমানে দেশের ২৯ জেলার ১৩৬টি উপজেলায় ২৪৬ কোটি টাকার ইলিশ উৎপাদন, উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে।’

মাছ ধরা বন্ধের মৌসুমে মাসে ৪০ কেজি ভিজিএফ চাল দেওয়ার বিষয়ে মৎস্য অধিদপ্তরের উপপ্রধান বলেন, ‘২০০৭-০৮ অর্থবছরে ১ লাখ ৪৬ হাজার জেলেকে দেওয়া হতো। এই সরকার যখন আসল, প্রধানমন্ত্রীর ঐকান্তিক ইচ্ছায় ১০ থেকে ৪০ কেজিতে উন্নীত হয়েছে। আমি মনে করি, এটাও জেলেদের জন্য শেখ হাসিনার সানুগ্রহ সহায়তা। এখন সাত লাখ জেলে সরাসরি ইলিশ আহরণের সঙ্গে জড়িত। ইলিশের উৎপাদন কমছে না। ধরার মানুষ বেড়ে গেছে। আগে যেখানে একজন মানুষ ১০টা ইলিশ পেত, এখন যদি সেখানে ১০ জন মানুষ যায়, কয়টা ইলিশ পাবে? এক নদীতে। আপনাদের বুঝতে হবে।’

ইলিশসহ অন্য মাছ রক্ষায় সরকারে সহযোগিতা করার আহ্বান জানান মমি।

বিশেষ অতিথি হিসেবে সংলাপে অংশ নেন উপকূলীয় দুই জেলার সংসদ সদস্য। পটুয়াখালী-৩ আসনের সংসদ সদস্য এস এম শাহজাদা বলেন, ‘ইলিশ এখন কূটনৈতিক সম্পর্ক রক্ষার বিষয় হয়ে গেছে। তরমুজের চাষ বাড়ার কারণে ইলিশ কমে যাচ্ছে।’ কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘তরমুজ খেতে নানা ধরনের সার ও রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়। সেসব আবার নদীতে গিয়ে পড়ছে। তাই ইলিশ তাদের আবাসস্থল আরও গভীরে নিয়ে যাওয়ায় জেলেরা হয়তো মাছ পাচ্ছেন না। কিন্তু সামগ্রিকভাবে সরকারের নানা পদক্ষেপে সব ধরনের মাছ উৎপাদনই বেড়েছে।’

জাতীয় প্রেসক্লাবের তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে সংলাপের আয়োজন করে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), সুন্দরবন ও উপকূল সুরক্ষা আন্দোলন এবং ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ।খুলনা-৬ আসনের সংসদ সদস্য আখতারুজ্জামান বাবু বলেন, ‘ছোটবেলায় আমরা ইলিশ কিনতাম আধা কেজির আশপাশের আকারের। কিন্তু দুই সপ্তাহ আগে ভোলা থেকে মাছ এনেছি। একেকটির ওজন সর্বনিম্ন ২ কেজি, সর্বোচ্চ ২ কেজি ৮০০ গ্রাম। বন্ধুবান্ধব, রাজনৈতিক সহকর্মী অনেকেই তা দিয়েছি। গতকাল (মঙ্গলবার) ঢাকায় আসার আগে খেয়ে এসেছি। সত্যি কথা বলি, ১৫ মিনিট পরে হাত ও মুখ থেকে গন্ধ (ইলিশের) আসছে। পরে সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে, দাঁত ব্রাশ করেছি। ৬৫ দিন বন্ধ রাখার কারণে ইলিশের উৎপাদন বাড়ছে।’

আখতারুজ্জামান বাবু বলেন, ‘পলি বাড়ায় নদীর উপকূলে ইলিশের দেখা মিলছে না। নদী খননে প্রধানমন্ত্রীর আন্তরিক প্রচেষ্টা রয়েছে। আমাদের গবেষণা দরকার। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী প্রত্যেকটি কথা, ধৈর্য সহকারে শোনেন এবং সমাধানের চেষ্টা করেন। আমরা কাছ থেকে দেখেছি, দেশের প্রতি তাঁর যে মমত্ব-মায়া, এটি আমাদের অনেকের ভেতরে থাকলেও তাঁর ভেতরে যেটি আছে, এটি অনন্য। আমরা আজকে যা ভাবছি, উনি অনেক আগে ভেবে রাখেন। এই হচ্ছেন জননেত্রী।’
 
জেলে কার্ড বেহাত হওয়ার বিষয়ে মৎস্যজীবীদের অভিযোগের বিষয়ে এমপি বাবু বলেন, ‘জেলেদের কার্ড সাহেবদের নামে আপনি-আমিই কিন্তু দিয়েছি। আমার পাশে যে কয়টা বাটপার থাকে, তাদের নাম না দিলে ওরা আবার ফেসবুকে লিখে। আমরা কিন্তু ঠিক না। অন্যের দোষ দিয়ে যাই। মৎস্য কর্মকর্তা, জেলে কর্মকর্তা কী করবেন? ওনার তো দিতেই হবে ভাইস চেয়ারম্যান, উপজেলা চেয়ারম্যান সুপারিশ করেছেন। তাঁদের দোষ না। দোষী আমরা সবাই।
 
‘আজকে আড়াই-তিন কেজি ইলিশ পাওয়া যায়। ভোলায়, আমাকে যদি কেউ এখন বলেন আমি কিন্তু ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এনে দিতে পারি। ভোলায় একজন লোক পাঠাব আপনাকে আড়াই কেজি, তিন কেজি ইলিশ এনে দেব। দুই কেজি তো অহরহ। কিছুদিন আগে ছিল না। আমরা যা-ই বলি, নাই নাই নাই। লোক কিন্তু বাড়তেছে। …’

সভাপতির বক্তব্যের শুরুতেই সুলতানা কামাল, দেশের প্রচলিত নিয়ম মেনে সবাইকে মৎস্য আহরণের অনুরোধ করেন।

মৎস্য অধিদপ্তরের উপপ্রধান মাসুদ আরা মমির উদ্দেশে সুলতানা বলেন, ‘তিনি অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন। আমার প্রশ্ন হচ্ছে আপনার যা বলছেন, তার সুফলটা জেলেদের কাছ থেকে শুনি না কেন? যারা মাছ ধরছেন, তাঁরা শোনেন না কেন? আগে আমরা যারা ভোক্তা প্রতিদিন ইলিশ খেয়েছি, এখন কেন খেতে পারি না। যদি ইলিশের উৎপাদন এতই বেড়ে থাকে, বাবু ভাইয়ের (আখতারুজ্জামান বাবু) যে অবস্থান আছে উনি ইচ্ছে করলে ২৪ ঘণ্টাই ইলিশ খেতে পারেন, কিন্তু আমি সুলতানা কামাল, সাধারণ নাগরিক আমি কিন্তু পারি না। সম্ভব না। আমাকে কেউ ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দুই কেজির ইলিশ সাপ্লাই (সরবরাহ) দেবে না। আমাকে কিনতে হলে কয়েক হাজার টাকা হাতে নিয়ে বাজারে যেত হবে। তা-ও যদি পাই। এই যে একটা তফাত রয়ে গেছে। এটাই আইনপ্রণেতাদের বলতে চাই। প্রধানমন্ত্রীর সদিচ্ছা নিয়ে কারও কোনো সন্দেহ নাই। তিনি সব সময় দেশের মানুষের ভালো চান। তাঁর আন্তরিকতা নিয়ে কেউ আমরা প্রশ্ন তুলি না। কিন্তু সেই কাজগুলো হয় না কেন?’

সংলাপে নিজেদের সমস্যার কথা তুলে ধরেন মৎস্যজীবীরাসুলতানা কামাল বলেন, ‘সেদিন এক মন্ত্রী বলেছেন দেশের মানুষ এখন ডাল-ভাতের জন্য কাঁদে না, মাছ-ভাতের জন্য কাঁদে। বাবু ভাই ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ১০০টা ইলিশ মাছ পান, কিন্তু ওই মানুষটা মাছের জন্য কাঁদে কেন? মানবাধিকার কর্মী হিসেবে এটাই আমার প্রশ্ন? আপনি (আখতারুজ্জামান বাবু) বাক্সভরে মানুষকে ইলিশ দিতে পারবেন, আরেকটা মানুষ কেন মাছ-ভাতের জন্য কাঁদবে? তা নিশ্চিতের দায়িত্ব আপনাদের। আপনি পারেন আমি পারি না। এই যে আপনার পারা এবং আমার না পারার মধ্যে এত পার্থক্য হবে কেন?’ 

সুলতানা কামাল বলেন, ‘বাংলাদেশের উন্নয়ন কেউ অস্বীকার করতে পারবে না। কিন্তু সেই সুফল সবাই পাচ্ছে না। … মমি হিসেবে না, আপনারা রাষ্ট্র, বুঝতে হবে কেন বলছেন ওনারা (জেলেরা) দেশকে ভালোবাসে না তাই এসব কথা বলছে? ওরা কি দেশের শত্রু? শুধু আমি একাই দেশকে ভালোবাসি। এই ঔদ্ধত্য আমি দেখাতে পারি? একমাত্র আমি দেশকে ভালোবাসি, আর কেউ না। এই ঔদ্ধত্য থাকা উচিত না। চিন্তা করতে হবে, কেন জেলেরা বলছেন তাঁরা মাছ পাচ্ছেন না।’

অনুষ্ঠানে উপস্থিত দুই সংসদ সদস্যের উদ্দেশে সুলতানা কামাল বলেন, ‘আপনারা অবকাঠামোগত উন্নয়নে যতটা নজর দিয়েছেন। সাংস্কৃতিক উন্নয়ন করার ক্ষেত্রে মনোযোগী হন নাই। এটা আমার অভিযোগ। এ কারণেই জেলেদের ধরতে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার বিষয়গুলো হচ্ছে। একটা ডিসকানেক্ট (বিচ্ছিন্নতা) রয়ে গেছে। কানেকশনটা (সংযোগ) হয় নাই।’

মমিকে (মাসুদ আরা মমি) আরেকটা কথা বলব, ‘আপনারা সরকারি চাকরি করছেন। বাবু, শাহজাদা ভাইয়েরা কোনো একটা কারণে আইনপ্রণেতার জায়গায় গেছেন। আপনারা বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সানুগ্রহে। কেন সানুগ্রহ হবে? আমার করের পয়সায় এই টাকা আসছে, করের পয়সা প্রধানমন্ত্রী কাস্টডিয়ান (দেখভাল করেন)। তিনি একা না, সরকার কাস্টডিয়ান। সেই টাকা হয়তো, জেলে ভাইদের কাছে আসছে। এটা সানুগ্রহের কী আছে? আপনারা কি কখনো চিন্তা করেন একটা মানুষের পাঁচজনের সংসারে ৪০ কেজি চালে মাস চলে কি না। তারপর কারেন্ট জাল নিয়ে মাছ ধরতে যায়, আর বলেন আইন ভাঙছে। কোন বিবেকে বলেন?’

সুলতানা কামাল বলেন, ‘দুর্নীতির কথা ধরলামই না। আপনি খুব সৎভাবে ১০টা কার্ড (জেলে) দিতে চান। কোন দশজনকে দেবেন? এখানে পরিকল্পনার ব্যাপার আছে। খালি সানুগ্রহ বললে হবে না। আমরা দয়ার পাত্র হব কেন কারও? আমরা এ দেশের নাগরিক, সম্মানিত নাগরিক। আমি কর দিই। আমি আমার নাগরিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অধিকার ভোগ করতে চাই। আমি কারও অনুগ্রহ চাই না। দয়া করে আপনারা অনুগ্রহের কথা বলবেন না আমাদের। আমার খুব মনঃকষ্ট হয়।’

সুলতানা কামাল আরও বলেন, ‘আমি বারবার বলছি, প্রধানমন্ত্রীর সদিচ্ছা এক শ বার বিশ্বাস করি। আপনাদের চেয়ে বেশি দিন ধরে তাঁকে চিনি। জানি তিনি চান বাংলাদেশের উন্নয়ন হোক। কিন্তু অনুগ্রহ করে আমাদের অনুগ্রহের কথা বলবেন না। কেউ বাংলাদেশে এমন নাই যে নাগরিকদের অনুগ্রহ করতে পারে। তিনি (শেখ হাসিনা) তাঁর দায়িত্ব পালন করছেন। সদিচ্ছার সঙ্গে করছেন, প্রশংসার সঙ্গে করছেন—এটা বলতে পারি। নিশ্চয়ই তাঁকে ধন্যবাদ জানাব। কিন্তু আমাকে কেউ অনুগ্রহ করে, সেটা গ্রহণে রাজি নই।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বুদ্ধিজীবী হত্যার দায়ে জামায়াতের দুই ছাত্রনেতা আশরাফ ও মুঈনুদ্দীনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিল ট্রাইব্যুনাল

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ০১: ০৫
জামায়াতে ইসলামীর তৎকালীন সহযোগী সংগঠন ছাত্রসংঘের দুই কেন্দ্রীয় নেতা ও আলবদর কমান্ডার আশরাফুজ্জামান খান ও চৌধুরী মুঈনুদ্দীনকে ২০১৩ সালে ৩ নভেম্বর মৃত্যুদণ্ড দেয় ট্রাইব্যুনাল। ছবি: সংগৃহীত
জামায়াতে ইসলামীর তৎকালীন সহযোগী সংগঠন ছাত্রসংঘের দুই কেন্দ্রীয় নেতা ও আলবদর কমান্ডার আশরাফুজ্জামান খান ও চৌধুরী মুঈনুদ্দীনকে ২০১৩ সালে ৩ নভেম্বর মৃত্যুদণ্ড দেয় ট্রাইব্যুনাল। ছবি: সংগৃহীত

আজ ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। ১৬ ডিসেম্বর বিজয়ের কয়েক দিন আগেই পাকিস্তানি বাহিনীর পরাজয় নিশ্চিত হয়ে ওঠে। বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঠেকানো যাচ্ছে না বুঝতে পেরে বাঙালি জাতিকে মেধাশূন্য করার লক্ষ্যে শেষ মরণ আঘাত হানে পাকিস্তানি বাহিনী। পরিকল্পিতভাবে একযোগে বুদ্ধিজীবীদের ধরে নিয়ে গিয়ে হত্যা করে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। বিজয়ের পরই তাঁদের অনেকের ক্ষতবিক্ষত মরদেহের সন্ধান মেলে।

পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সহযোগী স্থানীয় আলবদর ও আলশামস বাহিনীর সদস্যরাই মূলত বুদ্ধিজীবীদের বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে গিয়ে হত্যা করেছিল। আর এই দুই বাহিনীর মূল শক্তি ছিল স্বাধীনতাবিরোধী প্রধান রাজনৈতিক শক্তি জামায়াতে ইসলামীর তখনকার সহযোগী সংগঠন ইসলামী ছাত্রসংঘের নেতাকর্মীরা। পাকসেনাদের আত্মসমর্পণের আগে ঢাকা শহরে ঘন ঘন কারফিউয়ের মধ্যে মাইক্রোবাস নিয়ে বেরিয়ে অনেক বুদ্ধিজীবীকে ধরে নেওয়া হয়েছিল। তাদের সহায়তা করেছিল ছাত্রসংঘের নেতাকর্মীরা।

একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের বিচারের জন্য গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ২০১৩ সালে ৩ নভেম্বর মুক্তিযুদ্ধের সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নয় জন শিক্ষক, ছয় জন সাংবাদিক ও তিনজন চিকিৎসকসহ ১৮ বুদ্ধিজীবীকে অপহরণের পর হত্যার দায়ে ছাত্রসংঘের দুই কেন্দ্রীয় নেতা ও আলবদর কমান্ডার আশরাফুজ্জামান খান ও চৌধুরী মুঈনুদ্দীনকে মৃত্যুদণ্ড দেয় ট্রাইব্যুনাল। পলাতক আশরাফুজ্জামান বর্তমানে আছেন যুক্তরাষ্ট্রে, আর মুঈনুদ্দীন যুক্তরাজ্যে। কোনো দেশই তাদের ফেরত দিচ্ছে না।

ট্রাইব্যনালের ১৫৪ পৃষ্ঠার রায়ে উঠে এসেছে, কীভাবে আশরাফুজ্জামান ও মুঈনুদ্দীন ১৯৭১ সালের ১১ থেকে ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে আল বদর সদস্যদের নিয়ে বুদ্ধিজীবীদের অপহরণ ও হত্যার পর বধ্যভূমিতে লাশ গুম করেছিলেন। আশরাফুজ্জামান ছিলেন হত্যাযজ্ঞের ‘চিফ এক্সিকিউটর’ ও মুঈনুদ্দীন ‘অপারেশন ইনচার্জ’। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর আশরাফুজ্জামানের নাখালপাড়ার বাসা থেকে উদ্ধার করা ব্যক্তিগত দিনপঞ্জিতে হত্যার পরিকল্পনা ও একটি তালিকাও পাওয়া যায়।

জামায়াতের এই দুই ছাত্র নেতা ও তাদের সহযোগীদের হাতে নিহতদের মধ্যে রয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও নাট্যকার মুনীর চৌধুরী, অধ্যাপক মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, গিয়াসউদ্দিন আহমেদ, ড. সিরাজুল হক খান, ড. আবুল খায়ের, ড. ফয়জুল মহিউদ্দিন, অধ্যাপক রাশিদুল হাসান, অধ্যাপক আনোয়ার পাশা ও ড. সন্তোষ ভট্টাচার্য।

ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

সাংবাদিক সিরাজ উদ্দিন হোসেন, সৈয়দ নাজমুল হক, এএনএম গোলাম মুস্তাফা, নাজিম উদ্দিন আহমেদ, সেলিনা পারভীন, শহীদুল্লাহ কায়সার এবং চিকিৎসক মো. মর্তুজা, মো. ফজলে রাব্বি ও আলিম চৌধুরীকেও হত্যার পর গুম করে তারা।

‘ফ্যাসিস্ট’ জামায়াত

একাত্তরের যুদ্ধাপরাধে দল হিসাবে জামায়াতে ইসলামীর প্রত্যক্ষভাবে জড়িত থাকার বিষয়টি ট্রাইব্যুনালের রায়ে উঠে এসেছিল। আদালত বলেছিল, সেই সময় জামায়াতে ইসলামী একটি ফ্যাসিস্ট সংগঠন হিসাবে কাজ করেছে। ‘কিলিং স্কোয়াড’ আল বদরের নিয়ন্ত্রণ জামায়াতের হাতেই ছিল।

রায়ে বলা হয়, এটা প্রমাণিত হয়েছে যে, ফ্যাসিস্ট জামায়াতে ইসলামীর সংগঠিত মহাপরিকল্পনার আলোকেই সে সময় আল বদর বাহিনীকে নামানো হয়। বাঙালি জাতিকে প্যারালাইজড করতে তারা বুদ্ধিজীবী-সাংস্কৃতিক ব্যক্তিহীন করতে চেয়েছিল।

একাত্তরের ১৩ ডিসেম্বর দৈনিক শিলালিপির সম্পাদক সেলিনা পারভীনকে অপহরণের পর হত্যার বিষয়টি উল্লেখ করে রায়ে বলা হয়, ‘সন্তানের জন্য সেলিনা পারভীন প্রাণ ভিক্ষা চান, তাকে ছেড়ে দিতে বলেন। তার ছোট একটি ছেলে রয়েছে, যাকে দেখাশুনা করার আর কেউ নেই। কিন্তু নিষ্ঠুর হত্যাকারীরা তাকে ছাড়েনি। বেয়নেট দিয়ে তাকে তাতক্ষণিকভাবে হত্যা করা হয় বলে প্রসিকিউশনের ২২ নম্বর সাক্ষী জানিয়েছেন। সেলিনা পারভীন ছিলেন একজন মা। ভীতিকর আক্রমণ কেবল সেলিনা পারভীনের ওপরই করা হয় নাই। বরং মাতৃত্বের ওপরও হয়েছে। এটা বরং মাতৃহন্তাও। অবর্ণনীয় এই নিষ্ঠুরতা মানবতার বিবেককে আঘাত করেছে।’

এর আগে জামায়াতের মুক্তিযুদ্ধকালীন আমির গোলাম আযমের যুদ্ধাপরাধের বিচারের রায়ে দলটিকে ‘সন্ত্রাসী দল’ আখ্যা দিয়েছিল ট্রাইব্যুনাল। জিয়াউর রহমান ও এরশাদ সরকারের আমলে পুলিশ প্রহরায় মুঈনুদ্দীনকে দেশে আসার সুযোগ করে দেয়ায় ওই দুই সামরিক শাসককেও ধিক্কার জানানো হয়েছে রায়ের পর্যবেক্ষণে।

রায়ে বলা হয়, ‘এটা জাতির বড় একটি বিরাট লজ্জা (গ্রেট শেম) যে, জিয়া ও এরশাদ তাকে গ্রামের বাড়িতে যেতে দিয়েছেন। আত্মগোপনে গিয়ে বিদেশে পালিয়ে যাওয়া এই আসামিকে সে সময় পুলিশি নিরাপত্তাও দেয়া হয়। বিচারের মুখোমুখি করার পরিবর্তে তাকে রাষ্ট্রীয় মেশিনারি দিয়ে সম্মান দেয়া হলো।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

হাদিকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে সিঙ্গাপুরে পাঠানো হবে: প্রেস উইং

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ২২: ৫৮
ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদি। ফাইল ছবি
ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদি। ফাইল ছবি

ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ও ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদিকে আগামীকাল সোমবার দুপুরে একটি এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হবে।

আজ রোববার প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নির্দেশে সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, প্রধান উপদেষ্টার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়বিষয়ক বিশেষ সহকারী অধ্যাপক মো. সায়েদুর রহমান, এভারকেয়ার হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক জাফর, ওসমান হাদির ভাই ওমর বিন হাদির মধ্যে এক জরুরি কল কনফারেন্সে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। পরে প্রেস উইং থেকে পাঠানো বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়।

বিবৃতিতে বলা হয়, গত দুদিন ধরে ওসমান হাদির চিকিৎসার জন্য সরকার সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ার কয়েকটি হাসপাতালে যোগাযোগ করেছে। আজ এভারকেয়ার হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দলের পরামর্শে ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে আলোচনার পর প্রধান উপদেষ্টাকে অবহিত করা হয়।

প্রধান উপদেষ্টার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়বিষয়ক বিশেষ সহকারী অধ্যাপক মো. সায়েদুর রহমান প্রধান উপদেষ্টাকে জানান, বর্তমানে ওসমান হাদির শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল ও অপরিবর্তিত রয়েছে।

আগামীকাল দুপুরে ওসমান হাদিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে পাঠানো হবে। এ লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় এয়ার অ্যাম্বুলেন্স, চিকিৎসক দল ও ভ্রমণসংক্রান্ত সব প্রস্তুতি ইতিমধ্যে সম্পন্ন করা হয়েছে। সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালের অ্যাকসিডেন্ট ইমার্জেন্সি বিভাগে তাঁর চিকিৎসার সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

ওসমান হাদির চিকিৎসাসংক্রান্ত সব ব্যয় রাষ্ট্রীয়ভাবে বহন করা হবে। তাঁর চিকিৎসাপ্রক্রিয়া সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে রাখার জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন ড. ইউনূস।

ওসমান হাদির দ্রুত সুস্থতা কামনায় দেশবাসীর কাছে দোয়া ও প্রার্থনা চেয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

পদায়নের জন্য রাজনৈতিক পদলেহন করবেন না—বিদায়ী ভাষণে বিচারকদের প্রধান বিচারপতি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১: ৩১
প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ। ফাইল ছবি
প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ। ফাইল ছবি

প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ বলেছেন, পছন্দসই পদায়নের জন্য রাজনৈতিক পদলেহন পরিহার করতে হবে। মনে রাখতে হবে, আইন বৃহত্তর রাজনীতির একটা অঙ্গ হলেও বিচারকদের রাজনীতির উর্ধ্বে ওঠার প্রয়াস রপ্ত করতে হয়। কেবল ক্ষমতাবান শাসকশ্রেণির পক্ষে প্রয়োজনীয় পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার দায়িত্ব নিলে বিচার বিভাগের আলাদা কোনো অস্তিত্বেরই প্রয়োজন নেই। সে কাজের জন্য নির্বাহী বিভাগ ও পুলিশই যথেষ্ট। রাষ্ট্রের সাংবিধানিক ভিত্তি যে আদর্শকেই ধারণ করে গড়ে ওঠুক না কেন, বিচারকদের সুনীতি ও সুবিবেচনা বজায় রেখে কাজ করতে হবে।

সুপ্রিম কোর্ট অডিটরিয়ামে আজ রোববার জেলা ও মহানগর দায়রা জজ এবং চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটদের উদ্দেশে দেওয়া বিদায়ী ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন আপিল বিভাগের বিচারপতি, অ্যাটর্নি জেনারেল, বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও সুপ্রিম কোর্ট রেজিস্ট্রির কর্মকর্তারা।

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপটে গত বছরের ১১ আগস্ট ২৫তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব নেন রেফাত আহমেদ। অবসর নেওয়ার আগে আজ বিদায়ী ভাষণ দেন তিনি। ২৭ ডিসেম্বর অবসরে যাবেন রেফাত আহমেদ।

প্রধান বিচারপতি বিচারকদের উদ্দেশে বলেন, অসৎ ও অসাধু বিচারকদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। বিচারকদের দ্বারা সৃষ্ট যাবতীয় অন্যায়ের জন্য এখন থেকে অন্যের দিকে অঙ্গুলিনির্দেশ বন্ধ করতে হবে। জনগণের জন্য সংক্ষিপ্ত সময়ে সুবিচার নিশ্চিত করতে শতভাগ দায়িত্ব পালন করতে হবে। শুনানিকালে কোনো বিশেষ পদবিধারী ব্যক্তি বা ক্ষমতাবান পক্ষকে অতিরিক্ত গুরুত্ব দেওয়া বিচারকের দায়িত্বের অন্তর্ভুক্ত নয়।

সৈয়দ রেফাত আহমেদ বলেন, ‘এই পৃথক সচিবালয় (সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয়) প্রতিষ্ঠার কোনো স্বার্থকতা নেই, যদি না আমরা ব্যক্তিগত অসততার ব্যাপারে সতর্ক থাকি। একটি স্বাধীন সচিবালয় কেবল শুরু, সর্বশেষ উদ্দেশ্য নয়। আপনাদের উচিত, সততা আর যোগ্যতার ব্যাপারে দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ হওয়া। অনুপার্জিত অর্থের বাসনা, অন্যায্য বিলাসী জীবন এবং অসংগত ক্ষমতার প্রতিপত্তি যদি আমাদের মনকে কলুষিত করে রাখে, তাহলে পৃথিবীর কোনো আইনি বিধানই আমাদের সামষ্টিক স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে পারবে না।’

বিচারকদের উদ্দেশে রেফাত আহমেদ আরও বলেন, ‘উন্নত জীবনমান ও কর্মপরিবেশের প্রতি প্রত্যাশা কখনোই ব্যক্তিগত ভোগ, আত্মতুষ্টি কিংবা সামাজিক মর্যাদা অর্জনের লক্ষ্য হতে পারে না। এর অন্তরে থাকতে হবে বিচারিক সক্ষমতার উন্নয়ন, জ্ঞানচর্চার সম্প্রসারণ এবং উচ্চমানের কর্মদক্ষতা অর্জনের সৎ প্রেরণা। এটি অনস্বীকার্য যে, বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থায় চাকরিকালীন প্রশিক্ষণ সংস্কৃতি এখনো কাঙ্ক্ষিত মানে পৌঁছায়নি। প্রায়োগিক প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য আমরা এখনো একটি আধুনিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে পারিনি। তবে বিদ্যমান সুযোগের ন্যূনতম সদ্ব্যবহারের ক্ষেত্রেও বিচারকদের বড় অংশের অনীহা ও কার্পণ্য পরিলক্ষিত হয়। তাই আপনাদের প্রতি আমার অনুরোধ—জ্ঞান অর্জন ও পাঠাভ্যাসকে আপনারা জীবনের পরম দায় হিসেবে নেবেন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

চোরাগোপ্তা হামলার শঙ্কা থাকলেও ভোট নিয়ে শঙ্কা দেখছে না ইসি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন নির্বাচন কমিশনার মো. সানাউল্লাহ। ছবি: বাসস
সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন নির্বাচন কমিশনার মো. সানাউল্লাহ। ছবি: বাসস

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের তফসিল ঘোষণার পরদিন ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদির ওপর হামলার ঘটনার পর আরও চোরাগোপ্তা হামলার শঙ্কা দেখছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তবে এতে নির্বাচন নিয়ে কোনো শঙ্কা নেই বলে জানানো হয়েছে।

আজ রোববার (১৪ ডিসেম্বর) আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে জরুরি বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ।

সানাউল্লাহ বলেন, ‘আজকে একটা বিশেষ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। মূলত আমরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী আইন প্রয়োগকারী বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিদের ডেকেছিলাম। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন। এতে তফসিল ঘোষণার পর থেকে এই পর্যন্ত উদ্ভূত বিভিন্ন পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেছি। সামনের আমাদের কার্যক্রম এবং কৌশল কী হওয়া উচিত—সেগুলো নিয়ে আলোচনা করেছি এবং তাঁদের বিভিন্ন মত শুনেছি।’

সানাউল্লাহ আরও বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময় একটা ঘটনা, যেটা আমাদের সবার সবাইকে উদ্বিগ্ন করেছে। শরিফ ওসমান হাদির ওপরে চোরাগোপ্তা হামলা। সেটা নিয়ে বিশদ আলোচনা হয়েছে। তদন্তের স্বার্থে বিস্তারিত বলছি না। সেখানকার আরও কিছু বিষয় সম্বন্ধে আমরা অবহিত হয়েছে। যেগুলোর সাথে নির্বাচন এবং নির্বাচন কমিশনের স্বার্থ জড়িত।’

সানাউল্লাহ বলেন, ‘এখানে কয়েকটা বিষয় উঠে এসেছে যে ব্যক্তিকে শনাক্ত করা হচ্ছে সন্দেহভাজন হিসেবে। তিনি বেশ কিছুদিন ধরেই একটা সখ্যতা গড়ে তুলে অত্যন্ত কাছে গিয়েছে। দ্বিতীয়ত হচ্ছে যে তার একটা অতীত আছে, পেছনে তার একটা রাজনৈতিক ইন্টারেসিডেন্স (মধ্যস্থতা বা হস্তক্ষেপ) আছে এবং তার একটা ক্রিমিনাল রেকর্ড আছে। সেটা নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছ থেকে আমরা জানতে পারলাম যে রেবেল হান্ট বিশেষ করে—এক শুরু হওয়ার পর থেকে যেসব সন্ত্রাসীদের অ্যারেস্ট করা হয়েছিল, তাদের একটা বড় সংখ্যা ইতিমধ্যে জামিন পেয়ে গেছে এবং তারা সমাজে বিরাজ করছে। এটা নিয়ে আমাদের কী করণীয়—সেটা নিয়ে আমরা কথা বলেছি।’

দেশে চোরাগোপ্তা হামলার আশঙ্কাকে উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না জানিয়ে এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘সামনেও যে এটা সম্ভাবনা নাই, তা-ও বলছি না। আজকের মূল উদ্দেশ্য ছিল যাতে করে এই ধরনের হামলার ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে বা এগুলো যাতে কঠোর হস্তে দমন করা হয় ... নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে মেসেজ ইজ ভেরি ক্লিয়ার। নির্বাচন নিয়ে কোনো আশঙ্কা নাই।’

প্রার্থীদের বৈধ অস্ত্র ও লাইসেন্স দেওয়ার বিষয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার বক্তব্য নজরে আনলে এই নির্বাচন কমিশনার বলে, ‘আমার সাথে এ বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। কমিশনের সাথে কোনো আলোচনা হয়েছে বলে আমার জানা নাই। উনি কী মন্তব্য করেছেন, কোন প্রেক্ষাপটে করেছেন, আমি যদি জানি পরে আমি আলোকপাত করতে পারব।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত